আরবি ব্যাকরণ বা আরবি ভাষাবিজ্ঞান (আরবি: النحو العربي আন-নাহু আল-আরাবি বা আরবি: عُلُوم اللغَة العَرَبِيَّة উলুম আল-লুগাহ আল-আরাবিয়াহ), সংক্ষেপে নাহু, হল আরবি ভাষার ব্যাকরণ। আরবি ব্যাকরণ হল এমন একটি বিজ্ঞান যা অধ্যায়নের দ্বারা আরবি শব্দের শেষ অক্ষরের অবস্থা-বিধান (যের-যবর-পেশ ইত্যাদি প্রয়োগ) জানা যায় এবং বাক্য গঠনের পদ্ধতি সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান অর্জিত হয়। আরবি হল একটি সেমেটিক ভাষা। অন্যান্য সেমিটিক ভাষার ব্যাকরণের সাথে এ ভাষার ব্যাকরণের অনেক মিল রয়েছে।
ইতিহাস
প্রাচীনতম আরবি ব্যাকরণবিদ কে তা একটি বিতর্কিত বিষয়; কিছু সূত্র বলে যে তিনি হলেন আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি, আলী ইবনে আবি তালিবের কবি বন্ধু, যিনি খৃস্টাব্দ ৬০০-এর দশকের মাঝামাঝি আরবি জন্য একই বর্ণের ভিন্ন উচ্চারণের জন্য বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন এবং স্বরবর্ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,[১] অন্যরা বলেন যে, প্রাচীনতম ব্যাকরণবিদ হলেন ইবনে আবি ইসহাক (মৃত্যু ৭৩৫/৬ খ্রিস্টাব্দ, হিজরি ১১৭)।[২]
ইসলামের দ্রুত উত্থানের সাথে সাথে বসরা ও কুফার বিদ্যালয়গুলি অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে আরবি ব্যাকরণের নিয়মগুলি আরও বিকশিত করেছিল।[৩][৪] বসরা স্কুল থেকে সাধারণত আবু আমর ইবনে আল-আলা প্রতিষ্ঠিত হিসাবে বিবেচিত,[৫] দুই প্রতিনিধি এই ক্ষেত্রটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এদের মধ্যে একজন হলেন আল-খলিল ইবনে আহমদ আল-ফারাহাদি। তিনি প্রথম আরবি অভিধান এবং আরবি ছন্দঃশাস্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। আর দ্বিতীয় জন হলেন তাঁর ছাত্র সিবাওয়াহ, যিনি আরবি ব্যাকরণের তত্ত্ব সম্পর্কিত প্রথম বইটি রচনা করেছিলেন।[৬] কুফা স্কুল থেকে, আল-রুআসিকে সর্বজনীনভাবে প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যদিও তার নিজস্ব লেখাগুলি অবর্তমান হিসাবে বিবেচিত হয়।[৭][৮]
বিভাগ
শাস্ত্রীয় আরবী ব্যাকরণের জন্য ব্যাকরণ-বিজ্ঞান পাঁচটি শাখায় বিভক্ত:
- আল-লুগাত ( اَللُّغَة ) : (ভাষা / অভিধান) শব্দভাণ্ডার সংগ্রহ এবং ব্যাখ্যা করার সাথে সম্পর্কিত।
- আত-তাসরিফ বা আস-সরফ ( اَلتَّصْرِيف ) : (রূপতত্ত্ব বা শব্দতত্ত্ব) একই শব্দের বিভিন্ন রূপ নির্ধারণ।
- আন-নাহু (اَلنَّحْو ) : (বাক্য গঠন) বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ সমুহের শেষে ‘ইরাব’ প্রদান সম্পর্কিত ।
- আল-ইশতিকাক (اَلاشْتِقَاق ) : (উদ্ভূত) শব্দের উৎস বা ধাতু নির্ধারণ ।
- আল-বালাগাত ( اَلْبَلَاغَة ) : (অলঙ্কারশাস্ত্র) যা শৈলীগত গুণ বা স্পষ্টতাকে বিশদ করে।
তবে আরব অঞ্চল ও ভারতীয় উপমহাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন আরবি পাঠকেন্দ্রগুলোতে (যেমন মাদ্রাসা) মূলত আরবি ব্যাকরণের দুটি শাখাকে প্রধান ধরা হয়, এগুলো হলো, প্রথমত, ইলমুস সরফ বা শব্দতত্ত্ব, এবং দ্বিতীয়ত, ইলমুন নাহু বা বাক্যতত্ত্ব। আরবির সমসাময়িক প্রকরণগুলোর ব্যাকরণ বা ব্যাকরণসমূহ আরেকটি অন্যতম আলোচনার বিষয়। সাঈদ ম. বাদাভি, আরবি ব্যাকরণের একজন বিশেষজ্ঞ, আরবি ব্যাকরণকে বক্তার স্বাক্ষরতার পর্যায় ও প্রাচীন আরবি হতে বক্তার বিচ্যুতির হার অনুযায়ী ৫টি ভিন্ন প্রকরণে ভাগ করেছেন। সবচেয়ে কথ্য আরবি থেকে শুরু করে সবচেয়ে আড়ম্বর পর্যন্ত বাদাভির ৫টি ব্যাকরণিক প্রকার হলো নিরক্ষর কথ্য আরবি (عامِّيّة الأُمِّيِّينِ ‘আম্মিয়াত আল-উম্মিয়ীন), অর্ধ্ব-শিক্ষিত কথ্য আরবি (عامِّيّة المُتَنَوِّرِينَ ‘আম্মিয়াত আল-মুতানাউয়িরিন), শিক্ষিত কথ্য আরবি (عامِّيّة اَلمُثَقَّفِينَ ‘আম্মিয়াত আল-মুসাক্কাফিরীন), আধুনিক আদর্শ আরবি (فُصْحَى العَصْر ফুসহা ল-‘আসর), ও প্রাচীন আরবি (فُصْحَى التُراث ফুসহা ত-তুরাছ)।[৯] এছাড়াও বিশ্বজুড়ে মোট ২৫টিরও বেশি কথ্য আরবির ভিন্ন ভিন্ন বাচনশৈলী (dialects) প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোকে প্রধানত ২টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথাঃ মাশরেকি আরবি বা প্রাচ্য আরবদেশগুলোর আরবি ও মাগরেবি আরবি বা পাশ্চাত্য আরব দেশগুলোর আরবি।
ইলমুল লফয বা অর্থবোধক ধ্বনিতত্ত্ব
অর্থপূর্ণ ধ্বনিকে লফয বলে। লফজ দুই প্রকার বা দুই বাবঃ মুফরাদ বা কালিমা বা সীগাহ’ বা শব্দ ও মুরাক্কাব বা বাক্যাংশ। আরবি লিখনরীতিতে লেখা ডানদিক থেকে শুরু হয়ে বামদিকে অগ্রসর হয়, যা প্রচলিত বাংলা ও ইংরেজি লিখনরীতির বিপরীত, কারণ সেগুলো বামদিক থেকে শুরু হয়ে ডানদিকে অগ্রসর হয়।
বর্ণ বা হরফ
মূল নিবন্ধ: আরবি বর্ণমালা
আরবি ব্যাকরণে বর্ণকে হরফ বলা হয়। আবজাদি ক্রমে ২৯টি আরবি বর্ণ এবং তাদের বাংলা উচ্চারণ :
غ | ظ | ض | ذ | خ | ث | ت | ش | ر | ق | ص | ف | ع | س | ن | م | ل | ك | ي | ط | ح | ز | و | ه | د | ج | ب | ا |
গাইন (গ্) | জোয়া (য্/জ্/জ্ব) | দোয়াদ (দ্/দ্ব) | যাল (য্) | খা’ (খ্) | সা’ (স্/ছ্) | তা’ (ত্) | শিন/শীন (শ্) | রা’ (র্) | কফ (ক্/ক্ব/ক) | ছোয়াদ/সোয়াদ (ছ্,স্) | ফা’ (ফ্) | ‘আইন (‘আ, ‘ই, ‘উ) | সিন/সীন (স্) | নুন (ন্) | মিম (ম্) | লাম (ল্) | কাফ (ক্) | ইয়া (ইয়্) | তোয়া (ত্/ত্ব/ত) | হা’ (হ্) | যা’ (য্) | ওয়াও (ওয়্) | হা (হ্) | দাল/দ্বাল (দ্/দ্ব্) | জিম/জ্বিম (জ্/জ্ব্) | বা’ (ব্) | আলিফ (আ, ই, উ) |
২৮ | ২৭ | ২৬ | ২৫ | ২৪ | ২৩ | ২২ | ২১ | ২০ | ১৯ | ১৮ | ১৭ | ১৬ | ১৫ | ১৪ | ১৩ | ১২ | ১১ | ১০ | ৯ | ৮ | ৭ | ৬ | ৫ | ৪ | ৩ | ২ | ১ |
আধুনিক অভিধানসমূহ ও তথ্যসূত্রের গ্রন্থসমূহ বর্ণানুক্রমিকভাবে শব্দের ক্রমধারা রক্ষার ক্ষেত্রে আবজাদি ক্রমধারা ব্যবহার করে না, এক্ষেত্রে এর পরিবর্তে তুলনামুলক নতুন হিজাজি ক্রমধারা ব্যবহার ব্যবহার করা হয়, যেখানে বর্ণগুলো বর্ণগুলোকে আকৃতির সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আংশািকভাবে একত্রে দলবদ্ধ করা হয়েছে। হিজাজি ক্রমধারাকে কখনোই সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করা হয় না।
ي | و | ه | ن | م | ل | ك | ق | ف | غ | ع | ظ | ط | ض | ص | ش | س | ز | ر | ذ | د | خ | ح | ج | ث | ت | ب | ا |
ইয়া (য়ি) | ওয়াও (ওয়) | হা (হ) | নুন (ন) | মীম (ম) | লাম (ল) | কাফ (ক) | ক্বফ (ক্ব) | ফা (ফ) | গ্বঈন (ঘ) | আঈন (আয়্ব’) | য্বোয়া (য্ব) | ত্বোয়া (ত্ব) | দ্বোয়াদ (দ্ব) | সোয়াদ (অতি লঘু স ও ছ এর আংশিক সদৃশ) | শীন (শ) | সীন (লঘু স) | য্ঝা (য্ঝ) | র (র) | য্বাল (ধ, দ,ও য এর মিশ্রণ) | দ্বাল (দ্ব) | খ্ব (খ্ব) | হা (হ) | জীম (জ) | সা/থা (স ও থ এর মধ্যবর্তী) | তা (ত) | বা (ব) | আলিফ (অ) |
স্বরচিহ্ন বা হরকত
আরবীতে স্বরচিহ্নকে হরকত (ইংরেজিঃ Arabic diacritics) বলে। যবর, যের ও পেশকে যথাক্রমে দম্মাহ, ফাতহা ও কাছরাহ বলে। এগুলো া, ি ও ু কার হিসেবে কাজ করে। যবর, যের বা পেশ দ্বিত হলে তাকে তানবীন বলে। হরকতবিহীন হরফ বা বর্ণকে মিলিয়ে পড়াকে যজম বলে, যা হসন্ত ্ এর কাজ করে। আর একই অক্ষর দ্বৈতভাবে যুক্তবর্ণ হিসেবে মিলিয়ে পড়া হলে তাকে তাশদীদ বলে।
স্বরবর্ণ বা ইল্লত
আলিফ, ওয়াও ও ইয়াকে একত্রে ইল্লত বা স্বরবর্ন বলে।
ইলমুস সরফ বা শব্দতত্ত্ব
সরফের প্রধান অংশ হলো কালিমা বা শব্দ বা পদ। কালিমা তিন প্রকার বা তিন বাবঃ ইসম বা নাম (বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম), ফিল বা ক্রিয়া, হরফ বা অব্যয়।[১০]
ইসম বা নাম
ইসমকে ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে অর্থাৎ কারক হিসেবে এবং তুলনীয় আধিক্যবাচকতার ভিত্তিতে পাচ প্রকারে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। ইসমুল ফায়েল বা কর্তৃকারক, ইসমুল মাউফল বা কর্মকারক, ইসমুল তাফদীল তাফদীল বা তুলনীয় আধিক্যবাচক বিশেষ্য (একই রকম ইসমুল মুবালাফাহ বা তুলনাবিহীন আধিক্যবাচক বিশেষ্য), ইসমুদ দরফ/ইসমুয যরফ বা অধিকরণ কারক ও ইসমুল আ’লা বা করণকারক।
দমীর/যমীর বা সর্বনাম
পুরুষ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন | |
---|---|---|---|---|
১ম | أَنَا আনা | نَحْنُ নাহনু | ||
২য় | পুরুষবাচক | أَنْتَ আনতা | أَنْتُمَا আনতুমা | أَنْتُمْ আনতুম |
স্ত্রীবাচক | أَنْتِ আনতি | أَنْتُنَّ আনতুন্না | ||
৩য় | পুরুষবাচক | هُوَ হুয়া | هُمَا হুমা | هُمْ হুম |
স্ত্রীবাচক | هِيَ হিয়া | هُنَّ হুন্না |
যমীরুল মুত্তাসিলাহ বা অনুসর্গ সর্বনাম
আরও দেখুন: আসসালামু আলাইকুম § ব্যাকরণগত রূপভেদ
অনুসর্গ সর্বনাম (اَلضَّمَائِر الْمُتَّصِلَة আদ-দমা’য়ীর আল-মুত্তাসিলাহ) ফিল বা ক্রিয়ার পরে যুক্ত হয়ে কর্তা নয়, বরং কর্ম হিসেবে অর্থ প্রকাশ করে।
পুরুষ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন | |
---|---|---|---|---|
১ম | ـنِي, ـِي, ـيَ -নি/-ই/-ইয়া | ـنَا না | ||
২য় | পুং | ـكَ -কা | ـكُمَا -কুমা | ـكُمْ -কুম |
স্ত্রী | ـكِ -কি | ـكُنَّ -কুন্না | ||
৩য় | পুং | ـهُ, ـهِ -হু/-হি | ـهُمَا, ـهِمَا -হুমা/-হিমা | ـهُمْ, ـهِمْ -হুম/-হিম |
স্ত্রী | -হা ـهَا | ـهُنَّ, ـهِنَّ -হুন্না/-হিন্না |
পদান্বয়ী অব্যয় (preposition) যুক্ত সর্বনাম
কিছু খুব সাধারণ পদান্বয়ী অব্যয়ের (যেমন লি- “প্রতি”, পরোক্ষ বস্তুর জন্যও ব্যবহৃত হয়) সাথে অনুসর্গ সর্বনাম যোগ করা হলে সেগুলো অনিয়মিত বা অপ্রত্যাশিত একত্রিত রূপ প্রকাশ করে:
অর্থ | স্বাধীন রূপ | “আমার…” সাথে | “তোমার…” সাথে (পুং. এক.) | “তার… ” সাথে |
---|---|---|---|---|
“প্রতি”, পরোক্ষ বস্তু | لِـ লি- | لِي লি | لَكَ লাকা | لَهُ লাহু |
“মধ্যে”, “সাথে”, “মাধ্যমে” | بِـ বি- | بِي বি | بِكَ বিকা | بِهِ বিহি |
“মধ্যে” | فِي ফি | فِيَّ ফিয়া | فِيكَ ফিকা | فِيهِ ফিহি |
“প্রতি” | إِلَى ইলা | إِلَيَّ ইলায়া | إِلَيْكَ ইলাইকা | إِلَيْهِ ইলাইহি |
“উপরে” | عَلَى ‘আলা | عَلَيَّ ‘আলাইয়া | عَلَيْكَ ‘আলাইকা | عَلَيْهِ ‘আলাইহি |
“সাথে” | مَعَ মা’আ | مَعِي মা’ই | مَعَكَ মা’আকা | مَعَهُ মা’আহু |
“হতে” | مِنْ মিন | مِنِّي মিন্নি | مِنْكَ মিনকা | مِنْهُ মিনহু |
“উপরে”, “ব্যাপারে” | عَنْ ‘আন | عَنِّي ‘আন্নি | عَنْكَ ‘আনকা | عَنْهُ ‘আনহু |
নির্দেশক সর্বনাম
আরবিতে দুটি নির্দেশক সর্বনাম (demonstrative) (أَسْمَاء اَلْإِشَارَة অনু. আর – অনুবাদ আসমা’ আল-ইশারাহ) রয়েছে, নিকট-নির্দিষ্ট (এটি) এবং দূর-নির্দিষ্ট (‘ওটি’):
লিঙ্গ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন | |
---|---|---|---|---|
পুং | কর্তা হিসেবে | هٰذَا হাযা | هٰذَانِ হাযানি | هٰؤُلَاءِ হাউলাই |
কর্ম/সম্বন্ধ পদ হিসেবে | هٰذَيْنِ হাযাইনি | |||
স্ত্রী | কর্তা হিসেবে | هٰذِهِ হাযিহি | هٰاتَانِ হাতানি | |
কর্ম/সম্বন্ধ পদ হিসেবে | هٰاتَيْنِ হাতাইনি |
লিঙ্গ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন | |
---|---|---|---|---|
পুং | কর্তা হিসেবে | ذٰلِكَ، ذَاكَ যালিকা, যাকা | ذَانِكَ যানিকা | أُولٰئِكَ উলা’ইকা |
কর্ম/সম্বন্ধ পদ হিসেবে | ذَيْنِكَ যাইনিকা | |||
স্ত্রী | কর্তা হিসেবে | تِلْكَ তিলকা | تَانِكَ তানিকা | |
কর্ম/সম্বন্ধ পদ হিসেবে | تَيْنِكَ তাইনিকা |
কুরআনীয় আরবিতে আরেকটি নির্দেশক সর্বনাম আছে, সাধারণত এটি কোন নামপদের পরে বসে অধিকরণীয় সম্বন্ধ আকারে এবং এর অর্থ হয় (নামপদ)-এর মালিক:
লিঙ্গ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন | |
---|---|---|---|---|
পুং | কর্তৃবাচক | ذُو যু | ذَوَا যাওয়া | ذَوُو، أُولُو যায়ু, উলু |
অধিকরণবাচক | ذَا যা | ذَوَاتَيْ যাওয়ায়ি | ذَوِي، أُولِي যাওয়ি, উলি | |
সম্বন্ধবাচক | ذِي যি | |||
স্ত্রী | কর্তৃবাচক | ذَاتُ যাতু | ذَوَاتَا যাওয়াতা | ذَوَاتُ، أُولَاتُ যাওয়াতু, উলাতু |
অধিকরণবাচক | ذَاتَ যাতা | ذَوَاتَيْ যাওয়াতাই | ذَوَاتِ، أُولَاتِ যাওয়াতি, উলাতি | |
সম্বন্ধবাচক | ذَاتِ যাতি |
না’ত বা বিশেষণ
যখন কোন ইসম অপর কোন ইসমের পূর্বে বসে তার দোষ গুণ বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে তখন তাকে না’ত বা বিশেষণ বলে।
বচন
আরবিতে বচন তিন প্রকারঃ ওয়াহিদ বা একবচন, তাসনিয়াহ বা দ্বিবচন, ও জমআ বা বহুবচন।
জিন্স বা লিঙ্গ
আরবি ব্যাকরণে লিঙ্গকে জিন্স বলে। আরবি ব্যাকরণে লিঙ্গ দুই প্রকার বা দুই বাব, মুযাক্কার বা পুংলিঙ্গ, মুয়ান্নাস বা স্ত্রীলিঙ্গ।
পদাশ্রিত নির্দেশক
আরবিতে পদাশ্রিত নির্দেশক (article) নেই কিন্তু তার সমতুল্য নামপদ আছে যা দুই প্রকার। নির্দিষ্ট নাম বা ইসমুল মারিফাহ ও অনির্দিষ্ট নাম বা ইসমে নাকিরাহ।
ফিল বা ক্রিয়াপদ

আরবি ক্রিয়াপদের চার্ট
মূল নিবন্ধ: আরবি ক্রিয়াপদ
আরও দেখুন: আরবি অসম্পূর্ণ ক্রিয়া
অন্যান্য সেমিটিক ভাষার ক্রিয়াগুলির মতো আরবি ক্রিয়াপদ (فعل ফি’ল) অত্যন্ত জটিল। আদেশসূচক ক্রিয়াকে আমর আর নিষেধসূচক ক্রিয়াকে নাহী বলে। ফিলে আমরকে ইফআল (করো) দ্বারা উদাহরণ দেওয়া হয়। কতৃবাচক ক্রিয়াকে ফিল মা’রুফ আর কর্মবাচক ক্রিয়াকে ফিল মাজহুল বলে। এদেরকে যথাক্রমে ফাঈল ও মাফউল দ্বারা উদাহরণ দেওয়া হয় (আরও উদাহরণ, জালিম-মজলুম, হাবিব-মাহবুব আলিম-মাআলুম ইত্যাদি)। হ্যাবাচক ক্রিয়াকে ইসবাত ও নাবাচক ক্রিয়াকে নাফী বলে।
জামানা বা ক্রিয়ার কাল
আরবি ব্যকরণে ক্রিয়ার কালকে জমানা বলে। আরবিতে ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার এবং এদের ক্রিয়াপদও তিন প্রকারঃ মাদী বা অতীত, হাল বা বর্তমান এবং মুসতাকবিল বা ভবিষ্যত। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্রিয়াকে একত্রে ফিল মুদারী বলে। ফিল মাদিকে ফাআলা (করেছিল বা করলো) ও মুদারীকে ইয়াফআলু (করে, করছে বা করবে) দ্বারা প্রাথমিকভাবে উদাহরণ দেওয়া হয়। অনেক সময়, ভবিষ্যৎ কাল সুস্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য ফিল মুদারীর আগে আলাদা শব্দ আকারে সাওফা (سوف) বা ফিল মুদারীর সাথে সংযুক্ত আকারে শুধু সা (س) বর্ণটি যোগ করা হয়।
সংখ্যা বা আদদ
মূল নিবন্ধ: আরবি সংখ্যা
অংকবাচক সংখ্যা (اَلْأَعْدَاد اَلْأَصْلِيَّة আল-আদাদ আল-আসলিয়াহ) ০-১০ পর্যন্ত। শূন্য হলসিফর, যা থেকে সরাসরি ০ অঙ্কটি এসেছে।
- ০ ٠ সিফর(উন) (صِفْرٌ)
- ১ ١ ওয়াহিদ(উন) (وَاحِدٌ)
- ২ ٢ ইসনান(ই) (اِثْنَانِ)
- ৩ ٣ সালাসা(তুন) (ثَلَاثَةٌ)
- ৪ ٤ আরবা’আ(তুন) (أَرْبَعَةٌ)
- ৫ ٥ খামসা(তুন) (خَمْسَةٌ)
- ৬ ٦ সিত্তা(তুন) (سِتّةٌ)
- ৭ ٧ সাব’আ(তুন) (سَبْعَةٌ)
- ৮ ٨ সামানিয়া(তুন) (ثَمَانِيَةٌ)
- ৯ ٩ তিস’আ(তুন) (تسعةٌ)
- ১০ ١٠ ‘আশারা(তুন) (عَشَرَةٌ) (স্ত্রীবাচক রূপ ‘আশর(উন) عَشْرٌ)
- ১১ আহাদা আশার
- ১২ ইসনা আশার
- ১৩ সালাসাতা আশার
- ১৯ তিস’আতা আশার
- ২০ ইশরুন
- ২১ ওয়াহিদ ওয়া ইশরুন
- ২২ ইসনান ওয়া ইশরুন
- ২৫ খামসা ওয়া ইশরুন
- ৩০ সালাসুন
- ৩৫ খামসা ওয়া সালাসুন
- ৪০ আরবাঊন
- ৪৫ খামসা ওয়া আরবাউন
- ৫০ খামসুন
- ৬০ সিত্তুন
- ৭০ সাবঊন
- ৮০ সামানিয়ুন
- ৯০ তিসঊন
- ১০০ মিয়াত/মিয়া’
- ১০০০ আলফ
পদান্বয়ী অব্যয় (preposition)
আরবি | ইংরেজি | |
---|---|---|
সঠিক পদান্বয়ী অব্যয়সমূহ | بـ বি | সাথে, মধ্যে, তে |
تـ তা- | ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র تٱللهِ তাল্লাহি অভিব্যক্তিতে ‘আমি আল্লাহর কাছে শপথ করি’ | |
لَـ লা- | নিশ্চিতভাবে (ক্রিয়াপদের আগেও ব্যবহৃত হয়) | |
لِـ লি- | প্রতি, জন্য | |
كـ কা- | মত, অনুরুপ | |
فـ ফা- | [এবং] তাই/একারণে/এজন্য/অতএব/সুতরাং | |
إِلَى ’ইলা | প্রতি, দিকে | |
حَتَّى হাত্তা | আগপর্যন্ত, পর্যন্ত | |
عَلَى ‘আলা | উপরে; বিরুদ্ধে | |
عَن ‘আন | হতে, ব্যপারে | |
فِي ফি | মধ্যে, তে | |
مَعَ মা’আ[ক] | সাথে, পাশাপাশি | |
مِن মিন | হতে; তুলনায় | |
مُنْذُ মুনযু | অনেকদিন আগে/আগে থেকে | |
مُذْ মুয | অনেকদিন আগে/আগে থেকে | |
উপ-পদান্বয়ী অব্যয় | أَمامَ ’আমামা | সামনে |
بَيْنَ বায়না | দুটির মধ্যে, অনেকের মধ্যে | |
تَحْتَ তাহতা | নীচে | |
حَوْلَ হাওলা | চারদিকে | |
خارِجَ খারিজা | বাইরে | |
خِلالَ খিলালা | সময়ে | |
داخِلَ দাখিলা | ভেতরে | |
دُونَ দুনা | ছাড়া | |
ضِدَّ দিদ্দা | বিরুদ্ধে | |
عِنْدَ ‘ইনদা | অংশে; তে; ঘরে; মালিকানায় | |
فَوْقَ ফাওকা | উপরে | |
مَعَ মা’আ | সঙ্গে | |
مِثْلَ মিথলা | মত | |
وَراءَ ওয়ারাআ | পেছনে |
ইলমুন নাহু বা বাক্যতত্ত্ব
বাক্য বা জুমলা
আরবি ব্যাকরণে বাক্যকে জুমলা বলে। জুমলা দুই প্রকারঃ বিশেষ্যবাচক বাক্য বা জুমলাতুল ইসমিয়াত, এবং ক্রিয়াবাচক বাক্য বা জুমলাতুল ফিলিয়াত। ক্রিয়াবাচক বাক্যের প্রথম ক্রিয়াবাচক শব্দকে ফিল ও পরের ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যকে ফায়েল বলে। আর নামবাচক বাক্যের প্রথম নামবাচক শব্দের অংশকে মুবতাদা ও দ্বিতীয় অংশকে খবর বলে।
বাক্য গঠন কাঠামোপদ্ধতি
আরবিতে বাক্য গঠনের সাধারণ প্রধান কাঠামো হলঃ
- ক্রিয়া + কর্তা (সাধারণত কর্তা একেবারেই ব্যবহার হয় না, যদি না অতীব সুস্পষ্টকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়) + কর্ম। (ক্রিয়াবাচক বাক্য বা জুমলাতুল ফি’লিয়াত)
এবং দ্বিতীয় অপ্রধান কাঠামো হলোঃ
- কর্তা + ক্রিয়া + কর্ম। (বিশেষ্যবাচক বা নামবাচক বাক্য বা জুমলাতুল ইসমিয়াত)
আরবিতে বাক্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ক্রিয়াপদ, যা উল্লেখ না করলে বাক্যকে সম্পূর্ণ মনে করা হয় না, আর সবচেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কর্তা, যা সাধারণ ক্ষেত্রে প্রায় সকল বাক্যেই অনুল্লেখিত থাকে, যদি না এর অনুপস্থিতিতে বাক্যের কর্তা কে তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়, সে সকল ক্ষেত্র ছাড়া। যেমনঃ আমি ভাত খাই এর শাব্দিক আরবিঃ
- আ-কুলু (খাই) আনা (আমি) রুজ্বা (ভাত) (اكل انا رزا) । বা
- আনা (আমি) আ-কুলু (খাই) রুজ্বা (ভাত) (أنا أكل الرز)।
তাই কথ্য ভাষার ক্ষেত্রে এর আরবি হবে হবেঃ
- আ-কুলু (খাই) রুজা (ভাত) (اكل رزا)।
আরেকটি উদাহরণ
- আয়েশ ফী বাংলাদেশ (أعيش في بنغلاديش)
আরও দেখুন
টীকা
কিছু ব্যাকরণবিদ مَعَ শব্দটিকে একটি বিশেষ্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেন, পদান্বয়ী অব্যয় (preposition) হিসেবে নয়