নজরুলগীতি

নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তার সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩০০০-এরও বেশি[১] গান রচনা করেছেন। এসকল গানের বড় একটি অংশ তারই সুরারোপিত। তার রচিত চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধ্বগগণে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালাগুল বাগিচাগীতি শতদলবুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; একারণে অনুমান করা হয় প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। তার কিছু কালজয়ী গানগুলো হলো ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ‘, ‘চল চল চল‘, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ‘ ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্য ও জনপ্রিয়তা[উৎস সম্পাদনা]

নজরুলের আবির্ভাব ও কর্মকাল রবীন্দ্রযুগের অন্তর্ভূত। তবু নজরুল রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বলয়ের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে গীত রচনা করেছেন ও সুরারোপ করেছেন। তিনি বাংলা গানে বিচিত্র সুরের উৎস। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনিও একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও সুগায়ক। গানের সংখ্যায় তিনি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি বহু নতুন সুরের স্রষ্টা। বিচিত্র সুর আর তালে তার গান নিত্য নতুন।

নজরুল ” নজরুলগীতি ” শিখাচ্ছেন

শ্রোতার পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় নজরুলের কারার ওই লৌহকপাট গানটি ১৬তম স্থানে এবং চল্‌ চল্‌ চল্‌ ঊর্ধগগনে বাজে মাদল গানটি ১৮তম স্থানে রয়েছে।[২]

শ্রেণীবিন্যাস[উৎস সম্পাদনা]

বাংলা গানের বুলবুল কাজী নজরুল ইসলাম, ১৯৪০

সকল নজরুলগীতি ১০টি ভাগে বিভাজ্য। এগুলো হলোঃ ভক্তিমূলক গান, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক গান, রাগপ্রধান গান, হাসির গান, ব্যাঙ্গাত্মক গান, সমবেত সঙ্গীত, রণ সঙ্গীত এবং, বিদেশীসুরাশ্রিত গান।

নজরুল সঙ্গীতের বিষয় ও সুরগত বৈচিত্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে নজরুল-বিশেষজ্ঞ আবদুল আজীজ আল্‌-আমান লিখেছেন,

গানগুলি এক গোত্রের নয়, বিভিন্ন শ্রেণীর। তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত–শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সংগীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, নারী জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, অন্যান্য ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত, শিশু সংগীত, নৃত্য-সংগীত, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালি, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরও নানা বর্ণের গান। বিভিন্ন বিদেশী সুরের আদলে রচিত গানের সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীকে অবলম্বন করে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গান এবং নতুন সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর উপর ভিত্তি করে লেখা ‘নবরাগ’ পর্যায়ের গানগুলি নজরুলের সাংগীতিক প্রতিভার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।[৩]

নজরুল সঙ্গীত সংকলন[উৎস সম্পাদনা]

নজরুল সঙ্গীতের স্বরলিপি গ্রন্থের প্রচ্ছদ চিত্র। নজরুল নিজেই স্বরলিপি করেছিলেন।

গানের মালা[উৎস সম্পাদনা]

৯৫ টি সংগীত সমৃদ্ধ গ্রন্থটি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর (কার্তিক ১৩৪১) প্রকাশ করেন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স। গ্রন্থটি উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল: “পরম স্নেহভাজন শ্রীমান অনিলকুমার দাস কল্যাণবরেষুকে”। ৪+৯৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থের মূল্য ছিল দেড় টাকা।

এই গ্রন্থ যে সকল গানে সমৃদ্ধ গ্রন্থটি সেগুলি হল :

  1. আমি সুন্দর নহি জানি
  2. আধো-আধো বোল
  3. না-ই পরিলে নোটন-খোঁপায়
  4. অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত দেহা
  5. ভুল করে যদি ভালোবেসে থাকি
  6. ঝরাফুল- বিছানো পথে এস
  7. প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
  8. আজ নিশীথে অভিসার তোমার পথে
  9. কার মঞ্জীর রিনিঝিনি বাজে
  10. নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
  11. বল্ রে তোরা বল্ ওরে ও আকাশ-ভার তারা
  12. বল্ সখি বল্ ওরে সরে যেতে বল্
  13. নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
  14. চম্পা পারুল যুথী টগর চামেলি
  15. দুর দ্বীপ-বাসিনী চিনি তোমারে চিনি
  16. মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে
  17. বকুল-বনের পাখি ডাকিয়া আর
  18. মনের রং লেগেছে বনের পলাশ
  19. আধখানা চাঁদ হাসিছে gআকাশে
  20. যবে সন্ধ্যাবেলায় প্রিয় তুলসী-তলায়
  21. আঁখি তোলো দানো করুণা
  22. মদির স্বপনে মম বন-ভবনে
  23. মুঠি মুঠি আবীর ও কে কাননে ছড়ায়
  24. বল্লরী-ভুজ-বন্ধন খোলো
  25. তব যাবার বেলা বলে যাও মনের কথা
  26. তরুণ অশান্ত কে বিরহী
  27. বরষা ঐ এল বরষ্য ঝরে বারি গগনে ঝুরুঝুরু
  28. আমি ময়নামতীর শাড়ি দেবো
  29. স্নিগ্ধ-শ্যাম-বেণী-বর্ণা এস মালবিকা
  30. মেঘ -মেদুর গগন কাঁদে হুতাশ পরন
  31. আমি অলস উদাস আনমনা
  32. কোয়েলা কুহু কুহু ডাকে
  33. তোমার হাতের সোনা রাখি আমার হাতে
  34. বাদলা-মেঘের বাদল-তালে ময়ূর নাচে
  35. কে দুরন্ত বাজাও ঝড়ের ব্যাকুল বাঁশি
  36. এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী
  37. দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ
  38. শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল
  39. দোলে প্রাণের কোলে প্রভুর নামের মালা
  40. শঙ্কাশূন্য লক্ষকণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ঐ
  41. চল্ রে চপল তরুণ-দল বাঁধন-হারা
  42. বীরদল আগে চল্
  43. জননী মোর জন্মভূমি
  44. তোমার পায়ে ; কে পরালো মুন্ডমালা
  45. নাচে রে মোর কালো মেয়ে
  46. মাতলো গগন-অঙ্গনে ঐ
  47. দেখে যা-রে রুদ্রাণী মা
  48. মহাকালের কোলে এসে গৌরী
  49. শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে
  50. জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী
  51. লুকোচুরি খেলতে হরি হার মেনেছে
  52. খর রৌদ্রের হোমানল জ্বালি
  53. শ্যামা তন্বী আমি মেঘ-বরণা
  54. মম আগমনে বাজে আগমনীর সানাই
  55. উত্তরীয় লুটায় আমার
  56. ওরে ও ¯্রাতের ফুল
  57. বুনো ফুলের করুণ সুবাস ঝুরে
  58. এল শ্যামল কিশোর
  59. এল এল রে বৈশাখী ঝড়
  60. ঘুমাও, ঘুমাও ! দেখিতে এসেছি
  61. কলঙ্ক আর জোৎস্নায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ
  62. শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়
  63. তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে
  64. রাত্রি শেষের যাত্রী আমি
  65. ফুলের মতন ফুল্ল মুখে
  66. ফিরে ফিরে কেন তারই স্মৃতি
  67. আঁধার রাতের তিমির দুলে আমার সামনে
  68. দশ হাতে ঐ দশ দিকে মা
  69. মা এসেছে মা এসেছে
  70. ঐ কাজল-কালো চোখ
  71. ও কালো বউ
  72. যেয়ো না আর যেয়ো না
  73. আগের মত আমের ডালে বোল ধরেছে
  74. তোর রূপে সই গাহন করে
  75. ঝড়-ঝঞ¦ার ওড়ে নিশান
  76. আমার প্রাণের দ্বারে ডাক দিয়ে কে যায়
  77. এল ঐ বনাস্তে পাগল বসন্ত
  78. সহসা কি গোল বাঁধালো পাপিয়া আর পিকে
  79. এস কল্যাণী, চির-আয়ুষ্মতী
  80. দাও শৌর্য দাও ধৈর্য হে উদার নাথ
  81. চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল
  82. রঙ্গিলা আপনি রাধা
  83. কুঙ্কুম আবীর ফাগের
  84. এল ফুল-দোল ওরে
  85. যাবার বেলায় ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল
  86. জাগো দুস্তর পথের নব-যাত্রী
  87. ডেকো না আর দূরের প্রিয়া
  88. ভেঙো না ভেঙো না ধ্যান
  89. যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম
  90. মোর বুক-ভরা ছিল আশা
  91. বনে মোর ফুল-ঝরার বেলা
  92. মিলন-রাতের মালা হব তোমার অলকে
  93. যায় ঝিল্মিল্ ঢেউ তুলে
  94. কাজরী গাহিয়া চল গোপ-ললনা
  95. এবং তরুণ-তমাল-বরণ এস শ্যামল আমার।

গীতি শতদল[উৎস সম্পাদনা]

এই গ্রন্থটির প্রকাশক ছিলেন ডি এম লাইব্রেরি। ৮+১০৪ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ছিল দেড় টাকা। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালের এপ্রিলে (১৩৪১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ)। নজরুল ইসলাম এই গ্রন্থের প্রারম্ভে ‘দুটি কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় লেখেন “গীতিশতদলে’র সমস্ত গানগুলিই গ্রামোফোন ও স্বদেশী মেগাফোন কোম্পানীর রেকর্ড়ে রেখাবদ্ধ হইয়া গিয়াছে। আমার বহু গীতি-শিল্পী বন্ধুর কল্যাণে ‘রেডিও’ প্রভৃতিতে গীত হওয়ায় এই গানগুলি ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছে। এই অবসরে তাঁহাদের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি।… আমার বুলবুল প্রভৃতি গানের বইয়ের মত “গীতিশতদল”-ও সকলকে আকর্ষণে সমর্থ হইলে নিজেকে ধন্য মনে করিব।”

এই গ্রন্থে মোট ১০১টি গান ছিল। যে গানগুলি স্থান পায় সেগুলি হল :

  1. শুকনো পাতার নূপুর পায়ে
  2. চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়
  3. ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা
  4. পলাশ ফুলের মউ পিয়ে
  5. এস বসন্তের রাজা হে আমার
  6. তুমি নন্দন-পথ-ভোলা
  7. তোমার ফুলের মতন মন
  8. হেসে হেসে কল্সি নাচাইয়া
  9. ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায়
  10. গত রজনীর কথা পড়ে মনে
  11. পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
  12. রহি রহি কেন আজো
  13. পিউ পিউ বোলে পাপিয়া
  14. চাঁদের পিয়ালাতে আজি
  15. এস শারদ প্রাতের পথিক
  16. মালঞ্চে আজ কাহার যাওয়া আসা
  17. সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
  18. আমার দেওয়া ব্যথা ভোলা
  19. হুল ফুটিয়ে গেলে শুধু
  20. গোধূলির রং ছড়ালে
  21. সকরুণ নয়নে চাহে
  22. বাজিছে বাঁশির কার
  23. বন-হরিণীর তব বাঁকা আঁখির
  24. রেশমি চূড়ির তালে
  25. সেই পুরানো সুরে আবার
  26. ধীরে যায় ফিরে ফিরে চায়
  27. পিয়াসী প্রাণ তারে চায়
  28. বেলা পড়ে এল
  29. এল ফুলের মহলে ভোমরা
  30. ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায়
  31. আজও ফোটেনি কুঞ্জে
  32. পলাশ মঞ্জরি পরায়ে দে লো
  33. এ ঘোর-শ্রাবণ-নিশি
  34. দিও ফুলদল বিছায়ে
  35. অবুঝ মোর আঁখি-বারি
  36. উচাটন মন ঘরে রয় না
  37. ফিরে গেছে সই
  38. ছাড় ছাড় আঁচল বঁধু
  39. কুল রাখ না রাখ
  40. ফিরিয়া এস এস হে
  41. আঁধি ঘুম-ঘুম
  42. সেদিনো প্রভাতে
  43. জাগো জাগো রে মুসাফির
  44. কত জনম যাবে
  45. হায় ঝরে যায়
  46. এ কোথায় আসিলে হায়
  47. ভুল করে আসিয়াছি
  48. ভোলো প্রিয় ভোলো ভোলো
  49. আমি যেদিন রইব না গো
  50. এলে যে গো চির-সাথী
  51. ও তুই যাস্নে রাই কিশোরী
  52. দুঃখ ক্লেশ শোক
  53. ভোলো অতীত-স্মৃতি
  54. চির-কিশোর মুরলীধর
  55. সাগর আমায় ডাক দিয়েছে
  56. ভালোবেসে অবশেষে
  57. এস নূপুর বাজাইয়া
  58. রাস-মাঞ্চাপরি দোলে মুরলীধর
  59. নাচিয়া নাচিয়া এস
  60. নাচে ঐ আনন্দে
  61. তোমারে কি দিয়া পূজি
  62. আমার নয়নে কৃষ্ণ
  63. মন লহ নিতি নাম
  64. তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি
  65. দাও দাও দরশন
  66. নাচিছে নট-নাথ
  67. বাজিয়ে বাঁশি মনের বনে
  68. বিজন গোঠে কে রাখাল
  69. আজি নন্দ দুলালের সাথে
  70. শোনো লো বাঁশিতে
  71. হেলে দূলে বাঁকা কানাইয়া
  72. মণি-মঞ্জীর বাজে
  73. ফিরে যা সখি ফিরে যা ঘরে
  74. আনন্দ দুলালী ব্রজবালার সনে
  75. গুঞ্জ-মালা গলে
  76. মোর মাধব শূন্য মাধবী কুঞ্জে
  77. ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার
  78. সখি যায়নি তো শ্যাম মথুরায়
  79. নমো নটনাথ
  80. ভবের এই পাশা খেলায়
  81. ভুবনে ভুবনে আজি
  82. অসুর- বাড়ির ফেরৎ এ মা
  83. আজি প্রথম মাধবী ফুটিল কুঞ্জে
  84. জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী
  85. হোরির রঙ লাগে
  86. বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু
  87. জাগো জাগো ! নব আলোকে
  88. পরান হরিয়াছিলে পাশরিয়া
  89. নবীন বসন্তের রানী তুমি
  90. আজি মিলন-বাসর
  91. ওরে হুলোরে তুই রাত বিরেতে
  92. নিয়ে কাদা মাটির তাল
  93. আজকে হোরি ও নাগরী
  94. আচ লাচনের লেগেচে যে গাঁদি
  95. চায়ের পিয়াসী পিপাসিত চিত আমারা চাতক দল
  96. গিন্নির ভাই গান গাহে
  97. নথ-দন্ত-বিহীন
  98. নমো নমঃ আবু আর হাবু
  99. এবং একে একে সব

বুলবুল[উৎস সম্পাদনা]

বিখ্যাত নজরুলগীতি সংকলন বুলবুল ১৫ নভেম্বর ১৯২৮ (আশ্বিন, ১৩৩৫) তারিখে (১ম সংস্করণ) প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ডি এম লাইব্রেরি, কলকাতা। সুরশিল্পী দিলীপ কুমার রায়কে এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল। সাধারণ সংস্করণ ও রাজ সংস্করণের মূল্য ছিল যথাক্রমে এক টাকা ও পাঁচ সিকা। গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে। ৪৯টি গান ছিল এই সংস্করণে।

এ গ্রন্থে সমাহৃত গানগুলো হলোঃ-

  1. বাগিচায় বুলবুলি তুই
  2. আমারে চোখ-ইশারায়
  3. বসিয়া বিজনে কেন একা মনে
  4. ভুলি কেমনে আজো যে মনে
  5. কেন কাঁদে পরান কী বেদনায়
  6. মৃদুল বায়ে বকুল-ছায়ে
  7. কে বিদেশী বন-উদাসী
  8. করুণ কেন অরুণ আঁখি
  9. এত জল ও-কাজল চোখে
  10. আসে বসন্ত ফুলবনে
  11. দুরন্ত বায়ু পুরবইয়াঁ
  12. চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না
  13. পরান-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়
  14. সখি জাগো,রজনী পোহায়
  15. নিশি ভোর হল জাগিয়া
  16. এ বাসি বাসরে আসিলে কে গো
  17. বসিয়া নদীকূলে এলোচুলে
  18. কেন দিলে এ কাঁটা যদি গো
  19. সখি, বলো বঁধুয়ারে নিরজনে
  20. নহে নহে প্রিয়, এ নয় আঁখি-জল
  21. এ আঁখি-জল, মোছ পিয়া
  22. কি হবে জানিয়া বল কেন জল নয়নে
  23. পরদেশী বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
  24. কেন উচাটন মন পরান এমন করে
  25. আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি
  26. আজি দোল-পূর্ণিমাতে দুলবি তোরা আয়
  27. রুমুঝুমু কে এলে নূপুর পায়
  28. আজি এ কুসুম-হার সহি কেমনে
  29. গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু
  30. হাজার তারার হার হয়ে গো দুলি
  31. অধীর অম্বরে শুরু-গরজন
  32. ঝরে ঝরঝর কোন্ গভীর-গোপন ধারা
  33. হৃদয় যত নিষেধ হানে
  34. শুকাল মিলন-মালা আমি তবে যাই
  35. স্মরণ-পারের ওগো প্রেয়ি
  36. গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে
  37. কোন শরতে পূর্ণিমা চাঁদ
  38. জাগিলে ‘পারুল’ কি গো
  39. চরণ ফেলি গো মরণছন্দে
  40. নমো যন্ত্রপতি
  41. পুরবের তরুণ অরুণ
  42. কে শিবসুন্দর শরৎ-চাঁদ-চুড়
  43. কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে
  44. কেন আন ফুল-ডোর
  45. কেমনে রাখি আঁখি-চাপিয়া
  46. কেন আসিলে যদি যাবে চলি
  47. সাজিয়াছ যোগী বল কার লাগি
  48. মুসাফির! মোছ্ এ আঁখি-জল
  49. এ নহে বিলাস বন্ধু

বুলবুল (২য় খন্ড)[উৎস সম্পাদনা]

১৩৫২ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (মে, ১৯৫৯) প্রমীলা নজরুল ইসলাম ১৬, রাজেন্দ্রলাল স্ট্রিট, কলিকাতা-৬, এই বুলবুল (২য় খন্ড) নামীয় সঙ্গীত গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। গ্রন্থটির পরিবেশক ছিলেন ডি এম লাইব্রেরি। মূল্য আড়াই টাকা। গ্রন্থটিতে গান ছিল ১০১টি। কবি-পত্নী প্রমীলা নজরুল ইসলাম প্রকাশিকার ভূমিকায় লেখেন, “কবির আধুনিক গানগুলি সংকলন করে “বুলবুল” (২য়) প্রকাশ করা হলো। তাড়াতাড়ি প্রকাশ করার জন্য ছাপায় কিছু ভুল থেকে গেছে। পরবর্তী সংস্করণে আশা করি কোনো ভুল থাকবে না। বইটির শেষ পৃষ্ঠায় কিছু সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। এই গানের বইটির আরেকটি বিশেষত্ব এই যে, এর মধ্যে কবির আধুনিক অপ্রকাশিত কতকগুলি গান আমরা দিতে পেরেছি। নজরুলগীতি যাঁরা ভালোবাসেন তাদের কাছে এই বইটি সমাদর পেলে, আমি আমার প্রথম প্রচেষ্টাকে সার্থক বলে মনে করবো।”[৪]

বুলবুল (২য় খন্ড)-এ গ্রন্থিত গানসমূহ হলো:

  1. বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে
  2. বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে
  3. যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
  4. আমি চিরতরে দুরে চলে যাব
  5. সবার কথা কইলে কবি
  6. ওরে ডেকে দে দে লো
  7. নয়ন-ভরা জল গো তোমার
  8. আমি চাঁদ নহি, চাঁদ নহি অভিশাপ
  9. ভুল করে যদি ভালবেসে থাকি
  10. আমি আছি বলে দুখ পাও তুমি
  11. আর অনুনয় করিবে না কেউ
  12. মোরা আর জনমে হংস-মিথুন
  13. গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
  14. গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙে যায়
  15. রূপের দীপালি-উৎসব আমি দেখেছি
  16. এবার যখন উঠবে সন্ধ্যাতারা – সাঁঝ আকাশে
  17. বলেছিলে, তুমি তীর্থে আসিবে
  18. ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবি রে
  19. নূরজাহান ! নূরজাহান
  20. রাজো বাঁশরি বাজো বাঁশরি
  21. বলরে তোরা ওরে ও আকাশ-ভরা তারা
  22. সেদিন ছিল কি গোধূলি-লগন
  23. মোর ভুলিবার সাধনায় কেন সাধ বাদ
  24. আমার ভুবন কান পেতে রয়
  25. আন গোলাপ-পানি
  26. কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
  27. প্রদীপ নিভায়ে দাও
  28. রেশমি রুমালে কবরী বাঁধি
  29. নিশিরাতে রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বাদল-নূপুর
  30. ভোরের ঝিলের জলে শালুক
  31. সন্ধ্যা নেমেছে আমার বিজন ঘরে
  32. আজো ফাল্গুনে বকুল কিংশুকের বনে
  33. যখন আমার গান ফুরাবে
  34. ওগো সুন্দর তুমি আসিবে বলিয়া বনপথে পড়ে ঝরি
  35. ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচ নেচে কে এল গো
  36. মনে পড়ে আজও সেই নারিকেল কুঞ্জ
  37. আমি পুরব দেশের পুরনারী
  38. তেমনি চাহিয়া আছে নিশীথের তারাগুলি
  39. নন্দন বন হতে কে গো ডাক মোরে আধ-নিশীথে
  40. শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
  41. কাবেরী নদী- জলে কে গো বালিকা
  42. বসন্ত মুখর আজি
  43. তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে তাকি প্রিয়
  44. তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী
  45. কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে
  46. বন্ধু, আজো মনে রে পড়ে
  47. ধর্মের পথে শহীদ যাহরা
  48. তুমি আমার সকালবেলার সুর
  49. আগের মতো আমের ডালে বোলে ধরেছে বউ
  50. তব মুখখানি খুঁজিয়া ফিরি গো
  51. মোর গানের কথা যেন আলোকলতা
  52. এই বিশ্বে আমার সবাই চেনা
  53. কত দূরে তুমি, ওগো আঁধারের সাথী
  54. অনেক ছিল বলার
  55. বন্ধু! দেখলে তোমায় বুকের মাঝে
  56. বন-বিহঙ্গ! যাও রে উড়ে
  57. এ-কুল ভাঙে ও-কুল গড়ে
  58. উজান বাওয়ার গান গো এবার
  59. যবে ভোরের কুন্দ-কলি মেলিবে আঁখি
  60. মোর স্বপ্নে যেন বাজিয়েছিলে করুণ রাগিণী
  61. আমি সন্ধ্যামালতী বন-ছায়া অঞ্চলে
  62. শাওন আসিল ফিরে ; সে ফিরে এল না
  63. বেদিয়া বেদিনী ছুটে আয়
  64. মোর প্রিয়া হবে, এস নারী
  65. ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি
  66. নীলাম্বরী শাড়ি পরি
  67. আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়
  68. আমায় নহে গো, ভালবাসা শুধু ভালবাস মোর গান
  69. দোলন-চাঁপা বনে দোলে
  70. জুঁই-কুঞ্জে বন-ভোমরা কেন গুঞ্জে গুন্গুন্
  71. মমতাজ! মমতাজ! তোমার তাজমহল
  72. আমি জানি তব মন, আমি বুঝি তব ভাষা
  73. স্বপ্নে দেখি একটি নুতন ঘর
  74. ছড়ায়ে বৃষ্টির বেলফুল
  75. রাঙা মাটির পথে লো মাদল বাজে
  76. রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে
  77. ওগো প্রিয়, তব গান
  78. কেমনে হইব পার হে প্রিয়
  79. সাপুড়িয়া রে! বাজাও কোথায় সাপ খেলানোর বাঁশি
  80. নদীর স্রোতে মালার কুসুম ভাসিয়ে দিলাম, প্রিয়
  81. শোক দিয়েছ তুমি হে নাথ
  82. হে অশান্তি মোর এস এস
  83. গান ভুলে যাই মুখ পানে চাই, সুন্দর হে
  84. মেঘলা নিশি-ভোরে
  85. “চোখ গেল” “চোখ গেল” কেন ডাকিস রে
  86. পদ্মার ঢেউ রে
  87. কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও, মালা. গাঁথ অকারণে
  88. আমি নহি বিদেশিনী
  89. মেঘ-মেদুর বরবায় কোথা তুমি
  90. নিরজন ফুলবনে এস পিয়া
  91. সেই মিঠে সুরে মাঠের বাঁশরি বাজে
  92. (তুমি) শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা
  93. গাঙে জোয়ার এল ফিরে, তুমি এলে কই
  94. রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্ ঝুম্
  95. নিশি-পবন। ফুলের দেশে যাও
  96. কোন সে সুদূর অশোক-কাননে বন্দিনী তুমি সীতা
  97. তব চলার পথে আমার গানের পুল ছড়িয়ে যাই গো
  98. শুকনো পাতার নূপুর বাজে দখিন বায়ে
  99. জানি, জানি প্রিয়, এ জীবনে মিটিবে না সাধ
  100. বঁধু তোমার আমার এই যে বিরহ
  101. এবং পঞ্চ প্রাণের প্রদীপ-শিখায়

গুল বাগিচা