দিভিনা কোম্মেদিয়া (ইতালীয়: Divina Commedia দান্তে কর্তৃক রচিত একটি সুদীর্ঘ মহাকাব্য। বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কাজগুলোর অন্যতম এই মহাকাব্যটি এর ইংরেজি অনুবাদ ডিভাইন কমেডি (ইংরেজি: The Divine Comedy) নামেই বিশ্বে সুপরিচিত। বাংলা ভাষা সহ পৃথিবীর অসংখ্য ভাষায় এ মহাকাব্য অনূদিত হয়েছে। এটি অদ্যাবধি ইতালিয় সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে পরিগণিত।[১][২]
দান্তের জন্ম ১২৬৫’র ১৪ মে থেকে ১৩ জুনের মধ্যে; তার অকস্মাৎ প্রয়াণ ১৩২১ খ্রিষ্টাব্দে। ১৩০৮ থেকে শুরু করে, তার মৃত্যুর (১৩২১) এক বছর আগে ১৩২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ মহাকাব্য লেখা হয়। এ কাব্যে পরকাল তথা মৃত্যুপরবর্তী জীবনের কাল্পনিক উপস্থাপন মধ্যযুগের মনস্তত্ত্বের প্রতীক। মধ্যযুগে পাশ্চাত্য গির্জাগুলো কীভাবে জীবনযাত্রা বিকশিত হয়েছিল তা দান্তের কবিতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটি ইতালির পশ্চিমের তুস্কান অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হয়েছে। তুস্কান ভাষাকে প্রমিত ইতালীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পেছনেও এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।[৩]
কাঠামো
লা দিভিনা কোম্মেদিয়া মহাকাব্যটি তিন পর্বে বিভক্ত যথা:— ইনফেরনো, পুরগাতোরিও এবং পারাদিসো। প্রতিটি পর্বে রয়েছে ৩৩টি সর্গ বা কান্তি (ইতালিয় ভাষায় কান্তির একক কান্তো)। তবে ইনফারনো পর্বে আছে ৩৪টি সর্গ। অবশ্য এটি মুখবন্ধ স্বরূপ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সর্বমোট ১০০টি কান্তি রয়েছে এ মহাকাব্যে।[৪] মহাকাব্যে পংক্তির সংখ্যা ১৪,২৩৩।
এ সাহিত্যকর্মে “তিন”—এর ব্যবহার অভিক্ষিপ্ত। সাথে সাথে, ছন্দ হিসেবেও তেরজা রিমা ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি লাইনেই রয়েছে ১১টি মাত্রা।
কাহিনী ও বিষয়বস্তু
খ্রিস্টান ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দান্তের নরক ভ্রমণ ও স্বর্গ গমনের কাহিনী এ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য।[৫] প্রকৃতপক্ষে এ কবিতায় স্রষ্টার দিকে আত্মার ভ্রমণের কথাই বলা হয়েছে।[৬] দান্তে মধ্যযুগের খ্রিস্টান ধর্মচিন্তা ও দর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন, বিশেষত থামিস্টিক দর্শন ও থমাস একিনাসের সুম্মা থিওলোজিকা।[৭] যার কারণে, “দিভিনা কোম্মেদিয়া”-কে “ছন্দে ছন্দে সুম্মা”(The Summa in verse)ডাকা হয়। [৮] দান্তের এ সাহিত্যকর্মে ভের্গিলকে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কারণ বিয়েত্রিচকে দেখানো হয়েছে ঐশ্বরিক জ্ঞান হিসেবে।[৯]
উত্তমপুরুষে লেখা এ কাব্যে দেখা যায় তিনটি ভিন্ন জগতে দান্তের ভ্রমণ। রোমান কবি ভের্গিলকে দেখা যায় তার নরক ও পুরিগাতোরিও ভ্রমণে নির্দেশক হিসেবে থাকতে; বিয়েত্রিচ, দান্তের প্রেমিকা, তাকে স্বর্গে নিয়ে যায়। বিয়েত্রিচ ছিলো ফ্লোরেন্স শহরের এক রমণী, যার সাথে দান্তোর শৈশবে দেখা হয়। সারাজীবনই দান্তে তার প্রেমে মগ্ন ছিলেন, যার কথা আসে তার লা ভিতা নুওভাতে আসে। [১০]
But already my desire and my will
were being turned like a wheel, all at one speed,
by the Love which moves the sun and the other stars.[১১]