সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স (মূল ইংরেজি নাম Syntactic Structures) ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যার লেখক মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী নোম চম্স্কি।[৫] বইটি ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। বইটিতে প্রথমবারের মত রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ নামক ধারণাটিকে উপস্থাপন করা হয়। বাক্যতাত্ত্বিক (অর্থাৎ বাক্যের কাঠামো সংক্রান্ত) গবেষণার ক্ষেত্রে চম্স্কি-প্রস্তাবিত এই পন্থাটি ছিল সম্পূর্ণ বিধিসম্মত (অর্থাৎ বিভিন্ন চিহ্ন, সূত্র ও তাদের নিপূণ ব্যবহারভিত্তিক)। এই পদ্ধতিটির ভিত্তিতে রয়েছে কিছু পদগুচ্ছ কাঠামো সূত্র। [টীকা ২] এই সূত্রগুলি একটি বাক্যকে একাধিক ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করে ফেলে। চম্স্কি এরপর এই সূত্রগুলিকে এক নতুন ধরনের সূত্রের সাথে সংযুক্ত করেন, যাদের নাম “রূপান্তর”। এই পদ্ধতিটি বিভিন্ন ধরনের বাক্যিক সংগঠন বা কাঠামো উৎপাদন করতে পারে। [৬] চম্স্কির লক্ষ্য হল এই সীমিত সংখ্যক সূত্রের গুচ্ছ ব্যবহার করে যেকোন প্রদত্ত মানবভাষার সমস্ত এবং কেবলমাত্র ব্যাকরণশুদ্ধ বাক্যগুলি “উৎপাদন” করা।[৭][টীকা ৩][৮]
সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স ছিল চম্স্কির প্রথম গ্রন্থ। এই একক রচনাটি আকারে ছোট, এর পৃষ্ঠাসংখ্যা একশ’র খানিকটা বেশি। চম্স্কি বইটি ভাষাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের জন্য রচনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সে পড়ানোর জন্য তিনি যে পাঠগুলি তৈরি করেন, সেগুলির উপর ভিত্তি করেই তিনি বইটি লেখেন।[টীকা ৪] বইটিতে লেখা একটি বহুচর্চিত উক্তি হল “কালার্লেস গ্রিন আইডিয়াজ স্লিপ ফিউরিয়াসলি” (Colorless green ideas sleep furiously) অর্থাৎ “বর্ণহীন সবুজ ধারণাগুলি প্রচন্ড রেগে ঘুমায়”।[৯] এই ইংরেজি বাক্যটির কোন পরিষ্কার অর্থ নেই। কিন্তু কেবল ব্যাকরণের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মাতৃভাষী ইংরেজি বক্তার কাছে এটিকে একটি শুদ্ধ বাক্য বলে মনে হয়। চম্স্কির কাছে তাই বাক্যতত্ত্বের গবেষণা শব্দার্থতত্ত্বের গবেষণা থেকে স্বাধীন একটি বিষয়।[১০][টীকা ৫]
চম্স্কি যখন সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স লেখেন, তখনও তিনি শিক্ষায়তনিক অঙ্গনে তেমন পরিচিত হয়ে ওঠেননি।[টীকা ৬] মুটোঁ নামেক একটি ক্ষুদ্র ওলন্দাজ প্রকাশনা সংস্থা বইটি বাজারে বের করে।[টীকা ৭] তা সত্ত্বেও এই সূক্ষ্ম, জটিল ও গভীর বিষয়বস্তুসমৃদ্ধ বইটি শুরুতে ব্যাপক সমাদর পায়। এমনকি তৎকালীন ভাষা বিষয়ক গবেষণার ঐতিহ্যে বইটিকে একটি অন্যতম সংযোজন হিসেবে স্বাগত জানানো হয়।[১১] [টীকা ৮] কিন্তু শীঘ্রই বইটির সাহসী নতুন ধারণাগুলির জন্য প্রতিষ্ঠিত ও বয়স্ক ভাষাবিজ্ঞানীরা এর নেতিবাচক সমালোচনা করতে শুরু করেন।[টীকা ৯] তাদের বিপরীতে তরুণ নবীন ভাষাবিজ্ঞানীরা চম্স্কির গবেষণাপদ্ধতিকে উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেন।[টীকা ১০] ফলে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে এসে ভাষাবিজ্ঞান শাস্ত্রের মোড় ঘুরে যায়। এরপর থেকে বাক্যতত্ত্বকে কেন্দ্রে রেখে ভাষার বিধিসম্মত তত্ত্ব নির্মাণের কাজ অনেক স্বাভাবিক একটি কাজে পরিণত হয়। ভাষা গবেষণার এই ধারাতে ভাষিক বক্তার আচরণের পরিবর্তে বক্তার মনের মাঝে ভাষার অবস্থানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।[টীকা ১১]
সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স ভাষাবিজ্ঞানের বাইরে জ্ঞানের বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশেষ করে দর্শন, মনোবিজ্ঞান এবং বোধনবিজ্ঞানসমূহের উপর বইটি গভীর প্রভাব ফেলে। এছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের উপরও বইটিতে বর্ণিত তত্ত্ব প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।[টীকা ১১] কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ চম্স্কির তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে ভাষাকে একটি আদর্শ সংশ্রয় বা ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করাটা ভুল। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন চমস্কির তত্ত্বে উপাত্ত সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া হয়নি।[টীকা ১২] এ সত্ত্বেও ২১শ শতকের শুরুতে এসে ভাষাবিজ্ঞানী ও অন্যান্য পর্যালোচকেরা উভয়েই বইটির প্রশংসা করেন। তারা বইটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।[৪][টীকা ১৩][১২]
বিষয়বস্তু
সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচার্স বইতে চম্স্কি ভাষাবিজ্ঞানগত কাঠামোর একটি বিধিসম্মত তত্ত্ব তৈরী করতে চেয়েছেন। তিনি সুস্পষ্ট সূত্র প্রয়োগ করে সুনির্দিষ্ট আদল (model) নির্মাণের উপর জোর দিয়েছেন।[১৩]
ব্যাকরণের গ্রহণযোগ্যতা
চমস্কি লিখেছেন যে তার মুখ্য চিন্তা ব্যাকরণের গ্রহণয়োগ্যতার সমস্যা নিয়ে। একটি ভাষার ব্যাকরণকে তিনি সেই ভাষার একটি সঠিক তত্ত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। ভাষাবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যকে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কর্মপদ্ধতির সমান্তরালে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, যে কোনও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কিছু সংখ্যক পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। সেই তত্ত্ব ওই পর্যবেক্ষণগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে এবং নতুন ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করে। এই দুটি কাজই করা হয় কিছু অনুমিতিনির্ভর সংগঠন (Hypothetical construct হাইপোথেটিক্যাল কনস্ট্রাক্ট) (যেমন পদার্থবিজ্ঞানে, ভর, ইলেক্ট্রন, ইত্যাদি) দ্বারা কিছু সাধারণ সূত্র গঠনের মাধ্যমে। সেইরকম, ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণ কিছু সীমিত উচ্চারণের (পর্যবেক্ষণ) উপর নির্ভর করে তৈরী এবং এতে ইংরেজির কিছু বিশেষ ধ্বনিমূল (ফোনিম বা ধ্বনিসমষ্টি), পদসমষ্টি, বাক্য ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকরণগত নিয়মাবলি (সূত্র) থাকবে। এই নিয়মগুলি যেমন সেই ভাষায় ব্যবহৃত বাক্যগুলির পারস্পরিক গঠনগত সম্পর্ক প্রকাশ করবে, তেমনি অসীম বা অর্নিদিষ্ট সংখ্যক বাক্য যা এখনও উচ্চারিত হয়নি সেগুলোরও ভবিষ্যদ্বাণী করবে। কোন একটি ভাষায় ব্যবহৃত সসীম উচ্চারণগুলিকে তিনি পর্যবেক্ষণের সাথে তুলনা করেছেন এবং ব্যাকরণিক নিয়মগুলিকে সূত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যে সুত্রগুলি ধ্বনিমূল, পদসমষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন অনুমিতিনির্ভর সংগঠনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়।[১৪]
চমস্কির মতে ব্যাকরণের গ্রহণয়োগ্যতার জন্য প্রয়োজন বাহ্যিক পর্যাপ্ততা, সাধারণীকরণ এবং এরকম আরও কিছু শর্তাবলী পূরণ করা। বাহ্যিক পর্যাপ্ততার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন যে উপযুক্ত ব্যাকরণের দ্বারা উৎপাদিত বাক্যগুলিকে অবশ্যই সেই ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহারকারী (নেটিভ স্পিকার) -দের কাছে গ্রহণোপযোগী হতে হবে। সাধারণীকরণ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যে, কোন ভাষার ব্যাকরণ একটি নির্দিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানভিত্তিক পরিকাঠামোর অনুসারে হবে, যেখানে ফোনেম এবং ফ্রেজ কে কোনো নির্দিষ্ট ভাষার উপর নির্ভর না করেই সংজ্ঞায়িত করা হবে,[১৪] অর্থাৎ ব্যাকরণকে ভাষামুক্ত স্বনির্ভর হতে হবে।
কোন এক ভাষার লেখা বা উচ্চারণ সমষ্টির জন্য কোন ব্যাকরণটি বেশি ভাল – এই প্রশ্নের উত্তরে চমস্কি বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন বিচার পদ্ধতিকে (যা উপর্যুক্ত শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে সবথেকে সম্ভাবনাময় উপযোগী ব্যাকরণটি নির্ধারণ করে)। তিনি স্ট্রাকচারাল লিঙ্গুইস্টিক বা গঠনমূলক ভাষাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত ডিসকভারি প্রসেডিয়র অর্থাৎ আবিষ্কার পদ্ধতি (যা সয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভাষার লেখাসমষ্টি থেকে সঠিক ব্যাকরণটি বা গ্রামারটি উৎপাদন বা সৃষ্টি করে) অথবা ডিসিশন প্রসেডিয়র অর্থাৎ সিদ্ধান্ত পদ্ধতি (যা একটি ভাষাতে প্রাপ্ত প্রতিযোগী ব্যাকরণসমূহের মধ্যে থেকে সয়ংক্রিয়ভাবে সবথেকে কার্যকরী গ্রামারটিকে চিহ্নিত করে) – এই দুই পদ্ধতির থেকে বিচার পদ্ধতিকে বেশি উপযোগী মনে করেন।[১৫]
ব্যাকরণসম্মত বাক্য
চমস্কির মতে একটি ভাষা L-র ভাষাবিজ্ঞানভিত্তিক বা লিঙ্গুইস্টিক বিশ্লেষণের মূল উদ্দেশ্য হল ওই ভাষার গ্রামাটিক্যাল সিকোয়েন্স বা ব্যাকরণসম্মত বাক্যসমুহকে অগ্রামাটিক্যাল বাক্য থেকে আলাদা করা এবং ওই গ্রামাটিক্যাল বাক্যগুলিকে নিরীক্ষণ করা। গ্রামাটিক্যাল বলতে তিনি নেটিভ স্পিকারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকেই নির্দেশ করেছেন। কোন একটি ভাষা L-এর ব্যাকরণকে তিনি এমন একটি যন্ত্র বলেছেন যা L-এর সমস্ত গ্রামাটিক্যাল পদবিন্যাস বা সিকোয়েন্সগুলি উৎপাদন করবে এবং অগ্রামাটিক্যাল কিছু তৈরী করবে না ।[১৬] গ্রামাটিক্যালিটির ভিত্তি নিয়ে আরও বিশ্লেষণ করতে গিয়ে চমস্কি তিনটি উপায়ের কথা বলেছেন যেগুলি একটি বাক্যের গ্রামাটিক্যাল হওয়া বা না হওয়া নির্ধারণ করতে পারে না, যথা, ১) বাক্যটি লেখাসামগ্রীতে পাওয়া যায়, ২) বাক্যটি অর্থপূর্ণ এবং ৩) বাক্যটি পরিসংখ্যানগত ভাবে সম্ভাব্য। উদাহরণ হিসেবে তিনি একটি বাক্য উল্লেখ করেছেন, কালারলেস গ্রীন আইডিয়াস স্লিপ ফিউরিয়াসলি, যা গ্রামাটিক্যাল অথচ আগে কোন লেখাতে পাওয়া যায় নি, বাক্যটি অর্থপূর্ণ নয় এবং পরিসংখ্যানগতভাবে সম্ভাব্যও নয়।[১৭]
চমস্কি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ব্যাকরণ হল সয়ংসম্পূর্ণ ও অর্থ থেকে স্বাধীন, এবং সম্ভাবনাভিত্তিক আদলগুলি বাক্যিক গঠনপ্রণালীর মূল সমস্যাগুলিতে তেমন কোনও আলোকপাত করে না।[১৮]
ব্যাকরণের আদল
যদি ধরে নেওয়া যায় যে, একটি ভাষার এক গুচ্ছ ব্যাকরণসম্মত বাক্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে এরপর চমস্কি যেটা করেন সেটা হল তিনি সেই যন্ত্র বা আদল গঠন করার চেষ্টা করেন যা ওই উচ্চারণ বা কথাগুলোকে যথার্থভাবে বর্ণনা করতে পারে। [১৯] এর উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে আলোচনা করেছেন সসীম অবস্থা ব্যাকরণ (ফাইনাইট স্টেট গ্রামার) নিয়ে, যেটি একটি যোগাযোগ তত্ত্বভিত্তিক (কমিউনিকেশন থিওরিটিক) আদল, যেখানে ভাষা একটি সসীম অবস্থা মার্কভ প্রক্রিয়া (ফাইনাইট স্টেট মার্কভ প্রসেস), যেখানে ভাষার বাক্যগঠন প্রক্রিয়াকে একটি যন্ত্রের এক অবস্থা থেকে পরবর্তী অবস্থাতে গমনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়।[২০] তারপর তিনি আলোচনা করেছেন ফ্রেজ স্ট্রাকচার গ্রামার বা পদবিন্যাসের গঠনসম্পর্কিত ব্যাকরণ নিয়ে, যে মডেলটি বাক্যের পদবিভাজনের (কনস্টিটুয়েন্ট অ্যানালিসিসের) উপর ভিত্তি করে বানানো। [২১] তিনি দেখান যে দুটো আদলই ভাষাবিশ্লেষণের জন্য অপর্যাপ্ত এবং তিনি বাক্যতত্ত্বের উপর তার নিজস্ব একটি বিধিসম্মত নিয়মনিষ্ঠ তত্ত্ব (ফর্মাল থিওরি) নিবেদন করেন [১৪], যাকে বলা হয় রূপান্তমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ (ট্টান্সফর্মেশনাল জেনেরেটিভ গ্রামার), যা ফ্রেজ স্ট্রাকচার বা পদবিন্যাস গঠন ও ব্যাকরণগত রূপান্তরের (গ্রামাটিক্যাল ট্রান্সফর্মেশন) সম্মিলন।
যেকোন রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের (ট্রান্সফর্মেশনাল গ্রামারের) তিনটি সহজাত ব্যবস্থা আছে, যথা ফ্রেজ স্ট্রাকচার নিয়মাবলী, রূপান্তরমূলক (ট্রান্সফর্মেশনাল) নিয়মাবলী এবং রূপধ্বনিভিত্তিক (মরফোফোনেমিক) নিয়মাবলী। ফ্রেজ স্ট্রাকচার নিয়মাবলী ব্যবহার করা হয় ব্যাকরণগত শ্রেণী বা গ্রামাটিক্যাল ক্যাটেগরি সম্প্রসারনের জন্য ও প্রতিস্থাপনের জন্য। এগুলির প্রয়োগের ফলে এক সারি মরফিম (পদ, ওয়ার্ড) তৈরী হয়। একটি ট্রান্সফর্মেশনাল বা রূপান্তরমূলক নিয়ম একসারি মরফিম ও তাদের মধ্যবর্তী কাঠামোর উপর কাজ করে এবং সেটিকে একটি নতুন সারিতে ও নতুন কাঠামোতে রূপান্তরিত করে। এটি মূল সারিটির পুনর্বিন্যাস করতে পারে অথবা কোন মরফিম যুক্ত বা বিযুক্ত করতে পারে। রূপান্তরমূলক নিয়ম দুধরনের হয়, অবলিগেটরি বা বাধ্যতামূলক এবং অপশনাল বা ঐচ্ছিক। বাধ্যতামূলক রূপান্তরমূলক নিয়ম যখন ফ্রেজ স্ট্রাকচারের প্রান্তিক বা অন্তিম মরফিম সারি বা টারমিনাল স্ট্রিংগুলিতে[২২] প্রয়োগ করা হয় তখন সেই ভাষার কার্নেল সমূহ তৈরি হয়, যেগুলি সহজ, অ্যাকটিভ বা কর্ত্তৃবাচক, ঘোষণামূলক বা ডীক্লেরাটিভ এবং সম্মতিবাচক হ্যাঁ-সূচক বা অ্যাফার্মেটিভ বাক্য। জটিল, প্যাসিভ বা কর্মবাচক, নেতিবাচক ও প্রশ্নোবাচক বাক্য গঠন করতে গেলে এক বা একাধিক ঐচ্ছিক রূপান্তরমূলক নিয়ম একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে কার্নেল বাক্যগুলির উপর প্রয়োগ করতে হবে। সবশেষে, রূপান্তমুলক নিয়ম প্রয়োগের পরে প্রাপ্ত পদসমষ্টি বা মরফিম সারিকে মরফোফোনেমিক নিয়মাবলীর দ্বার একসারি ফোনেম(ভাষার ধ্বনিতত্ত্বের মূলগত উপাদান)-এ পরিবর্তিত করা হয়। [২৩]
সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচারসে চমস্কি জেনেরটিভ বা উৎপাদনশীল বা সৃষ্টিশীল নামে একটি নতুন শব্দের প্রবর্তণ করেছেন এবং এটিকে ব্যবহার করেছেন বিশেষ প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। যখন চমস্কি বলেন যে একটি ভাষার এক গুচ্ছ সীমিত নিয়মাবলী অসীম বাক্যসমূহ জেনারেট বা সৃষ্টি করবে তখন তিনি আসলে বলতে চান যে ওই নিয়মগুলি ওই ভাষার প্রাপ্ত (বর্তমান) ও অপ্রাপ্ত (ভবিষ্যতে প্রাপ্য) সমস্ত বাক্যসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ গঠনগত বর্ণনা দেবে।[১৪]