আহমদ জাইনি দাহলান (আরবি: أحمد زَيْني دَحْلان) (১৮১৬-১৮৮৬) ছিলেন মক্কার শাফিঈ মাযহাবের প্রধান মুফতি,[২][৩] ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের হেজাজ অঞ্চলে শায়খুল ইসলাম (উসমানীয় এখতিয়ারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ),[৪] এবং ইমাম আল-হারামাইন (দুটি পবিত্র শহর, মক্কা ও মদিনার ইমাম),[৫] সেইসাথে একজন ঐতিহাসিক ও আশ’আরি ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনি ওয়াহাবিবাদের চরম সমালোচনা এবং সুফিবাদের (অতীন্দ্রিয়বাদ) প্রতি তার প্রবণতার জন্য পরিচিত ছিলেন।[৬] ওয়াহাবি প্রভাবের বিরুদ্ধে তার গ্রন্থে দাহলান সুফিবাদকে ইসলামি অনুশীলনের একটি আইনি ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্পষ্টভাবে দেখান – যার মধ্যে রয়েছে তাওয়াসসুল (মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা), তাবাররুক (ব্যক্তি বা জিনিসের মাধ্যমে দোয়া চাওয়া) এবং জিয়ারাত আল-কুবুর (মাজার ও কবর জিয়ারত)।[৭][৮][৯]
তিনি ছিলেন আবদুল কাদের জিলানীর বংশধর। তিনি ইতিহাস, ফিকহ ও সাধারণভাবে ইসলামি বিজ্ঞানের উপর অসংখ্য গ্রন্থ লিখেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশ করেছেন।
জন্ম
তিনি ১২৩১ বা ১২৩২ হিজরি = ১৮১৬ বা ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।[১০]
শিক্ষক
তিনি আহমদ আল-মারজুকি আল-মালিকি আল-মক্কীর (আরবি: أحمد المرزوقي المالكي المكي) অধীনে অধ্যয়ন করেন।[১১]
ছাত্র
তার ছাত্রদের সংখ্যা এত বেশি যে, তার পরে এমন একজন আলেম খুঁজে পাওয়া বিরল, যার বর্ণনার শৃঙ্খলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়না। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন হুসাইন বিন আলী, মক্কার শরীফ যিনি তার থেকে কুরআন অধ্যয়ন করেছিলেন ও মুখস্থ করেছেন, ইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরী বেরলভী,[১২] খলিল আহমদ সাহারানপুরি,[১৩] শেখ মোস্তফা, উসমান বিন ইয়াহিয়া, আরশাদ থাভিল আল-বানতানি, মুহাম্মদ আমরুল্লাহ এবং আহমদ বিন হাসান আল আত্তাস।[১৪]
কর্ম
তিনি এমন এক যুগে লিখতেন এবং শিক্ষা দিতেন যখন মক্কায় প্রথম ছাপাখানা আসে, দাহলান তার অনুগত ছাত্রদের মাধ্যমে সালাফিবাদের প্রতি তার চ্যালেঞ্জগুলি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। উদাহরণস্বরূপ, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ত্রৈমাসিকে ওয়াহাবিদের শাসনামলে মক্কায় তাদের নিয়ে আসা দুর্দশার রূপরেখা নিয়ে একটি পুস্তিকা লিখেছেন, ফিতনাত আল- ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: فتنة الوهابية, অনুবাদ ‘ওয়াহাবি ফিতনা‘), এবং সম্পূর্ণ ওয়াহাবি মতবাদ ও অনুশীলনকে খণ্ডন করে একটি গবেষণা সেটি হল আল-দুরার আল-সানিয়্যাহ ফি আল-রাদ্দ ‘আলা আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: الدرر السَنِيَّة فى الرد على الوهابية, অনুবাদ ‘The Pure Pearls in Answering the Wahhabis’)।[১৫]
নিম্নে তার প্রকাশিত কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হল:[১৬]
- ফিতনাত আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: فتنة الوهابية)
- আল-দুরার আল-সানিয়্যাহ ফি আল-রাদ্দ আলা আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: الدرر السَنِيَّة فى الرد على الوهابية)
- খুলাসাত আল-কালাম ফি বায়ান উমারা’ আল-বালাদ আল-হারাম (আরবি: خلاصة الكلام في بيان أمراء البلد الحرام)
- আল-ফুতুহাত আল-ইসলামিয়াহ বা’দা মুদিয় আল-ফুতুহাত আল-নবভীয়্যাহ (আরবি: الفتوحات الإسلامية بعد مضي الفتوحات النبوية)
- ইবনে আজুরুম রচিত শারহ আল-আজুরুমিয়াহ (আরবি: شرح الأجرومية)
- ইবনে মালিক রচিত শারহ আল-আলফিয়্যাহ (আরবি: شرح الألفية)
- আল-গাজ্জালি রচিত (তানবীহ আল-গাফিলিন, মুখতাসার মিনহাজ আল-আবিদিন, আরবি: تنبيه الغافلين: مختصر منهاج العابدين)
মৃত্যু
তিনি ১৩০৪ হিজরির মহররম মাসে = ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।[১৭]