আরামীয় লিপি

প্রাচীন আরামাইক লিপি ফিনিশীয় লিপি থেকে উৎপত্তি লাভ করে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতক থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। তখন আরামাইক ভাষা লিখতে এটি ব্যবহৃত হয় এবং হিব্রু ভাষা লেখার জন্য ব্যবহৃত পালেও-হিব্রু লিপিকে প্রতিস্থাপিত করে এটি। সব বর্ণই ব্যঞ্জনবর্ণের প্রতিনিধিত্ব করে তবে কিছু বর্ণ দীর্ঘ স্বরবর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 আরামাইক বর্ণমালা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের লেখনি ব্যবস্থার মূলে রয়েছে এটি। এছাড়াও আরামাইক লিপি অনেক অ-চীনা কেন্দ্রীয় ও পূর্ব এশিয়ার লেখার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে অথবা অভিযোজিত হয়েছে। ব্যাপক ব্যবহারের জন্য এটি লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ও সরকারি ভাষার লিপিতে পরিণত হয় নতুন অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যে ও তার উত্তরাধিকারী আখমেনীয় সাম্রাজ্যে। আধুনিক হিব্রু বর্ণমালা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর আরামাইক লিপির সাথে সম্পর্ক বহন করে আসছে। অধিকাংশ বর্ণের আকারে মিল লক্ষ্য করা করা যায়।

লিখন পদ্ধতিতে ব্যঞ্জনবর্ণ নির্দেশিত হয় কিন্তু বেশিরভাগ স্বরবর্ণ নির্দেশিত হয় না(আরামাইকের মত) অথবা তাদেরকে ডায়াক্রিটিক্যাল চিহ্ন দিয়ে নির্দেশ করা হয় যাকে পিটার টি ড্যানিয়েল ‘আবজাদ’ বলে অভিহিত করেন। গ্রিক বর্ণমালা স্বরবর্ণগুলোকে আরো সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিনিধিত্ব করে যা আরামাইক করে নি।

ইতিহাস

উৎপত্তি

দ্বিভাষিক গ্রিক এবং আরামাইক শিলালিপি মৌর্য সম্রাট অশোক  কর্তৃক, কান্দাহার, আফগানিস্তান , খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী

প্রাচীনকালেরর শিলালিপি থেকে বোঝা গেছে আরামাইক ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হতো ফিনিশীয় বর্ণমালা ।[১] সময়ের সাথে সাথে বর্ণমালা বিকশিত হওয়ার ছক নিচে দেখানো হয়েছে। আরামাইক ভাষা ধীরে ধীরে  Lingua Franca হয়ে ওঠে। এভাবে আরামাইক লিপি সারা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং আসিরীয় কিউনিফর্ম লিপিকে প্রতিস্থাপন করে হয়ে ওঠে উদীয়মান লেখার পদ্ধতি।

আখেমেনীয় যুগে

প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীতে, দারাউসের অধীনে ফার্সিদের আখেমেনীয় বিজয়ের পথ ধরে মেসোপটেমিয়ায় বিজয়ের পর, ইরান প্রাচীন আরামাইক লিপিকে গ্রহণ করে কারণ ফার্সি সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন অঞ্চলের জাতির সাথে লিখিত যোগাযোগ করতে হতো। এটি একটি একক সরকারি ভাষায় পরিণত হয় যা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের ভাষা এবং আখমেনীয় আরামাইক হিসেবে অভিহিত হয়।      [২]

ইম্পেরিয়াল আরামাইক ছিল অত্যন্ত আদর্শমানের; এর বনানরীতি ছিল কথ্যভাষা নির্ভর নয় বরং ঐতিহ্য নির্ভর এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রাচীন ফার্সি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। আরামাইক বর্ণ তখন প্রধান দুটি শৈলীতে বিভক্ত হয়ে যায়, একটি “পাথুরে” শৈলী যেটি পাথরের পৃষ্ঠতলে লিখিত হতো, অপরটি “জড়ানো” শৈলী যা পাথুরে শৈলীকে বেশি রক্ষণশীল করে তোলে (এটির সাথে প্রাচীন আরামাইক ও ফিনিশীয় লিপির সাদৃশ্য ছিল)। দুটিই আখমেনীয় ফার্সি যুগে । যদিও জড়ানো লেখাগুলো পাথরের উপর অটল ছিল তবু এগুলো ৩য় শতকে (বিসি) লুকানোই ছিল। 

খাড়াভাবে বসানো পাথরের খণ্ডে সাল্ম দেবতার উদ্দেশ্যে লেখা আরামাইক লিপির প্রার্থনা। বেলেপাথর, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক। চার্লস হবার তায়মাতে খুঁজে পান এটিকে ১৮৮৪সালে। এখন এটি ল্যুভরে আছে।

আরামাইক থেকে উৎপন্ন লিপিসমূহ

যেহেতু ফিনিশীয় থেকে আরামাইক বিবর্তিত হয় এক ধীর প্রক্রিয়ায় তাই বিশ্বের লিপিগুলো ফিনিশীয় থেকে সরাসরি বিবর্তিত হয়েছে অথবা আরামাইক দ্বারা ফিনিশীয় থেকে কিছুটা কৃত্রিম হয়ে বিবর্তিত হয়েছে। সাধারণত ভূমধ্য অঞ্চলের লিপিগুলো (আনাতোলিয়া, গ্রিস, ইতালি) ফিনিশীয় হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে, বিবর্তিত হয় ৮ম শতকে (বিসিই), পূর্বাঞ্চলের লিপিগুলো (লেভ্যান্ট, ইরান, মধ্য এশিয়া ও ভারত) আরামাইক থেকে উদ্ভূত স্বীকৃতি পেয়েছে, বিবর্তিত হয় ৬ষ্ঠ শতকে (বিসিই) আখমেনীয় সাম্রাজ্যের আরামাইক লিপি থেকে।

হিব্রু ও নাবাতাইন লিপি যেহেতু রোমান যুগে বিকাশলাভ করে তাই এগুলো আরামাইক সাম্রাজ্যের লিপি থেকে কিছুটা বদলে গেছিল।

একটি জড়ানো হিব্রু ধরনের লেখার উদ্ভব হয়েছিল কিন্তু এটি আর টিকে থাকতে পারে নি। অন্যদিকে নাবাতাইন লিপি জড়িয়ে লেখায় উন্নতি সাধন করে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি আরবী লেখার আদর্শ ধরনে রূপন্তরিত হয়। আরবী লিপি ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে।

আরামাইক লিপির জড়ানো শৈলীর বিকাশ সিরীয়, পালমিরিন ও মান্দাইক লিপি তৈরিতে সাহায্য করে। এই লিপিগুলো মধ্য এশিয়ার কিছু লিপি যেমন সোগদীয় ও মঙ্গোলীয় লিপির ভিত্তি গড়ে দেয়।

প্রাচীন তুর্কি লিপি স্বাভাবিকভাবেই আরামাইক থেকে বিবর্তিত এটা স্বীকৃতি পায়, বিশেষভাবে যদি হয় তবে পাহলাবি অথবা সোগদীয় (ভি. থমসেনের মতে), অথবা সম্ভবত খরোষ্ঠী দ্বারা। (সিএফ., আইজাক শিলালিপি)।

আরামাইককে ব্রাহ্মীলিপির অতি সম্ভাব্য উৎস বিবেচনা করা হয়, যেটি দেবনাগরীসহ ব্রাহ্মী লিপি পরিবারের পূর্বপুরুষ।

আরামাইক বর্ণমালা

আজকে, বাইবেলের আরামাইক, ইহুদিদের নিও-আরামাইক উপভাষা ও আরামাইক ভাষায় লিখিত ধর্মীয় আইন গ্রন্থ হিব্রু বর্ণমালায় লিখিত হয়েছে। সিরীয় ও খ্রিস্টান নিও-আরামাইক উপভাষাগুলো সিরীয় বর্ণমালায়। মান্দাইক ভাষা মান্দাইক বর্ণমালায় লিখিত আছে। যেহেতু আরামাইক ও শাস্ত্রীয় হিব্রু দেখতে প্রায় এক রকম তাই আরামাইক লিপি আদর্শ হিব্রুর সাথে মিশে পাণ্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

বর্ণের নামআরামাইক লেখায় ব্যবহারবর্ণসমোচ্চারিত বর্ণ‌আইপিএ
সিরীয় লিপিসাম্রাজীয় আরামাইক লিপিহিব্রুআরবীব্রাহ্মীনাবাতায়েনখরোষ্ঠী
Ālap𐡀אا/ʔ/; /aː/, /eː/
Bēth𐡁בب/b/, /v/
Gāmal𐡂גج/ɡ/, /ɣ/
Dālath𐡃דد،ذ/ð/, /d/
𐡄הه??/h/
Waw𐡅וو/w/; /oː/, /uː/
Zain𐡆זز??/z/
Ḥēth𐡇חح،خ??/ħ/ /χ~x/
Ṭēth𐡈טط،ظemphatic /tˤ/
Yodh𐡉יي/j/; /iː/, /eː/
Kāp𐡊כ ךك/k/, /x/
Lāmadh𐡋לل/l/
Mem𐡌מ םم/m/
Nun𐡍נ ןن/n/
Semkath𐡎סس/s/
ʿĒ𐡏עع، غ??/ʕ/
𐡐פ ףف/p/, /f/
Ṣādhē, 𐡑צ ץص، ضemphatic /sˤ/
Qop𐡒קق/q/
Rēsh𐡓רر/r/
Shin𐡔שش/ʃ/
Taw𐡕תت، ث/t/, /θ/

ইউনিকোড

সিরীয় আরামাইক বর্ণমালাকে ১৯৯৯সালে ইউনিকোড আদর্শ সংস্করণ ৩.০ তে যোগ করা হয়।

সিরীয় পূর্ণরূপ (ঊর্ধ্বরেখার একটি রূপ) বিশেষ নিয়ন্ত্রক চিহ্ন “সিরীয় পূর্ণরূপ চিহ্ন(U+070F)” কে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। সিরীয় আরামাইকের ইউনিকোড ব্লক হচ্ছে U+0700 থেকে U+074F:

সাম্রাজ্যীয় আরামাইক বর্ণমালা ২০০৯সালের অক্টোবরে ইউনিকোড আদর্শ সংস্করণ ৫.২তে যুক্ত করা হয়েছে।

সাম্রাজ্যীয় আরামাইক লিপির ইউনিকোড ব্লক হচ্ছে U+10840 থেকে U+1085F: