আরাওয়াক (আরাহুয়াক, মাইপুরে আরাওয়াক), বা মেইপুরীয় ভাষাসমূহ একটি ভাষা পরিবার যেটি প্রাচীন দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল। আরাওয়াকরা মধ্য আমেরিকা এবং বর্তমানের বাহামা দ্বীপপুঞ্জ সহ ক্যারিবীয় এবং আটলান্টিকের বৃহত্তর এন্টিলিসে ছড়িয়ে পরে। শুধুমাত্র বর্তমানের ইকুয়েডর, উরুগুয়ে, এবং চিলিতে আরাকান ভাষার কথা বলে মতো মানুষ ছিল না। মেইপুরীয় একটি কল্পিত বৃহৎ-আরাওয়াক গোষ্ঠীর অন্যান্য ভাষা পরিবারের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
মেইপুরে নামটি দিয়েছিলেন ফিলিপ্পো এস গিলিজ, ১৭৮২ সালে, ভেনেজুয়েলার মেইপুরে ভাষা অনুসারে। প্রায় এক শতাব্দী পরে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরাওয়াক ভাষার উপর ভিত্তি করে বর্তমানের নামটি রাখা হয়। উত্তর আমেরিকার পন্ডিতদের বৃহৎ-আরাওয়াক ভাষাগোষ্ঠির প্রস্তাবের আগে অবধি আরাওয়াক শব্দটিই প্রধান্য পেয়েছিল। এরপর মেইপুরীয় নামটি মূল পরিবারের জন্য পুনরুত্থিত হয়েছিল।
ভৌগোলিক বন্টন
আমেরিকাতে ভাষাভাষির সংখ্যা অনুসারে আরাওয়াক বৃহত্তম ভাষা পরিবার। ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকা অঞ্চলে, পেরু ও বলিভিয়ার মধ্য আন্দিজ পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলীয় ঢাল বরাবর, উত্তর দিকে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূলের সুরিনাম, গায়ানা, ফরাসি গায়ানা, ভেনেজুয়েলা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং কলম্বিয়া অঞ্চল থেকে উত্তরদিকে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, বেলিজ এবং গুয়াতেমালা পর্যন্ত আরাওয়াক ভাষাগুলি ব্যবহৃত হয়।[২] আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতেও এই ভাষাগুলির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
আরাওয়াক ভাষীরা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে চলে যান এবং বৃহত্তর অ্যান্টিলিস এবং বাহামাকে বাসভূমি করেন। সম্ভবত উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঞ্চলের কিছু কুসাবো এবং কঙ্গারী জাতির বিলুপ্ত ভাষাগুলি এই পরিবারের সদস্য ছিলো।[৩]
তাইনো ভাষা, যেটিকে সাধারণভাবে দ্বীপ আরাওয়াক বলা হয়, সেটি কিউবা, হিসপানিয়োলা, পুয়ের্তো রিকো, জ্যামাইকা, এবং বাহামা দ্বীপপুঞ্জগুলিতে ব্যবহৃত হতো। কয়েকটি তাইনো শব্দ এখনও এই দ্বীপগুলিতে ইংরেজি বা স্পেনীয় ভাষী বংশধরদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। তাইনো ভাষাটি স্বল্প পরিমাণে প্রত্যয়িত ছিল কিন্তু আরাওয়াক পরিবারের মধ্যে তার শ্রেণীবদ্ধকরণ অবিতর্কিত। ভাল সাক্ষ্যপ্রাপ্ত আরাওয়াক ভাষার মধ্যে তাইনোর নিকটতম আত্মীয় মনে হয় কলম্বিয়ায় ব্যবহৃত গোয়াহিরো ভাষা।
গারিফুনা (বা কৃষ্ণ ক্যারিব) দ্বীপগুলি থেকে উদ্ভূত আরেকটি আকর্ষণীয় আরাওয়াক ভাষা। এটি মিশ্র আরাওয়াক, ক্যারিব এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের মধ্যে জোরপূর্বক অভিবাসনের ফলে বিকশিত হয়েছিল।[৪] হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা এবং বেলিজে এই ভাষার আনুমানিক ১,৯৫,৮০০ ব্যবহারকারী আছেন।[৫]
বর্তমানে সাম্প্রতিককালের তা-আরাওয়াক (তা-মেইপুরীয়) গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বক্তা দেখা যায় আরাওয়াক ভাষাগুলির: ওয়াইউ [গোয়াহিরো] (প্রায় ৩,০০,০০ ভাষিক); এবং গারিফুনা, (প্রায় ১,০০,০০০ ভাষিক)। এর পরে আসে কাম্পা গোষ্ঠী; আশানিনকা বা মূল কাম্পার প্রায় ১৫,০০০ থেকে ১৮,০০০ বক্তা আছে; এবং আশানিনকার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রায় ১৮,০০ থেকে ২৫,০০০। তারপরে সম্ভবত তেরেনা আসে (১০,০০০ ভাষিক); এবং ইয়ানেশাক বা আমুয়েশা (৬,০০০ থেকে ৮,০০০ ভাষিক)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভাষাসমূহ
বিপুল সংখ্যক আরাওয়াক ভাষার বিলুপ্তি এবং অপূর্ণ নথিভুক্তিকরণের কারণে মেইপুরীয়র শ্রেণীবিভাগ কঠিন। তবে একক ভাষা গঠনের প্রত্যক্ষ সম্পর্কগুলি ছাড়াও পন্ডিতরা সাধারণত মেইপুরীয়র বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। বেশ কিছু শ্রেণিকরণে মেইপুরীয়কে উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে, তবে সমস্ত ভাষাই যে কোন না কোন গষ্ঠীতে সঠিকভাবে জায়গা করে নিয়েছে তেমন সম্ভবত নয়। সকলেই নিচের তিনটি শ্রেণীবিভাগ মেনে নিয়েছেন:
- তা-মেইপুরীয় (বা তা-আরাওয়াক, ক্যারিবীয় আরাওয়াক, ক্যারিবীয় মেইপুরীয়)
- উচ্চ আমাজন মেইপুরীয় (বা উত্তর আমাজনীয় আরাওয়াক, অন্তর্দেশীয় মেইপুরীয়)
- মধ্য মেইপুরীয় (বা পারেসি-শিঙ্গু, পারেসি-ওয়াউখা)
- পিরো (বা পুরুস)
- কাম্পা (বা প্রাক-আন্দীয় মেইপুরীয়)
“আমি” উপসর্গের উপর নির্ভর করে পূর্ববর্তী তা-আরাওয়াক এবং নু-আরাওয়াক বিভাজন অস্বচ্ছ; নু- সমগ্র ভাষাপরিবারের বংশগত রূপ, এবং তা- ভাষাপরিবারের একটি শাখার অভিনবত্ব।
কাউফমান (১৯৯৪)
নিম্নোক্ত (পরীক্ষামূলক) শ্রেণিবদ্ধকরণ কাউফমান (১৯৯৪: ৫৭-৬০) থেকে নেওয়া। নিচে বর্ণিত বংশলতিকার পাশাপাশি, এমন কয়েকটি ভাষা রয়েছে যা হয় অ-মেইপুরীয় আরাওয়াক ভাষা বা শ্রেণীবদ্ধ করার পক্ষে স্বল্পজ্ঞাত (কফম্যান ১৯৯৪: ৫৮):
আরও একটি ভাষাও “আরাওয়াক” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
- সালুমাঁঁ (বা এনাওয়েনে-নাওয়ে)
উপরে উল্লিখিত শ্রেণীবিহীন ভাষা সহ, মেইপুরীয় পরিবারে প্রায় ৬৪ টি ভাষা রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯টি ভাষা এখন বিলুপ্ত: ওয়াইনুুুমা, মারিয়াতে, আনাউইয়া, আমারিজানা, খুমানা, পাসে, কাউইশানা, গারু, মারাওয়া, গুইনাও, ইয়াভিতেরো, মেইপুরে, মানাও, কারিয়াই, ওয়ারাইকু, ইয়াবাআনা, উইরিনা, আরুয়ান, তাইনো, কালহিফোনা, মারাওয়ান-কারিপুরা, সারাভেচা, কুস্তেনাউ, ইনাপারি, কানামারে, শেবায়ে, লাপাচু, এবং মোরিকে। উত্তরাঞ্চলীয় মেইপুরীয়
- উচ্চ আমাজনীয় শাখা
- সামুদ্রিক শাখা
- আরোয়াঁঁ (†)
- ওয়াপিশানা: আতোরাদা (বা আতোরাই), মাহুয়াইয়ানা (বা মাওয়াইয়ানা, মাপিদীয়, মাওপিদীয়), ওয়াপিশানা
- তা-মেইপুরীয়
- পালিকুর
দক্ষিণাঞ্চলীয় মেইপুরীয়
কাউফমান মোখোস গোষ্ঠীর বিলুপ্ত মাগিয়ানা ভাষার কোন বিবরণ দেননি।
আইখেনভাল্ড (১৯৯৯)
কোনো ভাষার প্রকার ভাষা না উপভাষা, নাম পরিবর্তন এবং বিভিন্ন অপূর্ণভাবে নথিভুক্ত ভাষার বিষয় আলোচনা না করার মতো ছোটখাটো সিদ্ধান্ত ছাড়া, আইখেনভাল্ড এবং কাউফমানের শ্রেণীকরণেরে মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তা হলো আইখেনভাল্ড দক্ষিণ মেইপুরীয়ের দক্ষিণ বহিস্থ এবং পশ্চিম শাখাগুলিকে বিভক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ বহিস্থ (‘দক্ষিণ আরাওয়াক’) শাখার অবশিষ্টাংশে সালুমাঁঁ এবং লাপাচু (‘আপোলিস্টা’) ভাষাগুলিকে নিয়োগ করেছেন; উত্তরাঞ্চলীয় মেইপুরীয়র সামুদ্রিক শাখাকে বিভক্ত করেছেন, যদিও আরোয়াঁঁ এবং পালিকুর ভাষাগুলিকে এই শাখায় রেখেছেন; এবং উত্তর মেইপুরীয়র উত্তর আমজনীয় শাখার উপ-গোষ্ঠীকরণকে মানতেন না।
নিম্নলিখিত শ্রেণীকরণটি কাউফমান দ্বারা অনুসৃত আইখেনভাল্ডের নামকরণ: উত্তর আরাওয়াক = উত্তরাঞ্চলীয় মেইপুরীয়
- রিও ব্রাঙ্কো = কাউফমানের ওয়াপিশানীয় (২) [“মাহুয়াইয়ানা” নামে মাপিদীয় এবং মাওয়াকোয়া সম্ভাব্য উপভাষা হিসাবে এর অন্তর্গত]
- পালিকুর = কাউফমানের পালিকুর + আরোয়াঁঁ (৩)
- কারিবীয় = তা-মেইপুরীয় (৮) [শেবায়ে সহ]
- উত্তর আমাজনীয় = উচ্চ আমাজন (১৭টি প্রত্যয়িত)
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাওয়াক = দক্ষিণ মেইপুরীয়
- দক্ষিণ আরাওয়াক = তেরেনা + কাউফমানের মোখো গোষ্ঠী + সালুমাঁঁ + লাপাচু [‘আপোলিস্তা’] (১১)
- পারেসি-শিঙ্গু = মধ্য মেইপুরীয় (৬)
- দক্ষিণ-পশ্চিম আরাওয়াক = পিরো (৫)
- কাম্পা (৬)
- আমুয়েশা (১)
- চামিকুরো (১)
আইখেনভাল্ড মোরিকে ভাষার পাশাপাশি কাউফমানের দ্বারা শ্রেণীকরণ করা হয়নি এমন ভাষা শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। তিনি এমন ১৫টি বিলুপ্ত ভাষা শ্রেণীবদ্ধ করেননি যেগুলি কাউফমান মেইপুরীয়র বিভিন্ন শাখায় রেখেছিলেন। আইখেনভাল্ড (১৯৯: ৬৯) রিও ব্রাঙ্কো শাখার অধীনে মাহুয়াইয়ানা এবং ওয়াপিশানাকে একসঙ্গে শ্রেণীভুক্ত করেছেন, এবং মাওয়াইয়ানা ভাষাকে “মাপিদীয়” এবং “মাওয়াকোয়া” নাম প্রদান করেছেন।
ওয়াকার এবং রিবেইরো (২০১১)
বেজীয় কম্পিউটেশনাল ফায়োলজেনটিকস ব্যবহার করে ওয়াকার এবং রিবেইরো (২০১১), নিম্নরূপে আরাওয়াক ভাষাগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।
আরাওয়াক | উত্তরপূর্ব দক্ষিণ পশ্চিম আমাজনিয়া আমুয়েশা, চামিকুরো পরি-কারিবীয় মধ্য ব্রাজিল মধ্য আমাজনিয়া উত্তরপশ্চিম আমাজনিয়া |
প্রতিটি শাখা অভ্যন্তরীণ কাঠামো নিচে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে কঠোরভাবে বাইনারি বিভক্ত ব্যবহৃত বেজীয় কম্পিউটেশনাল পদ্ধতির একটি ফলাফল।
- উত্তরপূর্ব
- দক্ষিণ
- পশ্চিম আমাজনিয়া
- আমুয়েশা, চামিকুরো
- পরি-ক্যারিবীয়
- ওয়ারাইকু, মারাওয়া
- (অন্তঃশাখা)
- (দ্বীপ শাখা)
- তাইনো
- দ্বীপী ক্যারিব, গারিফুনা
- লোকোনো
- পারাহুয়ানো, গুয়াহিরো
- (দ্বীপ শাখা)
- মধ্য ব্রাজিল
- (শাখা)
- (শাখা)
- ইয়াওয়ালাপিতি
- ওয়াউরা, মেহিনাকু
- মধ্য আমাজনিয়া
- (শাখা)
- আনাউইয়া
- গুইনাও, বারে
- (শাখা)
- বাহুয়ানা, মানাও
- (শাখা)
- আরোয়াঁঁ
- (শাখা)
- কাবিয়াই
- মাহুয়াইয়ানা, ওয়াপিশানা
- (শাখা)
- উত্তরপশ্চিম আমাজনিয়া
আরাওয়াক বনাম মেইপুরীয়
১৭৮৩ সালে, ইতালীয় যাজক ফিলিপ্পো সালভাতোরে গিলিয়ি ওরিনোকোর মেইপুরীয় ভাষার এবং বলিভিয়ার মোখো ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য দেখতে পান; তিনি এই ভাষা পরিবারের নাম দেন মেইপুরে। ফন ডেন শটাইনেন (১৮৮৬) এবং ব্রিন্টেন (১৮৯১) এর নাম পরিবর্তন করে এই ভাষাপরিবারের অন্যতম গুইয়ানা অঞ্চলের আরাওয়াক ভাষার নামে নামকরণ করেন। বর্তমানে এই ভাষা পরিবারকে মেইপুরিয়ান বা মেইপুরান এবং আরাওয়াক বা আরাওয়াকান বলা হয়।
আরাওয়াক শব্দটি বর্তমানে দুটি অর্থে ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকার পণ্ডিতরা এই ভাষা পরিবারের জন্য গিলিয়ি এবং পরবর্তী ভাষাবিদদের দ্বারা প্রদর্শিত আরুয়াক শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে উত্তর আমেরিকার বিদ্বানরা এই একই নামের দ্বারা একটি প্রকল্পিত ভাষা পরিবারকে বোঝাতেন, যার মধ্যে গুয়াহিবো এবং আরাওয়ান ভাষা গোষ্ঠীগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে উত্তর আমেরিকায় মূল পরিবারকে আলাদা করার জন্য মেইপুরিয়ান নামটি ব্যবহার করে থাকেন, যেটিকে কখনও কখনও অন্তঃআরাওয়াক বা মূল আরাওয়াক বলা হয়ে থাকে।[৬][৭]
বৈশিষ্ট্য
আরাওয়াকান বা মেইপুরীয় ভাষাগুলি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মূলত একটি পৃথক গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃত ছিল। বর্তমানে যে ভাষাগুলি আরাওয়াক নামে প্রচলিত তাদের প্রত্যেকটির উত্তম-পুরুষ একবচন উপসর্গ নু-, কিন্তু মূল আরাওয়াক গোষ্ঠীর ভাষাগুলিতে সেটি তা-। অন্যান্য মিলের মধ্যে রয়েছে মধ্যম-পুরুষ একবচন উপসর্গ পি-, সম্বন্ধবাচক কা-, এবং নঞর্থক মা-।
এল অ্যাডাম দ্বারা গঠিত আরাওয়াক ভাষা পরিবার, যেটিকে তিনি প্রথমে মেইপুরে নাম দিয়েছিলেন, সেটিকে ফন ডেন শটাইনেন “নু-আরাওয়াক” নাম দিয়েছিলেন, উত্তম-পুরুষ নু- উপসর্গের জন্য। ওলন্দাজ গুইয়ানা থেকে ব্রিটিশ গুইয়ানার উপকূল পর্যন্ত সব আরাওয়াক জাতির ভাষার মধ্যে এই মিলটি রয়েছে।
উচ্চ প্যারাগুয়েতে আরাওয়াক ভাষার উপজাতিরা বিদ্যমান: কিঙ্কিনাও, লায়ানা, ইত্যাদি। আমাজন নদীর মোহনার মাঝখানে, মারাখোস দ্বীপপুঞ্জে, আরুওয়ান লোকেরা আরাওয়াক উপভাষায় কথা বলতেন। ভেনেজুয়েলার উত্তরে গোয়াখিরা উপদ্বীপে যে গোয়াখিরা উপজাতিরা বাস করেন তারাও আরাওয়াক ভাষী। ডি ব্রেটের ১৮৯০-৯৫ সালের অনুমান অনুযায়ী গোয়াখিরা জাতির জনসংখ্যা ৩,০০০।[৮]
১৯২৮ সালে ক্লডিয়াস ড্যে ঘোয়ে ওলন্দাজ এবং গুইয়ানা লোকোনো/আরাওয়াকের ১৪০০টি পদের একটি শব্দভান্ডার প্রকাশ করেন, যার মধ্যে অধিকাংশ রূপমূল (ধাতু, প্রত্যয়), এবং অসম্পুর্ণ মূল ছিল, সামান্য পরিমানে যৌগিক বা সাধিত শব্দ ছিল। এছাড়াও ন্যন্সি হিকার্সনের ব্রিটিশ গুইয়ানার পাণ্ডুলিপি থেকে ৫০০টি পদের একটি তালিকা পাওয়া যায়। তবে এই তালিকাগুলিতে স্পেনীয়, ওলন্দাজ এবং ইংরেজি থেকে নেওয়া শব্দঋণের সংখ্যা বেশি ছিল। ড্যে ঘোয়ের তালিকায় ১০৬টিতে ইউরোপীয় ছাপ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৯৮টি ছিল শব্দঋণ।[৯]
ধ্বনিতত্ত্ব
একটি ভাষা থেকে আরেকটি ভাষার মধ্যে বিভিন্নতা থাকলেও একটি যৌগিক ধ্বনিতালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:[১০]
ব্যঞ্জনধ্বনি | ওষ্ঠ্য | দন্ত্য | দন্তমূলীয় | শীর্ষ-(দন্তমূলীয়)- তালব্য | পশ্চাত্তালব্য | কণ্ঠনালীয় | |
---|---|---|---|---|---|---|---|
স্পর্শ | ঘোষ | (b) | d | ɡ | |||
অঘোষ | p | t | k | (ʔ) | |||
অঘোষ মহাপ্রাণ | (pʰ) | (tʰ) | (kʰ) | ||||
উষ্ম | ts | tʃ | |||||
ঘৃষ্ট | (ɸ) | s | ʃ | h | |||
পার্শ্বিক | l | ||||||
র-কার | r | ||||||
নাসিক্য | m | n | ɲ | ||||
অর্ধস্বর | w | j |
সদৃশ মূলরূপীয় বৈশিষ্ট্য
সার্বিক মূলরূপ
আরাওয়াক ভাষাগুলি বহুসংশ্লেষণাত্নক এবং প্রধানত শির-চিহ্নিত। এদের ক্রিয়াপদ গঠন প্রক্রিয়া মোটামুটি জটিল। বিশেষ্যপদ গঠন প্রক্রিয়া অনেক কম জটিল এবং পরিবার জুড়ে অনুরূপ হতে থাকে। এই ভাষাগুলি প্রধানত পরসর্গীয়, কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ ব্যবহার হয়।[১১]
অবিচ্ছেদ্য এবং বিচ্ছেদবোধক সম্বন্ধবাচকতা
আরাওয়াক ভাষাগুলিতে সম্বন্ধবাচকতায় অবিচ্ছেদ্য এবং বিচ্ছেদবোধকতার পার্থক্য করার প্রবণতা আছে। এই ভাষাগুলিতে যে একটি সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হলো একটি পরসর্গ, যার পুনর্নির্মিত প্রত্ন-আরাওয়াক রূপ হলো /*-tsi/ (*ৎসি), যার মাধ্যমে শরিরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সম্বন্ধীয় বিশেষ্য পদগুলির সম্বন্ধবাচকতা লোপ পায়। এই পরসর্গটি শুধুমাত্র অবিচ্ছেদ্য শরীরাঙ্গের সাথেই ব্যবহার করা হয়। জ্ঞাতিত্ববোধক বিশেষ্যপদগুলি অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ হলেও এই পরসর্গ যোগ হয় না। পারেসি ভাষার একটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:[১১]
নো-তিহো |
1SG-face |
আমার মুখ |
তিহো-তি |
face-ALIEN |
(অন্য ব্যক্তির) মুখ |
শ্রেণীনির্দেশক
অনেক আরাওয়াক ভাষার মধ্যে শ্রেণীনির্দেশক জাতীয় রূপমূল রয়েছে যা বিশেষ্য পদগুচ্ছের প্রধান বিশেষ্য পদটির শ্রেণী চিহ্নিত করে। নিচের উদাহরণটি তারিয়ানা ভাষা থেকে নেওয়া।[১২] এখানে শ্রেণীনির্দেশক পরসর্গটি বিশেষ্য পদগুচ্ছের শব্দশ্রেণীটি প্রধান বিশেষ্যপদ (এবং বিশেষণ, সংখ্যা, নির্দেশক, সম্বন্ধবাচক শব্দ) এবং বাক্যাংশের ক্রিয়া ছাড়া বিশেষ্য পদগুচ্ছের বাকি সকল উপাদানে চিহ্নিত করে:[১২]
হা-দাপানা | পা-দাপানা | পানি-সি | নু-ইয়া-দাপানা | হানু-দাপানা |
DEM-CL:HOUSE | one-CL:HOUSE | house-NON.POSSV | 1SG-POSSV-CL:HOUSE | big-CL:HOUSE |
হেকু | না-নি-নি-দাপানা-মাহকা |
wood | 3PL-make-TOPIC.ADVANCING.VOICE-CL.HOUSE-REC.PAST.NON.VISUAL |
‘আমার এই বড়ো ঘরটি কাঠ দিয়ে তৈরি।’ |
উদাহরণ
বিভিন্ন পশ্চিম ইউরোপীয় ভাষায় ভুট্টার জন্য ব্যবহৃত শব্দটি আরাওয়াক ভাষার মারিসি শব্দ থেকে এসেছে, এবং এই শব্দের বিভিন্ন রূপ আরাওয়াক ভাষার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন উপজাতীয় ভাষায় পাওয়া যায়: লোকোনো, মারিসি, গায়ানা। তাইনো, মাহিসি, বৃহত্তর আন্টিলিস। কাউইশানা, মাজি, রিও খুপুরা। ওয়াইউ, মাইক্কি, গোয়াখিরা উপদ্বীপ। পাসেস, মারি, নিম্ন খুপুরা। পুরি, মাকি, রিও পারাইবা। ওয়াউরা, মাইনকি, উচ্চ শিঙ্গু নদী।