জ্যামিতির ইতিহাস

(প্রাচীন গ্রিক: γεωμετρία জ্যা – “ভূমি”, -মিতি “পরিমাপ”) স্থানিক সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞানের ক্ষেত্র হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। প্রাক-আধুনিক গণিতের দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে জ্যামিতি ছিল একটি, অন্যটি ছিল সংখ্যার চর্চা (পাটীগণিত)।

ধ্রুপদী জ্যামিতির লক্ষ্য ছিল কম্পাস এবং স্ট্রেইটেজ অঙ্কনইউক্লিড জ্যামিতির বিপ্লব ঘটান, তিনি গাণিতিক যথাযথতা এবং স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন যা এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। তার বই এলিমেন্টস ব্যাপকভাবে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাঠ্যপুস্তক হিসাবে বিবেচিত হয় এবং বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিমের সমস্ত শিক্ষিত লোকের কাছেই বইটি পরিচিত ছিল। [১]

আধুনিক যুগে জ্যামিতিক ধারণার বিমূর্ততা এবং জটিলতা রয়েছে যার জন্য জ্যামিতিক ধারণা উচ্চ স্তরে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং এটিকে ক্যালকুলাস এবং বিমূর্ত বীজগণিতের পদ্ধতিতে নিয়ে আশা হয়েছে, যার কারণে এই আধুনিক শাখা প্রাথমিক জ্যামিতির বংশধর হিসাবে সবেমাত্র স্বীকৃত হয়েছে।(গণিতের ক্ষেত্র এবং বীজগণিত জ্যামিতি দেখুন)

জ্যামিতি
অভিক্ষেপগোলক থেকে একটি সমতল
রূপরেখাইতিহাস
শাখা
ধারণাবৈশিষ্ট্য
শূন্যমাত্রিক
একমাত্রিক
দ্বিমাত্রিক
ত্রিমাত্রিক
Four– / other-dimensional
Geometers
by name
by period
দে

প্রান্তিক জ্যামিতি

প্রান্তিক জ্যামিতির নথিভুক্তি সে সময়ের জনগণের নির্মাণ কাজের জন্য শুরু হয়ে থাকতে পারে । তারা সিন্ধু সভ্যতায় অবিচ্ছিন্ন ত্রিভুজ আবিষ্কার করেন এবং প্রাচীন ব্যাবিলনিয়া প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে প্রারম্ভিক জ্যামিতির দৈর্ঘ্য, কোণ, ক্ষেত্রফল এবং আয়তনের বিষয়ে অভিজ্ঞতার সাথে আবিষ্কার জ্যামিতির নীতি আবিষ্কার করেন । তারা এই নীতিগুলো সংগ্রহ করে জরিপ, গঠন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন কারুকর্মের কিছু বাস্তব প্রয়োজন মেটান। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি আশ্চর্যজনকভাবে অবিশুদ্ধ নীতি ছিল এবং আধুনিক গণিতবিদ যদি ক্যালকুলাস এবং বীজগণিত ব্যবহার না করে এর সমাধান করতে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মিশরীয় এবং ব্যাবিলীয় উভয় পিথাগোরাসের জন্মের প্রায় ১৫০০ বছর আগে পিথাগোরিয়ান উপপাদ্যের সংস্করণ সম্পর্কে জানত এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ভারতীয় সুলবা সূত্রে উপপাদ্যের প্রথম বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল;বর্গাকার পিরামিডের ফারুস্টম আয়তনের (volume) জন্য মিশরীয়দের কাছে একটি সঠিক সূত্র ছিল;

মিশরীয় জ্যামিতি

প্রাচীন মিশরীয়রা জানত যে তারা নিম্নলিখিত হিসাবের মাধ্যমে একটি বৃত্তের আনুমানিক ক্ষেত্রফল পাওয়া যেতে পারে:[২]

বৃত্তের ক্ষেত্রফল ≈ [ (ব্যাস) x ৮/৯ ]

আহেমস পেপাইরাস ৩০টি সমস্যায় বৃত্তের ক্ষেত্রফল গণনা করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই নিয়ম অনুসারে ক্ষেত্রফল বৃত্তের ব্যাসের ৮/৯ ভাগের বর্গের সমান। ধরা হয় π এর মান ৪×(৮/৯) (বা ৩.১৬০৮৯৩…), যা ০.৬৩ শতাংশেরও বেশি ত্রুটিযুক্ত। ব্যাবিলনীয়দের গণনার তুলনায় এই মানটি কিছুটা কম সঠিক ছিল (২৫/৮ = ৩.১২৫, ০.৫৩ শতাংশের মধ্যে), তবে আর্কিমিডিসের আসন্ন মান ২১৫৭৫/৬৭৪৪১ = ৩.১৪১৬৩ আশ্চার্জনক ছিল না । আর্কিমিডিসের এই মানের তুলনায় ব্যাবিলনীয়দের গণনার ১০,০০০ এর মধ্যে মাত্র ১ ভাগের এর বেশি ত্রুটি ছিল।

আহেমস আধুনিক পাইকে আনুমানিক ২৭/৭ হিসাবে জানতেন এবং এটি একটি হেকাত বিভক্ত করতে ব্যবহার করেছিলেন, হেকাত x ২২ / x x ৭/২২ = হেকাত;

যাইহোক, আহেমস একটি সিলিন্ডারে পাওয়া তার হেকাতের পরিমাণকে গণনা করার জন্য পাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ২৫৬/৮১ এর মান ব্যবহার করেন। পার্শ্ব ৯ ইউনিটসহ ব্যবহার করে ৪৮ টি সমস্যা জড়িত এই বর্গক্ষেত্রটিকে ৩x৩ গ্রিডে কাটা হয়েছিল। কোণার বর্গের তির্যকটি ৬৩ ইউনিটের ক্ষেত্রফলসহ একটি অনিয়মিত অষ্টভুজ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি পায়ের দ্বিতীয় মান ৩.১১…… দিয়েছে।

দুটি সমস্যা ৩.১১ এবং ৩.১৬ একসাথে এর মধ্যে মানগুলির একটি ব্যাপ্তি নির্দেশ করে।

মস্কোর গাণিতিক পেপাইরাসের ১৪ টি সমস্যা সঠিক সূত্রটি বর্ণনা করে একটি পিরামিডের ফারুস্টম আয়তনের (volume) খুঁজে পাওয়া একমাত্র প্রাচীন উদাহরণ দেয়: V = 1 3 h ( a 2 + a b + b 2 ) {\displaystyle V={\frac {1}{3}}h(a^{2}+ab+b^{2})}

যেখানে a এবং b হল অগ্রভাগহীন পিরামিডের ভিত্তি এবং উপরের দিকের দৈর্ঘ্য এবং h এর উচ্চতা।

ব্যাবিলনীয় জ্যামিতি

মূল নিবন্ধ: ব্যাবিলনীয় গণিত

ব্যাবিলনীয়রা ক্ষেত্রফল এবং আয়তনের পরিমাপের নিয়ম জানত। তারা বৃত্তের পরিধিটি ব্যাসের তিনগুণ এবং ক্ষেত্রফলের এক-দ্বাদশ বর্গক্ষেত্র হিসাবে পরিমাপ করেছে। এই পরিমাপ সঠিক হবে যদি এটাকে পাই এর মান ৩ হিসাবে অনুমান করা হয়। একটি সিলিন্ডারের আয়তনের ভিত্তি এবং উচ্চতার গুণফল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। তবে, শঙ্কু বা বর্গাকার পিরামিডের আয়তন ভুলভাবে ভিত্তির উচ্চতা এবং অর্ধের যোগফলের গুনফল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যাবিলনীয়দের কাছেও পরিচিত ছিল। এছাড়াও, একটি সাম্প্রতিককালে সন্ধান পাওয়া যায় যে, ব্যাবিলনীয়রা একটি ফলকে পাইয়ের মান ৩ এবং ১/৮ হিসাবে ব্যবহার করেছিল । ব্যাবিলনীয়রা ব্যাবিলনীয় মাইলের জন্যও পরিচিত, যা আজকের হিসাবে প্রায় সাত মাইল দূরত্বের সমান । দূরত্বের জন্য এই পরিমাপটি অবশেষে সূর্যের ভ্রমণ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত সময়-মাইলে রূপান্তরিত হয়, তাই এটা সময়কে উপস্থাপন করে।[৩] সাম্প্রতিক সন্ধান থেকে দেখা গেছে যে প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা ইউরোপীয়দের প্রায় ১৪০০ বছর আগে জ্যোতির্বিদ্যার জ্যামিতি আবিষ্কার করেছে।[৪]

বৈদিক ভারতীয় জ্যামিতি

ঋগ্বেদের পাণ্ডুলিপি দেবনাগরীতে লেখা

বৈদিক যুফে ভারতবর্ষে জ্যামিতির প্রচলন ছিলো। যা মূলতো বিশদ ভাবে পুজার বেদী তৈরীতে ব্যাবহৃত হতো। এই বিষয়ের ওপর প্রাচীন (১ম সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) দুটি লেখা হলো সতপথ ব্রহ্মণ এবং সুলভ সূত্র[৫][৬][৭]

(হায়াসি ২০০৫, পৃ. ৩৬৩) মতে, সুলভ সূত্র হলো “পিথাগোরিয়ান তত্ত্বের প্রাচীনতম মৌখিক নিদর্শন, যদিও ব্যাবিলনিয়রা আগে থেকেই এর সাথে পরিচিত ছিলো।”

একটি আয়তকার ক্ষেত্রের তীর্যক রশ্মি (অক্ষন্য-রজ্জু) যে ক্ষেত্র উৎপন্ন করে, তা পার্শ্ব (পার্শ্বাভামানি) আর অনুভূমি (তির‍্যানমানি) [রশ্মি] দ্বারা উৎপন্ন ক্ষেত্রের [সমষ্টির] সমান।[৮]

এতে পিথাগোরিয়ান ট্রিপলস এর তালিকা ছিলো[৯], যা ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের একটি রূপ।[১০]এতে বৃত্তের বর্গকরন এবং “বর্গের বৃত্তায়নের” কথা উল্লেখ ছিলো।[১১]

বৌদ্ধান সু্লভ সূত্রে (সুলভ সূত্রের মধ্যে প্রাচীনতম, ৭ম বা ৮ম খ্রিস্টপূর্ব্দে লেখা হয়) সরল পিথাগোরিয়ান ট্রিপলসের (যেমনঃ (৩,৪,৫),(৫,১২,১৩),(৮,১৫,১৭),(৭,২৪,২৫) এবং (১২,৩৫,৩৭)) তালিকা ছিলো।[১২] এতে বর্গের বাহুর পিথাগোরিয়ান তত্ত্বও ছিলো (বর্গের পরিসীমা ব্যাপী বিস্তৃত রশ্মি বর্গের ক্ষেত্রফলের দ্বিগুন ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট বর্গ উৎপন্ন করে)।

গণিতবীদ এস.জি.দানির মতে, ব্যাবিলনের কিউনিফর্ম ট্যাবলেটে লিখিত প্লিম্পটন ৩২২ (১৮৫০ খ্রি.পূর্বাব্দে লেখা)[১৩]-এ ১৫ টি পিথাগোরিয়ান বড় ট্রিপলস ছিলো, যার মধ্যে ছিলো (১৩৫০০,১২৭০৯,১৮৫৪১) একটি আদি ট্রিপলস।[১৪] এটি এই নির্দেশ করে যে, ১৮৫০ খ্রি. পূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ানদের কাছে এই জ্যামিতির ধারণা গুলো পরিচিত ছিলো। যেহেতু এই টেবলেট গুলো সুলভ সূত্রের কয়েক শতক আগে লেখা, একি বিষয়ের আবির্ভাবকে মাথায় রেখে বলতে হয়, এটা আশা করা যুক্তিসঙ্গত যে অনুরূপ জ্ঞান ভারতেও ছিল।[১৫] দানি আরো বলেন,

“যেহেতু সুলভ সূত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিলো পুজার বেদির নির্মান বর্ণনা এবং এতে যে জ্যামিতিক নীতি যুক্ত ছিলো তা হলো পিথাগোরিয়ান ট্রিপলস, এটা বোধগম্য হলেও সুলভ সূত্রে এর থাকার কথা নয়। সুলভ সূত্রে থাকা ত্রিপলস গুলোকে প্রকৌশলের পরিচিতি বই-এ থাকা গণিত বা একই রকম বিষয়ের সাথে তুলনা করা যায় এবং সেই সময়ের বিষয়ের সামগ্রিক জ্ঞানের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। যেহেতু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সমসাময়িক অন্যকোন সূত্র পাওয়া যায়না এই বিশয়ের সন্তুষ্টি মূলক সমধান সম্ভব নয়।”

মোট তিনটি সুলভ সূত্র রচিত হয়েছিলো। বাকি দুই সুলভ সূত্র, মানব (৭৫০-৬৫০খ্রি.পূর্ব) রচিত মানব সুলভ সূত্র ও অপস্থাম্বা (৬৫০খ্রি.পূর্ব) রচিত অপস্থাম্বা সুলভ সুত্র বৌদ্ধান সু্লভ সূত্রের ফলাফলই বহন করে।

গ্রিক জ্যামিতি

ধ্রুপদি গ্রিক জ্যামিতি

প্রাচীন গ্রিক গণিতবীদদের কাছে জ্যামিতি তাদের মুকুটের পালক ছিলো, অন্যকোন ক্ষেত্রে তাঁরা এত ওপরে পৌছতে পারেনি। তাঁরা জ্যামিতির নতুন নতুন ধারা, বক্রতল, সমতল আবিষ্কার করে ছিলো। তাঁরা পরীক্ষণ ও ভুলের পরিবর্তে গাণিতিক যথাযথতাের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলো।

থেলেস ও পিথাগোরাস

পিথাগোরাসের উপপাদ্যঃa2+b2=c2

মিলেটাসের (বর্তমান তুরস্ক) থেলেসকে প্রথম গাণিতিক যথাযথতা পদ্ধতি ব্যাবহারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি ৫ টি গাণিতিক প্রস্তাবনা দেন, যদিও তাঁর প্রস্তাবনা গুলো হারিয়ে গিয়েছে। আয়নিয়ার এবং পরে ইতালির (তখন গ্রিসের একটি কলোনি) পিথাগোরাস থেলেস এর শিস্য ছিলেন, তিনি ব্যাবিলন ও মিশর ভ্রমণ করেন। তাঁর নামে নামাঙ্কিত তত্ত্বটি সম্ভবত তাঁর আবিষ্কার নয়। তবে তিনি এর ডিডাকটিভ প্রমাণদানকারী দের মাঝে প্রথম ছিলেন। তিনি আর তাঁর শিস্যরা একত্রিত হয়ে গণিত, দর্শন আর সংগীত চর্চা করতেন, এবং তাঁরা একত্রে বর্তামান উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে যে জ্যামিতি পড়ানো হয় তাঁর প্রায় সবটাই আবিষ্কার করেন।

প্লেটো

প্লেটো একজন দার্শনিক ছিলেন এবং গ্রিকদের মাঝে তিনি অত্যান্ত সম্মানিত ছিলেন। বলা হয় তিনি তাঁর স্কুলের ফটকে লিখে দিয়েছিলেন,”জ্যামিতির জ্ঞানহীন যারা তাদের প্রবেশ নিষেধ।”[১৬]গল্পটি সম্ববত মিথ্যা।[১৭] যদিও তিনি নিজে গণিতবিদ ছিলেনা, তবুও গণিতে তাঁর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গণিতবীদেরা জ্যামিতি সম্পর্কে প্লেটোর মতবাদ গ্রহণ করেছেন। প্লেটোর মতে জ্যামিতি শুধুমাত্র পরিমাপের বিষয় নয়, পরিমাপ হলো কর্মজীবীদের কাজ, পন্ডিতদের কাজ নয়। প্লেটোর শিস্য এরিস্টটল যথাযথতার প্রমাণ লিখেছিলেন যা ১৯শ শতকের আগ পর্যন্ত একি রুপে ব্যাবহৃত হয়ে আসছিলো।

হেলেনিস্টিক জ্যামিতি

ইউক্লিড

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল হিস্টরি জাদুঘরে থাকা ইউক্লিডের ভাষ্কর্য।

মহিলা জ্যামিতি শেখাচ্ছেন। মধ্যযুগের ইউক্লিডের এলিমেন্টসের অনুবাদে ব্যাবহৃত একটি চিত্রকর্ম (১৩১০ সালের)

আলেকজান্দ্রিয়ার ইউক্লিড প্লেটোর একাডেমির ছাত্র ছিলেন। তিনি দ্যা এলিমেন্টস অব জিওমেট্রি নামে ১৩ অধ্যায়ের একটি বই রচনা করেন, যাতে তিনি জ্যামিতির একটি স্বতঃসিদ্ধ ধারা প্রদর্শন করে, যা ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি নামে পরিচিত। তিনি জ্যামিতির আর আটটি বই রচনা করেন। যদিও ইউক্লিডই প্রথম জ্যামিতির পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা নন তবে তাঁর বইটি এতই এগিয়ে ছিলো যে বাকি বই গুলো পরিত্যাক্ত হয়ে হারিয়ে যায়। মিশরের শাসক প্রথম টলেমি তাঁকে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন।

দ্যা এলিমেন্টস শুরু হয় বিভিন্ন সঙ্গা দিয়ে, এতে ছিলো মৌলিক জ্যামিতিক নীতি এবং জেনারেল কোয়ান্টিটেটিভ প্রিন্সিপাল যা থেকে বাকি সব জ্যামিতিক ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর ৫ টি স্বতঃসিদ্ধ রয়েছে। এগুলো হলো (বোঝার স্বার্থে ভাষা সরলিকৃত হয়েছে)-

  1. দুটি বিন্দু একটি সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করা সম্ভব।
  2. যেকোন সসীম সরলরেখাকে সরলরেখায় প্রসারিত করা যায়।
  3. যেকোন ব্যাসার্ধ ও কেন্দ্র বিশিষ্ট বৃত্ত আঁকা সম্ভব।
  4. সকল সমকোন পরস্পর সমান।
  5. একি সমতলে অবস্থিত দুটি সরলরেখা তৃতীয় সরলরেখা দ্বারা ছেদিত হলে, এবং অনুরূপ কোন গুলো পরস্পর সমান হলে রেখা দ্বয় সমান্তরাল হবে।

বর্তমানে পরিচিত বীজগণিত ইউক্লিড জ্যামিতিক আকারে দেখিয়েছিলেন, যা গ্রিক জ্যামিতিক বীজগণিত নামে পরিচিত।

আর্কিমিদিস

সিসিলির সিরাকাসের (তখন এটি একটি গ্রিক নগর রাষ্ট্র ছিলো) আর্কেমিদিসকে গ্রিসের সর্বকালের সেরা গণিতবীদ বলা হয়। তাঁকে তিন মহাপুরুষের একজন বলা হয় (বাকি দুজন হলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন আর কার্ড ফেডেরিক গাউস)। যদি তিনি গণিতবিদ নাও হতেন তবুও তাঁকে মহান পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও উদ্ভাবক হিসেবে মনে রাখা হতো। তিনি বিশ্লেষণ জ্যামিতিতে স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থার মতো একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলারের লিমিটিং প্রসেস আবিষ্কার করেন। তবে বীজগাণিতিক নোটেশনের অভাবে তিনি তাঁর কাজ সম্পূর্ন করতে পারেননি।

আর্কিমিদিস পরবর্তি যুগ

মধ্যযুগের পণ্ডিতেরা জ্যামিতিকে ঐশ্বরিক গণ্য করতেন.১৩ শতকের এই পাণ্ডুলিপিতে কম্পাসকে ইশ্বরের সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আর্কিমিদিসের পর হেলেনিস্টিক জ্যামিতির পতন শুরু হয়। এরপর আরো ক্ষুদ্র কয়েকজন বিখ্যাত লোক এলেও, এর স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। প্রোক্লুস (৪১০-৪৮৫) কমেন্ট্রি অন ফার্স্ট বুক অব ইউক্লিড-এর লেখক ছিলেন, তিনি হেলেনিস্টিক যুগের অন্যতম শেষ জ্যামিতি নিয়ে কাজ করা গণিতবীদ। তিনি একজন পারদর্শি পণ্ডিত ছিলেন, তবে তিনি তাঁর কাজের থেকে বেশি বিখ্যাত প্রক্তন কাজ গুলোর সমালোচনা করার মাধ্যমে। রোমান সম্রাজ্য ও প্রজাতন্ত্র, যা গ্রিসের নগর রাষ্ট্র গুলোকে প্রতিস্তাপিত করেছিলো, অনেক মহান প্রকোশলীর জন্ম দিলেও বিখ্যাত গণিতবীদ সৃষ্টিতে ব্যার্থ হয়।

আলেকজান্দ্রিয়ার মহান লাইব্রেরিকে পরবর্তিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইতিহাসবীদেরা একমত যে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি অনেকবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও, আজেকজান্দ্রিয়ার পৈত্তলিক মন্দির ধ্বংসের পর আর তা মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। এই ধ্বংসযজ্ঞের যথেষ্ট প্রমাণ আজও পাওয়া যায়। সিজারের আগ্রাশনের ফলেই বন্দরের পাশ্ববর্তি গুদামে থাকা ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায় (লুইকানো কানফরার মতে, এর কোনটিই আসল কর্ম ছিলোনা, বরং রপ্তানির উদ্দেশ্য তৈরী করা নকল ছিলো)। কিন্তু এর ফলে সম্ববত জাদুঘর বা লাইব্রেরির কোন ক্ষতি হয়নি, কারণ এরপর উভয়েরই অস্থিত্ব টিকে ছিলো।[১৮]

গৃহ যুদ্ধ, পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও সংগ্রহে ক্রমহ্রাসমান বিনিয়োগ, ধর্মের বাইরে জ্ঞান চর্চার অগ্রহের অভাবকেই মূলত এই পতনের জন্য দায়ী করা হয়। ৩৯১ সালে থিওফেলাস সেরাপেরাম ধ্বংস করেন, একি অভিযানে লাইব্রেরি আর জাদুঘরও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

ধ্রুপদী ভারতীয় জ্যামিতি

বাকশালী পাণ্ডুলিপিতে অনেকগুলো জ্যামিতিক সমস্যার কথা উল্লেখ আছে (অনিয়ত ঘনবস্তু সম্পর্কিত সমস্যা সহ)। এই পাণ্ডুলিপিতে দশমিক সংখ্যার ধারণা পাওয়া যায়, শূন্য বোঝাতে একটি ফোটা ব্যাবহার করা হয়েছে। আর্যভট্টের লেখা আর্যভট্ট্যাতে (৪৯৯) ক্ষেত্রফল ও আয়তনের পরিমাপের উল্লেখ আছে।

৬২৮ সালে ব্রহ্মগুপ্ত জ্যেতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত রচনা করেন। ১২ অধ্যায়ে, ৬৬ সংস্কৃত শ্লোককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে; “মৌলিক অপারেশন” (ঘনমূল, ভগ্নাংশ, অনুপাত ও সমানুপাত এবং বিনিময়) ও “ফলিত গণিত” (গাণিতিক ধারা, ইটের স্তুপ জমানো, গাছের গুরি কাটা, আর শস্যদানা জমানো)।[১৯] শেষভাগে তিনি তাঁর বিখ্যাত বৃত্তীয় চতুর্ভুজ কর্ণ সম্পর্কিত উপপাদ্য বর্ণনা করেছেন।

ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য

কোন চতুর্ভুজের শীর্ষ বিন্দু চারটি একটি বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থান করলে চতুর্ভুজটিকে বৃত্তীয় চতুর্ভুজ বলা হয়। আবার চতুর্ভুজ কর্ণদ্বয় পরস্পর লম্ব হলে এটি হবে লম্বকর্ণ চতুর্ভুজ। এখন একটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজ লম্বকর্ণ চতুর্ভুজ হলে অর্থাৎ বৃত্তের অন্তস্থ কোন চতুর্ভুজের কর্ণদ্বয় পরস্পরের লম্ব হলে কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দু থেকে চতুর্ভুজটির যেকোন বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বটি সর্বদা ঐ বাহুর বিপরীত বাহুকে সমদ্বিখণ্ডিত করবে। এটিই ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য যা প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদজ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্তের (৫৯৮-৬৬৮)নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।

১২ তম অধ্যায়ে বৃত্তীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রদফলের সুত্র রয়েছে (হেরনের সূত্রের একটি সারলিকৃত রূপ), এছাড়া র‍্যাশনাল ত্রিভুজের সম্পূর্ণ বর্ননা দেওয়া হয়েছে।

ব্রহ্মগুপ্তের সূত্র

a, b, c ও d পার্শ্ববিশিষ্ট একটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল,

A = ( s − a ) ( s − b ) ( s − c ) ( s − d ) {\displaystyle A={\sqrt {(s-a)(s-b)(s-c)(s-d)}}}

যেখানে s হলো অর্ধপরিসীমা, অর্থাৎ s = a + b + c + d 2 {\displaystyle s={\frac {a+b+c+d}{2}}}

র‍্যাশনাল ত্রিভুজ সম্পর্কিত ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য

র‍্যাশনাল বাহু বিশিষ্ট একটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হলো,

a = u 2 v + v ,     b = u 2 w + w ,     c = u 2 v + u 2 w − ( v + w ) {\displaystyle a={\frac {u^{2}}{v}}+v,\ \ b={\frac {u^{2}}{w}}+w,\ \ c={\frac {u^{2}}{v}}+{\frac {u^{2}}{w}}-(v+w)}

যেখানে a, b ও c র‍্যাশনাল বাহু এবং u, v ও w যেকোন মূলদ সংখ্যা।[২০]

চৈনিক জ্যামিতি

১৭৯ সালে সংকলিত দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট, ৩য় শতকে লাই হুই এর সমালোচনা লেখেন।

হাইডাও শুয়ানজিং, লাই হুই, ৩য় শতাব্দী

জ্যামিতি বিশয়ক প্রাপ্ত কর্ম গুলোর মধ্যে সবথেকে প্রাচীন হলো দার্শনিক মোজির (৪৭০-৩৯০ খ্রি.পূ.) লিখিত মহিবাদি অনুশাসন, মো জিং। এটি তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর শিস্যরা ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংকলন করেন।

মো জিন এখনো পর্যন্ত প্রপ্ত প্রাচীনতম চাইনিজ জ্যামিটির বই হলেও, সম্ভবত এর আগেও আরো জ্যামিতি সম্পর্কিত বই চীনে ছিলো। কিন্তু চিন বংশের নৃপতি চিন শিহুয়াং-এর আমলের কুখ্যাত বই পোড়ানোর ঘটনায় অনেক বইই হারিয়ে যায়। তাছাড়া মো জিং এর জ্যামিতিক ধারনার উন্নত হওয়ার কারণে বোঝা যায় অন্য কোন কাজকে ভিত্তি ধরে তাঁর উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে এই বই রচনা করা হয়েছিলো।

মো জিং থেকে জ্যামিতির পাশাপাশি বাস্তু বিজ্ঞান ও গণিতের বিষয়েও ক্ষুদ্র ধারণা পাওয়া যায়। এতে পারমাণবিক (অতিক্ষুদ্র অর্থে) জ্যামিতির পরিচয় পাওয়া যায়, যাতে একটি রেখাকে এমন ভাবে অসংখ্য ভাগ করার কথা বলা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত রেখাটি আর রেখা থাকেনা, একটি বিন্দুতে পরিণত হয়।[২১]

ইউক্লিডের রেখার প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্গা ও প্লেটোর রেখার আরম্ভের মত মো জিং বলেছেন,”একটি রেখার প্রারম্ভে বা অন্তিমে একটি বিন্দু থাকে যা জন্মলগ্নে শিশুর মাথার মতো, এর অনুরূপ অন্য কিছু নেই।”[২২]

ডেমোক্রিটাসের পরমাণু তত্ত্বের ন্যায় মো জিং বলেছেন,”একটি বিন্দুকে ভাগ করা সম্ভব নয়, কারণ শূন্যতাকে ভাগ করা সম্ভব নয়।” তিনি আরো বলেছেন একই দৈর্ঘ্যের দুটি রেখা একই দূরত্বে সমাপ্ত হবে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে শূন্য পুরুত্বের তলকে একটার ওপরে এরেকটা রাখা সম্ভব নয়। কারণ তাদের পুরুত্ব না থাকায় তাঁরা কেউ পরস্পরকে স্পর্শ করবেনা।[২৩] বইটিতে পরিসীমা, ব্যাস ও ব্যাসার্ধ এবং আয়তনের সংঙ্গাও দেওয়া হয়েছে।[২৪]

হান যুগে (২০২ খ্রিস্টপুর্বাব্দ থেকে ২০২ খ্রিস্টাব্দ) চিন গণিতে সমৃদ্ধি লাভ করে। পশ্চিম হান যুগে ১৮৬ খ্রি.পূ. সালে লিখিত শুয়ান শু শু জ্যামিতিক ধারা নিয়ে লেখা প্রাচীন চিনা গ্রন্থগুলোর একটি। গণিতবিদ, জ্যাতির্বীদ ও আবিষ্কারক ঝাং হেন (৭৮-১৩৯ সাল) জ্যামিতি দিয়ে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতেন। পাই (π) এর মানের ধারণা ২য় খ্রিস্টপূবাব্দে ঝাও লি দিলেও, ঝান হেন পাই এর মান করার আরো নিখুত সূত্র বের করেন।[২৫] ঝাং হেন ৭৩০/২৩২ এর সমান পাই এর মান বের করেন। যদিও তিনি গলীয় তলের আয়তন বের করার জন্য ভিন্ন সূত্র ব্যাবহার করেছিলেন, তিনি ১০ এর বর্গমূল (৩.১৬২ এর প্রায় সমান) ব্যাবহার করে আয়তন বের করেন। যু চোংজি (৪২৯-৫০০ সাল) পাই-এর আরো কাছাকাছি মান বের করেছিলেন। তিনি ৩.১৪১৫৯২৬ ও ৩.১৪১৫৯২৭ এর মাঝামাঝি একটি মান নিয়েছিলেন, তিনি ৩৫৫/১১৩ (密率, মিলু বা বর্ধিত অনুমান) ও ২২/৭ (约率, ইয়েলু বা কাছাকাছি অনুমান) মান দুটিকে পাই হিসেবে অনুমান করেছিলেন।[২৬] পরবর্তিতে ফরাসি গণিতবিদ ফ্রান্সিস ভিয়েট সূত্র ব্যাবহার করে এই দুই মানের মাঝামাঝি পাই এর মান পেয়েছিলেন।

দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট

দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট প্রথম ১৭৬ সালে ব্রোঞ্জের পাতে খোদিত পাওয়া যায়, ৩য় শতাব্দীতে চাও ওয়ে রাজ্যের লিও হুই এটি সংস্কার করেন এবং এর সমালোচনা লেখেন। এই বইয়ে অনেক জ্যামিতিক সমস্যার উল্লেখ ছিলো, যেমন বৃত্ত ও বর্গের তলের ক্ষেত্রফল, বিভিন্ন ত্রি-মাতৃক ঘনবস্তুর আয়তন, এবং এতে পিথাগোরাসের উপপাদ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এতে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের চিত্রসহ প্রমাণ ছিলো,[২৭] এতে ঝু এর ডিউক আর শাং গাও এর পত্রের উল্লেখ ছিলো যাতে রাইট এঙ্গেল ত্রিভুজ ও পিথাগরাসের উপপাদ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো। এর সম্পাদক লিউ হুই ১৯২ বাহু বিশিষ্ট বহুভূজ ব্যাবহার করে পাই-এর মান ৩.১৪১০১৪ এবং ৩০৭২ বাহুবিশিষ্ট বহুভূজ ব্যাবহার করে পাই এর মান ৩.১৪১৫৯ বের করেন। লিউ হুই এর সমসাময়িক ওয়াং ফ্যাং (একজন গণিতবীদ ও জ্যাতির্বীদ যিনি পাই এর মান ৩.১৫৫৫ বা ১৪২/৪৫ বের করেছিলেন) এর মান থেকে এই মান বেশি নির্ভুল ছিলো।[২৮] লিউ হুই গাণিতিক জরিপ ব্যাবহার করে গভীরতা, উচ্চতা, প্রসস্থতা ও ক্ষেত্রফল বের করার বিষয়ে লিখেছেন।[২৯] তিনি আরো আবিষ্কার করেন যে একটি আয়তাকার ভূমি বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তুকে একটি পিরামিড ও একটি চতুস্তলীয় কিলকাকার ঘনবস্তুতে ভাগ করা যায়।[৩০] আর একটি ট্রাপিজয়েড আকৃতির ভূমি বিশিষ্ট একটি কিলকাকার ঘনবস্তু ও এর ঢালগুলোকে পিরামিড দ্বারা পৃথককৃত দুটি কিলকাকার ঘণবস্তুতে ভাগ করা যায়। এছাড়াও, লাও হুই আয়তনের কাভালারির নীতি ও গাউসিয়ান বর্জন নীতি ব্যাখ্যা করেন। দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স থেকে প্রাপ্ত সূত্র গুলো যা হান যুগে জানা ছিলো সেগুলো হলো,

ক্ষেত্রফলের সূত্র[৩১]

বর্গ আয়তক্ষেত্র বৃত্ত সমদ্বিবাহু ত্রিভুজরম্বজ ট্রাপিজিয়াম ডাবল ট্রাপিজিয়াম বৃত্তাংশ অয়ানুলাস (দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্তের মধ্যকার চক্র)

আয়তনের সূত্র

দুটি সমান্তরাল আয়তাকার তলের দুটি অ-আয়তাকার সমান্তরাল তলের পিরামিডের আয়তাকার ভূমি বিশিষ্ট পিরামিডের ফ্রাস্টাম অসমান বাহু বিশিষ্ট আয়তাকাল ভূমির পিড়ামিডের ফ্রাস্টামঘনক প্রিজম আয়তাকার ভূমি ও দুই ঢাল বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তু ট্রাপিজয়েড ভূমি এবং দুই ঢাল বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তু চতুস্তল কিলককিলকাকার বস্তুর ফ্রাস্টম(প্রকৌশলে ব্যাবহারের জন্য) সিলিন্ডার বৃত্তীয় ভূমি বিশিষ্ট সিলিন্ডার কোনকের ফ্রাস্টাম বলয় (গোলক)

প্রাচীন চীনের জ্যামিতিক ক্ষেত্রে অর্জনের ওপর নির্ভর করে পরবর্তিতে আরো অনেক ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব হয়েছিলো, যাদের মধ্যে ছিলেন জ্যাতির্বীদ ও গণিতবিদ শেন ক্যু (১০৩১ থেকে ১০৯৫ সাল) ও ইয়াং হুই (১২৩৮-১২৯৮ সাল) (যিনি প্যাসকেলের ত্রিভুজ আবিষ্কার করেন), জুজুয়াংকি (১৫৬২-১৬৩৩) এবং প্রমুখ।

ইসলামি স্বর্নযুগ

আল জাবর ওয়াল মুখাবালার একটি পৃষ্ঠা

আরও দেখুন: ইসলামি গণিত

৯ম শতকে ইসলামি স্বর্ণযুগ তাঁর শিখরে পৌছায়। এর কেন্দ্র ছিলো বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ বা জ্ঞানগৃহ, যা মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্র, এখানে শুধুমাত্র গ্রিকই নয় একিসাথে ভারতীয় বিজ্ঞানের উন্নতিসাধন হয়েছিলো।

ইসলামি গণিত বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব ও সংখ্যা পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত হলেও, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি এবং গাণিতিক জ্যাতির্বিদ্যায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং বীজগাণিতিক জ্যামিতির আবির্ভাবের কৃতিত্ব ইসলামি গণিতকে দেওয়া হয়।

আল-মাহানি (জন্ম ৮২০) অনেক জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান করেন। আল-খারাজি (জন্ম ৯৫৩) জ্যামিতি ও বীজগণিতকে দুটি আলাদা শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পাটীগণিত দ্বারা মৌলিক অপারেশনগুলোকে প্রতিস্থাপন করেন যা আজকের বীজগণিতের মূল।

থাবিত ইবনে কোররা (লাতিন ভাষায় থেবিত নামে পরিচিত) (জন্ম ৮৩৬) গণিতের অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, তিনি বাস্তব সংখ্যা থেকে সংখ্যা পদ্ধতি, যোগজীকরণ, গোলীয় ত্রিকোনমিতির তত্ত্ব, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি এবং নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা রাখেন। জ্যাতির্বিজ্ঞানে থাবিত টলেমীয় জগৎ সংস্কারে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তাঁকে পরিসংখ্যানের অন্যতম জনক বলা হয়। জ্যামিতিতে থাবিত তাঁর অনুপাত গঠনের ওপর একটি গুরুত্বপুর্ণ বই লেখেন। তাঁর বইয়ে তিনি জ্যামিতিক অনুপাতকে পাটিগণিতের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। গ্রিকরা এবিষয়ে কাজ করলেও, তাঁরা এতে পাটিগণিতের ব্যাবহারে খুব একটা এগোতে পারেনি।

কিছুক্ষেত্রে থাবিত প্লেটো আর এরিস্টটলের সমাচনা করেছেন, বিশেষত গতি বিষয়ে। তিনি জ্যামিতিতে ব্যাবহৃত একটি যুক্তিকে ব্যাবহার করে তাঁর ধারণা গ্রহণ করেছিলেন। জ্যামিতিতে তাঁর আরেকটি অবদান হলো পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সরলীকরণ[৩২]

ইব্রাহিম ইবনে সিনান ইবনে থাবিত (জন্ম ৯০৮), যিনি আর্কিমিদিস থেকে সরল যোগজীকরণের ধারণা দিয়েছিলেন, আল-কুহি (জন্ম ৯৪০) মুসলিম বিশ্বে গ্রিক জ্যামিতিকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং এই ধারা অব্যাহত রাখেন। গণিতবিদ, বিশেষত ইবনে হায়সাম আলোকবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং দর্পনের আলোক চরিত্র বর্ননায় কনিক ব্যাবহার করেছেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান, কাল-রক্ষণ এবং ভূগোল ছিলো তাদের জ্যামিতিক আর ত্রিকোনমিতিক গবেষণার উৎসাহ। উদাহরণস্বরূপ, ইব্রাহিম ইবনে সিনান এবং তাঁর দাদা থাবিব ইবনে কোররা সুর্যঘড়ি তৈরিতে ব্যাবহৃত বক্রতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। আবুল ওয়া’ফা এবং আবু নাসের মনসুর গোলীয় জ্যামিতির ব্যাবহার জ্যাতির্বিজ্ঞানে করেছেন।

রেনেসাঁ

এলব্রেখট দুরারের চিত্রকর্ম যাতে মাশাল্লাহ ইবনে আতহারিকে দেখানো হয়েছে, পৃষ্ঠাটির শিরোনাম “দে সায়েন্টিয়া মোটাস অর্বিস (ল্যাটিন সংস্করণ, ১৫০৪)। অন্যান্য মধ্যযুগের চিত্রের মতো, এখানে কম্পাস একি সাথে ধর্ম আর বিজ্ঞানের প্রতীক (ইশ্বরকে সৃষ্টির কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে)

ধ্রুপদী গ্রিক জ্ঞান ৯ম ও ১০ম শতকের ইসলামি স্বর্ণযুগে লেখা বই গুলোর হাত ধরে ১০ম শতকে ইউরোপে প্রবেশ করে এবং ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। হেনরি আরিটিপ্পুস (মৃত্যু ১১৬২) টলেমির আলমাগেস্ট বইটিকে সিসিলিতে ফিরিয়ে আনেন রাজা প্রথম উইলিয়ামের (রাজত্ব ১১৫৪-১১৬৬) প্রতি উপহার স্বরূপ। একজন বেনামী শিক্ষানুবিস সিসিলিতে ভ্রমণ করেন এবং আলমাগেস্ট সহ ইউক্লিডের বিভিন্ন কর্ম ল্যাটিনে অনুবাদ করেন।[৩৩] সিসিলির মূল অনুবাদ কর্ম গুলো গ্রিক থেকে ল্যাটিনে হলেও, যে লেখাগুলোর গ্রিক পাণ্ডুলিপি ছিলোনা সেক্ষেত্রে আরবি থেকে অনুবাদ করা হয়েছিলো। পালেরমোর ইউজিনিয়াস (মৃত্যু ১২০২) তাঁর তিনটি ভাষার দখল কাজে লাগিয়ে টলেমির অপটিক্স অনুবাদ করেন।[৩৪] ইউক্লিডের অবরহন পদ্ধতির জ্ঞান পুনরায় শেখা হয়েছিলো, ইউক্লিডের (ইউক্লিডীয় জ্যামিতি) এবং খৈয়ামের (বীজগাণিতিক জ্যামিতি) পদ্ধতি অব্যাহত ছিলো এবং এই দুই এর মিশলে নতুন ধারা ও তত্ত্বের উৎপত্তি হয়।

১৪-১৫শতকে রেনেসাঁ শিল্পকর্মে দৃষ্টিকোণের ধারণার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়, যা পূর্বের সমস্ত অর্জনকে ছাড়িয়ে যায়। কোয়ার্ট্রোসেন্ট্রোর রেনেসাঁ স্থাপত্যে নতুন স্থাপত্য রীতি গড়ে ওঠে ও নতুন পদ্ধতি ব্যাবহার শুরু হয়। এর প্রথমিক উদাহরণ পাওয়া যায় ফেলিপো ব্রুনেলেস্কির (১৩৭৭-১৪৪৬) ফ্লোরেন্স শহরের সান লরেঞ্জোতে[৩৫]

১৪১৩ সালে ফেলিপো ফ্লোরেন্সের বিল্ডিং গুলোর নকশা আয়নাতে ধারণ করে দৃষ্টিকোণের জ্যামিতিক রূপরেখা প্রণয়ন করেন, যা বর্তমানে চিত্রকর্মে ব্যাবহৃত হয়। এর পর পরই ফ্লোরেন্সের প্রায় সব শিল্পীই তাদের চিত্রকর্মে দৃষ্টিকোণের ব্যাবহার শুরু করেন,[৩৬] এই পদ্ধতি শুধুমাত্র চিত্রকর্মে গভিরতা ফুটিয়ে তুলতেই ব্যাবহৃত হতোনা, একি সাথে চিত্রের গঠনেও ব্যাবহার করা হতো। এতে চিত্রকর্ম গুলো খাপছাড়া না হয়ে, কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করে।

ফ্লোরেন্সে সঠিক দৃষ্টিকোণ পেইন্টিংগুলির দ্রুত বিস্তার থেকে বোঝা যায়, ব্রুনেলেচি সম্ভবত জেনে থাকলেও (তাঁর বন্ধু গণিতবিদ তোসকানেলির মাধ্যমে)[৩৭] গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রকাশ করেননি। কয়েক দশক পরে, তার বন্ধু লিওন বাতিস্তা আলবার্টি ডি পিকটুরা (১৪৩৫-১৪৩৬) গ্রন্থটি লিখেছিলেন, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে চিত্রকলায় দূরত্ব দেখানোর সঠিক পদ্ধতি এতে বর্ণনা করা হয়েছিলো। আলবার্টি পাডুয়ার স্কুলে এবং আলহাজেন’স অপটিক্স’ অধ্যয়নকারী বিয়াজিও পেলাকানি দা পারমার প্রভাবে আলোকবিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত হন।

পিয়েরো দেল্লা ফ্রান্সেস্কা ১৪৭০ সালে তার দে প্রস্পেকটেভা পিঙ্গেডি গ্রান্থে দেল্লা পিকতুরা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আলবার্টি নিজের কর্ম স্থল সমতলের পরিসংখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন এবং দৃষ্টিকোণের জন্য সামগ্রিক ভিত্তি সৃষ্টি করেন। ডেলা ফ্রান্সেসকা গাণিতিক ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য চিত্রের ব্যবহার শুরু করেন (যা এখন সাধারণ অনুশীলনে পরিণত হয়েছে), যার ফলে আলবার্টির চেয়ে তার গ্রন্থটি বোঝা সহজ হয়েছিল। ডেলা ফ্রান্সেসকা প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্লেটোনিক ঘনবস্তু সঠিকভাবে আঁকেন কারণ তিনি সেগুলি দৃষ্টিকোণ অনুসরণ করে এঁকেছিলেন।

পরিপ্রেক্ষিত কিছুকাল ফ্লোরেন্সেই আবদ্ধ থেকে গিয়েছিলো। জন ভ্যান আইক লন্ডনের দ্যা আর্নোলফিনি পোর্ট্রেটের মতো চিত্রকর্মে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো তৈরি করতে অক্ষম ছিলেন, কারণ তিনি ইতালিতে ঘটে যাওয়া তাত্ত্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে তিনি তার অভ্যন্তরীণ অংশে স্কেলের হেরফের দ্বারা অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রভাব অর্জন করেছিলেন। ধীরে ধীরে এবং আংশিকভাবে শিল্পকলা একাডেমিগুলির মাধ্যমে ইতালীয় কৌশলগুলি ইউরোপ জুড়ে এবং পরে বিশ্বের অন্যান্য অংশে শিল্পীদের প্রশিক্ষণের অংশ হয়ে ওঠে। এই রেনেসাঁ ঐতিহ্যের সমাপ্তি পরিপ্রেক্ষিত, আলোকবিদ্যা এবং প্রজেক্টিভ জ্যামিতির উপর স্থপতি, ভূগোলবিদ এবং আলোকবিদ জিরার্ড ডেসার্গের গবেষণায় এর চূড়ান্ত সংশ্লেষণ খুঁজে পায়।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ান ম্যান(১৪৯০),[৩৮]এতে একজন ব্যক্তিকে তার বাহু এবং পা আলাদা করে দুটি সম্প্রসারিত অবস্থানে চিত্রিত করে একটি বৃত্ত এবং বর্গক্ষেত্রের মাঝে খোদাই করা হয়েছে। অঙ্কনটি সাথে প্রাচীন রোমান স্থপতি ভিট্রুভিয়াস তার গ্রন্থ ডি আর্কিটেক্টুরা গ্রন্থের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত আদর্শ মানব শরীরের জ্যামিতিক অনুপাতের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

আধুনিক জ্যামিতি

সপ্তদশ শতক

র‍্যনে দেকার্তের গ্রন্থ ডিসকোর্স অন ম্যাথড

সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে জ্যামিতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছেইলো। প্রথমটি এবং তনমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ছিলো স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, বা স্থানাঙ্ক ব্যবস্থাসমীকরণ সম্পর্কিত জ্যামিতি। এই আবিষ্কারের জনক ছিলেন র‍্যনে দেকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) এবং পিয়ের দ্য ফের্মা (১৬০১-১৬৬৫)। এটি ছিল ক্যালকুলাসের বিকাশের এবং পদার্থবিজ্ঞানের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণগত বিজ্ঞানের জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রদূত। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ছিলো জিরাড ডিসারগাসের (১৫৯১-১৬৬১) অভিক্ষেপ জ্যামিতির গবেষণা। অভিক্ষেপ জ্যামিতি হলো কন প্রকার মাপঝোক ছাড়া এক ধরণের জ্যামিতি, যেখানে দুটি বিন্দুর পারস্পারিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে হেলেনিস্টিক জ্যামিতিবিদের কিছু অবদান পূর্বেই রেখেছিলেন, এনাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পাপ্পুস (৩৪০ সাল)। পরবর্তিতে জাঁ-ভিক্টর পন্সলেট (১৭৮৮-১৮৬৭) এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন।

১৭ শতকের শেষে, প্রায় একি সময়ে স্যার আইজাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) এবং গট‌ফ্রিড ভিলহেল্ম লাইব‌নিৎস (১৬৪৬-১৭১৭) ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। এর ফলে গাণিতিক বিশ্লেষণ নামে নতুন এক ধারার জন্ম হয়। যদিও এটি জ্যামিতির অংশ নয় এটি জ্যামিতির অনেক ক্ষেত্রে ব্যাবিহৃত হয়েছে এবং পূর্ব সমাধান করা সম্ভব ছিলোনা এমন অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। বক্ররেখার স্পর্শক রেখা নির্ণয় করা, এবং সেই বক্ররেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বের করা। ক্যালকুলাস এই সমস্যাগুলির বেশিরভাগকেই সহজবোধ্য গণনার বিষয়ে পরিণত করে।

অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতক

নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি

ইউক্লিডের পঞ্চম স্বীকার্য (সমান্তরাল স্বীকার্য হিসেবে পরিচিত) বাকি চারটি স্বীকার্য থেকে কখনো বিস্মৃত হয়নি। ইউক্লিডের পরে বাকি চারটি স্বীকার্য থেকে প্রমাণিত হয়নি এমন কয়েকটি অনুসিদ্ধান্ত ব্যাবহার করে এটি প্রমাণের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যার্থ হয়েছিলো। ওমর খইয়ামও পঞ্চম স্বীকার্য প্রমাণে ব্যার্থ হন, তাঁর ইউক্লিডের স্বীকার্যের সমালোচনা এবং নন-ইউক্লিডিয় পদ্ধতি ব্যাবহার করে প্রমাণ করা পরবর্তিতে নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামির জন্ম দেয়। ১৭০০ সাল নাগাদ প্রথম চারটি স্বীকার্যের অনেক গুলো অনুসিদ্ধান্ত আবিষ্কৃত হয় এবং পঞ্চম স্বীকার্য প্রমাণের অনেক ত্রুটি খুজে বের করা হয়। ১৮ শতকে সাক্কারি, লাম্বার্ট এবং লেগেন্ডার এর প্রত্যেকেই এই সমস্যাটির উপর চমৎকার কাজ করেছিলেন, কিন্তু তবুও তাঁরা সাফল্য পাননি। ১৯ শতকে গাউস, বলিয়ই এবং লোবাচেভস্কি সতন্ত্রভাবে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। সমান্তরাল স্বীকার্যটি প্রমাণ করা অসম্ভব ছিল বলে তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন, তারা একটি স্ব-সংগতিপূর্ণ জ্যামিতি তৈরি করতে শুরু করে যেখানে ধরে নেওয়া হয় স্বীকার্যটি ভুল। তাদের এ পদ্ধতি সফল হয়েছিলো এবং এভাবেই নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির সৃষ্টি হয়। ১৮৫৪ সালের দিকে, গাউসের একজন ছাত্র বের্নহার্ট রিমান সকল মসৃণ তলের অন্তর্নিহিত (স্বয়ংসম্পূর্ণ) জ্যামিতির একটি যুগান্তকারী গবেষণায় ক্যালকুলাসের প্রয়োগ করেছিলেন এবং এর ফলে একটি ভিন্ন নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পাওয়া যায়।

উইলিয়াম ব্লেইকের “নিউটন” তাঁর বৈজ্ঞানিক বাস্তুবাদের একক ধারার বিরোধীতার উদাহরণ। এখানে আইজাক নিউটনকে একজন ‘ঐশ্বরিক জ্যামিতিবিদ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে (১৭৯৫)

এটা গাণিতিকভাবে প্রমাণ করা বাকি ছিল যে নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মতোই স্ব-সংগতিপূর্ণ। এবং এটি প্রথম ১৮৬৮ সালে বেলট্রামি এই কাজটি সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথে সমান গাণিতিক ভিত্তিতে নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

যদিও এটি জানা ছিল যে বিভিন্ন জ্যামিতিক তত্ত্ব গাণিতিকভাবে সম্ভব ছিল, প্রশ্ন থেকে যায়, “এই তত্ত্বগুলির মধ্যে কোনটি আমাদের ভৌত জগতের জন্য সঠিক?” গাণিতিক কার্যক্রম দেখিয়েছে যে এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে দিতে হবে, গাণিতিক যুক্তির মাধ্যমে নয়, এবং পরীক্ষায় প্রচুর (আন্তঃনাক্ষত্রিক, অপার্থিব) দূরত্ব জড়িত হওয়ার কারণ উন্মোচিত হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিকাশের সাথে, এই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

গাণিতিক কঠোরতার প্রবর্তন

সমান্তরাল স্বীকার্য সম্পর্কিত সমস্ত গবেষণা প্রকাশ করেছে যে একটি জ্যামিতিবিদের পক্ষে যুক্তি থেকে ভৌত স্থান সম্পর্কে তার স্বজ্ঞাত উপলব্ধি আলাদা করা বেশ কঠিন এবং উপরন্তু, এর মাধ্যমে গুরুত্ব আরো বেশি প্রকাশ করে। পরীক্ষার মাধ্যমে ইউক্লিডের যুক্তিতে কিছু যৌক্তিক অপ্রতুলতা এবং কিছু অনির্ধারিত জ্যামিতিক নীতির উন্মোচিত হয়েছে যা ইউক্লিড কখনও কখনও ধারণা করেছিলেন। এই সমালোচনাটি ক্যালকুলাস এবং বিশ্লেষণের অসীম প্রক্রিয়ার অর্থ যেমন অভিসারণ করে, তেমনি ধারাবাহিকতা সম্পর্কিত সঙ্কটকেও প্রকাশ করে। জ্যামিতিতে স্বতঃসিদ্ধের নতুন স্পষ্ট একটি সেটের প্রয়োজন ছিল, যা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং যা কোনোভাবেই আমাদের ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান সম্পর্কে আমাদের অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভর করবে না। এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধগুলো বর্তমানে হিলবার্টের স্বতঃসিদ্ধ হিসাবে পরিচিত,যার ধারণা ডেভিড হিলবার্ট ১৮৯৪ সালে তাঁর গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি (জ্যামিতির ভিত্তি) শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধে দিয়েছিলেন। স্বতঃসিদ্ধের আরও কয়েকটি সেট কয়েক বছর আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল, কিন্তু হিলবার্টের স্বতঃসিদ্ধের মতো সেগুলো অর্থনীতিতে, কমনীয়তায় এবং ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতার সাথে সাদৃশ্যে তুলনীয় ছিল না।

বিশ্লেষণীক পরিস্থিতি, বা টপোলজি

অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাত্রায় গাণিতিক যুক্তির কিছু অগ্রগতির পুনরাবৃত্তি হয় যখন একই ধারণাগুলি নিয়ে সংখ্যারেখা ব্যাবহার করে গবেষণা করা হয়। এইভাবে একটি মেট্রিক জগতের সাধারণ ধারণা তৈরি কর হয় যাতে যুক্তিটি আরও সহজবোধ্য করা যায় এবং তারপরে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। ক্যালকুলাস- এবং বিশ্লেষণ-সম্পর্কিত ধারণাগুলি অধ্যয়নের এই পদ্ধতিটি বিশ্লেষণ পরিস্থিতি নামে এবং পরে টপোলজি হিসাবে পরিচিতি পায়। সরলতা এবং দৈর্ঘ্য এবং কোণ পরিমাপের সুনির্দিষ্ট সমতার মতো (যা ইউক্লিডীয় এবং অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল) বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তে এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ছিল আরও সরল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যেমন যোজন এবং সীমা। টপোলজি অচিরেই জ্যামিতি বা বিশ্লেষণের উপ-ক্ষেত্রের পরিবর্তে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি পৃথক ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

বিংশ শতাব্দী

বীজগণিতীয় জ্যামিতির বিকাশের মধ্যে রয়েছে বক্ররেখা এবং পৃষ্ঠতলের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রের অধ্যয়ন, যা আন্দ্রে ওয়েইল, আলেকজান্ডার গ্রোথেনডিক এবং জ্যঁ-পিয়েরো সেরের গবেষণা এবং বাস্তব বা জটিল সংখ্যার গবেষণা দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছে। সীমিত জ্যামিতি (শুধুমাত্র সীমিতভাবে অনেকগুলি বিন্দু সহ সমতল বা জগতের অধ্যয়ন) কোডিং তত্ত্ব এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিতে ব্যাবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটারের আবির্ভাবের সাথে সাথে নতুন শাখা যেমন কম্পিউটেশনাল জ্যামিতি বা ডিজিটাল জ্যামিতিতে জ্যামিতিক অ্যালগরিদম, জ্যামিতিক ডেটার বিচ্ছিন্ন উপস্থাপনা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।