অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেট্রোপলিটনের দ্বিতীয় প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পরেই তার অবস্থান। তিনি মহানগর এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমপর্যায়ের বিচারিক এখতিয়ার প্রয়োগ করেন। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে অতিরিক্তি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা যুগ্মসচিব এর সমান।[১] তিনি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ডেপুটি হিসেবে তার অবর্তমানে তার দায়িত্বভার পালন করে থাকেন।
অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনস্থ। তিনি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে মেট্রোপলিটন এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আমলী আদালতের দায়িত্ব পালনকালে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারার বিধান মোতাবেক তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে সংঘটিত যেকোনও অপরাধ আমলে নিতে পারেন। তিনি তার অধিক্ষেত্রের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন করার জন্য যেকোনও আদেশ দিতে পারেন। পুলিশ তদন্ত সহ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের বিবরণ আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করে। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২১ নম্বরে অবস্থিত।
ইতিহাস ও উৎপত্তি
২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের[২] ফলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদের উৎপত্তি হয়।
নিয়োগ
অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের[৩] ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজদের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন ও বদলি করে থাকে।
ক্ষমতা ও এখতিয়ার
অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)সি ধারা অনুযায়ী কোনো অভিযোগ ছাড়াই স্বত:প্রণোদিতভাবে যেকোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা-৬ এর উপধারা-৩ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলতে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমান বিচারিক ক্ষমতা ও এখতিয়ার প্রয়োগ করেন। তিনি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন।[৪][৫]
অপরাধ আমলে গ্রহণ
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমল যোগ্য অপরাধের সংবাদ পেলে তাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেন। আমল অযোগ্য অপরাধ হলে সেটার জন্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয় এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দিলে পুলিশ তদন্ত করতে পারে। অন্যদিকে, আদালতে কেউ গুরুতর অভিযোগ নিয়ে হাজির হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুসারে অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে অপরাধ আমলে নিতে পারেন বা ২০২ ধারা মোতাবেক পুলিশ বা অন্য যে কাউকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। রিপোর্ট প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ধারায় অপরাধ আমলে নিতে পারেন।
রিমান্ড
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপন করবে।[৬] সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট গুরুতর বা সূত্রবিহীন (Clueless) অপরাধের ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক ১৫ দিন পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দিতে পারেন।[৭]
পদমর্যাদা
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদার অবস্থান ২১ নম্বরে। উল্লেখ্য, মেট্রোপলিটন এলাকার উল্লেখযোগ্য শীর্ষ কর্মকর্তাগণের মধ্যে মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৬, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৭, বিভাগীয় কমিশনার/যুগ্ম মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ২১, পুলিশ কমিশনারের পদক্রম ২২ এবং জেলা প্রশাসকের পদক্রম ২৪ নম্বর।[৮]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
“জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান”। “বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ”। “বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ”। “বিচার বিভাগীয় বাতায়ন”। “দন্ডবিধি, ১৮৬০”। “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান”। “ফৌজদারি কার্যবিধি”।