সংরক্ষিত অঞ্চল রাজ্যের মোট আয়তনের ৪ শতাংশ স্থান অধিকার করে আছে।[১] পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চল রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র ১৪ শতাংশ; যা জাতীয় গড় ২৩ শতাংশের বেশ কম।[২] সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একাংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণভাগে অবস্থিত।[৩]

পশ্চিমবঙ্গে মোট ছয়টি জাতীয় উদ্যান ও পনেরোটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে।[৪]
জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
জাতীয় উদ্যানগুলি
নাম | প্রতিষ্ঠা | আয়তন (বর্গকিলোমিটারে ) |
---|---|---|
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান | ১৯৮৪ | ১৩৩০.১০ |
বক্সা জাতীয় উদ্যান | ১৯৯২ | ১১৭.১০ |
গোরুমারা জাতীয় উদ্যান | ১৯৯৪ | ৭৯.৪৫ |
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান[৫] | ২০১২ | ২১৬.৫১ |
নেওড়া(ভ্যালী) উপত্যকা জাতীয় উদ্যান | ১৯৮৬ | ৮৮ |
সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান | ১৯৯২ | ৭৮.৬০ |
বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বেথুয়াডহরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- চাপরামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- নরেন্দ্রপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- রমনাবাগান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- লোথিয়ান দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- সজনেখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- হ্যালিডে দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- সেঞ্চল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বক্সা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- চিন্তামনি কর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য(পক্ষিরালয়)
বন্যপ্রাণী
পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে প্রাপ্ত বন্যপ্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ভারতীয় গণ্ডার, ভারতীয় হাতি, হরিণ, চিতাবাঘ, গৌর,ও কুমির। এখানে প্রচুর পাখিও দেখা যায়। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা রাজ্যে ভিড় জমায়। সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মতো একটি উচ্চে অবস্থিত বনাঞ্চলে মায়া হরিণ, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, তাকিন, সেরো, বনরুই, মিনিভেট ও কালো মথুরা দেখা যায়। সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার সহ গাঙ্গেয় নদী ডলফিন, নদী কচ্ছপ, স্বাদুজলের কুমির ও নোনা জলের কুমির পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্ত লুপ্তপ্রায় প্রজাতির জীবের অন্যতম।[৬] ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটি স্বাভাবিক মৎস্য বিচরণ ক্ষেত্র, এখানে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক মাছেরাও বিচরণ করে।[৬]
উদ্ভিজ্জ
উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষিণবঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সমুদ্রতটবর্তী ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন।[৭] গাঙ্গেয় সমভূমির পলল মৃত্তিকা ও যথেচ্ছ বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চল যথেষ্ট উর্বর।[৭] রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিজ্জপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর মালভূমির সমরূপ। প্রধান বাণিজ্যিক উদ্ভিদ হল শাল (Shorea robusta)। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলে উপকূলীয় উদ্ভিজ্জ লক্ষিত হয়। এখানকার প্রধান উদ্ভিদ ক্যাসুরিনা বা ঝাউগাছ। সুন্দরবনের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান গাছ হল সুন্দরী (Heritiera fomes), এই গাছের নামানুসারেই উক্ত বনাঞ্চলের নামকরণ।[৮] উত্তরবঙ্গের উদ্ভিজ্জ প্রকৃতি ভূমির উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের ঘন বন দেখা যায়।[৯] ১০০০ মিটার ও তদুর্ধ উচ্চতায় উপক্রান্তীয় শ্রেণির বৃক্ষ লক্ষিত হয়। ১৫০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওক, কনিফার ও রডোডেনড্রন প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়।[৯]