১৯৯২-এ বাংলাদেশ

১৯৯২-এ বাংলাদেশ

৯৯২ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২১তম বছর। এটি ছিল খালেদা জিয়া সরকারের প্রথম স্থায়িত্বকালের দ্বিতীয় বছর।

দায়িত্ব

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

খালেদা
জিয়া

জনসংখ্যা

মোট জনসংখ্যা১০৭,৯৮৩,৭০৮
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি কিমি)৮২৯.৬
জনসংখ্যা বৃদ্ধি (বার্ষিক %)২.২%
পুরুষ এবং মহিলা অনুপাত (প্রতি ১০০ জন মহিলা)১০৬.৪
শহুরে জনসংখ্যা (মোট %)২০.৬%
জন্মহার, অপরিশোধিত (প্রতি ১,০০০ জনে)৩৩.৩
মৃত্যুর হার, অপরিশোধিত (প্রতি ১,০০০ জনে)৯.৫
মৃত্যুর হার, ৫ বছরের কম (প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে)১৩২
জন্মের সময় আয়ু, মোট (বছর)৫৯.৬
উর্বরতার হার, মোট (প্রতি মহিলার জন্মে)৪.১

জলবায়ু

১৯৯২-এ বাংলাদেশ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
দৈনিক গড় °সে (°ফা)১৭.৫
(৬৩.৫)
১৯.২
(৬৬.৬)
২৫.৩
(৭৭.৫)
২৮.৩
(৮২.৯)
২৭.৪
(৮১.৩)
২৮.৪
(৮৩.১)
২৭.৭
(৮১.৯)
২৮.১
(৮২.৬)
২৭.৮
(৮২.০)
২৬.৫
(৭৯.৭)
২৩.
(৭৩)
১৮.৩
(৬৪.৯)
২৪.৮
(৭৬.৬)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি)৫.৩
(০.২১)
৪৫.
(১.৮)
১৫.৯
(০.৬৩)
৪৩.৪
(১.৭১)
১৯৭.
(৭.৮)
২৮০.
(১১.০)
৪৮৭.২
(১৯.১৮)
৩২৯.১
(১২.৯৬)
৩০৯.৬
(১২.১৯)
১৪৫.৪
(৫.৭২)
৮.৫
(০.৩৩)
৩.৫
(০.১৪)
১,৮৬৯.৯
(৭৩.৬২)
উৎস: পূর্ব অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (UEA) এর জলবায়ু গবেষণা ইউনিট (CRU)[২]

ঘূর্ণিঝড়

স্যাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, মানচিত্র ঝড়টির পথ ও তীব্রতা দেখাচ্ছে

১৯৯২ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে সাইক্লোন ফরেস্ট নামে একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ৬০০,০০০ মানুষকে উচ্ছেদ করে। ৯ নভেম্বর ক্যারোলাইন দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিপর্যস্ত আবহাওয়ার একটি এলাকা থেকে ঘূর্ণিঝড়টির উদ্ভব হয়। ফরেস্টটি তিন দিন পরে দক্ষিণ চীন সাগরের উপরে আসলে একে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। সাধারণভাবে এটি পশ্চিম অনুসরন করে ছোটে, ১৫ নভেম্বর মালয় উপদ্বীপ বরাবর থাইল্যান্ডে আঘাত করার আগে সিস্টেমটি ক্রমাগতভাবে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের মধ্যে সংগঠিত হয় এবং দক্ষিণের ভিয়েতনাম অতিক্রম করে। এবার বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ফরেস্ট ১৭ নভেম্বর উত্তর দিকে মোড় নেয় এবং এর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে তীব্র হয়। এটি ২০ নভেম্বরে ২৩০ কিমি/ঘন্টা (১৪৫ mph) বাতাসের বেগসহ সাফির-সিম্পসন হারিকেন স্কেলে ৪-সমমানের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছে। আকস্মিকভাবে পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে মোড় নেয়ার কারনে, ঘূর্ণিঝড়টি শীঘ্রই প্রতিকূল পরিবেশগত পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। পরের দিন ভোরে অর্থাৎ ২১ নভেম্বর বিলীন হওয়ার আগে ফরেস্ট একটি দুর্বল সিস্টেম হিসেবে উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমাররে স্থলরেখায় আঘাত করে।

২০ নভেম্বরে ফরেস্ট যখন তার সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছে, তখন সারা বাংলাদেশে আশঙ্কা দেখা দেয় যে, ১৯৯১ সালের এপ্রিলে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ফলস্বরূপ, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যার মধ্যে ১০ লক্ষ পর্যন্ত জনসংখ্যা স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, ঝড়টি আকস্মিকভাবে পূর্ব দিকে মোড় নেয় এবং ৬০০,০০০ বাসিন্দাকে সফলভাবে সরিয়ে নেওয়ার ফলে অসংখ্য জীবন রক্ষা পায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সমস্ত বাড়ির প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও শুধুমাত্র দুটি মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয় এবং সামগ্রিক ক্ষতি তুলনামূলক অনেক কম হয়।

অর্থনীতি

জাতীয় আয়
বর্তমান (মার্কিন ডলার)বর্তমান (টাকা)জিডিপি (%)
জিডিপি$৩১.৭ বিলিয়ন৳১১৯৫.৪ বিলিয়ন
জিডিপি প্রবৃদ্ধি (বার্ষিক %)৫.৪%
মাথাপিছু জিডিপি$২৯৩.৬৳১১,০৭০
কৃষি, মূল্য সংযোজন$৯.৭ বিলিয়ন৳৩৬৪.৮ বিলিয়ন৩০.৫%
শিল্প, মূল্য সংযোজন$৬.৯ বিলিয়ন৳২৫৯.৬ বিলিয়ন২১.৭%
সেবা, ইত্যাদি, মূল্য সংযোজন$১৪.১ বিলিয়ন৳৫৩০.৬ বিলিয়ন৪৪.৪%
পরিশোধের হিসাব
বর্তমান (মার্কিন ডলার)বর্তমান (টাকা)জিডিপি (%)
বর্তমান অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স$১৮০.৮ মিলিয়ন.৬%
পণ্য ও সেবা আমদানি$৪,১৪২.৬ মিলিয়ন৳১৪৭.৬ বিলিয়ন১২.৩%
পণ্য ও সেবা রপ্তানি$২,৫৮১.২ মিলিয়ন৳৯০.৭ বিলিয়ন৭.৬%
সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ, নিট প্রবাহ$৩.৭ মিলিয়ন০.০%
ব্যক্তিগত রেমিটেন্স, প্রাপ্ত$৯১১.৮ মিলিয়ন২.৯%
বছরের শেষে মোট জমা (স্বর্ণসহ)$১,৮৫৩.৫ মিলিয়ন
আমদানির মাসে মোট জমা৫.২

দ্রষ্টব্য: ১৯৯২ সালের জন্য গড় সরকারি বিনিময় হার ছিল BDT প্রতি US$ ৩৮.৯৫।

ঘটনাবলী

জাহানারা ইমাম

  • ২৬ মার্চ – ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ঢাকায় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণ-আদালত নামে পরিচিত মক ট্রায়াল গঠন করে এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ‘দণ্ডাদেশ’ দেয়। [৩]
  • ১০ এপ্রিল – ভারত সীমান্তবর্তী খাগড়াছড়ি জেলার লোগাং গ্রামে লোগাং গণহত্যা সংঘটিত হয়। এই গণহত্যায় বাঙ্গালী বেসামরিক, সীমান্তরক্ষী এবং সেনাবাহিনী জড়িত ছিল। যারা কুড়াল, হ্যাচেট এবং বন্দুক দিয়ে জুম্ম জনগণকে আক্রমণ করে এবং সমস্ত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। [৪] সরকারি তদন্ত পরিষদ ঘোষণা করে যে, মাত্র ১২ জন মারা গেছে, যেখানে বেসরকারী অনুমান অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা [৫] প্রায় ৪০০তে দাঁড়ায়।
  • ২১ অক্টোবর – ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজারে প্রধান ক্যাম্পাসসহ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। [৬]
  • ৭ ডিসেম্বর – বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে বাঙালি হিন্দুদের বিরুদ্ধে একের পর এক সহিংসতা হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হয়। ঢাকার ভোলানাথ গিরি আশ্রমে হামলা ও লুটপাট করা হয়। [৭] পুরান ঢাকায় হিন্দু মালিকানাধীন জুয়েলারি দোকানে লুট হয়। রায়েরবাজারে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। [৮]
  • ৮ ডিসেম্বর – কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলায় হিন্দুদের উপর হামলা হয়। মুসলমানরা ১৪টি হিন্দু মন্দির আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে আটটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ছয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর মধ্যে আলী আকবর ডেলে ৫১টি হিন্দু বাড়ি এবং চৌফলদন্ডীতে আরো ৩০টি বাড়ি বিদ্যমান। [৯]
  • মিয়ানমারের ২৫০,০০০ রোহিঙ্গাদের এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। [১০]

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

স্বাধীনতা দিবসের পুরস্কার

প্রাপকএলাকাটীকা
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংগঠন
কাজী জাকের হোসেনশিক্ষা
জহির রায়হানসাহিত্যমরণোত্তর

একুশে পদক

  1. দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ (সাহিত্য)
  2. মোবাশ্বের আলী (সাহিত্য)
  3. এমাজউদ্দিন আহমদ (শিক্ষা)
  4. খান মোহাম্মদ সালেক (শিক্ষা)
  5. গিয়াস কামাল চৌধুরী (সাংবাদিকতা)
  6. আতাউস সামাদ (সাংবাদিকতা)
  7. শাহনাজ রহমতুল্লাহ (সঙ্গীত)
  8. আমজাদ হোসেন (নাটক)
  9. হাশেম খান (চারুকলা)

খেলাধুলা

  • অলিম্পিক:
  • ঘরোয়া ফুটবল:
  • ক্রিকেট:
    • ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ১৯৯২-৯৩ সার্ক চতুর্ভুজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশের ঢাকায় ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ৪টি দল নিয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানশ্রীলঙ্কার ‘এ’ দল এবং স্বাগতিক দেশের পূর্ণাঙ্গ জাতীয় দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। উপমহাদেশে উদ্ভুত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে লিগ পর্যায়ে টুর্নামেন্টটি পরিত্যাগ করতে হয়। সুতরাং, টুর্নামেন্টের কোন বিজয়ী ছিল না।

জন্ম

মৃত্যু

আরও দেখুন