Author: admin

  • উপনদী

    উপনদী

    উপনদী হলো জল-বিভাজিকার একটি প্রকরণ। বৃহদায়তন নদীর একটি ক্ষুদ্রতর ধারা এসকল উপনদী; কয়েকটি উপনদী মিলিত হয় এক একটি বৃহদাকার নদীর সাথে।

    ব্যুৎপত্তি

    যে সকল নদী কোন একটি উৎস হতে উৎপত্তি হয়ে কিছু দূরত্ব অতিক্রম করে অপর একটি নদীতে পতিত হয় তাকে সেই নদীর (যে নদীতে পতিত হয়েছে) উপনদী বলে।

    কিছু উপনদীর উদাহরণ

    বাংলাদেশে প্রচুর উপনদী রয়েছে; যেমন: তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, আত্রাই,সুবর্ণশ্রী ইত্যাদি নদীগুলো উৎসস্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদীতে গিয়ে মিশেছে; তাই এরা যমুনা নদীর উপনদী।[১]

    আরো দেখুন

    উপনদী

  • আন্তর্জাতিক দূরালাপনি সংযোগ নম্বর

    আন্তর্জাতিক দূরালাপনি সংযোগ নম্বর

    আইটিইউ-টি (ITU-T) এর ই ১৬৪ (E.164) অনুযায়ী বিশ্বের দেশসমূহের আন্তর্জাতিক দূরালাপনি সংযোগ নম্বর বা কোড এর তালিকা।

    এক নজরে

    +০: অব্যবহৃত
    +১: (NANP) US, CA, AI, AG, AS, BB, BS, VG, VI, KY, BM, GD, TC, MS, MP, GU, LC, DM, VC, PR, DO, TT, KN, JM
    +২০: EG+২১০:
    +২১১:
    +২১২: MA, EH
    +২১৩: DZ
    +২১৪:
    +২১৫:
    +২১৬: TN
    +২১৭:
    +২১৮: LY
    +২১৯:
    +২২০: GM
    +২২১: SN
    +২২২: MR
    +২২৩: ML
    +২২৪: GN
    +২২৫: CI
    +২২৬: BF
    +২২৭: NE
    +২২৮: TG
    +২২৯: BJ
    +২৩০: MU
    +২৩১: LR
    +২৩২: SL
    +২৩৩: GH
    +২৩৪: NG
    +২৩৫: TD
    +২৩৬: CF
    +২৩৭: CM
    +২৩৮: CV
    +২৩৯: ST
    +২৪০: GQ
    +২৪১: GA
    +২৪২: CG
    +২৪৩: CD
    +২৪৪: AO
    +২৪৫: GW
    +২৪৬: IO
    +২৪৭: AC
    +২৪৮: SC
    +২৪৯: SD
    +২৫০: RW
    +২৫১: ET
    +২৫২: SO
    +২৫৩: DJ
    +২৫৪: KE
    +২৫৫: TZ
    +২৫৬: UG
    +২৫৭: BI
    +২৫৮: MZ
    +২৫৯:
    +২৬০: ZM
    +২৬১: MG
    +২৬২: RE
    +২৬৩: ZW
    +২৬৪: NA
    +২৬৫: MW
    +২৬৬: LS
    +২৬৭: BW
    +২৬৮: SZ
    +২৬৯: KM
    +27: ZA+28: অব্যবহৃত+২৯০: SH
    +২৯১: ER
    +২৯২: SX প্রস্তাবিত–
    +২৯৩:
    +২৯৪:
    +২৯৫:
    +২৯৬:
    +২৯৭: AW
    +২৯৮: FO
    +২৯৯: GL
    +30: GR+31: NL+32: BE+33: FR+34: ES+350: GI
    +351: PT
    +352: LU
    +353: IE
    +354: IS
    +355: AL
    +356: MT
    +357: CY
    +358: FI
    +359: BG
    +36: HU+370: LT
    +371: LV
    +372: EE
    +373: MD
    +374: AM
    +375: BY
    +376: AD
    +377: MC
    +378: SM
    +379: VA
    +380: UA
    +381: SP, ME
    +382: ME
    +383:
    +384:
    +385: HR
    +386: SI
    +387: BA
    +388: EU
    +389: MK
    +39: IT
    +40: RO+41: CH+420: CZ
    +421: SK
    +422:
    +423: LI
    +424:
    +425:
    +426:
    +427:
    +428:
    +429:
    +43: AT+44: UK+45: DK+46: SE+47: NO+48: PL+49: DE
    +500: FK
    +501: BZ
    +502: GT
    +503: SV
    +504: HN
    +505: NI
    +506: CR
    +507: PA
    +508: PM
    +509: HT
    +51: PE+52: MX+53: CU+54: AR+55: BR+56: CL+57: CO+58: VE+৫৯০: GP
    +৫৯১: BO
    +৫৯২: GY
    +৫৯৩: EC
    +৫৯৪: GF
    +৫৯৫: PY
    +৫৯৬: MQ
    +৫৯৭: SR
    +৫৯৮: UY
    +৫৯৯: AN
    +60: MY+61: AU+62: ID+63: PH+64: NZ+65: SG+৬৬: TH+৬৭০: TL
    +৬৭১:
    +৬৭২: AQ
    +৬৭৩: BN
    +৬৭৪: NR
    +৬৭৫: PG
    +৬৭৬: TO
    +৬৭৭: SB
    +৬৭৮: VU
    +৬৭৯: FJ
    +৬৮০: PW
    +৬৮১: WF
    +৬৮২: CK
    +৬৮৩: NU
    +৬৮৪:
    +৬৮৫: WS
    +৬৮৬: KI
    +৬৮৭: NC
    +৬৮৮: TV
    +৬৮৯: PF
    +৬৯০: TK
    +৬৯১: FM
    +৬৯২: MH
    +৬৯৩:
    +৬৯৪:
    +৬৯৫:
    +৬৯৬:
    +৬৯৭:
    +৬৯৮:
    +৬৯৯:
    +৭: RU, KZ
    +৮০০: XT
    +৮০১:
    +৮০২:
    +৮০৩:
    +৮০৪:
    +৮০৫:
    +৮০৬:
    +৮০৭:
    +৮০৮: XS
    +৮০৯:
    +৮১: JP+৮২: KR+৮৩: অব্যবহৃত+৮৪: VN+৮৫০: KP
    +৮৫১:
    +৮৫২: HK
    +৮৫৩: MO
    +৮৫৪:
    +৮৫৫: KH
    +৮৫৬: LA
    +৮৫৭:
    +৮৫৮:
    +৮৫৯:
    +৮৬: CN+৮৭০: XN
    +৮৭১: XE
    +৮৭২: XF
    +৮৭৩: XI
    +৮৭৪: XW
    +৮৭৫:
    +৮৭৬:
    +৮৭৭:
    +৮৭৮: XP
    +৮৭৯:
    +৮৮০: BD
    +৮৮১: XG
    +৮৮২: XV
    +৮৮৩:
    +৮৮৪:
    +৮৮৫:
    +৮৮৬: TW
    +৮৮৭:
    +৮৮৮:
    +৮৮৯:
    +89: অব্যবহৃত
    +৯০: TR+৯১: IN+৯২: PK+৯৩: AF+৯৪: LK+৯৫: MM+৯৬০: MV
    +৯৬১: LB
    +৯৬২: JO
    +৯৬৩: SY
    +৯৬৪: IQ
    +৯৬৫: KW
    +৯৬৬: SA
    +৯৬৭: YE
    +৯৬৮: OM
    +৯৬৯:
    +৯৭০: PS
    +৯৭১: AE
    +৯৭২: IL
    +৯৭৩: BH
    +৯৭৪: QA
    +৯৭৫: BT
    +৯৭৬: MN
    +৯৭৭: NP
    +৯৭৮:
    +৯৭৯: XR
    +৯৮: IR+৯৯০:
    +৯৯১: XC
    +৯৯২: TJ
    +৯৯৩: TM
    +৯৯৪: AZ
    +৯৯৫: GE
    +৯৯৬: KG
    +৯৯৭:
    +৯৯৮: UZ
    +৯৯৯: XD
    বিশব্যাপী আন্তর্জাতিক দূরালাপনি সংযোগ নম্বর
  • অ্যান্টার্কটিকার ভূগোল

    অ্যান্টার্কটিকার ভূগোল

    অ্যান্টার্কটিকার ভূগোল প্রধানত কুমেরুর সন্নিকটে এর অবস্থান তথা, বরফের দ্বারা প্রভাবিত। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত, এটি কুমেরুর চারদিকে অপ্রতিসমভাবে বিস্তৃত এবং এর সিংহভাগই কুমেরু বৃত্তের দক্ষিণে অবস্থিত। এটি বিশ্ব মহাসাগরের দক্ষিণাংশের জলরাশি দ্বারা পরিবেষ্টিত – মতান্তরে এটি দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা অথবা প্রশান্ত মহাসাগর, অতলান্ত মহাসাগরভারত মহাসাগরের দক্ষিণভাগ দ্বারা বেষ্টিত। এর আয়তন ১.৪ কোটি বর্গ কিমি-র বেশি। অ্যান্টার্কটিকার প্রায় ৯৮% পৃথিবীর বৃহত্তম হিম আচ্ছাদন দ্বারা আবৃত, যাকে অ্যান্টার্কটিক হিম আচ্ছাদন বলা হয় এবং যা স্বাদুপানির বৃহত্তম আধার। গড়ে ১.৬ কিমি পুরুত্ব বিশিষ্ট এই বরফ আচ্ছাদনটি এত ভারী যে তা মহাদেশীয় মূলপ্রস্তরের অবনমন ঘটিয়েছে, কোন কোন স্থানে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে ২.৫ কিমি গভীর পর্যন্ত; যার ফলে তরল পানিবিশিষ্ট হিমবাহনিম্ন হ্রদেরও সৃষ্টি হয়েছে, যেমন ভস্তক হ্রদ। বরফ আচ্ছাদনের পরিসীমার দিকে অনেক হিম তাকহিম উত্থান রয়েছে।

    অঞ্চলসমূহ

    রাজকুমারী অ্যাস্ট্রিড এবং রাজকুমারী রগনিল্দ উপকূল

    বানজ়ার, সাবরিনা ও বাড ল’ গম্বুজ উপকূল

    ভৌগোলিকভাবে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ রস সাগরওয়েডেল সাগরের মাঝে ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিক পর্বতমালা দ্বারা দুটি অসমান অংশে বিভক্ত হয়েছে। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকাপূর্ব অ্যান্টার্কটিকা, মূলমধ্যরেখার সাপেক্ষে যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নামকরণকে অনেকে ইউরোকেন্দ্রিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে গণ্য করেন, যার ফলে বিকল্প নাম হিসেবে ‘ক্ষুদ্রতর অ্যান্টার্কটিকা’ ও ‘বৃহত্তর অ্যান্টার্কটিকা’ কে অনেক সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার অন্তর্ভুক্ত। ক্ষুদ্রতর পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক হিম আচ্ছাদন দ্বারা আবৃত। এই হিম আচ্ছাদন কিছু উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে কারণ এটি ধসে পড়ার ক্ষুদ্র সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তা ঘটে তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা খুব অল্প সময়ের মাঝেই কয়েক মিটার বৃদ্ধি পাবে।

    আগ্নেয়গিরি

    পর্যবেক্ষিত আগ্নেয় গ্যাসের উপস্থিতি ও অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিককালে জমা হওয়া অগ্ন্যুৎপাতজাত প্রস্তরখণ্ড বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডে চারটি আগ্নেয়গিরিকে সক্রিয় বলে মনে করা হয়। এগুলো হল: মেলবোর্ন পর্বত (২,৭৩০ মি) (৭৪°২১’দ., ১৬৪°৪২’পূ.), একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরি; বার্লিন পর্বত (৩,৫০০ মি) (৭৬°০৩’দ., ১৩৫°৫২’প.), যৌগিক আগ্নেয়গিরি; কফম্যান পর্বত (২,৩৬৫ মি) (৭৫°৩৭’দ., ১৩২°২৫’প.), যৌগিক আগ্নেয়গিরি; এবং হ্যাম্পটন পর্বত (৩,৩২৫ মি) (৭৬°২৯’দ., ১২৫°৪৮’প.), একটি আগ্নেয়গিরিকুন্ড। সমুদ্রতীরাতিক্রান্ত দ্বীপসমূহে কয়েকটি আগ্নেয়গিরিতে পূর্ব সক্রিয়তা নথিভুক্ত করা হয়েছে। যেমন: এরেবাস পর্বত (৩,৭৯৫ মি), ১০ টি জ্ঞাত অগ্ন্যুৎপাত ও ১ টি ধারণাকৃত অগ্ন্যুৎপাত রস দ্বীপে অবস্থিত একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরি। মহাদেশের অপর প্রান্তে, ডিসেপশন দ্বীপ (৬২°৫৭’দ., ৬০°৩৮’প.), ১০ টি জ্ঞাত অগ্ন্যুৎপাত ও ৪ টি ধারণাকৃত অগ্ন্যুৎপাত বিশিষ্ট এই আগ্নেয়গিরিকুন্ডটি সবচেয়ে সক্রিয় রয়েছে। ব্যালেনি দ্বীপপুঞ্জের বাকল দ্বীপ (৬৬°৫০’দ., ১৬৩°১২’পূ.), দক্ষিণ শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পেঙ্গুইন দ্বীপ (৬২°০৬’দ., ৫৭°৫৪’প.), পলেট দ্বীপ (৬৩°৩৫’দ., ৫৫°৪৭’প.), এবং লিন্ডেনবার্গ দ্বীপ (৬৪°৫৫’দ., ৫৯°৪০’প.) – এগুলোকেও সক্রিয় বলে ধারণা করা হয়।

    পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা

    এলাকা

    সমুদ্র

    বরফস্তুপ

    দ্বীপসমূহ

    পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা

    এলাকা

    সমুদ্র

    বরফস্তুপ

    দ্বীপসমূহ

    গবেষণাকেন্দ্রসমূহ

    সার্বভৌম প্রভূত্বের দাবীসমূহ

    উপনিবেশ ও অন্যান্য অঞ্চলসমূহ

    আরও দেখুন

  • অ্যান্টার্কটিকায় বসতি স্থাপন

    অ্যান্টার্কটিকায় বসতি স্থাপন

    অ্যান্টার্কটিকায় বসতি স্থাপন বলতে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে সপরিবারে স্থায়ী মানব বসতি গড়ার কথা বোঝানো হয়না। বর্তমানে শুধু কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী ও গবেষক অস্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করেন। অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ যেখানে কোন আদিবাসী বাসিন্দা নেই। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭০ টি ঘাঁটিতে (৪০ টি সারা বছর জুড়ে ও ৩০ টি শুধু গ্রীষ্মকালে) ৩০ টি দেশের বিজ্ঞানী ও কর্মচারী বসবাস করেন। অ্যান্টার্কটিকার আনুমানিক জনসংখ্যা গ্রীষ্মকালে ৪০০০ ও শীতকালে ১০০০ জন। এ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় অন্তত ১১ বার টিবশিশু জন্মগ্রহণের দৃষ্টান্ত রয়েছে, ৮ টি (প্রথমটি সহ) আর্জেন্টিনার এসপেরাঞ্জ়া ঘাঁটিতে এবং ৩ টি চিলির প্রেসিদেন্তে এদুয়ার্দো ফ্রেই মন্তাল্ভা ঘাঁটিতে

    প্রতিবন্ধকতাসমূহ

    আর্কটিকের জীবনধারার সাথে অ্যান্টার্কটিকার তুলনা

    অতীতে বসতি স্থাপনের জল্পনা

    ১৯৫০ এর দশকে একটি সাধারণ ধারণা ছিল কাচের গম্বুজের মাঝে আবদ্ধ নগরের মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে বসতি গড়ে তোলা সম্ভব। বাহ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নগরে শক্তির উৎস এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপায় হবে। অ্যান্টার্কটিকার ৬ মাস ব্যাপী রাতের বেলায় গম্বুজের কেন্দ্রীয় মিনারে একটি শক্তিশালী আলোর উৎস একটি কৃত্রিম সূর্য হিসেবে কাজ করবে বলে প্রস্তাবিত হয়েছিল। এই দৃশ্যকল্পে অ্যান্টার্কটিকার সাথে বহির্বিশ্বে নিয়মিত বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অ্যান্টার্কটিকার হিম আচ্ছাদন খনন করে খনিজ সম্পদ আহরণের শহর স্থাপন করার কথাও ভাবা হয়; তবে, শক্তি এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকার সংশ্লিষ্ট সমস্যা আছে। ম্যাকমার্ডো কেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লীটি পরিবেশ দূষণের উৎস হয়ে ওঠায় অনেক আগেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়।[১] অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থা, যা ধারাবাহিক কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তির সমষ্টি, তা অনুসারে বর্তমানে এন্টার্কটিকায় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এটি পরিবর্তন বা পরিত্যক্ত হলে তবেই বৈধভাবে অ্যান্টার্কটিকায় বড় মাপের বসতি স্থাপন করা যাবে। অপরপক্ষে, অ্যান্টার্কটিকায় স্থায়ী বসতি স্থাপনের অসাধ্যতাই এই ভূখণ্ডের সকল দাবীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থতার কারণ।[২]

    গম্বুজ নগর

    ভূমিতিক গম্বুজের বিকাশ সাধনকারী স্থপতি বাকমিন্‌স্টার ফুলার, অ্যান্টার্কটিকায় গম্বুজ নগর তৈরির সম্ভাবনা উত্থাপন করেন যার মাঝে নিয়ন্ত্রিত জলবায়ুতে স্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।[৩] ১৯৬৫ সালে গম্বুজ নগর নির্মাণের উপর তার প্রথম প্রকাশিত নির্দিষ্ট প্রস্তাবনায় তিনি অ্যান্টার্কটিকাকে এমন একটি প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রথম স্থান হিসেবে আলোচনা করেন।[৪] আমুন্ডসেন-স্কট কুমেরু কেন্দ্রের দ্বিতীয় ঘাঁটিটি (১৯৭৫-২০০৩ পর্যন্ত পরিচালিত) তার এই ধারণাটির একটি ক্ষুদ্রতর সংস্করণ; এটি শুধুমাত্র কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ভবন আবৃত করার মত বড়। ১৯৭১ সালে জর্মন স্থপতি ফ্রেই ওটোর নেতৃত্বে একটি দল ২ কিমি চওড়া ও ৪০,০০০ বাসিন্দা ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট, বায়ু-অবলম্বিত নগর গম্বুজ তৈরির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে।[৫] কিছু গবেষক সম্প্রতি ধারণাটি হালনাগাদ করার চেষ্টা করেছেন।[৬]

    গৃহাভ্যন্তরে জলচাষ ও মাছের চাষ

    বিদ্যুৎ উৎপাদন

    অস্ট্রেলীয় মসন স্টেশন এর পেছনে ডেভিড পর্বতমালা। স্টেশনের কয়েকটি বায়ুকল ছবিতে দৃশ্যমান।

    অ্যান্টার্কটিকায় গ্রীষ্মকালীন ৬ মাস মেরুদিবস হওয়ার কারণে এ সময়ে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নীরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অ্যান্টার্কটিকায় সৌর প্যানেল ব্যবহার করে জাপানের শৌওয়া স্টেশন, ব্রিটিশ রথেরা গবেষণা কেন্দ্র[৭] ও রুমানীয় লাও-রাকোভিৎস স্টেশনে[৮] গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। শীতকালীন ৬ মাস মেরুরাত্রির সময়ে সৌর বিকিরণের অনুপস্থিতিতে প্রধানত বায়ুশক্তি ব্যবহার করে, এবং ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহার করে বছর জুড়ে অ্যান্টার্কটিকায় নির্ভরযোগ্যতার সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সকল মহাদেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকায় বায়ুপ্রবাহের গড় গতি সর্বাধিক[৯] এবং শীতল নিম্নপ্রবাহী বায়ু এ মহাদেশে খুব সাধারণ ঘটনা হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ুশক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত শীতকালে নিম্নপ্রবাহী বায়ুর গতিবেগ সর্বোচ্চ হয়ে থাকে, যার ফলে সৌর বিকিরণের অনুপস্থিতি জনিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব[৭]। দমকা বা ঝটিকা বায়ুপ্রবাহের জন্য অণুভূমিক অক্ষ বায়ুকলের চাইতে উল্লম্ব অক্ষ বায়ুকল বেশি কর্মদক্ষ হওয়ায়[১০] এ ধরনের বায়ুকল অ্যান্টার্কটিকার জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়াও উল্লম্ব অক্ষ বায়ুকল অপেক্ষাকৃত দৃঢ় গঠনসম্পন্ন এবং অধিকাংশ যন্ত্রাদি ভূমির কাছে হওয়ায় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অপেক্ষাকৃত সহজ, যা অ্যান্টার্কটিকার মত বৈরী পরিবেশে সুবিধাজনক। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মসন স্টেশন, দক্ষিণ আফ্রিকার সানায়ে ৪ গবেষণা কেন্দ্রে বায়ুকলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। মসন স্টেশনের বিদ্যুৎ চাহিদার ৭০% এরও বেশি বায়ুশক্তির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও রস দ্বীপে অবস্থিত বায়ু খামার থেকে স্কট ঘাঁটিম্যাকমার্ডো স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে[৭]। অ্যান্টার্কটিক মূল ভূখণ্ড এবং পারিপার্শ্বিক দ্বীপগুলোতে অনেক সংখ্যক সক্রিয় ও সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থাকায় ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। স্কট ঘাঁটি হতে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এরেবাস পর্বতের নিকটে ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদক যন্ত্রগুলো সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে শীতল করার পর বিপরীত আস্রবণের মাধ্যমে স্কট ঘাঁটিতে ব্যবহারের জন্য পানিও পাওয়া সম্ভব হবে[৭]। ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোন প্রকল্প না নেয়া হলেও, ভবিষ্যতে এ ধরনের উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর বিদ্যুৎ ও পানির সুলভ উৎসের কারণে এরেবাস পর্বতের নিকটবর্তী অঞ্চল মানব বসতি স্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

    ভবিষ্যত অবস্থা

    যদিও অ্যান্টার্কটিকার বর্তমান পরিবেশে স্থায়ী মানব বসতি সার্থকভাবে সম্ভব করে তোলা খুব কষ্টকর, অবস্থার ভবিষ্যতে উন্নয়ন ঘটতে পারে। প্রস্তাবিত হয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ফলে, ২২শ শতাব্দীর শুরুতে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ুর অবস্থা অনেকটা আলাস্কা, আইসল্যান্ড ও উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বর্তমান জলবায়ুর মত হবে।[১১] এমনকি অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে উত্তুরে এলাকায়, যেমন অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের পশ্চিমাংসে তখন চাষাবাদ ও ফসল ফলানোও সম্ভব হতে পারে।

    অ্যান্টার্কটিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মানবশিশু

    এমিলিও মার্কোস পালমা (জন্ম জানুয়ারি ৭, ১৯৭৮) অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রথম মানুষ। তিনি একজন আর্জেন্টাইন নাগরিক, যিনি অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের এসপেরাঞ্জ়া ঘাঁটির ফরতীন সার্জেন্তো কাবরাল এ জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার ওজন ছিল ৩.৪ কেজি (৭ পা ৮ আউন্স)। তার পিতা, ক্যাপ্টেন জর্জ এমিলিও পালমা উক্ত ঘাঁটিতে কর্মরত আর্জেন্টাইন সামরিক সদস্যদের নেতা ছিলেন।[১২]

    আরও দেখুন

  • অশ্ব অক্ষাংশ

    অশ্ব অক্ষাংশ

    অশ্ব অক্ষাংশগুলির (Horse latitudes) আপেক্ষিক অবস্থানসমূহ প্রদর্শিত একটি চিত্র

    কর্কটক্রান্তি রেখামকরক্রান্তি রেখার দু’পাশে ৩০°- ৩৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ দেখা যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চল-এর শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, এই অঞ্চলকে “‘অশ্ব অক্ষাংশ”‘(ইংরেজি: Horse Latitude) বা “‘অশ্বাক্ষ”‘ বলা হয়।
    নিরক্ষীয় অঞ্চল-এর উষ্ণ, আর্দ্র ও লঘু বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ঘুরে ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। আবার, সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল থেকে শীতল ও উচ্চচাপের ভারী বায়ু ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার কাছে এই দুই ভারী বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ বলয়-এর সৃষ্টি করে। এই বায়ু প্রধানত নিম্নমুখী (মকরক্রান্তি রেখার কাছে) বা ঊর্ধমুখী (কর্কটক্রান্তি রেখার কাছে) হওয়ায় এই দুই অঞ্চলের বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, তাই এখানকার ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুপ্রবাহ বিশেষ না থাকায় ভূপৃষ্ঠের ওপর সর্বদা একপ্রকার শান্তভাব বজায় থাকে। তাই একে কর্কটীয়মকরীয় শান্তবলয়ও বলা হয়ে থাকে। [১]

    ক্রান্তীয় অঞ্চলে (৩০°- ৩৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে) সবসময়ই বায়ু উপর থেকে নিচে নামে। ফলে এর উষ্ণতা ও জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এইজন্য ক্রান্তীয় অঞ্চলে নিম্নমুখী বায়ুর প্রভাবে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। এইজন্য ক্রান্তীয় অঞ্চলে পৃথিবীর অধিকাংশ উষ্ণ মরুভূমির (সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।

    নামকরণের কারণ

    প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজগুলি কর্কটীয় শান্তবলয়ে (আটলান্টিক মহাসাগর-এ) এলে বায়ুপ্রবাহ না থাকার দরুন গতিহীন হয়ে পড়ত। শোনা যায়, উত্তর আমেরিকা থেকে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগামী কোন এক ঘোড়া-বোঝাই জাহাজের নাবিকরা পানীয় জল ও খাদ্যের অপচয়ের আশঙ্কায় তাদের ঘোড়া বা অশ্বগুলোকে এই অঞ্চলের সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল। সেই থেকে উত্তর গোলার্ধের কর্কটীয় শান্তবলয়ের অন্তর্গত ৩০°- ৩৮° উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বা অশ্বাক্ষ বলা হয়। [২]

    কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, দক্ষিণ গোলার্ধের মকরীয় শান্তবলয়টিকেও (৩০°-৩৮° দক্ষিণ অক্ষাংশ) অশ্ব অক্ষাংশ বলা যায়।

  • অর্থনৈতিক ভূগোল

    অর্থনৈতিক ভূগোল

    অর্থনৈতিক ভূগোল হলো ভূগোলের এমন একটি শাখা যেখানে পরিবেশ ও কালের প্রেক্ষিতে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়।

    তাত্ত্বিক পটভূমি এবং প্রভাব

    অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়গত ব্যাপার গবেষক এর পদ্ধতিগত চিন্তাধারা দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়। আলফ্রেড ওয়েবারের ঐতিহ্য অনুসরণ করে নিকোলাসিকাল অবস্থান তত্ত্ববিদরা, শিল্প অবস্থানের উপর নজর রাখেন এবং পরিমাণগত পদ্ধতি ব্যবহার করেন। ১৯৭০ দশকের পর থেকে নব্যধর্মীয় পদ্ধতির বিরুদ্ধে দুটি বৃহত্তর প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে পদ্ধতিগত শৃঙ্খলা পরিবর্তিত হয়েছে: মার্কসবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতি, ডেভিড হার্ভের কাজ থেকে বেরিয়ে আসছে; এবং নতুন অর্থনৈতিক ভূগোল যা স্বদেশীয় অর্থনীতিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কারণগুলি বিবেচনা করে।

    ইতিহাস

    কফির বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত শিল্প।

    আধুনা অর্থনৈতিক ভূগোলবিদগণ বিবিধ বিশিষ্ট ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করেছেন; যেমন অবস্থান তত্ত্ব এবং স্থানিক বিশ্লেষণ (ভৌগোলিক তথ্য পদ্ধতি ব্যবহার করে), বাজার গবেষণা, যোগাযোগ ভূগোল, আবাসন শিল্পে মূল্য বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বয়িক উন্নয়ন, পরিকল্পনা, ইন্টারনেট ভূগোল, আবিষ্কার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম.[১]

    অধ্যয়নের জন্য অভিগমনগুলি

    অর্থনৈতিক ভূগোল একটি অত্যন্ত বিস্তৃত বিষয় হিসাবে, অর্থনৈতিক ভূগোলবিদরা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রসারের গবেষণায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে অধ্যয়নের জন্য কিছু সুবিন্যস্ত উপায়ে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে:

    • তত্ত্বীয় অর্থনৈতিক ভূগোল
    • আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ভূগোল
    • ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ভূগোল
    • অভিব্যক্তিমূলক অর্থনৈতিক ভূগোল
    • জটিল অর্থনৈতিক ভূগোল
    • আচরণগত অর্থনৈতিক ভূগোল

    শাখাসমূহ

    গবেষণার এই ক্ষেত্রগুলি অন্যান্য ভৌগোলিক বিজ্ঞানগুলির সাথে জড়িত থাকতে পারে।

    অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ

    সাধারণভাবে, অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির স্থানগুলির প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করেন। অন্যদিকে ভূতাত্ত্বিকরা, অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ওপর অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াগুলির প্রভাবের ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন।

    নতুন অর্থনৈতিক ভূগোল

    নতুন অর্থনীতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন অর্থনীতি, সাধারণত বিশ্বায়নের দ্বারা চিহ্নিত। যার ফলে ঘটছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি, জ্ঞান সামগ্রী বৃদ্ধির এবং নারীবাদীতা। অর্থনৈতিক ভূগোলবিদরা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভেদ সহ নতুন অর্থনীতির কারণে সামাজিক ও স্থানিক বিভাগগুলি অধ্যয়ন করতে সক্ষম।

    নতুন অর্থনৈতিক ভূগোল প্রাথমিকভাবে অর্থনীতির সেবা-ভিত্তিক সেক্টরগুলির অন্তর্গত, যা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পাদনা করা হয়। যেমন সেসব শিল্প যেখানে লোকেরা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে।

  • অন্তরীপ

    অন্তরীপ

    অন্তরীপ হচ্ছে এক ধরনের ভূমিরূপ। ভূগোলের পরিভাষায়ঃ ভূপৃষ্ঠের কোন অংশ ক্রমশ সরু হয়ে কোন জল-অংশে (সাধারণতঃ সাগর) প্রবেশ করলে সেই সংকীর্ণ অংশকে অন্তরীপ বলা হয়।[১] অন্তরীপের ভৌগোলিক আয়ুষ্কাল সাধারণত কম হয়।

    গঠনের কারণ

    হিমবাহ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে অন্তরীপ গঠিত হতে পারে।

    Cape Cod and the islands off the Massachusetts coast, from space

    Cape Cornwall, England

    Cape Tisan in Mersin Province, Turkey

  • অধোগমন

    অধোগমন

    অধোগমন হলো একটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যা টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত সীমানায় সংঘটিত হয় যাতে একটি প্লেট অন্যটির নিচে চলে যায় এবং গুরুমন্ডলস্থ অভিকর্ষের কারণে ডুবে যেতে বাধ্য হয়।[১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে যে অঞ্চলে এই প্রক্রিয়াটি ঘটে তাকে অধোগমন অঞ্চল বলে। অধোগমনের হার সাধারণত প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার হয়; বেশিরভাগ প্লেটের প্রান্ত সীমানা বরাবর ঘর্ষণের ফলে পতনের গড় হার প্রায় দুই থেকে আট সেন্টিমিটার হয়।[১]

    সংজ্ঞা

    যখন কোনও মহাসাগরীয় প্লেট একটি মহাদেশীয় প্লেটের নিচে চলে যায় এবং এর তলদেশ দিয়ে সঞ্চলিত হয় তখন তাকে অধোগমন বলে।[২]

    সাধারণ বর্ণনা

    প্লেটগুলো সঞ্চারনশীল হওয়ায় এগুলো বিভিন্ন দিকে পরিভ্রমণ করে এবং এই অবস্থায় কখনও যদি দুটি মহাসাগরীয় প্লেট অথবা একটি মহাসাগরীয় এবং একটি মহাদেশীয় প্লেট মুখোমুখি অগ্রসর হয় তখন প্লেট দুটি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি লম্বালম্বি সম্প্রসারিত মন্ডলের সৃষ্টি করে যেখানে একটি প্লেট অপর প্লেটের নিচ দিয়ে অগ্রসর হয়, ফলে অধোগমনের সৃষ্টি হয়।[৩]

    আরও দেখুন

    ভূতত্ত্বীয় অধোগমন প্রক্রিয়ার কল্প-চিত্

  • অতিবৃষ্টি অরণ্য

    অতিবৃষ্টি অরণ্য

    অতিবৃষ্টি অরণ্য বা ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল হচ্ছে পৃথিবীর সেইসব বনাঞ্চল যেখানে সারা বছর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের বাৎসরিক পরিমাণ কমপক্ষে ১৭৫০ মিলিমিটার হতে ২০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সারা বছর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয় বলে গাছের পাতা সবসময় সবুজ থাকে। ভূপৃষ্ঠের মূলত নিরক্ষীয় হতে ক্রান্তীয় অঞ্চলেই এই অরণ্যগুলি দেখা যায়। অতিবৃষ্টি অরণ্যের মধ্যে বৃহত্তমটি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ক্রান্তীয় অঞ্চলের আমাজন নদীর অববাহিকাতে অবস্থিত আমাজন অরণ্যনিকারাগুয়াবেলিজসহ মধ্য আমেরিকায় এই আমাজন অতিবৃষ্টি অরণ্য বিস্তৃত। এছাড়াও ক্যামেরুন হতে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত নিরক্ষীয় আফ্রিকায়, মায়ানমার হতে ইন্দোনেশিয়াপাপুয়া নিউ গিনি পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব কুইন্সল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে এই অরণ্য দেখা যায়।

    ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য

    মূল নিবন্ধ: ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য

    সাধারণত নিরক্ষরেখা থেকে ১০ ডিগ্রী উত্তর দিকে বা দক্ষিণ দিকে যে অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলির দেখা মেলে, সেগুলিকে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য (ইংরেজি: Tropical rainforest) বলে। এগুলিতে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র এবং কোন বিশেষ শুষ্ক মৌসুম থাকে না। এগুলিতে গড় মাসিক তাপমাত্রা বছরের প্রায় সকল মাসেই ১৮ °সে (৬৪ °ফা) অতিক্রম করে।[১] গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৮ সেমি (৬৬ ইঞ্চি)-এর নিচে হয় না এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,০০০ সেমি (৩৯০ ইঞ্চি)ও অতিক্রম করতে পারে। তবে সাধারণত বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হয়ে থাকে ১৭৫ সেমি (৬৯ ইঞ্চি) থেকে ২০০ সেমি (৭৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত।[২]

    বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্যের ভৌগোলিক অবস্থান

    বিশ্বের অনেকগুলো ক্রান্তীয় অরণ্য সরাসরি মৌসুমি নিম্নচাপ অঞ্চলের (monsoon trough) সাথে সম্পর্কিত, যা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল (ইন্টারট্রপিকাল কনভারজেন্স জোন) নামেও পরিচিত।[৩] নিরক্ষীয় অঞ্চলে মূলত কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার মাঝামাঝি পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্যবিশিষ্ট ক্রান্তীয় আর্দ্র অরণ্য লক্ষ্য করা যায় । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলি অবস্থিত (মায়ানমার (বার্মা) থেকে ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, শ্রীলঙ্কা, সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা এবং ক্যামেরুন থেকে কঙ্গোর (কঙ্গো অতিবৃষ্টি অরণ্য), দক্ষিণ আমেরিকায় (যেমন: আমাজন অরণ্য), মধ্য আমেরিকায় (যেমন: বোসাস, দক্ষিণ ইউকাটান পেনিনসুলা (Yucatán Peninsula)-এল পেটেনবেলিজক্যালাকমুল), অস্ট্রেলিয়া, এবং আরো রয়েছে প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জে (যেমন হাওয়াই)। ক্রান্তীয় অরণ্যগুলিকে “পৃথিবীর ফুসফুস” নামেও ডাকা হয়; তবে সম্প্রতি জানা গেছে যে, অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মোট অক্সিজেন সংযোজনে যথেষ্ট পরিমাণ প্রভাব রাখে না।[৪][৫]

    অতিবৃষ্টি অরণ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ

    ক্রান্তীয় অঞ্চলের অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত ক্রান্তীয় আর্দ্র অরণ্যের পর্যায়ে পড়ে, যার অনেক রকম বিভাজন আছে। বন গবেষকগণ অতিবৃষ্টি অরণ্যকে অন্যান্য অরণ্য থেকে আলাদা করেন কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে, যেমন: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, শুকনো মৌসুমের ব্যাপ্তি, এবং উচ্চতা।[৬]

    তাপমাত্রা

    অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র- বার্ষিক গড় তাপমাত্রা হলো ২৫° সেলসিয়াস (৭৭° ফারেনহাইট)। বিষুবরেখার কাছাকাছি তাপমাত্রায় কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তবে বর্ষাবনে তাপমাত্রা বছরের প্রায় সব সময়ই প্রায় একই রকম থাকে- গড় সর্বনিম্ন মাসিক তাপমাত্রা হলো আরামদায়ক ১৮° সেলসিয়াস (৬৪° ফারেনহাইট)। যেখানকার তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াসের (৩২° ফারেনহাইট) কাছাকাছি চলে আসে সেখানে সাধারণত অতিবৃষ্টি অরণ্য গড়ে উঠে না কারণ বর্ষাবনের উদ্ভিদ ও জীবপ্রজাতি এতো কম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিবৃষ্টি অরণ্যের তাপমাত্রা বিষুবরেখা থেকে এর দূরত্বের ভিত্তিতে শুধু নির্ধারিত হয় না, বরং উচ্চতার উপরও নির্ভর করে। যত উচ্চতা বেশি হয়, রাতের তাপমাত্রা আনুপাতিক হারে তত কমতে থাকে। দৈনিক তাপমাত্রার এরকম উঠা-নামা অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। আর তাই সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,২৮০ ফুট (১,০০০ মিটার) উচ্চতার ঊর্ধ্বে অতিবৃষ্টি অরণ্য দেখা যায় না।[৬]

    বৃষ্টিপাত

    মূলত বৃষ্টিপাতের সাথেই অতিবৃষ্টি অরণ্যের সম্পর্ক। অতিবৃষ্টি অরণ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৮০০ মিলিমিটার (৬ ফুট) থেকে ৯০০০ মিলিমিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি মাসে সাধারণত ১০০ মিলিলিটারেরও (৪ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বলতে গেলে কোন অতিবৃষ্টি অরণ্যে শুকনো মৌসুম থাকেই না। যদি কখনও শুকনো সময় দেখা যায়, তবে সেটা সাধারণত হয় সংক্ষিপ্ত এবং আগে থেকে জানা যায় না।[৬]

    বিভিন্ন জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতের জন্য জলীয়বাষ্প দূর থেকে এলেও অতিবৃষ্টি অরণ্যে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার জলীয়বাষ্পের ৫০ শতাংশই হয় ঐ অতিবৃষ্টি অরণ্যের জলীয়বাষ্প। অতিবৃষ্টি অরণ্যকে ঘিরে থাকা গরম, ভ্যাপসা, আর্দ্রতাপূর্ণ যে বাতাস বিরাজ করে, তা জলীয়বাষ্পের খুব অল্প অংশই বেরিয়ে যেতে দেয়। অতিবৃষ্টি অরণ্যে যতটুকু বৃষ্টিপাত হয় তার অধিকাংশই গাছগুলো তার শাখা প্রশাখায় শুষে নেয়। কিছু পরিমাণ পাতার ফাঁক গলে নিচে পড়ে, যদিও অধিকাংশই নিচে পড়ার আগেই বাষ্প হয়ে যায় এবং আর্দ্র বাতাসে ভেসে থাকে। মৃদু, সদা চলাচলরত বাতাস তখন বাতাসের এই জলীয় অংশকে ঊর্ধ্বাকাশে তুলে নেয় এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে মেঘে পরিণত হয়। যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা জলীয় বাষ্প তৈরি হয়, তখন তা বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে, আবারো বৃষ্টির চক্রকে চালু রাখে।[৬]

    মৃত্তিকার রূপ

    অধিকাংশ অতিবৃষ্টি অরণ্যেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিপুল বৃষ্টিপাত আর প্রচন্ড গরমের কারণে মাটির পুষ্টি গুণাগুণ হারিয়ে যায়। পুষ্টি চাহিদার এই করুণ অবস্থার কারণে অধিকাংশ ক্রান্তীয় বৃক্ষ যতটুকু পুষ্টি পাওয়া যায়, তা তাদের জীবন্ত কোষে জমা করে রাখে। যখন এসব ক্রান্তীয় গাছগুলো মারা যায় তখন তাদের জমা করে রাখা পুষ্টি গুণাগুণ পচনের মাধ্যমে মাটিতে আবার ফিরে আসে। কিন্তু মাটিতে জমা থাকার চেয়ে অন্যান্য জীব বা উদ্ভিদ সাথে সাথেই সেসকল পুষ্টি গুণাগুণ শুষে নেয়।[৬]

    অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন

    অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন অন্যান্য সকল বনের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে এর বিভিন্ন স্তরভিত্তিক উদ্ভিদরাজির সমাবেশের কারণে, যাকে বলা হয় স্ট্রাটা (strata), একবচনে স্ট্র্যাটাম (stratum)।[৬]

    উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য

    অতিবৃষ্টি অরণ্যের উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর যে পরিমাণ, আদতে তা যেকোনো বাসস্থানের চেয়ে সমৃদ্ধ। যদিও বিগত কয়েক লক্ষ কোটি বছরের জলবায়ুগত পরিবর্তনে তাদের পরিমাণ কখনও বেড়েছে কখনও কমেছে, তবুও বর্ষাবন হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি বাস্তুসংস্থান। এই ধারাবাহিকতার কারণেই অতিবৃষ্টি অরণ্যে বেড়ে উঠেছে লক্ষ কোটি প্রজাতি, যার অনেকগুলো এনডেমিক (endemic), বা একমাত্র।[৬]

  • অঞ্চল

    অঞ্চল

    অঞ্চল একটি ভৌগোলিক প্রতিশব্দ যা বিভিন্ন অর্থে ভূগোলের বিভিন্ন শাখায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, অঞ্চল হলো একটি মাঝারি আয়তনের স্থল বা জলভাগ বোঝায়, যা প্রতিপাদিত এলাকার সমুদয় অংশ হতে ক্ষুদ্রতর (উদাহরণ সরূপ যা হতে পুরো পৃথিবী, একটি রাষ্ট্র, একটি নদীর মোহনা এবং অণ্যান্য) এবং কোন নির্দিষ্ট এলাকা হতে বৃহত্তর। একটি অঞ্চলকে অনেকগুলো ক্ষুদ্র এককের সমষ্টি হিসাবে (যেমন “নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য”) অথবা বৃহৎ এলাকার একটি অংশ (যেমন “যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চল”) হিসাবেও বিবেচনা করা যায়।

    অঞ্চল : ইংরেজি “region” শব্দটি ল্যাটিন regio (regere, to rule) থেকে উদ্ভূত, যার বাংলা প্রতিশব্দ অঞ্চল। অনেক দেশ এ শব্দটি রাষ্ট্রের উপবিভাগগুলোর প্রথাগত সত্তা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ইংরেজিতে এ শব্দটি অন্যান্য ভাষায় রীতিসম্মত অনুবাদের সমার্থক শব্দ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশ অঞ্চল শব্দটি প্রশাসনিক একক হিসেবে ব্যবহার করে।

    অঞ্চল হচ্ছে একটি বৃহৎ ভূভাগ যা অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্নতর, যেমন- এটি নিজের রীতিনীতি ও বৈশিষ্ট্য, অথবা এর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবয়বের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। ব্রিটিশ ভূগোলবিদদের ধারণা অনুযায়ী, একটি বৃহৎ, অনির্দিষ্ট এবং ভূপৃষ্ঠের অবিরত অংশ বা পরিসর হচ্ছে অঞ্চল। অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি এলাকা যাকে ভৌগোলিক, কার্মিক, সামাজিক অথবা সাংস্কৃতিক কারণে একটি একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি হতে পারে দেশের একটি প্রশাসনিক এলাকা। অঞ্চল হতে পারে কর্মকাণ্ড বা আগ্রহের একটি এলাকা বা পরিমণ্ডল। অপরদিকে আমেরিকার ভূগোলবিদদের ধারণা অনুযায়ী, একটি বৃহৎ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের অনির্দিষ্ট অংশ হচ্ছে অঞ্চল। অঞ্চল হচ্ছে পৃথিবীর এমন একটি বিভাগ যা নির্দিষ্ট ধরনের উদ্ভিদ বা প্রাণির দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অঞ্চল হচ্ছে একটি এলাকা, স্থান, পরিসর। অঞ্চল হতে পারে পৃথিবী বা মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ।

    অক্সফোর্ড ডিক্সেনারি অনুযায়ী, অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি এলাকা, বিশেষ করে একটি দেশের বা পৃথিবীর অংশবিশেষ যার রয়েছে শনাক্তযোগ্য বৈশিষ্ট্য, কিন্তু সবসময় নির্দিষ্ট সীমানা না-ও থাকতে পারে।

    ভারতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হবে ।
    

    সংজ্ঞা

    অঞ্চল বলতে প্রাকৃতিক, মানবীয় বৈশিষ্ট্যাবলি এবং মানুষ-পরিবেশ মিথষ্ক্রিয়া দ্বারা বিভক্ত ব্যাপক বিস্তৃত এলাকাকে বোঝায়। ভৌগোলিক অঞ্চল ও উপ-অঞ্চলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে অযথার্থভাবে নির্ধারিত এবং কখনো কখনো স্বল্পকালস্থায়ী সীমানা দ্বারা বর্ণনা করা হয়। অবশ্য, মানবীয় ভূগোলে জাতীয় সীমানার মতো অধিকারভুক্ত এলাকা আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

    বৈশ্বিক মহাদেশীয় অঞ্চলগুলো ছাড়াও রারিমণ্ডল যা মহাসাগরগুলো আবৃত করে ও বায়ুমণ্ডলীয় অঞ্চল রয়েছে, যা গ্রহমণ্ডলের স্থল ও জলভাগের উপরে পৃথক জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি করে। স্থল ও জলভাগের বৈশ্বিক অঞ্চলগুলো বিভিন্ন উপঅঞ্চলে বিভক্ত। এ উপ-অঞ্চলগুলো ভৌগোলিকভাবে ব্যাপক ভূতাত্তি¡ক অবয়ব দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা ব্যাপকভবে বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।  

    পারিসরিক এলাকা বর্ণনার ক্ষেত্রে অঞ্চলের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ এবং ভূগোলের বিভিন্ন শাখায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিটি শাখায় এলাকাকে অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমন, পরিবেশ ভূগোলে ব্যবহৃত বাস্তুঅঞ্চল, সাংস্কৃতিক ভূগোলে সাংস্কৃতিক অঞ্চল, জীবভূগোলে জীবঅঞ্চল ইত্যাদি। ভূগোলের যে ক্ষেত্র নিজেই অঞ্চলকে সমীক্ষা করে, তাকে আঞ্চলিক ভূগোল বলা হয়।

    প্রাকৃতিক ভূগোল, বাস্তুবিদ্যা, জীবভূগোল, প্রাণিভূগোল এবং পরিবশ ভূগোলের ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক অবয়ব, যেমন- বাস্তুতন্ত্র, বায়োম, নিষ্কাশন অববাহিকা, প্রাকৃতিক অঞ্চল, পর্বতমালা, মৃত্তিকার ধরন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। অপরদিকে, মানবয়ী ভূগোলে অঞ্চল ও উপঅঞ্চলগুলো মানবজাতির বিবরণসম্পর্কিত (ethnography) জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত করে বর্ণনা করা হয় ।

    একটি অঞ্চলের নিজস্ব প্রকৃতি রয়েছে, যা স্থানান্তর করা যায় না। এর প্রথম প্রকৃতিটি হচ্ছে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ (ভূগঠন, জলবায়ু, মৃত্তিকা স্তর ইত্যাদি)। এর দ্বিতীয় প্রকৃতিটি হচ্ছে ভৌত উপাদানগুলোর যৌগ, যা অতীতে মানুষ নির্মাণ করেছিলো। তৃতীয় প্রকৃতি হচ্ছে এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ, যা নবাগতদের দ্বারা পুনঃস্থাপন করা সম্ভব নয়।

    অঞ্চলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত ভূগোলবিদ ‍পিটার হ্যাগেট (Peter. Haggett: 1975) বলেন, “অঞ্চল হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের এমন একটি এলাকা যার প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট বৈশিষ্ট্য চারপাশের অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্ন।” এ প্রসঙ্গে ডেভিট গ্রিগ (David B. Grigg: 1934)-বলেন, “অঞ্চল হলো এমন একটি এলাকা যা অন্য একটি এলাকা থেকে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে স্বতন্ত্র। এ স্বাতন্ত্রতা একক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।” এছাড়া, ইভা জিআর.টেইলর (Eva G.R. Taylor: 1879-1966)-এর মতে, “সমরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সামান্য বিস্তৃত ভূপৃষ্ঠের একটি একক এলাকাকে অঞ্চল বলা হয়। অঞ্চলগুলো প্রকৃতিগতভাবে একই ধরনের এবং এগুলোর মধ্যে সামাজিক ঐক্য রয়েছে।” রিবার্ট এস. প্লেট (Ribert S. Platt: 1891-1964)-বলেন, “অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি ভৌগোলিক এলাকা, যার নির্ধারিত ভূখণ্ড রয়েছে এবং সে এলাকার অধিবাসীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অঞ্চলটি গড়ে ওঠেছে।” [১]

    প্রাকৃতিক অঞ্চল

    প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল (Natural resource regions) : প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায়শ সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল প্রাকৃতিক ভূগোল বা পারিবেশিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হতে পারে, কিন্তু এতে মানবীয় ভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোলেরও জোড়ালো উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি কয়লা অঞ্চল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক বা ভূরূপতাত্তি¡ক অঞ্চল, কিন্তু এর উন্নয়ন এবং উত্তোলন একে একটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে পরিণত করতে পারে।

    ঐতিহাসিক অঞ্চল

    ঐতিহাসিক অঞ্চল (Historical regions) :  ঐতিহাসিক ভূগোলের ক্ষেত্রটিতে কোনো স্থান বা অঞ্চলের সাথে মানুষের ইতিহাস জড়িত থাকায়, অথবা সময়ের সাথে সাথে স্থান ও অঞ্চলগুলো কীভাবে পরিবর্তীত হয় তা সমীক্ষা করার জন্য এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক ভূগোলবিদ ডি.ডব্লিউ. মেইনিং (D. W. Meinig) তার `The Shaping of America: A Geographical Perspective on 500 Years of History’ নামক পুস্তকে অনেকগুলো ঐতিহাসিক অঞ্চলের বর্ণান দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকার প্রাথমিক উপনিবেশ স্থাপনের জন্য যেসব ইউরোপীয়রা প্রচেষ্টা করেছিলো, তাদের উৎস অঞ্চল শনাক্তকরণ করতে যেয়ে তিনি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের আটলান্টিক উপকূলের প্রটেস্টাইন ধর্মালম্বি অধ্যুষিত অঞ্চলকে চিহ্নিত এবং সেগুলোর বর্ণনা করেছেন। এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে কতকগুলো উপাঞ্চল রয়েছে, যেমন- ‘ওয়েস্টার্ন চ্যানেল কমিউনিটি’ যার রয়েছে আরও কতিপয় উপ-উপাঞ্চল, যেমন- কর্নওয়েল, ডেভন, সমরসেট, ডরসেট প্রভৃতি।

    আমেরিকার ঐতিহাসিক অঞ্চল বর্ণনা করতে যেয়ে মেইনিং নিউফাউন্ডল্যান্ড ও নিউ ইংল্যান্ড উপকূলের গ্রান্ড ব্যাঙ্কসহ মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপক মৎস্যচারণের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি আমেরিকার ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রচলিত অঞ্চল, যেমন- ‘নিউ ফ্রান্স’, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’, ‘মিডল কলোনিস’ ইত্যাদি বর্জন করেন। এর পরিবর্তে তিনি লেখেন “পৃথক উপনিবেশ এলাকা”, সম্ভবত এগুলোর নামকরণ কলোনি স্থাপনের পরে করা হয়েছিলো। এসব অঞ্চল অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সীমানার সাথে যুক্ত ছিলো না। মেইনিং তার লেখায় “গ্রেটার নিউ ইংল্যান্ড” এবং এর প্রধান উপাঞ্চল “প্লেমাউথ”, “নিউ হ্যাভেন উপকূল” (লং আইল্যান্ডের অংশসহ), “রোড আইল্যান্ড”, “ম্যাসাচোসেট বে”, “কানেকটিকাট উপত্যকা” ইত্যাদি ঐতিহাসিক অঞ্চল সম্পর্কিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন।

    পর্যটন অঞ্চল

    পর্যটন অঞ্চল (Tourism region) : পর্যটন অঞ্চল এক ধরনের ভৌগোলিক অঞ্চল। অঞ্চলগুলো সচরাচর সরকারি সংস্থা বা পর্যটন ব্যুরো কর্তৃক সাধারণ সাংস্কৃতিক বা পারিবেশিক বৈশিষ্ট্যসম্বলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে থাকে। এ অঞ্চলগুলো প্রায়শ ভৌগোলিক, ভূতপূর্ব বা বর্তমান প্রশাসনিক অঞ্চল, বা পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় হয় এমনভাবে নামকরণ করা হয়ে থাকে। কখনো কখনো এলাকার গুণগত মানবৃদ্ধির জন্য স্মৃতি জাগানিয়া এবং দর্শনার্থীদের পর্যটনের অভিজ্ঞতা লাভে আগ্রহী করে তুলে এরূপ নাম রাখা হয়। দেশ, রাজ্য, প্রদেশ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক অঞ্চল প্রায়শ পর্যটকদের আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়ে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ব্যাপক প্রয়াস চালিয়ে থাকে।

    প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল

    প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল (Natural resource regions) : প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায়শ সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল প্রাকৃতিক ভূগোল বা পারিবেশিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হতে পারে, কিন্তু এতে মানবীয় ভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোলেরও জোড়ালো উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি কয়লা অঞ্চল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক বা ভূরূপতাত্তি¡ক অঞ্চল, কিন্তু এর উন্নয়ন এবং উত্তোলন একে একটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে পরিণত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চলের উদাহরণ হচ্ছে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র, বড়ো পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্র ইত্যাদি।

    ধর্মীয় অঞ্চল

    ধর্মীয় অঞ্চল (Religious regions) : কখনো কখনো একটি অঞ্চল একটি ধর্মের নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, যেমন- খ্রিস্টানজগৎ, শব্দটি মধ্যযুগরেনেসাঁর সাথে সম্পর্কিত খ্রিষ্টবাদ, যা ছিলো খানিকটা সামাজিক ও রাজনৈতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। আবার মুসলিম বিশ্ব শব্দটি কখনো কখনো বিশ্বের মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলো বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ব্যাপকার্থক শব্দ অঞ্চল বোঝানোর ক্ষেত্রে খুবই দ্ব্যর্থবোধক হয়ে থাকে।

    কতিপয় ধর্মের মধ্যে পরিষ্কারভাবে অঞ্চল সংজ্ঞায়িত করা আছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ, চার্চ অব ইংল্যান্ড, ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ এবং এ ধরনের অন্যান্য গির্জাগুলোর নামের মধ্যেই যাজক সম্পর্কীয় অঞ্চল নির্ধারণ করা থাকে, যেমন- বিশপের এলাকা (diocese), ইপারচি (eparchy), যাজকীয় প্রদেশ (ecclesiastical provinces) এবং প্যারিস (parish) ইত্যাদি।

    উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ৩২টি রোমান যাজকীয় প্রদেশে বিভক্ত। লুথারিয়ান চার্চ মিসৌরি যাজকসভা ৩৩টি ভৌগোলিক জেলায় বিভক্ত, যেগুলো আবার অনেকগুলো আঞ্চলিক সংঘে উপবিভক্ত।

    রাজনৈতিক অঞ্চল

    মানুষ মাত্রই কোন না কোন রূপ রাজনৈতিক এলাকা বা অঞ্চলে বাস করে।রাজনৈতিক পরিচিতি বা অস্তিত্ব রয়েছে ভূপৃষ্ঠের এমন অংশবিশেষকে রাজনৈতিক অঞ্চল বলে।
    রাজনৈতিক অঞ্চলের বৈশিষ্টসমূহঃ ১.অবস্থান, ২.অভিগম্যতা, ৩.আয়তন, ৪.আকৃতি, ৫.সীমানা

    রাজনৈতিক অঞ্চল (Political regions) : রাজনৈতিক ভূগোলের ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলো রাজনৈতিক এককের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, যেমন- সার্বভৌম রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র এককসমূহ, যেমন- প্রশাসনিক অঞ্চল, প্রদেশসমূহ, অঙ্গরাজ্যসমূহ, জেলা, উপজেলা, শহর, পৌরসভা ইত্যাদি এবং নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ে গঠিত বহুজাতিক গ্রুপ যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ এশীয় জাতিসমূহের সংঘ, ন্যাটো, অনির্ধারিত অঞ্চল, যেমন- তৃতীয় বিশ্ব, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি।

    সামরিক ব্যবহার

    সামরিক ক্ষেত্রে অঞ্চল হলো আর্মি গ্রুপ হতে বৃহৎ এবং আর্মি থিয়েটার হতে ক্ষুদ্রতর সামরিক ফরমেশনের সংক্ষেপ। এই ফরমেশনের পূর্ণ নাম হলো সামরিক অঞ্চল। একটি সামরিক অঞ্চল সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি আর্মি গ্রুপ নিয়ে গঠিত। সামরিক অঞ্চলের আয়তন বিভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ১ থেকে ৩ মিলিয়ন সৈন্যের সমন্নয়ে এটি গঠিত হয়। দুই বা ততোধিক সামরিক অঞ্চল দ্বারা একটি সামরিক থিয়েটার গঠিত হতে পারে। একটি সামরিক অঞ্চলের অধিনায়কত্ব করেন প্রধানত একজন পূর্ণাঙ্গ জেনারেল (ইউএস- চার তারা), একজন ফিল্ড মার্শাল বা জেনারেল অফ দ্য আর্মি (ইউএস- পাঁচ তারা), জেনারেলিসিমো (সোভিয়েত ইউনিয়ন) বা জেনারেল অফ দ্য আর্মিস (ইউএস-ছয় তারা) বা ছয় তারা জেনারেলের সমমর্যাদার একজন জেনারেল অফিসার (যেসকল রাষ্ট্রে এই মর্যাদার জেনারেল আছেন তাদের ক্ষেত্রে)। এই ফরমেশনের বিশাল আয়তনের জন্য এর ব্যবহার দূর্লভ। সামরিক অঞ্চলের কিছু উদাহরণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালিন ইউরোপের পূর্ব. পশ্চিম ও দক্ষিণ (প্রধানত ইতালি) রনাঙ্গণ। এই ফরমেশনের (দেখুন সামরিক সংগঠনএপিপি-৬এ)সামরিক মানচিত্র প্রতীক হলো ছয়টি “X”।

    অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ

    আমাদের পৃথিবীকে ভালোভাবে বোঝার বা জানার প্রয়োজনে অঞ্চল তৈরি করা হয়। কথিত অঞ্চলের বিদ্যমান পরিবেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে আমাদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমারেখা সাহায্য করে থাকে।

    একটি অঞ্চলকে অপর একটি অঞ্চল থেকে কতিপয় নির্দেষ্ট ও স্বাতন্ত্রসূচক বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথকভাবে শনাক্ত করা হয়। একটি অঞ্চলের সীমানা কতিপয় নির্বাচিত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। অঞ্চলগুলো আকার-আকৃতিতে পৃথক এবং সেগুলো স্থানীয় বা বিশ্বব্যাপী হতে পারে; পরস্পরকে আবৃত করতে পারে, বা পৃথক থাকতে পারে; সমগ্র পৃথিবীকে ভাগ করতে পারে, অথবা এর মধ্যে নির্বাচিত অংশে আলোকপাত করতে পারে।

    অঞ্চলকে প্রধান তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা- প্রথাগত (formal), কার্মিক (functional) ও উপলব্ধিগত বা উপভাষা (perceptual/vernacular)।

    প্রথাগত বা নিয়মানুগ বা আনুষ্ঠানিক অঞ্চল

    ভৌগোলিক দিক থেকে প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি ভৌগোলিক এলাকা যার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নির্দিষ্ট সীমানা রয়েছে। যেমন, শহর, জেলা, অঙ্গরাজ্য ও দেশের জন্য সীমানা দ্বারা প্রথাগত অঞ্চল গঠিত হয়। এ অঞ্চলগুলোকে প্রায়শ সাধারণ জ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এগুলোর সীমানা স্থানীয় বা জাতীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। একটি অঞ্চলের রূপ দানের জন্য বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়।  প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্বের কতিপয় মানদণ্ড, যেমন- রাজনৈতিক অধিভুক্তি, জাতীয়তা, সংস্কৃতি, সাধারণ ভাষা, ধর্ম, ভৌগোলিক অবয়ব ইত্যাদি অঞ্চল সৃজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

    প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চলের সংজ্ঞায় এমন এলাকার কথা বলা হয়েছে যা সরকারীভাবে নির্ধারিত। একটি প্রথাগত অঞ্চলে একটি শহর, জেলা, রাজ্য বা যেকোনো ধরনের ভৌগোলিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ ধরনের অঞ্চল পরিষ্কারভাবে সীমানা দ্বারা নির্ধারিত এবং জনসাধারণের বোধগম্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য থেকে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রথাগত অঞ্চল গঠিত হয় :

    ১. সর্বজনীন ভাষা,

    ২. ধর্ম

    ৩. জাতীয়তা

    ৪. রাজনৈুতিক অধিভুক্তি

    ৫. সংস্কৃতি ও

    ৬. ভৌগোলিক অবয়ব (জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ, উচ্চতা, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি)।

    এক বা একাধিক সনাক্তকরণযোগ্য অবয়ব ব্যবহার করে একটি অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক করা যায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ব্যবহার করে সৃষ্ট অঞ্চলগুলোর সীমানা তৈরি করা যায়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নির্ধারণের সময় যখন প্রাসঙ্গিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে জনগণের আয় বা ভাষা উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন অঞ্চলটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ চলক হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। নদনদী, পর্বতমালা, উপত্যকা এবং হ্রদগুলোর মতো প্রাকৃতিক সীমানা প্রায়শ কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে থাকে।

    প্রথাগত অঞ্চল বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়, যেগুলো একে চারপাশের এলাকা থেকে পৃথক করে থাকে। স্থানীয় মানুষের সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য ভাষা, আয়, ধর্ম ছাড়াও প্রথাগত অঞ্চল ভ‚প্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে দ্বীপগুলোর রয়েছে প্রাকৃতিক সীমারেখা।

    প্রথাগত অঞ্চল প্রকৃতির দিক থেকে গতিশীল হতে পারে, বলা যেতে পারে এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বিশ্বায়ন, বা বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক স্থানান্তরের কারণে পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যেতে পারে।

    মানদণ্ড নির্বাচনের ওপর একটি প্রথাগত বা আনুষ্ঠানিক অঞ্চল নির্ধারণ সহজ বা কঠিন হতে পারে। যখন একটি ভৌগোলিক অঞ্চল ভূভাগের স্থির অবয়বের বদলে অধিক পরিবর্তনশীল মানবীয় উপাদানের (যেমন- ভাষা) ওপর নির্ভর করে, সেখানে অঞ্চল নির্ধারণ কঠিন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি অঞ্চলের প্রতিবেশীদের মধ্যে ৫০% ইংরেজিতে কথা বলে, এ জনসংখ্যা সারা বছরই একই ধরনের না-ও থাকতে পারে, বরং সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়ে কম-বেশি হতে পারে। তবু, নীতিগতভাবে, প্রতিটি প্রথাগত অঞ্চল কতিপয় গণনাযোগ্য চলকের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

    প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Formal Region) :

    ১. প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Physical Characteristics) : যেকোনো প্রথাগত অঞ্চলকে প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়। যেমন- সুন্দরবন, ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চল।

    ২. সমরূপতা (Uniformity) :  কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রথাগত অঞ্চলের সর্বত্র একই ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- কোনো অঞ্চলে জলবায়ু বা ভূপ্রকৃতি সমরূপভাবে বজায় থাকে।

    ৩. অবিচ্ছিন্নতা (Continuous land mass) : প্রথাগত অঞ্চল প্রাকৃতিক বা মানব সৃষ্ট বৃহৎ কোনো প্রতিবন্ধক দ্বারা ব্যবিচ্ছন্ন হয় না। অর্থাৎ, এটি একটি একক এলাকা যাতে ভূপ্রাকৃতিক সমতা বজায় থাকে।

    ৪. সদৃশ্যতা (Homogeneous) : সমসত্ব আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠে বলে একে সদৃশ্য বৈশিষ্ট্যের অঞ্চল বলা হয়।

    ৫. অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Economic Characteristics) : সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে প্রথাগত অঞ্চল নির্ণয় করার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। অর্থনৈতিক প্রথাগত অঞ্চল চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আয় স্তর, বেকারত্বের হার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ইত্যাদি পরামিতিগুলো ব্যবহৃত হয়।

    ৬. সামাজিক বৈশিষ্ট্য (Social Characteristics) : স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠা অঞ্চলগুলোকে প্রথাগত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন- একটি উপজাতীয় এলাকা।

    ৭. রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Political Characteristics) : রাজনৈতিক কারণে বিশেষ কোনো অঞ্চল মূল ভূখণ্ডের বাইরে বিচ্ছিন্ন হিসেবে অবস্থান করতে পারে। এসব অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যসহ রাজনৈতিক মতাদর্শ সমরূপ হয়ে থাকে। যেমন- সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো।

    কার্মিক বা প্রায়োগিক বা ক্রিয়ামূলক অঞ্চল

    কার্মিক অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি অঞ্চল যা অন্যান্য এলাকা থেকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসারে ভিন্নতর। অন্য কথায়, এটি এমন একটি এলাকা যা প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমসত্ববিশিষ্ট, যেমন- ক্রান্তীয় অঞ্চল, মেরু অঞ্চল, মেরু অঞ্চল ইত্যাদি। এখানে জলবায়ুকে মানদণ্ড ধরে দুটি এলাকা পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়। কার্মিক অঞ্চল প্রায়শ নুড বা গ্রন্থি নামে পরিচিত একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুর চারদিকে গড়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে একটি সপিং সেন্টার চারদিকে প্রতিবেশিদের দ্বারা ঘেরাও থাকে, অথবা উপশহরগুলো একটি শহরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে থাকে। কার্মিক অঞ্চলের ধারণা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার যে সংযোগ ও প্রবাহ সৃষ্টি হয়, সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার পথ প্রদর্শন করে থাকে।

    ফোবার্গ, মর্ফি এবং দ্য ব্লিজের মতে, ‘একটি নির্দিষ্ট সেট কর্মকাণ্ডের দ্বারা অথবা, এগুলোর মধ্যে উদ্ভূত মিশস্ক্রিয়া দ্বারা কার্মিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেখানো যায়।’ সুতরাং, নিম্নোক্তগুলোকে কার্মিক অঞ্চল বিবেচনা করা যায় :

    ১. বৃষ্টিবহুল অরণ্য, যেখানে বৃক্ষ, পাখি ও স্তন্যপায়ী স¤প্রদায় বহু শতাব্দিব্যাপী অবিরতভাবে বসবাস করছে।

    ২.একটি কৃষিজীবী সম্প্রদায়কে কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দ্বারা নির্দিষ্ট করা যায়।

    ৩. একটি কর্পোরেট প্রধান কার্যালয়, যেখানে একটি সংগঠিত জনসংখ্যা উৎপাদন বা সেবার সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।

    একটি কার্মিক বা প্রায়োগিক অঞ্চল একটি কেন্দ্রস্থল বা কেন্দ্রবিন্দুর চারদিক ঘিরে গড়ে ওঠে। চারপাশের এলাকা নির্ভর করে কেন্দ্রস্থলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন, যেমন- বাণিজ্য পথ, রেডিও, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, ইনটানেট সংযোগ ও পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর। একটি কার্মিক অঞ্চলের শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য সমগ্র এলাকায় অবশ্যই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড প্রচলিত থাকতে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সর্বাধিক সংঘটিত হবে অঞ্চলটির কেন্দ্রবিন্দুতে এবং এবং কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে কর্মকাণ্ডের প্রগাঢ়তা কমে আসতে থাকবে। কার্মিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে অবিরত ধারা এর চারপাশের অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এরূপ অবস্থায় নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সমগ্র এলাকাটিই একটি ইউনিটের মতো আচরণ করবে।

    কার্মিক অঞ্চলের সীমানা এলাকাটির অবকাঠামো এবং সেবার উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সময় সময়ে পরিবর্তিত হয়। ভূগোলে পৃথিবীকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এসব অঞ্চলের রয়েছে কৃত্রিম সীমানা, যা সীমানার বাইরের অপেক্ষা ভিতরের অধিক প্রাধান্যবিশিষ্ট গুণাবলিকে পৃথক করার জন্য ব্যবহার করা হয়।   তিন ধরনের অঞ্চল রয়েছে, যথা- প্রথাগত বা নিয়মানুগ, কার্মিক বা প্রায়োগিক এবং ভ্যানাকিউলার বা উপলব্ধিগত। প্রথাগত অঞ্চলগুলোর অফিসিয়াল সীমানা রয়েছে, যেমন- দেশের, রাজ্যের, শহরের সীমানা। উপলব্ধিগত অঞ্চল বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সাংস্কৃতিক উপস্থাপন এবং যা মানুষের মতামতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।[২]

    কার্মিক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Functional Region) :

    ১. আন্তঃনির্ভরশীলতা (Inter-dependence) : কার্মিক অঞ্চলসমূহের পরস্পরের আন্তঃনির্ভরশীলতা একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ, কার্মিক অঞ্চল আন্তঃনির্ভরশীল কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। আবার বিভিন্ন কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে আন্তঃনির্ভরশীলতা দেখা যায়।

    ২. কার্মিক সুসঙ্গতি (Functional Coherence) : কার্মিক অঞ্চলে যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অর্থাৎ কোনো কর্মকাণ্ড অপর কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং সহায়ক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কর্মকাণ্ড একে অপরের পরিপূরক।

    ৩. ক্রমোচ্চতা সম্পর্ক (Hierarchial relationship) : পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কার্মিক অঞ্চলগুলো সাম্প্রতিক হয় বলে এদের মধ্যে একটি শ্রেণিক্রম (hierarchy) লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ  ক্রম এর আকারের ভিত্তিতে ক্রিয়ামূলক অঞ্চলগুলো ছোটো থেকে বড়ো একটি পর্যায় ক্রমিকধারা সৃষ্টি করে।

    ৪. আন্তঃসম্পর্ক (Inter-relation) : আন্তঃসম্পর্কযুক্ত (মিথষ্ক্রিয়া) কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে একটি কার্মিক অঞ্চল গড়ে ওঠে। অর্র্থাৎ কার্মিক অঞ্চলের সীমানা মূলত পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কর্মকাণ্ডের এলাকা নিয়ে গঠিত হয়। আবার বিভিন্ন কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক দেখা যায়। অন্যদিকে দেখা যায়, একটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গ্রন্থি সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়।

    ৫. অসমরূপতা (Heterogeneous) : কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে সমস্ত স্থানের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়। অর্থাৎ এ অঞ্চলে অসংখ্য ভিন্ন প্রকৃতির কর্মকাণ্ড বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। এটা যেমন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি অধিবাসীদের আয়ের সমতা, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

    ৬. গ্রন্থিবহুল (Nodal) : ক্রিয়ামূলক অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন বিন্দু বা গ্রন্থি গড়ে ওঠতে পারে।

    উপলব্ধিগত/উপভাষা অঞ্চল (Perceptual/vernacular regions) : উপলব্ধিগত অঞ্চলকে কখনো কখনো উপভাষা অঞ্চলও বলা হয়। যদিও অনেক ভ‚গোলবিদ এ শব্দগুলোকে পরস্পরের পরিবর্তে ব্যবহার করেন না, বরং ভিন্ন ভিন্ন ধারণা নির্দেশের জন্য এগুলোকে ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে একটি উপভাষা অঞ্চল কোনো এলাকার লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে, সেখানে উপলব্ধিগত অঞ্চল প্রায়শ একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকদের নিশ্চিত বিশ্বাস/অনুভ‚তি/মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

    উপভাষা/উপলব্ধিগত অঞ্চল মনোভাব, উপলব্ধি এবং যোগাযোগের পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল, একারণে তারা প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অবয়বভিত্তিক অঞ্চলের সাথে এর পরিবর্তন করতে অধিক পছন্দ করে থাকেন। ঢাকা উত্তরাঞ্চল, ঢাকা দক্ষিণাঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ইত্যাদি উপলব্ধিগত অঞ্চলের উদাহরণ।