গণপরিবহন সাধারণ যাত্রীদের ও সাধারণ জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ একটি পরিবহন ব্যবস্থা। বিশেষ করে পরিচালিত রুটগুলিতে যাত্রী পরিবহন একটি সময়সূচীতে পরিচালিত হয় এবং এটি একটি নির্ধারিত মূল্য দ্বারা করা হয়। প্রতিটি ট্রিপ। [১][২][৩] পাবলিক পরিবহন বা গণপরিবহনের উদাহরণগুলির মধ্যে শহরের বাস, ট্রলিবাস, ট্রাম (বা হালকা রেল) এবং যাত্রীবাহী ট্রেন, দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা (মেট্রো / সাবওয়ে / ভূগর্ভস্থ ইত্যাদি) এবং ফেরি অন্তর্ভুক্ত। শহরগুলির মধ্যে গণপরিবহনগুলি বিমান, আন্তঃনগর বাস পরিষেবক এবং আন্তঃনগর রেল (ইন্টারসিটি রেল) দ্বারা প্রভাবিত। বিশ্বের অনেক অংশে উচ্চ গতির রেল ব্যবস্থাগুলি বিকশিত হচ্ছে।
বেশিরভাগ গণপরিবহন ব্যবস্থাতে সময়সীমা নির্ধারিত সময়ের সাথে স্থির রুটগুলির সাথে চালিত হয়, যা সর্বাধিক ঘন ঘন পরিষেবা (যেমন: “প্রত্যেক ১৫ মিনিট” দিনের কোনও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়)। অধিকাংশ গণপরিবহনের মধ্যে রয়েছে অন্যান্য উপায়, যেমন ট্রেন চলাচলের জন্য যাত্রীদের যাত্রা বা বাস চলাচলের সুবিধা। [৪] বিশ্বের অনেক অংশে ট্যাক্সি পরিষেবা অফারের চাহিদাগুলি ভাগ করে নিয়েছে, যা নির্দিষ্ট গণপরিবহনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, বা তাদের প্রশংসা করতে পারে, যাত্রীদেরকে ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে নিয়ে আসতে। প্যারাট্রান্সিট কখনও কখনও নিম্ন চাহিদাগুলির ক্ষেত্রে এবং “ডোর-টু-ডোর” পরিষেবা প্রয়োজন এমন লোকদের জন্য ব্যবহৃত হয়। [৫]
নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে হল বিশ্বের অন্যতম দ্রুত গতির ব্যবস্থার একটি । সিস্টেম স্টেশনগুলির সংখ্যা অনুসারে
সাংহাই মেট্রো রুট দৈর্ঘ্যের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম দ্রুত গতির গণপরিবহন ব্যবস্থা।
নগরের সার্বজনীন গণপরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, ও ইউরোপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এশিয়াতে, মুনাফা-চালিত, বেসরকারি মালিকানাধীন এবং জনসাধারণের ব্যবসা বাণিজ্য এবং রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলি প্রধানত পাবলিক ট্রানজিট ব্যবস্থা পরিচালনা করে।[৬][৭] উত্তর আমেরিকায়, “পৌর গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ” সর্বাধিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালায়। ইউরোপে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি উভয় সংস্থা প্রধানত সরকারী গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করে, সরকারী পরিবহন পরিষেবা লাভের দ্বারা চালিত অর্থের দ্বারা ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা সরকারী ভর্তুকি দ্বারা অর্থায়নে পরিচালিত হতে পারে যার মধ্যে প্রতিটি যাত্রীকে ফ্ল্যাট হারের ভাড়া দিতে হয় । সেবা উচ্চ ব্যবহারকারীত্ব সংখ্যার এবং উচ্চ হারে ভারা পুনরুদ্ধার অনুপাতের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে লাভজনক হতে পারে, অথবা নিয়ন্ত্রিত এবং সম্ভবত স্থানীয় বা জাতীয় কর রাজস্ব থেকে ভর্তুকি করা হয়। সম্পূর্ণভাবে ভর্তুকির দ্বারা কিছু শহরগুলিতে বিনামূল্যে গণপরিবহন পরিষেবা প্রদান করে।
ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলির জন্য, পার্থক্য রয়েছ আন্তর্জাতিকভাবে বিদ্যমান জনসাধারণের গণরিবহণের ব্যবহার এবং গণপরিবহনের পরিমাণে। যদিও ওল্ড ওয়ার্ল্ডের দেশগুলো তাদের পুরানো ও ঘন বসতি সম্পর্ন শহরগুলিতে গণপরিবহন পরিবেশন করছে বিস্তৃত ভাবে এবং ঘন গণপরিবহন ব্যবস্থা আছে, তবে নিউ ওয়ার্ল্ডের অনেকগুলি শহরে আরো বেশি করে গণপরিবহনের প্রয়োজন কারণ এই সব শহরে সার্বজনীন পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ভাবে নেই। “ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট” (ইউআইটিপি) হল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অথরিটি এবং পরিচালক, প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নির্মাতা, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং গণপরিবহন সরবরাহ ও পরিষেবার শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। সংস্থাটির ৯২ টি দেশে ৩,৪০০ সদস্য রয়েছে।
খেয়া বা ফেরী হল জলভাগের উপর একটি যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যাত্রীবাহী ছোট জাহাজ যাত্রী পরিবহন করে পূর্বনির্ধারিত গন্তব্যে। অনেক সময় খেয়াতে পণ্যদ্রব্যও পরিবহন করা হয়। ফেরী একটি নির্দিষ্ট পথে অনেকগুলি গন্তব্যে চলাচল করে। খেয়া প্রধানত অগভীর জলভাগ যেমন নদী, হ্রদ বা উপকূলভাগে চলাচল করে। অনেক সময় গভীর জলেও চলাচল করে। খেয়া পরিবহন জলভাগের উপর সেতু বা জলভাগের গভীরে সুড়ঙ্গ পথ তৈরির থেকে অনেক কম খরচ সাপেক্ষ। ফলে জলভাগে ফেরি অনেক লাভ জনক। বিশেষত ভূমধ্যসাগরে উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে চলাচলের জন্য সেতু বা সুড়ঙ্গ বা টানেল অপেক্ষা খেয়া অনেক কার্যকরী।
একটি গাড়ি পারাপারকারী তুর্কী খেয়া
একটি নরওয়ের ফেরীর অভ্যন্তরে যাত্রীদের বসার স্থান।
ইতালির ভেনিসে শহরে জলপথে যাত্রী পরিবহনকারী খেয়া বা ছোট জাহাজগুলোকে ওয়াটার বাস বা ওয়াটার ট্যাক্সি বলা হয়।
ইতিহাস
গ্রীক সভ্যাতার সময় থেকেই খেয়া চলাচল গতি পায়। এই সময় প্রধানত মানুষ ফেরি করেই চালচল করত উপকূল ভাগে ও দ্বীপে। এর পর বিভিন্ন সময় খেয়া ব্যবস্থা ও জলযানগুলি উন্নত হয়েছে।
বিশ্বের কিছু বিখ্যাত ফেরী
এশিয়া
কলকাতা ও হাওড়া-এর মধ্যে চলাচলকারী একটি খেয়া।এটি ভারতের ব্যস্ততম খেয়া পথ গুলির একটি
হংকং শহরে খেয়া ব্যবস্থা খুবই পুরোনো। এই দ্বীপ শহর থেকে খেয়া চিনের মূল ভূখণ্ডে ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপে চলাচল করে। চিনের সাংহাই শহরেও রয়েছে সুসংগঠিত খেয়া ব্যবস্থা।
ভারতের প্রাক্তন রাজধানী ও ভারতের সংস্কৃতির রাজধানীকলকাতায় রয়েছে বিশ্বের প্রচীন খেয়া ব্যবস্থাগুলির একটি। কলকাতা থেকে হাওড়া খেয়া চলাচল করে সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও কলকাতা থেকে বালি, বেলুরমঠ, দক্ষিণেশ্বর প্রভৃতি স্থানে খেয়া চলাচল করে।[১]কলকাতা থেকে উত্তর প্রদেশের বারানসি পর্যন্ত একটি খেয়া চালু রয়েছে। এছাড়া ভারতের মুম্বাই শহরে রয়েছে খেয়া ব্যবস্থা। এই শহরের খেয়াগুলি উপকূল ভাগে চলাচল করে। কেরলের অভ্যান্তরীন জলভাগে একটি খেয়া ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এই ব্যবস্থাটি পরিচালনা করে কেরল রাষ্ট্রীয় জলপথ পরিবহন পর্ষদ।
বাংলাদেশের ঢাকা শহরের সঙ্গে চাঁদপুর, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার সাথে খেয়া চালু রয়েছে। জাপানেও খেয়া ব্যবস্থা চালু রয়েছে টোকিও শহরে।দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মালেশিয়ায় খেয়া চলাচল করে।
ইউরোপ এর ইংলিশ চ্যানেল হল বিশ্বের ব্যস্ততম জলপথ। এই পথে ব্রিটেন যুক্ত হয় ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। এই পথে ফ্রান্সের বহু বন্দর রয়েছে। এছাড়া ব্রিটেন এই পথে জার্মান, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ফেরী পরিচালনা করে। পথটি প্রধানত পণ্য পরিবহন খেয়া চালু করে। তবে বহু পর্যটক বহনকারী খেয়া এই পথে চলে।
বাল্টিক সাগরকে কেন্দ্র করে রাশিয়া, সুইডেন, ফিনল্যান প্রভৃতি এই সাগরের তীরবর্তী দেশের মধ্যে খেয়া ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এমনকি ইটালি, গ্রীস ও স্পেন থেকে খেয়া চলাচল করে এই সাগর তীরের দেশগুলির মধ্যে। তবে এই খেয়ায় বেশিভাগি পর্যটকরা চলাচল করে। অনেক সময় এই খেয়াতে গাড়ি রফতানী হয়।
ইউরোপের আমস্টারডাম শহরে খেয়া চলাচল করে শহরের খাল পথে।
কানাডাতে রয়েছে বেশ কিছু সুপেয় জল বা স্বাদু pদহ। ফলে এই দহ ও দহ থেকে উৎপন্ন নদীগুলিতে খেয়া বা ফেরী চলাচল করে। কানাডার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অবস্থিত পঞ্চ হ্রদ। এই হ্রদে খেয়া পরিসেবা রয়েছে। তবে উত্তর আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেয়া রয়েছে নিউ ইয়র্ক শহরে। এই শহরের ম্যানহাটান ও স্টেইন আইল্যান্ড এর মধ্যে। এই শহরে হাডসন নদীতে খেয়া চলাচল করে। নিউ জর্জিয়া শহরেও খেয়া ব্যবস্থা রয়েছে।
নিউ অর্লিন্সের এলাকায় এছাড়াও অনেক খেয়া যানবাহন ও পথচারীরা উভয় বহন করে। সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য আলজিয়ার্স খেয়া । এই পরিষেবাটি একটানা ১৮১৭ সাল থেকে ও উত্তর আমেরিকা প্রাচীনতম খেয়া পরিচালনা করছে।নিউ ইংল্যান্ড ইন, গাড়ি-বহনকারী মূল ভূখণ্ড কেপ কড এবং মার্থা এর মার্থান ভিনএয়াড এবং নানটুকেট আমরা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে ফেরি উডস হোল, মার্থা এর দ্রাক্ষাক্ষেত্র এবং নানটুকেট বাষ্পচালিত জাহাজ কর্তৃপক্ষ, যা সেইসাথে উডস হোল এবং ভিনেয়ার্ড হ্যাভেন মধ্যে বর্ষব্যাপী পরিচালিত হয় । মৌসুমি সেবা এছাড়াও শ্রম দিবসে ওএক ব্লোফস ও উডস হোল থেকে পরিচালিত হয়। সেখানে, উপরন্তু বাষ্পচালিত জাহাজ কর্তৃপক্ষ খেয়া বা দ্বীপ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি পরিবহনের স্রেফ পদ্ধতি হচ্ছে কোন পুল বা মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপ সংযোগ সুড়ঙ্গ আছে, একমাত্র যোগাযোগ হিসাবে কাজ করে যা ভারী মালবাহী এবং এই ধরনের খাবারের সরবরাহ দ্বারা এবং পেট্রল দ্বীপপুঞ্জ ট্রাকে করা যেতে পারে। উপরন্তু, হাই-লাইন ক্রুজ উভয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে উচ্চ গতির কলহপ্রি়া সেবা, সেইসাথে ঐতিহ্যগত খেয়া, এবং বেশ কিছু ছোট খেয়া চালানো হয় মৌসুমি যাত্রী কেবল পরিষেবা প্রাথমিকভাবে নিউ বেডফোর্ড, সহ অন্যান্য মূল ভূখণ্ড পোর্ট থেকে পর্যটক দিনের আসা যাওয়া গতি বাড়ানোর (নিউ পরিচালনা বেডফোর্ড ফাস্ট খেয়া) ফালমাউথ, (দ্বীপ রানী খেয়া এবং ফালমাউত খেয়া) এবং হারউইচ, (ফ্রিডম ক্রুজ লাইন)। খেয়া এছাড়াও মধ্যে ব্রিজপোর্ট এবং নিউ লন্ডন, এবং লং আইল্যান্ডের উপর পয়েন্ট থেকে রোড আইল্যান্ড ব্লক দ্বীপ যেমন কানেকটিকাট শহরে লং আইল্যান্ডের সাউন্ড জুড়ে রাইডার্স ও যানবাহন নিয়ে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার তাসমেনিয়া দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের মধ্যে ফেরী চলাচল করে। এই পথের দৈর্ঘ্য ৩০০ কিমি। এই পথে ফেরী রাত ও দিনে উভয় সময়ে চালচল করে। তাসমানিয়া দ্বীপের বন্দর শহর ডেভোনপোর্ট ও মূলভূখণ্ডের মেলবর্ন এর মধ্যে এই ফেরী চলাচল করে।
নিউজারল্যান্ড এর উত্র দ্বীপের ওয়েলিংটন ও দক্ষিণ দ্বীপের পিকটন শহরের মধ্যে ৯২ কিমি দীর্ঘ জলপথে ফেরী চলাচল করে। এই পথে এটি সংস্থা ফেরী পরিচালনা করে। এর মধ্যে একটি সরকারি সংস্থা – ইন্টেরিওল্যান্ডার।
ধরন
খেয়া বিভিন্ন ধরনের হয়, ধরন অনুযায়ী খেয়াগুলি বিভিন্ন কার্যে ব্যবহৃত হয়।
দোধারা
ওন্টেরিও খেয়েতে (মানিটোওলিন দ্বীপ) মালপত্র চাপানো হচ্ছে
দোধারা খেয়া হল এমন এক খেয়া ব্যবস্থা যেখানে জাহাজগুলিকে বিপরীত গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার জন্য জাহাজ ঘোরানোর প্রয়োজন নেই। জাহাজগুলি দুই দিকেই চলতে পাড়ে। এই খেয়া ব্যবস্থা রয়েছে স্টেটেন আইল্যান্ড খেয়া, ওয়াশিংটন খেয়া, স্টার খেয়া, নর্থ ক্যারলাইনা খেয়া। অস্ট্রিলিয়ার সিডনিতে এই খেয়া চালু হয়েছে। ২০০৮ সালে চালু হওয়া বিসি খেয়া তিনটি বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম ডাবোল-ওন্ড খেয়া ব্যবস্থা।
হোভারক্রাফট
হোভারক্রাফটের উন্নয়ন হয় প্রধানত ১৯৬০-১৯৯০ সালে। বিশ্বের বৃহত্তম হোভারক্রাফ্ট হল এসআর এন। এটি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মাঝে চলাচল করে। হোভারক্রাফট ক্যাটামেরিন থেকে তাড়াতাড়ি ও কম খরচ সাপেক্ষ। এটি সমুদ্রের মধ্যে ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় সহজে চলাচল করে। পোর্টমাউত থেকে ইসলে অফ ওয়েট পর্যন্ত একটি পথে যাত্রীদের জন্য হোভার পরিসেবা রয়েছে।
ক্যাটামেরিন
ক্যাটামেরিন ব্যবহৃত হয় দ্রুত পরিসেবার জন্য । স্টেন লাইন বিশ্বের বৃহত্তম ক্যাটামেরিন পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থা। ওই সংস্থার স্টেন এইচএসএস ক্লাস ফেরি ইউনাইটেট কিংডম ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে চলাচল করে। ক্যাটামেরিনগুলির মধ্যে ওয়াটারজেট এর ১৯,৬৩৮ টন ওজনের ক্যাটামেরিন ৩৭৫ টি যাত্রীবাহি গাড়ি ও ১,৫০০ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে। ব্রিটেনি ফেরি নরম্যান্ডি এক্সপ্রেস ও নর্ম্যান্ডি ভিটেনি পরিচালনা করে।
রোল অন/রোল অফ
রোল-অন / রোল অফ বৃহৎ প্রচলিত বাহু যার দ্বারা যানবাহন বোর্ড এবং চলে যাবে নামকরণ ।
পনটোন খেয়া
এই খেয়া প্রধানত ব্যবহৃত হয় কম উন্নত দেশে নদী বা দীর্ঘ জলপথে গাড়ি পারাপারে। প্রথমে খেয়া যানটি র্যাম্প জেটিতে যুক্ত করে এর পর গাড়ি চালক গাড়ি চালিয়ে খেয়াতে উঠে। ফেরীটি এর পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যায়।
ট্রেন খেয়া
এই সমস্ত খেয়া ব্যবহারকারী জাহাজে ট্রেন ও তার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকে এই খেয়া সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশে ট্রেন পরিবহন করে।
ঘুরনে খেয়া
স্কটল্যান্ডের একটি ঘুরনে খেয়া
এই খেয়াতে মালপত্র পাশথেকে তোলা হয়। খেয়াতে উপরের অংশ ডেকে উঠে আসে পণ্য তোলার জন্য। এর পর উপরের অংশ ফেরির নিচের অংশের সঙ্গে একই সরল রেখায় আসে এবং গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে।
বায়ু খেয়া
১৯৫০-১৯৬০ সালে বায়ু খেয়া শুরু হয়। এই খেয়াতে উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়। এই খেয়ায় সহজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পাঠানো যায়। এই খেয়ার প্রধান সংস্থাগুলি হল-চ্যানেল এয়ার ব্রিজ, সিলভার সিটি এয়ারওয়েজ এবং কোরসায়ার।
পদ খেয়া
এই ফেরী দেখা যায় ইউরোপের বেলজিয়ামে। এছাড়া চেক প্রজাতন্ত্র ও নেদারল্যন্ডেও দেখা যায়। নিউ ইয়র্ক শহরে রয়েছে ফুট ফেরী।
তারা খেয়া
One of several self-propelled cable ferries that cross the lower reaches of the Murray River in South Australia
এই খেয়া ব্যবহৃত হয় খুব কম দূরত্বের জল পথে। জলভাগের এক তীরে খেয়া থেকে অন্য পাশে তার থাকে খেয়ার সঙ্গে যুক্ত। এই তার টেনে খেয়াকে অন্য পারে নেওয়া হয়। এই ভাবে গাড়ি ও পণ্য পরিবহন করা হয়। সুইজারল্যান্ডে এই ধরনের ফেরী দেখা যায়।[৩]
যানবাহন বহন
ড্রায়ব্রিজ ফেরী লাইন, ফেরী সিলিপ. খেয়ার দরকার হাসিল আকারের তথ্য:৭৪ বাই ১৭.৫ মিটার (২৪৩ ফু × ৫৭ ফু), ২০০০ যাত্রী সঙ্গে ৬০ গাড়ি
খেয়া জাহাজগুলিকে খুবই দরকারের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়। জাহাজগুলি যাতে সহজেই যাত্রী ও পণ্য বন্দর থেকে উঠাতে নামাতে পারে। বিশেষ করে ট্রেন ও গাড়ি পরিবহনের খেয়া জাহাজগুলি নির্মাণের সময় এই সমস্ত জাহাজে র্যাম্প যুক্ত করা হয়।
দুর্ঘটনা
খেয়া চলাচলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জৈবপ্রযুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি মূলত জীববিদ্যাভিত্তিকপ্রযুক্তি, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তি কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়। ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কারোলি এরাকি (Károly Ereky) সর্বপ্রথম biotechnology শব্দটি ব্যবহার করেন।[১]
জাতিসংঘেরকনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভার্সিটি অনুসারে জৈব প্রযুক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:[২]
যে কোনো প্রকারের প্রায়োগিক প্রাযুক্তিক কাজ যা জৈবিক ব্যবস্থা, মৃত জৈবিক বস্তু অথবা এর থেকে প্রাপ্ত কোনো অংশকে ব্যবহার করে কোনো দ্রব্য বা পদ্ধতি উৎপন্ন করে বা পরিবর্তন করে যা বিশেষ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(Any technological application that uses biological systems, dead organisms, or derivatives thereof, to make or modify products or processes for specific use.)
ইতিহাস
জৈবপ্রযুক্তির একটি প্রাচীন প্রয়োগ– গাঁজন (Fermentation)
যদিও কৃষিকাজে জৈবপ্রযুক্তি বহুকাল পূর্বে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবুও উদ্ভিদের চাষাবাদে এর আধুনিকতম প্রয়োগ দেখা যায়। নব্যপ্রস্তর যুগেরনবোপলীয় বিপ্লবের পর থেকেই কৃষিকে খাদ্য উৎপাদনের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়। আধুনিক যুগের কৃষকেরা শ্রেষ্ঠ বীজ নির্বাচন ও ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ফলন ঘটিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যারখাদ্য চাহিদা পূরণ করছে। যখন শস্য ও জমির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন এমন কিছু জীব এবং তাদের থেকে উৎপন্ন পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা মাটিরউর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে, নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ করে, এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ বা পেস্ট দমন করে। কৃষির ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষক ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন উদ্ভিদের সাথে কোনো উদ্ভিদের প্রজনন ঘটিয়ে উদ্ভিদের জিনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ উন্মোচন করেছেন। বিয়ারেরগাঁজন ও আদিম জৈবপ্রযুক্তির একটি উদাহরণ।[৩] এই পদ্ধতিগুলো মেসোপটেমিয়া,মিশর,চিন এবং ভারতে প্রচলিত ছিল এবং পদ্ধতিগুলোর জীববৈজ্ঞানিক মূলনীতিগুলো এখনো একই রয়েছে। ১৮৫৭ সালে লুই পাস্তুরের গাঁজনবিষয়ক কাজের আগে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বোঝা না গেলেও এটিই একপ্রকার খাদ্যকে অন্য প্রকার খাদ্যে রূপান্তরকারী জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ। গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। হাজার বছর ধরে মানুষ শস্য এবং প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী জীবের মিলনে সৃষ্ট সন্তান একই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বৃহত্তম ও সর্বাধিক মিষ্টি ভুট্টা উৎপাদন করা হয়েছিল।[৪] বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞানীগণ অণুজীব সম্পর্কে অনেক তথ্য লাভ করতে থাকেন এবং পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৯১৭ সালেChaim Weizmann বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে প্রথম বিশুদ্ধ অণুজীব কালচারের প্রয়োগ করেন। তিনি Clostridium acetobutylicumব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ভুট্টার স্টার্চ প্রক্রিয়াজাত করে অ্যাসিটোন উৎপাদন করেছিলেন যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধেযুক্তরাজ্যের খুব দরকার ছিল বিস্ফোরক তৈরি করতে।[৫] জৈবপ্রযুক্তি অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নতিতেও ব্যবহৃত হয়েছে। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে Penicillium মোল্ড আবিষ্কার করেন। তার কাজ Howard Florey, Ernst Boris Chain এবং Norman Heatley কে পরিচালিত করে পেনিসিলিন উদ্ভাবনের দিকে। ১৯৪০ সাল থেকে পেনিসিলিন মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে।[৬]
প্রয়োগ
একটি গোলাপ গাছ যার জীবন কতগুলো কোষ হিসেবে শুরু হয়েছিল টিস্যু কালচারে।
৪টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে
স্বাস্থ্য
কৃষি
শিল্পে শস্য ও অন্যান্য পণ্যের (যেমন: জৈবিক উপায়ে পচনশীল প্লাস্টিক, উদ্ভিজ্জ তেল, জৈব জ্বালানি) ব্যবহার
পরিবেশ
অণুজীব দ্বারা জৈব পদার্থ প্রক্রিয়াজাতে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ হয়। আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারও জৈবপ্রযুক্তির উদাহরণ। এছাড়া কোনো জিনিসকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা, বর্জ্য শোধন, কলকারখানা দ্বারা দূষিত এলাকা পরিষ্কার এবং জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখাকে শনাক্ত করার জন্য কিছু শব্দ বা পরিভাষা উদ্ভূত হয়েছে। যেমন:-
গোল্ড বায়োটেকনোলজি বা স্বর্ণ জৈবপ্রযুক্তি
এই শাখাটি মূলত বায়োইনফরমেটিকসের উপরে ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে যা জৈবপ্রযুক্তির একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যেখানে জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো দ্রুত সাজানো যায় এবং তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় কম্পিউটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।এ টি অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- functional genomics, structural genomics and proteomics যা জৈবপ্রযুক্তি ও ওষুধশিল্পের মূল উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে।
ব্লু বায়োটেকনোলজি বা নীল জৈবপ্রযুক্তি
মূলত সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্র। যেমন- জৈব জ্বালানি পরিশোধনের ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণকারী মাইক্রো-শৈবাল ব্যবহৃত হয়।
গ্রিন বায়োটেকনোলজি বা সবুজ জৈবপ্রযুক্তি
জৈবপ্রযুক্তির সেই শাখা, যেখানে জৈবপ্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে একসাথে অনেক উদ্ভিদ উৎপন্ন করা যায়। নির্দিষ্ট পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ (বাইরে থেকে জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে উৎপন্ন উদ্ভিদ) তৈরি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী এবং অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদন।
রেড বায়োটেকনোলজি বা লাল জৈবপ্রযুক্তি
চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এই শাখার অন্তর্গত কাজগুলো হল টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি, বিভিন্ন থেরাপি, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি, কৃত্রিম হরমোন তৈরি, স্টেম কোষ প্রভৃতি তৈরি।
হোয়াইট বায়োটেকনোলজি বা সাদা জৈবপ্রযুক্তি
এটিকে শিল্প জৈবপ্রযুক্তিও বলা হয় কারণ এই প্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন এনজাইমের সঠিক ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ তৈরি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করা হয়।
ইয়োলো বায়োটেকনোলজি বা হলুদ জৈবপ্রযুক্তি
খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি।যেমন- গাঁজন পদ্ধতিতে ওয়াইন, পনির, বিয়ার প্রভৃতি উৎপাদন। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তিও এই শাখার আলোচ্য বিষয়।
গ্রে বা ধূসর জৈবপ্রযুক্তি
পরিবেশে প্রয়োগকৃত জৈবপ্রযুক্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণ দূর করাই এর প্রধান লক্ষ্য।
ব্রাউন বা বাদামি জৈবপ্রযুক্তি
শুষ্ক বা মরুভূমি এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ উৎপাদন করা হয় যা কঠিন প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম।
ভায়োলেট বা বেগুনি জৈবপ্রযুক্তি
এই ক্ষেত্রটি জৈবপ্রযুক্তির আইনি, নৈতিক এবং দার্শনিক দিকগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ডার্ক বা অন্ধকার জৈবপ্রযুক্তি
সন্ত্রাসবাদে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, জীবাণু অস্ত্র তৈরি এই শাখার অন্তর্গত।যেমন- অণুজীব বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে মানুষ, গবাদি পশু বা ফসলের রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করা।
কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক দিকনির্ণয় বা স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সংক্ষেপে স্যাটনাভ এক ধরনের দিকনির্দেশক স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা যা কৃত্রিম উপগ্রহের দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের যেকোনো অবস্থান প্রদর্শন করতে পারে। বেতার সংযোগের মাধ্যমে এটি ছোট বৈদ্যুতিন যন্ত্রের (জিপিএস) নিখুঁত অবস্থান (কিছু মিটার এর মধ্যে) বলে দিতে পারে (অক্ষাংশদ্রাঘিমাংশ ও উচ্চতা)। এই ব্যবস্থা দিকনির্দেশন, অবস্থান বা জিপিএস যুক্ত কোন চলমান বস্তুর অবস্থান নিরূপণে কার্যকরী। জিপিএস-কে নিখুঁত স্থানীয় সময় নিরূপণের কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই মাধ্যম সম্পূর্ণ আন্তর্জাল এবং দূরভাষ নিরপেক্ষ, যদিও এগুলির ব্যবহার এই স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত করে তোলে।
একটি স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা যদি পুরো বিশ্বে কার্যকরী হয় তবে তাকে গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (জিএনএসএস) বলে। ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত মার্কিন NAVSTAR জিপিএস, রাশিয়ান GLONASS এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের Galileo গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের আওতায় আসে। চিন তাদের আঞ্চলিক BeiDou ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমকে ২০২০ নাগাদ BeiDou-2 GNSS গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের দিকে পরিণত করে ফেলার প্রক্রিয়ায় আছে।[১]ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের Galileo ২০২০ নাগাদ পুরোপুরি কার্যকর হয়ে উঠবে।[২]ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর প্রসারণ ব্যবস্থা, GPS Aided GEO Augmented Navigation(GAGAN) NAVSTAR জিপিএস এবং GLONASS -এর কার্যক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ভারত ইতিমধ্যেই IRNSS কে NAVIC (Navigation with Indian Constellation) নাম দিয়ে কক্ষপথে স্থাপন করেছে, এটি মূলত কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহের সমষ্টি যা ভারতীয় উপমহাদেশে দিকনির্দেশনা করতে সক্ষম, জুন ২০১৬ এর মধ্যেই এটি কার্যকর হবে। ফ্রান্স ও জাপান তাদের নিজস্ব জিএনএসএস তৈরির পথে আছে।
পুরো বিশ্বে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য মূলত ১৮ থেকে ৩০ টি মাঝারি উচ্চতার, বিভিন্ন কক্ষীয়তলে বিভক্ত উপগ্রহ পুঞ্জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলির কক্ষীয়তল ৫০°-এর বেশি হেলে থাকে এবং আবর্তনকাল কমবেশি ১২ ঘণ্টা হয়ে থাকে (১২০০০ মাইল বা ২০০০০ কিমি উচ্চতায় এগুলি অবস্থিত)।
বিভাগ
নিখুঁত দিকনির্দেশন, অবস্থান নিরূপণ বা অসামরিক কার্যকলাপে ব্যবহৃত এই স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থাকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় ঃ
জিএনএসএস২ঃ ২য় প্রজন্মের কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণভাবে অসামরিক দিকনির্দেশন করতে সক্ষম, এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ইউরোপিয়ান গালিলিও পজিশনিং সিস্টেম। এটি বিমান চালনায় বিশেষ সহায়ক। এই ব্যবস্থা অসামরিক কাজে এল১ ও এল২ (এল ব্যান্ডএর কম্পাঙ্ক) কম্পাঙ্কের বেতার কাজে লাগায় এবং অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের জন্য এল৫ কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে। অসামরিক কাজে এল২ ও এল৫ কম্পাঙ্ককে জিপিএস ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে এনে জিপিএস কে জিএনএসএস২ তে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
Global Satellite Based Augmentation Systems (SBAS) যেমন Omnistar এবং StarFire।
আঞ্চলিক SBAS যার মধ্যে পড়ে WAAS (আমেরিকা), EGNOS (ইইউ), MSAS (জাপান) and GAGAN (ভারত)।
আঞ্চলিক স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন যেমন চিনের Beidou, ভারতের NAVIC, আর জাপানের প্রস্তাবিত QZSS।
মহাদেশীয় ভূনির্ভর প্রসারণ ব্যবস্থা (GBAS) উদাহরণ হিসাবে অস্ট্রেলিয়ান GRAS এবং আমেরিকার Department of Transportation National Differential GPS (DGPS) ব্যবস্থা।
আগে এই ধরনের কাজে DECCA, LORAN, GEE আর Omega radio navigationনামক ভূ-স্থাপিত বেতার মূলক যন্ত্র ব্যবহার করা হত। মূলত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘের বেতার প্রেরক একটি যন্ত্র প্রধান একটি সঙ্কেত পাঠায়, এই প্রেরক যন্ত্রের অবস্থান মাস্টার বা প্রভু অবস্থান হিসাবে পরিচিত। এই সঙ্কেত পাঠাবার কিছু মুহূর্ত পরেই আরও একটি সঙ্কেত কিছু “ভৃত্য” প্রেরক পাঠায়- এদের অবস্থান আলাদা আলাদা জায়গায় হয়ে থাকে। গ্রাহক যন্ত্রে এই দুটি সঙ্কেত গ্রহণের সময়ের তারতম্য থেকে গ্রাহকের অবস্থান প্রত্যেক “ভৃত্য” প্রেরক থেকে কতদূরে তা জানা যায়, যা অবস্থান নিরূপণে সহায়ক।
প্রথম স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা ছিল Transit। মার্কিন সেনা এই স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ১৯৬০ সালে কার্যকর করে। এর কাজ ডপলার ক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই স্যাটেলাইট পূর্বনির্ধারিত পথে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘের বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করে। স্যাটেলাইট এর গতি এই তরঙ্গদৈর্ঘের ওপর প্রভাব ফেলে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই তরঙ্গদৈর্ঘের পরিবর্তন দুটি সাম্ভাব্য জায়গা নির্দেশ করে। এভাবে বেশকিছু তথ্যসমষ্টি একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্দেশ করে- যা হল গ্রাহকের অবস্থান।
স্যাটেলাইটের নিখুঁত অবস্থান স্বল্প কিছু সময়ের জন্যেই প্রযোজ্য। গণনায় বিশুদ্ধতা আনার জন্য মার্কিন জলসেনা (USNO) নিরবচ্ছিন্নভাবে এই স্যাটেলাইটের নিখুঁত কক্ষীয় অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে যেতে থাকতো। যখনই কক্ষীয় আচরণ পাল্টাত তখনই নতুন অবস্থান সংবলিত তথ্য স্যাটেলাইটে প্রেরণ করা হত। এভাবে কক্ষীয় গণনায় বিশুদ্ধতা আনা হত।
এখন আধুনিক ব্যবস্থা আরো উন্নত। কক্ষীয় তথ্য ছাড়াও এখন স্যাটেলাইটগুলি তথ্য পাঠাবার নিখুঁত সময়ও মূল তথ্যের সাথে মিশিয়ে প্রেরণ করে। স্যাটেলাইট পুঞ্জের সময় গণনার কাজে একটি পারমাণবিক ঘড়ি সাহায্য করে। প্রেরক যন্ত্র অন্তত তিনটি বা চারটি স্যাটেলাইট থেকে তথ্য গ্রহণ করে (সমুদ্রতলে)। এরকম কিছু তথ্যসমষ্টি গ্রাহকের নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান নিরূপণ করে। একাজে trilateration গণিত ব্যবহার করা হয়। এখানে আরও দেখুন।
প্রত্যেক পরিমাপ গ্রাহককে প্রেরককেন্দ্রিক গোলক তলে আসীন করে। এরকম বেশ কিছু তথ্যপুঞ্জ গ্রাহকের অবস্থান নির্দেশ করে। গ্রাহক ও প্রেরকের আপেক্ষিক গতি ও আয়নমণ্ডলে বেতারের গতিহ্রাস গণনায় বিশুদ্ধতা কমিয়ে আনে। এর জন্য চার বা তার বেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়। Kalman filtering এর মত প্রণালী বিচ্ছিন্ন তথ্যস্রোতকে বিশ্লেষণ ও নিখুঁত অবস্থান নির্দেশ করে অবস্থান সময় ও গতির সঠিক পরিমাপ দেয়।
সামরিক ও অসামরিক ব্যবহার
ল্যাপটপ এর সাথে জিপিএস গ্রাহক যুক্ত আছে
সামরিক প্রয়োগ স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনের প্রধান অনুপ্রেরণা। লক্ষ্যে সঠিক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আঘাত করতে পারা স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনএর অন্ননতম অবদান। এতে অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা বাড়ে ও ভুল লক্ষ্যে আঘাতের সম্ভাবনা কমে। সৈন্যদলকে সঠিক ভাবে চালনা এবং তাদের অবস্থান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ সহায়ক।
অসামরিক প্রয়োগের বেশিরভাগ জুড়েই আছে দিকনির্দেসন। রেলপথ ও সড়কপথে যানবাহনের সঠিক অবস্থান জানতে পারা যানজট কমাতে সাহায্য করে। অজানা স্থানে এই ব্যবস্থা বিশেষ সুবিধাজনক। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে যেমন তৈল উত্তোলন, খনিজ উত্তোলনে এই পরিসেবা কাজে লাগে। স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন এর মাধ্যমে জমি জরিপ ও উচ্চতা নিরূপণ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা যায়।
Geostationary, GPS, GLONASS, Galileo, Compass (MEO), International Space Station, Hubble Space Telescope এবং Iridium constellation orbits, তার সঙ্গে Van Allen radiation belts এবং পৃথিবীর তুলনা.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস প্রায় ৩২ টি স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত যা ছয়টি কক্ষতলে বিভক্ত।এটি কার্যকর হয় ১৯৭৮ সালে এবং বিশ্বজুড়ে উপলব্ধ হয় ১৯৯৪ সালে। জিপিএস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম।
পূর্বতন সোভিয়েত এবং বর্তমান রাশিয়ান, Global’naya Navigatsionnaya Sputnikovaya Sistema (রাশিয়ান: ГЛОбальная НАвигационная Спутниковая Система), বা GLONASS ২৪ টি স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত দিকনির্দেশক স্যাটেলাইট ব্যবস্থা।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থা ২০০২ সালে জিপিএস এর পরিবর্ত হিসাবে গ্যলিলিও পজিশনিং সিস্টেম এর প্রকাশে রাজি হয়। গ্যলিলিও প্রায় ৩০ কোটি[৩] ইউরোর ব্যয়ে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে কার্যকর হয়।[৪] ৩০ টি মাঝারি উচ্চতার উপগ্রহ প্রাথমিকভাবে ২০১০ সালে কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু ২০১৪ সালে এটি কার্যকর হয়।[৫] প্রথম পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইটটি ২৮ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০২০ সালে এটি পুরোপুরি কার্যকর হবে। জিপিএস এর সমতুল্য হওয়ায় পুরনো জিপিএস সিস্টেম এর প্রভূত উন্নতিতে সক্ষম এই ব্যবস্থা। এতে Composite Binary Offset Carrier (CBOC) modulation ব্যবহার করা হয়।
চিন বর্তমানে তাদের এশীয় পরিষেবাকে বিবর্ধন করে ২০২০ এর মধ্যে ২য় প্রজন্মের Beidou স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা (BDS বা BeiDou-2, পুর্ববর্তি COMPASS) সম্পূর্ণ করার কথা ভাবছে।[৬] প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থা ৩০ টি মাঝারি উচ্চতার স্যাটেলাইট ও ৫ টি ভুসমলয় স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত হবে। ১৬ স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত এশীয় আঞ্চলিক ব্যবস্থা ২০১২ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল।
২য় প্রজন্মের Beidou স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা। চিনের এই ব্যবস্থা ১৬ টি মাঝারি উচ্চতার স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত। এটি বিবর্ধিত হয়ে ২০২০ সাল নাগাদ ৩৫ টি স্যাটেলাইট সংবলিত ব্যবস্থায় পরিণত হবে।
Indian Space Research Organisation (ISRO) নির্মিত NAVIC বা NAVigation with Indian Constellation একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আঞ্চলিক স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন সিস্টেম যা ভারতীয় সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রাধীন। ২৮ এপ্রিল ২০১৬-র মধ্যে সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার মে ২০০৬ সালে এর অনুমোদন দেয়। এটি ৭ টি দিকনির্দেশক স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত।[৯] যার মধ্যে ৩ টি ভুসমলয় কক্ষপথে আছে এবং বাকি চারটি সমলয় কক্ষপথে অবস্থিত থেকে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশকে স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনের আওতায় নিয়ে আসবে।[১০] সর্বনিম্ন ৭.৬ মিটারের বিশ্লেষণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভারতে প্রস্তুত। গ্রাহক প্রেরক এবং স্যাটেলাইটের যন্ত্রাংশ সবই ভারতে তৈরি হয়েছে যা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল।[১১] সাতটি স্যাটেলাইট IRNSS-1A, IRNSS-1B, IRNSS-1C, IRNSS-1D, IRNSS-1E, IRNSS-1F, এবং IRNSS-1G যথাক্রমে ১ জুলাই ২০১৩, ৪ এপ্রিল ২০১৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৪, ২৮ মার্চ ২০১৫, ২০ জানুয়ারী ২০১৬, ১০ মার্চ ২০১৬ এবং ২৮ এপ্রিল ২০১৬ তে সতীশ ধওন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।[১২]
Quasi-Zenith Satellite System বা QZSS হল জাপানের একটি আঞ্চলিক ৩ স্যাটেলাইট সমন্বিত ব্যবস্থা যা time transfer ও জিপিএসের ক্ষমতা বিবর্ধনে সহায়ক। প্রথম প্রদর্শনমূলক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয় সেপ্টেম্বর ২০১০ এ।
DORIS (Doppler Orbitography and Radio-positioning Integrated by Satellite) একটি ফরাসি ন্যাভিগেশন সিস্টেম। অন্য GNSS সিস্টেমের থেকে এটি আলাদা, এটির গ্রাহক স্যাটেলাইটের মধ্যে থাকে এবং বিশ্বের আলাদা আলাদা কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকে প্রেরক যন্ত্রের সহায়তায় নিখুঁত কক্ষীয় অবস্থান নিরূপিত হয়। GNSS সিস্টেমের সাথে একসঙ্গে এটি ব্যবহার করলে এর বিশ্লেষণ ক্ষমতা সেন্টিমিটার থেকে মিলিমিটারে নেমে আসে। এত সূক্ষ্ম মাপ পৃথিবীর কক্ষীয় বেগের সামান্য পরিবর্তন বা ভূ বিকৃতির সামান্য মাপও এর থেকে পাওয়া যায়।[১৩]
স্বল্প উচ্চতার কক্ষীয় স্যাটেলাইট দূরভাষ ব্যবস্থা
বর্তমান দুটি কার্যকর স্যাটেলাইট যেকোনো প্রেরক-গ্রাহক যন্ত্রের অবস্থান কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ডপলার ক্রিয়ার মাধ্যমে নিরূপণ করে। সেই অবস্থান সংবলিত তথ্য প্রেরক-গ্রাহক যন্ত্রে পাঠানো হয় যা AT command বা একটি graphical user interface বিশ্লেষণে সাহায্য করে।[১৪] এটিকে স্থান নির্ভর দুরভাষ মূল্য নির্ধারণেও কাজে লাগান যায়।
গণনাযন্ত্র, সংগনক বা কম্পিউটার (ইংরেজি: Computer) হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute)শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে। [১] পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম (International Business Machines – IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কম্পিউটার।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়।[২] এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।
১৬১৭ সালে স্কটল্যান্ডেরগণিতবিদজন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেন। এসব দন্ড জন নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারণা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।[৩]
ল্যাপটপ কম্পিউটারের ছবি
যুক্তরাষ্ট্রেরইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।
কম্পিউটার সিস্টেম
সিস্টেম হলো কতগুলো ইন্টিগ্রেটেড উপাদানের সম্মিলিত প্রয়াস যা কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করে। কম্পিউটার সিস্টেমের উপাদানগুলো নিম্নরূপ :-[৪]
সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের ভাষায় ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে প্রোগ্রাম বলে। এই প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম করে তাকেই সফটওয়্যার বলে। কম্পিউটারের সফট্ওয়্যারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।[৫]
সিস্টেম সফটওয়্যার : সিস্টেম সফট্ওয়্যার কম্পিউটারের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কাজের সমন্বয় রক্ষা করে ব্যবহারিক প্রোগ্রাম নির্বাহের জন্য কম্পিউটারের সামর্থ্যকে সার্থকভাবে নিয়োজিত রাখে।[৬]
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার : ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে অ্যাপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার বলে। ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক রকম তৈরি প্রোগ্রাম বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে পাওয়া যায়, যাকে সাধারণত প্যাকেজ প্রোগ্রামও বলা হয়।[৭]
হার্ডওয়্যার
একটি কম্পিউটারের সকল ভৌত অংশ, যেগুলি কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত থাকে, সেগুলিকে হার্ডওয়্যার বলে | এই অংশগুলি ইনপুট নেবার কাজে, ডেটা প্রক্রিয়াকরনের কাজে, আউটপুট দেবার কাজে, ডেটা সংরক্ষন এবং কার্য নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটারকে সাহায্য করে থাকে |
হিউম্যানওয়্যার বা ব্যবহারকারী
ডেটা সংগ্রহ, প্রোগ্রাম বা ডেটা সংরক্ষণ ও পরীক্ষাকরণ, কম্পিউটার চালানো তথা প্রোগ্রাম লিখা, সিস্টেমগুলো ডিজাইন ও রেকর্ড লিপিবদ্ধকরণ এবং সংরক্ষণ, সফট্ওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজগুলোর সাথে যুক্ত সকল মানুষকে একত্রে হিউম্যানওয়্যার (Humanware) বলা হয়।
ডেটা/ইনফরমেশন
ইনফরমেশন বা তথ্যের ক্ষুদ্রতম একককে ডেটা বলে। ডেটা হল সাজানো নয় এমন কিছু বিশৃঙ্খল ফ্যাক্ট (Raw Fact)ডেটা প্রধানত দুই রকম –
(ক) নিউমেরিক (Numeric) ডেটা বা সংখ্যাবাচক ডেটা। যেমনঃ ২৫,১০০,৪৫৬ ইত্যাদি। (খ) অ-নিউমেরিক (Non-Numeric) ডেটা। যেমনঃ মানুষ, দেশ ইত্যাদির নাম, জীবিকা, জাতি কিংবা ছবি, শব্দ ও তারিখ প্রভৃতি।
অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি সফটওয়্যার যা কম্পিউটার প্রোগ্রামের এক্সিকিউশনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা সিডিউলিং, ডিবাগিং, ইনপুট/আউটপুট কন্ট্রোল, একাউন্টিং, কম্পাইলেশন, স্টোরেজ অ্যাসাইনমেন্ট, ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং আনুষঙ্গিক কাজ করে থাকে। বর্তমানে মাইক্রো কম্পিউটার বা পিসিতে বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমগুলো হলো –
কম্পিউটারের রয়েছে প্রচুর ব্যবহার। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এর অপরিসীম ব্যবহার। সর্বোপরি যোগাযোগ ক্ষেত্রে এটি এনেছে অনন্য বিপ্লব। চিকিৎসা ও মানবকল্যাণেও এটি এক অনন্য সঙ্গী। এক কথায় কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা প্রায় সকল কাজ করতে সক্ষম।
ভূগোলে কমপিউটারের ব্যবহার:
জি আই এস এ কম্পিউটার: GIS প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কমপিউটার ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের সাহায্যে মানচিত্রে বিভিন্ন তথ্য যুক্ত করা হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার:
মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রেণিতে পাঠদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটারের গঠন ও প্রচলন নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।[৮]
নিচে কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণীবিভাগ দেখানো হলো :
এনালগ কম্পিউটার
যে কম্পিউটার একটি রাশিকে অপর একটি রাশির সাপেক্ষে পরিমাপ করতে পারে,তাই এনালগ কম্পিউটার। এটি উষ্ণতা বা অন্যান্য পরিমাপ যা নিয়মিত পরিবর্তিত হয় তা রেকর্ড করতে পারে।মোটর গাড়ির বেগ নির্ণায়ক যন্ত্র এনালগ কম্পিউটারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ডিজিটাল কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার দুই ধরনের বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ দ্বারা সকল কিছু প্রকাশ করা হয়। ভোল্টেজের উপস্থিতিকে ১ এবং অনুপস্থিতিকে ০ দ্বারা প্রকাশ করা হয় এটি যে কোন গণিতের যোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং বিয়োগ,গুণ ও ভাগের মতো অন্যান্য অপারেশন সম্পাদন করে। আধুনিক সকল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বলা যায়, প্রযুক্তি ও ভিত্তিগত দিক থেকে এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের আংশিক সমন্বয়ই হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। সাধারণত হাইব্রিড কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে এবং গণনা করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেমন আবহাওয়া দপ্তরে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটার অ্যানালগ পদ্ধতিতে বায়ুচাপ,তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার (কথ্য ভাষায় “বড় কম্পিউটার”) গুলি প্রধানত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহার করে, যেমন জনসংখ্যা, শিল্প এবং ভোক্তা পরিসংখ্যান, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স পরিকল্পনা এবং লেনদেন প্রক্রিয়াজাতকরণ।
মিনি কম্পিউটার
যে কম্পিউটার টার্মিনাল লাগিয়ে প্রায় এক সাথে অর্ধ শতাধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে তাই মিনি কম্পিউটার। এটা শিল্প-বাণিজ্য ও গবেষণাগারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।যেমন – pdp-11, ibms/36, ncrs/9290,
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলেও অভিহিত করা হয়। ইন্টারফেস চিপ (Mother Board) , একটি মাইক্রোপ্রসেসর, সিপিইউ, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি সহযোগে মাইক্রো কম্পিউটার গঠিত হয়। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এ কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। ম্যকিনটোস আইবিএম পিসি এ ধরনের কম্পিউটার।
অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটারকে সুপার কম্পিউটার বলে। এ কম্পিউটারের গতি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন ক্যারেক্টর। কোনো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্থাপনা করার মতো স্মৃতিভাণ্ডার বিশিষ্ট কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। CRAY 1, supers xll এ ধরনের কম্পিউটার।
ট্যাবলেট কম্পিউটার
ট্যাবলেট কম্পিউটার এক ধরনের মাইক্রো কম্পিউটার। যা পাম টপ কম্পিউটার নামে পরিচিত। এটি স্পর্শপর্দা সংবলিত প্রযুক্তি। এটি এনড্রয়েড এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
সফটওয়্যার
কম্পিউটার সফটওয়্যার (ইংরেজি: Computer software) বলতে একগুচ্ছ কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কর্মপদ্ধতি ও ব্যবহারবিধিকে বোঝায়, যার সাহায্যে কম্পিউটারে কোনো নির্দিষ্ট প্রকারের কাজ সম্পাদন করা যায়। [১]
বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ব্যবহারিক সফটওয়্যার, যেমন- অফিস স্যুট অ্যাপলিকেশন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের চিঠিপত্র, বিল, হিসাবপত্র, তথ্য ভান্ডার তৈরি করা যায়।
আবার কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের সফটওয়্যার চালানো ও সার্বিকভাবে কম্পিউটার পরিচালনার জন্য এক প্রকারের সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলোকে বলা হয় অপারেটিং সিস্টেম, যেমন গ্নু/লিনাক্স, ম্যাক ওএস, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ইত্যাদি। এ ধরনের সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও অন্যান্য সফটওয়্যারের মাঝে সমন্বয় সাধন করে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সকল প্রকারের কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
এছাড়া প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের সফটওয়্যার তৈরি করা হয়।
সিস্টেম সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার চালনা করতে সহায়তা করে, এপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালানোর জন্য প্লাটফর্ম গঠন করে। সিস্টেম সফটওয়্যারের মধ্যে আছে অপারেটিং সিস্টেম, হার্ডওয়্যার ড্রাইভার ইত্যাদি
ওয়েবক্যাম হলো বিশেষ ধরনের ভিডিও ক্যামেরা যা একটি কম্পিউটারের সাথে ইউএসবির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেটে ভিডিও আদান-প্রদান করতে পারে। ১৯৯১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এ ওয়েবক্যাম আবিষ্কার হয়। একুশ শতক থেকে ল্যাপটপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ল্যাপটপেই ওয়েবক্যাম যুক্ত করা শুরু করেছে।
0:40
industrial CT scanning
A webcam installed near Sumburgh Head lighthouse, (shetland). The cliffs are home to large numbers of seabirds and the area is an RSPB nature reserve.
প্রযুক্তি
ওয়েবক্যামে সাধারণত একটি লেন্স (উপরে), ইমেজ সেন্সর (নিচে), এবং সমর্থনকারী সার্কিট।
ওয়েবক্যাম বা ওয়েব ক্যামেরা হচ্ছে এক ধরনের ভিডিও ক্যামেরা, যা বাস্তব সময়ের ভিডিও ধারণ করে এবং একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তা কোনো মনিটরে প্রদর্শন করে৷ বাস্তব সময়ের ভিডিও চিত্র ধারণের পর তা ব্যবহারকারী নিজে দেখতে পারে অথবা ইমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য কোথাও প্রেরণ করতে পারে৷ আই পি ক্যামেরা(যা সাধারণত ইথারনেট বা ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়), যেভাবে মূল সিস্টেমের সাথে সংযু্ক্ত হয়ে থাকে, ওয়েবক্যাম সেভাবে যুক্ত না হয়ে সাধারণত ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে থাকে৷
বৈশিষ্ট্য
ওয়েবক্যাম সাধারণত এর কম মূল্য কিন্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধার জন্য সুপরিচিত৷[১] দূর হতে ভিডিও কথোপকথনের ক্ষেত্রে ওয়েবক্যাম যেমন বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে, তেমনি এর বাণিজ্যিক মূল্যও কম৷[২][৩]
ব্যবহার
ওয়েবক্যাম এর সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে ওয়েব লিঙ্ক তৈরির মাধ্যমে একটি কম্পিউটার বা ডিভাইসকে অপর একটি কম্পিউটার বা ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করে ভিডিও কথোপকথনের সুবিধা প্রদান৷ এক্ষেত্রে কম্পিউটার বা ডিভাইসটি একটি ভিডিও ফোন অথবা ভিডিও কনফারেন্স স্টেশন হিসাবে কাজ করে৷ এছাড়া ওয়েবক্যাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষন, কম্পিউটার ভিশন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে, ভিডিও সম্প্রচার এবং সামাজিক ভিডিও রেকর্ড করা ইত্যাদি কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷[৪]
বিভিন্ন ধরনের কাজে বিভিন্ন রকমের সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েবক্যামকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷
ইতিহাস
প্রথম উন্নতকরণের কাজ করা হয় ১৯৯১ সালে, ক্যমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে৷[৫] ১৯৯৪ সালে প্রথম সাদা কালো ওয়েবক্যাম বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে৷ এটি বাজারজাত করে আমেরিকার একটি কোম্পানি কানেকটিক্স৷ ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাসে প্রথম অ্যাপল ম্যাকিনটোশ এর কুইকক্যাম বাজারে আসে৷ এ ওয়েবক্যামগুলোর দাম ছিলো ১০০ ডলার করে৷ ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে পার্সোন্যাল কম্পিউটার এ ওয়েবক্যাম ব্যবহারের জন্য মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সিরিয়াল পোর্ট ও সফ্টওয়্যার বাজারে নিয়ে আসে৷
বৈশিষ্টসূচক কম খরচে ওয়েবক্যাম যা ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সাথে ব্যবহৃত করা হয়।
সাধারণত রিসোর্স মালিকের পক্ষ থেকে ওঅথ তার গ্রাহকদের রিসোর্সে সুরক্ষিত প্রবেশাধিকার পরিষেবা প্রদান করে।
এটি রিসোর্স মালিকদের পরিচয় দলিলাদি প্রকাশ না করেই তাদের সার্ভারের রিসোর্সগুলোতে তৃতীয় পক্ষের প্রবেশাধিকার অনুমোদন করার একটি প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে থাকে। রিসোর্স মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে ওঅথ সার্ভারের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের গ্রাহকদের প্রবেশাধিকার টোকেন প্রদান করেন, যা বিশেষভাবে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল এর সাথে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। রিসোর্স সার্ভারে অবস্থিত এসব সুরক্ষিত রিসোর্স ব্যবহার করতে তৃতীয় পক্ষ এই প্রবেশাধিকার টোকেন ব্যবহার করে। [৩]
ওঅথ, ওপেন আইডি থেকে পৃথক এবং সম্পূরক একটি পরিষেবা। ওঅথ মুক্ত প্রমাণীকরণ থেকেও স্বতন্ত্র, যা প্রমাণীকরণ এর জন্য সূত্রক স্থাপত্য, আদর্শ নয়। তবে ওঅথ সরাসরি ওপেন আইডি সংযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত কেননা ওঅথ ২.০ এর উপর ভিত্তি করেই এটি নির্মিত। ওঅথ প্রমাণীকরণ নীতি আদর্শাবলী, এক্সএসিএমএল হতেও স্বতন্ত্র। ওঅথ এক্সএসিএমএলের সঙ্গে সংযুক্ত যেতে পারে, যেখানে ওঅথ মালিকানা অনুমোদন এবং প্রবেশাধিকার প্রতিনিধিদের জন্য ব্যবহার করা হবে এবং এক্সএসিএমএল অনুমোদন নীতিটি সংজ্ঞায়িত করতে ব্যবহৃত হবে।
ইতিহাস
ওঅথ ২০০৬ সালের নভেম্বরে চালু হয়, যখন ব্লেন কুকটুইটারেওপেন আইডি এর প্রয়োগ করেন। ইতিমধ্যে Ma.gnolia তার সদস্যদের সেবার প্রবেশাধিকারের জন্য ওপেন আইডি দ্বারা প্রমাণীকরণ এর প্রয়োজন হয়। ম্যাগনোলিয়া হতে কুক, ক্রিস মেসিনা এবং ল্যারি হ্যাফ ডেভিড রেকর্দন এর সঙ্গে টুইটার এবং ম্যাগনোলিয়াএপিআই দ্বারা প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে আলোচনা করতে সাক্ষাৎ করেন। তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এপিআই এর জন্য কোন মুক্ত আদর্শ নেই, যা দ্বারা এমন প্রবেশাধিকার প্রদান সম্ভব। [৪].
একটি মুক্ত প্রটোকল লেখার খসড়া প্রদানকারীদের একটি ছোট গ্রুপ নিয়ে ২০০৭ সালের এপ্রিলে ওঅথ আলোচনা গ্রুপ সৃষ্টি হয়। গুগলেরডেউইট ক্লিনটন ওঅথ প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে দলটি একটি প্রাথমিক সংজ্ঞায়নের খসড়া তৈরি করে। এরান হ্যামার এতে যোগদান করেন এবং আরো আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে অবদান রাখেন। চৌঠা ডিসেম্বর ২০০৭ সালে ওঅথ কোর ১.০ এর সর্বশেষ খসড়া প্রকাশিত হয়। [৫]
২০০৮ সালের নভেম্বরে মিনিয়াপলিসে ৭৭তম ইন্টারনেট প্রকৌশল টাস্ক ফোর্স (আইইএইটিএফ) সভায় প্রটোকলটি আদর্শীকরণের জন্য আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জনসমাগম ছিল এবং আইইএটিএফে ওঅথে অংশগ্রহণকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মচাঞ্চল্য তৈরী করা হয়।
ওঅথ ২.০, ওঅথ ১.০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ওঅথ ২.০ ওয়েব এপ্লিকেশন, ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন মোবাইল ফোন এবং স্মার্ট যন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে প্রমাণীকরণ ধারা প্রদান করে। এই সংজ্ঞায়ন এবং সংশ্লিষ্ট আরএফসিগুলো IETF OAuth দ্বারা উন্নয়নকৃত [৭] মূল ফ্রেমওয়ার্কটি অক্টোবর ২০১২ তে প্রকাশিত হয়।ফেসবুকেরগ্রাফ এপিআই শুধুমাত্র OAuth 2.0 সমর্থন করে।[৮]গুগল তার সকল এপিআইয়ের কার্যনীতির প্রমাণীকরণের জন্য OAuth 2.0 কে সুপারিশ করে।[৯]মাইক্রোসফটও[১০] তার বিভিন্ন এপিআই এবং অ্যাজুর অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি পরিষেবার সকল প্রকারের প্রমাণীকরণ এর জন্য OAuth 2.0 সমর্থন করে। ওঅথ ২.০ ফ্রেমওয়ার্কটি[১১] এবং বাহক টোকেন ব্যবহার[১২] ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়।
নিরাপত্তা
২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল ওঅথ ১.০ প্রটোকলে নিরাপত্তা ত্রুটি সারানোর একটি সেশন ঘোষণা করা হয়েছিল,যা ওঅথ কোর ১.০ পরিচ্ছেদ ৬ প্রমাণীকরণ ধারাকে কে প্রভাবিত করেছিল। [১৩] এই ত্রুটিটি শনাক্তকরণের জন্য ওঅথ কোর প্রটোকলের Version 1.0a বের করা হয়েছিল। [১৪]
OAuth 2.0 কোন প্রকারের স্বাক্ষর গুপ্তকরণ, মাধ্যম সীমাবদ্ধকরণ অথবা গ্রাহক যাচাইকরণ সমর্থন করে না। এটি সম্পূর্ণভাবে কয়েক মাত্রার টিএলএস এবং সার্ভার প্রমাণীকরণের উপর নির্ভর করে।[১৫][১৬]
OAuth 2.0 এর প্রয়োগের পর অসংখ্য নিরাপত্তা ত্রুটি পাওয়া যায়।[১৭] নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই প্রটোকলকে অনিরাপদ বলে আখ্যায়িত করেন এবং এর সংজ্ঞায়নের প্রধান অবদানকারী বলেন, যে প্রায়োগিক ত্রুটিগুলো প্রায় অনিবার্য।[১৮][১৯]
জানুয়ারী ২০১৩ এ ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স ওঅথ ২.০ এর জন্য হুমকিস্বরূপ এমন অনেকগুলো মডেল প্রকাশ করেন।[২০] তাদের মধ্যে একটিকে বলা হয় মুক্ত পুননির্দেশ; ২০১৪ এর শেষের দিকে এটি কোভার্ট পুনর্নির্দেশক নামে ইয়ান ঝিং বর্ণনা করেন। [২১][২২][২৩][২৪]
সম্ভবত ওঅথের সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা ত্রুটি হল ফিশিং দুর্বলতা :[২৫] বাহ্যিকভাবে ওঅথের মত দেখতে কোন আক্রমণকারীর ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড প্রবেশ এর মাধ্যমে পরিচয়পত্র চুরির দরজা খুলে দেয়া। প্রচলিত two-factor authentication (এককালীন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে) এটি প্রতিরোধ করতে পারে না, কেননা ফিশিং সাইট গুলো তাও চুরি করতে পারে। তবে তৎক্ষণাৎ টোকেন গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে (দেখুন বিশ্বজনীন সেকেন্ড ফ্যাক্টর) এ থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে।
২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১ মিলিয়ন জিমেইল ব্যবহারকারী এই আক্রমণের শিকার হন, যেখানে তাদেরকে সহকর্মী, বন্ধু কিংবা কোন আত্মীয় একটি গুগল ডকুমেন্ট শেয়ার করতে চাইছে এই মর্মে একটি ইমেইল পাঠানো হতো। [২৬] তাদের মধ্যে যারা ইমেইল টি তে থাকা লিংকটিতে ক্লিক করেছে এবং তৃতীয় পক্ষের ক্ষতিকর প্রোগ্রামকে গুগল অ্যাপস এ প্রবেশাধিকার দিয়েছে তাদের পরিচয় পত্র চুরি হয়ে গিয়েছিল। [২৬] প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে [২৬] গুগল কর্তৃপক্ষ এই ফিশিং আক্রমণ বন্ধ করতে পেরেছিল এবং যারা প্রবেশাধিকার দিয়েছিল তাদেরকে প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল।
ব্যবহার
সুরক্ষিত আরএসএস /অ্যাটমকে ধারণ করার জন্য প্রমাণীকরণের লক্ষ্যে ওঅথ ব্যবহৃত হতে পারে। আরএসএস/এটম ফিডের প্রমাণীকরণ ব্যবহার সবসময় একটি সমস্যা হিসেবে পরিগণিত। উদাহরণস্বরূপ, গুগল সাইটের একটি আরএসএস ফিড গুগল রিডার দ্বারা ব্যবহারযোগ্য ছিল না। এর পরিবর্তে গুগল সাইট থেকে আরএসএস গ্রাহক যাচাইকরণের জন্য তিন স্তরবিশিষ্ট ওঅথ ব্যবহৃত হতো। এটি কোন সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি ছাড়াই লগইন করার পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে ওঅথ সিস্টেমের সকল সুবিধা পাওয়া যাবে।
ওঅথ এবং অন্যান্য আদর্শ
ওপেন আইডি বনাম ওঅথ ব্যবহার করে ছদ্ম-প্রমাণীকরণ
ওঅথ প্রমাণীকরণ প্রটোকল নয় বরং একটি অনুমোদন প্রটোকল। ওঅথ স্বয়ং ব্যবহারের পদ্ধতিকে ছদ্ম প্রমাণীকরণ বলা যেতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নিম্নোক্ত ডায়াগ্রাম গুলো অপেন আইডি( প্রমাণীকরণ প্রটোকল হিসেবে বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত) এবং প্রমাণীকরণের জন্য ওঅথের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে আলোকপাত করে।
উভয় পদ্ধতিতে যোগাযোগ প্রবাহটি একই :
(চিত্রে নেই) অ্যাপ্লিকেশন থেকে ব্যবহারকারী কোন রিসোর্স কিংবা লগইনের জন্য অনুরোধ করেন।
সাইটটি দেখে যে ব্যবহারকারী প্রমাণীকৃত নয়। এর ফলে এটি পরিচয় প্রদানকারীর(ওপেন আইডি কিংবা ওঅথ) জন্য একটি অনুরোধ প্রস্তুত করে, একে সাংকেতিকীকরণ করে এবং পুনর্নির্দেশক ইউআরএলের অংশ হিসেবে ব্যবহারকারীকে পাঠায়।
ব্যবহারকারীর ব্রাউজারটি অ্যাপ্লিকেশনের অনুরোধসহ পরিচয় প্রদানকারীর কাছে পুননির্দেশক ইউআরএল অনুরোধ করে।
যদি প্রয়োজন হয়, পরিচয় প্রদানকারী ব্যবহারকারীকে যাচাই করে (হতে পারে ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড প্রদান সাপেক্ষে)
যখন পরিচয় প্রদানকারী ব্যবহারকারীর প্রমাণিকরণের যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য পায়,তখন এটি অ্যাপ্লিকেশনের অনুরোধকে প্রক্রিয়াকরণ করে এবং একটি প্রত্যুত্তর প্রস্তুত করে এবং ব্যবহারকারীকে পুননির্দেশক ইউআরএল দ্বারা অ্যাপ্লিকেশন এ পাঠায়।
ব্যবহারকারীর ব্রাউজার অ্যাপ্লিকেশনের ফিরে যাওয়া পুননির্দেশক ইউআরএল কে অনুরোধ করে (যেখানে পরিচয় প্রদানকারীর প্রত্যুত্তরটিও সংযুক্ত থাকে)
অ্যাপ্লিকেশন টি পরিচয় প্রদানকারীর প্রত্যুত্তরকে সাংকেতিকীকরণ হতে উদ্ধার করে।
(শুধুমাত্র ওঅথ) প্রত্যুত্তরে একটি প্রবেশাধিকার টোকেন থাকে যা দ্বারা অ্যাপ্লিকেশনটি, ব্যবহারকারীর পক্ষে, পরিচয় প্রদানকারীর পরিষেবাসমূহে সরাসরিভাবে প্রবেশাধিকার লাভ করেন।
এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল যে ওপেন আইডি প্রমাণীকরণ এর ক্ষেত্রে পরিচয় প্রদানকারীর প্রত্যুত্তর হলো ব্যবহারকারী সংক্রান্ত তথ্যাবলী; যেখানে ওঅথ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিচয় প্রদানকারী একটি এপিআই প্রদানকারীও বটে এবং পরিচয় বহনকারী কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রত্যুত্তরটি একটি প্রবেশাধিকার টোকেন, যা দ্বারা অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্যাদিতে প্রবেশাধিকার লাভ করে। এক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার টোকেনটিকে একটি “ভৃত্য চাবির” ন্যায় কাজ করে, যা সংশ্লিষ্ট এপিআইগুলোতে প্রবেশাধিকার জন্য ব্যবহারকারীর অনুমোদন রয়েছে– তা প্রমাণ করতে অ্যাপ্লিকেশনটি তার প্রতিটি অনুরোধের সঙ্গে যুক্ত করে।
পরিচয় প্রদানকারী সাধারণত (কিন্তু সবসময় নয়) ব্যবহারকারীকে ওঅথ প্রবেশাধিকার টোকেন প্রদানের অংশ হিসেবে যাচাই করায়, একটি সফল ওঅথ প্রবেশাধিকার টোকেন পাওয়াকে প্রমাণীকরণের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তবে, ওঅথ যেহেতু এই বিষয়গুলোর জন্য ডিজাইন করা হয়নি, ফলে, এর উপর ভিত্তি করলে ব্যাপক নিরাপত্তা ত্রুটি দেখা যেতে পারে [২৭]
একটি নীতিমূলক ভাষা যার সাহায্যে ওঅথ দ্বারা সংজ্ঞায়িত সম্মতিসমূহ ব্যবহারকারী নীতিমালাসহ বৃহৎ পরিসরে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রকাশ করা যায়
অনুমোদন অনুরোধ পাঠানো এবং গ্রহণ করার জন্য একটি অনুরোধ/প্রত্যুত্তর স্কিম
অধিক দক্ষ অনুমোদন সিস্টেম সংগঠনের জন্য এক্সএসিএমএল এবং ওঅথ কে সংযুক্ত করা যেতে পারে। ওঅথ কোন নীতিমালা ভাষা প্রদান করে না, যার সাহায্যে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এর নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক্সএসিএমএল ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেখানে ওঅথ মূলত প্রতিনিধিত্বমূলক প্রবেশাধিকার (আমি, এর ব্যবহারকারী, টুইটারকে আমার ফেসবুক ওয়ালের প্রবেশাধিকারের অনুমতি প্রদান করছি) এবং পরিচয় কেন্দ্রিক অনুমোদনের উপর জোর প্রদান করে, সেখানে এক্সএসিএমএল বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা ব্যবহারকারীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, তার রিসোর্স এবং পরিস্থিতিকে (কে, কাকে , কখন, কোথায়, কিভাবে) বিবেচনা করে। এক্সএসিএমএল দ্বারা নিম্নোক্ত নীতিমালাসমূহ সংজ্ঞায়িত করা যায়:
ব্যবস্থাপকগণ তাদের ডিপার্টমেন্টে দলিলাদি দেখতে পারেন
ব্যবস্থাপকগণ তাদের আয়ত্তকৃত দলিলাদিসমূহ খসড়া পর্যায়ে সম্পাদনা করতে পারেন
এক্সএসিএমএল ওঅথের চেয়েও ভালো প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ প্রদান করতে পারে। এর ফলে প্রায়ই ওঅথ এবং এক্সএসিএমএলকে একত্র করা হয় যেখানে ওঅথ প্রতিনিধিত্বমূলক প্রবেশাধিকার এবং সম্মতি ব্যবস্থাপনার কাজ করে অন্যদিকে এক্সএসিএমএল অনুমোদন নীতিমালা প্রণয়ন করে, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়াকরণ এবং উপাত্তের উপর কাজ করবে। সবশেষে,এক্সএসিএমএল একাধিক স্তরে (এপিআই, ওয়েব এককদফায় প্রবেশ, ESBs, গৃহনির্মিত এপ্লিকেশন, ডেটাবেজ…) কাজ করতে পারে। ওঅথ বিশেষভাবে এইচটিটিপি ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন সমূহের উপর জোর প্রদান করে।
বিতর্ক
জুলাই ২০১২ সালে এরান হেমার তার ওঅথ ২.০ প্রকল্পের প্রধান কর্তৃপক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন, আইইটিএফে কর্মরত গ্রুপ থেকে অবসর নেন এবং সংজ্ঞায়ন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। আইইটিএফকে একটি “বাণিজ্যিক ক্ষেত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি ওয়েব এবং বাণিজ্যের সংস্কৃতির মধ্যকার দ্বন্দ্ব কে উত্থাপন করেন। অনুমোদন প্রটোকল হিসেবে বর্তমানে যাকে নকশা হিসেবে মনে করা হয়, তিনি বলেন যে এটি মূলত একটি “বাণিজ্যিক পদ্ধতি যাতে পরামর্শ সেবা এবং সাংগঠনিক সমাধান বিক্রয় করা হয়”। [২৮] ওঅথ ২.০ কে ১.০ এর সঙ্গে তুলনা করার সময় হ্যামার উল্লেখ করেন যে, এটি “জটিলতর, কম ব্যবহার্য, তুলনামূলক আরো অসম্পূর্ণ এবং অনিরাপদ” হয়ে উঠেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে প্রটোকল পর্যায়ের সকল প্রকারের স্বাক্ষর এবং গুপ্তিবিদ্যা অপসারণের মাধ্যমে গ্রাহকের টোকেন অসীম করা হয়েছে এবং অনুমোদন প্রক্রিয়াটি জটিল করে মেয়াদোত্তীর্ণ টোকেন যুক্ত করা হয়েছে (কেননা টোকেন গুলো রুদ্ধ করা সম্ভব নয়)। সংজ্ঞায়নে অসংখ্য উপাদান অসংজ্ঞায়িত অথবা অসীম রাখা হয়েছে, কারণ এই কর্মরত গ্রুপের বৈশিষ্ট্য হল কোন ত্রুটি আটকানোর জন্য ছোট হও অথবা একে প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধান্তের জন্য রেখে দাও। [২৮]
হ্যামার পরবর্তীতে তার পর্যবেক্ষণকে বিস্তৃত করে ইয়েটে উপস্থাপন করেন।[২৯]
পরবর্তীতে ডেভিড রেকর্ডনও অজানা কারণে সংজ্ঞায়ন থেকে নিজের নাম অপসারণ করেন। ডিক হার্ডট সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে নেন এবং ফ্রেমওয়ার্ক টি ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়।[১১]
উদীয়মান প্রযুক্তি হল সেসব প্রযুক্তি যেগুলো বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে সক্ষম বলে বিবেচ্য। এই প্রযুক্তিগুলো সাধারণত নতুন হলেও কিছু পুরোন প্রযুক্তি যেগুলো সম্পর্কে দ্বিমত আছে বা তুলনামূলকভাবে অনুন্নত, সেসব প্রযুক্তিও উদীয়মান প্রযুক্তির অন্তর্গত। উদাহরণস্বরূপঃ ৩ডি প্রিন্টিং ও জিন থেরাপি উদীয়মান প্রযুক্তি হলেও এদের উতপত্তি যথাক্রমে ১৯৮১ ও ১৯৯০ সালে।
উদীয়মান প্রযুক্তি তুলনামূলক ভিত্তিগত নতুনত্ব, দ্রুত বৃদ্ধি ও প্রসারমান, যুক্তিসম্পন্ন, দৃশ্যমান প্রভাব বিস্তারকারী, অনিশ্চিত ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। [১]
বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সমসাময়িক অগ্রগতি ও উদ্ভাবনকে উদীয়মান প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বহু শতাব্দি ধরে এসব অগ্রগতি ও উদ্ভাবন সাধারণত তাত্ত্বিক গবেষণা এবং বাণিজ্যিক গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য হয়ে আসছে। [৩][৪]
ক্রমবর্দ্ধমান উন্নয়ন এবং সংহতিনাশক প্রযুক্তিও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত। বিপরীতভাবে, সংহতিনাশক প্রযুক্তি বলতে বোঝায় একটি নতুন পদ্ধতি পূর্ববর্তী প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করে। উদাহরণ ঃ অটোমোবাইল দ্বারা ঘোড়ায় টানা রথ প্রতিস্থাপন।
উদীয়মান প্রযুক্তি বিতর্ক
কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিল জয় সহ আরো অনেক লেখক প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্লাস্টারকে মানবতার ভবিষ্যতের জন্য সমালোচনামূলক হিসেবে চিনহিত করেছেন। জয় সাবধান করেছেন যে, প্রযুক্তি অভিজাতদের দ্বারা ভালো বা মন্দ- উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। [৫]