Author: admin

  • অ্যাডোবি ফটোশপ

    অ্যাডোবি ফটোশপ (ইংরেজি: Adobe Photoshop) একটি গ্রাফিক্স সম্পাদনাকারী সফটওয়্যার। সাধারণ ভাবে সফটওয়্যারটিকে শুধুমাত্র ফটোশপ নামেই ডাকা হয়। এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে অ্যাডোবি সিস্টেমস। অ্যাডোবির সবথেকে জনপ্রিয় সফটওয়্যার এটি। বর্তমানে এই সফটওয়্যারটি ম্যাক ওএস এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য পাওয়া যায়। এই সফটওয়্যারটির ১৩ তম সংস্করণ (ফটোশপ সিএস ৬) প্রকাশিত হয়েছে। থমাস নল (Thomas Knoll) এবং জন নল (John Knoll) নামের দুই ভাই ১৯৮৭ সালে ফটোশপ তৈরির কাজ আরম্ভ করেন।[৪][৫]

    ইতিহাস

    সময়টা ১৯৮৭ সাল। তখন থমাস নল একজন পিএইচডি এর ছাত্র। তিনি Macintosh Plus এর জন্য একটি গ্রাফিক এপ্লিকেশন ডেভলপ করেন।[৬] এই এপ্লিকেশনটি এক কালারের পর্দায় সাদা-কালো ছবি শো করতে ব্যবহার হত। নল এটির নাম দিয়েছিলেন Display. মূলত এই display এপ্লিকেশনটিকে Father of photoshop বলা যায়।[৬]

    জন নল, ফটোশপের সহ উদ্ভাবক

    থমাস নল এর ভাই জন নল প্রোগ্রামটি দেখলেন। জন নল ফটোর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহী ছিলেন। জন তার ভাই থমাস কে একটি ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম বানানোর জন্য রাজি করালেন। তখন থমাস নল তার চলমান শিক্ষা জীবন থেকে ৬ মাসের বিরতি নিয়ে তৈরি করেন ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম যেটির নাম দিতে চেয়েছিলেন Image pro.[৬] কিন্তু কপিরাইট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সে নামের বদলে আমরা পেয়ে যাই ফটোশপের প্রথম ভার্সন ফটোশপ ০.৭।[৬] ১৯৮৮ সালে এডোবি ফটোশপ প্রোগ্রামটি ক্রয় করে বাজারজাত করতে রাজি হয়।[৬]

    বৈশিষ্ট্য

    প্রাথমিক ভাবে ফটোশপ তৈরি হয়েছিল কেবলমাত্র ছাপার কাজে ব্যবহার করা হবে এমন ছবি সম্পাদনা করার জন্য। কিন্তু ইন্টারনেট বিস্তারের সাথে সাথে ফটোশপ ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটের ছবি সম্পাদনা করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । ফটোশপের একটি সহকারী সফটওয়্যার অ্যাডোবি ইমেজরেডি দেওয়া হয়েছে যাতে ইন্টারনেট সম্পর্কিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আছে। ফটোশপের ছবি আঁকার তুলিগুলি এত উচ্চমানের যে বহু শিল্পী ডিজিটাল পেনের ( একরকম পেন যার সাহায্যে কম্পিউটারে ছবি আঁকা সম্ভব, একে পেন ট্যাবলেটও বলে ) সাহায্যে ফটোশপে ছবি আঁকেন।

    ফটোশপের সঙ্গে অন্যান্য অ্যাডোবি সফটওয়্যার গুলির খুবই শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। ফটোশপের সাধারণ ফরম্যাট পিএসডি কোন অসুবিধা ছাড়াই অ্যাডোবি ইলস্ট্রেটর, অ্যাডোবি প্রিমিয়ার, অ্যাডোবি আফটার ইফেক্ট এবং অ্যাডোবি এনকোর ডিভিডি তে নেওয়া যায়। বর্তমানে অ্যাডোবি সিস্টেমস ফ্ল্যাশ এবং ড্রিমউইভারের মত অপর দুই প্রবল জনপ্রিয় সফটওয়্যারের মালিক ম্যাক্রোমিডিয়াকে কিনে নেবার পরে ধারণা করা হচ্ছে যে ম্যাক্রমিডিয়ার বিভিন্ন জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলির সাথে ফটোশপের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। ফটোশপের সংস্করন ফটোশপ সিএস৩ থেকে ‘অ্যাডোবি ক্যামেরা র’ বলে একটি প্লাগ ইন দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ডিজিটাল ক্যামেরার র (Raw) ফাইল ফরম্যাট সহজেই ফটোশপে নেওয়া যাবে।

    ফটোশপ পরিবার

    ফটোশপ পরিবারে সাতটি আলাদা আলাদা সফটওয়্যার আছে । এগুলি হল

    • ফটোশপ সিএস ৫
    • ফটোশপ সিএস ৫ এক্সটেন্ডেড
    • ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ ম্যাকিনটোশের জন্য
    • ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ উইনডোজের জন্য
    • ফটোশপ এলিমেন্টস ৬.০ এবং অ্যাডোবি প্রিমিয়ার এলিমেন্টস ৪.০
    • ফটোশপ এক্সপ্রেস বিটা
    • ফটোশপ লাইটরুম ২
    • ফটোশপ সিএস সিক্স
    • ফটোশপ সিসি বা ক্রিয়েটিভ ক্লাউড (এর বিভিন্ন ভার্সন রয়েছে)

    ফটোশপ এর বিভিন্ন সংস্করন

    অ্যাডোবি ফটোশপ সিসি ২০১৫.৫ প্রকাশের স্ক্রিনশট।

    ফটোশপ ১.০

    সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ অ্যাডোবি কর্পোরেশন ফটোশপ প্রোগ্রামটি কিনে নেওয়ার পর এর ফিচার এ ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ ডিজিটাল কালার এডিটিং ও ইমেজ রিটাচিং সহ ফটোশপ ১.০ ভার্সন রিলিজ হয়। SciTex এর মত উচ্চমানের ফ্ল্যাটফরমে ব্যবহারের জন্য এটি চালু হয় এবং সাধারণ মানের একটি ফটো রিটাচিং এর জন্য ৩০০ ডলার ব্যয় করতে হত তখন।

    ফটোশপ ২.০

    জুন ১, ১৯৯০ আরো কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করে ফটোশপ ভার্সন ২.০ রিলিজ করে। এই ভার্সনে যুক্ত করা হয় adding Paths, CMYK color and the Pen tool এর মত গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো।

    ফটোশপ ২.৫

    ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে সর্বপ্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চালানোর উপযোগী করে ফটোশপ ২.৫ রিলিজ করা হয়। এই ভার্সনেই ফটোশপে প্যালেট যুক্ত করা হয়।

    ফটোশপ ৩.০

    ১৯৯৪ সালে ফটোশপ ৩.০ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে ফটোশপের লেয়ার প্যানেল যুক্ত করা হয়। এই লেয়ার যুক্ত হওয়ার ফলে ডিজাইনারদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। অনেক জটিল বিষয় সহজ হয়ে যায়। থমাস নল ও তার সসহকর্মী ডেভেলপারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেই নব্বই দশকেই কম্পিউটারে ফটো সম্পাদনা প্রবেশ করে নতুন যুগে।

    ফটোশপ ৪.০

    প্রায় দুই বছর পর ফটোশপের পরবর্তী ভার্সন ফটোশপ ৪.০ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে যুক্ত করা হয় অ্যাডজাস্টমেন্ট লেয়ার ও ম্যাক্রো ফিচার দুটি। এছাড়াও ফটোশপের user interface যুক্ত করা হয় এই ভার্সনে।

    ফটোশপ ৫.০

    ১ মে ১৯৯৮ ফটোশপের ভার্সন ৫.০ রিলিজ করা হয়। Editing type, Undo command, History panel, Magnetic lasso tool প্রভৃতি ফিচার চালু করা হয় এই ভার্সনে। ইমেজ এডিটিং এ কিছু বিষয় কত সহজ হয়ে গিয়েছে এই ভার্সনটি রিলিজ হওয়ার পর। এরপর মাত্র ১ বছর পর ফটোশপ ৫.৫ রিলিজ করা হয়। এই ভার্সনে Save for web ফিচারটি যুক্ত করা হয়। আর এর সাথে সাথে PNG ফরমেট এ ইমেজ এক্সপোর্ট করার ব্যবস্থাও পেয়ে যায়।

    ফটোশপ ৬.০

    বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষপ্রান্তে ফটোশপ ৬.০ রিলিজ হয়। ভেক্টর শেপ, টাইপ টুল, ব্লেনডিং অপশান প্রভৃতি ফিচার যুক্ত করা হয় এই ভার্সনে। এই ভার্সনে টাইপ টুল হয়েছে আরও সহজ। চোখ ধাধাঁনো এফেক্ট দেওয়ার জন্য ব্লেনডিং মোড এই ভার্সনেই পরিপূর্ণতা পায়।

    ফটোশপ ৭.০

    ফটোশপ ৬.০ রিলিজ হওয়ার ঠিক ২ বছর পর এ যাবত কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত ভার্সন ফটোশপ ৭.০ রিলিজ হয়। খুব সহজে ফাইল ও ফোল্ডার ব্রাউজ করার জন্য ফাইল ব্রাউজার, ব্রাশ ও প্যাচ টুল যুক্ত হয় এই ভার্সনেই। ফটোশপের পূর্ন রুপ বলতে আমরা এই ভার্সনকেই বুঝি। আজও অনেক বড় বড় বিখ্যাত ডিজাইনারগন ফটোশপ ৭.০ এ কাজ করেন।[৭][৮]

    ফটোশপ ‍ক্রিয়েটিভ স্টুডিও (সিএস ৮.০)

    যেহেতু ফটোশপের ডেভলপমেন্ট একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে চলছে। ডেভেলপারগন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে নিত্যনতুন ফিচার যোগ করার কাজে। ২০০৩ সালে ডিজাইনারদের প্রয়োজনীয় সবকিছু, গ্রাফিক ডিজাইনে লে-আউট ফিচার, ফটোগ্রাফির সবকিছু যুক্ত করে ফটোশপ রিলিজ করে ফটোশপ ৮.০ (সিএস)। Script, language, grouping of layer প্রভৃতি ফিচার যুক্ত করা হয় এতে। যা কিনা এই প্রোগ্রামটির অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়।[৯]

    ফটোশপ সিএস ২

    ২০০৫ সালে ফটোশপ সিএস ২ ভার্সন রিলিজ হয়। Red-eye removal tool, Vanishing point tool, Smart object এর মত ফিচার নিয়ে আসে এই ভার্সনে যার সাহায্যে ফটোশপের এডিটিং হয়ে উঠে কোন ধরনের Quality লস করা ছাড়াই। ।[১০]

    ফটোশপ সিএস ৩.০

    ২০০৭ সালে ফটোশপ সিএস ৩.০ রিলিজ হওয়ার পর এই সফটাও্য়্যারে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখতে পাই। টুলস এ ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এর নেভিগেশান প্রক্রিয়া ফটোশপে কাজ করাকে আর দ্রুততর করে তোলে। ক্যামেরা র ও কুইক সিলেকশান টুলের মত চমতকার বিষয়গুলো যুক্ত হয় এই ভার্সনে।[১১]

    ফটোশপ সিএস ৪

    ২০০৮ সালে ফটোশপের নতুন ভার্সন সিএস ৪ আসে। পেনিং(Panning), জুমিং(Zooming), মাস্কিং(Masking), অ্যাডজাস্টমেন্ট প্যানেল(Adjustment panel) ফিচারগুলোকে আধুনিক করে ডিজাইনার কাজকে আরও দ্রুতগতির ও আর চমকপ্রদ করার বিভিন্ন কমান্ড আসে এই ভার্সনে।[১২]

    ফটোশপ সিএস ৫

    ২০১০ সালে ফটোশপ সিএস ৫ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে যুক্ত হয় Puppet Warp Tool, Bristle tips, Mixer Brush and Automatic Lens correction প্রভৃতি ফিচারগুলো। মাস্কিং ফিচারটিকে আরও আধুনিক করা হয় এই ভার্সনে।[১৩]

    ফটোশপ সিএস ৬

    মে ৭, ২০১২ বহুল প্রতিক্ষিত ফটোশপ সিএস ৬ রিলিজ হয়। এই ভার্সনে সম্পূর্ণ নতুন একটি ইউজার ইন্টারফেস আমরা পেলাম। যাতে নিজেদের সুবিধা মত কালার এডজাস্ট করা সম্ভব। Auto saving, patch tool, move tool, blur gallery,vector shape with dash and dotted stroke প্রভৃতি নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ ফটোশপকে পরিপূর্ন করার যা প্রয়োজন সবই করা হয়েছে এই ভার্সনে। ভিডিও, এনিমেশন তৈরি করা অনেক সহজ হয়েছে এই ভার্সন আসার পর।[১৪]

    ফটোশপ Creative Cloud (সিসি)

    ফটোশপের সর্বাধুনিক সংস্করণ ফটোশপ ক্রিয়েটিভ ক্লাউড, Photoshop creative cloud (CC).[১৫] যা মূলত সফটওয়্যার পাইরেসি কমানোর লক্ষ্যে রিলিজ হয়েছে। এতে করে অ্যাডোবি কোম্পানি তাদের খরচটা কমাতে পারে।[১৬] যে কারণে তারা ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু অর্থ এর বিনিময়ে এটি অ্যাডোবি থেকে ব্যবহার করার সুযোগ/সেবাটি রেখেছে। Smart sharpen ও Camera sharp reduction এর মত অবিশ্বাস্য কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে এই ভার্সনে।[১৭]

    ফটোশপ এর বিভিন্ন অংশ সমূহ

    ফটোশপে কাজ করার সবিধার্থে এর বিভিন্ন ভার্সন এ নিয়মিত এর বিভিন্ন অংশসমূহ আরো বেশি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে এসব অংশ সমূহ নির্দিষ্ট সজ্জাবিন্যাসে সাজানো হয়েছে।

    টাইটেল বার

    এডোবি ফটোশপ স্ক্রিনের সব থেকে উপরে, File, Edit, Image, Layer, Select, Filter, View, Windows, Help এগুলার উপরে টাইটেল বার অবস্থিত, অর্থাৎ Adobe Photoshop কথাটির সাথে ডকুমেন্টের নাম যে বারে থাকে তাকে টাইটেল বার বলে। এর কাজ হচ্ছে ডকুমেন্টের নাম ধারণ করা।

    মেনু বার

    টাইটেল বারের ঠিক নিচে File, Edit, Image, Layer, Select, Filter, View, Windows, Help এই ৯টির প্রত্যেকটিকে মেনু বলে আর এই মেনুগুলো একটি বারের উপর সন্নিবেশিত হয়ে আছে যাকে মেনু বার বলে। এই মেনুগুলোর প্রত্যেকটির অধিনে আবার অনেকগুলো করে সাব-মেনু আছে যেগুলোকে ব্যবহার করে ব্যবহারকারী কাজকে প্রানবন্ত করতে পারবে।

    টুলস বক্স

    টুলস বক্সটি ডিফল্ট অবস্থায় এডোবি ফটোশপ স্ক্রিনের বাম প্রান্তে উলম্ব ভাবে থাকে। রাজমিস্ত্রি যেমন কাজ করার সময় তার বিভিন্ন যন্ত্র-পাতি কুন্নি, ওয়্যাটারলেভেল, ঊষা, স্ক্র-গেজ, হ্যামার, শাবল ইত্যাদী ব্যবহার করে নিখুত করে বিল্ডিং তৈরী করে ব্যবহারকারী ঠিক তেমন করে Move Tool, Rectangular Marquee Tool, Lasso Tool, Magic Wind Tool, Crop Tool ইত্যাদি ব্যবহার করে ডিজাইন করতে পারে।

    জুম ইন্ডিকেটর

    চলমান ডকুমেন্ডে কত % জুম আছে তা এখান থেকে দেখা যায়। এর অবস্থান টুলস বারের নিচে এবং স্ট্যাটাস বারের বাম পাশে। এখানে ক্লিক করে নির্দিষ্ট % জুম টাইপ করে এন্টার করলে আপনার ডকুমেন্ডটি ঐ % এ জুম হয়ে যাবে। নিজের ইচ্ছেমত জুমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটা একটা সহজ পদ্বতি।

    স্ট্যাটাস বার

    চলমান ডকুমেন্টে কোন কাজ হচ্ছে, কোন টুল ব্যবহৃত হচ্ছে ইত্যাদী সম্পর্কিত তথ্য স্টেটাস বারের মাধ্যমে যানা যায়। এর অবস্থান ডকুমেন্টের একেবারে নিচে জুম ইন্ডিকেটরের ডান পাশে।

    টাস্কবার

    ডেস্কটপের নিচের দিকে বামপাশ থেকে ডানপাশ পর্যন্ত যে উলম্ব বারটি থাকে তা হলো টাস্কবার। যখন কোন কাজকে মিনিমাইজ করা হয় তখন কাজগুলো সব এই টাস্কবারে এসে জমা হয় এবং প্রয়োজনের সময় আবার এখানে ক্লিক করলে কাজটি ম্যাক্সিমাইজ হয়ে যায়।

    প্যালেট

    ডিজাইনকে প্রানবন্ত এবং খুব সহজে করার জন্য প্যালেটের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে হয়। ফটোশপ চালু করার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় সব প্যালেট আপনার উইন্ডোতে নাও থাকেতে পারে, সেক্ষেতে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় প্যালেট নিয়ে আসার জন্য উইন্ডো মেনুতে গিয়ে উক্ত প্যালেটের নামে ক্লিক করলে প্যালেটটি চলে আসবে। প্যালেটগুলো Default অবস্থায় ডান পাশে অবস্থান করে, তবে আপনি এগুলোকে ড্রাগ করে এদিক সেদিক আপনার পছন্দমত স্থানে নিয়ে আসতে পারবেন।

    টুলবক্স পরিচিতি

    ফটোশপ চালু করলে এর বামদিকে দেখতে পাবেন টুলবক্স। ফটোশপে ছবির কাজ করার সময় টুলবক্স অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। ফটোশপের বর্তমান সংস্করনে প্রায় ৩০ রকম টুল আছে। কার্যকারিতার সুবিধার্থে এদেরকে ৬ টি গ্রুপে[১৮] ভাগ করা যায়। প্রতিটি টুলে আবার দু থেকে তিনটি করে সাব টুল আছে। টুলের উপর রাইট ক্লিক করলেই এগুলো পাওয়া যায়।[১৯]

    Marquee Tool

    Marquee Tool চার প্রকার –[১৮]

    1. Rectangular Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি চার কোনা আকারে ছবি নির্বাচন করতে পারেন। সাধারনত ড্র্যাগ করে নির্বাচন করা যাবে। আর যদি আপনি শিফট ধরে ড্র্যাগ করেন তাহলে বর্গাকারে নির্বাচন হবে।
    2. Elliptical Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি বৃত্তাকারে ছবিতে নির্বাচন করতে পারেন। নরমালি ড্র্যাগ করে নির্বাচন করা যাবে। আর যদি আপনি শিফট ধরে ড্র্যাগ করেন তাহলে বর্গাকারে নির্বাচন হবে।
    3. Single Row Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি ছবিতে Row আকারে দাগ ভাবে নির্বাচন করতে পারবেন।
    4. Single Column Marquee Tool: এটি দিয়ে আপনি ছবিতে Column আকারে দাগ ভাবে নির্বাচন করতে পারবেন।

    Move Tool

    এই টুলটির নাম Move Tool এটি দিয়ে আপনি আপনার ছবির কোন লেয়ারকে স্হানান্তর করাতে পারি। আপনি এখানে ক্লিক করলেই দুই বা ততোধিক লেয়ার থাকলে এ্যাকটিভ লেয়ারটি নির্বাচন হবে এবং আপনি ড্র্যাগ করে Move করাতে পারেন।[১৮]

    Lasso Tool

    বিভিন্নছবির স্থানে নির্বাচন করতে এর জুড়ি নেই। Lasso Tool তিন প্রকার –[১৮] এটি তিনটির সমন্বয়ে গ্রুপটোল।

    1. Lasso Tool: এটিকে একটি পেন্সিল ভাবুন। পেনসিলের মত চাপ দিয়ে যতটুকু আঁকাবেন তারপর ছেড়ে দিলেই ঐ অংশটুকু নির্বাচন হবে।
    2. Polygonal Lasso Tool: প্রথমে এক যায়গায় ক্লিক করে নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট তৈরির মাধ্যমে ছবিতে বিভিন্ন জায়গা নির্বাচন করতে পারবেন।
    3. Magnetic Lasso Tool: এটিতে তেমন কোন পরিশ্রম হবে না। শুধু ছবিতে যেখানে যেখানে যাবেন সেখানে এটি রং পার্থক্য দেখে নির্বাচন করে যাবে।

    Magic Wand Tool

    এটি দিয়ে আপনি যে কোন এক রং এর উপর ক্লিক করেই সে অংশটুকু নির্বাচন হয়ে যাবে।[১৮]

    Crop Tool

    এটি ব্যবহার করে আপনি ছবিকে যে কোন সাইজে Crop বা রিসাইজ করতে পারবেন। এটিতে ক্লিক করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে নিচের মত আসবে। এখানে আপনি সাইজ দিয়ে ক্রপ করতে পারেন।[১৮]

    Healing Brush Tool

    এতে কয়েকটি অংশ আছে[১৮]

    1. spot healing brush tool: এটি ফটোশপ সি সি এর খুবই কার্যকরী টুল৷ এর মাধ্যমে যে কোন দাগ অথবা অবাঞ্ছিত কিছু খুব সুন্দরভাবে মুছে ফেলা যায়৷
    2. Healing Brush Tool: একস্থান থেকে কপি করে আরেকস্থানে আনার জন্য উপযুক্ত ব্রাশ। এই টুলটি সক্রিয় করে যেখান থেকে কপি করে আনবেন শুধুমাত্র কিবোর্ড থেকে Alt চাপ দিয়ে ক্লিক করুন। তাহলেই হবে। তারপর যেখানে ড্র্যাগ করবেন সেখানেই কপি হয়ে যাবে।
    3. Patch Tools: এটা লেসো টুলের মতই তবে হয়ত একটু বিশেষত্ব আছে।
    4. Color Replacement Tool: এক কালারের পরিবর্তে আরেক কালার দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার হয়। কালার প্যালেটে শুধুমাত্র কালার নির্বাচন করে ড্র্যাগ করুন।
    5. Brush Tool: ফটোশপের সবচেয়ে কার্যকরী টুল হল এটি।

    Stamp Tool

    এখানে দুটি টুল আছে –[১৮]

    1. Clone Stamp Tool: এটির ব্যবহার Healing Brugh Tool এর মতই। একস্থান থেকে কপি করে আরেকস্থানে আনার জন্য উপযুক্ত ব্রাশ। এই টুলটি সক্রিয় করে যেখান থেকে কপি করে আনবেন শুধুমাত্র কিবোর্ড থেকে Alt চাপ দিয়ে ক্লিক করুন। তাহলেই হবে। তারপর যেখানে ড্র্যাগ করবেন সেখানেই কপি হয়ে যাবে।
    2. Pattern Stamp Tool: বিভিন্ন প্যাটার্ন দেওয়ার জন্য এটির ব্যবহার করা সহজ। এটি সক্রিয় করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবার থেকে আপনি বিভিন্ন প্যাটার্ন পছন্দ করে ছবিতে প্রয়োগ করতে পারেন।

    History Brush Tool

    আপনার ছবির প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করুন এই টুলটি। এখানে দুটো টুল পাবেন।

    Eraser Tool

    এটি দিয়ে মুছতে বা ডিলিট করতে হয়। এতে তিনটি টুল আছে –[১৮]

    1. Eraser Tool: এটা নির্বাচন করে ড্র্যাগ করে আপনি অপ্রয়োজনীয় অংশ মুছতে পারবেন।
    2. Background Eraser Tool: এর মাধ্যমে আপনার ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড লেয়ারে থাকা কোন রং কে শুছে ফেলা যাবে।
    3. Magic Eraser Tool: ব্যাকগ্রাউন্ড ইরেজার টুল আর এইটির কাজ একই শুধুমাত্র একটু প্রার্থক্য হল ব্যাকগ্রাউন্ড ইরেজার টুল দিয়ে ইরেজ করলে টুলটির আকারের স্থানের অংশটুকু ইরেজ হবে। আর এটি দিয়ে ইরেজ করলে যতটুকু এক কালার আছে তার সবটুকুই ইরেজ/ডিলিট হবে।

    Gradient Tool

    গ্র্যাডিয়েন্ট হলো বিভিন্ন কালারের সমন্বয়। এখানে দুইটি টুল আছে –[১৮]

    1. Gradient Tool: গ্রিডেন্ট টুল সক্রিয় করলে ষ্ট্যান্ডার্ড টুলবারে গ্র্যাডিয়েন্ট অপশন দেখতে পাবেন। এখানে বিভিন্ন গ্রাডিয়েন্ট নির্বাচন, সাইজ ও বিভিন্ন পরিবর্তন করতে পারবেন।
    2. Paint Bucket Tool: এই টুল দিয়ে বিভিন্ন রকম প্যাটার্ন দিতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই Fill থেকে প্যাটার্ন নির্বাচন করুন।

    Blur Tool

    ছবি মসৃন করার জন্য এটির ব্যবহার হয়। এটি সক্রিয় করলে নিচের মত ষ্ট্যান্ডার্ড টুল বারে আসবে। এখান থেকে আপনি বিভিন্ন অপশন পরিবর্তন করতে পারেন।

    Sharp Tool

    ছবিকে সার্প করার জন্য এই টুলস ব্যবহার করা হয়।

    Smudge Tool

    এটা দিয়ে সহজেই ছবিতে কোন দাগ থাকলে তা মুছে দিতে পারেন। এজন্য এটি নির্বাচন করে দাগের সমপরিমাণ সাইজ করে ছবিতে ড্র্যাগ করুন।

    Dodge Tool

    অত্যন্ত কার্যকরী টুল। এখানে তিনটি সাব টুল আছে –

    1. Dodge Tool: এই টুল দিয়ে ছবির ব্রাইটনেস বাড়ানো বা আলো দেওয়া যায়।
    2. Burn Tool: এটার কাজ ঠিক Dodge Tool এর উল্টো। অর্থাৎ এটি দিয়ে ব্রাইটনেস কমানো বা কালো করা হয়। যেমন, চুল কালো করা, চোখের মনি কালো করা, ভ্রু কালো করা ইত্যাদি।
    3. Sponge Tool: ছবিতে Sponge দেওয়ার জন্য। এখানে দুটো অপশন আছে।

    Path Selection Tool

    এখানে দুটো সাব টুল আছে –

    1. Path Selection Tool: ছবিতে কোন প্যাথ বা লেয়ার নির্বাচন করার জন্য।
    2. Direct Selection Tool: পুরো লেয়ার নির্বাচন করার জন্য।

    Pen Tool

    ফটোশপের কার্যকরী একটি টুল। এতে ৫টি সাব টুল আছে –

    1. Pen Tool: পেন টুলের সাহায্যে ছবিকে নির্বাচন করা যায়। লেসো টুল দিয়েও ছবি নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু লেসোটুলো ছবি নির্বাচন করার পর আনডু বা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় না। কিন্তু পেন টুলে সহজেই আপনি ধাপে ধাপে করতে পারেন। এতে ছবি নির্বাচন করা একটু কঠিন তবে এতে ছবির মান ভাল হয়।
    2. Free Form Pen Tool: স্বাধীন ভাবে ছবি নির্বাচন করার জন্য।
    3. Add Anchor Point Tool: প্যাথ অ্যাড করার জন্য এটির ব্যবহার। অবশ্য এটি আপনি কিবোর্ড থেকে Shift ধরেও করতে পারেন।
    4. Delete Anchor Point Tool: প্যাথ রিমুভ করার জন্য এটির ব্যবহার। অবশ্য এটি আপনি কিবোর্ড থেকে Alt ধরেও করতে পারেন।
    5. Convert Point Tool: আপনার আকানো সব প্যাথকে একটি প্যাথে কনভার্ট করার জন্য।

    Notes Tools

    ছবিতে কোন নোট বা কথা থাকলে তা সেভ করার জন্য এটিকে ব্যবহার করতে পারেন।

    Audio Annotation Tool

    ছবিতে রেকর্ড করা কথা যোগ করার জন্য এটির ব্যবহার। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার মাইক্রোফোন থাকতে হবে।

    Hand Tool

    ছবিকে স্থানান্তর করার জন্য এটির ব্যবহার।

    প্রতিযোগিতা

    ফটোশপ অত্যন্ত সফল হলেও এরও বেশ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী আছ। যাদের দাম ফটোশপের থেকে বেশ কম। যেমন ম্যাক্রোমিডিয়া ফায়ারওয়ার্কস, কোরেল ফটো পেন্ট, কোরেল পেন্ট শপ প্রো এবং আলায়েড (Ulead) ফটো ইমপ্যাক্ট। বহু শিল্পী ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ফটোশপের থেকে কোরেল পেন্টার পছন্দ করেন বেশি। এছাড়া রয়েছে বেশ কিছু ওপেন সোর্স এবং বিনামূল্যের সফটওয়্যার, তাদের মধ্যে জেনইউ লাইসেন্সধারী গিম্প বা জেনইউ ইমেজ ম্যানিপুলেশান প্রোগ্রাম প্রধানতম। এইসব সফটওয়্যারের সঙ্গে লড়াই করবার জন্য অ্যাডোবি বাজারের ছেড়েছে ফটোশপ এলিমেন্টস নামের একটি সফটওয়্যার যেটিতে কিছু বৈশিষ্ট্য কম থাকলেও দামে অনেক সস্তা। PS CC 2016 Coming Soon….

    আরো দেখুন

    উইন্ডোজ পিসিতে সচল অ্যাডোবি ফটোশপ
    উন্নয়নকারীঅ্যাডোবি সিস্টেমস
    প্রাথমিক সংস্করণ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০;
    ৩২ বছর আগে
    অপারেটিং সিস্টেমউইন্ডোজ ১০ সংস্করণ ১৮০৯ এবং পরবর্তী
    ম্যাক ওএস ১০.১৩ এবং পরবর্তী[১]
    আইপ্যাড ওএস ১৩.১ এবং পরবর্তী[২]
    প্ল্যাটফর্মIA-32 এবং x86-64
    উপলব্ধ২৬ টিটি ভাষায়[৩]
    ভাষার তালিকা
    ধরনরাস্টার ছবি সম্পাদনা প্রোগ্রাম
    লাইসেন্সTrialware, SaaS
    ওয়েবসাইটwww.adobe.com/products/photoshop.html
    ফাইলনাম এক্সটেনশন.psd
    ইন্টারনেট মাধ্যমের ধরনimage/vnd.adobe.photoshop
    টাইপ কোড8BPS
    মুক্ত বিন্যাস?না
    ওয়েবসাইটwww.adobe.com/devnet-apps/photoshop/fileformatashtml/
  • প্রকৌশল

    প্রকৌশল

    প্রকৌশল পেশাদারিসমাজমুখী ব্যবহারিক বিজ্ঞানের একটি বৃহৎ ক্ষেত্র, যেখানে গণিতপ্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক শাখাগুলিতে আলোচিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক বলপদার্থের ধর্মাবলিকে শাসনকারী বৈজ্ঞানিক বিধিমূলনীতিগুলি অধীত হয়; এবং যুগের আর্থ-সামাজিক চাহিদা মেটাতে, বাস্তব বিশ্বের অভিজ্ঞতা, যুক্তি, কল্পনা ও সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টির সহায়তা নিয়ে এবং ত্রুটিহীনতা, দীর্ঘস্থায়িত্ব, দ্রুততা, সরলতা, দক্ষতা, অর্থসাশ্রয়, অপচয় হ্রাস, জানমালের নিরাপত্তা, ইত্যাদি বিষয়ে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টিবিধান করে এই বিধি ও মূলনীতিগুলিকে সচেতনভাবে প্রয়োগ করে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন সম্পদ ও শক্তিকে (যান্ত্রিক, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক, ইত্যাদি) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন, উদ্ভাবনী ও সাধারণত জটিলতর কোনও প্রযুক্তি (যেমন পদার্থ, বস্তু, কাঠামো, স্থাপনা, যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, সংস্থান বা সিস্টেম) অথবা একাধিক প্রযুক্তির সমবায়ের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, এগুলির নির্মাণকাজে অন্য অনেক শ্রমিক মানুষকে সংগঠিতকরণ, যথাযথ নির্দেশনা প্রদান, পরিচালনা ও তদারকিকরণ কিংবা শিল্পক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পণ্যদ্রব্য হিসেবে এগুলির উৎপাদন, নির্মাণ-পরিবর্তী বা উৎপাদন-পরিবর্তী কালে নকশা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিতি নিয়ে এগুলি চালনা ও ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, প্রদত্ত চালনার শর্তে এগুলির ভবিষ্যৎ আচরণ, কর্মদক্ষতা ও খরচ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান, ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা হয়, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল প্রকৃতির সম্পদকে মানুষের ব্যবহারযোগ্য কোনও রূপে রূপান্তরিত করে কোনও ব্যবহারিক সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান করে মানবজাতির উপকার ও কষ্টলাঘব করা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    যারা প্রকৌশল ক্ষেত্রের উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ডগুলির সাথে জড়িত, তাদেরকে প্রকৌশলী বলে। প্রকৌশলীরা যা কিছু নকশা, সৃষ্টি ও নির্মাণ করেন, তাকে প্রযুক্তি বলে। যেমন পুরকৌশল ক্ষেত্রে সেতু, সড়ক, ভবন; তড়িৎ প্রকৌশল ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা; কম্পিউটার প্রকৌশল ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবস্থা, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা জালক; যন্ত্রকৌশল ক্ষেত্রে ইঞ্জিন, মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন, যন্ত্রসামগ্রী; রাসায়নিক প্রকৌশল ক্ষেত্রে রাসায়নিক পদার্থ, এগুলি প্রস্তুতির যন্ত্রপাতি; জৈব প্রকৌশল ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ বা জীব, ইত্যাদি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হয়। প্রকৌশলের উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেরই বহুসংখ্যক উপক্ষেত্র আছে, যেগুলির সম্মিলিত পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক এবং আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্রে এগুলির অবদান পরিলক্ষিত ও অনুভূত হয়।

    প্রকৌশল হল সেই সুসংগঠিত শক্তি যা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাস বদলে দেয়। মানব সভ্যতার ইতিহাস ও প্রকৌশলের ইতিহাস তাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বসভ্যতার যতটুকু প্রগতি সম্পন্ন হয়েছে, তার সবটুকুতেই প্রকৌশলবিদ্যার গভীর অবদান আছে।

    প্রকৌশলবিদ্যায় কেবল তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের খাতিরে বিশ্লেষণ করা হয় না কিংবা অস্তিত্বহীন কোনও কাল্পনিক, তাত্ত্বিক সমস্যার অসাধারণ প্রতিভাদীপ্ত সমাধান সন্ধান করা হয় না। প্রকৌশলবিদ্যার উদ্দেশ্য জ্ঞানবিজ্ঞানের নিরন্তর বিশ্বকোষীয় সংগ্রহ নয়, বরং সংগৃহীত তাত্ত্বিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সম্ভাব্য উপকারী দিকগুলিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। প্রকৌশল ছাড়া বিজ্ঞানের টেকসই বাস্তব উপকারী প্রয়োগ সম্ভব নয়। আবার প্রকৌশল কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও বাস্তব বিশ্বের মেলবন্ধনই ঘটায় না, এটি বিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজ, মানুষের কায়িক পরিশ্রম ও অর্থনীতির মধ্যকার যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করে। প্রকৌশল চিন্তাভাবনাহীন কায়িক পরিশ্রম নয়, বরং কায়িক পরিশ্রমের বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বোচ্চ কৌশলী ব্যবহার। প্রকৌশলবিদ্যা যুগের চাহিদা ও সমাজের চাহিদার ব্যাপারে সচেতন। প্রকৌশলবিদ্যা ছাড়া সমাজ ও সভ্যতার বস্তুগত অগ্রগতি প্রায় অচল হয়ে যাবে। প্রকৌশলবিদ্যা ছাড়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলির দক্ষতা হ্রাস পাবে ও এগুলির প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়বে।

    গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির সম্পর্ক

    গণিত হল যুক্তি ও সৃজনশীলতার সহায়তায় বিমূর্ত ধারণাসমূহের পরিমাপ, বিন্যাস ও সম্পর্কের বিশুদ্ধ অধ্যয়ন। গণিতে ব্যবহৃত সাংকেতিক ভাষা বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণাকে সুস্পষ্টভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রকাশ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা। গণিত বিজ্ঞানের ধারণাগুলি প্রকাশের ব্যাকরণিক ভিত্তি প্রদান করে।

    বিজ্ঞান হল প্রকৃতির বিভিন্ন পদার্থ ও শক্তির ধর্মসমূহ সম্পর্কে সত্যসমূহ এবং এগুলিকে নিয়ন্ত্রণকারী বিধি ও মূলনীতিসমূহের তাত্ত্বিক অধ্যয়ন। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় মানুষের কর্মকাণ্ড ও প্রভাব গণনায় না ধরে প্রকৃতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লব্ধ সমস্ত পদার্থ, শক্তি, প্রক্রিয়া ও সংস্থান বা সিস্টেম। গণিতবিদেরা বিজ্ঞানের জগৎ থেকে আগত আগ্রহজনক গাণিতিক সমস্যার উপরে অনুসন্ধান চালাতে পারেন। তবে গণিতবিদেরা কেবল গবেষণার খাতিরেও বিমূর্ত ধারণা অধ্যয়ন করতে পারেন, যার সাথে বাস্তব বিশ্বপ্রকৃতি বা একে অধ্যয়নকারী বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই।

    প্রকৌশল হল গণিত ও তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের বিধি ও মূলনীতিগুলির সুশৃঙ্খল প্রণালীবদ্ধ প্রয়োগ করে প্রযুক্তি নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক চাহিদার প্রয়োজনে উদ্ভূত বিভিন্ন ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান করা। প্রকৌশল তাই প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব বিস্তারকারী এক বিশেষ ধরনের কর্মকাণ্ড। একজন প্রকৌশলী তাঁর বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মাধ্যমে কোনও সমস্যার অন্তর্নিহত সীমাবদ্ধতাগুলি বুঝতে পারেন ও সেই অনুযায়ী বিভিন্ন দিক থেকে সমাধানের চেষ্টা করেন। একজন প্রকৌশলী গণিতের সাহায্যে ভৌত বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার গাণিতিক প্রতিমান (মডেল) তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাধান মূল্যায়ন করার জন্য গণিতের আশ্রয় নেন। প্রকৌশল নকশাকরণ প্রক্রিয়ার সাথে গণিতের নিবিড় সম্পর্ক আছে। যেকোনও প্রকৌশলীকে বহুসংখ্যক গাণিতিক দক্ষতার অধিকারী হতে হয়, যেমন পাটিগণিত, কলনবিদ্যা, জ্যামিতি, পরিমাপ, ফলাফলের সারণী ও লেখচিত্র নির্মাণ, গাণিতিক সূত্রায়ন, সময়রেখা, ইত্যাদি।

    প্রযুক্তি হল প্রকৌশলের সুবাদে লব্ধ বস্তু, যন্ত্র, সরঞ্জাম, প্রক্রিয়ার সমাহার যা বিভিন্ন ব্যবহারিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তি তাই প্রকৃতির বাইরে অবস্থিত সেই সমস্ত পদার্থ, জটিল বস্তু, প্রক্রিয়া ও সংস্থান বা সিস্টেমসমূহের সমগ্র, যা মানুষের উদ্দেশ্যমূলক ও প্রকৌশলমূলক কর্মকাণ্ডের ফসল।

    প্রয়োগপদ্ধতি

    সমস্যা সমাধান

    একজন প্রকৌশলী একজন সাধারণ বিজ্ঞানীর মত যেকোনও আগ্রহজনক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন না। তাকে এমন কোনও সমস্যার সমাধান করতে হয়, যে সমস্যা বাস্তব বিশ্বে কোনও ব্যবহারিক কারণে সৃষ্ট হয়েছে। প্রকৌশলীকে এমন সমাধান প্রদান করতে হয় যা অনেকগুলি পরস্পর-বিরোধী শর্তের মধ্যে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টিবিধান করে। প্রকৌশলীর সমাধানটি যদি দক্ষ হয়, তাহলে সাধারণত সেটি ব্যয়বহুলও হয়। নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখলে সমাধান আরও জটিল রূপ ধারণ করে। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করলে হয়ত ওজন বেড়ে যায়। একটি প্রকৌশলীয় সমাধান তাই অনেকগুলি বিষয় বিবেচনা করে গৃহীত এক ধরনের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টিবিধানমূলক সমাধান, যা হয়ত নির্দিষ্ট কোনও ভারসীমার মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, কিছু নিরাপত্তামূলক শর্ত সন্তুষ্টকারী সরলতম এবং কোনও প্রদত্ত ব্য়য়সীমার মধ্যে সবচেয়ে কর্মদক্ষ।

    কম্পিউটারের প্রয়োগ

    সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৌশল

    সাংস্কৃতিক উপস্থিতি থেকে প্রকৌশল

    আইনগত দিক থেকে প্রকৌশল

    জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে তুলনামূলক আলোচনা

    বিজ্ঞান

    অন্যান্য শাখা

    প্রকৌশলের প্রধান শাখাসমূহ

    ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন, শিল্প বিপ্লবের অন্যতম একটি আবিষ্কার

  • পুরকৌশল

    পুরকৌশল

    পুরকৌশল বা পূর্তকৌশল হলো পেশাদার প্রকৌশল ব্যবস্থার একটি শাখা যেখানে নকশা, নির্মাণ কৌশল, বাস্তবিক বা প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পরিবেশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয় যার মধ্যে সেতু, রাস্তা, পরিখা, বাঁধ, ভবন ইত্যাদি নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর সর্বত্র পুরকৌশলীদের কাজ রয়েছে। [১][২][৩] সামরিক প্রকৌশল ব্যবস্থার পর পুরকৌশল হলো সবচেয়ে পুরাতন প্রকৌশল ব্যবস্থা[৪] এবং তা বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশল ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যকারী বিভাগ।[৫] পুরকৌশলকে ঐতিহ্যগতভাবে বেশ কিছু উপ-শাখায় বিভক্ত করা হয়, যেমন স্থাপত্য প্রকৌশল, পরিবেশ প্রকৌশল, ভূ-কারিগরি প্রকৌশল, ভূপ্রকৃতিবিদ্যা, ভূগণিত, নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল, সংগঠন প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল, পরিবহণ প্রকৌশল, পৃথিবী বিজ্ঞান, বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান, আদালত প্রকৌশল, নগর প্রকৌশল, পানি সম্পদ প্রকৌশল, উপকরণ প্রকৌশল, উপকূলবর্তী প্রকৌশল, মহাকাশ প্রকৌশল, পরিমাণ জরিপ,[৪] মাপজোখ, পরিবেশবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, অবকাঠামো প্রকৌশল, বস্তুবিদ্যা, জলবিজ্ঞান, ভূমি জরিপ এবং নির্মাণ প্রকৌশল[৬]

    পুরকৌশল পেশার ইতিহাস

    মানব সভ্যতার শুরু থেকে প্রকৌশল জীবন ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ এবং ২০০০ সালে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতামেসোপটেমিয়ার সভ্যতা (প্রাচীন ইরাক) থেকে পুরকৌশলের যাত্রা শুরু বলে ধারণা করা হয়, ঠিক যখন থেকে মানুষ তাদের বসবাসের জন্য আবাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সেই সময়ে চাকা এবং পাল আবিষ্কার হবার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব দারুনভাবে বৃদ্ধি পায়।

    বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্তও পুরকৌশল এবং স্থাপত্যবিদ্যার মধ্যে কোন সুস্পষ্ট পার্থক্য ছিল না এবং প্রকৌশলী ও স্থপতি শব্দ দ্বারা ভৌগোলিক স্থানভেদে, মূলত একই ব্যক্তিকে বোঝান হত।[৭] মিশরের পিরামিডকে (খ্রিস্ট পূর্ব ২৭০০-২৫০০) বিশ্বের ইতিহাসে বড় কাঠামো নির্মাণের প্রথম দৃষ্টান্ত বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য পুরকৌশল নির্মাণকাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কানাত পানি ব্যাবস্থাপনা কৌশল (সবচেয়ে পুরানোটি ৩০০০ বছর পূর্বের ও প্রায় ৭১ কিলোমিটার লম্বা,[৮]),দ্যা অ্যাপেইন ওয়ে, চীনের গ্রেট ওয়াল ইত্যাদি। রোমানরা, তাদের সাম্রাজ্যজুড়ে নালা পোতাশ্রয়, সেতু বাঁধ, রাস্তাসহ অসংখ্য বেসামরিক স্থাপনা গড়ে তোলে।

    ১৮শ শতাব্দীতে পুরকৌশল শব্দটিকে সামরিক প্রকৌশলবিদ্যার বিপরীত হিসেবে ব্যবহার করা হত। বিশ্বের প্রথম স্বঘোষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন জন স্মিয়াথন যিনি এডিস্টোন লাইটহাউস তৈরি করেছিলেন। ১৭৭১ সালে স্মিয়াথন ও তার কয়েকজন সহকর্মী মিলে স্মিয়াথন সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যদিও তাদের কারিগরি বিষয় নিয়ে কিছু বৈঠক হয় তথাপিও এটি একটি সামাজিক সংগঠনের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না।

    ১৮১৮ সালে লন্ডনে ইন্সিটিউট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৮২০ সালে থমাস টেলফোর্ড এর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি রাজকীয় সনদ গ্রহণ করে যা পুরকৌশলকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

    যুক্তরাষ্ট্রে নরউইচ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বেসরকারি কলেজ হিসেবে পুরকৌশল পড়ান শুরু করা হয়, ১৮১৯ সালে।[৯] যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৩৫ সালে রেন্সিলেয়ার পলিটেকনিক ইন্সিটিউট থেকে পুরকৌশলে সর্বপ্রথম ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়।[১০] ১৯০৫ সালে প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে সেই ডিগ্রী পান নোরা স্ট্যান্টোন ব্লাচ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে।[১১]

    পুরকৌশলের ইতিহাস

    আর্কিমিডিসের স্ক্রু, যা হাত দিয়ে পরিচালনা করা হত এবং এর সাহায্যে অত্যন্ত কার্যকরভাবে পানি তোলা যেত

    পোন্ট দু গার্ড, ফ্রান্স, একটি রোমান পানি সরবরাহের কৃত্রিম প্রণালী যা আনুমানিক ১৯ খ্রিস্ট পূর্ব সালে তৈরি করা হয়েছিল

    পুরকৌশল হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন সমাধানের নিমিত্তে প্রাকৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং নীতিগুলোর প্রয়োগ। গণিতপদার্থবিজ্ঞানের সূত্রকে অধিকতর বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পুরকৌশল পেশা আজকের অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে। যেহুতু পুরকৌশলের বিস্তৃতি অনেক ব্যপক, এর জ্ঞান কাঠামোবিদ্যা, বস্তুবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, মাটি, জলবিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা, বলবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের আর শাখার সাথে সংযুক্ত।

    প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগীয় সময়কালে সকল সকল স্থাপত্যের নকশা এবং নির্মাণ রাজমিস্ত্রি এবং কাঠমিস্ত্রি দ্বারা করা হত, যার ফলে একসময় স্থপতির প্রয়োজন অনুভব করায়। সকল জ্ঞান একদল বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে মুষ্ঠিবধ্য ছিল এবং তা খুব কম সময়ই অন্যদের জানানো হত। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একই ধরনের স্থাপনা, রাস্তা ও অবকাঠামো দেখা যেত এবং তা আকারে ক্রমান্বয়ে আর বড় হতে থাকে। [১২]

    পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতের সূত্রগুলিকে পুরকৌশলের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রথম প্রচেষ্টাটি করেন আর্কিমিডিস তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ সালে, যার মধ্যে আর্কিমিডিসের তত্ত্ব অন্তর্গত ছিল, যা প্লবতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা মজবুত করতে সাহায্য করে এবং আমাদেরকে বিভিন্ন ব্যবহারউপযোগী সমাধান যেমন আর্কিমিডিসের স্ক্রু বানাতে সাহায্য করে। ব্রহ্মগুপ্ত, একজন ভারতীয় গণিতবিদ, সপ্তম খ্রিস্টাব্দে হিন্দু-আরবিক সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, পাটিগণিত ব্যবহার করে খননকৃত এলাকার আয়তন বের করবার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। [১৩]

    পুর-প্রকৌশলী

    শিক্ষা ও অনুমতিপত্র

    মূল নিবন্ধ: পুর-প্রকৌশলী

    পুর-প্রকৌশলী সাধারণত পুরকৌশল এর উপর একটি একাডেমিক ডিগ্রী নিয়ে থাকেন। এর শিক্ষাবর্ষ ৩ থেকে ৫ বছর হয়ে থাকে, এবং সম্পন্ন ডিগ্রী প্রকৌশল স্নাতক, বা বিজ্ঞান স্নাতক হিসেবে মনোনীত করা হয়। পুরকৌশল পাঠ্যক্রমে সাধারণত পদার্থবিদ্যা, গণিত, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, নকশা এবং নির্দিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। পুরকৌশলের প্রয়োজনীয় শাখায় প্রাথমিক কোর্স গ্রহণ করার পর, তারা উন্নতির সাপেক্ষে এক বা একাধিক শাখার উপর বিশেষত্ব লাভ করে থাকেন। যদিও স্নাতক ডিগ্রীর (বিএসসি) একজন ছাত্র শিল্প-স্বীকৃত(industry-accredited) যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে থাকে, আবার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্নাতকোত্তর ডিগ্রী (এমএসসি) প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দের বিষয়ে আরও বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে।.[১৪] অধিকাংশ দেশে, একটি স্নাতক ডিগ্রীই ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাদারী সার্টিফিকেশন হিসেবে কাজ করে। প্রত্যায়িত ডিগ্রী কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর, একজন প্রকৌশলীকে প্রত্যয়িত হওয়ার পূর্বেই তার পরীক্ষার ফলাফল আশাতীত এবং কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। একবার প্রত্যায়িত হয়ে গেলে, প্রকৌশলী তখন পেশাদার হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রাসঙ্গিক পেশাদারী সংস্থার মধ্যে, প্রকৌশলী জাতীয় সীমানা জুড়ে অনুশীলন বা হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করার বেপারে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে। প্রশংসাপত্রের সুবিধা অনেকাংশে তার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডাতে, শুধু মাত্র একজন প্রত্যায়িত পেশাদারী প্রকৌশলই পারবেন সরকারি এবং বেসরকারি কাজের জন্য, তার স্বাক্ষরকৃত প্রকৌশলী পরিকল্পনা (plan) এবং অঙ্কন(drawing) অনুমোদনের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে। “[১৫] যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশেও পুরকৌশলের জন্য একই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে পুর-প্রকৌশলীদের রাষ্ট্রীয় অনুমোদনে বা লাইসেন্সে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রায় সকল প্রতায়িত সংস্থাই নীতিশাস্ত্র কোড(code of ethics) মেনে চলে, যা ওখানকার সকল সদস্যকে মেনে চলতে হবে “[১৬] একজন প্রকৌশলীকে অন্য পক্ষের সাথে, চুক্তি আইন সংবলিত চুক্তিমুলক বিষয়গুল অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যদি একজন প্রকৌশলী তার কাররয ক্ষেত্রে অপারগ হয়, তবে তিনি আইনত দোষী সাব্বস্থ হতে পারে।”[১৭] একজন পুরকৌশলীকে আরও কিছু নিয়ম কানুন মেনে কাজ করতে হয়, সেটা হতে পারে বিল্ডিং কোড ও পরিবেশ গত আইন।

    চিত্রশালা

    আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো জটিল সব স্থাপনায় পুরকৌশলের সুগভীর জ্ঞান প্রয়োজন হয়।

    চীনেরসাংহাই এর একটি বহু স্তরবিশিষ্ট স্ট্যাক ইন্টারচেঞ্জ, ভবন, বাড়ি এবং পার্ক।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরফিলাডেলফিয়া সিটি হল এখনও বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা এবং লোড ভারবহনক্ষম কাঠামো।

  • পরিবেশ প্রকৌশল

    পরিবেশ প্রকৌশল মূলত একটি পেশাদারী প্রকৌশল ক্ষেত্র যেখানে পরিবেশ ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানসমূহের বিশোধন, সংগ্রহণ, সংরক্ষণ সর্বোপরি পুরো পরিবেশ রক্ষার উপায় সমূহ আলোচিত হয়। পরিবেশ প্রকৌশল এমন একটি শাখা, যা রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, উদপ্রবাহবিজ্ঞান, জলবিদ্যা, অণুজীববিজ্ঞান এবং গণিতের মত বিচিত্র বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সম্মিলনে জীবের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং পরিবেশের মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধানের সন্ধান করে।[১][২] পরিবেশ প্রকৌশল, পুরকৌশল এবং রসায়ন প্রকৌশল এর একটি উপ-শাখা।

    পরিবেশ প্রকৌশল হচ্ছে পরিবেশের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল নীতির প্রয়োগ, যাতে:

    • মানব স্বাস্থ্য রক্ষিত হয়,
    • প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষিত হয়,
    • এবং মানব জীবনের মানোন্নয়ন সম্পর্কিত পরিবেশ-জনিত বিষয়ের উৎকর্ষসাধন ঘটে।[১]

    পরিবেশ প্রকৌশলীরা বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনা, পানি এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য নিষ্কাশন এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্ভূত সমস্যার সমাধান প্রদান করে।[২][৩] তারা নগরের পানি সরবরাহ এবং শিল্পের বর্জ্য পানি শোধনাগার ব্যবস্থার নকশা করে[৪][৫] এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা করে। তারা ঝুঁকির তীব্রতা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে বিপজ্জনক-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন করে, এগুলোর ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য নিয়মকানুন বিকাশিত করে। তারা পরিবেশ প্রকৌশল আইন বাস্তবায়ন করে, যেমন প্রস্তাবিত নির্মাণ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন।

    পরিবেশ প্রকৌশলীরা পরিবেশের উপর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রভাব অধ্যয়ন করে এবং স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যা যেমন এসিড বৃষ্টি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, ওজোনস্তর ক্ষয়, পানি দূষণ এবং যানবাহন ও শিল্প উৎস থেকে বায়ু দূষণ ইত্যাদি চিহ্নিত করে।[২][৬][৭][৮]

    অধিকাংশ প্রশাসনেই যোগ্যতাসম্পন্ন পরিবেশ প্রকৌশলীদের জন্য লাইসেন্স এবং নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।[৯][১০][১১]

    ইতিহাস

    প্রাচীন সভ্যতা

    পরিবেশ প্রকৌশল এমন সব কাজের নাম, যেগুলো সভ্যতার শুরুতেই মানুষ নিজের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশগত অবস্থা পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার সময় থেকে করে আসছে।[৩][১২] যখন মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অবস্থার সাথে তাদের দৈহিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, তখন থেকেই তারা পরিবেশের মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।[৩] প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা (৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনায় বেশ দক্ষতা অর্জন করেছিল। তাদের বসবাসকৃত এলাকায় বিভিন্ন কূপ, গোসলখানা, জলাধার, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং শহরব্যাপী বিস্তৃত নিকাশি ব্যবস্থা পাওয়া গিয়েছে।[১২][১৩] এছাড়াও তারা একটি প্রাথমিক সেচ ব্যবস্থা তৈরী করেছিল যা তাদের ব্যাপক আকারে কৃষিকাজ করার সক্ষমতা দান করে।[১৪]

    ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত, অনেক সভ্যতাই জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং কিছু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, যেমন মেসোপটেমিয়া, মহেঞ্জোদাড়ো, প্রাচীন মিশর এবং স্কটল্যান্ডের ওর্কনি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও প্রাচীন গ্রীকরা বৃষ্টি এবং বর্জ্য পানি, নালা এবং নর্দমা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেচ এবং সার দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতো।[৩]

    রোমে ৩১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম নালা নির্মিত হয় এবং এরপর থেকে তারা খরার সময় সেচ এবং সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য নালা নির্মাণ অব্যাহত রাখে। এমনকি তারা খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর শুরুতেই একটি ভূগর্ভস্থ নর্দমা ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিল, যা তাইবার নদী পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসরণের মাধ্যমে কৃষিজমি তৈরি এবং একই সাথে শহর থেকে নর্দমা অপসারণ, উভয় কাজই করতো।[৩][১২]

    আধুনিক যুগ

    রোমের পতন থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা ব্যতীত খুব সামান্যই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।[১৫] আধুনিক পরিবেশ প্রকৌশল ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনের গ্রেট স্টিংক ঘটনার পর জোসেফ বাজালগেট এর প্রথম প্রধান নর্দমা নিকাশী ব্যবস্থা নকশার মাধ্যমে শুরু হয়। সেসময় শহরের নর্দমা ব্যবস্থা টেমস নদীতে কাঁচা নর্দমা সরবরাহ করতো, যে নদী আবার শহরের পানীয় জলের সিংহভাগের সরবরাহকারী, যার ফলে কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।[১২] শিল্পোন্নত দেশগুলোতে পানীয় জল শোধন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রবর্তন, পানিবাহিত রোগ কে মৃত্যুর প্রধান কারণ থেকে বিরল কারণে পরিণত করেছে।[১৬]

    পানি ও বায়ু দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত অবক্ষয় সম্পর্কে জনগণের ব্যাপক উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশ প্রকৌশল একটি পৃথক একাডেমিক শাখা হিসেবে আবির্ভূত হয়। সমাজ এবং প্রযুক্তির জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর অনভিপ্রেত প্রভাব সৃষ্টি করতে শুরু করে। একটি উদাহরণ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে কৃষিক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক ডিডিটি এর ব্যাপক প্রয়োগ। ডিডিটির গল্প, যা রেচল কারসন এর সাইলেন্ট স্প্রিং (১৯৬২) গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, এটিকে আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের জন্মসূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,[১৭] যার ফলশ্রুতিতে আধুনিক “পরিবেশ প্রকৌশল” ক্ষেত্রটি সৃষ্টি হয়েছে।

    প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

    অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল অথবা রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পরিবেশ প্রকৌশল শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে ও পরিবেশগত অবস্থার উন্নয়ন ও ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ইলেকট্রনিক প্রকল্পসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত। পুরকৌশলের অধীনে পরিবেশ প্রকৌশলীরা সাধারণত জলবিদ্যা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়োরিমিডিয়েশন এবং পানি ও বর্জ্য পানি শোধনাগার নকশা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। রসায়ন প্রকৌশলের অধীনে পরিবেশ প্রকৌশলীরা পরিবেশ রসায়ন, উন্নত বায়ু ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি এবং পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পরিবেশ প্রকৌশলের কিছু শাখায় প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৌশল এবং কৃষি প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত।

    শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি মূলত কিছু প্রধান শাখায় বিভক্ত:

    • যন্ত্র প্রকৌশল, পরিবেশগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যন্ত্র এবং যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেমন পানি এবং বর্জ্য পানি শোধনাগার, পাম্পিং স্টেশন, আবর্জনা পৃথকীকরণ উদ্ভিদ এবং অন্যান্য যান্ত্রিক সুবিধা নকশা সম্পর্কে অধ্যয়ন।
    • পরিবেশ প্রকৌশল বা পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে পুরকৌশল-মূলক পদ্ধতিতে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কে অধ্যয়ন।
    • পরিবেশ রসায়ন, টেকসই রসায়ন বা পরিবেশ রসায়ন প্রকৌশল, পরিবেশে খনন, দূষক এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সহ সকল রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব সম্পর্কে অধ্যয়ন।
    • পরিবেশ প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা সহ পরিবেশগত প্রভাব পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ, নকশা এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ইলেকট্রনিক যন্ত্র নির্মাণ সম্পর্কে অধ্যয়ন।

    পাঠ্যক্রম

    পরিবেশ প্রকৌশলের একটি সাধারণ পাঠ্যক্রম নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে গঠিত:[১৮]

    1. ভর এবং শক্তি স্থানান্তর
    2. পরিবেশ রসায়ন
      1. অজৈব রসায়ন
      2. জৈব রসায়ন
      3. পারমাণবিক রসায়ন
    3. বৃদ্ধি মডেল
      1. সম্পদ ব্যবহার
      2. জনসংখ্যা বৃদ্ধি
      3. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
    4. ঝুঁকি মূল্যায়ন
      1. ঝুঁকি শনাক্তকরণ
      2. ডোজ-রিসপন্স মূল্যায়ন
      3. এক্সপোজার মূল্যায়ন
      4. ঝুঁকি চরিত্রায়ণ
      5. তুলনামূলক ঝুঁকি বিশ্লেষণ
    5. পানি দূষণ
      1. পানি সম্পদ এবং দূষকসমূহ
      2. অক্সিজেন চাহিদা
      3. দূষক পরিবহন
      4. পানি এবং বর্জ্য পানি শোধন
    6. বায়ু দূষণ
      1. শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক নিঃসরণ
      2. মানদণ্ড এবং বিষাক্ত বায়ু দূষকসমূহ
      3. দূষণ মডেলিং(যেমন বায়ুমণ্ডলীয় বিচ্ছুরণ মডেলিং)
      4. দূষণ নিয়ন্ত্রণ
      5. বায়ু দূষণ ও আবহাওয়াবিজ্ঞান
    7. বৈশ্বিক পরিবর্তন
      1. গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা
      2. কার্বন, নাইট্রোজেন, এবং অক্সিজেন চক্র
      3. আইপিসিসি নির্ধারিত নিঃসরণ পরিস্থিতি
      4. সামুদ্রিক পরিবর্তন (সমুদ্র অম্লীকরণ, সমুদ্রের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যান্য প্রভাব) এবং স্ট্রাটোমণ্ডলে পরিবর্তন (জলবায়ু পরিবর্তনের ভৌত প্রভাব দেখুন)
    8. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার
      1. জীবন চক্র মূল্যায়ন
      2. উৎস হ্রাস
      3. সংগ্রহ এবং স্থানান্তর কার্যক্রম
      4. পুনর্ব্যবহার
      5. বর্জ্য থেকে শক্তিতে রূপান্তর
      6. আবর্জনাভূমি

    ভর ভারসাম্য

    একটি মানব-সৃষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য বিবেচনা করা যাক, যার সময়, অবস্থান, পদার্থের কোনো পর্যায় বা তরলের প্রবাহের সাথে সম্পর্কিত অবস্থা জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ঘনমাত্রার পরিমাপকৃত পরিবর্তনকে ওই দ্রব্যের ওপর প্রভাবদানকারী সকল পরিবর্তনের হারের ফাংশন হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

    V d C d t = ∑ ( d b m d t b ) {\displaystyle V{dC \over dt}=\sum ({d^{b}m \over dt^{b}})}

    অর্থাৎ কিছু নির্দিষ্ট আয়তনের জন্য, ঘনমাত্রার পরিবর্তন বনাম রৈখিক স্বাধীন সময়ের পরিবর্তন, ওই নির্দিষ্ট আয়তনের ভেতরে (+) এবং বাইরে (-) যা কিছু পরিবর্তন ঘটছে তার যোগফলের সমান। এটি কয়েকটি ভিন্ন কারণের জন্য অনুমোদিত:

    (১) ভরের নিত্যতা t o t a l m a s s = m a s s a + m a s s b + m a s s c . . . m a s s n

    {\displaystyle totalmass=mass_{a}+mass_{b}+mass_{c}...mass_{n}}(২) একটি সাধারণ ব্যবকলনীয় সমীকরণ হিসেবে প্রকাশ

    a 0 ( x ) y + a 1 ( x ) y ′ + a 2 ( x ) y ″ + ⋯ + a n ( x ) y ( n ) + b ( x ) = 0 , {\displaystyle a_{0}(x)y+a_{1}(x)y'+a_{2}(x)y''+\cdots +a_{n}(x)y^{(n)}+b(x)=0,}

    (৩) এর একটি সমাধান বিদ্যমান।

    যদিও ব্যবকলনীয় সমীকরণ বেশ জটিল হতে পারে, তবে প্রতি একক সময়ে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের জন্য ঘনমাত্রার পরিবর্তনের এই সূত্রটি ক্যালকুলাস ছাড়াই বেশ সহজবশ্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার দূষক সংবলিত একটি পাত্রের আয়তনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি সেখানে প্রথম মাত্রার বিক্রিয়া -kC সংঘটিত হয় এবং পাত্র স্থির অবস্থায় থাকে তবে তরল বর্জ্যের ঘনমাত্রাকে প্রাথমিক ঘনত্ব, বিক্রিয়া ধ্রুবক k, এবং হাইড্রলিক রিটেনশন টাইম (এইচআরটি) দ্বারা প্রকাশ করা যায়, যা প্রবাহ ও পাত্রের আয়তনের ভাগফলের সমান।

    C = C 0 / ( 1 + τ ∗ k ) {\displaystyle C=C_{0}/(1+\tau *k)}

    প্রয়োগ

    পানি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা

    পরিবেশ প্রকৌশলীরা একটি জলাশয়ের মধ্যে পানির ভারসাম্য মূল্যায়ন করেন এবং ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ, ওই জলাশয়ে বিভিন্ন চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় পানি, জলাশয়ের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহের মৌসুমী চক্র নির্ধারণ করেন এবং তারা বিভিন্ন কাজের জন্য পানি সঞ্চয়, শোধন এবং সরবাহের নানা সিস্টেম তৈরী করেন।

    পানি শোধন করে গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে তা ব্যবহারোপযোগী করা হয়। পান-উপযোগী পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে, পানি শোধনের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ সংক্রমণ ও অসংক্রামক অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস এবং সুস্বাদু করা হয়। পানি বণ্টন ব্যবস্থা[১৯][২০] এমনভাবে নকশা করা হয় যেন ব্যবহারকারীর বিভিন্ন চাহিদা যেমন গার্হস্থ্য ব্যবহার, অগ্নি দমন এবং সেচ ইত্যাদির জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করার মত পর্যাপ্ত পানির চাপ এবং প্রবাহের হার বিদ্যমান থাকে।

    বর্জ্য পানি শোধন

    পানি শোধনাগার, অস্ট্রেলিয়া

    বর্তমানে বেশ কয়েকটি বর্জ্য পানি শোধন প্রযুক্তি রয়েছে। একটি বর্জ্য পানি শোধনাগার কঠিন এবং ভাসমান উপাদান অপসারণের জন্য একটি প্রাথমিক শোধন ব্যবস্থা, একটি এয়ারেশন বেসিন, অধঃক্ষেপণ বা সক্রিয় স্লাজ ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত সেকেন্ডারি শোধন ব্যবস্থা, একটি তৃতীয় জৈবিক নাইট্রোজেন অপসারণ সিস্টেম এবং সর্বশেষে একটি নির্বীজন প্রক্রিয়া নিয়ে গঠিত। এয়ারেশন বেসিন/সক্রিয় স্লাজ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়ার (সক্রিয় স্লাজ) সাহায্যে জৈব উপাদান অপসারণ করে। সেকেন্ডারি শোধন ব্যবস্থা পানি থেকে সক্রিয় স্লাজ অপসারণ করে। তৃতীয় ব্যবস্থাটি যদিও সবসময় খরচের কারণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, তবুও নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস অপসারণ এবং প্রবাহে বা সমুদ্রে ছাড়ার আগে পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ক্রমেই প্রচলিত হয়ে উঠছে।[২১]

    বায়ু দূষণ ব্যবস্থাপনা

    বিজ্ঞানীরা রিসেপ্টরে দূষকের ঘনত্ব বা যানবাহন এবং শিল্প গ্যাস নির্গমন থেকে সামগ্রিক বায়ুর গুণগত মানের উপর প্রভাব মূল্যায়নে বায়ু দূষণ বিচ্ছুরণ মডেল তৈরি করেছেন। কিছু মাত্রায়, এই শাখা, দহন প্রক্রিয়া থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যের সাথে একীভূত হয়।

    পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং নিরসন

    মূল নিবন্ধ: পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন

    পানি দূষণ।

    পরিবেশ প্রকৌশলীরা বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশল নীতি প্রয়োগ করে পানি, বায়ু, আবাসস্থলের মান, উদ্ভিদ ও প্রাণী, কৃষি এবং বাস্তুসংস্থানের উপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা তা মূল্যায়ন করেন। যদি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তারা এই ধরনের প্রভাব সীমিত বা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর একটি উদাহরণ হলো, সড়ক নির্মাণের জন্য জলাভূমি ভরাট করা হলে এর বকল্প হিসেবে নিকটবর্তী কোনো স্থানে পুনরায় জলাভূমি তৈরি করা।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে,পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের রীতিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি, জাতীয় পরিবেশ নীতি আইন (নেপা) কার্যকরের মাধ্যমে শুরু হয়। সেই সময় থেকে, ১০০ টিরও বেশি উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশ হয় অনুরূপ নির্দিষ্ট আইন তৈরি করেছে অথবা অন্য কোথাও ব্যবহৃত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। নেপা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল ফেডারেল এজেন্সির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।[২২]

    নিয়ন্ত্রক সংস্থা

    পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) একটি অন্যতম সংস্থা, যারা মূল সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবেশ প্রকৌশলীদের নিয়ে কাজ করে। ইপিএ-এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো বা কমানোর জন্য বায়ু, পানি এবং সামগ্রিক পরিবেশগত মান রক্ষা এবং এর উন্নয়ন।[২৩]

    আরও দেখুন

    At Wikiversity you can learn more and teach others about পরিবেশ প্রকৌশল at:

    The Department of পরিবেশ প্রকৌশল

  • দূর অনুধাবন

    দূর অনুধাবন (ইংরেজি : Remote Sensing) হল কোন বস্তুকে সরাসরি স্পর্শ না করে সেই বস্তু হতে তার গুনাবলি সম্পর্কিত উপাত্ত সংগ্রহ করা এবং পর্যবেক্ষন করার এক ধরনের কৌশল । এক্ষেত্রে বিভিন্ন সেন্সর বা ডিভাইস ব্যবহার করা হয় ।[১] দূর অনুধাবন হচ্ছে জিওইনফরমেটিক্স এর একটা বড় অংশ । এটা আবার ভূ-বিজ্ঞানের একটি উপশাখা বলা যায় । বর্তমান যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। মহাকাশ তথা উপগ্রহ প্রযুক্তি আধুনিক যুগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে সেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি বর্তমান মহাকাশ প্রযুক্তির যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এটা এমন এক কৌশল যার মাধ্যমে রিমোট সেন্সিং ডিভাইসের দ্বারা কোন বস্তুকে সরাসরি স্পর্শ না করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত এই প্রযুক্তি বলতে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের দ্বারা মহাকাশ ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণকে অনেকে বুঝিয়ে থাকেন। যদিও এর মানে শুধু মহাকাশ হতে পর্যবেক্ষণ বুঝানো একেবারে ঠিক হবেনা কারণ RADAR ও LIDAR এর সাহায্যে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে রিমোট সেন্সিং এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তথ্যকে কম্পিউটারের মধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞের পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক । [২] উদাহারন হিসেবে বলা যায়- আকাশে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহ বা বিমান থেকে পরিবেশের কোন উপাদানের তথ্য সংগ্রহ । দূর অনুধাবন কৌশলে বেশ কিছু সেন্সর ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল [১]

    1. ক্যামেরা
    2. লেসার
    3. রেডিও তরঙ্গ গ্রহণকারী রিসিভার বা সংগ্রাহক
    4. রাডার ব্যবস্থা
    5. সনার
    6. সীসমোগ্রাফ
    7. গ্রাভিমিটারস
    8. ম্যাগ্নেটমিটার।

    উপগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশ ও আমাদের বাস যোগ্য পৃথিবীর দুর্গম স্থান পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়েছে। আকাশের উপরে অবস্থিত বিভিন্ন রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট ব্যবহার করে খুব সুন্দরভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা নাসা সহ ভারত, জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, উত্তর কোরিয়া, চীন খুব ভাল ভাবে মহাকাশ গবেষণায় সাফল্য নিয়ে আসছে।[২]

    ভূমিকম্পে দূর অনুধাবন

    উপাত্ত ধারণ কৌশল

    উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ

    ইতিহাস

    ব্যবহৃত সফটওয়্যার

    ERDAS imagine , ArcGIS, Map info, ER Mapper, etc

    প্রয়োগ

    বর্তমান সময়ে দূর অনুধাবন বা রিমোট সেন্সিং এর ব্যবহার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখায় এর বহুল ব্যবহার লক্ষণীয় এবং দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। যেসব ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

    1. দুর্যোগ পূর্বাভাস ও ব্যবস্থাপনা
    2. আবহাওয়া পর্যবেক্ষন ও পুর্বাভাস প্রদান
    3. আবহাওয়া ও সমুদ্র মডেলিং
    4. বিমান চালানো
    5. নৌ পরিবহন ও ন্যাভিগেশন
    6. টেলিকমিউনিকেশন
    7. স্থাপনা নির্মাণ
    8. পুরাকৌশল
    9. সামরিক বাহিনী
    10. পরিবহন জালি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা
    11. নগর পরিকল্পনা
    12. কৃষি ব্যবস্থাপনা
    13. পরিবেশ মডেলিং, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা
  • তড়িৎ-চিকিৎসা প্রকৌশল

    তড়িৎ-চিকিৎসা প্রকৌশল চিকিৎসাবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলের একটি শাখা যাতে প্রকৌশলীগণ রঞ্জনরশ্মি (এক্স-রে), সিটি, ধৈর্যশীল পর্যবেক্ষণ, চৌম্বকীয় অনুরণন চিত্রণ (এমআরআই), দূরবিকিরণবিজ্ঞান (টেলিরেডিয়োলজি), পিএসিএস ও ডেন্টাল সম্পর্কে অধ্যয়ন করে থাকেন বা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

    তড়িৎ-চিকিৎসা প্রকৌশলীদের সেবাসমূহ

    চৌম্বকীয় অনুরণন চিত্রণ (এমআরআই) যন্ত্র, যা তড়িৎ-চিকিৎসা প্রকৌশল শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়।

  • তড়িৎ ক্ষেত্র

    তড়িৎ ক্ষেত্র (কখনো কখনো সংক্ষিপ্তাকারে E-ক্ষেত্র[১] লেখা হয়) বলতে কোন বৈদ্যুতিকভাবে আহিত কণা যেখানে অবস্থান করে তার চারিদিকে যতদূর পর্যন্ত আধানটির বলের প্রভাব (আকর্ষণ জনিতও হতে পারে, আবার বিকর্ষণ জনিতও হতে পারে) বিস্তৃত থাকে, সেই অঞ্চলকে বোঝায়। তড়িৎ ক্ষেত্র আধানকে বেষ্টন করে রাখে এবং এই ক্ষেত্রের অন্যন্য বস্তুর ওপর আকর্ষণ বা বিকর্ষণের মাধ্যমে বল প্রয়োগ করে।[২][৩] একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের বৈদ্যুতিকভাবে আহিত কণার জন্য অথবা সময়ের সাথে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের জন্য হতে পারে। এটি একটি ভেক্টর রাশি। বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র উপরিপাত নীতি মেনে চলে। E = ∑ i E i = E 1 + E 2 + E 3 ⋯ \mathbf{E} = \sum_i \mathbf{E}_i = \mathbf{E}_1 + \mathbf{E}_2 + \mathbf{E}_3 \cdots \,\!

    একটি বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্র E তড়িৎ বিভবের(V) ঋণাত্মক গ্রেডিয়েন্টের সমান E = − ∇ V  \mathbf{E} = - \nabla V

    একটি পরিবাহী বস্তুর অসীম চাদরের অপর অবলম্বী একটি ধনাত্মক বিন্দু আধানের তড়িৎ ক্ষেত্র

  • তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল

    তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বা বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল (ইংরেজি: Electrical and Electronic Engineering) প্রকৌশল পেশার একটি প্রধান শাখা যা মূলত তড়িৎ বর্তনীতড়িচ্চুম্বকত্ব নিয়ে কাজ করে।[১] উল্লেখযোগ্য পেশা হিসেবে তড়িৎ প্রকৌশল আত্মপ্রকাশ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, যখন টেলিগ্রাফি এবং বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে তড়িৎ প্রকৌশলের ব্যাপ্তি বিদ্যুৎশক্তি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ সহ আরও কিছু উপশাখা জুড়ে বিস্তৃত।

    যখন শুধু তড়িৎ প্রকৌশল বলা হয় তখন মূলত যে শাখা বড় আকারের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি যেমন বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন, বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র আকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, সমন্বিত বর্তনী ইত্যাদি বৈদ্যুতিন প্রকৌশলের অন্তর্গত।[২] অন্য কথায় তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীগণ সাধারণত শক্তি সঞ্চালনের জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগান আর বৈদ্যুতিন প্রকৌশল প্রকৌশলীগণ তথ্য আদানপ্রদানের কাজে বিদ্যুৎ শক্তিকে ব্যবহার করেন। মৌলিক তত্ত্বের দিকটি বিবেচনা করলে বলা যায়, তড়িৎ প্রকৌশলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বৈদ্যুতিন প্রকৌশলে অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরকের মধ্য দিয়ে প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

    ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের ইতিহাস

    আদি ইতিহাস

    মাইকেল ফ্যারাডের আবিষ্কার থেকে তড়িৎ মোটর ও এ সম্পর্কিত প্রযুক্তির উদ্ভব ও বিকাশ হয়।

    সপ্তদশ শতক থেকেই বিদ্যুৎশক্তি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এর উপরে গবেষণা করার তীব্রতা বাড়তে থাকে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে। এই শতকে জর্জ সায়মন ও’ম, মাইকেল ফ্যারাডে, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৮২৭ সালে জর্জ ও’ম কোন তড়িৎ পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ ও এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন যা ও’মের সূত্র নামে পরিচিত। মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৩১ সালে তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশ আবিষ্কার করেন এবং ১৮৭৩ সালে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তির একীভূত রূপ সম্পর্কিত তত্ত্ব প্রকাশ করেন।[৩]

    টমাস আলভা এডিসন সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করেন

    তখন তড়িৎ প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবেই বিবেচিত হতো। পরে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান শুরু করে। ১৮৮৩ সালে জার্মানির টেখনিশে উনিভের্সিটেট ডার্মষ্টাট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত তড়িৎ প্রকৌশল পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে।[৪]

    এই সময়ে তড়িৎ প্রকৌশল সম্পর্কিত কাজের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৮২ সালে সর্বপ্রথম টমাস আলভা এডিসন লোয়ার ম্যানহাটনের ঊনপঞ্চাশ জন গ্রাহকের কাছে ১১০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। তার সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ ছিল একমুখী প্রবাহ ধরনের। ১৮৮৭ সালে নিকোলা টেসলা পরিবর্তী প্রবাহ ধরনের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পেটেন্ট বা স্বত্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তী কয়েক বছর টেসলা ও এডিসনের মধ্যে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ধরন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এই দ্বন্দ্ব বিদ্যুতের লড়াই (War of Currents) নামে পরিচিত। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের পদ্ধতি হিসেবে পরিবর্তী প্রবাহ একমুখী প্রবাহকে সরিয়ে স্থান দখল করে নেয় মূলত সঞ্চালন ব্যবস্থার তুলনামূলক দক্ষতা ও উন্নততর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে।

    এই দুজনের অবদানের কারণে তড়িৎ প্রকৌশল বেশ অগ্রসর হয়ে যায়। আবেশ মোটরপলিফেজ ব্যবস্থার উপরে টেসলার কাজ অনেক দিন ধরে বিজ্ঞানীদেরকে প্রভাবিত করে রাখে। অন্যদিকে টমাস এডিসন টেলিগ্রাফ এবং স্টক টিকারের প্রভূত উন্নতি ঘটান যা তার কোম্পানির জন্য অত্যন্ত লাভজনক হয়। এডিসনের কোম্পানি পরে বিখ্যাত জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ইতিমধ্যে ১৮ শতকের শেষ দিকে তড়িৎ প্রকৌশলের জগতে অন্যান্য দিকপালের আগমন শুরু হয়ে যায়।[৫]

    নিকোলা টেসলা প্রথম দীর্ঘ দূরত্বের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেন।

    আধুনিক উন্নয়ন

    বেতারের উন্নয়নের সময়কালে অনেক বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক বেতার এবং ইলেক্ট্রনিক্সের উন্নয়নে অবদান রাখেন। হাইন্‌রিশ হের্ৎস ১৮৮৮ সালে তার বিখ্যাত ইউএইচএফ (UHF) পরীক্ষার সময়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ (স্পার্ক গ্যাপ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে) ও চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। ১৮৯৫ সালে নিকোলা টেসলা নিউ ইয়র্কের ওয়েষ্ট পয়েন্টে অবস্থিত তার পরীক্ষাগার থেকে ৮০.৪ কিমি দূরে বেতার সংকেত ধরতে সক্ষম হন[৬]। ১৯০৪ সালে জন ফ্লেমিং প্রথম বেতার টিউব, যা ডায়োড নামে পরিচিত, আবিষ্কার করেন। দুই বছর পরে রবার্ট ভন লিবেনলি ডি ফরেষ্ট পৃথক গবেষণায় বিবর্ধক টিউব বা ট্রায়োড আবিষ্কার করেন।[৭] তারপর ১৯৩১ সালে ম্যানফ্রেড ভন আর্ডেনে ক্যাথোড রশ্মি নল আবিষ্কার করেন যা পরবর্তীতে টেলিভিশন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল।[৮] ১৯২০ সালে আলবার্ট হাল ম্যাগনিট্রন আবিষ্কার করেন যা ১৯৪৬ সালে পার্সি স্পেনসারকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল।[৯][১০] ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ডঃ উইম্পেরিসের নেতৃত্বে রাডার (এটিও ম্যাগনিট্রন ব্যবহার করে তৈরী) উদ্ভাবনের পথে অনেকদূর এগিয়ে যায় এবং ১৯৩৬ সালের আগস্ট মাসে বাউডসেতে প্রথম রাডার কেন্দ্র স্থাপন করে।[১১]

    ১৯৪১ সালে কনরাড ৎসুজে পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ র্কমক্ষম ও প্রোগ্রাম করার উপযোগী কম্পিউটার জেডথ্রি (Z3) জনসমক্ষে আনেন।[১২] এরপর ১৯৪৬ সালে জন প্রেসপার একার্টজন মাউচলি এনিয়াক উদ্ভাবন করেন যা পৃথিবীতে কম্পিউটার যুগের সূচনা করে। এইসব যন্ত্রের গাণিতিক দক্ষতা বিজ্ঞানীদেরকে অ্যাপোলো মিশন ও নাসার চাঁদে অবতরণ সহ সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটাতে এবং নিত্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করছে।[১৩]

    ১৯৪৭ সালে উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শক্‌লি, জন বারডিন এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইনের ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের জগতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করে এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৮ সালে জ্যাক কিলবি এবং ১৯৫৯ সালে রবার্ট নয়েস পৃথকভাবে সমন্বিত বর্তনী উদ্ভাবন করেন।[১৪] ইন্টেলের মার্সিয়ান হফ ১৯৬৮ সালে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করেন এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার আবিষ্কারের পথ করে দেন। যদিও ইনটেল ৪০০৪, ৪-বিটের প্রসেসর যা ১৯৭১ সালে আবিষ্কৃত হয়, প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে কিন্তু ১৯৭৩ সালে ৮-বিটের প্রসেসর ইনটেল ৮০৮০ আবিস্কৃত হওয়ার পরই প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্ম হয়। এই কম্পিউটারটির নাম ছিল অল্টেয়ার ৮৮০০[১৫]

    প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

    তড়িৎ প্রকৌশলীগণ একটি স্নাতক সম্মাননা অর্জন করে থাকেন যার প্রধান বিষয় থাকে তড়িৎ প্রকৌশল। এই সম্মাননা সাধারণত চার অথবা পাঁচ বছরের পড়াশোনার সফল সমাপনান্তে প্রদান করা হয় এবং এই সম্মাননা বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে স্নাতক (সম্মান) প্রকৌশল, স্নাতক (সম্মান) বিজ্ঞান, স্নাতক (সম্মান) প্রযুক্তি বা স্নাতক (সম্মান) প্রায়োগিক বিজ্ঞান নামে প্রদান করা হয়। এই সম্মাননার পাঠ্যতালিকায় প্রধানত পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, পপকল্প ব্যবস্থাপনা এবং তড়িৎ প্রকৌশলের নির্দিষ্ট বিষয়াদি থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ের বিষয়গুলোতে তড়িৎ প্রকৌশলের সকল বা প্রায় সকল শাখা সর্ম্পকে শিক্ষাদান করা হয়। পরবর্তীতে পড়াশুনার শেষের দিকে শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক শাখা বেছে নিয়ে তাতে বিশেষত্ব অর্জন করে।

    কিছু সংখ্যক তড়িৎ প্রকৌশলী স্নাতকোত্তর সম্মাননা যেমন স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননা বা প্রকৌশলে এমপিএইচ সম্মাননাও অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননার পাঠ্যতালিকা গবেষণা, বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা অথবা এই দুইয়ের সংমিশ্রণে গঠিত হয়। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের অনেক দেশে স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননাকে একটু দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের স্নাতক সমমানের সম্মাননা গণ্য করা হয়।[১৬]

    পেশাদার প্রকৌশলী

    বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রকৌশলে স্নাতক সম্মাননা প্রাপ্তি পেশাদার প্রকৌশলী হবার প্রথম ধাপ হিসেবে গণ্য হয়। প্রকৌশলে স্নাতক সম্মাননা অর্জনের পরে একজন প্রকৌশলীকে পেশাদারিত্বের সনদ অর্জনের জন্য বেশ কিছু শর্ত (প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনসহ) পূরণ করতে হয়। এই সনদ অর্জনের পরে একজন প্রকৌশলী পেশাদার প্রকৌশলী(যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাদক্ষিণ আফ্রিকায়), চার্টার্ড প্রকৌশলী ( যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ভারতজিম্বাবুয়েতে), পি ইঞ্জ (বাংলাদেশে)[১৭], চার্টার্ড পেশাদার প্রকৌশলী (অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ডে), ইউরোপীয় প্রকৌশলী (ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত বেশিরভাগ দেশে) ইত্যাদি নামে অভিহিত হন।

    পেশাদারিত্বের সনদ অর্জনের লাভ দেশ ভেদে কমবেশি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় “কেবলমাত্র একজন পেশাদার প্রকৌশলীই (প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার) জনস্বার্থে বা ব্যক্তিমালিকানাধীনে নির্মিত প্রকৌশল কাজ সমূহে মোহরাংকন করতে পারবেন।‍”[১৮] কোন কোন দেশে এই যোগ্যতা রাজ্য এবং রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে যেমন কুইবেকের “ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাক্ট”।[১৯] কোন কোন দেশে অবশ্য এরকম কোন আইনের অস্তিত্ব নেই। তবে আইন থাকুক বা নাই থাকুক, সব দেশের সব পেশাদারিত্বের সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নীতিগত ভাবে একটি নিয়ম মেনে চলে যা তাদের সকল সদস্যকে মেনে চলতে হয় অন্যথায় বহিষ্কৃত হবার সম্ভাবনা থাকে।[২০] এভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলি প্রকৌশল পেশার নীতিগত মান সমুন্নত রাখতে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। এমনকি আদালতে যেখানে কাজের জন্য সনদের অত্যন্ত ক্ষুদ্র মূল্য প্রদান করা হয় অথবা মূল্য দেওয়াই হয়না, সেখানেও প্রকৌশলীদের চুক্তিনামা মেনে চলতে হয়। কোন কারণে যদি একজন প্রকৌশলীর নির্মাণ বা কাজ ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন, এমনকি চরমক্ষেত্রে “ক্রিমিনাল নেগলিজেন্স” বা অবহেলার অপরাধে দণ্ডিত হতে পারেন। একজন প্রকৌশলীর কাজকে অবশ্যই আরো অনেক রীতি এবং নীতি যেমন গৃহনির্মাণ নীতি বা পরিবেশ আইন মেনে সম্পন্ন হতে হয়।

    তড়িৎ প্রকৌশলীদের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) এবং ইন্সটিটিউশন অফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইই)। আইইইই-এর ভাষ্যমতে তারা তড়িৎ প্রকৌশলে পৃথিবীর মোট প্রকাশনা ও নিবন্ধের ৩০ শতাংশ প্রকাশ করে, সারা বিশ্বে তাদের ৩৬০,০০০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে এবং তারা বাৎসরিক ৩০০টিরও বেশি সম্মেলনের আয়োজন করে।[২১] আইই ১৪টি জার্নাল প্রকাশ করে, সারা বিশ্বে তাদের সদস্য সংখ্যা ১২০,০০০ জনেরও বেশি, এবং তারা দাবী করে তারা ইউরোপের সর্ববৃহৎ পেশাদার প্রকৌশলী সংস্থা।[২২][২৩] প্রাযুক্তিক জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রকৌশলীদের ভুবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। তাই পেশাদারিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে প্রযুক্তি সর্ম্পকিত সংস্থার সদস্য হওয়া, নিজ নিজ ক্ষেত্রের সাময়িকীসমূহে অবহিত থাকা এবং ক্রমাগত জ্ঞানার্জন করার অভ্যাস বজায় রাখা জরুরী।[২৪]

    যন্ত্রপাতি এবং কর্মক্ষেত্র

    একজন তড়িৎ প্রকৌশলী যে সমস্ত যন্ত্র নিয়ে কাজ করেন তার মধ্যে রাডার একটি

    গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন পর্যন্ত তড়িৎ প্রকৌশলীরা প্রযুক্তির একটি বিশাল স্থান দখল করে আছেন। তারা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন, আবিষ্কার বা উদ্ভাবন, নিরীক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তারা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার নকশা প্রণয়ন করতে পারেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখাশুনা করতে পারেন, ঘরবাড়ির আলো ও বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা দেখাশুনা করতে পারেন, গৃহকর্মে ব্যবহার্য যন্ত্রের নকশা প্রণয়ন করতে পারেন অথবা শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।[২৫]

    তড়িৎ প্রকৌশলের মূল ভিত্তি হল পদার্থবিজ্ঞান আর গণিত, কারণ এর মাধ্যমে কোন যান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি কী হবে তার যৌক্তিক ও গাণিতিক বিশ্লেষন করা যায়। আধুনিককালের বেশিরভাগ প্রকৌশল কার্যক্রমে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতির নকশা প্রনয়নের সময় কম্পিউটারের সহায়তা নেওয়া এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যদিও চিন্তা বা আইডিয়াগুলো অঙ্কনের মাধ্যমে দ্রুত অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দক্ষতাকে এখনো অমূল্য বিবেচনা করা হয়।

    কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থা সহ ভূ-উপগ্রহ সম্পর্কিত কাজ তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলীদের কাজের অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম।

    যদিও সকল তড়িৎ প্রকৌশলীরই প্রাথমিক বর্তনী তত্ত্ব বা সার্কিট থিওরি জানা আছে, তবুও তাদের কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত বলে তারা কাজ অনুসারে বিভিন্ন তত্ত্ব ব্যবহার করেন। মূলত কে কোন তত্ত্ব ব্যবহার করেন তা তাদের কর্মক্ষেত্রের উপরে নির্ভর করে। যেমন একজন তড়িৎ প্রকৌশলী যার কর্মক্ষেত্র ভিএলএসআই (সমন্বিত বর্তনী বা আইসি ডিজাইনের কাজ), তার কাজের জন্য কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং কঠিন অবস্থা পদার্থবিজ্ঞান নিত্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু যিনি বৃহদাকারের তড়িৎ যন্ত্রাদি নিয়ে কাজ করেন তার জন্য এগুলো নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। এমনকি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী যিনি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন, তার জন্য বর্তনী তত্ত্বও অপ্রয়োজনীয় হতে পারে কারণ তিনি কাজ করেন তৈরি যন্ত্রাংশ নিয়ে। সম্ভবত তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা হচ্ছে দৃঢ় গাণিতিক দক্ষতা, কম্পিউটার জ্ঞান এবং তড়িৎ প্রকৌশলের সাথে সম্পর্কিত প্রাযুক্তিক ভাষা ও ধারণা সহজেই আত্মস্থ করার ক্ষমতা।

    বেশিরভাগ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রেই প্রকৌশল সম্পর্কিত কাজ তাদের কাজের একটা ছোট অংশ। অন্যান্য কাজ যেমন গ্রাহক বা ব্যবহারকারীদের সাথে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা, বাজেট তৈরী, প্রকল্পের সময়সূচী তৈরি ইত্যাদি তাদের কাজের একটা বড় অংশ বলে বিবেচিত হয়।[২৬] অনেক জ্যেষ্ঠ বা ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী কলাকুশলী এবং অন্যান্য প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত একটা দলের নেতৃত্ব দেন। এজন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দক্ষতা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্রকৌশল প্রকল্পের সাথে দলিলপত্রাদি তৈরি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হয় এবং দক্ষ লিখিত যোগাযোগ ক্ষমতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

    তড়িৎ প্রকৌশলীদের কাজের স্থান তাদের কাজের ধরনের মতই বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অত্যাধুনিক গবেষণাগারে যেমন তড়িৎ প্রকৌশলীদেরকে দেখা যায়, তেমনি তড়িৎ প্রকৌশলীদেরকে পাওয়া যায় কোন পরামর্শ প্রদানকারী সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে অথবা কোন ভূ-গর্ভস্থ খনিতে। কর্মক্ষেত্রে তড়িৎ প্রকৌশলীগনকে প্রায়ই বিজ্ঞানী, ইলেকট্রিশিয়ান, কম্পিউটার প্রোগ্রামার বা অন্যান্য প্রকৌশলী ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার লোকজনদের কাজকর্ম দেখাশোনা করতে হয়।

    শাখাসমূহ

    তড়িৎ প্রকৌশলের অনেক শাখা রয়েছে, তার মধ্যে নিম্নোক্ত শাখাগুলো সর্বাপেক্ষা পরিচিত। অনেক তড়িৎ প্রকৌশলী এগুলোর একটি শাখায় কাজ করলেও অনেকেই আবার একাধিক শাখার সমন্বয়ে কাজ করেন। কখনওবা কোন কোন শাখা যেমন ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বা কম্পিউটার প্রকৌশলকে তাদের বিপুল ব্যাপ্তির কারণে প্রকৌশলেরই আলাদা বিভাগ বলে ধরা হয়।

    বিদ্যুৎ শক্তি

    বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার একটি খুঁটি

    বিদ্যুৎশক্তি সংক্রান্ত প্রকৌশল বা শক্তি প্রকৌশল প্রধানত বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন, সঞ্চালন ও বণ্টন এবং এ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি যেমন ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক মোটর ইত্যাদি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে। পৃথিবীর অনেক এলাকায় অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জেনারেটরকে একসাথে একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা হয় যাকে গ্রিড বলে। সরকারীভাবে এই গ্রিডের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা করা হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীগণ এই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন থেকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে সস্তায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেন। বিদ্যুৎ শক্তি প্রকৌশলীরা এই গ্রিডের নকশা প্রণয়ন ও স্থাপন থেকে শুরু করে এই গ্রিডের সাথে সংযুক্ত হওয়া যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

    নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল

    নভোখেয়াযান কলাম্বিয়ার উৎক্ষেপণ

    নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল মূলত অত্যাধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সমূহের নকশা প্রণয়ন নিয়ে কাজ করে যেন এই যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করানো যায়। এমন নিয়ন্ত্রক প্রণয়ন করার জন্য তড়িৎ প্রকৌশলীরা তড়িৎ বর্তনী, ডিজিটাল সংকেত প্রসেসর এবং অতিক্ষুদ্র নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করে থাকেন। নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলের ব্যবহার আধুনিক বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার ফ্লাইট এবং প্রচালন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অনেক আধুনিক মোটরযানের গতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। শিল্প কারখানার স্বনিয়ন্ত্রণের (Automation) ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

    নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলীরা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রনয়নের সময় প্রায়ই ফিডব্যাক ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। উদাহরণ স্বরূপ স্বয়ংক্রীয় গতি নিয়ন্ত্রিত মোটরগাড়ীর কথা বলা যায়। এগুলোতে মোটরযানের গতির উপরে সার্বক্ষনিক নজরদারী করা হয় এবং ফলাফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ক্রমাগত প্রেরণ করা হয়। ফলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ফলাফল অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নভোখেয়াযান উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে মহাশূন্যে এর পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল ব্যবহৃত হয়।

    ইলেকট্রনিক্স

    বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ, আকারের তুলনা করার জন্য উপরে মিলিমিটারে দাগাঙ্কিত একটি রুলার বা মাপকাঠি দেখানো হয়েছে।

    ইলেকট্রনিক প্রকৌশল প্রধানত ইলেকট্রনিক বর্তনীর নকশা প্রণয়ন এবং পরীক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক বর্তনী সাধারণত রোধক, ধারক, ইন্ডাক্টর, ডায়োড প্রভৃতি দ্বারা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য তৈরি করা হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনার যেটি শুধুমাত্র আকাংক্ষিত বেতার স্টেশন ছাড়া অন্য গুলোকে বাতিল করতে সাহায্য করে, ইলেকট্রনিক বর্তনীর একটি উদাহরণ। পাশে আরেকটি উদাহরনের ছবি দেওয়া হলো।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল পরিচিত ছিল রেডিও প্রকৌশল নামে। তখন এর কাজের পরিধি ছিল রাডার, বাণিজ্যিক বেতার এবং আদি টেলিভিশন নিয়ে। বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন ভোক্তা বা ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন শুরু হল, তখন থেকে প্রকৌশলের এই শাখা বিস্তৃত হতে শুরু করে এবং আধুনিক টেলিভিশন, অডিও ব্যবস্থা, কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসর এই শাখার অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে বেতার প্রকৌশল নামটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে দশকের শেষ নাগাদ ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল নাম ধারণ করে।

    ১৯৫৯ সালে সমন্বিত বর্তনী উদ্ভাবনের পূর্বে ইলেকট্রনিক বর্তনী তৈরি হত বড় আকারের পৃথক পৃথক যন্ত্রাংশ দিয়ে। এই সব বিশাল আকারের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বর্তনীগুলো বিপুল জায়গা দখল করত এবং এগুলো চালাতে অনেক শক্তি লাগত। এই যন্ত্রাংশগুলোর গতিও ছিল অনেক কম। অন্যদিকে সমন্বিত বর্তনী বা আইসি অসংখ্য (প্রায়ই ১০ লক্ষ বা এক মিলিয়নেরও বেশি) ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তড়িৎ যন্ত্রাংশ, যাদের বেশিরভাগই মূলত ট্রানজিস্টর, দিয়ে গঠিত হয়। এই যন্ত্রাংশগুলোকে একটা ছোট্ট, প্রায় একটা কয়েনের আকারের সিলিকন চিলতে বা চিপের উপরে সমন্বিত করে সমন্বিত বর্তনী তৈরি করা হয়। বর্তমানের অত্যাধুনিক কম্পিউটার বা নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সবই প্রধানত সমন্বিত বর্তনী বা আইসি দ্বারা নির্মিত।

    মাইক্রোইলেকট্রনিক্স

    ১২×৬.৭৫ মিমি আকারের মাইক্রো বর্তনী

    মাইক্রোইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল অত্যন্ত ক্ষুদ্র, মূলত আণুবীক্ষণীক স্তরে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের নকশা ও নির্মাণ নিয়ে কাজ করে। এসব ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সমন্বিত বর্তনী তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় অথবা কখনো কখনো নিজেরাই ইলেকট্রনিক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত এবং পরিচিত মাইক্রোইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ হচ্ছে অর্ধপরিবাহী ট্রানজিস্টর। কিন্তু সকল প্রধান ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ যেমন রোধক, ধারক, আবেশক ইত্যাদিকে আণুবীক্ষণীক স্তরে তৈরি করা যায়।

    প্রায় সকল মাইক্রো ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য সিলিকনকে অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থের সাথে আণবিক স্তরে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে চাহিদামতো ততিচ্চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করা হয়। এই কারণে মাইক্রো ইলেকট্রনিক্সের সাথে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানরসায়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

    সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ

    বেয়ার ছাঁকনি সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবহার করে।

    নাম শুনেই বোঝা যায় সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ মূলত বৈদ্যুতিক বিশ্লেষণ এবং প্রভাবায়নের কাজ করে। সংকেত দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত অ্যানালগ সংকেত, যেখানে সংকেত তথ্য অনুযায়ী ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয়ত ডিজিটাল সংকেত, যেখানে সংকেত তথ্য অনুসারে বিচ্ছিন্ন কিছু মান অনুযায়ী দফায় দফায় পরিবর্তিত হয়। অ্যানালগ সংকেতের ক্ষেত্রে শাব্দিক সংকেত বিবর্ধন ও পরিশ্রুতকরণ এবং টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সংকেত মড্যুলেশনডিমড্যুলেশন সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণের আওতায় পড়ে। অন্যদিকে ডিজিটাল সংকেতের ক্ষেত্রে ডিজিটালি স্যাম্প্‌লকৃত সংকেতের সংকোচন, ত্রুটি চিহ্নিতকরণ ও ত্রুটি সংশোধন সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে পড়তে পারে।

    টেলিযোগাযোগ

    মিলস্টার কৃত্রিম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা

    টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল তড়িৎ প্রকৌশলের সেই শাখা যা সমকেন্দ্রিক তার (কো-এক্সিয়াল কেবল), অপটিক্যাল ফাইবার অথবা শূন্যস্থানের মত কোন চ্যানেল বা মাধ্যম দ্বারা তথ্য আদানপ্রদান নিয়ে কাজ করে। শূন্যস্থান দিয়ে তথ্য আদানপ্রদানের খাতিরে তথ্যকে প্রেরণের উপযোগী বাহক কম্পাংকে (ক্যারিয়ার ফিকোয়েন্সি) রূপান্তরের জন্য বাহক তরঙ্গে কোডিং করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটির নাম মড্যুলেশন। সুপরিচিত এনালগ মডুলেশন কৌশলের মধ্যে বিস্তার মড্যুলেশন এবং কম্পাংক মডুলেশন উল্লেখযোগ্য। কোন যোগাযোগ ব্যবস্থার দক্ষতা এবং ব্যয় ব্যবহৃত মড্যুলেশন কৌশলের উপরে নির্ভর করে। দক্ষ ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই বেশি ব্যয়বহুল। তাই দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়ন করার সাথে সাথে ব্যয়ও সংকোচন করে এ দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা প্রকৌশলীর দায়িত্ব।

    একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়ে গেলে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীগণ তখন ঐ ব্যবস্থায় ব্যবহৃতব্য প্রেরকগ্রাহক যন্ত্রের (ট্রান্সমিটাররিসিভার) নকশা করেন। কখনো কখনো গ্রাহক ও প্রেরক যন্ত্র একসাথে করে ট্রান্সসিভার নামের উভমুখী যোগাযোগের যন্ত্র তৈরি করা হয়। প্রেরক যন্ত্র ডিজাইন করার সময় এর দ্বারা ব্যবহৃতব্য তড়িৎ শক্তির পরিমাণ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে কারণ এর সাথে প্রেরক যন্ত্রের প্রেরিত সংকেতের শক্তি জড়িত। যদি কোন প্রেরক যন্ত্রের প্রেরিত সংকেতের শক্তি অপর্যাপ্ত হয়, তবে প্রেরিত তথ্যের সাথে নয়েজ মিশে তথ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

    সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশল

    উড়োজাহাজ বা মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতিসমূহ পাইলটকে যান নিয়ন্ত্রণের কাজে সহায়তা করে

    সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশলে প্রধানত পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন জিনিস পরিমাপের যেমন চাপ, তাপমাত্রা, বেগ ইত্যাদি মাপ-জোখের উপযোগী যন্ত্র তৈরী নিয়ে কাজ করা হয়। এই সকল সূক্ষাতিসূক্ষ যন্ত্রপাতি তৈরী করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের উপরে খুব ভালো দখল থাকতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঊড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন যন্ত্র প্রয়োজন হয় যা ক্রমাগত বাতাসের গতি এবং ভূমি হতে উচ্চতা মাপতে থাকে। আবার পেলশিয়ার-সীবেক এফেক্ট নীতি ব্যবহার করে তাপযুগলের সাহায্যে যে কোন দুটি বিন্দুর মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য নিরূপণ করা হয়।

    প্রায়শঃই দেখা যায় সহায়ক যন্ত্রপাতিসমূহ এককভাবে ব্যবহৃত হয় না, বরং কোন বৃহদ তড়িৎ প্রকৌশল ব্যবস্থার অংশ বা সহায়ক হিসেবে অথবা সংবেদী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো এমনকি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সুইচটি ব্যবহৃত হয় তা আসলে একটি তাপযুগল। এই তাপযুগল আবার বড় বড় ফার্নেসের স্থির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার কাজেও ব্যবহৃত হয়। এই কারণে সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশলকে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলের প্রতিরূপ বলা হয়ে থাকে।

    কম্পিউটার প্রকৌশল

    সুপার কম্পিউটার আজকাল নানাবিধ ক্ষেত্রে, যেমন ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা বা গাণিতিক জীববিজ্ঞানে, ব্যবহার করা হয়

    কম্পিউটার প্রকৌশল কম্পিউটার ডিজাইন ও কম্পিউটার ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে নতুন হার্ডওয়্যার ডিজাইন থেকে শুরু করে পিডিএ ডিজাইন এমনকি কোন শিল্প কারখানা নিয়ন্ত্রণের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ কোন কম্পিউটার ব্যবস্থার সফটওয়্যার নিয়েও কাজ করেন। অবশ্য প্রায়শই জটিল সফটওয়্যার ডিজাইন করাকে সফটওয়্যার প্রকৌশলের মধ্যে ধরা হয় এবং সফটওয়্যার প্রকৌশলকে আলাদা একটি শাখা ধরা হয়। কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ যে সমস্ত যন্ত্র সম্পর্কে কাজ করেন, ডেস্কটপ কম্পিউটার তার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ। বর্তমানে কম্পিউটার ভিডিও গেমের কনসোল থেকে শুরু করে ডিভিডি প্লেয়ার পর্যন্ত নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে।

    নিদ্যদিনের ব্যবহার্য সকল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি কম্পিউটারের সবচেয়ে ব্যবহার বেশি লাগছে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে। আধুনিক গবেষণা এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, বাস্তব যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরীক্ষণ পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই কম্পিউটার সিম্যুলেশন তার জায়াগা করে নিয়েছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, জৈব প্রযুক্তি এবং জিনতত্ত্বে এর ব্যবহার নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এই বিষয়টি অবশ্য সফ্‌টওয়্যার প্রকৌশলের অধীনে আলোচিত হয়।

    সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শাখা

    তড়িৎ প্রকৌশল ও যন্ত্র প্রকৌশলের সমন্বয়ে মেকাট্রনিক্স বা তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল শাখার সৃষ্টি হয়েছে। এরকম সমন্বিত যন্ত্র ব্যবস্থাকে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল বা তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা হয় এবং এখন এগুলোর দ্রুত প্রসার ঘটছে। স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা, গার্হস্থ্য তাপ নিয়ন্ত্রণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং উড়োজাহাজমোটর গাড়ীর বিভিন্ন উপব্যবস্থা তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থার উদাহরণ।

    তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থা শব্দটি মূলত বৃহদাকারের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও ভবিষ্যতে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির তড়িৎযন্ত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রজেক্টরে উন্নত ছবি সৃষ্টির জন্য, ইঙ্কজেট প্রিন্টারে উচ্চ মানের ছবি ছাপার নজল তৈরির জন্য ক্ষুদ্র তড়িৎযন্ত্র (মাইক্রো ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ব্যবস্থা – এমইএমএস) ব্যবহৃত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে শরীরে অভিযোজন করার উপযোগী অতি ক্ষুদ্র চিকিৎসা যন্ত্র এবং উন্নততর আলোক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়নের কাজে ক্ষুদ্র তড়িৎযন্ত্র সহায়তা করবে।[২৭]

    আরেকটি সম্পর্কিত শাখা হলো বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল, যা মূলত চিকিৎসাবিদ্যার যন্ত্রপাতি ডিজাইন নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে স্থায়ী যন্ত্রপাতি যেমন ভেন্টিলেটর, এমআরআই স্ক্যানার এবং ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ মনিটর এবং বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি যেমন ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট, কৃত্রিম পেসমেকার এবং কৃত্রিম হৃদযন্ত্র অন্তর্ভুক্ত।

    আরো দেখুন

    বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বণ্টন ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তড়িৎ প্রকৌশলীগণ করে থাকেন।

    বৈদ্যুতিন প্রকৌশলীরা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও জটিল বৈদ্যুতিন তড়িৎ বর্তনী তৈরি করে থাকেন।

  • টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল

    টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল হল একটি প্রকৌশল শাখা যাতে ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলকম্পিউটার বিজ্ঞানকে একসাথে কাজে লাগিয়ে টেলিকম সিস্টেমকে উন্নীত করা হয়।[১][২] একজন টেলিকম প্রকৌশলীকে জটিল ইলেকট্রনিক সুইচিং সিস্টেম, তারযুক্ত টেলিফোন এবং ফাইবার অপটিকের নকশা তৈরী থেকে স্থাপনা (installation) পর্যন্ত লক্ষ রাখতে হয়। টেলিকম প্রকৌশলকে সম্প্রচার প্রকৌশলের সঙ্গেও যুক্ত করা হয়।তারযুক্ত টেলিকম কোম্পানীগুলির সাধারণ মাধ্যম হল তামার তার, দ্বিপার্শ্বীয় টেলিগ্রাফিক তার এবং ফাইবার অপটিক। টেলিকম প্রকৌশলে তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য আদান-প্রদান, বেতারস্যাটেলাইট যোগাযোগ, ইন্টারনেটব্রডব্যান্ড প্রযুক্তির স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। [৩] বর্তমান প্রযুক্তিতে আগেকার যুগের বিপুল টেলিগ্রাফিক তারের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক এবং ডিজিটাল মাল্টিপ্লেক্সিং টেকনিক ব্যবহৃত হয়।[৪]

    VZ SAI workers Secaucus jeh.JPG

    আরও পড়ুন

    Dahlman, Erik; Parkvall, Stefan; Beming, Per; Bovik, Alan C.; Fette, Bruce A.; Jack, Keith; Skold, Johan; Dowla, Farid; Chou, Philip A.; DeCusatis, Casimer (2009). Communications engineering desk reference. Academic Press. p. 544. আইএসবিএন৯৭৮-০-১২-৩৭৪৬

  • টেলিগ্রাফি

    টেলিগ্রাফি হচ্ছে দূর দূরান্তে লিখিত বার্তা বা পত্র প্রেরণের এমন একটি পদ্ধতি যা মূল লিখিত পত্রটিকে প্রেরণ না করে সাধারনতঃ তারের মাধ্যমে বার্তাটি পাঠিয়ে দেয় । রেডিও টেলিগ্রাফি বা বেতার টেলিগ্রাফিতে বার্তা প্রেরণের জন্য রেডিও ব্যবহার করা হয়। তথ্য এবং উপাত্তের আধুনিক ধারা যেমন ফ্যাক্স, ই-মেইল, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদিও সামগ্রিকভাবে টেলিগ্রাফির অন্তর্গত। (টেলিগ্রাফ হচ্ছে দূর দূরান্তে বার্তা গ্রহণ বা প্রেরণ করবার অর্থাৎ টেলিগ্রাফির একটি যন্ত্রবিশেষ। ) বেতার টেলিগ্রাফিকে সি ডব্লিউ (CW) বলা হয়। সি ডব্লিউ হচ্ছে কন্টিনিউয়াস ওয়েভের সংক্ষিপ্ত রূপ।

    টেলিগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রেরিত মোর্স কোডে লিখিত টেলিগ্রাফি বার্তাকে টেলিগ্রাম বা কেবলগ্রাম, সংক্ষেপে কেবল বা তারবার্তা, বলা হতো। পরবর্তীতে টেলেক্স নেটওয়ার্কের (বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত টেলিপ্রিন্টারের নেটওয়ার্ক) মাধ্যমে প্রেরিত টেলিগ্রামকে টেলেক্স বার্তা বলা হতো। টেলিফোনের মাধ্যমে বহুদূরে বা দেশ-বিদেশে কথা বলা সহজলভ্য হওয়ার আগে টেলিগ্রাম সুবিধা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ব্যবসায়িক যোগাযোগ তো বটেই, টেলিগ্রামের মাধ্যমে এমনকি ব্যবসায়িক দলিল, এবং চুক্তিপত্রও সম্পাদিত হতো। ফ্যাক্স টেলিগ্রাফের মাধ্যমে প্রেরিত ছবিকে তারচিত্র (Wire picture) বা তারছবি (wire photo) বলা হতো।

    আলোক টেলিগ্রাফ এবং ধুম্রসংকেত

    বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ

    বিদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র টমাস আলভার এডিসন কর্তৃক আবিষ্কৃত ৷

    ১৮৪৪ খ্রীস্টাব্দে স্যামুয়েল মোর্স কর্তৃক প্রেরিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম টেলিগ্রাম :”What hath God wrought?

    ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দের পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত প্রধান টেলিগ্রাফ সংযোগ

    সিমেন্সের তৈরি T100 টেলেক্স যন্ত্র

    রেডিও টেলিগ্রাফি

    টেলিগ্রাফের বিবর্তন

    টেলেক্স

    ব্রিটিশ পুমা টেলেক্স যন্ত্র

    টি ডব্লিউ এক্স

    ইন্টারনেটের আবির্ভাব

    পটপরিবর্তন- টেলিগ্রাফের বদলে ই-মেইল

    দলিল পত্রাদি হিসেবে টেলিগ্রাফি

    সম্পর্কিত ওয়েব সাইট

    উইকিমিডিয়া কমন্সে টেলিগ্রাফি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

    জার্মানীর একটি আলোক টেলিগ্রাফ