বাক্যের বর্গ বা সংক্ষেপে বর্গ বলতে বাক্যের মধ্যে একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত বাক্যাংশকে বোঝায়। বৰ্গকে বাক্যের একক বলা হয়।[১]
উদাহরণ: “মালা ও মায়া খুব সকালে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল বাসে উঠে পড়লো।”
এই বাক্যে ‘মালা ও মায়া’, ‘খুব সকালে’, ‘বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা’, ‘স্কুল-বাসে’, ‘উঠে পড়লো’ শব্দগুচ্ছ এক একটি বর্গ।
কোনো একটি বর্গ বাক্যের মধ্যে যে পদের মতো আচরণ করে, সেই পদের নাম অনুযায়ী বর্গের নাম হয়।
বিশেষ্যবর্গ
বিশেষ্য পদের আগে এক বা একাধিক বিশেষণ বা সম্বন্ধপদ যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বর্গ তৈরি হয়।[১] যেমন – অসুস্থ ছেলেটি আজ স্কুলে আসেনি। আমার ভাই পড়তে বসেছে।
সংযোজক পদ দ্বারা দুইটি বিশেষ্য যুক্ত হয়েও বিশেষ্যবর্গ তৈরি হয়। যেমন – রহিম ও করিম বৃষ্টিতে ভিজছে।
বিশেষণবর্গ
বিশেষণবর্গ হচ্ছে বিশেষণজাতীয় শব্দের গুচ্ছ।[১] যেমন – আমটা দেখতে ভারি সুন্দর। ভদ্রলোক সত্যিকারের নির্লোভ। পোকায় খাওয়া কাঠ দিয়ে আসবাব বানানো ঠিক নয়।
ক্রিয়াবিশেষণবর্গ
ক্রিয়াবিশেষণবর্গ হলো সেসব শব্দগুচ্ছ যা বাক্যে একত্রে ক্রিয়াবিশেষণ হিসাবে কাজ করে।[১] যেমন– সকাল আটটার সময়ে সে রওনা হলো। তারপর আমরা দশ নম্বর প্লাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি সকাল থেকে বসে আছি। বেঁচে থাকার মতো সামান্য কয়টা টাকা বেতন পাই। সে খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে।
ক্রিয়াবৰ্গ
বাক্যের বিধেয় অংশের ক্রিয়াপদ ক্রিয়াবর্গ তৈরি করে।[১] যেমন– অস্ত্রসহ সৈন্যদল এগিয়ে চলেছে। সে লিখছে আর হাসছে। সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বসে পড়লো। বাচ্চাটা অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করছে।
ব্যাকরণ শাস্ত্রে, এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে তৈরি শব্দকে প্রকৃতি বলে।[১] প্রত্যয় হলো এই প্রকৃতির পর যুক্ত হওয়া কিছু অর্থহীন শব্দাংশ, যা নতুন শব্দ তৈরি করে। মূলত প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত অর্থহীন শব্দাংশই প্রকৃতি-প্রত্যয়। প্রত্যয় ক্রিয়ামূল ও শব্দের সাথে যুক্ত হয়।
প্রত্যয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। তবে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পরে অনেক সময়ে শব্দের অর্থ ও শ্রেণিপরিচয় বদলে যায়।
প্রকারভেদ
প্রত্যয় দুই প্রকার: ১.তদ্ধিত প্রত্যয়, ২.কৃৎ প্রত্যয়।
শব্দের পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে তদ্ধিতান্ত শব্দ। উদাহরণ: পঠ+অক=পাঠক, দিন+ইক = দৈনিক। এখানে, ‘অক’ ও ইক’ তদ্ধিত প্রত্যয় এবং ‘পাঠক’ ও ‘দৈনিক’ হলো তদ্ধিতান্ত শব্দ।
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। কৃৎ প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে কৃদান্ত শব্দ। উদাহরণ: দুল্+অনা = দোলনা, কৃ+তব্য = কর্তব্য। এখানে, ‘অনা’ ও ‘তব্য’ হলো কৃৎ প্রত্যয় এবং ‘দোলনা’ ও ‘কর্তব্য’ হলো কৃদন্ত শব্দ।
তবে বাচ্যের পরিবর্তনের কারণে পূরক পদের বদল হতে পারে। “টম রসায়ন পড়ছে” এই উদাহরণটিতে ‘টম’ উদ্দেশ্য হলে ‘রসায়ন’ হবে পূরক। কিন্তু বাচ্যের পরিবর্তনের ফলে পরবর্তী উদাহরণটিতে ‘রসায়ন’ যখন বাক্যের প্রথমে এসেছে, তখন এটিই উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে এবং ‘টম’ পূরক হয়ে গেছে।
ব্যাকরণ শাস্ত্রে, ক্রিয়ামূল বলতে ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য বা মূল অংশের অন্তর্নিহিত ভাবটির দ্যোতনা [টীকা ১] করে[১] অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থানকে বুঝায়। ক্রিয়ামূলকে ধাতুও বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে “√” করণী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
প্রকারভেদ
ক্রিয়ামূল বা ধাতু প্রধানত তিন প্রকার।
মৌলিক ধাতু
বাংলা ধাতু
সংস্কৃত ধাতু
বিদেশি ধাতু
সাধিত ধাতু
নাম ধাতু
প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু
কর্মবাচ্যের ধাতু
যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
বিশেষ্যের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
বিশেষণের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্, √চল, √দেখ্, √খেল,√পড়, √খা।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক) বাংলা ধাতু (খ) সংস্কৃত ধাতু এবং (গ) বিদেশি ধাতু
সাধিত ধাতু
কোনো মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে আ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর + আ = √করা, √দেখ্ + আ = √দেখা, √পড়্+আ= √পড়া।
সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু
বিশেষ্য , বিশেষণ ও ধ্বনাত্বক অব্যয়ের সাথে √কর্, √দে, √হ, √পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। উদাহরণ: পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে।
অন্যান্য ধাতুসমূহ
নাম ধাতু
নাম শব্দ অথ্যাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। উদাহরণ: জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো, বাঁকা > বাঁকানো।
ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু
মৌলিক ধাতুর সাথে ‘আ’ বা ‘ওয়া’ যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু গঠিত হয়। উদাহরণ: √কর + আ =করা। যা কিছু হারায় গিন্নী। বলেন, “কেষ্টা বেটাই চোর”, এখানে হারায় হলো প্রযোজক ধাতু। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। উদাহরণ: ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা।
নঞ্র্থক ধাতু
“অস্তি” বাচক √হ ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক ‘ন’ শব্দের যোগে গঠিত √নহ্ ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। উদাহরণ: নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
ধাতুর মূল
শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। সাধারণ অর্থে শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই বুঝায়। উদাহরণ: “দোকান” শব্দের মূল “দোকান”, “ঢাকা” শব্দের মূল “ঢাকা” এবং √লিখ ধাতুর মূল “লিখ্”, √কর ধাতুর মূল “কর্”।
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
২. ক্রিয়া-প্রকৃতি:
ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি হলো ধাতুর মূল। ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না। যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, সেগুলোতে একটি “শূন্য প্রত্যয় (০)” যুক্ত আছে বলে ধরে নেওয়া হয় । উদাহরণ: লিখ্, কর্ ।
বাংলা ভাষার সমস্ত ধাতুকে ২০টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা:-
ক্রমিক নং
ধাতুগণ
উদাহরণ
১
হ-আদিগণ
হ (হওয়া), ল (লওয়া) ইত্যাদি।
২
খা-আদিগণ
খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া), যা (যাওয়া) ইত্যাদি।
৩
দি-আদিগণ
দি (দেওয়া), নি (নেওয়া) ইত্যাদি।
৪
শু-আদিগণ
চু (চোঁয়ানো), নু (নোয়ানো), ছু (ছোঁয়া) ইত্যাদি।
৫
কর্-আদিগণ
কর্ ( করা), কম্ (কমা), গড় (গড়া), চল (চলা) ইত্যাদি।
৬
কহ্-আদিগণ
কহ্ (কহা), সহ্ (সহা), বহ্ (বহা) ইত্যাদি।
৭
কাট্-আদিগণ
গাঁথ্, চাল্, আক্, বাঁধ্, কাঁদ্ ইত্যাদি।
৮
গাহ্-আদিগণ
চাহ্, বাহ্, নাহ্ (নাহান>স্নান) ইত্যাদি।
৯
লিখ্-আদিগণ
কিন্, ঘির্, জিত্, ফির্, ভিড়্, চিন্ ইত্যাদি।
১০
উঠ্-আদিগণ
উড়্, শুন্, ফুট্, খুঁজ্, খুল্, ডুব্, তুল্ ইত্যাদি।
১১
লাফা-আদিগণ
কাটা, ডাকা, বাজা, আগা (অগ্রসর হওয়া) ইত্যাদি।
১২
নাহা-আদিগণ
গাহা ইত্যাদি।
১৩
ফিরা-আদিগণ
ছিটা, শিখা, ঝিমা, চিরা ইত্যাদি।
১৪
ঘুরা-আদিগণ
উঁচা, লুকা, কুড়া (কুড়াচ্ছে) ইত্যাদি।
১৫
ধোয়া-আদিগণ
শোয়া, খোঁচা, খোয়া, গোছা, যোগা ইত্যাদি।
১৬
দৌড়া-আদিগণ
পৌঁছা, দৌড়া ইত্যাদি।
১৭
চটকা-আদিগণ
সমঝা, ধমকা, কচলা ইত্যাদি।
১৮
বিগড়া-আদিগণ
হিচড়া, ছিটকা, সিটকা ইত্যাদি।
১৯
উলটা-আদিগণ
দুমড়া, মুচড়া, উপচা ইত্যাদি।
২০
ছোবলা-আদিগণ
কোঁচকা, কোঁকড়া, কোদলা ইত্যাদি।
প্রাতিপাদিক
প্রতিপাদিক হলো বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দ এবং বিভক্তিহীন তবে প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ ও ক্রিয়ামূল গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক। [২]
নাম-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কিংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে।
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: কর্ + অ = করা + কে = করাকে
ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি বিশেষ নিয়ম। বাংলা ভাষার তৎসম শব্দে দন্ত্য-ন এর ব্যবহার না হয়ে মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ণ-ত্ব বিধান এবং দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ষ-ত্ব বিধান বলা হয়।[১]
ণ-ত্ব বিধান
বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধণ্য-ণ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সেজন্য বাংলা (দেশি), তদ্ভব, বিদেশি, বানানে মূর্ধণ্য বর্ণ (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাংলায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধণ্য-ণ এবং দন্ত্য-ন এর ব্যবহার আছে। তা বাংলায় অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়। তৎসম শব্দের বানানে ণ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণ-ত্ব বিধান।
ণ ব্যবহারের নিয়ম
ঋ, র (্র),রেফ (র্), ষ (ক্ষ) বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: ঋণ,তৃণ, বর্ণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা।
যদি ঋ, র(্র), ষ(ক্ষ) বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ, য় অথবা অনুস্বার (ং) থাকে, তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়। যেমন: কৃপণ, নির্বাণ, গ্রহণ।
ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড।
প্র, পরা, পরি, নির্- উপসর্গের এবং ‘অন্তর’ শব্দের পরে নদ্, নম্, নশ্, নহ্, নী, নুদ্, অন্, হন্- কয়েকটি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ নয়। যেমন: প্রণাম, পরিণাম, প্রণাশ, পরিণতি, নির্ণয় ইত্যাদি।
প্র, পরা প্রভৃতির পর ‘নি’ উপসর্গের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: প্রণিপাত, প্রণিধান ইত্যাদি।
ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।
বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: ধরেন , মারেন, করেন, যাবেন, খাবেন, হবেন, নিবেন, দিবেন।
বিদেশী শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: কোরআন, জার্মান, জবান, নিশান, ফরমান, রিপন।
পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলে পরপদে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: মৃগনাভি, দুর্নাম, ত্রিনেত্র, মৃন্ময়।
ষ-ত্ব বিধান
যেসব তৎসম শব্দে ‘ষ’ রয়েছে তা বাংলায় অবিকৃত আছে। তৎসম শব্দের বানানে ষ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষ-ত্ব বিধান।
ষ ব্যবহারের নিয়ম
ঋ-কারে পরে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: ঋষি, বৃষ, বৃষ্টি।
অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ।
‘অতি’, ‘অভি’ এমন শব্দের শেষে ই-কার উপসর্গ এবং ‘অনু’ আর ‘সু’ উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন(‘ণ্ন’ মূর্ধ-ণ পরে দন্ত্য-ন), সুষম।
অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যেমন:
মনঃ+ তাপ = মনস্তাপ, শিরঃ + ত্রাণ= শিরস্ত্রাণ
ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান-এর প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষার যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার বানান ও উচ্চারণ রীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিতেরা কোনো শব্দের উচ্চারণকে অনায়াস করার জন্য একটি শব্দে পরপর দুইটি ধ্বনিকে কাছাকাছি উচ্চারণস্থলের রাখার চেষ্টা করেছেন। মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন-এর উচ্চারণ আপাতশ্রবণে কাছাকাছি মনে হলেও মূর্ধন্য-ণ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর দন্ত্য-ন উচ্চারণ করতে হয় দন্ত থেকে। তাই, যে সব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ দাঁতকে স্পর্শ করে অর্থাৎ ‘ত’-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ত, থ, দ, ধ) উচ্চারণ করার সময় কাছাকাছি আরেকটি ধ্বনি মূর্ধা থেকে উচ্চারণ না করে দন্ত থেকে উচ্চারণ করা সহজসাধ্য। সেকারণে সাধারণভাবে ‘ত’-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত ধ্বনি দন্ত্য-ন হয়। একই নিয়ম অনুসারে, যেসব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ মূর্ধাকে স্পর্শ করে অর্থাৎ ‘ট’-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ট, ঠ, ড, ঢ)-র সাথে যুক্ত ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়। ঋ, র, ষ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর তাই এই ধ্বনিগুলোর সাথে যুক্ত ধ্বনি হয় মূর্ধন্য-ণ। এখানে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ্য যে, “বণ্টন, লুণ্ঠন”-এই শব্দগুলোর প্রথম মূর্ধন্য-ণ টি ‘ট’-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হচ্ছে, তাই এখানে ণত্ব বিধান ব্যবহৃত হবে, কিন্তু পরের দন্ত্য-ন এর আগে বিরতি থাকায় মূর্ধন্য-ণ হচ্ছে না। ষত্ব বিধান-এর জন্যও একই রকম নিয়ম প্রযোজ্য।
কি ও কীবাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দদ্বয়, যেখানে কিক্রিয়াবিশেষণ (অব্যয়) এবং কীসর্বনাম পদ হিসেবে কাজ করে।[১] উভয়ই প্রশ্নবোধক বা বিস্ময়সূচক বাক্যে ব্যবহৃত হয়। সমোচ্চারিত শব্দ হওয়ায় প্রায়শই লেখা ও পড়ার সময় শব্দদ্বয়ের বানান ও অর্থ নিয়ে ব্যবহারকারীদের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। অনেকে ভিন্ন অর্থ প্রকাশের জন্য কেবল একটি শব্দই ব্যবহার করেন।
পার্থক্য ও ব্যবহার
‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে যেসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়, সেসকল ক্ষেত্রে কি ব্যবহৃত হয় এবং ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে যেসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না, বিশদ বিবরণ দিতে হয়, সেসকল ক্ষেত্রে কী ব্যবহৃত হয়।[২][৩]কি-এর উত্তরে ক্রিয়াবিশেষণ এবং কী-এর উত্তরে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ পাওয়া যায়। তুমি কি খাবে? তুমি কী খাবে?
প্রথম প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে খাবে কি-না, যার উত্তর হতে পারে “হ্যাঁ, খাবো” অথবা “না, খাবো না”, যেখানে দ্বিতীয় প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে কোন খাবারটি খাবে, যার উত্তর কোনো খাদ্যপণ্যের নাম হতে পারে।
বিস্ময়সূচক বাক্যে কিংবা হর্ষ বিষাদ বুঝাতে হলে কী ব্যবহার হবে।[৩]কী সুন্দর কথা বলেছে! কী মধুর
কারক শব্দটির ব্যাকরণগত অর্থ হলো- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাংলা ব্যাকরণ শাস্ত্রে, কারক বলতে মূলত ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ককে নির্দেশ করে। কারকের সম্পর্ক বোঝাতে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে সাধারণত বিভক্তি ও অনুসর্গ যুক্ত হয়।[১] বাক্যস্থ কোনো পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে শুধুমাত্র তখনই কারক হবে।
পূর্বে সম্প্রদান কারককে কারকের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসাবে ধরা হলেও বর্তমানে তা কর্ম কারকের অংশ হিসাবে বিবেচিত।
ছয়টি কারকের উদাহরণ
নিম্নোক্ত বাক্যসমূহে ছয়টি কারক উপস্থাপন করা হলো: বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন। এখানে–
বেগম সাহেবা – ক্রিয়ার সাথে কর্তৃসম্বন্ধ
চাল – ক্রিয়ার সাথে কর্ম সম্বন্ধ
হাতে – ক্রিয়ার সাথে করণ সম্বন্ধ
গরিবদের – ক্রিয়ার সাথে সম্প্রদান (কর্ম) সম্পর্ক
ভাঁড়ার থেকে – ক্রিয়ার সাথে অপাদান সম্পর্ক
প্রতিদিন – ক্রিয়ার সাথে অধিকরণ সম্পর্ক
দানবীর রাজা হর্ষবর্ধন প্রয়াগের মেলায় রাজভাণ্ডার থেকে স্বহস্তে দরিদ্র প্রজাদের অর্থসম্পদ বিতরণ করতেন। এখানে–
দানবীর রাজা হর্ষবর্ধন – ক্রিয়ার সাথে কর্তৃসম্বন্ধ
অর্থসম্পদ – ক্রিয়ার সাথে কর্ম সম্বন্ধ
স্বহস্তে – ক্রিয়ার সাথে করণ সম্বন্ধ
দরিদ্র প্রজাদের – ক্রিয়ার সাথে সম্প্রদান (কর্ম) সম্পর্ক
রাজভাণ্ডার থেকে – ক্রিয়ার সাথে অপাদান সম্পর্ক
প্রয়াগের মেলায় – ক্রিয়ার সাথে অধিকরণ সম্পর্ক
ইতিহাস
অধিকাংশ ভাষাতত্ত্ববিদ এটি মেনে নিয়েছেন, যে প্রাচীন গ্রিকদের তাদের নিজেদের ভাষার বিভিন্ন ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক ও বাক্যে এদের ব্যবহার সম্মন্ধে বিস্তৃত ধারণা ছিল। গ্রিক কবি আনাক্রিয়ন এর একটি পুস্তিকা থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তবুও এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়, যে আধুনিক ব্যাকরণে “কারক” বলতে যে বিষয়টিকে বোঝানো হয়, তা সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিকরা পুরাপুরি অবগত। “ব্যাকরণের কারক”কে সর্বপ্রথম ব্যাকরণের একটি স্বতন্ত্র অংশ হিসাবে বৈরাগ্যবাদীরা স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা তারা জানতে পেরেছিল প্রাচীন গ্রিসের পেরিপেটীয় ঘরানার কিছু দার্শনিকদের কাছ থেকে।[২][৩]
বাংলা কারক সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে বিভক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ কারকের সম্পর্ক বোঝাতে নামপদের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সাথেও নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করে।[১]
০ (শূন্য) বিভক্তি (অথবা অ-বিভক্তি), এ (য়), তে (এ), কে, রে, র (এরা) – এ কয়টি খাঁটি বাংলার শব্দ বিভক্তি। এছাড়া বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দও কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন – দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি।
নিচের ছকের বিভক্তিগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নামপদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে।
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ কাজ সম্পন্ন করে তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বা কর্তা কারক বলে। ক্রিয়ার সঙ্গে কে বা কারা যোগ করে প্রশ্ন করলে উত্তরে কর্তৃকারক পাওয়া যায়।
উদাহরণ:
খোকা বই পড়ে। [কে বই পড়ে?]
মেয়েরা ফুল তোলে। [কারা ফুল তোলে?]
আমরা নদীর ঘাট থেকে রিকশা নিয়েছিলাম। [কারা নদীর ঘাট থেকে রিকশা নিয়েছিলাম/নিয়েছিল?]
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী সম্প্রদান কারক বলে। একে নিমিত্ত কারক-ও বলা হয়। এখানে লক্ষণীয় যে, বস্তু নয় ব্যক্তিই সম্প্রদান কারক। ক্রিয়াকে কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তা সম্প্রদান কারক। স্বত্বত্যাগ না করে কোনো জিনিস কাউকে উদ্দেশ্য করে দিলে সেটি কর্মকারক হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হয় না। এই বিভ্রান্তি এড়াতে বর্তমানে সম্প্রদান কারককে কর্ম কারকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন কাঠামো: কিসের দ্বারা, কি দ্বারা, কি দিয়ে + ক্রিয়া +?
“করণ” শব্দটির অর্থ – যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা উপায়কেই করণ কারক বলে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে কিসের দ্বারা বা কি দ্বারা (কি দিয়ে) প্রশ্ন করলে উত্তরে করণ কারক পাওয়া যায়।
উদাহরণ:
নীরা কলম দিয়ে লেখে। [নীরা কি দিয়ে লেখে?]
“জগতে কীর্তিমান হয় সাধনায়।” [কি দিয়ে/কি দ্বারা জগতে কীর্তিমান হয়?]
চাষিরা ধারালো কাস্তে দ্বারা ধান কাটছে। [চাষিরা কি দ্বারা ধান কাটছে?]
ক্রিয়া সম্পাদনের সময়, স্থান এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে।
উদাহরণ:
বাড়িতে কেউ নেই। [কোথায় কেউ নেই?]
বসন্তে কোকিল ডাকে। [কখন কোকিল ডাকে?]
সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। [কিসে অন্ধকার দূরীভূত হয়?]
বাবা বাড়ি আছেন। [বাবা কোথায় আছেন?]
বিকাল পাঁচটায় অফিস ছুটি হবে। [কখন অফিস ছুটি হবে?]
সম্বন্ধ পদ
যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক নির্দেশ করে, তাকে সম্বন্ধ পদ বা সম্বন্ধ কারক বলে। ক্রিয়াপদের সঙ্গে এদের সম্পর্ক পরোক্ষ হয়। পূর্বে কারকে শ্রেণিভুক্ত না করা হলেও বর্তমানে একটি কারক হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ ক্রিয়ার সঙ্গে এদের সম্পর্ক বিদ্যমান।
বিভক্তি
সম্বন্ধ পদে -র বা -এর বিভক্তি (ষষ্ঠী বিভক্তি) যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন- আমি + -র = আমার, খালিদ + -এর = খালিদের।
সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে -কার > -কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন- আজি + -কার = আজিকার > আজকের, পূর্বে + -কার = পূর্বেকার, কালি + -কার = কালিকার > কালকার > কালকের। তবে “কাল” শব্দটির উত্তরে শুধু -এর বিভক্তিই যুক্ত হয়। যেমন- কাল + -এর = কালের। উদাহরণ– সে কত কালের কথা। [সে কবেকার কথা?]
“সম্বোধন” শব্দটির অর্থ আহ্বান। যাকে সম্বোধন বা আহ্বান করে কিছু বলা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। সম্বোধন পদ বাক্যের অংশ। কিন্তু বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ থাকে না বলে, সম্বোধন পদ কারক নয়।
নিয়মাবলি
অনেক সময় সম্বোধন পদের পূর্বে ওগো, ওরে, হে, অয়ি প্রভৃতি অব্যয়বাচক শব্দ বসে সম্বোধনের সূচনা করে। যেমন- “ওগো, তোরা জয়ধ্বনি কর”, “ওরে, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে”, “অয়ি নির্মল ঊষা, কে তোমাকে নিরমিল?”
অনেক সময় সম্বন্ধসূচক অব্যয়টি কেবল সম্বোধন পদের কাজ করে থাকে।
সম্বোধন পদের পরে অনেক সময় বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!) দেওয়া হয়। এই ধরনের বিস্ময়সূচক চিহ্নকে “সম্বোধন চিহ্ন” বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে সম্বোধন চিহ্ন স্থানে কমা (,) চিহ্নের প্রয়োগই বেশি হয়। যেমন- ওরে খোকা, যাবার সময় একটা কথা শুনে যাস্।
ব্যতিক্রম
বাংলায় এমন অনেক বাক্য রয়েছে যেখানে ক্রিয়াপদ নেই। উদাহরণস্বরূপ, “মাঠে মাঠে অজস্র ফসল”, “ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদীতে ভাসমান।” এ জাতীয় ক্রিয়াহীন অনেক বাক্য বাংলায় রয়েছে। ক্রিয়াপদ নেই বলে এই বাক্যগুলোর অন্তর্গত নাম শব্দগুলোর কারকও নেই। সেজন্য বলা হয়[কে?], “বাংলা বাক্য কারক-প্রধান নয়।”[৫] তবে বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য গঠিত হতে পারে না বলে বাংলা বাক্য বিভক্তিপ্রধান।
ক্রিয়ার যে রূপের দ্বারা ক্রিয়া ঘটার বিভিন্ন সময় বোঝায়, সেই সময়কে ক্রিয়ার কাল বলা হয়। অথবা কার্য সম্পন্ন হওয়ার সময়কেই ক্রিয়ার কাল বা কাল বলে। ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার।
বর্তমান কাল
অতীত কাল
ভবিষ্যৎ কাল
বর্তমান কাল
ক্রিয়ার যে রূপের দ্বারা ক্রিয়া এখন ঘটছে বোঝায় সেই সময়কে বর্তমান কাল বলে। বর্তমান কালকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।
সাধারণ বর্তমান
যে ক্রিয়ার কাজটি বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে বা হয়, তাকে সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলা হয়। যেমন :
সকালে সূর্য ওঠে।
দুই আর দুইয়ে চার হয়।
গাছে ফুল ফোটে।
তিনি হাটে যাননি।
কাগজ দিয়ে তৈরি হয় খাতা।
ঘটমান বর্তমান
যে ক্রিয়ার কাজ বর্তমানে ঘটছে বা চলছে, এখনো শেষ হয়ে যায়নি, তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলা হয়। যেমন:
আমার ছোট ভাই লিখছে।
হামিম এবং নাহিদ এখনো ফুটবল খেলছে।
পুরাঘটিত বর্তমান
যে ক্রিয়া কিছু আগে শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল এখনো রয়েছে, তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলা হয়। যেমন:
এখন বাবা অফিস থেকে ফিরেছেন।
এবার মা খেতে ডেকেছেন।
বর্তমান অনুজ্ঞা
যখন কাওকে কিছু করতে বলা হয় যেমন অনুরোধ বা আদেশ করা, তখন বর্তমান কালের সেই অবস্থাকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলা হয়। যেমন:
আমার প্রণাম নিও।
তেঁতুলের আঁচারটা দাও।
অতীত কাল
ক্রিয়ার যে রূপের দ্বারা ক্রিয়া পূর্বে কোন এক সময় সংঘটিত হয়েছে, সেই সময়কে অতীত কাল বলে ।
অতীত কালকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।
সাধারণ অতীত
যে ক্রিয়া অতীত কালে সাধারণভাবে সংঘটিত হয়েছে, তাকে সাধারণ অতীত কাল বলা হয়। যেমন :
আমি কাজটি করলাম।
আমি খেলা দেখে এলাম।
নিত্যবৃত্ত অতীত
যে ক্রিয়া অতীতে প্রায়ই ঘটত এমন বোঝায়, তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলা হয়। যেমন:
বাবা প্রতিদিন বাজার করতেন।
ছুটিতে প্রতিবছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।
ঘটমান অতীত
যে ক্রিয়া অতীত কালে চলেছিল, তখনো শেষ হয়নি বোঝায়, তাকে ঘটমান অতীত কাল বলা হয়। যেমন:
রিতা ঘুমাচ্ছিল।
তিনি মেয়েটির চেহারা কেমন জানতে চাইছিলেন।
পুরাঘটিত অতীত
যে ক্রিয়া অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন:
আমরা রাজশাহী গিয়েছিলাম।
তুমি কি তার পরীক্ষা নিয়েছিলে?
ভবিষ্যৎ কাল
ক্রিয়ার যে রূপের দ্বারা ক্রিয়া ভবিষ্যতে কোন একসময় ঘটবে সেই সময়কে ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়।
সাধারণ ভবিষ্যৎ
যে ক্রিয়া পরে বা ভবিষ্যতে সাধারণভাবে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। যেমন-
বাবা আজ আসবেন।
আমি হব সকালবেলার পাখি।
ঘটমান ভবিষ্যৎ
যে ক্রিয়ার কাজ ভবিষ্যতে শুরু হয়ে চলতে থাকবে, তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। যেমন:
সুমন হয়তো তখন দেখতে থাকবে।
মনীষা দৌড়াতে থাকবে।
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে এবং সেটি বোঝাতে সাধারণ ভবিষ্যৎ কালবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়, এমন হলে তার কালকে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল বলা হয়। অনেকে একে “সন্দেহ অতীত“ও বলে থাকেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যেমন:
তুমি হয়তো আমাকে এ কথা বলে থাকবে।
সম্ভবত পরীক্ষার ফল বের হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা
যখন কোনও আদেশ, অনুরোধ বা প্রার্থনা ভবিষ্যতের জন্য করা হয় তখন তাকে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বলা হয়। যেমন: