Author: admin

  • জি-৭ সম্মেলন ২০২২

    ২৬-২৮ জুন ২০২২ জার্মানির বাভারিয়ান আল্পসের এলমাউ দুর্গে জি-৭-এর ৪৮তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডাে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখো, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অংশ নেন।

    জি-৭ সম্মেলনে বৈশ্বিক অবকাঠামাে ও বিনিয়ােগ অংশীদারত্ব (পিজিআইআই) প্রকল্পটি ২০২২-এ নতুন নামে পুনরায় তােলা হয়। এর আগে ২০২১ সালে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে প্রথমবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল।

  • আরব শীর্ষ সম্মেলন ২০২২

    ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সফর শেষে ১৫ জুলাই ২০২২ সৌদি আরব সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৬ জুলাই আরব নেতাদের সঙ্গে বাইডেন শীর্ষ সম্মেলনে যােগ দেন।

    আরব শীর্ষ সম্মেলনে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ছয় দেশ সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের পাশাপাশি জর্ডান, মিসর ও ইরাকের নেতারা অংশ নেন।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিশােধিত তেলের উচ্চমূল্য ও রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জটিলতায় বাইডেন ওপেক জায়ান্ট সৌদি আরবকে পাশে চায়।

    একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও চীনের বৈশ্বিক প্রভাব রােধ করাও বাইডেনের উদ্দেশ্য। আর সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এই সম্মেলনে যােগ দেন।

    তবে ইসরায়েলকে নিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা অক্ষের পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে পারেননি বাইডেন। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সম্মেলনে আশানুরূপ কোনাে অগ্রগতি হয়নি।

  • বিশ্বের বিখ্যাত ১৪টি সমুদ্রবন্দর

    সাংহাই বন্দর : বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম বন্দর ধরা হয় চীনের এই সমুদ্রবন্দরকে। ২০০৫ সালে ইয়াংশানে গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠিত হলে এই বন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।

    জেবেল আলি বন্দর : সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই বন্দর মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। ১৯৭৯ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এটির উদ্বোধন করেন। এই বন্দরের গভীরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের জাহাজগুলাে এখানে সবচেয়ে বেশি আসে।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    সিঙ্গাপুর : সাংহাইয়ের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বন্দর সিঙ্গাপুর বন্দর। ১৮১৯ সালে স্থাপিত হওয়া এই বন্দর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল অংশের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়।

    রটারডাম : নেদারল্যান্ডসের এই সমুদ্রবন্দর ইউরােপের সবচেয়ে বড় বন্দর। চতুর্দশ শতাব্দীতে চালু হওয়া এই বন্দরের আয়তন ১০৫ বর্গকিলােমিটার।

    হাম্বানটোটা : শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বন্দর বর্তমানে চীনের দখলে। শ্রীলঙ্কা সরকার চীন থেকে নেওয়া ঋণ সময়মতাে পরিশােধ করতে না পারায় ২০১৭ সালে চীন এই বন্দর ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেয়।

    জেদ্দা : সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বন্দর এটি। লােহিত সাগরের পাশে অবস্থিত এই বন্দরের মাধ্যম সৌদি আরবের ৬৫ শতাংশ আমদানি সম্পন্ন হয়।

    চাবাহার : ওমান উপসাগরের পাশে অবস্থিত ইরানের এই বন্দর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর। ২০০৩ সালে ইরান ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে ভারত এই বন্দরের উন্নয়নের জন্য বিনিয়ােগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তী সময়ে এই বন্দর নিয়ে ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এর মধ্য দিয়ে ভারত ও আফগানিস্তানের বাণিজ্যের পথ সুগম হবে এবং ভারতের পক্ষে সহজে মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য করা সম্ভব হবে।

    গদর: আরব উপসাগরের তীরে অবস্থিত এই বন্দর একটি গভীর সমুদ্রবন্দর। পাকিস্তানের বন্দর হলেও এই বন্দর নির্মাণে সহযােগিতা করছে চীন। এতে চীনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যােগাযােগ স্থাপন আরও সহজ হবে। মূলত চীনের মাধ্যমে তাদের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রােড প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও এগিয়ে যাবে।

    মােম্বাসা : কেনিয়ার এই সমুদ্রবন্দর ঐতিহাসিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দর পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বন্দর। দাসপ্রথা চলাকালীন এই বন্দর দিয়েই পূর্ব আফ্রিকা থেকে দাসদের নিয়ে যাওয়া হতাে।

    পাের্ট সাইদ: মিসরের এই বন্দর আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর শহর। সুয়েজ খালের সর্ব উত্তরের এই বন্দর থেকেই সুয়েজ খালের শুরু। ১৮৫৯ সালে সুয়েজ খাল নির্মাণের সময় এই বন্দর শহরে প্রতিষ্ঠা হয়।

    হাইফা : ইসরায়েলের এই বন্দর প্রাচীনকাল থেকেই নাবিকদের জন্য এক আশ্রয়স্থল ছিল। ১১০০ সালে ক্রুসেডাররা হাইফা দখল করে নিলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে বন্দরটি বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯৩৩ সালে এটি আবার চালু করা হয় এবং বর্তমানে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর এবং নৌঘাঁটি এটি।

    কালিনিনগ্রাদ: কালিনিনগ্রাদ সমুদ্রবন্দরটি রাশিয়ার একমাত্র বরফবিহীন সমুদ্রবন্দর। রাশিয়ার সব সমুদ্রবন্দর শীতকালে সম্পূর্ণ বরফাচ্ছাদিত থাকে, সে জন্য বাল্টিক সাগরের তীরের কালিনিনগ্রাদ বন্দরটি রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    ওডেসা : ওডেসা ইউক্রেনের দক্ষিণে অবস্থিত কৃষ্ণসাগরের তীরে একটি বন্দর শহর। ওডেসা ইউক্রেনের জন্য সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নিলে ইউক্রেন সেভাস্তোপলে তাদের নৌঘাঁটি হারায়। এরপর তারা তাদের সদর দপ্তর এই ওডেসাতে স্থানান্তর করে। রাশিয়া যদি ওডেসা দখল করে নেয়, তাহলে কার্যকরভাবে ইউক্রেনকে বিদেশি বাণিজ্য ও সামরিক সাহায্য থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

    সেভাস্তোপােল : ১৭৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সেভাস্তোপােল শহরটি এর কৌশলগত অবস্থানের কারণে, ইতিহাসজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং নৌঘাটি ছিল। ক্রিমিয়ার বৃহত্তম এই শহরে বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয় নৌঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিলে সেভাস্তোপােলকেও তাদের দখলে নিয়ে নেয়। রাশিয়ার দখলের আগে সেভাস্তোপােলে ইউক্রেনের নৌবাহিনীর ঘাঁটি ছিল, যা পরে ওডেসাতে স্থানান্তর করা হয়।

  • শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকট

    প্রায় ছয় মাস ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশের সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গেছে দেশের। জনগণ। তারই জেরে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট গােতাবায়া রাজাপক্ষে। পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন গােতাবায়ার ভাই তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখল করে নিয়েছিল জনসাধারণ। তারপরই নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়।

    গত ২০ জুলাই ২০২২ পার্লামেন্টে ভােটাভুটি হয়। নির্বাচনে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট পদে যে তিন প্রার্থী লড়েন, তাঁদের মধ্যে রনিল ছাড়াও ছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন দল পদুজানা পেরামুনা পার্টির সংসদ সদস্য দুল্লাস আলাহাপেরুমা ও ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের নেতা কুমারা দেসানায়েকে।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ১৩৪ ভােট পেয়ে রনিল প্রার্থীদের মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে যান, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপেরুমা পান ৮২ ভােট। দেসানায়েকের বাক্সে পড়ে মাত্র ৩ ভােট। এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থানে যান রনিল। রাজধানী কলম্বােয় সরকারি দপ্তরগুলাে থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেন।

    শ্রীলঙ্কার সংকটের পেছনে কী

    কয়েক দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অর্থনৈতিক সংকট থেকেই রাজনৈতিক সংকটের শুরু। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, রাসায়নিক সারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতির একটি কারণ। তবে এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে।

    এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের কারণ হিসেবে দেশটির সরকার। পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়াকে দায়ী করেছে। করােনা মহামারির কারণে পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কা অনেকটাই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়ে। আমদানির জন্য এই বৈদেশিক মুদ্রা দেশটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    তবে শ্রীলঙ্কার এই সংকট নতুন নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামিল টাইগারদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের বদলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য সরবরাহের দিকে মন দেয়। রপ্তানি থেকে দেশটির আয় কমে যায়। আর আমদানির ব্যয় বাড়তেই থাকে।

    বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় জ্বালানি ও ওষুধের মতাে প্রয়ােজনীয় পণ্য আমদানির জন্য অর্থ পরিশােধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক বেশি হারে কর কমানাে, ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ, বড় বড় অবকাঠামাের জন্য খরচের কারণেও দেশটির অর্থনীতি সংকটে পড়েছে।

    আর এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে জনগণের দৈনন্দিন জীবনে। ফলে জনরােষের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার সরকার। আর তার ধারাবাহিকতাতেই বেড়েছে রাজনৈতিক সংকট।

    শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকটের ঘটনাপ্রবাহ নিম্নরূপ

    ৩ এপ্রিল ২০২২ : ৩ এপ্রিল গভীর রাতে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য ইস্তফা দেন। এতে গােতাবায়া-মাহিন্দা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

    ৪ এপ্রিল ২০২২ : ৪ এপ্রিল দেশটির বিরােধীদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয় সরকার। কিন্তু বিরােধীরা তা নাকচ করেন।

    ৯-১২ এপ্রিল ২০২২ :  ৯ এপ্রিল সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন হাজারাে মানুষ। ১২ এপ্রিল সরকার ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণখেলাপির ঘােষণা দেয়। অতিপ্রয়ােজনীয় পণ্য কিনতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষের দিকে বলে জানানাে হয়।

    ১৮-২৮ এপ্রিল ২০২২ : ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য নিয়ােগ দেয় সরকার। তবে এই সরকারেও মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাখেন গােতাবায়া। টানা কয়েক সপ্তাহের সরকারবিরােধী বিক্ষোভে ১৯ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২৮ এপ্রিল দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে থমকে যায় শ্রীলঙ্কা।

    ৬ মে ২০২২ : ৬ মে আবার ধর্মঘট ডাকা হয়। এদিন আবার জরুরি অবস্থা ঘােষণা করে শ্রীলঙ্কা সরকার।

    ৯ মে ২০২২ : ৯ মে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান সরকার সমর্থকেরা। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা হামলা করেন। সংঘর্ষের পর মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে  বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট গােতাবায়ার ওপর চাপ আরও বাড়ে। তিনি একা হয়ে পড়েন।

    ১২ মে ২০২২ : সংকট উত্তরণে রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১২ মে তিনি শপথ নেন। এর আগে তিনি পাঁচবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

    ৯ জুলাই ২০২২ : ৯ জুলাই সরকারবিরােধী বিক্ষোভ নাটকীয় মােড় নেয়। এদিন বিক্ষোভকারীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়েন। তার আগেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়েন গােতাবায়া।

    ১২ জুলাই ২০২২ : গণবিক্ষোভের মুখে ১২ জুলাই রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালদ্বীপে যান গােতাবায়া। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় রনিল বিক্রমাসিংহেকে। এই পদক্ষেপে দেশটিতে জনরােষ আরও বাড়ে।

    ১৩ জুলাই ২০২২ : ১৩ জুলাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা। জারি করেন রনিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়ােজনীয় সবকিছু করার নির্দেশ দেন তিনি। এদিন ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হামলা চালান। কার্যালয় দখলে নেন। তারা অবিলম্বে রনিলেরও পদত্যাগ দাবি করেন। দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দাবি জানান।

    ১৪ জুলাই ২০১২ : ১৪ জুলাই মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুরে যান গােতাবায়া। গােতাবায়া সিঙ্গাপুরে গিয়ে ১৪ জুলাই শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে ই-মেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

    ১৫ জুলাই ২০২২ :  ১৫ জুলাই গােতাবায়ার পদত্যাগপত্র। গ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘােষণা দেন। দেশটির পার্লামেন্ট স্পিকার। একই সঙ্গে রনিল দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

    ২০ জুলাই ২০১২ : পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমপি) ভােটে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
    ২২ জুলাই ২০১২। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মহাজনা একসাথ পেরামুনা পার্টির দিনেশ গুনাবর্ধনে।

  • ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের ৭৫ বছর

    ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় ভারত-পাকিস্তান নামে দুটি দেশ। এ বছর ভারত-ভাগের ৭৫ বছর পূর্ণ হলাে।

    দেশভাগ

    ব্রিটিশ ভারতকে দুটি স্বাধীন অধিরাজ্য অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত করার ঘটনাই দেশভাগ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনাবসানের প্রাক্কালে তৎকালীন মুসলিম লীগের সভাপতি মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু ও মুসলিম জাতির ভিত্তিতে দ্বিজাতি তরে উন্মেষ ঘটান।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ১৯৪৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণা সংশােধন করা হয় এবং দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে একটি ‘সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২২-২৩ মার্চ ১৯৪০ লাহােরে বাংলাসহ ভারতের একাধিক প্রদেশে তার দ্বিজাতি তত্ত্বের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

    মুসলিম-প্রধান বেলুচিস্তান, সিন্ধু, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে হবে পাকিস্তান। পাঞ্জাব ও বাংলায় যেহেতু মুসলিমদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না, সিদ্ধান্ত হলাে এই দুটি প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

    ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন

    ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে ৩ জুন ১৯৪৭ ব্রিটিশ সরকার ভারত বিভাগ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮ জুলাই ১৯৪৭ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ভারত স্বাধীনতা আইন পাস করা হয়। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলাে নিম্নরূপ-

    • ভারতকে বিভক্ত করে ভারতীয় ইউনিয়ন ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়।
    • ভারত ও পাকিস্তানের গণপরিষদ নিজ নিজ দেশের জন্য সংবিধান রচনা করার ক্ষমতা লাভ করে।
    • রাষ্ট্র দুটি ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত থাকবে কিনা নিজ নিজ দেশের গণপরিষদ তা নির্ধারণ করবে।

    নতুন সংবিধান রচিত ও প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত উভয় রাষ্ট্রকে নিম্নোক্ত বিধানগুলাে মেনে চলতে হবে।

    1. নিজ নিজ রাষ্ট্রের মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শক্রমে ব্রিটিশরাজ গভর্নর জেনারেল নিয়ােগ করবেন
    2. মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক গভর্নর নিয়ােগ করবেন , ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইনের সঙ্গে সংগতি নেই এই অজুহাতে রাষ্ট্র দুটির কোনাে আইন নাকচ করা যাবে না।

    র‌্যাডক্লিফ লাইন

    সিরিল র‌্যাডক্লিফ নামে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে ভারত উপমহাদেশের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। র‌্যাডক্লিফ আগে কখনােই ভারতে আসেননি। প্রথমবারের মতাে ভারতে এসে অর্পিত দায়িত্বের জন্য মাত্র পাঁচ সপ্তাহ ছিলেন।

    এই অল্প সময়ে তিনি যে রেখাগুলাে টানেন তা আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম জোরপূর্বক গণঅভিবাসনের সূচনা। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় দেড় কোটি মানুষ। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। দুই দেশের সীমারেখা টানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি র্যাডক্লিফকে মুসলিম এবং হিন্দু জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করতে বলা হয়।

    ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলাে ছাড়াও উপমহাদেশে ফরাসি, পর্তুগিজ বা ওলন্দাজ শাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অন্য অনেক অঞ্চলের পাশাপাশি স্থানীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত সার্বভৌম দেশীয় রাজ্য ছিল। স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা স্বশাসিত রাজ্যগুলােকে দলিল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত বা পাকিস্তানে যােগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

    এই অঞ্চলগুলাের কয়েকটি এখন পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তানের অংশ হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে অন্যতম কাশ্মীর, যেটি প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে এখনাে – একীভূত হয়নি, আবার রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেনি। সিরিল র‌্যাডক্লিফের নামানুসারে ৪,৫০,০০০ বর্গকিলােমিটার দৈর্ঘ্যের এ সীমান্তরেখার নাম হয় র‌্যাডক্লিফ লাইন।

    বিভাজনের কারিগর

    সিরিল জন র‌্যাডক্লিফ ভারতের সীমানা নির্ধারণে গঠিত র‌্যাডক্লিফ কমিশনের প্রধান। কমিশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ থেকে দুজন করে সদস্য ছিলেন। সদস্যরা সবাই ছিলেন আইনজীবী। র‌্যাডক্লিফ নতুন দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্র এবং আন্তর্জাতিক সীমা নির্দেশ করে তার রিপাের্ট পেশ করেন। তার প্রস্তাবনায় ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ১৪ ও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ পাকিস্তান এবং ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।

    দেশীয় রাজ্য

    বাংলায় প্রিন্সলি স্টেটকে বলা যায় স্থানীয় রাজ্য’ বা ‘দেশীয় রাজ্য’। যুক্তরাজ্যের অধীন ভারতে দু’ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল। একটা হলাে প্রভিন্স এবং অন্যটি হলাে প্রিন্সলি বা দেশীয় রাজ্য। এইরূপ রাজ্য ব্রিটিশদের অধীন হয়েও সীমিত স্বায়ত্তশাসন ভােগ করত। তারা সরাসরি এবং পূর্ণ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত হতাে না।

    এইরূপ রাজ্যের স্থানীয় শাসকরা ‘মহারাজা’, ‘রাজা’, ‘নিজাম ইত্যাদি-পদবি ব্যবহার করতেন। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় ভারতবর্ষে ৫টি দেশীয় রাজ্য এবং ১১টি প্রভিন্স ছিল।

    দেশীয় রাজ্যগুলাের মধ্যে আবার কিছু রাজ্য ছিল বাড়তি মর্যাদা সম্পন্ন। তাদের বলা হতাে স্যালুট স্টেট (Salute state)। রাজ্যগুলাের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জম্মু ও কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি। আকারেও সেগুলাে বড় ছিল। যেমন, জম্মু ও কাশ্মীরের আয়তন ছিল তখন প্রায় দুই লাখ ৭,০০০ বর্গ কিলােমিটার।

  • আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’র ঋণ কড়চা

    বাংলাদেশ সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে IMF’র কাছে ঋণ সহায়তার আবেদন করে। এ প্রেক্ষাপটে IMF’র ঋণের হালচাল নিয়ে আমাদের আয়ােজন।

    পূর্ণরূপInternational Monetary Fund
    প্রতিষ্ঠা১৯৪৪ সালে
    কার্যক্রম শুরু১ মার্চ ১৯৪৭
    জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থার মর্যাদা লাভ১৫ নভেম্বর ১৯৪৭
    সদর দপ্তরওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র
    বর্তমান সদস্য১৯০টি

    আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

    আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা। বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা এর প্রধান কাজ। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং দারিদ্র্যহাসে সহায়তাকার জন্য নীতিমালা প্রদান এবং সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। IMF’র মতে, ব্যক্তিগত ও আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলাে ত্রুটিপূর্ণভাবে কাজ করে এবং অনেক দেশে আর্থিক বাজারগুলিতে সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সংস্থাটি সরকারি অর্থায়নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প অর্থায়নের জোগান দেয়।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ঋণদানের শর্তসমূহ

    যখন কোনাে দেশের Balance of Payment বা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তারা IMF’র দ্বারস্থ হয়। IMF যখনই কোনাে ঋণ দেয় তখনই কিছু শর্ত বা পরামর্শ দেয়। IMF’র ঋণ প্রদানের উল্লেখযােগ্য শর্ত হলাে-

    • সরাসরি রপ্তানি এবং সম্পদ আহরণের ওপর অর্থনৈতিক আউটপট ফোকাস করা
    • মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা
    • বাণিজ্য উদারীন্দ্রণ বা আমদানি ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া
    • বিনিয়ােগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি
    • বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অতিরিক্ত ব্যয় না করা
    • মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি অপসারণ
    • বেসরকারিকরণ বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের সমস্ত বা – আংশিক মালিকানা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হস্তান্তর
    • জাতীয় আইনের বিপরীতে বিদেশি বিনিয়ােগকারীদের অধিকার বৃদ্ধি করা
    • শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা
    • ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা

    রিজার্ভ মুদ্রা

    IMF’র সম্পূরক আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ফান্ড বা মজুত সম্পদ, যা SDR (Special Drawing Rights) নামে পরিচিত। সদস্য দেশগুলাের জন্য SDR সুবিধা প্রবর্তনের জন্য ২৮ জুলাই ১৯৬৯ IMFর গঠনতন্ত্র সংশােধন করা হয়। সংস্থার সদস্যরা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের প্রয়ােজনে SDR-এ অন্তর্ভুক্ত মুদ্রা ব্যবহারের সুযােগ পায়। ১৯৭৪ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ বা মজুত মুদ্রা গ্রহণ করে। বর্তমানে IMF’র রিজার্ভ মুদ্রা ৫টি মার্কিন ডলার, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরাে ও ইউয়ান। ইউয়ান-এর অন্য নাম ‘রেনমিনবি।

    IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ

    স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ IMF’র কাছ থেকে ১০ বার ঋণ নেয়। তবে কোনােবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। এসব ঋণের বিপরীতে IMF নানা শর্ত দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কিছু শর্ত মেনে নেয় আবার কিছু মেনে নেয়নি। ১৪ জুন ১৯৭৪ বাংলাদেশ প্রথম IMF’র কাছ থেকে ঋণ পেতে চুক্তি স্বাক্ষর করে।

    সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ IME থেকে বছরে ১০০-১৫০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যােগ্য। কিন্তু IMFর বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ECE), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (EFF) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মােকাবিলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (RSE) এই তিন কর্মসূচি থেকে আলাদা করে ঋণ গ্রহণ করতে পারে।

    ECF থেকে নেওয়া ঋণে সুদ ও মাশুল দিতে হয় না। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ পরিশােধে সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে। বাকি দুটি তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার ১.৫৪ থেকে ১.৭৯%।

    সম্প্রতি বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে IMF’র নবগঠিত Resilience and Sustainability Trust (RST) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তার জন্য আবেদন করে। এই অর্থই বাংলাদেশের ইতিহাসে IMF থেকে সর্বোচ্চ ঋণ। RST ঋণের মেয়াদ ২০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর।

    IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ (হাজার SDR)

    বার চুক্তির তারিখসমাপ্তির তারিখঅনুমােদিত ঋণঋণ ছাড়
    ১ম১৪.০৬.১৯৭৪১৩.০৬.১৯৭৫৩১,২৫০৩১,২৫০
    ২য় ২৮.০৭.১৯৭৫২৭.০৭.১৯৭৬৬২,৫০০৬২,৫০০
    ৩য় ৩০.০৭.১৯৭৯২৯.০৭.১৯৮০৮৫,০০০৮৫,০০০
    ৪র্থ ০৮.১২.১৯৮০২১.০৬.১৯৮২৮,০০,০০০২,২০,০০০
    ৫ম ২৮.০৩.১৯৮৩৩১.০৮.১৯৮৩৬৮,৪০০৬৮,৪০০
    ৬ষ্ঠ ০২.১২.১৯৮৫৩০.০৬.১৯৮৭১,৮০,০০০১,৮০,০০০
    ৭ম০৬.০২.১৯৮৭  ০৫.০২.১৯৯০২,০১,২৫০২,০১,২৫০
    ৮ম ১০.০৮.১৯৯০১৩.০৯.১৯৯৩৩,৪৫,০০০৩,৩০,০০০
    ৯ম ২০.০৬.২০০৩ ১৯.০৬.২০০৭ ৪,০০,৩৩০৩,১৬,৭৩০
    ১০ম
    ১১.০৪.২০১২
     ১০.০৪.২০১৫
    ৬,৩৯,৯৬০
    ২,৭৪,২৬৯
    মােট২৮,১৩,৬৯০১৭,৬৯,৩৯৯

    [Note : ৯ম চুক্তি থেকে ৯৫,৬০৪ এবং ১০ম চুক্তি থেকে ২,৭৪,২৬৯ হাজার SDR পরিশােধ করা হয়নি।]

  • বিশ্বে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন নারীরা

    দ্রৌপদী মুর্মু, ভারতের রাষ্ট্রপতি

    আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়ে সম্প্রতি ইতিহাস গড়েন। ৬৪ বছর বয়সী দ্রৌপদী মুর্মু। ওডিশার সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই নারীকে এ পদে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে স্কুলশিক্ষক ছিলেন তিনি। ২৫ জুলাই ২০২২ তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

    ডেম স্যান্ড্রা মেসন, বারবাডােজের প্রেসিডেন্ট

    ২০২১ সালে বারবাডােজে প্রায় ৪০০ বছরের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং দেশটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। এরপর ক্যারিবীয় দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেম স্যান্ড্রা মেসন। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    কাতেরিনা সাকেলারােপুলু, গ্রিসের প্রেসিডেন্ট

    প্রথম গ্রিক নারী প্রেসিডেন্ট কাতেরিনা সাকেলারােপুলু একজন প্রখ্যাত। বিচারক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে গ্রিসের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত কাউন্সিল অব স্টেটের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন পদে নিয়ােজিত ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে গ্রিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কাতেরিনা সাকেলারােপুলু।

    হালিমা ইয়াকুব, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট

    হালিমা ইয়াকুব সিঙ্গাপুরের অষ্টম প্রেসিডেন্ট। ২০১৭ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর মা মালে এবং বাবা ভারতীয় বংশােদ্ভূত। ২০১৩ সালে তিনি দেশটির প্রথম নারী হিসেবে পার্লামেন্টে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেন।

    বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, নেপালের প্রেসিডেন্ট

    বিদ্যা দেবী ভান্ডারি নেপালের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং পরিবেশ ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব। পালন করেছেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিদ্যা। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম ও ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে নেপালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

    সাই ইং ওয়েন, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

    তাইওয়ানের রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ সাই ইং ওয়েন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালে প্রথমবার ও ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতাে নারী প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত হন তিনি। সাইকে নিয়মিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের একজন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। টাইম সাময়িকী।

    সাললামে জুরাবিচভিলি, জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট

    জর্জিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সালােমে জুরাবিচভিলি একজন সাবেক কূটনীতিক। ফ্রান্সের প্যারিসে জর্জিয়ার রাজনৈতিক শরণার্থী পরিবারে জন্ম নেন তিনি। ২০১৮ সালে। জুরাবিচভিলি জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নারী অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করার জন্য পরিচিত তিনি।

    সাহলে ওয়ার্ক জিউড, ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট

    ইথিওপিয়ার কূটনীতিক সাহলে ওয়ার্ক জিউড ২০১৮ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়ােজিত আছেন। তিনি ইথিওপিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এর আগে নাইরােবিতে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন সাহলে ওয়ার্ক জিউড।

  • বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর

    বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। আপনারা যারা বিভিন্ন শহর সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য লেখাটি সহায়ক হবে।

    বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের ৮টি শহর

    হংকং

    চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং। হংকং নামের অর্থ ‘সুবাসিত বন্দর’। পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগে অবস্থিত এই অঞ্চল বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ-বাণিজ্যকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর। ১৮৪২ সালে প্রথম আফিম যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা এই বন্দরের দখল নেয়। এরপর হংকংয়ের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটতে থাকে। হংকংকে ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়। ১৯৯৭ সালে বন্দরটি চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ব্যাংকিং, বিনিয়ােগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হংকংয়ের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    সাংহাই

    চীন এবং পুরাে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর সাংহাই। বাণিজ্যিকভাবে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই শহর বহু শতাব্দী ধরেই চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, নৌপরিবহন ও বাণিজ্যকেন্দ্র। প্রথম আফিম যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়লাভের পর যে পাঁচটি চীনা বন্দরকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করতে বাধ্য করা হয়, তার মধ্যে সাংহাই ছিল একটি। গত শতাব্দীর ৩০ দশকে সাংহাই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবির্ভূত হয়। সাংহাই বন্দর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর।

    সিঙ্গাপুর

    সিঙ্গাপুর ক্ষুদ্র আয়তনের একটি নগররাষ্ট্র। দেশটি শুধু এশিয়া নয়; বরং পুরাে বিশ্বে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশরা ১৮১৯ সালে সিঙ্গাপুরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খুলে দেওয়ার পর ইউরােপ ও এশিয়ার মধ্যে সমুদ্রবাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে সমুদ্রবন্দর হিসেবে সিঙ্গাপুর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব থাকা সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।

    দুবাই

    মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর বলা হয় দুবাইকে। ১৮ শতকে গড়ে ওঠা এই শহর বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্যটন এবং বিলাসকেন্দ্র হিসেবে এই শহর পরিচিত হতে। থাকে। মূলত বাণিজ্য কর, পর্যটন এবং বিমান পরিবহন থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয় এই শহরের। বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফা দুবাইয়ে অবস্থিত। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দুবাইয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য মেলা দুবাই এক্সপাে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন

    লন্ডন

    যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন বিশ্বের প্রধানতম অর্থ-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক শহর। কথিত আছে, রােমানরা ৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন দ্বীপ আক্রমণের ৪ বছর পর ৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লন্ডনে জনবসতি গড়ে ওঠে। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত শহরটি একসময় মহাপ্রতাপশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। লন্ডন বর্তমানেও পৃথিবীর অন্যতম সমুদ্রবন্দর ও শহর হিসেবে খ্যাত।

    নিউইয়র্ক

    নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এই শহর ১৬২৪ সালে ডাচদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তৎকালীন নাম ছিল নিউ আমস্টারডাম। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা ১৬৬৪ সালে এই অঞ্চল দখল করে নিলে এর নাম রাখা হয় নিউইয়র্ক। বিশ্ব অর্থবাজার এবং বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট নিউইয়র্ক শহরেরই অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র আর্থিক বাজারের এক রূপক শব্দই এই ওয়াল স্ট্রিট। বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়াল স্ট্রিটে অবস্থিত।

    লস অ্যাঞ্জেলেস

    যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। প্রথমে শহরটি স্পেনের অধীনে থাকলেও পরবর্তী সময়ে শহরটি মেক্সিকোর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৮৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য কিনে নিলে লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রের অধিভুক্ত হয়। চলচ্চিত্র দুনিয়ার খ্যাতনামা স্থান হলিউডের জন্যও বিখ্যাত এই শহর। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অংশ লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতির অন্যতম প্রধান

    শিকাগাে

    যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর শিকাগাে। মিশিগান হ্রদের তীরে অবস্থিত এই শহর ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে দেশটির পশ্চিম অংশে সম্প্রসারণের কাজ করছিল। ফলে শিকাগাে আদর্শগতভাবে এই সম্প্রসারণের দ্বারা তৈরি বাণিজ্য সম্ভাবনার সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের প্রসার ঘটায়। ফরচুন ৫০০-এর অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি কোম্পানির হেডকোয়ার্টার এই শহরে অবস্থিত।

  • চীন-তাইওয়ান সংকট

    ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখলের পর তাইওয়ান দেশটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর নিজস্ব সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাইওয়ান। চীন যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে। ২ আগস্ট ২০২২ তাইওয়ান সফরে যান মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলােসি। এরপরই চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

    চীন তাইওয়ান ইতিহাস

    ২৩৯ খ্রিষ্টপূর্বের চীনা একটি নথিতে প্রথমবারের মতাে দ্বীপটির নাম দেখা যায়। সেই সময় একজন ম্রাট, এ অঞ্চলটি আবিষ্কারের জন্য একটি অভিযাত্রী বাহিনী পাঠান। আর এ নথিকে চীন তার আঞ্চলিক দাবির সমর্থনে ব্যবহার করে। ১৬২৪-১৬৬২ সাল পর্যন্ত উপনিবেশ হিসেবে ডাচ শাসনের অধীনে ছিল তাইওয়ান। ১৭ শতকে প্রথমবারের মতাে তাইওয়ানের পুরােপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় চীন।

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    চীনের কুইং রাজবংশ ১৬৮৩-১৮৯৫ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান শাসন করে। তাইওয়ানের জনগােষ্ঠীর বিশাল অংশ মূল ভূখণ্ড চীন থেকে পর্যায়ক্রমে আগত। জনসংখ্যার অতিক্ষুদ্র অংশ আদিবাসী। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা ও দুর্দশা থেকে পালিয়ে তাইওয়ানে আসেন তারা। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ফুজিয়ান প্রদেশের হােকলাে চাইনিজ অথবা গুয়াংডং প্রদেশের হাক্কা চাইনিজ জনগােষ্ঠীর। আর তাদের বংশধররাই এখন পর্যন্ত এই দ্বীপের বৃহত্তম জনগােষ্ঠী।

    ২৫ জুলাই ১৮৯৪-১৭ এপ্রিল ১৮৯৫ প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধে জাপান কুইং রাজবংশের কাছ থেকে তাইওয়ান দখল করে নেয়। ১০ অক্টোবর ১৯১১-১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ সান ইয়াত সেনের নেতৃত্বে চীন বিপ্লব বা সিনহাই বিপ্লবের মাধ্যমে কুইং রাজবংশের পতন ঘটে। এই বিপ্লবের মাধ্যমে চীনে ২,০০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান হয়। এরপর চীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং নামকরণ করা হয় Republic of China বা ROC।

    আরো পড়ুন : চীনের হংকং শাসনের ২৫ বছর পূর্তি

    ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করলে চীন তাইওয়ানকে নিজেদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আবারও একীভূত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব ব্যর্থ হলে চীনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাই শেকের কাছ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেন।

    ১ অক্টোবর ১৯৪৯ তার নেতৃত্বে বিপ্লবী চীনা মুক্তিফৌজ সমগ্র চীনকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। মাও সে তুং তিন লাখ জনতার বিশাল সমাবেশে তিয়েনআনমেন স্কয়ার মঞ্চ হতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘােষণা দেন। অন্যদিকে, চিয়াং কাই শেক সদলবলে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে পালিয়ে ফরমােজা (বর্তমানে তাইওয়ান) দ্বীপে আশ্রয় নেন। ফরমােজা নামটা জাপানি শব্দ।

    যুক্তরাষ্ট্র-চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক

    ১ অক্টোবর ১৯৪৯ মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর মূল ভূমিতে ক্ষমতায় আসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। তখন চীন প্রজাতন্ত্র (ROC) নামের পরিবর্তে দেশটির – নাম রাখা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (PRC)। কমিউনিস্ট পার্টি অখণ্ড চীনে PRC’র সার্বভৌমত্ব দাবি করে। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাই শেকের নেতৃত্বে তাইওয়ানে আরেকটি সরকার গঠিত হয়। বিপ্লবের পর গঠিত, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র।

    ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধের সময় তাইওয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত হয়। ২ ডিসেম্বর ১৯৫৪ যুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার তাইওয়ানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেন। জবাবে চীন তাইওয়ানের ভূখণ্ডে হামলা করে। এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কয়েকটি ছােট ছােট দ্বীপ দখল করে নেয়।

    ১৯৫৮ সালে তাইওয়ান-চীন দ্বিতীয় দফা সংকটে পতিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তায় তাইওয়ানও চীনা আক্রমণের জবাব দেয়। এই যুদ্ধে চীন কোনাে ভূখণ্ড। নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। ১৮-১৯ জুন ১৯৬০ প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডােয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার তাইওয়ান সফর করেন।

    ২৫ অক্টোবর ১৯৭১ জাতিসংঘ ROC-কে বাদ দিয়ে PRC কে স্বীকৃতি দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের চীন সফরের। মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের শত্রুতার অবসান ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুংয়ের মধ্যকার ঐতিহাসিক করমর্দন সেসময় স্নায়ুযুদ্ধের জ্যামিতি পাল্টে দেয়। স্বাভাবিক হয় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক।

    আরো পড়ুন : বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে অটল

    ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ দুই দেশ সাংহাই ইশতেহারে। স্বাক্ষর করে। ১৯৭৮ সালে চীন তার অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে শুরু করে। বাণিজ্যিক সুযােগ এবং সম্পর্কোন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কচ্যুত করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই সাথে এক চীন নীতি মেনে নেয়। কিন্তু, তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহাল রাখে।

    চীনের তৎকালীন নেতা দেং জিয়াওপিং সে সময় চীন তাইওয়ানের জন্য এক দেশ, দুই নীতি’ এবং বল প্রয়ােগের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ একীভূতকরণের প্রস্তাব দেন। তবে ১৯৮২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রােনাল্ড রিগ্যান যুক্তরাষ্ট্রের ‘তাইওয়ান সম্পর্ক আইন পরিবর্তন না করার অঙ্গীকারসহ তাইওয়ানকে ছয়টি আশ্বাস (Six Assurances) দেন।

    ১৯৮৭ সালের শেষে তাইওয়ানবাসীরা প্রথমবারের মতাে চীনের মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার অনুমতি পায়। ১৯৯৩ সালে। সিঙ্গাপুরে প্রথম সরাসরি আলােচনা বসে চীন ও তাইওয়ান। ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাইওয়ানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি তেং-হুইকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অনুমােদন দিলে চীন ক্ষুব্ধ হয়। এই সফর চীন-তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও জটিল করে তােলে। এই সফরই তৃতীয় চীন-তাইওয়ান সংকট উসকে দেয়।

    ২১ জুলাই ১৯৯৫ চীন তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডের নিকটবর্তী জলসীমায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। জবাবে প্রতিশ্রুতি অনুসারে তাইওয়ান প্রণালিতে যুদ্ধবিমান মােতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিষয়টি মিটে যায়। ২৩ মার্চ ১৯৯৬ তাইওয়ানের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চীনকে আরও অসন্তুষ্ট করে। সে সময় চীন তাইওয়ানের কাছে সামরিক মহড়া চালায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা আগ্রাসন রােধ করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়।

    ২০০৫ সালের মার্চে চীন নতুন আইন অনুমােদন করে। আইনে বলা হয় তাইওয়ান স্বাধীনতার ডাক দিলে শক্তি প্রয়ােগ করবে চীন। ২০০৮ সালে তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যে পুনরায় উচ্চপর্যায়ের আলােচনা শুরু হয়। ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঐতিহ্যগতভাবে স্বাধীনচেতা ডেমােক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির সাই ইং-ওয়েন জয়লাভ করে। প্রেসিডেন্ট সাই সরকারও ‘এক চীন নীতিকে মেনে নেয়নি। ২ ডিসেম্বর ২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প যুগের পর যুগ অটুট থাকা মার্কিন প্রথা ভেঙে টেলিফোনে সরাসরি কথা বলেন সাই’র সঙ্গে।

    এক চীন নীতি

    তাইওয়ানকে ‘অখণ্ড’ চীনের অংশ মনে কার নীতিই এক চীন নীতি’। ১৯৭২ সালে চীনের নেতা মাও সে তুং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মধ্যে এক চীন নীতি’র প্রতি মার্কিন সমর্থনের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়।

    সাম্প্রতিক সংকট

    সূত্রপাত যেভাবে

    ২ আগস্ট ২০২২ মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলােসি চীনের নিয়মিত হুমকি ও সতর্কতা উপেক্ষা করে তাইওয়ান সফরে যান। তিনি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত উচ্চপর্যায়ের কোনাে কর্মকর্তার ২৫ বছরে এই প্রথম তাইওয়ান সফর। এর আগে ২ এপ্রিল ১৯৯৭ রিপাবলিকান নিউ গিরিচ তাইওয়ানে যান। ১৪ আগস্ট ২০২২ মার্কিন আইন প্রণেতাদের একটি দল তাইওয়ান সফর করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে চীনের পদক্ষেপ-

    • সামরিক মহড়া : ৪ আগস্ট ২০২২ তাইওয়ানকে ঘিরে থাকা অঞ্চলগুলােতে চীন বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে। কিছু কিছু জায়গায় তাইওয়ানের উপকূল থেকে দূরত্ব ছিল মাত্র ২০ কিলােমিটার। তাইওয়ান উপত্যকায় সামরিক মহড়ায় দূরপাল্লার গােলাও ছােড়া হয়। এই উপত্যকা চীন থেকে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এরপর আরও কয়েক দফায় সামরিক মহড়া চালায় চীন। জবাবে তাইওয়ানও সামরিক মহড়া চালায়।
    • বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা : ৩ আগস্ট ২০২২ তাইওয়ান থেকে ফল ও মাছ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করে চীন। এর মধ্যে অতিরিক্ত কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়ায় লেবুজাতীয় কিছু ফলের আমদানি স্থগিত করে। পাশাপাশি প্যাকেটে করােনাভাইরাস পাওয়া গেছে, এমন ইঙ্গিত করে তাইওয়ান থেকে নির্দিষ্ট কিছু মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করে। তবে তাইওয়ানের কৃষিপণ্যের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম নয়, ২০২১ সালে চীন কীটপতঙ্গ পাওয়ার অভিযােগ তুলে আনারস আমদানি নিষিদ্ধ করে।

    তাইওয়ান নিয়ে নতুন শ্বেতপত্র

    ১০ আগস্ট ২০২২ তাইওয়ান নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে Blot The Taiwan Question and China’s Reunification in the New Era শীর্ষক নতুন এ শ্বেতপত্রে তাইওয়ানে হংকংয়ের মতাে এক দেশ, দুই নীতি’ মডেল প্রস্তাব করে। তবে তাইওয়ানের ভিতরে তৃতীয় পক্ষের কোনাে ধরনের উস্কানি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী আচরণ বরদাস্ত করবে না চীন। প্রয়ােজনে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করার পরে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠাবে।

    নতুন শ্বেতপত্র আগের শ্বেতপত্রগুলাের প্রতিশ্রুতির বিপরীত। এর আগে ৩১ আগস্ট ১৯৯৩ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০০ প্রকাশিত শ্বেতপত্রে চীন প্রতিশ্রুতি দেয় পুনরেকত্রীকরণের পর হংকংয়ের মতাে তাইওয়ানের ক্ষেত্রেও ‘এক দেশ, দুই নীতি মেনে চলবে। অর্থাৎ কোনাে দিন চীন তাইওয়ান দখল করলেও সেখানে স্বশাসিত সরকার থাকবে এবং চীনের কোনাে সামরিক বাহিনী অথবা প্রশাসনিক কর্মী তাইওয়ান ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে না।

    আরো পড়ুন : বাংলাদেশ-চীনের সমঝােতা স্মারক

    চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হওয়ার পর তাইওয়ানকে স্বায়ত্তশাসনের আশ্বাস দেওয়া হয় সেই শ্বেতপত্রে। ১১ আগস্ট ২০২২ তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (MAC) শ্বেতপত্রে প্রস্তাবিত ‘এক দেশ, দুই নীতি’ মডেল প্রত্যাখ্যান করে। MAC চীন বিষয়ে তাইওয়ানের শীর্ষ নীতিনির্ধারক সংস্থা।

    এক দেশ, দুই নীতি

    ‘এক দেশ, দুই নীতি’ (One country, two systems) চীনের একটি মৌলিক আইন। এ মডেল প্রয়ােগের মাধ্যমে চীনা শাসনের অধীনেই স্বায়ত্তশাসন লাভ করে হংকং ও ম্যাকাও। ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৪ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী ঝাও জিয়াং সিনাে-ব্রিটিশ যৌথ ঘােষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ঘােষণাপত্রের বিশেষ শর্তটি ছিল ১৯৯৭ সালের পর থেকে চীন হংকংকে নিয়ন্ত্রণ করবে এক দেশ, দুই নীতি অনুযায়ী।

    পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়াবলি ব্যতিরেকে হংকং পরবর্তী ৫০ বছর অর্থাৎ ২০৪৭ সাল পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের স্বায়ত্তশাসন উপভােগ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ এপ্রিল ১৯৯০ চীনের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে হংকং এর জন্য মৌলিক আইন গৃহীত হয়।

    ১ জুলাই ১৯৯৭ হংকং এর মৌলিক আইনটি কার্যকর হয়। যার ফলে হংকং ব্রিটিশদের অধীনতা মুক্ত হয়ে চীনের বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। আর এরই মাধ্যমে অভিনব ‘এক দেশ, দুই নীতি ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। মৌলিক আইন অনুযায়ী, শুধু একটি চীন থাকবে, কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে পারবে।

    যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তাইওয়ান

    যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাইওয়ান ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সামরিক প্রভাব খর্বতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রভাব রাখতে চায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া থেকে রু করে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত। তাইওয়ান এর মাঝখানে এবং চীনের খুব কাছাকাছি। চীন-তাইওয়ান দখল করলে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব হয়ে যাবে।

    ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় Taiwan Relations Act করা হয়। এর মাধ্যমে দেশটি তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য সহায়তা দেয়। স্বাধীন তাইওয়ানের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না এবং চীনের অংশ হিসেবেও মানতে চায় না। তবে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃত না হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাইওয়ান যাতে সদস্যপদ লাভ করে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেয়।

    হুমকিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য

    ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং রাশিয়ার তেলের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ব বাজার এখন অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এর মধ্যে তাইওয়ান ও চীনের মধ্যকার সংঘাত আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ তাইওয়ানও এশিয়া তথা বিশ্বের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ানকে মাত্র ১৩টি দেশ স্বীকৃতি দিলেও পুরাে পৃথিবী এর ওপর নির্ভর করে।

    তাইওয়ান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে। বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের যে বাজার তার ৬৪ শতাংশই তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণে। শুধু তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC) বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান, সব জায়গায় দরকার পড়ে এই সেমিকন্ডাক্টর।

    দেশটির রপ্তানি আয়ের ৪০% আসে সেমিকন্ডাক্টর থেকে এবং জিডিপিরও ১৫% নির্ভর করে এর ওপর। এই সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরােপের দেশগুলাের কাছে তাইওয়ান গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক সামগ্রী, অপটিক্যাল, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, যানবাহন, লােহা, ইস্পাত, জৈব রাসায়নিক, তেলসহ খনিজ জ্বালানি, তামা, মৎস্যজাত পণ্য, চা, মধু, প্রাকৃতিক বালু ও আনারসসহ আরও অনেক কিছু বিশ্বে রপ্তানি করে দেশটি।

    এসব পণ্যের রপ্তানি বন্ধ হলে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। আবার নিজেদের মােট রপ্তানির ৩০ ভাগই চীনে পাঠায় তাইওয়ান। তাই চীনের যেকোনাে নিষেধাজ্ঞাই বড় প্রভাব ফেলে দেশটির ওপর। ইতােমধ্যে তাইওয়ানগামী অনেক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সমুদ্রপথেও জাহাজ চলাচল বন্ধ প্রায়।

    তাইওয়ান প্রণালি

    প্রণালি (Strait) হলাে পানির একটি সরু পথ, যা দুটি বৃহত্তর জলরাশিকে সংযুক্ত করে। প্রণালির মাধ্যমে দুই বা ততােধিক ভূখণ্ড আলাদা হয়। তাইওয়ান প্রণালি চীন এবং তাইওয়ানকে পৃথককারী একটি অগভীর সামুদ্রিক প্রণালি। প্রণালিটি দক্ষিণ চীন সাগরকে পূর্ব চীন সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ প্রায় ১৩০ কিলােমিটার প্রশস্ত এবং সর্বোচ্চ ৭০ মিটার গভীর। এটি ফরমােজা (সুন্দর) প্রণালি নামেও পরিচিত।

    প্রণালিটি দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে যুক্ত। আর দক্ষিণ চীন সাগর প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে, যা বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের ব্যস্ততম রুট। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ প্রণালির গুরুত্ব অত্যধিক। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে উৎপাদিত পণ্য জাহাজে করে ইউরােপ ও বিশ্বের অন্যান্য বাজারে পরিবহনের প্রধান নৌপথ এই প্রণালি। সারা এ জাহাজ চলাচল করে তার প্রায় অর্ধেক এবং বড় বড় জাহাজগুলাের ৮৮% তাইওয়ান প্রণালি দিয়ে যাওয়া-আসা করে।

    তাই বর্তমান বিশ্বের যেসব অঞ্চলকে সামরিক সংঘাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যে এ সময়ের অন্যতম সামরিক উত্তেজনাপূর্ণ ‘হটস্পট’ অঞ্চল তাইওয়ান প্রণালি। তবে এ প্রণালির মালিকানা নিয়ে অন্তর্জাতিক বিতর্ক রয়েছে। চীন জলপথটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমার পরিবর্তে ‘অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক জলসীমা’ হিসেবে বিবেচনা করে।

    অর্থাৎ, চীন সরকার এ প্রণালিতে বিদেশি জাহাজের চলাচলের স্বাধীনতা অস্বীকার করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা এটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমা বলে গণ্য করে এবং নিজেদের বাণিজ্যিক জাহাজ, যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানের স্বাভাবিক চলাচল বৈধ মনে করে।

    Facebook Twitter Print

    ইংরেজি সাহিত্য মডেল টেস্ট- ০২ || English Literature Model Test- 02

    Bangla Grammar Model Test-04 || বাংলা ব্যাকরণ মডেল টেস্ট- ০৪

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ ৩০+ সাধারণ জ্ঞান [পিডিএফ]

    আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’র ঋণ কড়চা

    সুইফট (SWIFT) কী ও কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? রাশিয়াকে কবে সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়?

    বিশ্বের আলােচিত বিরােধপূর্ণ সীমান্ত

    বরিস জনসনের পতনের পাঁচ কারণ

    জি-৭ সম্মেলন ২০২২

    মন্তব্য করুন

    Check Also

  • মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২

    সূচক০.৭৩২
    গড় আয়ু৭১.৪ বছর
    মাথাপিছু আয়১৬,৭৫২ মার্কিন ডলার
    শীর্ষ দেশসুইজারল্যান্ড (সূচক ০.৯৬২)
    সর্বনিম্ন দেশদক্ষিণ সুদান (সূচক ০.৩৮৫)
    গড় আয়ুতে শীর্ষেহংকং (৮৫.৫ বছর)
    গড় আয়ুতে সর্বনিম্নশাদ (৫২.৫ বছর)
    মাথাপিছু আয় (ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে) শীর্ষেলিচটেনস্টাইন (১,৪৬,৮৩০ মার্কিন ডলার)
    মাথাপিছু আয় (ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে) সর্বনিম্নবুরুন্ডি (৭৩২ মার্কিন ডলার)

    আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন :

    প্রতিবেদনে বাংলাদেশ
    সূচক০.৬৬১
    গড় আয়ু৭২.৪ বছর • পুরুষ : ৭০.৬ বছর • নারী : ৭৪.৩ বছর
    মাথাপিছু আয় (ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে)৫,৪৭২ মার্কিন ডলার • পুরুষ : ৮,১৭৬ মার্কিন ডলার • নারী : ২,৮১১ মার্কিন ডলার

    এই বিভাগের আরো পোস্ট :

    ২৭-৩১তম প্রতিবেদনে বাংলাদেশ
    যততমপ্রকাশদেশ ও অঞ্চলঅবস্থান
    ২৭২১ মার্চ ২০১৭১৮৮১৩৯তম
    ২৮১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮১৮৯১৩৬তম
    ২৯৯ ডিসেম্বর ২০১৯১৮৯১৩৫তম
    ৩০১৫ ডিসেম্বর ২০২০১৮৯১৩৩তম
    ৩১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২১৯১১২৯তম
    প্রতিবেদনে শীর্ষ ১০ দেশ
    অবস্থানদেশসূচকগড় আয়ু (বছর)মাথাপিছু আয় (PPP) মা. ড
    ০১সুইজারল্যান্ড০.৯৬২৮৪.০৬৬,৯৩৩
    ০২নরওয়ে০.৯৬১৮৩.২৬৪,৬৬০
    ০৩আইসল্যান্ড০.৯৫৯৮২.৭৫৫,৭৮২
    ০৪হংকং০.৯৫২৮৫.৫৬২,৬০৭
    ০৫অস্ট্রেলিয়া০.৯৫১৮৪.৫৪৯,২৩৮
    ০৬ডেনমার্ক০.৯৪৮৮১.৪৬০,৩৬৫
    ০৭সুইডেন০.৯৪৭৮৩.০৫৪,৪৮৯
    ০৮আয়ারল্যান্ড০.৯৪৫৮২.০৭৬,১৬৯
    ০৯জার্মানি০.৯৪২৮০.৬৫৪,৫৩৪
    ১০নেদারল্যান্ডস০.৯৪১৮১.৭৫৫,৯৭৯
    প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন ১০ দেশ
    অবস্থানদেশসূচকগড় আয়ু (বছর)মাথাপিছু আয় (PPP) মা. ড
    ১৯১দক্ষিণ সুদান০.৩৮৫৫৫.০৭৬৮
    ১৯০শাদ০.৩৯৪৫২.৫১৩৬৪
    ১৮৯নাইজার০.৪০০৬১.৬১২৪০
    ১৮৮মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র০.৪০৪৫৩.৯৯৬৬
    ১৮৭বুরুন্ডি০.৪২৬৬১.৭৭৩২
    ১৮৬মালি০.৪২৮৫৮.৯২১৩৩
    ১৮৫মােজাম্বিক০.৪৪৬৫৯.৩১,১৯৮
    ১৮৪বুরকিনা ফাসাে০.৪৪৯৫৯.৩২,১১৮
    ১৮৩ইয়েমেন০.৪৫৫৬৩.৮১,৩১৪
    ১৮২গিনি০.৪৬৫৫৮.৯২,৪৮১
    ক্যাটাগরিভিত্তিক মােট দেশ, শীর্ষ ও সর্বনিম্ন দেশ
    ক্যাটাগরিদেশশীর্ষ দেশসর্বনিম্ন দেশ
    অতি উচ্চ৬৬সুইজারল্যান্ড (প্রথম)থাইল্যান্ড (৬৬তম)
    উচ্চ৪৯আলবেনিয়া (৬৭তম)ভিয়েতনাম (১১৫তম)
    মধ্যম৪৪ফিলিপাইন (১১৬তম)আইভরিকোস্ট (১৫৯তম)
    নিম্ন৩২তানজানিয়া (১৬০তম)দক্ষিণ সুদান (১৯১তম)
    প্রতিবেদনে সার্কভুক্ত দেশ
    সূচকেশীর্ষ : শ্রীলংকাসর্বনিম্ন : আফগানিস্তান
    গড় আয়ুতেশীর্ষ : মালদ্বীপসর্বনিম্ন : আফগানিস্তান
    মাথাপিছু আয়েশীর্ষ : মালদ্বীপসর্বনিম্ন : আফগানিস্তান
    অবন্থানদেশসূচকগড় আয়ু (বছর)মাথাপিছু আয় (PPP) মা. ড
    ৭৩শ্রীলংকা০.৭৮২৭৬.৪১২,৫৭৮
    ৯০মালদ্বীপ০.৭৪৭৭৯.৯১৫,৪৪৮
    ১২৭ভুটান০.৬৬৭১.৮৯,৪৩৮
    ১২৯বাংলাদেশ০.৬১৭২.৪৫,৪৭২
    ১৩২ভারত০.৬৩৩৬৭.২৬,৫৯০
    ১৪৩নেপাল০.৬০২৬৮.৪৩,৮৭৭
    ১৬১পাকিস্তান০.৫৪৪৬৬.১৪,৬২৪
    ১৮০আফগানিস্তান০.৪৭৮৬২.০১,৮২৪