Category: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

Bengali language and literature

  • লিখন পদ্ধতি

    লিখন পদ্ধতি (ইংরেজি: writing system) বলতে এক ধরনের প্রতীক-পদ্ধতিকে বোঝায়, যা কোন ভাষার বিভিন্ন উপাদান ও বিবৃতি লেখায় প্রকাশে বা মুদ্রণে সাহায্য করে।

    ইতিহাস

    দেভাষাবিজ্ঞান
    ভাষা·পৃথিবীর ভাষাসমূহ·ভাষা পরিবারসমূহ·লিখন পদ্ধতি·পৃথিবীর লিখন পদ্ধতিসমূহ·ইশারা ভাষা
    ভাষিক তথ্য
    আহরণ
    ক্ষেত্রানুসন্ধানমূলক ভাষাবিজ্ঞান·ভাষাংশ ভাষাবিজ্ঞান
    তত্ত্বীয়
    ভাষাবিজ্ঞান
    বর্ণনামূলক/এককালিক ভাষাবিজ্ঞান·ধ্বনিতত্ত্ব·ধ্বনিবিজ্ঞান·রূপমূলতত্ত্ব·রূপধ্বনিতত্ত্ব·বাক্যতত্ত্ব·সঞ্জননী ব্যাকরণ·বাগর্থবিজ্ঞান·ভাষাতাত্ত্বিক শ্রেণীকরণবিদ্যা
    ভাষা
    ও সমাজ
    প্রয়োগতত্ত্ব·অধিবাচন বিশ্লেষণ·ক্রিয়াবাদী ভাষাবিজ্ঞান·সমাজভাষাবিজ্ঞান·নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান·জাতিভাষাবিজ্ঞান
    ঐতিহাসিক
    ভাষাবিজ্ঞান
    ভাষা পরিবারসমূহ·তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান·ব্যুৎপত্তি·ব্যক্তিগত ভাষার বিবর্তনতত্ত্ব·স্থান-নাম তত্ত্ব
    ফলিত
    ভাষাবিজ্ঞান
    উপভাষাতত্ত্ব·ভৌগোলিক ভাষাবিজ্ঞান·মনোভাষাবিজ্ঞান·অভিধানবিজ্ঞান·গাণিতিক বা পরিগণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান·মাতৃভাষা অর্জন·দ্বিতীয় ভাষা অর্জন·বহুভাষিকতা·আদালতি ভাষাবিজ্ঞান·চিকিৎসা ভাষাবিজ্ঞান·ভাষানুবাদ·ভাষা পরিকল্পনা·শিক্ষামূলক ভাষাবিজ্ঞান·স্নায়ুভাষাবিজ্ঞান
    ইতিহাসভাষার উৎস·ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাস
    ভাষাবিজ্ঞান
    ও সাহিত্য
    সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব·শৈলীবিজ্ঞান·ছন্দোবিজ্ঞান·অলংকারশাস্ত্র
    অন্যান্যভাষাবিজ্ঞানীদের তালিকা·অমীমাংসিত সমস্যাসমূহ·পরিভাষা·সংকেতবিজ্ঞান

    লিখন পদ্ধতির ঠিক কবে জন্ম হয়েছিল, তা সঠিক জানা যায় না। বিশ্বের নানা দেশে তাই লিপির উদ্ভব নিয়ে প্রচলিত আছে নানা উপকথা। চীনের উপকথা অনুসারে সাং চিয়েন নামের এক ড্রাগনমুখো লোক প্রাচীনকালে চীনা অক্ষরগুলি তৈরি করেছিলেন। অন্যদিকে মিশরের উপকথা অনুযায়ী পাখির মত মাথা ও মানুষের মত দেহবিশিষ্ট দেবতা থথ্‌ সৃষ্টি করেছিলেন মিশরীয় লিপি। ভারতের উপকথামতে হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা ভারতবর্ষের প্রাচীন লিপি আবিষ্কার করেছিলেন, এবং তার নামানুসারে ঐ লিপির নাম হয় ব্রাহ্মীলিপি।

    লিপিবিশারদেরা মনে করেন প্রথমে ছবি থেকে চিত্রভিত্তিক লিপি তথা চিত্রলিপির আবির্ভাব ঘটে এবং সেখান থেকে কালের বিবর্তনে সৃষ্টি হয় বর্ণ বা সিলেবলভিত্তিক লিপির। এ পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন বর্ণমালাভিত্তিক লিপিটি হল ফিনিশীয় লিপি, যা ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ফিনিশীয় জাতির লিপি ছিল। তাদের লিপিতে বাইশটি ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল। গ্রিক ও ইহুদীরা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে বর্ণমালার ধারণা ধার করে। গ্রিক বর্ণমালায় বর্ণের সংখ্যা ২৪। তারা ব্যঞ্জনবর্ণের পাশাপাশি স্বরবর্ণেরও প্রচলন করেছিল। পরে গ্রিকদের কাছ থেকে রোমানরা লিপির ধারণা নেয়। রোমান বর্ণমালা থেকেই পরে প্রায় সমস্ত ইউরোপের বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা তৈরি হয়।

    ভারতবর্ষের ব্রাহ্মীলিপির পেছনেও ফিনিশীয় লিপির প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। তবে প্রাচীন ভারতীয়রা সম্ভবত স্বাধীনভাবেই নিজেদের লিপি উদ্ভাবন করেছিল। ভারতবর্ষের হরপ্পা ও মহেনজোদারো সভ্যতার লিপিগুলির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্রাহ্মীলিপি প্রচলিত ছিল। এরপর অশোক লিপি বা মৌর্য লিপিতে এর বিবর্তন শুরু হয়। এর পরের ধাপে আসে কুষাণ লিপি; এগুলি কুষাণ রাজাদের আমলে প্রচলিত ছিল। এরপর ব্রাহ্মীলিপিটি উত্তরী ও দক্ষিণী – এই দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। উত্তরী লিপিগুলির মধ্যে গুপ্তলিপি প্রধান; এটি চতুর্থ ও ৫ম শতাব্দীতে প্রচলিত ছিল। গুপ্তলিপি থেকে আবির্ভাব হয় কুটিল লিপির; এটি ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। কুটিল লিপি থেকে উদ্ভব হয় নাগরী লিপির। প্রাচীন নাগরী লিপির পূর্ব শাখা থেকে ১০ম শতকের শেষভাগে এসে উৎপত্তি হয়েছে বাংলা লিপির। কম্বোজের রাজা নয়পালদেবের ইর্দার দানপত্রে এবং প্রথম মহীপালের বাণগড়ের দানপত্রে সর্বপ্রথম আদি বাংলা বর্ণমালা দেখতে পাওয়া যায়।

  • রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ

    রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ (ইংরেজি: Transformational-generative grammar) বলতে স্বাভাবিক ভাষার জন্য চম্‌স্কীয় ধারায় প্রবর্তিত ব্যাকরণকে বোঝায়। এই ধারণার ভিত্তি তৈরী হয়েছিল নোম চমস্কির রচিত সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচারস গ্রন্থে।

    সুগভীর ও উপরি অবয়ব

    একটি জেনেরটিভ গ্রামার বা উৎপাদনশীল ব্যাকরণের পরিকাঠামোর বর্ণনা নোম চমস্কির অ্যাসপেক্টস অফ দি থিওরি অফ সিন্ট্যাক্স গ্রন্থে পাওয়া যায়। সেখানে এই ব্যাকরণের বিশ্লেষনের জন্য তিনি দুটি ধারণার অবতারনা করেছেন, যথা, ডিপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়ব এবং সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব।

    চমস্কির মতে কোন একটি ভাষা সম্বন্ধীয় জ্ঞান সেই ভাষায় উদ্ভূত বা ব্যবহৃত অগুনতি সংখ্যক বাক্যাবলীকে বোঝবার ক্ষমতা দেয় বা দেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য জেনেরটিভ গ্রামারকে এমন একটি নিয়মাবলী যুক্ত ব্যবস্থা হতে হবে যা বারংবার প্রয়োগের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক স্ট্রাকচার বা অবয়ব সৃষ্টি করবে। এইসমস্ত নিয়মাবলীকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যায়, যথা, ১) সিন্ট্যাকটিক বা বাক্যগঠনজনিত, ২)ফোনোলজিক্যাল বা ধ্বনিসম্পর্কিত ও ৩) সিমান্টিক বা শব্দার্থজনিত অংশ।[১]

    সিন্ট্যাকটিক বা বাক্যগঠনজনিত উপাংশতে এক গুচ্ছ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ফর্মাল বা সাধারণীকৃত নিয়মনির্দিষ্ট বস্তুর নির্দেশ দেওয়া থাকে। কোন একটি নির্দিষ্ট বাক্যের একটিমাত্র অর্থবোধক ব্যাখ্যা দেওয়ার উপযোগী সমস্ত তথ্যই ওই সাধারণীকৃত নিয়মনির্দিষ্ট বস্তুগুলির প্রত্যেকটির মধ্যে বর্তমান থাকবে। চমস্কি বাক্য বলতে একসারি ফর্ম্যাটিভ বা বাক্যগঠনমূলক বর্ণসমষ্টিকে ইঙ্গিত করেছেন, একসারি ধ্বনি বা ফোনকে নয়।

    ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি পূর্ববর্তী সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা উৎপাদিত বাক্যের ধ্বনিগত বা ফোনেটিক রূপটি নির্ধারণ করে। অপরদিকে সিমান্টিক উপাংশটি পূর্ববর্তী সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা উৎপাদিত বাক্যের অর্থবোধক রূপ নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি সিন্ট্যাকটিক উপাংশকৃত অবয়বগুলিকে ধ্বনিসম্পর্কিত সংকেতের সঙ্গে যুক্ত করে আর সিমান্টিক উপাংশটি সিন্ট্যাকটিক উপাংশকৃত অবয়বগুলিকে কোন একটি নির্দিষ্ট শব্দার্থপূর্ণ বর্ণনার সঙ্গে যুক্ত করে। দুটি উপাংশই সিন্ট্যাকটিক উপাংশ থেকে পাওয়া ফর্মাটিভ সম্পর্কিত তথ্যের উপর কাজ করে।

    সুতরাং, কোন ব্যাকরণে, প্রত্যেক বাক্যের জন্য সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা দুটি অবয়ব উৎপাদন করতে হবে। একটি অবয়ব হবে ডিপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়ব এবং অপরটি হবে সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব। সুগভীর অবয়বটি বাক্যের শব্দার্থ বা সিম্যান্টিক রূপ নির্ধারণ করবে এবং উপরি অবয়বটি বাক্যের ফোনেটিক বা ধ্বনিগত রূপ নির্দিষ্ট করবে।

    সিন্ট্যাকটিক উপাংশের একটি অঙ্গ হল বেস বা ভিত্তিবেস হল কিছু নিয়ম নিয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা যে নিয়মগুলি কিছু অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক বেসিক স্ট্রীং বা মূলগত সারি উৎপাদন করে। প্রত্যেকটি বেসিক স্ট্রীং বা মূলগত সারির সঙ্গেই একটি গঠনমূলক বর্ণনা দেওয়া থাকে যাকে বেস ফ্রেজ মেকার বা মূল পদন্যাসকর্তা বলে। এই বেস ফ্রেজ মেকারগুলিই হল ডীপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়বের মূল উপাদান। একটি ভাষার প্রত্যেকটি বাক্যের মধ্যেই বেস ফ্রেজ মেকার বা পদন্যাসকর্তাগুলি দিয়ে গঠিত একটি ক্রম বা সারি থাকবে, যে ক্রমটি তৈরী হবে ব্যাকরণের সিন্ট্যাকটিক উপাংশের বেস বা ভিত্তি থেকে। চমস্কি পদন্যাসকর্তা সমন্বিত এই ক্রমসারিকে ওটির সঙ্গে সম্পর্কিত বাক্যের বেসিস বা ভিত্তিভূমি বলেছেন।[২]

    সিন্ট্যাকটিক উপাংশের অপর ও বিশেষ অঙ্গটি হল ট্রান্সফর্মেশনাল বা রূপান্তরমূলক অংশ, যা বাক্যের বেসিস বা ভিত্তিভূমি থেকে বাক্যটিকে তার সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব সহ উৎপাদন করবে, যার উপর ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি সুচারুভাবে কাজ করতে পারবে।

    পাণিনি

    চমস্কির মতে জেনেরটিভ গ্রামারের ধারণা খুব একটা নতুন ধারণা নয়। পাণিনির ব্যাকরণকে একদিক দিয়ে একধরনের উৎপাদনশীল ব্যাকরণ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।[৩]

  • রূপমূলতত্ত্ব

    রূপমূলতত্ত্ব (ইংরেজি– Morphology) হলো ভাষাবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা যেখানে শব্দের গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

    রূপমূলতত্ত্বে শব্দের রূপ (form) ও অর্থের (meaning) মধ্যস্থিত সম্পর্ক আলোচিত হয়। রূপমূলতাত্ত্বিকেরা শব্দকে একাধিক অর্থপূর্ণ অবিভাজ্য এককে ভাঙার চেষ্টা করেন। শব্দ গঠনকারী এই ন্যূনতম অর্থপূর্ণ এককের নাম দেয়া হয়েছে রূপমূল।

    শব্দ ভাষার একটি কেন্দ্রীয় ধারণা, ফলশ্রুতিতে রূপমূলতত্ত্বের সাথে ভাষাবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলির নিবিড় সম্পর্ক আছে। রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের বাহ্যিক ধ্বনিগত রূপের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু এটি ধ্বনিতত্ত্বের সাথেও সম্পর্কিত। এই দুই শাখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বিষয়গুলি রূপধ্বনিতত্ত্ব নামের শাস্ত্রে আলোচিত হয়। রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের অর্থ নিয়ে আলোচনা করে, তাই অর্থবিজ্ঞানের সাথেও এর সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বে আলোচিত সংগঠনগুলির অনেকগুলিই বাক্যের পদগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের সাথে জড়িত। এই হিসেবে বাক্যতত্ত্বের সাথেও রূপমূলতত্ত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বের সূত্রগুলি মেনে ভাষায় নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় বলে অভিধানবিজ্ঞানের সাথেও শাখাটির সম্পর্ক আছে।

    রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাসমূহ

    রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।

    গ্রন্থপঞ্জি

    ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • রূপধ্বনিতত্ত্ব

    রূপধ্বনিতত্ত্ব (ইংরেজি Morphophonology, morphophonemics বা morphonology) ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে রূপমূলসমূহের ধ্বনিতাত্ত্বিক গঠন, রূপমূলগুলি সংযোজনের সময় ধ্বনিসমূহের সংযোজন ও পরিবর্তন, ইত্যাদি আলোচনা করা হয়।

    একই রূপমূলের বিভিন্ন রূপের ধ্বনিমূলগত পার্থক্য আলোচনা করা, একই রূপমূলের বিভিন্ন রূপের উপস্থিতিস্থল (distribution) নির্ণয় করা, রূপধ্বনিতত্ত্বের নিরিখে ভাষার কাঠামোর বর্ণনা দেওয়া এই তত্ত্বের কাজ।

    এখানে ইংরেজি “capacious” বনাম “capacity” শব্দজুড়ির উদাহরণটি লক্ষনীয়। “capacious” শব্দে প্রথম “a” বর্ণটির উচ্চারণ “এই” ([eI])-এর মত, কিন্তু “capacity” শব্দে এটি “আ”([a])-এর মত শোনায়। এই ধ্বনি পরিবর্তনটি লাতিন থেকে আগত কিছু শব্দের রূপধ্বনিতত্ত্ব গবেষণা করে নিয়মের মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব। এ ধরনের আলোচনাগুলিই রূপধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।[১]

  • ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাস

    প্রাচীন ও মধ্যযুগে পাশ্চাত্যে ভাষা গবেষণার বিকাশ

    পাশ্চাত্যে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর গ্রিক দার্শনিকেরা প্রথম ভাষার তত্ত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হন। ভাষার উৎস ও গ্রিক ভাষার ব্যাকরণগত কাঠামো ছিল তাদের মূল বিতর্কের বিষয়। প্লেটোঅ্যারিস্টটল ভাষার অধ্যয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্লেটো গ্রিক শব্দসমূহের ব্যুৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করেন এবং ধারণা করা হয় পাশ্চাত্যে তিনিই প্রথম বিশেষ্য ও ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে দিয়োনিসিয়ুস থ্রাক্স প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রিক ব্যাকরণ রচনা করেন। এটি পাশ্চাত্যে ঐতিহ্যবাহী ব্যাকরণের ধারা শুরু করে। রোমান ব্যাকরণবিদ আইলিয়ুস দোনাতুস এবং প্রিস্কিয়ান খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকে দিওনিসিয়ুস থ্রাক্সের গ্রিক ব্যাকরণের পদ্ধতিগুলি লাতিন ভাষার উপর প্রয়োগ করেন। লাতিন ও গ্রিক উভয়েই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং এদের মধ্যে গঠনগত সাদৃশ্য ছিল; ফলে গ্রিক ব্যাকরণের অনুসরণে লাতিন ব্যাকরণ লেখা সম্ভব হয়েছিল।

    মধ্যযুগে ও রেনেসাঁসের সময় ইউরোপে প্রচলিত বেশির ভাগ ভাষার ব্যাকরণবিদেরা গ্রিক ও লাতিন ব্যাকরণকে আদর্শ ও “শুদ্ধ” ব্যাকরণ গণ্য করে তাদের নিজ নিজ ভাষার জন্য বিধানমূলক ব্যাকরণ রচনা করেন। রনেসাঁসের পরে ১৫শ শতকে ইউরোপীয়রা নতুন নতুন সমুদ্রপথ আবিষ্কার করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসা ও উপনিবেশের তাগিদে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা বিশ্বের অন্যান্য অনেক ভাষার সংস্পর্শে আসে, যেগুলির গঠন ছিল ইউরোপীয় ভাষাগুলি অপেক্ষা ভিন্ন। এগুলির সাথে লাতিন ও গ্রিক ভাষার কোন সম্পর্কই ছিল না। এ সময় ইউরোপীয় ভাষাপণ্ডিতেরা বিশ্বের ভাষাসমূহের মধ্যে বিদ্যমান সাধারণ বা বিশ্বজনীন মূলনীতিগুলির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরই ভিত্তিতে ১৭শ শতকে রচিত হয় অনেকগুলি “সাধারণ ব্যাকরণ”, যাদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাতটি হল ১৬৬০ সালে অঁতোয়ান আর্নো এবং ক্লোদ লঁসলো নামের দুই ফরাসি ব্যাকরণবিদ কর্তৃক রচিত Grammaire générale et raisonnée contenant les fondemens de l’art de parler, expliqués d’une manière claire et naturelle

    পাশ্চাত্যের বাইরে ভাষা গবেষণার ধারা

    পাশ্চাত্যের বাইরে ভারতীয় উপমহাদেশে ভাষাবিষয়ক গবেষণার একটি স্বতন্ত্র ধারা অতি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণবিদেরা উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যে পার্থক্য করেন, এবং গ্রিক ব্যাকরণবিদদের মত বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ ছাড়াও অনুসর্গ ও অব্যয় নামের দুটি পদ আবিষ্কার করেন। ভারতীয় ব্যাকরণবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন পাণিনি (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী)। তবে তার বেশ কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই ভারতে ব্যাকরণচর্চা শুরু হয়েছিল। পাণিনি-পূর্ব ব্যাকরণবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন যাস্ক (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী)। যাস্ক তার ব্যাকরণে বিশেষ্য, ক্রিয়া, উপসর্গ ও নিপাতের (অব্যয়) উল্লেখ করেছিলেন। তবে পাণিনির ব্যাকরণেই তার পূর্ববর্তী সমস্ত ভাষাতাত্ত্বিক চিন্তাধারা পূর্ণতা পায় এবং এটি ভবিষ্যতের সমস্ত ভারতীয় ব্যাকরণকে প্রভাবিত করে। তার ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে কমপক্ষে ১২টি ভিন্ন ব্যাকরণ-তত্ত্বের ধারা ও হাজার খানেক ব্যাকরণ রচিত হয়। ভারতীয় ভাষা গবেষণার কাজ ধ্বনিতাত্ত্বিক ও শব্দের অন্তর্সংগঠন – উভয় দিক থেকেই পাশ্চাত্যের ব্যাকরণের চেয়ে উন্নত বলে গণ্য করা হয়। পাণিনীয় সংস্কৃত ব্যাকরণ সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে আজও পৃথিবীর ইতিহাসের আর কোন ভাষার ব্যাকরণে এরকম পুঙ্খানুপুঙ্খতা, অভ্যন্তরীণ সঙ্গতি ও ধারণার সাশ্রয় পরিলক্ষিত হয়নি। ব্লুমফিল্ডের মতে পাণিনির অষ্ট্যাধ্যায়ী “one of the greatest monuments of human intelligence” (দ্রষ্টব্য Language, ১৯৩৩)। এই ব্যাকরণের মূল অংশে প্রায় চার হাজার সূত্র প্রদান করা হয়েছে। কেবল ১৮শ শতকের শেষার্ধে এসেই পাশ্চাত্যের ভাষাতাত্ত্বিকেরা ভারতীয় ব্যাকরণের এই ধারার সাথে প্রথম পরিচয় লাভ করেন।

    আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জন্ম

    অনেকেই ১৭৮৬ সালকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জন্মবছর হিসেবে গণ্য করেন। ঐ বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি তারিখে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ স্যার উইলিয়াম জোন্স কলকাতার রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির ৩য় বার্ষিক সভায় একটি গবেষণাপত্র পাঠ করেন, যাতে তিনি উল্লেখ করেন যে সংস্কৃত, গ্রিক, লাতিন, কেল্টীয়জার্মানীয় ভাষাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রকমের গাঠনিক সাদৃশ্য রয়েছে এবং প্রস্তাব করেন যে এগুলো সবই একই ভাষা থেকে উদ্ভূত। জোন্স বলেন, “The Sanskrit language … is of a wonderful structure; more perfect than the Greek, more copious than the Latin, and more exquisitely refined than either, yet bearing to both of them a stronger affinity, both in the roots of verbs and in the forms of grammar, than could possibly have been produced by accident; so strong indeed, that no philologer could examine them all three, without believing them to have sprung from some common source, which, perhaps, no longer exists: there is a similar reason, though not quite so forcible, for supposing that both the Gothic and the Celtic, though blended with a very different idiom, had the same origin with the Sanskrit; and the old Persian might be added to the same family…” [১]

    ১৯শ শতকের ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান

    জোন্সের এই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে সমগ্র ১৯শ শতক জুড়ে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা তুলনামূলক কালানুক্রমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বিভিন্ন ভাষার ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার ও ধ্বনিসম্ভারের মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করেন এবং ফলশ্রুতিতে আবিষ্কার করেন যে প্রকৃতপক্ষেই লাতিন, গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত, ইউরোপের বেশির ভাগ ভাষার মধ্যে বংশগত সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এগুলো সবই একটি আদি ভাষা প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে উদ্ভূত। ফ্রিডরিশ ফন শ্লেগেল, রাস্‌মুস রাস্ক, ফ্রান্ৎস বপ, ইয়াকপ গ্রিম, প্রমুখ ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞানী তাদের গবেষণা প্রকাশ করা শুরু করেন। ১৮০৬ সালে শ্লেগেল প্রথম জার্মানীয় ধ্বনি সরণের বিধিটি আবিষ্কার করেন। ১৮১৮ সালে রাস্ক এটি পুনরাবিষ্কার করেন এবং ১৮২২ সালে গ্রিম বিধিটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন; এটি গ্রিমের বিধি নামে পরিচিত। গ্রিমের বিধি ছিল তৎকালীন ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

    ১৯শ শতকের শেষ চতুর্থাংশে লাইপ্‌ৎসিশ-ভিত্তিক “নব্যব্যাকরণবিদেরা” (Jung-grammatiker; কার্ল ব্রুগ্‌মান, হের্মান অস্ট্‌হফ, হের্মান পাউল, প্রমুখ) দেখান যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদি ভাষাগুলোর উচ্চারণের সুশৃঙ্খল, ব্যতিক্রমহীন, নিয়মাবদ্ধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন ভাষাগুলোর উদ্ভব হয়েছে। ১৮৭৬ সালে কার্ল ভের্নার তার Eine Ausnahme der ersten Lautverschiebung আইনে আউসনামে ডের এর্স্টেন লাউটফারশিবুং “প্রথম ধ্বনি সরণের একটি ব্যতিক্রম” নামের নিবন্ধে গ্রিমের বিধির একটি সমস্যা সৃষ্টিকারী ব্যতিক্রমকে ধ্বনি-পরিবর্তনের একটি নতুন বিধি দ্বারা সমাধান করেন। ভের্নারের মতে গ্রিমের বিধি অনুসারে ধ্বনি সরণের পর দ্বিতীয়বার আরেকটি ধ্বনি সরণ ঘটে। এই দ্বিতীয় ধ্বনি সরণ বিধিটি ভের্নারের বিধি নামে পরিচিত। ভের্নারের এই আবিষ্কার নব্যব্যাকরণবিদদের জোর সমর্থন পায়।

    একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাবিজ্ঞানের আরেকটি ধারা স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। মার্কিন নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানীরা আমেরিকান ইন্ডিয়ান ভাষাসমূহের ওপর কাজ করতে শুরু করেন। এগুলোর অধিকাংশই ছিল বিলুপ্তির পথে, এবং এগুলোর কোন লিখিত দলিলও ছিল না। ফলে ঐতিহাসিক রচনাসমূহের তুলনা করে নয়, মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানীরা মাঠে গিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করে ভাষা বিশ্লেষণ করতেন।

    সোস্যুর এবং সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান

    ১৯শ শতকের শেষে সুইস ভাষাবিজ্ঞানী ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুর ভাষা গবেষণার গতিধারায় পরিবর্তন আনেন। সোস্যুর-ই প্রথম এককালিক ও কালানুক্রমিক ভাষাবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করেন। ফলে ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষার তুলনামূলক ঐতিহাসিক বিচারের পরিবর্তে যেকোন একটি ভাষার একটি নির্দিষ্ট কালের বিবরণের ব্যাপারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেন। সোস্যুর আরও প্রস্তাব করেন যে, ভাষা (langue, লংগ্‌) ও উক্তি (parole, পারোল) দুটি ভিন্ন সত্তা। তার মতে ভাষা হল অদৃশ্য অভ্যন্তরীণ কাঠামো, আর উক্তি হল তার বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। সোস্যুর মত দেন যে ভাষা বিভিন্ন আন্তঃসম্পর্কিত, পরস্পরনির্ভর উপাদানে তৈরি একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো বা সংগঠন। তার এই মতের ওপর ভিত্তি করে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটে।

    বিংশ শতকের প্রথমার্ধে মার্কিন সংগঠনবাদ

    ১৯২০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু বিচিত্র আদিবাসী আমেরিকান ভাষার উপর এককালিক ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পাদিত হয়। এসময়কার প্রধান ভাষাবিদ যেমন এডওয়ার্ড সাপির, ফ্রান্‌ৎস বোয়াস এবং আলফ্রেড ক্রোবার ছিলেন একাধারে নৃতত্ত্ববিদও। ১৯৩০-এর দশকে ভাষাবিজ্ঞানীরা বর্ণনামূলক কাজের পরিবর্তে ভাষাবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ভিত্তির উপর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সাপির ও লিওনার্ড ব্লুমফিল্ড ছিলেন এসময়কার ভাষাবৈজ্ঞানিক সংগঠনবাদের পুরোধা। তারা ভাষার গবেষণায় উপাত্তভিত্তিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর জোর দেন এবং বলেন যে ভাষাবিজ্ঞানের কাজ ভাষা কী ভাবে কাজ করে তা নৈর্ব্যক্তিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যবেক্ষণ করা; ভাষা কী রকম হওয়া উচিত, তা নিয়ে গবেষণা করা ভাষাবিজ্ঞানের কাজ নয়। ১৯৩৩ সালে ব্লুমফিল্ড প্রকাশ করেন তার বিখ্যাত Language গ্রন্থটি, যাতে মার্কিন সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের তৎকালীন চিন্তাধারাগুলি একটি প্রণালীবদ্ধ রূপ পায়। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশককে বলা হয় ভাষাবিজ্ঞানের “ব্লুমফিল্ডীয় যুগ”; এ সময় ব্লুমফিল্ড-প্রদত্ত কঠোর নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষণী পদ্ধতি অনুসরণ করে বহু ভাষার বিবরণমূলক ব্যাকরণ রচিত হয়। এ সময় ভাষাবিজ্ঞানীরা কোন ভাষার মাতৃভাষী ব্যক্তির বিভিন্ন উক্তি সংগ্রহ করতেন ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিভিন্ন নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে সেগুলোর ভেতরের ধ্বনিতাত্ত্বিক ও বাক্যতাত্ত্বিক সূত্র ও বিন্যাসগুলো আবিষ্কারের চেষ্টা করতেন।

    ব্লুমফিল্ডের পরবর্তী প্রজন্মের ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জেলিগ হ্যারিস, চার্লস হকেট, ইউজিন নিডা, বার্নার্ড ব্লখকেনেথ পাইক। তারা নব্য-ব্লুমফিল্ডীয় সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের একটি ধারা গড়ে তোলেন, যা মার্কিন সংগঠনবাদ নামে পরিচিত ছিল। মার্কিন সংগঠনবাদে ভাষার বিশ্লেষণে অর্থের কোন স্থান ছিল না। ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে জেলিগ হ্যারিস ভাষাবিষয়ক কিছু গবেষণাতে বিভিন্ন ধরনের বাক্যের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক সম্পর্ক দেখানোর জন্য “রূপান্তর” (transformation) ধারণাটির অবতারণা করেন।

    চম্‌স্কি ও রূপান্তরমূলক সঞ্জননী/সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ

    ১৯৫০-এর দশকেই কিছু কিছু ভাষাবিজ্ঞানী সংগঠনবাদের দুর্বলতা আবিষ্কার করেন। তারা বলেন সংগঠনবাদীরা কেবল ভাষার বাহ্যিক রূপ ও দৃশ্যমান উপাত্ত নিয়েই আগ্রহী এবং ভাষাবিজ্ঞানকে অহেতুক উপাত্ত-সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ক্ষুদ্র সীমায় আবদ্ধ করে ফেলেছেন। এর ফলে ভাষার অদৃশ্য অভ্যন্তরীণ সংগঠন ও বিভিন্ন ভাষার বিশ্বজনীন ধর্মগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী নোম চম্‌স্কি ছিলেন জেলিগ হ্যারিসের শিষ্য। চমস্কি সংগঠনবাদের বিরুদ্ধে লেখেন এবং ভাষা যে একটি মানসিক প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর সব ভাষাই যে কিছু সার্বজনীন বিন্যাস অনুসরণ করে, সে ব্যাপারে জোর দেন। চম্‌স্কির এই লেখার ফলে ভাষাবিজ্ঞানের গতি আরেকবার পরিবর্তিত হয়। চম্‌স্কি বিশ্বাস করেন যে কোন ব্যক্তির অচেতন, অব্যক্ত ভাষাবোধ এবং তার ভাষাপ্রয়োগ দুটি ভিন্ন বস্তু। তার মতে ভাষাবিজ্ঞানীর কাজ হল মানুষের ভাষাবোধ যেসব অন্তর্নিহিত মানসিক সূত্র দিয়ে গঠিত সেগুলো আবিষ্কার করা। এ প্রস্তাবের সমর্থনে ১৯৫৭ সালে Syntactic Structures নামের গ্রন্থে চম্‌স্কি উপস্থাপন করেন তার উদ্ভাবিত “রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ” নামের একটি ধারণা, যে ব্যাকরণের সূত্রগুলো দিয়ে কোন একটি ভাষার সমস্ত “বৈধ” বাক্যের গঠন ব্যাখ্যা করা সম্ভব। চমস্কি এতে হ্যারিসের “রূপান্তর” ধারণার সাথে গাণিতিক বিধিবদ্ধতার (mathematical formalism) সমন্বয় ঘটান। চম্‌স্কি আরও বলেন যে সব ভাষার মানুষই ভাষা বিষয়ক কিছু সার্বজনীন ধারণা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যাদের সমষ্টিগত নাম তিনি দেন “বিশ্বজনীন ব্যাকরণ“। এই ব্যাকরণের সীমা উদ্ঘাটন করাও ভাষাবিজ্ঞানীর অন্যতম কাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৭শ শতকে যুক্তিবাদীদের রচিত “সাধারণ” ব্যাকরণগুলির দিকে নির্দেশ করেন।

    উল্লেখ্য, চম্‌স্কীয় ধারায় “ব্যাকরণ” বলতে ভাষাবিষয়ক প্রথাগত কিছু আনুশাসনিক নিয়মের সমষ্টিকে বোঝানো হয় না, বরং মানবমনের বিমূর্ত ভাষাবোধ, যা মানুষকে কথা বলতে, বুঝতে কিংবা নতুন ভাষা শিখতে সাহায্য করে, সেটিকে নির্দেশকারী ও ব্যাখাকারী ভাষাবৈজ্ঞানিক সূত্রসমষ্টিকে বোঝায়।

    বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান মূলত চম্‌স্কি প্রস্তাবিত রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত বিভিন্ন ধরনের ব্যাকরণিক কাঠামোর গবেষণা। চম্‌স্কি বাক্যতত্ত্বকে ভাষাবিজ্ঞানের মূল ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ৫০ ও ৬০-এর দশকের প্রাথমিক প্রকাশের পর চম্‌স্কির নিজস্ব তত্ত্বের বিবর্তন ঘটেছে বেশ কয়েকবার: “মান তত্ত্ব” থেকে শুরু করে “সম্প্রসারিত মান তত্ত্ব”, “শাসন ও বন্ধন তত্ত্ব”, “নীতি ও পরামিতি”, এবং সর্বশেষ “ন্যূনতমবাদী প্রকল্প”। এছাড়া চম্‌স্কীয় তত্ত্বের অনুসরণে কিছু তত্ত্ব গড়ে উঠেছে, যেগুলি ভাষাবিজ্ঞানের লক্ষ্য-সংক্রান্ত চম্‌স্কীয় মতবাদ ও স্বতঃসিদ্ধগুলো অনেকাংশেই মেনে নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। এদের মধ্যে “কারক ব্যাকরণ”, “সাধারণীকৃত পদ সংগঠন ব্যাকরণ”, “সৃষ্টিশীল অর্থবিজ্ঞান”, “মস্তক-চালিত পদ সংগঠন ব্যাকরণ”, “আভিধানিক ফাংশনভিত্তিক ব্যাকরণ”, “সম্পর্কমূলক ব্যাকরণ” ও “অপটিমালিটি তত্ত্ব” অন্যতম।

    অন্যান্য ধারা

    চম্‌স্কীয় মূলধারার বাইরে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে শ্রেণীকরণবাদী একটি ধারা আছে, যে ধারার অনুসারী ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষাকে তাদের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করার চেষ্টা করেন। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী জোসেফ গ্রিনবার্গ ছিলেন এই ধারার অগ্রগামী প্রবক্তা। বর্তমানে এই ধারার ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে বার্নার্ড কমরি অন্যতম।

  • ভাষাসমূহের বর্ণানুক্রমিক তালিকা

    এ পর্যন্ত ৭,৩৩০টি মনুষ্য ভাষা লিপিবদ্ধ করেছে। এই নিবন্ধে প্রচলিত প্রধান মনুষ্য-ভাষাগুলির একটি বর্ণানুক্রমিক তালিকা দেয়া হল।

  • মিশরীয় চিত্রলিপি

    মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক বা মিশরীয় চিত্রলিপি (প্রাচীন গ্রিক: τὰ ἱερογλυφικά [γράμματα], ইংরেজি: Hieroglyphic) বা বহুবচনে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স হলো মিশরীয় লিপিবিশেষ। প্রাচীন মিশরে তিন ধরনের লিপি প্রচলিত ছিলো: হায়ারোগ্লিফিক (মিশরীয়), হায়রাটিক এবং ডেমোটিক। তিনটি লিপির নামই গ্রিকদের দেয়া। হায়ারোগ্লিফিক লিপির প্রতীককে বলা হয় “হায়ারোগ্লিফ”।[১]

    শব্দগত তাৎপর্য

    গ্রিক “হায়ারোগ্লিফ” শব্দের অর্থ ‘উৎকীর্ণ পবিত্র চিহ্ন’। গ্রিকরা যখন মিশর অধিকার করে তখন তাদের ধারণা হয় যে, যেহেতু পুরোহিতরা লিপিকরের দায়িত্ব পালন করেন, আর মন্দিরের গায়ে এই লিপি খোদাই করা রয়েছে,এই লিপি নিশ্চয়ই ধর্মীয়ভাবে কোনো পবিত্র লিপি।[১] গ্রিক ‘হায়ারোগ্লুফিকোস’ থেকে পরবর্তি ল্যাটিন ‘হায়ারোগ্লিফিকাস’ হয়ে ফরাসি ‘হায়রোগ্লিফিক’ থেকে ইংরেজি ‘হায়ারোগ্লিফিক’ শব্দটি এসেছে। গ্রিক উপসর্গ ‘হায়ারোস’ অর্থ ‘পবিত্র’, আর ‘গ্লুফি’ অর্থ ‘খোদাই করা লেখা’।[২]

    হায়ারোগ্লিফিকের বৈশিষ্ট্য

    উদ্ভবের কাল থেকে বিলুপ্তির কাল পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফিক ছিলো শব্দলিপিঅক্ষরলিপিনির্ভর। অক্ষরলিপি হিসেবে ছিলো প্রায় ২৪টি একক ব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু ঊহ্য কোনো এক স্বরধ্বনি। যেহেতু স্বরধ্বনির আলাদা অস্তিত্ব ছিলো না, তাই তার চিহ্নও ছিলো ঊহ্য। একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যেকোনো স্বরধ্বনিসহযোগে উচ্চারিত হতে পারতো, যেমন: ল্যাটিন ব্যঞ্জনধ্বনি m দিয়ে উদাহরণ দিলে ma, me, mi, mu ইত্যাদি। এছাড়া ছিলো প্রায় ৮০টির মতো দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থানে ঊহ্য থাকা যেকোনো স্বরধ্বনি। যেমন দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি tm দিয়ে উদাহরণ দিলে তার সাথে স্বরধ্বনি থাকতে পারে tama, tuma, tame, tima ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে। দ্বিব্যঞ্জনধ্বনির জন্য ছিলো একটিমাত্র চিহ্ন।[১]

    সাধারণভাবে প্রতিটি মিশরীয় শব্দের শুরু ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে। কিছু কিছু শব্দের শুরুতে অবশ্য স্বরধ্বনি রযেছে, যেমন: Amon, Osiris ইত্যাদি। কিছু ক্রিয়াপদের শব্দের শুরুতেও থাকে স্বরধ্বনি। তবে এগুলো থাকে ব্যঞ্জনধ্বনির হ্রস্ব উচ্চারণের ক্ষেত্রে এবং তাও ঊহ্য অবস্থায়। এভাবে হায়ারোগ্লিফিকের মাধ্যমে স্বরধ্বনি ঊহ্য রেখে শুধু ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে প্রকাশিত হতো একেকটি শব্দ। শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসারে মানুষ বুঝে নিতো কোথায় কোন স্বরধ্বনি বসিয়ে নিয়ে কোন মানেটা বুঝতে হবে। যেমন নেফারতিতির নাম লেখার সময় হায়ারোগ্লিফিকে লেখা হতো nfrtt -শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসারে মিশরীয়রা স্বরধ্বনি বসিয়ে নিয়ে বুঝতো Nefertiti।[১]

    কিছু কিছু ত্রিব্যঞ্জনধ্বনিবিশিষ্ট চিহ্নও ছিলো। এসব চিহ্ন ব্যবহার করা হতো বড় বড় শব্দের বেলায়। মিশরীয় লিপিকররাই মূলত লিখনপদ্ধতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী সাজাতেন অক্ষর, তবে ঐতিহ্যের ধারা তারা ঠিকই মানতেন। লিপিকররা ঠিক করতো লিপি কোথায় লেখা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে, লিপিমালা ডান না বাম, কোনদিক থেকে শুরু হবে। অর্থাৎ হায়ারোগ্লিফিক কখনও ডান থেকে বামে, কখনও বাম থেকে ডানে যেতো। কখনওবা উপর থেকে নিচে। আরেকটি পদ্ধতি ছিলো, যাকে বলা হয় ‘হলাবর্ত পদ্ধতি’, অনেকটা কৃষক যেমন করে জমিতে লাঙল দেন, তেমন করে ডান থেকে বামে, আবার বাম থেকে ডানে এমনিভাবে। তবে বোঝার পদ্ধতি হলো: মানুষ অথবা প্রাণীবাচক চিত্রের মুখ যেদিকে আছে অথবা হাত পা যেদিকে মুখ করে আছে, সেই দিকটাই হলো লিপি পঠনের শুরু আর তা এখন যেদিকেই যাক।[১]

    হায়ারোগ্লিফিক লিপি চিত্রে ভরপুর। অবস্থান বুঝে এসব চিত্রে আবার অলঙ্করণও থাকতো। চিত্রগুলো হতো বাস্তবধর্মী। এছাড়া আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিলো হায়ারোগ্লিফিকের: নির্ধারক চিহ্নের ব্যবহার। এই চিহ্নগুলোও বাস্তবধর্মী। প্রতিটি ভাষায় সমস্বর অনেক শব্দ থাকে। বাংলায় যেমন আছে বাণ, বান; সমস্বর শব্দ হলেও অর্থ পৃথক। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় সমস্বর শব্দের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন মিশরীয় ভাষায় শুধু SS চিহ্নে লিখিত শব্দটির অর্থ “লিপিকর” এবং “দলিল” দুটোই। এখন কোথায় লিপিকর আর কোথায় দলিল বোঝাবে, তা ঠিক করে নির্ধারক চিহ্ন। SS-এর সাথে যখন একজন ‘মানুষের ছবি’ থাকে তখন তা বোঝায় ‘লিপিকর’, আর যখন SS-এর সাথে থাকে ‘লেখার ফলক’ বা ‘লেখার পাতা’, তখন তা বোঝায় ‘দলিল’।[১]

    মিশরীয় লিখনপদ্ধতি চিত্রলিপি ও ভাবলিপির স্তর পেরিয়ে শব্দ ও অক্ষরলিপিতে পরিণত হলেও সংখ্যাবাচক চিহ্নের বেলায় তা ভাবলিপির স্তরেই থেকে যায়। এরকম অবস্থা এখনো যেমন রোমক সংখ্যাচিহ্নে দেখা যায়: I, II, III, IV, V ইত্যাদি। সংখ্যা খুব বড় হয়ে গেলে তা বোঝাতে জ্যামিতিক ধরনের চিহ্ন ব্যবহার করা হতো।[১]

    ইতিহাস

    মিশরীয় ফারাও মেনেসের রাজত্বকালে হায়ারোগ্লিফিক লিপির সৃষ্টি। চিত্রলিপি না হলেও মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক চিত্ররূপময়। এই লিপিতে সর্বশেষ ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিতে অবস্থিত দেবী আইসিসের মন্দিরের গায়ে লেখা হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর ষষ্ঠ শতকে আইসিসের মন্দিরে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে মিশরীয় লিপির দ্বীপশিখা নিভে যায়।[১]

    পাঠোদ্ধার

    গ্রিকরা যখন মিশর দখল করে নেয়, তখন তাদের বিশ্বাস ছিলো হায়ারোগ্লিফিক পবিত্র লিপি। আর এই ‘পবিত্রতা’ কথাটা যতদিন কাজ করছিলো গবেষকদের মাথায়, ততদিন কোনো না কোনোভাবে ভুল পাঠোদ্ধার হচ্ছিলো এই লিপির। এতে আরো রহস্যমন্ডিত হচ্ছিলো মিশরীয় ইতিহাস। গ্রিক ঐতিহাসিক প্লুতার্ক (খ্রিষ্টপূর্ব ১২০খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬) মিশরীয় লিপিকে ধর্মীয় পবিত্র বিষয়াদি লেখার লিপি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যদিও প্রায় তার সমসাময়িক ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লিখিত বিষয়াদি ধর্মীয় ব্যাপার নয় এবং মূলত এর মধ্যে ছোটবড় যুদ্ধ, অবরোধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে বলে মনে করতেন। সেকালের আরেক ঐতিহাসিক হোরোপোল্লো তার “হায়ারোগ্লিফিক” বইতে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কে প্রলুব্ধকর, অথচ ভ্রান্ত সমাধান তৈরি করে যান। সে সময়কার ইউরোপীয় গবেষকগণ অনেকটা অন্ধের মতোই হোরোপোল্লো’র ঐতিহাসিক বিবরণ আর হায়ারোগ্লিফিকের ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করেছিলেন, কেননা হোরোপোল্লো জাতিতে মিশরীয় ছিলেন। তিনি তার বইতে অনেকগুলো হায়ারোগ্লিফের গ্রিক অনুবাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ছিলো আসলে ভুল, যা আঠারশ বছর পর ধরা পড়ে সত্যিকার পাঠোদ্ধারের পর। তার এই গবেষণা-দুর্ঘটের মূল কারণ ছিলো তিনি তথ্যের সাথে বিপুল কল্পনা মিশিয়ে ছিলেন।[১]

    তারপর এই লিপির পাঠোদ্ধারে এগিয়ে আসেন গণিত ও প্রাচ্যভাষার অধ্যাপক আথানিয়াস কির্শার। তিনি কপ্টিক ভাষাগ্রিক ভাষা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে, কপ্টিক ভাষা আসলে হায়ারোগ্লিফিকেরই বিবর্তিত রূপ। তাই তিনি কপ্টিক ভাষার মাধ্যমে হায়ারোগ্লিফিকের অনুবাদ করতে গেলেন। কিন্তু তিনিও বিশ্বাস করতেন এই ভাষা পবিত্র, আর তাতেই তিনি তার অনুবাদকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি শব্দলিপিকে ভাবলিপি ধরে নিয়ে ধর্মসংশ্লিষ্ট অনুবাদ দাঁড় করালেন একটি স্মৃতিস্তম্ভের গায়ের সাতটি হায়ারোগ্লিফিক চিহ্নকে।[১]

    হায়ারোগ্লিফিকসহ অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আগের ভুল ধারণাগুলো ভাঙার শুরু অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। তখনই অনেক গবেষক হায়ারোগ্লিফিককে শব্দলিপি বলে সন্দেহ করতে থাকলেন। তখন গবেষকদের হাতে এলো উপবৃত্তাকার এক প্রকারের ফ্রেম, যার ফরাসি নাম কার্তুশ। তারা ধারণা করলেন এগুলোতে হয়তো ফারাও অথবা তাদের পত্নিদের নাম লেখা থাকতে পারে। যোহান গেয়র্গ ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তার একটি বইয়ে এরকম অনেকগুলো কার্তুশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে জানান, সদৃশ কার্তুশগুলো একই ব্যক্তির নাম আর বৈসদৃশ কার্তুশগুলো ভিন্ন ভিন্ন নাম।[১]

    এরপর ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করেন এবং ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার সৈন্যরা বিখ্যাত রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট উদ্ধার করেন। রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট আসলে একটি শিলালিপি। এতে একই সাথে রয়েছে তিনটি স্তর ও তিন স্তরে তিন লিপি: প্রথম স্তরে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি, দ্বিতীয় স্তরে হায়রাটিক লিপি, আর তৃতীয় স্তরে গ্রিক লিপি। কিন্তু লেখার ভাষা ছিলো দুটি: মিশরীয় আর গ্রিক ভাষাটলেমি রাজবংশের রাজা পঞ্চম টলেমি এপিফানেস ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এক ফরমান জারি করেন, যা মিশরীয় পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে রোসেটা কৃষ্ণশিলাপটে উৎকীর্ণ হয়। এই দ্বিভাষিক ত্রিলিপি অঙ্কিত শিলালিপিটিই খুলে দিয়েছিলো মিশরীয় লিপি ও ভাষা পঠনের দুয়ার।[১]

    পরবর্তিতে হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করেন ফরাসি জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিয়ঁ এবং ব্রিটিশ পদার্থবিদ টমাস ইয়ং।[১]

    বিবর্তন

    হায়ারোগ্লিফিক লিপি সময়ে সময়ে বিবর্তনের ধারা পার করেছে। বিবর্তিত হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে তা হায়রাটিক লিপির রূপ পরিগ্রহ করে, আর পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে তা ডেমোটিক লিপির রূপ পরিগ্রহ করে।

    হায়রাটিক লিপি

    মূল নিবন্ধ: হায়রাটিক লিপি

    হায়ারোগ্লিফিক লিপি বেশ কঠিন ছিলো আর এই উপলব্ধিতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দের দিকে হায়ারোগ্লিফিক বিবর্তিত হয়ে জন্ম হয় হায়রাটিক লিপির[১]

    ডেমোটিক লিপি

    মূল নিবন্ধ: ডেমোটিক লিপি

    খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দের দিকে প্রাচীন মিশরে ডেমোটিক লিপির উদ্ভব। এই লিপি হলো হায়ারোগ্লিফিক লিপির বিবর্তনের সর্বশেষ রূপ। চিত্রনির্ভর হায়ারোগ্লিফিক থেকে এই লিপি ধীরে ধীরে টানা টানা হাতের লেখার মতো রূপ ধারণ করে। , এমনকি হায়রাটিক লিপির চেয়েও দ্রুত লেখা যেতো এই লিপি দিয়ে।[১]

  • মান্য ভাষা

    মান্য ভাষা বা প্রমিত ভাষা (ইংরেজি: Standard Language) বলতে সেই ভাষা বৈচিত্রকে বোঝানো হয়ে থাকে যা, সমস্ত ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে একই ভাষায় ভাব বিনিময়ের ব্যবহারের জন্য একটি অভিন্ন ভাষা মান্য বা প্রমিত রূপে ব্যবহার করা হয়।

    মান্যকরণ

    কোনো ভাষার সর্বজনীন স্বীকৃত রূপ হলো সেই ভাষার মান্য বা প্রমিত রূপ। একটি নির্দিষ্ট গদ্যরীতি, বানানরীতি এবং ব্যাকরণের ভিত্তিতে একটি ভাষার মান্যকরণ করা হয়। ইংরেজি, ফরাসি, চাইনিজ, হিন্দুস্তানী ভাষার মতো বহুকেন্দ্রীক ভাষাসমূহের একাধিক মান্যরূপও দেখা যায়।

    উদাহরণ

    আরও দেখুন

  • মাতৃভাষা অর্জন

    মাতৃভাষা অর্জন তথা ভাষা অর্জন (ইংরেজি: Language acquisition বা First language acquisition) বলতে শিশুরা যে প্রক্রিয়াসমূহের মাধ্যমে ভাষা অর্জন করে, তাদেরকে বোঝায়।

    অনেক ভাষাবিজ্ঞানী, বিশেষত নোম চম্‌স্কি, যুক্তি দিয়েছেন যে মানবশিশুরা মস্তিষ্কে ভাষা অর্জনের সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সব মানবশিশুর মনে বা মস্তিষ্কে একটি বিশ্বজনীন ব্যাকরণ (Universal Grammar) বা ভাষা-অর্জনের কাঠামো জন্মের সময় থেকেই বিদ্যমান থাকে। শিশুটি যে পরিবেশ জন্মায় ও বড় হয়ে ওঠে, সেই পরিবেশ ও তার সাথে শিশুর মিথস্ক্রিয়া (interaction) শিশুটির ভাষা অর্জনের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

    যখন শিশুরা কোনও ভাষা অর্জন করে, তারা ভাষাটির ব্যাকরণ আয়ত্ত করে। এখানে ব্যাকরণ বলতে ভাষাটির ধ্বনিবিন্যাস, শব্দগঠন, বাক্য ও অর্থ সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মগুলিকে বোঝায়। যেকোন ভাষার ব্যাকরণ বা নিয়মসমষ্টি একটি সমৃদ্ধ ও জটিল ব্যবস্থা। কিন্তু শিশুরা পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই এই জটিল, প্রায়-দুর্বোধ্য ব্যাকরণ আয়ত্ত করে ফেলে। এছাড়াও তারা ভাষাটির প্রায়োগিক (pragmatic) সূত্রগুলি ও ভাষাটির শব্দভাণ্ডার (vocabulary) আয়ত্ত করে। শিশুদেরকে আলাদা করে মুখের ভাষা শেখানো লাগে না। তারা তাদের চারপাশের মানুষের ব্যবহার করা ভাষা থেকে নিয়ম, সূত্র এবং শব্দভাণ্ডারের সিংহভাগ বের করে নিতে পারে।

    ভাষা অর্জনের কৌশলসমূহ

    শিশুরা কী করে এত সহজে ও দ্রুত ভাষার জটিল সব সূত্র আয়ত্ত করে ফেলে তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ভাষা আয়ত্ত করার প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু শিখনকৌশল বা শিখনপদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনও কোনও ভাষাগবেষক বলেছেন যে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের ভাষা শুনে অনুকরণ (imitation) করে ভাষা আয়ত্ত করে। কিন্তু শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাক্য অনুকরণ করতে পারে না, বরং আংশিকভাবে অনুকরণ করে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে (spontaneous) ভুলত্রুটিসহ বাক্য সৃষ্টি করে। আবার কিছু কিছু শিশু কম বয়সে স্নায়ুগত বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে কথা বলতে সক্ষম না হলেও ভাষা বুঝতে পারে এবং পরবর্তীতে এই বাকবৈকল্য (speech disorder) কাটিয়ে উঠলে সাথে সাথে কথা বলতে শুরু করে। সেকারণে অনুকরণ শিশুর ভাষা অর্জনের মূল কৌশল হতে পারে না।

    অন্য কিছু গবেষক বলেছেন যে প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের ভাষার ব্যাকরণের ভুল শুধরে দিলে বা সঠিকভাবে ভাষা বলার জন্য বাহবা দিলে ধীরে ধীরে শিশুমনে নিয়মগুলির দৃঢ়ীভবন (reinforcement) ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত শিশুরা ভাষা অর্জন করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে বাবা-মা বা বড়দের এরকম ভুল শুধরে দেওয়ার হার খুবই বিরল। বরং বাবা-মায়েরা সাধারণত খুব খারাপ উচ্চারণের ভুল কিংবা বাক্যের ভেতরের তথ্যের সত্যতা-সংক্রান্ত ভুলগুলিই বেশি শুধরে দেন, ব্যাকরণের ভুলগুলি ধরেন না।

    কারও কারও মতে শিশুরা সাদৃশ্য (analogy) পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন নতুন বাক্য গঠন করে, অর্থাৎ একটি বাক্য শুনে সেই একই আদলের অন্য অনেক বাক্য গঠন করে। কিন্তু দেখা গেছে শিশুরা নতুন নতুন প্রশ্নবোধক বাক্য, জটিল বাক্য, ইত্যাদি জটিল কাঠামোবিশিষ্ট বাক্য সৃষ্টি করার সময় তেমন কোনও ভুল করেনা, যদিও তারা এ ধরনের বাক্য আগে থেকে খুব বেশি শোনেনি। বরং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমন সব বাক্য তৈরি করে, যেগুলি জটিল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে।

    প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিগুলির কোনটিই তাই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনা কীভাবে শিশুরা ভাষার সূত্রগুলি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিশীলভাবে নতুন নতুন বাক্য গঠন করতে পারে, কিংবা শিশুরা কেন এক ধরনের ভুল করে কিন্তু অন্য জটিল ধরনের ভুল করে না। শিশুর সাথে মায়ের বলা সহজ ভাষা (motherese) পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশুদের মনে ব্যাকরণের বিকাশ সুসংগঠিত প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্তের (well-formed linguistic input) উপর নির্ভর করে না।

    শিশুদের ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজে ও দ্রুত ঘটে এবং সমস্ত ভাষার সমস্ত শিশুর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার ধাপগুলি একই রকম হয়। এ সব কিছুই ঘটে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্ত বা উদ্দীপকের দারিদ্র্যকে (poverty of stimulus) অগ্রাহ্য করে। শিশু সবসময় তার চারপাশে শুদ্ধভাবে নির্মিত বাক্য শুনতেও পায় না, বরং অর্ধসমাপ্ত বাক্য, বাক্যের খন্ডাংশ, হঠাৎ বিরতি, অযাচিত ভুলত্রুটিযুক্ত বাক্য – এগুলি সবই তার মনে প্রবেশ করে। শিশুদেরকে কেউ সার্বক্ষণিকভাবে বুঝিয়ে বা দেখিয়েো দেয় না যে কোন্‌ বাক্যগুলি শুদ্ধ আর কোন্গু‌লি অশুদ্ধ। অর্থাৎ শিশুর মনে যে ভাষিক উপাত্তগুলি প্রবেশ করে, সেগুলি দরিদ্র, নিম্নমানের (impoverished)। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিশু শেষ পর্যন্ত শুদ্ধ, ভুলত্রুটিহীন পূর্ণ বাক্য বলতে সক্ষম হয়। এ কারণে ধারণা করা হয় যে ভাষা আয়ত্ত করার মানসিক প্রবৃত্তি বা ক্ষমতাটি (mental faculty) শিশুর জন্ম থেকেই থাকে এবং শিশু এই জটিল প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করার আগেই একটি “বিশ্বজনীন ব্যাকরণ” (Universal Grammar)) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কোন নির্দিষ্ট ভাষা যেমন বাংলা বা ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণের মত নয়, বরং এটি এমন কিছু মূলনীতির (principles) সমষ্টি যেগুলি সমস্ত মনুষ্য ভাষা মেনে চলে। ভাষা আয়ত্তকরণ তাই একটি সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া। শিশুরা তাদের মনে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মানসিক ব্যাকরণ (mental grammar) সৃষ্টি করে এবং এ কাজে বিশ্বজনীন ব্যাকরণ তাদেরকে নির্দেশনা দেয়।

    ভাষা অর্জনের ধাপসমূহ

    শিশুর মনে ভাষার বিকাশ ধাপে ধাপে ঘটে। এই ধাপগুলি বিশ্বজনীন। জীবনের প্রথম বছরে শিশুরা তাদের ভাষার ধ্বনিগুলি আয়ত্ত করে। তারে প্রথমে অনেক ধ্বনি শুনতে পায় বলে উপলব্ধি করে কিংবা উচ্চারণ করে, যেগুলি তাদের মনে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্তের মধ্যে নেই। ধীরে ধীরে তাদের ভাষিক উৎপাদন (speech production) ও উপলব্ধিগুলি (speech perception) ভাষিক পরিবেশের সাথে সুক্ষ্মভাবে সঙ্গতি রাখা শুরু করে। এই ধাপের শেষ পর্যায়ে শিশু যে আধো-আধো কথা (babble) বলা শুরু করে, সেখানে তার প্রবিষ্ট ভাষার সমস্ত ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি বিদ্যমান থাকে। বধির শিশুরা যখন জন্ম থেকেই প্রতীকী ভাষার সংস্পর্শে আসে, তারাও এই পর্যায়ে হাত দিয়ে আধো-আধো প্রতীকী ভাষায় (sign language) যোগাযোগ করতে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে আধো-আধো বুলি ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়ার একটি বিশ্বজনীন প্রাথমিক ধাপ যা শিশুমনে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্তের উপর নির্ভর করে।

    জীবনের প্রথম বছরের শেষভাগে শিশু তার প্রথম পূর্ণ শব্দগুলি বলতে শুরু করে। দ্বিতীয় বছরে শিশু আরও অনেক শব্দ আয়ত্ত করে এবং ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ব্যবস্থার সিংহভাগ আয়ত্ত করে। শিশুদের সবচেয়ে শুরুর দিককার কথাগুলি জটিল অর্থবিশিষ্ট অথচ এক-শব্দের বাক্যসমূহ দিয়ে গঠিত। এই ধাপের নাম পূর্ণব্যঞ্জক ধাপ (Holophrastic stage)। এর কিছু মাস পরে শিশু দুই বা তার বেশি শব্দ যোগ করতে শুরু করে। এই প্রাথমিক বাক্যগুলি কোন যাদৃচ্ছিক শব্দসমষ্টি নয়। শব্দগুলির সুনির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে এবং এগুলি বাক্যিক ও আর্থিক সঙ্গতি রক্ষা করে।

    এর পরে টেলিগ্রাফ ধাপে (Telegraph stage) এসে শিশু দীর্ঘতর বাক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু এগুলিতে প্রায়শই ব্যাকরণিকভাবে প্রয়োজনীয় শব্দ বা শব্দাংশ অনুপস্থিত থাকে। শিশুর প্রারম্ভিক ব্যাকরণে প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যাকরণের অনেক সূত্র অনুপস্থিত থাকে, তবে গুণগতভাবে দুটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ ধাপে শিশুদের উচ্চারিত বাক্যে পদক্রম (word order) সঠিক থাকে এবং কারক (case) ও অন্যান্য সঙ্গতিমূলক সূত্রগুলির ব্যত্যয় ঘটে না, যাতে বোঝায় যে তাদের ভাষার কাঠামো বা সংগঠন নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান আছে।

    শিশুরা বিভিন্ন ধরনের ভুল করে। যেমন, শিশুরা শব্দগঠনপ্রক্রিয়ার সূত্রগুলি (morphological rules) অতিসাধারণভাবে সর্বত্র প্রয়োগ করে থাকে। এতে বোঝা যায় যে তারা সূত্রগুলি আয়ত্ত করার প্রক্রিয়াতে আছে। এছাড়াও শিশুদেরকে তাদের ভাষার জন্য বিশেষ কিছু সূত্র বা নিয়ম শিখতে হয়, এবং এগুলি শিখতে গিয়েও ভুল হতে পারে। কিন্তু অন্য কিছু ধরনের ভুল আছে, যেগুলি শিশুরা কখনোই করে না। যেমন বিশ্বজনীর ব্যাকরণের মূলনীতিগুলি লংঘন করে এমন কোন ভুল শিশুরা করে না।

    যেসব বধির শিশু জন্ম থেকে প্রতীকী ভাষার সাথে পরিচিত, অন্যান্য শ্রবণক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের মতো তাদের প্রতীকী ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়াটিও একই ধাপগুলির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়।

    ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • ভাষার উৎস

    ভাষার উৎস (ইংরেজি: Origin of language), যার ভাষাবৈজ্ঞানিক ইংরেজি নাম গ্লটোগনি বা গ্লসোগনি (Glottogony, Glossogeny), নিয়ে বহু শতাব্দী ধরে লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু ভাষার পরিবর্তনশীলতার জন্য প্রাচীন ভাষাগুলির উৎসের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য প্রায় নেই বললেই চলে। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে আকার-ইঙ্গিতের নির্বাক অথবা প্রাক-ভাষা থেকে অন্তত একবার মৌখিক ভাষার জন্ম হয়। কিন্তু এর বেশি জানা নেই। বর্তমান মানব সভ্যতার কোথাও এখন সেই আদিম প্রাক ভাষার অস্তিত্ব নেই[১]। বিজ্ঞানীরা তাই বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ পদ্ধতি (indirect method) প্রয়োগ করে ভাষার উৎস খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

    ভাষার উৎপত্তি

    ৮০ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকার কিছু জঙ্গলে বাস করত এপ-জাতীয় কিছু প্রাণী। এই এপ-জাতীয় প্রাণীগুলির মধ্যে শিম্পাঞ্জি ও মানুষদের পূর্বপুরুষও ছিল। এরা সম্ভবত ছিল বর্তমান গরিলাদের মত। এরা মূলত বৃক্ষে বসবাস করত, মাটিতে চার পায়ে হাঁটত এবং বিশ-ত্রিশটার মত ভিন্ন ডাকের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করত। আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষ প্রাণীটি শিম্পাঞ্জিদের পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এই প্রাণীগুলির ভাষা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ উন্নত; কিন্তু মানুষদের এই আদি পূর্বপুরুষদের ভাষার প্রকৃতি সম্পর্কে খুব কমই জানতে পারা গেছে। আধুনিক মানুষ তথা Homo Sapiens-এর ভাষার উৎস নিয়ে বিংশ শতাব্দীর বেশির ভাগ সময় ধরেই তেমন গবেষণা হয়নি। কেবল অতি সম্প্রতি এসেই এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞানী, জিনবিজ্ঞানী, প্রাইমেটবিজ্ঞানী এবং স্নায়ুজীববিজ্ঞানীদের আহরিত তথ্য কিছু কিছু ভাষাবিজ্ঞানী খতিয়ে দেখছেন।

    বিশ্বের অনেক ধর্মেই ভাষার উৎস সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইহুদী-খ্রিস্টান-ইসলাম ধর্মের ধারায় বলা হয়, ঈশ্বর প্রথম মানুষ আদমকে বিশ্বের যাবতীয় পশু-পাখীর উপর কর্তৃত্ব দেন, এবং আদম এই সব পশু-পাখির একটি করে নাম দেন; এটি ছিল আদমের ভাষাজ্ঞানের প্রথম বড় প্রয়োগ। বর্তমানে পৃথিবীতে ভাষার প্রাচুর্যের কারণ হিসেবে বাবেলের মিনারের কাহিনীর উল্লেখ করা হয়; এই কাহিনী অনুসারে বর্তমান পৃথিবীতে ভাষার প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য হল মানুষের ঔদ্ধত্যের শাস্তি। এই ধর্মীয় কাহিনীগুলি অতীতে মেনে নেয়া হলেও বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ভাষার উৎসের একটি প্রাকৃতিক, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

    ১৮শ শতকের বেশ কিছু ইউরোপীয় দার্শনিক যেমন জঁ-জাক রুসো, কোঁদিয়াক, হার্ডার, প্রমুখ মনে করতেন ভাষার উৎস নির্ণয় করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। ভাষা যে মানুষের লিখিত ইতিহাসের চেয়ে বহু প্রাচীন, এ ব্যাপারটিকে তারা তেমন আমল দেননি। তারা মনে করেছিলেন, ভাষাহীন মানুষ কীভাবে বসবাস করত, তা মনের পর্দায় গভীরভাবে কল্পনা করে যৌক্তিকভাবে এগোলেই ভাষার কীভাবে উৎপত্তি হল, সে বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এই অনুমানগুলির মধ্যে কোন ঐকমত্য নেই। ১৯শ শতকে ভাষার উৎস নিয়ে এমন সব উদ্ভট, কল্পনাপ্রসূত তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছিল, যে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্নে প্যারিসের ভাষাতাত্ত্বিক সমিতি একটি নির্ভরযোগ্য সংগঠন হিসেবে নিজেদের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের সমিতিতে ভাষার উৎস সংক্রান্ত যেকোন গবেষণাপত্র পাঠে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আজও বেশির ভাগ ভাষাবিজ্ঞানী ভাষার উৎস সম্পর্কে তেমন আগ্রহী নন, কেননা তাদের মতে ভাষার উৎস নিয়ে যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত এতটাই কল্পনাপ্রসূত যে এগুলিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বের সাথে নেয়া সম্ভব নয়।

    ১৯৬০-এর দশক থেকে নোম চম্‌স্কির প্রবর্তিত ধারণাগুলি ব্যাকরণের তত্ত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। চম্‌স্কির মতে ভাষাবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় একটি প্রশ্ন হল মস্তিষ্কে অন্তর্নিহিত যে ক্ষমতাবলে মানুষ তার জীবনের প্রথম বছরগুলিতে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দক্ষভাবে কোন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা অর্জন করে, সেই জৈবিক ক্ষমতার প্রকৃতি কী? এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাষার উৎসের গবেষণা বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানের একটি অংশ বলেই মনে হয়। কীভাবে আদি মানুষের মধ্যে এই অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশ ঘটেছিল? অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে কীভাবে এর বিবর্তন ঘটে? চম্‌স্কি নিজে অবশ্য বেশ স্পষ্টভাবেই ভাষার বিবর্তন নিয়ে গবেষণাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। ফলে চমস্কীয় ভাষাবিজ্ঞানীরা এক ধরনের স্ববিরোধিতার মধ্যে কাজ করছেন। তারা সব ভাষাকে একটিমাত্র বিশ্বজনীন ব্যাকরণের আওতায় এনে ব্যাখ্যা করতে চাইছেন, যে ব্যাকরণের উৎস হল মানুষের অন্তর্নিহিত ভাষিক ক্ষমতা। অথচ এই ক্ষমতাটির উদ্ভব ও বিকাশ কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত নন। ইদানীং স্টিভেন পিংকার-সহ আরও কিছু বিজ্ঞানী এই নিরুদ্বেগ কাটিয়ে ভাষার উৎসের ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন।

    নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নবিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত প্রমাণাদি

    নৃবিজ্ঞানে কেবল মানুষের সংস্কৃতি নয়, জীববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের বিবর্তনের ধারাও আলোচিত হয়। নৃবিজ্ঞানীরা ভাষাকে মানুষের সংস্কৃতির একটি প্রপঞ্চ হিসেবে যেমন গণ্য করেন, তেমনি এটিকে আধুনিক Homo Sapiens-এর সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য হিসেবেও মর্যাদা দেন। তাই সাংস্কৃতিক ও জীববৈজ্ঞানিক উভয় ধরনের নৃবিজ্ঞানীরাই ভাষার উৎস সম্পর্কে আগ্রহী।

    ভাষার যে প্রত্যক্ষ লিখিত নিদর্শন পাওয়া গেছে, তার বয়স ৫ হাজার বছরের বেশি নয়। মুখের ভাষার উৎপত্তি কী করে ঘটল, তার উপর এই প্রমাণ তাই আলোকপাত করতে পারে না। তাই ভাষার উৎসের জন্য আমাদেরকে অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের উপরেই নির্ভর করতে হবে। প্রাচীন মানুষদের বাগযন্ত্র (জিহ্বা, ঠোঁট, স্বরযন্ত্র) সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারতাম, কিন্তু এগুলি নরম পেশীকলা দিয়ে তৈরি বলে আজ আর এগুলির অস্তিত্ব নেই। নৃবিজ্ঞানীদেরকে তাই খুলির হাড় থেকেই প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে। এর বাইরে প্রাচীন মনুষ্যবসতির আশেপাশে পাওয়া পাথরের হাতিয়ার, ফেলে দেওয়া জীবজন্তুর হাড় ও অন্যান্য উপকরণ থেকে যতদূর সম্ভব তথ্য আহরণ করতে হয়। এ সব বিচার করে নৃবিজ্ঞানীরা দুইটি তুলনামূলকভাবে স্থির তারিখের উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে একটি তারিখের পর থেকে নিশ্চিতভাবেই মানুষের মুখের ভাষা তার আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করেছিল। অন্যদিকে অপর তারিখটির পূর্বে নিশ্চিতভাবেই মানুষের মুখের ভাষা তার আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করেনি। এই দুই তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে ভাষার বিবর্তন কীভাবে ঘটেছিল, দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে প্রাপ্ত প্রমাণাদি থেকে এ সম্পর্কে কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।

    নৃবিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন, ভাষার উৎপত্তির ঘটনা ইতিহাসে একবারই ঘটেছিল, একাধিকবার নয়। বিশ্বের সর্বত্র প্রচলিত মনুষ্য ভাষাগুলির মধ্যে গাঠনিক সাদৃশ্য এই অনুমানের ভিত্তি। ধারণা করা হয় আধুনিক ভাষাক্ষমতা বলতে যা বোঝায়, তার সূচনা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়াতে Homo Sapiens-দের বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা অনুসারে এই ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার বছর আগে।

    অন্যদিকে এ কথাও সত্য যে আধুনিক মুখের ভাষাগুলির বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষের বিশেষ উল্টো L আকৃতির বাগনালী প্রয়োজন, এবং স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংক্সের গলার বেশ ভেতরে থাকা প্রয়োজন। কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে নিয়ান্ডার্থাল মানুষদের মধ্যেও ল্যারিংক্সের অবস্থান গলার বেশ উপরের দিকে ছিল এবং তাদের পক্ষে বর্তমান মনুষ্য ভাষার ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করা সম্ভব ছিল না। আবার কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন মানুষ যখন দুই পায়ে হাঁটা শুরু করেছিল, তখন মানুষের মাথার খুলি মেরুদণ্ডের সাথে একই রেখাতে চলে আসে এবং খুলির ভিত্তির সংকোচন ঘটে, ফলে মানুষের স্বরযন্ত্র গলার গভীরে নেমে আসে। এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন দ্বিপদী মানুষটি হল australopithecus afarensis প্রজাতির লুসি-র কঙ্কাল, যার বয়স প্রায় ৩০ লক্ষ বছর। সুতরাং অনুমান করা যায়, ঐ সময়ের দিকেই মানুষের ভাষা উৎপাদনকারী বিশেষ বাগযন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছিল।

    আদি মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে ভাষার উৎপত্তির সম্পর্ক স্থাপন করা আরও কঠিন। আদি মানুষের মস্তিষ্কের কোন অবশেষ আমাদের কাছে নেই। এদের মাথার খুলির ভেতরের খাঁজ থেকে মস্তিষ্কের বহির্গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশের সাথে ভাষার ক্ষমতা জড়িত, তাকে ব্রোকা-র এলাকা বলা হয়। মানুষের আদি পূর্বপুরুষদের মধ্যে ব্রোকার এলাকার মত কোন এলাকা ছিল কি না তা যদি জানাও যায়, তার পরেও সেটি ভাষার উৎস সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে পারবে না। ব্রোকার এলাকা শুধু ভাষা নয়, মানুষের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত। এছাড়া শিম্পাঞ্জি ও অন্যান্য এপ-জাতীয় প্রাণীর মস্তিষ্কের মধ্যে এরকম কোন আলাদা এলাকা দেখতে পাওয়া যায়নি, যা তাদের মৌখিক ভাষার সাথে সম্পর্কিত।

    কোন কোন পণ্ডিত ডান হাতে কাজ করার প্রবণতার সাথে ভাষার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। বেশির ভাগ মানুষের ডান হাতে কাজ করার প্রবণতা বেশি, আর মানুষের ডান হাত নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের বাম অংশ, যে অংশে ভাষা এলাকাগুলি অবস্থিত। তারা মনে করেন যে যদি দেখানো যায় যে প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা বেশির ভাগ ডান হাতে কাজ করত, তাহলে হয়ত ভাষার উৎসের সাথে এই ডান হাতে কাজ করার একটা সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু ডান বা বাম হাতে কাজ করার প্রবণতার সাথে ভাষিক দক্ষতার কী ধরনের কার্যকারণ সম্পর্ক আছে, তার কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আজও দেয়া সম্ভব হয়নি।

    জীববৈজ্ঞানিক নৃবিজ্ঞানের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হতে পারে যে মানুষের ভাষিক দক্ষতার উন্নতির ছাপ তার আশেপাশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, তার হাতিয়ারে, সরঞ্জামে, শিল্পে, ইত্যাদিতে পড়ার কথা। আসলেই প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে মানুষের হাতিয়ার ও সরঞ্জামের বৈচিত্র্য ও মানে এক ধরনের ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। ফ্রান্সের লাস্কো-র বিখ্যাত গুহাচিত্রগুলিও প্রায় ৩০ হাজার বছর পুরনো। কিন্তু এই তারিখগুলিকে আধুনিক ভাষা উদ্ভবের তারিখ হিসেবে বেশ দেরির তারিখ বলেই গণ্য করা হয়।