Category: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

Bengali language and literature

  • ফরাসি ব্যাকরণ

    ফরাসি ব্যাকরণ বলতে রোমান্স ভাষাদলের সদস্য ফরাসি ভাষার ধ্বনি, রূপমূল, বাক্য, ইত্যাদি উপাদানের প্রণালীবদ্ধ আলোচনাকে বোঝায়। ফরাসি ব্যাকরণের আলোচনায় লাতিন ব্যাকরণের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফরাসি ব্যাকরণের সাথে অন্যান্য রোমান্স ভাষার ব্যাকরণের অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে।

    বিশেষ্য

    ফরাসি ভাষার বিশেষ্যগুলির একটি অন্তর্নিহিত ধর্ম হল এদের ব্যাকরণিক লিঙ্গ। প্রতিটি ফরাসি বিশেষ্য ব্যাকরণিক দৃষ্টিকোণ থেকে (অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়) হয় পুংলিঙ্গ নতুবা স্ত্রীলিঙ্গ হয়। এগুলি বিশেষ্যের উচ্চারণ বা লিখিত রূপ দেখে খুব সহজে নির্ণয় করা যায় না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবচনিক বিশেষ্যের লিখিত রূপের শেষে যদি “e” বর্ণটি থাকে, তাহলে সেটি স্ত্রীলিঙ্গ হয়, এবং না থাকলে সেটি পুংলিঙ্গ হয়; কিন্তু এই সাধারণ নিয়মের অনেক ব্যতিক্রম আছে। সাধারণত বিশেষ্যের পূর্বে অবস্থিত আবশ্যক নির্দেশক পদ যেমন “একটি” (un আঁ বা une উ্যন্‌) বসিয়ে বিশেষ্যেটির লিঙ্গ স্মরণে রাখতে হয়। এছাড়া ফরাসি ভাষার অভিধানগুলিতে বিশেষ্যের অর্থের সাথে সাথে তার লিঙ্গ নির্দেশিত থাকে (m. অর্থাৎ পুংলিঙ্গ এবং f. অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গ)।

    ফরাসি বিশেষ্যের আরেকটি ধর্ম হল এর বচন, যা বিশেষ্যের সংখ্যা নির্দেশ করে। ফরাসি বিশেষ্যের দুইটি বচন হতে পারে: একবচন ও বহুবচন। বহুবচনের চিহ্ন হিসেবে প্রায়শই বিশেষ্যের লিখিত রূপের শেষে “s” বর্ণটি যোগ করা হয়, তবে কদাচিৎ কিছু বিশেষ্যের শেষে “x” বর্ণটি যোগ করা হয়। বহুবচনের চিহ্ন লিখিত রূপে দৃশ্যমান হলেও কথ্য ভাষায় সময় এগুলির উচ্চারণ হয় না, যদি না এগুলি দ্রুত ও জড়িয়ে কথা বলার সময় পরবর্তী শব্দের প্রারম্ভিক স্বরধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন “কলম” শব্দটির ফরাসি অনুবাদ একবচনে লিখিত রূপ Stylo ও উচ্চারণ স্তিলো এবং বহুবচনে লিখিত রূপ Stylos ও উচ্চারণ স্তিলো; অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চারণ একই, কিন্তু লিখিত রূপ ভিন্ন।

    ফরাসি বিশেষ্যগুলিতে কারকচিহ্ন বা বিভক্তি বসে না। পূর্বসর্গ (preposition) এবং বাক্যের পদক্রমে নির্দিষ্ট অবস্থানে বসিয়ে বিশেষ্যের এই ধর্মগুলি নির্দেশ করা হয়।

    বাক্যের কাঠামোয় বিশেষ্যের প্রয়োগ

    ফরাসি বাক্যের কাঠামোতে বিশেষ্য পদগুলির নিম্নলিখিত প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়:

    1. কর্তা; যেমন – Cette veste est bleue. “এই কোটটি নীল।”
    2. কর্মস্থানীয় সম্পূরক; যেমন – J’ai acheté cette veste. “আমি এই কোটটি কিনলাম।”
    3. কর্তার গুণবাচক; যেমন – Cette veste est une contrefaçon. “এই কোটটি একটি নকল (কোট)।”
    4. কর্মস্থানীয় সম্পূরকের গুণবাচক; যেমন – On appelle cela une veste. “আমরা এটাকে একটি কোট নামে ডাকি।”
    5. সমানাধিকারক; যেমন – Cet article, une veste, est très recherché. “এই জিনিসটির, মানে কোটটির, খুবই চাহিদা আছে।”

    নির্দেশক পদ

    ফরাসিতে নির্দিষ্টতাসূচক ও অনির্দিষ্টতাসূচক নির্দেশক পদ (article) ব্যবহৃত হয়, যেগুলি বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচনের সাথে সাযুজ্য রক্ষা করে। যেমন – un stylo আঁ স্তিলো “একটি কলম” বনাম une voiture উ্যন্‌ ভোয়াত্যুর “একটি গাড়ি”। এই উদাহরণে কলমের ফরাসি অনুবাদ stylo বিশেষ্যটি একবচন ও পুংলিঙ্গের বিধায় “un” আঁ নামের একবচন পুংলিঙ্গবাচক অনির্দিষ্টতাসূচক নির্দেশক পদটি ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু মোটরগাড়ির ফরাসি অনুবাদ voiture বিশেষ্যটি একবচন ও স্ত্রীলিঙ্গের বিধায় “une” উ্যন্‌ নামের একবচন স্ত্রীলিঙ্গবাচক অনির্দিষ্টতাসূচক নির্দেশক পদটি ব্যবহৃত হয়েছে। আবার des stylos দে স্তিলো উদাহরণে বিশেষ্যটি বহুবচনে আছে বিধায় “des” দে নামের বহুবচন-বাচক অনির্দিষ্টতাসূচক নির্দেশক পদটি ব্যবহৃত হয়েছে। একইভাবে নির্দিষ্টতাবাচক নির্দেশক পদ le ল্য, la লা এবং les লে যথাক্রমে একবচন পুংলিঙ্গ, একবচন স্ত্রীলিঙ্গ ও বহুবচনে অবস্থিত বিশেষ্য পদের আগে বসে। যেমন – le stylo ল্য স্তিলো, les voitures লে ভোয়াত্যুর এবং les stylos লে স্তিলো

    বিশেষণ

    ফরাসি বিশেষণগুলি সাধারণত বিশেষ্যের পরে বসে এবং বিশেষ্যের লিঙ্গ ও বচনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তিত হয়। যেমন – un stylo blanc “একটি সাদা কলম” বনাম une voiture blanche “একটি সাদা গাড়ি”। এখানে stylo পুংলিঙ্গ বলে “সাদা” বিশেষণটিকে blanc ব্লঁ হিসেবে লেখা হয়েছে, কিন্তু voiture স্ত্রীলিঙ্গ বলে “সাদা” বিশেষণটিকে blanche ব্লঁশ্‌ হিসেবে লেখা হয়েছে। একইভাবে des stylos blancs দে স্তিলো ব্লঁ “কিছু সাদা কলম” উদাহরণটিতে লিখিত রূপে একবচন blanc “সাদা” বিশেষণটির পরে বহুবচনবাচক “s” বর্ণ যোগ করে blancs “ব্লঁ” হিসেবে লেখা হয়েছে, যদিও উচ্চারণে এই অতিরিক্ত “s”-এর অস্তিত্ব নেই।

    সর্বনাম

    ফরাসি সর্বনামগুলি পুরুষ, লিঙ্গ ও বচনের জন্য চিহ্নিত। এছাড়া বাক্যে এদের ভূমিকা (কর্তা, মুখ্য কর্ম, গৌণ কর্ম) অনুযায়ী এগুলিতে বিভক্তি যুক্ত হয়। ফরাসিতে দ্বিতীয় পুরুষের সর্বনামে নৈকট্যসূচক tu ত্যু এবং সম্ভ্রমসূচক vous ভু-এর মধ্যে পার্থক্য করা হয়।

    ক্রিয়া

    ফরাসি ক্রিয়াগুলির বেশির ভাগ তিনটি নিয়মিত শ্রেণীতে পড়ে। তবে অনেক অনিয়মিত ক্রিয়াও আছে। ফরাসি ক্রিয়াগুলি পুরুষ ও বচনের জন্য চিহ্নিত। ক্রিয়ার চারটি সরল কাল ও পাঁচটি যৌগিক কাল আছে।Être “হওয়া” কিংবা avoir “থাকা” ক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে যৌগিক কালগুলি গঠন করা হয়। ক্রিয়াগুলির চারটি ভাব (mood) আছে: নির্দেশক ভাব, অনুজ্ঞাবাচক ভাব, অভিপ্রায়ার্থক ভাব ও সাপেক্ষ ভাব। আরও আছে দুইটি বাচ্য: কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্য। কর্মবাচ্য “être”-কে সহায়িকা ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করে গঠন করা হয়। ফরাসি নঞকরণ দুইটি অংশ নিয়ে সম্পন্ন হয়, যেমন – Je ne sais pas “আমি জানি না।” এখানে ne সামগ্রিকভাবে নঞর্থকতা নির্দেশ করছে এবং pas নির্দেশ করছে নঞর্থকতার ধরন।

    পদক্রম

    যৌগিক ক্রিয়া, কর্ম, ক্রিয়াবিশেষণীয় সর্বনাম, উৎক্রম (inversion), অনুজ্ঞা, ক্রিয়াবিশেষণ, ও নঞর্থক গঠনগুলির মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কের কারণে ফরাসি ভাষার পদক্রম বেশ জটিল।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • পর্তুগিজ ব্যাকরণ

    পর্তুগিজ ব্যাকরণ হল পর্তুগিজ ভাষার রূপমূলতত্ত্ববাক্যতত্ত্বের আলোচনা। পর্তুগিজ ব্যাকরণের সাথে অন্যান্য রোমান্স ভাষার, বিশেষ করে গালিসীয় ভাষা ও আইবেরীয় উপদ্বীপের অন্যান্য ভাষার ব্যাকরণের সাদৃশ্য আছে। পর্তুগিজ একটি সংশ্লেষণাত্মক (synthetic), একীভবনমূলক (fusional) ভাষা।

    পর্তুগিজ বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও নির্দেশক পদগুলিতে স্বল্প পরিমাণে বিভক্তি বিদ্যমান। পর্তুগিজ ভাষাতে দুইটি লিঙ্গ (পুং ও স্ত্রী), দুইটি বচন (একবচন ও বহুবচন), ক্ষুদ্রতানির্দেশক ও বর্ধননির্দেশক বিভক্তি এবং বিশেষণের অতিশয়ার্থক বিভক্তি রয়েছে। পর্তুগিজ ভাষাতে লাতিন ভাষার কারকব্যবস্থা আর অবশিষ্ট নেই, তবে ব্যক্তিবাচক সর্বনামগুলি এখনও কর্তা, ক্রিয়ার কর্ম এবং পূর্বসর্গের কর্মভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বিশেষণগুলি সাধারণত বিশেষ্যের পরে বসে।

    পর্তুগিজ ক্রিয়াগুলির বহু রূপ হতে পারে। এগুলির তিনটি কাল (অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ), তিনটি প্রকার (পুরাঘটিত, অ-পুরাঘটিত, এবং ঘটমান), দুইটি বাচ্য (কর্তৃ ও কর্ম) এবং একটি বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা রূপ বিদ্যমান। পুরাঘটিত ও অ-পুরাঘটিত প্রকারগুলিতে বিভক্তি সরাসরি ক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে নতুন ক্রিয়ারূপ গঠন করে। অন্যদিকে ঘটমান প্রকার এবং কর্মবাচ্যের ক্ষেত্রে আলাদা সহায়ক পদ নিয়ে ক্রিয়ারূপ গঠিত হয়। অন্যান্য রোমান্স ভাষার মত পর্তুগিজেও একটি অ-ব্যক্তিবাচক কর্মবাচ্য রূপ আছে, যেখানে ঘটককে একটি অনির্দিষ্ট সর্বনাম দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

    পর্তুগিজ মূলত একটি কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম ভাষা। তবে কখনো কখনো কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া ক্রমও দেখা যায়। পর্তুগিজ ভাষার বাক্যে পদের ক্রম খুব সুনির্দিষ্ট নয়। এটি একটি শূন্য কর্তা ভাষা, অর্থাৎ বাক্যে কর্তাস্থানীয় সর্বনাম ঊহ্য থাকে। অনেক সময় কথ্য ভাষাতে কর্মস্থানীয় সর্বনামও ঊহ্য থাকে। পর্তুগিজ ভাষাতে উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে সংযুক্তকারী দুইটি সংযোজক ক্রিয়া (copular verb) আছে।

    পর্তুগিজ ভাষার বেশ কিছু ব্যাকরণিক বৈশিষ্ট্য অন্যান্য রোমান ভাষা থেকে স্বতন্ত্র। এদের মধ্যে আছে পুরাঘটিত অতীত কাল নির্দেশের জন্য বিভক্তির ব্যবহার, ভবিষ্যৎ সংশয়ার্থ ক্রিয়ারূপ, বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা রূপ, এবং পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থ নির্দেশকারী পুরাঘটিত বর্তমান কালের ক্রিয়ারূপ। পর্তুগিজ ভাষার একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হল কিছু ক্রিয়ারূপের অভ্যন্তরে সর্বনামের সংক্ষিপ্ত রূপ বা Clitic অনুপ্রবিষ্ট হতে পারে।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • আধুনিক স্ট্যান্ডার্ড তিব্বতি ব্যাকরণ

    তিব্বতি ব্যাকরণ একটি চীন-তিব্বতি ভাষা লাসা তিব্বতি এর রূপবিদ্যা, বাক্য গঠন এবং অন্যান্য ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। স্ট্যান্ডার্ড তিব্বতি হল শ্রেণীকরণ বিদ্যানুযায়ী একটি ইরগেটিভ-নিরঙ্কুশ ভাষা । বিশেষ্যগুলি সাধারণত ব্যাকরণগত সংখ্যার জন্য চিহ্নিত করা হয় না, তবে কারকের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষণগুলি কখনই চিহ্নিত করা হয় না এবং বিশেষ্যের পরে উপস্থিত হয়। ডেমনস্ট্রেটিভরা এছাড়াও বিশেষ্যের পরে আসে কিন্তু এই সংখ্যার জন্য চিহ্নিত করা হয়. রূপবিদ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিয়াপদগুলি সম্ভবত তিব্বতি ব্যাকরণের সবচেয়ে জটিল অংশ। এখানে বর্ণিত উপভাষা হল মধ্য তিব্বতের, বিশেষ করে লাসা এবং আশেপাশের এলাকার কথ্য ভাষা, কিন্তু ব্যবহৃত বানানটি ধ্রুপদী তিব্বতি প্রতিফলিত করে, কথ্য উচ্চারণ নয়।

    বিশেষ্য এবং কারক

    তিব্বতি বিশেষ্য লিঙ্গ বা বচনের জন্য চিহ্নিত হয় না।

    আভিধানিক অর্থ দ্বারাই মূলত লিঙ্গ বোঝা যায়, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- তিব্বতি: གཡག་, ওয়াইলি: gyag কথার অর্থ হল চমরী গাই(পুং) আবার তিব্বতি : འབྲི ওয়াইলি: ‘bri কথার অর্থ হল চমরী গাই(স্ত্রী)৷ যে বিশেষ্যগুলি মানুষ বা কোনো সজীব বস্তুকে বোঝায় বহু ক্ষেত্রেই তাদের লিঙ্গ নিরধারণে অনুসর্গের ব্যবহার হয়। সাধারণত তিব্বতি: པ་, ওয়াইলি: pa অথবা তিব্বতি: པོ་, ওয়াইলি: po দ্বারা পুরুষ এবং তিব্বতি: མ་, ওয়াইলি: ma অথবা তিব্বতি: མོ, ওয়াইলি: mo দ্বারা স্ত্রী বোঝানো হয়।

    তিব্বতি অজীবজ বিশেষ্যে কখনও বচন চিহ্নিত হয় না। এমনকি যে সকল বিশেষ্য মনুষ্য জাতিকে বিশেষিত করে তাদেরও বহুবচন একমাত্র যখন তারা নির্দিষ্ট হবে। কোনো বিশেষ্যকে বহুবচনে আনার জন্য তিব্বতি: ཚ་, ওয়াইলি: tsho ব্যবহৃত হয়। যেমন তিব্বতি: ཨ་མ་, ওয়াইলি: a-ma কথার অর্থ হল মা; তিব্বতি: ཨ་མ་ཚ་, ওয়াইলি: a-ma-tsho কথার অর্থ হল মা গুলি৷

    লিখিত তিব্বতির বিশেষ্য কখনো নিশ্চয়তাকে চিহ্নিত করে না, কারণ তাহলে তিব্বতি ভাষায় তার কোনো অর্থই দাঁড়াবে না৷

    তিব্বতি বিশেষ্য কারক দ্বারা চিহ্নিত হয়। তিব্বতিতে মোট ৬টি কারক বর্তমান৷ যথা-

    ১.নিরঙ্কুশ কারক

    ২.এজেন্টিভ কারক

    ৩.সম্বন্ধ পদ

    ৪.অপাদান কারক

    ৫.সঙ্গী কারক

    ৬.বিধেয় কারক

    তিব্বতিতে কণাগুলি সর্বদা বিশেষ্য শব্দবন্ধের সাথে যুক্ত হয়, বিশেষ্যের সঙ্গে নয়। কারক অনুসর্গ গুলি সর্বদা বিশেষ্য শব্দবন্ধের সাথে যুক্ত হয় কিন্তু প্রকৃত বিশেষ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। অনুসর্গের রূপটি সে যার সঙ্গে যুক্ত হবে তার উপর নির্ভর করে৷

    নিরঙ্কুশ কারক

    নিরঙ্কুশ কারক হল বিশেষ্যের একটি অচিহ্নিত রূপ যা অকর্মক ক্রিয়ার উদ্দেশ্য এবং সকৰ্মক ক্রিয়ার বিধেয় অথবা কোনো আবেগের অভিজ্ঞক রূপে কাজ করে।

    সম্বন্ধ পদ

    সম্বন্ধ পদ কোনো বস্তু বা প্রাণীর উপর অধিকারকে বোঝায়। তিব্বতি সম্বন্ধ কারককে বাংলায় “এর” বা “র” বলা যেতে পারে। সম্বন্ধ পদীয় অনুসর্গ মূলত শব্দের শেষ বর্ণের উপর নির্ভর করে।

    • যদি শেষ বর্ণ འ་ <‘a> হয় তবে অনুসর্গ འི་ <‘i> হবে।
    • যদি শেষ বর্ণ ག་ <-g> অথবা ང་ <-ng> হয় তবে অনুসর্গ হবে གི་
    • যদি শেষ বর্ণ ད་ <-d>,  བ་ <-b>বা ས་ <-s> হয় তবে অনুসর্গ হিসেবে ཀྱི་ <Kyi> ব্যবহৃত হয়।
    • যদি শেষ বর্ণ ན་ <-n>,མ་ <-m>, ར་ <-r> অথবা <-l> হয় তবে གྱི: <gyi> অনুসর্গ ব্যবহৃত হবে৷

    ཆོས་ཀྱི་ འཁོར་ལོ

    chos-kyi ‘khor-lo

    ধর্মে চাকা

    ལུག་གི་ པགས་པ

    lug-gi pags-pa

    ভেড়া চামড়া

    সম্বন্ধ পদ সম্বন্ধী বাক্যখন্ড তৈরীতে সহায়তা করে।যেমন-

    དེབ་ ནང་ལ་ ཡོད་པའི་ པར་

    deb nang-la yod-pai par

    book inside-OBL is-GEN photo

    “ছবিটা বইয়ের মধ্যে আছে”

    এজেন্টিভ কারক

    তিব্বতি ভাষায় সম্বন্ধ পদের সাথে ས་ <-s> যোগ করে এজেন্টিভ কারক পাওয়া যায়। সম্বন্ধ পদের মতই-

    • শব্দের শেষে যদি འ་ <‘a> থাকে তবে অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হবে ས་ <-s>৷
    • শব্দের শেষে ག་ <-g > বা ང་ <-ng> থাকলে གིས་ <gis> ব্যবহৃত হবে।
    • ད་ <-d>,བ་ <-b> অথবা ས་ <-s> যদি শব্দের শেষে থাকে তবে ཀྱིས་ <kyis> ব্যবহৃত হবে।
    • শব্দের শেষ অক্ষর যদি ན་ <-n>, མ་ <-m>, ར་ <-r> বা ལ་ <-l> উপস্থিত থাকলে উপসর্গ রূপে ব্যবহৃত হবে གྱིས་ <gyis> ৷

    এজেন্টিভ কারক মূলত এরগেটিভ বা করণ কারকের কাজ করে থাকে। এই প্রকার কারক উদ্দেশ্য, এজেন্ট অথবা সকৰ্মক ক্রিয়ার সম্পাদক, “মানসিক” বা “মৌখিক” ক্রিয়ার এজেন্ট এবং সংবেদনের উপলব্ধকে দেখা যায়।

    অপাদান কারক

    অপাদান কারক-এর অনুসর্গ রূপে সর্বদাই ནས་ <nas> ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ্য পদের থেকে দূরে যাওয়াকে বোঝায়৷ এজেন্টিভ কারকের মতই অপাদান কারকও অনেক সময় এরগেটিভ কারকের মত কাজ করে থাকে এবং কোনো ক্রিয়ার সম্পাদকের সাথে বসে।

    সঙ্গী কারক

    সঙ্গী কারকের কারক-অনুসর্গ হিসেবে དང་ <dang> ব্যবহৃত হয়, যাকে বাংলাতে এবং, সঙ্গে, বিরুদ্ধে ইত্যাদি নানাভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে (যদিও কিছু ক্ষেত্রে অন্য কোনো শব্দ দিয়ে একে অনুবাদ করা যায় না)৷ এই কারকের ব্যবহারের পর একটি পূৰ্ণচ্ছেদ () ব্যবহৃত হয় যেমন –

    པཱ་ལགས་དང་། ཨ་ཁུ་དང་། ཨ་ནེ།

    paa-lags-dang, a-khu-dang, a-ne

    father-ass uncle-ass aunt

    “বাবা এবং কাকু এবং কাকি”

    কিন্তু এটি বহুবচনের সাথে যুক্ত হবে না। যেমন –

    བུ་དང་ བུ་མོ་ཚོར་ ལག་རྟགས་ སྦྲུས་པ་ཡོད།

    bu-dang bu-mo-tsho-r lag-rtags sbrus-pa-yod

    boy-ASS boy-FEM-PL-DAT present give-PAST-be:EX-EGO

    “(তারা) ছেলে ও মেয়েদের উপহার গুলি দিলেন”

    বিধেয় কারক

    তিব্বতিতে বিধেয় কারক একই সঙ্গে সম্প্রদান কারক এবং অধিকরণ কারক-এর কাজ করে। সম্প্রদান কারক অপ্রধান উদ্দেশ্যের কাজ করে এবং একে “জন্য” হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। অধিকরণ কারক কোনো কিছুর অবস্থান চিহ্নিত করে।

    এই কারকের দুটি অনুসর্গ রয়েছে, যথা-

    • -ར་ <r> ব্যাবহৃত হয় যেকোনো স্বরবর্ণ এবং འ་ <‘a> এর পর।
    • -ལ་ <l> ব্যাবহৃত হয় যেকোনো শব্দের পর।

    -ར་ এর ব্যবহার খুবই কম হয়। একমাত্র ব্যক্তিবাচক সর্বনাম এবং কিছু বিশেষণের পর এটি ব্যবহৃত হয়।

    সর্বনাম

    ব্যক্তিবাচক সর্বনাম

    তিব্বতি সর্বনামগুলি মূলত তিনটি থেকে একটি রেজিস্টার এবং তিনটি বচন (এক,দ্বি এবং বহুবচন) যুক্ত হয়।

    একবচনদ্বিবচনবহুবচন
    উত্তম পুরুষང་ང་གཉིས་ང་ཚོ་
    মধ্যম পুরুষসাধারণརང་རང་གཉིས་རང་ཚོ་
    সম্মানীয়ཁྱེད་རང་ཁྱེད་རང་གཉིས་ཁྱེད་རང་ཚོ་
    আপমানজনকཁྱོད་ཁྱོད་གཉིས་ཁྱོད་ཚོ་
    প্রথম পুরুষসাধারণཁོང་ཁོང་གཉིས་ཁོང་ཚོ་
    পরিচিতপুংཁོ་(རང་)ཁོ་(རང་)གཉིས་ཁོ་(རང་)ཚོ་
    স্ত্রীམོ་(རང་)མོ་(རང་)གཉིས་མོ་(རང་)ཚོ་

    নিদের্শক সর্বনাম

    নিদেৰ্শক সর্বনাম এই ভাষায় মূলত তিন প্রকার হয় যথা-

    ১.সমীপ্যবাচক: འདི་ <‘di> (“এই”, মূলত উত্তম পুরুষের নিকটে থাকা বস্তু)৷

    ২.মধ্যবাচক: ད་ <de> (“সেই” অর্থাৎ মধ্যম পুরুষের নিকটে থাকা বস্তু)৷

    ৩.দূরত্ববাচক: ཕ་གི་ <pha-gi> (“ওই” অর্থাৎ উভয়ের থেকে দূরে থাকা বস্তু)৷

    এদের মধ্যে འདི་ <‘di> ও ད་ <de> ক্রিয়াকালের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-

    • ལོ་རདི་<lo-‘di> “এই বছর” (বর্তমান কাল)
    • ལོ་དེ་ <lo-de> “সেই(ওই) বছর” (অতীত বা ভবিষ্যৎকাল)

    অপর পক্ষে ཕ་གི་ <pha-gi> দ্বারা কেবল মাত্র দূরত্বই বোঝায়৷ এই তিনটি নিদেৰ্শক সর্বনামের সাথে তির্যক কারক-অনুসর্গ () যুক্ত হয়ে তিনপ্রকারের ক্রিয়াবিশেষণ নির্মান করে৷ যথা-

    • འདིར <‘dir>- “এইখানে”
    • དེར་ <der>- “সেইখানে”
    • ཕ་གིར་ <pha-gir>- ” ওইখানে”

    ক্রিয়াপদ

    কপুলা

  • সাধু ভাষা

    সাধু ভাষা হলো বাংলা লেখ্য গদ্যের অপেক্ষাকৃত প্রাচীন রূপ। এর নবীন ও বর্তমানে বহুল প্রচলিত রূপটি হলো চলিত। সাধু ভাষা অনেকটা ধ্রুপদী বৈশিষ্ট্যের এবং চলিত ভাষা অপেক্ষা স্বল্প প্রাঞ্জল। “সাধু” শব্দের এক অর্থ শিষ্ট, মার্জিত বা ভদ্ররীতি সঙ্গত। রাজা রামমোহন রায় তাঁর “বেদান্ত গ্রন্থ” রচনাটিতে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।[১] সাধু ভাষার সঙ্গে প্রমিত বা চলিত ভাষার মিশ্রণকে দূষণীয় গণ্য করা হয়। লেখার সময় যেকোনো একটি রীতিকে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নচেৎ একে “গুরুচণ্ডালী” দোষে দুষ্ট আখ্যা দেওয়া হয়। তবে কবিতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়।

    ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সাধারণ গদ্য-সাহিত্যে ব্যবহৃত বাঙ্গালা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।[২] এছাড়াও তিনি এ ভাষাকে সমগ্র বঙ্গদেশের সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুহম্মদ এনামুল হকের মতে,

    বাংলা ভাষার সংস্কৃত শব্দ-সম্পন্ন ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের পূর্ণরূপ ও ব্যকরণসিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করিয়া ইংরেজি গদ্য-সাহিত্যের পদবিন্যাসের প্রণালি অনুসরণে পরিকল্পিত যে সর্বজনীন গদ্যরীতি বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তিত হয়, তাহাকে বাংলা সাধু ভাষা বলে ।

    সাধু ভাষার বাক্যরীতি অনেকটা সুনির্ধারিত। এ ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ অধিক। এতে সর্বনাম, ক্রিয়াপদ প্রভৃতির রূপ মৌখিক ভাষার রূপ অপেক্ষা পূর্ণতর। চলিত ভাষা সর্বদাই নতুন নতুন ধ্বনি-পরিবর্তন করে। কিন্তু সাধু ভাষায় শব্দের রূপান্তর তেমন দেখা যায় না। যেমন, চলিত ভাষায় স্বরসঙ্গতি ও অভিশ্রুতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়, কিন্তু সাধু ভাষায় তেমনটা দেখা যায় না। চলিত ভাষা অপেক্ষাকৃত চটুল এবং সাধু ভাষা গম্ভীর; তবে ব্যঙ্গরচনা বা রম্যরচনায় চলিত ভাষার মতো সাধু ভাষারও সফল ব্যবহার হতে পারে। তবে সাধু ভাষায় আছে এক ধরণের স্বাভাবিক আভিজাত্য ও ঋজুতা ।

    ইতিহাস

    ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ সূচিত হয়।[৩][৪] এ সময়ই সাধু ভাষার আবির্ভাব ঘটে।উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে কেন্দ্র করে বাংলা গদ্য চর্চা আরম্ভ হয়।[৫][৬][৭] মহাবিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে উইলিয়াম কেরি ও তার সহকর্মীগণ গদ্যের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় গদ্যের আবির্ভাব হয়।[৮] এভাবেই আরম্ভ হয় গদ্যের চলার পথ। তবে এ ধরণের ভাষা মূলত একটি আদর্শ রূপ লাভ করে দেশীয় পণ্ডিতদের মাধ্যমেই। নবজাগরণের সময় বহু সাহিত্যিক ও পণ্ডিতদের দ্বারা এ ভাষা পূর্ণতা লাভ করে।

    এর পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীর পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দা আস্‌সুম্পসাঁউ এর রচিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদে সাধু ভাষার আংশিক প্রয়োগ দেখা যায়। তিনি লিখেছেন,

    এ কারণে আমারে বিদাএ দিও আমি রাইত্রে থাকিতে যাইব।[৯][১০]

    এখানে পরিপূর্ণ সাধু ভাষা পরিলক্ষিত হয় না। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ দেশীয় পণ্ডিতদের লেখার ভঙ্গিই সাধু ভাষার আদর্শ রূপ ধরে নেয়া হয়।

    শব্দ ও পদপ্রকরণ

    সাধু ভাষার সঙ্গে চলিত ভাষার মূল পার্থক্য হয় সর্বনামক্রিয়াপদে। এছাড়াও বিশেষ্য পদের পার্থক্যও লক্ষণীয়। প্রমিত বা চলিত বাংলায় বিশেষ্য পদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদ্ভব হয় কিন্তু সাধু ভাষায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা তৎসম বা সংস্কৃত উৎসজাত হয়ে থাকে। তবে এ ভাষায় অসংস্কৃত বা বিদেশি শব্দ যে একেবারেই প্রবেশ করতে পারে না এমন নয়। কখনো কখনো সাধু রীতিতে লিখিত রচনায় অনায়াসে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

    উদাহরণ

    সাধুচলিত
      সাধারণ বর্তমান (উত্তম পুরুষ)করিকরি
    ভাবিভাবি
    যাইযাই
      সাধারণ বর্তমান (মধ্যম পুরুষ)করকর
    ভাবভাব
    যাওযাও
      সাধারণ বর্তমান (নাম পুরুষ)করেকরে
    ভাবেভাবে
    যায়,যানযায়,যান
      সাধারণ অতীত (উত্তম পুরুষ)করিলামকরলাম
    ভাবিলামভাবলাম
    লিখিলামলিখলাম
      সাধারণ অতীত (মধ্যম পুরুষ)করিলেকরলে
    ভাবিলেভাবলে
    লিখিলেলিখলে
      সাধারণ অতীত (নাম পুরুষ)করিল, করিলেনকরল, করলেন
    ভাবিল,ভাবিলেনভাবল, ভাবলেন
    লিখিল, লিখিলেনলিখল, লিখলেন
      সাধারণ ভবিষ্যৎ(উত্তম পুরুষ)লিখিবলিখব
    গ্রহণ করিবনিব
    পড়িব,পাঠ করিব,অধ্যয়ন করিবপড়ব
      সাধারণ ভবিষ্যৎ (মধ্যম পুরুষ ও নাম পুরুষ)করিবে, করিবেনকরবে, করবে
    গাহিবে, গাহিবেনগাবে, গাবেন
    লিখিবে,লিখিবেনলিখবে, লিখবেন
      ঘটমান বর্তমানলিখিতেছিলিখছি
    করিতেছেকরছি
    লম্ফ প্রদান করিতেছেলাফ দিচ্ছে
      ঘটমান অতীতশুনিতেছিলশুনছিল বা শুনছিলো
    পড়িতেছিলামপড়ছিলাম
      ঘটমান ভবিষ্যৎদৌড়াইতে থাকিবে,ধাবন করিতে থাকিবেদৌড়াতে থাকবে
    পড়িতে থাকিবপড়তে থাকব
      পুরাঘটিত বর্তমানকরিয়াছেন, করিয়াছেকরেছেন, করেছে
    হইয়াছেহয়েছে
      পুরাঘটিত অতীতদেখিয়াছিলামদেখেছিলাম
    শুনিয়াছিল,শুনিয়াছিলোশুনেছিল
      পুরাঘটিত ভবিষ্যৎদেখিয়া থাকিবেদেখে থাকবে
    শুনিয়া থাকিবেশুনে থাকবে
     নিত্যবৃত্ত অতীতযাইতামযেতাম
    ভ্রমণ করিতামবেড়াতাম, ঘুরতাম
      অসমাপিকাশুনিয়াশুনে
    শুনিতেশুনতে
    ভাবিয়াভেবে
    ভাবিতেভাবতে

    উল্লেখ্য যে ভাষার সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সাধু ভাষায় অনেক চলিত ক্রিয়াপদের রূপ যৌগিক ধাতু থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াপদ দ্বারা নির্দেশ করা হয়।যেমন: নিব (চলিত) আর গ্রহণ করিব (সাধু)। অথবা “খাব” সাধু ভাষায় “ভক্ষণ করিব” হতে পারে। সাধু থেকে চলিত ভাষার ক্রিয়াপদে রূপান্তরিত হওয়ার সময় অসমাপিকা ক্রিয়ার যে পরিবর্তন দেখা যায় সাধারণত তা ধ্বনি পরিবর্তনের “অভিশ্রুতি” নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন:বলিয়া(সাধু) > বলে(চলিত), ভাবিয়া(সাধু) > ভেবে(চলিত) । আবার সাধু-চলিতে অনেক ক্রিয়াপদের পার্থক্য ধ্বনি-পরিবর্তনের “হ-কার লোপ” নিয়ম দ্বারা নিরূপণ করা যায়। যেমন: গাহিবে (সাধু)> গাবে (চলিত) , চাহে (সাধু) > চায় (চলিত) ইত্যাদি।

    অন্যান্য

    সর্বনামবিশেষ্যঅব্যয়
    সাধুচলিতসাধুচলিতসাধুচলিত
    তাহারতারহস্তহাতঅদ্যআজ
    তাহাদেরতাদেরকর্ণকানতজ্জন্যসে কারণে
    তাহারাতারানাসিকানাকঅদ্যাপিআজও
    তাহাকেতাকেওষ্ঠঠোঁটকদাচ, কদাচিৎকখনো
    কাটিছেএরাকফোণিকনুইতথাপিতবুও
    ইহাদের,ইহাদিগেরএদের‌ মণিবন্ধ‌‌ কবজিনচেৎ,নতুবানইলে,নাহলে
    উহারাওরাঘৃতঘিপ্রায়শ,প্রায়শঃপ্রায়ই
    উহাদের,উহাদিগেরওদেরব্যাঘ্রবাঘযদ্যপিযদিও
    যাহাযাশৃগালশেয়ালকুত্রাপিকোথাও
    তাহাতাহস্তীহাতিকিঞ্চিৎকিছু, কিছুটা, কিঞ্চিৎ
    যাহাদেরযাদেরপক্ষীপাখিইত্যবসরেএই সুযোগে
    কাহাদেরকাকেমৎস্যমাছইত্যবকাশেএই সুযোগে
    কেহকেউঅগ্নিআগুনযদর্থেযে কারণে

    কখনো কখনো ধ্বনি-পরিবর্তনের বিভিন্ন নিয়ম দিয়ে সাধু ও চলিতের শব্দগত পার্থক্য বিচার করা যায়।যেমন: “অন্ত্যস্বরাগম” নিয়মানুযায়ী সত্য > সত্যি। উল্লেখ্য যে “সত্য” শব্দটি সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা উভয়েই ব্যবহৃত হয় । “আদি স্বরাগম” এর নিয়মানুযায়ী স্পর্ধা (সাধু তবে চলিতেও ব্যবহৃত হয়) > আস্পর্ধা (চলিতে অধিক ব্যবহৃত) ।

    প্রয়োগ

    উনিশ শতকে বাংলা গদ্যের প্রসারকালে সাধু ভাষার দুটি রূপ দেখা গিয়েছিল : বিদ্যাসাগরী ও বঙ্কিমী।[১১] প্রথমটিতে খ্যাত ছিলেন বাংলা গদ্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং সেই সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্ত। তাদের ভাষা বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দবহুল, যাতে অসংস্কৃত শব্দ পরিহারের প্রয়াস দেখা যায়।[১২] কিন্তু দ্বিতীয় রূপের প্রধান পুরুষ বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা সংস্কৃত শব্দবহুল হলেও তা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সে ভাষায় অসংস্কৃত শব্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল না।[১৩] বঙ্কিমী সাধু ভাষায়ই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, দীনেশচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ সাহিত্যিকের গ্রন্থাবলি রচিত হয়; এছাড়া সমসাময়িক সাহিত্যেও কমবেশি এ ভাষা ব্যবহূত হয়েছে। এভাবে এক সময় সাধু ভাষা বাংলার আদর্শ লেখ্য ভাষা হয়ে ওঠে। সমগ্র বঙ্গদেশে তখন গদ্য-লেখায় ও চিঠি-পত্রাদিতে প্রায়শ এই ভাষা ব্যবহূত হতো; সরকারি কাজকর্ম, বিশেষত আইন-সংশি­ষ্ট দস্তাবেজে এর প্রয়োগ ছিল সর্বাধিক। বর্তমানে দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সাহিত্যে এ ভাষার প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

    উদাহরণ

    বিদ্যাসাগরী ও বঙ্কিমী সাধু ভাষার দুটি উদাহরণ হলো:

    ‘এই পরম রমণীয় স্থানে কিয়ৎক্ষণ সঞ্চরণ করিয়া, রাজকুমার অশ্ব হইতে অবতীর্ণ হইলেন এবং সমীপবর্তী বকুলবৃক্ষের স্কন্ধে অশ্ববন্ধন ও সরোবরে অবগাহনপূর্বক, স্নান করিলেন; অনন্তর, অনতিদূরবর্তী দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দিরে প্রবেশপূর্বক দর্শন, পূজা, ও প্রণাম করিয়া কিয়ৎক্ষণ পরে বহির্গত হইলেন।’ (বেতালপঞ্চবিংশতি)[১৪]

    অন্যটি হলো:

    ‘অনেক দিন আনন্দোত্থিত সঙ্গীত শুনি নাই, অনেক দিন আনন্দ অনুভব করি নাই। যৌবনে যখন পৃথিবী সুন্দর ছিল, যখন প্রতি পুষ্পে পুষ্পে সুগন্ধ পাইতাম, প্রতি পত্রমর্মরে মধুর শব্দ শুনিতাম, প্রতি নক্ষত্রে চিত্রা-রোহিণীর শোভা দেখিতাম, প্রতি মনুষ্য-মুখে সরলতা দেখিতাম, তখন আনন্দ ছিল। পৃথিবী এখনো তাই আছে, কিন্তু এ হৃদয় আর তাই নাই।’(কৃষ্ণকান্তের উইল)[১৫]

    বিলোপন

    বর্তমানে সাধু ভাষার ব্যবহার তেমন নেই বললেই চলে। তবে কিছু পুরাতন কাগজসমূহে সংস্কারের অভাবে সাধু ভাষা রয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্মুদ্রণ না করায় এমন ঘটেছে। যেমন: জমির দলিলে এখনো সাধু ভাষা দেখতে পাওয়া যায়। তবে সাধু ভাষা যে একসময় অব্যবহৃত হয়ে পড়বে তা দূরদর্শী লেখকগণ পূর্বেই অবহিত করার চেষ্টা করেছেন।

    রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,

    রূপকথায় বলে এক-যে ছিল রাজা, তার দুই ছিল রানী,সুয়োরানী আর দুয়োরানী। তেমনি বাংলাবাক্যাধীপেরও আছে দুই রানী-একটাকে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে সাধু ভাষা;আর একটাকে কথ্য ভাষা,কেউ বলে চলতি ভাষা, আমার কোনো কোনো লেখায় আমি বলেছি প্রাকৃত বাংলা।[১৬]

    রবীন্দ্রনাথ আভিজাত্যের জন্য সাধু ভাষাকে সুয়োরানির সঙ্গে তুলনা করেছেন কিন্তু পরিণতিতে এর বিলুপ্তির কথাও বলেছেন।

    রূপকথায় শুনেছি,সুয়োরানী ঠাঁই দেয় দুয়োরানীকে গোয়ালঘরে। কিন্তু গল্পের পরিণামের দিকে দেখি সুয়োরানী যায় নির্বাসনে , টিকে থাকে একলা দুয়োরানী রানীর পদে। বাংলায় চলতি ভাষা বহু কাল ধরে জায়গা পেয়েছে সাধারণ মাটির ঘরে , হেঁশেলের সঙ্গে, গোয়ালের ধারে, গোবর-নিকোনো আঙিনার পাশে , যেখানে সন্ধেবেলায় প্রদীপ জ্বালানো হয় তুলসীতলায় আর বোষ্টমী এসে নাম শুনিয়ে যায় ভোরবেলাতে। গল্পের শেষ অংশটা এখনো সম্পূর্ণ আসে নি, কিন্তু আমার বিশ্বাস সুয়োরানী নেবেন বিদায় আর একলা দুয়োরানী বসবেন রাজাসনে।[১৭]

    ঔপনিবেশিক যুগেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে সাধু ভাষার ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও এর প্রাঞ্জলতা ও প্রাণের স্ফূর্তির অভাব নিয়ে নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক বিখ্যাত লেখকগণই (বিশেষত প্রমথ চৌধুরী) সহজবোধ্যতার জন্য চলিত ভাষাকেই আদর্শ জ্ঞান করতেন। এমনকি প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধু ভাষায় লিখলেও পরবর্তীতে তিনিও লেখার জন্য গ্রহণ করে নেন চলিত ভাষাকেই। এভাবে সময়ের সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রে চলিত ভাষা গ্রহণীয় হয়ে উঠতে থাকে আর হ্রাস পেতে থাকে সাধু ভাষার প্রয়োগ।

    অন্যান্য

    বাংলাদেশি লেখক, সমালোচক ও বুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান ২০০৫ সাল থেকে সাধু ভাষায় লেখালিখি করছেন।[১৮]

    আরও দেখুন

  • সর্বনাম

    সর্বনাম অর্থ সর্বের নাম (ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস)। সাধারণ অর্থ সবার নাম বা সবার সংজ্ঞা। প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে এটি একটি পদ হিসাবে স্বীকৃত। যা একটি অনুচ্ছেদে বিশেষ্য পদের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিকল্প শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয় [ক]। যেমনঃ

    • সর্বনামহীন প্রাথমিক রূপ : আফতাব ভালো ছেলে। আফতাব লেখাপড়া করে।
    • সর্বনামযুক্ত রূপ : আফতাব ভালো ছেলে। সে লেখাপড়া করে।

    সর্বনাম পদের উদাহরণ

    সংজ্ঞা

    বাংলা ব্যাকরণ মতেঃ– বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে।[১][২]
    আদিতে বাংলা ব্যাকরণের সর্বনাম পদের সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছিলঃ– সংস্কৃত তথা পাণিনির ব্যাকরণ অনুসারে[খ]। কিন্তু পাণিনির নির্ধারিত সংজ্ঞা ও তার উদাহরণ সংস্কৃত ভাষার জন্য উপযুক্ত হলেও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তা সর্বার্থে ব্যবহার করা যায় না।

    বাংলা সর্বনামগুলির সঙ্গে ইংরাজি সর্বনামগুলির কিছুটা সাদৃশ্য আছে । এখানে প্রথম পুরুষ, দ্বিতীয় পুরুষ এবং তৃতীয় পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা শব্দ ব্যবহার হয়। এই রীতি একবচন ও বহুবচন, এই দুইয়ের ক্ষেত্রেও শব্দগুলির ইংরাজি প্রতিরূপগুলির মত লিঙ্গভেদে পার্থক্য হয় না। অর্থাৎ, সে(পুং) বা সে(স্ত্রী) এই দুই ক্ষেত্রে একই সর্বনাম ব্যবহার হয়, কিন্তু নৈকট্যর জন্য, তৃতীয় পুরুষের ব্যবহার বিভিন্ন হয় ।

    সর্বনামের শ্রেণীবিভাজন

    সর্বনাম বাক্যের ভিতরে বিভিন্ন নির্দেশনার সূত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলতঃ বাক্যের ভিতর সর্বনামগুলোর প্রকৃতি কিরূপ হবে, তার উপর ভিত্তি করে সর্বনামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।[৪] যেমনঃ

    ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক সর্বনাম ( Personal Pronoun )

    যে সকল সর্বনাম ব্যক্তিবিশেষের বা ব্যক্তিসমূহকে নির্দেশ করে বা এদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তাদেরকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলা হয়। এরই অপর নাম পুরুষবাচক সর্বনাম। এটি তিনটি ধারায় বিন্যস্তঃ

    • মানুষ্যবাচক(সংজ্ঞা‌বাচক) : নাহিদ ভালো ছেলে। নাহিদের অনেক বন্ধু আছে। নাহিদ ভালো ছেলে। তার (বা এর) অনেক বন্ধু আছে।
    • প্রাণীবাচক : গরু চতুষ্পদী প্রাণী। গরুর একটি লেজ আছে। গরু চতুষ্পদী প্রাণী। এর একটি লেজ আছে।
    • বস্তুবাচক : বইটি দেখ। বইটির মলাটের রঙ লাল। বইটি দেখ। এর মলাটের রঙ লাল।

    আত্মবাচক সর্বনাম (Reflexive Pronoun )

    যে সকল সর্বনামের কর্তা নিজেই কর্মের অধীনে চলে যায় তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বুঝায়। ব্যক্তিবাচক সর্বনামের ক্ষেত্রে আমরা দেখি কর্তা কাজ করে বা করায়, কিন্তু নিজেকে সুদৃঢ়ভাবে কর্মের ভিতর বিলীন করে দেয় না। আত্মবাচক সর্বনাম সুদৃঢ়ভাবকে প্রকাশ করে [গ]। যেমনঃ আমি নিজেই অফিস করি।
    কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তা নিজেই ক্রিয়ার অংশ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আত্মবাচক সর্বনাম অনিবার্যভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে। যেমন- কাজটি আপনিই শেষ হয়ে গেল এক্ষেত্রে কাজটির আত্মবাচক সর্বনাম হলো আপনিই এবং তা সম্পন্ন হয় নিজে নিজেই। এই কারণে এই জাতীয় সর্বনাম হবে আত্মবাচক (স্ব-সিদ্ধ)।

    সামীপ্যবাচক (Near Demonstrative Pronoun)

    সামীপ্য-নির্দেশবাচক প্রচ্ছন্ন নির্দেশ বহন করে এবং নৈকট্য প্রকাশ করে। যেমনঃ ওই দেখা যায় তাল গাছ এখানে উত্তর, দক্ষিণ ইত্যাদি সুইনির্দিষ্ট কোন বিশেষ্যের পরিবর্তে বসেছে এবং দূরত্ব ও দিকের বিচারে নৈকট্য প্রকাশ করে [ঘ][৪]। সামীপ্য-নির্দেশবাচক সর্বনামের বিভিন্নতা নিম্মরূপঃ

    • প্রত্যক্ষ : অই বিষয় আমি স্বয়ং শুনেছি।
    • পরোক্ষ : অই বিষয় আমি লোকমুখে শুনেছি।
    • নিকটস্থ : ধেনু চরায়ে অই কাননে অদূর।
    • দূরস্থিত : অই দেখা যায় তাল গাছ
    • নির্দেশক (বিষয়): অই দুঃখে আমার দিন রাত যায়।
    • (ব্যক্তি) : অই কি জানে স্ত্রীকলা। কবিকঙ্কন – চণ্ডী।
    • বুদ্ধিস্থ : অই মম তপ, অই মম জপ। (স্বপ্নপ্রয়াণ/দ্বিজ্রেনাথ ঠাকুর)
    • দশাস্থ : ওই দুঃখে আমার জনম গেল। ওই অবস্থা থেকে আমার মুক্তি নেই। [৫]

    সাকল্যবাচক সর্বনাম (Inclusive Pronoun)

    যে সকল সর্বনাম দ্বারা সমষ্টিগত ভাব প্রকাশ পায়, তাকেই সাকল্যবাচক সর্বনাম বলা হয়। যেমন- আদ্যোপান্ত, সকল, সব, সবাই, সমুদয়, তাবত্। যেমনঃ আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায় [ঙ][৫]

    প্রশ্নবাচক সর্বনাম (Interrogative Pronoun)

    যে সকল সর্বনাম দ্বারা বক্তার প্রশ্ন প্রকাশ পায় বা নির্দেশিত হয়, তাদেরকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম বলা হয়। এই শ্রেনীবিন্যাসের মাঝের সর্বনামগুলো- কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কাহাদের, কাদের, কিসে, কে কে, কি কি, কোন কোন, কার কার। প্রশ্নের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে এই সর্বনামগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলোঃ

    • সাধারণ প্রশ্নবাচকঃ কোন বিষয়ে খোঁজ খবর করার জন্য ব্যবহৃত সাধারণ প্রশ্নবাচক সর্বনাম। যেমনঃ কে, কি, কি হেতু, কি কারণে ইত্যাদি।
    • প্রশ্ন-বিস্ময়সূচকঃ প্রশ্নবাচক সর্বনাম শুধুমাত্র প্রশ্নকেই প্রকাশ করে সীমাবদ্ধ থাকে না, একইসাথে বিস্ময় প্রকাশ ও করে থাকে এই সর্বনামের ব্যবহার রয়েছে। যেমনঃ কী কথা বলিস তুই, আমি যে তোর ভাষা বুঝি নে (চণ্ডালিকা। রবী্ন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
    • অনিশ্চয়তাবাচকঃ যে সকল প্রশ্নবাচক সর্বনাম দ্বারা প্রশ্নকর্তার অনিশ্চিয়তা প্রকাশ পায়, তাকে অনিশ্চয়তাবাচক বলা হয়। যেমনঃ কেউ-কি আমার কথা শুনছো?
    • ব্যতিহারঃ একই শব্দ দুই বার উল্লেখ করে প্রকাশ করার পদ্ধতিগত নাম হলো ব্যতিহার। প্রশ্নবাচক সর্বনামে এই জাতীয় শব্দ পাওয়া যায়। যেমনঃ কে কে, কোন কোন। [৬]

    অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক সর্বনাম (Indefinite Pronoun)

    যে সকল সর্বনামের দ্বারা কোন সুনির্দিষ্ট দিকের পরিবর্তে অনির্দিষ্ট দিককে নিদের্শিত করে, তাদেরকে অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক সর্বনাম বলে। যেমনঃ কে, কার, কিছু, কেউ, কেহ, কোন। উদাহরণঃ কে আসবে না আসবে, আমি তার কিছু জানি না [চ][৭]

    সাপেক্ষ সর্বনাম (Relative Pronoun)

    যে সকল সর্বনাম দ্বারা একটি বাক্যের সাপেক্ষে অন্য বাক্যকে যুক্ত করা হয়, তাদেরকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলা হয়। এই সর্বনাম মূলত বাক্যাংশকে যুক্ত করে ফলে এর বৈশিষ্ট্য দাঁড়ায় অনেকটা সংযোজক অব্যয়ের মতো। যেমনঃ এই সেই লোক, যে গতকাল এখানে এসেছিল।[৭]

    অন্যাদিবাচক সর্বনাম (Denoting other or others)

    যে সকল সর্বনাম দ্বারা অন্য, অপর, ভিন্ন, অসদৃশ্য, অন্যপ্রকার, অধিক ইত্যাদি নির্দেশিত হয়, সে সকল সর্বনামকে অন্যাদিবাচক সর্বনাম বলা হয়। যেমন: অন্য, অপর, ভিন্ন।

    • অন্য (ভিন্নতর) : এ কথা রেখে অন্য কথা বল।
    • অন্যপ্রকার : এটা আগেটার মতো নয়, অন্য রকম।
    • অধিক, আরও : এছাড়াও অন্য কথা আছে।[৭]

    অনিশ্চয়বাচক যৌগিক সর্বনাম ( Indefinite Compound Pronoun)

    যখন একাধিক শব্দ একত্রিত হয়ে একটি সর্বনাম তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক সর্বনাম বলে। যেমন- অন্য-কিছু, অন্য-কেউ, আর-কিছু, আর-কেউ, কেউ-না-কেউ, কেউ-বা, যা-কিছু, যা-তা, যে-কেউ, যে-কোন, যে-সে।[৭]

    আরোও দেখুন

    A.g

    টীকা

    সর্বনাম শুধু শব্দের পরিবর্তে বসে না, কোন বিশেষ্য বাচক বাক্য বা বাক্যাংশের পরিবর্তেও বসে। যেমন- গতদিনে তুমি যা বলেছিলে, তা সব ভুলে গেছি। এখানে ‘তা’ সর্বনামটি ‘গত দিনে তুমি যা বলেছিলে’ -এর পরিবর্তে বসেছে। পাণিনির মতেঃসর্বনাম হলো সব কিছুর নাম বা সংজ্ঞা। এই সংজ্ঞা দ্বারা সর্বনামের প্রকৃত অর্থ পাওয়া যায়। সর্বনামের সার্বিক প্রকৃতি বুঝতে হলে পাণিনিকৃত সর্বনামের প্রকরণগুলো ভালভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। পাণিনি সর্বনামগুলোকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছেন। যেগুলো হলো– সব্বাদি, অন্যাদি, পূব্বাদি, যদাদি ও ইদিমাদি। এই ভাগগুলোরও রয়েছে একাধিক উপবিভাগ। এই সকল ভাগ ও উপভাগের বিচারে সর্বনামের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ৪১টি। এর ভিতরে প্রাথমিক বিচারে সর্বনাম সংখ্যা ৩৩টি। এগুলো হলো- সব্ব, বিশ্ব, উভ, উভয়, অন্য, অন্যতর, ইতর, ত্বত্, ত্ব, নেম, সম, সিম, পূব্ব, পর, অবর, দক্ষিণ, উত্তর, অপর, অধর, স্ব, অন্তর, ত্যদ্ তদ্, যদ্, এতদ্, ইদম, অদস্, এক, দ্বি, যুষ্মদ, অষ্মদ, ভবত্ ও ও কিম্। এছাড়া কিম্, যদ্, তদ্ ও এক শব্দের পরে ডতর ও ডতম প্রত্যয় করলে মোট আটটি পদ পাওয়া যায়। এই পদগুলো হলো- কতর, কতম, যতর, যতম, ততর, ততম, একতর, একতম।[৩] কোনো ব্যক্তি যদি বলেন- আমি অফিস করি। এখানে আমি ব্যক্তিবাচক সর্বনাম। এখানে আমরা বুঝি যে কর্তার অফিসের কাজ অন্য কেউ করে না বা কর্তা অফিসের কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করায় না। কিন্তু এই বাক্যটি যদি কেউ বলেন- আমি নিজেই অফিস করি। এক্ষত্রে নিজেই শব্দের দ্বারা কর্তা প্রত্যক্ষভাবে কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং ওই ভাবকে সুদৃঢ়ভাবে প্রকাশ করে। নিকটস্থ, দূরস্থিত সর্বনামগুলো দিকের বিচারে সুনির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট হতে পারে। সুনির্দিষ্ট বলতে বক্তা জানেন এমন দিক বুঝায়। যেমন- ধেনু চরায়ে অই কাননে অদূর এখানে বক্তা জানেন কানন কোন দিকে। কিন্তু ওই কুহরিল পিক ললিত উচ্ছ্বাসে (হেমচন্দ্র)- বাক্যে জানা যায় না যে, কোকিল ঠিক কোন দিকে কুহরিল। ব্যাখ্যাঃ আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়

    • এখানে সকল বলতে বুঝানো হয়েছে সাকল্য। সমষ্টিগত পরিচয় যায়, এমন বিশেষ্যের পরিবর্তে এই সর্বনাম ব্যবহৃত হয়।
    • এই সর্বনাম কোন না কোন ব্যক্তিবাচ্য সর্বনামকে অনুসরণ করে, এক্ষেত্রে ব্যক্তিবাচ্য উহ্য রয়েছে (কোনো কোনো সময় উহ্য থাকতেও পারে)। যেমন- আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়।

    কিন্তু বিষয়টি যখন একাধিক ভাব প্রকাশ করে, তখন একই সর্বনাম দুইবার ব্যবহার করা হয়। যেমন-কেকে, কার কার, কিছু কিছু, কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে কে কে আসবে না আসবে, আমি তার কিছু জানি না বাক্যটি একাধিক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলা যায়, এবং এই কে কে বহুবচন নয় ব্যতিহারিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

  • সন্ধি

    সন্ধি বাংলা ব্যাকরণে শব্দগঠনের একটি মাধ্যম। এর অর্থ মিলন। সন্নিহিত দুটি ধ্বনি মিলিয়ে একটি ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধি‬ বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ব অংশে আলোচিত হয়। ধ্বনিগত মাধুর্য এবং স্বাভাবিক‬ উচ্চারণে সহজপ্রবণতা সন্ধির উদ্দেশ্য। যেকোনো পদের সঙ্গে সন্ধি হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হতে পারে। তবে বাংলা অব্যয় পদের সঙ্গে সন্ধি হয় না।

    সন্ধির দ্বারা দুটি শব্দকে মিলিয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়। যেমন- দেব শব্দটির অর্থ দেবতা এবং আলয় শব্দের অর্থ গৃহ। এই দুটি শব্দ মিলে তৈরি হয় দেবালয়, যার অর্থ দেবতার থাকার স্থান বা ঘর।

    ধারণা

    সন্ধি শব্দটির বিশ্লেষিত রূপ সম + √ধি + ই,[ক][১] অর্থাৎ‍ সমদিকে ধাবিত হওয়া বা মিলিত হওয়া। বাংলা ব্যাকরণমতে, দুটি শব্দের মধ্যে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনি যদি একইভাবে উচ্চারিত হয় বা তাদের উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি হয় তবে ধ্বনিদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত হওয়া অর্থাৎ‍ শব্দ দুটি মিলিত হয়ে এক শব্দে পরিণত হলে সেখানে সন্ধি হয়।[২] উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। এখানে বিদ্যাআলয় শব্দদ্বয় মিলিত হয়ে বিদ্যালয় শব্দটি গঠন করেছে।

    উদ্দ্যেশ্য

    সন্ধির উদ্দ্যেশ্য হলো:

    • বাক্যকে সুন্দর, প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য করা।
    • নতুন শব্দ তৈরি করা।
    • শব্দকে সংক্ষিপ্ত করা।
    • বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করা।
    • উচ্চারণে স্বাচ্ছন্দ্য আসে।
    • ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষা করা।

    প্রকারভেদ

    সন্ধি প্রধানত দুই প্রকার।

    • বাংলা সন্ধি
    • তৎসম সন্ধি

    বাংলা সন্ধি ২ প্রকার।

    • স্বরসন্ধি (নিচে দেখুন)
    • ব্যঞ্জনসন্ধি (নিচে দেখুন)

    তৎসম সন্ধি তিন প্রকার।

    স্বরসন্ধি

    স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে স্বরসন্ধি হয়। যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন (সিংহ = স্‌+ই+ং+হ্‌+অ ; আসন = আ+স্‌+অ+ন্‌+অ), বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয়, হিমালয় = হিম + আলয়। নিয়ম

    ১. অ/আ + অ/আ = আ

    উদাহরণ: সিংহাসন = সিংহ + আসন (স্‌+ই+ং+হ্‌+অ + আ+স্‌+অ+ন্‌+অ = স্‌+ই+ং+হ্‌++স্‌+অ+ন্‌+অ = সিংহাসন)

    ২. ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ

    উদাহরণ: সতীশ = সতী + ঈশ (স্‌+অ+ত্‌+ঈ + ঈ+শ্‌+অ = স্‌+অ+ত্‌++শ্‌+অ = সতীশ)

    উ/ঊ + উ/ঊ =ঊ

    উদাহরণ: বধূৎসব = বধূ + উৎসব ব্‌+অ+ধ্‌+ঊ + উ+ত্‌+স্‌+অ+ব্‌+অ = ব্‌+অ+ধ্‌++ত্‌+স্‌+অ+ব্‌+অ = বধূৎসব)

    ৪. অ/আ + ই/ঈ = এ

    উদাহরণ: মহেশ = মহা + ঈশ (ম্‌+অ+হ্‌+আ + ঈ+শ্‌+অ = ম্‌+অ+হ্‌++শ্‌+অ = মহেশ)

    ৫. অ/আ + উ/ঊ = ও

    উদাহরণ: বঙ্গোপসাগর = বঙ্গ + উপসাগর (ব্‌+অ+ঙ্‌+গ্‌+অ + উ+প্‌+অ+স্‌+আ+গ্‌+অ+র্‌+অ = ব্‌+অ+ঙ্‌+গ্‌++প্‌+অ+স্‌+আ+গ্‌+অ+র্‌+অ = বঙ্গোপসাগর)

    ৬. অ/আ + ঋ = অর্‌

    উদাহরণ: সপ্তর্ষি = সপ্ত + ঋষি (স্‌+অ+প্‌+ত্‌+অ + ঋ+ষ্‌+ই = স্‌+অ+প্‌+ত্‌++র্‌+ষ্‌+ই = সপ্তর্ষি)

    ৭.আ/আ + ঋত = আর্

    উদাহরণ: ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত

    ৮. অ/আ + এ/ঐ = ঐ

    উদাহরণ: জনৈক = জন + এক

    ৯. অ/আ + ও/ঔ = ঔ

    উদাহরণ: পরমৌষধ = পরম + ঔষধ

    ১০. ই/ঈ + ই/ঈ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্য‍

    উদাহরণ: ন্যূন = নি + ঊন

    ১১. উ/ঊ + উ/ঊ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্ব

    উদাহরণ: অনু + অয় = অন্বয়

    ১২. ঋ + ঋ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্র্

    উদাহরণ: পিত্রিচ্ছা = পিতৃ + ইচ্ছা

    ১৩. এ + অন্য স্বরবর্ণ = অয়্‌

    উদাহরণ: নয়ন = নে + অন

    ১৪. ঐ + অন্য স্বরবর্ণ = আয়্‌

    উদাহরণ: গায়ক = গৈ + অক

    ১৫. ও + অন্য স্বরবর্ণ = অব্‌

    উদাহরণ: গবেষণা = গো + এষণা

    ১৬.ঔ + ও/ঔ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ= আব্‌ =
    

    উদাহরণ: নাবিক = নৌ + ইক

    ব্যঞ্জনসন্ধি

    স্বরে আর ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে‬ ও ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও স্বরে সন্ধি হলে ব্যঞ্জন সন্ধি হয়। যেমন, বিপজ্জনক = বিপদ + জনক (বিপদ = ব্‌+ই+প্‌+অ+দ্‌+অ; জনক = জ্‌+অ+ন্‌+অ+ক্‌+অ)। ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত কথ্য রীতিতে সীমাবদ্ধ। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি মূলত সমীভবনের নিয়মে হয়ে থাকে। নিয়ম

    ১. বর্গের প্রথম বর্ণ (ক, চ, ট, ত/ৎ, প) + স্বরবর্ণ = বর্গের তৃতীয় বর্ণ (গ, জ, ড/ড়, দ, ব)

    ষড়ঋতু = ষট্‌ + ঋত

    ২. বর্গের প্রথম বর্ণ + বর্গের পঞ্চম বর্ণ = বর্গের প্রথম বর্ণ বদলে সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয়

    মৃন্ময় = মৃৎ + ময়

    ৩. ত/দ + জ/ঝ = জ্জ/জ্ঝ

    বিপজ্জনক = বিপদ্ + জনক

    ৪. ত/দ + চ/ছ = চ্চ/চ্ছ

    উচ্ছেদ = উৎ + ছেদ

    ৫. ত/দ + ল = ল্ল

    তল্লিখিত = তদ্‌ + লিখিত

    ৬. ম + স্পর্শবর্ণ (ক-ম) = ম বদলে ং হয়, অথবা যেই বর্গের স্পর্শবর্ণ সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয়

    সংগীত/সঙ্গীত = সম্‌ + গীত

    ৭. ম + অন্তঃস্থ বর্ণ (য, র, ল, ব)/ উষ্মবর্ণ (শ, ষ, স, হ) = ম বদলে ং হয়

    বশংবদ = বশম্‌ + বদ

    ৮. স্বরবর্ণ + ছ = চ্ছ

    পরিচ্ছেদ = পরি + ছেদ

    ৯. ত/দ + হ = দ্ধ

    উদ্ধত = উৎ + হত

    ১০. ত-বর্গীয় বর্ণ (ত, থ, দ, ধ) + শ = চ্ছ

    উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস

    ১১. শ/ষ + ত = ষ্ট

    দৃষ্টি = দৃশ্‌ + তি

    ১২. শ/ষ + থ = ষ্ঠ

    ষষ্ঠ = ষষ + থ

    বিসর্গসন্ধি

    বিসর্গসন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বিসর্গ সন্ধির প্রকারভেদগুলো হচ্ছেঃ র জাত বিসর্গ এবং স জাত বিসর্গ। বিসর্গসন্ধি র্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন, আশীর্বাদ = আশীঃ + বাদ (আশীঃ = আ+শ্‌+ঈ+ঃ; বাদ = ব্‌+আ+দ্‌+অ)

    নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি

    যেসব সন্ধিসমূহ স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি বা বিসর্গসন্ধির নিয়মগুলো মেনে চলে না, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। তৎসম শব্দের সন্ধিতেই শুধু নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি হয়। যেমন,

    • নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “স্বরসন্ধি”

    কুল+অটা= কুলটা, গো+অক্ষ= গবাক্ষ, প্র+ঊঢ়= প্রৌঢ়, অন্য+অন্য= অন্যান্য, মার্ত+অণ্ড= মার্তণ্ড, শুদ্ধ+ওদন= শুদ্ধোদন।

    • নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “ব্যঞ্জনসন্ধি”

    আ+চর্য= আশ্চর্য, গো+পদ= গোষ্পদ, বন+পতি= বনস্পতি, বৃহৎ+পতি= বৃহস্পতি, তৎ+কর= তস্কর, পর+পর= পরস্পর, মনস্+ঈষা= মনীষা, ষট্+দশ= ষোড়শ, এক+দশ= একাদশ, পতৎ+অঞ্জলি= পতঞ্জলি।

    নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “বিসর্গ সন্ধি”

    অহঃ+অহ = অহরহ, অহঃ+নিশ = অহর্নিশ, আঃ+পদ = আস্পদ।[৪]

    টীকা

    এটি সংস্কৃত ভাষায় বিশ্লেষিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এর অর্থ অন্য আরেকটি। আর ‘’ চিহ্নটি ধাতুদ্যোতক বোঝায়। বাংলা সন্ধিতে কখনো বির্সগ সন্ধি হয় না।[৩]

  • সন্ধি

    সন্ধি বাংলা ব্যাকরণে শব্দগঠনের একটি মাধ্যম। এর অর্থ মিলন। সন্নিহিত দুটি ধ্বনি মিলিয়ে একটি ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধি‬ বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ব অংশে আলোচিত হয়। ধ্বনিগত মাধুর্য এবং স্বাভাবিক‬ উচ্চারণে সহজপ্রবণতা সন্ধির উদ্দেশ্য। যেকোনো পদের সঙ্গে সন্ধি হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হতে পারে। তবে বাংলা অব্যয় পদের সঙ্গে সন্ধি হয় না।

    সন্ধির দ্বারা দুটি শব্দকে মিলিয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়। যেমন- দেব শব্দটির অর্থ দেবতা এবং আলয় শব্দের অর্থ গৃহ। এই দুটি শব্দ মিলে তৈরি হয় দেবালয়, যার অর্থ দেবতার থাকার স্থান বা ঘর।

    ধারণা

    সন্ধি শব্দটির বিশ্লেষিত রূপ সম + √ধি + ই,[ক][১] অর্থাৎ‍ সমদিকে ধাবিত হওয়া বা মিলিত হওয়া। বাংলা ব্যাকরণমতে, দুটি শব্দের মধ্যে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনি যদি একইভাবে উচ্চারিত হয় বা তাদের উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি হয় তবে ধ্বনিদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত হওয়া অর্থাৎ‍ শব্দ দুটি মিলিত হয়ে এক শব্দে পরিণত হলে সেখানে সন্ধি হয়।[২] উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। এখানে বিদ্যাআলয় শব্দদ্বয় মিলিত হয়ে বিদ্যালয় শব্দটি গঠন করেছে।

    উদ্দ্যেশ্য

    সন্ধির উদ্দ্যেশ্য হলো:

    • বাক্যকে সুন্দর, প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য করা।
    • নতুন শব্দ তৈরি করা।
    • শব্দকে সংক্ষিপ্ত করা।
    • বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করা।
    • উচ্চারণে স্বাচ্ছন্দ্য আসে।
    • ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষা করা।

    প্রকারভেদ

    সন্ধি প্রধানত দুই প্রকার।

    • বাংলা সন্ধি
    • তৎসম সন্ধি

    বাংলা সন্ধি ২ প্রকার।

    • স্বরসন্ধি (নিচে দেখুন)
    • ব্যঞ্জনসন্ধি (নিচে দেখুন)

    তৎসম সন্ধি তিন প্রকার।

    স্বরসন্ধি

    স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে স্বরসন্ধি হয়। যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন (সিংহ = স্‌+ই+ং+হ্‌+অ ; আসন = আ+স্‌+অ+ন্‌+অ), বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয়, হিমালয় = হিম + আলয়। নিয়ম

    ১. অ/আ + অ/আ = আ

    উদাহরণ: সিংহাসন = সিংহ + আসন (স্‌+ই+ং+হ্‌+অ + আ+স্‌+অ+ন্‌+অ = স্‌+ই+ং+হ্‌++স্‌+অ+ন্‌+অ = সিংহাসন)

    ২. ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ

    উদাহরণ: সতীশ = সতী + ঈশ (স্‌+অ+ত্‌+ঈ + ঈ+শ্‌+অ = স্‌+অ+ত্‌++শ্‌+অ = সতীশ)

    উ/ঊ + উ/ঊ =ঊ

    উদাহরণ: বধূৎসব = বধূ + উৎসব ব্‌+অ+ধ্‌+ঊ + উ+ত্‌+স্‌+অ+ব্‌+অ = ব্‌+অ+ধ্‌++ত্‌+স্‌+অ+ব্‌+অ = বধূৎসব)

    ৪. অ/আ + ই/ঈ = এ

    উদাহরণ: মহেশ = মহা + ঈশ (ম্‌+অ+হ্‌+আ + ঈ+শ্‌+অ = ম্‌+অ+হ্‌++শ্‌+অ = মহেশ)

    ৫. অ/আ + উ/ঊ = ও

    উদাহরণ: বঙ্গোপসাগর = বঙ্গ + উপসাগর (ব্‌+অ+ঙ্‌+গ্‌+অ + উ+প্‌+অ+স্‌+আ+গ্‌+অ+র্‌+অ = ব্‌+অ+ঙ্‌+গ্‌++প্‌+অ+স্‌+আ+গ্‌+অ+র্‌+অ = বঙ্গোপসাগর)

    ৬. অ/আ + ঋ = অর্‌

    উদাহরণ: সপ্তর্ষি = সপ্ত + ঋষি (স্‌+অ+প্‌+ত্‌+অ + ঋ+ষ্‌+ই = স্‌+অ+প্‌+ত্‌++র্‌+ষ্‌+ই = সপ্তর্ষি)

    ৭.আ/আ + ঋত = আর্

    উদাহরণ: ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত

    ৮. অ/আ + এ/ঐ = ঐ

    উদাহরণ: জনৈক = জন + এক

    ৯. অ/আ + ও/ঔ = ঔ

    উদাহরণ: পরমৌষধ = পরম + ঔষধ

    ১০. ই/ঈ + ই/ঈ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্য‍

    উদাহরণ: ন্যূন = নি + ঊন

    ১১. উ/ঊ + উ/ঊ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্ব

    উদাহরণ: অনু + অয় = অন্বয়

    ১২. ঋ + ঋ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্র্

    উদাহরণ: পিত্রিচ্ছা = পিতৃ + ইচ্ছা

    ১৩. এ + অন্য স্বরবর্ণ = অয়্‌

    উদাহরণ: নয়ন = নে + অন

    ১৪. ঐ + অন্য স্বরবর্ণ = আয়্‌

    উদাহরণ: গায়ক = গৈ + অক

    ১৫. ও + অন্য স্বরবর্ণ = অব্‌

    উদাহরণ: গবেষণা = গো + এষণা

    ১৬.ঔ + ও/ঔ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ= আব্‌ =
    

    উদাহরণ: নাবিক = নৌ + ইক

    ব্যঞ্জনসন্ধি

    স্বরে আর ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে‬ ও ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও স্বরে সন্ধি হলে ব্যঞ্জন সন্ধি হয়। যেমন, বিপজ্জনক = বিপদ + জনক (বিপদ = ব্‌+ই+প্‌+অ+দ্‌+অ; জনক = জ্‌+অ+ন্‌+অ+ক্‌+অ)। ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত কথ্য রীতিতে সীমাবদ্ধ। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি মূলত সমীভবনের নিয়মে হয়ে থাকে। নিয়ম

    ১. বর্গের প্রথম বর্ণ (ক, চ, ট, ত/ৎ, প) + স্বরবর্ণ = বর্গের তৃতীয় বর্ণ (গ, জ, ড/ড়, দ, ব)

    ষড়ঋতু = ষট্‌ + ঋত

    ২. বর্গের প্রথম বর্ণ + বর্গের পঞ্চম বর্ণ = বর্গের প্রথম বর্ণ বদলে সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয়

    মৃন্ময় = মৃৎ + ময়

    ৩. ত/দ + জ/ঝ = জ্জ/জ্ঝ

    বিপজ্জনক = বিপদ্ + জনক

    ৪. ত/দ + চ/ছ = চ্চ/চ্ছ

    উচ্ছেদ = উৎ + ছেদ

    ৫. ত/দ + ল = ল্ল

    তল্লিখিত = তদ্‌ + লিখিত

    ৬. ম + স্পর্শবর্ণ (ক-ম) = ম বদলে ং হয়, অথবা যেই বর্গের স্পর্শবর্ণ সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয়

    সংগীত/সঙ্গীত = সম্‌ + গীত

    ৭. ম + অন্তঃস্থ বর্ণ (য, র, ল, ব)/ উষ্মবর্ণ (শ, ষ, স, হ) = ম বদলে ং হয়

    বশংবদ = বশম্‌ + বদ

    ৮. স্বরবর্ণ + ছ = চ্ছ

    পরিচ্ছেদ = পরি + ছেদ

    ৯. ত/দ + হ = দ্ধ

    উদ্ধত = উৎ + হত

    ১০. ত-বর্গীয় বর্ণ (ত, থ, দ, ধ) + শ = চ্ছ

    উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস

    ১১. শ/ষ + ত = ষ্ট

    দৃষ্টি = দৃশ্‌ + তি

    ১২. শ/ষ + থ = ষ্ঠ

    ষষ্ঠ = ষষ + থ

    বিসর্গসন্ধি

    বিসর্গসন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বিসর্গ সন্ধির প্রকারভেদগুলো হচ্ছেঃ র জাত বিসর্গ এবং স জাত বিসর্গ। বিসর্গসন্ধি র্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন, আশীর্বাদ = আশীঃ + বাদ (আশীঃ = আ+শ্‌+ঈ+ঃ; বাদ = ব্‌+আ+দ্‌+অ)

    নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি

    যেসব সন্ধিসমূহ স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি বা বিসর্গসন্ধির নিয়মগুলো মেনে চলে না, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। তৎসম শব্দের সন্ধিতেই শুধু নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি হয়। যেমন,

    • নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “স্বরসন্ধি”

    কুল+অটা= কুলটা, গো+অক্ষ= গবাক্ষ, প্র+ঊঢ়= প্রৌঢ়, অন্য+অন্য= অন্যান্য, মার্ত+অণ্ড= মার্তণ্ড, শুদ্ধ+ওদন= শুদ্ধোদন।

    • নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “ব্যঞ্জনসন্ধি”

    আ+চর্য= আশ্চর্য, গো+পদ= গোষ্পদ, বন+পতি= বনস্পতি, বৃহৎ+পতি= বৃহস্পতি, তৎ+কর= তস্কর, পর+পর= পরস্পর, মনস্+ঈষা= মনীষা, ষট্+দশ= ষোড়শ, এক+দশ= একাদশ, পতৎ+অঞ্জলি= পতঞ্জলি।

    নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “বিসর্গ সন্ধি”

    অহঃ+অহ = অহরহ, অহঃ+নিশ = অহর্নিশ, আঃ+পদ = আস্পদ।[৪]

    টীকা

    এটি সংস্কৃত ভাষায় বিশ্লেষিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এর অর্থ অন্য আরেকটি। আর ‘’ চিহ্নটি ধাতুদ্যোতক বোঝায়। বাংলা সন্ধিতে কখনো বির্সগ সন্ধি হয় না।[

  • শব্দ (ব্যাকরণ)

    শব্দ বলতে কোনো ভাষার মৌখিক ও লৈখিক একককে বোঝায়। ব্যাকরণিক সংজ্ঞা মতে, শব্দ বলতে কিছু অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিকেও নির্দেশ করে, যা একটি বাক্য গঠনের মূল উপাদান। এক্ষেত্রে শব্দকে “পদ” বলে। শব্দ একাধিক বর্ণঅক্ষর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে।[১]

    শব্দের শ্রেণিবিন্যাস

    শব্দ‌কে ব্যুৎপত্তি, গঠন ও অর্থ অনুসা‌রে বি‌ভিন্ন ভাগে ভাগ করা হ‌য়ে থা‌কে ।

    উৎপত্তিগত

    বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম শব্দ, অর্ধ-তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, দেশি শব্দ ও বিদেশি শব্দ।

    তৎসম শব্দ

    যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় চলে এসেছে সে সব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণঃ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, জল, মস্তক, অন্ন, গৃহ, চরণ, তৃণ, অগ্রহায়ণ,ভাষা ইত্যাদি’

    অর্ধ-তৎসম শব্দ:

    যে-সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম শব্দ। যেমনঃ জ্যোৎস্না˂>জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ >ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂>গিন্নি, বৈষ্ণব˂>বোষ্টম, কুৎসিত >কুচ্ছিত।

    তদ্ভব শব্দ

    বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂>চম্মআর˂ >চামার,

    দেশি শব্দ

    বর্তমান বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে – কোল, মুণ্ডা, ভীম, খোকা,চাঁপা,কুলা,গঞ্জ,ডাব,ডাগর, টোপল ইত্যাদি। দেশী শব্দের উদাহরণ কুড়ি (বিশ) – কোলভাষা, পেট (উদর) – তামিল ভাষা।

    বিদেশি শব্দ

    বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।

    • আরবি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:—

    (১) ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, অজু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, জাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল ইত্যাদি।

    (২) প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ইত্যাদি।

    • ফারসি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত ফারসি শব্দগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:—

    (১) ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা ইত্যাদি।

    (২) প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ ইত্যাদি।

    (৩) বিবিধ শব্দ: আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাশ, রফতানি, হাঙ্গামা ইত্যাদি।

    ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশি শব্দগুলোর মধ্যে ফারসি শব্দই সবচেয়ে বেশি।

    • ইংরেজি শব্দ : দুই প্রকারের পাওয়া যায়:—

    (১) প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে– চেয়ার, টেবিল, পেন, পেন্সিল, ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, নোট, পাউডার, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, স্কুল, ব্যাংক ইত্যাদি।

    (২) পরিবর্তিত উচ্চারণে – স্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospital), বোতল (bottle), ডাক্তার (doctor), ইংরেজি (English) ইত্যাদি।

    • পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ৷
    • ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোরাঁ।
    • ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম) ৷
    • গুজরাটি শব্দ : হরতাল ৷
    • পাঞ্জাবি শব্দ : চড্ডী, শিখ
    • তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, তঙ্গা, বাবা৷
    • চীনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি, সাম্পান।
    • মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি
    • জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারাকিরি, সুনামি, ইমোজি৷
    • হিন্দী শব্দ : কমসেকম, চলতি, দেবদাস ইত্যাদি।
    • মিশ্র শব্দ:

    এ ছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ওই নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণিবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমনঃ
    রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি),
    হাটবাজার (বাংলা+ফারসি),
    হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ফারসি),
    হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি+তৎসম),
    খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম),
    ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি),
    পকেটমার (ইংরেজি+বাংলা)।

    শাকসবজি (তৎসম+ ফারসি)

    গঠন অনুসারে শ্রেণিবিভাগ

    গঠন অনুসারে শব্দকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ (ক) মৌলিক শব্দ এবং (খ) সাধিত শব্দ

    মৌলিক শব্দ

    যে -সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমনঃ গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি।

    এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসংগতি নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি।

    সাধিত শব্দ

    যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়।

    মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমনঃ • সমাসবদ্ধ হয়ে – চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ • প্রত্যয় সাধিত – ডুব+উরি = ডুবুরি • উপসর্গযোগে – প্র+শাসন = প্রশাসন

    *** এছাড়াও রয়েছে ,, 
          গরমিল - গর+মিল 
          চলন্ত- চ্ল+অন্ত
    

    অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ

    অর্থগতভাবে শব্দসমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়:

    যৌগিক শব্দ

    যে-সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে।

    যেমনঃ

    গায়কের কর্তব্য বাবুয়ানা ঢঙে মধুর সুরে দৌহিত্রকে চিকামারা গান শোনানো।
    মূল শব্দ শব্দ গঠন (অর্থ) অর্থ
    গায়ক=গৈ+অক- গান করে যে।
    কর্তব্য=কৃ+তব্য- যা করা উচিত।
    বাবুয়ানা=বাবু+আনা- বাবুর ভাব।
    মধুর=মধু+র- মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত।
    দৌহিত্র=দুহিতা+ষ্ণ্য- (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) কন্যার পুত্র, নাতি।
    চিকামারা=চিকা+মারা- দেওয়ালের লিখন।

    রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ

    যেসব শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় জাত অর্থ এবং ব্যবহারিক অর্থ পৃথক হয় বরং লোক প্রচলিত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ হিসেবে প্রকাশ পায় তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। প্রচলিত অর্থই রূঢ়ি অর্থ।

    যেমনঃ

    প্রবীণ ব্যক্তি হস্তীতে চড়ে তৈল নিয়ে গবেষণা করে সন্দেশ বানিয়ে বাঁশি বাজায়।
    হস্তী=হস্ত+ইন,(হাত আছে যার;গঠনগত অর্থ) কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়।
    গবেষণা=গো+এষণা (গো=গরু, এষণা=খোঁজা) ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা।
    বাঁশি=বাঁশ+ইন,(বাঁশ দিয়ে তৈরি) বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র।
    তৈল=তিল+ষ্ণ্য, (তিল থেকে তৈরি স্নেহ পদার্থ) উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন স্নেহ পদার্থ।
    প্রবীণ=প্র+বীণা (প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি) অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি।
    সন্দেশ=সম+দেশ (সংবাদ) মিষ্টান্ন বিশেষ

    যোগরূঢ় শব্দ

    যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ সম্পূর্ণ পৃথক নয়,বরং ব‍্যুৎপত্তিগত অর্থ কে অনুসরন করে ব‍্যবহারিক অর্থ প্রকাশিত হয় , তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। বিষয়টি কঠিন, তবে সহজ।।।।

    অথবা, সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। প্রসিদ্ধ অর্থই যোগরূঢ় অর্থ। যেমনঃ বানি+অধীর

    পঙ্কজ-পঙ্কে জন্মে যা (পদ্মফুল)
    রাজপুত-রাজার পুত্র, (ভারতের একটি জাতি বিশেষ)
    মহাযাত্রা-মহাসমারোহে যাত্রা (মৃত্যু)
    জলধি-জল ধারণ করে যা/এমন (সাগর)

    নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ

    বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে।

    যেমনঃ

    পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ
    অম্লজান – Oxygen
    সচিব – Secretary
    উদযান -Hydrogen
    স্নাতক – Graduate
    নথি – File
    স্নাতকোত্তর – Post Graduate
    প্রশিক্ষণ -Training
    সমাপ্তি – Final
    ব্যবস্থাপক – Manager
    সাময়িকী – Periodical
    বেতার – Radio
    সমীকরণ – Equation

    আরও দেখুন

  • বিভক্তি

    বিভক্তি হলো একপ্রকার গুচ্ছ বর্ণ, যারা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সম্পর্ক সাধনের জন্য যুক্ত হয়।[১] বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে বিশেষ্যসর্বনাম পদের সম্পর্ক বোঝাতে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, এই লগ্নকগুলোই বিভক্তি নামে পরিচিত।[২] বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদ এর সাথে নামপদ এর সম্পর্ক স্থাপন করে।

    এটি কারকের সঙ্গে বিভ্রান্ত হবার নয়, কারণ কারক হচ্ছে নামপদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক। অপরদিকে এই সম্পর্কটিকে বিভক্তি চিহ্নের মাধ্যমে নির্দেশ করানো হয়।

    উদাহরণস্বরূপ ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন এই বাক্যটি নিরীক্ষা করা যায়। বাক্যটিতে ছাদে পদটি ‘ছাদ’ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যোগ করে হয়েছে। অর্থ্যাৎ, ছাদে = ছাদ + এ। এখানে “এ” হচ্ছে বিভক্তি। অনুরূপভাবে, মা=মা + ০ বিভক্তি, শিশুকে=শিশু + -কে বিভক্তি) এবং চাঁদ= চাঁদ + ০ বিভক্তি।

    ইতিহাস

    এ বিষয়ে অনেক ভাষাতত্ত্ববিদই একমত, যে প্রাচীন গ্রিকদের তাদের ভাষার লগ্নকের একটি রূপ সম্পর্কে একপ্রকার “অস্পষ্ট” ধারণা ছিল, যার দ্বারা নামপদের সঙ্গে বাক্যের কর্মের সম্পর্ক স্থাপিত হয় (বর্তমানে যা ব্যাকরণ শাস্ত্রে “বিভক্তি” নামে পরিচিত)। গ্রিক কবি আনাক্রিয়নের একটি পুস্তিকা থেকে এই ধারণাটি নিশ্চিত বলে মনে করা হয়। তা সত্ত্বেও, এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি উপনীত হওয়া যায় না যে, প্রাচীন গ্রিকরা আসলেই জানতো যে আধুনিক ব্যাকরণের “বিভক্তি” কি। বৈরাগ্যবাদীদের অনেক মৌলিক ধারণার কারণ হিসেবে বলা যায়, আজকের ভাষাবিজ্ঞানের মূলসুত্র। ব্যাকরণের এই বিষয়টির ধারণাটিও বৈরাগ্যবাদের কাছে পাওয়া যায়, কিন্তু বৈরাগ্যবাদীরা “বিভক্তি” সম্পর্কে তাদের ধারণা দ্বারা ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।[৩][৪]

    প্রয়োজনীয়তা

    বাংলা ভাষায় ক্রিয়াহীন অসংখ্য বাক্য রয়েছে। তাই বলা যায়[কে?] বাংলা বাক্য কারকপ্রধান নয়। কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য ঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং বাক্যও অর্থগ্রাহ্য হয় না। বাক্যে বিভক্তির ব্যবহার বাক্যের বিন্যাস ও অর্থ ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ, বিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সেজন্যই বাংলা বাক্য বিভক্তি-প্রধান।[৫]

    প্রকারভেদ

    বাংলা বিভক্তি দুই প্রকার।

    • নাম বিভক্তি বা শব্দ বিভক্তি
    • ক্রিয়া বিভক্তি

    নাম বিভক্তি

    ০ (শূণ্য) বিভক্তি (অথবা, -অ বিভক্তি), -এ (-য়), -তে (-এ), -কে, -রে, -র (-এরা) – এ কয়টিকে বাংলা নাম বিভক্তি বা শব্দ বিভক্তি হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় পদও কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন: -দ্বারা, -দিয়ে, -হতে, -থেকে, -চেয়ে ইত্যাদি। বাংলা শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি কারক নির্দেশ করে বলে এগুলোকে কারক বিভক্তিও বলা হয়।[৫]

    বাংলা শব্দ-বিভক্তি সাত প্রকার।

    বিভক্তিএকবচনবহুবচন
    প্রথমা০, -অ, -এ (-য়), -তে, -এতে-রা, -এরা, -গুলি (-গুলো), -গণ
    দ্বিতীয়া০, -অ, -কে, -রে (-এরে), -এ, -য়, -তে-দিগে, -দিগকে, -দিগেরে, -দের
    তৃতীয়া০, -অ, -এ, -তে, -দ্বারা, -দিয়া (-দিয়ে), -কর্তৃক-দিগের দিয়া, -দের দিয়া, -দিগকে দ্বারা, -দিগ কর্তৃক, -গুলির দ্বারা, -গুলিকে দিয়ে, -গুলো দিয়ে, -গুলি কর্তৃক, -দের দিয়ে
    চতুর্থীদ্বিতীয়ার অনুরূপদ্বিতীয়ার অনুরূপ
    পঞ্চমী-এ (-য়ে, -য়), -হইতে, -থেকে, -চেয়ে, -হতে-দিগ হইতে, -দের হইতে, -দিগের চেয়ে, -গুলি হইতে, -গুলির চেয়ে, -দের হতে, -দের থেকে, -দের চেয়ে
    ষষ্ঠী-র, -এর।-দিগের, -দের, -গুলির, -গণের, -গুলোর
    সপ্তমী-এ (-য়), -তে, -এতে-দিগে, -দিগেতে, -গুলিতে, -গণে, -গুলির মধ্যে, -গুলোতে, -গুলোর মধ্যে

    দ্রষ্টব্য: বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শুন্য বিভক্তি আছে মনে করা হয়।

    ক্রিয়া বিভক্তি

    ক্রিয়ামূলের সঙ্গে যেসব লগ্নক যুক্ত হয়ে ক্রিয়ার কাল ও পক্ষ নির্দেশিত হয়, সেগুলোকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে। অধিকাংশ বাংলা ক্রিয়ার দুটি রূপ আছে: সাধারণ রূপ ও প্রযোজক রূপ। উভয় রূপের সঙ্গে যুক্ত ক্রিয়াবিভক্তি রূপ আলাদা।

    উদাহরণ:
    
    * পড়ছি (√পড় + ছি) 
    >ক্রিয়ার এই রূপটি থেকে বোঝা যায় যে, এই ক্রিয়ার কর্তা বক্তা পক্ষের এবং এটা দিয়ে ঘটমান বর্তমান কালের পড়া ক্রিয়াকে বোঝায়।
    
    * পড়বেন (√পড় + বেন) 
    >ক্রিয়ার এই রূপটি থেকে বোঝা যায় যে, এই ক্রিয়ার কর্তা শ্রোতা পক্ষের এবং এটা দিয়ে সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের পড়া ক্রিয়াকে বোঝায়।
    
    * পড়ছিল (√পড় + ছিল) 
    >ক্রিয়ার এই রূপটি থেকে বোঝা যায় যে, এই ক্রিয়ার কর্তা অন্য পক্ষের এবং এটা দিয়ে সাধারণ অতীত কালের পড়া ক্রিয়াকে বোঝায়।
    

    উপরে “√” চিহ্ন দিয়ে ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করা হয়েছে।

    বিভক্তি যোগের নিয়ম

    • অ-প্রাণী বা ইতর প্রাণীবাচক শব্দের বহুবচনে -গুলি, -গুলো যুক্ত হয়। যেমন: পাথরগুলো, গরুগুলি।[১]
    • অ-প্রাণীবাচক শব্দের উত্তরে ০ (শূণ্য) বিভক্তি হয়। যেমন: কলম দাও।[১]
    • স্বরান্ত শব্দ, অর্থাৎ যে শব্দগুলো কোনো স্বরধ্বনি দিয়ে শেষ হয়, এ ধরনের শব্দের উত্তর -এ বিভক্তির রূপভেদ হয় -য় বা -য়ে। -এ স্থানে -তে বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমন: মা + -এ = মায়ে, ঘোড়া + -এ = ঘোড়ায়, পানি + -তে = পানিতে।[১]
    • অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দ, অর্থাৎ যে শব্দগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে শেষ হয়, এ ধরনের শব্দের উত্তরে প্রায়ই -রা স্থানে -এরা হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তি -র স্থলে -এর যুক্ত হয়। যেমন: লোক + -রা = লোকেরা, বিদ্বান (ব্যঞ্জনান্ত) + -রা = বিদ্বানেরা, মানুষ + -এর = মানুষের। কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর একবচনে সাধারণত -র যুক্ত হয়, -এর যুক্ত হয় না। যেমন: বড়র, মামার, ছেলের।[১]
    • সাধারণত ক্রিয়ার স্থান, কাল, ভাব বোঝাতে -এ, -তে, -য়, -য়ে ইত্যাদি বিভক্তির ব্যবহার হয়। কখনো কখনো বাক্যের কর্তার সঙ্গেও এসব বিভক্তি বসে।[২]
    • যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই, সেসব শব্দের সঙ্গে -এ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: সকালে, দিনাজপুরে, ই-মেইলে, কম্পিউটারে, ছাগলে, তিলে ইত্যাদি।[২]
    • শব্দের শেষে ই-কার ও উ-কার থাকলে -তে বিভক্তি হয়। যেমন: হাতিতে, রাত্রিতে, মধুতে, ইত্যাদি।[২]
    • আ-কারান্ত শব্দের শেষে -য় বিভক্তি হয়। যেমন: ঘোড়ায়, সন্ধ্যায়, ঢাকায়, কলকাতায় ইত্যাদি।[২]
    • শব্দের শেষে দ্বিস্বর (স্বরধ্বনির দুইবার উচ্চারণ) থাকলে -য়ে বিভক্তি হয়। যেমন: ছইয়ে ভাইয়ে, বউয়ে।[২]
    • ই-কারান্ত শব্দের শেষেও -য়ে বিভক্তি দেখা যায়। যেমন: ঝিয়ে, ঘিয়ে।[২]
    • বাক্যে গৌণকর্মের সঙ্গে সাধারণত এক এবং -এরে বিভক্তি বসে। ক্রিয়াকে ‘কাকে’ প্রশ্ন করলে যে উত্তর (শব্দ) পাওয়া যায় তার সঙ্গে এই বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: শিশুকে, দরিদ্রকে, আমাকে, আমারে ইত্যাদি।[২]
    • বাক্যের মধ্যে পরবর্তী শব্দের সঙ্গে সম্বন্ধ বোঝাতে পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে -র, -এর এবং-য়ের বিভক্তি যুক্ত হয়। সাধারণত আ-কারান্ত, ই/ঈ-কারান্ত ও উ/ঊ-কারান্ত শব্দের শেষে -র বিভক্তি বসে। যেমন: রাজার প্রজার, হাতির, বুদ্ধিজীবীর, তনুর, বধূর।[২]
    • যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই, সেসব শব্দের শেষে -এর বিভক্তি হয়। যেমন: বলের, শব্দের, নজরুলের, সাতাশের ইত্যাদি।[২]
    • শব্দের শেষে দ্বিস্বর থাকলে -য়ের বিভক্তি হয়। যেমন: ভাইয়ের, বইয়ের, লাউয়ের, মৌয়ের ইত্যাদি।[২]

    বিভিন্ন কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

    সকল কারকে প্রথমা বা শুন্য বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারকরহিম বাড়ি যায়।
    (খ)কর্ম কারকডাক্তার ডাক।
    অর্থ অনর্থ ঘটায়।
    (গ)করণ কারকঘোড়াকে চাবুক মার।
    (ঘ)সম্প্রদান কারকগুরুদক্ষিণা দাও।
    ভিক্ষা দাও দেখিলে ভিক্ষুক
    (ঙ)অপাদান কারকগাড়ি স্টেশন ছাড়ে।
    (চ)অধিকরণ কারকসারারাত বৃষ্টি হয়েছে।
    আকাশ মেঘে ঢাকা।

    সকল কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারকবশিরকে যেতে হবে।
    (খ)কর্ম কারকতাকে বল।
    তাকে আমি চিনি।
    ধোপাকে কাপড় দাও।
    আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা।’
    (গ)করণ কারক
    (ঘ)সম্প্রদান কারক(সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি হয়।)
    (ঙ)অপাদান কারকবাবাকে বড্ড ভয় পাই।
    (চ)অধিকরণ কারক‘মন আমার নাচে রে আজিকে।’

    সকল কারকে তৃতীয়া বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারকফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।
    (খ)কর্ম কারক
    (গ)করণ কারকলাঙল দ্বারা জমি চাষ করা হয়।
    মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন।
    আমরা কান দ্বারা শুনি।
    (ঘ)সম্প্রদান কারক
    (ঙ)অপাদান কারকতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
    (চ)অধিকরণ কারকখিলিপান (এর ভিতর) দিয়ে ওষুধ খাবে।

    সকল কারকে চতুর্থী বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারক(ব্যবহার নেই)
    (খ)কর্ম কারক(ব্যবহার নেই)
    (গ)করণ কারক(ব্যবহার নেই)
    (ঘ)সম্প্রদান কারকভিখারিকে ভিক্ষা দাও।
    দরিদ্রকে দান কর।
    (ঙ)অপাদান কারক(ব্যবহার নেই)
    (চ)অধিকরণ কারক(ব্যবহার নেই)

    সকল কারকে পঞ্চমী বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারক
    (খ)কর্ম কারক
    (গ)করণ কারকসন্তান হতে দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।
    (ঘ)সম্প্রদান কারক
    (ঙ)অপাদান কারকজেলেরা নদী থেকে মাছ ধরছে।
    গাছ থেকে পাতা পড়ে।
    সুক্তি থেকে মুক্তো মেলে।
    দুধ থেকে দই হয়।
    বিপদ থেকে বাঁচাও।
    সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।
    (চ)অধিকরণ কারকবাড়ি থেকে নদী দেখা যায়।

    সকল কারকে ষষ্ঠী বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারকআমার যাওয়া হয়নি।
    (খ)কর্ম কারকতোমার দেখা পেলাম না।
    দেশের সেবা কর।
    (গ)করণ কারকতার মাথায় লাঠির আঘাত কোরো না।
    ইট-পাথরের বাড়ি শক্ত।
    ইটের বাড়ি সহজে ভাঙে না।
    (ঘ)সম্প্রদান কারকভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।
    (ঙ)অপাদান কারকযেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যে হয়।
    (চ)অধিকরণ কারক

    সকল কারকে সপ্তমী বা এ বিভক্তির ব্যবহার

    (ক)কর্তৃকারকলোকে বলে।
    পাগলে কী না বলে।
    (খ)কর্ম কারকঅধীনে দায়িত্ব অর্পণ করুন।
    কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে
    (গ)করণ কারককলমে লেখা ভালো হয়।
    হাতে না মেরে ভাতে মারো।
    (ঘ)সম্প্রদান কারকখোদার এ জীবে আহার দিবে কে?
    দীনে দয়া কর।
    (ঙ)অপাদান কারক‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে?’
    মেঘে বৃষ্টি হয়।
    (চ)অধিকরণ কারকদেহে প্রাণ নেই।
    তিলে আছে তেল, কুসুমে সৌরভ।

    আরও দেখুন

  • বাগধারা

    বাগধারা শব্দের আভিধানিক অর্থ কথার বচন ভঙ্গি বা ভাব বা কথার ঢং। বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা। বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরী হয়েছে। এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে।

    যে পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থের বাইরে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বলা হয় বাগধারা[১]

    বাগধারা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করে, ভাবের ইঙ্গিতময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্থাপন করে। এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ।

    বাগধারা গঠনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও বলা হয়। একে বাগবিধিও বলা হয়ে থাকে।[২]

    উদাহরণ

    আরও দেখুন: বাংলা বাগধারার তালিকা

    • আ ক খ গ =প্রাথমিক জ্ঞান
    • হ য ব র ল =বিশৃঙ্খলা
    • উজানের কৈ =সহজলভ্য
    • ঝাকের কৈ =দলভুক্ত
    • টাকার গরম =অর্থের অহংকার
    • তামার বিষ =অর্থের কুপ্রভাব
    • তুলসী বনের বাঘ =ভন্ড
    • অকালকুষ্মান্ড=অপদার্থ
    • ইদুর কপালে=মন্দভাগ্য
    • আমড়া গাছি করা = তোষামুদে
    • কাপুড়ে বাবু=বাহ্যিক সভ্য
    • খিচুড়ি পাকানো=জটিল করা
    • গরজ বড় বালাই =প্রয়োজনে গুরুত্ব
    • ঘর থাকতে বাবুই ভেজা=সুযোগ থাকতে কষ্ট
    • চোখে সাতার পানি=অতিরিক্ত মায়াকান্না
    • ছেড়া চুলে খোপা বাধা=বৃথা চেষ্টা
    • দুধে ভাতে থাকা =সুখে থাকা
    • নাড়ির টান =গভীর মমত্ববোধ
    • পালের গোদা =দলপতি
    • পেটে পেটে বুদ্ধি=দুষ্ট বুদ্ধি
    • ব্যাঙের আধুলি=সামান্য অর্থ