Category: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

Bengali language and literature

  • তাশদিদ

    তাশদিদ বা শাদ্দাহ (আরবি: شَدّة‎‎ shaddah[ˈʃæd.dæ], “[জোর] চিহ্ন”, একই মূল থেকে মৌখিক বিশেষ্য দ্বারাও বলা হয়, তাশদিদ تشديد tashdīd শাব্দিক অনুবাদ- “জোর”) আরবি বর্ণমালার সাথে ব্যবহৃত বৈশিষ্ট্যিসূচকগুলোর মধ্যে একটি, যা একটি দ্বিরুক্তিকৃত ব্যঞ্জনবর্ণ নির্দেশ করে। এটি কার্যকরীভাবে লাতিন, ইতালীয়, সুইডিশ এবং প্রাচীন গ্রীকের মতো ভাষার অর্থোগ্রাফিতে একটি ব্যঞ্জনবর্ণ দুইবার লেখার সমতুল্য। আর এইভাবে আরবি প্রতিবর্ণীকরণের বেশিরভাগ স্কিমে ল্যাটিন লিপিতে রেন্ডার করা হয়, যেমন رُمّان = rummānবেদানা‘।

    গঠন

    আকারে এটি একটি ছোট অক্ষর س s(h)in, শাদ্দাহের জন্য দাঁড়ানো। এটি অষ্টম শতাব্দীতে আল-খলিল ইবনে আহমাদ কবিতার জন্য তৈরি করেছিলেন। আগে এক্ষেত্রে একটি বিন্দু ব্যবহার করা হত।[১]

    সাধারণ ইউনিকোডনামআক্ষরিক অনুবাস
    0651
    ّ ّ
    তাশদিদ(ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বিগুণ)

    অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসূচকের সঙ্গে সমন্বয়

    যখন একটি তাশদিদ একটি ব্যঞ্জনবর্ণে ব্যবহার করা হয় যা একটি যবর /আ/ নেয়, তখন যবর তাশদিদের উপরে লেখা হয়। যদি ব্যঞ্জনবর্ণটি যের /i/ নেয়, তবে এটি ব্যঞ্জনবর্ণের নীচে তার স্বাভাবিক স্থানের পরিবর্তে ব্যঞ্জনবর্ণ এবং তাশদিদ মধ্যে লেখা হয়, তবে এই শেষ ক্ষেত্রে একটি একচেটিয়াভাবে আরবি ভাষায়ই ব্যবহার হয়, আরবি লিপি ব্যবহার করা অন্যান্য ভাষায় নয়।


    উদাহরণস্বরূপ, অক্ষর ـهـ এর উপর বৈশিষ্ট্যসূচকএর অবস্থান দেখুন h নিম্নলিখিত শব্দে:

    আরবিপ্রতিবর্ণীকরণঅর্থবৈশিষ্ট্যসূচকবৈশিষ্ট্যসূচকের অবস্থান
    يَفْهَمُইয়াফহামুসে বুঝেফাতহাহবর্ণের উপরে
    فَهَّمَফাহহামাতিনি ব্যাখ্যা করেছেনফাতহাহতাশদিদ উপরে
    فَهِمَফাহিমাসে বুঝেছেকাসরাহবর্ণের নিচে
    فَهِّمْফাহহিমবুঝাও!কাসরাহতাশদিদ এবং বর্ণের মধ্যে

    হাতে আরবি লেখার সময়, প্রথমে তাশদিদ এবং তারপর স্বরবর্ণ বৈশিষ্ট্যসূচক লেখার প্রথা রয়েছে।

    ইউনিকোড উপস্থাপনায়, তাশদিদ স্বরবর্ণের আগে বা পরে প্রদর্শিত হতে পারে এবং বেশিরভাগ আধুনিক ফন্ট উভয় বিকল্প পরিচালনা করতে পারে। যাইহোক, ক্যানোনিকাল ইউনিকোডের ক্রমানুসারে তাশদিদ স্বরবর্ণ বৈশিষ্ট্যসূচক অনুসরণ করে প্রদর্শিত হয়, যদিও ধ্বনিগতভাবে এটি সরাসরি ব্যঞ্জনবর্ণের অক্ষর অনুসরণ করা উচিত।

    ব্যঞ্জনবর্ণের দৈর্ঘ্য চিহ্নিত করার তাৎপর্য

    আরবীতে ব্যঞ্জনবর্ণের দৈর্ঘ্য বিপরীত: دَرَسَ darasa মানে “তিনি অধ্যয়ন করেছেন”, যখন دَرَّسَ darrasa মানে “তিনি শিখিয়েছেন”; بَكى صَبي bakā ṣabiyy মানে “একজন যুবক কেঁদেছিল” যখন بَكّى الصَّبي bakkā ṣ-ṣabiyy মানে “একটি যুবককে কাঁদতে বাধ্য করা হয়েছিল”।

    বিশেষ্য বা ক্রিয়ার ফর্মের কারণে একটি ব্যঞ্জনবর্ণ দীর্ঘ হতে পারে; যেমন, ক্রিয়ার কার্যকারক ফর্মের জন্য মূলের দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণটি দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন, যেমন উপরের darrasa, বা ব্যঞ্জনবর্ণের একীকরণের মাধ্যমে, উদাহরণস্বরূপ l- আরবি নির্দিষ্ট নিবন্ধের সমস্ত দন্তীয় ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে মিলিত হয়, যেমন ( الصّبي ) (a)ṣ-ṣabiyy এর পরিবর্তে (a)l-ṣabiyy, অথবা মেটাথেসিসের মাধ্যমে, শব্দের পরিবর্তন, উদাহরণস্বরূপ أَقَلّ aqall ‘কম, কম’ (* أَقْلَل এর পরিবর্তে aqlal ), أَكْبَر এর তুলনায় akbar ‘বৃহত্তর’।


    একটি দীর্ঘ ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা বন্ধ একটি উচ্চারণ একটি দীর্ঘ উচ্চারণ করা হয়. এটি স্ট্রেস এবং প্রসোডি উভয়কেই প্রভাবিত করে। শব্দের শেষ থেকে প্রথম দীর্ঘ উচ্চারণে চাপ পড়ে, তাই أَقَلّ aqáll (বা, iʻrāb, aqállu সাথে) أَكْبَر এর বিপরীতে ákbar, مَحَبّة maḥábbah “ভালোবাসা, আগাপে ” ম مَعْرِفة এর বিপরীতে maʻrifah ‘(অভিজ্ঞতামূলক) জ্ঞান’। আরবি আয়াতে, মিটার স্ক্যান করার সময়, একটি দীর্ঘ ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা বন্ধ একটি শব্দাংশকে দীর্ঘ হিসাবে গণনা করা হয়, ঠিক যেমন ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা বন্ধ হওয়া অন্য শব্দাংশ বা একটি দীর্ঘ স্বরবর্ণে শেষ হওয়া একটি শব্দাংশ: أَلا تَمْدَحَنَّ a-lā tamdaḥanna ‘তুমি কি সত্যিই প্রশংসা করবে না…?’ a-lā tam-da-ḥan-na হিসাবে স্ক্যান করা হয় : সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ, দীর্ঘ, সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ, সংক্ষিপ্ত।

  • ইবনে আবি ইসহাক

    আবদুল্লাহ ইবনে আবি ইসহাক আল হাদরামি (Arabic, عبد الله بن أبي اسحاق الحضرمي), (মৃত্যু ৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দ / ১১৭ হিজরি)[১][২] আরবি ভাষার প্রথম ব্যাকরণবিদ হিসেবে বিবেচিত হন।[৩] তিনি একটি ব্যাকরণ সংকলন করেন যাতে বিশুদ্ধ বলে পরিচিত বেদুইন আরবির উল্লেখ ছিল। আরবিতে ভাষাতাত্ত্বিক তুলনা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাকে প্রথম বলে বিবেচনা করা হয়।[৩]

    ইবনে আবি ইসহাকের দুইজন ছাত্র ছিলেন হারুন ইবনে মুসাআবু আমর ইবনুল আলা[৪][৫] তার ছাত্র আল সাকাফি ও আল আলার ব্যাকরণের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য আরবি ব্যাকরণের কুফাবসরা শাখার মূল ধরা হয়। বলা হয় যে ইবনে আবি ইসহাক সাধারণ ভাষ্যের চেয়ে ব্যাকরণের নিয়মের ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ ছিলেন।[৬]

    পরবর্তী সময়ের ব্যাকরণবিদদের উপর ইবনে আবি ইসহাকের প্রভাব রয়েছে। সিবাওয়েহ তার আরবি ব্যাকরণে সাতবার ইবনে আবি ইসহাককে কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[২]

    আরও দেখুন

  • আহমদ জাইনি দাহলান

    আহমদ জাইনি দাহলান (আরবি: أحمد زَيْني دَحْلان‎‎) (১৮১৬-১৮৮৬) ছিলেন মক্কার শাফিঈ মাযহাবের প্রধান মুফতি,[২][৩] ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের হেজাজ অঞ্চলে শায়খুল ইসলাম (উসমানীয় এখতিয়ারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ),[৪] এবং ইমাম আল-হারামাইন (দুটি পবিত্র শহর, মক্কা ও মদিনার ইমাম),[৫] সেইসাথে একজন ঐতিহাসিকআশ’আরি ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনি ওয়াহাবিবাদের চরম সমালোচনা এবং সুফিবাদের (অতীন্দ্রিয়বাদ) প্রতি তার প্রবণতার জন্য পরিচিত ছিলেন।[৬] ওয়াহাবি প্রভাবের বিরুদ্ধে তার গ্রন্থে দাহলান সুফিবাদকে ইসলামি অনুশীলনের একটি আইনি ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্পষ্টভাবে দেখান – যার মধ্যে রয়েছে তাওয়াসসুল (মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা), তাবাররুক (ব্যক্তি বা জিনিসের মাধ্যমে দোয়া চাওয়া) এবং জিয়ারাত আল-কুবুর (মাজার ও কবর জিয়ারত)।[৭][৮][৯]

    তিনি ছিলেন আবদুল কাদের জিলানীর বংশধর। তিনি ইতিহাস, ফিকহ ও সাধারণভাবে ইসলামি বিজ্ঞানের উপর অসংখ্য গ্রন্থ লিখেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশ করেছেন।

    জন্ম

    তিনি ১২৩১ বা ১২৩২ হিজরি = ১৮১৬ বা ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।[১০]

    শিক্ষক

    তিনি আহমদ আল-মারজুকি আল-মালিকি আল-মক্কীর (আরবি: أحمد المرزوقي المالكي المكي‎‎) অধীনে অধ্যয়ন করেন।[১১]

    ছাত্র

    তার ছাত্রদের সংখ্যা এত বেশি যে, তার পরে এমন একজন আলেম খুঁজে পাওয়া বিরল, যার বর্ণনার শৃঙ্খলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়না। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন হুসাইন বিন আলী, মক্কার শরীফ যিনি তার থেকে কুরআন অধ্যয়ন করেছিলেন ও মুখস্থ করেছেন, ইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরী বেরলভী,[১২] খলিল আহমদ সাহারানপুরি,[১৩] শেখ মোস্তফা, উসমান বিন ইয়াহিয়া, আরশাদ থাভিল আল-বানতানি, মুহাম্মদ আমরুল্লাহ এবং আহমদ বিন হাসান আল আত্তাস।[১৪]

    কর্ম

    তিনি এমন এক যুগে লিখতেন এবং শিক্ষা দিতেন যখন মক্কায় প্রথম ছাপাখানা আসে, দাহলান তার অনুগত ছাত্রদের মাধ্যমে সালাফিবাদের প্রতি তার চ্যালেঞ্জগুলি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। উদাহরণস্বরূপ, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ত্রৈমাসিকে ওয়াহাবিদের শাসনামলে মক্কায় তাদের নিয়ে আসা দুর্দশার রূপরেখা নিয়ে একটি পুস্তিকা লিখেছেন, ফিতনাত আল- ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: فتنة الوهابية‎, অনুবাদ ‘ওয়াহাবি ফিতনা‘‎), এবং সম্পূর্ণ ওয়াহাবি মতবাদ ও অনুশীলনকে খণ্ডন করে একটি গবেষণা সেটি হল আল-দুরার আল-সানিয়্যাহ ফি আল-রাদ্দ ‘আলা আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: الدرر السَنِيَّة فى الرد على الوهابية‎, অনুবাদ ‘The Pure Pearls in Answering the Wahhabis’‎)।[১৫]

    নিম্নে তার প্রকাশিত কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হল:[১৬]

    • ফিতনাত আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: فتنة الوهابية‎‎)
    • আল-দুরার আল-সানিয়্যাহ ফি আল-রাদ্দ আলা আল-ওয়াহাবিয়্যাহ (আরবি: الدرر السَنِيَّة فى الرد على الوهابية‎‎)
    • খুলাসাত আল-কালাম ফি বায়ান উমারা’ আল-বালাদ আল-হারাম (আরবি: خلاصة الكلام في بيان أمراء البلد الحرام‎‎)
    • আল-ফুতুহাত আল-ইসলামিয়াহ বা’দা মুদিয় আল-ফুতুহাত আল-নবভীয়্যাহ (আরবি: الفتوحات الإسلامية بعد مضي الفتوحات النبوية‎‎)
    • ইবনে আজুরুম রচিত শারহ আল-আজুরুমিয়াহ (আরবি: شرح الأجرومية‎‎)
    • ইবনে মালিক রচিত শারহ আল-আলফিয়্যাহ (আরবি: شرح الألفية‎‎)
    • আল-গাজ্জালি রচিত (তানবীহ আল-গাফিলিন, মুখতাসার মিনহাজ আল-আবিদিন, আরবি: تنبيه الغافلين: مختصر منهاج العابدين‎‎)

    মৃত্যু

    তিনি ১৩০৪ হিজরির মহররম মাসে = ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।[১৭]

    আরও দেখুন

  • আবু মোহাম্মদ আল-হাসান আল-হামদানি

    আবু মোহাম্মদ আল-হাসান ইবনে আহমদ ইবনে ইয়াকুব আল-হামদানি (২৭৯/২৮০-৩৩৩/৩৩৪ হিজরি / ৮৯৩-৯৪৫খ্রিঃ; আরবি: أبو محمد الحسن بن أحمد بن يعقوب الهمداني‎‎) ছিলেন পশ্চিম আমরান/ইয়েমেন এর বানু হামাদান গোত্রের একাধারে একজন আরব[১] মুসলিম ভূগোলবিদ, কবি, রসায়নবিদ, ব্যাকরণবিৎ, ঐতিহাসিক, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন আব্বাসিয় খেলাফতের শেষ সময়কার ইসলামিক সংস্কৃতির একজন শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি।

    জীবনী

    তার যথেষ্ট পরিমাণ বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড থাকা সত্ত্বেও আল-হামদানির জীবনকাহিনী সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়। তিনি ব্যাকরণবিদ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন বেশি, তাছাড়া তিনি অনেক কবিতা লিখে গেছেন, জ্যোতির্বিদ্যার ছক প্রণয়ন করেছেন, এবং তার জীবনের বেশীরভাগ সময়ই আরবের প্রাচীন ইতিহাস এবং ভূগোল সম্পর্কে জানতে অতিবাহিত করেছেন।

    তার জন্মের পূর্বে তার পরিবার আল-মারশি (المراشي) তে বসবাস করত। অতঃপর তারা সানা‘য় (صنعاء) চলে আসেন, যেখানে তিনি ৮৯৩ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন পরিব্রাজক ছিলেন এবং তিনি কুফা, বাগদাদ, বসরা, ওমান এবং মিশর ভ্রমণ করেন। সাত বছর বয়সের সময়, তিনি নিজে থেকেই ভ্রমণের কথা বলতেন। সাদাহ (صعدة) এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর, তিনি মক্কা ত্যাগ করেন, যেখানে তিনি ছয় বছরের বেশি অবস্থান করেছেন এবং শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করেছেন। সেখানে তিনি খাওলান (خولان) সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে, তিনি সানায় ফিরে আসেন এবং হিমিয়ার (حمْير) সম্পর্কে সংবাদ সংগ্রহ করেন, কিন্তু তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে দুই বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। কারামুক্তির পর, তার গোত্রের প্রতিরক্ষার জন্য তিনি রাইদা (ريدة) তে যান, সেখানেই তিনি তার গ্রন্থের বেশীরভাগ সংকলন করেন এবং ৯৪৫ সালে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সেখানেই বাস করেন।

    তার সম্পাদিত আরব উপদ্বীপের ভূগোল (সিফাৎ যাজিরাত উল-আরব) হচ্ছে এই বিষয়ের উপর এখন পর্যন্ত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। আলয়েস স্প্রেঞ্জারের দ্বারা তার গবেষণাগ্রন্থ Post- und Reiserouten des Orients (লাইপ্‌ৎসিশ, ১৮৬৪) এবং অন্য একটি গ্রন্থে Alte Geographie Arabiens (বের্ন, ১৮৭৫), নামে পাণ্ডুলিপি আকারে ব্যবহারের পর, ডি.এইছ. মুলার (লাইডেন, ১৮৮৪; cf. Sprenger’s criticism in Zeitschrift der deutschen morgenländischen Gesellschaft, খণ্ড- ৪৫, পৃ;৩৬১–৩৯৪) এই শিরোনামে এটিকে সম্পাদনা করেন।

    প্রাচীন আরব নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনায় ই. গ্ল্যাজার তার কাজ নিয়ে অনেক লেখালেখিও করেছেন। আল-হামদানির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কর্মের মধ্যে রয়েছে ইকলিল (মুকুট), যা দশ খণ্ডে হিমিয়ারিয়দের বংশবৃত্তান্ত সম্পর্কে এবং তাদের রাজাদের যুদ্ধসমূহ নিয়ে লিখা। এগুলোর মধ্য থেকে, ৮ অংশ, দক্ষিণ আরবের নগরদুর্গ এবং প্রাসাদসমূহের উপর, মুলার কর্তৃক Die Burgen und Schlösser Sudarabiens (ভিয়েনা, ১৮৮১) তে সম্পাদনা করা হয়েছে।

    আল-হামদানির বর্ণীত অন্যান্য কাজ গুস্তাভ লেবারেশ্ট ফ্লুগেলের Die grammatischen Schulen der Araber (লাইপ্‌ৎসিশ, ১৮৬২), পৃ;২২০–২২১; এ দেখা যায়।

    কর্মকাণ্ড

    আল-জাওহারাতাইন আল-আতিকাতাইন – একটি বই যা ঐ সময়ে পরিচিত ধাতুসমূহের বিবরণ দেয়, তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের সাথে সাথে প্রক্রিয়াকরণ ও আলোচনা করে যেমনঃ সোনা, রূপা এবং ইস্পাত। তাকে প্রথম দিকের একজন আরব বিবেচনা করা হয় যিনি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ব্যাখ্যা করেন চৌম্বক ক্ষেত্রের আচরণের অনুরূপ হিসেবে।[২] সিফাৎ জাজিরাত উল-আরব সিফাৎ জাজিরাত আল-আরব, খণ্ড- ১২, পৃষ্ঠা- ১০৭, ১৩‒১৪; ১৪৯, ১৭; ১৫৪, ৩। আলাক্লেল আল-হামদানি সাবার ইতিহাস হিমায়ার ও নাজরানের ভাষা صفة جزيرة العرب (ভূগোল/আরব উপদ্বীপের বৈশিষ্ট্য)

  • আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি

    আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি ( আরবি: أَبُو ٱلْأَسْوَد ٱلدُّؤَلِيّ‎‎ , আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি ; C.-16 / 603-69 / 689) এর পুরো নাম আবু আল আসওয়াদ জালিম ইবনে আমর ইবনে সুফিয়ান ইবনে জান্দাল ইবনে ইয়ামার ইবনে হিলস ইবনে নুফাথা ইবনে আদি ইবনে আদ-দিল ইবনে বকর [১] তার ডাক নাম আদ-দিলি, অথবা আল-দুওয়ালি। তিনি আলী বিন আবু তালিবের কবি সঙ্গী ও ব্যাকরণবিদ ছিলেন। ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রসারতা বাড়তে থাকলে লক্ষ লক্ষ নও-মুসলিম কুরআন পড়তে এবং তিলাওয়াত করতে আগ্রহী হয়। তখন আরবির একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আদ-দুওয়ালীকে আরবি ব্যাকরণের জনক হিসাবে সম্মান দেয়া হয়। তার ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ফলশ্রুতিতে এবং তারই নেতৃত্বে বসরায় ব্যাকরণবিদদের প্রথম বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিখ্যাত বিদ্যালয়টি কুফা নগরীর বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতা করতো। আল-দুওয়ালি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং স্বরবর্ণ চিহ্ন লেখা শুরু করেন। তিনি আরবি ভাষাবিদ্যার প্রথমদিককার ব্যাকরণ (নাহু/নাহব) লেখেন। [২] তাঁর অনেক ছাত্র এবং অনুসারী ছিল। [৩]

    অক্ষর-নির্দেশক এবং স্বর-নির্দেশক

    আল-দুয়ালি ব্যঞ্জনবর্ণকে পৃথক করার জন্য নির্দিষ্ট বর্ণগুলির জন্যে গাঢ় বর্ণের বিন্দু রাখার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন।। [৪] :৬৬৪ [৫] :১৩১ ব্যঞ্জনাত্মক পার্থক্যকে ইজাম (বা নুক্তা ) বলা হয় । ইঙ্গিতকে তাশকিল বলা হয় । আল-দু’আলির গাঢ় বিন্দু ব্যবস্থা এই উভয়কেই নির্দেশ করেছে। পাঠকদের বিভ্রান্তি দূর করে এবং আরবী শব্দ কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হবে তা পরিষ্কার করে দিতে সক্ষম হয়। :১৩১

    কার্যকর হলেও, গাঢ় আকারের বিন্দুগুলি ছোট আকারের ফন্টগুলিতে ব্যবহার কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো এবং স্ক্রিপ্টগুলির সীমিত নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনওটিতে ব্যবহার করা শক্ত। এছাটা যে কোনও আকারের ফন্ট বা স্ক্রিপ্ট তৈরি ক্রা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। সুতরাং, উমাইয়া গভর্নর আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আল-থাকাফি আল-দুসালির দু’জন শিক্ষার্থীকে একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি ও সংকেতায়িত করার জন্য বলেছিলেন যা সহজ এবং আরও কার্যকর ছিল। আল-খলিল ইবনে আহমদ আল-ফারাহিদি ( মৃত্যু: ৭৮৬) একটি নতুন তাশকিল (ভোকালাইজেশন) ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। এটি একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে আরবি লিপির জন্য সর্বজনীনভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। [৫] :১৩১

    আরবি সূত্রের রেফারেন্স

    ইবনে আল-নাদিমের দশম শতাব্দীর গ্রন্থ ‘ কিতাব আল-ফিহরিস্ট’ গ্রন্থে আল-বসরা্র ব্যাকরণবিদদের সম্পর্কে একটি অধ্যায়ে আল-দুওয়ালীর সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক মন্তব্যকারীর উদ্ধৃতি রয়েছে: বেশিরভাগ বিদ্বান মনে করেন যে ব্যাকরণটি আবিষ্কার করেছিলেন আবু আল-আসওয়াদ আদ-দুয়ালি, এবং তিনি ”বিশ্বাসী”র কমান্ডার আলী ইবনে আবী তালিবের কাছ থেকে শিখেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলে যে নছর ইবনে আসিম আল দুয়ালালি, যাকে আল- লেথি বলা হয়, ব্যাকরণ তৈরি করেছিলেন”। [৬]

    ভাষা বিশেষজ্ঞ আবু উবাইদাহ’র ( মৃত্যু: ২১০ হিজরী) এ্ইক মত, এবং কথাসাহিত্যিক আল-জুবায়েদী ( মৃত্যু: ৩৯7 হিঃ) আবু আল-আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন: “তিনিই সর্বপ্রথম আরবি ভাষার (বিজ্ঞান) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর পদ্ধতিগুলি লিখেছিলেন এবং এর বিধি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।”

    আবু উবায়দাহ বলেন, আল-দুয়ালি আলী ইবনে আবি তালিবের নিকট হতে ব্যাকরণ শিখেছিলেন, তবে তা প্রকাশ করেননি এবং যখন জিয়াদ তাকে জনপ্রিয় সাহিত্যের উন্নতির জন্য ব্যাকরণ রচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে যখন তিনি একজনকে কুরআনের ৯ নম্বর সূরার তিন নম্বর আয়াত “আল্লাহ মুশরিকদের ছেড়ে চলে গেলেন এবং তাঁর রসূলও” এর পরিবর্তে “আল্লাহ মুশরিক ও তাঁর রসূলকে ছাড়েন” পাঠ করতে শুনলেন তখন ত্নিনি আমিরের আদেশে সম্মত হলেন এবং উদ্দেশ্য ও বিধেয় সম্পর্কিত একটি অধ্যায় লেখেন। তিনি একজন বুদ্ধিমান ও আনুগত্যকারী লেখক চেয়েছিলেন। আবদুল আল-কায়েস গোত্রের প্রথম লেখকের কাজে সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয় লেখককে প্রেরণ করা হয়। আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি তাকে লেখার নির্দেশ দেন। [৭]

    আবু সাইদ আল-সিরাফি বর্ণনা করেন যে কীভাবে একবার দুওয়ালি নুবান্দজান থেকে আসা সাদ নামে এক পার্সির মুখোমুখি হয়েছিল [৮][৯]। সাদ ও সহযোগী পার্সিয়ানদের একটি দল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং কুদামাহ ইবনে মাআন- এর প্রট্যাগে পরিণত হয়েছিল । আল-দুওয়ালি সাদকে তার ঘোড়ার সাথে হাঁটতে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করল “ওহে সাদ, আপনি চড়েন না কেন?” সাʿদ জবাব দিলেন “আমার ঘোড়া শক্তিশালী (দালি)”, যার ফলে কয়েকজন পথচারী হাসতে শুরু করেছিলেন। তিনি “খোঁড়া” (জালি) বলতে চেয়েছিলেন। অতঃপর আল-দুয়ালা তাদের ধমক দিয়ে বললেন: “এই মাওয়ালিরা (আরব দেশে বসবাসকারী অনারব) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং আমাদের ভাই হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা তাদের কথা বলা শেখাই নি। যদি কেবল আমরা তাদের জন্য ভাষার [বিধিগুলি] রাখি! “

    আল-নাদিমের আল-ফিহরিস্টের প্রথম বিবরণটি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে যে আল-দুওয়ালি প্রথম ব্যাকরণবিদ ছিলেন। তিনি হাদিছা শহরে এক বই সংগ্রাহক মুহাম্মাদ ইবনে আল-হুসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে আল-নাদিমের দেখা সবচেয়ে দুর্দান্ত গ্রন্থাগার ছিল। সেখানে ব্যাকরণ, শব্দতত্ত্ব এবং সাহিত্যের উপর আরবি বই এবং প্রাচীন বই ছিল। তিনি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন এবং সংগ্রাহক তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেছিলো। আল হুসেইন কুফা নগরীর একজন প্রাচীন লেখাসংগ্রাহকের দেয়া একটি বাক্স তাকে দেখালেন । আন-নাদিম দেখতে পেলো বাক্সটি মিশর, চীন, তিহামাহ, ‘অ্যাডাম’ চামড়া এবং খুরসানের কাগজে লেখা বিভিন্ন পার্চমেন্ট এবং দলিলে পূর্ণ । আবু আমর ইবনুল’ আলা ‘, আবু আমর আল-শায়বানি, আল-আসামি, ইবন আল আরাবি, সিবাওয়েহ, আল-ফাররা’, এবং আল-্কিসাই সহ বিভিন্ন বিদ্বানের হাতে লেখা ব্যাকরণ ছিলো। এগুলির মধ্যে আননাদিম দেখতে পেলো যে ব্যাকরণটি আবু আল-আসওয়াদ [আল-দুওয়ালি] থেকে এসেছে। বইয়ের সংগ্রাহক মারা গেলে পাণ্ডুলিপি বাদে বাকি বিষয়বস্তুগুলি হারিয়ে যায়। [১০]

    তার প্রভাব

    আবু আল-আসওয়াদ কাছে যেসব বিদ্বান পড়াশোনা করেছেন তাদের মধ্যে ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ামার, ‘আনবাসাহ ইবনে মাআদান ,’ আনবাসাহ আল-ফিল (‘হাতির আনবসাহ); মায়মুন ইবনে আল-আকরান ছিলেন। নাসর ইবনে আসিম তাঁর সাথে পড়াশোনা করেছেন বলে বলা হয়।

  • সিদি আবু ইসহাক এর কবিতা

    সিদি আবু ইসহাক এর কবিতা (আরবি: أرجوزة سيدي بوسحاقي) ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ভাষাবিদ সিদি আবু ইসহাক (1394-1453) দ্বারা লিখিত আরবি ব্যাকরণ এর একটি কবিতা[১][২][৩][৪][৫]

    বর্ণনা

    ইবন হিশাম আল-আনসারির লেখা আরবি নিয়মের পাঠ্য ব্যাখ্যা করে ব্যাকরণ নিয়ে কাজ করে ইসলামিক বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত আরবি বইগুলোর মধ্যে সিদি বৌশাকির কবিতাকে বিবেচনা করা হয়।[৬][৭]

    এটিকে সিদি বুশাকির বইগুলির মধ্যে আরবি ব্যাকরণের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং আল-জাওয়াভির ব্যাকরণের কবিতা (আরবি: أرجوزة الزواوي في النحو) শিরোনামে এর পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য এবং ব্যাখ্যা রয়েছে।[৮][৯]

    বিষয়বস্তু

    ব্যাকরণবিদ সিদি বৌশাকি রাজাজ নামক আরবি কাব্যিক মিটার ব্যবহার করে 150 শ্লোকে তাঁর কবিতা রচনা করেছিলেন।[১০][১১]

    এই পাঠ্যটিতে, তিনি আরবি প্রসাডি এবং কবিতার উপর তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, যা কবিতাটির বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, প্রশংসা এবং প্রচারের দিকে পরিচালিত করেছে।[১২][১৩]

    সারাংশ

    লেখক তার দীর্ঘ কবিতাকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যথা ভূমিকা, তারপর বিষয়বস্তু এবং সবশেষে উপসংহার।[১৪][১৫]

    প্রথম ছয়টি স্তবকে, লেখক কবিতার বিষয়বস্তুর একটি সংক্ষিপ্তসার প্রদান করেছেন, যার লক্ষ্য রজাজের পদ্ধতিতে আরবি ব্যাকরণ এবং ইকরাব শেখানো, যা আরবি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজে মনে রাখা যায়।[১৬]

    এরপরে চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত 138টি স্তবকের কবিতাটির পাঠ্য আসে, প্রথম অধ্যায়টি বাক্য সম্পর্কে, দ্বিতীয় অধ্যায়টি প্রতিবেশী এবং বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে, তৃতীয় অধ্যায়ে বিশ্লেষণে অসাধারণ শব্দগুলি সম্পর্কে এবং চতুর্থ অধ্যায়টি বাক্য সম্পর্কে। বিশ্লেষণ।[১৭]

    লেখক তার কবিতা শেষ অধ্যায়ে শেষ করেন, যেখানে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রশংসা এবং নবীদের রসূলকে স্বাগত জানিয়ে তার রচনার সংকলন করার জন্য ছয়টি পদ বেছে নেন।

    আরও দেখুন

    ইংরেজি ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: সিদি আবু ইসহাক এর কবিতা
    উইকিমিডিয়া কমন্সে সিদি আবু ইসহাক এর কবিতা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
  • সমাস

    ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদ একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।

    বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে।

    যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর (শ্রীকৃষ্ণ)। সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটিকে বলে সমস্ত পদ। যেমন: এখানে দোয়াতকলম, পীতাম্বর হলো সমস্ত পদ। সমস্ত পদ কতগুলো পদের মিলিত রুপ, এই প্রতিটি পদকে বলে সমস্যমান পদ। সমস্ত পদকে বিস্তৃত করে যে বাক্যাংশ পাওয়া যায় তাকে বলে সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।[১] সমাস শব্দের ব্যুৎপত্তি হলো সম+অস(ধাতু) +অ ।

    সমাসের উদ্দেশ্য অল্পকথায় অধিক ভাব প্রকাশ করা ।একটা বিরাট শব্দগুচ্ছকে সমাসের মাধ্যমে সংক্ষেপণ করা যায়। তবে সাহিত্যিক প্রয়োজনেই সংস্কৃত ভাষায় সমাসের আবির্ভাব হয়েছিল বলে মনে হয়। কারণ সাহিত্যমূলক কর্মে সমাসের ব্যবহার একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

    অর্থবাচকতা

    সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ,সমর্থন,সংগ্রহ, মিলন,একাধিক পদের একপদীকরণ । ,

    সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য

    সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের।যেমন: সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত)। এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সমাসে পদের ক্রম অক্ষুণ্ন নাও থাকতে পারে যেমন:পথের রাজা=রাজপথ সন্ধিতে পদের ক্রম সর্বদা অক্ষুণ্ন থাকে যেমন:বিদ্যা+আলয়=বিদ্যালয়

    প্রকারভেদ

    সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা:

    1. দ্বন্দ্ব সমাস
    2. কর্মধারয় সমাস
    3. তৎপুরুষ সমাস
    4. বহুব্রীহি সমাস
    5. দ্বিগু সমাস এবং
    6. অব্যয়ীভাব সমাস (বর্তমানে এই সমাসকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসও বলা হয়।)

    তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হিসেবে সমাস মূলত চারটি। যথা: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহিঅব্যয়ীভাব সমাস(বর্তমানে এই সমাস কে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়)।

    এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান সমাস আছে, যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি।

    দ্বন্দ্ব সমাস

    মূল নিবন্ধ: দ্বন্দ্ব সমাস

    যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয় (কখনো বিয়োজক) দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

    দ্বন্দ্ব সমাস নয় প্রকার:[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
    ১। সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ ও কর্ম= কাজ-কর্ম, হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, খাতা-পত্র
    ২। বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন ও রাত= দিন-রাত, জমা-খরচ, ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো, লাভ-লোকসান
    ৩। বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার অথবা জিৎ= হার-জিৎ
    ৪। সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ ও কলা= দুধ-কলা,
    ৫। মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল ও ডাল= চাল-ডাল, মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট
    ৬। অলুক দ্বন্দ্ব: কাগজে ও কলমে= কাগজে-কলমে
    ৭। বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ= রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ
    ৮। একশেষ দ্বন্দ্ব: তুমি, সে ও আমি= আমরা

    ৯। অনুকার দ্বন্দ্ব: কাজ ও টাজ= কাজটাজ

    কর্মধারয় সমাস

    মূল নিবন্ধ: কর্মধারয় সমাস

    বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধান হয়।

    কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথাঃ- (১) সাধারণ কর্মধারয়

    বিশেষণ ও বিশেষ‍্য, বিশেষ‍্য ও বিশেষ‍্য অথবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ‍্যে এই সমাস হয়ে থাকে। যেমন, নীল যে আকাশ=নীলাকাশ। (২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

    কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পর্বত = হিমালয়পর্বত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে। (৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস

    সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র। (৪)রূপক কর্মধারয় সমাস

    উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে। (৫)উপমান কর্মধারয় সমাস

    উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।

    তৎপুরুষ সমাস

    মূল নিবন্ধ: তৎপুরুষ সমাস

    দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা যুক্ত= লবণাক্ত।

    “‘তৎপুরুষ”‘ শব্দটির অর্থ হল “তার পুরুষ”। তার পুরুষ এই শব্দ গুলির একপদীকরণে তৎপুরুষ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্ব পদ থেকে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি ‘র’ লোপ পেয়েছে ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এইভাবে এই সমাসের অধিকাংশ উদাহরণে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য থাকে এবং তৎপুরুষ শব্দটি হল এই রীতিতে নিষ্পন্ন সমাষের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।তাই উদাহরণের নামেই এর সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে তৎপুরুষ সমাস।

    তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ- (১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ

    দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত। (২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ

    তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ। (৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ

    চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি। (৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ

    পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট। (৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ

    ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু। (৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ

    সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা। (৭)উপসর্গ-তৎপুরুষ সমাস (=অব্যয়ীভাব)

    অনুবাদ অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বা অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম। (৮)উপপদ-তৎপুরুষ সমাস

    যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সে পদকে উপপদ বলে।[২] কৃদন্ত পদের সাথে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: জলে চরে যা= জলচর, জল দেয় যা= জলদ, পঙ্কে জন্মে যা= পঙ্কজ ইত্যাদি।

    এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।

    বহুব্রীহি সমাস

    মূল নিবন্ধ: বহুব্রীহি সমাস

    যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না ,সমস্ত পদের অর্থ প্রাধান্য্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

    প্রধানত বহুব্রীহি সমাস সাত প্রকার:

    ১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন—দশ আনন যার

    ২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি– পাপে মতি যার

    ৩/ মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি: বিড়ালোক্ষী– বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার

    ৪/ অলুক বহুব্রীহি: মুখেভাত– মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।

    ৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি– লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই।

    ৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক– নেই(ন) বাক যার।

    ৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক– বাকের সহিত বর্তমান

    দ্বিগু সমাস

    মূল নিবন্ধ: দ্বিগু সমাস

    পূর্ব পদে সংখ্যাবাচক শব্দ বসে সমাহার বা সমষ্টি বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

    • তদ্ধিতার্থে; যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু।
    • উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। (এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে)।
    • সমাহারে; যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোক।
    • চৌ রাস্তার সমাহার= চৌরাস্তা
    • সে(তিন) তারের সমাহার= সেতারা
    • শত অব্দের সমাহার=শতাব্দী
    • ছয় ঋতুর সমাহার=ষড়রিতু

    দ্বিগু শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘দুটি গরু’ কিন্তু ব্যাকরণ সম্মত অর্থ হল ‘দুটি গরুর মূল্যে কেনা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    অব্যয়ীভাব সমাস

    মূল নিবন্ধ: অব্যয়ীভাব সমাস

    অনুবাদ অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। এই সমাসকে বর্তমানে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।

    অন্যান্য সমাস

    ছয়টি প্রধান সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এজন্য এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।

    নিত্য সমাস

    যে সমাসে সমস্যমান পদ দ্বারা সমাস-বাক্য হয় না, অন্য পদের দ্বারা সমস্ত পদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন: কেবল তা = তন্মাত্র, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ = গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ, তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।

    অলোপ সমাস

    যে সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলোপ সমাস বলে। যেমন: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে, ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, মামার বাড়ি, গায়ে পড়া, গায়ে হলুদ, হাতেখড়ি, মুখে-ভাত,কানে-কলম ইত্যাদি।

    উপপদ সমাস

    কৃদন্ত-পদের পূর্বে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে এবং উপপদের সাথে কৃদন্ত-পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ সমাস বলে। যেমন: কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার।

    প্রাদি সমাস

    প্র,পরা প্রভৃতি ২০টি উপসর্গের সাথে কৃৎ প্রত্যয়সাধিত বিশেষ্য পদের সমাস হলে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন: সম্ (সম্যক্) যে আদর = সমাদর, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন, পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ = অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাত, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি = প্রগতি ইত্যাদি, প্রদর্শন=প্রকৃত রুপে দর্শন, প্রনাম=প্রত্যয় দ্বারা নাম।

    বাক্যাশ্রয়ী সমাস

    যে সমাসে সমাসবদ্ধ পদগুলি একমাত্রায় লেখা হয় না এমনকি সবসময় পদসংযোজক চিহ্ন দ্বারাও যুক্ত করে লেখা হয় না – বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত এই সমাসকে বলা হয় বাক্যাশ্রয়ী সমাস। যেমন ; ‘বসে-আঁকো-প্রতিযোগিতা’, ‘সব-পেয়েছির-দেশ’, ‘রক্ত-দান-শিবির’ ইত্যাদি ।

  • দ্বিগু সমাস

    সমাহার বা সমষ্টি বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।[১] দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়।

    তবে অনেক ব্যাকরণবিদ দ্বিগু সমাসকে কর্মধার‍য় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বৈয়াকরণ পাণিনি তার ‘অষ্টাধ্যায়ী’ ব্যাকরণে দ্বিগু সমাসকে অর্থ ও পদ সন্নিবেশের ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। কখনো কখনো দ্বিগু সমাসকে তদ্বিতার্থক দ্বিগু ও সমাহার দ্বিগু – এই দুই ভাগেও ভাগ করা হয়।

    উদাহরণ

    ত্রিকাল (তিন কালের সমাহার), চৌরাস্তা (চৌরাস্তার সমাহার), তেমাথা (তিন মাথার সমাহার), শতাব্দী (শত অব্দের সমাহার), পঞ্চবটী (পঞ্চবটের সমাহার), ত্রিপদী (ত্রি বা তিন পদের সমাহার), ত্রিফলা (ত্রি বা তিন ফলের সমাহার), নবরত্ন (নব বা নয় রত্নের সমাহার), তেপান্তর (তিন বা তে প্রান্তরের সমাহার), সপ্তাহ, পঞ্চনদ, পঞ্চভূত, ষড়ঋতু, দশ চক্র, অষ্টধাতু, সপ্তর্ষি, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, চতুরঙ্গ, ত্রিমোহিনী, ত্রিভুবন, চতুর্দশপদী, তেরনদী, সাতসমুদ্র ইত্যাদি।

    আরও দেখুন

  • দ্বন্দ্ব সমাস

    যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয় (কখনো বিয়োজক) দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: তাল ও তমাল= তাল-তমাল, দোয়াত ও কলম= দোয়াত-কলম। এখানে তাল ও তমাল এবং দোয়াত ও কলম- প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে।

    দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর – এই অব্যয় পদগুলো ব্যবহৃত হয়।[১] যেমন: মাতা ও পিতা= মাতা-পিতা, বই ও খাতা= বই-খাতা, ন্যায় ও অন্যায়= ন্যায়-অন্যায়, সহজ ও সরল= সহজ-সরল, সত্য ও মিথ্যা= সত্য-মিথ্যা।

    প্রকারভেদ

    দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
    ১। সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ ও কর্ম= কাজ-কর্ম
    ২। বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন ও রাত= দিন-রাত
    ৩। বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার অথবা জিৎ = হার-জিৎ
    ৪। সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ ও কলা= দুধ-কলা
    ৫। মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল ও ডাল= চাল-ডাল
    ৬। অলুক দ্বন্দ্ব: কাগজে ও কলমে= কাগজে-কলমে
    ৭। বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ= রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ
    ৮। একশেষ দ্বন্দ্ব: তুমি, আমি ও সে= আমরা

    দ্বন্দ্ব সমাসের গঠন

    বিভিন্নভাবে দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয়। যেমন:[১]

    ১. মিলনার্থক শব্দযোগে:মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট
    ২. বিরোধার্থক শব্দযোগে:দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি
    ৩. বিপরীতার্থক শব্দযোগে:আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো, লাভ-লোকসান
    ৪. অঙ্গবাচক শব্দযোগে:হাত-পা, নাক-কান, বুক-পিঠ, মাথা-মুণ্ডু, নাক-মুখ
    ৫. সংখ্যাবাচক শব্দযোগে:সাত-পাঁচ, নয়-ছয়, সাত-সতের, উনিশ-বিশ
    ৬. সমার্থক শব্দযোগে:হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভি, খাতা-পত্র
    ৭. প্রায় সমার্থক ও সহচর শব্দযোগে:কাপড়-চোপড়, পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর
    ৮. দুটি সর্বনামযোগে:যা-তা, যে-সে, যথা-তথা, তুমি-আমি, এখানে-সেখানে
    ৯. দুটি ক্রিয়াযোগে:দেখা-শোনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-নেওয়া
    ১০. দুটি ক্রিয়াবিশেষণযোগে:ধীরে-সুস্থে, আগে-পিছে, আকারে-ইঙ্গিতে
    ১১. দুটি বিশেষণযোগে:ভালো-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া

    বিশেষ দ্বন্দ্ব সমাস

    অলুক দ্বন্দ্ব

    মূল নিবন্ধ: সমাস § অলুক সমাস

    যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে।

    বহুপদী দ্বন্দ্ব

    তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: সাহেব-বিবি-গোলাম, হাত-পা-নাক-মুখ-চোখ।

    আরো দেখুন

  • তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।[১] তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনো বিভক্তি থাকতে পারে এবং পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ করা হয়। যেমন: বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস। এছাড়া তৎপুরুষ সমাসের অন্যান্য উদাহরণ হলো: লুচিকে ভাজা= লুচি-ভাজা, ছেলেকে ভোলানো= ছেলে-ভোলানো, লোককে দেখানো= লোক দেখানো, ট্রেনের দ্বারা ভ্রমণ= ট্রেনভ্রমণ, বজ্রের দ্বারা হত= বজ্রাহত ইত্যাদি।

    প্রকারভেদ

    তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার। যথা:

    দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, এরে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বা কর্ম তৎপুরুষ বলে। যথা: দুঃখকে প্রাপ্ত= দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন, পরলোকে গত= পরলোকগত,পুঁথিতে গত= পুঁথিগত। ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী= চিরসুখী।

    এরূপ- গাকে ঢাকা=গা-ঢাকা, রথকে দেখা=রথদেখা, বীজকে বোনা= বীজবোনা, ভাতরাঁধা, ছেলে-ভুলানো (ছড়া), নভেল-পড়া ইত্যাদি।

    তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মন দিয়ে গড়া= মন গড়া, শ্রম দ্বারা লব্ধ= শ্রমলব্ধ, মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা।

    ঊন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: এক দ্বারা ঊন= একোন, বিদ্যা দ্বারা হীন= বিদ্যাহীন, জ্ঞান দ্বারা শূন্য= জ্ঞানশূন্য, পাঁচ দ্বারা কম= পাঁচ কম।

    উপকরণব্যাক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত= স্বর্ণমণ্ডিত। এরূপ- হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, রত্নশোভিত ইত্যাদি।

    চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গুরুকে ভক্তি= গুরুভক্তি, আরামের জন্য কেদারা= আরামকেদারা, বসতের নিমিত্ত বাড়ি= বসতবাড়ি, বিয়ের জন্য পাগলা= বিয়েপাগলা ইত্যাদি। এরূপ- ছাত্রাবাস, ডাকমাশুল, চোষকাগজ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, হজযাত্রা, মালগুদাম, রান্নাঘর, মাপকাঠি, বালিকা-বিদ্যালয়, পাগলাগারদ ইত্যাদি।

    পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: খাঁচা থেকে ছাড়া= খাঁচাছাড়া, বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত ইত্যাদি

    সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: স্কুল থেকে পালানো= স্কুলপালানো, জেল থেকে মুক্ত= জেলমুক্ত ইত্যাদি। এরকম- জেলখালাস, বোঁটাখসা, আগাগোড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত ইত্যাদি।

    কোনো কোনো সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘এর’, ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যেমন: পরাণের চেয়ে প্রিয়= পরাণপ্রিয়।

    ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: চায়ের বাগান= চাবাগান, রাজার পুত্র= রাজপুত্র, খেয়ার ঘাট= খেয়াঘাট। এরূপ- ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, শ্বশুড়বাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি।

    ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজা’ স্থলে ‘রাজ’ এবং ‘পিতা’, ‘মাতা’, ‘ভ্রাতা’ স্থলে ‘পিতৃ’, ‘মাতৃ’, ‘ভ্রাতৃ’ হয়। যেমন: গজনীর রাজা= গজনীরাজ, রাজার পুত্র= রাজপুত্র, পিতার ধন= পিতৃধন, মাতার সেবা= মাতৃসেবা, ভ্রাতার স্নেহ= ভ্রাতৃস্নেহ, পুত্রের বধূ= পুত্রবধূ ইত্যাদি।

    পরপদে সহ, তুল্য, নিভ, প্রায়, প্রতিম- এসব শব্দ থাকলেও ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: পত্নীর সহ= পত্নীসহ, কন্যার সহ= কন্যাসহ, সহোদরের প্রতিম= সহোদরপ্রতিম/ সোদরপ্রতিম ইত্যাদি।

    কালের কোনো অংশবাচক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যেমন: অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ= পূর্বাহ্ন।

    পরপদে রাজি, গ্রাম, বৃন্দ, গণ, যূথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: ছাত্রের বৃন্দ= ছাত্রবৃন্দ, গুণের গ্রাম= গুণগ্রাম, হস্তীর যূথ= হস্তীযূথ ইত্যাদি।

    ‘অর্ধ’ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন: পথের অর্ধ= অর্ধপথ, দিনের অর্ধ= অর্ধদিন।

    শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন: মৃগীর শিশু= মৃগশিশু, ছাগীর দুগ্ধ= ছাগদুগ্ধ ইত্যাদি।

    ব্যাসবাক্যে ‘রাজা’ শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে বসে। যেমন: পথের রাজা= রাজপথ, হাঁসের রাজা= রাজহাঁস।

    • অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

    ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ, মামার বাড়ি, সাপের পা, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি। কিন্তু ভ্রাতার পুত্র= ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)।

    সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

    পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গাছে পাকা= গাছপাকা, দিবায় নিদ্রা= দিবানিদ্রা। এরূপ- বাকপটু, গোলাভরা, তালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দী, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।

    সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে। যেমন: পূর্বে ভূত= ভূতপূর্ব, পূর্বে অশ্রুত= অশ্রুতপূর্ব, পূর্বে অদৃষ্ট= অদৃষ্টপূর্ব।

    নঞ্ তৎপুরুষ সমাস

    না বাচক নঞ্ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: না আচার= অনাচার, না কাতর= অকাতর। এরূপ- অনাদর, নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।

    খাঁটি বাংলায় অ, আ, না কিংবা অনা হয়। যেমন: না কাল= অকাল বা আকাল। এরূপ- আধোয়া, নামঞ্জুর, অকেজো, অজানা, অচেনা, আলুনি, নাছোড়, অনাবাদী, নাবালক ইত্যাদি।

    না- বাচক অর্থ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ অর্থে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে। যেমন: না/নয় বিশ্বাস= অবিশ্বাস (বিশ্বাসের অভাব), না/নয় লৌকিক= অলৌকিক (ভিন্নতা), না/নয় কেশা= অকেশা (অল্পতা), না/নয় সুর= অসুর (বিরোধ), না/নয় কাল= অকাল (অপ্রশস্ত), না/নয় ঘাট= অঘাট (মন্দ)। এরূপ- অমানুষ, অসঙ্গত, অভদ্র, অনন্য, অগম্য ইত্যাদি।

    উপপদ তৎপুরুষ সমাস

    যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সে পদকে উপপদ বলে।[১] কৃদন্ত পদের সাথে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: জলে চরে যা= জলচর, জল দেয় যা= জলদ, পঙ্কে জন্মে যা= পঙ্কজ ইত্যাদি। এরূপ- গৃহস্থ, সত্যবাদী, ইন্দ্রজিৎ, ছেলেধরা, ধামাধরা, পকেটমার, পাতাচাটা, হাড়ভাঙ্গা, মাছিমারা, ছারপোকা, ঘরপোড়া, বর্ণচোরা, গলাকাটা, পা-চাটা, পাড়াবেড়ানি, ছা-পোষা , কলাধর, ঘুসখোর ইত্যাদি।

    অলুক তৎপুরুষ সমাস

    যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গায়ে পড়া, ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।

    তবে গায়ে-হলুদ, হাতেখড়ি ইত্যাদি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুদ বা খড়িকে বোঝায় না, অনুষ্ঠান বিশেষকে বোঝায়। সুতরাং এগুলো অলুক তৎপুরুষ নয়, অলুক বহুব্রীহি সমাস

    আরো দেখুন