Category: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

Bengali language and literature

  • পঠনবিকার

    পঠনবিকার একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক বিকার যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কোনও কিছু পড়তে বা বানান করতে অক্ষম হয় বা এসব কাজ করতে বড় ধরনের ঝামেলার শিকার হয়।[১][৬] একে ইংরেজি পরিভাষায় ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) বা রিডিং ডিজর্ডার (Reading disorder) বলে। পঠনবিকারের মাত্রা একেকজন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য একেক রকম হয়[৩] এতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিত্রলৈখিক প্রতীক, বিশেষ ভাষিক প্রতীক যেমন বর্ণ, অক্ষর, ইত্যাদি শনাক্ত করতে ও মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত করতে বাধাগ্রস্ত হয়। অত্যন্ত নিম্নমানের পঠন দক্ষতা, শব্দের বানান করতে সমস্যা, স্বাভাবিক দ্রুতিতে পঠনে অক্ষমতা, লেখার সময় শব্দ ও বর্ণের ক্রম উলটে ফেলা, অপাঠ্য হাতের লেখা, মনে মনে শব্দ উচ্চারণ করায় অপারগতা, উচ্চস্বরে পড়ার সময় উচ্চারণে সমস্যা, পঠিত বিষয়বস্তুর অর্থ না বোঝা, ইত্যাদি এই বিকারের কিছু লক্ষণ,[৩][৭] যেগুলি সাধারণত প্রাথমিক শৈশবকালীন বছরগুলিতে বিদ্যালয়ে প্রকাশ পায়।[২]

    পঠনবিকার অনৈচ্ছিক, এই বিকারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শেখার স্বাভাবিক আগ্রহ থাকে।[৩] পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চহারে মনোযোগের অভাবজনিত অতিসক্রিয়তা বিকার (Attention deficit hyperactivity disorder, সংক্ষেপে ADHD), বিকাশমূলক ভাষাবিকার (Developmental language disorder), ও সংখ্যা গণনায় সমস্যা (Dyscalculia) পরিলক্ষিত হয়।[২][৮][৯]

    বংশাণুগত ও পরিবেশগত উপাদানসমূহের মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার কারণে পঠনবিকার ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়।[২] কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিকারটি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হতে পারে।[৩] এর বিপরীতে যদি কোনও চোটজনিত মস্তিষ্ক জখম (traumatic brain injury), সন্ন্যাসরোগ (stroke), বা চিত্তভ্রংশের (dementia) কারণে পঠনবিকার ঘটে, তাহলে সেটিকে “অর্জিত পঠনবিকার” (Acquired dyslexia) বলে।[১] পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের পঠন-সংক্রান্ত ও ভাষিক প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত স্নায়ুপথগুলিতে অস্বাভাবিকতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।[৩] স্মৃতি, দৃষ্টিশক্তি, বানান ও পঠনদক্ষতার উপরে ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে পঠনবিকার নির্ণয় করা হয়।[৪] শ্রুতি সমস্যা বা দৃষ্টি সমস্যা, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা সুযোগের অভাবের কারণে সৃষ্ট পঠনে অসুবিধা থেকে পঠনবিকার পৃথক একটি বৈকল্য।[২]

    আগেভাগে শনাক্ত হলে এবং পঠন শিক্ষণে বিশেষায়িত দৃষ্টিভঙ্গির সহায়তা নিলে বেশিরভাগ পঠনবিকারগ্রস্ত শিশুকেই পঠন শেখানো সম্ভব। এজন্য পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিটির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষণ পদ্ধতিতে অভিযোজন ঘটাতে হয় (খাপ খাইয়ে নিতে হয়)।[১] যদিও এতে পঠনবিকারের মূলগত কারণের সমাধা হয় না, তা সত্ত্বেও এর ফলে এ-সংক্রান্ত উপসর্গগুলির মাত্রা বা ক্ষতি হ্রাস পেতে পারে।[১০] দৃষ্টিকে লক্ষ্য করে প্রদত্ত চিকিৎসাগুলি কার্যকর হয় না।[১১] পঠনবিকার অতিসাধারণ একটি শিখন প্রতিবন্ধিতা (learning disability) যা বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান।[১২] যেকোনও জনসমষ্টির ৩-৭% ব্যক্তি এর শিকার হয়ে থাকে।[২][৫] তবে কোনও জনসম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ২০% (প্রতি ৫ জনে ১ জন) কোনও না কোনও মাত্রায় পঠনবিকারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে।[১৩] পুরুষদের মধ্যে পঠনবিকার বেশী ধরা পড়লেও[২] বিশেষজ্ঞদের মতে এটি পুরুষ ও নারী উভয়কেই সমভাবে আক্রান্ত করে।[১২] কারও কারও মতে পঠনবিকারকে বৈকল্য বা বিকার হিসেবে গণ্য না করে একটি ভিন্ন উপায়ে শিখন হিসেবে গণ্য করাই শ্রেয়, যার সুবিধা-অসুবিধা দুই=ই বিদ্যমান।[১৪][১৫]

    যখন কোনও অতীতে স্বাভাবিকভাবে পঠনক্ষম ব্যক্তি পঠনক্ষমতা হারায়, তখন তাকে “শব্দান্ধতা” বা “শব্দবোধহীনতা” (ইংরেজি: Alexia অ্যালেক্সিয়া) বলে।[৩]

    আরও দেখুন

  • চিত্রলিপি

    চিত্রলিপি এক ধরনের লিখন পদ্ধতি বা লিপি যেখানে একটি অক্ষর বা বর্ণ দিয়ে সম্পূর্ণ একটি শব্দকে অথবা একটি রূপমূলকে (শব্দাংশকে) প্রকাশ করা হয়। এই চিত্রলিপিগুলির অক্ষরগুলি আঁকা ছবি থেকে উদ্ভূত হয়।

    চিত্রলিপির তালিকা

    উইকিমিডিয়া কমন্সে চিত্রলিপি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

    পৃথিবীর লিখন পদ্ধতির প্রকারগুলি
    শব্দীয় বর্ণমালা লিপিঅশব্দীয় বর্ণমালা লিপিধ্বনিক বর্ণমালা লিপিধ্বনিদলভিত্তিক লিপিঅর্ধ-শব্দলিপিচিত্রাক্ষর লিপিআব্জাদ লিপিসংখ্যা পদ্ধতি
    দেলিখন পদ্ধতিসমূহ

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • নজরুলগীতি

    নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তার সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩০০০-এরও বেশি[১] গান রচনা করেছেন। এসকল গানের বড় একটি অংশ তারই সুরারোপিত। তার রচিত চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধ্বগগণে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালাগুল বাগিচাগীতি শতদলবুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; একারণে অনুমান করা হয় প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। তার কিছু কালজয়ী গানগুলো হলো ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ‘, ‘চল চল চল‘, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ‘ ইত্যাদি।

    বৈশিষ্ট্য ও জনপ্রিয়তা[উৎস সম্পাদনা]

    নজরুলের আবির্ভাব ও কর্মকাল রবীন্দ্রযুগের অন্তর্ভূত। তবু নজরুল রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বলয়ের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে গীত রচনা করেছেন ও সুরারোপ করেছেন। তিনি বাংলা গানে বিচিত্র সুরের উৎস। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনিও একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও সুগায়ক। গানের সংখ্যায় তিনি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি বহু নতুন সুরের স্রষ্টা। বিচিত্র সুর আর তালে তার গান নিত্য নতুন।

    নজরুল ” নজরুলগীতি ” শিখাচ্ছেন

    শ্রোতার পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় নজরুলের কারার ওই লৌহকপাট গানটি ১৬তম স্থানে এবং চল্‌ চল্‌ চল্‌ ঊর্ধগগনে বাজে মাদল গানটি ১৮তম স্থানে রয়েছে।[২]

    শ্রেণীবিন্যাস[উৎস সম্পাদনা]

    বাংলা গানের বুলবুল কাজী নজরুল ইসলাম, ১৯৪০

    সকল নজরুলগীতি ১০টি ভাগে বিভাজ্য। এগুলো হলোঃ ভক্তিমূলক গান, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক গান, রাগপ্রধান গান, হাসির গান, ব্যাঙ্গাত্মক গান, সমবেত সঙ্গীত, রণ সঙ্গীত এবং, বিদেশীসুরাশ্রিত গান।

    নজরুল সঙ্গীতের বিষয় ও সুরগত বৈচিত্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে নজরুল-বিশেষজ্ঞ আবদুল আজীজ আল্‌-আমান লিখেছেন,

    গানগুলি এক গোত্রের নয়, বিভিন্ন শ্রেণীর। তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত–শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সংগীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, নারী জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, অন্যান্য ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত, শিশু সংগীত, নৃত্য-সংগীত, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালি, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরও নানা বর্ণের গান। বিভিন্ন বিদেশী সুরের আদলে রচিত গানের সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীকে অবলম্বন করে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গান এবং নতুন সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর উপর ভিত্তি করে লেখা ‘নবরাগ’ পর্যায়ের গানগুলি নজরুলের সাংগীতিক প্রতিভার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।[৩]

    নজরুল সঙ্গীত সংকলন[উৎস সম্পাদনা]

    নজরুল সঙ্গীতের স্বরলিপি গ্রন্থের প্রচ্ছদ চিত্র। নজরুল নিজেই স্বরলিপি করেছিলেন।

    গানের মালা[উৎস সম্পাদনা]

    ৯৫ টি সংগীত সমৃদ্ধ গ্রন্থটি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর (কার্তিক ১৩৪১) প্রকাশ করেন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স। গ্রন্থটি উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল: “পরম স্নেহভাজন শ্রীমান অনিলকুমার দাস কল্যাণবরেষুকে”। ৪+৯৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থের মূল্য ছিল দেড় টাকা।

    এই গ্রন্থ যে সকল গানে সমৃদ্ধ গ্রন্থটি সেগুলি হল :

    1. আমি সুন্দর নহি জানি
    2. আধো-আধো বোল
    3. না-ই পরিলে নোটন-খোঁপায়
    4. অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত দেহা
    5. ভুল করে যদি ভালোবেসে থাকি
    6. ঝরাফুল- বিছানো পথে এস
    7. প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
    8. আজ নিশীথে অভিসার তোমার পথে
    9. কার মঞ্জীর রিনিঝিনি বাজে
    10. নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
    11. বল্ রে তোরা বল্ ওরে ও আকাশ-ভার তারা
    12. বল্ সখি বল্ ওরে সরে যেতে বল্
    13. নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
    14. চম্পা পারুল যুথী টগর চামেলি
    15. দুর দ্বীপ-বাসিনী চিনি তোমারে চিনি
    16. মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে
    17. বকুল-বনের পাখি ডাকিয়া আর
    18. মনের রং লেগেছে বনের পলাশ
    19. আধখানা চাঁদ হাসিছে gআকাশে
    20. যবে সন্ধ্যাবেলায় প্রিয় তুলসী-তলায়
    21. আঁখি তোলো দানো করুণা
    22. মদির স্বপনে মম বন-ভবনে
    23. মুঠি মুঠি আবীর ও কে কাননে ছড়ায়
    24. বল্লরী-ভুজ-বন্ধন খোলো
    25. তব যাবার বেলা বলে যাও মনের কথা
    26. তরুণ অশান্ত কে বিরহী
    27. বরষা ঐ এল বরষ্য ঝরে বারি গগনে ঝুরুঝুরু
    28. আমি ময়নামতীর শাড়ি দেবো
    29. স্নিগ্ধ-শ্যাম-বেণী-বর্ণা এস মালবিকা
    30. মেঘ -মেদুর গগন কাঁদে হুতাশ পরন
    31. আমি অলস উদাস আনমনা
    32. কোয়েলা কুহু কুহু ডাকে
    33. তোমার হাতের সোনা রাখি আমার হাতে
    34. বাদলা-মেঘের বাদল-তালে ময়ূর নাচে
    35. কে দুরন্ত বাজাও ঝড়ের ব্যাকুল বাঁশি
    36. এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী
    37. দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ
    38. শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল
    39. দোলে প্রাণের কোলে প্রভুর নামের মালা
    40. শঙ্কাশূন্য লক্ষকণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ঐ
    41. চল্ রে চপল তরুণ-দল বাঁধন-হারা
    42. বীরদল আগে চল্
    43. জননী মোর জন্মভূমি
    44. তোমার পায়ে ; কে পরালো মুন্ডমালা
    45. নাচে রে মোর কালো মেয়ে
    46. মাতলো গগন-অঙ্গনে ঐ
    47. দেখে যা-রে রুদ্রাণী মা
    48. মহাকালের কোলে এসে গৌরী
    49. শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে
    50. জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী
    51. লুকোচুরি খেলতে হরি হার মেনেছে
    52. খর রৌদ্রের হোমানল জ্বালি
    53. শ্যামা তন্বী আমি মেঘ-বরণা
    54. মম আগমনে বাজে আগমনীর সানাই
    55. উত্তরীয় লুটায় আমার
    56. ওরে ও ¯্রাতের ফুল
    57. বুনো ফুলের করুণ সুবাস ঝুরে
    58. এল শ্যামল কিশোর
    59. এল এল রে বৈশাখী ঝড়
    60. ঘুমাও, ঘুমাও ! দেখিতে এসেছি
    61. কলঙ্ক আর জোৎস্নায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ
    62. শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়
    63. তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে
    64. রাত্রি শেষের যাত্রী আমি
    65. ফুলের মতন ফুল্ল মুখে
    66. ফিরে ফিরে কেন তারই স্মৃতি
    67. আঁধার রাতের তিমির দুলে আমার সামনে
    68. দশ হাতে ঐ দশ দিকে মা
    69. মা এসেছে মা এসেছে
    70. ঐ কাজল-কালো চোখ
    71. ও কালো বউ
    72. যেয়ো না আর যেয়ো না
    73. আগের মত আমের ডালে বোল ধরেছে
    74. তোর রূপে সই গাহন করে
    75. ঝড়-ঝঞ¦ার ওড়ে নিশান
    76. আমার প্রাণের দ্বারে ডাক দিয়ে কে যায়
    77. এল ঐ বনাস্তে পাগল বসন্ত
    78. সহসা কি গোল বাঁধালো পাপিয়া আর পিকে
    79. এস কল্যাণী, চির-আয়ুষ্মতী
    80. দাও শৌর্য দাও ধৈর্য হে উদার নাথ
    81. চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল
    82. রঙ্গিলা আপনি রাধা
    83. কুঙ্কুম আবীর ফাগের
    84. এল ফুল-দোল ওরে
    85. যাবার বেলায় ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল
    86. জাগো দুস্তর পথের নব-যাত্রী
    87. ডেকো না আর দূরের প্রিয়া
    88. ভেঙো না ভেঙো না ধ্যান
    89. যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম
    90. মোর বুক-ভরা ছিল আশা
    91. বনে মোর ফুল-ঝরার বেলা
    92. মিলন-রাতের মালা হব তোমার অলকে
    93. যায় ঝিল্মিল্ ঢেউ তুলে
    94. কাজরী গাহিয়া চল গোপ-ললনা
    95. এবং তরুণ-তমাল-বরণ এস শ্যামল আমার।

    গীতি শতদল[উৎস সম্পাদনা]

    এই গ্রন্থটির প্রকাশক ছিলেন ডি এম লাইব্রেরি। ৮+১০৪ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ছিল দেড় টাকা। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালের এপ্রিলে (১৩৪১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ)। নজরুল ইসলাম এই গ্রন্থের প্রারম্ভে ‘দুটি কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় লেখেন “গীতিশতদলে’র সমস্ত গানগুলিই গ্রামোফোন ও স্বদেশী মেগাফোন কোম্পানীর রেকর্ড়ে রেখাবদ্ধ হইয়া গিয়াছে। আমার বহু গীতি-শিল্পী বন্ধুর কল্যাণে ‘রেডিও’ প্রভৃতিতে গীত হওয়ায় এই গানগুলি ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছে। এই অবসরে তাঁহাদের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি।… আমার বুলবুল প্রভৃতি গানের বইয়ের মত “গীতিশতদল”-ও সকলকে আকর্ষণে সমর্থ হইলে নিজেকে ধন্য মনে করিব।”

    এই গ্রন্থে মোট ১০১টি গান ছিল। যে গানগুলি স্থান পায় সেগুলি হল :

    1. শুকনো পাতার নূপুর পায়ে
    2. চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়
    3. ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা
    4. পলাশ ফুলের মউ পিয়ে
    5. এস বসন্তের রাজা হে আমার
    6. তুমি নন্দন-পথ-ভোলা
    7. তোমার ফুলের মতন মন
    8. হেসে হেসে কল্সি নাচাইয়া
    9. ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায়
    10. গত রজনীর কথা পড়ে মনে
    11. পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
    12. রহি রহি কেন আজো
    13. পিউ পিউ বোলে পাপিয়া
    14. চাঁদের পিয়ালাতে আজি
    15. এস শারদ প্রাতের পথিক
    16. মালঞ্চে আজ কাহার যাওয়া আসা
    17. সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
    18. আমার দেওয়া ব্যথা ভোলা
    19. হুল ফুটিয়ে গেলে শুধু
    20. গোধূলির রং ছড়ালে
    21. সকরুণ নয়নে চাহে
    22. বাজিছে বাঁশির কার
    23. বন-হরিণীর তব বাঁকা আঁখির
    24. রেশমি চূড়ির তালে
    25. সেই পুরানো সুরে আবার
    26. ধীরে যায় ফিরে ফিরে চায়
    27. পিয়াসী প্রাণ তারে চায়
    28. বেলা পড়ে এল
    29. এল ফুলের মহলে ভোমরা
    30. ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায়
    31. আজও ফোটেনি কুঞ্জে
    32. পলাশ মঞ্জরি পরায়ে দে লো
    33. এ ঘোর-শ্রাবণ-নিশি
    34. দিও ফুলদল বিছায়ে
    35. অবুঝ মোর আঁখি-বারি
    36. উচাটন মন ঘরে রয় না
    37. ফিরে গেছে সই
    38. ছাড় ছাড় আঁচল বঁধু
    39. কুল রাখ না রাখ
    40. ফিরিয়া এস এস হে
    41. আঁধি ঘুম-ঘুম
    42. সেদিনো প্রভাতে
    43. জাগো জাগো রে মুসাফির
    44. কত জনম যাবে
    45. হায় ঝরে যায়
    46. এ কোথায় আসিলে হায়
    47. ভুল করে আসিয়াছি
    48. ভোলো প্রিয় ভোলো ভোলো
    49. আমি যেদিন রইব না গো
    50. এলে যে গো চির-সাথী
    51. ও তুই যাস্নে রাই কিশোরী
    52. দুঃখ ক্লেশ শোক
    53. ভোলো অতীত-স্মৃতি
    54. চির-কিশোর মুরলীধর
    55. সাগর আমায় ডাক দিয়েছে
    56. ভালোবেসে অবশেষে
    57. এস নূপুর বাজাইয়া
    58. রাস-মাঞ্চাপরি দোলে মুরলীধর
    59. নাচিয়া নাচিয়া এস
    60. নাচে ঐ আনন্দে
    61. তোমারে কি দিয়া পূজি
    62. আমার নয়নে কৃষ্ণ
    63. মন লহ নিতি নাম
    64. তোমার সৃষ্টি মাঝে হরি
    65. দাও দাও দরশন
    66. নাচিছে নট-নাথ
    67. বাজিয়ে বাঁশি মনের বনে
    68. বিজন গোঠে কে রাখাল
    69. আজি নন্দ দুলালের সাথে
    70. শোনো লো বাঁশিতে
    71. হেলে দূলে বাঁকা কানাইয়া
    72. মণি-মঞ্জীর বাজে
    73. ফিরে যা সখি ফিরে যা ঘরে
    74. আনন্দ দুলালী ব্রজবালার সনে
    75. গুঞ্জ-মালা গলে
    76. মোর মাধব শূন্য মাধবী কুঞ্জে
    77. ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার
    78. সখি যায়নি তো শ্যাম মথুরায়
    79. নমো নটনাথ
    80. ভবের এই পাশা খেলায়
    81. ভুবনে ভুবনে আজি
    82. অসুর- বাড়ির ফেরৎ এ মা
    83. আজি প্রথম মাধবী ফুটিল কুঞ্জে
    84. জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী
    85. হোরির রঙ লাগে
    86. বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু
    87. জাগো জাগো ! নব আলোকে
    88. পরান হরিয়াছিলে পাশরিয়া
    89. নবীন বসন্তের রানী তুমি
    90. আজি মিলন-বাসর
    91. ওরে হুলোরে তুই রাত বিরেতে
    92. নিয়ে কাদা মাটির তাল
    93. আজকে হোরি ও নাগরী
    94. আচ লাচনের লেগেচে যে গাঁদি
    95. চায়ের পিয়াসী পিপাসিত চিত আমারা চাতক দল
    96. গিন্নির ভাই গান গাহে
    97. নথ-দন্ত-বিহীন
    98. নমো নমঃ আবু আর হাবু
    99. এবং একে একে সব

    বুলবুল[উৎস সম্পাদনা]

    বিখ্যাত নজরুলগীতি সংকলন বুলবুল ১৫ নভেম্বর ১৯২৮ (আশ্বিন, ১৩৩৫) তারিখে (১ম সংস্করণ) প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ডি এম লাইব্রেরি, কলকাতা। সুরশিল্পী দিলীপ কুমার রায়কে এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল। সাধারণ সংস্করণ ও রাজ সংস্করণের মূল্য ছিল যথাক্রমে এক টাকা ও পাঁচ সিকা। গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে। ৪৯টি গান ছিল এই সংস্করণে।

    এ গ্রন্থে সমাহৃত গানগুলো হলোঃ-

    1. বাগিচায় বুলবুলি তুই
    2. আমারে চোখ-ইশারায়
    3. বসিয়া বিজনে কেন একা মনে
    4. ভুলি কেমনে আজো যে মনে
    5. কেন কাঁদে পরান কী বেদনায়
    6. মৃদুল বায়ে বকুল-ছায়ে
    7. কে বিদেশী বন-উদাসী
    8. করুণ কেন অরুণ আঁখি
    9. এত জল ও-কাজল চোখে
    10. আসে বসন্ত ফুলবনে
    11. দুরন্ত বায়ু পুরবইয়াঁ
    12. চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না
    13. পরান-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়
    14. সখি জাগো,রজনী পোহায়
    15. নিশি ভোর হল জাগিয়া
    16. এ বাসি বাসরে আসিলে কে গো
    17. বসিয়া নদীকূলে এলোচুলে
    18. কেন দিলে এ কাঁটা যদি গো
    19. সখি, বলো বঁধুয়ারে নিরজনে
    20. নহে নহে প্রিয়, এ নয় আঁখি-জল
    21. এ আঁখি-জল, মোছ পিয়া
    22. কি হবে জানিয়া বল কেন জল নয়নে
    23. পরদেশী বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
    24. কেন উচাটন মন পরান এমন করে
    25. আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি
    26. আজি দোল-পূর্ণিমাতে দুলবি তোরা আয়
    27. রুমুঝুমু কে এলে নূপুর পায়
    28. আজি এ কুসুম-হার সহি কেমনে
    29. গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু
    30. হাজার তারার হার হয়ে গো দুলি
    31. অধীর অম্বরে শুরু-গরজন
    32. ঝরে ঝরঝর কোন্ গভীর-গোপন ধারা
    33. হৃদয় যত নিষেধ হানে
    34. শুকাল মিলন-মালা আমি তবে যাই
    35. স্মরণ-পারের ওগো প্রেয়ি
    36. গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে
    37. কোন শরতে পূর্ণিমা চাঁদ
    38. জাগিলে ‘পারুল’ কি গো
    39. চরণ ফেলি গো মরণছন্দে
    40. নমো যন্ত্রপতি
    41. পুরবের তরুণ অরুণ
    42. কে শিবসুন্দর শরৎ-চাঁদ-চুড়
    43. কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে
    44. কেন আন ফুল-ডোর
    45. কেমনে রাখি আঁখি-চাপিয়া
    46. কেন আসিলে যদি যাবে চলি
    47. সাজিয়াছ যোগী বল কার লাগি
    48. মুসাফির! মোছ্ এ আঁখি-জল
    49. এ নহে বিলাস বন্ধু

    বুলবুল (২য় খন্ড)[উৎস সম্পাদনা]

    ১৩৫২ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (মে, ১৯৫৯) প্রমীলা নজরুল ইসলাম ১৬, রাজেন্দ্রলাল স্ট্রিট, কলিকাতা-৬, এই বুলবুল (২য় খন্ড) নামীয় সঙ্গীত গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। গ্রন্থটির পরিবেশক ছিলেন ডি এম লাইব্রেরি। মূল্য আড়াই টাকা। গ্রন্থটিতে গান ছিল ১০১টি। কবি-পত্নী প্রমীলা নজরুল ইসলাম প্রকাশিকার ভূমিকায় লেখেন, “কবির আধুনিক গানগুলি সংকলন করে “বুলবুল” (২য়) প্রকাশ করা হলো। তাড়াতাড়ি প্রকাশ করার জন্য ছাপায় কিছু ভুল থেকে গেছে। পরবর্তী সংস্করণে আশা করি কোনো ভুল থাকবে না। বইটির শেষ পৃষ্ঠায় কিছু সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। এই গানের বইটির আরেকটি বিশেষত্ব এই যে, এর মধ্যে কবির আধুনিক অপ্রকাশিত কতকগুলি গান আমরা দিতে পেরেছি। নজরুলগীতি যাঁরা ভালোবাসেন তাদের কাছে এই বইটি সমাদর পেলে, আমি আমার প্রথম প্রচেষ্টাকে সার্থক বলে মনে করবো।”[৪]

    বুলবুল (২য় খন্ড)-এ গ্রন্থিত গানসমূহ হলো:

    1. বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে
    2. বিদায়ের বেলা মোর ঘনায়ে আসে
    3. যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
    4. আমি চিরতরে দুরে চলে যাব
    5. সবার কথা কইলে কবি
    6. ওরে ডেকে দে দে লো
    7. নয়ন-ভরা জল গো তোমার
    8. আমি চাঁদ নহি, চাঁদ নহি অভিশাপ
    9. ভুল করে যদি ভালবেসে থাকি
    10. আমি আছি বলে দুখ পাও তুমি
    11. আর অনুনয় করিবে না কেউ
    12. মোরা আর জনমে হংস-মিথুন
    13. গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
    14. গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙে যায়
    15. রূপের দীপালি-উৎসব আমি দেখেছি
    16. এবার যখন উঠবে সন্ধ্যাতারা – সাঁঝ আকাশে
    17. বলেছিলে, তুমি তীর্থে আসিবে
    18. ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবি রে
    19. নূরজাহান ! নূরজাহান
    20. রাজো বাঁশরি বাজো বাঁশরি
    21. বলরে তোরা ওরে ও আকাশ-ভরা তারা
    22. সেদিন ছিল কি গোধূলি-লগন
    23. মোর ভুলিবার সাধনায় কেন সাধ বাদ
    24. আমার ভুবন কান পেতে রয়
    25. আন গোলাপ-পানি
    26. কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
    27. প্রদীপ নিভায়ে দাও
    28. রেশমি রুমালে কবরী বাঁধি
    29. নিশিরাতে রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বাদল-নূপুর
    30. ভোরের ঝিলের জলে শালুক
    31. সন্ধ্যা নেমেছে আমার বিজন ঘরে
    32. আজো ফাল্গুনে বকুল কিংশুকের বনে
    33. যখন আমার গান ফুরাবে
    34. ওগো সুন্দর তুমি আসিবে বলিয়া বনপথে পড়ে ঝরি
    35. ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচ নেচে কে এল গো
    36. মনে পড়ে আজও সেই নারিকেল কুঞ্জ
    37. আমি পুরব দেশের পুরনারী
    38. তেমনি চাহিয়া আছে নিশীথের তারাগুলি
    39. নন্দন বন হতে কে গো ডাক মোরে আধ-নিশীথে
    40. শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
    41. কাবেরী নদী- জলে কে গো বালিকা
    42. বসন্ত মুখর আজি
    43. তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে তাকি প্রিয়
    44. তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী
    45. কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে
    46. বন্ধু, আজো মনে রে পড়ে
    47. ধর্মের পথে শহীদ যাহরা
    48. তুমি আমার সকালবেলার সুর
    49. আগের মতো আমের ডালে বোলে ধরেছে বউ
    50. তব মুখখানি খুঁজিয়া ফিরি গো
    51. মোর গানের কথা যেন আলোকলতা
    52. এই বিশ্বে আমার সবাই চেনা
    53. কত দূরে তুমি, ওগো আঁধারের সাথী
    54. অনেক ছিল বলার
    55. বন্ধু! দেখলে তোমায় বুকের মাঝে
    56. বন-বিহঙ্গ! যাও রে উড়ে
    57. এ-কুল ভাঙে ও-কুল গড়ে
    58. উজান বাওয়ার গান গো এবার
    59. যবে ভোরের কুন্দ-কলি মেলিবে আঁখি
    60. মোর স্বপ্নে যেন বাজিয়েছিলে করুণ রাগিণী
    61. আমি সন্ধ্যামালতী বন-ছায়া অঞ্চলে
    62. শাওন আসিল ফিরে ; সে ফিরে এল না
    63. বেদিয়া বেদিনী ছুটে আয়
    64. মোর প্রিয়া হবে, এস নারী
    65. ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি
    66. নীলাম্বরী শাড়ি পরি
    67. আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়
    68. আমায় নহে গো, ভালবাসা শুধু ভালবাস মোর গান
    69. দোলন-চাঁপা বনে দোলে
    70. জুঁই-কুঞ্জে বন-ভোমরা কেন গুঞ্জে গুন্গুন্
    71. মমতাজ! মমতাজ! তোমার তাজমহল
    72. আমি জানি তব মন, আমি বুঝি তব ভাষা
    73. স্বপ্নে দেখি একটি নুতন ঘর
    74. ছড়ায়ে বৃষ্টির বেলফুল
    75. রাঙা মাটির পথে লো মাদল বাজে
    76. রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে
    77. ওগো প্রিয়, তব গান
    78. কেমনে হইব পার হে প্রিয়
    79. সাপুড়িয়া রে! বাজাও কোথায় সাপ খেলানোর বাঁশি
    80. নদীর স্রোতে মালার কুসুম ভাসিয়ে দিলাম, প্রিয়
    81. শোক দিয়েছ তুমি হে নাথ
    82. হে অশান্তি মোর এস এস
    83. গান ভুলে যাই মুখ পানে চাই, সুন্দর হে
    84. মেঘলা নিশি-ভোরে
    85. “চোখ গেল” “চোখ গেল” কেন ডাকিস রে
    86. পদ্মার ঢেউ রে
    87. কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও, মালা. গাঁথ অকারণে
    88. আমি নহি বিদেশিনী
    89. মেঘ-মেদুর বরবায় কোথা তুমি
    90. নিরজন ফুলবনে এস পিয়া
    91. সেই মিঠে সুরে মাঠের বাঁশরি বাজে
    92. (তুমি) শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা
    93. গাঙে জোয়ার এল ফিরে, তুমি এলে কই
    94. রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্ ঝুম্
    95. নিশি-পবন। ফুলের দেশে যাও
    96. কোন সে সুদূর অশোক-কাননে বন্দিনী তুমি সীতা
    97. তব চলার পথে আমার গানের পুল ছড়িয়ে যাই গো
    98. শুকনো পাতার নূপুর বাজে দখিন বায়ে
    99. জানি, জানি প্রিয়, এ জীবনে মিটিবে না সাধ
    100. বঁধু তোমার আমার এই যে বিরহ
    101. এবং পঞ্চ প্রাণের প্রদীপ-শিখায়

    গুল বাগিচা

  • নক্রচরিত

    নক্রচরিত হল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত ছোটগল্প[১][২][৩] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বাংলার গ্রামীণ সমাজের পটভূমিতে রচিত এই ছোটগল্পের মুখ্যচরিত্র নিশিকান্ত কর্মকার একজন গ্রামীণ মহাজন। চরিত্রে সে সত্যি সত্যিই নক্র (কুমীর) স্বরূপ। বাইরে তার ভেক পরম বৈষ্ণবের, অথচ ভিতরে ভিতরে টাকার জন্য সে করে না এমন কাজ নেই। লেখকের মরমী কলমে তীব্র ব্যঙ্গের সাথে এই গল্পে নিশিকান্তের কাহিনীর মধ্য দিয়ে পরতে পরতে উঠে এসেছে মজুতদার ব্যবসায়ীদের কীর্তিকলাপ ও চরিত্র। ‘৪২ থেকে ‘৪৫ সালের বাংলার ভয়াবহ মন্বন্তরের চিত্রও ধরা পড়েছে এই গল্পের পটভূমিতে, মতি পাল ও তার বউ-এর মৃত্যু ও তাকে কেন্দ্র করে চৌকিদারের কথাবার্তায়। এই মন্বন্তরের কারণ হিসেবে মজুতদারী ও ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভ যে কী ভূমিকা পালন করেছিল, তারও ঈঙ্গিতবাহী এই গল্প। গল্প যত শেষের দিকে এগোয়, ততই নিশিকান্তর মনে চেপে বসে এক অজানা আতঙ্ক, মুনাফার লোভে তার ঘৃণ্য কীর্তিকলাপ তলে তলে কোন্‌ সামাজিক প্রতিহিংসার জন্ম দিয়ে চলেছে, সেই আতঙ্কে তার অবচেতন হয়ে ওঠে শিহরিত। সুস্পষ্ট বামপন্থী সমাজচেতনায় ঋদ্ধ এই গল্পটি ছোটগল্পকার হিসেবে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

    লেখনী ও প্রকাশনার ইতিহাস[উৎস সম্পাদনা]

    এই ছোটগল্পটির পটভূমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মন্বন্তরের মুখোমুখি দাঁড়ানো অস্থির গ্রামীণ বঙ্গসমাজ। গল্পটি লেখাও হয়েছিল যতদূরসম্ভব এই সময়েই, ‘৪২ সাল বা তারপর।[৪] গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় যুগান্তর পত্রিকায়;[৫] পরবর্তীকালে গল্পটি লেখকের ভাঙাবন্দর ছোটগল্পগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।

    চরিত্রাবলী[উৎস সম্পাদনা]

    এই ছোট গল্পে আলাদা হয়ে উঠে আসা চরিত্রের সংখ্যা ছয়টি। এদের মধ্যে মূল চরিত্র নিশিকান্ত কর্মকার। এছাড়া আরও দু’টি প্রধান চরিত্র বিশাখা ও ইব্রাহিম দারোগা। আরও তিনটি তুলনামূলক অপ্রধান চরিত্র হল মদনযোগী ও চৌকিদার। এদের সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –

    মুখ্য চরিত্র[উৎস সম্পাদনা]

    নিশিকান্ত কর্মকার – গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সমগ্র গল্পটি একে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তার নামই (নিশিকান্ত = নিশির মতো কান্ত যাহার) তার চরিত্রের ঈঙ্গিতবাহী। সে একাধারে কাপড়ের ও সোনারূপার ব্যবসায়ী, চালের আড়ৎদার, মজুতদার, গোলাপাড়া হাটের জাঁদরেল মহাজন; আবার একই সাথে গোলাপাড়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টও সে। বাহ্যিক আচারে সে পরম বৈষ্ণব। কিন্তু রাতের আঁধারে ডাকাতদলের লুঠের মালের গোপন ক্রেতাও সেই। এমনকী তাদেরকেও ঠকাতে তার হাত কাঁপে না। আসল সোনাকে গিলটি বলে বেমালুম সে তাদেরকেও অনেক কম টাকা দেয়। বুঝেও কিছু করার থাকে না দুর্দান্ত ডাকাতদেরও। কারণ তাদের লুঠের মালের এমন নিশ্চিন্ত ও বিশ্বস্ত ক্রেতা খুঁজে পাওয়া ভার। তারউপর সদর থানার ইব্রাহিম দারোগার সাথে নিশির বিশেষ খাতিরের কথাও তাদের ভালো মতোই জানা। পঞ্চাশের মন্বন্তর। সামান্য খাবারের অভাবে যেখানে মতি পাল বা তার বউ’এর মতো অসংখ্য মানুষ মারা পড়ছে, সেখানেও তার আড়ৎ’এ আটশ মণ চাল মজুত। বারো টাকা মণের চাল বর্ষার সময় অন্তত চল্লিশ টাকা দরে ছাড়ার পরিকল্পনা নিশির। যুদ্ধের বাজারে অত দাম দিয়েও চাল কেনার দালালের যে অভাব নেই তাও তার বিলক্ষণ জানা। কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও রাতের অন্ধকার তার অস্বস্তির কারণ। ঘুমোতে পারে না সে সারারাত। গাছের পাতার সামান্য খসখস শব্দও তাকে সতর্ক করে তোলে। তার লোহার সিন্দুকের ঝকঝকে হাতল ও হবসের তালা অন্ধকারের মধ্যেও প্রতিমুহূর্তে তার চোখে ঝিকিয়ে ওঠে। বরং দিনের আলো তার কাছে অনেক বেশি নিশ্চিন্তির আশ্রয়। প্রাকপ্রত্যুষের নামগান ও কীর্তনের আসর তার ভক্তিভাবকে জাগিয়ে তোলে। তবু ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে সে ভাবময় কীর্তনের আসর ছেড়েও বিরক্তিকর কর্তব্যের খাতিরে চৌকিদারের সাথে যেতে হয় না খেয়ে মরা মতি পাল ও তার বউএর মৃতদেহ দেখতে। যেকোনও অপঘাতে মৃত্যুর সদরে সরেজমিন রিপোর্ট পাঠানোর দায়িত্ব যে তারই। কিন্তু পরনের একমাত্র কাপড় পেঁচিয়ে আত্মঘাতী মতি পালের বউএর ঝুলন্ত উলঙ্গ মৃতদেহ দেখে শিউরে ওঠে সে; বিবমিষা জাগ্রত হয়; ফিরে আসার সমগ্র পথটা তার মনে হতে থাকে, এই বুঝি হাজারে হাজারে নিরন্ন শীর্ণকায় প্রেতাত্মা তাকে ঘিরে ধরে কৈফিয়ৎ দাবি করে বসে। তার মানসচক্ষে ভেসে ওঠে একটা গরুর পচা গলিত শব আগলে বসে থাকা একটা ঘেয়ো কুকুরের তারস্বরে চিৎকার – এই গা রি রি করা ঘৃণ্য ইমপ্রেশনটি তুলে ধরেই গল্পটি পৌঁছয় তার উপসংহারে।

    অন্যান্য প্রধান চরিত্র[উৎস সম্পাদনা]

    1. বিশাখা – হাঁড়ির মেয়ে, কিন্তু ফরসা ও অসামান্য রূপসী। আসল নাম কষ্টবালা। নিশিকান্ত তার গলায় কন্ঠী পরিয়ে তাকে বোষ্টমী করে নিয়েছে। তার নূতন নাম দিয়েছে বিশাখা। তার যৌবনের এই প্রাক্তন লীলাসঙ্গিনীকে সে এখন অন্য কাজে ব্যবহার করে। দাপুটে ইব্রাহিম দারোগা এই বিশাখার সূত্রেই এখন নিশির হাতে বাঁধা। বিশাখা নিজেও সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। পারস্পরিক স্বার্থের টানই যে তার ও নিশির সম্পর্কের আসল রসায়ন, তা পরিষ্কার হয়ে যায় তারই কথায়। “মহামান্য অতিথি ও মূল্যবান প্রেমিক”[৬] ইব্রাহিম দারোগার প্রতি তার দরদ দেখে সাময়িকভাবে হলেও নিশি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লে তাকে মনে করিয়ে দিতে ভুল হয় না তার – “এত হিংসে কেন? এ নইলে অনেক আগেই যে হাতে দড়ি পড়ে যেত, সেটা খেয়াল নেই বুঝি।”[৭]
    2. ইব্রাহিম দারোগা – বিশাখার সূত্রে নিশিকান্তর হাতে বাঁধা পড়া জেলার দাপুটে দারোগা। তার নিজের দু’টো বউ রয়েছে। তারউপর রয়েছে একাধিক বাঁদীও। তারপরেও বিশাখার আকর্ষণে সে এসে ধরা দেয় নিশির পাতা ফাঁদে। একটা সাইকেলে চেপে সে ঘুরে বেড়ায় সারা থানা। এলাকায় ডাকাতি বাড়লে তার কর্তব্য শুধু নিশিকে সাবধান করা – “একটু সামলে চালাও কর্মকার। তোমার জন্যে কি আমার চাকরিটা যাবে?”[৬] নিশির আড়তে যে এই মন্বন্তরের বাজারেও বেআইনিভাবে পাঁচশ’ মণ চাল মজুত আছে, সে খবরও সে রাখে। তবে সেই খবর সে ব্যবহার করে শুধু প্রয়োজনে নিশিকে হুমকি দিয়ে নিজের সুবিধেটুকু আদায় করতে। তার সাথে নিশির আসলে এক লেনদেনের সম্পর্ক, ক্ষমতা ও অর্থ যার সাথে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে গ্রমের আর সকলে এদের নিয়ে চর্চা করতেও ভয় পায়। তাকে হাতে রেখে নিশি যেমন তার কাজকর্ম নিশ্চিন্তে চালিয়ে যেতে পারে, ইব্রাহিম দারোগারও মনে হয়, “ভারতবর্ষের প্রান্তে প্রান্তে নিশি কর্মকারের মতো বিবেচক আর বুদ্ধিমান লোক পাওয়া যাবে। এ নইলে আর পুলিসে চাকরি করে সুখ ছিল কী।”[৬] অসৎ সরকারি আধিকারিক, কালোবাজারি ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের মধ্যে অশুভ আঁতাত কীভাবে মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে সমাজজীবনকে পুতিগন্ধময় করে তোলে তার জীবন্ত উদাহরণ এই গল্পে নিশিকান্ত ও ইব্রাহিম দারোগা

    অপ্রধান চরিত্র[উৎস সম্পাদনা]

    1. মদন – ডাকাত দলের নেতা। পুরোদস্তুর নিশাচর। লুঠের সময় সময় বাঁচাতে মেয়েদের কান প্রয়োজনে ছিঁড়েও দুল ছিনতাই করতে হাত কাঁপে না তার। খুব ভালোভাবেই সে বোঝে, নিশিকান্ত তাদেরকেও ঠকায়। কিন্তু সব বুঝেও নিরুপায় সে, কারণ জানে লুঠের মাল হস্তান্তর করার এমন নিরাপদ ক্রেতা আর খুঁজে পাওয়া ভার। তারউপর পুলিশও তার হাতে। তাই যতই তার ইচ্ছে করুক, “লোহার বড় হাতুড়িটা তুলে মাথাটা ফাটিয়ে চৌচির করে দিই ওর”[৮], কার্যত নিশির বিরুদ্ধে অক্ষম রাগের অমার্জিত প্রকাশ ভিন্ন আর কিছু করার নেই তার। চরিত্রটির সাথে মুখ্য চরিত্রের সম্পর্কের মধ্যে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব থাকলেও মূলত অজটিল একমাত্রিক চরিত্র মদন
    2. যোগী – ডাকাত দলের অপেক্ষাকৃত কমবয়সী নতুন সদস্য। চরিত্রচিত্রণ অনেক বেশি জটিল। দুলের লোভে কান ছিঁড়ে নেওয়া মেয়েটির যন্ত্রণা এখনও তার মনে রেখাপাত করে – “উঃ, কী রকম কাঁদছিল মেয়েটা। ওভাবে কেড়ে না নিলেই-“[৯]; এইভাবে লুটপাট কতটা জোয়ানের কাজ, তাই নিয়ে এখনও সংশয় দেখা দেয় তার মনে। বোঝা যায়, অপরাধের পথে পুরোদস্তুর নেমে পড়লেও, ভিতরের মানুষটা এখনও সম্পূর্ণ মরে যায়নি তার। তবে চরিত্রটির বিকাশের আরও সুযোগ থাকলেও, গল্পের পরিসরে তার চিত্রণ নিয়ে খুব বেশি অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি লেখকের।
    3. চৌকিদার – গ্রামবাংলার নিরন্ন মানুষজনের কথা এর মাধ্যমেই পৌঁছয় আমাদের কাছে। হাটের হরিসভার কীর্তনের আসরে মাঝরাতে মূর্তিমান রসভঙ্গের চেহারায় আবির্ভূত হয় সে, মতি পাল ও তার বউ’এর খবর নিয়ে। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নিশিকে সে জানায়, “মতি পালের বৌ গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে বাবু। একবার যেতে হবে।”[১০] কেন মরল, কীভাবে মরল, এ’সব প্রশ্নের উত্তরে একরাশ সমবেদনা ও ক্ষোভের সাথে সে যোগ করে – “বাঁচবে কী করে বাবু? … না খেয়ে মরেছে। আগে ভিক্ষে করত, তিরিশ টাকা চালের বাজারে কে ভিক্ষে দেবে এখন? বৌটাও আর পেটের জ্বালা সইতে পারেনি, তাই গলায় দড়ি দিয়েই ঝামেলা মিটিয়েছে।”[১১] তার মুখ থেকেই আমরা আরও খবর পাই, “এরকম চললে দু’ মাসে দেশ উজাড় হয়ে যাবে। যে আগুন চারদিকে জ্বলছে, কারো রেহাই পাবার জো আছে !”[১১] নিজে একমাত্রিক চরিত্র হলেও সমগ্র গল্পের চরিত্র পালটে যায় তার উপস্থিতিতে। সেই হিসেবে গল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সে।

    বিষয়বস্তু[উৎস সম্পাদনা]

    অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, “[তিনি] সমসাময়িক যুগের প্রতিনিধিস্থানীয় শিল্পী। … মহাযুদ্ধ ও মন্বন্তরের পটভূমিতে তাঁর বিকাশ।”[১২] ১৩৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প-এর ভূমিকায় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক ছোট গল্পের পটভূমি ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি লিখেছেন –

    "সেদিন সর্বগ্রাসী যুদ্ধের তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে জীবনের খেলাঘর। ... সঙ্গে সঙ্গে শবলুব্ধ গৃধ্রদের ঊর্ধ্বস্বর বীভৎস চিৎকারে মুখরিত হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস; একদিকে যুদ্ধের জুয়াখেলায় কাগজিমুদ্রার ছিনিমিনি, অন্যদিকে চোরাকারবার আর কালোবাজারের নারকীয় অনাচারে পর্যুদস্ত দিনযাত্রা; সারা বাংলা জুড়ে নিরন্ন বিবস্ত্র নরনারীর গগনভেদী হাহাকার, আর তারই বুকে বসে মুনাফাশিকারী মজুতদার আর ব্যবসায়ীদের দানবীয় অট্টহাসি। মহাপ্রলয়ের সন্ধিলগ্নে যেন নরক গুলজার।"[১২]
    

    “নক্রচরিত” এই পটভূমিতেই রচিত একটি গল্প। গোপাদত্ত ভৌমিকের ভাষায় “কীভাবে মানুষের দুর্নিবার লোভ লেলিহান শিখায় জ্বলে উঠে দুর্ভিক্ষকে ভয়ংকর আকৃতি দিল” তারই এক খণ্ড কিন্তু জীবন্ত চিত্র ধরা পড়েছে এই ছোটগল্পের পরিসরে। “গ্রামের ক্ষমতার কেন্দ্রে কারা, কীভাবে গড়ে ওঠে তাদের শক্তির ভিত, নিশি কর্মকার সেই চিরকালের আর্কিটাইপ[১২]। একদিকে আমরা এইগল্পে পাই, মুনাফাখোর কালোবাজারি-অপরাধী-পুলিশের ত্র্যহস্পর্শ্ব কীভাবে গ্রামবাংলায় এক দুর্নীতিপরায়ণ কিন্তু সর্বগ্রাসী ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে তোলে, যা স্বাভাবিক জনজীবনের ভিতকেই টলিয়ে দেয়, অথচ তার বিরুদ্ধে সব জেনেও মুখ খোলার সাহস কারোর নেই; অন্যদিকে একইসাথে এই গল্প চিত্রিত করে এই অপরাধী চক্রের নিজস্ব মনোজগত – যেখানে একদিকে যেমন কাজ করে সীমাহীন লোভ-লালসা-অর্থলিপ্সা, অন্যদিকে একই সাথে কাজ করে কুটিল সন্দেহ ও আপাত অমূলক এক ভয়, যা পর্যুদস্ত করে তোলে তাদের নিজেদেরও। তারা এই অপরাধচক্রে পরস্পরের সহযোগী, কিন্তু সে সহযোগিতার মূল নিহিত রয়েছে তাদের নিজস্ব ব্যক্তিস্বার্থ ও নিরুপায়তার মধ্যেই। নাহলে পরস্পরের বিরুদ্ধে ফণা তুলতে ভাববে না তারা একমুহূর্তও। মদন তাই নিশির উপর রাগে দাঁত কিড়িমিড় করে ওঠে, নিশি চোরের উপর বাটপারির তত্ত্ব আউড়ে তাকে বেমালুম ঠকায়, ইব্রাহিম দারোগা নিশির গুদামে বেআইনি চাল মজুত থাকার খবর যে তার জানা, তার উল্লেখ করে নিশির কাছ থেকে নোটের তাড়া আদায় করে, বিশাখা নিশিকে মনে করিয়ে দেয়, ইব্রাহিম দারোগার সাথে তার নিরুপদ্রব সম্পর্কের জোরেই নিশির হাতে এখনও দড়ি ওঠেনি। আবার পাশাপাশি ডাকাতদলে নতুন নাম লেখানো যোগীর চরিত্র তুলে এনে লেখক নিশির মতো কালোবাজারের কারবারিদের মুখে একধরনের তুলনামূলক আলোকপাতও করেন। আমরা সেখানে দেখি, এমনকী যোগীর মতো রক্তলোলুপ সরাসরি ডাকাতের মধ্যেও যেটুকু মনুষ্যাবেগে্র অবশেষ রয়ে গেছে, নিশিদের মতো মুনাফাখোরদের মধ্যে সেটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

    আঙ্গিক[উৎস সম্পাদনা]

    গল্পকথন[উৎস সম্পাদনা]

    নক্রচরিত গল্পে গল্পকথনের ক্ষেত্রে লেখক সাধারণভাবে প্রচলিত ধারারই অনুসারী। গল্পকথক এখানে এক সর্বজ্ঞ দৃষ্টির অধিকারী, যার নিজের অবস্থান গল্পের বাইরে। সেই নিরপেক্ষ, নির্মোহ অবস্থান থেকেই সে চরিত্র ও ঘটনাবলীর বিবরণ আমাদের সরবরাহ করে, তার সেই চোখ দিয়েই আমরাও দেখি। তার দৃষ্টির সর্বজ্ঞগামিতার কারণেই কখনও কখনও আমরা চরিত্রদের মনেও প্রবেশের সুযোগ পাই, বিশেষ করে মুখ্য চরিত্র নিশিকান্ত কর্মকারের ক্ষেত্রে এ’ কথা বিশেষভাবে সত্য (এছাড়া যোগী বা ইব্রাহিম দারোগার মতো পার্শ্বচরিত্রদের ক্ষেত্রেও অবশ্য এর উদাহরণ আমরা দেখতে পাই)। কিন্তু সাধারণভাবে তার দৃষ্টি বহির্জগতেই সীমাবদ্ধ থাকে, আমরা বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনাবলীকে বাইরে থেকেই অবলোকন করার সুযোগ পাই, তাদের কথোপকথন ও কাজকর্ম দেখেই আমরা তাদের মনের গহনের খবর আঁচ করি। রাতের অতিথি মদন ও তার দলবলকে দরজা খুলে দিয়ে একবার ট্রাঙ্ক আর পুঁটলির দিকে তাকিয়ে নিশি প্রশ্ন করে “আজকের শিকার?”[১৩] তার শান্তভাব ও প্রশ্নর ধরন শুধু এই ভয়ঙ্কর লোকগুলোর সাথে তার পূর্ব পরিচয়ের কথাই আমাদের কাছে ফাঁস করে না, তার প্রকৃত চরিত্রের উপরও বেশ কিছুটা আলোকপাতও করে। বিশাখা ও ইব্রাহিম দারোগার বাইরের বিবরণ ও কথাবার্তাই চরিত্রদু’টোকে আমাদের সামনে জীবন্ত করে তোলে।

    কিন্তু সর্বদাই গল্পকথকের এই অবস্থান নিরপেক্ষ ও নির্মোহ থাকে না, স্থানে স্থানে তাকে অতিক্রমও করে যায় – ” – হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে – আসরের চারিদিকে ঘিরে ঘিরে চলছে অসংলগ্ন কীর্তন। অল্পবিস্তর পা টলছে দু-একজনের, শুধু গাঁজা নয়, ভাবের সাগরে নিঃশেষে তলিয়ে যাওয়ার জন্যে কেউ কেউ তাড়িও টেনে এসেছে। একজন এমনভাবে খোলের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে যে, দেখে মনে হয় ওটা সে যেমন করে হোক ভাঙবেই – এই তার স্থির সংকল্প। আর একজন ঊর্ধ্ববাহু হয়ে আকাশের দিকে লম্ফপ্রদান করছে, যেন ওপর থেকে কী একটা পেড়ে নামাবে; বোধহয় ভক্তিবৃক্ষের মুক্তিফল।”[১৪] হরিসভার এই বর্ণনায় কথকের তীব্র শ্লেষ পাঠকের চোখ এড়ায় না।

    চিত্রকল্প[উৎস সম্পাদনা]

    এই গল্পে গল্পকথনের আরেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন চিত্রকল্পের প্রতীকি ব্যবহার।[৪] গল্পের একেবারে শুরুতেই আমরা প্রায় অন্ধকার এক ঘরে দেখা পাই নিশি কর্মকারের, শকুনের মতো তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে সে প্রদীপের আলো কমিয়ে রেখে একরকম ইচ্ছাকৃত প্রায়ান্ধকারে বসে জমাখরচের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত, আর তার কপালে ফুটে ওঠা সরীসৃপ রেখা। গল্প আরেকটু এগোতেই পাঠকের উপলব্ধি টের পায় এই প্রায়ান্ধকার পরিবেশ, শকুনের মতো তীক্ষ্ণদৃষ্টি, বা কপালের সরীসৃপ রেখা – এসবই প্রতীকি, নিশি কর্মকারের প্রকৃত চরিত্রের ঈঙ্গিতবাহী। রাতের অন্ধকার ভেদ করে বিনিদ্র নিশির কানে আসা গাছের পাতার খসখস শব্দ, ঘাসের মধ্যে দিয়ে সাপের চলার শব্দ বা অন্ধকারের মধ্যেও তার চোখে জ্বলতে থাকা সিন্দুকের ঝকঝকে হাতল ও ভারী হবসের তালা এমনই আরও ক’টি প্রতীকি চিত্রকল্পের উদাহরণ। গল্পটি শেষও হয় এমনই একটি চিত্রকল্পেরই মাধ্যমে, যার তীব্র কষাঘাত পাঠকের মনে এক গা রি রি করে ওঠা ঘৃণার অনুভূতি ছড়িয়ে দিয়ে গল্পটির চূড়ান্ত অভিঘাত সৃষ্টি করে।

    ছোটগল্প হিসেবে সার্থকতা[উৎস সম্পাদনা]

    ছোটগল্পের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন –

    "ছোট গল্প হচ্ছে প্রতীতি (Impression)-জাত একটি সংক্ষিপ্ত গদ্যকাহিনী যার একতম বক্তব্য কোনো ঘটনা বা কোনো পরিবেশ বা কোনো মানসিকতাকে অবলম্বন করে ঐক্য-সংকটের মধ্য দিয়ে সমগ্রতা লাভ করে।[১৫] 
    

    এর কতগুলো উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত সূচনা, মিতভাষিতা, ভাবের একমুখিতা ও ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যঞ্জনাময় পরিসমাপ্তি।[১৫] সেই হিসেবে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের “নক্রচরিত” অবশ্যই একটি সার্থক ছোটগল্প। এর সূচনা আকস্মিক, শুরুতেই গভীর রাতে প্রায়ান্ধকার ঘরে গভীর মনোযোগের সাথে জমাখরচের হিসেবে রত নিশিকে এনে দাঁড় করায় তা ফোকাসে। এরপরে নিশিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়ে চলে কাহিনী, অন্যান্য চরিত্ররা আসে, তবে পার্শ্বচরিত্র হিসেবেই, পাঠকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু থেকে যায় নিশিই। তার লোভ, সন্দেহ, ঈর্ষা, হতাশা, মুনাফাসর্বস্বতা, ধর্মের মেকি মুখোশ – সবমিলে তাকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে চলে গল্প তার ক্লাইম্যাক্সের দিকে, যা আসে গল্পের একেবারে শেষে, একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যঞ্জনাময় চিত্রকল্পেরই মাধ্যমে। একটি গরুর গলা শবকে আগলে বসে থাকা একটি ঘেয়ো কুকুরের তারস্বরে চিৎকারের গা ঘিনঘিনে চিত্রকল্পটিতে আমরা স্বতস্ফূর্তভাবেই চিনে নিতে পারি দুর্ভিক্ষের বাজারেও আড়তে গোপনে চাল মজুত করে রেখে দাম বাড়ার আশায় তা পচিয়ে নষ্ট করা কালোবাজারিদের প্রতিনিধি নিশিকে। লেখকের কলম থেমে যায় এখানে এসেই, কিন্তু এই প্রতীতির অভিঘাতটা হয়ে ওঠে এতটাই তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী যে, ঠিক এই বিন্দু থেকেই পাঠকের মনে সঞ্চারিত হয়ে চলে গল্পটি; তার ভাবের একমুখিনতা, মন্বন্তরের আসল কারিগর কালোবাজারি ব্যবসায়ীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা সঞ্চারিত হয় পাঠক মনেও।

  • ধর্মমঙ্গল

    ধর্মমঙ্গল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার তিনটি প্রধান শাখার অন্যতম (অপর শাখাদুটি হল মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল)। এই কাব্য রচনার প্রধান উদ্দেশ্য দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার লৌকিক অনার্য দেবতা ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচার।[১] এই কাব্যের উপাদান মূলত রাঢ় বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক উপাদান।[২] ধর্মমঙ্গল কাব্যে দুটি কাহিনি সন্নিবেশিত হয়েছে: প্রথমটি পৌরাণিক রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি,[৩] এবং দ্বিতীয়টি লাউসেনের উপাখ্যান।[৪] দ্বিতীয় উপাখ্যানটিই কাব্যের মূল উপজীব্য।[৫] ধর্মমঙ্গল কাব্যের প্রধান কবিরা হলেন রূপরাম চক্রবর্তী (বর্ধমান, সপ্তদশ শতাব্দী)[৬] ও ঘনরাম চক্রবর্তী (বর্ধমান, সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দী)।[৭] এছাড়া এই কাব্যের অন্যান্য কবিরা হলেন ময়ূরভট্ট (ধর্মমঙ্গলের আদিকবি), শ্যাম পণ্ডিত, ধর্মদাস, রামদাস আদক, সীতারাম দাস, যাদুনাথ বা যাদবনাথ পণ্ডিত, খেলারাম চক্রবর্তী[৮] ও মানিকরাম গাঙ্গুলি।[৯] রাঢ় অঞ্চলের সমাজ ও রাজনীতি এই কাব্যের মূল উপজীব্য হওয়ায় কোনো কোনো সমালোচক এই কাব্যকে “রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য” বলে উল্লেখ করেন।[৫] তবে এই মত বিতর্কিত।[১০]

    আখ্যানভাগ[উৎস সম্পাদনা]

    হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান[উৎস সম্পাদনা]

    সকল ধর্মমঙ্গল কাব্যের গোড়ার দিকে রাজা হরিশ্চন্দ্র বা হরিচন্দ্র ও রানি মদনার পুত্রলাভের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই কাব্যের হরিশ্চন্দ্রের পুত্রের নাম লুইচন্দ্র বা লুইধর। তবে এই উপাখ্যানটির সঙ্গে মূল কাহিনির অন্তরঙ্গ যোগ নেই।[১১] উপাখ্যানটি নিম্নরূপ:[১২]

    রাজা হরিশ্চন্দ্র (কোনো কোনো পুথিতে হরিচন্দ্র) ও রানি মদনার সন্তানাদি ছিল না বলে নানাপ্রকার লাঞ্ছনা সহ্য করতে হত। একদা রাজা-রানি বনে ঘুরতে ঘুরতে বল্লুকা নদীর তীরে ভক্তদের ধর্মঠাকুরের পূজা করতে দেখেন। তা দেখে তাঁরাও পুত্রকামনায় ধর্মপূজা করেন। পুত্র বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তাঁকে ধর্মের নিকট বলি দিতে হবে – এই শর্তে ধর্মঠাকুর তাঁদের পুত্রবর দেন। কালক্রমে লুইচন্দ্র বা লুইধর নামে তাঁদের এক সর্বসুলক্ষণযুক্ত পুত্র জন্মায়। কিন্তু রাজা-রানি ধর্মকে দেওয়া তাঁদের প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হন। যথাকালে ধর্মঠাকুর এক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়ে রাজা ও রানির কাছে এসে বলেন যে, তিনি তাঁর উপবাসভঙ্গের পর লুইচন্দ্রের মাংস ভক্ষণ করতে চান। রাজা ও রানির কাতর অনুনয়ে তিনি কর্ণপাত করেন না, বরং তাঁদেরও তাঁর সঙ্গে বসে পুত্রমাংস ভক্ষণ করার আদেশ দেন। অগত্যা রাজা ও রানি লুইচন্দ্রকে খড়্গাঘাতে হত্যা করে তাঁর মাংস রন্ধন করেন। কিন্তু তাঁরা ব্রাহ্মণবেশী ধর্মের আদেশানুসারে পুত্রমাংস ভক্ষণ করার পূর্বেই ধর্মঠাকুর স্ববেশ ধারণ করে তাঁদের হাত ধরে ফেলেন। জানা যায়, লুইচন্দ্রকে আদৌ কাটা হয়নি। ধর্মঠাকুরের মায়ায় হরিশ্চন্দ্র মায়া-লুইকে হত্যা করেছেন মাত্র। আসলে লুইকে নিজের কোলে লুকিয়ে রেখে ধর্মঠাকুর রাজা ও রানিকে পরীক্ষা করছিলেন। পুত্রকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়ে রাজা ও রানি মহাখুশি হলেন এবং মহাসমারোহে ধর্মপূজার আয়োজন করলেন।

    এই কাহিনিটি অতি প্রাচীন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমান, পূর্বে ধর্মপূজার আসরে কেবল এই উপাখ্যানটিই গীত হত। আজও ধর্মপূজার দ্বিতীয় দিনে এটি গীত হয়। সকল ধর্মমঙ্গলেই এই কাহিনিটি রয়েছে। কোনো কোনো ধর্মমঙ্গলে আবার লাউসেনের প্রধান উপাখ্যানটির বদলে কেবল এই গল্পটিই স্থান পেয়েছে।[১৩]

    লাউসেনের উপাখ্যান[উৎস সম্পাদনা]

    ধর্মমঙ্গল কাব্যের দ্বিতীয় তথা প্রধান কাহিনিটি গড়ে উঠেছে লাউসেনের বীরত্বগাথাটিকে কেন্দ্র করে। ধর্মপূজার ‘ঘরভরা’ অনুষ্ঠানের জন্য এই কাহিনিটিকে গীত আকারে চব্বিশ পালায় বিভক্ত করে বারো দিন ধরে গাওয়া হয়।[১৪] এই কারণে এই কাহিনিটির অপর নাম ‘বারোমতি’ বা ‘বার্মাতি’। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “দেবকৃপাশ্রিত লাউসেন এই কাব্যের নায়ক এবং তাহার বীরত্বের অদ্ভুতরসের গল্পই ধর্মমঙ্গল কাব্যের প্রধান আকর্ষণ।”[১৫] লাউসেনের উপাখ্যানটি নিম্নরূপ:[১৬]

    ধর্মঠাকুর মর্ত্যে পূজা প্রচারের জন্য উৎসুক ছিলেন। এমন সময় স্বর্গের নর্তকী জাম্ববতী শাপগ্রস্থ হয়ে বমতি নগরে বেণুরায়ের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম হয় রঞ্জাবতী। রঞ্জাবতীর দিদি ছিলেন গৌড়েশ্বরের রাজমহিষী এবং তাঁর দাদা মহামদ ছিলেন গৌড়েশ্বরের মন্ত্রী। গৌড়েশ্বরের বিদ্রোহী সামন্ত তথা চণ্ডীর বরপুত্র ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে গৌড়েশ্বরের অপর সামন্ত তথা ঢেকুরগড়ের অধিপতি কর্ণসেনের ছয় পুত্র ও পুত্রবধূগণ যুদ্ধে নিহত হন। কর্ণসেন নিজেও পরাজিত হন। কর্ণসেনকে সান্ত্বনাস্বরূপ গৌড়েশ্বর নিজ শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেন। বিবাহের পর রঞ্জাবতীকে নিয়ে কর্ণসেন ময়নাগড়ে নতুন সামন্তের পদে অধিষ্ঠিত হন। এদিকে বৃদ্ধ কর্ণসেনের সঙ্গে বোনের বিবাহ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন মহামদ। গৌড়েশ্বরের কাজের প্রতিবাদ করতে না পেরে কর্ণসেনের সঙ্গেই শত্রুতা করেন তিনি। কর্ণসেনকে বারবার ‘পুত্রহীন’ বলে গালি দিতে থাকেন মহামদ। এতে বিচলিত হয়ে রঞ্জাবতী পুত্রকামনায় কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন সহ ধর্মঠাকুরের পূজা করতে থাকেন। যথাকালে ধর্মঠাকুরের কৃপায় এক স্বর্গভ্রষ্ট দেবতা রঞ্জাবতীর গর্ভে জন্ম নেন। তাঁর নাম রাখা হয় লাউসেন। এতে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে মহামদ ইন্দা মেটে নামে এক অনুচরকে পাঠিয়ে লাউসেনকে অপহরণ করলেন। ধর্মঠাকুর কর্পূরবিন্দু থেকে আর একটি ছেলে সৃষ্টি করে রঞ্জাবতীকে দিলেন। তার নাম হল কর্পূর ধবল। এদিকে ধর্মঠাকুরের আজ্ঞায় হনুমান লাউসেনকে উদ্ধার করে রঞ্জাবতীর কোলে ফিরিয়ে দিলেন। এইভাবে রঞ্জাবতী হলেন দুই পুত্রের জননী।

    ক্রমে লাউসেন বড়ো হয়ে উঠল। লেখাপড়া ও অস্ত্রবিদ্যায় অর্জন করল বিশেষ ব্যুৎপত্তি, এদিলে মল্লযুদ্ধেও হয়ে উঠল এক অপ্রতিরথ যোদ্ধা। গৌড়েশ্বরকে নিজ বীরত্ব দেখিয়ে খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে সে ভাই কর্পূর ধবলকে নিয়ে যাত্রা করল গৌড়ের উদ্দেশ্যে। পথে বাঘ, কুমির ইত্যাদি হিংস্র জন্তু বধ করে একদিকে যেমন নিজের খ্যাতি বৃদ্ধি করল, অন্যদিকে ভ্রষ্টা নারীদের প্রলোভন এড়িয়ে সে নৈতিক শুচিতারও পরিচয় দিল। এদিকে গৌড়ে পৌঁছেই লাউসেন মহামদের চক্রান্তে বন্দী হল। কিন্তু গৌড়েশ্বরকে বাহুবল দেখিয়ে খুশি করে সে অচিরেই মুক্তিলাভ করল। গৌড়েশ্বর তাঁকে প্রচুর পুরস্কার ও ময়নাগড়ের ইজারা দিলেন। ফেরার পথে কালু ডোম ও তার বউ লখ্যার সঙ্গে লাউসেনের শখ্যতা হল। লাউসেন এদেরও ময়নাগড়ে নিয়ে এল। কালুকে করল সেনাপতি। এরপর মহামদের চক্রান্তে গৌড়েশ্বর লাউসেনকে পাঠালেন কামরূপরাজকে দমন করতে। মহামদ ভেবেছিলেন প্রবল প্রতাপশালী কামরূপরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে লাউসেনের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ধর্মঠাকুরের কৃপায় লাউসেন কামরূপরাজকে পরাজিত করে তাঁর কন্যা কলিঙ্গাকে বিয়ে করে দেশে ফিরল। এতে মহামদ ঈর্ষায় দগ্ধ হতে লাগলেন। তাঁর চক্রান্তে আবার গৌড়েশ্বর লাউসেনকে শিমূল রাজ্য আক্রমণ করতে পাঠালেন। লাউসেনও লোহার গণ্ডার কেটে শিমূল রাজকন্যা কানাড়াকে বিবাহ করে নিয়ে এল। এতে মহামদের ক্রোধ বেড়ে গেল। তাঁরই চক্রান্তে অজয় নদের তীরে ইছাই ঘোষের সঙ্গে লাউসেনের প্রবল যুদ্ধ হল। যুদ্ধে ইছাই পরাজিত ও নিহত হল। এরপর মহামদ লাউসেনকে অন্যভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করলেন। তিনি কৌশলে গৌড়েশ্বরকে দিয়ে আদেশ করালেন যে, লাউসেন যদি ধর্মঠাকুরের বরপুত্র হয়, তবে তাকে পশ্চিমে সূর্যোদয় ঘটিয়ে দেখাতে হবে, নচেত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। হাকন্দ নামক স্থানে ধর্মের কঠোর তপস্যা করে লাউসেন এই অসাধ্যটিও সাধন করল।

    লাউসেন যখন হাকন্দে তপস্যা করছিল, তখন সেই সুযোগে মহামদ ময়নাগড় আক্রমণ করে। যুদ্ধে সপত্নী কালুরায় মারা যায়। লাউসেনের প্রথমা স্ত্রী কলিঙ্গা বীরবীক্রমে যুদ্ধ করে প্রাণত্যাগ করে। শেষে বীরাঙ্গনা কানাড়ার হাতে পরাজিত হয়ে মহামদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। দেশে ফিরে ধর্মঠাকুরের স্তব করে সকলকে বাঁচিয়ে তোলে লাউসেন। মর্ত্যে ধর্মঠাকুরের পূজা প্রচারিত হয়। মহামদ তাঁর কৃত পাপের জন্য কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ হয়। কিন্তু দয়াপরবশ হয়ে লাউসেন ধর্মঠাকুরের নিকট প্রার্থনা করে তাঁকে রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এরপর পরম গৌরবে কিছুকাল রাজত্ব করে পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্যভার তুলে দিয়ে স্বর্গারোহণ করে লাউসেন।

  • দস্যু বনহুর

    দস্যু বনহুর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক রোমেনা আফাজ কর্তৃক সৃষ্ট একটি কথাচরিত্র। দস্যু বনহুর সিরিজে এই চরিত্রভিত্তিক নিয়ে শতাধিক (১৩৮টি) গোয়েন্দা কাহনী প্রকাশিত হয়েছে। ছোটবেলা নৌদূর্ঘটনায় চৌধুরী বাড়ীর ছেলে মনির হারিয়ে যায়, দস্যু সর্দার কালু খাঁ তাঁকে কুঁড়িয়ে পান ও পরবর্তিতে তাঁকে “দস্যু বনহুর” রুপে গড়ে তোলেন। গরীবের বন্ধু ও চোরাকারবারীদের চির শত্রু দস্যু বনহুর যেমন গরীবের কাছে ছিলেন সম্মানিত, তেমনি চোরাকারবারী ও সন্ত্রাসদের কাছে ছিলেন জমদূতের মত। এই সিরিজের স্লোগান হচ্ছে ‘সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক দস্যু বনহুর’।

    সহায়ক চরিত্রসমূহ[উৎস সম্পাদনা]

    দস্যু বনহুরের সহায়ক চরিত্র হিসেবে রয়েছে রহমান ও কায়েস, তাঁরা একাধারে বনহুরের বন্ধু ও সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর দু’জন স্ত্রী ছিলো একজন জঙ্গলে অন্যজন শহরে; শহুরে স্ত্রীর নাম মনিরা ও অপরজনের নাম নূরী। মনিরার গর্ভে দস্যু বনহুরে বড় ছেলে “নুরুজ্জামান নূর” এর জন্ম, যে পরবর্তীতে দেশের সৎ ও সাহসী ডিটেকটিভ হিসেবে পরিচয় লাভ করে। নূরীর গর্ভে “জাভেদ” নামে তার একটি ছেলের জন্ম হয়, যে পিতার মতই দস্যুতা করতে ভালবাসে।

    “কালু খাঁ” যাঁকে দস্যু বনহুর বাপু বলে সম্বোধন করতেন, কালু খাঁ ছিলেন একজন প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ডাকাত সর্দার। একদিন তিনি ছোট্র মনিরকে কুঁড়িয়ে পান ও পরবর্তিতে তাঁকে “দস্যু বনহুর” রুপে গড়ে তোলেন।

    দস্যু বনহুর সিরিজে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে “আশা” নামের চরিত্রটিকে ধারণা করা হয় এই সিরিজের সবচেয়ে রহস্যময়। এছাড়া “দস্যু রানী” নামের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে যিনি “আহাদ” নামের একজন নাম করা একজন ডিটেকটিভের স্ত্রী।

    কাহিনী সংগ্রহ[উৎস সম্পাদনা]

    ইতিহাস[উৎস সম্পাদনা]

    নামকরণ[উৎস সম্পাদনা]

    বিভিন্ন মাধ্যমে দস্যু বনহুর[উৎস সম্পাদনা]

    চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অঞ্জনা অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিটির নাম ছিলো “দস্যু বনহুর”। ছবিটিতে “দস্যু বনহুর” চরিত্রে অভিনয় করে চিত্রনায়ক সোহেল রানা। এতে আরও অভিনয় করেন প্রয়াত চিত্রনায়ক জসিম। ছবিটির “ডোরা কাটা দাগ দেখলে বাঘ চেনা যায়” গানটি দারুন জনপ্রিয়তা পায়।

    সমালোচনা[উৎস সম্পাদনা]

    বইয়ের তালিকা[উৎস সম্পাদনা]

    1. দস্যু বনহুর
    2. দস্যু বনহুরের নতুন রুপ
    3. সৈনিক বেশে দস্যু বনহুর
    4. নাথুরামের কবলে মনিরা
    5. দুর্ধর্ষ দস্যু বনহুর
    6. ছায়ামূর্তি
    7. মনিরা ও দস্যু বনহুর
    8. সাগরতলে দস্যু বনহুর
    9. সর্বহারা মনিরা
    10. ঝিল শহরে দস্যু বনহুর
    11. ঝিন্দের রানী
    12. দস্যু দুহিতা
    13. বন্দিনী
    14. মায়াচক্র
    15. চিত্রনায়ক দস্যু বনহুর
    16. কান্দাইয়ের পথে দস্যু বনহুর
    17. বন্দী বনহুর
    18. দস্যু বনহুরের মৃত্যুদন্ড
    19. অন্ধ মনিরা
    20. প্রেত, আত্মা
    21. মৃত্যুর কবলে নূরী
    22. বনহুরের অন্তর্ধান
    23. আফ্রিকার জঙ্গলে দস্যু বনহুর
    24. বাংলাদেশে দস্যু বনহুর
    25. বন্ধনহীন দস্যু বনহুর
    26. দিল্লীর বুকে দস্যু বনহুর
    27. রাত্রী ভয়ঙ্কর
    28. প্রতিধ্বনি
    29. সাপুড়ে সসর্দার
    30. নাবিক দস্যু বনহুর
    31. ফৌজিন্দিয়া দ্বীপ
    32. আস্তানায় দস্যু বনহুর
    33. ঝাম জঙ্গলে দস্যু বনহুর
    34. ধূমকেতু
    35. সুন্দরবনের অন্তরালে
    36. ঢাকায় দস্যু বনহুর
    37. গুপ্ত রহস্য
    38. কিউকিলা ও দস্যু বনহুর
    39. ইরান সাগরে দস্যু বনহুর
    40. দস্যু বনহুর ও রানী দুর্গেশ্বরী
    41. দুর্গেশ্বরীর জীবন্ত সমাধি
    42. দস্যু বনহুর ও নিশাচর
    43. নাগরিক দস্যু বনহুর
    44. কাপালিক ও দস্যু বনহুর
    45. কান্দাই রহস্য
    46. কস্তুরীবাঈ
    47. পাতালপুরীতে দস্যু বনহুর
    48. কে এই নারী?
    49. নির্জন বাংলোর অভ্যন্তরে
    50. মৃত্যু-বিভীষিকা
    51. নীল দ্বীপের রানী
    52. নূরীর সন্ধানে
    53. জংলী মেয়ে
    54. নীল পাথর-১
    55. নীল পাথর-২
    56. বন্ধ্যা জঙ্গলে দস্যু বনহুর
    57. স্বাধীন বাংলায় দস্যু বনহুর
    58. পাকিস্তানে দস্যু বনহুর
    59. যমদূত ও দস্যু বনহুর
    60. হীরাঝিল
    61. ফাংহায় দস্যু বনহুর
    62. অশরীরী আত্মা
    63. বিদেশী ঘাটির সন্ধানে
    64. জংঙ্গল বাড়ি ঘাটি
    65. দস্যু বনহুর ও হামবার্ট
    66. জিহাংহায় দস্যু বনহুর
    67. চীন প্রাচীরের অভ্যন্তরে
    68. সাইক্লোনের কবলে দস্যু বনহুর
    69. চোরাবালি
    70. লাল চিঠি
    71. দস্যু বনহুর ও মিঃ হিলালী
    72. রক্তের নেশা
    73. অট্টহাসি
    74. দস্যু রানীর কবলে দস্যু বনহুর
    75. কুহেলিকা
    76. নাচের পুতুল-১
    77. নাচের পুতুল-২
    78. নাচের পুতুল-৩
    79. নাচের পুতুল-৪
    80. স্বর্নগুহা
    81. প্লাবন
    82. জীবন্ত কঙ্কাল
    83. রহস্যময়ী নারী
    84. অদৃশ্য দুটি হাত
    85. হত্যা রহস্য
    86. নীল সাগর
    87. ঘোলা জল
    88. রহস্য গুহা
    89. খোন্দকার বাড়ী
    90. গর্জিলা ও দস্যু বনহুর
    91. কালো মেঘ
    92. নররাক্ষস ও দস্যু বনহুর
    93. কে এই নররাক্ষস?
    94. দস্যু বনহুর ও মিস লুনা
    95. ক্যারিলং ও দস্যু বনহুর
    96. মুখোশের অন্তরালে
    97. মঙ্গল গ্রহের রহস্য
    98. অজানা দেশে
    99. তীরফলকের গভীর রহস্য
    100. সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে
    101. দস্যু জাভেদ
    102. মহাচক্র
    103. দস্যু বনহুর ও নিশো
    104. নূপুরের ঝংকার
    105. বনহুর ও হাঙ্গেরী কারাগার
    106. ভৌতিক গহ্বর
    107. ভৌতিক গহ্বরে মৃত্যুদূত
    108. মঙ্গল গ্রহে
    109. রুপালী সূর্য
    110. দস্যু বনহুর ও দস্যুরানী
    111. নরকঙ্কাল
    112. মায়ামৃগ
    113. মণিষা দ্বীপ
    114. মণিষা দ্বীপের গহ্বরে
    115. বনহুর ও জলদস্যু
    116. কুচক্রীর কবলে দস্যু বনহুর
    117. রক্তপায়ী বাদুড় ও দস্যু বনহুর
    118. করাল থাবা
    119. হিমাগারে দস্যু বনহুর
    120. মৃত্যুকূপে দস্যু বনহুর
    121. অন্ধকারের আতঙ্ক
    122. হাংহার রহস্য
    123. ষড়যন্ত্রের খপ্পরে দস্যু বনহুর
    124. মনিরার মুক্তি
    125. দুধর্ষ জাভেদ
    126. জাভেদ ও নরখাদক
    127. বিস্ময়কর গুহা
    128. বনহুর ও মাদাম বাঈ
    129. বনহুর ও মাদাম বাঈ-২
    130. আরাকানে দস্যু বনহুর
    131. লীলা নাগের হীরক হাড়
    132. পিরামিডের অভ্যন্তরে-১
    133. পিরামিডের অভ্যন্তরে-২
    134. ঈগলের গহ্বরে বনহুর
    135. লৌহমানব ও বনহুর
    136. হীরা ঝিলের গহ্বরে
    137. শত্রুর কবলে নূর
    138. স্বর্ণ সিংহাসন​
  • দক্ষিণায়নের দিন

    দক্ষিণায়নের দিন প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক শওকত আলী রচিত একটি সমকালীন উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৮৫ সালে প্রকশিত হয়। ৩২০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের উত্থান, পতন, সংগ্রাম, ভালোবাসার সমন্বয়ে বহুস্তর জীবনের পূর্ণ রূপ তুলে ধরা হয়েছে। শওকত আলীর দক্ষিণায়নের দিনকুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিন উপন্যাস তিনটি যথাক্রমে ১৯৭৬, ১৯৭৭, এবং ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তিনটি উপন্যাসেই পাত্র পাত্রী একই হওয়ায় প্রকাশক ১৯৮৫ সালে এই ত্রয়ী উপন্যাসকে একত্রে দক্ষিণায়নের দিন নামে প্রকাশ করেন।

    নাটক[উৎস সম্পাদনা]

    দক্ষিণায়নের দিন উপন্যাস অবলম্বনে দক্ষিণায়নের দিন নামক ধারাবাহিক নাটকটির চিত্রনাট্য লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন সাজ্জাদ সুমন।[১] এতে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদিশহীদুজ্জামান সেলিমসুমাইয়া শিমুআরমান পারভেজ মুরাদমৌসুমী বিশ্বাস প্রমুখ।[২] নাটকটি এনটিভিতে প্রচারিত হত।[৩]

    আরও দেখুন

  • তোতা ইতিহাস

    তোতা ইতিহাস বাংলা ভাষায় রচিত একটি গল্পগ্রন্থ যা প্রকৃতপক্ষে কাদির বখশ রচিত ফার্সি গল্পগ্রন্থ তুতিনামা-এর বঙ্গানুবাদ। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাঙালা ভাষার শিক্ষক চণ্ডীচরণ মুনশী ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে এই অনুবাদ কর্ম সম্পাদন করেন। গ্রন্থটি এ কলেজের বাঙালা শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। [১]

    তোতা ইতিহাস একটি উপাখ্যানগ্রন্থ যা বাঙালা গদ্য সাহিত্যের অন্যতম আদি নিদর্শন। ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে চণ্ডীচরণ মুনশী মূল ফার্সি থেকে বাঙালায ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদ করেন। পরবর্তী বৎসর অর্থাৎ ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটি মুদ্রিত হয়েছিল শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে।[১] এতে মোট ৩৫ টি গল্প আছে।

    সমসাময়িক কালে লন্ডন থেকে তোতা ইতিহাস-এর দু’টি সংস্করণ মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সংস্করণের পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৮। ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সংস্করণের পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪০। স্যার গ্রেভস হটন্‌ ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে তার Bengali Selection নামে যে গ্রন্থটি প্রকাশ করেন তাতে তোতা ইতিহাসের ১০ টি কাহিনীর ইংরেজি অনুবাদ সহ একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ডব্লিউ, ইয়াটস তার Introduction to the Bengali Language গ্রন্থের ২য় খণ্ডে তোতা ইতিহাস-এর ১৮ টি কাহিনী সংকলন করেন

  • তিলাইরাজা

    তিলাইরাজা গীতিকাটি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার কাছাড়ী গ্রাম নিবাসী রমিজ উল্লার নিকট থেকে ১৯৬৫ সালের জানুয়ারী মাসে স্ংগ্রীহিত। বাংলা একাডেমীর নিয়মিত সংগ্রাহক চৌধুরী গোলাম আকবর এটি সংগ্রহ করেন। গীতিকাটি খাসিয়া রাজা ও তার রাজ্যচুত্য হওয়ার ঘটনা নিয়ে রচিত। গীতিকাটির রচনাকাল ও রচয়ীতা যদিও অজ্ঞাত, এর নিরক্ষর গায়েন রমিজ উল্লাহ তার গ্রামবাসী নিয়ামত উল্লার কাছে শুনেন গীত করতে। এই গীতিকায় ১৭৭০ টি পঙ্‌ক্তি রয়েছে।[১]

  • তর্জা (লোকজ কবিতা প্রতিযোগিতা)

    তর্জা এক ধরনের দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী বাংলার অনুষ্ঠান। এটি লোকজ কবিতার একটি প্রতিযোগিতা। ঐতিহাসিকভাবে এটি পরিবেশন করা হয়ে থাকে গ্রাম্য আসরে কোনো চণ্ডীমণ্ডপে অথবা গ্রামদেবতার পূজাবেদি, মেলা অথবা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে। সাধারণত রাস্তাঘাটে, বাজারের কোনো স্থানে, বা মঞ্চ সাজিয়েও বিবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর পরিবেশনা করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করা হয় সাধারণত রামায়ণমহাভারত বা পুরাণ থেকে। কবিরা তাদের নিজ অংশটি ছড়া আকারে গায় এবং অন্য অংশগ্রহণকারীকে এর অর্থ অনুমান করতে হয়। বাংলার নবজাগরণের সময়ে আধুনিকায়নের জোয়ারে ঝুমুর ক্লাবসহ এমন অনেক ক্লাব ধ্বংশ করা হয়েছিল এদের অশালীন বিষয়বস্তু আছে বলে।[১]

    একটি তর্জা শ্লোকের উদাহরণ:

    মাগী মিনশেকে চিৎ করে ফেলে দিয়ে বুকে দিয়েছে পা আর চোখটা করে ঝুলুর ঝুলুর, মুখে নাইকো রা।[১]

    এর আক্ষরিক অনুবাদ: “কোনো বেহায়া মেয়ে পুরুষকে মাটিতে উপুড় করে ফেলে দিয়ে তার বুকে পা দিয়েছে, আর রাগে চোখ আগুন ঝরাচ্ছে মুখে কোনো আওয়াজ না করে।” [১] এই ধাঁধার উত্তর হল দেবী কালী এবং তাঁর সাথে যুক্ত কিংবদন্তি। এর উত্তরদাতারা সেই মুহূর্তে তৈরি একটি কবিতায় তার উত্তরও গাইবে।

    একটি শিল্প মাধ্যম[উৎস সম্পাদনা]

    এই কবিতা প্রতিযোগিতায় জেগে ওঠা সংগীতের একটি বিশেষ রূপ আছে। এছাড়া এটি অন্যান্য অনুরূপ লোকজ সংস্কৃতি ঝুমুরটপ্পার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বঙ্গের সংগীত জগতে এটি যোগ করছে এক অনন্য মাত্রা।