স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলোসফি অনুসারে, ধর্মদর্শন হচ্ছে, “ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত ধারণা এবং কেন্দ্রীয় বিষয় নিয়ে দার্শনিক অনুসন্ধান”।[১] এটি একটি প্রাচীন পাঠ্য বিষয়, যা অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে দার্শনিক আলোচনায় পাওয়া যায়, এবং এটি দর্শনের অন্যান্য শাখা যেমন অধিবিদ্যা, জ্ঞানতত্ত্ব ও নীতিশাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত।[২]
ধর্মদর্শন(Religion) ধর্মীয় দর্শন থেকে আলাদা কারণ ধর্মদর্শন ধর্মীয় দর্শনের মত কোন নির্দিষ্ট ধর্মব্যবস্থার সমস্যাগুলোর পরীক্ষা নীরিক্ষা করে না, বরং ধর্মদর্শন ধর্মের সামগ্রিক প্রকৃতি নিয়েই বিভিন্ন আলোচনা করে। ধর্মদর্শনের পাঠ এমনভাবে গড়ে উঠেছে যাতে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয়েই নিরাবেগভাবে এই বিষয়ে পাঠ করতে পারে।[৩]
দার্শনিক উইলিয়াম এল. রো ধর্মের দর্শনের সংজ্ঞা দেন এভাবেঃ “মৌলিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধারণার সমালোচনামূলক পরীক্ষণ”।[৪] ধর্মের দর্শনের আওতায় যেসব বিষয়াদি পরেঃ ঈশ্বরের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস, বিভিন্নরকমের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক, ভালো ও খারাপ – এর প্রকৃতি ও পরিসর এবং জন্ম, ইতিহাস ও মৃত্যুর ধর্মীয় ব্যাখ্যা।[৫] ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার নৈতিক অর্থ, বিশ্বাসের এর সাথে যুক্তি, অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যের সম্পর্ক; অলৌকিকতা, পবিত্র বাণী, বৈরাগ্যবাদ, ক্ষমতা আর পরিত্রাণ – এসব জিনিসও ধর্মের দর্শনের আওতায় পড়ে।[৬]
উনিশ শতক এর আগ পর্যন্ত ‘ধর্মের দর্শন’ শব্দটি পশ্চিমে ব্যবহার হয় নি।[৭] বেশিরভাগ পূর্বাধুনিক ও প্রথমদিককার আধুনিক দার্শনিক কাজসমূহ ধর্মীয় সারমর্ম ও ‘অ-ধর্মীয়’ দার্শনিক প্রশ্নসমূহের এক সংমিশ্রণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ায় হিন্দু উপনিষদ, দাওবাদ, কনফুসিয়াসবাদ আর বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত কিতাবাদি ছিল।[৮] গ্রীক দর্শন, যেমন পিথাগোরাসবাদ, বৈরাগ্যদর্শন এর মধ্যে দেবতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারণা ছিল, আর মধ্যযুগীয় দর্শন শক্তভাবে তিনটি ইব্রাহিমিএক ঈশ্বরবাদী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। পশ্চিম বিশ্বে প্রথম দিককার আধুনিক দার্শনিকগণ যথা থমাস হোব্স, জন লক আর জর্জ বার্কিলি নানধরনের ইহজাগতিক বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেন।[৯]
Religion
ধর্মের দর্শন, ধর্মতত্ত্ব হতে এ দিক থেকে আলাদা যে, ধর্মতত্ত্বে “সমালোচনামূলক চিন্তাধারা ধর্মীয় বিশ্বাস এর উপর ভিত্তিকৃত”।[১০] আবার, “ধর্মতত্ত্ব কোন কর্তৃত্বশালীর উপর নির্ভর করে যে চিন্তাভাবনা, ভাবপ্রকাশ ও সাক্ষী হওয়ার ব্যাপার সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে … [যখন] দর্শন তার যুক্তিসমূহ ভিত্তি করে সময়হীন প্রমাণের উপর”।[১১]
প্রাচীন সেরামানের দার্শনিকগণ দ্বারা ধর্মের দর্শনের কিছু অংশকে অধিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অ্যারিস্টটলেরঅধিবিদ্যায় অন্তহীন গতির জন্য মূল কারণ ছিল একটি অচালিত চালক, যে, প্রবৃত্তি বা চিন্তার ব্যবহার করে গতিকে গতিময় করে নিজে গতিশীল হওয়া ছাড়া।[১২] এই অচালিত চালক, অ্যারিস্টটল এর মতে, হলেন ঈশ্বর, যা ধর্মতত্ত্বের পড়ালেখার বিষয়বস্তু। যদিও দার্শনিকগণ একে ধর্মের দর্শনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন আর স্বাভাবিকভাবে একে পড়ালেখার আলাদা এক বিষয় হিসেবে দেখা হয়, তবু কিছু মানুষ, বিশেষ করে ক্যাথলিক দার্শনিকগণ দ্বারা এখনও একে অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে দেখা হয়।
অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে
এরিস্টোটল
ধর্মদর্শনের কিছু বিষয় প্রাচীন দর্শনের সময় থেকেই অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরিস্টোটলের মেটাফিজিক্স-এ শাশ্বত গতির পূর্বজ কারণ হিসেবে |”নিশ্চল চালক”-কে (unmoved mover) দায়ী করেছেন, যিনি আকাঙ্খার বা চিন্তার বস্তুর মত, নিজে না চালিত হয়ে অন্য বস্তুকে চালিত করে।[১২] এরিস্টোটলের মতে, ঈশ্বর ধর্মতত্ত্বে আলোচনার বিষয়। যাইহোক, আজ দার্শনিকগণ এই ঈশ্বর নিয়ে আলোচনার জন্য “ধর্মদর্শন” শব্দটি ব্যবহার করেন, এবং একে আলোচনার ভিন্ন ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হয়। যদিও একে অনেকে, বিশেষ করে ক্যাথলিক দার্শনিকগণ অধিবিদ্যার মধ্যে ফেলেন।
“ref2” নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
দার্শনিক উইলিয়াম এল. রো ধর্মের দর্শনের সংজ্ঞা দেন এভাবেঃ “মৌলিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধারণার সমালোচনামূলক পরীক্ষণ”।[৪] ধর্মের দর্শনের আওতায় যেসব বিষয়াদি পরেঃ ঈশ্বরের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস, বিভিন্নরকমের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক, ভালো ও খারাপ – এর প্রকৃতি ও পরিসর এবং জন্ম, ইতিহাস ও মৃত্যুর ধর্মীয় ব্যাখ্যা।[৫] ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার নৈতিক অর্থ, বিশ্বাসের এর সাথে যুক্তি, অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যের সম্পর্ক; অলৌকিকতা, পবিত্র বাণী, বৈরাগ্যবাদ, ক্ষমতা আর পরিত্রাণ – এসব জিনিসও ধর্মের দর্শনের আওতায় পড়ে।[৬]
Religion
উনিশ শতক এর আগ পর্যন্ত ‘ধর্মের দর্শন’ শব্দটি পশ্চিমে ব্যবহার হয় নি।[৭] বেশিরভাগ পূর্বাধুনিক ও প্রথমদিককার আধুনিক দার্শনিক কাজসমূহ ধর্মীয় সারমর্ম ও ‘অ-ধর্মীয়’ দার্শনিক প্রশ্নসমূহের এক সংমিশ্রণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ায় হিন্দু উপনিষদ, দাওবাদ, কনফুসিয়াসবাদ আর বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত কিতাবাদি ছিল।[৮] গ্রীক দর্শন, যেমন পিথাগোরাসবাদ, বৈরাগ্যদর্শন এর মধ্যে দেবতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারণা ছিল, আর মধ্যযুগীয় দর্শন শক্তভাবে তিনটি ইব্রাহিমিএক ঈশ্বরবাদী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। পশ্চিম বিশ্বে প্রথম দিককার আধুনিক দার্শনিকগণ যথা থমাস হোব্স, জন লক আর জর্জ বার্কিলি নানধরনের ইহজাগতিক বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেন।[
ধর্ম ও যৌনতা বা যৌনতা সম্পর্কিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি (Religion and sexuality)আদিকাল থেকে মানুষের যৌনাদর্শ তথা যৌন নৈতিকতা গঠন এবং যৌনাচার নিরূপণে প্রধান ভূমিকা রেখে এসেছে।
প্রতিটি প্রধান ধর্ম যৌনতা, নৈতিকতা ও নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে নৈতিক সূত্রাবলী তৈরি করেছে। এই নৈতিক সূত্রাবলী এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় যেগুলি যৌন আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে এবং জনগণের যৌন ক্রিয়াকলাপ এবং অভ্যাসগুলি প্রভাবিত করতে পারে।
সময়ের সাথে এবং সংস্কৃতির মধ্যে যৌন নৈতিকতা ব্যাপকভাবে পার্থক্য রয়েছে। একটি সমাজের যৌন মান- যৌন আচরণের মান-ধর্মীয় বিশ্বাস, বা সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থার সাথে যুক্ত হতে পারে, বা এই সমস্তগুলি। যৌনতা এবং প্রজনন বিশ্বব্যাপী মানুষের মিথস্ক্রিয়া এবং সমাজের মৌলিক উপাদান। উপরন্তু, “যৌন সীমাবদ্ধতা” সমস্ত মানব সমাজের জন্য অদ্ভুত সংস্কৃতির সর্বজনীন এক।[১][২] তদনুসারে, বেশিরভাগ ধর্ম মানুষের আচার-আচরণে যৌনতার জন্য একটি “যথাযথ” ভূমিকার প্রশ্নটি সমাধান করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে যৌন নিরপেক্ষতার বিভিন্ন কোড রয়েছে, যা যৌন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে বা নির্দিষ্ট যৌন সংক্রামিত কর্ম বা চিন্তাধারার জন্য আদর্শ মান নির্ধারণ করে।
ধর্ম এবং ধর্মবিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃতভাবে লিঙ্গ ও যৌনতা থেকে একটি বিশ্বাসী বিশ্বাসের জন্য নেতিবাচক ধারণা প্রদান করে, যা ঐশ্বরিকের সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি। কিছু ধর্ম জৈবিক প্রজনন (কখনও কখনও শুধুমাত্র যখন আনুষ্ঠানিক বৈবাহিক অবস্থা এবং একটি নির্দিষ্ট বয়সে) অনুমোদিত, এবং যৌন পরিতোষ জন্য চর্চা অন্যান্য কার্যকলাপ হিসাবে অভ্যাস হিসাবে অভ্যাসের জন্য অনুশীলন করা হয় যৌন কার্যকলাপ মধ্যে পার্থক্য।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রবল আকর্ষণ দেখা যায় যেটা আজও বিদ্যমান। প্রত্যেকেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। ইসলাম ধর্মে তা নিষেধ করা হয়নি। তবে এখানে বেশ কিছু নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে। পশুদের মত যৌনকামনা পূরণ করার অধিকার দেওয়া হয়নি। এখানে বিবাহের ব্যবস্থা রয়েছে। বিবাহের মাধ্যমে একজন পুরুষ কোনো মহিলাকে অধিকার করতে পারবে। তবে এর জন্য উপহার স্বরূপ পুরুষের পক্ষ থেকে মহিলাকে মহর প্রদান করতে হবে। এর সর্বোচ্চ কোনো ধরা বাধা পরিমাণ নেই তবে সর্বনিন্ম দশ দিরহাম হতে হবে।
সূরা নিসার তিন নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানান:
তোমরা দুই দুই বা তিন তিন বা চার চারটি বিয়ে করো। যদি মনে করো সমতা রক্ষা করতে পারবে না তাহলে একটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো
এখন আমরা বলতে পারি যে, একজন মহিলা একসময়ে একজন স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু পুরুষ একসাথে চারটি বিয়ে করতে পারবে। তবে পুরুষ যদি দুই, তিন অথবা চারটি বিয়ে করে, তবে তার সকল স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে হবে এবং সমান অধিকার দিতে হবে ।
অন্যায়ভাবে যৌনক্রিয়া করাকে যিনা বলে। ইসলামে এটাকে কঠোরভাবে নিষেধের সাথে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত পুরুষ ও নারী যারা, তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত প্রদান কর, তাদের বিষয়ে করুণা যেন তোমাদেরকে দুর্বল না করে— —সূরা আন-নুর, আয়াত ২
রাসুল (স.) হাদীসে বলেন,
একজন অবিবাহিত পুরুষ একজন অবিবাহিত নারীর সাথে ব্যভিচার করে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন পেতে হবে। আর বিবাহিত পুরুষের সাথে বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে।— — সহীহ মুসলিম, ১৭:৪১৯১ (ইংরেজি)
Religion and sexuality
এই অবৈধ যৌনাচারের ধারা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ
আদম সন্তানের উপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু-চোখের যিনা হল (নিষিদ্ধ যৌনতার প্রতি) দৃষ্টিপাত করা, দু’কানের যিনা হল শ্রবণ করা, রসনার যিনা হল কথোপকথন করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওযা, অন্তরের যিনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করা। আর যৌনাঙ্গ অবশেষে তা বাস্তবায়িত করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।— — সহীহ বুখারী, ৮:৭৭:৬০৯ (ইংরেজি),সহীহ মুসলিম, ৩৩:৬৪২১ (ইংরেজি)
সুতরাং, আমরা বলতে পারি ইসলামে অবৈধ যৌনাচারের কোনো সুযোগ নেই। বরং এর জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।
প্রতিটি প্রধান ধর্ম যৌনতা, নৈতিকতা ও নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে নৈতিক সূত্রাবলী তৈরি করেছে। এই নৈতিক সূত্রাবলী এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় যেগুলি যৌন আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে এবং জনগণের যৌন ক্রিয়াকলাপ এবং অভ্যাসগুলি প্রভাবিত করতে পারে।
ধর্ম (বাংলা উচ্চারণ: [dʱɔɾmo]ধর্মো) হলো নির্দিষ্ট আচরণ ও অনুশীলন, নৈতিকতা, বিশ্বাস, বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, গ্রন্থ, পবিত্র স্থান, ভবিষ্যদ্বাণী, ধর্মে নীতিশাস্ত্র বা সংস্থার একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যা মানবতাকে অতিপ্রাকৃত, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিকতা উপাদানগুলোর সাথে সম্পর্কিত করে;[১] কিন্তু, কোনো অবিকল একটি ধর্ম গঠন করে তা নিয়ে কোনো পণ্ডিতের ঐকমত্য নেই।[২][৩]
বিভিন্ন ধর্মে ঐশ্বরিক,[৪]পবিত্র জিনিস,[৫]বিশ্বাস,[৬] একটি অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা বা অতিপ্রাকৃত প্রাণী “এক ধরণের উল্লসিত তাড়না এবং অতিক্রম যা বাকি জীবনের জন্য নিয়ম ও ক্ষমতা সরবরাহ করে” থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপাদান থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে।[৭] ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যে আচার, উপদেশ, স্মরণসভা বা সঙ্গীত (দেবতা ও/অথবা সাধুদের), উৎসর্গ (উপাসনা), উৎসব, ভোজ, বিবাহপরিষেবা, ধ্যান, প্রার্থনা, সঙ্গীত, শিল্প, নৃত্য, জনসেবা বা মানব সংস্কৃতির অন্যান্য দিক অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ধর্মগুলির পবিত্র ইতিহাস এবং আখ্যান রয়েছে, যা পবিত্র শাস্ত্র এবং প্রতীক এবং পবিত্র স্থানগুলিতে সংরক্ষিত থাকতে পারে, যার লক্ষ্য বেশিরভাগই জীবনকে অর্থ প্রদান করা। ধর্মগুলিতে সাংকেতিক গল্প থাকতে পারে, যা কখনও কখনও অনুসারীরা সত্য বলে মনে হয়, যা জীবন, মহাবিশ্ব এবং অন্যান্য ঘটনার উৎপত্তি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, যুক্তি ছাড়াও, ধর্মীয় বিশ্বাসের উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।[৮]
বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১০,০০০ স্বতন্ত্র ধর্ম রয়েছে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৮৪℅ খ্রীষ্টধর্ম, ইসলাম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম বা লোকধর্মের, কোনো না কোনো ধরনের সাথে যুক্ত।[৯] ধর্মীয়ভাবে অসম্পৃক্ত জনসংখ্যার মধ্যে রয়েছে যারা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম, নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীদের সাথে সনাক্ত করে না। যদিও ধর্মীয়ভাবে অসম্পৃক্তরা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু ধর্মীয়ভাবে অসম্পৃক্তদের অনেকেরই এখনও বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে।[১০]
ধর্মীয় অধ্যয়নধর্মতত্ত্ব, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব এবং সামাজিক বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নসহ বিভিন্ন গ্রন্থগত শাখা নিয়ে গঠিত। ধর্মের তত্ত্বগুলো ধর্মের উৎপত্তি এবং কাজের জন্য বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করে, যার মধ্যে ধর্মীয় সত্ত্বা এবং বিশ্বাসের তত্ত্ববিদ্যার ভিত্তিও রয়েছে।[১১]
ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত √ধৃ হতে (অর্থ ‘ধারণ’)। ‘একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যত প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সব মিলিয়ে হয় তার ধর্ম।’ তার বিশ্বাস, তার পরম্পরাগত শিক্ষা, তারা আচার ব্যবহার ইত্যাদি এই সবই তার ধর্ম। যেভাবে আগুনের ধর্ম দহন করা, জলের ধর্ম শীতলতা, পশুর ধর্ম পশুত্ব, তেমনি মানুষের ধর্ম হয় মনুষত্ব। কিন্তু শাস্ত্র বলে মানুষ উচ্চমার্গীয় একটি জীব এবং এই উচ্চমার্গীয় জীবকে নির্ণয়ের জন্য মনুস্মৃতি বা (মনুষ্যের বিধি বিধান সম্বলিত গ্রন্থ)লেখা হয়েছে। এই গ্রন্থ অনুসারে মনুষ্য ধর্ম বিবেচিত হবে দশটি গুণ এর মাধ্যমে, যে দশটি গুণের উপস্থিতি তাদেরকে মনুষ্য প্রমাণ করবে। যথা-
ইংরেজি Religion (উচ্চারণ: রিলিজিয়ন, অর্থ: উপসনা ধর্ম) শব্দটির উৎপত্তি ফরাসিreligion থেকে, যেমন, “religious community” (উচ্চারণ: রিলিজিয়াস কমিউনিটি, অর্থ: ধর্মীয় সম্প্রদায়)। আবার এটি এসেছে লাতিনreligionem থেকে (nom. religio) যার অর্থ “পবিত্র বিষয়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ঈশ্বরদের প্রতি নিষ্ঠা” (“respect for what is sacred, reverence for the gods”),[১২] এবং “বাধ্যতা, যা মানুষ ও ঈশ্বরদের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ” (“obligation, the bond between man and the gods”),[১৩] যেটি আবার লাতিন religiō থেকে পাওয়া।
religion
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় পৃথিবীতে, আধুনিক ‘religion’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত লাতিন শব্দমূল religio -কে বোঝা হতো ব্যক্তিবিশেষের উপাসনা করার গুণ হিসেবে; কখনই মতবাদ, চর্চা কিংবা জ্ঞানের উৎসকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হতো না।[১৪] ধর্মের আধুনিক ধারণা এমন এক বিমূর্ততা, যা ধর্মকে কতকগুলো স্বতন্ত্র বিশ্বাস বা মতবাদের সমষ্টি হিসেবে উপস্থাপন করে। ধর্মের অর্থ হিসেবে এটি অতি সাম্প্রতিক একটি উদ্ভাবন, ইংরেজি ভাষা যার ব্যাপক ব্যবহার সপ্তাদশ শতাব্দী থেকে লক্ষণীয়। এসময় ‘ধর্ম’ বলতে বোঝানো হতে থাকে ‘উপাসনা ধর্মকে’। ইতিহাসবেত্তারা এর কারণ হিসেবে প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারের সময়ে খ্রিষ্ট ধর্মের বিভাজন ও ভ্রমণের যুগে বৈশ্বায়নকে দায়ী করে থাকেন।[১৪] এ যুগে, ইউরোপীয়দের সাথে অসংখ্য ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভাষার দেশী-বিদেশী জনপদের যোগাযোগ স্থাপন আরও সাধারণ একটি ব্যাপারে পরিণত হয়। আবার এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেরই নিজ ভাষায় ধর্মীয় ভাব প্রকাশের জন্য ‘religion’ -এর সমতূল্য ধারণা বা সমার্থক শব্দ ছিল না।[১৪] সপ্তাদশ শতকই সেই সময়, যখন ধর্মের ধারণা আধুনিক আকার পেতে শুরু করে। যদিও বাইবেল, কুরআন এবং অন্যান্য প্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহের মূল ভাষায় লিখিত সংস্করণে ধর্মের ধারণার কোন সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল না।
religion
এমনকি যে সংস্কৃতিতে এই ধর্মগ্রন্হসমূহ লেখা হয় কিংবা যারা এই গ্রন্হগুলো অনুসরণ করতেন তাদেরও ধর্মের কোন সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না।[১৫] উদাহরণস্বরূপ, গ্রিক শব্দ threskeia (উচ্চারণ: থ্রেসকিয়া বা থ্রিসকিয়া) -এর কথা বলা যায়, যেটি হিরোডোটাস ও জোসিফাসের মত প্রখ্যাত গ্রিক লেখকেরা ‘উপাসনা’ অর্থে ব্যবহার করতেন। অথচ আজকের দিনে নিউ টেস্টামেন্টে এর অনুবাদ করা হয়েছে ‘ধর্ম’ হিসেবে। মধ্যযুগেও উক্ত শব্দটি ‘উপাসনা’ কিংবা এর সমার্থক ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হতো।[১৫] আবার কুরঅানের ক্ষেত্রে, অধিকাংশ সময়ই আরবী শব্দ دين (উচ্চারণ: দ্বীন) -এর আধুনিক ইংরেজি অনুবাদ করা হয় ‘religion’ বা ধর্ম হিসেবে, কিন্তু সপ্তাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত অনুবাদকেরা এই শব্দটি ব্যবহার করতেন ‘আইন’ বোঝাতে।[১৫] এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতকেও গ্রিক দার্শনিক জোসিফাস গ্রিক শব্দ ioudaismos (উচ্চারণ: ইউদাইসমোস) -কে ‘সম্প্রদায়’ অর্থে ব্যবহার করতেন, যার সাথে আধুনিককালের এক সেট বিমূর্ত ধারণা ও বিশ্বাসের সমাহার হিসেবে ধর্মের যে সংজ্ঞা প্রণীত হয়েছে তার কোন সম্পর্ক নেই। যদিও বর্তমানকালে অনেকেই ioudaismos -কে ‘ইহুদি ধর্ম’ (Judaism) হিসেবে অনুবাদ করেন।[১৫] উনবিংশ শতকেই প্রথম চলিত ভাষায় ‘বৌদ্ধ ধর্ম’ (Buddhism), ‘হিন্দু ধর্ম’ (Hinduism), ‘তাওবাদ’ (Taoism), ‘কনফুসিয়ানিজম’ (Confucianism) প্রভৃতি শব্দের উন্মেষ ঘটে।[১৪][১৬]জাপানের সুদীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাপানে কখনই কোথাও ‘ধর্মের’ কোন ধারণা ছিল না। যেহেতু জাপানী ভাষায় ‘ধর্ম’ বোঝাতে কোন শব্দ ছিল না, এমনকি এর কাছাকাছি ভাব প্রকাশ করে এমন কোন শব্দও না থাকায়, যখন ১৮৫৩ সালে মার্কিন রণতরীগুলো জাপানের উপকূলে এর জলসীমায় অবস্থান নেয় এবং তৎকালীর জাপান সরকারকে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে ধর্মের স্বাধীনতাকেও রাষ্ট্রনীতি হিসেবে স্বীকার করে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকে, তখন জাপান সরকার বাধ্য হয় এই পশ্চিমা ধারণা গ্রহণ করতে।[১৬]
religion
উনিশ শতকের প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদম্যাক্স মুলারের মতে, ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত ‘religion’ শব্দটির শব্দমূল, লাতিন religio (উচ্চারণ: রিলিজিও) শব্দটি মূলত ব্যবহৃত হতো “ঈশ্বর কিংবা ঈশ্বরবর্গের প্রতি নিষ্ঠা, পবিত্র বিষয়সমূহ সম্পর্কে সাবধানী চিন্তা ও ভক্তি (যেটিকে পরবর্তীতে সিসারো ‘অধ্যবসায়’ হিসেবে ব্যাক্ত করেন)” অর্থে।[১৭][১৮] ম্যাক্স মুলার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বহু সংস্কৃতিকে ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে অনুরূপ ক্ষমতা-কাঠামোর অধিকারী হিসেবে চিন্হিত করেন, যেগুলোর মধ্যে মিশরীয়, পারস্যীয় ও ভারতীয় সংস্কৃতিও অন্তর্ভুক্ত। তার মতে আজ যেগুলোকে আদিম ধর্মমত বলা হয়, তৎকালীন মানুষের কাছে সেগুলো ছিল কেবলই ‘আইন’ মাত্র।[১৯]
অনেক ভাষাতেই এমন শব্দাবলি রয়েছে যেগুলোকে ‘ধর্ম’ হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে, কিন্তু ভাষাভাষিরা হয়তো ভিন্নভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আবার কিছু ভাষায় ধর্ম বলতে কোন শব্দই নেই। উদাহরণস্বরূপ, সংস্কৃত धर्म (উচ্চারণ: ধার্মা বা dharma) শব্দটিকে কখনও কখনও ‘উপাসনা ধর্ম’ হিসেবে ভাষান্তর করা হলেও এর আরেকটি অর্থ ‘আইন’। চিরায়ত যুগে দক্ষিণ এশিয়ায় ভক্তির মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত (penance through piety) এবং ধর্মানুষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক প্রথাগুলোও আইন শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথমদিককার মধ্যযুগীয় জাপানে ‘সাম্রাজ্যবাদী আইন’ এবং সর্বজনীন বা ‘বুদ্ধের আইনের’ মধ্যে এক ধরনের মেলবন্ধন ছিল, যেগুলো পরবর্তীকালে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতার স্বাধীন উৎসে পরিণত হয়।[২০][২১]
religion
হিব্রু ভাষায় ‘ধর্মের’ কোন অবিকল সমার্থক শব্দ নেই, এবং ইহুদি ধর্ম স্পষ্টরূপে ধর্মীয়, জাতীয়তাবাদী, বর্ণীয় কিংবা সাম্প্রদায়িক পরিচয়সমূহের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখায় না।[২২] এই ধর্মের কেন্দ্রীয় ধারণাসমূহের মধ্যে ‘halakha’ (উচ্চারণ: হালাকা বা হালাখা) অন্যতম, যার অর্থ, ‘পথ’ বা ‘পথে চলা’, যা আবার অনেকসময় ‘আইন’ হিসেবেও অনুবাদ করা হয়। এই আইন দ্বারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস ও দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ নির্দেশিত হয়।[২৩]
সংজ্ঞা
religion
পণ্ডিতগণ ধর্মের সংজ্ঞা নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে, দুটি সাধারণ সংজ্ঞা ব্যবস্থা রয়েছে: সমাজতাত্ত্বিক/কার্যকরী এবং ঘটনাগত/দার্শনিক।[২৪][২৫][২৬][২৭][২৮]
আধুনিক পাশ্চাত্য মতবাদ
ধর্মের ধারণার উৎপত্তি আধুনিক যুগে পাশ্চাত্য সভ্যতায়।[২৯]
ধর্মের বৈশিষ্ট্য
প্রাণী সুলভ ধর্ম অথবা বৈশিষ্ট্য – পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণীর মতই মানুষেরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন – খাওয়া, ঘুম, ভয়, মৈথুন, মলত্যাগ, বিবাদ, আত্মরক্ষা, পরিবেশে টিকে থাকার আয়োজন।
religion
মনুষ্য সুলভ ধর্ম অথবা বৈশিষ্ট্য – যে কারণে তারা মানুষ অর্থাৎ তাদের অর্জিত জ্ঞান, যা কেবল অনুভবই করা যায়, দেখা যায়না। এ বৈশিষ্ট্যের দ্বারাই মানুষ তার প্রাণী সুলভ ধর্ম অথবা বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কেবলমাত্র সমাজে বেড়ে ওঠা মানুষ্যের (হোমো স্যাপিয়েন্স-এর) মাঝেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যেমন – পরিচিতি, ভাবের আদান-প্রদানের জন্য ভাষা জ্ঞান, সামাজিকতা, পঞ্চ ইন্দ্রিয় কে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি, চিন্তা করে আবিষ্কারের ক্ষমতা, বিশ্লেষণাত্মক মন, স্ব প্রতিফলনের ক্ষমতা, চেতনা ও বোধশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, আবেগ ও অনুভূতি, ধৈর্য, বিবেক, ক্ষমা। এই মনুষ্য সুলভ ধর্ম অথবা বৈশিষ্ট্যের জন্য কালে কালে বিভিন্ন দর্শন, নিয়মকানুন এবং পথনির্দেশনা এসেছে।
ধর্মের ইতিহাস বিভিন্ন ধর্মমতে ভিন্ন ভিন্ন, তবে বর্তমান পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্ম অর্থ্যাৎ ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মমতে পৃথিবীর সকল মানুষ একজন পিতা ও একজন মাতা থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে। এই দুইজন আদি পিতা আদম (Adam) ও মাতা হাওয়া (Eve) এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম। এই তিন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ যথাক্রমে কুরআন মাজিদ, বাইবেল (নিউ টেস্টামেন্ট) ও তাওরাহ (ওল্ড টেস্টামেন্ট) থেকে এই ঘটনার সুত্র পাওয়া যায়। মানব্জাতির সৃষ্টির পর থেকেই মুলত মানুষের ধর্মের সুত্রপাত। ইসলাম ধর্মমতে আদম (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীতে আগমনের পর তার প্রাথমিক কাজ ছিল কিভাবে পৃথিবীতে জীবন ধারণ করতে হবে তা প্রতিপালন করা এবং এক্ষেত্রে ফেরেশতা জিবরাইল (আলাইহিস সালাম) (Gabrial) আদম (আলাইহিস সালাম) কে সহযোগিতা করেছেন। কিভাবে ঘর নির্মাণ করতে হবে, খাবার তৈরী করতে হবে, শিকার করতে হবে এসকল জিনিস ছিল তার প্রাথমিক ধর্ম। পরবর্তিতে আদম (আলাইহিস সালাম) ও হাওয়া (আলাইহিস সালাম) এর সন্তানসন্ততি জন্মগ্রহণ করলে তখনো তাদের জীবনধারণ করাটাই ছিল তাদের ধর্মের মূল বিধিবিধান।
religion
ধর্মীয় ধারনাগুলোর প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া যায় কয়েক হাজার বছর আগে মধ্য ও নিম্ন প্যালিলিথিক যুগে। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রায় ৩০০,০০০ বছর আগে ধর্মীয় ধারনার প্রমাণ হিসাবে হোমো স্যাপিয়েনদের কবরস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্মীয় ধারনার অন্যান্য প্রমাণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়, যার মধ্যে মধ্য পাথর যুগে হস্তনির্মিত বিভিন্ন প্রতীকী অন্তর্ভুক্ত। যাইহোক, প্রাথমিক প্যালিলিথিক যুগের হস্তনির্মিত বিভিন্ন প্রতীকীর ব্যাখ্যা, যা কিভাবে ধর্মীয় ধারণা সম্পর্কিত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ কিছুটা কম বিতর্কিত। বিজ্ঞানীরা সাধারণত ধর্মীয় ধারনার প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে উর্ধ-প্যালোলিথিক (৫০,০০০-১৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) যুগ থেকে পাওয়া বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয় ব্যাখ্যা করে থাকেন। সেই যুগের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর সাথে সম্পর্কিত উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে সিংহের মত দেখতে মানুষ, শুক্রের মূর্তি, চাউট গুহার সমাধি, গুহা চিত্র ইত্যাদি।
উনিশ শতকের গবেষকগণ ধর্মের উৎস সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন, যেটি খ্রিস্টান মতবাদকে বিতর্কিত করেছিলো। উদারতার আগে দাবিগুলো চ্যালেঞ্জ করেছিল। প্রারম্ভিক তত্ত্ববিদ এডওয়ার্ড বার্নেট টাইলর (১৮৩২-১৯১৭) এবং হার্বার্ট স্পেন্সার (১৮২০-১৯০৩) অ্যানিমিজমের ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন। আর প্রত্নতত্ত্ববিদ জন লুবক (১৮৩৪-১৯১৩) শব্দটিকে “প্রতিমাবাদ” বলেন। এদিকে ধর্মীয় পণ্ডিত ম্যাক মুলার (১৮২৩-১৯০০) বলেন ধর্ম শুরু হয় হেডোনিজম থেকে। ফোকলোরিস্ট উইলহেলম মানহার্ড (১৯৩১-১৮৮০) বলেছিলেন, ধর্ম “প্রাকৃতিকতা” থেকে শুরু হয়েছিল, যার দ্বারা তিনি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর পৌরাণিক ব্যাখ্যা বোঝাতে চেয়েছিলেন।[৩০] এই সব তত্ত্বগুলো ব্যাপকভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত কোন বিস্তৃত ঐক্যমত্য নেই।
religion
প্রাক-মৃৎপাত্র নিওলিথিক এ (পিপিএনএ) গোবেকলি তেপে, যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম ধর্মীয় স্থান।[৩১] এর মধ্যে রয়েছে বিশাল টি-আকৃতির প্রস্তর স্তম্ভ, যা বিশ্বের প্রাচীনতম মেগালিথ হিসেবে পরিচিত। [৩২] এটি বিমূর্ত চিত্র, চিত্রগ্রন্থ এবং পশু ভাস্কর্য ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত। এটি তথাকথিত নিউলিথিক বিপ্লবের আগে নির্মিত হয়েছিল, যেমনঃ ৯০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কৃষি ও পশুপালন শুরু হয়েছিলো। কিন্তু গোবেকলি তেপের নির্মাণে একটি উন্নত সংগঠন বুঝায়, যা এখন পর্যন্ত প্যালিওলিথিক, পিপিএনএ বা পিপিএনবি সমাজগুলোর সাথে সম্পর্কিত নয়। জায়গাটি প্রথম কৃষি সমাজের শুরুতে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায়। জায়গাটি এখনও খনন এবং বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এভাবে এই অঞ্চলের পুরনো সম্প্রদায়ের জন্য, সেইসাথে ধর্মের সাধারণ ইতিহাসের জন্য উল্লেখযোগ্য বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে।
ধর্মের উপকারিতা
সংগঠিত ধর্ম নিম্নলিখিত উপায়ে বৃহত্তর জনসংখ্যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদানের মাধ্যম হিসাবে উত্থাপিত হয়েছেঃ
সংগঠিত ধর্ম একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে ন্যায্যতা প্রদান করে, যার ফলে রাষ্ট্রকে সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানের জন্য কর আদায় করার অধিকার লাভ করে। ভারত এবং মেসোপটেমিয়ার ধর্মশাসনে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ,রাজা, এবং সম্রাট রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন।[৩৩] বিশ্বব্যাপী সমস্ত রাষ্ট্রীয় সমাজে অনুরূপ রাজনৈতিক কাঠামো রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ঐশ্বরিক অনুমোদন দ্বারা ন্যায্যতা পায়।
সংগঠিত ধর্ম সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার উপায় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলো। তবে রাষ্ট্র ও দেশগুলোতে হাজার হাজার বা কোটি কোটি মানুষ পরস্পরের সাথে সাথে সম্পর্কহীন ছিলো। জারেড ডায়মন্ড যুক্তি দেখান যে, সংগঠিত ধর্ম অন্য কোনও সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের মধ্যে বন্ধন তৈরী করে। অন্যথায় সেখানে শত্রুতার প্রবণতা প্রকাশ পাবে। কারণ হিসেবে তিনি যুক্তি দেন যে, ব্যান্ড ও উপজাতীয় সমাজের মধ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হত্যাকাণ্ড।
পৃথিবীতে মানুষের জীবন যাপনের দিক নির্দেশনা এবং সাম্য-মৈত্রীর বাণী নিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের আগমন ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতবর্ষ হচ্ছে ধর্মের আদিভূমি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধর্মের নামে মানুষ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে আবার এই ধর্মই মানুষকে করেছে সুসংহত, মানবতাবাদী। এছাড়া মানবধর্ম রয়েছে যেটা নাস্তিকরা পালন করে। তারা কোন ধর্মকেই বিশ্বাস করে না,তাদের মতে বিজ্ঞান ও আধুনিক পৃথিবী,তাদের জন্ম হয়েছে বির্বতনের মাধ্যমে এটাই তাদের বিশ্বাস।
ইব্রাহিমীয় ধর্ম বা আব্রাহামিক ধর্ম (ইংরেজি: Abrahamic Religion) বলতে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়, যাদের মধ্যে ইব্রাহিমের সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় উৎপত্তি[১] অথবা ধর্মীয় ইতিহাসগত ধারাবাহিকতা বিদ্যমান।[২][৩][৪] এইসব ধর্ম হযরত ইব্রাহিম অথবা তার বংশধর প্রচার করেছেন। ভারত, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশের উপজাতীয় অঞ্চল বাদ দিয়ে সারা বিশ্বে এই মতবাদের আধিপত্য। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে যে তিনটি ধর্মগত শ্রেণীবিন্যাস পাওয়া যায়, এদের মধ্যে ইব্রাহিমীয় ধর্ম একটি শ্রেণী; অপর দুটি শ্রেণী হচ্ছে ভারতীয় ধর্ম (উদাহরণ- হিন্দু ধর্ম) এবং পূর্ব এশীয় ধর্ম।[৫]
সৌদি আরবের মক্কার কাবা শরীফ; যেখানে সারা বিশ্বের লাখো মুসলিম একতার মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে প্রার্থনা করে থাকেন।
ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্-ইসলাম্) একেশ্বরবাদী । “ইসলাম” শব্দের অর্থ “আত্মসমর্পণ”, বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পণ। কুরআন দ্বারা পরিচালিত; যা এমন এক কিতাব যাকে এর অনুসরণকারীরা [৬]( আরবি : الله আল্লাহ ) বানী বলে মনে করে এবং ইসলামের প্রধান নবী মুহাম্মাদ সঃ এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি,জীবনাদর্শও (বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে ) এর ভিত্তি । ইসলামের অনুসরণকারীরা মুহাম্মদ সঃ কে শেষ নবী বলে মনে করে। । তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রাসূল (পয়গম্বর)। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং তাঁর দ্বারা মুহাম্মদ সঃ এর নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাঁদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তার নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়।
‘খ্রিস্ট ধর্ম (প্রাচীন গ্রিক: Χριστός খ্রিস্তোস) হচ্ছে একেশ্বরবাদী ধর্ম। নাজারাথের যিশুর জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ধর্ম বিকশিত হয়েছে। খ্রিস্টানরা মনে করেন যিশুই মসীহ এবং তাকে যিশু খ্রিস্ট বলে ডাকেন। খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা নতুন টেস্টামেন্ট বা নতুন বাইবেলে গ্রথিত হয়েছে। এই ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান পরিচিত। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র। ইসলাম ধর্মে যিশুকে ঈসা (আঃ) বলা হয়েছে। তবে ইসলামে তিনি একজন নবী।
২০০১ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২.১ বিলিয়ন খ্রিস্ট ধর্মের অনুসরণকারী আছে।[১৩][১৪][১৫][১৬] সে হিসেবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম।[১৭][১৮] ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে পালিত হয়।
প্রথম শতাব্দীতে একটি ইহুদি ফেরকা হিসেবে এই ধর্মের আবির্ভাব। সঙ্গত কারণে ইহুদি ধর্মের অনেক ধর্মীয় পুস্তক ও ইতিহাসকে এই ধর্মে গ্রহণ করা হয়েছে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ বা হিব্রু বাইবেলকে খ্রিস্টানরা পুরাতন বাইবেল বলে থাকে। ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের ন্যায় খ্রিস্ট ধর্মও আব্রাহামীয়।
ইহুদি ধর্ম (হিব্রু:יְהוּדִים ইয়াহুদীম) অত্যন্ত প্রাচীন, একেশ্বরবাদী ধর্ম। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথম পাঁচটি বইকে গণ্য করা হয়: জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস এবং ডিউটেরোনমি। এই পাঁচটি বইকে একত্রে “তোরাহ”ও (Torah) বলা হয়ে থাকে। মুসলমানগণ মোজেসকে মুসা নবী হিসেবে মানেন। এবং মুসা নবীর উপর নাজিলকৃত ধর্মগ্রন্থকে তাওরাত নামে অভিহিত করেন। ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈশ্বর এক, আর তাঁকে জেহোবা (Jehovah, YHWH) নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মতোই ইহুদিগণ পূর্বতন সকল বাণীবাহককে বিশ্বাস করেন, এবং মনে করেন মোজেসই সর্বশেষ বাণীবাহক। ইহুদিগণ যিশুকে ঈশ্বরের বাণীবাহক হিসেবে অস্বীকার করলেও, খ্রিস্টানগণ ইহুদিদের সবগুলো ধর্মগ্রন্থ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)কে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে থাকেন। ইহুদি ধর্ম সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের তথ্যমতে, পৃথিবীতে ইহুদির সংখ্যা ১৪০ লক্ষ যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.২ শতাংশ।[১৯]
মানব ধর্ম
বর্তমান যুগে যারা শুধু বিজ্ঞান ও বির্বতনকে বিশ্বাস করে তারা মানবধর্ম পালন করে।তারা স্বাধীন।তারা আধুনিক বিজ্ঞানকে আর্দশ মনে করে।
মানব ধর্মে বিশ্বাসীগণ নাস্তিক নামেও পরিচিত,কারণ তারা আদিমকালের কোন ধর্মই বিশ্বাস করে না, পালন করে না।৭৭১.৫০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মানবধর্মে বিশ্বাসী পুরো পৃথিবীতে ২০ কোটি প্রায়।মানব ধর্মের উল্লেখ কবি “লালন শার্হ” তার কবিতায় বলেছেন। তিনি চেয়েছেন ধর্ম,জাত,বর্ণের কোন ভেদাভেদ না রেখে সবাই মানবধর্মে মনোযোগ দেই, মানবধর্ম পালনে বিশ্বাসী হই।
দ্রুজ ( আরবী-درزي, দারজি অথবা দুরজি, বহুবচন دروز, দুরুজ; হিব্রু: דרוזים, “দ্রুজিম”) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং সামাজিক সম্প্রদায়।[২০] দ্রুজদের আবাসভূমি সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, এবং জর্ডানে। দ্রুজ ধর্মকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়না। কারণ এই ধর্মের ভিত্তিমূল ইসলাম। দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজদের ধর্ম বিধানে ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহের পাশাপাশি নিওপ্লাতিনিক এবং পিথাগোরীয় মতবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। দ্রুজগণ নিজেদেরকে “আহলে তাওহীদ” (একেশ্ববাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ) অথবা “আল মুয়াহিদুন” বলে পরিচয় দেয়। লেভান্ত বিশেষ করে লেবাননের ইতিহাস গঠনে দ্রুজদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজদের সামাজিক রীতিনীতি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের থেকে ভিন্ন।
ইব্রাহিমীয় বা আব্রাহামীয় ধর্ম সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মান্দাই ধর্ম বা মেন্ডীয়বাদ। মান্দাই ধর্মাবল্বীরা একেশ্বরবাদী হলেও তাদের মধ্যে দ্বৈতনীতি লক্ষ্য করা যায়।আদম,এ্যাবেল,সেথ্,ইনোস,নোহা,সেম্, এরাম এবং জন দ্যা ব্যাপটিষ্ট এর উপর তাদের দৃঢ় বিশ্বাস লক্ষ্যনীয়।মূলত এ ধর্মের অনুশীলন বেশি লক্ষ্য করা যায় ইউফেরিথিস,টাইগ্রিস এবং সাতার আল আরবকে ঘিরে।তারা বিশ্বাস করে এক অদৃশ্য ক্ষমতাশালীকে যার মধ্য থেকে এসেছে সৃষ্টিকর্তা। তারা বিশ্বাস করে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে আদিরূপ হতে।তারা আলোকে পিতা ও অন্ধকারকে মাতা হিসেবে বিশ্বাস করে।আত্মা অবিনশ্বর বলে তাদের বিশ্বাস। মৃত্যুর পর তাকে ফিরে যেতে হবে আপন ঠিকানায়। ভাগ্যের উপর গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব রয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। এ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের নাম “গীজা বা গীজা বারা”। বর্তমানে এ ধর্মের অনুসারী সংখ্যা প্রায় ৬০,০০০ হতে ৭০,০০০।
রাস্তাফারি
রাস্তাফারি হচ্ছে একটি ইব্রাহিমীয় ধর্মমত যা ১৯৩০ সালে জ্যামাইকাতে উৎপত্তি লাভ করে। রাস্তাফারি ধর্মানুসারীদের রাস্তাফারি, রাস্তাস, রাস্তাফারিয়ানস অথবা শুধু রাস নামে অভিহিত করা হয়। রাস্তাফারিরা তাদের চার্চ কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি যেমন মুরুব্বি, বড় সাধু ইত্যাদি নামেও পরিচিত হয়। অনেকে রাস্তাফারি জীবন দর্শনকে রাস্তাফারিয়ানিজম নামে অভিহিত করে তবে অধিকাংশ রাস ইজম ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে।ত্রুটি: কোনও পৃষ্ঠার নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি (সাহায্য)।
হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১১২ কোটি হিন্দুর বাস করেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে। অর্থাৎ বিশ্বের শতকরা ৯৪ শতাংশের বেশি হিন্দু ভারতবর্ষে বসবাস করে।[২৪][২৫] এছাড়া নেপাল (২৩,০০০,০০০), বাংলাদেশ (১৪,০০০,০০০) ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালিতে (৩,৩০০,০০০) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হিন্দুরা বাস করে। গরুকে এরা পবিত্র মনে করে। হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর। হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি নামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল উপনিষদ্, পুরাণ, ও ভারতীয় মহাকাব্যরামায়ণ ও মহাভারত। ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত মহাভারতের কৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে। এটি বিশ্বের সর্বপ্রাচীন ধর্ম। [২৬]
বৌদ্ধ ধর্ম বা ধর্ম (পালি ভাষায়ধম্ম) গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্বের পরিনির্বাণের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বাস করেন চীনে। আক্ষরিক অর্থে “বুদ্ধ” বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নিচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন “বুদ্ধ“। আর যে ব্যক্তি এই বোধি জ্ঞান লাভ বা ধারণ করেন তাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্ব জন্মের সর্বশেষ জন্ম হল বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জন্ম। জাতকে, বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব হিসেবে ৫৪৮ (মতান্তরে ৫৪৯) বার বিভিন্ন কূলে (বংশে) জন্ম নেবার আগে উল্লেখ আছে।[২৭] তিনি তার আগের জন্মগুলোতে প্রচুর ভালো বা পুণ্যের কাজ করেছিলেন বিধায় সর্বশেষ জন্মে বুদ্ধ হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ফলে তিনি এই দুঃখময় পৃথিবীতে আর জন্ম নেবেন না, এটাই ছিলো তার শেষ জন্ম। পরবর্তী বুদ্ধ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে তার শাসন চলবে।
জৈনধর্ম (সংস্কৃত: जैन धर्म) প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত। বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে এই ধর্মমতাবলম্বীদের দেখা যায়। জৈনধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের প্রতি শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ। জৈন দর্শন ও ধর্মানুশীলনের মূল কথা হল দৈব চৈতন্যের আধ্যাত্মিক সোপানে স্বচেষ্টায় আত্মার উন্নতি। যে ব্যক্তি বা আত্মা অন্তরের শত্রুকে জয় করে সর্বোচ্চ অবস্থা প্রাপ্ত হন তাকে জিন (জিতেন্দ্রিয়) আখ্যা দেওয়া হয়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতে জৈনধর্মকে শ্রমণ ধর্ম বা নির্গ্রন্থদের ধর্মও বলা হয়েছে। কথিত আছে, তীর্থঙ্কর নামে চব্বিশ জন মহাজ্ঞানী কৃচ্ছ্বসাধকের একটি ধারা পর্যায়ক্রমে জৈনধর্মকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন।[২৮] এঁদের মধ্যে ত্রাবিংশ তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ (খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী) ও সর্বশেষ তীর্থঙ্কর ছিলেন মহাবীর (খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী)।[২৯][৩০][৩১][৩২][৩৩] আধুনিক বিশ্বে জৈনধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও এই ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। ভারতে জৈন ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় ১০,২০০,০০০।[৩৪] এছাড়া উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের অন্যত্রও অভিবাসী জৈনদের দেখা মেলে।[৩৫]
জৈনরা প্রাচীন শ্রমণ অর্থাৎ, কৃচ্ছ্বসাধনার ধর্মকে আজও বহন করে নিয়ে চলেছেন। ভারতের অপরাপর ধর্মমত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তিদানের একটি প্রাচীন প্রথা জৈনদের মধ্যে আজও বিদ্যমান; এবং ভারতে এই সম্প্রদায়ের সাক্ষরতার হার অত্যন্ত উচ্চ।[৩৬][৩৭] শুধু তাই নয়, জৈন গ্রন্থাগারগুলি দেশের প্রাচীনতম গ্রন্থাগারও বটে।[৩৮]
শিখধর্ম[৩৯] একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম।[৪০] খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে পাঞ্জাব অঞ্চলে এই ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তার উত্তরসূরি দশ জন শিখ গুরুর (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব এঁদের মধ্যে দশম জন বলে বিবেচিত হন) ধর্মোপদেশ। শিখধর্ম বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী।[৪১] শিখ ধর্মমত ও দর্শন গুরমত (অর্থাৎ, গুরুর উপদেশ) নামেও পরিচিত। শিখধর্ম কথাটির উৎস নিহিত রয়েছে শিখ শব্দটির মধ্যে; যেটি সংস্কৃত মূলশব্দ শিষ্য বা শিক্ষা থেকে আগত।[৪২][৪৩]
শিখধর্মের প্রধান বক্তব্য হল ওয়াহেগুরু অর্থাৎ সর্বব্যাপী ঈশ্বরের প্রতীক এক ওঙ্কার-এর প্রতিভূ ওয়াহেগুরু-তে বিশ্বাস। এই ধর্ম ঈশ্বরের নাম ও বাণীর নিয়মবদ্ধ ও ব্যক্তিগত ধ্যানের মাধ্যমে মোক্ষলাভের কথা বলে। শিখধর্মের একটি বিশিষ্টতা হল এই যে, এই ধর্মে ঈশ্বরের অবতারতত্ত্ব স্বীকৃত নয়। বরং শিখেরা মনে করেন ঈশ্বরই এই ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ। শিখেরা দশ জন শিখ গুরুর উপদেশ ও গুরু গ্রন্থ সাহিব নামক পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে চলেন। উক্ত ধর্মগ্রন্থে দশ শিখ গুরুর ছয় জনের বাণী এবং নানান আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। গুরু গোবিন্দ সিংহ এই গ্রন্থটিকে দশম গুরু বা খালসা পন্থের সর্বশেষ গুরু বলে ঘোষণা করে যান। পাঞ্জাবের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিখধর্মের ঐতিহ্য ও শিক্ষা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শিখধর্মের অনুগামীরা শিখ (অর্থাৎ, শিষ্য) নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে শিখেদের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। শিখরা মূলত পাঞ্জাব ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বাস করেন। অধুনা পাকিস্তানেরপাঞ্জাব প্রদেশেও ভারত বিভাগের পূর্বে লক্ষাধিক শিখ বসবাস করতেন।[৪৪]
শাক্তধর্ম (সংস্কৃত: शाक्तं, Śāktaṃ; আক্ষরিক অর্থে শক্তিবাদ) হিন্দুধর্মের একটি শাখাসম্প্রদায়। হিন্দু দিব্য মাতৃকাশক্তি বা দেবী পরম ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর – এই মতবাদের উপর ভিত্তি করেই শাক্তধর্মের উদ্ভব। এই ধর্মমতাবলম্বীদের শাক্ত (সংস্কৃত: शक्त, Śakta) নামে অভিহিত করা হয়। হিন্দুধর্মের প্রধান তিনটি বিভাগের অন্যতম শাক্তধর্ম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অন্য দুটি বিভাগ হল বৈষ্ণবধর্ম ও শৈবধর্ম।
শাক্তধর্মমতে, দেবী হলেন পরব্রহ্ম। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। অন্য সকল দেব ও দেবী তার রূপভেদমাত্র। দর্শন ও ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে শাক্তধর্মের সঙ্গে শৈবধর্মের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। যদিও শাক্তরা কেবলমাত্র ব্রহ্মের শক্তিস্বরূপিণী নারীমূর্তিরই পূজা করে থাকেন। এই ধর্মে ব্রহ্মের পুরুষ রূপটি হল শিব। তবে তার স্থান শক্তির পরে এবং তার পূজা সাধারণত সহায়ক অনুষ্ঠান রূপে পালিত হয়ে থাকে।[৪৫]
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ভারতে শক্তিপূজা প্রচলিত। ২২,০০০ বছরেরও আগে ভারতের প্যালিওলিথিক জনবসতিতে প্রথম দেবীপূজার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে সিন্ধু সভ্যতার যুগে এই সংস্কৃতি আরও উন্নত রূপে দেখা দেয়। বৈদিক যুগে শক্তিবাদ পূর্বমর্যাদা হারালেও পুনরায় ধ্রুপদী সংস্কৃত যুগে তার পুনরুজ্জীবন ও বিস্তার ঘটে। তাই মনে করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই “হিন্দু ঐতিহ্যের ইতিহাস নারী পুনর্জাগরণের ইতিহাস রূপে লক্ষিত হয়”।[৪৬]
ফারাবাহার অথবা ফেরোহার, জরথুস্ত্রদের প্রাথমিক প্রতিকের একটি
জোরোয়াষ্টার (গ্রিক Ζωροάστρης, Zōroastrēs) বা জরথ্রুস্ট্রা (এভেস্টান: Zaraθuštra), অথবা জরথ্রুস্ট (ফার্সি ভাষায়: زرتشت ), ছিলেন একজন প্রাচীন পারস্যীয় ধর্ম প্রচারক এবং জরথ্রুস্ট ধর্ম মতের প্রবর্তক। জরথ্রুস্ট এমন একটি ধর্ম, যা ছিল প্রাচীন ইরানের আকামেনিদ, পার্থিয়ান এবং সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের[৪৭] জাতীয় ধর্ম; যা মূলত বর্তমানে আধুনিক ইরানের জরথ্রুস্ট সম্প্রদায় এবং ভারতের পার্সী সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়।[৪৮]
জরথুস্ত্র ধর্ম প্রাচীন আকামেনিদ সাম্রাজ্যের পূর্ব অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে। দার্শনিক জেরোয়াষ্টার প্রাচীন ইরানি ঈশ্বর তত্ব সরল ভাবে ব্যাখ্যা করা শুরু করেন।[৪৯] তিনি ঈশ্বরের দুটি রূপের কথা বর্ণনা করে।[৫০][৫১] ধর্ম প্রচারক জরথ্রুস্ট সাধারনভাবে স্বীকৃত একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তার সমসাময়িক কাল সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে তেমন কিছুই জানা যায়না। অনেক পন্ডিতের মতানুসারে তিনি আনুমানিক ১২০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়ের একজন মানুষ, যিনি প্রাচীন ধর্মমত প্রবর্তকদের অন্যতম, যদিও অন্য অনেকের মতে তিনি ১৮০০ খ্রীস্ট পুর্বাব্দ হতে ৬ষ্ঠ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ মধ্যবর্তী সময়ের একজন ধর্ম প্রচারক ছিলেন।[৫২]
বাহাই ধর্ম বা বাহাই বিশ্বাস হচ্ছে বাহাউল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একেশ্বরবাদী একটি ধর্ম বা বিশ্বাস। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পারস্যে (বর্তমানে ইরান) এই ধর্মের উৎপত্তি। মূলত মানবজাতির আত্মিক ঐক্য হচ্ছে এই ধর্মের মূল ভিত্তি।[৫৩] বিশ্বে বর্তমানে ২০০-এর বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই ধর্মের আনুমানিক প্রায় ৬০ লক্ষ অনুসারী রয়েছে।[৫৪][৫৫]
বাহাই বিশ্বাস অনুসারে ধর্মীয় ইতিহাস স্বর্গীয় দূতদের ধারাবাহিক আগমণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এইসব দূতদের প্রত্যেকে তাদের সময়কার মানুষদের সামর্থ্য ও সময় অনুসারে একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সকল স্বর্গীয় দূতদের মাঝে আছেন ইব্রাহিম, গৌতম বুদ্ধটেমপ্লেট:তথ্যসুত্র প্রয়োজন, যীশু, মুহাম্মাদ ও অন্যান্যরা। সেই সাথে খুব সাম্প্রতিককালে বাব ও বাহাউল্লাহ। বাহাই ধর্ম মতে এসকল দূতগণ প্রত্যেকেই তাদের পরবর্তী দূত আসার ব্যাপারে, ও তাদেরকে অনুসরণ করতে বলে গেছেন। এবং বাহাউল্লার জীবন ও শিক্ষার মাধ্যমে দূতগণের এই ধারা ও পূববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর অঙ্গীকার সম্পূর্ণ হয়েছে। মানবতা সমষ্টিগত বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে, এবং বৈশ্বিক মাপকাঠিতে সার্বিকভাবে শান্তি, সুবিচার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয়তা।[৫৬]
‘বাহাই’ (উচ্চারণ: bəˈhaɪ)[৫৭] শব্দটি একটি বিশেষণ হিসেবে বাহাই বিশ্বাস বা ধর্মকে নির্দেশ করতে বা বাহাউল্লার অনুসারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি উদ্ভূত হয়েছে আরবি বাহা’ থেকে, যার অর্থ ‘মহিমা’ বা ‘উজ্জলদীপ্তি’।[৫৮] ধর্মটিকে নির্দেশ করতে পূর্বে বাহাইজম বা বাহাইবাদ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ধর্মটির সঠিক নাম বাহাই বিশ্বাস।[৫৯][৬০]
ইয়াজিদি বা এজিদি হচ্ছে একটি কুর্দি নৃ-ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের রীতিনীতির সাথে জরথুস্ত্র[৬১] ধর্মমতের সাদৃশ্য রয়েছে। ইয়াজিদিগণ প্রধানত উত্তর ইরাকের নিনেভেহ প্রদেশে বসবাস করে। আমেরিকা। জর্জিয়া এবং সিরিয়াইয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইয়াজিদিদের সাক্ষাৎ মেলে। ১৯৯০ সালের দিকে ইয়াজিদিদের একটা অংশ ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানীতে অভিবাসিত হয়।[৬২] ইয়াজিদিগণ বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সাতটি পবিত্র জিনিস বা ফেরেশতার মাঝে এটাকে স্থাপন করেছেন। এই সাতজনের প্রধান হচ্ছেন মেলেক তাউস, ময়ুর ফেরেশতা।
মানি ধর্ম (ইংরেজি: Manichaeism, ফার্সি ভাষায় آیین مانی আইনে মানি; চীনা: 摩尼教; pinyin: Móní Jiào) হচ্ছে পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যতম একটি ধর্ম যা সাসানিয়ান শাসনামলে ইরানী ধর্মপ্রচারক মানি (২১৬-২৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) প্রচার করেন। মানি ধর্মে একটি দ্বৈত মহাবিশ্বের শিক্ষা বর্ণিত হয়েছে যেখানে ভালো (আলোকময় বিশ্ব) এবং মন্দ (অন্ধকারময় পৃথিবী) এর মধ্যে সঙ্ঘাতের কথা। এখানে বলা হয়েছে পৃথিবী একসময় অন্ধকারাছন্ন হয়ে যাবে এবং পূণরায় আলোর পথে ফিরে আসবে।
আরামীয়-সিরীয় ভাষাভাষী অঞ্চলে মানি ধর্ম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে টিকে ছিলো। পূর্বে চীন এবং পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত মানি ধর্মের প্রার্থনাগৃহ এবং ধর্মগ্রন্থ ছড়িয়ে পড়ে। পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রাচ্যে মানি ধর্ম দীর্ঘদিন টিকে ছিলো। মানি ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ বিলীন হয়ে গেছে। এখন কিছু অনুবাদ এবং খন্ডিত পুঁথি পাওয়া যায়।
কনফুসীয় ধর্ম (সরলীকৃত চীনা: 儒学; প্রথাগত চীনা: 儒學; ফিনিন: Rúxué) চীনের একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা যা বিখ্যাত চৈনিক সাধু কনফুসিয়াসের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ কনফুসিয়াস হলেন কনফুসীয় ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এটি মূলত নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তাধারাসমূহের সম্মিলনে সৃষ্ট একটি জটিল ব্যবস্থা যা একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকের মতে এটি পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। কারণ এই দেশগুলোতে এখন কনফুসীয় আদর্শের বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে।[৬৩][৬৪] কনফুসিয় মতবাদ একটি নৈতিক বিশ্বাস এএটাকে ধর্ম বলা হবে কিনা এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতভেদ আছে।[৬৫] অনেক শিক্ষাবিদ কনফুসিয় মতবাদকে ধর্ম নয় বরং দর্শন হিসেবে মেনে নিয়েছেন।[৬৬] কনফুসিয় ধর্মের মূলকথা হচ্ছে মানবতাবাদ।[৬৭]
শিন্তো ধর্ম জাপান ভূমিতে প্রচলিত একটি ধর্ম।[৬৮] এটাকে আচার ধর্ম বলা হয়।[৬৯] বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা এবং আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয় যা বর্তমান এবং অতীতের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করেছে।[৭০] জাপানী পুরাণ খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে[৭১] খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে কোজিকি এবং নিহন শকি’র ঐতিহাসিক দলিলে শিন্তো আচারের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
শিন্তো শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দেবতার পথ। শিন্তো শব্দটি শিন্দো শব্দ থেকে এসেছে।[৭২] শিন্ডো শব্দটির মূল খুঁজে পাওয়া যায় চীনা শব্দ শেন্ডো থেকে।[৭৩] শিন্তো শব্দটি দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। শিন অর্থ ইংরেজি স্পিরিট বা আধ্যাত্বিক শক্তি এবং তো অর্থ পথ।[৭৩][৭৪]
শিন্তো জাপানের প্রধান ধর্ম। দেশটির ৮০% মানুষ বিভিন্ন ভাবে শিন্তো রীতিনীতি পালন করে কিন্তু জরীপে খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে শিন্তো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়।[৭৫]
তাওবাদ বা দাওবাদ চীনের একটি প্রাচীন ধর্মমত। প্রাচীন দার্শনিক কনফুসিয়াসের সমসাময়িক লাও জে এই তাও মতবাদ প্রচার করেন। তার মতবাদ কনফুসিয়াসের মতো জীবনবাদী ছিল না। তাকে আধ্যাত্মবাদী বা প্রকৃতিবাদী বলা চলে। চীনা জীবনধারায় এই মতবাদ এখনও বৌদ্ধ ও কনফুসীয়বাদের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আছে। তাও শব্দের অর্থ পথ।
জেন (আক্ষরিকভাবে “বসতিপূর্ণ ধ্যান”; জাপানীজ: 座禅 ; সরলীকৃত চীনা: 坐禅 ; ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ: 坐禪 ; পিনয়িন: zuò chán ; ওয়েড-জাইলস: tso-ch’an , উচ্চারিত [tswô ʈʂʰǎn]) একটি ধ্যানমূলক শৃঙ্খলা যা সাধারণত জেন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের প্রাথমিক অনুশীলন। জাজানের সুনির্দিষ্ট অর্থ এবং পদ্ধতি স্কুল থেকে স্কুলে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণভাবে এটি অস্তিত্বের প্রকৃতির অন্তর্দৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। জাপানি রেঞ্জজী স্কুলে, জাজেন সাধারণত কোয়ানদের অধ্যয়নের সাথে যুক্ত হয়। জাপানের সোটো স্কুল, অন্যদিকে, শুধুমাত্র খুব কমই জহেলে কোইস সংযোজন করে, এমন একটি পদ্ধতি পছন্দ করে যেখানে মনটির কোনও অবজেক্ট নেই, যা শিখানশ নামে পরিচিত।
হোয়া হাও (Hòa Hảo) হল একটি ধর্মীয় আন্দোলন যা হয় একটি সমন্বয়বাদী লোকধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মের একটি সম্প্রদায় হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এটি 1939 সালে Huỳnh Phú Sổ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যাকে এর ভক্তরা একজন সাধু হিসাবে গণ্য করে।
‘ক্যাওদাই বা ক্যাও দাই মতবাদ (ভিয়েত্নামিজ: Đạo Cao Đài 道高臺, “মহা শক্তির পথ”; চীনা: 高台教; ফিনিন: Gāotáijiào) হচ্ছে একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। ১৯২৬ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের তায় নিনহ শহরে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়।[৭৬] এই ধর্মের পুরো নাম হচ্ছে দাই দাও তাম কাই ফো দো(“The Great Faith [for the] Third Universal Redemption”).[৭৬]ক্যাও দাই, আক্ষরিক অর্থে সর্বোচ্চ শাসক অথবা সর্বোচ্চ শক্তি[৭৬] হচ্ছেন উপাস্য দেবতা, যিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যাকে ক্যাও দাই অনুসারীরা উপাসনা করে। [৭৬][৭৭] ক্যাও দাই অনুসারীরা পৃথিবী স্রষ্টাকে সংক্ষেপে দুক ক্যাও দাই বলে যার পুরো নাম ক্যাও দাই তিয়েন অং দাই বো তাত মা হা তাত।[৭৮] পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ক্যাও দাই উপাসনালয়গুলো দেখতে একই রকম। আকৃতি এবং রঙের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।[৭৯]
অন্যান্য প্রাচীন ধর্ম
প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম
প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস মিশরীয় পুরাণে প্রতিফলিত হয়েছে। তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরানিক ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশর গ্রিক শাসকদের পদানত হলেও মিশরের পৌরানিক ধর্ম টিকে থাকে। পরবর্তীতে গ্রিক শাসকদের স্থানে রোমান শাসকগন এসে মিশর অধিকার করে নেন এবং সপ্তম শতক পর্যন্ত রোমানরাই মিশর শাসন করেন, এসময়ও পৌরানিক বিশ্বাস টিকে ছিল তবে গ্রিকো-রোমান ধর্মীয় বিশ্বাসের সংস্পর্ষে এসে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। অবশেষে ৬৪৬ সালে আরব মুসলমানদের হাতে মিশরের শাসনভার চলে গেলে পৌরানিক ধর্ম বিলুপ্তির পথ ধরে।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সাধারণত প্রাচীন সাম্রাজ্য, মধ্য সাম্রাজ্য এবং নতুন সাম্রাজ্য – এই তিনটি কালে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয়। মিশরীয় সভ্যতার তিনটি স্বর্ণযুগকে এই তিনটি কালের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরাণও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়।
প্রাচীন সাম্রাজ্যে মিশরীয় পুরাণের দেব-দেবীগন ছিলেন অনেকটা আঞ্চলিক, অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা চলত। সেই হিসেবে প্রাচীন সাম্রাজ্যের দেবকূলকে পাঁচটি প্রধান দলে ভাগ করা যায়।
হার্মোপোলিসের আটজন দেব-দেবী – নুনেত ও নু, আমুনেত ও আমুন, কুকেত ও কুক, হুহেত ও হুহ
এলিফ্যান্টাইনের খুম-সাতেত-আনুকেত ত্রয়ী
থিবিসের আমুন-মাত-খেনসু ত্রয়ী
মেম্ফিসের প’তাহ-সেকমেত-নেফেরতেম ত্রয়ী
সামারিতান
সামারিতান হচ্ছে বর্তমান ইসরাইলের উত্তর প্রদেশে বসবাসকারী সেমেটিক সম্প্রদায়ের একটি সাম্প্রদায়িক শাখাবিশেষ। এ মতবাদটির ইহুদিবাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিল রয়েছে। এটি বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা আধুনিক মতবাদ।
প্রাচীন গ্রিক ধর্ম
সবচেয়ে প্রাচীন ও শৈল্পিক ধর্ম হিসাবে ইউরোপে গ্রিক মিথ চালু ছিল । এ ধর্মের বিষয়বস্তু বর্তমানে রূপকথার গল্প হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে এর অনুসারী নেই বললেই চলে। গ্রিকদের লক্ষাধিক দেব-দেবী বিদ্যমান । তবে ধর্মটির প্রধান দেবতা হিসাবে জিউসকে ধরা হয়।
অ্যাজটেক ধর্ম একটি বিশ্বস্ত বাস্তবতা, জীবন এবং মৃত্যুর অস্তিত্বের জন্য আস্টেরিক / মেক্সিকোকে সাহায্য করে এমন একটি বিশ্বস্ত বিশ্বাস, রীতিনীতি এবং দেবদেবীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। Aztecs একটি একাধিক-দেবতা মহাবিশ্বের বিশ্বাস, Aztec সমাজের বিভিন্ন দিকের উপর বিভিন্ন রাজত্ব উপর রাজত্ব করেন এবং Aztec নির্দিষ্ট চাহিদা সাড়া এবং বিভিন্ন দেবতাদের সঙ্গে, সঙ্গে। এই গঠন গভীরভাবে ব্যাপক মেসোআমেরিকান ঐতিহ্যের মধ্যে স্থায়ী ছিল, যেখানে মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং প্রকৃতির ধারণার উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ তৃতীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ প্রাগৈতিহাসিক সমাজে ভাগ করা হয়েছিল।
সাধারণভাবে, অ্যাজটেকরা পৃথিবীকে বিভক্ত করে বিরোধিতার একটি ধারাবাহিক বিভাজনের দ্বারা ভারসাম্য বজায় রেখেছিল, যেমন গরম ও ঠান্ডা, শুষ্ক ও ভিজা, দিন ও রাত, আলো এবং অন্ধকারের মত বাইনারি বিরোধী। মানুষের ভূমিকা যথাযথ অনুষ্ঠান এবং বলিদান অনুশীলন করে এই ভারসাম্য বজায় রাখা ছিল।আজটেকরা প্রকৃতি পূজা করতো। তাঁরা ভূমি, বৃষ্টি ও সূর্যকে দেবতা মনে করতো এবং দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে নরবলি দেয়া অপরিহার্য মনে করতো। তাঁরা বিশ্বাস করতো সূর্যকে প্রতিদিন সন্তুষ্ট করতে না পারলে পরের দিন আর সূর্য উঠবে না। সাধারণত বলি হিসেবে যুদ্ধবন্দী ও দাসদের ব্যবহার করা হতো এবং আজটেক যাজকরাই এ কাজ সম্পন্ন করতো।
জরাথুস্ট্রবাদ: বর্তমান দিনকার ইরানি জনগনের স্বদেশী নিজস্ব বিশ্বাস এবং চর্চার পৃষ্টপোষক। বর্তমান সময়ে জরাথুস্ট্রধর্ম একশিলা, সাসানিদ সময়ের সম্ভ্রান্ত ধর্মের ধারাবাহিক রূপ, প্রাচীনকালে এটার কতিপয় ভিন্নতা ছিল যা স্থান, গোত্র এবং ঐতিহাসিক কালের কিছুটা পার্থক্যের কারণে।
জুরবানিজম: হাখমানেশী কালের শেষে, জরাথুস্ট্রবাদ ও জুরবানিধর্ম (জুরবানি জরাথুস্ট্রধর্ম) হিসেবে প্রমাণিত হয়, একটি একত্বদ্বৈতবাদ যা সাসানিদ কালের শেষে অনুসরণ করা হত।
মান্দাইজম: একটি নস্টিক একত্ববাদ যা প্রায় খ্রিস্ট পূর্ব ১ম শতকে মান্দা ডি-হেয়ি – “জীবনের জ্ঞান ” হিসেবে পালিত হত। মান্দানি ভাবাদর্শ মূলত কতিপয় ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং মতবাদের চেয়ে তাদের সাধারণ ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
ম্যানিকাইজম: ৩য় শতকের দ্বৈত নস্টিকধর্ম যা মান্দাইজম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ম্যানিকানরা “মহান পিতা”য় বিশ্বাসী (Aramaic: Abbā dəRabbūṯā, Persian: pīd ī wuzurgīh) এবং তাকে সর্বোচ্চ দেবতা(আলোর) হিসেবে মান্য করে।
কিছু ধর্মবাদীরা ইসলাম ধর্ম এবং স্থানীয় জরাথুস্ট্র ধর্মের প্রথার ভিন্ন চিন্তাধারার সন্নিবেশ করেছেন।[২]
ইসলামি শাসনের প্রথম থেকেই দেখা যায় পারস্য অতীন্দ্রিবাদ এর বিকাশ, যা পারস্য-ইসলামি সূফী একেশ্বরবাদের বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গি সাথে স্বত্বা, জীবন এবং ভালবাসার একটি ঐতিহ্যগত ব্যাখ্যা দেয়। আধ্যাত্মিক সত্যের (ঈশ্বর) উপলব্ধি এই বিশ্বাসের বিকাশ ঘটায়, যা স্বর্গীয় ভালবাসার ভিত্তি হিসেবে অতীন্দ্রিবাদ অনুশীলনের মাধ্যম জাগ্রত হয়।
কুররামাইটস্, ৯ম শতকের একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ৮ম শতাব্দীতে সুনপাডের নীতির উপর ভিত্তি করে প্রচলিত, যারা শিয়া ইসলাম এবং জরাথুস্ট্রবাদের মধ্যে সমন্বয় প্রচেষ্টার প্রচার করে। বাবাক খোররামদিনের অধীনে, আন্দোলনটি ব্যক্তিগত সম্পদ পুনঃবিতরণ এবং ইসলামের বিলুপ্তি খুঁজে।
বিহাফারদিয়ানরা, ধর্মপ্রবক্তা বিহ্ফারের চারপাশে ৮ম শতাব্দীর একটি প্রীতি আন্দোলন। যদিও জরাথুস্ট্রবাদে আন্দোলনটির শিকড় বলে মনে করা হতো, বেহফরিদ এবং তার অনুসারীদের জরাথুস্ট্রবাদ ও ইসলাম উভয়ের ক্ষতির (জরাথুস্ট্রবাদীদের দ্বারা) অভিযোগে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
ইয়ার্সান, ইজান্দানিজমের একটি ধর্মীয় আদেশ, যা ১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ইজান্দানিজম এক ঈশ্বরের সুস্পষ্ট বিশ্বাস হিসেবে একটি প্রাথমিক এবং পাঁচটি গৌণ অবতারের সাথে পবিত্র সাত গঠনের ঘোষণা দেয়।
জরাথুস্ট্রবাদ: বর্তমান দিনকার ইরানি জনগনের স্বদেশী নিজস্ব বিশ্বাস এবং চর্চার পৃষ্টপোষক। বর্তমান সময়ে জরাথুস্ট্রধর্ম একশিলা, সাসানিদ সময়ের সম্ভ্রান্ত ধর্মের ধারাবাহিক রূপ, প্রাচীনকালে এটার কতিপয় ভিন্নতা ছিল যা স্থান, গোত্র এবং ঐতিহাসিক কালের কিছুটা পার্থক্যের কারণে।
জুরবানিজম: হাখমানেশী কালের শেষে, জরাথুস্ট্রবাদ ও জুরবানিধর্ম (জুরবানি জরাথুস্ট্রধর্ম) হিসেবে প্রমাণিত হয়, একটি একত্বদ্বৈতবাদ যা সাসানিদ কালের শেষে অনুসরণ করা হত।
মান্দাইজম: একটি নস্টিক একত্ববাদ যা প্রায় খ্রিস্ট পূর্ব ১ম শতকে মান্দা ডি-হেয়ি – “জীবনের জ্ঞান ” হিসেবে পালিত হত। মান্দানি ভাবাদর্শ মূলত কতিপয় ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং মতবাদের চেয়ে তাদের সাধারণ ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
ম্যানিকাইজম: ৩য় শতকের দ্বৈত নস্টিকধর্ম যা মান্দাইজম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ম্যানিকানরা “মহান পিতা”য় বিশ্বাসী (Aramaic: Abbā dəRabbūṯā, Persian: pīd ī wuzurgīh) এবং তাকে সর্বোচ্চ দেবতা(আলোর) হিসেবে মান্য করে।
কিছু ধর্মবাদীরা ইসলাম ধর্ম এবং স্থানীয় জরাথুস্ট্র ধর্মের প্রথার ভিন্ন চিন্তাধারার সন্নিবেশ করেছেন।[২]
ইসলামি শাসনের প্রথম থেকেই দেখা যায় পারস্য অতীন্দ্রিবাদ এর বিকাশ, যা পারস্য-ইসলামি সূফী একেশ্বরবাদের বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গি সাথে স্বত্বা, জীবন এবং ভালবাসার একটি ঐতিহ্যগত ব্যাখ্যা দেয়। আধ্যাত্মিক সত্যের (ঈশ্বর) উপলব্ধি এই বিশ্বাসের বিকাশ ঘটায়, যা স্বর্গীয় ভালবাসার ভিত্তি হিসেবে অতীন্দ্রিবাদ অনুশীলনের মাধ্যম জাগ্রত হয়।
কুররামাইটস্, ৯ম শতকের একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ৮ম শতাব্দীতে সুনপাডের নীতির উপর ভিত্তি করে প্রচলিত, যারা শিয়া ইসলাম এবং জরাথুস্ট্রবাদের মধ্যে সমন্বয় প্রচেষ্টার প্রচার করে। বাবাক খোররামদিনের অধীনে, আন্দোলনটি ব্যক্তিগত সম্পদ পুনঃবিতরণ এবং ইসলামের বিলুপ্তি খুঁজে।
বিহাফারদিয়ানরা, ধর্মপ্রবক্তা বিহ্ফারের চারপাশে ৮ম শতাব্দীর একটি প্রীতি আন্দোলন। যদিও জরাথুস্ট্রবাদে আন্দোলনটির শিকড় বলে মনে করা হতো, বেহফরিদ এবং তার অনুসারীদের জরাথুস্ট্রবাদ ও ইসলাম উভয়ের ক্ষতির (জরাথুস্ট্রবাদীদের দ্বারা) অভিযোগে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
ইয়ার্সান, ইজান্দানিজমের একটি ধর্মীয় আদেশ, যা ১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ইজান্দানিজম এক ঈশ্বরের সুস্পষ্ট বিশ্বাস হিসেবে একটি প্রাথমিক এবং পাঁচটি গৌণ অবতারের সাথে পবিত্র সাত গঠনের ঘোষণা দেয়।
নবুয়ত (ইংরেজি: Prophecy, prophethood) হলো একটি প্রক্রিয়া যাতে এক বা একাধিক বার্তা একজন নবির কাছে প্রেরণ করে[১] এরপর অন্যান্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এ ধরনের বার্তাতে সাধারণত স্বর্গীয় অনুপ্রেরণা, নির্দেশনা, অথবা আসন্ন ঘটনা সম্পর্কে (স্বর্গীয় জ্ঞানের তুলনা করে) বাণী অবতীর্ণ হয়। সমস্ত ইতিহাস জুড়ে, অতীন্দ্রিয় যোগাযোগ বা অদৃশ্য দর্শন নবুয়াতের একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। [২] নবুয়তের দায়িত্বকে রিসালাত আর যারা এ দায়িত্ব পালন করে তাদের বলে নবি অথবা রাসুল।
নবুয়ত ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নবী ঐশীবাণী-সংবলিত ধর্মগ্রন্থ প্রাপ্ত হলে নবী একজন রাসূলের বা বার্তাবাহকের পদবি লাভ করেন যাকে আরবীতে রিসালাত বা বার্তাবাহকত্ব বলা হয়। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে বিভিন্ন যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা নবি ও রাসুল পাঠিয়েছেন।[৩]
কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[কুরআন৪:১৬৫]
রাসুলদেরকে আল্লাহ তার বাণী প্রেরণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (সূরা) অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।”[কুরআন৫৭:৯]
ইসলাম অনুসারে সর্বশেষ নবী হলেন মুহাম্মাদ এবং তিনি মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়া অল্পকাল পূর্বে প্রেরিত হয়েছেন।
অন্যান্য ধর্মে
prophet
ইসলাম ধর্ম
prophet
নবুয়ত ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নবী ঐশীবাণী-সংবলিত ধর্মগ্রন্থ প্রাপ্ত হলে নবী একজন রাসূলের বা বার্তাবাহকের পদবি লাভ করেন যাকে আরবীতে রিসালাত বা বার্তাবাহকত্ব বলা হয়। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে বিভিন্ন যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা নবি ও রাসুল পাঠিয়েছেন।[৩]
কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[কুরআন৪:১৬৫]
রাসুলদেরকে আল্লাহ তার বাণী প্রেরণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (সূরা) অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।”[কুরআন৫৭:৯]
ইসলাম অনুসারে সর্বশেষ নবী হলেন মুহাম্মাদ এবং তিনি মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়া অল্পকাল পূর্বে প্রেরিত হয়েছেন।
নবুয়ত ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নবী ঐশীবাণী-সংবলিত ধর্মগ্রন্থ প্রাপ্ত হলে নবী একজন রাসূলের বা বার্তাবাহকের পদবি লাভ করেন যাকে আরবীতে রিসালাত বা বার্তাবাহকত্ব বলা হয়। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে বিভিন্ন যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা নবি ও রাসুল পাঠিয়েছেন।[৩]
কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[কুরআন৪:১৬৫]
রাসুলদেরকে আল্লাহ তার বাণী প্রেরণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (সূরা) অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।”[কুরআন৫৭:৯]
ইসলাম অনুসারে সর্বশেষ নবী হলেন মুহাম্মাদ এবং তিনি মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়া অল্পকাল পূর্বে প্রেরিত হয়েছেন।
নবুয়ত ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নবী ঐশীবাণী-সংবলিত ধর্মগ্রন্থ প্রাপ্ত হলে নবী একজন রাসূলের বা বার্তাবাহকের পদবি লাভ করেন যাকে আরবীতে রিসালাত বা বার্তাবাহকত্ব বলা হয়। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে বিভিন্ন যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা নবি ও রাসুল পাঠিয়েছেন।[৩]
কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[কুরআন৪:১৬৫]
রাসুলদেরকে আল্লাহ তার বাণী প্রেরণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (সূরা) অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।”[কুরআন৫৭:৯]
ইসলাম অনুসারে সর্বশেষ নবী হলেন মুহাম্মাদ এবং তিনি মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়া অল্পকাল পূর্বে প্রেরিত হয়েছেন।
নবুয়ত ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং নবী ঐশীবাণী-সংবলিত ধর্মগ্রন্থ প্রাপ্ত হলে নবী একজন রাসূলের বা বার্তাবাহকের পদবি লাভ করেন যাকে আরবীতে রিসালাত বা বার্তাবাহকত্ব বলা হয়। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে বিভিন্ন যুগে প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা নবি ও রাসুল পাঠিয়েছেন।[৩]
কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[কুরআন৪:১৬৫]
রাসুলদেরকে আল্লাহ তার বাণী প্রেরণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (সূরা) অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।”[কুরআন৫৭:৯]
ইসলাম অনুসারে সর্বশেষ নবী হলেন মুহাম্মাদ এবং তিনি মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়া অল্পকাল পূর্বে প্রেরিত হয়েছেন।
প্রচলিত ইহুদি বোঝাপড়া মোতাবেক তোরাহ হল তানাখ নামে পরিচিত বৃহত্তর পাঠের অংশ। তানাখ ধর্মনিরপেক্ষ পণ্ডিতদের কাছে “হিব্রু বাইবেল” এবং খ্রীষ্টানদের কাছে “পুরাতন নিয়ম” নামে পরিচিত। তোরাহের সম্পূরক মৌখিক ঐতিহ্যকে মিদ্রাশ ও তালমুদের মতো পরবর্তী গ্রন্থ দ্বারা উপস্থাপন করা হয়। ইব্রীয় শব্দ তোরাহের অর্থ হতে পারে “শিক্ষা”, “আইন” বা “নির্দেশ”,[১৭] যদিও “তোরাহ” একটি সাধারণ শব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে যা মোশির মূল পাঁচটি বইয়ের সম্প্রসারণ বা বিস্তার করে এমন যেকোনো ইহুদি পাঠকে বোঝায়। ইহুদি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের মর্মস্থলের প্রতিনিধিত্বকারী তোরাহ হল একটি পরিভাষা ও শিক্ষাবলির একটি সমুচ্চয় যা অন্তত সত্তরটি এবং সম্ভাব্য অসীম দিক ও ব্যাখ্যা সমেত স্পষ্টত স্ব-অবস্থানে রয়েছে।[১৮] ইহুদিধর্মের গ্রন্থ, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ খ্রীষ্টধর্ম ও ইসলাম-সহ পরবর্তী অব্রাহামীয় ধর্মগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে।[১৯][২০]হেলেনীয়বাদের মতো ইব্রীয়বাদওপ্রারম্ভিক খ্রীষ্টধর্মের একটি মূল পটভৌমিক উপাদান হিসাবে এর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[২১]
Judaism
ইহুদিধর্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আন্দোলন রয়েছে যাদের বেশিরভাগই রব্বিনীয় ইহুদিধর্ম থেকে উদ্ভূত হয়েছে,[২২][২৩] যা মনে করে যে ঈশ্বর সীনয় পর্বতেমোশির কাছে তার আইন ও আদেশগুলো লিখিত এবং মৌখিক তোরাহ উভয় আকারে প্রকাশ করেছিলেন।[২৪] ঐতিহাসিকভাবে এই দাবির সমস্ত বা অংশকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যেমন: দ্বিতীয় মন্দির আমলে সদ্দূকী ও হেলেনীয় ইহুদিধর্ম;[২২][২৫] প্রারম্ভিক ও বিলম্বিত মধ্যযুগে করাইট ইহুদি; এবং আধুনিক অনর্থোডক্স সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশ।[২৬] ইহুদিধর্মের কিছু আধুনিক শাখা, যেমন: মানবতাবাদী ইহুদিধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষ বা অনাস্তিক্যবাদী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।[২৭][২৮] বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইহুদিধর্মীয় আন্দোলন হল অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম (হারেদি ইহুদিধর্ম ও আধুনিক অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম), রক্ষণশীল ইহুদিধর্ম এবং সংস্কার ইহুদিধর্ম। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পার্থক্যের প্রধান উৎস হল হালাখা (ইহুদি আইন), রব্বিনীয় ঐতিহ্যের কর্তৃত্ব ও ইস্রায়েল রাষ্ট্রের তাৎপর্য।[৩][২৯][৩০] অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম মনে করে যে তোরাহ ও হালাখা উৎপত্তিগতভাবে ঐশ্বরিক, চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় এবং তাদের কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। রক্ষণশীল ও সংস্কার ইহুদিধর্ম আরও উদার। রক্ষণশীল ইহুদিধর্ম সাধারণত সংস্কার ইহুদিধর্মের চেয়ে ইহুদি ধর্মের বাধ্যবাধকতাগুলোর আরও ঐতিহ্যবাদী ব্যাখ্যাকে প্রচার করে। একটি গতানুগতিক সংস্কার অবস্থান হল যে হালখাকে সাধারণ নির্দেশিকাগুলোর একটি সমুচ্চয় হিসাবে দেখা উচিত নয় বরং বিধিনিষেধ ও বাধ্যবাধকতার একটি সমুচ্চয় রূপে দেখা উচিত যা পালন করা সকল ইহুদির জন্য বাধ্যতামূলক।[৩১] ঐতিহাসিকভাবে বিশেষ আদালত হালখা বলবৎ করত; আজও এই আদালতগুলো বিদ্যমান, কিন্তু ইহুদিধর্মের অনুশীলন বেশিরভাগই স্বেচ্ছাধীন।[৩২] ধর্মতাত্ত্বিক ও আইনি বিষয়ে কর্তৃত্ব কোনো একক ব্যক্তি বা সংস্থার উপর ন্যস্ত নয়, বরং পবিত্র গ্রন্থাবলি এবং সেগুলোর ব্যাখ্যাকারী রব্বি ও পণ্ডিতদের উপর ন্যস্ত।
জন্মগত ইহুদি ও ধর্মান্তরিত ইহুদিসহ ইহুদিরা একটি নৃধর্মীয় গোষ্ঠী।[৩৩] ২০১৯ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বে ইহুদি জনসংখ্যা ১৪.৭ মিলিয়ন বা মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার ০.২৫%।[৩৪][৩৫] ইহুদিদের প্রায় ৪৬.৯% ইসরায়েলে এবং ৩৮.৮% যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করে, বাকিদের অধিকাংশ বসবাস করে ইউরোপে এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বসবাস লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া জুড়ে।[৩৬] পৃথিবীব্যাপী ১৪.৫ থেকে ১৭.৪ মিলিয়ন অনুসারী নিয়ে[৩৭] ইহুদিধর্ম বিশ্বের দশম বৃহত্তম ধর্ম।
মৌলিকভাবে হিব্রু বাইবেল বা তানাখ হল ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের সম্পর্কের একটি বিবরণ তাদের প্রাচীনতম ইতিহাস থেকে দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণ (আনু. ৫৩৫ খ্রীষ্টপূর্বাদ) পর্যন্ত। অব্রাহামকে প্রথম ইব্রীয় এবং ইহুদি জাতির পিতা হিসেবে সমাদৃত করা হয়। এক ঈশ্বরে তার বিশ্বাসের পুরষ্কার স্বরূপ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে তার দ্বিতীয় পুত্র ইস্হাকইস্রায়েল দেশের (তখন কনান নামে পরিচিত) উত্তরাধিকারী হবে। পরবর্তীতে ইস্হাকের পুত্র যাকোবের বংশধরদের মিসরে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয় এবং ঈশ্বর মোশিকে মিসর থেকে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দেন। সীনয় পর্বতে তারা মোশির পাঁচটি পুস্তক তথা তোরাহ লাভ করে। এই বইগুলো নবীঈম ও কতূবীমের সঙ্গে একত্রে তানাখ নামে পরিচিত; অন্যদিকে মৌখিক তোরাহ মিশনা ও তালমুদকে নির্দেশ করে। অবশেষে ঈশ্বর তাদের ইস্রায়েলের দেশে নিয়ে যান যেখানে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিলো শহরে ঈশ্বরীয় তাম্বু স্থাপন করা হয় শত্রুদের আক্রমণের বিরুদ্ধে জাতিকে সমাবিষ্ট করার জন্য। সময়ের সাথেসাথে ইহুদি জাতির আধ্যাত্মিক স্তর এমনভাবে হ্রাস পায় যে ঈশ্বর পলেষ্টীয়দের তাম্বুটি দখল করার অনুমতি দেন। ইস্রায়েলীয়রা তখন নবী শমূয়েলকে বলে যে তাদের একজন স্থায়ী রাজার দ্বারা শাসিত হওয়া দরকার এবং শমূয়েল শৌলকে তাদের রাজা হিসাবে নিযুক্ত করেন। যখন লোকেরা শৌলকে শমূয়েলের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়, তখন ঈশ্বর শমূয়েলকে বলেন তার জায়গায় দায়ূদকে নিয়োগ দিতে।
রাজা দায়ূদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি নবী নাথনকে বলেন যে তিনি একটি স্থায়ী মন্দির তৈরি করতে ইচ্ছুক এবং তার কর্মের পুরষ্কার হিসাবে ঈশ্বর দায়ূদকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তার পুত্র শলোমনকেপ্রথম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেবেন এবং তার সন্তানেরা কখনও সিংহাসনচ্যুত হবে না।
রব্বিনীয় ঐতিহ্য মোতাবেক আইনের বিশদ বিবরণ ও ব্যাখ্যা, যাকে মৌখিক তোরাহ বা মৌখিক আইন বলা হয়, মূলত একটি অলিখিত ঐতিহ্য ছিল যার ভিত্তি ছিল ঈশ্বর সীনয় পর্বতে মোশিকে যা বলেছিলেন। যাই হোক, যেহেতু ইহুদিদের ওপর অত্যাচার বৃদ্ধি পায় এবং বিশদ বিবরণগুলো ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে, তাই এই মৌখিক আইনগুলো রব্বি যিহূদা হানাসি (রাজকুমার যিহূদা) মিশনাতে লিপিবদ্ধ করেন, যা প্রায় ২০০ খ্রীষ্টাব্দে সংশোধিত হয়।
তালমুদ ছিল মিশনা ও গমারা উভয়েরই সংকলন, পরবর্তী তিন শতাব্দীতে রব্বিনীয় ভাষ্যগুলি সংশোধন করা হয়েছিল। গমারার উৎপত্তি ইহুদি বৃত্তির দুটি প্রধান কেন্দ্র, ফিলিস্তিন ও বাবিল।[৩৮] তদনুসারে, বিশ্লেষণের দুটি সংস্থা তৈরি হয়েছিল এবং তালমুদের দুটি রচনা তৈরি হয়েছিল। পুরনো সংকলনটিকে যিরূশালেমীয় তালমুদ বলা হয়। এটি ফিলিস্তিনে ৪র্থ শতাব্দীতে কোনো এককালে সংকলিত হয়েছিল।[৩৮]বাবিলীয় তালমুদ পণ্ডিত ১ম রব্বিনা, ২য় রব্বিনা ও রব আশি কর্তৃক ৫০০ খ্রীষ্টাব্দে অধ্যয়নগৃহসমূহে আলোচনার মাধ্যমে সংকলিত হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে এর সম্পাদনা অব্যাহত ছিল।
সমালোচনামূলক পণ্ডিতদের মতে তোরাহতে অসঙ্গতিপূর্ণ পাঠ্যগুলিকে একত্রে এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে যা ভিন্ন ভিন্ন বিবরণের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে।[৩৯][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন][৪০][৪১] এদের অনেকে, যেমন অধ্যাপক মার্টিন রোজ ও জন ব্রাইট, অভিমত দেন যে প্রথম মন্দিরের আমলে ইস্রায়েলীয়রা বিশ্বাস করত যে প্রতিটি জাতির নিজস্ব ঈশ্বর আছে, কিন্তু তাদের ঈশ্বর অন্যান্য ঈশ্বরদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।[৪২][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন][৪৩][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] কারও কারও মতে কট্টর একেশ্বরবাদ বাবিলীয় নির্বাসনের সময় তৈরি হয়েছে, সম্ভবত জরথুস্ত্রীয় দ্বৈতবাদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।[৪৪] এই দৃষ্টিকোণ থেকে শুধুমাত্র হেলেনীয় যুগেই বেশিরভাগ ইহুদিরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে তাদের ঈশ্বরই একমাত্র ঈশ্বর এবং ইহুদিধর্মের সঙ্গে অভিন্ন ও স্পষ্টভাবে আবদ্ধ একটি ইহুদি জাতির ধারণা গড়ে উঠেছিল।[৪৫] জন ডে যুক্তি দেন যে, বাইবেলের ইয়াহওয়েহ, এল, আশেরা ও বালদেবের উৎপত্তি পূর্ববর্তী কনানীয় ধর্মে নিহিত থাকতে পারে, যা গ্রীক দেবমণ্ডলীর মতো দেবতাদের একটি মণ্ডলীর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল।[৪৬]
সংজ্ঞায়ক বৈশিষ্ট্য ও বিশ্বাসমালা
মূলনীতি
বিশ্বাসের ১৩টি মূলনীতি:
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা ও শাসক; তিনি একাই মহাবিশ্বের সবকিছু তৈরি করেছিলেন, করেন ও করবেন।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—এক; এবং তার একত্বের মতো কোনোরূপ একত্ব নেই; এবং শুধু তিনিই আমাদের ঈশ্বর, যিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন৷
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—নিরাকার; এবং তিনি সমস্ত বস্তুগত বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত; এবং তার সঙ্গে কোনোকিছুর তুলনা হতে পারে না।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—প্রথম ও শেষ।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—একাই উপাসনার যোগ্য, এবং অন্য কোনো সত্তা আমাদের উপাসনার যোগ্য নয়।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের রব্বিমোশির (মুসা)—তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক—নবুয়ত সত্য ছিল; এবং তিনি ছিলেন তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নবীদের মধ্যে প্রধান।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সমগ্র তোরাহ যা এখন আমাদের কাছে আছে তা অবিকৃত ও একই রয়েছে যেভাবে আমাদের রব্বি মোশির—তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক—প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই তোরাহের কোনো পরিবর্তন হবে না, এবং সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—অন্য কোনো তোরাহ [বা নিয়ম] প্রদান করবেন না।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—মানুষের সকল কাজ ও চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অবগত, যেমন বলা হয়েছে: “তিনিই দান করেন তাদের চিন্তাশক্তি, লক্ষ্য করেন তাদের সকল কার্যকলাপ (গীতসংহিতা ৩৩:১৫)।”
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা—ধন্য তার নাম—যারা তার আদেশ পালন করে তাদের পুরস্কৃত করেন এবং যারা আদেশ লঙ্ঘন করে তাদের শাস্তি দেন।
আমি মশীহের আগমনে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; এবং যদিও তার আসতে দেরি হতে পারে, আমি প্রতিদিন তার আগমনের প্রতীক্ষা করি।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এক সময় মৃতদের পুনরুত্থান ঘটবে যখন সেই সময়কাল সৃষ্টিকর্তাকে—ধন্য তার নাম—খুশি করবে, এবং তার স্মরণ চিরকালের জন্য উন্নীত হবে।
ইব্রাহিমীয় ধর্ম’বা আব্রাহামীয় ধর্ম (ইংরেজি: Abrahamic Religion), যাকে সেমেটিক ধর্ম বা সেমিটিক ধর্মও বলা হয়, এটি দ্বারা মধ্যপ্রাচ্য এলাকার একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়, যাদের মধ্যে আব্রাহাম বা ইব্রাহিমের সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় উৎপত্তি[১] অথবা ধর্মীয় ইতিহাসগত ধারাবাহিকতা বিদ্যমান।[২][৩][৪]ভারত, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশের উপজাতীয় অঞ্চল বাদ দিয়ে সারা বিশ্বে এই মতবাদের আধিপত্য।[৫] এই বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত ধর্মগুলো হলো ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বাহাই ধর্ম।
তবে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্রি-তত্ব বাদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে।
ইহুদী ধর্মানুসারীরা নিজেদেরকে আব্রাহামের (ইব্রাহিমের) পৌত্র যাকোব (ইয়াকুব)-এর উত্তরপুরুষ বলে মনে করেন। এই ধর্ম কঠোরভাবে একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তাদের মূল ধর্মীয় বিধান বা হালাখা অনুসারে, এই ধর্মের অন্তর্গত সকল শাখার মূলগত ধর্মগ্রন্থ একটিই- তোরাহ বা তানাখ বা তাওরাত বা হিব্রু বাইবেল। ইহুদীদের ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন ধর্মসংশ্লিষ্ট পণ্ডিত ব্যক্তি ইহুদী ধর্মের মূল মত নির্দিষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রস্তাব করেন, যাদের সবগুলোই বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যায়। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা বলে Maimonides প্রদত্ত “বিশ্বাসের তেরোটি নীতি” স্বীকৃত, যা দ্বাদশ শতকে প্রদত্ত হয়। অর্থোডক্স ইহুদী এবং রক্ষণশীল ইহুদী মতে, মোশি (মুসা) সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী সত্য; তিনি পূর্বতন বা পরবর্তী সকল নবী তথা প্রেরিতপুরুষের নেতৃত্বস্থানীয়।
খ্রিস্টধর্ম সূচিত হয় ইহুদী ধর্মের একটি শাখা হিসাবে। এর উৎপত্তি ভূমধ্যসাগরীয় উপত্যকায় (বর্তমান ফিলিস্তিন ও ইসরাইল), খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে। পরবর্তীতে এটি পৃথক বিশ্বাস এবং ধর্মাচরণযুক্ত আলাদা ধর্ম হিসাবে বিস্তৃত হয়। খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম নবী যিশু (ঈসা(আ:))- প্রায় সকল মতেই তাকে ঐশ্বরিক বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদ মতানুযায়ী যিশু ঐশ্বরিক তিন চরিত্রের একজন।প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ভাববাদী বৈ কিছু নন।একজন ভাববাদী বা নবী হিসেবে যে মুজিযা বা প্রমান দরকার তা তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখিয়েছেন। খ্রিস্টীয় ইঞ্জিল শরীফ খ্রিস্টধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত; তবে এক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত কিছু মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যেমনঃ- রোমান ক্যাথলিক মত এবং পূর্বস্থিত অর্থোডক্স মত।
ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ করা। যিনি নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দেন এবং নিজের ইচ্ছায় জীবন পরিচালিত না করে আল্লাহর দেয়া বিধি-নিষেধ মেনে চলেন তিনিই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আর ইসলামের অনুসারীদেরকে আরবীতে বলা হয় মুসলিম।
ইসলাম ধর্ম মতে হযরত আদম (আঃ)]] হতেই ইসলাম ধর্মের শুরু। হযরত আদম (এডাম) ইসলামের প্রথম নবী । আল্লাহ মানবজাতিকে পথপ্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল (বার্তাবাহক) প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামী ইতিহাসবেত্তাদের মতানুযায়ী এসব বার্তাবাহকের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। রাসূলের সংখ্যা ৩১৩ জন ।
এরই ধারাবাহিকতায় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেয়া এই ধর্মের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা:)।
ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস হলো: আল্লাহ’র কোনো অংশীদার নেই এবং মুহাম্মদ (সা:) হলেন আল্লাহর বান্দা ও একজন রাসূল। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হলো কুরআন, । কুরআনের ব্যাখ্যায় দ্বারস্থ হতে হয় সহীহ বা যাচাইকৃত হাদিস সংকলনসমূহের উপর।
এই ধর্মের উল্লেখযোগ্য দিক হলো পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের সমস্ত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন ।ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা:)। মুসলিমরা দাবি করে ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মুসলমান বলা হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সাধারণত দুইটি। পরবর্তীতে ইসলাম শিয়া এবং সুন্নি দুটি মতে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি ঈদ-ঊল-ফিতর ও ঈদ-ঊল-আজহা । ইসলাম ধর্মকে সার্বজনীন ও চিরন্তন সত্য ধর্ম বলা হয় ।
ইব্রাহিমীয় ধর্ম’বা আব্রাহামীয় ধর্ম (ইংরেজি: Abrahamic Religion), যাকে সেমেটিক ধর্ম বা সেমিটিক ধর্মও বলা হয়, এটি দ্বারা মধ্যপ্রাচ্য এলাকার একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়, যাদের মধ্যে আব্রাহাম বা ইব্রাহিমের সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় উৎপত্তি[১] অথবা ধর্মীয় ইতিহাসগত ধারাবাহিকতা বিদ্যমান।[২][৩][৪]ভারত, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশের উপজাতীয় অঞ্চল বাদ দিয়ে সারা বিশ্বে এই মতবাদের আধিপত্য।[৫] এই বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত ধর্মগুলো হলো ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং বাহাই ধর্ম।
ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ (সংস্কৃত: धर्मो रक्षति रक्षितः; IAST: dharmo rakṣati rakṣitaḥ) একটি জনপ্রিয় সংস্কৃত বাক্যাংশ[১][২] এবং মনুসংহিতা শ্লোক ৮.১৫ ও মহাভারতে উল্লিখিত।[৩][৪][৫] এটির অর্থ হলো “ধর্ম তাদের রক্ষা করে যারা এটি রক্ষা করে।”[৬] ইংরেজিতে ধর্মের নিকটতম প্রতিশব্দ হল ধার্মিকতা (righteousness) এবং নীতিশাস্ত্র (ethics)।[৭]
বাক্যটি একটি সম্পূর্ণ মনুসংহিতা শ্লোকের একটি অংশ যা হলো:
dharma eva hato hanti dharmo rakṣati rakṣitaḥ tasmād dharmo na hantavyo mā no dharmo hato’vadhīt
— Manusmriti 8.15
धर्म एव हतो हन्ति धर्मो रक्षति रक्षितः तस्माद्धर्मो न हन्तव्यो मा नो धर्मो हतोऽवधीत्
মনুসংহিতা প্রথম অনুবাদ করেন স্যার উইলিয়াম জোন্স ১৭৭৬ সালে অন্যান্য সংস্কৃত ধর্মীয় বই সহ ব্রিটিশ ভারতে হিন্দুদের জন্য আইনী বিধান করার জন্য।[৮]
বিবাহ উৎসব বা বিয়ের অনুষ্ঠান (ইংরেজি: Wedding) হল এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে দুজন মানুষ বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংস্কৃতি, গোত্র, ধর্ম, দেশ এবং সামাজিক শ্রেণিভেদে বিবাহপ্রথা ও রীতিনীতিতে ব্যপক বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ বিবাহ অনুষ্ঠানেই দম্পতির বৈবাহিক স্বীকারোক্তি গ্রহণ, উপহার প্রদান (আংটি, প্রতীকী বস্তু, ফুল অর্থ), এবং সংশ্লিষ্ট স্বীকৃত ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে প্রকাশ্যে বৈবাহিক ঘোষণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে প্রায়শই বিশেষ ধরনের পোশাক পড়া হয়, এবং প্রায়সময়ই েই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় বৌভাত নামক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি উক্ত অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণত গানবাজনা ও কবিতাপাঠ হয় এবং দম্পতির ভবিষ্যৎ কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনাকরা হয় অথবা ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি বা সাহিত্য থেকে কিছু অংশ পাঠ করা হয়।