এয়ার গান এক প্রকার রাইফেল, পিস্তল অথবা শটগান যা ঘনীভূত বাতাস বা অন্য কোনো গ্যাসের দ্বারা ক্ষেপনসাধ্য বস্তূ প্রক্ষেপ করতে সক্ষম। এয়ার গান মূলত শিকার, বিনোদনমূলক শুটিং এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ( যেমন অলিম্পিক গেমস্ ) ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। এয়ার গান থেকে সাধারনত ক্ষেপনসাধ্য ধাতব বস্তূ প্রক্ষেপ করা হয় যা পেলেট নামে পরিচিত। কিছু ক্ষেত্রে এয়ার গান থেকে সিসের গুলি বা ছররা প্রক্ষেপ করা হয়। যে সব এয়ার গানে ক্ষেপনসাধ্য বস্তু হিসাবে প্লাস্টিকের গুলি ব্যবহার করা হয় তাদের এয়ার সফ্ট্ গান বলা হয়। এয়ার গান তুলনায় আগ্নেয়াস্ত্র অপেক্ষা কম শক্তিশালী হলেও মারনাস্ত্রের কাজ করতে পারে।
প্রকারভেদ
এয়ার গান মুলত তিন ধরনের হতে পারে, spring-piston, pneumatic, আর CO2. spring-piston ধরনের এয়ার গান সবচাইতে সরল প্রকৃতির আর দামে কম| এতে 0.177 গুলির স্পীড 1200 ফুট প্রতি সেকেন্ড অবধি হতে পারে| এতে সংকূচিত স্প্রীং এর শক্তি কে কাজে লাগানো হয় একটি পিষ্টন এর ওপর| pneumatic এয়ার গানে এয়ার ট্যাঙ্ক লাগানো থাকে, যাতে খুব উচ্চ চাপে বাতাস ভরে রাখা যায়| CO2 এয়ার গানে এয়ার ট্যাঙ্কের বদলে CO2 ট্যাঙ্ক থাকে| এই তিন রকমের ভেতর pneumatic, আর CO2 গানে খুব সঠিক নিশানা লাগানো যায় বলে Olympic আর ISSF ( International Shooting Sport Federation) ইভেন্ট এ এগুলো ব্যবহার করা হয়| তবে pneumatic এর দাম অনেক বেশি|
Walther LGR অলিম্পিকে ব্যবহৃত এয়ার রাইফেল
এয়ার গান সংক্রান্ত আইন
পৃথিবীর এক একটি দেশে এয়ার গানের লাইসেন্স এর এক এক রকম আইন আছে| জাপানে যে কোনো এয়ার গানের জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়| আবার বৃটেন, ভারত, জার্মানি, ইটালি এবং আরো অনেক দেশে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার muzzle energy সম্পন্ন বন্দুকের জন্য লাইসেন্স লাগে না| অন্যদিকে আমেরিকাতে এয়ার গান মাত্রই লাইসেন্স বিহীন বন্দুক| তা যদি এয়ার গান প্রযুক্তিতে তৈরি 0.50 ক্যালিবার হেভি মেশিনগান হয় তা কিনতেও লাইসেন্স লাগবে না| বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুসারে এয়ারগান নিষিদ্ধ।[১]
ক্যালিবার
এয়ার গানের পেলেট নানা ব্যাসের হয় তবে ৪.৫ মিমি (.১৭৭) এবং ৫.৫ মিমি (.২২) সর্বাধিক জনপ্রিয় | এই ৪.৫ মিমি (.১৭৭) ক্যালিবার হল সবচাইতে accurate যা Olympic আর ISSF ইভেন্ট এ ব্যবহার করা হয়, এছাড়াও .20″ (5.0 mm), .25″ (6.35 mm), .45″ (11.25 mm), .50″ (12.5 mm), .58″ (14.5 mm) ক্যালিবারের গুলি আছে|
ব্যবহার
শিকার, বিনোদনমূলক শুটিং এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ছাড়া যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে এর ব্যবহার সীমিত| গুলির স্পীড আগ্নেয়াস্ত্র অপেক্ষা কম হওয়া এর প্রধান কারণ| যেখানে AK-47 এর গুলির স্পীড ২,৩৪৬ ফুট প্রতি সেকেন্ড সেখানে এয়ার গানে গুলির স্পীড ১২০০ ফুট প্রতি সেকেন্ড। তবে 17th century তে এয়ার গান যুদ্ধে ব্যবহার করা হত| Girandoni Air Rifle হল একটি যুদ্ধে ব্যবহার করা এয়ার গান। অনেকেই বিয়ে বাড়িতে বংশগত ঐতিহ্যে হিসাবে এয়ার গানের সাহায্য গুলি ফুটিয়ে বিনোদন দিয়ে থাকেন।
নিরাপত্তা এবং অপব্যবহার
যেহেতু ঐতিহাসিক এয়ার গানসমূহ যুদ্ধবিগ্রহের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাই আধুনিক এয়ার গানসমূহ প্রাণঘাতী হতে পারে।[২] চিকিৎসা সাহিত্যে আধুনিক এয়ার গানকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩][৪][৫
আগ্নেয়াস্ত্র এক প্রকার হাতিয়ার যা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের দ্বারা এক অথবা একাধিক ক্ষেপণসাধ্য বস্তূ অতি দ্রুত প্রক্ষেপ করতে সক্ষম।[১] বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে৷
স্বীকারোক্তি (Confession) হল যে কোনো সময় দেওয়া এমন একধরনের স্বীকৃতি (Admission) বা বক্তব্য যার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের অপরাধ কবুল করে। ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে (Indian Evidence Act – 1872) স্বীকারোক্তির সংজ্ঞা না দেওয়া থাকলেও ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।
এই আইন (ধারা নং ২৪ – ৩০) অনুযায়ী স্বীকারোক্তি ফৌজদারী মামলায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়রূপে চিহ্নিত[১]।
প্রকারভেদ
১) ফৌজদারী আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে দেওয়া স্বীকারোক্তি (Judicial confession)
২) ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের সম্মুখে ছাড়া অন্য কোথাও দেওয়া স্বীকারোক্তি ( Extra judicial confession)
প্রাসঙ্গিক ধারাসমূহ
সাক্ষ্য আইনের ২৪ নং ধারা : প্রলোভন, হুমকি, প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদায় করা স্বীকারোক্তি আদালতের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হবে যদি আদালত মনে করেন তা দ্বারা স্বীকারকারী ব্যক্তি কোনো সুবিধা পাবে বা খারাপ কিছু এড়াতে পারবে।
সাক্ষ্য আইনের ২৫ নং ধারা : পুলিশের কাছে প্রদেয় স্বীকারোক্তি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে আনা যাবেনা।
সাক্ষ্য আইনের ২৬ নং ধারা : পুলিশের হেফাজতে থাকা ব্যক্তির স্বীকারোক্তি প্রমাণ হিসেবে আনা যাবেনা, যদিনা তা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষাতে দেওয়া হয়
সাক্ষ্য আইনের ২৭ নং ধারা : পুলিশের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি থেকে পাওয়া সংবাদের পরিমানস্বরূপ যে তথ্য আবিষ্কৃত হয় তার সাথে স্বীকারোক্তির সম্পর্ক প্রমাণ করা যাবে।
সাক্ষ্য আইনের ২৮ নং ধারা : প্রলোভন, হুমকি প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি দেওয়ার ফলে মনে তার যে প্রভাব পড়ে, সেটা দূর হয়ে যাওয়ার পরে প্রাপ্ত স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হয়।
সাক্ষ্য আইনের ২৯ নং ধারা : অন্যথায় প্রাসঙ্গিক স্বীকারোক্তি গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির কারণে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা।
সাক্ষ্য আইনের ৩০ নং ধারা : প্রমাণিত স্বীকারোক্তি, যা স্বীকারকারী ও একই অপরাধে অভিযুক্ত বিচারাধীন অভিযুক্তকে প্রভাবিত করে তখন তা আদালতের বিবেচনায় আসতে পারে।[২]
অষ্টম ও নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধের ইসলামি রাষ্ট্রগুলি থেকে, ইসলামি আইন (শরিয়ত নামে আরবিতে পরিচিত) সবসময় অন্যান্য আদর্শ পদ্ধতিগুলির সাথে বিদ্যমান ছিল।[১]
শরিয়তে কিছু অপরাধ হুদুদ নামে পরিচিত, যার জন্য ইসলামে নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট দণ্ড রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ব্যভিচারের শাস্তি দেওয়া হয় পাথর ছুড়ে, অবৈধ সম্পর্ক ও মদ্যপান এর শাস্তি কশাঘাত এবং চুরির শাস্তি অঙ্গচ্ছেদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো তাদের অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থায় হুদুদ শাস্তিবিধান গ্রহণ করেনি।[২][৩] কঠোর শাস্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে এবং বেশির ভাগ মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শরিয়তের বিভিন্ন দিক অবলম্বন করে থাকে, যদিও কিছু দেশে কেবল কিছু দিক গ্রহণ করতে পারে, অন্য কিছু দেশ সমগ্র শরিয়তের নীতিমালা প্রয়োগ করে।[২] অঙ্গচ্ছেদ এর তুলনায় মারধরের মত শাস্তি বেশি দেখা যায়।[৩]
সংখ্যালঘু-মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতিগুলির আইনি ব্যবস্থায় শরিয়ত গ্রহণ এবং চাহিদা আন্তর্জাতিক বিতর্কের একটি সক্রিয় বিষয়।[৪] সংখ্যাগরিষ্ঠ-মুসলিম দেশেগুলোর ভূমি আইন হিসাবে শরিয়ত চালু করে “ইসলামি আন্দোলনের একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য”[৫] হিসেবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে, এবং শরিয়ত প্রবর্তনের বা প্রসারিত করার প্রচেষ্টাগুলি বিতর্ক,[৬] সহিংসতা[৭] এবং এমনকি যুদ্ধবিগ্রহের সাথে রয়েছে।[৮] বিশ্বের অধিকাংশ দেশ শরিয়ত বুঝতে পারে না; যাইহোক, কিছু দেশের লোক যারা শরিয়ত বুঝতে পারে তারা তাদের ইসলামিক জনগোষ্ঠীর তালাক, উত্তরাধিকার এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়গুলির ভিত্তি হিসেবে এটি ব্যবহার করে।[৯] এবং যেসব দেশে ইসলাম প্রধান ধর্ম যেখানে শরিয়ত সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে আল্লাহর আইন ও ইসলামের বিরুদ্ধে পাপের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে – কেবল তালাক, উত্তরাধিকার ও ব্যক্তিগত বিষয় নয়।
কয়েকটি দেশ আছে যেখানে শরিয়তের আইনের বিরুদ্ধে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, অথবা এটি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সীমিত করা হয়েছে। কানডার ক্যুবেকে ২005 সালে, ক্যুবেকের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে ভোট প্রদানের মাধ্যমে শরিয়ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যখন কেবলমাত্র অন্টারিওর প্রদেশটির আইনের আওতায় অভ্যন্তরীণ আইনের বিরোধিতা করে।[১০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বিভিন্ন রাজ্যে শরিয়ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে , এবং নথির কিছু পরিমাপের কিছু অংশ পাস করেছে যা “বিদেশী, আন্তর্জাতিক বা ধর্মীয় আইন বিবেচনা থেকে রাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ। ২০১৪ সালের হিসাব মতে – আলাবামা, আরিজোনা, ক্যানসাস, লুইসিয়ানা, উত্তর ক্যারোলিনা, সাউথ ডাকোটা এবং টেনেসি এর অন্তর্ভুক্ত।[১০]
সংজ্ঞা এবং সুযোগ
এই নিবন্ধের নিমিত্ত হল শরিয়ত আইন ইসলামধর্মের নৈতিক নীতিমালা। এতে রয়েছে কোরআন ও হাদীসে প্রকাশিত অপরাধমূলক, নাগরিক, ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক এবং আইনের সকল দিক; এটার ভিতরে কঠোরতম এবং সবচেয়ে ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা অনুযায়ী, শরিয়তের আল্লাহর অব্যার্থ আইন বলা হয়েছে।[১১] শরিয়তের প্রাথমিক উৎসগুলি হচ্ছে কুরআনের আয়াতসমূহ এবং সূরাতে ইসলামের ইসলামের নবী মুহাম্মাদ দ্বারা নির্ধারিত উদাহরণে বর্ণিত নিয়ম।[১২] শরিয়তে রয়েছে ইসলামি আইন যেমনটা ইসলামি বিচারকগণ (কাদিস) রা ধর্মীয় নেতাদের জন্য বিভিন্নভাবে সাথে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রাথমিক উৎসগুলিতে সরাসরি প্রত্যক্ষ না করে এমন প্রশ্নগুলির উত্তরের জন্য শরিয়াতে ধর্মীয় পন্ডিতদের মতামত (উলেমা) মুসলিম সম্প্রদায় (ইজমা) ব্যাখ্যা করে গেছেন।[১১][১২]
শ্রেণীবিন্যাস
মুসলিম দেশগুলির আইনি ব্যবস্থা মিশ্র নিয়মব্যাবস্থা, শাস্ত্রীয় শরিয়তের নিয়মব্যাবস্থা এবং ধর্ম নিরপেক্ষ নিয়মব্যাবস্থা হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে।[১৩]
শাস্ত্রীয় শরিয়তের নিয়মব্যাবস্থা
শাস্ত্রীয় শরিয়া ব্যবস্থা এমন একটি স্থান যেখানে শরিয়ত একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে এবং একটি দেশের আইনি ব্যবস্থার অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান। ইরান, সৌদি আরব, এবং সুদান শাস্ত্রীয় শরিয়া সিস্টেমের উদাহরণ।[১৩]
ধর্ম নিরপেক্ষ নিয়মব্যাবস্থা
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাগুলি এমন যে, যেখানে শরিয়তে জাতির আইনি ব্যবস্থায় কোন ভূমিকা পালন করে না। তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ম একইসাথে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতির একটি উদাহরণ।[১৩]
মিশ্র নিয়মব্যাবস্থা
মিশ্র নিয়মব্যাবস্থা শরিয়ার মত প্রভাবশালী নয় কিন্তু জাতির আইনি ব্যবস্থার এক বা একাধিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বেশিরভাগ মুসলিম দেশগুলিতে দেখা যায়।[১৩]
সারা বিশ্বে শরিয়ত
মানচিত্র
দেশ অনুযায়ী শরিয়তের ব্যবহার
দেশ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার সদস্য যেখানে শরিয়া বিচার বিভাগীয় ভূমিকা পালন করে না।
সেসব দেশ যেখানে শরিয়ত ব্যক্তিগত স্থিতি সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (যেমন বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং শিশু হেফাজতে)
সেসব দেশ যেখানে শরিয়ত সম্পূর্ণ প্রযোজ্য, ব্যক্তিগত অবস্থা সংক্রান্ত বিষয়গুলি পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা।
সেসব দেশ যেখানে শরিয়তের আইন প্রয়োগে আঞ্চলিক বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়
Article 222 of the Family Code of 1984 specifies sharia as the residuary source of laws.[১৪] The sharia-derived family code treats women as minors under the legal guardianship of a husband or male relative.[১৫]
The legal system is based on both Sharia and remnants of the French legal code.[১৮] According to the article 229-7 of the Penal Code, any Muslim who makes use of products forbidden by Islamic law can be punished by imprisonment of up to six months.[১৯]
The Family Code is mainly derived from Islamic law and regulates personal status matters such as marriage, divorce, child custody and inheritance.[২০] Sharia does not apply to criminal law.[২১]
Article 2 of Egypt’s 2014 Constitution declares the principles of Islamic sharia to be the main source of legislation.[২২] Egypt’s law and enforcement system are in flux since its 2011 Revolution;[২৩] however, the declaration of Sharia’s primacy in Article 2 is a potential ground for unconstitutionality of any secular laws in Egyptian legal code.[২৪] Sharia courts and qadis are run and licensed by the Ministry of Justice.[২৫] The personal status law that regulates matters such as marriage, divorce and child custody is governed by sharia. In a family court, a woman’s testimony is worth half of a man’s testimony.[২৬]
Sharia courts have jurisdiction on cases regarding marriage, divorce, maintenance, guardianship of minors (only if both parties are Muslims). Also included are cases concerning waqfs, gifts, succession, or wills, provided that donor is a Muslim or deceased was a Muslim at time of death.[২৮]
Article 7 of the constitution identifies sharia as source of law in matters of personal status and inheritance among members of communities to which it applies.[২৯]
Ghana is a secular state. Any other laws inconsistent with the national constitution are deemed null and void. No religious laws are applied in civil or criminal cases.[৩০]
Islamic law is applied by Kadhis’ Courts where “all the parties profess the Muslim religion”.[৩২] Under article 170, section 5 of the constitution, the jurisdiction of Kadhis’ court is limited to matters relating to “personal status, marriage, divorce or inheritance in proceedings in which all the parties profess the Muslim religion and submit to the jurisdiction of the Kadhi’s courts”.[৩৩]
Qaddafi merged civil and sharia courts in 1973. Civil courts now employ sharia judges who sit in regular courts of appeal and specialise in sharia appellate cases.[৩৪] The personal status laws are derived from Islamic law.[৩৫]
It has a civil law system influenced by customary law.[১৬] In urban areas, positive law is common. In rural areas the customary law usually dominates. Local rural versions of sharia are the predominant sources for customary law.[৩৬] Article 25 in Title II of Mali’s constitution declares it to be a secular state.[৩৭]
The Penal Code contains Sharia crimes such as heresy, apostasy, atheism, refusal to pray, adultery and alcohol consumption. Punishments include lapidation, amputation and flagellation.[৩৮]
In 1956, a Code of Personal Status (Mudawana) was issued, based on dominant Maliki school of Sharia jurisprudence. Regional Sharia courts also hear personal status cases on appeal.[৪১] In matters of family law, a woman’s testimony is worth only half of that of a man.[৪২] With 2003 reforms of its criminal law, Article 222 of its new criminal code is derived from Islamic law; Articles 220–221, 268–272 of its criminal law similarly codify those activities as crimes that are prohibited under Sharia.[৪৩] Morocco adopted a new constitution in 2011; Article 41 of this constitution granted sole power to the Superior Council of the Ulemas to guide its laws through Fatwas from principles, precepts, and designs of Islam.[৪৪][৪৫]
Paula Rainha states that, “Mozambique’s legal system can be considered civil law based (at least the formal legal system) and legislation is the primary source of law.”[৪৬]
The legal system of Senegal is based on French civil law.[৪৮] The 1972 Family Code (Code de la famille) is secular in nature. Islamic law is allowed by article 571 of the Family Code only in the case of intestate successions, and only if the person had demonstrated in life a wish that his succession would be regulated by Islamic law. Most succession cases are decided under this provision. There hashere has been growing political attempts to introduce more sharia regulations.[৪৯]
Sharia was adopted in 2009.[৫০] Article 2 of Somali 2012 Constitution states no law can be enacted that is not compliant with the general principles and objectives of Sharia.[৫১][৫২] Sharia currently influences all aspects of Xeer as well as Somalia’s formal legal system.[৫৩]
Sharia has been declared the chief source of all legislation in Sudan’s 1968, 1973 and 1998 Constitutions.[৫৪] In 2005, Sudan adopted an interim national constitution; it removed some references to Sharia, but included Sharia-derived criminal, civil and personal legal codes, as well as Sharia-mandated hudud punishments.[৫৫] The Criminal Act of 1991 prescribes punishments which include forty lashes for drinking alcohol, amputation of the right hand for theft of a certain value and stoning for adultery.[৫৬][৫৭]
Islamic law is applicable to Muslims under the Judicature and Applications of Laws Act, empowering courts to apply Islamic law to matters of succession in communities that generally follow Islamic law in matters of personal status and inheritance. Unlike mainland Tanzania, Zanzibar retains Islamic courts.[৫৮]
Tunisia has a long secular tradition with a legal system based on French civil law. The Law of Personal Status, considered a reference in secular family law across the Arab world, bans polygamy and extrajudicial divorce. Sharia courts were abolished in 1956.[৫৯][৬০] Secular inheritance laws are indirectly based on Islamic jurisprudence, with religion never being mentioned in the Code of Personal Status; these laws accord to women half the share of property due to men.[৬১]
Article 129 (1) (d) of the constitution allows the parliament to establish by law “Qadhi’s courts for marriage, divorce, inheritance of property and guardianship”.[৬২]
Criminal law in Afghanistan continues to be governed in large part by Islamic law. The Criminal Law of September 1976 codifies sharia, and retains punishments such as the stoning to death of adulterers. However virtually all courts, including the Supreme Court of Afghanistan, rely on Islamic law directly.[৬৩]
Article 2 of Bahrain’s 2002 Constitution as originally adopted, as well as after February 2012 amendment, declares Islamic Sharia is a chief source of legislation.[৬৪][৬৫] Four tiers of ordinary courts have jurisdiction over cases related to civil, administrative and criminal matters, with Court of Cassation the highest civil court in Bahrain; in all matters, the judges are required to resort to Sharia in case legislation is silent or unclear.[৬৫] Sharia courts handle personal status laws.[৬৬][৬৭] A personal status law was codified in 2009 to regulate personal status matters. It applies only to Sunni Muslims; there is no codified personal status law for Shiites. In a Shari’a court a Muslim woman’s testimony is worth half of that of a Muslim man.[৬৮]
Marriage, divorce, alimony and property inheritance are regulated by Sharia for Muslims.[৬৯] The Muslim Personal Law (Shariat) Application Act, 1937 (XXVI of 1937) applies to Muslims in all matters relating to Family Affairs.[৭০] Islamic family law is applied through the regular court system.[৭১] There are no limitations on interfaith marriages.[৭২]
Sharia courts decide personal status cases or cases relating to religious offences.[৭৩] Sultan Hassanal Bolkiah declared in 2011 his wish to establish Islamic criminal law as soon as possible.[৭৪] A new penal code enacted in May 2014 will eventually prescribe sharia punishments, including the severing of limbs for property crimes and death by stoning for adultery and homosexuality.[৭৫]
The Muslim Personal Law (Shariat) Application Act 1937 directs the application of Muslim Personal Law to Muslims in a number of different areas, mainly related to family law.[৭৬]
Article 167 of the constitution states that all judicial rulings must be based upon “authoritative Islamic sources and authentic fatwa”.[৭৭] Book 2 of the Islamic Penal Code of Iran is entirely devoted to hudud punishments.[৭৮] Iranian application of sharia has been seen by scholars as highly flexible and directly contradicting traditional interpretations of the sharia.[৭৯]
Article 1 of Civil Code identifies Islamic law as a main source of legislation.[৮০] The 1958 Code, made polygamy extremely difficult, granted child custody to the mother in case of divorce, prohibited repudiation and marriage under the age of 16.[৮১] In 1995, Iraq introduced Sharia punishment for certain types of criminal offenses.[৮২] Iraq’s legal system is based on French civil law as well as Sunni and Jafari (Shi’ite) interpretations of Sharia.[৮৩] Article 41 of the constitution allows for personal status matters (such as marriage, divorce and inheritance) to be governed by the rules of each religious group. The article has not yet been put into effect, and a unified personal status law remains in place that builds on the 1959 personal status code.[৮৪]
Jordan has Sharia courts and civil courts. Sharia courts have jurisdiction over personal status laws, cases concerning Diya (blood money in cases of crime where both parties are Muslims, or one is and both the Muslim and non-Muslim consent to Sharia court’s jurisdiction), and matters pertaining to Islamic Waqfs.[৮৬] The Family Law in force is the Personal Status Law of 1976, which is based on Islamic law .[৮১] In Sharia courts, the testimony of two women is equal to that of one man.[৮৭]
Article 2 of Kuwait’s constitution identifies Islamic Sharia as a main source of legislation.[৬৪][৯১] According to the United Nations, Kuwait’s legal system is a mix of British common law, French civil law, Egyptian civil law and Islamic law.[৯২] The sharia-based personal status law for Sunnis is based on the Maliki fiqh and for Shiites, their own school of Islam regulates personal status.[৯৩][৯৪] Before a family court the testimony of a woman is worth half of that of a man.[৯৩] Kuwait blocks internet content prohibited by Sharia.[৯৫]
Lebanon’s legal system is based on a combination of Civil Law, Islamic law and Ottoman laws.☃☃ There are seventeen official religions in Lebanon, each with its own family law and religious courts. For the application of personal status laws, there are three separate sections: Sunni, Shia and non-Muslim. The Law of 16 July 1962 declares that Islamic law governs personal status laws of Muslims, with Sunni and Ja’afari Shia jurisdiction of Islamic law.[৮১] In a Muslim family court, the testimony of a woman is worth half of that of a man.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Schedule 9 of Malaysian constitution recognizes Islamic law as a state subject; in other words, the states of Malaysia have the power to enact and enforce sharia.[৯৭] Islamic criminal law statutes have been passed at the state level in Terengganu,[৯৮] Kelantan[৯৯] and Perlis,[১০০][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] but as of 2014 none of these laws have been implemented, as they contravene the Federal Constitution.[১০১][১০২][১০৩] In 2007, Malaysia’s Federal court ruled that apostasy matter lay “within the exclusive jurisdiction of Sharia Courts”.[৯৭] Malaysian Muslims can be sentenced to caning for such offences as drinking beer,☃☃ and adultery.☃☃ Several sharia crimes, such as khalwat (close proximity of unmarried man and woman) are punishable only in Sharia courts of Malaysia. Publishing an Islamic book that is different from official Malaysian version, without permission, is a crime in some states. Other sharia-based criminal laws were enacted with “Syariah Criminal Offences (Federal Territory) Act of 1997”.[৯৭] Muslims are bound by Sharia on personal matters, while members of other faiths follow civil law. Muslims are required to follow Islamic law in family, property and religious matters.[১০৪] In 1988 the constitution was amended to state that civil courts cannot hear matters that fall within the jurisdiction of Sharia courts.[১০৫]
Article 15 of the Act Number 1/81 (Penal Code) allows for hudud punishments.[১০৬] Article 156 of the constitution states that law includes the norms and provisions of sharia.[১০৭]
Islamic Sharia is the basis for legislation in Oman per Article 2 of its Constitution, and promulgated as Sultani Decree 101/1996.[১০৮] The Personal Statute (Family) Law issued by Royal Decree 97/32 codified provisions of Sharia.[১০৯] Sharia Court Departments within the civil court system are responsible for personal status matters.[১১০] A 2008 law stipulates that the testimonies of men and women before a court are equal.[১১১] Oman’s criminal law is based on a combination of Sharia and English common law.[১১২] Omani commercial law is largely based on Sharia; Article 5 of its Law of Commerce defaults to primacy of Sharia in cases of confusion, silence or conflict.
Until 1978 Islamic law was largely restricted to personal status issues. Zia ul Haq introduced Sharia courts and made far reaching changes in the criminal justice system.☃☃ Articles 203a to 203j of the constitution establish a sharia court with the power to judge any law or government actions to be against Islam, and to review court cases for adherence to Islamic law. The penal code includes elements of sharia.☃☃ Under article 5, section 2 of the Ordinance No. VII of 1979, whoever is guilty of zina, “if he or she is a muhsan, be stoned to death at a public place; or if he or she is not a muhsan, be punished, at a public place, with whipping numbering one hundred stripes”.[১১৩] Under a 2006 law, rape cases can be heard under civil as well as Islamic law.[১১৪]
There are sharia trial and circuit trial courts in Mindanao, which is home to the country’s significant Filipino Muslim minority.[১১৫] Sharia District Courts (SDCs) and Sharia Circuit Courts (SCCs) were created in 1977 through Presidential Decree 1083, which is also known as the Code of Muslim Personal Laws.[১১৬] Islamic law only applies to civil cases involving all Muslims nationwide. Cases are handled in the Autonomous Region in Muslim Mindanao and a couple of Mindanao provinces that are not part of ARMM by both sharia district and circuit courts, organised into five sharia districts. Outside these areas, sharia-related cases are processed in civil courts under a session from the five sharia districts.[১১৭] All other cases, including criminal ones, are dealt with by local civil courts.[১১৮]
Sharia is the main source of Qatari legislation according to Qatar’s Constitution.[১১৯][১২০] Islamic law is applied to laws pertaining to family law, inheritance, and several criminal acts (including adultery, robbery and murder). In some cases in Sharia-based family courts, a female’s testimony is worth half a man’s and in some cases a female witness is not accepted at all.[১২১] Flogging is used in Qatar as a punishment for alcohol consumption or illicit sexual relations.[১২২] Article 88 of Qatar’s criminal code declares the punishment for adultery is 100 lashes.[১২৩] Adultery is punishable by death when a Muslim woman and a non-Muslim man are involved.[১২৩] In 2006, a Filipino woman was sentenced to 100 lashes for adultery.[১২৩] In 2012, six expatriates were sentenced to floggings of either 40 or 100 lashes.[১২২] More recently in April 2013, a Muslim expatriate was sentenced to 40 lashes for alcohol consumption.[১২৪][১২৫][১২৬] In June 2014, a Muslim expatriate was sentenced to 40 lashes for consuming alcohol and driving under the influence.[১২৭] Judicial corporal punishment is common in Qatar due to the Hanbali interpretation of Islamic law. Article 1 of the Law No. 11 Of 2004 (Penal Code) allows for the application of “Sharia provisions” for the crimes of theft, adultery, defamation, drinking alcohol and apostasy if either the suspect or the victim is a Muslim.[১২৮]
Saudi criminal law is based totally on sharia.[১২৯] No codified personal status law exists, which means that judges in courts rule based on their own interpretations of sharia.[১৩০] See Legal system of Saudi Arabia
Sharia courts may hear and determine actions in which all parties are Muslims or in which parties involved were married under Muslim law. Court has jurisdiction over cases related to marriage, divorce, betrothal, nullity of marriage, judicial separation, division of property on divorce, payment of dowry, maintenance, and muta.[১৩১]
Private matters of Muslims are governed by Muslim Law, including marriage, divorce custody and maintenance. Muslim law principles have been codified in the Act No. 13 of 1951 Marriage and Divorce (Muslim) Act; Act No. 10 of 1931 Muslim Intestate Succession Ordinance and Act No. 51 of 1956 Muslim Mosques and Charitable Trusts or Wakfs Act.[১৩২]
Article 3 of the 1973 Syrian constitution declares Islamic jurisprudence one of Syria’s main sources of legislation.[১৩৩] The Personal Status Law 59 of 1953 (amended by Law 34 of 1975) is essentially a codified Islamic law.[১৩৪] The Code of Personal Status is applied to Muslims by Sharia courts.[১৩৫] In Sharia courts, a woman’s testimony is worth only half of a man’s.[১৩৬]
As part of Atatürk’s Reforms, sharia was abolished in April 1924, with the Law Regarding the Abolition of Islamic Law Courts and Amendments Regarding the Court Organization.[১৩৮]
Article 11 of the constitution declares that religious groups are separate from the state and the state educational system. But the legal system is civil law with Islamic influences [১৩৯][১৪০] Also converting a Muslim is a crime.[১৪১]
Law 20/1992 regulates personal status. The constitution mentions sharia.[১৪৩] Penal law provides for application of hadd penalties for certain crimes, although the extent of implementation is unclear.[১৪৪] Article 263 of the 1994 penal code states that “the adulterer and adulteress without suspicion or coercion are punished with whipping by one hundred strokes as a penalty if not married. […] If the adulterer or the adulteress are married, they are punished by stoning them to death.”[১৪৫]
Under certain conditions, Sharia rules on domestic relations are recognized by German courts based on private international law if no party has German citizenship. The outcome must not violate the principles of the German legal system according to the ordre public.[১৪৬]
Muslim populations of Western Thrace are subjected to Sharia, in issues related to family law, in the terms of the Treaty of Sevres.[১৪৭] At November, 2017, the Greek government announced plans to reduce the power of islamic law, making sure that its use is optional.[১৪৮]
As of 2014, there were reported to be around 85 “shariah courts” in the UK,[১৪৯][১৫০] with examples including Islamic Sharia Council and the newer, smaller, less strict Muslim Arbitration Tribunal.[১৪৯][১৫১] The councils/tribunals provide arbitration that is voluntary but legally binding, are “officially mandated” and set up outside the court system.[১৫১][১৫২] During recent years Sharia councils have been used increasingly in the UK and there are claims some of them act unfairly to women including legitimizing forced marriages and issuing discriminatory divorces to women. There are claims that some women were victims of inequitable decisions. According to Prime Minister, Theresa May, there is only one rule of law in the UK providing security for all citizens. There will be an independent review of whether Sharia discriminates against women, also “whether, and to what extent, the application of Sharia law may be incompatible with the law in England and Wales”.[১৫৩]
The Egyptian personal status law of 1954 is applied. The personal status law is based on Islamic law and regulates matters related to inheritance, marriage, divorce and child custody. Shari’a courts hear cases related to personal status. The testimony of a woman is worth only half of that of a man in cases related to marriage, divorce and child custody.[১৫৪]
Under the 1923 Treaty of Lausanne, Sharia regulates marriage, divorce, custody of children and inheritance for Muslims who reside in Western Thrace; the treaty also allows for the establishment of auqaf.[১৫৮] Muslim can alternatively choose a civil marriage and take their cases to civil court.[১৫৮] The question of the use of Sharia in Greece is the subject of recent[কখন?] judicial review.[১৫৯]
Aceh is the only part of Indonesia to apply Sharia in full. Islamic courts in Aceh had long handled cases of marriage, divorce and inheritance. After special autonomy legislation was passed in 2001, the reach of courts extend to criminal justice.[১৬১] Offences such as being alone with an unrelated member of the opposite gender, gambling and breaking Islamic dress rules can be punished with a public caning.[১৬২] In 2014, the provincial government of Aceh extended sharia’s reach, enacting and enforcing sharia to apply it to non-Muslims as well.[১৬৩][১৬৪]
In other parts of Indonesia, religious courts have jurisdiction over civil cases between Muslim spouses on matters concerning marriage, divorce, reconciliation, and alimony. The competence of religious courts is not exclusive, and parties can apply to District Courts for adjudication on basis of Roman-Dutch law or local adat.☃☃☃☃ Suharto’s New Order expanded the reach of Islamic law, first with the 1974 Marriage Act, which assigned jurisdiction over the marriage and divorce of Muslims to the Islamic cour), and with the 1989 Religious Judicature Act, which elevated Islamic courts by making them a parallel legal system, equal to state courts and gave them jurisdiction over inheritance (wasiyyah), gifts (hibah) and religious endowments. Muslim litigants could originally choose whether to have inheritance questions decided by the Islamic courts or by the civil courts, but a 2006 amendment eliminated this possibility; the same amendment gave Islamic courts new jurisdiction over property disputes, including financial and economic matters. Muslims seeking a divorce must also file their claim in Islamic courts. The Compilation of Islamic Law 1991 () regulates marriage, inheritance, and charitable trusts (wakaf trusts (wakaf).[১৬৫] Islamic law falls outside the jurisdiction of the Constitutional Court.[১৬৫] Since 2006, a number of districts have issued local ordinances based on sharia.[১৬৬]
Until 1999, Islamic law applied primarily to civil matters, but twelve of Nigeria’s thirty-six states have since extended Sharia to criminal matters.[১৬৭] Sharia courts can order amputations, and a few have been carried out.[১৬৮] The twelve sharia states are Zamfara, Bauchi, Borno, Gombe, Jigawa, Kaduna, Kano, Katsina, Kebbi, Niger, Sokoto and Yobe.[১৬৯]
ব্রুনো(Bruno), গোম্বে(Gombe)ও ইয়োবে(Yobe)
Borno, Gombe and Yobe have not yet begun to apply their Sharia Penal Codes.[১৭০]
The court system comprises Sharia courts and civil courts. Judicial corporal punishment is a legal form of punishment in UAE due to the Sharia courts. Flogging is used in UAE as a punishment for criminal offences such as adultery, premarital sex and prostitution.[১৭৩] In most emirates, floggings of Muslims are frequent, especially for adultery, prostitution and drunkenness, with sentences ranging from 80 to 200 lashes.[১৭৪][১৭৫] Between 2007 and 2013, many people were sentenced to 100 lashes.[১৭৩][১৭৬][১৭৭][১৭৮][১৭৯][১৮০][১৮১][১৮২] Moreover, in 2010 and 2012, several Muslims were sentenced to 80 lashes for alcohol consumption.[১৮৩][১৮৪] Under UAE law, premarital sex is punishable by 100 lashes.[১৮৫] Stoning is a legal form of judicial punishment in UAE. In 2006, an expatriate was sentenced to death by stoning for committing adultery.[১৮৬] Between 2009 and 2013, several people were sentenced to death by stoning.[১৭৯][১৮৭][১৮৮] In May 2014, an Asian housemaid was sentenced to death by stoning in Abu Dhabi.[১৮৯][১৯০][১৯১] Islamic law dictates the personal status law, which regulate matters such as marriage, divorce and child custody. The Sharia-based personal status law is applied to Muslims and sometimes non-Muslims. Non-Muslim expatriates are liable to Sharia rulings on marriage, divorce and child custody. Sharia courts have exclusive jurisdiction to hear family disputes, including matters involving divorce, inheritances, child custody, child abuse and guardianship of minors. Sharia courts may also hear appeals of certain criminal cases including rape, robbery, and related crimes. Apostasy is a crime punishable by death in the UAE. UAE incorporates hudud crimes of Sharia into its Penal Code – apostasy being one of them. Article 1 and Article 66 of UAE’s Penal Code requires hudud crimes to be punished with the death penalty, therefore apostasy is punishable by death in the UAE. Emirati women must receive permission from male guardian to remarry. The requirement is derived from Sharia,d from Sharia, and has been federal law since 2005.[১৯২] In all emirates, it is illegal for Muslim women to marry non-Muslims.[১৯৩] In the UAE, a marriage union between a Muslim woman and non-Muslim man is punishable by law, since it is considered a form of “fornication”.[১৯৩]
মৃত্যুকালীন জবানবন্দী (Dying Declaration) হলো আদালত প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি পরিভাষা যা ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের (Indian Evidence Act -1872) ৩২ নং ধারার (১) উপধারা বলে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রাহ্য করা হয়। সাধারণভাবে ব্যক্তির দেওয়া মৌখিক সাক্ষ্য সেই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নয়, মৃত্যুকালীন জবানবন্দী সেক্ষেত্রে একটি বিশেষ ব্যতিক্রম।[১]
শর্ত
মৃত্যুকালীন জবানবন্দী প্রাসঙ্গিক হতে গেলে মূলত: ১) সাক্ষ্যদানকারীর মৃত্যু হতে হবে ২) জবানবন্দী তার মৃত্যুর কারণ বা মৃত্যুর সাথে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত হতে হবে ৩) মৃত্যুর কারণ প্রশ্নাধীন বিষয় হতে হবে।
আইনানুসারে জবানবন্দী নথিবদ্ধকারী যদি প্রসাশনিক (Executive) বা বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (Judicial) নাও হন তবু সেই সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি, পুলিশ, ডাক্তার এই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন অবস্থার প্রেক্ষিতে। মৃত্যুকালীন জবানবন্দী কোনো বিশেষ ব্যক্তিকেই নথিবদ্ধ করতে হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে নেই।
মূল্য ও গুরুত্ব
মৃত্যুকালীন জবানবন্দী আদালতে শপথনামাপূর্বক নেওয়া হয় না বা তার প্রতি-পরীক্ষা (Cross Examination) ও করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই সাক্ষ্য ‘অন্যের শোনা সাক্ষ্য’ (Hearsay Evidence) হিসেবে ব্যতিক্রমীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে আদালতের বিবেচনায়। জবানবন্দীর বিশ্বাসযোগ্যতা, প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বিচার করে আদালত যদি মনে করেন তবে এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধীকে দোষী সাব্যস্তও করতে পারেন।[২
খুলা’ হলো স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে বা অন্যের কাছ থেকে নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে যে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করে তার নাম। এ তালাকের পর স্বামী স্ত্রীর কাছে ফিরে আসতে পারে না। এটাকে এ কারণে খুলা‘ বলা হয়, একজন নারী তার হাত থেকে স্বামীকে সরিয়ে দেয় যেমন একটি আংটি হাতের আঙুল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।[১]আল্লাহ বলেন
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
অর্থ: নারীরা পুরুষের অঙ্গ স্বরূপ এবং পুরুষরা নারীর অঙ্গ স্বরূপ। তিনি আরও বলেন যে,
فإن خفتم ألا يقيما حدود الله فلا جناح عليهما فيما افتدت به
অর্থ: তোমরা ভয় করো যে উভয়ের মাঝে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তাহলে উভয়ে সমজোতার ভিত্তিতে যে বিচার হবে তাতে কোনো পাপ নেই।
নবী মুহাম্মাদ বলেন: “যে কোন মহিলা তার স্বামীকে বিনা কারণে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুবাস হারাম।”[২]
হায়েজের সময় এবং পবিত্রতার সময় হলেও দোষ নেই। কেননা মুহাম্মাদ খুলাপ্রাপ্ত নারীকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেননি।”[৩]
আইনগত ভিত্তি
২০০০ সালের ১ নং আইনের ২০ নং ধারা হল ‘খুলা’ পদ্ধতির আইনি ভিত্তি। অনুচ্ছেদ ৬ এবং ২৪ এ এর বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটা শরীয়া আদালতের একটি আইন। এ আইনের অনুচ্ছেদ ১৮, অনুচ্ছেদ ২ এবং অনুচ্ছেদ ১৯, অনুচ্ছেদ ১, ২ এর বিস্তারিত বিবরণ আছে।
কারণ লিপিবদ্ধ করা
দেওয়ানি আইনের ক্ষেত্রে, মামলায় স্ত্রীকে খুলা তালাকের কারণগুলি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। তবে খুলার প্রয়োজনীয় ক্ষতির কারণের কারণগুলি তালিকাভুক্ত করতে হয়। যেমন স্ত্রী যদি দাম্পত্য বা বৈবাহিক জীবন চলার কোন উপায় না থাকে এবং সে ভয় করে যে সে আল্লাহর হক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন সে নারী খুলা তালাক চা্যইতে পারে।অন্যায় ভাবে কোন নারী খুলা তালাক চাইলে “সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।” যে আদালতে খুলার মামলা চলবে তার বিচারক সুনির্দিষ্ট আইন বা আইনি কারণ বা সীমিত ক্ষতির দিকে নজর দিবে না। সে বিবাহ টিকে রাখার জন্য চেষ্টা চালাবে। স্বামী/স্ত্রী, যদি এটি ব্যর্থ হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত পূরণ করা হয়, তাহলে তার বিচার করা হবে। তবে স্বামী -স্ত্রী তালাকের ব্যাপারে সম্মত হলে এবং বিবাহবিচ্ছেদ চুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হলে খুলা হবে। যা ২০০০ সালের ১ নং আইন এর ২০ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামী যদি তালাক সম্পূর্ণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে স্ত্রী তালাকের মামলা করতে পারে। উক্ত আদালতে আবেদন করবে এবং মামলাটি ইসলামিক আইন অনুযায়ী নয়, বরং আবেদনমূলক আইনের নিয়ম অনুসারে পরিচালিত হবে। কার্যক্রম নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়-
মহর পরিশোধ
স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত মহর ফের দিবে। এটা হলো প্রথম শর্ত। কিন্তু যদি স্বামী তার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে, তাহলে স্ত্রীকে সেটাও ফেরৎ দিতে হবে। অথবা আদালত বিয়ের দলিলে যতি আরও কিছু লেখা থাকে সেটা স্ত্রীকে ফেরৎ দিতে হবে না। এভাবে (১) বিবাহের উপহার সামগ্রীও ফেরৎ দিতে হবে না। কেননা তা মহর নয়। (২) বৈবাহিক অস্থাবর সম্পত্তিও মহর নয়, সেটাও ফেরৎ দিতে হবে না যতক্ষণ না স্ত্রী তার অর্থ ফেরত দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। স্ত্রীর মহর ফেরত বা মহর আদালতে ফেরৎ আইনি উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, এবং এটি যুক্তি দ্বারা বা আইনের দ্বারা প্রমাণিত হয়।
আর্থিক অধিকার মওকুফ
স্ত্রীর তার আর্থিক অধিকার মওকুফ করা বা স্বামীর কাছ থেকে তার সন্তানদের অধিকার ছাড়া বা তার হেফাজতে থাকা এবং খুলার স্বীকৃতি চাওয়া সবকিছু স্ত্রীর উপর নির্ভর করে। স্বামী তার সমস্ত আর্থিক ও আইনগত অধিকার মওকুফ করতে পারে, যদি সে বিলম্বে মহর গ্রদান করে বা ইদ্দতকালে থাকে। আর এটা সে উপস্থিত লোকদের হাতে অথবা বিচারকের সামনে পেশ করবে। আর এটা উভয়ের বিচ্ছেদের পরে করবে। তবে ছোট সন্তানের হেজানত বা তাদের দেখাশোনার জন্য ব্যয় করা অর্থের ক্ষেত্রে হবে না।
মীমাংসার প্রস্তাব
স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধের অবসান ঘটাতে আদালতকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে। আদালতের হস্তক্ষেপ অবশ্যই স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপরার মাধ্যমে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করবে। এই মীমাংসার বাধ্যবাধকতা হচ্ছে ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত রক্ষা করার জন্য। যা জনশৃঙ্খলার সাথে সম্পর্কিত। আদালত তাদের মধ্যে দুইবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে বাধ্য, যা ত্রিশ দিনের কম নয় এবং ষাট দিনের বেশি নয়, যাতে পরিবারকে রক্ষা করা যায়।
দুই মীমাংসাকারীর নিয়োগ
স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন মোট দু’জন বিচারক নিয়োগ করবে। তারা স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মীমাংসা করে পরিবারটাকে রক্ষা করবে। এটা কুরআনের বিধান, যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফতওয়া বিভাগ বাস্তবায়ন করেছিল। ফলে এরকম একটি খুলা মামলার সমাধান হয়েছিল। যেহেতু এটা স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয় বা খুলার মামলাটি স্বামীর দ্বারা সৃষ্ট ত্রুটি বা ক্ষতির উপর ভিত্তি করে নয়, বরং এটি স্বামীর মনস্তাত্ত্বিক বিদ্বেষ এবং স্ত্রীর সমাপ্তির আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে। আর বিবাহিত জীবন. স্বামী -স্ত্রীর স্বার্থে এবং শিশুদের স্বার্থে স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য দুই সালিশকারীকে অবশ্যই তিন মাসের বেশি সময়ের মধ্যে স্বামীদের পুনর্মিলনের চেষ্টায় তাদের ভূমিকা শেষ করতে হয় এবং এটা বিবাহবিচ্ছেদ মামলার বিশেষ প্রকৃতি।
আদালতের সামনে স্ত্রীর ঘোষণা দেবে যে সে তার বৈবাহিক জীবন চালিয়ে নিতে ইচ্ছুক নয়।
স্ত্রী স্বামীর সাথে তার জীবন বিদ্বেষের স্বীকারুক্তি দেবে। এই স্বীকারোক্তিটি বিচারিক আদালতের সামনে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা হিসাবে হবে। বিচারক তদন্তের শেষ মামলাটি বিচারের জন্য সংরক্ষিত করবে। স্ত্রীর এ ঘোষণা প্রমাণ করবে যে সে স্বামীর সাথে সংসার করতে অপারগ।
মামলাটি যখন পূর্ণ হয় তখন বিচারের জন্য সংরক্ষণ করা
যখন আদালত পূর্ববর্তী সমস্ত পদ্ধতি বা পর্যায় সমাপ্ত করে, তখন সে রায়কে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেবে। খুলার শর্ত পূরণ হলে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় এড়ানো যায় না। যদি আদালতের বিশ্বাস এবং তার দৃঢ় বিশ্বাসের মধ্যেও থাকে যে আসামী স্বামী ভুল করেনি এবং কোন ক্ষতি করেনি তার স্ত্রীর উপর। ডিভোর্স কেস একটি প্রক্রিয়াগত মামলা, যার মধ্যে আদালতের ভূমিকা তার উপাদানগুলি প্রমাণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই যখন স্ত্রীকে স্বামীর কাছে ফেরত দেওয়া হয় তখন মহর পরিশোধ করতে হয়। এটা ঐ সময় হয় যখন উক্ত বিচারকদ্বয় বা অন্যকোন উপায়ে মীমাংসা করা সম্ভব না হয়।
ডিভোর্স মামলায় চূড়ান্ত রায়
ডিভোর্স মামলায় জারি করা রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়, কোন আফিল চলে না। বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।
খুলার কারণে স্ত্রীর জন্য ব্যয় থাকে না
বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করে স্ত্রীর বিবাহিত জীবন শেষ করার অধিকার কার্য়কর হওয়ার পর তার স্বামীর কাছ থেকে নেওয়া মহর ফেরত দিবে। ফলে স্বামীকে আর স্ত্রীকে কোন খরচ দেবেনা। মোটা অংকের অর্থও দাবি করতে পারবে না।
ইসলামে খুলা তালাকের বিধান
বিবাহ এবং তালাক একটি ধর্মীয় চুক্তি বা এটি একটি আইনি চুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, তালাক একটি নিছক শব্দ দিয়ে সংঘটিত হয়, যা স্বামী লিখিতভাবে জানাবে। তবে খুলার বিধান ইসলামে অনেক গুরুত্তপূর্ণ।
খুলার শরয়ী বিধান
হাম্বলী চিন্তাধারায়: হাম্বলী মতে কোন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চাইলে সে তার কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ গ্রহণ করার জন্য নির্ধারিত হয়।[৪] তাদের দলিল হলো সাবিত বিন কাইসের স্ত্রীর ঘটনা। কিন্তু পর্যাপ্ত কারণ না থাকলে হবে না। কেননা নবী স বলেছেন, যে নারী বিনা কারণে স্বামীর কাছে তালাক চায় তার জন্য বেহেশতের সুবাস হারাম।
ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে, যদি স্বামী তার স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণ হয় তবে স্বামীর পক্ষে এটি গ্রহণ করা অপছন্দনীয়।আর যদি বিষয়টি স্ত্রীর নিজের বিচ্ছিন্নতার কারণে হয়, তবে স্বামীর জন্য মহরের চেয়ে বেশি গ্রহণ করাকে ঘৃণা করেন। আর বিষয়টির অন্যদিক হলে বেশি গ্রহণ করা জায়েজ, কারণ সর্বশক্তিমানের উক্তি: “এতে কোন দোষ নেই সে তার বিনিময়ে যা মুক্তিপণ দিয়েছিল “আল-বাকারাহ: ২২
আর স্বামীর আচরণের কারণে যদি স্ত্রী খুলা তালাকে বাধ্য হন তাহলে অতিরিক্ত কিছু দিতে হবে না।[৫] তারা এটিকে সর্বশক্তিমানের উক্তি দ্বারা প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে: ((এবং তাদেরকে আপনি যা দিয়েছেন তা থেকে কিছু নিতে নিষেধ করবেন না)) [আন-নিসা: 19]।
শাফিরা একেবারে খুলকে ঘৃণা করেন। তারা এর থেকে দুটি ব্যতিক্রম কথা বলেন:[৬]
স্ত্রী ভয় পায় যে, আল্লাহ স্বামীর উপর আরোপিত অধিকার পালন করতে পারবে না। অথবা মহিলা তার স্বামীকে অস্বীকার করে, সে তার উপর তার অধিকার পূরণ করতে পারে না।
একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়ার শফৎ করে তালাক না দিয়ে আবার একসাথে থাকতে চায় এবং তাকে খাওয়ায়, পান করায়। তখন এ স্ত্রী লোকটি খুলা তালাকা চাইতে পারে।
মালেকীরা খুলাকে জায়েজ করেছে (এটা সুন্নাহ বা অপছন্দ নয়)। এ শর্তে যে যদি স্ত্রীর সম্মতিতে থাকে, যদি এটি তার বাধ্যবাধকতায় হয়, তাহলে তালাক কার্যকর করা হয়।[৭]
খুলার সময়
তালাকের নির্দিষ্ট সময় আছে।একজন পুরুষ হায়েজের সময় তার স্ত্রীকে তালাক দেবে না, তবে খুলাতে কোন দোষ নেই।[৮]
স্বামীর ক্ষমতা যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে: সে একজন বিবেকবান প্রাপ্তবয়স্ক।
বিবাহ চুক্তি অবশ্যই বৈধ হতে হবে। সহবাস হোক বা না হোক।
স্ত্রী অর্থের সঠিকভাবে ব্যবহারকারিনি হবে। সেই সাথে একজন প্রাপ্তবয়স্কা, বুদ্ধিমতি, অক্ষম, দাসী, মূর্খ, বা অসুস্থ হবে না। উদাহরণস্বরূপ, বোকার খুলা হয় না।
খুলার বিনিময় হালাল অর্থে হবে যাতে এটি একটি মহর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াইন বা শুয়োরের মাংস দিয়ে খুলা হয় নযা।
স্ত্রীর সম্মতিতে খুলা হবে। এতে স্বামীর সম্মতি থাকবে।
খুলার বিনিময়
হাম্বালীদের মতে, স্বামী তার স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন হলে খুলার ক্ষতিপূরণ নেওয়া অপছন্দনীয়। যদিও এটি স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করার কারণেদিতে হয়। তবে স্ত্রীর মহরের পরিবর্তে স্বামী গ্রহণ করতে পারে, তবে এর চেয়ে বেশিও নিতে পারে। কেননা আল্লাহ পাক বলেছেন, কোনো ক্ষতি নাই।﴾[১০]
খুলা এমনও হতে হবে যে এটি মহর হিসাবে প্রদান করা যেতে পারে। ফকীহগণ উপকার ও অধিকারের বিনিময়ে খুলার অনুমতি দিয়েছেন, যেমন কোনো রোগের চিকিৎসা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমি চাষ করা বা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো, বা এর পেছনে খরচ করা, অথবা ইদ্দতকালের ব্যয় রহিত করা।
শরীয়তে খুলার প্রভাব
তালাকে বায়েন :এটি দ্বারা এক তালাক বায়েন হয়।
খুলা দ্বারা তালাকের সংখ্যা হ্রাস পায় না:। কেননা আল্লাহ প্রথমে তালাকের কথা বলেছেন পরে খুলার কথা বলেছেন।
বিচারকের রায় কার্যকর হওয়ার শর্ত নয়।
যদি খুলের কিছু শর্ত নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে খুল ‘অবৈধ হয় না।
স্ত্রীর জন্য খুলার অর্থ প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
খুলা হলেআবার স্ত্রীকে ফেরৎ নেয়া যায় না। তবে হিলা বিবাহের পর নেয়া যাবে।
কুরআন মজিদ অথবা কুরআ-ন মাজী-দ বা কোরআন (আরবি: القرآن আল্-কুর্’আন্[টী১]) ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন।[১] এটিকে আরবি শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়।[২][৩][৪][৫] কুরআনকে প্রথমে অধ্যায়ে (আরবিতে সূরা) ভাগ করা হয় এবং অধ্যায়গুলো (সূরা) আয়াতে বিভক্ত করা হয়েছে।
এই কিতাব আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল এর মাধ্যমে ইসলামিক নবি মুহাম্মাদ এর কাছে মৌখিকভাবে ভাষণ আকারে কুরআনের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন,[৬][৭] দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদের বয়স ৪০ বছর[৮] এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।[১][৯][১০] মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা যা তার নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ[১১] এবং ঐশ্বরিক বার্তা প্রেরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায় যা আদম থেকে শুরু হয়ে মুহাম্মাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তবে সুফিবাদের অনুসারীরা বিশ্বাস করে থাকেন মুহাম্মাদের সকল কর্মকান্ড উম্মতের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্যই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়। কুরআনের আয়াতসমূহে কুরআন শব্দটি ৭০ বার এসেছে।[১২]
ইসলামি ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবি মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। ইসলামের অনুসারীরা কুরআনকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে বিশ্বাস করে। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আয়াত বা পঙ্ক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; মতান্তরে ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়।[১৩][১৪][১৫][১৬] মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়। তবে কুরআনে কোনো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামি ভাষ্যমতে কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরআনের সূরা আল-হিজরের (১৫ নং সূরা), ৯ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে, এবং তা হল:
“
আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।[১৭]
কুরআনে কুর’আন শব্দটি কয়েকটি অর্থে প্রায় ৭০ বার এসেছে। আর, আরবি ব্যাকরণে “কুর’আন” শব্দটি একটি “মাসদার”,যা ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৭৫:১৭,১৮ আয়াতে এটি,(قرأ) ক্বারা’আ (‘পাঠ করা’, ‘আবৃত্তি করা’ বা ‘অনুসরণ করা’) ক্রিয়ার ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[১৮] এই শব্দটির “মাসদার” (الوزن) হচ্ছে غفران তথা “গুফরান”। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, (غفر) নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে “ক্ষমা করা”; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো (غفران), এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সূরা আল-কিয়ামাহের (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:”অতঃপর, আমি যখন তা পাঠ করি (ক্বুরা’নাহু), তখন আপনি সেই পাঠের (কুরআ’নাহ্) অনুসরণ করুন।”[১৯]
কুরআনে যেখানেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই এর যথার্থ বিশেষ্য বা বিশেষণ পাওয়া যায়। ক্বারা’আ ক্রিয়াপদ কুরআনে পুনঃপুনঃ ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭:৯৩ আয়াতে এর অর্থ ‘পাঠ করা’; কিন্তু এর বহুল প্রচলিত অর্থটি হল,’আবৃত্তি করা’ (তিলাওয়াঃ),৭৫: ১৬,১৭। মুহাম্মদ এর আবৃত্তি সমন্ধেও এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি তাঁর নিজের উপর অবতীর্ণ ওহী আবৃত্তি করেন (৭ঃ২০৪; ১৬ঃ৯৮; ১৭ঃ৪৫; ৮৪ঃ২১; ৮৭ঃ৬)। শব্দটি মুমিনদের আবৃত্তি সমন্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে , তারা সালাতে ওহী আবৃত্তি করেন (৭৩ঃ২০)। এ থেকে বোঝা যায়, কুরআন শব্দের অর্থ হল ‘আবৃত্তি করা’ যা মুহাম্মদ আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে আবৃত্তি করেছেন (৭৫ঃ১৮; ৮৬ঃ৬) এবং মানুষের সম্মুখেও আবৃত্তি করেছেন। যদিও কুরআন বলতে সাধারভাবে তাঁর উপর অবতীর্ণ ওহীর সমষ্টিকে বুঝায়। তবে শব্দটি (কুরআন) তাঁর উপর অবতীর্ণ পৃথক পৃথক ওহী (১০ঃ১৫; ১২ঃ৩; ৭২ঃ১; ২ঃ১৮৫) সমন্ধে বা খন্ডে খন্ডে অবতীর্ণ (১৭ঃ১০৬; ২০ঃ১; ৭৬ঃ২৩; ২৫ঃ৩২ ; ৫৯ঃ২১) আল্লাহর ওহী সমন্ধে বলা হয়েছে যা তিঁনি আল্লাহ কতৃক পেয়েছিলেন (২৭ঃ৬; ২৮ঃ৮৫)।
আল কিতাব (ধর্ম গ্রন্থ বা পুস্তক) শব্দটি আল-কুরআনের প্রতিশব্দ হিসাবে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল-কিতাব সমন্ধে বলা হয়েছে “ইহা এক কল্যানময়ী রাত্রিতে (৪৪ঃ২) অবতীর্ণ হইয়াছে” (৪০ঃ২; ৪৫ঃ২)। ১৫ঃ১ আয়াতে বলা হয়েছে, “এইগুলি আল-কুরআন এবং সুস্পষ্ট অর্থবোধক আল-কিতাবের অলৌকিক নিদর্শনসমূহ।” বিষয়বস্তু হিসেবে কুরআনকে প্রায়ই ‘যি’কর’ বলা হয়েছে। এখানে এর অর্থ উপদেশ, সাধারণ বাণী (২১ঃ২৬,৪২; ৩৮ঃ৮৭)। যি’করকে ‘অবতীর্ণ’ (২১ঃ৫০; ৩৮ঃ৮) এবং ‘মহান পবিত্র গ্রন্থ’ (৪১ঃ৪১) বলা হয়েছে। আবার ৩৬ঃ ৬৯ আয়াতে কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, ” এ তো কেবল এক উপদেশ ও স্পষ্ট কুরআন মাত্র”। ২১ঃ৭ আয়াতে আহ্’লুল-কিতাবকে আহ্’লুয যি’কর বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আল-হি’কমাঃ শব্দটি উল্লেখ করা যেতে পারে। ২ঃ১২১,১৫১; ৩ঃ১৬৪; ৬২ঃ২ -এ আল-কিতাবের সাথে হি্’কমাঃ উল্লেখ করা হয়েছে। ২ঃ২৩৯; ৪ঃ১১৩ -এ কুরআনের সঙ্গে হি’কমাতের অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ আছে। কুরআনে, কুরআনকে “আল-ফুরকা’ন”-ও বলা হয়েছে।
“সূরা(سورة)” শব্দটি আরবী সূর (নগর প্রাচীর) হতে গৃহীত একবচনজ্ঞাপক যোগ করিয়া গঠিত। সূরার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্দিষ্ট অংশকে আয়াত বলা হয়। হিব্রু ‘ওত’ শব্দের ন্যায় ইহা বিশেষ অর্থে নিদর্শন, বিশ্বাসের নিদর্শন (২ঃ২৪৮; ৩ঃ৪১; ২৬ঃ১৯৭) বিশেষত আল্লাহর অস্তিত্ব ও ক্ষমতার নিদর্শন (১২ঃ১০৫; ৩৬ঃ৩৩) বুঝায়। তাই এটি দ্বারা অলৌকিক ঘটনাকে’ও (মু’জিযাঃ) বুঝায় (৩ঃ৪৯; ৪৩ঃ৪৬)। মুহাম্মদ যে আল্লাহর নবী এর প্রমাণস্বরুপ মক্কার পৌত্তলিকরা তার নিকট অলৌকিক ক্রিয়া (মু’জিযাঃ) দেখানোর দাবী করত। যেহেতু প্রেরিত ওহীগুলোই তার অন্যতম মু’জিযাঃ (৬ঃ১৫৮; ৭ঃ২০৩; ২০ঃ১৩৩; ২৯ঃ৫০) সেজন্যই এগুলোর নাম আয়াত হয়েছে। আয়াতগুলো উর্ধ-জগত হতে (২ঃ৯৯; ২৮ঃ৮৭) আল্লাহর নবীর নিকট (২ঃ২৫২; ৩ঃ৫৮; ৪৫ঃ৫) পাঠানো হত এবং পূর্ববর্তী নবীগনের ন্যায় (২৮ঃ৫৯) তিনিও উহা লোকদেরকে আবৃত্তি করে শোনাতেন (২ঃ১৫১; ৩ঃ১৬৪; ৬৫ঃ১১)।
আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা করেন, (২ঃ১৮৭) ; “তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে” (৩ঃ১১৩); “আর কাফিররা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।” (২৯ঃ৪৭)। আবার কিছু যায়গায় গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আয়াতসমূহের প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। যেমন,”আর আমি এতে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি”(২৪ঃ১); “একটি কিতাব যাহা আমি পাঠাইয়াছি, যেন তাহারা ইহার আয়াতগুলি সমন্ধে চিন্তা করিতে পারে” (৩৮ঃ২১); “এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত” (১০ঃ১; ৩১ঃ১) ; “এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত” (১২ঃ১; ২৬ঃ১; ২৮ঃ১) ; “এ হল কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াতসমূহ” (১৫ঃ১) ; “এইগুলি আল-কু’রআন ও স্পষ্ট বিবরণদানকারী” (কিতাব) (২৭ঃ১)। “একটি কিতাব যার আয়াতগুলি দৃড়রূপে প্রথিত “, (১১ঃ১, ১৩,১)। কিতাবে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং বিভিন্ন অর্থবোধক আয়াতসমূহ আছে (৩ঃ৭)। যেমন, “আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মত আনয়ন করি
” (২ঃ১০৬)। “যদি আমি এক আয়াত অন্য আয়াত দ্বারা বদল করি (১৬ঃ১০১)।
এইসব বিবরণ হতে মুহাম্মদ এর উপর অবতীর্ণ ওহীর বিষয়বস্তু সমন্ধে জানা যায় “উহা সুরক্ষিত ফলক বা লাওহ’ মাহ্’ফুজ’ হইতে অবতীর্ণ হইয়াছে” (৮৫ঃ২২)। ” ইহা একটি সুরক্ষিত পুস্তকে রহিয়াছে” (৫৬ঃ৭৯)। “ইহা আমার নিকট মূল কিতাবে রহিয়াছে” (৪৩ঃ৪; ৩ঃ৭)। আল-কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, “ইহা একটি উপদেশ-গ্রন্থ যাহা সম্মানিত, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং পবিত্র পত্রসমূহে মহান ন্যায়নিষ্ঠ লেখকদের হস্তে লিপিবদ্ধ” (৮০; ১১-১৬)। ৫২ঃ৮২ আয়াতে বিস্তারিত পত্রে লিখিত কিতাবের শপথ করা হয়েছে এবং ৬৮ঃ১ -এ বলা হয়েছেঃ “কলম ও যাহা দ্বারা লেখা হয় তাহার শপথ” এবং ৯৬ঃ৪-৫ এ বলা হয়েছে “কলম দ্বারা তিনি মানবকে শিক্ষা দিয়েছেন যাহা সে জানিত না” তাঁকে আরও বলা হয়েছে, “তোমার রাব্ব- এর কিতাব হইতে যাহা তোমার প্রতি ওয়াহ্’য়িরূপে পাঠানো হইয়াছে তাহা পাঠ কর”। “আল্লাহর কথা কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না ” (১৮ঃ২৭)। ৪ঃ১৬৪; ৪০ঃ৭৮ – এ বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁহাকে কতক নবীর কথা বলিয়াছেন এবং কতক নবীর কথা বলেন নাই।
রাসূল এর উপর অবতীর্ণ ওহী থেকেই উম্মুল কিতাব (৪৩ঃ৪) এর মূল বিষয়বস্তু ধারণা করে নেয়া যায়। সেগুলো হল, আল্লাহর সত্তা, বিশ্ব সৃষ্টি – বিশেষত মানব সৃজন, ভাল ও মন্দ আত্না-সমূহের সৃষ্টি, শেষ বিচার, জান্নাত,জাহান্নাম, পূর্ববর্তী নবী গনের অভিজ্ঞতা, আল্লাহর ইবাদত ও সামাজিক জীবন সম্বন্ধীয় যাবতীয় আইন-কানুন এবং বিশেষ বিশেষ আইন (৪ঃ১০৩, ১২৭,১৩৮; ৩৩ঃ৬)। বার মাসের উল্লেখ প্রসঙ্গে (৯ঃ৩৬) এবং ২২ঃ৪ -এ শয়তান কতৃক মানবকে প্রলুব্ধ করার প্রয়াস প্রসঙ্গে বিশ্ব সৃজন-তত্ত্বের আভাষ দেয়া হয়েছে। এমনকি, বিশ্বে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে এবং সংঘটিত হবে তার সব কিছুই ঐ উম্মুল কিতাবে আছে (১০ঃ৬১; ২৭ঃ৭৫; ৩৪ঃ৩; ৬ঃ৩৮,৫৯; ১১ঃ৬; ২০ঃ৫১; ১৭ঃ৫৮)।
কুরআনের অনেকগুলি নামের মধ্যে বিশেষ চারটি নাম হল আল-কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব ও আয-যিক্’র। ‘আল-কুরআন’ নামের অর্থ ‘যাহা পঠিত হয়’। এটি বহু আয়াত ও সূরার সংকলন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কুরআনের প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দটি হল ‘ইকরা’-‘পাঠকর’। ‘আল-ফুরকান’ নামের অর্থ পার্থক্যকারী, সত্য ও মিথ্যার, আলো ও অন্ধকারের এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্যকারী। ‘আল্-কিতাব’ অর্থ লিখিত গ্রন্থ যা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ‘আয-যিক্’র’ নামের অর্থ উপদেশ যা আল্লাহ্-তা‘আলা স্বীয় বান্দাগণকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের নিমিত্তে দিয়েছেন।
মুসলমানদের মতে এটি আল্লাহর বাণী বা বক্তব্য, যা ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। তাদের মতে এটি একটি মুজিজা বা অলৌকিক গ্রন্থ যা মানব জাতির পথনির্দেশক। মুসলমানদের বিশ্বাস, কুরআনে মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।[২০]
ইতিহাস
নবীর যুগ
ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, হেরা গুহায় অবস্থানকালে মুহাম্মাদের নিকট প্রথম কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। এরপর ২৩ বছর ধরে তার নিকট কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। হাদিস ও মুসলিম ইতিহাস অনুসারে, মুহাম্মাদ মদীনায় হিজরত করে একটি স্বাধীন মুসলিম সম্প্রদায় গঠন করার পর তিনি তাঁর অনেক সাহাবাকে কুরআন তেলাওয়াত ও এর শিক্ষা গ্রহণ করে ছড়িয়ে দিতে আদেশ দেন, যা নিয়মিত অবতীর্ণ হতো। বলা হয় যে, কিছু কুরাইশ যাদেরকে বদর যুদ্ধে বন্দী করা হয়েছিল, তারা কিছু মুসলিমকে তৎকালীন সরল লিখন পদ্ধতি শেখানোর পর তাদের স্বাধীনতা ফিরে পায়। এইভাবে মুসলমানদের একটি দল ধীরে ধীরে সাক্ষর হয়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে, খেজুরের ডাল, হাড় ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত লিখিত হয়। যাইহোক, ৬৩২ সালে মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় কুরআন বইয়ের আকারে লিপিবদ্ধ ছিল না।[২১][২২][২৩] আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে মুহাম্মাদ নিজে আয়াতগুলো লেখেননি।[২৪]
সংকলন
মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় তার তত্ত্বাবধানে প্রথম পূর্ণ কুরআন লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু এগুলো এক জায়গায় একত্রিত করা হয়নি। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর এর যুগে দ্বাদশ হিজরি সালে ইয়ামামার যুদ্ধ সত্তর জন হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন।এতে হযরত ওমর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি খলিফাআবু বকর কে বলেন,
“
“এভাবে জিহাদেহাফেজগনশহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অতএব, আপনি কুরআন মাজিদ একত্রে সংকলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”
”
প্রথমে আবু বকর রাজি না হলেও ওমর এর অনুরোধে রাজি হন। কুরআন সংরক্ষণের এ দ্বায়িত্ব মুহাম্মাদ এর সময়ের ওহি লেখক সাহাবি যায়েদ ইবনে সাবিত এর উপর প্রদান করা হয়।
যায়েদ ইবনে সাবিত নিজে হাফেজে কুরআন ছিলেন। তিনি কুরআন সংকলন করার ব্যাপারে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। একটি হলো-কুরআনের আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সাহাবা মুখস্থ বলবেন, অপরটি হলো তিনি মুহাম্মাদ এর সময়ে লিখিত ঐ আয়াতটি প্রদর্শন করবেন। তিনি লিখিত ছাড়া কুরআনের আয়াত সত্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করেননি। তিনি বহু যাচাই বাছাই করার পর সাহাবায়ে কেরামের নিকট রক্ষিত মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় লিখিত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি থেকে সে সময়ের আবিষ্কৃত বিশেষ কাগজে গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ (যা সউফ নামে পরিচিত[২৫]) করেন। লিপিবদ্ধ কুরআনটি হযরত আবু বকর এর তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। তার ওফাতের পর এটি হযরত ওমর এর হেফাজতে থাকে। তার শাহাদাতের পর তারই ওসিয়ত অনুসারে কুরআনের এ প্রতিলিপিটি মুহাম্মাদ এর স্ত্রী বিবি হাফসা এর নিকট গচ্ছিত থাকে। তৃতীয় খলিফাউসমান এর যুগে ইসলামি সম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ইসলামের এ প্রসারের ফলে বিভিন্ন জাতি ও ভাষাভাষী লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের অনেকেই কুরআনের গঠন পদ্ধতি অনুসরণ করে কুরআনের বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করতে পারত না। বিশেষ করে আরমেনিয়া এবং আজারবাইজান যুদ্ধে সমবেত মুসলমানদের কুরআন পাঠ পদ্ধতির বিভিন্নতা দেখে বিশিষ্ট সাহাবিহুযাইফা, খলিফাউসমান কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি অবিলম্বে এ নিয়ে নেতৃস্থানীয় সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে চার জন বিশিষ্ট সাহাবা সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করেন। এ চার জন সাহাবা হচ্ছেন-
হযরত উসমান এর উদ্যোগে হিজরি ২৪ সালে শেষবারের মতো কুরআন সংকলনের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বোর্ড হযরত হাফসা এর নিকট সংরক্ষিত মূল কপিটি সংগ্রহ করেন।[২৭][২৮] উক্ত বোর্ড পূর্বলিখিত প্রতিলিপিটি অনুসরণ করে পাঠ ও উচ্চারনের বিভিন্নতা দূর করার জন্য শুধু কুরাইশি উচ্চারণ ও ভাষায় তার আরও সাতটি প্রতিলিপি প্রস্তুত করেন। বর্ণিত আছে যে, সাতটি প্রতিলিপি তৈরি করে মক্কা, শাম, ইয়েমেন,বাহরাইন, বসরা ও কুফা প্রদেশে একটি করে প্রেরণ করা হয়। আর রাজধানী মদিনাতে একটি কপি খলিফার নিকট সংরক্ষিত রাখা হয়।[২৯] এরপর বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে সংরক্ষিত প্রতিলিপিগুলো সকলের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।[৩০] এভাবে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রা.-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পবিত্র কুরআন সংকলিত ও বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরিত হয় বিধায় তাকে “جمع القرآن ” বা কুরআন সংগ্রহকারী বলা হয়।
ইসলামী পরিভাষা অনুযায়ী, কুরআনের অলৌকিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই বিশ্বাসকে ইজায বলা হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে আল কুরআন একটি ঐশ্বিক গ্রন্থ যা কোনো মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় ও যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত কার্যকর এবং এর মাধ্যমে এই গ্রন্থ মুহাম্মাদের নবীত্বের মর্যাদার অনুমোদনে প্রদত্ত মূল প্রমাণ। কুরআনেই অননুকরণীয়তা ধারণাটির উৎপত্তি, যেখানে পাঁচটি ভিন্ন আয়াতে এর বিরোধীদের কুরআনের মত কিছু তৈরী করতে আহ্বান করা হয়: “যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জ্বীন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবেনা।”[৩১] নবম শতাব্দী থেকে অসংখ্য রচনা প্রকাশিত হয়েছে যাতে কুরআন ও এর শৈলী ও বিষয়বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। আল জুরজানি (মৃত্যু ১০৭৮) ও আল বাকিলানি (মৃত্যু ১০১৩) সহ মধ্যযুগীয় মুসলিম পণ্ডিতেরা এই বিষয়ে লিখেছেন, এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কুরআন অধ্যয়নের জন্য ভাষাগত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও অন্যরা বলেছেন যে কুরআনে মহৎ ধারণা আছে, অন্তর্নিহিত অর্থ আছে, এই গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে এর সতেজতা বজায় রেখেছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিছু পণ্ডিত বলেন যে কুরআনে বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কুরআনের অলৌকিকতার মতবাদ প্রমাণে মুহাম্মাদের নিরক্ষরতার উপর আরও জোর দেওয়া হয় যেহেতু নিরক্ষর মুহাম্মাদের পক্ষে এই গ্রন্থ রচনা মোটেই সম্ভব নয়।[৩২][৩৩]
নামাজে কুরআন তেলাওয়াত
নামাজে বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা আবশ্যক। নামাজে কিরাআত তিলাওয়াতের বিষয়াবলী জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলানো ওয়াজিব। কমপক্ষে তিন আয়াত বা তিন আয়াতের সমপরিমাণ বড় এক আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে।
ইসলামী শিল্পকলায়
এছাড়াও কুরআন ইসলামী শিল্প ও বিশেষ করে তথাকথিত কুরআনী চারুলিপি ও চিত্রায়নের পদ্ধতিকে অনুপ্রাণিত করেছে।[৩৪] কুরআনে কখনোই চিত্র ব্যবহার করা হয়নি তবে অনেক কুরআনে পাতার প্রান্তে, সূরার মাঝখানে বা শুরুতে বিভিন্ন ধাঁচে অলঙ্করণ করে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদের বাতি, ধাতব বা মৃৎপাত্রে কুরআনের আয়াত মুদ্রিত হয়েছে।
কুরআনের নাযিল হওয়া প্রথম চার আয়াত; ৯৬তম সূরা আলাক
কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের (আয়াত আরবি শব্দ, এর সাহিত্যিক অর্থ নিদর্শন) সংখ্যা প্রায় ৬,২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮টি অথবা ৬৬৬৬টি)।[৩৫] প্রত্যেকটি সূরার একটি নাম রয়েছে। নামকরণ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়েছে; তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই নাম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমন নামও পাওয়া যায় যা সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয় নি যেমন সূরা ফাতিহা। ফাতিহা শব্দটি এ সূরার কোথাও নেই। সূরাগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট সজ্জা রয়েছে। সজ্জাকরণ তাদের অবতরণের ধারাবাহিকতা অনুসারে করা হয় নি। বরং দেখা যায় অনেকটা বড় থেকে ছোট সূরা অনুযায়ী সাজানো। অবশ্য একথাও পুরোপুরি সঠিক নয়। সজ্জার প্রকৃত কারণ কারও জানা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বড় সূরাও ছোট সূরার পরে এসেছে। তবে একটি সূরা বা তার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকতার সাথেই অবতীর্ণ হয়েছিল বলে মুসলমানদের ধারণা। কুরআনের সজ্জাটি মানুষের মুখস্থকরণের সুবিধার সৃষ্টি করেছে।
হিজ্ব বা মানজিল হচ্ছে কুরআনের প্রথম সূরা (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত অন্য সূরাগুলো নিয়ে করা একটি শ্রেণি। হিজ্ব মুফাস্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করা। এতে ৭টি মানজিলের মাধ্যমে সবগুলো সূরাকে একসাথে করা হয়েছে।[৩৬] মানজিলগুলো হচ্ছে:
মানজিল ১ = ৩ টি সূরা, যথা, ২—৪
মানজিল ২ = ৫ টি সূরা, যথা, ৫—৯
মানজিল ৩ = ৭ টি সূরা, যথা, ১০—১৬
মানজিল ৪ = ৯ টি সূরা, যথা, ১৭—২৫
মানজিল ৫ = ১১ টি সূরা, যথা, ২৬—৩৬
মানজিল ৬ = ১৩ টি সূরা, যথা, ৩৭—৪৯
মানজিল ৭ = ৬৫ টি সূরা, যথা, ৫০—১১৪
কুরআনে মোট ৩০ টি পারা বা অধ্যায় রয়েছে। ১১৪টি পূর্নাঙ্গ সূরা রয়েছে। সূরাগুলো বিভিন্ন আকারের হলেও কুরআনের পারাগুলো প্রায় সমান আকারের। কুরআন মুখস্থকরণের ক্ষেত্রে সাধারণতম পারা অনুযায়ী শিক্ষা করানো হয়। যে সকল স্থানে সমগ্র কুরআন পাঠের আয়োজন করা হয় সেখানেও এই পারা অনুযায়ী করা হয়।
বিষয়বস্তু
কুরআনের বিষয়বস্তু আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পুনরুত্থান সহ মৌলিক ইসলামী বিশ্বাসসমূহ বর্ণনা করে। পূর্বের নবিগণের বিবরণ, নৈতিক ও আইনগত বিষয়, মুহাম্মাদের সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা, দানশীলতা ও নামাজের কাহিনীও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের আয়াতে ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে সাধারণ উপদেশ রয়েছে এবং এতে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সাধারণ নৈতিক পাঠের রূপরেখা প্রদান করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে মুসলিমরা কুরআন এর বার্তার সত্যতার ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করে।[৩৭]
একেশ্বরবাদ
কুরআনের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো একেশ্বরবাদ। আল্লাহ জীবন্ত, শাশ্বত, সর্বব্যাপী এবং সর্বশক্তিমান হিসেবে বর্ণিত (দেখুন কুরআন ২:২০, ২:২৯, ২:২৫৫)। আল্লাহর শক্তিমত্তা তার সৃষ্টির ক্ষমতায় সর্বোপরি আবির্ভূত হয়। তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টা (দেখুন কুরআন ১৩:১৬, ২:২৫৩, ৫০:৩৮ ইত্যাদি)। কুরআন এর মতে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ নির্ভরতার দিক দিয়ে সকল মানুষ সমান এবং এই সত্যকে স্বীকার করা ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
কুরআনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বিভিন্ন আয়াতে সৃষ্টিতাত্ত্বিক যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ,মহাবিশ্ব প্রবর্তিত হয়েছে সুতরাং এর একজন প্রবর্তক প্রয়োজন এবং যা কিছু বিদ্যমান, সবকিছুর অস্তিত্বের জন্যই একটি যথার্থ কারণ থাকতে হবে। এছাড়া, এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের কথাও প্রায়ই উল্লেখ করা হয়েছে: “যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?”[৩৮][৩৯]
পরলোকতত্ত্ব
নবীগণ
নৈতিকতাত্ত্বিক ধারণা
বিজ্ঞানের জন্য উৎসাহ
সাহিত্যিক গঠন
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ইসা বাউলাতা কুরআনের সাহিত্যিক গঠনপ্রণালি সম্বন্ধে নিম্ন প্রকারের মন্তব্য করেছেন।[৪০]
“
কুরআনের বার্তাগুলো বিভিন্ন সাহিত্যিক গঠনে প্রকাশিত হয়েছে, যা আরবি সাহিত্যের সবচেয়ে নিখুঁত লিখিত রচনা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কুরআনের ভাষার উপর ভিত্তি করেই আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়েছে, এবং মুসলিম অলঙ্কার শাস্ত্রবিদদের বর্ণনামতে, কুরআনের বাগধারাগুলো ভীষণ সুন্দর এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত হয়… উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, কুরআন এর বার্তা প্রকাশ করার নিমিত্তে বিপুল প্রকার ও শ্রেণির সাহিত্যিক উপাদানের সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছে।
”
কুরআনের ব্যাখ্যা কোরআন নিজেই দেয়।
ব্যাখ্যা
কুরআনের আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা এবং তাদের তাৎপর্য খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে যাকে তাফসীর বলা হয়। তাফসীর মুসলিমদের প্রাচীনতম কেতাবি কার্যক্রমগুলির একটি। কুরআন অনুসারে, মুহাম্মাদ প্রথম ব্যক্তি যিনি মুসলমানদের জন্য আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেন।[৪১] অন্যান্য প্রারম্ভিক দৃষ্টান্তের মধ্যে কয়েকজন সাহাবা যেমন আবু বকর, উমর ইবনুল খাত্তাব, উসমান ইবন আফফান, আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবিত, আবু মুসা আশয়ারী এবং আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের।[৪২] সে সময় ব্যাখ্যা-পদ্ধতি, আয়াতের সাহিত্যিক দিকগুলির ব্যাখ্যা, এর শানে নুযূল এবং মাঝে মাঝে অন্য আয়াতের সাহায্যে কোনো আয়াতের ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদি আয়াতটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বন্ধীয় হয়, তাহলে কখনও কখনও মুহাম্মাদ এর কিছু হাদিস বর্ণনা করে এর অর্থ স্পষ্ট করা হতো।[৪৩]
যেহেতু কুরআন ধ্রুপদী আরবী ভাষায় উচ্চারিত হয়, পরবর্তী ধর্মান্তরিতদের অনেকেই (অধিকাংশই অ-আরব) সবসময় কুরআন এর আরবি বুঝতো না, আরবী ভাষায় সাবলীল ব্যক্তির কাছে যেসব অভিব্যক্তি সুস্পষ্ট তা তারা বুঝতে সক্ষম ছিলো না। আরবী ভাষার ভাষ্যকাররা এই অভিব্যক্তিগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং মুহাম্মাদের নবীত্বের শুরুতে কোন আয়াতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রাচীনতম মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য উপযুক্ত, এবং কোনগুলো পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন, এর ভিত্তিতে পুরাতন পাঠ্যগুলো (মানসুখ) বাতিল (নাসিখ) করা হয়েছে।[৪৪][৪৫] তবে অন্যান্য কিছু আলেমগণ মনে করেন যে কুরআনের কোন আয়াত বাতিল করা হয়নি।[৪৬]
কুরআন অনুবাদ করা সবসময়ই সমস্যাজনক এবং জটিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বলেন যে কুরআনের পাঠ্য অন্য ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব নয়।[৪৭] উপরন্তু, প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে একটি আরবি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে, যা একটি যথাযথ অনুবাদ প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে তোলে।[৪৮]
তা সত্ত্বেও, কুরআন অধিকাংশ আফ্রিকান, এশীয় এবং ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।[৩২] ইসলামের প্রথম যুগে, সপ্তম শতাব্দীতে, সালমান আল-ফারসি সূরা ফাতিহাকে ফারসি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কুরআন অনুবাদের সূচনা করেন।[৪৯] ইতোপূর্বে মুহাম্মাদ, আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশী বা নিগাস ও বাইজেন্টাইনের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট পাঠানো চিঠিতে কুরআনের আংশিক অনুবাদ প্রেরণ করেন।[৪৮] হিন্দু রাজা মেহরুকের অনুরোধে আবদুল্লাহ বিন উমর বিন আব্দুল আজিজের নির্দেশে ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে আলওয়ারে (সিন্ধু, ভারত, বর্তমানে পাকিস্তান) ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসীদের জন্য কুরআনের আরেকটি অনুবাদ সম্পন্ন হয়।[৫০]
কুরআনের প্রথম সম্পূর্ণ অনুবাদ ফার্সি ভাষায় ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। সামানি সম্রাট প্রথম মনসুরের শাসনামলে (৯৬১-৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ), তার উদ্যোগে, খোরাসানের একদল পণ্ডিত আরবী ভাষায় লিখিত তাফসির আল-তাবারী কে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে একাদশ শতাব্দীতে আবু মনসুর আব্দুল্লাহ আল-আনসারির একজন ছাত্র ফার্সি ভাষায় কুরআনের একটি সম্পূর্ণ তাফসীর লেখেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে, নাজম আল-দীন আবু হাফস আল-নাসাফি ফার্সি ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন। তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ১০২ টি ভাষায় কুরআন অনুবাদিত হয়েছিল।[৪৮] বর্তমানে পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলোর প্রায় সবগুলোতেই কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ রয়েছে। ২০১০ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ১৮তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীতে ১১২টি ভাষায় অনুবাদিত কুরআন উপস্থাপিত হয়।[৫১]
১১৪৩ খ্রিস্টাব্দে পিটার দ্য ভেনারেবল এর জন্য লাতিন ভাষায় রবার্ট কেটন এর করা কুরআন এর অনুবাদটি পাশ্চাত্য ভাষায় কুরআন এর প্রথম অনুবাদ ছিল।[৫২] ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ভাষায় আন্দ্রে দু রায়ার এর অনুবাদটি ব্যবহার করে ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে আলেকজানডার রস্ কুরআনের প্রথম ইংরেজী অনুবাদটি সম্পন্ন করেন। ১৭৩৪ সালে জর্জ সেল কুরআনের প্রথম পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ ইংরেজিতে প্রকাশ করেন; আরেকটি ১৯৩৭ সালে রিচার্ড বেল কর্তৃক এবং আরও একটি ১৯৫৫ সালে আর্থার জন আর্বেরি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই সকল অনুবাদকেরাই অমুসলিম ছিলেন। মুসলিমদের দ্বারাও ইংরেজিতে কুরআন অনুবাদিত হয়েছে। আধুনিক ইংরেজিতে মুসলিম অনুবাদকদের প্রকাশিত কুরআন এর মধ্যে রয়েছে দ্য অক্সফোর্ড ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক কর্তৃক প্রকাশিত মুহাম্মাদ আবদেল হালিম এর অনুবাদ, ড. মুস্তাফা খাত্তাব এর অনুবাদ দ্য ক্লিয়ার কুরআন, সহিহ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদ ইত্যাদি।
পাঞ্জাবের মোগা জেলায় কুরআন এর প্রাচীনতম গুরমুখী অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে, যা ১৯১১ সালে মুদ্রিত হয়েছিল।[৫৩]
আন্তঃরৈখিক ফার্সি অনুবাদসহ ইলখানাত যুগের আরবী কুরআন।
১৬৪৭ সালে ইউরোপীয় ভাষায় প্রথম মুদ্রিত কুরআন।
জার্মান ভাষায় কুরআন এর প্রথম অনুবাদের নামপত্র।
চীনা ভাষায় কুরআন এর অনুবাদে সূরা ইয়াসীনের আয়াত ৩৩ ও ৩৪।
কুরআনের যথাযথ তেলাওয়াত হলো তাজবিদ নামের একটি পৃথক শৃঙ্খলার বিষয় যা কীভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত, প্রতিটি স্বতন্ত্র বর্ণনামূলক উচ্চারণ কীভাবে করা উচিত, যে স্থানে বিরতি থাকা উচিত সেখানে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন, উচ্চারণের ক্ষেত্রে যেখানে উচ্চারণটি দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত, যেখানে বর্ণগুলি এক সাথে শোনা উচিত এবং যেখানে সেগুলি পৃথক রাখা উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলি বিশদভাবে নির্ধারণ করে। বলা যেতে পারে যে, এই অনুশাসনটি কুরআনের সঠিক তেলাওয়াতের আইন ও পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করে এবং তিনটি মূল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে: ব্যঞ্জনধ্বনি এবং স্বরধ্বনির যথাযথ উচ্চারণ (কুরআনীয় ধ্বনির উচ্চারণ), আবৃত্তিতে বিরতি দেওয়ার নিয়ম এবং পুনরায় শুরুকরণের নিয়ম, এবং আবৃত্তির বাদ্যযন্ত্র এবং সুমধুর বৈশিষ্ট্য।[৫৪]
কুরআনের ভুল তেলাওয়াত এড়াতে, তেলাওয়াতকারীরা একজন উপযুক্ত শিক্ষকের সাথে প্রশিক্ষণের একটি প্রোগ্রাম অনুসরণ করেন। তাজবিদ বিধিগুলির জন্য উল্লেখ হিসাবে ব্যবহৃত দুটি জনপ্রিয় গ্রন্থ হলো ইবনে আল-জাজারি রচিত মাতন আল-জাজারিয়াহ[৫৫] এবং সুলায়মান আল জামজুরি রচিত তুহফাত আল-আতফাল।
মুরাত্তাল, যা ধীর গতিতে, অধ্যয়ন এবং অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মুজাওয়াদ, একটি ধীর তিলাওয়াতকে বোঝায় যা প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা জনসাধারণের পরিবেশনার মতো উচ্চতর প্রযুক্তিগত শৈল্পিকতা এবং সুরেলা মড্যুলেশন স্থাপন করে।[৬০]
বৈকল্পিক পাঠ
লিখন ও মুদ্রণ
লিখন
১৯ শতকে ব্যাপকভাবে মুদ্রণ প্রচলিত হওয়ার পূর্বে, কুরআন ক্যালিগ্রাফার ও অনুলিপিকারীদের তৈরিকৃত অনুলিপির মাধ্যমেই হস্তান্তরিত হতো। প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিগুলো হেজাজি লিপিতে লেখা হয়েছিল। হেজাজি শৈলীর পাণ্ডুলিপি অন্তত এটা নিশ্চিত করে যে লিখিতভাবে কোরআন এর প্রসার প্রাথমিক পর্যায়েই শুরু হয়েছিল। সম্ভবত নবম শতাব্দীতে, লেখাগুলোতে পুরু রেখার ব্যবহার শুরু হয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে কুফিক লিপি নামে পরিচিত। নবম শতাব্দীর শেষের দিকে, কুরআনের অনুলিপিগুলোতে নতুন ধরণের লিপি আবির্ভূত হতে শুরু করে যা পূর্ববর্তী লিপিকে প্রতিস্থাপন করে। পূর্ববর্তী শৈলীর ব্যবহার বন্ধ করার কারণ ছিল যে, ঐ পদ্ধতিতে অনুলিপি তৈরী করতে অনেক সময় লাগতো কিন্তু সেসময় অনুলিপির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছিল। অনুলিপিকারীরা তাই লেখার সহজ শৈলীটিই বেছে নেয়। একাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে, ব্যবহৃত শৈলী ছিল প্রাথমিকভাবে নাসখ, মুহাক্কাক, রায়হানি এবং কিছু বিরল ক্ষেত্রে সুলুস লিপি। নাসখ খুব ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা এবং ইবেরিয়াতে, মাগরিবি শৈলী অধিক জনপ্রিয় ছিল। আরও স্বতন্ত্র হলো বিহারী লিপি যা শুধুমাত্র ভারতের উত্তরাঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়েছিল। নাস্তালিক শৈলী ফার্সি বিশ্বে খুব কমই ব্যবহৃত হয়।[৬১][৬২]
শুরুতে, কুরআন বিন্দু বা হরকত সহ লেখা হতো না। এই বৈশিষ্ট্য সর্বশেষ সাহাবাহদের জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে যোগ করা হয়। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিমদের জন্যই পাণ্ডুলিপি কেনা খুবই ব্যয়বহুল ছিল, তাই কুরআনের কপিগুলো মসজিদে রাখা হতো যাতে তা জনগণের কাছে সুলভ হয়। উৎপাদনশীলতার দিক থেকে, উসমানীয় অনুলিপিকারীরাই সর্বোত্তম নিদর্শন তৈরী করে। এর কারণ ছিল ব্যাপক চাহিদা, মুদ্রণ পদ্ধতির অজনপ্রিয়তা এবং নান্দনিকতা।[৬৩][৬৪]
এই অনুচ্ছেদটি খালি।আপনি এখানে যোগ করে সাহায্য করতে পারেন।
অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে সম্পর্ক
রানী বিলকিসের ‘রাজা সুলাইমানের কাছে সফর’। এডওয়ার্ড পয়েন্টার, ১৮৯০। তাওরাতের মতে, সুলাইমান ছিলেন একজন রাজা, যার সাতশত স্ত্রী এবং তিনশত উপ-পত্নী তার বৃদ্ধ বয়সে পথভ্রষ্ট হয় এবং মূর্তি পূজা শুরু করে[৬৫]। তাকে কুরআনে একজন রাজা-নবী-শাসক ও জ্বিন এবং প্রকৃতির শাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিছু অমুসলিম দল যেমন বাহাই এবং দ্রুজরা কোরআনকে পবিত্র মনে করে। একেশ্বর সার্বজনীনবাদীরাও কুরআন থেকে অনুপ্রেরণা চাইতে পারেন। কুরআনের সাথে ডায়াতেসারন, জেমসের প্রোটোয়েভেঞ্জেলিয়াম, ইনফ্যান্সি গসপেল অব থমাস, স্যুডো-ম্যাথিউ গসপেল এবং আরবী ইনফ্যান্সি গসপেলের সাথে কিছু আখ্যানের মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।[৬৬][৬৭][৬৮] একজন পণ্ডিত পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি গসপেল হারমনি হিসেবে ডায়াতেসারনকে ক্রিশ্চিয়ান গসপেলের একটি পাঠ্য হিসেবে ধারণা করা হয়েছে।[৬৯]
বাইবেল
“
তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী বিষয়ের সত্যতা প্রতিপাদনকারী। এবং এর পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছিলেন।[৭০]
”
কুরআনে পূর্বের কিতাবগুলোর (তওরাত ও ইঞ্জিল) সাথে তার সম্পর্ককে তাদের অনন্য উৎপত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এগুলো সবই এক আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে।[৭১]
ক্রিস্টোফ লাক্সেনবার্গের (দ্য সিরো-আরামাইক রিডিং অব দ্য কোরান বইয়ে) মতে কুরআনের ভাষা সিরিয়াক ভাষার অনুরূপ ছিল। কুরআনে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পবিত্র বই (তানাক, বাইবেল) এবং ভক্তিমূলক সাহিত্যে বর্ণিত অনেক মানুষের কাহিনী এবং ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত বিবরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।[৭২]অ্যাডাম, এনোচ, নূহ, ইবার, শেলা, অব্রাহাম, লূত, ইসমাইল, ইস্ হাক, যাকোব, যোষেফ, জেথ্রো, দায়ূদ, শলোমন, এলিয়, ইলীশায়, যোনা, হারোণ, মোশি, জাকারিয়া, বাপ্তিস্মদাতা ও যীশুকে ঈশ্বরের নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত, কুরআনে অন্য যে কোন ব্যক্তির তুলনায় মূসাকে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[৭৩] ঈসাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর চেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয় (মুহাম্মদ নামকে প্রায়ই “নবী” বা “রসূল” বলে উল্লেখ করা হয়), অন্যদিকে মরিয়মকে নতুন টেস্টামেন্টের চেয়ে কুরআনে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[৭৪]
^[টী১] সাহিত্যিক আরবি উচ্চারণ আঞ্চলিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। প্রথম স্বরের শব্দ “ও” বা “উ” হতে পারে, আর দ্বিতীয় স্বরের শব্দ “অ্যা” বা “আ” হতে পারে। উদাহরণে : মিশরে উচ্চারণ হবে “কোর’আন” আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে উচ্চারণ হবে “কুর’অ্যান”।
কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ (আরবি: الكعبة al-Ka‘bah; আ-ধ্ব-ব: [‘kɑʕbɑ]), আরও যে নামে পরিচিত al-Kaʿbatu l-Mušarrafah (الكعبة المشرًّفة), al-Baytu l-ʿAtīq (البيت العتيق “আদিম বাড়ি”), অথবা al-Baytu l-Ḥarām (البيت الحرام “পবিত্র বাড়ি”), একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবেরমক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্ম মতে কাবা কে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়।[১] এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ তারা যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে। পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ পরেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।[১]
কাবা কালো সিল্কের উপরে স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি করা কাপড়ের গিলাফে আবৃত থাকে। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে পরিচিত ; যা প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়।[২][৩] এ কাপড়ের মধ্যে সুতা দিয়ে কালেমা শাহাদাত লিখা হয়। এর দুই তৃতীয়াংশ স্থাণে কোরানের বাণী স্বর্ণ দিয়ে এম্রোয়ডারি করা হয়।
কিবলা
কিবলা হচ্ছে নামাজের জন্য মুসলমানদের যেদিকে মুখ করা দাঁড়াতে হয়, সেই দিকটি। অনেক ধর্মেই উপাসনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিক থাকে। সেরকমই মুসলমানদের জন্য কিবলা হচ্ছে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম, যা কাবা শরিফ নামে বেশি পরিচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রথমে কাবা শরিফ কিবলা ছিল না। বরং প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মদীনায় হিজরতের ষোল মাস পর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কিবলা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের কিবলা অর্থাৎ কাবা শরীফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।
তাওয়াফ
তাওয়াফ হল ঘড়ির কাটার বিপরীতমুখী হয়ে কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা। কাবার চারদিকে একত্রে ঘুরন্ত মুসলমানেরা এক আল্লাহ্র নামে একাত্মতা প্রকাশ করার জ্বলন্ত উদাহরণ । তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হাজারে আসওয়াদে চুমু দেয়ার নিয়ম। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
হজের গুরুত্বপূর্ণ রোকন তাওয়াফ। তাছাড়া হজ নির্দিষ্ট ৫ দিনে সম্পন্ন হয়। কিন্তু হজের সফরে হাজিগণ দীর্ঘ দিন মক্কায় অবস্থান করে। এ সময়ে প্রতিনিয়ত তাঁরা তাওয়াফ করবেন।
তাওয়াফের অনেক ফজিলত রয়েছে। সে কারণেই তাওয়াফ যেন সঠিক এবং সহিহ হয়ে সে জন্য তাওয়াফের নিয়ম-কানুন জানা জরুরি। তাই ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
তাওয়াফ শুরুর স্থান পবিত্র কাবা শরিফের যে কোনায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত, সেই কোনা থেকে মাতআফের (তাওয়াফের জায়গার) ওপর দিয়ে মসজিদে হারামের দিকে একটা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া আছে এবং কাবা শরিফের গিলাফের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আরবিতে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দের ক্যালিগ্রাফি খচিত লেখা রয়েছে। সে বরাবর দাগের ওপর দাঁড়ানো।
তাওয়াফ শুরু করার আগে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা অথবা স্পর্শ করা; সম্ভব না হলে দাগের ওপর দাঁড়িয়ে চলা শুরু করার সময় নামাজের নিয়ত বাঁধার মতো করে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার` বলে চক্কর দেয়া শুরু করা।
যেদিকে যাবে হাজরে আসওয়াদ থেকে পবিত্র কাবা শরিফের দরজার দিকে অগ্রসর হওয়া। এর পর হাতিমে কাবা বাহিরে দিয়ে রুকনে শামি ও ইরাকি অতিক্রম করে রুকনে ইয়ামেনি বরাবর এসে তা স্পর্শ করা। যদি সম্ভব না হয়ে তবে হাতে ইশারা করা।
রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত আসতে এই দোয়া পড়া-‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আ’জাবান নার।’ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া এবং পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দান করুন।’
হাজরে আসওয়াদের কোনায় এসে আগের মতো আবারো স্পর্শ বা ইশারার মাধ্যমে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে চক্কর শুরু করা। এভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
তাওয়াফ আদায়কালে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
>> ইযতিবা করা যারা ইহরাম বেঁধে হজ ও ওমরার জন্য ফরজ তাওয়াফ করবেন, তাঁদেরকে তাওয়াফের সময় অবশ্যই ইযতিবা করতে হবে। আর তাহলো বীর-বাহাদুরিসূলভ চাদর পরিধান করা। চাদরের মধ্যভাগ থাকবে ডান বগলের নিচে।
আর ফরজ তাওয়াফ না হলে সাধারণ তাওয়াফের বেলায় যে কোনো পোশাকেই তাওয়াফ করা যাবে।
>> হাতিমে কাবাসহ তাওয়াফরোকনে শামি ও রোকনে ইরাকির মধ্যে অবস্থতি অর্ধবৃত্তাকার অংশটিকে হাতিমে কাবা বলা হয়। বাইতুল্লাহ তাওয়াফকালে হাতিমে কাবাকেও প্রদক্ষিণ করা।
>> হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু এবং শেষতাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে মুলতাযেম, কাবা শরিফের দরজা, হাতিমে কাবা হয়ে রুকনে শামি ও ইরাকি শেষ করে রুকনে ইয়েমেনি অতিক্রম করে আবার হাজরে আসওয়াদে এসে শেষ করা। বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করার সময় রুকনে ইয়েমেনি কর্নার অতিক্রমকালে সম্ভব হলে চুম্বন করা বা হাতে স্পর্শ করা। ভিড় থাকলে ইশারা করাই যথেষ্ট।
>>বাইতুল্লাহকে সাতবার চক্করের মাধ্যমে তাওয়াফ শেষ হয়। এ সাত চক্করের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে হবে। প্রথম তিন চক্বরকে রমল বলে। অর্থাৎ বীর দর্পে দ্রুততার সঙ্গে তাওয়াফ করা। পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেটে তাওয়াফ সম্পন্ন করা
স্থাপত্য এবং অভ্যন্তর
কাবা হল একটি কিউবয়েড আকৃতির কাঠামো যা পাথর দিয়ে তৈরি।এটি প্রায় ১৩.১ মিটার (৪৩ ফুট ০ ইঞ্চি) লম্বা (কিছু দাবি করে ১২.০৩ মিটার বা ৩৯ ফুট ৫+১⁄২ ইঞ্চি), যার বাহুগুলি ১১.০৩ মি × ১২.৮৬ মিটার (৩৬ ফুট ২+১⁄২ ইঞ্চি × ৪২ ফুট ২+ ১⁄২ ইঞ্চি)।কাবার ভিতরের মেঝে মার্বেল ও চুনাপাথর দিয়ে তৈরি।অভ্যন্তরীণ দেয়াল, পরিমাপ ১৩ মি × ৯ মি (৪৩ ফু × ৩০ ফু), ছাদের অর্ধেক পথ টাইল্ড, সাদা মার্বেল দিয়ে পরিহিত, মেঝে বরাবর গাঢ় ছাঁটাই সহ।অভ্যন্তরের মেঝে প্রায় ২.২ মি (৭ ফু ৩ ইঞ্চি) দাঁড়িয়েছে স্থলভাগের উপরে যেখানে তাওয়াফ করা হয়।
কাবার প্রবেশপথের সরাসরি সংলগ্ন দেয়ালে শিলালিপি সহ ছয়টি ফলক রয়েছে এবং অন্যান্য দেয়াল বরাবর আরও বেশ কয়েকটি ফলক রয়েছে। দেয়ালের উপরের কোণে সোনার কোরানের আয়াত দিয়ে সূচিকর্ম করা একটি কালো কাপড় আছে।তত্ত্বাবধায়করা মার্বেল ক্ল্যাডিংকে একই সুগন্ধযুক্ত তেল দিয়ে অভিষেক করে যা কালো পাথরের বাইরে অভিষেক করতে ব্যবহৃত হয়।কাবার অভ্যন্তরে তিনটি স্তম্ভ (কিছু ভুলভাবে দুটি রিপোর্ট করে) আছে, একটি এবং অন্য দুটির মধ্যে একটি ছোট বেদি বা টেবিল সেট করা আছে।বাতির মতো বস্তু (সম্ভাব্য লণ্ঠন বা ক্রুসিবল সেন্সার ) সিলিং থেকে ঝুলে থাকে।সিলিং নিজেই গাঢ় রঙের, নিচের ছাঁটাইয়ের মতো রঙের।বাব উত-তওবাহ— ডান দেয়ালে (প্রবেশের ডানদিকে) একটি সিঁড়ি আছে, তার মাধ্যমে কাবার ছাদে যাওয়া যায় ।ছাদ এবং সিলিং উভয়ই (সম্মিলিতভাবে দ্বৈত স্তরযুক্ত) তৈরি স্টেইনলেস স্টীল- ক্যাপড সেগুন কাঠ দ্বারা।
কাবার একটি প্রযুক্তিগত অঙ্কন যেখানে মাত্রা এবং উপাদান দেখানো হয়েছে
রুকন আল-ইয়ামানি (ইয়েমেনি কর্নার)
নিম্নলিখিত তালিকার প্রতিটি সংখ্যাযুক্ত আইটেম ডায়াগ্রাম ছবিতে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে মিলে যায়।
হাজার আল-আসওয়াদ ( আরবি: الحجر الأسود, প্রতিবর্ণী. al-Hajar al-Aswad, অনুবাদ ‘The Black Stone’ : الحجر الأسود , রোমানাইজড : আল-হাজার আল-আসওয়াদ , আলোকিত । ‘কালো পাথর’), কাবার পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি সেই স্থান যেখানে মুসলমানরা তাদের কাবা প্রদক্ষিণ শুরু করে, যা তাওয়াফ নামে পরিচিত।
প্রবেশদ্বারে একটি দরজা ২.১৩ মি[রূপান্তর: অজানা একক] মাটির উপরে কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালে, যাকে বলা হয় বাব আর-রাহমাহ ( আরবি: باب الرحمة : باب الرحمة , রোমানাইজড : বাব আর-রহমাহ , লিট । ‘রহমতের দরজা’), এটিও প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে)।[১] ১৯৭৯ সালে, ৩০০ কেজি (৬৬০ পা) সোনা দ্বারা শিল্পী আহমদ বিন ইব্রাহিম বদর কর্তৃক তৈরি সোনার দরজা, যা ১৯৪২ সালে তার পিতা ইব্রাহিম বদরের তৈরি পুরানো রূপার দরজা প্রতিস্থাপন করে বসানো হয়। বনু শায়বার খিলান আকৃতির গেট এবং জমজম কূপের মধ্যে মসজিদে একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে।প্রাচীনতম টিকে থাকা দরজাটি ১০৪৫ সালের পূর্বের। [৪]
মিজাব আল-রাহমাহ, যাকে সাধারণত মিজাব বলা হয় । এটি সোনার তৈরি একটি বৃষ্টির স্পাউট।১৬২৭ সালে যখন কাবা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, ১৬২৬ সালে একটি বন্যার কারণে চারটি দেয়ালের মধ্যে তিনটি ভেঙে পড়ার পরে যোগ করা হয়েছিল।
কাবার তিন দিকের এই তির্যক কাঠামোটি শাদেরওয়ান নামে পরিচিত ( আরবি: شاذروان : شاذروان ) এবং ১৬২৭ সালে মিজাব আল-রাহমাহ এর সাথে বৃষ্টির পানি থেকে ভিত্তি রক্ষা করার জন্য যুক্ত করা হয়েছিল।
হাতিম (হাতেম নামেও রোমানীকৃত ) এবং হিজর ইসমাইল নামেও পরিচিত, এটি একটি নিম্ন প্রাচীর যা মূল কাবার অংশ ছিল।এটি একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল বিপরীত দিকে, কিন্তু কাবার উত্তর-পশ্চিম দেয়ালের সাথে সংযুক্ত নয়।এটা১.৩১ মি (৪ ফু ৩ ১⁄২ ইঞ্চি) উচ্চতা এবং ১.৫ মি (৪ ফু ১১ ইঞ্চি) প্রস্থ বিশিষ্ট, এবং সাদা মার্বেল দিয়ে গঠিত।হাতিম এবং কাবার মধ্যবর্তী স্থানটি মূলত কাবার অংশ ছিল এবং তাই তাওয়াফের সময় এখানে প্রবেশ করা হয় না।
আল-মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ এবং প্রবেশ দরজার মধ্যে মোটামুটি২ মি (৬ ১⁄২ ফু) জায়গা রয়েছে।একজন হাজীর জন্য কাবার এই অঞ্চলটি স্পর্শ করা বা এখানে দুআ করা অনেক আকাঙ্ক্ষিত।
( মাকামে ইব্রাহিম ) হল একটি কাঁচ এবং ধাতব ঘের যার মধ্যে ইব্রাহিম (আঃ) এর পায়ের ছাপ রয়েছে।কাবার উপরের অংশগুলি নির্মাণের সময় ইব্রাহিম(আঃ) এই পাথরের উপর দাঁড়িয়েছিলেন এবং উপরের অংশগুলির জন্য ইসমাইল(আঃ)কে তার কাঁধে তুলেছিলেন।
কালো পাথরের কোণে।এটি কাবার কেন্দ্র থেকে খুব সামান্য দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করে।কাবার চারটি কোণ মোটামুটিভাবে কম্পাসের চারটি মূল দিক নির্দেশ করে। [১]
রুকন আল-ইয়ামানি ( আরবি: الركن اليمني, প্রতিবর্ণী. ar-Rukn al-Yamani, অনুবাদ ‘The Yemeni Corner’ : الركن اليمني , রোমানাইজড : আর-রুকন আল-ইয়ামানি , লিট । ‘ইয়েমেনি কর্নার’), যা রুকন-ই-ইয়ামানি বা রুকন-ই-ইয়েমেনি নামেও পরিচিত, কাবার কেন্দ্র থেকে সামান্য দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করা কাবার কোণ।[১][৫]
রুকন উশ-শামি ( আরবি: الركن الشامي : الركن الشامي , রোমানাইজড : আর-রুকন আশ-শামি , লিট । ‘দ্য লেভানটাইন কর্নার’), যা রুকন-ই-শামি নামেও পরিচিত, কাবার কেন্দ্র থেকে খুব সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে মুখ করা কাবার কোণ।[৫]
রুকন আল-ইরাকি ( আরবি: الركن العراقي : الركن العراقي , রোমানাইজড : আর-রুকন আল-ইরাকি , lit. ‘দ্য ইরাকি কর্নার’), হল কাবার কেন্দ্র থেকে সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করা কাবার কোন।
কিসওয়াহ, এমব্রয়ডারি করা আবরণ।কিসওয়া হল একটি কালো রেশম এবং সোনার পর্দা যা প্রতি বছর হজ যাত্রার সময় প্রতিস্থাপন করা হয়। এর দুই-তৃতীয়াংশ হল হিজাম, সোনার সূচিকর্ম করা কোরানিক পাঠের একটি ব্যান্ড, শাহাদা সহ, ঈমানের ইসলামী ঘোষণা।কাবার দরজার পর্দা বিশেষভাবে অলংকৃত এবং সিতারা বা বোরকু’ নামে পরিচিত। হিজাম এবং সিতারায় সোনা ও রূপার তারে সূচিকর্ম করা শিলালিপি রয়েছে, কুরআনের আয়াত এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সহ।
মার্বেল স্ট্রাইপ প্রতিটি প্রদক্ষিণের শুরু এবং শেষ চিহ্নিত করে।
দ্রষ্টব্য: কাবার প্রধান (দীর্ঘ) অক্ষটি ক্যানোপাস নক্ষত্রের উত্থানের সাথে সারিবদ্ধ হতে পরিলক্ষিত হয়েছে যার দিকে এর দক্ষিণ প্রাচীর নির্দেশিত হয়েছে, যখন এর ছোট অক্ষ (এর পূর্ব-পশ্চিম সম্মুখভাগ) মোটামুটি গ্রীষ্মের সূর্যোদয়ের সাথে সারিবদ্ধ। এবং শীতকালীন সূর্যাস্তের সূর্যাস্ত।
বাব আত-তওবাহ, “তাওবার দরজা”
সৌদি আরবে ৫০০-রিয়ালের (প্রায় ১৩৩ ডলার ) নোটের উল্টো দিকে একই রকম দৃশ্য ছাপা হয়েছে।
মাকামে ইব্রাহিম
মিজাব আল-রাহমাহ
পরিষ্কার
“পবিত্র কাবা পরিষ্কার” ( আরবি: تنظيف الكعبة المشرفة, প্রতিবর্ণী. Tanzif al-Ka’bat al-Musharrafah, অনুবাদ ‘Cleaning of the Sacred Cube’ : تنظيف الكعبة المشرفة , রোমানাইজড : তানযীফ আল-কাবাত আল-মুশাররাফাহ , লি . ‘কাবা পরিষ্কার করা’). অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস শা’বানের ১ তারিখে, রমজানমাস শুরু হওয়ার প্রায় ত্রিশ দিন আগে এবং প্রথম মাস মুহাররমের ১৫ তারিখে।কাবার চাবি বনি শায়বাহ ( আরবি: بني شيبة : بني شيبة) এর কাছে রয়েছে
) গোত্রের কাছে, এটি একটি সম্মান যা তাদের উপর মুহাম্মদ(স:) দ্বারা অর্পিত। পরিচ্ছন্নতার অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপজাতির সদস্যরা কাবার অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানায়।
মক্কা প্রদেশের গভর্নর এবং সহকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওদ সুগন্ধি দিয়ে জমজমের পানিতে ডুবানো কাপড় ব্যবহার করে কাবার অভ্যন্তর পরিষ্কার করেন।তায়েফ গোলাপ, আউদ ও কস্তুরী সহ বেশ কিছু বিলাসবহুল পারফিউমের সাথে জমজমের পানির মিশ্রণের সাথে নির্ধারিত তারিখের একদিন আগে ধোয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়।গোলাপের সুগন্ধি মিশ্রিত জমজমের পানি মেঝেতে ছড়িয়ে খেজুর পাতা দিয়ে মুছে দেওয়া হয়।সাধারণত, পুরো প্রক্রিয়াটি দুই ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়।
ইসলামে তাৎপর্য
কাবা হল ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান, এবং প্রায়ই বাইতুল্লাহ ( আরবি: بيت الله, প্রতিবর্ণী. Bayt Allah, অনুবাদ ‘House of Allah’ : بيت الله নামে ডাকা হয়। ‘আল্লাহর ঘর’). এবং বাইত আল্লাহ আল-হারাম (আরবি: بيت الله الحرام, প্রতিবর্ণী. বাইত আল্লাহ ইল-হারাম, অনুবাদ ‘আল্লাহর পবিত্র ঘর’’আল্লাহর পবিত্র ঘর’).
) তীর্থযাত্রার একটি ইসলামী আচার এবং হজ এবং ওমরাহ উভয় সময়েই এটি বাধ্যতামূলক।হাজীরা কাবার (ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান ) চারপাশে সাতবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে যান; প্রথম তিনটি দ্রুত গতিতে মাতাফের বাইরের অংশে এবং পরেরটি চারবার অল্প গতিতে কাবার কাছাকাছি। প্রদক্ষিণটি আল্লাহর উপাসনায় বিশ্বাসীদের একতা প্রদর্শন করে বলে বিশ্বাস করা হয়, কারণ তারা কাবার চারপাশে একসাথে চলাফেরা করে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময়। তাওয়াফ করার সময় ওজু অবস্থায় থাকা (অযু) বাধ্যতামূলক কারণ এটিকে একটি ইবাদত ( ‘ইবাদাহ ) বলে মনে করা হয়।
কাবার কোণের কালো পাথর থেকে তাওয়াফ শুরু হয়।সম্ভব হলে, মুসলমানরা এটিকে চুম্বন করতে বা স্পর্শ করতে পারে, কিন্তু বেশি ভিড়ের কারণে এটি প্রায়শই সম্ভব হয় না।প্রতিবার একটি প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করার সময় তারা বাসমালা ও তাকবীর উচ্চারণ করবে।হজযাত্রীদের সাধারণত অন্তত দুবার “তাওয়াফ করার” পরামর্শ দেওয়া হয় – একবার হজের অংশ হিসেবে এবং আবার মক্কা ছাড়ার আগে।
পাঁচ প্রকার তাওয়াফ হল:
ত্বওয়াফ আল-কুদুম (আগমন তাওয়াফ) যারা পবিত্র নগরীর বহিরাগত এবং মক্কায় বসবাস করবে না তারা এ ধরনের তাওয়াফ করে।
তাওয়াফ আত-তাহিয়াহ (সালাম ত্বওয়াফ) যেকোনো সময়ে আল-মসজিদ আল-হারামে প্রবেশ করার পরে করা হয় এবং এটি মুস্তাহাব ।
ত্বওয়াফ আল- ওমরাহ (উমরাহ তাওয়াফ) বিশেষভাবে ওমরাহর জন্য করা তাওয়াফকে বোঝায়।
মক্কা ত্যাগ করার আগে তাওয়াফ আল-ওয়াদা’ (“বিদায় তাওয়াফ”) করা হয়।
তাওয়াফ আয-জিয়ারাহ (দর্শনের তাওয়াফ), তাওয়াফ আল-ইফাদ (ক্ষতিপূরণের তাওয়াফ) বা তাওয়াফ আল- হাজ (হজ তাওয়াফ) হজ শেষ করার পরে করা হয়।
নামাজের সময় যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হয় তাই কিবলা।[কুরআন২:১৪৩–১৪৪] নামাযের সময় প্রার্থনাকারী ব্যক্তির সাপেক্ষে যে দিকে মুখ করা হয় তা হল কাবার দিক। প্রার্থনা ছাড়াও, মুসলমানরা কেবলার দিকে মুখ করে কুরআন তেলাওয়াত করাকে ভাল শিষ্টাচারের অংশ বলে মনে করে।
•আল-বায়ত আল-হারাম (আরবি: ٱلْبَيْت ٱلْحَرَام, lit. ’পবিত্র ঘর’) ৫:৯৭ এ
•আল-বায়ত আল-আতীক (আরবি: ٱلْبَيْت ٱلْعَتِيق, lit. ’প্রাচীন বাড়ি’) ২২:২৯ এ
ঐতিহাসিক এডুয়ার্ড গ্লেসারের মতে, “কাবা” নামটি দক্ষিণ আরব বা ইথিওপিয়ান শব্দ ” মিকরাব ” এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যা একটি মন্দিরকে নির্দেশ করে। লেখিকা প্যাট্রিসিয়া ক্রোন এই ব্যুৎপত্তির বিরোধিতা করেছেন।
পটভূমি
শহরটি ইসলামের উত্থানের তিন শতাব্দী আগে লিখিত কোনো পরিচিত ভৌগোলিক বা ইতিহাস থেকে অনুপস্থিত, যদিও অনেক মুসলিম এবং শিক্ষাবিদ ঐতিহাসিক প্রাক-ইসলামী মক্কার শক্তি ও গুরুত্বের ওপর জোর দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তারা এটিকে একটি শহর হিসাবে চিত্রিত করেছে যা মশলা ব্যবসার আয়ের উপর সমৃদ্ধ হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্যাট্রিসিয়া ক্রোন বিশ্বাস করেন যে এটি একটি অতিরঞ্জন এবং মক্কা শুধুমাত্র চামড়া, কাপড় এবং উটের মাখনের জন্য যাযাবরদের সাথে ব্যবসার জন্য একটি আউটপোস্ট ছিল। ক্রোন যুক্তি দেন যে মক্কা যদি বাণিজ্যের একটি সুপরিচিত কেন্দ্র হত, তবে এটি সম্পর্কে পরবর্তী লেখক যেমন প্রকোপিয়াস, নননোসাস, বা সিরিয়াক গির্জার ক্রনিকলাররা সিরিয়াক ভাষায় লিখতেন। [৬]এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, “ইসলামের উত্থানের আগে, এটি একটি পবিত্র অভয়ারণ্য হিসাবে সম্মানিত ছিল এবং এটি একটি তীর্থস্থান ছিল।”
ইসলামের আগে, কাবা সমগ্র আরব উপদ্বীপ জুড়ে বিভিন্ন বেদুইন উপজাতিদের জন্য একটি পবিত্র স্থান ছিল। প্রতি চান্দ্র বছরে একবার বেদুইনরা মক্কায় তীর্থযাত্রা করত। যে কোন উপজাতীয় বিবাদকে একপাশে রেখে, তারা কাবায় তাদের দেবতাদের পূজা করবে এবং শহরে একে অপরের সাথে ব্যবসা করত। কাবার অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম রাখা হয়েছিল। হুবালের একটি মূর্তি (মক্কার প্রধান মূর্তি) এবং অন্যান্য পৌত্তলিক দেব-দেবীর মূর্তি কাবার বা তার আশেপাশে স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা যায়। দেয়ালে সাজানো মূর্তি আঁকা ছিল। ফেরেশতাদের ছবি, ‘ইব্রাহিম আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণীর তীর ধারণকারী এবং ‘ঈসা ( যীশু ) এবং তার মা মরিয়ম ( মেরি ) এর দৃশ্যও কাবার অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল এবং পরে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদের নির্দেশে ধ্বংস করা হয়েছিল। [৭] অনির্ধারিত সাজসজ্জা, টাকা এবং একজোড়া মেষের শিং কাবার ভিতরে থাকার কথা রেকর্ড করা হয়েছিল। [৭] কথিত আছে যে, মেষের শিং জোড়া ইব্রাহিম কর্তৃক তার পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে যে মেষ কুরবানী দেওয়া হয়েছিল, তার।[৭]
আল-আজরাকি তার পিতামহের কর্তৃত্বে নিম্নলিখিত বর্ণনা প্রদান করেছেন: [৭]
আমি শুনেছি যে আল-বাইত (কাবাকে নির্দেশ করে) একটি ছবি স্থাপন করা হয়েছিল (আরবি: تمثال, অনুবাদ ‘চিত্রণ’) মরিয়ম ও ঈসার। [‘আতা’] বললেন: “হ্যাঁ, এতে মরিয়মের একটি সুশোভিত ছবি ছিল (‘মুজাওওয়াকান’); তাঁর কোলে, তাঁর পুত্র ঈসা শোভিত হয়ে বসেছিলেন।”
কারেন আর্মস্ট্রং তার বই ইসলাম: এ শর্ট হিস্ট্রি -এ দাবি করেছেন যে কাবা আনুষ্ঠানিকভাবে হুবাল, একজন নাবাতেন দেবতাকে উত্সর্গীকৃত ছিল এবং এতে ৩৬০টি মূর্তি ছিল যা সম্ভবত বছরের দিনগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে। যাইহোক, মুহাম্মদ(স:) যুগে কাবাকে আল্লাহর ঘর হিসাবে উপাসনা করা হয়েছিল।বছরে একবার, আরব উপদ্বীপের চারপাশের উপজাতিরা হজযাত্রা সম্পাদনের জন্য মক্কায় একত্রিত হত, যা ব্যাপকভাবে দৃঢ় বিশ্বাসের একটি চিহ্ন ছিল যে, একেশ্বরবাদীদের দ্বারা উপাসনা করা একই দেবতা ছিলেন আল্লাহ। এই সময়ে মুসলমানরা মুহাম্মাদের নির্দেশ অনুযায়ী জেরুজালেমের দিকে মুখ করে সালাতের নামাজ আদায় করবে এবং কাবার পৌত্তলিক সংঘের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। [৯] আলফ্রেড গুইলাউম তার ইবনে ইসহাকেরসিরাহের অনুবাদে বলেছেন যে কাবাকে হয়তো মেয়েলি আকারে উল্লেখ করা যেতে পারে। পূর্বে তাওয়াফ প্রায়ই পুরুষদের এবং মহিলাদের দ্বারা প্রায় নগ্ন অবস্থায় সঞ্চালিত হত। আল্লাহ ও হুবল একই উপাস্য নাকি ভিন্ন ছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উরি রুবিন এবং ক্রিশ্চিয়ান রবিনের একটি অনুমান অনুসারে, হুবাল শুধুমাত্র কুরাইশদের দ্বারাই পূজা করা হতো এবং কাবা প্রথমে আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিল, যা বিভিন্ন গোত্রের লোকদের সর্বোচ্চ দেবতা ছিল, যখন কুরাইশদের দেবতাদের প্যান্থিয়ন কাবাতে স্থাপন করা হয়েছিল। তারা মুহাম্মদের সময়ের এক শতাব্দী আগে মক্কা জয় করেছিল।
ইমোতি দাবি করেন যে, এক সময় আরবে এ ধরনের অসংখ্য কাবা অভয়ারণ্য ছিল, কিন্তু এটিই ছিল পাথরের তৈরি একমাত্র অভয়ারণ্য। অন্যদেরও কালো পাথরের প্রতিপক্ষ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আরবের ঘাইমান শহরের কাবাতে একটি “লাল পাথর” ছিল; এবং আল-আবালাতের কাবার “সাদা পাথর” ছিল। ধ্রুপদী ইসলামে গ্রুনবাউম উল্লেখ করেছেন যে সেই সময়ের দেবত্বের অভিজ্ঞতা প্রায়শই পাথর, পর্বত, বিশেষ শিলা গঠন বা “অদ্ভুত বৃদ্ধির গাছ” ইত্যাদির ফেটিসিজমের সাথে যুক্ত ছিল। আর্মস্ট্রং আরও বলেছেন যে কাবাকে বিশ্বের কেন্দ্রে বলে মনে করা হয়েছিল, যার সরাসরি উপরে স্বর্গের গেট রয়েছে। কাবা সেই স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে যেখানে পবিত্র বিশ্ব অপবিত্রের সাথে ছেদ করেছে।
সারওয়ারের মতে, মুহাম্মদের জন্মের প্রায় ৪০০ বছর আগে, আমর বিন লুহায় নামক একজন ব্যক্তি, যিনি কাহতান থেকে এসেছেন এবং হিজাজের রাজা ছিলেন তিনি কাবার ছাদে হুবালের একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। এই মূর্তিটি শাসক কুরাইশ গোত্রের অন্যতম প্রধান দেবতা ছিল। মূর্তিটি লাল এগেট দিয়ে তৈরি এবং মানুষের মতো আকৃতির, কিন্তু ডান হাতটি ভেঙে সোনার হাত দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। যখন মূর্তিটি কাবার ভিতরে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তখন এর সামনে সাতটি তীর ছিল যা ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য ব্যবহৃত হত। চিরকাল যুদ্ধরত উপজাতিদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য, মক্কাকে একটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছিল যার আয়তন ছিল কাবার ৩০ কিলোমিটার (২০ মা) এর মধ্যে। এই যুদ্ধ-মুক্ত অঞ্চলটি মক্কাকে কেবল তীর্থস্থান হিসাবেই নয়, একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবেও উন্নতি করতে দেয়।
সামারিটান সাহিত্যে, সামারিটান বুক অফ দ্য সিক্রেটস অফ মোজেস ( আসাতির ) বলে যে ইসমাইল এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র নেবাইওথ কাবা এবং মক্কা শহরও নির্মাণ করেছিলেন।” আসাতির বইটি সম্ভবত ১০ম শতাব্দীতে সংকলিত হয়েছিল, যদিও মোসেস গ্যাস্টার ১৯২৭ সালে প্রস্তাব করেছিলেন যে এটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের পরে লেখা হয়েছিল।
ইসলামী মতানুযায়ী
কাবা এবং মসজিদ আল-হারাম একটি তাবিজ শার্টে চিত্রিত, ১৬ বা১৭তম শতকের প্রথম দিকে
কোরআনে কাবার উৎপত্তি সম্পর্কে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে। এটি বলে যে কাবা ছিল মানবজাতির জন্য প্রথম উপাসনার ঘর, এবং এটি আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম এবং ইসমাইল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
প্রকৃতপক্ষে, মানবজাতির জন্য নির্ধারিত প্রথম ঘর (ইবাদত) ছিল বাক্কায় (মক্কা), (যা) বরকতময় এবং মানবজাতির জন্য পথনির্দেশক।
দেখো! আমরা ইব্রাহীমকে (পবিত্র) ঘরের স্থানটি দিয়েছিলাম, (বলে) “আমার সাথে (ইবাদতে) কোন কিছুকে শরীক করো না; এবং আমার গৃহকে পবিত্র কর তাদের জন্য যারা একে প্রদক্ষিণ করে, বা দাঁড়ায়, বা রুকু বা সেজদা করে।
এবং মনে রাখবেন ইব্রাহিম ও ইসমাইল ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন (এই প্রার্থনার মাধ্যমে): “হে আমাদের প্রভু! আমাদের কাছ থেকে (এই সেবা) গ্রহণ করুন: আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
তাফসির ) ব্যাখ্যায় কাবার উৎপত্তি নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে দুটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন। একটি হল, কাবা মানুষ সৃষ্টির আগে মালাইকাফেরেশতাদের উপাসনার স্থান ছিল। পরে, স্থানটিতে একটি উপাসনালয় তৈরি করা হয়েছিযাবং নূহ ( আঃ ) এর সময়ে বন্যার সময় হারিয়ে গিয়েছিল এবং অবশেষে ইব্রাহিম (আঃ) এবং ইসমাইল (আঃ) দ্বারা পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল যেমনটি পরে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে সিথির এই রেওয়ায়েতটিকে দুর্বল বলে গণ্য করেছেন এবং আলী ইবনে আবি তালিবের বর্ণনার পরিবর্তে পছন্দ করেছেন যে যদিও কাবার আগে আরও কয়েকটি মন্দির থাকতে পারে, তবে এটি ছিল প্রথম বায়তুল্লাহ (“আল্লাহর ঘর”), যইব্রাহিমঁও ইসমাইল র দ্বারআল্লাহর া নিদেশে নির্র্ম এবং , সম্পূর্ণরূপে তাঁর জন্য উত্সর্গীকৃততাঁর দ্বারা পবিত্র ও আআশীর্বাদকৃতযেমনটি কুরআন ের২২:২৬-২৯ এএ লা হয়েছে। সহিহ আল-বুখারির একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে কাবা ছিল পৃথিবীর প্রথম মসজিদ এবং দ্বিতীয়টি ছিল জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ ।
আবু জর বর্ণনা করেন: আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পৃথিবীর পৃষ্ঠে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, আল-মসজিদ-উল-হারাম (মক্কায়)। আমি বললাম, “পরে কোনটি নির্মিত হয়েছিল?” তিনি উত্তর দিলেন “আল-আকসার মসজিদ (জেরুজালেমে)।” আমি বললাম, উভয়ের মধ্যে নির্মাণের সময়কাল কত ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। তিনি আরো বলেন, “যেখানে (তোমরা থাকো এবং) নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়, সেখানেই নামায আদায় কর, কেননা সর্বোত্তম কাজ হল তা করা (অর্থাৎ সময়মত নামায পড়া)।”
আব্রাহাম যখন কাবা নির্মাণ করছিলেন, তখন একজন ফেরেশতা তার কাছে কালো পাথরটি নিয়ে আসেন যা তিনি কাঠামোর পূর্ব কোণে রেখেছিলেন। আরেকটি পাথর ছিল মাকাম ইব্রাহিম বা আব্রাহামের স্টেশন, যেখানে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম আঃ কাঠামো নির্মাণের কাজ করেছিলেন। কালো পাথর এবং মাকাম ইব্রাহীমকে মুসলমানরা আব্রাহামের তৈরি মূল কাঠামোর একমাত্র অবশিষ্টাংশ বলে বিশ্বাস করে কারণ অবশিষ্ট কাঠামোটি ইতিহাসে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বহুবার ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। কাবার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর, আল্লাহ ইসমাইলের বংশধরদেরকে একটি বার্ষিক তীর্থযাত্রা করার জন্য আদেশ দেন: হজ এবং কুরবানী।কাবার আশেপাশে একটি অভয়ারণ্যও করা হয়েছিল যেখানে রক্তপাত এবং যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল।[কুরআন২২:২৬–৩৩]ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, ইসমাইলের মৃত্যুর পর সহস্রাব্দ বছর ধরে, তার বংশধর এবং স্থানীয় উপজাতি যারা জমজমের চারপাশে বসতি স্থাপন করেছিল তারা ধীরে ধীরে বহুশ্বরবাদ এবং মূর্তিপূজার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কাবার মধ্যে বেশ কিছু মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল যা প্রকৃতির বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন উপজাতির দেবতাদের প্রতিনিধিত্ব করে। তীর্থযাত্রায় নগ্ন প্রদক্ষিণ সহ বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠান গৃহীত হয়েছিল। [২১] আল-আজরাকির আখবার মক্কায় লিপিবদ্ধ বাণী অনুসারে তুব্বা’ নামে একজন রাজা প্রথম কাবার দরজা তৈরি করেন বলে মনে করা হয়।
টলেমি এবং ডিওডোরাস সিকুলাস
এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলামে লেখা, ওয়েনসিঙ্ক টলেমি দ্বারা উল্লেখিত ম্যাকোরাবা নামক একটি স্থান দিয়ে মক্কাকে চিহ্নিত করেছেন। [২২] জিই ভন গ্রুনবাউম বলেছেন: ” টলেমি মক্কা উল্লেখ করেছেন। তিনি যে নামটি দিয়েছেন তা আমাদের এটিকে একটি অভয়ারণ্যের চারপাশে তৈরি একটি দক্ষিণ আরব ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত করতে দেয়।” মেকান ট্রেড অ্যান্ড দ্য রাইজ অফ ইসলামে, প্যাট্রিসিয়া ক্রোন যুক্তি দেন যে মক্কার সাথে মাকোরাবার পরিচয় মিথ্যা এবং ম্যাকোরাবা দক্ষিণ আরবের একটি শহর ছিল যা তখন আরাবিয়া ফেলিক্স নামে পরিচিত ছিল। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা ম্যাকোরাবার যুক্তিগুলি পুনর্বিবেচনা করেছে এবং সেগুলিকে অসন্তোষজনক বলে মনে করেছে৷
সিনিডাসের আগাথারচাইডের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে, ডিওডোরাস সিকুলাস লোহিত সাগরের উপকূলে একটি মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন, “যা অত্যন্ত পবিত্র এবং সমস্ত আরববাসীদের দ্বারা অত্যন্ত সম্মানিত”। এডওয়ার্ড গিবন বিশ্বাস করতেন এটাই কাবা। যাইহোক, ইয়ান ডি. মরিস যুক্তি দেন যে গিবন উৎসটি ভুলভাবে পড়েছিলেন: ডিওডোরাস উপাসনালয়টিকে মক্কা বলে অনেক উত্তরে রেখেছেন।
খুজিস্তান ক্রনিকল
এই সংক্ষিপ্ত নেস্টোরিয়ান (খ্রিস্টান বংশোদ্ভূত) ধারাবিবরণীটি ৬৬০-এর দশকের পরে লেখা হয়েছে, যা আরব বিজয় পর্যন্ত ইতিহাসকে কভার করে এবং আরব ভূগোলের উপর একটি আকর্ষণীয় ধারণাও দেয়। ভূগোল কভার করা অংশটি আরবে মুসলিম অভয়ারণ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি অনুমান দিয়ে শুরু হয়:
“ইব্রাহিমের ক্বতা (কাবা) সম্পর্কে, আমরা এটি ছাড়া আর কী তা আবিষ্কার করতে পারিনি, কারণ আশীর্বাদপুষ্ট আব্রাহাম সম্পত্তিতে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং কেনানীয়দের হিংসা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন, তিনি বাস করতে বেছে নিয়েছিলেন মরুভূমির দূরবর্তী এবং প্রশস্ত অংশ। যেহেতু তিনি তাঁবুতে বাস করতেন, তাই তিনি আল্লাহর উপাসনা এবং বলিদানের জন্য সেই জায়গাটি তৈরি করেছিলেন। জায়গাটির স্মৃতি সংরক্ষিত থাকায় এটির বর্তমান নামটি পূর্বের নাম অনুসারে রাখা। আরবদের জন্য সেখানে উপাসনা করা কোন নতুন বিষয় ছিল না, কিন্তু প্রাচীনকালে ফিরে যায়, তাদের প্রথম দিকে, যেখানে তারা তাদের জনগণের প্রধান পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।”[২৩]
এটি খ্রিস্টান বংশোদ্ভূত রাশিদুন খিলাফতের একটি প্রাথমিক রেকর্ড যা স্পষ্টভাবে কাবার উল্লেখ করে এবং এই ধারণাটিকে নিশ্চিত করে যে কেবল আরবরা নয়, কিছু খ্রিস্টানও সপ্তম শতাব্দীতে ইব্রাহিমের সাথে স্থানটিকে যুক্ত করেছিল। এটি কাবার উল্লেখ করা দ্বিতীয় তারিখযোগ্য পাঠ্য, প্রথমটি হচ্ছে কুরআনের কিছু আয়াত।
শিলালিপি
সৌদি প্রত্নতাত্ত্বিক মোহাম্মদ আলমাগথাভি মসজিদ আল-হারাম এবং কাবার উল্লেখ করে কিছু শিলালিপি আবিষ্কার করেছেন, যা ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর। তাদের মধ্যে একটি নিম্নরূপ পড়ে:
“ঈশ্বরই যথেষ্ট এবং লিখেছেন মায়সারা বিন ইব্রাহিম কাবার সেবক (খাদিম আল-কাবা)।”[২৪]
জুয়ান কোলের অভিমত যে শিলালিপিটি সম্ভবত হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর (সি. ৭১৮ – ৮১৫ খ্রি.)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মুহাম্মদ(স:) এর যুগ
কালো পাথরটি কাবার একটি পোর্টালের মাধ্যমে দেখা যায়
মুহাম্মদ (স:)-এর জীবদ্দশায় (৫৭০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ), কাবা স্থানীয় আরবদের দ্বারা একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বন্যার কারণে কাবার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মুহাম্মদ (স:) কাবার পুনর্নির্মাণে অংশ নেন। ইবনে ইসহাকেরসিরাত রাসুল আল্লাহ (মুহাম্মদ (স:)-এর জীবনীগুলির মধ্যে একটি) বর্ণনা করে যে মুহাম্মদ (স:) মক্কার বংশের মধ্যে একটি ঝগড়া মীমাংসা করেছিলেন যে কোন বংশটি কাবায় কালো পাথরটি স্থাপন করবে। ইসহাকের জীবনী অনুসারে, মুহাম্মদের সমাধান ছিল সমস্ত গোত্রের প্রবীণদের একটি চাদরের উপর ভিত্তিপ্রস্তরটি তুলে দেওয়া, যার পরে মুহাম্মদ (স:) নিজের হাতে পাথরটিকে তার চূড়ান্ত স্থানে স্থাপন করেছিলেন। ইবনে ইসহাক বলেছেন যে কাবার পুনর্নির্মাণের জন্য কাঠ একটি গ্রীক জাহাজ থেকে এসেছে যা শুয়াবায় লোহিত সাগরের উপকূলে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং বাকুম নামক একজন কপটিক ছুতার এ কাজটি করে। মুহাম্মদ (স:)-এর মেরাজ’-এ তাকে কাবা থেকে মসজিদ আল-আকসা এবং সেখান থেকে সপ্তম আসমানে নেওয়া হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ]
মুসলমানরা প্রাথমিকভাবে জেরুজালেমকে তাদের কিবলা বা প্রার্থনার দিক হিসাবে বিবেচনা করেছিল এবং প্রার্থনা করার সময় এটির দিকে মুখ করেছিল; যাইহোক, কাবার তীর্থযাত্রা একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল যদিও এর আনুষ্ঠানিকতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একজন নবী হিসাবে মুহাম্মদের সময়ের প্রথমার্ধে যখন তিনি মক্কায় ছিলেন, তখন তিনি এবং তার অনুসারীরা মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হন যে কারণে শেষ পর্যন্ত ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তারা মদিনায় হিজরত করে। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে, মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে কিবলার দিকটি মসজিদ আল-আকসা থেকে মক্কার মসজিদ আল-হারামে পরিবর্তিত হয়েছিল, সূরা ২, আয়াত ১৪৪-এর নাযিলের মাধ্যমে।[কুরআন২:১৪৪] ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ ওমরাহ পালনের অভিপ্রায়ে মুসলিমদের একটি দলকে মক্কার দিকে নিয়ে যান, কিন্তু কুরাইশরা তা করতে বাধা দেন। তিনি তাদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি , হুদায়বিয়ার চুক্তি, যা মুসলমানদের পরের বছর থেকে কাবায় অবাধে তীর্থযাত্রা করার অনুমতি দেয়।
তার মিশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে, কুরাইশদের মিত্র, বনু বকর, হুদায়বিয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করার পর, মুহাম্মদ (স:) মক্কা জয় করেন । তার প্রথম কাজ ছিল কাবা থেকে মূর্তি ও ছবি অপসারণ করা। ইবনে ইসহাক এবং আল-আজরাকি দ্বারা সংগৃহীত প্রতিবেদন অনুসারে, মুহাম্মদ(স:) মেরি এবং যীশুর একটি চিত্রকর্ম এবং ইব্রাহিমের একটি ফ্রেস্কো রেখেছিলেন। [২৫]
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবীজি যখন মক্কা বিজয়ের দিনে প্রবেশ করেন তখন কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। নবী তার হাতে থাকা একটি লাঠি দিয়ে তাদের আঘাত করতে শুরু করলেন এবং বলছিলেন, “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে…” (কোরআন ১৭:৮১)”
আল-আজরাকি আরও জানায় কিভাবে মুহাম্মদ বিজয়ের দিনে কাবাতে প্রবেশ করার পর, সমস্ত ছবি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন:
শিহাব (বলেন) যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিজয়ের দিন কাবাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাতে অন্যদের মধ্যে ফেরেশতাদের (মালাইকা) একটি ছবি ছিল এবং তিনি ইব্রাহিম (আ.)-এর একটি ছবি দেখেছিলেন এবং তিনি বলেছেন: “আল্লাহ তাদের হত্যা করুন যারা তাকে ভবিষ্যদ্বাণীতে তীর নিক্ষেপকারী শ্রদ্ধেয় বৃদ্ধ হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে (শাইখান ইয়াস্তাকসিম বিল-আজলাম)।”
বিজয়ের পর, মুহাম্মদ(স:) ইসলামে এর মহান মসজিদ (মসজিদ আল-হারাম) সহ মক্কার পবিত্রতাও পুনরুদ্ধার করেন। তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হুজ্জাত উল-ওয়াদা’ (“বিদায় তীর্থযাত্রা”) নামে হজ করেন কারণ মুহাম্মদ এই হজে তার আসন্ন মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
মুহাম্মদ (সা:) মৃত্যুর পরে
১৯১০ সালে
২০১৩ সালে একটি সম্প্রসারণ পর্যায়ে কাবা
কাবা বহুবার মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। উমাইয়াদের এবং আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের(একজন প্রারম্ভিক মুসলিম যিনি বহু বছর ধরে মক্কা শাসন করেছিলেন, আলির মৃত্যু এবং উমাইয়াদের দ্বারা ক্ষমতার একত্রীকরণের মধ্যে)মধ্যে যুদ্ধে মক্কার প্রথম অবরোধের সময় ৩ রবিউল আউয়াল ৬৪ হিজরি বা রবিবার, ৩১ অক্টোবর ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে অগ্নিকাণ্ডের ফলে কাঠামোটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।আব্দুল্লাহ হাতিমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটি পুনরায় নির্মাণ করেন। তিনি এমনটি করেছিলেন একটি ঐতিহ্যের ভিত্তিতে (বেশ কয়েকটি হাদিস সংগ্রহে পাওয়া গেছে) যে হাতিম ছিল আব্রাহামিক কাবার ভিত্তির একটি অবশিষ্টাংশ, এবং মুহাম্মদ নিজে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটি পুনর্নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।
৬৯২ সালে মক্কার দ্বিতীয় অবরোধের সময় উমাইয়া সেনাবাহিনী আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের নেতৃত্বে কাবাকে পাথর দিয়ে বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। শহরটির পতন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের মৃত্যুর ফলে আবদ আল-মালিক ইবনে মারওয়ানের অধীনে উমাইয়ারা অবশেষে সমস্ত ইসলামী সম্পত্তি পুনরায় একত্রিত করে এবং দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়। ৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে, ‘আব্দ আল-মালিক আল-জুবায়ের কাবার অবশিষ্টাংশগুলিকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং কুরাইশদের দ্বারা স্থাপন করা ভিত্তির উপর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। কাবা মুহম্মদের সময়ের ঘনক আকৃতিতে ফিরে আসে।
৯৩০ খ্রিস্টাব্দের হজের সময়, শিয়া কারমাতিয়ানরা আবু তাহির আল-জান্নাবির অধীনে মক্কা আক্রমণ করে, জমজম কূপকে তীর্থযাত্রীদের মৃতদেহ দিয়ে অপবিত্র করে এবং কালো পাথর চুরি করে, এটি আল-আহসা’ নামে পরিচিত পূর্ব আরবের মরূদ্যানে নিয়ে যায়। আব্বাসীয়রা ৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এটির মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এটি সেখানে ছিল। এরপর থেকে কাবার মৌলিক আকৃতি ও গঠনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
১৬২৬ সালে ভারী বর্ষণ ও বন্যার পর কাবার দেয়াল ধসে পড়ে এবং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই বছর, অটোমান সম্রাট মুরাদ চতুর্থের শাসনামলে, মক্কা থেকে গ্রানাইট পাথর দিয়ে কাবা পুনর্নির্মিত হয় এবং মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
পাঁচটি স্তম্ভ আছে [১][২]। এই পাঁচটি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। একই সাথে প্রথম তিনটির উপর আমল করা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ এবং শেষ দুটি সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কাজ।
ইসলামি ইতিহাস সম্পর্কে একটি অন্যতম প্রধান অনুমান হলো, পাঁচটি স্তম্ভ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবির মৃত্যুর পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। যদিও, মুসলমানদের মাঝে ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িকতার কারণে স্তম্ভসমূহের মধ্যে সামান্য পার্থক্য তৈরি হয়। নবি মুহাম্মাদের জীবনী ও বিশ্বাসের প্রভাব স্তম্ভসমূহের মধ্যে সর্বদাই বিদ্যমান। পাঁচটি স্তম্ভ কুরআনের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, এমনকি মক্কায় হজ্জ্ব (পঞ্চস্তম্ভের একটি) এর বিষয় কুরআনের মধ্যে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। যাইহোক, পাঁচ স্তম্ভ বিশ্বাস ও অনুশীলনের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যসমূহ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ, তবে এর মানে এই নয় এই মতৈক্য মুহাম্মাদের জীবদ্দশাতেও বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত প্রমাণ দেখাচ্ছে যে, স্তম্ভসমূহ সর্বদাই বর্তমান কালের মতো সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, বরং ধ্রুপদী রূপ থেকে বর্তমান রূপে আসতে এর দীর্ঘ সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।[৩]
কালেমা শাহাদাত বলতে মূলত: এখানে বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে শাহাদাত মুখে বলা (সাক্ষ্য দেওয়া) ও অন্তরে বিশ্বাস করা (বিশ্বাস)৷ এই বিশ্বাসকে বলা হয় “ঈমান“৷ [৬] কালেমা শাহাদত হলো
অনুবাদ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই । আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসূল।”
নামায, নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত বা উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
রোযা বা রোজা (ফার্সি روزہ রুজ়ে), সাওম (আরবি صوم স্বাউম্), বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ, (فرض ফ়ার্দ্ব্) যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।
উৎপত্তি
রোজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘বিরত থাকা’। আর আরবিতে এর নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
প্রকারভেদ
রোজা পাঁচ প্রকার।
ফরজ রোজা: যা আবার চার প্রকার-
রমজান মাসের রোজা।
কোন কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।
শরিয়তে স্বীকৃত কারণ ব্যতীত রমজানের রোজা ছেড়ে দিলে কাফ্ফারা হিসেবে ৬০টি রোজা রাখা।
রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা।
ওয়াজিব রোজা: নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
সুন্নত রোজা: মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা।
মোস্তাহাব রোজা: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সাপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।
নফল রোজা: মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই।
যাকাত (আরবি: زكاة zakāt, “যা পরিশুদ্ধ করে”, আরও আরবি: زكاة ألمال, “সম্পদের যাকাত”) হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকুরআন এ “যাকাত” শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
হজ্ব বা হজ্জ বা হজ (আরবি: حج) ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্জ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ্জ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজ্জ্বের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য সৌদি আরবেরমক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক।
জিহাদকে অনেক সময় ইসলামের ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা হয়। ২০১৫ সালে বিতর্কিত ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদো একটি খবর প্রকাশ করে যে, সুইজারল্যান্ডের এক মুসলিম গবেষক তারিক রামাদান “জিহাদ”কে ইসলামের ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও ইসলামের কোনো শাখাতেই ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে এর কোনো স্বীকৃৃতি নেই। জিহাদকে শুধুমাত্র ইসলামের একটি আবশ্যিক (ফরজ) ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হয়।
ইসলাম, হ্যাঁ; ইসলামী দল, না হলো ইন্দোনেশিয়ার প্রভাবশালী মুসলিম পণ্ডিত নূরখলিশ মাজিদ প্রবর্তিত একটি স্লোগান। ১৯৭০ সালে জাকার্তার তামান মারজুকি ইসমাইলে (টিআইএম) দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই স্লোগান প্রবর্তন করেন।[১][২] স্লোগানটি খুব দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে মুসলমানদের ভোট দেওয়া পাপ এমন ধারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।[৩][৪]
পটভূমি
১৯৫০ এর দশকে ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী দলগুলি এই ধারণা প্রচার করছিল যে মুসলমানদের কেবল ইসলামী দলের পক্ষেই ভোট দেওয়া উচিত। অনেক মুসলিম আলেমরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন এবং এমন দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে এই ধারণা প্রচার করতে থাকেন যে মুসলমান ভোটারদের ভোট তাদের পরকালীন মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট মুসলিম পণ্ডিত নূরখলিশ মাজিদ ১৯৭০ এর দশকে “ইসলাম, হ্যাঁ; ইসলামী দল, না” নামে স্লোগানটি চালু করেছিলেন। স্লোগানটি দ্রুতই খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং মুসলমান ভোটারদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে তাদের ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করে। ফলশ্রুতিতে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির পক্ষে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে বলে দেখা যায়।[৪]
তত্ত্বীয় নির্দেশনা
ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী দল বা ইসলামী রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে ঐশ্বরিক কিছু নেই বলে মাজিদ মনে করতেন। মুসলমানদেরকে তাই পার্থিব এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ বা আচরণ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয় বলে তিনি মত দেন।[৫] তিনি মানবসৃষ্ট সংগঠন অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আল্লাহর ইচ্ছার একীভূতকরণের সমালোচনা করেছেন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঐশী অনুমোদনের দোহাই দিয়ে থাকে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর ইচ্ছার সাথে মানবীয় এজেন্ডার সমীকরণ তৈরি করে যে রাজনৈতিক দলগুলি ইসলামের নামকে কাজে লাগাচ্ছে তারা মূর্তিপূজার সঙ্গে জড়িত।[৬] তিনি মত দেন যে, ইসলাম ও ইসলামী দলগুলি একে অপরের সাথে তুলনীয় নয়। কারণ, ইসলামকে কেবলই একটি রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিণত করা যায় না।[৭] মাজিদের দৃষ্টিতে ইসলাম ও ইসলামী দলগুলিকে একত্রে চিহ্নিত করা কেবল ভুলই নয়, বিপজ্জনকও। কারণ, যদি কোনদিন ইসলামী দলগুলির রাজনীতিবিদরা জঘন্য কাজ করে, যার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, তবে ধর্ম হিসাবে ইসলামকে দোষী হিসাবে দেখা হতে পারে। তেমনিভাবে যদি কোনও ইসলামী দল হেরে যায়, তবে ধর্ম হিসেবে ইসলাম হেরে গেছে বলেও মনে হতে পারে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইসলামীকরণের এমন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে মাজিদ স্লোগানটি ইসলামী দল ও তথাকথিত ইসলামী সমাজগুলোর সমালোচনার অংশ হিসাবে চালু করেছিলেন যারা ইন্দোনেশীয় জনগণের চোখে ইসলামী দলগুলিকে পবিত্র ও ঐশ্বরিক করে তুলেছিল।[৮][৯]
রাজনৈতিক প্রভাব
মাজিদ প্রবর্তিত এই স্লোগানটি কাকতালীয় ভাবে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ নির্বাচনের মুহুর্তের সাথে মিলে যায়। দৈবক্রমে বা অন্য কোন কারণে, ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ক নয়া এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মনেরই যেন প্রতিধ্বনি ছিল। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের পছন্দের প্রতিচ্ছবি থেকে এটি দেখা যায়। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় যে, ইসলামী দলগুলি চূড়ান্ত পরাজয়ের শিকার। এটি ১৯৫৫ সালের পর থেকে ইসলামী দলগুলির দীর্ঘ যাত্রারও কিছুটা সমাপ্তি টেনেছিল। বিপরীতে, ইন্দোনেশিয়ায় তখন ইসলামের নবায়নও নতুনভাবে শুরু হয়।[১০] স্লোগানটি এইভাবে ইন্দোনেশীয় সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এমন সময়ে যখন রাজনৈতিক ইসলাম ইতিমধ্যে একটি ধাক্কার সম্মুখীন। এটি ইন্দোনেশীয়দের মধ্যে একটি আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক শক্তি হিসাবে ইসলামকে পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে এক অসামান্য ভূমিকা পালন করে যা ধর্মের শুধু আনুষ্ঠানিক ও আইনগত দিক নয় বরং নৈতিক ও ব্যবহারিক নীতিসমূহের উপর জোর প্রদান করে।[১১] ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থানের কারণে মাজিদ বেশ সমালোচিত হন। বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে। বহু দলীয় নেতা তার বিরুদ্ধে ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার অভিযোগ আনেন।[১২]
আধুনিককালে প্রাসঙ্গিকতা
ইন্দোনেশিয়ার বিশিষ্ট মুসলিম চিন্তাবিদ দাওয়াম রাহারজো বিশ্বাস করতেন যে ১৯৭০ সালে মাজিদ যে স্লোগান প্রবর্তন করেছিলেন তা ইসলাম ও মুসলমানদের তৎকালীন উদ্ভূত সমস্যার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে করেছিলেন। কারণ তার মতে, সেই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামী দলগুলি তখনো ইসলামকে একটি অনুমোদিত রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। অন্য অনেকেই একই মতামতের প্রতিধ্বনি করেছেন যে, মাজিদ রাজনৈতিক ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন কারণ ইসলামী দলগুলির অবস্থা ছিল তখন খুবই নাজুক এবং ইসলামী দলগুলি তখনো ইন্দোনেশিয়ার বহুত্ববাদী সমাজে ধর্মের ভাষাকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি।[১৩] তবে ইন্দোনেশিয়ার অনেক ধর্মীয় নেতা এখনও বিশ্বাস করেন যে মাজিদের চিন্তাভাবনা এবং তাঁর বিখ্যাত স্লোগান আধুনিক সময়ের পরিস্থিতির সাথে এখনো প্রাসঙ্গিক।[২]