Category: ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

Geography Environment and Disaster Management

  • পৃথিবীর গঠন(The structure of the earth)

    পৃথিবীর গঠন(The structure of the earth)

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীন গঠনপৃথিবীর গঠন(The structure of the earth) অনেকটা পেয়াজের মতো বিভিন্ন খোলসাকৃতির স্তরে বিন্যস্ত। এই স্তরগুলোকে তাদের বস্তুধর্ম এবং রাসায়নিক ধর্ম দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। পৃথিবীর বাহিরের দিকে রয়েছে সিলিকেট দিয়ে তৈরি কঠিন ভূত্বক বা ক্রাস্ট, তারপর অত্যন্ত আঠালো একটি ভূ-আচ্ছাদন বা ম্যান্টল, একটি বহিঃস্থ মজ্জা বা কোর যেটি ম্যান্টলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম আঠালো এবং সব শেষে একটি অন্তঃস্থ মজ্জা। পৃথিবীর অভ্যন্তরীন গঠন বৈজ্ঞানিক ভাবে বোঝার জন্য কোন স্থানের ভূসংস্থান এবং গভীরতা, বহিঃস্থ এবং অন্তঃস্থ শিলাস্তর, আগ্নেয়গিরি এবং অগ্ন্যুৎপাত, মহাকর্ষীয় এবং তরিৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের পরিমাপ, ভূকম্পন তরঙ্গের বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়।

    পৃথিবীর ভর

    পৃথিবীর ভর নির্ণয় করার জন্য অভিকর্ষজ বল এর কারণে নির্গত শক্তি পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপগ্রহের ঘূর্ণন থেকেও এটি পরিমাপ করতে পারেন। পৃথিবীর গড় ঘণত্ব পরিমাপ করা হয় অভিকর্ষীয় দোলক ব্যবহার করে। পৃথিবীর ভর হলো ৬×১০২৪ কিলোগ্রাম।[১]

    ভূ-গঠন

    প্রিলিমিনিরি রেফারেন্স আর্থ মডেল অনুযায়ী পৃথিবীর ঘণত্বের অরীয় বন্টন[২]

    The structure of the earth

    প্রিলিমিনারি রেফারেন্স আর্থ মডেল অনুযায়ী পৃথিবীর অভিকর্ষ;[২] পৃথিবীর অভ্যন্তরীন ঘণত্বের ধ্রুবক এবং রৈখিক তুলনা।

    The structure of the earth

    ভূমিকম্প তরঙ্গের সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীন চিত্র দেখানো হয়েছে

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীন অংশের বিন্যস্ত চিত্র। ১. মহাদেশীয় ভূ-ত্বক – ২. মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক – ৩. উপরস্থ ভূ-আচ্ছাদন – ৪. নিম্নস্থ ভূ-আচ্ছাদন – ৫. বহিঃস্থ মজ্জা – ৬. অন্তঃস্থ মজ্জা – এ: মহো বিচ্ছিন্নতা – বি: গুটেনবার্গ বিচ্ছিন্নতা– সি: লেমান-বুলেন বিচ্ছিন্নতা

    পৃথিবীর গঠনকে দু’ভাবে বর্ণনা করা যায়। এক- যান্ত্রিক উপায়ে যেমন, বস্তুবিদ্যা, অথবা দুই- রাসায়ানিক ভাবে। যান্ত্রিক ভাবে দেখলে, পৃথিবীকে অশ্বমন্ডল, আস্থেনোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল, বহিঃস্থ মজ্জা এবং অন্তঃস্থ মজ্জা এই ক’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর রাসায়নিক ভাবে পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে ভূত্বক, উপরস্থ ভূ-আচ্ছাদন, নিম্নস্থ ভূ-আচ্ছাদন, বহিঃস্থ মজ্জা এবং অন্তঃস্থ মজ্জা এই ক’টি ভাগে। ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর ভূ-তাত্ত্বিক উপদানগুলোর গভীরতা[৩] নিচের তালিকায় দেখানো হয়েছে।

    গভীরতা (কিলোমিটার)গভীরতা (মাইল)স্তর
    ০-৬০০-৩৫অশ্বমন্ডল (সাধারণত ৫-২০০ কিমি গভীর)
    ০-৩৫০-২২ভূত্বক (সাধারণত ৫-৭০ কিমি গভীর)
    ৩৫-৬০২২-৩৭ভূ-আচ্ছাদনের সবচেয়ে উপরিভাগ
    ৩৫-২,৮৯০২২-১৭৯০ভূ-আচ্ছাদন
    ২১০-২৭০১৩০-১৬৮উচ্চ মেসোমণ্ডল ( উপরস্থ ভূ-আচ্ছাদন)
    ৬৬০-২,৮৯০৪১০-১,৭৯০নিম্ন মেসোমণ্ডল (নিম্নস্থ ভূ-আচ্ছাদন)
    ২,৮৯০-৫,১৫০১,৭৯০-৩,১৬০বহিঃস্থ মজ্জা
    ৫,১৫০-৬,৩৬০৩,১৬০-৩,৯৫৪অন্তঃস্থ মজ্জা

    পৃথিবীর এই ধরনের স্তর বিন্যাস পরোক্ষ ভাবে বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূ-কম্পন তরঙ্গের প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ভূ-মজ্জার কোন একটি অংশে যখন শিয়ার ওয়েভের চেয়ে ভিন্ন গতিবেগের ভূ-কম্পন তরঙ্গ প্রবাহিত হয়, তখন সাধারণত শিয়ার ওয়েভ বা মাধ্যমিক ভূ-তরঙ্গ ভূ-মজ্জার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। আলো যে ভাবে প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাবার সময় বেঁকে যায়, সেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরে ভূ-কম্পন তরঙ্গ তার গতিবেগের ভিন্নতার কারণে প্রতিসৃত হয়; এই প্রতিসরণ হয়ে থাকে স্নেলের সূত্র অনুযায়ী। একইভাবে প্রতিফলনের কারণে ভূ-কম্পন তরঙ্গের গতিবেগ অনেক বেশি বেড়ে যায়, ঠিক যেভাবে আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আলো ছড়িয়ে যায় অনেক দিকে।

    ভূ-ত্বক

    সর্ববহিঃস্থ স্তরে পৃথিবীর গঠন(The structure of the earth)পৃথিবীর ভূ-ত্বকের গভীরতা সাধারণত ৫-৭০ কিলোমিটার (৩.১-৪৩.৫ মাইল) হয়ে থাকে। এই পাতলা স্তরটিকে বলা হয় মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক; যেটি সমুদ্র অববাহিকার (৫-১০ কিমি) নিচে অবস্থিত এবং ঘণ লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকেট এবং বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয় শিলা (যেমন, ব্যাসাল্ট) দিয়ে গঠিত। অপরদিকে, ভূ-ত্বকের তুলনামূলক পুরু স্তরটিকে বলে মহাদেশীয় ভূত্বক; যেটির ঘণত্ব মহাসাগরীয় ভূ-ত্বকের চেয়ে কম এবং সোডিয়াম, পটাশিয়াম, এলুমিনিয়াম ও সিলিকেট শিলা (যেমন- গ্র্যানাইট) দিয়ে গঠিত। ভূত্বকের শিলাগুলোকে দু’টো প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। তা হলো, ১-সিয়াল এবং ২-সিমা। হিসেব করা দেখা গেছে, কোনার্ড বিচ্ছিন্নতা (দ্বিতিয় ধাপের বিচ্ছিন্নতা) যেখানে শুরু হয়, তার ১১ কিমি নিচ থেকে শুরু হয় সিমা স্তর। সর্ববহিঃস্থ ভূ-আচ্ছাদন এবং ভূত্বককে নিয়ে অশ্বমন্ডল গঠিত।

    The structure of the earth

    দু’টো প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ভূ-ত্বক এবং ভূ-আচ্ছাদনের মধ্যকার সীমারেখা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভূকম্পন-গতিবেগ বা সিসমিক গতিবেগের বিচ্ছিন্নতা, যেটাকে মহো বিচ্ছিন্নতা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। শিলাস্তরের উপর দিকে প্লেজিওক্লেস ফ্লেডস্পার (এক ধরনের এলুমিনিয়াম-পটাশিয়াম সংমিশ্রণ) থাকা এবং নিচের দিকে না থাকার তারতম্যের কারণে তৈরি হয় মহো বিচ্ছিন্নতা। দ্বিতীয়ত, মহাসাগরীয় ভূ-ত্বকের পুঁজিভূত আগ্নেয়শিলা এবং সুগঠিত পাতালিক শিলার মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক বিচ্ছিন্নতা কাজ করে। এই ঘটনাটি দেখা যায় মহাসাগরীয় ভূত্বকের সুগভীর অংশে, যেখানে অফিওলাইট ক্রম অনুযায়ী মহাদেশীয় ভূত্বকের উপর মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক অভিলেপিত বা প্রলেপিত হয়েছে।

    ভূত্বকের অনেক শিলাই গঠিত হয়েছে ১০ কোটি বছর আগে। সবচেয়ে পুরনো খনিজ পদার্থ যেটি পাওয়া গেছে তার বয়স হলো ৪.৪ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ ভূত্বকের বয়স অন্তত ৪.৪ বিলিয়ন বছর।[৪]

    ভূ-আচ্ছাদন

    পৃথিবীর মানচিত্রে মহো বিচ্ছিন্নতা দেখানো হয়েছে।

    The structure of the earth

    ভূ-আচ্ছাদনের গভীরতা ২,৮৯০ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরু স্তর। দু’টো ভাগে ভাগ করা যায় ভূ-আচ্ছাদনকে; উচ্চ আচ্ছাদন এবং নিম্ন আচ্ছাদন। এই দু’টো স্তর একটি পরিবৃত্তি এলাকা দ্বারা বিভাজিত হয়েছে। ভূ-ত্বকের সর্বনিম্ন অংশ, যেটা ভূ-ত্বক এবং ভূ-আচ্ছাদনের সীমারেখায় অবস্থিত, সেটাকে বলা হয় ডি″ (ডি ডাবল প্রাইম) স্তর।[৫] ভূ-আচ্ছাদনের নিম্নভাগে মোট চাপের পরিমাণ প্রায় ১৪০ গিগা প্যাসকেল (১.৪ মেগা বায়ুচাপ)। সিলিকেট শিলার মাধ্যমে ভূ-আচ্ছাদন গঠিত হয়। সিলিকেট শিলায় লোহা এবং ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ উপরিভাগের ভূ-ত্বকের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। যদিও ভূ-আচ্ছাদন কঠিন অবস্থায় থাকে, তবে উচ্চ তাপমাত্রার ফলে এটি এক সময় বেশ নমনীয় হয় এবং প্রায় তরলের মতোই প্রবাহিত হতে পারে। তবে এ ঘটনা ঘটতে লক্ষ-কোটি বছর সময় লেগে যাবে। টেকটনিক পাতের গতিবিধির কারণে এক সময় ভূ-পৃষ্ঠে ভূ-আচ্ছাদনের পরিচলন ঘটে। ভূ-আচ্ছাদনের গভীরে যত যাওয়া হয়, ভূ-চাপ ততোই বেড়ে যায় বলে ভূ-আচ্ছাদনের প্রবাহিত হবার ঘটনা উপরিভাগে বেশি ঘটে, নিচের দিকে ঘটে কম (বলা ভাল, ভূ-আচ্ছাদনের রাসায়নিক পরিবর্তনও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে)। গভীরতার উপর নির্ভর করে, ভূ-আচ্ছাদনের সান্দ্রতার ব্যাপ্তি  ১০২১ থেকে ১০২৪ প্যাসকেল-সেকেন্ড হতে পারে।[৬] তুলনামূলক আলোচনা করলে বলা যায়, পানির সান্দ্রতা প্রায় ১০−৩ প্যাসকেল-সেকেন্ড এবং আলকাতরার ১০ প্যাসকেল-সেকেন্ড। ভূ-আচ্ছাদনে তাপের অন্যতম উৎস হলো প্লেট টেকটোনিক থেকে আসা তাপ, এই তাপ একদম পৃথিবী গঠিত হবার শুরুর দিকে তৈরি হয়েছিল। এছাড়া ভূ-ত্বকে থাকা ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম এবং পটাশিয়াম মৌলের তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয় থেকেও ভূ-আচ্ছাদনের ভেতর তাপ জমা হয়ে থাকে।[৭]

    ভূ-মজ্জা

    পৃথিবীর গড় ঘণত্ব হলো ৫,৫১৫ কিলোগ্রাম/কিউবিক মিটার, কারণ ভূ পৃষ্ঠের উপাদানগুলোর গড় ঘণত্ব হলো মাত্র ৩,০০০ কিলোগ্রাম/কিউবিক মিটার। ভূ-মজ্জায় এর চেয়ে ঘণ উপাদান রয়েছে এটা অবশ্যই ধরে নিতে হবে। ভূকম্পীয় পরিমাপ থেকে দেখা যায় যে, ভূ-মজ্জা দু’টি অংশে বিভক্ত; একটি কঠিন অন্তঃস্থ মজ্জা (ব্যাসার্ধ ১,২২০ কিমি[৮] এবং একটি তরল বহিঃস্থ মজ্জা (ব্যাসার্ধ ৩,৪০০ কিমি)। বহিঃস্থ মজ্জায় ঘণত্বের ব্যাপ্তি হলো ৯,৯০০ থেকে ১২,২০০ কিলোগ্রাম/কিউবিক মিটার এবং অন্তঃস্থ মজ্জায় এটি ১২,৬০০-১৩,০০০ কিলোগ্রাম/কিউবিক মিটার।[৯]

    ১৯৩৬ সালে ইঙ্গ লিম্যান অন্তঃস্থ মজ্জা আবিষ্কার করেছিলেন। সাধারণত ধারণা করা হয় যে, অন্তঃস্থ মজ্জা প্রাথমিকভাবে শুধু লোহা এবং নিকেল দ্বারা গঠিত। অন্তঃস্থ মজ্জা সর্বত্র কঠিনই হবে এমন কোন কথা নেই, তবে যেহেতু এটি ভূ-কম্পন তরঙ্গকে পথচ্যুত করে তাই এটাকে মোটামুটি কঠিনই বলা যায়। এক সময় পরীক্ষালব্ধ প্রমাণের মাধ্যমে ভূ-মজ্জার স্ফটিক মডেলটিকে সমালোচিত করা হয়েছিল।[১০] তবে অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ চাপে ভূ-মজ্জা অন্য রকম আচরণ করে। স্থির হীরকের নেহাই পরীক্ষায় দেখা যায়, মজ্জা চাপের কারণে গলন তাপমাত্রা উৎপন্ন হতে পারে। স্থির শক লেজার পরীক্ষায় এই তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২,০০০ কেলভিন।[১১][১২] লেজার পরীক্ষায় প্লাজমা উৎপন্ন করে জানা গেছে,[১৩] অন্তঃস্থ মজ্জা কঠিন নাকি কঠিনের ন্যায় প্লাজমা তার উপর অন্তঃস্থ মজ্জার চাপীয় অবস্থা নির্ভর করে। এ বিষয়ে এখনো গবেষণা চলছে

    The structure of the earth

    পৃথিবী গঠিত হবার শুরুর দিকের ধাপগুলো সংগঠিত হয়েছে সারে চার বিলিয়ন (৪.৫×১০৯) বছর আগে। গলন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে অপেক্ষাকৃত ভারী বস্তুগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ডুবে গিয়েছে এবং হালকা বস্তুগুলো ভূ-ত্বকে এসে জমা হয়েছে; এই ঘটনাটি পৃথিবীর পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় ভূ-মজ্জার সিংহভাগ উপাদান হলো লোহা (৮০%), সাথে কিছুটা নিকেল এবং আরও কিছু হালকা মৌল। হালকা মৌলগুলোকে একীভূত করার কাজে ঘণ উপাদানগুলোর, যেমন সীসা কিংবা ইউরেনিয়ামের খুবই সামান্যই অবদান ছিল। তাই তারা ভূ-ত্বকেই স্থায়ীভাবে থেকে গেছে। তবে অনেকে এটাও দাবী করে যে, অন্তঃস্থ মজ্জা একটি একক লৌহ স্ফটিক মাত্র।[১৪][১৫]

    গবেষণাগারে লোহা এবং নিকেলের একটি সংকর ধাতুর নমুনাকে ভূ-মজ্জার মতো চাপীয় অবস্থায় রেখে একটি হীরক ধারকের সাহায্যে আটকে ৪,০০০ কেলভিন তাপ দেওয়া হয়েছিল। নমুনাটিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এক্স রে-র সাহায্যে। এই পর্যবেক্ষণের ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে যে পৃথিবীর অন্তঃস্থ মজ্জা একটি অতিকায় স্ফটিক দিয়ে তৈরি, যেটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ধাবমান।[১৬][১৭]

    পৃথিবীর বহিঃস্থ তরল মজ্জাটি ভেতরের কঠিন মজ্জাকে ঘিরে রেখেছে। এটি লোহা, নিকেল এবং আরও কিছু লঘু ধাতু দিয়ে তৈরি।

    সাম্প্রতিক চিন্তাধারা বলে, অন্তঃস্থ মজ্জার একদম ভেতরের দিকে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ, প্লাটিনাম এবং লৌহ রয়েছে।[১৮]

    পৃথিবী মৌলিকভাবে কিছু পদার্থের সাথে সম্পৃক্ত, যেসব পদার্থ উল্কাপাতের ফলে অগঠিত ভাবে পৃথিবীতে এসেছে, গলন প্রক্রিয়ার সময় সুগঠিত হয়েছে, যেগুলো কন্ড্রাইট মিটিওরাইট বা ধাতব শিলা নামে পরিচিত এবং যে পদার্থগুলো সূর্যের বাহ্যিক অংশের উপাদান।[১৯][২০] তাই পৃথিবী মূলত একটি ধাতব শিলা, এমন ধারণা পোষণ করার পেছনে যুক্তি রয়েছে। পৃথিবী একটি সাধারণ কন্ড্রাইট মিটিওরাইট যেটি এন্সটাটাইট মিটিওরাইট-কে (এটি একরকম পাইরক্সিন শিলা, মূলত ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট দিয়ে গঠিত) উপেক্ষা করে পৃথিবীর ভূমিরূপকে প্রভাবিত করে থাকে, এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ১৯৪০ সালের দিকে ফ্রান্সিস বার্চ সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা একটি ভূপ্রকৃতিবিদ্যা গঠন করেছে। এই দুই ধরনের মিটিওরাইটের মধ্যে পার্থক্য হলো, এন্সটাটাইট মিটিওরাইট তৈরি হয়েছে সীমিত পরিমাণ অক্সিজেনের উপস্থিতিতে, যার ফলে বিভিন্ন অক্সিফাইল উপাদানগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপে ভূ-মজ্জায় সংকর ধাতু হিসেবে জমা হয়েছে।

    The structure of the earth

    ডাইনামো মতবাদ বলছে যে পৃথিবীর বহিঃস্থ মজ্জার পরিচলন এবং কোরিওলিস প্রভাব সম্মিলিত ভাবে ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করে। কঠিন অন্তঃস্থ মজ্জাটি এতই উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে যে সেটি কোন স্থায়ী চৌম্বকক্ষেত্রকে ধরে রাখতে পারে না, তবে তা তরল বহিঃস্থ মজ্জার তৈরি চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটিকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। পৃথিবীর বহিঃস্থ মজ্জায় অবস্থিত চৌম্বক ক্ষেত্রটির গড় শক্তি হলো ২৫ গস বা ২.৫ মিলি টেসলা, যা ভূপৃষ্ঠের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী।[২১][২২]

    সাম্প্রতিক প্রমাণাদি বলছে যে, পৃথিবীর অন্তঃস্থ মজ্জা পৃথিবীর তুলনায় সামান্য বেশি গতিতে ঘূর্ণায়মান।[২৩] ২০১১ সালের একটি গবেষণা অবশ্য এই মতবাদ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে। এমনও হতে পারে যে ভূ-মজ্জাটি প্রাকৃতিকভাবে বা বিশৃঙ্খলভাবে দোদুল্যমান। ২০০৫ সালের অগাস্টে একদল ভূ-প্রকৃতিবিদ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করেছিল যে, পৃথিবীর অন্তঃস্থ মজ্জা ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ০.৩ থেকে ০.৫ ডিগ্রি দ্রুততর গতিতে ঘুরছে।[২৪][২৫]

    পৃথিবীর তাপমাত্রা গ্রেডিয়েন্টের সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলছে, তাপমাত্রা গ্রেডিয়েন্ট হলো পৃথিবীর প্রাথমিক ভূমিগঠনের সময় নির্গত তাপশক্তি, তেজষ্ক্রিয় পরমাণুর ক্ষয় এবং অন্তঃস্থ মজ্জার শীতলীভূতকরণের সমাহার।

    বিকল্প ধারণাসমূহের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ

    এডমান্ড হ্যালির প্রকল্প।

    The structure of the earth

    ১৬৯২ সালে ফিলোসফিক্যাল ট্রাঞ্জিকশনস অফ রয়্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এডমান্ড হ্যালি পৃথিবীর একটি ধারণা দিয়েছিলেন যে, পৃথিবীটা ৫০০ মাইল পুরুত্বের একটি ফাঁপা খোলস দিয়ে গঠিত, যার গভীরতম মজ্জার চারিদিকে আরও দু’টি সমকেন্দ্রিক খোলস রয়েছে, যেগুলোর ব্যাস যথাক্রমে শুক্র, মঙ্গল এবং বুধ এর অনুরূপ।[২৬] হ্যালির এই মতবাদটি গড়ে উঠেছিল পৃথিবী এবং চাঁদের আপেক্ষিক ঘণত্বের মানের উপর নির্ভর করে, যেমনটা আইজাক নিউটন বলেছিলেন তার গ্রন্থ প্রিন্সিপিয়াতে। হ্যালি মন্তব্য করেছিলেন, “স্যার আইজ্যাক নিউটন চাঁদকে পৃথিবীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কঠিন বস্তু হিসেবে দেখিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন ধরে নিচ্ছি না যে, আমাদের পৃথিবীটার চার-নবমাংশই ফাঁপা?”[২৬]

  • পৃথিবীর আহ্নিক গতি(Earth’s instantaneous speed)

    পৃথিবীর আহ্নিক গতি(Earth’s instantaneous speed)

    পৃথিবীর আহ্নিক গতি (Earth’s instantaneous speed)বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে। মুক্তি বেগ ১১.২ km/s

    ঘূর্ণনকাল

    আপাত সৌর দিবস

    মূল নিবন্ধ: আপাত সৌর সময়

    Earth’s instantaneous speed

    সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কে আপাত সৌর দিবস বলে। এই সময় পৃথিবীর আক্ষিক গতির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ও নতির পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ও নতি হাজার বছর ধরে পরিবর্তিত হয় বলে পৃথিবীর আপাত সৌর দিবসও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণতঃ বছরের দুইটি সময়ে আপাত সৌর দিবস গড় সৌর দিবস অপেক্ষা দীর্ঘতর এবং অপর দুইটি সময়ে হ্রস্বতর হয়। সূর্য ক্রান্তিবৃত্তের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোণে পরিক্রমণ করলে অনুসূরের নিকটে আপাত সৌর দিবস ১০ সেকেন্ডের মতো দীর্ঘতর হয়, অপরদিকে অপসূরের নিকটে আপাত সৌর দিবস ১০ সেকেন্ডের মতো হ্রস্বতর হয়। অয়নের নিকটবর্তী অঞ্চলে আপাত সৌর দিবস ২০ সেকেন্ড দীর্ঘতর এবং বিষুবের নিকটবর্তী অঞ্চলে ২০ সেকেন্ড হ্রস্বতর হয়। অনুসূর ও অয়ন এই দুই ধরনের দশা যৌথভাবে আপাত সৌর দিবসকে ২২ ডিসেম্বরের নিকটে ৩০ সেকেন্ড দীর্ঘতর করে। অপরদিকে ১৯শে জুনের নিকটে অয়নের প্রভাব অপসূর দ্বারা বিলোপিত হলে আপাত সৌর দিবস মাত্র ১৩ সেকেন্ড দীর্ঘতর হয়। বিষুবের প্রভাবে আপাত সৌর দিবস ২৬ মার্চ ১৮ সেকেন্ড ও ১৬ সেপ্টেম্বর ২১ সেকেন্ড কমে যায়।

    গড় সৌর দিবস

    পৃথিবীর নক্ষত্র দিবস সৌর দিবস অপেক্ষা হ্রস্বতর। সময়কাল ১এ সূর্য ও কোন নক্ষত্র দুটি মাথার ওপরে। সময়কাল ২এ পৃথিবীর ৩৬০° ঘূর্ণন সম্পন্ন, নক্ষত্র মাথার ওপরে কিন্তু সূর্য নয় (১→২ = এক নক্ষত্র দিবস)। সময়কাল ৩এ সূর্য আবার মাথার ওপরে (১→৩ = এক সৌর দিবস)

    মূল নিবন্ধ: গড় সৌর সময়

    Earth’s instantaneous speed

    একবছরে মোট আপাত সৌর দিবসের গড়কে গড় সৌর দিবস বলা হয়। গড় সৌর দিবস ৮৬,৪০০ গড় সৌর সেকেন্ড নিয়ে তৈরি। পূর্বের চেয়ে বর্তমানে এই সেকেন্ড মানক সেকেন্ড অপেক্ষা আরো দীর্ঘতর হয়েছে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে গড় সৌর দিবস ৮৬,৪০০ মানক সেকেন্ড অপেক্ষা ০-২ মিলিসেকেন্ড দীর্ঘতর হয়েছে।

    নক্ষত্র দিবস

    মূল নিবন্ধ: নক্ষত্র সময়

    স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে নিজের অক্ষের চারিদিকে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কালকে স্থির নক্ষত্র দিবস বলা হয়। এর মান ৮৬,১৬৪.০৯৮৯০৩৬৯১ গড় সৌর সেকেন্ড বা ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯৮৯০৩৬৯১ গড় সৌর দিন। চলায়মান নক্ষত্রের সাপেক্ষে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কালের মান ৮৬,১৬৪.০৯০৫৩০৮৩২৮৮ গড় সৌর সেকেন্ড বা ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯০৫৩০৮৩২৮৮ গড় সৌর দিন। এই সময়কাল স্থির নক্ষত্র দিবস অপেক্ষা ৮.৪ মিলিসেকেন্ড হ্রস্ব। এই দুই সময়কাল গড় সৌর দিবস অপেক্ষা ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড হ্রস্ব।

    কৌণিক বেগ

    Earth’s instantaneous speed

    পৃথিবীর কৌণিক বেগ (৭.২৯২১১৫০ ± ০.০০০০০০১) ×১০−৫ রেডিয়ান/মানক সেকেন্ড। [n ২] এই মানকে পৃথিবীর বিষুব ব্যাসার্ধ ৬,৩৭৮,১৩৭ মিটার দিয়ে গুণ করলে পৃথিবীর বিষুব গতিবেগ হয় ৪৬৫.১ মিটার/সেকেন্ড বা ১,৬৭৪.৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা। [৬] পৃথিবীর ওপর কোন স্থানের অক্ষাংশের কোসাইনের সঙ্গে পৃথিবীর বিষুব গতিবেগ গুণ করলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের স্পর্শক বরাবার গতিবেগ নির্ণয় করা যায়। [৭] [n ৩]

    ঘূর্ণনের পরিবর্তন

    মানক দিনের থেকে দিনের দৈর্ঘ্যের বিচ্যুতি, ১৯৬২-২০০০

    পৃথিবীর ঘূর্ণনতল ও অক্ষের সঙ্গে অক্ষীয় নতির সম্পর্ক

    পৃথিবীর আহ্নিক গতির(Earth’s instantaneous speed) অক্ষ স্থির নক্ষত্র ও পৃথিবীপৃষ্ঠের সাপেক্ষে সচল থাকে। সূর্য, চাঁদ ও অন্যন্য মহাজাগতিক বস্তুর মাধ্যাকর্ষণের বাহ্যিক শক্তিতে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষের পূর্বগামী ঘূর্ণন হয়ে থাকে। লক্ষাধিক বছর ধরে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনশক্তি ও কৌণিক বেগ খুব ধীর গতিতে কমে চলেছে। অবশ্য পৃথিবী পৃষ্ঠে ২০০৪ ভারত মহাসাগর ভূমিকম্পের মতো বেশ কিছু বড় ঘটনা পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিবেগ তিন মাইক্রোসেকেন্ডের মতো বাড়িয়ে দিয়েছে। হিমযুগের পরবর্তী হিমবাহ পশ্চাদপসরণের দ্বারা পৃথিবীপৃষ্ঠের ভরের বণ্টনের পরিবর্তনের ফলে কৌণিক ভরবেগের নিত্যতার দ্বারা পৃথিবীর ঘূর্ণনের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।

    Earth’s instantaneous speed

    পাদটীকা

    পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০৪৭ থেকে বেড়ে গেলে এবং অনুসূর যথার্থ বিষুব ও অয়নে অবস্থান করলে, কেবলমাত্র একটি শীর্ষযুক্ত সময়কাল দুইটি শীর্ষযুক্ত অপর সময়কালের সঙ্গে সমতা বজায় রাখে। (১৮০°/π রেডিয়ান)×(৮৬,৪০০ সেকেন্ড/গড় সৌর দিবস) = ৩৬০.৯৮৫৬°/গড় সৌর দিবস – এর দ্বারা বোঝা যায়, এক সৌর দিবসে পৃথিবীর ঘূর্ণন স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে ৩৬০° এর বেশি।[৪] উদহারণ স্বরূপ, কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র ২৮.৫৯° উত্তরে অবস্থিত,সুতরাং সেই স্থানের স্পর্শক বরাবার গতিবেগ হবে ১৬৭৪.৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা × কোসাইন ২৮.৫৯° = ১৪৭০.২৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা[৭]

    নেপালে হিমালয়ের একাংশের ছবি। বছরের প্রতি দিন রাত্রিবেলা একই সময়ে তোলা আকাশের ছবিগুলিকে একত্র করা হয়েছে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে আকাশের গায়ে বিভিন্ন তারার আপাত বার্ষিক গতিপথ বোঝা যাচ্ছে। ‘কেন্দ্রে’ অর্থাৎ নাক্ষত্র উত্তর মেরুতে রয়েছে ধ্রুবতারা।

    Earth’s instantaneous speed

    পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে

  • পৃথিবীর আকার(size of the earth)

    পৃথিবীর আকার(size of the earth)

    পৃথিবীর আকার শব্দযুগলের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং এই শব্দযুগল দিয়ে পৃথিবীর আয়তন এবং আকৃতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যদিও গোলক পৃথিবীর সত্যিকার চিত্রের কাছাকাছি অনুমান করা এবং আরও কিছু উদ্দেশ্যসাধনের সন্তোষজনক, ভূগণিতবিদগণ অনেকগুলো মডেল তৈরি করেছেন যা আরও সূক্ষ্মভাবে পৃথিবীর আকৃতির আনুমান করতে সাহায্য করে। এই মডেলগুলোর সমন্বিত পদ্ধতিসমূহ ন্যাভিগেশন, জরিপ, ক্যাডাস্ট্রার, ভূমির ব্যবহার, এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়াদির সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনের ধারণা প্রদান করে।

    পৃথিবীর আকারের মডেলের প্রয়োজনীয়তা

    size of the earth

    বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ভূবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার ফলে পৃথিবীর আকারের নির্ভুলতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। এই নির্ভুল উন্নতির প্রাথমিক কার্যকারিতা (তহবিলের জন্য প্রেরণা, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী থেকে) ছিল বেলেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নিষ্ক্রিয় নির্দেশিকা পদ্ধতির জন্য ভৌগোলিক এবং মহাকর্ষীয় তথ্য সরবরাহ করা। এই তহবিলটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবৈজ্ঞানিক শাখার সম্প্রসারণ এবং ভূবিজ্ঞান বিভাগের সৃষ্টি ও বৃদ্ধির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে।[১]

    পৃথিবীর আকারের মডেল

    গোল

    size of the earth

    সমগ্র পৃথিবীর আকারের সহজতম মডেল হল একটি গোলক। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল পৃথিবীর মধ্যভাগ থেকে এর পৃষ্ঠের দূরত্ব, যা প্রায় ৬,৩৭১ কিলোমিটার (৩,৯৫৯ মাইল)। ব্যাসার্ধ হল পূর্ণাঙ্গ গোলকের সাধারণ বৈশিষ্ট। একটি গোলক থেকে পৃথিবীর পার্থক্য মাত্র এক শতাংশের এক তৃতীয়াংশ, ফলে একে “পৃথিবীর ব্যাসার্ধ” বলা যেতে পারে।

    খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেওয়া হয়,[২] কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী তা কাল্পনিক বিষয় রয়ে যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ অব্দে এরাটোস্থেনিস পৃথিবীর ব্যসার্ধ বিষয়ক প্রথম বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রদান করেন, এবং এরাটোস্থেনিসের গণনায় নির্ভুলতার ব্যবধান ছিল ২% থেকে ১৫%।

    আয়তন

    size of the earth

    পৃথিবীর আয়তন আনুমানিক ১,০৮৩,২১০,০০০,০০০ কিমি (২.৫৯৮৮ × ১০১১ কিউবিক মাইল)।[৩]

    ভূগণিত অনুসারে পৃথিবীর আকার শব্দযুগলের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং এই শব্দযুগল দিয়ে পৃথিবীর আয়তন এবং আকৃতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যদিও গোলক পৃথিবীর সত্যিকার চিত্রের কাছাকাছি অনুমান করা এবং আরও কিছু উদ্দেশ্যসাধনের সন্তোষজনক, ভূগণিতবিদগণ অনেকগুলো মডেল তৈরি করেছেন যা আরও সূক্ষ্মভাবে পৃথিবীর আকৃতির আনুমান করতে সাহায্য করে। এই মডেলগুলোর সমন্বিত পদ্ধতিসমূহ ন্যাভিগেশন, জরিপ, ক্যাডাস্ট্রার, ভূমির ব্যবহার, এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়াদির সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনের ধারণা প্রদান করে।

    পৃথিবীর আকারের মডেলের প্রয়োজনীয়তা

    বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ভূবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার ফলে পৃথিবীর আকারের নির্ভুলতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। এই নির্ভুল উন্নতির প্রাথমিক কার্যকারিতা (তহবিলের জন্য প্রেরণা, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী থেকে) ছিল বেলেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নিষ্ক্রিয় নির্দেশিকা পদ্ধতির জন্য ভৌগোলিক এবং মহাকর্ষীয় তথ্য সরবরাহ করা। এই তহবিলটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবৈজ্ঞানিক শাখার সম্প্রসারণ এবং ভূবিজ্ঞান বিভাগের সৃষ্টি ও বৃদ্ধির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে।[১]

    পৃথিবীর আকারের মডেল

    size of the earth

    গোল

    সমগ্র পৃথিবীর আকারের সহজতম মডেল হল একটি গোলক। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল পৃথিবীর মধ্যভাগ থেকে এর পৃষ্ঠের দূরত্ব, যা প্রায় ৬,৩৭১ কিলোমিটার (৩,৯৫৯ মাইল)। ব্যাসার্ধ হল পূর্ণাঙ্গ গোলকের সাধারণ বৈশিষ্ট। একটি গোলক থেকে পৃথিবীর পার্থক্য মাত্র এক শতাংশের এক তৃতীয়াংশ, ফলে একে “পৃথিবীর ব্যাসার্ধ” বলা যেতে পারে।

    খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেওয়া হয়,[২] কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী তা কাল্পনিক বিষয় রয়ে যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ অব্দে এরাটোস্থেনিস পৃথিবীর ব্যসার্ধ বিষয়ক প্রথম বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রদান করেন, এবং এরাটোস্থেনিসের গণনায় নির্ভুলতার ব্যবধান ছিল ২% থেকে

    ভূগণিত অনুসারে পৃথিবীর আকার শব্দযুগলের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং এই শব্দযুগল দিয়ে পৃথিবীর আয়তন এবং আকৃতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যদিও গোলক পৃথিবীর সত্যিকার চিত্রের কাছাকাছি অনুমান করা এবং আরও কিছু উদ্দেশ্যসাধনের সন্তোষজনক, ভূগণিতবিদগণ অনেকগুলো মডেল তৈরি করেছেন যা আরও সূক্ষ্মভাবে পৃথিবীর আকৃতির আনুমান করতে সাহায্য করে। এই মডেলগুলোর সমন্বিত পদ্ধতিসমূহ ন্যাভিগেশন, জরিপ, ক্যাডাস্ট্রার, ভূমির ব্যবহার, এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়াদির সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনের ধারণা প্রদান করে।

    পৃথিবীর আকারের মডেলের প্রয়োজনীয়তা

    size of the earth

    বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ভূবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার ফলে পৃথিবীর আকারের নির্ভুলতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। এই নির্ভুল উন্নতির প্রাথমিক কার্যকারিতা (তহবিলের জন্য প্রেরণা, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী থেকে) ছিল বেলেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নিষ্ক্রিয় নির্দেশিকা পদ্ধতির জন্য ভৌগোলিক এবং মহাকর্ষীয় তথ্য সরবরাহ করা। এই তহবিলটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবৈজ্ঞানিক শাখার সম্প্রসারণ এবং ভূবিজ্ঞান বিভাগের সৃষ্টি ও বৃদ্ধির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে।[১]

    পৃথিবীর আকারের মডেল

    গোল

    size of the earth

    সমগ্র পৃথিবীর আকারের সহজতম মডেল হল একটি গোলক। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল পৃথিবীর মধ্যভাগ থেকে এর পৃষ্ঠের দূরত্ব, যা প্রায় ৬,৩৭১ কিলোমিটার (৩,৯৫৯ মাইল)। ব্যাসার্ধ হল পূর্ণাঙ্গ গোলকের সাধারণ বৈশিষ্ট। একটি গোলক থেকে পৃথিবীর পার্থক্য মাত্র এক শতাংশের এক তৃতীয়াংশ, ফলে একে “পৃথিবীর ব্যাসার্ধ” বলা যেতে পারে।

    খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেওয়া হয়,[২] কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী তা কাল্পনিক বিষয় রয়ে যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ অব্দে এরাটোস্থেনিস পৃথিবীর ব্যসার্ধ বিষয়ক প্রথম বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রদান করেন, এবং এরাটোস্থেনিসের গণনায় নির্ভুলতার ব্যবধান ছিল ২% থেকে

    আরও দেখুন

  • দক্ষিণ মেরু(south pole)

    দক্ষিণ মেরু(south pole)

    পৃথিবীর দক্ষিণ(south pole) ভাগে অবস্থিত যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থান হল পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু বা ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু(south pole) বা কুমেরু। দক্ষিণ মেরু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দক্ষিণতম বিন্দু। এই স্থান পৃথিবীর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত উত্তর মেরুর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী গবেষণাগার আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র অবস্থিত।

    ভূগোল

    ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু

    পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থানটি হল পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু। এই স্থানের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ৯০° দক্ষিণ। এই স্থানের দ্রাঘিমা অসংজ্ঞাত হওয়ায় একে ০° ধরে নেওয়া হয়। দক্ষিণ মেরুতে সমস্ত দিক উত্তর দিকে নির্দেশ করে। এই কারণে দক্ষিণ মেরুতে মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে দিক নির্ণয় করা হয়। [১]

    south pole

    পূর্বে দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের সমুদ্রে অবস্থান করলেও মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকার এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮৩৫ মিটার বা ৯,৩০১ ফুট ওপরে ২,৭০০ মিটার পুরু বরফে ঢাকা মালভূমিতে অবস্থিত। তাই এই স্থানের ভূপৃষ্ঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মতো উঁচু। এই স্থান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী সমুদ্র ১৩০০ কিলোমিটার দূরে তিমি উপসাগর[২] মেরুর বরফ মূল মধ্যরেখার থেকে ৩৭° থেকে ৪০° পশ্চিমের মধ্যে ওয়েডেল সাগরের দিকে বছরে ১০ মিটার করে প্রবাহিত হচ্ছে। [৩]

    সময়

    south pole

    যেহেতু দক্ষিণ মেরুতে সূর্যোদয়সূর্যাস্ত বছরে একবার হয় এবং পৃথিবীর সকল দ্রাঘিমা রেখা এই বিন্দুতে এসে মিলিত হয়, সেহেতু দক্ষিণ মেরুকে কোন নির্দিষ্ট সময় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কিন্তু প্রায়োগিক ও প্রাত্যাহিক ব্যবহারের জন্য আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড সময়ের সাহায্য নেয়।

    আবহাওয়া

    south pole

    মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।

    দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় −২৫.৯ °সে (−১৫ °ফা)] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে −৪৫ °সে (−৪৯ °ফা) হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা −৫৮ °সে (−৭২ °ফা) থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা −১২.৩ °সে (৯.৯ °ফা)[৪] এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন −৮২.৮ °সে (−১১৭.০ °ফা)[৫][৬][৭] পাওয়া যায়।

    south pole

    দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া শুষ্ক। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত প্রায় কখনোই হয়না বললেই চলে। কিন্তু প্রচন্ড গতিবেগে প্রবাহিত হাওয়ায় তুষারপাত হয় এবং প্রতি বছর ২০ সেমি (৭.৯ ইঞ্চি) হারে তুষার জমা হয়।[৮]

    ২০০৯ সালের দক্ষিণ মেরু-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
    মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
    সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা)−১৪
    (৭)
    −২০
    (−৪)
    −২৬
    (−১৫)
    −২৭
    (−১৭)
    −৩০
    (−২২)
    −৩১
    (−২৪)
    −৩৩
    (−২৭)
    −৩২
    (−২৬)
    −২৯
    (−২০)
    −২৯
    (−২০)
    −১৮
    (০)
    −১২.৩
    (৯.৯)
    −১২.৩
    (৯.৯)
    সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা)−২৫.৯
    (−১৪.৬)
    −৩৮.১
    (−৩৬.৬)
    −৫০.৩
    (−৫৮.৫)
    −৫৪.২
    (−৬৫.৬)
    −৫৩.৯
    (−৬৫.০)
    −৫৪.৪
    (−৬৫.৯)
    −৫৫.৯
    (−৬৮.৬)
    −৫৫.৬
    (−৬৮.১)
    −৫৫.১
    (−৬৭.২)
    −৪৮.৪
    (−৫৫.১)
    −৩৬.৯
    (−৩৪.৪)
    −২৬.৫
    (−১৫.৭)
    −৪৬.৩
    (−৫১.৩)
    সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)−২৯.৪
    (−২০.৯)
    −৪২.৭
    (−৪৪.৯)
    −৫৭.০
    (−৭০.৬)
    −৬১.২
    (−৭৮.২)
    −৬১.৭
    (−৭৯.১)
    −৬১.২
    (−৭৮.২)
    −৬২.৮
    (−৮১.০)
    −৬২.৫
    (−৮০.৫)
    −৬২.৪
    (−৮০.৩)
    −৫৩.৮
    (−৬৪.৮)
    −৪০.৪
    (−৪০.৭)
    −২৯.৩
    (−২০.৭)
    −৫২.০
    (−৬১.৬)
    সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)−৪১
    (−৪২)
    −৫৭
    (−৭১)
    −৭১
    (−৯৬)
    −৭৫
    (−১০৩)
    −৭৮
    (−১০৮)
    −৮২
    (−১১৬)
    −৮০
    (−১১২)
    −৭৭
    (−১০৭)
    −৭৯
    (−১১০)
    −৭১
    (−৯৬)
    −৫৫
    (−৬৭)
    −৩৮
    (−৩৬)
    −৮২.৮
    (−১১৭.০)
    মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড়৫৫৮৪৮০২১৭৬০৪৩৪৬০০৫৮৯২,৯৩৮
    উৎস ১: [৯]
    উৎস ২: [১০]

    south pole

    মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।
    দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় −২৫.৯ °সে (−১৫ °ফা)] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে −৪৫ °সে (−৪৯ °ফা) হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা −৫৮ °সে (−৭২ °ফা) থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা −১২.৩ °সে (৯.৯ °ফা)[৪] এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন −৮২.৮ °সে (−১১৭.০ °ফা)[৫][৬][৭] পাওয়া যায়।

  • চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon)

    চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon)

    চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon) বলতে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের গঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যাকে বুঝানো হয়। এই সম্পর্কিত তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যটি হল জায়ান্ট-ইম্প্যাক্ট তত্ত্ব।[১][২] এটি নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা চলছে এবং একাধিক ভিন্ন অভিমত রয়েছে।[১] অন্যান্য প্রস্তাবিত তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে ফিশন, গঠন একত্রীক্করণ (ঘনীভবন তত্ত্ব), গ্রহাণু তত্ত্ব এবং মহাকাশীয় সংঘর্ষ তত্ত্ব।[৩] আদর্শ দৈত্যাকার সংঘর্ষ তত্ত্বমতে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীকে ঘিরে একটি ডেবরিস বলয়ে তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে চাঁদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। চাঁদের অক্সিজেন আইসোটপিক অনুপাত মূলতঃ পৃথিবীর মতই।[৪] কিন্তু থিইয়া যদি ভিন্ন কোন গ্রহ বা প্রোটোপ্লানেট হত, তবে অবশ্যই এর আইসোটপিক অনুপাত পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন হত।[৫]

    গঠন

    “বিগ মুলে”, চন্দ্র নমুনা ৬১০১৬

    Origin and growth of the moon

    কিছু তত্ত্বে বলা হয় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে, সৌরজগতের গঠনের শুরুর দিকে, পৃথিবী পাথর এবং লাভায় পূর্ণ ছিল এবং পৃথিবীর কোন বড় আকারের চাঁদ ছিল না। মঙ্গল গ্রহাকৃতির আদিম প্রোটোপ্লানেট থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষিত হলে পৃথিবী থেকে একটি অংশ বিচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। মহাশূন্যে ছিটকে পড়া অংশ হারিয়ে গেলেও এরই মাঝে কিছু অংশ আবার পৃথিবীর কক্ষপথে একীভূত হয়ে চাঁদ গঠন করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, চাঁদের উদ্ভব পৃথিবীর বর্তমান আকারের সাথে অন্তত ৯০% সামঞ্জস্য পূর্ণ কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ হলেই সম্ভব।বেশিরভাগ সময়ই সাংঘর্ষিক বস্তুটিকে থিইয়া বলা হয়। গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত চাঁদের দেবী সেলেন এর মা থিইয়া থেকে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, এই সংঘর্ষের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হতে পারে তার পরিমান অত্যন্ত বেশি। এরূপ বিশাল সংঘর্ষে ট্রিলিয়ন টনেরও বেশি বস্তু বাষ্পীভূত এবং গলে যাওয়ার কথা। এমনকি এতে পৃথিবীর কোন কোন অংশের তাপমাত্রা ১০,০০০°C (১৮০০০ °F) এর মত হয়েছিল।

    গ্রহণ

    এই তত্ত্বমতে চাঁদ পৃথিবী কর্তৃক অধিগ্রহিত হয়েছিল।[৬] ১৯৮০-এর আগ অব্দি এই ধারণা বেশ জনপ্রিয় ছিল। চাঁদের আকৃতি, কক্ষপথ এবং জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত ইস্যু এই ধারণাকে সমর্থন করে।[৬] 

    Origin and growth of the moon

    অধিগ্রহণ তত্ত্বের মূল সমস্যা হল,[৬] পৃথিবীর সাথে এরূপ ঘটনা সাধারনত বিস্ফোরণ কিংবা কক্ষপথের বিচ্যুতি ঘটায়। তাই ধারণা করা হয়, আদিম পৃথিবীতে একটি বিশাল বায়ুমন্ডল থাকতে পারে যা সঙ্ঘর্ষকে ধীর গতিতে ঘটতে সাহায্য করে। এই তত্ত্বমতে বৃহস্পতি এবংশনির অনিয়ত উপগ্রহীয় কক্ষপথের কারণও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[৭] তবে দুই জায়গার প্রয়োজনীয় অভিন্ন  অক্সিজেন আইসোটপের অনুপাতের কারণ বিশ্লেষণ করতে এই তত্ত্ব ব্যবহার সুবিধাজনক নয়।[৪]

    পৃথিবী এবং চাঁদের স্কেল, ৫০০ কি.মি প্রতি পিক্সেল

    ফিশন

    বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের পুত্র জর্জ ডারউইন সপ্তদশ শতকের দিকে সর্বপ্রথম ফিশন তত্ত্বের সূচনা করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে ক্রম ঘূর্ণায়মান পৃথিবী থেকে একটি অংশ ছিটকে গিয়ে চন্দ্রের সূচনা করে।[৬] অস্ট্রিয়ান ভূতত্ত্ববিদ অটো এমফারার ১৯২৫ সালে মহাদেশীয় প্রবাহের দরুণ চন্দ্রের সৃষ্টি বলে প্রস্তাবনা দেন।[৮]

    পরিবৃদ্ধি

    Origin and growth of the moon

    পরিবৃদ্ধির তত্ত্বানুসারে পৃথিবী এবং চন্দ্র সৌরজগতের আদিম পরিবৃদ্ধি চাকতিতে একই সাথে গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্ব পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী কৌণিক ভরবেগের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের লৌহ অংশ অপেক্ষাকৃত কম (পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় ৫০ শতাংশ কিন্তু চাঁদের ব্যাসার্ধের মাত্র ২৫%)  কেন তার উত্তরও এই তত্ত্ব দিতে অক্ষম।[৯]গঠন তরান্বিত করে।

    অতিরিক্ত তত্ত্ব এবং গবেষণা

    চন্দ্র বিবর্তন, নাসা ২০১২ এর ভিডিও।[১০]

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

    অপর একটি সম্ভাব্য তত্ত্বে বলা হয় পৃথিবীর চাঁদ শুক্র গ্রহ থেকে এসেছে।

    Origin and growth of the moon

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

  • জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ(Universalization of knowledge)

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ(Universalization of knowledge)

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ বা ইংরেজি নাম (Universalization of knowledge) বলতে জ্ঞানকে এর ঐশ্বরিক উৎস থেকে পৃথক করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রক্রিয়াটি আধুনিক যুগে জ্ঞানের ধারণাটি বোঝার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে। এটি জ্ঞানের আধ্যাত্মিক-পারমার্থিক ভিত্তি রয়েছে এবং জ্ঞান পবিত্রের সাথে সম্পর্কিত এমন ধারণাকে প্রত্যাখান করে। ফরাসি দার্শনিক রনে গেনো বহু আগেই আধুনিক সভ্যতায় ‘জ্ঞানের সর্বনিম্ন স্তরে সীমাবদ্ধ’ হওয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তার মাধ্যমে শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাদী ধারার লেখকদের মধ্যে যদিও এটি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয়, জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের এই প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্যভাবে ইসলামী দার্শনিক সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর ১৯৮১ সালে প্রদত্ত তার গিফোর্ড বক্তৃতামালায় সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা ও ধারণাবদ্ধ করেন যা পরবর্তীতে নলেজ এন্ড দ্য স্যাক্রেড নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

    ধারণা

    Universalization of knowledge

    নাসরের মতে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ ইহলৌকিকতাবাদের ধারণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। তিনি ধারণাটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এমন এক মতবাদ হিসেবে ‘যা কেবলই মানবীয় উৎস থেকে উৎসারিত এবং যা ঊর্ধ্ব জগতের সাথে সম্পর্কহীন’। এটি মানুষ ও স্রষ্টার মাঝে এক ধরনের ‘সত্তাগত বিচ্ছেদের’ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।[১] নাসরের যুক্তি অনুসারে এটি একটি ‘অশুভ শক্তি’ যা বিজ্ঞান ও জ্ঞানকে কেবলমাত্র ইহলৌকিক জগতের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে। এই প্রক্রিয়ায় একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে বিজ্ঞান জ্ঞান থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং প্রথাগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে এদের মধ্যকার সমজাতীয় চরিত্রটি হারায়।[২] জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের মূল কথা হলো আধুনিক সভ্যতা জ্ঞানের বহির্জাগতিক উৎসের সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং জ্ঞানকে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।[৩]

    ডিকশনারি অব লিটারারি বায়োগ্রাফি অনুসারেঃ

    [নাসরের] মূল যুক্তি হলো যে প্রকৃত জ্ঞান তার মৌলিক গুনাবলীর কারণেই গভীরভাবে পবিত্রের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। তার মতানুসারে, এটি হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, তাওবাদ, জরথ্রুস্টবাদ, ইহুদিধর্ম, ইসলামখ্রিস্টধর্ম সহ প্রত্যেক সনাতন ধর্মের মৌলিক শিক্ষা। রেনেসাঁ পরবর্তী আধুনিক জগতেই কেবল জ্ঞান ও পবিত্রের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।[৪]

    Universalization of knowledge

    নাসরের বিশ্লেষণে ‘জানা’ ও ‘জ্ঞান’ শব্দদুটি তাদের একমাত্রিক চরিত্র হারায়। তার মতে, পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ জ্ঞানের এক প্রাথমিক পর্যায় মাত্র। এই প্রক্রিয়াগুলি জ্ঞানের সর্বোচ্চ রূপ ‘সামগ্রিক জ্ঞান’ বা ‘আল মারিফায়’ পৌঁছার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করে। একইভাবে, ‘জানা’ বলতে প্রণালীবদ্ধভাবে যুক্তির প্রয়োগ থেকে শুরু করে ধীশক্তি দ্বারা অন্তরের অনুধাবনকে বোঝায়।[৫] তার মতে, প্রকৃতিগতভাবেই জ্ঞান সত্তার সাথে সম্পর্কিত এবং পবিত্রতার ধারণার সাথে জড়িত। জ্ঞান এমন এক মানবীয় গুণ যা সহজাতভাবেই মানুষ অর্জন করতে পারে। জানা বলতে তাই সেই পরম সত্তাকে জানা বোঝায় যিনি সকল জ্ঞান ও চেতনার উৎস।[৬] মধ্যযুগ পরবর্তী লোকায়তকরণ প্রক্রিয়া এবং মানবতাবাদ শেষ পর্যন্ত সত্তার সাথে জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পবিত্রের সংযোগ ছিন্ন করেছে।[৭]

    আল আখাওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেফানো বিগলিয়ার্ডির মতেঃ

    পরম সত্তার জ্ঞান বলতে উচ্চতর আধ্যাত্মিক স্তরের অস্তিত্বের জ্ঞান, প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মাঝে আন্তঃসম্পর্ক, তাদের মধ্যকার বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সর্বোপরি পরম সত্তার থেকে সবকিছুর উৎপত্তি এমন জ্ঞানকে বোঝায়। যাইহোক, নাসরের মতে পরম সত্তা সম্পর্কে ধীশক্তির এই সচেতনতা এর সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হিসেবে এর ব্যবহার না থাকার কারণে হারিয়ে গেছে। নাসরের পুনর্গঠনে এই ধরনের বিস্মৃতি মানুষের সমগ্র চিন্তার গতিপথকে সংজ্ঞায়িত করে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশকে জ্ঞানের চলমান ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা যায়।[৮]

    Universalization of knowledge

    নাসরের মতে, আধুনিক বিজ্ঞান বিভিন্ন স্তরের বাস্তবতাকে নিছক ‘মনো-দৈহিক স্তরে’ সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। পবিত্র দর্শন বিবর্জিত এই বিজ্ঞান একারণে শুধুমাত্র বস্তুগত জগতের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। আধুনিক বিজ্ঞান সত্তার শ্রেণীবিন্যাসের ধারণা পরিত্যাগ করার কারণে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বআবিষ্কার উচ্চতর বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত সত্যের মূল্যায়ন করতে অক্ষম। নাসরের কথায় আধুনিক বিজ্ঞান একটি ‘অসম্পূর্ণ’ বা ‘অগভীর বিজ্ঞান’ যা কেবলমাত্র বাস্তবতার কিছু অংশ নিয়ে কথা বলে এবং অন্য অংশগুলোকে অস্বীকার করে।[৯] এটি জ্ঞান অর্জনকারী সত্তা ও জ্ঞাত বস্তূর মাঝে পার্থক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। নাসর যুক্তি দেখিয়েছেন যে আধুনিক বিজ্ঞান একটি বিশুদ্ধ পরিমাণগত পদ্ধতি গ্রহণ করে জ্ঞান ও সত্যের অন্বেষণে ধীশক্তির ভূমিকাকে অস্বীকার করার কারণে এর প্রতীকী চেতনা এবং অভিজ্ঞতা ও যুক্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।[১০][১১] নাসরের যুক্তিতে বাস্তবতার কাঠামো অপরিবর্তনশীল। যা পরিবর্তিত হয় তা হচ্ছে সেই বাস্তবতা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও উপলব্ধি। কোনো ধরনের স্থায়ীত্ববোধ না থাকায় আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শন বাস্তবতাকে একটি অস্থায়ী জাগতিক প্রক্রিয়ায় পরিণত করেছে। জেন স্মিথের বিশ্লেষণে, এই ঘটনাটিকেই নাসর আধুনিক জগতে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ ও পবিত্রতাবোধ হারানোর সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[১২]

    ঐতিহাসিক বিকাশ

    Universalization of knowledge

    ‘আমি চিন্তা করি, তাই আমার অস্তিত্ব আছে’ র‍্যনে দেকার্তের বিখ্যাত উচ্চারণের এই ‘আমি’ নাসরের মতে ঐশ্বরিক ‘আমি’ নন যিনি দেকার্তের প্রায় সাত শতাব্দী আগে মানসুর আল-হাল্লাজের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমিই সত্য’ (আনাল হাক্ব)।[১৩]

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেন হেগেল যিনি ‘জ্ঞানের পুরো প্রক্রিয়াটিকে পরিবর্তন ও হয়ে ওঠার থেকে অবিচ্ছেদ্য এক ধরনের দ্বান্দ্বিকতায় পরিণত করেন।[১৪][১৫]

    Universalization of knowledge

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের প্রক্রিয়াটি প্রাচীন গ্রীকদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।[১৬] গ্রীক দার্শনিক ধারার যুক্তিবাদীসংশয়বাদীরা জ্ঞানকে যুক্তির শৃঙ্খলে সীমাবদ্ধ করে একে নেহায়েত এক মানসিক কসরতে পরিণত করার মাধ্যমে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[৮] যুক্তিবৃত্তির দ্বারা ধীশক্তিকে এবং ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের দ্বারা অন্তরের আলোক উদ্ভাসনকে প্রতিস্থাপিত করার কারণে গ্রীক দার্শনিকদের জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়ার অগ্রদূত বলা যেতে পারে।[১৭] ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যান্য বড় ধাপগুলির মধ্যে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের দার্শনিক ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ যা প্রকৃতিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রূপে উপস্থাপন করে। তবে এই প্রক্রিয়া চরম অবস্থায় পৌঁছে র‍্যনে দেকার্তের চিন্তায়, যিনি ‘ব্যক্তিগত সত্তাকে বাস্তবতার কেন্দ্র ও সকল জ্ঞানের মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করেন’।[১৮] ফলস্বরুপ, দূরতম ছায়াপথে জ্ঞানের প্রতিচ্ছায়া পড়লেও তার মূল শেষ পর্যন্ত দেকার্তের কোগিটোতেই প্রোথিত থাকে।[১৯]

    ডিকশনারি অব লিটারারি বায়োগ্রাফির ভাষ্যমতে:

    নাসর আধুনিক জগতে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ এবং এর ফলস্বরুপ মানব বুদ্ধিমত্তার অবক্ষয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, সংকটের মূল প্রাচীন গ্রীসের যুক্তিবাদী ও সন্দেহবাদীদের পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে রেনেসাঁকেন্দ্রিক মানবতাবাদ এবং আলোকায়নের যুগে বিকশিত যুক্তিবাদকে তিনি ইহজাগতিকীকরণ প্রক্রিয়ায় নিকট ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করেন। রেনেসাঁকেন্দ্রিক মানবতাবাদ জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু স্রষ্টা থেকে মানুষে স্থানান্তর করে এবং মহাবিশ্বকে একটা পার্থিব ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করে। যুক্তিবাদ অন্যদিকে মানব জ্ঞানকে কেবলই যুক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপন করে। নাসরের মতে, দেকার্তের পর জ্ঞানতত্ত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পথ অবলম্বন করেছে যা অনুধাবন ও প্রত্যাদেশকেন্দ্রিক চিরায়ত জ্ঞানকে যুক্তিপূজা দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছে। অধিবিদ্যাকে পরিত্যাগ করার কারণে যুক্তিবাদ এভাবে অভিজ্ঞতাবাদের দুয়ার প্রশস্ত করে। অভিজ্ঞতাবাদ পরিণামে অস্তিত্ববাদবিনির্মাণবাদ সহ নানা ধরণের অযৌক্তিক মতবাদের জন্ম দেয়। আধুনিক ইতিহাস তাই জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণ ও অবক্ষয়ের দ্বারা সংজ্ঞায়িত এক ইতিহাস যা মানবতাকে তার বুদ্ধিমত্তা থেকে বঞ্চিত করেছে। অন্যদিকে, মহাবিশ্বকে বঞ্চিত করেছে অর্থ ও সৌন্দর্য থেকে।[৪]

    নব্য-কনফুসীয় দার্শনিক লিউ শু-শেইন লিখেছেনঃ

    আধুনিক ইউরোপীয় দর্শন সম্বন্ধে নাসরের সমালোচনা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে দেকার্ত যে সত্তার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা পরমাত্মা বা ঐশ্বরিক কোনো সত্তা নন। তিনি বরং তার ভ্রমাত্মক ব্যক্তিসত্তার প্রতি নির্দেশ করছিলেন যেটি তার চেতনা ও অভিজ্ঞতাকে সকল জ্ঞানতত্ত্ব, তত্ত্ববিদ্যা ও নিশ্চয়তার উৎস হিসেবে গ্রহণ করে। হিউমের সন্দেহবাদী দর্শনের পর কান্ট এক ধরণের অজ্ঞেয়বাদ শিক্ষা দেন বৈশিষ্টগতভাবে যা ধীশক্তির দ্বারা বিষয়বস্তুর অপরিহার্য উপাদানকে উপলব্ধি করার সম্ভাবনা খর্ব করে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় হেগেলীয়মার্কসীয় দ্বন্দবাদে যা বাহ্য অস্থায়ী রূপের আড়ালে নিত্য বলে কিছু থাকতে পারে এমন ধারণাকে পুরোপুরী অস্বীকার করে। স্থায়িত্ববোধের এই অভাব মূলধারার পশ্চিমা দর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। বিশ্লেষণাত্মক দর্শন এবং পরবর্তীতে বিকশিত অযৌক্তিক দর্শনসমূহ থেকে জ্ঞানের পবিত্র গুণটি তাই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।[২০]

    Universalization of knowledge

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের ঐতিহাসিক কারণগুলির ‘শক্তিশালী এক উপকরণ’ হলো বিবর্তনবাদী তত্ত্ব[২১] যা নাসরের ভাষায় ‘একমাত্রিক জগতে অনুভূমিক, বস্তুগত কারণগুলিকে উচ্চতর বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত অস্তিত্ত্বের উল্লম্ব মাত্রাগুলির স্থলে প্রতিস্থাপন করার এক মরিয়া প্রচেষ্টা মাত্র’।[২২] ডেভিড বারেলের কথায়, ‘বিশ্বাসঘাতকতার শিকড়’ হয়তো ‘দেকার্তের অপর প্রান্তে’ মধ্যযুগীয় দর্শনেও পাওয়া যাবে যার মধ্যে টমাস একুইনাস, বোনাভেঞ্চার ও ডান্স স্কটাসের মতো ধর্মতত্ত্ববীদ ও দার্শনিকদের চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত। নাসরের মতে, এসব সংশ্লেষণের চরম যুক্তিবাদী চরিত্র আধিবিদ্যক ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্তর্জ্ঞানকে নৈয়ায়িক শ্রেণীর মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেছে যা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দিককে প্রকাশ করার পরিবর্তে কেবল যুক্তিবাদীতাকেই প্রকাশ করে।[২৩]

    প্রভাব

    Universalization of knowledge

    পাশ্চাত্যের ‘পতনের’ ঘটনাটি ইহজাগতিক জ্ঞানের উৎস হিসেবে প্রাচীন গ্রীসের যুক্তিবাদীদের বিশেষত এরিস্টটলীয় ধারার দর্শন গ্রহণ করার সময় থেকে চিহ্নিত করা হয়।[২৪]

    জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের এই প্রক্রিয়াটি আধুনিক বিশ্বের জন্ম দিয়েছে যা বৈশিষ্টগতভাবে বস্তুজগৎ-কেন্দ্রিক। এই মতবাদ যুক্তি, চিন্তা, ভাষাধর্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করা হয়। মানব প্রকৃতিও এর প্রভাবের বাইরে নয়। আধুনিক বিশ্ব যেহেতু পরম সত্তার সাথে সংযোগহীন, আভ্যন্তরীণ উপাদানের থেকে বাহ্যিক রূপের উপর গুরুত্ত্ব প্রদান সেহেতু জ্ঞান উৎপাদনের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বে পবিত্রতার ধারণা লোপ পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বস্তুবাদের উত্থান। এই ধারণা অনুসারে পদার্থ এবং এর থেকে উদ্ভূত বিষয়সমূহ ছাড়া আর সবই অনস্তিত্ত্বশীল।[২৫] জ্ঞানকে যখন তার ঐশ্বরিক উৎস থেকে আলাদা করা হয়, তখন এটি তার অন্তর্নিহিত কিংবা রূপকাশ্রিত অর্থ উভয়ই হারায়। এটি তখন সেই সব বিষয়ের উপর আলোকপাত করে যা গণনা ও পরিমাপ করা যায় কিংবা যে বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। এই প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাবাদের উদ্ভব। এটিকে এমন এক মতবাদ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যা ব্যক্তির থেকে অন্য কোনো কিছুকেই বড় বলে স্বীকার করে না এবং যা সভ্যতাকে শুধুমাত্র মানবীয় উপাদান দিয়ে বিচার করতে চায়। ব্যক্তির চেয়ে বড় কোনো কর্তৃত্ব স্বীকার না করায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাবাদ প্রকৃতিবাদ ও খাঁটি যুক্তিবাদের জন্ম দেয় এবং প্রকৃত সত্যের দিশা দেবে এমন কারো অনুপস্থিতিতে কালক্রমে এটি সবকিছুকে আপেক্ষিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার প্রয়াস পায়।[২৬] এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তৈরি হওয়া জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রয়োগে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে যা আধুনিক বিশ্বে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ। ঐশ্বরিক বিষয়ে অজ্ঞ বহুধা বিভক্ত এই বিজ্ঞান মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিক আবহকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংশ করেছে।[১১][২৭]

    মূল্যায়ন

    Universalization of knowledge

    লিউ শু-শেইনের মতে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের এই প্রক্রিয়াটি ততটা খারাপ নয় যেমনটা নাসর ইঙ্গিত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ নির্ভর বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ইহজাগতিকীকরণের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যেহেতু নিশ্চয়তার সন্ধানকে আর উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে না।[২৮] ডেভিড হার্ভের মতে, ইউরোপীয় আলোকায়নের যুগে বিকশিত চিন্তা মানুষকে তাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য জ্ঞান ও সামাজিক সংগঠনের লোকায়তকরণ প্রত্যাশা করেছিল। ব্রিঙ্কম্যান স্বাধীনভাবে জ্ঞানের ইহজাগতিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে যুক্তি দেখান যে “যদি জানা একটি মানবীয় কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে, তবে এটি সবসময়ই কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক পরিস্থিতির অনুগামী হবে।” অন্যদিকে, ডেভিড বারেল যুক্তি দেখিয়েছেন যে, উত্তরাধুনিক পৃথিবীতে পূর্বের যে কোনো সময়ের থেকে রেনেসাঁ দর্শন সম্পর্কে নাসরের সমালোচনা এখন বেশি গ্রহণযোগ্য। যারা এমন যুক্তি দেখায় যে, ‘দেকার্তের আদর্শ অনুসরণ করে যদি জ্ঞান অর্জন সম্ভব না হয়, তবে প্রকৃত অর্থেই জ্ঞানলাভ অসম্ভব’, বারেলের মতে তারা তাদের আধুনিক মতবাদই কেবল বয়ে বেরাচ্ছেন।[২৩]

    Universalization of knowledge

  • রোসারিও(Rosario)

    রোসারিও(Rosario)

    রোসারিও ( Rosario)হল উত্তর-মধ্য আর্জেন্তিনার সান্তা ফে প্রদেশের বৃহত্তম শহর। এটি বুয়েনোস আইরেস থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ৩০০ কিলোমিটার (১৮৭ মাইল) দূরে পারানা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে রোসারিও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কোনও রাজ্যের রাজধানী নয় এমন শহরগুলির মধ্যে আর্জেন্তিনায় এই শহরই সবচেয়ে জনবহুল; এই শহরের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। বৃহত্তর রোসারিওতে ২০১২ র হিসাবে আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১,২৭৬,০০০ জন। [৫] এই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল এর নব্যধ্রুপদী স্থাপত্য; বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে এই স্থাপত্যরীতি শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভবনে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।

    Rosario

    এই শহর রোসারিও দপ্তর‘এর প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র। আর্জেন্তিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটি একটি প্রধান রেলপথের প্রান্তিক স্টেশন এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আর্জেন্তিনার অন্যতম প্রধান নৌকেন্দ্র। এই নদীবন্দরে জাহাজ পারানা নদীর মাধ্যমে প্রবেশ করে। এই নদী যদিও ৩৪ ফুট (১০ মি) গভীর, তবে পলি জমে যাওয়ার প্রবণতা এর এক বড় সমস্যা; সেইকারণে পর্যায়ক্রমে পঙ্কোদ্ধার করে এর নাব্যতা বজায় রাখতে হয়। এখানে জাহাজ ঢোকা-বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রোসারিও পোর্ট কর্তৃপক্ষ। [৬] গম,ময়দা,খড়,তিসি, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, ভুট্টা, চিনি,চেরা কাঠ , বিভিন্ন মাংস, চামড়া এবং উল এই বন্দরের মাধ্যমে মূলত রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

    Rosario

    পারানা নদী বরাবর গড়ে ওঠা যে কয়টি আর্জেন্তিনীয় শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোনও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম করা সম্ভব হয় না, রোসারিও তার মধ্যে অন্যতম। এই শহরের রক্ষাকর্ত্রী কুমারী রোসারিও। তার সম্মানে খ্রিস্টীয় উৎসবের দিন (ফিস্ট) হল ৭ অক্টোবর। এ’ ক্ষেত্রে আরেকটি তথ্য উল্লেখের দাবি রাখে; গ্রহাণু ১৪৮১২ রোসারিওর নামকরণ এই সন্ত কুমারী রোসারিওর সম্মানেই করা হয়।[৭]

    রোসারিও শহরের উল্লেখযোগ্য মানুষের সংখ্যা অনেক। এঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন বিপ্লবী চে গেভারা; ফুটবল খেলোয়াড় ম্যাক্সিমিলিয়ানো উররুতি, লিওনেল মেসি, এঙ্খেল দি মারিয়া, ম্যাক্সিমিলিয়ানো রদ্রিগেজ এবং মাউরো ইকার্দি;ফুটবল প্রশিক্ষক সিজার লুইস মেনোত্তি, গেরার্দ্প মার্তিনো এবং মার্সেলো বিয়েলসা;হকি খেলোয়াড় লুসিয়ানা আয়ামার; অভিনেতা / কৌতুকাভিনেতা আলবার্তো ওলমেদো এবং অভিনেত্রী লিবের্তাদ লামার্কে;জ্যাজ সুরকার গাতো বারবিএরি; কার্টুনিস্ট / লেখক রবার্ট ফন্তানাহোসা; গায়ক / গীতিকার ফিতো পেজ; শিল্পী / চিত্রশিল্পী আন্তোনিও বের্নি; এবং মডেল ভ্যালেরিয়া মাজ্জা, প্রমুখ।

    রোসারিও (স্পেনীয় উচ্চারণ: [roˈsaɾjo]) হল উত্তর-মধ্য আর্জেন্তিনার সান্তা ফে প্রদেশের বৃহত্তম শহর। এটি বুয়েনোস আইরেস থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ৩০০ কিলোমিটার (১৮৭ মাইল) দূরে পারানা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে রোসারিও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কোনও রাজ্যের রাজধানী নয় এমন শহরগুলির মধ্যে আর্জেন্তিনায় এই শহরই সবচেয়ে জনবহুল; এই শহরের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান। বৃহত্তর রোসারিওতে ২০১২ র হিসাবে আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১,২৭৬,০০০ জন। [৫] এই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল এর নব্যধ্রুপদী স্থাপত্য; বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে এই স্থাপত্যরীতি শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভবনে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।

    Rosario

    এই শহর রোসারিও দপ্তর‘এর প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র। আর্জেন্তিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটি একটি প্রধান রেলপথের প্রান্তিক স্টেশন এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আর্জেন্তিনার অন্যতম প্রধান নৌকেন্দ্র। এই নদীবন্দরে জাহাজ পারানা নদীর মাধ্যমে প্রবেশ করে। এই নদী যদিও ৩৪ ফুট (১০ মি) গভীর, তবে পলি জমে যাওয়ার প্রবণতা এর এক বড় সমস্যা; সেইকারণে পর্যায়ক্রমে পঙ্কোদ্ধার করে এর নাব্যতা বজায় রাখতে হয়। এখানে জাহাজ ঢোকা-বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রোসারিও পোর্ট কর্তৃপক্ষ। [৬] গম,ময়দা,খড়,তিসি, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, ভুট্টা, চিনি,চেরা কাঠ , বিভিন্ন মাংস, চামড়া এবং উল এই বন্দরের মাধ্যমে মূলত রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

    Rosario

    পারানা নদী বরাবর গড়ে ওঠা যে কয়টি আর্জেন্তিনীয় শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোনও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম করা সম্ভব হয় না, রোসারিও তার মধ্যে অন্যতম। এই শহরের রক্ষাকর্ত্রী কুমারী রোসারিও। তার সম্মানে খ্রিস্টীয় উৎসবের দিন (ফিস্ট) হল ৭ অক্টোবর। এ’ ক্ষেত্রে আরেকটি তথ্য উল্লেখের দাবি রাখে; গ্রহাণু ১৪৮১২ রোসারিওর নামকরণ এই সন্ত কুমারী রোসারিওর সম্মানেই করা হয়।[৭]

    রোসারিও শহরের উল্লেখযোগ্য মানুষের সংখ্যা অনেক। এঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন বিপ্লবী চে গেভারা; ফুটবল খেলোয়াড় ম্যাক্সিমিলিয়ানো উররুতি, লিওনেল মেসি, এঙ্খেল দি মারিয়া, ম্যাক্সিমিলিয়ানো রদ্রিগেজ এবং মাউরো ইকার্দি;ফুটবল প্রশিক্ষক সিজার লুইস মেনোত্তি, গেরার্দ্প মার্তিনো এবং মার্সেলো বিয়েলসা;হকি খেলোয়াড় লুসিয়ানা আয়ামার; অভিনেতা / কৌতুকাভিনেতা আলবার্তো ওলমেদো এবং অভিনেত্রী লিবের্তাদ লামার্কে;জ্যাজ সুরকার গাতো বারবিএরি; কার্টুনিস্ট / লেখক রবার্ট ফন্তানাহোসা; গায়ক / গীতিকার ফিতো পেজ; শিল্পী / চিত্রশিল্পী আন্তোনিও বের্নি; এবং মডেল ভ্যালেরিয়া মাজ্জা,

    Rosario

  • মূল মধ্যরেখা(main midline)

    মূল মধ্যরেখা(main midline)

    মূল মধ্যরেখা (main midline)হলো ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার একটি মধ্যরেখা (দ্রাঘিমাংশের একটি রেখা), যাকে ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল মধ্যরেখা এবং তার বিপরীত মধ্যরেখা (৩৬০°-পদ্ধতিতে ১৮০ তম মধ্যরেখা) মিলিতভাবে একটি মহাবৃত্ত গঠন করে। এই মহাবৃত্ত পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে বিভক্ত করে। মধ্যরেখা গুলোর অবস্থান মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে বিবেচনা করা হলে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ এই দুভাগে ভাগ করা যায়।

    গ্যারারডাস মার্কেটর ১৫৯৫ সালে তার অ্যাটলাস কসমোগ্রাফিকায় ২৫° পশ্চিম মধ্যরেখার নিকটবর্তী কোন স্থানে মূল মধ্যরেখা ব্যবহার করেছেন, এটি আটলান্টিক মহাসাগরের সান্তা মারিয়া দ্বীপের নিকট দিয়ে গমন করে। তিনি ১৮০° মধ্যরেখাটি বেরিং প্রণালীর উপর দিয়ে অঙ্কন করেছেন।

    মূল মধ্যরেখা ইচ্ছাস্বাধীন ভাবে নির্বাচন করা হয়, এটি নিরক্ষরেখার মতো নয়। নিরক্ষরেখা মূলত অক্ষের আবর্তনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় হয়।[১]

    ইতিহাস

    অবস্থান

    নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এটি অবস্থিত। নওগাঁর আত্রাইছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।[১][৫] আত্রাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এই প্রাসাদটি অবস্থিত।[২][৪]

    ইতিহাস

    main midline

    জমিদার গির্জাশঙ্কর চৌধুরী এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তবে কবে নাগাদ এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। গির্জাশঙ্কর চৌধুরী তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই জমিদারী পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার আমলেই এই জমিদারী আরো ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই জমিদার বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে জমিদার বাড়ির গেটে দুইজন নেপালী প্রহরী ছিল।[১][৬]

    জমিদার বংশধরের মধ্যে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী ছিলেন সকলের কাছে বেশ সু-পরিচিত। তিনি জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যসহ প্রজাদের সুবিধার জন্য তার জমিদারী এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেন। রাস্তাঘাট, পুকুর খনন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনি ০৬ ছেলে ও ০৬ মেয়ের জনক ছিলেন। দেশ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে তিনি স্ব-পরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার চতুর্থ পুত্র প্রতাপশঙ্কর এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে জমিদার প্রিয়শঙ্কর তার চতুর্থ ছেলে প্রতাপশঙ্করকে রেখে পরিবারের বাকী সদস্যদের নিয়ে কলকাতায় চলে যান। তারপর প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখানে বসবাস করতে থাকেন। তখন তিনি তার কর্মজীবন হিসেবে হাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ২০০৫ সালে পরলোকগমন করেন। এখন এই জমিদার বাড়িতে তার পুত্র অভিজিৎ চৌধুরী বসবাস করতেছেন।[৭][৮]

    অবকাঠামো

    main midline

    বসবাসের জন্য রোমান স্থাপত্যশৈলীতে দ্বিতল বিশিষ্ট প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। জমিদার বাড়ির দুর্গা মন্দির, গুপিনাথ মন্দির, বাসন্তি মন্দির নামে তিনটি নিজস্ব মন্দির রয়েছে। এই প্রাসাদে শান বাঁধানো একটি কুয়া এবং সান বাঁধানো ঘাটসহ একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাশেই গানবাড়ি নামে একটি ভবন রয়েছে, যেখানে তৎকালীন সময়ে গানবাজনাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হতো। গানবাড়ির সন্নিকটে একটি বৈঠকখানা রয়েছে, যেখানে তৎকালীন সময়ে জমিদাররা বিচার-শালিস পরিচালনা করতেন। বৈঠকখানার সামনে বিশাল ফুলের বাগান রয়েছে। জমিদার বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল,ফল, ঔষধি ও সুশোভন বাহারি পাতাবাহার গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান রয়েছে

    মূল মধ্যরেখা হলো ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার একটি মধ্যরেখা (দ্রাঘিমাংশের একটি রেখা), যাকে ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল মধ্যরেখা এবং তার বিপরীত মধ্যরেখা (৩৬০°-পদ্ধতিতে ১৮০ তম মধ্যরেখা) মিলিতভাবে একটি মহাবৃত্ত গঠন করে। এই মহাবৃত্ত পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে বিভক্ত করে। মধ্যরেখা গুলোর অবস্থান মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে বিবেচনা করা হলে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ এই দুভাগে ভাগ করা যায়।

    গ্যারারডাস মার্কেটর ১৫৯৫ সালে তার অ্যাটলাস কসমোগ্রাফিকায় ২৫° পশ্চিম মধ্যরেখার নিকটবর্তী কোন স্থানে মূল মধ্যরেখা ব্যবহার করেছেন, এটি আটলান্টিক মহাসাগরের সান্তা মারিয়া দ্বীপের নিকট দিয়ে গমন করে। তিনি ১৮০° মধ্যরেখাটি বেরিং প্রণালীর উপর দিয়ে অঙ্কন করেছেন।

    মূল মধ্যরেখা ইচ্ছাস্বাধীন ভাবে নির্বাচন করা হয়, এটি নিরক্ষরেখার মতো নয়। নিরক্ষরেখা মূলত অক্ষের আবর্তনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় হয়।[১]

    ইতিহাস

    main midline

    অবস্থান

    নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এটি অবস্থিত। নওগাঁর আত্রাইছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।[১][৫] আত্রাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এই প্রাসাদটি অবস্থিত।[২][৪]

    ইতিহাস

    main midline

    জমিদার গির্জাশঙ্কর চৌধুরী এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তবে কবে নাগাদ এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। গির্জাশঙ্কর চৌধুরী তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই জমিদারী পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার আমলেই এই জমিদারী আরো ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই জমিদার বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে জমিদার বাড়ির গেটে দুইজন নেপালী প্রহরী ছিল।[১][৬]

    জমিদার বংশধরের মধ্যে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী ছিলেন সকলের কাছে বেশ সু-পরিচিত। তিনি জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যসহ প্রজাদের সুবিধার জন্য তার জমিদারী এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেন। রাস্তাঘাট, পুকুর খনন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনি ০৬ ছেলে ও ০৬ মেয়ের জনক ছিলেন। দেশ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে তিনি স্ব-পরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার চতুর্থ পুত্র প্রতাপশঙ্কর এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে জমিদার প্রিয়শঙ্কর তার চতুর্থ ছেলে প্রতাপশঙ্করকে রেখে পরিবারের বাকী সদস্যদের নিয়ে কলকাতায় চলে যান। তারপর প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখানে বসবাস করতে থাকেন। তখন তিনি তার কর্মজীবন হিসেবে হাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ২০০৫ সালে পরলোকগমন করেন। এখন এই জমিদার বাড়িতে তার পুত্র অভিজিৎ চৌধুরী বসবাস করতেছেন।[৭][৮]

    অবকাঠামো

    main midline

    main midline

    বসবাসের জন্য রোমান স্থাপত্যশৈলীতে দ্বিতল বিশিষ্ট প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। জমিদার বাড়ির দুর্গা মন্দির, গুপিনাথ মন্দির, বাসন্তি মন্দির নামে তিনটি নিজস্ব মন্দির রয়েছে। এই প্রাসাদে শান বাঁধানো একটি কুয়া এবং সান বাঁধানো ঘাটসহ একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাশেই গানবাড়ি নামে একটি ভবন রয়েছে, যেখানে তৎকালীন সময়ে গানবাজনাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হতো। গানবাড়ির সন্নিকটে একটি বৈঠকখানা রয়েছে, যেখানে তৎকালীন সময়ে জমিদাররা বিচার-শালিস পরিচালনা করতেন। বৈঠকখানার সামনে বিশাল ফুলের বাগান রয়েছে। জমিদার বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল,ফল, ঔষধি ও সুশোভন বাহারি পাতাবাহার গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান রয়েছে

    main midline

  • মালভূমি(the plateau)

    মালভূমি(the plateau)

    সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ – ৬০০ মিটার উচুতে অবস্থিত, উপরিভাগ প্রায় সমতল বা তরঙ্গায়িত এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত বিস্তৃত ভূমিকে মালভূমি বলে।[১][২]

    যেহেতু মালভূমি দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো অর্থাৎ এর ওপরটা প্রায় সমতল এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত, সেইজন্য মালভূমির অপর নাম টেবিলল্যান্ড। যেমনঃ তিব্বতের মালভূমি, ছোটোনাগপুরের মালভূমি প্রভৃতি।

    the plateau

    তিব্বতের মালভূমি

    প্রকারভেদ

    the plateau

    উৎপত্তি অনুসারে মালভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।

    • পর্বত বেষ্টিত মালভূমিঃ ভু-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেনীর মাঝখানের স্থান পার্শ্বচাপের উচু হয়ে এই প্রকার মালভূমির সৃষ্টি করে। চারিদিক পর্বত দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এর নাম পর্বত বেষ্টিত মালভুমি। যেমনঃ তিব্বতের মালভুমি, ইরানের মালভুমি প্রভৃতি।
    • ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিঃ নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন পর্বত অঞ্চল ধীরে হীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চতা হ্রাস পায়। এরপর ওই মালভূমির ওপর দিয়ে নদনদী ও তার শাখা প্রশাখা প্রবাহিত হলে এদের উপত্যকা বরাবর মালভূমিটি ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে কোনো বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ছোটোনাগপুরের মালভূমি।
    • লাভাগঠিত মালভূমি: অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রুপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই সঞ্চিত লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ভারতের দাক্ষিনাত্য মালভূমি।

    মালভূমির আকার ও আকৃতি

    the plateau

    উচ্চতা ছাড়াও মালভূমির অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হল—

    ক) মালভূমি এক বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি।

    খ) এর উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত।

    গ) চারদিকে ঢাল বেশ বেশি।

    কলোরাডো মালভূমি

    দক্ষিণ আমেরিকার মঁ রোরাইমা

    সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ – ৬০০ মিটার উচুতে অবস্থিত, উপরিভাগ প্রায় সমতল বা তরঙ্গায়িত এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত বিস্তৃত ভূমিকে মালভূমি বলে।[১][২]

    the plateau

    যেহেতু মালভূমি দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো অর্থাৎ এর ওপরটা প্রায় সমতল এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত, সেইজন্য মালভূমির অপর নাম টেবিলল্যান্ড। যেমনঃ তিব্বতের মালভূমি, ছোটোনাগপুরের মালভূমি প্রভৃতি।

    তিব্বতের মালভূমি

    প্রকারভেদ

    the plateau

    উৎপত্তি অনুসারে মালভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।

    • পর্বত বেষ্টিত মালভূমিঃ ভু-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেনীর মাঝখানের স্থান পার্শ্বচাপের উচু হয়ে এই প্রকার মালভূমির সৃষ্টি করে। চারিদিক পর্বত দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এর নাম পর্বত বেষ্টিত মালভুমি। যেমনঃ তিব্বতের মালভুমি, ইরানের মালভুমি প্রভৃতি।
    • ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিঃ নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন পর্বত অঞ্চল ধীরে হীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চতা হ্রাস পায়। এরপর ওই মালভূমির ওপর দিয়ে নদনদী ও তার শাখা প্রশাখা প্রবাহিত হলে এদের উপত্যকা বরাবর মালভূমিটি ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে কোনো বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ছোটোনাগপুরের মালভূমি।
    • লাভাগঠিত মালভূমি: অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রুপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই সঞ্চিত লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ভারতের দাক্ষিনাত্য মালভূমি।

    মালভূমির আকার ও আকৃতি

    the plateau

    উচ্চতা ছাড়াও মালভূমির অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হল—

    ক) মালভূমি এক বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি।

    খ) এর উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত।

    গ) চারদিকে ঢাল বেশ বড়।

    সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ – ৬০০ মিটার উচুতে অবস্থিত, উপরিভাগ প্রায় সমতল বা তরঙ্গায়িত এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত বিস্তৃত ভূমিকে মালভূমি বলে।[১][২]

    যেহেতু মালভূমি দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো অর্থাৎ এর ওপরটা প্রায় সমতল এবং চারিদিক খাড়া ঢালযুক্ত, সেইজন্য মালভূমির অপর নাম টেবিলল্যান্ড। যেমনঃ তিব্বতের মালভূমি, ছোটোনাগপুরের মালভূমি প্রভৃতি।

    তিব্বতের মালভূমি

    প্রকারভেদ

    the plateau

    উৎপত্তি অনুসারে মালভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।

    • পর্বত বেষ্টিত মালভূমিঃ ভু-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেনীর মাঝখানের স্থান পার্শ্বচাপের উচু হয়ে এই প্রকার মালভূমির সৃষ্টি করে। চারিদিক পর্বত দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এর নাম পর্বত বেষ্টিত মালভুমি। যেমনঃ তিব্বতের মালভুমি, ইরানের মালভুমি প্রভৃতি।
    • ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিঃ নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন পর্বত অঞ্চল ধীরে হীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চতা হ্রাস পায়। এরপর ওই মালভূমির ওপর দিয়ে নদনদী ও তার শাখা প্রশাখা প্রবাহিত হলে এদের উপত্যকা বরাবর মালভূমিটি ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে কোনো বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ছোটোনাগপুরের মালভূমি।
    • লাভাগঠিত মালভূমি: অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রুপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই সঞ্চিত লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি করে। যেমনঃ ভারতের দাক্ষিনাত্য মালভূমি।

    মালভূমির আকার ও আকৃতি

    the plateau

    উচ্চতা ছাড়াও মালভূমির অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হল—

    ক) মালভূমি এক বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি।

    খ) এর উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত।

    গ) চারদিকে ঢাল বেশ বড়।

    the plateau

  • মানব বসতি(human settlement)

    মানব বসতি(human settlement)

    পরিসংখ্যানপ্রত্নতত্ত্বে মানব বসতি (ইংরেজিঃ Human Settlement) হল এমন একটি সম্প্রদায় যেখানে মানুষ বসবাস করে। ডিকশনারি অফ জিওগ্রাফি অনুসারে “স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কোন স্থানে এক বা একাধিক মানুষ যখন বসবাস করতে শুরু করে, তখন তাকে বসতি বলে।”[১] বিখ্যাত ভূগোলবিদ টেরি, জি, জনসন বলেন, “বসতি হল সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের ধরন সম্পর্কিত অধ্যয়ন।” সুতরাং বলা যায় যে, কোন একটি স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বা অস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য যে অবয়ব তৈরি করে তাকেই মানব বসতি বলে।

    human settlement

    বসতিতে প্রথাগত ভাবে তার নিজস্ব নির্মিত সুযোগ-সুবিধা, যেমন রাস্তা, বেষ্টনী, মাঠ পদ্ধতি, নদীতীর ও খাল, পুকুর, পার্কবন, বায়ুকল ও পানিকল, জমিদার মহল, পরিখা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা বিদ্যমান থাকে।[২]

    ইতিহাস

    প্রকারভেদ

    human settlement

    বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মানব বসতির শ্রেণীবিভাগ করা হয়।[৩]

    অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুসারে

    বসতিতে বসবাসকারী জনগোষ্টির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরভিত্তি করে মানব বসতিকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়।

    গ্রামীণ বসতি

    human settlement

    • যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকেই গ্রামীণ বসতি বলা হয়। গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ যেকোনো একটি হতে পারে।

    নগর বসতি

    স্থিতিকাল অনুসারে

    স্থিতিকাল অনুসারে বসতি ৩ প্রকার। যথা:

    • ক্ষণস্থায়ী বসতি:যে বসতি বছরের খুব অল্প সময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এবং বাকি সময় অব্যবহৃত থাকে তাকে ক্ষণস্থায়ী বসতি বলে।
    • অস্থায়ী বসতি:যে বসতি অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নির্মিত হয় তাকে অস্থায়ী বসতি বলে।
    • স্থায়ী বসতি:স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যে বসতি নির্মিত হয় তাকে স্থায়ী বসতি বলে।

    অবস্থান অনুসারে

    human settlement

    অবস্থান অনুসারে মানব বসতি ৩ প্রকার। যথা:

    • জলাময় বসতি: কোনো বড় জলাশয় (যেমন নদী, হ্রদ, সমুদ্র) এর তীরবর্তী এলাকায় যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে জলাময় বসতি বলে।
    • পাহাড়ী বসতি: পাহাড়ী অঞ্চলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে পাহাড়ী বসতি বলে।
    • সমতল বসতি:সমতল অঞ্চলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে সমতল বসতি বলে।

    আকৃতি অনুসারে

    আকৃতি অনুসারে বসতি চার প্রকার। যথা:

    • দন্ডবসতি:যাতায়াতের সুবিধার্থে যখন লোকজন নদী বা রাস্তার দুই ধারে বসতি গড়ে তুলে তবে তাকে দন্ড বসতি বলে।
    • সমকোনী বসতি:যে স্থানে দুই বা তিনটি রাস্তা সমকোনে বা ইংরেজি Y আকারে মিলিত হয় তবে তাকে দন্ড বসতি বলে।
    • চৌমাতা বসতি:দুটি রাস্তা পরস্পরকে ছেদ করেছে এমন রাস্তাকে চৌমাতা বসতি বলে।
    • বৃত্ত বসতি:নিরাপত্তার কারণে নিরাপদ ঘাঁটি বা স্থানকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে বৃত্ত বসতি বলে।

    বিন্যাস অনুসারে

    human settlement

    বিন্যাস অনুসারে মানব বসতি ৫ প্রকার। যথা:

    • সারিবন্ধ বসত:কোনো নদী বা সড়কের দুই ধারে সারিবন্ধভাবে গড়ে ওঠা বসতিকে সারিবন্ধ বসতি বলে।
    • অনুকেন্দ্রিক বসতি:কোনো একটি বিশেষ স্থানকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে গড়ে উটা বসতিকে অনুকেন্দ্রিক বসতি বলে।
    • সংঘবদ্ধ বসতি:যখন অনেকগুলো বসতি খুব কাছাকাছি বসবাস করে তখন তাকে সংঘবদ্ধ বসতি বলে।
    • বিছিন্ন বসতি:যখন কোনো অঞ্চলের পরিবারগুলো এলোমেলো ভাবে বসবাস করে তখন তাকে বিছিন্ন বসতি বলে।
    • বিক্ষিপ্ত বসতি:যখন কোনো বসতির মধ্যো কৃষিভূমি, জলাভূমি, বনভূমি থাকার কারণে পরিবারগুলো দূরে অবস্থান করে তখন তাকে বিক্ষিপ্ত বসতি বলে।

    জনসংখ্যার আকার অনুসারে

    জনসংখ্যার আকার অনুযায়ী বসতি চার প্রকার। যথা:

    • খামার বাড়ি:একটি কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক পরিবার মিলে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে খামার বাড়ি বলে।
    • পাড়া:সাধারণত অল্প কয়েকটি পরিবার মিলে একটি পাড়া তৈরি হয়।
    • ক্ষুদ্রগ্রাম:কয়েকটি পাড়ার সমন্বয়ে একটি ক্ষুদ্রগ্রাম গঠিত হয়।
    • বড়গ্রাম:অনেকগুলো পাড়া নিয়ে একটি বড়গ্রাম গঠিত হয়। এশিয়া মহাদেশএর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং বাংলাদেশএর হবিগণ্জ্ঞ জেলায় অবস্থিত।

    মানব বসতির নিয়ামকসমূহ

    মানব বসতি গড়ে উঠার পেছনে যে সকল উপাদান কাজ করে তাদের কে মানব বসতির নিয়ামক বলে। মানব বসতির নিয়ামক সমূহ প্রধানত ২ প্রকার।

    প্রাকৃতিক নিয়ামক সমূহ

    human settlement

    ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ, মাটির উর্বরতা, পানির প্রাপ্যতা, অরণ্য ইত্যাদি

    সামাজিক নিয়ামকসমূহ

    • অর্থনীতি: যে অঞ্চলে খলিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় যেখানে বসতি গড়ে ওঠে।
    • সংস্কৃতি: যে অঞ্চলে একই ধরনের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট বিদ্যমান যেখানে মানব বসতি গড়ে ওঠে।
    • সমাজ: একই সামাজিক বৈশিষ্টসম্পন্ন মানুষ একত্রে বসবাসের জন্য মানব বসতি গড়ে তোলে।
    • রাজনীতি: রাজনৈতিক কারণেও অনেক সময় বসতির স্থান পরিবতর্তিত হয়।

    গুরুত্ব

    যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকেই গ্রামীণ বসতি বলা হয়। গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ যেকোনো একটি হতে পারে।

    human settlement