শাসন ব্যবস্থা (এছাড়াও “শাসন“) হল সরকারের রূপ বা নিয়ম, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক নিয়ম ইত্যাদির সেট যা একটি সরকার বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং সমাজের সাথে এর মিথস্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ইয়েলের অধ্যাপক জুয়ান জোসে লিঞ্জের মতে বর্তমানে তিনটি প্রধান ধরনের রাজনৈতিক শাসন রয়েছে: গণতন্ত্র, একচ্ছত্রবাদ এবং এই দুটির মধ্যে বসে কর্তৃত্ববাদ (হাইব্রিড শাসনের সাথে)।[১][২]
ব্যবহার
যদিও regime শব্দটি যেকোন ধরনের সরকারের প্রতিশব্দ হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে, আধুনিক ব্যবহার এটিকে একটি নেতিবাচক অর্থ দিয়েছে, যা একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার বা একনায়কত্বকে বোঝায়। ওয়েবস্টারের সংজ্ঞা বলে যে régime শব্দটি কেবল সরকারের একটি রূপকে বোঝায়,[৩] যেখানে অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানেশাসনকে “একটি সরকার, বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[৪]
“শাসন” শব্দটির সমসাময়িক একাডেমিক ব্যবহার জনপ্রিয় এবং সাংবাদিকতার ব্যবহারের চেয়ে বিস্তৃত, যার অর্থ “সরকারের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী স্তর (যা প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরিবর্তন করা সহজ) এবং রাষ্ট্রের (যা একটি জটিল আমলাতন্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জবরদস্তিমূলক ফাংশনগুলির একটি পরিসর সহ)।”[৫] বৈশ্বিক অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শাসনের ধারণাটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির নাম দেওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয় (আন্তর্জাতিক শাসন দেখুন), যা জাতীয় সরকারগুলির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিছু লেখক এইভাবে প্রতিষ্ঠান এবং শাসনের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মকভাবে পার্থক্য করেন এবং স্বীকার করেন যে তারা একে অপরের সাথে আবদ্ধ:
আমরা যে প্রতিষ্ঠানগুলিকে বর্ণনা করি সেগুলি সর্বজনীনভাবে প্রণীত, অনুশীলন, পদ্ধতি এবং নিয়মগুলির তুলনামূলকভাবে স্থায়ী সংস্থা, ডব্লিউটিও-এর মতো আনুষ্ঠানিক আইনি সত্তা থেকে শুরু করে আরও অনানুষ্ঠানিক কিন্তু আইনগতভাবে চাপযুক্ত এবং উদার পুঁজিবাদী বাজারের মতো অনুশীলন এবং শাসনের স্থায়ী সেট। এখানে মূল বাক্যাংশগুলি হল ‘পাবলিকলি অ্যাক্টেড’ এবং ‘আপেক্ষিকভাবে স্থায়ী’। এই অর্থে ‘পাবলিকলি অ্যাক্টেড’ শব্দগুচ্ছটি সক্রিয় অভিক্ষেপ, আইনি অনুমোদন, এবং প্রায়শই নয়, একধরনের বিরোধিতাকে বোঝায়।[৬]
এইভাবে শাসনগুলিকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে প্রোটোকল এবং নিয়মগুলির সেট হিসাবে যেগুলি হয় প্রতিষ্ঠান বা প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনগুলিতে এমবেড করা – আনুষ্ঠানিক যেমন রাষ্ট্র বা অনানুষ্ঠানিক যেমন “উদার বাণিজ্য শাসন” – যা প্রকাশ্যে প্রণীত এবং তুলনামূলকভাবে স্থায়ী।[৬]
রাষ্ট্রবিজ্ঞান (ইংরেজি: Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিজ্ঞান নামে উল্লেখ করেছেন।[১]
উপ-শাখাসমূহ
অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিম্নোক্ত এক বা একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন –
প্রাচীন ভারতেঋগ্বেদ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, মহাভারত এবং বৌদ্ধদেরপালি শাস্ত্রে রাজনীতিবিদদের কথকতা উল্লেখ আছে। তক্ষশীলায় অবস্থানকারী চাণক্য ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন যাতে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ভারসাম্যের কথা তুলে ধরেছেন। এতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও আর্থিক নীতি, কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। চাণক্য যুগের অবসানের দুই শতক পরবর্তীকালে রচিত মনুস্মৃতি গ্রন্থেও ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রামাণ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। যদিও বহু পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা ধর্মনিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠেনি। এবিষয়ে বিখ্যাত অধ্যাপক ডানিং বলেছেন, “প্রাচ্যের আর্যরা তাঁদের রাষ্ট্রভাবনাকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা থেকে মুক্ত করতে পারেননি।” তবে এ মতের বিরোধীতা করে বলা যায়, প্রাচীন ভারতে ধর্ম কেবলমাত্র পূজাপার্বণ ছিলনা, বরং ধর্ম বলতে বোঝাত, একপ্রকার জীবনচর্যা, যা মানুষ এবং সমাজের উন্নতি সাধন করে। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সপ্তাঙ্গ। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, কোন রাষ্ট্রের মোট উপাদান হল সাতটি। যথাঃ- স্বামী, অমাত্য, জনপদ, কোষ, দুর্গ, দূরগ, মিত্র। কৌটিল্যর এই সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব বর্তমান কালের বহু চিন্তাবিদকেও বিস্মিত করে।
প্রাচীন ভারতের মতোই মধ্যযুগেও ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার এক উল্লেখযোগ্য ধারা পরিলক্ষিত হয়। সুলতানী সাম্রাজ্যের মতোই মোঘল সাম্রাজ্যেও রাজনীতি এক বিশেষ প্রায়োগিক রূপলাভ করে। এ সময়ে আকবর, শাহজাহান, (একইসাথে শেরশাহ) প্রভৃতি বাদশাহদের পররাষ্ট্রনীতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে এক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থা যেমন গড়ে ওঠে, তার পাশাপাশি জায়গীরদারি ব্যাবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির বিকেন্দ্রীভবনও বহুলাংশে সম্ভবপর হয়। আবুল ফজল সহ আরও বহু লেখকের লেখা সেসময়কার রাষ্ট্রব্যাবস্থার প্রামান্য দলিল হয়ে রয়েছে।
সাধারণভাবে ভারতে ইউরোপীয় বণিকশক্তি, পাশাপাশি রাজশক্তির আগমণের মাধ্যমেই আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আধুনিক যুগের সূচনায় ভারতীয় রাজনীতি এক সম্পূর্ণ নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। রাষ্ট্রব্যাবস্থার বিস্তার ঘটার পাশাপাশি তা আরও জটিল রূপলাভ করে। ভারতে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তার যে কটি ধারা বিশেষ প্রবল রূপলাভ করে সেগুলি হলঃ-
১) সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা হিসেবে জাতীয়তাবাদের বিকাশ। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। সে সময়কার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া অর্থনীতির বিকাশের এক হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু ভারতে জাতীয়তাবাদের বিকাশের পটভূমি সম্পূর্ণ পৃথক, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে কয়েকজন পুরোধা ব্যক্তি হলেনঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমূখ। এঁরা বিদেশী রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধীতা করে এক যথার্থ ভারতবর্ষের কল্পনা করেছিলেন।
২) উপনিবেশিক শক্তির সাহায্যে ভারতীয় সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়াস একদল চিন্তাবিদের কাজকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। যেমন, রাজা রামমোহন রায়।
৩) জাতীয়তাবাদের সংকীর্ন গন্ডীকে পেরিয়ে এসময় কতিপয় ভারতীয় দার্শনিক আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রশস্ত পথেই মানবমুক্তির কথা বলেন। এদের অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ।
৫) এর পাশাপাশি বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার উপনিবেশিক ভারতে ধর্মের ভিত্তিতেও রাজনীতির তথা রাষ্ট্রচিন্তার এক ধারা লক্ষ্য করা যায়, যা পরবর্তীকালে প্রবল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সৈয়দ আহমেদ খান, সাভারকার, গোলয়ালকার প্রমুখের নাম এবং ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে মুসলিম লিগ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।
রাজনৈতিক অর্থনীতি বা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হল এবং আইন, প্রচলিত পদ্ধতি ও সরকারের সঙ্গে উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ের সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যয়নের জন্য ব্যবহৃত প্রধান পরিভাষা।
এই শাস্ত্রটি বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনীতির পাঠশাস্ত্র হিসেবে ১৭শ শতকে বিকাশ লাভ করে যা সরকার বিষয়ে তত্ত্বের মাঝে সম্পদের মালিকানার তত্ত্বকে অন্তর্ভুক্ত করে। [১]
কিছু রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ শ্রমভিত্তিক মূল্যের তত্ত্বের প্রস্তাব করেন (জন লক কর্তৃক প্রবর্তিত, এডাম স্মিথ ও কার্ল মার্ক্স কর্তৃক বিকশিত), যাতে বলা হয়, শ্রম হল মূল্যের প্রকৃত উৎস। অনেক রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ আবার প্রযুক্তির রাতারাতি উন্নয়নের দিকে আলোকপাত করেছেন, যার ভূমিকা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
১৯ শতকে, “রাজনৈতিক অর্থনীতি” পরিভাষাটি অর্থনীতি নামক পরিভাষা দ্বারা স্থানান্তরিত হয়, এবং পরিভাষাটি পরিবর্তন করেছিলেন এমন কিছু লোক, যারা উৎপাদন ও ভোগের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তির পরিবর্তে গাণিতিক ভিত্তিতে অর্থ বিষয়ক অধ্যয়নকে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন।
বর্তমানে, রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থ হল ভিন্ন কিন্তু পারস্পারিকভাবে-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আচরণের অধ্যয়নের আঙ্গিকসমূহ, যার সীমা হল অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বিত অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রথাগত অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করা বিভিন্ন মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ চিন্তার ব্যবহার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার হল এমন একটি অস্থায়ী অ্যাডহক (বিশেষ ও পূর্বপরিকল্পনাবিহীন) সরকার যা একটি নিয়মিত সরকার নির্বাচিত বা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি দেশের কিছু সরকারি দায়িত্ব ও কার্য সম্পাদন করে। নির্দিষ্ট অনুশীলনের উপর নির্ভর করে, এটি সাধারণত এলোমেলোভাবে নির্বাচিত বা সংসদের অনুমোদিত সদস্য বা বিদায়ী সদস্যদের নিয়ে থাকে, যতক্ষণ না তাদের বরখাস্ত করা হয়।
প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসমূহ সাধারণত তাদের কার্যে সীমিত থাকে, সত্যিকারের শাসন ও নতুন আইনের প্রস্তাব না করে শুধুমাত্র চলমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য কাজ করে। স্থায়ী সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অস্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়, কারণ উপরোক্ত কার্যাবলী অনুশীলন করার জন্য এই সরকারের কোন বৈধ ম্যান্ডেট (নির্বাচনী অনুমোদন) থাকে না।
ছায়া সরকার হচ্ছে এক গুচ্ছ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যে, বাস্তব ও প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত হয় না ( যেমন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস), বরং বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা গঠিত হয় যারা পর্দার আড়ালে থেকে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নজরের বাইরে থেকে ক্ষমতার চর্চা করেন। এই বিশ্বাস অনুসারে, আনুষ্ঠানিক নির্বাচিত সরকার এই ছায়া সরকারের অনুগত হয় যেখানে এই ছায়া সরকার সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হয়।
ছায়া সরকার তত্ত্ব প্রায়ই প্রস্তাব করে যে, সরকারকে গুপ্তভাবে বৈদেশিক সত্ত্বা (যেমন এলিয়েন, দ্য ভ্যাটিকান এবং জেস্যুটস), আভ্যন্তরীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (যেমন ইহুদি, করপোরেট সমাজ ও সেন্ট্রাল ব্যাংক বা ফ্রিম্যাসোন) বা কোন বৈশ্বিক অভিজাত ও রাষ্ট্রাতিগ প্রতিষ্ঠান (নিও ওয়ার্ল্ড অর্ডার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুসারে সুপ্রান্যাশনাল অরগানাইজেশন) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয় যারা রাষ্ট্রের নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় বা বিশ্বকে জয় করতে চায়।
ইতিহাস
ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত রচনাগুলো একটি গুপ্ত সরকারের অস্তিত্বকে ধরে নেয়া হয় যা আপাত সরকারের পেছনে আসল ক্ষমতার অধিকারী। এরকম রচনার মধ্যে ড্যান স্মুট, উইলিয়াম গাই কার, জিম মারস, ক্যারল কুইংলি, গ্যারি অ্যালেন, অ্যালেক্স জোনস, ডেস গ্রিগিন, জি. এডোয়ার্ড গ্রিফিন, ডেভিড আইক এবং দ্বিতীয় মাইকেল এ. হফম্যান এর রচনা রয়েছে। এই লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, এই গুপ্ত সরকারের সদস্যরা কাউনসিল অব ফরেইন রিলেশনস, রয়াল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ারস, দ্য ট্রাইলেটারেল কমিশন, দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ, সিআইএ এবং এমআই৬ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বা এদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে এরা আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ব ব্যাংক এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট এর সহায়তা নিতে পারে।[১][২][৩] এই ধারণাটি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো দ্য এক্স-ফাইলস দ্বারা জনপ্রিয় হয়।
মিল্টন উইলিয়াম কুপার দাবী করেন, ছায়া সরকার বহির্বিশ্বের এলিয়েনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৯১ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থ বিহাইন্ড এ পেল হর্স[৪][৫] “ইউএফও এবং মিলিশিয়া সারকেলে” প্রভাবশালী ছিল।[৬] বইটিতে “গুপ্ত বিশ্বের সরকারের কার্যাবলি” এবং “যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের উপর ইলুমিনেটির যুদ্ধের ঘোষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুপ্ত কার্যাবলি” সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়।[৭] কুপার দাবী করেন তিনি যখন নেভিতে কাজ করেন তখন একটি গুপ্ত নথি দেখেন যেখানে এলিয়েনদের সাথে সরকারের বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে বর্ণনা ছিল। কুপার ইলুমিনেটির ধারণাকে তার বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত করেন এবং দাবী করেন, বহির্বিশ্বের এলিয়েনরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে গুপ্তভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৪ সালে ডিউইট ডি. আইজেনহাওয়ারকে এলিয়েনদের সাথে মধ্যস্থতা করা, ইলুমিনেটির একটি অভ্যন্তরীন চক্র প্রতিষ্ঠা করে তাদের সাথে সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের কাছ থেকে এসব গোপন রাখার জন্য অভিযুক্ত করেন। কুপার বিশ্বাস করতেন, এলিয়েনরা বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন, ধর্ম, জাদু, উইচক্রাফট এবং অকাল্টের দ্বারা মানবজাতিকে শাসন ও প্ররোচিত করে। এমনকি ইলুমিনেটিও নিজেদের অজান্তেই এলিয়েনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়।[৪]
কুপার ইলুমিনেটিকে গুপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেন, যাকে দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ দ্বারা ন্নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি নাইটস অব কলম্বাস, মেসনস, স্কাল এবড বোন্স এবং অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে। তার কথায় এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নব্য বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কুপারের মতে, ইলুমিনেটি ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্যই এলিয়েন হুমকি আবিষ্কার করে নি, বরং বিশ্বকে দখল করতে সক্রিয়ভাবে এলিয়েনদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্রে জড়িত।[৪] কুপার বিশ্বাস করতেন জেমস ফরেস্টালের বেথেসডা হাসপাতালের ষোল তলার জানালা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি ম্যাজেস্টিক-১২ নামের একটি গুপ্ত কমিটির কারসাজি ছিল এবং জেসন এডভাইজরি গ্রুপের বিজ্ঞনীরা ট্রাইটেরিয়াল কমিশন এবং কাউন্সিল অব ফরেইন রিলেশন এর নির্বাহী কমিটি মেম্বারদেরকে সবসময় রিপোর্ট করে যারা ইলুমিনেটির উচ্চপদস্থ সদস্য।[৮][৯]
উক্তিতে
“আমাদের রিপাবলিকের ভীতি হচ্ছে অদৃশ্য সরকার, যা একটি বিশালাকার অক্টোপাস এবং আমাদের শহর, রাজ্যসমূহ ও জাতির উপরে তার পাগুলো নাচাচ্ছে।” – জন হাইলান, নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র, ১৯২২
“প্রকাশ্য সরকারের পেছনে একটি অদৃশ্য সরকার আছে যার জনগণের প্রতি কোন আনুগত্য ও দায়বধ্যতা নেই” -রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্টের প্রোগ্রেসিভ (“বুল মুজ”) পার্টির প্লাটফর্ম থেকে।[১০]
“গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের থেকে আসা সংগঠিত মতামতের একটি সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত হস্তক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যারা সমাজের এই অদৃশ্য কৌশলকে হস্তক্ষেপ করে তারা অদৃশ্য সরকার, যারা দেশের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। আমরা সকার, আমাদেরকে শাসন করা হয়, আমাদের মনকে গঠন করা হয়, স্বাদকে তৈরি করা হয়, আমাদের ধারণা হচ্ছে নির্দেশিত, আর এগুলোর বেশিরভাগই তাদের দ্বারা হয় যাদের সম্পর্কে আমরা কখনও শুনিই নি।” – এডওয়ার্ড বারনেস, দ্য “ফাদার অব পাবলিক রিলেশনস”, তার ১৯২৮ সালের প্রভাবশালী বই প্রোপাগান্ডা -তে এটা লেখেন।[১১]
“কিন্তু অকপটে বলতে গেলে একটি বাইরের সূত্র আছে যাকে আমরা “ডিপ স্টেট” বা “ছায়া সরকার” বলি। জনগণ এদে দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়, যারা আমাদের সরকার, আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী।” – রন পল, প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি, নভেম্বর ২০১৬ তে বলেন (ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর)।[১২]
ছায়া মন্ত্রিসভা ওয়েস্টমিন্সটার সরকার পদ্ধতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে বিরোধী দল থেকে একদল জ্যৈষ্ঠ সদস্য একটা মন্ত্রিসভা গঠন করেন যেটা সরকারের মন্ত্রিসভার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এখানে, প্রতিটি সরকারী মন্ত্রীদের বিপরীতে একজন ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য থাকেন যিনি সরকারী মন্ত্রীর কাজকে বিশ্লেষণ করেন এবং প্রয়োজনে বিকল্প পথ তুলে ধরেন। অধিকাংশ দেশে ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যকে ছায়া মন্ত্রী বলা হয়ে থাকে।
একজন ছায়া মন্ত্রীর কাজের পরিধি তাকে দল ও সমর্থকের কাছে প্রসিদ্ধ করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যদি তিনি উচ্চ পদস্থ কোন দফতরে কাজ করেন। অবশ্য, ছায়া মন্ত্রীরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সাধারণ সদস্যদের মতই পেয়ে থাকেন। একজন ছায়া মন্ত্রীর দল সরকার গঠন করলে তিনি যেই দফতরের ছায়া মন্ত্রী ছিলেন, সেই দফতর নাও পেতে পারেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদের কাজ হচ্ছে সেই দেশের সরকারের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন করা।
বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবিধানিক পদ নয়। এটি একটি সংবিধিবদ্ধ পদ। সাংবিধানিক পদ হচ্ছে সে সকল পদ, যেগুলোর মেয়াদ সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত, সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি এটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উত্থাপিত যেকোনো রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব মত প্রকাশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। অনুচ্ছেদ ৬৪(৪) অনুসারে রাষ্ট্রপতির সন্তোষানুযায়ী সময়সীমা পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীয় পদে বহাল থাকবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক লাভ করবেন।[১] কিছু কিছু আইন বিশেষজ্ঞের মতে অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক পদ।[২]
অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারকে সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকেন। বলা যায় অ্যাটর্নি জেনারেল হলো সরকারের আইনগত পরামর্শক। [৩]
অস্থায়ী সরকার যাকে জরুরী সরকার বা ট্রানজিশনাল সরকারও বলা হয়,[১] একটি জরুরি সরকার কর্তৃপক্ষ যা সাধারণত নতুন জাতির ক্ষেত্রে বা পূর্ববর্তী শাসকের পতনের পরে রাজনৈতিক কাজ পরিচালনার জন্য গঠিত হয় । অস্থায়ী সরকার সাধারণত নাগরিক বা বিদেশীদের দ্বারা যুদ্ধের সময় অথবা পরে নিযুক্ত হয় এবং প্রায়শই উত্থিত হয়।
অস্থায়ী সরকার নিয়মিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যহত রাখে যতক্ষণনা একটি নতুন সরকার নিযুক্ত হয় এবং যা সাধারণত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে হয় ।[২] তারা পরবর্তী সরকারের জন্য আইনি কাঠামো, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত নির্দেশিকা, অর্থনীতির কাঠামো, সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সারিবদ্ধকরণ সংজ্ঞায়িত করতে জড়িত থাকতে পারে। [৩]
ইয়োসি শেইন এবং জুয়ান জে লিন্জের মতে, অস্থায়ী সরকারগুলিকে চারটি দলে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:[৪
ভেড়া বা মেষ কে গৃহপালিত করার ইতিহাস ১১০০০ থেকে ৯০০০ খ্রিস্টপূর্ব আগের যখন থেকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় বন্য মোফলন পোষ মানানো শুরু হয়।ভেড়া বা মেষ মানুষের দ্বারা প্রথম গৃহপালিত প্রাণী,যার প্রমাণ সে সময়ের ইরানি মূর্তি দেখে পাওয়া যায়।প্রথম দিকে ভেড়া মাংস, দুধ, এবং চামড়ার জন্য পালন করা হত।৬০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে ইরানে পশমওয়ালা ভেড়া পালন শুরু হয় এবং পারস্য সংস্কৃতির লোকেরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ভেড়ার পশমের উপর নির্ভরশীল হতে থাকেন। ঐ সময়ে তারা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে আফ্রিকা এবং ইউরোপ থেকে ভেড়া আমদানি শুরু করেন।
মোফলনদের মনে করা হয় গৃহপালিত ভেড়ার আদিম পূর্বপুরুষ
গৃহপালিত ভেড়া এবং তাদের বন্য পূর্বপুরুষ মধ্যে বংশ পরম্পরার কোন সঠিক হদিস নেই।[১] তবে সবচেয়ে প্রচলিত অনুমান এই যে অভিস এরাইস মেষ এশিয়াটিক (O. orientalis) প্রজাতির মোফলন থেকে এসেছে।তবে এটা মনোনীত যে ইউরোপিয়ান মোফলন হচ্ছে গৃহপালিত ভেড়াদের মধ্যে প্রাচীনতম শাবক যা তাদের প্রাচীনতম প্রজাতি থেকে কম বন্য পরিবেশে বেড়ে উঠেছে,যা প্রাচীন সাহিত্যে ও ফুটে উঠেছে।[২]:৫স্কটল্যান্ড এর দুর্গদুগ্ধ মরিট এর মতো খুব কম প্রজাতি বন্য ইউরোপিয়ান মোফলনের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে প্রজনন করা হয়েছিল। [৩] একসময় মনে করা হত উরিয়াল(O. vignei) ইরানের আশপাশের মোফলনের সাথে সংরায়নের মাধ্যমে গৃহপালিত ভেড়ার একটি আদিম পূর্বপুরুষ। [৪]:৬ যাইহোক, উরিয়াল আরগালি ( O. ammon),এবং তুষার মেষ(O. nivicola) এর অন্যান্য অভিস প্রজাতির তুলনায় ক্রোমোজোমের সংখ্যা সতন্ত্র, যা তাদের অকল্পনীয় সম্পর্ক প্রদর্শন করে,এবং সনাক্তকারী গবেষণা প্রমাণ করে উরিয়াল প্রজাতির পূর্বপুরুষ এর কোনো অস্তিত্ব নেই।[১] অনেক গবেষণা ইউরোপীয় ও এশীয় প্রজাতির তুলনা আরও জোরদার করেছে এবং দুই প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনেটিক পার্থক্য প্রদর্শন করেছে।এসবের মধ্যে দুটি ব্যাখ্যা কে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।প্রথম ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একটি অজানা প্রজাতির বা উপপ্রজাতির বন্য ভেড়া থেকে গৃহপালিত ভেড়া উদ্ভূত হয়েছে। [৫] দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয় এই প্রজাতি বন্য মোফলনের বিভিন্ন প্রজাতির সংকর প্রকরণ যা অন্যান্য প্রাণীদের মতো পরিচিতি লাভ করে। [৬]
প্রাচীন ভেড়া এবং আধুনিক প্রজাতির মধ্যে উল সংগ্রহ করার কৌশলকে প্রধান পার্থক্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আদিম ভেড়াদের রোইং নামক প্রক্রিয়ায় হাত দ্বারা তাদের দেহ থেকে উল সংগ্রহ করা হত যার ফলে অনেক উল থেকে যেত। রোইং মোটা তন্তু পিছনে ফেলে রাখতে সাহায্য করে যাকে কেম্প ও বলা চলে এবং যা এখনও নরম মেষলোমের চেয়ে দীর্ঘতর।এছাড়াও মেষলোম মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হতে পারে যা স্বাভাবিকভাবেই দেহ থেকে কষে পড়ে। রোইং এর এই বৈশিষ্ট্যের জন্য “সয়ায়” এবং অনেক “শিটল্যান্ড” প্রজাতি আজও টিকে আছে। প্রকৃতপক্ষে,সয়ায় প্রজাতির অন্যান্য উত্তর ইউরোপীয় প্রজাতির ভেড়াদের মতো ছোট লেজ, স্বাভাবিক রোইং মেষলোম, সঙ্কুচিত আকার, এবং উভয় লিঙ্গের ভেড়াদের শিং রয়েছে, যেগুলো নিবিড়ভাবে প্রাচীন ভেড়া এর সাথে সম্পর্কিত। মূলত, বয়ন এবং উল কাটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের তুলনায় বরং একটি হস্তশিল্প যার একসময় বাড়ীতে,বাড়ীতে প্রচলন ছিল। বাবিলন, সুমেরীয়, এবং পারস্যরা সবাই ভেড়ার উপর নির্ভরশীল ছিল ; যদিও পোশাক শিল্পে লিলেন ছিল প্রথম বুনন কাপড়, যখন উল ছিল একটি উচ্চমূল্য পণ্য। মেষলোমের জন্য মেষপালের উন্নয়ন বৃদ্ধি ছিল আদিম শিল্পের প্রথম ধাপ,এবং ক্রমেই এটি পণ্যবিনিময় অর্থনীতির আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।অসংখ্য বাইবেলের পরিসংখ্যান পশুপাল রাখা সম্পর্কে বলে থাকে, এবং ইস্রায়েলের রাজারা তাদের প্রজাদের মালিকানাধীন ভেড়ার সংখ্যা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করত। [৪]:৭
এশিয়ায়
পোষা পালন
মেষ বা ভেড়া মানবজাতির দ্বারা প্রথম পোষ্য প্রাণী ( যদিও কুকুর পোষ মানানো হয় ২০,০০০ বছর আগে হতে।) ; পোষ পালনের সময় মেসোপটেমিয়ায় নয় থেকে এগারো হাজার বছর আগে বলে অনুমান করা হয়। [৪]:৪[৭]:১১–১৪[৮]:২[৯] তাদের বন্য আত্মীয়দের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল,যেমন-তুলনামূলক আগ্রাসনের অভাব, সামলানো আকার,তাড়াতাড়ি যৌন পরিপক্কতা, একটি সামাজিক প্রকৃতি, এবং উচ্চ প্রজনন হার,যা পোষ মানানোর জন্য তাদের বিশেষভাবে উপযুক্ত করে তুলেছিল। [১০]:৭৮–৮০অভিস অ্যারাইজ প্রজাতির মেষ আজ একটি সম্পূর্ণরূপে পোষা প্রাণী তে রূপান্তরিত যা তার স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বন্য ভেড়ার অস্তিত্ব আছে,(সাধারণত দ্বীপপুঞ্জ)যেখানে বড় শিকারী বর্জিত এলাকা আছে এবং যা বন্য ঘোড়া, ছাগল, শূকর, বা কুকুর এর আকারে নয়,যদিও বহু বন্য জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে বিচ্ছিন্ন পরিবেশে স্বতন্ত্র প্রজাতির মতো বাস করছে। [১০]:৭৫[১১]
গৌণ পণ্য হিসেবে,এবং নতুন প্রজাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে এশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বা ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে ভেড়া পালন শুরু হয়েছিল। [১২] প্রাথমিকভাবে, ভেড়া শুধুমাত্র মাংস, দুধ ও চামড়ার জন্য রাখা হত।ইরানে পাওয়া মূর্তিসংক্রান্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন বলে লোমশভেড়া নির্বাচন খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে শুরু হতে পারে,[৪]:৫[৭]:১১ এবং প্রথম উলের বোনা জামাকাপড় দুই থেকে তিন হাজার বছর পরে প্রচলন হয়েছে। [১৩]:৮ এর আগে,ভেড়া মাংসের জন্য জবাই করা হত,তখনকার সময় চামড়া পাকিয়ে/কষিয়ে পরিধানের এক ধরনের নিমা তৈরি করা হত। গবেষকরা মনে করেন এধরনের পোশাকের উন্নয়ন উর্বর অঞ্চলের চেয়ে দূরবর্তী প্রচণ্ড শীতলঅঞ্চলে মানুষের বসবাসে উৎসাহিত করে যেখানে গড় তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২১°C)।[১৪] ক্যাটালহইউক(Çatalhöyük) এ প্রাপ্ত ভেড়ার কর্ষণদন্ত(molars) এবং হাড়গোড় এই ধারণা দেয় যে ঐসময়ে ভেড়া ঐসব এলাকায় গৃহপালিত হতে শুরু করে।[১৫] আধুনিক প্রজাতির সবপ্রধান বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ব্রোঞ্জ যুগের ভেড়াদের সারা পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ব্যাপক মিল ছিল। [৪]:৬
খৃস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে, প্রাচীন শহর জেইতুন এর অধিবাসীরা ভেড়া ও ছাগল তাদের প্রাথমিক গৃহপালিত পশু হিসেবে পালন করত।[১৬] এছাড়াও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে যাযাবর মেষপালকের চরিত্র/ধরন সংক্রান্ত অনেক নির্দশন শনাক্তকরা হয়েছে,যার মধ্যে- ভেড়া ও ছাগলের হাড়ের প্রাদুর্ভাব দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে, শস্য বা শস্য-প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জামাদির অভাব, খুব সীমিত স্থাপত্য প্রদর্শনকারী চারিত্রিকবৈশিষ্ট্যের সমষ্টি, একটি কৃষি অঞ্চলের বাইরের এলাকা, এবং আধুনিক যাযাবর মেষপালকের জীবনসংক্রান্ত জনগণের সাথে মানবজাতিসমূহের বিজ্ঞানসন্মত বিবরণের সাদৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। [১৭]
ঐসব দেশে অনেক মেষ থাকলে ও ভবঘুরে এবং আধা-ভবঘুরে প্রজাতি একদম নগণ্য যেমন- সৌদি আরবে (সম্ভবত ৩%এর কম ), ইরান (৪%), এবং আফগানিস্তান (সর্বোচ্চ ১০%)। [১৯]
ভারতে
ভারতে মেরিনো এবং অন্যান্য উচ্চ মানের উল ভেড়ার সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমে দেশী ভেড়ার শাবকের গুণমান উন্নত করার প্রচেষ্টায় চলছে। উন্নত মানের উল ও মাংস উৎপন্ন করার লক্ষ্যে দেশী ভেড়ার উত্পাদনে এই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
চীনে
চীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভেড়া-পালনের জন্য প্রয়োজনীয় বৃহৎ খোলা চারণভূমি না থাকায় ভেড়া চীনের কৃষি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের মধ্যে ভেড়ার খামার বেশি দেখা যায় যেখানে খোলা চারণভূমি রয়েছে। ‘’’ঝান’’’ নামে চীনের একটি দেশি প্রজাতির ভেড়া আছে। সরকারের প্রচার সত্ত্বেও ১৯৮৫ সাল থেকে প্রজাতিটির বংশবৃদ্ধি কমে গেছে।
জাপানে
জাপানি সরকার ১৮০০ সালে সর্বত্র ভেড়া বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করে। মেষ প্রতিপালনের প্রকল্প হিসেবে ইয়র্কশায়ার,বার্কশায়ার, স্প্যানিশ মেরিনো, অসংখ্য চীনা এবং মঙ্গোলিয়ান প্রজাতির ভেড়া খামারে পালনের জন্য সরকার প্রচার করে উত্সাহ দান করে। কৃষকদের জ্ঞানের অভাব ছিল যে কিভাবে সফলভাবে ভেড়া রাখা যায় এবং আমদানি করা ভেড়া সম্পর্কে তথ্য প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা, প্রকল্পটিকে ব্যর্থ করে দেয়,১৮৮৮ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গোলিয়ায়
ভেড়া পালন সহস্রাব্দ ধরে মঙ্গোলিয়ানদের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবনধারায় রূপ নিয়েছে। মঙ্গোলিয়ান ভেড়া পালনের ঐতিহ্য ও আধুনিক বিজ্ঞান ভালোভাবে বিকশিত হয়েছে। মঙ্গোলিয়ান নির্বাচন এবং পশু বিজ্ঞান দেশের শ্রেণী বিভাগ করেছে- (১) উল ফাইবার এর দৈর্ঘ্য, সূক্ষ্মতা এবং স্নিগ্ধতা, (২)বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁচার সামর্থ্য, (গ) প্রকৃত চেহারা, পুচ্ছ আকৃতি, আকার, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে সাধারণ প্রজাতির ভেড়াদের মধ্যে- মোঙ্গল কালহা, গভঃ-আলতাই, বাইদ্রাগ, বায়াদ, উঝেঞ্চিন, সাম্বার এবং অন্যান্য প্রজাতির সংখ্যা, মোটা-লেজ শাবক প্রজাতি।
দেশের সমগ্র ভেড়া পালের দেশীয় প্রাণীর একটি আদমশুমারি প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়। ২০১৪ সালের শেষের দিকের আদমশুমারি আনুযায়ী দেশে ভেড়ার সংখ্যা ২৩ মিলিয়নের অধিক যা সমগ্র দেশে মজুত প্রাণিদের ৪৪.৬ শতাংশ ।
বার্ষিক চান্দ্র বছরের আগে মর্যাদাপূর্ণ সরকারি পুরস্কার “বেস্ট হারডার’’ (মঙ্গোলিয়ান “Улсын сайн малчин цол” ) মনোনয়ন ও নির্বাচন করা হয়।
কিংবদন্তি হলো ইতিহাস ও কল্পনা র সংমিশ্রনের লৌকিক কথা সাহিত্যের চরিত্র বিশিষ্ট লোককথা.. (ল্যাটিন, legenda, “things to be read”) মানুষেরকাজের বয়ান যা বক্তা এবং স্রোতা ঊভয়ের দ্বারাই মানবেতিহাসে সংঘটিত বলে মনে করা হয় এবং তাকে কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় যাতে গল্পটিরverisimilitude থাকে। কিংবদন্তির সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণকারিদের কাছে এর এমন কোন অংশ নেই যা “বাস্তবতার” জগতের বাইরের, অত্যন্ত নমনীয় বা পরিবর্তনশীল কিছু ধ্রুবক দ্বারা সংজ্ঞায়িত, যার মাঝে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে অলৌকিক ঘটনা যা সত্যিই ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, প্রতিবোধনের নির্দিষ্ট ঐতিহ্যের মধ্যে যেখানে কিংবদন্তিটির উদ্ভব, এবং যার মধ্যে এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, এটাকে তাজা ও জীবন্ত, এবং বাস্তবসম্মত রাখার জন্য। গ্রিম ভাইরা ঐতিহাসিক পটভূমিতে স্থাপিত লোককথাকে কিংবদন্তি বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন।