Category: গাণিতিক যুক্তি

Mathematical logic

  • ঢাল

    ঢাল

    ঢাল বা নতিমাত্রা হচ্ছে এমন একটি রেখা বা গ্রেডিয়েন্ট যা বর্ণনা করে এর দিক এবং কৌণিক মান[১]

    ঢাল সাধারণতঃ ‌ m অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।[২]

    একটি রেখার (যেকোনো) দুটি স্বতন্ত্র বিন্দুর মধ্যে “উল্লম্ব পরিবর্তন” থেকে “অনুভূমিক পরিবর্তন” এর অনুপাত খুঁজে বের করে ঢাল গণনা করা হয়। কখনও কখনও অনুপাতটি ভাগফল হিসাবে প্রকাশ করা হয়, একই রেখায় প্রতি দুটি স্বতন্ত্র বিন্দুর জন্য একই সংখ্যা দেয়। একটি রেখা যা কমছে তার একটি ঋণাত্মক “বৃদ্ধি” আছে।

    বিশ্লেষণ

    স্থানাঙ্ক জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির সাহায্যে

    Wiki slope in 2d.svg

    ধরি, ছক কাগজে দুটি বিন্দু ( x 1 , y 1 ) {\displaystyle (x_{1},y_{1})} ও ( x 2 , y 2 ) {\displaystyle (x_{2},y_{2})} । তাহলে বিন্দু দুটির সংযোজক সরলরেখার নতি হবে:- m = Δ y Δ x = y 2 − y 1 x 2 − x 1 {\displaystyle m={\frac {\Delta y}{\Delta x}}={\frac {y_{2}-y_{1}}{x_{2}-x_{1}}}}

    আবার সরলরেখাটি x x-অক্ষের সঙ্গে θ \theta কোণে আনত থাকলে, সেক্ষেত্রে নতি হবে m = t a n θ {\displaystyle m=tan\theta }

    উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, একটি সমকোণী ত্রিভুজ তৈরী হয়েছে। সেখান থেকে,

    m = t a n θ = y 2 − y 1 x 2 − x 1 = Δ y Δ x {\displaystyle m=tan\theta ={\frac {y_{2}-y_{1}}{x_{2}-x_{1}}}={\frac {\Delta y}{\Delta x}}}

    অবকলনের সাহায্যে

    নতিকে এভাবেও প্রকাশ করা যায়:

    m = d y d x {\displaystyle m={\frac {dy}{dx}}}

    কোন বক্ররেখার কোন বিন্দুতে নতি নির্ণয় করতে হলে, ওই বিন্দুতে স্পর্শক অঙ্কন করা হয়। তারপর নতি নির্ণয় করা হয়।

    সরলরেখায় প্রয়োগ

    y = m x + c {\displaystyle y=mx+c} সমীকরণটি সরলরেখার অন্যতম প্রধান সমীকরণ। এতে ব্যবহৃত m m পদটি নতি নির্দেশ করে।

    ৪৫° রেখা

    কোনো সরলরেখা মূলবিন্দুগামী হলে, যদি তার নতি ১ এর সমান হয়, তাকে ৪৫° রেখা বলে।

    এটি y = m x + c {\displaystyle y=mx+c} সমীকরণটি মেনে চলে। এক্ষেত্রে c = 0 {\displaystyle c=0}(যেহেতু y {\displaystyle y}-অক্ষকে ( 0 , 0 ) {\displaystyle (0,0)} বিন্দুতে ছেদ করে।)

    মূলবিন্দুগামী যে কোনও সরলেখার সমীকরণ তাই y = m x {\displaystyle y=mx}

    ৪৫° রেখায় m = 1 {\displaystyle m=1} হবার জন্য, এটির সমীকরণ হয়:- y = x {\displaystyle y=x}

    এখানে আবার নতিকোণ ( θ \theta)=৪৫° বা π 4 {\displaystyle {\frac {\pi }{4}}} হবার জন্যই, m = t a n π 4 = 1 {\displaystyle m=tan{\frac {\pi }{4}}=1}

    সাধারণ সমীকরণে

    সরলরেখার সাধারণ সমীকরণ:- a x + b y + c = 0 {\displaystyle ax+by+c=0} এখান থেকে নতি পাওয়া যায়, m = − a b {\displaystyle m={\frac {-a}{b}}}

    আরও দেখুন

  • আলোন্‌জো চার্চ

    আলোন্‌জো চার্চ

    আলোন্‌জো চার্চ (জুন ১৮, ১৯০৩ – আগস্ট ১১, ১৯৯৫) ছিলেন একজন মার্কিন গণিতবিদ এবং যুক্তিবিদ। তত্ত্বীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর পিছনে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। অ্যালান টুরিংয়ের পাশাপাশি চার্চকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [১][২]

     ছিলেন একজন মার্কিন গণিতবিদ এবং যুক্তিবিদ। তত্ত্বীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর পিছনে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। অ্যালান টুরিংয়ের পাশাপাশি চার্চকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    তিনি ওয়াশিংটন, ডিসি তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৪ সালে ব্যাচেলর ডিগ্রী এবং ১৯২৭ সালে ওসওয়াল্ড ভেবলেন এর তত্ত্বাবধানে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। গটিংগেনের গেয়র্গ আউগুস্ট বিশ্ববিদ্যালয়-এ পোস্টডক করার পর তিনি ১৯২৯-১৯৬৭ প্রিন্সটনে পড়ান এবং ১৯৬৭-১৯৯০ পড়ান ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট লস অ্যাঞ্জেলেস-এ।

    গণিতবিষয়ক কাজ

  • মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি

    আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি (আরবি: ابو عبد الله محمد بن موسى الخوارزمي‎‎; আনু. ৭৮০–৮৫০; পূর্বে অ্যালগোরিদমি হিসেবে ল্যাটিনিকৃত)[৪] ছিলেন একজন ফার্সি[৫][৬][৭] বহুবিদ্যাবিশারদ, যিনি গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ভূগোলের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী অবদান রেখেছিলেন। প্রায় ৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ গ্রন্থাগারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।[৮]

    বীজগণিতের উপর আল-খারেজমি জনপ্রিয়করণ গ্রন্থটি রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণের প্রথম পদ্ধতিগত সমাধান উপস্থাপন করেছিল।[৯] বীজগণিতে তাঁর অন্যতম প্রধান সাফল্য ছিল বর্গক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ করে কীভাবে দ্বিঘাত সমীকরণগুলি সমাধান করা যায় তার প্রদর্শন, যার জন্য তিনি জ্যামিতিক যৌক্তিকতা সরবরাহ করেছিলেন।[১০] কারণ তিনিই প্রথম বীজগণিতকে একটি স্বাধীন শৃঙ্খলা হিসেবে গণ্য করেন এবং “হ্রাস” এবং “ভারসাম্য” পদ্ধতি (বিয়োগকৃত পদগুলির একটি সমীকরণের অন্য দিকে স্থানান্তর, অর্থাৎ, সমীকরণের বিপরীত দিকের অনুরূপ পদ বাতিল করা) প্রবর্তন করেন, আল-খারেজমিকেই বীজগণিতের জনক[১১][১২] বা প্রতিষ্ঠাতা[১৩][১৪] হিসাবে বর্ণনা করা হয়। বীজগণিত শব্দটি নিজেই তার বইয়ের শিরোনাম থেকে এসেছে (আল-জাবের শব্দের অর্থ “সমাপ্তি” বা “পুনরায় যোগদান”)।[১৫] তার নাম অ্যালগোরিজম এবং অ্যালগরিদম[১৬] শব্দের জন্ম দেয়, সেইসাথে স্প্যানিশ, ইতালীয় এবং পর্তুগিজ শব্দ অ্যালগোরিটমো, এবং স্প্যানিশ গুয়ারিস্মো[১৭] এবং পর্তুগিজ আলগারিস্মো অর্থ “ডিজিট”।[১৮]

    দ্বাদশ শতাব্দীতে, পাটিগণিতের উপর তার পাঠ্যপুস্তকের ল্যাটিন অনুবাদ (অ্যালগরিদমো ডি নিউমেরো ইন্দোরাম) যা বিভিন্ন ভারতীয় সংখ্যাকে সংহিতাবদ্ধ করে, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে দশমিক অবস্থানগত সংখ্যা ব্যবস্থা চালু করে।[১৯] ১১৪৫ সালে রবার্ট অফ চেস্টার কর্তৃক ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত কম্পেন্ডিয়াস বুক অন ক্যালকুলেশন বাই কমপ্লিশন অ্যান্ড ব্যালান্সিং ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রধান গাণিতিক পাঠ্য-বই হিসাবে ব্যবহৃত হত।[২০][২১][২২][২৩]

    তিনি তার সর্বাধিক পরিচিত কাজ ছাড়াও, তিনি টলেমির ভূগোল সংশোধন করেন, বিভিন্ন শহর এবং এলাকার দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশতালিকাভুক্ত করেন।[২৪] তিনি আরও জ্যোতির্বিজ্ঞান সারণির একটি সেট তৈরি করেন এবং ক্যালেন্ডারিক কাজ, সেইসাথে অ্যাস্ট্রোলাব এবং সূর্যালোক সম্পর্কে লিখেছিলেন। তিনি ত্রিকোণমিতির সঠিক সাইন, কোসাইন টেবিল এবং স্পর্শকগুলির প্রথম সারণি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

    জীবনের ইতিহাস

    • জন্ম : সোভিয়েত রাশিয়ার আরব সাগরে পতিত আমু দরিয়া নদীর একটি দ্বীপের নিকটে অবস্থিত খোয়ারিজম নামক শহরে। এই শহরটি প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল যার তৎকালীন নাম ছিল উরগেঞ্চ। তার জন্ম তারিখ বা শৈশব ও কৈশোর সম্বন্ধে কিছু জানা যায়নি। তবে আনুমানিক ৭৮০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
    • মৃত্যু : খলিফা আল মামুনের মৃত্যুর ১৪ বছর পর (আনুমানিক ৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে) আল খারিজমির মৃত্যু হয়।

    আল খারিজমি খলিফা আল মামুনের বায়তুল হিকমাহ সংলগ্ন গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিকের চাকুরি করতেন। খলিফা মামুনের মৃত্যুর পরও তিনি জীবিত ছিলেন এবং পরবর্তী খলিফা আল ওয়াতহিকের (Al Wathiq) শাসনকালের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত, ভূগোল এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রাখেন। তবে মূলত বীজগণিতের জন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন।
    এজন্যই তাকে বীজগণিতের জনক বলা হয়।

    আল খোয়ারিজমীর জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছুই জানা যায়না; এমনকি তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন তা ও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তার নাম থেকে অনুমান করা হয় যে তিনি সম্ভবত আব্বাসীয় শাসনামলে খোরাসান প্রদেশের খোয়ারিজমী (খিভা) হতে আগমন করেন। (বর্তমানে উজবেকিস্থান এর জরাজম প্রদেশ)

    প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আল তাবারী তার নাম দেন মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারিজমি আল কুতরুবুল্লী (আরবি: موسى الخوارزميّ المجوسيّ القطربّليّ). এই বিশেষণ আল-কুতরুবুল্লী এটাই নির্দেশ করে যে তিনি সম্ভবত বাগদাদ এর নিকটবর্তী ক্ষুদ্র শহর কুতরুবুল, হতে এসেছেন। আল খারিজমির ধর্ম সম্পর্কে টমুর লিখেছেন:

    আল তাবারী কর্তৃক তার উপর আরোপিত আরেকটি বিশেষণ হল, “আল-মাজুশী,” এটাই নির্দেশ করে যে তিনি হয়তোবা প্রাচীন জরথ্রুস্ট মতবাদের অনুসারী ছিলেন। এটা ইরানীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে তৎকালীন সময় পর্যন্ত অসম্ভব ছিলনা, কিন্তু “এলজেবরা” গ্রন্থের মুখবন্ধ হতে দেখা যায় যে, আল-খারিজমী ছিলেন একজন ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান, অর্থাৎ আল তাবারী বিশেষণ এটাই নির্দেশ করে যে হয়তোবা তাঁর পূর্বপুরুষ কিংবা তিনি সম্ভবত তাঁর কৈশোরে জরথ্রুস্ট মতবাদের অনুসারী ছিলেন।[২৫]

    ইবনে আল নাদিম এর কিতাব “আল-ফিরহিস্ট” এ আমরা আল খারিজমির একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী খুঁজে পাই, যেখানে তার লিখিত বই সমূহের একটি তালিকাও রয়েছে। আল-খারিজমি তার অধিকাংশ গ্রন্থ ৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ হতে ৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ সময় কালের মধ্যে রচনা করেছেন। মুসলমানদের পারস্য বিজয় এর পরে বাগদাদ ব্যবসা-বাণিজ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ফলে দূর-দূরান্ত এমনকি চীন ও ভারত উপমহাদেশ থেকেও প্রচুর ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞানী বাগদাদে পাড়ি জমান। অনুমান করা হয় যে আল-খারিজমিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি বাগদাদে খলিফা আল-মামুন এর গ্রন্থাগারে প্রধান গ্রন্থাগারিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন, এবং সেখানে তিনি বিজ্ঞান ও গণিত চর্চা করতেন। এখানে বসেই তিনি গ্রিকসংস্কৃত ভাষায় রচিত অনেক বৈজ্ঞানিক রচনা অনুবাদ করেন।

    বীজগণিতে অবদান

    বীজগণিত হল ইসলামী সভ্যতায় তার সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। বীজগণিতকে তিনিই প্রথম গণিতশাস্ত্রের মধ্যে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলেন এবং এর প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভারতীয়রাই প্রথম বীজগণিত নিয়ে গবেষণা করে এবং গ্রিকদের মধ্যে কেবল ডায়োফ্যান্টাস ব্যতীত আর কাউকে বীজগণিত নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনা করতে দেখা যায়নি। ভারতীয়দের গাণিতিক উৎকর্ষের সময়টা অনেক প্রাচীন ছিল। সুতরাং খারিজমির সময় বীজগণিতের অবস্থা ছিল ম্রিয়মান। এ সময় তিনি বীজগণিতের ভিত্তি স্থাপন করে আধুনিক গণিতের পথকে অনেকটাই কুসুমাস্তীর্ণ করে তোলেন। তাকে গণিতের অন্যতম জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[২৬][২৭]

    • খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে হিন্দু গণিতবিদগণ দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।[২৮] হিন্দুদের উদ্ভাবিত এই দশমিক পদ্ধতি খারিজমিই প্রথম ইসলামী জগতে নিয়ে আসেন। তার রচিত The Book of Addition and Subtraction According to the Hindu Calculation (যোগ-বিয়োগের ভারতীয় পদ্ধতি) তারই উদাহরণ।
    • আরবি ভাষায় তার রচিত গ্রন্থই সর্বপ্রথম ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। পাশ্চাত্য সভ্যতায় ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমেই তার গবেষণার বিকাশ ঘটে। অ্যালগরিদম উৎপত্তিই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
    • তার রচিত পুস্তক কিতাব আল জাবর ওয়াল মুকাবলা হতে বীজগণিতের ইংরাজী নাম আলজেবরা উত্পত্তি লাভ করে।
    • Algorithm শব্দটি Alkhwarizmi নামের ল্যাটিন অপভ্রংশ algorismi হতে উত্পত্তি লাভ করেছে।

    পাটিগণিতে অবদান

    পাটিগণিতেও অসামান্য পারদর্শী ছিলেন। তিনিই প্রথম শূণ্য (0) সহ অন্যান্য সংখ্যার ব্যবহার শুরু করেন, তার মাধ্যমেই ইউরোপ শূণ্যের ব্যবহার শিক্ষা লাভ করে।

    জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান

    জ্যোতির্বিজ্ঞানে আল খারিজমি একটি স্মরণীয় নাম । এ শাস্ত্রে তিনি বহু মৌলিক অবদান রেখে গেছেন, তার রচিত ‘নির্ঘণ্ট’ প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এর সাহায্যে ইবনে আলী জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর পর্যবেক্ষণ চালান এবং এ বিষয়ে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। আল ফারাগণী তার যুগের একজন শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তার রচিত ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্তসার’ (Elements of Astronomy) ক্রিমেনার জিয়ার্ড ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।

    ভূগোলে অবদান

    তার রচিত সুরত-আল-আরদ (The image of the Earth) গ্রন্থটি বিশ্বের প্রথম মানচিত্র হিসেবে বিবেচিত।[২৯]

    ত্রিকোনোমিতিতে অবদান

    আল খোয়ারিজমি রচিত জিজ আল সিন্দ-হিন্দে ত্রিকোণমিতি নিয়ে কম কাজ থাকলেও তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই বইয়ে ত্রিকোণমিতিক ফাংশন সাইন এবং কোসাইন-এর অনুপাত নির্ণয় করে এগুলোকে তার অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেবিলে সংযুক্ত করেন। গোলকীয় ত্রিকোণমিতি নিয়েও খোয়ারিজমির একটি বই রয়েছে।[৩০]

    ইহুদী বর্ষপঞ্জি

    হিব্রু বর্ষপঞ্জি নিয়ে খোয়ারিজমি ‘রিসালা ফি ইসতিখরাজ তারিখ আল ইয়াহুদ’ (Extraction of the Jewish Era) শিরোনামের একটি বই রচনা করেন। সপ্তাহের কোন দিন মাসের প্রথম দিন হবে তা নির্ণয়ের উপায় তিনি এতে বর্ণনা করেন। এটি ‘তিশ্রি’ নামেও পরিচিত। এছাড়াও ইহুদি বর্ষ বা ‘অ্যানো মুন্ডি’ এবং ‘অ্যানো গ্রেকোরাম’ বা গ্রীক বর্ষের মধ্যকার বিরামকাল তিনি নির্ণয় করেন। হিব্রু পঞ্জিকা ব্যবহার করে সূর্য ও চাঁদের দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করা নিয়েও এতে আলোচনা আছে।[৩১]

    গ্রন্থাবলী

    জীবনীসংক্রান্ত

    বীজগণিত

    পাটীগণিত

    জ্যোতির্বিদ্যা

    • Goldstein, B. R. (১৯৬৮)। Commentary on the Astronomical Tables of Al-Khwarizmi: By Ibn Al-Muthanna। Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-00498-2
    • Hogendijk, Jan P. (১৯৯১)। “Al-Khwārizmī’s Table of the “Sine of the Hours” and the Underlying Sine Table”। Historia Scientiarum42: 1–12।
    • King, David A. (১৯৮৩)। Al-Khwārizmī and New Trends in Mathematical Astronomy in the Ninth Century। New York University: Hagop Kevorkian Center for Near Eastern Studies: Occasional Papers on the Near East 2এলসিসিএন 85150177
    • Neugebauer, Otto (১৯৬২)। The Astronomical Tables of al-Khwarizmi

    বর্তুল ত্রিকোণমিতি

    • B. A. Rozenfeld. “Al-Khwarizmi’s spherical trigonometry” (Russian), Istor.-Mat. Issled. 32–33 (1990), 325–339.

    Jewish calendar

    ভূগোল

    • Daunicht, Hubert (১৯৬৮–১৯৭০)। Der Osten nach der Erdkarte al-Ḫuwārizmīs : Beiträge zur historischen Geographie und Geschichte Asiens (German ভাষায়)। Bonner orientalistische Studien. N.S.; Bd. 19। এলসিসিএন 71468286
    • Mžik, Hans von (১৯১৫)। “Ptolemaeus und die Karten der arabischen Geographen”। Mitteil. D. K. K. Geogr. Ges. In Wien58: 152।
    • Mžik, Hans von (১৯১৬)। “Afrika nach der arabischen Bearbeitung der γεωγραφικὴ ὑφήγησις des Cl. Ptolomeaus von Muh. ibn Mūsa al-Hwarizmi”। Denkschriften d. Akad. D. Wissen. In Wien, Phil.-hist. Kl.59
    • Mžik, Hans von (১৯২৬)। Das Kitāb Ṣūrat al-Arḍ des Abū Ǧa‘far Muḥammad ibn Mūsā al-Ḫuwārizmī। Leipzig।
  • আর্যভট্ট

    আর্যভট্ট (দেবনাগরী: आर्यभट) (৪৭৬৫৫০)[১][২] প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের মধ্যে একজন। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম তার নামে “আর্যভট্ট” রাখা হয়।

    জন্ম

    আর্যভট্টের কাজ থেকে তার জন্মসাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেলেও তার জন্মস্থান নিয়ে সুবিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আর্যভট্টের অন্যতম ভাষ্যকার প্রথম ভাস্করের ভাষ্য অনুযায়ী তার জন্ম হয়েছিল অশ্মকা নামের একটি জায়গায়। প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রীতিতে এই জায়গাটিকে নর্মদা এবং গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ গুজরাত এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের আশেপাশের একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৩][৪]

    উচ্চশিক্ষা

    কিছু তথ্যমতে জানা যায় যে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কুসুমপুরায় গিয়েছিলেন। তিনি কুসুমপুরায়ই বসবাস করতেন,[৫] তার ভাষ্যকার প্রথম ভাস্কর এই স্থানকে পাটালিপুত্র নগরী অভিহিত করেছেন।[৩] তিনি কুসুমপুরের আর্যভ নামে খ্যাত ছিলেন। তার কাজের অধিকাংশই তিনি করেছিলেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিক্ষাশেষে তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। কেউ কেউ বলেছেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবেও আর্যভট্ট দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৩]

    প্রধান অবদান

    প্রাচীন ভারতীয় গণিতের ইতিহাসে আর্যভট্টের হাত ধরেই ক্লাসিকাল যুগ (কিংবা স্বর্ণযুগ) শুরু হয়। গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত আর্যভট্টের বিভিন্ন কাজ মূলত দুটি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মাঝে ‘আর্যভট্টীয়’ একটি, যেটি উদ্ধার করা গিয়েছে। এটি রচিত চার খণ্ডে, মোট ১১৮টি স্তোত্রে। অন্য যে কাজটি সম্পর্কে জানা যায় সেটি হল ‘আর্য-সিদ্ধান্ত’। আর্য-সিদ্ধান্তের কোন পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত এবং প্রথম ভাস্করের কাজে এটির উল্লেখ মেলে। আর্যভট্ট গ্রন্থ রচনা করেছেন পদবাচ্যের আকারে।

    আর্যভট্টীয়

    মাত্র ২৩ বছর বয়সে আর্যভট্ট এই গ্রন্থটি সংকলন করেন। এ চারটি অধ্যায়‌ দশগীতিকা, গণিতপাদ, কালক্রিয়াপদ ও গোলপাদ। দশগীতিকা, কালক্রিয়া ও গোলপাদ অধ্যায়ে গোলীয় ত্রিকোণমিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়াবলী রয়েছে। অন্যদিকে গণিত পাদে আছে পাটীগণিত, বীজগণিত, সমতল ত্রিকোণমিতি, দ্বিঘাত সমীকরণ, প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার ঘাতবিশিষ্ট পদ সমূহের বর্গ ও ঘনের সমষ্টি এবং একটি সাইন অণুপাতের সারণি রয়েছ। তাছাড়া এই অধ্যায়ে সে সময়কার জনপ্রিয় জ্যোতিষচর্চার প্রয়োজনীয় ৩৩টি গাণিতিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা রয়েছে। গণিতপাদে আর্যভট্ট পাই-এর মান তথা বৃত্তের পরিধির সঙ্গে এর ব্যাসের মান ৩.১৪১৬ হিসাবে চিহ্নিত করেন। তিনি ভারতবর্ষে শূন্যের প্রচলন করেন।

    গণিতে আর্যভট্টের অবদান

    দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি এবং শূন্য

    আর্যভট্টের কাজে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার পাওয়া যায়। আর্যভট্ট অবশ্য তার কাজে প্রচলিত ব্রাহ্মী লিপি ব্যবহার করেননি। পদবাচ্যের আকারে গ্রন্থ রচনা করায় সংখ্যা উপস্থাপনের একটি নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন তিনি। সেখানে সংখ্যাকে শব্দের আকারে উপস্থাপন করা হত। ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে তিনি ব্যবহার করতেন বিভিন্ন অঙ্ক হিসেবে আর স্বরবর্ণগুলোর সাহায্যে বুঝিয়ে দিতেন যে কোন অঙ্কটি কোন অবস্থানে রয়েছে। সে দিক থেকে তার ব্যবহৃত দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থা ঠিক আজকের দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থার মত নয়, তবে পদ্ধতিগত বিবেচনায় আজকের দশমিক সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্য ছিল কিনা সে বিষয়ে দ্বন্দ্ব্ব রয়েছে। শূন্যের সমতুল্য একটি ধারণা তার কাজে ছিল, সেটিকে বলা হয়েছে ‘খ’ (শূণ্যতা অর্থে)। ‘খ’ এর ধারণাটি কোন অঙ্ক হিসেবে ছিল নাকি শূন্যস্থান জ্ঞাপক চিহ্ন হিসেবে ছিল সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রচলিত বইগুলোতে সেটিকে শূন্যস্থান জ্ঞাপক চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও Georges Ifrah দাবি করেছেন যে আর্যভট্ট পরোক্ষভাবে সেটিকে একটি দশমিক অঙ্ক হিসেবেই ব্যবহার করতেন। তবে দশমিক পদ্ধতিকে ব্যবহার করে তিনিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ গাণিতিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন, এর মাঝে ছিল সংখ্যার বর্গমূল ও ঘনমূল নির্ণয়। এটিই ছিল দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গরূপে স্থাপিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি, কারণ স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় এ সংখ্যার উপস্থাপন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভ্যতায় ব্যবহার করা হলেও স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর ব্যবহারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, সুতরাং এটির পদ্ধতিগত উপযোগিতা সম্পূর্ণরূপে অণুধাবিত হয়নি। সে সময় সবচেয়ে জরুরি ছিল দশমিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পদ্ধতিগত সাধারণীকরণ নিশ্চিত করা, যেটি সর্বপ্রথম করেন আর্যভট্ট। তাই তিনিই পূর্ণাঙ্গ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি প্রবর্তনের কৃতিত্বের দাবিদার। ৪৯৮ সালের দিকের একটি কাজে আর্যভট্টের একটি কাজে দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিবৃতিতে স্থানম স্থানম দশ গুণম বাক্যাংশটি পাওয়া যায় যার অর্থ হল- স্থান থেকে স্থানে দশ গুণ করে পরিবর্তিত হয়। এখান থেকে স্পষ্টতই বর্তমান দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি মেলে।

    ত্রিকোণমিতি

    আর্যভট্টের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক অবদান হচ্ছে আধুনিক ত্রিকোণমিতির সূত্রপাত করা। ত্রিকোণমিতির ব্যবহারে আর্যভট্ট সাইন, ভারসাইন (Versine = ১ – Cosine), বিপরীত সাইনের ব্যবহার করেন। সূর্য সিদ্ধান্তে এ সংক্রান্ত কিছু কাজ থাকলেও আর্যভট্টের কাজে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ মেলে। সাইন ফাংশনের জন্য যুগ্ম ও অর্ধ কোণের সূত্রগুলো তিনি জানতেন বলে ধারণা করা হয়। আর্যভট্টের ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ ত্রিকোণমিতিক সম্পর্কগুলোর একটি হল- sin (n+১)x কে sin x এবং sin (n-১)x এর সাহায্যে প্রকাশ করা। আর্যভট্ট একটি সাইন টেবিল তৈরি করেছিলেন, যেটিতে ৩ ডিগ্রি ৪৫ মিনিট পার্থক্যে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত সাইন এবং ভারসাইনের মান উল্লেখ করা ছিল। তার ব্যবহার করা এই সূত্রটি দিয়ে খুব সহজেই এই সাইন টেবিলটি recursively তৈরি করে ফেলা সম্ভব। সেই সূত্রটি হল-

    sin (n + ১) x – sin nx = sin nx – sin (n – ১) x – (১/২২৫)sin nx

    আর্যভট্টের তৈরি করা সাইন টেবিলটি এখানে উল্লেখ করা হল। বলে রাখা যেতে পারে আর্যভট্ট তার সাইন টেবিলে সরাসরি sinθ এর বদলে Rsinθ ব্যবহার করেছেন। এখানে R দ্বারা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের ব্যাসার্ধ বোঝানো হচ্ছে। আর্যভট্ট এই ব্যাসার্ধের মান ব্যবহার করেছিলেন ৩৪৩৮, এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে আর্যভট্ট এক মিনিট পরিমাণ কোণের জন্য একক ব্যাসার্ধের বৃত্তে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যকে এক একক হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। একটি বৃত্তের সম্পূর্ণ পরিধি তার কেন্দ্রে (৩৬০ × ৬০) = ২১৬০০ মিনিট কোণ ধারণ করে। সে হিসেবে বৃত্তের পরিধি হল ২১৬০০ একক এবং ঐ বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২১৬০০/২π, আর্যভট্টের হিসেবে পাওয়া π = ৩.১৪১৬ ব্যবহার করলে ব্যাসার্ধের মান প্রায় ৩৪৩৮ হয়।

    ক্রমিক নংকোণের মান (A)
    ডিগ্রি,মিনিট
    আর্যভট্টের নিজস্ব সংখ্যাপদ্ধতিতে উল্লিখিত মান
    (দেবনগরী)
    আর্যভট্টের নিজস্ব সংখ্যাপদ্ধতিতে উল্লিখিত মান
    (ISO ১৫৯১৯ প্রতিবর্ণীকরণ অনুসারে)
    প্রচলিত দশমিক পদ্ধতি অনুসারে R(sin nx – sin (n-১)x) এর আর্যভট্ট প্রদত্ত মানআর্যভট্ট প্রদত্ত
    (R × sinA) এর মান

    (R × sinA) এর প্রকৃত মান
       ১০৩°   ৪৫′मखिmakhi২২৫২২৫′২২৪.৮৫৬০
       ২০৭°   ৩০′भखिbhakhi২২৪৪৪৯′৪৪৮.৭৪৯০
       ৩১১°   ১৫′फखिphakhi২২২৬৭১′৬৭০.৭২০৫
       ৪১৫°   ০০′धखिdhakhi২১৯৮৯০′৮৮৯.৮১৯৯
       ৫১৮°   ৪৫′णखिṇakhi২১৫১১০৫′১১০৫.১০৮৯
       ৬২২°   ৩০′ञखिñakhi২১০১৩১৫′১৩১৫.৬৬৫৬
       ৭২৬°   ১৫′ङखिṅakhi২০৫১৫২০′১৫২০.৫৮৮৫
       ৮৩০°   ০০′हस्झhasjha১৯৯১৭১৯′১৭১৯.০০০০
       ৯৩৩°   ৪৫′स्ककिskaki১৯১১৯১০′১৯১০.০৫০৫
       ১০৩৭°   ৩০′किष्गkiṣga১৮৩২০৯৩′২০৯২.৯২১৮
       ১১৪১°   ১৫′श्घकिśghaki১৭৪২২৬৭′২২৬৬.৮৩০৯
       ১২৪৫°   ০০′किघ्वkighva১৬৪২৪৩১′২৪৩১.০৩৩১
       ১৩৪৮°   ৪৫′घ्लकिghlaki১৫৪২৫৮৫′২৫৮৪.৮২৫৩
       ১৪৫২°   ৩০′किग्रkigra১৪৩২৭২৮′২৭২৭.৫৪৮৮
       ১৫৫৬°   ১৫′हक्यhakya১৩১২৮৫৯′২৮৫৮.৫৯২৫
       ১৬৬০°   ০০′धकिdhaki১১৯২৯৭৮′২৯৭৭.৩৯৫৩
       ১৭৬৩°   ৪৫′किचkica১০৬৩০৮৪′৩০৮৩.৪৪৮৫
       ১৮৬৭°   ৩০′स्गsga৯৩৩১৭৭′৩১৭৬.২৯৭৮
       ১৯৭১°   ১৫′झशjhaśa৭৯৩২৫৬′৩২৫৫.৫৪৫৮
       ২০৭৫°   ০০′ङ्वṅva৬৫৩৩২১′৩৩২০.৮৫৩০
       ২১৭৮°   ৪৫′क्लkla৫১৩৩৭২′৩৩৭১.৯৩৯৮
       ২২৮২°   ৩০′प्तpta৩৭৩৪০৯′৩৪০৮.৫৮৭৪
       ২৩৮৬°   ১৫′pha২২৩৪৩১′৩৪৩০.৬৩৯০
       ২৪৯০°   ০০′cha৩৪৩৮′৩৪৩৮.০০০০

    বীজগণিত

    একাধিক অজানা রাশি সংবলিত সমীকরণ (সাধারণভাবে ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ নামে পরিচিত) সমাধান করার একটি সাধারণ পদ্ধতি তৈরি করেন আর্যভট্ট। এটির নাম ছিল “কুত্তক”। প্রথম ভাস্করের কাজে কুত্তক পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেবার সময় একটি উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে- “এমন সংখ্যা নির্ণয় কর যাকে 8 দিয়ে ভাগ করলে 5, 9 দিয়ে ভাগ করলে 4 এবং 7 দিয়ে ভাগ করলে 1 অবশিষ্ট থাকে।” পরবর্তীকালে এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতবর্ষে কুত্তক পদ্ধতিটিই আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর্যভট্টের কাজে প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার ঘাতবিশিষ্ট পদ সমূহের বর্গ ও ঘনের সমষ্টির সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।

    পাইয়ের মান

    আর্যভট্টীয় বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আর্যভট্ট লিখেছেন- “চার এর সাথে একশ যোগ করে তাকে আট দিয়ে গুণ করে তার সাথে বাষট্টি হাজার যোগ করা হলে বিশ হাজার একক ব্যাসের বৃত্তের পরিধি পাওয়া যায়”। সে হিসেবে আর্যভট্ট পাই এর মান নির্ণয় করেছিলেন ((4+100)×8+62000)/20000 = 62832/20000 = 3.1416, যেটা তার সময় পর্যন্ত যেকোন গণিতবিদের বের করা মানগুলোর মাঝে সবচেয়ে সঠিক।

    জ্যোতির্বিদ্যায় আর্যভট্টের অবদান

    আর্যভট্টীয় বইটির গোলপাদ অংশে আর্যভট্ট উদাহরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। তিনি পৃথিবীর আক্ষিক গতির হিসাবও করেছিলেন। তার হিসেবে পৃথিবীর পরিধি ছিল ৩৯,৯৬৮ কিলোমিটার, যেটা সে সময় পর্যন্ত বের করা যেকোন পরিমাপের চেয়ে শুদ্ধতর (ভুল মাত্র ০.২%)। সৌর জগৎে গ্রহগুলোর কক্ষপথের আকৃতি তার ভাষ্যে ছিল উপবৃত্তাকৃতির, এক বছর সময়কালের প্রায় সঠিক একটি পরিমাপ করেছিলেন, সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সঠিক কারণ উল্লেখ করা এবং তার সময় নির্ধারণ করা। তিনি সৌরজগতের পৃথিবীকেন্দ্রিক নাকি সূর্যকেন্দ্রিক মডেল ব্যবহার করেছিলেন সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। B.L. van der Waerden, Hugh Thurston এর লেখায় আর্যভট্টের জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত হিসাব নিকাশের পদ্ধতিকে সরাসরি সূর্যকেন্দ্রিক বলে দাবি করা হয়েছে। Noel Swerdlow অবশ্য এ জন্য B.L. van der Waerden এর প্রত্যক্ষ সমালোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে আর্যভট্টের ধারণায় সৌরজগৎ পৃথিবীকেন্দ্রিকই ছিল। অপর দিকে Dennis Duke এর মতে, আর্যভট্টের কাজের পদ্ধতি সূর্যকেন্দ্রিক ছিল, তবে সেটি আর্যভট্ট লক্ষ করেননি কিংবা জানতেন না।

    আর্যভট্ট সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের হিন্দু পৌরাণিক ধারণার পরিবর্তে প্রকৃত কারণগুলো ব্যাখ্যা করে গেছেন। সেই সাথে তিনি সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল নির্ণয়ের পদ্ধতিও বের করেছিলেন। আর্যভট্ট বলেছিলেন যে চাঁদের আলো আসলে সূর্যের আলোর প্রতিফলনেরই ফলাফল।

  • আর্নেস্টো সিসারো

    আর্নেস্টো সিসারো (১২ মার্চ ১৮৫৯ – ১২ সেপ্টেম্বর ১৯০৬) একজন ইটালীয় গণিতবিদ যিনি ব্যবকলনীয় জ্যামিতি নিয়ে কাজ করেছিলেন। সিসারো ১৮৯০ সালে Lezioni di Geometria Intrinseca (সাংসিদ্ধিক জ্যামিতির পাঠ) নামে ব্যবকলনীয় জ্যামিতি বিষয়ক একটি বই লেখেন যেখানে বৃহত্তর শ্রেণির ডি রাম বক্ররেখার আংশিক আবদ্ধ ফ্রাক্টাল বক্ররেখা, বহুমাত্রিক স্থানকে একমাত্রিক স্থানে মানচিত্রায়নের পদ্ধতিস্বরূপ স্থান-পূরক-বক্ররেখাসহ[১] আরও কিছু বক্ররেখার বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল – তাঁর সম্মানে যেগুলো আজও সিসারো বক্ররেখা নামে পরিচিত।[২] উপরন্তু তিনি অপসারী ধারার ‘সিসারো-সমষ্টিকরণ’ এর গড় বের করার নিয়ম সিসারো গড় এর জন্যও পরিচিত।

    জীবনী

    সিসারো ১৮৫৯ সালে ইটালির নেপলসে পিতা লুইগি সিসারো ও মাতা ফরতুনাটা নুনসিয়ান্তের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৩ সালে তাকে বেলজিয়ামের লীজে বড় ভাই জোসেপের কাছে পাঠানো হয় যিনি ঐ সময়ে সেখানকার এক স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে খনিজবিদ্যা ও স্ফটিকবিদ্যা পড়াতেন। আর্নেস্টো সিসারোর শিক্ষাজীবনের শুরুটা বেশ হতাশাজনক ছিল, তিনি কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি লীজের এক খনিজ স্কুলের বৃত্তি যোগার করেন। এখানেই তিনি তার এক নিবন্ধের মাধ্যমে গণিতবিদ ইউজেন চার্লস কাতালানের সুনজরে পড়েন। অবশেষে ১৮৮৭ সালে তিনি যখন রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে বের হলেন ততক্ষণে বহুসংখ্যক প্রকাশনার মাধ্যমে তিনি বেলজিয়ামের রয়্যাল সাইন্স সোসাইটির অংশে পরিণত হয়েছিলেন।

    পরের বছরই তিনি পালের্মো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণিত চেয়ার অর্জন করেন এবং ১৮৯১ সাল অবধি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অতঃপর তিনি রোমে পাকাপোক্ত হন। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ম্যানলিওকে পানিতে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আকস্মিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদে আসীন ছিলেন।

    প্রকাশনা

    সিসারোর মূল অবদান ব্যবকলনীয় জ্যামিতিতে। তাঁর Lezioni di Geometria Intrinseca (সাংসিদ্ধিক জ্যামিতির পাঠ) বিশেষকরে ফ্রাক্টাল বক্ররেখার গঠন ব্যাখ্যা করে। তিনি কচের তুষারকণা বক্ররেখা নিয়েও চর্চা করেন; এটি সেই বক্ররেখা যা তার সকল বিন্দুতে অবিচ্ছিন্ন কিন্তু ব্যবকলনযোগ্য নয়।

    তাঁর অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে– Introduction to the Mathematical Theory of Infinitesimal Calculus (ইন্ট্রডাকশন টু দ্যা ম্যাথমেটিকাল থিওরি অব ইনফিনিটেসিমাল ক্যালকুলাস ১৮৯৩), Algebraic Analysis (অ্যালজেব্রিক এনালাইসিস ১৮৯৪), Elements of Infinitesimal Calculus (ইলিমেন্টস অব ইনফিনিটেসিমাল ক্যালকুলাস ১৮৯৭)। ধারার গড়ের সীমার মাধ্যমে তিনি অপসারী ধারার একটি সম্ভাব্য সংজ্ঞা দেন যা বর্তমানে সিসারোর সমষ্টি নামে পরিচিত।

    সিসারোর গ্রন্থ তালিকা

    আইএসবিএন ১৩৯০৭০৭৩৪২

  • আর্কিমিডিস

    আর্কিমিডিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায়: Ἀρχιμήδης আর্খিম্যাদ্যাস্‌, বর্তমান গ্রিক ভাষায় Αρχιμήδης আর্খ়িমিদ়িস্‌) বা সিরাকাসের আর্কিমিডিস (খ্রি.পূ. ২৮৭-২১২) একজন গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদদার্শনিক। প্রাচীন গ্রিক সভ‍্যতা তার উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেছিলো প্রাচীন কালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস এর সময়ে। যদিও তার জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তবুও তাকে ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদার্থবিদ্যায় তার উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে স্থিতিবিদ্যা আর প্রবাহী স্থিতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন এবং লিভারের কার্যনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যাপ্রদান। পানি তোলার জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু পাম্প, যুদ্ধকালীন আক্রমণের জন্য সীজ (ইংরেজি: siege সীঝ়্‌) ইঞ্জিন ইত্যাদি মৌলিক যন্ত্রপাতির ডিজাইনের জন্যও তিনি বিখ্যাত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার নকশাকৃত আক্রমণকারী জাহাজকে পানি থেকে তুলে ফেলার যন্ত্র বা পাশাপাশি রাখা একগুচ্ছ আয়নার সাহায্যে জাহাজে অগ্নিসংযোগের পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।[১]

    আর্কিমিডিসকে সাধারণত প্রাচীন যুগের সেরা এবং সর্বাকালের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২][৩] তিনি মেথড অফ এক্সহশন ব্যবহার করে অসীম ধারার সমষ্টিরূপে প্যারাবোলার বক্ররেখার অন্তগর্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন এবং পাই -এর প্রায় নিখুঁত একটি মান নির্ণয় করেন।[৪] এছাড়াও তিনি আর্কিমিডিসের স্পাইরালের সংজ্ঞা দেন, বক্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন এবং অনেক বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করার একটি চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।

    যদিও রোমানরা আর্কিমিডিসের কোন ক্ষতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু রোমানদের সিরাকিউজ অবরোধের সময় এক রোমান সৈন্যের হাতেই আর্কিমিডিস নিহত হন। রোমান দার্শনিক সিসেরো আর্কিমিডিসের সমাধীর উপরে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি গোলকের উল্লেখ করেছেন। আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছিলেন যে সিলিন্ডারের ভেতর আবদ্ধ গোলকটির আয়তন এবং ভূমির ক্ষেত্রফল উভয়ই সিলিন্ডারের দুই তৃতীয়াংশ, যা আর্কিমিডিসের সেরা গাণিতিক অর্জনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত।

    প্রাচীনকালে আর্কিমিডিসের গাণিতিক রচনাগুলি তার উদ্ভাবনগুলোর মত পরিচিত ছিল না। আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদরা তার লেখা পড়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখও করেছেন, কিন্তু আনুমানিক ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রিক স্থপতি ইসেডোর অফ মিলেতাস সর্বপ্রথম তার সকল রচনা একত্রে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ ইউতোশিয়াস আর্কিমিডিসের কাজের উপর একটি বিবরণ প্রকাশ করেন, যা তাকে প্রথমবারের মত বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পরিচিত করে তোলে। আর্কিমিডিসের কাজের খুব কম লিখিত দলিল মধ্যযুগের পর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু সেই অল্পকিছু দলিলই পরবর্তীকালে রেনেসাঁ যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয়।[৫] ১৯০৬ সালে আর্কিমিডিসের একটি নতুন পাণ্ডুুুলিপি আবিষ্কৃত হয় যা তার গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে।[৬]

    জীবনী

    ব্রোঞ্জনির্মিত আর্কিমিডিসের এই মূর্তিটি বার্লিনের আর্কেনহোল্ড অবজারভেটরিতে অবস্থিত। এর ভাস্কর গেরহার্ড থীয়েম এবং এটি ১৯৭২ সালে উন্মোচন করা হয়।

    আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রিসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাইজান্টাইন গ্রিক ঐতিহাসিক জন যেতজেসের বিবরণ অনুযায়ী আর্কিমিডিস পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান, সেখান থেকে তার জন্মসাল সম্পর্কে ধারণা করা হয়।[৭] দ্য স্যান্ড রেকোনার নামক দলিলে আর্কিমিডিস তার বাবার নাম ফিডিয়াস বলে উল্লেখ করেন। ফিডিয়াস একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক প্লুটার্খ তার দ্য প্যারালাল লাইভস নামক জীবনী গ্রন্থে আর্কিমিডিসকে সিরাকিউজের রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর আত্মীয় বলে উল্লেখ করেন।[৮] আর্কিমিডিসের বন্ধু হেরাক্লিডিস তার একটি জীবনী লিখেছিলেন, কিন্তু সেটি পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। [৯] আর্কিমিডিসের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তথ্য তাই আর জানা যায়নি। যেমন তিনি বিয়ে করেছিলেন কিনা, তার কোন সন্তান ছিল কিনা এগুলো এখনো অজানা। যৌবনে আর্কিমিডিস সম্ভবত মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পড়াশুনা করেছিলেন, যেখানে কোনোন অভ সামোস এবং এরাতোস্থেনেস অফ সিরেন তার সহপাঠী ছিলেন। তিনি কোনোন অভ সামোসকে তার বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন; অপরদিকে তার দুটি কাজের ( দ্য মেথোড অভ মেকানিক্যাল থিওরেমস এবং দ্য ক্যাটল প্রবলেম) শুরুতে এরাতোস্থেনেসের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশনা ছিল।[a]

    ২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় আর্কিমিডিস নিহত হন, যখন রোমান সেনাপতি জেনারেল মার্কাস ক্লডিয়াস মার্সেলাস দুই বছর ধরে অবরোধের পর সিরাকিউজ শহর দখল করেন। প্লুটার্খের বিবরণ অনুযায়ী, সিরাকিউজের পতনের সময় আর্কিমিডিস একটি গাণিতিক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক রোমান সৈন্য তাকে কাজ বন্ধ করে জেনারেল মার্সেলাসের সাথে দেখা করতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর্কিমিডিস তার কাজ শেষ না করে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত সৈনিক তার তলোয়ার দিয়ে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। অন্য একটি স্বল্প প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, আর্কিমিডিস এক রোমান সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণের সময় নিহত হন। এই মতবাদ অনুসারে, তিনি কিছু গাণিতিক সরঞ্জাম বহন করছিলেন যেগুলোকে সৈন্যটি মূল্যবান সম্পদ ভেবে বিভ্রান্ত হয় এবং লোভে পড়ে তাকে হত্যা করে। বলা হয়ে থাকে যে, জেনারেল মার্সেলাস আর্কিমিডিসের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি তার কোন ক্ষতি না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর্কিমিডিসের মৃত্যুসংবাদ তাই তাকে ক্ষুব্ধ করে।[১০]

    কোন গোলকের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল তার অন্তঃস্থ সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ২/৩ অংশের সমান। আর্কিমিডিসের সমাধিতে তাঁর নিজের অণুরোধে একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার বসানো হয়।

    আর্কিমিডিসের সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা সমান উচ্চতা ও ব্যাসের একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত, যা তার সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর একটিকে নির্দেশ করে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে সমান উচ্চতা ও ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে গোলকটির আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের দুই তৃতীয়াংশ। আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন।[১১]

    আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহ

    সোনার মুকুট

    আর্কিমিডিস তার অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতির মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে মুকুটের সোনার ঘনত্ব খাটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম।

    আর্কিমিডিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতি। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর জন্য লরেল পাতার মুকুটের মত দেখতে একটি সোনার মুকুট প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর্কিমিডিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মুকুটটি খাঁটি সোনার কিনা সেটা নিশ্চিত করার।[১২] সহজ পদ্ধতি ছিল মুকুটটি গলিয়ে তার ঘনত্ব নির্ণয় করা, কিন্তু রাজা মুকুটটি নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। আর্কিমিডিস যখন এ সমস্যা নিয়ে ভাবছিলেন, তখন হঠাৎ গোসল করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেন যে তিনি পানিতে নামা মাত্র বাথটাবের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন যে পানির এই ধর্মকে ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহার করা সম্ভব। যেহেতু ব্যবহারিক কাজের জন্য পানি অসংকোচনশীল[১৩], তাই পানিতে নিমজ্জিত মুকুট তার আয়তনের সমান পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত করবে। এই অপসারিত পানির আয়তন দ্বারা মুকুটের ভরকে ভাগ করে মুকুটের ঘনত্ব পরিমাপ করা সম্ভব। যদি মুকুটের উপাদানে সোনার সাথে অন্য কোন কম ঘনত্বের সস্তা ধাতু যোগ করা হয় তাহলে তার ঘনত্ব খাঁটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম হবে। বলা হয়ে থাকে যে এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসকে এতই উত্তেজিত করেছিল যে তিনি নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় “ইউরেকা” (গ্রিক: “εὕρηκα!” ; অর্থ “আমি পেয়েছি!”) বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন।[১৪]

    বাস্তবে আর্কিমিডিসের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে যে পরিমাণ পানি অপসারিত হবে সেটি সঠিকভাবে নির্নয় করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ।[১৫] এই সমস্যার সমাধান করা হয় fluid statics এর মাধ্যমে যেটি আর্কিমিডিস তত্ত্ব নামে পরিচিত। তত্ত্বটি তার On Floating Bodies প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। তত্ত্বে বলা হয়েছে যে , কোন বস্তুর ওজন এটি দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান। [১৬]

    আর্কিমিডিসের স্ক্রু

    আর্কিমিডিসের স্ক্রু পানি উত্তোলনের কাজ ব্যবহৃত একট কার্যকর যন্ত্র।

    আর্কিমিডিসের প্রকৌশল কাজের অধিকাংশই ছিল তার নিজ শহর সিরাকিউজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। গ্রিক লেখক অথেনিয়াস অভ নক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো আর্কিমিডিসকে একটি বিশাল জাহাজ তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সিরাকিউসা নামের এই জাহাজটিকে প্রয়োজনানুযায়ী প্রমোদতরী, রসদ-সরবরাহকারী এবং রণতরী হিসেবে ব্যবহার করে যেত। বলা হয়ে থাকে যে ক্লাসিকাল যুগে নির্মাণ করা সকল জাহাজের মধ্যে সিরাকিউসা ই ছিল সর্ববৃহৎ।[১৭] অথেনিয়াসের ধারণামতে, এই জাহাজে একসাথে ছয়শো যাত্রী বহন করা যেত এবং জাহাজটিতে সাজানো বাগান, একটি ব্যায়ামাগার এবং দেবী আফ্রোদিতির মন্দির ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এত বৃহদাকৃতির একটি জাহাজে প্রচুর পানি চুঁইয়ে ঢুকতো। সেই পানি নির্গমণের জন্য আর্কিমিডিস তার বিখ্যাত আর্কিমিডিসের স্ক্রু তৈরি করেন। এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি স্ক্রু আকৃতির ঘূর্ণায়মান ধাতব ব্লেড যাকে হাত দিয়ে ঘুরানো হত। এই যন্ত্রটি খাল থেকে উঁচু জমিতে সেচের জন্যও ব্যবহার করা হত। বর্তমানকালেও পানি এবং কয়লা, শস্যদানা জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পদার্থ উত্তোলনের জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিসের স্ক্রু সম্ভবত প্রাচীন ব্যবিলনের শুন্যোদ্যানে জলসেচনের জন্য ব্যবহৃত স্ক্রু পাম্পের একটি উন্নততর রূপ ছিল। [১৮][১৯][২০]

    আর্কিমিডিসের থাবা

    “দ্য ক্ল অভ আর্কিমিডিস” বা “আর্কিমিডিসের থাবা” একটি অস্ত্র যা আর্কিমিডিস তার শহর সিরাকিউজকে বহিঃস্থ আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য উদ্ভাবন করেছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। এ যন্ত্রটিতে একটি ক্রেনের ন্যায় বাহু এবং তাতে ঝুলানো একটি বিশাল ধাতব আংটা ছিল। এই আংটার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজকে উল্টে ফেলা হত। আধুনিককালে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে “সুপারউইপনস অভ দ্য এনসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড” নামের একটি টেলিভিশন ডকুমেণ্টারীতে এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করা হয় এবং সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে এটি প্রস্তুত এবং সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।[২১][২২]

    আর্কিমিডিসের উত্তপ্ত রশ্মিঃ সত্য নাকি জনশ্রুতি?

    আর্কিমিডিস হয়তো অনেকগুলো আয়না একত্র করে আবতল প্রতিফলক হিসেবে কাজ করিয়ে সিরাকিউজ আক্রমণকারী জাহাজ ভস্মীভূত করেছিলেন।

    দ্বিতীয় শতকের লেখক লুসিয়ানের বর্ণনা অনুযায়ী, সিরাকিউজ যখন আক্রান্ত হয়, আর্কিমিডিস শত্রুপক্ষের জাহাজ আগুনে ভস্মীভূত করেন। ট্রেলসের এনথেমিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিস অনেকগুলি আয়নার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন।[২৩]

    রেনেসাঁ যুগ থেকেই অবশ্য এই জনশ্রুতির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। রেনে দেকার্ত একে অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যদিও বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র আর্কিমিডিসের যুগে সহজলভ্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।[২৪] অনেকের ধারণা, সারিবদ্ধভাবে সাজানো অনেকগুলো চকচকে পলিশ করা ব্রোঞ্জ বা তামার পাতের সাহায্যে জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব। এতে প্রকৃতপক্ষে সৌরচুল্লীতে ব্যবহৃত পরাবৃত্তিক প্রতিফলনের নীতি ব্যবহার করা হবে।

    ১৯৭৩ সালে গ্রিক বিজ্ঞানী ইওয়ান্নিস সাক্কাস আর্কিমিডিসের সূর্যরশ্মি নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় তিনি সত্তুরটি আয়না ব্যবহার করেন। প্রতিটি আয়নার আকার ছিল পাঁচ ফুট বনাম তিন ফুট এবং এগুলো তামা দ্বারা পালিশ করা ছিল। আয়নাগুলো একশো ষাট ফুট দূরবর্তী একটি প্লাইউড নির্মিত জাহাজের দিকে তাক করা ছিল। আয়নাগুলো ঠিকমত ফোকাস করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অবশ্য জাহাজটিতে আলকাতরার প্রলেপ ছিল, যা সম্ভবত অগ্নিসংযোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। [২৫]

    ২০০৫ এর অক্টোবরে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির একদল ছাত্র ১২৭টি এক ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিশিষ্ট আয়না প্রায় ১০০ ফুট দূরবর্তী একটি কাঠের ডামি জাহাজের উপর ফোকাস করে একটি পরীক্ষা চালায়। প্রায় দশ মিনিট উজ্জ্বল সূর্যালোকে এক জায়গায় থাকার পর জাহাজটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এ পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসা হয় যে এ প্রক্রিয়ায় অগ্নিসংযোগ সম্ভব তবে তা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। মিথবাস্টার্স টেলিভিশন শোতে এমআইটির এই শিক্ষার্থীরা পুনরায় একই পরীক্ষা চালায়, এবার সানফ্রান্সিসকো ঊপকূলে একটি কাঠের মাছধরা নৌকার উপর। এবারও বেশ কিছু সময় পর ছোট আকারে নৌকাটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে আগুন জ্বলে ওঠার জন্য কাঠকে তার দহন তাপমাত্রায় পৌছতে হয় যা প্রায় তিনশো ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান।[২৬]

    ২০০৬ এর জানুয়ারিতে অণুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সময় মীথবাস্টার্স সিদ্ধান্ত দেয় যে এটি প্রকৃতপক্ষে জনশ্রুতি, সত্য নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে অগ্নিসংযোগের জন্য দীর্ঘ সময় এবং ঊজ্জ্বল সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করা হয়। এছাড়াও বলা হয় যে সিরাকিউজ পূর্বদিক থেকে আক্রান্ত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সকাল বেলার আক্রমণই এ পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা সম্ভব। মীথবাস্টার্সে এ কথাও মনে করিয়ে দেয়া হয় যে সেসময় প্রচলিত অন্যান্য অস্ত্র, যেমন অগ্নিসংযোগ করা তীর অথবা ক্যাটাপোল্টের বোল্ট ব্যবহার করে আরো সহজে কোন জাহাজে দূর থেকে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব ছিল।[১]

    অন্যান্য আবিষ্কার ও উদ্ভাবন

    যদিও আর্কিমিডিস নিজে লিভার উদ্ভাবন করেননি, তিনিই প্রথম লিভারের কার্যনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়ার কথা অনুযায়ী, লিভারের মূলনীতি বোঝাতে গিয়ে আর্কিমিডিস বলেছিলেন, “আমাকে একটা দাঁড়ানোর জায়গা দাও, আমি পৃথিবীকে তুলে সরিয়ে দেব”।[২৭] প্লুটার্খ ব্যাখ্যা করেছেন আর্কিমিডিস কিভাবে ব্লক-এন্ড-ট্যাকল পুলি ডিজাইন করেন, যা নাবিকদের লিভারের মুলনীতি ব্যবহার করে অনেক ভারী বস্তু সরাতে সাহায্য করে।[২৮] এছাড়াও আর্কিমিডিস ক্যাটাপোল্টের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করেন এবং প্রথম পিউনিক যুদ্ধের সময় ওডোমিটার আবিষ্কার করেন। প্রচলিত বিবরণ অনুযায়ী, ওডোমিটার ছিল একটি গীয়ারযুক্ত ঠেলাগাড়ি যা প্রতি মাইল চলার পর একটি পাত্রে ছোট একটি গোলক ফেলে দিত।[২৯]

    সিসেরো (খৃষ্টপূর্ব ১০৬ – ৪৩) তার De re publica নামক কাল্পনিক কথোপকথনে আর্কিমিডিসের উল্লেখ করেন। সিরাকিউজ দখলের পর রোমান সেনাপতি মার্কাস ক্লদিয়াস মার্সেলাস রোমে দুটি যন্ত্র নিয়ে যান। এই যন্ত্রগুলির সাহায্যে সূর্য, চাঁদ এবং পাঁচটি গ্রহের স্থান পরিবর্তন দেখানো যেত, যা জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত হত।[৩০][৩১] একসময় ধারণা করা হত যে এমন যন্ত্র তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ যন্ত্রকৌশলগত জ্ঞান থাকা লাগে তা এত প্রাচীনকালে ছিল না, কিন্তু ১৯০২ সালে এন্টিকাইথেরা মেকানিজমের খোঁজ পাওয়ার পর বোঝা যায় যে প্রাচীন গ্রিকদের এসব বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল।[৩২][৩৩]

    গণিত

    যদিও আর্কিমিডিসকে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হয়, কিন্তু তিনি গণিতেও অনেক অবদান রাখেন। প্লুটার্খ লিখেছেন, “তাঁর সমুদয় ভালোবাসা এবং উচ্চাকাঙ্খা ছিল সেসব তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি যেখানে তাঁকে বাস্তব জীবনের প্রয়োজন নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না।”[৩৪]

    আর্কিমিডিস মেথড অভ এক্সহশন ব্যবহার করে পাইয়ের আসন্ন মান নির্ণয় করেন

    আর্কিমিডিস বর্তমানে ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসে ব্যবহৃত অতিক্ষুদ্র সংখ্যার ধারণা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। প্রুফ অভ কন্ট্রাডিকশন ব্যবহার করে তিনি নিখুঁতভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারতেন, সেই সাথে সেসব সমাধানের লিমিটও উল্লেখ করতেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মেথড অভ এক্সহশন, যার সাহায্যে তিনি পাইয়ের মান যথেষ্ট নিখুঁতভাবে নির্ণয় করেন। তিনি এই কাজের জন্য বৃত্তের বাইরে একটি বড় বহুভুজ এবং ভেতরে একটি ছোট বহুভুজ আঁকেন। বহভুজের বাহুর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পায়, তা আকৃতিতে বৃত্তের তত কাছাঁকাছি আসতে থাকে। যখন প্রতিটি বহুভুজের ৯৬টি করে বাহু, তিনি বহুগুলির দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন এবং দেখান যে পাইয়ের মান ২২/৭ (প্রায় ৩.১৪২৯) এবং ২২৩/৭১ (প্রায় ৩.১৪০৮) এর মাঝে, যা প্রকৃত মান ৩.১৪১৬ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি আরও প্রমাণ করেন যে বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গের পাই গুণিতকের সমান। অন দ্য স্ফীয়ার এন্ড সিলিন্ডার বইতে তিনি মতবাদ প্রদান করেন যে, যে কোন মানকে তার নিজের সাথে যথেষ্ট সংখ্যক বার যোগ করলে তা যে কোন নির্দিষ্ট মানকে অতিক্রম করবে। এই মতবাদ বাস্তব সংখ্যার আর্কিমিডিয়ান বৈশিষ্ট্য নামে পরিচিত।[৩৫]

    মেজারমেন্ট অভ সার্কেল বইতে আর্কিমিডিস ৩ এর বর্গমূল ২৬৫/১৫৩ (প্রায় ১.৭৩২০২৬১) এবং ১৩৫১/৭৮০ (প্রায় ১.৭৩২০৫১২) এর মাঝে বলে উল্লেখ করেন, যা প্রকৃত মান ১.৭৩২০৫৮ এর খুবই কাছাঁকাছি। তিনি অবশ্য কোন পদ্ধতিতে এই মান নির্ণয় করেছিলেন সে প্রসঙ্গে কোন কিছুই উল্লেখ করেননি।[৩৬]

    আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছেন যে উপরের চিত্রের পরাবৃত্তিক ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল নিচের চিত্রের অন্তঃস্থ ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণিতকের সমান।

    কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা বইতে আর্কিমিডিস প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল একই ক্ষেত্রের অন্তঃস্থ ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণিতকের সমান, যা পাশের চিত্রে দেখানো হয়েছে। তিনি এ সমস্যার সমাধানটিকে একটি অসীম ধারা হিসেবে প্রকাশ করেন যার সাধারণ অণুপাত ১/৪। ∑ n = 0 ∞ 4 − n = 1 + 4 − 1 + 4 − 2 + 4 − 3 + ⋯ = 4 3 . {\displaystyle \sum _{n=0}^{\infty }4^{-n}=1+4^{-1}+4^{-2}+4^{-3}+\cdots ={4 \over 3}.\;}

    দ্য স্যান্ড রেকোনার বইতে আর্কিমিডিস এই মহাবিশ্ব মোটা কতগুলো ধূলিকণা ধারণ করতে সক্ষম তা গণনা করার চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তিনি ধূলিকণার সংখ্যা গণনা করার জন্য অনেক বেশি বড় এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এ সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি মিরিয়াডের ভিত্তিতে গণনা করার একটি পদ্ধতি বের করেন। মিরিয়াড শব্দটি গ্রিক μυριάς murias থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ১০,০০০। তিনি ১০০ মিলিয়নকে (মিরিয়াডের মিরিয়াড) ভিত্তি করে একটি নাম্বার সিস্টেম প্রস্তাব করেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ করতে ৮ ভিজিনটিলিয়ন ( ৮ x ১০৬৩) ধূলিকণা প্রয়োজন।[৩৭]

    লেখালেখি

    আর্কিমিডিস তার কাজের লিখিত রূপের জন্য ডরিক গ্রিক ভাষা ব্যবহার করতেন, যা প্রাচীন সিরাকিউজের আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। .[৩৮] আর্কিমিডিসের অধিকাংশ কাজ ইউক্লিডের কাজের মত সংরক্ষিত হয়নি; তার সাতটি থীসিসের কথা জানা যায় কেবলমাত্র অন্যদের কাজের রেফারেন্স থেকে। পাপ্পাস অভ আলেকজান্দ্রিয়া আর্কিমিডিসের “অন স্ফীয়ার মেকিং” এবং বহুতল বিশিষ্ট বস্তুর উপর আরএকটি কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে থেরন অভ আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিসরণ সম্পর্কে আর্কিমিডিসের হারিয়ে যাওয়া একটি লেখনী “Catoptrica” এর উল্লেখ করেন। জীবদ্দশায় আর্কিমিডিস তার কাজের প্রচারের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদদের উপর নির্ভর করতেন। বাইজান্টাইন স্থপতি ইসিডোর অভ মিলেতাস আর্কিমিডিসের লেখনীগুলোকে একত্রিত করেন; পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতকে ইউতোশিয়াস অভ আসকালোন তার কাজের উপর লিখিত বিবরণ প্রকাশ করার পর আর্কিমিডিসের কাজ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর্কিমিডিসের কাজ থাবিত ইবনে কুররা (৮৩৬-৯০১ খ্রিষ্টাব্দ) আরবিতে এবং জেরার্ড অভ ক্রেমোনা (১১৪৭-১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) ল্যাটিনে অনুবাদ করেন। রেনেসাঁর সময় ১৫৪৪ সালে জোহান হেরওয়াগেন সুইজারল্যান্ডের বাজল শহর থেকে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় আর্কিমিডিসের কাজ সহ এডিটিও প্রিন্সেপস (Editio Princeps) বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। [৩৯] ১৫৮৬ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি বাতাস ও পানিতে ধাতব বস্তুর ওজন নির্ণয়ের জন্য একটি হাইড্রোস্ট্যাটিক নিক্তি উদ্ভাবন করেন, যা আর্কিমিডিসের কাজ দ্বারা অণুপ্রাণিত বলে বলা হয়ে থাকে। [৪০]

    অক্ষত কাজসমূহ

    Archimēdous Panta sōzomena, 1615

    লিভার সম্পর্কে আর্কিমিডিসের কথিত উক্তি, “আমাকে একটা দাঁড়ানোর জায়গা দাও, আমি পৃথিবীকে তুলে সরিয়ে দেব”

    • অন দ্য ইকুইলিব্রিয়াম অভ প্লেইনস (On the Equilibrium of Planes) (দুই খন্ড)

    প্রথম খণ্ডে পনেরটি উপপাদ্য আর সাতটি অণুসিদ্ধান্ত রয়েছে, অপরদিকে দ্বিতীয় খণ্ডে দশটি উপপাদ্য পাওয়া যায়। এই বইতে আর্কিমিডিস লিভারের মূলনীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “লিভারের দুই বাহুতে প্রযুক্ত ওজন বাহু দুইটির দৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক।” এই বইয়ে উল্লিখিত মূলনীতির সাহায্যে আর্কিমিডিস বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের বস্তু, যেমন ত্রিভুজ, সামান্তরিক, পরাবৃত্তের ক্ষেত্রফল এবং ভরকেন্দ্র নির্ণয় করেন। [৪১]

    • অন দ্য মেজারমেন্ট অভ আ সার্কেল (On the Measurement of a Circle)

    কোনন অভ সামোস (Conon of Samos) এর ছাত্র ডোসিথিস অভ পেলুসিয়ামের (Dositheus of Pelusium) সাথে যৌথভাবে লিখিত এই নিবন্ধে তিনটি উপপাদ্য রয়েছে। দ্বিতীয় উপপাদ্যে আর্কিমিডিস দেখান যে পাইয়ের মান ২২৩/৭১ এর চেয়ে বড় এবং ২২/৭ এর চেয়ে ছোট। ২২/৭ কে পাইয়ের আসন্ন মান হিসেবে মধ্যযুগে গ্রহণ করা হয় এবং বর্তমানেও অত্যন্ত নিখুঁত হিসাবের প্রয়োজন না থাকলে ২২/৭ কেই পাইয়ের মান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

    • “অন স্পাইরালস (On Spirals)”

    আঠাশটি উপপাদ্য নিয়ে গঠিত এই কাজটিও ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্কিমিডিয়ান স্পাইরালকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় (“r”,θ) স্পাইরালকে নিচের সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ r = a + b θ {\displaystyle \,r=a+b\theta } যেখানে “a” এবং “b” দুটি বাস্তব সংখ্যা।

    • “অন দ্য স্ফীয়ার এ্যাণ্ড দ্য সিলিন্ডার (On the Sphere and the Cylinder)” (দুই খন্ড)

    ডোসিথিসকে উদ্দেশ্য করে লেখা এই উপপাদ্যে আর্কিমিডিস সমান উচ্চতা এবং ব্যাস বিসিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের মধ্যবর্তী সম্পর্ক প্রকাশ করেন। এই উপপাদ্য অনুযায়ী, “r” ব্যাসার্ধবিশিষ্ট গোলক এবং সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে, গোলকের আয়তন ৪⁄৩πr3 এবং সিলিন্ডারের আয়তন 2πr3। অপরদিকে, গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 4πr2 এবং সিলিন্ডারের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 6πr2। গোলকটির আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল যথাক্রমে সিলিন্ডারের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের two-thirds অংশ। উল্লেখ্য, আর্কিমিডিস নিজের এই কাজটি নিয়ে সর্বাপেক্ষা বেশি গর্ববোধ করতেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অণুরোধে তাঁর সমাধিফলকের উপর একটি গোলক এবং একটি সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়।

    • “অন কোনয়েডস এ্যাণ্ড স্পেরোয়েডস (On Conoids and Spheroids)”

    বত্রিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই কাজটিও ডোসিথিয়াসকে উদ্দ্যেশ্য করে লেখা। এতে আর্কিমিডিস কোণক, গোলক এবং পরাবৃত্তিক গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল এবং আয়তন পরিমাপ করেন।

    • “অন ফ্লোটিং বডিজ (On Floating Bodies)” (দুই খন্ড)

    প্রথম খণ্ডে আর্কিমিডিস প্রবাহী পদার্থের সাম্যাবস্থার সূত্র বিবৃত করেন এবং প্রমাণ করেন যে পানি একটি ভারকেন্দ্রের চারপাশে গোলকীয় আকার ধারণ করবে। তাঁর এই কাজটি সমসাময়িক গ্রিক জ্যোতির্বিদদের (যেমন এরাতোস্থেনিস) “পৃথিবী গোল” মতবাদের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা থেকে হয়ে থাকতে পারে। তিনি এমন একটি বিন্দু কল্পনা করেছিলেন যার দিকে সকল পদার্থ পতিত হয় এবং গোলকীয় আকার লাভের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি পরাবৃত্তিক গোলকের বিভিন্ন অংশের সাম্যাবস্থামূলক অবস্থান পরিমাপ করেন। সম্ভবত তাঁর চেষ্টা ছিল জাহাজের হালের একটি আদর্শ আকৃতি নির্ণয় করা। তাঁর কাজ করা পরাবৃত্তিক গোলকগুলির মধ্যে কিছু তাদের ভূমি পানির নিচে এখন শীর্ষ পানির উপরে রেখে ভাসতে পারতো, যেভাবে হিমশৈল সাগরে ভেসে বেড়ায়। আর্কিমিডিস এই বইয়ে তাঁর প্লবতার নীতি বিবৃত করেন এভাবেঃ

    কোন প্রবাহী পদার্থে সম্পূর্ণ বা আংশিক নিমজ্জিত কোন বস্তু উপরের দিকে তার অপসারণ করা প্রবাহীর ওজনের সমপরিমাণ এবং বিপরীতমুখী ধাক্কা অণুভব করে।

    • “দ্য কোয়াড্রেচার অভ প্যারাবোলা(The Quadrature of the Parabola)”

    ডোসিথিয়াসকে উদ্দেশ্য করে লেখা চব্বিশটি উপপাদ্য সংবলিত এই রচনায় আর্কিমিডিস দুইটি ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রমাণ করেন যে একটি পরাবৃত্ত এবং একটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমান ভূমি ও উচ্চতাবিশিষ্ট ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের ৪/৩ গুণ। এই প্রমাণের জন্য তিনি একটি জ্যামিতিক ধারার অসীম পর্যন্ত যোগফল নির্ণয় করেন।

  • আবু রায়হান আল-বেরুনি

    আবু রায়হান আল-বেরুনী বা আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনী (ফার্সি: ابوریحان محمد بن احمد بیرونی; ৯৭৩–১০৪৮), সাধারণত আল-বেরুনী নামে পরিচিত, ইসলামী স্বর্ণযুগে[১] একজন খাওয়ারেজমিয় ইরানি পণ্ডিত[২] এবং বহুবিদ্যাবিশারদ ছিলেন।[৩][৪] তাকে বিভিন্নভাবে ” ইন্ডোলজির প্রতিষ্ঠাতা”, ” তুলনামূলক ধর্মের জনক “, [৫] [৬] [৭] [৮] “আধুনিক জিওডেসির জনক ” এবং প্রথম নৃতত্ত্ববিদ বলা হয়। [৯] [১০] তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি আল-বেরুনী নামে পরিচিত। রুশীয় তুর্কিস্তানের খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি আল-বেরুনী শহর নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন গণিত, জ্যোতিঃপদার্থবিদ, রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক, পঞ্জিকাবিদ, দার্শনিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনীর কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, “আল-বেরুনী শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন।”[১১]

    আল-বেরুনী পদার্থবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন এবং একজন ইতিহাসবিদ, কালানুক্রমিক এবং ভাষাবিদ হিসেবেও নিজেকে আলাদা করেছিলেন। [৬] তিনি তার দিনের প্রায় সমস্ত বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছিলেন এবং জ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে তার অক্লান্ত গবেষণার জন্য প্রচুর পুরস্কৃত হয়েছিল। [১২] রাজা এবং সমাজের অন্যান্য শক্তিশালী উপাদান আল-বেরুনীর গবেষণাকে অর্থায়ন করে এবং নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা মাথায় রেখে তাকে খুঁজে বের করে। নিজের অধিকারে প্রভাবশালী, আল-বেরুনী নিজে অন্যান্য জাতির পণ্ডিতদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, যেমন গ্রীক, যাদের থেকে তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন যখন তিনি দর্শনের অধ্যয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। [১৩] একজন প্রতিভাধর ভাষাবিদ, তিনি খওয়ারেজমিয়ান, ফার্সি, আরবি, সংস্কৃত এবং গ্রীক, হিব্রু এবং সিরিয়াক ভাষাও জানতেন। তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন গজনীতে, তৎকালীন গজনভিদের রাজধানী, আধুনিক দিনের মধ্য-পূর্ব আফগানিস্তানে। ১০১৭ সালে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ভ্রমণ করেন এবং ভারতে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের অন্বেষণের পর তারিখ আল-হিন্দ (ভারতের ইতিহাস) শিরোনামে ভারতীয় সংস্কৃতির উপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন। [ক] তিনি, তার সময়ের জন্য, বিভিন্ন জাতির রীতিনীতি এবং ধর্মের উপর একজন প্রশংসনীয়ভাবে নিরপেক্ষ লেখক ছিলেন, ১১ শতকের প্রথম দিকে ভারত তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ বস্তুনিষ্ঠতা তাকে আল-ওস্তাদ (“দ্য মাস্টার”) উপাধি অর্জন করেছিল তার প্রথম দিকের অসাধারণ বর্ণনার স্বীকৃতিস্বরূপ। [১৫]

    ইরানে, আবু রায়হান বিরুনির জন্মদিন জরিপ প্রকৌশলী দিবস হিসেবে পালিত হয়। [১৬]

    নাম

    আল-বেরুনীর নামটি ফার্সি শব্দ বিরুন (অর্থাৎ ‘বাইরে’) থেকে এসেছে, কারণ তিনি আফ্রিগিদ খোয়ারাজমশাহদের রাজধানী কাথের একটি দূরবর্তী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [১৭] [১৮]

    জন্ম

    ১৯৭৩ সালে সোভিয়েত পোস্ট স্ট্যাম্পে আল বেরুনীর একটি কল্পিত ছবি

    তিনি একটি অতি সাধারণ ইরানি পারিবারে ৪ সেপ্টেম্বর (মতান্তরে ৩ সেপ্টেম্বর), ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রোজ বৃহস্পতিবার খাওয়ারিজমের শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। [১৯] তার বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিলো আল-ইরাক বংশীয় রাজপতি বিশেষ করে আবু মনসুর বিন আলী বিন ইরাকের তত্ত্ববধানে। তিনি সুদীর্ঘ ২২ বছর রাজকীয় অনুগ্রহে কাটিয়েছেন।

    জীবন

    তিনি মধ্য এশিয়ার আফ্রিগিদ রাজবংশের খওয়ারেজম (চোরাসমিয়া)-এর রাজধানী কাথের বাইরের জেলায় ( বিরুন ) জন্মগ্রহণ করেন – যা এখন উজবেকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র কারাকালপাকস্তানের অংশ। [৬] [২০] [২১]

    আল-বিরুনী তার জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর খওয়ারেজমে কাটিয়েছেন যেখানে তিনি ইসলামিক আইনশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, ব্যাকরণ, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা ও দর্শন অধ্যয়ন করেছেন এবং শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রেই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি কাজ করেছেন। অন্যান্য বিজ্ঞান। [২০] ইরানী খওয়ারেজমিয়ান ভাষা, যেটি ছিল বিরুনির মাতৃভাষা, [২২] [২৩] ইসলামের পরে কয়েক শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলের তুর্কিকরণ পর্যন্ত টিকে ছিল – যেমনটি অন্তত প্রাচীন খোয়ারেজমের সংস্কৃতি এবং বিদ্যার কিছু অংশ ছিল – কারণ এটি কল্পনা করা কঠিন। এত জ্ঞানের ভান্ডার বিরুনির কমান্ডিং ব্যক্তিত্ব, একটি সাংস্কৃতিক শূন্যতায় উপস্থিত হওয়া উচিত ছিল। [৬] তিনি আফ্রিগিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, যারা ৯৯৫ সালে মামুনিদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজবংশ দ্বারা উৎখাত হয়েছিল। তিনি তার মাতৃভূমি বোখারা ত্যাগ করেন, তারপর নূহের পুত্র সামানীদ শাসক দ্বিতীয় মনসুরের অধীনে। সেখানে তিনি আভিসেনার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন [২৪] এবং এই দুই পণ্ডিতের মধ্যে বিদ্যমান মতবিনিময় রয়েছে।

    ৯৯৮ সালে, তিনি তাবারিস্তানের জিয়ারিদ আমির কাবুস ( শা. ৯৭৭–৯৮১, ৯৯৭–১০১২ )। সেখানে তিনি তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ লিখেছেন, আল-আথার আল-বাক্বিয়া ‘আন-কোরুন আল-খালিয়্যা (আক্ষরিকভাবে: “গত শতাব্দীর অবশিষ্ট চিহ্ন” এবং “প্রাচীন জাতির কালক্রম” বা “অতীতের ভেস্টিজেস” হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে) ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিক কালানুক্রমের উপর, সম্ভবত প্রায় ১০০০ সি.ই. যদিও তিনি পরে বইটিতে কিছু সংশোধন করেছিলেন। তিনি বাভান্দিদ শাসক আল- মারজুবানের দরবারেও যান। মামুনিদের হাতে আফ্রিগিদের নিশ্চিত মৃত্যু স্বীকার করে, তিনি পরবর্তীদের সাথে শান্তি স্থাপন করেছিলেন যিনি তখন খওয়ারেজম শাসন করেছিলেন। গোরগঞ্জে (খওয়ারেজমেও) তাদের দরবারটি বরণীয় বিজ্ঞানীদের সমাবেশের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিল।

    ১০১৭ সালে, গজনীর মাহমুদ রেএ নিয়ে যান। আল-বেরুনী সহ অধিকাংশ পণ্ডিতদের গজনী রাজবংশের রাজধানী গজনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিরুনিকে দরবারে জ্যোতিষী করা হয় [২৫] এবং ভারতে আক্রমনের সময় মাহমুদের সাথে সেখানে কয়েক বছর বসবাস করেন। গজনীর মাহমুদের সাথে সফরে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল চুয়াল্লিশ বছর। [২১] বিরুনি ভারতের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কিছুর সাথে পরিচিত হন। এই সময়ে তিনি ভারত পাঠ সম্পর্কে লেখেন, এটি ১০৩০ সালের দিকে শেষ করেন। [২৬] তার লেখার পাশাপাশি, আল-বেরুনী অভিযানে থাকাকালীন বিজ্ঞানের দিকে তার অধ্যয়ন প্রসারিত করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি সূর্যের উচ্চতা পরিমাপ করার জন্য একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন এবং সেই উদ্দেশ্যে একটি অস্থায়ী চতুর্ভুজ তৈরি করেছিলেন। [২৭] আল-বেরুনী ভারতবর্ষ জুড়ে যে ঘন ঘন ভ্রমণ করেছিলেন তার উপর তার গবেষণায় অনেক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। [২৮]

    সুন্নি আশ’আরি মাযহাবের অন্তর্গত, আল-বেরুনী তথাপি মাতুরিদি ধর্মতত্ত্ববিদদের সাথেও যুক্ত। তবে তিনি মু’তাযিলার খুব সমালোচক ছিলেন, বিশেষ করে আল-জাহিজ এবং জুরকানের সমালোচনা করেছিলেন। [২৯] তিনি মহাবিশ্বের অনন্ততা সম্পর্কে তার মতামতের জন্য অ্যাভিসেনাকেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। [৩০] [৩১]

    শিক্ষা

    তিনি গণিতশাস্ত্র “আবু নাস -এর ইবন আলি ইবন ইরাক জিলানি এবং তদ্রূপ আরো কিছু বিদ্বান ব্যক্তির কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। অধ্যয়নকালেই তিনি তার কিছু প্রাথমিক রচনা প্রকাশ করেন এবং প্রখ্যাত দার্শনিক ও চিকিৎসাশাস্ত্রজ্ঞ ইবন সিনার সাথে পত্র বিনিময় করেন। আল বিরুনির মাতৃভাষা ছিল খাওয়ারিজিম আঞ্চলিক ইরানি ভাষা। কিন্তু তিনি তার রচনাবলি আরবিতে লিখে গেছেন। আরবি ভাষায় তার অগাধ পান্ডিত্য ছিল। তিনি আরবিতে কিছু কবিতাও রচনা করেন। অবশ্য শেষের দিকে কিছু গ্রন্থ ফার্সিতে অথবা আরবি ও ফার্সি উভয় ভাষাতেই রচনা করেন। তিনি গ্রিক ভাষাও জানতেন। হিব্রুসিরীয় ভাষাতেও তার জ্ঞান ছিল।

    তিনি ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং শাহ আবুল হাসান আলি ইব্‌ন মামুন কর্তৃক সম্মানে গৃহীত হন। তিনি আলি ইব্‌ন মামুনের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং অনেক নাজুক রাজনৈতিক কার্যকলাপ ছাড়াও রাজকীয় দৌত্যকার্যের দায়িত্বেও নিয়োজিত থাকেন। মামুন তার সৈন্যবাহিনী কর্তৃক ১০১৬১৭ খ্রিস্টাব্দে নিহত হওয়ার পর সুলতান মাহমুদ খাওয়ারিজম দখল করে নেন।গণিতবিদ আবু নাসের মানসুর ইবন আলি ও চিকিৎসক আবুল খায়ের আল-হুসায়ন ইবন বাবা আল-খাম্মার আল-বাগ দাদদির সাথে গজনি চলে যান। এখানেই তার জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। তখন হতে তিনি গাজনি শাহী দরবারে সম্ভবত রাজ জ্যোতির্বিদ হিসেবে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি কয়েকবার সুলতান মাহমুদের সাথে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমন করে ছিলেন। গজনির সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ভারতে প্রায় ১২ বছর অবস্থান করেন। এখানে সংস্কৃত ভাষা শেখেন এবং হিন্দু ধর্ম, ভারতীয় সভ্যতাসংস্কৃতি, দেশাচার, সামাজিক প্রথা, রাতিনীতি, কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় কিছু আঞ্চলিক ভাষায়ও জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি এই এক যুগের অধ্যায়ন ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দ্বারা রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল তারিকিল-হিন্দ

    গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং মিনিট ও সেকেন্ডের আবিষ্কার

    বিরুনির লেখা ১৪৬টি বইয়ের মধ্যে পঁচানব্বইটি নিবেদিত জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত এবং গাণিতিক ভূগোলের মতো সম্পর্কিত বিষয়গুলি। [৩২] তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে বাস করতেন, যখন আব্বাসীয় খলিফারা জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার প্রচার করেছিলেন, [২১] কারণ এই ধরনের গবেষণা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক নয়, একটি ধর্মীয় মাত্রাও ধারণ করেছিল: ইসলামে উপাসনা এবং প্রার্থনার জন্য পবিত্রতার সঠিক নির্দেশাবলী সম্পর্কে জ্ঞান প্রয়োজন। অবস্থানগুলি, যা শুধুমাত্র জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে। [৩৩]

    তার গবেষণা চালানোর জন্য, আল-বেরুনী জড়িত অধ্যয়নের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছিলেন।

    জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর তার প্রধান কাজ [৩৪] প্রাথমিকভাবে একটি জ্যোতির্বিদ্যা এবং গাণিতিক পাঠ্য; তিনি বলেছেন: “আমি জ্যামিতি দিয়ে শুরু করেছি এবং পাটিগণিত এবং সংখ্যার বিজ্ঞানে, তারপর মহাবিশ্বের কাঠামোতে এবং অবশেষে বিচারিক জ্যোতিষশাস্ত্রে চলেছি, জ্যোতিষীর শৈলী এবং শিরোনামের যোগ্য কেউ নয় যিনি বিজ্ঞানের জন্য এগুলোর সাথে পুরোপুরি পরিচিত নন।” [৩৫] এই আগের অধ্যায়গুলিতে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ভবিষ্যদ্বাণীর উপর চূড়ান্ত অধ্যায়ের ভিত্তি স্থাপন করেছেন, যার তিনি সমালোচনা করেছেন। তিনিই প্রথম যিনি জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের মধ্যে শব্দার্থগত পার্থক্য করেছিলেন [৩৬] এবং পরবর্তীতে একটি রচনায়, জ্যোতির্বিদ্যার বৈধ বিজ্ঞানের বিপরীতে জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি খণ্ডন লিখেছেন, যার জন্য তিনি সর্বান্তকরণে সমর্থন প্রকাশ করেন। কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে জ্যোতিষশাস্ত্র খণ্ডন করার জন্য তার কারণ জ্যোতিষীদের দ্বারা ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলি অভিজ্ঞতাবাদের পরিবর্তে ছদ্মবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এবং জ্যোতিষীদের এবং সুন্নি ইসলামের গোঁড়া ধর্মতাত্ত্বিকদের মতামতের মধ্যে দ্বন্দ্বের সাথে সম্পর্কিত। [৩৭] [৩৮]

    তিনি ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যার উপর একটি বিস্তৃত ভাষ্য লিখেছিলেন তাহকীক মা লি-ল-হিন্দে যা বেশিরভাগই আর্যভট্টের রচনার অনুবাদ, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে জ্যোতির্বিদ্যার উপর একটি কাজ যা আর বিদ্যমান নেই, তার মিফতাহ-ইলম পৃথিবীর ঘূর্ণনের বিষয়টি সমাধান করেছেন। -আলহাই’আ (জ্যোতির্বিদ্যার চাবিকাঠি):

    পৃথিবীর ঘূর্ণন কোনোভাবেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, কারণ একটি জ্যোতির্বিদ্যার চরিত্রের সমস্ত উপস্থিতি এই তত্ত্ব অনুসারে অন্যের মতো ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে, অন্যান্য কারণ রয়েছে যা এটিকে অসম্ভব করে তোলে। এই প্রশ্নটি সমাধান করা সবচেয়ে কঠিন। আধুনিক এবং প্রাচীন উভয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বাধিক বিশিষ্টরা পৃথিবীর গতিশীলতার প্রশ্নটি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন এবং এটি খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন। আমরাও, মিফতাহ-ইলম-আলহাই’আ (জ্যোতির্বিদ্যার চাবিকাঠি) নামক একটি বিষয়ের উপর একটি বই রচনা করেছি, যেখানে আমরা মনে করি আমরা আমাদের পূর্বসূরিদেরকে ছাড়িয়ে গেছি, কথায় না হলেও, বিষয়টির সমস্ত ঘটনাতেই। [৩৯]

    সিজির জ্যোতির্বিদ্যার বর্ণনায় তিনি পৃথিবীর গতিবিধি সম্পর্কে সমসাময়িক বিতর্কের ইঙ্গিত দেন। তিনি ইবনে সিনার সাথে একটি দীর্ঘ চিঠিপত্র এবং কখনও কখনও উত্তপ্ত বিতর্ক চালিয়েছিলেন, যেখানে বিরুনি বারবার অ্যারিস্টটলের মহাকাশীয় পদার্থবিদ্যাকে আক্রমণ করেছেন: তিনি সরল পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তি দেন যে ভ্যাকুয়াম অবস্থা অবশ্যই বিদ্যমান; [৪০] উপবৃত্তাকার কক্ষপথের বিরুদ্ধে অ্যারিস্টটলের যুক্তির দুর্বলতা দেখে তিনি “বিস্মিত” হয়েছেন যে তারা একটি শূন্যতা তৈরি করবে; [৪০] তিনি মহাকাশীয় গোলকের অপরিবর্তনীয়তাকে আক্রমণ করেন। [৪০]

    তার প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজ, মাসুদ কানন, বিরুনি লক্ষ্য করেছেন যে, টলেমির বিপরীতে, সূর্যের এপোজি (স্বর্গের সর্বোচ্চ বিন্দু) সচল ছিল, স্থির নয়। [৪১] [৪২] তিনি জ্যোতির্বিদ্যার উপর একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছিল যে কীভাবে এটিকে সময় বলতে এবং জরিপ করার জন্য একটি চতুর্ভুজ হিসাবে ব্যবহার করতে হয়। আটটি গিয়ারযুক্ত যন্ত্রের একটি বিশেষ চিত্রকে পরবর্তী মুসলিম অ্যাস্ট্রোলেব এবং ঘড়ির পূর্বপুরুষ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। [২১] অতি সম্প্রতি, বিরুনির গ্রহণের ডেটা ১৭৪৯ সালে ডানথর্ন দ্বারা চাঁদের ত্বরণ নির্ধারণে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, [৪৩] এবং তার বিষুব সময় এবং গ্রহন সম্পর্কিত ডেটা পৃথিবীর অতীত ঘূর্ণনের একটি অধ্যয়নের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। [৪৪]

    আল-বেরুনী ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি ১০০০ সালে ইহুদি মাস নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথম ঘন্টাকে সেক্সজেজিসিভাবে মিনিট, সেকেন্ড, তৃতীয় এবং চতুর্থ ভাগে ভাগ করেছিলেন। [৪৫]

    চিরন্তন মহাবিশ্বের খণ্ডন

    আশ’আরি মাযহাবের পরবর্তী অনুসারীদের মতো, যেমন আল-গাজ্জালি, আল-বেরুনী প্রবলভাবে রক্ষা করার জন্য বিখ্যাত [৪৬] সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি অবস্থান হলো যে, মহাবিশ্বের একটি সূচনা ছিল, তিনি সৃজন বহির্গত নিহিলোর শক্তিশালী সমর্থক, বিশেষভাবে খণ্ডন করেন। একাধিক চিঠি চিঠিপত্রে দার্শনিক ইবনে সিনা . [৩০] [৩১] [৪৭]

    আল-বিরুনী নিম্নলিখিতটি বলেছেন, [৪৮] [৩১]

    “এছাড়া অন্যান্য লোকেরা, এই মূর্খ প্ররোচনাকে ধরে রাখে, সেই সময়ের কোনও শেষ নেই।”[৪৮][৩১]

    তিনি আরও বলেছেন যে অ্যারিস্টটল, যার যুক্তি ইবনে সিনা ব্যবহার করেন, তিনি নিজেকে বিরোধিতা করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যে মহাবিশ্ব এবং বস্তুর একটি শুরু আছে যখন এই ধারণাটিকে ধরে রেখেছিলেন যে পদার্থটি প্রাক-শাশ্বত। ইবনে সিনাকে লেখা তার চিঠিতে তিনি অ্যারিস্টটলের যুক্তি তুলে ধরেন যে, সৃষ্টিকর্তার মধ্যে একটি পরিবর্তন রয়েছে। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে স্রষ্টার মধ্যে একটি পরিবর্তন আছে বলার অর্থ হবে প্রভাবের একটি পরিবর্তন (অর্থাৎ মহাবিশ্বের পরিবর্তন হয়েছে) এবং মহাবিশ্ব যে না থাকার পরে সৃষ্টি হচ্ছে তা এমন একটি পরিবর্তন (এবং তাই যুক্তি দিয়ে কোন পরিবর্তন নেই) – কোন শুরু নেই – এর অর্থ অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করেন যে স্রষ্টাকে অস্বীকার করা হয়েছে)। [৩০] [৩১]

    অ্যারিস্টটলের মতো গ্রীক দার্শনিকদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই ধর্মের পাঠ্য প্রমাণ অনুসরণ করার জন্য আল-বেরুনী গর্বিত ছিলেন। [৩০] [৩১]

    পদার্থবিদ্যা

    আল-বেরুনী মধ্যযুগীয় বলবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তনে অবদান রেখেছিলেন। [৪৯] [৫০] তিনি একটি নির্দিষ্ট ধরনের হাইড্রোস্ট্যাটিক ব্যালেন্স ব্যবহার করে ঘনত্ব নির্ধারণের জন্য পরীক্ষামূলক পদ্ধতি তৈরি করেন। [২১]

    ভূগোল এবং ভুগণিত

    বিরুনি পাহাড়ের উচ্চতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করার একটি অভিনব পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তিনি পিন্দ দাদান খানের (বর্তমান পাকিস্তান) নন্দনায় এটি চালিয়েছিলেন। [৫১] তিনি একটি পাহাড়ের উচ্চতা পরিমাপ এবং সেই পাহাড়ের চূড়া থেকে দিগন্তে ডুবের পরিমাপ ব্যবহার করে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ গণনা করতে ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করেছিলেন। ৩৯২৮.৭৭ মাইল পৃথিবীর জন্য তার গণনা করা ব্যাসার্ধ ৩৮৪৭.৮০ মাইলের প্রকৃত গড় ব্যাসার্ধের চেয়ে ২% বেশি। [২১] তার অনুমান ১২,৮০৩,৩৩৭ কিউবিট হিসাবে দেওয়া হয়েছিল, তাই আধুনিক মানের তুলনায় তার অনুমানের নির্ভুলতা হাতের জন্য কোন রূপান্তর ব্যবহার করা হয় তার উপর নির্ভর করে। এক হাতের সঠিক দৈর্ঘ্য স্পষ্ট নয়; একটি ১৮-ইঞ্চি হাতের সাথে তার অনুমান হবে ৩,৬০০ মাইল, যেখানে ২২-ইঞ্চি হাতের সাথে তার অনুমান হবে ৪,২০০ মাইল। [৫২] এই পদ্ধতির একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল যে আল-বেরুনী বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিসরণ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না এবং এটির জন্য কোনও ভাতা দেননি। তিনি তার গণনায় ৩৪ আর্ক মিনিটের একটি ডিপ অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু প্রতিসরণ সাধারণত পরিমাপকৃত ডিপ অ্যাঙ্গেলকে প্রায় ১/৬ পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে তার গণনাটি প্রকৃত মানের প্রায় ২০% এর মধ্যে নির্ভুল করে তোলে। [৫৩]

    পৃথিবীর ব্যাসার্ধ এবং পরিধি অনুমান করার জন্য আল-বেরুনী দ্বারা প্রস্তাবিত এবং ব্যবহৃত একটি পদ্ধতির চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে

    আবু রায়হান আল-বেরুনী কর্তৃক ইরানের চার দিক ও রাজনৈতিক বিভাগ

    আল-বেরুনীর জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজগুলির মধ্যে একটি থেকে চাঁদের পর্যায়গুলি ব্যাখ্যা করে একটি টীকাযুক্ত চিত্র। সূর্য (অনেক ডানে) – পৃথিবী (দূর বাম) এবং চন্দ্র পর্যায়গুলি

    তার কোডেক্স মাসুডিকাস (১০৩৭) এ, আল-বেরুনী এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে বিশাল সমুদ্রের ধারে একটি ল্যান্ডমাসের অস্তিত্বের তত্ত্ব দিয়েছেন, বা যা আজ আমেরিকা নামে পরিচিত। তিনি পৃথিবীর পরিধি এবং আফ্রো-ইউরেশিয়ার আকার সম্পর্কে তার সঠিক অনুমানের ভিত্তিতে এর অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন, যা তিনি পৃথিবীর পরিধির মাত্র দুই-পঞ্চমাংশ বিস্তৃত দেখতে পেয়েছেন, যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলি যা ইউরেশিয়ার জন্ম দিয়েছে তা অবশ্যই আছে। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে বিশাল সমুদ্রে জমির জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে অন্ততপক্ষে কিছু অজানা ল্যান্ডমাস পরিচিত অক্ষাংশের মধ্যে থাকবে যেখানে মানুষ বসবাস করতে পারে এবং সেইজন্য সেখানে বসবাস করা হবে। [৫৪]

    চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং খনিজবিজ্ঞান

    বিরুনি একটি ফার্মাকোপিয়া (ঔষধ প্রস্তুত করার প্রণালীসম্বন্ধে নির্দেশসংবলিত পুস্তক বা তালিকা) লিখেছিলেন, “কিতাব আল-সায়দালা ফি আল-তিব্ব” (ঔষধের প্রস্তুত প্রণালী বই)। এটি সিরিয়াক, ফার্সি, গ্রীক, বেলুচি, আফগান, কুর্দি এবং কিছু ভারতীয় ভাষায় মাদকের নামের প্রতিশব্দ তালিকাভুক্ত করে। [৫৫] [৫৬]

    তিনি ধাতু এবং মূল্যবান পাথরের ঘনত্ব এবং বিশুদ্ধতা নির্ধারণ করতে একটি হাইড্রোস্ট্যাটিক ব্যালেন্স ব্যবহার করেছিলেন। তিনি রত্নকে তাদের প্রাথমিক শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন নির্দিষ্ট মাধ্যাকর্ষণ এবং কঠোরতা বিবেচনা করেছেন তার দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করেছেন, রঙ দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করার সময়ের সাধারণ অনুশীলনের পরিবর্তে। [৫৭]

    ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান

    চাঁদের দশার উপর তার কাজ

    পৃথিবীর পরিধি ও ব্যাসার্ধের উপর কাজ

    আল-বেরুনী যে কত বড় ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি যে কত উচ্চস্তরে স্থান লাভ করেছিলেন, এ সম্বন্ধে একটি ঘটনা উল্লেখই যথেষ্ট। একদিন সুলতান মাহমুদ গজনিতে তার হাজার বৃক্ষের বাগানে গ্রীষ্মবাসের ছাদে বসে আল বিরুনিকে বললন, এ বাড়ির চার দরজার কোন দরজাটি দিয়ে আমি বের হবো, আপনি তা গুনে ঠিক করে একটি কাগজ়ে লিখে আমার কম্বলের নিচে রেখে দিন। আল-বেরুনী তার আস্তারলব যন্ত্রের সাহায্যে অঙ্ক কষে তার অভিমত একটি কাগজ়ে লিখে সুলতান মাহমুদের কম্বলের নিচে রেখে দিলেন। তখন সুলতান রাজমিস্ত্রির সাহায্যে একটি নতুন দরজা সৃষ্টি করে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে দেখেন আল-বেরুনীর কাগজে অনুরূপ কথাই লেখাঃ “আপনি পূর্ব দিকের দেয়াল কেটে একটি নতুন দরজা করে বেরিয়ে যাবেন”। কাগজের লেখা পাঠ করে সুলতান রেগে গিয়ে ছাদ থেকে আল-বেরুনীকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন। নিচে মশামাছি প্রতিরোধের জন্য জাল পাতা ছিল। সুলতানের আদেশ কার্যকর হওয়ার পর আল-বেরুনী সেই জালে আটকে গিয়ে মাটিতে আস্তে পড়ার ফলে বেশি আঘাত পেলেন না। সুলতান আল-বেরুনীকে আবার ডেকে আনলেন এবং তার চাকরের কাছ থেকে আল বিরুনির দৈনিক ভাগ্য গণনার ডায়েরিটা নিয়ে সুলতান দেখলেন, তাতে লিখা আছে “আমি আজ উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে গেলেও বিশেষ আঘাত পাব না”। এ দেখে সুলতান আরো রেগে গিয়ে আল-বেরুনীকে জেলে পাঠালেন। এর পর আল-বেরুনীকে কারগার থেকে মুক্তির সুপারিশ করতে কেউ সাহস পেলেন না। ছয় মাস পর সুলতানের মনমর্জি বুঝে প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাসান একদিন আল-বেরুনীর প্রতি সুলতানের নেক নজর আকর্ষণ করলেন। সুলতান মাহমুদের এ কথা স্বরণই ছিল না। তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে মুক্তি দিলেন।

    সুলতান মাসউদ

    ইউরোপীয় পন্ডিতদের মতে, আল-বেরুনী ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকোষ, তার প্রত্যেকটি গ্রন্থ ছিল জ্ঞানের আধার। ভারতীয় পন্ডিতরা আল-বেরুনীকে বলতেন জ্ঞানের সমুদ্র। কোনো অবস্থাতেই তার এসব অমূল্য গ্রন্থের পরিচয় অল্প কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আল-বেরুনীর ভারত থেকে গজনি প্রত্যাবর্তন করার কিছু দিন পর সুলতান মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর পুত্র সুলতান মাসউদ ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরহণ করেন। তিনি ১০৩০১০৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সিংহাসনে ছিলেন। সুলতান মাসউদ আল-বেরুনীকে খুব সম্মান করতেন। আল-বেরুনী তার অণুরক্ত হয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম সুলতানের নামানুসারে রাখেন, কানুন মাসুউদী এবং তা সুলতানের নামে উৎসর্গ করেন। সুবিশাল গ্রন্থখানা সর্বমোট ১১ খণ্ডে সমাপ্ত। গ্রন্থটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সুলতান মাসউদ অত্যন্ত খুশি হয়ে একটি হাতির ওজনের পরিমাণ রৌপ্য বৈজ্ঞানিক আল-বেরুনীকে উপহার করেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করে বাহিক্য সন্তোষ প্রকাশ করে সব রৌপ্যই রাজকোষে ফিরিয়ে দেন। মন্তব্য করেন, তার এত ধনসম্পদের কোনো প্রয়োজন নেই।

    কানুন মাসুউদী এর বিষয়

    গ্রন্থটির প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে জ্যোতির্বিজ্ঞান, তৃতীয় খণ্ডে ত্রিকোণমিতি। এতে দু’টি তালিকা দেয়া হয়েছে। এখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলোচনার সাথে ত্রিকোণমিতিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করার প্রচেষ্টায় তিনি যে সফলতা লাভ করেছেন তা প্রশংসনীয়। মাসউদের অণুরোধে অতি সরল পদ্ধিতে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় দিবারাত্রির পরিমণবিষয়ক একটি পুস্তকও তিনি প্রণয়ন করন। চতুর্থ খণ্ডে গোলাকার জ্যোতির্বিদ্যা (Spherical Astronomy); পঞ্চম খণ্ডে চন্দ্র, সূর্যের মাপ, গ্রহ এবং দ্রাঘিমা; ছষ্ঠ খণ্ডে সূর্যের গতি প্রকৃতি; সপ্তম খণ্ডে চন্দ্রের গতি প্রকৃতি; অষ্টম খণ্ডে চন্দ্রের দৃশ্যমান ও গ্রহণ; নবম খণ্ডে স্থির নক্ষত্র দশম খণ্ডে পাঁচটি গ্রহ নিয়ে এবং একাদশ জ্যোতিষ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এখানে তিনি মূল্যবান অর্থ উপস্থাপন করেন।

    ইতিহাস এবং কালপঞ্জি

    রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর বিরুনির প্রধান প্রবন্ধ, কিতাব আল-মুসামারা ফি আবার মাররজম (হারারজম বিষয়ক রাত্রিকালীন কথোপকথনের বই) এখন শুধুমাত্র বায়হাকির তারিখ-ই মাস’দীর উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়। এ ছাড়াও ঐতিহাসিক ঘটনা ও পদ্ধতির বিভিন্ন আলোচনা তার আল-আথার আল-বাকিয়ায় এবং কানুন এবং ভারতের আথারের অন্যত্র রাজাদের তালিকা এবং তার অন্যান্য রচনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাওয়া যায়। [৫৮] আল-বেরুনীর “প্রাচীন জাতির কালক্রম” বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুগের দৈর্ঘ্য নির্ভুলভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। [২১]

    ধর্মের ইতিহাস

    বিরুনিকে ব্যাপকভাবে ধর্মের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [৫৯] – তুলনামূলক ধর্মের ক্ষেত্রে অগ্রগামী, অন্যান্য ধর্মের মধ্যে,

    জরাথুস্ট্রবাদ, ইহুদি, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং ইসলামের অধ্যয়ন। তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে নিয়েছিলেন: “আমরা এখানে এই বিষয়গুলির একটি বিবরণ দিয়েছি যাতে পাঠক বিষয়টির তুলনামূলক চিকিত্সার মাধ্যমে জানতে পারে যে ইসলামের প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা উন্নত এবং এই বৈপরীত্যটি কতটা স্পষ্টভাবে সমস্ত রীতিনীতিকে প্রকাশ করে। এবং ব্যবহার, ইসলামের থেকে ভিন্ন, তাদের অপরিহার্য নোংরামিতে।” যাইহোক, তিনি মাঝেমাঝে অন্যান্য সংস্কৃতির ঘটনার প্রশংসা প্রকাশ করার জন্য খুশি ছিলেন এবং তার সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় অন্যান্য ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করেছিলেন। [৬০] তিনি তাদের ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব শর্তে তাদের বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। তার অন্তর্নিহিত ধারণাটি ছিল যে সমস্ত সংস্কৃতি কমপক্ষে অন্য সমস্ত সংস্কৃতির দূরবর্তী আত্মীয় কারণ তারা সমস্ত মানবিক গঠন। “বরং, আল-বেরুনী যেটা তর্ক করছেন বলে মনে হচ্ছে তা হল যে প্রতিটি সংস্কৃতিতে একটি সাধারণ মানব উপাদান রয়েছে যা সমস্ত সংস্কৃতিকে দূরের আত্মীয় করে তোলে, যদিও তারা একে অপরের কাছে বিদেশী মনে হতে পারে।” [৬১]

    আল-বেরুনী হিন্দুদের একটি শিক্ষিত এবং একটি অশিক্ষিত শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। তিনি শিক্ষিতদের একেশ্বরবাদী হিসাবে বর্ণনা করেন, বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর এক, শাশ্বত, এবং সর্বশক্তিমান এবং সমস্ত ধরনের মূর্তি পূজা পরিহার করেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে অশিক্ষিত হিন্দুরা বহুবিধ মূর্তি পূজা করত তবুও নির্দেশ করে যে এমনকি কিছু মুসলমান (যেমন জাবরিয়া ) ঈশ্বরের নৃতাত্ত্বিক ধারণা গ্রহণ করেছে। [৬২]

    নৃতত্ত্ব

    আল-বেরুনী ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ, রীতিনীতি ও ধর্ম নিয়ে লিখেছেন। আকবর এস. আহমেদের মতে, আধুনিক নৃতাত্ত্বিকদের মতো, তিনি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে বিস্তৃত অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণে জড়িত ছিলেন, তাদের ভাষা শিখেছেন এবং তাদের প্রাথমিক পাঠ্য অধ্যয়ন করেছেন, ক্রস-সাংস্কৃতিক তুলনা ব্যবহার করে বস্তুনিষ্ঠতা এবং নিরপেক্ষতার সাথে তার ফলাফলগুলি উপস্থাপন করেছেন। আখবার এস. আহমেদ উপসংহারে পৌঁছেছেন যে আল-বেরুনীকে প্রথম নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, [৬৩] অন্যরা অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন যে প্রচলিত অর্থে তাকে খুব কমই একজন নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। [৬৪]

    ইন্ডোলজি (ভারতবিদ্যা)

    একজন ইন্ডোলজিস্ট হিসেবে আল-বিরুনীর খ্যাতি মূলত দুটি গ্রন্থের উপর নির্ভর করে। [৬৫] আল-বেরুনী ভারতে তাহকীক মা লি-ল-হিন্দ মিন মাকুলাহ মাকবুলাহ ফি আল-আকল আও মার্ধুলাহ নামে একটি বিশ্বকোষীয় রচনা লিখেছিলেন (বিভিন্নভাবে অনুবাদ করা হয়েছে “ভারতীয়রা যে সমস্ত কিছুর হিসাব, যুক্তিসঙ্গত এবং অযৌক্তিক তা যাচাই করে” [৬৬] অথবা “বইটি নিশ্চিত করে যে ভারতের সাথে সম্পর্কিত কি, যৌক্তিক বা ঘৃণ্য কিনা” [৬৫] ) যেখানে তিনি ধর্ম, ইতিহাস, ভূগোল, ভূতত্ত্ব, বিজ্ঞান এবং গণিত সহ ভারতীয় জীবনের প্রায় প্রতিটি দিক অনুসন্ধান করেছেন। ভারত ভ্রমণের সময়, সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস আল-বেরুনীর মূল ফোকাস ছিল না: তিনি বরং সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ধর্ম পরীক্ষা করে হিন্দু জীবনের বেসামরিক এবং পণ্ডিত দিকগুলি নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। [৬৭] তিনি একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে ধর্ম অন্বেষণ. [৬৮] তিনি সরল বাগ্মীতার সাথে তার উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন: তিনি ভারতীয় ঋষি পতঞ্জলির যোগসূত্রের অনুবাদ করেছেন তর্জামত কেতাব বাতাঞ্জলি ফিল-হিল্যাস পুরুষ আল-এরতেবাক শিরোনামে

    আমি আমাদের বিরোধীদের যুক্তি উপস্থাপন করব না যাতে তাদের খণ্ডন করা যায়, কারণ আমি বিশ্বাস করি যে ভুল আছে। আমার বই আর কিছুই নয়, একটি সাধারণ ঐতিহাসিক তথ্যের রেকর্ড। আমি পাঠকদের সামনে হিন্দুদের তত্ত্বগুলিকে ঠিক তাদের মতোই তুলে ধরব, এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক দেখানোর জন্য আমি তাদের সাথে গ্রীকদের অনুরূপ তত্ত্বগুলি উল্লেখ করব। (১৯১০, ভলিউম ১, পৃ. ৭; ১৯৫৮, পৃ. ৫)

    আল-বিরুনীর বিশ্লেষণের একটি উদাহরণ হল তার সারসংক্ষেপ কেন অনেক হিন্দু মুসলমানদের ঘৃণা করে। বিরুনি তার বইয়ের শুরুতে উল্লেখ করেছেন কিভাবে মুসলমানদের হিন্দু জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিখতে কষ্ট হয়েছিল। [৬৮] তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অধিকন্তু, ১১ শতকে হিন্দুরা তার অনেক শহরে ধ্বংসাত্মক আক্রমণের ঢেউ সহ্য করেছিল, এবং ইসলামিক সৈন্যরা অসংখ্য হিন্দু ক্রীতদাসকে পারস্যে নিয়ে গিয়েছিল, যা – আল-বেরুনী দাবি করেছিলেন – হিন্দুদের শুধুমাত্র মুসলিম নয়, সমস্ত বিদেশীদের প্রতি সন্দেহজনক হয়ে উঠতে অবদান রেখেছিল। হিন্দুরা মুসলমানদেরকে হিংস্র ও অপবিত্র মনে করত এবং তাদের সাথে কিছু শেয়ার করতে চাইত না। সময়ের সাথে সাথে, আল-বেরুনী হিন্দু পণ্ডিতদের স্বাগত জয় করেন। আল-বেরুনী বই সংগ্রহ করেছিলেন এবং এই হিন্দু পণ্ডিতদের সাথে সংস্কৃতে সাবলীল হওয়ার জন্য অধ্যয়ন করেছিলেন, ১১ শতকের ভারতে অনুশীলনের মতো গণিত, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা এবং শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি আবিষ্কার ও আরবিতে অনুবাদ করেছিলেন। তিনি ভারতীয় পণ্ডিতদের দেওয়া যুক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যারা বিশ্বাস করেছিলেন যে পৃথিবী অবশ্যই গোলাকার আকৃতির হতে হবে, যা তারা মনে করেছিল যে অক্ষাংশ, ঋতু এবং চাঁদ এবং তারার সাথে পৃথিবীর আপেক্ষিক অবস্থানের দ্বারা দিনের আলোর ঘন্টার পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করার একমাত্র উপায়। একই সময়ে, আল-বেরুনী ভারতীয় লেখকদেরও সমালোচক ছিলেন, যারা তিনি বিশ্বাস করতেন যে পুরানো নথির অনুলিপি তৈরি করার সময় অসতর্কতার সাথে ভারতীয় নথিগুলি নষ্ট হয়ে গেছে। [৬৯] তিনি হিন্দুদেরকে কী করতে দেখেছেন এবং কী করতে দেখেছেন না সে বিষয়েও তিনি সমালোচনা করেছিলেন, উদাহরণস্বরূপ ইতিহাস এবং ধর্ম সম্পর্কে তাদের কৌতূহলের ঘাটতি খুঁজে পাওয়া।

    [৭০]হিন্দু জীবনের একটি নির্দিষ্ট দিক যা আল-বেরুনী অধ্যয়ন করেছিলেন তা হল হিন্দু ক্যালেন্ডার । এই বিষয়ে তাঁর বৃত্তি মহান দৃঢ়সংকল্প এবং ফোকাস প্রদর্শন করেছিল, তিনি যে গভীর গবেষণা করেছেন তার পদ্ধতির শ্রেষ্ঠত্ব উল্লেখ না করে। তিনি হিন্দু ক্যালেন্ডারের তারিখগুলিকে তিনটি ভিন্ন ক্যালেন্ডারের তারিখে রূপান্তর করার একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন যা তার সময়কালের ইসলামিক দেশগুলিতে প্রচলিত ছিল, গ্রীক, আরব/মুসলিম এবং পারস্য। বিরুনি তার তত্ত্ব নির্ধারণে জ্যোতির্বিদ্যাকেও নিযুক্ত করেছিলেন, যা ছিল জটিল গাণিতিক সমীকরণ এবং বৈজ্ঞানিক গণনা যা একজনকে বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের মধ্যে তারিখ এবং বছরকে রূপান্তর করতে দেয়। [৭১]

    বইটি যুদ্ধের ক্লান্তিকর রেকর্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কারণ আল-বেরুনী সামাজিক সংস্কৃতিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন। কাজটিতে ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তৃত বিষয়ের উপর গবেষণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে তাদের ঐতিহ্য এবং রীতিনীতির বর্ণনা রয়েছে। যদিও তিনি রাজনৈতিক এবং সামরিক ইতিহাস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছিলেন, বিরুনি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলি রেকর্ড করেছিলেন এবং উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলি কোথায় হয়েছিল তার প্রকৃত সাইটগুলি উল্লেখ করেছিলেন। উপরন্তু, তিনি ভারতীয় শাসকদের কাহিনী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন কিভাবে তারা তাদের উপকারী কর্মের মাধ্যমে তাদের জনগণের উপর শাসন করেছে এবং জাতির স্বার্থে কাজ করেছে। কিন্তু, তার বিবরণ সংক্ষিপ্ত এবং বেশিরভাগই শুধুমাত্র শাসকদের তাদের আসল নাম উল্লেখ না করে তালিকাভুক্ত করে। তিনি তাদের শাসনামলে যে সকল কর্মকাণ্ড করেছিলেন, সেগুলি সম্পর্কে তিনি যাননি, যা রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করার জন্য আল-বেরুনীর মিশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আল-বেরুনী তাঁর রচনায় ভারতের ভূগোলও বর্ণনা করেছেন। তিনি জলের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনা নথিভুক্ত করেছেন। এই বর্ণনাগুলি আজকের আধুনিক ইতিহাসবিদদের জন্য উপযোগী কারণ তারা আধুনিক ভারতে নির্দিষ্ট গন্তব্যগুলি সনাক্ত করতে বিরুনির বৃত্তি ব্যবহার করতে সক্ষম। ইতিহাসবিদরা কিছু ম্যাচ তৈরি করতে সক্ষম হন এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে নির্দিষ্ট এলাকাগুলি অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন শহরের সাথে প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন দূর্গ এবং ল্যান্ডমার্কগুলিকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল, এমনকি আধুনিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বেও তাদের উপযোগিতা সহ আল-বিরুনীর অবদানকে বৈধতা দেয়। [৬৮] আল-বেরুনী কর্তৃক প্রদত্ত হিন্দুধর্মের উচ্ছৃঙ্খল বিবরণ তার সময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ছিল। তিনি বলেছিলেন যে তিনি তার লেখায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ছিলেন, একজন সঠিক ঐতিহাসিকের মতো নিরপেক্ষ ছিলেন। বিরুনি ভারত সম্পর্কে সবকিছু নথিভুক্ত করেছে ঠিক যেমনটি ঘটেছে। কিন্তু, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে কীভাবে তাকে দেশের স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের কিছু বিবরণ সম্পূর্ণ নির্ভুলতার দিক থেকে নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে, তবে, তিনি তার লেখায় যথাসম্ভব সৎ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। [৬৮] ডাঃ এডওয়ার্ড সি. সাচাউ এটিকে “সংঘাতময় তলোয়ার, পোড়ানো শহর এবং লুণ্ঠিত মন্দিরের জগতে শান্ত, নিরপেক্ষ গবেষণার একটি জাদু দ্বীপের সাথে তুলনা করেছেন।” [৭২] বিরুনির লেখা খুবই কাব্যিক ছিল, যা আধুনিক সময়ের জন্য কাজের ঐতিহাসিক মূল্য কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। যুদ্ধ ও রাজনীতির বর্ণনার অভাবে ছবির সেই অংশগুলো সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। যাইহোক, অনেকে আল-বেরুনীর কাজ ব্যবহার করেছেন ইতিহাসের তথ্য যাচাই করার জন্য অন্যান্য রচনায় যা অস্পষ্ট ছিল বা তাদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। [৭৩]

    কাজ

    আল-বিরুনীর বেশিরভাগ কাজ আরবি ভাষায় যদিও তিনি আপাতদৃষ্টিতে কিতাব আল-তাফহিম ফারসি এবং আরবি উভয় ভাষাতেই লিখেছেন, উভয় ভাষার উপর তার দক্ষতা দেখিয়েছেন। [৭৪] বিরুনির তার ৬৫তম চান্দ্র/৬৩তম সৌর বছরের (৪২৭/১০৩৬ এর শেষ) পর্যন্ত তার নিজস্ব সাহিত্য উৎপাদনের ক্যাটালগ ১২টি বিভাগে বিভক্ত ১০৩টি শিরোনাম তালিকাভুক্ত করে: জ্যোতির্বিদ্যা, গাণিতিক ভূগোল, গণিত, জ্যোতিষ বিষয়ক দিক এবং ট্রানজিট, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, একটি শিরোনামহীন বিভাগ, জ্যোতিষশাস্ত্র, উপাখ্যান, ধর্ম, এবং বইগুলি তার আর নেই৷ [৭৫]

    বিদ্যমান কাজ নির্বাচন

    • ভারত যা বলেছে তার একটি সমালোচনামূলক অধ্যয়ন, কারণ দ্বারা গৃহীত বা প্রত্যাখ্যান ( تحقيق ما للهند من مقولة معقولة في العقل أو مرذولة ); বা ইন্ডিকা ; অথবা কিতাব আল-হিন্দ ; কিতাব আল-বিরুনী ফী তাহকীক মা লি-আল-হিন্দ ; [৭৬] বা আলবেরুনির ভারত (অনুবাদ) [৭৬] – ভারতের ধর্ম ও দর্শনের সংকলন।
    • জ্যোতিষশাস্ত্রের শিল্পের উপাদানগুলিতে নির্দেশনার বই ( কিতাব আল-তাফহিম লি-আওয়াইল সিনাআত আল-তানজিম [৭৭] ); ফার্সি ভাষায়
    • বিগত শতাব্দীর অবশিষ্ট চিহ্ন ( الآثار الباقية عن القرون الخالية ) – গাণিতিক, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ঐতিহাসিক তথ্য সহ সংস্কৃতি এবং সভ্যতার ক্যালেন্ডারের একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন, (খ্রিস্টান ধর্মের কয়েকটি অধ্যায় সহ) [৭৮]
    • মেলকাইট ক্যালেন্ডার, বা লেস ফেটেস দেস মেলচাইটস – আরবি পাঠ্য যার ফরাসি অনুবাদের নির্যাস দ্য রেমেনিং সাইন্স অফ পাস্ট সেঞ্চুরিজ থেকে। [৭৯]
    • মাসউদি আইন ( قانون مسعودي ) – জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল এবং প্রকৌশলের এনসাইক্লোপিডিয়া, গজনীর মাহমুদের পুত্র মাসুদকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
    • জ্যোতিষশাস্ত্র বোঝা ( التفهيم لصناعة التنجيم ) – গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন এবং উত্তর শৈলী বই, আরবি এবং ফারসি ভাষায়।
    • ফার্মেসি – ওষুধ এবং ওষুধের উপর।
    • রত্ন ( الجماهر في معرفة الجواهر ) – খনিজ এবং রত্নগুলির ভূতত্ত্ব ম্যানুয়াল। মাসুদের ছেলে মওদুদকে উৎসর্গ করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
    • Astrolabe
    • একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
    • গজনীর মাহমুদ ও তার পিতার ইতিহাস
    • খাওয়ারেজমের ইতিহাস
    • কিতাব আল-আথার আল-বাকিয়াহ ‘আন আল-কুরুন আল-খালিয়াহ[৭৬] [৭৬]
    • রিসালাহ লি-আল-বিরুনী (এপিত্রে দে বেরুনী) [৭৬]

    ফার্সি কাজ

    বিরুনি তার বেশিরভাগ কাজ আরবি ভাষায় লিখেছিলেন, তার বয়সের বৈজ্ঞানিক ভাষা হিসেবে, তবে তার আল-তাফহিমের ফারসি সংস্করণ [৭৪] ফার্সি ভাষায় বিজ্ঞানের প্রথম দিকের কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি ফার্সি গদ্য এবং অভিধানের জন্য সমৃদ্ধ উৎস। [৮০] বইটি একটি বিস্তারিত এবং দক্ষ ফ্যাশনে চতুর্ভুজ কভার করে। [৮০]

    উত্তরাধিকার

    অসাধারণভাবে, আল-বিরুনীর মৃত্যুর পর, গজনভিদ শাসনের অবশিষ্ট সময়কালে এবং পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে, তার কাজটি নির্মিত হয়নি, এমনকি উল্লেখও করা হয়নি। এটি মাত্র কয়েক শতাব্দী পরে (এবং তখন পশ্চিমে), যে তার কাজগুলি আবার পঠিত হয়েছিল এবং সেগুলিকে উল্লেখ করা হয়েছিল – সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভারত সম্পর্কিত তার বইয়ের ক্ষেত্রে, যা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কার্যকলাপের সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। ১৭ শতক থেকে। [৮১]

    তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র, আবু রায়খান বেরুনী, ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে মুক্তি পায়। [৭৬]

    তার সম্মানে চন্দ্র গর্ত আল-বেরুনী এবং গ্রহাণু ৯৯৩৬ আল-বেরুনী নামকরণ করা হয়েছিল।

    অ্যান্টার্কটিকার বিরুনি দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে আল-বেরুনীর নামে।

    জুন ২০০৯ সালে, ইরান ভিয়েনায় জাতিসংঘের অফিসে একটি প্যাভিলিয়ন দান করেছিল – যা ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের কেন্দ্রীয় মেমোরিয়াল প্লাজায় স্থাপন করা হয়েছিল। [৮২] স্কলারস প্যাভিলিয়ন নামকরণ করা হয়েছে, এতে চারজন বিশিষ্ট ইরানি পণ্ডিতের মূর্তি রয়েছে: আভিসেনা, আবু রায়হান বিরুনি, জাকারিয়া রাজি (রাজেস) এবং ওমর খৈয়াম[৮৩] [৮৪]

    ইরান কর্তৃক দান করা পার্সিয়ান স্কলার প্যাভিলিয়নের অংশ হিসাবে ভিয়েনায় জাতিসংঘের অফিসে আল-বেরুনীর মূর্তি

    চন্দ্রের গর্ত আল-বেরুনী, চাঁদের দূরে, অ্যাপোলো ১৪ দ্বারা দেখা গেছে

    মৃত্যু

    আল-বেরুনী ৬৩ বছর বয়সে জটিল রোগে আক্রান্ত হন। তার পরও তিনি ১২ বছর বেঁচেছিলেন। ১৩ই ডিসেম্বর ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে, ৪৪০ হিজরি ২ রজব তিনি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান।

    গ্রন্থ

    আল-বেরুনীর সর্বমোট ১১৪টি গ্রন্থের উল্লেখ তিনি নিজে করেছেন। এর মধ্যে ১০৩টি গ্রন্থ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ১০টি অসম্পূর্ণ গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। আবু নাসের মানসুর ১২টি, আবু সাহল আ-মাসিহি ১২টি, আবু সাহল আল-মাসিহি ১২টি, আবু আলি আল-হাসন ইবন আলি আল-জিলি একটি পুস্তক তার নামে আরোপিত করে উল্লেখ করেছেন। ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮টি। উপরিউক্ত রিসালায় রচনার পরে তিনি আরো কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হতে প্রতীয়মান হয়, তার রচিত গ্রন্থের সর্বমোট সংখ্যা ১৮০টি। এগুলো তথ্য, তত্ত্ব ও পরিসরের দিকে হতে বিভিন্ন। কোনোটি পুস্তক, কোনোটি গবেষণামূলক সন্দর্ভ আবার কোনোটি বৃহদাকার গ্রন্থ, যাতে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার বিধৃত ধারণ করা হয়েছে।

    সম্মননা

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়।[৮৫]

  • অঁরি পোয়াঁকারে

    অঁরি পোয়াঁকারে[১] (২৯ এপ্রিল ১৮৫৪ – ১৭ জুলাই ১৯১২) ফরাসি গণিতবিদ, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, প্রকৌশলীদার্শনিক, এবং গণিতের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৌলিক প্রতিভা বলে স্বীকৃত। তাকে প্রায়ই বহুশাস্ত্রবিদ এবং গণিতের সর্বশেষ বিশ্ববাদী বলা হয়।

    কর্মজীবন

    একজন গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে পোয়াঁকারে বিশুদ্ধ গণিত, ফলিত গণিত, গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান এবং নভোবলবিজ্ঞানে অনেক মৌলিক অবদান রেখেছেন। তিনি পোয়াঁকারে অনুমানকে সুত্রবদ্ধ করেন, যা গণিতবিশ্বে একটি বিশ্ববিখ্যাত অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবে বিবেচিত ছিল; শেষ পর্যন্ত ২০০২-০৩ সালে এসে এটি সমাধান করা সম্ভব হয়। পোয়াঁকারে গণিতের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণবাদী তন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এছাড়া তাকে আধুনিক টপোগণিতের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহাজাগতিক বলবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি অভিসারী ও অপসারী শ্রেণী সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য উপস্থাপন করেন।[২]

  • বহুপদী

    বহুপদী (ইংরেজি: Polynomial) হলো একটি গাণিতিক প্রকাশ, যা এক বা একাধিক চলক এবং তাদের ধনাত্মক পূর্ণ সাংখ্যিক ঘাত এবং ধ্রুবকের যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।[১] একটি এক চলক বিশিষ্ট দ্বিঘাত বহুপদী : x 2 − 4 x + 7 {\displaystyle x^{2}-4x+7}

    গণিত এবং বিজ্ঞানে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ: বহুপদী সমীকরণ গঠনের মাধ্যমে বহু জটিল গাণিতিক সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।

    প্রকার

    এক চলক বিশিষ্ট বহুপদী

    a n x n + a n − 1 x n − 1 + ⋯ + a 2 x 2 + a 1 x + a 0 {\displaystyle a_{n}x^{n}+a_{n-1}x^{n-1}+\dotsb +a_{2}x^{2}+a_{1}x+a_{0}}

    এটি একটি এক চলক বিশিষ্ট বহুপদী, যেখানে n ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা। a 1 {\displaystyle a_{1}}থেকে a n {\displaystyle a_{n}}পর্যন্ত পদগুলো x xএর বিভিন্ন ঘাতের সহগ

    লক্ষণীয় যে, x 2 + 1 x 3 + x + 3 {\displaystyle x^{2}+{\tfrac {1}{x^{3}}}+x+3} কোনো বহুপদী রাশি নয়। কারণ রাশিটির দ্বিতীয় পদে x x এর ঘাত − 3 {\displaystyle -3} যা ঋণাত্মক।

    দুই চলক বিশিষ্ট বহুপদী

    2 x 2 + 4 x 2 y + 5 x y 2 + 3 y 2 + 3 {\displaystyle 2x^{2}+4x^{2}y+5xy^{2}+3y^{2}+3}একটি দুই চলকবিশিষ্ট বহুপদী, যেখানে বহুপদীর সর্বোচ্চ ঘাত 3। উল্লেখ্য, কোনো বহুপদীতে যদি দুইটি চলক সংবলিত পদ x m y n {\displaystyle x^{m}y^{n}} আকারে থাকে, তবে বহুপদীর সর্বোচ্চ ঘাত হয় (m+n)। অর্থাৎ দুটি চলকের ঘাতের যোগফলের সমান।[২]

    একঘাত বহুপদী

    কোনো বহুপদী রাশিতে যদি চলকের সর্বোচ্চ ঘাত এক হয়, তবে সেই বহুপদী রাশিকে একঘাত বহুপদী বলা হয়।

    এক চলক বিশিষ্ট একঘাত বহুপদী :

    a x + b {\displaystyle ax+b}

    এখানে ab উভয়ই ধ্রুবক

    দুই চলকবিশিষ্ট একঘাত বহুপদী :

    a x + b y + c {\displaystyle ax+by+c}

    এখানে a, bc সবগুলোই ধ্রুবক।

    দ্বিঘাত বহুপদী

    যেসব বহুপদী রাশিতে চলকের সর্বোচ্চ ঘাত দুই, তাদেরকে দ্বিঘাত বহুপদী বলা হয়।

    এক চলক বিশিষ্ট দ্বিঘাত বহুপদী :

    a x 2 + b x + c {\displaystyle ax^{2}+bx+c}

    এখানে a, bc ধ্রুবক। এখানে a≠0, কারণ a এর মান শূন্য হলে তা একঘাত বহুপদীতে পরিনত হবে।

    দুই চলক বিশিষ্ট দ্বিঘাত বহুপদী :

    a x 2 + b y 2 + c x y + d {\displaystyle ax^{2}+by^{2}+cxy+d}

    a, b, cd ধ্রুবক।

    ত্রিঘাত বহুপদী

    যদি কোনো বহুপদী রাশিতে সর্বোচ্চ ঘাত সংখ্যা তিন হয়, তবে তাকে ত্রিঘাত বহুপদী বলা হয়।

    এক চলক বিশিষ্ট ত্রিঘাত বহুপদী:

    a x 3 + b x 2 + c x + d {\displaystyle ax^{3}+bx^{2}+cx+d}

    এখানে a, b, cd ধ্রুবক।

    বহুপদী সমীকরণ

    মূল নিবন্ধ: বহুপদী সমীকরণ a n x n + a n − 1 x n − 1 + ⋯ + a 2 x 2 + a 1 x + a 0 = 0 , {\displaystyle a_{n}x^{n}+a_{n-1}x^{n-1}+\dotsb +a_{2}x^{2}+a_{1}x+a_{0}=0,}

    আকারের সমীকরণকে বহুপদী সমীকরণ বলে। উল্লেখ্য, এখানেও n একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা, a 0 , a 1 , a 2 . . . . . . . . . a n {\displaystyle a_{0},a_{1},a_{2}.........a_{n}}সহগ গুলো x বর্জিত সংখ্যা এবং a n {\displaystyle a_{n}} অবশ্যই শূন্য নয়। কারণ তা সমীকরণের সর্বোচ্চ ঘাতের সহগ

  • নির্ণায়ক

    নির্ণায়ক (ইংরেজি: Determinant) হলো বীজগণিতের একটি ফাংশন যা স্কেলার রাশি n-এর উপর নির্ভরশীল। একটি নির্দিষ্ট ধনাত্মক সংখ্যা n এর জন্য n×n ম্যাট্রিক্সের একটি অনন্য নির্ণায়ক ফাংশন আছে।

    উল্লম্ব বার

    ম্যাট্রিক্স A এর নির্ণায়ককে |A| দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই প্রকাশ পদ্ধতিটি কিছুটা দ্ব্যর্থবোধক, কেননা এটি ম্যাট্রিিক্সেের কিছু নর্ম এবং পরম মান প্রকাশের জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে। ম্যাট্রিক্স নর্মকে দুটি উল্লম্ব বার (e.g., ‖A‖) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে, ফলে নির্ণায়ক প্রকাশে প্রথম পদ্ধতিটি প্রায়শই ব্যবহার হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাট্রিক্সের জন্য A = [ a b c d e f g h i ] 
A = \begin{bmatrix} a & b & c\\d & e & f\\g & h & i \end{bmatrix}\,

    নির্ণায়ক det ( A ) \det(A) কে প্রকাশ করা হয় | A | |A| বা আরো নির্দিষ্টভাবে | A | = | a b c d e f g h i | . 
|A| = \begin{vmatrix} a & b & c\\d & e & f\\g & h & i \end{vmatrix}.\,

    অর্থাৎ, বর্গাকৃতির বন্ধনীসমূহ দীর্ঘ উল্লম্ব বার দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।

    ২x২ ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক

    সামান্তরিকের ক্ষেত্রফলটি হল এর বাহু নির্দেশক ভেক্টরগুলো থেকে সৃষ্ট মেট্রিক্সের নির্ণায়ক

    2×2 ম্যাট্রিক্স হলো A = [ a b c d ] 
A = \begin{bmatrix} a & b\\c & d \end{bmatrix}\,

    ম্যাট্রিক্সটির নির্ণায়ক হলো det ( A ) = a d − b c . \det(A)=ad-bc.\,

    ৩x৩ ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়কসমূহ

    এই প্যারালালপিপেডটির আয়তন হল r1, r2, ও r3 সারির মেট্রিক্সের নির্ণায়কটির পূর্ণমান

    The 3×3 matrix: A = [ a b c d e f g h i ] . A=\begin{bmatrix}a&b&c\\
d&e&f\\g&h&i\end{bmatrix}.

    ম্যাট্রিক্সটির প্রথম সারিতে cofactor expansion ব্যবহার করে আমরা পাই: det ( A ) = a | e f h i | − b | d f g i | + c | d e g h | = a e i − a f h − b d i + c d h + b f g − c e g = ( a e i + b f g + c d h ) − ( g e c + h f a + i d b ) , \begin{align}
\det(A) &= a\begin{vmatrix}e&f\\h&i\end{vmatrix}
-b\begin{vmatrix}d&f\\g&i\end{vmatrix}
+c\begin{vmatrix}d&e\\g&h\end{vmatrix} \\
&= aei-afh-bdi+cdh+bfg-ceg \\
&= (aei+bfg+cdh)-(gec+hfa+idb),
\end{align}

    ৩x৩ মেট্রিক্সের নির্ণায়ক কোনাকুনি রেখা দিয়ে হিসাব করা যাবে

    একে সহজভাবে মনে রাখা যাবে এভাবে, এটি হলো উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বরাবর তিনটি কোণাকুণি রেখার উপাদানগুলোর গুণফলের সমষ্টি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে তিনটি রেখার উপাদানের সমষ্টির বিয়োগফলের সমান যখন ম্যাট্রিক্সের প্রথম দুটি কলামের কপি নিম্নোক্ত উপায়ে লেখা হয় a b c a b d e f d e g h i g h − a b c a b d e f d e g h i g h 
\begin{matrix}
\color{blue}a & \color{blue}b & \color{blue}c & a & b \\
d & \color{blue}e & \color{blue}f & \color{blue}d & e \\
g & h & \color{blue}i & \color{blue}g & \color{blue}h
\end{matrix}
\quad - \quad
\begin{matrix}
a & b & \color{red}c & \color{red}a & \color{red}b \\
d & \color{red}e & \color{red}f & \color{red}d & e \\
\color{red}g & \color{red}h & \color{red}i & g & h
\end{matrix}

    উল্লেখ্য যে, এই মনে রাখার রাখার পদ্ধতিটি উচ্চতর মাত্রার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

    উদাহরণ

    ধরা যাক, আমরা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্ণায়কের মান নির্ণয় করতে চাই A = [ − 2 2 − 3 − 1 1 3 2 0 − 1 ] . A = \begin{bmatrix}-2&2&-3\\
-1& 1& 3\\
2 &0 &-1\end{bmatrix}.

    সরাসরি লাইবনিৎসের সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া যাবে:

    det ( A ) \det(A)\,= =\,( − 2 ⋅ 1 ⋅ − 1 ) + ( − 3 ⋅ − 1 ⋅ 0 ) + ( 2 ⋅ 3 ⋅ 2 ) (-2\cdot 1 \cdot -1) + (-3\cdot -1 \cdot 0) + (2\cdot 3\cdot 2)
    − ( − 3 ⋅ 1 ⋅ 2 ) − ( − 2 ⋅ 3 ⋅ 0 ) − ( 2 ⋅ − 1 ⋅ − 1 ) - (-3\cdot 1 \cdot 2) - (-2\cdot 3 \cdot 0) - (2\cdot -1 \cdot -1)
    = =\,2 + 0 + 12 − ( − 6 ) − 0 − 2 = 18. 2 + 0 + 12 - (-6) - 0 - 2 = 18.\,

    এছাড়াও আমরা লাপ্লাস বিস্তার ব্যবহার করে নির্ণায়ককে কলাম ও সারির মাধ্যমে বর্ধিত করতে পারি। শূন্য আছে এমন একটি সারি বা কলাম ব্যবহার করা ভালো, তাই দ্বিতীয় কলামটি নিয়ে পাই:

    det ( A ) \det(A)\,= =\,( − 1 ) 1 + 2 ⋅ 2 ⋅ det [ − 1 3 2 − 1 ] + ( − 1 ) 2 + 2 ⋅ 1 ⋅ det [ − 2 − 3 2 − 1 ] (-1)^{1+2}\cdot 2 \cdot \det \begin{bmatrix}-1&3\\ 2 &-1\end{bmatrix} + (-1)^{2+2}\cdot 1 \cdot \det \begin{bmatrix}-2&-3\\ 2&-1\end{bmatrix}
    = =\,( − 2 ) ⋅ ( ( − 1 ) ⋅ ( − 1 ) − 2 ⋅ 3 ) + 1 ⋅ ( ( − 2 ) ⋅ ( − 1 ) − 2 ⋅ ( − 3 ) ) (-2)\cdot((-1)\cdot(-1)-2\cdot3)+1\cdot((-2)\cdot(-1)-2\cdot(-3))
    = =\,( − 2 ) ( − 5 ) + 8 = 18. (-2)(-5)+8 = 18.\,
    দেগণিত

    বিষয়শ্রেণীসমূহ: