“ব্যাস” এর ইংরেজি প্রতিশব্দ “diameter” এসেছে গ্রিক διάμετρος (diametros) থেকে; এর διά (dia) অর্থ “জুড়ে” বা “দিয়ে” এবং μέτρον (metron) অর্থ “পরিমাপ”।[১] এটি সাধারণত d অথবা ⌀ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আরও দেখুন
বৃত্তের পরিধি (C) কালো , ব্যাস (D)সবজে নীল, ব্যাসার্ধ (R) লাল, এবং কেন্দ্র বা মূল (O) ম্যাজেন্টা
বৃত্তচাপ (প্রতীক: ⌒) হল কোন ব্যবকলনযোগ্যবক্ররেখার একটি আবদ্ধ রেখাংশ। দ্বিমাত্রিক বহুভাঁজে অর্থাৎ সমতলের ক্ষেত্রে কোন বৃত্তের কর্তিত অংশ বৃত্তচাপের একটি সাধারণ উদাহরণ; এক্ষেত্রে একে বৃত্তীয় বৃত্তচাপ বলা হয়। কোন স্থানে কোন বৃত্তচাপ একটি মহাবৃত্ত বা মহা-উপবৃত্তের অংশ হয়ে থাকলে একে মহা বৃত্তচাপ বলা হয়।
একটি বৃত্তের প্রতি জোড়া পৃথক পৃথক (স্বতন্ত্র) বিন্দু দুটি বৃত্তচাপকে নির্দেশ করে। বিন্দু দুটি যদি পরস্পরের সরাসরি বিপরীতে অবস্থান না করে অর্থাৎ ঐ বিন্দু দুটি ও কেন্দ্রের সংযোগ রেখা যদি সরল না হয় তবে এই বৃত্তচাপ দুটির একটি হবে গৌণ বৃত্তচাপ বা উপচাপ যা বৃত্তের কেন্দ্রে π রেডিয়ান অর্থাৎ (১৮০ ডিগ্রি বা দুই সমকোণ) অপেক্ষা ক্ষুদ্র কোণ দখল করবে এবং অপরটি মুখ্য বৃত্তচাপ বা অধিচাপ (জ্যামিতি) যা বৃত্তের কেন্দ্রে π রেডিয়ান অপেক্ষা বৃহৎ কোণ দখল করবে।
বৃত্তীয় বৃত্তচাপ
বৃত্তের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য
ধরাযাক, r ব্যাসার্ধের কোন বৃত্তের একটি বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য L যা বৃত্তের কেন্দ্রে রেডিয়ান এককে θ কোণ উৎপন্ন করেছে অর্থাৎ কেন্দ্রস্থ কোণের মান θ রেডিয়ান।
এখন, আমরা জানি, কোন বৃত্তের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য ও বৃত্তটির পরিধির অনুপাত বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ ও বৃত্তটির পরিধি দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের অনুপাতের সমান। তাহলে আমরা পাব— L c i r c u m f e r e n c e = θ 2 π .
পরিধির মান প্রতিস্থাপন করে— L 2 π r = θ 2 π
or, L = θ r .
এখন ডিগ্রি এককে উক্ত কোণের পরিমাপ α হলে— θ = α π 180
সুতরাং বৃত্তচাপটির দৈর্ঘ্য বা বৃত্তচাপ-দৈর্ঘ্য হবে— L = α π r 180 .
প্রায়োগিক পদ্ধতিতে বৃত্তের বৃত্তচাপ-দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে বৃত্তচাপটির প্রান্তবিন্দুদ্বয় থেকে বৃত্তের কেন্দ্রে দুটি রেখা টানতে হয় এবং রেখাদ্বয় কেন্দ্রে মিলিত হয়ে যে কোণ উৎপন্ন করে তা পরিমাপ করতে হয়। অতঃপর নিম্নোক্ত গাণিতিক নির্বচনটির আড় গুণন থেকে বৃত্তচাপ-দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা হয়: (ডিগ্রি এককে কোণের মান)/৩৬০° = L/পরিধি
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোণের মান 60° এবং পরিধি 24 inche হয় তবে— 60 360 = L 24 360 L = 1440 L = 4.
বৃত্তের পরিধি কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করা তার মান সর্বদা 360° এবং পরিধি ও এই কোণের মান পরস্পরের সমানুপাতিক হওয়ায় এমনটা হয়।
একটি বৃত্তের ঊর্ধ্বস্থ অর্ধাংশের পরামিতি নিম্নরূপে লেখা যায়— y = r 2 − x 2
সুতরাং x = a থেকে x = b সীমায় বৃত্তচাপ-দৈর্ঘ্য হল: L = r [ arcsin ( x r ) ] a b .
বৃত্তচাপের ক্ষেত্রফল
একটি বৃত্তের কোন বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দুদ্বয় থেকে বৃত্তটির কেন্দ্রে দুটি রেখা টানলে যে কর্তিত বা খণ্ডিত অংশটি পরিস্ফুটিত হয় সেই কর্তিত বা খণ্ডিত অংশটিকে সেক্টর বলা হয়। বৃত্তচাপ সেক্টর ক্ষেত্রফল (Arc sector area) বলতে এই খণ্ডাংশটির ক্ষেত্রফলকে বোঝানো হয় যা বাংলাভাষী বিদ্যার্থীদের কাছে বৃত্তচাপের ক্ষেত্রফল হিসেবে পরিচিত ও চর্চিত।
এখন, r ব্যাসার্ধের বৃত্তে কোন বৃত্তচাপ বৃত্তটির কেন্দ্রে θ দখল করলে বৃত্তচাপটির ক্ষেত্রফল অর্থাৎ বৃত্তচাপ সেক্টর ক্ষেত্রফল হবে— A = r 2 θ 2 .
প্রমাণ: আমরা জানি, বৃত্তের কোন সেক্টরের ক্ষেত্রফল A এবং বৃত্তের ক্ষেত্রফলের অনুপাত, সেক্টর কর্তৃক কেন্দ্রে দখলকৃত θ কোণ এবং যে কোন সম্পূর্ণ বৃত্তের কোণের অনুপাতের সমান। সুতরাং— A π r 2 = θ 2 π .
উভয় পক্ষ থেকে π কে বর্জন করলে আমরা পাব— A r 2 = θ 2 .
সবশেষে উভয় পক্ষকে r 2 দ্বারা গুণ করলে সেক্টরের ক্ষেত্রফল হবে— A = 1 2 r 2 θ .
এবং কেন্দ্রস্থ কোণকে ডিগ্রি এককে পরিমাপ করা হলে উপরে বর্ণিত রূপান্তরটি প্রয়োগ করে পাই— সেক্টরের ক্ষেত্রফল: A = α 360 π r 2 .
বৃত্তচাপ সেগমেন্ট ক্ষেত্রফল
বৃত্তচাপ সেগমেন্ট ক্ষেত্রফল (চিত্রে: সবুজ অংশ)
বৃত্তচাপ এবং এর দুইপ্রান্তবিন্দুর সংযোজক রেখার দ্বারা গঠিত কাঠামোর (চিত্রে: সবুজ অংশ) ক্ষেত্রফল: 1 2 r 2 ( θ − sin θ ) .
অর্থাৎ সেক্টরটির ক্ষেত্রফল থেকে এর ত্রিভুজাকার অংশের ক্ষেত্রফল বিয়োগ করলে বৃত্তচাপ সেগমেন্ট ক্ষেত্রফল পাওয়া যাবে। আরও জানতে বৃত্তাকার সেগমেন্ট দেখুন।
বৃত্তচাপের ব্যাসার্ধ
AP এবং PB রেখাংশেরগুণফল CP এবং PD রেখাংশের গুণফলের সমান। যদি বৃত্তচাপের প্রস্থ AB এবং উচ্চতা CPহয় তবে বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে। C D = A P ⋅ P B C P + C P
ধরাযাক, কোন বৃত্তচাপের ব্যাসার্ধ r , উচ্চতা H এবং বেধ W । বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দুদ্বয়কে সংযুক্ত করে একটি জ্যা কল্পনা করা যাক। এই জ্যা এর লম্ব-সমদ্বিখণ্ডক নিজেও একটি জ্যা, যা সংশ্লিষ্ট বৃত্তের একটি ব্যাস। বিবেচনাধীন বৃত্তচাপটির বেধ অর্থাৎ প্রথম জ্যা এর দৈর্ঘ্য W এবং এর প্রত্যেক অর্ধাংশের (যেহেতু প্রথম জ্যাটি লম্ব-সমদ্বিখণ্ডক দ্বারা দ্বিখণ্ডিত) দৈর্ঘ্য W 2 । ব্যাসের মোট দৈর্ঘ্য 2 r এবং এটি প্রথম জ্যা দ্বারা দ্বিখণ্ডিত। দ্বিতীয় জ্যা এর এই খণ্ডদ্বয়ের একটি হবে আলোচনাধীন চাপটির সাজিটা তথা উচ্চতা H এবং অপর অংশের দৈর্ঘ্য হবে ( 2 r − H ) ।
এখন এই দুই জ্যা-এ আন্তঃছেদী জ্যা উপপাদ্য প্রয়োগ করলে আমরা পাই— H ( 2 r − H ) = ( W 2 ) 2 ,
বৃত্ত (ইংরেজি: Circle) হলো ইউক্লিডীয়জ্যামিতি অনুসারে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে থেকে সমান দূরত্বে এবং একই সমতলে অবস্থিত সমস্ত বিন্দুর সংকলন। অর্থাৎ, বৃত্তের পরিধিস্থ সকল বিন্দু কেন্দ্র থেকে একটি দূরত্বে অবস্থিত।অথবা, কোনো সমতলে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুু হতে সমদূরবর্তী সকল বিন্দুুর সেটকে বৃত্ত বলে।
অন্যভাবে বলা যায় যে, বৃত্ত একটি বিশেষ ধরনের উপবৃত্ত, যার উপকেন্দ্রদ্বয় সমবিন্দু। একটি বৃত্তীয় কনিকের অক্ষের সাপেক্ষে লম্ব সমতল কনিকটিকে ছেদ করলে প্রাপ্ত বক্ররেখাটি একটি বৃত্ত হয়।
বৃত্ত একটি আবদ্ধ বক্ররেখা বিধায় যে কোনো বৃত্তীয় স্থানকে অন্তস্থ এবং বহিস্থ এই দুই ভাগে ভাগ করে। এদের মধ্যে অন্তস্থ অঞ্চলটি সসীম এবং বহিস্থ অংশটি অসীম। অন্তস্থ অঞ্চলটি চাকতি হিসেবেও পরিচিত ।
সংজ্ঞাসমূহ
বৃত্তচাপ: বৃত্তের সাথে সংযুক্ত বা এর পরিধির কোনো অংশ।
ব্যাস: একটি কেন্দ্রভেদী রেখাংশ যার শেষবিন্দুদ্বয় বৃত্তের পরিসীমায় অবস্থিত। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যাস এমন একটি রেখাংশের দৈর্ঘ্য যা বৃত্তের কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যকার বৃহত্তম দূরত্ব। এটি একটি বিশেষ ধরনের জ্যা, সবচেয়ে দীর্ঘতম জ্যা এবং এটি ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ। ব্যাস একটি বৃত্তকে সমান দুটি ভাগে বিভক্ত করে যার প্রতিটি অর্ধবৃত্ত।
ব্যাসার্ধ: একটি রেখাংশ যা বৃত্তের কেন্দ্রের সাথে বৃত্তের যে কোনো একটি বিন্দুকে যুক্ত করে। কার্যত যেই রেখাংশ ব্যাসের অর্ধেক তাই ব্যাসার্ধ।
কর্তক: একটি বর্ধিত জ্যা, যা দুটি বিন্দুতে বৃত্তকে ছেদ করে এমন একতলীয় সরলরেখা।
অর্ধবৃত্ত: ব্যাস ও একটি চাপ (যা ব্যাসের শেষ বিন্দুদ্বয়ের সাথে সংযুক্ত) দ্বারা বেষ্টিত অংশ।
স্পর্শক: একটি বৃত্ত বহির্ভূত একতলীয় সরলরেখা যা বৃত্ততে একটি একক বিন্দুতে স্পর্শ করে মাত্র।
লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণ শুরু হওয়ারও আগে থেকে বৃত্ত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল। প্রাকৃতিক বৃত্তগুলো, যেমন: চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়েছিলো। চাকা, যা মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে, তা বৃত্তাকার। চাকার সাথে সম্পর্কিত আরো কিছু আবিষ্কার, যেমন গিয়ার, চাকি প্রভৃতিও বৃত্তাকার। গণিতে বৃত্তের অধ্যয়ন পরবর্তীকালে জ্যামিতি ও ক্যালকুলাসের মত উচ্চতর শাখাগুলোর উন্নয়নে অবদান রেখেছে । প্রারম্ভিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান মধ্যযুগীয় পণ্ডিতদের ঐশ্বরিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো এবং অনেকেই বৃত্তকে “ঐশ্বরিক” বা “নির্ভুল” বলে বিশ্বাস করতো।[১][২]
১৭০০ খ্রিষ্টপূর্ব: মিশরীয় রাইন্ড ম্যাথমেটিক্যাল প্যাপিরাসে (ইংরেজি: Rhind Mathemetical Papyrus) বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় একটি পদ্ধতি লিপিবদ্ধ হয় । এতে ২৫৬/৮১(৩.১৬০৪৯….)কে π এর আনুমানিক মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩]
৩০০ খ্রি. পূ:- ইউক্লিডের এলিমেন্টসের তৃতীয় গ্রন্থে বৃত্তের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
প্লেটোর “সপ্তম পত্রে” বৃত্তের বিস্তারিত সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা আছে। প্লেটো একটি নিখুঁত বৃত্ত ব্যাখ্যা করেছেন এবং কীভাবে এটি কোনো অঙ্কন, শব্দ, সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা থেকে ভিন্ন তা ব্যাখ্যা করেছে।
১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দ: লিন্ডেমান প্রমাণ করেন যে π একটি অতীন্দ্রিয় বা অপ্রত্যক্ষ সংখ্যা। এর ফলে হাজার বছর ধরে চলে আসা বৃত্তকে বর্গ রূপান্তরের সমস্যাটির সুরাহা ঘটে।[৪]
বিশ্লেষণী ফলাফল সমূহ
পরিধির দৈর্ঘ্য
প্রমাণ করা যায় যে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত হলো একটি ধ্রুবক সংখ্যা। একে গ্রিক শব্দ π (পাই) বলা হয়। π একটি অমূলদ সংখ্যা ও এটি ট্রান্সেনডেন্টাল সংখ্যা। অর্থাৎ একে কখনোই কোনো বীজগাণিতিক সমীকরণের মূলরূপে প্রকাশ করা যাবে না। সমতলে অবস্থিত বৃত্তের ক্ষেত্রে এর মান প্রায় ৩.১৪১৫৯২৬৫৪। পরিধির দৈর্ঘ্য C, ব্যাসার্ধ r ও ব্যাস d হলে π এর সংজ্ঞানুযায়ী, C = π d = 2 π r .
ক্ষেত্রফল
আর্কিমিডিসের প্রমাণ অনুসারে, বৃত্তের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল একটি ত্রিভুজের সমান, যার ভূমি বৃত্তের পরিধি ও উচ্চতা বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান হবে।[৫] অর্থাৎ, π এর সাথে ব্যাসার্ধের বর্গের গুণফলই বৃত্তের ক্ষেত্রফল: A r e a = π r 2 .
ব্যাস d দ্বারা প্রকাশ করলে: A r e a = π d 2 4 ≈ 0 . 7854 d 2 ,
অন্যভাবে যদি চিন্তা করা হয়, তবে বৃত্তের পরিধিকে n সংখ্যক ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে যদি n খুব বড় হয়, তবে প্রতিটি চাপকেই একটি ক্ষুদ্র রেখাংশ বিবেচনা করা যায়। পরিধি C হলে এই ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যটি C/n. এখন, এই ক্ষুদ্র রেখাগুলোর প্রান্ত কেন্দ্রের সাথে যোগ করলে উৎপন্ন প্রতিটি ত্রিভুজের বেলায় ভূমি C/n হলে লম্ব ব্যাসার্ধের সমান। কাজেই প্রতিটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল Cr/(2n), এখন তাহলে বৃত্তের ক্ষেত্রফল হবে n সংখ্যক ক্ষুদ্র ত্রিভুজগুলোর সমষ্টি। অর্থাৎ, ক্ষেত্রফল=½Crn/n=½Cr. কলনবিদ্যাও একই ফলাফল দেয়।
x–yকার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায়, (a, b) কেন্দ্র এবং r ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট বৃত্তের সমীকরণ হল : ( x − a ) 2 + ( y − b ) 2 = r 2 .
এই সমীকরণটি “বৃত্তীয় সমীকরণ” নামেও পরিচিত।
বৃত্তস্থঃ যেকোন বিন্দুর উপর পিথাগোরাসের উপপাদ্য প্রয়োগ করে বৃত্তের এই সমীকরণটি পাওয়া যায় । মূলবিন্দুতে কেন্দ্র হলে সমীকরণটি দাঁড়ায় : x 2 + y 2 = r 2 .
পরামিতিক সমীকরণে রূপান্তর করা হলে : x = a + r cos t , y = b + r sin t
যখন t, 0 থেকে 2π পরিসরের স্থিতিমাপে পরিবর্তনশীল, তখন জ্যামিতিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী (a,b) ও (x,y) দ্বারা উৎপন্ন কোণটি X-অক্ষ তৈরি করে। বৃত্তের একটি বিকল্প স্থিতিমাপক হল:বন x = a + r 1 − t 2 1 + t 2 y = b + r 2 t 1 + t 2 .
এই স্থিতিমাপকে t ও r এর আনুপাতিক সম্পর্ককে জ্যামিতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় বৃত্তের ত্রিমাত্রিক রেখাচিত্রের মাধ্যমে, যা X-অক্ষ বরাবর কেন্দ্রের সমান্তরালে একটি রেখাংশে অবস্থিত।
সজাতিক স্থানাঙ্কে প্রতিটি কৌণিক ধারা বৃত্তের সমীকরণ দ্বারা প্রকাশিত হয়ঃ a x 2 + a y 2 + 2 b 1 x z + 2 b 2 y z + c z 2 = 0.
এটি প্রমাণ করা যায় যে, কৌণিক একটি বৃত্ত ঠিক যখন কৌণিক্টির মধ্যে I(1: i: 0) এবং J(1: −i: 0) বিন্দু দুটি বিদ্যমান থাকে। এই বিন্দুগুলোকে অসীম বৃত্তাকার বিন্দু বলা হয়।
বৃত্তের সমীকরণঃ
পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায়, বৃত্তের সমীকরণ হলো: r 2 − 2 r r 0 cos ( θ − ϕ ) + r 0 2 = a 2
এখানে a হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ, ( r , θ ) বৃত্তের একটি সাধারণ বিন্দুর পোলার স্থানাঙ্ক, ( r 0 , ϕ ) বৃত্তের কেন্দ্রের পোলার স্থানাঙ্ক (r0 হলো মূলবিন্দু থেকে বৃত্তের কেন্দ্রের দূরত্ব এবং φ হলো বামাবর্তে উৎপন্ন কোণ, যা X-অক্ষের ধনাত্মক প্রান্ত থেকে মূলবিন্দু ও কেন্দ্রের সংযোজক সরলরেখার মাঝে অবস্থিত)। মূলবিন্দুকেন্দ্রিক একটি বৃত্তের জন্য r0 = 0, ফলে r = a। যখন r0 = a বা মূলবিন্দু ও কেন্দ্র যখন একই বিন্দু হয় তখন সমীকরণটি: r = 2 a cos ( θ − ϕ ) .
সাধারণত, সমীকরণটি r এর জন্য সমাধান করা যায়: r = r 0 cos ( θ − ϕ ) + a 2 − r 0 2 sin 2 ( θ − ϕ ) ,
বর্গমূল চিহ্নের আগে ঋণাত্মক চিহ্ন (-) থাকলে, তাও এই সমীকরণ দ্বারা একই সমাধান দিবে।
জটিল তল
জটিল তল ব্যবস্থায়, c কেন্দ্র ও r ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট বৃত্তের সমীকরণ হলোঃ | z − c | = r
স্থিতিমাপক রূপে একে প্রকাশ করা যায়ঃ z = r e i t + c
সামান্য সরলভাবে সমীকরণটিঃ p z z ¯ + g z + g z ¯ = q বাস্তব সংখ্যা p,q ও জটিল সংখ্যা g এর জন্য এটিকে “সাধারণীকরণ বৃত্ত” ও বলা হয়। এই মানগুলোর জন্য উপর্যুক্ত সমীকরণটিকে লেখা যায়ঃ p = 1 , g = − c ¯ , q = r 2 − | c | 2 , যেন | z − c | 2 = z z ¯ − c ¯ z − c z ¯ + c c ¯
সকল সাধারণীকরণ বৃত্তই প্রকৃত বৃত্ত নয়; হয় সেগুলি স্বাভাবিক বৃত্ত, নয় তো সরলরেখা।
বৈশিষ্ট্য
বৃত্ত হল নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে আবদ্ধ বৃহত্তম ক্ষেত্রফল।
বৃত্ত বিশেষ ধরনের প্রতিসাম্যের অধিকারী একটি আকৃতি। কেন্দ্রভেদী যে কোন রেখাই প্রতিফলন প্রতিসম অক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং কেন্দ্রের সাপেক্ষে যে কোন কোনে ঘূর্ণন প্রতিসাম্য তৈরি হয় ।
প্রতিটি বৃত্তের আকৃতি অভিন্ন ।
বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রূব সংখ্যা, একে π দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায় মূলবিন্দুতে কেন্দ্র বিশিষ্ট একক ব্যাসার্ধের বৃত্তকে বলা হয় একক বৃত্ত ।
যে কোন তিনটি বিন্দুগামী, যারা অসমরেখ, একটি এবং কেবলমাত্র একটি বৃত্ত রয়েছে ।
বক্রতার ব্যাসার্ধRবক্রতার বিপরীত (reciprocal) রাশি। একটি বক্ররেখার কোন বিন্দুতে বক্রতার ব্যাসার্ধ হল ঐ বিন্দুর চুম্বনকারী বৃত্ত বা আপতিত বৃত্তের (Osculating cirle) ব্যাসার্ধ।[১] প্রকৃতপক্ষে কোন বিন্দুতে বক্রতার ব্যাসার্ধ চুম্বনকারী বৃত্তের ব্যাসার্ধের পুরোপুরি সমান না হয়ে খুবই কাছাকাছি মানের হয়ে থাকে। তাই বলা যায়, একটি বক্ররেখার কোন বিন্দুতে সর্বাধিক নিখুঁত বা কাছাকাছি মানের যে বৃত্ত আঁকা যায় সেই বৃত্তের যে ব্যাসার্ধ, সেটিই ঐ বিন্দুতে বক্ররেখাটির বক্রতার ব্যাসার্ধ। অন্যভাবে, একটি বক্ররেখার কোন বিন্দুতে বক্রতার ব্যাসার্ধ ঐ বিন্দুতে বক্ররেখাটির বক্রতার সর্বোচ্চ সন্নিকটবর্তী বৃত্তচাপটির ব্যাসার্ধের সমান। একইভাবে, পৃষ্ঠতলের বক্রতার ব্যাসার্ধ পৃষ্ঠতলটির সাধারণ ছেদক বা ছেদকসমূহের সাথে যে বৃত্তটি সর্বোচ্চ পরিমাণে মিলে যায় সেই বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান।[২][৩][৪] (একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একটি পৃষ্ঠতলের সাধারণ ছেদক হচ্ছে ঐ পৃষ্ঠতলের সাথে একটি সাধারণ তলের পারস্পরিক ছেদের ফলে উৎপন্ন বক্ররেখা[৫][৬][৭])। বক্ররেখা বরাবর এগোতে থাকলে বক্রতার ব্যাসার্ধের পরিবর্তন হতে থাকবে।
সংজ্ঞা
স্থানিক বক্ররেখার ক্ষেত্রে বক্রতা ভেক্টরের (curvature vector) দৈর্ঘ্যই বক্রতার ব্যাসার্ধ। সমতলিক বক্ররেখার ক্ষেত্রে বক্রতার ব্যাসার্ধ R হল নিম্নোক্ত রাশির পরম মান[৪]— R ≡ | d s d φ | = 1 κ ,
কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় বক্ররেখাকে y(x) আকারে লেখা হলে বক্রতার ব্যাসার্ধ (বক্ররেখাকে দুবার পর্যন্ত ব্যবকলনযোগ্য ধরে):— R = | ( 1 + y ′ 2 ) 3 2 y ″ | , where y ′ = d y d x , y ″ = d 2 y d x 2 ,
এবং | z | হল zএর পরম মান। বক্ররেখাটিকে x(t) এবং y(t) এর মাধ্যমে পরামিতিকরণ করা হলে বক্রতার ব্যাসার্ধ:— R = | d s d φ | = | ( x ˙ 2 + y ˙ 2 ) 3 2 x ˙ y ¨ − y ˙ x ¨ | , where x ˙ = d x d t , x ¨ = d 2 x d t 2 , y ˙ = d y d t , y ¨ = d 2 y d t 2 .
পরীক্ষণ ও ভুলকরণ পদ্ধতিতে(Heuristically) একে নিম্নরূপে লেখা যায়[৩]:— R = | v | 3 | v × v ˙ | , where | v | = | ( x ˙ , y ˙ ) | = R d φ d t .
বিশেষ ক্ষেত্রে f(t), ℝ থেকে ℝ-এ কোন ফাংশন হলে এবং এর লেখচিত্র γ(t) = (t, f(t)) হলে লেখচিত্রটির বক্রতার ব্যাসার্ধ:— ρ ( t ) = | 1 + f ′ 2 ( t ) | 3 2 | f ″ ( t ) |
প্রতিপাদন
γ কে উপরের ন্যায় এবং t কে নির্দিষ্ট ধরা যাক। পরামিতিকৃত একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ ρ নির্ণয় করতে হবে যা t-তে γ এর শূন্যতম, প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তরজের সদৃশ হবে। স্পষ্টতই নির্ণেয় ব্যাসার্ধ অবস্থান γ(t) এর উপর নির্ভরশীল নয়, এটি শুধু বেগ γ′(t) এবং ত্বরণ γ″(t) এর উপর নির্ভরশীল হবে। v এবং w ভেক্টর দুটি থেকে শুধু তিনটি স্বাধীন স্কেলার ভেক্টর পাওয় যায়। যথা:- v · v, v · w, and w · w। একইভাবে বক্রতার ব্যাসার্ধকে অবশ্যই | γ′(t) |2, | γ″(t) |2 এবং γ′(t) · γ″(t) এই তিনটি স্কেলাররের ফাংশন হতে হবে।[৪]
ℝn-এ পরামিতিকৃত কোন বৃত্তের জন্য সাধারণ সমীকরণটি হল— g ( u ) = a cos h ( u ) + b sin h ( u ) + c
যেখানে c ∈ ℝn হচ্ছে বৃত্তটির কেন্দ্র (অন্তরজে এটি দৃশ্যমান না হওয়ায় অপ্রাসঙ্গিক)। a,b ∈ ℝn হচ্ছে দৈর্ঘ্য ρ এর লম্ব ভেক্টর ( a · a = b · b = ρ2 ও a · b = 0) এবং h : ℝ → ℝ হচ্ছে t-তে দুবার ব্যবকলনযোগ্য একটি অবাধ (arbitrary) ফাংশন।
g সংশ্লিষ্ট অন্তরজসমূহকে নিম্নরূপভাবে পাওয়া যাবে— | g ′ | 2 = ρ 2 ( h ′ ) 2 g ′ ⋅ g ″ = ρ 2 h ′ h ″ | g ″ | 2 = ρ 2 ( ( h ′ ) 4 + ( h ″ ) 2 )
g এর অন্তরজগুলোকে t-তে γ এর অনুরূপ অন্তরজগুলোর সমান ধরে পাই— | γ ′ ( t ) | 2 = ρ 2 h ′ 2 ( t ) γ ′ ( t ) ⋅ γ ″ ( t ) = ρ 2 h ′ ( t ) h ″ ( t ) | γ ″ ( t ) | 2 = ρ 2 ( h ′ 4 ( t ) + h ″ 2 ( t ) )
ρ, h′(t) এবং h″(t) অজানা রাশিযুক্ত এই সমীকরণত্রয়কে ρ এর জন্য সমাধান করা যেতে পারে এবং বক্রতার ব্যাসার্ধের নিম্নোক্ত সূত্র পাওয়া যেতে পারে:— ρ ( t ) = | γ ′ ( t ) | 3 | γ ′ ( t ) | 2 | γ ″ ( t ) | 2 − ( γ ′ ( t ) ⋅ γ ″ ( t ) ) 2
অর্ধ-তল হচ্ছে অসীম দৈর্ঘ্যের একটি সরলরেখার যেকোন এক পাশের সমস্ত বিন্দু নিয়ে (রেখার অপর পাশের বিন্দুগুলো অবশ্যই বর্জনীয়) কল্পিত একটি সমতলীয় অঞ্চল। সহজভাবে বলা যায়, কোন সমতলের উপর অসীম দৈর্ঘ্যের একটি রেখা আঁকা হলে রেখাটির যেকোন এক পাশে সমতলটির যে খণ্ডিত অংশ পাওয়া যাবে তাই অর্ধ-তল। রেখাস্থ বিন্দুসমূহকে অর্ধ-তলটির অন্তর্ভুক্ত করা হলে একে বদ্ধ অর্ধ-তল এবং রেখাস্থ বিন্দুসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে একে খোলা অর্ধ-তল বলা হয়।[৮][৯]
ঊর্ধ্বস্থ অর্ধ-তলে a ব্যাসার্ধের অর্ধ-বৃত্তের জন্য— y = a 2 − x 2 , y ′ = − x a 2 − x 2 , y ″ = − a 2 ( a 2 − x 2 ) 3 2 , R = | − a | = a
এবং নিম্নস্থ অর্ধ-তলে a ব্যাসার্ধের অর্ধ-বৃত্তের জন্য— y = − a 2 − x 2 , R = | a | = a
এখন a ব্যাসার্ধের বৃত্তের যে বক্রতার ব্যাসার্ধ পাব তা হবে a এর সমান।
উপবৃত্ত
a বৃহৎ অক্ষ এবং b ক্ষুদ্র অক্ষযুক্ত উপবৃত্ত।
লাল রঙের চার কোণাকার ডায়াগ্রামটি নীল রঙের উপবৃত্তের ইভলিউট
2a বৃহৎ অক্ষ ও 2b ক্ষুদ্র অক্ষযুক্ত উপবৃত্তের বৃহৎ অক্ষের শীর্ষ বিন্দু দুটিতে বক্রতার ব্যাসার্ধ ক্ষুদ্রতম হবে (R = b2/a) পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র অক্ষের শীর্ষ বিন্দু দুটিতে বক্রতার ব্যাসার্ধ হবে সর্বোচ্চ (R = a2/b)।
বক্ররেখা বরাবর এগোতে থাকলে বক্রতার ব্যাসার্ধ তথা বক্রতার কেন্দ্রের অবস্থানের পরিবর্তন হতে থাকে। একটি বক্ররেখার বক্রতার কেন্দ্রগুলোর জন্য যে লোকাস পাওয়া যায় তা বক্ররেখাটির ইভলিউট গঠন করে।
সংক্ষেপে, প্রিজম হলো এমন একটি ত্রিমাত্রিক আকৃতি যার অন্তত ২টি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত আছে এবং সমস্ত প্রান্তগুলি সমতল।
যদি দুটি ত্রিভুজাকৃতি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত থাকে এবং সমস্ত প্রান্তগুলি সমতল হয়
তাকে ত্রিভুজাকৃতি প্রিজম বলে। আর যদি দুটি বর্গাকৃতি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত, চারটি আয়তকার অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত এবং সমস্ত প্রান্তগুলো সমতল থাকে তাকে আয়তকার প্রিজম বলে।
বিস্তৃতভাবে, যে ঘনবস্তুর দুই প্রান্ত সর্বসম ও সমান্তরাল বহুভুজ দ্বারা আবদ্ধ এবং অন্যান্য তলগুলো সামান্তরিকক্ষেত্র, তাকে প্রিজম (Prism) বলে। প্রিজমের এই সর্বসম ও সমান্তরাল প্রান্তদ্বয়কে প্রিজমের ভুমি (Base) এবং অন্যান্য তলগুলোকে পার্শ্বতল (Faces) বলা হয়। প্রিজমের দুইটি তল অর্থাৎ একটি ভূমি ও একটি পার্শ্বতল অথবা দুইটি পার্শ্বতল পরস্পর যে রেখায় মিলিত হয় তাকে প্রিজমের একটি ধার (Edge) বলে। প্রিজমের তিনটি ধার পরস্পর যে বিন্দুতে মিলিত হয় তাকে শীর্ষবিন্দু (Vertex/Vertices) বলে।
আবার, যে প্রিজমের সবগুলো পার্শ্বতলই আয়তক্ষেত্র, তাকে খাড়া বা সমপ্রিজম (Right Prism) বলে এবং অন্য ক্ষেত্রে প্রিজমকে তীর্যক প্রিজম (Oblique Prism) বলে। বাস্তব ক্ষেত্রে লম্বপ্রিজমই বেশি ব্যবহার করা হয়।
প্রিজম সম্পর্কিত কতিপয় সূত্রাবলি
সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল
প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল (Surface area) হলো এর ভূমিদ্বয় ও পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি। এখানে উল্লেখ্য, ভূমিদ্বয় সর্বসম হওয়ায় একটি ভূমির ক্ষেত্রফলকে ২ দ্বারা গুণ কতলেই এদের সমষ্টি পাওয়া যায়। এর সাথে পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি যোগ করলেই প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। আবার ভুমিদ্বয় সমান্তরাল হওয়ায় এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব অর্থাৎ পার্শ্বতলগুলোর দৈর্ঘ্য তথা প্রিজমের উচ্চতা সব সময় সমান। ফলে ভূমির পরিসীমাকে উচ্চতা দ্বারা গুণ করলেই পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি পাওয়া যায়।
প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফলকে A দ্বারা, ভূমির ক্ষেত্রফলকে B বা AB দ্বারা, ভূমির পরিসীমাকে P এবং ভূমিদ্বয়ের মধ্যবর্তী লম্ব দূরত্ব তথা উচ্চতাকে h দ্বারা প্রকাশ করলে,
A = 2 B + P h
প্রিজমের আয়তন
যেকোনো প্রিজমের আয়তন হলো তার ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতা তথা ভূমিদ্বয়ের মধ্যবর্তী লম্বদূরত্বের গুণফল।
প্রিজমের আয়তন = ভুমির ক্ষেত্রফল × উচ্চতা
প্রিজমের আয়তনকে V দ্বারা, ভূমির ক্ষেত্রফলকে B বা AB দ্বারা এবং উচ্চতাকে h দ্বারা প্রকাশ করলে,
V = B h
আরও কিছু সাধারণ সূত্রাবলি
যেকোনো n-ভূজাকৃতি প্রিজমের ক্ষেত্রে,
i. প্রিজমের তল সংখ্যা (ভূমিসহ) = 2 + n
ii. প্রিজমের শীর্ষবিন্দু সংখ্যা = 2 n
iii. প্রিজমের ধার সংখ্যা = 3 n
যেখানে, n হলো প্রিজমটির ভূমির বাহু সংখ্যা।
প্রিজমের নামকরণ
যেকোনো প্রিজমের ভুমির বাহুর সম সংখ্যক পার্শ্বতল থাকে। প্রিজমের ভুমির নামানুসারে প্রিজমের নাম করণ করা হয়। অর্থাৎ n সংখ্যক বাহু বা ভুজ বিশিষ্ট প্রিজমের নাম হবে, n-ভুজাকার প্রিজম বা n-ভুজাকৃতি প্রিজম (ইংরেজিতে n-gonal Prism)। যেমনঃ ত্রিভুজাকার প্রিজম (Triangular Prism), চতুর্ভুজাকার প্রিজম, পঞ্চভুজাকৃতি প্রিজম (Pentagonal Prism), ষড়ভুজাকৃতি প্রিজম (Hexagonal Prism) ইত্যাদি।
বর্ণনা
সবচেয়ে কম তল সমন্বিত লম্ব প্রিজমের ভুমিদ্বয় ত্রিকোণাকৃতি। অনেক সময় প্রিজম বলতে এরকম ত্রিকোণাকার লম্ব প্রিজম আকৃতির স্বচ্ছ বস্তু বোঝানো হয়, যা আলোকবিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত -এর উপর নিবন্ধের জন্য দেখুন প্রিজম (আলোকবিজ্ঞান)। প্রিজম হল বহুভুজ প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট সরল দণ্ড- পদার্থবিজ্ঞানে প্রিজম সাধারণতঃ প্রস্থের থেকে দৈর্ঘ্যে অনেক লম্বা- এর দুই প্রান্তের বিশেষ প্রয়োজন হয় না, তবে জ্যামিতিক ভাবে প্রিজম হতে হলে এই দণ্ডের প্রান্তদ্বয় হতে হবে সমান্তরাল। প্রিজমের পার্শ্বতলগুলির আকার সামন্তরিক, যা লম্ব-প্রিজমের ক্ষেত্রে আয়তক্ষেত্র। প্রিজমের প্রস্থচ্ছেদের আকৃতি তার ভুমি বা প্রান্তদ্বয়ের ন্যায় বহুভুজ। ত্রিকোণাকৃতির প্রিজমকে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রিজম বলে অভিহিত করলেও তার থেকে অনেক বেশি পরিচিত আরেকটি আকৃতির প্রিজম আমাদের চারিদিকে বিদ্যমান যার প্রস্থচ্ছেদ আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্রাকার। প্রায় সবরকম বাক্স, ইঁট, বই, ইত্যাদি এই আকৃতির। এবং এর প্রান্তদ্বয় বর্গক্ষেত্রাকার ও পার্শ্বতলগুলিও বর্গক্ষেত্রাকার হলে তা হল একটি ঘনক। প্রিজমের প্রান্তের বহুভুজের বাহুসংখ্যা বাড়িয়ে অসীম করলে প্রান্তের আকৃতি হবে বৃত্তাকার এবং সেক্ষেত্রে প্রিজমটি হয়ে যাবে চোঙা (cylinder) আকৃতির।
গণিতে, প্যাস্কেলের ত্রিভুজ-এর গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বিপদী উপপাদ্য, ২ এর ঘাত যোগফলের অনুক্রম সহ বিভিন্ন গাণিতিক ধারার অভিব্যক্তি প্রকাশে সহায়তা করে। ফ্রান্স-এর গণিতবিদ, ব্লেইজ প্যাস্কেল-এর নাম অনুসারে এই ধারার নামকরণ করা হয়েছে।
প্রথমে, ধারাটির প্রথম লাইন ০-১-০ দিয়ে শুরু হয়। এর ঠিক নিচে পরের লাইটিতে, ০ দিয়ে ধারাটি শুরু হয়, যার পরবর্তী সংখ্যাটি প্রথম দুই পদের যোগফল, ০+১=১, এবং পরের পদটি শেষের দুই পদের যোগফল, ১+০=১; এবং শেষ পদটি ০ হয়। ফলে দ্বিতীয় লাইনটির হয়, ০-১-১-০। তৃতীয় লাইনের ক্ষেত্রে, প্রথম পদটি, দ্বিতীয় লাইনের প্রথম ও দ্বিতীয় পদের যোগফল ০+১=১, দ্বিতীয় পদটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদের যোগফল ১+১=২, তৃতীয় পদটি তৃতীয় ও চতুর্থ পদের যোগফল ১+০=১; এবং শেষ পদটি ০ হয়, এবং লাইনটি হয় ০-১-২-১-০। এই ক্রম অনুসারে পরবর্তী লাইন গুলো চলতে থাকে।
প্যাস্কেলের ত্রিভুজে, উপর্যুক্ত সারির দুটি সংখ্যার যোগফলে অনুগামী সারির সংখ্যাগুলো নির্ণয় করা হয় এবং প্রথম পদ শূণ্য, পরের পদটি এক; এবং শেষ পদ শূণ্য ও তার আগের পদটি এক হয়।
পরিসীমা (পরিসীমা, ইংরাজী: ‘perimeter’) মানে হল দুই মাত্রা বা পরিসরের একটি আকৃতির চারপাশের পথের মোট দৈর্ঘ্য। বৃত্তের ক্ষেত্রে এই পরিসীমাকে পরিধি বলা হয়। বৃত্তের পরিধির সূত্র = 2πrর। বাস্তবক্ষেত্রে গণিতের এই পরিসীমা নির্ণয় ব্যবস্থাটির যথেষ্ট প্রয়োগ দেখা যায়। একটি খেলার মাঠের পরিসীমা নির্ণয় করে মাঠের চারিদিকে দেয়া ফেন্সিঙের মোট দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায় এবং সেই অনুপাতে ফেন্সিং কেনার খরচের হিসাব করা যায়।
যেখানে a i হল i -th nটি বাহু যুক্ত বহুভুজের (1st, 2nd, 3rd … nth) বাহুর দৈর্ঘ্য
cardoid γ : [ 0 , 2 π ] → R 2 (drawing with a = 1 ) x ( t ) = 2 a cos ( t ) ( 1 + cos ( t ) ) y ( t ) = 2 a sin ( t ) ( 1 + cos ( t ) ) L = ∫ 0 2 π x ′ ( t ) 2 + y ′ ( t ) 2 d t = 16 a
পরিসীমা হল একটি আকৃতির চারদিকের মোট দৈর্ঘ্য। সাধারণ আকৃতিগুলি বাদেও অন্যান্য আকৃতিগুলির পরিসীমা গণনা করতে এই সূত্র প্রয়োগ করা যায় — ∫ 0 L d s , যেখানে L হল পথটির দৈর্ঘ্য এবং d s হল একটি অবিচ্ছিন্ন রেখার অংশ। এতে এই দুটিকে ব্যবহারিক রূপে গণনা করা থেকে বীজগণিতীয় রাশিতে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এখন, যদি রেখাটি বক্র আকৃতির γ : [ a , b ] → R 2 with γ ( t ) = ( x ( t ) y ( t ) )
এবং দৈর্ঘ্য L কে নিচে দেয়া ধরনে নির্ণয় করা হয় — L = ∫ a b x ′ ( t ) 2 + y ′ ( t ) 2 d t
বৃত্তের পরিধি
If the diameter of a circle is 1, its circumference equals π.
বৃত্তের পরিসীমাকে সাধারণত পরিধি বলা হয়। এর ব্যাস ও ব্যাসার্ধ পরিধির সমানুপাতিক। এই ক্ষেত্রে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের জন্য একটি ধ্রুবক সংখ্যা ‘π'(পাই) ব্যবহার করা হয়। যখন ‘P’ মানে পরিধি বা পরিসীমা এবং ‘D’ বৃত্তের ব্যাস হয় তখন — : P = π ⋅ D . যদি ‘r’ অর্থাৎ বৃত্তের ব্যাসার্ধ দিয়া থাকে তখন সূত্রটি এমন ধরনের হয়- P = 2 π ⋅ r . বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের জন্য বৃত্তটির ব্যাস, ব্যাসার্ধ এবং পাই-এর মানের বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেই যথেষ্ট। অবশ্য অসুবিধা এখানেই যে, পাই কোনো পরিমেয় সংখ্যা নয়, তাই পরিধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এর একটি সঠিক মান গ্রহণ করা অতি আবশ্যক।
পরাবৃত্ত বা প্যারাবোলা (ইংরেজি: Parabola, গ্রিক: παραβολή) একধরনের কণিক যেখানে উৎকেন্দ্রীকতা (e) এর মান ১
আকৃতি
প্যারাবোলা একটি দ্বিমাত্রিক দ্বিপ্রতিসাম্য বক্ররেখা যা ইংরেজিরইউ(U) আকৃতির। প্যারাবোলা হল উপকেন্দ্র এবং দিকাক্ষ(নিয়ামক) হতে সমদূরবর্তী বিন্দুসমূহের সঞ্চারপথ।
বিভিন্ন অংশ
প্যারাবোলার একটি নির্দিষ্ট বিন্দু এবং একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা হতে সমদূরবর্তী বিন্দু সমুহের সঞ্চারপথ। নির্দিষ্ট বিন্দুকেউপকেন্দ্র এবং নির্দিষ্ট রেখাটিকেদিকাক্ষরেখা বা নিয়ামকরেখা বলা হয়। উপকেন্দ্র দিকাক্ষ রেখার উপর অবস্থিত নয় এমন যেকোন বিন্দু। দিকাক্ষরেখার উপর লম্ব এবং উপকেন্দ্রগামী রেখাকে অক্ষরেখা বলা হয়। পরাবৃত্তকে অক্ষরেখা সমান দুই ভাগে ভাগ করে। পরাবৃত্ত ও অক্ষরেখার ছেদবিন্দুকে শীর্ষ বিন্দু নামে আখ্যায়িত করা হয়। উপকেন্দ্রিক লম্ব পরাবৃত্তের একটি জ্যা যা উপকেন্দ্র দিয়ে গমনকরে।
জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মেনাইকুমস (Menaechmus) প্রথম কনিক নিয়ে কাজ করেন। তিনি পরাবৃত্তের মাধ্যমে কনিকের সমস্যার সমাধান করার উপায় বের করেন(যদিও তার পদ্ধতি পরবর্তিতে লক্ষপুরন করতে পারেনি)। খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে আর্কিমিডিস পরাবৃত্ত ও একটি রেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল তার পরিচালনা পদ্ধতির মাধ্যমে নির্নয় করতে সফল হন। পরাবৃত্ত নামকরণ করেন বিখ্যাত জ্যামিতিক অ্যাপলনিয়াস। অ্যপলনিয়াস পরাবৃত্তের অনেক বৈশিষ্ট আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছিলেন ক্ষেত্রফলের ধারনার সাথে এই বক্ররেখার একটি যোগসূত্র রয়েছে।[১] আলেকজেন্দ্রিয়ার বিখ্যাত জ্যামিতিজ্ঞ পাপ্পস উপকেন্দ্র, দিকাক্ষ সহ কনিকের অন্যান্য অংশের নামকরণ করেন।
গ্যালিলিও দেখিয়েছিলেন অভিকর্ষের প্রভাবে ভূপৃষ্টে অনূভুমিক ভাবে নিক্ষিপ্ত একটি বস্তুর সঞ্চারপথ একটি পরাবৃত্ত এবং এর সমীকরন y = a x + b x 2
কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় পরাবৃত্তের সমীকরণ
Conic Sections
দিকাক্ষের সমীকরণx=-a, উপকেন্দ্রের স্থানাংক (a, 0) এবং (x, y) পরাবৃত্তের উপরস্থ একটি বিন্দু। পরাবৃত্তের সঙ্গানুসারে উপকেন্দ্র থেকে পরাবৃত্তের উপর যে কোন বিন্দুর দুরত্ব এবং দিকাক্ষ থেকে একই বিন্দুর লম্ব দুরত্ব সমান। অতএব- | x + a | = ( x − a ) 2 + y 2
সমীকরনের উভয় পক্ষকে বর্গ করলে y 2 = 4 a x
উপরের সমীকরনে x ও y কে পরস্পরের দ্বারা প্রতিস্থাপিত করলে নতুন আরেকটি পরাবৃত্তের সমীকরন পাওয়া যায় যা y অক্ষের সাপেক্ষে প্রতিসাম্য। x 2 = 4 a y
উপর্যুক্ত পরাবৃত্তের শীর্ষ মূল বিন্দু(0,0) তে অবস্থিত। শীর্ষ বিন্দুকে (h, k) বিন্দুতে স্থানান্তরিত করলে পরাবৃত্তের সমীকরন পাওয়া যায়- ( x − h ) 2 = 4 a ( y − k )
সরলিকৃত সমীকরন এর প্রমাণ আকার হিসাবে লেখা যায- y = a x 2 + b x + c
যা গ্যালিলিও এর নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথের সমীকরনের সাথে মিলে যায়।