Category: গাণিতিক যুক্তি

Mathematical logic

  • নিখুঁত ঘনবস্তু

    নিখুঁত ঘনবস্তু(ইংরেজি Perfect cuboid) হল একধরনের অয়লার ইঁট(ইংরেজি Euler brick), যার কর্ণ একটি পূর্ণ সংখ্যা।

    অন্য কথায়, অয়লার ইঁট এ উল্লেখিত ডায়োফন্টাইন সমীকরণ এ নিচের সমীকরণটি যোগ করতে হবে। a 2 + b 2 + c 2 = g 2 {\displaystyle a^{2}+b^{2}+c^{2}=g^{2}}

    নিখুঁত ঘনবস্তু সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্যঃ

    • 2টি ধার অবশ্যই জোড় এবং 1টি অবশ্যই বিজোড়।(primitive নিখুঁত ঘনবস্তুর ক্ষেত্রে)
    • একটি ধার 4 দ্বারা এবং অপর একটি 16 দ্বারা বিভাজ্য।
    • একটি ধার 3 দ্বারা এবং অপর একটি 9 দ্বারা বিভাজ্য।
    • একটি ধার 5 দ্বারা বিভাজ্য।
    • একটি ধার 11 দ্বারা বিভাজ্য।

    ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিখুঁত ঘনবস্তুর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এবং এর অস্তিত্বহীনতার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আধুনিক গণনাযন্ত্র ব্যবহার করে জানা গেছে যে, নিখুঁত ঘনবস্তুর ক্ষুদ্রতম ধারের ন্যূনতম দৈর্ঘ্য 4.3 বিলিয়ন। একটি কর্ণ এবং দুইটি পার্শ্বকর্ণের (তিনটির মধ্যে)ক্ষেত্রে সমাধান পাওয়া গেছে। যেমনঃ (a,b,c) = (672,153,104)

    সবগুলো কর্ণ এবং তিনটির মধ্যে দুইটি ধার এর ক্ষেত্রেও সমাধান পাওয়া গেছে।

  • ত্রিভুজ

    সমতলীয় জ্যামিতির ভাষায় তিনটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ চিত্রকে ত্রিভুজ বলা হয়। এটি একটি বহুভুজ, যার তিনটি ছেদচিহ্ন ও তিনটি প্রান্ত থাকে। দ্বি-মাত্রিক তলে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ° বা দুই সমকোণ। এক সময় কেবল ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতেই ত্রিভুজ নিয়ে আলোচনা করা হত। কিন্তু নিকোলাই লোবাচেভস্কি সহ অন্যান্য জ্যামিতি বিশেষজ্ঞদের অবদানের ফলে অসমতলীয় জ্যামিতিতেও বর্তমানে ত্রিভুজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ধরনের তলে ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ নয়। অথচ ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে এই ধারণাটি।

    ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে, যেকোন তিনটি বিন্দু, যখন অ-সমলাইন, একটি অনন্য ত্রিভুজ এবং একই সাথে একটি অনন্য সমতল (অর্থাৎ একটি দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় স্থান) নির্ধারণ করে। অন্য কথায়, সেই ত্রিভুজটি ধারণ করে শুধুমাত্র একটি সমতল রয়েছে এবং প্রতিটি ত্রিভুজই কোনো না কোনো সমতলে রয়েছে। যদি সমগ্র জ্যামিতিটি শুধুমাত্র ইউক্লিডীয় সমতল হয়, তবে একটি মাত্র সমতল থাকে এবং এতে সমস্ত ত্রিভুজ থাকে; যাইহোক, উচ্চ-মাত্রিক ইউক্লিডীয় স্থানগুলিতে, এটি আর সত্য নয়। এই নিবন্ধটি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির ত্রিভুজ সম্পর্কে, এবং বিশেষ করে, ইউক্লিডীয় সমতল, অন্যথায় উল্লেখ করা ছাড়া।

    প্রকারভেদ

    বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে

    বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকারের হতে পারে। যথা:–

    • সমবাহু ত্রিভুজ – যার তিনটি বাহুরই দৈর্ঘ্য সমান। সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রে প্রতিটি কোণের মান ৬০° হয়।
    • সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ – যার যে-কোন দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের শীর্ষকোণ ৯০° হলে অপর সমান দুইটি বিপরীত কোণ ৪৫° করে হবে। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণ দুটি সমান হয়।
    • বিষমবাহু ত্রিভুজ – যার তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য তিন রকম। বিষমবাহু ত্রিভুজের তিনটি কোণ-ই পরস্পরের সঙ্গে অসমান হয়।

    কোণের ভিত্তিতে

    কোণের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকার হতে পারে –

    • সমকোণী ত্রিভুজ – যার যেকোন একটি কোণ ১ সমকোণ বা ৯০° এর সমান।
    • সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ – যার তিনটি কোণই সূক্ষ্মকোণ।
    • স্থূলকোণী ত্রিভুজ – যার যেকোন একটি কোণ স্থূলকোণ।
    সমবাহুসমদ্বিবাহুবিষমবাহু
    সমকোণীস্থূলকোণীসূক্ষ্মকোণী

    ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপ

    ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপের নানা পদ্ধতি আছে। নিম্নে এরকম কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হল।

    জ্যামিতির মাধ্যমে

    ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল (Area) A পরিমাপের সূত্র হল: A = 1 2 b h {\displaystyle A={\frac {1}{2}}bh}

    যেখানে b হল ত্রিভুজের যে কোন একটি বাহুর দৈর্ঘ্য (ভূমি), h হল উচ্চতা, অর্থাৎ ভূমির বিপরীত শীর্ষবিন্দুর হতে ভূমির উপরে অঙ্কিত লম্ব। নিম্নের ছবিতে এটির ব্যাখ্যা ও উদাহরণ দেখান হলঃ

    The triangle is first transformed into a parallelogram with twice the area of the triangle, then into a rectangle.

    সূত্রটি কীভাবে এসেছে, তা ওপরের ছবি থেকে অনুধাবন করা সম্ভব। সবুজ বর্ণে চিহ্নিত ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য, প্রথমে ত্রিভুজের একটি প্রতিকৃতি (উপরে নীল বর্ণের ত্রিভুজটি) তৈরি করে, সেটিকে 180° ঘুরানো হয়েছে। এর পর ত্রিভুজটি দুটিকে যুক্ত করে একটি সামান্তরিক পাওয়া যায়। সামান্তরিকের কিছু অংশ কেটে অন্য পাশে যুক্ত করে একটি আয়তক্ষেত্র পাওয়া যাবে। যেহেতু এই আয়তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল হল ‘bh’, ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল অবশ্যই তার অর্ধেক, অর্থাৎ 1/2×bh হবে।

    ভেক্টরের সাহায্যে

    সামান্তরিকটির ক্ষেত্রফল হল ভেক্টর দুটির ক্রস গুণনের সমান

    পূর্বের উদাহরণের মত করে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল ভেক্টরের মাধ্যমের বের করে, তা থেকে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করা সম্ভব। যদি ABAC যথাক্রমে A হতে B পর্যন্ত এবং A হতে C পর্যন্ত ভেক্টর হয়ে থাকে, তাহলে ABDC সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল হল |AB × AC|, অর্থাৎ ABAC ভেক্টর দুইটির ক্রস গুণনের সমান। |AB × AC| হল |h × AC| এর সমতূল্য, যেখানে h হল সামান্তরিকটির উচ্চতাসূচক ভেক্টর।

    এই ফলাফল অনুযায়ী ত্রিভুজ ABC এর ক্ষেত্রফল হল সামান্তরিকটির অর্ধেক, অর্থাৎ S = ½|AB × AC|.

    ত্রিকোণমিতির সাহায্যে

    ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে উচ্চতা h নির্ণয় করণ।

    ত্রিভুজের উচ্চতা ত্রিকোণমিতির সাহায্যে সহজেই বের করা যায়। বাম পার্শ্বের ছবিতে, ত্রিভুজ ABC এর উচ্চতা h = a sin γ।

    এই ফলাফল উপরে উল্লিখিত S = ½bh সূত্রে বসালে পাওয়া যায়, ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল হল, S = ½ab sin γ

    স্থানাংকের মাধ্যমে

    যদি A বিন্দুটির কার্তেসীয় স্থানাংক (0, 0) এবং B ও C এর স্থানাংক যথাক্রমে B = (xByB) ও C = (xCyC) হয়ে থাকে, তাহলে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল S হল এই বিন্দু তিনটির নির্ণায়কের অর্ধেক, অর্থাৎ S = 1 2 | det ( x B x C y B y C ) | = 1 2 | x B y C − x C y B | . S=\frac{1}{2}\left|\det\begin{pmatrix}x_B & x_C \\ y_B & y_C \end{pmatrix}\right| = \frac{1}{2}|x_B y_C - x_C y_B|.

    যেকোন তিন বিন্দুর জন্য সাধারণ ভাবে সূত্রটি হল: S = 1 2 | det ( x A x B x C y A y B y C 1 1 1 ) | = 1 2 | x A y B − x B y A + x B y C − x C y B + x C y A − x A y C | . S=\frac{1}{2} \left| \det\begin{pmatrix}x_A & x_B & x_C \\  y_A & y_B & y_C \\ 1 & 1 & 1\end{pmatrix} \right| = \frac{1}{2} \big| x_A y_B - x_B y_A + x_B y_C - x_C y_B + x_C y_A - x_A y_C \big|.

    ঘণজ্যামিতি, অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে, ত্রিভুজাকৃতির এলাকা {A = (xAyAzA), B = (xByBzB) and C = (xCyCzC)} এর ক্ষেত্রফল হল তিনটি মূল সমতলে (i.e. x=0, y=0 and z=0) ত্রিভুজটির অভিক্ষেপের পিথাগোরীয় যোগফল, অর্থাৎ – S = 1 2 ( det ( x A x B x C y A y B y C 1 1 1 ) ) 2 + ( det ( y A y B y C z A z B z C 1 1 1 ) ) 2 + ( det ( z A z B z C x A x B x C 1 1 1 ) ) 2 . S=\frac{1}{2} \sqrt{ \left( \det\begin{pmatrix} x_A & x_B & x_C \\ y_A & y_B & y_C \\ 1 & 1 & 1 \end{pmatrix} \right)^2 +
\left( \det\begin{pmatrix} y_A & y_B & y_C \\ z_A & z_B & z_C \\ 1 & 1 & 1 \end{pmatrix} \right)^2 +
\left( \det\begin{pmatrix} z_A & z_B & z_C \\ x_A & x_B & x_C \\ 1 & 1 & 1 \end{pmatrix} \right)^2 }.

    হিরনের সূত্র

    ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য হিরনের সূত্র হল: S = s ( s − a ) ( s − b ) ( s − c ) S = \sqrt{s(s-a)(s-b)(s-c)}

    যেখানে s = ½ (a + b + c) হচ্ছে অর্ধ-পরিসীমা, অর্থাৎ ত্রিভুজটির পরিসীমার অর্ধেক। কোন ত্রিভুজে পরিসীমা হল ঐ ত্রিভুজের তিন বাহুর দৈর্ঘ্যের যোগফল।

    ত্রিভুজ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিন্দু ও রেখা

    শীর্ষ

    যে তিনটি বিন্দু জুড়ে ত্রিভুজ তৈরি হয়। প্রতিটি শীর্ষ এক জোড়া বাহুর সংযোগ স্থল।

    বাহু

    ত্রিভুজের পরিসীমা যে তিনটি রেখাংশ দ্বারা সমপূর্ণ হয়।অথবা ত্রিভুজের দুটি শীর্ষ বিন্দুর সংযোগ রেখাকে বাহু বলে।

    মধ্যমা

    ত্রিভুজের যেকোন শীর্ষ ও বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু সংযোগকারী রেখাংশ এক একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের মধ্যমাত্রয় সমবিন্দুগামী।

    ভরকেন্দ্র

    ভরকেন্দ্র

    যেখানে মধ্যমাত্রয় মিলিত হয় ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র (centroid) হল সেই বিন্দু

    (ভরকেন্দ্র গামী যেকোন রেখার দুপাশের ক্ষেত্রফল (এবং সেই অনপাতে ভর) সমান।

    ভরকেন্দ্র প্রতিটি মধ্যমাকে ১:২ অনুপাতে বিভক্ত করে।

    সমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যবিন্দু পর্যায়ক্রমে যোগ করলে যে ছয়টি ত্রিভুজ উৎপন্ন হয় তা – সমকোণী ত্রিভুজ

    লম্বকেন্দ্র

    লম্বকেন্দ্র

    ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুগুলির উপর তিনটি লম্ব সমবিন্দুগামী, এবং বিন্দুটির নাম লম্বকেন্দ্র

    পরিবৃত্ত

    পরিবৃত্ত

    তিনটি শীর্ষবিন্দু যোগ করে যেমন একটিমাত্র ত্রিভুজ হয় তেমনি তিনটি বিন্দু (শীর্ষ)গামী বৃত্তও একটিই, এর নাম পরিবৃত্ত।

    পরিকেন্দ্র

    পরিবৃত্তের কেন্দ্র (যে বিন্দু ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় থেকে সমদূরত্বে স্থিত)।

    অসমতলীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজ

    কেবলমাত্র সমতলীয় জ্যামিতিতে (ইউক্লিডিয় জ্যামিতি বা অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি) ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০° বা দুই সমকোণঅসমতলীয় বা অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির উদাহরণঃ

    পরাবৃত্তীয় জ্যামিতি ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি < ১৮০°

    লম্বিক ত্রিভুজ

    ABC ত্রিভুজের Aa, Bb এবং Ccউচ্চতা রেখাগুলোর পাদবিন্দু যথাক্রমে a, b এবং cabc ত্রিভুজ হলো পূর্বোল্লিখত ABC ত্রিভুজের লম্বিক ত্রিভুজ।

    একটি ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুত্রয় থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব তিনটি বিপরীত বাহুগুলোকে যে তিনটি বিন্দুতে ছেদ করে সেই বিন্দুগুলো যে ত্রিভুজটি গঠন করে সেটিই প্রথম ত্রিভুজের লম্বিক ত্রিভুজ (orthic triangle)।

    মধ্যবিন্দু ত্রিভুজ

    Le triangle et ses médianes (0).gif

    কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহুর মধ্যবিন্দু তিনটি যে ত্রিভুজটি গঠন করে তাকে প্রথম ত্রিভুজটির মধ্যবিন্দু ত্রিভুজ (medial triangl

  • ডিগ্রি (কোণ)

    ডিগ্রি হচ্ছে দ্বিমাত্রিক কোণ পরিমাপের একটি একক। আরেকটি একক হচ্ছে রেডিয়ান। দুটি সরলরেখা যদি একটি আরেকটির উপর অবস্থান করে, তবে তাদের মধ্যেকার কোণের পরিমাণ হচ্ছে ০ ডিগ্রি। আর একটি রেখা সম্পূর্ণ ঘুরে এসে যদি আবার দ্বিতীয় রেখার উপর অবস্থান করে তবে ৩৬০ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন হয়। একটি রেখা আরেকটি রেখার সঙ্গে লম্ব ভাবে থাকলে তাদের মধ্যে কোণের পরিমাপ ৯০°। ডিগ্রির চিহ্ন হচ্ছে (°)। ৩০ ডিগ্রি কোণকে লেখা যায় ৩০°।

    ডিগ্রি
    এককের তথ্য
    একক পদ্ধতিঅ-এসআই একক
    যার একককোণ
    প্রতীক°[১][২] or deg[৩]
    একক রুপান্তর
    ১ °[১][২]… সমান …
       ঘূর্ণন   1/360 turn
       রেডিয়ান   π/180 rad ≈ 0.01745.. rad
       মিলিরেডিয়ান   50·π/9 mrad ≈ 17.45.. mrad
       গ্রেডিয়ান   10/9g
  • ট্রাপিজিয়াম

    ট্রাপিজিয়াম হলো চতুর্ভুজের একটি বিশেষ রূপ। যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পরের সমান্তরাল কিন্তু কোন ক্রমেই ঐ বাহুদ্বয় সমান নয় তাকে দুই বাহু সমান্তরাল চতুর্ভুজ বা ট্রাপিজিয়াম বলে। অপর যে বিপরীত বাহুযুগলের কথা এখনও বলা হয়নি সেই বাহুদ্বয় পরস্পরের সমান হলেও ট্রাপিজিয়াম গঠন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অর্থাৎ ট্রাপিজিয়ামের অসমান্তরাল বাহুদ্ব পরস্পরের সমান হলে এটি হবে সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম

    ভাষা ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে ট্রাপিজিয়াম ও ট্রাপিজয়িড সম্পর্কে সারা দুনিয়ায় পরস্পরবিরোধী একটি ধারণা প্রচলিত আছে। ট্রাপিজিয়াম শেখার শুরুতে সে বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা জরুরী। বৃটেনে যা ট্রাপিজিয়াম (Trapezium in UK) = যুক্তরাষ্ট্রে তা ট্রাপিজয়িড (Trapezoid in US) বৃটেনে যা বিষমবাহু চতুর্ভুজ (Irregular Quadrilateral in UK) = যুক্তরাষ্ট্রে তা ট্রাপিজিয়াম (Trapezium in US)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    ক্ষেত্রফল

    ট্রাপিজিয়ামের দুইটি সমান্তরাল বাহু যথাক্রমে ”a” এবং ”b” এবং বাহুদ্বয়ের দৈর্ঘ্যের যোগফল m ও সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব “h” হলে, একটি ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল নিম্নোক্ত সূত্র ব্যবহার করে K দ্বারা প্রকাশ করা যায়। [১] K = 1 2 ( a + b ) ⋅ h = 1 2 m h {\displaystyle K={\frac {1}{2}}(a+b)\cdot h={\frac {1}{2}}mh}

  • জ্যামিতির ইতিহাস

    (প্রাচীন গ্রিক: γεωμετρία জ্যা – “ভূমি”, -মিতি “পরিমাপ”) স্থানিক সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞানের ক্ষেত্র হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। প্রাক-আধুনিক গণিতের দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে জ্যামিতি ছিল একটি, অন্যটি ছিল সংখ্যার চর্চা (পাটীগণিত)।

    ধ্রুপদী জ্যামিতির লক্ষ্য ছিল কম্পাস এবং স্ট্রেইটেজ অঙ্কনইউক্লিড জ্যামিতির বিপ্লব ঘটান, তিনি গাণিতিক যথাযথতা এবং স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন যা এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। তার বই এলিমেন্টস ব্যাপকভাবে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাঠ্যপুস্তক হিসাবে বিবেচিত হয় এবং বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিমের সমস্ত শিক্ষিত লোকের কাছেই বইটি পরিচিত ছিল। [১]

    আধুনিক যুগে জ্যামিতিক ধারণার বিমূর্ততা এবং জটিলতা রয়েছে যার জন্য জ্যামিতিক ধারণা উচ্চ স্তরে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং এটিকে ক্যালকুলাস এবং বিমূর্ত বীজগণিতের পদ্ধতিতে নিয়ে আশা হয়েছে, যার কারণে এই আধুনিক শাখা প্রাথমিক জ্যামিতির বংশধর হিসাবে সবেমাত্র স্বীকৃত হয়েছে।(গণিতের ক্ষেত্র এবং বীজগণিত জ্যামিতি দেখুন)

    জ্যামিতি
    অভিক্ষেপগোলক থেকে একটি সমতল
    রূপরেখাইতিহাস
    শাখা
    ধারণাবৈশিষ্ট্য
    শূন্যমাত্রিক
    একমাত্রিক
    দ্বিমাত্রিক
    ত্রিমাত্রিক
    Four– / other-dimensional
    Geometers
    by name
    by period
    দে

    প্রান্তিক জ্যামিতি

    প্রান্তিক জ্যামিতির নথিভুক্তি সে সময়ের জনগণের নির্মাণ কাজের জন্য শুরু হয়ে থাকতে পারে । তারা সিন্ধু সভ্যতায় অবিচ্ছিন্ন ত্রিভুজ আবিষ্কার করেন এবং প্রাচীন ব্যাবিলনিয়া প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে প্রারম্ভিক জ্যামিতির দৈর্ঘ্য, কোণ, ক্ষেত্রফল এবং আয়তনের বিষয়ে অভিজ্ঞতার সাথে আবিষ্কার জ্যামিতির নীতি আবিষ্কার করেন । তারা এই নীতিগুলো সংগ্রহ করে জরিপ, গঠন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন কারুকর্মের কিছু বাস্তব প্রয়োজন মেটান। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি আশ্চর্যজনকভাবে অবিশুদ্ধ নীতি ছিল এবং আধুনিক গণিতবিদ যদি ক্যালকুলাস এবং বীজগণিত ব্যবহার না করে এর সমাধান করতে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মিশরীয় এবং ব্যাবিলীয় উভয় পিথাগোরাসের জন্মের প্রায় ১৫০০ বছর আগে পিথাগোরিয়ান উপপাদ্যের সংস্করণ সম্পর্কে জানত এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ভারতীয় সুলবা সূত্রে উপপাদ্যের প্রথম বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল;বর্গাকার পিরামিডের ফারুস্টম আয়তনের (volume) জন্য মিশরীয়দের কাছে একটি সঠিক সূত্র ছিল;

    মিশরীয় জ্যামিতি

    প্রাচীন মিশরীয়রা জানত যে তারা নিম্নলিখিত হিসাবের মাধ্যমে একটি বৃত্তের আনুমানিক ক্ষেত্রফল পাওয়া যেতে পারে:[২]

    বৃত্তের ক্ষেত্রফল ≈ [ (ব্যাস) x ৮/৯ ]

    আহেমস পেপাইরাস ৩০টি সমস্যায় বৃত্তের ক্ষেত্রফল গণনা করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই নিয়ম অনুসারে ক্ষেত্রফল বৃত্তের ব্যাসের ৮/৯ ভাগের বর্গের সমান। ধরা হয় π এর মান ৪×(৮/৯) (বা ৩.১৬০৮৯৩…), যা ০.৬৩ শতাংশেরও বেশি ত্রুটিযুক্ত। ব্যাবিলনীয়দের গণনার তুলনায় এই মানটি কিছুটা কম সঠিক ছিল (২৫/৮ = ৩.১২৫, ০.৫৩ শতাংশের মধ্যে), তবে আর্কিমিডিসের আসন্ন মান ২১৫৭৫/৬৭৪৪১ = ৩.১৪১৬৩ আশ্চার্জনক ছিল না । আর্কিমিডিসের এই মানের তুলনায় ব্যাবিলনীয়দের গণনার ১০,০০০ এর মধ্যে মাত্র ১ ভাগের এর বেশি ত্রুটি ছিল।

    আহেমস আধুনিক পাইকে আনুমানিক ২৭/৭ হিসাবে জানতেন এবং এটি একটি হেকাত বিভক্ত করতে ব্যবহার করেছিলেন, হেকাত x ২২ / x x ৭/২২ = হেকাত;

    যাইহোক, আহেমস একটি সিলিন্ডারে পাওয়া তার হেকাতের পরিমাণকে গণনা করার জন্য পাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ২৫৬/৮১ এর মান ব্যবহার করেন। পার্শ্ব ৯ ইউনিটসহ ব্যবহার করে ৪৮ টি সমস্যা জড়িত এই বর্গক্ষেত্রটিকে ৩x৩ গ্রিডে কাটা হয়েছিল। কোণার বর্গের তির্যকটি ৬৩ ইউনিটের ক্ষেত্রফলসহ একটি অনিয়মিত অষ্টভুজ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি পায়ের দ্বিতীয় মান ৩.১১…… দিয়েছে।

    দুটি সমস্যা ৩.১১ এবং ৩.১৬ একসাথে এর মধ্যে মানগুলির একটি ব্যাপ্তি নির্দেশ করে।

    মস্কোর গাণিতিক পেপাইরাসের ১৪ টি সমস্যা সঠিক সূত্রটি বর্ণনা করে একটি পিরামিডের ফারুস্টম আয়তনের (volume) খুঁজে পাওয়া একমাত্র প্রাচীন উদাহরণ দেয়: V = 1 3 h ( a 2 + a b + b 2 ) {\displaystyle V={\frac {1}{3}}h(a^{2}+ab+b^{2})}

    যেখানে a এবং b হল অগ্রভাগহীন পিরামিডের ভিত্তি এবং উপরের দিকের দৈর্ঘ্য এবং h এর উচ্চতা।

    ব্যাবিলনীয় জ্যামিতি

    মূল নিবন্ধ: ব্যাবিলনীয় গণিত

    ব্যাবিলনীয়রা ক্ষেত্রফল এবং আয়তনের পরিমাপের নিয়ম জানত। তারা বৃত্তের পরিধিটি ব্যাসের তিনগুণ এবং ক্ষেত্রফলের এক-দ্বাদশ বর্গক্ষেত্র হিসাবে পরিমাপ করেছে। এই পরিমাপ সঠিক হবে যদি এটাকে পাই এর মান ৩ হিসাবে অনুমান করা হয়। একটি সিলিন্ডারের আয়তনের ভিত্তি এবং উচ্চতার গুণফল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। তবে, শঙ্কু বা বর্গাকার পিরামিডের আয়তন ভুলভাবে ভিত্তির উচ্চতা এবং অর্ধের যোগফলের গুনফল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যাবিলনীয়দের কাছেও পরিচিত ছিল। এছাড়াও, একটি সাম্প্রতিককালে সন্ধান পাওয়া যায় যে, ব্যাবিলনীয়রা একটি ফলকে পাইয়ের মান ৩ এবং ১/৮ হিসাবে ব্যবহার করেছিল । ব্যাবিলনীয়রা ব্যাবিলনীয় মাইলের জন্যও পরিচিত, যা আজকের হিসাবে প্রায় সাত মাইল দূরত্বের সমান । দূরত্বের জন্য এই পরিমাপটি অবশেষে সূর্যের ভ্রমণ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত সময়-মাইলে রূপান্তরিত হয়, তাই এটা সময়কে উপস্থাপন করে।[৩] সাম্প্রতিক সন্ধান থেকে দেখা গেছে যে প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা ইউরোপীয়দের প্রায় ১৪০০ বছর আগে জ্যোতির্বিদ্যার জ্যামিতি আবিষ্কার করেছে।[৪]

    বৈদিক ভারতীয় জ্যামিতি

    ঋগ্বেদের পাণ্ডুলিপি দেবনাগরীতে লেখা

    বৈদিক যুফে ভারতবর্ষে জ্যামিতির প্রচলন ছিলো। যা মূলতো বিশদ ভাবে পুজার বেদী তৈরীতে ব্যাবহৃত হতো। এই বিষয়ের ওপর প্রাচীন (১ম সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) দুটি লেখা হলো সতপথ ব্রহ্মণ এবং সুলভ সূত্র[৫][৬][৭]

    (হায়াসি ২০০৫, পৃ. ৩৬৩) মতে, সুলভ সূত্র হলো “পিথাগোরিয়ান তত্ত্বের প্রাচীনতম মৌখিক নিদর্শন, যদিও ব্যাবিলনিয়রা আগে থেকেই এর সাথে পরিচিত ছিলো।”

    একটি আয়তকার ক্ষেত্রের তীর্যক রশ্মি (অক্ষন্য-রজ্জু) যে ক্ষেত্র উৎপন্ন করে, তা পার্শ্ব (পার্শ্বাভামানি) আর অনুভূমি (তির‍্যানমানি) [রশ্মি] দ্বারা উৎপন্ন ক্ষেত্রের [সমষ্টির] সমান।[৮]

    এতে পিথাগোরিয়ান ট্রিপলস এর তালিকা ছিলো[৯], যা ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের একটি রূপ।[১০]এতে বৃত্তের বর্গকরন এবং “বর্গের বৃত্তায়নের” কথা উল্লেখ ছিলো।[১১]

    বৌদ্ধান সু্লভ সূত্রে (সুলভ সূত্রের মধ্যে প্রাচীনতম, ৭ম বা ৮ম খ্রিস্টপূর্ব্দে লেখা হয়) সরল পিথাগোরিয়ান ট্রিপলসের (যেমনঃ (৩,৪,৫),(৫,১২,১৩),(৮,১৫,১৭),(৭,২৪,২৫) এবং (১২,৩৫,৩৭)) তালিকা ছিলো।[১২] এতে বর্গের বাহুর পিথাগোরিয়ান তত্ত্বও ছিলো (বর্গের পরিসীমা ব্যাপী বিস্তৃত রশ্মি বর্গের ক্ষেত্রফলের দ্বিগুন ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট বর্গ উৎপন্ন করে)।

    গণিতবীদ এস.জি.দানির মতে, ব্যাবিলনের কিউনিফর্ম ট্যাবলেটে লিখিত প্লিম্পটন ৩২২ (১৮৫০ খ্রি.পূর্বাব্দে লেখা)[১৩]-এ ১৫ টি পিথাগোরিয়ান বড় ট্রিপলস ছিলো, যার মধ্যে ছিলো (১৩৫০০,১২৭০৯,১৮৫৪১) একটি আদি ট্রিপলস।[১৪] এটি এই নির্দেশ করে যে, ১৮৫০ খ্রি. পূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ানদের কাছে এই জ্যামিতির ধারণা গুলো পরিচিত ছিলো। যেহেতু এই টেবলেট গুলো সুলভ সূত্রের কয়েক শতক আগে লেখা, একি বিষয়ের আবির্ভাবকে মাথায় রেখে বলতে হয়, এটা আশা করা যুক্তিসঙ্গত যে অনুরূপ জ্ঞান ভারতেও ছিল।[১৫] দানি আরো বলেন,

    “যেহেতু সুলভ সূত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিলো পুজার বেদির নির্মান বর্ণনা এবং এতে যে জ্যামিতিক নীতি যুক্ত ছিলো তা হলো পিথাগোরিয়ান ট্রিপলস, এটা বোধগম্য হলেও সুলভ সূত্রে এর থাকার কথা নয়। সুলভ সূত্রে থাকা ত্রিপলস গুলোকে প্রকৌশলের পরিচিতি বই-এ থাকা গণিত বা একই রকম বিষয়ের সাথে তুলনা করা যায় এবং সেই সময়ের বিষয়ের সামগ্রিক জ্ঞানের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। যেহেতু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সমসাময়িক অন্যকোন সূত্র পাওয়া যায়না এই বিশয়ের সন্তুষ্টি মূলক সমধান সম্ভব নয়।”

    মোট তিনটি সুলভ সূত্র রচিত হয়েছিলো। বাকি দুই সুলভ সূত্র, মানব (৭৫০-৬৫০খ্রি.পূর্ব) রচিত মানব সুলভ সূত্র ও অপস্থাম্বা (৬৫০খ্রি.পূর্ব) রচিত অপস্থাম্বা সুলভ সুত্র বৌদ্ধান সু্লভ সূত্রের ফলাফলই বহন করে।

    গ্রিক জ্যামিতি

    ধ্রুপদি গ্রিক জ্যামিতি

    প্রাচীন গ্রিক গণিতবীদদের কাছে জ্যামিতি তাদের মুকুটের পালক ছিলো, অন্যকোন ক্ষেত্রে তাঁরা এত ওপরে পৌছতে পারেনি। তাঁরা জ্যামিতির নতুন নতুন ধারা, বক্রতল, সমতল আবিষ্কার করে ছিলো। তাঁরা পরীক্ষণ ও ভুলের পরিবর্তে গাণিতিক যথাযথতাের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলো।

    থেলেস ও পিথাগোরাস

    পিথাগোরাসের উপপাদ্যঃa2+b2=c2

    মিলেটাসের (বর্তমান তুরস্ক) থেলেসকে প্রথম গাণিতিক যথাযথতা পদ্ধতি ব্যাবহারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি ৫ টি গাণিতিক প্রস্তাবনা দেন, যদিও তাঁর প্রস্তাবনা গুলো হারিয়ে গিয়েছে। আয়নিয়ার এবং পরে ইতালির (তখন গ্রিসের একটি কলোনি) পিথাগোরাস থেলেস এর শিস্য ছিলেন, তিনি ব্যাবিলন ও মিশর ভ্রমণ করেন। তাঁর নামে নামাঙ্কিত তত্ত্বটি সম্ভবত তাঁর আবিষ্কার নয়। তবে তিনি এর ডিডাকটিভ প্রমাণদানকারী দের মাঝে প্রথম ছিলেন। তিনি আর তাঁর শিস্যরা একত্রিত হয়ে গণিত, দর্শন আর সংগীত চর্চা করতেন, এবং তাঁরা একত্রে বর্তামান উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে যে জ্যামিতি পড়ানো হয় তাঁর প্রায় সবটাই আবিষ্কার করেন।

    প্লেটো

    প্লেটো একজন দার্শনিক ছিলেন এবং গ্রিকদের মাঝে তিনি অত্যান্ত সম্মানিত ছিলেন। বলা হয় তিনি তাঁর স্কুলের ফটকে লিখে দিয়েছিলেন,”জ্যামিতির জ্ঞানহীন যারা তাদের প্রবেশ নিষেধ।”[১৬]গল্পটি সম্ববত মিথ্যা।[১৭] যদিও তিনি নিজে গণিতবিদ ছিলেনা, তবুও গণিতে তাঁর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গণিতবীদেরা জ্যামিতি সম্পর্কে প্লেটোর মতবাদ গ্রহণ করেছেন। প্লেটোর মতে জ্যামিতি শুধুমাত্র পরিমাপের বিষয় নয়, পরিমাপ হলো কর্মজীবীদের কাজ, পন্ডিতদের কাজ নয়। প্লেটোর শিস্য এরিস্টটল যথাযথতার প্রমাণ লিখেছিলেন যা ১৯শ শতকের আগ পর্যন্ত একি রুপে ব্যাবহৃত হয়ে আসছিলো।

    হেলেনিস্টিক জ্যামিতি

    ইউক্লিড

    অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল হিস্টরি জাদুঘরে থাকা ইউক্লিডের ভাষ্কর্য।

    মহিলা জ্যামিতি শেখাচ্ছেন। মধ্যযুগের ইউক্লিডের এলিমেন্টসের অনুবাদে ব্যাবহৃত একটি চিত্রকর্ম (১৩১০ সালের)

    আলেকজান্দ্রিয়ার ইউক্লিড প্লেটোর একাডেমির ছাত্র ছিলেন। তিনি দ্যা এলিমেন্টস অব জিওমেট্রি নামে ১৩ অধ্যায়ের একটি বই রচনা করেন, যাতে তিনি জ্যামিতির একটি স্বতঃসিদ্ধ ধারা প্রদর্শন করে, যা ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি নামে পরিচিত। তিনি জ্যামিতির আর আটটি বই রচনা করেন। যদিও ইউক্লিডই প্রথম জ্যামিতির পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা নন তবে তাঁর বইটি এতই এগিয়ে ছিলো যে বাকি বই গুলো পরিত্যাক্ত হয়ে হারিয়ে যায়। মিশরের শাসক প্রথম টলেমি তাঁকে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন।

    দ্যা এলিমেন্টস শুরু হয় বিভিন্ন সঙ্গা দিয়ে, এতে ছিলো মৌলিক জ্যামিতিক নীতি এবং জেনারেল কোয়ান্টিটেটিভ প্রিন্সিপাল যা থেকে বাকি সব জ্যামিতিক ধারণা পাওয়া যায়। তাঁর ৫ টি স্বতঃসিদ্ধ রয়েছে। এগুলো হলো (বোঝার স্বার্থে ভাষা সরলিকৃত হয়েছে)-

    1. দুটি বিন্দু একটি সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করা সম্ভব।
    2. যেকোন সসীম সরলরেখাকে সরলরেখায় প্রসারিত করা যায়।
    3. যেকোন ব্যাসার্ধ ও কেন্দ্র বিশিষ্ট বৃত্ত আঁকা সম্ভব।
    4. সকল সমকোন পরস্পর সমান।
    5. একি সমতলে অবস্থিত দুটি সরলরেখা তৃতীয় সরলরেখা দ্বারা ছেদিত হলে, এবং অনুরূপ কোন গুলো পরস্পর সমান হলে রেখা দ্বয় সমান্তরাল হবে।

    বর্তমানে পরিচিত বীজগণিত ইউক্লিড জ্যামিতিক আকারে দেখিয়েছিলেন, যা গ্রিক জ্যামিতিক বীজগণিত নামে পরিচিত।

    আর্কিমিদিস

    সিসিলির সিরাকাসের (তখন এটি একটি গ্রিক নগর রাষ্ট্র ছিলো) আর্কেমিদিসকে গ্রিসের সর্বকালের সেরা গণিতবীদ বলা হয়। তাঁকে তিন মহাপুরুষের একজন বলা হয় (বাকি দুজন হলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন আর কার্ড ফেডেরিক গাউস)। যদি তিনি গণিতবিদ নাও হতেন তবুও তাঁকে মহান পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও উদ্ভাবক হিসেবে মনে রাখা হতো। তিনি বিশ্লেষণ জ্যামিতিতে স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থার মতো একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলারের লিমিটিং প্রসেস আবিষ্কার করেন। তবে বীজগাণিতিক নোটেশনের অভাবে তিনি তাঁর কাজ সম্পূর্ন করতে পারেননি।

    আর্কিমিদিস পরবর্তি যুগ

    মধ্যযুগের পণ্ডিতেরা জ্যামিতিকে ঐশ্বরিক গণ্য করতেন.১৩ শতকের এই পাণ্ডুলিপিতে কম্পাসকে ইশ্বরের সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

    আর্কিমিদিসের পর হেলেনিস্টিক জ্যামিতির পতন শুরু হয়। এরপর আরো ক্ষুদ্র কয়েকজন বিখ্যাত লোক এলেও, এর স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। প্রোক্লুস (৪১০-৪৮৫) কমেন্ট্রি অন ফার্স্ট বুক অব ইউক্লিড-এর লেখক ছিলেন, তিনি হেলেনিস্টিক যুগের অন্যতম শেষ জ্যামিতি নিয়ে কাজ করা গণিতবীদ। তিনি একজন পারদর্শি পণ্ডিত ছিলেন, তবে তিনি তাঁর কাজের থেকে বেশি বিখ্যাত প্রক্তন কাজ গুলোর সমালোচনা করার মাধ্যমে। রোমান সম্রাজ্য ও প্রজাতন্ত্র, যা গ্রিসের নগর রাষ্ট্র গুলোকে প্রতিস্তাপিত করেছিলো, অনেক মহান প্রকোশলীর জন্ম দিলেও বিখ্যাত গণিতবীদ সৃষ্টিতে ব্যার্থ হয়।

    আলেকজান্দ্রিয়ার মহান লাইব্রেরিকে পরবর্তিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইতিহাসবীদেরা একমত যে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি অনেকবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও, আজেকজান্দ্রিয়ার পৈত্তলিক মন্দির ধ্বংসের পর আর তা মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। এই ধ্বংসযজ্ঞের যথেষ্ট প্রমাণ আজও পাওয়া যায়। সিজারের আগ্রাশনের ফলেই বন্দরের পাশ্ববর্তি গুদামে থাকা ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায় (লুইকানো কানফরার মতে, এর কোনটিই আসল কর্ম ছিলোনা, বরং রপ্তানির উদ্দেশ্য তৈরী করা নকল ছিলো)। কিন্তু এর ফলে সম্ববত জাদুঘর বা লাইব্রেরির কোন ক্ষতি হয়নি, কারণ এরপর উভয়েরই অস্থিত্ব টিকে ছিলো।[১৮]

    গৃহ যুদ্ধ, পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও সংগ্রহে ক্রমহ্রাসমান বিনিয়োগ, ধর্মের বাইরে জ্ঞান চর্চার অগ্রহের অভাবকেই মূলত এই পতনের জন্য দায়ী করা হয়। ৩৯১ সালে থিওফেলাস সেরাপেরাম ধ্বংস করেন, একি অভিযানে লাইব্রেরি আর জাদুঘরও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

    ধ্রুপদী ভারতীয় জ্যামিতি

    বাকশালী পাণ্ডুলিপিতে অনেকগুলো জ্যামিতিক সমস্যার কথা উল্লেখ আছে (অনিয়ত ঘনবস্তু সম্পর্কিত সমস্যা সহ)। এই পাণ্ডুলিপিতে দশমিক সংখ্যার ধারণা পাওয়া যায়, শূন্য বোঝাতে একটি ফোটা ব্যাবহার করা হয়েছে। আর্যভট্টের লেখা আর্যভট্ট্যাতে (৪৯৯) ক্ষেত্রফল ও আয়তনের পরিমাপের উল্লেখ আছে।

    ৬২৮ সালে ব্রহ্মগুপ্ত জ্যেতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত রচনা করেন। ১২ অধ্যায়ে, ৬৬ সংস্কৃত শ্লোককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে; “মৌলিক অপারেশন” (ঘনমূল, ভগ্নাংশ, অনুপাত ও সমানুপাত এবং বিনিময়) ও “ফলিত গণিত” (গাণিতিক ধারা, ইটের স্তুপ জমানো, গাছের গুরি কাটা, আর শস্যদানা জমানো)।[১৯] শেষভাগে তিনি তাঁর বিখ্যাত বৃত্তীয় চতুর্ভুজ কর্ণ সম্পর্কিত উপপাদ্য বর্ণনা করেছেন।

    ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য

    কোন চতুর্ভুজের শীর্ষ বিন্দু চারটি একটি বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থান করলে চতুর্ভুজটিকে বৃত্তীয় চতুর্ভুজ বলা হয়। আবার চতুর্ভুজ কর্ণদ্বয় পরস্পর লম্ব হলে এটি হবে লম্বকর্ণ চতুর্ভুজ। এখন একটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজ লম্বকর্ণ চতুর্ভুজ হলে অর্থাৎ বৃত্তের অন্তস্থ কোন চতুর্ভুজের কর্ণদ্বয় পরস্পরের লম্ব হলে কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দু থেকে চতুর্ভুজটির যেকোন বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বটি সর্বদা ঐ বাহুর বিপরীত বাহুকে সমদ্বিখণ্ডিত করবে। এটিই ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য যা প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদজ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্তের (৫৯৮-৬৬৮)নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।

    ১২ তম অধ্যায়ে বৃত্তীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রদফলের সুত্র রয়েছে (হেরনের সূত্রের একটি সারলিকৃত রূপ), এছাড়া র‍্যাশনাল ত্রিভুজের সম্পূর্ণ বর্ননা দেওয়া হয়েছে।

    ব্রহ্মগুপ্তের সূত্র

    a, b, c ও d পার্শ্ববিশিষ্ট একটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল,

    A = ( s − a ) ( s − b ) ( s − c ) ( s − d ) {\displaystyle A={\sqrt {(s-a)(s-b)(s-c)(s-d)}}}

    যেখানে s হলো অর্ধপরিসীমা, অর্থাৎ s = a + b + c + d 2 {\displaystyle s={\frac {a+b+c+d}{2}}}

    র‍্যাশনাল ত্রিভুজ সম্পর্কিত ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য

    র‍্যাশনাল বাহু বিশিষ্ট একটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হলো,

    a = u 2 v + v ,     b = u 2 w + w ,     c = u 2 v + u 2 w − ( v + w ) {\displaystyle a={\frac {u^{2}}{v}}+v,\ \ b={\frac {u^{2}}{w}}+w,\ \ c={\frac {u^{2}}{v}}+{\frac {u^{2}}{w}}-(v+w)}

    যেখানে a, b ও c র‍্যাশনাল বাহু এবং u, v ও w যেকোন মূলদ সংখ্যা।[২০]

    চৈনিক জ্যামিতি

    ১৭৯ সালে সংকলিত দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট, ৩য় শতকে লাই হুই এর সমালোচনা লেখেন।

    হাইডাও শুয়ানজিং, লাই হুই, ৩য় শতাব্দী

    জ্যামিতি বিশয়ক প্রাপ্ত কর্ম গুলোর মধ্যে সবথেকে প্রাচীন হলো দার্শনিক মোজির (৪৭০-৩৯০ খ্রি.পূ.) লিখিত মহিবাদি অনুশাসন, মো জিং। এটি তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর শিস্যরা ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংকলন করেন।

    মো জিন এখনো পর্যন্ত প্রপ্ত প্রাচীনতম চাইনিজ জ্যামিটির বই হলেও, সম্ভবত এর আগেও আরো জ্যামিতি সম্পর্কিত বই চীনে ছিলো। কিন্তু চিন বংশের নৃপতি চিন শিহুয়াং-এর আমলের কুখ্যাত বই পোড়ানোর ঘটনায় অনেক বইই হারিয়ে যায়। তাছাড়া মো জিং এর জ্যামিতিক ধারনার উন্নত হওয়ার কারণে বোঝা যায় অন্য কোন কাজকে ভিত্তি ধরে তাঁর উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে এই বই রচনা করা হয়েছিলো।

    মো জিং থেকে জ্যামিতির পাশাপাশি বাস্তু বিজ্ঞান ও গণিতের বিষয়েও ক্ষুদ্র ধারণা পাওয়া যায়। এতে পারমাণবিক (অতিক্ষুদ্র অর্থে) জ্যামিতির পরিচয় পাওয়া যায়, যাতে একটি রেখাকে এমন ভাবে অসংখ্য ভাগ করার কথা বলা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত রেখাটি আর রেখা থাকেনা, একটি বিন্দুতে পরিণত হয়।[২১]

    ইউক্লিডের রেখার প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্গা ও প্লেটোর রেখার আরম্ভের মত মো জিং বলেছেন,”একটি রেখার প্রারম্ভে বা অন্তিমে একটি বিন্দু থাকে যা জন্মলগ্নে শিশুর মাথার মতো, এর অনুরূপ অন্য কিছু নেই।”[২২]

    ডেমোক্রিটাসের পরমাণু তত্ত্বের ন্যায় মো জিং বলেছেন,”একটি বিন্দুকে ভাগ করা সম্ভব নয়, কারণ শূন্যতাকে ভাগ করা সম্ভব নয়।” তিনি আরো বলেছেন একই দৈর্ঘ্যের দুটি রেখা একই দূরত্বে সমাপ্ত হবে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে শূন্য পুরুত্বের তলকে একটার ওপরে এরেকটা রাখা সম্ভব নয়। কারণ তাদের পুরুত্ব না থাকায় তাঁরা কেউ পরস্পরকে স্পর্শ করবেনা।[২৩] বইটিতে পরিসীমা, ব্যাস ও ব্যাসার্ধ এবং আয়তনের সংঙ্গাও দেওয়া হয়েছে।[২৪]

    হান যুগে (২০২ খ্রিস্টপুর্বাব্দ থেকে ২০২ খ্রিস্টাব্দ) চিন গণিতে সমৃদ্ধি লাভ করে। পশ্চিম হান যুগে ১৮৬ খ্রি.পূ. সালে লিখিত শুয়ান শু শু জ্যামিতিক ধারা নিয়ে লেখা প্রাচীন চিনা গ্রন্থগুলোর একটি। গণিতবিদ, জ্যাতির্বীদ ও আবিষ্কারক ঝাং হেন (৭৮-১৩৯ সাল) জ্যামিতি দিয়ে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতেন। পাই (π) এর মানের ধারণা ২য় খ্রিস্টপূবাব্দে ঝাও লি দিলেও, ঝান হেন পাই এর মান করার আরো নিখুত সূত্র বের করেন।[২৫] ঝাং হেন ৭৩০/২৩২ এর সমান পাই এর মান বের করেন। যদিও তিনি গলীয় তলের আয়তন বের করার জন্য ভিন্ন সূত্র ব্যাবহার করেছিলেন, তিনি ১০ এর বর্গমূল (৩.১৬২ এর প্রায় সমান) ব্যাবহার করে আয়তন বের করেন। যু চোংজি (৪২৯-৫০০ সাল) পাই-এর আরো কাছাকাছি মান বের করেছিলেন। তিনি ৩.১৪১৫৯২৬ ও ৩.১৪১৫৯২৭ এর মাঝামাঝি একটি মান নিয়েছিলেন, তিনি ৩৫৫/১১৩ (密率, মিলু বা বর্ধিত অনুমান) ও ২২/৭ (约率, ইয়েলু বা কাছাকাছি অনুমান) মান দুটিকে পাই হিসেবে অনুমান করেছিলেন।[২৬] পরবর্তিতে ফরাসি গণিতবিদ ফ্রান্সিস ভিয়েট সূত্র ব্যাবহার করে এই দুই মানের মাঝামাঝি পাই এর মান পেয়েছিলেন।

    দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট

    দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স অন ম্যাথামেটিকাল আর্ট প্রথম ১৭৬ সালে ব্রোঞ্জের পাতে খোদিত পাওয়া যায়, ৩য় শতাব্দীতে চাও ওয়ে রাজ্যের লিও হুই এটি সংস্কার করেন এবং এর সমালোচনা লেখেন। এই বইয়ে অনেক জ্যামিতিক সমস্যার উল্লেখ ছিলো, যেমন বৃত্ত ও বর্গের তলের ক্ষেত্রফল, বিভিন্ন ত্রি-মাতৃক ঘনবস্তুর আয়তন, এবং এতে পিথাগোরাসের উপপাদ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এতে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের চিত্রসহ প্রমাণ ছিলো,[২৭] এতে ঝু এর ডিউক আর শাং গাও এর পত্রের উল্লেখ ছিলো যাতে রাইট এঙ্গেল ত্রিভুজ ও পিথাগরাসের উপপাদ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো। এর সম্পাদক লিউ হুই ১৯২ বাহু বিশিষ্ট বহুভূজ ব্যাবহার করে পাই-এর মান ৩.১৪১০১৪ এবং ৩০৭২ বাহুবিশিষ্ট বহুভূজ ব্যাবহার করে পাই এর মান ৩.১৪১৫৯ বের করেন। লিউ হুই এর সমসাময়িক ওয়াং ফ্যাং (একজন গণিতবীদ ও জ্যাতির্বীদ যিনি পাই এর মান ৩.১৫৫৫ বা ১৪২/৪৫ বের করেছিলেন) এর মান থেকে এই মান বেশি নির্ভুল ছিলো।[২৮] লিউ হুই গাণিতিক জরিপ ব্যাবহার করে গভীরতা, উচ্চতা, প্রসস্থতা ও ক্ষেত্রফল বের করার বিষয়ে লিখেছেন।[২৯] তিনি আরো আবিষ্কার করেন যে একটি আয়তাকার ভূমি বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তুকে একটি পিরামিড ও একটি চতুস্তলীয় কিলকাকার ঘনবস্তুতে ভাগ করা যায়।[৩০] আর একটি ট্রাপিজয়েড আকৃতির ভূমি বিশিষ্ট একটি কিলকাকার ঘনবস্তু ও এর ঢালগুলোকে পিরামিড দ্বারা পৃথককৃত দুটি কিলকাকার ঘণবস্তুতে ভাগ করা যায়। এছাড়াও, লাও হুই আয়তনের কাভালারির নীতি ও গাউসিয়ান বর্জন নীতি ব্যাখ্যা করেন। দ্যা নাইন চ্যাপ্টার্স থেকে প্রাপ্ত সূত্র গুলো যা হান যুগে জানা ছিলো সেগুলো হলো,

    ক্ষেত্রফলের সূত্র[৩১]

    বর্গ আয়তক্ষেত্র বৃত্ত সমদ্বিবাহু ত্রিভুজরম্বজ ট্রাপিজিয়াম ডাবল ট্রাপিজিয়াম বৃত্তাংশ অয়ানুলাস (দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্তের মধ্যকার চক্র)

    আয়তনের সূত্র

    দুটি সমান্তরাল আয়তাকার তলের দুটি অ-আয়তাকার সমান্তরাল তলের পিরামিডের আয়তাকার ভূমি বিশিষ্ট পিরামিডের ফ্রাস্টাম অসমান বাহু বিশিষ্ট আয়তাকাল ভূমির পিড়ামিডের ফ্রাস্টামঘনক প্রিজম আয়তাকার ভূমি ও দুই ঢাল বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তু ট্রাপিজয়েড ভূমি এবং দুই ঢাল বিশিষ্ট কিলকাকার ঘনবস্তু চতুস্তল কিলককিলকাকার বস্তুর ফ্রাস্টম(প্রকৌশলে ব্যাবহারের জন্য) সিলিন্ডার বৃত্তীয় ভূমি বিশিষ্ট সিলিন্ডার কোনকের ফ্রাস্টাম বলয় (গোলক)

    প্রাচীন চীনের জ্যামিতিক ক্ষেত্রে অর্জনের ওপর নির্ভর করে পরবর্তিতে আরো অনেক ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব হয়েছিলো, যাদের মধ্যে ছিলেন জ্যাতির্বীদ ও গণিতবিদ শেন ক্যু (১০৩১ থেকে ১০৯৫ সাল) ও ইয়াং হুই (১২৩৮-১২৯৮ সাল) (যিনি প্যাসকেলের ত্রিভুজ আবিষ্কার করেন), জুজুয়াংকি (১৫৬২-১৬৩৩) এবং প্রমুখ।

    ইসলামি স্বর্নযুগ

    আল জাবর ওয়াল মুখাবালার একটি পৃষ্ঠা

    আরও দেখুন: ইসলামি গণিত

    ৯ম শতকে ইসলামি স্বর্ণযুগ তাঁর শিখরে পৌছায়। এর কেন্দ্র ছিলো বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ বা জ্ঞানগৃহ, যা মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্র, এখানে শুধুমাত্র গ্রিকই নয় একিসাথে ভারতীয় বিজ্ঞানের উন্নতিসাধন হয়েছিলো।

    ইসলামি গণিত বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব ও সংখ্যা পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত হলেও, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি এবং গাণিতিক জ্যাতির্বিদ্যায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং বীজগাণিতিক জ্যামিতির আবির্ভাবের কৃতিত্ব ইসলামি গণিতকে দেওয়া হয়।

    আল-মাহানি (জন্ম ৮২০) অনেক জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান করেন। আল-খারাজি (জন্ম ৯৫৩) জ্যামিতি ও বীজগণিতকে দুটি আলাদা শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পাটীগণিত দ্বারা মৌলিক অপারেশনগুলোকে প্রতিস্থাপন করেন যা আজকের বীজগণিতের মূল।

    থাবিত ইবনে কোররা (লাতিন ভাষায় থেবিত নামে পরিচিত) (জন্ম ৮৩৬) গণিতের অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, তিনি বাস্তব সংখ্যা থেকে সংখ্যা পদ্ধতি, যোগজীকরণ, গোলীয় ত্রিকোনমিতির তত্ত্ব, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি এবং নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা রাখেন। জ্যাতির্বিজ্ঞানে থাবিত টলেমীয় জগৎ সংস্কারে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তাঁকে পরিসংখ্যানের অন্যতম জনক বলা হয়। জ্যামিতিতে থাবিত তাঁর অনুপাত গঠনের ওপর একটি গুরুত্বপুর্ণ বই লেখেন। তাঁর বইয়ে তিনি জ্যামিতিক অনুপাতকে পাটিগণিতের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। গ্রিকরা এবিষয়ে কাজ করলেও, তাঁরা এতে পাটিগণিতের ব্যাবহারে খুব একটা এগোতে পারেনি।

    কিছুক্ষেত্রে থাবিত প্লেটো আর এরিস্টটলের সমাচনা করেছেন, বিশেষত গতি বিষয়ে। তিনি জ্যামিতিতে ব্যাবহৃত একটি যুক্তিকে ব্যাবহার করে তাঁর ধারণা গ্রহণ করেছিলেন। জ্যামিতিতে তাঁর আরেকটি অবদান হলো পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সরলীকরণ[৩২]

    ইব্রাহিম ইবনে সিনান ইবনে থাবিত (জন্ম ৯০৮), যিনি আর্কিমিদিস থেকে সরল যোগজীকরণের ধারণা দিয়েছিলেন, আল-কুহি (জন্ম ৯৪০) মুসলিম বিশ্বে গ্রিক জ্যামিতিকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং এই ধারা অব্যাহত রাখেন। গণিতবিদ, বিশেষত ইবনে হায়সাম আলোকবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং দর্পনের আলোক চরিত্র বর্ননায় কনিক ব্যাবহার করেছেন।

    জ্যোতির্বিজ্ঞান, কাল-রক্ষণ এবং ভূগোল ছিলো তাদের জ্যামিতিক আর ত্রিকোনমিতিক গবেষণার উৎসাহ। উদাহরণস্বরূপ, ইব্রাহিম ইবনে সিনান এবং তাঁর দাদা থাবিব ইবনে কোররা সুর্যঘড়ি তৈরিতে ব্যাবহৃত বক্রতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। আবুল ওয়া’ফা এবং আবু নাসের মনসুর গোলীয় জ্যামিতির ব্যাবহার জ্যাতির্বিজ্ঞানে করেছেন।

    রেনেসাঁ

    এলব্রেখট দুরারের চিত্রকর্ম যাতে মাশাল্লাহ ইবনে আতহারিকে দেখানো হয়েছে, পৃষ্ঠাটির শিরোনাম “দে সায়েন্টিয়া মোটাস অর্বিস (ল্যাটিন সংস্করণ, ১৫০৪)। অন্যান্য মধ্যযুগের চিত্রের মতো, এখানে কম্পাস একি সাথে ধর্ম আর বিজ্ঞানের প্রতীক (ইশ্বরকে সৃষ্টির কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে)

    ধ্রুপদী গ্রিক জ্ঞান ৯ম ও ১০ম শতকের ইসলামি স্বর্ণযুগে লেখা বই গুলোর হাত ধরে ১০ম শতকে ইউরোপে প্রবেশ করে এবং ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। হেনরি আরিটিপ্পুস (মৃত্যু ১১৬২) টলেমির আলমাগেস্ট বইটিকে সিসিলিতে ফিরিয়ে আনেন রাজা প্রথম উইলিয়ামের (রাজত্ব ১১৫৪-১১৬৬) প্রতি উপহার স্বরূপ। একজন বেনামী শিক্ষানুবিস সিসিলিতে ভ্রমণ করেন এবং আলমাগেস্ট সহ ইউক্লিডের বিভিন্ন কর্ম ল্যাটিনে অনুবাদ করেন।[৩৩] সিসিলির মূল অনুবাদ কর্ম গুলো গ্রিক থেকে ল্যাটিনে হলেও, যে লেখাগুলোর গ্রিক পাণ্ডুলিপি ছিলোনা সেক্ষেত্রে আরবি থেকে অনুবাদ করা হয়েছিলো। পালেরমোর ইউজিনিয়াস (মৃত্যু ১২০২) তাঁর তিনটি ভাষার দখল কাজে লাগিয়ে টলেমির অপটিক্স অনুবাদ করেন।[৩৪] ইউক্লিডের অবরহন পদ্ধতির জ্ঞান পুনরায় শেখা হয়েছিলো, ইউক্লিডের (ইউক্লিডীয় জ্যামিতি) এবং খৈয়ামের (বীজগাণিতিক জ্যামিতি) পদ্ধতি অব্যাহত ছিলো এবং এই দুই এর মিশলে নতুন ধারা ও তত্ত্বের উৎপত্তি হয়।

    ১৪-১৫শতকে রেনেসাঁ শিল্পকর্মে দৃষ্টিকোণের ধারণার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়, যা পূর্বের সমস্ত অর্জনকে ছাড়িয়ে যায়। কোয়ার্ট্রোসেন্ট্রোর রেনেসাঁ স্থাপত্যে নতুন স্থাপত্য রীতি গড়ে ওঠে ও নতুন পদ্ধতি ব্যাবহার শুরু হয়। এর প্রথমিক উদাহরণ পাওয়া যায় ফেলিপো ব্রুনেলেস্কির (১৩৭৭-১৪৪৬) ফ্লোরেন্স শহরের সান লরেঞ্জোতে[৩৫]

    ১৪১৩ সালে ফেলিপো ফ্লোরেন্সের বিল্ডিং গুলোর নকশা আয়নাতে ধারণ করে দৃষ্টিকোণের জ্যামিতিক রূপরেখা প্রণয়ন করেন, যা বর্তমানে চিত্রকর্মে ব্যাবহৃত হয়। এর পর পরই ফ্লোরেন্সের প্রায় সব শিল্পীই তাদের চিত্রকর্মে দৃষ্টিকোণের ব্যাবহার শুরু করেন,[৩৬] এই পদ্ধতি শুধুমাত্র চিত্রকর্মে গভিরতা ফুটিয়ে তুলতেই ব্যাবহৃত হতোনা, একি সাথে চিত্রের গঠনেও ব্যাবহার করা হতো। এতে চিত্রকর্ম গুলো খাপছাড়া না হয়ে, কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করে।

    ফ্লোরেন্সে সঠিক দৃষ্টিকোণ পেইন্টিংগুলির দ্রুত বিস্তার থেকে বোঝা যায়, ব্রুনেলেচি সম্ভবত জেনে থাকলেও (তাঁর বন্ধু গণিতবিদ তোসকানেলির মাধ্যমে)[৩৭] গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রকাশ করেননি। কয়েক দশক পরে, তার বন্ধু লিওন বাতিস্তা আলবার্টি ডি পিকটুরা (১৪৩৫-১৪৩৬) গ্রন্থটি লিখেছিলেন, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে চিত্রকলায় দূরত্ব দেখানোর সঠিক পদ্ধতি এতে বর্ণনা করা হয়েছিলো। আলবার্টি পাডুয়ার স্কুলে এবং আলহাজেন’স অপটিক্স’ অধ্যয়নকারী বিয়াজিও পেলাকানি দা পারমার প্রভাবে আলোকবিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত হন।

    পিয়েরো দেল্লা ফ্রান্সেস্কা ১৪৭০ সালে তার দে প্রস্পেকটেভা পিঙ্গেডি গ্রান্থে দেল্লা পিকতুরা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আলবার্টি নিজের কর্ম স্থল সমতলের পরিসংখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন এবং দৃষ্টিকোণের জন্য সামগ্রিক ভিত্তি সৃষ্টি করেন। ডেলা ফ্রান্সেসকা গাণিতিক ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য চিত্রের ব্যবহার শুরু করেন (যা এখন সাধারণ অনুশীলনে পরিণত হয়েছে), যার ফলে আলবার্টির চেয়ে তার গ্রন্থটি বোঝা সহজ হয়েছিল। ডেলা ফ্রান্সেসকা প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্লেটোনিক ঘনবস্তু সঠিকভাবে আঁকেন কারণ তিনি সেগুলি দৃষ্টিকোণ অনুসরণ করে এঁকেছিলেন।

    পরিপ্রেক্ষিত কিছুকাল ফ্লোরেন্সেই আবদ্ধ থেকে গিয়েছিলো। জন ভ্যান আইক লন্ডনের দ্যা আর্নোলফিনি পোর্ট্রেটের মতো চিত্রকর্মে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো তৈরি করতে অক্ষম ছিলেন, কারণ তিনি ইতালিতে ঘটে যাওয়া তাত্ত্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে তিনি তার অভ্যন্তরীণ অংশে স্কেলের হেরফের দ্বারা অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রভাব অর্জন করেছিলেন। ধীরে ধীরে এবং আংশিকভাবে শিল্পকলা একাডেমিগুলির মাধ্যমে ইতালীয় কৌশলগুলি ইউরোপ জুড়ে এবং পরে বিশ্বের অন্যান্য অংশে শিল্পীদের প্রশিক্ষণের অংশ হয়ে ওঠে। এই রেনেসাঁ ঐতিহ্যের সমাপ্তি পরিপ্রেক্ষিত, আলোকবিদ্যা এবং প্রজেক্টিভ জ্যামিতির উপর স্থপতি, ভূগোলবিদ এবং আলোকবিদ জিরার্ড ডেসার্গের গবেষণায় এর চূড়ান্ত সংশ্লেষণ খুঁজে পায়।

    লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ান ম্যান(১৪৯০),[৩৮]এতে একজন ব্যক্তিকে তার বাহু এবং পা আলাদা করে দুটি সম্প্রসারিত অবস্থানে চিত্রিত করে একটি বৃত্ত এবং বর্গক্ষেত্রের মাঝে খোদাই করা হয়েছে। অঙ্কনটি সাথে প্রাচীন রোমান স্থপতি ভিট্রুভিয়াস তার গ্রন্থ ডি আর্কিটেক্টুরা গ্রন্থের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত আদর্শ মানব শরীরের জ্যামিতিক অনুপাতের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

    আধুনিক জ্যামিতি

    সপ্তদশ শতক

    র‍্যনে দেকার্তের গ্রন্থ ডিসকোর্স অন ম্যাথড

    সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে জ্যামিতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছেইলো। প্রথমটি এবং তনমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ছিলো স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, বা স্থানাঙ্ক ব্যবস্থাসমীকরণ সম্পর্কিত জ্যামিতি। এই আবিষ্কারের জনক ছিলেন র‍্যনে দেকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) এবং পিয়ের দ্য ফের্মা (১৬০১-১৬৬৫)। এটি ছিল ক্যালকুলাসের বিকাশের এবং পদার্থবিজ্ঞানের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণগত বিজ্ঞানের জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রদূত। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ছিলো জিরাড ডিসারগাসের (১৫৯১-১৬৬১) অভিক্ষেপ জ্যামিতির গবেষণা। অভিক্ষেপ জ্যামিতি হলো কন প্রকার মাপঝোক ছাড়া এক ধরণের জ্যামিতি, যেখানে দুটি বিন্দুর পারস্পারিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে হেলেনিস্টিক জ্যামিতিবিদের কিছু অবদান পূর্বেই রেখেছিলেন, এনাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পাপ্পুস (৩৪০ সাল)। পরবর্তিতে জাঁ-ভিক্টর পন্সলেট (১৭৮৮-১৮৬৭) এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন।

    ১৭ শতকের শেষে, প্রায় একি সময়ে স্যার আইজাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) এবং গট‌ফ্রিড ভিলহেল্ম লাইব‌নিৎস (১৬৪৬-১৭১৭) ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। এর ফলে গাণিতিক বিশ্লেষণ নামে নতুন এক ধারার জন্ম হয়। যদিও এটি জ্যামিতির অংশ নয় এটি জ্যামিতির অনেক ক্ষেত্রে ব্যাবিহৃত হয়েছে এবং পূর্ব সমাধান করা সম্ভব ছিলোনা এমন অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। বক্ররেখার স্পর্শক রেখা নির্ণয় করা, এবং সেই বক্ররেখা দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বের করা। ক্যালকুলাস এই সমস্যাগুলির বেশিরভাগকেই সহজবোধ্য গণনার বিষয়ে পরিণত করে।

    অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতক

    নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি

    ইউক্লিডের পঞ্চম স্বীকার্য (সমান্তরাল স্বীকার্য হিসেবে পরিচিত) বাকি চারটি স্বীকার্য থেকে কখনো বিস্মৃত হয়নি। ইউক্লিডের পরে বাকি চারটি স্বীকার্য থেকে প্রমাণিত হয়নি এমন কয়েকটি অনুসিদ্ধান্ত ব্যাবহার করে এটি প্রমাণের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যার্থ হয়েছিলো। ওমর খইয়ামও পঞ্চম স্বীকার্য প্রমাণে ব্যার্থ হন, তাঁর ইউক্লিডের স্বীকার্যের সমালোচনা এবং নন-ইউক্লিডিয় পদ্ধতি ব্যাবহার করে প্রমাণ করা পরবর্তিতে নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামির জন্ম দেয়। ১৭০০ সাল নাগাদ প্রথম চারটি স্বীকার্যের অনেক গুলো অনুসিদ্ধান্ত আবিষ্কৃত হয় এবং পঞ্চম স্বীকার্য প্রমাণের অনেক ত্রুটি খুজে বের করা হয়। ১৮ শতকে সাক্কারি, লাম্বার্ট এবং লেগেন্ডার এর প্রত্যেকেই এই সমস্যাটির উপর চমৎকার কাজ করেছিলেন, কিন্তু তবুও তাঁরা সাফল্য পাননি। ১৯ শতকে গাউস, বলিয়ই এবং লোবাচেভস্কি সতন্ত্রভাবে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। সমান্তরাল স্বীকার্যটি প্রমাণ করা অসম্ভব ছিল বলে তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন, তারা একটি স্ব-সংগতিপূর্ণ জ্যামিতি তৈরি করতে শুরু করে যেখানে ধরে নেওয়া হয় স্বীকার্যটি ভুল। তাদের এ পদ্ধতি সফল হয়েছিলো এবং এভাবেই নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির সৃষ্টি হয়। ১৮৫৪ সালের দিকে, গাউসের একজন ছাত্র বের্নহার্ট রিমান সকল মসৃণ তলের অন্তর্নিহিত (স্বয়ংসম্পূর্ণ) জ্যামিতির একটি যুগান্তকারী গবেষণায় ক্যালকুলাসের প্রয়োগ করেছিলেন এবং এর ফলে একটি ভিন্ন নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পাওয়া যায়।

    উইলিয়াম ব্লেইকের “নিউটন” তাঁর বৈজ্ঞানিক বাস্তুবাদের একক ধারার বিরোধীতার উদাহরণ। এখানে আইজাক নিউটনকে একজন ‘ঐশ্বরিক জ্যামিতিবিদ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে (১৭৯৫)

    এটা গাণিতিকভাবে প্রমাণ করা বাকি ছিল যে নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মতোই স্ব-সংগতিপূর্ণ। এবং এটি প্রথম ১৮৬৮ সালে বেলট্রামি এই কাজটি সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথে সমান গাণিতিক ভিত্তিতে নন-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

    যদিও এটি জানা ছিল যে বিভিন্ন জ্যামিতিক তত্ত্ব গাণিতিকভাবে সম্ভব ছিল, প্রশ্ন থেকে যায়, “এই তত্ত্বগুলির মধ্যে কোনটি আমাদের ভৌত জগতের জন্য সঠিক?” গাণিতিক কার্যক্রম দেখিয়েছে যে এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে দিতে হবে, গাণিতিক যুক্তির মাধ্যমে নয়, এবং পরীক্ষায় প্রচুর (আন্তঃনাক্ষত্রিক, অপার্থিব) দূরত্ব জড়িত হওয়ার কারণ উন্মোচিত হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিকাশের সাথে, এই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

    গাণিতিক কঠোরতার প্রবর্তন

    সমান্তরাল স্বীকার্য সম্পর্কিত সমস্ত গবেষণা প্রকাশ করেছে যে একটি জ্যামিতিবিদের পক্ষে যুক্তি থেকে ভৌত স্থান সম্পর্কে তার স্বজ্ঞাত উপলব্ধি আলাদা করা বেশ কঠিন এবং উপরন্তু, এর মাধ্যমে গুরুত্ব আরো বেশি প্রকাশ করে। পরীক্ষার মাধ্যমে ইউক্লিডের যুক্তিতে কিছু যৌক্তিক অপ্রতুলতা এবং কিছু অনির্ধারিত জ্যামিতিক নীতির উন্মোচিত হয়েছে যা ইউক্লিড কখনও কখনও ধারণা করেছিলেন। এই সমালোচনাটি ক্যালকুলাস এবং বিশ্লেষণের অসীম প্রক্রিয়ার অর্থ যেমন অভিসারণ করে, তেমনি ধারাবাহিকতা সম্পর্কিত সঙ্কটকেও প্রকাশ করে। জ্যামিতিতে স্বতঃসিদ্ধের নতুন স্পষ্ট একটি সেটের প্রয়োজন ছিল, যা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং যা কোনোভাবেই আমাদের ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান সম্পর্কে আমাদের অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভর করবে না। এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধগুলো বর্তমানে হিলবার্টের স্বতঃসিদ্ধ হিসাবে পরিচিত,যার ধারণা ডেভিড হিলবার্ট ১৮৯৪ সালে তাঁর গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি (জ্যামিতির ভিত্তি) শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধে দিয়েছিলেন। স্বতঃসিদ্ধের আরও কয়েকটি সেট কয়েক বছর আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল, কিন্তু হিলবার্টের স্বতঃসিদ্ধের মতো সেগুলো অর্থনীতিতে, কমনীয়তায় এবং ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতার সাথে সাদৃশ্যে তুলনীয় ছিল না।

    বিশ্লেষণীক পরিস্থিতি, বা টপোলজি

    অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাত্রায় গাণিতিক যুক্তির কিছু অগ্রগতির পুনরাবৃত্তি হয় যখন একই ধারণাগুলি নিয়ে সংখ্যারেখা ব্যাবহার করে গবেষণা করা হয়। এইভাবে একটি মেট্রিক জগতের সাধারণ ধারণা তৈরি কর হয় যাতে যুক্তিটি আরও সহজবোধ্য করা যায় এবং তারপরে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। ক্যালকুলাস- এবং বিশ্লেষণ-সম্পর্কিত ধারণাগুলি অধ্যয়নের এই পদ্ধতিটি বিশ্লেষণ পরিস্থিতি নামে এবং পরে টপোলজি হিসাবে পরিচিতি পায়। সরলতা এবং দৈর্ঘ্য এবং কোণ পরিমাপের সুনির্দিষ্ট সমতার মতো (যা ইউক্লিডীয় এবং অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল) বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তে এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ছিল আরও সরল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যেমন যোজন এবং সীমা। টপোলজি অচিরেই জ্যামিতি বা বিশ্লেষণের উপ-ক্ষেত্রের পরিবর্তে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি পৃথক ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

    বিংশ শতাব্দী

    বীজগণিতীয় জ্যামিতির বিকাশের মধ্যে রয়েছে বক্ররেখা এবং পৃষ্ঠতলের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রের অধ্যয়ন, যা আন্দ্রে ওয়েইল, আলেকজান্ডার গ্রোথেনডিক এবং জ্যঁ-পিয়েরো সেরের গবেষণা এবং বাস্তব বা জটিল সংখ্যার গবেষণা দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছে। সীমিত জ্যামিতি (শুধুমাত্র সীমিতভাবে অনেকগুলি বিন্দু সহ সমতল বা জগতের অধ্যয়ন) কোডিং তত্ত্ব এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিতে ব্যাবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটারের আবির্ভাবের সাথে সাথে নতুন শাখা যেমন কম্পিউটেশনাল জ্যামিতি বা ডিজিটাল জ্যামিতিতে জ্যামিতিক অ্যালগরিদম, জ্যামিতিক ডেটার বিচ্ছিন্ন উপস্থাপনা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

  • জ্যামিতি

    জ্যামিতি গণিতের একটি শাখা যেখানে আকার ও আকৃতি এবং পরিমান এতদসম্পর্কিত বিভিন্ন আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়।[১] জ্যামিতিকে স্থান বা জগতের বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা যায়। পাটিগণিতে যেমন গণনা সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তেমনি জ্যামিতিতে স্থান বা জগৎ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রাথমিক জ্যামিতিকে কাজে লাগিয়ে দ্বি-মাত্রিক বিভিন্ন আকারের ক্ষেত্রফলপরিসীমা এবং ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব।

    জ্যামিতিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি

    জ্যামিতিতে কতগুলি সরল ধারণা ব্যবহার করে যুক্তিভিত্তিক জটিলতর কাঠামো গঠন করা হয়। এই সরল ধারণাগুলিকে মোটামুটি তিনটি বড় শ্রেণীতে ভাগ করা সম্ভব – অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ, সংজ্ঞায়িত পদসমূহ এবং স্বতঃসিদ্ধসমূহ।

    অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ

    জ্যামিতির কিছু কেন্দ্রীয় ধারণার কোন সরল সংজ্ঞা নেই। এই অসংজ্ঞায়িত ধারণাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল বিন্দু, রেখাতলের ধারণা।

    এই মৌলিক ধারণাগুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। একটি বস্তু কোথায়? – এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট, স্থির অবস্থানের কথা চিন্তা করতে হয়। “বিন্দু” পদটি দিয়ে আমাদের এই স্বজ্ঞাভিত্তিক (intuitive) স্থির, নির্দিষ্ট অবস্থানের ধারণাকেই নির্দেশ করা হয়। অনেক ভৌত বস্তুই বিন্দুর ধারণা নির্দশ করে। যেমন কোন ব্লক আকৃতির বস্তুর কোনা, পেন্সিলের ডগা, কিংবা কাগজের উপর ফুটকি। এই জিনিসগুলিকে বিন্দু নামক মানসিক, বিমূর্ত ধারণাটির বাস্তব, মূর্ত প্রতিরূপ বা মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে একটি টানটান সুতা, টেবিলের ধার, পতাকাবাহী দণ্ড, ইত্যাদি পরপর সাজানো অনেকগুলি বিন্দুকে নির্দেশ করে। যদি কল্পনা করা যায় যে এই বিন্দুসারি দুই দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে আমরা যে মানসিক ধারণাতে উপনীত হই, জ্যামিতিতে তার নাম দেয়া হয়েছে “রেখা”। আর “তল” পদটি কোন চ্যাপ্টা পৃষ্ঠ যেমন- মেঝে, টেবিলের উপরিভাগ, কিংবা ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি ভৌত বস্তু দিয়ে নির্দেশ করা যায়। কিন্তু আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হবে যে এটি চারিদিকে অসীম পর্যন্ত সম্প্রসারিত, অর্থাৎ রেখার যেমন কোন শেষবিন্দু নেই, ঠিক তেমনি তলের কোন ধার নেই।

    জ্যামিতির অন্যান্য অসংজ্ঞায়িত পদগুলি বিন্দু, রেখা ও তলের মধ্যে সম্পর্কের বর্ণনা দেয়। যেমন – “একটি রেখার উপর অবস্থিত একটি বিন্দু” বাক্যাংশটি একটি অসংজ্ঞায়িত সম্পর্ক। অর্থাৎ এটিকে আরও কোন সরলতর ধারণার সাহায্য নিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

    সংজ্ঞায়িত পদসমূহ

    অসংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একত্র করে অন্যান্য পদের সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব, যেগুলিকে বলা হয় সংজ্ঞায়িত পদ। যেমন অসমরেখ বিন্দু বলতে সেইসব বিন্দুকে বোঝায় যারা একই রেখার উপর অবস্থিত নয়। একটি রেখাংশ বলতে বোঝায় কোন দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও এদের মধ্যবর্তী সমস্ত বিন্দু নিয়ে গঠিত কোন রেখার অংশ। আবার রশ্মি বলতে বোঝায় একটি আংশিক রেখাকে বোঝায় যার একটিমাত্র শেষবিন্দু আছে এবং বাকি সমস্ত বিন্দু ঐ শেষবিন্দু থেকে কোন এক দিকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত।

    সংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একে অপরের সাথে এবং অসংজ্ঞায়িত পদের সাথে একত্র করে আরও অনেক পদের সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন – কোণ বলতে দুইটি রশ্মিকে বোঝায় যাদের একটি সাধারণ শেষবিন্দু আছে। একইভাবে ত্রিভুজ ধারণাটিকে তিনটি অসমরেখ বিন্দু এবং এদের মধ্যে অবস্থানকারী রেখাংশের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

    স্বতঃসিদ্ধসমূহ

    স্বীকার্য বা স্বতঃসিদ্ধগুলি হচ্ছে অপ্রমাণিত কিন্তু সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত কিছু অনুমান, যেমন – “দুইটি ভিন্ন বিন্দুর মধ্য দিয়ে একটি এবং কেবলমাত্র একটি রেখা গমন করতে পারে”। যে ব্যবস্থা বা সংশ্রয়ে বিন্দু, রেখা ও তল সম্পর্কিত কতগুলি বিরোধিতাহীন স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাব করা হয় এবং এই স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়, সেই সংশ্রয়কে একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা (বা সংক্ষেপে জ্যামিতি) বলা হয়। স্বতঃসিদ্ধসমূহের বিভিন্ন সেট ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থায় উপনীত হওয়া সম্ভব।

    যদি ভৌত স্থান বা জগতের অভিজ্ঞতার সাথে স্বতঃসিদ্ধগুলির মিল থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে আশা করা যায় যে ঐ স্বতঃসিদ্ধগুলি ব্যবহার করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলিও ভৌত জগতের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যাবে। তবে যেহেতু যেকোন স্বতঃসিদ্ধের সেটই খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পছন্দ করা হয়, সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তগুলিও বাস্তব জগতের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে না। তাই কিছু কিছু জ্যামিতিক ব্যবস্থা বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ প্রয়োগ না-ও করা যেতে পারে।

    উপপাদ্যসমূহ

    উপপাদ্যগুলি স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে যুক্তিভিত্তিক আরোহী পদ্ধতিতে বের করা হয়। আর এই আরোহী পদ্ধতিকে বলা হয় উপপাদ্যটির প্রমাণ। কোন প্রমাণের প্রতিটি ধাপকে হয় কোন স্বতঃসিদ্ধ অথবা কোন পূর্ব-প্রমাণিত উপপাদ্য দিয়ে সমর্থিত হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি উপপাদ্য বলে যে, যদি একটি রেখা কোন সমান্তরাল রেখাজোড়ের যেকোন একটির সাথে সমান্তরাল হয়, তবে সেটি রেখাজোড়ের অপর রেখাটির সাথেও সমান্তরাল। এখানে সমান্তরাল রেখা বলতে সেই সব রেখাকে বোঝায় যারা একে অপরের থেকে তাদের গোটা দৈর্ঘ্য বরাবর সমান দূরত্ব বজায় রাখে।

    আমরা যখন জ্যামিতিতে কোন উপপাদ্য প্রমাণ করি, তখন আমরা কতগুলি অনুমানের একটি সেট থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই।

    ইউক্লিডীয় জ্যামিতি

    বিভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থার মধ্যে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথেই আমরা বেশি পরিচিত। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক জগতের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের নামে এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে, কেননা তিনিই প্রথম এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার বিবরণ দেন। যদিও ইউক্লিডীয় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধগুলির সাথে বাস্তব জগতের অনেক মিল পাওয়া যায়, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এগুলি পুরোপুরি নিখুঁত নয়।

    দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেকসময় সমতলীয় জ্যামিতি এবং ত্রি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেক সময় ঘন জ্যামিতি নামে ডাকা হয়। সমতলীয় জ্যামিতিতে কেবল সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলি কেবল একটি তলের উপর অবস্থিত। এগুলির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ – এই দুইটি মাত্রা আছে। অন্যদিকে ঘন জ্যামিতিতে সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলির তিনটি মাত্রা আছে: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা।

    ত্রিমাত্রিক ফাঁপা কোণককে একটি তল দিয়ে কাটলে যে দ্বিমাত্রিক রেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে; এটি জ্যামিতির একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

    ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধসমূহ

    ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের জ্যামিতিবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার সময়কার বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্যগুলিকে খুবই অল্প সংখ্যক স্বতঃসিদ্ধের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি নির্ণয় করেন যে নিচের মাত্র পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে সমস্ত উপপাদ্যতে উপনীত হওয়া যায়:

    1. যেকোন দুইটি প্রদত্ত বিন্দুর মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।
    2. কোন সরলরেখাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করা যায় কিংবা যেকোন বিন্দুতে সীমাবদ্ধ করা যায়।
    3. যেকোন বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে ও যেকোন ব্যাসার্ধ (বৃত্তের যেকোন বিন্দু থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব) নিয়ে একটিমাত্র বৃত্ত আঁকা সম্ভব।
    4. সব সমকোণ সবসময় সমান।
    5. একটি প্রদত্ত সরলরেখার বহিঃস্থ একটি প্রদত্ত বিন্দু দিয়ে প্রথম সরলরেখার সমান্তরাল কেবলমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।

    উপরের পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধকে অন্যান্য সংজ্ঞায়িত পদের সাথে বিভিন্নভাবে সমন্বিত করে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিক বস্তুর ধর্মগুলি (যেমন ক্ষেত্রফল, পরিধি, ইত্যদি) প্রমাণ করা সম্ভব। এই ধর্মগুলি আবার আরও জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্যের প্রমাণে ব্যবহার করা যায়।

    দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতি

    দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে প্রায়শই দেখা যায় এমন জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে আছে বৃত্ত, বহুভুজ, ত্রিভুজ, এবং চতুর্ভুজসমূহ। ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ দুইটি বিশেষ ধরনের বহুভুজ।

    বৃত্ত

    বৃত্ত একটি সমতলীয় বক্ররেখা যার প্রতিটি বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত একটি নিদিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী, এই নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে।তিনটি অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব। অনেকসময় বৃত্ত বলতে শুধু বক্ররেখাটিকে না বুঝিয়ে রেখাটি দ্বারা সম্পূর্ণ ক্ষেত্রকেও বোঝানো হয়।

    যেসব বৃত্তের একটি সাধারণ কেন্দ্র আছে তাদেরকে সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বলা হয়। যেসব কোণের শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্র এবং দুই বাহু বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ, সেগুলিকে বৃত্তের কেন্দ্রীয় কোণ বলে। বৃত্তের পরিধিকে ৩৬০টি সমান ভাগ বা ডিগ্রিতে ভাগ করা হয় এবং কোন কেন্দ্রীয় কোণের ডিগ্রি পরিমাপ ঐ কোণটি বৃত্ত থেকে যে চাপ ছেদ করে তাতে অন্তর্গত ডিগ্রির সংখ্যার সমান।

    বৃত্তের পরিধি (C) ও ব্যাসের (d) গুণফলকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে এর ক্ষেত্রফল A পাওয়া যায় অর্থাৎ A = C d 4 {\displaystyle A={\frac {Cd}{4}}} । পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতের আসন্ন মান ৩.১৪১৫৯২৬৫। দশমিকের পরে অসীমসংখ্যক অ-পর্যায়বৃত্ত অঙ্কবিশিষ্ট এই ধ্রুবকটিকে পাই নামে ডাকা হয়। বৃত্তের ক্ষেত্রফলকে A = π r 2 {\displaystyle A=\pi r^{2}} আকারেও লেখা যায়, যেখানে r হল ব্যাসার্ধ। একইভাবে, বৃত্তের পরিধি হল ব্যাস ও পাই-এর গুণফল C = π d {\displaystyle C=\pi d}

    বহুভুজ

    সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল যেকোন চিত্রকে বহুভুজ বলা হয়। যদি বহুভুজের সবগুলি বাহু ও কোণ সমান হয়, তবে সেটিকে সুষম বহুভুজ বলে। সুষম বহুভুজের কেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর দূরত্বকে apothem বলে। কোন সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল হল এর apothem (a) ও পরিসীমার (p) গুণফলের অর্ধেক, অর্থাৎ A = 1 2 a p {\displaystyle A={\frac {1}{2}}ap}

    ত্রিভুজ

    মূল নিবন্ধ: ত্রিভুজ

    ত্রিভুজ হল সমতলের উপর অঙ্কিত একটি চিত্র যা তিনটি সরলরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। যদি ত্রিভুজের তিনটি বাহুই অসম হয়, তবে একে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে। আর কেবল দুই বাহু সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং তিনটি বাহুই সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলা হয়। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজে সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণগুলি সমান। আর সমবাহু ত্রিভুজের সবগুলি কোণ সমান।

    যে ত্রিভুজের একটি কোন সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে। সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুর নাম অতিভুজ। পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্য অনুযায়ী সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ত্রিভুজটির সমকোণ-সংলগ্ন দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দুটির ক্ষেত্রফলের যোগফলের সমান। অর্থাৎ a 2 + b 2 = c 2 {\displaystyle a^{2}+b^{2}=c^{2}} যেখানে c অতিভুজের দৈর্ঘ্য এবং a ও b হলো সমকোণ-সংলগ্ন বাহুদুটির দৈর্ঘ্য৷

    ত্রিভুজের ভিতরের কোনগুলিকে অন্তঃস্থ কোণ বলে, আর ত্রিভুজের বাহুগুলিকে বাড়িয়ে দিয়ে যে কোণগুলি পাওয়া যায়, তাদেরকে হলে বহিঃস্থ কোণ। ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি ১৮০°। এছাড়াও, যেকোন বহিঃস্থ এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণদ্বয়ের সমষ্টির সমান।

    ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত আঁকা রেখাকে বলা হয় ত্রিভুজটির একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা একই বিন্দুতে ছেদ করে এবং এটি প্রতিটি মধ্যমার শীর্ষবিন্দু থেকে দুই-তৃতীয়াংশ দূরত্বে অবস্থিত। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বকে ঐ ত্রিভুজের উচ্চতা বলে।

    দুইটি ত্রিভুজকে সর্বসম বলা হয় যদি এগুলি নিচের তিনটি শর্তের যেকোনটি পূরণ করে: (১) একটি ত্রিভুজের এক বাহু ও দুইটি কোণ অন্যটির অনুরূপ বাহু ও দুইটি কোণের সমান; (২) কোন একটি ত্রিভুজের দুই বাহু এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ অন্য ত্রিভুজটির দুই বাহু ও অন্তর্ভুক্ত কোণের সমান; অথবা (৩) একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু অপর ত্রিভুজের তিন বাহুর সমান। যদি একই সমতলে অবস্থিত দুইটি ত্রিভুজকে নিখুঁতভাবে একটির উপর আরেকটিকে বসিয়ে দেয়া যায়, তবে তারা সরাসরি সর্বসম। আর যদি বসানোর আগে একটিকে উল্টে নিতে হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি বিপরীতভাবে সর্বসম।

    যদি দুইটি ত্রিভুজের একটির সবগুলি কোণ অন্যটির সবগুলি কোণের সমান হয়, তবে তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয় এবং এদের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক হয়।

    ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর ভূমি (b) ও এই ভূমির উপর অঙ্কিত উচ্চতার (h) গুণফলের অর্ধেক ( S = 1 2 b h {\displaystyle S={\frac {1}{2}}bh})। যেকোন বাহুকেই ভূমি ধরা যায়। যদি ত্রিভুজটি সমবাহু হয়, তবে এর ক্ষেত্রফল S = 3 4 a 2 {\displaystyle S={\frac {\sqrt {3}}{4}}a^{2}}, যেখানে a যেকোন বাহুর দৈর্ঘ্য। যদি কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহু a, b এবং c হয়, তবে গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের দেয়া সূত্র অনুযায়ী এর ক্ষেত্রফল S = s ( s − a ) ( s − b ) ( s − c ) S = \sqrt{s(s-a)(s-b)(s-c)}, যেখানে s ত্রিভুজের পরিসীমার অর্ধেক s = ( a + b + c ) 2 {\displaystyle s={\frac {(a+b+c)}{2}}}

    চতুর্ভুজ

    চতুর্ভুজ হল চারটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল ক্ষেত্র। যেসব বিভিন্ন চতুর্ভুজের সাথে আমরা অতিপরিচিত তাদের মধ্যে আছে ট্রাপিজিয়াম, যার দুইটি সমান্তরাল কিন্তু অসমান। সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলি সমান ও সমান্তরাল। রম্বস এক ধরনের সামান্তরিক যার সবগুলি বাহু সমান। আয়তক্ষেত্র এক ধরনের সামান্তরিক যার কোণগুলি সমকোণ। বর্গক্ষেত্র হল সমান বাহুবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্র। সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। আয়োতক্ষেত্রের কর্ণদ্বয় সমান। যেসব চতুর্ভুজের বাহুগুলি অসমান ও অসমান্তরাল, তাদেরকে বিষম চতুর্ভুজ বলে।

    ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল এর সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেক: A = [(b1 + b2)/2]h। সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের সমান: A = bh।

    বিষম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল গণনার জন্য চতুর্ভুজটিকে সাধারণত কর্ণের সাহায্যে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নেয়া হয় এবং তারপর ত্রিভুজ দুইটির ক্ষেত্রফল আলাদা করে বের করে যোগ করে সম্পূর্ণ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করা হয়।

    ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতিসমূহ

    ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে যে বস্তুগুলি প্রায়োই আলোচিত হয় তাদের মধ্যে আছে গোলক, বহুতলক, ত্রিশিরা বা প্রিজম, বেলন বা সিলিন্ডার, ও কোণক। বেলন আসলে প্রিজমেরই একটি বিশেষ রূপ; আর কোণক পিরামিডের বিশেষ রূপ।

    গোলক

    গোলক একটি তল যার সমস্ত বিন্দু কেন্দ্র নামের একটি বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। গোলককে একটি সমতল দিয়ে ছেদ করলে ছেদবিন্দুগুলি একটি বৃত্ত গঠন করে। তলটি গোলকের কেন্দ্র দিয়ে গেলে এরূপ বৃহত্তম বৃত্তটি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিষুবরেখা এরকম একটি বৃহত্তম বৃত্ত (যদি পৃথিবীকে একটি গোলক কল্পনা করি)। গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল A = 4pr2, এবং আয়তন V = 4/3pr3 সমীকরণ দিয়ে পাওয়া যায়।

    বহুতলক

    সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ যেকোন ঘনবস্তুকে বহুতলক বলে। যদি কোন বহুতলকের পৃষ্ঠগুলির প্রতিটি সর্বসম সুষম বহুভুজ হয়, তবে এটিকে সুষম বহুতলক বলা হয়। প্রমাণ করা হয়েছে যে কেবল পাঁচ রকমের বহুতলকের জন্য সুষম বহুতলক সম্ভব। এগুলি হল চতুস্তলক (চারটি তল), ঘনক (ছয়টি তল), অষ্টতলক (আটটি তল), দ্বাদশতলক (১২টি তল), এবং বিশতলক (২০টি তল)। প্রাচীন গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা এই পাঁচটি বহুতলক সম্পর্কে জানতেন। সুষম কিংবা অসম, যেকোন বহুতলকের একটি বিশেষ ধর্ম হচ্ছে এর তলের সংখ্যা ও শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা যোগ করে ২ বিয়োগ করলে এর ধারের সংখ্যা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও বহুতলকগুলির সাথে প্রকৃতির রহস্যময়তার সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হত।

    ত্রিশিরা বা প্রিজম

    প্রিজম হচ্ছে এমন এক ধরনের বহুতলক যার দুইটি পৃষ্ঠ পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম (এদেরকে ভূমি বলে) এবং যার অন্য সব পৃষ্ঠ সামান্তরিক। parallelepiped এক ধরনের প্রিজম যার ভূমিদ্বয় সামান্তরিক। একটি সমকোণী প্রিজমের তলগুলি আয়তাকার(ভূমিগুলি আয়তাকার হতেও পারে নাও হতে পারে)। প্রিজমের আয়তন এর যেকোন ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল: V = bh.

    পিরামিড

    পিরামিড একটি বহুতলক যার ভূমি একটি বহুভুজ এবং পার্শ্বগুলি একই শীর্ষবিন্দুবিশিষ্ট ত্রিভুজ। যদি কোন পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভুজ হয় এবং এর শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রবিন্দুকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হয়, তবে এটিকে সুষম সমকোণী পিরামিড বলে। পিরামিডের ক্ষেত্রফল এর ভূমির ক্ষেত্রফলের এক-তৃতীয়াংশ ও এর উচ্চতার গুণফলের সমান।

    বেলন বা সিলিন্ডার ও কোণক

    বেলন বা সিলিন্ডার হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট প্রিজম। এর আয়তনের সূত্রও তাই প্রিজমের মত ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল দিয়ে বের করা হয়। যদি দুইটি ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমিদ্বয়ের উপর লম্ব হয়, তবে সেই সিলিন্ডারকে সমকোণী সিলিন্ডার বলা হয়। নতুবা একে তির্যক সিলিন্ডার বলে।

    কোণক (cone) হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট পিরামিড। পিরামিডের শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হলে তাকে সমকোণী কোণক বলে। b ক্ষেত্রফলের ভূমি ও h উচ্চতার কোণকের আয়তনের সূত্র পিরামিডের অনুরূপ: V = €bh

    কনিক ছেদ

    কোণকের পৃষ্ঠতলকে সমতল একটি তল দিয়ে ছেদ করলে যে বক্ররেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে (উল্লেখ্য এখানে কোণক বলতে আসলে দুইটি সমকোণী বৃত্তভূমিক কোণকের একটিকে উল্টিয়ে দুই শীর্ষবিন্দু একত্রে স্থাপন করলে যে জ্যামিতিক চিত্রটি তৈরি হয়, তাকে বোঝাচ্ছে)। শীর্ষবিন্দুর দুইপাশের কোণকের যেকোন পৃষ্ঠকে nappe বলে।

    যদি কোণকের অক্ষ ও এর পৃষ্ঠের অন্তর্বর্তী কোণ A হয় এবং কোণকটিকে একটি তল A-এর চেয়ে বড় কোণে ছেদ করে, তবে ছেদরেখাটি হয় একটি বদ্ধ বক্ররেখা যার নাম উপবৃত্ত। যদি তলটি কোণককে অক্ষের সাথে লম্বভাবে ছেদ করে, তবে যে আবদ্ধ বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তার নাম বৃত্ত। বৃত্ত তাই উপবৃত্তের একটি বিশেষ রূপ।

    যদি তলটি অক্ষের সাথে A কোণের সমান কোণ করে ছেদ করে, অর্থাৎ কোণকের পৃষ্ঠতলের সমান্তরালে ছেদ করে, তবে যে উন্মুক্ত ও অসীমে বিস্তৃত বক্ররেখাটি ছেদরেখা হিসেবে পাওয়া যায়, তাকে পরাবৃত্ত বলে। আর যদি তলটি অক্ষের সমান্তরালে বা A কোণের চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোণে ছেদ করে, তবে যে বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তাকে অধিবৃত্ত বলে। এইক্ষেত্রে কোণকটির উভয় nappe-ই ছিন্ন হয়, ফলে অধিবৃত্তের দুইটি শাখা থাকে, যাদের প্রতিটি অসীম পর্যন্ত প্রসারিত।

    যেহেতু কনিক ছেদগুলি দ্বিমাত্রিক বক্ররেখা, তাই এদের সংজ্ঞায় ত্রিমাত্রিক কোণকের উল্লেখ না করে অন্য উপায়ে সংজ্ঞা দেয়া হয়। দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোণকীয় ছেদ হল সেই সমস্ত বিন্দুর চলনপথ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যেগুলির দূরত্ব এবং ঐ নির্দিষ্ট বন্দুর বহিঃস্থ একটি নির্দিষ্ট রেখা থেকে ঐ একই বিন্দুগুলির দূরত্ব একটি ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় ফোকাস বা উপকেন্দ্র, এবং নির্দিষ্ট রেখাটিকে বলা হয় নিয়ামক বা দিগাক্ষ। ধ্রুব অনুপাতটিকে বলা হয় কনিক ছেদের উৎকেন্দ্রিকতা এবং একে e দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যদি P একটি বিন্দু হয় এবং Q বিন্দুটি P থেকে দিগাক্ষরেখার উপর অঙ্কিত লম্বের পাদবিন্দু হয়, তবে P বিন্দুটির F ফোকাসবিশিষ্ট একটি কনিক ছেদের উপর অবস্থিত হওয়ার একমাত্র শর্ত হল [FP] = e[QP]। যখন e = ১ তখন কনিকটি একটি পরাবৃত্ত; যখন e > ১, তখন এটি অধিবৃত্ত; এবং যখন e < ১, এটি একটি উপবৃত্ত।

    কনিকের অনেক গাণিতিক বৈশিষ্ট্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোন কনিকের আকারে নির্মিত দর্পণে আলো নির্দিষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রতিফলিত হয়। বৃত্তাকার দর্পণের ফোকাস থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আবার ফোকাসে ফিরে আসে। উপবৃত্তাকার দর্পণের দুইটি ফোকাসের যেকোন একটি থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলনের পর অন্য ফোকাসটি দিয়ে গমন করে। পরাবৃত্তীয় দর্পণে ফোকাস থেকে উৎসারিত আলো প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রেখায় গমন করে, এ কারণে স্পটলাইটে পরাবৃত্তীয় দর্পণ ব্যবহার করা হয়, যেন আলো চারপাশে বিক্ষিপ্ত না হয়। অধিবৃত্তের একটি ফোকাস থেকে উৎসারিত আলোকরশ্মি প্রতিফলনের পর এমনভাবে গমন করে যেন মনে হয় এগুলি অন্য ফোকাসটি থেকে উৎসারিত হচ্ছে।

    এই ত্রিমাত্রিক চিত্রটি উত্তর মেরু থেকে গোলকের নিচে একটি সমতলের উপর স্টেরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ প্রদর্শন করে।

    বিশ্লেষণী জ্যামিতি

    কিছু কিছু সাংখ্যিকবীজগাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বিন্দু, রেখা এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতি নির্দেশ করা যায়, এই উপলব্ধি থেকেই বিশ্লেষণী জ্যামিতির জন্ম। অক্ষ ও স্থানাঙ্ক ব্যবহার করে সমীকরণগুলির চিত্রলেখ অঙ্কনের মাধ্যমে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য আকৃতি নির্দেশ করা সম্ভব। যেমন, লম্বভাবে অবস্থিত দুইটি অক্ষ থেকে দূরত্ব নির্দেশ করে কোন একটি বিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব। যদি কোনো বিন্দু x-অক্ষ থেকে ৫ একক দূরে এবং y-অক্ষ থেকে ৭ একক দূরে অবস্থিত হয়, তবে এটির অবস্থান x = 7, y = 5, এই সমীকরণ দুইটি দিয়ে নির্দেশ করা সম্ভব। একইভাবে, একটি সরলরেখাকে সবসময় ax + by + c = 0 আকারের একটি সমীকরণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়। বৃত্ত, উপবৃত্ত, কোণীয় ছেদ ও অন্যান্য আকৃতির জন্য আরও জটিল সমীকরণ আছে।

    বিশ্লেষণী জ্যামিতিতে দুই ধরনের সমস্যা খুবই সাধারণ। প্রথম ধরনের সমস্যাতে কতগুলি বিন্দুর জ্যামিতিক বিবরণ দেয়া থাকে, এবং সেখান থেকে এই বিন্দুগুলিকে সিদ্ধ করে এমন বীজগাণিতিক সমীকরণ করতে হয়। দ্বিতীয় ধরনের সমস্যা এর বিপরীত: প্রদত্ত বীজগাণিতিক সমীকরণ থেকে এমন কোন বিন্দু সমাহার বের করতে হয় যেগুলি একটি জ্যামিতিক বিবৃতি মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ ৩ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্ত যার কেন্দ্র x ও y অক্ষের ছেদবিন্দু তথা মূলবিন্দুতে অবস্থিত, সেটির সমস্ত বিন্দু x 2 + y 2 = 9 {\displaystyle x^{2}+y^{2}=9} সমীকরণ মেনে চলবে। এই ধরনের সমীকরণ ব্যবহার করে জ্যামিতিক অন্যান্য সমস্যা যেমন কোন কোণ বা রেখাংশের সমদ্বিখণ্ডক বের করা, বা কোন রেখার নির্দিষ্ট বিন্দুতে লম্ব আঁকা, তিনটি প্রদত্ত অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে বৃত্ত আঁকা, ইত্যাদি সম্পাদন করা যায়।

    একইভাবে তিনটি অক্ষ ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক জগতে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য চিত্র নির্দেশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তৃতীয় অক্ষ বা z অক্ষটি পর দুইটি অক্ষের উপর লম্বভাবে অবস্থিত থাকে।

    গণিতের উন্নয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতি মূল্যবান ভূমিকা রাখে। এটি সংখ্যার সম্পর্ক তথা বিশ্লেষণী গণিতের সাথে জ্যামিতি তথা স্থানিক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করে। বিশ্লেষণী জ্যামিতির কৌশলগুলি সংখ্যা ও বীজগাণিতিক রাশিমালার জ্যামিতিক উপস্থাপন সম্ভব করে। ফলে ক্যালকুলাস, ফাংশনের তত্ত্ব, ও উচ্চতর গণিতের অন্যান্য সমস্যা নতুন আলোকে দেখার সুযোগ হয়। বিশ্লেষণী জ্যামিতি ছাড়া অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও তিনের অধিক মাত্রার জ্যামিতির আলোচনা সম্ভবপর হত না।

    অন্তরক জ্যামিতি

    জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস ভূমি জরিপ ও প্রভূমিতি (geodesy) সংক্রান্ত ব্যাবহারিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অন্তরক জ্যামিতি শাখা শুরু করেন। এতে তিনি অন্তরক ক্যালকুলাস ব্যবহার করে বক্ররেখা ও বক্রতলসমূহের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি গাণিতিকভাবে দেখান যে একটি বেলনের স্বকীয় বক্রতা ও একটি সমতলের স্বকীয় বক্রতা একই, কেননা একটি ফাঁপা বেলনকে অক্ষ বরাবর কেটে চ্যাপ্টা করলে এটি একটি সমতলে পরিণত হয়, কিন্তু গোলকের ক্ষেত্রে রূপবিকার না করে এটি করা যায় না।

    অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি

    ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ বলে যে কোনো প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ একটি বিন্দু দিয়ে ঐ রেখার সমান্তরাল কেবল একটি রেখা আঁকা সম্ভব এবং এই সমান্তরাল রেখা কখনোই প্রদত্ত রেখাটিকে স্পর্শ করবে না, অসীম পর্যন্ত সমান্তরালে চলতে থাকবে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে জার্মান গণীতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, রুশ গণিতবিদ নিকলাই ইভানভিচ লোবাচেভ্‌স্কি এবং হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ ইয়ানোশ বলিয়ই একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে দেখান যে এমন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে ইউক্লিডের এই পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য একটি স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব যেটি বলে যে কোন প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ কোন বিন্দু দিয়ে রেখাটির সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা আঁকা সম্ভব। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে জার্মান গণিতবিদ গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান দেখান যে আরেকটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে এরকম কোনো সমান্তরাল রেখাই আঁকা সম্ভব নয়।

    উপরের দুই ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির বিস্তারিত বিবরণ বেশ জটিল, তবে দুটিকেই সহজ মডেলের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। বলিয়াই-লোবাচেভ্‌স্কি জ্যামিতিতে (যাকে অনেক সময় অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিও বলা হয়) এমন একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা আলোচনা করা হয় যার সমস্ত বিন্দু একটি বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং যার সমস্ত সম্ভাব্য রেখা বৃত্তটির জ্যা। যেহেতু সংজ্ঞা অনুসারে দুইটি সমান্তরাল রেখাকে যতই প্রসারিত করা হোক না কেন, এর কখনোই মিলবে না, এবং অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিতে যেহেতু রেখাগুলি বৃত্তের ধারের বাইরে প্রসারিত করা সম্ভব নয়, সে কারণে যেকোন রেখার সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা রেখাটির বহিঃস্থ বিন্দু দিয়ে আঁকা সম্ভব।

    একইভাবে রিমানীয় বা উপবৃত্তীয় অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে জ্যামিতিক “বিশ্ব” বা “জগত” একটি বিশাল গোলকের পৃষ্ঠ যেখানে সব সরলরেখা একেকটি বৃহত্তম বৃত্ত। এই জ্যামিতিতে এক জোড়া সমান্তরাল রেখা আঁকা অসম্ভব।

    অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের জন্য, অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ও অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহাজাগতিক দূরত্ব এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা যেমন আপেক্ষিকতার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ইউক্লিডীয় জ্যামিতির চেয়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পর্যবেক্ষণকৃত ঘটনাবলির আরও সূক্ষ্ম ও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বক্রতলের একটি রিমানীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত।

    অভিক্ষেপী জ্যামিতি

    বিভিন্ন জ্যামিতিক বস্তু ও এদের অভিক্ষেপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে ১৭শ শতকে জ্যামিতির আরেকটি শাখা শুরু হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কনিকগুলিকে অভিক্ষেপের মাধ্যমে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত করা যায়। কোন ফ্ল্যাশলাইটকে দেয়ালের সাথে লম্বভাবে ধরলে বৃত্তাকার আলোকপট্টি ফেলে, কিন্তু কোণ করে হেলিয়ে ধরলে দেয়ালে উপবৃত্তাকার আলোকপট্টির সৃষ্টি হয়।

    অভিক্ষেপী রূপান্তরের পরেও জ্যামিতিক চিত্রের কিছু কিছু ধর্ম অপরিবর্তনশীল থাকে। এই অপরিবর্তনশীল ধর্মগুলি কী, তাই অভিক্ষেপী জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্যের আলোচ্য।

    চার বা তার বেশি মাত্রার জ্যামিতি

    অভিক্ষেপী ও বিশ্লেষণী জ্যামিতির উন্নয়ন গণিতবিদদেরকে তিনের বেশি মাত্রার জগতের জ্যামিতি অধ্যয়নে উৎসাহী করে। অনেকে মনে করেন এ ধরনের বহুমাত্রিক জগৎ নিয়ে চিন্তা করা খুব কঠিন। কিন্তু আসলে গণিতবিদেরা এগুলি আরও সহজ উপায়ে কল্পনা করেন।

    ভৌত বিশ্বের যেকোন বিন্দুর অবস্থান তিনটি অক্ষের (সাধারণত x, y, ও z-অক্ষ নামে পরিচিত) সাপেক্ষে নির্দেশ করা সম্ভব। ভৌত বিশ্বের স্থান বিষয়ক জ্যামিতি তাই ত্রিমাত্রিক।

    এই ত্রিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে কল্পনায় যদি একটি গোলক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নেওয়া হয়, তবে এটি একটি চতুর্মাত্রিক জগতে পরিণত হয়। কেননা তখন প্রতিটি বিন্দু-গোলকের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য চারটি নির্দেশক লাগবে: গোলকের কেন্দ্র নির্দেশকারী x, y, ও z-স্থানাংক এবং গোলকটির ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য।

    একইভাবে দ্বিমাত্রিক জগৎ দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক জগতকে উপস্থাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দ্বিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে একটি বৃত্ত দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়, এবং ত্রিমাত্রিক জগতের তিনটি মাত্রা হল বৃত্তের কেন্দ্র নির্দেশক দুইটি স্থানাংক এবং এর ব্যাসার্ধ।

    তিনের বেশি মাত্রার জগৎ নিয়ে জ্যামিতিক ধারণাগুলি ভৌত বিজ্ঞানে, বিশেষ করে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সুষম জ্যামিতিক বস্তুগুলির অধ্যয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতির পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। এই জ্যামিতিকে বলে সাংগঠনিক জ্যামিতি (structural geometry)। সাংগঠনিক জ্যামিতির একটি সরল উদাহরণ হল শুন্য, এক, দুই, তিন, চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির সংজ্ঞা বের করা, যাকে সবচেয়ে কম সংখ্যক শীর্ষ, ধার ও পৃষ্ঠ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এদের মধ্যে শুন্য, এক, দুই ও তিন মাত্রার জন্য বস্তুগুলি হচ্ছে আমাদের পরিচিত বিন্দু, রেখা, ত্রিভুজ ও চতুস্তলক। চার মাত্রার জগতের জন্য দেখানো যায় যে সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির পাঁচটি শীর্ষ, ১০টি ধার এবং ১০টি পৃষ্ঠ আছে।

    জ্যামিতিশাস্ত্রের ইতিহাস

    প্রাচীন জ্যামিতিবিদেরা ভূমিক্ষেত্রসমূহের ক্ষেত্রফল ও ঘরবাড়ি নির্মাণের সময় সঠিকভাবে সমকোণ নির্ণয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন। প্রাচীন মিশরে প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় জমিসমূহের সীমানা নষ্ট হয়ে যেত এবং এই সীমানাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য জ্যামিতির সাহায্য নেয়া হত। এই ধরনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্যামিতি প্রাচীন মিশর, সুমের এবং ব্যাবিলনিয়াতে বিকাশ লাভ করে এবং পরবর্তীতে গ্রিকদের হাতে পরিশীলিত ও নিয়মাবদ্ধ হয়।

    প্রাচীন গ্রিসের জ্যামিতি

    একজন গ্রীক মহিলা জ্যামিতি শিক্ষা দিচ্ছে

    ইতিহাসের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিবিদ হিসেবে যার নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন মিলেতুসের থালেস। থালেস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গ্রিসে বাস করতেন। থালেসকে অনেকগুলি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্যের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়; এদের মধ্যে অন্যতম হল অর্ধবৃত্তস্থিত কোণ যে সমকোণ, তার প্রমাণ।

    থালেসই প্রথম দেখান যে কতগুলি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বিবৃতি তথা স্বতঃসিদ্ধ থেকে যৌক্তিকভাবে অগ্রসর হয়ে একটি জ্যামিতিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই স্বতঃসিদ্ধগুলিকে থালেস ও তার পরবর্তী গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা স্ব-প্রমাণিত সত্য বলে মনে করতেন। তবে আধুনিক গাণিতিক চিন্তাধারায় এগুলিকে কতগুলি সুবিধাজনক কিন্তু যথেচ্ছ অনুমান বলে গণ্য করা হয়। থালেসের এই আরোহী পদ্ধতির ধারণা সমস্ত জ্যামিতিক গবেষণায়, এমনকি সমস্ত গাণিতিক গবেষণায় বর্তমান কাল পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছে।

    থালেসের এক বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন পিথাগোরাস। পিথাগোরাস ও তার সহযোগীরা ত্রিভুজ, বৃত্ত, অনুপাত, ও কিছু কিছু ঘনবস্তুর জন্য অনেক নতুন নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। পিথাগোরাসের সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি বর্তমানে তার নামে নামান্বিত এবং বলে যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ বাকি বাহুদ্বয়ের বর্গের যোগফলের সমষ্টি।

    গ্রিকদের প্রস্তাবিত ও স্বীক্রৃত স্বতঃসিদ্ধগুলি ছিল এই জাতীয়: “দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী ক্ষুদ্রতম পথ সরলরেখা।” এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধ থেকে বিন্দু, রেখা, কোণ, বক্ররেখা ও তলসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন উপপাদ্যে যৌক্তিকভাবে উপনীত হওয়া যেত। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে ইউক্লিডই সর্বপ্রথম বিভিন্ন ছড়িয়ে থাকা উপপাদ্য ও স্বতঃসিদ্ধগুলি একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে তার Elements গ্রন্থতে প্রকাশ করেন। ১৩টি পার্চমেন্ট রোল বা পুস্তকে লেখা এই গ্রন্থ মানবমনের চরম উৎকর্ষের একটি নিদর্শন। প্রকাশের প্রায় ১০০০ বছর গণিতবিদের এগুলোতে সামান্যই কোন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন যোগ করতে পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীতেও জ্যামিতির প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে ইউক্লিডের বইটি অবিকৃতভাবে ব্যবহার করা হত। ইউক্লিডের কাজের গুরুত্ব তার ফলাফলে নয়, বরং তার পদ্ধতিতে। তার প্রমাণিত বেশির ভাগ উপপাদ্যই বহু বছর আগেই জানা ছিল, কিন্তু তার আগে কেউই দেখাতে পারেনি যে এগুলি সব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং সামান্য কিছু প্রাথমিক স্বতদঃসিদ্ধ থেকে এগুলিতে উপনীত হওয়া সম্ভব। ইউক্লিড এভাবে তার কাজের মাধ্যমে আরোহী পদ্ধতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন।

    গ্রিকরা কেবল রুলার ও কাঁটা-কম্পাস ব্যবহার করে জ্যামিতিক চিত্র আঁকার সমস্যা (সমপাদ্য) উদ্ভাবন করেছিল। সরল সমস্যাগুলির মধ্যে আছে কোন প্রদত্ত রেখাংশের দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের রেখাংশ আঁকা, কোন একটি কোণকে সমদ্বিখণ্ডিত করা, ইত্যাদি। গ্রিকদের এ সংক্রান্ত তিনটি বিখ্যাত সমস্যা বহু বছর ধরে গণিতবিদেরা সমাধান করতে পারেন নি: প্রদত্ত ঘনকের দ্বিগুণ আয়তনের ঘনক আঁকা, প্রদত্ত বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফলের বর্গ আঁকা, এবং একটি কোণকে সমত্রিখণ্ডিত করা। এগুলির কোনটিই রুলার ও কাঁটাকম্পাসের সাহায্য নিয়ে আঁকা সম্ভব নয়। এদের মধ্যে বৃত্তের বর্গীকরণের অসম্ভাব্যতা ১৮৮২ সালের আগে প্রমাণিত হয়নি।

    গ্রিক গণিতবিদ পের্গার আপোল্লনিয়ুস কনিক ছেদগুলি নিয়ে গবেষণা করেন এবং এগুলির অনেক মৌলিক ধর্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দেই আবিষ্কার করেন। কনিকগুলি ভৌত বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসে। যেমন যেকোন খ-বস্তুর কক্ষপথ, যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এমন গ্রহ বা ধূমকেতুর গতিপথ সবসময় কোন এক ধরনের কনিকের উপর অবস্থান করে। ক্রৃত্রিম উপগ্রহগুলিও পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে।

    মহান গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিদিস খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে জ্যামিতিতে অনেকগুলি অবদান রাখেন। তিনি অনেকগুলি বক্ররেখাবদ্ধ আকৃতির ক্ষেত্রফল এবং বক্রতলাবদ্ধ ঘনবস্তুর, যেমন সিলিন্ডারের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করার সূত্র বের করেন। এছাড়াও পাই-এর আসন্ন মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি বের করেন এবং বলেন যে এই মান ৩ ১০/৭০ ও ৩ ১০/৭১ এর মধ্যবর্তী।

    মধ্যযুগে জ্যামিতি

    ১৫শতকে জ্যামিতিচর্চা, একজন আরব ও একজন ইউরোপীয়ান জ্যামিতি গবেষণা করছে

    ৫ম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে জ্যামিতির তেমন উন্নতিসাধন হয়নি।এসময় ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা এবং ভারতের হিন্দুরা জ্যামিতির বেশির ভাগ উন্নতি সাধন করেন।গ্রিক গণিতের বেশির ভাগই ছড়িয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এদের কিছু কিছু, যেমন ইউক্লিডের Elements মুসলমান ও হিন্দুরা অনুবাদ করে সংরক্ষণ করেন ও অধ্যয়ন করেন। ৬ষ্ঠ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি পাই-এর অত্যন্ত সঠিক মানের একটি সূত্র দান করেন; তিনি পাই-এর মান ধরেন ৬২৮৩২/২০০০০, বা ৩.১৪১৬, যা দশমিকের পর চার ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান। ৪র্থ ও ১৩শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে জ্যামিতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ত্রিকোণমিতি শাস্ত্রের উন্নতি সাধন করা হয়।

    ১২শ ও ১৩শ শতকে ইউক্লিডের এলিমেন্টস গ্রিক ও আরবি থেকে লাতিনে ও আধুনিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ধর্মীয় শিক্ষালয়ে জ্যামিতি শিক্ষা যোগ করা হয়।

    ১৭শ ও ১৮শ শতকের জ্যামিতি

    ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রেনে দেকার্তে জ্যামিতিকে সামনের দিকে এগিয়ে দেন। ১৬৩৭ সালে তার প্রভাবশালী রচনা Discourse on Method প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার সাহায্যে জ্যামিতিক আকৃতি প্রকাশের পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তার কাজ জ্যামিতি ও বীজগণিতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এই যোগসূত্রই বিশ্লেষণী জ্যামিতি এবং আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি।

    ১৭শ শতকের জ্যামিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল অভিক্ষেপী জ্যামিতির উদ্ভাবন। অভিক্ষেপী জ্যামিতিতে কোন জ্যামিতিক বস্তুর এক তল থেকে আরেক তলে অভিক্ষেপ ফেললে এর ধর্মের কী পরিবর্তন ঘটে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। জেরার দ্যজার্গ নামের এক ফরাসি প্রকৌশলী perspective নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অভিক্ষেপী জ্যামিতি উদ্ভাবন করেন। ১৮শ শতকে গাসপার মোঁজ নামের ফরাসি এক গণিতের অধ্যাপক বিবরণমূলক জ্যামিতি নামে জ্যামিতির আরেকটি শাখা উদ্ভাবন করেন। বিবরণমূলক জ্যামিতিতে দ্বি-মাত্রিক চিত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহকে কীভাবে ত্রুটিহীনভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং এর সাহায্যে কীভাবে ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির নানা সমস্যা সমাধান করা যায়, তার আলোচনা করা হয়। প্রকৌশলস্থাপত্যের অঙ্কনের ভিত্তি হল এই বিবরণমূলক জ্যামিতি।

    আধুনিক জ্যামিতি

    ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কাঠামোর ভেতরেই বিশ্লেষণী, অভিক্ষেপী ও বিবরণমূলক জ্যামিতির আবর্ভাব ঘটে। বহু শতাব্দী ধরে গণিতবিদেরা বিশ্বাস করতেন যে অনন্য সমান্তরাল রেখা সংক্রান্ত ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটি বাকী চারটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে প্রমাণ করা যাবে, কিন্তু এই প্রমাণ বের করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯শ শতকে এসে নতুন নতুন জ্যামিতিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয় যেগুলিতে ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এইসব নতুন ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেন কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, ইয়ানোশ বলিয়ই, নিকলাই লবাচেভ্‌‌স্কি এবং গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান

    ১৮৭২ সালে জার্মান গণিতবিদ ফেলিক্স ক্লাইন গণিতের একটি অপেক্ষাকৃত নবীন শাখা গ্রুপ তত্ত্ব ব্যবহার করে তার সময়কার সমস্ত জ্যামিতিক ব্যবস্থাগুলিকে এক ব্যবস্থার অধীনে আনেন। ১৮৯৯ সালে আরেকজন জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তার Foundations of Geometry বইটি প্রকাশ করেন, যাতে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির জন্য স্বতঃসিদ্ধসমূহের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রদান করা হয় এবং এটি গণিতের অন্যান্য শাখায় গভীর প্রভাব ফেলে।

    ১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে দেখা যায় অনেক ভৌত ঘটনা জ্যামিতিক মূলনীতি থেকে উপনীত হওয়া সম্ভব। এই তত্ত্বের সাফল্য অন্তরক জ্যামিতি ও টপোগণিতের গবেষণায় জোয়ার আনে।

    ১৯শ শতকের ব্রিটিশ গণিতবিদ আর্থার কেলি চার বা তারও বেশি মাত্রার জ্যামিতি প্রবর্তন করেন। ১৯শ শতকে ফ্র্যাক্টাল মাত্রার আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে ফ্র্যাক্টালের ধারণা কাজে লাগিয়ে জ্যামিতির নতুন শাখা ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতির উদ্ভব হয়।

  • চার বর্ণ উপপাদ্য

    চার বর্ণ উপপাদ্য বলে, কোন তল যদি বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা থাকে তবে তাকে মাত্র চারটি রঙ ব্যবহার করে এমনভাবে আঁকা যায় যেন কোন দুইটি সংলগ্ন অঞ্চলের রঙ একই না হয়। এখানে সংলগ্ন বলতে একটি বিন্দুতে মিলিত হওয়াকে ধরা হয় না; কেবল যদি অঞ্চল দুইটি একটি রেখাংশে মিলিত হয় তবেই তাদের সংলগ্ন বলা হয়। আবার, দুইটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে একই অঞ্চল হিসাবে ধরা যাবে না, যদিও পৃথিবীর মানচিত্রে কিছু দেশ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত, যেমন অ্যাঙ্গোলা

    এই উপপাদ্যটি প্রথম উল্লেখযোগ্য উপপাদ্য যা কম্পিউটারের সাহায্যে প্রমাণ করা হয়েছে।

    গণিত বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন।
    দেগণিত

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • গোলক

    এর ব্যাসের চারপাশে ঘুরালে যে ঘনবস্তু উৎপন্ন হয় তাকেই গোলক বা সুষম গোলক বলে। r {\displaystyle \,r} ব্যাসার্ধের একটি গোলকের আয়তন হবে (4π r 3 {\displaystyle \,r^{3}})/3 এবং এর পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল হবে 4π r 2 {\displaystyle \,r^{2}}। কার্তেসীয় স্থাণাঙ্ক ব্যাবস্থায় কেন্দ্র মূল-বিন্দুতে অবস্থিত এমন r {\displaystyle \,r} ব্যাসার্ধর কোন গোলকের সমীকরণ হবে: x 2 + y 2 + z 2 = r 2 {\displaystyle \,x^{2}+y^{2}+z^{2}=r^{2}}

    সুতরাং গোলক হল ত্রিমাত্রিক দেশে অবস্থিত একটি গোল বলের ন্যায় জ্যামিতিক আকার।

    গোলকের আয়তন

    ৩ মাত্রার একটি গোলক ভিতরে আয়তন (অর্থাৎ একটি বল-এর আয়তন)-এর সূত্র দেওয়া হলো V = 4 3 π r 3 {\displaystyle \!V={\frac {4}{3}}\pi r^{3}}

    যেখানে R হল গোলকের ব্যাসার্ধ এবং π হল ধ্রুবক পাই. এই সূত্রটি প্রথম আর্কিমিডিস দ্বারা উদ্ভূত হয়েছিল, যিনি দেখিয়েছিলেন যে একটি গোলকের আয়তন একটি পরিধিকৃত সিলিন্ডারের 2/3। (এই দাবিটি ক্যাভালিয়ারির নীতি থেকে অনুসরণ করে।) আধুনিক গণিতে, এই সূত্রটি অখণ্ড ক্যালকুলাস ব্যবহার করে উদ্ভূত হতে পারে, যেমন x = 0 থেকে x অক্ষ বরাবর কেন্দ্রীভূত অসীম পুরুত্বের অসীম সংখ্যক বৃত্তাকার ডিস্কের আয়তনের যোগফলের যোগফল যেখানে ডিস্কের ব্যাসার্ধ r (অর্থাৎ y = r) থেকে x = r যেখানে ডিস্কের ব্যাসার্ধ রয়েছে 0 (অর্থাৎ y = 0)। যেকোনো প্রদত্ত x এ, বর্ধিত আয়তন (δV) ডিস্কের ক্রস-বিভাগীয় এলাকার গুণফল x এবং এর পুরুত্ব (δx) দ্বারা দেওয়া হয়: এবং এটি খুব উচ্চ মানের । (This assertion follows from Cavalieri’s principle.) In modern mathematics, this formula can be derived using integral calculus, e.g. disk integration to sum the volumes of an infinite number of circular disks of infinitesimal thickness stacked centered side by side along the x axis from x = 0 where the disk has radius r (i.e. y = r) to x = r where the disk has radius 0 (i.e. y = 0).

    At any given x, the incremental volume (δV) is given by the product of the cross-sectional area of the disk at x and its thickness (δx): And it is very high quality δ V ≈ π y 2 ⋅ δ x . {\displaystyle \!\delta V\approx \pi y^{2}\cdot \delta x.}

    The total volume is the summation of all incremental volumes: V ≈ ∑ π y 2 ⋅ δ x . {\displaystyle \!V\approx \sum \pi y^{2}\cdot \delta x.}

    In the limit as δx approaches zero[১] this becomes: V = ∫ − r r π y 2 d x . {\displaystyle \!V=\int _{-r}^{r}\pi y^{2}dx.}

    At any given x, a right-angled triangle connects x, y and r to the origin, hence it follows from Pythagorean theorem that: r 2 = x 2 + y 2 . {\displaystyle \!r^{2}=x^{2}+y^{2}.}

    Thus, substituting y with a function of x gives: V = ∫ − r r π ( r 2 − x 2 ) d x . {\displaystyle \!V=\int _{-r}^{r}\pi (r^{2}-x^{2})dx.}

    This can now be evaluated: V = π [ r 2 x − x 3 3 ] x = − r x = r = π ( r 3 − r 3 3 ) − π ( − r 3 + r 3 3 ) = 4 3 π r 3 . {\displaystyle \!V=\pi \left[r^{2}x-{\frac {x^{3}}{3}}\right]_{x=-r}^{x=r}=\pi \left(r^{3}-{\frac {r^{3}}{3}}\right)-\pi \left(-r^{3}+{\frac {r^{3}}{3}}\right)={\frac {4}{3}}\pi r^{3}.}

    সুতরাং গোলকের আয়তন হল: V = 4 3 π r 3 . {\displaystyle \!V={\frac {4}{3}}\pi r^{3}.}

  • কেন্দ্র (জ্যামিতি)

    কোন বস্তুর কেন্দ্র বলতে বস্তুটির মধ্যবর্তী একটি বিন্দুকে বোঝানো হয়। কেন্দ্রের বিস্তৃত সংজ্ঞাটিকে বিবেচনায় নিলে এর আলোকে বলা যায়, কোন বস্তুর কেন্দ্র থাকবে না যদি জ্যামিতিকে আইসোমেট্রি সম্পর্কিত জ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    একটি ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমার (median) ছেদবিন্দুকে (point of intersection) ভরকেন্দ্র (centroid) বলে।

    ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দু (vertex) থেকে বিপরীত বাহুর উপর লম্ব (perpendicular) টানিলে, এই লম্বত্রয়ের ছেদবিন্দুকে লম্ববিন্দু (orthocentre) বলে।

    ত্রিভুজের তিনটি বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব-সমদ্বিখন্ডকের (perpendicular bisectors) ছেদবিন্দুকে পরিকেন্দ্র (circumcentre) ও ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমদ্বিখন্ডকের (angle bisectors) ছেদবিন্দুকে অন্তঃকেন্দ্র (incentre) বলে

    বৃত্ত, গোলক ও রেখাংশের কেন্দ্র

    বৃত্তের ক্ষেত্রে এর প্রান্তবিন্দুগুলো অর্থাৎ পরিধিস্থ বিন্দুগুলো বৃত্তটির অন্তস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দুটি থেকে সমদূরবর্তী সেই বিন্দুটিকে ঐ বৃত্তের কেন্দ্র বলা হয়। অর্থাৎ যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে বৃত্তের পরিধির সকল বিন্দুর দুরত্ব সমান সেই নির্দিষ্ট বিন্দুটিই বৃত্তের কেন্দ্র।[১] অনুরূপভাবে, কোন গোলকের অভ্যন্তরীণ যে বিন্দুটি গোলকের পৃষ্ঠের সকল বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী সেটাই গোলকের কেন্দ্র। কোন গোলককে সুষম পুরুত্বের অসংখ্য চাকতিতে কর্তন করা হলে গোলকের কেন্দ্রগামী চাকতিটির ব্যাসার্ধ সর্বাধিক হবে। আবার কোন রেখাংশের কেন্দ্র হল এর প্রান্তদ্বয়ের মধ্যবিন্দু। কোন রেখাংশের কেন্দ্রবিন্দু এবং রেখাংশটির প্রান্তদ্বয় থেকে সমদূরবর্তী অন্য কোন বিন্দুর সংযোজক সরল রেখা ঐ রেখাংশের উপর লম্ব।

    সিমেট্রিক বা প্রতিসাম্যিক বস্তুর কেন্দ্র

    প্রতিসাম্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত বস্তুতে প্রতিসাম্যিক ক্রিয়া সত্ত্বেও যে বিন্দুটি (অর্থাৎ বিন্দুটির অবস্থান) অপরিবর্তিত থাকে তাই প্রতিসাম্যের কেন্দ্র। ফলে বর্গ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস অথবা সামান্তরিকের কেন্দ্র এদের কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দুতে অবস্থিত। কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দুই এসব ক্ষেত্রের ঘূর্ণন প্রতিসাম্যের বিন্দু। অনুরূপভাবে উপবৃত্তঅধিবৃত্তের কেন্দ্র এদের অক্ষসমূহের ছেদবিন্দুতে অবস্থিত।

    ত্রিভুজের কেন্দ্র

    শুধুমাত্র সমবাহু ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র, ভরকেন্দ্র, অন্তঃকেন্দ্র, লম্বকেন্দ্র এবং নয়-বিন্দুর কেন্দ্র একই। সমবাহু ত্রিভুজে বিন্দুটির অবস্থান ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে ভূমির দিকে দুই-তৃতীয়াংশ লম্ব দূরত্বে।

    নিচের বিশেষ কয়েকটি বিন্দুকে প্রায়ই ত্রিভুজের কেন্দ্র হিসেবে আলোচনা করা হয়ে থাকে। তবে ত্রিভুজের কেন্দ্রের সংখ্যা আদতে এত বেশি যে এটা নিয়ে বিশালাকার গ্রন্থ রচনা করা যাবে।

    • পরিকেন্দ্র (circumcentre): ত্রিভুজের বাহুত্রয়ের লম্ব-সমদ্বিখন্ডকত্রয় সমবিন্দু। এই বিন্দুই ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র। অন্যভাবে কোন বৃত্তের অভ্যন্তরে বৃত্তের পরিধি ঘেষে একটি ত্রিভুজ অঙ্কন করা হলে এই বৃত্তের কেন্দ্রই হবে উল্লেখিত ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র। উল্লেখিত বৃত্তটিকে পরিবৃত্ত বলে। সংক্ষেপে কোন কোন ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় দিয়ে গমনকারী বৃত্তের কেন্দ্রই ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র।
    • ভরকেন্দ্র (centroid): ত্রিভুজের যে কোন শীর্ষবিন্দু এবং তার বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুর সংযোজক সরলরেখাকে মধ্যমা বলে। ত্রিভুজের মধ্যমাত্রয় সমবিন্দু। এ বিন্দুটিই ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র। ত্রিভুজটি সুসম ঘনত্বের হলে ভরকেন্দ্র হবে এর ভারসাম্যের বিন্দু। ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র প্রত্যেক মধ্যমা কি ২:১ অনুপাতে অন্তর্বিভক্ত করে।
    • অন্তঃকেন্দ্র (incentre): ত্রিভুজের কোণত্রয়ের সমদ্বিখণ্ডক রেখা তিনটি যে বিন্দুতে মিলিত হয় সেই বিন্দুটিই ত্রিভুজটির অন্তঃকেন্দ্র। ত্রিভুজের অভ্যন্তরে অঙ্কিত বৃত্তকে অন্তঃবৃত্ত বলা হয়। অন্তঃবৃত্তের কেন্দ্রই উল্লেখিত ত্রিভুজের অন্তঃকেন্দ্র। অন্যভাবে কোন ত্রিভুজের বাহুত্রয় কোন বৃত্তের (অন্তঃস্থ) স্পর্শক হলে এই বৃত্তের কেন্দ্রই উল্লেখিত ত্রিভুজের অন্তঃকেন্দ্র।
    • লম্ববিন্দু বা লম্বকেন্দ্র (orthocentre): ত্রিভুজের শীর্ষ হতে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব তিনটি যে বিন্দুতে মিলিত হয় সেই বিন্দুকে ত্রিভুজের লম্ববিন্দু বলা হয়। অন্যভাবে ত্রিভুজের উচ্চতা রেখাগুলোর ছেদবিন্দুই হল লম্ববিন্দু।
    • বহিঃকেন্দ্র: ত্রিভুজের একটি কোণের অন্ত-সমদ্বিখণ্ডক এবং অপর দুই কোণের বহি-সমদ্বিখণ্ডক যে বিন্দুতে মিলিত হয় তাকে বহিঃকেন্দ্র বলে। আবার কোন ত্রিভুজের যেকোনো এক বাহু এবং অপর দুই বাহুর বর্ধিত অংশ যে বৃত্তের স্পর্শক সেই বৃত্তের কেন্দ্রই উল্লেখিত ত্রিভুজের বহিঃকেন্দ্র। সংক্ষেপে কোন ত্রিভুজের বহিঃবৃত্তের কেন্দ্রই ত্রিভুজটির বহিঃকেন্দ্র।
    • নব-বিন্দুর কেন্দ্র (nine-point centre): ত্রিভুজের নয়টি মূল বিন্দুগামী বৃত্তের কেন্দ্র হল নববিন্দু কেন্দ্র

    কোন সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র, ভরকেন্দ্র, অন্তঃকেন্দ্র, লম্বকেন্দ্র এবং নয়-বিন্দুর কেন্দ্র একই যা ত্রিভুজটির প্রতিসাম্য-অক্ষত্রয়ের ছেদবিন্দুতে অবস্থিত। এক্ষেত্রে বিন্দুটি ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে ভূমির দিকে দুই-তৃতীয়াংশ লম্ব দূরত্বে অবস্থান করে।

    ত্রিভুজের কেন্দ্রের যথাযথ সংজ্ঞাটি হবে: a, bc বাহু বিশিষ্ট ত্রিভুজের দৈর্ঘ্যেত্রয়ের f(a,b,c), f(b,c,a) ও f(c,a,b) ফাংশন তিনটি যে বিন্দুর ত্রিরৈখিক স্থানাঙ্ক নির্দেশ করে সেই বিন্দুটিই ত্রিভুজের কেন্দ্র যেখানে:

    1. f ফাংশনটি a, b ও c এ সমসত্ব অর্থাৎ কেন্দ্রের অবস্থানের স্কেল অনির্ভরতার শর্তে বাস্তব ঘাত h এর জন্য f(ta,tb,tc)=thf(a,b,c);
    2. f ফাংশনটি শেষ দুটি আর্গুমেন্টে সিমেট্রিক অর্থাৎ f(a,b,c)= f(a,c,b)।[২]

    এই যথাযথ সংজ্ঞায় দ্বিকেন্দ্রিক ব্রোকার্ড বিন্দু যুগলকে বাদ দেওয়া হয়েছে (দর্পণ-চিত্র প্রতিফলনে ব্রোকার্ড বিন্দুযুগলের অদল-বদল বা আন্তঃপরিবর্তন ঘটে)। গণিতবিদ ক্লার্ক কিম্বার্লিং ত্রিভুজ কেন্দ্রের বিশ্বকোষ নামে একটি সুদীর্ঘ অনলাইন তালিকা তৈরি করেছেন যেখানে এ পর্যন্ত ৩৪১৯৬ টি ত্রিভুজ-কেন্দ্রের বিবরণ রয়েছে এবং তালিকাটি ক্রমশ বর্ধমান।[৩]

    স্পর্শীয় বহুভুজ ও চক্রীয় বহুভুজের কেন্দ্র

    স্পর্শীয় বহুভুজের ক্ষেত্রে এর প্রতিটি বাহুই একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের স্পর্শক। এই বৃত্তটিকে অন্তঃবৃত্ত বলা হয় যার কেন্দ্রকে বহুভুজটির একটি কেন্দ্র বিবেচনা করা যায়।

    কোন চক্রীয় বহুভুজের বাহুগুলোর লম্ব-সমদ্বিখন্ডক রেখাগুলো যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে চক্রীয় বহুভুজটির কেন্দ্র বলা হয়। অন্যভাবে চক্রীয় বহুভুজের শীর্ষগুলো দিয়ে গমনকারী বৃত্তের কেন্দ্রই চক্রীয় বহুভুজের কেন্দ্র। উল্লেখিত বৃত্তটিকে পরিবৃত্ত এবং এর কেন্দ্রকে পরিকেন্দ্র বলা হয়।

    যদি কোন বহুভুজ একই সঙ্গে স্পর্শীয় ও চক্রীয় হয় তবে একে দ্বিকেন্দ্রিক বহুভুজ বলা হয়। যেমন— সকল ত্রিভুজই দ্বিকেন্দিক। দ্বিকেন্দ্রিক বহুভুজের অন্তকেন্দ্র ও পরিকেন্দ্র সাধারণ অন্তকেন্দ্র ও পরিকেন্দ্র বিন্দুর মত নয়।

    সাধারণ বহুভুজের কেন্দ্র

    সাধারণ বহুভুজের কেন্দ্রকে বেশ কয়েকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। ফাঁকা বহুভুজের শীর্ষবিন্দুগুলোতে সম পরিমাণ ভরের বিবেচনা থেকে “শীর্ষবিন্দু ভরকেন্দ্র” ধারণাটি এসেছে। বহুভুজের প্রতিটি বাহুতে প্রতি একক দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট ভরের বিবেচনা থেকে “বাহু ভরকেন্দ্র” ধারণাটি এসেছে। আর সাধারণ কেন্দ্রের (যাকে শুধুমাত্র ভরকেন্দ্র বা ক্ষেত্র কেন্দ্র বলা হয়) ধারণাটি এসেছে সুষম ঘনত্বের বহুভুজাকার পৃষ্ঠতলের ধারণা থেকে।

  • কনিক

    কার্তেসীয় সমতলে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু এবং একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা থেকে যেসব বিন্দুর দূরত্বের অনুপাত একটি ধ্রুবক, তাদের সেট একটি সঞ্চারপথ; এই সঞ্চারপথকে কনিক (ইংরেজি: Conic) বলা হয়। এখানে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু নামে চিহ্নিত বিন্দুটিকে কনিকের উপকেন্দ্র বা ফোকাস (focus) বলে; নির্দিষ্ট সরলেরেখাটিকে বলে কনিকের দিকাক্ষ (directrix) বা নিয়ামক এবং ধ্রুব অনুপাতটিকে বলা হয় উৎকেন্দ্রিকতা (eccentricity) যাকে সাধারণত e দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই e এর বিভিন্ন মানের জন্য সঞ্চার পথের আকৃতি বিভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন আকৃতির এই সঞ্চার পথগুলোর মাঝে পরাবৃত্ত, উপবৃত্ত ও অধিবৃত্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

    • e = 0 {\displaystyle e=0} হলে, সঞ্চারপথকে বলা হয় বৃত্ত
    • e = 1 {\displaystyle e=1} হলে, সঞ্চারপথটিকে বলা হয় পরাবৃত্ত (Parabola)।

    চিত্রের বক্র রেখাটি একটি পরাবৃত্ত নির্দেশ করছে যার দিকাক্ষ L এবং উপকেন্দ্র F. পরাবৃত্তস্থ যেকোন বিন্দুর উপকেন্দ্র থেকে দূরত্ব(PnF), ঐ বিন্দু থেকে দিকাক্ষের উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্যে(PnQn) এর সমান।

    • 0 < e < 1 <img src="https://wikimedia.org/api/rest_v1/media/math/render/svg/679de8c4138507493a1cc5adc572bb0ffdd19a82" alt="{\displaystyle 0<e হলে, সঞ্চারপথটিকে বলা হয় উপবৃত্ত (Ellipse)।
    • e > 1 1}”> হলে, সঞ্চারপথটিকে বলা হয় অধিবৃত্ত (Hyperbola)।