ইসলাম, হ্যাঁ; ইসলামী দল, না হলো ইন্দোনেশিয়ার প্রভাবশালী মুসলিম পণ্ডিত নূরখলিশ মাজিদ প্রবর্তিত একটি স্লোগান। ১৯৭০ সালে জাকার্তার তামান মারজুকি ইসমাইলে (টিআইএম) দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই স্লোগান প্রবর্তন করেন।[১][২] স্লোগানটি খুব দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে মুসলমানদের ভোট দেওয়া পাপ এমন ধারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।[৩][৪]
পটভূমি
১৯৫০ এর দশকে ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী দলগুলি এই ধারণা প্রচার করছিল যে মুসলমানদের কেবল ইসলামী দলের পক্ষেই ভোট দেওয়া উচিত। অনেক মুসলিম আলেমরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন এবং এমন দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে এই ধারণা প্রচার করতে থাকেন যে মুসলমান ভোটারদের ভোট তাদের পরকালীন মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট মুসলিম পণ্ডিত নূরখলিশ মাজিদ ১৯৭০ এর দশকে “ইসলাম, হ্যাঁ; ইসলামী দল, না” নামে স্লোগানটি চালু করেছিলেন। স্লোগানটি দ্রুতই খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং মুসলমান ভোটারদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে তাদের ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করে। ফলশ্রুতিতে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির পক্ষে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে বলে দেখা যায়।[৪]
তত্ত্বীয় নির্দেশনা
ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী দল বা ইসলামী রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে ঐশ্বরিক কিছু নেই বলে মাজিদ মনে করতেন। মুসলমানদেরকে তাই পার্থিব এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ বা আচরণ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয় বলে তিনি মত দেন।[৫] তিনি মানবসৃষ্ট সংগঠন অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আল্লাহর ইচ্ছার একীভূতকরণের সমালোচনা করেছেন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঐশী অনুমোদনের দোহাই দিয়ে থাকে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর ইচ্ছার সাথে মানবীয় এজেন্ডার সমীকরণ তৈরি করে যে রাজনৈতিক দলগুলি ইসলামের নামকে কাজে লাগাচ্ছে তারা মূর্তিপূজার সঙ্গে জড়িত।[৬] তিনি মত দেন যে, ইসলাম ও ইসলামী দলগুলি একে অপরের সাথে তুলনীয় নয়। কারণ, ইসলামকে কেবলই একটি রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিণত করা যায় না।[৭] মাজিদের দৃষ্টিতে ইসলাম ও ইসলামী দলগুলিকে একত্রে চিহ্নিত করা কেবল ভুলই নয়, বিপজ্জনকও। কারণ, যদি কোনদিন ইসলামী দলগুলির রাজনীতিবিদরা জঘন্য কাজ করে, যার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, তবে ধর্ম হিসাবে ইসলামকে দোষী হিসাবে দেখা হতে পারে। তেমনিভাবে যদি কোনও ইসলামী দল হেরে যায়, তবে ধর্ম হিসেবে ইসলাম হেরে গেছে বলেও মনে হতে পারে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইসলামীকরণের এমন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে মাজিদ স্লোগানটি ইসলামী দল ও তথাকথিত ইসলামী সমাজগুলোর সমালোচনার অংশ হিসাবে চালু করেছিলেন যারা ইন্দোনেশীয় জনগণের চোখে ইসলামী দলগুলিকে পবিত্র ও ঐশ্বরিক করে তুলেছিল।[৮][৯]
রাজনৈতিক প্রভাব
মাজিদ প্রবর্তিত এই স্লোগানটি কাকতালীয় ভাবে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ নির্বাচনের মুহুর্তের সাথে মিলে যায়। দৈবক্রমে বা অন্য কোন কারণে, ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ক নয়া এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মনেরই যেন প্রতিধ্বনি ছিল। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের পছন্দের প্রতিচ্ছবি থেকে এটি দেখা যায়। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় যে, ইসলামী দলগুলি চূড়ান্ত পরাজয়ের শিকার। এটি ১৯৫৫ সালের পর থেকে ইসলামী দলগুলির দীর্ঘ যাত্রারও কিছুটা সমাপ্তি টেনেছিল। বিপরীতে, ইন্দোনেশিয়ায় তখন ইসলামের নবায়নও নতুনভাবে শুরু হয়।[১০] স্লোগানটি এইভাবে ইন্দোনেশীয় সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এমন সময়ে যখন রাজনৈতিক ইসলাম ইতিমধ্যে একটি ধাক্কার সম্মুখীন। এটি ইন্দোনেশীয়দের মধ্যে একটি আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক শক্তি হিসাবে ইসলামকে পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে এক অসামান্য ভূমিকা পালন করে যা ধর্মের শুধু আনুষ্ঠানিক ও আইনগত দিক নয় বরং নৈতিক ও ব্যবহারিক নীতিসমূহের উপর জোর প্রদান করে।[১১] ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থানের কারণে মাজিদ বেশ সমালোচিত হন। বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে। বহু দলীয় নেতা তার বিরুদ্ধে ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার অভিযোগ আনেন।[১২]
আধুনিককালে প্রাসঙ্গিকতা
ইন্দোনেশিয়ার বিশিষ্ট মুসলিম চিন্তাবিদ দাওয়াম রাহারজো বিশ্বাস করতেন যে ১৯৭০ সালে মাজিদ যে স্লোগান প্রবর্তন করেছিলেন তা ইসলাম ও মুসলমানদের তৎকালীন উদ্ভূত সমস্যার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে করেছিলেন। কারণ তার মতে, সেই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামী দলগুলি তখনো ইসলামকে একটি অনুমোদিত রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। অন্য অনেকেই একই মতামতের প্রতিধ্বনি করেছেন যে, মাজিদ রাজনৈতিক ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন কারণ ইসলামী দলগুলির অবস্থা ছিল তখন খুবই নাজুক এবং ইসলামী দলগুলি তখনো ইন্দোনেশিয়ার বহুত্ববাদী সমাজে ধর্মের ভাষাকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি।[১৩] তবে ইন্দোনেশিয়ার অনেক ধর্মীয় নেতা এখনও বিশ্বাস করেন যে মাজিদের চিন্তাভাবনা এবং তাঁর বিখ্যাত স্লোগান আধুনিক সময়ের পরিস্থিতির সাথে এখনো প্রাসঙ্গিক।[২]
মানবজাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য তিনি যুগে-যুগে অনেক নবি-রাসূল, আসমানী কিতাব এবং নিদর্শন পাঠিয়েছেন।[১৬] ইসলামে প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো পবিত্র কুরআন, যা স্বয়ং আল্লাহর বাণী; আর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবি মুহাম্মদ (ﷺ) (২৯ আগস্ট ৫৭০- ৮ জুন ৬৩২) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলা হয় যা হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সমস্ত সুন্নাহইহাদিস, কিন্তু সমস্ত হাদিসসুন্নাহ নয়।
সৌদি আরবেরমক্কারকাবা শরিফ; যেখানে সারা বিশ্বের লাখো মুসলিম একতার মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে প্রার্থনা করে থাকেন।
ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম শুধুমাত্র কোন নতুন ধর্মই নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলামের উৎপত্তি। আদম ছিলেন এই পৃথিবীর প্রথম মানব এবং মানবজাতির মধ্যে ইসলামের প্রথম নবি। আর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবি হলেন মুহাম্মদ, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন স্রষ্টার পক্ষ থেকে।[২৭][২৮][২৯]
মুসলমানরা দুইটি প্রধান সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, সুন্নি (৮০-৯০%) অথবা শিয়া (১০-২০%)।[৩৫] মূলত যারা শিয়া নয় তাদের সবাইকেই সুন্নি (মুসলিম) হিসেবে গণনা করা হয়। সুন্নি ইসলাম মূলত অনেকগুলো ইসলামী মতাদর্শের সমষ্টি। এছাড়াও কিছু মুসলমান নিজেদেরকে শিয়া সুন্নি কোনো দলেই ফেলেন না, তারা ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভাজনে বিশ্বাসী না। তারা কুরআন এবং হাদিসকে মূল ধরে এগুলোর আলোকে (ইজমা ও কিয়াস) ইসলাম পালন করে এবং নিজেকে বিশুদ্ধ মুসলমান হিসেবে গড়ার চেষ্টা করে। তবে কুরআন এবং হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনার ক্ষেত্রে ইজমা এবং কিয়াস গ্রহণযোগ্য নয় বলে তারা বিশ্বাস করে। আর তারা মনে করে সকল মুসলমানের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দ্বীন (মাযহাব) ইসলাম মনে করা এবং নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া।
সালাম ও সাল্.ম উভয় শব্দেরই অর্থ হল আনুগত্য, আত্নসমর্পন ও হুকুম পালন। অর্থগুলোর মধ্যে ‘পবিত্র ও দোষ- ত্রুটিমুক্ত হওয়া’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই শব্দমূল হতে (ক্রিয়াপদে/ফে’ল) (أَسْلَمَ) আসলামা, ইসলাম গ্রহণ করল ও ক্রিয়াবিশেষ্য (إِسْلَام) ইসলাম, আত্নসমর্পন এবং কতৃকারকে (مسلم) মুসলিম, ইসলাম গ্রহণকারী শব্দ তিনটির উৎপত্তি হয়েছে।[৪৪][টীকা ২]
সিল্.ম, সিলাম ও সালিম এর অর্থ কঠিন প্রস্তর, কারণ ওতে কোমলতা নাই, নরম হওয়া থেকে মুক্ত। সালাম এর আরেক অর্থ, বাবলা গাছের ন্যায় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ, যা কাঁটাযুক্ত হওয়ায় বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহর গুণবাচক নাম আস-সালাম শব্দটির মধ্যেও যাবতীয় দূর্বলতা থেকে মুক্ত, এমন অর্থ নিহিত রয়েছে। সাল্.ম এর যে ৪টি অর্থ দেয়া হয়েছে তার সবগুলোই ইসলাম শব্দের মাস্.দার (ক্রিয়ামূল) () এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। সেকারণে মূল অর্থ দাঁড়ায় ‘ইবাদত, দ্বীন ও ‘আকীদাকে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট করা।[৪৩]
কুরআনে ৮ জায়গায় ইসলাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে(৩:১৯,৮৫; ৫:৩;৬ :১২৫; ৯:৭৮; ৩৯:২২; ৪৯:১৭; ৬১:৭)। স্বরচিহ্নের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন আকারে তবে একই অর্থে এই শব্দমূল থেকে উৎপন্ন বেশ কয়েকটি পদের ব্যবহার দেখা যায়।(৮:৬১) যুদ্ধবিরতির জন্য শান্তির প্রস্তাব, (২:১০৮) ইসলামি বিধান, (৪:৯১-৯২) যুদ্ধ পরিহারের প্রস্তাব, (১০ :২৫) শান্তি বা (৫১:২৫) শান্তি কামনামূলক মুসলিম অভিবাদন। শেষোক্ত অর্থে ২৪:২৭ আয়াতে, ইসলাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।[৪৪]
অর্থ
প্রধানত দুইটি অর্থ পাওয়া যায়,
এক অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা (২:১১২)
শান্তি স্থাপন তথা বিরোধ পরিহার করা। ২য় অর্থটির ব্যাখ্যা হলো-
আত্মসমর্পনে আল্লাহর সহিত শান্তি স্থাপিত হয় এবং তার বিরুদ্ধতা পরিত্যক্ত হয়।
আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের সাথে একাত্মতার অনুভূতিতে, সাম্যনীতির স্বীকৃতিতে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ইসলাম একটি দ্বিন (৩:১৮); পারস্পরিক ব্যবহার, লেন-দেন সবই এর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিনের উৎস কুরআন। এটি একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সে কারণে ইবাদত ও দার্শনিক বিষয়াবলির পাশাপাশি এটি মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে, সর্ববিষয়ে নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মাবলির প্রতিও গুরুত্ব দেয়।
“রিলিজিয়ন” বা “ধর্ম” বলতে যে আধ্যাত্মিক ও পারত্রিক জীবন-দর্শন ও ক্রিয়াকর্ম বুঝায় সেই অর্থে একে “ধর্ম” বললে কোনভাবেই এর পুরো অর্থ প্রকাশ পায় না।[৪৪]
ইসলাম মানুষের চিরন্তন ধর্ম (৩:১৮)। এর মূল কথা হল-
আল্লাহর একত্ব ও অদ্বিতীয়ত্বে বিশ্বাস,
ইয়াওমূ’ল আখির বা মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও বিচারান্তে অনন্ত পরজীবনে বিশ্বাস, এবং
আমাল-স.আলিহ্ বা সৎকর্মে আত্মনিয়োগ।
বিশ্বাসের পর্যায়গুলো হল
ফেরেশতাগণ,
আসমানী কিতাবমূহ
নবী-রাসূল
শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস
আল্লাহর সর্বময় নিয়ন্ত্রণে (তাকদির) বিশ্বাস ও উপরের তিনটি মৌলিক উপাদানের সাথে যুক্ত হয়।
প্রথম মানব ও নবি আদম হতে শেষ নবি মুহাম্মদ পর্যন্ত কুরআনে উল্লিখিত / অনুল্লিখিত সকল নবি-রাসূল (৪০:৭৮), পৃথিবীর বিভিন্ন গোত্র ও জাতির কাছে (১০: ৪৭, ১৩ : ৭, ৩৫ : ২৪), উপরের তিন উপাদান সংবলিত ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
এই তিনের ভিত্তিতে কুরআন সমসাময়িক ইহুদী, খ্রিষ্টান, স.আবিই ও মাজুসি অর্থাৎ সকল ধর্মাবলম্বীকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল (২ :৬২) এবং আহ্বানে সাড়া দিলে নিরাপত্তা ও মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়েছিলো। এখনও সেই আহ্বান কার্যকর রয়েছে।[৪৪]
তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জ্বিন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে। তবে কিছু সম্প্রদায়, যেমনঃ আহ্মদি বা কাদিয়ানী নামক একটি সম্প্রদায় মনে করে মুহাম্মদ শেষ নবী নন; বরং যুগের চাহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে।[৪৫] এবং শিয়াদের একটি বিরাট অংশবিশেষ ইসমাঈলীয়দের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস যে, ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী ছিলেন। [৪৬]
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আদম হতে শুরু করে আল্লাহ্ প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। কুরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে,
“
“নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে (মুহাম্মদ) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।”৩৫:২৪[৪৭]
”
ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই ইব্রাহিমের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে “আহলে কিতাব” বলে সম্বোধন করা হয়েছে । কুরআনের সূরা আলে ইমরানে আহবান করা হয়েছে,
“
“তুমি (মুহাম্মদ) বল, হে কিতাবীগণ, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুকেই তাঁর শরিক না করি। এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তাঁরা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা স্বাক্ষী থাক; অবশ্যই আমরা মুসলিম।”৩:৬৪[৪৭]
”
এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের পন্ডিতগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন। ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খৃস্টানগণ ইনজিলকেনতুন বাইবেল বলে থাকে।
মুসলমানগণ বিশ্বজগতেরসৃষ্টিকর্তাকে ‘আল্লাহ’ বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ [] তার প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূলসুরা ইখলাসে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে, [قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ] {الاخلاص:১-৪}
“
“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”১১২:১-৪[৪৭]
”
এই পৃথিবীর কোন কিছু যদি সূরা ইখলাসে উল্লেখ করা এই ৪ টি শর্ত পূরণ করে তাহলে মুসলিমদের তাকে আল্লাহ বলে মেনে নিতে কোন সমস্যা থাকবে না।
আল্লাহ্ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত। আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য, যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য। খৃস্টানগণ খৃস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলিমগণ খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসকে অস্বীকার করেন। ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও পৌত্তলিকতার অসমতুল্য, যার কোনো প্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব। মুসলিমরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তার বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে। কিতাবুল ঈমানে আল্লাহর বর্ণনা এভাবে আছে :
আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়। তার কোন অংশ বা অংশিদার বা শরিক নেই। তিনি কারো উপন নির্ভরশীল নন, বরং সকলেই তার উপর নির্ভরশীল। তার কোন কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্র নন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। একমাত্র তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তাআলাকে আয়ত্ত করতে পারেনা।
তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। একমাত্র তিনিই ইবাদত (উপাসনা) পাওয়ার যোগ্য। তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে ঘটমান সব কিছু দেখতে ও শুনতে পান। তাঁর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই, তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
মুসলিমরা বিশ্বাস করে, আল্লাহর বর্ণনা মানুষের কল্পনা, বিজ্ঞান ও দর্শন দ্বারা জানা সম্ভব না।
ফিরিশতা বা ফেরেশতা ফারসী শব্দ। ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘মালাইকা’। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি। এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি। তারা মুলত আল্লাহর দূত। তারা সর্বদা ও সর্বত্র আল্লাহর বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি। তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। তারা পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন। তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোনো স্থানে গমনাগমন ও আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।
ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়িত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য:
জিব্রাইল – ইনি আল্লাহর দূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ২:৯৭; ৯৮, ৬৬:৪)। সূরা ১৬:১০২ আয়াতে জিব্রাইল ফেরেশতাকে পবিত্র রূহ বা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদ আদান-প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব, জিব্রাইল তাদের প্রধান। জিব্রাইল-ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন। এই ফেরেশতাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ তার নিজস্ব আকৃতিতে মোট দুইবার দেখেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আন নাজমে বলা হয়েছে,
“
“সে ঊর্ধ্বাকাশের উপরিভাগে। তারপর সে কাছে এলো। অতঃপর সে আরো কাছে এলো। তাঁদের মাঝে ব্যবধান থাকল দুই ধনুকের বা তাঁর চাইতেও কম। অতঃপর সে তাঁর বান্দার কাছে ওহী পৌঁছে দিল, যা তাঁর পৌঁছানোর ছিল। সে যা দেখেছে, অন্তর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি। তোমরা কী সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা সে নিজের চোখে দেখেছে। সে তাঁকে আরও একবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুন্তাহার কাছে।” ৫৩:৭-১৪[৪৭]
”
প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ: মুসলিম শরীফ ৩২৯, ৩৩০, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪ এবং ৩৩৬[৪৮]
মিকাইল – কুরআনের ২:৯৭ আয়াতে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ইসরাফিল – এই ফেরেস্তা আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন। তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
মালাকুল-মাউত – ইনি মৃত্যুর ফেরেশতা ও সকল প্রাণীর রূহ কবচ করেন।
বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরআনে ‘কিরামান কাতিবিন’ (অর্থ: সম্মানিত লেখকগণ) বলা হয়েছে তারা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন। কবরে মুনকির ও নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত বা বেহেশতের দেখভাল করেন বলে বর্ণিত আছে। ইসলাম, খৃস্টান ও ইহুদী ধর্ম ছাড়া হিন্দুধর্মেও ফেরেশতা তথা স্বর্গীয় দূতদের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে।
আসমানী কিতাবসমূহ
আসমানী কিতাব হলো মূলত আল্লাহর বাণী যা আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল নামক ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলগণের নিকট প্রেরণ করেছেন।বলা হয়, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সর্বমোট আসমানী কিতাব পাঠানো হয়েছে ১০৪টি। তার মধ্যে ৪টি হলো প্রধান আসমানী কিতাব ও বাকি ১০০টি সহীফা।
হাত্তাত আজিজ এফেন্দির হস্তলিখিত – কুরআনের প্রথম সুরা।
কুরআন মুসলিমদের মূল ধর্মগ্রন্থ। তাদের বিশ্বাস পবিত্র এই কুরআন স্রষ্টার অবিকৃত, হুবহু বক্তব্য। বিশ্বাস করা হয়, আল্লাহ নিজেই কুরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে স্রষ্টা প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয়। কুরআনকে আরও বলা হয় “আল-কুরআন” । বাংলায় “কুরআন”-এর জায়গায় বানানভেদে “কোরআন” বা “কোরান”ও লিখতে দেখা যায়।
ইসলাম ধর্মমতে, জীব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ-এর নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ই জুলাই, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাঁর বাণী অবতীর্ণ করেন। এই বাণী তাঁর (মুহাম্মদের) অন্তঃস্থ ছিলো, সংরক্ষণের জন্য তাঁর অনুসারীদের দ্বারা পাথর, পাতা ও চামড়ার ওপর লিখেও রাখা হয়।
অধিকাংশ মুসলিম পবিত্র কুরআনের যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন। কুরআন জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না, বরং কবর দেয়ার মত করে মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় বা পরিষ্কার স্রোতের পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যেক মুসলিমই কুরআনের কিছু অংশ এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্থ করে থাকেন, কমপক্ষে যেটুকু আয়াত নামাজ আদায়ের জন্য পড়া হয়। সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থকারীদের হাফিজ (সংরক্ষণকারী) বলা হয়। মুসলিমরা আরবি কুরআনকেই কেবলমাত্র নিখুঁত বলে বিশ্বাস করেন। সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা ও সণেটিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে কখনোই আরবি কুরআনের সমতুল্য ও সমান নিখুঁত গণ্য করা হয় না, বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ ‘অর্থানুবাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
নবী ও রাসূলগণ
বলা হয়, আদম আঃ থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ পর্যন্ত আল্লাহ পৃথিবীতে প্রায় ১,২৪,০০০ (আনুমানিক) নবী ও রাসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে আদম আঃ সর্ব প্রথম মানুষ ও আল্লাহর সর্ব প্রথম নবী এবং সর্ব শেষ ও চূড়ান্ত নবী ও রাসূল হলেন মুহাম্মাদ।
মুসলিমগণ বিশ্বাস করে যীশু (ঈসা) আল্লাহর পুত্র নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল। তার উপর ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছে। তিনি কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে আবার আসবেন এবং মুহাম্মদের অনুসারী হিসেবে মৃত্যু বরণ করবেন ।
বর্তমান সৌদি আরবের, হেজাজ অঞ্চলের, মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববী (নবীজীর মসজিদ) এঁর প্যানারমিক দৃশ্য। ইসলামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ।
মুহাম্মদ ছিলেন তৎকালীন আরবের কুরাইশ বংশের একজন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তার গুণের কারণে তিনি আরবে “আল-আমীন” বা “বিশ্বস্ত” উপাধিতে ভূষিত হন। স্রষ্টার নিকট হতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনি মানুষকে ইসলাম ধর্ম এর দিকে দাওয়াত দেন। তাকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণী-বাহক (নবী) হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, পূর্বের একেশ্বরবাদী ধর্ম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।
ইসলাম ধর্মমতে, তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে জিব্রাইলের মাধ্যমে ঐশী বাণী লাভ করেন। এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো পবিত্র কুরআন, যা তিনি মুখস্থ করেন ও তার অনুসারীদের (সাহাবী) দিয়ে লিপিবদ্ধ করান। কারণ, তিনি নিজে লিখতে ও পড়তে জানতেন না।
কুরআনে বলা হয়েছে,
“
“তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পড় নি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখনি যে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করবে।”২৯:৪৮ [৪৭]
”
“
“সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।” ৬৯:৪৪-৪৭ [৪৭]
”
মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, ঐশ্বিক বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলামের নবী কখনো ভুল করেননি। আরো বিশ্বাস করা হল, তার জীবনকালে তিনি সম্পূর্ণ আলৌকিকভাবে মেরাজ লাভ করেন।
মুসলিমদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে “সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলতে হয়। এর অর্থ: ‘আল্লাহ তার উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন।’ একে বলা হয় দরুদ শরীফ। এছাড়াও আরও অনেক দরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে। তার মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট। কোনো এক বৈঠকে তার নাম নিলে দরুদ একবার বলা আবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব)।
‘হাদীস’ (اﻠﺤﺪﻴث) আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কথা, বাণী, কথা-বার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী ইত্যাদি। [৪৯] ইসলামী পরিভাষায় মুহাম্মদের কথা, কাজ, অনুমোদন এবং তার দৈহিক ও চারিত্রিক যাবতীয় বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে। মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তার সাহাবীরা তার হাদীসসমূহ মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতেন। প্রথমদিকে হাদীস লেখার অনুমতি ছিলো না। তখনকার অনুন্নত মুদ্রণব্যবস্থার কারণে কেউ লিখিত হাদিসকে ভুলক্রমে কুরআনের আয়াত মনে করতে পারে এই আশঙ্কা ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের নবী তার কোনো কোনো সাহাবী বা সহচরকে হাদীস লেখার অনুমতি প্রদান করেন।[৫০] তার মৃত্যুর পর তার সাহাবীরা নিয়মিত তার হাদিসগুলো চর্চা করতেন ও তাদের ছাত্রদের কাছে বর্ণনা করতেন। সাহাবীদের ছাত্র তথা তাবেঈরা ওমর ইবন আব্দুল আযীযের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন।[৫১]
মুহাম্মদের কথা-কাজসমূহের বিবরণ এভাবে লোকপরম্পরায় সংগ্রহ ও সংকলন করে সংরক্ষণ করা হলে তার বক্তব্যসমূহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয়। মুসলিম পণ্ডিতদের সংকলিত সেসব হাদিস-সংকলন গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছয়টি গ্রন্থ প্রসিদ্ধ হয়েছে। এগুলোকে ‘ছয়টি হাদিস গ্রন্থ’ (কুতুবুস সিত্তাহ) আখ্যা দেয়া হয়। হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাদীসের সনদ বা হাদিসের বর্ণনাকারীদের নির্ভরযোগ্য যাচাই।
কিয়ামতে বা শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলির একটি। ইসলাম ধর্মে কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্বের সৃষ্টা (আল্লাহ) সকল মানুষ ও জ্বীন দের পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য। সকলে তার কৃতকর্মের হিসাব দেওয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার বা শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে জান্নাত/বেহেশত কিংবা জাহান্নাম/দোযখ এ পাঠানো হবে। ইসলামের নবী কিয়ামতের পুর্বের ঘটনাবলি সম্পর্কে কিছু আগাম নিদর্শন বলে গেছেন। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল
ইংরেজি ভাষায় ইসলাম (al-Islām) শব্দটির দশটি উচ্চারণ রয়েছে। উচ্চারণের সময় আক্ষরিকভাবে কোন ‘সিলাবলটির উপর জোর দেয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এই আলাদা আলাদা উচ্চারণগুলো প্রচলিত হয়েছে। এখানে বাংলা একাডেমি অভিধানের উচ্চারণ দুটি দেয়া হল। যুক্তরাষ্ট্র (), যুক্তরাজ্য () আরবীতে ক্রিয়ার রুপ ও ব্যবহার বাংলা/ইংরেজি ব্যাকরন হতে মৌলিকভাবে আলাদা)