নিম্নমানের নকশাভিত্তিক যুক্তি (ইংরেজি: Argument from poor design বা Dysteleological argument) সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে একটি যুক্তি। এই ক্ষেত্রে বলা হয় একজন সর্বশক্তিমান এবং দয়ালু ঈশ্বর জীবে এমন কোনো জটিল নকশা করেন নি, যা প্রকৃতিতে দেখা যায়।

এই বিতর্কের স্ট্রাকচার মোডস টলেন্সের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে: যদি সৃষ্ট জীবে এমন অনেক কিছু পাওয়া যায়, যা নিখুঁত নয়, সেক্ষেত্রে জীবে; সত্তার দ্বারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডিজাইনের হাইপোথিসিসের আর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। যাইহোক এর প্রধান লক্ষ্য ঈশ্বর আছে কি নাই, তা নির্ধারণ করা নয়, বরং এটা এ বিষয়ে আলোচনা করে যে, ভাগ্য বা ঘটনা চক্রে জীবের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করলে, জীবে এমন অনেক ডিজাইন খুঁজে পাওয়া যায়, যা দেখে অবশ্যই এটাই মনে হয়, এ ডিজাইন দুর্ঘটনাবশত নয়, বরং ঈশ্বরের দ্বারা অনেক ভেবেচিন্তে তৈরি করা হয়েছে।
যদিও “argument from poor design” নামে এই নিবন্ধটি লিখা হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে এটা খুব কম ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়ে বিতর্ক চললে বর্তমানে হালনাগাদ হিসাবে অন্যান্য ফ্রেজ (phrase) বা নতুন শিরোনামে একে ডাকা হয়, যেমন: “poor design”(মান অনুন্নত নকশা), “suboptimal design”(দুর্বল মানের নকশা), “unintelligent design”(বুদ্ধিহীন নকশা) অথবা “ডিস্টিওলজি/ডিস্টিওলজিকালl“। শেষ পরিভাষা টি ১৯ শতকের জীববিজ্ঞানী আর্নেস্ট হ্যাকল প্রবর্তন করেন।
মোটের উপর সাধারণ পাঠ

আশা করা যায়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে যারা টিকে থাকবে, তারা যোগ্যতার চূড়ায় অবস্থান করবে, কিন্তু এই চূড়া সবসময় শীর্ষস্থানীয় হয় না।
বিতর্কটি যেভাবে চলে:
- একজন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, মহান দয়ালু স্রষ্টা ঈশ্বর জীব সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ এই মহান সত্তা নিশ্চয়ই তার সৃষ্ট জীবে সর্বোৎকৃষ্ট নকশা তৈরী করবেন।
- কিন্তু জীবে যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা সর্বোৎকৃষ্ট নয়।
- অর্থাৎ হয় ঈশ্বর জীব সৃষ্টি করেননি অথবা তিনি দয়ালু, জ্ঞানী অথবা সর্বশক্তিমান নন।
বিখ্যাত টেলিওলোজিক্যাল আর্গুমেন্টের এর reductio ad absurdum হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়:
- দুর্ঘটনা বা ভাগ্যক্রমে জীবের গঠনপ্রণালি যদি তৈরী হয়ে থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত নিখুত। কিন্তু এতটা নিখুঁত বুদ্ধিহীন প্রকৃতি কিভাবে তৈরী করে?
- অর্থাৎ, জীবন অবশ্যই কোনো কোনো এক বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা দ্বারাই তৈরি হয়েছে
- আর এ সৃষ্টিকর্তাই হলেন ঈশ্বর
“খুতযুক্ত ডিজাইন” বিবর্তন নামক বৈজ্ঞানিক থিওরী অর্থাৎ প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এই থিওরী অনুযায়ী, এই সমস্ত খুতগুলো জীবে কোনো কাজের জন্যই তৈরী হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে জীবের বিবর্তনের কারণে প্রজাতিভেদে এই অংশগুলোর কিছু ভিন্ন কাজ শুরু করেছে অথবা কিছু কিছু নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। যা জীবদেহে বিবর্তনের চিহ্ন বা অবশেষ রুপে বিদ্যমান।
সর্বোৎকৃষ্ট চূড়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং বলা হয়, এটার ফলে উৎপন্ন প্রজাতির যে বৈশিষ্ট্য উৎপন্ন হবে, তা হবে সর্বোত্তম। কিন্তু একটা প্রজাতি স্বাভাবিকভাবে প্রথমবারেই টিকে থাকার লড়াইয়ে সেরা স্থানে পৌছে যেতে পারে না।
এই “poor design” বিতর্কটি চার্লস ডারউইনও ব্যবহার করেছেন।[১] Stephen Jay Gould এবং Richard Dawkins এই বিতর্ক কে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তাদের মতে জীবদেহে বিদ্যমান এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া ক্রমান্বয়ে পুঞ্জীভূত চিহ্ন । আর এভাবেই এই বৈশিষ্ট্য (Features) গুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। ধর্মে বিশ্বাসী বিবর্তনবাদীরা জীবের নকশা নিয়ে এই বিতর্ককে বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে তাদের বিশ্বাসকে বলবৎ রেখে দিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
উদাহরণসমূহ
মানুষে
মারাত্মক ত্রুটি

শিল্পীর তুলিতে ectopic pregnancy এর চিত্রায়ন। সমালোচকরা এইসব জ।হরণকে ‘প্যালের ঘড়ি সংক্রান্ত‘ উপমার সাথে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে
মানবদেহের শারীরবিদ্যায় বেশ অনেকগুলো খুত রয়েছে, যেগুলোর ভয়াবহতা এত ব্যাপক যে, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে মানুষকে মৃত্যু বরন পর্যন্ত করতে হতোঃ
- In the human female, a fertilized egg can implant into the fallopian tube, cervix or ovary rather than the uterus causing an en:ectopic pregnancy। ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান নালির মাঝে ক্যাভিটির উপস্থিতি নারীর পুন:উৎপাদনশীল প্রক্রিয়ার ডিজাইনের যে ব্যাপক ত্রুটি আছে তাকে নির্দেশ করে। আধুনিক সার্জারীর পুর্বে ইকটোপিক প্রেগনেন্সির কারণে (এক্ষেত্রে ভ্রুণ ইউরেটাসের বাইরে সংযুক্ত হয়) সন্তান এবং মা উভয়ই মৃত্যুমুখে পতিত হত। এমনকি বর্তমান সময়েও; এ ধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে মায়ের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মায়ের গর্ভপাত(এবরশন) করানো হয়।
- নারী মানবদেহে, the birth canal passes through the pelvis. The prenatal skull will deform to a surprising extent. যাইহোক, যদি বাচ্চার মাথা পেলভিক আগ্রমুখের(pelvic opening) চেয়ে বড় হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে মা তার সন্তান প্রসব করতে পারে না। আধুনিক চিকিৎসার উন্নয়নের পুর্বে (সিজারিয়ান পদ্ধতি) এই ধরনের জটিলতার ফলে হয় মা, অথবা সন্তান অথবা উভয়ই মারা যেত। জন্মগত অন্য জটিলতা যেমন:breech birth (সন্তানের উপরের অংশের পরিবর্তে নিচের অংশ যদি আগে ভুমিষ্ট হয়, তাকে ব্রিচ বার্থ বলে) এর ক্ষেত্রে ভ্যাজিনার(বার্থ ক্যানাল) অবস্থানের জন্য পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে।
- পুরুষ মানুষে, শুক্রাশয় প্রাথমিকভাবে পেটের ভিতর তৈরী হয়। গর্ভকালের পরে তা উদরীয় প্রাচীর (abdominal wall) দ্বারা স্ক্রোটামের ভিতর স্থানান্তরিত হয়। এর কারণে উদরীয় প্রাচীরে দুইটি দুর্বল পয়েন্ট গঠিত হয়, যা থেকে পরবর্তীতে হার্নিয়া হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে অভ্যন্তরীণ ব্লক এবং গ্যাংরিনের মত জটিলতার কারণে সাধারণত মৃত্যু ঘটত।[২]
- গলবিল, খাদ্য গলাধঃকরণ এবং শ্বসন উভয়ের জন্য একটি প্যাসেজ বা সাধারণ পথ ব্যবহৃত হয়; এর ফলে বিষম খাওয়ার(শ্বাসরোধের) প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকে।
- মানবদেহে অবস্থিত এপেণ্ডিক্স হচ্ছে একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ, এটি থাকার উদ্দেশ্য কী, তা জানা যায় নি। (ইতোমধ্যে এর কিছু কার্যকারীতা প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু এগুলো এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়) একে অপসারণ করলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ও পরে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যাইহোক, এই অপ্রয়োজনীয় অঙ্গের কারণে এপেণ্ডিসাইটিস নামক ইনফেকশন হতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মেডিক্যাল-ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যক্তির নিশ্চিত মৃত্যু হয়।
f
অন্যান্য ত্রুটি
- অতিকম ব্যবহৃত স্নায়ু ও পেশি, যেমন প্লিন্টারিস পেশি পায়ের,[৩] that are missing in part of the human population and are routinely harvested as spare parts if needed during operations. আরেকটি উদাহরণ হলোঃ কান নাড়ানোর জন্য যে পেশির প্রয়োজন, সেই পেশি মানুষের আছে এবং এর কোনো উপযোগিতা নেই।([৪] p. 328).
- প্রায় সকল প্রাণী এবং উদ্ভিদ তাদের নিজেদের শরীরে ভিটামিন সি সংশ্লেষণ করতে পারে, কিন্তু মানুষ তা করতে ব্যর্থ। কারণ এ এনজাইমের জন্য যে জিন প্রয়োজন (সুডোজীন ΨGULO) তা মানবদেহে নিষ্ক্রিয়।[৫] ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয় এবং পরবর্তীতে মৃত্যুও হতে পারে। এই জীন অন্যান্য প্রাইমেট এবং গিনিপিগ এও নিষ্ক্রিয়, কিন্তু সক্রিয় অন্য প্রাণীতে।[৬]
অন্যান্য জীবে
- আফ্রিকান লোকাস্টে স্নায়ু কোষ যা ডানাকে সংযুক্ত করে, তা উদরে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এটা একটা অপ্রয়োজনীয় শক্তি খরচ।[২]
- অর্কিডের প্রজনন ব্যবস্থা অন্যান্য ফুল থেকে জটিল এবং ভিন্ন
- পাণ্ডার বড় সীসাময়েড অস্থি; অন্যান্য প্রাণী যেভাবে অঙ্গুলি ব্যবহার করে, সেভাবেই ব্যবহৃত হয়।[২]
- অউড্ডয়নশীল পাখিতে( উড়তে অক্ষম) অপ্রয়োজনীয় ডানার উপস্থিতি। যেমনঃ উটপাখি ([৪] p. 326).
- টেট্রাপডের সাথে তুলনা করলে অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী টেট্রাক্রোমিক দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলেছে।
- বলিষ্ঠ কিন্তু ভারী হাড় প্রাণী যারা উড়তে পারে না তাদের জন্য উপযুক্ত, কিন্তু বাদুড় উড়তে পারে অথবা হালকা হাড় পেনগুইন এবং উটপাখির মত পাখিতে আছে, কিন্তু তারা উড়তে পারে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- অসংখ্য নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতি। যেমনঃ তিমিতে ফিমার এবং পেলভিসের উপস্থিতি।(বিবর্তন অনুসারে তিমির পুর্বপুরুষরা স্থলেই বসবাস করত)
- টুরিটোপসিস দোর্নি(একপরকার জেলিফিস) এবং হাইড্রা জৈবিকভাবে অমরণশীল, কিন্তু বেশিরভাগ প্রাণী তা নয়।
- অনেক প্রজাতিতে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপনায় সাড়াদানের সহজাতপ্রবৃত্তি থাকে। এটা অনেকক্ষেত্রে প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়। যেমনঃ মথ আগুনের শিখা দেখলে সেইদিকেই আকৃষ্ট হয়।
- উদ্ভিদের রঙ কালো নয়, সবুজ। কারণ ক্লোরোফিল সবুজ আলো খুবই অল্প শোষণ করে, কিন্তু উদ্ভিদ যদি কালো হত, তাহলে সে বেশি পরিমাণ আলো বা শক্তি শোষণ করতে পারত।
- তিমি এবং ডলফিন বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণ করে, কিন্তু পানিতেই জীবনযাপন করে। এর অর্থ তাদেরকে ঘনঘন পৃষ্ঠতলে উঠে আসতে হয় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করতে।
সমালোচনা
উত্তম নকশা এবং ট্রেড-অফ ব্যবস্থা
অনেকেই এর সমালোচনায় বলে, যে সিস্টেম দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা একটা বাজে নকশা বা ওই সিস্টেমে বাজে খরচ হয়েছে আসলে এমনো হতে পরে, এটা ইচ্ছে করে করা হয়েছে। যেমনঃ ট্রেড অফ ব্যবস্থার মত। এটা এমন এক অবস্থা; যেখানে ইচ্ছে করে সিস্টেমে কোনো কিছু খারাপ করে, বাকি বিষয়গুলো উন্নত করা হয়, এর ফলে দেখা যায় পুরো সিস্টেমটাই ভালোভাবে চলছে।[৭] তড়িৎকৌশল প্রকৌশলির এমপ্লিফায়ারের যে ডিজাইন, তা থেকে একটা উদাহরণ প্রায়সই ব্যবহার করা হয়ঃ মনে করো, একজন তড়িৎপ্রকৌশলী নেগেটিভ ফিডব্যাক লুপ ব্যবহার করে, যাতে করে এমপ্লিফায়ার স্থায়িত্ব অর্জন করে। কিন্তু একজন সাধারণ পর্যবেক্ষক যখন তা পর্যবেক্ষণ করবেন, তার মনে হতেও পারে প্রকৌশলী ভুল করেছেন। কিন্তু এই low(কম) gain ইচ্ছাকৃত ছিল, এটা দেখে ভুল মনে হচ্ছে-কারণ পর্যবেক্ষকই প্রকৌশলীর কাজ সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিল।
সুনির্দিষ্ট উদাহরণসমুহ
পরিকল্পিত সৃজনবাদের প্রবক্তা উইলিয়াম ডেমবস্কি সন্তোষজনক ডিজাইন এবং পরিকল্পিত ডিজাইনের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করেন।[৮] জন উডমরাপে Creation Ministries International নামক ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লিখেন, তিনি সেখানে বলেছেন পাণ্ডার “অঙ্গুষ্ঠী “ পাণ্ডার পাতা ছিড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।[৯]
এপেণ্ডিক্সকে দাবী করা হয়, জীবে এর কোনো কাজ নেই, কিন্তু গবেষকরা দেখিয়েছেন, এটা ফিটাসে এবং তরুণ যুবকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভ্রুণের বৃদ্ধির ১১তম সপ্তাহে ফিটাসের এপেণ্ডিক্সে এণ্ডোক্রিন কোষ তৈরী হয়, এই কোষ অনেক বায়োজেনিক এমাইন এবং পেপটাইড হরমোন তৈরী করে, যা জৈবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আর তরুণ বয়সে এপেণ্ডিক্স ইমিউনিটি সিস্টেম বা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কাজ করে।[১০]
সৃষ্টিবাদী জোনাথান সারফাতি এবং অপথালমোলজিস্ট পিটার গার্নি যৌথভাবে Creation Ministries International ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লিখেন। সে আর্টিকেলে মানব চক্ষুর ডিজাইন ত্রুটিপুর্ণ, এই অভিযোগকে তারা নাকচ করে দেন। তাদের মতে যদি বিকল্পভাবে এই চোখের ডিজাইন করা হত, তাহলে তা আরো জটিলতার স্বীকার হত। এর চেয়ে এই নকশাই উত্তম এবং মানবচক্ষু ভালোভাবেই কাজ করছে।[১১][১২]
সমালোচনার প্রতিউত্তর
ত্রুটিযুক্ত নকশার বিপক্ষে যে সব যুক্তি আছে, তার বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিউত্তর দয়েছেন। উদাহরণস্বরুপঃ পাণ্ডার বৃদ্ধাঙ্গুলির ক্ষেত্রে, এই ক্ষেত্রে এই অভিযোগ করা হয় না যে এটা কাজ করে না, বরং এটা করা হয় যে; এই নকশাটা ত্রটিযুক্ত। বাস্তবে পরিবর্তিত কবজির হাড় থেকে হাতের অঙ্গুলি বেশি কর্যকরী হয়।
দাবী করা হয়, জাঙ্ক ডিএনএর উপযোগিতা পাওয়া গেছে, এই দাবীর প্রতিউত্তরে ত্রুটিযুক্ত নকশার প্রবক্তরা বলেন, কিছু নন-কোডিং ডিএনএর কার্যকারীতা পাওয়া গেছে সত্যি, কিন্তু তার মানে তো এই না যে সকল নন কোডিং ডিএনএরই কার্যকারীতা আছে। মানবজাতিতে কিছু জিনকে সুডোজিন বলে, যা বাস্তবিকই অকার্যকর এবং জাঙ্ক।
ঈশ্বরকে জড়িয়ে এই বিতর্ক
দুর্বল ডিজাইন বলে যে বিতর্ক চলে আসছে, এই বিতর্কের বিতার্কিকরা কখনো কখনো ঈশ্বরের অস্তিত্বের অনুপস্থিতি বা দয়ালু, সর্বশক্তিমান ব্যক্তি ঈশ্বরকে বাতিল করে দেওয়ার জন্য এ বিতর্ককে ব্যবহার করেন । দুর্বল-নকশা অর্থে একে ঈশ্বরর অযোগ্যতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। দুর্বল নকশার উপস্থিতি (তাদের মতে, বিবর্তনের কারণেই শক্তির অপচয় হয় এধরনের অনেক কিছুই জীবে রয়ে গেছে ) এটাই প্রমাণ করে যে, যদি কেও জীবজগৎ কে ডিজাইন করে, তাহলে হয় সে অজ্ঞ ডিজাইনার বা অন্ধ নকশাকারী বা বাস্তবে কোনো নকশাকারীই নেই। গুল্ডের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ” যদি ঈশ্বর নিজের জ্ঞানের বিশালতা এবং ক্ষমতা প্রকাশ করতে চান তাহলে তিনি যে মেশিনটা বানাবেন নিশ্চয়ই সেখানে তিনি শুধু ফ্যাশন হিসেবে সেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করবেন না, যার কোনো কার্যকারিতা সেই মেশিনে নেই। অর্কিডকে দেখলেই বুঝা যায়, এটা কোনো আদর্শ মানের নকশাকারী তৈরী করে নি, বরং মনে হয় তড়িঘড়ি করে যেনতেন ভাবে তৈরী করা হয়েছে।….”[১৩]
ধর্মে বিশ্বাসী বিবর্তনবাদীরা দুর্বল নকশাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য বলেন, স্রষ্টা তার সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন কেই ব্যবহার করেছেন।[১৪]