Tag: বিসিএস পরীক্ষা মডেল টেস্ট

  • ইসলামের রূপরেখা

    ইসলামের রূপরেখা

    ইসলাম  –ইসলাম (আরবি: الإسلام‎‎ আল্-ইস্‌লাম্) একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্মকুরআন দ্বারা পরিচালিত;  যা আল্লাহর (আরবি : الله আল্লাহ্) বানী এবং ইসলামের প্রধান নবী মুহাম্মাদ এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শও (বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে) ইসলামের ভিত্তি। ইসলামের অনুসারীরা মুহাম্মদ -কে শেষ নবী বলে মনে করেন। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়।

    ইসলামের রূপরেখা

    বিশ্বাস

    আকিদা

    সুন্নী/ইবাদী/আহমদিয়া
    ইসলামের পঞ্চস্তম্ভশাহাদাহ্‌নামাজরোজাহজ্জযাকাত

    তাওহীদরিসালাতইসলামের নবি ও রাসুলফেরেস্তা

    আসমানী কিতাবআখিরাততকদীরকদরশেষ বিচারইসলামি পরকালবিদ্যাখতমে নবুয়ত

    শিয়া ইসনা আশারিয়া তাওহিদআদলনবুয়তইমামতনামাজরোজাহজ্জযাকাতখুমুসসৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধজিহাদ

    ইসমাইলি ইসমাইলি সপ্তস্তম্ভ

    পয়গাম্বর

    ধর্মগ্রন্থ
    ইসলামি গ্রন্থসমূহ
    আসমানী কিতাব
    কুরআন
    সূরা
    মাক্কী সূরা
    মাদানী সূরা
    আয়াত
    পারা

    মুকাত্তা’আত
    কুরআনে নারী
    কুরআনে দৃষ্টান্ত

    সম্প্রদায়

    ইবাদত (প্রার্থনা)

    মুসলমান দাবিকারী দলসমূহ

    ইসলামি ধর্মতত্ত্ব

    দর্শন

    ইসলামি দর্শন
    ইসলামে নীতি
    সুফি অধিবিদ্যা
    কালাম
    ইহসান
    মারিফাত
    হাকিকত
    সুফি মনোবিজ্ঞান
    ইসলাম ও বিজ্ঞান
    ইসলামি বিজ্ঞান
    ইসলামি অর্থনীতি
    ইসলামি গণতন্ত্র
    ইসলামি সমাজতন্ত্র
    ইসলামি আইন
    ইসলামবাদ
    মুসলিম জাতীয়তাবাদ
    ইসলামের দৃষ্টিতে বিবর্তনবাদ
    মধ্যযুগে ইসলামী বিশ্বে আলকেমি ও রসায়ন
    মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বে জ্যোতির্বিদ্যা
    মধ্যযুগীয় ইসলামে ভূগোল ও মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা
    মধ্যযুগীয় ইসলামে গণিত
    মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বের চিকিৎসা
    মধ্যযুগীয় ইসলামে চক্ষুরোগ-চিকিৎসা
    মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞান
    মধ্যযুগের ইসলামে মনোবিজ্ঞান

    ধর্মতত্ব

    আইন

    হাদিস

    জিহাদ

    ইসলামি সন্ত্রাসবাদ
    জিহাদ
    ইসলামের রাজনৈতিক দিক
    মুহাম্মাদের নেতৃত্বে যুদ্ধের তালিকা
    ইসলামি মৌলবাদ
    ইসলামবাদ
    ইসলামি সামরিক আইনশাস্ত্র
    খিলাফত

    অলৌকিক

    নবীজীর সামরিক জীবন

    মুসলিমদের বিজয়

    ইসলামের কাহিনী

    বিশ্বব্যাপী ইসলাম

    ইসলামের ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: ইসলামের ইতিহাস

    প্রতিষ্ঠান

    গ্রন্থ

    সুন্নি সংগ্রহ

    1. সহীহ বুখারী
    2. সহীহ মুসলিম
    3. সুনানে আবু দাউদ
    4. সুনান আত-তিরমিজী
    5. সুনানে নাসাই
    6. সুনান-এ-ইবনে মাজাহ
    • কুতুব আস-সিত্তাহ ব্যতীত
      • অন্যান্য প্রাথমিক / প্রধান সংগ্রহ (প্রাথমিক হাদিসের বইগুলি সেই বইগুলি যা লেখক বা তাদের ছাত্ররা নিজে সংগ্রহ করেছেন এবং লিখেছেন)।
    1. মুয়াত্তা ইমাম মালিক
    2. সুনান আদ-দারিমী
    3. মুসনাদে আহমাদ
    4. সহীহ ইবনে খুজাইমাহ
    5. সহীহ ইবনে হিব্বান
    6. আল-মুস্তাদরাক আলা আল-সহীহাইন (তালখিস আল-মুস্তাদরাক)
    7. মুজামুল কবির
    8. মুজামুল আওসাত
    9. মুজামুস সাগির
    10. মুসনাদ আত-তায়ালিসি
    11. মুসনাদ আবি আওয়ানা
    12. মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ
    13. আবদুল আল রাজ্জাকের মুসান্নাফ
    14. আল-আদাবুল মুফরাদ
    15. সুনানুল কুবরা লিল-বায়হাকি( আল-সুনান আল-কবির )
    16. শুয়াবুল ইমান
    17. শামাইল মুহাম্মাদিয়া (শামাইল তিরমিযী)
    18. মুসান্নাফ ইবনে জুরায়জ
    19. সুনান আল-কুবরা লিল নাসা’ই
    20. সহিফাহ হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ
    21. তাহজিবুল আসার
    22. কিতাব-উল- আতাহার
    23. মুসনাদে আবু হানিফা
    24. মুসনাদ আল-শাফিয়ী
    25. মুসনাদুস সিরাজ
    26. মুসনাদ আল-ফিরদাউস
    27. মুসনাদ আবু ইয়ালা
    28. সুনান সাঈদ ইবনে মানসুর
    29. আমির আল মোমেনিনের খাসাইস
    30. সুনান দার আল-কুতনি
    31. মুসনাদ হুমাইদি
    32. মুসনাদ ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ
    33. মুসনাদ আল বাজ্জার
    34. তহাবী শরীফ
    35. খাসায়েসুল কুবরা
    36. আল মাওজুআতুল কুবরা
    • হাদীসের মাধ্যমিক বইগুলি (মাধ্যমিক হাদিসের বইগুলি হ’ল বইগুলি যা প্রাথমিক হাদিসের বইগুলি থেকে নির্বাচিত, সংকলন এবং সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এটি মূল সংগ্রহ নয়)। )
    1. মিশকাত আল-মাসাবিহ
    2. মাসবিহ আল-সুন্নাহ
    3. রিয়াযুস সালিহিন
    4. বুলুগ আল-মারাম
    5. মাজমা আল জাওয়াইদ
    6. কানজ আল-উম্মাল
    7. যুজাজাত আল-মাসাবীহ
    8. সহীহুল বিহারী
    9. মুনতাখাব আহাদীদ
    10. আল-মাওদ’আত আল-কুব্রী (
    11. আত-তারগীব ওয়াট-তারাহীব
    12. মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর সহীহাহ হিসাবে সিলসিলাহ আহাদীছ
    13. জামে ‘ মুক্বিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদি’র সহীহ

    সামাজিক

    ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা

    সমালোচনা

    ঘটনাবলী

    অবস্থান এবং স্থাপনাসমূহ

    অর্থনীতি

    সংগ্রামী মুসলিম দল

    ইসলামী ব্যক্তিত্ব

    নবী-রাসূলগণ

  • প্রবেশদ্বার:ইসলাম

    প্রবেশদ্বার:ইসলাম

    আল-ইসলাম প্রবেশদ্বারে স্বাগতম উইকিপিডিয়ায় ইসলাম-সম্পর্কিত সম্পদের জন্য একটি প্রবেশদ্বারবাংলা ভাষায়২,৩৮৮ টি নিবন্ধ রয়েছে।

    প্রবেশদ্বার:ইসলাম
    ইসলাম প্রবেশদ্বারমুহাম্মাদ (সাঃ) প্রবেশদ্বারইসলাম কী?সূচকউইকিপ্রকল্পবিষয়শ্রেণী
    Basmala.svg

    সম্পাদনা

    প্রবেশদ্বার ইসলাম

    Bissmillah.gif

    ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্‌-ইসলাম্‌) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। “ইসলাম” শব্দের অর্থ “আত্মসমর্পণ”, বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পণ। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে আরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলামের নবীমুহাম্মদ এই ধর্ম প্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং তার কর্তৃক মুহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের (মুসলমানদের) বিশ্বাস

    অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়।ইহুদিখ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়। মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি ও তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। মুহাম্মদ ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়া পত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান অনারব এবং আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান সংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশভাগ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।

    ইসলাম সম্পর্কে আরও জানুন…

    সম্পাদনা

    প্রধান নিবন্ধ

    Istanbul, Hagia Sophia, Allah.jpg

    আল্লাহ্ (আরবি: ﺍﷲ‎‎) একটি আরবি শব্দ, ইসলাম ধর্মানুযায়ী যার মানে হল “বিশ্বজগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং প্রতিপালকের নাম”। “আল্লাহ” শব্দটি প্রধানতঃ মুসলমানরাই ব্যবহার করে থাকেন। মূলতঃ “আল্লাহ্” নামটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকতার সাধারনভাবে বহুল-ব্যবহৃত নাম। এটি ছাড়াও আরো কিছু নামে সম্বোধন করা হয়। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ্‌র নিরানব্বইটি নামের কথা উল্লেখ আছে; তার মধ্যে কয়েকটি হল: সৃষ্টিকতা, ক্ষমাকারী, দয়ালু, অতিদয়ালু, বিচারদিনের মালিক, খাদ্যদাতা, বিশ্বজগতের মালিক প্রভৃতি।

    তবে আরবি খ্রিস্টানরাও প্রাচীন আরবকাল থেকে “আল্লাহ” শব্দটি ব্যবহার করে আসছেন। বাহাই, মাল্টাবাসী, মিজরাহী ইহুদি এবং শিখ সম্প্রদায়ও “আল্লাহ” শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। আরো দেখুন

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত নিবন্ধ

    Mecca prayer, 1889.tif

    মসজিদ (আরবি: مسجد‎‎ উচ্চরণ:ˈmæsdʒɪd) মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত স্থাপনা। শব্দটির উৎপত্তি আরবি “মসজিদ” থেকে, যার আভিধানিক অর্থ শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থৎ সিজদাহ করা। সাধারণভাবে, যেসব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: صلاة‎‎ সালাত) আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে। আবার যেসব বড় আকারের মসজিদগুলো নিয়মিত নামাজের সাথে সাথে শুক্রবারের জুম’আর নামাজ আদায় হয় এবং অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী (যেমন: কোরআন শিক্ষা দেওয়া) সম্পাদিত হয়, সেগুলো জামে মসজিদ (مسجد جامع) নামে অভিহিত। ইমাম নামাজের ইমামতি করেন বা নেতৃত্ব দেন।

    মসজিদ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রার্থণা করা ছাড়াও শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতর়ণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।মসজিদের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে, সেই সপ্তম শতাব্দির সাদাসিধে খোলা প্রাঙ্গনবিশিষ্ট মসজিদে কাবা বা মসজিদে নববী থেকে বর্তমানে এর প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। এখন অনেক মসজিদেরই সুবিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার এবং বৃহদাকার প্রাঙ্গন দেখা যায়। মসজিদের উৎপত্তি আরব উপদ্বীপে হলেও বর্তমানে তা পৃথিবীর সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আরও জানুন…

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত রাজ্য

    ImperioOtomano1683.png

    উসমানীয় সাম্রাজ্য (/ˈɒtəmən/; উসমানীয় তুর্কি: دَوْلَتِ عَلِيّهٔ عُثمَانِیّه, Devlet-i Aliyye-i Osmâniyye, আধুনিক তুর্কি: Osmanlı İmparatorluğu or Osmanlı Devleti), ঐতিহাসিকভাবে তুর্কি সাম্রাজ্য বা তুরস্ক বলে পরিচিত, ছিল একটি ইসলামি সাম্রাজ্য। ১২৯৯ সালে অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রথম উসমান উত্তরপশ্চিম আনাতোলিয়ায় এই সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম মুরাদ কর্তৃক বলকান জয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য বহুমহাদেশীয় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে এবং খিলাফতের দাবিদার হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদেরকনস্টান্টিনোপল জয় করার মাধ্যমে উসমানীয়রা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য উচ্ছেদ করে।

    ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল।১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩২টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এসবের কিছু পরে সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকিগুলোকে কিছুমাত্রায় স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়া হয়।

    উসমানীয় সাম্রাজ্য ছয় শতাব্দী ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। তবে দীর্ঘদিনব্যাপী ইউরোপীয়দের তুলনায় সামরিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। ধারাবাহিক অবনতির ফলে সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর আনাতোলিয়ায় নতুন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের উদ্ভব হয়। বলকানমধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো বিভিন্ন নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আরও জানুন…

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত চিত্র

    তানজানিয়ানরা ২০০৮-২০০৯ গাজা গোলাবর্ষণের প্রতিবাদ করছেন
    কৃতিত্ব: মুহাম্মদ মাহদি করিম

    তানজানিয়ানরা ২০০৮-২০০৯ গাজা গোলাবর্ষণের প্রতিবাদ করছেন।

    …সংগ্রহশালা/মনোনয়নআরও…

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত জীবনী

    Navez Agar et Ismaël.jpg

    ইসমাইল (আরবি: إسماعيل) কুরআন এবং বাইবেলে উল্লেখিত এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, তিনি একজন নবী, এবং তাঁর সম্মানার্থে তাঁর নামোচ্চারণের সাথে ‘আলাইহিসসালাম’ (সংক্ষেপে আ.) বা ‘শান্তি বর্ষিত হোক’ উচ্চারণ করা উচিত। তিনি ইব্রাহিম-এর সর্বপ্রথম সন্তান এবং ইব্রাহিমের স্ত্রী হাজেরার গর্ভে তার জন্ম। বাইবেলের বর্ণনামতে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

    বাইবেলে তাঁর উল্লেখ ইশমায়েল নামে, সেখানে তাঁর পিতার নাম উচ্চারিত হয় ‘আব্রাহাম‘ হিসেবে।

    ইসমাঈলের পিতা ইব্রাহীমকে [আ.] ঈশ্বর (আল্লাহ) বলেছিলেন, “তোমার সবচাইতে প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় কুরবাণী করো”; তখন তিনি একে একে দুম্বা, উট ইত্যাদি কুরবাণী করার পরও যখন দেখলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই একই বাণী আসছে, তখন তিনি তাঁর স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবাণী দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন, ঠিক তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে দেবদূতের (ফেরেশতার) মাধ্যমে ইব্রাহীমকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করলেন এবং পুত্র ইসমাইলের স্থলে দুম্বা শুইয়ে দিলেন, আর তখন থেকেই মুসলমানদের ওপর নির্দিষ্ট নিসাব অনুযায়ী বৎসরে একবার উট, দুম্বা, গরু ইত্যাদি কুরবাণী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। আরো দেখুন

    সম্পাদনা

    আপনি জানেন কি ?

    …সংগ্রহশালা

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত যুদ্ধ

    উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘটনা। বদরের যুদ্ধের পরের বছর এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় । বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে কুরাইশরা মদীনা আক্রমণ করতে আসে। ফলে এই যুদ্ধের সূত্রপাত। ইসলামের প্রাথমিক যুগের হিজরি তৃতীয় সালে মদিনার তিন মাইল উত্তর-পূর্বে উহুদ নামক একটি পাহাড়ে নিকটস্থ কঙ্করময় প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং একই সঙ্গে ইসলাম ধর্মকে অঙ্কুরেই বিনাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে মক্কার তিন হাজার যোদ্ধা মদিনা অভিমুখে অভিযান করে। প্রথমাবস্থায় মুসলিম বাহিনীর বিজয় লাভের লক্ষণ দেখা যায়। বিজয়ের আভাস দেকে কিছু সংখ্যক যোদ্ধা অসতর্ক হয়ে পড়লে বিপর্যয় নেমে আসে। তাঁদের নেতা মুহাম্মাদ (সা.) নির্দেশ ভুলে গিয়ে মুসলমান তীরন্দজগণ নিদির্ষ্ট স্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ঐ স্থান অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং এই সযোগে মক্কায় যোদ্ধাগণ পিছন দিক থেকে মুসলিম বাহিনীকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে মুসলিম বাহিনী অতর্কিতে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ফলশ্রুতিতে হামজা(রা.) সহ প্রায় সত্তর জন মুসলমান শহীদ হন। মুহাম্মদ (সা.), আবুবকর (রা.)উমর (রা.) আহত হন। মুহাম্মাদ (সা.) একটি দাঁত ভেঙে যায়। মুসলমানদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়। তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ করায় শত্রুপক্ষ মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আরও জানুন…

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত আয়াতের ভাবানুবাদ

    শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু

    আল্লাহ,তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব (অমর), সবকিছুর ধারক/চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আকাশ ও ভূমিতে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তার অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। এবং তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু তা ব্যতীত – যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। এবং তাঁর আসন সমস্ত আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোর দেখাশোনা-রক্ষণাবেক্ষণ করতে তিনি ক্লান্তিবোধ করেন না। আর তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

    সূরা বাকারা: ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)…সংগ্রহশালা/মনোনয়ন

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত উক্তি

    মজুরকে তার গায়ের ঘাম মোছার আগে তার মজুরী দিয়ে দিও।

    -মুহাম্মাদ(সঃ)

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত হাদীস

    আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবীজি বলেছেন:

    “(দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।”

    (সুনান ইবনে মাজাহ :৭৯, রিয়াজুস স্বালিহিন :১০২)

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত বিস্তৃত দৃশ্য

    Wahbi-al-hariri-rifai-university-of-medina-saudi-arabia-1969-cc-by-sa.jpg

    মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৯, সৌদি আরব।

    সম্পাদনা

    প্রসঙ্গ

    IslamSymbolAllahCompWhite.PNG

    প্রসঙ্গইসলাম(বই)

    ঈমান ও আমল : আল্লাহ‘র একত্ববাদশাহাদাহ্‌নামাযরোযাহজ্জযাকাত

    Islam topics

    প্রধান বাক্তিত্ব : মুহাম্মাদ (সা:)আবু বকর ওমরওসমানআলীমুহাম্মাদ (সা:) এঁর সাথীরাআহল আল-বাইতইসলামে নবীশিয়া ইমাম

    কিতাব আইন : কুর’আনহাদীসশরিয়াহআইনশাস্ত্র • কালাম • মুহাম্মাদ (সা:) এঁর জীবনী

    মুসলমানদের শ্রেণীবিভাগ : সুন্নিশি’য়াসূফীইবাদীকুরানবাদী

    সমাজ-রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদর্শনশিল্পকলাবিজ্ঞানস্থাপত্যবর্ষপঞ্জিছুটির দিনইসলামে নারীনেতৃবৃন্দরাজনীতিইসলামে শান্তিজিহাদউদারতাবাদআন্তর্জাতিক মুক্তি সমোঝোতাইসলামোফোবিয়া


    আরও দেখুন : ইসলামী শব্দকোষ, ইসলামি নিবন্ধের সূচিপত্র

    সম্পাদনা

    সম্পর্কিত প্রবেশদ্বার

     কুর’আন হাদীস ইসলামের ইতিহাস মুহাম্মাদপতাকা সৌদি আরব দেওবন্দি

    সম্পাদনা

    বিষয়শ্রেণীসমূহ

    ইসলাম

    অবস্থান অনুযায়ী ইসলাম

    আলী

    আল্লাহ

    আহল-ই-হাদীস

    ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম

    ইসলাম ও নারী

    ইসলাম ও মানবতা

    ইসলাম ও রাজনীতি

    ইসলাম ও সমাজ

    ইসলাম টেমপ্লেট

    ইসলাম বিষয়ক অসম্পূর্ণ নিবন্ধ

    ইসলাম শিক্ষা

    ইসলাম-সম্পর্কিত তালিকা

    ইসলামবাদ

    ইসলামি অর্থনীতি

    ইসলামি আইন

    ইসলামি আচরণ এবং অভিজ্ঞতা

    ইসলামি আন্দোলন

    ইসলামি গণমাধ্যম

    ইসলামি গোষ্ঠী

    ইসলামি চিকিৎসা

    ইসলামি দর্শন

    ইসলামি পবিত্র দিন

    ইসলামি পরিভাষা

    ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান

    ইসলামি প্রথা

    ইসলামি বিশ্বাস ও মতবাদ

    ইসলামি ব্যক্তিত্ব

    ইসলামি শিক্ষা

    ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

    ইসলামি সম্মানসূচক উপাধি

    ইসলামি সাহিত্য

    ইসলামে ধর্মত্যাগ

    ইসলামে বিবাহ

    ইসলামে ভাষা

    ইসলামে শালীনতা

    ইসলামের ইতিহাস

    ইসলামের ঘটনাবলী

    ইসলামের নবি

    ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ

    ইসলামের পণ্ডিত

    ইসলামের ফিরকা

    ইসলামের শর্তাবলী

    ইসলামের শাখা

    উইকিপ্রকল্প ইসলাম

    উইকিপ্রকল্প দেওবন্দি

    কালেমা

    কুরআন

    খুলাফায়ে রাশেদীন

    জীবন-বিধান

    দেওবন্দি

    ইসলামের পবিত্র স্থান

    পীর

    ফিকহ

    ফেরেশতা

    ইসলামি বর্ষপঞ্জি

    বাংলাদেশের ইসলামি লেখক

    মদিনা

    মসজিদ

    মাজহাব

    মাদ্রাসা

    মুসলিম

    মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থ

    রমজান

    শতাব্দী অনুযায়ী ইসলাম

    ইসলামি সংগঠন

    ইসলামি সংস্কৃতি

    সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম

    সর্ব-ইসলামবাদ

    সাহাবা

    ইসলাম সম্পর্কিত সাহিত্য

    হজ্জ

    হাদিস

    হালাল খাবারপ্রবেশদ্বার:ইসলামইসলামের রূপরেখাআরশআল-কাওয়াকিব আল-দারারি ফী শারহি সহীহ আল-বুখারীআসসালামু আলাইকুমআহলুল হাদীসআহ্‌মদীয়াইসলামইসলাম, হ্যাঁ; ইসলামী দল, নাইসলামের পঞ্চস্তম্ভঈশ্বরের সিংহাসনউইকিপিডিয়া:উইকিপ্রকল্প ইসলামকাবাকুরআনগেয়ারভী শরীফতারাবীহদ্রুজপর্দাফাতিমাবাইতুল-মালবাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞানমক্কামদিনামসজিদমাকামে ইব্রাহিমমাজারমালিকিটেমপ্লেট:মুসলমান রসায়নবিদগণমুসলমানদের ছুটির দিনমুসলিমমুসলিম বিশ্বমুহাম্মাদমূসার সহিফালাইলাতুল মেরাজমেসওয়াকরাজা দায়ূদসদরুদ্দিন দাশতকি

    নির্দিষ্ট কোন বিষয়শ্রেণীর উপবিষয়শ্রেণীগুলো দেখতে “►”  চিহ্নে ক্লিক করুন। পূর্বাবস্থায় ফেরৎ যেতে “▼”  চিহ্নে ক্লিক করুন।

    সম্পাদনা

    উইকিপ্রকল্প

    মূল প্রকল্প

    উইকিপ্রকল্প ইসলাম

    উইকিপ্রকল্প কি?

    দেইসলামের নবী
    ইসলাম
    বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ
    বিশ্বাসআদর্শ
    চর্চাজীবনপদ্ধতি
    গ্রন্থবিধিবিধান
    মুহাম্মাদইতিহাস
    সমাজসংস্কৃতি
    অর্থনীতিরাজনীতি
    সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী
    সম্পর্কিত বিষয়াবলী
     ইসলাম প্রবেশদ্বার
    দে

    সম্পাদনা

    ইসলাম টেমপ্লেটসমূহ

    দেইসলাম টেমপ্লেটসমূহ

    সম্পাদনা

    আপনি যা করতে পারেন

    ইসলাম সম্পর্কিত নিবন্ধের আরও দেখুন অংশটিতে {{প্রবেশদ্বার|ইসলাম}} ট্যাগ যুক্ত করুন। ইসলাম সম্পর্কিত প্রবন্ধের আলাপ পাতায় {{উইকিপ্রকল্প ইসলাম}} ট্যাগ যুক্ত করুন । উইকিপ্রকল্প ইসলামে যুক্ত হউন , এবং প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী হিসেবে নিজেকে তালিকাভুক্ত করুন। উল্লেখযোগ্যতা: উল্লেখযোগ্যতা উদ্বেগের নিবন্ধগুলো , উইকিপ্রকল্প উদ্বেগ এ তালিকাভুক্ত। অনুরোধকৃত নিবন্ধ :মহাদেশ অনুযায়ী মুসলিম, দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম, জাতীয়তা অনুযায়ী মুসলিম, দেশ অনুযায়ী মুসলিম, বাঙালি মুসলিম, বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাস, বাংলাদেশে মাদ্রাসা, বাংলাদেশে মসজিদ, ঢাকায় মসজিদ, চট্টগ্রামে মসজিদ, পর্দা প্রথা, আকীকা, খতনা, অন্দরমহল অসম্পূর্ণগুলো :ইসলাম‎, ইসলাম এবং বিজ্ঞান‎, ইসলামী আইন, ইসলামী স্বর্ণযুগ, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ, উইকিপ্রকল্প ইসলাম‎, ফিকহ‎, শরিয়ত‎, সাহাবা‎, হাদিস‎, ইসলামী পরকালবিদ্যা‎, ইসলামের ইতিহাস‎

    সম্পাদনা

    উইকিমিডিয়া


    উইকিসংবাদে ইসলাম
    উন্মুক্ত সংবাদ উৎস


    উইকিউক্তিতে ইসলাম
    উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন


    উইকিসংকলনে ইসলাম
    উন্মুক্ত পাঠাগার


    উইকিবইয়ে ইসলাম
    উন্মুক্ত পাঠ্যপুস্তক ও ম্যানুয়াল


    উইকিবিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম
    উন্মুক্ত শিক্ষা মাধ্যম


    উইকিমিডিয়া কমন্সে ইসলাম
    মুক্ত মিডিয়া ভাণ্ডার


    উইকিঅভিধানে ইসলাম
    অভিধান ও সমার্থশব্দকোষ


    উইকিউপাত্তে ইসলাম
    উন্মুক্ত জ্ঞানভান্ডার


    উইকিভ্রমণে ইসলাম
    উন্মুক্ত ভ্রমণ নির্দেশিকা

    সার্ভার ক্যাশ খালি করুন

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • আল কালাম (বই)

    আল কালাম (বই)

    আল কালাম (উর্দু: الکلام‎‎) শিবলী নোমানীর রচিত একটি কালামশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ।[১] এটি ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয়। এটি শিবলীর পূর্ববর্তী গ্রন্থ ইলমুল কালামের সম্পূরক গ্রন্থ। তাই গ্রন্থটিকে ইলমুল কালামের দ্বিতীয় খণ্ডও বলা হয়। এ গ্রন্থটিতে তিনি কালামশাস্ত্রের আধুনিক রুপ দর্শন সহ ধর্মীয় বিশ্বাস সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলো এবং ইসলামি বিধিবিধানের স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বিবৃত যাবতীয় বিষয়ের খুঁটিনাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দর্শনের আয়নায় ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধানকে যথার্থ ও সুচিন্তিত প্রমাণ করার প্রয়াস চালিয়েছেন।[২]

    আল কালাম (বই)

    মূল্যায়ন

    গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন,

    মিশনারীদের খ্রিস্ট ধর্মপ্রচার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক অন্তর্দ্বন্দ্ব ভারতীয় মুসলমানদের মন-মেজাজকে অতিষ্ঠ ও পরাভূত করে রেখেছিল। তারা যুগের একজন গাযালী বা রাযী বা ইবনে রুশদের আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় ছিল। তারা নাস্তিকদের অভিযোগ রদ করে আপন ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যুক্তির খোঁজে উন্মুখ হয়ে রয়েছিল। শিবলী মুসলমানদের বিপদগামী হতে দেননি। তিনি সুষ্ঠু বুদ্ধিভিত্তিক প্রমাণ দিয়ে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসসমূহ প্রতিষ্ঠিত করেন। যাঁরা দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার চর্চা করেন, তাঁরা ভাল করে জানেন যে, ভারতে আজ পর্যন্ত শিবলীর সমকক্ষ কোন কালামবিদ জন্মগ্রহণ করেনি। তাঁর এ রচনাদ্বয়ের জ্ঞান ও যুক্তিবাদের আলোকে ইসলামের মৌলিক আকীদাসমূহ উপলব্ধি করা যায়। যারা এতদিন নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেবল হাওয়ার উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছিল এবং মনের টানেই আপন ধর্মীয় বিশ্বাসে অটল ছিল, তাদের জন্য এই গ্রন্থদ্বয় ছিল মহার্ঘ্য। এর ফলে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস খুবই দৃঢ়তা লাভ করে। শিবলী রচিত গ্রন্থদ্বয়ের উপকারিতা এখানেই শেষ নয়। পাশ্চাত্য দর্শনের দিক থেকে ইসলামী আকায়েদের বিরুদ্ধে যে সব প্রশ্নের অবতারণা করা হয়, সেগুলোর দাঁতভাঙ্গা জওয়াব দেবার জন্যও মুসলিম চিন্তাবিদগণ এ রচনাদ্বয়ের সাহায্য গ্রহণ করতে আরম্ভ করেন। শিবলী যখন “ইলমুল কালাম”“আল – কালাম” রচনায় রত ছিলেন, তখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মুসলমানরা ছিল পর্যুদস্ত। এছাড়া পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থাও তখন ইসলামি আকায়েদকে বিনষ্ট করার জন্য ছিল যথেষ্ট। আজ বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারিগণ নব নব কৌশলে ইসলামের মৌলিক আকায়েদ বিনষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায় শিবলীর “আল কালাম”“ইলমুল কালাম”–এর উপকারিতা আরও বেড়ে যেতে বাধ্য৷
    — [৩]

    সমালোচনা

    ইলমুল কালামআল কালাম প্রকাশের পর গ্রন্থদ্বয়ের বিভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়, এমনকি তাকে কাফির ফতোয়াও দেওয়া হয়। পরবর্তী শিবলী নোমানী তার ব্যাখ্যাও দেন। স্রষ্টা ও নবুয়ত সম্পর্কে তিনি বলেন,

    যার এই বিশ্বাস হবে যে, বস্তু চিরঞ্জীব এবং স্রষ্টার তৈরী নয় তাহলে সে নাস্তিক ও নিরশ্বরবাদী হবে। আমি বস্তুকে না চিরস্থায়ী মনে করি না চিরঞ্জীব মনে করি। আমি মনে করি স্রষ্টার সকল গুণাবলী চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী। নবুয়ত সম্পর্কে আমি কখনও এই বিশ্বাস করিনা যে, এটি অর্জিত সম্পদ এবং যে কেউ নবী হতে পারে। আমি মনে করি নবুয়ত আল্লাহর অনুগ্রহ।
  • অলৌকিক ঘটনা

    অলৌকিক ঘটনা

    অলৌকিক ঘটনা এমন একটি ঘটনা যা প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক আইন দ্বারা ব্যাখ্যাযোগ্য নয়। [১] এই জাতীয় ঘটনাকে কোনও অতিপ্রাকৃত সত্তা (বিশেষত দেবতা ), যাদু, একটি অলৌকিক কর্মী, সাধু বা কোনও ধর্মীয় নেতা হিসাবে দায়ী করা যেতে পারে।

    অলৌকিক ঘটনা

    অনানুষ্ঠানিকভাবে, শব্দ অলৌকিক ঘটনা প্রায়ই কোনো উপকারী ঘটনা যে পরিসংখ্যানগত অসম্ভাব্য কিন্তু বিরোধী নয় বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয় প্রকৃতির আইন যেমন একটি জীবিত হিসাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অথবা কেবল একটি “বিস্ময়কর” সংঘটন, সম্ভাবনা নির্বিশেষে, যেমন একটি জন্ম হিসাবে, একটি আসল, বা অনুমিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে একটি মানব সিদ্ধান্তে পৌঁছে। এই জাতীয় অন্যান্য অলৌকিক চিহ্নগুলি হতে পারে: টার্মিনাল হিসাবে চিহ্নিত রোগের বেঁচে থাকা, জীবন-হুমকির পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বা ‘প্রতিকূলতাকে মারধর’। কিছু কাকতালীয় ঘটনাগুলি অলৌকিক হিসাবে দেখা যেতে পারে। [২]

    একটি সত্য অলৌকিক সংজ্ঞা অনুসারে, এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হবে, যার ফলে অনেক চিন্তাবিদ তাদের শারীরিকভাবে অসম্ভব হিসাবে বরখাস্ত করে (যা তাদের বৈধতার ডোমেনের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত আইন লঙ্ঘনের প্রয়োজন) বা তাদের প্রকৃতির দ্বারা নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব (কারণ) সমস্ত সম্ভাব্য শারীরিক প্রক্রিয়া কখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না)। পূর্বের অবস্থানটি টমাস জেফারসন এবং দ্বিতীয়টি ডেভিড হিউমে প্রকাশ করেছেনধর্মতত্ত্ববিদরা সাধারণত বলে থাকেন যে divineশ্বরিক প্রমাণের সাথে God শ্বর নিয়মিতভাবে প্রকৃতির মধ্য দিয়ে কাজ করেন, একজন স্রষ্টা হিসাবে, ছাড়াও, উপরে বা এর বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারেন না। [৩]

    সংজ্ঞা

    সাধারনভাবে অসম্ভব বা প্রকৃতিকভাবেও যা হওয়া অসম্ভব এমন কোন ঘটনার বর্ণনা দিতে সাধারণত “অলৌকিক শব্দ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। [১] ওয়েন গারডেম ” তার মতে – ইশ্বরের ক্রিয়াকলাপের একটি কম সাধারণ ধরণের যাতে তিনি লোকদের বিস্মিত ও আশ্চর্য করে এবং নিজেই সাক্ষ্য দেন।” [৪]

    ব্যাখ্যা

    অতিপ্রাকৃত কাজ

    একটি অলৌকিক ঘটনা এমন একটি ঘটনা যা,প্রকৃতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। অলৌকিক ঘট। প্রায়শই ধর্মীয় পাঠ্য যেমনঃ বাইবেল বা কুরআন বলে যে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে এবং বিশ্বাসীরা এটিকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছে।

  • অদ্বৈতবাদ (অদ্বৈত চেতনা)

    অদ্বৈতবাদ (অদ্বৈত চেতনা)

    অদ্বৈতবাদ (সংস্কৃত: अद्वैतवाद) হল অদ্বৈততা ও আন্তঃসংযোগ;[১][২][৩] এবং অদ্বৈত চেতনা[৪][৫]  অদ্বৈতবাদকে বিশুদ্ধ চেতনাও বলা হয়[৬][৭][৮] এবং “বিষয় ও বস্তুর অ-পার্থক্য,”[৯] আদি চেতনা বা সাক্ষী-চেতনা,[৪][৫] “আদি, প্রাকৃতিক সচেতনতা” যাকে ‘কেন্দ্রহীন’ ও দ্বিধাবিহীন সত্তার সারমর্ম হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[ওয়েব ১] এই মতবাদটি ভারতীয় দর্শনে উদ্ভূত দ্বৈতবাদী মতের বিপরীত; আধিভৌতিক ঘটনা ও পরমের সাধারণ পরিচয়; এবং আত্মাপরমাত্মার একত্ব।[১০] সংস্কৃতে অদ্বৈত (अद्वैत) শব্দটির অর্থ “দুই নয়”[১][১১] বা “এক ও পৃথক নয়”।[১১]

    অদ্বৈতবাদ (অদ্বৈত চেতনা)

    পুরুষ ও অদ্বৈতবাদের ভারতীয় ধারণাগুলি খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে তপস্বী পারিপার্শ্বিক অবস্থায় প্রত্ন-সাংখ্য অনুমান হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। ভারতীয় ঐতিহ্যে, এই আদিম চেতনার উপলব্ধি, সাক্ষ্য দেওয়া কিন্তু সাধারণ মনসংসারের জট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে মোক্ষ বা বিমুত্তি, ভোগান্তি ও সংসার থেকে মুক্তি বলে মনে করা হয়। এটি আত্মসংযম ও বোধি, বৈষম্যমূলক বিচক্ষণতা বা “আলোকিতকরণ” দ্বারা সম্পন্ন হয়।[১২][ওয়েব ২]

    মতবাদটি প্রাথমিকভাবে অদ্বৈত বেদান্তের সাথে সম্পর্কিত। এ বেদান্ত অনুসারে, অদ্বৈততা হল অদ্বৈত সচেতনতা, আত্মাব্রহ্মের অদ্বৈততা।[১][১৩][টীকা ১] এছাড়াও যোগ দর্শন, কাশ্মীর শৈবধর্মবৌদ্ধধর্ম দুটি ধারণাকেই পুরোপুরি প্রভাবিত করেছিল।[১৪] বৌদ্ধ ঐতিহ্যে, অদ্বৈততা “পরস্পর নির্ভরতা”[২] এবং শূন্যতা ও “দুটি সত্য মতবাদ” এর শিক্ষার সাথে যুক্ত, বিশেষ করে পরম ও আপেক্ষিক সত্যের অদ্বৈততার মধ্যমাক শিক্ষা;[১৫][১৬] এবং যোগাচার ধারণার সাথে “শুধু মন/চিন্তা” (চিত্ত-মাত্র) বা “শুধু-প্রতিনিধিত্ব” (বিজ্ঞপ্তিমাত্র)।[১৭]

    একেশ্বরবাদ, তুরীয়বাদ, রহস্যবাদ, সার্বজনীনতাবাদ, সুফিবাদ (সুফি অধিবিদ্যা, ফানা ও হাকিকত), পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম, নয়াপ্লাতোবাদ, গূঢ়বাদপশ্চিমা গূঢ়বাদ প্রভৃতি মতবাদে অদ্বৈতবাদ আলোচিত।

    সংজ্ঞা

    অদ্বৈতবাদ হল একটি অস্পষ্ট ধারণা, যার জন্য অনেক সংজ্ঞা পাওয়া যেতে পারে।[টীকা ২] ডেভিড লয়ের মতে, যেহেতু প্রাচীন ও আধুনিক বিভিন্ন আধ্যাত্মিকতাধর্মের মধ্যে একই ধরনের ধারণা ও পদ রয়েছে, তাই ইংরেজি শব্দ “নন্ডুয়ালিটি”-এর জন্য কোনো একক সংজ্ঞা যথেষ্ট নয় এবং সম্ভবত বিভিন্ন “অনন্ডুয়ালিটি” বা অদ্বৈততার তত্ত্ব সম্পর্কে কথা বলাই উত্তম।[১৮] লয় তাওবাদ, মহাযান বৌদ্ধধর্ম এবং অদ্বৈত বেদান্তে অদ্বৈতবাদকে সাধারণ থ্রেড হিসেবে দেখেন,[১৯][টীকা ৩] “ফাইভ ফ্লেভারস অফ নন্ডুয়ালিটি”কে আলাদা করে:[ওয়েব ৩]

    1. অদ্বৈত, অদ্বৈত সচেতনতা, বিষয় ও বস্তুর পার্থক্য, বা বিষয় ও বস্তুর অদ্বৈততা।[ওয়েব ৩] লয়ের মতে, উপনিষদে “এটি প্রায়শই আত্মা (স্ব) এবং ব্রহ্মের মধ্যে পরিচয় হিসাবে প্রকাশ করা হয়।”[১৩][টীকা ৪]
    2. অদ্বয়, ঘটনা এবং পরমের পরিচয়, “দ্বৈত এবং অদ্বৈততার অদ্বৈততা”,[ওয়েব ৩] অথবা “মধ্যমাক বৌদ্ধধর্ম” এবং “দুটি সত্য মতবাদে” পাওয়া আপেক্ষিক এবং চূড়ান্ত সত্যের অদ্বৈততা।
    3. অদ্বৈতবাদ, বিশ্বের অ-বহুত্ব। যদিও অভূতপূর্ব জগৎ “জিনিস” এর বহুত্ব হিসাবে আবির্ভূত হয়, বাস্তবে তারা “একক কাপড়ের”।[ওয়েব ৩]
    4. বিপরীতের জোড়ায় দ্বৈতবাদী চিন্তাধারার অস্বীকার। তাওবাদের ইয়িন-ইয়াং প্রতীক এই দ্বৈতবাদী চিন্তাধারার সীমা অতিক্রমের প্রতীক।[ওয়েব ৩]
    5. রহস্যবাদ, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে অতীন্দ্রিয় ঐক্য।[ওয়েব ৩]

    খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের ব্রহ্মবাদী ও অব্রহ্মবাদী তপস্বী ঐতিহ্যগুলি ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছিল, প্রাক-সাংখ্য গণনা (তালিকা) ব্যবহার করে ধ্যান অনুশীলনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে অভিজ্ঞতার প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।[১৪] প্রথম সহস্রাব্দ খ্রিস্টাব্দ বৌদ্ধ মধ্যমাকযোগাচার দর্শনে এবং অদ্বৈত বেদান্তে “একক স্তর বা অন্তর্নিহিত নীতি”-তে বিস্ময়কর বাস্তবতাকে ভেঙে ফেলার জন্য অন্তর্নিহিত “ঐক্যের ভিত্তি” গঠনের দিকে আন্দোলন দেখেছিল।[২২]

    সাংখ্য ও যোগ দর্শনে অদ্বৈতবাদ

    মূল নিবন্ধসমূহ: সাংখ্য, যোগ (হিন্দুধর্ম)যোগ দর্শন

    সাংখ্য, ভারতীয় দর্শনের দ্বৈতবাদী অস্তিক  দর্শন,[২৩][২৪][২৫] অনুসারে মানুষের অভিজ্ঞতা পুরুষ (চেতনা) এবং প্রকৃতি (জ্ঞান, মন ও আবেগ), এ দুটি স্বাধীন বাস্তবতা দ্বারা গঠিত। সাংখ্য হিন্দুধর্মের যোগ দর্শনের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত, যার জন্য এটি তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করে, এবং এটি ভারতীয় দর্শনের অন্যান্য দর্শনের উপর প্রভাবশালী ছিল।[২৬]

    দর্শন

    পুরুষ-প্রকৃতি

    পুরুষ হল জটিল ধারণা[২৭] যার অর্থ বৈদিকউপনিষদিক সময়ে বিকশিত হয়েছে। উৎস ও ঐতিহাসিক সময়রেখার উপর নির্ভর করে, এর অর্থ হল মহাজাগতিক সত্তা বা স্ব, চেতনা ও সার্বজনীন নীতি।[২৮][২৭][২৯] বেদ অনুসারে, পুরুষ মহাজাগতিক সত্তা ছিল যার বলির মাধ্যমে দেবতারা সমস্ত জীবন সৃষ্টি করেছিলেন।[৩০] উপনিষদে, পুরুষ ধারণাটি স্বয়ং, আত্মা ও সর্বজনীন নীতির বিমূর্ত সারাংশকে বোঝায় যা শাশ্বত, অবিনাশী, রূপবিহীন ও সর্বব্যাপী।[৩০] সাংখ্য দর্শনে, পুরুষ হল বহুবচন অচল পুরুষ (আধ্যাত্মিক) মহাজাগতিক নীতি, বিশুদ্ধ চেতনা। এটি নিখুঁত, স্বাধীন, মুক্ত, অদৃশ্য, অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে অজানা, মন বা ইন্দ্রিয় দ্বারা যে কোনও অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে এবং কোনও শব্দ বা ব্যাখ্যার বাইরে। এটি বিশুদ্ধ থেকে যায়, “অনাতিকর চেতনা”। পুরূষ উৎপন্ন হয় না বা উৎপন্ন হয় না।[৩১] কোন আবেদন পুরুষকে যোগ্য করতে পারে না, বা এটিকে সারগর্ভ বা বস্তুনিষ্ঠ করতে পারে না।[৩২] এটাকে “কমানো যাবে না, ‘মীমাংসা’ করা যাবে না।” পুরুষের যে কোন পদবী প্রকৃতি থেকে আসে এবং সীমাবদ্ধতা।[৩৩]

    অব্যক্ত প্রকৃতি হল অসীম, নিষ্ক্রিয়, এবং অচেতন, এবং তিনটি গুণ (সহজাত প্রবণতা),[৩৪][৩৫] যেমন সত্ত্বরজঃ ও তমঃ এর ভারসাম্য নিয়ে গঠিত। প্রকৃতি যখন পুরুষের সংস্পর্শে আসে তখন এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, এবং প্রকৃতি প্রকাশিত হয়, তেইশটি তত্ত্ব,[৩৬] যেমন বুদ্ধি, অহং (অহংকার) ও মন (মনস); পাঁচটি সংবেদনশীল ক্ষমতা; পাঁচটি কর্ম ক্ষমতা; এবং পাঁচটি “সূক্ষ্ম উপাদান” বা “সংবেদী বিষয়বস্তুর রীতি” (তনমাত্রা), যেখান থেকে পাঁচটি “স্থূল উপাদান” বা “অনুভূতিগত বস্তুর রূপ” উদ্ভূত হয়,[৩৪][৩৭] ইন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতার প্রকাশের জন্ম দেয় উপলব্ধি।[৩৮][৩৯]

    জীব (জীবন্ত সত্তা) হল সেই অবস্থা যেখানে পুরুষ প্রকৃতির সাথে আবদ্ধ হয়।[৪০] মানুষের অভিজ্ঞতা হল পুরুষ-প্রকৃতির পারস্পরিক ক্রিয়া, পুরুষ জ্ঞানীয় কার্যকলাপের বিভিন্ন সংমিশ্রণ সম্পর্কে সচেতন।[৪০] প্রকৃতিতে পুরুষের বন্ধনের অবসানকে সাংখ্য দর্শনের দ্বারা মুক্তি বা কৈবল্য বলা হয়,[৪১] এবং অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মসংযম দ্বারা অর্জন করা যেতে পারে।[১২][ওয়েব ২]

    উৎপত্তি ও বিকাশ

    যদিও সাংখ্য-সদৃশ অনুমান ঋগ্বেদ এবং কিছু পুরানো উপনিষদে পাওয়া যায়, সাংখ্যের অ-বৈদিক উৎপত্তি হতে পারে এবং এটি তপস্বী মিলিয়াসে বিকশিত হতে পারে। আনুমানিক ৮ম বা ৭ম খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আদি-সাংখ্য ধারণাগুলি বিকাশ লাভ করেছে, যেমনটি মধ্যবর্তী উপনিষদ, বুদ্ধচরিত, ভগবদ্গীতা এবং মহাভারতের মোক্ষধর্ম-বিভাগ।[৪২] এটি আদি তপস্বী ঐতিহ্য এবং ধ্যান, আধ্যাত্মিক অনুশীলন এবং ধর্মীয় বিশ্বতত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত ছিল,[৪৩] এবং যুক্তির পদ্ধতি যার ফলে জ্ঞান (বিদ্যা, বিবেক) ​​মুক্ত হয় যা দুঃখপুনর্জন্মের চক্রকে শেষ করে।[৪৪] “দার্শনিক ফর্মুলেশনের মহান বৈচিত্র্যের” অনুমতি দেয়।[৪৩] প্রাক-কারিকা পদ্ধতিগত সাংখ্য খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতে বিদ্যমান ছিল।[৪৫] সাংখ্যের সংজ্ঞায়িত পদ্ধতিটি সাংখ্যকারিকা (৪র্থ খ্রিস্টাব্দ) দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

    উপনিষদ

    উপনিষদগুলোতে প্রটো-সাংখ্য অনুমান রয়েছে।[৪৪] বৃহদারণ্যক উপনিষদে নিজের সম্পর্কে যাজ্ঞবল্ক্যের ব্যাখ্যা, এবং ছান্দোগ্য উপনিষদে উদ্দালক আরুণি ও তার পুত্র স্বেতকেতুর মধ্যে কথোপকথন মানুষের (আত্মা) সারাংশ সম্পর্কে আরও বিকশিত ধারণার প্রতিনিধিত্ব করে “বিশুদ্ধ বিষয়তা – অর্থাৎ, যিনি নিজে অজ্ঞ, যিনি দ্রষ্টা যাকে দেখা যায় না” এবং “বিশুদ্ধ সচেতন” হিসাবে অনুমান, বা গণনার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়।[৪৬] লারসনের মতে, “প্রাচীন অনুমান থেকে ভারতীয় চিন্তাধারার অদ্বৈতবাদী প্রবণতা এবং দ্বৈতবাদী সাংখ্য উভয়ই বিকশিত হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”[৪৭] লারসনের মতে, বৃহদারণ্যক উপনিষদে তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ঐতরেয় উপনিষদ এবং যাজ্ঞবল্ক্যমৈত্রেয়ী কথোপকথনেও সাংখ্যে তত্ত্বের গণনা পাওয়া যায়।[৪৮]

    কঠোপনিষদ শ্লোক ৩.১০-১৩ এবং ৬.৭-১১ তে পুরুষের ধারণা বর্ণনা করে এবং অন্যান্য ধারণাগুলিও পরবর্তী সাংখ্যে পাওয়া যায়।[৪৯] কঠোপনিষদ, খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের মাঝামাঝি, শ্লোক ২.৬.৭ থেকে ২.৬.১৩-তে সাংখ্যের মতো আত্ম-জ্ঞানের পথের সুপারিশ করে এবং এই পথটিকে যোগ বলে।[৫০]

    শুধুমাত্র যখন মনস (মন) চিন্তা ও পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাথে স্থির থাকে,
    এবং যখন বুদ্ধি (যুক্তির শক্তি) নড়বড়ে হয় না, তখন তারা সর্বোচ্চ পথ বলে।
    একেই বলে যোগ, ইন্দ্রিয়ের স্থিরতা, মনের একাগ্রতা,
    এটা চিন্তাহীন গাফেল অলসতা নয়, যোগ হল সৃষ্টি ও বিলীন।

    — কঠোপনিষদ, ২.৬.১০-১১[৫১][৫২]

    হিন্দুধর্ম

    বেদান্ত

    মূল নিবন্ধ: বেদান্ত

    বেদান্তের বেশ কয়েকটি দর্শনকে সাংখ্য দ্বারা অবহিত করা হয় এবং একধরনের অদ্বৈতবাদ শেখানো হয়। সর্বাধিক পরিচিত হল অদ্বৈত বেদান্ত, তবে অন্যান্য অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনগুলিরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব এবং অনুসরণ রয়েছে, যেমন বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত এবং  দ্বৈতাদ্বৈত,[৫৩] উভয়ই ভেদাভেদ।

    “অদ্বৈত” বলতে বোঝায় ব্রহ্মআত্মার অদ্বৈততা, যেমন বেদান্ত, শাক্তধর্মশৈবধর্মে রয়েছে।[৫৩] যদিও শব্দটি আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন থেকে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, “অদ্বৈত” বহু মধ্যযুগীয় ভারতীয় পণ্ডিতদের পাশাপাশি আধুনিক দর্শন এবং পণ্ডিতদের দ্বারা গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়।[টীকা ৫]

    অদ্বৈতের হিন্দু ধারণাটি এই ধারণাটিকে বোঝায় যে সমস্ত মহাবিশ্ব অপরিহার্য বাস্তবতা, এবং মহাবিশ্বের সমস্ত দিক এবং দিকগুলি শেষ পর্যন্ত সেই বাস্তবতার অভিব্যক্তি বা চেহারা।[৫৩] দাশগুপ্ত ও মোহন্তের মতে, উপনিষদিক যুগের পর থেকে বৈদিক ও বৌদ্ধ উভয় প্রকার ভারতীয় চিন্তাধারায় অদ্বৈতবাদের বিকাশ ঘটে।[৫৪] ভারতীয় চিন্তাধারায় অদ্বৈতবাদের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি ছান্দোগ্য উপনিষদে পাওয়া যেতে পারে, যা প্রাচীনতম বৌদ্ধধর্মের প্রাক-তারিখ। প্রাক-সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধধর্মও হয়ত ছান্দোগ্য উপনিষদের শিক্ষার প্রতি সাড়া দিয়েছিল, এর কিছু আত্ম-ব্রহ্ম সম্পর্কিত অধিবিদ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।[৫৫][টীকা ৬]

    হিন্দুধর্মের বিভিন্ন দর্শনে অদ্বৈত বিভিন্ন শেডে প্রদর্শিত হয় যেমন অদ্বৈত বেদান্তবিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত  (বৈষ্ণবাদ), শুদ্ধাদ্বৈত বেদান্ত (বৈষ্ণবাদ), অদ্বৈত  শৈববাদ ও শাক্তবাদে[৫৩][৫৮][৫৯] আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্তে, অদ্বৈত বোঝায় যে সমস্ত বাস্তবতা ব্রহ্মের সাথে এক,[৫৩] যে আত্মাব্রহ্ম এক।[৬০][৬১] আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্তে, অদ্বৈত বোঝায় যে সমস্ত বাস্তবতা ব্রহ্মের সাথে এক,[৫৩] যে আত্মা ও ব্রহ্ম এক।[৬২][৬৩] কিছু হিন্দু ঐতিহ্যের অদ্বৈত ধারণাগুলি দ্বৈতবাদ বা দ্বৈতকে রক্ষা করে এমন দর্শনের সাথে বৈপরীত্য, যেমন মধ্বাচার্য যিনি বলেছিলেন যে “অভিজ্ঞ বাস্তবতা” এবং ঈশ্বর ভিন্ন ও স্বতন্ত্র।[৬৪][৬৫]

    অদ্বৈত বেদান্ত

    মূল নিবন্ধ: অদ্বৈত বেদান্ত

    রাজহাঁস অদ্বৈতের গুরুত্বপূর্ণ চিত্র

    অদ্বৈত বেদান্তের অদ্বৈততা মূলত ব্রহ্মআত্মার পরিচয়।[৬৬] সাংখ্যের মতে, আত্মা হল সচেতনতা, সাক্ষী-চেতনা। কাশ্মীর শৈবধর্ম পরবর্তী ঐতিহ্যগুলিকে প্রভাবিত করে অদ্বৈত ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মে বিস্তৃত স্রোত হয়ে উঠেছে।

    অদ্বৈত বেদান্তের প্রাচীনতম টিকে থাকা পাণ্ডুলিপিটি  শ্রীগৌড়পাদাচার্য কর্তৃক রচিত,[১৭] যাকে গোবিন্দ ভাগবতপদের শিক্ষক এবং আদি শঙ্করের ঠাকুরদাদা হিসেবে গণ্য করা হয়। আদি শঙ্কর এর অদ্বৈত বেদান্ত ঐতিহ্য থেকে অদ্বৈত সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যিনি বলেছেন যে ব্রহ্ম, একক একীভূত শাশ্বত সত্য, হল বিশুদ্ধ সত্তা, চেতনা ও আনন্দ (সৎ-চিত্ত-আনন্দ)।[৬৭]

    অদ্বৈত, মূর্তি বলেন, ব্রহ্ম ও আত্ম-চেতনা (বিজ্ঞান) কোন পার্থক্য ছাড়াই জ্ঞান[৬৮] বেদান্তের লক্ষ্য হল “সত্যিকারের বাস্তব” জানা এবং এইভাবে এর সাথে এক হয়ে যাওয়া।[৬৯] অদ্বৈত বেদান্তের মতে, ব্রহ্ম হল সর্বোচ্চ বাস্তবতা,[৭০][৭১][৭২] মহাবিশ্ব, অদ্বৈত দর্শন অনুসারে, কেবল ব্রহ্ম থেকে আসে না, এটি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম হল মহাবিশ্বে বিদ্যমান সমস্ত বৈচিত্র্যের পিছনে একক বন্ধনকারী ঐক্য।[৭১] ব্রহ্মও সেই যা সমস্ত পরিবর্তনের কারণ।[৭১][৭৩][৭৪] ব্রহ্ম হল “সৃজনশীল নীতি যা সমগ্র বিশ্বে উপলব্ধি করা হয়”।[৭৫]

    অদ্বৈতবাদের অদ্বৈতবাদ, আত্মার হিন্দু ধারণার উপর নির্ভর করে যা সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ “সারাংশ”[ওয়েব ৫]  বা ব্যক্তির “বাস্তব আত্ম”;[৭৬][৭৭] এটি “অন্তরাত্মা” হিসাবেও নিযুক্ত করা হয়।[৭৬][৭৮] আত্মা হল প্রথম নীতি,[৭৯] আত্মা হল সার্বজনীন নীতি, শাশ্বত অদ্বৈত স্ব-উজ্জ্বল চেতনা, হিন্দুধর্মের অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের দাবি।[৮০][৮১]

    অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন আত্মাকে স্ব-অস্তিত্বের সচেতনতা, সীমাহীন, অদ্বৈত ও ব্রহ্মের মতোই বিবেচনা করে।[৮২] অদ্বৈত দর্শন দাবি করে যে প্রতিটি জীবন্ত সত্তার মধ্যে “আত্মা, স্বয়ং” আছে যা ব্রহ্মের সাথে সম্পূর্ণ অভিন্ন।[৮৩][৮৪] এই পরিচয়টি ধারণ করে যে সচেতনতা রয়েছে যা সমস্ত জীবের মধ্যে সংযোগ করে এবং বিদ্যমান, তাদের আকার বা রূপ নির্বিশেষে, কোন পার্থক্য নেই, কোন উচ্চতর, কোন নিকৃষ্ট, কোন পৃথক ভক্ত আত্মা (আত্মান), কোন পৃথক ঈশ্বর আত্মা (ব্রহ্ম) নেই।[৮৩] একত্ব সমস্ত প্রাণীকে একত্রিত করে, প্রত্যেক সত্তার মধ্যেই ঐশ্বরিক রয়েছে, এবং সমস্ত অস্তিত্ব একক বাস্তবতা, অদ্বৈত বেদান্তিগণ বলেন।[৮৫] অদ্বৈত বেদান্তের অদ্বৈতবাদ ধারণাটি দাবি করে যে প্রতিটি আত্মা অসীম ব্রহ্ম থেকে আলাদা নয়।[৮৬]

    বাস্তবতার তিনটি স্তর

    অদ্বৈত বেদান্ত সত্তাতাত্ত্বিক বাস্তবতার তিনটি স্তরের অনুমান করার মাপকাঠি হিসাবে সাবেশনকে গ্রহণ করে:[৮৭][৮৮]

    1. পরমার্থিক (পরমার্থ, পরম), বাস্তবতা যা অধিভৌতিকভাবে সত্য এবং সত্তাতাত্ত্বিকভাবে সঠিক। এটি অনুভব করার অবস্থা যে “যা একেবারে বাস্তব এবং যার মধ্যে অন্যান্য বাস্তবতার স্তর উভয়ই সমাধান করা যেতে পারে”। এই অভিজ্ঞতা অন্য কোন অভিজ্ঞতা দ্বারা সাবলেট (অতিরিক্ত) করা যাবে না।[৮৭][৮৮]
    2. ব্যবাহারিক (ব্যবহার), বা সম্বৃত্তি-সয়,[৮৯] এটি সময়ের সাথে সাথে সর্বদা পরিবর্তিত হয়, নির্দিষ্ট সময় ও প্রেক্ষাপটে অভিজ্ঞতাগতভাবে সত্য কিন্তু অধিভৌতিকভাবে সত্য নয়। এটি “আমাদের অভিজ্ঞতার জগত, অসাধারণ জগত যা আমরা প্রতিদিন জাগ্রত অবস্থায় পরিচালনা করি”। এটি সেই স্তর যেখানে জীব (জীবন্ত সত্তা বা পৃথক আত্মা) এবং ঈশ্বর উভয়ই সত্য; এখানে, বস্তুজগতও সত্য।[৮৮]
    3. প্রথিভাষিক (প্রতিভাষিক, আপাত বাস্তবতা, অবাস্তবতা), “একমাত্র কল্পনার উপর ভিত্তি করে বাস্তবতা”। এটি অভিজ্ঞতার স্তর যেখানে মন তার নিজস্ব বাস্তবতা তৈরি করে। যেমন অন্ধকারে সাপকে দড়ি হিসেবে উপলব্ধি হয়।[৮৮]
    বৌদ্ধধর্মের সাথে মিল ও পার্থক্য

    পণ্ডিতরা বলেছেন যে অদ্বৈত বেদান্ত মহাযান বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, সাধারণ পরিভাষা ও পদ্ধতি এবং কিছু সাধারণ মতবাদের কারণে।[৯০][৯১] এলিয়ট ডয়েচ এবং রোহিত ডালভি বলেন:

    যে কোনো ঘটনাতে মহাযান দর্শন ও বেদান্তের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, পরবর্তীতে কিছু দ্বান্দ্বিক কৌশল ধার করে, যদি নির্দিষ্ট মতবাদ না থাকে।[৯২]

    অদ্বৈত বেদান্ত বৌদ্ধ দর্শনের সাথে সম্পর্কিত, যেটি “দুটি সত্য মতবাদ” এবং এই মতবাদের মত ধারণাকে প্রচার করে যে শুধুমাত্র চেতনা আছে (বিজ্ঞাপ্তি-মাত্র)। এটা সম্ভব যে অদ্বৈত দার্শনিক গৌড়পাদ বৌদ্ধ ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।[১৭] শঙ্কর উপনিষদীয় গ্রন্থের সাথে গৌড়পাদ-এর ধারণার সমন্বয় ঘটান এবং গোঁড়া হিন্দুধর্মের অত্যন্ত প্রভাবশালী দর্শন গড়ে তোলেন।[৯৩][৯৪]

    বৌদ্ধ পরিভাষা বিজ্ঞপ্তি-মাত্রা প্রায়শই চিত্ত-মাত্রা শব্দটির সাথে বিনিময়যোগ্যভাবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তাদের ভিন্ন অর্থ রয়েছে। উভয় পদের প্রমিত অনুবাদ হল “শুধুমাত্র চেতনা” বা “শুধুমাত্র মন”। অদ্বৈত বেদান্তকে পণ্ডিতরা “আদর্শবাদী অদ্বৈতবাদ” বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু কেউ কেউ এই লেবেলের সাথে একমত নন।[৯৫][৯৬] মধ্যমাক বৌদ্ধধর্ম এবং অদ্বৈত বেদান্ত উভয়ের মধ্যে পাওয়া আরেকটি ধারণা হল অজাতিবাদ, যা গৌড়পাদ নাগার্জুনের দর্শন থেকে গ্রহণ করেছিলেন।[৯৭][৯৮][টীকা ৭] গৌড়পাদ “মাণ্ডূক্য  উপনিষদের দর্শনে [উভয় মতবাদ] বোনা, যা শঙ্কর দ্বারা আরও বিকশিত হয়েছিল।[১০০][টীকা ৮]

    মাইকেল কোমান্স বলেছেন যে বৌদ্ধ চিন্তাধারা এবং গৌড়পদ চিন্তার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, সেই বৌদ্ধধর্মে তার দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে রয়েছে নির্ভরশীল উৎপত্তির মতবাদ যার মতে “”সবকিছুই অপরিহার্য প্রকৃতি ছাড়া, এবং সবকিছুই অপরিহার্য প্রকৃতির শূন্য”, যদিও গৌড়পাদ এই নীতির উপর মোটেও নির্ভর করেন না। গৌড়পাদের আজতিবাদ হল অপরিবর্তনীয় অদ্বৈত বাস্তবতার উপর প্রয়োগ করা যুক্তির ফলাফল যার মতে “বাস্তবতা (সত) আছে যা অজাত (অজা)” যার অপরিহার্য প্রকৃতি (স্বভাব) আছে, এবং এটিই “অনন্ত, নির্ভীক, অক্ষয় আত্মা ও ব্রহ্ম”।[১০২] এইভাবে, গৌড়পদ বৌদ্ধ পণ্ডিতদের থেকে পৃথক যেমন নাগার্জুন, কমান্স বলেন, প্রাঙ্গণ গ্রহণ করে এবং উপনিষদের মৌলিক শিক্ষার উপর নির্ভর করে।[১০২] অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, হিন্দুধর্মের বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি রয়েছে, “আত্মা বিদ্যমান, স্বতঃপ্রকাশিত সত্য হিসাবে”, একটি ধারণা যা এটি তার অদ্বৈতবাদের তত্ত্বে ব্যবহার করে। বৌদ্ধধর্ম, বিপরীতে, ভিত্তি ধরে রাখে, “স্বতঃপ্রকাশ্য হিসাবে আত্মার অস্তিত্ব নেই”।[১০৩][১০৪][১০৫]

    মহাদেবন পরামর্শ দেন যে গৌড়পাদ বৌদ্ধ পরিভাষা গ্রহণ করেছিলেন এবং এর মতবাদগুলিকে তার বেদান্তিক লক্ষ্যগুলির সাথে খাপ খাইয়েছিলেন, যেমন প্রাথমিক বৌদ্ধধর্ম উপনিষদিক পরিভাষা গ্রহণ করেছিল এবং এর মতবাদগুলিকে বৌদ্ধ লক্ষ্যে অভিযোজিত করেছিল; উভয়ই নতুন অর্থ প্রকাশের জন্য প্রাক-বিদ্যমান ধারণা এবং ধারণা ব্যবহার করেছে।[১০৬] দাশগুপ্ত ও মোহন্ত উল্লেখ করেছেন যে বৌদ্ধধর্ম ও শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্ত বিরোধী ব্যবস্থা নয়, কিন্তু “উপনিষদিক যুগ থেকে শঙ্করের সময় পর্যন্ত একই অদ্বৈতবাদী অধিবিদ্যার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়।”[৫৪]

    বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত

    মূল নিবন্ধ: বিশিষ্টাদ্বৈত

    আরও তথ্যের জন্য দেখুন: ভেদাভেদ

    রামানুজ, বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্তের প্রতিষ্ঠাতা, ‘যোগ্য অদ্বৈতবাদ’ মতবাদ শিখিয়েছিলেন।

    বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত হল বেদান্তের আরেকটি প্রধান বিদ্যালয় এবং যোগ্য সমগ্রের অদ্বৈততা শেখায়, যেখানে একমাত্র ব্রাহ্মণই বিদ্যমান, কিন্তু বহুত্ব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটিকে “যোগ্য অদ্বৈতবাদ” বা “বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অদ্বৈতবাদ” হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

    এই দর্শনের মতে, জগৎ বাস্তব, তবুও সমস্ত পার্থক্যের অন্তর্নিহিত হল সর্বাঙ্গীণ ঐক্য, যার মধ্যে সমস্ত “জিনিস” এক “বৈশিষ্ট্য”। বিশিষ্টাদ্বৈত দর্শনের প্রধান প্রবক্তা রামানুজ দাবি করেন যে প্রস্থানত্রয় – যেমন উপনিষদ, ভগবদ্গীতা এবং ব্রহ্মসূত্র -কে এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যা বৈচিত্রের মধ্যে এই ঐক্যকে দেখায়, অন্য কোনো উপায় তাদের ধারাবাহিকতা লঙ্ঘন হবে।

    বেদান্ত দেশিক বিবৃতিটি ব্যবহার করে বিশিষ্টাদ্বৈত  সংজ্ঞায়িত করেছেন: আশেশা চিৎ-অচিৎ প্রকারম ব্রহ্মৈকামেব তত্ত্বম – “ব্রহ্ম, সংবেদনশীল ও অন্তর্নিহিত পদ্ধতি (বা গুণাবলী) দ্বারা যোগ্য, একমাত্র বাস্তবতা।”

    নব্য-বেদান্ত

    মূল নিবন্ধসমূহ: নব্য-বেদান্ত, স্বামী বিবেকানন্দরামকৃষ্ণ মিশন

    নব্য-বেদান্ত বা “নব-হিন্দুত্ব”,[১০৭] হিন্দুধর্মের আধুনিক ব্যাখ্যা যা পশ্চিমা উপনিবেশবাদ এবং প্রাচ্যবাদের প্রতিক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছিল, এবং অদ্বৈত বেদান্তকে কেন্দ্রীয় মতবাদের সাথে হিন্দুধর্মকে “হিন্দুধর্মের সমজাতীয় আদর্শ”[১০৮] হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষ্য রাখে।[১০৯]

    নব্য-বেদান্ত, যেমনটি বিবেকানন্দ ও রাধাকৃষ্ণণ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে, অদ্বৈত বেদান্তের কাছে ঋণী, কিন্তু অদ্বৈত-দর্শনও প্রতিফলিত করে। নব্য-অদ্বৈতের উপর প্রধান প্রভাব ছিল রামকৃষ্ণ, নিজে একজন ভক্ত ও তান্ত্রিক এবং বিবেকানন্দের গুরু। মাইকেল টাফ্টের মতে, রামকৃষ্ণ নিরাকার ও রূপের দ্বৈতবাদের সমন্বয় করেছিলেন।[১১০] রামকৃষ্ণ পরম সত্তাকে ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক, সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বলে বিবেচনা করেছেন:

    যখন আমি পরম সত্তাকে নিষ্ক্রিয় বলে মনে করি – সৃষ্টি বা সংরক্ষণ বা ধ্বংসও নয় – তখন আমি তাকে ব্রহ্ম বা পুরুষ বলি, নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বর। যখন আমি তাকে সক্রিয় – সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং ধ্বংসকারী হিসাবে মনে করি – আমি তাকে শক্তি বা মায়া বা প্রকৃতি, ব্যক্তিগত ঈশ্বর বলি। কিন্তু তাদের মধ্যে পার্থক্য একটি পার্থক্য মানে না। ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক একই জিনিস, যেমন দুধ এবং তার শুভ্রতা, হীরা এবং তার দীপ্তি, সাপ এবং তার নড়বড়ে গতি। একটি ছাড়া অন্যটির ধারণা করা অসম্ভব। ঐশ্বরিক মা এবং ব্রহ্ম এক।[১১১]

    রাধাকৃষ্ণণ অভিজ্ঞতার জগতের বাস্তবতা এবং বৈচিত্র্যকে স্বীকার করেছেন, যা তিনি পরম বা ব্রহ্ম দ্বারা সমর্থিত এবং সমর্থিত হিসাবে দেখেছেন।[ওয়েব ৬][টীকা ৯] অনিল সুকলের মতে, বিবেকানন্দের নব্য-অদ্বৈত “দ্বৈত বা দ্বৈতবাদ এবং অদ্বৈত বা অদ্বৈতবাদের মিলন”:[১১৩]

    নব্য-বেদান্তও অদ্বৈতবাদী কারণ এটি মনে করে যে ব্রহ্ম, চরম বাস্তবতা, এক সেকেন্ড ছাড়া এক, একমেবদ্বিতীয়ম্। কিন্তু শঙ্করের প্রথাগত অদ্বৈত থেকে আলাদা, এটি কৃত্রিম বেদান্ত যা দ্বৈত বা দ্বৈতবাদ এবং অদ্বৈত বা অদ্বৈতবাদ ও বাস্তবতার অন্যান্য তত্ত্বের মিলন ঘটায়। এই অর্থে এটিকে কংক্রিট অদ্বৈতবাদও বলা যেতে পারে কারণ এটি ধরে রাখে যে ব্রহ্ম উভয়ই যোগ্য, সগুণ এবং গুণহীন, নির্গুণ।[১১৩]

    রাধাকৃষ্ণণও শঙ্করের মায়ার ধারণার পুনর্ব্যাখ্যা করেছিলেন। রাধাকৃষ্ণণের মতে, মায়া কঠোর পরম আদর্শবাদ নয়, বরং “জগতকে চূড়ান্তভাবে বাস্তব বলে বিষয়গত ভুল ধারণা।”[ওয়েব ৬] সরমার মতে, নিসর্গদত্ত মহারাজের ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে, অদ্বৈতবাদ মানে “আধ্যাত্মিক অ-দ্বৈতবাদ বা নিরঙ্কুশবাদ”,[১১৪] যার বিপরীতে রয়েছে পরম-এর প্রকাশ, যা নিজেই অব্যক্ত এবং অতিক্রান্ত:[১১৫]

    সত্তা ও অ-সত্তা, জীবন ও মৃত্যু, ভাল ও মন্দ, আলো ও অন্ধকার, দেবতা ও মানুষ, আত্মা ও প্রকৃতির মতো সমস্ত বিপরীতকে পরম সত্তার প্রকাশ হিসাবে দেখা হয় যা মহাবিশ্বের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন এবং তবুও এটি অতিক্রম করে।[১১৬]

    কাশ্মীর শৈববাদ

    মূল নিবন্ধসমূহ: শৈবধর্মকাশ্মীর শৈববাদ

    শৈবধর্মের বিভিন্ন দর্শনে অদ্বৈত কেন্দ্রীয় ধারণা, যেমন কাশ্মীর শৈববাদ[৫৩] এবং শিব অদ্বৈত যা সাধারণত  বীরশৈববাদ নামে পরিচিত।

    কাশ্মীর শৈববাদকে অভিনবগুপ্ত[টীকা ১০] “পরদ্বৈত” হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যার অর্থ “সর্বোচ্চ ও পরম অদ্বৈতবাদ”।[ওয়েব ৭] এই মতবাদকে বিভিন্ন পণ্ডিতরা অদ্বৈতবাদী[১১৭] আদর্শবাদ (পরম আদর্শবাদ, আস্তিক অদ্বৈতবাদ,[১১৮] বাস্তববাদী আদর্শবাদ,[১১৯] অতিন্দ্রিয় ভৌতবাদ বা কংক্রিট অদ্বৈতবাদ[১১৯]) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।

    কাশ্মীর শৈববাদ ভৈরব তন্ত্র এবং এর উপশ্রেণি কৌল তন্ত্রের শক্তিশালী অদ্বৈতবাদী ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে, যেগুলি কাপালিকদের দ্বারা রচিত তন্ত্র[১২০] এছাড়াও বসুগুপ্তের কাছে শিবসূত্রের একটি উদ্ঘাটন ছিল।[১২০] কাশ্মীর শৈববাদ দ্বৈতবাদী শৈব সিদ্ধান্তকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করেছে।[১২১] সোমানন্দ, অদ্বৈতবাদী শৈববাদের প্রথম ধর্মতত্ত্ববিদ, ছিলেন উৎপলদেবের শিক্ষক, যিনি ছিলেন অভিনবগুপ্তের মহা-শিক্ষক, যিনি পরে ক্ষেমরাজের শিক্ষক ছিলেন।[১২০][১২২]

    কাশ্মীর শৈবধর্মের দর্শন শঙ্করের অদ্বৈতের বিপরীতে দেখা যায়।[১২৩] অদ্বৈত বেদান্ত ধারণ করে যে ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয় এবং অভূতপূর্ব জগৎ হল ব্রহ্মের মিথ্যা চেহারা (মায়া), অর্ধ-অন্ধকারে দেখা সাপের মতো সেখানে শুয়ে থাকা দড়ির মিথ্যা চেহারা। কাশ্মীর শৈববাদ, সমস্ত জিনিসই সার্বজনীন চেতনা, চিৎ বা ব্রহ্মের প্রকাশ।[১২৪][১২৫] কাশ্মীর শৈববাদ অভূতপূর্ব জগতকে (শক্তি) বাস্তব হিসাবে দেখে: এটি বিদ্যমান, এবং এর অস্তিত্ব রয়েছে চেতনায় (চিৎ)।[১২৬]

    কাশ্মীর শৈবধর্ম প্রভাবিত হয়েছিল, এবং বিভিন্ন গোঁড়া ও ভিন্নধর্মী ভারতীয় ধর্মীয় ও দার্শনিক ঐতিহ্য থেকে মতবাদ গ্রহণ করেছিল।[১২৭] এর মধ্যে রয়েছে বেদান্ত, সাংখ্য, পতঞ্জলি যোগ এবং ন্যায়, এবং যোগাচার ও মধ্যমাক সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দর্শন,[১২৭] কিন্তু তন্ত্রনাথ-প্রথাও রয়েছে।[১২৮]

    সমসাময়িক স্থানীয় ঐতিহ্য

    প্রাথমিক সচেতনতা অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহ্যেরও অংশ, যেগুলি কম জোরালোভাবে, বা সমস্ত নয়, সন্ন্যাস ও প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনগুলিতে সংগঠিত। যদিও প্রায়শই “অদ্বৈত বেদান্ত” বলা হয়, তবে এই ঐতিহ্যগুলির উৎপত্তি স্থানীয় ভাষা আন্দোলন এবং “গৃহস্থ” ঐতিহ্য থেকে, এবং নাথ, নায়নার এবং সন্তমত ঐতিহ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

    রমণ মহর্ষি

    মূল নিবন্ধ: রমণ মহর্ষি

    রমণ মহর্ষি (১৮৭৯-১৯৫০) শৈব সিদ্ধান্ত, অদ্বৈত বেদান্ত এবং যোগ শিক্ষা ব্যবহার করে তার অন্তর্দৃষ্টি ব্যাখ্যা করেছেন

    রমণ মহর্ষি (৩০ ডিসেম্বর ১৮৭৯ – ১৪ এপ্রিল ১৯৫০) আধুনিক সময়ের অসামান্য ভারতীয় গুরুদের একজন হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।[১২৯] রমণ এর শিক্ষাকে প্রায়ই অদ্বৈত বেদান্ত হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়, যদিও রমণ মহর্ষি কখনই “কোন স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেননি”।[ওয়েব ৮] রমণ নিজেও তার অন্তর্দৃষ্টিকে অদ্বৈত বলেননি:

    দ্বৈতবাদী: শ্রী ভগবান কি অদ্বৈতকে সমর্থন করেন?

    মহর্ষি: দ্বৈত ও অদ্বৈত হল আপেক্ষিক পদ। তারা দ্বৈত অনুভূতির উপর ভিত্তি করে। আত্মা যেমন আছে তেমনি আছে। দ্বৈত বা অদ্বৈত নেই। “আমি যে আমি তা”।[টীকা ১১] সরল সত্তা হল আত্ম (স্বয়ং)।[১৩১]

    নব্য-অদ্বৈত

    মূল নিবন্ধ: নব্য-অদ্বৈত

    নব্য-অদ্বৈত হল নতুন ধর্মীয় আন্দোলন যা অদ্বৈত বেদান্তের একটি আধুনিক, পাশ্চাত্য ব্যাখ্যা, বিশেষ করে রমণ মহর্ষির শিক্ষার উপর ভিত্তি করে।[১৩২] আর্থার ভার্সলুইসের মতে, নব্য-অদ্বৈত হল একটি বৃহত্তর ধর্মীয় স্রোতের অংশ যাকে তিনি বলেন তাৎক্ষণিকতাবাদ,[১৩৩][ওয়েব ১১] “নির্দিষ্ট ধর্মীয় ঐতিহ্যের মধ্যে কোন প্রস্তুতিমূলক অনুশীলনের বেশি কিছু ছাড়াই অবিলম্বে আধ্যাত্মিক আলোকসজ্জার দাবি।”[ওয়েব ১১] নব্য-অদ্বৈত এই তাৎক্ষণিকতা এবং এর প্রস্তুতিমূলক অনুশীলনের অভাবের জন্য সমালোচিত হয়।[১৩৪][টীকা ১২][১৩৫][টীকা ১৩] যদিও চেতনার এই অবস্থাটি স্বতঃস্ফূর্ত বলে মনে হতে পারে,[টীকা ১৪] এটি সাধারণত তপস্বী বা ধ্যান/মননশীল অনুশীলনের মাধ্যমে দীর্ঘায়িত প্রস্তুতি অনুসরণ করে, যার মধ্যে নৈতিক আদেশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উল্লেখযোগ্য নব্য-অদ্বৈত শিক্ষক হলেন এইচ ডব্লিউ এল পুঞ্জা[১৩৬][১৩২] এবং তার ছাত্ররা গঙ্গাজী,[১৩৭]  অ্যান্ড্রু কোহেন,[টীকা ১৫] এবং একার্ট টোলে[১৩২]

    অদ্বৈততার আধুনিক পশ্চিমা আধ্যাত্মিক শিক্ষক, জেফ ফস্টারের মতে, অদ্বৈততা হল:

    জীবনের অপরিহার্য একতা (ঐক্য), সম্পূর্ণতা যা এখানে এবং এখন বিদ্যমান, যে কোনো আপাত বিচ্ছেদের আগে […] বিচ্ছেদ ও বৈচিত্র্যের বাধ্যতামূলক চেহারা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সার্বজনীন সারাংশ, বাস্তবতা। একতা সর্বত্র আছে – এবং আমরা অন্তর্ভুক্ত।[১৩৯]

    নাথ সম্প্রদায় এবং ইঞ্চেগেরি সম্প্রদায়

    মূল নিবন্ধসমূহ: নাথ, সহজাইঞ্চেগেরি সম্প্রদায়

    গোরক্ষনাথের মতো নাথ যোগীদের সাথে নাথ সম্প্রদায়, সহজাকে প্রবর্তন করেছিল, স্বতঃস্ফূর্ত আধ্যাত্মিকতার ধারণা। সহজ মানে “স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিক, সরল বা সহজ”।[ওয়েব ১৫] কেন উইলবারের মতে, এই মতবাদ অদ্বৈততা প্রতিফলিত করে।[১৪০]

    বৌদ্ধধর্ম

    বিভিন্ন বৌদ্ধ মতামত রয়েছে যা আদিম সচেতনতা ও অদ্বৈততা বা “দুই নয়” ধারণা এবং অভিজ্ঞতার সাথে অনুরণিত। বুদ্ধ প্রাচীনতম বৌদ্ধ গ্রন্থে অদ্বয় শব্দটি ব্যবহার করেন না, কিন্তু এটি বিমলাকীর্তির মত কিছু মহাযান সূত্রে দেখা যায়।[১৪১] যখন বুদ্ধ একীভূত মানসিক মনোযোগ (সমাধি) এবং ধ্যান শোষণ শিক্ষা দিয়েছিলেন যা সাধারণত উপনিষদিক চিন্তাধারায় শেখানো হত, তিনি উপনিষদের আধিভৌতিক মতবাদগুলিকেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, বিশেষ করে ধারণাগুলি যেগুলি প্রায়শই হিন্দু অদ্বৈততার সাথে জড়িত, যেমন মতবাদ যে “এই মহাজাগতিক স্বয়ং” এবং “সবই একত্ব” ( সংযুত্তনিকায় ১২.৪৮ এবং  মজ্ঝিমনিকায় ২২)।[১৪২][১৪৩] এই কারণে, অদ্বৈততার বৌদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিগুলি হিন্দু ধারণার থেকে বিশেষভাবে ভিন্ন, যা আদর্শবাদী অদ্বৈতবাদের দিকে ঝোঁক।

    অন্যান্য প্রাচ্য ধর্ম

    শিখধর্ম

    শিখ ধর্মতত্ত্ব পরামর্শ দেয় যে মানুষের আত্মা এবং একেশ্বরবাদী ঈশ্বর দুটি ভিন্ন বাস্তবতা (দ্বৈতবাদ),[১৪৪]  এটিকে অদ্বৈতবাদী এবং অন্যান্য ভারতীয় ধর্মের অদ্বৈতবাদী দর্শনের বিভিন্ন ছায়া থেকে আলাদা করে।[১৪৫] যাইহোক, শিখ পণ্ডিতরা শিখ ধর্মগ্রন্থের অদ্বৈতবাদের ব্যাখ্যা অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছেন, যেমন সিং সভার ভাই বীর সিং দ্বারা নব্য ঔপনিবেশিক সংস্কারবাদী আন্দোলনের সময়। মান্দাইর অনুসারে, সিং শিখ ধর্মগ্রন্থকে অদ্বৈততা শিক্ষা হিসাবে ব্যাখ্যা করেন।[১৪৬]

    অন্যরা মনে করে যে শিখ ধর্মতত্ত্ব মানুষের আত্মা এবং একেশ্বরবাদী ঈশ্বর একই বাস্তবতা (অ-দ্বৈতবাদ) প্রস্তাব করে। শিখ পণ্ডিতরা এমনকি শিখ ধর্মগ্রন্থের অদ্বৈতবাদের ব্যাখ্যাও অন্বেষণ করে চলেছেন, যেমন সিং সভার ভাই বীর সিং দ্বারা নব্য ঔপনিবেশিক সংস্কারবাদী আন্দোলনের সময়। অরবিন্দ মন্দিরের মতে, সিং শিখ ধর্মগ্রন্থকে অদ্বৈততা শিক্ষা হিসাবে ব্যাখ্যা করেন।[১৪৬]

    তাওবাদ

    মূল নিবন্ধ: তাওবাদ

    তাই চি রেখাচিত্র

    তাওবাদের উ ওয়েই (চীনা উ, না; ওয়েই, করা) হল একটি শব্দ যেখানে বিভিন্ন অনুবাদ রয়েছে[টীকা ১৬]  এবং প্যাসিভিটি থেকে আলাদা করার জন্য ডিজাইন করা ব্যাখ্যা। য়িন এবং য়াং ধারণা, প্রায়ই ভুলভাবে দ্বৈতবাদের প্রতীক হিসাবে কল্পনা করা হয়, আসলে এই ধারণাটি বোঝানোর জন্য যে সমস্ত আপাত বিপরীত অ-দ্বৈত সমগ্রের পরিপূরক অংশ।[১৪৭]

    পশ্চিমা ধর্ম

    মূল নিবন্ধসমূহ: আধ্যাত্মিকতা, নবযুগ, সমন্বয়বাদ, নব্য-অদ্বৈত, পাশ্চাত্য গূঢ়বাদ, বহুবর্ষজীবী দর্শনসমন্বয়বাদ

    চিন্তার আধুনিক সূত্র “অদ্বৈত চেতনা” কে সার্বজনীন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা হিসাবে দেখে, যা সাধারণ স্তর এবং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে একই সারাংশ।[১১] এটি নব্য-বেদান্ত ও নব-অদ্বৈত থেকে উদ্ভূত, তবে নয়াপ্লাতোবাদপাশ্চাত্য গুপ্ততত্ত্ব এবং বহুবর্ষবাদের ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে। “কেন্দ্রীয় সারাংশ”[১৪৮] হিসাবে অদ্বৈত চেতনার ধারণাটি সার্বজনীনতাবাদী এবং বহুবর্ষবাদী ধারণা, যা পশ্চিমা আধ্যাত্মিক ও গোপনীয় ঐতিহ্য এবং এশীয় ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন ও সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে আধুনিক পারস্পরিক বিনিময় এবং ধারণার সংশ্লেষণের অংশ।[টীকা ১৭]

    পশ্চিমা ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় উপাদানগুলি হল নয়াপ্লাতোবাদ, যা খ্রিস্টীয় চিন্তাধারা বা রহস্যবাদ এবং এর সহগামী অপোফ্যাটিক ধর্মতত্ত্বের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল; এবং পাশ্চাত্য গুপ্ততত্ত্ব, যা নয়াপ্লাতোবাদ এবং হার্মেটিসিজম সহ নস্টিক উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে পশ্চিমা ঐতিহ্য হল, অন্যদের মধ্যে, বহুবর্ষজীবী দর্শন, সুইডেন বর্জিয়ানবাদ, একেশ্বরবাদপ্রাচ্যতত্ত্ববাদতুরীয়বাদধর্মতত্ব এবং নতুন যুগের ধারণা।[১৫১]

    প্রাচ্যের আন্দোলন হল হিন্দু সংস্কার আন্দোলন যেমন স্বামী বিবেকানন্দের নব্য-বেদান্ত এবং  অরবিন্দের অবিচ্ছেদ যোগ, বিপাসন আন্দোলন এবং বৌদ্ধ আধুনিকতাবাদ।[টীকা ১৮]

    আরও দেখুন

    টীকা

    grasping mind See Nonduality.com, FAQ and Nonduality.com, What is Nonduality, Nondualism, or Advaita? Over 100 definitions, descriptions, and discussions. According to Loy, nondualism is primarily an Eastern way of understanding: “…[the seed of nonduality] however often sown, has never found fertile soil [in the West], because it has been too antithetical to those other vigorous sprouts that have grown into modern science and technology. In the Eastern tradition […] we encounter a different situation. There the seeds of seer-seen nonduality not only sprouted but matured into a variety (some might say a jungle) of impressive philosophical species. By no means do all these [Eastern] systems assert the nonduality of subject and object, but it is significant that three which do – Buddhism, Vedanta and Taoism – have probably been the most influential.[২০] According to Loy, referred by Pritscher:

    …when you realize that the nature of your mind and the [U]niverse are nondual, you are enlightened.[২১]

    grasping mind This is reflected in the name “Advaita Vision,” the website of advaita.org.uk, which propagates a broad and inclusive understanding of advaita.[ওয়েব ৪] Edward Roer translates the early medieval era Brihadaranyakopnisad-bhasya as, “(…) Lokayatikas and Bauddhas who assert that the soul does not exist. There are four sects among the followers of Buddha: 1. Madhyamicas who maintain all is void; 2. Yogacharas, who assert except sensation and intelligence all else is void; 3. Sautranticas, who affirm actual existence of external objects no less than of internal sensations; 4. Vaibhashikas, who agree with later (Sautranticas) except that they contend for immediate apprehension of exterior objects through images or forms represented to the intellect.”[৫৬][৫৭] “A” means “not”, or “non”; “jāti” means “creation” or “origination”;[৯৯] “vāda” means “doctrine”[৯৯] The influence of Mahayana Buddhism on other religions and philosophies was not limited to Advaita Vedanta. Kalupahana notes that the Visuddhimagga contains “some metaphysical speculations, such as those of the Sarvastivadins, the Sautrantikas, and even the Yogacarins“.[১০১] Neo-Vedanta seems to be closer to Bhedabheda-Vedanta than to Shankara’s Advaita Vedanta, with the acknowledgement of the reality of the world. Nicholas F. Gier: “Ramakrsna, Svami Vivekananda, and Aurobindo (I also include M.K. Gandhi) have been labeled “neo-Vedantists,” a philosophy that rejects the Advaitins’ claim that the world is illusory. Aurobindo, in his The Life Divine, declares that he has moved from Sankara’s “universal illusionism” to his own “universal realism” (2005: 432), defined as metaphysical realism in the European philosophical sense of the term.”[১১২] Abhinavgupta (between 10th – 11th century AD) who summarized the view points of all previous thinkers and presented the philosophy in a logical way along with his own thoughts in his treatise Tantraloka.[ওয়েব ৭] A Christian reference. See [ওয়েব ৯] and [ওয়েব ১০] Ramana was taught at Christian schools.[১৩০] Marek: “Wobei der Begriff Neo-Advaita darauf hinweist, dass sich die traditionelle Advaita von dieser Strömung zunehmend distanziert, da sie die Bedeutung der übenden Vorbereitung nach wie vor als unumgänglich ansieht. (The term Neo-Advaita indicating that the traditional Advaita increasingly distances itself from this movement, as they regard preparational practicing still as inevitable)[১৩৪] Alan Jacobs: “Many firm devotees of Sri Ramana Maharshi now rightly term this western phenomenon as ‘Neo-Advaita’. The term is carefully selected because ‘neo’ means ‘a new or revived form’. And this new form is not the Classical Advaita which we understand to have been taught by both of the Great Self Realised Sages, Adi Shankara and Ramana Maharshi. It can even be termed ‘pseudo’ because, by presenting the teaching in a highly attenuated form, it might be described as purporting to be Advaita, but not in effect actually being so, in the fullest sense of the word. In this watering down of the essential truths in a palatable style made acceptable and attractive to the contemporary western mind, their teaching is misleading.”[১৩৫] See Cosmic Consciousness, by Richard Bucke Presently Cohen has distanced himself from Poonja, and calls his teachings “Evolutionary Enlightenment”.[১৩৮]What Is Enlightenment, the magazine published by Choen’s organisation, has been critical of neo-Advaita several times, as early as 2001. See.[ওয়েব ১২][ওয়েব ১৩][ওয়েব ১৪] Inaction, non-action, nothing doing, without ado See McMahan, “The making of Buddhist modernity”[১৪৯] and Richard E. King, “Orientalism and Religion”[১৫০] for descriptions of this mutual exchange. The awareness of historical precedents seems to be lacking in nonduality-adherents, just as the subjective perception of parallels between a wide variety of religious traditions lacks a rigorous philosophical or theoretical underpinning.

  • অজ্ঞেয়বাদ

    অজ্ঞেয়বাদ

    অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে এমন একটি দার্শনিক চিন্তা বা মতবাদ বা ধারণা যেখানে বলা হয় যে কোনো ঈশ্বর বা কোনো পরমসত্ত্বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা নিরস্তিত্ব মানুষের অজানা এবং এটি তাদের দ্বারা কখনো জানা সম্ভব হবেনা।[১][২][৩]

    অজ্ঞেয়বাদ

    মার্কিন দার্শনিক উইলিয়াম এল. রোয়ে বলেন, “অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে মানবজাতি কখনো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে আছেন এটি শক্তভাবে প্রমাণ করতে সমর্থ হবেনা আবার ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে নেই এটিও শক্তভাবে নিশ্চিত করতে অসমর্থ থেকে যাবে”।[২] অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে যুক্তি ও জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ধারণা, এটি কোনো ধর্ম নয়। এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেনা আবার স্বীকারও করেনা।[৪] ইংরেজ জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলি ‘অজ্ঞেয়বাদ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৮৬৯ সালে। ইনার আগের চিন্তাবিদরাও অবশ্য তাদের মতবাদে অজ্ঞেয়বাদের প্রচার করেছেন যেমন সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্ত, খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর একজন ভারতীয় দার্শনিক যিনি ‘পরকাল’ সম্বন্ধে অজ্ঞেয়বাদ প্রকাশ করেছিলেন;[৫][৬][৭] এবং পীথাগোরাস, ৫ম শতাব্দীর গ্রিক দার্শনিক, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তার অজ্ঞেয়বাদ প্রকাশ করেছিলেন।[৮] ‘নাসদীয় সূক্ত’ (একটি ভারতীয় মতবাদ) এবং ঋগ্বেদ পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারে অজ্ঞেয়।[৯][১০][১১]

    অজ্ঞেয়বাদের সংজ্ঞীয়করণ

    জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলি বলেন,

    অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে বিজ্ঞানের একটি নির্যাস, প্রাচীন হোক কিংবা আধুনিক। এটা সহজভাবেই বোঝায় যে একজন মানুষ বলবেনা যেটা সে জানে বা বিশ্বাস করে যেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই জানার বা বিশ্বাস করার জন্য। ফলত, অজ্ঞেয়বাদ শুধু জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্বেরই বড়ো অংশ থেকে একপাশে সরে থাকেনা, এটি ধর্মতত্ত্ববিরোধী মতবাদেরও ঠিক পক্ষে যায়না। সমগ্রভাবে, প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধিতা এর আতোল বাতোল কথাগুলো আমার কাছে প্রচলিত ধর্মীয় ধ্যান-ধ্যারণার থেকে বেশি আক্রমণাত্মক মনে হয়, কারণ প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধিতা দৃঢ়ভাবে কারণ এবং বিজ্ঞানের আলোকে কথা বলে, অপরদিকে প্রচলিত ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা নয়।[১২]

    — Thomas Henri Huxley

    যেখানে অজ্ঞেয়বাদীরা অস্বীকার করেন, নীতিবিগর্হিত হিসেবে, হচ্ছে একটি বিপরীত মতবাদ, যে কিছু বর্ণনা আছে যেগুলোকে মানুষের বিশ্বাস করা উচিত, যৌক্তিক সন্তোষজনক প্রমাণ ছাড়া; এবং পুনঃসত্যতাপ্রমাণীকরণ অবিশ্বাসের দাবির সঙ্গে যুক্ত থাকা এমন অপর্যাপ্ত সমর্থিত বর্ণনা।[১৩]

    — Thomas Henry Huxley

    অজ্ঞেয়বাদ, আসলে, ধর্মবিশ্বাস নয়, একটি নিয়ম, যেটি একটি কঠিন নীতির উপাদানের উপর তৈরি……ধনাত্মকভাবে নীতিটি প্রকাশিত হতে পারেঃ বুদ্ধির ক্ষেত্রে, আপনি কারণ অনুসন্ধান করুন যতদূর এটি আপনাকে নিয়ে যায়, অন্য কোনো বিবেচনা ছাড়াই। এবং ঋণাত্মকভাবেঃ বুদ্ধির ক্ষেত্রে দাবী করবেননা যে উপসংহারগুলো সুনিশ্চিত যেগুলো প্রমাণিত হয়েছে বা প্রমাণযোগ্য।[১৪][১৫][১৬]

    — Thomas Henry Huxley

    একজন বিজ্ঞানী হিসেবে হাক্সলি অজ্ঞেয়বাদকে এক প্রকারের সীমানানির্দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। একটি তত্ত্ব যার কোনো সমর্থন অবলম্বন নেই, পরীক্ষণযোগ্য ঘটনা কোনো অবলম্বন নয়, বৈজ্ঞানিক দাবী। যেমন, কোনো বলা তত্ত্বকে প্রমাণ করার জন্য কোনো উপায় থাকবেনা, ফলাফলগুলো অমীমাংসিত আকারে বের হবে। তার অজ্ঞেয়বাদ হাতের দাবীতে সত্য কিংবা মিথ্যার উপর বিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলনা। অস্ট্রীয়-ব্রিটিশ দার্শনিক কার্ল পপারও তাকে অজ্ঞেয়বাদী বলেছেন।[১৭] মার্কিন দার্শনিক উইলিয়াম এল. রোয়ে অনুযায়ী, অজ্ঞেয়বাদের সঠিক অর্থ হচ্ছে, “অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে সেই মতবাদ যা নির্দেশ করে যে মানবজাতি কখনোই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে সক্ষম হবেনা আবার অপরদিকে ঈশ্বরের যুক্তিযুক্ত অনস্তিত্বও প্রমাণ করতে পারবেনা।[২]

    অন্যান্যরা এই ধারণাটির পুনঃসংজ্ঞা দিয়েছেন, এটিকে বিশ্বাস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে, এবং শুধু অসামঞ্জস্য পুরো নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে। জর্জ এইচ. স্মিথ (জাপানে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন লেখক, জন্মঃ ১৯৪৯) এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন যে নাস্তিক্যবাদের সরু সংজ্ঞাই অজ্ঞেয়বাদ শব্দটির সাধারণ ব্যবহার সংজ্ঞা ছিলো,[১৮] এবং অজ্ঞেয়বাদের বিস্তারিত সংজ্ঞা ছিলো এই শব্দটির সাধারণ ব্যবহার সংজ্ঞা,[১৯], নাস্তিক্যবাদের সংজ্ঞাটাকে আরো বড়ো করে এবং অজ্ঞেয়বাদের সংজ্ঞাটাকে আরো ছোটো করে। স্মিথ নাস্তিক্যবাদ এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসের তৃতীয় বিকল্প হিসেবে অজ্ঞেয়বাদকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘অজ্ঞেয় নাস্তিকবাদ’ নামে নতুন একটি শব্দ তৈরি করেন যেটি এমন একটি চিন্তা যা নির্দেশ করে যে একজন মানুষ কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা, কিন্তু আবার দাবীও করেনা যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব সম্পর্কে তার শক্ত প্রমাণ আছে, আর একটি শব্দের অবতারণা স্মিথ ঘটান যেটি হচ্ছে ‘অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক্য’, এ মতবাদ হচ্ছে যে একজন মানুষ ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো যুক্তি বোঝেনা বা বুঝতে চায়না, কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বে তার বিশ্বাস আছে।[২০][২১][২২]

    ব্যুৎপত্তি

    অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি সর্বপ্রথম টমাস হেনরি হাক্সলি ১৮৬৯ সালে ব্রিটেনের ‘মেটাফিজিক্যাল সোসাইটি’ (অধিবিদ্যা সমাজ) এ ব্যবহার করেন তাঁর দর্শন প্রকাশ করতে যেটি আত্মিক এবং রহস্যময় সকল জ্ঞানের দাবী প্রত্যাখ্যান করে। তবে অজ্ঞেয় এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘অ্যাগনস্টিক’ (agnostic) শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ভাষার দুটি শব্দ ‘এ’, ἀ- (a-) এবং ‘নসিস’, ‘γνῶσις’ (gnōsis) থেকে এসেছে যাদের অর্থ যথাক্রমে নেই এবং জ্ঞান।[২৩][২৪] প্রাচীন যুগের খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকরা গ্রিক শব্দ ‘নসিস’ (জ্ঞান) কে “আধ্যাত্মিক জ্ঞান” বোঝাতে ব্যবহার করতেন। প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই অজ্ঞেয়বাদ, হাক্সলি শব্দটিকে অনেক বিস্তৃত করে প্রকাশ করেছিলেন।[২৫] হাক্সলি শব্দটিকে কোনো বিশ্বাস হিসেবে প্রকাশ করেননি বরং একে সংশয়বাদী, প্রমাণভিত্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[২৬] বর্তমানে স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানে অজ্ঞেয়বাদ শব্দটিকে জানা সম্ভব নয় এমন কিছু বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।[২৭] তবে কারিগরি জগৎ এবং মার্কেটিং জগতে “অজ্ঞেয়” শব্দটি দ্বারা কিছু বাঁধা; যেমনঃ প্ল্যাটফর্ম[২৮] কিংবা হার্ডওয়্যার হতে স্বাধীনতা বুঝায়।[২৯]

    অজ্ঞেয়বাদের বৈশিষ্ট্য

    ইউরোপের যুক্তি ও বিজ্ঞান বিকাশের সময়কালের একজন স্কটিশ দার্শনিক ড্যাভিড হিউম এর মতে মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোন তথ্যই পুরোপুরি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন যে “মানবজাতির ভ্রমশীলতা” কথাটি দ্বারা বোঝায় যে মানুষ কোন ব্যাপারেই পরম নিশ্চয়তা অর্জন করতে পারবে না। তবে কিছু ব্যাপার সংজ্ঞায়িতই করা হয় এমনভাবে যা নিশ্চিতভাবে ওই বিশেষ বস্তু বা বিষয়কেই বোঝায়। যেমনঃ ব্যাচেলর শব্দটি বলা মাত্রই আমরা বুঝে যাবো যে ব্যক্তির সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি অবিবাহিত। এক্ষেত্রে আমরা সন্দেহ করতে পারবো না তিনি বিবাহিত কিনা। এছাড়াও ত্রিভুজ বললেই আমরা বুঝবো এর তিনটি কোণ রয়েছে। এ ধরনের ব্যাপার ব্যতীত কোনকিছুই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।[৩০]

    প্রকারভেদ

    কট্টর অজ্ঞেয়বাদ (যা “বদ্ধ”, “দৃঢ়” বা “স্থায়ী অজ্ঞেয়বাদ” হিসেবেও পরিচিত) এমন একটি মতবাদ যা বলে ঈশ্বর, দেবতা কিংবা কোন অলৌকিক সত্ত্বা আছে কি নেই তার উত্তর মানুষ কখনোই দিতে পারবে না। কেননা মানুষ কোন অভিজ্ঞতাকে শুধুমাত্র পূর্বে হওয়া বস্তুগত অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের আলোকেই ব্যাখ্যা করে। তাই বলা চলে একজন কট্টর অজ্ঞেয় ব্যক্তি বলবেন, “ঈশ্বর এর অস্তিত্ব আছে কি নেই তা আমি জানতে পারবো না এবং আপনিও কখনোই জানতে পারবেন না।”[৩১][৩২][৩৩]দুর্বল অজ্ঞেয়বাদ (যা “উন্মুক্ত”, “পরীক্ষামূলক” বা “অস্থায়ী অজ্ঞেয়বাদ” হিসেবেও পরিচিত) এমন একটি মতবাদ যা বলে ঈশ্বর আছে কি নেই তার উত্তর মানুষের কাছে এখন অজানা হলেও চিরকালই যে অজানা থাকবে এমন নয়। সুতরাং বলা চলে, প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া যাবে না যতক্ষণ না কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই একজন প্রমাণভিত্তিক অজ্ঞেয় ব্যক্তি বলবেন যে “আমি জানি না ঈশ্বর আছেন কি নেই। যদি এই ব্যাপারে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তখন হয়ত কিছু বলা যাবে।”[৩১][৩২][৩৩]উদাসীন অজ্ঞেয়বাদ এমন একটি মতবাদ যা বলে কোন বিতর্কই এক বা একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব কিংবা অনস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবে না। আর একান্তই যদি এক বা একাধিক ঈশ্বর থেকেই থাকেন তবে তার সঙ্গে মানুষের পরিণতির কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানুষের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না এবং এই ব্যাপারটি মানুষের জন্য অগুরুত্বপূর্ণ।[৩৪][৩৫][৩৬]

    ইতিহাস

    গ্রিক দর্শন

    অজ্ঞেয়বাদী চিন্তা, সন্দেহবাদের রুপে প্রাচীন গ্রীসে একটি আনুষ্ঠানিক দার্শনিক অবস্থান পেয়েছিল। এটির প্রবক্তার মধ্যে ছিলেন প্রোটাগোরাস, পিরহো, ক্যার্নিডেস, সেক্সটাস এম্পিরিকাস[৩৭] এবং কারো কারো মতে সক্রেটিস যিনি জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে সন্দেহবাদী প্রবণতার মিশ্রণ ঘটানোর গোঁড়া সমর্থক ছিলেন।[৩৮]

    পিরহো বলেছিলেন যে, আমাদের বিচার বানানো থেকে দূরে থাকা উচিত কারণ আমরা কখনো প্রকৃত সত্যতা জানতে পারবনা। পিরহোর মতে, মতামত বানানো সম্ভব, কিন্তু অবশ্যতা এবং জ্ঞান জানা অসম্ভব।[৩৯] ক্যার্নিডেসও সকল জ্ঞানের দাবীর ক্ষেত্রে সন্দেহ পোষণ করতেন। তিনি যদিও একটি ‘সম্ভাবনা তত্ত্ব’ বের করেন।তার মতে অবশ্যতা কখনোই সিদ্ধ করা যায়না।[৪০] প্রোটাগোরাস ঈশ্বরের ঐতিহ্যগত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেনঃ[৮]

    ঈশ্বরদের ক্ষেত্রে, আমার জানার কোনো মানে হয়না যে তারা আছেন নাকি নেই অথবা তারা কী প্রকারের। অনেক জিনিশ জ্ঞান জানা নিবৃত্ত করে এর মধ্যে রয়েছে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে অজ্ঞাততা এবং মানবজীবনের স্বল্পস্থায়িত্বতা।

    হিন্দু দর্শন

    আরও দেখুন: সঞ্জয় বেলট্ঠিপুত্ত

    হিন্দুত্ববাদের ইতিহাস জুড়েই শক্ত দার্শনিক ভাবনা এবং সন্ধিগ্ধচিত্ততার ঐতিহ্য পাওয়া যায়।[৪১][৪২]

    ঋগ্বেদ পৃথিবী এবং দেব-দেবীদের তৈরি হওয়ার ব্যাপারে একটি অজ্ঞেয়বাদী মতবাদ গ্রহণ করে। ঋগ্বেদের দশম অধ্যায়ের ‘নাসাদিয়া শুক্তা’ (সৃষ্টিতত্ত্ব) এ বলা হয়েছেঃ[৪৩][৪৪][৪৫]

    সত্যই কে জানেন?
    কে এটি এখানে ঘোষণা করবেন?
    কোথা হতে এটির উৎপত্তি? কোথা হতে এই সৃষ্টি?
    ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পরে দেবতারা এসেছিলেন।
    তবে কে জানেন যে কোথা হতে এটি উত্থিত হয়েছে?

    হিউম, কান্ট, এবং কেরেকগার্ড

    এরিস্টটল,[৪৬] এন্সলাম,[৪৭][৪৮] আকুইনাস,[৪৯][৫০] এবং দেকার্ত[৫১] যৌক্তিকভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে চেষ্টা করে যুক্তিগুলি উপস্থাপন করেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতার যেকোন সন্দেহাতীত প্রমাণ করানো অসম্ভব বলে ডেভিড হিউমের সন্দেহজনক অভিজ্ঞতাবিজ্ঞান, ইমানুয়েল কান্টের বিরোধাভাস, এবং সোরেন কেরেকগার্ডের অস্তিত্ববাদী দর্শন পরবর্তী অনেক দার্শনিক বিশ্বাসকে এই প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করার জন্য উপলব্ধি করায়।[৫২]

    সরেন কেরেকগার্ড তার ১৮৪৪ সালের ফিলোসফিক্যাল ফ্র্যাগমেন্টস বইতে বলেনঃ[৫৩]

  • ইসলামি দর্শন

    ইসলামি দর্শন

    ইসলামি দর্শন (ইংরেজি: Islamic philosophy, আরবি: فلسفة إسلامية ‎‎) অথবা আরবি দর্শন হল জীবন বিশ্বজগৎ নৈতিকতা সমাজ এবং মুসলিম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত আরও অনেক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার উপরে নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা, অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা। ইসলামি দর্শন মূলত দুই ভাগে বিভক্তঃ কালাম ও ফালসাফা। ফালসাফা গ্রিক শব্দ, এটি গ্রিক দর্শন থেকে উৎসরিত। অপরদিকে কালাম অর্থ কথা বা বক্তব্য, এটি যুক্তিতর্ককে দর্শনে ব্যবহার করে[১][২]। ইসলামি দার্শনিকদের মধ্যে সকলেই মুসলিম নন। ইয়াহিয়া ইবন আদির মত খ্রিষ্টান ও মাইমোনিডিস এর মত ইহুদীরাও ইসলামি দর্শন ঐতিহ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং ইবনে আল-রাওয়ান্দি ও মুহাম্মাদ ইবন জাকারিয়া আল-রাযীর মত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য দর্শনশাস্ত্রকে ব্যবহার করেছিলেন।[৩] ৮ম শতাব্দীতে বাগদাদে সর্বপ্রথম স্বাধীনভাবে দার্শনিক অনুসন্ধান হিসেবে প্রাচীন ইসলামি দর্শনের উদ্ভব ঘটে। ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দী হল প্রাথমিক ইসলামি দর্শনের ব্যাপ্তিকাল, এ সময়কালকে ইসলামি স্বর্ণযুগ বলা হয়। দার্শনিক আল-কিন্দি এর সূচনা করেন এবং ইবনে রুশদের[৪] হাতে এই প্রাথমিক সময়কালটির সমাপ্তি ঘটে। ইসলামি দর্শন বলতে সাধারণত ইসলামি সমাজে সৃষ্ট দার্শনিক ভাবধারাকে বোঝানো হয়। এটির সাথে ধর্মীয় কোন বিষয়াবলীর সম্পৃক্ততা নেই, এমনকি একচেটিয়াভাবে মুসলমানদের কর্তৃক তৈরীকৃত বিষয়াবলীসমূহ।[৫]

    ইসলামি দর্শন

    ভূমিকা ও প্রথাগত প্রভাব

    ইসলামি সমাজে ইসলামি দর্শন প্রবর্তন করা ও সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করার নামই হল ইসলামি দর্শন।

    ইসলামি দর্শন একটি জেনেরিক শব্দ যাকে বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত এবং ব্যবহার করা যায়। বিস্তৃত অর্থে এটি ইসলামের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি যা ইসলামিক গ্রন্থে থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা মূলত মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য এবং সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা সম্পর্কে আলোকপাত করে। অন্য অর্থে এটি ইসলামি সাম্রাজ্যের অধীনে বা আরবইসলামি সংস্কৃতি এবং ইসলামি সভ্যতার ছায়াগ্রন্থের মধ্যে যেসব চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছে এমন কোনও স্কুলকে বোঝায়। সংকীর্ণ অর্থে এটি ফালসাফার একটি অনুবাদ, অর্থ এই বিশেষ স্কুলগুলির মতামত যে অধিকাংশ নিওপ্লাটোনিজম ও এরিস্টটলীয়লিজমের মত গ্রিক দর্শনের পদ্ধতির প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।

    এটি ধর্মীয় বিষয় এবং মুসলমানদের দ্বারা উৎপাদিত কোন বিষয়ের সাথে জড়িত সম্পর্ক নয়। আর ইসলামের মধ্যে চিন্তার সমস্ত স্কুল দার্শনিক তদন্তের ব্যবহার বা বৈধতা স্বীকার করে না। কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে মানুষের সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কখনওই, সত্য ও সঠিক পথ অর্জনে সহায়তা করতে পারেনা। এটিও লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন “যুক্তি” (‘একিওএল’) কখনও কখনও ইসলামি আইনের উৎস হিসাবে স্বীকৃত হয়, তবে তার মধ্যে কখনও কখনও দর্শনের “যুক্তি” থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ থাকতে পারে।

    ইসলামি দর্শনের ইতিহাসগ্রাফী বিতর্ক দ্বারা চিহ্নিত বিষয়টি হল কিভাবে বিষয়টিকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইবনে সিনা (আভিসিনা) এবং পশ্চিমা চিন্তাবিদ ইবনে রুশদের মত হল ইসলামিক দর্শন কীভাবে পড়তে হবে অথবা কীভাবে একে ব্যাখ্যা করা উচিত । লিও স্ট্রসের মতে ইসলামি দার্শনিকরা ধর্মীয় আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য তাদের প্রকৃত অর্থ গোপন করেছিলেন, কিন্তু ওলভার লিমানের মত পণ্ডিত তাতে মতানৈক্য প্রদর্শন করেছেন।

    নাম হিসাবে ইসলামি দর্শন বলতে ইসলামিক পদ্ধতিতে দার্শনিক কার্যকলাপকে বোঝায়। শাস্ত্রীয় বা প্রথমার্ধের ইসলামি দর্শনের মূল উৎস হল ইসলাম ধর্ম নিজেই (বিশেষ করে ধারণাগুলি কুরআন থেকে উদ্ভূত এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে) এবং গ্রিক দর্শন যা পূর্বের মুসলমানদের বিজয় লাভের ফলে পূর্ব ভারতীয়-ইসলামি দর্শন এবং ফার্সি দর্শনের সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছে। দার্শনিক বিতর্কগুলির বেশিরভাগই ধর্ম এবং যুক্তিগুলির সমন্বয় সাধনের কেন্দ্রবিন্দু যা পরে গ্রিক দর্শনের দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।

    দর্শনের প্রতিপক্ষ

    কিছু মুসলমান দর্শনের ধারণাকে অ-ইসলামিক মতবাদ বলে বিরোধিতা করে। জনপ্রিয় সালাফি ওয়েবসাইট IslamQA.info (সৌদি আরবের শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ কর্তৃক নিরীক্ষণ করা হয়) দর্শনকে একটি “এলিয়েন সত্তা” বলে ঘোষণা করে:

    ইসলামি দর্শনের পরিভাষা জ্ঞানের একটি শাখা হিসাবে উত্থিত হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত যা ইসলামিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমের মধ্যে শেখানো হয় যতক্ষণ না এটি শাইখ মুস্তফা ‘আব্দুল রাজ্জাক’ – আল-আজহারের শায়খ দ্বারা চালু করা হয় – ইসলামের উপর পশ্চিমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধারণাটির উপর ভিত্তি করে যে ইসলামের কোন দর্শন নেই। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এমন যে ইসলামের দেহে দর্শনের একটি এলিয়েন সত্তা প্রবেশ করলো।

    ফতোয়া দাবী করে যে, “ফুকাহের সংখ্যাগরিষ্ঠ” [ফিক্ইয়ে বিশেষজ্ঞরা] বলেছেন যে দর্শন অধ্যয়ন করা হারাম এবং এদের মধ্যে কিছু তালিকা রয়েছে:

    • ইবনে নুজাইম (হানাফি) আল-আশাবাহ ওয়াল-নাজাঈমে লিখিত আছে;
    • আল-দারদির (মালিকি) আল-শারহ আল-কাবিরে বলেছেন;
    • আল-দাশোকী তাঁর হাশিয়াহ (২/১৭৪);
    • জাকারিয়ার আল-আনসারি (শাফায়ী) তাঁর আসনা আল-মাতালিবে (৪/১৮২);
    • আল বাহুতি (হাম্বোলি) কাশশাফ আল কিনা বলেছেন ‘(৩/৩৪);

    ইসলামিককিউএ আল-গাজ্জালীকে উদ্ধৃত করে বলেছেন যে, দর্শনের “চারটি শাখা” (জ্যামিতি এবং গণিত, যুক্তিবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান), কিছু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান “শরীয়াহ, ইসলাম ও সত্যের বিরুদ্ধে যায়” চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়া, “প্রকৃতির জন্য কোন গবেষণার প্রয়োজন নেই”।

    মানি ‘হা্ম্মাদ আল জুহানী, (বিশ্ব মুসলিম যুব পরিষদের পরামর্শমূলক কাউন্সিলের একজন সদস্য এবং সাধারণ পরিচালক ) এই ঘোষণাটি উদ্ধৃত করেছেন যে, দর্শনে সুন্নাহের নৈতিক নির্দেশনা অনুসরণ করা হয় না, ” দার্শনিকরা যুক্তিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে যা সংজ্ঞায়িত করেছেন তা বিশ্বাস ও ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক মিথ্যাবাদ এবং সবচেয়ে জঘন্যতম, যা যুক্তি, ব্যাখ্যা এবং রূপক যা ধর্মীয় গ্রন্থকে বিকৃত করে তার নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা খুবই সহজ। “

    ইবনে আবি আল ইজ, আল-তাহাওয়ায়িয়াহের একজন মন্তব্যকারী, দার্শনিকদের নিন্দা করেন যারা “শেষ দিন এবং এর ঘটনাকে অস্বীকার করে।” তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে জান্নাত এবং জাহান্নাম মানুষের মানসিক চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়, মানুষের মনের বাস্তবতার বাইরে কিছুই নেই ।

    মনজুর এলাহি তার “সমাজ সংস্কারে সঠিক আকীদার গুরুত্ব” বইতে কালামশাস্ত্র, ইসলামী দর্শন বা ফালসাফা ও ইসলামী মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যা সম্পর্কে বলেন,[৬]

    মুতাকাল্লিমীনগণ আকীদা শাস্ত্রকে ‘‘ইলমুল কালাম’’ এবং দার্শনিকগণ ‘‘আল-ফালসাফা আল-ইসলামিয়্যাহ’’ বা ইসলামী দর্শন, ‘‘আল-ইলাহিয়্যাত’’ ও ‘‘মেটাফিজিক্স’’ (অতিপ্রাকৃতিকতা) নামে অভিহিত করেছেন। শেষোক্ত এ নামগুলো সম্পর্কে ড. নাসের আল-আকলসহ আরো অনেকে বলেন যে, ইসলামী আকীদাকে এসকল নামে অভিহিত করা মোটেই শুদ্ধ নয়। এর কারণ বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবরাহীম আল হামাদ বলেন, “কেননা ইলমুল কালামের উৎস হল মানব বুদ্ধি-বিবেক, যা হিন্দু ও গ্রিক দর্শন নির্ভর। পক্ষান্তরে তাওহীদের মূল উৎস হল ওহী। তাছাড়া ইলমুল কালামের মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা, ভারসাম্যহীনতা, অজ্ঞতা ও সংশয়-সন্দেহ। এজন্যই সালাফে সালেহীন ইলমুল কালামের নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। আর তাওহীদ হল জ্ঞান, দৃঢ় বিশ্বাস ও ঈমান নির্ভর,….. আরেকটি কারণ এও বলা যেতে পারে যে, দর্শনের ভিত্তি অনুমান, বাতিল আকীদা, কাল্পনিক চিন্তা ও কুসংস্কারচ্ছন্ন ধারণার উপর স্থাপিত”। ইমাম হারাওয়ী ذم الكلام وأهله নামে ৫ খন্ডের একটি বই এবং ইমাম গাযযালী تهافت الفلاسفة নামে একটি বই রচনা করেছেন। এছাড়া ‘ইলমুল কালাম’ ও ‘ফালসাফা’ যে সঠিক ইসলামী আকীদার প্রতিনিধিত্ব করে না, সে বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়েমসহ আরো বহু মুসলিম স্কলার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

    প্রারম্ভিক ইসলামিক দর্শন

    প্রাথমিকভাবে ইসলামিক চিন্তাধারা যা “ইসলামিক গোল্ডেন এজ” এর সময় দর্শনের কথা বলে, যা ঐতিহ্যগত ভাবে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে দুটি প্রধান স্রোতকে আলাদা করা যেতে পারে। প্রথমটি হল কালাম, যা মূলত ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির সাথে মোকাবিলা করে এবং অন্যটি হল ফালসাফা যা এরিস্টটলিয়ানিজম এবং নিওপ্লেটনিকবাদ এর ব্যাখ্যাগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে দার্শনিক-ধর্মতত্ত্ববিদরা উভয় প্রবণতার মধ্যে সমন্বয় সাধনে প্রচেষ্টা চালান, বিশেষত ইবনে সিনা (আভিসিনা), যিনি আভিসিনিজম স্কুল এবং ইবনে রুশদ (আভিরোয়েস), আভিরোইজম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তাছাড়া ইবনে আল-হায়থাম (আল হাজেন) এবং আবু রাইয়ান আল-বিরুনি।

    কালাম

    ‘ইলম আল-কালাম আরবি: علم الكلام‎‎ হল দর্শন যা ডায়ালেক্টিকের মাধ্যমে ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব সংক্রান্ত নীতিমালা খোঁজে। আরবি ভাষায় শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “বক্তৃতা”।

    প্রথম বিতর্কের একটি ছিল কাদিরীয় (قدر অর্থ “ভাগ্য”) যারা স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসি ছিল; এবং জাবেরীয় (جبر অর্থ “বল”, “সীমাবদ্ধতা”), যারা ফলতত্ত্বে বিশ্বাস করতো।

    হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীতে ইরাকের বসরা ধর্মতত্ত্বের স্কুলে একটি নতুন আন্দোলনের উদ্ভূত হয়েছিল। বসরা হাসানের একজন ছাত্র ওয়াসিল ইবনে আতা, তিনি একজন মুসলিম কোন পাপ করার কারণে তার বিশ্বাস নষ্ট করে দেয় কিনা তা নিয়ে শিক্ষকের সাথে মতবিরোধ হওয়ার কারণে গ্রুপ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী সভ্যদের রেডিকাল মতামতকে রদবদল করেছিলেন বিশেষ করে কাদিরীয় ও জাবেরীয়দের। এই নতুন স্কুলটিকে মুতাজিলা (ইটাজলা, নিজেকে পৃথক করা) বলা হয়।

    মুতাজিলা সম্প্রদায় একটি কঠোর যুক্তিবাদিতার দিকে তাকিয়েছিলেন ইসলামিক মতবাদ ব্যাখ্যা করার জন্য। ইসলামের একটি যুক্তিসঙ্গত ধর্মতত্ত্ব অনুসরণ করাই ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তবুও তাত্ক্ষণিকভাবে অন্যান্য ইসলামিক দার্শনিকরা মাতুরিদী ও আশারিয়াদের সমালোচনা করেছিলেন। আশারিয়ার পণ্ডিত ফখর আদ-দীন আল রাজি মুতাজিলা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আল-মুতাকাল্লিমিন ফি ‘ইলম আল-কালাম’ লিখেছিলেন।

    পরবর্তীকালে “ধর্মতত্ত্ব” বলতে কেবল কালাম শব্দটি ব্যবহার করতেন, যেমনঃ হৃদয়ের কর্তব্য হল ফেকাহের (জুরিসপ্রুডেন্স) সাথে বিরোধিতা করাই হল শরীরের দায়িত্ব।

    ফালসাফা

    ফালসাফা গ্রীক থেকে নেয়া একটি শব্দ যার অর্থ “দর্শন” (গ্রিক উচ্চারণ ফিলোসফি ফালসাফা হয়ে ওঠেছে)। নবম শতাব্দী থেকে খলিফা আল মা’মুন ও তার উত্তরাধিকারীদের কারণে প্রাচীন গ্রিক দর্শন আরবদের মধ্যে চালু করা হয়েছিল এবং পেরিপ্যাটিক স্কুলটি সক্ষম প্রতিনিধিদের খুঁজে পেতে শুরু করেছিল। তাদের মধ্যে আল-কিন্ডি, আল-ফারাবি, আভিসিনা এবং আভিরোইস প্রমুখ ছিলেন। আরেকটি প্রবণতা বিশুদ্ধতা ব্রাদার্স দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছিল যারা মৌলিক নব্যপ্লাটোনিক এবং নব্যপিথাগোরিয়ান বিশ্ব দর্শন ব্যাখ্যা করতে এরিস্টটলিয়ান ভাষা ব্যবহার করেছিল।

    আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে কয়েকজন চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানী, তাদের বেশ কিছু সংখ্যক প্রচলিত মতের বিরোধী মুসলিম বা অ-মুসলিমরা খ্রিস্টান পশ্চিমে গ্রীক, হিন্দু ও অন্যান্য প্রাক-ইসলামি জ্ঞান প্রেরণে ভূমিকা পালন করেছিল। তারা খ্রিস্টান ইউরোপে এরিস্টটলকে পরিচিত করার জন্য অবদান রেখেছিল। তিনজন ধারণাগত চিন্তাবিদ আল-ফারাবি, আভিসিনা ও আল-কিন্ডি অন্যান্য চিন্তাধারার সাথে এরিস্টটলিয়াজম এবং নিওপ্লাটোনিজমকে যুক্ত করেছিল ইসলামের মধ্য দিয়ে।

    কালাম এবং ফালসাফার মধ্যে কিছু পার্থক্য

    এরিস্টটল ঈশ্বরের ঐক্য প্রদর্শন করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি যে মতামতটি বজায় রেখেছিলেন সেই বিষয়টি ছিল চিরন্তন, এটি অনুসরণ করে যে ঈশ্বর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হতে পারেন না। যাইহোক, তিনি যা বলেছিলেন তার কার্যকারিতা ছিল প্রয়োজন অনুসারে, “প্রথম কারণ” এর যে অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন তা থেকে সৃষ্টির সমস্ত পরিবর্তন ঘটতে থাকে যা ঈশ্বরের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গিকে হ্রাস করে। এরিস্টটলের “ডিভাইন মাইন্ড” আসলে একটি সৃষ্টিগত নীতি হতে পারে। অ্যারিস্টলীয়ানিজমের মতে, মানুষের আত্মা হল কেবল মানুষের সুবিন্যস্ত ফর্ম, এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বিষয় যা জীবন্ত মানুষের দেহ তৈরি করে। এটা বোঝায় যে মানুষের দেহ ছাড়া আত্মার অস্তিত্ব চিন্তা করা অবান্তর। প্রকৃতপক্ষে, এরিস্টটল লিখেছেন, “এটা স্পষ্ট যে আত্মা অথবা অন্তত এর কিছু অংশ (যদি বিভেদ করা যায়) শরীর থেকে পৃথক করা যায় না। […] এবং এইভাবে যারা মনে করেন যে শরীর ছাড়া আত্মার অস্তিত্ব নেই তাদের ধারণা সঠিক। ” এরিস্টটলীয়ানিজমের মতে অন্তত একটি মনস্তাত্ত্বিক শক্তি বা সক্রিয় বুদ্ধি শরীরের থেকে পৃথক থাকতে পারে। অধিকন্তু, অনেক ব্যাখ্যা অনুযায়ী সক্রিয় বুদ্ধি হচ্ছে একটি অতিমানবীয় সত্তা যা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে এবং মানুষের মনকে আলোকিত করে, এটি মানুষের আত্মার কোন একক অংশ নয়। সুতরাং, এরিস্টটলের তত্ত্বগুলি পৃথক মানব আত্মার অমরত্বকে অস্বীকার করে বলে মনে হচ্ছে।

    কেননা মুতাকাল্লিমুনের অনুসারীরা বস্তুর সৃষ্টিকে তুলে ধরার জন্য দর্শনের একটি ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা ডেমোক্রিটাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পরমাণুর তত্ত্বটি গ্রহণ করেছিল। তারা শিক্ষা দিয়েছিল যে পরমাণুগুলির পরিমাণ বা বর্ধিত রূপ নেই। মূলত পরমাণু ঈশ্বর দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এবং উপলক্ষ হিসাবে যা প্রয়োজন বলে মনে হয় তা তৈরি করা হয়। দেহ জীবন ফিরে পায় বা মারা যায় পরমাণুর একীভূতকরণের মাধ্যমে। কিন্তু এই তত্ত্ব বস্তুর সৃষ্টিতে দর্শনের আপত্তিকে মুছে ফেলেনি।

    প্রকৃতপক্ষে, যদি মনে করা হয় যে ঈশ্বর তাঁর “ইচ্ছার” দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন নির্দিষ্ট বস্তুর জন্য, এটি স্বীকার করা আবশ্যক যে তিনি তাঁর ইচ্ছা সম্পন্ন করার আগে বা তাঁর বস্তু অর্জনের পূর্বে অসিদ্ধ ছিলেন। এই অসুবিধা দূর করার জন্য মুতাকাল্লিমিনরা পরমাণুর তত্ত্বকে সময় পর্যন্ত প্রসারিত করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, স্থানটি পরমাণুর গঠন এবং ভ্যাকুয়ামের মতোই সময়ও একইভাবে ছোট অদৃশ্য মুহূর্তগুলির দ্বারা গঠন করা হয়েছে। বিশ্বের প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত মতবাদ একবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাদের জন্য এটি সহজ বিষয় ছিল সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রদর্শন করা এবং ঈশ্বর যে অনন্য, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ তা মেনে নেয়া।

    শাস্ত্রীয় কালের শেষ

    দ্বাদশ শতাব্দীতে কালাম দার্শনিক ও গোঁড়াদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল চ্যাম্পিয়নদের অভাবের জন্য তা নষ্ট করা হয়েছিল। একই সময়ে ফালসাফা গুরুতর জটিল পরীক্ষার অধীনে এসেছিল। সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ আল-গাজ্জালী থেকে এসেছিল যার কাজ তাহাফাত আল-ফালাসিফা (দার্শনিকদের অসঙ্গতি) পেরিপ্যাটেটিক স্কুলের প্রধান আর্গুমেন্টকে আক্রমণ করেছিল।

    ইবনে রুশদ মাইমোনিদস এর সমসাময়িক ইসলামি পেরিপ্যাটেটিকের শেষ একজন ছিলেন যিনি আল-গাজ্জালীর সমালোচনা বিরুদ্ধে ফালসাফার মতামত রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। ইবনে রুশদের তত্ত্বগুলি মূলত ইবনে বাজ্জাজ ও ইবনে তুফায়েলের মতামত থেকে ভিন্ন নয়, যারা শুধুমাত্র আভিসিনা ও আল-ফারাবী শিক্ষার অনুসরণ করে। সমস্ত ইসলামিক পেরিপ্যাটিক্টিক্সের মতই ইবনে রুশদ মহাবিশ্বের বুদ্ধিমত্তা এবং বিশ্বজগতকে নিয়ে অনুমানকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে গতি মহাবিশ্বের সমস্ত অংশে স্থানান্তরিত হয় যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ-অনুমান হিসেবে খ্যাত যা আরবি দার্শনিকদের মনের মধ্যে বিশুদ্ধ শক্তির এরিস্টটলের মতবাদ এবং শাশ্বত বিষয়গুলির মধ্যে জড়িত দ্বৈতবাদের সাথে সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে।

    কিন্তু আল ফারাবী, আভিসিনা এবং অন্যান্য ফার্সি এবং মুসলিম দার্শনিকরা যখন ঐতিহ্যগত বিশ্বাসের উপর ছড়িয়ে পড়া বিষয়গুলির উপরে কথা বলতে চাচ্ছিলেন তখন ইবনে রুশদ পূর্ণ নিবিড়তা ও চাপের মধ্যে আনন্দে আনন্দিত ছিলেন। এভাবে তিনি বলেছিলেন, “কেবল বস্তু শাশ্বত নয় গঠন বস্তুর সাথে সহজাত। অন্যথায়, এটি একটি প্রাক্তন নিহিলো” (মুনক, “ম্যাল্যাঞ্জেস,” পৃঃ ৪৪৪)। এই তত্ত্ব অনুযায়ী এই বিশ্বের অস্তিত্ব শুধুমাত্র একটি সম্ভাবনা নয় যা আভিসিনা ঘোষণা করেছিলেন এটি একটি অপরিহার্যতা ও আছে।

    যুক্তিবিজ্ঞান

    প্রারম্ভিক ইসলামিক দর্শনে যুক্তিবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইসলামি আইন আর্গুমেন্টের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে অপরিসীম যা কালামের মধ্যে যুক্তিবিজ্ঞানকে একটি অপরিহার্য অভিগমন হিসাবে দেখা হয়েছে, কিন্তু এই অভিগমন পরে মুতাজিলা দার্শনিকদেরর উত্থানের সঙ্গে গ্রিক দর্শনের এবং হেলেনিক দর্শনের ধারণা দ্বারা আলাদা করা হয়েছিল, যারা এরিস্টটলের ন্যায়শাস্ত্রকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিল। হেলেনিসটিক কাজগুলি ইসলামিক দার্শনিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল যারা মধ্যযুগীয় ইউরোপে এরিস্টটলের যুক্তিবিজ্ঞানের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাছাড়া ইবনে রুশদের ন্যায়শাস্ত্র এখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল । আল-ফারাবি, আভিসিনা, আল-গাজ্জালী এবং অন্যান্য মুসলিম যুক্তিবিদরা যারা প্রায়ই এরিস্টটলীয় মতকে সমালোচনা ও সংশোধন করার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব যুক্তি গঠন করেছিলেন, এছাড়াও তাঁরা রেনেসাঁর সময়ে ইউরোপীয় যুক্তিগুলির পরবর্তী উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।

    দর্শনশাস্ত্রের রুটলেজ এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে:

    “ইসলামি দার্শনিকগণের জন্য যুক্তিবিজ্ঞান শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রথা ও তাদের বৈধতা নিয়ে গবেষণা করে না তার সাথে ভাষা ও এমনকি ইতিহাসবিদ্যা এবং আধ্যাত্মিকতার দর্শনের উপাদানও অন্তর্ভুক্ত আছে। আরবি ব্যাকরণবিদদের সাথে আঞ্চলিক বিরোধের কারণে ইসলামিক দার্শনিকরা খুব আগ্রহী ছিলেন যুক্তি এবং ভাষা মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য এবং তারা যুক্তি এবং বক্তৃতা সম্পর্কিত বিষয় এবং যুক্তিবিজ্ঞান এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক আলোচনায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিলেন। আনুষ্ঠানিক লজিক্যাল বিশ্লেষণের এলাকা, তারা তত্ত্বের শর্তসমূহকে এরিস্টটলের শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী আরও বৃদ্ধি করেছিলেন। তারা এরিস্টটলের ধারণানুযায়ি অনুমানমূলক ফর্মকে যা সব যুক্তিপূর্ণ বিতর্ককে হ্রাস করতে পারে বলে বিবেচনা করেছিল এবং তারা অনুমানমূলক তত্ত্বকে যুক্তিগত ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে গণ্য করেছিলেন। প্রধান ইসলামিক এরিস্টটলীয়ানদের বেশিরভাগই পোয়েটিকসকে একটি অনুমানমূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। “

    মুসলিম যুক্তিবাদীদের দ্বারা গঠিত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নগুলির মধ্যে “আভিসিনিয়ান লজিক” এর উন্নয়নকে এরিস্টটলীয় যুক্তিবিজ্ঞানের প্রতিস্থাপন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আভিসিনার যুক্তিব্যবস্থাকে হাইপোথেটিকাল সিলোজিজম প্রবর্তনের জন্য দায়ী মনে করা হয় যা সাময়িক মডাল লজিক এবং ইনডাক্টিভ লজিক নামেও পরিচিত।

    ইসলামি আইন এবং ধর্মতত্ত্বের মধ্যে যুক্তিবিজ্ঞান

    এরিস্টটলের কাজগুলি আরবিতে অনুবাদ করার আগে কিয়াস পদ্ধতির সাথে সপ্তম শতাব্দী থেকে ফিকাহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র), শরিয়া (ইসলামি আইন) এবং কালাম (ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব) এর সাথে প্রস্তাবনামূলক যুক্তি, প্রগতিশীল যুক্তি এবং নিরপেক্ষ অনুমানমূলক যুক্তি চালু হয়েছিল। ইসলামি গোল্ডেন এজের পরে ইসলামিক দার্শনিক, যুক্তিবিদ ও ধর্মতত্ত্ববিদদের মধ্যে বিতর্ক ছিল কিয়াস শব্দের সাথে অদ্ভুত যুক্তি, প্রগতিশীল যুক্তি বা সুস্পষ্ট বাক্যগঠন নিয়ে। কিছু ইসলামি পণ্ডিত যুক্তি দেন যে কিয়াস বলতে প্রস্তাবনামূলক যুক্তিকে বোঝায়। ইবনে হাজম (৯৯৪-০০৬৪) মতানৈক্য প্রদর্শন করেছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে কিয়াস প্রস্তাবনামূলক যুক্তি না কিন্তু সত্যিকার অর্থে অনুমানমূলক যুক্তি হল একটি বাস্তবজ্ঞান এবং সাদৃশ্যমূলক যুক্তি হল একটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত জ্ঞান। আল-গাজ্জালী (১০৫৮-১১১১; এবং আধুনিক যুগে আবু মুহাম্মদ আসেম আল-মাকদিসি) যুক্তি দিয়েছিলেন যে, কিয়াস আক্ষরিক অর্থে একটি বাস্তব এবং সুস্পষ্ট বক্তব্যের সমতাপূর্ণ যুক্তি উল্লেখ করে। এ সময় অন্যান্য ইসলামি পণ্ডিতরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে কিয়াস শব্দটি দ্বারা সাদৃশ্যমূলক যুক্তি এবং অনুমানমূলক যুক্তি উভয়ই বোঝায়।

    এরিস্টটলীয় যুক্তি

    যুক্তিবিজ্ঞানের প্রথম মূল আরবি রচনাগুলি আল-কিন্দি (আলকিন্ডস) (805-873) দ্বারা উৎপাদিত হয়েছিল যিনি তার সময় পর্যন্ত পূর্বের যুক্তিগুলির উপর একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন। অ-এরিস্টটলীয় উপাদানের সঙ্গে যুক্তিবিজ্ঞানের প্রথম রচনাগুলি আল-ফারাবি (আল-ফারাবি) (৮৭৩-৯৫০) দ্বারা উৎপাদিত হয়েছিল, যিনি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিষয়গুলির বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন যেমন সংখ্যা ও বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক, যুক্তি ও ব্যাকরণের মধ্যে সম্পর্ক এবং অ-এরিস্টটলীয় ফর্মের মধ্যে সম্পর্ক। তিনি যুক্তিবিজ্ঞানকে দুটি পৃথক দলের শ্রেণীভুক্ত করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন, প্রথমটি হচ্ছে “ধারণা” এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে “প্রমাণ”।

    ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৯৮), এরিস্টটলীয় যুক্তিবিজ্ঞানের সবচেয়ে সুস্পষ্ট মন্তব্যের লেখক ছিলেন এবং তিনি ছিলেন আল-আন্দালুসের শেষ প্রধান যুক্তিবিদ।

    আভিসিনিয়ান যুক্তি

    আভিসিনিয়ান (৯৮০-১০৩৭) অ্যারিস্টলীয় যুক্তিবিজ্ঞানের বিকল্প হিসেবে “আভিসিনিয়ান লজিক” নামে পরিচিত লজিকের নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। দ্বাদশ শতকের মধ্যে, আভিসিনার যুক্তিবিজ্ঞান ইসলামি বিশ্বে যুক্তিবিজ্ঞানের আধিপত্য ব্যবস্থা হিসেবে এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যার প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।

    এরিস্টটলীয় যুক্তির প্রথম সমালোচনা আভিসিনা (৯৮০-১০৩৭) দ্বারা লিখিত হয়েছিল, যিনি মন্তব্যের পরিবর্তে যুক্তিবিজ্ঞানের উপর স্বাধীন সংকলন উৎপাদন করেছিলেন। এ সময় তিনি এরিস্টটলেরর প্রতি আত্মনিয়োগের জন্য বাগদাদের লজিক্যাল স্কুলের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি সংজ্ঞা এবং শ্রেণিবিভাগের তত্ত্ব এবং নির্ণায়ক প্রস্তাবের পূর্বাভাসের পরিমাপের অনুসন্ধান করেছিলেন এবং “সাময়িক মোডাল” অনুমানমূলক তত্ত্বের- এর উপর একটি মূল তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন। সংশোধনমূলক বিষয়গুলো হল “সব সময়ে”, “বেশিরভাগ সময়ে”, এবং “কিছু সময়ের মধ্যে”।

    আভিসিনা (৯৮০-১০৩৭) প্রায়ই দর্শনশাস্ত্রের প্রস্তাবনামূলক যুক্তির উপর নির্ভরশীল ছিলেন, তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। ইবনে সিনা প্রস্তাবনামূলক যুক্তিবিজ্ঞানের উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন যা তিনি সিন্ড্রোমের ধারণাকে ব্যবহার করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখায় তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি চুক্তির পদ্ধতি, পার্থক্য এবং সহানুভূতিশীল বৈষম্যের কথা বর্ণনা করেছিলেন যা প্রস্তাবনামূলক যুক্তিবিদ্যা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে জটিল ছিল।

    ইবনে হাজম (৯৯৪-১০৬৪) স্কোপ অফ দ্য লজিক লিখেছিলেন, যেখানে তিনি জ্ঞানের উৎস হিসেবে ইন্দ্রিয়ের ধারণার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। আল-গাজ্জালী (আল-জাজেল) (১০৫৮-১১১১) ধর্মতত্ত্বে যুক্তিবিজ্ঞান ব্যবহারের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যা কালামে আভিসিনিয়ান যুক্তি ব্যবহার করে। আল-গাজ্জালী এর লজিকাল উন্নতি সত্ত্বেও দ্বাদশ শতকের আশারি স্কুলটি ধীরে ধীরে ইসলামিক জগতের বেশিরভাগ লজিক সংক্রান্ত মূল কাজকে চেঁপে ধরেছিল, যদিও পারসিয়া ও লেভান্টের মতো কিছু ইসলামি অঞ্চলে যুক্তিবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা অব্যাহত ছিল।

    ফখর আল-দীন আল-রাজি (১১৪৯) এরিস্টটলের “প্রথম পরিসংখ্যান” এর সমালোচনা করেছিলেন এবং প্রস্তাবনামূলক যুক্তিবিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধন করেছিলেন এবং জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩) দ্বারা উদ্দীপিত প্রস্তাবনামূলক যুক্তিবিজ্ঞানের পদ্ধতিতে প্ররোচনামূলক যুক্তি গঠন প্রণয়ন করেছিলেন। গ্রিক যুক্তিবিন্যাসের পদ্ধতিগত পুনরাবৃত্তি শাহাব আল-দিন সোহরাওয়ার্দী (1155-1191) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইলুমিনিস্ট স্কুল দ্বারা লিখিত হয়েছিল, যিনি “নিছক প্রয়োজনীয়তার” ধারণাটি গড়ে তুলেছিলেন, যা লজিক্যাল দার্শনিক মতামতের ইতিহাসে প্রস্তাবনামূলক যুক্তিবিদ্যার পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল।

    অধিবিদ্যা

    ঈশ্বরের অস্তিত্বের জন্য আভিসিনা এর প্রমাণ ছিল প্রথম তাত্ত্বিক যুক্তি যা তিনি হিলিং বইয়ের অধিবিদ্যা বিভাগে প্রস্তাব করেছিলেন। এই প্রারম্ভিক প্রমাণ পদ্ধতি ব্যবহার করার এটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা যা এককভাবে স্বজ্ঞা এবং কারণ ব্যবহার করে। আভিসিনার ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ ছিল অনন্য যাকে মহাজাগতিক যুক্তি এবং তাত্ত্বিক যুক্তি উভয় হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।

    সারাংশ এবং অস্তিত্বের মধ্যে পার্থক্য

    ইসলামি দর্শনশাস্ত্রের সাথে ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের একীভূতকরণ ঘটেছিল যা এরিস্টটলীয়জমের তুলনায় স্পষ্টতই আলাদা। যেখানে অস্তিত্ব সাপেক্ষ এবং দুর্ঘটনার ডোমেন হিসাবে পরিচিত, সারাংশ দুর্ঘটনার বাইরের বিষয়কে সহ্য করে। এই প্রথম আভিসিনার দ্বারা অধিবিদ্যা বর্ণিত হয়েছে, তিনি নিজেও আল ফারাবি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

    কিছু প্রাচ্যবিদরা (বা বিশেষ করে থমিস্ট স্কলারশিপের দ্বারা প্রভাবিত) যুক্তি দেন যে আভিসিনাই প্রথম অস্তিত্বকে(ওজুদ) একটি দুর্ঘটনা হিসাবে যা সারাংশ (মাহিয়া) মধ্যে ঘটে। তবে তত্ত্ববিদ্যার এই দৃষ্টিভঙ্গিটি সবচেয়ে কেন্দ্রীয় নয় যে পার্থক্যটি আভিসিনা সারাংশ এবং অস্তিত্বের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অতএব, আভিসিনাকে অস্তিত্বের ধারণার প্রবক্তা বলা চলেনা, যে অস্তিত্বকে (আল-উজুদ) যখন প্রয়োজন নামক পদ দিয়ে “প্রয়োজনীয় অস্তিত্ব নিজের জন্যই”(ওয়াজিব আল-উজুদ বি-ধাতিহি), যা বর্ণনা বা সংজ্ঞা ব্যতীত এবং বিশেষত অজ্ঞতা বা সারমর্ম ছাড়া (লা মাহিয়া লাহু) হিসাবে উল্লেখ করে। ফলস্বরূপ, আভিসিনার তত্ত্ববিদ্যা ‘অস্তিত্ববাদী’ হয় যখন এটি প্রয়োনীয়তা (ওজুদ) এর সাথে নিবন্ধীকরণ করা হয় (যদিও এটি “দৈবঘটনার-কোয়া-সম্ভাবনা” (“ইমকান বা মুমকিন আল-ওয়াজুদ, যার অর্থ “দৈবঘটনা”)।

    পুনরুত্থান

    ইবনে আল নাফিস ধর্মভিত্তিক অটোডিড্যাক্টাস “ইসলাম ও মুসলমানদের নীতিমালার” একটি প্রতিরক্ষা হিসাবে লিখেছেন যেখানে আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল যেমন- নবী, ধর্মীয় আইন, শরীরের পুনরুত্থান এবং বিশ্বজগতের রূপান্তর এর মিশনের উপর । বইটি হাদিস কর্পাসকে প্রমাণের ফর্ম হিসাবে প্ররোচক যুক্তি এবং উপাদান উভয় ব্যবহার করে শারীরিক পুনরুত্থান এবং মানব আত্মার অমরত্বের জন্য যৌক্তিক আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে ইসলামি পণ্ডিতরা এই কাজটিকে আধ্যাত্মিক পুনরুত্থানের (আধ্যাত্মিক পুনরুত্থানের বিপরীত) আভিসিনার আধ্যাত্মিক যুক্তিবাদের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখেছিল যা আগে আল-গাজ্জালী দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।

    আত্মা এবং আত্মা

    মুসলিম চিকিৎসক-দার্শনিক, আভিসিনা ও ইবনে আল-নাফিস আত্মার উপর নিজেদের তত্ত্ব গড়ে তুলেছেন। তারা উভয়ে আত্মা এবং আত্মার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছিলেন, এবং বিশেষ করে আত্মার প্রকৃতি নেভিগেশনের উপর আভিসিনিয়ান মতবাদ পণ্ডিতদের মধ্যে প্রভাবশালী ছিল। আত্মা সম্পর্কে আভিসিনার কিছু মতামত ছিল ধারণার অন্তর্ভুক্ত, যেমন আত্মার অমরত্ব হল তার প্রকৃতির পরিণাম এবং এটি পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে নয়। “দ্য টেন ইন্টিলেক্টস” এর তত্ত্বে তিনি মানব আত্মাকে দশম ও চূড়ান্ত বুদ্ধি হিসেবে দেখেছিলেন।

    ইবনে সিনা সাধারণত হার্ট থেকে উদ্ভূত আত্মার এরিস্টটলের ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন, অন্যদিকে ইবনে আল নাফিস এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং পরিবর্তে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আত্মা “সম্পূর্ণভাবে দেহের সাথে সম্পর্কিত এবং এক বা কয়েকটি অঙ্গ নয়।” তিনি এরিস্টটলের ধারণার আরও সমালোচনা করেন যে প্রতিটি অনন্য আত্মার জন্য একটি অনন্য উৎসের অস্তিত্ব প্রয়োজন, এই ক্ষেত্রে তিনি হৃদয়ের কথা বলেছিলেন। ইবনে আল-নাফিস এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, “আত্মা মূলত আত্মার সাথে অথবা কোন অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং সমগ্র প্রকৃতি যার আত্মাটি সেই আত্মা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত” যা মানুষ ‘আমি’ বলার দ্বারা বুঝায়।

    চিন্তা গবেষণা

    আভিসিনাকে যখন হামাদানের কাছে ফারদাজন দুর্গে কারাবদ্ধ করা হয়েছিল তখন তিনি তাঁর বিখ্যাত “ফ্লোটিং ম্যান” চিন্তাধারা রচনা করেছিলেন যা মানুষের আত্ম সচেতনতা এবং আত্মার উল্লেখযোগ্যতা প্রদর্শন করে। তিনি জীবিত মানব বুদ্ধিমত্তার কথা উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে সক্রিয় বুদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন যা তিনি হাইপোস্ট্যাসিস বলে বিশ্বাস করতেন, যার দ্বারা ঈশ্বর মানুষের মনের সাথে সত্যের যোগাযোগ ঘটান এবং প্রকৃতির নির্দেশ ও সুবিবেচনা সম্বন্ধে নির্দেশ দেন। তাঁর “ফ্লোটিং ম্যান” মতবাদ তার পাঠকদেরকে বলে যে তাদের নিজেদেরকে বাতাসে স্থগিত কল্পনা করতে পারে যা সমস্ত ইন্দ্রিয় থেকে বিচ্ছিন্ন, এমনকি যা তাদের নিজস্ব দেহের সাথে কোন সংবেদী যোগাযোগও নেই। তিনি যুক্তি দেন যে, এই পরিস্থিতিতে, একজন ব্যক্তি স্ব-চেতনা সম্পন্ন থাকবে। এভাবে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আত্মার ধারণা যৌক্তিকভাবে কোন বস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়, তবে ঐ আত্মাকে আপেক্ষিক পদে দেখা যায় না, তবে একে একটি প্রাথমিক পদার্থ হিসাবে দেখা যেতে পারে।

    এই যুক্তিটি পরে রেন ডেসকার্টেস দ্বারা পরিশুদ্ধ এবং সরলীকৃত করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি সমস্ত বহিরাগত জিনিসগুলির ধারণা থেকে বিমূর্ত হতে পারি, কিন্তু নিজের চেতনার অনুভূতি থেকে নয়।”

    সময়

    প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের বিপরীতে যারা বিশ্বাস করতেন যে মহাবিশ্বের শুরুতে কোন অসীম অতীত ছিল না, মধ্যযুগীয় দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদরা মহাবিশ্বের শুরুতে একটি সসীম অতীত ছিল সেই ধারণাকে বিকশিত করেছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি তিন আব্রাহামিক ধর্মের দ্বারা প্রচারিত সৃষ্টিতত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল: যেমন- ইহুদীধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম এবং ইসলাম। খ্রিস্টান দার্শনিক জন ফিলোপোনস প্রাচীন গ্রিক ধারণা অসীম অতীতের বিরুদ্ধে প্রথম যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। তবে, এই অসীম অতীতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উন্নত মধ্যযুগীয় আর্গুমেন্ট ইসলামিক দার্শনিক আল-কিন্ডি (আলকিন্দোস); ইহুদি দার্শনিক সাদিয়া গাওন; এবং ইসলামি ধর্মতত্ত্ববিদ আল-গাজ্জালী (আলগাজেল) দ্বারা বিকশিত হয়েছিল। তারা অসীম অতীতের বিরুদ্ধে দুটি যৌক্তিক আর্গুমেন্ট উন্নত করেছিলেন, প্রথমটি হচ্ছে ” প্রকৃত অসীম অস্তিত্বের অসম্ভবতা থেকে যুক্তি”, যা বলে যে:

    ” প্রকৃত অসীমের কোন অস্তিত্ব নেই।” “ঘটনার একটি অসীম আঞ্চলিক প্রত্যাবর্তন একটি প্রকৃত অসীমকে নির্দেশ করে।” “∴ একটি অসীম আভ্যন্তরীণ ঘটনার প্রত্যাবর্তনের কোন অস্তিত্ব নেই।”

    দ্বিতীয় যুক্তিটি হল, “ক্রমাগত যোগসূত্র দ্বারা একটি প্রকৃত অসীমতা সম্পন্ন করার অসম্ভবতা থেকে যুক্তি”, বলেছে যে:

    “একটি প্রকৃত অসীম ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা সম্পন্ন করা যাবে না।” “অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক ধারা ধারাবাহিকভাবে যোগ করা হয়েছে।” “∴ অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক ধারা একটি প্রকৃত অসীম হতে পারে না।” উভয় আর্গুমেন্ট পরে খ্রিস্টান দার্শনিক এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয় যুক্তিটি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে যখন এটি ইমানুয়েল কান্ট দ্বারা সময় সম্পর্কিত প্রথম সূত্রের থিসিস দ্বারা গৃহীত হয়েছিল।

    সত্য

    অধিবিদ্যার মধ্যে আভিসিনা (ইবনে সিনা) সত্যকে সংজ্ঞায়িত করেছেন:

    মনের অনুরূপ তাই যা বাইরের সাথে যোগাযোগ আছে।

    আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে তার সত্যের সংজ্ঞা বর্ধিত করেছেন:

    একটি জিনিসের সত্য হল প্রতিটি জিনিসের একটি সম্পত্তি যেটি তার নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এমন কিছু।

    টমাস অ্যাকুইনাস তার কোডলিবেটার মধ্যে আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে সত্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এই একটি ভাষ্য লিখেছেন, যেমন নিম্নরূপ ব্যাখ্যা:

    প্রতিটি জিনিসের সত্যতা হল যেমনটি আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে বলেছিলেন, এটি তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন সম্পত্তি সম্পত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই তাকে সত্য স্বর্ণ বলা হয় যা সঠিকভাবে স্বর্ণ হচ্ছে এবং এটি প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণের প্রকৃতি অর্জন করে। এখন প্রতিটি জিনিস সঠিকভাবে কিছু প্রকৃতির কারণেই এটি প্রকৃতির সম্পূর্ণ ফর্মের অধীনে দাঁড়ায়, আর এটাই হচ্ছে প্রকৃতি ও প্রকৃতির প্রজাতি।

    প্রারম্ভিক ইসলামি রাজনৈতিক দর্শন বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে একটি অনিবার্য সংযোগকে জোর দিয়েছিল এবং সত্য অনুসন্ধানের জন্য ইজতেহাদের প্রক্রিয়াটির উপর জোর দিয়েছিল।

    ইবনে আল-হায়থাম (আল-হাজেন) যুক্তি দিয়েছেন যে প্রকৃতি সম্পর্কে সত্য আবিষ্কার করার জন্য মানুষের মতামত এবং ত্রুটিকে দূর করতে এবং মহাবিশ্বকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন। টলেমীর বিরুদ্ধে তার অপরিয়াস এ ইবনে আল-হায়থাম সত্যের উপর নিম্নলিখিত মন্তব্য লিখেছিলেন:

    সত্য নিজেই নিজের সন্ধান করে [সে সতর্ক করে] এবং অনিশ্চয়তায় লিপ্ত হয় [এবং বৈজ্ঞানিক কর্তৃপক্ষ (যেমন টলেমী, যিনি প্রচুর সম্মানিত) ত্রুটি থেকে মুক্ত নয় …
    অতএব, সত্যের সন্ধানকারী এমন ব্যক্তি নয় যিনি পূর্ববর্তীদের রচনা অধ্যয়ন করেন এবং তাঁর স্বাভাবিক প্রকৃতির অনুসরণ করেন, তাদের উপর নির্ভর করেন, বরং যে ব্যক্তি তাদের বিশ্বাসকে সন্দেহ করে এবং তাদের কাছ থেকে যে-বিষয়গুলি সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন করে, যারা যুক্তি এবং বিক্ষোভ প্রকাশ করে, এবং মানুষের কথা বলেনা যার প্রকৃতি সব অসিদ্ধতা এবং অভাব থেকে নিখুঁত নয়। এইভাবে যিনি বিজ্ঞানীদের লেখার গবেষণা তদন্ত করেন, যদি সত্য শেখা তার লক্ষ্য হয়, তিনি নিজে যা পাঠ করেন তা সবাইকে তার শত্রু বানানোর প্রস্তুত করে এবং তার বিষয়বস্তুকে মূল এবং মার্জিনে প্রয়োগ করার জন্য প্রতিটি দিক থেকে তাকে আক্রমণ করে। তার নিজেই নিজেকে সন্দেহ করা উচিত যাতে সে তার সমালোচনামূলক পরীক্ষা চালায়। তবে প্রতিহিংসা বা বিনয়ী হতে দূরে থাকতে পারে।
    আমি ক্রমাগত জ্ঞান এবং সত্য অনুসন্ধান করেছিলাম এবং এটি আমার বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে ঈশ্বরের কাছে উজ্জ্বলতা এবং নিকটবর্তীতা লাভের জন্য সত্য ও জ্ঞানের সন্ধানের চেয়ে আর ভাল কোন উপায় আমার জানা নেই।

    স্বাধীন ইচ্ছা এবং পূর্বনির্ধারিত গন্তব্য

    স্বাধীন ইচ্ছা বনাম পূর্বনির্ধারিত গন্তব্য সংক্রান্ত বিষয়টি হল “শাস্ত্রীয় ইসলামিক চিন্তাধারার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়”। ইসলামি বিশ্বাসের ভিত্তিতে পূর্বনির্ধারিত গন্তব্য অথবা ঐশ্বরিক পূর্বানুমতি (আল-ক্বাদ্বা ওয়া আল-কদর) অনুযায়ী, ঈশ্বরের পূর্ণ জ্ঞান এবং নিয়ন্ত্রণ আছে সব কিছুর উপর যা সংগঠিত হয়। এই বিষয়টি কোরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেমন “বলুন: আমাদের কাছে আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা ছাড়া আমাদের আর কিছুই হবে না: তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা” … মুসলমানদের জন্য সমস্ত পৃথিবীতে যা ঘটেছে ভাল বা খারাপ সব কিছুই পূর্বে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই ঘটতে পারেনা। মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী যদিও অনুষ্ঠানগুলি পূর্বনির্ধারিত তবু মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারে আছে, যেমন সে সঠিক ও ভুল নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে এবং এভাবে তার কর্মের জন্য সে দায়ী। ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী যা ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে সব কিছুই আগে থেকেই আল-লাউ আল-মাহফুজের “সংরক্ষিত ট্যাবলেট” এ লেখা আছে।

    প্রাকৃতিক দর্শন

    পরমাণুবাদ

    পারমাণবিক দর্শনগুলি ইসলামি দর্শনের প্রথম দিকে পাওয়া যায় যা গ্রিক ও ভারতীয় ধারণাগুলির একটি সংশ্লেষণ উপস্থাপন করে। গ্রিক এবং ভারতীয় উভয় সংস্করণের মতোই ইসলামি পরমাণুবাদের মধ্যে একটি চার্জিং বিষয় ছিল যা প্রচলিত ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তবুও এটি এমন একটি উর্বর ও নমনীয় ধারণা ছিল যে গ্রীস ও ভারতের মতোই এটি ইসলামিক চিন্তাধারাকেও প্রভাবিত করেছিল।

    দার্শনিক আল-গাজ্জালী (১০৫৮-১১১১) এর কাজ ইসলামি পরমাণুবাদের সবচেয়ে সফল ফর্ম ছিল যা আশারি দর্শনের স্কুল নামে পরিচিত। আশারি পরমাণুবাদে, পরমাণু শুধুমাত্র চিরস্থায়ী এবং অস্তিত্বের বস্তুগত জিনিস, এবং বিশ্বের অন্য সব “ঘটনাক্রমে” যার অর্থ হল যা শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। অনুভূতি ব্যতীত অন্য কিছুই কোন ঘটনাক্রমের কারণে হতে পারে না। প্রচলিত ঘটনা প্রাকৃতিক শারীরিক কারণের বিষয় নয়, তবে তারা ঈশ্বরের ক্রমাগত হস্তক্ষেপের সরাসরি ফলাফল যার কোন কিছুই তা ইচ্ছা ছাড়া ঘটতে পারে না। এইভাবে প্রকৃতি ঈশ্বরের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল যা অন্যান্য আশারিয়া ইসলামি ধারণার সাথে অথবা এর অভাবের সাথে মিলিত হয়।

    ইসলামের অন্যান্য ঐতিহ্যগুলি আশারিয়া সম্প্রদায়ের পরমাণুবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং অনেক গ্রীক গ্রন্থে বিশেষ করে এরিস্টটলের কথা প্রকাশ করেছিল। স্পেনের দার্শনিকদের একটি সক্রিয় স্কুল বিশিষ্ট ভাষ্যকার ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৯৮ খ্রিস্টাব্দ) সহ আল-গাজ্জালীর চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং এরিস্টটলের চিন্তাকে ব্যাপক মূল্যায়ন করা হয়েছিল। ইবনে রুশদ এরিস্টটলের অধিকাংশ কাজে বিশদ মন্তব্য করেছিলেন এবং তার মন্তব্য পরে ইহুদি এবং খ্রিস্টান পণ্ডিতদের চিন্তার মধ্যে এরিস্টটলের এর ব্যাখ্যা গাইড হিসাবে কাজ করেছিল।

    সৃষ্টিতত্ত্ব

    কোরআন (৬১০-৬২৩) এ অনেকগুলি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে কিছু আয়াত রয়েছে যা আধুনিক লেখকগণ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং সম্ভবত বিগ ব্যাং তত্ত্বের সাথে মিল আছে বলে মনে করেন:

    যারা অবিশ্বাস পোষণ করে, তারা কি দেখে না যে আসমান ও জমিন এক সত্তা ছিল, অতঃপর আমি তাদেরকে পৃথক করে দিলাম? আর আসমান সমূহকে আমাদের হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি এবং আমরা তাদেরকে প্রসারিত করি। – কোরআন ৫১:৪৭

    প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকদের বিপরীতে যারা বিশ্বাস করতেন যে মহাবিশ্বের শুরুতে কোন অসীম অতীত ছিল না, মধ্যযুগীয় দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদরা মহাবিশ্বের শুরুতে একটি সসীম অতীত ছিল সেই ধারণাকে বিকশিত করেছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি তিন আব্রাহামিক ধর্মের দ্বারা প্রচারিত সৃষ্টিতত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল: যেমন- ইহুদীধর্ম, খ্রিস্টান এবং ইসলাম। খ্রিস্টান দার্শনিক জন ফিলোপোনস প্রাচীন গ্রিক ধারণা অসীম অতীতের বিরুদ্ধে প্রথম যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। তবে, এই অসীম অতীতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উন্নত মধ্যযুগীয় আর্গুমেন্ট ইসলামিক দার্শনিক আল-কিন্ডি (আলকিন্দোস); ইহুদি দার্শনিক সাদিয়া গাওন (সাদিয়া বেন জোসেফ); এবং ইসলামি ধর্মতত্ত্ববিদ আল-গাজ্জালী (আলগাজেল) দ্বারা বিকশিত হয়েছিল। তারা অসীম অতীতের বিরুদ্ধে দুটি যৌক্তিক আর্গুমেন্ট উন্নত করেছিলেন, প্রথমটি হচ্ছে ” প্রকৃত অসীম অস্তিত্বের অসম্ভবতা থেকে যুক্তি”, যা বলে যে:

    “প্রকৃত অসীমের কোন অস্তিত্ব নেই।” “ঘটনার একটি অসীম আঞ্চলিক প্রত্যাবর্তন একটি প্রকৃত অসীমকে নির্দেশ করে।” “∴ একটি অসীম আভ্যন্তরীণ ঘটনার প্রত্যাবর্তনের কোন অস্তিত্ব নেই।”

    দ্বিতীয় যুক্তিটি হল, “ক্রমাগত যোগসূত্র দ্বারা একটি প্রকৃত অসীমতা সম্পন্ন করার অসম্ভবতা থেকে যুক্তি”, বলেছে যে:

    একটি প্রকৃত অসীম ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা সম্পন্ন করা যাবে না।” “অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক ধারা ধারাবাহিকভাবে যোগ করা হয়েছে।” “∴ অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক ধারা একটি প্রকৃত অসীম হতে পারে না।

    উভয় আর্গুমেন্ট পরে খ্রিস্টান দার্শনিক এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয় যুক্তিটি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে যখন এটি ইমানুয়েল কান্ট দ্বারা সময় সম্পর্কিত প্রথম সূত্রের থিসিস দ্বারা গৃহীত হয়েছিল।

    বিবর্তন

    অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম

    বিবর্তনের প্রাথমিক তত্ত্ব বিকাশের জন্য মুতাজিলা বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আল-জাহিজ (৭৭৬-৮৬৭ খ্রি:) ছিলেন মুসলিম জীববিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণের মধ্যে প্রথম। তিনি প্রাণীদের উপর পরিবেশের প্রভাবের কথা অনুমান করেছিলেন এবং প্রাণীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে পরিবেশের প্রভাব বিবেচনা করেছিলেন এবং তিনিই প্রথম অস্তিত্বের সংগ্রামকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অগ্রদূত হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। আল-জাহিজের বুক অব এ্যানিমাল এ অস্তিত্বের জন্য লড়াইয়ের ধারণাগুলি নিম্নরূপ সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা হয়েছে:

    “প্রাণীরা অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে, তাছাড়া সম্পদের জন্য, অন্যের দ্বারা খাওয়া এড়ানোর এবং বংশবৃদ্ধি জন্য। পরিবেশগত প্রভাবগুলি বেঁচে থাকার লক্ষ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যগুলি বিকাশের জন্য ভূমিকা পালন করে, এইভাবে তারা নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। এইভাবে যারা বেঁচে থাকে তাদের বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে। “

    ভারতের অধ্যায় ৪৭, “ভাসুদেব ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ” শিরোনামে আবু রায়হান বেরুণি একটি প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছিলেন কেন মহাভারতে বর্ণিত সংগ্রাম “সংঘটিত হতে হয়েছিল”। তিনি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন যে বিবর্তনের সাথে জৈবিক ধারণাগুলির সম্পর্ক রয়েছে, যার ফলে বেশিরভাগ পণ্ডিত ব্যক্তি তার ধারণাকে ডারউইনবাদ ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে তুলনা করেছেন। বেরুণী কৃত্রিম নির্বাচনের ধারণা বর্ণনা করেছিলেন তারপর একে প্রকৃতির মধ্যে প্রয়োগ করেছিলেন:

    “কৃষক তার শস্য নির্বাচন করে, যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটা বাড়তে দেন, আর বাকিটা ছিঁড়ে ফেলেন। ফরেস্টার সেই সব শাখাগুলিকে রেখে দেয় যাদেরকে তিনি চমৎকার বলে মনে করেন এবং অন্য সকলকে কেটে ফেলেন।” মৌমাছি তাদের ধরনের মধ্যে যারা শুধুমাত্র খায় তাদের মেরে ফেলে কিন্তু তাদের মৌচাকের মধ্যে কাজ করেনা। অনুরূপ পদ্ধতিতে প্রকৃতি এগিয়ে যায়, তবে, এটি তার কর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য করেনা সব পরিস্থিতিতে তারা এক এবং অভিন্ন। এটা গাছের পাতা এবং ফল ধ্বংস করতে বাধা দেয়না , এইভাবে যে ফলাফল তারা প্রকৃতির অর্থনীতির উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে তা উপলব্ধি করতে বাধা দেয় এবং অন্যদের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়। “

    ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নাসির আল-দীন আল-টুসি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কীভাবে উপাদানগুলি খনিজ পদার্থে রূপান্তরিত হয়, তারপর উদ্ভিদ, তারপর প্রাণী এবং তারপর মানুষে। তারপর তুসি তার ব্যাখ্যা চালিয়ে গিয়েছিলেন কিভাবে বংশগত পরিবর্তনশীলতা জীবিত জিনিসের বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল:

    “যেসব প্রাণী নতুন বৈশিষ্ট্যগুলি দ্রুততর অর্জন করতে পারে তারা আরও বেশি পরিবর্তনশীল। ফলস্বরূপ, তারা অন্য প্রাণীর চেয়ে সুফল লাভ করে। […] অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক মিথষ্ক্রিয়াগুলির ফলে দেহের পরিবর্তন হচ্ছে।”

    টুসি আলোচনা করেছিলেন কিভাবে জীবাণু তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম:

    “পশু এবং পাখির জগতের দিকে লক্ষ্য করুন। শক্তি, সাহস এবং যথাযথ সরঞ্জামসমূহ [অর্গান] সহ [প্রতিরক্ষা] এবং দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় তাদের আছে, […] এইসব অঙ্গগুলি হল তাদের জন্য বাস্তব অস্ত্র। […] ।] উদাহরণস্বরূপ, শিং-বর্শা, দাঁত এবং চোয়াল-ছুরি এবং সুই, পা এবং খুঁড়া-গদা। কিছু প্রাণীর শিং এবং সূঁচ তীরের অনুরূপ। […] যেসব প্রাণীদের প্রতিরক্ষার কোন উপায় নেই (যেমন গাজেল এবং ফক্স) উড়া এবং চালাকির সাহায্যে নিজেদের আত্মরক্ষা করে। […] এদের মধ্যে কিছু উদাহরণস্বরূপ, মৌমাছি, পিঁপড়া এবং কিছু পাখির প্রজাতি আছে যারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য এবং একে অপরের সাহায্য করার জন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। “

    তারপর টুসি ব্যাখ্যা করেছিলেন কিভাবে উন্নত প্রজাতি থেকে মানুষ বিবর্তিত হয়েছিল:

    “এই ধরনের মানুষ [সম্ভবত অ্যানথ্রোপেড এপস] পশ্চিম সুদান এবং বিশ্বের অন্যান্য দূরবর্তী কোণে বসবাস করে। তারা তাদের অভ্যাস, কর্ম এবং আচরণের কারণে অনেকটাই পশুদের নিকটবর্তী। […] মানুষের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে তাদেরর পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তাদের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আছে যার কারণে তারা প্রাণী জগত, উদ্ভিদ জগত বা এমনকি নির্জীব দেহের সাথে একত্রিত করতে পারে। “

    প্রজাতির পুনর্বিন্যাস

    আল-দিনাওয়ারীকে (৮২৮-৮৯৬) তার বুক অব প্লান্টসের জন্য আরবি বোটানিকের প্রতিষ্ঠাতা বলে বিবেচনা করা হয়। এই বইয়ের মধ্যে তিনি উদ্ভিদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে বিবর্তন ঘটে তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং ফুল ও ফল উৎপাদনের পর্যায়গুলি বর্ণনা করেছিলেন।

    ইবনে মিসস্কায়েফ আল ফয়েজ আল-আসগার এবং দ্য ব্রেদারান অব পিউরিটি এর এনসাইক্লোপিডিয়া অব দ্য ব্রেদারানস অব পিউরিটি (ইখওয়ান আল-সাফা) বিবর্তনের তত্ত্বগুলি উন্নত করেছিল যা সম্ভবত চার্লস ডারউইন এবং ডারউইনিজম এর প্রতিষ্ঠার উপর প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু এক সময় তাকে অত্যধিক উৎসাহিত হিসাবে সমালোচনা করা হয়েছে।

    “[এই বইগুলি] বলে যে ঈশ্বর প্রথম বিষয় তৈরি করেছিলেন এবং উন্নয়নের জন্য শক্তি দিয়ে এটি বিনিয়োগ করেছিলেন। অতএব, বিষয় বাষ্পীয় আকার গ্রহণ করে যা উপযুক্ত সময়ে পানি আকারে রূপান্তরিত হয়। উন্নয়ন পরবর্তী স্তরে ছিল খনিজ জীবন। সময় পরিক্রমায় বিভিন্ন ধরনের পাথরের উন্নয়ন ঘটেছিল। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ গঠন হল শৈবাল। উদ্ভিদের বিবর্তন বৃক্ষের সাথে ঘটেছে যা প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য বহন করে। এটি একটি খেজুর গাছ। এর পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ রয়েছে। যদি এর সব শাখাগুলি কাটা হয় তবে এর কিছুই হবেনা কিন্তু মাথাটি কেটে ফেলা হলে তা মরে যায়। খেজুর গাছকে গাছের মধ্যে সর্বচ্চো এবং প্রাণীদের মধ্যে সর্বনিম্ন সাদৃশ্য আছে বলে মনে করা হয়। তারপর সর্বনিম্ন প্রাণীদের উৎপত্তি হয়। পরে এটি বানরে বিবর্তিত হয়। এটি ডারউইন এর বিবৃতি নয়। এটি ইবনে মাস্কেয়াহের বক্তব্য যা ইখওয়ান আল-সাফার ইপিসলস সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম চিন্তাবিদদের মতে বানর নিম্ন ধরনের বর্বর মানুষে বিবর্তিত হয়েছে। তারপর তারা উচ্চতর শ্রেণীর মানব হয়ে ওঠে। মানুষ হয়ে যায় সাধু, হয়ে যায় একজন নবী। তারপর তিনি একটি উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হন এবং দেবদূত হয়ে উঠেন। ফেরেশতাদের চেয়ে উচ্চতর একজন আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নয়। সবকিছু তাঁর কাছ থেকে শুরু হয় এবং তাঁর কাছে সবকিছুই ফিরে আসে। “

    ১৮১২ সাল থেকে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রেদারান অব পিউরিটি এর ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যেত, তখন আলফাউজ আল-আসগারের আরবি পাণ্ডুলিপি এবং ইখওয়ান আল-সাফার ইপিসলসগুলি উনিশ শতকের দিকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যেত। এই কাজ সম্ভবত উনিশ শতকের বিবর্তনবাদীদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং সম্ভবত চার্লস ডারউইন ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

    চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে খালদুন এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রেদারান অব পিউরিটি তে পাওয়া বিবর্তনীয় ধারণাগুলি আরও উন্নত করেছিলেন। তার ১৩৭৭ সালের কাজ মুকাদ্দীমা থেকে নিম্নোক্ত বিবৃতিগুলি বিবর্তনীয় ধারণা প্রকাশ করে:

    আমরা সেখানে ব্যাখ্যা করেছিলাম যে সব কিছুর অস্তিত্ব তার সরল এবং যৌগিক মিশ্রণের জগতে উত্থান এবং পতনের একটি প্রাকৃতিক ক্রমে সাজানো যার ফলে সবকিছু একটি অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা গঠন করে চলে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি বস্তু নির্দিষ্ট পর্যায়ে শেষের অংশগুলি প্রকৃতির দ্বারা তাদের পাশে বা নিচের দিক থেকে অন্যের সাথে যুক্ত এবং যেকোনো সময় তারা রূপান্তরিত হতে পারে। এটি একটি সহজ উপাদান যার সঙ্গে পাম গাছ এবং দ্রাক্ষালতা (যা গঠিত হয়) গাছপালার শেষ পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক হল শামুক এবং ঝিনুকের সাথে, (যা গঠিত হয়) এটি ঘটে প্রাণীদের (সর্বনিম্ন স্তরের) ক্ষেত্রে । এটি বানর এবং অন্যান্য প্রাণীদের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের চালাকি এবং চিন্তা চেতনার সাথে ভিত্তি করে এটাই মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলে, যাদের মধ্য ভাবনা এবং প্রতিফলিত করার ক্ষমতা রয়েছে। দুনিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে উভয়ের পাশাপাশি যে প্রস্তুতি (রূপান্তরের জন্য) রয়েছে তার অর্থ হচ্ছে যখন আমরা তাদের সাথে একটি সংযোগের কথা বলি।

    উদ্ভিদের এমন সৌন্দর্য ও ক্ষমতা নেই যা প্রাণীদের আছে। অতএব, ঋষি কদাচিৎ তাদের রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। জন্তুরা তিনটি ক্রমাঙ্কনের শেষ এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খনিজ পদার্থ গাছপালায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং উদ্ভিদরা প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে কিন্তু প্রাণীরা নিজেদের চেয়ে উন্নত কোন রূপে রূপান্তরিত হতে পারেনি।

    বহুবিধ ইসলামি পণ্ডিত ও বিজ্ঞানী পলিম্যাথ ইবনে আল-হায়থাম ও আল-খাজিনি সহ এই ধারণাগুলির আলোচনা ও বিকশিত করেছিলেন। পরে এগুলো লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, রেনেসাঁসের পর এই কাজগুলি পশ্চিমা দেশে দৃষ্টিগোচর হতে থাকে যা পশ্চিমা দর্শন ও বিজ্ঞানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

    প্রপঁঞ্চবিজ্ঞান

    আশ’আরী পলিম্যাথ ইবনে আল-হায়থাম (আলহাজেন) কে প্রপঁঞ্চবিজ্ঞানের অগ্রদূত বলে বিবেচনা করা হয় । তিনি শারীরিক এবং দর্শনীয় বিশ্বের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং তার অন্তর্নিহিত বিষয়সমূহ, মনোবিজ্ঞান এবং মানসিক ফাংশন নিয়ে আলোকপাত করেছেন। জ্ঞান ও ধারণার বিষয়ে তাঁর তত্ত্বগুলি বিজ্ঞান ও ধর্মের ডোমেনগুলির সাথে যুক্ত যা পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবতার সরাসরি পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে অস্তিত্বের দর্শনের দিকে পরিচালিত করেছিল। বিশ্লেষণের উপর তার বেশিরভাগ চিন্তাধারা বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত আর উন্নত করা হয়নি।

    মনের দর্শনশাস্ত্র

    মধ্যযুগীয় ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার মধ্যে মনের দর্শনকে অধ্যয়ন করা হয়েছিল, যা ইসলামিক জগতে নফস (আক্ষরিক অর্থে আরবিতে “স্ব” বা “আত্মা”) কে নির্দেশ করে যা বিশেষ করে ইসলামি স্বর্ণযুগ (অষ্টম-পঞ্চদশ শতকের) সময় এবং আধুনিক সময়ে (বিংশ -একবিংশ শতক) মনোবিজ্ঞান, মনঃসমীক্ষণ এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত।

    স্থান এবং মহাশূন্য

    আরব পলিম্যাথ আল-হাসান ইবনে আল-হায়থাম (আলহাজেন মৃত্যু ১০৪১ খ্রিস্টাব্দে) অ্যারিস্টটলের স্থান(টপস) সংক্রান্ত ধারণা নিয়ে একটি পূর্ণ গাণিতিক সমালোচনা করেছিলেন তার রাইসাল / কওল ফাই মেকান (স্থান / বিচ্যুতির স্থান) এর মধ্যে ।

    অ্যারিস্টটলের পদার্থবিজ্ঞান (বই চতুর্থ – ডেল্টা) উল্লেখ করে যে, কোন কিছুর স্থান বলতে স্থির অবস্থায় থাকা দেহের দ্বি-মাত্রিক সীমানাকে বুঝায় এবং এটির মধ্যে যা রয়েছে তার সাথে যোগাযোগের মধ্যে রয়েছে। ইবনে আল-হায়থাম এই সংজ্ঞা নিয়ে মতবিরোধ করেন এবং দেখান যে এই স্থানটি (আল-মাকান) ধারণাকৃত (তিন-মাত্রিক) অকার্যকর (আল-খালা ‘আল-মুরতাদাহিয়াল) ধারণকারী শরীরের ভেতরের পৃষ্ঠতলের মধ্যে বিদ্যমান। তিনি দেখিয়েছেন যে স্থানটি মহাশূন্যের সমতুল্য ছিল, স্থানটির কোষ এক্সটেনসিয়ো বা এমনকি লিবিনিজের বিশ্লেষণের সাথে ডেসকার্টের মতামতকে গ্রাহ্য করে। ইবনে আল-হায়থামের গণিতকরণের স্থানটি বিভিন্ন জ্যামিতিক বিষয়ের উপর বিশ্রামিত, গোলক এবং অন্যান্য কঠিন বস্তুর উপর তার গবেষণা সহ যেখানে তিনি দেখান যে গোলকটি (আল-কুরাই) অন্যান্য জ্যামিতিক কঠিন বস্তুর সমান আকারের (বড় আকারের) পৃষ্ঠ এলাকায় তারা সমান। । উদাহরণস্বরূপ, একটি গোলকের যে একটি সিলিন্ডারের সমান পৃষ্ঠ এলাকা আছে, এটি সিলিন্ডারের তুলনায় (ভলিউম্যাট্রিক) মাত্রার বৃহত্তর হবে; অতএব, গোলকটি সিলিন্ডারের দ্বারা দখলযুক্ত একটি বৃহত্তর স্থান দখল করে; অ্যারিস্টটলের স্থানের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন এটি তার অসদৃশ: যে এই গোলক এবং সিলিন্ডার যে স্থানগুলি দখল করে তার মাত্রা সমান হয়। ইবনে আল-হায়থাম অ্যারিস্টটলের দার্শনিক ধারণাকে গাণিতিক ভিত্তিতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরবর্তীতে, দার্শনিক আবদ আল-লতিফ আল-বাগদাদী (ত্রয়োদশ শতকে) এরিস্টটলীয় ধারণার স্থানকে একটি প্রবন্ধের শিরোনামের একটি অংশে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন: ফী আল-রাদ ‘আলা ইবনে আল-হায়থাম ফী আল-মকান (ইবনে আল- হায়থামের স্থান), যদিও তাঁর প্রচেষ্টা একটি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয় ছিল কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক এবং গাণিতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপযুক্ত ছিল।

    ইবনে আল-হায়থাম তাঁর বুক অব অপটিক্সে (১০২১) স্পেস ধারণার এবং এর উপবিধিগত প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। দৃষ্টির অন্তর্নিহিত মডেলে তার পরীক্ষামূলক প্রমাণটি স্থান পরিবর্তনের অনুভূতি অনুধাবন পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়েছে যা ছিল ইউক্লিড এবং টলেমী দ্বারা সমর্থিত পূর্বের নির্গমন মূলক দৃষ্টি তত্ত্বের বিপরীত। “শারীরিক অভিজ্ঞতার চেয়ে যা চোখে দেখা যায় তার উপর বেশি জোর দিয়েছেন, আলহাজেন স্বতঃস্ফূর্ত দৃষ্টির স্বতঃস্ফূর্ততাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সেই সাথে দৃষ্টির স্বায়ত্তশাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য দূরত্ব এবং আকারের স্পষ্ট ধারণা ছাড়া দৃষ্টি এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী কিছু বলতে পারে না। “

    শিক্ষার দর্শন

    মধ্যযুগীয় ইসলামি জগতে প্রাথমিক বিদ্যালয় মক্তব নামে পরিচিত ছিল যা অন্তত দশম শতাব্দীর দিকে বিদ্যমান ছিল। মাদ্রাসার মত (উচ্চ শিক্ষায় উল্লেখ করা) একটি মক্তব প্রায়ই একটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত ছিল। একাদশ শতকে, ইবনে সিনা (পশ্চিমে আভিসিনা) তাঁর বইয়ের একটি অধ্যায়ে মক্তব শিরোনামে ” প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের ভূমিকা এবং বাচ্চাদের লালন পালন” শিক্ষকদের গাইড হিসাবে মক্তবে কাজ করার জন্য। তিনি লিখেছেন যে ব্যক্তিগত শিক্ষাদান থেকে পৃথক শিক্ষার পরিবর্তে ক্লাসগুলিতে শেখানো হলে ছেলেমেয়েরা ভাল শিখতে পারে, এবং ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মূল্যায়ন এবং সংমিশ্রনের মূল্য এবং সেইসাথে গ্রুপের মধ্যে আলোচনা এবং বিতর্কের উপযোগিতা উল্লেখ করেছিলেন। ইবনে সিনা মক্তব বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছিলেন শুধু তাই নয় মক্তব স্কুলের শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করেছিলেন।

    প্রাথমিক শিক্ষা

    ইবনে সিনা লিখেছেন যে ছয় বছর বয়সের শিশুদেরকে মক্তব বিদ্যালয়ে পাঠানো উচিত এবং চতুর্দশ বছর পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তাদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া উচিত। সেই সময় তিনি লিখেছিলেন যে তাদেরকে কুরআন, ইসলামি অধিবিদ্যা, ভাষা, সাহিত্য, ইসলামি নীতিশাস্ত্র এবং ম্যানুয়াল দক্ষতা (যা বিভিন্ন দক্ষতার বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে) শেখানো উচিত ।

    মাধ্যমিক শিক্ষা

    ইবনে সিনা মক্তব স্কুলে পড়াশোনার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার সময় উল্লেখ করেছিলেন এটি হল তখন যখন শিক্ষার্থীরা তাদের সামাজিক অবস্থানের সাথে সাথে নির্বিশেষে ম্যানুয়াল দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করে। তিনি লিখেছেন যে ১৪ বছর পর বাচ্চাদেরকে যেসব বিষয়ে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে সেই সব বিয়ষকে তাদের পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া উচিত, যেমন, পড়াশোনা, ম্যানুয়াল দক্ষতা, সাহিত্য, প্রচার, চিকিৎসা, জ্যামিতি, বাণিজ্য, কারিগরি, বা অন্য কোন বিষয় বা পেশা যার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে কর্মজীবনের জন্য অনুগমন করতে আগ্রহী হবে। তিনি লিখেছিলেন যে এটি হল বাচ্চাদের জন্য একটি ট্রানজিশনাল পর্যায় তাই ছাত্রদের মানসিক বিকাশ এবং নির্বাচিত বিষয়গুলিকে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয় পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকের বয়স সম্পর্কে নমনীয়তা থাকা দরকার।

    বৈজ্ঞানিক দর্শন

    বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

    আরব আশারিয়া পলিম্যাথ ইবনে আল-হায়থাম (আলহাজেন) দ্বারা বিজ্ঞান পদ্ধতির উন্নয়ন ছিল বিজ্ঞানের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বুক অব অপটিক্সে ( ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুরূপ ছিল এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত ছিল:

    • পর্যবেক্ষণ
    • সমস্যার বিবরণ
    • অনুমানের প্রণয়ন
    • পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুমান পরীক্ষা করা
    • পরীক্ষামূলক ফলাফল বিশ্লেষণ
    • উপসংহার গঠন করা এবং সূত্রের ব্যাখ্যা
    • ফলাফল প্রকাশ

    মোশন মডেলের মধ্যে ইবনে আল-হায়থামও ওকামের রেজারের একটি প্রাথমিক সংস্করণ বর্ণনা করেছিলেন, যেখানে তিনি জ্যোতির্বিদ্যাগত গতির বৈশিষ্ট্যগুলির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কেবল মাত্র অনুমানমূলক কাজ করেছিলেন এবং তিনি তার গ্রহের মডেলকে নিয়ে মহাজাগতিক হাইপোথিসিসকে পরিহার করার চেষ্টা করেছিলেন কারণ তা পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া যায় না।

    পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বিজ্ঞান

    আভিসিনাকে (ইবনে সিনা) তাঁর পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোর প্রবর্তনের জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। শুধু তাই নয়, ঔষধের পরীক্ষামূলক ব্যবহার এবং আবিষ্কারের প্রক্রিয়ার মধ্যে বাস্তবিক পরীক্ষার জন্য ও চিকিৎসা পদার্থের কার্যকারিতা প্রমাণের একটি সুনির্দিষ্ট গাইড প্রদানের জন্য তাঁর চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ্যানসাইক্লোপিডিয়া নামে পরিচিত ক্যানন অব মেডিসিন (একাদশ শতকের দিকে), যা পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত প্রথম বই ছিল। এটি নতুন ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য নিম্নোক্ত নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল যা এখনও আধুনিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে:

    • “ঔষধকে কোনো বহিরাগত দুর্ঘটনাগত মান থেকে মুক্ত হতে হবে।”
    • “এটি একটি সহজ রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা আবশ্যক, কোন যৌগিক রোগের ক্ষেত্রে নয়।”
    • “ঔষধকে দুটি বিপরীত ধরনের রোগের সঙ্গে পরীক্ষা করা উচিত, কারণ কখনও কখনও একটি ঔষধ তার অত্যাবশ্যক গুণাবলী দ্বারা একটি রোগ এবং অন্যটি তার দুর্ঘটনাজনিত বিষয় দ্বারা নিরাময় করে।”
    • “ঔষধের মান রোগের শক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু মাদক দ্রব্য রয়েছে, যার তাপ নির্দিষ্ট রোগের ঠাণ্ডা থেকে কম, তাই তাদের উপর কোন প্রভাব থাকবেনা।”
    • “কর্মের সময় পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যাতে সারাংশ এবং দুর্ঘটনা বিভ্রান্ত না হয়।”
    • “ড্রাগের প্রভাব ক্রমাগত বা অনেক ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা যায়, যদি এটি না ঘটে তবে এটি ছিল একটি দুর্ঘটনাপূর্ণ প্রভাব।”
    • “পরীক্ষা মানুষের শরীরের সাথে করা উচিত, সিংহ বা একটি ঘোড়া উপর ড্রাগের পরীক্ষা মানুষের উপর তার প্রভাব সম্পর্কে কিছু প্রমাণিত নাও হতে পারে।”

    আরও দেখুন

    ইসলাম
    বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ
    বিশ্বাসআদর্শ
    চর্চাজীবনপদ্ধতি
    গ্রন্থবিধিবিধান
    মুহাম্মাদইতিহাস
    সমাজসংস্কৃতি
    অর্থনীতিরাজনীতি
    সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী
    সম্পর্কিত বিষয়াবলী
     ইসলাম প্রবেশদ্বার
  • নাস্তিকের বাজি

    নাস্তিকের বাজি

    দার্শনিক মাইকেল মার্টিন এর দ্বারা নাস্তিকের বাজি (Atheist’s Wager) এর ধারণাটি জনপ্রিয় হয়। তিনি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত তার বই Atheism: A Philosophical Justification (নাস্তিকতা: একটি দর্শনগত ন্যায্যতা) তে এটি উল্লেখ করেন। এটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে যুক্তি হিসেবে প্যাসকেলের বাজি (Pascal’s Wager) এর একটি নাস্তিক্যবাদী প্রত্যুত্তর, যার মাধ্যমে প্যাসকেলের বাজি এর যুক্তিকে খণ্ডন করা হয়।

    নাস্তিকের বাজি

    নাস্তিকের বাজি থেকে একটি ভাষ্য পাওয়া যায়; তা হলো: যেহেতু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, মহান ও সবচেয়ে বেশি দয়ালু, এর অর্থ তিনি অবশ্যই ভালো কাজের জন্য ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করবেন এবং যদি ঈশ্বর নাও থাকেন, তাতে কী? ভাল কাজ করার ফলে আখেরে কোনো ক্ষতি তো আর হবে না। মৃত্যুর পরে সেই কাজ পৃথিবীতে ইতিবাচকভাবেই মুল্যায়িত হবে। অর্থাৎ, এথেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ধর্ম ব্যতীত একজন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যময়, দুশ্চিন্তাবিহীন জীবন অতিবাহিত করতে পারে।[১][২] আরেকটি ভাষ্যে বলা হয়েছে, ঈশ্বর হয়তো সৎ অবিশ্বাসীকে পুরস্কৃত করবেন, আর কঠোর শাস্তি দিবেন অসৎ বিশ্বাসীকে।[৩]

    ব্যাখ্যা

    এই বাজি এটাই উদ্ধৃত করে যে, কেও যদি চিন্তা করে দেখে, সে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করবে, তাহলে নিম্নোক্ত সম্ভাবনাগুলোই সামনে আসবে।[১][৪][৫]

    • আপনি যদি সৎভাবে জীবনযাপন করেন ও ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। এবং যদি সত্যিই দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই স্বর্গে যাবেন। এক্ষেত্রে আপনার অর্জন সীমাহীন (অসীম)।
    • যদি আপনি সৎ জীবনযাপন করেন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে থাকেন এবং যদি সত্যিই দয়ালু ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকেন; আপনার কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তাহলে আপনি স্বর্গে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রেও আপনার অর্জন অসীম।
    • যদি আপনি সৎভাবে জীবনযাপন করেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে থাকেন, কিন্তু কোনো দয়ালু ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে আপনি স্বর্গে যেতে পারছেন না, তবে আপনার কাজ পৃথিবীতে ভালোভাবেই মূল্যায়ন হবে। এক্ষেত্রে আপনার অর্জন সসীম বা সীমিত।
    • যদি আপনি সৎভাবে জীবনযাপন করে থাকেন, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলেও আপনার স্বর্গে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তবুও আপনার কাজ ভালোভাবে পৃথিবীতে মূল্যায়িত হবে। এক্ষেত্রেও আপনার অর্জন সীমিত বা সসীম।
    • যদি আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, কিন্তু অসৎ মানুষের ন্যায় জীবন অতিবাহিত করেন, এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বর থেকেও থাকেন, তাহলেও আপনার কাজের শাস্তিস্বরুপ আপনাকে নরকে পতিত হতে হবে। আপনার ক্ষতি এক্ষেত্রে অসীম।
    • যদি আপনি অসৎ মানুষের ন্যায় জীবনযাপন করেন ও ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাসী হন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে আপনি নরকে পতিত হবেন। এক্ষেত্রে আপনার ক্ষতি অসীম।
    • যদি আপনি খারাপ মানুষের ন্যায় জীবনযাপন করেন, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলে আপনার কাজে পৃথিবীতে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হবে। অবশ্য আপনার ক্ষতি এক্ষেত্রে সীমিত।
    • যদি আপনি খারাপ মানুষের ন্যায় জীবন-যাপন করেন, আবার ঈশ্বরেও বিশ্বাস না রাখেন, এবং দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলেও আপনার কাজ পৃথিবীতে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হবে। এক্ষেত্রেও আপনার ক্ষতি সীমিত।

    এই তালিকাটিকে ছকাকারে দেওয়া হলো, যেখানে শর্তমোতাবেক জীবনব্যবস্থায় কি ফলাফল আসে, তা সহজেই বুঝা যায়: যদি দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন

    ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে (বি)ঈশ্বরে অবিশ্বাস করলে (অবি)
    সৎভাবে জীবনযাপন করলে (স)+∞ (স্বর্গ)+∞ (স্বর্গ)
    অসৎভাবে জীবনযাপন করলে (অস)-∞ (নরক)-∞ (নরক)

    যদি দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে

    ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে (বি)ঈশ্বরে অবিশ্বাস করলে (অবি)
    সৎভাবে জীবনযাপন করলে (স)+X (ইতিবাচক মুল্যায়ন)+X (ইতিবাচক মুল্যায়ন)
    অসৎভাবে জীবনযাপন করলে (অস)-X (নেতিবাচক মুল্যায়ন)-X (নেতিবাচক মুল্যায়ন)

    মার্টিন ক্রীড়া তত্ত্ব বা গেম থিওরিকে (এই থিওরীর মাধ্যমে তুলনামুলকভাবে কোন কৌশল সবচেয়ে ভালো হবে, তা ব্যাখ্যা করা যায়) ব্যবহার করে ও এই ছক এবং তার মান উল্লেখ করে বলেন, আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেও নির্দ্বিধায় একটা সৎ ও চমৎকার জীবন অতিবাহিত করতে পারেন।

  • নিম্নমানের নকশাভিত্তিক যুক্তি

    নিম্নমানের নকশাভিত্তিক যুক্তি

    নিম্নমানের নকশাভিত্তিক যুক্তি (ইংরেজি: Argument from poor design বা Dysteleological argument) সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে একটি যুক্তি। এই ক্ষেত্রে বলা হয় একজন সর্বশক্তিমান এবং দয়ালু ঈশ্বর জীবে এমন কোনো জটিল নকশা করেন নি, যা প্রকৃতিতে দেখা যায়।

    নিম্নমানের নকশাভিত্তিক যুক্তি

    এই বিতর্কের স্ট্রাকচার মোডস টলেন্সের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে: যদি সৃষ্ট জীবে এমন অনেক কিছু পাওয়া যায়, যা নিখুঁত নয়, সেক্ষেত্রে জীবে; সত্তার দ্বারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডিজাইনের হাইপোথিসিসের আর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। যাইহোক এর প্রধান লক্ষ্য ঈশ্বর আছে কি নাই, তা নির্ধারণ করা নয়, বরং এটা এ বিষয়ে আলোচনা করে যে, ভাগ্য বা ঘটনা চক্রে জীবের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করলে, জীবে এমন অনেক ডিজাইন খুঁজে পাওয়া যায়, যা দেখে অবশ্যই এটাই মনে হয়, এ ডিজাইন দুর্ঘটনাবশত নয়, বরং ঈশ্বরের দ্বারা অনেক ভেবেচিন্তে তৈরি করা হয়েছে।

    যদিও “argument from poor design” নামে এই নিবন্ধটি লিখা হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে এটা খুব কম ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়ে বিতর্ক চললে বর্তমানে হালনাগাদ হিসাবে অন্যান্য ফ্রেজ (phrase) বা নতুন শিরোনামে একে ডাকা হয়, যেমন: “poor design”(মান অনুন্নত নকশা), “suboptimal design”(দুর্বল মানের নকশা), “unintelligent design”(বুদ্ধিহীন নকশা) অথবা “ডিস্টিওলজি/ডিস্টিওলজিকালl“। শেষ পরিভাষা টি ১৯ শতকের জীববিজ্ঞানী আর্নেস্ট হ্যাকল প্রবর্তন করেন।

    মোটের উপর সাধারণ পাঠ

    আশা করা যায়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে যারা টিকে থাকবে, তারা যোগ্যতার চূড়ায় অবস্থান করবে, কিন্তু এই চূড়া সবসময় শীর্ষস্থানীয় হয় না।

    বিতর্কটি যেভাবে চলে:

    1. একজন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, মহান দয়ালু স্রষ্টা ঈশ্বর জীব সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ এই মহান সত্তা নিশ্চয়ই তার সৃষ্ট জীবে সর্বোৎকৃষ্ট নকশা তৈরী করবেন।
    2. কিন্তু জীবে যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা সর্বোৎকৃষ্ট নয়।
    3. অর্থাৎ হয় ঈশ্বর জীব সৃষ্টি করেননি অথবা তিনি দয়ালু, জ্ঞানী অথবা সর্বশক্তিমান নন।

    বিখ্যাত টেলিওলোজিক্যাল আর্গুমেন্টের এর reductio ad absurdum হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়:

    1. দুর্ঘটনা বা ভাগ্যক্রমে জীবের গঠনপ্রণালি যদি তৈরী হয়ে থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত নিখুত। কিন্তু এতটা নিখুঁত বুদ্ধিহীন প্রকৃতি কিভাবে তৈরী করে?
    2. অর্থাৎ, জীবন অবশ্যই কোনো কোনো এক বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তা দ্বারাই তৈরি হয়েছে
    3. আর এ সৃষ্টিকর্তাই হলেন ঈশ্বর

    “খুতযুক্ত ডিজাইন” বিবর্তন নামক বৈজ্ঞানিক থিওরী অর্থাৎ প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এই থিওরী অনুযায়ী, এই সমস্ত খুতগুলো জীবে কোনো কাজের জন্যই তৈরী হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে জীবের বিবর্তনের কারণে প্রজাতিভেদে এই অংশগুলোর কিছু ভিন্ন কাজ শুরু করেছে অথবা কিছু কিছু নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। যা জীবদেহে বিবর্তনের চিহ্ন বা অবশেষ রুপে বিদ্যমান।

    সর্বোৎকৃষ্ট চূড়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং বলা হয়, এটার ফলে উৎপন্ন প্রজাতির যে বৈশিষ্ট্য উৎপন্ন হবে, তা হবে সর্বোত্তম। কিন্তু একটা প্রজাতি স্বাভাবিকভাবে প্রথমবারেই টিকে থাকার লড়াইয়ে সেরা স্থানে পৌছে যেতে পারে না।

    এই “poor design” বিতর্কটি চার্লস ডারউইনও ব্যবহার করেছেন।[১] Stephen Jay Gould এবং Richard Dawkins এই বিতর্ক কে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তাদের মতে জীবদেহে বিদ্যমান এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া ক্রমান্বয়ে পুঞ্জীভূত চিহ্ন । আর এভাবেই এই বৈশিষ্ট্য (Features) গুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। ধর্মে বিশ্বাসী বিবর্তনবাদীরা জীবের নকশা নিয়ে এই বিতর্ককে বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে তাদের বিশ্বাসকে বলবৎ রেখে দিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    উদাহরণসমূহ

    মানুষে

    মারাত্মক ত্রুটি

    শিল্পীর তুলিতে ectopic pregnancy এর চিত্রায়ন। সমালোচকরা এইসব জ।হরণকে ‘প্যালের ঘড়ি সংক্রান্ত‘ উপমার সাথে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে

    মানবদেহের শারীরবিদ্যায় বেশ অনেকগুলো খুত রয়েছে, যেগুলোর ভয়াবহতা এত ব্যাপক যে, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে মানুষকে মৃত্যু বরন পর্যন্ত করতে হতোঃ

    • In the human female, a fertilized egg can implant into the fallopian tube, cervix or ovary rather than the uterus causing an en:ectopic pregnancy। ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান নালির মাঝে ক্যাভিটির উপস্থিতি নারীর পুন:উৎপাদনশীল প্রক্রিয়ার ডিজাইনের যে ব্যাপক ত্রুটি আছে তাকে নির্দেশ করে। আধুনিক সার্জারীর পুর্বে ইকটোপিক প্রেগনেন্সির কারণে (এক্ষেত্রে ভ্রুণ ইউরেটাসের বাইরে সংযুক্ত হয়) সন্তান এবং মা উভয়ই মৃত্যুমুখে পতিত হত। এমনকি বর্তমান সময়েও; এ ধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে মায়ের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মায়ের গর্ভপাত(এবরশন) করানো হয়।
    • নারী মানবদেহে, the birth canal passes through the pelvis. The prenatal skull will deform to a surprising extent. যাইহোক, যদি বাচ্চার মাথা পেলভিক আগ্রমুখের(pelvic opening) চেয়ে বড় হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে মা তার সন্তান প্রসব করতে পারে না। আধুনিক চিকিৎসার উন্নয়নের পুর্বে (সিজারিয়ান পদ্ধতি) এই ধরনের জটিলতার ফলে হয় মা, অথবা সন্তান অথবা উভয়ই মারা যেত। জন্মগত অন্য জটিলতা যেমন:breech birth (সন্তানের উপরের অংশের পরিবর্তে নিচের অংশ যদি আগে ভুমিষ্ট হয়, তাকে ব্রিচ বার্থ বলে) এর ক্ষেত্রে ভ্যাজিনার(বার্থ ক্যানাল) অবস্থানের জন্য পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে।
    • পুরুষ মানুষে, শুক্রাশয় প্রাথমিকভাবে পেটের ভিতর তৈরী হয়। গর্ভকালের পরে তা উদরীয় প্রাচীর (abdominal wall) দ্বারা স্ক্রোটামের ভিতর স্থানান্তরিত হয়। এর কারণে উদরীয় প্রাচীরে দুইটি দুর্বল পয়েন্ট গঠিত হয়, যা থেকে পরবর্তীতে হার্নিয়া হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুর্বে অভ্যন্তরীণ ব্লক এবং গ্যাংরিনের মত জটিলতার কারণে সাধারণত মৃত্যু ঘটত।[২]
    • গলবিল, খাদ্য গলাধঃকরণ এবং শ্বসন উভয়ের জন্য একটি প্যাসেজ বা সাধারণ পথ ব্যবহৃত হয়; এর ফলে বিষম খাওয়ার(শ্বাসরোধের) প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকে।
    • মানবদেহে অবস্থিত এপেণ্ডিক্স হচ্ছে একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ, এটি থাকার উদ্দেশ্য কী, তা জানা যায় নি। (ইতোমধ্যে এর কিছু কার্যকারীতা প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু এগুলো এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়) একে অপসারণ করলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ও পরে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যাইহোক, এই অপ্রয়োজনীয় অঙ্গের কারণে এপেণ্ডিসাইটিস নামক ইনফেকশন হতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মেডিক্যাল-ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যক্তির নিশ্চিত মৃত্যু হয়।

    f

    অন্যান্য ত্রুটি

    • অতিকম ব্যবহৃত স্নায়ু ও পেশি, যেমন প্লিন্টারিস পেশি পায়ের,[৩] that are missing in part of the human population and are routinely harvested as spare parts if needed during operations. আরেকটি উদাহরণ হলোঃ কান নাড়ানোর জন্য যে পেশির প্রয়োজন, সেই পেশি মানুষের আছে এবং এর কোনো উপযোগিতা নেই।([৪] p. 328).
    • প্রায় সকল প্রাণী এবং উদ্ভিদ তাদের নিজেদের শরীরে ভিটামিন সি সংশ্লেষণ করতে পারে, কিন্তু মানুষ তা করতে ব্যর্থ। কারণ এ এনজাইমের জন্য যে জিন প্রয়োজন (সুডোজীন ΨGULO) তা মানবদেহে নিষ্ক্রিয়।[৫] ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয় এবং পরবর্তীতে মৃত্যুও হতে পারে। এই জীন অন্যান্য প্রাইমেট এবং গিনিপিগ এও নিষ্ক্রিয়, কিন্তু সক্রিয় অন্য প্রাণীতে।[৬]

    অন্যান্য জীবে

    • আফ্রিকান লোকাস্টে স্নায়ু কোষ যা ডানাকে সংযুক্ত করে, তা উদরে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এটা একটা অপ্রয়োজনীয় শক্তি খরচ।[২]
    • অর্কিডের প্রজনন ব্যবস্থা অন্যান্য ফুল থেকে জটিল এবং ভিন্ন
    • পাণ্ডার বড় সীসাময়েড অস্থি; অন্যান্য প্রাণী যেভাবে অঙ্গুলি ব্যবহার করে, সেভাবেই ব্যবহৃত হয়।[২]
    • অউড্ডয়নশীল পাখিতে( উড়তে অক্ষম) অপ্রয়োজনীয় ডানার উপস্থিতি। যেমনঃ উটপাখি ([৪] p. 326).
    • টেট্রাপডের সাথে তুলনা করলে অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী টেট্রাক্রোমিক দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলেছে।
    • বলিষ্ঠ কিন্তু ভারী হাড় প্রাণী যারা উড়তে পারে না তাদের জন্য উপযুক্ত, কিন্তু বাদুড় উড়তে পারে অথবা হালকা হাড় পেনগুইন এবং উটপাখির মত পাখিতে আছে, কিন্তু তারা উড়তে পারে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
    • অসংখ্য নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতি। যেমনঃ তিমিতে ফিমার এবং পেলভিসের উপস্থিতি।(বিবর্তন অনুসারে তিমির পুর্বপুরুষরা স্থলেই বসবাস করত)
    • টুরিটোপসিস দোর্নি(একপরকার জেলিফিস) এবং হাইড্রা জৈবিকভাবে অমরণশীল, কিন্তু বেশিরভাগ প্রাণী তা নয়।
    • অনেক প্রজাতিতে সুনির্দিষ্ট উদ্দীপনায় সাড়াদানের সহজাতপ্রবৃত্তি থাকে। এটা অনেকক্ষেত্রে প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়। যেমনঃ মথ আগুনের শিখা দেখলে সেইদিকেই আকৃষ্ট হয়।
    • উদ্ভিদের রঙ কালো নয়, সবুজ। কারণ ক্লোরোফিল সবুজ আলো খুবই অল্প শোষণ করে, কিন্তু উদ্ভিদ যদি কালো হত, তাহলে সে বেশি পরিমাণ আলো বা শক্তি শোষণ করতে পারত।
    • তিমি এবং ডলফিন বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণ করে, কিন্তু পানিতেই জীবনযাপন করে। এর অর্থ তাদেরকে ঘনঘন পৃষ্ঠতলে উঠে আসতে হয় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করতে।

    সমালোচনা

    উত্তম নকশা এবং ট্রেড-অফ ব্যবস্থা

    অনেকেই এর সমালোচনায় বলে, যে সিস্টেম দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা একটা বাজে নকশা বা ওই সিস্টেমে বাজে খরচ হয়েছে আসলে এমনো হতে পরে, এটা ইচ্ছে করে করা হয়েছে। যেমনঃ ট্রেড অফ ব্যবস্থার মত। এটা এমন এক অবস্থা; যেখানে ইচ্ছে করে সিস্টেমে কোনো কিছু খারাপ করে, বাকি বিষয়গুলো উন্নত করা হয়, এর ফলে দেখা যায় পুরো সিস্টেমটাই ভালোভাবে চলছে।[৭] তড়িৎকৌশল প্রকৌশলির এমপ্লিফায়ারের যে ডিজাইন, তা থেকে একটা উদাহরণ প্রায়সই ব্যবহার করা হয়ঃ মনে করো, একজন তড়িৎপ্রকৌশলী নেগেটিভ ফিডব্যাক লুপ ব্যবহার করে, যাতে করে এমপ্লিফায়ার স্থায়িত্ব অর্জন করে। কিন্তু একজন সাধারণ পর্যবেক্ষক যখন তা পর্যবেক্ষণ করবেন, তার মনে হতেও পারে প্রকৌশলী ভুল করেছেন। কিন্তু এই low(কম) gain ইচ্ছাকৃত ছিল, এটা দেখে ভুল মনে হচ্ছে-কারণ পর্যবেক্ষকই প্রকৌশলীর কাজ সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিল।

    সুনির্দিষ্ট উদাহরণসমুহ

    পরিকল্পিত সৃজনবাদের প্রবক্তা উইলিয়াম ডেমবস্কি সন্তোষজনক ডিজাইন এবং পরিকল্পিত ডিজাইনের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করেন।[৮] জন উডমরাপে Creation Ministries International নামক ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লিখেন, তিনি সেখানে বলেছেন পাণ্ডার “অঙ্গুষ্ঠী “ পাণ্ডার পাতা ছিড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।[৯]

    এপেণ্ডিক্সকে দাবী করা হয়, জীবে এর কোনো কাজ নেই, কিন্তু গবেষকরা দেখিয়েছেন, এটা ফিটাসে এবং তরুণ যুবকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভ্রুণের বৃদ্ধির ১১তম সপ্তাহে ফিটাসের এপেণ্ডিক্সে এণ্ডোক্রিন কোষ তৈরী হয়, এই কোষ অনেক বায়োজেনিক এমাইন এবং পেপটাইড হরমোন তৈরী করে, যা জৈবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আর তরুণ বয়সে এপেণ্ডিক্স ইমিউনিটি সিস্টেম বা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কাজ করে।[১০]

    সৃষ্টিবাদী জোনাথান সারফাতি এবং অপথালমোলজিস্ট পিটার গার্নি যৌথভাবে Creation Ministries International ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লিখেন। সে আর্টিকেলে মানব চক্ষুর ডিজাইন ত্রুটিপুর্ণ, এই অভিযোগকে তারা নাকচ করে দেন। তাদের মতে যদি বিকল্পভাবে এই চোখের ডিজাইন করা হত, তাহলে তা আরো জটিলতার স্বীকার হত। এর চেয়ে এই নকশাই উত্তম এবং মানবচক্ষু ভালোভাবেই কাজ করছে।[১১][১২]

    সমালোচনার প্রতিউত্তর

    ত্রুটিযুক্ত নকশার বিপক্ষে যে সব যুক্তি আছে, তার বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিউত্তর দয়েছেন। উদাহরণস্বরুপঃ পাণ্ডার বৃদ্ধাঙ্গুলির ক্ষেত্রে, এই ক্ষেত্রে এই অভিযোগ করা হয় না যে এটা কাজ করে না, বরং এটা করা হয় যে; এই নকশাটা ত্রটিযুক্ত। বাস্তবে পরিবর্তিত কবজির হাড় থেকে হাতের অঙ্গুলি বেশি কর্যকরী হয়।

    দাবী করা হয়, জাঙ্ক ডিএনএর উপযোগিতা পাওয়া গেছে, এই দাবীর প্রতিউত্তরে ত্রুটিযুক্ত নকশার প্রবক্তরা বলেন, কিছু নন-কোডিং ডিএনএর কার্যকারীতা পাওয়া গেছে সত্যি, কিন্তু তার মানে তো এই না যে সকল নন কোডিং ডিএনএরই কার্যকারীতা আছে। মানবজাতিতে কিছু জিনকে সুডোজিন বলে, যা বাস্তবিকই অকার্যকর এবং জাঙ্ক।

    ঈশ্বরকে জড়িয়ে এই বিতর্ক

    দুর্বল ডিজাইন বলে যে বিতর্ক চলে আসছে, এই বিতর্কের বিতার্কিকরা কখনো কখনো ঈশ্বরের অস্তিত্বের অনুপস্থিতি বা দয়ালু, সর্বশক্তিমান ব্যক্তি ঈশ্বরকে বাতিল করে দেওয়ার জন্য এ বিতর্ককে ব্যবহার করেন । দুর্বল-নকশা অর্থে একে ঈশ্বরর অযোগ্যতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। দুর্বল নকশার উপস্থিতি (তাদের মতে, বিবর্তনের কারণেই শক্তির অপচয় হয় এধরনের অনেক কিছুই জীবে রয়ে গেছে ) এটাই প্রমাণ করে যে, যদি কেও জীবজগৎ কে ডিজাইন করে, তাহলে হয় সে অজ্ঞ ডিজাইনার বা অন্ধ নকশাকারী বা বাস্তবে কোনো নকশাকারীই নেই। গুল্ডের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ” যদি ঈশ্বর নিজের জ্ঞানের বিশালতা এবং ক্ষমতা প্রকাশ করতে চান তাহলে তিনি যে মেশিনটা বানাবেন নিশ্চয়ই সেখানে তিনি শুধু ফ্যাশন হিসেবে সেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করবেন না, যার কোনো কার্যকারিতা সেই মেশিনে নেই। অর্কিডকে দেখলেই বুঝা যায়, এটা কোনো আদর্শ মানের নকশাকারী তৈরী করে নি, বরং মনে হয় তড়িঘড়ি করে যেনতেন ভাবে তৈরী করা হয়েছে।….”[১৩]

    ধর্মে বিশ্বাসী বিবর্তনবাদীরা দুর্বল নকশাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য বলেন, স্রষ্টা তার সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন কেই ব্যবহার করেছেন।[১৪]

    আরও দেখুন

  • চাচাপোয়া

    চাচাপোয়া

    চাচাপোয়ারা হল আন্দিজ পার্বত্যাঞ্চলের একটি প্রাচীন জাতি। আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢালে, অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের বিপরীত দিকে, বর্তমান পেরুর আমাজন নদী সংলগ্ন আমাজোনাস অঞ্চলে তাদের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ইনকাদের সাথে তাদের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। বহু চেষ্টার পর অবশেষে স্পেনীয় আক্রমণের মাত্র বছর ষাটেক আগে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইনকারা তাদের নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়। চাচাপোয়া নামটিও তাদেরই দেওয়া, কেচুয়া ভাষায় যার মানে ‘মেঘ-যোদ্ধা’। এই অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অরণ্য (রেন ফরেস্ট) ও সবসময় আর্দ্র পরিবেশের জন্যই বোধহয় ইনকারা তাদের এমন নামে ডাকত।

    চাচাপোয়া

    তবে চাচাপোয়াদের সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য হাতে পাওয়া যায় না। কারণ তাদের সম্বন্ধে স্পেনীয় ও ইনকাদের রেখে যাওয়া প্রত্যক্ষ বিবরণ নিতান্তই স্বল্প। এইকারণেই তাদের উপর তথ্যর প্রয়োজনে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির উপরই বেশি নির্ভর করতে হয়। যাইহোক, তাদের সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ পাওয়া যায়, তার অন্যতম হল স্পেনীয় বিজেতা ও ঐতিহাসিক পেদ্রো সিয়েজা দে লেওনের লেখা বর্ণনা। তিনি চাচাপোয়াদের সমগ্র আমেরিন্ডীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ফরসা ও সুন্দর বলে উল্লেখ করেছেন।[১] এর থেকে বোঝা যায় অন্য আন্দীয় জাতিগুলির থেকে এরা ছিল কিছুটা আলাদা। তবে পেরুর ইনস্তিতুতো দে আরকেওলখিয়া আমাজোনিকার প্রত্নতাত্ত্বিকরা চাচাপোয়াদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী পরীক্ষা করে অভিমত প্রকাশ করেন যে তারা সংস্কৃতিগত দিক থেকে আমাজনীয় জাতিগুলির থেকে আন্দীয় জাতিগুলিরই বেশি কাছাকাছি ছিল।

    ইতিহাস

    কুয়েলাপ দুর্গর ভগ্নাবশেষ ও চারপাশের দৃশ্য

    যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণাদি থেকে বুঝতে পারা যায়, ২০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সময় থেকেই আন্দিজ পর্বতের পূর্বঢালের এই আমাজন অরণ্যাঞ্চলে মানুষের বসতি ছিল, চাচাপোয়াদের সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাসময় হিসেবে সাধারণত ৭৫০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দকেই ধরা হয়। এদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটি বিশাল দুর্গ – কুয়েলাপগ্রান পাহাতেন, পাহাড়ের চূড়ার উপর তৈরি আরেকটি দেওয়াল ঘেরা প্রাচীন বসতির ধ্বংসস্তূপ। দুটি জায়গাতেই সামরিক প্রয়োজনে নির্মাণের দিকটি পরিষ্কার ফুটে ওঠে।[২] মনে হয় উয়ারিদের (চাচাপোয়াদের সমসাময়িক এই সংস্কৃতি আন্দিজের ঠিক উলটো ঢালে এইসময় বিকাশ লাভ করেছিল ও পর্বতের উচ্চভূমি থেকে একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।) হাত থেকে প্রতিরক্ষার খাতিরেই তারা এগুলি, গড়ে তুলেছিল। এর থেকে তাদের ‘যোদ্ধা’ পরিচয়টিরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এছাড়াও কুয়েলাপ’এর অদূরেই তাদের একটি কবরস্থান কারাহিয়াও আবিষ্কৃত হয়েছে।[৩] তবে পঞ্চদশ শতকে ইনকারা আন্দিজ পর্বত পেরিয়ে তার পূর্বঢালের দিকে অগ্রসর হলে, চাচাপোয়াদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তারা ইনকাদের হাতে পরাজিত হয়। তাদের একরকম জোর করেই দলে দলে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। তাদের পরপর বিভিন্ন বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়। এই কারণেই হয়তো স্পেনীয়রা যখন এই অঞ্চলে প্রবেশ করে, ইনকাদের বিরুদ্ধে বহুক্ষেত্রে চাচাপোয়ারা স্পেনীয়দেরই পক্ষাবলম্বন করে। যাইহোক, ১৫৪৭’এর পর চাচাপোয়াদের স্বাধীন অস্তিত্ব স্পেনীয় ঔপনিবেশিক সৈন্যদের হাতেই খর্বিত হয় ও পরবর্তী সময়ে প্রবল অত্যাচার, দারিদ্র ও মহামারীতে তাদের জনসংখ্যা প্রবলভাবে হ্রাস পায়।[৪]

    ১৪৭৫ সালে যখন চাচাপোয়ারা ইনকাদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় তখন তাদের জনসংখ্যা ছিল মোটামুটি ৫ লক্ষ বলে আন্দাজ করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে একটা বড় অংশকে (গবেষক এস্পিনোথা[৫] ও পেটার লেরখের[৬] মতে জনসংখ্যার প্রায় ৫০%কেই) সেই সময় অন্যত্র, বিশেষত তিতিকাকা হ্রদকুসকোতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। ইনকাদের আমলে করদাতাদের সংখ্যার যে হিসেব পাওয়া গেছে, তার উপরে নির্ভর করে আন্দাজ করা হয়, স্পেনীয় বিজেতাদের আগমণের কালে এদের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ১ লক্ষে।[৭]

    বিতর্ক

    যদিও সাধারণভাবে ৭৫০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দকে চাচাপোয়া সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাপর্ব হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এর সঠিক সময় নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের অবকাশ রয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে বর্তমানে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাদের দৈত্যাকার দুর্গ কুয়েলাপএর নির্মাণের সময়কাল নিয়েও। এই দু’টিই কিছুদিন আগে পর্যন্তও ধরা হত ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ আলফ্রেদো নার্বায়েথ এই দুর্গের নির্মাণকার্যের সঠিক সময় বের করার উদ্দেশ্যে যে রেডিওকার্বন পরীক্ষা চালান, তাতে উঠে আসে এই দুর্গটির অন্তত কিছু অংশ ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমদিকে, অর্থাৎ ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। সেই হিসেবে ষষ্ঠ শতাব্দকে দুর্গটির নির্মাণকার্যের সূচনাপর্ব বলে ধরা যেতেই পারে। এর মানে দাঁড়ায় চাচাপোয়া সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাপর্বকেও অন্ততপক্ষে সেই সময়ে বা তার কিছুটা আগে বলেই ধরতে হবে।[৮][৯] ১৯৮০ থেকে এই অঞ্চলে পড়ে থেকে গবেষণা চালিয়ে আসা জার্মান বংশোদ্ভূত বর্তমানে পেরুর নাগরিক গবেষক পেটার লেরখেরও মতে এ’ধরনের একটি নির্মাণকার্য করার একটি পূর্বশর্তই হল – একেবারে নতুন কোনও সংস্কৃতি, যাদের এ’ধরনের নির্মাণকার্যের কোনওরকম পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই, তাদের পক্ষে এইরকম দুর্গনির্মাণ সম্ভবই নয়। তার গবেষণার তাই ইঙ্গিত এই সংস্কৃতির সূচনাপর্ব বাস্তবে নিশ্চয়ই আরও প্রাচীন, হয়তো বা আজ থেকে ২০০০ বছর আগেই এর বিকাশ আরম্ভ হয়।[১০]