Tag: ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্ট

  • উত্তর হিসপানিয়া

    উত্তর হিসপানিয়া

    উত্তর হিসপানিয়া বা নিকট হিসপানিয়া (লাতিন ভাষাHispania Citerior; স্পেনীয় ভাষাHispania Cercana, উচ্চারণ – ইসপানিয়া থেরকানা) বর্তমান স্পেনের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী একটি রোমান প্রদেশ। দ্বিতীয় পুনিক যুদ্ধে কার্থেজীয়দের কাছ থেকে ইবেরীয় উপদ্বীপের কর্তৃত্ব রোমান প্রজাতন্ত্রের হাতে আসার পর খ্রিস্টপূর্ব ১৯৭ অব্দে রোমানরা পিরেনিজ পর্বতের দক্ষিণে উপদ্বীপের তাদের নিজেদের কর্তৃত্বাধীন অঞ্চলকে প্রশাসনিকভাবে দু’টি প্রদেশে ভাগ করে। এর মধ্যে উত্তরের, অর্থাৎ রোম থেকে অপেক্ষাকৃত নিকট প্রদেশটির নাম দেওয়া হয় “নিকট হিসপানিয়া” বা “উত্তর হিসপানিয়া”। এই প্রদেশটি উত্তরে পিরেনিজ থেকে উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল ধরে বর্তমান স্পেনের উপকূলীয় শহর কার্তাখেনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[১][২]

    উত্তর হিসপানিয়া

    এই প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছু বিতর্ক আছে। আগে মনে করা হত এই প্রদেশের প্রধানদপ্তর প্রথমে কার্তাখেনা নোভা (বর্তমান কার্তাখেনা) থেকে পরিচালিত হলেও পরে সিজার অগাস্টাসের সময়ে তা তারাকো শহরে (বর্তমান তারাগোনা) স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু এখন মনে করা হয়, প্রথম থেকেই প্রশাসনিক দপ্তর হিসেবে কার্তাখেনার পাশাপাশি তারাকোকেও ব্যবহার করা হত।[৩] রোমান ভৌগোলিক স্ট্রাবোর লেখাও এর সাক্ষ্য বহন করে। [৪] পরবর্তীকালে প্রজাতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটলে সিজার অগাস্টাসের সময় উত্তর হিসপানিয়াও একটি রাজতান্ত্রিক প্রদেশে রূপান্তরিত হয়। এইসময় তারাকো থেকেই এর প্রশাসন পরিচালিত হওয়ায় একে হিসপানিয়া তারাকোনেনসিস নামেও অভিহিত করা হতে থাকে। তবে সরকারিভাবে তখনও পর্যন্ত হিসপানিয়া থিতেরিওর বা নিকট হিসপানিয়া নামটিই বজায় ছিল।[৫] এই প্রদেশের অন্যান্য শহরের মধ্যে সাগুন্তুম (বর্তমান নাম সাগুন্তো, ভ্যালেন্সিয়া শহরের উত্তরে অবস্থিত) ও ইয়েরদা (বর্তমান ইয়েইদা) উল্লেখযোগ্য।

    হিসপানিয়া থিতেরিওরের রোমান প্রশাসন এই প্রদেশের পশ্চিমে বসবাসকারী থেলতিবেরীয়দের সাথে বারেবারে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পশ্চিমের বিভিন্ন অঞ্চলেও রোমের কর্তৃত্ব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। সম্রাট অগাস্টাস খ্রিস্টপূর্ব ২৭ অব্দে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হলে রোমের অধীন বিভিন্ন প্রদেশগুলিকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। এইসময়ে হিসপানিয়া থিতেরিওরের সাথে আরও বেশ কিছু অঞ্চল যুক্ত করা হয় এবং সেই বৃহত্তর প্রদেশটিকে সাধারণভাবে হিসপানিয়া তারাকোনেনসিস নামে অভিহিত করা শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২৯ – ১৯ অব্দে কান্তাব্রীয় যুদ্ধে[৬] রোমানদের জয়ের ফলে প্রায় সমগ্র ইবেরীয় উপদ্বীপ রোমানদের অধীন হয়ে পড়লে হিসপানিয়া তারাকোনেনসিসের আয়তন প্রভুত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। হিসপানিয়া থিতেরিওর নামটি এইসময় থেকেই অপ্রচলিত হয়ে পড়ে।

  • আবিষ্কারের যুগ

    আবিষ্কারের যুগ

    আবিস্কারের যুগ, বা অনুসন্ধানের যুগ (আনুমানিক ১৫শ শতাব্দীর শুরু থেকে সপ্তাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি), বলতে সেই সময়কে বুঝায় যার মাধ্যমে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ব্যাপক সমুদ্র অভিযানের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায় এবং বিশ্বায়নের সূচনা করে। এটি সেই সময়কেও নির্দেশ করে যখন ইউরোপে উপনিবেশবাদ এবং বাণিজ্যবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটে এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয় নীতি হিসবে গৃহীত হয়। এসময় ইউরোপীয়দের কাছে অজানা অনেক নতুন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার হয় যেখানে আগে থেকেই জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। আর অইউরোপীয়দের কাছে এটা ছিল অজানা কোনো মহাদেশ থেকে আক্রমণকারীদের আগমনের শামিল।

    আবিষ্কারের যুগ

    অনুসন্ধানের ধারা শুরু হয় পর্তুগিজদের ১৪১৯ এবং ১৪২৭ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের ম্যাদিরা ও আজোরো দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার, ১৪৩৪ সালে আফ্রিকার উপকূল, ১৪৯৮ সালে ভারত আগমনের সমুদ্রপথ আবিষ্কার, স্পেনের রাজার সহয়তায় ১৪৯২ সাল থেকে ১৫০২ সাল পর্যন্ত ক্রিস্টফার কলম্বাসের আমেরিকা অভিযানের এবং মেগানলেসের ১৫১৯-১৫২২ সালের মধ্যে প্রথম পুরো পৃথিবী পরিভ্রমণের মাধ্যমে। এই সব আবিষ্কারগুলো আটলান্টিক,ভারত,প্রশান্ত মহাসাগরগুলোতে সমুদ্র অভিযান এবং আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্টেলিয়াতে স্থল অভিযানের দিকে ধাবিত করে, যা ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত বজায় ছিল এবং শেষ হয় বিংশ শতাব্দীর মেরু অঞ্চল অনুসন্ধানের মাধ্যমে।

    ইউরোপিয়ানদের এরকম অভিযানের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের এবং প্রাচীন বিশ্ব (ইউরোপ,এশিয়া,আফ্রিকা) ও নতুন বিশ্ব (আমেরিকা ও অস্টেলিয়া) এর সংযোগের মাধ্যমে উপনিবেশ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। পাশাপাশি কলম্বিয়ান বিনিময়ের মাধ্যমে বৃক্ষ, পশু, খাদ্য, মানব জনসংখ্যা ( দাসসহ),সংক্রামক রোগ জীবাণু এবং সংস্কৃতি পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধের মাঝে বিনিময় ঘটে।

    বৈশ্বিক বাস্তুসংস্থান, কৃষি ও সংস্কৃতিতে বিশ্বায়নের এই ঘটনা সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। কারণ আবিষ্কারের যুগ এবং ইউরোপিয়ানদের অভিযানের পরেই পৃথিবীর বৈশ্বিক মানচিত্র তৈরি, নতুন বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি এবং দূরবর্তী সভ্যতার কাছে আসার সুযোগ হয়। কিন্তু পাশাপাশি ইউরোশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন রোগের আগমন ঘটে যা আগে ছিল না, এর সাথে ইউরোপ কর্তৃক স্থানীয়দের দাস বানানো, শোষণ করা, তাদের উপর আধিপাত্য বিস্তার করা হয় এবং উপনিবেশ স্থাপন করে। আর এর মাধ্যমে খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা খ্রিস্ট ধর্ম পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে।[১][২]

    পর্যালোচনা

    প্রধান যাত্রাসমূহের মানচিত্র। নিচে বিস্তারিত দেখুন

    যুবরাজ হেনরির সহায়তায় পর্তুগিজরা প্রথম ১৪১৮ সাল থেকে আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলীয় এলাকা অনুসন্ধান শুরু করে। তারা কারভাল নামে নতুন হালকা জাহাজ তৈরি করে যা আরো বেশি পাল্লার এবং দ্রুত,[৩] পাশাপাশি এটা ছিলো খুব অল্প ও খুব বেশি বাতাসেও চলার উপযোগী ছিলো। ১৪৮৮ সালে বার্টোমুলো দিয়াজ এই পথে ভারত মহাসাগরে পৌঁছে

  • আফ্রিকার ইতিহাস

    আফ্রিকার ইতিহাস

    আফ্রিকার ইতিহাস হলো পূর্ব আফ্রিকায় হোমিনিড নামক প্রাচীন মানব এবং প্রায় ৩০০০-২৫০,০০ বছর আগে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর উত্থানের সময় থেকে বৈচিত্র্যময় এবং রাজনৈতিক উন্নয়নশীল জাতি রাষ্ট্রগুলির সৃষ্টির পর থেকে আফ্রিকার বর্তমান অবস্থা। প্রাচীন মিশরে এবং পরবর্তীতে নুবিয়া,সাহিল,মাগরেব এবং আফ্রিকার শৃঙ্গে প্রথম নথিভুক্ত ইতিহাসের উদ্ভব ঘটে।

    আফ্রিকার ইতিহাস

    উপনিবেশ কালের পূর্বের আফ্রিকা

    একজন রাজকীয় অশ্বারোহী যোদ্ধা

    হোমিনিড এবং হোমো স্যাপিয়েন্স এর বিবর্তন

    প্রস্তর যুগের সময়কালীন আফ্রিকান দ্বিখণ্ডিত শিল্পকলা (বর্শার তীক্ষ্ণ অংশ)

    হোমিনিন উপ-পরিবার এবং হোমো গণ এই উভয়টির জন্মস্থান হল আফ্রিকা। এদের অন্তর্ভুক্ত ৮টি প্রজাতিরই প্রথম জন্ম হয়েছে আফ্রিকায় যার মধ্যে কেবল হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতিটিই বর্তমানে অস্তিত্বশীল রয়েছে।

    জীবাশ্মবিদ্যা এবং প্রত্নতত্ত্বের সর্বাধুনিক ব্যাখ্যা অনুসারে আজ থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে হোমিনিডদের অস্তিত্বশীলতার সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া যায়। এই প্রাণীগুলো ছিল অনেকটাই তাদের নিকটতম প্রতিবেশী বৃহৎ আফ্রিকান উল্লুকের মত। কিন্তু হোমিনিডদের দ্বিপদী চলন প্রক্রিয়া ছিল যা তাদেরকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল বিপুলভাবে। কারণ দ্বিপদী চলনের কারণেই তারা বনাঞ্চল এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার উষ্ণমন্ডলীয় বৃক্ষহীন সমতলভূমি এই উভয় স্থানেই বসবাসে পারঙ্গম ছিল। তারা এমন একটি সময় এই সুবিধা ভোগ করছিল যখন আফ্রিকা ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে উঠছিল এবং বনাঞ্চল হ্রাস পেয়ে উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। এভাবেই প্রায় ৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে বেশ কিছু অস্ট্রালোপিথেকাইন হোমিনিড প্রজাতি আফ্রিকার দক্ষিণ, পূর্ব এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।

    এরপর বিবর্তনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ধাপ ছিল হোমো হ্যাবিলিস এর বিবর্তন যা আজ থেকে প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে সংঘটিত হয়। এরাই প্রথম প্রজাতি যারা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রস্তুতে সক্ষম ছিল। এই সক্ষমতার কারণে হোমো হ্যাবিলিসরা প্রথম মাংস ভক্ষণ শুরু করে। তারা নিজেদের প্রস্তুতকৃত হাতিয়ার ব্যবহার করে অন্য জন্তুদের শিকারকৃত প্রাণী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার হিসেবে গ্রহণ শুরু করে। এছাড়াও এসময় থেকেই প্রথম তারা মৃত প্রাণীদের শবদেহ সংরক্ষণ শুরু করে যা থেকে তারা অস্থি ও মজ্জা সংগ্রহ করে। তবে হোমো হ্যাবিলিসরা বড় শিকারী প্রাণীদের সাথে শিকারে পেরে উঠতোনা এবং অধিকাংশ সময়ই শিকার করার পরিবর্তে শিকারে পরিণত হতো। শিকারের পাশাপাশি তারা পাখির বাসা থেকে ডিম চুরি, ছোটোখাটোো প্রাণী এবং দূর্বল কিন্তু বড় প্রাণী শিকার করতো।

    প্রায় এক মিলিয়ন বছরের পূর্বে বিবর্তিত হয় হোমো ইরেক্টাস। এদের মস্তিষ্কের আকৃতি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ (১,০০০ সিসি) ছিল যার সাহায্যে এরা আরো কার্যকর পাথরের অস্ত্র বানাতে সক্ষম হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে আফ্রিকান সমতলভূমির সবচেয়ে দূর্ধর্ষ শিকারীতে পরিণত হয়। হোমো ইরেক্টাসরাই প্রথম আগুনের ব্যবহার করতে শিখে এবং এদের মধ্যে অনেকেই আফ্রিকা ত্যাগ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং বিবর্তিত হয়ে হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিসে পরিণত হয়।

    জীবাশ্মের নমুনা এটিই নির্দেশ করে যে ১০০,০০০ – ১৫০,০০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকায় হোমো স্যাপিয়েন্সদের বসতি ছিল। ভাষাতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক প্রমাণাদি থেকে পরবর্তিতে আফ্রিকা থেকে অনেক মানুষের বহির্গমনের নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়া আফ্রিকাতেও অনেক মানুষ আসে আর এসবের বিস্তারি বিবরণ উদ্ধার করা হয়েছে কম্পিউটারের সাহায্যে জীনগত গবেষণার মাধ্যমে।

    প্রাগৈতিহাসিক নিওলিথিক সংস্কৃতি

    উত্তর আফ্রিকা

    বর্তমানে প্রাপ্ত নিওলিথিক যুগের কিছু খেদাইকৃত শিলিলিপি এবং সাহারা মরুভূমিতে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক যুগের স্মৃতিস্তম্ভের বৃহৎ আকারের বেশ কিছু প্রস্তরখন্ড হতে যা জানা গেছে সে অনুসারে তুষার যুগে উত্তর আফ্রিকার শুষ্ক ঘাসাচ্ছাদিত সমতলভূমিতে শিকারী এবং পশু ও ফসল সংগ্রহকারী সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে যেখানে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত সেখানে প্রাচীনকালের এক সময় ভালোরকমের কৃষিকাজ হত বলেও জানা গেছে। কিন্তু যখন সাহারার মরুকরণ শুরু হয় তখন এখানকার কৃষিজীবী জনগণ নীল নদের উপত্যকায় বসবাসের মাধ্যমে সেখানে কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করে। সেখানেই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তিভূমি স্থাপিত হয়। তবে এই স্থাপনকালে মিশরে শিক্ষা-দীক্ষার প্রচলন হয়নি। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এটিই প্রতীয়মান হয় যে নীল নদের উপত্যকা জুড়ে মানব বসতির ইতিহাস ফারাও রাজাদের সাম্রাজ্য স্থাপনের ইতিহাসের চেয়েও অনেক পুরনো। এই অঞ্চলে প্রায় ৬০০০ খৃস্টপূর্বাব্দে সুসংঘটিত কৃষিকাজের সূচনা ঘটে।

    সাব-সাহারান আফ্রিকা

    আরও দেখুন

    দেআফ্রিকার ইতিহাস
    সার্বভৌম রাষ্ট্রআলজেরিয়া • ইথিওপিয়া • ইরিত্রিয়া • উগান্ডা • অ্যাঙ্গোলা • কঙ্গো • গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো • ক্যামেরুন • কেনিয়া • কেপ ভের্দি • কোত দিভোয়ার • কোমোরোস • গাবন • গাম্বিয়া • গিনি • গিনি-বিসাউ • ঘানা • চাদ • জাম্বিয়া • জিবুতি • জিম্বাবুয়ে • টোগো • তানজানিয়া • তিউনিসিয়া • দক্ষিণ আফ্রিকা • নাইজেরিয়া • নামিবিয়া • বিষুবীয় গিনি • বুর্কিনা ফাসো • বুরুন্ডি • বেনিন • বতসোয়ানা • মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র • মরক্কো • মরিশাস • মাদাগাস্কার • মালাউই • মালি • মিশর • মোজাম্বিক • মৌরিতানিয়া • রুয়ান্ডা • লাইবেরিয়া • লিবিয়া • লেসোথো • সুদান • সাঁউ তুমি ও প্রিঁসিপি • সিয়েরা লিওন • সেনেগাল • সোমালিয়া • সোয়াজিল্যান্ড
    অধীনস্থ,
    স্বায়ত্তশাসিত এবং
    অন্যান্য প্রশাসনিক অঞ্চল
    ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ / সেউতা / মেলিয়া (স্পেন)  • মাদেইরা (পর্তুগাল)  • মায়োত / রেউনিওঁ (ফ্রান্স)  • পান্টল্যান্ড  • সেন্ট হেলিনা (যুক্তরাজ্য)  • সোকোত্রা (ইয়েমেন)  • সোমালিল্যান্ড  • দক্ষিণ সুদান  • পশ্চিম সাহারা  • জাঞ্জিবার (তানজানিয়া)


    আফ্রিকা বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পুর্ণ, আপনি চাইলে এটিকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা

    আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা

    আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি বিতর্কিত তত্ত্ব। এই তত্ত্বর মূল উপজীব্য বিষয় হল, দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর যে সুপ্রাচীন সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, সেই সভ্যতার ভিত্তি পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে গড়ে ওঠা সেই সময়ের অন্যান্য সুপ্রাচীন সভ্যতার মতো কৃষি ছিল না; বরং খাদ্যের জন্য এই সুপ্রাচীন সভ্যতার মানুষ মূলত সমুদ্রজাত নানা খাদ্যর উপর নির্ভর করতো।

    আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা

    মধ্য পেরুর সমুদ্রোপকূলবর্তী বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক খননস্থলে বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক খননকার্য চালানো হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৭০’এর দশকে আসপেরো নামক স্থানে চালানো খননকার্য। এই খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মাইকেল এডওয়ার্ড মোজলি প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,এই সভ্যতার মূল ভিত্তি ছিল সমুদ্রজাত খাদ্য। শস্যজাতীয় খাদ্য সিদ্ধ করার উপযোগী কোনওরকম মৃৎপাত্রের অণুপস্থিতি তাদের এই সিদ্ধান্তকেই আরও জোরদার করে। খনন অঞ্চলে উঁচু প্ল্যাটফর্মের উপর পাওয়া ছোট ছোট ঢিবি বা স্তূপ থেকে তারা আন্দাজ করেন এগুলি আসলে প্রাণীজ খাদ্য প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত উনুনজাতীয় বস্তুরই অবশেষ মাত্র।[১] এর উপর ভিত্তি করেই এরপর থেকে আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতার তত্ত্ব ঐতিহাসিক মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[২]

    তবে এই তত্ত্ব তাদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্কেরও জন্ম দেয়। কারণ সাধারণভাবে স্বীকৃত তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনও জায়গায় সভ্যতার উত্থানের পিছনে সেখানকার মানুষের কৃষিনির্ভরতা, বিশেষ করে অন্তত একটি শস্যের ব্যাপক চাষের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ উদ্বৃত্ত খাদ্য ব্যতীত জনঘনত্ব বৃদ্ধি ও কিছু সংখ্যক মানুষের সরাসরি খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার সুযোগ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। ফলে অপেক্ষাকৃত জটিল সমাজব্যবস্থার উদ্ভবের জন্য অন্তত একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত কৃষির উন্নতি খুবই প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে যেখানেই স্বতন্ত্রভাবে সুপ্রাচীন সভ্যতাগুলির বিকাশ ঘটেছে, সেখানেই এই বিষয়টির সত্যতা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতার তত্ত্ব এই স্বীকৃত তত্ত্বটিকেই একরকম চ্যালেঞ্জ করে বসে। ফলে তা ঐতিহাসিক মহলে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়।

    পরবর্তীকালে ঐ অঞ্চলের কাছাঁকাছি আরও বিভিন্ন স্থলে আরও অনেকগুলি খননস্থলে ঐ একই সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে বিখ্যাত পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ রুথ শেডি সলিসের নেতৃত্বে সমুদ্রোপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে কারাল নামক স্থানে যে খননকার্য চলে, তার ফলে ঐ অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ৯০০০[৩] অব্দ থেকে শুরু করে যে পরস্পর সংযুক্ত এক বিস্তীর্ণ সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল, তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কারাল’এ এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে ঐ স্থলের নামানুসারে এই সভ্যতাকে সাধারণত কারাল সভ্যতা বলে অভিহিত করা হয়। এই সভ্যতার বিকাশের সর্বোত্তম সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ – ১৮০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কাল।[৪] এইসব স্থলে খননকার্যে একদিকে যেমন সমুদ্রজাত খাদ্যের নানা নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, অন্যদিকে কৃষিরও বেশ কিছু চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে। এই তথ্যের উপর নির্ভর করে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে জোনাথন হাস, উইনিফ্রেড ক্রিমার, প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদ এই তত্ত্বর তীব্র বিরোধিতা করেন।[৫] তবে চার্লস মান প্রমুখ বিশেষজ্ঞ আবার এই তত্ত্বর সত্যতার সম্ভাবনার পক্ষেই মতপ্রকাশ করেছেন।[৬]

    বিতর্ক

    কারালে প্রাপ্ত চুল্লীর ধ্বংসাবশেষ

    ১৯৭০’এর দশকে যখন প্রথম এই তত্ত্বটির উদ্ভব ঘটে, তখন থেকেই তাকে ঘিরে তীব্র বিতর্কেরও জন্ম হয়। বহু প্রত্নতত্ত্ববিদই প্রশ্ন তোলেন, সামুদ্রিক ও সমুদ্রজাত খাদ্যর যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের উপর ভিত্তি করে এই তত্ত্বকে সামনে আনা হয়েছে, সেইসব খাদ্য মানুষকে কত ক্যালোরি শক্তি জোগাতে সক্ষম? সেই সব খাদ্যজাত পুষ্টির উপর নির্ভর করে একটি সভ্যতা গড়ে ওঠাই বা কতটা সম্ভব?[৭] অবশ্য তখনও পর্যন্ত এই সভ্যতার মূলত বিভিন্ন সমুদ্রোপকূলবর্তী খননস্থলগুলিতেই অণুসন্ধান চালানো হয়েছিলো এবং সেখানে প্রাপ্ত তথ্যর উপর ভিত্তি করেই এই তত্ত্ব গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ৯০’এর দশকে সমুদ্র থেকে বেশ খানিকটা ভিতরে বিভিন্ন স্থলে এবং বিশেষ করে কারালে এই সভ্যতার এক বিশাল কেন্দ্র আবিষ্কৃত হওয়ায় এই তত্ত্ব আরও প্রশ্নের মুখে পড়ে। কারণ –

    1. এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত এই সভ্যতার সর্ববৃহৎ এই কেন্দ্রটি সমুদ্র থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত। অর্থাৎ এতদিন ধরে যে ধারণা ছিল যে এই সভ্যতা ছিল মূলত সমুদ্রোপকূলবর্তী কিছু ছোট ছোট গ্রামেই সীমাবদ্ধ, তা ঠিক নয়।
    2. কারালে খননকার্যে সেইসময়ে ব্যবহৃত কিছু কিছু শস্যফল উৎপাদনকারী ও কন্দজাতীয় উদ্ভিদের অস্তিত্বর প্রমাণ পাওয়া যায়। এগুলি হল স্কোয়াশ, কয়েকরকমের বিনস, পেয়ারা, লুকুমা, মিষ্টি আলু, প্রভৃতি।[৮] পরবর্তীকালে জোনাথন হাস প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদরা আরও উত্তরে কিছু খননস্থলেও এই উদ্ভিদগুলির খোঁজ পান। তার সঙ্গে তারা আভোকাডো, আচিরা, প্রভৃতি আরও কিছু উদ্ভিদের ব্যবহারেরও প্রমাণ পান। বর্তমানে এই সভ্যতার বিভিন্ন খননস্থলগুলি থেকে সে’ সময় মেইজেরও যে প্রচলন ছিল, তা নিশ্চিতভাবেই জানতে পারা গেছে।[৯]
    3. পেরুর এই উপকূলীয়় অঞ্চল যদিও প্রচণ্ড শুষ্ক একটি অঞ্চল, কিন্তু এই সঙ্কীর্ণ উপকূলীয় উপত্যকা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে পূর্বের সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা বরফ গলা জলে পুষ্ট অন্তত ৫০টি ছোট ছোট নদী বয়ে গেছে। এই সভ্যতার যেসব কেন্দ্রগুলির ধ্বংসাবশেষ সমুদ্র থেকে দূরে দেশাভ্যন্তরে খুঁজে পাওয়া গেছে, সেগুলি বেশিরভাগই এই সব নদীগুলি বা তার থেকে কাটা কিছু খালের পাশে অবস্থিত। এইসব খালের অস্তিত্ব স্বভাবতই একধরনের সেচব্যবস্থা ও কৃষির ইঙ্গিতবাহী; আর এই খালগুলির পাশে সভ্যতার কেন্দ্রগুলি গড়ে ওঠাই কৃষির উপর তাদের একধরনের নির্ভরতার প্রতি নির্দেশ করে।

    তৃণনির্মিত থলি – কারাল

    এতৎসত্ত্বেও আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতার তত্ত্বটিকে বাতিল পরিগণিত করা যায় না। কারণ –

    1. সামুদ্রিক বা সমুদ্রজাত খাদ্যের আধিক্য এই সভ্যতার এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সমুদ্রোপকূল ও দেশাভ্যন্তর – সর্বত্রই এই ধরনের খাদ্য ব্যবহারের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকী কারালেও খননকার্য চলাকালীন রুথ শেডি সলিস লক্ষ্য করেন “অসংখ্য প্রাণীজ ভুক্তাবশেষ, যার প্রায় পুরোটাই সামুদ্রিক”। এর মধ্যে শামুক বা ঝিনুকের খোল থেকে শুরু করে অ্যাঙ্কোভি, সার্ডিন, প্রভৃতি মাছের কাঁটা ও হাড়, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।[৮] বিশেষ করে অ্যাঙ্কোভি মাছের অবশেষ থেকে পরিষ্কার যে এই মাছ দেশাভ্যন্তরেও খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত।[৬] অর্থাৎ সাধারণভাবে এটা বলা যেতেই পারে যে, এই সভ্যতার মানুষ খাদ্যের জন্য মূলত সমুদ্রজাত বিভিন্ন খাদ্যের উপরই নির্ভর করতো।
    2. আরও একটি বিষয় সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে আজ ঐতিহাসিকরা অনেকটাই নিশ্চিত। তা হল এই সভ্যতা্র অন্যতম কৃষিজ উৎপাদন ছিল একধরনের তুলো (Gossypium barbadense; গসিপিয়াম বারবাডেন্স প্রজাতির)। এই তুলো থেকে তৈরি সুতো দিয়েই মাছ ধরার জাল তৈরি হত। এছাড়া একধরনের লম্বা ঘাসও এখানে উৎপন্ন হত, যার থেকে শক্ত থলি তৈরি করা হত। কারাল অঞ্চলের খননকার্যে এইধরনের তৃণনির্মিত থলির নিদর্শন পাওয়া গেছে।[১০] অর্থাৎ, কৃষিজ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যের জন্য এই সভ্যতার মানুষ মূলত সামুদ্রিক খাদ্যের উপরই নির্ভরশীল ছিল, যদিও সেই খাদ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কৃষিজ ফসলের উপরই নির্ভর করতে হত।

    পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্ব

    এই কারণেই এই অঞ্চলে সুপ্রাচীন সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে বর্তমানে একধরনের পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্ব জোরদার হয়ে উঠেছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, দেশাভ্যন্তরের বিভিন্ন কেন্দ্রগুলির মূল ভিত্তি ছিল এই তুলো ও ঘাসের চাষ ও তার থেকে নানাধরনের প্রয়োজনীয় জাল, কাপড়, থলি, প্রভৃতির উৎপাদন বজায় রাখা। অন্যদিকে উপকূলীয় কেন্দ্রগুলির মূল উৎপাদন ছিল মাছ ও সমুদ্রজাত খাদ্য, যার উপর স্থলাভ্যন্তরের কেন্দ্রগুলিও নির্ভরশীল ছিল। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করেই বর্তমানে উপকূল ও দেশাভ্যন্তরের কেন্দ্রগুলির এই পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্বই জোরদার হয়ে উঠেছে।

  • আন্দীয় সভ্যতা

    আন্দীয় সভ্যতা

    দীর্ঘতম পর্বতমালা হলো দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা। এই পার্বত্য ভূভাগে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল, যাদের মধ্যে কতগুলি হল অতি প্রাচীন। সম্মিলিতভাবে এসব সভ্যতাকেই মূলত আন্দীয় সভ্যতা বলা হয়ে থাকে। উত্তরে আজকের কলম্বিয়া থেকে দক্ষিণে আতাকামা মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল ভূভাগে এই সভ্যতাগুলির বিকাশ ও বিস্তৃতির সাক্ষ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে আজকের পেরু ছিল এইসব প্রাচীন সভ্যতার বিকাশের কেন্দ্রভূমি।[১][২] অবশ্য তার বাইরেও তিওয়ানাকু, প্রভৃতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার অস্তিত্বর কথাও আমরা জানতে পারি।

    আন্দীয় সভ্যতা
    OLYMPUS DIGITAL CAMERA

    ইনকা সাম্রাজ্য ছিল পেরুর স্পেনীয় বিজয়ের পূর্বে এই অঞ্চলের প্রাচীন আমেরিন্ডিয়ান অধিবাসীদের শেষ স্বাধীন রাজনৈতিক অস্তিত্ব। এমনকী তাদের সাম্রাজ্যেও কিন্তু আমরা দেখতে পাই বহু জাতি, ভাষা ও সভ্যতার আলাদা আলাদা অস্তিত্ব বজায় ছিল। এরা যদিও সবাই ইনকাদের শাসনের অধীনেই ছিল, সকলের তাদের প্রতি সমান আনুগত্য ছিল না, সকলের সংস্কৃতিও একইরকম ছিল না। যেমন চিমুরা মুদ্রার ব্যবহার করতো, কিন্তু ইনকা সাম্রাজ্যে তার ব্যবহার ছিল না। সেখানে বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই বাণিজ্য চলতো। আবার চাচাপোয়ারা ইনকাদের অধীনতা মানতে বাধ্য হলেও বাস্তবে তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্নই রয়ে গিয়েছিল। এই কারণেই স্পেনীয়দের সাথে তাদের লড়াই শুরু হলে চাচাপোয়া অভিজাতদের এক বড় অংশ ইনকাদের পরিবর্তে স্পেনীয়দেরই সাহায্য করে।[৩]

    ১৫২০‘র দশকের শেষের দিকে এই অঞ্চলে স্পেনীয়দের আবির্ভাব[৪][৫] ও তারপর থেকে তাদের উপনিবেশের ক্রমাগত বিস্তারের ফলে এই অঞ্চলে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক যে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা ঘটে, তার ফলেই এই অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন ঘটে ও ইউরোপীয় ধারার সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে শুরু করে।[৪]

    প্রাক-কলম্বীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতা

    কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার সমগ্র আমেরিকার ইতিহাসেই ধারাবাহিকতার মাঝে এক ছেদ’এর কাজ করেছিল। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম নয়। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে এই অঞ্চলে স্পেনীয়দের পদার্পণ এতটাই প্রভাববিস্তার করে যে তার আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষের সভ্যতার সুদীর্ঘ ধারা এর ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বহুক্ষেত্রে ভাষা সংস্কৃতি থেকে পুরো জাতি পর্যন্ত এর ধাক্কায় বিলুপ্ত হয়, বা তাদের আগেকার সভ্যতা সংস্কৃতির সাথে সমস্ত সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে। ফলে আজ যখন ঐতিহাসিকরা আবার ঐ অঞ্চলের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন, দেখা গেছে স্পেনীয়দের আগমণের সময়ে মূলত স্পেনীয়দেরই লেখা কিছু বিবরণ ও স্পেনীয় ভাষা শিখে সেই ভাষাতেই লেখা আমেরিন্ডীয়দের অতি সামান্য কিছু বিবরণ ছাড়া তাদের হাতে আর বিশেষ কিছুই এসে পৌঁছয়নি। ফলে কলম্বাসের অভিযানের পূর্বের ইতিহাস উদ্ধারের ক্ষেত্রে মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সেই কারণেই আন্দীয় অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও কলম্বাস-পূর্ব প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতা ও স্পেনীয়দের আগমণের সমকালীন সভ্যতা এই দুইভাগে ভাগ করে আলোচনা করাই শ্রেয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের ইতিহাসের উপকরণ তুলনামূলকভাবে বেশি, তাই তার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনাও তুলনায় অনেক বেশি বিস্তারিত।

    কারাল সভ্যতা

    মূল নিবন্ধ: কারাল সভ্যতা

    প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে শুষ্ক সুপে উপত্যকায় ৫০০০ বছরের পুরনো দুটি কারাল পিরামিড।

    কারাল সভ্যতা বা কারাল-সুপে সভ্যতা এখনও পর্যন্ত জানা সবচেয়ে প্রাচীন আন্দীয় সভ্যতা। এই সভ্যতা বহু ক্ষেত্রে নর্তে চিকো সভ্যতা নামেও পরিচিত।[৬] প্রথম নামটি এসেছে পেরুর সুপে উপত্যকায় অবস্থিত কারাল অঞ্চলের নাম থেকে। এইস্থানেই এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্তূপটি আবিস্কৃত হয়েছে। তাছাড়া এই অঞ্চলটি, যতদূর বোঝা গেছে, এই সভ্যতায় একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান বলেও বিবেচিত হত।[৭] অন্যদিকে পেরুর এই অঞ্চলকে কথ্য ভাষায় বর্তমানে নর্তে চিকো (স্পেনীয়, অর্থ উত্তরের ছোট্ট স্থান) বলা হয়। তার থেকেই এই দ্বিতীয় নামটির সৃষ্টি। খ্রিস্টজন্মের ৯০০০ বছর আগেই এই সভ্যতার সূচনা হয়।[৮] তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ – ১৮০০ অব্দকে এই সভ্যতার সবচেয়ে বেশি বিকাশের সময় বলে মনে করা হয়।[৯] উত্তর-মধ্য পেরুর সমুদ্র উপকূলে এই সভ্যতার অন্তত ৩০টি কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কারাল, আসপেরো, উয়ারিকাঙ্গা, কাবালেত, প্রভৃতি স্থলে খননকার্যের মাধ্যমে এই সভ্যতার প্রচূর নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে পাথরে তৈরি সম্ভাব্য বড় বড় মন্দিরের উঁচু প্ল্যাটফর্ম, বসবাসের জন্য তৈরি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ, বেশ কিছু ঢিবি, প্ল্যাটফর্মের উপর খাওয়াদাওয়ার চিহ্ন, হাড়ের তৈরি বেশ কিছু বাঁশি, প্রভৃতি। তবে নব্যপ্রস্তর যুগের এই সভ্যতায় ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না। এমনকী মৃৎপাত্র তৈরি বা ব্যবহারের কোনও নিদর্শনও এখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে এখানে যথেষ্ট জটিল একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপের অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যায়। কালের বিচারে এই সভ্যতার সর্বোত্তম বিকাশের সময়টি ছিল পুরনো পৃথিবীর সুমের সভ্যতার থেকে হাজার বছর পরে, কিন্তু মিশরে যে সময়ে পিরামিডগুলি নির্মাণ হয়, তার সমসাময়িক। পশ্চিম গোলার্ধের অপর প্রাচীন সভ্যতা কেন্দ্র মেসোআমেরিকার থেকে এই সভ্যতা অন্তত ২০০০ বছর প্রাচীন।[১০]

    পৃথকভাবে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল, পৃথিবীর এমন ছটি কেন্দ্রের অন্যতম ও আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো নগরসভ্যতা এই কারাল সভ্যতার কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। সাধারণভাবে অত্যন্ত শুষ্ক এই অঞ্চলের বুক দিয়ে বয়ে গেছে সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা প্রায় ৫০টি ছোট ছোট নদী। এদের ধার বরাবর প্রতিষ্ঠিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিরও মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। কিন্তু তারা চাষ করতো কোনও খাদ্যদ্রব্য নয়, মূলত তুলো। সেই তুলো দিয়ে মাছ ধরার জাল তৈরি করে সরবরাহ করা হত সমুদ্রতীরে অবস্থিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিতে। এই কেন্দ্রগুলিতে সংগৃহীত মাছ ও সামুদ্রিক নানা খাদ্যদ্রব্যই ছিল এই সভ্যতার মানুষের মূল খাদ্যদ্রব্য। জালের সাথে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ই ছিল সেই অর্থে এই সভ্যতার ভিত্তি। অবশ্য সঙ্কীর্ণ নদী উপত্যকাগুলিতে কিছু ফল ও সব্জিচাষের নিদর্শনও পাওয়া যায়। এই ধরনের সভ্যতার অন্য কোনও প্রাচীন নিদর্শনের কথা এখনও পর্যন্ত জানা নেই।[১০]

    আজ থেকে প্রায় ৩৮০০ বছর আগে ভূমিকম্প বা এল নিনো জাতীয় কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই সভ্যতার পতন ঘটে বলে মনে করা হয়।

    লাস ভেগাস সংস্কৃতি

    মূল নিবন্ধ: লাস ভেগাস সংস্কৃতি

    দক্ষিণ আমেরিকার অন্য এক সুপ্রাচীন সংস্কৃতি হল লাস ভেগাস সংস্কৃতি। প্রাচীন এই সংস্কৃতির বিকাশকাল মোটামুটি ৮০০০ – ৪৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।[১১] তবে অত্যন্ত ছোট ছোট মূলত পরিবারকেন্দ্রিক উৎপাদনভিত্তিক এই সংস্কৃতি তখনও তেমন কোনও কেন্দ্রীয় প্রশাসন যতদূর সম্ভব গড়ে তুলতে পারেনি। এই কারণে সভ্যতা শব্দটির তুলনায় সংস্কৃতি শব্দটি এদের বর্ণনায় বেশি উপযুক্ত। নৃতত্ত্ববিদ কারেন ই স্টোটার্ট’এর মতে ইকুয়েডরের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলের জটিল জীববৈচিত্রের সাথে সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে এরা এদের বসতিগুলি গড়ে তুলেছিল।[১১] এই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া প্রায় ৩১টি সুপ্রাচীন বসতির অবশেষ থেকে পাওয়া জিনিসপত্রের রেডিওকার্বন পরীক্ষায় এদের বয়সের প্রাচীনত্ব সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।[১২]

    এখানকার মানুষ ছিল মূলত শিকারী ও সংগ্রাহক; তবে এরা মাছ ধরতে জানতো। পরবর্তীকালে আদিম পদ্ধতিতে চাষও শুরু করে এরা। কাঠ, বাঁশ, লম্বা ঘাস ও গাছের ছাল এরা নানা কাজে ব্যবহার করতো।[১৩] তবে মৃৎপাত্র তৈরির পদ্ধতি এদেরও জানা ছিল না।

    এরা ছোট ছোট দলে বাস করতো। তবে আশেপাশের নানা অঞ্চলের মানুষের সাথে এদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ৩০০০ বছরের মধ্যে এদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে খুব সামান্যই পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল।[১১] বর্তমান ইকুয়েডরের সান্তা এলেনা অঞ্চলের সুম্পাতে এদের সবচেয়ে বড় বসতিটি আবিস্কৃত হয়েছে।

    চাভিন সংস্কৃতি

    মূল নিবন্ধ: চাভিন সংস্কৃতি

    চাভিন মৃৎপাত্র

    এই সভ্যতার সর্বোত্তম বিকাশের সময়কাল মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় হাজার বছর ব্যাপী সময়কাল। এদের ভাষা আমাদের জানা নেই এবং যতদূর সম্ভব সেই ভাষা আজ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। তাই এরা নিজেরা নিজেদের কী বলতো সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারা যায় না।[১৪] আন্দিজ পর্বতের উপর প্রায় ১০০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পেরুর চাভিন দে উয়ান্তার’এ এই সভ্যতার সব থেকে বড় কেন্দ্রটি আবিস্কৃত হয়েছে বলে, সেই জায়গার নাম অনুসারে তাদের চাভিন সংস্কৃতি বলে উল্লেখ করা হয়। কারাল-সুপে সভ্যতার আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এই সভ্যতাকেই দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা বলে মনে করা হত। আন্দিজ পর্বতের উচ্চভূমিতে এদের মূল কেন্দ্রগুলি অবস্থিত হলেও উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।[১৫]

    সোনার নেকলেস, চাভিন সংস্কৃতি

    পেরুর বর্তমান রাজধানী লিমার কাছে অবস্থিত এই চাভিন দে উয়ান্তার শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ নাগাদ নির্মিত হয়। তবে তার আগেও এখানে বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কেন্দ্রের মন্দিরটিকে চাভিন স্থাপত্যের একটি প্রধান নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছে। এই অঞ্চলে প্রচূর বৃষ্টিপাত হয়। তাই বৃষ্টির জলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মন্দিরটিকে ঘিরে অত্যন্ত সুন্দর নিকাশী ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তাছাড়া মন্দির তৈরি করতে যে সাদা ও কালো পাথরের ব্যবহার করা হয়েছিল, তা বয়ে আনা হয়েছিল দূর থেকে। এর থেকে এক ধরনের সাংগঠনিক ক্ষমতার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়, যার থেকে বোঝা যায় চাভিনদের কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।[১৫] তবে তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে তেমন কিছুই আবিস্কৃত হয়নি। চাভিন দে উয়ান্তার ছিল মূলত একটি ধর্মীয় কেন্দ্র। তবে এর অবস্থান ছিল পার্বত্য ও উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগের রাস্তা ও উত্তর দক্ষিণে যোগাযোগের রাস্তার একরকম সংযোগস্থলে। সেই কারণে আন্দাজ করা হয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল।[১৬]

    চাভিন সভ্যতা ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। এরা ভুট্টা, কিনোয়া, আলু, প্রভৃতি ফসলের চাষ করতো। চাষের জন্য জল সেচের বন্দোবস্তও ছিল। স্থানীয় পশু ইয়ামাকে তারা পোষ মানিয়েছিল। তাদের মাংস খাওয়া হত, পোশাক তৈরির জন্য তাদের লোম ব্যবহৃত হত, আবার মালবহনের কাজেও তাদের ব্যবহার করা হত।[১৫][১৭] পূর্ববর্তী কারাল সভ্যতার সাথে তাদের এক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হল, মৃৎপাত্রের ব্যবহার তারা জানতো। উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের ব্যবহৃত সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যার থেকে তাদের শিল্পবোধের পরিচয় মেলে। এছাড়া মন্দিরগাত্রে ও দেওয়ালেও তারা খোদাই করে অনেক শিল্পকর্ম রচনা করেছিল। এগুলির সাথে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের যোগ ছিল বলে মনে করা হয়।[১৭] ধাতুবিদ্যাতেও তাদের যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় মেলে। ধাতু গলিয়ে তারা কাজ করতে জানতো। সোনার কাজেও তাদের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।[১৫]

    ভালদিভিয়া সংস্কৃতি

    বর্তমান ইকুয়েডরের মানচিত্রে ভালদিভিয়া-সংস্কৃতির কেন্দ্রগুলির অবস্থান

    মূল নিবন্ধ: ভালদিভিয়া সংস্কৃতি

    চাভিন সংস্কৃতি যদি এক অর্থে কারাল-সুপে সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করে থাকে, লাস ভেগাস সংস্কৃতির সরাসরি উত্তরাধিকার বর্তায় ভালদিভিয়া সংস্কৃতির উপর। তবে এই দুই প্রাচীন সংস্কৃতি সময়ের হিসেবে পরস্পর সরাসরি যুক্ত ছিল না, বরং একের বিলোপ ও অপরের উদ্ভবের মধ্যে প্রায় ৬০০ বছরের ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান ইকুয়েডরের গুয়াইয়াস প্রদেশের সান্তা এলেনা উপদ্বীপের ভালদিভিয়া শহরের কাছে নব্যপ্রস্তরযুগীয় এই সংস্কৃতির কেন্দ্রগুলি প্রথম আবিস্কৃত হয়েছিল বলে তার এই নাম। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ – ১৮০০ অব্দের মধ্যে ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল বরাবর এই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। সেই হিসেবে এই সংস্কৃতি ছিল দক্ষিণে বিকশিত ও উন্নত কারাল সভ্যতারই সমসাময়িক। তবে কারাল সভ্যতার মতো এখানে কোনও বৃহৎ শহর গড়ে ওঠা বা জটিল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের তেমন নিদর্শন পাওয়া যায় না। গুয়াইয়াস, লস রিওস, মানাবি এবং এল ওরো প্রভৃতি প্রদেশে লা সেন্তিনেলা, লা লোরা, পুয়েব্লো নুয়েভো, সান ইসিদ্রো, সান পাবলো, প্রভৃতি স্থানে এই সভ্যতার প্রায় ১৫০টি কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে।[১৮]

    ইকুয়েডরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ এমিলিও এস্ত্রাদা ১৯৫৬ সালে প্রথম এই সংস্কৃতির নিদর্শন আবিষ্কার করেন। এরা মৃৎপাত্র তৈরি করতে জানতো; এদের তৈরি মৃৎপাত্রগুলিতে প্রথমদিকে সুক্ষতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হলেও ক্রমে ক্রমে এরা এতে খুবই দক্ষ হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তৈরি এদের রঙীন, পালিশযুক্ত ও সুক্ষ কারুকার্যতে পরিপূর্ণ পাত্রগুলি তার সাক্ষ বহন করে। এদের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও মৎসশিকার। ভুট্টা, কাসাভা, বিনস, স্কোয়াশ, তুলো, প্রভৃতি ছিল তাদের প্রধান ফসল। সমুদ্র উপকূল, খাঁড়ি ও নদী থেকে তারা মাছও ধরতো। তুলো থেকে তারা কাপড় তৈরি করতো।

    ভালদিভিয়ার মানুষের থাকার জায়গারও একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে। কোনও একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে সাধারণত বৃত্তাকারে বা উপবৃত্তাকারে বাড়িগুলিকে সাজিয়ে তাদের বসতিগুলি গড়ে উঠেছিল। এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ভালদিভীয় বসতিটি প্রায় ১০ হেক্টর জমির উপর গড়ে উঠেছিল। সেখানে যতদূর সম্ভব প্রায় ৩০০ মানুষ বসবাস করতো। তাদের বাড়িগুলিও ছিল বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার বা কিছুটা U-আকৃতির। এদের তৈরি ভেনাস মূর্তিগুলিও বিশেষভাবে বিখ্যাত। আরও উল্লেখ্য, এই মূর্তিগুলি প্রতিটিই আলাদা আলাদা ব্যক্তির – কোনও দেবীমূর্তি নয়। মূর্তিগুলি সাধারণত মাটি দিয়েই তৈরি হত।

    পারাকাস ও টোপারা সংস্কৃতি

    পারাকাস বয়নশিল্পের নমুনা

    মূল নিবন্ধ: পারাকাস সংস্কৃতি

    বর্তমান পেরুর পশ্চিমে দীর্ঘ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের দক্ষিণ অংশে পারাকাস উপদ্বীপ সংলগ্ন ইকা অঞ্চলে মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে বিকশিত যে সংস্কৃতির নজির পাওয়া যায়, তা পারাকাস সংস্কৃতি নামে পরিচিত। পারাকাস উপদ্বীপে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষগুলো থেকেই এই সংস্কৃতির মানুষের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতে পারা গেছে। ১৯২০’র দশকে বিখ্যাত পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ হুলিও তেলিও প্রথম এই সংস্কৃতির বিষয়ে অনুসন্ধান চালান।[১৯] বড় বড় কবরস্থানে একসাথে অনেক মৃতদেহর সৎকার করা, মৃতদেহকে মমি করে রাখা, জলসেচের জন্য কাটা খালের বিন্যাস, সোনা পিটিয়ে তৈরি অলঙ্কার ও মুখোশ, অবসিডিয়ান ছুরি, মৃৎপাত্র এবং উন্নত রঙীন ও জটিল বয়নশিল্প এই সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।[২০]

    ইকা উপত্যকা অঞ্চলে পারাকাস সংস্কৃতির মানুষদের বসবাস কালেই যতদূর সম্ভব উত্তর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ নাগাদ এক নতুন সংস্কৃতির মানুষদের ঐ উপত্যকায় আগমণ ঘটে। এরপর অন্তত এক প্রজন্ম বা তার কিছু বেশি সময়কাল পারাকাস উপদ্বীপ ও ইকা উপত্যকা, দুই অঞ্চলেই এই দুই সংস্কৃতির মানুষই পাশাপাশি বসবাস করতে থাকে। এই নতুন সংস্কৃতির মানুষদের টোপারা বলে অভিহিত করা হয়। পারাকাসটোপারা সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্রণের ফলেই পরবর্তী নাজকা সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। পারাকাসদের সুক্ষ বয়নশিল্প ও মৃৎশিল্পের দক্ষতা এই নতুন সংস্কৃতিতেও গৃহীত হয়। যদিও পারাকাসদের বয়নশিল্পের যা কিছু নিদর্শন শুষ্ক উপকূল অঞ্চল থেকেই বেশি পাওয়া গেছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এই সংস্কৃতির মানুষদের আন্দিজ পর্বতের উচ্চভূমিতেও যাতায়াত ছিল। সেখানেও তারা বসতি স্থাপনও করেছিল।

    নাজকা সংস্কৃতি

    নাজকা চিত্রিত মৃৎপাত্র – রঙের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়।

    মূল নিবন্ধ: নাজকা সংস্কৃতি

    নাজকা সংস্কৃতি হল আন্দীয় অঞ্চলের আরেক সুপ্রাচীন সংস্কৃতি। মোটামুটি ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল এই সংস্কৃতির বিকাশের সময়। দক্ষিণ পেরুর শুষ্ক উপকূলে নাজকা শহরের কাছে রিও গ্রন্দে নদীর উপত্যকায় এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল বলে ঐ শহরের নামানুসারে একে নাজকা সংস্কৃতি বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই সভ্যতায় আমরা সহজেই পূর্বসুরী পারাকাস সংস্কৃতিরই ধারাবাহিকতা লক্ষ করে থাকি। কিছু কিছু পরিবর্তন সূচিত হলেও, এদের বয়নশিল্প, সূচিকর্ম বা মৃৎপাত্র অনেকটা একই প্রকার। এদের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল পুকুইয়োনাজকা রেখা। এর মধ্যে প্রথমটি হল মাটির নীচ দিয়ে জলসংবহনের এক বিশেষ পদ্ধতি, নাজকারা যার উদ্ভব ঘটিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি পুকুইয়ো পাওয়া গেছে। আর দ্বিতীয়টির কারণে নাজকারা আজ পৃথিবী বিখ্যাত। এগুলি হল মাটির উপর টানা বিশাল বিশাল সরলরেখা এবং তার সমন্বয়ে অঙ্কিত জ্যামিতিক চিত্র ও নানা পশুপাখির ছবি। এগুলির বিশালত্ব সত্যিই ধারণা করা কঠিন। প্রায়শই রেখাগুলি মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত এবং এতটাই বড় যে আধুনিক যুগে হেলিকপ্টার বা বিমানের সাহায্যেই একমাত্র তার পূর্ণাঙ্গ ছবি তোলা সম্ভব হওয়ার পর তাদের প্রকৃত চেহারা সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করা গেছে।[২১] ড্রেসডেনের জার্মান গবেষিকা মারিয়া রাইখা এরকম ৫০টি চিত্র ও ১০০০টিরও বেশি রেখা আবিষ্কার করেছেন, যাদের কোনও কোনওটি এমনকী ২০ কিলোমিটার লম্বা।[২২][২৩][২৪]

    নাজকাদের কোনও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাদের বসতিগুলি ছিল ছোট, কোনও শহরের চিহ্ন সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নাজকা উপত্যকার নিম্নাংশে কাউয়াচি নামক স্থানে একটি মাটির ঢিবি ও পিরামিড পাওয়া গেছে, যতদূর সম্ভব যা ধর্মীয় কারণেই ব্যবহৃত হত। এখানে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও ভোজসভার চিহ্ন পাওয়া গেছে।

    তাদের কৃষি ব্যবস্থা ছিল বেশ উন্নত। মিষ্টি আলু, স্কোয়াশ, ভুটা, ম্যানিওক, প্রভৃতি ফসল তারা উৎপাদন করতো। চাষের জন্য সেচের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া তারা সমুদ্রে জালের সাহায্যে মাছও ধরতো। সিল মাছ শিকারেও তারা ছিল দক্ষ। ৫০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তাদের পতন শুরু হয়। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই পতন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে বারে বারে আছড়ে পড়া সামুদ্রিক ঝড় তথা এল নিনো জনিত বন্যাকে অনেক সময়ই দায়ী করে থাকেন।[২৫]

    মোচে সংস্কৃতি

    মোচে মৃৎপাত্র

    মূল নিবন্ধ: মোচে সংস্কৃতি

    মোচে সংস্কৃতি মোচিকা সংস্কৃতি, প্রাক-চিমু সংস্কৃতি, প্রভৃতি নামেও পরিচিত। পেরুর উত্তরাংশে সমুদ্রোপকূলে আজকের মোচেত্রুহিলিও শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে মোটামুটি ১০০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে এরাও রাজনৈতিকভাবে কোনও একটি রাষ্ট্র গঠন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকলেও তারা একটি সাধারণ সংস্কৃতির জন্ম দিতে সক্ষম হয়। এদের তৈরি অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি ও বিশাল বিশাল স্থাপত্যর নিদর্শন আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। বিশেষ করে সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র, সোনার কাজ, মূলত ইঁটের তৈরি বিশাল বিশাল স্থাপত্য বা উয়াকা এবং জটিল ও বিস্তৃত সেচব্যবস্থা মোচে সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।[২৬] এদের সংস্কৃতি বিকাশের সমগ্র যুগটিকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা মোটামুটি তিনটি পৃথক উপযুগে ভাগ করে থাকেন – প্রাচীন মোচে সংস্কৃতি (১০০ – ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ), মধ্য মোচে সংস্কৃতি (৩০০ – ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) ও অন্তিম মোচে সংস্কৃতি (৫০০ – ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ)।[২৭]

    এরা ছিল মূলত একটি কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি। কৃষির প্রয়োজনেই এরা বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল জুড়ে জটিল সেচব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়। তার জন্য এরা প্রয়োজনে নদীস্রোতকে ঘুরিয়ে দিয়ে হলেও ফসলের মাঠে জলের জোগান নিশ্চিত করে।[২৭][২৮] তবে এদের হস্তশিল্প সবচেয়ে বিখ্যাত। এদের তৈরি বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য থেকে এদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। শিকার, মাছ ধরা থেকে শুরু করে মারপিট, এমনকী যৌনাচার পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের অত্যন্ত বাস্তবানুগ চিত্র সেখানে পাওয়া যায়। এদের তৈরি মূর্তিগুলির আরেকটি বিশেষত্ব হল সেগুলি বেশিরভাগই মনে হয় ব্যক্তিবিশেষের, কোনও দেবদেবীর নয়।[২৮]

    মোচেদের তৈরি আরও দুটি জিনিস বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তাদের ইঁট নির্মিত বিশাল বিশাল উয়াকাগুলির রঙের ঔজ্জ্বল্য, কারুকার্য ও বিশালত্ব সত্যিই বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কিন্তু কিছুটা প্রাকৃতিক কারণে, কিছুটা স্পেনীয় বিজয়ের সময়ে লুঠপাটের কারণে সেগুলি আজ অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত। অন্যদিকে তাদের তৈরি সোনা ও অন্য ধাতুর তৈরি শিল্পকর্মগুলি তাদের সুক্ষ্মতার জন্যই বিস্ময়উদ্রেককারী।[২৮] এরা দক্ষিণে ইকা উপত্যকার নাজকা সংস্কৃতির সমসাময়িক। এদের উদ্ভবের সাথে পূর্ববর্তী চাভিন সংস্কৃতির যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। ওয়ারিচিমুদের এদের উত্তরসূরী বলে সাধারণভাবে ঐতিহাসিকরা মতপ্রকাশ করে থাকেন।

    তিওয়ানাকু সভ্যতা

    তিওয়ানাকু পুরোহিতের মূর্তি

    মূল নিবন্ধ: তিওয়ানাকু সভ্যতা

    তিওয়ানাকু সভ্যতা (স্পেনীয়Tiahuanaco বা Tiahuanacu) হল প্রাক্‌-কলম্বীয় আমেরিকার এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা। দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ার পশ্চিমাংশে এর বিকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে এরা ছিল ইনকাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরী। তিতিকাকা হ্রদ তীরবর্তী এই সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ থেকে পশ্চিমে দেসাখুয়াদেহো যাওয়ার রাস্তায় লা পাজ থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে তিওয়ানাকু নামক স্থানে। আন্দিজ পর্বতের সুউচ্চ আলতিপ্লানো উচ্চভূমিতে অবস্থিত এই অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২৬০০ ফুট বা ৪০০০ মিটার উঁচু। ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনীয় বিজেতা (কনকিস্তাদোর) পেদ্রো সিয়েজা দে লেওন ইনকাদের শক্তিকেন্দ্র কুলিয়াসুয়ু খুঁজে বের করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে তিওয়ানাকুতে এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে ফেলেন।[২৯] মনে করা হয় এই শহরই ছিল এই সভ্যতার প্রশাসনিক প্রধান শহর। অন্তত পাঁচশো বছর এই শহরকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতার শাসনব্যবস্থা বজায় ছিল বলে মনে করা হয়। ২০০০ সাল থেকে এই শহর ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।[৩০]

    প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিওয়ানাকু শহর সংলগ্ন অঞ্চলে সুপ্রাচীন সময় থেকেই মানুষের বসতি স্থাপিত হয়েছিল। প্রথম দিকে এটি ছিল একটি ছোট্ট কৃষিভিত্তিক গ্রাম।[৩১] কিন্তু ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই অঞ্চল একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় কেন্দ্রে পরিণত হয়। এরপর তাকে কেন্দ্র করেই একটি শক্তিশালী রাজ্যের বিস্তার ঘটে, তিওয়ানাকু যার প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ৬০০ – ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই সভ্যতা তার বিকাশের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছয় বলে মনে করা হয়।[২৯] এইসময় বর্তমান বলিভিয়ার পশ্চিম অংশ থেকে এই সভ্যতা পশ্চিমে দক্ষিণ পেরু, উত্তর চিলি, ও উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্তিনাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

    মূলত কৃষিকে ভিত্তি করেই এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। চাষের জন্য এরা তিতিকাকা হ্রদ সংলগ্ন নিচু জমির মধ্যে কিছু অংশ উঁচু করে কৃষিজমি তৈরি করে। এই উঁচু জমিগুলোর মাঝখানে কিছুটা জল বাঁধাই থেকে যায়। তার ফলে জমি যে জল পায়, তাতে দেখা গেছে এই ধরনের জমি অতি উচ্চ ফলনশীলে পরিণত হয়। আবার এই জলে একই সাথে মাছও চাষ করা যায়। আবার চারদিকের নিচু থেকে যাওয়া ডোবা জমি যাতায়াতের জন্য জলপথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।[৩২] এই সভ্যতার স্থাপত্য শিল্পও সত্যিই চোখে পড়ারই মতো। তিওয়ানাকু শহরে নানা পর্যায়ে অসংখ্য নির্মাণকার্য চলেছিল। এদের মধ্যে বেশ কটির ধ্বংসস্তূপ আমাদের সময় পর্যন্ত টিকে রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান হল একটি পিরামিড – আকাপানা, বারো ফুট উঁচু একটি সূর্যতোরণ, একটি তিনশো ফুট লম্বা বড় বড় দরজাসহ পাথরের পাঁচিল ঘেরা উঠোন – কালাসাসায়া, প্রভৃতি।[৩২]

    একাদশ শতাব্দী নাগাদ এই সভ্যতার পতনের সূচনা ঘটে। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধেই তাদের শাসন ভেঙে পড়ে। তবে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে তাদের শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ আজও ইনকা-পূর্ব আন্দীয় সভ্যতাগুলির উৎকর্ষের জাজ্জ্বল্যমান নিদর্শন হিসেবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।[৩০]

    চাচাপোয়া

    মূল নিবন্ধ: চাচাপোয়া

    কুয়েলাপ দুর্গর ভগ্নাবশেষ ও চারপাশের দৃশ্য

    চাচাপোয়ারা হল আন্দিজ পার্বত্যাঞ্চলের আরেক প্রাচীন জাতি। আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢালে, অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের বিপরীত দিকে, বর্তমান পেরুর আমাজন নদী সংলগ্ন আমাজোনাস অঞ্চলে তাদের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ইনকাদের সাথে তাদের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। বহু চেষ্টার পর অবশেষে স্পেনীয় আক্রমণের মাত্র বছর ষাটেক আগে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইনকারা তাদের নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়। চাচাপোয়া নামটিও তাদেরই দেওয়া, কেচুয়া ভাষায় যার মানে ‘মেঘ-যোদ্ধা’। এই অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অরণ্য (রেন ফরেস্ট) ও সবসময় আর্দ্র পরিবেশের জন্যই বোধহয় ইনকারা তাদের এমন নামে ডাকত।

    তবে চাচাপোয়াদের সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য হাতে পাওয়া যায় না। কারণ তাদের সম্বন্ধে স্পেনীয় ও ইনকাদের রেখে যাওয়া প্রত্যক্ষ বিবরণ নিতান্তই স্বল্প। এইকারণেই তাদের উপর তথ্যর প্রয়োজনে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির উপরই বেশি নির্ভর করতে হয়। যাইহোক, তাদের সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ পাওয়া যায়, তার অন্যতম হল স্পেনীয় বিজেতা ও ঐতিহাসিক পেদ্রো সিয়েজা দে লেওনের লেখা বর্ণনা। তিনি চাচাপোয়াদের সমগ্র আমেরিন্ডীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ফরসা ও সুন্দর বলে উল্লেখ করেছেন।[৩৩] এর থেকে বোঝা যায় অন্য আন্দীয় জাতিগুলির থেকে এরা ছিল কিছুটা আলাদা। তবে পেরুর ইনস্তিতুতো দে আরকেওলখিয়া আমাজোনিকার প্রত্নতাত্ত্বিকরা চাচাপোয়াদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী পরীক্ষা করে অভিমত প্রকাশ করেন যে তারা সংস্কৃতিগত দিক থেকে আমাজনীয় জাতিগুলির থেকে আন্দীয় জাতিগুলিরই বেশি কাছাকাছি ছিল।

    যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণাদি থেকে বুঝতে পারা যায়, ২০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সময় থেকেই আন্দিজ পর্বতের পূর্বঢালের এই আমাজন অরণ্যাঞ্চলে মানুষের বসতি ছিল, চাচাপোয়াদের সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাসময় হিসেবে সাধারণত ৭৫০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দকেই ধরা হয়। এদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটি বিশাল দুর্গ – কুয়েলাপগ্রান পাহাতেন, পাহাড়ের চূড়ার উপর তৈরি আরেকটি দেওয়াল ঘেরা প্রাচীন বসতির ধ্বংসস্তূপ। দুটি জায়গাতেই সামরিক প্রয়োজনে নির্মাণের দিকটি পরিষ্কার ফুটে ওঠে।[৩৪] মনে হয় উয়ারিদের (চাচাপোয়াদের সমসাময়িক এই সংস্কৃতি আন্দিজের ঠিক উলটো ঢালে এইসময় বিকাশ লাভ করেছিল ও পর্বতের উচ্চভূমি থেকে একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।) হাত থেকে প্রতিরক্ষার খাতিরেই তারা এগুলি, গড়ে তুলেছিল। এর থেকে তাদের ‘যোদ্ধা’ পরিচয়টিরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এছাড়াও কুয়েলাপ’এর অদূরেই তাদের একটি কবরস্থান কারাহিয়াও আবিষ্কৃত হয়েছে।[৩৫] তবে পঞ্চদশ শতকে ইনকারা আন্দিজ পর্বত পেরিয়ে তার পূর্বঢালের দিকে অগ্রসর হলে, চাচাপোয়াদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তারা ইনকাদের হাতে পরাজিত হয়। তাদের একরকম জোর করেই দলে দলে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। তাদের পরপর বিভিন্ন বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়। এই কারণেই হয়তো স্পেনীয়রা যখন এই অঞ্চলে প্রবেশ করে, ইনকাদের বিরুদ্ধে বহুক্ষেত্রে চাচাপোয়ারা স্পেনীয়দেরই পক্ষাবলম্বন করে। যাইহোক, ১৫৪৭’এর পর চাচাপোয়াদের স্বাধীন অস্তিত্ব স্পেনীয় ঔপনিবেশিক সৈন্যদের হাতেই খর্বিত হয় ও পরবর্তী সময়ে প্রবল অত্যাচার, দারিদ্র ও মহামারীতে তাদের জনসংখ্যা প্রবলভাবে হ্রাস পায়।[৩৬]

    ওয়ারি সভ্যতা

    পিকিলিয়াক্তায় উয়ারিদের তৈরি রাস্তা

    মূল নিবন্ধ: উয়ারি সভ্যতা

    উয়ারি বা ওয়ারিরা (স্পেনীয়Huari, উচ্চারণ – উয়ারি) ৫০০ – ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে[৩৭] তাদের সভ্যতা তথা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। সময়ের বিচারে এরা ছিল তিওয়ানাকুদের সমসাময়িক। এদের মূল কেন্দ্রটি ছিল দক্ষিণ পেরুতে বর্তমান আয়াকুচো শহরের ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত উয়ারিতে। প্রাচীন এই শহরকে কেন্দ্র করে উপকূলের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে শুরু করে আন্দিজ পর্বতের উচ্চস্থল পর্যন্ত তারা তাদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। সংস্কৃতিগত দিক থেকে এরা ছিল কারাল সভ্যতার উত্তরাধিকারী ও পরবর্তীকালের ইনকাদের পূর্বসূরী। জলের প্রয়োজন মেটাতে ও সেচের প্রয়োজনে এরা বড় বড় খাল কাটে ও পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা গড়ে তোলে। এদের প্রধান ফসল ছিল আলুভুট্টা। এদের শহরগুলো ছিল প্রাচীর ঘেরা। তারমধ্যে বাড়িগুলো ছিল পরপর সাজানো। মাঝে সরু রাস্তা। তবে বড় বড় প্রাসাদ, চক, চোখ ধাঁধানো মন্দির বা পিরামিডের কোনও নিদর্শন তেমন পাওয়া যায়নি। এদের বিষয়ে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে শহরগুলোর জোরদার সুরক্ষা ব্যবস্থা বলে তেমন কিছু চোখে পড়ে না। অর্থাৎ, যুদ্ধবিগ্রহের তেমন প্রকোপ তাদের সহ্য করতে হয়নি।[৩৮]

    প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে ঐতিহাসিকরা উপকূলীয় পেরুর ও মধ্য-কেন্দ্রীয় আন্দিজের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন ভগ্নাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। এদের মধ্যে ‘উয়ারি’ থেকে অনেকখানি উত্তরে চিকলায়োতে যে প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষটি মাত্র ২০০৮ সালে খুঁজে পাওয়া গেছে, তা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।[৩৯] এছাড়াও দক্ষিণ পেরুতে মোকাহুয়া অঞ্চলের পার্বত্য উচ্চভূমিতেও তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর চেরো বাউল আবিষ্কৃত হয়েছে। তাদের এই শহরটি আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এখানেই তারা তিওয়ানাকুদের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিল ও দুই সভ্যতার মানুষ পাশাপাশি প্রায় কয়েকশো বছর বসবাসও করে। কিন্তু তাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহের তেমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।[৪০] আবার দক্ষিণ-পূর্বে কুজকো থেকে তিতিকাকা হ্রদ যাওয়ার পথে আন্দিজ পর্বতের উপরে তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পিকিলিয়াক্তা খুঁজে পাওয়া গেছে। এত দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা তাদের বিভিন্ন কেন্দ্রগুলির অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, তাদের সাম্রাজ্য কতটা বিস্তৃতি লাভ করেছিল।

    ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সময় থেকে উয়ারিদের পতনের আভাস পাওয়া যেতে শুরু করে। আর ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তাদের শহরগুলি হঠাৎই পরিত্যক্ত হয়। এর প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকরা এখনও পর্যন্ত একমত হতে পারেননি।

    চিমু সভ্যতা

    ১১০০ থেকে ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি[৪১] চিমু মৃৎপাত্র

    মূল নিবন্ধ: চিমু সভ্যতা

    উত্তর পেরুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে চিমোর অঞ্চলে বর্তমান ত্রুহিলিও শহরের কাছাকাছি এলাকায় চিমু সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এর ঐতিহাসিক সময়কাল ছিল মোটামুটি ১২৫০ থেকে ১৪৭০ খ্রিষ্টাব্দ। এরা মূলত ছিল উত্তর পেরুর উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা। আন্দিজ পর্বত ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলের মধ্যবর্তী সঙ্কীর্ণ, মাত্র ২০ থেকে ১০০ মাইল চওড়া, কিন্ত যথেষ্ট লম্বা এক ভূভাগকে তাদের সভ্যতার বিকাশস্থল বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে পরবর্তীকালে এদের প্রভাব যথেষ্ট বিস্তার লাভ করে। দক্ষিণে পেরুর বর্তমান রাজধানী লিমার কাছকাছি অঞ্চল থেকে শুরু করে উত্তরে আজকের ইকুয়েডরের সীমানা পর্যন্ত অঞ্চলে এদের প্রভাবাধীন ছিল বলে জানতে পারা গেছে।[৪২] এদের মূল শহর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল চান চান। চিমু সভ্যতার সর্বোচ্চ বিকাশের সময় এই শহরে এক লক্ষাধিক মানুষ বাস করত বলে মনে করা হয়। সেই হিসেবে সমকালীন দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম শহর ছিল এই চান চান[৪৩] শহরটিতে ইঁটের তৈরি বিশাল বিশাল প্রাসাদ দেখতে পাওয়া যায়। ১৪৭০ সালে তাদের শেষ রাজা মিনচামাঙ্কামানের পতন ঘটে ও ইনকা সম্রাট তুপাক ইনকা ইউপানাকির বাহিনী চিমুদের এলাকা দখল করে তাকে ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে। এই অঞ্চলে স্পেনীয়দের আগমণের মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে ঘটা এই যুদ্ধেই স্বাধীন রাজ্য হিসেবে চিমুদের অস্তিত্বের বিলোপ ঘটে। সেই কারণেই স্পেনীয়রা যখন এখানে এসে পৌঁছয়, তখনও ইনকাদের হাতে চিমুদের পতনের আগের সময়ের সাক্ষী কিছু মানুষ অন্তত বেঁচেছিলেন। স্পেনীয় ঐতিহাসিকরা তাদের কাছ থেকে চিমুদের সম্বন্ধে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে লিখে গেছেন বলে, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ব্যতীতও তাদের সম্বন্ধে আরও কিছু তথ্য অন্তত আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।

    পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে আমরা জানতে পারি, মোচেদের উত্তরাধিকারী হিসেবেই তাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। চিমুদের তৈরি মৃৎপাত্রগুলি, অন্তত তাদের প্রথম যুগে, দেখা যায় মোচেদের তৈরি মৃৎপাত্রগুলির সাথে বৈশিষ্ট্যগতভাবে অনেকটাই একইরকম। প্রায়শই এগুলি দেখতে হত কোনও না কোনও জীবজন্তুর মতো। এছাড়া ছয়তলযুক্ত কোনও বোতল বা পাত্রের উপরে কোনও দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা ব্যক্তি মানুষের মূর্তিও অনেকসময়ই দেখতে পাওয়া যায়। চিমু মৃৎপাত্রগুলির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এতে কালো রঙের ব্যবহার বিশেষ করে চোখে পড়ে। বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু ব্যবহার করে প্রস্তুত তাদের ধাতুশিল্পেও সুক্ষ্মতা ও দক্ষতার যথেষ্ট পরিচয় মেলে। মূলত সোনা, রূপা ও তামার মিশ্রিত একধরনের সংকর ধাতুর ব্যাপক ব্যবহার ছিল চিমুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।[৪৪] কৃষি ও মাছ ধরা ছিল তাদের সভ্যতার দুই মূল ভিত্তি। কৃষির জন্য তারা জলসেচের এক বিরাট ও জটিল ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। মোচে নদী থেকে জলসেচের মাধ্যমে তারা প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে চাষের ব্যবস্থা করেছিল। তাদের মূল ফসল ছিল ভুট্টাতুলো[৪৪] তাদের ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে তারা ছিল চন্দ্র উপাসক। সূর্য উপাসক ইনকাদের সাথে তাদের ধর্মাচরণের মূল পার্থক্য ছিল এইখানেই। দেবতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী উৎসর্গ করা ছিল তাদের ধর্মাচরণের আরেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।[৪৫]

    ইনকা সভ্যতা

    মূল নিবন্ধইনকা সাম্রাজ্য

    মাচু পিচু, ইনকা সভ্যতার একটি নিদর্শন

    বর্তমান পেরুর কোস্কো এলাকায় সুপ্রাচীন ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়েছিল একটি উপজাতি হিসাবে। দ্বাদশ শতাব্দিতে মধ্য আমেরিকা থেকে আগত একদল ভাগ্যান্বেষি পেরুর কুজকো (Cuzko) উপত্যকায় এসে বসবাস শুরু করে। আগত এই জনগোষ্ঠির মধ্যে ছিল কৃষক, কারিগর, কামার ইত্যাদি। স্থানীয় লোকেদের পরাভূত করে হাতুন তামাক নামক এক সাহসী যোদ্ধা ১৩৯০ সালের দিকে কুজকো উপত্যকায় একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। রাজত্বের নাম হয় ইনকা এবং রাজা তাপাক নিজেকে ভিরাকোচা ইনকা (জনগণের ঈশ্বর) নামে ভূষিত করেন। বলা যেতে পারে ইনকা সভ্যতার সূচনা কিছুটা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে হয়েছিল।

    ইনকা সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একটি দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ছিল। এই আন্দীয় সভ্যতায় টাকার প্রচলন ছিল এবং ভোগ্যপণ্য ও বিলাসপণ্যের ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এই সভ্যতায় কর ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। বলা হয়ে থাকে যে কর উত্তোলকরা বিভিন্ন পশু, বৃদ্ধ বা দাসের বলি উৎসর্গ হিসেবে গ্রহণ করত।

    স্পেনীয় বিজেতাদের হাতে ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে ইনকাদের শেষ শক্ত ঘাঁটির পতন ঘটে। কিন্তু এর আগে ১৪৩৮ – ১৫৩৩ সালের মধ্যে এদের সভ্যতা ও সাম্রাজ্য তার বিকাশের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়। নিজেদের সাম্রাজ্য ও প্রভাবাধীন এলাকা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এরা সরাসরি যুদ্ধের পাশাপাশি নানাধরনের আপাত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিও ব্যবহার করে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম অংশের এক বিশাল ভূখণ্ডকে নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমান পেরুর আন্দিজ পর্বতমালাকে কেন্দ্র করে এদের শাসনাধীন ও প্রভাবাধীন এলাকা ছড়িয়ে পড়ে বর্তমান ইকুয়েডর, পশ্চিম ও দক্ষিণমধ্য বলিভিয়া, উত্তরপশ্চিম আর্জেন্তিনা, উত্তর ও উত্তরমধ্য চিলি ও দক্ষিণ কলম্বিয়ায়। তাদের এই সাম্রাজ্য ছিল এতটাই বিশাল যে ১৫৩০ সাল নাগাদ তার আয়তন ছিল প্রায় ৯ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার; এই বিশাল ভূখণ্ডের বাসিন্দা ছিল ২০০টিরও বেশি আলাদা আলাদা জাতি, যারা সকলেই ছিল ইনকাদের শাসনাধীন।[৪৬]

    মুইজকা

    স্বর্ণনির্মিত মুইজকা ভেলা – এল ডোরাডো উপকথার জন্মের পিছনে এই ধরনের স্বর্ণ্নির্মিত শিল্পের ভূমিকা কম ছিল না।

    মূল নিবন্ধ – মুইজকা উপজাতি

    বর্তমান কলম্বিয়ার প্রায় মাঝামাঝি অঞ্চলে, আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব রেঞ্জের (কর্ডিলিয়েরা ওরিয়েন্টাল) উচ্চভূমিতে মুইজকা উপজাতির মানুষ ইনকাদের ও অন্যান্য আন্দীয় সভ্যতার আওতার বাইরে থেকেই একধরনের পৃথক সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। প্রায় ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে তারা বসবাস করতো। তারা ছিল চিবচা ভাষী মানুষ। ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তারা প্রথম স্পেনীয়দের সংস্পর্শে আসে। এদের অবশ্য কোনও ঐক্যবদ্ধ রাজ্য গড়ে ওঠেনি। তারা ছোট ছোট অঞ্চলকে ভিত্তি করেই তাদের পৃথক পৃথক গোষ্ঠীশাসন গড়ে তুলেছিল। এইসব গোষ্ঠীর প্রধান বা নেতাদের বলা হত কাথিকে; কিন্তু এইসব কাথিকেদের নেতৃত্বে তারা তাদের ছোট ছোট রাজ্যগুলিকে একসাথে করে কতগুলি রাজ্যজোট গড়ে তোলে। এই রাজ্যজোটগুলিতে থাকা প্রতিটি পৃথক রাজ্যই ছিল স্বাধীন, কিন্তু তারা তাদের কিছু সাধারণ স্বার্থে এই ধরনের অপেক্ষাকৃত বড় জোট গড়ে তোলে। এরকম তিনটি জোটের কথা জানতে পারা যায়, যাদের নেতা ছিল তিনজন – থাকে, থিপা ও ইরাকা। এদের মধ্যে যেমন রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তেমনি বৈরিতাও কম ছিল না।[৪৭]

    তবে এরা ছিল যথেষ্ট উন্নত। অন্তত ইউরোপীয়দের আগমণের কালে বা তার অব্যবহিত পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম শক্তিশালী সমাজ ও অর্থনীতি ছিল এরা। বিশেষ করে খনিশিল্পে তাদের যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় মেলে। তারা পান্না, তামা, কয়লা, সোনা, প্রভৃতি খনিজ সম্পদে ছিল বেশ ধনী। তাদের অর্থনীতিও ছিল যথেষ্ট মজবুত। বিশেষত সোনার সুক্ষ্ম অলঙ্করণের কাজে এদের দক্ষতা ছিল তুলনাহীন। হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণশহর এল ডোরাডোর উপকথার জন্মের পিছনে এদের স্বর্ণপ্রাচূর্যের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলেই মনে করা হয়। মূলত বিনিময় প্রথায় তারা বাণিজ্য করতো। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে নানাপ্রকার বিলাসসামগ্রী – সবই তারা এইভাবেই বিনিময় করতো। তাদের সমাজ মূলত ছিল কৃষিভিত্তিক। কৃষির প্রয়োজনে তারা আন্দিজের উচ্চভূমিতেও সেচব্যবস্থা ও ধাপ কেটে চাষের জমি গড়ে তুলেছিল। বুনন ছিল তাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এদের বোনা নানাধরনের অত্যন্ত জটিল বুননের সুক্ষ্ম কাপড়ের নিদর্শন পাওয়া গেছে।[৪৮]

    এদের সমাজে খেলাধূলার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। ক্রীড়া ছিল বহুক্ষেত্রেই তাদের ধর্মীয় আচারের একটি অঙ্গ। এইসব খেলার মধ্যে তেহো নামক ধাতব চাকতি নির্ভর একটি খেলা কলম্বিয়ায় আজও জনপ্রিয়। এছাড়া কুস্তিও ছিল আরেকটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ খেলা। এই খেলায় বিজয়ীকে গোষ্ঠীপ্রধানের তরফ থেকে সুক্ষ্ম একটি শাল উপহার দেওয়া হত এবং তাকে গুয়েচে বা যোদ্ধা বলে গণ্য করা হত।

    এরা ছিল মূলত সূর্যের উপাসক। সোগামোসো বা সূর্যদেবের পবিত্র শহরে তাদের প্রধান মন্দিরটি অবস্থিত ছিল। পুরোহিতদের এদের সমাজে যথেষ্ট প্রভাব ছিল। ছোট থেকেই তাদের আলাদা ধরনের শিক্ষা দেওয়া হত। চাষবাস থেকে যুদ্ধ পর্যন্ত সবকিছুতেই তাদের পরামর্শের খুবই গুরুত্ব ছিল। প্রচলিত গল্পের পরম্পরা থেকে মনে করা হয়, শুরুতে তাদের ধর্মে নরবলিরও প্রচলন ছিল। কিন্তু স্পেনীয়দের সংস্পর্শে আসার আগেই এই প্রথা অবলুপ্ত হয়েছিল। কারণ স্পেনীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে এরকম কোনও নরবলির কথা শুনতে পাওয়া যায় না। ১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনীয়দের হাতে এদের পতন ঘটে।[৪৭]

    এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন।
  • আদি রাজত্ব (মিশর)

    আদি রাজত্ব (মিশর)

    মিশরের আদি রাজত্ব (ইংরেজিEarly Dynastic Period ; জার্মানFrühdynastische Periode ; ৩১০০ – ২৬৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বলতে মিশরের ইতিহাসের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সময়কে সাধারণভাবে বোঝানো হয়ে থাকে। উত্তর ও দক্ষিণ মিশরের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি একক রাজ্য গড়ে ওঠার সময়কালকে (৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এর সূচনাপর্ব ধরা হয়ে থাকে ও তৃতীয় রাজবংশের তথা পুরাতন রাজত্বের সূচনা পর্যন্ত সাধারণভাবে এর ব্যাপ্তি ছিল বলে ধারণা করা হয়।[১] মিশরের প্রথমদ্বিতীয় রাজবংশের রাজত্বকালকে এই যুগের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।[২] এই সময়ের প্রথমদিকে মিশরের রাজধানী ছিল তিথনিস। পরবর্তীকালে প্রথম রাজবংশের আমলে তা মেমফিসে সরিয়ে আনা হয়।

    আদি রাজত্ব (মিশর)

    সূচনা

    মিশরের ফারাওদের ঐতিহাসিক দ্বিমুকুট; এর একটি উচ্চ মিশরের ও অন্যটি নিম্ন মিশরের প্রতীক।

    উচ্চনিম্ন মিশর তথা দক্ষিণ ও উত্তর মিশরের একত্রীকরণের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক সময়পর্বের সূচনা। ফারাও মেনেসের রাজত্বকালেই এই ঐক্য সাধিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের মিশরীয় সন্ন্যাসী মানেথো‘র এগিপটিয়াকা (“মিশরের ইতিহাস”) থেকেও এই তথ্যই সমর্থিত হয়। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা তার সঠিক পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। অনেকে তাকে তৃতীয় নাকাদা সংস্কৃতিকালীন নৃপতি নারমের বলে মনে করে থাকেন।[৩][৪][৫] আবার কারুর মতে প্রথম রাজবংশের ফারাও হোর-আহা ও মেনেস একই মানুষ।[৬] সেই হিসেবে অনেকেই তাকেই প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও মনে করে থাকেন।[৭] যাই হোক না কেন, মিশরীয় ঐতিহ্য অনুসারে তাকে পরবর্তী ৩০০০ বছর স্থায়ী ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে মিশর শাসন করা ফারাওদের প্রথমজন বলে গণ্য করা হয়।

    রেডিওকার্বন পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে গবেষকরা আজ অনেকটাই নিশ্চিত যে মিশরের আদি রাজত্বকালীন প্রথম রাজবংশভুক্ত বা তার আগের রাজবংশপূর্ব যে বিভিন্ন ফারাওয়ের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, তাদের নির্দিষ্ট সময়কাল ও ক্রমপর্যায় সম্পর্কে আমাদের ধারণার বেশ কিছু সংশোধনের প্রয়োজন আছে।[৮]

    প্রথম রাজবংশ

    মূল নিবন্ধপ্রথম রাজবংশ
    প্রথম রাজবংশের ফারাওদের ক্রমতালিকা সম্বন্ধে আজ ঐতিহাসিকরা অনেকটাই নিশ্চিত। এই রাজবংশের প্রথম ফারাও ছিলেন মেনেস অথবা নারমের, শেষ শাসক ছিলেন কা। এই বংশের আটজন নৃপতির কথা জানতে পারা যায়। এঁদের সকলেই আবিডোসে সমাধিস্থ হন। এই রাজবংশের প্রায় শেষ পর্যন্ত ঐতিহ্যানুসারে রাজার মৃত্যুর পর তার নিকটাত্মীয় ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদেরও রাজার সাথে পাঠানো হত। রাজার কবরের পাশেই ছোট ছোট বর্গাকার কবরে রাজার সমাধিস্থলেই তাদেরও স্থান হত।

    এই রাজবংশের আমলে মেয়েদেরও যে যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল, তার প্রমাণ রাণী মেরিৎনেইত; ফারাও ডেনের আমলে তার যে কতটা গুরুত্ব ছিল তা আন্দাজ করা যায় তার সমাধি থেকে। সমাধিটি যথেষ্ট বড়; তার উপর তার নিজস্ব ব্যক্তিগত চিহ্ন (পিনতাদেরা) এবং ধর্মীয় আচার ও রীতি পালনের জন্য নিজস্ব জায়গা; সমাধিস্থলটিও যথেষ্ট বড়, পৃথক ও রাজকীয়[৯] – এ’সব কিছুই তার পৃথক রাজকীয় মর্যাদারই ইঙ্গিতবাহী।[১০] এর থেকে ঐতিহাসিকরা আন্দাজ করেন যে ফারাও ডেন’এর অল্পবয়সে একটা উল্লেখযোগ্য সময় ফারাও’এর হয়ে তিনিই হয়তো রাজকীয় কাজকর্ম দেখাশুনো করতেন।[১০] সেই কারণেই হয়তো ফারাও ডেন তার মাকে সিংহাসনের যুগ্ম অধিকারীর সম্মান প্রদান করেছিলেন। অবশ্য মিশরের ইতিহাসে এ’রকম ঘটনার উদাহরণ আমরা পরেও দেখতে পাই, যেমন দ্বাদশ রাজবংশের রাণী নোফ্রুসোবেক বা অষ্টাদশ রাজবংশের রাণী হাতশেপসুত[১১]

    মিশরের প্রথম রাজবংশের শাসনকাল নানা কারণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এইসময় প্রশাসনিক বহু রীতির প্রথম প্রচলন ঘটে; নতুন নতুন প্রশাসনিক পদ্ধতির প্রয়োগও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, এইসময় থেকেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অধিকর্তা ও রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের জন্য হা-তিয়া (প্রাদেশিক গভর্নর), ইরি-পাৎ, আজ-মের, প্রভৃতি সম্মানসূচক পদবী ও পদ প্রচলিত হয়। ফারাও হোর-ডেন রাজকীয় উপাধির প্রচলন করে নিসুত-বিতি উপাধি গ্রহণ করেন; তার উত্তরাধিকারী ফারাও আনেজিব এই উপাধিকেই কিছুটা পরিবর্তন করে নেবুই হিসেবে পরিচিত হন। প্রথম রাজবংশের প্রত্যেক শাসকই নিজেদের জন্য আলাদা আলাদা রাজকীয় প্রাসাদ নির্মাণ করান। সুনির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতির রূপায়নের নজিরও আমরা এই আমলে লক্ষ করি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন সাম্রাজ্য, যেমন সিরিয়া, নুবিয়া বা লেভান্তের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে এই সম্পর্ক নির্ধারিত হত। পশ্চিম দিকের প্রতিবেশী লিবীয়দের সাথে এইসময় মিশরের যুদ্ধবিগ্রহ ছিল একপ্রকার নৈমিত্তিক ঘটনা।

    মিশরবিদরা অনেকেই সন্দেহ করেন, প্রথম রাজবংশের শেষের দিকে সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়; এর পরিণামেই আবিডোসের রাজকীয় সমাধিক্ষেত্র এইসময় লুটের শিকার হয়।[১২] এইসময় সিংহাসনে বসেন কিছু অখ্যাতনামা ফারাও, যেমন স্নেফেরকা, সেখেৎ বা হোরাস-বা; এঁদের সম্বন্ধে আমরা খুব একটা কিছু জানি না।

    দ্বিতীয় রাজবংশ

    দ্বিতীয় রাজবংশের সূচনাকালে পরপর তিনজন ফারাও সম্পর্কে মিশরবিদরা অনেকটাই নিশ্চিত; এঁদের মধ্যে প্রথমজন ছিলেন হোতেপসেখেমুই; তারপরে সিংহাসনে বসেন ফারাও নেবরে ও শেষে ক্ষমতায় আসেন নিনেতিয়ের; তৃতীয়জনের মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব পুনরায় মাথা চাড়া দেয় বলে ঐতিহাসিকরা অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন।[১২][১৩]

    ভোলফগাং হেলক, ওয়াল্টার ব্রায়ান এমেরি, হেরমান এ. শ্ল্যোগল, ইউর্গেন ফন বেকেরট, প্রমুখ মিশরবিদদের মতে দ্বিতীয় রাজবংশের আমলে মিশর দু’টি পৃথক সাম্রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে; উচ্চ ও নিম্নমিশর প্রশাসনিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। সেনেড, সেথ-পেরিবসেন এবং সেখেমিব-পেরেনমাৎ‘এর মতো ফারাওরা শুধুমাত্র উচ্চমিশরে রাজত্ব করেন; তাদের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল আবিডোস; অন্যদিকে একইসময়ে সেনেফেরকা, নেফেরকারে/ আকা, হুদিয়েফা বা নেফেরকাসোকার, প্রমুখ ফারাওরা নিম্নমিশরে রাজত্ব করেন ও মেমফিসকে তাদের শাসনকেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন। এই অনুমানের অন্যতম ভিত্তি হল ফারাও সেখেমিব ও পেরিবসেন’এর নামাঙ্কিত কিছু কাদামাটি নির্মিত শীলমোহর; উচ্চ ও নিম্ন মিশরের মধ্যে প্রশাসনিক বিভাজন এখানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত। যেমন উপরিউক্ত শীলগুলিতে রাজকীয় শীলমোহর ব্যবহারের অধিকারীদের সুস্পষ্টভাবে “উচ্চমিশরের

  • বনু আউস

    বনু আউস

    বানু আউস (আরবী: بنو أوس অর্থ আউস বংশধর)৷এ গোত্রের বিখ্যাত একজন ব্যক্তির নাম ছিল আউস৷ তার নামে এ গোত্রটি বনু আউস নামে প্রসিদ্ধি পায়৷ বনু আউস মদিনার আরব গোত্রসমূহের মধ্যে প্রধান একটি গোত্র। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সহচরগণ হিজরত[১][২][৩] করে মদীনা যাওয়ার পর বানু আউস এবং বানু খাযরাজ (মদীনার আরেকটি গোত্রের নাম) তাদেরকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগীতা করেন৷ ফলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হয়ে এ উভয় গোত্রকে আন্সার উপাধিতে ভূষিত করেন৷ আনসার অর্থ সাহায্যকারীবৃন্দ। আউস ও খাযরাজ দুভাই ছিলেন৷ তাদের বাবার নাম হারিসা বিন ছা’লাবা(তিনি জাফনা উপগোত্রের একটি শাখাগোত্র বানু সালাবা এর প্রধান গোত্রপতি ও বানু ক্বায়লাহ শাখাগোত্রের সর্দার ছিলেন)৷ আর মায়ের নাম ক্বায়লাহ বিনতে কাহিল৷ মায়ের নামে এ দুগোত্র কে একত্রে বানু ক্বায়লাহ ( بنو قيلة) নামেও ডাকা হতো।[১]

    বনু আউস

    নামকরণ

    এ গোত্রের নামকরণ গোত্রের প্রথম ব্যক্তি আউস বিন হারেছা এর নামে। আউসের আঠারোতম ঊর্ধ্বতন পুরুষের নাম ক্বাহতান৷ মূল গোত্র থেকে যখন এ শাখা গোত্রটি পৃথক হচ্ছিলো তখন এর প্রবীন ব্যক্তি ছিলেন আউস৷ এজন্য তার নামেই গোত্রটি পরিচিতি পায়৷ [১]

    ইতিহাস

    প্রাক ইতিহাস

    ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে[৪] মা’রিব বাঁধের বড় বন্যার কারণে ইয়েমেন থেকে কাহলানে অভিবাসিত হওয়ার সময়ে তালাবা বিন আমর, সকল আইসের পূর্ব পুরুষ, নিজের গোত্র থেকে আলাদা হয়ে যান এবং ইয়াসরিবে (মদিনা) বসবাস শুরু করে।[৫] এই এলাকা তখন ইহুদিতে শাসনাধীন ছিলো। বনু কয়লা গোত্র কিছুদিন ইহুদিদের প্রজা হিসেবে ছিলো। খাজরাজ গোত্রের মালিক বিন আজলান ইহুদিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায় করে নেন। ফলে আউজ এবং খাজরাজ গোত্র খেঁজুর বাগানের মালিকানা(শেয়ার) লাভ করে।[১] ৫ম শতকে বানু ক্বায়লাহ্ গোত্র ইয়াসরিবকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় এবং ইহুদি গোত্রগুলো এক শতাব্দীর জন্য ইতিহাসের আড়ালে চাপা পড়ে।[৩]

    ইসলামের আগমন

    হিজরত (৬২২ খ্রিস্টাব্দ)

    মুহাম্মদ মক্কা কাফেরদের (মক্কার মূর্তিপুজারীগণকে ইসলামে কাফের নামে অভিহিত করা হয়) অত্যাচারে হিজরত করে মদিনা চলে আসেন। মদিনার বানু আউস এবং বানু খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মদিনা সনদ এর ৩০-৩১ ধারায় বনু আউস গোত্রকে মুসলমানদের মিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[৬] এর পর থেকে বনু আউস সহ মদিনার অন্যান্য গোত্রগুলো আনসার নামে পরিচিত পায়। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে কাব ইবনে আল আশরাফ বনু আউসের লোকের হাতে নিহত হয়।

    বানু কুরাইজাহ – ৬২৭

    বানু কুরাইজা ছিলো মদিনায় বসবাসরত একটি ইহুদি গোত্র। এই গোত্রের কিছু লোক ধর্মান্তরিত হয়। বানু কুরাইজা গোত্র মদিনার অন্যান্য গোত্রের সাথে মদীনা সনদে স্বাক্ষর করে। কিন্তু তারা গোপনে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে আঁতাত করে। মক্কার কুরাইশগন মদিনার মুসলমানদের আক্রমণ করে। যা খন্দকের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৬২৭ সালের এই যুদ্ধে কুরাইশগণ পরাজিত হয়ে মক্কায় পালিয়ে যায়। অন্যদিকে মদিনার অধিবাসী এবং মক্কা থেকে আগত মুসলিম অভিবাসীদের হাতে বনু কুরাইজা গোত্রের ইহুদিদের বড় অংশ নিহত হয়।

    বানু কুরাইজা গোত্র আগের একটি যুদ্ধে বনু আউসের মিত্র বাহিনী ছিলো। মদিনাবাসীগণ যখন বানু কুরাইজাকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য বন্দি করলো তখন তারা বিচারের জন্য আউস গোত্রের প্রধান সাদ ইবনে মুয়াজ কে বিচারক নির্বাচন করলো।[৭] সাদ অভিযুক্ত গোত্রের পুরুষকে হত্যা এবং নারী ও শিশুকে দাস হিসেবে বন্দী করার রায় দেন।[৩] সাদ খন্দকের যুদ্ধে মারাত্বক আহত হয়েছিলেন। এর অল্প কিছুদিন পরে তিনি মারা যান।

    বনু আউস গোত্রের কয়েকজন ব্যক্তি

  • অভিযান

    অভিযান

    অভিযান বলতে বোঝায় কোন তথ্য বা সংস্থান আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করাকে। মানুষ সহ সকল প্রকার প্রাণীরা অভিযান করে থাকে। মানব ইতিহাসে, এর নাটকীয় উত্থান আবিষ্কারের যুগে ঘটেছিল যখন ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা বিভিন্ন কারণে বিশ্বের বাকি অংশ যাত্রা করেছিলেন। সেই থেকে আবিষ্কারের যুগ পরবর্তী বড় অনুসন্ধানগুলি মূলত তথ্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই ঘটেছিল।

    অভিযানকারী কাজিমিয়ের্য নোয়াক

    অভিযান

    মানব অনুসন্ধানের উল্লেখযোগ্য সময়কাল

    ফিনিশিয়ান গ্যালির নৌযান

    ফিনিশিয়ানরা (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ – খ্রিস্টপূর্ব ৩০০) ভূমধ্যসাগর এবং আনাতুলিয়া জুড়ে ব্যবসা করত যদিও তাদের বেশিরভাগ ভ্রমণপথ আজও অজানা। কিছু ফিনিশিয়ান নিদর্শনগুলিতে টিনের উপস্থিতি বোঝায় যে তারা সম্ভবত ব্রিটেন ভ্রমণ করেছিলেন। ভার্জিলের আনিড এবং অন্যান্য প্রাচীন উৎস অনুসারে, কিংবদন্তি কুইন দিদো ছিলেন সোরের ফিনিশিয়ান যিনি উত্তর আফ্রিকায় যাত্রা করেছিলেন এবং কার্থেজ শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

    পশ্চিম আফ্রিকার কার্টেজিনান অভিযান

    হ্যানো নেভিগেটর (খ্রিস্টপূর্ব ৫০০), একজন কার্থাজেইন অভিযাত্রী যিনি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অভিযান করেছিলেন।

    উত্তর ইউরোপ এবং থুলিতে গ্রীক ও রোমানদের অভিযান

    মার্সেই, পাইথিয়াসের গ্রীক অভিযাত্রী (৩৮০ – খ্রিস্টপূর্ব ৩১০ খ্রিস্টাব্দ) সর্বপ্রথম গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানিতে অভিযান চালিয়েছিলেন এবং থুলিতে পৌঁছেছিলেন (সাধারণভাবে যাকে শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বা আইসল্যান্ড বলে মনে করা হতো)।

    রোমান অভিযান

    আফ্রিকা অভিযান

    রোমানরা সাহারা মরুভূমি পার হওয়ার জন্য পাঁচটি বিভিন্ন পথ দিয়ে অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল:

    এই সমস্ত অভিযানগুলি লিজিওনারিদের দ্বারা সমর্থিত এবং মূলত একটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল। ৬২ খ্রিস্টাব্দে দুটি সেনাদল নীল নদের উৎস অনুসন্ধান করেছিলেন; সম্রাট নেরো কর্তৃক চালানো একমাত্র এই অভিযানটিকেই ইথিওপিয়া বা নুবিয়া বিজয়ের প্রস্তুতি বলে মনে হয়েছিল।

    অনুসন্ধানের মূল কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল স্বর্ণ লাভ করে উটের মাধ্যমে তা পরিবহন করা।

    আফ্রিকার পশ্চিম এবং পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি অভিযান রোমান জাহাজ দ্বারা সমর্থিত ছিল এবং নৌ বাণিজ্যগুলির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত ছিল (মূলত ভারত মহাসাগরের দিকে)। রোমানরা উত্তর ইউরোপেও বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছিল এবং এশিয়াতে চীন পর্যন্ত অভিযান করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দ-৬৪০ খ্রিস্টাব্দ

    টলেমেক মিশর অধিগ্রহণের সময় রোমানরা ভারতের সাথে বাণিজ্য শুরু করে। সাম্রাজ্যটির এখন মশলা বাণিজ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে যা মিশর খ্রিস্টপূর্ব ১১৮ অব্দের প্রথম দিকে শুরু করেছিল। ১০০ খ্রিস্টাব্দ-১৬৬ খ্রিস্টাব্দ

    এ সময়ে রোমান-চীনা সম্পর্ক শুরু হয়। টলেমি গোল্ডেন চেরোনাসি (অর্থাৎ মালয় উপদ্বীপ) এবং কাটিগারা বাণিজ্য বন্দরের কথা লিখেছেন, যা এখন উত্তর ভিয়েতনামের এসি ইও নামে পরিচিত। এটি চীনা হান সাম্রাজ্য এর একটি প্রদেশ জিয়াওঝোর অংশ।

    পলিনেশিয়ান যুগ

    অস্ট্রোনেশিয়ান

    পলিনেশিয়ানরা উপকূলবর্তী মানুষ ছিলেন, তারা নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করার সময় প্রায় ৫০০ বছর ধরে অভিযান চালানোর পর মধ্য ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরকে আবিষ্কার করেছিলেন। তাদের অভিযানের মূল আবিষ্কারটি ছিল আউটরিগার ক্যানো, যা মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য একটি দ্রুত এবং স্থিতিশীল মঞ্চে পরিণত হয়। ধারণা করা হয় যে, নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে করা ভ্রমণটি সুচিন্তিত ছিল।

    আচরণগত বৈশিষ্ট্য

    ২০১৫ সালের একটি গবেষণা , যা মোবাইল ফোনের ডেটা এবং ইতালির ব্যক্তিগত যানবাহনের জিপিএস ট্র্যাকার এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করাহয়েছিল, তা প্রমাণিত করে যে, ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে তাদের গতিশীলতার অভ্যাস অনুসারে দুটি সু-সংজ্ঞায়িত বিভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, যার মধ্যে একটি হলো “অভিযাত্রী” এবং অপরটি হলো “প্রত্যাবর্তনকারী”।

  • প্রবেশদ্বার:ইতিহাস

    প্রবেশদ্বার:ইতিহাস

    সম্পাদনা

    ইতিহাস প্রবেশদ্বার

    ইতিহাস হল সমাজ, সভ্যতা ও মানুষের রেখে যাওয়া নিদর্শনের উপর গবেষণা ও সেখান থেকে অতীত সম্পর্কের সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা নেবার শাস্ত্র। ইতিহাস সন্ধিবিচ্ছেদ করলে হয় ইতি হ আস, এই রকম ছিল। বাংলা ইতিহাস শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে হিস্টোরি। গ্রীক শব্দ হিস্টোরিয়া থেকেই এই হিস্টোরি শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ কোন কিছু কারন সন্ধান। ইংরেজি শব্দ স্টোরি থেকে এই শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত কারন সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯১১ সালের এনস্লাইকোপেডিয়া ব্রিটানিকাতে প্রকাশিত সংজ্ঞা মতে, ইতিহাস হল ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী, যাতে মানবজীবনে ঘটে যাওয়া সব বিষয়ই শুধু নয় প্রকৃতির ঘটনাবলীও অন্তর্ভুক্ত। সব কিছুই পরিবর্তিত হয় এং আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে, কিছুই পরম নয়। ফলে, সমগ্র মহাবিশ্ব ও এর সকল অংশেরই ইতিহাস বিদ্যমান। বিস্তারিত…

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত নিবন্ধ

    প্রবেশদ্বার:ইতিহাস

    মহামতি আলেকজান্ডার

    মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the great) (জন্ম – জুলাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬, মৃত্যু জুন ১১, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ জয় (টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) করেছিলেন। আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামেও পরিচিত, কারন তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফার্সি ভাষায় “ইস্কান্দর, মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের”, উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর, হিব্রুতে “আলেকজান্ডার মোকদন, আরমেনিয়ানয়ে ট্রে-কারনাইয়া”। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ “দুই শিং বিশিষ্ট” (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শি” বা অত্যন্ত পারদর্শি।

    আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। আলজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্র গুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারন ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। এরপর তিনি পূর্বে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন, কারন শৈশবে তার শিক্ষক বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী এরিস্টোটল তাকে বলেছিলেন কোথায় ভূমি শেষ হয় এবং মহাসাগর শুরু হয়। আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে বিদেশী (বিশেষ করে যারা গ্রিক বা মেসিডোনিয়ান নয়) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে “একত্রিকরণ”-এর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তিনি তার সেনাবাহিনীতে বিদেশীদের সাথে বিবাহ উৎসাহিত করেন এবং নিজেও বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেন। প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর আলেকজান্ডার মৃত্যু বরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্‌ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। আলেকজান্ডারের অভিযানের ফলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে (মিশর, গ্রিক, পারস্য, ভারতীয়) এক নতুন সভ্যতার শুরু হয়। এই সভ্যতাই হেলেনেস্টিক সভ্যতা। গ্রিক ও গ্রিসের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতায় আলেকজান্ডার ইতিহাসে, সাহিত্যে, পুরাণে জীবিত হয়ে আছেন। … … … আরও জানুন

    পরামর্শসংগ্রহশালা

    সম্পাদনা

    নির্বাচিত চিত্র

    সম্রাট আকবর

    মুঘল সম্রাট আকবর এই সাম্রাজ্যের তৃতীয় এবং সর্বশ্রেষ্ট্র সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। … … … আরো জানুন

    পরামর্শসংগ্রহশালা

    সম্পাদনা

    আপনি জানেন কি…

    এরিস্টোটল

    • … ভারতের শেষ স্বাধীন মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর … … …
    • … … …ঘসেটি বেগমকে অর্ধেক পুতে হত্যা করা হয়েছিলো…

    সম্পাদনা

    ইতিহাস উপপ্রবেশদ্বার

    প্রত্নতত্ত্বপ্রাচীন সভ্যতা
    মিশরীয় ইতিহাসপ্রাচীন জার্মানিক সংস্কৃতি
    বিজ্ঞানের ইতিহাসযুদ্ধ
    প্রাচীন রোমপ্রাচীন রোমের সামরিক বাহিনী
    প্রাচীন গ্রিসবাইজান্টাইন সাম্রাজ্য
    ত্রুটি:চিত্রটি সঠিক নয় অথবা চিত্রটি নাই
    মধ্যযুগক্রুসেডস
    ইসলামের ইতিহাসবাংলাদেশের ইতিহাস
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধআমেরিকার গৃহযুদ্ধ
    মুসলিম সাম্রাজ্যউসমানীয় সাম্রাজ্য

    সম্পাদনা

    উইকিপ্রকল্প

    সম্পাদনা

    আপনি কি করতে পারেন

    • বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে পারেন।
    • বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে পারেন।
    • ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লিখতে পারেন।
    • বিভিন্ন দেশের ইতিহাস নিয়ে লিখতে পারেন।
    • বিভিন্ন আবিস্কারের ইতিহাস নিয়ে লিখতে পারেন।

    সম্পাদনা

    বিষয়শ্রেণী

    ইতিহাসবাংলাদেশের ইতিহাসপ্রাচীন ইতিহাসসভ্যতযুদ্ধপ্রাচীন সভ্যতাএশিয়ার ইতিহাসইসলামের ইতিহাসহিন্দুধর্মের ইতিহাসঐতিহাসিকবিজ্ঞানের ইতিহাসভারতের ইতিহাসইউরোপের ইতিহাস

    সম্পাদনা

    সম্পর্কিত উইকিমিডিয়া

    উইকিউক্তিতে ইতিহাস
    উক্তি
    কমন্‌সে ইতিহাস
    চিত্র
    উইকিউৎসে ইতিহাস
    লেখা
    উইকিবইয়ে ইতিহাস
    সারগ্রন্থ এবং লেখা

    সার্ভার ক্যাশ খালি করুন

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • ইতিহাস

    ইতিহাস

    ইতিহাস[ক] হলো অতীত বৃত্তান্ত বা কালানুক্রমিক অতীত কাহিনি ও কার্যাবলির লিখন, বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন।[২][৩][৪][৫] তবে কোনো কোনো দার্শনিক (যেমন- বেনেদেত্তো ক্রোচে) মনে করেন, যে ইতিহাস হলো বর্তমান, কারণ অতীত ঘটনাগুলোই বর্তমানে “ইতিহাস” হিসাবে অধ্যয়ন করা হয়।[৬] বৃহৎ একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এটি কখনো মানবিক বিজ্ঞান এবং কখনো বা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই ইতিহাসকে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। কারণ ইতিহাসে এই উভয়বিধ শাস্ত্র থেকেই পদ্ধতিগত সাহায্য ও বিভিন্ন উপাদান নেওয়া হয়। ইতিহাসের উদ্দেশ্য হলো বর্তমানের সাথে অতীতকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা।[৬]

    ইতিহাস

    একটি শাস্ত্র হিসেবে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো উপবিভাগের নাম চলে আসে, তার মধ্যে রয়েছে দিনপঞ্জি, ইতিহাস লিখন, কুলজি শাস্ত্র, প্যালিওগ্রাফি, ক্লায়োমেট্রিক্স ইত্যাদি। স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে, ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, যদিও কেবল লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসে সকল তত্ত্ব উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যে উৎসগুলো বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়– লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক বা প্রত্যক্ষকরণ। ইতিহাসবেত্তারা সাধারণত তিনটি উৎসই বিশ্লেষণ করে দেখেন। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে লিখিত উপাদান সর্বজনস্বীকৃত। এই উৎসটির সাথে লিখন পদ্ধতির ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

    শব্দের উৎপত্তি

    ইংরেজি “হিস্টরি” (History) শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে “ইতিহাস” শব্দটি এসেছে। ইংরেজি History শব্দটি এসেছে গ্রিকলাতিন শব্দ ἱστορία – Historia থেকে, যার অর্থ সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত গ্রিসের হেরোডোটাস তাঁর গ্রিক ও পারসিকদের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনাসম্বলিত গ্রন্থের নামকরণ করেন Historia (যার ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে “Histories”)। মূলত ঘটনার অনুসন্ধান অর্থে হেরোডোটাস Historia শব্দটি ব্যবহার করেন।

    বাংলা ভাষায় “ইতিহাস” শব্দটি এসেছে ‘ইতিহ’ শব্দমূল থেকে, যার অর্থ ঐতিহ্য। এটি হলো একটি তৎসম শব্দ, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। ইতিহাস শব্দটির রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়- ইতহ + √অস্ + অ – যার অর্থ হলো “এমনটিই ছিল বা এমনটিই ঘটেছিল।”

    লিখনধারা

    রাজমালা, ১৫-১৬ শতকে বাংলা পদ্যে লিখিত ত্রিপুরার ইতিহাস-বিষয়ক একটি গ্রন্থ, যা বাংলা ভাষায় ইতিহাস লিখনের প্রারম্ভিক নমুনাগুলোর একটি।

    মূল নিবন্ধ: ইতিহাস লিখনধারা

    ইতিহাস লিখনধারার সম্পর্কিত বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। প্রথমত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- পদ্ধতি ও অনুশীলনের বিকাশের গল্প। দ্বিতীয়ত, এটি বুঝায় কী সৃষ্টি করেছে, যেমন- ইতিহাস লিখনরীতির নির্দিষ্ট বিষয়। তৃতীয়ত, এটি দিয়ে বুঝানো হয় কীভাবে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- ইতিহাসের দর্শন। অতীতের বর্ণনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃতীয় ধারণাটি প্রথম দুটি ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়, যা মূলত বর্ণনা, ব্যাখ্যা, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ, সাক্ষ্য বা প্রমাণের ব্যবহার, বা অন্যান্য ইতিহাসবেত্তাদের উপস্থাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাস কি একক বর্ণনা নাকি ধারাবাহিক বর্ণনা হিসেবে শিখানো হবে তা নিয়ে পেশাদারী ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।[৭][৮]

    দর্শন

    আলেকজেন্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারের একটি চিত্র

    মূল নিবন্ধ: ইতিহাসের দর্শন

    ইতিহাসের দর্শন হলো দর্শনের একটি শাখা যেখানে ঘটনাবলির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশেষ করে মানবীয় ইতিহাস।[৯] এছাড়া এই শাখায় এর বিকাশের সম্ভাব্য পরমকারণমূলক সমাপ্তির কথা বিবেচনা করা হয়, যেমন- মানবীয় ইতিহাসের পদ্ধতিতে কোনো নকশা, কারণ, নীতি, বা সমাপ্তি রয়েছে কিনা। ইতিহাসের দর্শনকে ইতিহাস লিখনধারার সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। ইতিহাস লিখনধারায় ইতিহাসের পদ্ধতি ও অনুশীলন এবং ইতিহাসকে একটি নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে এর বিকাশের উপর জোড় দেওয়া হয়।[১০] আবার ইতিহাসের দর্শনকে দর্শনের ইতিহাসের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না, কারণ দর্শনের ইতিহাস হলো একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দর্শনের ধারণাসমূহের বিকাশ নিয়ে অধ্যয়ন।

    অধ্যয়নের ক্ষেত্র

    যুগ নির্ধারণ

    ইতিহাস এক নির্দিষ্ট সময়ে ঘটা ঘটনাবলি ও উন্নয়নকে কেন্দ্র করে লিখিত হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ সেই সময় বা যুগকে একটি নির্দিষ্ট নাম দিয়ে চিহ্নিত করেন।[১১] ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই নামসমূহ ভিন্ন হতে পারে, যেমন- সেই যুগের শুরুর সময় ও সমাপ্তির সময়। শতাব্দীদশক হলো বহুল ব্যবহৃত যুগ নির্দেশক এবং কালপঞ্জি অনুসারে এই যুগ নির্ধারিত হয়। বেশিরভাগ যুগ পূর্ববর্তী ঘটনার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় এবং এর ফলে এতে পূর্ববর্তী সময়ে ব্যবহৃত মৌলিক ধারণা ও বিচারবুদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। যে পদ্ধতিতে যুগসমূহের নাম দেওয়া হয় তা এই যুগসমূহকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে এবং কীভাবে অধ্যয়ন করা হচ্ছে তাকে প্রভাবিত করে।[১২]

    সময়কালভিত্তিক

    ভৌগোলিক অবস্থান

    নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, যেমন- মহাদেশ, দেশশহরও ইতিহাস অধ্যয়নের ক্ষেত্র। ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কেন ঘটেছিল তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণ জানার জন্য ইতিহাসবেত্তাগণ ভূগোল অধ্যয়ন করে থাকেন।

    অঞ্চলভিত্তিক

    অর্থনৈতিক ইতিহাস

    মূল নিবন্ধসমূহ: অর্থনীতির ইতিহাসব্যবসার ইতিহাস

    যদিও অর্থনৈতিক ইতিহাস উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বর্তমান সময়ে অর্থনীতি বিভাগে এই বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং তা প্রথাগত ইতিহাস বিভাগ থেকে ভিন্ন।[১৩] ব্যবসায় তত্ত্বে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক কৌশল, সরকারি নিয়মকানুন, শ্রম বিভাগের সম্পর্কের ইতিহাস ও সমাজে এর প্রভাব বর্ণিত হয়। এছাড়া এতে নির্দিষ্ট কোম্পানি, নির্বাহী, ও উদ্যোক্তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়। ব্যবসায় তত্ত্ব অর্থনৈতিক ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এবং তা ব্যবসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান করা হয়।[১৪]

    ধর্মের ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: ধর্মের ইতিহাস

    ধর্মের ইতিহাস শতাব্দীকাল ধরে ধর্মবহির্ভূত ও ধার্মিক দুই শ্রেণির ইতিহাসবেত্তাদের কাছে প্রধান বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এবং ধর্মীয় শিক্ষালয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তা শিখানো হচ্ছে। এই ধরনের ইতিহাস বিষয়ক প্রধান সাময়িকীসমূহ হলো চার্চ হিস্টরি, দ্য ক্যাথলিক হিস্টরিক্যাল রিভিউ, এবং হিস্টরি অফ রিলিজিয়ন্স[১৫] সাধারণত এর বিষয়বস্তু হয়ে থাকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক দিক, এমনকি ধর্মতত্ত্ব ও প্রার্থনার বিধিও। এই বিষয়ের অধীনে পৃথিবীর যে সকল অঞ্চল ও এলাকায় মানুষ বসবাস করেছে, সে সকল অঞ্চল ও এলাকার ধর্ম নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।[১৬]

    পরিবেশগত ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: পরিবেশগত ইতিহাস

    পরিবেশগত ইতিহাস হলো ইতিহাসের একটি নবীন ক্ষেত্র, যা ১৯৮০-এর দশকে বিকাশ লাভ করে। এতে পরিবেশের ইতিহাস এবং পরিবেশের উপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়।[১৭]

    বিশ্বের ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: বিশ্বের ইতিহাস

    বিশ্বের ইতিহাস হলো গত ৩০০০ বছর ধরে প্রধান প্রধান সভ্যতার বিকাশের অধ্যয়ন। বিশ্বের ইতিহাস মূলত শিক্ষার একটি ক্ষেত্র। বিষয়টি ১৯৮০-এর দশকের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,[১৮] জাপান[১৯] ও অন্যান্য দেশে বিশ্বায়নের ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

    সংস্কৃতির ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: সাংস্কৃতিক ইতিহাস

    সংস্কৃতির ইতিহাস হলো সমাজে শিল্পকলা ও মানুষের চিত্র ও দৃশ্য ধারণার অধ্যয়ন। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এটি সামাজিক ইতিহাসের স্থলাভিষিক্ত হয়। এটি মূলত নৃবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সমন্বিত রূপ যেখানে ভাষা, জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। এতে অতীতে মানুষের জ্ঞানচর্চা, প্রথা ও শিল্পের নথি ও বর্ণনা পরীক্ষা করা হয়। অতীতে মানুষ কীভাবে তাদের স্মৃতি ধরে রেখেছিল তা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আলোচনার প্রধান বিষয়।[২০]

    সেনাবাহিনীর ইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: সেনাবাহিনীর ইতিহাস

    সেনাবাহিনীর ইতিহাস হলো যুদ্ধবিগ্রহ, যুদ্ধ কৌশল, যুদ্ধ, অস্ত্র ও যুদ্ধের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ধারণা। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে আবির্ভূত হওয়া নব্য সেনাবাহিনীর ইতিহাস সেনাপ্রধানদের চেয়ে সৈন্যদের প্রতি বেশি আলোকপাত করে, বিশেষ করে রণকৌশলের চেয়ে তাঁদের মনস্তত্ত্ব এবং সমাজ ও সংস্কৃতিতে যুদ্ধ বিগ্রহের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।[২১]

    ইতিহাসবেত্তা

    বেনেদেত্তো ক্রোচে

    Ban Zhao, courtesy name Huiban, was the first known female Chinese historian.

    পান চাও, সৌজন্যমূলক নাম হুইপান, এখন পর্যন্ত জানতে পারা প্রথম চীনা ইতিহাসবেত্তা ছিলেন।

    মূল নিবন্ধ: ইতিহাসবিদ

    আরও দেখুন: ইতিহাসবেত্তাদের তালিকা

    পেশাদার ও অপেশাদার ইতিহাসবেত্তগণ পূর্ববর্তী ঘটনাবলি আবিষ্কার, সংগ্রহ, সংগঠিত ও উপস্থাপন করেন। তাঁরা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, পূর্বের লিখিত মৌলিক উৎস ও অন্যান্য উপায়ে, যেমন- স্থানের নামের তথ্য আবিষ্কার করেন। ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় ঐতিহাসিক যুগের কালক্রম অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, বিশেষ করে তাদের ইতিহাস লেখার সময় অনুসারে কারণ তিনি যে সময়ে বর্তমান ছিলেন সেই সময়ের ইতিহাস না লিখে অন্য কোনো সময়ের ইতিহাস রচনায় বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। কালনিরূপক ও আখ্যানকারগণ যদিও ইতিহাসবেত্তা নন, তবে কিছু ক্ষেত্রে তাঁদেরকেও ইতিহাসবেত্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    ছদ্মইতিহাস

    মূল নিবন্ধ: ছদ্মইতিহাস

    ছদ্মইতিহাস হলো এমন লিখিত রূপ যার সারমর্ম ঐতিহাসিক প্রকৃতির, কিন্তু ইতিহাস লিখনধারার চিরাচরিত রূপ থেকে ভিন্ন এবং এতে পরিণতি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি ঐতিহাসিক নেতিবাচকতার সাথে সম্পৃক্ত এবং জাতীয়, রাজনৈতিক, সেনাবাহিনী ও ধর্ম বিষয়ে নতুন, কল্পনাপ্রসূত ও বিরোধপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রমাণের মাধ্যমে উপসংহার টেনে থাকে।[২২]

    প্রাগৈতিহাস

    মূল নিবন্ধ: প্রাগৈতিহাস

    মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিকাশের ইতিহাস, কিন্তু প্রশ্নটি সবসময় বিতর্কিত ছিল যে আদিমানুষ ও তাঁদের সভ্যতা কখন ও কোথায় বিকশিত হয়েছিল। ইতিহাসের এই অধ্যয়নকে বলা হয় প্রাগৈতিহাস। অর্থাৎ ইতিহাসের আগের ইতিহাস। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানবসভ্যতা চারটি ভাগে বিভক্ত-[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    • আদিপ্রস্তর যুগ
    • প্রাথমিক প্রস্তর যুগ
    • প্রয়াত প্যালিওলিথিক যুগ
    • ধাতু সময়কাল

    প্রাচীনতম মানবসভ্যতা বিষয়ক অধ্যয়ন

    হাজার বছর বর্বরতা থেকে অর্ধসভ্যতা এবং অর্ধসভ্যতা থেকে সভ্যতার প্রথম স্তর পর্যন্ত আবৃত থাকে। কিন্তু পৃথিবীর কোন সময়ে, কীভাবে এই সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে আজও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে এটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, প্রাচীন বিশ্বের সকল সভ্যতা নদীর উপত্যকায় উদ্ভূত এবং সমৃদ্ধ হয়েছিল। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতাঅ্যাসিরীয় সভ্যতা দজলাফুরাত নদী উপত্যকায়, নীলনদ উপত্যকায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা এবং সিন্ধু নদী উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    আরও দেখুন

    উদ্ধৃতি

    টীকা

    উচ্চারণ: ইতিহাশ[ɪt̪ɪˌɦaʃ]