অন্তরীপ হচ্ছে এক ধরনের ভূমিরূপ। ভূগোলের পরিভাষায়ঃ ভূপৃষ্ঠের কোন অংশ ক্রমশ সরু হয়ে কোন জল-অংশে (সাধারণতঃ সাগর) প্রবেশ করলে সেই সংকীর্ণ অংশকে অন্তরীপ বলা হয়।[১] অন্তরীপের ভৌগোলিক আয়ুষ্কাল সাধারণত কম হয়।
গঠনের কারণ
হিমবাহ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে অন্তরীপ গঠিত হতে পারে।
Cape Cod and the islands off the Massachusetts coast, from space
অধোগমন হলো একটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যা টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত সীমানায় সংঘটিত হয় যাতে একটি প্লেট অন্যটির নিচে চলে যায় এবং গুরুমন্ডলস্থ অভিকর্ষের কারণে ডুবে যেতে বাধ্য হয়।[১]ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে যে অঞ্চলে এই প্রক্রিয়াটি ঘটে তাকে অধোগমন অঞ্চল বলে। অধোগমনের হার সাধারণত প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার হয়; বেশিরভাগ প্লেটের প্রান্ত সীমানা বরাবর ঘর্ষণের ফলে পতনের গড় হার প্রায় দুই থেকে আট সেন্টিমিটার হয়।[১]
সংজ্ঞা
যখন কোনও মহাসাগরীয় প্লেট একটি মহাদেশীয় প্লেটের নিচে চলে যায় এবং এর তলদেশ দিয়ে সঞ্চলিত হয় তখন তাকে অধোগমন বলে।[২]
সাধারণ বর্ণনা
প্লেটগুলো সঞ্চারনশীল হওয়ায় এগুলো বিভিন্ন দিকে পরিভ্রমণ করে এবং এই অবস্থায় কখনও যদি দুটি মহাসাগরীয় প্লেট অথবা একটি মহাসাগরীয় এবং একটি মহাদেশীয় প্লেট মুখোমুখি অগ্রসর হয় তখন প্লেট দুটি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি লম্বালম্বি সম্প্রসারিত মন্ডলের সৃষ্টি করে যেখানে একটি প্লেট অপর প্লেটের নিচ দিয়ে অগ্রসর হয়, ফলে অধোগমনের সৃষ্টি হয়।[৩]
সাধারণত নিরক্ষরেখা থেকে ১০ ডিগ্রী উত্তর দিকে বা দক্ষিণ দিকে যে অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলির দেখা মেলে, সেগুলিকে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য (ইংরেজি: Tropical rainforest) বলে। এগুলিতে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র এবং কোন বিশেষ শুষ্ক মৌসুম থাকে না। এগুলিতে গড় মাসিক তাপমাত্রা বছরের প্রায় সকল মাসেই ১৮ °সে (৬৪ °ফা) অতিক্রম করে।[১] গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৮ সেমি (৬৬ ইঞ্চি)-এর নিচে হয় না এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,০০০ সেমি (৩৯০ ইঞ্চি)ও অতিক্রম করতে পারে। তবে সাধারণত বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হয়ে থাকে ১৭৫ সেমি (৬৯ ইঞ্চি) থেকে ২০০ সেমি (৭৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত।[২]
বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্যের ভৌগোলিক অবস্থান
ক্রান্তীয় অঞ্চলের অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত ক্রান্তীয় আর্দ্র অরণ্যের পর্যায়ে পড়ে, যার অনেক রকম বিভাজন আছে। বন গবেষকগণ অতিবৃষ্টি অরণ্যকে অন্যান্য অরণ্য থেকে আলাদা করেন কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে, যেমন: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, শুকনো মৌসুমের ব্যাপ্তি, এবং উচ্চতা।[৬]
তাপমাত্রা
অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র- বার্ষিক গড় তাপমাত্রা হলো ২৫° সেলসিয়াস (৭৭° ফারেনহাইট)। বিষুবরেখার কাছাকাছি তাপমাত্রায় কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তবে বর্ষাবনে তাপমাত্রা বছরের প্রায় সব সময়ই প্রায় একই রকম থাকে- গড় সর্বনিম্ন মাসিক তাপমাত্রা হলো আরামদায়ক ১৮° সেলসিয়াস (৬৪° ফারেনহাইট)। যেখানকার তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াসের (৩২° ফারেনহাইট) কাছাকাছি চলে আসে সেখানে সাধারণত অতিবৃষ্টি অরণ্য গড়ে উঠে না কারণ বর্ষাবনের উদ্ভিদ ও জীবপ্রজাতি এতো কম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিবৃষ্টি অরণ্যের তাপমাত্রা বিষুবরেখা থেকে এর দূরত্বের ভিত্তিতে শুধু নির্ধারিত হয় না, বরং উচ্চতার উপরও নির্ভর করে। যত উচ্চতা বেশি হয়, রাতের তাপমাত্রা আনুপাতিক হারে তত কমতে থাকে। দৈনিক তাপমাত্রার এরকম উঠা-নামা অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। আর তাই সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,২৮০ ফুট (১,০০০ মিটার) উচ্চতার ঊর্ধ্বে অতিবৃষ্টি অরণ্য দেখা যায় না।[৬]
বৃষ্টিপাত
মূলত বৃষ্টিপাতের সাথেই অতিবৃষ্টি অরণ্যের সম্পর্ক। অতিবৃষ্টি অরণ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৮০০ মিলিমিটার (৬ ফুট) থেকে ৯০০০ মিলিমিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি মাসে সাধারণত ১০০ মিলিলিটারেরও (৪ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বলতে গেলে কোন অতিবৃষ্টি অরণ্যে শুকনো মৌসুম থাকেই না। যদি কখনও শুকনো সময় দেখা যায়, তবে সেটা সাধারণত হয় সংক্ষিপ্ত এবং আগে থেকে জানা যায় না।[৬]
বিভিন্ন জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতের জন্য জলীয়বাষ্প দূর থেকে এলেও অতিবৃষ্টি অরণ্যে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার জলীয়বাষ্পের ৫০ শতাংশই হয় ঐ অতিবৃষ্টি অরণ্যের জলীয়বাষ্প। অতিবৃষ্টি অরণ্যকে ঘিরে থাকা গরম, ভ্যাপসা, আর্দ্রতাপূর্ণ যে বাতাস বিরাজ করে, তা জলীয়বাষ্পের খুব অল্প অংশই বেরিয়ে যেতে দেয়। অতিবৃষ্টি অরণ্যে যতটুকু বৃষ্টিপাত হয় তার অধিকাংশই গাছগুলো তার শাখা প্রশাখায় শুষে নেয়। কিছু পরিমাণ পাতার ফাঁক গলে নিচে পড়ে, যদিও অধিকাংশই নিচে পড়ার আগেই বাষ্প হয়ে যায় এবং আর্দ্র বাতাসে ভেসে থাকে। মৃদু, সদা চলাচলরত বাতাস তখন বাতাসের এই জলীয় অংশকে ঊর্ধ্বাকাশে তুলে নেয় এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে মেঘে পরিণত হয়। যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা জলীয় বাষ্প তৈরি হয়, তখন তা বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে, আবারো বৃষ্টির চক্রকে চালু রাখে।[৬]
মৃত্তিকার রূপ
অধিকাংশ অতিবৃষ্টি অরণ্যেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিপুল বৃষ্টিপাত আর প্রচন্ড গরমের কারণে মাটির পুষ্টি গুণাগুণ হারিয়ে যায়। পুষ্টি চাহিদার এই করুণ অবস্থার কারণে অধিকাংশ ক্রান্তীয় বৃক্ষ যতটুকু পুষ্টি পাওয়া যায়, তা তাদের জীবন্ত কোষে জমা করে রাখে। যখন এসব ক্রান্তীয় গাছগুলো মারা যায় তখন তাদের জমা করে রাখা পুষ্টি গুণাগুণ পচনের মাধ্যমে মাটিতে আবার ফিরে আসে। কিন্তু মাটিতে জমা থাকার চেয়ে অন্যান্য জীব বা উদ্ভিদ সাথে সাথেই সেসকল পুষ্টি গুণাগুণ শুষে নেয়।[৬]
অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন
অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন অন্যান্য সকল বনের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে এর বিভিন্ন স্তরভিত্তিক উদ্ভিদরাজির সমাবেশের কারণে, যাকে বলা হয় স্ট্রাটা (strata), একবচনেস্ট্র্যাটাম (stratum)।[৬]
উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য
অতিবৃষ্টি অরণ্যের উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর যে পরিমাণ, আদতে তা যেকোনো বাসস্থানের চেয়ে সমৃদ্ধ। যদিও বিগত কয়েক লক্ষ কোটি বছরের জলবায়ুগত পরিবর্তনে তাদের পরিমাণ কখনও বেড়েছে কখনও কমেছে, তবুও বর্ষাবন হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি বাস্তুসংস্থান। এই ধারাবাহিকতার কারণেই অতিবৃষ্টি অরণ্যে বেড়ে উঠেছে লক্ষ কোটি প্রজাতি, যার অনেকগুলো এনডেমিক (endemic), বা একমাত্র।[৬]
অঞ্চল একটি ভৌগোলিক প্রতিশব্দ যা বিভিন্ন অর্থে ভূগোলের বিভিন্ন শাখায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, অঞ্চল হলো একটি মাঝারি আয়তনের স্থল বা জলভাগ বোঝায়, যা প্রতিপাদিত এলাকার সমুদয় অংশ হতে ক্ষুদ্রতর (উদাহরণ সরূপ যা হতে পুরো পৃথিবী, একটি রাষ্ট্র, একটি নদীর মোহনা এবং অণ্যান্য) এবং কোন নির্দিষ্ট এলাকা হতে বৃহত্তর। একটি অঞ্চলকে অনেকগুলো ক্ষুদ্র এককের সমষ্টি হিসাবে (যেমন “নিউ ইংল্যান্ড রাজ্য”) অথবা বৃহৎ এলাকার একটি অংশ (যেমন “যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চল”) হিসাবেও বিবেচনা করা যায়।
অঞ্চল : ইংরেজি “region” শব্দটি ল্যাটিন regio (regere, to rule) থেকে উদ্ভূত, যার বাংলা প্রতিশব্দ অঞ্চল। অনেক দেশ এ শব্দটি রাষ্ট্রের উপবিভাগগুলোর প্রথাগত সত্তা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ইংরেজিতে এ শব্দটি অন্যান্য ভাষায় রীতিসম্মত অনুবাদের সমার্থক শব্দ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশ অঞ্চল শব্দটি প্রশাসনিক একক হিসেবে ব্যবহার করে।
অঞ্চল হচ্ছে একটি বৃহৎ ভূভাগ যা অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্নতর, যেমন- এটি নিজের রীতিনীতি ও বৈশিষ্ট্য, অথবা এর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবয়বের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। ব্রিটিশ ভূগোলবিদদের ধারণা অনুযায়ী, একটি বৃহৎ, অনির্দিষ্ট এবং ভূপৃষ্ঠের অবিরত অংশ বা পরিসর হচ্ছে অঞ্চল। অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি এলাকা যাকে ভৌগোলিক, কার্মিক, সামাজিক অথবা সাংস্কৃতিক কারণে একটি একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি হতে পারে দেশের একটি প্রশাসনিক এলাকা। অঞ্চল হতে পারে কর্মকাণ্ড বা আগ্রহের একটি এলাকা বা পরিমণ্ডল। অপরদিকে আমেরিকার ভূগোলবিদদের ধারণা অনুযায়ী, একটি বৃহৎ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের অনির্দিষ্ট অংশ হচ্ছে অঞ্চল। অঞ্চল হচ্ছে পৃথিবীর এমন একটি বিভাগ যা নির্দিষ্ট ধরনের উদ্ভিদ বা প্রাণির দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অঞ্চল হচ্ছে একটি এলাকা, স্থান, পরিসর। অঞ্চল হতে পারে পৃথিবী বা মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ।
অক্সফোর্ড ডিক্সেনারি অনুযায়ী, অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি এলাকা, বিশেষ করে একটি দেশের বা পৃথিবীর অংশবিশেষ যার রয়েছে শনাক্তযোগ্য বৈশিষ্ট্য, কিন্তু সবসময় নির্দিষ্ট সীমানা না-ও থাকতে পারে।
ভারতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হবে ।
সংজ্ঞা
অঞ্চল বলতে প্রাকৃতিক, মানবীয় বৈশিষ্ট্যাবলি এবং মানুষ-পরিবেশ মিথষ্ক্রিয়া দ্বারা বিভক্ত ব্যাপক বিস্তৃত এলাকাকে বোঝায়। ভৌগোলিক অঞ্চল ও উপ-অঞ্চলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে অযথার্থভাবে নির্ধারিত এবং কখনো কখনো স্বল্পকালস্থায়ী সীমানা দ্বারা বর্ণনা করা হয়। অবশ্য, মানবীয় ভূগোলে জাতীয় সীমানার মতো অধিকারভুক্ত এলাকা আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
বৈশ্বিক মহাদেশীয় অঞ্চলগুলো ছাড়াও রারিমণ্ডল যা মহাসাগরগুলো আবৃত করে ও বায়ুমণ্ডলীয় অঞ্চল রয়েছে, যা গ্রহমণ্ডলের স্থল ও জলভাগের উপরে পৃথক জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি করে। স্থল ও জলভাগের বৈশ্বিক অঞ্চলগুলো বিভিন্ন উপঅঞ্চলে বিভক্ত। এ উপ-অঞ্চলগুলো ভৌগোলিকভাবে ব্যাপক ভূতাত্তি¡ক অবয়ব দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা ব্যাপকভবে বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
পারিসরিক এলাকা বর্ণনার ক্ষেত্রে অঞ্চলের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ এবং ভূগোলের বিভিন্ন শাখায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিটি শাখায় এলাকাকে অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমন, পরিবেশ ভূগোলে ব্যবহৃত বাস্তুঅঞ্চল, সাংস্কৃতিক ভূগোলে সাংস্কৃতিক অঞ্চল, জীবভূগোলে জীবঅঞ্চল ইত্যাদি। ভূগোলের যে ক্ষেত্র নিজেই অঞ্চলকে সমীক্ষা করে, তাকে আঞ্চলিক ভূগোল বলা হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোল, বাস্তুবিদ্যা, জীবভূগোল, প্রাণিভূগোল এবং পরিবশ ভূগোলের ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক অবয়ব, যেমন- বাস্তুতন্ত্র, বায়োম, নিষ্কাশন অববাহিকা, প্রাকৃতিক অঞ্চল, পর্বতমালা, মৃত্তিকার ধরন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। অপরদিকে, মানবয়ী ভূগোলে অঞ্চল ও উপঅঞ্চলগুলো মানবজাতির বিবরণসম্পর্কিত (ethnography) জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত করে বর্ণনা করা হয় ।
একটি অঞ্চলের নিজস্ব প্রকৃতি রয়েছে, যা স্থানান্তর করা যায় না। এর প্রথম প্রকৃতিটি হচ্ছে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ (ভূগঠন, জলবায়ু, মৃত্তিকা স্তর ইত্যাদি)। এর দ্বিতীয় প্রকৃতিটি হচ্ছে ভৌত উপাদানগুলোর যৌগ, যা অতীতে মানুষ নির্মাণ করেছিলো। তৃতীয় প্রকৃতি হচ্ছে এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ, যা নবাগতদের দ্বারা পুনঃস্থাপন করা সম্ভব নয়।
অঞ্চলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত ভূগোলবিদ পিটার হ্যাগেট (Peter. Haggett: 1975) বলেন, “অঞ্চল হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের এমন একটি এলাকা যার প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট বৈশিষ্ট্য চারপাশের অন্যান্য এলাকা থেকে ভিন্ন।” এ প্রসঙ্গে ডেভিট গ্রিগ (David B. Grigg: 1934)-বলেন, “অঞ্চল হলো এমন একটি এলাকা যা অন্য একটি এলাকা থেকে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে স্বতন্ত্র। এ স্বাতন্ত্রতা একক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।” এছাড়া, ইভা জিআর.টেইলর (Eva G.R. Taylor: 1879-1966)-এর মতে, “সমরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সামান্য বিস্তৃত ভূপৃষ্ঠের একটি একক এলাকাকে অঞ্চল বলা হয়। অঞ্চলগুলো প্রকৃতিগতভাবে একই ধরনের এবং এগুলোর মধ্যে সামাজিক ঐক্য রয়েছে।” রিবার্ট এস. প্লেট (Ribert S. Platt: 1891-1964)-বলেন, “অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি ভৌগোলিক এলাকা, যার নির্ধারিত ভূখণ্ড রয়েছে এবং সে এলাকার অধিবাসীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অঞ্চলটি গড়ে ওঠেছে।” [১]
প্রাকৃতিক অঞ্চল
প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল (Natural resource regions) : প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায়শ সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল প্রাকৃতিক ভূগোল বা পারিবেশিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হতে পারে, কিন্তু এতে মানবীয় ভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোলেরও জোড়ালো উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি কয়লা অঞ্চল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক বা ভূরূপতাত্তি¡ক অঞ্চল, কিন্তু এর উন্নয়ন এবং উত্তোলন একে একটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে পরিণত করতে পারে।
ঐতিহাসিক অঞ্চল
ঐতিহাসিক অঞ্চল (Historical regions) : ঐতিহাসিক ভূগোলের ক্ষেত্রটিতে কোনো স্থান বা অঞ্চলের সাথে মানুষের ইতিহাস জড়িত থাকায়, অথবা সময়ের সাথে সাথে স্থান ও অঞ্চলগুলো কীভাবে পরিবর্তীত হয় তা সমীক্ষা করার জন্য এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক ভূগোলবিদ ডি.ডব্লিউ. মেইনিং (D. W. Meinig) তার `The Shaping of America: A Geographical Perspective on 500 Years of History’ নামক পুস্তকে অনেকগুলো ঐতিহাসিক অঞ্চলের বর্ণান দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকার প্রাথমিক উপনিবেশ স্থাপনের জন্য যেসব ইউরোপীয়রা প্রচেষ্টা করেছিলো, তাদের উৎস অঞ্চল শনাক্তকরণ করতে যেয়ে তিনি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের আটলান্টিক উপকূলের প্রটেস্টাইন ধর্মালম্বি অধ্যুষিত অঞ্চলকে চিহ্নিত এবং সেগুলোর বর্ণনা করেছেন। এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে কতকগুলো উপাঞ্চল রয়েছে, যেমন- ‘ওয়েস্টার্ন চ্যানেল কমিউনিটি’ যার রয়েছে আরও কতিপয় উপ-উপাঞ্চল, যেমন- কর্নওয়েল, ডেভন, সমরসেট, ডরসেট প্রভৃতি।
আমেরিকার ঐতিহাসিক অঞ্চল বর্ণনা করতে যেয়ে মেইনিং নিউফাউন্ডল্যান্ড ও নিউ ইংল্যান্ড উপকূলের গ্রান্ড ব্যাঙ্কসহ মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপক মৎস্যচারণের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি আমেরিকার ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রচলিত অঞ্চল, যেমন- ‘নিউ ফ্রান্স’, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’, ‘মিডল কলোনিস’ ইত্যাদি বর্জন করেন। এর পরিবর্তে তিনি লেখেন “পৃথক উপনিবেশ এলাকা”, সম্ভবত এগুলোর নামকরণ কলোনি স্থাপনের পরে করা হয়েছিলো। এসব অঞ্চল অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সীমানার সাথে যুক্ত ছিলো না। মেইনিং তার লেখায় “গ্রেটার নিউ ইংল্যান্ড” এবং এর প্রধান উপাঞ্চল “প্লেমাউথ”, “নিউ হ্যাভেন উপকূল” (লং আইল্যান্ডের অংশসহ), “রোড আইল্যান্ড”, “ম্যাসাচোসেট বে”, “কানেকটিকাট উপত্যকা” ইত্যাদি ঐতিহাসিক অঞ্চল সম্পর্কিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
পর্যটন অঞ্চল
পর্যটন অঞ্চল (Tourism region) : পর্যটন অঞ্চল এক ধরনের ভৌগোলিক অঞ্চল। অঞ্চলগুলো সচরাচর সরকারি সংস্থা বা পর্যটন ব্যুরো কর্তৃক সাধারণ সাংস্কৃতিক বা পারিবেশিক বৈশিষ্ট্যসম্বলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে থাকে। এ অঞ্চলগুলো প্রায়শ ভৌগোলিক, ভূতপূর্ব বা বর্তমান প্রশাসনিক অঞ্চল, বা পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় হয় এমনভাবে নামকরণ করা হয়ে থাকে। কখনো কখনো এলাকার গুণগত মানবৃদ্ধির জন্য স্মৃতি জাগানিয়া এবং দর্শনার্থীদের পর্যটনের অভিজ্ঞতা লাভে আগ্রহী করে তুলে এরূপ নাম রাখা হয়। দেশ, রাজ্য, প্রদেশ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক অঞ্চল প্রায়শ পর্যটকদের আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়ে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ব্যাপক প্রয়াস চালিয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল
প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল (Natural resource regions) : প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায়শ সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চল প্রাকৃতিক ভূগোল বা পারিবেশিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হতে পারে, কিন্তু এতে মানবীয় ভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোলেরও জোড়ালো উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি কয়লা অঞ্চল হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক বা ভূরূপতাত্তি¡ক অঞ্চল, কিন্তু এর উন্নয়ন এবং উত্তোলন একে একটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে পরিণত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চলের উদাহরণ হচ্ছে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র, বড়ো পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্র ইত্যাদি।
ধর্মীয় অঞ্চল
ধর্মীয় অঞ্চল(Religious regions) : কখনো কখনো একটি অঞ্চল একটি ধর্মের নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, যেমন- খ্রিস্টানজগৎ, শব্দটি মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সাথে সম্পর্কিত খ্রিষ্টবাদ, যা ছিলো খানিকটা সামাজিক ও রাজনৈতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। আবার মুসলিম বিশ্ব শব্দটি কখনো কখনো বিশ্বের মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলো বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ব্যাপকার্থক শব্দ অঞ্চল বোঝানোর ক্ষেত্রে খুবই দ্ব্যর্থবোধক হয়ে থাকে।
কতিপয় ধর্মের মধ্যে পরিষ্কারভাবে অঞ্চল সংজ্ঞায়িত করা আছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ, চার্চ অব ইংল্যান্ড, ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ এবং এ ধরনের অন্যান্য গির্জাগুলোর নামের মধ্যেই যাজক সম্পর্কীয় অঞ্চল নির্ধারণ করা থাকে, যেমন- বিশপের এলাকা (diocese), ইপারচি (eparchy), যাজকীয় প্রদেশ (ecclesiastical provinces) এবং প্যারিস (parish) ইত্যাদি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ৩২টি রোমান যাজকীয় প্রদেশে বিভক্ত। লুথারিয়ান চার্চ মিসৌরি যাজকসভা ৩৩টি ভৌগোলিক জেলায় বিভক্ত, যেগুলো আবার অনেকগুলো আঞ্চলিক সংঘে উপবিভক্ত।
রাজনৈতিক অঞ্চল
মানুষ মাত্রই কোন না কোন রূপ রাজনৈতিক এলাকা বা অঞ্চলে বাস করে।রাজনৈতিক পরিচিতি বা অস্তিত্ব রয়েছে ভূপৃষ্ঠের এমন অংশবিশেষকে রাজনৈতিক অঞ্চল বলে। রাজনৈতিক অঞ্চলের বৈশিষ্টসমূহঃ ১.অবস্থান, ২.অভিগম্যতা, ৩.আয়তন, ৪.আকৃতি, ৫.সীমানা
রাজনৈতিক অঞ্চল (Political regions) : রাজনৈতিক ভূগোলের ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলো রাজনৈতিক এককের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, যেমন- সার্বভৌম রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র এককসমূহ, যেমন- প্রশাসনিক অঞ্চল, প্রদেশসমূহ, অঙ্গরাজ্যসমূহ, জেলা, উপজেলা, শহর, পৌরসভা ইত্যাদি এবং নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ে গঠিত বহুজাতিক গ্রুপ যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ এশীয় জাতিসমূহের সংঘ, ন্যাটো, অনির্ধারিত অঞ্চল, যেমন- তৃতীয় বিশ্ব, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি।
সামরিক ব্যবহার
সামরিক ক্ষেত্রে অঞ্চল হলো আর্মি গ্রুপ হতে বৃহৎ এবং আর্মি থিয়েটার হতে ক্ষুদ্রতর সামরিক ফরমেশনের সংক্ষেপ। এই ফরমেশনের পূর্ণ নাম হলো সামরিক অঞ্চল। একটি সামরিক অঞ্চল সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি আর্মি গ্রুপ নিয়ে গঠিত। সামরিক অঞ্চলের আয়তন বিভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ১ থেকে ৩ মিলিয়ন সৈন্যের সমন্নয়ে এটি গঠিত হয়। দুই বা ততোধিক সামরিক অঞ্চল দ্বারা একটি সামরিক থিয়েটার গঠিত হতে পারে। একটি সামরিক অঞ্চলের অধিনায়কত্ব করেন প্রধানত একজন পূর্ণাঙ্গ জেনারেল (ইউএস- চার তারা), একজন ফিল্ড মার্শাল বা জেনারেল অফ দ্য আর্মি (ইউএস- পাঁচ তারা), জেনারেলিসিমো (সোভিয়েত ইউনিয়ন) বা জেনারেল অফ দ্য আর্মিস (ইউএস-ছয় তারা) বা ছয় তারা জেনারেলের সমমর্যাদার একজন জেনারেল অফিসার (যেসকল রাষ্ট্রে এই মর্যাদার জেনারেল আছেন তাদের ক্ষেত্রে)। এই ফরমেশনের বিশাল আয়তনের জন্য এর ব্যবহার দূর্লভ। সামরিক অঞ্চলের কিছু উদাহরণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালিন ইউরোপের পূর্ব. পশ্চিম ও দক্ষিণ (প্রধানত ইতালি) রনাঙ্গণ। এই ফরমেশনের (দেখুন সামরিক সংগঠন ও এপিপি-৬এ)সামরিক মানচিত্র প্রতীক হলো ছয়টি “X”।
অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ
আমাদের পৃথিবীকে ভালোভাবে বোঝার বা জানার প্রয়োজনে অঞ্চল তৈরি করা হয়। কথিত অঞ্চলের বিদ্যমান পরিবেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে আমাদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমারেখা সাহায্য করে থাকে।
একটি অঞ্চলকে অপর একটি অঞ্চল থেকে কতিপয় নির্দেষ্ট ও স্বাতন্ত্রসূচক বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথকভাবে শনাক্ত করা হয়। একটি অঞ্চলের সীমানা কতিপয় নির্বাচিত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। অঞ্চলগুলো আকার-আকৃতিতে পৃথক এবং সেগুলো স্থানীয় বা বিশ্বব্যাপী হতে পারে; পরস্পরকে আবৃত করতে পারে, বা পৃথক থাকতে পারে; সমগ্র পৃথিবীকে ভাগ করতে পারে, অথবা এর মধ্যে নির্বাচিত অংশে আলোকপাত করতে পারে।
অঞ্চলকে প্রধান তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা- প্রথাগত (formal), কার্মিক (functional) ও উপলব্ধিগত বা উপভাষা (perceptual/vernacular)।
প্রথাগত বা নিয়মানুগ বা আনুষ্ঠানিক অঞ্চল
ভৌগোলিক দিক থেকে প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি ভৌগোলিক এলাকা যার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নির্দিষ্ট সীমানা রয়েছে। যেমন, শহর, জেলা, অঙ্গরাজ্য ও দেশের জন্য সীমানা দ্বারা প্রথাগত অঞ্চল গঠিত হয়। এ অঞ্চলগুলোকে প্রায়শ সাধারণ জ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এগুলোর সীমানা স্থানীয় বা জাতীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। একটি অঞ্চলের রূপ দানের জন্য বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্বের কতিপয় মানদণ্ড, যেমন- রাজনৈতিক অধিভুক্তি, জাতীয়তা, সংস্কৃতি, সাধারণ ভাষা, ধর্ম, ভৌগোলিক অবয়ব ইত্যাদি অঞ্চল সৃজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চলের সংজ্ঞায় এমন এলাকার কথা বলা হয়েছে যা সরকারীভাবে নির্ধারিত। একটি প্রথাগত অঞ্চলে একটি শহর, জেলা, রাজ্য বা যেকোনো ধরনের ভৌগোলিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ ধরনের অঞ্চল পরিষ্কারভাবে সীমানা দ্বারা নির্ধারিত এবং জনসাধারণের বোধগম্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্য থেকে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রথাগত অঞ্চল গঠিত হয় :
এক বা একাধিক সনাক্তকরণযোগ্য অবয়ব ব্যবহার করে একটি অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক করা যায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ব্যবহার করে সৃষ্ট অঞ্চলগুলোর সীমানা তৈরি করা যায়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নির্ধারণের সময় যখন প্রাসঙ্গিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে জনগণের আয় বা ভাষা উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন অঞ্চলটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ চলক হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। নদনদী, পর্বতমালা, উপত্যকা এবং হ্রদগুলোর মতো প্রাকৃতিক সীমানা প্রায়শ কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানা নির্দেশ করে থাকে।
প্রথাগত অঞ্চল বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়, যেগুলো একে চারপাশের এলাকা থেকে পৃথক করে থাকে। স্থানীয় মানুষের সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য ভাষা, আয়, ধর্ম ছাড়াও প্রথাগত অঞ্চল ভ‚প্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে দ্বীপগুলোর রয়েছে প্রাকৃতিক সীমারেখা।
প্রথাগত অঞ্চল প্রকৃতির দিক থেকে গতিশীল হতে পারে, বলা যেতে পারে এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বিশ্বায়ন, বা বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক স্থানান্তরের কারণে পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যেতে পারে।
মানদণ্ড নির্বাচনের ওপর একটি প্রথাগত বা আনুষ্ঠানিক অঞ্চল নির্ধারণ সহজ বা কঠিন হতে পারে। যখন একটি ভৌগোলিক অঞ্চল ভূভাগের স্থির অবয়বের বদলে অধিক পরিবর্তনশীল মানবীয় উপাদানের (যেমন- ভাষা) ওপর নির্ভর করে, সেখানে অঞ্চল নির্ধারণ কঠিন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি অঞ্চলের প্রতিবেশীদের মধ্যে ৫০% ইংরেজিতে কথা বলে, এ জনসংখ্যা সারা বছরই একই ধরনের না-ও থাকতে পারে, বরং সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়ে কম-বেশি হতে পারে। তবু, নীতিগতভাবে, প্রতিটি প্রথাগত অঞ্চল কতিপয় গণনাযোগ্য চলকের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
প্রথাগত বা নিয়মানুগ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Formal Region) :
১. প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Physical Characteristics) : যেকোনো প্রথাগত অঞ্চলকে প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়। যেমন- সুন্দরবন, ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চল।
২. সমরূপতা (Uniformity) : কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রথাগত অঞ্চলের সর্বত্র একই ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- কোনো অঞ্চলে জলবায়ু বা ভূপ্রকৃতি সমরূপভাবে বজায় থাকে।
৩. অবিচ্ছিন্নতা (Continuous land mass) : প্রথাগত অঞ্চল প্রাকৃতিক বা মানব সৃষ্ট বৃহৎ কোনো প্রতিবন্ধক দ্বারা ব্যবিচ্ছন্ন হয় না। অর্থাৎ, এটি একটি একক এলাকা যাতে ভূপ্রাকৃতিক সমতা বজায় থাকে।
৪. সদৃশ্যতা (Homogeneous) : সমসত্ব আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠে বলে একে সদৃশ্য বৈশিষ্ট্যের অঞ্চল বলা হয়।
৫. অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Economic Characteristics) : সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে প্রথাগত অঞ্চল নির্ণয় করার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। অর্থনৈতিক প্রথাগত অঞ্চল চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আয় স্তর, বেকারত্বের হার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ইত্যাদি পরামিতিগুলো ব্যবহৃত হয়।
৬. সামাজিক বৈশিষ্ট্য (Social Characteristics) : স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠা অঞ্চলগুলোকে প্রথাগত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন- একটি উপজাতীয় এলাকা।
৭. রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Political Characteristics) : রাজনৈতিক কারণে বিশেষ কোনো অঞ্চল মূল ভূখণ্ডের বাইরে বিচ্ছিন্ন হিসেবে অবস্থান করতে পারে। এসব অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যসহ রাজনৈতিক মতাদর্শ সমরূপ হয়ে থাকে। যেমন- সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো।
কার্মিক বা প্রায়োগিক বা ক্রিয়ামূলক অঞ্চল
কার্মিক অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি অঞ্চল যা অন্যান্য এলাকা থেকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসারে ভিন্নতর। অন্য কথায়, এটি এমন একটি এলাকা যা প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমসত্ববিশিষ্ট, যেমন- ক্রান্তীয় অঞ্চল, মেরু অঞ্চল, মেরু অঞ্চল ইত্যাদি। এখানে জলবায়ুকে মানদণ্ড ধরে দুটি এলাকা পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়। কার্মিক অঞ্চল প্রায়শ নুড বা গ্রন্থি নামে পরিচিত একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুর চারদিকে গড়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে একটি সপিং সেন্টার চারদিকে প্রতিবেশিদের দ্বারা ঘেরাও থাকে, অথবা উপশহরগুলো একটি শহরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে থাকে। কার্মিক অঞ্চলের ধারণা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার যে সংযোগ ও প্রবাহ সৃষ্টি হয়, সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার পথ প্রদর্শন করে থাকে।
ফোবার্গ, মর্ফি এবং দ্য ব্লিজের মতে, ‘একটি নির্দিষ্ট সেট কর্মকাণ্ডের দ্বারা অথবা, এগুলোর মধ্যে উদ্ভূত মিশস্ক্রিয়া দ্বারা কার্মিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেখানো যায়।’ সুতরাং, নিম্নোক্তগুলোকে কার্মিক অঞ্চল বিবেচনা করা যায় :
১. বৃষ্টিবহুল অরণ্য, যেখানে বৃক্ষ, পাখি ও স্তন্যপায়ী স¤প্রদায় বহু শতাব্দিব্যাপী অবিরতভাবে বসবাস করছে।
২.একটি কৃষিজীবী সম্প্রদায়কে কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দ্বারা নির্দিষ্ট করা যায়।
৩. একটি কর্পোরেট প্রধান কার্যালয়, যেখানে একটি সংগঠিত জনসংখ্যা উৎপাদন বা সেবার সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।
একটি কার্মিক বা প্রায়োগিক অঞ্চল একটি কেন্দ্রস্থল বা কেন্দ্রবিন্দুর চারদিক ঘিরে গড়ে ওঠে। চারপাশের এলাকা নির্ভর করে কেন্দ্রস্থলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন, যেমন- বাণিজ্য পথ, রেডিও, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, ইনটানেট সংযোগ ও পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর। একটি কার্মিক অঞ্চলের শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য সমগ্র এলাকায় অবশ্যই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড প্রচলিত থাকতে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সর্বাধিক সংঘটিত হবে অঞ্চলটির কেন্দ্রবিন্দুতে এবং এবং কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে কর্মকাণ্ডের প্রগাঢ়তা কমে আসতে থাকবে। কার্মিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে অবিরত ধারা এর চারপাশের অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এরূপ অবস্থায় নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সমগ্র এলাকাটিই একটি ইউনিটের মতো আচরণ করবে।
কার্মিক অঞ্চলের সীমানা এলাকাটির অবকাঠামো এবং সেবার উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সময় সময়ে পরিবর্তিত হয়। ভূগোলে পৃথিবীকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এসব অঞ্চলের রয়েছে কৃত্রিম সীমানা, যা সীমানার বাইরের অপেক্ষা ভিতরের অধিক প্রাধান্যবিশিষ্ট গুণাবলিকে পৃথক করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তিন ধরনের অঞ্চল রয়েছে, যথা- প্রথাগত বা নিয়মানুগ, কার্মিক বা প্রায়োগিক এবং ভ্যানাকিউলার বা উপলব্ধিগত। প্রথাগত অঞ্চলগুলোর অফিসিয়াল সীমানা রয়েছে, যেমন- দেশের, রাজ্যের, শহরের সীমানা। উপলব্ধিগত অঞ্চল বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সাংস্কৃতিক উপস্থাপন এবং যা মানুষের মতামতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।[২]
কার্মিক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Functional Region) :
১. আন্তঃনির্ভরশীলতা (Inter-dependence) : কার্মিক অঞ্চলসমূহের পরস্পরের আন্তঃনির্ভরশীলতা একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ, কার্মিক অঞ্চল আন্তঃনির্ভরশীল কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। আবার বিভিন্ন কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে আন্তঃনির্ভরশীলতা দেখা যায়।
২. কার্মিক সুসঙ্গতি (Functional Coherence) : কার্মিক অঞ্চলে যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অর্থাৎ কোনো কর্মকাণ্ড অপর কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং সহায়ক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কর্মকাণ্ড একে অপরের পরিপূরক।
৩. ক্রমোচ্চতা সম্পর্ক (Hierarchial relationship) : পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কার্মিক অঞ্চলগুলো সাম্প্রতিক হয় বলে এদের মধ্যে একটি শ্রেণিক্রম (hierarchy) লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ ক্রম এর আকারের ভিত্তিতে ক্রিয়ামূলক অঞ্চলগুলো ছোটো থেকে বড়ো একটি পর্যায় ক্রমিকধারা সৃষ্টি করে।
৪. আন্তঃসম্পর্ক (Inter-relation) : আন্তঃসম্পর্কযুক্ত (মিথষ্ক্রিয়া) কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে একটি কার্মিক অঞ্চল গড়ে ওঠে। অর্র্থাৎ কার্মিক অঞ্চলের সীমানা মূলত পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কর্মকাণ্ডের এলাকা নিয়ে গঠিত হয়। আবার বিভিন্ন কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক দেখা যায়। অন্যদিকে দেখা যায়, একটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গ্রন্থি সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়।
৫. অসমরূপতা (Heterogeneous) : কার্মিক অঞ্চলের মধ্যে সমস্ত স্থানের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়। অর্থাৎ এ অঞ্চলে অসংখ্য ভিন্ন প্রকৃতির কর্মকাণ্ড বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। এটা যেমন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি অধিবাসীদের আয়ের সমতা, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৬. গ্রন্থিবহুল (Nodal) : ক্রিয়ামূলক অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন বিন্দু বা গ্রন্থি গড়ে ওঠতে পারে।
উপলব্ধিগত/উপভাষা অঞ্চল (Perceptual/vernacular regions) : উপলব্ধিগত অঞ্চলকে কখনো কখনো উপভাষা অঞ্চলও বলা হয়। যদিও অনেক ভ‚গোলবিদ এ শব্দগুলোকে পরস্পরের পরিবর্তে ব্যবহার করেন না, বরং ভিন্ন ভিন্ন ধারণা নির্দেশের জন্য এগুলোকে ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে একটি উপভাষা অঞ্চল কোনো এলাকার লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে, সেখানে উপলব্ধিগত অঞ্চল প্রায়শ একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকদের নিশ্চিত বিশ্বাস/অনুভ‚তি/মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
উপভাষা/উপলব্ধিগত অঞ্চল মনোভাব, উপলব্ধি এবং যোগাযোগের পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল, একারণে তারা প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অবয়বভিত্তিক অঞ্চলের সাথে এর পরিবর্তন করতে অধিক পছন্দ করে থাকেন। ঢাকা উত্তরাঞ্চল, ঢাকা দক্ষিণাঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ইত্যাদি উপলব্ধিগত অঞ্চলের উদাহরণ।
অক্ষীয় অয়নচলন বলতে সুনির্দিষ্টভাবে পৃথিবীর আবর্তন-অক্ষের অবিরল দোলিত চলনকেই বুঝায় যা , হেলেদুলে-ঘূর্ণায়মান একটি লাটিমের মতো , প্রায় ২৬,০০০ বছরব্যাপী এক চক্রে শীর্ষ-মিলিত এক জোড়া কোণ তৈরী করে ।
২৬,০০০ বছরব্যাপী অয়নচলন-চক্রকে পৃথিবীর কাছ থেকে এমনটাই দেখায় । বর্তমান উত্তর মেরুতারা – ধ্রুবতারা (Polaris) (উপরে) । প্রায় ৮,০০০ বছরে এ স্থানটি নেবে উজ্জ্বল তারাদানব (Deneb) (বামে) , আর প্রায় ১২,০০০ বছরে অভিজিৎ (Vega) (বামমধ্য) । এখানে পৃথিবীর আবর্তনকে পরিমাপক-রেখায় দেখানো হয়নি – এ সময়কালে পৃথিবী ৯,০০০,০০০ বারেরও বেশিবার স্বাবর্তিত হবে।
মেরু ও বিষুব স্থানান্তরণ
আরও দেখুন
পৃথিবীর অক্ষের আহ্নিক বা দৈনিক (সাদাতীর) ও অক্ষীয় (সাদাবৃত্ত) অয়নচলন বা পথচলনপৃথিবী নিজের আবর্তনশীল অক্ষকে (লালরেখা) ঘিরে দৈনিক এক আবর্তন করে (সাদা তীর) আর স্বাাবর্তনী এ অক্ষটি নিজেও মন্থরগতিতে প্রায় ২৬,০০০ বছরে এক ঊর্ধ্ব-নিম্নবৃত্তীয় স্ব আবর্তন (সাদা বৃত্ত) পূর্ণ করে ।
পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষরেখা বলে। এ অক্ষরেখার উত্তর-প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্ব পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির জন্য এ রেখা বৃত্তাকার, তাই এ রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্ব স্থির করা হয়; নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়।অক্ষাংশের ভিন্নতা ও পরিবর্তনের সাথে সাথেই জলবায়ুরও তারতম্য ঘটে। সূর্য কিরণ সারা বছর লম্ব ভাবে পরার কারণে নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে ।এবং মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্য রশ্মি ক্রমশ তির্যক হতে থাকে এবং জলবায়ু শিতল হয়। ফলে নিরক্ষিয় অঞ্চলে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। নিরক্ষরেখা বরাবর স্থানসমূহে সূর্যরশ্মি খাড়াভাবে পড়ে বিধায় ঐসকল অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে। ১ °সে অক্ষাংশে উষ্ণতা 0.২৮ °সে হ্রাস পায় বলেই নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তি উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বরফ রয়েছে।
নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ ০° জ্যামিতির কোণের ন্যায় ।অক্ষাংশের পরিমাপের একককে ডিগ্রী বলে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার অক্ষাংশ ২৩°৪২′০″ উত্তর।
গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে, ডিগ্রী বা পূর্ণ ঘুর্ণনকে সাধারণ একক হিসেবে ব্যবহার করার চেয়ে রেডিয়ানকে সাধারণ একক হিসেবে গণ্য করা হয়। এককসমূহকে নিম্নোক্তভাবে রূপান্তর করা হয়: 1 rev = 360° = 2π rad, ও 1 rad = 180° / π ≈ 57.3°
দিবালোক সংরক্ষণ সময় বা ডেইলাইট সেইভিং টাইম (সংক্ষেপে ডিএসটি) হলো ঘড়ির সময় ১ অথবা ২ ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার একটি রীতি, যাতে ঘড়ির কাটার হিসাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই এক ঘণ্টা পরে ঘটে এবং বিকেলের ভাগে একটু অতিরিক্ত সময় সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত এই রীতিতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তকালে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয় এবং শরতে আবার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তার একটি খামখেয়ালিপূর্ণ প্রবন্ধে প্রথম এই নাটকীয় ব্যবস্থার ধারণা তুলে ধরেন; পরবর্তিতে এই ধারণাটি প্রথম ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ্যের সামনে তুলে ধরেন উইলিয়াম উইলেট নামের একজন ব্রিটিশ নির্মাতা ওয়েস্ট অফ ডেলাইট নামক একটি প্যামপ্লেটে।[১]
প্রয়োগ
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি চালু হয়, ঘড়িকে মধ্য ইউরোপীয় সময় (CET) রাত ২টা থেকে মধ্য ইউরোপীয় গ্রীষ্মকালীন সময় (CEST) রাত ৩টায় এগিয়ে নেয়া হয়।
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি শেষ হলো, ঘড়ির সময়কে রাত ৩টা সিইএসটি থেকে রাত ২টা সিইটি-তে পিছিয়ে নেয়া হয়। অন্যান্য অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে বদলে নেয়।
দিবালোক সংরক্ষণ সময় সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যখন এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় শক্তি উৎপাদনে জ্বালানী খরচ কমানোর জন্য। কোনো কোনো অঞ্চল পরবর্তিতে প্রকৃত সময়ে ফিরে এলেও এখনও অনেক দেশ এই পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে, যাতে পুরো দেশকে “রণ সময়”-এর অধীন করে নেয়া হয়, যাতে পুরো যুদ্ধকালীন সময়টায় দেশের সময়কে একঘণ্টা এগিয়ে নেয়া হয়। এই ধারাবাহিকতায় পদ্ধতিটি যুক্তরাজ্যও অনুসরণ করে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্বাভাবিক সময় থেকে সময়কে আরো এক ঘণ্টা (অর্থাৎ ২ ঘণ্টা) এগিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তিতে শান্তিকালীন সময়ে রণ সময় একটি বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়।[১]
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র, সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ডিএসটি অনুসরণ করে আসছে তাদের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। বিতর্কিত ও ঝামেলাপূর্ণ এই পদ্ধতিটির বিতর্ক অবসানের জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং অধীন রাজ্যগুলোর মধ্যকার ঝামেলা দূর করতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ‘ইউনিফর্ম টাইম এ্যাক্ট’ পাশ করে। এই বিধান অনুসারে সকল অঙ্গরাজ্যের জন্য কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিএসটি অনুসরণ করা হবে। তবে শুধুমাত্র সেই অঞ্চলটি বা রাজ্যটি এর আওতামুক্ত থাকবে, যেখানে রাজ্যটির আইনগত কিংবা রাজনৈতিক পরিচালক তা ব্যবহারে অসম্মতি জানাবেন। যাবতীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দিবালোক সংরক্ষণ সময় শুরু হয় এপ্রিল মাসের প্রথম রবিবার রাত ২টায় এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসের শেষ রবিবার রাত ২টায়।[১]
বাংলাদেশ
২০০৯ সালের ২০ জুন থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ডিএসটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই নিয়ম দেশটিতে জনপ্রিয় হয়নি এবং পরবর্তিতে সরকার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়। ভবিষ্যতে আর কখনও দেশটিতে ডিএসটি প্রবর্তন করা হবে না বলে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিতর্ক
এই পদ্ধতিটি বিতর্কিত, কারণ বিকালের দিকে আলো যোগ করলে কেনাকাটা, খেলাধুলাসহ অন্যান্য যেসকল কাজে আলো বেশি কাজে লাগে সেগুলো লাভবান হলেও কৃষিকাজ, সান্ধ্যকালীন প্রমোদসহ বেশ কিছু কাজের সমস্যা করে। বিশেষ করে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক প্রবর্তিত ‘রণ সময়’-এর চরম বিরোধিতা করেন কৃষকেরা, কারণ তাদের কৃষিকালীন সময় নির্ধারিত হয় সূর্যের হিসাবে, কিন্তু ব্যবসাকালীন সময় নির্ধারিত হয় ডিএসটি ধরে, যা চরম অসুবিধাজনক। রেল, বাস, বিমান ইত্যাদির সময় উল্টাপাল্টা হয়ে পড়ে, কারণ সব দেশে ডিএসটি প্রচলিত নয়।[১] ডিএসটির প্রাথমিক লক্ষ্য সান্ধ্যকালীন আলোর ব্যবহার হ্রাস। ডিএসটির ফলে ঘড়ির সময়ের পরিবর্তন অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে। এর ফলে সময়ের হিসাব জটিল হয়ে পড়ে, সভা, ভ্রমণ, রেকর্ড সংরক্ষণ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ভারি জিনিসপত্র ও ঘুমের ধারার ব্যাঘাত ঘটে। অনেক কম্পিউটার-নির্ভর ব্যবস্থা তাদের ঘড়িগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে নিলেও, এতে ভুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে যখন ডিএসটি বদলে স্বাভাবিক সময়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
যুক্তি
বিতর্ক থাকাসত্ত্বেয় এই পদ্ধতিটির পক্ষে যেসকল যুক্তি পেশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকালের দিকে বেশি সময় আলো থাকলে সড়ক দূর্ঘটনার হার কমে যায়; তবে স্বাস্থ্য ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এর প্রভাব অস্পষ্ট।