Tag: ৪৫তম বিসিএস

  • লিম্ফোব্লাস্ট

    লিম্ফোব্লাস্ট

    একটি লিম্ফোব্লাস্ট হলো পরিবর্তিত সেল মরফোলজি সহ একটি পরিবর্তিত নিষ্পাপ লিম্ফোসাইট y। এটি ঘটে যখন লিম্ফোসাইট একটি অ্যান্টিজেন দ্বারা সক্রিয় করা হয় (অ্যান্টিজেন-উপস্থাপক কোষ থেকে) এবং নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম বৃদ্ধি দ্বারা নতুন এমআরএনএ এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ দ্বারা পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তারপরে লিম্ফোব্লাস্ট ৩-৫ দিনের জন্য প্রতি ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪ বার বিভাজন শুরু করে, একটি একক লিম্ফোব্লাস্টের সাথে প্রায় ১ হাজার ক্লোন তৈরি করে তার মূল মত লিম্ফোসাইট, প্রতিটি ভাগের সাথে অনন্য অ্যান্টিজেনের বৈশিষ্ট্য ভাগ করে নেওয়া হয়। অবশেষে বিভাজনকারী কোষগুলি ইফেক্টর কোষগুলিতে পৃথক হয়, যাকে প্লাজমা সেল (বি কোষের জন্য), সাইটোঅক্সিক টি কোষ এবং হেল্পার টি কোষ হিসাবে পরিচিত। [১]

    লিম্ফোব্লাস্ট

    লিম্ফোব্লাস্টগুলি অপরিপক্ব কোষগুলিকেও উল্লেখ করতে পারে যা সাধারণত পরিপক্ব লিম্ফোসাইটগুলি গঠনে পৃথক করে। [২] সাধারণত অস্থি মজ্জার মধ্যে লিম্ফোব্লাস্টগুলি পাওয়া যায় তবে তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL) এ লিম্ফোব্লাস্টগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রসারিত হয় এবং পেরিফেরিয়াল রক্তে প্রচুর সংখ্যায় পাওয়া যায়।

    আকার ১০ এবং ২০ μm এর মধ্যে হয়। [৩]

    যদিও লিম্ফোব্লাস্ট সাধারণত লিউকোসাইটগুলির পরিপক্বতায় পূর্ববর্তী কোষকে বোঝায়, এই শব্দটির ব্যবহার কখনও কখনও অসঙ্গত হয়। ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া রিসার্চ কনসোর্টিয়াম একটি লিম্ফোব্লাস্টকে সংজ্ঞায়িত করে “একটি লিম্ফোসাইট যা অ্যান্টিজেন দ্বারা উদ্দীপিত হওয়ার পরে আরও বড় হয়ে উঠেছে। লিম্ফোব্লাস্টগুলি অপরিপক্ব লিম্ফোসাইটগুলির মতো দেখায় এবং একসময় পূর্ববর্তী কোষ বলে মনে করা হত। । [৪] সাধারণত, লিউকেমিয়া সম্পর্কে কথা বলার সময়, “ব্লাস্ট” লিম্ফোব্লাস্টগুলির সংক্ষেপণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

    লিম্ফোব্লাস্টগুলি মাইলোব্লাস্ট থেকে মাইক্রোস্কোপিকভাবে আলাদা আলাদা নিউকোলিওলি, আরও ঘনীভূত ক্রোমাটিন এবং সাইটোপ্লাজমিক গ্রানুলের

    অনুপুস্থিতিতেদ্বারা চিহ্নিত করা যায়। তবে এই মরফোলজিক পার্থক্যগুলি নিখুঁত নয় এবং একটি নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় পৃথকীকরণের রিসেপ্টরগুলির অনন্য ক্লাস্টারের উপস্থিতির জন্য অ্যান্টিবডি ইমিউনস্টেইনিংয়ের উপর নির্ভর করে। [৫]

    অতিরিক্ত চিত্র

    
    

    আরো দেখুন

  • লাইসোসোম

    লাইসোসোম

    লাইসোসোম বা লাইসোজোম (ইংরেজি:Lysosome) এক ধরনের কোষীয় অঙ্গাণু যা সাধারণত প্রাণী কোষে পাওয়া যায়।কোষের সাইটোপ্লাজমে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপো-প্রোটিন সম্বনয়ে গঠিত মেমব্রন বা ঝিল্লি দ্বারা আবৃত যে অঙ্গাণুটি নানাবিধ হাইড্রোলাইটিক এনজাইমের ধারক বা বাহক হিসেবে কাজ করে তাই লাইসোজোম বলে।এতে বিদ্যমান ভেসিকলগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম এর আধার হিসেবে কাজ করে। একে “আত্মঘাতী থলিকা” বা “আত্মঘাতী স্কোয়াড” বলা হয়। লাইসোসোম শব্দটি গ্রিক থেকে আগত। গ্রিক “লাইসো” শব্দের অর্থ হজমকারী এবং “সোমা” শব্দের অর্থ বস্তু

    লাইসোসোম

    আবিষ্কার

    নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান দ্য দুভ ১৯৫৫ সালে লাইসোসোম আবিষ্কার ও নামকরণ করেন।

    বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ লুভ এর অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান দে দুভ এবং তার দল ১৯৪৯ সালে যকৃতে ইনসুলিনের ক্রিয়া-কৌশল নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। এসময় তারা শর্করা বিপাকের (গ্লাইকোলাইসিস) ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এবং ইনসুলিনের লক্ষ্যবস্তু গ্লুকোজ ৬-ফসফাটেজ (G6P) এনজাইমের ওপর লক্ষ্য রেখেছিলেন। তারা দেখতে পেলেন যে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রধান এনজাইম হল G6P।[১][২] কিন্তু বারবার পরীক্ষার পরও তারা কোষীয় নির্যাস থেকে এনজাইমটি আলাদা করতে পারেন নি। তাই এনজাইমটি আলাদা করতে তারা আরও cell fractionation পদ্ধতি অবলম্বন করেন।[৩]

    এনজাইমটি সণাক্ত করতে তারা অ্যাসিড ফসফাটেজ ব্যবহার করে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। কিন্তু এর ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে খুবই কম; প্রত্যাশিত মানের ১০% এর কাছাকাছি। এরপর একদিন তারা ৫ দিন ধরে সংরক্ষিত কিছু বিশুদ্ধ কোষ ভগ্নাংশের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করেন। তারা লক্ষ্য করেন, এনজাইমের ক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে আবার নতুন নমুনাসমূহের মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। পরীক্ষাটি বারবার করেও একই রকম ফলাফল পাওয়া যায়। এ কারণে প্রস্তাব করা হয় যে, কোন একটি প্রতিবন্ধকতার জন্য ভিত্তিস্তরে এনজাইমের দ্রুত প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরই কেবল এনজাইমগুলোর ব্যাপন ঘটে। তারা এই প্রতিবন্ধকতাকে “ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত ও অ্যাসিড ফসফাটেজ ধারণকারী একটি থলের ন্যায় কাঠামো ”- বলে আখ্যা দেন।[৪][৫]

    ঝিল্লিযুক্ত ভগ্নাংশ, যেগুলো কোষীয় অঙ্গাণু বলে পরিচিত, সেখান থেকে একটি সম্পর্কহীন এনজাইম cell fractionation প্রক্রিয়ার সাথে পাওয়া যায়। এদের পরিপাকীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে, ১৯৫৫ সালে দে দুভ এদের নাম দেন “লাইসোসোম”।[৬]

    ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এর অ্যালেক্স বি. নভিকফ সেই বছরই দে দুভ এর গবেষণাগার পরিদর্শনে যান এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে সফলভাবে লাইসোসোম অঙ্গাণুটির প্রথম দৃশ্যমান প্রমাণ সংগ্রহ করেন। এছাড়া অ্যাসিড ফসফাটেজের জন্য একটি রঞ্জক পদ্ধতি ব্যবহার করে, দে দুভ ও নভিকফ লাইসোসোমের পানিগ্রাহী এনজাইমের অবস্থান নিশ্চিত করেন।[৭]

    অ্যালেক্স বি. নভিকফ ১৯৬০ সালে এদের আণুবীক্ষণিক গঠন বর্ণনা করেন। ১৯৬০ সালে Matile এটি নিউরোস্পোরা ছত্রাকে পর্যবেক্ষণ করেন।

    অবস্থান

    লোহিত রক্তকণিকা ব্যতীত প্রায় সব প্রাণীকোষেই লাইসোসোম থাকে। শ্বেত রক্তকণিকায় অধিক পরিমাণে লাইসোসোম পাওয়া যায়। এছাড়া যকৃত কোষ, বৃক্ক কোষ ও অন্ত্রআবরণী কোষে লাইসোসোম বেশি থাকে।

    উৎপত্তি

    This is crucial for many disease pathways

    এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে এদের উৎপত্তি এবং গলজি বডি কর্তৃক প্যাকেজকৃত।[৮]

    ভৌত গঠন

    লাইসোসোম দ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপোপ্রোটিন আবরণী দ্বারা আবদ্ধ থাকে। ভ্যাকুওল ঘন তরলপূর্ণ ও এসিডিক হয়। লাইসোসোম সাধারণত বৃত্তকার। এর ব্যাস সাধারণত ০.২ থেকে ০.৮ মাইক্রোমিলি এর মধ্যে হয়।[৯] তবে এদের আকার ছোট-বড় হতে পারে। যেমন: বৃক্ক কোষের লাইসোসোম অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এমন কি বড় লাইসোসোম এর আকার ছোটগুলোর চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি বড় হতে পারে।

    [১০]

    রাসায়নিক গঠন

    লাইসোসোমে ৬০ টিরও বেশি এনজাইম এবং ঝিল্লিতে ৫০টিরও বেশি ধরনের মেমব্রেন প্রোটিন পাওয়া গেছে।[১১][১২] এ এনজাইমগুলো অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এ সংশ্লেষিত হয়। প্রধান এনজাইমগুলো হল:

    • DNAase
    • RNAase
    • লাইসোজাইম
    • এস্টারেজ
    • স্যাকারেজ
    • এসিড লাইপেজ
    • অ্যারাইল সালফোটেজ
    • ফসফোলাইপেজ
    • ফসফোটেজ এস্টারেজ
    • গ্যালাকটোসাইডেজ
    • গ্লুকোসাইডেজ
    • ডেক্সট্রোনেজ

    ইত্যাদি [১৩]

    লাইসোসোমের অভ্যন্তর এসিডিক। এর পি.এইচ প্রায় ৪.৫ থেকে ৫ এর মধ্যে [১৪] যা সাইটোসল (সাইটোপ্লাজম এর ম্যাট্রিক্স) এর পি.এইচ (৭.২) এর চেয়ে কম।

    এসিডিক হওয়ার জন্য লাইসোসোমের প্রোটন সংগ্রহ

    প্রকারভেদ

    ১.প্রাথমিক লাইসোসোম: প্রাথমিক সদ্য গঠিত এনজাইম পূর্ণ ক্ষুদ্র থলি বিশেষ।

    ২.অটোফ্যাগোসোম বা সাইটোলাইসোসোম: কোষের অপ্রয়োজনীয় অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মসৃণ পর্দা দ্বারা আবৃত হয়ে পৃথক অংশ গঠন করে। এর সাথে এক বা একাধিক প্রাথমিক লাইসোসোম মিলিত হয়ে অটোফ্যাগোসোম গঠন করে। এতে মাইটোকন্ড্রিয়া, রাইবোসোম, পারঅক্সিসোম, গ্লাইকোজেন দানা ইত্যাদির স্বপাচন ঘটে।

    ৩.হেটারোফ্যাগোসোম বা গৌণ লাইসোসোম: ফ্যাগোসাইটোসিস বা পিনোসাইটোসিসের ফলে উৎপন্ন ফ্যাগোসোমের সাথে একাধিক প্রাথমিক লাইসোসোম মিলিত হয়ে হেটারোফ্যাগোসোম গঠন করে।

    ৪.রেসিডুয়াল বডি বা টেলো লাইসোসোম: অপাচিত বস্তু যুক্ত গৌণ লাইসোসোমকে টেলো লাইসোসোম বলে।

    ৫, উদ্ভিদ কোষে সম্প্রতি একস্তর বিশিষ্ট Oleosome নামে লাইসোসোম পাওয়া গেছে ।

    কাজ

    • ফ্যাগোসাইটোসিস ও পিনোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে।
    • অন্তঃকোষীয় পরিপাক এ সহায়তা করে।
    • প্রোটিনকে ডাইপেপটাইড ও কার্বোহাইড্রেটকে মনোস্যাকারাইডে পরিণত করে।
    • কোষে খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাইসোসোমের এনজাইমগুলো কোষের অঙ্গাণুগুলো ধ্বংস করে দেয়। একে স্বগ্রাস বা অটোফ্যাগি বলে। এভাবে সমগ্র কোষ পরিপাক হয়ে গেলে তাকে অটোলাইসিস বলে।
    • লাইসোসোমের এনজাইমগুলো কোষের মধ্যে গৃহীত খাদ্যবস্তু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জারিত করলে তাকে হেটারোফ্যাগি বলে।
    • শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণুর আবরণ বিগলনে লাইসোসোম ভূমিকা রাখে।
    • কোষ বিভাজনকালে এরা কোষীয় ও নিউক্লিও আবরণী ভাঙতে সহায়তা করে। এরা কোষে কেরাটিন প্রস্তুত করে।

    লাইসোসোম কোষের ক্ষতি করে না কেন?

    1. লাইসোসোমের ঝিল্লি কোষের বাকি অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
    2. লাইসোসোমের অভ্যন্তর এসিডিক। এর পি.এইচ প্রায় ৪.৫ থেকে ৫ এর মধ্যে [১৪] এনজাইমগুলো পি.এইচ সেনসেটিভ এবং শুধু এসিডিয় পরিবেশে কাজ করে। সাইটোসল (সাইটোপ্লাজম এর ম্যাট্রিক্স) এর পি.এইচ (৭.২) প্রশম বলে কোষের অ্যালকালাইন পরিবেশে এরা কাজ করে না।

    রোগ

    লাইসোসোমে এনজাইমের ঘাটতির ফলে কিছু পদার্থ (যেমন: গ্লাইকোজেন, গ্লাইকোলিপিড) লাইসোসোমে সঞ্চিত যা ২০ প্রকারের কনিজেনিট্যাল রোগ সৃষ্টি করে। এদের লাইসোসোমাল স্টোরেজ ডিজিস (Lysosomal storage disease) বলে। এর সরাসরি কোনো চিকিৎসা নেই।[১৫]

    Lysomal Storage Diseases ব্লাড ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে নিউক্লিয়েজ এনজাইম নিউক্লিয়াসে জিনগত পরিবর্তন ঘটায়

  • যোজক কলা

    যোজক কলা

    যোজক কলা এক ধরনের আঁশবহুল কলা, যেটি মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গ অথবা কলাকে সমর্থন করে, যুক্ত করে অথবা বিচ্ছিন্ন করে। এটি চার ধরনের কোষকলার একটি[১] (অপর তিনটি হচ্ছে আবরণী, পেশি ও স্নায়ুকলা)।

    যোজক কলা ফাইব্রোব্লাস্ট, এডিপোসাইট, ম্যাক্রোফেজ, মাস্ট কোষ এবং লিউকোসাইড নিয়ে গঠিত। ১৮৩০ সালে জোসেফ পিটার মুলার “যোজক কলা” শব্দটি (জার্মান ভাষায়, বিন্দেগিউবে) প্রস্তাব করেন। ১৮ শতকেই যোজক কলা স্বতন্ত্র্য শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হত। প্রাণীদের যোজক কলার মূল উপাদান কোলাজেন ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এটির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ২৫%।

    যোজক কলা

    যোজক কলার সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ ১.কোষগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরে বিন্যস্ত থাকে না; ২.কোষ গুলোর মাঝে ম্যাট্রিক্স থাকায় ঘন সন্নিবেশিত হয় না; ৩.মেসোডার্ম নামক ভ্রুন থেকে এ কলার উৎপত্তি; ৪.রক্তবাহ উপস্থি।

    সাধারণ কার্যাবলীঃ

    ১.দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা কলার মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে; ২.কঙ্কাল গঠন করে দেহের বিভিন্ন কাঠামো প্রদান এবং বিভিন্ন অঙ্গের সংরক্ষণে চলাচলে সাহায্য করে; ৩.বিভিন্ন পদার্থের পরিবহনে অংশগ্রহণ করে; ৪.দেহের উপবিষ্ট ক্ষতিকারক পদার্থ ও জীবণু থেকে রক্ষা করে; ৫.ক্ষত নিরাময়ের অংশগ্রহণ করে; ৬.দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। [২][৩]

    তরল যোজক কলা

    যে কলা ধাত্র তরল ও যার কোষগুলো ধাত্রে ভাসমান অবস্থায় থাকে, তাকে তরল যোজক কলা বলে। এটি শোষিত খাদ্যসহ বিভিন্ন দ্রবীভূত পদার্থ দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে এবং রেচন পদার্থ ধৌত করে বলে একে পরিবহন বা সংবহন কলাও বলা হয়। তরল যোজক কলা প্রধানত দুই প্রকার। যথা:

  • যৌন দ্বিরূপতা

    যৌন দ্বিরূপতা

    যৌন দ্বিরূপতা (ইংরেজি: Sexual dimorphism) বলতে কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবের স্ত্রী ও পুরুষ সদস্যের মধ্যে বাহ্যিক শারীরিক বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এমন তারতম্য দেখা যায় যাতে করে স্ত্রী-পুরুষে খুব সহজে পার্থক্য করা যায়। সাধারণত প্রধান পার্থক্যটি হল যৌনাঙ্গের বিভিন্নতা। এছাড়া বর্ণ, আকার-আকৃতি, গঠন অথবা কোন বিশেষ জিনগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এদের আলাদা করা যায়। প্রধানত দুটো কারণে যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়। প্রথমত, বিপরীত লিঙ্গের জীবকে আকৃষ্ট করার লক্ষে যৌন বিবর্তনের মাধ্যমে দ্বিরূপতা সৃষ্টি (যেমন পুরুষ ময়ূরের ঝলমলে পালক) এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে দ্বিরূপতা সৃষ্টি (যেমন পুরুষ বেবুনের বড় দেহ ও শ্বদন্ত)। প্রধানত পাখিদের মধ্যে যৌন দ্বিরূপতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ পাখিদের ঝলমলে ও উজ্জ্বল পালক থাকে, এতে প্রজনন ও সীমানা বজায় রাখতে সুবিধা হয়। স্ত্রী পাখিদের পালক সাধারণত খুব সাদামাটা হয়, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে তা একদম মিশে যায়। ফলে বাসায় বসে থাকা স্ত্রী পাখিরা শত্রুর হাত থেকে বেঁচে যায়। একই কারণে স্তন্যপায়ীঅমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়। এছাড়া আচরণের দিক থেকেও বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন: কাঁটাওয়ালা তক্ষকের পুরুষ সদস্যদের খাদ্যাভ্যাস স্ত্রী সদস্যদের তুলনায় ভিন্ন।[১]

    যৌন দ্বিরূপতা
  • মেন্ডেলীয় বংশগতি

    মেন্ডেলীয় বংশগতি

    মেন্ডেলীয় বংশাণুগতি ১৮৬৫–১৮৬৬ সালে গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কর্তৃক প্রস্তাবিত উত্তরাধিকার সূত্রে মেনে চলে এমন বংশগতীয় নীতি। মেন্ডেলের এই গবেষণার ফল ১৮৬৬ সালে ব্রান ন্যাচারাল হিসস্ট্রি সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তাঁর আবিষ্কার বিশ্বে তখন কোনো সাড়া জাগাতে পারিনি। প্রায় ৩৪ বছর পর ১৯০০ সালে এই প্রস্তাবিত নীতিটি হল্যান্ডের ডি ভ্রিস, জার্মানির কোরেন্স ও অস্ট্রিয়ার চ্যারম্যাকের পৃথক পৃথক গবেষণার মাধ্যমে মেন্ডেলের বর্ণিত ফলাফলগুলি পুনরায় উৎঘাটন করেন, যা মেন্ডেলর পুনরাবিষ্কার নামে অভিহিত করা হয়, এবং উইলিয়াম বেটসন দ্বারা এটি আরও জনপ্রিয়তা পায়।[১] মেন্ডেলের প্রস্তাবিত বংশগতীয় সূত্রের নীতিগুলো প্রাথমিকভাবে বিতর্কিত ছিলো। ১৯১৫ সালে টেন্ডস হান্ট মরগান বোভেরি – সাটন ক্রোমোজোম তত্ত্বের সাথে মেন্ডেলের তত্ত্বগুলি একীভূত করেন। এভাবে মেন্ডেলিয় বংশগতির নীতিসমূহ শাস্ত্রীয় জিনতত্ত্বের মূল হয়ে ওঠে। রোনাল্ড ফিশার ১৯৩০ সালে তাঁর জেনেটিক্যাল থিওরি অফ ন্যাচারাল সিলেকশন গ্রন্থে প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বের সাথে এই বংশগতীয় নীতির সম্মেলন ঘটান। তিনিই বিবর্তনকে গাণিতিক ভিত্তিতে পরিণত করেন এবং আধুনিক বিবর্তনীয় সংশ্লেষণের মধ্যে জনসংখ্যা বংশাণুবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করেন। [২]

    মেন্ডেলীয় বংশগতি

    ইতিহাস

    মেন্ডেলিয় বংশগতির নীতিগুলোর নামকরণ করা হয়েছে গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেলের নামে। [৩] উনিশ শতকে এই মোরোভিয়ান ধর্ম যাজক নিজ মঠের বাগানে রোপণকৃত মটর গাছের(পিসাম স্যাটিভিম ) উপর কিছু সাধারণ সঙ্করায়ন পরীক্ষা চালান। [৪] ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ সালের মধ্যে তিনি প্রায় পাঁচ হাজার মটর গাছের উপর পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষাগুলো থেলে তিনি দুইটি সাধারণ নীতির প্রবর্তন করেন। এই নীতগুলৈ পরবর্তীকালে মেন্ডেলের বংশগতীয় নীতি নামে প্রচলিত হয়। তিনি তার গবেষণা “ভেরসুখে উবার ফ্লানৎযেন-হুব্রিডেন ( প্ল্যান্ট হাইব্রিডাইজেশন সম্পর্কিত পরীক্ষা ) দুই ভাগে গবেষণাপত্র আকারে প্রকাশ করেন। চেক প্রজাতন্ত্রের বারনো শহরের ন্যাচারাল হিস্টরি সোসাইটিতে ১৮৬৫ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ও ৮ই মার্চে তিনি দুই দফায় তার গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন। যা ১৮৬৬ সালে প্রকাশিত হয়।

    মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল সেই সময়ের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছিল। যদিও সে সময়কার জীববিজ্ঞানীদের কাছে এগুলি পুরোপুরি অজানা ছিল না, তবুও তার প্রস্তাবিত সাধারণভাবে প্রযোজ্য হিসাবে মেনে নেয়া হয়নি। এমনকি মেন্ডেল নিজেও মনে করেছিলেন যে, কেবলমাত্র কয়েকটি প্রজাতি বা বৈশিষ্ট্য়ের জন্য তার প্রস্তাবিত নীতিগুলো প্রযোজ্য। মেন্ডেলের বংশগতীয় নীতির তাৎপর্য অনুধাবনের পথে প্রধান বাধা ছিলো “কমপ্লেক্স ট্রেইটস”। কমপ্লেক্স ট্রেইটস হল উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জিনগত বৈশিষ্ট্য যা শুধুমাত্র একটি জিন দ্বারা বর্ণনা করা যায় না। অবশ্য বর্তমানে এই ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো একাধিক জিনের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।[৪]

    মেন্ডেল তার সময়ে নিজের প্রস্তাবিত বংশগতীয় নীতিগুলোর গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও ১৯০০ সালে তিন ইউরোপীয় বিজ্ঞানী হুগী দে ভ্রি, কার্ল করেন্স এবং এরিখ ফন শেমার্ক একই নীতি পুনঃআবিষ্কার করেন। ” পুনঃআবিষ্কার” এর সঠিক প্রকৃতি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক হয়েছে: দে ভ্রি বিষয়টিতে প্রথমে প্রকাশ করেছিলেন, একটি পাদটীকায় মেন্ডেলের কথা উল্লেখ করে।

    বিজ্ঞানে করেন্স দে ভ্রির গবেষণাপত্রটি পড়ে মেন্ডেলের আবিষ্কারকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দে ভ্রির বুঝতে পারেন এই বংশগতীয় নীতি আবিষ্কারের তার তুলনায় মেন্ডেল অনেক এগিয়ে। দে ভ্রি হয়তো বা তার গবেষণা প্রকাশিত তথ্যে গড়মিল করেছিলেন। দে ভ্রি নিজের গবেষণা পত্রে কতটুকু নিজের জ্ঞান আর কতটুকু মেন্ডেলের গবেষণা থেকে আহরিত জ্ঞান লিপিবদ্ধ করেছিলেন সেই ব্যাপারে সন্দেহ থেকে গেছে। পরবর্তীতে অন্যান্য গবেষকেরা অভিযোগ করেন, ফন শেমার্ক বংশগতীয় নীতির ফলাফল নিজেই ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। [৫][৬][৭]

    মেন্ডেলের জিনগত আবিষ্কার

    মেন্ডেলের আবিষ্কারের পাঁচটি অংশ তৎকালীন সাধারণ তত্ত্ব থেকে ভিন্ন ছিলো। তার বংশগতীয় নীতি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত ছিলো এই পাঁচটি অংশ।

    1. চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যগুলো একক এবং, একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। (বেগুনি বনাম সাদা, লম্বা বনাম বামন)।
    2. জিনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলির বিকল্প রূপ বিদ্যমান। প্রতিটি জিনেটিক বৈশিষ্ট্য পিতা বা মাতার মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। বর্তমানে একে এলিল বলা হয়।
    3. একটি অ্যালিল অন্যটির চেয়ে প্রভাবশালী। প্রভাবশালী এলিল ফেনোটাইপ দ্বারা প্রতিফলিত হয়।
    4. গেমেটগুলি এলোমেলোভাবে পৃথককরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। হেটারোজাইগোটিক ক্ষেত্রে দুটি অ্যালিলের সমান ফ্রিকোয়েন্সি সম্পন্ন গ্যামেট উৎপাদিত হয়।
    5. বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের স্বতন্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে। আধুনিক ভাষায়, জিন একে অপরের সাথে যুক্ত নয়।
  • রক্ত

    রক্ত

    রক্ত হল মানুষের এবং উচ্চশ্রেণীর মেরুদন্ডী প্রাণিদেহের এক প্রকার তরল সংবহনতন্ত্র যা কোষে প্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্যপদার্থ গুলোকে একই কোষ থেকে দূরীভূত করে। রক্ত জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত সামান্য লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃৎপিণ্ড, ধমনী, শিরাকৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্ত একধরনের তরল যোজক কলা। রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। রক্ত হল আমাদেরে দেহের জ্বালানি স্বরূপ।[১] রক্ত রক্তরসে অবস্থিত রক্ত কণিকা দিয়ে গঠিত।রক্তের তরলের ৫৫% রক্তরস এবং বেশির ভাগই পানি(৯২%) এবং এতে আরও আছে আয়ন , হরমোন , কার্বন ডাই অক্সাইড (মলত্যাগকারী পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রক্তরস) এবং রক্ত কণিকা। মানবদেহে মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ রক্ত থাকে (গড়ে মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে)। [২] অ্যালবুমিন হলো রক্তরসের প্রধান প্রোটিন এবং এটি রক্তের কোলয়েডাল অসমোটিক চাপ কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।রক্ত কণিকা প্রধানত লোহিত রক্তকণিকা (একে RBC বা এরিথ্রোসাইট বলা হয), শ্বেত রক্তকণিকা (একে WBC বা লিউকোসাইটও বলা হয়) এবং অনুচক্রিকা (একে প্লেটলেট বা থ্রম্বোসাইটও বলা হয়)। মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ সবচাইতে বেশি থাকে। এর মধ্যে রয়েছে হিমোগ্লোবিন, এটি একটি আয়রন যুক্ত প্রোটিন, যা শ্বাসযন্ত্রের গ্যাসের সাথে বিপরীতভাবে আবদ্ধ হয়ে অক্সিজেনকে পরিবহন করে এবং রক্তে দ্রবণীয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। বিপরীত, বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড বহিরাগত ভাবে পরিবাহিত হয়ে বাই কার্বনেট আয়ন হিসেবে রক্তরসে পরিবাহিত হয়। মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্ত যখন উজ্জ্বল লাল হয় তখন এর হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন যুক্ত হয় এবং যখন এটি অক্সিজেন মুক্ত হয় তখন গাড় লাল হয়ে যায়। কিছু প্রাণ, যেমন ক্রাস্টেসিয়ান এবং মলাস্ক, হিমোগ্লোবিন এর পরিবর্তে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য হিমোসায়ানিন জাতীয় পদার্থ ব্যবহার কর। পোকামাকড় এবং কিছু মলাস্কা রক্তের পরিবর্তে হিমোলিম্ফ নামক একটি তরল ব্যবহার করে, পার্থক্য হল হিমোলিম্ফে কোন বদ্ধ সংবহন তন্ত্র থাকেনা। বেশিরভাগ পোকামাকড়ের মধ্যে, এই ধরনের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মধ্যে অক্সিজেন পরিবহনকারী অনু থাকেনা কারণ তাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য শ্বাসনালী সিস্টেম যথেষ্ট ছোট। চোয়াল যুক্ত মেরুদন্ডী প্রাণীদের একটি অভিযোজিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূলত শ্বেতরক্তকণিকার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। শ্বেত রক্তকণিকা সমূহ সংক্রমণ এবং পরজীবী প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকা গুলো জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থোপোডায় অন্তর্ভুক্ত প্রাণীরা হিমোলিম্ফ ব্যবহার করে এবং তাদের ইমিউন সিস্টেম এর অংশ হিসেবে হিমোসাইট থাকে। হৃদপিন্ডের পাম্পিং ক্রিয়ার দ্বারা রক্তনালীর মাধ্যমে মাধ্যমে শরীরের চারপাশে রক্ত সঞ্চালিত হয়।ফুসফুসের মাধ্যমে ধমনীর রক্ত শ্বাস নেওয়া বাতাস থেকে শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন বহন করে এবং শিরার রক্ত কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, কোষ দ্বারা উৎপাদিত একটি বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ যা ফুসফুসের শ্বাস ছাড়ার সময় দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। রক্তের পিএইচ সামান্য ক্ষারীয় অর্থাৎ ৭.৩৫-৭.৪৫ (গড়ে ৭.৪০)। মানুষের রক্তের তাপমাত্রা ৩৬ – ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (গড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)।[৩][৪] রক্তের আপেক্ষিক ঘনত্ব পানির চেয়ে বেশি, প্রায় ১.০৬৫ । অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা। সুনির্দিষ্ট বাহিকার মাধ্যমে রক্ত দেহের সবখানে সঞ্চালিত হয়।

    রক্ত

    রক্তের অংশ

    রক্তের মূল অংশ দুইটি। যথা:

    রক্তরস

    রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে রক্তরস (plasma) বলে। রক্তকণিকা ব্যতীত রক্তের বাকি অংশই রক্ত রস। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তের প্রায় ৫৫% রক্তরস।

    রক্তের প্রধান উপাদান দুইটি। যথা: (ক) অজৈব পদার্থ (খ) জৈব পদার্থ

    (ক) অজৈব পদার্থ: রক্তরসে ৪ ধরনের অজৈব পদার্থ দেখা যায়।এগুলো হল: জল ৯১%-৯২%, কঠিন পদার্থ ৭%-৮% যার মধ্যে আছে ক্যাটায়ন ( Na+, K+, Ca++, Mg++, P+++, Fe++, Cu+, Mn++, Zn++, Pb++ ইত্যাদি ) ও অ্যনায়ন (Cl, HCO, PO43-, SO42-, ইত্যাদি) এবং ০.৯% গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে আছে কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    (খ) জৈব পদার্থ: রক্ত রসে মাত্র ৭.১%-৮.১% জৈব পদার্থ থাকে। এর মধ্যে অধিক পরিমাণে থাকে প্লাজমা প্রোটিন- গড়ে ৬-৮ গ্রাম/ডেসি লি.। প্লাজমা প্রোটিনগুলো হচ্ছে – অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফিব্রিনোজেন। এছাড়াও অন্যান্য জৈব পদার্থগুলো হল: স্নেহ দ্রব্য (নিউট্রাল ফ্যাট, কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড, লেসিথিন ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ), অপ্রোটিন নাইট্রোজেন দ্রব্য (অ্যামাইনো এসিড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিন, ক্রিয়েটিনিন, জ্যানথিন ইত্যাদি), রঞ্জক দ্রব্য (বিলিরুবিন, বিলিভার্ডিন), বিভিন্ন ধরনের এসিড (যেমন:- সাইট্রিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড), হরমোন, ভিটামিন, এনজাইম, মিউসিন ও অ্যান্টিবডি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    কাজ

    1. মানবদেহে রক্তরসের মাধ্যমে পাচিত খাদ্যবস্তু, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
    2. রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (fluidity), প্রবাহধর্ম (rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
    3. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    4. অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ রক্ত ধারণ করে।
    5. রক্তের তরল ভাবের প্রধান কারণ রক্ত রস।
    6. বাফার হিসেবে কাজ করে এতে বিদ্যমান প্রোটিন।
    7. দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে।
    8. দেহে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে।

    মানব রক্তরসের কিছু প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানসমূহ

    1. রক্তের অ্যালবুমিন
    2. গ্লোবিউলিন (অ্যান্টিবডি গামা/ইম্যুনো গ্লোব্যুলিন)
    3. প্রতঞ্চকপ্রতিতঞ্চক উপাদান সমূহ
    4. ফাইব্রিনোজেনভিট্রোনেক্টিন
    5. কম্প্লিমেন্টস (২০টির বেশি)
    6. সি আর পি
    7. ট্রান্সফেরিন
    8. ট্রান্সথাইরেটিন
    9. সেরুলোপ্লাজমিন
    10. হ্যাপ্টোগ্লোবিন
    11. হিমোপেক্সিন
    12. সাইটোকাইনস
    13. লাইপোপ্রোটিনকাইলোমাইক্রন
    14. এল বি পি
    15. গ্লুকোজ
    16. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা
    17. খনিজ লবণ
    18. ভিটামিন
    19. হরমোন
    20. এন্টিবডি
    21. বর্জ্যপদার্থ যেমন :- কার্বন ডাই অক্সাইড , ইউরিয়া , ইউরিক এসিড
    22. সোডিয়াম ক্লোরাইড খুবই অল্প ৷

    রক্তকণিকা

    বিভিন্ন রক্তকণিকা (রক্তকোষ)

    রক্তের প্লাজমার মধ্যে নির্দিষ্ট আকার ও গঠন বিশিষ্ট উপাদান বা রক্ত কোষসমূহকে রক্ত কণিকা বলে। রক্তে প্রায় তিন ধরনের কণিকা পাওয়া যায়। যথা:

    ১।লোহিত রক্তকণিকা (Erythorcytes), মানুষের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি শাসনকার্যে আগত অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোহিত রক্তকণিকা লাল অস্থিমজ্জা, প্লীহা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন হয়। এর গড় আয়ু ১২০ দিন। মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বিঅবতল বৃত্তের মত। লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন দেহকোষে পরিবহন করে এবং দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে আসে। চিত্র:লোহিত রক্তকণিকা

    ২।শ্বেত রক্তকণিকা (Leucocytes) মানব দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে একে শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয। এর গড় আয়ু ১-১৫ দিন। শ্বেত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কোন আকার নেই এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ।এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকার পরিবর্তন করতে পারে এবং ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। দেহ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। প্রকারভেদঃ সাইটোপ্লাজমের দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি উপর ভিত্তি করে শ্বেত রক্তকণিকা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

    এদের সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ।এরা সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে যথা- লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। লিম্ফোসাইট গুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা এবং এরা অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং অ্যান্টিবডির মাধ্যমে দেহে প্রকৃত রোগজীবাণু ধ্বংস করে দেহকে সুরক্ষা দেয়।মনোসাইট ছোট ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বড় কণিকা, এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধ্বংস করে।

    1. (খ)গ্রনুলোসাইট বা দানাদার

    এদের সাইটোপ্লাজম সখ্য দানাযুক্ত। নিউক্লিয়াস এর আকার এর উপর ভিত্তি করে এরা প্রধানত তিন প্রকার যথা –

    • নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে।
    • ইওসিনোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে অ্যালার্জি প্রতিরোধ কর।
    • বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্ত বাহিকা ভেতর রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
    1. (খ)অণুচক্রিকা (Thrombocytes)

    এগুলো দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন অঙ্গানু যেমন মাইট্রোকন্ডিয়া গলগি বস্তু থাকে কিন্তু কোন নিউক্লিয়াস থাকে না।অনুচক্রিকা গুলোর গড় আয়ু ৫-১০ দিন। অনুচক্রিকার প্রধান কাজ হল রক্ত তঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। যখন দেহের কোন রক্ত বাহিকা বা কোন টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায় তখন সেখানকার অনুচক্রিকা গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

    রক্ত কনিকার বিভিন্ন রোগ

    1. পলিসাইথিমিয়া :— লোহিত রক্তকণিকা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে ৷ লোহিত রক্তকণিকার পরিমান প্রতি ঘন মিলিলিটারে ৬৫ লাখের বেশি হয়ে যায় এই রোগে।
    2. এনিমিয়া :— লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে ৷ সাধারনত স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫% লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে এই রোগ হয় ।
    3. লিউকোমিয়া :— শ্বেত রক্তকণিকা অত্যধিক বেড়ে গেলে যদি ৫০০০০ -১০০০০০০ হয় ৷
    4. লিউকোসাইটোসিস :— শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে যদি ২০০০০-৩০০০০ হয় ৷
    5. থ্রম্বোসাইটোসিস :— অণুচক্রিকার সংখা বেড়ে গেলে ৷
      1. করোনারী থম্বোসিস :— হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বাধায় ৷
      2. সেরিব্রাল থম্বোসিস :— মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধায় ৷
    6. পারপুরা / থ্রোম্বোসাইটোপিনিয়া :— অণুচক্রিকা কমে গেলে ৷
    7. থ্যালাসেমিয়া :— বংশগত রোগ। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে ৷

    রক্তের ধরন

    রক্তের ধরন (রক্তের গ্রুপ হিসাবেও পরিচিত) যা অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির ভিত্তিতে এবং রক্তের লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Corpuscles) পৃষ্ঠে প্রাপ্ত অ্যান্টিজেনিক পদার্থগুলির উপর ভিত্তি করে। এই অ্যান্টিজেনগুলি রক্তের গ্রুপ সিস্টেমের উপর নির্ভর করে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, গ্লাইকোপ্রোটিন বা গ্লাইকোলিপিড হতে পারে। এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিজেন অন্যান্য টিস্যুগুলির অন্যান্য ধরনের কোষের পৃষ্ঠেও উপস্থিত রয়েছে। এই লাল রক্ত ​​কোষের পৃষ্ঠের বেশিরভাগ অ্যান্টিজেনগুলি একটি অ্যালিল (জিনের বিকল্প সংস্করণ) থেকে উদ্ভূত হতে পারে এবং সম্মিলিতভাবে রক্তের গ্রুপ সিস্টেম গঠন করতে পারে।রক্তের ধরন (বা রক্তের গ্রুপ) নির্ধারিত হয় লাল রক্ত ​​কোষে উপস্থিত ABO রক্ত ​​গ্রুপ অ্যান্টিজেন দ্বারা। রক্তের ধরনগুলি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং পিতামাতার উভয়ের অবদানের প্রতিনিধিত্ব করে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএসবিটি) দ্বারা মোট ৩৬ টি মানব রক্তের গ্রুপ সিস্টেম এবং ৩৪৬ অ্যান্টিজেনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রক্তের গ্রুপ সিস্টেমগুলি হল ABO এবং Rh।লােহিত রত্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের অ্যান্টিজেন (antigens) থাকে এবং রস্তুরসে a ও b দুই ধরনের অ্যান্টিবডি (antibody) থাকে। কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০১ সালে মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করেন এবং A, B, AB এবং O এ চারটি গ্রুপের নামকরণ করেন। আর রেসাস (Rh) ফ্যাক্টর আন্টিজেন রক্তে উপস্থিত থাকলে রক্ত পজিটিভ না থাকলে রক্ত নেগেটিভ। তাই ABO গ্রুপের পাশাপাশি রেসাস ফ্যাক্টরও পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখাতে হবে। অর্থাৎ রেসাস ফ্যাক্টর বিবেচনায় নেওয়া হলে রক্ত গ্রুপ গুলা হবে A+, A-, B+ B-, AB+, AB-,O+ এবং O-। সাধারণত একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ আজীবন একই রকম থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    রক্তচাপ

    হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণের কারণে মানুষের ধমনীশিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হয়। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন এর ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে।হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। মানুষের শরীরে ৮০/১২০ হলো আদর্শ রক্তচাপ, ৮০/১৩০ হলো সবচেয়ে অনুকূল রক্তচাপ এবং ৮৫/১৪০ হলো সর্বোচ্চ রক্তচাপ।আর রক্তচাপ নির্ণয়ের যন্ত্রের নাম হলো-স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphygmomanometer)

    রক্তচাপের গুরুত্ব

    রক্তচাপ রক্তসংবহনে এবং জালকতন্ত্রে পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এই পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া রক্ত থেকে কোষে পুষ্টি সরবরাহ করা, মূত্র উৎপাদন করা প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজের সঙ্গে জড়িত।

    রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী কারণসমূহ

    1. হৃৎপিণ্ডের সংকোচন করার ক্ষমতা।
    2. রক্তবাহের স্থিতিস্থাপকতা।
    3. হরমোন।
    4. খাদ্য গ্রহণ।
    5. ঘুমানো।
    6. দৈহিক পরিশ্রম।

    রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মান

    1. লোহিত রক্তকণিকা:
    • পুরুষ :প্রতি  ঘনমিলিমিটারে ৫০ লক্ষ
    • মহিলা : প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৪৫ লক্ষ

    ২. শ্বেতরক্তকণিকা: ৪-১১ /৫-৮ হাজার / ঘন মিলিলিটার

    ৩. অনুচক্রিকা – ২.৫ – ৫ লক্ষ / ঘন মিলিলিটার

    অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এবং এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে কোনো ব্যক্তি মারা যেতে পারে ।

  • টেস্টোস্টেরন

    টেস্টোস্টেরন

    টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের। মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী,পাখি [১] সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়।[২] স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়,যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এটি প্রধান পুরুষ হরমোন যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোষ (Leydig Cell) থেকে উৎপন্ন হয়।

    পুরুষের জন্য টেস্টোস্টেরন প্রজনন অঙ্গ যেমন শুক্রাশয় (Testis) বর্ধনের পাশাপাশি গৌণ বৈশিষ্ট্য যেমন মাংসপেশি,শরীরের লোম বৃদ্ধি করে। [৩]

    পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। [৪][৫]

    টেস্টোস্টেরন

    শব্দতত্ত্ব

    টেস্টোস্টেরন নামটি মূলত টেস্টিস বা শুক্রাশয় ও স্টেরন বা স্টেরয়েড কিটোন নামক দুটি শব্দের সন্ধির মাধ্যমে নামকরণ করা হয়েছে। সুতরাং টেস্টোস্টেরন শব্দের অর্থ হলো শুক্রাশয় নিসৃত কিটোনবিশিষ্ট স্টেরয়েড হরমোন।

    স্বাস্থ্যগত প্রভাব

    সাধারণত এন্ড্রোজেন প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর সংবলিত টিস্যুর বৃদ্ধি সাধন করে।টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে লিঙ্গিক(virilizing) এবং অ্যানাবলিক (Anabolic) এই দু ভাগে ভাগ করা যায়।

    • মাংসপেশি বৃদ্ধি,হাড়ের ঘনত্ব(density)বৃদ্ধি,হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে উদ্দীপনা করা – এসব অ্যানাবলিক কাজ।
    • যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা,বিশেষ করে ফিটাসের শিশ্ন এবং শুক্রথলি তৈরি এবং জন্মের পরে (বয়ঃসন্ধিকালে) কণ্ঠস্বর গাঢ় হওয়া,দাড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি – এসব এন্ড্রোজেনিক কাজ।এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য।

    জন্মের পূর্বে

    প্রারম্ভিক শৈশব

    বয়ঃসন্ধির পূর্বে

    শৈশবের পরে এন্ড্রোজেন লেভেল বৃদ্ধির লক্ষণীয় প্রভাব দেখা যায় ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই।যেমন-

    • বয়স্ক-টাইপ শরীরের গন্ধ।
    • বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজায়।
    • উচ্চতায় বৃদ্ধি।
    • গোঁফ ও দাড়ি গজানো।
    • পুরুষালী কণ্ঠস্বর হয়।

    বয়ঃসন্ধিকাল

    প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে বয়ঃসন্ধিকালিন প্রভাব দেখা যায়। ছেলেদের এই প্রভাব সচরাচর একটু দেরিতে হয় কিন্তু মেয়েদের রক্তে মুক্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ অনেক দিন থেকে বেশি মাত্রায় থাকলে এমনটি দেখা যায়।

    • সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া। এটি ব্রণের কারণ হতে পারে।
    • ভগাংকুর (Clitoris) বর্ধিত হওয়া।
    • শ্রোণীদেশের চুল নিচে উরু এবং উপরে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত।
    • মুখমণ্ডলে চুল (জুল্পি, গোঁফ, দাঁড়ি)। *মাথার চুল কমে যাওয়া।
    • বুকে,বৃন্তের চারপাশে,নিতম্বের চারপাশে লোম।
    • পায়ে পশম।
    • বগলে চুল।
    • মুখের উপরস্থ ফ্যাট কমে যাওয়া।
    • পেশি বৃদ্ধি।
    • গাঢ় কণ্ঠস্বর।
    • পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি।
    • কাঁধ প্রসারিত, বুকের পাঁজর ফুলে যাওয়া।
    • হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং বৃদ্ধি রোহিত হওয়া।

    প্রাপ্ত বয়স্ক

    টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বয়স্ক নারীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আরো পরিষ্কারভাবে প্রমাণযোগ্য , কিন্তু উভয়ের জন্যই দরকারি। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পরে হ্রাস পাওয়ায় এইসবের কিছু প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।

    রক্ত পরীক্ষা, কেন্দ্রের বাম দিকে হালকা নীল বর্ণ পুরুষ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেখাচ্ছে।

    জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত ব্যবহার

    ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি

    টেস্টোস্টেরন এবং যৌন উদ্দীপনা

    পুরুষের যৌন উদ্দীপনায় টেস্টোস্টেরন

    টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা একই ব্যক্তির যৌন ক্রিয়ার সময়সীমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম যৌন সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য বেশি ।[৯] একাধিক ব্যক্তিদের সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত ব্যক্তি পরের দিন সকালে টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা অনুভব করে থাকেন।[১০]

    যে সকল পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা (যেমনঃ পর্নোগ্রাফি) দেখেন, তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা গড়ে ৩৫% বেড়ে যায়, ফিল্ম শেষ হওয়ার পর ৬০-৯০ মিনিট এ চূড়ান্তে ওঠে, কিন্তু কোন বৃদ্ধি যৌন নিরপেক্ষ ছবি দেখার পর হয় না।[১১] এছাড়াও যে সকল পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা দেখেন, তাদের মানসিক অবসাদ কমে বলে জানা গেছে।[১২] আগের গবেষণা যৌন উদ্দীপনা এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রার মাঝে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। [১৩]

    ২০০২ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়,একজন মহিলার সাথে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের পরে পুরুষের মাঝে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ে।পুরুষেরা নারীদের মুগ্ধ (Impress) করার চেষ্টা করেছিল- এই বর্ধন এইরূপে সম্পর্কিত ছিল।[১৪]

    নারীদের দেহের হরমোন চক্রের উপর পুরুষের টেস্টোস্টেরন মাত্রা এবং যৌন উদ্দীপনা বহুলাংশে জ্ঞাত। [১৫]

    নারীদের যৌন উদ্দীপনায় টেস্টোস্টেরন

    আচরণ এবং ব্যক্তিত্ব

    টেস্টোস্টেরন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিবার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে।[১৬][১৭]

    টেস্টোস্টেরন আগ্রাসী মনোভাব বাড়ার পিছনেও অনেকাংশে দায়ী।”[১৮]

  • টেংরা

    টেংরা

    টেংরা ছোট একটি মাছ। যার বৈজ্ঞানিক নাম Batasio tengana

    বর্ণনা

    টেংরা মাছ আকারে ছোট হয় এবং মাথায় দুই জোড়া গোঁফ থাকে।দেহ প্রায় গোলাকার,দেহে কোনো আঁশ নেই এবং দেহ বেশ পিচ্ছিল।আত্মরক্ষার জন্য ফুলকার দুই পাশে দুইটি এবং পিঠে একটি সরু কাঁটা থাকে।পিঠের উপরের অংশ কালচে এবং পেটের দিকটা সাদা হয়ে থাকে।

    শ্রেনীবিন্যাস

    টেংরা এর বৈজ্ঞানিক নাম Batasio tengana। মাছটির ইংরেজি নাম Batasio। এটি Bagridae পরিবার (family) এর অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশ এর স্থানীয় (Native) মাছ।[১]

    চাষপদ্ধতি

    টেংরা

    কলকাতার বাজারে টেংরা

    টেংরা একটি মিষ্টি পানির দেশীয় মাছ।সাধারণত নদী,খাল ও বিলে এ মাছ পাওয়া যায়। তবে এ মাছ পুকুরে চাষ করা সম্ভব।

    প্রজনন

    টেংরা মাছ ৩ মাস বয়সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। মে মাসের শেষের দিকে এ মাছ পেটে ডিম ধারণ করে এবং প্রায় এক মাস পর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিম ছেড়ে দেয় যেখান থেকে জন্ম হয় হাজার হাজার বাচ্চা।

    পুষ্টি গুণাগুণ

    ১০০ গ্রাম টেংরা মাছে ১৪৪ ক্যালরি শক্তি, ১৯.২ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৫ গ্রাম চর্বি, ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২ মিলিগ্রাম আয়রন।তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের টেংরা মাছ খাওয়া উচিত।

    বাসস্থান

    এটি মিঠা পানির মাছ। সাধারণত নদী, খাল এবং বিল এ পাওয়া যায়। তবে পুকুরে এ মাছ চাষ করা সম্ভব।

    চাষ পদ্ধতি

    টেংরা মাছ এর বাণিজ্যিক চাষ করা হয় না। ইউরোপের বাজারে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একুয়ারিয়াম ফিশ হিসাবে টেংরা মাছের চাহিদা রয়েছে।[২]

    আরো দেখুন

    ১.বাংলাদেশের মাছ

  • উপাঙ্গ (শারীরবিদ্যা)

    উপাঙ্গ (শারীরবিদ্যা)

    উপাঙ্গ (ইংরেজি ভাষায়: Limb) বলতে প্রাণীদেহের সাথে যুক্ত বা প্রাণীদেহ থেকে অভিক্ষিপ্ত কোন অংশকে বোঝায়। উপাঙ্গ মূলত প্রাণীর চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা কিংবা কোন কিছুতে চড়া। তবে কিছু কিছু প্রাণী তাদের সামনের উপাঙ্গগুলোকে (মানুষের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্ব উপাঙ্গ) জিনিসপত্র বহন, ব্যবহার বা নাড়াচাড়া করার কাজে ব্যবহার করে। কিছু কিছু প্রাণী তাদের পেছনের উপাঙ্গও এসব কাজে ব্যবহার করতে পারে, যেমন পাখি, এরা এদের পেছনের পা দিয়ে শিকার করতে সক্ষম। অক্টোপাস আর মাকড়শার উপাঙ্গ আটটি। আর্থ্রোপডদের সাধারণত ছয়টি উপাঙ্গ থাকে। বেশিরভাগ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের উপাঙ্গ চারটি। মানুষের সামনের উপাঙ্গগুলো হাত আর পেছনের উপাঙ্গগুলো পা নামে পরিচিত। মানুষের হাত দুর্বল হলেও সূক্ষ্ম সব কাজের জন্য পারদর্শী। পাখির সামনের দু’টি উপাঙ্গ ডানা আর পেছনের উপাঙ্গ দু’টি পা নামে পরিচিত। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বেশিরভাগই তাদের চারটি উপাঙ্গ হাঁটা, শিকার বা দৌড়ানোর কাজে ব্যবহার করে। প্রধানত ভ্রুণাবস্থায় প্রাণীদের দেহে উপাঙ্গের আবির্ভাব ঘটে, পরবর্তীতে কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপের পরে উপাঙ্গগুলি সঠিক অবয়বে আসে। জন্ম নেওয়ার পরে প্রাণীদের জীবনের প্রাথমিক পর্যায়েও উপাঙ্গের উন্নয়ন ঘটে, যেমন ব্যাঙ। এদের ব্যাঙাচি অবস্থায় দু’টি উপাঙ্গ থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরও দু’টি উপাঙ্গের আবির্ভাব ঘটে।

    উপাঙ্গ (শারীরবিদ্যা)

    টুলেরপেটন , ডেভোনিয়ান যুগেরটেরাপড

    বিষয়শ্রেণীসমূহ:

  • উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব

    উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব

    উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব (এছাড়াও ফাইটোপ্যাথোলজি) হল রোগজীবাণু (সংক্রামক জীব) এবং পরিবেশগত অবস্থা (শারীরবৃত্তীয় কারণ) দ্বারা সৃষ্ট রোগের বৈজ্ঞানিক গবেষণা। [১] সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী জীবের মধ্যে রয়েছে ছত্রাক, ওমাইসিটিস, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ভিরিওডস্, ভাইরাস- সদৃশ জীব, ফাইটোপ্লাজমা, প্রোটোজোয়া, নেমাটোড এবং পরজীবী উদ্ভিদ । কীটপতঙ্গ, মাইট, মেরুদণ্ড বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের মতো ইক্টোপ্যারাসাইটগুলি অন্তর্ভুক্ত নয় যা উদ্ভিদের টিস্যু খেয়ে উদ্ভিদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদ রোগতত্ত্বয় রোগজীবাণু সনাক্তকরণ, রোগের কারণ অনুসন্ধান, রোগের চক্র, অর্থনৈতিক প্রভাব, উদ্ভিদ রোগের মহামারীবিদ্যা, উদ্ভিদ রোগ প্রতিরোধ, কীভাবে উদ্ভিদ রোগ মানুষ ও প্রাণীকে প্রভাবিত করে, প্যাথোসিস্টেম জেনেটিক্স এবং উদ্ভিদ রোগের ব্যবস্থাপনার অধ্যয়ন জড়িত।

    উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব

    সারসংক্ষেপ

      খাদ্যের নির্ভরযোগ্য উৎপাদনের জন্য উদ্ভিদের রোগ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি জমি, পানি, জ্বালানি এবং অন্যান্য উপকরণের কৃষি ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য সমস্যা তৈরি করে। প্রাকৃতিক এবং চাষকৃত উভয় জনসংখ্যার গাছপালা সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহন করে, তবে আয়ারল্যান্ডের মহাদুর্ভিক্ষ এবং চেস্টনাট ব্লাইটের মতো ধ্বংসাত্মক উদ্ভিদ রোগের প্রভাবের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, সেইসাথে রাইস ব্লাস্ট, সয়াবিন সিস্ট নেমাটোড এবং সাইট্রাস ক্যানকার এর মতো পুনরাবৃত্ত গুরুতর উদ্ভিদ রোগ।

    ইতিহাস

    উদ্ভিদ রোগবিদ্যা প্রাচীনকাল থেকে থিওফ্রাস্টাস থেকে শুরু করে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন প্রাথমিক আধুনিক যুগে মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের সাথে শুরু হয়েছিল এবং ১৯ শতকে বিকশিত হয়েছিল।[২]