১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটির প্রথম দশ চরণ সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।[৩]
ব্যুৎপত্তি
সোনা শব্দটির অর্থ “স্বর্ণ“, আর সোনার শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “স্বর্ণের অন্তর্গত”, বা “স্বর্ণ দিয়ে তৈরি” এবং “আর” দখল করে। এটি “প্রিয়” অর্থপ্রিয় পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত, কিন্তু গানের মধ্যে সোনার বাংলা শব্দটি বাঙালির মূল্যবোধ প্রকাশ করতে পারে বা ফসল তোলার আগে ধানক্ষেতের রঙের তুলনা বোঝানো হয়েছে।
ইতিহাস
রচনা ও সুরারোপ
আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, তাই এর সঠিক রচনাকাল জানা যায় না।[৪] সত্যেন রায়ের রচনা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতারটাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় এই গানটি প্রথম গীত হয়েছিল। এই বছরই ৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২ ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে গানটি মুদ্রিত হয়। এই বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও গানটি মুদ্রিত হয়েছিল। তবে ৭ আগস্ট উক্ত সভায় এই গানটি গীত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৪] বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে অবস্থা ও ব্যবস্থা প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথম গীত হয়েছিল।[৪]
আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিল শিলাইদহের ডাকপিয়ন গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির সুরের অণুষঙ্গে।[৪]সরলা দেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে তার শতগান সংকলনে গগন হরকরা রচিত গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেক স্বদেশী গানের সুরই এই স্বরলিপি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছিল।[৪] যদিও পূর্ববঙ্গের বাউলদের ভিডমিড ও ভাটিয়ালি সুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ইতঃপূর্বেই হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৮৮৯-১৯০১ সময়কালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারির কাজে ভ্রমণ ও বসবাসের সময় বাংলার লোকজ সুরের সঙ্গে তার আত্মীয়তা ঘটে। তারই অভিপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী আন্দোলনের সমসাময়িক গানগুলি, বিশেষত আমার সোনার বাংলা।
যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
গানের কথা
মূল কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটি এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গানের প্রথম দশ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি
জনপ্রিয়তা
শ্রোতাদের পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার তৈরি সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় এই গানটি প্রথম স্থান দখল করে।[৫]
আঞ্জুমান নিজস্ব প্রচার মাধ্যম হিসেবে আল-এসলাম (১৯১৫-১৯২১) নামক পত্রিকা প্রকাশ করে।[১]
কার্যক্রম
এই সংগঠন ১৯২১ সাল পর্যন্ত স্বনামে কার্যকর ছিল। এরপর তা জামিয়াত-উল-উলামা-ই-বাঙ্গালার সাথে একীভূত হয়। আঞ্জুমান বাংলা ও আসামে তাদের কার্যক্রম চালায়। ভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে পড়া মুসলিমদেরকে শিরক ও বিদাত থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা প্রদান করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা মক্তব, মাদ্রাসা নির্মাণ করেন ও তহবিল গঠন করেন। চট্টগ্রামে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল কিন্তু তহবিলের কারণে তা সম্ভব হয়নি।[১]
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে আঞ্জুমান অংশ নেয়। আঞ্জুমান হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষপাতী ছিল। স্বদেশী পণ্যের বিক্রির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতায় স্বদেশী খিলাফত স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।[১]
সমাপ্তি
দীর্ঘদিন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পর ১৯২১ সালে আঞ্জুমানের কার্যক্রম বন্ধ হয় এবং তা জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের বাংলার শাখা জামিয়াত-উল-উলামা-ই-বাঙ্গালার সাথে একীভূত হয়।[১]
অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ কেন্দ্রিক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক মতবাদ যা দক্ষিণ এশিয়ার সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের একটি কেন্দ্রীভূত স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্র ব্যবাস্থার দাবি করে । বাঙালি জাতীয়তাবাদী মাওলানা ভাসানি, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ প্রখ্যাত বাঙালি একটি অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা প্রজাতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।[১][২]বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলো একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে প্রাচীন কাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসরত বাঙালি জাতি, তথা বাংলা ভাষাগত অঞ্চলের অধিবাসীদের বুঝানো হয়ে থাকে। বাঙালি জাতি উপমহাদেশের একটি অন্যতম জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রভাবিত এক প্রভাবশালী জাতি। বাঙালি জাতীকে উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার বলা হয়ে থাকে। অবিভক্ত বাংলা পরবর্তীতে ব্রিটিশ চক্রান্তে বিভক্ত করা হয়। প্রাচীন বঙ্গদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধ জাতি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ধারনাকে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা বা বৃহত্তর বাংলাদেশ বলা হয়ে থাকে, যাদের ইতিহাস অন্ততঃ চার হাজার বছর পুরোনো।
ঐতিহাসিক পটভূমি
ব্রিটিশ রাজ ভারতে ক্যাবিনেট মিশন ১৯৪৬ প্রেরন করলে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির এ সময়ে বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আনুষ্ঠানিকভাবে অবিভক্ত বাংলাকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র করার এক পরিকল্পনা পেশ করেন।[৩][৪][৫] নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসুও তার সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্রের এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালের ২৬শে এপ্রিল ইংরেজ বড়লাট লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনের সাথে এক সভায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উত্থাপন করেন অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা প্রস্তাব। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি তার এই পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন সৃষ্টির জন্য মাউন্টব্যাটেনের কাছ থেকে দুমাস সময় চেয়ে নেন। মাউন্টব্যাটেন তাকে জানান যে তিনি দেশ বিভাগের বিরুদ্ধে, তবে ঐক্যবদ্ধ ভারত না হলে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবকেই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। ঐদিনই কায়েদে আজম জিন্নাহর সাথে সাথে মাউন্টব্যাটেনের এক বৈঠক হয়। সে বৈঠকে তিনি জিন্নাহকে জানান সোহরাওয়ার্দি তাকে বলেছেন যে ভারত বা পাকিস্তান কারো সাথে যোগ দেবে না এই শর্তে অবিভক্ত বাংলা থাকা সম্ভব। জিন্নাহ ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব সমর্থন করেন।
মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী যাবার পথে ‘৪৭ সালের ৯ই মে কলকাতায় আসলে তার সাথে অবিভক্ত বাংলার অন্যতম মূল প্রস্তাবক শরৎচন্দ্র বসু আলোচনা করেন। তার পরের দিন মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম, মহাত্মা গান্ধীর সাথে অবিভক্ত বাংলার প্রস্তাব নিয়ে আলাপ করেন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা সৃষ্টির জন্য ১৯৪৭ সালের ২০শে মে সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান পার্টির নেতা শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে নেতা পর্যায়ে একটি ত্রিদলীয় আলোচনা সভা হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দি, মুহম্মদ আলী, ফজলুর রহমান, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক আবুল হাশিম, আব্দুল মালেক, অবিভক্ত বাংলার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা কিরণশঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বকসি এবং শরৎচন্দ্র বসু। এ সভায় আবুল হাশিম ও শরৎ বসু সবার সাথে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিরণশঙ্কর রায় কংগ্রেস পার্টির দলের ঘোষিত নীতির বিরোধিতা করে এই প্রস্তাবের সাথে যুক্ত হন। সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশিম একইভাবে মুসলিম লীগের ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেন। সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর মধ্যে বাংলার সার্বভৌম মর্যাদা কি হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু তাদের উভয়েরই প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাংলা প্রদেশের বিভক্তি রোধ করা।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম তাদের পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রদেশের হিন্দু নেতাদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর প্রয়াস অব্যাহত রাখেন। সোহরাওয়ার্দী নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে ফ্রেডারিক বারোজ, জিন্নাহ ও মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং তাদের সঙ্গে তার সন্তোষজনক আলোচনাও হয়। শরৎ বসু মার্চে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি (AICC) কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেন। কিরণশঙ্করের বিশ্বাস ছিল যে, যদি মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ হিন্দুদের জন্য এমন কিছু প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রদেশটির অখণ্ডতা রক্ষা পেতে পারে। ১৯৪৭-এর মে মাসের গোড়ার দিক থেকে অবিভক্ত বাংলার পক্ষপাতীরা একে অন্যের কাছাকাছি আসেন। কলকাতায় গান্ধীর সফরকালে তারা তাদের প্রস্তাব নিয়ে গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তার পরামর্শ কামনা করেন। তারা তাদের অভিমত সম্পর্কে কংগ্রেস ও লীগ শীর্ষ নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।
প্রস্তাব
১৯৪৭-এর ২০শে মে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার পক্ষপাতী নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্তগুলি ছিল নিম্নরূপ:
বাংলা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।[৬]
স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের সংবিধানে যুক্ত নির্বাচন ও বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে আর সে সঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান জনসমষ্টির সংখ্যানুপাতে আসন সংরক্ষিত থাকারও ব্যবস্থা থাকবে। হিন্দু ও তফশিলি হিন্দুদের আসনগুলি তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের জনসমষ্টির অনুপাতে তাদের জন্য বণ্টনের ব্যবস্থা থাকবে কিংবা এমন ভাবে সে ব্যবস্থা করা হবে যাতে উভয় সম্প্রদায়ের সম্মতি থাকবে। নির্বাচনী এলাকাগুলি হবে কার্যত বহু নির্বাচনী এলাকা এবং ভোট হবে বণ্টন অনুসারে, সামগ্রিক নয়। নির্বাচন চলাকালে কোনো প্রার্থী তার নিজ সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলে এবং একইভাবে প্রদত্ত অন্য সম্প্রদায়গুলির ২৫ শতাংশ ভোট পেলে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। যদি কোনো প্রার্থী এ শর্তাবলি পূরণ না করতে পারেন তাহলে যিনি তার সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।[৬]
স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ও বাংলা বিভক্ত করা হবে না এ মর্মে ব্রিটিশ রাজকীয় সরকারের ঘোষণার পর বাংলার বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়া হবে। তদস্থলে একটি নতুন অন্তবর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। এ মন্ত্রিসভায় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের (তফশিলি হিন্দু ও হিন্দুসহ) সমান সংখ্যক সদস্য থাকবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী এ হিসেবের বাইরে থাকবেন। এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলিম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু।
নতুন সংবিধানের আওতায় একটি আইন পরিষদ ও একটি মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত পর্যায়ে গঠিত হওয়া সাপেক্ষে ইত্যবসরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন (তফশিলি হিন্দুসহ) ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন চাকরিতে সমান অংশের অধিকারী হবেন। আর এসব চাকরি-বাকরি করবেন বাঙালিরা।[৬]
গণপরিষদ ৩০ জন বাক্তিকে নিয়ে গঠিত হবে। এদের মধ্যে ১৬ জন হবেন মুসলিম ও ১৪ জন অমুসলিম। ইউরোপীয়রা ছাড়া ব্যবস্থাপক পরিষদের মুসলিম ও অমুসলিম সদস্যরা তাদেরকে নির্বাচিত করবেন।[৬][৭]
নিজেদের মধ্যে এক সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী, কিরণশঙ্কর রায় ও শরৎচন্দ্র বসু তাদের এ পরিকল্পনার পরীক্ষামূলক চুক্তির শর্তগুলির ব্যাপারে কংগ্রেস ও লীগ হাই কমান্ডের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করেন। তবে কংগ্রেস ও লীগ নেতাদের মধ্যে তৎকালে বিরাজমান ভুল বোঝাবুঝি ও পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এ সমঝোতার প্রণেতারা দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কংগ্রেস ও লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা চুক্তির শর্তগুলির সরাসরি নিন্দা করেন। কলকাতার প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদপত্র এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের খাজা গ্রুপের সংবাদপত্রগুলি চুক্তির শর্তগুলির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান শুরু করে। খাজা গ্রুপের এ ধারণা হয় যে, এ চুক্তির অর্থ হবে হিন্দুদের কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ, আর কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা নেতাদের মতে, এ চুক্তিটি পাকিস্তানের সীমানা সম্প্রসারণের একান্ত লক্ষ্যেই করা হয়েছে।
জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব সত্তার অব্যাহত বিকাশের পথে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক শতকে এ অঞ্চলে কারুশিল্প, নির্মাণ ও শিল্প কারখানা, শিক্ষা ও প্রশাসন ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জন ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষা, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক নানা নীতির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন দেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চালু করে। ঔপনিবেশিক পরিবর্তনগুলো বিগত কয়েক শতকে গড়া-ওঠা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করছিল, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে ধ্বংসও করে দিয়েছিল। উনিশ শতকের ঘটনাবলি এক ধরনের বাঙালি জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলে।
ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ
আন্দোলনরত ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের প্রাক্কালে সাম্প্রদায়িক প্রশ্নজনিত সমস্যার সমাধানে একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব। ১৯৪৭ সালের এপ্রিল-মে দেশবিভাগের প্রশ্নটি পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
হোসেন সোহরাওয়ার্দীর স্বাধীন বাংলা
সোহরাওয়ার্দী ভারত ইউনিয়নের বাইরে সম্পূর্ণভাবে এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত বাংলাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শরৎ বসু অবিভক্ত বাংলাকে কল্পনা করেছিলেন ভারত ইউনিয়নের মধ্যেই এক সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে। তারা উভয়েই বাংলা বিভাগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ বিভক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং এ প্রদেশের হিন্দু মহাসভার নেতারা। বাংলার কতিপয় হিন্দু ও মুসলিম নেতা সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর প্রয়াসের সমর্থন জানিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ হলেন: কিরণশঙ্কর রায় (বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার কংগ্রেস সংসদীয় দলনেতা), সত্যরঞ্জন বক্সী (শরৎ বসুর সচিব), আবুল হাশিম (বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক), ফজলুর রহমান (বাংলা প্রদেশের রাজস্ব মন্ত্রী), মুহম্মদ আলী (সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী) ও আরও অনেকে। প্রস্তাবটি কিছুকাল ধরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় আলোচিত হয় এবং বাংলার তৎকালীন নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে ঐকমত্যে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলে।
১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি-র ঘোষণার পর ভারতের স্বাধীনতার বিষয়টি দৃশ্যত নিকটতর হয়ে ওঠায় এবং ওই ঘোষণার পর পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করার পক্ষে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যুক্তিতর্কের আলোকে সোহরাওয়ার্দীসহ বাংলার অল্পসংখ্যক রাজনীতিক এক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলা প্রদেশের সংহতি রক্ষার চিন্তা করেন। তারা বাংলাকে তার নিজস্ব সংবিধানসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রদেশে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনের বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে, বাংলা বাঙালিদের ও এ বাংলা অবিভাজ্য। এ প্রদেশের একটি অংশ অন্যটির ওপর নির্ভরশীল, আর তাই এখানকার সকলেই এর প্রশাসনে অংশীদার হওয়ার অধিকারী। তিনি এ আশা পোষণ করেন যে, বাংলাকে এক গৌরবময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সেখানকার সকল শ্রেণীর মানুষ সম্প্রীতিতে বাস ও কাজ করতে দৃঢ়সংকল্প। সোহরাওয়ার্দী মনে করেন যে, যখন এ স্বাধীনতা অর্জিত হবে তখন বাংলায় শান্তি ও সমৃদ্ধির এক নবযুগের সূচনা হবে। আবুল হাশিম বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম নেতাদের প্রতি তাদের নিজেদের সমস্যা ব্রিটিশ প্রশাসনের আওতার বাইরে শান্তিপূর্ণ ও সুখকরভাবে নিষ্পত্তিতে সম্মিলিতভাবে প্রয়াসী হওয়ার আবেদন জানান। বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে শরৎ বসু অবিভক্ত বাংলার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন।
১৯৪৭ সালের এপ্রিল-মে’র দিনগুলিতে হিন্দু মালিকানাধীন সংবাদপত্র ও রাজনীতিকেরা বাংলা বিভাগের পক্ষে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন শুরু করে দেয়। ১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় ভারত বিভাগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশ বিভাগ অনিবার্য- এ বিষয়টি কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা নেতাদের কাছে পরিষ্কার হওয়ার পর তারা বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভারত ইউনিয়নের মধ্যে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে সঙ্কল্প প্রকাশ করেন। বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা প্রাদেশিক বিভাগ এবং ভারত ইউনিয়নের মধ্যে কলকাতাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ (পশ্চিম বঙ্গ) গঠনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করে।
প্রায় একই সময়ে বাংলার প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভা এ মর্মে দৃঢ় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে, বাংলার হিন্দুরা, অন্ততপক্ষে বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ, অবশ্যই ভারত ইউনিয়নের মধ্যে থাকবে এবং উক্ত অঞ্চলসমূহকে ভারতের অবশিষ্ট অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এ ব্যাপারে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বাংলা কংগ্রেস এবং দেশের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভাগুলির বাঙালি হিন্দু সদস্যদের সমর্থন তার পক্ষে আনতে সমর্থ হন। ঠিক এ পর্যায়ে যখন কংগ্রেস-হিন্দু মহাসভা অাঁতাত সাফল্যের সঙ্গে বাংলা বিভক্তির জন্য তাদের অভিযান সফলভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন সোহরাওয়ার্দীও বাংলা সম্পর্কিত তার পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে, ঘোষণা দেন। ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে এক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী তার স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এরপর আবুল হাশিম ১৯৪৭-এর ২৯ এপ্রিল কলকাতায় প্রদত্ত এক বিবৃতিতে একই ইস্যুতে তার অভিমত ঘোষণা করেন। এর কয়েকদিন পর শরৎ বসু তার সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
এসব পরিকল্পনা সাধারণভাবে ভারতের এবং বিশেষ করে, বাংলার দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের পরিবেশে উত্থাপিত হয়। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরবর্তীকালে জিন্নাহর নেতৃত্বে পরিচালিত পাকিস্তান আন্দোলন বাংলার মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগ পাকিস্তান দাবির সমর্থনে মুসলিম জনসাধারণের অভিমত সংগঠিত করতে শুরু করে। বাংলার কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতৃবৃন্দ সারা বাংলার পাকিস্তানিকরণের সম্ভাবনায় দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে এ প্রদেশে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন কঠিন হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অর্জনের জন্য নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম কর্মসূচিতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। অন্যান্য প্রদেশে এ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলেও কলকাতায় এ দিবস সহিংসতায় রূপ নেয়। এখানে সরকার ছিল মুসলিম লীগের নিয়ন্ত্রণাধীনে। ফলে বাংলা প্রাদেশিক বিভাগের দাবির অনুকূলে হিন্দু জনমত গঠনে এর প্রচন্ড প্রভাব পড়ে।
বাংলা প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভা ও এ প্রদেশের কংগ্রেস নেতারা সার্বভৌম বাংলা পরিকল্পনা উপেক্ষা করেন। তারা সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগের বিরুদ্ধে বাঙালি হিন্দুদের একটি বিরাট অংশকে সংগঠিত করেন। তাদের মতে, সোহরাওয়ার্দীর এ উদ্যোগ সারা বাংলায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। হিন্দু সংবাদপত্রগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে অবিভক্ত বাংলা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে হিন্দু জনমত গড়ে তোলার কোনো চেষ্টাই বাদ রাখে নি। হিন্দু মহাসভা বাংলার কংগ্রেস সদস্যদের ওপর বিপুল প্রভাব বিস্তার করে।
বাংলার কংগ্রেস সদস্যদের অধিকাংশ যখন স্বাধীন বাংলার জন্য সোহরাওয়ার্দীর পরিকল্পনার বিরোধিতা করে, তখন প্রদেশের মুসলিম লীগ মহলগুলির মনোভাবও বিভক্তির পক্ষে চলে আসে। বাংলা মুসলিম লীগের বৃহত্তর অংশ তথা জিন্নাহর অনুসারীরা খাজা নাজিমউদ্দীন ও মওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে দাবি করতে থাকে যে, বাংলা একক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে, কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। জিন্নাহ যেমন পাকিস্তান সম্পর্কে অনমনীয় ছিলেন, নাজিমউদ্দীন, আকরাম খান ও তাদের অনুসারীরাও ঠিক তেমন অনড় ছিলেন। তারা জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ১৯৪৭-এর ২৮ মে আকরাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ নিরীক্ষামূলক চুক্তির শর্তগুলির নিন্দা করে এবং লীগের পাকিস্তান দাবির প্রতি অবিচল ও জিন্নাহর নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করে। এরপর ১৯৪৭ সালের ২৮ মে তারিখে প্রদত্ত ভারতীয় কংগ্রেসের নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদকের এক বিবৃতি অবিভক্ত বাংলার ফর্মুলাকে আরও একদফা বিপর্যস্ত করে। ভারতীয় কংগ্রেসের পথ ধরে বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্পাদক কালীপদ মুখার্জি এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে ১৯৪৭ সালের ১ জুন এক বিবৃতি প্রদান করেন।
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধিতা আসে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। কংগ্রেস হাইকমান্ড অবিভক্ত বাংলায় মুসলমানদের স্থায়ী আধিপত্যের সম্ভাবনায় শঙ্কিত হন। জওহরলাল নেহরু ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সার্বভৌম বাংলার ধারণার ব্যাপারে ঘোর বিরোধী ছিলেন। নেহরুর ধারণা ছিল যে, এ পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলার মুসলিম লীগ কার্যত গোটা বাংলাকে পাকিস্তানে যোগ দিতে বাধ্য করবে। তিনি আরও মনে করতেন যে, যদি বাংলা অবিভক্ত থাকে তবে তা ভারতীয় ইউনিয়নের একটি অংশ হওয়া উচিত। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন যে, কংগ্রেস স্বতন্ত্র বাংলা রাষ্ট্রকে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনা হিসেবে গণ্য করবে।
সর্দার প্যাটেল অবিভক্ত বাংলার উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগঠিত করার প্রস্তাব দেন। ১৯৪৭-এর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে বাংলার প্রভাবশালী হিন্দু নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থেকে বোঝা যায়, হিন্দুদের বাংলা বিভক্তির দাবির নেপথ্যে তার নির্দেশক ভূমিকা ছিল এবং সেসঙ্গে সার্বভৌম বাংলা ধারণার বিপক্ষে তার উগ্র মনোভাবের কথাও জানা যায়। বাংলার যেসব হিন্দু নেতা ওই প্রদেশের মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন প্যাটেল তাদের নিন্দা করেন। উল্লিখিত নিরীক্ষামূলক চুক্তির শর্তগুলির ব্যাপারে মুসলিম লীগ হাই কমান্ডের দৃষ্টিভঙ্গিও খুব একটা অনুকূল ছিল না। এ বিষয়ে প্রথম দিকে জিন্নাহ কংগ্রেস হাইকমান্ডের মতো ঘোর বিরোধী ছিলেন না। এর থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, তিনি এ পরিকল্পনাকে উৎসাহিত করেছিলেন।
মাউন্টব্যাটেনের মতে, ভারতকে বিভক্ত করতে হলে পাঞ্জাব ও বাংলাকে ভাগ করতে হবে। তিনি এর পক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, জিন্নাহ গোড়ার দিকে স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার প্রস্তাবে সম্মতি দিতেও আগ্রহী ছিলেন। তার প্রধান বিবেচ্য বিষয় ছিল বাংলার বিভক্তি এড়ানো। তাতে করে স্বাধীন বাংলা ও পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যতে একটা মৈত্রী গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় তার এ সম্মতি ছিল গৌণ বিকল্প। তবুও শেষাবধি তিনি এ ইস্যুর অনুকূলে মনস্থির করতে পারেন নি। সম্ভবত তিনি এ ধারণার আলোকেই উল্লিখিত উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে, এটি পাকিস্তান সম্পর্কিত বিশ্বাস থেকে বিচ্যুতি। তিনি উল্লিখিত পরীক্ষামূলক চুক্তিতে যে যুক্ত নির্বাচনের বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে সে বিষয়ে কোনো রেয়াত দিতে তৈরি ছিলেন না। বাংলার প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে মনে করেছিলেন, বাংলা প্রদেশে একটি কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তা হবে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদেরকে আরও ঘনিষ্ঠতর করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর তাতে একই সঙ্গে এ প্রদেশের বিভক্তিও রোধ করা যাবে। কিন্তু জিন্নাহ কখনও বিষয়টিকে ততখানি জরুরি বলে বিবেচনা করেন নি। বাংলায় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা প্রশ্নে তার ভেটো সোহরাওয়ার্দী-বসু ফর্মুলার জন্য অতীব গুরুতর বলেই প্রমাণিত হয়।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সার্বভৌম স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা ধারণার প্রতি সর্বাত্মকভাবে বৈরী ছিলেন এমন নয়। বাংলার তৎকালীন গভর্নর ফ্রেডারিক বারোজ প্রদেশটির আদৌ বিভক্তির পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি বরং সোহরাওয়ার্দী-বসু ফর্মুলার পক্ষপাতী ছিলেন এবং তা যাতে বাস্তবায়িত হয় সে জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন। ভাইসরয়ও ভারত ও পাকিস্তানের ডোমিনিয়ন মর্যাদার সঙ্গে অবিভক্ত বাংলাকেও ওই একই মর্যাদা দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন না। তিনি সোহরাওয়ার্দীকে এ মর্মে আশ্বাস দেন যে, লীগ ও কংগ্রেস হাইকমান্ড অনুমোদন করলে বাংলা নিয়ে যেকোনো নিস্পত্তি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মেনে নেবে। তবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে। তারা মাত্র একটি প্রদেশের স্বার্থের জন্য গোটা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে রফা করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই এ পরিকল্পনা যে ব্যর্থ হবে তা ছিল প্রায় পূর্বনির্ধারিত। এরপর কংগ্রেস ও লীগ হাইকমান্ড ভারত বিভক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়নের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (১৯৪৭ সালের ৩ জুন) গ্রহণ করায় অবিভক্ত বাংলা ধারণার ওপর চূড়ান্ত আঘাত আসে।[৬]
নৃপেন্দ্র নারায়ণ যখন দশ মাস বয়স ছিল তখন তার পিতা নরেন্দ্র নারায়ণ ১৮৬৩ সালে মারা যান। তিনি একই বছরেই রাজা হিসেবে রাজতন্ত্র পালন করেছিলেন। যেহেতু তিনি শিশু ছিলেন সেহেতু প্রশাসন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করেন।[৩] তার বড় ভাই চিত্ররঞ্জন এবং রূপনারায়ণপুরের রাজা, তাদের পূর্বপুরুষদের জমি ছিলো।[৩] তিনি বেনারসেওয়ার্ডস ইন্সটিটিউট এ অধ্যয়ন করেন, তারপরে বাঁকিপুর কলেজ, পাটনা এবং শেষপর্যন্ত কলকাতারপ্রেসিডেন্সি কলেজে, আইন নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮৭৮ সালে তিনি কলকাতার কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের অবিলম্ব পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান।[৩]
তিনি চার পুত্র ও তিন কন্যার পিতা ছিলেন নামগুলি হল- রাজেন্দ্র নারায়ণ, জিতেন্দ্র নারায়ণ, ভিক্টর নৃত্যেন্দ্র নারায়ণ, হিতেন্দ্র নারায়ণ এবং কন্যা প্রতিভা দেবী, সুধীরা দেবী এবং সুকৃতি দেবী।[৪][৫] পরে তার পুত্র রাজেন্দ্র নারায়ণ ও জিতেন্দ্র নারায়ণ পরে কুচবিহারের মহারাজা হন। গায়ত্রী দেবী ও ইলা দেবী তার পুত্র জিতেন্দ্র নারায়ণের মেয়ে।
মৃত্যু
নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৯১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইংরেজ উপকূলীয়বর্তী অঞ্চল বেক্সহিল্ল সাগরে মৃত্যু হয়। তার শেষ কৃত্যকার্য ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯১১ বেক্সহিল্ল এ সম্পন্ন হয়। মহারাজা বেক্সহিল্ল এসেছিলেন আরোগ্য লাভ করার জন্য পরে মুর হল, নিনফিল্ড ছেড়ে চলে যায়। তার এক মেয়ে সম্প্রতি নিমজ্জিত হয়ে ছিল। ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯১৩ সালে তার দ্বিতীয় পুত্র মহারাজা কুমার জিতেন্দ্র দ্বারা নৃপেন্দ্রর নামে উত্সর্গীকৃত একটি স্মারক পানীয় শাখা খোলা হয় (জিতেন্দ্র এর বড় ভাই রাজেন্দ্রের মৃত্যুর পর কোচ বিহারের সিংহাসনে বসেন)। ডে লা ওয়ার প্যাভিলিয়নের বর্তমান অবস্থানে ফোয়ারাটি মূলত কোস্টগার্ডদের কুঠিরের পাশে ছিল। ১৯৩৪ সালে যখন প্যাভিলিয়নের পথ তৈরির জন্য কুঠিরটি ধ্বংস করা হয়, তখন ইগার্টন পার্কের দুর্গটি পুনরায় তৈরি হয়। এটি বেক্সহিল্ল জাদুঘর থেকে পাশের পার্কের প্রবেশের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল ১৯৬৩ সালে এটি পুনঃস্থাপন জন্য অপসারিত করা হয়। এটি এক সময়ের জন্য বেক্সহিল্ল সমাধিটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিন্তু তারপর পরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার বর্তমান অবস্থান অজানা।[৬]
বেক্সহিল্ল সাগরের ঐতিহাসিক সমাজ বেক্সহিল্লের সাথে নৃপেন্দ্রর সংযোগ সংক্ষিপ্ত বিবরণ “বেক্সহিল্ল মহারাজা” একটি বই প্রকাশ করে ছিল।
তিনি ১৮৮৪ সালে একটি আইন প্রবর্তন করেন তার রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে তিনি তার নিজের রাজ্যে উচ্চতর শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে এ.বি.এন.শীল কলেজ নামে পরিচিত। এছাড়াও, তার রানী, সুনীতি দেবীর নামে, একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা সুনীতি কলেজ নামে নামকরণ করা হয় পরে ১৮৮১ সালে সুনীতি একাডেমী নামে পরিচিত।১৮৮৩ সালে তিনি জলপাইগুড়ি শহরে নৃপেন্দ্র নারায়ণ হল নির্মাণ করেন এবং ১৮৮৭ সালে দার্জিলিংয়েলেইস জুবিলি স্যানিটিয়ারিয়াম নির্মাণের জন্য জমি প্রদান করেন।[৪] তিনি ১৮৮২ সালে কলকাতায় ইন্ডিয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] তিনি ১৮৮৯ সালে কোচবিহারে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণের জন্য আনন্দময়ী ধর্মসালা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৯২ সালে কোচবিহারে নৃপেন্দ্র নারায়ণ পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত করেন।[৮] তিনি ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ক্লাবের প্রথম সভাপতি ছিলেন।
মহারাজা ছিলেন ক্রিকেটে একজন উদ্যমশীল ব্যক্তি এবং কোচবিহার দলকে উন্নতি করেন এবং সারা পৃথিবীর শীর্ষ মানের খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানায়। কোচবিহারের প্রাসাদে তিনি একটি ক্রিকেট মাঠ স্থাপন করেন এবং কলকাতারআলিপুরে একটি মাঠ উন্নতি করেন। তার দল এবং নাটোর মহারাজার দল বাংলায় ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ ছিল।[৯]
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (এছাড়াও নার্সারি স্কুল অথবা প্লে স্কুল নামে পরিচিত) হল একটি শিক্ষা সংস্থা বা শেখার জায়গা নৈবেদ্য শৈশবের শিক্ষা। শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষা শুরু করার আগের শিক্ষাই হলো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। এটি প্রকাশ্যে বা বেসরকারীভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং সরকারী তহবিল থেকে ভর্তুকিও দেওয়া হতে পারে।
পরিভাষা
পরিভাষা দেশ অনুসারে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিছু ইউরোপীয় দেশগুলিতে “কিন্ডারগার্টেন” শব্দটি আইএসসিইডি স্তর ০ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বোঝায়। এক বা একাধিক বছর এই ধরনের পড়াশোনা বাধ্যতামূলক (শিশুরা ইস্কেডি স্তর ১-এ প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু করার আগে)।[১]
নিম্নলিখিত শর্তাবলী এই বয়সীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করা যেতে পারে:
প্রাক-প্রাথমিক[২] ৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ৬ বছর বয়সী- এমন একটি শিক্ষামূলক সার্ভিস যা পিতামাতারা তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (শিশুদের) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগে ভর্তি করতে পারেন। কিন্ডারগার্টেন বয়সের চেয়ে কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য পরিষেবাগুলি সংজ্ঞায়িত করতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষত যেসব দেশে কিন্ডারগার্টেন বাধ্যতামূলক। প্রাক-প্রাথমিক প্রোগ্রামটি একটি নার্সারি স্কুলে হয়।
নার্সারি স্কুল (যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন) ০ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী- একটি প্রাক-প্রাথমিক চাইল্ড কেয়ার ইন্সটিটিউশনে শিক্ষা ব্যবস্থা। যার মধ্যে প্রাক স্কুল রয়েছে।
ডে কেয়ার (মার্কিন) ০ মাস থেকে ২১/২ বছর বয়সী – একটি নার্সারি স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এটিকে “চাইল্ড কেয়ার সার্ভিস” বা “ক্র্যাচে “ও বলা যেতে পারে।[৩][৪]
প্রাক বিদ্যালয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য) ২ থেকে ৫ বছর বয়সী – এটি একটি নার্সারি স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। সন্তানের বিকাশগতভাবে উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে প্রস্তুতির সম্পর্ক রয়েছে এতে। পটি প্রশিক্ষণ এর একটি বড় কারণ। যাতে কোনও শিশু ২ বছরের কম বয়সে এটা শুরু করতে পারে। নার্সারি স্কুলে পড়াশোনা করা যে কোনও শিশুর জন্য প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী কারণ এটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়াগুলির মাধ্যমে শিশুকে একটি প্রধান ভুমিকা দেয়। প্রাক-প্রাথমিকের একটি শিশু জ্ঞান, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের উপর ভিত্তি করে শেখার মাধ্যমে তাদের পরিবেশ এবং কীভাবে অন্যদের সাথে মৌখিকভাবে যোগাযোগ করবেন সে সম্পর্কে শিখে। যেসব শিশু প্রাক-প্রাথমিক পড়াশোনা করে তারা কীভাবে তাদের চারপাশের বিশ্ব কিভাবে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে তা শিখে।
প্রাক-কে (বা প্রাক-কিন্ডারগার্টেন) ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী নার্সারি স্কুলে অনুষ্ঠিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার উন্নয়নের একটি উদ্যোগ। সন্তানের রঙ, সংখ্যা, আকার এবং আরও অনেক কিছু শেখানোর জন্য এখানে আরও অনেক কিছু রয়েছে।
কিন্ডারগার্টেন (মার্কিন) ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী – একটি নার্সারী স্কুলে এবং কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের অনেক জায়গায় (ইংরেজি ভাষী দেশগুলিতে কম) এটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায়কে বোঝায়।
ইতিহাস
উৎপত্তি
স্যামুয়েল ওয়াইল্ডারস্পিন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৪৮ সালে জন রজার্স হারবার্ট দ্বারা খোদাই করা।
এমন যুগ ছিল যখন স্কুলে পড়া হতো না এবং যারা কেবল বাড়িতে পড়া-লিখা শিখেছে এমন শিশুদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ ছিল। সেখানে অনাথদের জন্য বা কারখানায় কর্মরত মহিলাদের বাচ্চাদের কাছে বিদ্যালয় প্রবেশাধিকার করার অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।
১৭৭৯ সালে জোহান ফ্রেডরিক ওরবিলিন এবং লুইস স্কিপা প্রতিষ্ঠিত স্ত্রাসবুর। এখানে তারা প্রাক বিদ্যালয়ে তাদের দেখাশুনা করত যাদের বাবা দিনের বেলা তাদের বাচ্চাদের সময় দিতে পারতেন না এবং এটি ছিল শিক্ষার একটি প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান।[৫] প্রায় একই সময়ে, ১৭৮০ সালে, বাভারিয়াতেও একই ধরনের শিশু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। [৬] ১৮০২ সালে, পলিন জুর লিপ্পি ডেটমোল্ডে একটি প্রাক বিদ্যালয় কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।
১৮১৬ সালে রবার্ট ওউনে একজন দার্শনিক পাঠশালা এবং স্কটল্যান্ডের নিউ ল্যানার্কে প্রথম ব্রিটিশ শিশু বিদ্যালয় চালু করেন। সম্ভবত এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী প্রথম শিশু বিদ্যালয় চালু করেছিলেন।[৭][৮][৯]সমবায় কলগুলিতে তাঁর উদ্যোগে ওউন চান শিশুদের একটি ভাল নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় যাতে তারা তাদের নীতির জন্য উপযুক্ত হয়। তাঁর এই ব্যবস্থা মৌলিক সাক্ষরতার সাথে বাধ্য শিশুদের ভালো শিশুতে তৈরি করতে সফল হয়েছিল।[১০]
স্যামুয়েল ওয়াইল্ডারস্পিন লন্ডনে ১৮১৯ সালে তাঁর প্রথম শিশু বিদ্যালয়টি খোলেন।[১১] এবং তিনি আর কয়েক শতাধিক প্রতিষ্ঠা শুরু করেছিলেন। তিনি এই বিষয়টিতে প্রচুর রচনা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর কাজটি পুরো ইংল্যান্ড এবং তারপরেও শিশুদের বিদ্যালয়ের মডেল হয়ে যায়। ওয়াইল্ডারস্পিনের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল প্লে বিদ্যালয়। খেলার মাঠ আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাঁরই। ১৮২৩ সালে, ওয়াইল্ডারস্পিন বিদ্যালয় ভিত্তিক শিশু দরিদ্রদের শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি পরের বছর ইনফ্যান্ট স্কুল সোসাইটির পক্ষে কাজ শুরু করেন। তিনি অন্যকে তার মতামত জানান। তিনি লিখেছিলেন “দ্য ইনফ্যান্ট সিস্টেম”। এক থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুদের শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং নৈতিক ক্ষমতা বিকাশের জন্য লিখেছেন।
বিস্তার
কাউন্টেস থেরেসা ব্রুনজিভিক (১৭৭৫-১৮৬১) যিনি এই ধরনের পরিকল্পনার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং জোহান হাইনরিখ পেস্তালজি যার প্রভাবিত হয়েছিল এই পরিকল্পণাটি। বুদাপেস্টে একটি এঙ্গেলকেট নামে তার বাসভবনে মে ১৮২৮ সালের ২৭ তারিখে (হাঙ্গেরিয়ানের ‘দেবদূত বাগানে’) এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রথমে তিনি ছোট বাচ্চাদের জন্য এগারো কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১২][১৩] ১৮৩৬ সালে তিনি প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্রগুলির ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ধারণা আভিজাত্য এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পুরো হাঙ্গেরীয় রাজ্যে এর অনুলিপি করা হয়।
ফ্রিডরিচ ফ্রাবেল (১৭৮২-১৮৫২) থুওরিয়ায়ের শোয়ার্জবার্গ-রুডলস্টাড্টের প্রধানত ব্যাড ব্লাঙ্কেনবার্গ গ্রামে ১৮৩৭ সালে একটি প্লে এবং অ্যাক্টিভিটি ইনস্টিটিউট চালু করেন। যার নাম তিনি কিন্ডারগার্টেনের নাম দিয়েছিলেন ২৮ জুন ১৮৪০ সালে।
ফ্রেবেলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলারা পুরো ইউরোপ এবং বিশ্বজুড়ে কিন্ডারগার্টেনগুলি খোলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কিন্ডারগার্টেনটি ১৮৫২ সালে উইসকনসিনের ওয়াটারটাউনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি জার্মান ভাষায় পরিচালিত হয়েছিল।[১৪] এলিজাবেথ পিবাডি ১৮৬০ সালে আমেরিকার প্রথম ইংরেজি-কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আমেরিকাতে প্রথম নিখরচায় কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৮৭০ সালে একটি জার্মান শিল্পপতি ও সমাজসেবী কনরাড পপেনহুসেন। তিনি পপেনহুসেন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রকাশ্যে অর্থায়িত কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেন্ট লুইতে ১৮৭৩ সালে সুসান ব্লো দ্বারা কানাডার প্রথম প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন ১৮৭০ সালে প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ শার্লটটাউনে ওয়েসলিয়ান মেথোডিস্ট চার্চ দ্বারা খোলা হয়েছিল এবং দশকের শেষে, তারা কানাডার বড় শহর এবং শহরগুলিতে সাধারণ ছিল।[১৫][১৬] দেশের প্রথম পাবলিক-বিদ্যালয় কিন্ডারগার্টেনস সেন্ট্রাল স্কুল। ১৮৮২ সালে অন্টারিওয়ের বার্লিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১৭] ১৮৮৫ সালে, টরন্টো নর্মাল স্কুল (শিক্ষক প্রশিক্ষণ) কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার জন্য একটি বিভাগ চালু করে।
এলিজাবেথ হ্যারিসন শৈশবকালীন শিক্ষার তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেছিলেন এবং কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালে ন্যাশনাল কলেজ অফ এডুকেশন প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
হেড স্টার্ট হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রকাশিত অর্থায়নের প্রাক বিদ্যালয় প্রোগ্রাম। ১৯৬৫ সালে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্য রাষ্ট্রপতি জনসন তৈরি করেছিলেন কেবলমাত্র ১০% শিশু প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে, বিভিন্ন রাজ্য ১৯৮০ এর দশকে নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলির জন্য প্রাক-প্রাথমিক ভর্তুকি দিয়েছিল।
উন্নয়নমূলক অঞ্চল
শিক্ষা গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলি জন্মের সময় থেকেই শুরু হয়।[১৮] এই প্রারম্ভিক বছরগুলিতে মানুষ পরবর্তীকালের তুলনায় আরও তথ্য গ্রহণ করতে সক্ষম হয়ে থাকে। প্রথম বছরগুলিতে মস্তিষ্ক সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল উন্নত করতে উচ্চমানের শিক্ষক এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপর দীর্ঘমেয়াদী ভালো প্রভাব ফেলতে পারে।[১৯][২০]
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশের ক্ষেত্রগুলি পৃথক। তবে নিম্নলিখিত মূল বিষয় সাধারণত দেওয়া হয়ে থাকে।[২১][২২]
প্রাক – প্রাথমিক ব্যবস্থা কাঠামোর (প্রশাসন, শ্রেণির আকার, শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত, পরিষেবাদি), প্রক্রিয়া (শ্রেণিকক্ষের পরিবেশের গুণগত মান, শিক্ষক-শিশুর মিথস্ক্রিয়া ইত্যাদি) এবং প্রান্তিককরণ (মানক, পাঠ্যক্রম, মূল্যায়ন) উপাদানগুলির মান পর্যবেক্ষণ করে। পাঠ্যক্রম বিভিন্ন বয়সের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১০ পর্যন্ত গণনা সাধারণত চার বছর বয়সের পরে হয়।[২৩] কিছু অধ্যয়ন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুবিধার বিষয়ে বিতর্ক করে।[২৪] যে প্রি-স্কুলটি জ্ঞানীয় এবং সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে তা সন্ধান করে।[২৫][২৬]ইউসি বার্কলে এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ১৪,০০০ প্রাক-প্রাথমিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে প্রাক-পাঠ ও গণিতে সাময়িক জ্ঞানীয় বিকাশ থাকাকালীন প্রাক-পাঠ বিদ্যালয়ের সামাজিক বিকাশ এবং সহযোগিতার উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।[২৭] গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যে প্রাক-প্রাথমিকে চেয়ে বাড়ির পরিবেশ ভবিষ্যতের ফলাফলগুলিতে আরো বেশি প্রভাব ফেলে।[১৮] এমন একটি উদীয়মান প্রমাণ রয়েছে যে উচ্চমানের প্রাক-প্রাথমিক একাডেমিক বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে এটি “খেলার ভিত্তিতে” হয়। বোস্টনের ডাঃ পিটার গ্রে অনুসারে “বড়দের থেকে দূরে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা হল কীভাবে বাচ্চারা নিজের সিদ্ধান্ত নিতে, তাদের আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে, অন্যের সাথে মতপার্থকতা করতে এবং বন্ধুবান্ধব শিখতে শেখে” কলেজের অধ্যাপক এবং খেলার বিবর্তন এবং শিশু বিকাশে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ “সংক্ষেপে, খেলা কীভাবে বাচ্চারা তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে শেখে।”[২৮] প্রাক স্কুলগুলি মন্টেসরি, ওয়াল্ডর্ফ, হেড স্টার্ট, হাইস্কোপ,[২৯]রেজিও এমিলিয়া পদ্ধতির, ব্যাংক স্ট্রিট এবং ফরেস্ট কিন্ডারগার্টেনের মতো বিভিন্ন শিক্ষার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।
ভারতেরউত্তরপ্রদেশেরসাহারানপুর জেলায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, যা ১৮৬৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি একটি মৌলিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে যা দরসে নেজামি নামে পরিচিত। দারুল উলুম দেওবন্দে এটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের সাথে চালু করা হয়েছিল।[১] পরবর্তীতে দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে সারাবিশ্বে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। তাই এটি দরসে নেজামি মাদ্রাসার মূল আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত।[২] দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাক্রম মোট ৩টি ধাপে সমাপ্ত হয়: প্রাথমিক শিক্ষা, ফাযেল কোর্স এবং তাখাচ্ছুছাত। প্রাথমিক শিক্ষা বা দীনিয়াত বিভাগের ব্যপ্তি মোট ৫ বছর। ফাযেল কোর্স বা আলেম কোর্সের ব্যপ্তি মোট ৮ বছর। ফাযেল কোর্স দারুল উলুম দেওবন্দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর্স। এই কোর্স সমাপ্তকারীদের আলেম বলা হয়৷ ফাযেল কোর্সের মান সাধারণ শিক্ষার স্নাতকের সমান। ফাযেল কোর্স পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ের বিষেশায়িত উচ্চশিক্ষা তাখাচ্ছুছাত নামে পরিচিত। বিষয় অনুযায়ী এটি ১, ২ বছর বা আরও বেশি হতে পারে।
ফাযেল কোর্সের প্রথম চার বছরকে ছানুভী বিভাগ বলা হয়৷ এই বিভাগে আরবি নাহু ছরফ, আরবি ইনশা মান্তেক (তর্কবিদ্যা), কুরআন তরজমা এবং ইসলামি ইতিহাস সহ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। আর শেষ চার বছরে ইলুমল বালাগাত, ফাসাহাত, তাফসির, উসূলে তাফসির, ফিকহ, উসূলে ফিকহ, হাদিস ও উসূলে হাদিসের পাঠ দান করা হয়৷ শেষ বছরকে দাওরায়ে হাদিস বলা হয়। এতে সিহাহ সিত্তাহসহ মোয়াত্তাইন ও তহাবী এবং শামায়েলে তিরমিজীর পাঠদান করা হয়৷
ফাযেল কোর্স পরবর্তী বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা বা তাখাচ্ছুছাতের মধ্যে রয়েছে তাদরিব ফিল ইফতা, তাজবিদ, তাখাস্সুস ফিল হাদিস, তাকমিল আদব, তাকমিল তাফসির ইত্যাদি।[৩][৪][৫][৬][৭][৮]
প্রেক্ষাপট
নবীর যুগে শিক্ষার সূচনা হয় কুরআন দিয়ে। ওমরের খেলাফতকালে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি হাদিস বিদ্যার প্রচার ও প্রকাশনারও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষাগত চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি কুরআন, হাদীস, ফিকাহ এবং আরবি কবিতা শিখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত যাকে উদ্ভাবন ও সংস্কারের যুগ বলা হয়, সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির সাথে সাথে বিভিন্ন শিল্প ও বিজ্ঞানের উদ্ভাবন এবং তাদের অনুবাদের সূত্রপাত ঘটে এবং প্রয়োজন অনুসারে কিছু কলাও শেখানো শুরু হয়। যেমন: হাদিস, তাফসির, ফিকহ, ফিকহের মূলনীতি, ব্যাকরণ ও বাক্য গঠন, অভিধান, আরবি কবিতা এবং ইতিহাস সেই সময়ের শিক্ষাগত শিক্ষার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হত। মেডিসিন, জ্যোতিষ, জ্যোতির্বিদ্যা এবং আরও কিছু গ্রীক বিজ্ঞানও এই সিলেবাসে যোগ করা যেতে পারে। হিজরি পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে দ্বান্দ্বিকতা বা স্কলাস্টিক থিওলজির বিজ্ঞান ইমাম গাজ্জালির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং যার সমর্থনে পূর্বোক্ত বিজ্ঞান ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা, দর্শন ইত্যাদির মতো নৈমিত্তিক বিজ্ঞান ইসলামিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে ওঠে। যেহেতু আরব পরিবারগুলো মিশর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশগুলিতে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রচুর সংখ্যায় আরবের ঝোঁককে প্রাধান্য দিয়ে, তাফসীর, হাদিস এবং আসমা আল-রিজাল শাস্ত্রের প্রতি তুলনামূলকভাবে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। আন্দালুসিয়ায় (স্পেন) সাহিত্য, কাব্য ও ইতিহাসের ব্যাপক উচ্চতা ছিল। ইরানে যুক্তি ও দর্শনের প্রাধান্য ছিল এবং খুরাসান ও ট্রান্সক্সিয়ানাতে ফিকহ, ফিকহের নীতি এবং তাসাউউফের প্রচলন ছিল বেশি। তবে একই সময়ে, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং চাহিদার প্রভাবের কারণে, সিলেবাসে পরিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া প্রায়ই এক এবং একই দেশে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হয়েছে। যদিও মুসলমানরা হিজরির প্রথম শতাব্দীতে ভারতে পৌঁছেছিল এবং হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর শুরুতে অর্থাৎ সুলতান মাহমুদ গজনভির আমলে, যখন সিন্ধু ছাড়াও পাঞ্জাবের এলাকা তাদের সংখ্যায় বেশ ভালোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ইসলামি রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাদের প্রকৃত প্রভাবের সময়কাল শুরু হয় হিজরি সপ্তম শতাব্দীর শুরু থেকে, অর্থাৎ সুলতান শাহাব আল-দিন ঘুরির শাসনামল থেকে। এটি সেই সময় ছিল যখন খুরাসান, ট্রান্সক্সিয়ানা ইত্যাদিতে, যদিও তাফসীর এবং হাদিস, ব্যাকরণ এবং বাক্য গঠন, অলঙ্কারশাস্ত্র এবং সাহিত্য, আইনশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, স্কলাস্টিক থিওলজি এবং তাসাউউফকে আদর্শ শিক্ষা, আইনশাস্ত্র এবং আইনশাস্ত্রের নীতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ভারতে যে সমস্ত মুসলমানরা এসেছিলেন তারা বেশির ভাগই এই দেশগুলো থেকে এসেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তাই তাদের ঝোঁকের আগমনও অনিবার্য ছিল। এই হিসেবে এই সমস্ত বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ভারতে এই যুগের পাঠ্যক্রমের একটি অংশ এবং পার্সেল ছিল। মাওলানা হাকিম সাইয়্যিদ আবদ আল-হায় লখনভি পুরাতন ভারতীয় পাঠ্যক্রমের নিম্নলিখিত চারটি সময়কাল নির্ধারণ করেছেন:
প্রথম পর্যায়
হিজরী সপ্তম শতাব্দী থেকে এর শুরু এবং দশম শতাব্দীতে এর সমাপ্তি এমন সময়ে নেওয়া উচিত যখন দ্বিতীয় যুগ শুরু হয়েছিল। কম-বেশি দুইশত বছর ধরে নিম্নোক্ত শাখার অধিগ্রহণকে ব্যাকরণ, বাক্য গঠন, সাহিত্য, অলঙ্কারশাস্ত্র, ফিকহ, ফিকহের মূলনীতি, যুক্তিবিদ্যা,
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার একটি ধরন। মূলত উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকে এই ধারার উৎপত্তি। সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে, সুনির্দিষ্ট জনগোষ্টির জন্য, বিশেষ উদ্দেশ্যে সংগঠিত এবং বিশেষ শিখন চাহিদা পূরণের জন্য, আলাদাভাবে বা সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত শিক্ষামূলক কার্যক্রমই হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা (non formal education)।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ধারণা নতুন নয়। উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার আগেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে (drop out) বা কোন না কোন কারণে প্রাথমিক শিক্ষাচক্র (primary education cycle) সমাপ্ত করার আগেই স্কুল থেকে ঝরে পরে। ফলে এইসব দেশে এইভাবে নিরক্ষর জনগণের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাই তাদের মানে এইসব দেশের বিশাল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত অসুবিধাগ্রস্থ (disadvantaged) ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ (second chance of education) প্রদান করা যায়। তাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ দানকারী কার্যক্রমও বলা হয়।
আবার উন্নয়নশীল দেশসমূহে দেখা যায় সরকারের একার পক্ষে সকল শ্রেণির সকল মানুষের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই সেইসব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সহায়ক/সম্পূরক ও পরিপূরক (supplementary and complementary) হিসেবেও কাজ করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা। তবে কখনোই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে না।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য-
১। এটি একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা।
২। শিক্ষাক্রম নির্দিষ্ট নয়, আর থাকলেও শিথিলযোগ্য।
৩। ডিগ্রীমুখী বা সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা নয়।
৪। এটি স্থানীয় সুযোগ-সুবিধা ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম
৫। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুসারে বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়।
৬। ব্যবহারিক দিকগুলোর প্রতি বেশি লক্ষ রাখা হয়।
৭। আলাদাভাবে পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা নেই তবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা আছে।
আসাম ডনবস্কো বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালের ২৯ মার্চে গুয়াহাটি-এর আজারাত প্রতিষ্ঠা করা একটি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়। আসাম ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় বিধি,২০০৭র অনুসারে আসাম ডনবস্কো বিশ্ববিদ্যালয় বিধি,২০০৯ ২০০৯ সাল ৯ জানুয়ারির মতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। Salesians of Don Bosco (SDB)র অধীনস্থ ডনবস্কো সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন।[১][২][৩][৪] ডনবস্কো বিশ্ববিদ্যালয় আসামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিহাস
Fr. Pascual Chávez, Rector Major, Salesians of Don Bosco laying the Foundation Stone of the University
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য Salesians of Don Bosco সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে শিলংে সেইন্ট এন্ঠনিজ কলেজ প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে Salesians of Don Bosco উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।
১১ আগস্ট, ২০০৮ সালে প্রথম প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকের পাঠক্রম আরম্ভ হয়েছিল।
আসাম সরকার আসাম ডনবস্কো বিশ্ববিদ্যালয় বিধি ২০০৮ সালে অনুমোদন জানায়।
৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।
২০০৯ সালের ২০ আগস্টে প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং ২৭ আগস্টে খারঘুলির ডনবস্কো ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান প্রথম ব্যবস্থাপনার স্নাতকোত্তর শ্রেণী আরম্ভ করা হয়।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা (Informal Education) অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার একটি সাধারণ শব্দ যা কাঠামোগত পাঠ্যক্রমের বাইরেও ঘটতে পারে। [১] এটি শিক্ষার একটি উল্লেখ্যযোগ্য ধরন। মানুষ তার জন্মের পর থেকে এ নানাভাবে শিখছে। এই শিক্ষা তার সমাজের কাছ থেকে হচ্ছে, পরিবারের কাছ থেকে হচ্ছে, আবার গুরুজনের বা বিশিষ্ট-অবিশিষ্ট ব্যক্তি বা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমেও হচ্ছে। আবার প্রকৃতি কাছ থেকেও মানুষ শিখছে। প্রতিনিয়ত তার শেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে শেখে । এই যে অনির্দিষ্ট নানা উপায়ে মানুষ শিখছে এটাই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাই আমাদের শেখার বা আচার-আচরণের অনেক বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দেয়। জন্মের পর একটি শিশু কীভাবে কথা বলতে হবে তাকে আলাদা করে শেখাতে হয় না, সে নিজে নিজে তার পরিবারের সবাইকে দেখেই শেখে। এইভাবেই সূচনা হয় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার। প্রাচীন সমাজে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল শিক্ষা লাভের একমাত্র উপায় এবং এ শিক্ষা ছিল সর্বজনীন। বাঁচার জন্য এবং বাঁচার মধ্যে দিয়ে এ শিক্ষা অর্জিত হতো। তখন সামাজিকীকরণ ও শিক্ষার মধ্যে কোন প্রভেদ ছিল না। আধূনিক সমাজে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আধিপত্য সত্ত্বেও পারিবারিক শিক্ষাই এখনো শিশুর মানসিক বিকাশ ও চরিত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
এই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বোঝাতেই সুনির্মল বসু লিখেছেন-
“বিশ্বজোড়া পাঠাশালা মোর
সবার আমি ছাত্র,
নানাভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্রি”
নিয়ম
লোকেরা তথ্যের আলাদা ব্যাখ্যা করে এবং তাই কাঠামোগত পাঠ্যক্রম সমস্ত শিক্ষার্থীকে সঠিক তথ্য বুঝতে না দেয়। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার তুলনায় কম নিয়ন্ত্রিত, যার কারণে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এত শক্তিশালী হতে পারে
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধারাবাহিক এবং ক্রম উচ্চস্তরে বিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। শিক্ষার্থী একটি বয়সে আনুষ্ঠানিক উপায়ে শিক্ষা অর্জন শুরু করে এবং ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে থাকে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কাঠামো স্তর
বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকে ১৯৭৭ সালে প্রণীত হয় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী।