Tag: bcs question

  • সামাজিক শ্রেণী

    সামাজিক শ্রেণী

    সামাজিক শ্রেণি বা শুধুই “শ্রেণি”, যা শ্রেণিভিত্তিক সমাজে, হচ্ছে সমাজের স্তরবিন্যাসের মডেলের উপরে কেন্দ্র করে গঠিত সমাজবিজ্ঞানের ধারণা এবং রাজনৈতিক তত্ত্ব। এটি হচ্ছে জনগণ বা দলের ক্রমবিভক্ত সামাজিক বিভাগের একটি সমষ্টি[১] যেগুলোর সবচেয়ে বড় পরিচিত হচ্ছে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন শ্রেণিসমূহ।

    তাত্ত্বিক প্রতিমানসমূহ

    মার্কসবাদী

    “সামাজিক উৎপাদনের ইতিহাস-নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় নিজেদের স্থান, উৎপাদনের উপায়ের সংগে তাদের সম্পর্ক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা আইন রূপে বিধিবদ্ধ), শ্রমের সামাজিক সংগঠনে তাদের ভূমিকা, সুতরাং যে সামাজিক সম্পদ তাদের হাতে রয়েছে তার কতটা অংশ ও পাবার উপায় অনুসারে লোকেদের পৃথক বড়ো বড়ো দলকে বলা হয় শ্রেণি। শ্রেণি হলও লোকেদের তেমন সব গ্রুপ, সামাজিক অর্থনীতির নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় তাদের বিভিন্ন স্থানের দরুন একদল অপর দলের শ্রম আত্মসাৎ করতে পারে।”

    ভ্লাদিমির লেনিন, একটি মহা আরম্ভ – জুন, ১৯১৯[২]

    খুব সহজ ভাষায় শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, একই প্রণালীতে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে সমাজের এরূপ এক একটি অংশ হলো এক একটি শ্রেণি। শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, সমাজের একাংশের শ্রমকে অপরাংশ আত্মসাৎ করতে পায় যার মাধ্যমে তাই হলও শ্রেণি। সমাজের একাংশ সমস্ত ভূমি আত্মসাৎ করলে হয় ভূস্বামী শ্রেণি ও কৃষক শ্রেণি। যদি সমাজের একাংশ হয় কলকারখানা, শেয়ার এবং পুঁজির মালিক, আর অন্য একটা অংশ কাজ করে ওইসব কলকারখানায়, তাহলে হয় পুঁজিপতি শ্রেণি এবং প্রলেতারিয়ান শ্রেণি অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি। শ্রেণিদের মধ্যে পার্থক্যের মৌল লক্ষণ হলো- সামাজিক উত্পাদনে তাদের স্থান, সুতরাং উত্পাদনের উপায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে। প্রতিটি শ্রেণির থাকে উৎপাদনের উপায়ের সংগে সুনির্দিষ্ট নিজস্ব সম্পর্ক। এই লক্ষণ দিয়েই পার্থক্য করা যায় শ্রেণি আর অন্যান্য সামাজিক গ্রুপের মধ্যে যারা শ্রেণি নয়। যেমন, উত্পাদনের উপায়ের সাথে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্ক নেই, তাই তারা শ্রেণি নয়, বুদ্ধিজীবীরা হলও বিভিন্ন শ্রেণির অংশবিশেষ নিয়ে একটা সামাজিক স্তর।[৩]

    অর্থাৎ শ্রেণি হচ্ছে বিশাল সংখ্যার একদল লোক যারা উৎপাদনের উপায়ের সংগে সম্পর্ক, শ্রমের সামাজিক সংগঠন, সামাজিক সম্পদ প্রাপ্তির প্রণালী আর পরিমাণের দিক থেকে পৃথক। এক্ষেত্রে শোষক দলটা সংখ্যায় অল্প, শোষিতরা অধিকাংশ। এই যে একদল লোক শোষক, উৎপীড়ক এবং অন্যদল শোষিত ও উৎপীড়িতরূপে সৃষ্ট হয়, তাদের বলা হয় বৈরী শ্রেণি, কারণ তাদের স্বার্থ আপোষহীন।[২]

  • বিবাহ উৎসব

    বিবাহ উৎসব

    বিবাহ উৎসব বা বিয়ের অনুষ্ঠান (ইংরেজি: Wedding) হল এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে দুজন মানুষ বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংস্কৃতি, গোত্র, ধর্ম, দেশ এবং সামাজিক শ্রেণিভেদে বিবাহপ্রথা ও রীতিনীতিতে ব্যপক বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ বিবাহ অনুষ্ঠানেই দম্পতির বৈবাহিক স্বীকারোক্তি গ্রহণ, উপহার প্রদান (আংটি, প্রতীকী বস্তু, ফুল অর্থ), এবং সংশ্লিষ্ট স্বীকৃত ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে প্রকাশ্যে বৈবাহিক ঘোষণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে প্রায়শই বিশেষ ধরনের পোশাক পড়া হয়, এবং প্রায়সময়ই েই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় বৌভাত নামক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি উক্ত অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণত গানবাজনা ও কবিতাপাঠ হয় এবং দম্পতির ভবিষ্যৎ কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনাকরা হয় অথবা ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি বা সাহিত্য থেকে কিছু অংশ পাঠ করা হয়।

    আরও দেখুন

    আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক
    সম্পর্কের ধরন
    সম্পর্ক সংক্রান্ত কার্যক্রম
    সম্পর্ক ছেদ
    আবেগ ও অনুভূতি
    সংস্কার ও অভ্যাস
    অপব্যবহার
    দে

    ছবি

    • গায়ে হলুদ
    • গায়ে হলুদ
    • কনে, বাংলাদেশ
    • বর, বাংলাদেশ

    টীকা

  • বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন

    বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন

    যখন কোনও জাতি বা জনগোষ্ঠী তাদের স্বদেশভূমি থেকে বিশ্বের অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই ব্যাপারটিকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন (ইংরেজি: Diaspora) বলা হয়।[১][২]সাধারণত বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন পরিভাষাটি দ্বারা কোন জনগোষ্ঠীর তাদের স্বভূমি থেকে অনৈচ্ছিকভাবে ছড়িয়ে পড়াকে বোঝানো হয়। যেসব জাতি বা সম্প্রদায় বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন সম্পাদন করে, তাদেরকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় বলা হয়। প্রাচীনকালে যিহুদীয়া থেকে ইহুদিদের ছড়িয়ে পড়া এবং কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) থেকে গ্রিকদের পালিয়ে যাওয়া এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগরান্তর দাস বাণিজ্য, কুলি বাণিজ্যের সময় দক্ষিণ চীন এবং ভারতীয়দের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, আইরিশ দুর্ভিক্ষের সময় আইরিশ জাতির বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, ফিলিস্তিনি বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন,[২][৩] সারকেশীয়দের নির্বাসন, ইংল্যান্ডে নরমান বিজয়ের পর অ্যাংলো-স্যাক্সন যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের দেশান্তর ইত্যাদি।[৪]

    ইংরেজি “ডায়াস্পোরা” (Diaspora) পরিভাষাটি দিয়ে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের ঘটনা এবং বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি উভয়কেই বোঝানো হয়ে থাকে।

    সম্প্রতি, বিদ্বজ্জনগণ বিভিন্ন রকম বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন। বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের কারণ, যেমন সাম্রাজ্যবাদ, বাণিজ্য বা শ্রমিক অভিপ্রয়াণের ভিত্তিতে, বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মধ্যকার সামাজিক সংসক্তি ও পূর্বপুরুষের ভূমির সাথে তাদের বন্ধনের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীবিভাগগুলো করা হয়। কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় তাদের স্বভূমির সাথে শক্তিশালী রাজনৈতিক বন্ধন বজায় রাখে। বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে স্বভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অভিলাষ, অন্যান্য সমজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক, এবং আশ্রয়দাতা দেশের সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত না হওয়া।[২]

    বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন
    CC-RedLineMus-146213_A.jpg

    শব্দটির উদ্ভব এবং বিকাশ

    বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন কথাটি “Diaspora”-র বাংলা পরিভাষা। “Diaspora” শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ διασπείρω (diaspeirō) থেকে, যার অর্থ “আমি বিক্ষিপ্ত হই” বা “আমি ছড়িয়ে পড়ি”। প্রাচীন গ্রীসে διασπορά (diaspora) শব্দটির অর্থ ছিল “বিক্ষিপ্ত হওয়া”,[৫] আর এর দ্বারা সমাজের শীর্ষস্থানীয় নাগরিকদের বোঝানো হত যারা উপনিবেশীকরণের উদ্দেশ্যে বা কোন অঞ্চলকে সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন স্থানে এসেছেন।[৬] প্রাচীন যুগের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের একটি উদাহরণ হচ্ছে স্পার্টানদের শাসনে মেসেনীয়দের শতাব্দীব্যাপী নির্বাসন যা থুসিডাইডসের গ্রন্থ “পেলপনেশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস” গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

    শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ থেকে বর্তমান অর্থে বিকাশ শুরু হয় যখন হিব্রু বাইবেলকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়;[৭] এক্ষেত্রে সেপটুয়াজিন্ট (গ্রীক ভাষায় অনুদিত হিব্রু বাইবেল) এর যেসব স্থানে “diaspora” শব্দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:

    • ডিউটেরোনমি ২৮:২৫, বাক্যাংশটি “ἔσῃ ἐν διασπορᾷ ἐν πάσαις ταῖς βασιλείαις τῆς γῆς”, (esē en diaspora en pasais tais basileiais tēs gēs), অর্থাৎ, “পৃথিবীর সকল রাজ্যে তোমরা ছড়িয়ে পড়বে”।

    এবং

    • সালমস ১৪৬(১৪৭).২, বাক্যাংশটি “οἰκοδομῶν Ἰερουσαλὴμ ὁ Kύριος καὶ τὰς διασπορὰς τοῦ Ἰσραὴλ ἐπισυνάξει”, (oikodomōn Ierousalēm ho Kyrios kai tas diasporas tou Israēl episynaxē), অর্থাৎ, “প্রভু জেরুসালেম তৈরি করেছেন: ইজরায়েল থেকে বহিস্কৃতদেরকে তিনি সেখানে একত্রিত করেছেন”
  • প্রাণীদের মধ্যে ধর্মীয় আচরণ

    প্রাণীদের মধ্যে ধর্মীয় আচরণ

    প্রাণীদের বিশ্বাস (Animal faith) হচ্ছে প্রাণীদের আচরণ নিয়ে একটি পাঠ যা আদি-ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে প্রস্তাব দেয়। এরকম কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই যে কোন অ-মানব প্রাণী ঈশ্বর বা দেবতায় বিশ্বাস করে, পূজা বা প্রার্থনা করে, অধিবিদ্যা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা আছে, ধর্মীয় আচারগত গুরুত্ব আছে এমন কোন মূর্তি তৈরি করে, বা মানুষের ধর্মীয় আচরণের মত অন্য কোন আচরণ করে। প্রাণীর কোন রকম ধর্মীয় বিশ্বাস আছে কিনা তা ধর্মের পর্যাপ্ত পরিমাণে উদার সংজ্ঞা এর উপরে নির্ভর করে। তাই যদি ধর্ম বলতে, “অ-মানবকেন্দ্রিক, অ-নরত্বারোপনমূলক, নিরীশ্বরবাদী ও অ-ধীকেন্দ্রিক আন্ত-প্রজাতীয় ধর্ম বোঝানো হয়,[১][২] তাহলে শিম্পাঞ্জী, হাতি, ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণীদের আচারগত কিছু আচরণকে ধর্মীয় আচরণ বলা যায়।

    আধুনিক মানুষ ও তার নিকট পূর্বপুরুষের মধ্যে ধর্মের বিকাশ এর আলোচনায় আধুনিক প্রাণীদের মধ্যে আদি-ধর্মের আলোচনাটি প্রাসঙ্গিক।

    প্রাণীদের মধ্যে ধর্মীয় আচরণ

    নরবানরদের মধ্যে আচারগত আচরণ

    ধর্মতাত্ত্বিক ও জীববিজ্ঞানী অলিভার পাৎজ বলেন, যেহেতু শিম্পাঞ্জীরা নৈতিক প্রতিনিধিত্বে (কোন কাজ ঠিক নাকি ভুল এসম্পর্কে ধারণায় আসা, এবং তার উপর ভিত্তি করে কাউকে দায়ী করা) সক্ষম, খ্রিস্টানরা তাদেরকে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি হিসেবে মনে করতে পারে।[৩] এছাড়াও, ন্যান্সি আর. হাওয়েল প্রস্তাব করেন, “শিম্পাঞ্জী ও বনবোদের মধ্যে সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার আদিরূপ, যেমন সংযুক্তি, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, সামাজিকতা ও কিছু মাত্রায় সাংকেতিক ক্ষমতা।[১] প্রাইমেটোলজিস্ট জেন গুডঅল আরও দূরে গিয়ে বলেন, শিম্পাঞ্জীদেরকে ঘন বৃষ্টির সময় বা যখন জলপ্রপাতের কাছে আসে তখন নাচতেও দেখা যায়। তিনি বলেন তাদের এই প্রদর্শনটি ধর্মীয় প্রথার পূর্বসুরি।[৪] যাই হোক, ধর্মতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার এল. ফিশার মনে করেন, গুডঅল শিম্পাঞ্জীদের উপর নরত্বারোপ করেছেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, শিম্পাঞ্জীরা “গভীর আবেগ” প্রকাশে সক্ষম, তবে তিনি বলেন, শিম্পাঞ্জীরা আধ্যাত্মিকতার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে না, কারণ, “ভাষা ছাড়া এর কোন অর্থ হয় না।”[৫]

    অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে আচারগত আচরণ

    রোনাল্ড কে. সিগল আফ্রিকার হাতিদের মধ্যে এই ধর্মীয় বিশ্বাসের পূর্বসুরি সম্পর্কে গবেষণা করেছেন, এবং বলেছেন, “হাতিরা প্রাকৃতিক চক্রগুলো সম্পর্কে সচেতন, কারণ তারা “চন্দ্র পূজা” এর চর্চা করে, এবং অপূর্ণ চন্দ্রের দিকে শাখা প্রশাখাকে নাড়ায়, এবং পূর্ণচন্দ্রের সময় আচারগত স্নানে অংশ নেয়।[৬]

    প্রাণীদের মধ্যে অন্তেষ্টিক্রিয়ার প্রথা

    অনেক প্রাণীর মধ্যেই মৃত পশুর জন্য দুঃখ করার ব্যাপারটি সাধারণ, কিন্তু অন্তেষ্টিক্রিয়ার আচার সকল প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। তবে আফ্রিকান হাতিরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।[৭]

    রোনাল্ড কে. সিগল লিখেছেন: “… কেউ হাতিদের বিস্তৃত অন্তেষ্টিক্রিয়ার আচরণটিকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না, যা সেই প্রজাতির প্রথাগত বা এমনকি ধর্মীয় আচরণের সংকেত দেয়। যখন মৃত হাতিদের সৎকারের বিষয়টি আসে, হাতিরা প্রায়ই তাদেরকে কাঁদা, মাটি ও পাতা দিয়ে সমাধিস্থ করে। হাতিরা হাতি ছাড়াও গণ্ডার, মহিষ, গরু, বাছুর এবং এমনকি মানুষকেও এভাবে সমাধিস্থ করে। হাতিদেরকে প্রচুর পরিমাণে ফল, ফুল এবং রঙ্গিন পাতা দিয়েও মৃতদেহকে সৎকার করতে দেখা গেছে।”[৬]

    বন্য ও ধৃত শিম্পাঞ্জী, উভয়ের মধ্যেই নিজেদের দলের কোন সদস্যের মৃত্যুতে প্রথাগত আচরণ করতে দেখা যায়। এই আচরণগুলো শুরু হয় দলের বা কোন সদস্যের নীরবতার মধ্য দিয়ে, যা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিরাজমান থাকে, এবং এরপর হাতিগুলো নির্দিষ্ট কিছু শব্দ উচ্চারণ করে; এমনটা দেখা গিয়েছে। এরপর এরা মৃতদেহকে সজ্জিত করে, এরপর একে একে পবিত্রতার সহিত মৃতদেহকে দেখতে আসে, এবং মৃতদেহের দিকে তাকায়। এরা মৃতের প্রতি শোক প্রদর্শন করে, এবং এদের মধ্যে দুঃখের গোঙ্গানির স্বর শোনা যায়।[৮]

    হাতি ও শিম্পাঞ্জি ছাড়াও ডলফিনদেরকেও মৃতের প্রতি মনোযোগ প্রতি আলাদাভাবে মনোযোগী হতে দেখা গিয়েছে। ডলফিনকে কয়েকদিন যাবৎ মৃত সদস্যের সাথে থাকতে দেখা যায়, আর ডুবুরীদের কাছাকাছি আসতে তারা বাধা দেয়।[৯] তাদের আচরণের কারণ এখনও অস্পষ্ট। গবেষকগণ এদের কাজগুলোকে পর্যবেক্ষন করছেন, চিন্তার কোন প্রক্রিয়াগুলো তাদেরকে এই কাজে উৎসাহ দান করে তা বর্তমান গবেষণাগুলো থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না।[১০]

    প্রাথমিক আধুনিক মানুষ নিয়ে গবেষণায় প্রাসঙ্গিকতা

    প্রাণীদের আচারগত জীবন প্যালিওএনথ্রোপলজিস্টদের কাছে আগ্রহের বিষয়, কারণ এগুলো তাদেরকে এই বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি দান করে যে, কিভাবে আমাদের পূর্বপুরুষের মাঝে ধর্মীয় বিশ্বাসব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল। “ক্রো-ম্যাগনন মানবের কঙ্কালের ধ্বংসাবশেষ ভ্রূণীয় অবস্থানে (ফিটাল পজিশনে) রাখা, কারণ আদি লোকধারণা অনুসারে এই অবস্থান পুনর্জন্মে সুবিধা দান করে। অ-মানব প্রাণীদের মধ্যে আত্মীয়দের নিয়ে আচরণ আমাদেরকে মানুষের প্রকৃতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝবার সুযোগ দান করে।”[১১] এদিকে, কেউ কেউ আফ্রিকার হাতি ও নিয়ান্ডারথালদের অন্তেষ্টিক্রিয়া প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু অগভীর সাদৃশ্য লক্ষ করেছেন।[১২]

    বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞানী ম্যাট রসানো তত্ত্ব দেন যে, ধর্ম তিনটি পর্যায়ে বিবর্তিত হয়েছে: প্রাক-উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগে, পরমানন্দদায়ক আচার দ্বারা ধর্মকে চিহ্নিত করা যেত যা সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। পরবর্তীতে উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগে শামানীয় চিকিৎসা আচার বিকশিত হয়। শেষে, গুহাচিত্র, আচারগত মূর্তি, পূর্বপুরুষ পূজা এবং পুরাকাহিনী ও নৈতিক বিধানের অন্তর্ভূক্তির মধ্য দিয়ে ধর্মীয় প্রকাশ বিকশিত হয়।[১৩] এটা যদি সত্য হয় তাহলে গুডঅল বর্ণিত শিম্পাঞ্জীদের আচরণকে প্রাক-উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগের ধর্মের সদৃশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। অবশ্য ডি ওয়াল বলেন, বনোবোদের থেকে (শিম্পাঞ্জী গণের একটি প্রজাতি) এরকম আচারগত আচরণের কোন সাক্ষ্য পাওয়া যায় না, কিন্তু তারা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং তারা নৈতিক প্রতিনিধিত্ব প্রদর্শন করে। এটি নৈতিকতাপ্রাক-ধর্ম এর সহবিকাশের সম্ভাবনার সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে।[১৪]

    আরও দেখুন

  • প্রত্নতত্ত্ব

    প্রত্নতত্ত্ব

    বাংলা প্রত্নতত্ত্ব শব্দটি ‘প্র+ত্ন= প্রত্ন’ অর্থ- পুরাতন ও ‘তৎ+ত্ব= তত্ত্ব’অর্থ-বিজ্ঞান। সমষ্টিগত অর্থ হল, পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান। প্রচলিত ধারণায়, বস্তুগত নিদর্শনের ভিত্তিতে অতীত পুনঃনির্মাণ করার বিজ্ঞানকেই প্রত্নতত্ত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়। অতীতের সংস্কৃতি ও পরিবেশগত নিয়ে চর্চা করে এমন অন্যান্য বিজ্ঞান বা বিষয়গুলোর (যেমন- ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি) মধ্যে প্রত্নতত্ত্বের বিশেষত্ব হলো- এটি কেবল বস্তুগত নিদর্শন অর্থাৎ প্রামাণ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং তার সাথে মানুষের জীবনধারার সম্পর্ক নির্ণয় করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ইনামগাঁওয়ের কয়েকহাজার বছরের বৃষ্টিপাতের ধরনের একটি উপাত্ত হাজির করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য উদ্ধারের এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকলেও ওই বিশেষ বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতিতে মানুষ কিভাবে বসবাস ও জীবনযাপন, এই বিশেষ বিশ্লেষণটি প্রত্নতাত্ত্বিকরা করে থাকেন। ইনামগাওয়ের পরিবৈশিক তথ্য ও গর্তবসতিগুলো এই দুই প্রাচীন উপাদান মিলিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই সময়ের মানুষের জীবনপ্রণালি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন। তাই প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়নের মূল বিষয়গুলো হলো- ভৌত ধ্বংসাবশেষ, পরিবেশগত তথ্য, জৈব অবশেষ বা জীবাশ্ম, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যাবলী ইত্যাদি। আর প্রত্নতত্ত্বের কাজ হলো- এইসব বিষয়কে বিশ্লেষণ করে প্রাচীনকালের মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির তৎকালীন চিত্র বোঝা এবং তার মাধ্যমে মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের ধারা ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানুষ এবং পরিবেশের রূপরেখা নির্মাণ করা। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব প্রধানত ইতিহাস ও পরিবেশ বিজ্ঞানের এক সহযোগী। তবে পরিবৈশিক প্রেক্ষিতের চেয়ে মানুষের সংস্কৃতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এমন বিষয়েই দীর্ঘকাল ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড সীমিত ছিল। কাজেই সাধারণত প্রত্নস্থান ও পুরাতন জিনিসপত্র আবিষ্কার, স্থান ও বস্তু চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তকরণ এবং বস্তু ও কাঠামোর বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ ও তা জনসমক্ষে উপস্থাপন এর মধ্যেই প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল। প্রাকৃতিক ও পরিবৈশিক প্রেক্ষিত এবং অবস্তুগত ভাবগত নিদর্শন যেমন সামাজিক সম্পর্ক ও মনোস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব বর্তমানে মানুষের অতীত ইতিহাসের গৃহবন্দী চর্চার বদলে পরিবেশ, ভূপ্রকৃতি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের অন্যান্য বিষয়ের অতীত অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত নির্মাণের বিজ্ঞান হিসেবে চর্চিত হচ্ছে।

    প্রত্নতত্ত্ব

    উদ্ভব ও বিকাশ

    খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৬খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে বেবিলনের সিপপুরে সামাথ নামক একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের নির্মাতার নাম জানার উদ্দেশ্যে সম্রাট নবনিডাস (Nabonidus) ধ্বংসস্তুপের মধ্যে খননকাজ পরিচালনা করেন। তার এই কীর্তির জন্য তাকে পৃথিবীর প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক বলে অভিহিত করা হয়। সম্রাটের কন্যা এন্নিগালডি নান্না (Ennigaldi Nanna) খননে প্রাপ্ত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত নিদর্শনাদি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন।

    গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডেস (Thucydides)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৬ অব্দে এথেন্সের প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেলস (Delos)-এর ঈজিয়ান দ্বীপের (Aegean Islands) প্রাচীন সমাধিগুলোতে খনন পরিচালনা করে খননে প্রাপ্ত নিদর্শনাদি সম্পর্কে সেই সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। অন্য দিকে, প্রাচীন চীনে পূর্ব-প্রজন্মের নিদর্শনাদি সংরক্ষণের মাধ্যমে পারিবারিক ও মৌখিকভাবে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস সংরক্ষণের প্রচলন ছিল। রোমান দার্শনিক লুকরেটিয়াস (Lucretius) খ্রিষ্টপূর্ব ৯৯খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫ অব্দে এবং চীনা দার্শনিক ইউয়ান কং (Yuan K’ang) খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে চীনাদের প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণের এই চর্চা এবং এই নিদর্শনগুলোর বিশ্লষেণ করে প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির রূপরেখা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

    ভারতে সুলতানী শাসনামলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ ও এর ভিত্তিতে ইতিহাস চর্চার সূচনা হয়। মুহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৪১৩৫১) ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুশীলন করেন। তিনি সারা ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন এবং এগুলোর আলোকে ইতিহাস রচনার জন্য পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়োগ করেন। অশোকস্তম্ভসমূহের শিলালিপির পাঠোদ্ধারের জন্য তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা পৃথিবীর প্রথম পেশাদারী প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

    চতুদর্শ শতক থেকে ইউরোপের রেনেসাঁ পর্বে অভিজাতদের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়; ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্রত্ন-লুটেরা উভয় সম্প্রদায় মূলত যেকোনো উপায়ে প্রত্ন নিদর্শন সংগ্রহ করার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন। মিশরের পিরামিড ও ইউরোপের প্রাচীন সমাধিগুলোতে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার নামে এক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। ইতালিতে (রোম) যাচ্ছেতাই খনন এবং নিদর্শন বাণিজ্য এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, সেখানে বেশকিছু প্রত্ননিদর্শন বিক্রির বাজার ও বার্ষিক প্রত্ননিদর্শন বিক্রয় মেলা আয়োজন করা হতো।

    এই প্রথায় প্রথম বিপরীতমুখী প্রয়াস চালান ইংরেজ গবেষক জন লিল্যান্ড (John Leland)। ১৫৩৩ থেকে ১৫৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রাচীন নথিপত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। অপর ইংরেজ গবেষক উইলিয়াম কার্ডেন (William Carden) ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইংল্যান্ডের প্রাচীন নিদর্শনসমূহের এক বিস্তারিত তালিকা প্রণয়ন করেন যা “ব্রিটানিয়া” নামে প্রকাশিত হয়। তার গবেষণাকর্মটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, তিনি স্থানিক প্রেক্ষিতের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রাচীন নিদর্শনগুলোর ব্যাখ্যা করেন এবং উদ্ভিদের দেহবৃদ্ধির ধরনের পার্থক্যের ভিত্তিতে মাটির নিচে চাপা পড়া প্রত্নস্থান শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। প্রত্নস্থান চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণের এই এরিয়াল পদ্ধতি (প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের কারণে বিবর্তিত হলেও) আজো অত্যন্ত জনপ্রিয়। অপর ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক জন অব্রে (John Aubrey) Stonehenge ও Abebury নামে দুটি প্রত্নস্থানের বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণ করেন। তার বিবরণের ওপর নির্ভর করে ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে হারকুল্যুনেউম ও পম্পেই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালিত হয়। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এখানে একটানা খনন পরিচালিত হয়, এবং প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের অদ্ভুত ধাঁধায় খনন পরিত্যাক্ত হয় এবং তা থেকে কোনো ইতিহাস ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে খনন আবার শুরু হয়, এখনো সেখানে খনন চলছে।

    ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ডেনিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও কিউরেটর সি জে থমসন “থ্রি এজ সিস্টেম” আবিষ্কার করলে ইতিহাসের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়ে ওঠে। ফলে প্রত্নতত্ত্ব চর্চা এক নতুন গতি পায়। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসকে পাথর যুগ, ব্রোঞ্জের যুগলোহার যুগ – এই তিনটি ভাগে ভাগ করলে, পাথরের হাতিয়ার ও ব্রোঞ্জের হাতিয়ারগুলো আসলে কী তা বোঝা সম্ভব হয়, এবং ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদানের হাত থেকে প্রত্নতত্ত্ব রক্ষা পায়। অপর ডেনিশ প্রত্নতাত্ত্বিক জে জে ওয়ারসাই ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে এই গবেষণাকে একটি একক প্রত্নস্থানের স্তরবিন্যাসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। একটি প্রত্নস্থানের বিভিন্ন গভীরতায় বিভিন্ন ধরনের প্রত্নসামগ্রী যে একই সময়ের ব্যক্তিরা ব্যবহার করেনি, তা যে মানুষের ইতিহাসের বিকাশের ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা এই তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এক অভাবনীয় গতি দেয়।

    ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পম্পেই ও হারকুল্যুনেউম-এ প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় এবং এইবার প্রত্নতাত্ত্বিকরা উক্ত প্রত্নস্থলের মানুষের জীবনপ্রণালি ব্যাখ্যায় অগ্রগতি লাভ করেন। এই সাফল্য দেশ-বিদেশের প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের এক উৎসবের সূচনা করে। কার্টিয়াস গ্রিসের অলিম্পিয়ায়, কোল্ডওয়ে এবং ওয়াল্টার মেসোপটেমিয়ায়, হার্বাট কনসট্যান্টিন্যাপল ও তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায়, পিট রিভার্স ইংল্যান্ডে এবং হুইলার ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন সূচনা করেন। এই প্রত্যেকটি খনন পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

    আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব

    আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব চর্চা শুরু হয় জার্মানদের হাতে। জার্মান মানবতাবাদী ও প্রাক-ইতিহাসবেত্তা (প্রিহিস্টোরিয়ান) গুস্তাফ কোসিনা ১৮৯৫ হতে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত “বসতি প্রত্নতত্ত্ব” (সেটেলমেন্ট প্রত্নতত্ত্ব) নামে প্রত্নতত্ত্বের এক আধুনিক মতবাদের বিকাশ ঘটান। এর মূল ভিত্তি ছিল, বস্তুনিদর্শনের (আর্টিফ্যাক্ট) ধরনের মাধ্যমে মানব সংস্কৃতি নির্ণয় এবং স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অঞ্চলকে প্রাচীন ট্রাইব বা এথনিক গ্রুপের বসতি এলাকা বলে চিহ্নিত করা। তার পদ্ধতির সবচে সমস্যাযুক্ত বিষয় হলো বর্তমান মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাকে সরাসরি বর্ণনা করা। এর মাধ্যমে তিনি বর্তমান জার্মানদেরকেই নর্ডিক, আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় (ইন্দো-জার্মান)-দের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন। তিনি অন্য সংস্কৃতি ও মানুষদের ওপরে জার্মানদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের পরাজয়ের পর তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে যুক্তি করতে থাকেন, লৌহ যুগে পোল্যান্ড জার্মানদের বসতির একটি অংশ ছিল। কোসিনার মৃত্যুর পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের উদ্ভব হলে তারাও তার এই ডগমা গ্রহণ করে। থার্ড রাইখের সময় (হিটলারের নাজী শাসনামলকে থার্ড রাইখ বলা হয়) এই মতবাদ পৃষ্ঠপোষকতা পায়। নাজী শাসনে এটি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা পায়। আলফ্রেড রোজেনবার্গ এবং হাইনরিখ হিমলার এই মতবাদ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেন। এডলফ হিটলার এদের উভয়কে সরাসরি সাহায্য করেন। হিমলার গড়ে তোলেন Deutsches Ahnenerbe (জার্মান বংশগতির উত্তরাধিকার) নামক একটি সংস্থা। এরা কোসিনার বসতি প্রত্নতত্ত্বের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করে (Jones ১৯৯৮:৩)। তারা জার্মানীর পূর্বদিকে বিস্তার আবিষ্কার করে। এই বিস্তার ছিল পোল্যান্ড, দক্ষিণ রাশিয়া এবং ককেশাস অঞ্চলে। প্রত্নতত্ত্বের এই ধারার সঙ্গে আরও যারা এই দলে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে হ্যান্স রাইনার্থ ও হারমান উইর্থের নাম উল্লেখযোগ্য। ইউরোপ বা বৈশ্বিকভাবে ব্যাপারটি যেমন-ই হোক না কেন, এই গবেষণা জার্মানদের জাতীয় চেতনা ও অহমবোধ বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

    অন্যদিকে, পোলিশ প্রত্নতাত্ত্বিক Konrad Jazdewski ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপের প্রত্নতাত্ত্বিক অ্যাটলাস প্রকাশ করেন, তাতে তিনি ব্রোঞ্জ যুগে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে স্লোবানিক জাতির সম্প্রসারনকে চিত্রিত করেন (Kristiansen ১৯৯২:১৮), অর্থাৎ এক অর্থে তিনি পোলিশ (স্লোবানিক)-দেরকেই ইউরোপের প্রকৃত মালিক হিসেবে উপস্থাপন করেন; এটি পোলিশদের আত্মশ্লাঘার একটি হাতিয়ার হিসেবে আজো ক্রিয়াশীল।

    একই ভাবে ফ্রান্সে রোমান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রতিহতকরণে গলদের প্রতিরোধের প্রত্নতাত্ত্বিক নথিগুলো ফরাসি জাতীয় চেতনা বিকাশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটেছে লা টেনে-র ওপরে প্রত্নতত্ত্বের গবেষণালব্ধ তথ্যগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর। যদিও জার্মানদের মতো এখানেও তা একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণ ঘটায়, কিন্তু আইরিশ জাতীয় প্রেরণার এক উৎস হিসেবেই থেকে যায়। একই ভাবে ইসরাইলের মাসাদা অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পর দেখা যায়- সেখানে রোমান সাম্রাজ্যের বিরোধিতাকারী একদল ইহুদি গণ-আত্মহত্যা করেছিল; এই ঘটনা এবং স্থানটি ইসরাইল রাষ্ট্রটির জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে তৈরি হয়েছে, স্থানটি সামরিক অনুষ্ঠানাদির কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে (Zarubavel ১৯৯৪)।

    প্রত্নতত্ত্বের এই ধারার বিকাশ উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে তুলতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে (Mattingly ১৯৯৬:৫৬-৯ এবং Paddayya ১৯৯৫:১৪১)। সাম্প্রতিক সময়ে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে (Rao ১৯৯৪, Pollock ১৯৯৬)।

    বসতি প্রত্নতত্ত্বের পর প্রত্নতত্ত্বের যে মতবাদটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব-বিস্তারী ছিল তা হলো সংস্কৃতি-ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব। গর্ডন চাইল্ড এই মতবাদের প্রধান উদ্যোক্তা। প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় তার ব্যাপক অবদানের জন্য অনেকে তাকে প্রত্নতত্ত্বের জনক-ও বলে থাকেন। যেসব বিষয় সাধারণভাবে সংস্কৃতির অংশ বলে গণ্য হয় এবং প্রায়ই যা প্রাচীন সামাজিক সত্তার বিভিন্ন খণ্ডাংশের ফল হিসেবে গণ্য হয় তার এককের স্থানিক ও সময়গত কাঠামোর মধ্যে তৈরি বস্তুগত নিদর্শনের অভিজ্ঞতাবাদী সারসংক্ষেপ, বর্ণনা এবং শ্রেণীকরণের (ক্লাসিফিকেশন) বৈশিষ্ট্যকেই সংস্কৃতি-ইতিহাস বলা যেতে পারে। সংস্কৃতি-ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় ঐতিহ্যের ভিন্নতা (বা বৈচিত্র্য) সত্ত্বেও এটাই ছিল বিশ শতকের ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যত্র প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক মতবাদ। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অতীত জনগণ বা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইতিহাস তৈরি করা হয়, যা আসলে নাজি জার্মানীর প্রত্নতাত্ত্বিক কাঠামোর মূলনীতির সঙ্গে একই।

    জাপানের ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও কৃষিনির্ভর সংস্কৃতির প্রতি জাতীয় গুরুত্ব আরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রত্নতত্ত্বের এই ঘরানার গবেষণাগুলো অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে।

    ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় তাসকান শহরে ড. উইলিয়াম রাথজে পরিচালিত ফেলনাময়লা প্রকল্প (The Garbage Project) আধুনিক প্রত্নতত্ত্বের এক মাইলস্টোন। শহরের অধিবাসীদের ফেলে দেওয়া ময়লা-আবর্জনা থেকে শহরের মানুষের স্বভাব-চরিত্র-সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে তিনি প্রাচীন নিদর্শন থেকেও যে প্রাচীন মানুষের সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব তা প্রমাণ করেন। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব শুধু বিজ্ঞানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তা-ই নয়, বরং পদ্ধতি হিসেবেও প্রত্নতত্ত্ব যে বৈজ্ঞানিক তা প্রমাণিত হয়। এই গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে তথ্য আহরণ করা শুরু হয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে চালু করা হয়। এর ফলে আশির দশক থেকে বিশ্বব্যাপী প্রত্নতত্ত্ব চর্চা ব্যাপক বৃদ্ধি পেলে এর মতাদর্শিক ঘরানারও ব্যাপক বিস্তার ঘটে। কাঠামোবাদী, প্রক্রিয়াবাদী, উত্তর-প্রক্রিয়াবাদী, নির্মাণবাদী ইত্যাদি নানা ঘরানা দ্রুত প্রকাশিত হয়। আপাত অর্থে বিভিন্ন ছোট ছোট ইস্যুতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে আলাদা আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি হয়, পিটার আকো একে বলছেন “ঘেটো”। এই সময় প্রথমবারের মতো মানুষের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকে পরিস্থিতি (সিচুয়েশন) এবং প্রেক্ষিত (কনটেক্সট) এর নিরিখে গবেষণা করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। আরও পরিষ্কার করে বললে, প্রত্নতত্ত্বের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়; অতীত মানুষের বিভিন্ন গোষ্ঠী, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক-সূত্র ও সম্পর্কের সামর্থ্য, রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক স্তরায়নকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঊনিশশো আশির দশকের বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করার ও সমাধানের পথনির্দেশের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের অবস্থান থেকে অবদান রাখার চেষ্টা করেন। গোষ্ঠী, শ্রেণী, সীমানা, আদিবাসী, জাতিত্ব ইত্যাদি প্রকরণগুলো প্রত্নতত্ত্বে আলোচিত হতে থাকে। এই সময় আকো, জোনস ও আরও কিছু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রত্নতাত্ত্বিকের উদ্যোগে কাজের তত্ত্ব বলে এক তত্ত্বহীন ঘেটো-র উদ্ভব ঘটে, এদের মূল বক্তব্য হলো- কাজ করতে করতেই একজন গবেষক তার তত্ত্ব খুঁজে পাবেন, যার সাথে পৃথিবীতে প্রচলিত অন্য তত্ত্বসমূহের কোনো মিল না-ও থাকতে পারে। কিন্তু অন্য তত্ত্বের প্রতি পূর্ব-ধারণার (প্রি-কনসেপ্ট) ফলে তিনি যদি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেটি সত্যিই বিপজ্জনক।

    প্রত্নতত্ত্বের কাজের পদ্ধতি

    জরিপ

    উৎখননের সম্ভাব্যতা বা বাস্তবতা যাচাই করার জন্যই জরিপ করা হয়।পদ্ধতিগতভাবে,প্রত্নস্থান বা প্রত্ননির্দশন শনাক্ত করা, খুঁজে বের করা,তা ভূ-পৃষ্ঠে চিহ্নত করা, মানচিত্রে শনাক্ত করা,এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করাকে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বলে। জরিপ গবেষণা ২ ধরনের হয়ে থাকে।যথাঃ ১.জরিপ-পূর্ব গবেষণা. ২.মাঠ জরিপ গবেষণা.

    অনুসন্ধান

    কোন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পূর্বে প্রাকখনন গবেষণা সম্পাদন করতে হয়। এর জন্য প্রথম Archaeo- book study বা library work কার্য সম্পর্কে ধারণা অর্জন এর পর কোন জায়গায় প্রত্ননিদর্শন আছে কিনা বা ঐ স্থানটি প্রত্নস্থান কিনা তা পায়ে হেটে জরিপ/খুজে বের করার মাধ্যমকে অনুসন্ধান বলে।

    উৎখনন

    কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের ঠিক পরের স্থানটি দখল করে আছে উৎখনন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো পুস্তকে লিপিবদ্ধ নয়। উৎখনন হলো এমন একটি বিষয় যা কোনো প্রত্নতত্ত্ববিদও পুনঃপুন খনন কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেও কোনো প্রত্নস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার বিশেষ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যেমন; grid পদ্ধতি, এরিয়াল ইমেজ, স্যাটেলাইট ইমেজ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে উৎখনন কার্য সম্পন্ন করা যায়।

    সংরক্ষণ

    আমরা যখন কোনো প্রত্নস্থান থেকে কোন প্রকার প্রত্নবস্তুু পাই সেটাকে নানা প্রকার পদার্থ দ্বারা এটিকে তার সাথে মানানসই করে এটিকে কোন একটি জাদুঘর বা প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় জায়গায় রাখি এটাই সংরক্ষন।আবার যাতে কোনো প্রকার বিলুপ্তির আশংক্ষা না থাকে সে পর্যায়ে রাখাকে সংরক্ষন বলে।

    নথিভুক্তকরণ

    আমরা যখন কোনো প্রত্নবস্তু পাই সেটি কিভাবে পেলাম,সেটি কোন সময়ের,তার ওজন কত,তার উচ্চতা,তার রং,তার নাম,কতটুকু মাটির নিচে পেলাম,কোন অঞ্চলের,এভাবে খুঁটিনাটি সব লিখাকেই বলে নথিভুক্তকরন।

    প্রত্নতত্ত্বের উপাদান

    প্রত্নতত্ত্বের উপাদান হিসেবে সাধারণভাবে ভৌত ধ্বংসাবশেষ, পরিবেশগত তথ্য, জৈব অবশেষ বা জীবাশ্ম, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যাবলী ইত্যাদিকে বিবেচনা করা হয়। তবে ভাবগত নিদর্শন যার আপাত অর্থে কোনো বহনযোগ্য, বাণিজ্যযোগ্য বা দৃশ্যমান অস্তিত্ব নাই এমন কোন বিষয়ও হতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিকের প্রধান সূত্র।ক

    আরও দেখুন

  • পূর্ব পুরুষের উপাসনা

    পূর্ব পুরুষের উপাসনা

    মৃতপূর্বপুরুষদের উপাসনা বা শ্রদ্ধা হলো, মৃত ব্যক্তির প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে উপাসনা। কিছু সংস্কৃতিতে, এটি বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত যে মৃতদের অবিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব রয়েছে এবং জীবিতদের ভাগ্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে পারে। কিছু গোষ্ঠী তাদের প্রত্যক্ষ, পারিবারিক পূর্বপুরুষদের পূজা করে। কিছু কিছু সম্প্রদায় ও ধর্ম, বিশেষ করে পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী এবং রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী সাধুদেরকে ঈশ্বরের কাছে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পূজা করে; পরেরটিও পুর্গেটরিতে বিদেহী আত্মার জন্য প্রার্থনায় বিশ্বাস করে। তবে অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী মৃতদের প্রতি পূজা করাকে মূর্তিপূজাপাপ বলে জ্ঞান করে।

    ইউরোপীয়এশীয়ওশেনিয়ানআফ্রিকান ও আফ্রো-ডায়াস্পোরিক সংস্কৃতিতে, পূর্বপুরুষ পূজার লক্ষ্য হল জীবিতদের প্রতি পূর্বপুরুষদের অব্যাহত মঙ্গল এবং ইতিবাচক মনোভাব নিশ্চিত করা এবং কখনও কখনও বিশেষ অনুগ্রহ বা সহায়তার জন্য অনুরোধ করা। পূর্বপুরুষের শ্রদ্ধার সামাজিক বা অ-ধর্মীয় কাজ হল আত্মীয়তার মূল্যবোধ গড়ে তোলা, যেমন ফিলিয়াল ধার্মিকতা, পারিবারিক আনুগত্য ও পারিবারিক বংশের ধারাবাহিকতা। পূর্বপুরুষের পূজা সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত জটিলতার প্রতিটি স্তরের সমাজে ঘটে এবং এটি আধুনিক সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশীলনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আজও রয়ে গেছে।

    পূর্ব পুরুষের উপাসনা

    সাধারণভাবে

    পূর্বপুরুষের উপাসনা দেবতার উপাসনার মতো নয়। কিছু আফ্রো-ডায়াস্পোরিক সংস্কৃতিতে, পূর্বপুরুষকে জীবিতদের পক্ষে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হিসাবে দেখা হয়, প্রায়শই মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে বার্তাবাহক হিসাবে। আত্মা হিসেবে যারা একসময় নিজেরাই মানুষ ছিল, তারা ঐশ্বরিক সত্তার চেয়ে মানুষের চাহিদা বুঝতে সক্ষম হিসাবে দেখা হয়। অন্যান্য সংস্কৃতিতে, পূর্বপুরুষের উপাসনার উদ্দেশ্য অনুগ্রহ চাওয়া নয় বরং দায়িত্ব পালন করা। কিছু সংস্কৃতি বিশ্বাস করে যে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রকৃতপক্ষে তাদের বংশধরদের দ্বারা সরবরাহ করা প্রয়োজন, এবং তাদের অনুশীলনের মধ্যে খাদ্য এবং অন্যান্য বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যরা বিশ্বাস করে না যে পূর্বপুরুষরা এমনকি তাদের বংশধরেরা তাদের জন্য কী করে সে সম্পর্কেও সচেতন, কিন্তু যেটি হল ধার্মিকতার প্রকাশটি গুরুত্বপূর্ণ।

    অধিকাংশ সংস্কৃতি যারা পূর্বপুরুষ উপাসনা করে তারা একে “পূর্বপুরুষ উপাসনা” বলে না। ইংরেজিতে, উপাসনা শব্দটি সাধারণত দেবতা বা ঈশ্বরকে প্রদত্ত শ্রদ্ধেয় প্রেম ও ভক্তি বোঝায় না।[১][২][৩] যাইহোক, অন্যান্য সংস্কৃতিতে, এই উপাসনা কোন বিশ্বাস দেয় না যে বিদেহী পূর্বপুরুষরা কোন ধরনের দেবতা হয়ে উঠেছে। বরং, এই রীতিটি হল পূর্ণাঙ্গ কর্তব্য, ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করার এবং তাদের পরবর্তী জীবনে পূর্বপুরুষদের দেখাশোনা করার পাশাপাশি তাদের জীবিত বংশধরদের জন্য তাদের নির্দেশনা খোঁজার উপায়। এই বিষয়ে, অনেক সংস্কৃতি ও ধর্মের অনুরূপ অনুশীলন রয়েছে। কেউ কেউ তাদের পিতামাতা বা অন্যান্য পূর্বপুরুষদের সমাধি পরিদর্শন করতে পারে, ফুল ছেড়ে তাদের সম্মান ও স্মরণ করার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করতে পারে, পাশাপাশি তাদের পূর্বপুরুষদের তাদের দেখাশোনা চালিয়ে যেতে বলে। যাইহোক, এটি তাদের উপাসনা হিসাবে বিবেচিত হবে না কারণ উপাসনা শব্দটি সর্বদা নির্দিষ্ট পশ্চিমা ইউরোপীয় খ্রিস্টান ঐতিহ্যের একচেটিয়া ও সংকীর্ণ প্রসঙ্গে এমন অর্থ প্রকাশ করতে পারে না।

    সেই অর্থে পূর্বপুরুষ উপাসনা শব্দগুচ্ছ কিছু পশ্চিম ইউরোপীয় খ্রিস্টান ঐতিহ্যের সীমিত দৃষ্টিকোণ থেকে, চিনা ও অন্যান্য বৌদ্ধ-প্রভাবিত এবং কনফুসিয়ান-প্রভাবিত সমাজের পাশাপাশি আফ্রিকান ও ইউরোপীয় সংস্কৃতি নিজেদেরকে করতে দেখে। এটি ইংরেজিতে veneration শব্দের অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ব্যক্তির মর্যাদা, জ্ঞান বা উৎসর্গের কারণে সৃষ্ট মহান সম্মান বা শ্রদ্ধা বুঝায়।[৪][৫][৬]

    যদিও পূর্বপুরুষের উপাসনার উৎপত্তি সম্বন্ধে কোনো সাধারণভাবে গৃহীত তত্ত্ব নেই, এই সামাজিক ঘটনাটি এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত সমস্ত মানব সংস্কৃতিতে কোনো না কোনো আকারে দেখা যায়। ডেভিড-ব্যারেট এবং কার্নি দাবি করেন যে মানব বিবর্তনের সময় পূর্বপুরুষ উপাসনা গোষ্ঠী সমন্বয় ভূমিকা পালন করতে পারে,[৭] এবং এটি এমন প্রক্রিয়া যা ধর্মীয় প্রতিনিধিত্বকে গোষ্ঠী সংহতি বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে।[৮][৯]

    পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার সংস্কৃতি

    পূর্বপুরুষের উপাসনা আফ্রিকাজুড়ে প্রচলিত এবং অনেক ধর্মের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এটি প্রায়শই সর্বোত্তম সত্ত্বাতে বিশ্বাসের দ্বারা বৃদ্ধি পায়, তবে প্রার্থনা এবং/অথবা বলিদান সাধারণত পূর্বপুরুষদের জন্য দেওয়া হয় যারা নিজেরাই এক ধরনের গৌণ দেবতা হয়ে উঠতে পারেন। পূর্বপুরুষের উপাসনা অনেক আফ্রিকানদের মধ্যে রয়ে গেছে, কখনও কখনও খ্রিস্টধর্মের পরবর্তী গৃহীত ধর্মগুলির পাশাপাশি অনুশীলন করা হয় (যেমন নাইজেরিয়াতে ইগবো লোকদের মধ্যে), এবং ইসলামে (বিভিন্ন মান্ডে মানুষ এবং বামুম এবং বাকোসি জনগণের মধ্যে) এশিয়া-আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ অংশে[১০][১১] এবং গোঁড়া সেরাধর্মে, প্যাঙ্গুল সেরার জনগণের দ্বারা পূজা করা হয়।

    এশিয়ান সংস্কৃতি

    কম্বোডিয়া

    পছুম বেন এবং কম্বোডিয়ান নববর্ষের সময় লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে উপহার দেয়। পছুম বেন এমন সময় যখন অনেক কম্বোডিয়ান সাত প্রজন্ম পর্যন্ত মৃত আত্মীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।[১২] সন্ন্যাসীরা পালি ভাষায় রচিত শ্লোকগুলি রাতে উচ্চারণ করেন (নিরন্তর, না ঘুমিয়ে) নরকের দরজা খোলার পূর্বসূচীতে, এমন ঘটনা যা বছরে একবার ঘটে বলে ধারণা করা হয় এবং এটি পালি ত্রিপিটকে উদ্ভূত রাজা যমের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে যুক্ত। এই সময়ের মধ্যে, নরকের দরজা খোলা হয় এবং মৃতদের ভূত (প্রেত) বিশেষভাবে সক্রিয় বলে অনুমান করা হয়। এটি মোকাবেলা করার জন্য, তাদের উপকার করার জন্য খাদ্য-অর্ঘ করা হয়। এই ভূতগুলির মধ্যে কিছু তাদের শুদ্ধকরণের সময় শেষ করার সুযোগ পায়, যেখানে অন্যদের অস্থায়ীভাবে নরক ছেড়ে যাওয়ার জন্য কল্পনা করা হয়, তারপরে আরও কষ্ট সহ্য করার জন্য; অনেক ব্যাখ্যা ছাড়া, আত্মীয় যারা নরকে নেই (যারা স্বর্গে আছে বা অন্যথায় পুনর্জন্ম হয়েছে) তাদেরও সাধারণত অনুষ্ঠান থেকে উপকৃত হওয়ার কল্পনা করা হয়।

    চীন

    আরও তথ্যের জন্য দেখুন: চীনে পূর্বপুরুষের উপাসনা

    মেংজিয়া লংশান মন্দিরে পূজার সময় ধূপ জ্বালানো, যা গুয়ান ইউ, মাজু এবং অন্যান্যদের জন্য উৎসর্গ করা হয়

    চীনে, পূর্বপুরুষের উপাসনা (敬祖, পিনয়িন: jìngzǔ) এবং পূর্বপুরুষের উপাসনা (拜祖, পিনয়িন: bàizǔ) মৃত ব্যক্তির কর্মকে সম্মান ও স্মরণ করার চেষ্টা করে; তারা মৃতদের চূড়ান্ত শ্রদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করে। পিতামাতাকে (এবং প্রবীণদের) সম্মান করার গুরুত্ব এই সত্যের সাথে নিহিত যে একজনের সত্তার সমস্ত শারীরিক দিকগুলি পিতামাতার দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, যারা দৃঢ় পদে না থাকা পর্যন্ত মঙ্গল বজায় রাখতে থাকে। পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও শ্রদ্ধা হল জীবনে এবং পরবর্তীতে তাদের এই করুণাময় কাজটি ফিরিয়ে দেওয়া। শি (尸; “মৃতদেহ, ব্যক্তিত্ব”) ছিলেন চৌ রাজবংশ (১০৪৫-২৫৬ খৃষ্টপূর্বাব্দ) মৃত আত্মীয়ের বলিদানকারী প্রতিনিধি। শি অনুষ্ঠানের সময়, পূর্বপুরুষের আত্মা অনুমিতভাবে ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রবেশ করবে, যিনি বলিদানের নৈবেদ্য খাবেন ও পান করবেন এবং আধ্যাত্মিক বার্তা প্রকাশ করবেন।

    ভারত

    মূল নিবন্ধসমূহ: পিতৃ, দেবতা (ভারতীয় ধর্ম)মৃত্যু পরবর্তী ভারতীয় আচার

    পিতৃপক্ষের শেষে কলকাতার জগন্নাথ ঘাটে শ্রাদ্ধ হয়।

    পূর্বপুরুষরা ভারতচীনে ব্যাপকভাবে শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত এবং পূজনীয়। মৃত ব্যক্তির আত্মাকে পিতৃ বলা হয়, যাকে পূজা করা হয়। যখন একজন ব্যক্তি মারা যায়, তখন পরিবার তেরো দিনের শোক পালন করে, যাকে সাধারণত শ্রাদ্ধ বলা হয়। এক বছর থেকে, তারা তর্পণের আচার পালন করে, যেখানে পরিবার মৃতকে নৈবেদ্য দেয়। এই আচার-অনুষ্ঠানের সময়, পরিবার মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাবার তৈরি করে এবং মৃতকে খাবার দেয়। তারা কাকদের এই খাবারটি নির্দিষ্ট দিনে অফার করে কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে আত্মা এটির স্বাদ নিতে পাখির আকারে আসে। তারা যোগ্য ব্রাহ্মণদের শ্রাদ্ধ, নির্দিষ্ট প্রস্তুতির একটি ছোট উৎসব দিতেও বাধ্য। এই আচারের পরেই পরিবারের সদস্যদের খেতে দেওয়া হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এটি পূর্বপুরুষের আত্মাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে তারা ভুলে যায় না এবং তাদের ভালবাসা হয়, তাই এটি তাদের শান্তি নিয়ে আসে। শ্রাধের দিন, লোকেরা প্রার্থনা করে যে পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্তি পায়, কোনও শত্রুতা ভুলে যায় এবং শান্তি পায়। প্রতি বছর, নির্দিষ্ট তারিখে (হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে) যখন ব্যক্তি মারা গিয়েছিল, পরিবারের সদস্যরা এই আচারের পুনরাবৃত্তি করে।

    সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মহাদেশের অন্য কোথাও বৃহৎ ভারতীয় ও চীনা জনসংখ্যার ফলস্বরূপ পূর্বপুরুষ-উপাসনার ভারতীয় ও চীনা রীতি এশিয়া জুড়ে প্রচলিত। অধিকন্তু, ফিজি ও গায়ানার মত জায়গায় বৃহৎ ভারতীয় জনসংখ্যার ফলে এই অনুশীলনগুলি তাদের এশিয়ান মাতৃভূমির বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে।

    ইন্দোনেশিয়া

    ইন্দোনেশিয়ায় পূর্বপুরুষদের উপাসনা কিছু আদিবাসীদের ঐতিহ্য। টোবা বাতাকের পোডম, মিনাহাসানদের ওয়ারুগা এবং করো জনগণের (ইন্দোনেশিয়া) কফিন হল পূজার রূপের কয়েকটি উদাহরণ।

    জাপান

    জাপানে বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তনের আগে, পূর্বপুরুষদের উপাসনা এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সাধারণ ছিল না, বিশেষ করে অ-অভিজাতদের জন্য।[১৩] হেইয়ান যুগে, পরিত্যাগ মৃতদের নিষ্পত্তির সাধারণ পদ্ধতি ছিল।[১৪] বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের পর, কবরস্থানে দাফন বা দাহ করার পরে কখনও কখনও আচার অনুষ্ঠান করা হত।[১৫]

    কোরিয়া

    পূর্বপুরুষদের জন্য কোরিয়ান জেসা বেদি

    কোরিয়াতে, পূর্বপুরুষের উপাসনাকে জেনেরিক শব্দ  জেরি (হাঙ্গুল: 제례; হাঞ্জা: ) বা জেসা (হাঙ্গুল: 제사; হাঞ্জা: ) দ্বারা উল্লেখ করা হয়। জেরির উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে মুনমিও জেরিয়ে এবং জংমিও জেরি, যা প্রতি বছর যথাক্রমে শ্রদ্ধেয় কনফুসীয় পণ্ডিত এবং প্রাচীন যুগের রাজাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সম্পাদিত হয়। পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে বলা হয় চ্যারি (차례)। এটা আজও চর্চা করা হয়।[১৬]

    বেশিরভাগ ক্যাথলিক, বৌদ্ধ এবং অবিশ্বাসীরা পৈতৃক আচার পালন করে, যদিও প্রোটেস্ট্যান্টরা তা করে না।[১৭] পৈতৃক আচারের উপর ক্যাথলিক নিষেধাজ্ঞা ১৯৩৯ সালে প্রত্যাহার করা হয়, যখন ক্যাথলিক চার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্বপুরুষের আচারকে নাগরিক অনুশীলন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[১৭]

    পৈতৃক আচারগুলি সাধারণত তিনটি বিভাগে বিভক্ত:[১৮]

    1. চ্যারি (차례, 茶禮) – চায়ের আচার বৎসরে চারবার প্রধান ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয় (কোরিয়ান নববর্ষ, চুসেওক)
    2. কিজে (기제, 忌祭) – পূর্বপুরুষের মৃত্যুবার্ষিকীর আগের রাতে অনুষ্ঠিত পারিবারিক অনুষ্ঠান (기일, 忌日)
    3. সিজে (시제, 時祭; 사시제 বা 四時祭 বলাও হয়) – পাঁচ বা ততোধিক প্রজন্ম অপসারিত পূর্বপুরুষদের জন্য অনুষ্ঠিত মৌসুমী অনুষ্ঠান (সাধারণত বার্ষিক দশম চান্দ্র মাসে সঞ্চালিত হয়)

    মায়ানমার

    আধুনিক মায়ানমারে পূর্বপুরুষের উপাসনা মূলত কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু এর মূলধারার অবশিষ্টাংশ এখনও বিদ্যমান, যেমন “বো বো গি” (আক্ষরিক অর্থে “মহান পিতামহ”) এর উপাসনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিভাবক আত্মা যেমন “নাত”, যার সবগুলোই হয়তো ঐতিহাসিক নিদর্শনপূর্ব পুরুষের উপাসনা।[১৯]

    প্রাক-ঔপনিবেশিক বার্মায় রাজদরবারে পূর্বপুরুষের উপাসনা ছিল। কোনবং রাজবংশের সময়, মৃত রাজা ও তাদের স্ত্রীদের কঠিন সোনার ছবিগুলিকে রাজপরিবার দ্বারা বছরে তিনবার পূজা করা হত, বার্মিজ নববর্ষের সময় (থিংয়ান), ভাসার শুরুতে ও শেষে।[২০] ছবিগুলি কোষাগারে সংরক্ষিত ছিল এবং জেটাউনজাউং (ဇေတဝန်ဆောင်, “হল অফ অ্যানসেস্টরস”) এ উপাসনা করা হয়েছিল, বইয়ের সাথে।[২০]

    কিছু পণ্ডিত পূর্বপুরুষ উপাসনার অদৃশ্য হওয়ার কারণ হিসেবে বৌদ্ধ মতবাদের অ্যানিকা ও অনত্তা, অস্থিরতা ও ‘স্ব’কে প্রত্যাখ্যান করার জন্য দায়ী করেন।[২১]

    ফিলিপাইন

    মূল নিবন্ধসমূহ: অ্যানিতো, আদিবাসী ফিলিপাইনের লোকধর্মফিলিপিনো সংস্কৃতিতে আত্মা

    বিভিন্ন ইগোরোট বুলুল অ্যানিতো বা পূর্বপুরুষ আত্মাকে চিত্রিত করে (১৯০০ খৃষ্টাব্দ)

    প্রাক-ঔপনিবেশিক ফিলিপাইনের অ্যানিমিস্টিক আদিবাসী ধর্মগুলিতে, পূর্বপুরুষ আত্মারা ছিল দুটি প্রধান ধরনের আত্মার মধ্যে একটি (অ্যানিতো) যাদের সাথে শামানরা যোগাযোগ করে। পূর্বপুরুষের আত্মাগুলিকে উমলাগাদ (আদি “অভিভাবক” বা “তত্ত্বাবধায়ক”) নামে পরিচিত ছিল। তারা প্রকৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা বা পরিবারের সাধারণ অভিভাবক আত্মা হতে পারে। প্রাচীন ফিলিপিনোরা বিশ্বাস করত যে মৃত্যুর পর, ব্যক্তির আত্মা (সাধারণত নৌকায়) আত্মিক জগতে ভ্রমণ করে।[২২][২৩][২৪] আত্মা জগতে একাধিক অবস্থান হতে পারে, বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীতে পরিবর্তিত। আত্মারা কোন জায়গায় শেষ হয় তা নির্ভর করে তারা কিভাবে মারা গেছে, মৃত্যুর সময় কত বয়সে বা জীবিত থাকাকালীন ব্যক্তির আচরণ। আত্মারা পাতালে মৃত আত্মীয়দের সাথে পুনরায় মিলিত হয় এবং পাতাল জগতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যেমন তারা বস্তুজগতে করেছিল। কিছু ক্ষেত্রে, মন্দ লোকদের আত্মা নির্দিষ্ট আত্মিক রাজ্যে প্রবেশ করার আগে তপস্যা ও শুদ্ধির মধ্য দিয়ে যায়। আত্মারা শেষ পর্যন্ত আত্মা জগতে কিছু সময়ের পর পুনর্জন্ম লাভ করবে।[২২][২৩][২৫][২৬]

    আত্মা জগতের আত্মা বস্তুগত জগতে এখনও কিছুটা প্রভাব বজায় রাখে এবং এর বিপরীতে। প্যাগানিতো  আচারগুলি সুরক্ষা, মধ্যস্থতা বা পরামর্শের জন্য ভাল পূর্বপুরুষ আত্মাদের আহ্বান করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। মৃতদের প্রতিহিংসাপরায়ণ আত্মা আবির্ভাব বা ভূত (ম্যান্টিউ) হিসাবে প্রকাশ করতে পারে এবং জীবিত মানুষের ক্ষতি করতে পারে। প্যাগানিতো তাদের সন্তুষ্ট বা নির্বাসিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[২২][২৫][২৭] পূর্বপুরুষ আত্মাগুলি অসুস্থতা বা মৃত্যুর সময়ও বিশিষ্টভাবে চিত্রিত হয়, কারণ তারা আত্মাকে পাতালের দিকে ডাকে, আত্মাকে (সাইকোপম্প), বা আগমনের পর আত্মার সাথে দেখা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।[২২]

    পূর্বপুরুষ আত্মাগুলি কর্ডিলারানদের মধ্যে কালাডিং নামেও পরিচিত;[২৮] মাগুইন্দানাও এবং মারানাও-এর মধ্যে টোনং;[২৯] সামা-বাজাউ-এর মধ্যে উম্বো;[৩০]  তাগালগদের মধ্যে নিনুনো; এবং বিচলানদের মধ্যে নোনো।[৩১] পূর্বপুরুষের আত্মা সাধারণত খোদাই করা মূর্তি দ্বারা উপস্থাপিত হয় যাকে তাওটাও বলা হয়।এগুলি ব্যক্তির মৃত্যুর পরে সম্প্রদায় দ্বারা খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিটি পরিবারের একটি তাওতাও ঘরের কোণে একটি শেলফে সংরক্ষিত ছিল।[২২]

    প্রধানত রোমান ক্যাথলিক ফিলিপিনো লোকেরা ১৫২১ সালে স্প্যানিশ মিশনারিদের সংস্পর্শে আসার পর থেকে খ্রিস্টান হওয়া সত্ত্বেও – যদিও তাদের প্রতিবেশীদের কাছে সাধারণ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পূর্বপুরুষদেরকে এখনও বিশেষভাবে সম্মান করে। বর্তমান দিনে, বাড়ির বেদিতে মৃতদের ছবি তোলার মাধ্যমে পূর্বপুরুষের শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়, এটি অনেক ফিলিপিনো খ্রিস্টান বাড়িতে সাধারণ জিনিস। ফটোগ্রাফের আগে মোমবাতিগুলি প্রায়শই জ্বালিয়ে রাখা হয়, যা কখনও কখনও তাজা সাম্পাগুইটা জাতীয় ফুলের মালা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।পূর্বপুরুষ, বিশেষ করে মৃত পিতা-মাতাকে এখনও সাইকোপম্প হিসাবে গণ্য করা হয়, কারণ একজন মৃত ব্যক্তিকে মৃত আত্মীয়দের আত্মার দ্বারা পরকালে (তাগালগ: সুন্দো, “আনয়ন”) নিয়ে আসা হয়। বলা হয়ে থাকে যে, মৃত ব্যক্তিরা যখন মৃত প্রিয়জনদের নাম ডাকে, তখন তারা দেখতে পায় সেই বিশেষ ব্যক্তিদের আত্মারা মৃত্যুশয্যার পাদদেশে অপেক্ষা করছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    ফিলিপিনো ক্যাথলিক ও আগ্লিপায়ান  মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় ফিলিপাইনে এর সর্বশ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি হল ৩১ অক্টোবর ও ২ নভেম্বরের মধ্যে হ্যালোমাস ঋতু, যাকে বিভিন্নভাবে উন্ডাস ([দ্য] ফার্স্ট, স্প্যানিশ  আন্দাস বা সম্ভবত হনরা শব্দের উপর ভিত্তি করে বলা হয়), টদস লস শান্তস (আক্ষরিক অর্থে সমস্তসেন্টস), এবং কখনও কখনও আরাওং মগা পাতায় (“ডে অফ দ্য ডেড”), যা অল সোলস ডে-এর নিম্নলিখিত গৌরবকে বোঝায়। ফিলিপিনোরা ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটিকে মৃত পরিবার পরিদর্শন করে, তাদের সমাধি পরিষ্কার ও মেরামত করে পালন করে। সাধারণ নৈবেদ্য হল প্রার্থনা, ফুল, মোমবাতি এবং এমনকি খাবার, যখন অনেকে দিনের অবশিষ্ট সময় কাটায় এবং পরবর্তী রাত্রি কবরস্থানে পুনর্মিলন, খেলা ও গান বা গান বাজায়।[৩২]

    চীনা ফিলিপিনোদের মধ্যে, পূর্বপুরুষ উপাসনার সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে স্পষ্ট ও স্বতন্ত্র রীতিনীতি রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী চীনা ধর্ম থেকে চলে আসে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান ক্যাথলিক বিশ্বাসের সাথে মিশে যায়। অনেকে এখনও পারিবারিক সমাধিতে ও বাড়িতে ছবি তোলার আগে ধূপ জ্বালায় এবং কিম জ্বালায়, যখন তারা অল সোলস ডে পিরিয়ডের সময় আয়োজিত গণসমাবেশে চীনা অনুশীলনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    শ্রীলংকা

    শ্রীলঙ্কায়, প্রথাগত শ্রীলঙ্কার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৃত্যুর পর ষষ্ঠ দিনে পূর্বপুরুষকে অর্ঘ প্রদান করা হয়।[৩৩]

    থাইল্যান্ড

    গ্রামীণ উত্তর থাইল্যান্ডে, ফাউন ফি (থাই: ฟ้อนผี, “স্পিরিট নৃত্য” বা “ভূতের নৃত্য”) নামে পরিচিত পূর্বপুরুষদের আত্মাদের সম্মানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। এতে পূর্বপুরুষদের জন্য স্পিরিট মিডিয়াম সোর্ড ফাইটিং, স্পিরিট-পসেসড ড্যান্সিং এবং এবং আধ্যাত্মিক মোরগ লড়াইয়ে স্পিরিট মিডিয়াম মোরগ লড়াই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৩৪]

    ভিয়েতনাম

    পূর্বপুরুষদের জন্য ভিয়েতনামী বেদী। লক্ষ্য করুন ছোট বৌদ্ধ বেদি উপরের কোণে উঁচু

    নববর্ষের নৈবেদ্য উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে একজন বৃদ্ধ

    পূর্বপুরুষের উপাসনা হল ভিয়েতনামী সংস্কৃতির অন্যতম একীভূত দিক, কারণ কার্যত সমস্ত ভিয়েতনামী, ধর্মীয় অনুষঙ্গ নির্বিশেষে (বৌদ্ধ, ক্যাথলিক বা অ্যানিমিস্ট) তাদের বাড়িতে বা ব্যবসায় পূর্বপুরুষের বেদী রয়েছে।

    ভিয়েতনামে, ঐতিহ্যগতভাবে লোকেরা জন্মদিন উদযাপন করত না (পশ্চিমা প্রভাবের আগে), কিন্তু প্রিয়জনের মৃত্যুবার্ষিকী সবসময় গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ ছিল। মৃত ব্যক্তির স্মরণে ভোজসভার জন্য পরিবারের সদস্যদের অপরিহার্য জমায়েত ছাড়াও, নরকের টাকার সাথে ধূপকাঠি পোড়ানো হয় এবং পূর্বপুরুষের বেদীতে নৈবেদ্য হিসাবে খাবারের বড় থালা তৈরি করা হয়, যেখানে সাধারণত তাদের নামের ছবি বা ফলক থাকে মৃত নিখোঁজ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, তাদের পরিবার মৃত বলে বিশ্বাস করে, বায়ু সমাধি তৈরি করা হয়।

    গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী বা ধর্মীয় উদযাপনের সময়, নতুন ব্যবসা শুরু করার সময়, বা এমনকি যখন কোনও পরিবারের সদস্যদের নির্দেশনা বা পরামর্শের প্রয়োজন হয় এবং এটি ভিয়েতনামী সংস্কৃতির সন্তানোচিত কর্তব্যের উপর জোর দেওয়ার বৈশিষ্ট্য।

    ভিয়েতনামী পূর্বপুরুষদের উপাসনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে নারীদের ঐতিহ্যগতভাবে পৈতৃক আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সহ-কর্মকর্তার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, চীনা কনফুসিয়ান মতবাদের বিপরীতে, যা শুধুমাত্র পুরুষ বংশধরদের এই ধরনের আচার সম্পাদন করতে দেয়।[৩৫]

    ইউরোপীয় সংস্কৃতি

    গ্রামীণ স্পেনের মনোরম কবরস্থান

    ইউরোপের ক্যাথলিক দেশগুলিতে (পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের অ্যাংলিকান চার্চের সাথে চলতে থাকে), ১ নভেম্বর (অল সেন্টস ডে) পরিচিত হয়ে ওঠে এবং এখনও বিশেষভাবে যারা মারা গেছে তাদের শ্রদ্ধা করার দিন হিসাবে পরিচিত, এবং যারা চার্চ দ্বারা সরকারী সাধু বলে বিবেচিত হয়েছে। নভেম্বর ২, (অল সোলস ডে), বা “মৃত দিবস”, হল সেই দিন যখন সমস্ত বিশ্বস্ত মৃতদের স্মরণ করা হয়। সেই দিন, পরিবারগুলি তাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য মোমবাতি জ্বালাতে, তাদের ফুল রেখে এবং প্রায়শই পিকনিক করতে কবরস্থানে যায়। অল সেন্টস’-“অল হ্যালোস ইভ” বা “হ্যালোয়েন”-এর আগের সন্ধ্যা হল বেসরকারীভাবে নরকের বাস্তবতা মনে রাখার, মন্দের কাছে হেরে যাওয়া আত্মাদের শোক করার এবং নরক এড়ানোর উপায়গুলি মনে রাখার জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্যাথলিক দিন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এটি সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে পালিত হয় হালকা-হৃদয় ভীতি ও ভয়ের চেতনায়, যা ভূতের গল্প, বনফায়ার, পোশাক পরা, জ্যাক-ও-লন্ঠন খোদাই করা এবং ” ট্রিক-অর-ট্রিটিং” (দ্বারে দ্বারে গিয়ে মিছরির জন্য ভিক্ষা করা)।

    উত্তর আমেরিকা

    অফরেন্ডা টেকুইস্কিয়াপান, মেক্সিকোতে

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকানাডায়, ফুল, পুষ্পস্তবক, কবরের সজ্জা এবং কখনও কখনও মোমবাতি, খাবার, ছোট নুড়ি বা মৃতদের জীবনের মূল্যবান জিনিসগুলি মৃতদের সম্মান করার উপায় হিসাবে সারা বছর কবরে রাখা হয়। উভয় দেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পটভূমিতে এই ঐতিহ্যের উৎপত্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মেমোরিয়াল ডে-তে অনেক লোক মৃত প্রিয়জনদের সম্মান জানায় যারা সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। ইস্টার, ক্রিসমাস, ক্যান্ডেলমাস এবং অল সোলস ডে, ডে অফ দ্য ডেড বা সামহেন-এর মতো ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সহ দিনগুলিও এমন সময় যখন মৃত ব্যক্তির আত্মীয় ও বন্ধুরা তাদের প্রিয়জনের কবরে জড়ো হতে পারে। ক্যাথলিক চার্চে, একজনের স্থানীয় প্যারিশ চার্চ প্রায়ই মৃতদের জন্য তাদের মৃত্যুবার্ষিকী বা অল সোলস ডেতে প্রার্থনা করে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মেমোরিয়াল ডে হল ফেডারেল ছুটির দিন যা দেশের সেনাবাহিনীতে কাজ করা মৃত পুরুষ ও মহিলাদের স্মরণ করার জন্য, বিশেষ করে যারা যুদ্ধে বা সক্রিয় চাকরির সময় মারা গিয়েছিল। আরলিংটন ও গেটিসবার্গের মতো ১৪৭টি জাতীয় কবরস্থানে, স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য প্রতিটি কবরে ছোট আমেরিকান পতাকা রাখা সাধারণ। মে মাসের শেষ সোমবার মেমোরিয়াল ডে ঐতিহ্যগতভাবে পালন করা হয়, ৩-দিনের সাপ্তাহিক ছুটির জন্য বরাদ্দ করা হয় যেখানে অনেক স্মারক পরিষেবা ও প্যারেড শুধুমাত্র সারা দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতে ২৬টি আমেরিকান কবরস্থানে (ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইউনাইটেড) কিংডম, ফিলিপাইন, পানামা, ইতালি,লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস ও তিউনিসিয়া)। এটি প্রবীণদের মধ্যে তাদের মৃত্যুর তারিখে পতিত পরিষেবা সদস্যদের স্মরণ করা সাধারণ অভ্যাস। বিশ্বযুদ্ধে তাদের শহর মুক্ত করার যুদ্ধে মারা যাওয়া আমেরিকানদের স্মরণ করার সময় অন্যান্য দেশেও এই অভ্যাসটি সাধারণ। এর উদাহরণ হল ১৬ আগস্ট (১৯৪৪) কর্নেল গ্রিফিথ, লেভেসে শত্রুদের ক্রিয়াকলাপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা যান, একই দিনে তিনি চার্টেস ক্যাথেড্রালকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর কৃতিত্ব পান।

    ইহুদি ধর্মে, যখন কবর স্থান পরিদর্শন করা হয়, তখন শিরস্তরের উপর একটি ছোট নুড়ি স্থাপন করা হয়। যদিও এর কোন সুস্পষ্ট উত্তর নেই কেন, নুড়ি ফেলে রাখার এই রীতিটি বাইবেলের সেই দিনগুলিতে হতে পারে যখন মানুষ পাথরের স্তূপের নীচে চাপা পড়েছিল। আজ, তারা টোকেন হিসাবে বামে আছে যে মানুষ সেখানে পরিদর্শন এবং মনে রাখা হয়েছে।[৩৬]

    বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির আমেরিকানরা তাদের বাড়িতে তাদের পূর্বপুরুষদের ছবি, ফুল এবং স্মৃতিচিহ্ন সহ মৃত প্রিয়জনদের জন্য উৎসর্গীকৃত মন্দির তৈরি করতে পারে। ক্রমবর্ধমানভাবে, রাস্তার ধারে অনেক মন্দির দেখা যেতে পারে মৃত আত্মীয়দের জন্য যারা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল বা সেই স্থানেই মারা গিয়েছিল, কখনও কখনও রাজ্য বা প্রদেশ দ্বারা অর্থায়ন করা হয় কারণ এই মার্কারগুলি বিপজ্জনক এলাকায় সাবধানে গাড়ি চালানোর জন্য শক্তিশালী অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। ওয়াশিংটন, ডি সি-তে ভিয়েতনাম ভেটেরান্স মেমোরিয়াল, বিশেষ করে মৃত ব্যক্তিদের অর্ঘ্য দেবার জন্য পরিচিত; অবশিষ্ট আইটেম জাতীয় উদ্যান পরিষেবা দ্বারা সংগ্রহ করা হয় এবং আর্কাইভ করা হয়।

    চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস-এর সদস্যরা অন্যান্য পরিবারের সাথে তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য মরণোত্তর বাপ্তিস্ম এবং অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান করে।

    নেটিভ আমেরিকানরা মৃতদের পূজার ব্যাপারে খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিল না, যদিও তারা মৃতদেরকে কাপড় ও সরঞ্জাম দিয়ে কবর দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে কবরস্থানে খাবার ও পানীয় রেখে দিতে পরিচিত ছিল; পুয়েব্লো ভারতীয়রা মৃতদের ধর্মকে সমর্থন করত যারা আচারিক নৃত্যের মাধ্যমে মৃতদের পূজা করত বা আবেদন করত।[৩৭]

    ইসলাম

    ইসলাম কবর মাজার ও পূর্বপুরুষ উপাসনা সম্পর্কে জটিল ও মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি আছে। অনেক প্রারম্ভিক ইসলামিক ব্যক্তিত্বের কবর হল মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্থান, যার মধ্যে আলিও রয়েছে এবং অনেক সাহাবী ও প্রাথমিক খলিফা সহ কবরস্থান। অন্যান্য অনেক সমাধি হল প্রধান স্থাপত্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্থান, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় সমাধি এবং ভারতের তাজমহল। যাইহোক, ওয়াহাবি ধর্মীয় আন্দোলন সাধু পূজার ধারণাকে বিতর্কিত করে।[৩৮] এই আন্দোলনের অনুসারীরা সৌদি আরব এবং ইসলামিক রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল সহ অনেক কবরস্থান ধ্বংস করেছে।

    ইমান আহমাদ, আল-হাকিম এবং অন্যরা মারওয়ান ইবন আল-হাকাম-একজন অন্যায় শাসক-এর সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে তিনি একবার নবীর কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং একজন লোককে নবীর কবরে গাল দিয়ে দেখেছেন। মারওয়ান ইবনুল হাকাম জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি জানেন আপনি কি করছেন? কবরের কাছে, মারওয়ান ইবনে আল-হাকাম বুঝতে পারলেন যে এটি আবু আইয়ুব আল-আনসারি, নবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবী। আবু আইয়ুব আল-আনসারী উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি জানি আমি কি করছি। আমি এখানে আল্লাহর রাসূলের জন্য এসেছি – পাথরের জন্য নয়।” এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি নবীর সান্নিধ্যে দোয়া চাচ্ছেন, তাঁর কবর ঢেকে রাখা পাথরের জন্য নয়। আবু আইয়ুব আল আনসারী তার প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিলেন যা তিনি আল্লাহর রসূলকে বলতে শুনেছেন: “শাসকরা সঠিকভাবে শাসন করলে ইসলামের ধর্ম নিয়ে কাঁদবেন না। বরং এই ধর্মের জন্য কান্নাকাটি কর যদি শাসকরা ভুল শাসন করে থাকে।” তার প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে, আবু আইয়ুব মারওয়ান ইবনে আল-হাকামকে বলছিলেন: “আপনি সেই শাসকদের মধ্যে একজন নন যারা সঠিকভাবে ইসলামের নিয়ম অনুসারে শাসন করছেন।

    ইসলামের কিছু অনুসারী সাধু পূজার ধারণার সাথে বিরোধিতা করে, কিন্তু এই প্রথাটি তুরস্কে, বিশেষ করে আলেভি মুসলমানদের মাধ্যমে বজায় রাখা হয়েছে।[৩৮]

    প্রাচীন সংস্কৃতি

    পূর্বপুরুষের উপাসনা অনেক ঐতিহাসিক সমাজের বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য ছিল।

    প্রাচীন মিশর

    যদিও কিছু ইতিহাসবিদ দাবি করেন যে প্রাচীন মিশরীয় সমাজ তার বিস্তৃত সমাধি ও মমিকরণের আচারের কারণে “মৃত্যু সম্প্রদায়” ছিল, এটি ছিল বিপরীত। দর্শন যে “এই পৃথিবী শুধু অশ্রুর উপত্যকা” এবং মৃত্যু ও ঈশ্বরের সাথে থাকা পার্থিব অস্তিত্বের চেয়ে ভাল অস্তিত্ব প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অজানা ছিল। এর অর্থ এই নয় যে তারা জীবনের কঠোরতার সাথে অপরিচিত ছিল; বরং, তাদের নীতির মধ্যে এই জীবন ও পরবর্তী জীবনের মধ্যে ধারাবাহিকতার অনুভূতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিশরীয় জনগণ তাদের দৈনন্দিন জীবনের সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও ধর্মকে এতটাই ভালবাসত যে তারা পরবর্তীতে সেগুলি চালিয়ে যেতে চেয়েছিল-যদিও কেউ কেউ সুন্দর পশ্চিমে (মিশরীয় পরবর্তী জীবন) আরও ভাল স্টেশনের আশা করতে পারে।

    সমাধিগুলি পরকালে বাসস্থান ছিল এবং তাই সেগুলি যত্ন সহকারে নির্মিত ও সজ্জিত করা হয়েছিল, ঠিক যেমন জীবিতদের জন্য ঘর ছিল। মমিকরণ মৃতদেহ সংরক্ষণের একটি উপায় ছিল যাতে মৃত ব্যক্তির কা (আত্মা) জীবিত থাকাকালীন উপভোগ করা জিনিসগুলির অফার পেতে ফিরে আসতে পারে। যদি মমিকরণ সাশ্রয়ী না হয়, তবে মৃত ব্যক্তির অনুরূপ “কা-মূর্তি” এই উদ্দেশ্যে খোদাই করা হয়েছিল। ধন্য মৃতদের সম্মিলিতভাবে আখু বা “চকচকেরা” (একবচন: আখ) বলা হত। তাদের বর্ণনা করা হয়েছিল “বাদামের পেটে সোনার মতো জ্বলজ্বল” (ড. নুইত) এবং প্রকৃতপক্ষে অনেক সমাধি ও মন্দিরের ছাদে সোনার তারা হিসাবে চিত্রিত হয়েছিল।

    যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কা আখ হয়ে ওঠে তা মৃত্যুর পরে স্বয়ংক্রিয় ছিল না; এটি ডুয়াট বা আদারওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে ৭০-দিনের যাত্রা জড়িত, যা মৃতদের লর্ড ওয়েসির (ড. ওসিরিস) এর সামনে বিচারের দিকে পরিচালিত করেছিল যেখানে কা-এর হৃদয়কে মাআতের পালক (সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে) এর বিপরীতে ওজন করা হবে ) যাইহোক, যদি কা সঠিকভাবে প্রস্তুত না করা হয়, তাহলে এই যাত্রা বিপজ্জনক বিপদ এবং অদ্ভুত দানব দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারে; তাই আবিষ্কৃত প্রাচীনতম ধর্মীয় গ্রন্থগুলির মধ্যে কিছু, যেমন আনি এর প্যাপিরাস (সাধারণত দ্য বুক অফ দ্য ডেড নামে পরিচিত) এবং পিরামিড লিপিগুলি আসলে গাইড হিসাবে লেখা হয়েছিলমৃত ব্যক্তিকে সফলভাবে দুআত নেভিগেট করতে সাহায্য করুন।

    যদি হৃদয় মা’আতের পালকের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখে, তাহলে কা বিচার রায় দিয়েছিল এবং আখ হিসেবে সুন্দর পশ্চিমে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল যিনি ছিলেন মা হেরু (“স্বরের সত্য”) দেবতা এবং অন্যান্য আখুদের মধ্যে বসবাস করার জন্য। এই মুহুর্তে শুধুমাত্র কা-কে আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জীবিতদের দ্বারা পূজা করার যোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল। যারা দুআতে হারিয়ে গেছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার এড়াতে চেষ্টা করেছে তারা হতভাগ্য (এবং কখনও কখনও বিপজ্জনক) মুতু, অস্থির মৃত। যাদের সত্যিকারের দুষ্ট হৃদয় পালককে ছাড়িয়ে গেছে তাদের জন্য, দেবী অ্যামিট তাদের গ্রাস করার জন্য ওয়েসিরের বিচারের আসনের পিছনে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি যৌগিক প্রাণী ছিলেন যা মিশরের তিনটি মারাত্মক প্রাণীর মতো: কুমির, জলহস্তী ও সিংহ। আম্মিটকে খাওয়ানোর জন্য এটিকে ইটারনাল ভ্যায়েডে পাঠানো হয়েছিল, কা হিসেবে “অনির্মিত” হতে হবে।

    আম্মিত খাওয়ার পাশাপাশি, শারীরিক মৃত্যুর পর একজন কাকে সবচেয়ে খারাপ পরিণতি ভুলে যেতে হবে। এই কারণে, প্রাচীন মিশরে পূর্বপুরুষের পূজা ছিল স্মরণের গুরুত্বপূর্ণ আচার যাতে এই জীবনে এবং পরবর্তী জীবনে কাকে “জীবিত” রাখা যায়। রাজকীয়, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ও ধনীরা তাদের স্থানীয় যাজকদের সাথে তাদের সমাধিতে প্রার্থনা এবং নৈবেদ্য দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলেন। বিনিময়ে, যাজকদের প্রদত্ত পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান হিসাবে নৈবেদ্যগুলির অংশ রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিছু  কবরের শিলালিপি এমনকি পথচারীদেরকে মৃত ব্যক্তির নাম উচ্চস্বরে বলার জন্য আমন্ত্রণ জানায় (যা তাদের স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করতেও সাহায্য করেছিল) এবং তারা চাইলে জল, প্রার্থনা বা অন্যান্য জিনিস দেওয়ার জন্য। স্বল্প ধনী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বাড়িতে, পারিবারিক  আখু এর আবাসন ছবি এবং পূজার বেদি হিসেবে পরিবেশনের উদ্দেশ্যে দেয়ালে কুলুঙ্গি খোদাই করা হয়।

    কেমেটিক অর্থোডক্সির ধর্মে এই একই ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পূর্বপুরুষদের পূজার অনুশীলনের অনেকগুলি আজও চালু রয়েছে।

    প্রাচীন রোম

    আরও তথ্যের জন্য দেখুন: রোমান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধি

    দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকের রোমান সারকোফ্যাগাস থেকে বিশদ বিবরণ যা মেলেগারের মৃত্যুকে চিত্রিত করে।

    রোমানরা, অনেক ভূমধ্যসাগরীয় সমাজের মতো, মৃতদের মৃতদেহকে দূষিত বলে মনে করত।[৩৯] রোমের ধ্রুপদী যুগে, মৃতদেহকে প্রায়শই দাহ করা হতো এবং ছাই শহরের দেয়ালের বাইরে একটি সমাধিতে রাখা হতো। ফেব্রুয়ারী মাসের বেশির ভাগ সময়ই ছিল মৃতদের শুদ্ধিকরণ, প্রায়শ্চিত্ত ও শ্রদ্ধার জন্য, বিশেষ করে প্যারেন্টালিয়ার নয় দিনের উৎসবে, যে সময়ে পরিবার তার পূর্বপুরুষদের সম্মান করেছিল। পরিবার কবরস্থান পরিদর্শন করে এবং কেক ও ওয়াইন ভাগ করে, মৃতদের জন্য অর্ঘ্য হিসাবে এবং নিজেদের মধ্যে খাবার হিসাবে উভয়ই। প্যারেন্টালিয়া ২১শে ফেব্রুয়ারী আরও নোংরা ফেরালিয়ার সাথে সমাপ্তি ঘটায়, মানেসকে বলিদান ও নৈবেদ্য প্রদানের সর্বজনীন উৎসব, মৃতদের সম্ভাব্য দূষিত আত্মা যাদের প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন ছিল।[৪০] ল্যাটিন এপিটাফের সবচেয়ে সাধারণ শিলালিপি শব্দগুলির মধ্যে একটি হল ডিস ম্যানিবুস, সংক্ষেপে ডিএম, “মানেস দেবতাদের জন্য”, যা কিছু খ্রিস্টান সমাধির পাথরেও দেখা যায়। ২২ ফেব্রুয়ারী ক্যারিস্টিয়া ছিল পারিবারিক লাইনের উদযাপন কারণ এটি বর্তমান পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।[৪১]

    সম্ভ্রান্ত রোমান পরিবার তাদের বাড়ির ট্যাবলিনিয়ামে (ডোমাস) পূর্বপুরুষের ছবি (কল্পনা) প্রদর্শন করেছিল। কিছু উৎস ইঙ্গিত করে যে এই প্রতিকৃতিগুলি আবক্ষ্য ছিল, আবার অন্যরা বলে যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মুখোশও প্রদর্শিত হয়েছিল। মুখোশগুলি, সম্ভবত মৃত ব্যক্তির মুখ থেকে মোমের আদলে তৈরি, অভিজাত রোমান মারা যাওয়ার সময় শেষকৃত্যের মিছিলের অংশ ছিল। পেশাগত শোকার্তরা মৃত ব্যক্তির পূর্বপুরুষদের মুখোশ এবং রেগালিয়া পরতেন কারণ মৃতদেহ বাড়ি থেকে, রাস্তা দিয়ে এবং শেষ বিশ্রামস্থলে নিয়ে যাওয়া হত।[৪২]

  • পুলিন্দ

    পুলিন্দ

    বিন্ধ্য পর্বতের সঙ্গে পুলিন্দ উপজাতির যোগ সুস্পষ্ট হলেও, মনে করা হয়, এদের কয়েকটি উপজাতীয় শাখা হিমালয়অসম অঞ্চলেও বসবাস করত।[৪] তাদের হিমালয়ে বসবাসকারী শাখাটিকে ভারতীয় সাহিত্যে কিরাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪]

  • পুরুষত্ব

    পুরুষত্ব

    পুরুষত্ব বা নরত্ব (ছেলেস্বভাব, পুরুষালি ভাব অথবা পৌরুষ নামেও পরিচিত) হল কতগুলো বৈশিষ্ট্য, চরিত্র ও প্রবণতার সমষ্টি যা ছেলে বা পুরুষের মধ্যে প্রকাশিত হয়। পুরুষত্ব সামাজিকভাবে প্রস্ফুটিত হয়, কিন্তু সামাজিক ও জীববৈজ্ঞানিক প্রভাবক দ্বারা গঠিত হয়,[১][২][৩] যদিও এটি জীববিজ্ঞানগত পুরুষ লিঙ্গ হতে আলাদা। [৪][৫] নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই পুরুষালি লক্ষণ ও আচরণ দেখা যেতে পারে। যাদের মধ্যে পুরুষালি ও মেয়েলি উভয় চরিত্রের প্রভাব দেখা যায় তাদের এন্ড্রোজিনাস বলা হয়। নারীবাদী দার্শনিকগণ মনে করেন লিঙ্গের অস্পষ্টতা লৈঙ্গিক পার্থক্যকে জটিল করে তুলতে পারে। [৬][৭]

    পুরুষত্ব

    সাহস, স্বাধীনচেতা হওয়া, দৃঢ়তা প্রভৃতি পুরুষত্বের গুণ। [৮][৯][১০] এসকল গুণ স্থান ও পরিবেশভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। [১১] পুরুষত্ব ও ক্ষমতাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে, দায় ও পরিণতি উপেক্ষা করা হলে তাকে ম্যাকিস্মো ( machismo) বলা হয়। [১২]

  • নৃবিজ্ঞান

    নৃবিজ্ঞান

    আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান (ইংরেজি ভাষায় Anthropology) মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা । কিন্তু মানুষ বিষয়ক অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির চেয়ে এটির পরিধি ব্যাপকতর। বিশ্বের সকল অঞ্চলের, সংস্কৃতির মানুষকে নিয়ে এই বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়। লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষের বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের গবেষণাও নৃবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। নৃবিজ্ঞানে মানুষকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষণা করা হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ ও তাদের সব রকমের অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে ও সেগুলি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা সামাজিক রীতিনীতি হতে পারে।

    নৃবিজ্ঞান

    ইতিহাস

    প্রথম দিকে বিমূর্ত বিশেষ্য হিসাবে ইতিহাসের ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান বা নৃতত্ত্ববিজ্ঞানকে ব্যবহার করা হতো । বর্তমানের নৃবিজ্ঞান শব্দের যে রূপ তা প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল রেনেসাঁস জার্মানিতে, ম্যাগনাস হন্ড্ট ও ওটো ক্যাসম্যানের কাজগুলোতে । তাদের নতুন ল্যাটিন অ্যানথ্রোপোলজিয়া গ্রিক শব্দ ánthrōpos (ἄνθρωπος, “মানব”) এবং lógos (λόγος, “অধ্যয়ন”) এর মিশ্র রূপ থেকে উদ্ভব হয়েছে । (এটি বিশেষণ হিসাবে অ্যারিস্টট্লের কাজগুলিতে প্রকাশিত হয়েছিল) ১৮ শতকের প্রথম দিকে এটি ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা শুরু হয় সম্ভবত ফরাসি এনথ্রোপোলজির মাধ্যমে।

    ১৯ শতক

    ১৬৪৭ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বার্থোলিনস নিম্নরূপে ”l’anthropologie” কে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন – নৃবিজ্ঞান বা বলা যেতে পারে মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে সচরাচর কিংবা যুক্তিসংগত কারণেই ভাগ করা হয় শরীর বিদ্যায়-যা আলোচনা করে দেহ ও তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এবং মনোবিদ্যায়-যা আলোচনা করে আত্মা নিয়ে।’ [১]

    পরবর্তীতে এলোমেলোভাবে এই পরিভাষা বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন এতিয়েন সেরেস ১৮৩৯ সালে তুলনামূলক শরীরতত্ত্বের ভিত্তিতে মানুষের প্রাকৃতিক ইতিহাস বা জীবাশ্মবিজ্ঞান ব্যাখ্যার জন্য এবং ১৮৫০ সালে National museum of natural history(France) এর Jean louise armand de quatrefages breau নৃবিদ্যা এবং নৃকূলবিদ্যার সাহায্যে চেয়ার তৈরির ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে এই পরিভাষা ব্যবহার করেছিলেন।বিভিন্ন সময়ে নৃবিজ্ঞানীদের বেশ কিছু ক্ষণস্থায়ী সংগঠন তৈরি হয়েছে।১৮৩৯ সালে ফ্রান্সের Societe ethnologique de Paris যারা প্রথবার নৃকূলবিদ্যা পরিভাষা ব্যবহার করেছিলো তারা মূলত ছিলো দাস প্রথা বিরোধী।ফলে ১৮৪৮ সালে এই প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে সংগঠনেরও বিলুপ্তি ঘটে।

    ২০ ও ২১ শতক

    ক্ষেত্র

    সামাজিক-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান

    সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র্যতা এবং সাদৃশ্যতা  অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে থাকে। সংস্কৃতি হলো একটি মানবগোষ্ঠীর ধর্ম, সামজিক রীতিনীতি, খাবার, আচার ও শিল্পের বৈশিষ্ট্য। ফলে, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানে মানুষ কিভাবে সংস্কৃতির অংশ হয়ে জীবন-যাপন করে, সেটা অন্যতম আলোচ্য বিষয়। সংস্কৃতির পরিবর্তনের ব্যাপারগুলোও এইক্ষেত্রে আলোচিত হয়৷  সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান সামাজিক কাঠামোর উন্মোচন,প্রতীকের ব্যাখ্যা প্রদানের কাজও করে থাকে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরা মাঠকর্ম অথবা সংস্কৃতির তুলনামূলক অধ্যয়নের মাধ্যমে করে থাকেন। মাঠকর্মে নৃবিজ্ঞানীরা যে সমাজ, সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করেন তারা সেই জনগোষ্ঠীর সাথে বসবাস করে এসকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। প্রথাগতভাবে নৃবিজ্ঞানীরা ছোট কোন জনগোষ্ঠীতে থেকে ঐ জনগোষ্ঠীর আচার, রীতিনীতি, প্রথা, বিশ্বাস, সামাজিক রীতি, ধর্ম, অর্থনীতি ও রাজনীতি পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়ন করেন। নৃবৈজ্ঞানিক চিন্তাসূত্র নৃতাত্ত্বিক মাঠকর্ম থেকে উদ্ভূত হয় বলে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিজ্ঞান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সংস্কৃতির আড়াআড়ি পাঠের ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীরা মাঠকর্ম থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করে থাকে। সাংস্কৃতিক তুলনা, বৈচিত্র্য নির্ণয় ও সাধারণীকরণ করতে এথনোলজি ( Ethnology ) অনুসরণ করা হয়। অনুমান নিরীক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত তত্ত্ব নির্মাণে এথনোলজি সাহায্য করে। বহু মহাদেশে নৃবিজ্ঞান বলতে কেবলমাত্র ‘সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান’ কে বোঝায় কিন্তু উত্তর আমেরিকায় নৃবিজ্ঞানের যেকোনো উপবিভাগের অনুশীলন ঘটে ‘চার ক্ষেত্রের’ সাপেক্ষ হিসেবে।[১]

    জৈবিক নৃবিজ্ঞান

    নৃবিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে মানুষের প্রাচীনসত্তা বা জৈবিকসত্তা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা হয়ে থাকে। প্রধান উদ্দেশ্য হল – মানুষকে জৈবিকসত্তা হিসাবে বিবেচনা করে তার প্রাণিজগতে সঠিক অবস্থান, ক্রমবিকাশের ধারায় তার উদ্ভব, বৈজ্ঞানিক অভিধা,তার জিনের গঠন, শারীরিক গঠনগতবিদ্যা এবং বাসস্থানগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে সর্বেক্ষণ ও পর্যালোচনা।

    প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান

    প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান হলো অতীতের মানুষ ও তার সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণার ক্ষেত্র। নৃবিজ্ঞানের এই শাখায় মানুষের পূর্বসূরী ও মানব-সদৃশ প্রাণীর জীবাশ্মের নিদর্শন এবং সেইসব মানুষ ও মানব-সদৃশ প্রাণী গোষ্ঠীর জীবন যাপনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক ও সামাজিক বস্তুসামগ্রী গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা। এই ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির সাথে বর্তমানের সেতুবন্ধন।

    ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান

    নৃবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হল দৈহিক নৃবিজ্ঞান। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের একটি উপশাখায় পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ও পরবর্তীকালে তাদের শারীরিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য জীবাশ্মবিজ্ঞান নামে পরিচিত। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের আরেকটি উপশাখায় বর্তমান মনুষ্য সমাজগুলির মধ্যকার দৈহিক বৈচিত্র্যের প্রকৃতি ও কারণ আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য বৈচিত্র্য নামে পরিচিত।

    নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় প্রধান শাখা হল সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান আবার তিনটি উপশাখায় বিভক্ত—প্রত্নবিজ্ঞান, নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানজাতিবিজ্ঞান। এই তিনটি উপশাখাই মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এগুলি থেকে কোন নির্দিষ্ট সমাজের চিন্তাধারা ও আচরণের রীতিনীতি বুঝতে পারা যায়।

    প্রত্নবিজ্ঞানীরা প্রাগৈতিহাসিক মানুষদের দৈনন্দিন জীবন এবং রীতিনীতি তাত্ত্বিকভাবে পুনর্গঠন করতে চেষ্টা করেন। এছাড়াও তারা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অনুসরণ করেন এবং এই পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তারা পুরাতন মনুষ্য সংস্কৃতিগুলির অবশেষ থেকে ইতিহাস পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালান।

    নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানীদের একাংশ ভাষার আবির্ভাব এবং সময়ের সাথে ভাষার বিস্তার নিয়ে আগ্রহী; এই ক্ষেত্রটি ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান নামে পরিচিত। তারা সমকালিক ভাষাগুলি কীভাবে একে অপরের থেকে আলাদা, তা নিয়েও গবেষণা করেন; এই গবেষণা বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। এছাড়াও তারা সমাজে ভাষার প্রকৃত প্রয়োগ নিয়েও আগ্রহী; এই ক্ষেত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে সমাজভাষাবিজ্ঞান।

    বর্তমান ও নিকট অতীতের জাতিগুলির রীতিনীতি, চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের মধ্যে কী পার্থক্য আছে এবং কেনই বা এই পার্থক্য হয়, তা জাতিবিজ্ঞানে আলোচিত হয়। জাতিবিজ্ঞানীদের একাংশ জাতিবিবরণে আগ্রহী; একজন জাতিবিবরক কোন একটি সমাজে গিয়ে বছরখানেক বাস করেন, কথা বলেন এবং সেই সমাজের রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সামাজিক দলটির একটি পূর্ণাঙ্গ জাতিগত বিবরণ প্রস্তুত করেন। আরেক ধরনের জাতিবিজ্ঞানীর নাম জাতি-ইতিহাসবিদ; এরা লিখিত দলিলপত্র অনুসন্ধান করে সময়ের সাথে কোন একটি নির্দিষ্ট জাতিগত দলের জীবনধারা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। তৃতীয় আরেক ধরনের জাতিবিজ্ঞানীকে বলা হয় আন্তঃসাংস্কৃতিক গবেষক; এরা জাতিবিবরক ও জাতিইতিহাসবিদদের উপাত্ত থেকে কিছু সংস্কৃতির নমুনা নেন এবং কোন ধরনের রীতিনীতি সাধারণভাবে সব ধরনের সমাজে প্রযোজ্য, তা আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।

    নৃবিজ্ঞানের গবেষণা মানুষকে সহিষ্ণু করতে সাহায্য করতে পারে। অন্য জাতির লোক কেন সাংস্কৃতিক ও দৈহিক দিক থেকে আলাদা আচরণ করে, নৃবিজ্ঞান তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়। যেসব সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও কাজকর্ম আমাদের কাছে ভুল বা অশোভন মনে হতে পারে, সেগুলি হয়ত বিশেষ পরিবেশগত বা সামাজিক অবস্থার জন্য অভিযোজনের ফসল।

    এছাড়াও নৃবিজ্ঞানের আরো অনেক শাখা রয়েছে, সেগুলো হলোঃ- স্বাস্থ্য নৃবিজ্ঞান, ব্যবসায় নৃবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক নৃবিজ্ঞান প্রভৃতি।

  • তুর্ক-মঙ্গোল ঐতিহ্য

    তুর্ক-মঙ্গোল ঐতিহ্য

    তুর্ক-মঙ্গোল ঐতিহ্য

    এরও পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক কালেও তুর্ক-মঙ্গোল ঐতিহ্য ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যেই প্রোটো-তুর্কীয় ভাষা থেকে প্রোটো-মঙ্গোলীয় ভাষার পূর্বপুরুষ ভাষাগুলোতে প্রচুর শব্দ প্রবেশ করে। ব্যক্তিবাচক সর্বনামগুলোতে তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয় ভাষাগুলোতে অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় (যেমন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে যথাক্রমে *b-, *s-, *i- প্যারাডাইম)। এরকম অন্যান্য সাদৃশ্যগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের পূর্বে তুর্কীয় ভাষাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগে বিভক্ত হয়ে বিকশিত হবার আগেই তৈরি হয়ে যায়।[২] তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয় মানুষেরা অন্তত সেই সময় থেকেই একই ধর্ম তেনগ্রিবাদ এর অনুসারী ছিল।

    প্রাচীন কালে অনেক সময় ব্যাপী ভাষাগত সংস্পর্শে থাকার কারণে তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয়দের ভাষায় আরও বেশি মৌলিক ফনোট্যাক্টিক, ব্যাকরণগত ও টাইপোলজি সংক্রান্ত সাদৃশ্য দেখা যায় (যেমন সঙ্কালিক স্বরসঙ্গতি, ব্যাকরণগত লিঙ্গের অভাব, প্রচুর সংযোজন, উচ্চমাত্রার সাদৃশ্যপূর্ণ ফনোট্যাকটিকাল নিয়ম)।[২] অতীতে এরকম সাদৃশ্যগুলোর এদের মধ্যকার জিনগত সম্পর্ক অনুসন্ধানে ধাবিত করে, আর সেখান থেকে আলতাইক ভাষা পরিবার নামক ধারণার জন্ম হয় যা এখন বিস্তৃত পরিসরে পণ্ডিতমহলে গৃহীত। আরও সম্প্রতি, জিনগত সম্পর্কের নির্দিষ্ট প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাব হেতু, এই সাদৃশ্যগুলোকে ভাষা সংস্পর্শের তিনটি জ্ঞাত সময়কাল অনুসারে ভাগ করা হয়েছে। এই সাদৃশ্যগুলোর কারণে উত্তর-পূর্ব এশীয় ভাষা অঞ্চল এর একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে তুংগুসীয়, কোরীয় এবং জাপনীয় ভাষা পরিবারও অন্তর্গত, যদিও তুর্কীয় এবং মঙ্গোলীয় ভাষাগুলোই সব থেকে বেশি সাদৃশ্য প্রদর্শন করে।

    আরও দেখুন