আইন সমাজতত্ত্ব বা আইন সমাজবিজ্ঞান (বা আইনি সমাজবিজ্ঞান) প্রায়শই সমাজবিজ্ঞানের একটি উপশৃঙ্খলা বা আইনি অধ্যয়নের মধ্যে একটি আন্তঃশৃঙ্খলা পদ্ধতির হিসাবে বর্ণনা করা হয়। [১] কেউ কেউ সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে “প্রয়োজনীয়ভাবে” আইন হিসাবে সমাজবিজ্ঞানকে দেখেন,[২] তবে অন্যরা এটিকে আইন ও সমাজবিজ্ঞানের শাখার মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করার ঝোঁক রয়েছে।[৩] এখনও অনেকে এটিকে সমাজবিজ্ঞানের একটি উপশৃঙ্খলা বা আইনি অধ্যয়নের একটি শাখা হিসাবে বিবেচনা না করে, বরং বিস্তৃত সামাজিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্যের মধ্যে নিজস্ব অধিকার নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করে। সেই অনুযায়ী, মূলধারার যে সমাজবিজ্ঞান থেকে আলাদা ও তদনুসারে, এটি মূলধারার সমাজবিজ্ঞানের নিয়মতান্ত্রিকভাবে, তাত্ত্বিক ভিত্তি করে আইনের গবেষণামূলক অধ্যয়ন হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। অন্যান্য দেশের ন্যায় রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে আইন ও সমাজ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। আইন ও সমাজ সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠান প্রার্থক্য ছিল বাংলাদেশে আগাগোড়াই। মূলত পূর্বে বাংলা অঞ্চলে অপরাধমূলক আচরণের নিষ্পত্তি করাই আইন ও সমাজের মূল কাজ ছিল। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় শাস্তি প্রদান করা হতো। আইন ও সমাজ কে কেন্দ্র করে গুপ্তযুগে যে প্রতিষ্ঠান চলতো তাকে অধিকরণ বলা হত। অধিকরণ পরিচালনার জন্য একজন রাজকর্মচারী ও কিছু সমবায় সংঘের সদস্য থাকতো। প্রাচীন কিছু তাম্রলিপি থেকে অধিকরণ এর বিচার কার্যাবলীর বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রাচীন জমি ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যাদিও অধিকরণে কিছু প্রাচীন কাগজপত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগের অধিকরণ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপোষ মীমাংসা করা ছাড়া কোন কর্তৃত্ব দেখাতো না। মধ্যযুগের প্রাথমিক পর্যায়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য পৃথক হলে পল্লী ব্যবসায়ীদের শক্তি প্রতিপত্তি ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় তাই বলা যায় মধ্যযুগের প্রাথমিক পর্যায় থেকে পল্লী অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা ছড়িয়ে যায়। তারপর থেকে পল্লী অঞ্চলের নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সামরিক-সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণ করে। গুপ্তযুগ পরবর্তী শাসকরা ভূমি দান ও প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গুপ্ত পরবর্তী যুগে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছোট শাসকদের সাংস্কৃতিক সামরিক ও রাজনৈতিক সবরকম শক্তি কেন্দ্রের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুগল পূর্ব যুগের প্রত্যেক শাসক একেকজন সেনাধ্যক্ষ ছিল যারা বাংলায় দেশে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। সুলতানি এবং মোগল আমলে এভাবেই চলতো। সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় বাংলার সুলতান ও মুগল শাসকদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল নিরঙ্কুশ। ‘জগৎ একটি বাগান, আর রাষ্ট্র সে বাগানের মালী; সুলতানি রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ফকরুদ্দিন রাজি এমনই বলেছেন, আর রাষ্ট্র মানেই সুলতান, যার অভিভাবক হচ্ছে আইন।’ এ ধরনের বক্তব্যে বাংলার স্থানীয় গোষ্ঠীপতিদের সঙ্গে সুলতানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করার বা অন্য কোনোরূপ ক্ষমতা-বণ্টনের সুযোগ তেমন নেই। মধ্যযুগের শেষ আধুনিক যুগের শুরুতে বাংলায় দুইটি উৎস বিদ্যমান ছিল স্থানীয় প্রায়শই হিন্দু নিয়ে গঠিত ও প্রাদেশিক রাজধানী মুসলিম সুলতান ও মুগল শাসক। দুই গ্রুপের মধ্যে কে কার চেয়ে বেশি আপোষ সমঝোতা করতে পারে এনিয়ে তাদের দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুলভ আচরণ ছিল।
আধুনিক যুগে আইন ও সমাজবিজ্ঞান
আধুনিক যুগের শুরুতে স্থানীয় ও প্রাদেশিক ক্ষমতাধরদের মূল কাজ ছিল প্রজাদের মধ্যে কার বিভিন্ন সমস্যা সমঝোতা মীমাংসা করা। এসব করতে তারা নিজেদের মত আইন তৈরি ও ব্যাখ্যা করতেন। এর ফলে তৎকালীন সমাজে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব পূর্ণ বিকাশ লাভ করেছিল। তত্ত্বগতভাবে কাজীরা ছিলেন সুলতানি বা মুগল শাসকদের প্রতিনিধি। কিন্তু প্রত্যেক শহরের ইসলামী বিচারকদের এমন একটা কর্তৃত্ব ছিল যা রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন। সুলতান বা দেওয়ানের ছিল প্রকৃত ক্ষমতা, কিন্তু কাজীর অবস্থান নির্ভরশীল এমন একটা কর্তৃত্বের ওপর যার কোনো সীমাবদ্ধ এলাকা ছিল না। ফলে কাজীদের এক অন্যরকম বিচারিক ক্ষমতা ছিলো যাতে করে তারা মুসলিম অমুসলিম সবার প্রতি বিচার সংক্রান্ত যেকোন কাজ স্বাধীনভাবে করতেন। কাজীরা অন্যান্য শাসকের সিদ্ধান্ত ও যাচাই করতেন।
আইনের দৃষ্টিতে সমতা (এছাড়াও আইনের অধীনে সমতা হিসাবে পরিচিত, আইনি সমতা বা আইনি সমতাবাদ) নীতিটি হলো প্রতিটি স্বতন্ত্র সত্তাকে অবশ্যই আইনের দ্বারা সমানভাবে বিচার করতে হবে (আইসোনমি নীতি) এবং এগুলি সমস্ত ন্যায়বিচারের আইন (যথাযথ প্রক্রিয়া) এর সাপেক্ষে।[১] সুতরাং, আইনটি অবশ্যই নিশ্চয়তা দেয় যে, সরকার কর্তৃক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সুবিধাপ্রাপ্ত বা বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না বা পাবে না। আইনের আগে সমতা উদারবাদীদের মৌলিক নীতিগুলির মধ্যে একটি। [২][৩] এই নীতিটি সমতা, ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত হয়। সুতরাং, আইনের আগে সাম্যতার নীতিটি বেমানান। যেমন আইনি ব্যবস্থার সাথে অ্যাসলভারি, সার্ভিডির অস্তিত্ব রুদ্ধ করে দেয়।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার (ইউডিএইচআর) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “আইনের সামনে সকলেই সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষার জন্য কোনো বৈষম্য ছাড়াই সকলে অধিকারী”। [১] সুতরাং, জাতি, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, অধিকার, বৈষম্য বা পক্ষপাত ছাড়াই আইনের আওতায় প্রত্যেককে সমান আচরণ করতে হবে। সাম্যের সাধারণ নিশ্চয়তা বিশ্বের বেশিরভাগ জাতীয় সংবিধানে থাকে।[৪] তবে এই নিশ্চয়তাটি নির্দিষ্ট প্রয়োগগুলি ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদিও অনেকগুলি সংবিধান জাতিভেদে নির্বিশেষে সাম্যের নিশ্চয়তা দেয়,,[৫] তবে কেবলমাত্র কয়েকটি সংখ্যক জাতীয়তা নির্বিশেষে সমতার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়। [৬]
ইতিহাস
আইনজীবী গুয়ান ঝং (খ্রিস্টপূর্ব ৭২০–৬৪৫) ঘোষণা করেছিলেন যে শাসকের এখতিয়ারাধীন সমস্ত ব্যক্তি আইনের সামনে সমান।
পেরোকেরনেসিয়ান যুদ্ধের থুকাইডাইডেসের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ পেরিক্সের ৪৩১ বিসিইয়ের শেষকৃত্যের বক্তৃতায় অ্যাথেনীয় গণতন্ত্রের মুক্ত পুরুষ নাগরিকদের মধ্যে সমতার প্রশংসা করার একটি অংশ পাওয়া যায়:
আমরা যদি আইনগুলির দিকে নজর রাখি তবে তারা তাদের ব্যক্তিগত পার্থক্যে সকলের সাথে সমান ন্যায়বিচারের সামর্থ্য রাখে; যদি সামাজিক অবস্থানের দিকে, জনজীবনে অগ্রযাত্রা সক্ষমতার জন্য খ্যাতি হয়, শ্রেণিক বিবেচনার দ্বারা যোগ্যতায় হস্তক্ষেপ না করা হয়; আবার দারিদ্র্যও বাধা দেয় না।[৭]
প্রাচীন যুগে, মৌলিক সাম্যের উন্মাদ দমন একটি তুচ্ছ বিষয় ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে রোমান রাজতন্ত্রের উত্থান এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের প্লাইবস অ্যাসক্রোস্যান্ট ট্রাইব্যুনস প্রতিষ্ঠা, সিনসিনাটাসের পুত্র সিসো একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে ন্যায়সঙ্গত লিখিত আইন তৈরির প্রতিরোধে ফোরামের পক্ষ থেকে ধাওয়া করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে রোমান রাজতন্ত্রের উত্থান এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের প্লাইবস অ্যাসক্রোস্যান্ট ট্রাইব্যুনস প্রতিষ্ঠাতা সিনসিনাটাসের পুত্র সিসো একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে ন্যায়সঙ্গত লিখিত আইন তৈরির প্রতিরোধ করা ও বিচারালয়ের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে ধাওয়া করা। রোমের ক্ষেত্রে, প্লাবস (প্রাচীন রোমের নাগরিক সুখবিসুখ ও অধিকার হইতে বহুলাংশে বঞ্চিত জনসাধারণ) এবং পৃষ্ঠপোষকদের সংগঠন তাদের উপর নির্ভরশীলতা উভয় শ্রমিক এবং সৈন্যের অর্থ দ্বাদশ টেবিল স্থাপন এবং বৃহত্তর সাম্যতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আদেশের সংঘাতের সমাধান হয়েছিল। বিশেষত, সম্রাট বাদে সমস্ত নাগরিক রোমান সাম্রাজ্যকালেরোমান আইনে সমান ছিল। তবে, এই নীতিটি বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়নি এবং এমনকি ইউরোপে অভিজাত ও আভিজাত্যের উত্থানই আধুনিক যুগে অব্যাহত অসম আইনি ব্যবস্থা তৈরি করেছিল।
উদারনীতি
উদারনীতি আইনের সামনে সকল ব্যক্তির জন্য সমতার জন্য আহ্বান জানায়।[২] উদারপন্থী এবং আধুনিক আমেরিকান রক্ষণশীলদের দ্বারা গৃহীত ধ্রুপদী উদারপন্থা স্বতন্ত্র অধিকার ব্যয়ে দলগত অধিকার অনুসরণের বিরোধিতা করেছিল।[৩] তবে লক্কান উদারনীতি (ধ্রুপদী উদারনবাদের ভিত্তি) অন্যদের দ্বারা সামাজিক অধিকার এবং দায়িত্ব সহ ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। [৮]
নারীবাদ
আইনের আগে সমতা হলো নারীবাদের কিছু শাখার মতবাদ। ১৯ শতকে, আইনের আগে লিঙ্গ সমতা ছিলো একটি ভিত্তিগত লক্ষ্য, কিন্তু পরবর্তীতে কিছু নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরে রাখা হয় যে, আনুষ্ঠানিক আইন সমতায় নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকৃত ও সামাজিক সমতা তৈরি করতে যথেষ্ট নয়।
আইনবিদ্যায় স্নাতক বা ব্যাচেলর অফ লজ (ইংরেজি: Bachelor of Laws) বলতে ব্রিটিশ কমন ল’ (Common law) আইনব্যবস্থা যে সব দেশে প্রচলিত, সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন বিষয়ে প্রদত্ত প্রাথমিক উচ্চশিক্ষায়তনিক উপাধির সাধারণ নাম, যা ইংরেজিতে সংক্ষেপে এলএল.বি নামেও পরিচিত। মূলত লাতিন লিগাম ব্যাকালাউরেস হতে এলএল.বি. পরিভাষাটি আগত।
বিশ্বব্যাপী অধ্যয়ন
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের নিম্নলিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর অফ লজ অধ্যয়ন করা যায়:
বাংলা ভাষায় আইন–আদালতে ব্যবহৃত পরিভাষাসমূহের একটি তালিকা নিচে দেয়া হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ একসময় মোগল ও সুলতানদের শাসনাধীনে থাকায় এর বিচারব্যবস্থায় প্রচুর আরবি–ফারসি কৃতঋণ শব্দ ব্যবহৃত হয়। ফলে তৎসম ও তদ্ভব শব্দের পাশাপাশি এসব বিদেশি শব্দও এখানে করা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তালিকাটি বিন্যাস্ত করা হয়েছে ইংরেজি শব্দের বর্ণানুক্রম অনুসারে।
মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয় তাকে আইন বলে। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law যা Lag নামক শব্দ থেকে উদ্ভূত।[১] Lag এর আভিধানিক অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং যা সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।
আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্জকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আইন বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়।[২] ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিকদার্শনিকঅ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, “আইনের শাসন যেকোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল।”[৩] সামাজিক জীবনে যে রীতিনীতি বা বিধিবিধান মানুষ মেনে চলে তা হলো সামাজিক আইন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন হলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালার প্রেক্ষিতে সমাজে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সার্বজনীনভাবে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নির্দেশ।[৪]
সংজ্ঞা
মূলধারার সংজ্ঞা
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আইনের অসংখ্য সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মেরিয়াম-ওয়েস্টার হতে তৃতীয় নতুন আন্তর্জাতিক অভিধান আইনটিকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেন: আইন একটি সম্প্রদায়ের বাধ্যতামূলক রীতি; একটি নিয়ম বা আচরণের পদ্ধতি বা পদক্ষেপ যা একটি সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধ্যতামূলক হিসাবে নির্ধারিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত, স্বীকৃত বা প্রয়োগের দ্বারা অনুমোদনের (বাধ্যতামূলক, ডিক্রি, রিসক্রিপ্ট, আদেশ, অধ্যাদেশ, আইন, সমাধান, বিধি, বিচারিক সিদ্ধান্ত বা ব্যবহার হিসাবে) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। [৫]
১৯৭৩ সালে স্ক্রিবনার দ্বারা প্রকাশিত আইডিয়াস অফ হিস্ট্রি অফ আইডিয়াস আইন অনুসারে সংজ্ঞাটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল: “একটি আইনি ব্যবস্থা হলো মানব আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জটিল পদ্ধতি, একই সাথে এটি কেবল একটি অংশে ভূমিকা পালন করে, কম প্রাতিষ্ঠানিক ধরনের সামাজিক ও নৈতিক বিধিগুলির জন্য আচরণকে প্রভাবিত করে৷
বাংলাদেশের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ অনুসারে ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানি নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের স্থাবর সম্পত্তি যা পাকিস্তান আমলে ‘শত্রু সম্পত্তি’ ও বাংলাদেশ আমলে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ নামে অভিহিত হয়েছিল, তা ফেরৎ পেতে পারেন। এই আইনের ২০০১ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধিত হয়। সংশোধিত আইনের ৯ক ধারা অনুযায়ী সরকারী গেজেটে মৌজাভিত্তিক জেলাওয়ারি তালিকা প্রকাশের পর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে অর্পিত সম্পত্তির দাবিদার মনে করলে, তার দাবির সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ সরকারি গেজেট প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি অথবা ট্রাইব্যুনালে উক্ত সম্পত্তি অবমুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। [১]
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তফসিলে এমন বহু সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল যা কখনোই অর্পিত সম্পত্তি ছিল না। ফলে হাজার হাজার মানুষকে হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়। সাধারণ মানুষের দাবির মুখে সরকার আইনের “খ” তফসিলটি বাতিল করে। [২]
অর্পিত সম্পত্তি কী
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ‘ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস ১৯৬৫’ জারি করা হয়। এই বিধিমালা অনুসারে ওই ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়, তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘শত্রু সম্পত্তির’ নাম পরিবর্তন করে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ রাখা হয়। এসব অর্পিত সম্পত্তি মূল মালিক বা তদীয় বৈধ উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১’ প্রণয়ন করা হয়। তবে তা বাস্তবায়নের জণ্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা জারি না করায় আইন অনুসারে দীর্ঘকাল কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি।[৩]
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন (সংশোধন) আইন ২০১১
১১ ডিসেম্বর ২০১১ ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১১ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০১২
২১ মে ২০১২ ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১১ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। এই আইনের ১৩ ধারার ভাষ্য এই যে, “অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১১ কার্যকর হইবার ৩০০ (তিনশত)] দিনের মধ্যে সরকার এই ধারার বিধান অনুযায়ী ‘ক’ ও ‘খ’ তফসিলে বর্ণিত অর্পিত সম্পত্তির মৌজাভিত্তিক উপজেলা বা থানা বা] জেলাওয়ারী তালিকা প্রস্ত্তত করিয়া সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রকাশ করিবে।”[৪]
অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা ২০১২
২ মে ২০১২ এস. আর. ও. নম্বর ১০৭-এর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা জারি করা হয়। এই বিধিমালা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে গেজেটে প্রকাশিত জমির প্রকৃত দাবিদার মনে করলে, তার দাবির সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ সরকারি গেজেট প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি বরাবরে আবেদন করতে পারেন। [৫]
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (২য় সংশোধন) ২০১৩
১০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিতর্কিত “খ” তফসিলটি বাতিল করা হয়। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের “খ” তফসিলে এমন অনেক সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল যা কখনোই অর্পিত সম্পত্তি ছিল না। ফলে হাজার হাজার মানুষকে হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় এবং এই তফসিল সংশোধনের দাবি ওঠে। ভুক্তভোগী মানুষের দাবির মুখে সরকার আইনের “খ” তফসিলটি বাতিল করার উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (২য় সংশোধন) ২০১৩ উপস্থাপন ও পাস করা হয়। এই সংশোধনী আইনের মাধ্যমে মূল আইনের ২৮ ধারা যথাযথভাবে সম্প্রসারণ করা হয়।[২][৬]
গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহ
তফসিল-ক বর্ণিত অর্পিত সম্পত্তি : সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্পিত সম্পত্তি।
তফসিল-খ বর্ণিত অর্পিত সম্পত্তি : ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তি।
সরকারী গেজেটে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে তা না লাভের জন্য যদি কেউ আবেদন না করে তবে তা দখলে নিয়ে সরকার দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে পারবে।
অর্পিত সম্পত্তি ফেরৎ লাভের শর্তাবলী
সরকারী গেজেটে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে তা ফেরৎ লাভের জন্য আবেদন করতে হবে। না করলে অর্পিত সম্পত্তি সরকারি দখলে নিয়ে তা দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।
অর্পিত সম্পত্তি ফিরে হলে দাবিদারকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।
বিনিময় মামলার আওতায় যারা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য তাদেরকে ভারতে প্রদত্ত সম্পত্তির বিবরণী জমা দিতে হবে। [৭]
অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৮৭৬ হলো ব্রিটিশ ভারতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর শিল্পচর্চার মাধ্যমে পরাধীনতা ও উপনিবেশিক শাসকদের প্রতি প্রতিবাদ প্রতিরোধের জন্য তৎকালীন সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত একটি নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ।[১] এই আইনটি অদ্যাবধি ভারতবর্ষের বহু স্থানে বলবত্ রয়েছে।[২]
সার্বভৌমত্ব (বাংলা উচ্চারণ: [সার্বভৌমত্ব] (শুনুন)) বলতে কোন দেশ বা রাষ্ট্রের নিজের অভ্যন্তরীন এবং অন্যান্যরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বোঝায়। সার্বভৌমত্ব কোনো পরিচালনা পরিষদের বাইরের কোনো উৎস বা সংগঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা। রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, সার্বভৌমত্ব কোনো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এটি রাষ্ট্রগঠনের সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক মতবাদের একটি মূলনীতি।এটি রাষ্ট্র গঠনের মূখ্য উপাদান।আর সার্বভৌমের আদর্শই হলো আইন।এই উপাদান ব্যতীত কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।
সার্বভৌমত্বের প্রকারভেদ
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধারণা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এই বিতর্ক এখনো চলমান রয়েছে। এর ফলে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা, ধারণা এবং প্রয়োগে পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে আলোকায়নের সময়ে। সার্বভৌমত্বের বর্তমান ধারণায় ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, কর্তৃপক্ষ এবং স্বীকৃতি– এই চারটি দিক রয়েছে। স্টিফেন ডি. ক্রাসনার এর মতে, এই শব্দটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে অনুধাবন করা যায়ঃ
অভ্যন্তরীন সার্বভৌমত্ব – রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের কোনো কর্তৃপক্ষের চর্চিত সর্বময় ক্ষমতা।
আন্তঃনির্ভরশীল সার্বভৌমত্ব – রাষ্ট্রের সীমান্ত আছে ধরে নিয়ে তাতে চলাচলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
আন্তর্জাতিক আইনি সার্বভৌমত্ব – অন্যান্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক আইনি সার্বভৌমত্বের উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, শায়েখতান্ত্রিক সার্বভৌমত্ব শায়েখতন্ত্র, রাজকীয় সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ইসলামিক সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি।
ওয়েস্টফ্যালিয়ান সার্বভৌমত্ব – রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্যান্য কর্তৃপক্ষের উপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব (এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদাহরণঃ বাহ্যিক ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা অন্য কোনো বাহ্যিক শক্তি)।
আমরা প্রায়ই এই চারটি ধারণাকে একত্রে আসতে দেখি, কিন্তু এটি অপরিহার্য নয়। এই চারটি দিক একটি আরেকটির দ্বারা প্রভাবিত নয়, এবং এক দিয়ে সার্বভৌম না হয়েও অন্য দিক দিয়ে সার্বভৌম ছিল, এ ধরনের রাষ্ট্রের উদাহরণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইনের মতে, সার্বভৌমত্বের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল একে অর্থবহ হতে হলে বাকিদের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি থাকতে হবে, “সার্বভৌমত্ব একটি আইনি ব্যাপারের বাইরেও কিছু একটা, (…যার) পারস্পারিক স্বীকৃতি দরকার হয়। সার্বভৌমত্ব একটি কাল্পনিক বাণিজ্য, যাতে দুটি সম্ভাব্য বিরোধী পক্ষ বাস্তব সক্ষমতাকে সম্মান করে এই ধরনের স্বীকৃতিকে তাদের সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল কৌশল হিসাবে গ্রহণ করে।”
ইতিহাস
ধ্রুপদী ধারণা
রোমান আইনজ্ঞ উলপিয়ান লক্ষ করেন যে
জনগণ তাদের নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতা সম্রাটের কাছে স্থানান্তর করে। Cum lege regia, quae de imperio eius lata est, populus ei et in eum omne suum imperium et potestatem conferat (Digest I.4.1)
সম্রাট কোনো আইনের অধীন নন। Princeps legibus solutus est (Digest I.3.31)
সম্রাটের ইচ্ছাই সংবিধান। Quod principi placuit legis habet vigorem. (Digest I.4.1)
যদিও তিনি সরাসরি বলেননি, তবু সম্রাট এক ধরনের চূড়ান্ত ক্ষমতা চর্চা করতেন, যার উৎপত্তি জনতার থেকেই, এমন একটি ধারণা উলপিয়ান ব্যক্ত করেন।
মধ্যযুগীয় ধারণা
উলপিয়ানের ধ্রুপদী বক্তব্য মধ্যযুগীয় ইউরোপে অজানা ছিল না, কিন্তু মধ্যযুগীয় সময়ে সার্বভৌমত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ছিল। মধ্যযুগের রাজারা সার্বভৌম ছিলেন না, অন্ততঃ অতটা শক্তিশালী না, কারণ তাদের অভিজাত সামন্তদের সাথে ক্ষমতা ভাগ করতে হত এবং সামন্তরা তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। উপরন্তু, দুই শ্রেণীকেই প্রথা মেনে চলতে হত।
মধ্যযুগে সার্বভৌমত্ব রাজন্য ও অভিজাতদের de jure অধিকার হিসাবে এবং ব্যক্তি জীবনে তাদের নিজস্ব পছন্দগুলি তৈরি করার de facto ক্ষমতা হিসাবে উপস্থিত ছিল।
১৩৮০ থেক ১৮০০ সালের কাছাকাছি সময়ে জ্যোফ্রে চৌসাটারের মিডল ইংলিশ সংগ্রহে ক্যানটারবেরী টেলস, বিশেষত দ্য ওয়াইফ অফ বাথের গল্পে নারীবাদী সার্বভৌমত্বের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছিল।
পরে ইংরেজ আর্থারিয়ান রোম্যান্স, দ্য ওয়েডিং অফ স্যার গোয়াইন ও ডাম র্যাগনিয়েল (1450 খ্রিষ্টাব্দ), দ্য ওয়াইফ অফ বাথ গল্পের অনেক উপাদান ব্যবহার করে, তবে রাজা আর্থার এবং নাইটদের আদালতের প্রেক্ষাপটে গল্পটি সাজায়। এর গল্প নাইট স্যার গোয়েনের তার নববঁধু ডাম র্যাগনিয়েলকে সার্বভৌমত্ব প্রদানকে ঘিরে আবর্তিত হয়, যাকে নারীদের চূড়ান্ত চাওয়া হিসাবে দেখানো হয়।
পুণর্জাগরণ
মধ্যযুগে সার্বভৌমত্ব অভিজাতদের ‘ডেই জুরে’ অধিকার হিসাবে এবং ব্যক্তির নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ‘ডেই ফ্যাক্টো’ সক্ষমতা হিসাবে বর্তমান ছিল।
একটি ধারণা হিসাবে সার্বভৌমত্বের পূণর্জাগরণ ঘটে ষোড়শ শতাব্দীতে, এমন একটি সময়ে যখন গৃহযুদ্ধ একটি কেন্দ্রীয় শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের বাসনা তৈরি করেছিল, যখন সামন্ত রাজারা তাদের আভিজাত্যের বিনিময়ে নিজেদের হাতে ক্ষমতা পুঞ্জিভূত করছিল, এবং আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে উঠছিল। জীন বোদিন, কিছুটা ফ্রান্সের ধর্মযুদ্ধগুলোর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে পরম রাজতন্ত্রের আকারে সার্বভৌমত্বের তত্ত্ব প্রদান করেন। ১৫৭৬ সালে তিনি তার বই Les Six Livres de la République (প্রজাতন্ত্রের ছয়টি বই) এ যুক্তি দেখান, সহজাতভাবেই সার্বভৌমত্বকে হতে হবেঃ
পরমঃ এই অংশে তিনি বলেন যে সার্বভৌম সত্ত্বাকে অবশ্যই দায়িত্ব ও শর্ত থেকে স্বাধীন হতে হবে, অধীনদের অনুমোদন ছাড়াও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকতে হবে, পূর্বসূরীদের আইনের অধীন হবে না, এবং নিজের আইনেরও অধীনে থাকবে না, কারণ এটি অযৌক্তিক।
স্থায়ীঃ এটি কোনো জরুরী অবস্থায় কোনো নেতা কিংবা কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মচারী যেমন ম্যাজিস্ট্রেটের উপর অর্পিত দায়িত্ব নয়। যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তাকে স্থায়ী হতে হবে, কারণ সময়সীমা আরোপ করার সক্ষমতা আছে এমন কাউকে অবশ্যই সার্বভৌম শক্তির চেয়েও শক্তিশালী হতে হবে, যা পরম ক্ষমতার অধিকারী কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রে অসম্ভব।
জনগণের কাছ থেকে শাসকের কাছে (সার্বভৌম হিসাবেও পরিচিত) সার্বভৌমত্ব স্থানান্তরের ধারণা বোদিন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; প্রাকৃতিক নিয়ম এবং ঐশ্বরিক আইন সার্বভৌম শাসন করার অধিকার প্রদান করে। এবং সার্বভৌম ব্যক্তি ঐশ্বরিক আইন বা প্রাকৃতিক নিয়মের ঊর্ধ্বে নন, বরং তিনি কেবল মানবসৃষ্ট আইনের উর্ধ্বে। তিনি ঐশ্বরিক আইন থেকে উদ্ভূত কিছু মৌলিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম, যুক্তি, সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য সাধারণ আইন এবং সার্বভৌম ও তার উত্তরসুরি নির্ধারণ এবং সার্বভৌমের ক্ষমতার সীমা কী হবে এসব ব্যাপার নির্ধারণকারী রাষ্ট্রের মৌলিক আইনের প্রতি সার্বভৌমের লক্ষ রাখার ব্যাপারে জোর দেন। এইভাবে, বোদিনের সার্বভৌমের ক্ষমতা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক আইন এবং প্রতিটি মানুষের উপর আরোপিত উচ্চতর আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল। সার্বভৌমের ঐশ্বরিক ও প্রাকৃতিক আইন মেনে চলার ব্যাপারটি তার কাজকর্মে কিছু নৈতিক সীমারেখা টেনে দেয়। বোদিন lois royales বা ফরাসী রাজতন্ত্রের কিছু মৌলিক আইন যার দ্বারা উত্তরাধিকারের মত ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রিত হত, কেও প্রাকৃতিক নিয়ম এবং ফরাসী সার্বভৌমের অবশ্য পালনীয় হিসাবে তুলে ধরেন।
পরমত্বের ধারণায় বিশ্বাসী হওয়ার পরেও বাস্তবক্ষেত্রে সরকারের কীভাবে কাজ করা উচিত, এ ব্যাপারে বোদিনের কিছু মধ্যপন্থী মতামত ছিল। তিনি বলেন, সার্বভৌম বাধ্য না হলেও বাস্তবে উপদেশ পাওয়ার জন্য তার একটি সিনেট আহ্বান করা উচিত, আইনের মাধ্যমে বিচারকদের হাতে কিছু প্রাশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা উচিত এবং জনগণের সাথে যোগাযোগের উপায় হিসেবে একটি ব্যবস্থাপক সভা রাখা উচিত। বোদিন বিশ্বাস করতেন “সবচেয়ে ঐশ্বরিক, সবচেয়ে চমৎকার এবং সঠিক রাষ্ট্র” আংশিকভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে ও আংশিকভাবে অভিজাতদের দ্বারা শাসিত হয়।
বোদিন তার মতবাদে রাজাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে দেন।
আলোকায়নের যুগ
আলোকায়নের যুগে সার্বভৌমত্বের ধারণা পশ্চিমা রাষ্ট্রের বর্ণনায় আইনি ও নৈতিক শক্তি হয়ে উঠে। নির্দিষ্ট করে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার উপায় হিসাবে “সামাজিক চুক্তি”র চুক্তির প্রস্তাব করা হয়, এবং ১৮০০ সালের মধ্যে ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়, যদিও ব্রিটেনেও কিছুটা কম পরিমাণে হয়।
লেভিয়াথানে থমাস হোবস বোদিনের মতই সার্বভৌমত্বের একটি ধারণায় পৌঁছান, যেটি অন্য কারণে “পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া”য় আইনি কাঠামো লাভ করে। তিনি প্রথমবারের মত সামাজিক চুক্তির একটি আধুনিক সংস্করণ তৈরি করেন, এবং যুক্তি দেখান যে মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা ছাড়া জীবনের কদর্য, পাশবিক ও ইতর গুণগুলোকে কাটিয়ে উঠতে মানূষের অবশ্যই একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আসতে হবে এবং একটি সার্বভৌম শক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে যা তাদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য কাজ করতে বাধ্য করবে। এই যুক্তিটি সার্বভৌমত্বের প্রথম প্রবর্তকদের আকৃষ্ট করেছিল। হোবস বোদিনের ও ওয়েস্টফেলিয়ান ধারণার বাইরেও সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাকে আরো দৃঢ় করেন এবং বলেন একে অবশ্যই হবে হবেঃ
পরমঃ কারণ সার্বভৌমের উপর শর্ত আরোপ করা যাবে কেবল যদি তার বাইরেও কোনো সালিশি শক্তি থাকে যে নির্ধারণ করবে কখন সার্বভৌম এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সার্বভৌমের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকবে না।
অদৃশ্যঃ সার্বভৌম কেবল নিজের এলাকার চূড়ান্ত কর্তাই নয়, সে তার কর্তৃত্ব আর কারো সাথে ভাগ করে না। হোবস একে সত্য বলে ধরে নেন কারণ এছাড়া একাধিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে মতবিরোধের নিষ্পত্তি করার কোনো উপায় থাকবে না।
তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনগণ শাসককে সার্বভৌমত্ব দেয় হোবস এই অনুমান থেকে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে শাসক কখনো ব্যর্থ হলে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা নতুন একটি সামাজিক চুক্তি করার মাধ্যমে ফিরে পায়।
হোবসের এই তত্ত্ব সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব ব্যবহার করে সার্বভৌমত্বের ধারণাকে দৃঢ়ভাবে আকার প্রদান করে। জাঁ-জ্যাক রুশো (১৭২১-১৭৭৮ খ্রি.) জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা প্রদান করে বলেন (ফ্রান্সিসকো সুরেজের শক্তির উত্থানের তত্ত্বের প্রথম দিকের সূত্র অনুগামী) যে জনগণই একমাত্র বৈধ সার্বভৌম। রুসো সার্বভৌমত্বকে অবিচ্ছিন্ন বলে বিবেচনা করা; তিনি উৎস এবং সার্বভৌমত্ব প্রয়োগকারী সত্ত্বার মধ্যে পার্থক্যের নিন্দা করেছেন, যার উপর ভিত্তি করে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। জন লক এবং মন্টেসকিউও সার্বভৌমত্বের ধারণার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অবিচ্ছিন্নতার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রুশো এবং হোবসের সাথে চেয়ে ভিন্ন ছিল
সরকার বা শাসনব্যবস্থা[১] (ইং: Government) হলো কোনো দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যার মাধ্যমে দেশটির শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সরকারের মৌলিক দায়িত্ব জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা বিধান করা, সমাজের শান্তি বজায় রাখা, মানুষের জান-মাল রক্ষা করা এবং বিবাদের ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনা করা। সরকার তার ওপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ পালনের স্বার্থে রাজস্ব আহরণ করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তা ব্যয় করে থাকে।[২]
সাধারণত “সরকার” শব্দটির দ্বারা একটি সাধারণ সরকার বা সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বোঝায়। সরকার স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক, শিক্ষাগত, ধর্মীয়, বা অন্যান্য বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলিও নিজস্ব পরিচালন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাসিত হয়। এই জাতীয় কর্তৃপক্ষ বোর্ড অফ ডিরেক্টর, ম্যানেজার, গভর্নর নামে পরিচিত; এগুলিকে প্রশাসন (যেমন বিদ্যালয় প্রশাসন) বা কাউন্সিল অফ এল্ডার্স (যেমন খ্রিষ্টান চার্চে) নামেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সরকারের আকার অঞ্চল বা উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়।
সংগঠনের আয়তন বৃদ্ধি হলে সরকারের জটিলতাও বাড়ে। তাই ছোটো শহর বা ছোটো-মাঝারি বেসরকারি সংস্থাগুলিতে আধিকারিকের সংখ্যা বড়ো বড়ো বহুজাতিক কর্পোরেশনের তুলনায় কম রাখা হয়। বড়ো সংস্থায় বহুমুখী দপ্তর ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ক্রমপর্যায়ে লক্ষিত হয়। জটিলতা বাড়লে সরকারের কাজ-কর্মের প্রকৃতিও জটিল হয়ে পড়ে। তাই আনুষ্ঠানিক নীতি ও কার্যপদ্ধতি ঘোষণারও প্রয়োজন হয়।
সরকারের ধরন
সরকারের বিভিন্ন ধরন। বিস্তারিত দেখতে মানচিত্রে ক্লিক করুন।
কর্তৃত্ববাদী সরকার – কর্তৃত্ববাদী সরকার কোনো প্রজাতন্ত্র বা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্বের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে। এটি অনির্বাচিত শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থা, যাঁরা কিছুটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন।
সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র – এই জাতীয় সরকারের ক্ষমতা আইন বা আনুষ্ঠানিক সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং এই সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ দ্বারা নির্বাচিত। উল্লেখ্য, প্রাচীন স্পার্টা ঘোষিতভাবে ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র; কিন্তু সেদেশের অধিকাংশ মানুষই ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতেন। আবার প্রথম যুগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ছিল গণতান্ত্রিক দেশ; কিন্তু ক্রীতদাসদের সেযুগে ভোটদানের অধিকার ছিল না।
গণতন্ত্র – গণতন্ত্র হল এমন একটি সরকার যা দেশের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ দ্বারা নির্বাচিত। এই সরকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বা সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র দুইই হতে পারে। গণতন্ত্রের ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার তার সামাজিক মর্যাদা বা সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়।