Tag: bcs question

  • সংসদ সদস্য

    সংসদ সদস্য

    সংসদ সদস্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদে সরকার কিংবা বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এর ইংরেজি প্রতিরূপ হচ্ছে ‘মেম্বার অব পার্লামেন্ট’ বা ‘এমপি’ এবং বাংলায় ‘সংসদ সদস্য’ কিংবা ‘সাংসদ’। এছাড়া, ফরাসী ভাষায় সংসদ সদস্যকে ‘ডেপুটি’ নামে অভিহিত করা হয়।

    সংসদ সদস্য

    পরিচিতি

    সংসদীয় গণতন্ত্রে একজন সংসদ সদস্য আইন-প্রণয়ন বিশেষতঃ রাষ্ট্রীয় আইননাগরিক অধিকার প্রণয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাধারণ অর্থে নির্দিষ্ট সংসদ কিংবা জাতীয় সংসদের সদস্যই এমপি বা সংসদ সদস্য হিসেবে আখ্যায়িত হন।

    বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে – উচ্চ কক্ষ এবং নিম্ন কক্ষ। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ‘সংসদ সদস্য’ পদটি নিম্নকক্ষের জন্য প্রযোজ্য। সচরাচর জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্য পদটি উচ্চ কক্ষে ভিন্ন পদে উপস্থাপন ও চিহ্নিত করা হয়। উচ্চ কক্ষ হিসেবে সিনেটে সংসদ সদস্য তখন তিনি ‘সিনেটর’ পদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

    অবস্থান

    সংসদ সদস্য হিসেবে ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে দলের সদস্যরূপে তাঁর অবস্থানকে নিশ্চিত করতে হয়। পরবর্তীতে দলীয় সভায় মনোনয়নের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জনমতের যথার্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিফলনে তিনি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। কখনোবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভাবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সাধারণতঃ সংসদ সদস্য কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে থাকেন। দলীয়ভাবে মনোনয়নলাভে ব্যর্থ হলে কিংবা দলীয় সম্পৃক্ততা না থাকলেও ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে অনেকে নির্বাচিত কিংবা মনোনীত সংসদ সদস্য হন।

    সংসদ সদস্যকে অনেকে ‘সাংসদ’ নামেও ডেকে থাকেন। তবে, নিত্য-নৈমিত্তিক বা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে ‘মেম্বার অব পার্লামেন্ট’ হিসেবে সংসদ সদস্যকে ‘এমপি’ শব্দের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানকালে প্রচারমাধ্যমে সাধারণ অর্থেই এমপি শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্যণীয়।

    ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি

    গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত প্রতিফলন বা ভোটে একজন প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে মনোনীত হন, যা ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ‘প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টারে’ বা হাউজেস অব পার্লামেন্ট বা ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেসে রক্ষিত জনপ্রতিনিধির আসনকে কেন্দ্র করে ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে।

    অস্ট্রেলিয়া

    অস্ট্রেলিয়ায় সংসদ সদস্য বলতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হিসেবে পরিচিত ‘হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের’ সদস্যকে বুঝায়। সদস্যরা কখনো কখনো তাদের নামের শেষে এমপি লিখে থাকেন। ‘কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট’ হিসেবে সিনেটের সদস্যগণ সিনেটর নামে পরিচিতি।

    অস্ট্রেলিয়ার প্রদেশ হিসেবে নিউ সাউথ ওয়েলস্‌ এবং ভিক্টোরিয়ায় নিম্ন কক্ষ লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে সংসদ সদস্যগণ তাদের নামের শেষে ‘এমপি’ লিখেন। পক্ষান্তরে উচ্চ কক্ষ হিসেবে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যরা নামের শেষে ব্যবহার করেন’এমএলসি’।

    বাংলাদেশ

    মূল নিবন্ধ: জাতীয় সংসদ

    বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যগণ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাঁরা প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাদেরকেও ‘এমপি’ বা ‘মেম্বার অব পার্লামেন্ট’ বা ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সংসদে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে ৫০ জন সংরক্ষিত আসন থেকে মহিলা সদস্য। সাংসদদের নামের শেষে এমপি লেখা হয়। যেমনঃ বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন চট্টগ্রাম – ১ (মীরসরাই) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এমপি

    বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়।

    কানাডা

    কানাডায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা বিরাজমান। কানাডীয় সংসদে উচ্চ কক্ষকে ‘সিনেট অব কানাডা’ এবং নিম্ন কক্ষকে ‘কানাডিয়ান হাউজ অব কমন্স’ ডাকা হয়। তাসত্ত্বেও, উভয় কক্ষের সদস্যগণই মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা সংসদ সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। কিন্তু কথা বলার ধরন অনুযায়ী নিম্ন কক্ষের সদস্যগণকে ‘সংসদ সদস্য’ এবং উচ্চ কক্ষের সদস্যগণকে সিনেটরের মর্যাদা দেয়া হয়।[১] ১০৫ আসনের সিনেট এবং ৩০৮ আসনের হাউজ অব কমন্স নিয়ে কানাডায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত।[২]

    প্রত্যেকটি প্রদেশের সংসদীয় ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। সাধারণতঃ প্রত্যেক সদস্যই এমএলএ বা মেম্বার অব দ্য লেজিসলেটিভ এসেম্বলী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে থাকেন। ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে দেশটির কয়েকটি প্রদেশ। তন্মধ্যে ওন্টারিও প্রদেশে সংসদ সদস্যরা ‘মেম্বার অব প্রভিনশিয়াল পার্লামেন্ট’ বা এমপিপি; কুইবেক প্রদেশে ‘মেম্বার অব দ্য ন্যাশনাল এসেম্বলী’ বা এমএনএ নামে পরিচিত। ফরাসী ভাষায় একজন এমএনএ-কে ডেপুটি বলা হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর প্রদেশে তাদেরকে ‘মেম্বার অব দ্য হাউজ অব এসেম্বলী’ বা এমএইচএ পদবী গ্রহণ করতে দেখা যায়।

    ভারত

    মূল নিবন্ধ: সংসদ (ভারত)

    পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশটির সংসদীয় ব্যবস্থাপনা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। সেগুলো হচ্ছে লোকসভা এবং রাজ্যসভা। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল সদস্যই ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে পরিচিতি।

    সদস্যরা ভারতীয় প্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে লোকসভায় সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। কিন্তু রাজ্যসভার সদস্যরা পরোক্ষভাবে প্রদেশের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদ সদস্য হন। প্রত্যেক প্রদেশেই নির্দিষ্টসংখ্যক সংসদ সদস্যের পদ বরাদ্দ আছে। উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক সদস্য পদ রয়েছে।

    কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটভূক্ত দলের সংমিশ্রণে গঠিত হয় যেখানে লোকসভায় সর্ববৃহৎ দল বৃহৎসংখ্যক আসন লাভ করতে সক্ষম হয়।

    আয়ারল্যান্ড

    মেম্বার অব পার্লামেন্ট শব্দটি ১৮০১ সালের পূর্বেকার আয়ারল্যান্ডের সংসদ ‘আইরিশ হাউজ অব কমন্সের’ সদস্যকে বুঝায়। এছাড়াও এটি যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের হাউজ অব কমন্সে ১৮০১ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত আইরিশ সদস্যদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে।

    উত্তর আয়ারল্যান্ডে নির্বাচিত এমপিরা বর্তমানকালেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে অংশ নিয়ে থাকেন।

    ১৯২২ সালের পর ‘আইরিশ ফ্রি স্টেটের’ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘ডেইল আইরিয়ান’ বা (দ্য ডেইল)-এর সদস্যরা নিম্নকক্ষে ‘অয়েরেচটাসে’ (সংসদ) ‘ডেইল আয়ারিন’ (ডেইল) বা টিচটা ডালা বা টিডি নামে পরিচিত। উচ্চ কক্ষকে ‘সীনাড আইরিয়ান’ বলে। এর সদস্যরা ‘সিনেটর’ নামে পরিচিত।

    কেনিয়া

    জাতীয় সংসদের ২১০টি আসনের সাধারণ নির্বাচনে কেনিয়ার অধিবাসীরা সদস্যরূপে নির্বাচিত হয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে আরো ১২ জন সদস্যকে মনোনীত করা হয়। সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘সংসদ সদস্য’ নামে অভিহিত হন।[৩]

    মালয়েশিয়া

    যুক্তরাজ্যের সংসদের অনুরূপ ধাঁচে মালয়েশিয়ার সংসদ গড়ে উঠেছে। এটি দু’টি কক্ষবিশিষ্ট। হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে রয়েছে ‘দিওয়ান রাকিয়াত’ এবং সিনেট হিসেবে ‘দিওয়ান নাগারা’।

    দিওয়ান রাকিয়াতের জন্য একজন ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে গেলে তাকে সাধারণ নির্বাচন কিংবা উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে হয়। এছাড়াও, যারা দেশের সেবায় অসামান্য অবদান রাখেন তাদেরকে দিওয়ান নাগারা’র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য রাজা কর্তৃক মনোনীত হন। তারা প্রদেশ প্রধান কর্তৃক মনোনীত হয়ে রাজার অনুমোদনের উপর নির্ভর করেন। তন্মধ্যে, প্রত্যেকটি প্রদেশের আয়তনের উপর সিনেটরের সংখ্যা নির্ভরশীল।

    সংসদ সদস্যরা তাদের নামের পূর্বে ‘ইয়াং বারহোরমাত’ বা ‘সম্মানীয়’ পদবী ব্যবহার করেন যা সংক্ষেপে ওয়াই.বি নামে পরিচিত।

    নাউরু

    ১৮টি আসন নিয়ে নাউরু সংসদ গঠিত। এখানকার সংসদ সদস্যদের নামের সামনে ‘সম্মানীয়’ শব্দ প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।

    পাকিস্তান

    পাকিস্তানে সংসদ সদস্য বলতে ‘ন্যাশনাল এসেম্বলী অব পাকিস্তান’ বা ‘কউমি এসেম্বলী’র সদস্যকে বুঝানো হয়ে থাকে। এই ন্যাশনাল এসেম্বলী বা জাতীয় সংসদ ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।

    শ্রীলঙ্কা

    সার্কভূক্ত দেশের অন্যতম দেশ শ্রীলঙ্কায় সংসদ সদস্যগণ ১৯৭৮ সাল থেকে ‘পার্লামেন্ট অব শ্রীলঙ্কা’র সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এছাড়াও, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল স্টেট এসেম্বলী’, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ‘পার্লামেন্ট অব সিলোন’ নিম্নকক্ষের ‘হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস্‌ অব সিলোনে’র সদস্যকে বুঝানো হয়ে থাকে।

    জিম্বাবুয়ে

    ‘হাউজ অব এসেম্বলী অব জিম্বাবুয়ে’ আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের প্রধান আইন সভা। আইন সভার সদস্যগণ সংসদ সদস্য নামে পরিচিত। সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্যবৃন্দ সিনেটর নামে পরিচিত।

    অন্যান্য পদ্ধতি

    সংসদ সদস্য শব্দটি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে বিভিন্ন সংসদীয় গণতন্ত্রে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যা ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি অবলম্বন করে না।

    প্রতিনিধিত্বকারী দেশসমূহ

    নিম্নবর্ণিত দেশসমূহে সংসদীয় ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে একজন সংসদ সদস্য নির্দিষ্ট কিংবা নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের সংসদ কার্যালয়ে স্বীয় মতামত ব্যক্ত ও প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ লাভের অধিকারী।

    এন্টিগুয়া ও বারবুডা অস্ট্রেলিয়া আয়ারল্যান্ড ইরাক ইসরায়েল কানাডা গ্রেনাডা জ্যামাইকা টুভালু ডোমেনিকা ত্রিনিদাদ এন্ড টোব্যাগোথাইল্যান্ড নাউরু নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান পাপুয়া নিউগিনি মালয়েশিয়া মাল্টা মৌরীতাস বাহামা বার্মুডা বাংলাদেশবার্বাডোজ বেলিজ ভারত ভানুয়াতু যুক্তরাজ্য সিঙ্গাপুর সেন্ট কিটস্‌ এন্ড নেভিস সেন্ট লুসিয়া সেন্ট ভিনসেন্ট এণ্ড দ্য গ্রেনাডাইনস্‌ সলোমন দ্বীপপুঞ্জ
  • শাসন

    শাসন

    শাসন ব্যবস্থা (এছাড়াও “শাসন“) হল সরকারের রূপ বা নিয়ম, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক নিয়ম ইত্যাদির সেট যা একটি সরকার বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং সমাজের সাথে এর মিথস্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ইয়েলের অধ্যাপক জুয়ান জোসে লিঞ্জের মতে বর্তমানে তিনটি প্রধান ধরনের রাজনৈতিক শাসন রয়েছে: গণতন্ত্র, একচ্ছত্রবাদ এবং এই দুটির মধ্যে বসে কর্তৃত্ববাদ (হাইব্রিড শাসনের সাথে)।[১][২]

    শাসন

    ব্যবহার

    যদিও regime শব্দটি যেকোন ধরনের সরকারের প্রতিশব্দ হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে, আধুনিক ব্যবহার এটিকে একটি নেতিবাচক অর্থ দিয়েছে, যা একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার বা একনায়কত্বকে বোঝায়। ওয়েবস্টারের সংজ্ঞা বলে যে régime শব্দটি কেবল সরকারের একটি রূপকে বোঝায়,[৩] যেখানে অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে শাসনকে “একটি সরকার, বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[৪]

    “শাসন” শব্দটির সমসাময়িক একাডেমিক ব্যবহার জনপ্রিয় এবং সাংবাদিকতার ব্যবহারের চেয়ে বিস্তৃত, যার অর্থ “সরকারের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী স্তর (যা প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরিবর্তন করা সহজ) এবং রাষ্ট্রের (যা একটি জটিল আমলাতন্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জবরদস্তিমূলক ফাংশনগুলির একটি পরিসর সহ)।”[৫] বৈশ্বিক অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শাসনের ধারণাটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির নাম দেওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয় (আন্তর্জাতিক শাসন দেখুন), যা জাতীয় সরকারগুলির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিছু লেখক এইভাবে প্রতিষ্ঠান এবং শাসনের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মকভাবে পার্থক্য করেন এবং স্বীকার করেন যে তারা একে অপরের সাথে আবদ্ধ:

    আমরা যে প্রতিষ্ঠানগুলিকে বর্ণনা করি সেগুলি সর্বজনীনভাবে প্রণীত, অনুশীলন, পদ্ধতি এবং নিয়মগুলির তুলনামূলকভাবে স্থায়ী সংস্থা, ডব্লিউটিও-এর মতো আনুষ্ঠানিক আইনি সত্তা থেকে শুরু করে আরও অনানুষ্ঠানিক কিন্তু আইনগতভাবে চাপযুক্ত এবং উদার পুঁজিবাদী বাজারের মতো অনুশীলন এবং শাসনের স্থায়ী সেট। এখানে মূল বাক্যাংশগুলি হল ‘পাবলিকলি অ্যাক্টেড’ এবং ‘আপেক্ষিকভাবে স্থায়ী’। এই অর্থে ‘পাবলিকলি অ্যাক্টেড’ শব্দগুচ্ছটি সক্রিয় অভিক্ষেপ, আইনি অনুমোদন, এবং প্রায়শই নয়, একধরনের বিরোধিতাকে বোঝায়।[৬]

    এইভাবে শাসনগুলিকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে প্রোটোকল এবং নিয়মগুলির সেট হিসাবে যেগুলি হয় প্রতিষ্ঠান বা প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনগুলিতে এমবেড করা – আনুষ্ঠানিক যেমন রাষ্ট্র বা অনানুষ্ঠানিক যেমন “উদার বাণিজ্য শাসন” – যা প্রকাশ্যে প্রণীত এবং তুলনামূলকভাবে স্থায়ী।[৬]

  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান

    রাষ্ট্রবিজ্ঞান

    রাষ্ট্রবিজ্ঞান (ইংরেজি: Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে পরিচালন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিজ্ঞান নামে উল্লেখ করেছেন।[১]

    রাষ্ট্রবিজ্ঞান

    উপ-শাখাসমূহ

    অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিম্নোক্ত এক বা একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন –

    ভারতীয় উপমহাদেশ

    প্রাচীন ভারতে ঋগ্বেদ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, মহাভারত এবং বৌদ্ধদের পালি শাস্ত্রে রাজনীতিবিদদের কথকতা উল্লেখ আছে। তক্ষশীলায় অবস্থানকারী চাণক্য ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন যাতে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ভারসাম্যের কথা তুলে ধরেছেন। এতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও আর্থিক নীতি, কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। চাণক্য যুগের অবসানের দুই শতক পরবর্তীকালে রচিত মনুস্মৃতি গ্রন্থেও ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রামাণ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। যদিও বহু পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা ধর্মনিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠেনি। এবিষয়ে বিখ্যাত অধ্যাপক ডানিং বলেছেন, “প্রাচ্যের আর্যরা তাঁদের রাষ্ট্রভাবনাকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা থেকে মুক্ত করতে পারেননি।” তবে এ মতের বিরোধীতা করে বলা যায়, প্রাচীন ভারতে ধর্ম কেবলমাত্র পূজাপার্বণ ছিলনা, বরং ধর্ম বলতে বোঝাত, একপ্রকার জীবনচর্যা, যা মানুষ এবং সমাজের উন্নতি সাধন করে। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সপ্তাঙ্গ। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, কোন রাষ্ট্রের মোট উপাদান হল সাতটি। যথাঃ- স্বামী, অমাত্য, জনপদ, কোষ, দুর্গ, দূরগ, মিত্র। কৌটিল্যর এই সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব বর্তমান কালের বহু চিন্তাবিদকেও বিস্মিত করে।

    প্রাচীন ভারতের মতোই মধ্যযুগেও ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার এক উল্লেখযোগ্য ধারা পরিলক্ষিত হয়। সুলতানী সাম্রাজ্যের মতোই মোঘল সাম্রাজ্যেও রাজনীতি এক বিশেষ প্রায়োগিক রূপলাভ করে। এ সময়ে আকবর, শাহজাহান, (একইসাথে শেরশাহ) প্রভৃতি বাদশাহদের পররাষ্ট্রনীতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে এক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থা যেমন গড়ে ওঠে, তার পাশাপাশি জায়গীরদারি ব্যাবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির বিকেন্দ্রীভবনও বহুলাংশে সম্ভবপর হয়। আবুল ফজল সহ আরও বহু লেখকের লেখা সেসময়কার রাষ্ট্রব্যাবস্থার প্রামান্য দলিল হয়ে রয়েছে।

    সাধারণভাবে ভারতে ইউরোপীয় বণিকশক্তি, পাশাপাশি রাজশক্তির আগমণের মাধ্যমেই আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আধুনিক যুগের সূচনায় ভারতীয় রাজনীতি এক সম্পূর্ণ নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। রাষ্ট্রব্যাবস্থার বিস্তার ঘটার পাশাপাশি তা আরও জটিল রূপলাভ করে। ভারতে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তার যে কটি ধারা বিশেষ প্রবল রূপলাভ করে সেগুলি হলঃ-

    ১) সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা হিসেবে জাতীয়তাবাদের বিকাশ। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। সে সময়কার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া অর্থনীতির বিকাশের এক হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু ভারতে জাতীয়তাবাদের বিকাশের পটভূমি সম্পূর্ণ পৃথক, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে কয়েকজন পুরোধা ব্যক্তি হলেনঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমূখ। এঁরা বিদেশী রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিরোধীতা করে এক যথার্থ ভারতবর্ষের কল্পনা করেছিলেন।

    ২) উপনিবেশিক শক্তির সাহায্যে ভারতীয় সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়াস একদল চিন্তাবিদের কাজকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। যেমন, রাজা রামমোহন রায়।

    ৩) জাতীয়তাবাদের সংকীর্ন গন্ডীকে পেরিয়ে এসময় কতিপয় ভারতীয় দার্শনিক আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রশস্ত পথেই মানবমুক্তির কথা বলেন। এদের অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ।

    ৪) বিংশ শতকের বিশের দশকের গোড়া থেকেই সোভিয়েত বিপ্লবের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জী প্রমুখেরা মার্ক্সবাদী রাজনীতির একটি বিকল্প ধারা গড়ে তোলেন।

    ৫) এর পাশাপাশি বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার উপনিবেশিক ভারতে ধর্মের ভিত্তিতেও রাজনীতির তথা রাষ্ট্রচিন্তার এক ধারা লক্ষ্য করা যায়, যা পরবর্তীকালে প্রবল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সৈয়দ আহমেদ খান, সাভারকার, গোলয়ালকার প্রমুখের নাম এবং ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে মুসলিম লিগ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।

    আরও পড়ুন

  • রাজনৈতিক অর্থনীতি

    রাজনৈতিক অর্থনীতি

    রাজনৈতিক অর্থনীতি বা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হল এবং আইন, প্রচলিত পদ্ধতি ও সরকারের সঙ্গে উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ের সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যয়নের জন্য ব্যবহৃত প্রধান পরিভাষা।

    এই শাস্ত্রটি বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনীতির পাঠশাস্ত্র হিসেবে ১৭শ শতকে বিকাশ লাভ করে যা সরকার বিষয়ে তত্ত্বের মাঝে সম্পদের মালিকানার তত্ত্বকে অন্তর্ভুক্ত করে। [১]

    রাজনৈতিক অর্থনীতি

    কিছু রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ শ্রমভিত্তিক মূল্যের তত্ত্বের প্রস্তাব করেন (জন লক কর্তৃক প্রবর্তিত, এডাম স্মিথকার্ল মার্ক্স কর্তৃক বিকশিত), যাতে বলা হয়, শ্রম হল মূল্যের প্রকৃত উৎস। অনেক রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ আবার প্রযুক্তির রাতারাতি উন্নয়নের দিকে আলোকপাত করেছেন, যার ভূমিকা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

    ১৯ শতকে, “রাজনৈতিক অর্থনীতি” পরিভাষাটি অর্থনীতি নামক পরিভাষা দ্বারা স্থানান্তরিত হয়, এবং পরিভাষাটি পরিবর্তন করেছিলেন এমন কিছু লোক, যারা উৎপাদন ও ভোগের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তির পরিবর্তে গাণিতিক ভিত্তিতে অর্থ বিষয়ক অধ্যয়নকে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন।

    বর্তমানে, রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থ হল ভিন্ন কিন্তু পারস্পারিকভাবে-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আচরণের অধ্যয়নের আঙ্গিকসমূহ, যার সীমা হল অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বিত অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রথাগত অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করা বিভিন্ন মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ চিন্তার ব্যবহার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে।

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার হল এমন একটি অস্থায়ী অ্যাডহক (বিশেষ ও পূর্বপরিকল্পনাবিহীন) সরকার যা একটি নিয়মিত সরকার নির্বাচিত বা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি দেশের কিছু সরকারি দায়িত্ব ও কার্য সম্পাদন করে। নির্দিষ্ট অনুশীলনের উপর নির্ভর করে, এটি সাধারণত এলোমেলোভাবে নির্বাচিত বা সংসদের অনুমোদিত সদস্য বা বিদায়ী সদস্যদের নিয়ে থাকে, যতক্ষণ না তাদের বরখাস্ত করা হয়।

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার

    প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসমূহ সাধারণত তাদের কার্যে সীমিত থাকে, সত্যিকারের শাসন ও নতুন আইনের প্রস্তাব না করে শুধুমাত্র চলমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য কাজ করে। স্থায়ী সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অস্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়, কারণ উপরোক্ত কার্যাবলী অনুশীলন করার জন্য এই সরকারের কোন বৈধ ম্যান্ডেট (নির্বাচনী অনুমোদন) থাকে না।

  • ছায়া সরকার (ষড়যন্ত্র)

    ছায়া সরকার (ষড়যন্ত্র)

    ছায়া সরকার হচ্ছে এক গুচ্ছ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যে, বাস্তব ও প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত হয় না ( যেমন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস), বরং বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা গঠিত হয় যারা পর্দার আড়ালে থেকে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নজরের বাইরে থেকে ক্ষমতার চর্চা করেন। এই বিশ্বাস অনুসারে, আনুষ্ঠানিক নির্বাচিত সরকার এই ছায়া সরকারের অনুগত হয় যেখানে এই ছায়া সরকার সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হয়।

    ছায়া সরকার (ষড়যন্ত্র)

    ছায়া সরকার তত্ত্ব প্রায়ই প্রস্তাব করে যে, সরকারকে গুপ্তভাবে বৈদেশিক সত্ত্বা (যেমন এলিয়েন, দ্য ভ্যাটিকান এবং জেস্যুটস), আভ্যন্তরীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (যেমন ইহুদি, করপোরেট সমাজ ও সেন্ট্রাল ব্যাংক বা ফ্রিম্যাসোন) বা কোন বৈশ্বিক অভিজাত ও রাষ্ট্রাতিগ প্রতিষ্ঠান (নিও ওয়ার্ল্ড অর্ডার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুসারে সুপ্রান্যাশনাল অরগানাইজেশন) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয় যারা রাষ্ট্রের নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় বা বিশ্বকে জয় করতে চায়।

    ইতিহাস

    ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত রচনাগুলো একটি গুপ্ত সরকারের অস্তিত্বকে ধরে নেয়া হয় যা আপাত সরকারের পেছনে আসল ক্ষমতার অধিকারী। এরকম রচনার মধ্যে ড্যান স্মুট, উইলিয়াম গাই কার, জিম মারস, ক্যারল কুইংলি, গ্যারি অ্যালেন, অ্যালেক্স জোনস, ডেস গ্রিগিন, জি. এডোয়ার্ড গ্রিফিন, ডেভিড আইক এবং দ্বিতীয় মাইকেল এ. হফম্যান এর রচনা রয়েছে। এই লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, এই গুপ্ত সরকারের সদস্যরা কাউনসিল অব ফরেইন রিলেশনস, রয়াল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ারস, দ্য ট্রাইলেটারেল কমিশন, দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ, সিআইএ এবং এমআই৬ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বা এদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে এরা আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ব ব্যাংক এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট এর সহায়তা নিতে পারে।[১][২][৩] এই ধারণাটি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো দ্য এক্স-ফাইলস দ্বারা জনপ্রিয় হয়।

    মিল্টন উইলিয়াম কুপার দাবী করেন, ছায়া সরকার বহির্বিশ্বের এলিয়েনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৯১ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থ বিহাইন্ড এ পেল হর্স [৪][৫] “ইউএফও এবং মিলিশিয়া সারকেলে” প্রভাবশালী ছিল।[৬] বইটিতে “গুপ্ত বিশ্বের সরকারের কার্যাবলি” এবং “যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের উপর ইলুমিনেটির যুদ্ধের ঘোষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুপ্ত কার্যাবলি” সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়।[৭] কুপার দাবী করেন তিনি যখন নেভিতে কাজ করেন তখন একটি গুপ্ত নথি দেখেন যেখানে এলিয়েনদের সাথে সরকারের বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে বর্ণনা ছিল। কুপার ইলুমিনেটির ধারণাকে তার বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত করেন এবং দাবী করেন, বহির্বিশ্বের এলিয়েনরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে গুপ্তভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৪ সালে ডিউইট ডি. আইজেনহাওয়ারকে এলিয়েনদের সাথে মধ্যস্থতা করা, ইলুমিনেটির একটি অভ্যন্তরীন চক্র প্রতিষ্ঠা করে তাদের সাথে সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের কাছ থেকে এসব গোপন রাখার জন্য অভিযুক্ত করেন। কুপার বিশ্বাস করতেন, এলিয়েনরা বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন, ধর্ম, জাদু, উইচক্রাফট এবং অকাল্টের দ্বারা মানবজাতিকে শাসন ও প্ররোচিত করে। এমনকি ইলুমিনেটিও নিজেদের অজান্তেই এলিয়েনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়।[৪]

    কুপার ইলুমিনেটিকে গুপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেন, যাকে দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ দ্বারা ন্নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি নাইটস অব কলম্বাস, মেসনস, স্কাল এবড বোন্স এবং অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে। তার কথায় এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নব্য বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কুপারের মতে, ইলুমিনেটি ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্যই এলিয়েন হুমকি আবিষ্কার করে নি, বরং বিশ্বকে দখল করতে সক্রিয়ভাবে এলিয়েনদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্রে জড়িত।[৪] কুপার বিশ্বাস করতেন জেমস ফরেস্টালের বেথেসডা হাসপাতালের ষোল তলার জানালা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি ম্যাজেস্টিক-১২ নামের একটি গুপ্ত কমিটির কারসাজি ছিল এবং জেসন এডভাইজরি গ্রুপের বিজ্ঞনীরা ট্রাইটেরিয়াল কমিশন এবং কাউন্সিল অব ফরেইন রিলেশন এর নির্বাহী কমিটি মেম্বারদেরকে সবসময় রিপোর্ট করে যারা ইলুমিনেটির উচ্চপদস্থ সদস্য।[৮][৯]

    উক্তিতে

    “আমাদের রিপাবলিকের ভীতি হচ্ছে অদৃশ্য সরকার, যা একটি বিশালাকার অক্টোপাস এবং আমাদের শহর, রাজ্যসমূহ ও জাতির উপরে তার পাগুলো নাচাচ্ছে।” – জন হাইলান, নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র, ১৯২২

    “প্রকাশ্য সরকারের পেছনে একটি অদৃশ্য সরকার আছে যার জনগণের প্রতি কোন আনুগত্য ও দায়বধ্যতা নেই” -রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্টের প্রোগ্রেসিভ (“বুল মুজ”) পার্টির প্লাটফর্ম থেকে।[১০]

    “গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের থেকে আসা সংগঠিত মতামতের একটি সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত হস্তক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যারা সমাজের এই অদৃশ্য কৌশলকে হস্তক্ষেপ করে তারা অদৃশ্য সরকার, যারা দেশের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। আমরা সকার, আমাদেরকে শাসন করা হয়, আমাদের মনকে গঠন করা হয়, স্বাদকে তৈরি করা হয়, আমাদের ধারণা হচ্ছে নির্দেশিত, আর এগুলোর বেশিরভাগই তাদের দ্বারা হয় যাদের সম্পর্কে আমরা কখনও শুনিই নি।” – এডওয়ার্ড বারনেস, দ্য “ফাদার অব পাবলিক রিলেশনস”, তার ১৯২৮ সালের প্রভাবশালী বই প্রোপাগান্ডা -তে এটা লেখেন।[১১]

    “কিন্তু অকপটে বলতে গেলে একটি বাইরের সূত্র আছে যাকে আমরা “ডিপ স্টেট” বা “ছায়া সরকার” বলি। জনগণ এদে দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়, যারা আমাদের সরকার, আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী।” – রন পল, প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি, নভেম্বর ২০১৬ তে বলেন (ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর)।[১২]

    আরও দেখুন

  • ছায়া মন্ত্রিসভা

    ছায়া মন্ত্রিসভা

    ছায়া মন্ত্রিসভা ওয়েস্টমিন্সটার সরকার পদ্ধতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে বিরোধী দল থেকে একদল জ্যৈষ্ঠ সদস্য একটা মন্ত্রিসভা গঠন করেন যেটা সরকারের মন্ত্রিসভার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এখানে, প্রতিটি সরকারী মন্ত্রীদের বিপরীতে একজন ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য থাকেন যিনি সরকারী মন্ত্রীর কাজকে বিশ্লেষণ করেন এবং প্রয়োজনে বিকল্প পথ তুলে ধরেন। অধিকাংশ দেশে ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যকে ছায়া মন্ত্রী বলা হয়ে থাকে।

    ছায়া মন্ত্রিসভা

    একজন ছায়া মন্ত্রীর কাজের পরিধি তাকে দল ও সমর্থকের কাছে প্রসিদ্ধ করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যদি তিনি উচ্চ পদস্থ কোন দফতরে কাজ করেন। অবশ্য, ছায়া মন্ত্রীরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সাধারণ সদস্যদের মতই পেয়ে থাকেন। একজন ছায়া মন্ত্রীর দল সরকার গঠন করলে তিনি যেই দফতরের ছায়া মন্ত্রী ছিলেন, সেই দফতর নাও পেতে পারেন।

  • অ্যাটর্নি জেনারেল

    অ্যাটর্নি জেনারেল

    অ্যাটর্নি জেনারেল পদের কাজ হচ্ছে সেই দেশের সরকারের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন করা।

    অ্যাটর্নি জেনারেল


    বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবিধানিক পদ নয়। এটি একটি সংবিধিবদ্ধ পদ। সাংবিধানিক পদ হচ্ছে সে সকল পদ, যেগুলোর মেয়াদ সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত, সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি এটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উত্থাপিত যেকোনো রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব মত প্রকাশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। অনুচ্ছেদ ৬৪(৪) অনুসারে রাষ্ট্রপতির সন্তোষানুযায়ী সময়সীমা পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীয় পদে বহাল থাকবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক লাভ করবেন।[১] কিছু কিছু আইন বিশেষজ্ঞের মতে অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক পদ।[২]


    অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারকে সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকেন। বলা যায় অ্যাটর্নি জেনারেল হলো সরকারের আইনগত পরামর্শক। [৩]

    আরও দেখুন

  • অস্থায়ী সরকার

    অস্থায়ী সরকার

    অস্থায়ী সরকার যাকে জরুরী সরকার বা ট্রানজিশনাল সরকারও বলা হয়,[১] একটি জরুরি সরকার কর্তৃপক্ষ যা সাধারণত নতুন জাতির ক্ষেত্রে বা পূর্ববর্তী শাসকের পতনের পরে রাজনৈতিক কাজ পরিচালনার জন্য গঠিত হয় । অস্থায়ী সরকার সাধারণত নাগরিক বা বিদেশীদের দ্বারা যুদ্ধের সময় অথবা পরে নিযুক্ত হয় এবং প্রায়শই উত্থিত হয়।

    অস্থায়ী সরকার

    অস্থায়ী সরকার নিয়মিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যহত রাখে যতক্ষণনা একটি নতুন সরকার নিযুক্ত হয় এবং যা সাধারণত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে হয় ।[২] তারা পরবর্তী সরকারের জন্য আইনি কাঠামো, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত নির্দেশিকা, অর্থনীতির কাঠামো, সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সারিবদ্ধকরণ সংজ্ঞায়িত করতে জড়িত থাকতে পারে। [৩]

    ইয়োসি শেইন এবং জুয়ান জে লিন্জের মতে, অস্থায়ী সরকারগুলিকে চারটি দলে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:[৪

  • কুরআন

    কুরআন

    কুরআন মজিদ অথবা কুরআ-ন মাজী-দ বা কোরআন (আরবি: القرآن‎‎ আল্-কুর্’আন্[টী১]) ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন।[১] এটিকে আরবি শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়।[২][৩][৪][৫] কুরআনকে প্রথমে অধ্যায়ে (আরবিতে সূরা) ভাগ করা হয় এবং অধ্যায়গুলো (সূরা) আয়াতে বিভক্ত করা হয়েছে।

    কুরআন

    এই কিতাব আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল এর মাধ্যমে ইসলামিক নবি মুহাম্মাদ এর কাছে মৌখিকভাবে ভাষণ আকারে কুরআনের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন,[৬][৭] দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদের বয়স ৪০ বছর[৮] এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।[১][৯][১০] মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা যা তার নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ[১১] এবং ঐশ্বরিক বার্তা প্রেরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায় যা আদম থেকে শুরু হয়ে মুহাম্মাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তবে সুফিবাদের অনুসারীরা বিশ্বাস করে থাকেন মুহাম্মাদের সকল কর্মকান্ড উম্মতের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্যই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়। কুরআনের আয়াতসমূহে কুরআন শব্দটি ৭০ বার এসেছে।[১২]

    ইসলামি ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবি মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। ইসলামের অনুসারীরা কুরআনকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে বিশ্বাস করে। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আয়াত বা পঙ্‌ক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; মতান্তরে ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়।[১৩][১৪][১৫][১৬] মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়। তবে কুরআনে কোনো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামি ভাষ্যমতে কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরআনের সূরা আল-হিজরের (১৫ নং সূরা), ৯ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে, এবং তা হল:

    আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।[১৭]

    কুরআন এর পাণ্ডুলিপি, ব্রুকলিন যাদুঘর

    ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ১১ শতকের উত্তর আফ্রিকার কুরআন.

    ইরানের মাশহাদে কুরআন, যা আলি কৃর্তক লিখিত

    ব্যুৎপত্তি ও অর্থ

    কুরআনে কুর’আন শব্দটি কয়েকটি অর্থে প্রায় ৭০ বার এসেছে। আর, আরবি ব্যাকরণে “কুর’আন” শব্দটি একটি “মাসদার”,যা ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৭৫:১৭,১৮ আয়াতে এটি,(قرأ) ক্বারা’আ (‘পাঠ করা’, ‘আবৃত্তি করা’ বা ‘অনুসরণ করা’) ক্রিয়ার ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[১৮] এই শব্দটির “মাসদার” (الوزن) হচ্ছে غفران তথা “গুফরান”। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, (غفر) নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে “ক্ষমা করা”; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো (غفران), এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সূরা আল-কিয়ামাহের (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:”অতঃপর, আমি যখন তা পাঠ করি (ক্বুরা’নাহু), তখন আপনি সেই পাঠের (কুরআ’নাহ্‌) অনুসরণ করুন।”[১৯]

    কুরআনে যেখানেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই এর যথার্থ বিশেষ্য বা বিশেষণ পাওয়া যায়। ক্বারা’আ ক্রিয়াপদ কুরআনে পুনঃপুনঃ ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭:৯৩ আয়াতে এর অর্থ ‘পাঠ করা’; কিন্তু এর বহুল প্রচলিত অর্থটি হল,’আবৃত্তি করা’ (তিলাওয়াঃ),৭৫: ১৬,১৭। মুহাম্মদ এর আবৃত্তি সমন্ধেও এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি তাঁর নিজের উপর অবতীর্ণ ওহী আবৃত্তি করেন (৭ঃ২০৪; ১৬ঃ৯৮; ১৭ঃ৪৫; ৮৪ঃ২১; ৮৭ঃ৬)। শব্দটি মুমিনদের আবৃত্তি সমন্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে , তারা সালাতে ওহী আবৃত্তি করেন (৭৩ঃ২০)। এ থেকে বোঝা যায়, কুরআন শব্দের অর্থ হল ‘আবৃত্তি করা’ যা মুহাম্মদ আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে আবৃত্তি করেছেন (৭৫ঃ১৮; ৮৬ঃ৬) এবং মানুষের সম্মুখেও আবৃত্তি করেছেন। যদিও কুরআন বলতে সাধারভাবে তাঁর উপর অবতীর্ণ ওহীর সমষ্টিকে বুঝায়। তবে শব্দটি (কুরআন) তাঁর উপর অবতীর্ণ পৃথক পৃথক ওহী (১০ঃ১৫; ১২ঃ৩; ৭২ঃ১; ২ঃ১৮৫) সমন্ধে বা খন্ডে খন্ডে অবতীর্ণ (১৭ঃ১০৬; ২০ঃ১; ৭৬ঃ২৩; ২৫ঃ৩২ ; ৫৯ঃ২১) আল্লাহর ওহী সমন্ধে বলা হয়েছে যা তিঁনি আল্লাহ কতৃক পেয়েছিলেন (২৭ঃ৬; ২৮ঃ৮৫)।

    আল কিতাব (ধর্ম গ্রন্থ বা পুস্তক) শব্দটি আল-কুরআনের প্রতিশব্দ হিসাবে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল-কিতাব সমন্ধে বলা হয়েছে “ইহা এক কল্যানময়ী রাত্রিতে (৪৪ঃ২) অবতীর্ণ হইয়াছে” (৪০ঃ২; ৪৫ঃ২)। ১৫ঃ১ আয়াতে বলা হয়েছে, “এইগুলি আল-কুরআন এবং সুস্পষ্ট অর্থবোধক আল-কিতাবের অলৌকিক নিদর্শনসমূহ।” বিষয়বস্তু হিসেবে কুরআনকে প্রায়ই ‘যি’কর’ বলা হয়েছে। এখানে এর অর্থ উপদেশ, সাধারণ বাণী (২১ঃ২৬,৪২; ৩৮ঃ৮৭)। যি’করকে ‘অবতীর্ণ’ (২১ঃ৫০; ৩৮ঃ৮) এবং ‘মহান পবিত্র গ্রন্থ’ (৪১ঃ৪১) বলা হয়েছে। আবার ৩৬ঃ ৬৯ আয়াতে কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, ” এ তো কেবল এক উপদেশ ও স্পষ্ট কুরআন মাত্র”। ২১ঃ৭ আয়াতে আহ্’লুল-কিতাবকে আহ্’লুয যি’কর বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আল-হি’কমাঃ শব্দটি উল্লেখ করা যেতে পারে। ২ঃ১২১,১৫১; ৩ঃ১৬৪; ৬২ঃ২ -এ আল-কিতাবের সাথে হি্’কমাঃ উল্লেখ করা হয়েছে। ২ঃ২৩৯; ৪ঃ১১৩ -এ কুরআনের সঙ্গে হি’কমাতের অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ আছে। কুরআনে, কুরআনকে “আল-ফুরকা’ন”-ও বলা হয়েছে।

    “সূরা(سورة)” শব্দটি আরবী সূর (নগর প্রাচীর) হতে গৃহীত একবচনজ্ঞাপক যোগ করিয়া গঠিত। সূরার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্দিষ্ট অংশকে আয়াত বলা হয়। হিব্রু ‘ওত’ শব্দের ন্যায় ইহা বিশেষ অর্থে নিদর্শন, বিশ্বাসের নিদর্শন (২ঃ২৪৮; ৩ঃ৪১; ২৬ঃ১৯৭) বিশেষত আল্লাহর অস্তিত্ব ও ক্ষমতার নিদর্শন (১২ঃ১০৫; ৩৬ঃ৩৩) বুঝায়। তাই এটি দ্বারা অলৌকিক ঘটনাকে’ও (মু’জিযাঃ) বুঝায় (৩ঃ৪৯; ৪৩ঃ৪৬)। মুহাম্মদ যে আল্লাহর নবী এর প্রমাণস্বরুপ মক্কার পৌত্তলিকরা তার নিকট অলৌকিক ক্রিয়া (মু’জিযাঃ) দেখানোর দাবী করত। যেহেতু প্রেরিত ওহীগুলোই তার অন্যতম মু’জিযাঃ (৬ঃ১৫৮; ৭ঃ২০৩; ২০ঃ১৩৩; ২৯ঃ৫০) সেজন্যই এগুলোর নাম আয়াত হয়েছে। আয়াতগুলো উর্ধ-জগত হতে (২ঃ৯৯; ২৮ঃ৮৭) আল্লাহর নবীর নিকট (২ঃ২৫২; ৩ঃ৫৮; ৪৫ঃ৫) পাঠানো হত এবং পূর্ববর্তী নবীগনের ন্যায় (২৮ঃ৫৯) তিনিও উহা লোকদেরকে আবৃত্তি করে শোনাতেন (২ঃ১৫১; ৩ঃ১৬৪; ৬৫ঃ১১)।

    আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা করেন, (২ঃ১৮৭) ; “তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে” (৩ঃ১১৩); “আর কাফিররা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।” (২৯ঃ৪৭)। আবার কিছু যায়গায় গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আয়াতসমূহের প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। যেমন,”আর আমি এতে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি”(২৪ঃ১); “একটি কিতাব যাহা আমি পাঠাইয়াছি, যেন তাহারা ইহার আয়াতগুলি সমন্ধে চিন্তা করিতে পারে” (৩৮ঃ২১); “এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত” (১০ঃ১; ৩১ঃ১) ; “এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত” (১২ঃ১; ২৬ঃ১; ২৮ঃ১) ; “এ হল কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াতসমূহ” (১৫ঃ১) ; “এইগুলি আল-কু’রআন ও স্পষ্ট বিবরণদানকারী” (কিতাব) (২৭ঃ১)। “একটি কিতাব যার আয়াতগুলি দৃড়রূপে প্রথিত “, (১১ঃ১, ১৩,১)। কিতাবে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং বিভিন্ন অর্থবোধক আয়াতসমূহ আছে (৩ঃ৭)। যেমন, “আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মত আনয়ন করি

    ” (২ঃ১০৬)। “যদি আমি এক আয়াত অন্য আয়াত দ্বারা বদল করি (১৬ঃ১০১)।

    এইসব বিবরণ হতে মুহাম্মদ এর উপর অবতীর্ণ ওহীর বিষয়বস্তু সমন্ধে জানা যায় “উহা সুরক্ষিত ফলক বা লাওহ’ মাহ্’ফুজ’ হইতে অবতীর্ণ হইয়াছে” (৮৫ঃ২২)। ” ইহা একটি সুরক্ষিত পুস্তকে রহিয়াছে” (৫৬ঃ৭৯)। “ইহা আমার নিকট মূল কিতাবে রহিয়াছে” (৪৩ঃ৪; ৩ঃ৭)। আল-কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, “ইহা একটি উপদেশ-গ্রন্থ যাহা সম্মানিত, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং পবিত্র পত্রসমূহে মহান ন্যায়নিষ্ঠ লেখকদের হস্তে লিপিবদ্ধ” (৮০; ১১-১৬)। ৫২ঃ৮২ আয়াতে বিস্তারিত পত্রে লিখিত কিতাবের শপথ করা হয়েছে এবং ৬৮ঃ১ -এ বলা হয়েছেঃ “কলম ও যাহা দ্বারা লেখা হয় তাহার শপথ” এবং ৯৬ঃ৪-৫ এ বলা হয়েছে “কলম দ্বারা তিনি মানবকে শিক্ষা দিয়েছেন যাহা সে জানিত না” তাঁকে আরও বলা হয়েছে, “তোমার রাব্ব- এর কিতাব হইতে যাহা তোমার প্রতি ওয়াহ্’য়িরূপে পাঠানো হইয়াছে তাহা পাঠ কর”। “আল্লাহর কথা কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না ” (১৮ঃ২৭)। ৪ঃ১৬৪; ৪০ঃ৭৮ – এ বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁহাকে কতক নবীর কথা বলিয়াছেন এবং কতক নবীর কথা বলেন নাই।

    রাসূল এর উপর অবতীর্ণ ওহী থেকেই উম্মুল কিতাব (৪৩ঃ৪) এর মূল বিষয়বস্তু ধারণা করে নেয়া যায়। সেগুলো হল, আল্লাহর সত্তা, বিশ্ব সৃষ্টি – বিশেষত মানব সৃজন, ভাল ও মন্দ আত্না-সমূহের সৃষ্টি, শেষ বিচার, জান্নাত,জাহান্নাম, পূর্ববর্তী নবী গনের অভিজ্ঞতা, আল্লাহর ইবাদত ও সামাজিক জীবন সম্বন্ধীয় যাবতীয় আইন-কানুন এবং বিশেষ বিশেষ আইন (৪ঃ১০৩, ১২৭,১৩৮; ৩৩ঃ৬)। বার মাসের উল্লেখ প্রসঙ্গে (৯ঃ৩৬) এবং ২২ঃ৪ -এ শয়তান কতৃক মানবকে প্রলুব্ধ করার প্র‍য়াস প্রসঙ্গে বিশ্ব সৃজন-তত্ত্বের আভাষ দেয়া হয়েছে। এমনকি, বিশ্বে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে এবং সংঘটিত হবে তার সব কিছুই ঐ উম্মুল কিতাবে আছে (১০ঃ৬১; ২৭ঃ৭৫; ৩৪ঃ৩; ৬ঃ৩৮,৫৯; ১১ঃ৬; ২০ঃ৫১; ১৭ঃ৫৮)।

    কুরআনের অনেকগুলি নামের মধ্যে বিশেষ চারটি নাম হল আল-কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব ও আয-যিক্’র। ‘আল-কুরআন’ নামের অর্থ ‘যাহা পঠিত হয়’। এটি বহু আয়াত ও সূরার সংকলন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কুরআনের প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দটি হল ‘ইকরা’-‘পাঠকর’। ‘আল-ফুরকান’ নামের অর্থ পার্থক্যকারী, সত্য ও মিথ্যার, আলো ও অন্ধকারের এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্যকারী। ‘আল্-কিতাব’ অর্থ লিখিত গ্রন্থ যা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ‘আয-যিক্’র’ নামের অর্থ উপদেশ যা আল্লাহ্-তা‘আলা স্বীয় বান্দাগণকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের নিমিত্তে দিয়েছেন।

    মুসলমানদের মতে এটি আল্লাহর বাণী বা বক্তব্য, যা ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। তাদের মতে এটি একটি মুজিজা বা অলৌকিক গ্রন্থ যা মানব জাতির পথনির্দেশক। মুসলমানদের বিশ্বাস, কুরআনে মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।[২০]

    ইতিহাস

    নবীর যুগ

    ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, হেরা গুহায় অবস্থানকালে মুহাম্মাদের নিকট প্রথম কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। এরপর ২৩ বছর ধরে তার নিকট কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। হাদিস ও মুসলিম ইতিহাস অনুসারে, মুহাম্মাদ মদীনায় হিজরত করে একটি স্বাধীন মুসলিম সম্প্রদায় গঠন করার পর তিনি তাঁর অনেক সাহাবাকে কুরআন তেলাওয়াত ও এর শিক্ষা গ্রহণ করে ছড়িয়ে দিতে আদেশ দেন, যা নিয়মিত অবতীর্ণ হতো। বলা হয় যে, কিছু কুরাইশ যাদেরকে বদর যুদ্ধে বন্দী করা হয়েছিল, তারা কিছু মুসলিমকে তৎকালীন সরল লিখন পদ্ধতি শেখানোর পর তাদের স্বাধীনতা ফিরে পায়। এইভাবে মুসলমানদের একটি দল ধীরে ধীরে সাক্ষর হয়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে, খেজুরের ডাল, হাড় ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত লিখিত হয়। যাইহোক, ৬৩২ সালে মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় কুরআন বইয়ের আকারে লিপিবদ্ধ ছিল না।[২১][২২][২৩] আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে মুহাম্মাদ নিজে আয়াতগুলো লেখেননি।[২৪]

    সংকলন

    মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় তার তত্ত্বাবধানে প্রথম পূর্ণ কুরআন লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু এগুলো এক জায়গায় একত্রিত করা হয়নি। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর এর যুগে দ্বাদশ হিজরি সালে ইয়ামামার যুদ্ধ সত্তর জন হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন।এতে হযরত ওমর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি খলিফা আবু বকর কে বলেন,

    “এভাবে জিহাদে হাফেজগন শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অতএব, আপনি কুরআন মাজিদ একত্রে সংকলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

    প্রথমে আবু বকর রাজি না হলেও ওমর এর অনুরোধে রাজি হন। কুরআন সংরক্ষণের এ দ্বায়িত্ব মুহাম্মাদ এর সময়ের ওহি লেখক সাহাবি যায়েদ ইবনে সাবিত এর উপর প্রদান করা হয়।

    যায়েদ ইবনে সাবিত নিজে হাফেজে কুরআন ছিলেন। তিনি কুরআন সংকলন করার ব্যাপারে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। একটি হলো-কুরআনের আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সাহাবা মুখস্থ বলবেন, অপরটি হলো তিনি মুহাম্মাদ এর সময়ে লিখিত ঐ আয়াতটি প্রদর্শন করবেন। তিনি লিখিত ছাড়া কুরআনের আয়াত সত্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করেননি। তিনি বহু যাচাই বাছাই করার পর সাহাবায়ে কেরামের নিকট রক্ষিত মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় লিখিত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি থেকে সে সময়ের আবিষ্কৃত বিশেষ কাগজে গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ (যা সউফ নামে পরিচিত[২৫]) করেন। লিপিবদ্ধ কুরআনটি হযরত আবু বকর এর তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। তার ওফাতের পর এটি হযরত ওমর এর হেফাজতে থাকে। তার শাহাদাতের পর তারই ওসিয়ত অনুসারে কুরআনের এ প্রতিলিপিটি মুহাম্মাদ এর স্ত্রী বিবি হাফসা এর নিকট গচ্ছিত থাকে। তৃতীয় খলিফা উসমান এর যুগে ইসলামি সম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ইসলামের এ প্রসারের ফলে বিভিন্ন জাতি ও ভাষাভাষী লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের অনেকেই কুরআনের গঠন পদ্ধতি অনুসরণ করে কুরআনের বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করতে পারত না। বিশেষ করে আরমেনিয়া এবং আজারবাইজান যুদ্ধে সমবেত মুসলমানদের কুরআন পাঠ পদ্ধতির বিভিন্নতা দেখে বিশিষ্ট সাহাবি হুযাইফা, খলিফা উসমান কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি অবিলম্বে এ নিয়ে নেতৃস্থানীয় সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে চার জন বিশিষ্ট সাহাবা সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করেন। এ চার জন সাহাবা হচ্ছেন-

    হযরত উসমান এর উদ্যোগে হিজরি ২৪ সালে শেষবারের মতো কুরআন সংকলনের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বোর্ড হযরত হাফসা এর নিকট সংরক্ষিত মূল কপিটি সংগ্রহ করেন।[২৭][২৮] উক্ত বোর্ড পূর্বলিখিত প্রতিলিপিটি অনুসরণ করে পাঠ ও উচ্চারনের বিভিন্নতা দূর করার জন্য শুধু কুরাইশি উচ্চারণ ও ভাষায় তার আরও সাতটি প্রতিলিপি প্রস্তুত করেন। বর্ণিত আছে যে, সাতটি প্রতিলিপি তৈরি করে মক্কা, শাম, ইয়েমেন,বাহরাইন, বসরাকুফা প্রদেশে একটি করে প্রেরণ করা হয়। আর রাজধানী মদিনাতে একটি কপি খলিফার নিকট সংরক্ষিত রাখা হয়।[২৯] এরপর বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে সংরক্ষিত প্রতিলিপিগুলো সকলের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।[৩০] এভাবে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রা.-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পবিত্র কুরআন সংকলিত ও বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরিত হয় বিধায় তাকে “جمع القرآن ” বা কুরআন সংগ্রহকারী বলা হয়।

    ইসলামে গুরুত্ব

    অননুকরণীয়তা

    মূল নিবন্ধ: কুরআনের অলৌকিকতা

    ইসলামী পরিভাষা অনুযায়ী, কুরআনের অলৌকিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই বিশ্বাসকে ইজায বলা হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে আল কুরআন একটি ঐশ্বিক গ্রন্থ যা কোনো মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় ও যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত কার্যকর এবং এর মাধ্যমে এই গ্রন্থ মুহাম্মাদের নবীত্বের মর্যাদার অনুমোদনে প্রদত্ত মূল প্রমাণ। কুরআনেই অননুকরণীয়তা ধারণাটির উৎপত্তি, যেখানে পাঁচটি ভিন্ন আয়াতে এর বিরোধীদের কুরআনের মত কিছু তৈরী করতে আহ্বান করা হয়: “যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জ্বীন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবেনা।”[৩১] নবম শতাব্দী থেকে অসংখ্য রচনা প্রকাশিত হয়েছে যাতে কুরআন ও এর শৈলী ও বিষয়বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। আল জুরজানি (মৃত্যু ১০৭৮) ও আল বাকিলানি (মৃত্যু ১০১৩) সহ মধ্যযুগীয় মুসলিম পণ্ডিতেরা এই বিষয়ে লিখেছেন, এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কুরআন অধ্যয়নের জন্য ভাষাগত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও অন্যরা বলেছেন যে কুরআনে মহৎ ধারণা আছে, অন্তর্নিহিত অর্থ আছে, এই গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে এর সতেজতা বজায় রেখেছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিছু পণ্ডিত বলেন যে কুরআনে বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কুরআনের অলৌকিকতার মতবাদ প্রমাণে মুহাম্মাদের নিরক্ষরতার উপর আরও জোর দেওয়া হয় যেহেতু নিরক্ষর মুহাম্মাদের পক্ষে এই গ্রন্থ রচনা মোটেই সম্ভব নয়।[৩২][৩৩]

    নামাজে কুরআন তেলাওয়াত

    নামাজে বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা আবশ্যক। নামাজে কিরাআত তিলাওয়াতের বিষয়াবলী জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলানো ওয়াজিব। কমপক্ষে তিন আয়াত বা তিন আয়াতের সমপরিমাণ বড় এক আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে।

    ইসলামী শিল্পকলায়

    এছাড়াও কুরআন ইসলামী শিল্প ও বিশেষ করে তথাকথিত কুরআনী চারুলিপি ও চিত্রায়নের পদ্ধতিকে অনুপ্রাণিত করেছে।[৩৪] কুরআনে কখনোই চিত্র ব্যবহার করা হয়নি তবে অনেক কুরআনে পাতার প্রান্তে, সূরার মাঝখানে বা শুরুতে বিভিন্ন ধাঁচে অলঙ্করণ করে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদের বাতি, ধাতব বা মৃৎপাত্রে কুরআনের আয়াত মুদ্রিত হয়েছে।

    • চারুলিপি, অষ্টাদশ শতাব্দী, ব্রুকলিন যাদুঘর
    • কুরআনী শিলালিপি, বড় গম্বুজ মসজিদ, দিল্লী, ভারত
    • সূরা আন-নূর এর আয়াত সম্বলিত এনামেল কাঁচের মসজিদ প্রদীপ
    • কুরআনের আয়াত সম্বলিত দেয়াল, শাহ-ই-জিন্দা স্মৃতিসৌধ, সমরকন্দ, উজবেকিস্তান
    • কুরআন এর পৃষ্ঠা সজ্জা, উসমানীয় যুগ
    • স্বর্ণে লিখিত এবং বাদামী কালি দিয়ে অঙ্কিত কুরআনের এই পাতাগুলো অনুভূমিক বিন্যাসে সজ্জিত। এটি কুফিক লিপির একটি নিদর্শন।

    পাঠ্য ও বিন্যাস

    মূল নিবন্ধসমূহ: কুরআনের পারাসূরা

    সূরা আল-ফাতিহা, কুরআন এর প্রথম সূরা।

    কুরআনের নাযিল হওয়া প্রথম চার আয়াত; ৯৬তম সূরা আলাক

    কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের (আয়াত আরবি শব্দ, এর সাহিত্যিক অর্থ নিদর্শন) সংখ্যা প্রায় ৬,২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮টি অথবা ৬৬৬৬টি)।[৩৫] প্রত্যেকটি সূরার একটি নাম রয়েছে। নামকরণ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়েছে; তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই নাম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমন নামও পাওয়া যায় যা সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয় নি যেমন সূরা ফাতিহা। ফাতিহা শব্দটি এ সূরার কোথাও নেই। সূরাগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট সজ্জা রয়েছে। সজ্জাকরণ তাদের অবতরণের ধারাবাহিকতা অনুসারে করা হয় নি। বরং দেখা যায় অনেকটা বড় থেকে ছোট সূরা অনুযায়ী সাজানো। অবশ্য একথাও পুরোপুরি সঠিক নয়। সজ্জার প্রকৃত কারণ কারও জানা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বড় সূরাও ছোট সূরার পরে এসেছে। তবে একটি সূরা বা তার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকতার সাথেই অবতীর্ণ হয়েছিল বলে মুসলমানদের ধারণা। কুরআনের সজ্জাটি মানুষের মুখস্থকরণের সুবিধার সৃষ্টি করেছে।

    হিজ্‌ব বা মানজিল হচ্ছে কুরআনের প্রথম সূরা (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত অন্য সূরাগুলো নিয়ে করা একটি শ্রেণি। হিজ্‌ব মুফাস্‌সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করা। এতে ৭টি মানজিলের মাধ্যমে সবগুলো সূরাকে একসাথে করা হয়েছে।[৩৬] মানজিলগুলো হচ্ছে:

    • মানজিল ১ = ৩ টি সূরা, যথা, ২—৪
    • মানজিল ২ = ৫ টি সূরা, যথা, ৫—৯
    • মানজিল ৩ = ৭ টি সূরা, যথা, ১০—১৬
    • মানজিল ৪ = ৯ টি সূরা, যথা, ১৭—২৫
    • মানজিল ৫ = ১১ টি সূরা, যথা, ২৬—৩৬
    • মানজিল ৬ = ১৩ টি সূরা, যথা, ৩৭—৪৯
    • মানজিল ৭ = ৬৫ টি সূরা, যথা, ৫০—১১৪

    কুরআনে মোট ৩০ টি পারা বা অধ্যায় রয়েছে। ১১৪টি পূর্নাঙ্গ সূরা রয়েছে। সূরাগুলো বিভিন্ন আকারের হলেও কুরআনের পারাগুলো প্রায় সমান আকারের। কুরআন মুখস্থকরণের ক্ষেত্রে সাধারণতম পারা অনুযায়ী শিক্ষা করানো হয়। যে সকল স্থানে সমগ্র কুরআন পাঠের আয়োজন করা হয় সেখানেও এই পারা অনুযায়ী করা হয়।

    বিষয়বস্তু

    কুরআনের বিষয়বস্তু আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পুনরুত্থান সহ মৌলিক ইসলামী বিশ্বাসসমূহ বর্ণনা করে। পূর্বের নবিগণের বিবরণ, নৈতিক ও আইনগত বিষয়, মুহাম্মাদের সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা, দানশীলতা ও নামাজের কাহিনীও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের আয়াতে ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে সাধারণ উপদেশ রয়েছে এবং এতে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সাধারণ নৈতিক পাঠের রূপরেখা প্রদান করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে মুসলিমরা কুরআন এর বার্তার সত্যতার ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করে।[৩৭]

    একেশ্বরবাদ

    কুরআনের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো একেশ্বরবাদ। আল্লাহ জীবন্ত, শাশ্বত, সর্বব্যাপী এবং সর্বশক্তিমান হিসেবে বর্ণিত (দেখুন কুরআন ২:২০, ২:২৯, ২:২৫৫)। আল্লাহর শক্তিমত্তা তার সৃষ্টির ক্ষমতায় সর্বোপরি আবির্ভূত হয়। তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টা (দেখুন কুরআন ১৩:১৬, ২:২৫৩, ৫০:৩৮ ইত্যাদি)। কুরআন এর মতে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ নির্ভরতার দিক দিয়ে সকল মানুষ সমান এবং এই সত্যকে স্বীকার করা ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।

    কুরআনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বিভিন্ন আয়াতে সৃষ্টিতাত্ত্বিক যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ,মহাবিশ্ব প্রবর্তিত হয়েছে সুতরাং এর একজন প্রবর্তক প্রয়োজন এবং যা কিছু বিদ্যমান, সবকিছুর অস্তিত্বের জন্যই একটি যথার্থ কারণ থাকতে হবে। এছাড়া, এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের কথাও প্রায়ই উল্লেখ করা হয়েছে: “যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?”[৩৮][৩৯]

    পরলোকতত্ত্ব

    নবীগণ

    নৈতিকতাত্ত্বিক ধারণা

    বিজ্ঞানের জন্য উৎসাহ

    সাহিত্যিক গঠন

    কুরান

    ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ইসা বাউলাতা কুরআনের সাহিত্যিক গঠনপ্রণালি সম্বন্ধে নিম্ন প্রকারের মন্তব্য করেছেন।[৪০]

    কুরআনের বার্তাগুলো বিভিন্ন সাহিত্যিক গঠনে প্রকাশিত হয়েছে, যা আরবি সাহিত্যের সবচেয়ে নিখুঁত লিখিত রচনা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কুরআনের ভাষার উপর ভিত্তি করেই আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়েছে, এবং মুসলিম অলঙ্কার শাস্ত্রবিদদের বর্ণনামতে, কুরআনের বাগধারাগুলো ভীষণ সুন্দর এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত হয়… উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, কুরআন এর বার্তা প্রকাশ করার নিমিত্তে বিপুল প্রকার ও শ্রেণির সাহিত্যিক উপাদানের সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

    কুরআনের ব্যাখ্যা কোরআন নিজেই দেয়।

    ব্যাখ্যা

    কুরআনের আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা এবং তাদের তাৎপর্য খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে যাকে তাফসীর বলা হয়। তাফসীর মুসলিমদের প্রাচীনতম কেতাবি কার্যক্রমগুলির একটি। কুরআন অনুসারে, মুহাম্মাদ প্রথম ব্যক্তি যিনি মুসলমানদের জন্য আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেন।[৪১] অন্যান্য প্রারম্ভিক দৃষ্টান্তের মধ্যে কয়েকজন সাহাবা যেমন আবু বকর, উমর ইবনুল খাত্তাব, উসমান ইবন আফফান, আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবিত, আবু মুসা আশয়ারী এবং আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের[৪২] সে সময় ব্যাখ্যা-পদ্ধতি, আয়াতের সাহিত্যিক দিকগুলির ব্যাখ্যা, এর শানে নুযূল এবং মাঝে মাঝে অন্য আয়াতের সাহায্যে কোনো আয়াতের ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদি আয়াতটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বন্ধীয় হয়, তাহলে কখনও কখনও মুহাম্মাদ এর কিছু হাদিস বর্ণনা করে এর অর্থ স্পষ্ট করা হতো।[৪৩]

    যেহেতু কুরআন ধ্রুপদী আরবী ভাষায় উচ্চারিত হয়, পরবর্তী ধর্মান্তরিতদের অনেকেই (অধিকাংশই অ-আরব) সবসময় কুরআন এর আরবি বুঝতো না, আরবী ভাষায় সাবলীল ব্যক্তির কাছে যেসব অভিব্যক্তি সুস্পষ্ট তা তারা বুঝতে সক্ষম ছিলো না। আরবী ভাষার ভাষ্যকাররা এই অভিব্যক্তিগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং মুহাম্মাদের নবীত্বের শুরুতে কোন আয়াতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রাচীনতম মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য উপযুক্ত, এবং কোনগুলো পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন, এর ভিত্তিতে পুরাতন পাঠ্যগুলো (মানসুখ) বাতিল (নাসিখ) করা হয়েছে।[৪৪][৪৫] তবে অন্যান্য কিছু আলেমগণ মনে করেন যে কুরআনের কোন আয়াত বাতিল করা হয়নি।[৪৬]

    বিভিন্ন আলেমদের দ্বারা কুরআনের বেশ কিছু ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। জনপ্রিয় কয়েকটি হলো তাফসির ইবনে কাসির, তাফসির আল জালালাইন, তাফহিমুল কুরআনতাফসির আল-তাবারি, তাফসির আল কবির। তাফসীরের আরও আধুনিক কাজ হলো মাআরিফুল কুরআন

    গূঢ় ব্যাখ্যা

    সুফি ধারাভাষ্যের ইতিহাস

    অর্থের স্তর

    পুনঃগ্রাস

    অনুবাদ

    মূল নিবন্ধ: কুরআন অনুবাদ

    আরও দেখুন: কুরআনের অনুবাদসমূহের তালিকা

    কুরআন অনুবাদ করা সবসময়ই সমস্যাজনক এবং জটিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বলেন যে কুরআনের পাঠ্য অন্য ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব নয়।[৪৭] উপরন্তু, প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে একটি আরবি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে, যা একটি যথাযথ অনুবাদ প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে তোলে।[৪৮]

    তা সত্ত্বেও, কুরআন অধিকাংশ আফ্রিকান, এশীয় এবং ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।[৩২] ইসলামের প্রথম যুগে, সপ্তম শতাব্দীতে, সালমান আল-ফারসি সূরা ফাতিহাকে ফারসি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কুরআন অনুবাদের সূচনা করেন।[৪৯] ইতোপূর্বে মুহাম্মাদ, আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশী বা নিগাস ও বাইজেন্টাইনের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট পাঠানো চিঠিতে কুরআনের আংশিক অনুবাদ প্রেরণ করেন।[৪৮] হিন্দু রাজা মেহরুকের অনুরোধে আবদুল্লাহ বিন উমর বিন আব্দুল আজিজের নির্দেশে ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে আলওয়ারে (সিন্ধু, ভারত, বর্তমানে পাকিস্তান) ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসীদের জন্য কুরআনের আরেকটি অনুবাদ সম্পন্ন হয়।[৫০]

    কুরআনের প্রথম সম্পূর্ণ অনুবাদ ফার্সি ভাষায় ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। সামানি সম্রাট প্রথম মনসুরের শাসনামলে (৯৬১-৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ), তার উদ্যোগে, খোরাসানের একদল পণ্ডিত আরবী ভাষায় লিখিত তাফসির আল-তাবারী কে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে একাদশ শতাব্দীতে আবু মনসুর আব্দুল্লাহ আল-আনসারির একজন ছাত্র ফার্সি ভাষায় কুরআনের একটি সম্পূর্ণ তাফসীর লেখেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে, নাজম আল-দীন আবু হাফস আল-নাসাফি ফার্সি ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন। তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে।

    ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ১০২ টি ভাষায় কুরআন অনুবাদিত হয়েছিল।[৪৮] বর্তমানে পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলোর প্রায় সবগুলোতেই কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ রয়েছে। ২০১০ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ১৮তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীতে ১১২টি ভাষায় অনুবাদিত কুরআন উপস্থাপিত হয়।[৫১]

    ১১৪৩ খ্রিস্টাব্দে পিটার দ্য ভেনারেবল এর জন্য লাতিন ভাষায় রবার্ট কেটন এর করা কুরআন এর অনুবাদটি পাশ্চাত্য ভাষায় কুরআন এর প্রথম অনুবাদ ছিল।[৫২] ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ভাষায় আন্দ্রে দু রায়ার এর অনুবাদটি ব্যবহার করে ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে আলেকজানডার রস্‌ কুরআনের প্রথম ইংরেজী অনুবাদটি সম্পন্ন করেন। ১৭৩৪ সালে জর্জ সেল কুরআনের প্রথম পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ ইংরেজিতে প্রকাশ করেন; আরেকটি ১৯৩৭ সালে রিচার্ড বেল কর্তৃক এবং আরও একটি ১৯৫৫ সালে আর্থার জন আর্বেরি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই সকল অনুবাদকেরাই অমুসলিম ছিলেন। মুসলিমদের দ্বারাও ইংরেজিতে কুরআন অনুবাদিত হয়েছে। আধুনিক ইংরেজিতে মুসলিম অনুবাদকদের প্রকাশিত কুরআন এর মধ্যে রয়েছে দ্য অক্সফোর্ড ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক কর্তৃক প্রকাশিত মুহাম্মাদ আবদেল হালিম এর অনুবাদ, ড. মুস্তাফা খাত্তাব এর অনুবাদ দ্য ক্লিয়ার কুরআন, সহিহ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদ ইত্যাদি।

    পাঞ্জাবের মোগা জেলায় কুরআন এর প্রাচীনতম গুরমুখী অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে, যা ১৯১১ সালে মুদ্রিত হয়েছিল।[৫৩]

    • আন্তঃরৈখিক ফার্সি অনুবাদসহ ইলখানাত যুগের আরবী কুরআন।
    • ১৬৪৭ সালে ইউরোপীয় ভাষায় প্রথম মুদ্রিত কুরআন।
    • জার্মান ভাষায় কুরআন এর প্রথম অনুবাদের নামপত্র।
    • চীনা ভাষায় কুরআন এর অনুবাদে সূরা ইয়াসীনের আয়াত ৩৩ ও ৩৪।

    বাংলা ভাষায় কুরআনের প্রধান অনুবাদসমূহ

    পঠন

    পঠনের নিয়ম

    আরও দেখুন: তাজবিদ

    কুরআনের যথাযথ তেলাওয়াত হলো তাজবিদ নামের একটি পৃথক শৃঙ্খলার বিষয় যা কীভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত, প্রতিটি স্বতন্ত্র বর্ণনামূলক উচ্চারণ কীভাবে করা উচিত, যে স্থানে বিরতি থাকা উচিত সেখানে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন, উচ্চারণের ক্ষেত্রে যেখানে উচ্চারণটি দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত, যেখানে বর্ণগুলি এক সাথে শোনা উচিত এবং যেখানে সেগুলি পৃথক রাখা উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলি বিশদভাবে নির্ধারণ করে। বলা যেতে পারে যে, এই অনুশাসনটি কুরআনের সঠিক তেলাওয়াতের আইন ও পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করে এবং তিনটি মূল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে: ব্যঞ্জনধ্বনি এবং স্বরধ্বনির যথাযথ উচ্চারণ (কুরআনীয় ধ্বনির উচ্চারণ), আবৃত্তিতে বিরতি দেওয়ার নিয়ম এবং পুনরায় শুরুকরণের নিয়ম, এবং আবৃত্তির বাদ্যযন্ত্র এবং সুমধুর বৈশিষ্ট্য।[৫৪]

    কুরআনের ভুল তেলাওয়াত এড়াতে, তেলাওয়াতকারীরা একজন উপযুক্ত শিক্ষকের সাথে প্রশিক্ষণের একটি প্রোগ্রাম অনুসরণ করেন। তাজবিদ বিধিগুলির জন্য উল্লেখ হিসাবে ব্যবহৃত দুটি জনপ্রিয় গ্রন্থ হলো ইবনে আল-জাজারি রচিত মাতন আল-জাজারিয়াহ[৫৫] এবং সুলায়মান আল জামজুরি রচিত তুহফাত আল-আতফাল।

    এল মিনশাবি, আল-হুসারি, আবদুল বাসিত, মোস্তফা ইসমাইল এর মতো কয়েকজন মিশরীয় তেলাওয়াতকারীর তেলাওয়াত, তেলাওয়াতের বর্তমান শৈলীর বিকাশে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল।[৫৬][৫৭][৫৮][৫৯]:৮৩ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশ্ব-স্তরের তেলাওয়াতের জন্য সুপরিচিত, যা প্রমাণিত হয়েছে জাকার্তার মারিয়া উলফাহ এর মতো মহিলা তেলাওয়াতকারীদের জনপ্রিয়তায়।[৫৪]

    তেলাওয়াত দুই প্রকার:

    1. মুরাত্তাল, যা ধীর গতিতে, অধ্যয়ন এবং অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
    2. মুজাওয়াদ, একটি ধীর তিলাওয়াতকে বোঝায় যা প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা জনসাধারণের পরিবেশনার মতো উচ্চতর প্রযুক্তিগত শৈল্পিকতা এবং সুরেলা মড্যুলেশন স্থাপন করে।[৬০]

    বৈকল্পিক পাঠ

    লিখন ও মুদ্রণ

    লিখন

    ১৯ শতকে ব্যাপকভাবে মুদ্রণ প্রচলিত হওয়ার পূর্বে, কুরআন ক্যালিগ্রাফার ও অনুলিপিকারীদের তৈরিকৃত অনুলিপির মাধ্যমেই হস্তান্তরিত হতো। প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিগুলো হেজাজি লিপিতে লেখা হয়েছিল। হেজাজি শৈলীর পাণ্ডুলিপি অন্তত এটা নিশ্চিত করে যে লিখিতভাবে কোরআন এর প্রসার প্রাথমিক পর্যায়েই শুরু হয়েছিল। সম্ভবত নবম শতাব্দীতে, লেখাগুলোতে পুরু রেখার ব্যবহার শুরু হয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে কুফিক লিপি নামে পরিচিত। নবম শতাব্দীর শেষের দিকে, কুরআনের অনুলিপিগুলোতে নতুন ধরণের লিপি আবির্ভূত হতে শুরু করে যা পূর্ববর্তী লিপিকে প্রতিস্থাপন করে। পূর্ববর্তী শৈলীর ব্যবহার বন্ধ করার কারণ ছিল যে, ঐ পদ্ধতিতে অনুলিপি তৈরী করতে অনেক সময় লাগতো কিন্তু সেসময় অনুলিপির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছিল। অনুলিপিকারীরা তাই লেখার সহজ শৈলীটিই বেছে নেয়। একাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে, ব্যবহৃত শৈলী ছিল প্রাথমিকভাবে নাসখ, মুহাক্কাক, রায়হানি এবং কিছু বিরল ক্ষেত্রে সুলুস লিপি। নাসখ খুব ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা এবং ইবেরিয়াতে, মাগরিবি শৈলী অধিক জনপ্রিয় ছিল। আরও স্বতন্ত্র হলো বিহারী লিপি যা শুধুমাত্র ভারতের উত্তরাঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়েছিল। নাস্তালিক শৈলী ফার্সি বিশ্বে খুব কমই ব্যবহৃত হয়।[৬১][৬২]

    শুরুতে, কুরআন বিন্দু বা হরকত সহ লেখা হতো না। এই বৈশিষ্ট্য সর্বশেষ সাহাবাহদের জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে যোগ করা হয়। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিমদের জন্যই পাণ্ডুলিপি কেনা খুবই ব্যয়বহুল ছিল, তাই কুরআনের কপিগুলো মসজিদে রাখা হতো যাতে তা জনগণের কাছে সুলভ হয়। উৎপাদনশীলতার দিক থেকে, উসমানীয় অনুলিপিকারীরাই সর্বোত্তম নিদর্শন তৈরী করে। এর কারণ ছিল ব্যাপক চাহিদা, মুদ্রণ পদ্ধতির অজনপ্রিয়তা এবং নান্দনিকতা।[৬৩][৬৪]

    • “নীল” কুরআন এর একটি পৃষ্ঠা
    • কুফিক লিপি, অষ্টম বা নবম শতাব্দী।
    • মাগরিবি লিপি, ১৩-১৪শ শতাব্দী
    • মুহাক্কাক লিপি, চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দী।
    • শিকাস্তা নাস্তালিক লিপি, ১৮-১৯শ শতাব্দী।

    মুদ্রণ

    সমালোচনা

    Wiki letter w.svgএই অনুচ্ছেদটি খালি।আপনি এখানে যোগ করে সাহায্য করতে পারেন।

    অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে সম্পর্ক

    রানী বিলকিসের ‘রাজা সুলাইমানের কাছে সফর’। এডওয়ার্ড পয়েন্টার, ১৮৯০। তাওরাতের মতে, সুলাইমান ছিলেন একজন রাজা, যার সাতশত স্ত্রী এবং তিনশত উপ-পত্নী তার বৃদ্ধ বয়সে পথভ্রষ্ট হয় এবং মূর্তি পূজা শুরু করে[৬৫]। তাকে কুরআনে একজন রাজা-নবী-শাসক ও জ্বিন এবং প্রকৃতির শাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

    কিছু অমুসলিম দল যেমন বাহাই এবং দ্রুজরা কোরআনকে পবিত্র মনে করে। একেশ্বর সার্বজনীনবাদীরাও কুরআন থেকে অনুপ্রেরণা চাইতে পারেন। কুরআনের সাথে ডায়াতেসারন, জেমসের প্রোটোয়েভেঞ্জেলিয়াম, ইনফ্যান্সি গসপেল অব থমাস, স্যুডো-ম্যাথিউ গসপেল এবং আরবী ইনফ্যান্সি গসপেলের সাথে কিছু আখ্যানের মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।[৬৬][৬৭][৬৮] একজন পণ্ডিত পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি গসপেল হারমনি হিসেবে ডায়াতেসারনকে ক্রিশ্চিয়ান গসপেলের একটি পাঠ্য হিসেবে ধারণা করা হয়েছে।[৬৯]

    বাইবেল

    তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী বিষয়ের সত্যতা প্রতিপাদনকারী। এবং এর পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছিলেন।[৭০]

    কুরআনে পূর্বের কিতাবগুলোর (তওরাত ও ইঞ্জিল) সাথে তার সম্পর্ককে তাদের অনন্য উৎপত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এগুলো সবই এক আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে।[৭১]

    ক্রিস্টোফ লাক্সেনবার্গের (দ্য সিরো-আরামাইক রিডিং অব দ্য কোরান বইয়ে) মতে কুরআনের ভাষা সিরিয়াক ভাষার অনুরূপ ছিল। কুরআনে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পবিত্র বই (তানাক, বাইবেল) এবং ভক্তিমূলক সাহিত্যে বর্ণিত অনেক মানুষের কাহিনী এবং ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত বিবরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।[৭২] অ্যাডাম, এনোচ, নূহ, ইবার, শেলা, অব্রাহাম, লূত, ইসমাইল, ইস্ হাক, যাকোব, যোষেফ, জেথ্রো, দায়ূদ, শলোমন, এলিয়, ইলীশায়, যোনা, হারোণ, মোশি, জাকারিয়া, বাপ্তিস্মদাতা ও যীশুকে ঈশ্বরের নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত, কুরআনে অন্য যে কোন ব্যক্তির তুলনায় মূসাকে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[৭৩] ঈসাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর চেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয় (মুহাম্মদ নামকে প্রায়ই “নবী” বা “রসূল” বলে উল্লেখ করা হয়), অন্যদিকে মরিয়মকে নতুন টেস্টামেন্টের চেয়ে কুরআনে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[৭৪]

    আরও দেখুন

    টীকা

    • ^[টী১] সাহিত্যিক আরবি উচ্চারণ আঞ্চলিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। প্রথম স্বরের শব্দ “ও” বা “উ” হতে পারে, আর দ্বিতীয় স্বরের শব্দ “অ্যা” বা “আ” হতে পারে। উদাহরণে : মিশরে উচ্চারণ হবে “কোর’আন” আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে উচ্চারণ হবে “কুর’অ্যান”।