Tag: bcs question

  • বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল

    বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল

    মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
    বিভাগ
    ৬৪ জেলা
    ৪৯২ উপজেলা
    ৪৫৫৪ ইউনিয়ন৩২৭ পৌরসভা১২ সিটি কর্পোরেশন
    গ্রামওয়ার্ড

    বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল সমূহকে নিম্নের কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়ঃ

    বিভাগ

    বাংলাদেশের বিভাগসমূহ

    বিভাগপ্রতিষ্ঠিতজনসংখ্যা[১]আয়তন (কিমি)[১]জনসংখ্যা ঘনত্ব
    ২০১১ (লোক/কিমি)[১]
    বৃহত্তম শহর
    (জনসংখ্যা-সহ)
    ঢাকা১৮২৯৩৬,০৫৪,৪১৮২০,৫৩৯১,৭৫১ঢাকা (৭,০৩৩,০৭৫)
    চট্টগ্রাম১৮২৯২৮,৪২৩,০১৯৩৩,৭৭১৮৪১চট্টগ্রাম (২,৫৯২,৪৩৯)
    রাজশাহী১৮২৯১৮,৪৮৪,৮৫৮১৮,১৯৭১,০১৫রাজশাহী (৪৪৯,৭৫৬)
    খুলনা১৯৬০১৫,৬৮৭,৭৫৯২২,২৭২৭০৪খুলনা (৬৬৩,৩৪২)
    বরিশাল১৯৯৩৮,৩২৫,৬৬৬১৩,২৯৭৬২৬বরিশাল (৩২৮,২৭৮)
    সিলেট১৯৯৫৯,৯১০,২১৯১২,৫৯৬৭৮০সিলেট (৪৭৯,৮৩৭)
    রংপুর২০১০১৫,৭৮৭,৭৫৮১৬,৩১৭৯৬০রংপুর (৩৪৩,১২২)
    ময়মনসিংহ২০১৫১১,৩৭০,০০০১০,৫৮৪১,০৭৪ময়মনসিংহ (৪৭১,৮৫৮)
    ১৪৪,০৪৩,৬৯৭১৪৭,৫৭০৯৭৬ঢাকা
  • কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮

    কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮

    আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীন কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান আইন, ২০১৮ হলো ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস হওয়া একটি আইনপাকিস্তান আমল থেকে কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতির দাবি উঠতে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এই দাবি আরও জোরালো হয়। ২০০৬ সালে আজিজুল হকের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকার সরকারি স্বীকৃতির ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন হয় নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বীকৃতির উদ্যোগ নেয়। পরে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে স্বীকৃতি গ্রহণে সবার মধ্যে ঐক্যমত্য হলে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা স্বীকৃতির ঘোষণা দেন।[১] যা ২০১৮ সালে এই আইনের মাধ্যমে আইনি বৈধতা পায়। সমালোচনা করা হয় যে, এই আইন পাসে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দিকে থেকে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মর্জিমাফিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।[২][৩]

    প্রেক্ষাপট

    কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮

    দারুল উলুম দেওবন্দ

    দারুল উলুম হাটহাজারী

    ঔপনিবেশিক ভারতে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম দেওবন্দ[৪] এই দারুল উলুম দেওবন্দকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা গড়ে উঠে।[৫] বঙ্গ অঞ্চলে এ ধারার প্রথম কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম হাটহাজারী[৪] ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক ভারত থেকে ভারতপাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান আমলে সর্বপ্রথম আতহার আলী, ছিদ্দিক আহমদ, শামসুল হক ফরিদপুরী এ মাদ্রাসাগুলোর সরকারি স্বীকৃতির দাবি উত্থাপন করেন।[৫] আতহার আলী স্বীকৃতির বিল আনার জন্য শফি উসমানিকে চিঠি লিখেন, যা এখনো সংরক্ষিত আছে।[৬] বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর সময়ে আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে বেফাক নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি স্বীকৃতির দাবি নিয়ে কাজ করতে থাকে। এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন হারুন ইসলামাবাদী, নূর উদ্দিন গহরপুরী, আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী, আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সহ বেফাকের প্রমুখ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ।[৫][৬] বেফাকের প্রতিকূলতার কারণে আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী তরুণদের মাধ্যমে স্বীকৃতির দাবি জোরালো করার চিন্তা করেন। ফলশ্রুতিতে নব্বইয়ের দশকে তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা পরিষদ’ ও ‘কওমি মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদ’। স্বীকৃতির দাবিতে জনমত তৈরির জন্য এই দুই সংগঠন ক্ষুদ্র পরিসরে প্রচার কাজ শুরু করে।[৫] ১৯৯২ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত ইসলামী ছাত্র মজলিসের কলেজ প্রতিনিধি সম্মেলনে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি সহ ১৩ দফা জাতীয় শিক্ষা দাবি উত্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে সেই দাবিতে এক লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বরাবর জমা দেয়া হয়।[৭] ২০০৫ সালের ১৫ এপ্রিল আজিজুল হক পল্টন ময়দানে ‘কওমি মাদ্রাসা জাতীয় ছাত্র কনভেশন’ আয়োজন করে স্বীকৃতির দাবি তুলে ধরেন।

    দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির সংবাদ

    পরের বছর ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে লাগাতার ৫ দিন অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ৫ম দিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে একটি ওলামা সম্মেলন ডেকে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণার আশ্বাস দিলে তিনি অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।[৬] আজিজুল হকের এ কর্মসূচির ফলে স্বীকৃতির দাবি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক জনমত তৈরি হয়। তার সাথে উবায়দুল হক, মুহিউদ্দীন খান, ফজলুল হক আমিনী, সৈয়দ ফজলুল করিম প্রমুখ একাত্মতা ঘোষণা করেন।[৫] কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা রক্ষার প্রশ্নে আপোষহীন অবস্থান নেন মুফতি আব্দুর রহমান[৬] খালেদা জিয়া তার সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ঘোষণা দেন এবং ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত গেজেটও প্রকাশ করে।[৭] তবে সেটি বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের সময় বা সুযোগ ঐ সরকার পায়নি৷ তখন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ দাবির সাথে একমত ছিলেন না।[৩] ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফরীদ উদ্দীন মাসঊদরুহুল আমিনের মাধ্যমে এই স্বীকৃতির দাবি আবার সামনে আসে।[৫][৮] শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে ২৫ সদস্য এবং পরে ৬২ সদস্যের আলেমদের প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবি জানায়। প্রতিনিধিদলে আজিজুল হকশাহ আহমদ শফীও ছিলেন।[৯] ২০০৯ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী আলেমদের সঙ্গে যে আলোচনার সূত্রপাত করেন, সেটি ২০১০ সালে গ্রহণ করা শিক্ষানীতিতেও স্থান পায়। ২০১২ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করে সরকার।[১০] নানা প্রতিকূলতার কারণে কমিশনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।[৫] পরিশেষে ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির আলোকে কওমি সনদের স্বীকৃতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়।[৫]

    ইতিহাস

    শাহ আহমদ শফী

    আলেমদের ঐক্যমতের পর ২০১৭ সালে ১১ এপ্রিল শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশের শীর্ষ আলেমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে কওমি সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা প্রদান করেন।[৫] ১৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।[১১] প্রজ্ঞাপন জারির পর আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে অভিন্ন প্রশ্নে ১৫ মে প্রথমবারের মতো সারা দেশে মোট ২১৮টি কেন্দ্রে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।[৭] ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার তা সংসদে তোলা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।[২] ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির সম্মতিলাভের পর এটি আইনে পরিণত হয়। আইনটি পাসের জন্য ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর শুকরানা মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।[৮]

    বিশ্লেষণ

    এই আইনে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নামে একটি কমিটির বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিটি স্থায়ী কমিটি বলে বিবেচিত হবে এবং তা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে। এই কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বলে বিবেচিত হবে। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তরকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শুধুমাত্র উক্ত কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে সময়-সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। এই কমিটির অধীনে ছয়টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থাকবে। সেগুলো হলো: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশজাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ। এই কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধিত কওমি মাদ্রাসাগুলোতে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও পাঠ্যসূচি অনুসারে দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা পরিচালিত হবে। এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও পাঠ্যসূচি অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।[২]

    প্রতিক্রিয়া

    ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল শেখ হাসিনার ঘোষণার পর এটিকে হেফাজতে ইসলামের কাছে ‘নতি স্বীকার’ হিসেবে দেখিয়ে বিভিন্ন বাম সংগঠন এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ এর সমালোচনা করে।[১২] বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি এটিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে।[১৩] আলিয়া মাদ্রাসার একটি অংশ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জঙ্গিবাদ গেঁড়ে বসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত অ্যাখ্যা দিয়ে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।[১৪][১৫] বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছেন।[১৬] প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সভানেত্রী খালেদা জিয়া তার আমলে স্বীকৃতির বিষয়টি স্মরণ করে দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে এবং এর মাধ্যমে আলেমদের ধোঁকা দিচ্ছে।[১৭] বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং সংবিধানের মৌল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক বলা হয়। সরকারের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল আপত্তি জানিয়ে বলে সামান্য ছাড় দেওয়া হলে তারা আবারও বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। তবে এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এটিকে বিদ্যমান বাস্তবতা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন এতে ‘আপসের’ কোনো বিষয় নেই।[১৮]

    বিলটি পাসের সময় জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই আইনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মনে হচ্ছে চাপের মধ্যে বা যেমন খুশি তেমনভাবে এটি করা হয়েছে। এই বিলটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আইনে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। হয়তো এর কারণ দেওবন্দের কারিকুলাম অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এটি করা হয়েছে।’ তবে তিনি এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।[২] জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক বিল। আমরা সম্পূর্ণভাবে একমত। আমি যাচাই বাছাইয়ের পক্ষে নই, আমি চাই বিলটি অবিলম্বে পাস করা হোক।’[১৯]

    বিলটি পাসের পর আব্দুল হালিম বুখারী, শাহ আহমদ শফী, সুলতান যওক নদভী, মাহমুদুল হাসান, ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মিজানুর রহমান সাঈদ, আরশাদ রাহমানি সহ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় আলেম স্বাগত জানিয়েছে।[২০]

    আরও দেখুন

  • শিলিগুড়ি করিডোর

    শিলিগুড়ি করিডোর

    শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে দেশের অবশিষ্ট অংশের সংযোগরক্ষাকারী একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই ভূখণ্ডের আকৃতি মুরগির ঘাড়ের মতো বলে একে চিকেন’স নেক নামেও অভিহিত করা হয়। এই ভূখণ্ডের প্রস্থ ২১ থেকে ৪০ কিলোমিটার। এর দুপাশে নেপালবাংলাদেশ রাষ্ট্র। ভুটান করিডোরের উত্তর দিকে অবস্থিত।

    শিলিগুড়ি এই অঞ্চলের প্রধান শহর। এই শহরটি ভুটান, নেপাল, সিকিম, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র।

    শিলিগুড়ি করিডোর

    ইতিহাস

    ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে শিলিগুড়ি করিডোরের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে ভারতের সাথে মিলিত হওয়া অবধি রাজতন্ত্রী সিকিম করিডোরের উত্তর দিকে ছিল।[১][২] এটি শিলিগুড়ি করিডোরের উত্তরে ভারতকে একটি সুরক্ষা দিয়েছে এবং চীনা চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম দিকের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করেছে।

    ২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই অঞ্চলে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে উক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়।[৩] তবে অবৈধ ড্রাগ ও অস্ত্রচোরাচালান বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা।[৪]

    গুরুত্ব

    যদিও শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঞ্চল, এর অবস্থান একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে বৈরিতার ফলস্বরূপ ভারত বিভাগ হয়েছিল। প্রথম থেকেই এই দুটি নতুন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শত্রুতা ও সংঘাতের দ্বারা চিহ্নিত ছিল।

    চীনের দখল করে নেয়ার সম্ভাবনা

    এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ভারত-ভুটান-চিনের সীমান্ত মিশেছে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার খুব কাছে। সিকিমের কুপুপের কাছে এখন যেখানে চিনা সেনার ঘাঁটি রয়েছে, সেখান থেকে শিলিগুড়ি করিডরের নাগরাকাটা আকাশপথে মোটামুটি ৪৫-৫০ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব কমাতেই চিনা সেনা ডোকলাম কব্জা করতে চাইছে। কারণ, ডোকলাম থেকে নাগরাকাটার আকাশপথে দূরত্ব বড়জোর ২৫ কিলোমিটার।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, ডোকলামে স্থিতাবস্থা চলছে বলে এখন হা জেলার মধ্যেই অন্য রাস্তা খুঁজছে চিন।

    যাতে ভুটানের মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে ঘাঁটি গাড়া সম্ভব হয়। ডোকলামে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কংক্রিট হেলিপ্যাড, কংক্রিটের ছাউনি, সুড়ঙ্গ, নজরদারি টাওয়ার তৈরি করেছে চিনা সেনা।

    বেশ কিছু নতুন বাঙ্কারও বানিয়েছে। আর রাস্তা তো তৈরি করেইছে। তবে ডোকলামের সর্বোচ্চ অংশটিতে ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকায় নজরদারির দিক দিয়ে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

    ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত-বিবাদ নিয়ে চিনের আলোচনা চলছে ঠিকই। কিন্তু তার আগেই ভুটানের পশ্চিম দিকে ক্রমেই এগিয়ে আসছে চিন। টহলদারি চালাচ্ছে। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘ভুটানের মিডল সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থিম্পুকে ছেড়ে দিতে চায় চিন। তার বদলে পশ্চিম ভুটানে ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিতে চায় তারা। এই অংশ সিকিম ও কালিম্পং লাগোয়া। গত ২৪-২৫ জুলাই চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী কং শুয়াংইউ থিম্পুতে গিয়ে ফের একই প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন।’’ ওই গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দেশের যা কথাবার্তাই হোক না কেন, পশ্চিম ভুটানের ২৬৯ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চিনা

    সেনার অবাধ গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে মাসে এক বা দু’বার চিনের সেনা ‘লং রুট পেট্রলিং’-এ ভুটানের ভিতরে যেত। এখন প্রায়ই তাদের ওই এলাকায় দেখা যাচ্ছে। চিনের আম নাগরিকেরাও মাঝে-মধ্যে ভুটানি সেনার শিবিরে এসে কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। এ সবে ভুটানের দিক থেকেও তেমন কোনও বাধা আসছে না।

    এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। যদিও গত ৭ মার্চ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ লোকসভায় জানান, ২০১৭-এর ২৮ অগস্টের পরে ডোকলাম বা সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে আর কিছু হয়নি। এক প্রতিরক্ষা বিশেষ়জ্ঞের কথায়, ‘‘ভুটানের পারোতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি রয়েছে। পারো থেকে হা জেলায় পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। ফলে এতটা উদ্বেগেরও কোনও কারণ নেই।’’ হাসিমারা ও পানাগড় বিমানঘাঁটি যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখে বলেও জানান তিনি।

    তবু সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ ডোকলামে কিছু না-ঘটলেও ২০১৭-এর ২৮ ডিসেম্বর অরুণাচলের আপার সিয়াং জেলার শিয়ুং লা-তে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে এসেছিল চিনা সেনা। ভারতের আপত্তি ও সীমান্ত বৈঠকের পরে তারা ফিরে যায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ৫৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) জানিয়েছে, চিন সীমান্ত বরাবর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে গতি আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে তারা।

    এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের মহড়াও। সীমান্তে হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রায় আইটিবিপি-র কাজের সুবিধার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক ছাউনি তৈরির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

    শিলিগুড়ি করিডোর, মানচিত্রে লাল রঙের বৃত্তের দ্বারা চিহ্নিত

  • রাঢ়

    রাঢ়

    রাঢ় হল ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গঝাড়খণ্ডের একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল। এটি পশ্চিমে ছোটোনাগপুর মালভূমি ও পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত। রাঢ় অঞ্চলের সীমানা সম্পর্কে প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলেও, বোঝা যায় যে মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই এই অঞ্চলের অবস্থিতি ছিল। অঞ্চলের কয়েকটি অংশ আধুনিক ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত।[১][২][৩]

    রাঢ়

    ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে রাঢ় অঞ্চলটির ভিন্ন ভিন্ন নামে চিহ্নিত হয়েছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এখানে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন রাঢ় সভ্যতা ও গঙ্গারিডাই রাজ্য এখানেই অবস্থিত ছিল। তবে এর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না।[২][৩][৪][৫]

    নামকরণ ও ব্যুৎপত্তি

    এই অঞ্চলের বিভিন্ন নামগুলি আসলে “রাঢ়” শব্দটির শব্দগত বিকৃতি। অনেক সময় “ঢ়” শব্দটি “ঢ” হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত জৈণ ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এ “রাঢা”, “রাঢ”, “রাঢ়া”, “রাঢ়”, “লাঢা”, “লাঢ়” প্রভৃতি শব্দগুলি পাওয়া যায়। কোনো কোনো বইতে “লালা”, “রার” বা “লাড়” নামেও এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। ভাষাতাত্ত্বিক প্রভাত রঞ্জন সরকারের মতে, চীনারা রাঢ়কে “লাটি”, গ্রিকরা “গঙ্গারিডি” ও আর্যরা “রাট্টা” বলত। তবে অনেক গ্রিক, রোমানমিশরীয় বইতেই “গঙ্গারিডাই”, “গঙ্গারিডি”, “গঙ্গারিটাই” ও “গঙ্গারিডাম” সভ্যতা, রাজ্য বা জাতির উল্লেখ রাঢ়ের পাশাপাশি একইভাবে করা হয়েছে। মেগাস্থিনিস, টলেমি, স্ট্রাবো, প্লিনি দ্য এল্টার, অ্যারিয়ান, ডিওডোরাস সিকুলাস, কুইন্টাস কার্টিয়াস রিউফুসপ্লুটার্কের রচনায় গঙ্গারিডাই রাজ্যের নাম পাওয়া যায়।[২][৩][৬][৭]

    “রাঢ়” শব্দের ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন, এটি অস্ট্রোএশিয়াটিক পরিবার-ভুক্ত কোনো এক স্থানীয় ভাষা থেকে এসেছে। সাঁওতালি ভাষায় প্রচলিত নিম্নোক্ত ভাষাগুলি থেকে এর উদ্ভব হওয়া সম্ভব: “লার” (সুতো), “রাড়” (সুর) ও “লাড়” (সাপ)। প্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে, শব্দটির উৎস প্রোটো-অস্ট্রোএশিয়াটিক “রাঢ়া” বা “রাঢ়ো” শব্দদুটি, যার অর্থ “লালমাটির দেশ” বা “ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার দেশ”।[২][৬]

    “গঙ্গারিডাই” শব্দের উৎসটিও স্পষ্ট নয়। ঐতিহাসিক ড. অতুল সুর, প্লিনি ও টলেমির মতে এর অর্থ “গঙ্গার তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চল”। যদিও অন্যান্য গবেষকদের মতে, এর অর্থ, “গঙ্গাহৃদি” (যে অঞ্চলের হৃদয়ে গঙ্গা প্রবাহিত), “গঙ্গারাষ্ট্র” বা “গোন্ডা-রিডাই” (গোন্ডা জাতির দেশ)। মেগাস্থিনিস এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বলেছেন, “Gangarides’। ডিওডোরাস সিকুলাসের বর্ণনা অনুসারে, গঙ্গারিডাই “রাষ্ট্রে সবচেয়ে বড়ো আকারের ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হাতি ছিল।”[৭]

    অবস্থান

    বর্ধমান বিভাগের সম্পূর্ণ বীরভূম জেলা, বর্ধমান জেলার মধ্যভাগ, বাঁকুড়া জেলার পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ভাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ রাঢ়ের অন্তর্গত। এছাড়া প্রেসিডেন্সি বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার অংশবিশেষ ও হুগলি জেলার সামান্য অংশ রাঢ়ের অন্তর্গত।

    ভূগোল

    • ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকা – পশ্চিমের মালভূমি থেকে কাঁকুড়ে পলিমাটি বয়ে এনে এই অঞ্চলের নদীগুলি এই সমভূমি সৃষ্টি করেছে। যদিও সঠিক অর্থে সমতলভূমি নয় রাঢ় অঞ্চল। স্থানে স্থানে ঢেউখেলানো অসমতম ভূমি ও টিলা এই অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

    পুরনো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে ল্যাটেরাইট লাল মাটির প্রাধান্যই বেশি। মাটির স্তর এখানে অগভীর। মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম। নদী অববাহিকাগুলি বাদে অন্যত্র তাই মাটি খুব একটা উর্বর নয়।

    • নদনদী – রাঢ় অঞ্চলের প্রধান নদনদীগুলি হল ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাইকাঁসাই। এই নদীগুলির উৎপত্তিস্থল ছোটনাগপুর মালভূমি ও এগুলির প্রতিটিই ভাগীরথী-হুগলি বা তার কোনও উপনদীতে মিলিত হয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীর অংশবিশেষও এই অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় এগুলিতে সারা বছর জল থাকে না। তবে বর্ষাকালে প্রায়শই দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়।
    • জলবায়ু – সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় রাঢ় অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। গ্রীষ্ম ও শীতকালের গড় তাপমাত্রা এখানে যথাক্রমে ৩৫º-৪০º ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১২º-১৪º ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাঢ়ে বছরে গড়ে প্রায় ১৪০-১৬০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তর রাঢ়ের তুলনায় দক্ষিণ রাঢ়ে বেশি। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ কালবৈশাখী ও অক্টোবরে আশ্বিনের ঝড়ও এই অঞ্চলের জলবায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
    • প্রাকৃতিক উদ্ভিদ – এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক উদ্ভিদের মধ্যে শাল, মহুয়া, শিমূল, কুল, বাবলা, বাঁশ ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চল অরণ্যসংকূল। তবে বর্তমানে জনবসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে বহুলাংশে অরণ্যচ্ছেদন ও চাষাবাদ এই অঞ্চলের ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ভূমিক্ষয় রোধের জন্য তাই কৃত্রিম উপায়ে বনায়ন শুরু হয়েছে।

    অর্থনীতি

    • কৃষি – কৃষিতে এই অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। সমতল ভূভাগ, উন্নত সেচব্যবস্থা ও অনুকূল অবস্থার জন্য রাঢ়ের নদী অববাহিকাগুলিতে ধান, গম, আখ, ডাল, তৈলবীজ, জোয়ার ও আলু প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এর মধ্যে ধানচাষ সর্বাধিক হয় বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। জোয়ার ও তৈলবীজ মেদিনীপুরে, গম বাঁকুড়ায়, বীরভূমে আখ প্রচুর উৎপন্ন হয়। হুগলি ও বর্ধমান জেলায় প্রচুর আলু এবং হুগলি ও মেদিনীপুরে পান ও বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপন্ন হয়।

    এছাড়া পণ্য ফসলের মধ্যে বাঁকুড়া জেলায় পলাশ ও কুল গাছে লাক্ষাকীট এবং বাঁকুড়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় রেশমকীটের খাদ্য তুঁতগাছের চাষ হয়।

    • খনিজ – এই অঞ্চলে অল্প পরিমাণে হলেও কিছু উৎকৃষ্ট খনিজ পাওয়া যায়। বর্ধমানের রাণীগঞ্জ অঞ্চলে প্রচুর উৎকৃষ্ট কয়লা মজুত আছে। বীরভূমের মহম্মদবাজার, খড়িয়া, কামারপুকুর ও বাঁকুড়ার মেজিয়ায় অল্প পরিমাণে অভ্র, ফায়ার ক্লে ও চিনামাটি পাওয়া যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি, লাবণি ও সরিষা থানায় অল্প ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। এছাড়া হুগলি ও বর্ধমান জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বালির খাদ আছে।
    • শিল্প – রাঢ় অঞ্চলে বৃহৎ শিল্প খুব একটা গড়ে ওঠেনি। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য এই অঞ্চল জগদ্বিখ্যাত। এই অঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প হল – বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার পোড়ামাটি ও টেরাকোটার কাজ ও পুতুল শিল্প, বিষ্ণুপুরের রেশম, তসর, শাঁখা ও কাঁসা-পিতলের শিল্প, মুর্শিদাবাদের হাতির দাঁতের শিল্প ও রেশম শিল্প, পশ্চিম মেদিনীপুরের মাদুর ও বেতশিল্প এবং হুগলির তাঁতশিল্প।

    এছাড়া বীরভূমের আহম্মদপুরের চিনি কল ও রাঢ়ের বিভিন্ন অঞ্চলের চালকল, তেলকল ও কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা এই অঞ্চলের মাঝারি শিল্পের কয়েকটি নিদর্শন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কিছু বৃহৎ শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন। এর মধ্যে বর্ধমানের অন্ডালে একটি বিমাননগরী বা এয়াট্রোপোলিশ স্থাপনের পরিকল্পনা অন্যতম।

    পাদটীকা

    “Rarh”Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১২। Sarkar, Shrii Prabhat Ranjan (২০০৪)। Ráŕh – The Cradle of Civilization। Ananda Marga Publications। আইএসবিএন81-7252-221-3|আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। Chattopadhyaya, Rupendra K.। “Radha”Banglapedia। ২৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১২। Majumdar, Dr. R. C. (১৯৬০)। The Classical Accounts of India। Calcutta। পৃষ্ঠা 103–128; 170–172; 198; 234। McCrindle, John W. (১৯০১)। Ancient India As Described in Classical LiteratureMunshiram Manoharlal Publishers। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন8170690838“Bankura”। RTBot – Real Time Information। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১২। “The Historic State of Gangaridai”। Bangladesh.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১২।

    ঐতিহাসিক/ভৌগোলিক অঞ্চল
    উপর থেকে নিচে, বাঁদিক থেকে ডানদিকে: তারাপীঠের গ্রামীণ অঞ্চল, বীরভূমের একটি গ্রাম, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাপ্রাঙ্গন, দুর্গাপুরের আনন্দ বিনোদন উদ্যান, কার্জন গেট, বর্ধমান শহরের ১০৮ শিবমন্দির, বিষ্ণুপুরেরশ্যামরায় মন্দির
    রাঢ় অঞ্চলের মানচিত্র
    রাঢ়রাঢ়Location in India
    স্থানাঙ্ক: ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব
    দেশ ভারত
    রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
    সরকার
     • শাসকপশ্চিমবঙ্গ সরকার
    ভাষা
     • সরকারিবাংলাইংরেজি
     • অন্যান্য ভাষাওড়িয়া, কুড়ুখ, মগধী, মুন্ডারিসাঁওতালি
    সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
    প্রধান শহরহাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সি

    ঐতিহাসিক/ভৌগোলিক অঞ্চল
    উপর থেকে নিচে, বাঁদিক থেকে ডানদিকে: তারাপীঠের গ্রামীণ অঞ্চল, বীরভূমের একটি গ্রাম, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাপ্রাঙ্গন, দুর্গাপুরের আনন্দ বিনোদন উদ্যান, কার্জন গেট, বর্ধমান শহরের ১০৮ শিবমন্দির, বিষ্ণুপুরেরশ্যামরায় মন্দির
    রাঢ় অঞ্চলের মানচিত্র
    রাঢ়রাঢ়Location in India
    স্থানাঙ্ক: ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব
    দেশ
     ভারত
    রাজ্য
    পশ্চিমবঙ্গ
    সরকার
     • শাসক
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার
    ভাষা
     • সরকারি
    বাংলাইংরেজি
     • অন্যান্য ভাষা
    ওড়িয়া, কুড়ুখ, মগধী, মুন্ডারিসাঁওতালি
    সময় অঞ্চল
    ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
    প্রধান শহর
    হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সি
    ঐতিহাসিক/ভৌগোলিক অঞ্চল







    উপর থেকে নিচে, বাঁদিক থেকে ডানদিকে: তারাপীঠের গ্রামীণ অঞ্চল, বীরভূমের একটি গ্রাম, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাপ্রাঙ্গন, দুর্গাপুরের আনন্দ বিনোদন উদ্যান, কার্জন গেট, বর্ধমান শহরের ১০৮ শিবমন্দির, বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দির
    রাঢ় অঞ্চলের মানচিত্র
    রাঢ়
    রাঢ়
    Location in India
    স্থানাঙ্ক: ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব
    দেশ
     ভারত
    রাজ্য
    পশ্চিমবঙ্গ
    সরকার
     • শাসক
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার
    ভাষা
     • সরকারি
    বাংলাইংরেজি
     • অন্যান্য ভাষা
    ওড়িয়া, কুড়ুখ, মগধী, মুন্ডারিসাঁওতালি
    সময় অঞ্চল
    ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
    প্রধান শহর
    হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সি
    ঐতিহাসিক/ভৌগোলিক অঞ্চল







    উপর থেকে নিচে, বাঁদিক থেকে ডানদিকে: তারাপীঠের গ্রামীণ অঞ্চল, বীরভূমের একটি গ্রাম, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাপ্রাঙ্গন, দুর্গাপুরের আনন্দ বিনোদন উদ্যান, কার্জন গেট, বর্ধমান শহরের ১০৮ শিবমন্দির, বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দির
    রাঢ় অঞ্চলের মানচিত্র
    রাঢ়
    রাঢ়
    Location in India
    স্থানাঙ্ক: ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব
    দেশ
     ভারত
    রাজ্য
    পশ্চিমবঙ্গ
    সরকার
     • শাসক
    পশ্চিমবঙ্গ সরকার
    ভাষা
     • সরকারি
    বাংলাইংরেজি
     • অন্যান্য ভাষা
    ওড়িয়া, কুড়ুখ, মগধী, মুন্ডারিসাঁওতালি
    সময় অঞ্চল
    ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
    প্রধান শহর
    হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সি
  • বিহারীনাথ

    বিহারীনাথ

    বিহারীনাথ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার উচ্চতম পাহাড়। এই অঞ্চলটি জেলার অন্যতম গভীর বনাঞ্চলও বটে। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৪৫১ মিটার (১,৪৮০ ফুট)।[১] বিহারীনাথ বাঁকুড়া শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) এবং শালতোড়া শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার (৯ মাইল) দূরে অবস্থিত। বিহারীনাথ এলাকায় কিছু প্যালিওলিথিক প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়। এর পর থেকেই এই পাহাড় ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি পুরাতাত্ত্বিক মহলে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।[২] বিহারীনাথ পাহাড়ের পাদদেশ অংশটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ০.৫০ হেক্টর আয়তনের একটি ছোটো জলাধারকে কেন্দ্র করে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিহারীনাথের নিকটে একটি প্রাচীন জৈন মন্দিরও আছে।[৩] এই অঞ্চলে ভূগর্ভে কয়লা সঞ্চিত রয়েছে। বিহারীনাথ ব্লক দামোদরোত্তর অঞ্চলের রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের দক্ষিণ মধ্য অংশে অবস্থিত। পুরো অঞ্চলটিই পলিমাটিতে ঢাকা।[৪]

    বিহারীনাথ
    বিহারীনাথ
    সর্বোচ্চ বিন্দু
    উচ্চতা৪৫১ মিটার (১,৪৮০ ফু)
    ভূগোল
    অবস্থানশালতোড়া, বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
    মূল পরিসীমাছোটনাগপুর মালভূমি
  • বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত

    বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত

    বাংলাদেশ-ভারত সীমানা, আঞ্চলিকভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা (আইবি) বলা হয়, এটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে চালু আন্তর্জাতিক সীমানা, যেটা বাংলাদেশের আটটা বিভাগ এবং ভারতের রাজ্যগুলোর সীমা নির্ধারণ করেছে।

    বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত

    বাংলাদেশ এবং ভারত একটা ৪,১৫৬ কিমি (২,৫৮২ মাইল) লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানা অংশ ভাগ করে, এটা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা, যার মধ্যে আছে অসম ২৬২ কিমি (১৬৩ মাইল), ত্রিপুরা ৮৫৬ কিমি (২৭৫ মাইল), মিজোরাম ১৮০ কিমি (১১০ মাইল), মেঘালয়া ৪৪৩ কিমি (২৭৫ মাইল) এবং পশ্চিমবঙ্গ ২,২১৭ কিমি (১,৩৭৮ মাইল)।[১] সীমানার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভাগগুলোর মধ্যে আছে ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট এবং চট্টগ্রাম। দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে কতগুলো থাম দিয়ে মার্কা করা আছে। সামান্য সীমা নির্ধারণ করা জায়গায় দু-দিক থেকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে ভারত এবং বাংলাদেশ দু-দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে ভূমি পরিসীমা চুক্তি করে সীমানার সরলীকরণ করা হয়েছে।[২]

    ইতিহাস

    বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১২৭৩ নং পোস্ট

    র‌্যাডক্লিফ লাইন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট ভারত ভাগের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটা সীমা নির্ধারণ লাইন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাজের স্থপতি, স্যার সিরিল রাডক্লিফ, যিনি বর্ডার কমিশনের সভাপতি ছিলেন এবং ৮.৮ কোটি জনগণের মধ্যে ১৭৫,০০০ বর্গমাইল (৪৫০,০০০ বর্গকিমি) ভূমি নিরপেক্ষভাবে সমদ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিলেন।[৩]

    বিচার্য বিষয়সমূহ 

    গোসম্পদ, খাবার জিনিস, ওষুধ এবং মাদকদ্রব্য ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরা কারবারের গুপ্তপথ হিসেবে সীমানাকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে সীমানা অতিক্রম করে। কারণ একটা বিরাট সংখ্যক বেআইনি অনুপ্রবেশকারী সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে, ভারতীয় সীমা প্রহরা চৌকিগুলো একটা বিতর্কিত দেখামাত্র-গুলিচালনা নীতি কার্যকর করেছে।[৪][৫][৬] ভারতীয় সেনা এবং বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে হিংসার খবরের জন্যে এই নীতি নেওয়া হয়েছে।[৭] ২০০১ খ্রিস্টাব্দে খুব লক্ষণীয়ভাবে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ছোটো লড়াইয়ে সামিল হয়ছিল, এই সীমানা যার সাক্ষ্য বহন করে।  

    ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে চ্যানেল ৪ নিউজ সংবাদ দেয় যে, বিএসএফ ভারত-বাংলাদেশি বেড়া চৌকির পাশাপাশি কয়েকশো বাংলাদেশি মানুষকে হত্যা করে। বিএসএফ দাবি করে যে, বেড়া চৌকির মূল উদ্দেশ হল বেআইনি অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং সীমা-পার সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ।[৮] ২০১০ খ্রিস্টাব্দে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লু) ৮১ পাতার প্রতিবেদন দাখিল করে যাতে বলা হয়েছে, বিএসএফের অসংখ্য অপব্যবহার সামনে এসেছে। প্রতিবেদনটা নেওয়া হয়েছে বিএসএফের পীড়নের শিকার, সাক্ষী, বিএসএফ সদস্য এবং তার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ থেকে। প্রতিবেদন বলছে যে, একুশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যে ১০০০ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। এইচআরডব্লু বলছে বিএসএফ শুধু বেআইনি অনুপ্রবেশকারী অথবা চোরাকারবারীদেরই হত্যা করেনি, এমনকি নিরীহ ব্যক্তি যাদের কাছাকাছি দেখা গিয়েছে, কখনোবা এমনকি যারা সীমানার কাছে জমিতে কাজ করছে (কৃষিজমি) তাদেরও।[৯]

    বাংলাদেশের শেষ বাড়ি, তামাবিল, সিলেট, জয়িন্তা পাহাড় রিসর্ট, বাংলাদেশ-ভারত সীমানা

    বাংলাদেশ সরকার বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, তারা জোর করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢুকে ভারত-বাংলাদেশ সীমানার পাশাপাশি এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এটা বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে বেআইনি অনুপ্রবেশের প্রতিশোধ এবং যার ফলে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে কাঁটাতারের বেড়ার সূত্রপাত।[১০] ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, তারা ৫৯ জন বেআইনি ব্যক্তিকে হত্যা করেছে (৩৪ বাংলাদেশি, ২১ ভারতীয় এবং বাকিরা অজ্ঞাত) যারা আগের ছ-মাসের মধ্যে সীমানা পার করার চেষ্টা করেছিল।[১১] বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম অভিযোগ করেছে যে বিএসএফ বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা থেকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ৮ এবং ১৫ বছর বয়সী ৫ জন বাংলাদেশি শিশুকে অপহরণ করেছে। শিশুরা সীমানার কাছে মাছ ধরতে এসেছিল।[১২] ২০১০-এ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে যে সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী এলোপাথাড়ি হত্যা করেছে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ বাহিনী হত্যা করে লাশটা বেড়ার ওপর ঝুলিয়ে রেখেছিল – যেটা ছিল ফেলানি (১৫ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি বালিকা)।[১৩]

    ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চোরাচালান এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, মাদক এবং বেআইনি অস্ত্র চালান ইত্যাদি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক সম্মেলন সংঘটিত হয়েছে, বিজিবি থেকে কর্নেল মুহম্মদ শাহিদ সারওয়ার সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দুর্বৃত্তদের এক তালিকা দিয়েছেন, যা ভারতে জায়গা নিয়েছে, এবং বিএসএফ-ও একই ধরনের তালিকা বিজিবিকে হস্তান্তর করেছে। 

    পরিবেষ্টিত অঞ্চল, বিপরীত অধিকৃত এবং অনির্দেশিত সীমানাগুলো

    ভারত—বাংলাদেশ সীমানা

    পরিবেষ্টিত অঞ্চল অথবা ছিটমহলসমূহ হল ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে ভারত  অন্তর্ভুক্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত দু-দেশের মধ্যে একটা দীর্ঘ বিচার্য বিষয়।

    সীমানাটা তৈরি হয়েছে একটা সরু দাগ দিয়ে যাকে ‘চিকেন্স নেক‘  বা ‘পাখির ঘাড়’ বলা হয় এবং যা ভারতের মূল ভূভাগ ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে অসুবিধেজনক অবস্থায় যোগ করেছে

  • বাঁকুড়া জেলার ভূগোল

    বাঁকুড়া জেলার ভূগোল

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মেদিনীপুর বিভাগভুক্ত একটি জেলা। বাঁকুড়া জেলার ভূগোল মধ্য রাঢ়ের এক বৃহদায়তন অঞ্চলের ভৌগোলিক বিস্তৃতির পরিচায়ক। পশ্চিমের উচ্চভূমি, ছোট ছোট টিলা, কাঁকুড়ে লাল মাটি, খরস্রোতা নদীনালা ও চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বাঁকুড়া জেলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।

    বাঁকুড়া জেলার ভূগোল

    অবস্থান ও বিস্তৃতি

    বাঁকুড়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যভাগে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে মধ্য গাঙ্গেয় নিম্নভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই জেলা দক্ষিণে ২২º৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে ২৩º৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং পশ্চিমে ৮৬º৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে পূর্বে ৮৭º৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তন ৬৮৮২ বর্গ কিলোমিটার। জেলার উত্তরে পশ্চিম বর্ধমান জেলা, দক্ষিণে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা, দক্ষিণ-পূর্ব হুগলি জেলা এবং পশ্চিমে পুরুলিয়া জেলা। দামোদর নদ বাঁকুড়া ও দুই বর্ধমান জেলাদুটিকে পৃথক করেছে।

    রাজনৈতিক ভূগোল

    প্রশাসনিক বিভাগসমূহ

    বাঁকুড়া জেলা ৩টি মহকুমা ও সর্বমোট ২২টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত। এগুলি হল:

    মহকুমাব্লক
    সদর মহকুমাবাঁকুড়া-১, বাঁকুড়া-২, ছাতনা, শালতোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, বড়জোড়াওন্দা ব্লক
    বিষ্ণুপুর মহকুমাবিষ্ণুপুর, জয়পুর(পশ্চিমবঙ্গ), কোতুলপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়রইন্দাস ব্লক
    খাতড়া মহকুমাখাতড়া, ইন্দপুর, হীরাবাঁধ, রানিবাঁধ, তালডাংরা, রায়পুর(পশ্চিমবঙ্গ) সিমলাপাল ও সারেঙ্গা

    এছাড়া তিনটি পুরসভা আছে এই জেলায় – একটি জেলাসদরে ও অপর দুটি বিষ্ণুপুর মহকুমার বিষ্ণুপুরসোনামুখীতে। তবে এই জেলায় কোনও পৌরসংস্থা নেই।

    ভূপ্রকৃতি

    বাঁকুড়া জেলার বিস্তৃতি ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্যভাগ পর্যন্ত। এই অঞ্চলের মধ্যে ভূপ্রাকৃতিক তারতম্য অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় – পশ্চিমের উচ্চভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চল, মধ্যভাগের অসমতল ভূমিভাগ ও পূর্বের পলিগঠিত সমভূমি।

    পশ্চিমের উচ্চভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হল বন্ধুর ভূমিভাগ, ঘন অরণ্য, স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন ল্যাটেরাইট পাহাড়, টিলা, শিলাস্তুপ ও উপত্যকা। এই অঞ্চলের উত্তরভাগ শুশুনিয়া উচ্চভূমি নামে পরিচিত। শুশুনিয়াবিহারীনাথ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পাহাড়। মধ্যভাগের অসমতল ভূমিভাগও শিলাস্তুপ, নিম্নশৈলশিরা ও উপত্যকাযুক্ত। অন্যদিকে সমগ্র বিষ্ণুপুর মহকুমা ও সদর মহকুমার অধিকাংশ থানা নিয়ে গঠিত পূর্বের সমভূমি অঞ্চল দামোদরদ্বারকেশ্বর নদের সঞ্চিত পলিদ্বারা গঠিত। এখান থেকেই পশ্চিমে ভূমিভাগ ক্রমশ উঁচু হয়েছে।

    ভূতত্ত্ব

    বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ অঞ্চল ল্যাটেরাইট ও পলিমৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। যদিও জেলার পশ্চিমাংশ গঠিত হয়েছে আর্কিয়ান যুগের সিস্টোস ও নিসোস শিলার দ্বারা ও দক্ষিণাংশ গণ্ডোয়ানা সিস্টেমের পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশে কিছু মেসোজোয়িক যুগের ডলোরাইট গঠিত ডাহক লক্ষিত হয়। অন্যদিকে বিষ্ণুপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চল গঠিত হয়েছে সাম্প্রতিক পলি দ্বারা।

    নদনদী

    বাঁকুড়া জেলার প্রধান নদনদীগুলি হল দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাইকংসাবতী। নদীগুলি পরস্পরের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালে ভূমির ঢাল অনুসারে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়েছে। এগুলির উৎপত্তি ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল ও মৌসুমি বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে এই সকল নদীতে জল অত্যন্ত কম থাকে। যদিও বর্ষায় প্রায়ই এই জেলায় দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয় কিন্তু শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই আবার জলতলের উচ্চতা নেমে যায়। দামোদর এই জেলার প্রধান নদ ও এই নদ বাঁকুড়াকে বর্ধমান থেকে পৃথক করেছে। ভয়াল বন্যা এই নদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই কারণে দামোদর ‘বাংলার দুঃখ’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এই নদে বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সালি ও বোদাই বাঁকুড়ায় দামোদরের প্রধান উপনদী। দ্বারকেশ্বর নদ জেলার মধ্যভাগ দিয়ে উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত। এর প্রধান উপনদী হল আরকুসা, গন্ধেশ্বরী, শিলাই, বরাহ ইত্যাদি। এছাড়া জয়নাগু, কুমারী, কানা দামোদর, ভৈরববাঁকি, তারাফেনী জেলার উল্লেখযোগ্য নদনদী। দামোদরের জলোচ্ছ্বাসে মেজিয়া ব্লকে একটি বিল তৈরি হয়েছে। এটি মেজিয়া বিল নামে পরিচিত।

    পাহাড়-পর্বত

    বিহারীনাথ বাঁকুড়া জেলার সর্বোচ্চ পাহাড়। জেলার উত্তরভাগে শালতোড়া ব্লকে অবস্থিত এই পাহাড়ের উচ্চতা ১৪৬৯ ফুট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় ছাতনা ব্লকে অবস্থিত শুশুনিয়া। উচ্চতা ১৪৪২ ফুট। তৃতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় রানিবাঁধ ব্লকের বামনীসিনি। এর উচ্চতা ৮০০ ফুট। অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যে খাতড়া ব্লকের মশক ও লেভি পাহাড়, গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের কাড়ো পাহাড়, রানিবাঁধ ব্লকের ছেঁদাপাহাড়, মেজিয়া ব্লকের মেজিয়া পাহাড় ও খাতড়া ব্লকের মুকুটমণিপুর পাহাড় উল্লেখযোগ্য।[১]

    জলবায়ু

    বাঁকুড়া জেলার জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক। সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন, যদিও স্বাস্থ্যকর। উষ্ণ গ্রীষ্ম, উচ্চ আর্দ্রতা ও সুষম বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য। শীতকাল (নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে-ফেব্রুয়ারির শেষভাগ), গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে), বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) ও শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বরের প্রথম ভাগ) – এই চারটি ঋতু এই জেলায় বিশেষভাবে লক্ষিত হয়। গ্রীষ্মকালীন সর্বাধিক তাপমাত্রা ৪৪º-৪৫º সেন্টিগ্রেড ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫º সেন্টিগ্রেড এবং শীতকালীন সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৩º সেন্টিগ্রেড ও ৬º সেন্টিগ্রেড। মার্চ মাস থেকে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও মে মাসে তাপমাত্রা সর্বাধিক হয়। অপরদিকে শরৎকালে উষ্ণতা হ্রাস পেতে শুরু করে ও ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই জেলা সর্বাধিক শীতল থাকে। গ্রীষ্মে মাঝে মাঝে লু ও শীতে শৈত্যপ্রবাহও বইতে দেখা যায়। জেলার গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪০০ মিলিমিটার, যার অধিকাংশই বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে। উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। গ্রীষ্মে কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়।

    মৃত্তিকা

    বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ স্থানই কাঁকুড়ে ল্যাটেরাইট বা বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে গঠিত। কিন্তু দামোদর অববাহিকার ইন্দাস, কোতুলপুর ও সোনামুখী ব্লক এলাকার উত্তরভাগ সাম্প্রতিক পলি দ্বারা গঠিত। উচ্চভূমির মাটি অনুর্বর হলেও ধান, ভূট্টা ও গম চাষের উপযুক্ত। নিম্নভূমির মাটি উর্বর। এই মাটি সালি ও সুমা – এই দুই ধরনের। সালি মাটিতে ধান ও সুমা মাটিতে নানাপ্রকার ফসলের চাষ ভাল হয়।

    স্বাভাবিক উদ্ভিদ

    বাঁকুড়া জেলার মোট বনভূমির আয়তন ২৪৭.৭০ হাজার হেক্টর, যা জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তনের ২১.৪৭%। জাতীয় অরণ্য নীতি কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে এটি সামান্য কম। মূলত শুষ্ক ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য বা শালবন এখানে বেশি দেখা যায়। এছাড়া পিয়াশাল, সেগুন, বহেড়া, পলাশ, কুসুম, মহুয়া, পিপুল, বাবলা, আম, কাঁঠাল, পারাষি এবং আগাছার মধ্যে ধুতুরা, নিশিন্দা, আশশেওড়া ইত্যাদি দেখা যায়। জেলার সোনামুখী, জয়পুর, বিষ্ণুপুর, রানিবাঁধ এলাকায় অরণ্যাঞ্চল নিবিড়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছাড়া জেলার সর্বত্রই অরণ্য অসমান বিস্তৃত। তবে ভূমিরূপের বিচ্ছিন্নতার উপর অরণ্যের বিস্তার নির্ভরশীল। উচ্চভূমি, পাহাড়ের ঢাল, শৈলশিরাগুলিতে অরণ্যের ঘনত্ব বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বৃক্ষচ্ছেদন করে চাষাবাদ ও বসতিস্থাপনের ফলে অরণ্যপ্রকৃতি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তাই কৃত্রিম উপায়ে বনায়ন ঘটিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চলছে।

  • বঙ্গোপসাগর

    বঙ্গোপসাগর

    বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর[৩] এটি ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর। এই উপসাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভারতশ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মিয়ানমারথাইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝখানে বিরাজ করছে ভারতের অধিভুক্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

    বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার (৮,৩৯,০০০ মা)। একাধিক বড়ো নদী এই উপসাগরে এসে মিশেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গা ও তার প্রধান দুই শাখানদী পদ্মাহুগলি, ব্রহ্মপুত্র ও তার উশাখানদী যমুনামেঘনা, ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, সুবর্ণরেখা, কাবেরী ইত‍্যাদি নদীসমূহ। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল চেন্নাই, চট্টগ্রাম, পায়রা বন্দর, কলকাতা, হলদিয়া, মংলা, পারাদীপ, টুটিকোরিন, বিশাখাপত্তনমইয়াঙ্গুন। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবস্থিত। এই উপসাগরের তীরে অবস্থিত বিখ‍্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চেন্নাই, পুুুরি, বিশাখাপট্টনম, সুুুুন্দরবন, দিঘা, ফুকে, কুয়াকাটা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ত্রিংকোমালি ইত‍্যাদি।

    বঙ্গোপসাগর

    বঙ্গোপসাগরে জেলে নৌকার দৃশ্য

    বিস্তার

    ইন্টারন্যাশানাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশন বঙ্গোপসাগরের যে সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেটি নিম্নরূপ:[৪] পূর্ব দিকে: মায়ানমারের নেগ্রাইস অন্তরীপ (১৬°০৩’ উত্তর) থেকে একটি রেখা আন্দামানের বৃহদায়তন দ্বীপগুলির উপর দিয়ে এমনভাবে টানা হয়েছে, যাতে দ্বীপগুলির মধ্যভাগের সংকীর্ণ জলভাগ রেখার পূর্ব দিকে পড়ে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এই রেখাটি লিটল আন্দামান দ্বীপ (১০°৪৮’ উত্তর অক্ষরেখা ও ৯২°২৪’ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা) পর্যন্ত প্রসারিত। তারপর মায়ানমার সাগরের দক্ষিণপশ্চিম সীমা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের সীমা প্রসারিত। (সুমাত্রার ওয়েজং রাজা (৫°৩২′ উত্তর ৯৫°১২′ পূর্ব) থেকে পোয়েলো ব্রু পর্যন্ত একটি রেখা নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম দিকের দ্বীপগুলির উপর দিয়ে এমনভাবে প্রসারিত, যাতে দ্বীপগুলির মধ্যভাগের সংকীর্ণ জলভাগ মায়ানমার সাগরে পড়ে। এই রেখাটি দক্ষিণে লিটল আন্দামান দ্বীপের স্যান্ডি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রসারিত। দক্ষিণ দিকে:

    অ্যাডাম’স ব্রিজ (ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে) ও ডোন্ড্রা হেডের (শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ বিন্দু) থেকে পোয়েলো ব্রুয়ের উত্তর বিন্দু (৫°৪৪′ উত্তর ৯৫°০৪′ পূর্ব) পর্যন্ত।

    নামকরণ

    প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে বঙ্গোপসাগরকে বলা হয়েছে ‘মহোদধি’ (সংস্কৃত: महोदधि, অর্থাৎ, বিরাট জলাধার)।[৫][৬] প্রাচীন মানচিত্রগুলিতে এই উপসাগরটি সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস বা গ্যাঞ্জেটিকাস সাইনাস নামে পরিচিত। এই কথা দুটির অর্থ গঙ্গা উপসাগর।[৭]

    বঙ্গোপসাগরের অন্যান্য সংস্কৃত নামগুলি হল ‘বঙ্গোপসাগর’ (সংস্কৃত: वङ्गोपसागर), বঙ্গসাগর (সংস্কৃত: वङ्गसागर) ও পূর্বপয়োধি (সংস্কৃত:पूर्वपयोधि, পূর্ব মহাসাগর)।

    নদ-নদী

    উপগ্রহের ছবি: বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবন, একাধিক নদী এসে পড়েছে এর বুকে

    বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক বৃহৎ নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। তন্মধ্যে উত্তরদিক থেকে গঙ্গা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র; দক্ষিণদিক থেকে মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, ইরাবতী এবং কাবেরী নদী উল্লেখযোগ্য। ৬৪ কিলোমিটারব্যাপী (৪০ মাইল) কৌম নদী সবচেয়ে ছোট নদী হিসেবে সরু খাল দিয়ে এবং ২,৯৪৮ কিলোমিটারব্যাপী (১,৮৩২ মাইল) বিশ্বের ২৮তম দীর্ঘ নদী হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশ, চীন, নেপালভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপকে ঘিরে গঠিত হয়েছে। মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) ইরাওয়াদি (সংস্কৃত ইরাবতী) নদীও এ উপসাগরে মিলিত হয়েছে এবং একসময় গভীর ও ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৃষ্টি করেছিল।

    সমুদ্র বন্দর

    বিশাখাপত্মম, ভারতের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর।

    বাংলাদেশের প্রধান তিনটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম,পায়রামংলা বন্দর এই উপসাগরে অবস্থিত। ভারতের প্রধান সমুদ্র বন্দরের মধ্যে কাকিনাদা, চেন্নাই, বিশাখাপত্মম, কলকাতা, তৃণকমলি, পন্ডিচেরী এবং পারাদিপ। মায়ানমারের পূর্ববর্তী রাজধানী ও সর্ববৃহৎ নগরী ইয়াংগুন, বঙ্গোপসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্রবন্দর।

    দ্বীপপুঞ্জ

    বঙ্গোপসাগরে অনেকগুলো দ্বীপমালা রয়েছে। তন্মধ্যে – আন্দামান, নিকোবর এবং মার্গুই দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম। উত্তর-পূর্বে মিয়ানমার উপকূলের চিদুবা দ্বীপপুঞ্জ কয়েকটি কর্দমাক্ত আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত যা মাঝে মাঝে সক্রিয় হয়। গ্রেট আন্দামান হচ্ছে আন্দামান দ্বীপমালার প্রধান দ্বীপ; অন্যদিকে রিচি’র দ্বীপটি ক্ষুদ্রতম দ্বীপপুঞ্জের আওতাধীন। ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ৩৭টিতে অধিবাসী রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপেই বেশীরভাগ লোক বাস করে যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬.৫%।[৮]

    সমুদ্র সৈকতসমূহ

    দীঘা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত।

    কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত।[৯]

    সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ

    সমুদ্র সৈকতঅবস্থান
    কক্সবাজারবাংলাদেশ
    কুয়াকাটাবাংলাদেশ
    নিঝুম দ্বীপবাংলাদেশ
    ইনানী সৈকতবাংলাদেশ
    সোনাদিয়াবাংলাদেশ
    সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপবাংলাদেশ
    বকখালিভারত
    মন্দারমণিভারত
    দীঘাভারত
    চাঁদিপুরভারত
    পুরীভারত
    বিশাখাপত্তনমভারত
    মেরিনা সৈকতভারত
    গাপালিমিয়ানমার
    অরুগ্রামশ্রীলঙ্কা

    সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কীয়

    প্লেট টেকটোনিক্স

    ভারত মহাসাগরের অন্তর্গত বঙ্গোপসাগর একটি লবনাক্ত জলের সমুদ্র।পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ারকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। বঙ্গোপসাগরের নীচে, যা দুর্দান্ত ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের অংশ এবং আস্তে আস্তে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্লেটটি সুন্দা ট্রেঞ্চে বার্মা মাইক্রোপ্লেটের সাথে দেখা করে। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ বার্মা মাইক্রোপ্লেটের অংশ আর ইন্ডিয়া প্লেট সুন্দা ট্রেঞ্চ বা জাভা ট্রেঞ্চে বার্মা প্লেটের নিচে পরিচালনা করে। এখানে, একে অপরের উপর দুটি প্লেটের চাপ চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যার ফলে মায়ানমারে আগ্নেয়গিরির মতো আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় এবং সুন্দা আর্ক নামে একটি আগ্নেয়গিরির চাপ তৈরি হয়। সুমাত্রা-আন্দামান ভূমিকম্প এবং এশিয়ান সুনামি এই অঞ্চলে চাপের ফলে একটি সাবমেরিন ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংসাত্মক সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল।

    সামুদ্রিক ভূতত্ত্ব

    সিলোন দ্বীপ এবং করোম্যান্ডেল উপকূল থেকে উপসাগরের মাথার দিকে প্রসারিত ৫০ মিটার জোন এবং দক্ষিণ দিকের দিকে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপকে আলিঙ্গন করা একটি স্ট্রিপ দিয়ে সমুদ্রের নিচে ১০০ ফুট লাইন দ্বারা আবদ্ধ; প্রায় ৫০ মি। এর বাইরে ৫০০মি ব্যাপী সীমা রয়েছে। গঙ্গার মুখের বিপরীতে, যদিও এই গভীরতার মধ্যে অন্তরগুলি বদ্বীপ প্রভাব দ্বারা খুব বেশি প্রসারিত হয়।

    সোয়াচ অফ ন গ্রাউন্ডটি বঙ্গোপসাগরের ১৪ কিলোমিটার প্রশস্ত গভীর সমুদ্রের উপত্যকা। এই উপত্যকার গভীরতম রেকর্ড করা অঞ্চলটি প্রায় ১৩৫০ মি। সাবমেরিন উপত্যকাটি বেঙ্গল ফ্যান বা বঙ্গ পাখার অংশ, বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন পাখা।

    সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজন্তু

    বঙ্গোপসাগর জৈব বৈচিত্র্যে পূর্ণ, প্রবাল শৈবাল, মোহনা, মাছের জাল এবং নার্সারি অঞ্চল এবং ম্যানগ্রোভের মধ্যে বিভক্ত। বঙ্গোপসাগর বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানগুলির মধ্যে একটি।

    কেরিলিয়া জর্দোনি হ’ল বঙ্গোপসাগরের একটি সাগর সাপ। গ্লোরি অফ বেঙ্গল শঙ্কু Conus bengalensis এমন একটি সমুদ্র শৈল যা বঙ্গোপসাগরের সৈকত বরাবর ছবি তোলা যায় একটি বিপন্ন প্রজাতি, জলপাই রাইডলি সমুদ্র কচ্ছপ বাঁচতে পারে কারণ ভারতের ওড়িশার গহিরমাথা সমুদ্র সৈকত, গহিরমাথা সামুদ্রিক বন্যজীবন অভয়ারণ্য, বাসা বাঁধতে পারে মার্লিন, ব্যারাকুডা, স্কিপজ্যাক টুনা, (ক্যাটসুওয়োনাস পেলেমিস), ইয়েলোফিন টুনা, ইন্দো-প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাকড ডলফিন (সওসা চিনেসিস), এবং ব্রাইডের তিমি (বালেনোপেটেরা এডেনি) সামুদ্রিক প্রাণীগুলির মধ্যে কয়েকটি। বঙ্গোপসাগর হোগফিশ (বোডিয়ানাস নিলি) এক প্রকার র‌্যাবস যা টর্বিড লেগুন রিফ বা অগভীর উপকূলীয় শৈলীতে বাস করে। ডলফিনগুলির স্কুলগুলি দেখা যায়, সেগুলি বোতল নাক ডলফিন (টারসিওপস ট্রানক্যাটাস), প্যান্ট্রপিকাল স্পটেড ডলফিন (স্টেনেলা অ্যাটেনুয়াতা) বা স্পিনার ডলফিন (স্টেনেলা লংগেরোস্ট্রিস)। টুনা এবং ডলফিন সাধারণত একই পানিতে বাস করে। অগভীর ও উষ্ণতর উপকূলীয় জলে ইরাবাদি ডলফিনগুলি (অর্কেইলা ব্রিভিরোস্ট্রিস) পাওয়া যায় |

    গ্রেট নিকোবর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ অনেক প্রাণীকে অভয়ারণ্য সরবরাহ করে যার মধ্যে কয়েকটিতে লবণাক্ত জলের কুমির (ক্রোকোডিলাস প্যারোসাস), দৈত্য চামড়াযুক্ত সমুদ্রের কচ্ছপ (ডেরোমেলিস করিয়াসিয়া) এবং মালায়ান বাক্স টার্টল (কুওরা অ্যাম্বোইনেসিস কমারোমা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

    আরেকটি বিপন্ন প্রজাতির রাজকীয় বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবন একটি বিশাল ইস্টুয়ারিন ডেল্টাকে সমর্থন করে যা গঙ্গা নদী ডেল্টায় একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল ধারণ করে|

    রাসায়নিক সমুদ্রবিদ্যা

    বঙ্গোপসাগরের সীমানা উপকূলীয় অঞ্চলগুলি খনিজ সমৃদ্ধ। শ্রীলঙ্কা, সেরেন্দিব বা রত্না – দ্বিপা যার অর্থ জেম দ্বীপ। অ্যামেথিস্ট, বেরিল, রুবি, নীলা, পোখরাজ এবং গারনেট হ’ল শ্রীলঙ্কার কিছু রত্ন। গারনেট এবং অন্যান্য মূল্যবান রত্নগুলি ওড়িশা এবং অন্ধ্র প্রদেশেও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়|

    কৌশলগত গুরুত্ব

    বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রীয়ভাবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত। এটি দুটি বিশাল অর্থনৈতিক ব্লক, সার্ক এবং আসিয়ান এর কেন্দ্রে অবস্থিত। এটি উত্তরের চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল এবং ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরগুলিকে প্রভাবিত করে। চীন, ভারত, এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার সাথে সমুদ্র তীরে সন্ত্রাসবাদ রোধে সহযোগিতা বাড়াতে নৌ সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এর অন্তর্নিহিত দ্বীপগুলি (আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ) এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বঙ্গোপসাগরের সাথে উপকূলের পাশাপাশি পারাদীপ কলকাতা, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, টুটিকোরিন, চট্টগ্রাম এবং মংলা প্রভৃতি প্রধান বন্দরগুলি এর গুরুত্বকে যুক্ত করেছে।

    চীন সম্প্রতি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করেছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং সম্প্রতি ভারতের সাথে বড় অনুশীলন করেছে | বঙ্গোপসাগরে সর্বকালের বৃহত্তম যুদ্ধযুদ্ধ, যা মালবার২০০৭ নামে পরিচিত, ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে নৌযানগুলি অংশ নিয়েছিল। ভারত ছিল অংশগ্রহণকারী।

    ২০০৭ সালের মালাবারের নৌ মহড়ায় অংশ নেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজের চিত্র। জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এজিস ক্রুজার এবং বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে লজিস্টিকাল সাপোর্ট জাহাজ অংশ নিয়েছিল।

    বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর পরিমাণে জমা দেওয়া ভারত ও মায়ানমারকে একটি আঞ্চলিক বিবাদে গুরুতর জরুরি করে তুলেছিল। কিছু তেল ও গ্যাস ব্লকের অধিকার নিয়ে বিরোধের কারণে মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের সাথে সংক্ষিপ্ত কূটনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

    বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিতর্কিত সমুদ্রসীমা সীমানা ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। সমুদ্র আইনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সীমানা বিবাদে একটি সমঝোতা চলছে।

    নৌ ভূতত্ত্ব

    সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হচ্ছে একটি ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। গভীরতম এই উপত্যকা রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার।[১০] এখানকার ডুবো গিরিখাত বঙ্গ পাখার অংশ, যা বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত।[১১][১২]

    ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিবাত্যা

    যখন বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হয়ে ৭৪ মাইল (১১৯ কিলোমিটার) গতিবেগে বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় তখন তা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যা নামে আখ্যায়িত হয়। এ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যাই আটলান্টিক মহাসাগরে হারিকেন নামে পরিচিত।[১৩] ১৯৭০ সালে এরকমই এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ভোলায় ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ অধিবাসী প্রাণ হারান যা স্মরণ করে আজো অনেক লোক শিউরে উঠেন। নিচে প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের তালিকা দেয়া হলোঃ-

    ক্রমিক নংসালবিবরণকোড নাম
    ২০০৯প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়আইলা
    ২০০৮অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়নার্গিস
    ২০০৭অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়সিডর
    ২০০৬অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়মালা
    ২০০৬, সেপ্টেম্বরটাইফুনজ্যাংসেন
    ২০০৪, নভেম্বরটাইফুনমুইফা
    ২০০২, মেউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়২বি
    ১৯৯১, এপ্রিলবাংলাদেশ সাইক্লোন
    ১৯৮৯, নভেম্বরটাইফুন গে
    ১০১৯৮৫, মেউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ওয়ান১বি
    ১১১৯৮২, এপ্রিলসাইক্লোন ওয়ান১বি
    ১২১৯৮২, মেউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় টু২বি
    ১৩১৯৮২, অক্টোবরউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় থ্রী৩বি
    ১৪১৯৮১, ডিসেম্বরসাইক্লোন থ্রী৩বি
    ১৫১৯৮০, অক্টোবরউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ওয়ান১বি
    ১৬১৯৮০, ডিসেম্বরঅজানা ঘূর্ণিঝড় ফোর৪বি
    ১৭১৯৮০, ডিসেম্বরউপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ফাইভ৫বি
    ১৮১৯৭১সাইক্লোন ওড়িষ্যা
    ১৯১৯৭০, নভেম্বরভোলা সাইক্লোন

    ঐতিহাসিক স্থান

    বিবেকানন্দের ইলম

    • বঙ্গোপসাগরের নিচে শ্রী বৈশাখেসয়ারা স্বাম্পী (Vaisakheswara Swampy) মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে।[১৪]
    • মহাবলিপুরাম নামক সাতটি বৌদ্ধ ধর্ম মন্দির এখানে আছে। মহাবলিপুরামের তীরবর্তী মন্দিরটি অষ্টম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়।
    • বিবেকানন্দর ইল্লম, আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা যা এখানে সংরক্ষিত হয়েছে। ফ্রেডরিক টিউডর নামক রাজা কর্তৃক ১৮৪২ সালে বরফ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত ভাষন এখানে কার্নান প্রাসাদের ধারণ করা আছে।
    • কনার্ক, সূর্য মন্দির বা কৃষ্ণ বৌদ্ধ মন্দিরের স্থান। ১২০০ সালের দিকে এই পবিত্র স্থানটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
    • ধানিসখাদিতে অবস্থিত রামানাথ মন্দির, যেখানে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর মিলিত হয়েছে।[১৫]

    কৌশলগত উপযোগিতা

    বাংলাদেশের জন্য

    বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া: ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসিঙ্গাপুর

    বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা হবার কারণে দেশের উন্নয়নে বঙ্গোপসাগরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে[১৬] এবং আন্তর্জাতিক মহড়াও এখানেই হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত শেষ যৌথ মহড়াটি হয় ২০০৯ সালের শুরুর দিকে।[১৭]

    চীনের জন্য

    গুজব আছে যে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের কোকো দ্বীপে চীনের একটি সামুদ্রিক ঘাঁটি আছে।[১৮]

    ভারতের জন্য

    কৌশলগত দিক দিয়ে বঙ্গোপসারগর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বঙ্গোপসারগরের উপকূল দিয়ে তাদের কিছু দুরবর্তী দ্বীপ আছে (আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ) এবং কলকাতা, চেন্নাই, ভিজাগতুতিকরিন(Tuticorin) এর মত সমুদ্র বন্দর আছে। ১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে নৌবাহিনীর বেশির ভাগ আক্রমনই হয়েছিল বঙ্গোপসারগরে।[১৯]

    পরিবেশগত ক্ষতি

    দূষণ

    প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ বা তার কাছাকাছি মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। যার মধ্যে যানবাহনের ধোঁয়া, রান্নাবান্নায় নির্গত ধোঁয়া এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য অন্যতম।[২০]

    ইতিহাস

    ব্রিটিশ পেনাল কলোনী

    আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রোস দ্বীপ (Ross Island)।

    আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ রোস দ্বীপে (Ross Island) ১৮৯৬ সালে কালো পানি অথবা ক্ষুদ্রাতির কারাগার তৈরি হয়। যা ব্রিটিশ পেনাল কলোনী হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং সেখানে রাজনৈতিক বন্দীদের আজীবন কারাবাস দেয়া হতো।

  • বঙ্গদেশের নামসমূহ

    বঙ্গদেশের নামসমূহ

    অধুনা ‘বঙ্গ‘ বা বাংলা ভূমি (Land of Bengal) ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল , যা সুপ্রাচীন রাজ্য ও জনবসতি থেকে উদ্ভূত হয়।

    বঙ্গদেশের নামসমূহ

    ইতিহাস

    বাংলা বা বেঙ্গল (Bengal) শব্দগুলির আদি উৎস অজ্ঞাত, কিন্তু বিশ্বাস করা হয় যে শব্দটি বং অথবা বাং নামক একটি দ্রাবিড়ীয়-ভাষী উপজাতি বা গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বং জাতিগোষ্ঠী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন।[১]

    অন্য তত্ত্ব বলছে যে শব্দটির উৎপত্তি ভাঙ্গা (বঙ্গ) শব্দ থেকে হয়েছে, যেটি অস্ট্রিক শব্দ “বঙ্গা” থেকে এসেছিল, অর্থাৎ অংশুমালী। শব্দটি ভাঙ্গা এবং অন্য শব্দ যে বঙ্গ কথাটি অভিহিত করতে জল্পিত (যেমন অঙ্গ) প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমনঃ বেদ, জৈন গ্রন্থে, মহাভারত এবং পুরাণে। “ভাঙ্গালা” (বঙ্গাল/বঙ্গল)-এর সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ রাষ্ট্রকূট গোবিন্দ ৩-এর নেসারি প্লেট্‌সে উদ্দিষ্ট (৮০৫ খ্রিস্টাব্দ-আগে) যেখানে পাল রাজা ধর্মপাল এর বৃত্তান্ত লেখা আছে।[২]

    নামসমূহ

    আধুনিক নামসমূহ

    ভৌগোলিক প্রভেদ

    ঐতিহাসিক নামসমূহ

    বিশেষণ

    অন্যান্য নাম

    বঙ্গের ডাকনাম

    • সোনার বাংলা
    • রূপসী বাংলা
    • শ্যামল বাংলা
    • এপার বাংলা
    • ওপার বাংলা
    • ভারতীয় বাংলা
    • পদ্মাপাড়
    • নদীমাতৃক দেশ
    • হাজার নদীর দেশ

    আরও দেখুন

  • পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত অঞ্চল

    পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত অঞ্চল

    সংরক্ষিত অঞ্চল রাজ্যের মোট আয়তনের ৪ শতাংশ স্থান অধিকার করে আছে।[১] পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চল রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র ১৪ শতাংশ; যা জাতীয় গড় ২৩ শতাংশের বেশ কম।[২] সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একাংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণভাগে অবস্থিত।[৩]

    পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত অঞ্চল

    পশ্চিমবঙ্গে মোট ছয়টি জাতীয় উদ্যান ও পনেরোটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে।[৪]

    জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

    জাতীয় উদ্যানগুলি

    নামপ্রতিষ্ঠাআয়তন (বর্গকিলোমিটারে )
    সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান১৯৮৪১৩৩০.১০
    বক্সা জাতীয় উদ্যান১৯৯২১১৭.১০
    গোরুমারা জাতীয় উদ্যান১৯৯৪৭৯.৪৫
    জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান[৫]২০১২২১৬.৫১
    নেওড়া(ভ্যালী) উপত্যকা জাতীয় উদ্যান১৯৮৬৮৮
    সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান১৯৯২৭৮.৬০

    বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

    বন্যপ্রাণী

    পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে প্রাপ্ত বন্যপ্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ভারতীয় গণ্ডার, ভারতীয় হাতি, হরিণ, চিতাবাঘ, গৌর,ও কুমির। এখানে প্রচুর পাখিও দেখা যায়। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা রাজ্যে ভিড় জমায়। সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মতো একটি উচ্চে অবস্থিত বনাঞ্চলে মায়া হরিণ, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, তাকিন, সেরো, বনরুই, মিনিভেটকালো মথুরা দেখা যায়। সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার সহ গাঙ্গেয় নদী ডলফিন, নদী কচ্ছপ, স্বাদুজলের কুমিরনোনা জলের কুমির পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্ত লুপ্তপ্রায় প্রজাতির জীবের অন্যতম।[৬] ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটি স্বাভাবিক মৎস্য বিচরণ ক্ষেত্র, এখানে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক মাছেরাও বিচরণ করে।[৬]

    উদ্ভিজ্জ

    উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষিণবঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সমুদ্রতটবর্তী ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন[৭] গাঙ্গেয় সমভূমির পলল মৃত্তিকা ও যথেচ্ছ বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চল যথেষ্ট উর্বর।[৭] রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিজ্জপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর মালভূমির সমরূপ। প্রধান বাণিজ্যিক উদ্ভিদ হল শাল (Shorea robusta)। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলে উপকূলীয় উদ্ভিজ্জ লক্ষিত হয়। এখানকার প্রধান উদ্ভিদ ক্যাসুরিনা বা ঝাউগাছ। সুন্দরবনের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান গাছ হল সুন্দরী (Heritiera fomes), এই গাছের নামানুসারেই উক্ত বনাঞ্চলের নামকরণ।[৮] উত্তরবঙ্গের উদ্ভিজ্জ প্রকৃতি ভূমির উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের ঘন বন দেখা যায়।[৯] ১০০০ মিটার ও তদুর্ধ উচ্চতায় উপক্রান্তীয় শ্রেণির বৃক্ষ লক্ষিত হয়। ১৫০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওক, কনিফাররডোডেনড্রন প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়।[৯]