Tag: bcs question

  • পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল

    পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল

    পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গ পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। দক্ষিণে ২১º৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে ২৭º১০’ উত্তর অক্ষাংশ এবং পশ্চিমে ৮৫º৫০’ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্বে ৮৯º৫০’ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি বিস্তৃত। এ-রাজ্যের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর, ধুবুলিয়া, বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী, গুসকরা, আউশগ্রাম, রাজবাঁধ, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া জেলার দুর্লভপুর এবং পুরুলিয়া জেলার আদ্রা শহরের উপর দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তি রেখা প্রসারিত। এ-রাজ্যের উত্তর সীমা যেমন হিমালয় পর্বতমালাকে স্পর্শ করেছে, তেমনি দক্ষিণ সীমায় রয়েছে গঙ্গাব্রহ্মপুত্রমেঘনার সুবিশাল বদ্বীপ ও বঙ্গোপসাগর। তিনটি বিদেশি রাষ্ট্র – নেপাল, ভুটানবাংলাদেশ এবং পাঁচটি ভারতীয় রাজ্য – সিক্কিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাআসাম প্রত্যক্ষভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী। এছাড়াও সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সান্নিধ্যের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান।পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল

    রাজ্যের উত্তরে রয়েছে হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গ, আবার দক্ষিণে রয়েছে সমুদ্র-উপকূলীয় সমভূমি; পশ্চিম দিকে যেমন রয়েছে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল, তেমনি পূর্বদিকে রয়েছে গাঙ্গেয় বদ্বীপ সমভূমি। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একমাত্র রাজ্য যার উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে সমুদ্র রয়েছে। এই রাজ্যে মালভূমি ও সমভূমির সহাবস্থান দেখা যায়।

    পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল

    অবস্থান ও বিস্তৃতি

    পশ্চিমবঙ্গের জেলা

    পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বদিকে অবস্থিত। এ-রাজ্যের উত্তরে হিমালয় এবং হিমালয়ের কোলে অবস্থিত নেপাল ও ভুটান রাষ্ট্র এবং সিক্কিম রাজ্য; পূর্বদিকে অসম রাজ্য ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র, পশ্চিমে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিমবঙ্গের আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গ কিলোমিটার বা ৩৪,২৬৭ বর্গ মাইল। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটান বা পৌরপুঞ্জ অঞ্চল এবং তৃতীয় বৃহত্তম নগর।

    রাজনৈতিক ভূগোল

    পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি রাজনৈতিক বিভাগ ও মোট ২৩টি জেলা রয়েছে। যেমন – বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমহুগলি; মেদিনীপুর বিভাগের অন্তর্গত পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামপুরুলিয়া; জলপাইগুড়ি বিভাগের অন্তর্গত কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পংআলিপুরদুয়ার; মালদা বিভাগের অন্তর্গত উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহমুর্শিদাবাদ এবং প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্গত কলকাতা, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনাহাওড়া জেলা। প্রতিটি জেলা মহকুমাশাসক কর্তৃক শাসিত মহকুমা ও মহকুমাগুলি ব্লকে বিভক্ত থাকে (ব্যতিক্রম কলকাতা)। পঞ্চায়েতপুরসভা নামক স্থানীয় শাসনপ্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে ব্লক গঠিত হয়। এছাড়াও গঙ্গার উত্তরের সাতটি জেলাকে একত্রে উত্তরবঙ্গ ও গঙ্গার দক্ষিণের ষোলোটি জেলাকে একত্রে দক্ষিণবঙ্গ বলা হয়। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আরক্ষা (পুলিশ) বিভাগীয় আঞ্চলিক একক।

    ভূমিরূপ

    উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

    উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, টাইগার হিল থেকে।

    অবস্থান

    পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয় অবস্থান করছে। সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালার অংশ বিশেষ পর্বতময় এই অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পশ্চিম সিমান্তে পূর্ব হিমালয় পর্বতশ্রেণির উপর অবস্থিত। একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পুরো দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর-পূর্বের সামান্য কিছু অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

    ভূপ্রকৃতি

    এই পার্বত্যভূমি তরাই-এর সমভূমি থেকে ৩০০ মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর হঠাৎ খাড়াভাবে উপরে উঠে গিয়েছে (সমান উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলকে যে রেখা দিয়ে যুক্ত করা হয়, তাকে সমোন্নতি রেখা বলা হয়)।

    প্রধানত পাললিক ও রূপান্তরিত শিলা দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বন্ধুর। এবড়ো-খেবড়ো পার্বত্যভূমি, পাহাড়ের খাঁড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত এবং ছুরির ফলার মতো পর্বতশিরা এই অঞ্চলের প্রধান ভুপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

    হিমালয় পর্বতের কয়েকটি গিরিশ্রেণি এবং উপত্যকা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকের ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে। তিস্তা নদী সিকিম থেকে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে সুগভীর গিরিখাত দ্বারা এই অঞ্চলটিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে, যেমন— (১) তিস্তার পশ্চিমদিকের পার্বত্য অঞ্চল এবং (২) তিস্তার পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল।  তিস্তার পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চলটি পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় উঁচু।

    তিস্তা নদীর পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চল

    দার্জিলিং হিমালয়ের সর্বোচ্চ অংশ এখানে অবস্থিত। এখানকার প্রধান দুটি পর্বতশ্রেনী হল সিঙ্গালিলা (দার্জিলিংকে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে) এবং দার্জিলিং-মহালধিরাম শৈলশিরা। সিংগালিলার চারটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল  সান্দাকফু (৩৬৩৬ মি), ফালুট (৩,৫৯৫ মি), টংলু (৩,০৩৬ মি) ও সবরগ্রাম (৩,৫৪৩ মি)। সিঙ্গালিলা পর্বতের সান্দাকফু (Sandakphu) পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। দার্জিলিং-কার্শিয়াং পর্বতমালার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ হল টাইগার হিল (২,৫৬৭মি)।

    তিস্তা নদীর পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল

    তিস্তার পূর্বদিকে রয়েছে দুরবিনদারা পর্বত। এই পর্বতটি কালিম্পং শহর এর ঢালে অবস্থিত। কালিম্পং থেকে দুরবিনদারা পর্বতটি ক্রমশ নিচু হয়ে পূর্বদিকে জলঢাকা নদীর উপত্যকার দিকে এগিয়ে গেছে। এই অঞ্চলে দার্জিলিং হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ  ঋষিলা অবস্থিত। ঋষিলা শৃঙ্গের উচ্চতা ৩,১৩০ মি.। ঋষিলা শৃঙ্গের আরও পূর্বদিকে জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর অংশে ডলোমাইট শিলায় গঠিত নাতিউচ্চ বক্সা-জয়ন্তী পাহাড় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

    উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ সমূহ

    স্থানাঙ্কচূড়াউচ্চতা (মিটার)
    সান্দাকফু৩৬৩৬
    ফালুট৩৫৯৫
    সাবারগ্রাম৩৫৪৩
    রাচেলা ডান্ডা৩১৭০
    টংলু৩০৩৬
    টাইগার হিল২৫৬৭
    ঘুম হিল২৪০০
    ডেলো হিল১৭০৪
    বক্সা হিল১৪০০
    ১০দুরবিন হিল১৩৭২

    পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল

    অবস্থান

    পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই ঢেউখেলানো উঁচুভুমি ও মালভুমি অঞ্চলটি সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমদিকের ৫০ মিটারের বেশি উচ্চতাযুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে। গ্রানাইট ও নিস্ শিলা দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি হল ছোটনাগপুর মালভূমির অংশ বিশেষ।ভূ-তাত্ত্বিক গঠন অনুসারে এই অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন অঞ্চল। প্রাচীন আগ্নেয় ও পাললিক শিলা দিয়ে এই মালভূমি অঞ্চল গঠিত। এটি ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্ব প্রান্তের ভগ্ন ঢালু অংশ। ইহা পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু।

    ভূপ্রকৃতি

    সমগ্র উচ্চভূমি অঞ্চলটি দক্ষিণে বরাভূম উচ্চভূমি, পশ্চিমে পুরুলিয়া উচ্চভূমি এবং উত্তর-পূর্বে শুশুনিয়া উচ্চভূমিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর, কোপাই, অজয়, দামোদর প্রভৃতি নদীগুলির ক্ষয় কাজের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত এই উচ্চভূমির বাকি অংশগুলো এখানে সেখানে টিলার মতো ছোট ছোট পাহাড়ের আকারে দঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি ও পাঞ্চেৎ,  বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া, ঝাড়গ্রাম জেলায় বেলপাহাড়ি, বীরভূমের মামাভাগ্নে পাহাড়, মথুরাখালি প্রভৃতি। অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। গোগরাবুরু শৃঙ্গের উচ্চতা ৬৭৭ মি.।

    গঙ্গার ব-দ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল

    উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলকে বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্থানই বৈচিত্র্যহীন সমভূমি। পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলটি নদীবাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে গড়ে উঠেছে। ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার পার্থক্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি অঞ্চলকে ছয়ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (১) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, (২) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, (৩) রাঢ় অঞ্চল, (৪) উপকূলের বালুকাময় সমভূমি (৫) গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল ও (৬) সুন্দরবন অঞ্চল।

    তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল ( পিডমন্ড সমভূমি )

    তরাই (কথাটির অর্থ আর্দ্র অঞ্চল) হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে ৩৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত জলাভূমিময় তৃণভূমি, সাভানা ও বনভূমির একটি অঞ্চল। পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা এবং জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তরাংশে নদীবাহিত বালি ও নুড়ি জমে তরাই অঞ্চলটির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু হয়ে গিয়েছে। অসংখ্য নদীখাত তরাই অঞ্চলটিকে বিভিন্ন সমান্তরাল অংশে বিভক্ত করেছে। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে তিস্তা নদীর ডানদিকের অংশ তরাই এবং বাঁদিকের অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত।তরাই অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত হিমালয়ের পাথর, নুড়ি আর ক্ষয়প্রাপ্ত মাটিতে তৈরি বনময় ভাবর অঞ্চল। তরাই অঞ্চলের মাটিতে কাদা ও বালির পর্যায়ক্রমিক স্তর দেখা যায়। এখানকার ভৌমজলপৃষ্ঠ (ওয়াটার টেবিল) উচ্চ হওয়ায় অনেক ঝোরা ও জলভূমি দেখা যায়। তরাই অঞ্চলের নদীগুলিতে বর্ষাকালে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হয়। তরাই-ডুয়ার্স সাভানা ও তৃণভূমি একটি বাস্তু-অঞ্চল (ইকোরিজিয়ন)। এই অঞ্চলটি গোটা তরাই অঞ্চলের মধ্যভাগ জুড়ে অবস্থিত। এইখানে লম্বা লম্বা ঘাসের তৃণভূমি, সাভানা এবং চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী বনভূমি দেখা যায়। ভূমিভাগের সাধারণ উচ্চতা ৮০-১০০ মিটার। তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, জলঢাকা, সঙ্কোশ প্রভৃতি বড় এবং একাধিক ছোট নদীর বয়ে আনা বালি, নুড়ি ও পাথরে গড়ে উঠেছে তরাই।

    উত্তরের সমভূমি অঞ্চল

    পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে, তরাই ও গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণাঞ্চল, উত্তর দিনাজপুর জেলা (উত্তরের কয়েকটি অংশ বাদে), দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা, মালদহ জেলা ও কোচবিহার জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে এই সমভূমি গঠিত। উত্তর দিনাজপুরের যে সংকীর্ণ ভূখণ্ডটি মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের সঙ্গে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার সংযোগ রক্ষা করছে তার নাম মহানন্দা করিডোর। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের সমস্ত অঞ্চলই পলল সমভূমি। তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর পলি জমে এই অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। মোটামুটিভাবে সমতল হলেও মাঝে মাঝে এখানে সেখানে খাল-বিল এবং উঁচু-নিচু জমি চোখে পড়ে। এখানে কোনও কোনও স্থানে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢিবি দেখা যায়।

    ভুপ্রকৃতিগত ভাবে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে তাল, বরেন্দ্রভূমি ও দিয়ারা এই তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। মহানন্দা নদী মালদহ জেলাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। পূর্বাংশটি প্লাবন সমভূমি। এটি পুরনো পলিমাটিতে গঠিত। এখানে কয়েকটি টিলাও দেখা যায়। এই অঞ্চলটি বরেন্দ্রভূমি নামে পরিচিত এবং এটি গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের অংশ। পশ্চিমাংশটি নতুন পলিমাটিতে গঠিত। এই অংশে কালিন্দী নদী মহানন্দা নদীতে মিশেছে। মালদহের কালিন্দী নদীর উত্তরে অবস্থিত ভূমিভাগ তাল নামে পরিচিত। এটি একটি নিম্নভূমি। এখানে অনেক জলা ও বিল দেখা যায়। কালিন্দী নদীর দক্ষিণে অবস্থিত উর্বর অংশটির নাম দিয়ারা। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার দক্ষিণাঞ্চলও নতুন পলিমাটি এবং তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, জলঢাকা, সঙ্কোশ, বালাসোন, পুনর্ভবা, আত্রেয়ী ও অন্যান্য ছোট নদীগুলির জমা করা নুড়িপাথরে তৈরি হয়েছে।

    রাঢ় অঞ্চল

    পশ্চিমের মালভূমির পূর্ব সীমা থেকে ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত সামান্য ঢেউ খেলানো ও পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলটি রাঢ় সমভূমি নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বীরভূম জেলার পূর্বাংশ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। পুরানো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির মাটির রঙ লাল। এখানকার মাটি ল্যাটেরাইট প্রকৃতির। তাই এই মাটির রং লাল। এখানকার জমির স্বাভাবিক ঢাল পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, শিলাবতী, কংসাবতী, বক্রেশ্বর প্রভৃতি হল রাঢ় অঞ্চলের প্রধান নদী। এই অঞ্চলটি কৃষিকাজে অত্যন্ত উন্নত।

    উপকূলের বালুকাময় সমভূমি

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল ভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। সর্বদক্ষিণের উপকূলবর্তী তটভূমি বালুকাময়। এখানকার তটভূমির ঢাল খুবই কম। এখানে বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি দেখা যায়। তটভূমির উত্তর দিকের বালিয়াড়িগুলি সমুদ্র উপকূলের সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। দুটি বালিয়াড়ির মাঝের নিচু অংশে জলাভূমি দেখা যায়। এই সমভূমি নদীপ্রবাহ ও বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বাহিত বালি ও কাদায় গঠিত। উপকূল অঞ্চলের সমান্তরালে বালিয়াড়ি ও জলাভূমি দেখা যায়। দিঘা বালিয়াড়ি বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে কাছে এবং কাঁথি বালিয়াড়ি সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। কোথাও কোথাও সমুদ্র থেকে বালিয়াড়িগুলির দূরত্ব ১৫-১৬ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ১১-১২ মিটার।

    গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল

    এই বদ্বীপ অঞ্চলটি পূর্বদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে পশ্চিমে কান্দি মহকুমা বাদে সমগ্র মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এবং বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের ৫০ মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর বিস্তৃত। এই অঞ্চলের উত্তরে পদ্মা নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর উপস্থিত। সমগ্র অঞ্চলটি সমতল হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের একটি অংশ। গঙ্গা বা পদ্মা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই প্রভৃতি নদনদী বাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে কালক্রমে সমুদ্রবক্ষ থেকে এই নতুন ভূভাগ বা বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে।


    গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (১) মুমূর্ষ বদ্বীপ, (২) পরিণত বদ্বীপ ও (৩) সক্রিয় বদ্বীপ।

    (১) মুমূর্ষ বদ্বীপ :- নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার এই বদ্বীপ অংশে নদীগুলো গঙ্গা বা পদ্মা থেকে বিছিন্ন হয়ে মৃতপ্রায় হওয়ায় এই অঞ্চলের বদ্বীপ গঠন আর সম্ভব নয়। এখানে তাই প্রচুর বিল, জলাভূমি ও অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।

    (২) পরিণত বদ্বীপ :-  ছোটনাগপুরের মালভূমি থেকে নদীবাহিত প্রচুর বালি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি জমে বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলী জেলায় এই বদ্বীপ অঞ্চলের গঠন প্রায় শেষ হয়েছে। তাই এখানে জলাভূমির সংখ্যা অনেক কম এবং মৃত্তিকাও বেশ কঠিন।

    (৩) সক্রিয় বদ্বীপ :- উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং কলকাতা জেলার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলে নদী ও সমুদ্র বাহিত পলি দিয়ে বদ্বীপ গঠনের কাজ আজও চলছে। সমুদ্রের জোয়ারের প্রভাবে এখানকার মৃত্তিকা কিছুটা লবণাক্ত।

    সুন্দরবন অঞ্চল

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশ এবং উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ পূর্বাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত, তাই এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনোও চলছে। সুন্দরবনের নদীগর্ভ ছাড়া সমস্ত অংশই সমতল। সমুদ্রতল থেকে এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা মাত্র ৩-৪ মিটার হওয়ায় এর অনেকটাই সমুদ্রজলের জোয়ারে ঢেকে যায়। সুন্দরবন অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের ১০২ টি ছোটো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ৪৮ টি দ্বীপ এ মানুষ এর বসতি রয়েছে। এই অঞ্চল এর মাটি লবনাক্ত ও কাদা প্রকৃতির। এই অঞ্চলে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে। সুন্দরী গাছের উপস্থিতির কারণে সুন্দরবন নামকরণ হয়েছে।মাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০-৪০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই অঞ্চলে গঙ্গা প্রধান নদী হলেও অসংখ্য নদী আছে যেমন কালিন্দী,রায়মঙ্গল, মাতলা, বিদ্যাধরী ইত্যাদি। এছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত রয়াল বেঙ্গল টাইগার এই অঞ্চলের ই সম্পদ।

    নদনদী

    পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রকৃতি অনুসারে এই রাজ্যের উত্তর ও পশ্চিম দিক উঁচু এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক বঙ্গোপসাগরের দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের নদনদীগুলো উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলিকে পাঁচটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:

    গঙ্গা

    গঙ্গা ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের সর্ব প্রধান নদী। গঙ্গা নদী হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলী নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, আর প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী–হুগলী নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহানা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলী নদী। হুগলী নদীর দক্ষিণাংশে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব দেখা যায়। অতিরিক্ত জল এনে কলকাতা বন্দরকে বাঁচানোর জন্য গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে।

    ভাগীরথী-হুগলি নদীর পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত নদী সমূহ

    ভাগীরথী-হুগলী নদীর পূর্ব দিকের নদীগুলির মধ্যে জলঙ্গী, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, চুর্ণী, ইছামতী, বিধ্যাধরি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই নদীগুলোর বেশির ভাগই পদ্মার শাখানদী। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে এই সব নদীতে বিশেষ জলপ্রবাহ থাকে না এবং বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে প্রায়ই বন্যা দেখা যায়।

    জলঙ্গী নদী :– জলঙ্গী নদীর দৈর্ঘ্য ২০৬ কিলোমিটার। জলঙ্গী নদী উত্তর-পশ্চিমাংশে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর নদিয়া জেলার মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে নবদ্বীপের নিকট ভাগীরথী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

    ভাগীরথী-হুগলি নদীর পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত নদী সমূহ

    ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম দিকের নদী গুলোর মধ্যে (১) ময়ূরাক্ষী, (২) অজয়, (৩) দামোদর, (৪) দ্বারকেশ্বর, (৫) শিলাবতী ( শিলাই), (৬) কংসাবতি (কাঁসাই), (৭) রূপনারায়ন, (৮) হলদি, (৯) কেলেঘাই, (১০) সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে অজয়, দামোদর ও ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে এবং অন্যান্য নদীগুলো পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিকের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে শিলাবতী ও দারকেশ্বর নদী দুটি মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নামে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে অবশেষে গেঁওখালির কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। এছাড়া কেলেঘাই ও কংসাবতী নদী যুক্ত হয়ে হলদি নদীর সৃষ্টি করেছে। এইসব নদীর মধ্যে কেবলমাত্র সুবর্ণরেখা নদীটি ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, অন্য নদীগুলো ভাগীরথী-হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। এইসব নদী প্রধানত বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীতে সারাবছর সমান জল প্রবাহ থাকে না এবং অতিবৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

    দামোদর নদ : দামোদর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। দামোদর নদীটি ঝাড়খন্ড রাজ্যের পালামৌ জেলার ছোটনাগপুর মালভূমির খামারপাত পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে উলুবেড়িয়ার কাছে ভাগীরথী-হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। বর্তমানে দামোদর নদের মুল প্রবাহ শীর্ণ হয়ে হুগলী নদীতে পড়েছে এবং এই নদীর বেশির ভাগ জল তার শাখা নদী মুন্ডেশ্বরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দামোদরের প্রধান শাখা মুন্ডেশ্বরী রূপনারায়ণ নদীতে মিশেছে।

    পূর্ব হিমালয় থেকে উৎপন্ন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদনদী

    পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকের নদীগুলির মধ্যে (১) মেচি, (২) বালাসন, (৩) মহানন্দা, (৪) তিস্তা, (৫) জলঢাকা, (৬) তোর্সা, (৭) রায়ডাক, (৮) সঙ্কোশ, (৯) কালজানি প্রভৃতি প্রধান। মহানন্দা ছাড়া এইসব নদী উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হওয়ায় তিস্তা ও জলঢাকা নদী দুটি অত্যন্ত খরস্রোতা এবং এইসব নদীতে সারাবছরই জল থাকে। উত্তরবঙ্গের নদীখাতগুলি পলি, বালি ও নুড়ি প্রভৃতি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষার সময় এইসব নদীতে কখনও কখনও বন্যা দেখা যায়। এই নদীগুলির সমভূমি অংশে নৌকা চালানো যায়।

    দক্ষিণবঙ্গ এবং সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য নদনদী

    মাতলা, গোসাবা, বিদ্যাধরী, পিয়ালী, ইছামতী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, সপ্তমুখী, বড়তলা, জামিরা প্রভৃতি দক্ষিণবঙ্গ ও সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য নদনদী। প্রত্যেকটি নদীই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ইছামতী, মাতলা, হাড়িয়াডাঙা, সপ্তমুখি, জামিরা প্রভৃতি নদীগুলো বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের জলে পুষ্ট, তাই এদের জল লবণাক্ত। জোয়ারের সময় এই নদীগুলোতে নৌকা চালানো যায়।

    জলবায়ু

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূপ্রকৃতি গত বৈচিত্র পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক। উত্তরে হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিস্তার এবং ভূমিরূপের নানান বৈচিত্র্য এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারতম্য ঘটিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিক থেকে যতই উত্তর দিকে যাওয়া যায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ততই বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু সাধারণভাবে উষ্ণ ও আর্দ্র এবং ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত। জলবায়ু অঞ্চল হিসাবে, পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উষ্ণ মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে মোটামুটি চারটি প্রধান ঋতুতে ভাগ করা যায়। যেমন— (১) শুষ্ক গ্রীষ্মকাল,  (২) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল, (৩) শরৎকাল ও (৪) শীতকাল। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্পস্থায়ী। তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোন প্রভাব নেই। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

    শুষ্ক গ্রীষ্মকাল

    মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। মার্চ মাস থেকে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং মে মাসে উত্তাপ সর্বোচ্চ হয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের  সমভূমি অঞ্চলের উত্তাপ ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠতে থাকে। এই সময় সমভূমি অঞ্চলের উষ্ণতা ২৬° সেলসিয়াস থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উত্তাপের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি হয় এবং মালদহ অঞ্চলে দুপুরে উত্তপ্ত ‘লু’ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের গড় উত্তাপ ২০° থেকে ৩০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে স্থানে স্থানে গড় তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানে তাপমাত্রা ৪০° থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। তবে উচ্চতার জন্য জলপাইগুড়িতে এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় সাগর দ্বীপে তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের নিচে থাকে। পর্বতের উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শিলিগুড়ি বাদে দার্জিলিং জেলার আবহাওয়া খুব মনোরম ও আরামদায়ক হয়। মোটামুটিভাবে ১৪° থেকে ১৭° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়। কালবৈশাখীর স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়।

    আর্দ্র গ্রীষ্মকাল

    আর্দ্র গ্রীষ্মকালকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের কাল বা বর্ষাকাল বলে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকাল থাকে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপের ফলে পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ফলে ১৫ই জুনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে প্রায় ১২৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গের স্থান বিশেষে ১৩০ থেকে ৪০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি গড় ৩০০ সেমির মতো এবং পশ্চিমাংশে মালভূমি অঞ্চলে সবচেয়ে কম, গড়ে ১৫০ সেমি.।

    শরৎকাল

    শরৎকালকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল বলে। অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে শরৎকাল বিরাজ করে। শরৎকালকে বর্ষার বিদায়ী কাল বলা হয়। অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস এই দুই মাসে বৃষ্টি ও উষ্ণতা দুইই কমে থাকে। উষ্ণতা ২০° থেকে ২৫° সেলসিয়াস হয়। রাত্রিতে একটু একটু শীত-শীত বোধ হয় এবং ভোরবেলা শিশির পড়ে। সময়টা খুব আরামদায়ক। তবে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে। কালবৈশাখীর ঝড়ের তুলনায় এই ঝড় বেশি অনিষ্টকর। অনেক সময় সমুদ্র উত্তাল হয়ে উপকূলের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

    শুষ্ক শীতকাল

    ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস, এই তিন মাস পশ্চিমবঙ্গে শীতকাল। উত্তরে দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল বাদে পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৩° থেকে ১৯° সেলসিয়াস। দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চলে শীত সবচেয়ে বেশি, 0° থেকে ৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। এই সময় দার্জিলিং-এ মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয়। শীতকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলেও উষ্ণতা কমে যায়। এই অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি। অর্থাৎ গ্রীষ্মে উত্তাপ খুব বেশি এবং শীতে উত্তাপ খুব কম। পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না, তবে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও অল্প বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা ও আশপাশে শীতকালে ভোরের দিকে কুয়াশা হয়।

    পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

    একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার বাকি অংশ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত। বেশি উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার ফলে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অংশে পশ্চিমবঙ্গের সমতলভূমির তুলনায় তাপমাত্রা অনেক কম। ফলে গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা যখন প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস  করে, তখন দার্জিলিং পাহাড়ের লোকেরা শীতের হাত থেকে বাঁচতে গরম পোশাক পরে। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের বাকি অংশে যখন অসহ্য গরম, তখন পার্বত্য অঞ্চলের আবহাওয়া খুবই মনোরম থাকে। দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা হল ১৫° সেলসিয়াস। এই সময় পার্শ্ববর্তী জলপাইগুড়ি জেলার সমতল অংশে তাপমাত্রা প্রায় ২০° সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। শীতকালে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। শীতকালে দার্জিলিং অঞ্চলের তাপমাত্রা মাত্র ২° সেলসিয়াস বা তারও নিচে নেমে যায়। এই অঞ্চলের শীতকালীন গড় উষ্ণতা ২° সেলসিয়াস হলেও, অনেক সময় সর্বনিম্ন উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায়। শীতকালে দার্জিলিং শহর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সুউচ্চ হিমালয় পর্বতের গায়ে ধাক্কা খেয়ে দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলে তুমুল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই জন্য পশ্চিমবঙ্গের অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৪০০ সেন্টিমিটার। বর্ষাকালের পর শরৎকাল এলে দার্জিলিং জেলার আবহাওয়া আবার মনোরম হয়ে ওঠে। মনোরম আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য গ্রীষ্ম ও শরৎকালে সারা পৃথিবী থেকে বহু পর্যটক এই অঞ্চলে বেড়াতে আসেন। তাই এখানকার দার্জিলিং, সান্দাকফু, কালিম্পং, লাভা, মিরিক প্রভৃতি স্থানে বহু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

    মৃত্তিকা

    ১. পার্বত্য মৃত্তিকা: পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে এই মৃত্তিকা পাওয়া যায় । এই মৃত্তিকার রং কালো ও ধূসর। মোটামুটি উর্বর ও পডসল মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা চা চাষের পক্ষে উপযুক্ত। কমলালেবু এবং সিঙ্কোনা বৃক্ষ এই মৃত্তিকাতে ভালো জন্মায়। ২. প্রাচীন পলি গঠিত মৃত্তিকা: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ,বীরভূম এবং বীরভূমের পূর্বাংশে এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। এই মৃত্তিকা বয়সে প্রবীণ ।মাঝারি উর্বর প্রকৃতির।ভাঙ্গর নামে পরিচিত। এই মৃত্তিকা তে ধান, গম, আখ তুঁতে ভালো জন্মায়। ৩. নবীন পলিগঠিত মৃত্তিকা: মুর্শিদাবাদ ,নদিয়া ,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরে এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। এই মৃত্তিকা বয়সে নবীন উর্বর প্রকৃতির ও খাদার নামে পরিচিত। এই মৃত্তিকা তে ধান, গম, পাট প্রভৃতি চাষ হয়। ৪. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা: সমগ্র পুরুলিয়া ,বীরভূম ,বাঁকুড়া ,বর্ধমান,পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিমাংশে এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়, এই মৃত্তিকা ইটের মতো শক্ত ও অনুর্বর প্রকৃতির এবং জলধারন ক্ষমতা অন্যান্য মৃত্তিকার চেয়ে কম। ৫. লাল মাটি: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলে লাল মাটি দেখা যায়। এই অঞ্চলকে রাঢ় অঞ্চল বলা হয়।এই প্রকৃতির মৃত্তিকা অনুর্বর ও জলধরন ক্ষমতা কম। ৬. লবণাক্ত মাটি: পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও কাঁথি উপকূলে এই মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। এই মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এই মাটিতে নারকেল সুপারি তরমুজ ইত্যাদি ফসল জন্মায়।

    স্বাভাবিক উদ্ভিদ

    মানবীয় ভূগোল

    জনবিন্যাস

    জীবিকা

    প্রাকৃতিক বিপর্যয়

  • দাহালা খাগড়াবাড়ি

    দাহালা খাগড়াবাড়ি

    দাহালা খাগড়াবাড়ী (#৫১) একটি ভারতীয় ছিটমহল ছিল যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার অন্তর্গত ছিল। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের একটি অংশ ছিল। ১ আগস্ট ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের একমাত্র তৃতীয়-ক্রমের ছিটমহল (বা কাউন্টার-কাউন্টার-ছিটমহল) ছিলো। এটি ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহলগুলির সর্বাপেক্ষা ছোটগুলির মধ্যে একটি- ৭,০০০ বর্গমিটার (১.৭ একর), যদিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১০৬টি ও ভারতের অভ্যন্তরে ৯২টি বাংলাদেশী ছিটমহলের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা ছোট নয়।

    দাহালা খাগড়াবাড়ি

    পরিদর্শন

    দহলা খাগড়াবাড়ি (# ৫১) বাংলাদেশী গ্রাম উপনচৌকি ভজনি দ্বারা পুরোপুরি ঘেরা ছিলো এবং #১১০ নিজে ভারতীয় গ্রাম বালপাড়া খাগড়াবাড়ী এবং বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দেবীগঞ্জের অন্তর্গত। এভাবে, দহলা খাগড়াবাড়ি একটি ছিল ছিটমহলের ছিটমহল। বাস্তবে, এই জমির অংশটুকু বসবাসের জন্য ব্যবহৃত না হয়ে কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি এর প্রথম ক্রমের ভারতীয় ছিটমহল থেকে কয়েক হাজার মিটার বাংলাদেশী জমি দ্বারা পৃথক ছিল।

    এই ছিটমহলের মালিক একজন বাংলাদেশী কৃষক ছিলেন যিনি দহলা খাগড়াবাড়ির আশেপাশের ছিটমহলে বাস করেন (#৫১)

    এর আকার ছোট হলেও, দহলা খাগড়াবাড়ি (# ৫১) ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাওয়া ছিটমহলগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট ছিল না, যেখানে সর্বাপেক্ষা ছোটটি হলো পানিসালা নং ৭৯, যা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্তর্গত ১,০৯০ বর্গমিটার (০.২৭ একর) বিশিষ্ট একটি ভারতীয় ছিটমহল। [১]

    প্রশাসনের অভাব এবং ছিটমহলের বাসিন্দাদের অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার ১৬২ টি ছিটমহল অদলবদলের অভিপ্রায় ঘোষণা করে, যাতে বাসিন্দাদের জাতীয়তার সুযোগ প্রদান করে সমস্যাটির সমাধান করা যায়।[২] ৬মে, ২০১৫-তে ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিটি অনুমোদন করে এবং ছিটমহলটিকে বাংলাদেশের কাছে তুলে দিতে সম্মত হয়।

    আরো দেখুন

    আরও পড়ুন

    • টেলর, অ্যাডাম, ওয়াশিংটন পোস্ট। ১ অগস্ট ২০১৫, বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত সীমান্ত বিবাদকে বিদায় জানুন [১]
  • পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু মূলত ক্রান্তীয় প্রকৃতির অর্থাৎ উষ্ণ ধরনের। এছাড়া এই রাজ্যের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এজন্য পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তার এবং ভূমিরূপের নানা বৈচিত্র্য এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য ঘটিয়েছে। জলবায়ুগতভাবে পশ্চিমবঙ্গ একটি বৈচিত্র্যময় রাজ্য।

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

    • ঋতু পরিবর্তন : পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়। যথা: গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল।
    • মৌসুমী বায়ুর প্রভাব : গ্রীষ্মকালে উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এবং শীতকালে শীতল ও শুষ্ক মৌসুমী বায়ু এই রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বর্ষাকালে (গ্রীষ্মকালের শেষভাগ) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে এবং শীতকালে শুষ্ক ও শীতল জলবায়ু বিরাজ করে।
    • বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, শীতকালে হয় ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে।
    • উত্তরপ্রান্তে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই রাজ্যের উত্তরপ্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে (দার্জিলিং হিমালয়ের পাদদেশে) প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
    • উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় রাজ্যের বাকী এলাকার জলবায়ু সমভাবাপন্ন : দার্জিলিং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল-এ ভূমির উচ্চতা বেশি বলে গ্রীষ্মকাল মনোরম, কিন্তু শীতকাল অত্যন্ত তীব্র

    পশ্চিমবঙ্গের অবশিষ্ট সমভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি হয় না। তবে পশ্চিমের পুরুলিয়া জেলায় শীত-গ্রীষ্মের তাপের পার্থক্য সমভূমি অঞ্চল থেকে বেশি।[১]

    ঋতুচক্র

    বছরের বিভিন্ন সময়ে উষ্ণতার তারতম্য, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বায়ুপ্রবাহের বৈচিত্র্য প্রভৃতি লক্ষ্য করে আবহতত্ত্ববিদগণ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে চারটি প্রধান ঋতুতে ভাগ করেছেন। যথা: গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল। গ্রীষ্মকাল সম্পাদনা মার্চ মাসের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব।

    উষ্ণতা

    গ্রীষ্মকালে সমভূমি অঞ্চলে গড় উষ্ণতা থাকে ২৪ °সে (৭৫ °ফা) থেকে ৩২ °সে (৯০ °ফা)।[২] তবে, স্থানভেদে উষ্ণতার তারতম্য দেখা যায়। যেমন, এপ্রিল মে মাসে যখন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে চায় না, তখন দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে অবস্থান করে।[৩][৪][৫] গ্রীষ্মকালে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তাপপ্রবাহ চলে ও উষ্ণতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে।[৬][৭][৮] তবে, দার্জিলিঙের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির উচ্চতা বেশি বলে গ্রীষ্মকাল মনোরম। দার্জিলিঙে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    বৃষ্টিপাত

    মে মাসে মাঝে মাঝে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কালবৈশাখী নামক ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাবের ফলে ঝড়বৃষ্টি হয় এবং গরম অনেকটা কমে যায়।[৯]

    বর্ষাকাল সম্পাদনা জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগ পর্যন্ত বর্ষাকাল। বর্ষাকালে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে আসা উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা রাজ্যে বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও কম কোথাও বেশি। বার্ষিক ১৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের ১২৫ সেন্টিমিটার এই সময় বর্ষিত হয়। রাজ্যের উত্তরভাগে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ২৫০ সেন্টিমিটার।

    শরৎকাল সম্পাদনা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত শরৎকালের স্থায়ীত্ব। এই সময় আকাশ মেঘমুক্ত হয় এবং অপেক্ষাকৃত মনোরম আবহাওয়া বিরাজ করে। তবে এসময় মাঝে মাঝে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়, একে আশ্বিনের ঝড় বলা হয়। এই ঋতুর শেষে বাতাসে ক্রমশ হিমেল ভাব দেখা দেয়।

    শীতকাল সম্পাদনা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতকাল স্থায়ী থাকে। জানুয়ারি শীতলতম মাস। তাপমাত্রা সর্বনিম্ন গড়ে ৯°-১৬° সেন্টিগ্রেড থাকলেও রাজ্যের উত্তরভাগে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। কোন কোন সময় ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমা ঝঞ্ঝার সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।

    জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক

    • কর্কটক্রান্তি রেখা : পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও নদিয়া) পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর) বিস্তৃত থাকায় এই রাজ্যের অধিকাংশ স্থান (দার্জিলিং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া) উষ্ণভাবাপন্ন।
    • মৌসুমী বায়ু : বর্ষাকালে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে আসা উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা রাজ্যে বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও কম কোথাও বেশি। শীতকালে উত্তরভাগের ঠান্ডা স্থলভাগ থেকে আসা উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে ঠান্ডা পড়ে। এই বায়ুপ্রবাহ শুষ্ক থাকে বলে বৃষ্টিপাত বিশেষ হয় না।
    • ভূমির উচ্চতা : ভূমির উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমে।

    পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতা বেশি বলে উষ্ণতাও এই অঞ্চলে অনেক কম।

    • সামুদ্রিক প্রভাব : সমুদ্রের প্রভাবের জন্য এই রাজ্যের দক্ষিণ ভাগের জলবায়ু প্রায় সমভাবাপন্ন; শীত ও গ্রীষ্ম কোনটাই তীব্র নয়।
    • পর্বতের প্রভাব : পশ্চিমবঙ্গের উত্তর সীমান্তে হিমালয় পর্বতশ্রেণী পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত থাকায় একদিকে যেমন আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এতে বাধা পেয়ে এই রাজ্যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তেমনি উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুও হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে পশ্চিমবঙ্গে শীত কম পড়ে।[২]

    প্রভাব

    বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে বেশিরভাগ শস্য উৎপাদন হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু ধানপাট চাষের পক্ষে আদর্শ। এছাড়া ডাল ও তৈলবীজের ফলন ব্যাপকভাবে হয়। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে চা-এর উৎপাদন উন্নতমানের এবং স্বাদে-গন্ধে জগৎ-বিখ্যাত।

    পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ঋতুতে রথযাত্রা, দোল উৎসব, দুর্গাপূজা, ঈদ-উল-ফিতর,বড়দিন (খ্রীস্টমাস), নবান্ন ইত্যাদি পালিত হয়।

  • দক্ষিণবঙ্গ

    দক্ষিণবঙ্গ

    দক্ষিণবঙ্গ বা দক্ষিণ বাংলা হলো বঙ্গ এলাকার দক্ষিণাংশ। এটি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ, ফরিদপুর বিভাগ, বরিশাল বিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশ নিয়ে গঠিত। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ সুন্দরবন অবস্থিত।

    দক্ষিণবঙ্গ

    বাংলাদেশে

    বরিশাল বিভাগখুলনা বিভাগফরিদপুর বিভাগ (প্রস্তাবিত)
    বরগুনা জেলা বরিশাল জেলা ভোলা জেলা ঝালকাঠি জেলা পটুয়াখালী জেলা পিরোজপুর জেলাবাগেরহাট জেলা চুয়াডাঙ্গা জেলা যশোর জেলা ঝিনাইদহ জেলা খুলনা জেলা কুষ্টিয়া জেলা মাগুরা জেলা মেহেরপুর জেলা নড়াইল জেলা সাতক্ষীরা জেলাফরিদপুর জেলা গোপালগঞ্জ জেলা মাদারীপুর জেলা রাজবাড়ী জেলা শরীয়তপুর জেলা

    পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে

    বর্ধমান বিভাগপ্রেসিডেন্সি বিভাগমেদিনীপুর বিভাগমালদা বিভাগ
    হুগলি জেলা পূর্ব বর্ধমান জেলা পশ্চিম বর্ধমান জেলা বীরভূম জেলাহাওড়া জেলা কলকাতা জেলা নদিয়া জেলা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাপূর্ব মেদিনীপুর জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ঝাড়গ্রাম জেলা পুরুলিয়া জেলা বাঁকুড়া জেলামুর্শিদাবাদ জেলা

    দক্ষিণবঙ্গের শহরসমূহের তালিকা

    পশ্চিমবঙ্গ

    বাংলাদেশ

    পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) ও বাংলাদেশের মানচিত্র যা উত্তরবঙ্গ সবুজ রঙে ও দক্ষিণবঙ্গ লাল রঙে দেখাচ্ছে।

    দক্ষিণ বাংলার প্রধান শহর ও নগরগুলি:

  • তিনবিঘা করিডোর

    তিনবিঘা করিডোর

    তিনবিঘা করিডোর হল একটি স্বতন্ত্র ভূমি যা ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেওয়া হয়।[১]

    তিনবিঘা করিডোর

    ইতিহাস

    তিনবিঘা করিডোরের মাঝে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের রাস্তা।

    তিনবিঘা করিডোরের চারপাশে কাটাঁতারের বেড়া।

    ১৯৭৪ এর ১৬ইমে এর ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর (১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু)) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর (৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার (২.৮৫ বর্গমাইল)) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এরফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে যদিও ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারণে হস্তান্তর করেনি। এটি হস্তান্তরে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল।[২][৩]

    পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি বাংলাদেশকে দেওয়ার বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসাবে দিয়েছিল এই শর্তে যে একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।[৪]

    ১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার (৮.৭২ বর্গমাইল), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার (৪.৩৬ বর্গমাইল) বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচ বিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার (৭.০০ বর্গমাইল) যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথা ছিল। ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০%ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার (৭.২১ বর্গমাইল) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল।

    ১৯৭১ এর পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারেঃ “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।” [৫]

    নামের উৎপত্তি

    বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক বিঘা থেকে তিনবিঘা নামের উৎপত্তি, ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গমিটার (১৬,১৫০ থেকে ৭২,৮৮০ বর্গফুট) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান।

    করিডোরে প্রবেশ

    তিনবিঘা করিডোরে ভারতীয় বিএসএফ এর ক্যাম্প।

    পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত,[৬][৭] এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারণ সে-সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।[৭]

    ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।[৮][৯]

    ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।[১০]

    অবকাঠামো

    ২০১১ সালের পূর্বে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাতে কোন হাসপাতাল[৭] বা কলেজ ছিল না। ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করেন।[১০]

  • জয়চন্ডী পাহাড়

    জয়চন্ডী পাহাড়

    জয়চন্ডী পাহাড় হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত একটি পাহাড় শৃঙ্খলা, এটি বেশ কটি পাহাড় নিয়ে গঠিত। প্রতিটি পাহাড়ের নিজস্ব নাম আছে, যেমন- যোগীঢাল, চন্ডী, ঘড়ি, সিজানো, রাম-সীতা প্রভৃতি৷ জেলার রঘুনাথপুর মহকুমার সদর শহর রঘুনাথপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পুরুলিয়াবরাকর রোডের ধারে অবস্থিত জয়চন্ডী পাহাড় একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং পর্বতারোহণ শিক্ষাকেন্দ্র। ভারতীয় রেলের দক্ষিণপূর্ব রেল ক্ষেত্রের আসানসোলআদ্রা বিভাগের একটি স্টেশন হল জয়চন্ডী পাহাড় রেল স্টেশনসত্যজিৎ রায় পরিচালিত হীরক রাজার দেশে ছবির শ্যুটিং এখানে হয়েছিল।

    জয়চন্ডী পাহাড়

    জয়চন্ডী পাহাড়ের একটি অংশ

    ভূগোল

    জয়চন্ডী পাহাড়

    Location of the area of Joychandi Pahar and Its Railways Station in West Bengal

    ২৩.৫৫° উত্তর ৮৬.৬৭° পূর্ব অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে জয়চণ্ডী পাহাড় অবস্থিত।[১] এই পাহাড়ের গড় উচ্চতা ১৫৫ মি (৫০৯ ফু)। এটি ছোটো নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নিচু ধাপে অবস্থিত।[২]

  • কলকাতা মহানগর অঞ্চল

    কলকাতা মহানগর অঞ্চল

    কলকাতা মহানগর অঞ্চল বা কলকাতা মেট্রোপলিটান অঞ্চল (কেএমএ) বা বৃহত্তর কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা মহানগরের একটি সংযুক্ত নগরাঞ্চল। দিল্লিমুম্বইয়ের পর এটি ভারতের তৃতীয় সবথেকে জনবহুল মহানগর এলাকা। এলাকাটি কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) দ্বারা পরিচালিত। চারটি পৌরসংস্থা ও ৩৮টি পৌরসভা এই এলাকার অন্তর্গত।[২][৩]

    কলকাতা মহানগর অঞ্চল

    এক্তিয়ার

    এক্তিয়ার
    মানব বসতিনামমোট সংখ্যা
    পৌরসংস্থাকলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া, চন্দননগর
    পৌরসভাউত্তর ২৪ পরগনা জেলা বরানগর, বারাসত, ব্যারাকপুর, ভাটপাড়া, দমদম, গারুলিয়া, হালিশহর, কামারহাটি, কাঁচরাপাড়া, খড়দহ, মধ্যমগ্রাম, নৈহাটি, নিউ ব্যারাকপুর, নিউ টাউন, উত্তর ব্যারাকপুর, উত্তর দমদম, পানিহাটি, দক্ষিণ দমদম, টিটাগড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বারুইপুর, বজবজ, জয়নগর মজিলপুর, মহেশতলা, পূজালি, রাজপুর সোনারপুর নদিয়া জেলা গয়েশপুর, কল্যাণী হাওড়া জেলা উলুবেড়িয়া হুগলী জেলা বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর, বাঁশবেড়িয়া, চাঁপদানি, ডানকুনি, হুগলী-চুঁচুড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া কোতরং৩৮

    জনপরিসংখ্যান

    ২০১১ সালে জনগণনার তথ্য অনুসারে কলকাতা মহানগর অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১,৪১,১২,৫৩৬ জন অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লক্ষের কিছু বেশি।[৪] কেএমডিএ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী অঞ্চলটির মোট আয়তন ১,৮৮৬.৬৭ বর্গকিলোমিটার (৭২৮.৪৫ মা), সুতরাং এই অঞ্চলটির জনঘনত্ব ৭,৪৮০ প্রতি বর্গকিলোমিটার (১৯,৪০০ /বর্গমাইল)

    পাদটীকা

    http://censusindia.gov.in/2011-prov-results/paper2/data_files/india2/Million_Plus_UAs_Cities_2011.pdfKolkataওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৮ মার্চ ২০১২ তারিখে. Metropolis.org. “Chapter II – The Vision _ Evolution of Kolkata Metropolitan Area” (PDF)। jnnurmmis.nic.in। ১১ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২২। http://censusindia.gov.in/2011-prov-results/paper2/data_files/india2/Million_Plus_UAs_Cities_2011.pdf

  • জাট এলাকা

    জাট এলাকা

    জাট এলাকা হলো পাট চাষের একটি শব্দ যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উত্তর-পূর্ব দিকের অংশকে নির্দেশ করে। এই ভৌগোলিক এলাকাটি বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এবং কুমিল্লা জেলার অংশ নিয়ে গঠিত।[১] এলাকাটি প্রতি বছর বন্যার পানি দ্বারা বাহিত পলির তাজা জমা পায়। মাটির গঠন অম্লীয়, বেলে দোআঁশ থেকে কাদামাটি দোআঁশ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। বাণিজ্যিক গুণাগুণ অনুসারে, এই এলাকায় সবচেয়ে ভালো মানের পাট, জাট জাতীয় পাট জন্মে। বিশ্বে উন্নতমানের পাটের কারণে নারায়ণগঞ্জের এ অঞ্চলে আদমজী জুট মিল্‌স প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মিলটি বিশ্বের বৃহত্তম পাটকলে পরিণত হয়। যদিও, মিলটি ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায়।[২]

    জাট এলাকা
  • চট্টগ্রামের নাম

    চট্টগ্রামের নাম

    বাংলায় শহরটি চট্টগ্রাম নামে পরিচিত। নামটি চাটগাঁইয়া সংস্কৃতি, ভাষা এবং ইতিহাস থেকে এসেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইতিহাস এবং চাটগাঁইয়া ভাষায় এটির বেশ কয়েকটি নাম আছে। চাটগাঁইয়া ভাষায় প্রায় ৫০% আরবি উৎসের শব্দভান্ডার রয়েছে।[১]

    চট্টগ্রামের নাম

    চাটগাঁইয়া নাম

    চাটগাঁইয়া ভাষায় চট্টগ্রামের নাম চিটাঙ। অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে চাটগা, চৈট্ট্যভূমি এবং চট্টলা[২] চট্টগ্রামের চাটগাও নামটি এখনো হিন্দি, পাঞ্জাবি, এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ব্যবহার করা হয়। উর্দু এবং ফারসী ভাষায় চট্টগ্রামের নাম চাটগাম। এছাড়া চিটাগং নামটি চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে এবং বাংলার পূর্ব উপভাষাও প্রচলিত, “গ্যাং” এর অর্থও গ্রাম। ইসলামাবাদ নামটি চট্টগ্রামের আরো একটি বহুল ব্যবহৃত নাম, যেটি মোঘল বিজয়ের পর দেয়া হয়। এবং এটি দ্বারা মূলত চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাজধানী অর্থাৎ চট্টগ্রাম শহরকে বুঝানো হয়। এই নামেও চট্টগ্রাম সুপ্রসিদ্ধ। চাটগাঁইয়া ভাষাতেও চট্টগ্রাম শহর বুঝাতে এই নামের ব্যবহার আছে।

    বাংলা নাম

    বাংলা নাম চট্টগ্রাম-এর প্রত্যয় রয়েছে “-গ্রাম” যা প্রমিত বাংলা গ্রাম থেকে এসেছে, এবং “চট্ট” শব্দটি “চাটি” অর্থাৎ বাতি থেকে উৎপন্ন। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী নামটি ইসলামের প্রসারের সময়ে, যখন একজন মুসলমান শহরের একটি পাহাড়ের চূড়ায় একটি চাটি (বাতি) জ্বালিয়েছিলেন এবং নামাজ আদায় করার জন্য (আজান) আহ্বান করেছিলেন।[৩] এইভাবে, অনেকে শহরকে বলতে থাকেন, চাটিগ্রাম বা চাটিগাঁও, যেখানে গাঁও অর্থ গ্রাম।

    আরবি নাম

    আরব ব্যবসায়ীরা নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রামে উন্নত মুদ্রা, ব্যাংকিং এবং শিপিং দেখেছিল। শুরুর দিকের বিশ্বজনীন মুসলমানরা সমুদ্র বাণিজ্যের একটি প্রবেশপথ হিসেবে বন্দরের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।[৪] ভৌগোলিকভাবে, গঙ্গা বদ্বীপ বাংলায় অবস্থিত। আরবি শব্দ শাত (شط) যার অর্থ বদ্বীপ, এটি চট্টগ্রাম, গঙ্গা বদ্বীপ, শাত আল-গঞ্জ (شط الغانج) এর ব্যুৎপত্তিও হতে পারে। [৫][৬][৭] মরক্কোর ভ্রমণকারী ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম বন্দরকে সাদকাওয়ান (سدكاوان) বলে উল্লেখ করেছেন। [৮] [৯] বর্তমানে চট্টগ্রামের আরবি নাম হল শীতাগুং (شيتاغونغ), যা চট্টগ্রামের ইংরেজি নাম থেকে উৎপন্ন।

    আরাকানি নাম

    বাংলা সালতানাত থেকে আরাকানের স্বাধীনতার পর ম্রাক ইউ রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ছিল চট্টগ্রাম। শহরের ব্যুৎপত্তির বার্মিজ ঐতিহ্য হল, ৯ম শতাব্দীতে আক্রমণকারী একজন আরাকানিজ রাজা শহরটিকে সিট-টা-গুং নাম দিয়েছিলেন (যার অর্থ যইুদ্ধ করা অনুচিত)। [৫]

    পর্তুগিজ এবং ডাচ নাম

    আদি ডাচ বাংলার মানচিত্র

    পর্তুগিজরা বন্দর শহরটিকে পোর্টো গ্র্যান্ডে ডি বেঙ্গালা বলে উল্লেখ করেছিল, যার অর্থ “বাংলার গ্র্যান্ড হারবার”। শব্দটি প্রায়শই পোর্টো গ্র্যান্ডে হিসাবে সরলীকৃত ছিল। [১০] অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে ডাচ থেকে Xatigan [১১], Xetigam, এবং Chatigão একটি আদি বাংলা নাম থেকে এসেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

    ঐতিহাসিক নাম এবং ডাকনাম

    ওলন্দাজ জাহাজ ১৭০২ সালে মুঘল আমলে চট্টগ্রাম পরিদর্শন করে

    চট্টগ্রামের মুঘল বিজয় বাঙালি নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে এবং স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্যের যুগের সূচনা করে। শহরটির নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ (ইসলামের শহর) এবং পুরনো শহরে এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।[১২][১৩]

    রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি দ্য এল্ডারের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরকে এরিথ্রীয় সাগরের পেরিপ্লাসে গঙ্গাবাজার (Gongabazaar) অর্থ “গঙ্গার বাজার” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত স্থানটি সম্ভবত সীতাকুণ্ড, সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। [১৪]

    প্রাচীন তিব্বতীয় গ্রন্থে শহরটি জ্বালানধারা (Jaalondhaara) নামে পরিচিত ছিল এবং আরব ভৌগোলিক গ্রন্থে সামান্দর (Samandar) নামে পরিচিত ছিল। [১৪]

    শহরটি বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার (বাংলাদেশের প্রবেশপথ) এবং সেইসাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে পরিচিত। [১৫]

    আরও দেখুন

  • গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ (বঙ্গীয় ব-দ্বীপ[১] বা সুন্দরবন ব-দ্বীপ, ইংরেজি: Ganges Delta বা, Bengal Delta) দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি ব-দ্বীপ যা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী ভিত্তিক ব-দ্বীপ।[২][৩] এটি গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র সহ বেশ কয়েকটি নদীর মিলিত জলরাশি হিসেবে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এ কারণে একে অনেক সময় গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র ব-দ্বীপ নামেও অভিহিত করা হয়। এটি বিশ্বের উর্বরতম অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। তাই, অনেকে একে গ্রিন ডেল্টা বা সবুজ ব-দ্বীপ বলে থাকেন। বদ্বীপটি হুগলী নদী থেকে পূর্ব দিকে মেঘনা নদী পর্যন্ত প্রসারিত।

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ

    ভূগোল

    ব-দ্বীপের একটি সাধারণ দৃশ্য, যেখানে খেজুর গাছ, ধান খেত, সবুজ সমতল ভূমি এবং পুকুর দেখা যাচ্ছে।

    জেমস রেনেলের জরিপের মানচিত্রে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ (১৭৭৮)

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির এবং এটি একটি “আর্কুয়েট” (তোরণ-আকৃতির) বদ্বীপ হিসাবে বিবেচিত হয়। বদ্বীপটি ১,০৫,০০০ কিমি (৪১,০০০ মা)-এরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বদ্বীপটি বাংলাদেশ এবং ভারতে বিস্তৃত থাকলেও উত্তরের ভুটান, তিব্বত, ভারত ও নেপাল থেকে সৃষ্ট নদীগুলো এই বদ্বীপের মধ্য দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। ব-দ্বীপটির প্রায় ৬০% হয় বাংলাদেশে এবং ৪০% ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। বদ্বীপটির বেশিরভাগ অঞ্চল নদী বাহিত ছোট ছোট পলি কণা দ্বারা গঠিত। এমনকি নদীগুলো তাদের উৎস হিমবাহগুলো থেকে ফ্লুভিও-হিমবাহ হিসাবে এই সূক্ষ্ম কণাগুলো বহন করে নিয়ে আসে। লাল এবং লাল-হলুদ ল্যাটারাইট মাটি আরো পূর্ব দিকের প্রান্তে পাওয়া যায়। এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

    এটি অসংখ্য চ্যানেল, জলাশয়, হ্রদ এবং পলি মাটির প্লাবন সমভূমি (চর)-এর সমন্বয়ে গঠিত। গঙ্গার শাখানদী- গড়াই-মধুমতি নদী গাঙ্গেয় ব-দ্বীপকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে: একটি হল ভূতাত্ত্বিকভাবে তরুণ ও সক্রিয় পূর্বাঞ্চলীয় বদ্বীপ এবং অপরটি হল পুরাতন ও কম সক্রিয় পশ্চিমাঞ্চলীয় বদ্বীপ।[১]

    জনসংখ্যা

    মৌসুমী বায়ু জনিত বন্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে বেশি পানি প্রবাহ জনিত বন্যা এবং উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ১২৫ থেকে ১৪৩ মিলিয়ন মানুষ এই ব-দ্বীপে বাস করে। বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশ গাঙ্গেয় বদ্বীপে বসবাস করে এবং দেশের অনেক মানুষ বেঁচে থাকার জন্য এই বদ্বীপের উপর নির্ভরশীল।[৪]

    মনে করা হয়, ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের উপর নির্ভরশীল এবং প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ গঙ্গা অববাহিকায় বাস করে। অর্থাৎ, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নদী অববাহিকা। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২০০ জন (অর্থাৎ, বর্গমাইল প্রতি ৫২০ জন) এবং এটি বিশ্বের সর্বাধিক ঘনবসতিযুক্ত অঞ্চলগুলোর একটি।

    বন্যজীবন

    বেঙ্গল টাইগার

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ জুড়ে রয়েছে তিনটি বাস্তুসংস্থান অঞ্চল। নিম্নতর গাঙ্গেয় সমভূমির আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য অঞ্চল এ অঞ্চলের সর্বাধিক অংশ জুড়ে বিদ্যমান। অবশ্য, বনের বেশিরভাগ অংশই কৃষিকাজের জন্য ফাঁকা করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র ছোট ছোট কিছু বনাঞ্চল রয়েছে। ক্যানব্রেক নামে পরিচিত লম্বা ঘাসের ঘন স্ট্যান্ডগুলো আর্দ্র অঞ্চলে বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবনের স্বাদুপানির জলাভূমির বনাঞ্চল বঙ্গোপসাগরে কাছাকাছি অবস্থিত। এই বন শুষ্ক মৌসুমে নোনাপানিতে প্লাবিত হয় আবার বর্ষা মৌসুমে মিঠাপানিতে প্লাবিত হয়। এই বনও ধীরে ধীরে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাস্তু-অঞ্চলের ১৪,৬০০ বর্গকিলোমিটার (৫,৬০০ মা)-এর মধ্যে মাত্র ১৩০ বর্গকিলোমিটার (৫০ মা) অঞ্চল সুরক্ষিত। বদ্বীপটির বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ হল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থান অঞ্চল, যা ৫৪ টি দ্বীপ সহ মোট ২০,৪০০ বর্গকিলোমিটার (৭,৯০০ মা) জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবনের নামকরণও করা হয়েছে সুন্দরী নামে পরিচিত একটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদের নামানুসারে, যার বৈজ্ঞানিক নাম Heritiera fomes

    ব-দ্বীপের প্রাণীগুলির মধ্যে রয়েছে দেশি অজগর (Python molurus), মেঘলা চিতা (Neofelis nebulosa), ভারতীয় হাতি (Elephas maximus indicus), কুমির ইত্যাদি। প্রায় ১,০২০টি বিপন্নপ্রায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) সুন্দরবনে বাস করে বলে মনে করা হয়। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় পাতলা বন রয়েছে যা থেকে মূল্যবান কাঠ পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে শাল, সেগুন এবং অশ্বত্থ গাছ পাওয়া যায়। এছাড়া, বদ্বীপ অঞ্চলে গরান গাছও রয়েছে।

    অনুমান করা হয় যে প্রায় ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ (Axis axis) বদ্বীপটির সুন্দরবন অংশে রয়েছে। এছাড়াও সেখানে মাছরাঙা, ঈগল, কাঠঠোকরা, শালিক (Acridotheres tristis), জলার তিতির (Francolinus gularis) এবং দোয়েল (Copsychus saularis) পাখি দেখা যায়। বদ্বীপটিতে দুটি প্রজাতির ডলফিনের সন্ধান পাওয়া যায়: ইরাবতী ডলফিন (Orcaella brevirostris) এবং গঙ্গা নদীর ডলফিন (Platanista gangetica gangetica)। ইরাবতী ডলফিন একটি মহাসাগরীয় ডলফিন, যা বঙ্গোপসাগর থেকে বদ্বীপে প্রবেশ করে। তবে গঙ্গা নদীর ডলফিন সত্তিকারার্থেই একটি নদীতে বসবাসকারী ডলফিন। তবে এটি অত্যন্ত বিরল এবং বিপন্নপ্রায় প্রাণী হিসাবে বিবেচিত।

    এছাড়া, অঞ্চলটিতে যেসব উদ্ভিদ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: সুন্দরী, গর্জন, বাঁশ, গোলপাতা (Nypa fruticans) এবং ম্যানগ্রোভ খেজুর (Phoenix paludosa)। উদ্ভিদের অনেক বিপন্ন প্রজাতিও এখানে পাওয়া যায়।

    ভূ-তত্ত্ব

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত: ভারতীয় পাত, ইউরেশীয় পাত এবং বার্মা পাত[৫] ইওসিন প্যালিওসেল্ফের প্রান্তটি কলকাতা থেকে শিলং মালভূমির প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। প্যালিওসেল্ফের প্রান্তটি উত্তর-পশ্চিমে পুরু মহাদেশীয় ভূত্বক থেকে দক্ষিণ-পূর্বের পাতলা মহাদেশীয় বা মহাসাগরীয় ভূত্বকে রূপান্তর চিহ্নিত করে। হিমালয়ের প্রবাহ থেকে আগত বিপুল পরিমাণে পলি ইওসিনের পর থেকে বদ্বীপটির সমুদ্রসৈকতকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মা) প্রসারিত করেছে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের নিচে পেলোশেল্ফের প্রান্তের দক্ষিণ-পূর্বে পলির ঘনত্ব ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) অতিক্রম করতে পারে।[৬]

    অর্থনীতি

    ধান, গবাদি পশু এবং নদী ও পুকুরের মাছ এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের প্রধান উৎস।

    বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক কৃষি ক্ষেত্রে কর্মরত। তারা বদ্বীপের উর্বর প্লাবনভূমিতে ফসল ফলান। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে যেসব ফসল উৎপন্ন হয় সেগুলোর মধ্যে প্রধান হল পাট, চা এবং ধান[৪] মাছ ধরাও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। কারণ এ অঞ্চলের অনেকের কাছেই মাছ একটি প্রধান খাদ্য।[৭]

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা মাছ চাষে উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগ করতে বদ্বীপের দরিদ্র মানুষদেরকে সহায়তা দিয়ে আসছেন। অব্যবহৃত পুকুরগুলোকে কার্যকর মাছের খামারে পরিণত করে এবং বিদ্যমান পুকুরগুলোতে মাছ চাষে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকেই এখন মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে পুকুরে মাছের উৎপাদন ৮০০% বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।[৮] চিংড়ি সাধারণত খোলা পানিতে নিমজ্জিত কন্টেইনার বা খাঁচায় চাষ করা হয়। এগুলোর বেশিরভাগই রফতানি করা হয়।[৭]

    হাসনাবাদ ফেরি ঘাটে মানুষের ভীড়

    কলকাতার হুগলী নদীর উপর বিদ্যাসাগর সেতু

    অসংখ্য নদী-নালা বেষ্টিত থাকায় অঞ্চলটিতে যাতায়াত করা বেশ কষ্টসাধ্য। বেশিরভাগ দ্বীপপুঞ্জ থেকে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের একমাত্র উপায় হল কাঠের ফেরি নৌকা। সেতুর সংখ্যা খুবই কম। কিছু দ্বীপ এখনও বৈদ্যুতিক গ্রিডের সাথে সংযুক্ত নেই। সেসব দ্বীপের বাসিন্দাদের মাঝে সৌর কোষ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবণতা দেখা যায়।

    আর্সেনিক দূষণ

    আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক মৌল যা স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। এটি ধান এবং অন্যান্য প্রধান ফসলের মাধ্যমে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে।

    জলবায়ু

    গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা গ্রীষ্মমন্ডলীয় আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত। এর পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি বছর ১,৫০০ থেকে ২,০০০ মিমি (৫৯ থেকে ৭৯ ইঞ্চি) এবং পূর্বাঞ্চলে প্রতি বছর ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মিমি (৭৯ থেকে ১১৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়। গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং শীতল ও শুষ্ক শীতকাল জলবায়ুকে কৃষির জন্য উপযুক্ত করে তোলে।

    বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়

    ১৯৭০ সালের নভেম্বরে, বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে মারাত্মক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়টি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে আঘাত হানে ১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে ৫,০০,০০০ মানুষ নিহত হয় (সরকারিভাবে হিসেবে) এবং আরও ১০,০০০ জন নিখোঁজ হয়। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুমান করেছিল যে, ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০,০০,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।[৯]

    ১৯৯১ সালে বদ্বীপটিতে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে প্রায় ১,৩৯,০০০ মানুষ মারা যায়।[১০]

    এ অঞ্চলে প্রায়ই তীব্র বন্যা দেখা দিয়ে থাকে। ১৯৯৯ সালে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে বন্যার ফলে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত এবং ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। পুরো ধানের ফসল নষ্ট হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এই অঞ্চলের মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য ৯০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছিল।[১১]

    বঙ্গীয় ব-দ্বীপের ইতিহাস

    বিনিতা দামোদরন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন কর্তৃক দুর্ভিক্ষ ব্যবস্থাপনার রীতিটির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন এবং বন ও জমি পরিচালনার ফলে যে বড় ধরনের পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছে তার সাথে এই পদ্ধতিগুলোর সম্পর্ক চিহ্নিত করেছেন।[১২][১৩][১৪] দেবযানী ভট্টাচার্য্য দেখিয়েছেন যে পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবিলা করে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে বিংশ শতাব্দীতে সূচনা পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শক্তি কীভাবে কলকাতাকে নগর কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছিল।[১৫][১৬]

    বঙ্গীয় বা গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের পূর্ব অংশকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতেখার ইকবাল কৃষ্ণবিত্ত সমৃদ্ধি বা হ্রাস, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, দারিদ্র্য এবং দুর্ভিক্ষ অধ্যয়ন করার জন্য বঙ্গীয় ব-দ্বীপকে (বিশেষত, ঔপনিবেশিক সময়কালকে) একটি পরিবেশগত কাঠামো হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন।[১৭] ইকবাল দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে ঔপনিবেশিক শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের মতো প্রতিরোধ আন্দোলন কীভাবে অধ্যয়ন করা যেতে পারে।[১৮]

    বঙ্গীয় বা গাঙ্গেয় বদ্বীপের পরিবেশ ইতিহাসের গবেষণার ক্ষেত্রে একটি দুর্বল দিক হল বেশিরভাগ গবেষণা অষ্টাদশ থেকে একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই অষ্টাদশ শতকের পূর্বে এই অঞ্চলের পরিবেশগত ইতিহাস সম্পর্কে তথ্যের অভাব রয়েছে।

    বদ্বীপের ভবিষ্যত

    আসন্ন বছরগুলোতে গাঙ্গেয় বদ্বীপে বসবাসকারী লোকদের সবচেয়ে বড় যে হুমকির সম্মুখীন হতে হবে তা হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ০.৫ মিটার (১ ফু ৮ ইঞ্চি) বাড়লেই বাংলাদেশে প্রায় ছয় মিলিয়ন লোক ঘরছাড়া হতে পারে।[১৯]

    বদ্বীপটিতে তিতাস এবং বখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে, এখন বেশ কয়েকটি বড় বড় তেল সংস্থা গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর কাজে বিনিয়োগ করেছে।[২০][২১]

    দৃশ্য

    মহাকাশ থেকে গঙ্গা নদী

    আরো দেখুন

    তথ্যসূত্র