অন্তরীপ হচ্ছে এক ধরনের ভূমিরূপ। ভূগোলের পরিভাষায়ঃ ভূপৃষ্ঠের কোন অংশ ক্রমশ সরু হয়ে কোন জল-অংশে (সাধারণতঃ সাগর) প্রবেশ করলে সেই সংকীর্ণ অংশকে অন্তরীপ বলা হয়।[১] অন্তরীপের ভৌগোলিক আয়ুষ্কাল সাধারণত কম হয়।
গঠনের কারণ
হিমবাহ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে অন্তরীপ গঠিত হতে পারে।
Cape Cod and the islands off the Massachusetts coast, from space
অধোগমন হলো একটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যা টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত সীমানায় সংঘটিত হয় যাতে একটি প্লেট অন্যটির নিচে চলে যায় এবং গুরুমন্ডলস্থ অভিকর্ষের কারণে ডুবে যেতে বাধ্য হয়।[১]ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে যে অঞ্চলে এই প্রক্রিয়াটি ঘটে তাকে অধোগমন অঞ্চল বলে। অধোগমনের হার সাধারণত প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার হয়; বেশিরভাগ প্লেটের প্রান্ত সীমানা বরাবর ঘর্ষণের ফলে পতনের গড় হার প্রায় দুই থেকে আট সেন্টিমিটার হয়।[১]
সংজ্ঞা
যখন কোনও মহাসাগরীয় প্লেট একটি মহাদেশীয় প্লেটের নিচে চলে যায় এবং এর তলদেশ দিয়ে সঞ্চলিত হয় তখন তাকে অধোগমন বলে।[২]
সাধারণ বর্ণনা
প্লেটগুলো সঞ্চারনশীল হওয়ায় এগুলো বিভিন্ন দিকে পরিভ্রমণ করে এবং এই অবস্থায় কখনও যদি দুটি মহাসাগরীয় প্লেট অথবা একটি মহাসাগরীয় এবং একটি মহাদেশীয় প্লেট মুখোমুখি অগ্রসর হয় তখন প্লেট দুটি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি লম্বালম্বি সম্প্রসারিত মন্ডলের সৃষ্টি করে যেখানে একটি প্লেট অপর প্লেটের নিচ দিয়ে অগ্রসর হয়, ফলে অধোগমনের সৃষ্টি হয়।[৩]
সাধারণত নিরক্ষরেখা থেকে ১০ ডিগ্রী উত্তর দিকে বা দক্ষিণ দিকে যে অতিবৃষ্টি অরণ্যগুলির দেখা মেলে, সেগুলিকে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য (ইংরেজি: Tropical rainforest) বলে। এগুলিতে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র এবং কোন বিশেষ শুষ্ক মৌসুম থাকে না। এগুলিতে গড় মাসিক তাপমাত্রা বছরের প্রায় সকল মাসেই ১৮ °সে (৬৪ °ফা) অতিক্রম করে।[১] গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৮ সেমি (৬৬ ইঞ্চি)-এর নিচে হয় না এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,০০০ সেমি (৩৯০ ইঞ্চি)ও অতিক্রম করতে পারে। তবে সাধারণত বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হয়ে থাকে ১৭৫ সেমি (৬৯ ইঞ্চি) থেকে ২০০ সেমি (৭৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত।[২]
বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্যের ভৌগোলিক অবস্থান
ক্রান্তীয় অঞ্চলের অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত ক্রান্তীয় আর্দ্র অরণ্যের পর্যায়ে পড়ে, যার অনেক রকম বিভাজন আছে। বন গবেষকগণ অতিবৃষ্টি অরণ্যকে অন্যান্য অরণ্য থেকে আলাদা করেন কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে, যেমন: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, শুকনো মৌসুমের ব্যাপ্তি, এবং উচ্চতা।[৬]
তাপমাত্রা
অতিবৃষ্টি অরণ্য সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র- বার্ষিক গড় তাপমাত্রা হলো ২৫° সেলসিয়াস (৭৭° ফারেনহাইট)। বিষুবরেখার কাছাকাছি তাপমাত্রায় কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তবে বর্ষাবনে তাপমাত্রা বছরের প্রায় সব সময়ই প্রায় একই রকম থাকে- গড় সর্বনিম্ন মাসিক তাপমাত্রা হলো আরামদায়ক ১৮° সেলসিয়াস (৬৪° ফারেনহাইট)। যেখানকার তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াসের (৩২° ফারেনহাইট) কাছাকাছি চলে আসে সেখানে সাধারণত অতিবৃষ্টি অরণ্য গড়ে উঠে না কারণ বর্ষাবনের উদ্ভিদ ও জীবপ্রজাতি এতো কম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিবৃষ্টি অরণ্যের তাপমাত্রা বিষুবরেখা থেকে এর দূরত্বের ভিত্তিতে শুধু নির্ধারিত হয় না, বরং উচ্চতার উপরও নির্ভর করে। যত উচ্চতা বেশি হয়, রাতের তাপমাত্রা আনুপাতিক হারে তত কমতে থাকে। দৈনিক তাপমাত্রার এরকম উঠা-নামা অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। আর তাই সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,২৮০ ফুট (১,০০০ মিটার) উচ্চতার ঊর্ধ্বে অতিবৃষ্টি অরণ্য দেখা যায় না।[৬]
বৃষ্টিপাত
মূলত বৃষ্টিপাতের সাথেই অতিবৃষ্টি অরণ্যের সম্পর্ক। অতিবৃষ্টি অরণ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৮০০ মিলিমিটার (৬ ফুট) থেকে ৯০০০ মিলিমিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি মাসে সাধারণত ১০০ মিলিলিটারেরও (৪ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বলতে গেলে কোন অতিবৃষ্টি অরণ্যে শুকনো মৌসুম থাকেই না। যদি কখনও শুকনো সময় দেখা যায়, তবে সেটা সাধারণত হয় সংক্ষিপ্ত এবং আগে থেকে জানা যায় না।[৬]
বিভিন্ন জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতের জন্য জলীয়বাষ্প দূর থেকে এলেও অতিবৃষ্টি অরণ্যে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার জলীয়বাষ্পের ৫০ শতাংশই হয় ঐ অতিবৃষ্টি অরণ্যের জলীয়বাষ্প। অতিবৃষ্টি অরণ্যকে ঘিরে থাকা গরম, ভ্যাপসা, আর্দ্রতাপূর্ণ যে বাতাস বিরাজ করে, তা জলীয়বাষ্পের খুব অল্প অংশই বেরিয়ে যেতে দেয়। অতিবৃষ্টি অরণ্যে যতটুকু বৃষ্টিপাত হয় তার অধিকাংশই গাছগুলো তার শাখা প্রশাখায় শুষে নেয়। কিছু পরিমাণ পাতার ফাঁক গলে নিচে পড়ে, যদিও অধিকাংশই নিচে পড়ার আগেই বাষ্প হয়ে যায় এবং আর্দ্র বাতাসে ভেসে থাকে। মৃদু, সদা চলাচলরত বাতাস তখন বাতাসের এই জলীয় অংশকে ঊর্ধ্বাকাশে তুলে নেয় এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে মেঘে পরিণত হয়। যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা জলীয় বাষ্প তৈরি হয়, তখন তা বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে, আবারো বৃষ্টির চক্রকে চালু রাখে।[৬]
মৃত্তিকার রূপ
অধিকাংশ অতিবৃষ্টি অরণ্যেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিপুল বৃষ্টিপাত আর প্রচন্ড গরমের কারণে মাটির পুষ্টি গুণাগুণ হারিয়ে যায়। পুষ্টি চাহিদার এই করুণ অবস্থার কারণে অধিকাংশ ক্রান্তীয় বৃক্ষ যতটুকু পুষ্টি পাওয়া যায়, তা তাদের জীবন্ত কোষে জমা করে রাখে। যখন এসব ক্রান্তীয় গাছগুলো মারা যায় তখন তাদের জমা করে রাখা পুষ্টি গুণাগুণ পচনের মাধ্যমে মাটিতে আবার ফিরে আসে। কিন্তু মাটিতে জমা থাকার চেয়ে অন্যান্য জীব বা উদ্ভিদ সাথে সাথেই সেসকল পুষ্টি গুণাগুণ শুষে নেয়।[৬]
অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন
অতিবৃষ্টি অরণ্যের গঠন অন্যান্য সকল বনের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে এর বিভিন্ন স্তরভিত্তিক উদ্ভিদরাজির সমাবেশের কারণে, যাকে বলা হয় স্ট্রাটা (strata), একবচনেস্ট্র্যাটাম (stratum)।[৬]
উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য
অতিবৃষ্টি অরণ্যের উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর যে পরিমাণ, আদতে তা যেকোনো বাসস্থানের চেয়ে সমৃদ্ধ। যদিও বিগত কয়েক লক্ষ কোটি বছরের জলবায়ুগত পরিবর্তনে তাদের পরিমাণ কখনও বেড়েছে কখনও কমেছে, তবুও বর্ষাবন হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি বাস্তুসংস্থান। এই ধারাবাহিকতার কারণেই অতিবৃষ্টি অরণ্যে বেড়ে উঠেছে লক্ষ কোটি প্রজাতি, যার অনেকগুলো এনডেমিক (endemic), বা একমাত্র।[৬]
অক্ষীয় অয়নচলন বলতে সুনির্দিষ্টভাবে পৃথিবীর আবর্তন-অক্ষের অবিরল দোলিত চলনকেই বুঝায় যা , হেলেদুলে-ঘূর্ণায়মান একটি লাটিমের মতো , প্রায় ২৬,০০০ বছরব্যাপী এক চক্রে শীর্ষ-মিলিত এক জোড়া কোণ তৈরী করে ।
২৬,০০০ বছরব্যাপী অয়নচলন-চক্রকে পৃথিবীর কাছ থেকে এমনটাই দেখায় । বর্তমান উত্তর মেরুতারা – ধ্রুবতারা (Polaris) (উপরে) । প্রায় ৮,০০০ বছরে এ স্থানটি নেবে উজ্জ্বল তারাদানব (Deneb) (বামে) , আর প্রায় ১২,০০০ বছরে অভিজিৎ (Vega) (বামমধ্য) । এখানে পৃথিবীর আবর্তনকে পরিমাপক-রেখায় দেখানো হয়নি – এ সময়কালে পৃথিবী ৯,০০০,০০০ বারেরও বেশিবার স্বাবর্তিত হবে।
মেরু ও বিষুব স্থানান্তরণ
আরও দেখুন
পৃথিবীর অক্ষের আহ্নিক বা দৈনিক (সাদাতীর) ও অক্ষীয় (সাদাবৃত্ত) অয়নচলন বা পথচলনপৃথিবী নিজের আবর্তনশীল অক্ষকে (লালরেখা) ঘিরে দৈনিক এক আবর্তন করে (সাদা তীর) আর স্বাাবর্তনী এ অক্ষটি নিজেও মন্থরগতিতে প্রায় ২৬,০০০ বছরে এক ঊর্ধ্ব-নিম্নবৃত্তীয় স্ব আবর্তন (সাদা বৃত্ত) পূর্ণ করে ।
পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষরেখা বলে। এ অক্ষরেখার উত্তর-প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্ব পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির জন্য এ রেখা বৃত্তাকার, তাই এ রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্ব স্থির করা হয়; নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়।অক্ষাংশের ভিন্নতা ও পরিবর্তনের সাথে সাথেই জলবায়ুরও তারতম্য ঘটে। সূর্য কিরণ সারা বছর লম্ব ভাবে পরার কারণে নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে ।এবং মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্য রশ্মি ক্রমশ তির্যক হতে থাকে এবং জলবায়ু শিতল হয়। ফলে নিরক্ষিয় অঞ্চলে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। নিরক্ষরেখা বরাবর স্থানসমূহে সূর্যরশ্মি খাড়াভাবে পড়ে বিধায় ঐসকল অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে। ১ °সে অক্ষাংশে উষ্ণতা 0.২৮ °সে হ্রাস পায় বলেই নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তি উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বরফ রয়েছে।
নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ ০° জ্যামিতির কোণের ন্যায় ।অক্ষাংশের পরিমাপের একককে ডিগ্রী বলে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার অক্ষাংশ ২৩°৪২′০″ উত্তর।
গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে, ডিগ্রী বা পূর্ণ ঘুর্ণনকে সাধারণ একক হিসেবে ব্যবহার করার চেয়ে রেডিয়ানকে সাধারণ একক হিসেবে গণ্য করা হয়। এককসমূহকে নিম্নোক্তভাবে রূপান্তর করা হয়: 1 rev = 360° = 2π rad, ও 1 rad = 180° / π ≈ 57.3°
দিবালোক সংরক্ষণ সময় বা ডেইলাইট সেইভিং টাইম (সংক্ষেপে ডিএসটি) হলো ঘড়ির সময় ১ অথবা ২ ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার একটি রীতি, যাতে ঘড়ির কাটার হিসাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই এক ঘণ্টা পরে ঘটে এবং বিকেলের ভাগে একটু অতিরিক্ত সময় সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত এই রীতিতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তকালে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয় এবং শরতে আবার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তার একটি খামখেয়ালিপূর্ণ প্রবন্ধে প্রথম এই নাটকীয় ব্যবস্থার ধারণা তুলে ধরেন; পরবর্তিতে এই ধারণাটি প্রথম ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ্যের সামনে তুলে ধরেন উইলিয়াম উইলেট নামের একজন ব্রিটিশ নির্মাতা ওয়েস্ট অফ ডেলাইট নামক একটি প্যামপ্লেটে।[১]
প্রয়োগ
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি চালু হয়, ঘড়িকে মধ্য ইউরোপীয় সময় (CET) রাত ২টা থেকে মধ্য ইউরোপীয় গ্রীষ্মকালীন সময় (CEST) রাত ৩টায় এগিয়ে নেয়া হয়।
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি শেষ হলো, ঘড়ির সময়কে রাত ৩টা সিইএসটি থেকে রাত ২টা সিইটি-তে পিছিয়ে নেয়া হয়। অন্যান্য অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে বদলে নেয়।
দিবালোক সংরক্ষণ সময় সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যখন এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় শক্তি উৎপাদনে জ্বালানী খরচ কমানোর জন্য। কোনো কোনো অঞ্চল পরবর্তিতে প্রকৃত সময়ে ফিরে এলেও এখনও অনেক দেশ এই পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে, যাতে পুরো দেশকে “রণ সময়”-এর অধীন করে নেয়া হয়, যাতে পুরো যুদ্ধকালীন সময়টায় দেশের সময়কে একঘণ্টা এগিয়ে নেয়া হয়। এই ধারাবাহিকতায় পদ্ধতিটি যুক্তরাজ্যও অনুসরণ করে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্বাভাবিক সময় থেকে সময়কে আরো এক ঘণ্টা (অর্থাৎ ২ ঘণ্টা) এগিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তিতে শান্তিকালীন সময়ে রণ সময় একটি বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়।[১]
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র, সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ডিএসটি অনুসরণ করে আসছে তাদের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। বিতর্কিত ও ঝামেলাপূর্ণ এই পদ্ধতিটির বিতর্ক অবসানের জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং অধীন রাজ্যগুলোর মধ্যকার ঝামেলা দূর করতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ‘ইউনিফর্ম টাইম এ্যাক্ট’ পাশ করে। এই বিধান অনুসারে সকল অঙ্গরাজ্যের জন্য কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিএসটি অনুসরণ করা হবে। তবে শুধুমাত্র সেই অঞ্চলটি বা রাজ্যটি এর আওতামুক্ত থাকবে, যেখানে রাজ্যটির আইনগত কিংবা রাজনৈতিক পরিচালক তা ব্যবহারে অসম্মতি জানাবেন। যাবতীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দিবালোক সংরক্ষণ সময় শুরু হয় এপ্রিল মাসের প্রথম রবিবার রাত ২টায় এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসের শেষ রবিবার রাত ২টায়।[১]
বাংলাদেশ
২০০৯ সালের ২০ জুন থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ডিএসটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই নিয়ম দেশটিতে জনপ্রিয় হয়নি এবং পরবর্তিতে সরকার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়। ভবিষ্যতে আর কখনও দেশটিতে ডিএসটি প্রবর্তন করা হবে না বলে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিতর্ক
এই পদ্ধতিটি বিতর্কিত, কারণ বিকালের দিকে আলো যোগ করলে কেনাকাটা, খেলাধুলাসহ অন্যান্য যেসকল কাজে আলো বেশি কাজে লাগে সেগুলো লাভবান হলেও কৃষিকাজ, সান্ধ্যকালীন প্রমোদসহ বেশ কিছু কাজের সমস্যা করে। বিশেষ করে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক প্রবর্তিত ‘রণ সময়’-এর চরম বিরোধিতা করেন কৃষকেরা, কারণ তাদের কৃষিকালীন সময় নির্ধারিত হয় সূর্যের হিসাবে, কিন্তু ব্যবসাকালীন সময় নির্ধারিত হয় ডিএসটি ধরে, যা চরম অসুবিধাজনক। রেল, বাস, বিমান ইত্যাদির সময় উল্টাপাল্টা হয়ে পড়ে, কারণ সব দেশে ডিএসটি প্রচলিত নয়।[১] ডিএসটির প্রাথমিক লক্ষ্য সান্ধ্যকালীন আলোর ব্যবহার হ্রাস। ডিএসটির ফলে ঘড়ির সময়ের পরিবর্তন অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে। এর ফলে সময়ের হিসাব জটিল হয়ে পড়ে, সভা, ভ্রমণ, রেকর্ড সংরক্ষণ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ভারি জিনিসপত্র ও ঘুমের ধারার ব্যাঘাত ঘটে। অনেক কম্পিউটার-নির্ভর ব্যবস্থা তাদের ঘড়িগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে নিলেও, এতে ভুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে যখন ডিএসটি বদলে স্বাভাবিক সময়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
যুক্তি
বিতর্ক থাকাসত্ত্বেয় এই পদ্ধতিটির পক্ষে যেসকল যুক্তি পেশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকালের দিকে বেশি সময় আলো থাকলে সড়ক দূর্ঘটনার হার কমে যায়; তবে স্বাস্থ্য ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এর প্রভাব অস্পষ্ট।
১৯৯২ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে সাইক্লোন ফরেস্ট নামে একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়বাংলাদেশের ৬০০,০০০ মানুষকে উচ্ছেদ করে। ৯ নভেম্বর ক্যারোলাইন দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিপর্যস্ত আবহাওয়ার একটি এলাকা থেকে ঘূর্ণিঝড়টির উদ্ভব হয়। ফরেস্টটি তিন দিন পরে দক্ষিণ চীন সাগরের উপরে আসলে একে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। সাধারণভাবে এটি পশ্চিম অনুসরন করে ছোটে, ১৫ নভেম্বর মালয় উপদ্বীপ বরাবর থাইল্যান্ডে আঘাত করার আগে সিস্টেমটি ক্রমাগতভাবে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের মধ্যে সংগঠিত হয় এবং দক্ষিণের ভিয়েতনাম অতিক্রম করে। এবার বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ফরেস্ট ১৭ নভেম্বর উত্তর দিকে মোড় নেয় এবং এর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে তীব্র হয়। এটি ২০ নভেম্বরে ২৩০ কিমি/ঘন্টা (১৪৫ mph) বাতাসের বেগসহ সাফির-সিম্পসন হারিকেন স্কেলে ৪-সমমানের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছে। আকস্মিকভাবে পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে মোড় নেয়ার কারনে, ঘূর্ণিঝড়টি শীঘ্রই প্রতিকূল পরিবেশগত পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। পরের দিন ভোরে অর্থাৎ ২১ নভেম্বর বিলীন হওয়ার আগে ফরেস্ট একটি দুর্বল সিস্টেম হিসেবে উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমাররে স্থলরেখায় আঘাত করে।
২০ নভেম্বরে ফরেস্ট যখন তার সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছে, তখন সারা বাংলাদেশে আশঙ্কা দেখা দেয় যে, ১৯৯১ সালের এপ্রিলে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ফলস্বরূপ, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যার মধ্যে ১০ লক্ষ পর্যন্ত জনসংখ্যা স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, ঝড়টি আকস্মিকভাবে পূর্ব দিকে মোড় নেয় এবং ৬০০,০০০ বাসিন্দাকে সফলভাবে সরিয়ে নেওয়ার ফলে অসংখ্য জীবন রক্ষা পায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সমস্ত বাড়ির প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও শুধুমাত্র দুটি মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয় এবং সামগ্রিক ক্ষতি তুলনামূলক অনেক কম হয়।
অর্থনীতি
জাতীয় আয়
বর্তমান (মার্কিন ডলার)
বর্তমান (টাকা)
জিডিপি (%)
জিডিপি
$৩১.৭ বিলিয়ন
৳১১৯৫.৪ বিলিয়ন
জিডিপি প্রবৃদ্ধি (বার্ষিক %)
৫.৪%
মাথাপিছু জিডিপি
$২৯৩.৬
৳১১,০৭০
কৃষি, মূল্য সংযোজন
$৯.৭ বিলিয়ন
৳৩৬৪.৮ বিলিয়ন
৩০.৫%
শিল্প, মূল্য সংযোজন
$৬.৯ বিলিয়ন
৳২৫৯.৬ বিলিয়ন
২১.৭%
সেবা, ইত্যাদি, মূল্য সংযোজন
$১৪.১ বিলিয়ন
৳৫৩০.৬ বিলিয়ন
৪৪.৪%
পরিশোধের হিসাব
বর্তমান (মার্কিন ডলার)
বর্তমান (টাকা)
জিডিপি (%)
বর্তমান অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স
$১৮০.৮ মিলিয়ন
.৬%
পণ্য ও সেবা আমদানি
$৪,১৪২.৬ মিলিয়ন
৳১৪৭.৬ বিলিয়ন
১২.৩%
পণ্য ও সেবা রপ্তানি
$২,৫৮১.২ মিলিয়ন
৳৯০.৭ বিলিয়ন
৭.৬%
সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ, নিট প্রবাহ
$৩.৭ মিলিয়ন
০.০%
ব্যক্তিগত রেমিটেন্স, প্রাপ্ত
$৯১১.৮ মিলিয়ন
২.৯%
বছরের শেষে মোট জমা (স্বর্ণসহ)
$১,৮৫৩.৫ মিলিয়ন
আমদানির মাসে মোট জমা
৫.২
দ্রষ্টব্য: ১৯৯২ সালের জন্য গড় সরকারি বিনিময় হার ছিল BDT প্রতি US$ ৩৮.৯৫।
২৬ মার্চ – ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ঢাকায় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণ-আদালত নামে পরিচিত মক ট্রায়াল গঠন করে এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ‘দণ্ডাদেশ’ দেয়। [৩]
১০ এপ্রিল – ভারত সীমান্তবর্তী খাগড়াছড়ি জেলার লোগাং গ্রামে লোগাং গণহত্যা সংঘটিত হয়। এই গণহত্যায় বাঙ্গালী বেসামরিক, সীমান্তরক্ষী এবং সেনাবাহিনী জড়িত ছিল। যারা কুড়াল, হ্যাচেট এবং বন্দুক দিয়ে জুম্ম জনগণকে আক্রমণ করে এবং সমস্ত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। [৪] সরকারি তদন্ত পরিষদ ঘোষণা করে যে, মাত্র ১২ জন মারা গেছে, যেখানে বেসরকারী অনুমান অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা [৫] প্রায় ৪০০তে দাঁড়ায়।
৭ ডিসেম্বর – বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে বাঙালি হিন্দুদের বিরুদ্ধে একের পর এক সহিংসতা হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হয়। ঢাকার ভোলানাথ গিরি আশ্রমে হামলা ও লুটপাট করা হয়। [৭] পুরান ঢাকায় হিন্দু মালিকানাধীন জুয়েলারি দোকানে লুট হয়। রায়েরবাজারে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। [৮]
৮ ডিসেম্বর – কক্সবাজার জেলারকুতুবদিয়া উপজেলায় হিন্দুদের উপর হামলা হয়। মুসলমানরা ১৪টি হিন্দু মন্দির আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে আটটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ছয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর মধ্যে আলী আকবর ডেলে ৫১টি হিন্দু বাড়ি এবং চৌফলদন্ডীতে আরো ৩০টি বাড়ি বিদ্যমান। [৯]
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ১৯৯২-৯৩ সার্ক চতুর্ভুজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশেরঢাকায় ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ৪টি দল নিয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ‘এ’ দল এবং স্বাগতিক দেশের পূর্ণাঙ্গ জাতীয় দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। উপমহাদেশে উদ্ভুত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে লিগ পর্যায়ে টুর্নামেন্টটি পরিত্যাগ করতে হয়। সুতরাং, টুর্নামেন্টের কোন বিজয়ী ছিল না।