Tag: Edsger Wybe Dijkstra

  • পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ থলি(Earth’s internal heat pockets)

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ থলি(Earth’s internal heat pockets)

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ থলিEarth’s internal heat pockets পৃথিবীর তাপীয় ইতিহাসের মৌলিক অংশ। অনুমান করা হয় পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে পৃষ্ঠতলের তাপের প্রবাহ ৪৭±২ টেরাওয়াট[১] এবং প্রায় সমান পরিমাণে দুটি প্রধান উৎস থেকে এই তাপ আসে। এর একটি হল ম্যান্টল এবং ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সমস্থানিকগুলির তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দ্বারা উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় উত্তাপ, এবং অপরটি পৃথিবীর গঠনের সময় উৎপন্ন আদ্য তাপ যার কিছু পরিমান এখনো থেকে গেছে।[২]

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ অধিকাংশ ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তি প্রদান করে[৩] এবং ভূত্বকীয় পাত গুলিকে চালনা করে।[২] এর ভূতাত্ত্বিক তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও, আসলে পৃথিবীর মোট তাপ থলির মাত্র ০.০৩% তাপশক্তি পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে ভূপৃষ্ঠে আসে, সেই জায়গায় সৌর বিকিরণ থেকে নির্গত হয় ১৭৩,০০০ টেরাওয়াট তাপশক্তি।[৪] এই সৌর বিকিরণ, প্রতফলনের পরে যা অবশেষে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোয়, প্রতিদিনের চক্রে কেবল কিছু দশক সেন্টিমিটার এবং বার্ষিক চক্রের কিছু দশক মিটার পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলির জন্য সৌর বিকিরণের বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই।[৫]

    Earth’s internal heat pockets

    তাপ-প্রবাহের ঘনত্বের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী তথ্যগুলি সংগ্রহ ও সংকলন করে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সিসমোলজি অ্যান্ড ফিজিক্স অফ দ্য আর্থ’স ইন্টেরিয়র এর আন্তর্জাতিক হিট ফ্লো কমিশন।[৬]

    তাপ এবং পৃথিবীর বয়সের প্রাথমিক অনুমান

    Earth’s internal heat pockets

    পৃথিবীর শীতলীভবনের হারের গণনার উপর ভিত্তি করে (পৃথিবীর অভ্যন্তরে ধ্রুবক পরিবাহিতা অনুমান করে নিয়ে), ১৮৬২ সালে উইলিয়াম থমসন, (পরে লর্ড কেলভিন) পৃথিবীর বয়স অনুমান করেছিলেন ৯৮ মিলিয়ন বছর,[৭] কিন্তু তেজষ্ক্রিয়তা সময় নির্ণয় করে পাওয়া গেছে পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। সুতরাং এই দুটি সময় একেবারেই মেলেনি।[৮] ১৮৯৫ সালে জন পেরি প্রস্তাব করে বলেছিলেন[৯] পৃথিবীর অভ্যন্তরে পরিবর্তনশীল পরিবাহিতা পৃথিবীর গণনা করা বয়সকে কোটি কোটি বছর বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেজষ্ক্রিয়তা সময় নির্ণয় দিয়ে এটি পরে নিশ্চিত করা গিয়েছিল। থমসনের যুক্তির স্বাভাবিক উপস্থাপনার বিপরীতে, তাপের উৎস হিসাবে তেজস্ক্রিয়তাকে যোগ করে পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া পৃথিবীর ভূত্বকের তাপীয় নতি ব্যাখ্যা করা যাবে না। আরও উল্লেখযোগ্যভাবে, পৃথিবীর মধ্যে যে তাপ পরিবাহিত হয় সেটি ম্যান্টল পরিচলন ক্রিয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয়। এই তত্ত্বের ভিত্তিতে থমসনের অনুমান,-শুধুমাত্র পরিবহনের মাধ্যমে শীতলতা- এই যুক্তি অসিদ্ধ হয়ে যায়।

    বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহ

    পৃথিবীর প্রস্থচ্ছেদে দেখা যাচ্ছে এর প্রধান বিভাগ এবং পৃথিবীর মোট অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহে তাদের আনুমানিক অবদান, এবং পৃথিবীর মধ্যে প্রধান তাপ পরিবহন প্রক্রিয়া

    পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠ পর্যন্ত মোট তাপ প্রবাহের আনুমানিক মাপ ৪৩ টেরাওয়াট থেকে ৪৯ টেরাওয়াটের (টেরাওয়াট হল ১০১২ ওয়াট) মধ্যে থাকে।[১০] একটি সাম্প্রতিক অনুমান হল ৪৭ টেরাওয়াট,[১] যেটি গড় ৯১.৬ মিলিওয়াট/মি তাপ প্রবাহের সমতুল্য, এবং ৩৮,০০০ এর বেশি পরিমাপের উপর ভিত্তি করে এটই নির্দিষ্ট হয়েছে। মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় ভূত্বকের তাপ প্রবাহ হল যথাক্রমে ৭০.৯ এবং ১০৫.৪ মিলিওয়াট/মি[১]

    যখন পৃথিবীর মোট অভ্যন্তরীণ তাপের প্রবাহ ভূত্বকে সেভাবে পৌঁছোয় না, পৃথিবীর তাপের দুটি মূল উৎস,- তেজষ্ক্রিয় এবং আদ্য তাপ-এদের আপেক্ষিক অবদান অত্যন্ত অনিশ্চিত। কারণ এগুলি সরাসরি পরিমাপ করা কঠিন। রাসায়নিক এবং ভৌত পরীক্ষা অনুযায়ী এই তাপ অবদানের আনুমানিক পরিসর তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ জনিত উত্তাপ থেকে ১৫–৪১ টেরাওয়াট এবং আদ্য তাপ থেকে ১২–৩০ টেরাওয়াট।[১০]

    Earth’s internal heat pockets

    পৃথিবীর কাঠামো হ’ল বাইরে একটি শক্ত ভূত্বক, যার মধ্যে মহাদেশীয় ভূত্বক হল তুলনামূলকভাবে পুরু এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক হল পাতলা, তবে দুটিই কঠিন। এর নিচে আছে কঠিন কিন্তু বহতা ম্যান্টল, তার নিচে তরল বহির্মজ্জা, এবং শেষে একটি কঠিন অন্তর্মজ্জা। কোনও উপাদানের বহমানতা তার তাপমাত্রার সমানুপাতিক; তাই, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহের অভিব্যক্তি হিসাবে শক্ত ম্যান্টল এখনও তাপমাত্রার ক্রিয়াকলাপে দীর্ঘ সময়ের হিসেবে প্রবাহিত হতে পারে।[২] পৃথিবীর অন্তস্থল থেকে কিভাবে তাপমুক্ত হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ম্যান্টল পরিচলন ঘটে। অধিক উত্তপ্ত ভাসমান ম্যান্টল ওপর দিকে ওঠে এবং তুলনামূলক ভাবে কম উত্তপ্ত ঘনতর ম্যান্টল নিচের দিকে চলে যায়। ম্যান্টলের এই পরিচলন প্রবাহ পৃথিবীর অশ্মমণ্ডল পাতের চলাচলকে নিয়ন্ত্রিত করে। এইভাবে, ভূত্বকীয় পাতের ক্রিয়াকলাপের জন্য নিম্ন ম্যান্টলে তাপের অতিরিক্ত ভাণ্ডারটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিম্ন ম্যান্টলে যে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলি জমা আছে তাদের সমৃদ্ধকরণের সম্ভাব্য উৎস।[১১]

    পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ থলি

    Earth’s internal heat pockets

    পৃথিবীর তাপ পরিবহন ঘটে পরিবহন, ম্যান্টল পরিচলন, জলবাহী সংবহন, এবং আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণের মাধ্যমে।[১২] পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহের যতটা ভূ-পৃষ্ঠে আসে তার ৮০% ম্যান্টল পরিচলনের মাধ্যমে হয়। বাকি তাপের বেশিরভাগই পৃথিবীর ভূত্বকে উদ্ভূত হয়।[১৩] আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাত, ভূমিকম্প এবং পর্বতমালা সৃষ্টির কারণে প্রায় ১% এর মত তাপ আসে।[২] সুতরাং, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপের প্রায় ৯৯% ভূত্বকে পরিবহনের মাধ্যমে ক্ষয় হয়, এবং ম্যান্টল পরিচলন এই তাপ পরিবহনে প্রধান ভূমিকা নেয়। পুরু মহাদেশীয় ভূত্বক থেকে বেশিরভাগ তাপ প্রবাহ অভ্যন্তরীণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণের জন্য হয়; বিপরীতে পাতলা মহাসাগরীয় ভূত্বকে অভ্যন্তরীণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণের তাপ মাত্র ২%।[২] উপরিভাগে অবশিষ্ট তাপ প্রবাহ ম্যান্টল পরিচলনের থেকে ভূত্বকের তলদেশীয় উত্তাপের কারণে হয়। তাপের প্রবাহ শিলার বয়সের সাথে ব্যাস্তানুপাতিকভাবে সম্পর্কিত,[১] মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার নবীনতম শৈল থেকে সর্বোচ্চ তাপ প্রবাহ হয়, এটি দেখা গেছে পৃথিবীর তাপ প্রবাহের বৈশ্বিক মানচিত্র থেকে।[১]

    তেজস্ক্রিয় তাপ

    সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর তেজস্ক্রিয় তাপ প্রবাহ

    পৃথিবীর ম্যান্টল এবং ভূত্বকে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের ফলে পরবর্তী সমস্থানিকের জন্ম হয় এবং জিওনিউট্রিনো ও তাপশক্তি বা তেজস্ক্রিয় তাপ নিসৃত হয়। অন্যান্য তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকের তুলনায় চারটি প্রধান তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক তেজস্ক্রিয় তাপের সিংহভাগের জন্য দায়ী। সেগুলি হল: ইউরেনিয়াম-২৩৮ (২৩৮ইউ), ইউরেনিয়াম-২৩৫ (২৩৫ইউ), থোরিয়াম-২৩২ (২৩২থো), এবং পটাসিয়াম-৪০ (৪০কে)।[১৪] ২০০ কিলোমিটার গভীরতা থেকে শিলা নমুনাপ্রাপ্তির অসম্ভাব্যতার কারণে, পুরো ম্যান্টলে জুড়ে নির্দিষ্টভাবে তেজস্ক্রিয় তাপ নির্ধারণ করা শক্ত,[১৪] যদিও কিছু অনুমান পাওয়া যায়।[১৫] পৃথিবীর মজ্জাংশে, ভূ-রসায়ন অধ্যয়ন ইঙ্গিত দেয় যে ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলির কম ঘনত্বের কারণে তাদের তেজস্ক্রিয় তাপের উল্লেখযোগ্য উৎস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।[১৬] ম্যান্টলে তেজস্ক্রিয় তাপ উৎপাদন বিষয়টি ম্যান্টল পরিচলনের কাঠামোর সাথে যুক্ত। ধারণা করা হয় যে নিম্ন ম্যান্টলের কাঠামোতে উচ্চ ঘনত্বের স্তরযুক্ত তেজস্ক্রিয় তাপ উৎপাদনকারী উপাদান থাকতে পারে, অথবা সমস্ত ম্যান্টল জুড়ে ছোট ছোট তেজস্ক্রিয় পদার্থের ভাণ্ডার থাকতে পারে।[১৭]

    Earth’s internal heat pockets

    সমস্থানিকতাপমুক্তি
    ওয়াট/কিগ্রা সমস্থানিক
    অর্দ্ধায়ু
    বছর
    ম্যান্টলের গড় ঘনত্ব
    কিগ্রা সমস্থানিক/কিগ্রা ম্যান্টল
    তাপমুক্তি
    ওয়াট/কিগ্রা ম্যান্টল
    ২৩২থো২৬.৪×১০−৬১৪.০×১০১২৪×১০−৯৩.২৭×১০−১২
    ২৩৮ইউ৯৪.৬×১০−৬৪.৪৭×১০৩০.৮×১০−৯২.৯১×১০−১২
    ৪০কে২৯.২×১০−৬১.২৫×১০৩৬.৯×১০−৯১.০৮×১০−১২
    ২৩৫ইউ৫৬৯×১০−৬০.৭০৪×১০০.২২×১০−৯০.১২৫×১০−১২

    জিওনিউট্রিনো শনাক্তকারী ২৩৮ইউ এবং ২৩১থো এর ক্ষয় শনাক্ত করতে পারে এবং এইভাবে বর্তমান তেজস্ক্রিয় তাপ থলিতে তাদের অবদান অনুমানের করা যায়, কিন্তু ২৩৫ইউ এবং ৪০কে – এদের শনাক্ত করা যায় না। তবুও, মনে করা হয় ৪০কে এর অবদান ৪ টেরাওয়াট তাপশক্তি।[১৮] তবে সংক্ষিপ্ত অর্ধায়ুর কারণে ২৩৫ইউ এবং ৪০কে এর ক্ষয় প্রথম অবস্থার পৃথিবীতে তেজস্ক্রিয় তাপ প্রবাহে বড় অবদান রেখেছিল। বর্তমানের চেয়ে সেই সময় পৃথিবী অনেক বেশি উত্তপ্ত ছিল।[১১] পৃথিবীর মধ্য থেকে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে মুক্ত জিওনিউট্রিনোর পরিমাপের প্রাথমিক ফলাফল, তেজস্ক্রিয় তাপের একটি প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যা, অনুমান দিয়েছিল যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মোট তাপ উৎসের অর্ধেক হল তেজস্ক্রিয় তাপ[১৮] এবং এটি পূর্ববর্তী অনুমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[১৭]

    আদ্য তাপ

    Earth’s internal heat pockets

    আদ্য তাপ হল পৃথিবী তার আসল গঠন থেকে ক্রমশ শীতল হতে থাকায় যে তাপ হারিয়েছে, এবং এটি এখনও সক্রিয়ভাবে উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় উত্তাপের বিপরীতে। পৃথিবীর মজ্জার তাপ প্রবাহ—মজ্জা ত্যাগ করে তা ওপরে অবস্থিত ম্যান্টলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে—এটি আদ্য তাপের কারণে বলেই মনে করা হয়, এবং অনুমান করা হয় এর পরিমান ৫–১৫ টেরাওয়াট।[১৯] ম্যান্টলের আদ্য তাপ হ্রাসের পরিমানের অনুমান ৭ থেকে ১৫ টেরাওয়াটের মধ্যে। এটি গণনা করা হয় মূল তাপ প্রবাহ এবং পৃষ্ঠের তাপ প্রবাহ থেকে পাওয়া মোট তেজস্ক্রিয় উত্তাপের ব্যবকলন করে।[১০]

  • দক্ষিণ মেরু(south pole)

    দক্ষিণ মেরু(south pole)

    পৃথিবীর দক্ষিণ(south pole) ভাগে অবস্থিত যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থান হল পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু বা ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু(south pole) বা কুমেরু। দক্ষিণ মেরু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দক্ষিণতম বিন্দু। এই স্থান পৃথিবীর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত উত্তর মেরুর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী গবেষণাগার আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র অবস্থিত।

    ভূগোল

    ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু

    পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থানটি হল পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু। এই স্থানের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ৯০° দক্ষিণ। এই স্থানের দ্রাঘিমা অসংজ্ঞাত হওয়ায় একে ০° ধরে নেওয়া হয়। দক্ষিণ মেরুতে সমস্ত দিক উত্তর দিকে নির্দেশ করে। এই কারণে দক্ষিণ মেরুতে মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে দিক নির্ণয় করা হয়। [১]

    south pole

    পূর্বে দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের সমুদ্রে অবস্থান করলেও মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকার এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮৩৫ মিটার বা ৯,৩০১ ফুট ওপরে ২,৭০০ মিটার পুরু বরফে ঢাকা মালভূমিতে অবস্থিত। তাই এই স্থানের ভূপৃষ্ঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মতো উঁচু। এই স্থান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী সমুদ্র ১৩০০ কিলোমিটার দূরে তিমি উপসাগর[২] মেরুর বরফ মূল মধ্যরেখার থেকে ৩৭° থেকে ৪০° পশ্চিমের মধ্যে ওয়েডেল সাগরের দিকে বছরে ১০ মিটার করে প্রবাহিত হচ্ছে। [৩]

    সময়

    south pole

    যেহেতু দক্ষিণ মেরুতে সূর্যোদয়সূর্যাস্ত বছরে একবার হয় এবং পৃথিবীর সকল দ্রাঘিমা রেখা এই বিন্দুতে এসে মিলিত হয়, সেহেতু দক্ষিণ মেরুকে কোন নির্দিষ্ট সময় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কিন্তু প্রায়োগিক ও প্রাত্যাহিক ব্যবহারের জন্য আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড সময়ের সাহায্য নেয়।

    আবহাওয়া

    south pole

    মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।

    দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় −২৫.৯ °সে (−১৫ °ফা)] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে −৪৫ °সে (−৪৯ °ফা) হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা −৫৮ °সে (−৭২ °ফা) থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা −১২.৩ °সে (৯.৯ °ফা)[৪] এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন −৮২.৮ °সে (−১১৭.০ °ফা)[৫][৬][৭] পাওয়া যায়।

    south pole

    দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া শুষ্ক। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত প্রায় কখনোই হয়না বললেই চলে। কিন্তু প্রচন্ড গতিবেগে প্রবাহিত হাওয়ায় তুষারপাত হয় এবং প্রতি বছর ২০ সেমি (৭.৯ ইঞ্চি) হারে তুষার জমা হয়।[৮]

    ২০০৯ সালের দক্ষিণ মেরু-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
    মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
    সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা)−১৪
    (৭)
    −২০
    (−৪)
    −২৬
    (−১৫)
    −২৭
    (−১৭)
    −৩০
    (−২২)
    −৩১
    (−২৪)
    −৩৩
    (−২৭)
    −৩২
    (−২৬)
    −২৯
    (−২০)
    −২৯
    (−২০)
    −১৮
    (০)
    −১২.৩
    (৯.৯)
    −১২.৩
    (৯.৯)
    সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা)−২৫.৯
    (−১৪.৬)
    −৩৮.১
    (−৩৬.৬)
    −৫০.৩
    (−৫৮.৫)
    −৫৪.২
    (−৬৫.৬)
    −৫৩.৯
    (−৬৫.০)
    −৫৪.৪
    (−৬৫.৯)
    −৫৫.৯
    (−৬৮.৬)
    −৫৫.৬
    (−৬৮.১)
    −৫৫.১
    (−৬৭.২)
    −৪৮.৪
    (−৫৫.১)
    −৩৬.৯
    (−৩৪.৪)
    −২৬.৫
    (−১৫.৭)
    −৪৬.৩
    (−৫১.৩)
    সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)−২৯.৪
    (−২০.৯)
    −৪২.৭
    (−৪৪.৯)
    −৫৭.০
    (−৭০.৬)
    −৬১.২
    (−৭৮.২)
    −৬১.৭
    (−৭৯.১)
    −৬১.২
    (−৭৮.২)
    −৬২.৮
    (−৮১.০)
    −৬২.৫
    (−৮০.৫)
    −৬২.৪
    (−৮০.৩)
    −৫৩.৮
    (−৬৪.৮)
    −৪০.৪
    (−৪০.৭)
    −২৯.৩
    (−২০.৭)
    −৫২.০
    (−৬১.৬)
    সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)−৪১
    (−৪২)
    −৫৭
    (−৭১)
    −৭১
    (−৯৬)
    −৭৫
    (−১০৩)
    −৭৮
    (−১০৮)
    −৮২
    (−১১৬)
    −৮০
    (−১১২)
    −৭৭
    (−১০৭)
    −৭৯
    (−১১০)
    −৭১
    (−৯৬)
    −৫৫
    (−৬৭)
    −৩৮
    (−৩৬)
    −৮২.৮
    (−১১৭.০)
    মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড়৫৫৮৪৮০২১৭৬০৪৩৪৬০০৫৮৯২,৯৩৮
    উৎস ১: [৯]
    উৎস ২: [১০]

    south pole

    মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।
    দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় −২৫.৯ °সে (−১৫ °ফা)] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে −৪৫ °সে (−৪৯ °ফা) হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা −৫৮ °সে (−৭২ °ফা) থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা −১২.৩ °সে (৯.৯ °ফা)[৪] এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন −৮২.৮ °সে (−১১৭.০ °ফা)[৫][৬][৭] পাওয়া যায়।

  • চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon)

    চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon)

    চাঁদের উৎপত্তি ও পরিবর্ধন(Origin and growth of the moon) বলতে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের গঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যাকে বুঝানো হয়। এই সম্পর্কিত তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যটি হল জায়ান্ট-ইম্প্যাক্ট তত্ত্ব।[১][২] এটি নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা চলছে এবং একাধিক ভিন্ন অভিমত রয়েছে।[১] অন্যান্য প্রস্তাবিত তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে ফিশন, গঠন একত্রীক্করণ (ঘনীভবন তত্ত্ব), গ্রহাণু তত্ত্ব এবং মহাকাশীয় সংঘর্ষ তত্ত্ব।[৩] আদর্শ দৈত্যাকার সংঘর্ষ তত্ত্বমতে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীকে ঘিরে একটি ডেবরিস বলয়ে তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে চাঁদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। চাঁদের অক্সিজেন আইসোটপিক অনুপাত মূলতঃ পৃথিবীর মতই।[৪] কিন্তু থিইয়া যদি ভিন্ন কোন গ্রহ বা প্রোটোপ্লানেট হত, তবে অবশ্যই এর আইসোটপিক অনুপাত পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন হত।[৫]

    গঠন

    “বিগ মুলে”, চন্দ্র নমুনা ৬১০১৬

    Origin and growth of the moon

    কিছু তত্ত্বে বলা হয় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে, সৌরজগতের গঠনের শুরুর দিকে, পৃথিবী পাথর এবং লাভায় পূর্ণ ছিল এবং পৃথিবীর কোন বড় আকারের চাঁদ ছিল না। মঙ্গল গ্রহাকৃতির আদিম প্রোটোপ্লানেট থিইয়া পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষিত হলে পৃথিবী থেকে একটি অংশ বিচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। মহাশূন্যে ছিটকে পড়া অংশ হারিয়ে গেলেও এরই মাঝে কিছু অংশ আবার পৃথিবীর কক্ষপথে একীভূত হয়ে চাঁদ গঠন করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, চাঁদের উদ্ভব পৃথিবীর বর্তমান আকারের সাথে অন্তত ৯০% সামঞ্জস্য পূর্ণ কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ হলেই সম্ভব।বেশিরভাগ সময়ই সাংঘর্ষিক বস্তুটিকে থিইয়া বলা হয়। গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত চাঁদের দেবী সেলেন এর মা থিইয়া থেকে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, এই সংঘর্ষের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হতে পারে তার পরিমান অত্যন্ত বেশি। এরূপ বিশাল সংঘর্ষে ট্রিলিয়ন টনেরও বেশি বস্তু বাষ্পীভূত এবং গলে যাওয়ার কথা। এমনকি এতে পৃথিবীর কোন কোন অংশের তাপমাত্রা ১০,০০০°C (১৮০০০ °F) এর মত হয়েছিল।

    গ্রহণ

    এই তত্ত্বমতে চাঁদ পৃথিবী কর্তৃক অধিগ্রহিত হয়েছিল।[৬] ১৯৮০-এর আগ অব্দি এই ধারণা বেশ জনপ্রিয় ছিল। চাঁদের আকৃতি, কক্ষপথ এবং জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত ইস্যু এই ধারণাকে সমর্থন করে।[৬] 

    Origin and growth of the moon

    অধিগ্রহণ তত্ত্বের মূল সমস্যা হল,[৬] পৃথিবীর সাথে এরূপ ঘটনা সাধারনত বিস্ফোরণ কিংবা কক্ষপথের বিচ্যুতি ঘটায়। তাই ধারণা করা হয়, আদিম পৃথিবীতে একটি বিশাল বায়ুমন্ডল থাকতে পারে যা সঙ্ঘর্ষকে ধীর গতিতে ঘটতে সাহায্য করে। এই তত্ত্বমতে বৃহস্পতি এবংশনির অনিয়ত উপগ্রহীয় কক্ষপথের কারণও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[৭] তবে দুই জায়গার প্রয়োজনীয় অভিন্ন  অক্সিজেন আইসোটপের অনুপাতের কারণ বিশ্লেষণ করতে এই তত্ত্ব ব্যবহার সুবিধাজনক নয়।[৪]

    পৃথিবী এবং চাঁদের স্কেল, ৫০০ কি.মি প্রতি পিক্সেল

    ফিশন

    বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের পুত্র জর্জ ডারউইন সপ্তদশ শতকের দিকে সর্বপ্রথম ফিশন তত্ত্বের সূচনা করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে ক্রম ঘূর্ণায়মান পৃথিবী থেকে একটি অংশ ছিটকে গিয়ে চন্দ্রের সূচনা করে।[৬] অস্ট্রিয়ান ভূতত্ত্ববিদ অটো এমফারার ১৯২৫ সালে মহাদেশীয় প্রবাহের দরুণ চন্দ্রের সৃষ্টি বলে প্রস্তাবনা দেন।[৮]

    পরিবৃদ্ধি

    Origin and growth of the moon

    পরিবৃদ্ধির তত্ত্বানুসারে পৃথিবী এবং চন্দ্র সৌরজগতের আদিম পরিবৃদ্ধি চাকতিতে একই সাথে গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্ব পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী কৌণিক ভরবেগের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের লৌহ অংশ অপেক্ষাকৃত কম (পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় ৫০ শতাংশ কিন্তু চাঁদের ব্যাসার্ধের মাত্র ২৫%)  কেন তার উত্তরও এই তত্ত্ব দিতে অক্ষম।[৯]গঠন তরান্বিত করে।

    অতিরিক্ত তত্ত্ব এবং গবেষণা

    চন্দ্র বিবর্তন, নাসা ২০১২ এর ভিডিও।[১০]

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

    অপর একটি সম্ভাব্য তত্ত্বে বলা হয় পৃথিবীর চাঁদ শুক্র গ্রহ থেকে এসেছে।

    Origin and growth of the moon

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

    ২০১১ সালে একটি তত্ত্বে বলা হয় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বিতীয় একটি চন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীতে যার সাথে বর্তমান চন্দ্রের একটি সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষ বর্তমান চন্দ্রের গঠন তরান্বিত করে।

  • কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবী(Earth in science fiction)

    কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবী(Earth in science fiction)

    কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবী(Earth in science fiction)কথাসাহিত্যের একটি সুবিশাল অংশের প্রেক্ষাপট বা বিষয়বস্তু হল পৃথিবী। কথাটি কল্পবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সত্য, যদিও সেখানে এর বিপরীত রীতিটিই সহজলক্ষ্য। ক্ষেত্রবিশেষে পৃথিবীর আকৃতির বাস্তববিরুদ্ধ বর্ণনাও (সমতল বা শূন্যগর্ভ পৃথিবী) দেওয়া হয়ে থাকে। অল্পসংখ্যক রচনায় এক মূর্ত ও জীবন্ত পৃথিবীকেও উপস্থাপনা করা হয়েছে। সুদূর ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে রচিত গল্প-উপন্যাসগুলিতে পৃথিবীকে দেখা যায় হয় মহাকাশচারী মানবসভ্যতার একটি কেন্দ্র রূপে অথবা এক ছায়াপথীয় সাম্রাজ্যের অসংখ্য বসবাসযোগ্য গ্রহের একটি হিসেবে, আবার কখনও বা দেখা যায় পৃথিবী বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় বা পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে অথবা অন্য কোনও উপায়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।[২][১]

    সম্পর্কিত শব্দভাণ্ডার

    Earth in science fiction

    আরও দেখুন: পৃথিবী § নাম-ব্যুৎপত্তি, ও মানব প্রজাতিগুলির নামসমূহ

    বহু কল্পবিজ্ঞান রচনায় পৃথিবীর নামটি কম জনপ্রিয়, বরং গ্রহটিকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘পৃথিবী’ শব্দের লাতিন প্রতিশব্দ ‘টেরা’ বা ‘টেলাস’ নামে।[১]:১৩৯[৩] ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার কল্পবিজ্ঞানে পৃথিবীর অধিবাসীরা উল্লিখিত হয়েছে বিভিন্ন নামে। যেমন, আর্থলিংস (Earthlings), আর্থারস (Earthers), আর্থবর্ন (Earthborn), আর্থফোক (Earthfolk), আর্থিয়ানস (Earthians), আর্থিজ (Earthies, এটি প্রায়শই নিন্দাসূচক শব্দ হিসেবে প্রযুক্ত হয়), আর্থমেন ও আর্থউইমেন (Earthmen ও Earthwomen), আর্থপার্সনস (Earthpersons), আর্থসাইডারস (Earthsiders), সোলারিয়ানস (Solarians), টেল্যুরিয়ানস (Tellurians) বা টেরানস (Terrans)।[৪]:৪১, ৪৩–৪৮, ১৯২, ২৩৩–২৩৪, ২৩৭–২৩৮

    সেই সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের শব্দভাণ্ডারে পৃথিবীতে একটি মহাকাশযানের অবতরণ অর্থে পৃথিবীপাতের (Earthfall) মতো শব্দও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; এবং “পৃথিবী গ্রহের বা এই গ্রহের পরিবেশের সদৃশ” ধারণাটি বোঝাতে আর্থ-টাইপ (Earth-type), আর্থলাইক (Earthlike), আর্থনর্ম(অ্যাল) (Earthnorm(al)) ও টেরেস্ট্রিয়াল (terrestrial) শব্দগুলিও ব্যবহৃত হয়েছে।[৪]:৪১, ৪৩–৪৮, ১৯২, ২৩৩–২৩৪, ২৩৭–২৩৮

    কোনও গ্রহের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটিকে পৃথিবী-সদৃশ করে তোলার ধারণাটি পৃথিবীকরণ (ইংরেজিতে terraforming) নামে পরিচিত। পৃথিবীকরণের ধারণাটি বিকশিত হয়েছে কল্পবিজ্ঞান ও বাস্তব বিজ্ঞান উভয় ধারাতেই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগান শুক্র গ্রহের পৃথিবীকরণের প্রস্তাব দেন। এটিকে এই ধারণার প্রথম বিবরণগুলির অন্যতম মনে করা হয়।[৫] ‘টেরাফর্মিং’ শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন জ্যাক উইলিয়ামসন ১৯৪২ সালে অ্যাস্টাউন্ডিং সায়েন্স ফিকশন পত্রিকায় প্রকাশিত কল্পবিজ্ঞান ছোটোগল্প “কলিশন অরবিট“-এ।[৬][৭][৪]:২৩৫[৮] যদিও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পৃথিবীকরণের ধারণাটি তার আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ অক্টেভ বেলিয়ার্ডের “একবিংশ শতাব্দীতে এক প্যারিসবাসীর এক দিন” বইটির নাম করা যায়। এই বইটিতে চাঁদের পরিবেশ বাসযোগ্য করে তোলার ধারণাটি উল্লিখিত হয়েছিল।[৯] প্রকৃতপক্ষে সম্ভবত পৃথিবীকরণের ধারণাটিরও আগে উদ্ভাবিত হয়েছিল জেনোফর্মিং-এর ধারণাটি – অর্থাৎ এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীকে নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে তাদের বাসযোগ্য করে তোলে। এইচ. জি. ওয়েলসের ধ্রুপদি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস-এ (১৮৯৮) এর একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১০]

    বিষয়বস্তু

    Earth in science fiction

    সাধারণভাবে বলতে গেলে কল্পবিজ্ঞান সহ কথাসাহিত্যের একটি সুবৃহৎ অংশের প্রেক্ষাপট পৃথিবী।[২]:২২৬, ২২৮ পৃথিবী যেখানে শুধুমাত্র কাহিনির অবশ্যম্ভাবী প্রেক্ষাপট বলেই উপেক্ষণীয় নয়, সেখানে বেশ কয়েকটি বিষয়বস্তুকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[১]:১৩৭

    পৃথিবী

    Earth in science fiction

    কল্পবিজ্ঞানের অনেক গল্প-উপন্যাসেরই প্রেক্ষাপট বহিঃস্থ মহাকাশ, আবার অনেক কাহিনিরই ঘটনাস্থল পৃথিবী; এই পার্থক্য কল্পবিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে বিতর্কের একটি বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬২ সালে জে. জি. ব্যালার্ডের লেখা হুইচ ওয়ে টু ইনার স্পেস? প্রবন্ধটির নাম করা যায়। “বহিঃস্থ মহাকাশ অভিযান”-এর কয়েকজন সমালোচক “পার্থিব” ধারণাগুলি ও সমসাময়িক পাঠকদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার নিকটবর্তী চিত্রকল্পের গুরুত্বটিকে নির্দেশ করেন।[২]:২২৮[১১] যদিও এটা মনে করা হয় যে “কথাসাহিত্যে [একটি গ্রহের] নিজ অধিকারে স্বচ্ছন্দে বিষয়বস্তু হওয়ার ক্ষেত্রে তা বেশিই বড়ো এবং সেটির জীবনকাল অতি দীর্ঘ”, তবুও অনেক লেখকই এই বিষয়টি নিয়ে কাহিনি রচনায় আগ্রহী হন।[ক][১]:১৩৮[১২] কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসে পৃথিবীকে দেখানো হয়েছে গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত, যুক্তিগোলকওমেগা বিন্দুর মতো সম্পূর্ণতাবাদী ‘বৃহৎ চিত্র’ ধারণার দ্বারা প্রভাবিত এবং মহাকাশ থেকে পৃথিবীর আলোকচিত্র গ্রহণের ফলে জনপ্রিয়তা প্রাপ্ত একটি সত্ত্বা হিসেবে।[১]:১৩৮ অন্যান্য রচনায় পৃথিবীর ধারণাটিকে দেখা হয়েছে দেবী গাইয়া হিসেবে[খ] (গ্রিক পুরাণ থেকে গৃহীত ধারণা; কল্পবিজ্ঞানে আরেক গুরুত্বপূর্ণ যে ভূদেবীর নাম বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছেন তিনি হলেন রোমান দেবী টেরা বা টেলাস[৪]:৪১)। এই ধারণাগুলিকে জুড়ে কয়েকটি রচনায় পৃথিবীকে একটি প্রায়-জৈব এবং চেতন সত্ত্বা রূপেও দেখানো হয়েছে। এই ধরনের রচনার ধ্রুপদি উদাহরণ হল আর্থার কোনান ডয়েলের হোয়েন দ্য ওয়ার্ল্ড স্ক্রিমড (১৯২৮) ও জ্যাক উইলিয়ামসনের বর্ন অফ দ্য সান (১৯৩৪)।[২]:২২৭

    আকৃতি

    ‘অভ্যন্তরীণ জগতে’র মানচিত্র, উইলিয়াম ব্র্যাডশরদ্য গডেস অফ অ্যাটভাটাবার (১৮৯২) থেকে

    খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দ নাগাদই আর্কিমিডিসএরাতোস্থেনেস কর্তৃক পৃথিবীর গোলকাকার প্রমাণিত হয়েছিল। তাই আধুনিক সাহিত্যে পৃথিবীকে সমতল হিসেবে প্রদর্শন প্রায় করা হয় না বললেই চলে। তবে এই ধারার ব্যতিক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে টেরি প্রেচেটের ডিস্কওয়ার্ল্ড নামক প্রহসনমূলক ধারাবাহিকটি (যা অনুপ্রাণিত হয়েছে হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বের ধারণা থেকে) এবং এস. ফাওলার রাইটের উপন্যাস বিয়ন্ড দ্য রিম (১৯৩২) প্রভৃতি ইচ্ছাকৃতভাবে প্ররোচক রচনা।[১]:১৩৭–১৩৮[২]:২২৬ এছাড়াও রয়েছে শূন্যগর্ভ পৃথিবীর কাল্পনিক বিবরণ। উদাহরণস্বরূপ এডগার অ্যালান পোর দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পিম অফ ন্যানটাকেট (১৮৩৮) উপন্যাসটির নাম করা যায়। এটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল জন ক্লিভেস সিমেস জুনিয়ারের মডেলটির দ্বারা, যে মডেলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে খোলা জায়গার দেখানো হয়েছিল।[১]:১৩৭ অল্প কয়েকজন লেখক আবার অপর এক পুরনো প্রান্তিক তত্ত্ব প্রতি-পৃথিবীর ধারণাটিকে নিজেদের রচনায় তুলে এনেছিলেন। এই প্রতি-পৃথিবী হল সৌরজগৎের একটি প্রকল্পিত বস্তু, যা একই কক্ষপথে পৃথিবীর বিপরীত দিক থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।[গ][২]:২২৭

    গ্রহীয় প্রযুক্তিবিদ্যা

    Earth in science fiction

    বৃহৎ পরিসরে গ্রহীয় প্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাগুলির মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর আক্ষিক আনতির সমন্বয়সাধন[ঘ] বা কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর অপসারণ[ঙ][১]:১৩৮–১৩৯ কয়েকটি রচনায় ভূপ্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাটি উঠে এসেছে। এই শব্দটির মাধ্যমে সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত সমস্যাগুলির সমাধানে বৃহৎ পরিসরে গৃহীত প্রকল্পগুলিকে বোঝায়। উল্লেখ্য, ভূপ্রযুক্তিবিদ্যার বিষয়টি জলবায়ু কথাসাহিত্যের অনেক রচনায় উল্লিখিত একটি বিষয়।[১৪] চরম ক্ষেত্রে পৃথিবীকে সম্পূর্ণভাবে অপচয়িত হতে এবং এটির সমগ্র ভর ডাইসন গোলকের মতো অতিনির্মাণ গঠনে পুনঃব্যবহৃত হতে দেখা যায়।[চ][২]:২২৭

    পৃথিবীর পরিসমাপ্তি

    সায়েন্স ফিকশন কোয়ার্টারলি পত্রিকার গ্রীষ্ম ১৯৪০ সংখ্যার প্রচ্ছদে পৃথিবী ধ্বংসের ছবি।

    পৃথিবীর ভবিষ্যতের বিভিন্ন রূপ কল্পিত হয়েছে। কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসের উপজীব্য এই গ্রহটির পরিসমাপ্তির কাহিনি; এগুলি সকল আকারেই লিখিত হয়েছে – কয়েকটি কেন্দ্রীভূত হয়েছে ‘জাঁকালো শোকপালনে’র উপর; [ছ] অন্যগুলি অনেকটা স্ল্যাপস্টিক কমেডির অনুরূপ;[জ] আবার কোনও কোনও রচনায় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের বিষয়গুলিকে পর্যালোচনার একটি সুযোগ হিসেবে পৃথিবীর পরিসমাপ্তির বিবরণকে গ্রহণ করা হয়েছে।[ঝ][১৫][১]:১৩৯ জলবায়ু কথাসাহিত্যের বর্গটিতে প্রায়শই নিকট ও সুদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলগুলিকে বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে আনা হয়, এই ফলাফল অ্যানথ্রোপোজেনিক হতে পারে,[ঞ] বা বিপর্যয়মূলকও হতে পারে।[ট][১৪][২]:২২৭ অন্যান্য রচনায় (প্রায়শই প্রলয় ও প্রলয়োত্তর কথাসাহিত্যমুমূর্ষু পৃথিবী বর্গে) দেখা যায়, পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে অথবা অন্ততপক্ষে ভাবী প্রজন্মগুলির জন্য গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে; এই ধরনের বহু রচনারই প্রেক্ষাপট তাই পতিত জমিতে পরিণত হওয়া এক পৃথিবী।[ঠ] এই সকল বর্গের কোনও কোনোও রচনায় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তুও মিশে যায়, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার পরিণামে উদ্ভূত পরিবেশগত বিপর্যয়কে সাধারণভাবে মানব সভ্যতার ধ্বংসের এক সূচক হিসেবে গ্রহণ করা হয় (অন্যান্য কাহিনিতে দেখা যায় যে পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষের যুদ্ধবিগ্রহ, ভিনগ্রহীদের আক্রমণ,[ড] বা অন্য কোনও রকম মানব-সৃষ্ট কারণ[ঢ] বা আকস্মিক বিপর্যয়ের ফলে)।[১৪][১৭][১৮][২]:২২৭–২২৮ বিপর্যয়ের সময়টি অথবা বিপর্যয়োত্তরকালের প্রেক্ষাপটে রচিত এমন অনেক রচনাই পরিবেশ-সংক্রান্ত উদ্বেগগুলির রূপক, বা অন্য ক্ষেত্রে লেখকেরা মানবজাতির যে বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন সেগুলি সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছেন।[২]:২২৭[১৮]

    অনেক গ্রহের মধ্যে একটি

    Earth in science fiction

    সুদূর ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে রচিত অনেক রচনায় পৃথিবী একটি ছায়াপথী সাম্রাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা বৃহত্তর সভ্যতার অনেকগুলি জনবসতিপূর্ণ গ্রহের একটি মাত্র। পৃথিবীর সাতন্ত্র্যের ধারণাটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়ে অনুরূপ অনেক গ্রহই পাওয়া যায় বা সৃষ্ট হয় এই সব রচনায় (যা স্পেস অপেরার একটি সাধারণ বিষয়)।[ণ][১]:১৩৯ কোনও কোনও গল্প-উপন্যাসে পৃথিবীকে জ্ঞাত মহাবিশ্বের একটি কেন্দ্র, অথবা অন্ততপক্ষে ছায়াপথের প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে দেখানো হয়।[ত][২]:২২৭ অন্যান্য ক্ষেত্রে, প্রধানত বিস্মৃত একটি সেকেলে জগৎ হিসেবে পৃথিবীর গুরুত্ব খুবই কম।[থ][১]:১৩৯[২]:২২৭[১৯] ক্লিফোর্ড ডি. সিমাকের সেমেটারি ওয়ার্ল্ড (১৯৭৩) উপন্যাসে পৃথিবী হল গ্রহ-আকারের একটি কবরখানা এবং গর্ডন আর. ডিকসনের কল হিম লর্ড (১৯৬৬) উপন্যাসে পৃথিবী একটি জাদুঘর।[২]:২২৭ চরম ক্ষেত্রে, কোনও কোনও রচনায় দেখা যায় যে পৃথিবী সাধারণভাবে একটি হারানো জগৎ, যার ফলে তা পরিণত হয়েছে একটি পৌরাণিক স্থানে এবং যে অল্প কয়েকজন পৃথিবীর কিংবদন্তির কথা জানে তারাও এটির বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে।[দ] এই ধরনের কোনও কোনও রচনার একটি প্রধান বিষয়বস্তু হল ভবিষ্যতের সভ্যতা বা অসমসাহসী অভিযাত্রীর দলের ‘হারানো আঁতুরঘর’ বা পৃথিবী অনুসন্ধান।[ধ] শেষত, কোনও কোনও গল্প লেখা হয়েছে পৃথিবী আবিষ্কারকারী ভিনগ্রহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে।[ন][২]:২২৮[২২]

    এক ভিন্ন ইতিহাস

    কোনও কোনও রচনায় পৃথিবীর ভবিষ্যতের পরিবর্তে অতীতকে ফিরে অথবা সম্ভবত পাশ দিয়ে দেখা হয়। এখানে কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের এবং সেই সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক কথাসাহিত্যের উপাদান মিশে যায়। এটি হয় নির্দিষ্টভাবে বিকল্প ইতিহাস বর্গটির মাধ্যমে, [প] এবং সেই সঙ্গে সময় ভ্রমণের মাধ্যমেও (যেমন গ্যারি ওয়েস্টফালের মতে, অধিকাংশ সময় ভ্রমণকারীই মহাকাশের পরিবর্তে অনেক বেশি পরিমাণে সময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এবং পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতে উপনীত হয়)।[২]:২২৬

    আরও দেখুন

    পাদটীকা

    Earth in science fiction

    উদাহরণস্বরূপ ক্যামিলে ফ্ল্যামারিয়নেরলুমেন (১৮৮৭), ডেভিড ব্রিনেরআর্থ (১৯৯০) বা টেরি প্র্যাচেট, ইয়ান স্টিউয়ার্টজ্যাক কোহেনেরদ্য সায়েন্স অফ ডিস্কওয়ার্ল্ড (১৯৯৯) বইগুলির নাম করা যায়।[১]:১৩৮[১২] যেমন অন্যান্য উদাহরণের সঙ্গে ১৯৯০ সালের কার্টুন ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ারস[২]:২২৭ উদাহরণস্বরূপ জন নর্ম্যানেরটার্নসম্যান অফ গোর (১৯৬৬) উপন্যাসটির নাম করা যায়।[২]:২২৭ উদাহরণ, ন্যাট শ্যাশনারেরআর্থস্পিন (১৯৩৭)[১]:১৩৮–১৩৯ উদাহরণ, হোমার এয়ন ফ্লিন্টেরদ্য প্ল্যানেটার (১৯১৮), নেইল বেলেরদ্য সেভেনথ বাওল (১৯৩০), এডমন্ড হ্যামিলটনেরথান্ডারিং ওয়ার্ল্ডস (১৯৩৪), ফ্রিৎজ লেইবারেরআ পেইল অফ এয়ার (১৯৫১), ফ্রেডেরিক পোলসি. এম. কর্নব্লাথেরউলফবেন (১৯৫৭), রজার ম্যাকব্রাইড অ্যালেনের দ্য রিং অফ ক্যারন (১৯৯০)[১]:১৩৮–১৩৯লিউ সিজিনের দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ (২০০০)। শেষোক্ত উপন্যাসটি অবলম্বনে ২০১৯ সালে একটি জনপ্রিয় চীনা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।[১৩] উদাহরণ, কার্ল টি. ফ্লোকেরকনজার্ভেশন অফ মাস (১৯৮২)[২]:২২৭জর্জ সি. ওয়ালিসেরদ্য লাস্ট ডেজ অফ আর্থ (১৯০১), এডমন্ড হ্যামিলটনের রিকুইয়েম (১৯৬২)[১৫][১]:১৩৯ডগলাস অ্যাডামেরদ্য রেস্তোরাঁ অ্যাট দি এন্ড অফ দ্য ইউনিভার্স (১৯৮০)[১৫][১]:১৩৯ফ্র্যাংক বেকন্যাপ লং-এর দ্য ব্লু আর্থম্যান (১৯৩৫) বা ব্রায়ান ডব্লিউ. অলডিসেরহটহাউস (১৯৬২) [১৫][১]:১৩৯ যেমন, জর্জ টার্নারেরদ্য সি অ্যান্ড সামার (১৯৮৭), জন বার্নেসেরমাদার অফ স্টর্মস (১৯৯৪), কিম স্ট্যানলি রবিনসনেরসায়েন্স ইন দ্য ক্যাপিটল ধারাবাহিক, যার প্রথম উপন্যাস ফর্টি সাইনস অফ রেইন (২০০৪)।[১৪] যেমন, ফ্রেড হয়েলেরদ্য ব্ল্যাক ক্লাউড (১৯৫৭), ফিলিপ জোস ফার্মারেরফ্লেশ (১৯৬০), ভ্যাল গেস্টেরদ্য ডে দি আর্থ কট ফায়ার (১৯৬১), জন ক্রিস্টোফারেরদ্য ওয়ার্ল্ড ইন উইন্টার (১৯৬২) ও জে. জি. ব্যালার্ডেরদ্য ড্রওনড ওয়ার্ল্ড (১৯৬২)।[১৫][১৪] যেমন, কেভিন রেনল্ডসেরওয়াটারওয়ার্ল্ড (১৯৯৫)[২]:২২৭ যেমন, কারেল ক্যাপেকেরওয়ার উইথ দ্য নিউটস (১৯৩৬); ডগলাস অ্যাডামসের দ্য হিচহাইকার’স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি (১৯৭৮) বা ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র টাইটান এ.ই.[২]:.২২৭–২২৮ যেমন, পিয়েরস অ্যান্টনিররিংস অফ আইস (১৯৭৪),[২]:২২৭–২২৮হাজিমে ইয়াতাতেরকাউবয় বেবপ (১৯৯৮)।[১৬]জেমস ব্লিশেরআর্থম্যান, কাম হোম (১৯৫৩) [১]:১৩৯ যেমন, জিন রডেনবেরিরস্টার ট্রেক (১৯৬৫); আরও দেখুন: টেরান ফেডারেশন[২]:২২৭ যেমন, পল আন্ডারসনেরদ্য চ্যাপ্টার এন্ডস (১৯৫৪),[১]:১৩৯[২]:২২৭ বা ইয়োশিকি তানাকারলেজেন্ড অফ দ্য গ্যালাক্টিক হিরোজ (১৯৮২) [১৯] যেমন, আইজ্যাক অ্যাসিমোভেরফাউন্ডেশন ধারাবাহিক (১৯৪২)[১]:১৩৯ যেমন, ই. সি. টাবেরডুমারেস্ট সাগা (১৯৬৭),[১]:১৩৯কেইকো তাকেমিয়ারটুওয়ার্ড দ্য টেরা (১৯৭৭)[২০]গ্লেন এ. লারসেনেরব্যাটেলস্টার গ্যালাক্টিকা (১৯৭৮)[২১] এডমন্ড হ্যামিলটনের দ্য ডেড প্ল্যানেট (১৯৪৬); হাল ক্লিমেন্টেরআইসওয়ার্ল্ড (১৯৫৩),[২]:২২৮আইয়ান এম. ব্যাংকসেরদ্য স্টেট অফ দি আর্ট (১৯৯১)[২২] যেমন, টেরি প্রেচেট ও স্টিফেন ব্যাক্সটারেরলং আর্থ ধারাবাহিক[২৩]

  • ওজোনস্তর ক্ষয়(Ozone depletion)

    ওজোনস্তর ক্ষয়(Ozone depletion)

    ওজোনস্তর ক্ষয় (Ozone depletion)দুটি স্বতন্ত্র কিন্তু সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ১৯৭০ এর দশক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোনস্তর আয়তনে প্রতি দশকে ৪% হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই ঘটছে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের স্ট্রাটোমণ্ডল মন্ডলে। এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি ওজোনস্তর ছিদ্র বলা হয়ে থাকে।

    এই ঘটনাটি ওজোনস্তরের ওজোন অণুর হ্যালোজেন দ্বারা প্রভাবকীয় ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে।[১] এই হ্যালোজেন অণুর মূল উৎস হল মানবসৃষ্ট হ্যালোকার্বণ হিমায়ন পদার্থের সালোক বিভাজন। যেমনঃ ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, ফ্রেয়ন, হ্যালোয়াঅ্যালকেন ইত্যাদি। ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গমনের পর এই সকল যৌগ স্ট্র্যাটোমণ্ডলে গিয়ে পৌছে।[২] এই ঘটনাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে হ্যালোজেন যৌগের বৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। CFC (ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস) এবং অন্যান্য ক্ষয়কারী অন্যান্য যৌগসমূহকে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী যৌগ (‘ODS) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওজোনস্তর ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি যেমন UVB তরঙ্গ (২৮০–৩১৫ nm) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। পরিলক্ষিত ওজোনক্ষয় বিশ্বে ব্যপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যার ফলে মন্ট্রিয়াল চুক্তি গৃহীত হয়েছে, যার ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস, হ্যালোজেন এবং অন্যান্য ওজোনস্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    Ozone depletion

    বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের ফলে যে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে তা ত্বকের ক্যানসার, ছানি,[৩] উদ্ভিদজগতের ক্ষতি, প্ল্যাঙ্কটন হ্রাস, সমুদ্রের জীবের হ্রাস ইত্যাদির সমস্যার কারণ হতে পারে।

    ওজোনস্তর ক্ষয় (Ozone depletion)দুটি স্বতন্ত্র কিন্তু সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ১৯৭০ এর দশক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোনস্তর আয়তনে প্রতি দশকে ৪% হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই ঘটছে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের স্ট্রাটোমণ্ডল মন্ডলে। এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি ওজোনস্তর ছিদ্র বলা হয়ে থাকে।

    Ozone depletion

    এই ঘটনাটি ওজোনস্তরের ওজোন অণুর হ্যালোজেন দ্বারা প্রভাবকীয় ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে।[১] এই হ্যালোজেন অণুর মূল উৎস হল মানবসৃষ্ট হ্যালোকার্বণ হিমায়ন পদার্থের সালোক বিভাজন। যেমনঃ ক্লোরোফ্লুরোকার্বনফ্রেয়নহ্যালোয়াঅ্যালকেন ইত্যাদি। ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গমনের পর এই সকল যৌগ স্ট্র্যাটোমণ্ডলে গিয়ে পৌছে।[২] এই ঘটনাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে হ্যালোজেন যৌগের বৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। CFC (ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস) এবং অন্যান্য ক্ষয়কারী অন্যান্য যৌগসমূহকে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী যৌগ (‘ODS) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওজোনস্তর ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি যেমন UVB তরঙ্গ (২৮০–৩১৫ nm) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। পরিলক্ষিত ওজোনক্ষয় বিশ্বে ব্যপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যার ফলে মন্ট্রিয়াল চুক্তি গৃহীত হয়েছে, যার ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস, হ্যালোজেন এবং অন্যান্য ওজোনস্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের ফলে যে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে তা ত্বকের ক্যানসারছানি,[৩] উদ্ভিদজগতের ক্ষতি, প্ল্যাঙ্কটন হ্রাস, সমুদ্রের জীবের হ্রাস ইত্যাদির সমস্যার কারণ হতে পারে।

    ওজোনস্তর ক্ষয়(Ozone depletion) দুটি স্বতন্ত্র কিন্তু সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ১৯৭০ এর দশক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোনস্তর আয়তনে প্রতি দশকে ৪% হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই ঘটছে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের স্ট্রাটোমণ্ডল মন্ডলে। এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি ওজোনস্তর ছিদ্র বলা হয়ে থাকে।

    Ozone depletion

    এই ঘটনাটি ওজোনস্তরের ওজোন অণুর হ্যালোজেন দ্বারা প্রভাবকীয় ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে।[১] এই হ্যালোজেন অণুর মূল উৎস হল মানবসৃষ্ট হ্যালোকার্বণ হিমায়ন পদার্থের সালোক বিভাজন। যেমনঃ ক্লোরোফ্লুরোকার্বনফ্রেয়নহ্যালোয়াঅ্যালকেন ইত্যাদি। ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গমনের পর এই সকল যৌগ স্ট্র্যাটোমণ্ডলে গিয়ে পৌছে।[২] এই ঘটনাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে হ্যালোজেন যৌগের বৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। CFC (ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস) এবং অন্যান্য ক্ষয়কারী অন্যান্য যৌগসমূহকে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী যৌগ (‘ODS) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওজোনস্তর ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি যেমন UVB তরঙ্গ (২৮০–৩১৫ nm) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। পরিলক্ষিত ওজোনক্ষয় বিশ্বে ব্যপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যার ফলে মন্ট্রিয়াল চুক্তি গৃহীত হয়েছে, যার ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস, হ্যালোজেন এবং অন্যান্য ওজোনস্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের ফলে যে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে তা ত্বকের ক্যানসারছানি,[৩] উদ্ভিদজগতের ক্ষতি, প্ল্যাঙ্কটন হ্রাস, সমুদ্রের জীবের হ্রাস ইত্যাদির সমস্যার কারণ হতে পারে।

    ওজোনস্তর ক্ষয়(Ozone depletion) দুটি স্বতন্ত্র কিন্তু সম্পর্কযুক্ত ঘটনা যা ১৯৭০ এর দশক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোনস্তর আয়তনে প্রতি দশকে ৪% হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই ঘটছে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের স্ট্রাটোমণ্ডল মন্ডলে। এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি ওজোনস্তর ছিদ্র বলা হয়ে থাকে।

    Ozone depletion

    এই ঘটনাটি ওজোনস্তরের ওজোন অণুর হ্যালোজেন দ্বারা প্রভাবকীয় ক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে।[১] এই হ্যালোজেন অণুর মূল উৎস হল মানবসৃষ্ট হ্যালোকার্বণ হিমায়ন পদার্থের সালোক বিভাজন। যেমনঃ ক্লোরোফ্লুরোকার্বনফ্রেয়নহ্যালোয়াঅ্যালকেন ইত্যাদি। ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গমনের পর এই সকল যৌগ স্ট্র্যাটোমণ্ডলে গিয়ে পৌছে।[২] এই ঘটনাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে হ্যালোজেন যৌগের বৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। CFC (ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস) এবং অন্যান্য ক্ষয়কারী অন্যান্য যৌগসমূহকে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী যৌগ (‘ODS) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওজোনস্তর ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি যেমন UVB তরঙ্গ (২৮০–৩১৫ nm) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। পরিলক্ষিত ওজোনক্ষয় বিশ্বে ব্যপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যার ফলে মন্ট্রিয়াল চুক্তি গৃহীত হয়েছে, যার ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনস, হ্যালোজেন এবং অন্যান্য ওজোনস্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের ফলে যে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে তা ত্বকের ক্যানসারছানি,[৩] উদ্ভিদজগতের ক্ষতি, প্ল্যাঙ্কটন হ্রাস, সমুদ্রের জীবের হ্রাস ইত্যাদির সমস্যার কারণ হতে পারে।

  • দ্রুজ(Druze)

    দ্রুজ(Druze)

    দ্রুজ (Druze), দারজি বা দুরজি, বহুবচন: دروز, দুরুজ; হিব্রু: דרוזים, “দ্রুজিম”) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম ও সামাজিক সম্প্রদায়।[৭] দ্রুজদের মূল আবাসভূমি সিরিয়ালেবাননইসরাইলজর্দানে দ্রুজ ধর্মকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কারণ এই ধর্মের ভিত্তিমূল মূলত ইসলাম। দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজদের ধর্ম বিধানে ইব্রাহিমীর ধর্মসমূহের পাশাপাশি নিওপ্লাতিনিক ও পিথাগোরীয় মতবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্রুজগণ নিজেদেরকে “আহলে তাওহীদ” (একেশ্ববাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ) বা “আল-মুয়াহিদুন” বলে পরিচয় দেয়। ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে লেবাননের ইতিহাস গঠনে দ্রুজদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজদের সামাজিক রীতিনীতি মুসলিম, ইহুদিখ্রিস্টানদের থেকে ভিন্ন।

    অবস্থান

    Druze

    দ্রুজ অনুসারীগণ প্রধানত সিরিয়া, লেবানন, জর্দান এবং ইসরাইলে বসবাস করে।[৮][৯] ‘‘ইনস্টিটিউট অফ দ্রুজ’’ এর গবেষণা থেকে জানা যায় ৫০-৫৫% দ্রুজ সিরিয়ায়, ৪০% লেবাননে, ৬-৭% ইসরাইলে এবং ১-২% জর্দানে বাস করে।[৮][১০]

    মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুজ অনুসারীগণ উল্লেখযোগ্য হারে বাস করে। দ্রুজগণ আরবিতে কথা বলে ও প্রাচ্যীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করেন।[১১] পৃথিবীতে দ্রুজ অনুসারীগণের সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি।[১২]

    ইতিহাস

    Druze

    নামের উৎস

    দ্রুজ অনুসারীগণ বিশ্বাস করেন আল হাকিম বি আমর আল্লাহ হচ্ছে ঈশ্বর প্রেরিত দূত

    দ্রুজ নামটি এসেছে মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল নাশতাকিন আদ-দারাজীর নাম থেকে। দারাজী শব্দটি ফারসি। আদ-দারাজী ছিলেন প্রাক দ্রুজ যুগের একজন সাধু ও প্রচারক। দ্রুজগণ আদ-দারাজীকে ধর্মগুরু মানে এবং নিজেদেরকে দ্রুজ বলে পরিচয় দেয়।[১৩]

    প্রথম দিকে আদ-দারাজী গোপনে তাঁর মতবাদ প্রচার করতেন। তিনি প্রচার করতেন সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে বিরাজ করেন। বিশেষ করে আলী ইবনে আবি তালিব ও তার বংশধরদের মাঝে। তৎকালীন খলিফা আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহর মাঝেও সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে প্রচার করেন। আদ-দারাজী নিজেকে ‘বিশ্বাসের তরবারি’ ঘোষণা করেন।

    ১০১৬ সালে আদ-দারাজী ও তাঁর অনুসারীগণ প্রকাশ্যে তাদের বিশ্বাস প্রচার করতে শুরু করেন এবং জনসাধারণকে তাদের এই ধর্মমত গ্রহণের ডাক দেন। কায়রোতে তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু হয়। এই কারণে প্রায় বছরখানেক আদ-দারাজীর কার্যক্রম বন্ধ থাকে।[১৪]

    ১০১৮ সালে আদ-দারাজী আততায়ীর হাতে নিহত হন। কোনো কোনো উৎস দাবী করে যে তিনি আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহর হাতে নিহত হন।[১৩][১৫]

    আবার কারও কারও মতে দ্রুজ শব্দটি এসেছে আরবী দারেশাহ (যিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন) থেকে।[১৬] একমাত্র আরব ঐতিহাসিক খ্রিস্টান মনীষী ‘এন্তিওখ এর ইয়াহিয়া’ খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে স্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করে গেছেন দ্রুজ সম্প্রদায় আদ-দারাজীর হাতেই তৈরি হয়েছে।[১৭] একজন ইহুদি ভ্রমনকারী বেঞ্জামিন টুডেলা প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ১১৬৫ সালে লেবানন অথবা এর আশপাশ অতিক্রম করার সময় দ্রুজদের দেখা পান। তিনি দ্রুজদের দগজিইন নামে সম্বোধন করেন। তিনি বর্ণনা করেন দ্রুজরা পাহাড়চারী একেশ্বরবাদী জাতি, যারা পরমাত্মায় বিশ্বাস করে।[১৮]

    প্রাক-ইতিহাস

    Druze

    দ্রুজ বিশ্বাস শিয়া ইসমাইলি মতবাদের সংস্পর্ষে এসে একটি ধর্মীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। শিয়া ইসমাইলি মতবাদ গ্রিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত এবং সেই সময়ের অনেক ধর্মীয় এবং দার্শনিক মতের বিরোধিতা করতো। ইসমাইলি মতের একজন সমর্থক হামজা ইবনে-আলী ইবনে-আহমাদ এই বিশ্বাস প্রচার শুরু করেন। তিনি ১০১৪ সালে ইউরোপে আসেন এবং আল-হাকিম মসজিদের নিকটবর্তী রিদান মসজিদে তিনি মনীষী এবং নেতাদের জমায়েত করেন।[১৯] ১০১৭ সালে হামজা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্রুজ বিশ্বাস ও ইউনিটারিয়ান মতবাদ প্রচারণা শুরু করেন। হামজা ফাতিমীয় খলিফা আল-হাকিমের সমর্থন লাভ করেন। তিনি ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি ডিক্রি জারু করেন।[২০]

    আল-হাকিম দ্রুজ বিশ্বাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত হন। যদিও তাঁর নিজ ধর্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষাবিদদের মাঝে মতদ্বৈততা আছে। জন এসপোসিতো বলেন, আল-হাকিম বিশ্বাস করতেন, তিনি শুধু মাত্র দৈবভাবে ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিযুক্ত নন, তিনি মহাজাগতিক শক্তি যিনি ঈশ্বরের সাথে যুক্ত।[২১] অনেক দ্রুজ ও অদ্রুজ পণ্ডিত, যেমন: সামি সোয়াদ ও সামি মাকারেম বলেন, ধর্ম প্রচারে প্রাক-দ্রুজ প্রচারক আদ-দারাজীর ভূমিকা ছিলো ধোঁয়াশাপূর্ণ।[২২] আল-হাকিম আদ-দারাজীর দৈবত্বকে প্রত্যাখান করনে।[১৫][২৩] এবং হামজা ইবনে আলীকে সমর্থনের মাধ্যমে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেন।[২৪]

    একরাতে সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে বেরিয়ে আল-হাকিম নিখোঁজ হয়ে যান। ধারণা করা হয় তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। খুব সম্ভবত তার বড় বোন সিত্তাল-মুলক এই হত্যাকান্ডের পেছনে ছিলেন। হামজা ইবনে আলীর পরে দ্রুজ আন্দোলন আল-মুক্তানা বাহাউদ্দিনের নতুন উদিয়মান নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

    বিশ্বাসের সমাপ্তি

    Druze

    আলহাকিম নিখোঁজ হওয়ার পরে তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র সন্তান আলী আজ-জহির সিংহাসনে উপবেশন করলে ফাতিতীয় খিলাফাতের সমর্থনে চলমান দ্রুজ আন্দোলন আজ-জহিরকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয় কিন্তু হামজাকে ইমাম (নেতা) হিসেবে অনুসরণ করা শুরু করে।[১৫] নাবালক খলিফার অভিভাবক সিত্তাল-মুলক ১০২১ সালে সেনাবাহিনীকে এই আন্দোলনকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।[১৩] একই সময়ে হামজা বিন আলী বাহাউদ্দীন আস-সামুকিকে ইউনিটারিয়ান মুভমেন্টের নেতৃত্ব প্রদান করেন।[১৫] পরবর্তী সাত বছর দ্রুজ অনুসারীগণ চরম নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যার শিকার হন। নতুন খলিফা জহির এই বিশ্বাসকে মুছে ফেলতে চেয়েছেন।[২৫] এটি ছিলো ফাতিতীয় সাম্রাজ্যে ক্ষমতার যুদ্ধের ফলাফল। কারণ দ্রুজ অনুসারীগণ আলী আজ-জহিরকে তাদের ইমাম হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অনেক গুপ্তচর বিশেষ করে আদ-দারাজীর অনুসারীগণ ইউনিটারিয়ান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। গুপ্তচরগণ মূলত বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি করে দ্রুজ মতবাদের সম্মানহানীর চেষ্টা করতো। নতুন খলিফা এরই সূত্রধরে দ্রুজ সম্প্রদায়ের উপর সেনা লেলিয়ে দেন। এন্তিওখ থেকে আলেক্সান্দ্রিয়া পর্যন্ত ফাতিমীয় সেনাবাহিনীর হাতে প্রায় দশহাজার দ্রুজ অনুসারী নিহত হয়।[১৩] বৃহত্তম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় এন্তিওখে। সেখানে ৫০০০ দ্রুজ ধর্মীয় নেতাকে হত্যা করা হয়।[১৩] এর ফলে দ্রুজ অনুসারীগণ আত্মগোপন করে। যারা ধরা পড়তো তাদেরকে বলপূর্বক ধর্মত্যাগে বাধ্য করা হত অথবা হত্যা করা হত। দক্ষিণ লেবানন এবং সিরিয়াতে কিছু দ্রুজ টিকে থাকতে সমর্থ হয়। আজ-জজিহের মৃত্যুর দুই বছর পরে ১০৩৮ সালে দ্রুজ আন্দোলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। [২৫]

    আধুনিক ইতিহাস

    লেবানন ও সিরিয়াতে দ্রুজগণ আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। দেশের প্রতি দ্রুজদের আনুগত্য এবং ভালোবাসা প্রবল[২৬]। নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুজগণ খুবই সহমর্মী। দেশে বিদেশে যেখানেই হোক দ্রুজগণ একে অন্যের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে[২৭]। দ্রুজদের ক্ষমতার ইতিহাস আছে। ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের তুলনায় দ্রুজরাই সব থেকে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেছে।[২৭]

    বিশ্বাস

    Druze

    ধর্মগ্রন্থ

    দ্রুজদের ধর্মগ্রন্থের নাম “কিতাব আল-হিকমাহ” বা “রাসাইল হিকমাহ” (আরবি: رسـائـل الـحـكـمـة, বাংলা: জ্ঞানের বই)।[২৮]

    নৃতাত্ত্বিক পরিচয়

    দ্রুজরা মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় উপজাতি। এরা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের পাহাড়ী এলাকায় বাস করে।

  • দিব্যজ্ঞান(divination)

    দিব্যজ্ঞান(divination)

    দিব্যজ্ঞান(divination) বা থিওসফি হল ১৯ শতকের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। এটি প্রাথমিকভাবে রাশিয়ান অভিবাসী হেলেনা ব্লাভাটস্কি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রধানত ব্লাভাটস্কির লেখা থেকে এর শিক্ষাগুলি আঁকে। ধর্মের পণ্ডিতদের দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে নতুন ধর্মীয় আন্দোলন এবং পাশ্চাত্য গুহ্যবাদের জাদুবাদী স্রোতের অংশ হিসাবে, এটি নয়াপ্লাতোবাদ ও এশীয় ধর্ম যেমন হিন্দুধর্মবৌদ্ধধর্মের মতো পুরানো ইউরোপীয় উভয় দর্শনের উপর আঁকে।

    থিওসফিক্যাল সোসাইটির লোগোটি বিভিন্ন প্রাচীন প্রতীককে একত্রিত করেছে।

    divination

    ব্লাভাটস্কি দ্বারা উপস্থাপিত, থিওসফি শিক্ষা দেয় যে মাস্টার্স নামে পরিচিত আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞদের প্রাচীন ও গোপন ভ্রাতৃত্ব রয়েছে, যারা—যদিও সারা বিশ্বে পাওয়া যায়—তিব্বতে কেন্দ্রীভূত। ব্লাভাটস্কির দ্বারা এই মাস্টারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে তারা মহান প্রজ্ঞা এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির চাষ করেছেন এবং থিওসফিস্টরা বিশ্বাস করেন যে তারাই আধুনিক থিওসফিক্যাল আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন ব্লাভাটস্কির মাধ্যমে তাদের শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে। তারা বিশ্বাস করে যে এই মাস্টাররা প্রাচীন ধর্মের জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন যা একবার সারা বিশ্বে পাওয়া গিয়েছিল এবং যা আবার বিদ্যমান বিশ্ব ধর্মগুলিকে গ্রহণ করবে। তাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলি তবুও তাদের পদ্ধতিকে “ধর্ম” হিসাবে উল্লেখ করে না। থিওসফি একক, ঐশ্বরিক পরম অস্তিত্বের কথা প্রচার করে। এটি উদ্ভাবনবাদী সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রচার করে যেখানে মহাবিশ্বকে এই পরম থেকে বাহ্যিক প্রতিফলন হিসাবে ধরা হয়। থিওসফি শেখায় যে মানব জীবনের উদ্দেশ্য হল আধ্যাত্মিক মুক্তি এবং দাবি করে যে মানুষের আত্মা কর্মের প্রক্রিয়া অনুসারে শারীরিক মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে। এটি সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক উন্নতির মূল্যবোধকে প্রচার করে, যদিও এটি নির্দিষ্ট নৈতিক কোডগুলি নির্ধারণ করে না।

    divination

    ব্লাভাটস্কি দ্বারা উপস্থাপিত, থিওসফি শিক্ষা দেয় যে মাস্টার্স নামে পরিচিত আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞদের প্রাচীন ও গোপন ভ্রাতৃত্ব রয়েছে, যারা—যদিও সারা বিশ্বে পাওয়া যায়—তিব্বতে কেন্দ্রীভূত। ব্লাভাটস্কির দ্বারা এই মাস্টারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে তারা মহান প্রজ্ঞা এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির চাষ করেছেন এবং থিওসফিস্টরা বিশ্বাস করেন যে তারাই আধুনিক থিওসফিক্যাল আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন ব্লাভাটস্কির মাধ্যমে তাদের শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে। তারা বিশ্বাস করে যে এই মাস্টাররা প্রাচীন ধর্মের জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন যা একবার সারা বিশ্বে পাওয়া গিয়েছিল এবং যা আবার বিদ্যমান বিশ্ব ধর্মগুলিকে গ্রহণ করবে। তাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলি তবুও তাদের পদ্ধতিকে “ধর্ম” হিসাবে উল্লেখ করে না। থিওসফি একক, ঐশ্বরিক পরম অস্তিত্বের কথা প্রচার করে। এটি উদ্ভাবনবাদী সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রচার করে যেখানে মহাবিশ্বকে এই পরম থেকে বাহ্যিক প্রতিফলন হিসাবে ধরা হয়। থিওসফি শেখায় যে মানব জীবনের উদ্দেশ্য হল আধ্যাত্মিক মুক্তি এবং দাবি করে যে মানুষের আত্মা কর্মের প্রক্রিয়া অনুসারে শারীরিক মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে। এটি সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক উন্নতির মূল্যবোধকে প্রচার করে, যদিও এটি নির্দিষ্ট নৈতিক কোডগুলি নির্ধারণ করে না।

    divination

    ১৮৭৫ সালে ব্লাভাটস্কি ও আমেরিকান হেনরি ওলকট এবং উইলিয়াম কোয়ান বিচারক দ্বারা থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার সাথে নিউ ইয়র্ক সিটিতে থিওসফি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ব্লাভাটস্কি ও ওলকট ভারতে স্থানান্তরিত হন, যেখানে তারা তামিলনাড়ুর আদিয়ারে সোসাইটির সদর দপ্তর স্থাপন করেন। ব্লাভাটস্কি তার ধারণা দুটি বইতে বর্ণনা করেছেন, আইসিস উন্মোচিত ও গোপন মতবাদ। তিনি মাস্টার্স সম্পর্কিত তার দাবিকে সমর্থন করার জন্য কথিতভাবে অতিপ্রাকৃত ঘটনা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যদিও বারবার প্রতারণামূলকভাবে এটি করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ১৮৯১ সালে ব্লাভ্যাটস্কির মৃত্যুর পর, সোসাইটিতে বিভেদ দেখা দেয়, যেখানে বিচারক আমেরিকার থিওসফিক্যাল সোসাইটিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আলাদা করার জন্য নেতৃত্ব দেন। বিচারকের উত্তরসূরি ক্যাথরিন টিংলির অধীনে, সান দিয়েগোতে লোমাল্যান্ড নামে থিওসফিক্যাল সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আদ্যার-ভিত্তিক সোসাইটি পরে অ্যানি বেসান্টের হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার অধীনে এটি পতনের আগে ১৯২০ এর দশকের শেষের দিকে সবচেয়ে বড় আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। থিওসফিক্যাল আন্দোলন এখনও বিদ্যমান, যদিও তার উচ্চ দিনের তুলনায় অনেক ছোট আকারে।

    থিওসফি পশ্চিমা দেশগুলিতে দক্ষিণ এশীয় ধর্মের জ্ঞান আনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক গর্বকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন বিশিষ্ট শিল্পী এবং লেখকরাও থিওসফিক্যাল শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। থিওসফির আন্তর্জাতিক অনুসরণ রয়েছে এবং বিংশ শতাব্দীতে এর হাজার হাজার অনুসারী ছিল। থিওসফিক্যাল ধারণাগুলি অন্যান্য গুপ্ত আন্দোলন ও দর্শনের বিস্তৃত পরিসরের উপরও প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে নৃতত্ত্ব, চার্চ ইউনিভার্সাল ও ট্রায়াম্ফ্যান্ট এবং নতুন যুগ।

    divination

    ১৮৭৫ সালে ব্লাভাটস্কি ও আমেরিকান হেনরি ওলকট এবং উইলিয়াম কোয়ান বিচারক দ্বারা থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার সাথে নিউ ইয়র্ক সিটিতে থিওসফি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ব্লাভাটস্কি ও ওলকট ভারতে স্থানান্তরিত হন, যেখানে তারা তামিলনাড়ুর আদিয়ারে সোসাইটির সদর দপ্তর স্থাপন করেন। ব্লাভাটস্কি তার ধারণা দুটি বইতে বর্ণনা করেছেন, আইসিস উন্মোচিত ও গোপন মতবাদ। তিনি মাস্টার্স সম্পর্কিত তার দাবিকে সমর্থন করার জন্য কথিতভাবে অতিপ্রাকৃত ঘটনা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যদিও বারবার প্রতারণামূলকভাবে এটি করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ১৮৯১ সালে ব্লাভ্যাটস্কির মৃত্যুর পর, সোসাইটিতে বিভেদ দেখা দেয়, যেখানে বিচারক আমেরিকার থিওসফিক্যাল সোসাইটিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আলাদা করার জন্য নেতৃত্ব দেন। বিচারকের উত্তরসূরি ক্যাথরিন টিংলির অধীনে, সান দিয়েগোতে লোমাল্যান্ড নামে থিওসফিক্যাল সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আদ্যার-ভিত্তিক সোসাইটি পরে অ্যানি বেসান্টের হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার অধীনে এটি পতনের আগে ১৯২০ এর দশকের শেষের দিকে সবচেয়ে বড় আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। থিওসফিক্যাল আন্দোলন এখনও বিদ্যমান, যদিও তার উচ্চ দিনের তুলনায় অনেক ছোট আকারে।

    (divination)

    divination

    থিওসফি পশ্চিমা দেশগুলিতে দক্ষিণ এশীয় ধর্মের জ্ঞান আনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক গর্বকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন বিশিষ্ট শিল্পী এবং লেখকরাও থিওসফিক্যাল শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। থিওসফির আন্তর্জাতিক অনুসরণ রয়েছে এবং বিংশ শতাব্দীতে এর হাজার হাজার অনুসারী ছিল। থিওসফিক্যাল ধারণাগুলি অন্যান্য গুপ্ত আন্দোলন ও দর্শনের বিস্তৃত পরিসরের উপরও প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে নৃতত্ত্ব, চার্চ ইউনিভার্সাল ও ট্রায়াম্ফ্যান্ট এবং নতুন যুগ।

  • দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন(Dalit Buddhist movement)

    দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন(Dalit Buddhist movement)

    দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন বা নববৌদ্ধ আন্দোলন (পালি : নবযান)[১] হল বিংশ শতাব্দীতে সিংহলি বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের সহায়তায় ভারতের দলিতগণকে নিয়ে গড়ে ওঠা একটি বৌদ্ধ নবজাগরণ। ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ভীমরাও আম্বেডকর বর্ণাশ্রম ভিত্তিক ব্রাহ্মণ্য হিন্দুসমাজের নিন্দাপূর্বক সমস্ত দলিত অর্থাৎ শূদ্রাদি নিম্নবর্ণীয় ব্যক্তিগণকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হতে আহ্বান করেন এবং এর ফলে এই আন্দোলন বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে।

    উদ্ভব

    Dalit Buddhist movement

    বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক শাক্যমুনি বুদ্ধের পরিনির্বাণলাভের অনতিকাল পরেই বৌদ্ধ ধর্ম বিপুল প্রসার লাভ করে এবং ভারতের প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। কিন্তু খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতেই ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনরুত্থান এবং ইসলামের আগমনের ফলে ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম অবলুপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে সিংহলি বৌদ্ধ ভিক্ষু অনাগরিক ধর্মপাল কর্তৃক মহাবোধি সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত সংগঠনের নেতৃত্বাধীনে ভারতে পুনরায় বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণ সূচিত হয়। যদিও সেইসময় মহাবোধি সোসাইটি মূলত উচ্চবর্ণীয় ব্যক্তিদের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল।

    দক্ষিণ ভারত

    ১৮৯৮ সালে, পন্ডিত ইয়োথি থাস তামিলনাড়ুতে শাক্য বৌদ্ধ সমাজ – ভারতীয় বৌদ্ধ সমিতি নামেও পরিচিত – প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলিতদের জন্য হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় বিকল্প হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মকে উপস্থাপন করেন। থাসের প্রচেষ্টার ফলে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতে তামিল দলিতদের মধ্যে একটি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে ওঠে। ভারতীয় বৌদ্ধ সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন পল ক্যারাস। আম্বেদকরবাদী আন্দোলনের বিপরীতে, ভারতীয় বৌদ্ধ সমিতি শ্রীলঙ্কায় প্রতিষ্ঠিত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের ঐতিহ্যকে গ্রহণ করে (যেখানে থাস তার প্রশিক্ষণ এবং বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন)।[২]

    উত্তর ভারত

    Dalit Buddhist movement

    দুটি আদি ধর্ম আন্দোলন – যেগুলি বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষে হিন্দু ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করেছিল – উত্তরপ্রদেশে স্বামী অচ্যুতানন্দ হরিহর এবং পাঞ্জাবে বাবু মঙ্গু রাম চালু করেছিলেন। একটি অস্পৃশ্য পরিবারে জন্মগ্রহণকারী, অচ্যুতানন্দ আর্য সমাজ শুদ্ধি সংস্কার আন্দোলনে যোগদান করেন এবং সেখানে প্রায় আট বছর (১৯০৫-১৯১২) কাজ করেন।[৩] তিনি অনুভব করেছিলেন যে আর্য সমাজ সূক্ষ্ম উপায়ে অস্পৃশ্যতা অনুশীলন করে এবং পরবর্তীকালে সামাজিক-রাজনৈতিক ভারতীয় অছুত মহাসভা আন্দোলন শুরু করার জন্য এটি ছেড়ে দেয়। অচ্যুতানন্দ আদি-হিন্দু পত্রিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দলিতদেরকে “ভারতীয়দের আদি ধর্ম” হিসেবে আদি-ধর্মে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।[৪] অচ্যুতানন্দ একটি যৌথ সাংস্কৃতিক ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে তার দর্শন প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি এটি উপজাতি সমাজ সহ দলিতদের বাইরেও দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন এবং উপবাসের পাশাপাশি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিলেন, এই বলে যে ব্রাহ্মণরা “ব্রিটিশদের মতই ভারতে বিদেশী” ছিল, আনন্দ তেলতুম্বদে অনুসারে। বাবু মঙ্গু রামও পাঞ্জাবের একটি অস্পৃশ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যার একটি সমৃদ্ধ চামড়া ব্যবসা ছিল।

    Dalit Buddhist movement

    মঙ্গু রাম ১৯০৯ সালে ২৩ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় কাজ করেন।[৪] সেখানে, তিনি গদর পার্টিতে যোগ দেন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করার জন্য ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ভারতে অস্ত্র পাচার করেন। ১৯২৫ সালে, তিনি দলিত স্বাধীনতার দিকে মনোনিবেশ করেন, “অ্যাড ধর্ম” আন্দোলনের পাশাপাশি তার ধারণাগুলি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আদি-ডাঙ্কা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করেন। তেলতুম্বডের মতে, মান্ডু রামের ধর্মীয় আন্দোলন বাস্তবায়িত হতে ব্যর্থ হয় এবং মঙ্গু রাম পরে আম্বেদকরবাদী আন্দোলনে যোগ দেন।[৫] ১৯১৪ সালে, প্রকাশকে কলকাতায় বোধনন্দ মহাস্তবীর হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং লখনউতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তিনি ১৯১৬ সালে ভারতীয় বুদ্ধ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯২৮ সালে একটি বিহার স্থাপন করেন।[৬]

    ভীমরাও রামজি আম্বেডকর

    Dalit Buddhist movement

    ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে য়েবলা সম্মেলনে বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেডকর ঘোষণা করেন যে তিনি কিছুতেই একজন হিন্দুধর্মাবলম্বী হিসেবে মৃত্যুবরণ করবেন না কারণ হিন্দুধর্ম বর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ এবং বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ আম্বেডকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রত্যেকেই তাকে স্ব স্ব ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানান। এরপর বিভিন্ন বৈঠকে দলিতদের ধর্মান্তরিত হওয়ার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি আলোচিত হয়। ১৯৩৬ সালের ২২ মে লখনউতে একটি ” সর্বধর্ম সম্মেলন ” অনুষ্ঠিত হয়। জগজীবন রাম সহ বহু বিশিষ্ট দলিত নেতৃবর্গ উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন, যদিও বাবাসাহেব আম্বেডকর এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এই সম্মেলনে ইসলাম, খ্রিস্ট ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিগণ তাদের ধর্মের গুণাবলি দলিত নেতাদের সামনে ব্যাখ্যা করেন।

    ১০ জুন, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ভিক্ষু লোকনাথ বাবাসাহেব আম্বেডকরের দাদরের বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। পরে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লোকনাথ জানান যে আম্বেডকর বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং সমগ্র দলিত সম্প্রদায়কে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। ১৯৩৭ সালে লোকনাথ তার সিংহলে অবস্থিত ছাপাখানা থেকে ভারতের নিপীড়িত এবং দলিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেন যাতে লিখিত হয়, বৌদ্ধ ধর্ম আপনাদের মুক্তি এনে দেবে

    ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধে আম্বেডকর একবার কানপুরে অবস্থিত আচার্য ঈশ্বরদত্ত মেধার্থীর বুদ্ধিপুরী বিদ্যালয়ে ভ্রমণ করেন। ইতঃপূর্বেই মেধার্থী ভিক্ষু লোকনাথ কর্তৃক বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন এবং ১৯৪০ সালের মধ্যভাগে তার আম্বেডকরের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। দিল্লিতে কিছুদিনের জন্য আম্বেডকর আচার্য মেধার্থীর নিকটে পালি ভাষাও শিক্ষা করেন।

    ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কোল্হাপুরের মহারাজ চতুর্থ সাহু কর্তৃক আয়োজিত ” অব্রাহ্মণ সম্মেলন “-এ আম্বেডকর প্রথমবার বোধানন্দ মহাস্থবিরের সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন। ১৯৪০ সালে পর পর দু’টি অনুষ্ঠানে তারা পুনরায় সাক্ষাৎ করেন এবং ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করেন। মহাস্থবির আম্বেডকরের দ্বিতীয় বিবাহে আপত্তি প্রকাশ করেন কারণ তার দ্বিতীয়া স্ত্রী ছিলেন ব্রাহ্মণ কুলজাতা। পরবর্তীকালে মহাস্থবিরের অনুগামীগণ আম্বেডকরের ” রিপাবলিকান পার্টি ” (Republican Party)-তে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

    Dalit Buddhist movement

    আম্বেডকরের দীক্ষা

    নাগপুরে অবস্থিত দীক্ষাভূমি স্তূপ, যেস্থানে বাবাসাহেব আম্বেডকরবৌদ্ধ ধর্মেদীক্ষাগ্রহণ করেছিলেন

    দলিতদের জন্য একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মই মঙ্গলপ্রদ, এই তত্ত্বের উপর বহু গ্রন্থ প্রকাশের পর আম্বেডকর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর নাগপুরের দীক্ষাভূমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে ত্রিরত্ন এবং পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। এরপর সেখানে উপস্থিত তার ৩৮০০০০ অনুগামীও বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই দীক্ষানুষ্ঠানে আচার্য ঈশ্বরদত্ত মেধার্থী এবং তার শিষ্য ভোজদেব মুদিত-ও উপস্থিত ছিলেন।

    এর পরবর্তীকালে বহু ধর্মান্তরিত দলিত নিজেদের ” আম্বেডকর বৌদ্ধ ” বলে অভিহিত করেছেন কারণ আম্বেডকরের দীক্ষাগ্রহণের মাধ্যমেই এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ এই আন্দোলনকে নববৌদ্ধ আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কারণ এর ফলে ভারতে অবলুপ্তপ্রায় বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণ সম্ভব হয়েছিল।

    আম্বেডকর কর্তৃক গৃহীত ২২টি শপথ

    Dalit Buddhist movement

    স্বয়ং দীক্ষাগ্রহণের পর আম্বেডকর তার অনুগামীগণকে দীক্ষাপ্রদান করেন। ত্রিরত্ন এবং পঞ্চশীল গ্রহণের পর তারা সম্মিলিতভাবে ২২টি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আম্বেডকর অপর একটি গণদীক্ষার আয়োজন করেন এবং সেখানেও নবদীক্ষিত বৌদ্ধগণকে নিম্নোল্লিখিত ২২টি শপথ প্রদান করেন।

    1. আমি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের প্রতি কোন বিশ্বাস রাখব না এবং তাদের উপাসনা করব না।
    2. আমি রাম এবং কৃষ্ণ, যারা ঈশ্বরের অবতার রূপে পরিচিত, তাদের প্রতি কোন বিশ্বাস রাখব না এবং তাদের উপাসনা থেকে বিরত থাকব।
    3. আমি গৌরী, গণপতি সহ অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীগণের প্রতি কোন বিশ্বাস রাখব না এবং তাদের আরাধনা করব না।
    4. আমি ঈশ্বরের অবতারে বিশ্বাস করি না।
    5. আমি ভগবান বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে স্বীকার করি না এবং ভবিষ্যতেও করব না। আমি মনে করি এই তত্ত্বটি একটি মিথ্যা প্রচারমাত্র।
    6. আমি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এবং মৃতের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করা থেকে বিরত থাকব।
    7. আমি সেই সমস্ত কার্যাবলি থেকে বিরত থাকব যার দ্বারা ভগবান বুদ্ধের শিক্ষার অবমাননা হয়।
    8. আমি ব্রাহ্মণগণকে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে ধর্মীয় ক্রিয়াদি সম্পাদন করতে দেব না।
    9. আমি মানুষের মধ্যে সাম্যে এবং ঐক্যে বিশ্বাস করব।
    10. আমি মানবসমাজে সাম্য এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার্থ আপ্রাণ প্রয়াস করে যাব।
    11. আমি ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত অষ্টাঙ্গ মার্গ অনুসরণ করে চলব।
    12. আমি ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত দশ পারমিতা মান্য করে চলব।
    13. আমি জগতের সকল জীবের প্রতি দয়া এবং করুণা প্রদর্শন করব এবং তাদের রক্ষা করব।
    14. আমি চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করব না।
    15. আমি মিথ্যা বাক্য উচ্চারণ করব না এবং কখনও মিথ্যাচার করব না।
    16. আমি ইন্দ্রিয়কাম চরিতার্থ করার জন্য কোন অসাধু কার্যে লিপ্ত হব না।
    17. আমি মদ্যাদি মাদকদ্রব্য সেবন করব না।
    18. আমি জীবনে প্রতিনিয়ত অষ্টাঙ্গ মার্গ অনুশীলনের প্রয়াস করব এবং সকলের প্রতি করুণা অভ্যাস করব।
    19. আমি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করছি কারণ হিন্দুধর্ম মনুষ্যত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। হিন্দুধর্ম বর্ণাশ্রমভিত্তিক সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে মানবসমাজে বিভেদের প্রাচীর সৃষ্টি করেছে এবং সাম্য প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করেছে। তাই আমি বৌদ্ধ ধর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার ধর্ম হিসেবে অবলম্বন করলাম।
    20. আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম।
    21. আমি বিশ্বাস করি যে আমি জন্মান্তরিত হয়েছি।
    22. আমি এতদ্বারা ঘোষণা করছি যে আমি ভবিষ্যতে ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত ধর্ম দর্শন এবং শিক্ষানুসারে জীবনযাপন করব।

    আম্বেদকরের মৃত্যুর পর

    Dalit Buddhist movement

    বৌদ্ধ আন্দোলন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল আম্বেদকরের ধর্মান্তরের পরেই তার মৃত্যুর কারণে। এটি অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক জনসমর্থন পায়নি যা আম্বেদকর আশা করেছিলেন। আম্বেদকরবাদী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে বিভাজন এবং দিকনির্দেশনার অভাব একটি অতিরিক্ত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মানুষের দ্বারা তা আবারও প্রসারিত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বর্তমানে ভারতে ৮.৪৪ মিলিয়ন বৌদ্ধ রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত 6.5 মিলিয়ন মহারাষ্ট্রে মারাঠি বৌদ্ধ। এটি বৌদ্ধধর্মকে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্ম এবং মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৬%, কিন্তু ভারতের সামগ্রিক জনসংখ্যার ৩%-এরও কম।[৭]

    বৌদ্ধ পুনরুজ্জীবন দুটি রাজ্যে কেন্দ্রীভূত রয়েছে: আম্বেদকরের জন্মস্থান মহারাষ্ট্র এবং উত্তর প্রদেশ – বোধনন্দ মহাস্তবীর, আচার্য মেধারথি এবং তাদের সহযোগীদের দেশ।
    
  • ধর্মদর্শন(Religion)

    ধর্মদর্শন(Religion)

    ধর্মদর্শন

    স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলোসফি অনুসারে, ধর্মদর্শন হচ্ছে, “ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত ধারণা এবং কেন্দ্রীয় বিষয় নিয়ে দার্শনিক অনুসন্ধান”।[১] এটি একটি প্রাচীন পাঠ্য বিষয়, যা অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে দার্শনিক আলোচনায় পাওয়া যায়, এবং এটি দর্শনের অন্যান্য শাখা যেমন অধিবিদ্যা, জ্ঞানতত্ত্বনীতিশাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত।[২]

    ধর্মদর্শন(Religion) ধর্মীয় দর্শন থেকে আলাদা কারণ ধর্মদর্শন ধর্মীয় দর্শনের মত কোন নির্দিষ্ট ধর্মব্যবস্থার সমস্যাগুলোর পরীক্ষা নীরিক্ষা করে না, বরং ধর্মদর্শন ধর্মের সামগ্রিক প্রকৃতি নিয়েই বিভিন্ন আলোচনা করে। ধর্মদর্শনের পাঠ এমনভাবে গড়ে উঠেছে যাতে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয়েই নিরাবেগভাবে এই বিষয়ে পাঠ করতে পারে।[৩]

    পূর্বালোচনা

    Religion

    দার্শনিক উইলিয়াম এল. রো ধর্মের দর্শনের সংজ্ঞা দেন এভাবেঃ “মৌলিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধারণার সমালোচনামূলক পরীক্ষণ”।[৪] ধর্মের দর্শনের আওতায় যেসব বিষয়াদি পরেঃ ঈশ্বরের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস, বিভিন্নরকমের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক, ভালো ও খারাপ – এর প্রকৃতি ও পরিসর এবং জন্ম, ইতিহাস ও মৃত্যুর ধর্মীয় ব্যাখ্যা।[৫] ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার নৈতিক অর্থ, বিশ্বাসের এর সাথে যুক্তি, অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যের সম্পর্ক; অলৌকিকতা, পবিত্র বাণী, বৈরাগ্যবাদ, ক্ষমতা আর পরিত্রাণ – এসব জিনিসও ধর্মের দর্শনের আওতায় পড়ে।[৬]

    উনিশ শতক এর আগ পর্যন্ত ‘ধর্মের দর্শন’ শব্দটি পশ্চিমে ব্যবহার হয় নি।[৭] বেশিরভাগ পূর্বাধুনিক ও প্রথমদিককার আধুনিক দার্শনিক কাজসমূহ ধর্মীয় সারমর্ম ও ‘অ-ধর্মীয়’ দার্শনিক প্রশ্নসমূহের এক সংমিশ্রণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ায় হিন্দু উপনিষদ, দাওবাদ, কনফুসিয়াসবাদ আর বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত কিতাবাদি ছিল।[৮] গ্রীক দর্শন, যেমন পিথাগোরাসবাদ, বৈরাগ্যদর্শন এর মধ্যে দেবতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারণা ছিল, আর মধ্যযুগীয় দর্শন শক্তভাবে তিনটি ইব্রাহিমি এক ঈশ্বরবাদী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। পশ্চিম বিশ্বে প্রথম দিককার আধুনিক দার্শনিকগণ যথা থমাস হোব্‌স, জন লক আর জর্জ বার্কিলি নানধরনের ইহজাগতিক বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেন।[৯]

    Religion

    ধর্মের দর্শন, ধর্মতত্ত্ব হতে এ দিক থেকে আলাদা যে, ধর্মতত্ত্বে “সমালোচনামূলক চিন্তাধারা ধর্মীয় বিশ্বাস এর উপর ভিত্তিকৃত”।[১০] আবার, “ধর্মতত্ত্ব কোন কর্তৃত্বশালীর উপর নির্ভর করে যে চিন্তাভাবনা, ভাবপ্রকাশ ও সাক্ষী হওয়ার ব্যাপার সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে … [যখন] দর্শন তার যুক্তিসমূহ ভিত্তি করে সময়হীন প্রমাণের উপর”।[১১]

    প্রাচীন সেরামানের দার্শনিকগণ দ্বারা ধর্মের দর্শনের কিছু অংশকে অধিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অ্যারিস্টটলের অধিবিদ্যায় অন্তহীন গতির জন্য মূল কারণ ছিল একটি অচালিত চালক, যে, প্রবৃত্তি বা চিন্তার ব্যবহার করে গতিকে গতিময় করে নিজে গতিশীল হওয়া ছাড়া।[১২] এই অচালিত চালক, অ্যারিস্টটল এর মতে, হলেন ঈশ্বর, যা ধর্মতত্ত্বের পড়ালেখার বিষয়বস্তু। যদিও দার্শনিকগণ একে ধর্মের দর্শনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন আর স্বাভাবিকভাবে একে পড়ালেখার আলাদা এক বিষয় হিসেবে দেখা হয়, তবু কিছু মানুষ, বিশেষ করে ক্যাথলিক দার্শনিকগণ দ্বারা এখনও একে অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে দেখা হয়।

    অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে

    এরিস্টোটল

    ধর্মদর্শনের কিছু বিষয় প্রাচীন দর্শনের সময় থেকেই অধিবিদ্যার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরিস্টোটলের মেটাফিজিক্স-এ শাশ্বত গতির পূর্বজ কারণ হিসেবে |”নিশ্চল চালক”-কে (unmoved mover) দায়ী করেছেন, যিনি আকাঙ্খার বা চিন্তার বস্তুর মত, নিজে না চালিত হয়ে অন্য বস্তুকে চালিত করে।[১২] এরিস্টোটলের মতে, ঈশ্বর ধর্মতত্ত্বে আলোচনার বিষয়। যাইহোক, আজ দার্শনিকগণ এই ঈশ্বর নিয়ে আলোচনার জন্য “ধর্মদর্শন” শব্দটি ব্যবহার করেন, এবং একে আলোচনার ভিন্ন ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হয়। যদিও একে অনেকে, বিশেষ করে ক্যাথলিক দার্শনিকগণ অধিবিদ্যার মধ্যে ফেলেন।

    Religion

    “ref2” নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

    দার্শনিক উইলিয়াম এল. রো ধর্মের দর্শনের সংজ্ঞা দেন এভাবেঃ “মৌলিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধারণার সমালোচনামূলক পরীক্ষণ”।[৪] ধর্মের দর্শনের আওতায় যেসব বিষয়াদি পরেঃ ঈশ্বরের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস, বিভিন্নরকমের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক, ভালো ও খারাপ – এর প্রকৃতি ও পরিসর এবং জন্ম, ইতিহাস ও মৃত্যুর ধর্মীয় ব্যাখ্যা।[৫] ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার নৈতিক অর্থ, বিশ্বাসের এর সাথে যুক্তি, অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যের সম্পর্ক; অলৌকিকতা, পবিত্র বাণী, বৈরাগ্যবাদ, ক্ষমতা আর পরিত্রাণ – এসব জিনিসও ধর্মের দর্শনের আওতায় পড়ে।[৬]

    Religion

    উনিশ শতক এর আগ পর্যন্ত ‘ধর্মের দর্শন’ শব্দটি পশ্চিমে ব্যবহার হয় নি।[৭] বেশিরভাগ পূর্বাধুনিক ও প্রথমদিককার আধুনিক দার্শনিক কাজসমূহ ধর্মীয় সারমর্ম ও ‘অ-ধর্মীয়’ দার্শনিক প্রশ্নসমূহের এক সংমিশ্রণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ায় হিন্দু উপনিষদ, দাওবাদ, কনফুসিয়াসবাদ আর বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত কিতাবাদি ছিল।[৮] গ্রীক দর্শন, যেমন পিথাগোরাসবাদ, বৈরাগ্যদর্শন এর মধ্যে দেবতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারণা ছিল, আর মধ্যযুগীয় দর্শন শক্তভাবে তিনটি ইব্রাহিমি এক ঈশ্বরবাদী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। পশ্চিম বিশ্বে প্রথম দিককার আধুনিক দার্শনিকগণ যথা থমাস হোব্‌স, জন লক আর জর্জ বার্কিলি নানধরনের ইহজাগতিক বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেন।[

  • ধর্মগ্রন্থ(Dharma book)

    ধর্মগ্রন্থ(Dharma book)

    ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে সেই সকল বিশেষ গ্রন্থ যাতে মানুষের জীবন যাপনের বিধান, ভাল কাজ করার পরামর্শ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। পৃথিবীতে যুগে যুগে আসা সকল ধর্মেরই কোন না কোন ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। মুসলমানদের কুরআন, হিন্দুদের বেদ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, খ্রিস্টানদের বাইবেল, বৌদ্ধদের ত্রিপিটক, ইহুদিদের তানাখ ইত্যাদি।

    ইহুদি ধর্মগ্রন্থ

    Dharma book

    হিব্রু বাইবেল

    হিব্রু বাইবেলের পাণ্ডুলিপি (একাদশ শতাব্দী)

    হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) বলতে ইহুদিখ্রিস্টানদের ধর্মীয় পুস্তকাবলীর সাধারণ অংশকে বোঝায়। পণ্ডিতেরা খ্রিস্টানদের পুরাতন বাইবেল (Old Testament) বা ইহুদিদের তানাখ (Tanakh) (যে গ্রন্থগুলো প্রকৃতপক্ষে একই) বোঝাতে গিয়ে এই পরিভাষাকেই নিরপেক্ষ মনে করে ব্যবহার করেন। হিব্রু বাইবেলকে ইহুদিরা তানাখ বলে থাকে। গ্রন্থটির তিনটি অংশের আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে তানাখ শব্দটি গঠিত। ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীগণ বিশ্বাস করেন মুসার উপর তাওরাত কিতাব নাজিল হয়। কিন্তু তারা তানাখকে তাওরাত কিতাব বলে স্বীকৃতি দেয় না।

    হিন্দু ধর্মগ্রন্থ

    Dharma book

    বেদ

    মূল নিবন্ধ: বেদ

    অথর্ববেদ সংহিতার একটি পৃষ্ঠা। এটি গ্রন্থের প্রাচীনতম অংশ।

    বেদ ( সংস্কৃত: वेद, জ্ঞান ) হল প্রাচীন ভারতে রচিত একাধিক ধর্মগ্রন্থের একটি সমষ্টি । বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদ সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ[১][২] বেদকে “অপৌরুষেয়” (“মানুষের দ্বারা রচিত নয়”) মনে করা হয় ।[৩][৪][৫] হিন্দুরা বিশ্বাস করে , বেদ প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে । তাই বেদের অপর নাম শ্রুতি (“ʼযা শোনা হয়েছে”ʼ)।[৬][৭] অন্য ধর্মগ্রন্থগুলিকে বলা হয় “স্মৃতি(হিন্দুধর্ম)। স্মৃতি” (“ʼযা মনে রাখা হয়েছেʼ”) । হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে , বেদ সর্বোচ্চ উপাস্য ঈশ্বর ব্রহ্ম কর্তৃক প্রকাশিত ।[৮] বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বা শ্রুতি সংহিতা নামে পরিচিত চারটি প্রধান সংকলনকে কেন্দ্র করে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মের যজ্ঞ অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত ॐ

    1. ঋগ্বেদ অংশে হোতার বা প্রধান পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে;
    2. যজুর্বেদ অংশে অধ্বর‍্যু বা অনুষ্ঠাতা পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে;
    3. সামবেদ অংশে উদ্গাতার বা মন্ত্রপাঠক পুরোহিত কর্তৃক গীত স্তোত্রগুলি সংকলিত হয়েছে;
    4. অথর্ববেদ অংশে মারণ, উচাটন, বশীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি সংকলিত হয়েছে।[৯]

    বেদের প্রতিটি পদ মন্ত্র নামে পরিচিত। কোনো কোনো বৈদিক মন্ত্র আধুনিক কালে প্রার্থনা সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়ে থাকে।

    ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা ও বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায় বেদ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা বেদকে তাদের প্রধান ধর্মমত (আস্তিক) হিসেবে গ্রহণ করেছে। অন্যান্য শাখা, বিশেষত বৌদ্ধধর্মজৈনধর্ম বেদকে তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করে না (নাস্তিক)।[১০][১১] অধিকন্তু বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম, শিখধর্ম,[১২][১৩]ব্রাহ্মধর্ম,[১৪] এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক অব্রাহ্মণ হিন্দুরা[১৫] বেদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে না। ইয়েঙ্গার ইত্যাদি কোনো কোনো দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ তামিল দিব্য প্রবন্ধম্‌ বা আলোয়ারদের রচনাকে বেদের সমতুল্য জ্ঞান করেন।[১৬]

    শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বা গীতা

    Dharma book

    মূল নিবন্ধ: ভগবদ্গীতা

    কুরুক্ষেত্রেকৃষ্ণঅর্জুন; অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর চিত্রকলা

    ভগবদ্গীতা (সংস্কৃত: भगवद्गीता, ˈbʱəɡəʋəd̪ ɡiːˈt̪aː (সাহায্য·তথ্য), ভগবানের গান) বা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বা গীতা একটি ৭০০-শ্লোকের হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত-এর একটি অংশ। যদিও গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক উপনিষদের মর্যাদা পেয়ে থাকে। হিন্দুরা গীতা-কে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। হিন্দুধর্ম, দর্শন ও সাহিত্যের ইতিহাসে গীতা এক বিশেষ স্থানের অধিকারী।[১৭] গীতা-র কথক কৃষ্ণ হিন্দুদের দৃষ্টিতে ঈশ্বরের অবতার পরমাত্মা স্বয়ং।[১৭] তাই গীতা-য় তাকে বলা হয়েছে “শ্রীভগবান”।[১৮]

    কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথচালকের ভূমিকায় কৃষ্ণ

    গীতা-র বিষয়বস্তু কৃষ্ণ ও পাণ্ডব রাজকুমার অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে শত্রুপক্ষে আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় কৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র[১৯]বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন। তাই গীতা-কে বলা হয় হিন্দু ধর্মতত্ত্বের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ এবং হিন্দুদের জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা। যোগশাস্ত্র ব্যাখ্যার সময় কৃষ্ণ নিজের “স্বয়ং ভগবান” রূপটি উন্মোচিত করেন এবং বিশ্বরূপে অর্জুনকে দর্শন দিয়ে আশীর্বাদ করেন। অর্জুন ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণের মুখ থেকে গীতা শুনেছিলেন সঞ্জয় (তিনি যুদ্ধের ঘটনা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে বর্ণনা করার জন্য বেদব্যাসের কাছ থেকে দিব্য দৃষ্টি লাভ করেছিলেন), হনুমান (তিনি অর্জুনের রথের চূড়ায় বসে ছিলেন) ও ঘটোৎকচের পুত্র বর্বরিক যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব ঘটনা দেখেছিলেন)।

    গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হয়। অর্থাৎ, গীতা উপনিষদ বা বৈদান্তিক সাহিত্যের অন্তর্গত।[২০] “উপনিষদ্” নামধারী ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত হলেও, মহাভারত-এর অংশ বলে গীতা স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্গত।[২১][২২] আবার উপনিষদের শিক্ষার সারবস্তু গীতা-য় সংকলিত হয়েছে বলে একে বলা হয় “উপনিষদসমূহের উপনিষদ”।[২৩] গীতা-কে মোক্ষশাস্ত্র নামেও অভিহিত করা হয়।[২৪]

    ভারতীয় মণীষীদের পাশাপাশি অ্যালডাস হাক্সলি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, জে. রবার্ট ওপেনহাইমার,[২৫] রালফ ওয়াল্ডো এমারসন, কার্ল জাং, হেনরিক হিমারহারমান হেস প্রমুখ পাশ্চাত্য মণীষীরাও গীতার উচ্চ প্রশংসা করেছেন।[২৩][২৬]

    পুরাণ

    Dharma book

    মূল নিবন্ধ: পুরাণ

    অষ্টমাতৃকা-সহ দেবী অম্বিকা (দুর্গা) রক্তবীজ দৈত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত; দেবীমাহাত্ম্যম্, মার্কণ্ডেয় পুরাণের পুথিচিত্র

    পুরাণ (সংস্কৃত: पुराण purāṇa, “প্রাচীনযুগীয়”) হিন্দু, বৌদ্ধজৈন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ আখ্যানমূলক ধর্মগ্রন্থ-সমুচ্চয়। পুরাণে সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, রাজন্যবর্গ, যোদ্ধৃবর্গ, ঋষি ও উপদেবতাগণের বংশবৃত্তান্ত এবং হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, দর্শন ও ভূগোলতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।[২৭] পুরাণে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো দেবতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং তাতে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রাবল্যও লক্ষিত হয়। এই গ্রন্থগুলি প্রধানত আখ্যায়িকার আকারে রচিত, যা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

    লোকমতে, মহাভারত-রচয়িতা বেদব্যাস পুরাণসমূহের সংকলক।[২৮] যদিও পুরাণের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পাঠগুলি গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খ্রিস্টীয় তৃতীয়-পঞ্চম শতাব্দী) সমসাময়িক। এর অধিকাংশ উপাদানই ঐতিহাসিক বা অন্যান্য সূত্রাণুযায়ী এই সময়কাল ও তার পরবর্তী শতাব্দীগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরাণগ্রন্থগুলি ভারতের নানা স্থানে রচিত হয়েছিল। পুরাণের সামগ্রিক পাঠে কিছু সাধারণ ধারণা লক্ষিত হয়; কিন্তু একটি পুরাণের উপর অপর আরেকটি পুরাণের প্রভাব অন্বেষণ দুঃসাধ্য। তাই সাধারণভাবে এগুলিকে সমসাময়িক বলেই ধরে নেওয়া হয়।.[২৯]

    লিখিত পাঠ্যগুলির রচনাতারিখ পুরাণের প্রকৃত রচনাতারিখ নয়। কারণ একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে পূর্ববর্তী এক সহস্রাব্দ কাল ধরে এই কাহিনিগুলি মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়ে আসে। এবং পরবর্তীকালে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এগুলির আকার ও রূপ পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।[৩০]

    কাশীর মহারাজা ডক্টর বিভূতি নারায়ণ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে অল ইন্ডিয়া কাশীরাজ ট্রাস্ট গঠিত হলে পুরাণ নিয়ে সুসংহত গবেষণার কাজ শুরু হয়। এই সংস্থা থেকে পুরাণের সমালোচনামূলক সংস্করণ এবং পুরাণম্ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।[৩১]

    উপনিষদ

    উনিশ শতকের প্রথমভাগে লেখা ঋগ্বেদ পুথি

    উপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: उपनिषद्) হিন্দুধর্মের এক বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থের সমষ্টি। এই বইগুলিতে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, উপনিষদ্‌গুলিতে সর্বোচ্চ সত্য ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে। উপনিষদ্‌গুলি মূলত বেদ-এর ব্রাহ্মণআরণ্যক[৩২] অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায়। এগুলি প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।

    দুশোরও বেশি উপনিষদের কথা জানা যায়। এগুলির মধ্যে প্রথম বারোটিই প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলিকে “মুখ্য উপনিষদ” বলে। ভগবদ্গীতা, ব্রহ্মসূত্র এবং মুখ্য উপনিষদ্‌গুলি[৩৩] (এগুলিকে একসঙ্গে প্রস্থানত্রয়ী বলা হয়) পরবর্তীকালে হিন্দু বেদান্ত দর্শনের বিভিন্ন শাখার জন্ম দিয়েছিল। এগুলির মধ্যে দুটি একেশ্বরবাদী শাখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[note ১][note ২][note ৩]

    ঐতিহাসিকদের মতে, মুখ্য উপনিষদ্‌গুলি প্রাক্‌-বৌদ্ধ যুগ থেকে[৩৭][৩৮] শুরু করে খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত[৩৮] সুদীর্ঘ সময়কালের বিভিন্ন পর্বে রচিত হয়। অপর দিকে অপ্রধান উপনিষদগুলি মধ্যযুগ ও প্রাক্‌-আধুনিক যুগের রচনা।[৩৯] অবশ্য প্রতিটি উপনিষদের সঠিক রচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ব্রিটিশ কবি মার্টিন সেমোর-স্মিথ উপনিষদ্‌গুলিকে “সর্বকালের ১০০টি সবচেয়ে প্রভাবশালী বই”-এর তালিকাভুক্ত করেছেন।[৪০] আর্থার শোপেনহাওয়ার, রালফ ওয়াল্ডো এমারসন ও হেনরি ডেভিড থোরো সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপনিষদ্‌গুলির গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। গবেষকেরা উপনিষদের দর্শনের সঙ্গে প্লেটোকান্টের দর্শনের মিল খুঁজে পান।[৪১][৪২]

    বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ

    ত্রিপিটক

    মূল নিবন্ধ: ত্রিপিটক

    ত্রিপিটক

    ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম। বুদ্ধের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হচ্ছে। এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক, সূত্র পিটকঅভিধর্ম পিটক

    পিটক শব্দটি পালি এর অর্থ – ঝুড়ি, পাত্র, বাক্স ইত্যাদি, অর্থ যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়।[৪৩] বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ। খ্রীষ্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ এর পরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রিষ্ট পূর্ব ৫৪৩ অব্দে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রিষ্ট পূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্দে। প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়।[৪৪]

    বিনয় পিটক

    বিনয় ত্রিপিটকের সর্বাগ্রে গ্রথিত বিষয়, বিনয় বুদ্ধশাসনের আয়ু স্বরুপ, বিনয়ের স্থিতিতেই বুদ্ধ শাসনের স্থিতি নির্ভরশীল। গৌতম বুদ্ধের পরিনির্বাণের অব্যবহতি পরে এ বিষয় অনুধাবন করে বুদ্ধশিষ্যদের অগ্রজ সারির প্রাজ্ঞ- অভিজ্ঞ ধর্মধর, বিনয়ধর ও মাতিকাধর ভিক্ষুদের নিয়ে প্রথম সংগীতির মাধ্যমে বিনয় ও ধর্ম সংরক্ষ্ণণের ব্যবস্থা করা হয়। [৪৫]

    সূত্র পিটক

    সূত্র শব্দের অর্থ সত্যের প্রকাশ । সেই সত্য হলো তথাগত গৌতম বুদ্ধ সম্বোধির প্রভাবে জ্ঞাত সত্যের প্রকাশ। অন্যভাবে বলা যায় চতুরার্য সত্যের সূচনা করে বলেই সূত্র। [৪৬] যে কথা স্বয়ং বুদ্ধ বলেছেন ” চারি আর্য্য সত্য বর্জিত কোন ধর্ম নেই।” সুতরাং – দুঃখ , দুঃখের কারণ (সমুদয়) , দুঃখ নিরোধ ও দুঃখ নিরোধের উপায় – এই চারি সত্যের ব্যখামুলক প্রকাশ বুদ্ধ বচনের যেই অংশে নিহিত তাই সূত্র। সূত্র জাতীয় বুদ্ধ বচন সমুহ ত্রিপিটকের যে বিভাগে একত্রীকরণ করা হয়েছে তাকে সুত্ত পিটক বলে।Prof. Winternitz লিখেছেন ” the suttapitak is our mose reliable source for the Dhamma , the religion of Buddha and his earliest disciples” [৪৭]

    অভিধর্ম পিটক

    Dharma book

    ত্রিপিটকের তিন মূল ধারার অন্যতম একটি হলো অভিধর্ম পিটক। এটিকে বৌদ্ধ দর্শনের সংহত সংস্করণ বলা হয়। এখানে বৌদ্ধ দর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ রয়েছে। তথাগত বুদ্ধ নানা উপদেশের মাধ্যমে যে তত্ত্বসমূহ উপস্থাপন করেছেন, যে নৈতিক আদর্শিক বিষয়সমুহ তিনি অনুসরণ, অনুকরণ ও অনুধাবন করতে উপদেশ দিয়েছেন সে তত্ত্বসমুহের বিন্যস্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে বিনয় পিটকে।[৪৮] বাঙ্গালী অভিধর্ম গবেষকদের মধ্যে অন্যতম বীরেন্দ্র লাল মুৎসদ্দি অভিধর্ম পিটক সম্বন্ধে বলেছেন:

    সূত্রের ভাষা আছে, উচ্ছ্বাস আছে, উদান আছে, গাথা আছে, উদ্দীপনা আছে, অপায় আছে, অপায় ভয় আছে, দেব-ব্রহ্মা আছে, দেব-ব্রহ্মলোকের আকর্ষণ আছে, নির্বাণের সুসমাচার আছে।[৪৯]

    খ্রিস্ট ধর্মশাস্ত্র

    বাইবেল

    মূল নিবন্ধ: বাইবেল

    গুটেনবার্গ বাইবেল

    বাইবেল হল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল (বিবলজ) শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে বা ‘পাওযা’ গ্রীক বিবলিয়া শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘একটি পুস্তক’। এটি প্যাপিরাস গাছের ছাল। বাইবেল হচ্ছে শাস্ত্র লিপি বা পুস্তক, ঈশ্বরের বাক্য। বাইবেল হলো ৬৬টি পুস্তকের একটি সংকলন, যা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত— ৩৯টি পুস্তক সংবলিত পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, এবং ২৭টি পুস্তক সংবলিত নতুন নিয়ম বা নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টধর্মমতে, ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক বাইবেল রচনা করেছিলেন। এরা ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন লোক। বাইবেলের মুখ্য বিষয়বস্তু বা কেন্দ্রমণি হলেন যীশুপুরাতন নিয়ম মূলত হিব্রু ভাষায় লিখিত, তবে দানিয়েল ও ইষ্রা পুস্তক দুটির কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় লিখিত। নুতন নিয়ম গ্রীক ভাষায় রচিত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই বাইবেল লিখেছেন। খ্রিস্টানগণ বিশ্বাস করেন, এই বাইবেল রচনা হয়েছিল খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদের অন্যতম পবিত্র আত্মার সহায়তায়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে মানুষের গুনাহ্‌ থেকে নাজাত করার জন্য ঈশ্বর তার মনোনিত ব্যক্তি যীশুকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। যে কেউ যীশুর প্রতি বিশ্বাস করে এবং পাপ মাফ পাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ঈশ্বরের দিকে ফেরে সেই মুক্তি পায়। বাইবেলের ইউহোন্না খন্ডের ১৪ রুকু ৬ আয়াতে বলা হয়েছে, “আমিই (যীশুই) পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে (অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে) যেতে পারে না।” ইসলাম ধর্মে “বাইবেল” বলে কোনো ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় না। উল্লেখ পাওয়া যায়, ঈশ্বরের বাণীবাহক ঈসার [আ.] প্রতি অবতীর্ণ ইঞ্জিল নামক ধর্মগ্রন্থের। কুরআনে বর্ণিত ঈসাকেই বাইবেলে যীশু বলা হয়। তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে বাইবেল আল্লাহর গ্রন্থ ইনযিলের পরিবর্তিত গ্রন্থ। কারণ মুসলিম ধারণা মতে, খ্রিস্টান পন্ডিতরা ইনযিলে পরিবর্তন সাধন করেছে[৫০]

    ইসলাম ধর্মগ্রন্থ

    কুরআন

    মূল নিবন্ধ: কুরআন

    কুরআন

    কুরআন (القرآن) মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ।[৫১] “কুরান” বা “কুরআন” শব্দটি আরবী শব্দ, এই শব্দের উতপত্তি ও অর্থ নিয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের মাঝে মতপার্থক্য আছে। কারো কারো মতে কুরান শব্দটি নবী মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের “আলাম” বা নির্ধারিত নাম, যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর দ্বারা নির্ধারিত তিনটি পৃথক পৃথক কিতাব বুঝানো হয়ে থাকে, কুরান দ্বারাও ঠিক তেমনি একটি নির্ধারিত কিতাব বুঝানো হয়ে থাকে। এই হিসাবে শব্দটি –আরবী ব্যকরন রীতি অনুযায়ী- অন্য কোন উতস-শব্দ থেকে “মুশতাক” বা উদ্ভূত শব্দ নয়। ইমাম শাফী র. এর মত এটা। আবার অন্য আলেমের মত এই যে, কুরান শব্দটি তার উতস-শব্দ থেকে “মুশতাক” বা উদ্ভূত একটি শব্দ। যারা এই মত প্রকাশ করেন তারা আবার কুরানের উতস-মুল বা মুল শব্দ নির্ধারনে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করেছেনঃ কারো মতে কুরান শব্দটি আরবী “কারান” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ যুক্ত করা, যেহেতু কুরানে বিভিন্ন আয়াত, সুরা একে অপরের সাথে যুক্ত তাই একে “কুরান” বলা হয়ে থাকে। আবার কারো মতে মুল শব্দ “কারান” নয়, বরং মুল শব্দ হচ্ছে “করায়া” যার অর্থ পড়া, এখানে আরবী ভাষার রীতি অনুযায়ী পড়া দ্বারা পঠিত গ্রন্থ বা কিতাবকে বুঝানো হয়েছে । কুরানের এই শেষোক্ত অর্থই বেশি পরিচিত -অর্থাৎ কুরানের শাব্দিক অর্থ “পঠিত কিতাব”। [৫২] “কুরান আল্লাহর বাণী, যা তার রাসুলের উপর অবতীর্ণ হয়েছে, যার অনুরুপ কুরান পেশ করতে সবাই অক্ষম, যার তেলাওয়াত ইবাতাদ, যা “মুতাওয়াতির” বা অকাট্যভাবে বর্নিত, যা মুসহাফে লিখিত, যার শুরু হয়েছে সুরা ফাতিহা দিয়ে আর শেষ হয়েছে সুরা নাসের মাধ্যমে”। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবী মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আয়াত বা পঙ্‌ক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি বা ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবর্তীর্ণ হয়।[৫৩][৫৪][৫৫][৫৬] মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবর্তীর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়। তবে কুরআনে কোনও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামী ভাষ্যমতে কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরয়ানের যে আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে তা হল:

    আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।[৫৭]

    আরবি ব্যাকরণে কুরআন শব্দটি মাসদার তথা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি قرأ ক্বরা’আ ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে যার অর্থ পাঠ করা বা আবৃত্তি করা। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৫৮] এই শব্দটির মিটার বা “মাসদার” (الوزن) হচ্ছে غفران তথা “গুফরান”। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, غفر নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে “ক্ষমা করা”; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো غفران, এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং আরেকটি অর্থ হচ্ছে একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সূরা আল-কিয়ামাহ্ (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:

    অতঃপর, আমি যখন তা পাঠ করি (ক্বুরা’নাহু), তখন আপনি সেই পাঠের (কুরআ’নাহ্) অনুসরণ করুন।[৫৯]

    হাদিস

    Dharma book

    মূল নিবন্ধ: হাদিস

    হাদিস (আরবিতে الحديث) হলো মূলত ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক মুহাম্মাদের বাণী ও জীবনাচরণ। হাদিসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ। কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং হাদিসকে অনেক সময় তার ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ.) বলেন-
    والحديث لغة ضد القد يم واصطلا حامااضيف الى النبى ﷺ قولا له اوفعلا له اوتقرير اوصفة حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام –
    অর্থ: আভিধানিক অর্থে হাদীস শব্দটি কাদীম তথা অবিনশ্বরের বিপরীত আর পরিভাষায় বলা হয় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। চাই তার বক্তব্য হোক বা কর্ম বা অনুমোদন অথবা গুণ এমন কি ঘুমন্ত অবস্থায় বা জাগ্রত অবস্থায় তার গতি ও স্থির সবই হাদীস।

    বুখারী শরীফের বিশিষ্ট ব্যাখ্যাগ্রন্থ عمدة القارى এর মধ্যে হাদীস সম্বন্ধে রয়েছে:
    علم الحديث هو علم يعرف به اقوال النبى ﷺ وافعاله واخواله –
    অর্থ: ইলমে হাদীস এমন বিশেষ জ্ঞান যার সাহায্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অবস্থা জানতে পারা যায়। আর ফিক্হবিদদের নিকট হাদীস হল:
    اقوال رسول الله ﷺ وافعاله –
    অর্থ: হাদীস হলো আল্লাহর রাসূলের কথা ও কাজসমূহ।
    বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানা মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) এর মতে, হাদীস (حديث) এমন একটি বিষয় যা রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম ও নীরবতা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈনদের কথা, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়।[৬০]