মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কপিরাইট আইন তৈরি করা হয়েছে লেখক ও শিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য, তাদের সৃষ্টি করা শিল্প ও সংস্কৃতি উপর তাদের বিশেষ কিছু অধিকার প্রদান করার জন্য। কপিরাইট আইন, লেখক ও শিল্পীদের একচ্ছত্র অধিকার করতে প্রদান করে কাজ সৃষ্টি করতে এবং এগুলোর কপি বিক্রি করতে, একই সাথে অধিকার প্রদান করে ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন কাজ করেতে, এবং প্রকাশ্যে তাদের কাজ প্রদর্শন করতে ও সম্পাদনা করতে। এই একচেটিয়া অধিকার একটি সময় সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সাধারণত, অধিকারের এই মেয়াদ শেষ হয় কাজটির মালিকের মৃত্যুর ৭০ বছর পর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১লা জানুয়ারি, ১৯২৩ সালের আগে তৈরি করা যে কোনো সঙ্গীতকে সাধারণত বিবেচনা করা পাবলিক ডোমেইন হিসাবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কপিরাইট আইন নিয়ন্ত্রিত হয়, কপিরাইট আইন, ১৯৭৬ দ্বারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে স্পষ্টভাবে ক্ষমতা প্রদান করেছে কংগ্রেসকে কপিরাইট আইন তৈরি করার জন্য যা আর্টিকেল ১, সেকশন-৮, ধারা ৮, এ পরিচিত রয়েছে,[১] হিসেবে কপিরাইট ধারা হিসাবে। কপিরাইট ধারার অধীনে কংগ্রেসের ক্ষমতা আছে, “বিজ্ঞানের অগ্রগতি উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় শিল্পকলাকে, সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুরক্ষিত করার, যাতে লেখক ও উদ্ভাবকরা তাদের নিজ নিজ লেখা এবং আবিষ্কারের উপর মেধাস্বত্ত অধিকার পায়।”[২]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কপিরাইট আইনের আদি গোড়া খুজে পাওয়া যায় ব্রিটিশ স্ট্যাচুট অফ অ্যানা পাশ হওয়ার পর থেকেই, যা প্রভাব রাখে প্রথম ইউএস ফেডারাল কপিরাইট আইন, কপিরাইত এক্ট ১৭৯০ পাশ করতে। এরপর থেকে এই কপিরাইট আইনটি বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, সবচেয়ে আলোচিত, কপিরাইট আইন ১৯৭৬ ও সনি বোনো কপিরাইট টার্ম এক্সটেনশন এক্ট ১৯৯৮ (যা “মিকি মাউস প্রটেকশন এক্ট” নামেও পরিচিত, কারণ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফলতাপ্রাপ্ত কার্টুন চরিত্র মিকি মাউসের কপিরাইটের সময় সীমা শেষ হওয়া থেকে রক্ষা পায়)।
মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষমাত্রই এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা।[১] যদিও অধিকার বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝানো হয় তা এখন পর্যন্ত একটি দর্শনগত বিতর্কের বিষয়।[২] বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে, যখন আমরা দেখছি যে, মানুষের অধিকারসমূহ আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানির কারণে বার বার লংঘিত হচ্ছে। প্রথমত একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধিনস্তদের অধিকার রক্ষা করবে। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র এবং তৃতীয়ত আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করে থাকে।
মানবাধিকারের সংজ্ঞা
মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির সদস্যদের আচার আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক আইন সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত যা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিষয় হিসেবে ধর্তব্য।[৩] এতে কোন মানুষ এজন্য সংশ্লিষ্ট অধিকার ভোগ করবে যে, সে জন্মগতভাবে একজন মানুষ।[৪] অন্যকথায় বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য মানুষের যেসকল অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত তাদেরকে মানবাধিকার বলে
All human beings are born free and equal in dignity and rights.
অর্থাৎ ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।’[৫] বর্তমান বিশ্বে Human Rights শব্দটি বহুল আলোচিত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক-বিতণ্ডা ও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত। একদিকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে মতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো পর্যন্ত অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সাথে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে।[৬]
মানবাধিকারের ক্রমবিকাশ
প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্র সমূহ
মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ধারায় প্রাচীন ভারতীয় নীতি শাস্ত্র সমূহ এক গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত করা যায়। প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহের আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল ন্যায়-নীতি এবং মানব ধর্ম, যা বাস্তবে মানব অধিকারকেই নির্দেশ করেছে। এই সব ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে মানুষের জীবনে নৈতিক বিকাশ, মানুষের করণীয়ের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চা পরোক্ষভাবে নৈতিক নীতি বা মানব অধিকার নিয়েই বিস্তার লাভ করেছে।
সাইরাস সিলিন্ডার
৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস যিনি সাইরাস দ্য গ্রেট’নামে সমধিক পরিচিত ব্যাবিলন আক্রমণ করেন। ব্যাবিলন আক্রমণের পর তিনি ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা নির্যাতিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন। তাদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনেরও ব্যবস্থা করে দেন। অতঃপর সাইরাসের নির্দেশে একটি সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। যা সাইরাস সিলিন্ডার নামে অভিহিত। এতে সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ।
মদীনা সনদ
মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (স.) কর্তৃক মদীনা সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মদীনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এ সনদে মোট ৪৭ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলোতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সর্বপ্রথম সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদসমূহ:
সনদে স্বাক্ষরকারী সকল সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে এবং সব সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।
সব নাগরিক পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও ধর্ষণ নিষিদ্ধ।
কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার কারণে অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।
দুর্বল ও অসহায়দের সর্বোতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।
ম্যাগনা কার্টা
মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে ম্যাগনা কার্টাকে একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মানবাধিকারের মহাসনদ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত। এটি ছিলো মূলতঃ ইংল্যান্ডের রাজা জন ও ধনী বিত্তশালী ব্যারনদের মধ্যে ১২১৫ সালে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এতে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিলো যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে খামখেয়ালীভাবে জনগণের উপর কর আরোপ করা যাবেনা। রাজকর্মকর্তারা যথেচ্ছভাবে জনগণের ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে না।ব্যাবসায়ীরা রাজ্যের মধ্যে ইচ্ছেমতো একস্থান হতে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারবে। কোনো স্বাধীন মানুষকে বিচারিক রায় বা দেশীয় আইনানুযায়ী ব্যতীত গ্রেপ্তার, কারারুদ্ধকরণ, সম্পত্তিচ্যুত, দীপান্তরিত বা নির্বাসিত কিংবা হয়রানির শিকার করা যাবে না।
এই ম্যাগনা কার্টা চুক্তির মধ্য দিয়েই সংসদীয় গণতন্ত্রের পাশাপাশি আইনের শাসনের ধারণার যাত্রাও শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক সনদেই বিশ্ব ইতিহাসে সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয় কোনো দেশের রাজাসহ সে দেশের সকলেই রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। প্রজাদের অধিকার ও রাজার ক্ষমতা হ্রাসের যৌক্তিক এ দলিল পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহুদেশে মানবাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেকে কাজ করেছে।
পিটিশন অব রাইটস
১৬শ শতকে ব্রিটিশ জনগণের আন্দোলনের ফলে প্রথম যে তাৎপর্যপূর্ণ দলিলের সৃষ্টি হয় তা পিটিশন অব রাইটস নামে অভিহিত। ১৬২৮ সালে পিটিশন অব রাইটস সংসদ কর্তৃক আইনের আকারে গৃহীত হয়েছিলো। পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া করারোপ, বিনা অপরাধে কারারুদ্ধকরণ, ব্যক্তিগত বাসস্থানে স্বেচ্ছাচারী অনুপ্রবেশ এবং সামরিক আইনের প্রয়োগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করেছিলো মানবাধিকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি।
বিল অব রাইটস
১৬৮৯ সালে বিল অব রাইটস ব্রিটিশ পার্লমেন্টে গৃহীত হয় ও বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ভল্টেয়ারের মতে, বিল অব রাইটস প্রত্যেক মানুষকে সেই সমস্ত প্রাকৃতিক অধিকার পুনরুদ্ধার করে দিয়েছে যেগুলো থেকে তারা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসক থেকে বঞ্চিত ছিলো। যেমনঃ জীবন ও সম্পত্তির পূর্ণ স্বাধীনতা, লেখনী দ্বারা জাতির নিকট কথা বলার অধিকার, স্বাধীন লোকদের দ্বারা গঠিত জুরি ছাড়া আর কারো দ্বারা ফৌজদারী অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন না হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। শুধু তাই নয়, বিল অব রাইটস ঘোষণা করে, পার্লামেন্টের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে রাজা যদি কোনো আইনকে স্থগিত বা ভঙ্গ করেন অথবা রাজা তার খরচের জন্য ইচ্ছেমত করারোপ করেন বা রাজ-কমিশন বা রাজ-আদালত গঠন করেন তাহলে এগুলো হবে বেআইনি ও ধ্বংসাত্মক।
বিভিন্ন ধর্মে মানবাধিকারের স্বরুপ
ইসলাম ধর্মে মানবাধিকার
সর্বশেষ একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মের প্রচারক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতৃক নাজিলকৃত কুরআনুল কারীমের বিভিন্নস্থানে মানবাধিকারের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। ইসলামে সার্বজনীন মানবাধিকারের বিষয়টি জীবনের সর্বক্ষেত্র ও বিভাগে পরিব্যাপ্ত। ইসলাম মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবময় অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। মানুষকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের মর্মবাণী শুনিয়ে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বংশীয় মর্যাদা, শ্রেণীবৈষম্য ও বর্ণপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। অধীনদের প্রতি সদাচারী ও ন্যায়পরায়ণ হতে শিক্ষা দিয়েছে। আরব-অনারব, সাদা-কালো সবাই একই পিতা-মাতা হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। মানুষের মধ্যে মর্যাদার কোনো পার্থক্য হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার, জীবনরক্ষণ ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সংঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার, হালাল উপার্জনের অধিকার, এতিম, মিসকিন, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশির অধিকার, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রভৃতি সব ব্যাপারেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।[৭]
মহানবী সা: বিদায় হজ্জের ভাষণে এসব উল্লেখিত মানবাধিকারের কথা সংক্ষিপ্ত অথচ স্পষ্ট করে বলে গেছেন।[৮]
ভারতবর্ষে চুক্তি সম্পর্কীয় আইন ভারতীয় চুক্তি আইন ১৮৭২ (ইংরেজি: Indian Contract Act, 1872) তে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। এই আইনটি ইংরেজ শাসনের সময়ে অনুমোদিত এবং এটি ইংরেজ সাধারণ আইনের (British Common Law) নীতিসমূহের ওপর প্রতিষ্ঠিত। জম্মু ও কাশ্মীর বাদে সমগ্র ভারতে ভারতীয় চুক্তি আইনটি প্রযোজ্য। এই আইনটি কোন্ পরিস্থিতিতে কোনো কাজের জন্য দুটি দলের হওয়া চুক্তি আইনমতে পালনীয় হবে তাকে নির্ণয় করে। প্রত্যেক লোকই প্রতিদিন বিভিন্ন চুক্তিতে জড়িত হয়ে পড়ে। এই চুক্তিসমূহ থেকে কিছু অধিকার এবং কর্ত্তব্যর সৃষ্টি হয়। ভারতীয় চুক্তি আইনে ভারত এই অধিকার এবং কর্ত্তব্যসমূহের সুরক্ষা তথা পালনের বিষয় সামগ্রিকভাবে নেয়।
ইতিহাস
১৮৬১ সালে ইংরেজ শাসনকালে চেয়ারম্যান স্যার জন রমিলির (Sir John Romilly) তত্ত্বাবধানে স্যার এডওয়ার্ড রিয়ান, আর. লোব, জে. এম. মেকলয়েড, স্যাার ডব্লিউ. আরলি এবং জাষ্টিস উইলসকে প্রারম্ভিক সদস্য হিসাবে নিয়ে গঠন করা তৃতীয় আইন আয়োগ (The Third Law commission) ভারতের জন্য চুক্তি আইনের এক প্রতিবেদন খসড়া হিসাবে দাখিল করে। এই খসড়া ১৮৭২ সালের ২৫ এপ্রিল সেই বর্ষের নবম আইন হিসাবে গৃহীত হয় এবং ১৮৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় চুক্তি আইনটি কার্যকরী হয়।
ভারতীয় চুক্তি আইন ১৮৭২ গৃহীত হওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতে চুক্তির জন্য কোনো সংগঠিত আইন ছিল না। দেশটির মুখ্য নগরসমূহ অর্থাৎ মাদ্রাজ, বোম্বে এবং কলিকতায় বিভিন্ন চুক্তিসমূহ রাজা ১ম জর্জ ১৭২৬ সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অনুমোদন করা এক সনদমতে সম্পন্ন হয়েছিল। এর পরে ১৭৮১ সালে ইংরেজ সরকার নিষ্পত্তি আইন বলবৎ করে। নিষ্পত্তি আইন অনুসারে ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সওয়াল-জবাব করেছিলেন। পক্ষের ধর্ম অনুসারে বিবাদসমূহের মীমাংসা হিন্দু আইন অথবা মুসলিম আইনমতে হয়েছিল। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে পদকীয় আইন প্রযোজ্য ছিল। মূল শহরগুলির বাইরের চুক্তিসমূহ ইংরেজ চুক্তি আইনসমূহের মতে সম্পন্ন করা হয়েছিল।
ক্রমবিকাশ
গৃহীত হওয়ার সময়ে আইনটির ২৬৬ টা ধারা ছিল। আইনটি যথেষ্ট বড় পরিসরের ছিল এবং এটি নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ নিয়ে হয়েছিল।
চুক্তি আইনের প্রাথমিক নীতিসমূহ (ধারা ১-৭৫)
সামগ্রী বিক্রীর সঙ্গে জড়িত চুক্তি (ধারা ৭৬-১২৯)
বিশেষ প্রকারের চুক্তি (ক্ষতিপূরণ, নিশ্চিতি, জামিন এবং বন্ধক অন্তর্ভুক্ত) (ধারা ১২৫-২৩৮)
অংশীদারী ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত চুক্তি (ধারা ২৩৯-২৬৬)
ভারতীয় চুক্তি আইনে সামগ্রী বিক্রয় এবং অংশীদারী ব্যবসায় সম্পর্কীয় সরল এবং প্রাথমিক নীতিসমূহ সামরি লৈছিল। বাণিজ্য ক্ষেত্রটির প্রগতির ফলত উদ্ভব হওয়া নতুন নিয়ম-নীতিসমূহ সামরি ল’বলৈ চুক্তি আইনটি যঠেষ্ট নাছিল। গতিকে ১৯৩০ এবং ১৯৩২ সালে সামগ্রী বিক্রয় এবং অংশীদারী ব্যবসায়র জন্য দুটি নতুন আইন ক্রমে সামগ্রী বিক্রয় আইন ১৯৩০ এবং অংশীদারী ব্যবসায় আইন ১৯৩২ গৃহীত করা হয়।
বর্তমান সময়ে ভারতীয় চুক্তি আইনে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ এসেছে।
চুক্তি আইনের প্রাথমিক নীতিসমূহ (ধারা ১-৭৫)
বিশেষ প্রকারের চুক্তি (ক্ষতিপূরণ, নিশ্চিতি, জামিন এবং বন্ধক অন্তর্ভুক্ত) (ধারা ১২৫-২৩৮)[১]
সংজ্ঞা
আইনটির ধারা ২(এইচ) মতে “আইনমতে বলবৎ হওয়া যেকোনো বন্দোবস্তই”চুক্তি। অর্থাৎ বৈধ চুক্তির জন্য এক বন্দোবস্ত ও থাকা এবং এটি আইনমতে বলবৎ হওয়া প্রয়োজনীয়।[২]
ধারা ২(ই) মতে “পরস্পরের জন্য লাভের সৃষ্টি করা সকল অঙ্গীকার এবং অঙ্গীকারের সকল সমষ্টি” বন্দোবস্ত।[২]
ধারা ২(বি) মতে “যখন একজন লোক তাঁকে দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয় তখন প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়া বলে ধরা হয়। যখন একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় তখন এটি একটি অঙ্গীকার হয়ে যায়।”[২]
বৈধ চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত
ধারা ১০ অনুসারে, “সবধরণের বন্দোস্তই চুক্তি, যদি এইসমূহ দুইপক্ষের মুক্ত সম্মতি, চুক্তির জন্য যোগ্যতার, এক ন্যায্য সামগ্রীর সঙ্গে ন্যায্য লাভের জন্য হয়, এবং যদি একে প্রকাশ্যে অবৈধ বলে স্বীকৃত দেওয়া না হয়।”
প্রস্তাব
ভারতীয় চুক্তি আইন ১৮৭২ ধারা ২(এ) ত প্রস্তাবের সংজ্ঞা এরকম দেওয়া হয়েছে, “যখন একজন ব্যক্তি অন্য একজনের সম্মতি নিয়ে কোনো এক কাজ করার বা কাজটি করার থেকে মুক্ত থাকার ইচ্ছা অন্যজনকে ব্যক্ত করে, তখন তাঁকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে ধরা হয়।” এইমত এক ন্যায্য প্রস্তাব হতে হলে কাজটি করা বা না করার ইচ্ছার বিষয়টি ব্যক্ত করা জরুরী। কিন্তু কেবল ইচ্ছা ব্যক্ত করলেই এটি ন্যায্য প্রস্তাব হয় না। এই ইচ্ছার কথা প্রস্তাব পাঁচজনকে তাদের সম্মতি নিয়ে প্রত্যেককে জানাতে হয় এবং এই প্রস্তাবে এমন কোনো শর্ত্ত থাকবে না যেটি পূর্ণ না হলে প্রস্তাব গৃহীত হল বলে ধরা যায়।
প্রস্তাবের বিভাগসমূহ: ১. সাধারণ প্রস্তাব : সকলের জন্য। ২. বিশেষ প্রস্তাব : নির্দিষ্ট লোকর জন্য। ৩. বিপরীতমুখী প্রস্তাব : দুইপক্ষ পরস্পরকে দেওয়া একই প্রস্তাব। ৪. পরিবর্ত্তিত প্রস্তাব : মূল প্রস্তাবের শুদ্ধি। ৫. স্থিত প্রস্তাব : কোনো বিশেষ সময় পর্যন্ত থাকা প্রস্তাব।
প্রস্তাব গ্রহণ
ধারা ২(বি) মতে “যখন একজন লোক তাঁকে দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয় তখন প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরা হয়। যখন একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।”
ন্যায্য প্রস্তাব গ্রহণের নিয়মসমূহ:
১. প্রস্তাব গ্রহণ এবং পাশ করতে হবে।
২. প্রস্তাব দাতাকে সম্মতির বিষয়ে অন্যজনকে জানাতে হবে।
৩. প্রস্তাবটি নির্ধারিত উপায়ে গ্রহণ করতে হবে।
8. নির্দিষ্ট করে দেওয়া অথবা এক যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।
৫. মৌনতাকে প্রস্তাব গ্রহণ হিসাবে ধরা হয় না।
৬. দুইপক্ষ বিষয়টিতে সম্মত হতে হবে।
লাভ
ধারা ২(ডি) র সংজ্ঞা অনুযায়ী, “when at the desire of the promisor, the promisee or any other person, has done or abstained from doing, or does or abstains from doing, or promises to do or abstain from doing, something, such act or abstinence or promise is called a consideration for the promise.”[৩]
বন্দোবস্ত একটি দুইপক্ষের একটা ন্যায়সংগত লাভের (consideration) জন্য হতে হবে।
সেই লাভ আইনসংগত হবে না যদি এটি:
আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হয়।
এমন প্রকৃতির, যাকে অনুমোদন জানালে কোনো আইন ভংগ হয়।
এক জালিয়াতি, অথবা কোনো ব্যক্তি তথা অন্যের সম্পত্তির অনিষ্ট সাধন করে।
ন্যায়ালয়ে একই নীতিবিরুদ্ধ, অথবা জনগণের নীতির বিপক্ষে যায়, এবং
লাভ বিভিন্ন রূপের যেমন টাকা, সামগ্রী, পরিষেবা, বিবাহের অঙ্গীকার, ভবিষ্যতে কার্য পালনের অঙ্গীকার ইত্যাদি হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের যোগ্যতা
আইনটির ধারা ১১ অনুযায়ী এক বৈধ চুক্তির জন্য পক্ষসমূহের নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে।
তিনি নাবালক হলে চলবে না। ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্ক আইন ১৮৭৫ মতে ১৮ বছরের অনুর্ধ্বজনই নাবালক।
চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময়ে তাকে মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায় থাকতে হবে।
তাকে এমন একজন ব্যক্তি হলে চলবে না যাকে আইন ব্যক্তিগতভাবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে।
মুক্ত সম্মতি
ধারা ১৩ অনুযায়ী, দুজন বা ততোধিক ব্যক্তিকে তখনই সম্মত হওয়া বলে ধরা হয় যখন তারা কোনো এক বিষয়ে একই অর্থে একমত হয়।[৪]
একটি সম্মতি তখনই মুক্ত হয় যখন এটি বাধ্যকরণ (ধারা ১৫), দমনীয় প্রভাব (ধারা ১৬), জাল (ধারা ১৭), অপবর্ণনা (ধারা ১৮) এবং ভুলের দ্বারা (ধারা ১৯) প্রভাবিত না হয়।
চুক্তির প্রকার
চুক্তির নির্বাহ বা বাতিলকরণ
চুক্তি একটি নিম্নলিখিত ধরনে নির্বাহ অথবা রদ করা হতে পারে।
১. একমত মাধ্যমে নির্বাহ (ধারা ৬২, ৬৩)
দুইপক্ষের মুক্ত সম্মতি থাকলে একটি চুক্তি নির্বাহ করতে পারা যায়।[৫]
২. রূপায়ণের মাধ্যমে নির্বাহ (ধারা ৩৭, ৩৮)
চুক্তি অনুযায়ী কার্য সমাপন হলেই সেই চুক্তি নির্বাহ হয়।[৬]
৩. আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাহ
চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তির মৃত্যু হ’লে অথবা তিনি দেউলীয়া অবস্থাত পড়লে আইন হস্তক্ষেপ করে চুক্তিটি বাতিল করে। কোনো ক্ষেত্রে যদি পূর্বের অধিকার নতুন অধিকারের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় তবে পূর্বের অধিকার সম্বন্ধীয় চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।[৭]
৪. চুক্তি ভংগকরণের মাধ্যমে নির্বাহ (ধারা ৩৯)
কোনো পক্ষই চুক্তি অনুসারে কার্য না করলে সেই চুক্তি বাতিল হয়। এইক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য পক্ষ প্রথম পক্ষের বিপক্ষে আইনের কাছে যেতে পারে।[৮]
৫. রূপায়ণ করার সম্ভাবনাহীনতার মাধ্যমে (ধারা ৫৬)
একটি চুক্তি রূপায়ণ করা প্রকৃতপক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়লে এটি নির্বাহ হয়।[৯]
৬. সময় পেরোনোর ফলে
চুক্তি রূপায়ণের সময় পেরিয়ে গেলে এটি বাতিল হয়ে যায়। মেয়াদ আইন ১৯৪০ (The Limitation Act 1940) অনুযায়ী একটি চুক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপায়িত করতে হয়।[১০]
বাংলাদেশ একটি সাধারণ আইনের দেশ। এটির আইনগত পদ্ধতি বিকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ ভারতের উপর তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ব্রিটিশ নিয়মে। ব্রিটিশ ও মোগল আমলে বাংলাদেশ বঙ্গ নামে পরিচিত ছিল এবং এর আগে আগে বাংলাদেশের আরও কিছু নাম ছিল। যদিও আমাদের প্রায় পূর্ব ঐতিহাসিক যুগ থেকেই বাংলাদেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উপকরণ ও প্রতিষ্ঠান ছিল। মুঘলরা প্রথমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলি শনাক্ত ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। কিং জর্জ ১ প্রদত্ত ১৭২৬-এর সনদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে মাদ্রাজ, বোম্বাই এবং কলকাতায় মেয়রের আদালত প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয় এবং ব্রিটিশ ভারতের জন্য সেটাকে প্রথম সংহিতাবদ্ধ আইন হিসাবে স্বীকৃত হয়। তখনকার ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে তৎকালীন বাংলার জন্যেও এটি প্রথম সংহিতাবদ্ধ আইন ছিল। একাত্তরের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সংসদ কর্তৃক প্রণীত সংবিধিবদ্ধ আইন আইন গঠনের প্রাথমিক রূপ। [১]
ইতিহাস
মৌলিক অধিকার আইন
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় অংশে মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল করা হবে (ধারা-২৬)
আইনের সামনে সমতা (ধারা-২৭)
ধর্ম, ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য (ধারা-২৮)
সরকারি চাকরিতে সুযোগের সমতা (ধারা-২৯)
বিদেশী উপাধি, ইত্যাদি নিষিদ্ধকরণ (ধারা-৩০)
আইন রক্ষার অধিকার (ধারা-৩১)
জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষা (ধারা-৩২)
গ্রেফতার ও আটকের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা (ধারা-৩৩)
জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধকরণ (ধারা-৩৪)
বিচার ও শাস্তির ক্ষেত্রে সুরক্ষা (ধারা-৩৫)
চলাফেরার স্বাধীনতা (ধারা-৩৬)
সমাবেশের স্বাধীনতা (ধারা-৩৭)
সংগঠনের স্বাধীনতা (ধারা-৩৮)
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ-৩৯)
পেশা বা পেশার স্বাধীনতা (ধারা-৪০)
ধর্মের স্বাধীনতা (ধারা-৪১)
সম্পত্তির অধিকার (ধারা-৪২)
বাড়ি এবং চিঠিপত্রের সুরক্ষা (ধারা-৪৩)
মৌলিক অধিকারের প্রয়োগ (ধারা-৪৪)
শৃঙ্খলা আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন (ধারা-৪৫)
ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষমতা (ধারা-৪৬)
কিছু আইনের জন্য সংরক্ষণ (ধারা-৪৭)
নির্দিষ্ট নিবন্ধের অপ্রযোজ্যতা (ধারা-৪৭.ক)
মামলা আইন
বিচারিক নজির বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশী আদালত সাংবিধানিক আইনের মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক নজির প্রদান করেছে, যেমন বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ সরকার, যা সামরিক আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বনাম মাসদার হোসেনের রায়ে ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
অরুণা সেন বনাম বাংলাদেশ সরকার, সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি আটক ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে নজির স্থাপন করেছে। আদালত আব্দুল লতিফ মির্জা বনাম বাংলাদেশ সরকারের রায়ে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতি নিশ্চিত করেছে । দুটি রায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর অধীনে বেশিরভাগ আটককে অবৈধ করার নজির ছিল ।
বাংলাদেশের আইনে বৈধ প্রত্যাশার মতবাদ বিচারিক নজির দ্বারা বিকশিত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি (ইংরেজি: Chief Justice) হল বিচারর বিভাগ রয়েছে এমন বেশ কিছু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের প্রিজাইডিং সদস্যের পদ। ইংরেজি সাধারণ আইন অনুসারে এই পদটি গঠন করা হয়। এই ধরনের সর্বোচ্চ আদালত বিশিষ্ট কিছু দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাংলাদেশ, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আইয়ারল্যন্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি; তবে যুক্তরাজ্যে এই বিচারব্যবস্থা কিছুটা ব্যতিক্রম।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
প্রধান বিচারপতি নির্ধারন এক একটি অঞ্চলে এক এক প্রক্রিয়ায় করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই এই পদটি আদালতের সর্বাপেক্ষা প্রবীন ব্যক্তিকে দেয়া হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এই পদটির জন্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক মনোনয়ন দিয়ে থাকেন যেটি পরবর্তিতে সিনেট কর্তৃক অনুমদিত হতে হয়।
টর্ট এর উদ্ভব মূলত ল্যাটিন শব্দ Toram থেকে, যার অর্থ দাঁড়ায় ভুল, অর্থাৎ যে দেওয়ানি ভুল আমল যোগ্য। বাংলাদেশে টর্ট কি, তা সম্পর্কে যথাযথভাবে কোথাও, অর্থাৎ সংবিধানে বা কোন আইনে উল্লেখ করা নেই। তবে, বাংলাদেশ সহ আমদের এই ভারতীয় উপমাহাদেশের যতগুলো দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল, সকল দেশের আইন ব্যাবস্থায় কমন ল-এর প্রভাব দেখা যায়। বাংলাদেশ-ও এর ব্যাতিক্রম নয়। টর্ট এর উৎপত্তি ইংল্যান্ডে, তাই এর সরাসরি উল্লেখ বাংলাদেশের সংবিধান বা কোন আইনে না থাকলেও, এখতিয়ারভুক্ত আদালতে এর আমলযোগ্যতা রয়েছে।
টর্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা এখনো পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এটি মুলত ধারণা এবং লিগ্যাল ম্যাক্সিমের উপর ভিত্তি করে বর্তমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত স্যালমন্ডের অভিমতটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত, যেখানে তিনি বলেছেন,
Tort is a civil wrong for which the remedy in common law action for unliquidated damages, and which is not exclusively the breach of a contrat, or, the breach of a trust, or, other merely equitable obligation.
যার অর্থ দাঁড়ায়,
টর্ট এমন এক প্রকারের প্রতিকার যা দেওয়ানি ক্ষতিসাধনের দরুন প্রদান করা হয়; যা পারতপক্ষে চুক্তিভঙ্গ, বিশ্বাসভঙ্গ বা এই জাতীয় ন্যায়সম্মত দায়ের অন্তর্গত নয়।
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ হলো বাংলাদেশে শিশু অধিকার বাস্তবায়নের একটি আইন। শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের জীবন বিকাশের সরকার 2011 সালে আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সুদূরপ্রসারী রূপকল্প বহন করা হয়েছে। এনীতিতে শিশু বলতে 18 বছরের কম বয়সী এবং কিশোর বলতে 14 থেকে 18 বছর বয়সীদের বুঝায়। জবরদস্তিমূলক ভারি ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা এই আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।পথশিশু ও বিপথগামী শিশুদের বিকাশে পৃথক ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে ।[১]
প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ সংবিধানে ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষে ১৯৭৪ সালে শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠারলক্ষে প্রণীত হয় “শিশু আইন ১৯৭৪”। বহুমাত্রিক উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে এ আইনের যুগোপযোগীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯ এ স্বাক্ষর ও অনুসমর্থনকারী প্রথম রাষ্ট্রসমুহের মধ্যে বাংরাদেশ অন্যতম হওয়ায় ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করা হয়। ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেশ হিসাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করেছে। শিশু নির্যাতন বন্ধ করা, বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি সকল বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ ও তাদের প্রতি নিরাপত্তা বিধান করা অন্যতম লক্ষ্য ধরা হয়। জাতীয় শিশু অধিকার কমিটির সুপারিশমালার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৪ সালে প্রণীত জাতীয় শিশু নীতিকে আবারও যুগোপযোগী করার জন্য জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ প্রণয়ন করে।[১]
জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এর বিভিন্ন দিক
সংজ্ঞা : এ নীতিতে শিশু বলতে আঠারো বছরের কম বয়সী ব্যক্তি এবং কিশোর বলতে ১৪ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের বুঝায়।
পরিধি : এ নীতি বাংলাদেশের নাগরিক সকল শিশুর ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে বুঝায়।
মূলনীতি :
বাংলাদেশের সংবিধান, শিশু আইন ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহের আলোকে শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণ।
শিশু দারিদ্র বিমোচন।
শিশুর প্রতি সকল প্রকাল নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণ।
শিশুর সার্বিক সুরক্ষা ও সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে শিশুদের অংগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শিক্ষা, স্বাস্থ, পুষ্টি, নিরাপত্তা, বিনোদন ও অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গগত, ধর্মীয়, জাতিগত, পেশাগত, সামাজিক, আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির পরিচয় নির্বিশেষে সকল শিশু ও কিশোর কিশোরীর জন্য মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সর্বোত্তম উন্নয়ন ও বিকাশ নিশ্চিত করা।
কন্যা শিশু এবং প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
শিক্ষা ও শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুদের দেশ সম্পর্কে আগ্রহী ও সচেতন করে গড়ে তোলা যাতে তারা সৎ, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক রূপে বিকাশ লাভ করতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে শিক্ষার অপরিহার্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে শিশুদের একটি বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলা যাতে তারা ভবিষ্যতে দেশ ও বিশ্বের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়।
শিশুদের জন্য অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
শিশু ও কিশোর কিশোরীর জীবনকে প্রভাবিত করে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে তাদের মতামত প্রতিফলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
শিশু অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
এভাবে এ নীতিতে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ, শিশুর নিরাপদ জন্ম ও সার্বিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ, শিশুর দারিদ্র বিমোচন, শিশু স্বাস্থ্য, শিশুর বিকাশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৩ – ৫ বছর), শিশু শিক্ষা, শিশুর বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশুর সুরক্ষা, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম, অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম, শিশুর জন্ম নিবন্ধন, সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক শিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শিশুর সুরক্ষা, শিশুর অধিকার ও উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে শিশুর উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যক্রমে তাদের মতামত ও অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা, কিশোর কিশোরীদের উন্নয়ন করা, শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও বাস্তবায়ন কৌশলসূহ উল্লেখ আছে।[১]
পরবর্তীতে শিশু আইন
বাংরাদেশ সরকার পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের ধারা ২৬। (১) এ বলা হয়েছে বিচারকালীন শিশুকে নিরাপদ হেফাজতে রাখতে হবে যার মেয়াদ হবে যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ের জন্য। উপধারা (৩) এ বলা হয়েছে শিশুকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা একান্ত প্রয়োজন হলে শিশু-আদালত, সংশ্লিষ্ট শিশুকে উক্ত আদালত হতে যুক্তিসঙ্গত দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত কোনো প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করবার জন্য আদেশ প্রদান করবে : তবে শর্ত থাকে যে, এই উপ-ধারার অধীনে কোনো শিশুকে প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী অধিক বয়স্ক শিশুদের হতে প্রেরিত শিশুকে পৃথক করে রাখতে হবে। ধারা ৫৯। (১) এ বলা হয়েছে সরকার, বিচার প্রক্রিয়ায় আটকাদেশপ্রাপ্ত শিশু এবং বিচারের আওতাধীন শিশুর আবাসন, সংশোধন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে, লিঙ্গভেদে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। (২) উপধারা (১) এর প্রাসঙ্গিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া সরকার, যে কোনো সময়, এর যে কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠানকে শিশু অপরাধীদের অবস্থানের জন্য উপযুক্ত মর্মে প্রত্যয়ন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে- ধারা ৬৩। (৩) দণ্ডবিধির ধারা ৮২-এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে ৯ (নয়) বছর বয়সের কম বয়সী কোনো শিশুকে কোনো প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না : তবে শর্ত থাকে যে, কোনো কারণে ৯ (নয়) বছর বয়সের কম বয়সী অভিভাবকহীন কোনো শিশুকে কোথাও পাওয়া গেলে তাকে অধিদফতর বা উহার নিকটস্থ কোনো কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে এবং অধিদফতর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বোর্ডের গোচরীভূত করত: সংশ্লিষ্ট শিশুকে সুবিধাবঞ্চিত শিশু গণ্যে, ক্ষেত্রমতো, ধারা ৮৪ বা ধারা ৮৫-এর বিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।[২]
সুপারিশ
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ২৭ শে আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এক লটেবিল বৈঠকে কিছু সুপারিশ করে। যেমন রাষ্ট্রকে শিশুর প্রতি সব ধরণের সহিংসতা বন্ধে সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ ও প্রচলিত আইনের কার্যকর বাস্তÍবায়ন এর লক্ষ্যে রাজনৈতিক অঙ্গিকার প্রদান করা। এভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা যাতে সবাই শিশুদের প্রতি মানবিক দৃষ্টি রাখে। ইত্যাদি।[৩]
সমুদ্র আইন বলতে সমুদ্র সংক্রান্ত আইনকে বুঝায় অর্থাৎ সামুদ্রিক অঞ্চলে বিভিন্ন দেশসমূহের যে সকল অধিকার বিদ্যামান সে সম্পর্কিত আইনকে সমুদ্র আইন বলে।
সমুদ্র সম্পর্কিত আইন সমূহ
বিভিন্ন দেশে সমুদ্র সম্পর্কিত আইন রয়েছে, যেমন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক সমুদ্র আইন পাস করা হয় যা আঞ্চলিক পানি ও সামুদ্রিক এলাকা আইন ১৯৭৪ (The Territorial Waters And Meritime Zones Act, 1974) নামে পরিচিত। এছাড়া জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক “জাতিসংঘ কনভেনশন”-১৯৮২একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন যা বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত।
গোয়েন্দা (ইংরেজি: Detective) হচ্ছেন একজন পেশাদার অনুসন্ধানকারী বা তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি কোন পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য অথবা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি কর্তৃক মনোনীত গুপ্তচর হতে পারেন। সাম্প্রতিককালে গোয়েন্দাকে ‘ব্যক্তিগত গোয়েন্দা’ বা ‘ব্যক্তির অন্তঃদৃষ্টি’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। অনানুষ্ঠানিকভাবে, বিশেষত কথাসাহিত্যে একজন গোয়েন্দাকে নিবন্ধন বা লাইসেন্সধারী কিংবা লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় দেখা যায়। শার্লক হোমস এবং ইন্সপেক্টর ক্লোসিও অত্যন্ত জনপ্রিয় গোয়েন্দা ঔপন্যাসিক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত নাম।
গোয়েন্দার প্রধান কাজই হচ্ছে কোন গুরুতরভাবে লুক্কায়িত অপরাধ বা অমিমাংসিত ঐতিহাসিক অপরাধের ঘটনাপ্রবাহ তদন্তের স্বার্থে তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগ্রহ করে সংবাদের পিছনের সংবাদ জনসমক্ষে তুলে ধরা। এছাড়াও, গোয়েন্দা হিসেবে একজন ব্যক্তি ‘ডিটেকটিভ’ হিসেবেও সকলের কাছে পরিচিতি পেয়ে থাকেন।
বৈশিষ্ট্যাবলী
সাধারণ অর্থে যিনি গুপ্তচর বৃত্তির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনি ‘গোয়েন্দা’ নামে পরিচিত।[১] সাধারণত একজন সফল ও স্বার্থক গোয়েন্দাকে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়
অপরাধ বা রহস্যজনক কর্মকাণ্ড মনোঃবিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন।
রহস্যমূলক কর্মকাণ্ডে সর্বক্ষণ সম্পৃক্ত থেকে তীক্ষ্ণ ও শাণিত মেধা প্রয়োগ করবেন।
উপস্থিত বিচার-বুদ্ধি যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা বস্তুকে জনসমক্ষে উপস্থাপন করবেন।
নির্দোষ ব্যক্তি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বা দোষী না হন এবং প্রকৃত দোষীকে আইনে সোপর্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অপরাধী বা ঘটনার ছোট্ট ক্লু, সঙ্কেত বা চিহ্নের সাহায্যে অপরাধের গতি-প্রকৃতি ও অবস্থান চিহ্নিত করবেন।
প্রেক্ষাপট
কিছু কিছু পুলিশ অধিদপ্তরে ‘গোয়েন্দা’ পদে সরাসরি লোক নিয়োগ করা হয় না। গোয়েন্দাকে ঐ পদে নিয়োগের জন্যে নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। তন্মধ্যে লিখিত পরীক্ষা একটি অন্যতম মানদণ্ড। পুলিশ কর্মকর্তাকে এ যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমেই কেবল গোয়েন্দা পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
ব্রিটিশ আইন অনুসারে, পুলিশ গোয়েন্দাকে কমপক্ষে দু’বছর পোশাকধারী বা উর্দি পরিহিত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতে হয়। এরফলে তিনি ‘অপরাধী তদন্ত অধিদপ্তরে’ যোগদানের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেন। গোয়েন্দা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার জন্য যুক্তরাজ্যের পুলিশবাহিনীতে চাকরির পাশাপাশি অপরাধ তদন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে ‘জাতীয় তদন্ত পরীক্ষায়’ অবশ্যই কৃতকার্য হতে হয়।
অনেক পুলিশ অধিদপ্তরে গোয়েন্দা হিসেবে স্নাতক উত্তীর্ণ সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে পোশাকবিহীন অবস্থায় সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। অনেকের মতে, গোয়েন্দারা সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের চাকরি করেন ও পৃথক ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। গোয়েন্দাদের মাঝে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের গুণাবলী, সক্ষমতা, যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় যা পোশাক বা উর্দিধারী পুলিশ কর্মকর্তাদের চেয়ে পৃথক।
অপরদিকে সমালোচকেরা বলেন যে, কোনরূপ পূর্ব অভিজ্ঞতা বা পুলিশ বিভাগে চাকরি না করে একজন গোয়েন্দা সম্পূর্ণরূপে সফলকাম হতে পারেন না। বরঞ্চ আদর্শ পুলিশী কার্যক্রমে তাদের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরী হয়। পোশাক পরিহিত পুলিশ সহকর্মীদের সাথে কাজ করতে গিয়ে তারা কাজের পরিবেশকে আরো কঠিন ও দুরূহ করে তোলেন।
গোয়েন্দাকে তার অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। তন্মধ্যে – তদন্তকার্যে নীতিবোধ, চর্চা এবং প্রক্রিয়া রয়েছে। সাক্ষাৎকার ও প্রশ্নমূলক দৃষ্টিভঙ্গী; অপরাধ আইন ও প্রক্রিয়া, প্রচলিত আইনে গ্রেফতার, অনুসন্ধান ও মালামাল জব্দ, ওয়ারেন্ট ও প্রমাণ; পুলিশ বিভাগে রক্ষিত নথিপত্র ও প্রতিবেদন সম্পর্কে ধারণা; আদালতে প্রমাণ বা স্বাক্ষ্য হিসেবে পুলিশ বিভাগের নীতিমালা, চর্চা ও উদ্দেশ্য; এবং পুলিশ বিভাগের পদ্ধতি ও স্বাক্ষ্য অন্যতম। সাধারণতঃ উভয়ক্ষেত্রেই পুলিশ কর্মকতা এবং গোয়েন্দাকে প্রশ্নমূলক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। কিন্তু গোয়েন্দাকে আরো বেশি প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি ও মোকাবেলা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়।
বেসরকারী পর্যায়ে গোয়েন্দাকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিবন্ধনের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এর জন্যে তাকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং অপরাধীর অতীত ইতিহাস সম্পর্কেও সম্যক অবগত হতে হয়। কয়েকটি রাজ্যে শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষণ, সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে অস্ত্র পরিচালনাসহ অভিজ্ঞতার প্রয়োজনকে গুরুত্ব প্রদান করে।
প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদেরকে একত্রিত করে গঠিত ‘গোয়েন্দা শাখা’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সামরিক বাহিনী কিংবা পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। অভ্যন্তরীণ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষায় এ শাখার ভূমিকা অপরিসীম। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্যান্য দল কিংবা বিভাগের তুলনায় সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাসম্পন্ন শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে গোয়েন্দা শাখাকে।
লুক্কায়িত, অমিমাংসিত বা গোপনীয় অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে গোয়েন্দা শাখাকে বিশেষায়িত করে অনেকগুলো স্তরে বিভাজন করা হয়। সেগুলো হলো – নরহত্যা; দস্যুতা বা ডাকাতি; সংগঠিত অপরাধ; নিখোঁজ; প্রতারণা; মাদকদ্রব্য; যৌন হয়রানী; কম্পিউটার অপরাধ; অভ্যন্তরীণ সহিংসতা; নজরদারী ইত্যাদি।
পরিচয়
একজন ব্যক্তি যখন গোয়েন্দা হিসেবে কর্মরত থাকেন তখন তিনি একটি আইডেন্টি কার্ড সঙ্গে রাখেন। প্রয়োজনে কেউ তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্নবিদ্ধ করলে নিজ পরিচয় প্রদান করেন। সাধারণতঃ গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ পদবীধারী ব্যক্তির নামের পূর্বে ডিটেকটিভ লেখা থাকে যা সংক্ষেপে ‘ডিট (Det), নামে পরিচিতি পায়।
কার্যধারা
মাঠ পর্যায়ে
গোয়েন্দা কার্য পরিচালনার জন্য একজন গোয়েন্দাকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাপক ও বিস্তৃত চিন্তাধারার অধিকারী হতে হয়। নিত্য-নতুন কলা-কৌশল, ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় তাকে। এছাড়াও, অধিকাংশ মামলা কার্য সম্পূর্ণকরণের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তদন্তকার্য ও প্রত্যক্ষদর্শী বা স্বাক্ষীদের উপযুক্ত স্বাক্ষ্য-প্রমাণাদির উপর নির্ভর করতে হয়, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তদন্তকার্য পরিচালনার পাশাপাশি যদি গোয়েন্দা কার্যক্রমে চরদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা হয়, তাহলে অতি দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর। চরগণ ব্যক্তির সাথে নিরবচ্ছিন্ন কিংবা মাঝে মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। গোয়েন্দারা পরবর্তীতে চরদের কাছ তাদের মধ্যকার কথাবার্তা থেকে এ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে জানেন ও তথ্য সংগ্রহ করেন; কিন্তু তিনি তা কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন না। পরবর্তীতে গোয়েন্দারা পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ এবং তথ্য সংরক্ষণের উপরই সম্ভাব্য ব্যক্তি বা ইপ্সিত বস্তুর অবস্থান নিশ্চিত করেন।
ফৌজদারী তদন্তের কার্যকলাপগুলো খতিয়ে দেখতে বা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। ফৌজদারী তদন্তে দ্রুতবেগে গাড়ী চালানো, মাতলামী করে গাড়ী চালানো, চৌর্য্যবৃত্তি, হত্যাকাণ্ড, জালিয়াতি, প্রতারণা ইত্যাদি বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত। যখন পুলিশ তদন্ত কার্যের সমাপণী ঘোষণা করেন, তখন তারা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন।
কোন কারণে ফৌজদারী তদন্তে একজন গোয়েন্দার মনে যদি সন্দেহজনক কোন কিছুর উদ্রেক হয়, তাহলে তিনি স্বাক্ষ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর মাধ্যমেই তিনি আদালতের সম্মুখে পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন।
ময়না তদন্ত
সাধারণতঃ মৃতদেহের শারীরিক বা দৈহিক বৈশিষ্ট্য জানার জন্য ময়না তদন্তের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই ময়না তদন্তের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়না তদন্তের মাধ্যমেও একটি মামলা সুচারুরূপে নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব যা গোয়েন্দাদের কার্যক্রম এবং তদন্তের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ও হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। আইন অনুযায়ী ‘ফরেনসিক বিজ্ঞান’ এমন একটি পদ্ধতি যা বিস্তারিত ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে যে-কোন ব্যক্তির প্রশ্নের ব্যাখ্যা বা উত্তর প্রদান করা সম্ভব হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধ অথবা দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর।
অতীত ইতিহাস
অনেক ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা সরকারী এবং ব্যক্তিগত নথিপত্র ঘেঁটে অপরাধ বা রহস্য সম্পর্কীয় বিষয়কে পটভূমিকায় নিয়ে ও তথ্য সংযোগ করে অগ্রসর হন। পুলিশ বাহিনীর গোয়েন্দারা শুধুমাত্র নথিপত্র কিংবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাঁপের সাহায্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে থাকেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ গুরুতর অপরাধী থেকে শুরু করে সামান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্যেও ‘ব্যক্তিগত নথি’ খুলে রক্ষণাবেক্ষন করে থাকেন। এরফলে, গোয়েন্দারা অপরাধীর গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত বিবরণ, ব্যক্তিগত তথ্যাবলী, ছবি ইত্যাদির সাহায্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তির গতিবিধি অনুসন্ধানসহ নজরদারী করতে পারেন। এছাড়াও, অপরাধী যদি মোটর সাইকেলের মালিক হন, তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্যাবলীও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ওয়ারেন্ট সাথে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দারা ক্রেডিট কার্ডের রেকর্ড এবং ব্যাংক বিবৃতির মতো বিষয়গুলোও অনুসন্ধান করে থাকেন। হোটেলের নিবন্ধন তথ্য, ক্রেডিট প্রতিবেদন, আনসার মেশিনের বার্তা এবং ফোনের কথোপকথনও এর অন্তর্ভুক্ত।
অবদান
দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে গোয়েন্দা বা গোয়েন্দা দল প্রয়োজনে জীবনবাজী রেখে নিজ রাষ্ট্রের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় অন্য দেশে অবস্থান করেন যা আইনের পরিভাষায় ‘গোয়েন্দাগিরি’ বা ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ নামে পরিচিত।
আধুনিক বিশ্বে গোয়েন্দা তৎপরতার উপরই একটি দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে। কখনো তারা সাফল্য পান ও নিজ রাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় তথ্য কিংবা উপকরণ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রেরণ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে থাকেন। আবার ব্যর্থতায় তাদের জীবনহানী ঘটে কিংবা কারাগারে ঠাঁই হয় বছরের পর বছর ধরে। অনেক সময় গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে দু’দেশের মধ্যেকার পারস্পরিক চমৎকার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হতে দেখা যায়। সৌভাগ্যবশতঃ দেশগুলোর পারস্পরিক বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় কদাচিৎ কেউ কেউ মুক্তিলাভ করেন। গোয়েন্দাদের দক্ষ করে তুলতে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য উন্নত দেশে প্রেরণ করা হয়। অপরাধী সনাক্তকরণে তারা বহুবিধ নিত্য-নতুন কৌশল ও পন্থা গ্রহণ করেন।
কিশোর, তরুণদেরকে উদ্দীপ্ত করতে গোয়েন্দা(দের) রোমাঞ্চকর অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে ঘিরে মুদ্রণ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক খ্যাতিমান লেখক, প্রকাশক বিভিন্নভাবে ‘গোয়েন্দা উপন্যাস’ প্রকাশ করে যথেষ্ট খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। সাধারণতঃ এতে তাদের সাফল্যগাঁথাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। দলগত পর্যায়ে গোয়েন্দাদেরকে ঘিরে রচিত হয়েছে – তিন গোয়েন্দা, পাণ্ডব গোয়েন্দা, এমিলের গোয়েন্দা দল ইত্যাদি গোয়েন্দা কাহিনী সিরিজ। বাংলা সাহিত্যের মধ্যে গোয়েন্দা সিরিজ: ফেলুদা,কাকাবাবু ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা চরিত্র হলো ব্যোমকেশ বক্সী যার স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে গোয়েন্দা সিরিজের জনক বলা হয়। কাকাবাবুর স্রষ্টা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিত রায়। এর মধ্যে বাঙালির প্রিয় চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয় ফেলুদা। ফেলুদার প্রথম দুটি চলচ্চিত্র তৈরী করেন স্বয়ং এর স্রষ্টা সত্যজিত রায়। চলচ্চিত্র দুটি:সোনার কেল্লা ও জয়বাবা ফেলুনাথ।
চলচ্চিত্র অঙ্গনে
গোয়েন্দাদের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা, কৌশল অবলম্বন, ব্যক্তিগত জীবন, ব্যর্থতা ইত্যাদির বিভিন্ন নিত্য-নতুন ধারা নিয়ে বিশ্বে অনেক চলচ্চিত্র, নাটক প্রদর্শিত হয়েছে। তন্মধ্যে – জেমস বন্ড বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সাধারণতঃ এ ধারার সিনেমাগুলো চলচ্চিত্রকার ব্যতীত অন্য কোন লেখক, ঔপন্যাসিকের লেখা গল্প বা উপন্যাসকে অবলম্বন করে চলচ্চিত্র উপযোগী করা হয়।
অনেকগুলো চলচ্চিত্রে গোয়েন্দাকে প্রধান চরিত্র কিংবা অপ্রধান চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলা ভাষায় বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার হিসেবে সম্ভবতঃ সত্যজিৎ রায় সর্বাগ্রে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি গোয়েন্দাদের ঘিরে অনেকগুলো চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তন্মধ্যে – চিড়িয়াখানা, জয় বাবা ফেলুনাথ তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
খুলা’ হলো স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে বা অন্যের কাছ থেকে নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে যে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করে তার নাম। এ তালাকের পর স্বামী স্ত্রীর কাছে ফিরে আসতে পারে না। এটাকে এ কারণে খুলা‘ বলা হয়, একজন নারী তার হাত থেকে স্বামীকে সরিয়ে দেয় যেমন একটি আংটি হাতের আঙুল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।[১]আল্লাহ বলেন
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
অর্থ: নারীরা পুরুষের অঙ্গ স্বরূপ এবং পুরুষরা নারীর অঙ্গ স্বরূপ। তিনি আরও বলেন যে,
فإن خفتم ألا يقيما حدود الله فلا جناح عليهما فيما افتدت به
অর্থ: তোমরা ভয় করো যে উভয়ের মাঝে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তাহলে উভয়ে সমজোতার ভিত্তিতে যে বিচার হবে তাতে কোনো পাপ নেই।
নবী মুহাম্মাদ বলেন: “যে কোন মহিলা তার স্বামীকে বিনা কারণে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুবাস হারাম।”[২]
হায়েজের সময় এবং পবিত্রতার সময় হলেও দোষ নেই। কেননা মুহাম্মাদ খুলাপ্রাপ্ত নারীকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেননি।”[৩]
আইনগত ভিত্তি
২০০০ সালের ১ নং আইনের ২০ নং ধারা হল ‘খুলা’ পদ্ধতির আইনি ভিত্তি। অনুচ্ছেদ ৬ এবং ২৪ এ এর বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটা শরীয়া আদালতের একটি আইন। এ আইনের অনুচ্ছেদ ১৮, অনুচ্ছেদ ২ এবং অনুচ্ছেদ ১৯, অনুচ্ছেদ ১, ২ এর বিস্তারিত বিবরণ আছে।
কারণ লিপিবদ্ধ করা
দেওয়ানি আইনের ক্ষেত্রে, মামলায় স্ত্রীকে খুলা তালাকের কারণগুলি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। তবে খুলার প্রয়োজনীয় ক্ষতির কারণের কারণগুলি তালিকাভুক্ত করতে হয়। যেমন স্ত্রী যদি দাম্পত্য বা বৈবাহিক জীবন চলার কোন উপায় না থাকে এবং সে ভয় করে যে সে আল্লাহর হক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন সে নারী খুলা তালাক চা্যইতে পারে।অন্যায় ভাবে কোন নারী খুলা তালাক চাইলে “সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।” যে আদালতে খুলার মামলা চলবে তার বিচারক সুনির্দিষ্ট আইন বা আইনি কারণ বা সীমিত ক্ষতির দিকে নজর দিবে না। সে বিবাহ টিকে রাখার জন্য চেষ্টা চালাবে। স্বামী/স্ত্রী, যদি এটি ব্যর্থ হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত পূরণ করা হয়, তাহলে তার বিচার করা হবে। তবে স্বামী -স্ত্রী তালাকের ব্যাপারে সম্মত হলে এবং বিবাহবিচ্ছেদ চুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হলে খুলা হবে। যা ২০০০ সালের ১ নং আইন এর ২০ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামী যদি তালাক সম্পূর্ণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে স্ত্রী তালাকের মামলা করতে পারে। উক্ত আদালতে আবেদন করবে এবং মামলাটি ইসলামিক আইন অনুযায়ী নয়, বরং আবেদনমূলক আইনের নিয়ম অনুসারে পরিচালিত হবে। কার্যক্রম নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়-
মহর পরিশোধ
স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত মহর ফের দিবে। এটা হলো প্রথম শর্ত। কিন্তু যদি স্বামী তার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে, তাহলে স্ত্রীকে সেটাও ফেরৎ দিতে হবে। অথবা আদালত বিয়ের দলিলে যতি আরও কিছু লেখা থাকে সেটা স্ত্রীকে ফেরৎ দিতে হবে না। এভাবে (১) বিবাহের উপহার সামগ্রীও ফেরৎ দিতে হবে না। কেননা তা মহর নয়। (২) বৈবাহিক অস্থাবর সম্পত্তিও মহর নয়, সেটাও ফেরৎ দিতে হবে না যতক্ষণ না স্ত্রী তার অর্থ ফেরত দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। স্ত্রীর মহর ফেরত বা মহর আদালতে ফেরৎ আইনি উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, এবং এটি যুক্তি দ্বারা বা আইনের দ্বারা প্রমাণিত হয়।
আর্থিক অধিকার মওকুফ
স্ত্রীর তার আর্থিক অধিকার মওকুফ করা বা স্বামীর কাছ থেকে তার সন্তানদের অধিকার ছাড়া বা তার হেফাজতে থাকা এবং খুলার স্বীকৃতি চাওয়া সবকিছু স্ত্রীর উপর নির্ভর করে। স্বামী তার সমস্ত আর্থিক ও আইনগত অধিকার মওকুফ করতে পারে, যদি সে বিলম্বে মহর গ্রদান করে বা ইদ্দতকালে থাকে। আর এটা সে উপস্থিত লোকদের হাতে অথবা বিচারকের সামনে পেশ করবে। আর এটা উভয়ের বিচ্ছেদের পরে করবে। তবে ছোট সন্তানের হেজানত বা তাদের দেখাশোনার জন্য ব্যয় করা অর্থের ক্ষেত্রে হবে না।
মীমাংসার প্রস্তাব
স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধের অবসান ঘটাতে আদালতকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে। আদালতের হস্তক্ষেপ অবশ্যই স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপরার মাধ্যমে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করবে। এই মীমাংসার বাধ্যবাধকতা হচ্ছে ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত রক্ষা করার জন্য। যা জনশৃঙ্খলার সাথে সম্পর্কিত। আদালত তাদের মধ্যে দুইবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে বাধ্য, যা ত্রিশ দিনের কম নয় এবং ষাট দিনের বেশি নয়, যাতে পরিবারকে রক্ষা করা যায়।
দুই মীমাংসাকারীর নিয়োগ
স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন মোট দু’জন বিচারক নিয়োগ করবে। তারা স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মীমাংসা করে পরিবারটাকে রক্ষা করবে। এটা কুরআনের বিধান, যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফতওয়া বিভাগ বাস্তবায়ন করেছিল। ফলে এরকম একটি খুলা মামলার সমাধান হয়েছিল। যেহেতু এটা স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয় বা খুলার মামলাটি স্বামীর দ্বারা সৃষ্ট ত্রুটি বা ক্ষতির উপর ভিত্তি করে নয়, বরং এটি স্বামীর মনস্তাত্ত্বিক বিদ্বেষ এবং স্ত্রীর সমাপ্তির আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে। আর বিবাহিত জীবন. স্বামী -স্ত্রীর স্বার্থে এবং শিশুদের স্বার্থে স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য দুই সালিশকারীকে অবশ্যই তিন মাসের বেশি সময়ের মধ্যে স্বামীদের পুনর্মিলনের চেষ্টায় তাদের ভূমিকা শেষ করতে হয় এবং এটা বিবাহবিচ্ছেদ মামলার বিশেষ প্রকৃতি।
আদালতের সামনে স্ত্রীর ঘোষণা দেবে যে সে তার বৈবাহিক জীবন চালিয়ে নিতে ইচ্ছুক নয়।
স্ত্রী স্বামীর সাথে তার জীবন বিদ্বেষের স্বীকারুক্তি দেবে। এই স্বীকারোক্তিটি বিচারিক আদালতের সামনে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা হিসাবে হবে। বিচারক তদন্তের শেষ মামলাটি বিচারের জন্য সংরক্ষিত করবে। স্ত্রীর এ ঘোষণা প্রমাণ করবে যে সে স্বামীর সাথে সংসার করতে অপারগ।
মামলাটি যখন পূর্ণ হয় তখন বিচারের জন্য সংরক্ষণ করা
যখন আদালত পূর্ববর্তী সমস্ত পদ্ধতি বা পর্যায় সমাপ্ত করে, তখন সে রায়কে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেবে। খুলার শর্ত পূরণ হলে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় এড়ানো যায় না। যদি আদালতের বিশ্বাস এবং তার দৃঢ় বিশ্বাসের মধ্যেও থাকে যে আসামী স্বামী ভুল করেনি এবং কোন ক্ষতি করেনি তার স্ত্রীর উপর। ডিভোর্স কেস একটি প্রক্রিয়াগত মামলা, যার মধ্যে আদালতের ভূমিকা তার উপাদানগুলি প্রমাণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই যখন স্ত্রীকে স্বামীর কাছে ফেরত দেওয়া হয় তখন মহর পরিশোধ করতে হয়। এটা ঐ সময় হয় যখন উক্ত বিচারকদ্বয় বা অন্যকোন উপায়ে মীমাংসা করা সম্ভব না হয়।
ডিভোর্স মামলায় চূড়ান্ত রায়
ডিভোর্স মামলায় জারি করা রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়, কোন আফিল চলে না। বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।
খুলার কারণে স্ত্রীর জন্য ব্যয় থাকে না
বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করে স্ত্রীর বিবাহিত জীবন শেষ করার অধিকার কার্য়কর হওয়ার পর তার স্বামীর কাছ থেকে নেওয়া মহর ফেরত দিবে। ফলে স্বামীকে আর স্ত্রীকে কোন খরচ দেবেনা। মোটা অংকের অর্থও দাবি করতে পারবে না।
ইসলামে খুলা তালাকের বিধান
বিবাহ এবং তালাক একটি ধর্মীয় চুক্তি বা এটি একটি আইনি চুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, তালাক একটি নিছক শব্দ দিয়ে সংঘটিত হয়, যা স্বামী লিখিতভাবে জানাবে। তবে খুলার বিধান ইসলামে অনেক গুরুত্তপূর্ণ।
খুলার শরয়ী বিধান
হাম্বলী চিন্তাধারায়: হাম্বলী মতে কোন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চাইলে সে তার কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ গ্রহণ করার জন্য নির্ধারিত হয়।[৪] তাদের দলিল হলো সাবিত বিন কাইসের স্ত্রীর ঘটনা। কিন্তু পর্যাপ্ত কারণ না থাকলে হবে না। কেননা নবী স বলেছেন, যে নারী বিনা কারণে স্বামীর কাছে তালাক চায় তার জন্য বেহেশতের সুবাস হারাম।
ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে, যদি স্বামী তার স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণ হয় তবে স্বামীর পক্ষে এটি গ্রহণ করা অপছন্দনীয়।আর যদি বিষয়টি স্ত্রীর নিজের বিচ্ছিন্নতার কারণে হয়, তবে স্বামীর জন্য মহরের চেয়ে বেশি গ্রহণ করাকে ঘৃণা করেন। আর বিষয়টির অন্যদিক হলে বেশি গ্রহণ করা জায়েজ, কারণ সর্বশক্তিমানের উক্তি: “এতে কোন দোষ নেই সে তার বিনিময়ে যা মুক্তিপণ দিয়েছিল “আল-বাকারাহ: ২২
আর স্বামীর আচরণের কারণে যদি স্ত্রী খুলা তালাকে বাধ্য হন তাহলে অতিরিক্ত কিছু দিতে হবে না।[৫] তারা এটিকে সর্বশক্তিমানের উক্তি দ্বারা প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে: ((এবং তাদেরকে আপনি যা দিয়েছেন তা থেকে কিছু নিতে নিষেধ করবেন না)) [আন-নিসা: 19]।
শাফিরা একেবারে খুলকে ঘৃণা করেন। তারা এর থেকে দুটি ব্যতিক্রম কথা বলেন:[৬]
স্ত্রী ভয় পায় যে, আল্লাহ স্বামীর উপর আরোপিত অধিকার পালন করতে পারবে না। অথবা মহিলা তার স্বামীকে অস্বীকার করে, সে তার উপর তার অধিকার পূরণ করতে পারে না।
একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়ার শফৎ করে তালাক না দিয়ে আবার একসাথে থাকতে চায় এবং তাকে খাওয়ায়, পান করায়। তখন এ স্ত্রী লোকটি খুলা তালাকা চাইতে পারে।
মালেকীরা খুলাকে জায়েজ করেছে (এটা সুন্নাহ বা অপছন্দ নয়)। এ শর্তে যে যদি স্ত্রীর সম্মতিতে থাকে, যদি এটি তার বাধ্যবাধকতায় হয়, তাহলে তালাক কার্যকর করা হয়।[৭]
খুলার সময়
তালাকের নির্দিষ্ট সময় আছে।একজন পুরুষ হায়েজের সময় তার স্ত্রীকে তালাক দেবে না, তবে খুলাতে কোন দোষ নেই।[৮]
স্বামীর ক্ষমতা যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে: সে একজন বিবেকবান প্রাপ্তবয়স্ক।
বিবাহ চুক্তি অবশ্যই বৈধ হতে হবে। সহবাস হোক বা না হোক।
স্ত্রী অর্থের সঠিকভাবে ব্যবহারকারিনি হবে। সেই সাথে একজন প্রাপ্তবয়স্কা, বুদ্ধিমতি, অক্ষম, দাসী, মূর্খ, বা অসুস্থ হবে না। উদাহরণস্বরূপ, বোকার খুলা হয় না।
খুলার বিনিময় হালাল অর্থে হবে যাতে এটি একটি মহর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াইন বা শুয়োরের মাংস দিয়ে খুলা হয় নযা।
স্ত্রীর সম্মতিতে খুলা হবে। এতে স্বামীর সম্মতি থাকবে।
খুলার বিনিময়
হাম্বালীদের মতে, স্বামী তার স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন হলে খুলার ক্ষতিপূরণ নেওয়া অপছন্দনীয়। যদিও এটি স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করার কারণেদিতে হয়। তবে স্ত্রীর মহরের পরিবর্তে স্বামী গ্রহণ করতে পারে, তবে এর চেয়ে বেশিও নিতে পারে। কেননা আল্লাহ পাক বলেছেন, কোনো ক্ষতি নাই।﴾[১০]
খুলা এমনও হতে হবে যে এটি মহর হিসাবে প্রদান করা যেতে পারে। ফকীহগণ উপকার ও অধিকারের বিনিময়ে খুলার অনুমতি দিয়েছেন, যেমন কোনো রোগের চিকিৎসা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমি চাষ করা বা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো, বা এর পেছনে খরচ করা, অথবা ইদ্দতকালের ব্যয় রহিত করা।
শরীয়তে খুলার প্রভাব
তালাকে বায়েন :এটি দ্বারা এক তালাক বায়েন হয়।
খুলা দ্বারা তালাকের সংখ্যা হ্রাস পায় না:। কেননা আল্লাহ প্রথমে তালাকের কথা বলেছেন পরে খুলার কথা বলেছেন।
বিচারকের রায় কার্যকর হওয়ার শর্ত নয়।
যদি খুলের কিছু শর্ত নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে খুল ‘অবৈধ হয় না।
স্ত্রীর জন্য খুলার অর্থ প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
খুলা হলেআবার স্ত্রীকে ফেরৎ নেয়া যায় না। তবে হিলা বিবাহের পর নেয়া যাবে।