বাস্তুবিদ্যা (ইংরেজি: Ecology) : জীববিজ্ঞানের যে বিশিষ্ট শাখায় পরিবেশে বিন্যস্ত বিভিন্ন জীব ও তার পারিপার্শ্বিক জড় উপাদান এবং তাদের পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়া, নির্ভরশীলতা ও মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে বাস্তুবিদ্যা বা ইকোলজি বলে।[১]
পরিবেশবিজ্ঞানের ইংরেজি পরিভাষা Ecology ইকোলজি। গ্রিক οίκος, ওইকোস অর্থাৎ “বাসস্থান” এবং λόγος লোগোস অর্থাৎ “বিদ্যা” ইংরেজি Ecology পরিভাষাটি এসেছে। ইকোলজি শব্দটি জার্মান বিজ্ঞানী “আর্নস্ট হেকেল” ১৮৬৬ সালে সর্বপ্রথম প্রণয়ন করেন।
The scientific discipline of ecology addresses the full scale of life, from tiny bacteria to processes that span the entire planet. Ecologists study many diverse and complex relations among species, such as predation and pollination. The diversity of life is organized into different habitats, from terrestrial (middle) to aquatic ecosystems.
একটি জীব থেকেই কেবল আরেকটি জীবের সৃষ্টি সম্ভব। এই তত্ত্বকেই বায়োজেনেসিস বলা হয়। এ ব্যাপারে ল্যাটিন ভাষায় একটি প্রবাদ আছে “জীবন থেকেই জীবনের উদ্ভব” লুইস পাস্তুরের পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ থেকে বায়োজেনেসিস মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে অ্যাবায়োজেনেসিস বায়োজেনেসিসের সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ অ্যাবায়োজেনেসিস অনুসারে জড় থেকে জীবের সৃষ্টি সম্ভব।
বায়োজেনেসিস শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন হেনরি চার্লটন বাস্তিয়ান। কিন্তু তিনি বায়োজেনেসিস বলতে জড় থেকে জীব সৃষ্টির পদ্ধতিকে বুঝিয়েছিলেন। পরে থমাস হাক্সলি জড় থেকে জীব সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অ্যাবায়োজেনেসিস বলে অবিহিত করেন। তিনি বায়োজেনেসিসের সংজ্ঞা পুনর্গঠন করেন। তিনি একটি জীব থেকে নতুন জীব সৃষ্টির পদ্ধতিকে বায়োজেনেসিস বলেন।[১] মহাবিশ্বের ইতিহাসে,[২] এক বার অ্যাবায়োজেনেসিস হয়েছে এবং সেটি ছিল প্রথম প্রাণ সৃষ্টির সময়।[৩][৪][৫]
প্রাচীন গ্রীকরা বিশ্বাস করত জড় বস্তু থেকে জীবের সৃষ্টি সম্ভব। তারা বিশ্বাস করত গায়া দেবী পাথর থেকে জীবন সৃষ্টি করতে পারেন, এই পদ্ধতিটি ‘জেনেরিও স্পন্টানায়ি’ নামে পরিচিত ছিল। এরিস্টটল এটি না মানলেও তিনি বিশ্বাস করতেন অন্য ধরনের জীব কিংবা মাটি থেকে নতুন জীবের সৃষ্টি সম্ভব। এই স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি বা অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু ১৭দশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ মতবাদের বিরুদ্ধে নানা পর্যবেক্ষণ ও বিতর্কের শুরু হয়। বৈজ্ঞানিক উন্নতির সাথে সাথে নানা মত, ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও সংস্কারের কারণে ব্যাপারটি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠে।
১৬৬৮ সালে ফ্রান্সেস্কো রেডি নামের একজন ইতালীয় চিকিৎসক প্রমাণ করেন উঁচু স্তরের জীব জড় বস্তু থেকে সৃষ্টি হয় নি। কিন্তু অ্যাবায়োজেনেসিস মতবাদের অনুসারীরা দাবি করে এই মতবাদটি অণুজীবের ক্ষেত্রে খাটে না। তাই তারা বলে অণুজীব জড় বস্তু থেকে সৃষ্টি হতে পারে। ১৭৬৫ সালে জন নিধাম ফ্লাস্কে মুরগির মাংসের জুস নেন এবং তা সিদ্ধ করেন। তারপর তিনি তা ঠাণ্ডা করে অপেক্ষা করেন। এতে অণুজীব জন্ম নেয় এবং তিনি দাবী করেন এই পরীক্ষা স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি তথা অ্যাবায়োজেনেসিসের স্বপক্ষে। অর্থাৎ মাংসের জুস থেকে অণুজীব সৃষ্টি হয়েছে। ১৭৬৮ সালে লাজ্জারো স্পালানজানি পুনরায় নিধামের পরীক্ষাটি করেন কিন্তু ফ্লাস্ক থেকে বাতাস সরিয়ে নেন। ফলস্বরূপ কোন অণুজীব জন্ম নেয় নি। যা অ্যাবায়োজেনেসিসের বিপক্ষে। কিন্তু নিধাম দাবী করেন স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টির জন্য বায়ু আবশ্যক ফলে স্পালানজানির ফ্লাস্ক থেকে বায়ু অপসারণ করায় অণুজীব জন্ম নেয় নি। নিধামের প্রথম পরীক্ষার প্রায় ১০০ বছর পর দুজন বিজ্ঞানী বায়ু নিয়ে বিতর্কের সমাধানের চেষ্টা করেন। ১৮৩৬ সালে ফ্রেঞ্জ স্কালজ বায়ু নিরুদ্ধ ফ্লাস্কে সেদ্ধ মাংসের জুস নেন এবং তাতে অ্যাসিড দ্রবনের মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবেশ করান। একি ভাবে থিওডোর স্চোয়ান উত্তপ্ত নলের মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবেশ করান। দেখা যায় দুই ক্ষেত্রেই কোন অণুজীব জন্ম নেয় নি। এই পরীক্ষাদ্বয় অ্যাবায়োজেনেসিসের বিপক্ষে। কিন্তু অ্যাবায়োজেনেসিস মতবাদের অনুসারীরা দাবী করে অ্যাসিড ও তাপ বায়ুর গুণ পরিবর্তন করে যার ফলে অণুজীব জন্ম নেয় না। এই বিতর্কের অবসান হয় যখন বিজ্ঞানীরা বায়ুকে তুলা পূর্ণ নলের প্রবেশ করান। তুলায় বাতাসের মধ্যকার অণুজীব আটকা পড়ে ফলে মাংসে অণুজীব জন্ম নেয় না।অবশেষে লুইস পাস্তুর একটি লম্বা ও বাঁকা হাসের ঘাড়ের মত ফ্লাস্ক ব্যবহার করেন। বাতাস তাতে সহজেই প্রবেশ করতে পারে কিন্তু তাতে কোন অণুজীব জন্ম নেয় না কারণ অণুজীবরা ‘U’ আকারের বাঁকা নলে আটকা পড়ে এবং মাংস পর্যন্ত পৌছাতে পারে না। তিনি প্রমাণ করেন যে পূর্বে কোন জীব দ্বারা সংক্রমিত হওয়া ছাড়া নতুন জীবের সৃষ্টি সম্ভব নয়। পাস্তুর তার পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর বলেন “ স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি একটি স্বপ্ন মাত্র”
বাইভালভিয়া পূর্ববর্তী শতকে Lamellibranchiata এবং Pelecypoda ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। এরা মূলত মলাস্কা পর্বের এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। বাইভালভিয়ারা মস্তকবিহীন,এদের RADULA (কাইটিন নির্মিত বিশেষ রেতি জিহ্বা), অডন্টোফোর (RADULA-কে ধরে রাখার অঙ্গাণু) নেই।গুগলি, শামুক,ঝিনুক প্রভৃতি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
ইতিহাস
সম্প্রতি প্রাপ্ত EARLY CAMBRIAN বাইভালভ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বের ফসিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে এর জীবন্ত প্রজাতির স্ংখ্যা প্রায় ৯২০০,যার মধ্যে রয়েছে ১২৬০ টি প্রজাতি এবং ১০৬টি গোত্র। বাইভালভিয়ার ৮০০০ এরও বেশি প্রজাতি জলজ। এদের সর্বশেষ আবিষ্কৃত গোত্রটি হলো- Veneridae যার ৬৮০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে।
গঠন
বাইভালভরা সাধারণত হেমোলিম্ফ (হিমোসিল নামক রক্তপূর্ণ প্রকোষ্ঠ থাকে), দুইটি সদৃশ খোলকের জন্য এদের ‘বাইভালভিয়া’ বলা হয়। খোলসগুলো ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে গঠিত এবং নমনীয় লিগামেন্ট দ্বারা স্ংযুক্ত থাকে। খোলকের দুইটি অংশকে ভালভ বলা হয়, এগুলোর উভয়টিতে দাঁতের মতো অঙ্গ থাকে। বাইভালভিয়াদের দেহ দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসম, ভালভগুলো মধ্যরেখীয় তলে স্ংযুক্ত। একটি পরিণত বাইভালভিয়ার খোলসের আকার ১ মিলিমিটারের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হ্তে শুরু করে ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগেরই খোলসের আকার ১০সেমি (৪ ইঞ্চি) অপেক্ষা বেশি হয়না।
খাদ্যাভাস
বাইভালভিয়ারা টেনিডিয়া নামক বিশেষ ফুলকা দ্বারা খাদ্য গ্রহণ ও শ্বসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে।এরা ছাঁকন পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে।
স্বভাব ও বাসস্থান
বাইভালভিয়া শ্রেণির সদস্যরা সাধারণত স্বাদু জল কিংবা নোনা জলে বসবাস করে। এরা শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাদামাটিতে লুকিয়ে থাকে। পরিণত বাইভালভিয়ারা সমুদ্র তলদেশে পাথর কিংবা কোনো দৃঢ় কোনো অবলম্বনের সাথে আটকে থাকে। এদের == স্ক্যালপ এবং == ফাইল শেল প্রজাতি মুক্ত সাঁতারু।
বিবিধ
বাইভালভিয়া শ্রেণির শামুক ও ঝিনুক মানুষের প্রিয় খাদ্যে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে মেরিকালচার এবং হ্যাচারির মাধ্যমে এদের চাষ করা হচ্ছে। রোমানরা বহু পূর্ব হ্তেই শামুক ও ঝিনুক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। ঝিনুক মুক্তোর অন্যতম উৎস, এ কারণেও মানুষের নিকট এর চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বাইভালভরা প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশ দূষণ রোধে সক্ষম। শিল্পীরা শিল্পকর্মের অন্যতম উপাদান হিসেবেও শামুক, ঝিনুক এবং অন্যান্য বাইভালভদের ব্যবহার করে থাকে।
বর্গ হচ্ছে জীববিদ্যার একটি বিশেষ শ্রেণীবিন্যাসবৈদ্যিক ধাপ যা শ্রেণীর নিচে ও গোত্রের উপরে অবস্থান করে।
জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী আউগুস্টুস কুইরিনুস রিভিনুস ১৬৯০-এর দশকে উদ্ভিদের শ্রেণীকরণ করেন ও এ নিয়ে ধারাবাহিক কিছু রচনা প্রকাশিত করেন। সেখানেই প্রথমবারের মত শ্রেণীবিন্যাসের আলাদা ধাপ হিসেবে “বর্গ” ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে সুয়েডীয় জীববিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস ১৭৩৫ সালে তার সিস্তেমা নাতুরায়ে গ্রন্থে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের শ্রেণীকরণ করতে গিয়ে “বর্গ” ধারণাটিকে সমন্বিতভাবে সর্বত্র প্রয়োগ করেন।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান আটটি শ্রেণীবিন্যাস ক্রমের নিন্মতম থেকে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত ক্রমবিভক্তি। অন্তর্বর্তী অপ্রধান ক্রমগুলো দেখানো হয়নি।
জীবন বা প্রাণ এমন একটি অবস্থা, যা একটি জীবকে জড় পদার্থ (প্রাণহীন) ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে। খাদ্য গ্রহণ, বিপাক, বংশবৃদ্ধি, পরিচলন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করে। জীবন বা প্রাণ বিষয়ক শিক্ষা জীববিজ্ঞানে আলোচিত হয়। প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়াকলাপকে জীবন বলা হয়।
জীবন হল সেই সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা জৈবিক প্রক্রিয়াসম্পন্নভৌত সত্তাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করে, যেমন, কোষীয় সংকেত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া, যেসব বস্তুগুলোর এই গুণাবলিগুলো নেই, হয় এইসব গুণগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, নয় তো বা তাদের এই গুণগুলো কোনদিন ছিলই না, সাধারণত এগুলোকে জড় বস্তু হিসাবে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়। জীবন বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান, যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক, প্রোটিস্ট, আর্কিয়া এবং ব্যাকটেরিয়া। কখন কখনও রূপের এই মানদণ্ড দ্ব্যর্থহীন ভাবেও প্রকাশ পেতে পারে এবং সেইসাথে ভাইরাস, ভিরোয়েড, বা সম্ভাবনাময় কৃত্রিম জীবনকে “জীবন্ত” জীব হিসাবে ব্যাখ্যা করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। জীববিদ্যা জীবন সম্পর্কিত অধ্যয়নের জন্য বিজ্ঞানের মূল অংশ, যদিওবা বিজ্ঞানে অন্যান্য অনেক শাখাও এর সাথে জড়িত।
জীবনের সংজ্ঞা প্রদান কিছুটা বিতর্কিত। তবে বর্তমানে প্রচলিত সংজ্ঞায় বলা হয় জীবহোমিওস্ট্যাটিস মেনে চলে, যা কোষ দিয়ে গঠিত, রূপান্তরিত হয়, বৃদ্ধি পায়, পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়, উদ্দীপকের প্রতি ক্রিয়াশীল হয়, এবং প্রজননে সক্ষম। এছাড়া জীববিজ্ঞান বিষয়ক আরও অনেক সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, এবং জীবনের কিছু কিছু ব্যতিক্রমধর্মী উদাহরণও বিদ্যমান রয়েছে, যেমন ভাইরাস। দীর্ঘদিন ধরে জীবনের বলতে কি বুঝায় তা জানার চেষ্টা চলছে এবং জীবন্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও বিকাশ নিয়ে অনেক তত্ত্ব প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি প্রধান তত্ত্বের একটি হল – বস্তুবাদ, এটি এমন এক বিশ্বাস যাতে বলা হয় সবকিছু উৎপত্তি হয়েছে কোন বস্তু থেকে এবং জীবন হল এর একটি জটিল রূপ; আরেকটি তত্ত্ব হাইলোমর্ফিজম হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয় সবকিছু বস্তু ও আকারের সমন্বয়, এবং জীবন্ত বস্তুর রূপ হল এর আত্মা; আরেকটি তত্ত্ব- স্বতঃজনন হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয় জীবন জড় পদার্থ থেকে পৌনপনিকভাবে বিকশিত হয়; এবং প্রাণবাদ হল এমন একটি বিশ্বাস যাতে বলা হয়ে থাকে জীবদের “জীবন প্রণালি” বা “প্রাণের কণিকা” থাকে। আধুনিক সংজ্ঞায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক শাখা থেকে উপাত্ত গ্রহণ করায় তা জটিলতর হয়েছে। জৈবপদার্থবিদগণ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে অনেক সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কয়েকটি জীব প্রক্রিয়া তত্ত্ব হল – গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত হল এমন একটি ধারণা যেখানে পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে নিজেই জাগ্রত। অন্য একটি তত্ত্বে বলা হয় জীবন হল বাস্তুতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য; এবং অন্য একটি তত্ত্ব সম্পর্কে বলা যায় জীবন হল জীববিজ্ঞানের জটিল প্রক্রিয়া ব্যবস্থা, যা গাণিতিক জীববিজ্ঞানের একটি শাখা। জীবনের উৎপত্তিতে জড় পদার্থ, যেমন সাধারণ জৈব যৌগ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জীবনের উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। প্রায় সকল জীবের ক্ষেত্রে যেসকল বৈশিষ্ট্য একই হয়ে থেকে তার মধ্যে অন্যতম হল কিছু সুনির্দিষ্ট মূল রাসায়নিক উপাদান যা প্রাণরসায়নের সাধারণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে প্রয়োজন।
৪.৫৪ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর গঠনের কিছু সময় পর, ৪.৪১ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাসাগরসমূহের গঠনের পর প্রায় ৪.২৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রথম জীবনের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।[১][২][৩][৪] পৃথিবীর বর্তমান জীবন সম্ভবত আরএনএ জগৎ হতে উদ্ভূত, যদিও আরএনএ-ভিত্তিক জীবনই প্রথম নয়। যে প্রক্রিয়ায় জীবনের উৎপত্তি হয়েছে তা আজও অজানা রয়ে গেছে, যদিও অনেক অনুসিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে এবং সেগুলো বেশিরভাগ সময়ই মিলার-উরি নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। প্রাপ্ত প্রথম জীবনের অস্তিত্ব হল ব্যাকটেরিয়ার মাইক্রোফসিল, ৩.৪৫ বিলিয়ন বছর পুরাতন অস্ট্রেলিয়ান শিলায় অণুজীব পাওয়া গেছে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।[৫][৬] ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিজ্ঞানীরা ৩৫৫টি জিনের সেট প্রাপ্তির প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাদের সকল জীবের সর্বশেষ সার্বজনীন একই পূর্বপুরুষ বলে উপস্থাপন করা হয়।[৭]
পৃথিবীতে জীবনের পরম্পরার শুরু থেকে ভূতাত্ত্বিক সময়ের ভিত্তিতে তা পরিবেশকে পরিবর্তিত করেছে। বেশিরভাগ বাস্তুতন্ত্রে বেঁচে থাকার জন্য জীবনকে বিভিন্ন ধরনের অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। কিছু অণুজীব, যেমন এক্সট্রিমোফিল শরীরগত ও জৈবরাসায়নিকভাবে বিরূপ পরিবেশে বেড়ে ওঠতে পারে, যা পৃথিবীতে অন্য প্রাণের জন্য ক্ষতির কারণ। এরিস্টটল প্রথম ব্যক্তি যিনি জীবদের শ্রেণীবিন্যাস করেন। পরবর্তীতে কার্ল লিনিয়াসপ্রজাতিদের শ্রেণীবিন্যাসের জন্য দ্বিপদ নামকরণেরনিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এছাড়া জীবনের নতুন গণ ও বিভাগে আবিষ্কৃত হয়, যেমন কোষ ও অণুজীব, যা জীবদের সম্পর্কের কাঠামোতে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। কোষ জীবনের ক্ষুদ্রতম একক ও গঠনতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত। দুই ধরনের কোষ রয়েছে, সেগুলো হল প্রাক-কেন্দ্রিক ও সুকেন্দ্রিক। উভয়ই মেমব্রেনের সাথে সাইটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত এবং অনেক বায়োমলিকিউল, যেমন প্রোটিন ও নিউক্লেইক এসিড থাকে। কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া নতুনভাবে কোষ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃ কোষ দুই বা ততোধিক অপত্য কোষে বিভাজিত হয়।
যদিও এখন পর্যন্ত শুধু পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তবে তা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ তা নয়। অনেক বিজ্ঞানীরা বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে ভাবছেন। কৃত্রিম জীবন হল জীবনের কোন রূপের কম্পিউটারাইজড নকল বা মানুষের তৈরি পুনর্গঠন, যা প্রাকৃতিক জীবন সম্পর্কিত পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। মৃত্যু হল কোন জীবনে মধ্যে থাকা সকল জৈবিক প্রক্রিয়ার চিরস্থায়ী সমাপ্তি। বিলুপ্তি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোন নির্দিষ্ট গণ, প্রজাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জীবাশ্ম হল কোন জীবের সংরক্ষিত বাকি অংশ।
সংজ্ঞা
জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কাছে একটি দুরুহ ব্যাপার।[৮][৯][১০][১১][১২] এর একটি কারণ হল জীবন একটি প্রক্রিয়া, কোন বস্তু নয়।[১৩][১৪][১৫] যেকোন সংজ্ঞাই পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল জানা ও অজানা প্রাণের জন্য এক হতে হবে।[১৬][১৭][১৮]
যেহেতু জীবনের কোন দ্ব্যর্থতাহীন সংজ্ঞা নেই, বর্তমান বেশিরভাগ সংজ্ঞাই বিবৃতিমূলক। জীবন বলতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট ধারণকারী যেকোন বিষয়কে বুঝায়:[১৭][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪]
হোমিওস্ট্যাটিস: অভ্যন্তরীণ অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার ব্যবস্থা; উদাহরণস্বরূপ, তাপমাত্রা কমানোর জন্য ঘামা।
বিপাক: রাসায়নিক ও শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর করে কোষীয় উপাদানগুলোর সংশ্লেষণ এবং অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর বিশ্লেষণ। অভ্যন্তরীণ অবস্থা ঠিক রাখা এবং জীবনের সাথে সম্পর্কিত অন্য কিছু উৎপাদনের জন্য জীবন্ত বস্তুর জৈবশক্তির প্রয়োজন।
বৃদ্ধি: বিশ্লেষণের চেয়ে সংশ্লেষণের পরিমাণ বেশি রাখা। একটি বর্ধনশীল জীবের আকারের সাথে এর অন্যান্য অংশ বৃদ্ধি পায়।
অভিযোজন: সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি মৌলিক বিষয় এবং এর মাধ্যমে জীবের উত্তরাধিকার, খাদ্য শৃঙ্খল ও বাহ্যিক বিষয়সমূহ নির্ধারিত হয়।
উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়া দেখানো: প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে,
প্রজনন: নতুন পৃথক জীবন জন্মদানের ক্ষমতা। এটা একক জীব কোষ থেকে অযৌন প্রজনন বা দুটি জীব কোষ থেকে যৌন প্রজননের মাধ্যমে হতে পারে।
এই জটিল প্রক্রিয়াকে শারীরিক কার্যাবলি বলা হয়, যার কিছু ভৌত ও রাসায়নিক ভিত্তি এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা জীবন ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন্ত বস্তুগুলোর তাপগতিবিদ্যার পদ্ধতিতে সুসংবদ্ধ আণবিক গঠন রয়েছে, যা নিজেই প্রজননে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং দীর্ঘ দিন ঠিকে থাকে অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে।[২৫][২৬]তাপগতিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে একটি উন্মুক্ত পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা এর পারিপার্শ্বিকতা থেকে তার নিজের পূর্ণ অনুলিপি তৈরি করে থাকে।[২৭] ফলে, জীবন হল আত্মনির্ভরশীল রাসায়নিক পদ্ধতি যা ডারউইনীয় বিবর্তন মেনে চলতে সক্ষম।[২৮][২৯] এই সংজ্ঞার একটি বিশেষ দিক হল এটি জীবনের রাসায়নিক যোগসূত্রের দিকের চেয়েও বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া থেকে জীবনকে আলাদা করতে মনোনিবেশ করে।[৩০]
বাকিরা পদ্ধতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের সংজ্ঞা প্রদান করে যা আণবিক রসায়নের উপর নির্ভরশীল নয়। জীবনের একটি পদ্ধতিগত সংজ্ঞা হল জীবন্ত বস্তু স্ব-সংগঠিত ও স্ব-গঠনে (স্ব-প্রজনন) সক্ষম। এই সংজ্ঞার একটি ভিন্নরূপ হল স্টুয়ার্ট কফম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞা, যেখানে বলা হয়েছে জীবন একক অথবা একাধিক পদ্ধতি যা নিজের বা তাদের প্রজননে এবং কমপক্ষে একটি তাপগতিবিজ্ঞান কর্ম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম।[৩১] এই সংজ্ঞা বিভিন্ন সময়ে কর্ম পদ্ধতির ভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বর্ধিত করা হয়েছে।[৩২]
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা একটি এডিনো ভাইরাস।
ভাইরাসকে জীবিত জীব হিসাবে বিবেচনা করা উচিত হবে কিনা তা এখনও বিতর্কিত। এগুলোকে প্রায়শই জীবনের ধরন হিসাবে গণ্য না করে বরং শুধু অনুলিপি তৈরিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩৩] এগুলোকে “জীবনের সংজ্ঞার শেষপ্রান্তের প্রাণীর” হিসাবে বর্ণনা করা হয়,[৩৪] কারণ এগুলো জিন ধারণ করে, প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বিকশিত হয়[৩৫][৩৬] এবং স্ব-সন্নিবেশের মাধ্যমে নিজেদের একাধিক অনুলিপি তৈরি করে। তবে যাইহোক, ভাইরাসের বিপাক প্রক্রিয়া নেই এবং নিজের নতুন অনুলিপি তৈরি করার জন্য এদের একটি হোস্ট কোষের প্রয়োজন হয়। জীবনের উৎসের গবেষণার জন্য হোস্ট কোষগুলির মধ্যে ভাইরাস স্ব-সন্নিবেশের ক্রিয়া জানার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ এটির মাধ্যমে জৈব অণুগুলোর স্ব-সন্নিবেশের মাধ্যমে জীবনের প্রারাম্ভ শুরু হওয়ার অনুসিন্ধান্তটি প্রমাণ করা যেতে পারে।[৩৭][৩৮][৩৯]
জীবপদার্থবিজ্ঞান
জীবন বলতে আসলে কি বুঝায় তা নুন্যতম প্রয়োজনীয় ঘটনাগুলোকে প্রকাশ করার জন্য, জীবনের আরও অন্যান্য জৈবিক সংজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়েছে,[৪০] যার অনেকগুলো রাসায়নিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। জীবপদার্থবিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেছেন যে জীবিত বস্তু নেতিবাচক এনট্রপিতে উপর ভিত্তি করে কাজ করে।[৪১][৪২] অন্যভাবে বলতে গেলে, জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোকে দেখা যেতে পারে জৈব অণুর অভ্যন্তরীণ শক্তির বিলম্বিত স্বতঃস্ফূর্ত ছড়িয়ে পড়া কিংবা বিচ্ছুরণ হিসাবে, যার মাধ্যমে এটি আরও সম্ভাব্য স্থায়ী একটি মাইক্রোস্টেটে পৌছায়। [৮] আরও বিস্তারিতভাবে, যেমন জন বার্নাল, এরভিন শ্রোডিঙার, ইউজিন উইগনার এবং জন এভরির মতো পদার্থবিজ্ঞানীদের মতে, জীবন হল এমন শ্রেণীভুক্ত ঘটনাগুলির সদস্য যা উন্মুক্ত কিংবা চলমান সিস্টেমগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ এনট্রপি হ্রাস করতে সক্ষম, তবে সেটির বিনিময়ে সিস্টেমগুলি পরিবেশ থেকে বিনামূল্যে শক্তি কিংবা পদার্থ গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে একটি অবনমিত রূপে এটি পরিবেশে প্রত্যাখ্যান করে।.[৪৩][৪৪]
লিভিং সিস্টেম থিওরি
লিভিং সিস্টেমগুলো হল উন্মুক্ত স্ব-সাংগঠনিক জীবিত অংশ যা পরিবেশের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে থাকে। এই সিস্টেম গুলো তথ্য, শক্তি, এবং পদার্থের প্রবাহ দ্বারা বজায় থাকে।
গত কয়েক দশক ধরে কিছু বিজ্ঞানী প্রস্তাব করেছেন যে, জীবনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সাধারণ জীবন্ত সিস্টেম তত্ত্ব দরকার।[৪৫] এই ধরনের সাধারণ তত্ত্বটি পরিবেশবিজ্ঞান ও জৈবিক বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হবে এবং সমস্ত জীবিত সিস্টেম কিভাবে সাধারণ নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করে কাজ করে তার রূপরেখা তৈরি করবে। কোন ঘটনাকে ব্যাখা করার জন্য তার সকল উপাদানকে ভেঙে আলাদা করে দেখার পরিবর্তে, একটি সাধারণ জীবিত ব্যবস্থা তত্ত্ব তার পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্কের গতিশীল নিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করে।[৪৬]
পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে যে একটি জীবিত উপাদান তার ধারণা পাওয়া যায় দর্শন ও ধর্মে, কিন্তু এই বিষয়টির প্রথম বৈজ্ঞানিক আলোচনা করেন স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস হিউটন। ১৭৮৫ সালে, তিনি বলেন যে পৃথিবী একটি সুপারঅর্গানিজম ছিল যার সঠিক ব্যাখা করা সম্ভব শারীরবিদ্যার মাধ্যমে। হিউটনকে ভূতত্ত্ববিদ্যার জনক বলা হয়ে থাকে, কিন্তু হিউটনের এই জীবিত পৃথিবীর ধারণা ১৯শতকে এসে প্রখর খণ্ডতাবাদ তত্ত্বের কারণে হারিয়ে যেতে থাকে[৪৭]:১০ গাইয়া অনুসিদ্ধান্ত, ১৯৬০ সালে প্রস্তাব করেন বিজ্ঞানী জেমস লাভলক,[৪৮][৪৯] তিনি প্রস্তাব করেন যে পৃথিবীর সকল জীবিত প্রাণ একসাথে একটি একক জীব হিসাবে কাজ করে যা তার বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশগত শর্তাবলীকে নির্ধারণ করে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে।[৪৭] এই অনুসিন্ধান্তটি আধুনিক পৃথিবী ব্যবস্থা বিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
অভঙ্গুরতত্ত্ব
জীবনের গতি-প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সাধারণ লিভিং সিস্টেম থিওরির প্রথম প্রস্তাবনা করা হয় ১৯৭৮ সালে, আমেরিকান জীববিজ্ঞানী জেমস গ্রিয়ার মিলার দ্বারা।[৫০]রবার্ট রোসেন (১৯৯১ সালে) এটা তৈরি করেন, তিনি একটি সিস্টেমের সকল উপাদানকে এভাবে সংজ্ঞা প্রদান করে যে, “এটি একটি সংগঠনের একক; যা একটি ফাংশনের অংশ যার উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে এর বিভিন্ন অংশ এবং সমগ্রটির মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক।” এই ধারণা এবং বিভিন্ন প্রথমদিকের ধারণা থেকে, তিনি “সিস্টেম রিলেশনাল তত্ত্বকে” দাড় করান, যা চেষ্টা করে জীবনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করতে। বিশেষ করে, তিনি “জীবের মধ্যে অভঙ্গুরতত্ত্বের বিভিন্ন উপাদানকে” চিহ্নিত করেন যা লিভিং সিস্টেম ও “বায়োলজিক্যাল মেশিনের” মধ্যে ভিত্তিগত পার্থক্য করতে সাহায্য করে।[৫১]
বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যরূপে জীবন
একটি ব্যবস্থাপনা হিসাবে কল্পনা করা জীবন ব্যবস্থায়, পরিবেশগত ফ্লাক্স ও জৈবিক ফ্লাক্সকে একত্রে “পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া” হিসাবে দেখা হয়,[৫২] এবং পরিবেশের সাথে তাদের এই প্রতিক্রিয়াশীল সম্পর্ক কোন বিতর্ক ছাড়াই বলা যেতে পারে জীবনকে বোঝার জন্য তথা বাস্ততন্ত্রকে বোঝার জন্য অতীব জরুরি। হ্যারল্ড জে. মোরোভিটজ (১৯৯২ সালে) এটি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, জীবন কোন একক অণূজীব কিংবা কোন প্রজাতি নয় বরং এটি হল বাস্তুতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য।[৫৩] তিনি আরও যুক্তি দেন যে, বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কিত জীবনের সংজ্ঞাটি প্রাণরসায়ন কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের সাথে বেশি বাঞ্ছনীয়। রবার্ট উলানওউইকজ (২০০৯ সালে) পারস্পরিক মঙ্গলজনক সহাবস্থানকে উল্লেখ করেন জীবনের ও বাস্ততন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক ক্রমবর্ধমান আচরণ বোঝার জন্য মূল চাবিকাঠি হিসাবে।[৫৪]
কমপ্লেক্স সিস্টেম বায়োলজি (সিএসবি) বিজ্ঞানের সেই ক্ষেত্র যা ডায়নামিক সিস্টেম তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে কার্যকরী জীবের জটিলতার উদ্ভব নিয়ে আলোচনা করে।[৫৫] এই অংশকে প্রায়শই সিস্টেম বায়োলজি বলা হয় এবং যার মূল লক্ষ্য হল জীবনের সবচেয়ে মৌলিক দিকগুলো বুঝতে সাহায্য করা। সিএসবি এবং সিস্টেম বায়োলজির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অংশটিকে বলা হয় রিলেশনাল বায়োলজি, যার মূল আলোচ্য বিষয় হল গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে জীবন প্রক্রিয়াকে বোঝার চেষ্টা করা, এবং এইসকল সম্পর্কে জীবের অপরিহার্য কার্যকরী উপাদান অনুসারে শ্রেণীবিভাগ করা; বহুকোষীয় জীবের ক্ষেত্রে এই শ্রেণীবিভাগকে সংজ্ঞায়িত করা হয় “ক্যাটাগরিয়াল বায়োলজি” হিসাবে, কিংবা বায়োলজিক্যাল রিলেশনের ক্যাটাগরি তত্ত্ব হিসাবে জীবের একটি মডেল উপস্থাপন, একই সাথে জীবিত জীবের ডায়নামিক, পরিপাকতন্ত্রের জটিল নেটওয়ার্ক, জেনেটিক এবং এপিজেনেটিক প্রসেস ও সংকেত ব্যবস্থাপনা -এর ভিত্তিতে ফাংশনাল অর্গানাইজেশনের বীজগাণিতিক টপোলজি।[৫৬][৫৭] বিকল্প কিন্তু ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট পন্থাগুলির নজর রাখে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সীমাবদ্ধতার উপর, যেখানে সীমাবদ্ধতা হতে পারে কোষীয়, যেমন এনজাইম কিংবা ম্যাক্রোস্কোপিক -যেমন হাড় বা ভাস্কুলার সিস্টেমের পুরো নকশার সীমাবদ্ধতা।[৫৮]
ডারউইনীয় পরিবর্তনশীলতা
এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে লিভিং সিস্টেমের পর্বের ও কিছু সুনির্দিষ্ট বাহ্যিক ব্যবস্থার বিবর্তন একই ধরনের কিছু মূলনীতি মেনে চলে যা ডারউইনীয় ডায়নামিক নামে পরিচিত।[৫৯][৬০] এই ডারউইনীয় পরিবর্তনশীলতা গঠন করা হয়েছিল প্রথমে একটি সাধারণ অ-জৈবিক ব্যবস্থায় যা তাপগতিবিদ্যার সাম্যাবস্থায় পৌছানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট দূরে সেখানে কিভাবে অণুবীক্ষণিক পর্বের উদ্ভব হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করে, এবং এরপর এর মধ্যে আরও যুক্ত হয়েছে সংক্ষিপ্ত, প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম আরএনএ অণু। বিষয়টির অন্তর্নিহিত সারমর্ম হল পর্ব-উৎপাদক প্রক্রিয়াটি প্রকৃতপক্ষে একই হয়ে থাকে উভয় ধরনের ব্যবস্থার জন্য।[৫৯]
অপারেটর তত্ত্ব
আরও একটি সিস্টেমেটিক সংজ্ঞা হল অপারেটর তত্ত্ব যেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে “জীবন হল একটি গতানুগতিক শব্দ যা জীবের মধ্যে উপস্থিত থাকা কিছু সাধারণ বন্ধনীর জন্য ব্যবহার করা হয়; এই সাধারণ বন্ধনীগুলো জীবের কোষে পাওয়া যাওয়া যেমন ঝিল্লি ও অটোক্যাটিক্যাল সেট”[৬১] এবং যা অর্গানাইজেশনে থাকা যে কোন ব্যবস্থার জীবের ক্ষেত্রে যেটি যেকোন অপারেটর টাইপ মেনে চলে তাতে কমপক্ষে একটি কোষ থাকবে।[৬২][৬৩][৬৪][৬৫] জীবনকে আরও চিন্তা করা যেতে পারে নিম্নতর নেগেটিভ ফিডব্যাকের নেটওয়ার্কের মডেল হিসাবে, যা হল একটি সবৃহৎ পজেটিভ ফিডব্যাকের একটি অধিনীস্ত নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া, যা সম্প্রসারণ ও প্রজননের সম্ভাব্যতা দ্বারা গঠিত হয়।[৬৬]
জীবনের সবচেয়ে প্রাচীনতম তত্ত্বগুলো বস্তুবাদী ছিল, যেখানে ধারণ করা হয় যে, বিদ্যমান সব কিছুই বস্তু, এবং সেক্ষেত্রে জীবন কেবল একটি জটিল আকারের বা বিন্যাসের বস্তুর সমাবেশ। এম্পেদোক্লেস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ সালে) যুক্তি যে, মহাবিশ্বের সবকিছু চারটি শাশ্বত “উপাদান” বা “সবকিছুর শিকড়” দ্বারা গঠিত হয়: এগুলো হল মাটি, জল, বায়ু এবং আগুন। এই চারটি উপাদানগুলির বিন্যাস এবং পুনর্বিন্যাস দ্বারা সমস্ত পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়। জীবনের বিভিন্ন প্রকারভেদ এই উপাদানগুলির উপযুক্ত মিশ্রণ দ্বারা সৃষ্ট হয়।[৬৭]
ডেমোক্রিতোস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে) মনে করতেন যে জীবনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যটি হল এতে একটি আত্মা (মনস্তত্ত্ব) আছে। অন্যান্য প্রাচীন লেখকের মত, তিনি চেষ্টা করেছেন ব্যাখ্যা করতে বস্তুর মাঝে কি থাকলে তাকে জীবন্ত বলা যায়। তার ব্যাখ্যাটি ছিল এই রকম যে জ্বলন্ত পরমাণুগুলো ঠিক সেইভাবে একটি আত্না তৈরি করে যেভাবে একটি পরমাণু তৈরি ও বিনষ্ট হয় অন্যান্য বিভিন্ন জিনিসের। তিনি তার ব্যাখ্যাটি করেন আগুনের আলোকে কারণ জীবন ও তাপের মধ্যে আপাত সংযোগ রয়েছে, যেমনটি আগুন জ্বলতে জ্বলতে সামনে আগায় তেমনি জীবন সামনে আগায়।[৬৮]
প্লেটোর চিন্তা করা বিশ্বটি হল শাশ্বত এবং অপরিবর্তনীয় ধরণের, একটি ঐশ্বরিক শিল্পী দ্বারা বস্তুর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, বিভিন্ন যান্ত্রিক বিশ্ব দৃশ্যের সঙ্গে তা তীব্রভাবে বৈপরীত্য প্রকাশ করছে, যার মাঝে পরমাণুবাদ- অন্ততপক্ষে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য … এই বিতর্কটি প্রাচীন বিশ্বের সর্বত্র জুড়ে চলতে থাকে। যাক্রিক পরমাণুবাদ এপিকুরোসের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ পেয়েছিল … যখন বৈরাগ্য একটি ঐশ্বরিক উদ্দেশ্যবাদ গ্রহণ করেছিল … তখন সিন্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে ওঠে: হয় পথ দেখাতে হবে পথভ্রেষ্ট প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলে বিশ্বটি থেকে কিভাবে একটি সুবিন্যস্ত, পরিমার্জিত বিশ্ব হিসাবে গড়ে তোলা যায়, কিংবা এই প্রক্রিয়ায় কিভাবে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সাহায্য করা যায়।[৬৯]
প্রাচীন গ্রিসে উদ্ভব হওয়া যন্ত্রবাদীয় বস্তুবাদকে পুনর্জীবিত ও পরিমার্জিত করেন ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত, তিনি বলেন যে প্রাণী এবং মানুষের বিভিন্ন অঙ্গগুলো একসঙ্গে সন্নিবেশ করা হয়েছে একটি মেশিন হিসাবে কাজ করার জন্য। ১৯শতকে জৈবিক বিজ্ঞানের কোষ তত্ত্বের অগ্রগতি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহ প্রদান করে। চার্লস ডারউইন (১৮৫৯) বিবর্তনীয় তত্ত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উদ্ভবের একটি যান্ত্রিক ব্যাখ্যা।[৭০]
হাইলোমরফিজম তত্ত্বটি প্রথম প্রকাশ করেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল (খৃষ্টপূর্ব ৩২২ সালে)। অ্যারিস্টট্লের জন্য জীববিজ্ঞানে হাইলোমোফিজার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ব্যাপকভাবে তার লেখাগুলো বিদ্যমান রয়েছে। এই দৃষ্টি মতে, গাঠনিক মহাবিশ্বের সবকিছুতে বস্তু ও অবয় উভয় রয়েছে, এবং কোন জীবন্ত জিনিসের অবয় হল তার আত্মা (গ্রীক সাইকে, ল্যাটিন অ্যানিমা)। তিন ধরনের আত্না রয়েছে: গাছপালার উদ্ভিদ আত্মা, যা তাদের বাড়তে ও অবঃক্ষয়ে এবং নিজেদের পুষ্ট করার প্রকৃত কারণ, কিন্তু এটি এদের গতি এবং সংবেদনশীলতা ঘটায় না; প্রাণী আত্মা, যা প্রাণীদের চলাচল এবং অনুভব করার ক্ষমতা প্রদান করে; এবং এরপর হল বিচক্ষণতার আত্মা, যা চেতনা এবং যুক্তি উৎস হিসাবে কাজ করে, এটি (এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন) যে শুধুমাত্র মানুষের মাঝেই দেখা যায়।[৭১] প্রতিটি উচ্চতর আত্মার ক্ষেত্রে নিম্ন আত্মার সকল গুণাবলীর থাকে। এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন বস্তু কোন অবয় ছাড়াও থাকতে পারে, কিন্তু অবয় কোন বস্তু ছাড়া থাকতে পারে না, এবং এই কারণে আত্মা কোন শরীর ছাড়া থাকতে পারে না।[৭২]
এটা জীবন সম্পর্কিত পরমকারণবাদ ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জ্যসপূর্ণ, যা উদ্দ্যেশ কিংবা লক্ষ্য-দ্বারা পরিচালিত ঘটনার প্রকৃত কারণও বটে। ফলশ্রূতিতে, মেরু ভাল্লুকের সাদা রঙের চামড়া থাকাটা এটির ছদ্ম-আবরণের উদ্দেশ্যে রয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা যায়। তাই, কার্যকারণের দিকের ক্ষেত্রে (বর্তমান থেকে অতীত পর্যন্ত) বিজ্ঞানলব্ধ উপাত্তের সঙ্গে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অসঙ্গতি থাকে, যা পূর্বে ঘটা বিভিন্ন কারণের ফলাফলের প্রভাব ব্যাখ্যা করে। জৈবিক বৈশিষ্ট্যাবলীগুলি ভবিষ্যতের সর্বোত্তম ফলাফলের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, তবে এটি প্রজাতির অতীত বিবর্তনীয় ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে, যা বৈশিষ্ট্যগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায়। জৈবিক বৈশিষ্ট্যাবলীগুলি ভবিষ্যতের সর্বোচ্চ ফলাফল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, এটি করা যায় একটি প্রজাতির অতীতের বিবর্তনীয় ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে, যা প্রশ্ন তোলে বৈশিষ্ট্যগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচনকে নিয়ে।[৭৩]
স্বতঃস্ফূর্ত প্রজনন ছিল সেই বিশ্বাস যেখানে অনুরূপ জীব থেকে বংশদ্ভুত হওয়া ছাড়াই ভিন্ন একটি জীবন্ত জীবের সাধারণ গঠন হওয়া সম্ভব। সাধারণত, ধারণা ছিল যে কিছু কিছু জীব যেমন মশা-মাছি জন্ম নিতে পারে নিষ্প্রাণ বস্তু যেমন ধুলাবালি থেকে অথবা সাধারণ ধারণা ছিল ইদুর বা পোকা-মাকরের মৌসুমি প্রজনন হত কাদা কিংবা আবর্জনা থেকে।[৭৪]
স্বতঃজননের তত্ত্বটি প্রথম প্রদান করেন এরিস্টটল,[৭৫] তিনি জীবের উদ্ভব নিয়ে পূর্বে কাজ করা প্রাকৃতিক দার্শনিকদের বিভিন্ন প্রাচীন ব্যাখ্যার সংকলন এবং সম্প্রসারিত করেন; তার এই ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত থাকে প্রায় দুই সহস্রাব্দ পর্যন্ত। এই ব্যাখ্যা পরীক্ষণের মাধ্যমে অপসারিত করেন লুই পাস্তুর ১৮৫৯ সালে, যিনি পূর্বসুরীদের যেমন ফ্রান্সিসকো রেডির করে যাওয়া পরীক্ষণকে সম্প্রসারিত করেন।[৭৬][৭৭] প্রমাণিত না হওয়া স্বতঃজননের ঐতিহ্যগত ধারণা আজ জীববিজ্ঞানের মধ্যে আর কোন বিতর্কের বিষয় নয়।[৭৮][৭৯][৮০]
প্রাণশক্তিবাদ হল সেই বিশ্বাস যে জীবনের-মূলচালিকা শক্তিটি হল অ-উপাদানীয়। এই মতবাদের সূচনা করেন জর্জ আর্নেস্ট স্থ্যাল (১৭ শতকে), এবং এই মতবাদটি জনপ্রিয় ছিল ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই মতবাদটি বিভিন্ন দার্শনিক যেমন অঁরি বের্গসন, ফ্রিডরিখ নিৎশে, ও উইলহেম ডিলদে,[৮১] শারীরস্থানবিদ যেমন মারি ফ্রাঙ্কোজ জেভিয়ার বিচ্যাট, এবং রসায়নবিদ যেমন যাস্টাস ভন লাইবিগ প্রমুখের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল।[৮২] প্রাণশক্তিবাদ ধারণাটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জৈব এবং অজৈব পদার্থগুলো মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, এবং আরও ধারণা ছিল যে জৈব পদার্থগুলো শুধুমাত্র জীবন্ত বস্তু থেকেই অপলব্ধি করা সম্ভব। এই ধারণা অসত্য বলে প্রমাণিত হয় ১৮২৮ সালে, যখন ফ্রেডরিখ ভোলারইউরিয়া উৎপাদন করেন অজৈব পদার্থ থেকে।[৮৩] ধরে নেয়া হয় হয় যে, ভোলার সংশ্লেষণটি হল আধুনিক জৈব রসায়নের প্রারাম্ভ। এটা ছিল একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা কারণ প্রথমবারের মত কোন অজৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জৈব যৌগ তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।[৮২]
১৮৫০ সালের দিকে, হারমান ভন হেলমোল্ট্জ, জুলিয়াস রবার্ট ভন মেয়ার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, এটা প্রদর্শন করান যে পেশীর আন্দোলনের ফলে কোন শক্তির ক্ষয় হয় না, ইঙ্গিত প্রদান করে যে, পেশী নড়াতে কোন “মাত্রাতিরিক্ত শক্তির” প্রয়োজন হয় না।[৮৪] এই ফলাফলগুলো প্রাণশক্তিবাদমূলক তত্ত্ব নিয়ে আর কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে আগ্রহ বিনষ্ট করে দেয়, যদিওবা এই বিশ্বাস ছদ্মবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেমন হোমিওপ্যাথিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে, যা রোগ এবং অসুস্থতার কারণকে চিহ্নিত করে জীবনী শক্তি বা কল্পিত মূল চালিকা শক্তির ব্যাঘাত হিসাবে।[৮৫]
৯৯% এরও বেশি প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের জীব, সংখ্যায় যার পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন প্রজাতিরও বেশি,[১০৪] এখন পর্যন্ত যা পৃথিবীতে বসবাস করেছে বর্তমানে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।[১০৫][১০৬]
যদিওবা পৃথিবীতে শ্রেণীভূক্ত প্রজাতি জীবের সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন থেকে ২ মিলিয়নের মধ্যে,[১০৭][১০৮] তথাপি পৃথিবীর মোট জীবের প্রজাতির সংখ্যা এখনও নিশ্চিত নয়। এর অনুমানিক পরিধি ৮ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন পর্যন্ত,[১০৭][১০৮] যদি স্বল্প করে ধরা হয় তাহলে এর পরিধি ১০ থেকে ১৪ মিলিয়ন,[১০৭] কিন্তু যদি অতি বৃহৎ আকারে ধরা হয় তাহলে এর পরিধি ১ ট্রিলিয়নেরও অধিক (যার এক হাজার ভাগের এক শতাংশের প্রজাতির বিবরণ আমাদের কাছে রয়েছে), মে ২০১৬ সালে উপলব্ধ এক গবেষণা অনুসারে।[১০৯][১১০] পৃথিবীতে পরস্পর সম্পর্কিত ডিএনএবেস পেয়ারের সংখ্যা অনুমান করা হয় ৫.০ x ১০৩৭ টি এবং যার ওজন প্রায় ৫০ বিলিয়ন টন।[১১১] ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিজ্ঞানীরা ৩৫৫টি জিনের সেট প্রাপ্তির প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এগুলোকে সকল জীবের সর্বশেষ সার্বজনীন একই পূর্বপুরুষ (ইংরেজি বর্ণ অনুসারে- এলইউসিএন) জিন বলে উপস্থাপন করেন যা বর্তমানে পৃথিবীতে সকল জীবিত জীবের অংশ। [৭]
জ্ঞাত সকল জীবের মৌলিক আণবিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কিছু মিল খুজে পাওয়া যায়, যা একই আদিপুরুষ থেকে জীবনের সৃষ্টিরই বহিঃপ্রকাশ; এই পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, জীবনের ব্যুৎপত্তির উপর একটি অনুসিন্ধান্ত দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়, যা ব্যাখা করা চেষ্টা করে বিশ্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ গঠনের, যা গঠিত হয়েছিল সাধারণ জৈব যৌগ থেকে, যার মাধ্যম ছিল প্রটোসেলের প্রাক-কোষীয় জীবন ও বিপাক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন মডেলকে শ্রেণীবিভিক্ত করা হয় “প্রথমে-জিন” এবং “প্রথমে-বিপাক” শ্রেণীতে, কিন্তু একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা হচ্ছে হাইব্রীড মডেলের উত্থান, যা উভয় শ্রেণীবিভাগকে একত্রিত করে তৈরি করা।[১১২]
জীবন শুরু কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে বর্তমানে কোন বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য নেই। বর্তমানে, সর্বাধিক স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মডেলটি মিলার-উরি পরীক্ষণ এবং সিডনি ফক্সের কাজ উপর ভিত্তি করে তৈরি করা, যেখানে দেখান হয়েছে যে, আদি-পৃথিবী রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটার জন্য অণুকূলে ছিল, যা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পূর্বের অজৈব যৌগ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন জৈব যৌগের সমন্বয় করে,[১১৩] এবং ফসফোলিপিডগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিপিড বাইলেয়ার গঠন করে,- একটি কোষীয় ঝিল্লির মৌলিক কাঠামো গঠন করে।
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ)তে অন্তর্ভুক্ত নির্দেশাবলী ব্যবহার করে জীবন্ত জীব প্রোটিন সংশ্লেষণ করে, যা হল অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি পলিমার। প্রোটিন সংশ্লেষণের মধ্যবর্তী প্রক্রিয়ায় মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রিবোনিউক্লিয়িক এসিড(আরএনএ) পলিমারগুলি। আসলে কিভাবে জীবন প্রারাম্ভ হল, তার একটি সম্ভাবনা উত্তর হল, প্রথমে উৎপত্তি হয় জিনের, এরপর প্রোটিনের;[১১৪] বিকল্প সম্ভাবনাটি হচ্ছে প্রোটিন প্রথম এসেছিল এবং তারপর আসে জিন।[১১৫]
যাইহোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে জিন এবং প্রোটিন উভয়ই একে অপরটিকে তৈরি করার প্রয়োজন হয়, কোনটি প্রথমে আসেছিল সেটি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো মুরগী আগে না ডিম আগে আসছে তার মতো। এই কারণে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এই অনুমান গ্রহণ করেছেন যে, এটা অসম্ভাব্য ছিল যে জিন এবং প্রোটিন স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছে।[১১৬]
এই সকল কারণে ফ্রান্সিস ক্রিক কর্তৃক প্রথম প্রস্তাব করা হয়,[১১৭] সম্ভবনা রয়েছে যে প্রথম জীবনের প্রারাম্ভ হয়েছিল আরএনএ থেকে[১১৬] যার তথ্য ধারণের জন্য ডিএনএ এর মত গুনাগুণ রয়েছে এবং কিছু প্রোটিনের ন্যায় ক্যাটালাইটিকও গুনাগুণ রয়েছে। এটাকে বলা হয় আরএনএ জগৎ অনুসিন্ধান্ত, এবং এই অনুমানের সমর্থন করা হয়ে থাকে কারণ দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ জটিল কোষীয় উপাদানগুলির (যেগুলো ধীরে ধীরে বিকাশিত হয়) বেশিরভাগ অংশই কিংবা সম্পূর্ণ অংশ আরএনএ দ্বারা গঠিত। এছাড়াও, অনেক ক্রিটিকাল কোফ্যাক্টর (এটিপি, অ্যাসিটাল-কোএ, এনএডিএইচ, প্রভৃতি) হয় নিউক্লিওটাইড সম্পুর্ণভাবে কিংবা এর সাথে সম্পর্কিত উপাদান দ্বারা গঠিত। যখন অনুসিন্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছিল তখন আরএনএ এর ক্যাটালাইটিক গুনাবলী সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না,[১১৮] কিন্তু পরবর্তিতে থমাস ক্যাচ ১৯৮৬ সালে এটি নিশ্চিত করেন।[১১৯]
আরএনএ জগত অনুসিন্ধান্তের একটি বড় সমস্যা হল আরএনএর সংশ্লেষণ অন্য জৈব অণুর প্রেক্ষাপটে সরল অজৈব পদার্থের অনেক কঠিন। এটির একটি কারণ হল সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশে আরএনএ সাধারণত অগ্রসর হয় খুব স্থিতিশীল ভাবে এবং একটি অপরটির সাথে ক্রিয়াশীল হয় খুব ধীরে, এবং অনুসিন্ধান্তে আরও প্রস্তাব করা হয়েছিল যে জীবন্ত জীবের অন্যান্য অণুর সমন্বয় ঘটেছিল আরএনএর সৃষ্টির আগে।[১২০] তবে, পৃথিবীর বর্তমান জীবনযাত্রার শুরুর আগের পরিবেশ সৃষ্টি করে, সফলভাবে কিছু সুনির্দিষ্ট আরএনএ অণুর সংশ্লেষণ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে – বিক্রিয়ার পুরোটা সময় জুড়ে অগ্রদূত ফসফেটের উপস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট অনুক্রমে বিকল্প অগ্রদূত বিক্রিয়ক যুক্ত করে।[১২১] এই গবেষণা আরএনএ জগত অনুসিন্ধান্তকে আরও সুস্পষ্ট করে।[১২২]
২০১৩ সালে প্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, ৩.৫ গিগা বছরের আগে প্রতিক্রিয়াশীল ফসফরাস প্রজাতি (যেমন ফসফাইট) এর প্রাচুর্য্য ছিল পৃথিবীর সাগরগুলোতে, এবং ফলশ্রুতিতে এসক্রাইবারসাইট সহজেই জলীয় গ্লিসারলের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফাইট এবং গ্লিসারল ৩-ফসফেট উৎপন্ন করতে পারত।[১২৩] এটা অনুমান করা হয় যে, সর্বশেষ ভারী গ্রহাণুবর্ষণ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড এর অংশ হল এসক্রাইবারসাইট– থেকে প্রথম ফসফরাস পৃথিবীতে এসে থাকতে পারে, যা প্রাইবায়োটিক জৈব অণুগুলির সাথে বিক্রিয়া করে ফফোরাইলেটেড বায়োমোলিকুলস যেমন আরএনএ গঠন করতে পারে।[১২৩]
২০০৯ সালে, পরীক্ষণে মাধ্যমে ডারউইনের বিবর্তবাদ প্রদর্শন করা হয়, যেখানে ভিট্রোতে একটি দুই-কম্পোনেন্ট ব্যবস্থার আরএনএ এনজাইম (রাইবোজাইমস) ছিল।[১২৪] কাজটি জেরাল্ড জয়েসের ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন “সাধারণ জীববিজ্ঞানের বাইরে এটি প্রথম উদাহরণ, যেখানে একটি আণবিক জেনেটিক ব্যবস্থায় বিবর্তনীয় অভিযোজন ঘটেছে।”[১২৫]
প্রিবায়োটিক যৌগ সমূহ মহাজাগতিকভাবে উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে। ২০১১ সালে নাসা করা, পৃথিবীতে পাওয়া উল্কাপিণ্ডের উপর ভিত্তি করে করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ডিএনএ এবং আরএনএ উপাদানগুলি (অ্যাডেনিন, গুয়েনিন এবং এর সাথে সম্পর্কিত জৈব অণুগুলো) হয়তো মহাকাশে গঠিত হয়ে থাকতে পারে।[১২৬][১২৭][১২৮][১২৯]
মার্চ ২০১৫ সালে, নাসার বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো রিপোর্ট প্রকাশ করেন যে, জীবের জটিল ডিএনএ এবং আরএনএ এর জৈব উপাদানগুলি যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ইউরাসিল, সাইটোসিন এবং থায়মিন, – কে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হম্ভব হয়েছে মহাকাশের মত পরিবেশ সৃষ্টি করে ও উল্কাপিণ্ডে পাওয়া যায় এরূপ প্রারাম্ভিক রাসায়নিক উপাদান যেমন পাইরিমিডিন ব্যবহার করে। পাইরিমিডিন, যেমন পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস), মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন-সমৃদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, বিজ্ঞানীদের মতে এটি সম্ভবত রেড জায়েন্ট কিংবা নক্ষত্রীয় ধুলো এবং গ্যাসের মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।[১৩০]
পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র্য ঘটার পিছনে কাজ করেছে জেনেটিক পরিবর্তনের সুযোগ, বিপাকীয় ক্ষমতা, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ[১৩২] এবং মিথোজীবিতা প্রভৃতির মধ্যে গতিশীল মিথস্ক্রিয়তা।[১৩৩][১৩৪][১৩৫] পৃথিবীর অস্তিত্বের অধিকাংশ সময় জুড়েই, এর বসবাসযোগ্য পরিবেশে প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে অণূজীব এবং তাদের বিপাক ও বিবর্তন। এর ফলাফলস্বরূপ এই অণুজীবীও কার্যক্রমের কারণে পৃথিবীর বাহ্য-রাসায়নিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটছে একটি ভূতাত্ত্বিক সময় রেখা ধরে, যা পরবর্তিতে প্রভাব রাখছে বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিবর্তিত প্রাণের বিকাশের উপর।[১৩২] উদাহারণস্বরূপ, সায়ানোব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালোকসংশ্লেষনের সময় বাই-প্রোডাক হিসাবে নিষ্কাসিত অক্সিজেন পুরো পৃথিবীর পরিবেশে একটি ব্যাপক আকারের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর কারণ হল ওই সময় পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের জন্য অক্সিজেন ছিল বিষস্বরূপ, এর কারণে অক্সিজেনের আবির্ভাব একটি নাটকীয় বিবর্তনীয় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে, এবং পরিশেষে এই ঘটনাই পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ শ্রেণীর বিকাশে কাজ করে। জীব এবং তাদের পরিবেশের মধ্যে এই পারস্পরিক সম্পর্ক একটি প্রাণবন্ত জীব-ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।[১৩২]
জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির সামগ্রিক যোগফল। এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর প্রাণের এলাকা, এটি একটি বদ্ধ ব্যবস্থা (সৌর এবং মহাবৈশ্বিক রেডিয়েশন এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ থেকে মুক্ত) এবং এটি ব্যাপকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত।[১৩৬] সর্বশেষ বায়োফিজিওলজিক্যাল সংজ্ঞা অনুসারে, জীবমণ্ডল হল একটি বিশ্বব্যাপী বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থা যার সাথে সংযুক্ত সকল জীবিত জীব ও তাদের নিজের মধ্যে সম্পর্ক, তাছাড়াও উল্ল্যেখযোগ্য বিভিন্ন উপাদান যেমন অশ্মমণ্ডল, জীওস্ফিয়ার, জলমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল প্রভৃতির সাথে এটি সম্পর্কিত।
পৃথিবীর জীবমণ্ডলের সকল স্থানেই জীব জীবন ধারণ করে থাকে, যার অন্তর্ভুক্ত হল মাটি, হট স্প্রিং, শিলার অভ্যন্তরে যা প্রায় ভূ-অভ্যন্তরের ১৯ কিমি (১২ মা) গভীরেও হতে পারে, একইসাথে সমুদ্রের গভীরতম স্থানে, বায়ুমণ্ডলের অনেক উচ্চতাতে প্রায় ৬৪ কিমি (৪০ মা) উপরে।[১৩৭][১৩৮][১৩৯] কিছু বিশেষ পরীক্ষাগারের পরিবেশে, এটা দেখা যায় যে মহাশূন্যের প্রায়-ওজনশূন্যতা পরিবেশেও জীব বেঁচে থাকতে পারে[১৪০][১৪১] এবং বেঁচে থাকতে পারে বাইরের মহাশূন্যের অসীম শুন্যতায়।[১৪২][১৪৩] এমনকি পৃথিবীতে সমদ্রের গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও জীবকে বেঁচে থাকতে দেখা যায়।[১৪৪][১৪৫] এই সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমাংশের সমুদের সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২,৫৯০ মি (৮,৫০০ ফু; ১.৬১ মা) নিচের শিলার অভ্যন্তরে প্রায় ৫৮০ মি (১,৯০০ ফু; ০.৩৬ মা) নিচেও জীব বেঁচে থাকতে দেখা যায়,[১৪৪][১৪৬] শুধু তাই নয়, জাপানের কাছের সমদ্রতলের ২,৪০০ মি (৭,৯০০ ফু; ১.৫ মা) নিচেও জীবের সন্ধান পাওয়া যায়।[১৪৭] আগস্ট ২০১৪ সালে, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে অ্যান্টার্টিকার বরফের প্রায় ৮০০ মি (২,৬০০ ফু; ০.৫০ মা) নিচেও জীবের সন্ধান পাওয়া গেছে।[১৪৮][১৪৯] একজন গবেষকের মতে, “আপনি অণুজীব যেকোন স্থানে খুজে পেতে পারেন— এগুলো পরিবেশের সাথে মাত্রাতিরিক্তভাবে খাপ খাওয়াতে পারে এবং এইস্থানে বেঁচে থাকতে পারে।”[১৪৪]
সাধারণ দৃষ্টিকোন থেকে, জীবমণ্ডল হল যেকোন আবদ্ধ, স্বনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা যা বাস্তুসংস্থানকে ধারণ করতে পারে। কৃত্রিমভাবে বানানো জীবমণ্ডলও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে যেমন বায়োস্ফিয়ার ২ ও বিআইওএস-৩ এবং চাঁদ কিংবা অন্যান্য গ্রহে থাকা সম্ভব্য যেকোন জীবমণ্ডল।[১৫২]
সহনশীলতার পরিসীমা
ডিনোকক্কাস রেডিয়দুরান্স একটি এক্সট্রিমোফিল যা চরম ঠান্ডা, বিশুষ্কীকরণ, ভ্যাকুয়াম, এসিড এবং রেডিয়েশন এক্সপোজারেও টিকে থাকতে পারে।
একটি বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় উপাদান হল জীবন ধারণের জন্য বাহ্যিক ও রাসায়নিক উপাদান যেমন—শক্তি (সূর্যালোক বা রাসায়নিক শক্তি), পানি, তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডল, মাধ্যাকর্ষণ, পুষ্টি, এবং অতিবেগুনীসূর্য বিকিরণ হতে সুরক্ষা।[১৫৩] অধিকাংশ বাস্তুতন্ত্রে, এই পরিবেশ দিনের বিভিন্ন সময় পরিবর্তীত হয় এবং এক মৌসুমে থেকে পরবর্তী মৌসুমে পরিবর্তীত হয়।[১৫৪] তাই বেশিরভাগ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য, জীবের একটি পরিবর্তনশীল পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, যা “সহনশীলতার পরিসীমা” বলে। এই সীমার বাইরে অংশ হল “শারীরবৃত্তীয় চাপের অঞ্চল,” যেখানে বেঁচে থাকা এবং প্রজনন করা সম্ভাব্য কিন্তু জীবের অনুকূলে নয় এটি। এই সীমার বাইরে অংশ হল “অসহিষ্ণু অঞ্চল”, যেখানে এই জীবের বেঁচে থাকা ও প্রজনন অস্বাভাবিক কিংবা অসম্ভব। যে সকল জীবের সহনশীলতার পরিসীমার অংশটি অনেক বেশি সেগুলো ব্যাপক পরিসরে ছড়াতে পারে কম সহনশীলতার পরিসীমার জীবদের তুলনায়।[১৫৪]
বেঁচে থাকার জন্য, কিছু নির্দিষ্ট অণুজীব এমন একটি অবস্থা ধারণ করতে পারে যাতে করে এরা চরম ঠান্ডা, সম্পূর্ণ বিশুষ্কীকরণ, অনাহার, উচ্চ মাত্রার বিকিরণের প্রকাশে, এবং অন্যান্য বাহ্যিক বা রাসায়নিক চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হতে পারে। এই অণুজীবগুলো সপ্তাহ, মাস, বছর বা এমনকি শতাব্দীর ধরে এই বৈরী পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।[১৩২]এক্সট্রিমোফিল হল সেই সকল মাইক্রোবিয়াল জীবের ধরণ যা সাধারণত জীবের জন্য যে সহনশীল পরিসীমা আছে তার বাইরে অবস্থান করে বেঁচে থাকে।[১৫৫] এরা বিকাশিত হয় শক্তির কিছু বিরল উৎস ব্যবহার করে। যদিওবা সকল জীবই প্রায় অভিন্ন ধরনের অণু সমন্বয়ে গঠিত, কিন্তু বিবর্তনটি এই ধরনের অণুজীবকে এই বিস্তৃত সীমার বাহ্যিক ও রাসায়নিক অবস্থার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম করেছে। এই চরম পরিবেশে বেঁচে থাকা এই সকল অণুজীবীয় সম্প্রদায়ের বিপাকীয় বৈচিত্র্যের ও গঠনিক বৈশিষ্ট্য সমূহের উপর এখনও গবেষণা চলছে।[১৫৬]
অণুজীব এমনকি পৃথিবীতে গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও বেঁচে থাকতে পারে।[১৪৪][১৪৫] এছাড়াও অণুজীব সমুদ্রতলদেশের শিলার ভিতরে প্রায় ১,৯০০ ফুট (৫৮০ মি) নিচে ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচের প্রায় ৮,৫০০ ফুট (২,৬০০ মি) নিচে বেঁচে থাকতে পারে।[১৪৪][১৪৬]
সকল জীবিত বস্তুর জৈবরাসায়নিক কার্যকলাপ চলানোর জন্য কিছু মূল রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন। কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, এবং সালফার– এগুলো হল সব প্রাণীর জন্য মৌলিক ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট – এগুলোকে প্রায়ই ইংরেজি আদ্যক্ষর সিএইচএনওপিএস দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একসঙ্গে এগুলো বেঁচে থাকার মৌলিক বস্তু নিউক্লিক অ্যাসিড, প্রোটিন এবং লিপিড তৈরি করে। এই ছয়টি উপাদানগুলির মধ্যে পাঁচটি দ্বারা ডিএনএর রাসায়নিক উপাদানগুলি গঠিত হয়, একমাত্র ব্যতিক্রম উপাদান হচ্ছে সালফার। সালফার, অ্যামিনো অ্যাসিডের সিসটেইন এবং ম্যাথিয়োনাইন গঠনের একটি উপাদান। এই সকল উপাদানের মধ্যে জৈবিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রচুর্য্য দেখাা যায় কার্বনের, যার মধ্যে একাধিক, স্থিতিশীল সমযোজী বন্ধনী গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। কার্বন, কার্বন-ভিত্তিক(জৈব) অণুর বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক গঠন তৈরি করতে সহায়তা করে।[১৫৯] কিছু বিকল্প কাল্পনিক ধরণের জৈবরাসায়নিক ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই তালিকার এক বা একাধিক উপাদানকে বাদ দিয়ে কিংবা তালিকার কোনও একটি উপাদানকে অদলবদল করে বাইরের কোন উপাদান যুক্ত করে কিংবা কাইরালিটির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে বা অন্যান্য রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি পরিবর্তন করে তৈরি হয়।[১৬০][১৬১]
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড হল সেই অণু যা জ্ঞাত সকল জীবিত জীব ও অনেক ভাইরাসের বৃদ্ধি, ক্রমবিকাশ, কার্যকলাপ ও প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। প্রোটিন ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেডের পাশাপাশি, ডিএনএ এবং আরএনএ হল নিউক্লিক এসিড, এগুলো হল তিনটি প্রধান ধরনের মধ্যে অন্যতম ম্যাক্রোমলিকিউল যা জীবিত সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। অধিকাংশ ডিএনএ অণুতে দুইটি বাইপলিমারের সূত্র আঙ্গুরের মত প্যাচানো থেকে দ্বৈত হেলিক্সের মত হয়। দুইটি ডিএনএ সুত্র একত্রে পলিনিউক্লিউটাইড নামে পরিচিত, কারণ এগুলো গঠিত হয় অনেকগুলো একক অংশনিউক্লিওটাইড দ্বারা।[১৬২] প্রতিটি নিউক্লিউটাইড গঠিত হয়ে থাকে নাইটোজেন-যুক্তনিউক্লিউওবেস দ্বারা — হয় সাইটোসিন (সি), গুয়ানিন (জি), এডেনিন (এ) কিংবা থাইমিন (টি) দ্বারা — একই সাথে থাকে চিনি, যাকে বলা হয় ডিঅক্সিবেস এবং একটি ফসফেট গ্রুপ। নিউক্লিউওটাইডগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয় একটি সমযোজী বন্ধনের চেইনের মাধ্যমে যার মাঝে থাকে একটি নিউক্লিউটাইডের চিনির অণুর সাথে পরের ফসফেটের সংযুক্তি, ফলশ্রূতিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে একটি চিনি-ফসফেটের মেরুদণ্ড তৈরি হয়। বেস পেয়ার নিয়ম অনুসারে (এ সাথে টি, এবং সি সাথে জি সংযুক্ত হয়ে থাকে), হাইড্রোজেন বন্ধন দুটি পৃথক পলিনিউক্লিওটাইডের সুত্রের নাইট্রোজেনীয়াস বেসের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি করে দ্বি-সুত্রীয় ডিএনএ তৈরি করে। পৃথিবীতে পরস্পর সংযুক্ত ডিএনএ বেস-জোড়ার মোট পরিমাণ অনুমান করা হয় প্রায় ৫.০ x ১০৩৭টি, এবং যার ওজন হল ৫০ বিলিয়ন টন।[১১১] যদি তুলনা করা হয়, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে থাকা মোট ভর অনুমান করা হয় প্রায় ৪ টিটন (ট্রিলিয়ন টন কার্বন)।[১৬৩]
ডিএনএর জীবের জৈবিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। ডিএনএ মেরুদণ্ড ফাটল প্রতিরোধী, এবং দ্বি-আনিবিক কাঠামোর উভয় অনুই একই জৈবিক তথ্য ধারণ করে। জৈবিক তথ্যের প্রতিলিপি তৈরি হয় যখন অণু দুটি পৃথক হয়ে যায়। ডিএনএ’র একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (মানুষের ক্ষেত্রে ৯৮% এরও বেশি) নন-কোডিং, যার অর্থ হল এই অংশগুলি প্রোটিন অনুক্রমের প্যাটার্ন হিসেবে কাজ করে না।
ডিএনএর দুটি অণু একে অপরের বিপরীত দিক দিয়ে গমন করে এবং তাই এটা পরস্পর অসমান্তরাল হয়ে থাকে। প্রতিটি চিনির অণুর সাথে সংযুক্ত অংশটি হল যে কোন চার ধরনের মধ্যে এক ধরনের নিউক্লিওবেস (আনুষ্ঠানিকভাবে, ক্ষার) দ্বারা গঠিত। ডিএনএ-এর মেরুদন্ডের সাথে সংযুক্ত নিউক্লিওবেস গুলোর বিভিন্নভাবে সাজানোর ব্যবস্থা হল সেই ক্রম যা জীবের জৈবিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। জেনেটিক কোডের মধ্যে, আরএনএ অণুগুলো অনুধাবনের মাধ্যমে প্রোটিনগুলির মধ্যে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডের অনুক্রমটি সুনির্দিষ্ট করা যায়। এই আরএনএ অণুগুলো প্রাথমিকভাবে ডিএনএ অণুকে একটি টেমপ্লেট হিসাবে ব্যবহার করে ট্রান্সক্রিপশন নামক একটি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
কোষগুলির মধ্যে, ডিএনএ ক্রোমোজোমের দীর্ঘ কাঠামোর মধ্যে সাজানো থাকে। কোষ বিভাজনের সময় এই ক্রোমোসোমগুলি ডিএনএ পুনরাবৃত্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রতিলিপি তৈরি করে, যার ফলে প্রতিটি কোষের ক্রোমোজোমের সম্পূর্ণ সেট বজায় থাকে। সুকেন্দ্রিক জীবের (প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক এবং প্রোটিস্টা) ক্ষেত্রে বেশিরভাগের ডিএনএ কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতরে থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গাণু যেমন, মাইটোকন্ড্রিয়া বা ক্লোরোপ্লাস্ট মধ্যে থাকে।[১৬৪] এর বিপরীতে, প্রাক-কেন্দ্রিক জীব (ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া) তাদের ডিএনএ সাইটোপ্লাজমে সংরক্ষিত থাকে। ক্রোমোসোমের মধ্যে, ক্রোমাটিন প্রোটিন যেমন হিস্টোন ডিএনএ-কে সঙ্কুচিত ও সংগঠিত করে রাখে। এই সঙ্কুচিত গঠনগুলি ডিএনএ এবং অন্যান্য প্রোটিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সহায়তা করে, ডিএনএর বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান আটটি শ্রেণীবিন্যাস ক্রমের নিন্মতম থেকে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত ক্রমবিভক্তি। অন্তর্বর্তী অপ্রধান ক্রমগুলো দেখানো হয়নি।
জীবনকে সাধারণত আটটি ভাগে শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে থাকে- ডোমেইন, কিংডম, ফাইলাম, ক্লাস, অর্ডার, ফ্যামেলি, জেনাস এবং স্পিসিস. মে ২০১৬ সালে, বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ১ ট্রিলিয়ান প্রজাতির জীব রয়েছে যার মাঝে মাত্র একহাজার ভাগের এক শতাংশের বিবরন তাদের কাছে রয়েছে।[১০৯]
প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টেটল (৩৮৪-৩২২ বিসি) সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি জীবের শ্রেণি বিভাগের উপর কাজ করেন, ওই সময়ের পরিচিত সকল জীবন্ত জীবকে তিনি ভাগ করেন হয় উদ্ভিদ কিংবা প্রাণি হিসাবে, এই বিভাগের মূল ভিত্তি ছিল এগুলো চলাচল করতে পারে কিনা। তিনি প্রাণিকে আরও বিভক্ত করেন এগুলোতে রক্ত রয়েছে কিনা বা রক্তবিহীন কিনা (অন্তত লাল রক্তবিহীন কিনা), যেটাকে পারস্পরিকভাবে মেরুদণ্ডী প্রাণী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীতে বিভক্ত করার সাথে তুলনা করা যায়, এবং রক্তযুক্ত প্রাণীকে বিভক্ত করা যায় পাঁচটি গ্রুপে: ভিভিপেরাস কোয়াড্রুপেডস্ (মেমেল্স), অভিপেরাস কোয়াড্রুপেডস্ (রেপটাইল ও এমফিবিয়ান), পাখি, মাছ ও তিমি। রক্তবিহীন প্রাণীকেও বিভক্ত করা যায় পাঁচটি গ্রুপে: সিফালোপেড, ক্রাসটাসিন, পোকামাকড় (যার মধ্যে রয়েছে মাকড়শা, স্কর্পিয়ান ও সেণ্ট্রিপেডস, এগুলো ছাড়াও আজকাল যা পোকামাকর হিসাবে গণ্য কর হয় তাও এর অন্তর্ভুক্ত), খোলস যুক্ত প্রাণী (যেমন বেশিরভাগ মলাস্কা ও একাইনোডার্মাটা), এবং জুফাইটা (প্রাণি যেগুলো দেখতে উদ্ভিদের মত)। যদিও প্রাণিবিদ্যা নিয়ে এরিস্টেটলের কাজ নির্ভুল ছিল না, কিন্তু এটা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় জীববিজ্ঞানের বিশ্লেষণ এবং তার মৃত্যুর পর বহু শতাব্দী ধরে এই বিশ্লেষণ চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল।[১৬৭]
আমেরিকার অন্বেষণার ফলে বিপুল সংখ্যক নতুন উদ্ভিদ ও প্রাণির সন্ধান পাওয়া যায় যাদের বিবরণ ও শ্রেণিবিন্যাস করা প্র্যোজন হয়ে উঠে। ১৬শ শতাব্দীর শেষভাগে ও ১৭ তম শতাব্দীর শুরুর দিকে, প্রাণি জগতের উপর নিরুপম গবেষণা করা হয় এবং এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হয় যতক্ষণ না এর ফলাফল সম্মখ জ্ঞানের একটি আধার তৈরি করা যা শ্রেণিবিন্যাসের একটি গাঠনিক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করা। ১৭৪০-দশকের শেষের দিকে, কার্ল লিনিয়াস প্রজাতির শ্রেণীবিন্যাসের জন্য দ্বিদলীয় নামকরণের একটি পদ্ধতি চালু করেন। লিনিয়াস নামকরণের এই গঠনটি উন্নত করার চেষ্টা করেন এবং পূর্বে ব্যবহৃত বহু-শব্দযুক্ত নামগুলোকে সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করেন এগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় অলঙ্করণ বিলুপ্ত করে, নতুন বর্ণনামূলক শর্তাবলী প্রবর্তন করেন এবং সঠিকভাবে তাদের অর্থ সংজ্ঞায়িত করেন।[১৬৮]
প্রাথমিকভাবে ছত্রাকে উদ্ভিদ হিহাবে গণ্য করা হত। খুব অল্প সময়ের জন্য লিনিয়াস এগুলোকে শ্রেণিবিন্যাসের প্রাণিজগতের ভার্মিস বলে শ্রেণিবিভাগ করেন, কিন্তু পরবর্তিতে এটিকে তিনি আবার উদ্ভিদজগতে স্থাপিত করেন। কোপল্যান্ড ছত্রাকে প্রোস্টিস্টা হিসাবে শ্রেণিবিভাগ করেন, ফলশ্রুতিতে তিনি সমস্যাটা খানিকটা পাশ কাটিয়ে যান কিন্তু স্বীকার করেন এগুলোর আলাদা অবস্থা।[১৬৯] এই সমস্যাটা পুরোপুরিভাবে সমাধান করেন হুইট্রেকার, যখন তিনি এগুলকে নিজস্ব কিংডমের অধীনস্থ করেন, তার পাঁচ-কিংডম ব্যবস্থায়।বিবর্তনের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে প্রকৃতপক্ষে ছত্রাক উদ্ভিদজগতের থেকে প্রাণিজগতের সাথে বেশি সম্পর্কিত।[১৭০]
নতুন আবিষ্কার কোষ ও মাইক্রো-অরগানিজম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণের সুয়োগ করে দিয়েছে, জীবনের নতুন গ্রুপ উন্নমোচিত হয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে কোষবিদ্যা এবং মাইক্রোবায়োলজির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই নতুন জীবগুলি মূলত হয়, প্রোটোজোয়া রূপে প্রাণিজগতে কিংবা প্রোটোফাইটা/থেলোফাইটা রূপে উদ্ভিদজগতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়, কিন্তু পরিশেষে এগুলোকে একত্রিত করে একটি জগতে নিয়ে আসেন হেকেল যা হল প্রোটিস্টা, পরবর্তিতে প্রাক-কেন্দ্রিক অংশটিকে ভেংগে মনেরা জগতে নিয়ে যাওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত দুটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত করা হয়, ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া রূপে। এই ঘটনাগুলো ছয়-কিংডম ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে এবং পরিশেষে বর্তমানের তিন-অধিজগৎ ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে, যার মূল ভিত্তি হল বিবর্তনীয় সম্পর্ক।[১৭১] যদিওবা, সুকেন্দ্রিক অংশের শ্রেণিবিভাগ, বিশেষ করে প্রোটিস্টার শ্রেণিবিভাগ, এখনও বিতর্কিত।[১৭২]
মাইক্রোবায়োলজি, আণবিক জীববিজ্ঞান ও ভাইরাসবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে, অ-কোষীয় পুনঃপ্রজনন এজেন্টগুলো আবিষ্কৃত হয়, যেমন ভাইরাস এবং ভিরোড। যদিওবা এগুলো জীবিত বলে বিবেচিত হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে; ভাইরাসের মধ্যে জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কোষীয় ঝিল্লি, বিপাক এবং পরিবেশের সাথে বৃদ্ধি বা প্রতিক্রিয়া করার গুণের অভাব রয়েছে। ভাইরাসকে এখনও এর জীববিদ্যা এবং জেনেটিক্স উপর ভিত্তি করে “প্রজাতি”তে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে, কিন্তু এই ধরনের শ্রেণীবিভাগ অনেক দিক দিয়ে বিতর্কিত।[১৭৩]
কোষ হল প্রতিটি জীবন্ত বস্তুর কাঠামো মৌলিক একক, এবং সমস্ত কোষ উৎপন্ন হয় পূর্ব থেকে উপস্থিত কোষের বিভাজনের মাধ্যমে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে হেনরি ডিট্রোচেট, থিওডোর শচওয়ান, রুডলফ ভিরচোও এবং অন্যান্যরা কোষ তত্ত্ব প্রণয়ন করা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা ব্যাপকভাবে গ্রহীত হয়েছিল।[১৮৩] একটি প্রাণীর কার্যকলাপ তার কোষের মোট কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে, কারণ দেহে শক্তি প্রবাহ এগুলোর মধ্যে ও মাঝে ঘটে।[১৮৪] কোষগুলো বংশগতির তথ্য ধারণ করে থাকে যা কোষ বিভাজনের সময় একটি জেনেটিক কোড হিসাবে পরবর্তি কোষে স্থানন্তরিত হয়।[১৮৫]
কোষ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রাক-কেন্দ্রিক কোষে নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য ঝিল্লি-আবদ্ধ অঙ্গাণু থাকে না, যদিও এই কোষগুলোতে গোলাকার ডিএনএ এবং রাইবোজোম থাকে। ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া হল প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের দুইটি ডোমেন। আরেকটি প্রধান শ্রেনীর কোষ হল সুকেন্দ্রিক কোষ, যাতে স্বতন্ত্র নিউক্লি ঝিল্লি থাকে একটি নিউক্লিয়ার মেমব্রেণ ও মেমব্রেণ ঝিল্লি-আবদ্ধ অঙ্গাণুর মাঝে, এতে আরো অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, লাইসোসোম, রুক্ষ ও মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এবং অন্তকোষীয় গহ্বর থাকে। উপরন্তু, তারা সংগঠিত ক্রোমোসোম ধারণ করে যা জেনেটিক উপাদান বহন করে। বৃহৎ জটিল জীবগুলোর সকল প্রজাতিই সুকেন্দ্রিক কোষ দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে প্রাণী, উদ্ভিদ ও ছত্রাক, যদিও সুকেন্দ্রিক প্রজাতির বেশিরভাগই প্রোটিস্টঅণুজীব।[১৮৬] প্রচলিত মডেল অনুসারে সুকেন্দ্রিক কোষ বিকাশিত হয়েছে প্রাক-কেন্দ্রিক কোষ থেকে, আর সুকেন্দ্রিক কোষের প্রধান অঙ্গাণুগুলো এন্ডোসিম্বায়োসিস মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এবং প্রাক-সুকেন্দ্রিক কোষের সাথে ক্রিয়ার মধ্যে গঠিত হয়েছে।[১৮৭]
কোষবিদ্যার মূল আণবিক ক্রিয়াগুলো সংগঠিত হয়ে থাকে প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে। প্রোটিন বায়োসিনেথিসিস নামক একটি এনজাইম-অনুঘটক প্রক্রিয়া দ্বারা রবিওসোমের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াগুলির অধিকাংশ সমন্বিত হয়ে থাকে। কোষের নিউক্লিক অ্যাসিডের জিন এক্সপ্রেশনের উপর ভিত্তি করে একটি ধারাক্রম অনুসারে আমিনো অ্যাসিডগুলো একত্রিত হয় এবং সংযুক্ত হয়।[১৮৮] সুকেন্দ্রিক কোষে, কোষের নিদির্ষ্ট স্থানে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয় গল্গি এপারেটাসের মাধ্যমে যাতে করে এই প্রোটিনগুলিকে বিভিন্ন স্থানে পৌছাতে পারে ও প্রক্রিয়াজাত হতে পারে।[১৮৯]
কোষগুলো, কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরুৎপাদিত হয়ে থাকে যার মধ্যমে একটি মাতৃকোষ থেকে দুই বা ততোধিক নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। প্রাক-কেন্দ্রিক কোষের জন্য, কোষ বিভাজন হয়ে থাকে ফিশন প্রক্রিয়ায় যেখানে ডিএনএ টির প্রতিলিপি তৈরি হয়, তারপর দুটি অংশই কোষীয় ঝিল্লির বিভিন্ন অংশে সংযুক্ত হয়। সুকেন্দ্রিক কোষে, মাইটোসিসের আরও জটিল একটি প্রক্রিয়া অনুসরিত হয়। যাইহোক, শেষ ফলাফল একই; ফলে কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট কোষগুলো তার আদি কোষের সাথে পরিপূর্ণ সমাঞ্জস্য থাকে (মিউটেশনের কোষগুলো ছাড়া) এবং উভয়ই পরবর্তিতে আবার কোষ বিভাজনে সক্ষম থাকে একটি ইন্টারফেজ সময়ের পর থেকে।[১৯০]
বহুকোষীয় জীবগুলি প্রথম বিকাশিত হয়েছিল কোষের কলোনি তৈরি করে। এই কোষগুলি গ্রুপ জীবের সৃষ্টি করতে পারে কোষীয় সংযুক্তির মাধ্যমে। কলোনির প্রত্যেক সদস্য পৃথকভাবে নিজেরমত বেঁচে থাকতে সক্ষম, অপরদিকে সত্যিকারের বহু-কোষীয় জীবের সদস্যরা আলাদা বিশেষত্ব বিকাশ করেছে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য অবশিষ্ট জীবের উপর নির্ভর করে। এই ধরনের জীবগুলি কলোনি তৈরি করেছে বা একক জীবাণু কোষ তৈরি করেছে যা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কোষ গঠন করতে সক্ষম হয় যা পূর্ণাং জীব গঠন করে। এই বিশেষত্ব বহুকোষীয় জীবগুলিকে এক কোষীয় জীবের তুলনায় আরো দক্ষতার সাথে রসদ ব্যবহারে সাহায্য করে।[১৯১] জানুয়ারিতে ২০১৬ সালে, বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেন যে, প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে, একটি অণুতে একটি সামাণ্য জিনগত পরিবর্তন, যাকে জিকে-পিআইডি বলা হয়, হয়তো জীবের এক কোষীয় জীব থেকে বহুকোষীয় জীবে পরিণত করার পিছনে কাজ করেছে।[১৯২]
কোষগুলো তার মাইক্রোপরিবেশ বোঝার ও এর সাথে খাপ খাওয়ার পদ্ধতি বের করেছে, যার ফলে তাদের অভিযোজন উন্নত হয়েছে। কোষীয় সংকেত ব্যবস্থা কোষীয় কার্যক্রম সমন্বয় করে থাকে, এবং একইসাথে বহুকোষীয় প্রাণীর মৌলিক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কোষীয় সংকেতগুলি সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে জেসট্যাক্রিন সিগন্যালিং ব্যবহার করে হতে পারে, অথবা পরোক্ষভাবে এন্ড্রাক্রিন সিস্টেমে এজেন্টদের বিনিময়ের মাধ্যমে হতে পারে। আরো জটিল জীবের ক্ষেত্রে, কার্যক্রমের সমন্বয় একটি সুনির্দিষ্ট স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ঘটতে পারে।[১৯৩]
যদিওবা নিশ্চিতভাবে একমাত্র পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, অনেকেই মনে করেন যে বহির্জাগতিক প্রাণের বিকাশ যে শুরু কেবলমাত্র যুক্তিসঙ্গত তাই নয়, এটা খুবই সম্ভাব্য কিংবা অনিবার্য।[১৯৪][১৯৫]সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহ ও তার চাঁদে এবং একইসাথে অন্যান্য গ্রহমণ্ডলে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে কোন একসময়ে এগুলোতে থেকে থাকা কোষীয় প্রাণীর অস্তিত্বের সন্ধানে এবং এসইটিইআই এরূপ একটি প্রজেক্ট, যারা বহির্জাগতিক প্রাণীর সভ্যতা কর্তৃক প্রেরিত রেডিও ট্রান্সমিশন শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। সৌর জগতের অন্যান্য স্থান যেখানে অণুজীব প্রাণের অস্থিত্ব থাকতে পারে যার মধ্যে রয়েছে মঙ্গল গ্রহের অধিপৃষ্ট, শুক্র গ্রহের উপরের বায়ুমণ্ডল[১৯৬] এবং বৃহত্তাকার গ্রহগুলোর অধীনস্থ কিছু চাঁদের সাগরের উপরের পৃষ্ঠ।[১৯৭][১৯৮] সৌরজগতের বাইরে, কোন আরেকটি প্রধান-সিকোয়েন্স তারকাটি ঘিরে, যে অঞ্চলটি যা পৃথিবীর মত প্রাণ ধারণ করতে পারবে, পৃথিবীরই মত কোন গ্রহতে এমন অঞ্চলকে বাসযোগ্য অঞ্চল বলে হয়। এই অঞ্চলের ভেতর ও বাহ্যিক ব্যাসার্ধ পরিবর্তিত হতে পারে তারকাটির উজ্জ্বলতার সাথে, এটা অঞ্চলটির কত সময় ধরে টিকে থাকবে তার সাথেও উজ্জ্বলতা সম্পর্কিত। সূর্যের তুলনায় আরো বড় আকারের তারকায় বৃহতাকার বাসযোগ্য অঞ্চল থাকতে পারে, কিন্তু এটি অতি অল্প সময়ের ব্যবধান জন্য প্রধান-সিকোয়েন্স তারকা রূপে থাকে। ছোট লাল খর্বাকার তারকার ক্ষেত্রে আবার বিপরীত সমস্যা রয়েছে, এতে ছোট বাসযোগ্য অঞ্চল থাকতে পারে যা উচ্চ মাত্রার চুম্বকীয় সক্রিয়তায় মাঝে পরে যায় এবং এতে করে বদ্ধ কক্ষপথের টাইডাল লকিং এর প্রভাব দেখা দেয়। অতএব, মধ্যবর্তী ভর পরিসরের তারকা যেমন সূর্যের ক্ষেত্রে অধিক সম্ভাবনা কাজ করে পৃথিবীর মত প্রাণের বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে।[১৯৯] একটি ছায়াপথের মধ্যে তারকার সঠিক অবস্থানও প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। তারকার সাথে একটি অঞ্চলে থাকা ভারী উপাদানগুলো যা গ্রহ সৃষ্টি করতে পারে, এর সাথে সম্ভাব্য আবাসস্থলের জন্য-ক্ষতিকারক সুপারনোভা ইভেন্টগুলির কম হারের সংমিশ্রণ, একত্রে জটিল প্রাণ ধারণে ও বিকাশে সক্ষম গ্রহ তৈরির সম্ভবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।[২০০]ড্রেকের সূত্রের ভেরিয়েবলগুলি ব্যবহার করে, গ্রহমণ্ডলের স্বম্ভাব্য অবস্থা আলোচনা করা হয় যেখানে সভ্যতা বিকাশের সম্ভবতা অধিক রয়েছে।[২০১] তার এই সূত্র ব্যবহার করে বহির্জাগতিক জীবনের সংখ্যা নিরূপন করা মোটামুটি কঠিন; তার কারণ ভেরিয়েবলগুলো বেশিরভাগই অজানা, ব্যবহারকারীর মতামত সমীকরণের ফাংশনগুলোর ক্ষেত্রে একটি আয়না হিসেবে কাজ করে। ফলস্বরূপ, ছায়াপথের সভ্যতার সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১০^-১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫৬ মিলিয়নের বেশি হতে পারে; বিস্তারিত জানার জন্য ড্রেকের সূত্র পড়ুন।
আর্টিফিশিয়াল লাইফ বা কৃত্রিম জীবন হল জীবনের কোন একটি বিশেষ অংশের অনুকরণ, যা করা হয়ে থাকে কম্পিউটার, রোবটিক্স বা জৈব-রসায়নের মাধ্যমে।[২০২] কৃত্রিম জীবনের অধ্যয়ন ঐতিহ্যগত জীববিদ্যাকে অনুকরণ করে কিছু জৈবিক ঘটনাকে পুনবৃত্তি করার প্রচেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিকরা কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে জীবিত সিস্টেমের যুক্তিগত দিকটি নিয়ে অধ্যয়ন করে-বোঝার চেষ্টা করে, সকল ধরনের জটিল তথ্য প্রসেসিংগুলো যা ওই সিস্টেমগুলির প্রকৃত সংজ্ঞা প্রদান করে।[১৮৪] যেখানে সংজ্ঞা অনুসারে, জীবন হল, জীবিত অবস্থায় থাকা, অপর দিকে কৃত্রিম জীবন বলতে সাধারণত একটি ডিজিটাল পরিবেশে এবং অস্তিত্বে সীমাবদ্ধ তথ্যকে বুঝানো হয়।
সিনথেটিক জীববিজ্ঞান হল বায়োটেকনোলজির একটি নতুন ক্ষেত্র, যা বিজ্ঞান ও জৈব প্রকৌশলকে একত্রিত করে গঠিত। এর সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে নতুন জৈবিক ফাংশন ও সিস্টেমের নকশা করা এবং নির্মাণ করা যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। সিনথেটিক জীববিজ্ঞান ধারণ করে বায়োটেকনোলজির বিস্তারিত পুনসংজ্ঞা এবং তার সম্প্রসারণ। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল যাতে করে ইঞ্জিনিয়ারিং করে জৈবিক সিস্টেমের নকশা ও কাঠামো তৈরি করতে পারা, যা তথ্য প্রক্রিয়া, রসায়নিক পরিবর্তন, উপকরণ ও কাঠামো তৈরি, শক্তি উৎপাদন, খাদ্য সরবরাহ এবং পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যকে স্বমন্নত এবং উত্তর উত্তর উন্নত করেতে পারবে।[২০৩]
মৃত্যুকে সংজ্ঞায়িত করার চ্যালেঞ্জগুলির একটি হলো জীবন থেকে একে আলাদা করা। মৃত্যুর বলতে হয়, যে মুহূর্তে জীবনের শেষ হয়ে যায় তা বুঝায়, অথবা যে মুহূর্তে জীবনের সূচনা ঘটে তা বুঝায়।[২০৫] যাইহোক, যখন মৃত্যু ঘটেছে তা নির্ণয় করার জন্য জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে সঠিক ধারণাগত সীমানা অঙ্কন করা প্রয়োজন। এটাই বেশি সমস্যাদায়ক, কারণ কিভাবে জীবনের সংজ্ঞা দেয়া হবে তার উপর সামান্যই ঐক্যমত্য রয়েছে। সহস্রাব্দ ধরে “মৃত্যুর প্রকৃতি” বিশ্বের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রধান চিন্তাধারার এবং দার্শনিক অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বেশিরভাগ ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে হয়, পরকাল বা আত্মারপুনর্জন্ম অথবা পরবর্তীকালে দেহের পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস রেখে।
বিলুপ্তকরণ হল প্রক্রিয়া যার ফলাফল হল, একটা টেক্সোন বা প্রজাতি গ্রুপের সকল প্রাণীর বিনাশ হওয়া, ফলশ্রুতিতে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।[২০৬] বিলুপ্তির মুহূর্তটি সাধারণত ধরা হয়, যখন ওই প্রজাতির শেষ জীবটি মারা যায়। কারণ একটি প্রজাতি সম্ভাব্য পরিসীমা বেশ বড় হতে পারে, তাই এই মুহূর্তটি নির্ধারণ করা কঠিন, ফলশ্রুতিতে এটা সাধারণত করা হয়ে থাকে অনুক্রমঅনুসারে পৃথকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পর আপাত অনুপস্থিতি থাকলে। প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে থাকে যখন তারা পরিবর্তনশীল আবাসস্থলের সাথে আর খাপ খাওয়াতে পারে না কিংবা শক্তিশালী প্রতিযোগী উপস্থিত থাকলে। পৃথিবীর ইতিহাসের, ৯৯% এরও বেশি প্রজাতির জীব যারা কোন না কোন সময় জীবন্ত ছিল আজ বিলুপ্ত হয়েছে;[১০৪][১০৫][১০৬][২০৭] যাইহোক, গণবিলুপ্তি হয়তোবা নতুন প্রজাতির জীবের বিবর্তন ত্বরানিত করেছে তাদের জন্য বৈচিত্রতার সুযোগ প্রদান করে।[২০৮]
জীবাশ্ম হল সদূর অতীতের প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবের সংরক্ষিত অংশ বা অংশবিশেষ। সামগ্রিকভাবে সকল জীবাশ্মসমূহ, যা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আবিষ্কৃত হয়নি উভয়ই, এবং শিলা গঠনের ভিতরে ও পাললিক শিলা স্তরগুলির (স্ট্র্যাটা) মধ্যে থাকা জীবাশ্মগুলোকে একত্রে জীবাশ্ম রেকর্ড হিসাবে প্রকাশ করা হয়। একটি সংরক্ষিত নমুনাকে জীবাশ্ম বলা হবে যদি এটি ১০,০০০ বছরের চেয়ে পুরোনো হয়।[২০৯] যদিওবা, জীবাশ্মের বয়সের রেঞ্জ শুরু হয় সবচাইতে নবীনটি হলোসিন যুগের এবং প্রাচীনতমটি আর্কিয়ান যুগ পর্যন্ত, যা প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর পুরোনো।[২১০][২১১]
ভাইরাস ও অন্যান্য একই ধরনের জীবের বিবর্তন এখনো অজানা। ফলে এই শ্রেণীবিন্যাস প্যারাফাইলিক হতে পারে, কারণ কোষীয় জীবন অকোষীয় জীবন থেকে উদ্ভূত হতে পারে, বা পলিফাইলিক হতে পারে, কারণ সবচেয়ে সাম্প্রতিক প্রাপ্ত পূর্বপুরুষ প্যারাফাইলির অন্তর্ভুক্ত নয়। সংক্রামন প্রোটিন অণু প্রায়ন জীবন্ত বলে বিবেচিত হয় না, কিন্তু একে “জীব-সমতুল্য জৈবিক গঠন” বলে বর্ণনা করা হয়। কিছু বিশেষ ভাইরাস-আশ্রিত জৈবিক গঠনকে সাবভাইরাল এজেন্ট বলে বিবেচনা করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট ও ডিফেক্টিভ ইন্টারফারিং পার্টিকল, যাদের প্রতিরূপ ধারণ করতে সাহায্যকারী ভাইরাসের প্রয়োজন হয়
জীব দেহ হতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলো নিঃসৃত হওয়ার ঘটনাকে বায়োলুমিনিসেন্স (Bioluminescence) বা জীব দ্যুতি বলে। অথবা, যে পদ্ধতিতে কিছু জীব রাসায়নিক শক্তিকে আলোক শক্তিতে রুপান্তরিত করে। স্থলজ ও জলজ উভয় প্রকার প্রাণীতে এই রকমের দ্যুতি বা আলো দেখা যায়। যেমনঃ জোনাকি পোকা, নকটিলুকা। বিজ্ঞানীদের মতে এই সকল প্রাণীদের দেহে দু’ধরনের রাসায়নিক পদার্থ লুসিফেরিন ও লুসিফারেজ থাকে যা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে আলো উৎপন্ন করে।
সাধারণ অর্থে, জীবদ্যুতিতল মূল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি হালকা-নির্গত অণু এবং একটি এনজাইম জড়িত, সাধারণত যা লুসিফেরিন এবং লুসিফেরেজ নামে পরিচিত। যেহেতু এগুলি জেনেরিক নাম, লুসিফারিন এবং লুসিফেরেসগুলি প্রায়শই প্রজাতি বা গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত করে আলাদা হতে পারে , অর্থাৎ ফায়ারফ্লাই লুসিফেরিন। সমস্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত ক্ষেত্রে, এনজাইম লুসিফেরিনের জারণকে অনুঘটক বা catalyst করে।
কিছু প্রজাতিতে লুসিফ্রেসের জন্য অন্যান্য কফ্যাক্টর(কোএনজাইম) যেমন ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম আয়নগুলির প্রয়োজন হয় এবং কখনও কখনও এনার্জি বহনকারী অণু অ্যাডেনোসিন ট্রাইফোসফেট (ATP) থাকে। বিবর্তনে, লুসিফেরিনগুলি সামান্য পরিবর্তিত হয়: বিশেষত একটি, কোয়েলেনটেরাজিন(এক ধরনের লুসিফেরিন /আলো উৎপাদক অনু) ১১ টি বিভিন্ন প্রাণী ফাইলাতে(পর্ব) পাওয়া যায়, যদিও এর মধ্যে কিছুতে, প্রাণীগুলি তাদের খাদ্যতালিকার মাধ্যমে এটি গ্রহণ করে। বিপরীতে, লুসিফেরেসগুলি বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, যা প্রমাণ হয় যে বিবর্তনীয় ইতিহাসে বায়োলুমিনেসেন্স ৪০ বারেরও বেশি উত্থিত হয়েছিল।
অ্যারিস্টটল এবং প্লিনি দ্য এল্ডার উভয়ই উল্লেখ করেছিলেন যে স্যাঁতসেঁতে কাঠ কখনও কখনও এক আলোকসজ্জা দেয়। বহু শতাব্দী পরে রবার্ট বয়েল দেখিয়েছিলেন যে কাঠ এবং গ্লোভোর্ম উভয় ক্ষেত্রেই অক্সিজেন জড়িত ছিল। উনিশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত বায়োলুমিনেসেন্স সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি। ঘটনাটি প্রাণী গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষত সামুদ্রিক পরিবেশে বিস্তৃত হয়। জমিতে এটি ছত্রাক, ব্যাকটিরিয়া এবং পোকামাকড় সহ অমেরুদণ্ডী এর কিছু গ্রুপে দেখা যায়।
প্রাণীর দ্বারা জৈব পদার্থের ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে পাল্টা আলোকসজ্জা ছদ্মবেশ, অন্যান্য প্রাণীর নকল, উদাহরণস্বরূপ শিকারকে লোভনীয় করা এবং একই প্রজাতির অন্যান্য ব্যক্তির সাথে সংকেত দেওয়া, যেমন সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করার জন্য। পরীক্ষাগারে লুসিফ্রেজ-ভিত্তিক সিস্টেমগুলি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োমেডিকেল গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা রাস্তায় এবং আলংকারিক আলোতে বায়োলুমিনসেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের সম্ভাবনাও তদন্ত করছেন এবং একটি বায়োলুমিনসেন্ট উদ্ভিদ তৈরি করা হয়েছে।
বায়োলুমিনেসেন্সঃ বায়োলুমিনেসেন্স হলো একপ্রকার শীতল আলো যা কোনো জীবন্ত জীবের দেহ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। শীতল আলো বলতে,যে আলোতে ২০% এরও কম তাপ উৎপন্ন হয়। এরা ২০০- ১০০০ মিটার গভীরে পাওয়া যায়।
বায়োলুমিনেসেন্টঃ যে সমস্ত জীব বায়োলুমিনেসেন্স তৈরিতে সক্ষম তাদেরকে বায়োলুমিনেসেন্ট জীব বলা হয়।বেশির ভাগ বায়োলুমিনেসেন্স সমুদ্রে দেখা যায়,কেননা সমুদ্রের গভীরের যেসব স্থানে আলো পৌছাতে পারে না সেসব স্থানে ৯০% এর বেশি বায়োলুমিনেসেন্ট জীব দেখা যায়। বায়োলুমিনেসেন্স তৈরী করে এমন কিছু সামুদ্রিক জীব হলো-ব্যাকটেরিয়া,ছত্রাক,স্কুইড,জেলিফিশ,ফায়ারফ্লাই,গ্যাস্ট্রোপোড,ছোটবড় বিভিন্ন মাছ সহ খুব অল্প সংখ্যক হাঙ্গর। এছাড়াও স্থল বা ভূমিতেও বায়োলুমিনেন্ট জীব দেখা যায়,যেমনঃজোনাকি পোকা,মিলিপিড,সেন্টিপিড,নেমাটোড,রেলপথের কীট,কিছু মাশরুম এবং কেঁচো। কিন্তু মিঠাপানিতে অর্থাৎ পুকুর কিংবা নদীর পানিতে এখনো বায়োলুমিনেসেন্স লক্ষ্য করা যায় নি।
বায়োলুমিনেসেন্ট সকল জীবগুলো প্রকৃতি প্রদত্ত বায়োলুমিনেসেন্স ক্ষমতার অধিকারী নাও হতে পারে,,এক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রাণী বায়োলুমিনেসেন্ট জীব গুলোর সাথে মিথোজীবীতা অথবা তাদেরকে ভক্ষণের ফলে বায়োলুমিনেসেন্স প্রদর্শন করতে পারে।
বায়োলুমিনেসেন্স তৈরি প্রক্রিয়াঃ লুমিনেসেন্ট প্রতিক্রিয়াতে লুসিফেরিন এবং লুসিফেরেজ নামে দুই ধরণের রাসায়নিক পদার্থ একত্রিত হয়। প্রোটিন লুসিফেরেজ অনুঘটক হিসাবে কাজ করে, লুসিফেরিনকে বেঁধে রাখে এবং এর জারণকে সহজতর করে, যার ফলে শক্তি বা আলো উৎপন্ন হয়।
বায়োলুমিনেসেন্স এর কাজ- বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহার করে বায়োলুমিনেন্ট জীবেরা শিকার ধরা,আত্মরক্ষা,যোগাযোগ করে থাকে।
শিকার ধরতেঃ অন্ধকার মহাসাগরে বায়োলুমিনেন্ট জীব গুলো হালকা আলোর ঝলকানি ব্যবহার করে শিকারকে আকৃষ্ট করে,কিছু মাছ বায়োলুমিনেসেন্স কে একটি টর্চলাইট হিসেবে ব্যবহার করে।অ্যাংলারফিশের মতো মাছগুলি লুমিনাস ব্যাকটেরিয়াকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে শিকারকে বোকা বানিয়ে দেয়।
আত্মরক্ষাঃ
বায়োলুমিনেসেন্ট জীব গুলো যখন কোনো শিকারির ফাঁদে পড়ে তখন তারা বিভিন্ন আলো প্রদর্শন করে শিকারির চোখকে ফাঁকি দিয়ে পলায়ন করে অথবা তারা আত্মরক্ষার জন্য বর্ণ পরিবর্তন করে নিজেদের আড়াল করে রাখে।
যোগাযোগঃ “ফায়ারফ্লাই” বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহার করে পুরুষ ও স্ত্রী’রা ঝলকানি বিনিময় করে। স্ত্রী’রা উড়ন্ত পুরুষদের ঝলকানিতে সাড়া দেয়,সাড়া পেয়ে পুরুষ সদস্যরা স্ত্রী সদস্যদের কাছে আসে এবং তাদের সঙ্গম হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ফায়ারফ্লাই এর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি এড়াতে, প্রতিটি প্রজাতির সংকেতগুলি ক্রম অনুসারে কোড করা হয়।
বায়োলুমিনেসেন্স এর বর্ণঃ নীল রঙ ছাড়াও বায়োলুমিনেসেন্স বেশ কিছু বর্ণের হতে পারে।তবে,নীল থেকে লাল রঙের মাধ্যমে বিভিন্ন রঙে বায়োলুমিনেসেন্স হয়।ফায়ারফ্লাই এবং কিছু বিটলের মতো স্থলজ প্রাণীগুলোতে বায়োলুমিনেসেন্স সবুজ বা হলুদ আবার কখনো কখনো লালও হতে পারে।তবে সমুদ্রের বায়োলুমিনেসেন্স বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নীল-সবুজ বা সবুজ হয়ে থাকে।
বায়োলুমিনেসেন্স এর উপকারিতাঃ
উপজাতিরা ঘন জঙ্গলের মধ্যে যাতায়াতের সময় আলো জ্বালানোর জন্য বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহার করে থাকে।খননকারীরা সুরক্ষা প্রদীপ হিসেবে “ফায়ারফ্লাই” ব্যবহার করতেন।
গোবেষকরা সবুজ শক্তির সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বায়োলুমিনেসেন্স এর দিকে ঝুকছেন।
ভবিষ্যতে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে বায়োলুমিনেসেন্স এর ব্যবহার হতে পারে।
পানির বিষাক্ততা পরীক্ষণের জন্য বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহৃত হয়।
বায়োলুমিনেসেন্স একটি বিরল ঘটনা,নিম্নলিখিত স্থান সমূহতে ভ্রমণ করে আপনিও এই অসাধারণ দৃশ্য গুলো উপভোগ করতে পারবেন-
ভ্রূন (ইংরেজি: Zygote) একটি আদি কোষ যা দুইটি গ্যামেট এর মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়। যৌন জনন -এ অংশগ্রহণকারী প্রাণীতেশুক্রাণুরডিম্বাণুরনিউক্লিয়াসের মিলনের ফলে যে জাইগোট সৃষ্টি হয় তা ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে পরিস্ফুটনের মাধ্যমে ভ্রুন সৃষ্টি করে।[১]
ভ্রূনের পুষ্টি
মাতৃ জরায়ুর প্রাচীরের রক্ত থেকেই ভ্রুন অমরার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান লাভ করে। শক্তির জন্য ভ্রুন প্রধানত গ্লুকোজকে ব্যবহার করে।ভ্রুনের দেহে উচ্চহারে ফ্যাট এবং প্রোটিন সঞ্চিত হয়। গ্লুকোজ থেকেই অধিকাংশ চর্বি সংশ্লেষিত হয়। মাতৃৃদেহ থেকে ভ্রুন অল্পমাত্রায চর্বি পরিশোষন করে। পুষ্টি সম্পর্কিত সাধারণ বিপাকীয় ঘটনাবলির পাশাপাশি ভ্রুনের দেহে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, লৌহ এবং ভিটামিন সংশ্লিষ্ট বিপাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে।[২]
একটি জীব হয় প্রাককেন্দ্রিক বা সুকেন্দ্রিক। প্রাককেন্দ্রিক জীবগুলিকে দুইটি অধিরাজ্যে (ডোমেইন) ভাগ করা হয়েছে – ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া। অন্যদিকে সুকেন্দ্রিক জীবগুলির কোষগুলির ভেতরে ঝিল্লিতে আবৃত একটি কোষকেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস থাকে এবং একই সাথে ঝিল্লি দ্বারা আবৃত কোষীয় অঙ্গাণু নামের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠ থাকে (যেমন প্রাণীকোষের মাইটোকন্ড্রিয়া এবং উদ্ভিদকোষের প্লাস্টিড)।[২] ছত্রাক, প্রাণী ও উদ্ভিদ হলো সুকেন্দ্রিক জীবসমূহের তিনটি রাজ্যের উদাহরণ।
বিভিন্ন প্রাক্কলন অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে জীব প্রজাতির সংখ্যা ২০ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ কোটি পর্যন্ত হতে পারে।[৩] এদের মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতির জীব সম্পর্কে তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।[৪] পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫০০ কোটির বেশি প্রজাতির জীবের আবির্ভাব হয়েছে এবং এদের শতকরা ৯৯ ভাগই[৫] বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।[৬][৭]
সমকামিতার জীববৈজ্ঞানিক কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ উভয়ের নিকট সমভাবে কৌতূহল থাকলেও এখনো পর্যন্ত সমকামপ্রবণতার সুনিশ্চিত জীববৈজ্ঞানিক কার্যকারণ সূত্র আবিষ্কৃত হয় নি। সমকামিতার সাথে বিজ্ঞান বিশেষ করে জীববৈজ্ঞানিক (প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জীববিজ্ঞান ও যৌন অভিমুখিতা বলা হয়) সম্পর্ক আছে কী নেই, থাকলে কতটুকু আছে – তা নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। একজন মানুষ কেন সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে তার কোনো একক নির্ণায়ক (জিন, হরমোন ইত্যাদি) অদ্যাবধি কোনো গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সমলিঙ্গের প্রতি যৌনাকর্ষণের পেছনে সামাজিক নির্ণায়ক (social factor) ও জীববৈজ্ঞানিক উভয়বিধ কারণ যুগপৎ সক্রিয়। মানুষের স্বভাব গঠনে ক্রিয়াশীল জিন ও হরমোন এবং সামাজিক নির্ণায়কসমূহ (social factor) মিশ্রিতভাবে এই যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণ করে থাকে বলে বিজ্ঞানীগণ মত দিয়েছেন।[১][২][৩] একটি অনুকল্প মতে, অন্ততপক্ষে পুরুষ সমকামী না বিষমকামী হবে তা নির্ধারণ জন্মের পরে পরিবেশ করতে পারে না, করার সম্ভাবনাও দুর্বল।[৪]
যৌন অভিমুখিতা ব্যাখার ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানের তত্ত্বসমূহ বেশ জনপ্রিয়।[১] এতে বংশানুক্রমিক বিষয়ের (genetic factor) জটিল অন্তক্রিয়া সহ মস্তিষ্ক এবং মাতৃগর্ভকালীন প্রাথমিক জীবনের পরিবেশ (early uterine environment) নিয়েও আলোচনা করা হয়।[৫] এই বিষয়গুলো জিন, জন্মপূর্বে মার্তৃগর্ভে হরমোন এবং মস্তিষ্কের গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং ব্যক্তির বিষমকামী, সমকামী, উভকামী ও নিষ্কামী যৌন-অভিমুখিতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
বিকাশশীল ভ্রূণের উপর হরমোন প্রভাবের দরুন যৌন অভিমুখিতার বিকাশ প্রভাবিত হয়; এটাই বিজ্ঞান মহলে সবচেয়ে প্রভাবশালী অনুকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।[৪][৬] সহজ ভাষায়, বিকাশশীল ভ্রূণমস্তিষ্ক নারীগর্ভে নারী হিসেবে শুরুতে অবস্থান করে। পুরুষের ওয়াই ক্রমোজম বিশিষ্ট শুক্রাণু যদি ভ্রুণটিকে নিষিক্ত করে থাকে পরবর্তীতে ভ্রুণটিতে শুক্রাশয় বিকশিত হয়; যা টেস্টেস্টোরন নামক প্রাথমিক অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর-সক্রিয়কারী হরমোন নিঃসরণ করে। ফলে ভ্রূণ এবং ভ্রূণের মস্তিষ্ক পুরুষোচিত হয়ে উঠে। পুরুষতান্ত্রিক প্রভাব পুরুষে পুরুষোচিত মস্তিষ্কের সাধারণ কাঠামো প্রদান করে, এবং বেশিরভাগ সময়, মহিলাদের প্রতি তার আকর্ষণ তৈরী হয়। হাইপোথিসিজ বা অনুকল্প হিসেবে মনে করা হয়, সমকামী পুরুষের মস্তিষ্কের মূল অঞ্চলে- টেস্টেস্টোরনের মাত্রা সামান্য থাকে; অথবা টেস্টেস্টোরন পুরুষোচিত প্রভাব সৃষ্টিকালীন সময়ে প্রতিক্রিয়াতে পার্থক্য হয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ (ক্রিটিক্যাল) সময়ে টেস্টেস্টোরনের ওঠানামা হয়। নারী সমকামীতে অনুকল্প হিসেবে মনে করা হয় ,মস্তিষ্কের মূল অঞ্চলে টেস্টেস্টোরনের উচ্চতর মাত্রা তাদের মধ্যে সমকামী আকর্ষণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।<[৪] গর্ভকালীন সময়ে টেস্টোস্টোরনের প্রভাবের মাত্রা ডান হাতের আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের অনুপাত (তর্জনী এবং অনামিকার দৈর্ঘ্য) দেখে বুঝা যায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ নারী সমকামীদের আঙুলের অনুপাতের মান একই রকম বেশি; যা নারীদের টেস্টেস্টোরনের উচ্চতর মাত্রাকে নির্দেশ করে।[৭] মাতৃগর্ভে শিশুর হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করে পরবর্তীতে শিশুর সামাজিক আচরণ কিরকম হবে- এধরনের গবেষণা অনৈতিক হওয়ায় আজ অবধি এধরনের গবেষণা করা হয়নি। ফলে মার্তৃগর্ভে হরমোনের প্রভাবেই সন্তানের যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব পরে কিনা- এবিষয়ে সুনিশ্চিত হওয়া কঠিন। কিন্তু প্রাণীর উপরে এগবেষণা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে মার্তৃগর্ভে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করলে পরবর্তীতে সন্তানের যৌন অভিমুখিতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরে। উদাহরণ স্বরুপ- প্রাণী মার্তৃগর্ভে থাকা অবস্থায় তার সেক্স হরমোন পরিবর্তন করলে দেখা গিয়েছে, মেয়ে প্রাণী ছেলের মত আচরণ করে এবং ছেলে প্রাণী মেয়ের মত আচরণ করে। এথেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, সেক্স হরমোনের প্রভাব মানুষের যৌন অভিমুখিতা এবং আচরণে প্রভাব ফেলে। তবে মানুষের উপর এধরনের গবেষণায় বিভিন্ন নৈতিক বাধা থাকায় শতকরায় কতটুকু তা পরিমাপ করা যায় নি।[৪][৭][৬][৮]
ভ্রুণের বিকাশের সময়ে মাতৃগর্ভে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াকে সমকামিতা এবং উভকামিতা উদ্ভবের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৯] ১৯৯০ সাল থেকে হওয়া গবেষণাগুলোর মতে একজন নারীর যত বেশি ছেলে সন্তান থাকবে, পরবর্তী সন্তানের সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকবে। গর্ভাধানের সময় মায়ের রক্ত প্রবাহে পুরুষের কোষ প্রবেশ করে, যা মায়ের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছে ফরেন বা বিদেশী বস্তু। প্রতিক্রিয়াস্বরুপ পুরুষের কোষকে নিষ্ক্রিয় করতে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা এন্টিবডি তৈরী করে। এই এন্টিবডি ছেলে শিশুর মস্তিষ্কের সেই অংশে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে, যে অংশে ছেলে শিশুর মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয়। গবেষণা মতে যত বেশি ছেলে সন্তান জন্ম নিতে থাকে মায়ের এন্টিবডি তত বেশি শক্তিশালী হয়, ফলে পরবর্তী ছেলে সন্তানগুলোর নারীদের প্রতি আকর্ষণের পরিবর্তে পুরুষের প্রতি আকর্ষণের প্রবণতা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবিষয়টিকে পর্যবেক্ষকরা জন্মসূত্রে ভ্রাতৃসম্পর্কের প্রভাব বলে চিহ্নিত করেছেন। জৈব রাসায়নিক প্রমাণ হিসেবে গবেষকরা এজন্য দায়ী প্রোটিনকে শনাক্ত করেছেন।[৯][১০] মাইকেল বেলী সমকামীতার অন্যতম কারণ হিসেবে মার্তৃগর্ভের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেছেন।[১১] ১৫ থেকে ২৯ শতাংশ পুরুষ সমকামীর মধ্যে এই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাকিরা জিনগত এবং হরমোন গত প্রভাবের জন্য সমকামী এবং উভকামী হয় বলে গবেষকরা মনে করেন।[১২][৯]
১৯৯০ এর দিকে বহুল আলোচিত সামাজিকরণ তত্ত্ব মতে শিশুদের কোন জন্মগত যৌন অভিমুখিতা থাকেনা বরং জন্মের পরে পরিবেশের মাধ্যমে তা গঠিত হয়। যাইহোক, বিভিন্নসময় দুর্ঘটনাজনিত কারণে অনেক শিশুর শিশ্ন অপসারণ করা হয়েছিল এবং তাদেরকে এই অপারেশনের কথা না জানিয়ে মেয়ে শিশু হিসেবে বড় করা হয়েছে। সামাজিকীকরণ তত্ত্ব অনুসারে এই শিশুগুলো ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে এই শিশু গুলো মেয়েদের প্রতিই আকর্ষণ অনুভব করেছে। এথেকেই অনুমান করা হয় যৌন অভিমুখিতা জন্মের পরের পরিবেশগত ফ্যাক্টর নয় বরং জন্মপূর্ব পরিবেশ যেমন হরমোন, জিন এসবের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। “সহজাত না পরিবেশগত?” (ন্যাচার অর নার্চার) এই বিতর্কে অন্তত পুরুষ সমকামিতা যে সহজাত তা নির্দেশ করে।[৪]
বিষমকামী এবং সমকামী পুরুষ ও নারীর আইএনএএইচ৩ এর গড় আয়তন।[১৩]
বিষমকামী পুরুষ
সমকামী পুরুষ
নারী
প্রিঅপটিক এলাকার সেক্সুয়াল ডাইমিরফিক নিউক্লিয়াস (এসডিএন-পিওএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যা মানুষ এবং কিছু সংখ্যক স্তন্যপায়ী (ভেড়া, ইঁদুর ইত্যাদি) প্রাণীতে আলাদা। এই আলাদা হওয়ার কারণ নারী এবং পুরুষের হরমোনের মাত্রায় তারতম্য।[৪][৭]ইনাহ৩ মস্তিষ্কের এমন একটি এলাকা যা পুরুষে নারীর চেয়ে বড় হয়। যৌন আচরণ কেমন হবে তা মস্তিষ্কের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নির্ধারণ করে। মস্তিষ্কের প্রস্থচ্ছেদ করে দেখা গিয়েছে সমকামী পুরুষের ইনাহ৩ বিষমকামী পুরুষের চেয়ে আকারে ছোট, যা নারীতে দেখা যায়। সাইমন লভে প্রথম এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন। যা পরবর্তীতে পুনরাবৃত্তি করার পর একই ফলাফল আসে। [৭] যাইহোক এধরনের মস্তিষ্কের প্রস্থচ্ছেদ সংশ্লিষ্ট গবেষণা কিছুটা দুর্লভ কারণ এধরনের গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকে না এবং নমুনা হিসেবে মানব মস্তিষ্কও সহজলভ্য নয়।[৪]
সমকামী এবং বিষমকামী ভেড়া ও ভেড়ির ওএসডিএনের গড় আয়তন।[১৩]গর্ভকালীন হরমোনই ভেড়া এবং ভেড়ির জৈবিক লিঙ্গের পার্থক্য নির্ধারণ করে।[৮]
বিষমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া পুরুষ ভেড়া
সমলিঙ্গে আকৃষ্ট হওয়া পুরুষ ভেড়া
ভেড়ি (নারী)
চার্লস রোসেলির গবেষণা মতে গৃহপালিত ভেড়ার ৬-৮% সারা জীবন ভর সমকামী আচরণ প্রদর্শন করে। ভেড়ার মস্তিষ্কের ওভাইন সেক্সুয়াল ডিমরফিক নিউক্লিয়াস (ওএসডিএন) নামক এলাকা যৌন আকর্ষণের জন্য দায়ী।[১৩]:১০৭–১১০। ভেড়ার মস্তিষ্কের প্রস্থচ্ছেদ করে দেখা গিয়েছে, বিষমকামী পুরুষ ভেড়ার তুলনায় সমকামী আচরণ প্রদর্শন করা পুরুষ মস্তিষ্কের ওএসডিএন এলাকা ছোট এবং নারীদের মত। এই গবেষণা থেকে আরও দেখা গিয়েছে যে, ভেড়ার ওএসডিএনের আকার গর্ভকালীন সময়ে গঠিত হয়েছে। জন্মের পরে নয়। এথেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন জন্মপূর্ব হরমোন যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে এবং মস্তিষ্ককে পুরুষোচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [৮][৪]
জিনগত প্রভাব
একাধিক জিন যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে। জিনগত এবং পরিবেশগত প্রভাবের অর্থ বেশিরভাগ মানুষ ভুলভাবে বুঝেন বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।[৪]পরিবেশগত প্রভাব বললেই অনেকে ধরে নেন সামাজিক প্রভাব যৌন অভিমুখিতার ক্রমবিকাশে ভূমিকা রাখে। অথচ বিজ্ঞানীদের ধারণা বিশেষ করে পুরুষের যৌন অভিমুখিতা তার জন্মের পরের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।[৪]গর্ভকালীন পরিবেশ কিন্তু সামাজিক পরিবেশ নয়। এই জন্মপূর্ব প্রসবকালীন পরিবেশ যেহেতু শিশুর যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই এই পরিবেশ যৌন প্রবৃত্তির সাথে জিনগত ভাবে সম্পর্কিত না হলেও এক্ষেত্রে যৌন অভিমুখিতা কেমন হবে তার সাথে জীববৈজ্ঞানিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।[৪]{rp|76}} অর্থাৎ জনপূর্ব পরিবেশ কর্তৃক কারো যৌনতা প্রভাবিত হলে সেই যৌন পরিচয় সহজাত হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে।
যমজ পরীক্ষা
বিভিন্ন সময় যৌন অভিমুখিতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যমজদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো মূলত পরিবেশগত ও জিনগত কারণ তুলনা করার জন্য করা হয়ে ছিল। ১৯৯১ সালের এক গবেষণায় বেইলি ও পিলার্ড দেখেন যে যমজদের মাঝে ৫২ শতাংশ অভিন্ন যমজ ভাই (আইডেন্টিকাল বা মনোজাইগোটিক যমজ ভাই) ও ২২ শতাংশ ভিন্ন যমজেরা (ফ্র্যাটারনাল টুইন বা ডাইজাইগোটিক টুইন) সমকামিতার জন্য কনকরডেন্স দেখায়। অর্থাৎ যমজের ক্ষেত্রে একজনের মধ্যে সমকামিতা থাকলে তার অভিন্ন যমজ ভাই এর মধ্যে সমকামিতা থাকার সম্ভাবনা ৫২ শতাংশ এবং ভিন্ন যমজের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা ২২ শতাংশ। উল্লেখ্য, তারা গবেষণার জন্য “হোমোফাইল পাবলিকেশন্স” থেকে যমজদের নিয়োগ করেন। এদের মাঝে ৫৯ জনকে প্রশ্নোত্তর করা হয়েছিল।[১৪] মনোজাইগোটিক বলতে একই রকম সেটের জিন থাকা অভিন্ন বা আইডেন্টিকাল যমজ নির্দেশ করে, এবং ডাইজাইগোটিক দ্বারা ভিন্ন বা ফ্রাটারনাল যমজের প্রতি ইঙ্গিত করে হয় যেখানে জিনগুলো অযমজ ভাইদের মতই অনেকটা ভিন্ন হয়। ৬১ জোড়া যমজদের মাঝে, গবেষকরা লক্ষ করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষেরা (৬৬% মনোজাইগোটিক যমজ এবং ৩০% ডাইজাইগোটিক যমজ) সমকামী কনকরডেন্স (একজনের মধ্যে সমকামিতা থাকলে আরেকজনের মধ্যে সমকামিতা থাকার হার) দেখায়।[১৫] ২০০০ সালে বেইলিতে ডুন এবং মার্টিন ৪,৯০১ জন অস্ট্রেলিয়ান যমজদের মাঝে গবেষণা করে রিপোর্ট করেন যে, এই বিশাল দলের অর্ধেকের চেয়ে কম মানুষ একমত প্রকাশ করেন।[১৬] সমমত প্রকাশকারীদের মাঝে ২০% পুরুষ অভিন্ন যমজ এবং ২৪% নারী অভিন্ন যমজ বা মনোজাইগোটিক যমজ।
বেয়ারম্যান ও ব্রুকনার (২০০২) সালে আগের গবেষণাগুলোর সমালোচনা করেন সেগুলোর ছোটখাটো এবং সনাক্তকৃত স্যাম্পল বাছাই[১৭] এবং গবেষণার বিষয়ে নন-রিপ্রেজেন্টেটিভ বাছাই করার জন্য।[১৮] তারা ২৮৯ জোড়া অভিন্ন এবং ৪৯৫ জোড়া ভিন্ন যমজের মাঝে পরীক্ষা চালিয়ে শুধুমাত্র ৭.৭% পুরুষ এবং ৫.৩% নারীর মধ্যে সমকামিতার কনকরডেন্স খুঁজে পান। আর এই প্যাটার্ন নিশ্চিত করে না, যে জিনগত প্রভাব সামাজিক বিষয়ের প্রতি অনির্ভরশীল।[১৭] অর্থাৎ, তাদের মতে যমজ নিয়ে গবেষণা এটা নির্দেশ করতে পারে না যে যমজ নিয়ে গবেষণায় যে কনকরডেন্স এর মাধ্যমে যৌন অভিমুখিতার কারণ হিসেবে জিনগত ভিত্তি পাওয়া যায় তার উপর সামাজিক কোন প্রভাব নেই। তাদের মতে এখানে জেনেটিক্স ছাড়াও সামাজিক প্রভাব কাজ করতে পারে।
২০১০ সালে সুইডেনের প্রাপ্ত বয়স্ক যমজদের ( ৭৬০০ এরও বেশি) মধ্যে[১৯] গবেষণা করে পাওয়া যায় যে সমকামী আচরণকে জিনগত এবং ব্যক্তি-নির্দিষ্ট পরিবেশগত উৎস (individual-specific environmental sources) (যেমন মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থা, অসুস্থতা বা ট্রমা, যৌন অভিজ্ঞতা) দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়, যেখানে বণ্টিত পরিবেশের (shared-environment) ভেরিয়েবলগুলোর প্রভাব যেমন পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক প্রবণতা এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও গুরূত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নারীরা পরিসংখ্যানগত দিক থেকে বংশগত বা জিনগত প্রভাবের (hereditary effects) দুর্বল প্রভাবের দিকে খুব একটা প্রভাবিত হয় না, অন্যদিকে পুরুষদেরকে বণ্টিত পরিবেশগত প্রভাবে (shared environmental effects) প্রভাবিত হতে দেখা যায় না। তবে এই পরীক্ষার ফল বেশ সমালোচনার স্বীকার হয় কেননা স্বেচ্ছাসেবকেরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তাই এখানে বেশি পরিমাণে সমকামী যমজ অংশগ্রহণ করার একটা সাম্ভাব্য পক্ষপাত কাজ করতে পারে;
বায়োমেট্রিক মডেলিং এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, পুরুষের মধ্যে যৌন অভিমুখিতার ভেরিয়েন্সের ০.৩৪ – ০.৩৯ অংশ জিনগত প্রভাব, ০.০০ অংশ বণ্টিত পরিবেশ (shared environment) এবং ০.৬১-০.৬৬ অংশ ব্যক্তি-নির্দিষ্ট পরিবেশ (individual-specific environment) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে জিনগত প্রভাব দেখা যায় ০.১৮ – ০.১৯, বণ্টিত পরিবেশের প্রভাব ০.১৬ – ০.১৭ অংশ এবং ব্যক্তি-নির্দিষ্ট পরিবেশের প্রভাব দেখা যায় ০.৬৪-০.৬৬ অংশ। যদিও একটি বিস্তৃত কনফিডেন্স ব্যাপ্তি (confidence interval) সতর্ক ব্যাখ্যা নির্দেশ করে, এই ফলাফলটি সমকামী আচরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক জিনগত প্রভাব ও পারিবারিক (familial) প্রভাব এর মাঝারি প্রভাব এবং অ-বণ্টিত পরিবেশের (nonshared environment (social and biological)) মাঝারি থেকে বড় প্রভাব এর সাথে সামঞ্জস্যতা দেখায়।[২০]
উল্লেখ্য, আমাদের আচরণকে আমাদের জিন এবং পরিবেশ প্রভাবিত করে। যে পরিবেশ আমাদেরকে প্রভাবিত করে তা মূলত দুই রকম হয়। এগুলো হচ্ছে বণ্টিত পরিবেশ (Shared environment) এবং অ-বণ্টিত পরিবেশ (Non-shared environment)। বণ্টিত পরিবেশ বলতে পরিবেশের সেইসব প্রভাব বোঝানো হয় যা বিভিন্ন সদস্যকেই প্রভাবিত করে। আবার একই বাড়িতে ভাইদের মধ্যে (যমজ বা অযমজ) মধ্যে যে প্রভাবের ফলে একই উন্নয়নগত ও অন্যান্য ফলাফল দেখা যায় তাকেও বণ্টিত পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক বণ্টিত পরিবেশ (familial shared environment) বলে। অন্যদিকে পরিবেশের যে বিষয়গুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই প্রভাবিত করে তবে তাকে অ-বণ্টিত পরিবেশ (Non-shared environment) বলে। আবার পরিবেশের যে প্রভাব একই বাড়িতে ভাইদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটায় তাকেও অ-বণ্টিত পরিবেশ বলে। অ-বণ্টিত পরিবেশকে ব্যক্তি-নির্দিষ্ট পরিবেশও (individual-specific environment) বলা হয়।[২১][২২]
সমালোচনা
যমজ পরীক্ষা অনেক ভাবেই সমালোচিত হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো বিশেষ করে নিজস্ব ইচ্ছামতো সনাক্তকরণ প্রবণতার দোষে দূষণীয়। দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত সমকামীদের যমজ ভাই বোন রয়েছে, তারাই এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছে। এতে করে, অভিন্ন যমজদের যৌন অভিমুখিতার পার্থক্য গড়তে শুধুমাত্র জিনগত বৈশিষ্ট্যই একক ভাবে দায়ী না হওয়ার সম্ভাবনা সুনিশ্চিত হয়।[২৩]
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল, মনোজাইগোটিক যমজেরা ভিন্ন হতে পারে। ভিন্ন গঠনপদ্ধতির কারণে মনোজাইগোটিক যমজেরা সমকামি প্রবণতা না দেখানোর সম্ভাবনা রয়ে যায়। গ্রিঙ্গাস ও চেন (২০০১) একটি গঠনপদ্ধতির বর্ণনা করেন যা মনোজাইগোটিক যমজদের মাঝে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় একই প্লাসেন্টা ভাগাভাগি করে কিনা এর ভিত্তিতে পার্থক্যকে তুলে ধরে।[২৪] যেসব যমজেরা মাতৃগর্ভে একই প্লাসেন্টা ভাগাভাগি করে না, তাদের হরমনগত পরিবেশ ভিন্ন হয়। এতে তাদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ভিন্নভাবে ঘটার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে একই প্লাসেন্টা ভাগাভাগি কয়ারী অভিন্ন যমজেরা একই ধরনের হরমনগত পরিবেশে বড় হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে যমজদের মাঝে “ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম” দেখা দিতে পারে।[২৫]
1কোন সম্পর্কের জন্য প্রাথমিক গবেষণার এই ফলাফল গুলো অকাট্য প্রমাণ নয়। 2আকস্মিক/ধারাবাহিকতাহীন হওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য নয়
যৌন অভিমুখিতায় ক্রোমোজমের সংযোগ আছে কিনা এ সংক্রান্ত গবেষণা গুলো ইঙ্গিত করে; জিনোমে বিদ্যমান অসংখ্য জেনেটিক ফ্যাক্টর অভিমুখিতায় প্রভাব ফেলে। ১৯৯৩ সালে ডিন হ্যামার এবং তার সহ-গবেষকরা ৭৬ জন পুরুষ সমকামি ভাই এবং তাদের পরিবারের উপর গবেষণা করে একটি সংযোগ খুঁজে পাওয়ার দাবী করে তা প্রকাশ করেন ।[২৮] হ্যামার দেখতে পান যারা সমকামী পুরুষ, তাদের মামা, মামাত ভাইরাই; চাচা চাচাতো ভাইদের তুলনায় অধিক সমকামী। অর্থাৎ, মায়ের দিকের আত্মীয়রাই, পিতার দিকের আত্মীয়দের তুলনায় অধিক বেশি সমকামী। হ্যামার ভাবলেন, যেহেতু সংযোগটা মায়ের দিক এসেছে; তাই জিনগত পার্থক্য থেকে থাকলে; এই পার্থক্য এমন একটা ক্রমোজমে থাকবে যা পিতা বা পুরুষে; মায়ের (নারী) চেয়ে ভিন্ন। আর নারী ও পুরুষে পার্থক্য সুচক ক্রোমোজমের নাম হলো এক্স-ওয়াই ক্রমোজোম। একজন নারী এক্স-এক্স ক্রোমোজম ও একজন পুরুষ এক্স-ওয়াই ক্রোমোজম বহন করে। তাই তিনি যে সব সমকামী ভাইদের মধ্যে এরকম দেখা গিয়েছিল, তাদেরকে এক্স ক্রোমোজমের ২২ তম মার্কার ব্যবহার করে একই রকম এলিলের জন্য এক্স ক্রোমোজমের সংযোগ পরীক্ষা করা হয়েছিল। অন্য আরেক গবেষণায় ৪০ জোড়ার মধ্যে পরীক্ষা করায় ৩৩ জোড়ার মধ্যে এক্সকিউ২৮ এর দূরবর্তী এলাকায় একই রকম এলিল খুজে পাওয়া গিয়েছিল, যা কাকা-কাকাতো ভাইদের তুলনায় বেশি ছিল। এই বিষয়টাই গণমাধ্যমে “সমকামী জিন’” খুজে পাওয়া গিয়েছে এই মর্মে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে শিরোনাম হয়েছিল। স্যান্ডার্স এবং তার সহযোগীরা ১৯৯৮ সালে একইরূপ গবেষণায় দেখতে পান, মামা-মামাতো ভাইদের দিক থেকে ১৩% সমকামী হয়, যেখানে চাচা-চাচাতো ভাইদের দিক থেকে ৬% সমকামী হয়।[২৯]
এইচইউ এবং তার সহযোগীদের দ্বারা পরবর্তী আরেকটি গবেষণায় এই গবেষণাটি পুনঃউৎপাদন করা হয়, এবং আগের উপাত্তকে সংশোধন করা হয়। এই গবেষণাটি- ৬৭% সমকামী ভাই; এক্স ক্রোমোজোমে(মাতা থেকে প্রাপ্ত) এক্সকিউ২৮ এ সম্পৃক্ত স্যম্পল শেয়ার করে, এটাই দেখায়।[৩০] অন্য দুইটি স্টাডি (ব্যালী এবংতার সহযোগী, ১৯৯৯; এমসিকেনাইট এবং মালকম, ২০০০) ব্যর্থ হয়েছিল, মাতার দিক থেকে সমকামী ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক আছে বলে যে দাবী করা হয়েছিল, সেই দাবীকে প্রমাণ করতে।[২৯] রাইস এবং তার সহযোগীরা ১৯৯৯ সালে এক্সকিউ ২৮ এর সংযোগ সংক্রান্ত গবেষণাকে পুনরুৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়।[৩১] সকল ধরনের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বৃহত্তর বিশ্লেষণ গুলো এটাই নির্দেশ করে যে, এক্সকিউ২৮ এর সাথে একটা সুনির্দিষ্ট সংযোগ তো আছে, কিন্তু তার সাথে সাথে এটাও নির্দেশ করা হয় যে, আরো অতিরিক্ত কোনো জিন মানুষের যৌন অভিমুখিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।[৩২]
মুসতানস্কি ও তার সহযোগীরা (২০০৫) হ্যামার (১৯৯৩) ও এইচইউয়ের (১৯৯৫) করা গবেষণার পরিবারের সদস্যদের পুরো জিনোম স্ক্যান করেন। তারা এক্সকিউ২৮ এর সাথে কোনো সংযোগ খুঁজে পান নি।[৩৩]
২০১২ সালে ব্যাপক পরিসরে স্বাধীন গ্রুপ কর্তৃক পুরুষ সমকামিতার পিছনে কোনো জিনগত সংযোগ আছে কিনা, অন্বেষণ শুরু করা হয়।[৩৪] এই গবেষণাটি করা হয়েছিল ৪০৯ জন স্বতন্ত্র সমকামী যমজ ভাইয়ের উপর। তাদের ৩ লক্ষ একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম মার্কার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণাটি দৃঢ়ভাবে হ্যামারের অন্বেষিত এক্সকিউ২৮ এর গবেষণাটিকে সমর্থন করেছিল। এক্সকিউ২৮ এর সংযোগের পাশাপাশি এটি ৮ নং ক্রমোজমের পেরিসেন্ট্রোমেরিক এলাকার সাথেও পুরুষ সমকামিতার সংযোগ খুঁজে পায়। গবেষকরা সমাপ্তি টানেন এই বলে, “আমাদের গবেষণা থেকে এটাই উপলব্ধ যে, জিনগত প্রকরনই সমকামী পুরুষে মনস্তাত্ত্বিক দিশার ক্রমবিকাশ ঘটায়।” নারীর যৌন অভিমুখিতার সাথে এক্সকিউ২৮ এর সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় নি।[৩০][৩৫] যদিও এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নারীর সমকামিতার সাথেও বংশানুক্রমিক জিনগত কারণ বিদ্যমান।[৩৬]
সেক্স ক্রোমোজোমের পাশাপাশি সমকামীতায় অটোজোমের জিনগত অবদান আছে, এমনটা প্রস্তাব করা হয়। একটি গবেষণায় ৭০০০ জনের অধিক অংশগ্রহণ করেন। এলিস এবং তার সহযোগীরা (২০০৮ সাল) ৭০০০ জনের উপর একটি জরিপ চালান। তারা সমকামী এবং বিষমকামীদের মধ্যে A ব্লাড গ্রুপের ফ্রিকোয়েন্সিতে একটা সুনির্দিষ্ট প্রাধান্য দেখতে পান, তারা দেখেন বিষমকামীদের তুলনায় সমকামী নারী-পুরুষদের Rh নেগেটিভ বেশি। যেহেতু উভয় রক্তের গ্রুপ এবং Rh ফ্যাক্টর জিনগত ভাবে উত্তরাধিকার সুত্রে এলিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এলিলের অবস্থান ৯ নং ক্রোমোজোম ও ১ নং ক্রোমোজমের উপর অবস্থান করছে, তাই এই গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়, সমকামিতার সাথে অটোজোমের জিনের একটি সম্ভাব্য সংযোগ আছে।[৩৭][৩৮]
কিছু প্রাণীর মডেল ব্যবস্থায় যৌন অভিমুখিতার জীববিজ্ঞান নিয়ে বিস্তৃতপরিসরে আলোচনা করা হয়েছে। বহুল পরিচিত ফলের মাছি ড্রসোফিলিয়া ম্যালানোগস্টারে, দেখা গিয়েছে, যেসব পুরুষ ফলের মাছি সমলিঙ্গে আকৃষ্ট হয়; তারা যখন বিপরীত লিঙ্গের সাথে যৌনাচারণ করে, তখন সেই নারী ফলের মাছি প্রজননের হার তুলনামুলক বেশি থাকে। এই সংযোগটিকে গবেষকরা জিনগত কারণ বলেই মনে করেন।[৩৯] কোরিয়া এডভান্সড ইন্সটিউট সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির জিনপ্রকৌশলীর একটি দল নারী ইদুরের মত স্তন্যপায়ী প্রাণীতে একটি গবেষণা করেন। তারা সফলভাবে এমন একটি নারী ইদুর সৃষ্টি করেন, যার যৌন অভিমুখিতার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি জিনের (FucM) ঘাটতি ছিল। সেই জিন ব্যতীত নারী ইদুরটি পুরুষ ইদুরের মত স্বভাব প্রদর্শন করতে থাকে এবং নারী ইদুরের মুত্রের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। যেসব ইদুর ফিউকোস মুটারোটাসে (FucM) জিন ধারণ করে; তারা পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়।[৪০]
সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে গবেষকরা বলেন, যৌন অভিমুখিতায় জিনের প্রভাব আছে, কিন্তু জিনই তা নির্ধারণ করে, এমনটা নয়। জিনের প্রভাব এবং জিন নির্ধারক দুইটি কখনো সমতুল্য নয়। ডিন হ্যামার এবং মাইকেল ব্যালী অনুসারে জিন দ্বারা অভিমুখিতা তৈরী হওয়া হচ্ছে, সমকামিতার অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি কারণ।[৪১][৪২]
২০১৭ সালে, ন্যাচারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১০৭৭ জন সমকামী পুরুষ ও ১২৩১ জন বিষমকামী পুরুষের জিনোম ওয়াইড এসোসিয়েশন গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় দুটি সুনির্দিষ্ট জিনকে পুরুষের সমকামীতার জন্য দায়ী করা হয়েছে। ১৩ নং ক্রমোজমে প্রাপ্ত একটি জিনের নাম এসএলআইটিআরকে৬ (SLITRK6) জিন। এই জিনটি ডিএনএর যে পুনর্বিন্যাস (সিকোয়েন্স) ধারণ করে; তা সমকামী পুরুষ ও বিষমকামী পুরুষে ভিন্ন।[৪৩] এই গবেষণাটি পুর্বোক্ত আরো একটি গবেষণা প্রতিবেদনকে সমর্থন করে। সাইমন লিভ্যে কর্তৃক করা গবেষণাটিতে দেখা গিয়েছে সমকামী পুরুষের হাইপোথ্যালামাস বিষমকামী পুরুষ থেকে ভিন্ন।[৪৪] এই এসএলআইটিআরকে৬ জিনটি হাইপোথ্যালামাসের মধ্যমস্তিষ্কে সক্রিয়। গবেষকরা আরো একটি জিন খুঁজে পান, যার নাম “‘থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন রিসেপ্টর’” (TSHR)। এই জিনটি ১৪ নং ক্রমোজমে অবস্থিত। এর ডিএনএ পুনর্বিন্যাস সমকামী পুরুষে বিষমকামী পুরুষ থেকে ভিন্ন।[৪৩] থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন রিসেপ্টর থাইরয়েডকে উদ্দীপ্ত করে এবং গ্রেভ রোগ টিএসএইচআর এর কার্যক্রম ব্যাহত করে। পূর্বে করা গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, গ্রেভ রোগ সমকামী পুরুষে; বিষমকামী পুরুষের তুলনায় বেশি দেখা যায়।[৪৫] গবেষণা থেকে এটাও দেখা গিয়েছে, গড়পরতায় সমকামী পুরুষের ওজম বিষমকামীদের তুলনায় কম হয়। অনুমান করা হয়, টিএইচএসআর অতিসক্রিয়তার জন্যই সমকামী পুরুষে ওজন হ্রাস পায়।[৪৬][৪৭]
২০১৮ সালে, গানা এবং তার সহযোগীরা পুরুষ ও নারীর যৌন অভিমুখিতার উপর আরেকটি জিনোম ওয়াইড এসোসিয়েশন স্টাডি করেন। প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের উপর করা এই গবেষণার মধ্যে ২৬,৮৯০ জন মানুষ জীবনে একবারের জন্য হলেও সমলিঙ্গের মানুষের সাথে যৌনক্রিয়া করেছে। গবেষক দল দেখতে পান, যারা একবারের জন্য হলেও সমলিঙ্গের মানুষের সাথে যৌনক্রিয়ায় জড়িয়েছে, তাদের ৭, ১১, ১২ এবং ১৫ নং ক্রমোজমের চারটি প্রকরণে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য আছে। পুরুষের ১১ এবং ১৫ নং ক্রমোজমে প্রাপ্ত প্রকরণ সুনির্দিষ্ট। ১১ নং ক্রমজোমে একটি অলফ্যাক্টরী জিনের প্রকরণ অবস্থিত এবং ১৫ নং ক্রমোজমে পুরুষের টাকের জন্য দায়ী এমন জিনের প্রকরণ অবস্থিত। চারটা প্রকরণ নারী এবং পুরুষে স্বাস্থ্য বিকার, হতাশাজনক মনোবিকার এবং স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সাথে এবং শুধুমাত্র নারীতে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত। যাইহোক, এই চারটি প্রকরণ যৌন অভিমুখিতা কেমন হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম নয়।[৪৮]
২০১৯ এর ২৯শে আগস্ট, সায়েন্স সাময়িকী একটি বৃহৎ গবেষণাপত্রে দাবি করে সমকামী জিন বলে কিছু নেই এবং জিনের সঙ্গে যৌন অভিমুখিতার সম্পর্কের বিষয়টি খুবই বিরল ও জটিল।[৪৯][৫০][৫১][৫২]
এপিজিনেটিক গবেষণা
এই নিবন্ধটিতে একজন বিশেষজ্ঞের মনোযোগ প্রয়োজন। নিবন্ধ-এর সমস্যা ব্যাখ্যা করে, দয়া করে এই টেমপ্লেটে একটি reason বা talk প্যারামিটার যুক্ত করুন।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, মায়ের জিনগত গঠন ও সমকামিতার সাথে পুত্রের যৌন অভিমুখিতার সম্পর্ক রয়েছে। নারীদের দুটি এক্স (X) ক্রোমোজোম আছে। এর মাঝে একটি “সুইচড অফ” বা নিষ্ক্রীয় যার ফলে কিছু স্বভাবী বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ভ্রুণাবস্থায় এক্স ক্রোমোজোমের এই বৈশিষ্ট্য না-দেখানোর প্রবণতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ অধারাবাহিকভাবে ঘটে। বকল্যাণ্ড এবং সহগবেষকবৃন্দ (২০০৬) জানিয়েছেন যে, সমকামি পুরুষদের মায়েদের এক্স ক্রোমোজোম অসমকামি পুরুষদের মায়েদের এক্স ক্রোমোজোমের চেয়ে অনেক বেশি তীব্রভাবে বৈশিষ্ট্য গোপন করে। ১৬ শতাংশ একজন সমকামি পুরুষের মা ও ২৩ শতাংশ দুই জন সমকামি পুরুষের মায়েরা এক্স ক্রোমোজোমের এই তীব্রতা দেখায়। অন্যদিকে সমকামি নয় এরকম পুরুষদের মায়ের ক্ষেত্রে এই হার ৪ শতাংশ মাত্র।[৫৩]
ব্ল্যানচার্ড (Blanchard) এবং ক্ল্যাসেন (Klassen) (১৯৯৭ সালে) গবেষণা করে বলেছেন, যদি পরিবারে বড় ভাই থাকে, তাহলে প্রত্যেক বড় ভাইয়ের জন্য ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা দাড়ায় ৩৩%।[৫৪][৫৫] এখন পর্যন্ত এটিই “যৌন অভিমুখিতা নিয়ে হওয়া গবেষণায় প্রাপ্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এপিডেমিওলজিকাল ভেরিয়াবল“।[৫৬] এটাকে যদি ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে এটা বলা যায় যে, মার্তৃজঠরে পুরুষের ভ্রুণ তৈরী হওয়ার সময় মায়ের ইমিউন সিস্টেম (রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা) সক্রিয় হয়ে উঠে, এবং ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেকে পুরুষের ভ্রুণ তৈরী হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকবার মাতৃ ইমিউন সিস্টেম আগেরবারের চেয়ে অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠে। গর্ভকালীন সময়ে এই মাতৃ রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাপক অনুকল্প (maternal immunization hypothesis) (MIH) মতে, এ অবস্থা শুরু হয়, যখন পুরুষ ভ্রুণ এর কোষ মায়ের মাসিকচক্রে প্রবেশ করে অথবা মা যখন সন্তানকে জন্ম দেয়।[৫৭] পুরুষ ভ্রুণ উৎপন্ন করে এইচ-ওয়াই এন্টিজেন যা নিশ্চিতভাবে মেরুদণ্ডী পর্বের প্রাণীর লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এই ওয়াই লিঙ্কড প্রোটিনটিকে (যেহেতু এটা পুরুষের) মায়ের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চিনতে পারে না, কারণ তিনি একজন নারী। এর কারণে তার এন্টিবডি; যা তার অমরার দেয়াল ধরে চলাফেরা করে, তা (এন্টিবডির) ভ্রুণের এর প্রকোষ্ঠে ক্রমবিকশিত হয়। এখান থেকে এন্টি মেল বডি ভ্রুণীয় মস্তিষ্কের উন্নয়নের ব্লাড/ব্রেইন ব্যারিয়ার (BBB) অধিক্রমণ করে। এতে যৌন অভিমুখিতার সাথে সম্পর্কিত যৌন দ্বিমরফিক মস্তিষ্কের গঠনে (sex-dimorphic brain structures) পরিবর্তন আসে। যার ফলে ছেলে সন্তানের জন্মের পর নারীর তুলনায়; তার পুরুষের প্রতি আকর্ষণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[৫৭] মায়ের এইচ-ওয়াই এন্টিবডি; এইচ-ওয়াই এন্টিজেনকে মনে রাখে, তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়। ফলে পরবর্তীতে তৈরী হওয়া প্রতিটি পুরুষ ভ্রুণ এইচ-ওয়াই এন্টিবডি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই এইচ-ওয়াই এন্টিজেনের পুরুষ ভ্রুণের মস্তিষ্কে পুরুষের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করার কথা, যা মায়ের এইচ ওয়াই এন্টিবডি কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়।[৫৪]
২০১৭ সালে গবেষকরা, অধিক বড় ভাই থাকলে, কেন ছেলে সন্তানে সমকামিতা দেখা যায় এরুপ একটি জৈব কৌশল আবিষ্কার করেন। তারা মনে করেন, নিউরোলিজিন ৪-ওয়াই লিঙ্কড প্রোটিন এরুপ ভুমিকা পালন করে। তারা দেখতে পান, নারীর পুরুষের তুলনায় অধিক এন্টি- নিউরোলিজিন-৪-ওয়াই লেভেল থাকে। গবেষণা থেকে আরো দেখা যায়, ছেলে সমকামী ও তার অগ্রজ বড় ভাই আছে, এরুপ মায়ের এন্টি- নিউরোলিজিন-৪-ওয়াই এর স্তর; বিষমকামী সন্তান থাকা মায়ের চেয়ে বেশি।[৫৮]
যাইহোক এই ‘মাতৃ রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকল্প’ সমালোচিত, কারণ রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রমণের বিষয়টিকে যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তবে সমকামিতার সামগ্রিক অবস্থাকে এই প্রস্তাবনা ব্যাখ্যা করতে পারে না, অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা পুরুষ সমকামী হয়, তাদের বড় ভাই নেই।[৫৯]
“জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব” ৭১-৮৫ শতাংশ পুরুষের সমকামী হওয়ার পিছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে না।[৬০] অধিকন্তু, এটি ব্যাখ্যা করতে পারে না কেন প্রথম ছেলে সন্তানের মধ্যে সমকামিতা দেখা যায়।[৬১]
নারীর উর্বরতা
২০০৪ সালে, ইটালির বিজ্ঞানীরা ৪,৬০০ মানুষের উপর একটি গবেষণা চালান। এরা ৯৮ জন সমকামী ও ১০০ জন বিসমকামী পুরুষের আত্মীয় ছিলেন। সমকামী পুরুষের নারী আত্মীয়দের তুলনামূলক বেশি সন্তানসন্ততি আছে বলে পরিলক্ষিত হয়। সমকামী পুরুষের নারী আত্মীয়দের অধিক সন্তানসন্ততি থাকার পাশাপাশি; সমকামী পুরুষের মায়ের দিককার আত্মীয়দের (যেমনঃ মাসি/খালা); সমকামী পুরুষদের পিতার দিকের নারী আত্মীয়দের (যেমনঃ ফুফু বা পিশি) তুলনায় বেশি সন্তান সন্ততি আছে। এতে করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, এক্স ক্রোমোজোমে করে যে জিনগত বৈশিষ্ট্য বাচ্চার মাঝে পরিবাহিত হত, তার নারীর মাঝে ঊর্বরতা এবং পুরুষের মাঝে সমকামি প্রবণতার সঞ্চার করে। এই গবেষণা তাৎপর্যপূর্ণ ও সমকামিতার সাথে জৈবিক কারণ যুক্ত আছে অনুধাবন করা গেলেও সুনির্দিষ্ট কোনো জিন যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণ করে, এমনটা বলা যায় না।[৬২][৬৩]
ফেরোমন গবেষণা
সুইডেনের এক গবেষণায় [৬৪] দাবী করা হয় সমকামি ও বিষমকামীরা যৌন উদ্দীপক ঘ্রাণের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে আচরণ করে। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, পুরুষের ঘামে থাকা টেস্টোটেরনের উপস্থিতি বিষমকামী নারী ও সমকামী পুরুষদের হাইপোথ্যালামাসের একটি অংশকে সক্রিয় করে। আবার অন্যদিকে, নারীর মূত্রের সাথে পাওয়া এস্ট্রোজেনের উপস্থিতিতে বিষমকামী পুরুষের মস্তিষ্ক ঠিক একই রকম আচরণ করে।[৬৫]
মস্তিষ্কের গঠন সংক্রান্ত গবেষণা
নারী ও পুরুষ লিঙ্গভেদে যেমন ভিন্ন, একইভাবে তাদের মস্তিষ্কের কিছু প্রত্যঙ্গও লিঙ্গভেদে ভিন্ন হয়। অর্থাৎ নারীর মস্তিষ্কের কিছু প্রত্যঙ্গ ও পুরুষের মস্তিষ্কের কিছু প্রত্যঙ্গ আলাদা। এছাড়া যৌন অভিমুখিতার ভিত্তিতে মস্তিষ্কের গঠনে তফাৎ আছে বলেও একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে, ডিক সোয়াব এবং মিশেল এ. হফম্যান সমকামী ও বিসমকামী পুরুষদের মস্তিষ্কের সুপারকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াসের আকারে পার্থক্য রয়েছে বলে প্রকাশ করেন।[৬৬] ১৯৯২ সালে, এলেন ও গরস্কি এন্টেরিওর কমিশারের আকারের পার্থক্যের সাথে যৌন অভিমুখিতার সম্পর্ক খুঁজে পেলেও [৬৭] তা একাধিক গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়। সেসব পরীক্ষার একটিতে দেখা যায়, মূল পার্থক্য আসলে শুধুমাত্র একটি একক বাহ্যিক কারণে ঘটে থাকে।[৬৮][৬৯][৭০]
পুরুষ ও নারীর মস্তিষ্কে এরুপ গাঠনিক পার্থক্য দেখার পর একটি ধারণা গড়ে উঠেছিল যে, মানুষের দুই রকম মস্তিষ্ক থাকবে। হয় নারী মস্তিষ্ক নতুবা পুরুষ মস্তিষ্ক। আর এরকম ভিন্ন মস্তিষ্কই নারী ও পুরুষের স্বভাবে ভিন্নতা তৈরী করবে। এরকম ধারণা থেকে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছিল, তা হলো, যদি কোনো পুরুষে নারী মস্তিষ্ক থাকে, তাহলে সে হবে পুরুষ সমকামী। যদিও কিছু গবেষক এই ধারণার পিছনে কোনো শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই বলেই দাবী করেছেন। যদিও নারী-পুরুষ ভেদে মস্তিষ্কের আকারে ও মস্তিষ্কের কিছু প্রত্যঙ্গে পার্থক্য দেখা গিয়েছে, তবুও এটাই বলা যায়, নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।[৭১][৭২]
সিমন লিভ্যেও মস্তিষ্কের সাথে যৌন অভিমুখিতার সংযোগ আছে কিনা; এই বিষয়ের কিছু গবেষণা করেন। তিনি হাইপোথ্যালামাসেরনিউরনের চারটা গ্রুপ;- যাদেরকে আইএনএএইচ১, আইএনএএইচ২,আইএনএএইচ৩ এবং আইএনএএইচ৪ বলা হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। প্রাণিতে থাকা যৌন স্বভাবকে এই এলাকা সমূহ প্রভাবিত করে; এমনটা অন্যান্য গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে; কিন্তু মানুষের যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে এসব এলাকা কেমন ভূমিকা রাখে; তা জানার জন্য এগবেষণা প্রাসঙ্গিক। এ অংশের উপর গবেষণা করার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, পুর্বের তথ্য থেকে দেখা গিয়েছে, পুরুষ এবং নারীর আইএনএএইচ২ এবং আইএনএএইচ৩ এর আকারে পার্থক্য হয়।[৭৩]
তিনি হাসপাতালের ৪১ জন মৃত রোগী থেকে মস্তিষ্ক সংগ্রহ করেন। তার সংগ্রহ তিনভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম গ্রুপে ছিল ১৯ জন সমকামী পুরুষ। যারা মারা গিয়েছেন এইডস-সংক্রান্ত অসুস্থতায়। দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল ১৬ জন পুরুষ, যাদের যৌন অভিমুখিতা অজ্ঞাত ছিল, কিন্তু গবেষকরা তাদের বিষমকামী বলে অনুমান করেছেন। এই দ্বিতীয় গ্রুপের ছয়জন পুরুষ মারা গিয়েছিলেন এইডস সংক্রান্ত অসুস্থতায়। তৃতীয় গ্রুপে ছিলেন ছয়জন নারী, যাদের যৌন অভিমুখিতা বিষমকামী বলে গবেষকরা অনুমান করেছিলেন। তৃতীয় গ্রুপের একজন নারী এইডস সংক্রান্ত অসুস্থতায় মারা গিয়েছিলেন।[৭৩]
দ্বিতীয় গ্রুপের যেসমস্ত রোগীদেরকে বিষমকামী বলে অনুমান করা হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে যারা এইচআইভি পজেটিভ ছিল, মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুসারে তাদের প্রত্যেকেই হয় ড্রাগের অপব্যবহার বা রক্ত স্থানান্তরের কারণে হয়েছিল। এদের মধ্যে দুইজন বিষমকামী; কখনো সমকামীতার মত যৌন ক্রিয়ায় (যেমনঃ পায়ুমৈথুন) যুক্ত হয়েছিলেন কিনা; চিকিৎসকের এরকম অনুমান সরাসরী প্রত্যাখান করেছিলেন। যাদেরকে বিষমকামি বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল; তাদের প্রকৃত যৌন অভিমুখিতা কী ছিল, সেসমস্ত কোনো তথ্য পাওয়া মেডিক্যাল রেকর্ডে পাওয়া যায় নি; মোট জনসংখ্যার একটা অনুপাত হিসাব করে, তাদেরকে বিষমকামী ধরা হয়েছে।”[৭৩]
লিভ্যে আইএনএএইচ১, আইএনএএইচ২ বা আইএনএএইচ৪ এর আকারের মধ্যে পার্থক্যের কোনো প্রমাণ পান নি। কিন্তু আইএনএএইচ৩ এর আকার বিষমকামী পুরুষের গ্রুপে সমকামী পুরুষের গ্রুপের তুলনায় দ্বিগুণ বড় দেখা গিয়েছিল। এমনকি যে ছয়জন বিষমকামী কিন্তু এইডস আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল, তাদেরও আইএনএএইচ৩ বড় দেখা গিয়েছিল। সমকামী পুরুষের মস্তিষ্কের আইএনএএইচ৩; বিষমকামী নারীর প্রায় সমান বলে গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে।
যাইহোক, অন্যান্য গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে, প্রিঅপটিক এলাকার সেক্সুয়ালি ডিমরফিক নিউক্লিয়াস, যা আইএনএএইচ৩ ধারণ করে, তা এইডসে আক্রান্ত সমকামী পুরুষে বিষমকামীর ন্যায় সমান আকারের এবং এটা নারীর তুলনায় বড়। এটা পরিষ্কারভাবে সমকামী পুরুষের; ‘নারীর হাইপোথ্যালামাস থাকে’, এধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। এরপরে সমকামী পুরুষদের সুপ্রাকায়াজম্যাটিক নিউক্লিয়াস যথেষ্ট বড় (বিষমকামী পুরুষে কোষে ঘনত্ব এবং নিউরনের সংখ্যা উভয়ই দ্বিগুণ)। সমকামী নারী, উভকামী পুরুষ ও উভকামী নারীর হাইপোথ্যালামাসের এই এলাকাটি নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো গবেষণা করা হয় নি। যদিও এই গবেষণাটি তেমনভাবে পরীক্ষিত নয়, তারপরেও বিস্তৃত পরিসরে ডোরনারের (Dörner) স্বীকৃত অনুকল্প “সমকামী পুরুষের নারীর হাইপোথ্যালামাস থাকে” এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে এই গবেষণা তীব্র সন্দেহ পোষণ করে এবং “পুরুষের নারীর চেয়ে মস্তিষ্কের কলাকৌশল ভিন্ন” হবার জন্য জন্মপুর্ব থেকে টেস্টেস্টোরেণের কার্যক্রম দায়ী; আর এ কার্যক্রম এপিজেনেটিক প্রভাবের কারণে হয়;- এমন ধারণাকেই প্রস্তাবনা করে।[৭৪][৭৫]
উইলিয়াম বাইন এবং তার কলিগগণ এই গবেষণাটি পুনরাবৃত্ত করার প্রয়াসে আইএনএএইচ১ থেকে আইএনএএইচ৪ নিয়ে এ গবেষণা পুনরায় করেন। তাদের গবেষণাটি ১৪ জন এইচআইভি-পজেটিভ সমকামী পুরুষ, ৩৪ জন বিষমকামী পুরুষ (যার দশজন এইচআইভি পজেটিভ ছিলেন) এবং ৩৪ জন সমকামী নারীর (৯ জন এইচআইভি পজেটিভ) মস্তিষ্কের উপর পরিচালিত হয়। গবেষকগণ বিষমকামী পুরুষ এবং বিষমকামী নারীর মধ্যে আইএনএএইচ৩ এর আকারের সুনির্দিষ্ট পার্থক্য খুজে পান। আইএনএএইচ৩ এর আকার সমকামী পুরুষে; বিষমকামী পুরুষের তুলনায় ছোট এবং বিষমকামী নারীর তুলনায় বড়; এমনটা দেখা যায়। যদিও এই পার্থক্যটা পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য নয়।[৭৬]
বাইন এবং তার সহযোগীরা আইএনএএইচ৩ এর ওজনের পাশাপাশি নিউরনের সংখ্যাও গণনা করেন। এ গণনার কাজটি লিভ্যায় করেননি। ফলাফলে দেখা গিয়েছে আইএনএএইচ৩ এর ওজন, বিষমকামী নারীর তুলনায় বিষমকামী পুরুষে সুনির্দিষ্টভাবে বেশি। সমকামী ও বিষমকামী পুরুষের নিউরনের সংখ্যায় কোনো পার্থক্য দেখা যায় নি। তবে নারী পুরুষে এই নিউরনের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হারে পার্থক্য দেখা গিয়েছে।[৭৬]
২০১০ সালে গার্কিয়া ফালগুয়েরাস এবং সোয়াবের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভ্রুণ মার্তৃজঠরে থাকা অবস্থায়; মায়ের মাসিক (পিরিয়ড) চলাকালীন সময়ে পুরুষ শিশুর ক্ষেত্রে টেস্টেস্টোরণ প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়া করে। আর নারী ভ্রুণের ক্ষেত্রে এই হরমোনের অনুপস্থিতিতে আনুষঙ্গিক কার্যকলাপ ঘটে। এইভাবেই মার্তৃগর্ভে থাকা অবস্থায় আমাদের লিঙ্গ পরিচয় (আমরা পুরুষ হব নাকি নারী) এবং যৌন অভিমুখিতা; আমাদের মস্তিষ্কের গঠনের সময় নির্ধারিত হয়। গবেষণা থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি যা থেকে বলা যায়; জন্মের পর সামাজিক পরিবেশ যৌন পরিচয় বা যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব ফেলে।”[৭৭]
ওভাইন মডেল
গৃহপালিত ভেড়াকে গবেষণামুলক মডেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে; যাতে করে সমকামিতার জন্য প্রাথমিক স্নায়বিক কলাকৌশল কিভাবে কাজ করে, তা বুঝা যায়। পর্যবেক্ষণ থেকে বুঝা দেখা গিয়েছে, গৃহিপালিত পুরুষ ভেড়ার ৮ শতাংশ অন্য পুরুষ ভেড়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু বেশিরভাগ পুরুষ ভেড়াই নারী ভেড়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়। বেশিরভাগ প্রজাতিতেই লিঙ্গ ভেদে যে পার্থক্য হওয়ার সাথে সাথে তাদের যৌন-দ্বৈত-নিউক্লিয়াসে (SDN) পার্থক্য দেখা যায়। প্রিওপটিক হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত সেক্সুয়াল ডিমরফিক নিউক্লিয়াস (এসডিএন) নারীর চেয়ে পুরুষে সাধারণত বড় হয়।
পুরুষ ভেড়ার প্রতি যেসব পুরুষ ভেড়া আকৃষ্ট হত; রোসেলি এবং তার সহগবেষকরা দেখেন সেসব ভেড়ার প্রি অপটিক হাইপোথ্যালামাসের ওভাইন এসডিএন, বিষমকামী পুরুষ ভেড়ার চেয়ে ছোট। সমকামী পুরুষ ভেড়ার ওভাইন-এসডিএন এর আকার নারী ভেড়ার সমরুপ। ওভাইন-এসডিএনের স্নায়ু বা নিউরন প্রদর্শন করে যে, সমকামী পুরুষ ভেড়ার এরোম্যাটাস উৎসেচকের (এনজাইম) স্তর (লেভেল) বিষমকামী পুরুষ ভেড়ার চেয়ে নিম্নতর। তবে এই প্রকাশের স্তর নারী ভেড়ার সমরুপ। যার অর্থ দাঁড়ায় পুরুষ ভেড়া; পুরুষকামী হবে নাকি নারী কামী হবে; তা স্নায়বিক দিক থেকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং হরমোন এখানে প্রভাবিত করে। However, results failed to associate the role of neural aromatase in the sexual differentiation of brain and behavior in the sheep, due to the lack of defeminization of adult sexual partner preference or oSDN volume as a result of aromatase activity in the brain of the fetuses during the critical period. Having said this, it is more likely that oSDN morphology and homosexuality may be programmed through an androgen receptor that does not involve aromatisation. Most of the data suggests that homosexual rams, like female-oriented rams, are masculinized and defeminized with respect to mounting, receptivity, and gonadotrophin secretion, but are not defeminized for sexual partner preferences, also suggesting that such behaviors may be programmed differently. যদিও ওভাইন-এসডিএনের প্রকৃত ক্রিয়া সম্পুর্ণভাবে জানা যায় নি। এর ঘনত্ব, দৈর্ঘ্য এবং কোষ সংখ্যা যৌন অভিমুখিতার সাথে আন্তসম্পৃক্ত। and a dimorphism in its volume and of cells could bias the processing cues involved in partner selection. অধিক গবেষণার মাধ্যমে এটা জানা আবশ্যক; ওএসডিএনের ক্রমবিকাশের সময় এবং ভেড়ার জন্মপূর্ব জৈব প্রভাব; প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের সঙ্গী নির্বাচনকে কিভাবে প্রভাবিত করে।[৭৮]
জীববিজ্ঞানের তত্ত্বে যৌন অভিমুখিতা
পূর্ব নিশ্চিত তত্ত্ব
ভ্রুণের বিকাশের সময় এবং পরিবেশগত কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ সংক্রান্ত গবেষণা পূর্ব নিশ্চিত তত্ত্বের অংশ। কিছু গবেষণা অনুসারে ভ্রুণ দশায় হরমোনের প্রভাব যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রভাব রাখে[৭৯][৮০][৮১] সমকামী ও বিসমকামী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের গঠন এবং তাদের চিন্তা করার সক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই পার্থক্য দেখা যাওয়ার দরুন এই অনুকল্পটি সমর্থিত হয়েছে। এই পার্থক্য দেখা যাওয়ার একটি ব্যাখ্যা হলোঃ সমকামী পুরুষের জন্মপূর্বে ভ্রুণের বিকাশকালীন দশায় মার্তৃগর্ভে হরমোনের প্রভাব তার মস্তিষ্কের পুরুষালি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে থাকতে পারে। মা এবং ভ্রুণের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, গর্ভবতী মায়ের সুনির্দিষ্ট ড্রাগ গ্রহণের ফলে সেই ড্রাগের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া, মার্তৃকালীন চাপ এবং সরাসরি ইঞ্জেকশনের কারণে হরমোন যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব ফেলতে পারে, অর্থাৎ সন্তান সমকামী হয়ে উঠতে পারে। এই অনুকল্পটি যৌন অভিমুখিতায় জন্মসূত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত।
Exotic becomes erotic
এই নিবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করা প্রয়োজন। এই নিবন্ধটি বাংলা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় লেখা হয়েছে। নিবন্ধটি যদি ঐ নির্দিষ্ট ভাষা ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে তবে, অনুগ্রহ করে নিবন্ধটি ঐ নির্দিষ্ট ভাষার উইকিপিডিয়াতে তৈরী করুন। অন্যান্য ভাষার উইকিপিডিয়ার তালিকা দেখুন এখানে। এই নিবন্ধটি পড়ার জন্য আপনি গুগল অনুবাদ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জাম দ্বারা অনুবাদকৃত লেখা উইকিপিডিয়াতে সংযোজন করবেন না, কারণ সাধারণত এই সরঞ্জামগুলোর অনুবাদ মানসম্পন্ন হয় না।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ মনস্তত্ত্ববিদ ড্যারিয়েল বেম তার তত্ত্বে বলেন; যৌন অভিমুখিতায় যেসব জৈব ফ্যাক্টর প্রভাব বিস্তার করে; এই জৈব ফ্যাক্টর এর উদ্দীপ্ত হওয়া আর যৌন অভিমুখিতায় হয়তো শৈশবের কোনো অভিজ্ঞতা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। A child’s temperament predisposes the child to prefer certain activities over others. Because of their temperament, which is influenced by biological variables such as genetic factors, some children will be attracted to activities that are commonly enjoyed by other children of the same gender. Others will prefer activities that are typical of another gender. This will make a gender-conforming child feel different from opposite-gender children, while gender-nonconforming children will feel different from children of their own gender. According to Bem, this feeling of difference will evoke psychological arousal when the child is near members of the gender which it considers as being ‘different’. Bem theorizes that this psychological arousal will later be transformed into sexual arousal: children will become sexually attracted to the gender which they see as different (“exotic”). This proposal is known as the “exotic becomes erotic” theory.[৮২]
বেম তার তত্ত্বকে সম্পুর্ণভাবে সঠিক প্রমাণ করতে পারে নি।[৮৩] ৪৮ রকম গবেষণাকে পুনঃ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে লিঙ্গ সঙ্গতিহীনতা নারী এবং পুরুষ উভয়েরই সমকামী হবার শক্তিশালী আগাম নির্দেশক।[৮৪] ছয়টি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, বালকের লিঙ্গ সংগতিহীনতা ৭ বছর বয়স থেকে শুরু হয়; যা কৈশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে। গবেষণা মতে এরুপ লিঙ্গ সঙ্গতিহীনতা দেখা যাওয়া বালকদের ৬৩ শতাংশ পরিণত বয়সে গিয়ে সমকামী বা উভকামী হয়।[৮৫]
যৌন অভিমুখিতা ও বিবর্তন
সাধারণ
বিষমকামীদের যৌন আচরণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা প্রজননের হার কমে যায়। যা টিকে থাকার লড়াইয়ে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন ধারণা অনুসারে বিবর্তনের হার কমাতে সমকামিতা সরাসরি জড়িত। তবুও সমকামিতা কেন টিকে গেলো, আর বিবর্তনের মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করা যায় কিভাবে এই সমস্যা সমাধানে বেশকিছু গবেষণা ভিন্ন ভিন্ন তাত্ত্বিও ও পরীক্ষণীয় ব্যাখ্যা দিয়েছে।[৮৬]
কিছু কিছু স্কলার [৮৬] বলেন, বিসমকামীদের ভাই-বোনের মধ্যে প্রজনন না ঘটার যেরকম সুবিধে আছে ঠিক সেভাবেই সমকামিতা পরোক্ষভাবে অভিযোজিত ক্ষমতার জন্য কাজ করে। এনালজির দিক দিয়ে, সিকল সেল এনিমিয়া হওয়ার কারণ একটি নির্দিষ্ট অ্যালীল। এই অ্যালীলের দুইটি কপি উপস্থিত থাকলে রোগটি হয় আবার এক কপি উপস্থিত থাকলে তা ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যা হেটেরোজাইগোসীয় সুবিধা বলে চিহ্নিত।[৮৭]
গবেষকরা আরো দেখান, ডারউইন নিজে উত্তরাধিকার বাছাইয়ের কথা অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বইয়ে বলেছেন। তাই ডারউইনের বিবর্তন মডেলে শুধুমাত্র একক নয় বরং পারিবারিক দল (রক্তের সম্পর্ক) এই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারে।
কুইন্সল্যান্ড ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের ব্রেন্ড জিয়েৎস একটি ভিন্ন তত্ত্বের প্রস্তাবনা দেন। তার প্রদত্ত তত্ত্বে যেসব পুরুষেরা নারীদের মতো (যেমন যত্ন নেওয়া, আবেগপ্রবণতা, স্নেহপ্রবণতা) বৈশিষ্ট্য দেখায় তারা নারীদের নিকট আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে এবং তাদের [নারীরূপ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনকারী] সংগম সঙ্গী পাওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। অর্থাৎ এই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিষমকামী পুরুষে বাড়তি সুবিধা যোগ করে।[৮৮]
২০০৮ সালে করা একটি গবেষণার গবেষকরা বলেন “বিবেচনা করার মত এমন অনেক প্রমাণ আছে যে, মানুষের যৌন অভিমুখিতা জিনগতভাবে প্রভাবিত। তাই এটা জানা যায় না কেন সমকামীতার ফলে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা এত কম থাকা সত্ত্বেও তা মানুষের জনসংখ্যায় এত অধিক হারে দেখা যায়। তারা প্রস্তাবিত অনুকল্পে বলেন, যেহেতু সমকামিতাকে নিয়ন্ত্রণকারী জিন সমকামীদের প্রজননের সফলতা হ্রাস করে, তার মানে পক্ষান্তরে, একই জিন যেসব বিষমকামীদের থাকে, তারা নিশ্চয়ই কোনো সুবিধাও পায়।” গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল এটাই প্রস্তাবনা করে যে, “যেসব জিনের কারণে সমকামিতা দেখা যায়, সেই একই জিন বিষমকামীদের প্রজননে সফলতার সুবিধা দেয় এবং এইভাবেই বিবর্তনের ছাঁকুনিতে কিভাবে সমকামিতা টিকে রয়েছে, বা জনসংখ্যায় কেন সমকামিতা দেখা যায়, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।” [৮৯]
যাইহোক, এর বিপরীতে আরো একটি বিকল্প সমাধানকে তারা উড়িয়ে দেন নি। তাদের মতে বিষমকামীরা সমকামিতার জিন বহন করায় সুবিধা পেতে পারে, এটা তাদের একটি প্রস্তাবনা হলেও, অপর প্রস্তাবনাটি হলো সমকামী-বিষমকামী যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে, সমকামী সন্তানটিকে অপরজনের মত অনেক বেশি বিষমকামী আচরণ প্রকাশ করতে সমাজ-পরিবার কর্তৃক চাপ প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে তাদের একাধিক যৌন সঙ্গী হয় এবং এভাবেই সমকামিতার বৈশিষ্ট্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। একইসাথে গবেষকরা এটাও স্বীকার করেছ্বন, একাধিক যৌন সঙ্গী মাত্রই যে বংশবৃদ্ধিতে বিশাল সফলতা তা নাও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যৌনসঙ্গীর সাথে বংশবৃদ্ধির সফলতার মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণের মত যথেষ্ট প্রমাণাদি অতীত বা বর্তমানের বিবর্তনীয় ইতিহাসে নেই।
২০০৪ সালে প্রকাশিত এক ইতালীয় গবেষণার মাধ্যমে বিসমকামিতা সুবিধা অনুকল্প আরো শক্ত সমর্থন পায়। এই গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে সমকামি পুরুষের মার্তৃকুলের আত্মীয়দের মাঝে ঊর্বরতার হার বেশি।[৬২][৬৩] হ্যামার বিষয়টিকে উল্লেখ করে বলেন,[৯০] যেসব নারীরা “গে জিন” বহন করেন, তাদের প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়; যার ফলে মোট জনসংখ্যায় উচ্চতর ভাবেই সমকামিতা বজায় থাকে।[৬৩]
সমকামী চাচা প্রকল্প
“সমকামী চাচা অনুকল্প” থেকে এটা প্রতীয়মেয় হয় যে, নিজের সন্তান না থাকলেও, কাছের আত্মীয়ের সন্তানদের খাদ্য, প্রতিরক্ষা, আশ্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ এর মত ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে, সেসব সন্তানের জিনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই অনুকল্পটি আত্মীয় নির্বাচন মুলক তত্ত্বের একটি সম্প্রসারিত রুপ। যা অভিযোজনের মাধ্যমে কল্যাণ করার জায়গা থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। ১৯৩২ সালে জে. বি. এস হালডেন প্রাথমিক ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন এবং পরবর্তীতে জন মায়ানার্ড স্মিথ, ডব্লিউ ডি হ্যামিলটন এবং মেরী জেন ওয়েস্ট-এবারহার্ড আরো সম্প্রসারিতভাবে একে ব্যাখ্যা করেন।[৯১] এই ধারণাটি সুনির্দিষ্ট সামাজিক পতঙ্গ যাদের বেশিরভাগ সদস্য ছিল বন্ধ্যা; তার বিন্যাস ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
ভাসে এবং ভ্যান্ডারল্যান (২০১০) সামোয়ার প্যাসিফিক দ্বীপে এই তত্ত্বকে পরীক্ষণ করেন। তারা সেখানের নারী, বিষমকামী পুরুষ এবং ফাফাফাইন পুরুষের উপর গবেষণা চালান। এইদ্বীপের যেসব মানুষ জন্মসুত্রে পুরুষ হলেও যৌন সঙ্গী নির্বাচনের দিক থেকে পুরুষকে বাছাই করে তাদের ফাফাফাইন নামে অভিহিত করা হয়। তারা সংস্কৃতিগত দিক থেকে সে সমাজে স্বতন্ত্র তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ভাসে এবং ভ্যান্ডারল্যান দেখতে পান, ফাফাফাইনরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের সন্তানকে সাহায্য করতে অতীব আগ্রহী থাকলেও। সেসব শিশু তাদের পরিবারের সন্তান নয়; তাদেরকে খুব একটা সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। এখান পরীক্ষণটিই আত্মীয় নির্বাচন মুলক অনুকল্পের পক্ষে প্রথম প্রমাণ।[৯২][৯৩]
এই প্রকল্পটি সমকামিতা সংক্রান্ত অন্য গবেষণার সাথে সংগতিপুর্ন, যা সহোদর ও জমজের মধ্যে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে।[৯২][৯৩][৯৪][ভাল উৎস প্রয়োজন]
জীবের টিকে থাকার জন্য বংশবিস্তার মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং সে ভূমিকা পালনের পথে সমকামিতা অন্যতম অন্তরায় হলেও কেন সমকামিতা আজ পর্যন্ত বিলুপ্ত হলো না, এই প্রশ্নের উত্তর উপর্যুক্ত অনুকল্পটি ব্যাখ্যা করে। সমকামিতা ও উভকামীতার মত অবিষমকামী আচরণ কেন সমাজে আজো টিকে রয়েছে, তার ব্যাখা হিসেবে এই অনুকল্পটিকে অনেক বিজ্ঞানী সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য অনুকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন। জীববিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বে হরহামেশা ব্যবহৃত হওয়া বেল কার্ভ প্রকরণ দ্বারা, আচরণের যে বিশাল ক্যানভাস আছে, সেই ক্যানভাসের আচরণের বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায়।
ভ্যাসাল এবং ভ্যান্ডারলেন (২০১১) প্রমাণ উপস্থাপন করে দেখান, যদি এমন একটি পরিশীলিত ফিনোটাইপ (জিন দ্বারা প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য) থাকে, যে ফেনোটাইপটি চাচা মামা গোত্রীয় পুরুষদের মধ্যে সমকামিতা/সমপ্রেমকে প্রকাশ করে, সেই ফেনোটাইপটি তার বৈশিষ্ট্য (চাচা/মামার মত ভালোবাসা এবং/অথবা সমপ্রেমিতা) প্রকাশের জন্য কোন ভাবেই সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে না।[৯৫]
সমকামী পুরুষ ও নারীতে জৈবিক পার্থক্য
শারীরতত্ত্ব বিদ্যায়
কিছু গবেষণা মানুষ ও তার যৌন অভিমুখিতার মধ্যে শারীরবৃত্তের আন্তঃসম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। প্রমাণ সমৃদ্ধ এই গবেষণাগুলো অনুযায়ীঃ
সমকামী পুরুষ এবং বিষমকামী নারীর মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ার গড়পড়তায় একইরুপ সমান হয়। সমকামী নারী এবং বিষমকামী পুরুষের ডানদিকে ব্রেইন হেমিস্ফিয়ার গড়পড়তায় কিছুটা বড় হয়।[৯৬]
প্রতিবেদন অনুসারে সমকামী পুরুষদের; বিষমকামী পুরুষের তুলনায় গড়পড়তায় দীর্ঘ এবং পাতলা পুরুষাঙ্গ থাকে।[১০০]
সমকামী পুরুষ এবং সাধারণ নারীদের; মস্তিষ্কের আইএনএএইচ৩ প্রায় একই হয়। এর কোষ বিষমকামী পুরুষদের তুলনায় সমকামি পুরুষে ঘনতর হয় এবং আকারে ছোট হয়।[৭৩]
এন্টেরিয়র কমিশার নারীতে, পুরুষের তুলনায় বড় হয়। পরবর্তীতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমকামী পুরষে; যারা সমকামি নন তাদের তুলনায় এটি বড় হয়।[৬৭] কিন্ত পরবর্তী গবেষণায় দেখা গিয়েছে; এধরনের কোনো পার্থক্য নেই।[১০১]
সমকামী নন এরুপ নারীর তুলনায় উভকামী ও সমকামী নারীদের মধ্যকর্ণ ও কেন্দ্রীয় অডিটরী সিস্টেমের কার্যাবলী পুরুষের ন্যায়। (গবেষকদের মতে এই অন্বেষণ যৌন অভিমুখিতার জন্য জন্মপুর্ব হরমোন দায়ী এই প্রকল্পের সাথে সংগতিপুর্ণ).[১০৩]
সমকামী নারী এবং উভকামী নারীতে স্টার্টল রেসপন্স (eyeblink following a loud sound) পুরুষের ন্যায় আচরণ করে।[১০৪]
সমকামী এবং সমকামী নন এরুপ পুরুষদের মস্তিষ্ক দুইটি পুটেটিভ (putative) সেক্স ফেরোমেনে ভিন্নভাবে সাড়াদান করে।[৬৪][১০৫][১০৬]
মস্তিষ্কের একটি এলাকা এমিগডালা সমকামী নন, এসব পুরুষের তুলনায় সমকামী পুরুষে অনেক বেশি সক্রিয়।[১০৭] সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখিয়েছে মস্তিষ্কের গঠনের সাথে (হেমিস্ফিয়ারিক অনুপাতে পার্থক্য এবং এমিগোডালার প্যাটার্ন সংযোগ অন্তর্ভুক্ত করলে) যৌন অভিমুখিতার আন্তঃসম্পর্ক আছে। সমকামী পুরুষ এমিগডালাতে বিষমকামী পুরুষের তুলনায় অধিক নারীত্বমুলক প্যাটার্ন দেখায়, এবং একইভাবে সমকামী নারী বিষমকামী নারীর তুলনায় এমিগডালাতে অধিক পুরুষত্বমুলক প্যাটার্ন দেখায়। সমকামী পুরুষ এবং বিষমকামী নারীর বাম এমিগডালা সংযোগ অধিকভাবে বিস্তৃত; এমনটাও দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে বিষমকামী পুরুষ এবংসমকামী নারীতে ডান এমিগডালা অধিকভাবে বিস্তৃত।[১০৮][১০৯]
বিষমকামী নারী-পুরুষের তুলনায় সমকামী পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে বাঁহাতি ও সব্যসাচী হবার প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে।[১২০][১২১][১২২]সিমন লিভ্যে এর বিরুদ্ধাচরণ করে বলেন “কে কোন হাত অধিক ব্যবহার করবে; তা জন্মপুর্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়…[১২৩] সমকামী পুরুষদের মধ্যে ডানহাতি না হবার যে প্রবণতা বাড়তে থাকে, তা যৌন অভিমুখিতা জন্মপুর্ব কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ধারণার সাথে সংগতিপুর্ণ,” সম্ভবত উত্তরাধিকার সুত্রে।[৭৩]
৫০ জন সমকামী পুরুষের মধ্যে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে; তাদের ২৩ শতাংশের ঘড়ির বিপরীতক্রমে হেয়ার হোর্ল আছে, যা মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। এর সাথে বাঁহাতিদের একটা আন্তঃসংযোগ আছে।[১২৪]
সমকামী পুরুষদের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কণিষ্ঠাঙ্গুলির ফিঙ্গারপ্রিন্ট ঘনতর হয়।[১২৪]
সমকামী পুরুষদের বাহু এবং হাতের দৈর্ঘ্য সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় ছোট হয়। তবে এটা শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের মধ্যে দেখা গিয়েছে।[১২৪]
জে. মাইকেল বেইলি যুক্তি দেখান; সমকামীদের জৈবনিক মার্কার দেখা যায় কী যায় না-এর (Biological markers) পরিবর্তে প্রাক শৈশব লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তা মুলক আচরণ সমকামিতা যে সহজাত প্রবৃত্তি তার জন্য অধিকতর ভাল প্রমাণ। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন সমকামী পুরুষেরা তাদের শৈশবকালীন লৈঙ্গিক অনিশ্চয়তার জন্য যতটা না প্রশংসা বা পুরস্কার পান তার চেয়ে বেশি তিরস্কৃত হন এবং ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তিও পেতে হয়। অর্থাৎ শৈশবে সমাজ কর্তৃক এই আচরণ বিকশিত হওয়ার সময় বাধার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও সমাজে এর আধিক্য দেখে বুঝা যায়, এ আচরণ শতভাগ সহজাত প্রবৃত্তি থেকে উৎসরিত। [১২৫]
যৌন অভিমুখিতা জিনগত বা মনস্তত্ব বিষয় এর উপির নির্ভর করে কিনা; তা নিয়ে উচ্চমাত্রায় রাজনৈতিক ইস্যু হয়েছে। দ্য এডভোকেট, একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুরুষ সমকামী এবং নারীসমকামী ভিত্তিক পত্রিকা ১৯৯৬ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, এই পত্রিকার ৬১ শতাংশ পাঠক মনে করে “যদি সমকামিতা জৈবিকভাবে স্বীকৃত এমনটা গবেষণা থেকে খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সহজতর হবে।”[১২৬]যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন এবং সুইডেনে করা একটি জরিপ থেকে দেখা গেছে, যারা বিশ্বাস করে সমকামিতা জন্মগত, তারা তুলনামুলকভাবে অন্য যারা সমকামীতা মানুষের ইচ্ছাকৃত ধরে নেয়, তাদের তুলনায় সমকামিদের প্রতি পজেটিভ দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করে।[১২৭][১২৮] যৌন অভিমুখিতা জৈবিকভাবে নির্ধারিত এর সপক্ষে প্রমাণ দেওয়া গেলে (অথবা যৌন অভিমুখিতা অপরিবর্তনীয় এমনটা নিশ্চিত হলে) তা বৈষম্যকারী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সমকামিতার পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়।[১২৯][১৩০][১৩১] সমাজের রক্ষণশীলতার দিক দিয়ে যৌন অভিমুখিতার দিকে দিয়ে সংখ্যালঘুদের সামাজিক অবস্থানের ভিত তৈরিতে যৌন অভিমুখিতার সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওয়াশিংটন ডি.সির একটি রক্ষণশীল খ্রিস্টান দল “গেটিং ইত স্ট্রেইট” বইয়ে তর্কের বিষয় হিসেবে উত্থাপন করেন যে, জন্মসূত্রে যৌন অভিমুখিতা নির্ধারিত হয় এরকম ধারণা নির্দিষ্ট বর্ণের প্রতি হওয়া বৈষম্যের মত নির্দিষ্ট যৌন অভুমিখিতা প্রদর্শন করে এরকম মানুষের প্রতি বৈষম্যের বিরোধিতা করে। এই বইয়ে সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলা হয় এবং হোমোফোবিয়াকে বর্ণবৈষম্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করতে বলা হয়। যদিও, রেভারেন্ড রবার্ট শ্নেক এর মতো সামাজিক রক্ষণবাদী ব্যক্তির মতে, যে কেউ যে কোন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্য মেনে নিতে পারে। যদিও তিনি নৈতিকভাবে সমকামিতা বিরোধী।[১৩২]
জাতীয় বিবাহ সংঘের বোর্ড চ্যামার ও গল্প লেখক অরসন স্কট কার্ড সমকামিতার উপরে জীববৈজ্ঞানিক গবেষণার পক্ষে লিখেছেন। তার মতে, সমকামিতার কারণে হিসেবে জিনেটিক কিংবা জীববিজ্ঞানীয় কারণ নির্ধারনে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সমকামিদের অধিকার প্রাপ্তিতে অবদান রাখতে পারে। এই গবেষণাগুলো কোনভাবেই সমকামিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ থেকে নয় বরং প্রমাণের জন্য, সমকামিতা কোন রোগ নয় এবং এর কোন ঔষধ নেই। সমকামি ভাবে বেঁচে থাকা ও জীবনযাপনের ইচ্ছা একটি ভিন্ন ধরনের জীবনযাপন বলে তিনি অভিহিত করেন।”[১৩৩]
কারো কারো মতে যৌন অভিমুখিতার দিক দিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সমকামিতার সাথে জীববিজ্ঞানের সম্পর্ক অথবা জন্মসূত্রে সমকামিতার নির্ধারন হওয়া প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাদের তর্কের একটি অংশ, মানুষের জীবনের যৌন অভিমুখিতা বিভিন্ন কারণে পাল্টাতে পারে।[১৩২][১৩৪] চ্যান্ডলার বার অবশ্য সংকা প্রকাশ করেছেন, ভ্রুনের যৌন অভিমুখিতা ভ্রুণ হত্যাকে উস্কে দিতে পারে।[১৩৫] লেভেই বলেছে, সমকামিতার উপর হওয়া গবেষণা গে ও লেসবিয়ানদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এরকম চিঠি তিনি পেয়েছেন।[১৩২] | ্ নি
বিশ্বকাপ (ইংরেজি: World cup) এক ধরনের বৈশ্বিকক্রীড়াপ্রতিযোগিতাবিশেষ। এতে সচরাচর বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল বা ব্যক্তিগতভাবে কোন খেলোয়াড় সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধিত্ব করে ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শিরোপাজয় করে নিজ দেশের পরিচিতি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে তুলে ধরে। বিশ্বকাপকে সচরাচর নির্দিষ্ট ক্রীড়া বা খেলার প্রধান প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিজয়ী দল বা ব্যক্তি ঐ খেলায় সর্বোচ্চ সম্মাননা ও ক্রীড়ায় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হন। তবে অলিম্পিকের ন্যায় কিছু কিছু খেলায় শিরোপালাভ করাও বিশ্বকাপের সমতুল্য।
বেশকিছু খেলা বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপকেই সাধারণতঃ বিশ্বকাপ নামে ডাকা হয়।[১] ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো এসোসিয়েশন ফুটবল প্রতিযোগিতার বৈশ্বিক অসম্ভব জনপ্রিয়তাই এর মূল কারণ।
বৈশিষ্ট্যাবলী
কিছু ক্রীড়া পরিচালনাকারী সংস্থা বিশ্বকাপের পরিবর্তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ বা এর সম্পর্কযুক্ত অন্যকোন ক্রীড়া পরিভাষা ব্যবহার করে। সংস্থাগুলো অনেক সময় বিশ্বকাপ এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ – উভয় ধরনের প্রতিযোগিতাই ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-কানুন প্রয়োগপূর্বক আয়োজন করে থাকে। সংক্ষিপ্ত কিংবা দীর্ঘমেয়াদী সময়কালের উপযোগী করে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বয়সসীমা, উন্মুক্ত, লিঙ্গভেদ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারে আয়োজন করা হয়। দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। প্রায়শঃই নক-আউট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকাপের সমাপণ ঘটানো হয়। এক্ষেত্রে দলের সংখ্যা যখন দুইটি হয়, তখন পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার বিজয়ীকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হিসেবে সোনা কিংবা রূপায় মোড়ানো এবং তুলনামূলকভাবে বড় সুন্দর একটি ট্রফি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দেরকেও পদক প্রদান করা হয়। খুব কমক্ষেত্রেই উভয় দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী দল এ খেতাব পরবর্তী চার, দুই কিংবা এক বছরের জন্য প্রাপ্য হন। দলগত ক্রীড়ায় এর বহুল প্রয়োগ ঘটে। বিশ্বকাপ ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাও বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত।