ভৌগোলিক গঠন(Geographical structure) হলো পৃথিবীর প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গঠনাকৃতি। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠনগুলো ভূমিরূপ এবং বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, ভূখণ্ডের ধরন (পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান) হলো প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠন। বিপরীতে, মানব বসতি বা অন্যান্য প্রকৌশলগত রূপগুলি কৃত্রিম ভৌগোলিক গঠনের ধরন হিসাবে বিবেচিত হয়।
আবাসকে বর্ণনা করার জন্য দুটি পৃথক শব্দ রয়েছে: বাস্তুসংস্থান এবং বায়োম। একটি বাস্তুতন্ত্র হল জীবের একটি সম্প্রদায়।[১] বিপরীতে, বায়োমগুলি বিশ্বের বৃহত্ অঞ্চল দখল করে থাকে এবং প্রায়শঃই পর্বতশ্রেণীসহ বিভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক গঠনকে ধারণ করে।[২]
একটি বাস্তুসংস্থানের মধ্যে জৈব বৈচিত্র্য হলো আন্তঃআলিয়া, স্থলজগত, সামুদ্রিক এবং অন্যান্য জলজ বাস্তুতন্ত্রসহ সমস্ত উত্স থেকে জীবিত প্রাণীর মধ্যকার পরিবর্তনশীলতা।[৩] জীবিত জৈব পদার্থগুলো তারা যে পরিবেশে থাকে সেখানকার প্রতিটি উপাদানের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত থাকে এবং বাস্তুতন্ত্র এমন পরিস্থিতিকে বিবৃত করে যেখানে জীব এবং তাদের পরিবেশের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
বায়োম দ্বারা বাস্তুতন্ত্রের একই প্রজাতির গাছপালা, প্রাণী এবং মাটিতে বিস্তৃত জৈব উপাদানসমূহের বৃহত্ অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ কা হয়ে থাকে।[৪] বায়োমকে গাছের কাঠামো (যেমনঃ বৃক্ষ, ঝোপঝাড় এবং ঘাস), পাতার ধরন (যেমনঃ ব্রডলিফ এবং সুইডাফ), গাছের ব্যবধান (বন, কাঠের ভূমি, সাভানা) এবং জলবায়ু প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বাস্তুঅঞ্চলের মতো করে জিনগত, করশাস্ত্রীয় বা ঐতিহাসিক মিল দ্বারা বায়োমগুলি সংজ্ঞায়িত হয় না। বায়োমগুলি প্রায়শঃই পরিবেশগত উত্তরসূরি এবং বিবিধ উদ্ভিদের পারস্পরিক সম্মিলনে দিক থেকে চিহ্নিত হয়।
একটি ভূমিরূপ একটি ভূতাত্ত্বিক একক নিয়ে গঠিত এবং ভূভাগের অংশ হিসাবে ভূ-পৃষ্ঠের পৃষ্ঠতল এবং অবস্থান দ্বারা মূলতঃ সংজ্ঞায়িত হয় এবং এরা সাধারণত ভূবিদ্যার একটি উপাদান। ভূমিরূপকে উচ্চতা, ঢাল, স্থিতি, স্তরায়ণ, শিলার প্রকরণ এবং মাটির ধরনের মতো বৈশিষ্ট্যগুলি দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বার্ম, স্তুপ, পাহাড়, খাড়া ভূমি, উপত্যকা, নদী এবং আরও অনেক উপাদান। মহাসাগর এবং মহাদেশগুলি সর্বোচ্চ ধাপের ভূমিরূপ। জলভাগ হলো জলের কোনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণের জমে থাকা, যা সাধারণত পৃথিবীকে আবৃত করে রাখে। “জলভাগ” শব্দটি দ্বারা প্রায়শঃই মহাসাগর, সমুদ্র এবং হ্রদকে বুঝানো হয়; তবে এর মধ্যে জলের ছোট ছোট অংশগুলো, যেমনঃ পুকুর, ছড়া বা জলাভূমিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। নদী, স্রোতস্বীনি, খাল এবং অন্যান্য ভৌগোলিক গঠন যেখানে জল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয় তাদেরকে সর্বদা জলভাগ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, তবে এদেরকে জল দ্বারা গঠিত ভৌগোলিক গড়ন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
একটি বসতি হল একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী সম্প্রদায় যেখানে লোকজন বাস করে। বসতির ক্ষেত্রের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক দল একত্রিত হয়ে বসবাস করা থেকে শুরু করে চতুর্পার্শ্বে নগর-অঞ্চলগুলোর সাথে সংযুক্ত বৃহত্ মহানগরও অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য ভূদৃশ্য গঠন, যেমনঃ রাস্তাঘাট, বেষ্টনী, মাঠ, সীমানা তীর এবং গর্ত, পুকুর, উদ্যান এবং কাঠ, কল, প্রাসাদ, পরিখা এবং উপাসনালয়কে বসতির অংশ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।[৫]
প্রকৌশলগত ভৌগোলিক গঠনের মধ্যে মহাসড়ক, সেতু, বিমানবন্দর, রেলপথ, ভবনসমূহ, বাঁধসমূহ এবং জলাধারসমূহ অন্তর্ভুক্ত এবং নৃমন্ডলের অংশ কারণ এগুলি মানব-নির্মিত ভৌগোলিক গড়ন।
মানচিত্রাঙ্কনিক গঠন এমন একটি বিমূর্ত ভৌগোলিক গঠন, যা মানচিত্রে প্রদর্শিত হয়, কিন্তু গ্রহে এরা অবস্থিত হলেও তা বাস্তবে দৃষ্ট হয় না। উদাহরণস্বরূপ, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, নিরক্ষীয় অঞ্চল এবং প্রধান অক্ষ পৃথিবীর মানচিত্রে প্রদর্শিত হয় কিন্তু এটি বাস্তবে বিদ্যমান নয়। এটি একটি তাত্ত্বিক রেখা যা তথ্যসূত্র, দিক নির্নয় এবং পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভৌগোলিক গঠন হলো পৃথিবীর প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গঠনাকৃতি। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠনগুলো ভূমিরূপ এবং বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, ভূখণ্ডের ধরন (পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান) হলো প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠন। বিপরীতে, মানব বসতি বা অন্যান্য প্রকৌশলগত রূপগুলি কৃত্রিম ভৌগোলিক গঠনের ধরন হিসাবে বিবেচিত হয়।
ভৌগোলিক গঠন হলো পৃথিবীর প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গঠনাকৃতি। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠনগুলো ভূমিরূপ এবং বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, ভূখণ্ডের ধরন (পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান) হলো প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠন। বিপরীতে, মানব বসতি বা অন্যান্য প্রকৌশলগত রূপগুলি কৃত্রিম ভৌগোলিক গঠনের ধরন হিসাবে বিবেচিত হয়।
ভৌগোলিক গঠন হলো পৃথিবীর প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গঠনাকৃতি। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠনগুলো ভূমিরূপ এবং বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, ভূখণ্ডের ধরন (পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান) হলো প্রাকৃতিক ভৌগোলিক গঠন। বিপরীতে, মানব বসতি বা অন্যান্য প্রকৌশলগত রূপগুলি কৃত্রিম ভৌগোলিক গঠনের ধরন হিসাবে বিবেচিত হয়।
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়।তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়।মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।
সাধারণ জ্ঞানে ভূমিকম্প শব্দটি দ্বারা যে কোন প্রকার ভূকম্পন জনিত ঘটনাকে বোঝায় – সেটা প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্য সৃষ্ট যাই হোক না কেন। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হতে পারে। ভূমিকম্পের প্রাথমিক ফাটলকে বলে ফোকাস বা হাইপোসেন্টার। এপিসেন্টার হল হাইপোসেন্টার বরাবর মাটির উপরিস্থ জায়গা।
ভূমিকম্পের ফলাফলঃ
ভূমিকম্পের ফলাফল ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীতে বহু পরিবর্তন ও ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ফল সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে অসংখ্য ফাটল এবং চ্যুতির সৃষ্টি হয়। কখনো সমুদ্রতলের অনেক স্থান উপরে ভেসে ওঠে। আবার কখনো স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তিত বা বন্ধ হয়ে যায়। ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ বরফখণ্ড হঠাৎ নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ভূমিকম্পের ধাক্কায় সমুদ্রের পানি তীর থেকে নিচে নেমে যায় এবং পরক্ষণেই ভীষণ গর্জন সহকারে ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে। এ ধরনের জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে ব্যাপক জান-মালের ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের ফলে কখনো উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়। আবার কখনো সমুদ্রের তলদেশের কোনো স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রে দ্বীপের সৃষ্টি করে। ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিক পার্শ্বচাপের প্রভাবে কুঁচকে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ধস নেমে নদীর গতি রোধ করে হ্রদের সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে বহু প্রাণহানি ঘটে। ভূমিকম্পে রেলপথ, সড়কপথ, পাইপ লাইন প্রভৃতি ভেঙে যায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। টেলিফোন লাইন, ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভূপৃষ্ঠের বড় বাধ, কালভার্ট, সেতু প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও অনেক সময় সুনামির সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র
পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়শই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিমি.-র মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল (Mantle) থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে।
ভূমিকম্পের কারণ
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
ভূপৃষ্ঠজনিত
আমাদের ভূ -পৃষ্ঠ অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনও প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থানচ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনও অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। আর এই কম্পনই ভূমিকম্প রূপে আমাদের নিকট আবির্ভূত হয়।
আগ্নেয়গিরিজনিত
কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
শিলাচ্যুতিজনিত
কখনো কখনো পাহাড় কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূপাত
কোনো কারণে পাহাড়-পর্বত হতে বৃহৎ শিলাখণ্ড ভূত্বকের ওপর ধসে পড়ে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত ভাঁজ পর্বতের নিকট অধিক ভূমিকম্প হয়।
তাপ বিকিরণ
ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
ভূগর্ভস্থ বাষ্প
নানা কারণে ভূগর্ভে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেয়; ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয় এবং ভূমিকম্প হয়।
হিমবাহের প্রভাবে
কখনো কখনো প্রকাণ্ড হিমবাহ পর্বতগাত্র হতে হঠাৎ নিচে পতিত হয়। এতে ভূত্বক কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্পনের সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্প
এশিয়া
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে আসলে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূঅভ্যন্তরের দুটি ভূচ্যুতির (faultline) প্রভাবে আন্দোলিত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়ার,[১] অর্থাৎ বড় ধরনের ভূ-কম্পনের। বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা।[২]
বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ৮৫ বছরের ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড।
প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে, বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয় না। এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০’রও বেশি ভূমিকম্প; তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৩০ বছরে (পরিপ্রেক্ষিত ২০০৪) ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে।[৪]
বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা।[২] বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়ার,[১] অর্থাৎ বড় ধরনের ভূ-কম্পনের। এই সূত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট-ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন (জুলাই ২০১৬) এতদিন প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংশ্লিষ্ট মডেলের অভাবে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা যাচ্ছিল না। এবার তারা সেটি করতে পেরেছেন। তারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের নিচে জমে ওঠা টেকটনিক প্লেটে চাপ জমে উঠছে কম করে বিগত ৪০০ বছর ধরে। এই চাপ যখন মুক্ত হবে তখন সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৮.২ রিখটার, এমনকী তা ৯ রিখটারেও পৌঁছতে পারে। প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।[৫]
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশেরশ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়[৩][৪] এবং ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প[৬]। এমনকি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUET) মানমন্দিরে জানুয়ারি ২০০৬ থেকে মে ২০০৯ পর্যন্ত ৪ বছরে, রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূ-কম্পনও ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে মে ২০০৭ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫-এর উপরে, এবং সেগুলোর ৯৫%-এরই উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে।[১] অতীতের এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে[৪], অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মতবিরোধ থাকলেও[৭] অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন।[৮] অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যে কোনও সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।[১][৬]
বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র:GSB)
জোন-১-এ অবস্থিত বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। কারণ সিলেট–সুনামগঞ্জ ও ভারতেরশিলংকে বিভক্ত করেছে ডাওকি নদী, আর এই ডাওকি নদী ডাওকি চ্যুতি (Dauki fault) বরাবর অবস্থান করছে, আর ভূতাত্ত্বিক চ্যুতিগুলোই বড় ধরনের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।[৬] সিলেটের সীমান্ত এলাকাবর্তী এধরনের চ্যুতিগুলোর কোনো কোনোটিতে সাব-ডাউন ফল্ট রয়েছে, যেগুলো ভূমিকম্প ঘটালে বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।[৯] কারণ এতে করে পাথারিয়া অন্তর্চ্যুতি (Patharia anticline)[১০] নিচের দিকে মোচড় দিতে পারে।
জোন-২
জোন-২-এ অবস্থিত রাজশাহী জেলা, ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত এবং তাই ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[১১] সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় থাকার কারণে এই অঞ্চলও যেকোনো সময় মারাত্মক ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হতে পারে।
জোন-২-তে থাকা রাজধানী শহর ঢাকায় সে হিসেবে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন নেই। তবে ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। সরকারি তথ্যসূত্রমতে, ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০,০০০ লোক হতাহত হবে। দিনের বেলায় হলে হতাহতের সংখ্যা হবে ৭০,০০০। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের ৩,২৬,০০০ ভবনের উপর পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রায় ৭২,০০০ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আরও ৮৫,০০০ ভবন মাঝারি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু দালান ভাঙার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য সম্পদ।[১২] এমনকি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ পরিচালিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুলস ফর ডায়াগনসিস অফ আরবান এরিয়াস এগেইন্সট সাইসমিক ডিযাসটার (রেডিয়াস) জরিপে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকাও অন্যতম।[১৩]
এছাড়াও জাপানেরটোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (টিআইটি)-র সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এক সাম্প্রতিক (২০১০) গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার ভূমিতে বিভিন্ন প্রকারের মাটি (লাল মাটি, নরম মাটি ইত্যাদি) রয়েছে। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন এলাকা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।[১৩]
পৌরাণিক কাহিনীতে ভূমিকম্প
ভূমিকম্প নিয়ে নানা ধরনের লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে…
গ্রিক জাতির ধারণা অনুযায়ী তাবৎ ভূমিকম্পের জন্য দায়ী ভূমিকম্পের দেবতা পোসাইডন। পোসাইডন যখন খারাপ মেজাজে থাকেন, তখন ভূমিতে ত্রিশূল দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করেন। ফলে ভূমিকম্প হয়। মানুষের পাপকাজে রাগন্বিত হয়েও তিনি এরকম করেন বলে প্রচলিত আছে।
পশ্চিম আফ্রিকান সংস্কৃতির কিছু মানুষ মনে করত, জীবন টিকে আছে এক দৈত্যের মাথার মধ্যে। গাছপালা সেই দৈত্যের চুল। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হচ্ছে পরজীবীর মতো, যারা দৈত্যের ত্বকজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মধ্যে দৈত্যটি মাথা এদিক-ওদিক ঘোরায়। তখনই ভূমিকম্প হয়।
নর্স পুরাণে আছে সৌন্দর্যের দেবতা বলডারকে হত্যা করার কারণে দেবতা লকিকে একটি বিষধর সাপ মাথার ওপর দিয়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সেই সাপ তার মাথায় ক্রমাগত বিষ ঢেলে চলেছে। তার স্ত্রী সেজিন তাকে বাচানোর জন্য একটি পাত্রে বিষ ভরে রাখছে। পাত্রটি পুর্ণ হয়ে গেলে সে যখন তা খালি করতে যায় তখন ক্রমাগত পড়তে থাকা বিষ থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য লকি নাড়াচাড়া করে ফলে ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের ফলাফল
ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে পর্বতগাত্র থেকে বৃহৎ বরফখণ্ড হঠাৎ নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
ভূমি জরিপ হচ্ছে এমন এক কৌশল, পেশা, বিজ্ঞান যা নির্দিষ্টভাবে স্থানসমূহের ভূগোলক বা ত্রিমাত্রিক অবস্থানের পারস্পারিক দূরত্ব এবং কোণ নির্ণয় করতে পারে। এই বিন্দুসমূহে সাধারণত পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত এবং তারা অধিকাংশ সময় ভূমি সীমানা নির্ধারণ করে ব্যক্তিগত অথবা সরকারী পর্যায়ে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য জরিপাকারীরাগণিত (জ্যামিতি এবং ত্রিকোণমিতি), পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং আইন বিদ্যার সহায়তা নিয়ে থাকে।
ইতিহাস
জরিপের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এমনকি প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় নীল নদের অতি প্লাবনের কারণে জমির সীমানা মুছে যাবার পর দড়ি দিয়ে সীমানা নির্ধারণের নথি পাওয়া গেছে।
ভূগোলবিদ বলতে আমরা সেই পণ্ডিত ব্যক্তিকে বুঝি যার অধ্যয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে ভূগোল, পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানব সমাজ।
যদিও ঐতিহাসিকভাবে যিনি মানচিত্র তৈরি করতেন তাকেই ভূগোলবিদ বলা হতো; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানচিত্র তৈরি করা শিক্ষার একটি ক্ষেত্র যা মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা নামে পরিচিত এবং এটি ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত একটি অধিক্ষেত্র। ভূগোলবিদগণ কেবলমাত্র পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বা মানব সমাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাই করেন না, অধিকন্তু তারা এই দু’য়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ মানব সমাজে কিভাবে অবদান রাখছে’ – তা নিয়ে গবেষণা করার সাথে সাথে তারা ‘মানব সমাজ কিভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে’ – সেটিরও অনুসন্ধান করেন ।
বিশেষত: প্রাকৃতিক ভূগোলের গবেষকগণ প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে অধ্যয়ন করেন; বিপরীতে মানবীয় ভূগোল বিশারদগণ মানব সমাজ সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। আধুনিক ভূগোলবিদগণই জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) -এর প্রাথমিক পরিচর্চাকারী, যারা প্রায়শ:ই স্থানীয়, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের পরিবেশ এবং প্রকৌশল সংস্থায় নিযুক্ত হন।
ভূগোলবিদ শিরোনামে জোহানস্ ভারমিরের অঙ্কিত একটি বিখ্যাত তৈলচিত্র রয়েছে, যা কখনো কখনো জোহানস্ ভারমিরেরজ্যোতির্বিদ শিরোনামের চিত্রটির সাথে একত্রে যুক্ত (সিরিজ) বলে ধারণা করা হয়। এই চিত্র দুটিকে ১৬৬৮-৬৯ সালে তাদের অঙ্কনকালীন সময়ে ইউরোপে ভূগোলবিদদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানভিত্তিক অভিক্ষিপ্তাবস্থা গড়ে ওঠা ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিনিধিত্বকারী বলে মনে করা হয়।
ভূগোলক (ইংরেজি: Geoid/ˈdʒiːɔɪd/) হল এমন এমন ধরনের আকৃতি যা বাতাস ও স্রোতের মত প্রভাবকের অনুপস্থিতিতে অভিকর্ষ বল এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের দরুন মহাসাগরের পৃষ্ঠতলের আকৃতি। এই আকৃতি মহাদেশ থেকে মহাদেশে বিস্তৃতি (যেমন খুবই সরু প্রকল্পিত খালের মত) লাভ করে। এটি সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস এবং তিনি এটাকে “পৃথিবীর গাণিতিক আকৃতি” বলে অভিহিত করেন। তিনি আরো বলেন যে, এটি ভরের অসম বণ্টনের দরুন সৃষ্টি হয় এবং এটি মসৃণ কিন্তু অসমতল। এটি শুধুমাত্র বৃহৎ অভিকর্ষীয় পরিমাপ এবং গণনা থেকে জানা সম্ভব হয়। ভূগণিত এবং ভূপ্রকৃতিবিদ্যায় প্রায় ২০০ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আলোচিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এটি স্যাটেলাইটভিত্তিক ভূগণিতের উন্নতির দরুন এটি তখন থেকে নির্ভুলভাবে মাপা সম্ভব হচ্ছে।
ভূগোলকীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ, বিভব শক্তি এবং কেন্দ্রবিমুখী বিভব শক্তির যোগফল সমান। অভিকর্ষ বল ভূগোলকের সবখানে লম্বভাবে ক্রিয়া করে। এর মানে হল, উল্লম্ব রেখাগুলো কোন বিন্দুর উপরে লম্ব হিসেবে থাকে এবং পানির স্তর ভূগোলকের সমান্তরাল যদি ও কেবল যদি অভিকর্ষ বল এবং কৌণিক ত্বরণের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে। ভূগোলকীয় পৃষ্ঠ উপবৃত্তীয় পৃষ্ঠের উপরে অবস্থান করবে যদি অভিকর্ষের ধনাত্মক পরিবর্তন (ব্যাপক আধিক্য) দেখা যায় এবং ভূগোলকীয় পৃষ্ঠ উপবৃত্তীয় পৃষ্ঠের নিচে অবস্থান করবে যদি অভিকর্ষের ঋণাত্মক পরিবর্তন (ব্যাপক কমতি) দেখা যায়।[১]
বর্ণনা
মিটারস্কেলে ভূগোলকের উঁচু নিচু অবস্থার মানচিত্র (ইজিএম৯৬ অভিকর্ষ মডেল এবং ডব্লিউজিএস৮৪ এর উপবৃত্তের নমুনাকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।)[২]
ভূগোলকের পৃষ্ঠ উঁচুনিচু, নমুনা উপবৃত্তের মত নয় (নমুনা উপবৃত্তে পৃথিবীর বাহ্যিক রূপকে গাণিতিক রূপে চিত্রিত করা হয়েছে)। ভূগোলকের পৃষ্ঠ বাহ্যিক পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে তুলনামূলকভাবে মসৃণ। বাহ্যিক পৃথিবীর কোন বিন্দুর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার সীমা +৮,৮৪৮ মিটার (মাউন্ট এভারেস্ট) থেকে −১১,০৩৪ মিটার (মারিয়ানা খাত) এই সীমার মাঝে অবস্থান করলেও ভূগোলকের কোন বিন্দুর সীমা +৮৫ মিটার (আইসল্যান্ড) থেকে –১০৬ মিটার (ভারতের দক্ষিণাংশ) এই সীমায় বিস্তৃত, যার সীমা ২০০ মিটারেরও কম।[৩]
মহাসাগরগুলো যদি আইসোফিকনিক (ধ্রুব গভীরতাবিশিষ্ট) এবং জোয়ারভাটা, স্রোত কিংবা আবহাওয়া সংক্রান্ত কোন বিষয় যদি মহাসাগরগুলোতে প্রভাব বিস্তার না করত, তবে এর পৃষ্ঠের আকৃতি ভূগোলকের ন্যায় হত। ভূগোলক এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতার মধ্যকার পার্থক্য “মহাসাগরীয় পৃষ্ঠের ভূসংস্থান” নামে পরিচিত। মহাদেশীয় ভূমিতে যদি বহু সুরঙ্গ বা খাল জালের ন্যায় বিস্তৃত থাকে, তবে ঐ খালগুলোর পানির উচ্চতা এবং ভূগোলকের খুব বেশি পার্থক্য থাকবে না। বাস্তবে, মহাদেশের অধীনে ভূগোলকীয় ধারণা প্রদান করা কষ্টকর হলেও ভূতত্ত্ববিদরা অনুমানের ভিত্তিতে মহাদেশীয় বিন্দুর উচ্চতা বের করেছেন, স্পিরিট লেভেলিংয়ের মাধ্যমে বাহ্যিক বর্ণনা প্রদান করা এখনো সম্ভব হয় নি।
সমকক্ষীয় পৃষ্ঠ হবার দরুন ভূগোলকের সবখানে অভিকর্ষ বল লম্বভাবে কাজ করে। এর মানে হল, যখন জাহাজে সাগর দিয়ে যাবার সময় ভূগোলকের উঁচুনিচু খেয়াল করবেন না; স্থানীয় উল্লম্ব রেখা (লম্বসূত্র) সবসময় একে স্পর্শ করা স্থানীয় স্পর্শকের উপরে লম্ব। একইভাবে, স্পিরিট লেভেলকে অবশ্যই ভূগোলকের সমান্তরাল হতে হবে।
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার ক্ষেত্রে স্পিরিট লেভেলিংয়ের মাধ্যমে উচ্চতার তারতম্য দেখা যায়, যদিও জাহাজ সর্বদা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থান করে (স্রোতের প্রভাব বিবেচনা না করে)। এটা হবার কারণ হল জিপিএস ভূ-উপগ্রহগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে আর এটি কেবল আপেক্ষিক মান সরবরাহ করতে পারে। কোনো কিছুর ভূগোলকীয় উচ্চতা বের করতে হলে খসড়া জিপিএস মানকে অবশ্যই সঠিক হতে হবে। বিপরীতভাবে, স্পিরিট লেভেলিংয়ের মাধ্যমে স্রোত পরিমাপ স্টেশন থেকে মাপা উচ্চতাকে ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে সচরাচর ভূগোলকীয় উচ্চতা বলে গণ্য করা হয়। আধুনিক জিপিএস গ্রাহকে ইজিএম-৯৬ এর মত ভূগোলক এবং ওয়ার্ল্ড জিওডেটিক সিস্টেমের উপবৃত্তকে কাজে লাগিয়ে কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। তখন ওয়ার্ল্ড জিওডেটিক সিস্টেমের উপবৃত্তকে ও ডব্লিউজিএস৮৪ এর ভূগোলককে কাজে লাগিয়ে উচ্চতার মান সঠিকভাবে বের করা সম্ভব হয়। যখন জাহাজে থাকাকালীন সময়ে উচ্চতার মান শূন্য হয় না, তখন সমুদ্রস্রোত, বায়ুচাপ (আবহাওয়ার প্রভাব) এবং স্থানীয় সমুদ্রপৃষ্ঠীয় ভূসংস্থান এর পিছনে কাজ করে থাকে।
সাধারণ উদাহরণ
পৃথিবীর অভিকর্ষীয় ক্ষেত্র নিখুঁত নয় আবার একরূপও নয়। চ্যাপ্টা উপবৃত্তকে সচরাচর পৃথিবীর আদর্শ আকার হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু, পৃথিবী যদি পুরোপুরিভাবে গোলাকার হত, তবে সবখানে অভিকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রভাব সমান হত না কেননা পৃথিবীর ঘনত্ব (এবং ভর) এই গ্রহের সবখানে সমান নয়। এটি হবার কারণ হল ম্যাগমার উপস্থিতি, শৃঙ্গের উপস্থিতি, গভীর সামুদ্রিক খাদের উপস্থিতি এবং অন্যান্য কারণ।
যদি পানিতে এই আদর্শ গোলকটি ডুবে থাকে, তবে পানির উচ্চতাও সবখানে সমান হবে না। এটা হবার কারণ হল, পৃথিবীতে স্থানভেদে অভিকর্ষীয় শক্তির প্রভাব উচ্চ কিংবা নিম্ন হব। সেজন্য, স্থানভেদে পানির উচ্চতার হ্রাসবৃদ্ধি দেখা যাবে।
গোলীয় সুরবিজ্ঞানের সাহায্যে উপস্থাপন
গোলীয় সুরবিজ্ঞান প্রায়শই ভূগোলকের আনুমানিক আকৃতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে ইজিএম৯৬ (আর্থ গ্রাভিটি মডেল ১৯৯৬) কে কাজে লাগিয়ে ভূগোলকের আকৃতি নির্ণয় করার কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।[৪] এটি ন্যাশনাল ইমেজারি অ্যান্ড ম্যাপিং এজেন্সি (বর্তমান ন্যাশনাল জিওস্পাশাল এজেন্সি বা এনজিএ) কর্তৃক নির্ধারিত। এই মডেলের অঘূর্ণায়মান অংশ বের করার সূত্রটি হল:[৫] V = G M r ( 1 + ∑ n = 2 n max ( a r ) n ∑ m = 0 n P ¯ n m ( sin ϕ ) [ C ¯ n m cos m λ + S ¯ n m sin m λ ] ) ,
ভূগোলকের উঁচুনিচু অবস্থাকে (উল্লম্ব রঙের সাহায্যে) ত্রিমাত্রিক চিত্রে দেখানো হয়েছে। এখানে গ্যাল এককের ব্যবহার করা হয়েছে।
এখানে ϕ এবং λ হল যত্রাক্রমে “ভূকেন্দ্রিক” (গোলাকার) অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ, P ¯ n m হল সহযোগী ল্যাগ্রাঞ্জীয় বহুপদী, যার মাত্রা n ও ক্রম m , এবং C ¯ n m ও S ¯ n m হল গাণিতিক সহগ, যেগুলো নির্ধারণ হয়েছে নির্ণয় করা গাণিতিক তথ্যের সাহায্যে। উপরিবর্ণিত সমীকরণে পৃথিবীর অভিকর্ষীয় প্রাবাল্য হিসেবে V ব্যবহৃত হয়েছে, ভূগোলককে ব্যবহার না করে। ঐ স্থান থেকে ϕ , λ , r , ছাড়াও r বের করা হয় যা “ভূকেন্দ্রিক ব্যাসার্ধ” নামে পরিচিত। এটি হল পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের মান। ভূগোলক হল বিশেষ সমকক্ষীয় পৃষ্ঠ[৫] এবং এটি এর আকার নির্ণয়ে সহায়তা করে থাকে। এর নতির সাথে অভিকর্ষীয় ত্বরণের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইজিএম৯৬ এর মাঝে বহু সহগ ও মাত্রা খুঁজে পাওয়া যায়, এবং এর ৩৬০ ক্রম (উদাহরণস্বরূপ n max = 360 ) বর্ণনা করে থাকে বৈশ্বিক ভূগোলক সম্পর্কে যা ৫৫ কিলোমিটার (বা ১১০ কিলোমিটার, এটি নির্ভর করে কারো এর ধারণা বিশ্লেষণের পার্থক্যের উপর)। গাণিতিক সহগ, C ¯ n m এবং S ¯ n m এর মান নির্ণয় সম্ভব V এর সমীকরণ দেখে। এই দুইটি গাণিতিক সহগের মান m = ০ ব্যতীত সব মানের জন্য বের করা সম্ভব। m=০ হলে কেবলমাত্র একটি মান পাওয়া যায়। কারণ, sin ( 0 λ ) = 0 । এখানে (2n+1), এই গাণিতিক সহগটি কাজ করে। এতে n এর মানের কোন প্রভাব পড়ে না। এই বিষয় এবং সূত্রকে কাজে লাগিয়ে, ∑ I = 1 L I = L ( L + 1 ) / 2 , এরপর সর্বমোট সহগ সংখ্যা হল ∑ n = 2 n max ( 2 n + 1 ) = n max ( n max + 1 ) + n max − 3 = 130317 এখানে ইজিএম৯৬ এর মান n max = 360
বহু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ধারাকে অপ্রয়োজনীয় জটিল জিনিস বলে গণ্য করা হয় এবং অল্প (সম্ভবত কয়েক ডজন বার) ধাপ করার পর এই প্রক্রিয়ার ইতি টানা হয়।
উচ্চ মানের মডেলকে বর্তমানে উন্নয়ন করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইজিএম৯৬ প্রণেতারা উন্নত মডেল নিয়ে কাজ করছেন যার সাথে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া অভিকর্ষীয় তথ্যের (যেমন গ্রাভিটি রিকভারি অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্ট) গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এটি ২১৬০ ক্রম ও মাত্রা উপর পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম (এখানে এক ডিগ্রির এক ষষ্ঠমাংশ এবং ৪০ লক্ষাধিক সহগ ব্যবহৃত হবে)।[৬]
এনজিএ ইজিএম২০০৮ নামের নতুন মডেল এনেছে, যেখানে গোলকীয় সুরবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ২১৫৯ মাত্রা ও ক্রমের ব্যবহার করা হয় এবং অতিরিক্ত মাত্রা ও ক্রমের মান যথাক্রমে ২১৯০ ও ২১৫৯ এ পৌঁছায়।[৭] এই ধরনের মডেলের ডাটাকে কাজে লাগিয়ে সফটওয়ারও বের করা হয়েছে।[৭]
আদর্শ ভূগোলক
পিটার ভানিসেকের ও তার সহকর্মীরা স্টোকসীয় পদ্ধতির সাগায্যে আদর্শ ভূগোলকীয় সমাধান বের করতে সক্ষম হয়েছেন।[৮] তাদের এই সমাধান ভূগোলকীয় সমাধানের ক্ষেত্রে প্রায় সম্পূর্ণ নিখুঁত এবং পূর্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধানের মাত্রার মানের ক্ষেত্রেও উন্নতি সাধিত হয়েছে।[৯][১০][১১][১২]
ব্যতিক্রম
অভিকর্ষীয় ও ভূগোলকীয় ব্যতিক্রম সংঘটিত হতে পারে প্রসঙ্গ বস্তু থেকে ভূত্বক এবং অশ্মমণ্ডলীয় পুরুত্বের পরিবর্তনের দরুন। প্রতিটি বিন্যাসই স্থানীয় সমস্থিতিক পূর্ণতার অধীন।
ভূগোলকীয় পৃষ্ঠের উচ্চতা পৃথিবী পৃষ্ঠের ঘনত্বের তারতম্যের উপর নির্ভরশীল। ভূগোলকীয় পরিমাপ আমাদের এই গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। পুরু ভূত্বকের ভূগোলকীয় নিদর্শন ধনাত্মক হলে এর পুরুত্ব সমগ্র অশ্মমণ্ডলে প্রভাব বিস্তার করবে (উদাহরণস্বরূপ, অরোজেনিক বেল্টে মহাদেশীয় সংঘর্ষ)।
সময়-পরিবর্তনীয়তা
সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট মিশন যেমন, গ্রাভিটি ফিল্ড অ্যান্ড স্টেডি-স্টেট ওশান সার্কুলেশন এক্সপ্লোরার এবং গ্রাভিটি রিকভারি অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্ট ভূগোলকের সময় পরিবর্তনীয় বিষয় নিয়ে কাজ করেছে। ২০১০ সালের জুন মাসে গ্রাভিটি ফিল্ড অ্যান্ড স্টেডি-স্টেট ওশান সার্কুলেশন এক্সপ্লোরারের স্যাটেলাইট তথ্যকে ভিত্তি করে পাওয়া তথ্য ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ভূপর্যবেক্ষণ ব্যবহারকারী সেবা সরঞ্জামের মাধ্যমে অনলাইনে আসে।[১৩][১৪]ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ২০০৯ সালের মার্চ মাসে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করেছিলন। এর উদ্দেশ্য ছিল স্থানিক বিশ্লেষণের সাথে নজিরবিহীন নিখুঁত মানের সাহায্যে অভিকর্ষীয় ত্বরণ চিত্রায়ন। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ মিউনিখ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ আন্তর্জাতিক গ্রাভিটি ফিল্ড অ্যান্ড স্টেডি-স্টেট ওশান সার্কুলেশন এক্সপ্লোরার ব্যবহারকারী সম্মেলনে নতুন ভূগোলকীয় মডেল প্রকাশ করা হয়।[১৫] সময়-পরিবর্তনীয় ভূগোলকে গ্রাভিটি ফিল্ড অ্যান্ড স্টেডি-স্টেট ওশান সার্কুলেশন এক্সপ্লোরার থেলে পাওয়া পানিচক্রের তথ্য,[১৬] হিমবাহের ভারসাম্য সংক্রান্ত তথ্য,[১৭] এবং হিমবাহ পরবর্তী ভূমির উত্থান সংক্রান্ত তথ্য[১৮] অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হিমবাহ পরবর্তী ভূমির উত্থান সংক্রান্ত তথ্যে সময়-পরিবর্তনীয় গ্রাভিটি ফিল্ড অ্যান্ড স্টেডি-স্টেট ওশান সার্কুলেশন এক্সপ্লোরার থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে ম্যান্টলের সান্দ্রতা বের করা হয়েছে।[১৯]
মঙ্গলের ভূগোলক মেরিনার ৯ এবং ভাইকিংয়ের মত স্যাটেলাইট প্রোগ্রামের সাহায্যে বের করা সম্ভব হয়েছে। উপবৃত্ত থেকে নির্গত প্রধান বস্তুকে থারসিস আগ্নেয় মালভূমি (থারসিস হল একটি মহাদেশ আকৃতির ভূখণ্ড যা একটি আগ্নেয় মালভূমি) ও এর বিপরীত পৃষ্ঠ থেকে নির্গত আদর্শ প্রবাহী বস্তু বলে ধারণা করা হচ্ছে।[২১]
absolute dating– সুনিশ্চিত বা সন্দেহাতিত ভাবে বয়স ঠিক করা বা নিরুপন করা;জিও-ঐতিহাসিক ভূতত্বের ক্ষেত্রে ইহা নিখূঁত বয়স নর্ধারনের পদ্ধতি যেমন ইউরেনিয়াম-সীসা ডেটিং, যাহাতে আইসোটোপ সিষ্টেম সহ উপাদানগুলির শিলাগুলিতে আটকে থাকা উপাদানগুলির তেজস্ক্রিয় ক্ষয়কে ব্যবহার করা হয় (এবং তাহা) দ্বারা অর্জিত পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলাগুলির বয়স নিরঙ্কুশ বলিয়া মানিয়া লওয়া হয়; প্রত্নতত্বে এটি একটি সুনিশ্চিত কালানুক্রমিক বয়স নির্ধারনের প্রক্রিয়া যাহা সন্দেহাতিতভাবে সংখ্যাগত বয়স বা বয়সের ব্যাপ্তি নির্ধারন করে; কোন জীবাস্ম কতটা পুরোনো তা নির্ধারণ করার পদ্ধতি বোঝাতে ইহা বহুল ব্যবহৃত হয়।
acceleration of gravity-[n]–মধ্যাকর্ষণ ত্বরন ;মধ্যাকর্ষনের বেগবর্ধন বা দ্রুতকরন; পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন প্রভাবের অধীনে অভাধে পতিত একটি বস্তুর ত্বরন যাহা সময়ের প্রতি ইউনিট গতিবেগ-প্রায় ঠিক,বূদ্ধির হার হিসাবে প্রকাশিত হয়,আদর্শ মান নির্ধারিত করা হয়েছে প্রায় ৯.৮১ মিঃ প্রতি সেকেন্ড,প্রতি সেকেন্ড,অভিকর্ষ হল ত্বরনগতির সীমা যেমন বিশ্বে আলো হল অভিন্ন গতির সীমা *; পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন ক্ষেত্রে পতনশীল বস্তুর ত্বরন বস্তুর থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দুরত্বের বর্গক্ষেত্রের বিপরীত ভাবে সমানুপাতিক এবং অক্ষাংশের সাথে কিছুটা ভিন্ন হয়**; পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি একটি শুন্য স্থানে অবাধে পতিত একটি বস্তুর ত্বরন***; মধ্যাকর্ষ বলের প্রভাবে গতি বৃদ্ধি ও বলা হয়।
active layer–[n]–সক্রিয় বা কর্মক্ষম বা চালু স্তর বা পরত /থর / থাক / তবক / পলি /প্রলেপ /পরদা / চাপ /পাল্লা / ডিম্ব প্রসব কারিণী।
alluvial fan–[n]–পাহাড়,পর্বত থেকে নদী গুলি যখন অপেক্ষাক্রিত সমভূমিতে পৌঁছায় তখন এই নদী বাহিত নুড়ি, পাথর, বালি, ও তলানি পঙ্ক ইত্যাদি দিয়ে পাখা আকৃতির যে ভূমি গঠিত হয় তাহাকে অ্যালুভিয়াল ফ্যান বলে;এই রকম পাখা আকৃতির ভূমি মৃত্যু উপত্যকায় অর্থাৎ ডেথ ভ্যালিতে(যাহা উত্তর আমেরিকার মরুভূমি অঞ্চল) বিস্তার লাভ করছে এবং মঙ্গল গ্রহ সহ অন্য গ্রহগুলিতেও আছে।
alluvial soil–[n] পলল ভূমি বা পলল মাটি; পলিসৃষ্ট জমি; [description]- আলগা, অসংহত তলানি বা কাদামাটি,অপেক্ষাকৃত বড় দানাযুক্ত বালি, নুড়ি,কাকড় যাহা আকারে ক্ষয়ে, কিছু আকারে পুনর্গঠিত হয়ে একটি অ-সামুদ্রিক বিন্যাসে এক প্রকার সুক্ষ্ম দানাযুক্ত উর্বর মাটি তৈরি হয় যাহা বিশেষতঃ বন্যায় সমভূমিতে বা নদী অববাহিকায় প্রবাহিত জলের দ্বারা জমা হয়; বন্যার দ্বারা বিশেষত নদী উপত্যকায় জমা পলি যাহা পৃথিবীর উপরের স্তর যেথায় গাছপালা জন্মায়।
alternation–[n]–পালাক্রমে সংঘটন;পরিক্রমন; পর্যায় অনুব্রিত্তি; ক্রম; বিনিময়; বিকল্প; অদল বদল; একটি প্রদত্ত বিন্যাসে বা ক্রমে এগিয়ে যাওয়া;এক থেকে অন্যটিতে পালাক্রমে সংঘঠিত হওয়া বা ঘোরা; এক বস্তু, অবস্থা, ক্রিয়া, স্থিতি থেকে অন্যটিতে এবং বারবার,বারবার পুনরাবৃত ঘুর্ণন থেকে ক্রমাগত পরিবর্তন; একটি পরিস্থিতি যখানে এক জিনিষ বারবার ঘটে বা একের পর এক উপস্থিত থাকে।
angular distance–[n]–কৌণিক দূরত্ব; একটি পর্যবেক্ষক দ্বারা উপলব্ধ হিসাবে দুটি বস্তুর মধ্যে কৌনিক বিচ্ছেদ; synonym–angle বা কোন ইত্যাদি।
anthropocentric approach:– নৃতাত্বিক পদ্ধতি; মানব কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি; মানুষের মূল্যবোধ ও অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতে জগতের সব কিছুকে বিচার করে দেখার প্রচেষ্টা সম্পর্কিত পদ্ধতি; মানুষকে বিশ্বের চরম পরিনতি হিসাবে গন্য করার ধারনা প্রসূত দৃষ্টিভঙ্গি।
anthropogeography -[n]–নৃতাত্ত্বিক ভূগোল বা মানব ভূগোল; মানুষের ভৌগোলিক বিতরন অধ্যয়ন; ইহা নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা যাহা মানুষের ভৌগোলিক বিতরন এবং মানুষের ও তাদের পরিবেশের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কাজ করে; সমাজের ভৌগোলিক বিভাজন, দেশান্তরে গমন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং [যেটির জন্য এটি সবথেকে ভালভাবে স্মরন করা হয়] মানুষের এর উপর পরিবেশের প্রভাবের ইহা একটি পদ্ধতিগত বিশ্লেশনর একটি ধরন যাহা অনুসরন বা উপযোগী করে নওয়া হয়েছে উনবিংশ শতাব্দির শেষের দিক থেকে বিংশ শতকের গোড়ার দিক পর্য্যন্ত।
antipodes[n]–ূপৃষ্ঠের যে স্থান অন্য একটি স্থানের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত;ভু-পৃষ্ঠের (পরস্পর) বিপরীত দিকে অবস্থিত (দুটি) স্থান;বিপরিত পৃথিবী পৃষ্ঠের বাসিন্দা।
arc –[n]– বৃত্ত চাপ; বৃত্তের পরিধি বা কোন বক্র রেখার অংশ ;বিদ্যুতের বৃত্তাকার আলোকচ্ছটা ।
area–[n]– ক্ষেত্রের পরিমান বা আয়তন; অঞ্চল; কোন কিছুর জন্য বা দ্বারা নির্দিষ্ট বা চিন্হিত এলাকা; কোন বিষয় ধারনা; জিজ্ঞাসা ইত্যদির পরিধি ।
areal differentiation– স্যাটেলাইট অথবা উড়োজাহাজ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও মনুষ্য জাতির দৃশ্যমান পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার উপর ভিত্তি করে বিভক্ত করা। এটি আকাশ থেকে দেখে কোন ভৌগোলিক অঞ্চল পৃথক করার পদ্ধতি
authigenic [adj]– [পাহাড় /পাথর/ শিলা যে ভাবে গঠিত হয়] ,সেই উপাদান যেথায় পাওয়া যায়।
axis–[n]–[geo]–মরু রেখা;অক্ষ রেখা; যে কাল্পনিক রেখাকে কেন্দ্র করে কোন বস্তু আবর্তিত হয়;[bio]-মেরুদন্ড ;[bot]-কান্ড ;[math]–স্থানাঙ্ক পরিমাপের জন্য নির্দেশক সরল রেখা; [pol]–দ্বিতীয় মহযুদ্ধের প্রাক্কালে জার্মানি ও ইতালির মধ্যে গঠিত রাজনৈতিক আতাত বা চক্র যাতে পরে জাপানও যুক্ত হয় ।
basin [n] –নদীর অববাহিকা; গোলাকার বা ডিম্ব আকৃতির উপত্যকা; নৌকা বেঁধে রাখার উপযোগী গভীর জলাশয়; হাত মুখ ধোয়ার জন্য কলযুক্ত এবং সচরাচর দেওয়ালে লাগানো গামলার মতো পাত্র।
bay[n]–উপসাগর; সাগরের চেয়ে ক্ষুদ্র কিন্তূ নদী বা মোহনা থেকে বড় বা খুদে সাগর, [উদাহরণ: বঙ্গোপসাগর,(Bay of Bengal)]; চির হরিৎ বৃক্ষ বিশেষ; কোনো বাড়ির কোনো অংশের মূল প্রকোষ্ঠ; বিমান বা মহাকাশ যান ইত্যাদিতে বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত প্রকোষ্ঠ বা সংরক্ষিত অংশ
bed [n]– নদীর গতিপথ বা খাত; নদী,সমুদ্র প্রভৃতির তলদেশ বা গর্ভ;স্তর; যেখানে কোন বিশেষ ফুল বা উদ্ভিদ বহু সংখ্যায় উৎপন্ন হয়; ঘুমের স্থান; শয্যা; বিছানা/গদি/খাট; হোটেলে এক ব্যক্তির থাকার ব্যবস্থা বা হাসপাতালে একজন রোগীর শয্যা।
behavioural geography–[Adj]–আচারনগত ভূগোল যাহা আচার ব্যবহার (মনস্তাত্বিক)বিস্তার সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করে;যে ভূগোল মানব জাতীর প্রাথমিক ও মৌলিক কার্য্য কারন বিধি সম্পর্কে বিচার বিশ্লেসন করে বা এটি মানব ভূগোলের এমন একটি পন্থা বা উপ শাখা যাহা একটি সামগ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে স্থানিক যুক্তি,সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং আচারনের অন্তর্নিহিত জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়ে মানুষের আচরন পরীক্ষা করে; সমাজতত্ব, মনোবিজ্ঞান এবং নৃতত্ব সম্পর্কিত ভূগোল ।
bell[n]–ঘণ্টা আকৃতির কোন বস্তু; প্রতি আধ ঘন্টা সময় বোঝাবার ঘন্টা ধ্বনি; শুষির বাদ্য যন্ত্রের ঘন্টার মত অংশ; ঘন্টা; ঘন্টার আওয়াজ।
belt–[n]–নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোন অঞ্চল/জেলা/প্রদেশ প্রভৃতি; নানা ধরনের চাকা ঘুরিয়ে যন্ত্রাদি চালনা ও মাল ও জনপরিবহনে নিয়োজিত, পোক্ত অথচ নমনীয় উপাদানে তৈরি ক্রমাগত চলমান ব্যান্ড বা পট্টি [কনভেয়র বেল্ট]; বেল্টের মতো যে বস্তু কোন কিছুকে বেষ্টন করে থাকে; কোমর বন্ধ; চামড়া বা কাপড়ের বেল্ট আকৃতির পট্টি বা ফিতে।
bio-diversity[n]– জীববৈচিত্র্য;পৃথিবীর পরিবেশ বা পরি মণ্ডলের মধ্যে সমগ্র বিশ্বের বা বিশেষ কোন অঞ্চলের বিভিন্ন্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে বৈচিত্র্য বা বিভিন্ন্যতা।
biostratigraphic unit–[n]–বিভিন্ন জীবাশ্ম দিয়ে গঠিত ভূ-স্তরীয় সমষ্টি বা দলপুঞ্জ এর একক;শিলার আপেক্ষিক ভূতাত্বিক বয়স নির্ধারনের পদ্ধতি হিসাবে পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে জীবাশ্ম সনাক্তকরনের একক;জীবাশ্মের একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর দ্বারা চিন্হিত স্তরগুলির একক;ভূবিদ্যায় পৃথক ও নর্দিষ্ট অন্তরবর্তী সময়ে শিলা,পাথর বা পাহাড় গঠনের পর্যায় ক্রমের হিসাবের মান বা একক ;প্রস্তর বিজ্ঞান সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তে উদ্ভিদ ও প্রানী জগতের একটি বিশেষ জীবাশ্ম দ্বারা চিন্হিত ভূতাত্বিক স্তরের একটি গ্রুপ।
biozone[n]–জৈব অঞ্চল; এক ধরনের শিলা বা মাটির স্তর যেখানে জীবের একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের জীবাস্ম পাওয়া যায় যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে এসে ছিল;প্রদত্ত ট্যাক্সন এর মোট বিশ্ব ব্যাপী টাইম স্ট্যাটিগ্রাফিক পরিসীমা এবং সেই সময় কালের মধ্যে যে শিলার উপস্থিতি ছিল তার সমকালিন সময়ের শিলার অবস্থান।
canyon-[n]–গভীর খাদ;গিরিসংকট বা গভীর গিরিসংকট; গভীর গিরিখাত বিশেষ যার ভেতর দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয় ।
cannon-[n]-কামান; বড়ো ভারি কামান; তোপ; আধুনিক সামরিক বিমানে ব্যবহৃত গোলা নিক্ষেপক ভারী সয়ংক্রিয় কামান; প্রাচীন কালে ব্যবহৃত ধাতুর তৈরী নিরেট গোলা নিক্ষেপক;আধুনিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে গান ও শেল অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়; ব্লিয়ার্ড খেলায় পয়েন্ট পাবার জন্য লাঠি দিয়ে মারা বল দিয়ে অন্য বলকে মারা । [v i]-কামান দাগা বা ক্যানন করা।
Cenozoic Era–[n]–সনোজিক যুগ; সিনোজিক যুগ এর অর্থ হল “নতুন জীবন” যার অর্থ আবার ফ্যানেরোজোক ইওনের বা কালপর্বের তিনটি ভূতাত্বিক যুগের বর্তমান এবং সাম্প্রতিক যুগ; পৃথিবীর ইতিহাসের বৃহত্তম কালপর্ব(ফ্যানেরোজিক ইওন) এর তৃতীয়টি যাহা প্রায় ৬৬০ লক্ষ বৎসর পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং বর্তমান অবধি প্রসারিত এবং এই সময়ের মধ্যে মহাদেশগুলি তাহাদের আধুনিক কনফিগারেশন বা আকৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থান গ্রহন করেছিল এবং এই সময় পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রানীজগৎ বর্তমানের দিকে বিকশিত হয়েছিল; ৬৫০ লক্ষ বৎসর আগে শুরু হওয়া এক যুগ অর্থাৎ বর্তমান যুগ সম্পর্কিত, যখন স্তন্যপায়ী বৈশিস্ট যুক্ত প্রানীর আরোহন হয়েছিল।
chronometer-[n]–মূলত নাবিকদের ব্যবহৃত সুক্ষ্মভাবে সময় নিরূপনকারী ষন্ত্র বিশেষ ; সময় নিরূপক ঘড়ি বিশেষ, সমুদ্রে দ্রঘিমাংশ নিরূপনের কাজে যা ব্যবহৃত হয়;অত্যন্ত নির্ভূলভাবে কাল নিরূপক ষন্ত্র/ সময় মাপার যন্ত্র; সর্ব্বোচ্চ ভ্রমশুন্যতার জন্য এবং সমুদ্রে দ্রঘিমাংশ নির্ধারনে ব্যবহারের জন্য নিশ্চিতকরন এবং সামন্জস্য করার জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে যেখানে সময়টির খুব সঠিক পরিমাপের প্রয়োজন হয় তার জন্য একটি বিষেশ পদ্ধতি সহ ডিজাইন করা টাইমপিস বা টাইমিং ডিভাইস বা যন্ত্র ।
chronostratigraphic unit–[n]–ভূতাত্বিক সময়ের একটি পৃথক এবং নির্দিষ্ট বিরতিতে গঠিত শিলার একটি ক্রম; শিলাগুলির একটি দেহ যা ভূতাত্বিক সময়ের নির্দিষ্ট ব্যবধানের সময়কালে গঠিত শিলাগুলিকে অন্তর্ভূক্ত করে এবং সেই সময়ে কেবল সেই পাথরগুলি গঠিত হয়; এগুলি হ’ল স্তরযুক্ত বা অপরিবর্তিত শিলগুলির দেহ যা ভূতাত্তিক সময়ের নির্দিষ্ট সময়কালে গঠিত হয়েছিল,তাদের বয়স বা উৎসের সময়ের ভিত্তিতে পাথরগুলির এককগুলিতে শিলার সংগঠন।
climate –[n]–জলবায়ু অথবা কোন দেশের্ বা কোন স্থানের জলবায়ু আবার জলবায়ু হচ্ছে দীর্ঘ কয়েক বছরের আবহওয়ার গড়;স্থানীয় আবহাওয়া বা বাতাবরন;[pol]-চলতি অবস্থা অর্থাৎ লোকজনের ভাবনা মতামত প্রভৃতি।
ভূগোল (ইংরেজি: Geography, যেটি এসেছে গ্রীক শব্দ “γεωγραφία”, বা, geographia, থেকে; যার শাব্দিক অর্থ: “পৃথিবী সম্পর্কিত বর্ণনা বা আলোচনা“[১]) হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে পৃথিবীর ভূমি, এর গঠন বিন্যাস, এর অধিবাসী সম্পর্কিত সমস্ত প্রপঞ্চ (phenomenon / ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচিত হয়।[২] এই শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে গ্রিক জ্ঞানবেত্তা এরাটোসথেনিস (২৭৬–১৯৪ খ্রিস্টপূর্ব) প্রথম ব্যবহার করেন।[৩] ভূগোলে মানুষের বসবাসের জগৎ ও তার সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ ভৌত ভূগোলে জলবায়ু, ভূমি ও জল নিয়ে গবেষণা করা হয়; সাংস্কৃতিক ভূগোলে কৃত্রিম, মনুষ্যনির্মিত ধারণা যেমন দেশ, বসতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন, দালান, ও ভৌগোলিক পরিবেশের অন্যান্য পরিবর্তিত রূপ আলোচনা করা হয়। ভূগোলবিদেরা তাদের গবেষণায় অর্থনীতি, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব এবং গণিতের সহায়তা নেন। সাধারণতঃ প্রায়শই এটিকে প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবীয় ভূগোল নামক দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়।[৪][৫] ভূগোলের চারটি ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রকৃতি ও মানবজাতি সম্পর্কিত স্থানিক বিশ্লেষণ, স্থান ও অঞ্চল সম্পর্কিত এলাকা পঠন, মানব-ভুমি সম্পর্ক পঠন এবং ভূবিজ্ঞান।[৬] ভূগোলকে “পৃথিবী পঠন-বিভাগ” ও “মানুষ এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যকার সেতু-বন্ধন” বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত এরাটোসথেনিস (২৭৬-১৯৪ খ্রীস্টপূর্ব) পৃথিবীর বর্ণনা অর্থে সর্বপ্রথম এ Geography শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। Geography→Geo (পৃথিবী)+ graphos (বর্ণনা বা বিবরণ) অর্থাৎ Geography শব্দের অর্থ হলো পৃথিবীর বর্ণনা । বাংলা ভাষায় প্রাচীন হিন্দু পুরাণে ব্যবহৃত ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে; যদিও ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’ শব্দের মর্মার্থ প্রকাশ করে না। এ ছাড়া বর্তমান জিওগ্রাফির সংজ্ঞা অনুসারে ‘ভূগোল শব্দটি দিয়ে জিওগ্রাফি শব্দটিকে ধারণ করা যায় না। বাংলা একাডেমির ইংরেজি-বাংলা অভিধানে (তৃতীয় সংস্করণ, ২০১৫) জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ ‘ভূগোলবিদ্যা’ বা ‘ভূবিজ্ঞান’ করা হয়েছে, ‘ভূগোল’ নয়। এ কারণে বাংলাভাষা সচেতন অনেক ভূগোলবিদ জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ভূবিদ্যা’ শব্দটির ব্যবহারে অধিক আগ্রহী।
মানচিত্রাঙ্কনবিদ এবং বিভিন্ন স্থানের নাম ও সংখ্যা বিষয়ক অধ্যয়নকারীকে ভূগোলবিদদের সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক নয়; যদিও অনেক ভূগোলবিদ ভূসংস্থান ও মানচিত্রাঙ্কন বিষয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন, তবুও প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের মূল বিচরণক্ষেত্র নয়।
শাখা সমূহ
ভূগোলের মূল বিষয়বস্তুকে বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের সুবিধার্থে:
প্রাকৃতিক ভূগোল হলো ভূগোলের সেই অংশ যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ ও তাদের গাঠনিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি মূলত: অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, ভূপৃষ্ঠ, এবং বৈশ্বয়িক উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগত (জীবমণ্ডল) নিয়ে গঠিত এবং তাদের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন শাখা গুলো নিম্বরুপ:
জ্যোতির্বিদ্যা
ভূতত্ত্ববিদ্যা
জলবায়ু বিজ্ঞান
সমুদ্রবিদ্যা
মৃত্তিকা ভূগোল
উদ্ভিদবিদ্যা
প্রাণীভূগোল
পদার্থবিজ্ঞান
প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা
ভূত্বকের উপরিভাগের ভৌত পরিবেশ এবং এতে কার্যরত বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ বিজ্ঞানের যে শাখায় সমীক্ষা করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। অধিকাংশ ভূগোলবিদ ভূগোলকে প্রাকৃতিক ও মানবিক নামক দুই শাখায় বিভক্ত করতে আগ্রহী। আবার অনেকে ভূপৃষ্ঠে জীবমণ্ডলের বাস্তুসংস্থানকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয় বিধায় ভূগোলকে প্রাকৃতিক, মানবিক ও জীবভূগোল নামক তিন শাখায় বিভক্ত করে থাকেন। বিগত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, বিষয়বস্তু এবং পঠনপাঠন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুরুতে প্রাকৃতিক ভূগোল বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের (ভূমিবন্ধুরতা, পানি ও বায়ু) অধ্যয়নকে বুঝাতো। যেমন- আর্থার হোমসের (Arther Holmes, 1960) মতে, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের বন্ধুরতা, সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের বিষয়াদি যা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত, তার সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল। কার্ল রিটারের (Carl Ritter, 1779-1859) মতে, ‘প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিবেচনা করে।’ হার্টশোর্ন বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ।’
এ দিক থেকে বিবেচনা করলে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবল কতিপয় ভূবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের একীভবনই নয়, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকাণ্ডের আন্তঃক্রিয়ার ধরনও পর্যালোচনা করে। ভূগোলের একটি প্রতিষ্ঠিত শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পারিসরিক (spatial) ধরন এবং ভূপৃষ্ঠের পরিবেশের উপাদানগুলোর পারিসরিক সম্পর্ক সমীক্ষা করে। এ ছাড়াও এটি আঞ্চলিক ধরনের সাথে পারিসরিক সম্পর্কের কারণ, একই সাথে পরিবেশের উপাদানগুলোর পরিবর্তনের কারণও ব্যাখ্যা করে থাকে। এ থেকে বলা যায়, ভূমি, বায়ু, পানি এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের সহায়ক যে জীবমণ্ডল, তার বিস্তারিত সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।
প্রাকৃতিক ভূগোলের বিকাশ
প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রটি ভূগোল জ্ঞানের পুরো শাখাটির মতোই প্রাচীন। চিরায়ত গ্রিক যুগে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে ভূগোলের উৎপত্তি এবং উনবিংশ শতকের শেষভাগে নৃভূগোল (Anthropogeography) বা মানবিক ভূগোলের উৎপত্তির পূর্ব পযর্ন্ত ভূগোল ছিলো মূলত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান : অবস্থানের সমীক্ষা ও জ্ঞাত পৃথিবীর সকল স্থানের ধারাবাহিক বর্ণনা।
ভারত
প্রাচীন ভারতে ভূগোল তথা ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় বেদ ও প্রাচীন পুরাণে। বেদ-এর লিখিত-রচনা কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের দ্বিতীয় ভাগ। অথর্ববেদ-এ প্রাচীন পুরাণ-এর উৎস সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। বিদ্বজ্জনদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ – ১০০০ অব্দে অথর্ববেদ এর স্তোত্র গুলি রচিত হয়েছিল। প্রাচীন পুরাণের রচয়িতাগণ পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশীয় দ্বীপে ভাগ করেছিলেন – জম্বু দ্বীপ, ক্রৌঞ্চ দ্বীপ, কুশ দ্বীপ, প্লক্ষ দ্বীপ, পুষ্কর দ্বীপ, শক দ্বীপ ও শাল্মলী দ্বীপ ও সেই সব দ্বীপের জলবায়ু আর ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দিয়েছিলেন। বরাহমিহির পৃথিবীতে জল-এর সৃষ্টি, মেঘ ও বৃষ্টিপাত, মহাজাগতিক গ্রহ সম্পর্কিত বস্তু সমূহের অবস্থান আর সঞ্চারণ পথ সম্পর্কে লিখেছিলেন। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট সেই সময়ে পৃথিবীর পরিধি ২৪৮৩৫ মাইল গণনা করেছিলেন যা প্রকৃত পরিধি থেকে ০.২ % কম ছিল।
প্রাচীন চীনে ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে। ভৌগোলিক মানচিত্র গঠিত হত তৎকালীন সাম্রাজ্য সমূহের অবস্থান ও বিস্তৃতি, নদী অববাহিকা, নদীপথ ও বাণিজ্য পথের অবস্থান ইত্যাদি সহ। শুই জিং নামে তৃতীয় শতকের এক অজ্ঞাতনামা লেখকের একটি বই পাওয়া গেছে যেখানে চীনের ১৩৭ টি নদীর তৎকালীন বিবরণ পাওয়া যায়।
জিয়া ড্যানের (৭৩০ ৮০৫ খ্রিষ্টাব্দ) মতো চীনা ভৌগোলিকের বিভিন্ন বৈদেশিক অঞ্চলের যথাযথ বর্ণনায় সমুদ্রপথে পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথের বিবরণ ও মধ্যযুগীয় ইরানীদের দ্বারা সৃষ্ট সমুদ্রমধ্যে আলংকারিক স্তম্ভের কথা আছে যেগুলো আসলে জাহাজদের পথ দেখানোর বাতিঘর ছিল।
নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সোঙ সাম্রাজ্য এবং ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত মিঙ সাম্রাজ্যের আমলে নিয়মানুগ ভৌগোলিক চর্চা সম্পর্কে জানা যায়। সোঙ সাম্রাজ্যের প্রখ্যাত কবি, পণ্ডিত এবং সরকারি আধিকারিক ফান চেংদা (১১২৬ – ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের দক্ষিণ প্রদেশগুলির বিভিন্ন অঞ্চলের ভূসংস্থান, কৃষি ও আর্থ বাণিজ্যিক পণ্যের উপর ভূ-বিদ্যার সনদ লিখেছিলেন। বহুবিদ্যাজ্ঞ চীনা বৈজ্ঞানিক শেন কুও (১০৩১ – ১০৯৫ খ্রিষ্টাব্দ) দেশের অভ্যন্তরে পাওয়া সামুদ্রিক জীবাশ্ম এবং বাঁশ গাছের এলাকা থেকে বহুদূরে পাওয়া বাঁশ গাছের জীবাশ্ম থেকে ভূমি-র গঠনের উপর আনুমানিক ধারণা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখে গেছেন। এই সোঙ সাম্রাজ্যের সময়কালে কোরিয়া এবং মধ্যযুগীয় কম্বোডিয়া-ও উপর ভৌগোলিক বিবরণ সমন্বিত বই পাওয়া যায়।
মিঙ সাম্রাজ্যের ভূগোলবিদ, জু জিয়াকে (১৫৮৭ – ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের বহু প্রদেশে ভ্রমণ করেছিলেন (অনেকসময় পদব্রজে)। তিনি একটি বৃহৎ ভৌগোলিক এবং ভূসংস্থানিক সনদ লিখেছিলেন যেখানে ছোটো ছোটো গিরিখাত, অভ্র ও স্ফটিক মিশ্রিত শ্লেটপাথরের মতো খনি গর্ভের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য সংবলিত তার ভ্রমণপথের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। চৈনিক লেখাগুলিতে মধ্য প্রাচ্য, ভারতবর্ষ এবং মধ্য এশিয়া-র বিভিন্ন সভ্যতার বর্ণনা আছে যেহেতু খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে পর্যটক ঝ্যাং কিয়ানের সত্যনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকে বৈদেশিক অঞ্চলের ভূসংস্থান ও ভৌগোলিক বিশেষত্ব সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।
মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপ
ঈজিপ্ট ও ব্যাবিলনেও প্রাচীন আলোচনা ছিল ভূবিদ্যা সম্পর্কে। ইজিপ্ট-এ নীলনদের অববাহিকা, ভূমধ্যসাগর ও পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের মানচিত্র এবং ব্যাবিলনে পৃথিবীর মানচিত্রের অন্যতম প্রাচীন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।
গ্রিক-রোমান যুগে ভূবিদ্যা-র আলোচনা অনেক বিস্তার লাভ করে। অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য, নগর-পরিকল্পনা চিত্র, ভূমির জরীপ ও প্রকারভেদ, নদী-র দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাপ ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত অনুশীলন ও ব্যবহারবিধি-র প্রচলন ছিল। আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমে পিউটিন্জার টেবিল হিসাবে পরিচিত এক গোটানো মানচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যের সড়কপথগুলি দেখানো আছে এবং রোমান সাম্রাজ্যের বাইরে ব্রিটেন থেকে মধ্য-প্রাচ্য হয়ে আফ্রিকা এবং তারপর ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন দেশের তখনকার জ্ঞাত অংশ সমূহ নিবদ্ধ আছে। একশোটির ও বেশি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছিল এই মানচিত্রটি-তে।
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেস (Eratosthenese, 276-194 BC) প্রাকৃতিক ভূগোলের অগ্রপথিক। তিনি এমন এক সময় এ বিষয়ে অবদান রাখেন যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবীর আকার ও আকৃতি সম্পর্কেই অনিশ্চিত ছিলেন। মিশরের বিভিন্ন স্থানের দূরত্বের সাথে সূর্যের আলোক রশ্মির পতনকোণের পার্থক্য হিসাব করে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের মাধ্যমে ইরাটোসথেনেস প্রাকৃতিক ভূগোলবিদ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চিরস্তায়ী আসন করে নিয়েছেন। এটিই ছিলো বর্তমানে পরিচিত ভূআকৃতিবিদ্যার (Geodesy) প্রথম গবেষণা। ইরাটোসথেনেসের বহু মূল্যবান ভূগোলবিষয়ক কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি মানচিত্রের গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করেছিলেন এবং নিজেকে একজন দক্ষ কার্টোগ্রাফার (cartographer) হিসেবে গড়ে তুলেন। যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবী গোলাকার না চেপ্টা এ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত, তখন ইরাটোসথেনেস গোলাকার পৃথিবীর কোন কোন স্থান সূর্যালোক দ্বারা অপর মণ্ডল অপেক্ষা অধিক উষ্ণ- এ বিষয়টি উপলব্ধি করেন এবং পৃথিবীকে কতিপয় পরিবেশমণ্ডলে বিভক্ত করে মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে, গোলাকার পৃথিবীতে একটি নিরক্ষীয় বলয়, দুটি মেরু বলয় এবং এদের মাঝে দুটি নাতিশীতোষ্ণ বলয় বিদ্যমান রয়েছে। ইরাটোসথেনেসের মৃত্যুর বহু শতাব্দি পর্যন্ত অনেক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেসের জ্ঞানকে যথার্থ বলে মেনে নিতে পারেননি (ব্লিজ, ১৯৯৩)।[৭]
বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (Herodotus, 485-424 BC) মিসর ভ্রমণের সময় মিসরকে ‘নীল নদের দান’ বলে মন্তব্য করেন এবং নীল নদের মোহনায় পলি সঞ্চয়ের আকৃতির মাঝে গ্রিক অক্ষর ডেল্টার Δ সাদৃশ্য খুঁজে পান এ ধরনের ভূবৈচিত্র্যকে তিনি ডেল্টা (বাংলায় বদ্বীপ) নামকরণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দে প্লিনি জুনিয়র (প্লিনি সিনিয়র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন) নেপলস উপসাগরে একটি নৌকায় দাঁড়িয়ে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত প্রত্যক্ষ করে যে লিপিবদ্ধ করেছেন, তা সত্যই বিষ্ময়কর। তিনি বর্ণনা করেছেন, আগ্নেয়গিরির উপর ব্যাঙের ছাতার আকৃতির মেঘ কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং পম্পেই ও হারকোলিয়াম শহর দুটিকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলো। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তিনি যখন আগ্নেয়গিরির ধ্বংসযজ্ঞ দেখছিলেন, তখন তিনি জানতেন না তারই মামা/মায়ের বড় ভাই (Pliny The Elder)(যিনি আবার তারই দত্তক পিতা-ও ছিলেন), ভিসুভিয়াসের লাভাস্রোতে পড়ে মারা যাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন ভূগোলবিদদের অধিকাংশ রচনা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান পণ্ডিতদের সামান্য কিছু রচনা যা আমাদের পর্যন্ত এসেছে তা থেকে আমরা জাতে পারি, তখনকার নদীগুলো কত প্রশস্ত আর কত খরস্রোতা ছিলো, বর্তমানে ঘুমিয়ে আছে এরূপ কিছু আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ড এবং তৎকালীন কিছু উদ্ভিদের কথা, যা বর্তমানে সেসব স্থান থেকে হারিয়ে গেছে। রোমান যুগের অবসানে ইউরোপে দীর্ঘ সময়ব্যাপী অন্ধকার যুগের শুরু হয়। মধ্যযুগে ভূগোল চর্চার দীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিলো আরব অঞ্চলের মুসলিম এবং চৈনিক পণ্ডিতরা। মধ্যযুগে যুদ্ধ, আগুন এবং অবহেলার কারণে প্রাচীন অনেক মূল্যবান বই, মানচিত্র, রচনা চিরতরে হারিয়ে গেছে।
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয়দের সামুদ্রিক অভিযান এবং ব্যাপক আবিষ্কারের যুগে প্রাকৃতিক ভূগোলের পুনর্জাগরণ ঘটে। পর্তুগিজরা আফ্রিকার উপকূল ঘুরে এশিয়ার পূর্বপ্রান্তে এবং কলম্বাস আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফিরে এসে জানায় পশ্চিমের ভূখণ্ডের কথা। মানচিত্রাঙ্কনবিদগণ সংগ্রহকৃত জ্ঞানের ভিত্তিতে সঠিক মানচিত্র তৈরি করতে শুরু করেন। নতুন আবিষ্কৃত দেশগুলো সম্পর্কে ইউরোপের শহরগুলোতে কখন বড় বড় নদী, বরফাবৃত সুউচ্চ পর্বতমালা, বোনো উপকূল, বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, ভয়াল ভৃগুতট, সুউচ্চ বৃক্ষপূর্ণ গভীর বনভূমি, অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর বন্যপ্রাণি এবং অজানা সব মানুষের কথা প্রচার হতে শুরু করে। ইউরোপীয় অভিযাত্রী ও ভাগ্যন্বেষীরা সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজসম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন। ভৌগোলিক জ্ঞান সম্পদ লাভের চাবিকাঠিতে পরিণত হয়।
ইউরোপীয়রা যখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের স্থাপিত উপনিবেশগুলোতে সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নতুন ভূখণ্ডের সন্ধানে ছুটে চলছে, তখন কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী প্রাপ্ত নতুন নতুন তথ্যগুলো যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণে বের হন। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট তাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি সম্পদ নয়- জ্ঞান আহরণের জন্য নতুন মহাদেশ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ছিলেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশের ওরিনোকো নদী পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এবং ইকোয়েডর, পেরুতে মাঠজরিপ করেন। ১৮০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পূর্বে তিনি কিউবা ভ্রমণ করেন এবং মেক্সিকো পাগড় দেন। পরবর্তীতে তিনি সােইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে প্যারিসে স্থায়ী হয়ে তিনি আমেরিকা ভ্রমণের ওপর ৩০টি বই লেখেন এবং উনিশ শতকের বংশগতিসংক্রান্ত সেরা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ হিবে পরিচিত ছয় খণ্ডের ‘কসমস’ সিরিজটি প্রকাশ করেন।
হামবোল্টের রচনা থেকে আমরা তার সময়ের প্রাকৃতিক ভূগোলের রাজ্য সম্পর্কে জানতে পারি। এটি প্রমাণিত হয় যে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবলমাত্র পৃথিবীর পৃষ্ঠসম্পর্কিত বিষয়াদিই অধ্যয়ন করে না, এটি এখন মৃত্তিকা, উদ্ভিজ্জ, প্রাণী, সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডল প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সমীক্ষা করে। যদিও ‘ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি’ শব্দটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে, তথাপি ব্যাপক বিস্তৃত ক্ষেত্রের জন্য এর নাম ‘ন্যাচারাল জিওগ্রাফি’ হলেই অধিক মানানসই হতো।
রাশিয়া
প্রাকৃতিক ভূগোলের উন্নয়নে তৎকালীন সম্পদশালী রাশিয়ার জারগণ (সম্রাটগণ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অষ্টাদশ শতাব্দির মদ্যভাগে রাশিয়ার শাসকরা অনেক ভূগোলবিদকে মেরুপ্রদেশীয় সাইবেরিয়ার বিভিন্ন সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। রাশিয়ান ভূগোলবিদগণের মধ্যে মিখাইল লমোনোসোভ (Mikhail Lomonosov, 1711-1765)-কে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সাইবেরিয়ার গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলো হচ্ছে- মৃত্তিকার জৈবিক উৎস উদ্ঘাটন, বরফখণ্ড বিচলনের একটি সমন্বিত নতির বিকাশসাধন, যা অদ্যাবধি মৌলিক হিসেবে বিবেচিত এবং তদানুযায়ী হিমবিজ্ঞান (Glaciology) নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখার গোড়াপত্তন। লমোনোসোভের পথ ধরে উনবিংশ শতকে রাশিয়ার ভাসিলিভিচ ডকোচেভ (Vasily Vasili’evich Dokuchaev, 1846 –1903)-এর মতো বিখ্যাত ভূগোলবিদের জন্ম হয়। তিনি ‘ভূখণ্ড বা অঞ্চলের সমন্বিত নীতি’ (principle of comprehensive analysis of the territory) এবং রাশিয়ান শেরনোজেম (Russian Chernozem)-এর ওপর অবদান রাখেন, যা পরবর্তী সময়ে সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য ভূত্বকীয় স্তর মৃত্তিকা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ধারণার সাথে পরিচিত করে| তিনি প্রথম মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস এবং মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেন। এভাবে নতুন ভৌগোলিক সমীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে মৃত্তিকাবিজ্ঞান (Pedology) প্রতিষ্ঠিত হয়। একারণে ভিসিলি ডকোচেভকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। রাশিয়ান পণ্ডিতদের অবদানে জলবায়ুবিজ্ঞানও ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হয়। রাশিয়ার জলবায়ুবিজ্ঞানীদের মধ্যে জার্মান বংশোদ্ভুত ভ্লাদিমির কোপেন (Wladimir Köppen) সকলের অগ্রগণ্য। তিনি বিশ্বের জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করেন, যা আজও সঠিক হিসেবে সমাদৃত। যাহোক, এ মহান ভূগোলবিদ তার কাজের মাধ্যমে পুরাজলবায়ুবিজ্ঞানে (Paleoclimatology) অবদান রাখেন। ‘ভূতাত্ত্বিক অতীতের জলবায়ু’ (The climates of the geological past) নামে তার গবেষণার জন্য তাকে পুরাভূগোলের (Paleogeography) জনক বলা যায় (আলম, কে. আশলাফুল-২০১৪)।[৮]
আমেরিকা
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথমভাগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ভূগোলবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস (W.M. Davis)-এর অবদান। ভূগোলের সাধারণ তত্ত্ব হিসেবে তার প্রদত্ত ‘ভৌগোলিক চক্র’ (geographical cycle) কেবল বিষয় হিসেবে ভূগোলকে তার দেশে প্রতিষ্ঠিত করেনি, বরং প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মহামডেল (paradigm) হিসেবে কাজ করে। ডেভিসের মতানুসারে, সময়ের বিবর্তনে ভূগঠন পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যায়। (উইলিয়াম মরিস ডেভিসের এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফলে ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখা বিকাশ লাভ করে।
প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তীত হয়েছে। ১৮৫০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে জ্ঞানের এ শাখায় চারটি প্রধান ধারণা খুবই জোড়ালোভাবে প্রভাববিস্তার করেছিলো; যথা- (১) সমতাবাদ (Uniformitarianism) : এ তত্ত্ব পৃথিবীর বর্তমান অবস্থর জন্য বিপর্যয় শক্তি (catastrophic force) দায়ী এ ধারণা বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে ধারণা দেয় যে, অবিরত সমতাসাধনের বিদ্যমান প্রক্রিয়াসমূহ আমাদের গ্রহটির অতীত ও বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। (২) বিবর্তনবাদ (Evolution theory) : চার্লস ডারোউনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বে প্রভাবিত হয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানীগণ প্রাকৃতিক প্রপঞ্চের (phenomena) বিভিন্নতার বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যা প্রদান শুরু করেন। (৩) তথ্যানুসন্ধান ও জরিপ (Exploration and Survey) : ১৯০০ সালের পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান আবিষ্কার ও সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান ও জরিপ কাজে প্রাকৃতিক ভূগোলের সকল ক্ষেত্র সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলো। (৪) সংরক্ষণ (Conservation) : ১৮৫০ সালের প্রথম দিক থেকে একসময়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যবিশিষ্ট এলাকায় মানবিক উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়।
১৯৫০ সালের পর থেকে দুটি শক্তি প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি নির্ধারণে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে। যথা- (১) সংখ্যাতাত্ত্বিক বিপ্লব (Quantitative Revolution) : এসময়ে প্রাকৃতিক ভূগোলে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ কেন্দ্রীয় মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়। মানচিত্রায়ন, মডেলসমূহ, পরিসংখ্যান, গণিত ও প্রকল্প পরীক্ষণ সবকিছু আসে পরিমাপ থেকে। (২) মানব-ভূমি সম্পর্ক (Human/Land Relationships) : পরিবেশের ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক ভূগোলের বহু গবেষক পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাবের বিষয়ে সমীক্ষা শুরু করেন (আলম, কে. আশরাফুল-২০১৫)।[৯]
প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্রসমূহ
পৃথিবী সম্পর্কে তথ্য আহরণের মধ্যদিয়ে ভৌগোলিক জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিলো। বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞানের পরিধি এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে যে, কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত ভৌগোলিক জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব নয়। ফলে দেখা দিয়েছে বিশেষায়নের ঝোঁক। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের মতো প্রাকৃতিক জগতের বিষয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের দিনে বিরল। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভৌগোলিক জ্ঞানের সন্ধানে উত্তরোত্তর জটিল-কঠিন পদ্ধতি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশেষায়ন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানে বিশেষায়নের প্রয়োজন আছে। প্রথমে সামগ্রিক জ্ঞানকে কতকগুলো বিষয়ে খণ্ড করা হয়, আবার প্রতিটি বিষয়কে কতিপয় বিশেষীকরণে ভাগ করা হয়। এভাবেই বিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। বিগত শতকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন বিষয় একটি গুচ্ছ হিসেবে বিকশিত হয়েছে (ব্লিজ-১৯৯৩)।[৭]
১. ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) : ভূদৃশ্যের ভূগোল ‘ভূরূপবিজ্ঞান’ বা ভূমিরূপবিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভূগোলের সর্বাপেক্ষা উৎপাদনশীল একটি ক্ষেত্র। মূল ইংরেজি পরিভাষাটি চয়ন করেন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ আলবার্ট প্যাঙ্ক (Albert Penck)। গ্রিক তিনটি শব্দ Geo অর্থ পৃথিবী, morph অর্থ গঠন বা আকার এবং logos অর্থ বর্ণনা দিয়ে ভূপৃষ্ঠের গঠনকাঠামো সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অবয়বসমূহের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকৃতি এবং এগুলোর উদ্ভবের পশ্চাতে ক্রিয়াশীল কার্যকারণ প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনাই হচ্ছে ভূরূপবিজ্ঞান। ভূরূপবিজ্ঞান হচ্ছে ভূগোলের সেই শাখা, যাতে অভ্যন্তরীণ অবস্থাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের ভূদৃশ্য পরিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।
ভূরূপবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু মূলত (১) ভূমির বন্ধুরতা বা ভূগঠনের দিক এবং স্কেল, (২) পদ্ধতি- যা ভূপৃষ্ঠের আকৃতি প্রদান করে, এবং (৩) যে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমিরূপ পর্যালোচনা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে (আলম, ২০১৪)।[৮]
২. জলবায়ুবিজ্ঞান (Climatology) : আবহবিদ্যা ও প্রাকৃতিক ভূগোল যৌথভাবে জলবায়ু ও তার বিস্তৃতি আলোচনার জন্য জলবায়ুবিজ্ঞান গঠন করেছে। জলবায়ুবিজ্ঞান কেবলমাত্র জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ বা বিস্তৃতিই পর্যালোচনা করে না, বৃহত্তরভাবে এটি মানব সমাজের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভিজ্জের ধরন, মৃত্তিকা গঠনসহ পরিবেশের বিভিন্ন প্রশ্ন ও অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীকে বেষ্টনকারী বায়ুমণ্ডলের উপাদন এবং এদের বৈশিষ্ট্যের বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনাই হচ্ছে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিজ্ঞান। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অপরদিকে, কোনো স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা পর্যালোচনা করলে যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ুবিজ্ঞানের তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো : (১) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিজ্ঞান, (২) আঞ্চলিক জলবায়ুবিজ্ঞান ও (৩) ফলিত জলবায়ুবিজ্ঞান।
৩. জীবভূগোল (Biogeography) : জীববিজ্ঞানের দিক থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান, বাস্তুবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান- এ তিনটি উপক্ষেত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত। যখন জীববিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক ভূগোল উপরিস্থাপিত (overlap) হয়, তখন বৃহৎ উপক্ষেত্র জীবভূগোলের সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেখানে জীবভূগোল নিজেই বিশেষায়িত। প্রাকৃতিক ভূগোল উদ্ভিদবিদ্যার সমন্বয়ে উদ্ভিদভূগোল গঠন করে এবং প্রাণিবিদ্যার সাথে সমন্বয়ে প্রাণিভূগোল উপক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। স্মর্তব্য যে, জীবভূগোল নিজেই বাস্তুবিদ্যার সংযোজক, যা এই উপক্ষেত্র দুটির মধ্যে অবস্থান করে; বাস্তবে প্রাণিভূগোল ও উদ্ভিদ ভূগোল উভয়েই জীবভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের পর্যালোচনাই হচ্ছে জীবভূগোল, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৃত্তিকা, প্রাণী ও উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জীবভূগোল শব্দটি দ্বারা জীববিজ্ঞান ও ভূবিদ্যা উভয়কে একত্রে নির্দেশ করে। অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডলে জীবের বসবাসের উপযোগী অংশ যা জীবমণ্ডল নামে পরিচিত- এর আলোচনার ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের জৈব বিষয়গুলো উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, প্রাণ-রসায়ন প্রভৃতি শাখায় পর্যালোচনা করা হলেও জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ভূগোল এর অর্থ ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করে থাকে।
৪. মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্র মৃত্তিকা ভূগোলের সম্পর্ক রয়েছে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের (Soil Science) বা পেডোলজির (Pedology) সাথে। পেডোলজিস্টরা মৃত্তিকার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি এবং মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে থাকেন। মৃত্তিকা ভূগোলে মৃত্তিকার পারিসরিক ধরন, বিস্তৃতি এবং জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ ও মানুষের সাথে সম্পর্কের বিষয় আলোচনা করা হয়।
৫. সমুদ্র ভূগোল (Marine Geography) : সমুদ্র ভূগোল সমুদ্রবিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি গঠনে সহায়তাকারী অন্যতম উপাদান যেমন মানবীয়, তেমনি প্রাকৃতিক। যে শাস্ত্রে বারিমণ্ডলের সমীক্ষা করা হয়, তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বলে। এটি বারিমণ্ডলের প্রাকৃতিক ও জৈবিক বিষয়গুলো বর্ণনা করে। সমুদ্রবিজ্ঞান অনেকগুলো উপক্ষেত্রে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র ভূতত্ত্ব, সমুদ্র ভূরূপবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক সমুদ্রবিদ্যা, সমুদ্রের জলের রসায়ন, জৈব সমুদ্রবিদ্যা ইত্যাদি (আলম, ২০১৪)।[৮]5. জ্যোতির্বিজ্ঞান আদি বিজ্ঞানের প্রকৃতি গুগলের নিজস্ব শাখা হলো জ্যোতির্বিজ্ঞান। ভূগোলের এই শাখায় সৌরমণ্ডল তথা মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র,ব্ল্যাকহোল,গ্যালাক্সি সম্পর্কে ভূগোলের শাখায় আলোচনা করা হয়। একটি প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন শাখা।
প্রাকৃতিক ভূগোলের উদ্দেশ্য
বায়ু, জল, জীব, মৃত্তিকা এবং ভূগঠন প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার প্রধাণ উদ্দেশ্য এবং মানুষ কর্তৃক ভূপৃষ্ঠে এসবের ব্যবহার সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়। আবার পৃথিবীকে মানুষের সর্বোত্তম ব্যবহারের স্বার্থে বিজ্ঞানীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার উদ্দেশ্যকে তাদের মাত্রা (dimension) এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করা যায়।
আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বসবাস ও হাঁটাচলা করি, প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠ বলতে তারও থেকে বেশি কিছু বোঝায়। ভূপৃষ্ঠ কেবল একটি আয়তন (volume) নয়, বরং এর সাথে মানুষের সম্পর্ক ও অনুভবের দ্বারা একে চিহ্নিত করতে হবে।
এ আয়তনের কেন্দ্রে রয়েছে ভূপৃষ্ঠ, যেখানে আমরা বসবাস করি। এরসাথে ভূপৃষ্ঠের ঠিক নিচে ভূত্বকের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভূমিরূপ ভূত্বকের পৃষ্ঠকে সজ্জিত করেছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির কর্মকাণ্ডের ফলাফল। ভূপৃষ্ঠের উপরের বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রাকৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া ও অবস্থা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে ভূপৃষ্ঠের উপর ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, ভূত্বকের নিচের কিছু অংশ, জল ও স্থলভাগসহ সমগ্র ভূপুৃষ্ঠ এবং এর উপরের প্রায় ২০ কিমি ব্যাপী বায়ুমণ্ডল এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রাকৃতিক ভূগোলে স্থলভাগ বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কারণ এটি হাতের কাছে এবং মানুষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যাহোক, খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ইত্যাদির প্রধাণ উৎস এবং ভূপৃষ্ঠে পরিবহনের প্রধাণ মাধ্যম হিসেবে মহাসাগরগুলো ক্রমবর্ধমানহারে মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল ও জীবমণ্ডলের প্রতিটি পদার্থ কিছুসংখ্যক উপাদান দ্বারা গঠিত। যেমন- বায়ুমণ্ডলকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয়। শিলা, ভূমিরূপ, মৃত্তিকা ইত্যাদি অশ্মমণ্ডলের উপাদান। নদী, হ্রদ, হিমবাহ, বরফাবরণ, মহাসাগর ইত্যাদি বারিমণ্ডলের অংশ এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রণী জীবমণ্ডলের অংশ (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭)।১০ প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন উপাদানের সন্বেয়ে প্রাকৃতিক ভূগোলের অনেক প্রপঞ্চ (phenomenon/ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গঠিত হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোলে এরসব উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথিবীর বর্ণনা করা যায়। এগুলো সময়ে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রায়শ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বর্ষণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ হচ্ছে বায়ুমণ্ডীয় চলরাশি বা সূচক, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও সময়ের আবহাওয়া অবস্থা প্রকাশ করে। এদের প্রকৃতি এবং দীর্ঘ সময়কালে এগুলোর পরিবর্তন জলবায়ুর অবস্থা বর্ণনা করে। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। এসব চলরাশি বা সূচক ভৌগোলিক পার্থক্য প্রদর্শন করে, একই সাথে এর দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ করা যায় (আলম, ২০১৪)।[৮]
যখন একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন অপর একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন ঘটায়, তখন উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে।চলরাশি বা সূচক গুলো কীভাবে একে অপরের ওপর প্রভাববিস্তার করে তা জানা থাকলে প্রপঞ্চ (ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গুলোর পরিবর্তন ও ভৌগোলিক ব্যাখ্যা করা যায়।
এরূপ মিথস্ক্রিয়া সাধারণত অনেক বেশি জটিল হয়ে থাকে। বাস্তবে অসংখ্য চলরাশি বা সূচক একসাথে মিথস্ক্রিয়া করে। সিস্টেমগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সম্পর্কগুলোকে মডেলরূপে তৈরি করার প্রয়াস চালানো হয়। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধাণ উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ বা আয়তনকে বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল, জীবমণ্ডল এবং মানুষের পারস্পরিক মিথস্কিয়াকে একটি পদ্ধতি (system) হিসেবে উপস্থাপন করা (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭).[১০]
প্রাকৃতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি
প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এতে অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডল- এ চারটি মণ্ডলের উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে ও গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হয়।
উল্লেখিত চারটি উপাদান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য পৃথিবীর উৎপত্তি, বয়স, ভূঅভ্যন্তরের গঠন এবং সমুদ্রের পর্যঙ্ক প্রভৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ সমীক্ষা করা হয়। ভূআলোড়নের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃজ শক্তির অধ্যয়ন, উভয়বিধ শক্তির মিথস্ক্রিয়া এবং এদের ফলাফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের উঁচুনিচু ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট বহিঃজ শক্তি ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলোকে সমুদ্র সমতলে নামিয়ে আনার কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকে।
প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠের পর্বতমালা, ভাঁজ, চ্যুতি প্রভৃতি বন্ধুর ভূপ্রকৃতির উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য এবং বিস্তৃতি বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, এদের বিস্তৃতি এবং অগ্ন্যুঃপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ ও বিপর্যয়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর প্রভাববিস্তার করে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। বহিঃজ শক্তির দ্বারা (বিচূর্ণীভবন, ক্ষয়ীভবন, নগ্নীভবন) সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠের অবয়বগুলোর পর্যালোচনা থেকে ভূমিরূপ পদ্ধতি এবং এর কাজের ধরন (প্রবহমান জলরাশি, ভূগর্ভস্থ জল, সমুদ্র ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ) সম্পর্কে জানা যায় (আলম, ২০১৪)।[৮]
বারিমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর পর্যালোচনায় সমুদ্র তলের বন্ধুরতা, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, সমুদ্রের সঞ্চয়, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্র স্রোত, প্রবাল প্রাচীর, এটল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলোর পর্যালোচনায় বায়ুমণ্ডলের সংমিশ্রণ, গঠন, উপাদান, জলবায়ু ও আবহাওয়ার নিয়ামক, সৌরতাপ, সৌর বিচ্ছুরণ, তাপসমতা, ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ, বায়ুভর, বায়ুপুঞ্জ, ঘূর্ণিঝড়, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মৃত্তিকা ক্ষয় ও সঞ্চয়ন, পরিবেশ দূষণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারাবাহিক পর্যালোচনা একই সাথে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ার সম্পর্ক প্রাকৃতিক ভূগোলের সমীক্ষার বিষয়। নিম্নলিখিত কারণে প্রাকৃতিক ভূগোলের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুতে প্রধাণ পরিবর্তনগুলো সূচিত হয়ে থাকে :
১. প্রাকৃতিক ভূগোল মানুষের কল্যাণে অধিকতর অর্থবহ ও প্রায়োগিক এবং মানবীয় ভূগোলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল সংবদ্ধ এবং সমাজের সাথে অধিকতর সম্পর্কিত করার ইচ্ছা সর্বজনীন।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রতি মানুষের অধিকতর মনোযোগ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের বৈরী আচরণের ফলে পরিবেশগত ভরেসাম্য বিনষ্ঠ এবং প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান।
৩. বহিরাঙ্গন ও গবেষণাগারে যান্ত্রিকায়ন ও বিভিন্ন ভূমিরূপ পদ্ধতি পরিমাপের ক্রিয়াপদ্ধতি এবং উপাত্তসমূহের গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রতি অধিকতর গুরুত্বারোপ।
৪. কতিপয় বিশেষ অবয়ব, যেমন- বাস্তুপদ্ধতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা, জলবিজ্ঞান, প্লেট টেকটোনিক্স ইত্যাদির প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেওয়া।
৫. সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাক্রো-টেম্পোরাল (macro-temporal) স্কেলের পরিবর্তে মাইক্রো-টেম্পোরাল (micro-temporal) স্কেল এবং বৃহৎ ম্যাক্রো-স্পেশিয়াল (macro-spatial) স্কেলের পরিবর্তে ক্ষুদ্র মাইক্রো-স্পেশিয়াল (micro-spatial) স্কেল; ভূমিরূপ ও পারিবেশিক (environmental) পদ্ধতির সমীক্ষায় সমাজের সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত পারিবেশিক সমস্যাসমূহ সমাধনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে (আলম, ২০১৪)।[৮]
প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখা
ভূগোল অসংখ্য বৃহত্ উপশাখায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে:
বদ্বীপ একটি প্রাকৃতিক ভূমি, যা নদীর মোহনায় দীর্ঘদিনের জমাট পলি অথবা নদীবাহিত মাটির সৃষ্ট দ্বীপ।[১][২] একটি নদী বয়ে গিয়ে যখন কোন জলাধার, হ্রদ, সাগর কিংবা মহাসাগরে পরে তখন নদীমুখে বদ্বীপ তৈরী হয়। এটাই বদ্বীপ।
যেভাবে বদ্বীপ তৈরী হয়
নদী পলিমাটি বয়ে নিয়ে মূলত তিন ভাবে বদ্বীপ তৈরী করতে পারে; প্রথমত, নদী যদি স্থির কোন জলাধার যেমন, হ্রদ, উপসাগর, সাগর বা মহাসাগরে পতিত হয়, দ্বিতীয়ত, অপর আরেকটি নদীর সাথে মিলিত হয় এবং দ্বিতীয় নদী যদি প্রথম নদীর সাথে তাল মিলিয়ে পলিমাটি সরাতে না পারে তবে এবং তৃতীয়ত, এমন কোন ভুমধ্য অঞ্চল যেখানে নদীর পলি স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়ে।
বদ্বীপের প্রকারভেদ
স্রোত-নিয়ন্ত্রিত বদ্বীপ
জোয়ার-ভাটা-নিয়ন্ত্রিত বদ্বীপ
গিল্বার্ট বদ্বীপ
ভূমধ্য বদ্বীপ
আকৃতি অনুসারে বদ্বীপের প্রকারভেদ
ধনুকাকৃতি বদ্বীপ
তীক্ষাগ্র বদ্বীপ
পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ
খাড়ীয় বদ্বীপ
আকৃতি, অবস্থান এবং গঠনপ্রণালীভিত্তিক শ্রেণি
আকৃতি, অবস্থান এবং গঠনপ্রণালীর ওপর ভিত্তি করে বদ্বীপকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়; যথা-
১.ধনুকাকৃতি বদ্বীপ (Arcuate Delta) : এ জাতীয় বদ্বীপের আকৃতি ধনুকাকার, যা দেখতে বাঁকানো ফলার মতো । এ ধরনের দ্বীপগুলোর মাঝের অংশ সমুদ্রের দিকে বাড়ানো এবং প্রশস্ত এবং স্থলভাগের দিকে সংকীর্ণ হয়ে থাকে। এ বদ্বীপগুলো কিছুটা মোটা দানাযুক্ত শিলাচূর্ণ, বালুকা ও নুড়ি দ্বারা গঠিত হয়। অনেক শাখাপ্রশাখাবিশিষ্ট নদী দ্বারা গঠিত হয় বলে এ বদ্বীপের বাইরের অংশ উত্তল দেখায়। সিন্ধু, গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা, নীল, হোয়াংহো, পো, রাইন প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এ শ্রেণিভুক্ত।
২. পাখির পা সদৃশ বদ্বীপ (Birds Foot Delta) : যেসব বদ্বীপ দেখতে পাখির আয়ের আঙ্গুলের মতো, তাকে পাখীর পা সদৃশ বদ্বীপ বলে। মোহনার কাছে ছোট ছোট শাখানদীর খাতসমূহের উভয় তীরে সূক্ষ পলি সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপগুলোলম্বা হয়ে সামনের দিকে বাড়তে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে পাখির আঙ্গুলের মতো আকৃতি প্রাপ্ত হয়। এ বদ্বীপগুলো অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ণ কণাবিশিষ্ট শিলা ও বালুকাচূর্ণ, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়। মিসিসিপি নদীর মোহানায় এরূপ বদ্বীপ দেখা যায়।
৩. হ্রদ বদ্বীপ(Lacustrine Delta) : হ্রদের স্থির পনিতে পতিত হওয়া নদী মোহনায় পলি সঞ্চিত হয়ে যে বদ্বীপ গঠিত হয়, তাকে হ্রদ বদ্বীপ বলে। কাস্পিয়ান সাগরে পতিত উরাল, ভল্গা নদীর মোহনায় গঠিত দ্বীপ এর উদাহরণ।
৪. মোহনা বদ্বীপ (Estuarine Delta) : যেসব নদীর মোহনায় সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটার প্রকোপ বেশি, সেসব স্থানে সমুদ্রের বেশ গভীরে নদীবাহিত পলিগুলো ধীরগতিতে সঞ্চিত হয়ে যে বদ্বীপ গঠিত হয়, তাকে মোহনা বদ্বীপ বলে। সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটার কারণে সেখানে বদ্বীপ গঠনে অনেক বেশি সময় লাগে।
৫. সামুদ্রিক বদ্বীপ (Marine Delta) : মোহনায় নদীর স্রোত সমুদ্রের পানিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নদীবাহিত পলি, বালি, কর্দম প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপ গঠিত হয়, তাকে সামুদ্রিক বদ্বীপ বলে। এরূপ বদ্বীপ গঠনের জন্য সমুদ্র শান্ত ও স্থলভাগ দ্বারা বেশিস্টত হতে হয়ে। যেমন- বঙ্গোপসাগর, ভূমধ্যসাগরে পতিত বিভিন্ন নদীর মোহনায় গঠিত বদ্বীপ।
৬. কাসপেট বদ্বীপ (Cuspate Delta) : নদীর মোহনায় অনুকূল অবস্থা বিরাজ করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নদীস্রোত সোজাসোজি সমুদ্রের মধ্যে অনেকদূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে সমুদ্রের তীরে স্রোতপ্রবাহের উভয়পাশে পলি সঞ্চিত হযে ত্রিকোণাকার বদ্বীপ সৃষ্টি করে। এরূপ বদ্বীপকে কাসপেট বদ্বীপ বলে। ইতালির টাইবার নদীর মোহনায় এরূপ বদ্বীপ দেখা যায়।
৭. পাখা বদ্বীপ (Fan Delta) : কখনো কখনো স্রোতের সামনে পলি সঞ্চিত হয়ে পাখার আকৃতিতে বদ্বীপের সৃষ্টি হয় এবং স্থলভাগ সামনির দিকে সম্প্রসারিত হয়। এক্ষেত্রে প্রধান নদী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে উক্ত বদ্বীপের উভয় পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রধান নদীর সাথে উপনদী যেখানে মিলিত হয় যেখানেও উপনদী দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে পাখার আকৃতিবিশিষ্ট বদ্বীপ সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ইউরোপের রাইন নদীর মোহনায় এবং বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের উপকূলে গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার প্রবাহ দ্বারা সৃষ্ট বদ্বীপ এর উদাহরণ।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বদ্বীপ
গঙ্গা বদ্বীপ মূলত ভারতের ভাগীরথী-হুগলী নদীরেখা ও বাংলাদেশের পদ্মা-মেঘনা নদীরেখার অন্তরবর্তী অংশকে বোঝায়। কিন্তু বদ্বীপ অঞ্চলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সে হিসেবে ভাগীরথী নদীর পশ্চিমে বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া ও মেদিনীপুর জেলার এক বিরাট অংশ গঙ্গা বদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অনুরূপভাবে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় উচ্চভূমি ও দক্ষিণ-পূরবের পাহাড়ী অঞ্চল ব্যতীত বাকি অংশকে সাধারণভাবে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
গঠনের ইতিহাস
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বদ্বীপ বোর-হোল সমীক্ষা থেকে অতদঅঞ্চলের প্লাইসটোসিনের শেষ এবং হলোসিন উপযুগের জটিল পললায়ন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা গেছে। ক্রিয়াশীল পাঁচটি প্রধান উপাদান অতদঅঞ্চলে পলল এবং পললায়নের হারের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। এগুলো হলো :
প্লাইসটোসিন উপযুগের শেষের দিকে ১৮,০০০ বছর আগে সমুদ্র সমতল বর্তমান অবস্থানের তুলনায় ক্রমশ ১৩০ মিটার নিচে নেমে গিয়েছিলো।
পরবর্তীতে হলোসিন উপযুগে সমুদ্র সমতল বর্তমান অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।
সে সময়কালে বঙ্গ-সিলেট অববাহিকা অক্ষের কেন্দ্র বছরে ২-৪ মিলিমিটার হারে অবনতমত হচ্ছে (এবং সম্ভবত উত্তর ও দক্ষিণদিকে আরও বেশি)। একারণে প্রান্তদেশ অপেক্ষা কেন্দ্রের নিকট হলোসিন পললের পুরুত্ব বেশি।
হলোসিন উপযুগের শুরুতে জলবায়ু এখনকার তুলনায় আর্দ্র ছিলো, এ কারণে নদীগুলো অধিক পরিমাণে বালিময় পলল বহন করতো।
হলোসিন উপযুগে ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা একাধিকবার তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেছে।
আন্তঃহৈমবাহিক উষ্ণ সময়কালের পূর্ববর্তী শেষ বরফ যুগে ১২০,০০০ বছর পূরবে সমুদ্র সমতল বর্তমান অবস্থানের কাছাকাছি থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে এবং ৩০,০০০ বছর পূরবে বর্তমানের তুলনায় প্রায় ৭০ মিটার নিচে নেমে যায়। সমুদ্র সমতল নিচে নেমি যাওয়ার কারণে নদীগুলো বিদ্যমান ভূদৃশ্যকে গভীরভাবে কেটে প্রবাহিত হয়। সুতরাং নদীগুলোর মধ্যবর্তী ভূমিরূপের যে পলল দেখা যায়, সেগুলো বিচূর্ণীভূত ও জারিত (oxidised) হয় এবং মৃত্তিকা গঠিত হয়। Goodbred and Kuehl এসব প্লাইসটোসিন ভূপৃষ্ঠকে বাংলাদেশে বর্তমান ভূপৃষ্ঠের ১০-৪৫ মিটার নিচে এবং পশ্চিম বাংলায় স্থানীয়ভাবে উদ্ভেদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন (Brammer, 2012)।
৩০,০০০ থেকে ১৮,০০০ বছর আগে সমুদ্র সমতলের পতন খুবই দ্রুত হয় এবং তৎকালীন নদীগুলো অধিকতর গভীরভাবে প্লাইসটোসিন পৃষ্ঠ কেটে প্রবাহিত হয়। বর্তমানের তুলনায় সে সময়ের জলবায়ু ছিলো শীতলতর ও শুষ্কতর এবং গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহগতি ও পলল বোঝা বর্তমানের তুলনায় সম্ভবত অনেক সকম ছিলো। পশ্চিম বাংলায় গঙ্গা প্লাবনভূমির কতিপয় মৃত্তিকায় ২৩,০০০ বছর পূরবের ক্যালক্রেইটের (calcrete- কঠিন চুনের সঞ্চয়) উপস্থিতি দ্বারা প্লাইসটোসিন উপযুগের শেষ সময়কালের শুষ্কতর জলবায়ু শনাক্ত করা যায়।
শেষ হিমযুগের অবসানের পর বর্তমান সময়ের প্রায় ১৮,০০০ বছর আগে সমুদ্র সমতল দ্রুত উপরে উঠতে থাকে এবং প্রায় ১১,০০০ বছর আগে বর্তমান অবস্থানের তুলনায় প্রায় ৫৫ মিটার নিচে অবস্থান করে। প্রথম দিকে জলবায়ু ছিলো অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এবং সেই সাথে নদীর প্রবাহ ও পলল বোঝাও কম ছিলো। মৌসুমি জলবায়ু পুনরায় শুরু হয় এবং প্রায় ১১,০০০ থেকে ৭,০০০ বছরের মধ্যে এমন একটি সময়কাল আসে যখন বৃষ্টিপাত ও নদীর পলল বোঝা বর্তমানের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। প্রায় ১১,০০০ বছর পূরবে সমুদ্র সমতল ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে েএবং প্রায় ৬,৫০০ বছর আগে বর্তমান অবস্থানের কাছাকাছি চলে আসে (Brammer, 2012)।
হলোসিন পললায়ন (Holocene Sedimentation) : সবর্শেষ বরফ যুগের চূড়ান্ত পরযায়ে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার উপকূলরেখার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। এটি ধরে নেয়া হয় যে, বেঙ্গল ফ্যান বর্তমান উপকূলরেখার দক্ষিণে ছিলো, কিন্তু বঙ্গোপসাগরের একটি সংকীর্ণ অংশ সম্ভবত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড থেকে সিলেট অববাহিকার দিকে বর্ধিত ছিলো। প্রায় ১৪,০০০ বছর পূর্বে সমুদ্র সমতলের দ্রুত উত্থান উপকূল রেখাকে এখনকার অবস্থানের তুলনায় দেশের ভিতরের দিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঠেলে দেয়। প্রায় ৭,০০০ বছর আগে উন্মুক্ত প্লাইসটোসিন ভূদৃশ্যের মধ্যে কর্তিত উপত্যকাগুলো উচ্চ নির্গমন ক্ষমতাসম্পন্ন নদী বাহিত বালি দ্বারা মোহনা দ্রুতই ভরাট হয়ে যায় । বর্তমান সময়ের প্রায় ৭,০০০ বছর আগে সমুদ্র সমতলের উচ্চতা বৃদ্ধির হার হ্রাস পায় এবং যখন পলল সরবরাহের হার সমুদ্র সমতল উত্থানকে অতিক্রম করে যায়, তখন এটি বদ্বীপ সঠনের অবস্থা সৃষ্টি করে, কিন্তু গুডব্রেড বলেন যে, যখন সমুদ্র সমতল উত্থানের হার বছরে ১ সেন্টিমিটার ছিলো, তখন বদ্বীপের গঠন শুরু হয়েছিলো (Goodbred 200৩; Brammer, 2012)। পরবর্তীতে, বালি ও পলির মিশ্রিত পলল সঞ্চিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে বদ্বীপ পৃষ্ঠ অগ্রসর হয় এবং জলাভূমি ও পরিত্যাক্ত নদীখাতে পিট ভিত (peat bed) তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র প্লাবনভূমির নিচে হলোসিন পলল রয়েছে, সম্ভাব্য ব্যতিক্রম হচ্ছে প্রাচীন হিমালয় পাদদেশীয় সমভূমি, যা সম্ভবত প্লাইসটোসিন উপযুগের।
উপকূলীয় এলাকা (Coastal area) : বঙ্গ অববাহিকার অবিরত ভূগাঠনিক অবনমনের কারণে বদ্বীপ বরাবর পলি সংযোজন হারের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। মেঘনা মোহনায় অবস্থিত ভোলা দ্বীপেহেলোসিন পললের ভিত্তি ৪৮০ মিটার গভীর রয়েছে, অপরদিকে, পশ্চিম বাংলার ভাগিরথী-হুগলী নদীর প্লাবনভূমিতে হলোসিন পলল মাত্র ১-৩ মিটার পুরু এবং সেখানে স্থানীয়ভাবে প্লাইসটোসিন পৃষ্ঠের উদ্ভেদ (outcrop) রয়েছে (Brammer, 2012)।
গঙ্গা জোয়ার প্রভাবিত প্লাবনভূমির এখনকার বহুবৃত্তচাপীয় উপকূলরেখা, তরুণ মেঘনা মোহনার প্লাবনভূমি এবং বিভিন্ন কোণ যেখানে প্রতিটি বৃত্তচাপের পশ্চাত দিয়ে শাখা নদীগুলো উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়, এসবই গঙ্গা নদীর প্রধান থাত ও এর সাথে সম্পর্কিত বদ্বীপগুলোর পূবর্দিকে স্থানান্তরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভূগর্ভস্থ পিট স্তরের রেডিওকারবন বয়োঃনিরূপনের ওপর ভিত্তি করে এলিসন ও অন্যান্য (২০০৩) গঙ্গার প্রাক্তন তিনটি বদ্বীপ এবং এখনকার গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের প্রাথমিক বয়স নির্ধারণ করেছেন।
৫,০০০-২,৫০০ বছর আগে পশ্চিমাংশের বদ্বীপের সাথে সম্পর্কিত ঙ্গাখাত সম্ভবত বর্তমানের ভাগিরথী-হুগলী নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো।
৪,০০০-১,৮০০ বছর আগে দ্বিতীয় বদ্বীপ গঠনের সময় গঙ্গার প্রধান স্রোতধারা সম্ভবত গড়াই-মধুমতি-হরিণঘাটা নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হতো।
১,৮০০-২০০ বছর আগে তৃতীয় বদ্বীপ (কুয়াকাটা উপদ্বীপ) গঠনের সাথে আড়িয়াল খাঁ নদীর সংযোগ রয়েছে।
অতীতে ২০০ বছর আগে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র এখনকার মেঘনা মোহনায় মিলিত হয়েছে।
বোর-হোল অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এলিসন ও অন্যান্য বলেন যে, প্রতিটি বদ্বীপের ক্রমবৃদ্ধির সময় সক্রিয় নদীগুলোর মুখে পলিময় সঞ্চয়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়, যা এখনকার মেঘনায় ঘটছে। প্রতিটি পূরবমুখী স্থানান্তরের পর সক্রিয় বদ্বীপে পুরাতন পলিময় পলল জোয়ার প্রভাবিত শাখা নদীগুলোর মিহি পললের নিচে চাপা পড়ে।
প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য” শব্দটি প্রথম ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং এবং ল্যান্ডস্কেপ উদ্যানের সাথে ব্যবহার করা হয়েছিল। আরও ব্যবহার হয়েছিল প্রাকৃতিক একটি আনুষ্ঠানক শৈলীর বিপরীতে। আলেকজান্ডার ভন হামভোল্ট সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য থেকে আলাদা একটি প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের ধারণা দিয়েছিলেন। তারপর ১৯০৮ সালে ভূতত্ববিদ অটো শ্লুয়েটারভূগোল বিষয়টিকে অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে আলাদা করার জন্যে মূলত প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য থেকে সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য শব্দটি পৃথক ও আলাদা করেছিলেন।
রেচল কারসন ১৯৬২ সালে তার সাইলেন্ট স্প্রিং বইয়ে একটি রাস্তার পাশের দৃশ্য এভাবে বর্ণনা করেনঃ “রাস্তাগুলির পাশাপাশি, লরেল, ভাইবার্নাম এবং অ্যাল্ডার, দুর্দান্ত ফার্ন এবং বুনো ফুলগুলি বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ভ্রমণকারীদের চোখকে আনন্দিত করে” এবং তারপর বলেন কীভাবে এখন ভেষজনাশকের ব্যবহার হচ্ছেঃ “রাস্তাঘাটগুলি একসময় এত আকর্ষণীয় ছিল, এখন আগুনে ভেসে ওঠার মতো, বাদামী এবং শুকনো গাছপালা দিয়ে রেখাযুক্ত ছিল”[১] যদিও স্প্রে করার আগেই ভূদৃশ্য জৈবিক ভাবেই হ্রাস পেয়েছে। প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য কী হতে পারে তার ধারণাটি এখনও প্রসঙ্গ থেকে অনুমিত করা যায়।
“প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য” শব্দটি প্রথম ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং এবং ল্যান্ডস্কেপ উদ্যানের সাথে ব্যবহার করা হয়েছিল। আরও ব্যবহার হয়েছিল প্রাকৃতিক একটি আনুষ্ঠানক শৈলীর বিপরীতে। আলেকজান্ডার ভন হামভোল্ট সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য থেকে আলাদা একটি প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের ধারণা দিয়েছিলেন। তারপর ১৯০৮ সালে ভূতত্ববিদ অটো শ্লুয়েটারভূগোল বিষয়টিকে অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে আলাদা করার জন্যে মূলত প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য থেকে সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য শব্দটি পৃথক ও আলাদা করেছিলেন। “প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য” শব্দটির প্রাথমিক ব্যবহার খুজে পাওয়া যায় একজন ভূগোলবিদ কার্ল ও সৌর এর “The Morphology of Landscape(1952)” বইতে।[২]
শব্দটির উৎস
শব্দটির মূলত প্রথম ব্যবহার হয়েছিলো ল্যান্ডস্কেপ পেইনটিং এ, যদিও প্রকৃত শব্দটি প্রথম ল্যান্ডস্কেপ বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিলো। উভয় ক্ষেত্রেই এটি একটি প্রাকৃতিক শৈলীর চেয়ে বেশি প্রাকৃতিক শৈলীর বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে এটি প্রকৃতির ঘনিষ্ট ছিল। চুলিং কোয়া বলেছিলেন, “শপ্তদশ শতাব্দী বা আঠারো শতকের গোড়ার দিকে মানুক প্রাকৃতিক দৃশ্যকে একটি আঁকাছবির মত উপভোগ করতে পারতো এবং তাই শব্দের সাথে ব্যবহার না করেই এটিকে ভূদৃশ্য হিসেবে মনোনিত করুন।”[৩]জন আইকিন ভূদৃশ্য উদ্যান সম্পর্কে ১৭৯৪ সালে বলেছিলেন,”যাইহোক, একটি কৃত্রিম উদ্যানের একক দৃশ্যে অভিনবত্ব আছে, যা তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্যের অসীম বৈচিত্র্য নতুন রূপের একটি অবর্ণনীয় ফ্লোর উপস্থাপন করে।”[৪] বিশিষ্ট আমেরিকান ল্যান্ডস্কেপ উদ্যানবিদ অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ডাউনিং ১৮৪৪ সালে মন্তব্য করেছেনঃ “সোজা খাল, গোলাকার জলের টুকরো এবং জ্যামিতিক মোডের নিয়মিত সমস্ত ফর্ম স্পষ্টতই পুরো চরিত্র এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রকাশের বিরধীতা করে।[৫]
দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমনের পর আলেকজান্ডার ভন হামভোল্ট প্রথম সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যকে পৃথক করেন, যদিও তিনি আসলে এই পদ ব্যবহার করেন না।[৬][৭]অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ডাউনিং সচেতন এবং সহানুভূতিশীল ছিলেন হামভোল্ট এর তত্বের প্রতি যা আমেরিকান ভূদৃশ্য উদ্যানকে প্রভাবিত করেছিল।[৮]
পরবর্তীকালে, ভূগোলবিদঅটো শ্লিয়েটার ১৯০৮ সালে যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভূগোলকে ল্যান্ডস্কাফসকুন্ডে (ভূদৃশ্য বিজ্ঞান) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে ভূগোলকে অন্য কোনও অনুশাসন দ্বারা ভাগ করে যুক্তিসঙ্গত বিষয় দেওয়া হবে।[৯][১০] তিনি দুটি রূপের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সংজ্ঞা দিয়েছেনঃ উরল্যান্ডস্যাফট (মূল ল্যান্ডস্কেপ) বা ল্যান্ডস্কেপ যা প্রধানত মানুষের প্ররোচিত পরিবর্তনের আগে বিদ্যমান ছিল এবং কাল্টুরল্যান্ডশ্যাফ্ট (সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য) মানব সংস্কৃতি দ্বারা নির্মিত একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য। স্লোটার যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভূগোলের প্রধান কাজ ছিল এই দুটি ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তনগুলি শনাক্ত করা।
প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য শব্দটি কখনও কখনও প্রান্তরের প্রতিশব্দ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়, তবে ভূগোলবিদদের জন্য প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য একটি বৈজ্ঞানিক শব্দ যা জৈবিক, ভূতাত্ত্বিক, জলবায়ু এবং একটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের অন্যান্য দিকগুলিকে বোঝায়, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলিকে কখনও প্রান্তর শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয় না।[১১]
প্রাকৃতিক এবং সংরক্ষিত
প্রাকৃতিক শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে যে কারণে বিষয়গুলো জটিল। একদিকে আভিধানিকভাবে প্রকৃতির মূল অর্থ হচ্ছেঃ “মানুষ বা মানব সৃষ্টির বিপরীতে উদ্ভিদ, প্রাণী, ল্যান্ডস্কেপ এবং পৃথিবীর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এবং পণ্য সমষ্টিগতভাবে শারীরিক জগতের ঘটনা।”[১২]
প্রথম সংজ্ঞাটির দ্বৈতবাদের মূলটি হ’ল একটি “প্রাচীন ধারণা”, কারণ প্রথমদিকে লোকেরা মানুষবিহীন পরিবেশকে অন্য হিসেবে দেখতো। সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ থেকে পৃথক করা হয়েছিলো।[১৩] পশ্চিমে খ্রিস্টধর্মের পতনের কাহিনী, এটাই স্বর্গ থেকে মানবজাতির বহিষ্কার, যেখানে সমস্ত সৃষ্টি মিলেমিশে বাস করত একটি অপূর্ণ বিশ্বের মধ্যে যা প্রধান প্রবাদ ছিল।[১৪]কার্তেসিয়ান দ্বৈতবাদ, সপ্তদশ শতাব্দী থেকে, প্রকৃতি সম্পর্কে এই দ্বৈতবাদী চিন্তাকে আরও জোরদার করেছিল।[১৫] এই দ্বৈতবাদে কৃত্রিম থেকে প্রাকৃতিক শ্রেষ্ঠত্বর প্রতি মূল রায় যায়। আধুনিক বিজ্ঞান অবশ্য প্রকৃতির একান্ত দৃষ্টিভঙ্গির দিকে এগিয়ে চলেছে।[১৬]
উনিশ শতকের মাঝামাঝি আমেরিকানরা বুঝতে পেরেছিল যে এই জমি আরও বেশি বেশি গৃহপালিত হয়ে উঠছে এবং বন্যজীবন বিলুপ্ত হচ্ছে। এর ফলে আমেরিকান ন্যাশনাল পার্ক এবং অন্যান্য সংরক্ষণ সাইট তৈরি হয়েছিল।[১৭] প্রাথমিকভাবে এটি বিশ্বাস করা হয়েছিল যে প্রাকৃতিক দৃশ্য হিসাবে দেখা যা কিছু করা দরকার তা হ’ল “লগিং, চারণ, আগুন এবং পোকার প্রকোপের মতো ঝামেলা এড়ানো”।[১৮] এটি এবং পরবর্তী পরিবেশ নীতি, প্রান্তরের ধারণাগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।[১৯] তবে, এই নীতিটি ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি, এবং ইয়েলোস্টোন পার্কে, একটি উদাহরণ ধরতে, বিদ্যমান বাস্তুশাস্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছিল, প্রথমে নেটিভ আমেরিকান জনগোষ্ঠী বাদ দিয়ে এবং পরে নেকড়ে বিনাশের মাধ্যমে।[২০]
এক শতাব্দী পরে, বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, এটি বিশ্বাস করা শুরু হয়েছিল যে “উদ্বোধনের হাত থেকে সুরক্ষা পার্কের মান সংরক্ষণের পক্ষে অপর্যাপ্ত ছিল” এবং জাতীয় উদ্যানগুলির প্রাকৃতিক দৃশ্যকে তার ‘‘ প্রাকৃতিক ’’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রত্যক্ষ মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।[২১] লিওপোল্ড রিপোর্টে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে “একটি জাতীয় উদ্যানের আমেরিকাতে আদিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা উচিত”[২২] এই নীতি পরিবর্তনটি শেষ পর্যন্ত ১৯৯০এ ইয়েলোস্টোন পার্কে নেকড়েদের পুনরুদ্ধারের দিকে পরিচালিত করে।
যাইহোক, বিভিন্ন শাখায় সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে প্রাকৃতিক বা “আদিম” ভূদৃশ্য একটি মিথ, এবং এটি এখন উপলব্ধি হয়েছে যে মানুষ দীর্ঘকাল ধরে প্রাকৃতিকটিকে একটি সাংস্কৃতিক প্রাকৃতিক দৃশ্যে রূপান্তরিত করে চলেছে এবং অল্প কিছু জায়গাই মানব প্রভাব থেকে মুক্ত রয়েছে।[২৩] আগের সংরক্ষণ নীতিগুলি পরে সাংস্কৃতিক হস্তক্ষেপ হিসাবে দেখা হত। কী প্রাকৃতিক এবং কোনটি কৃত্রিম বা সাংস্কৃতিক ধারণা এবং কীভাবে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের আবিষ্কারে এবং এটি কীভাবে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে তা আবিষ্কার করায় আরও জটিল হয়ে উঠেছে।[২৪]
প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে দ্বৈত চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি পণ্ডিতদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। মারিয়া কাইকা বলেছেনঃ “আজকাল, আমরা প্রকৃতি এবং সংস্কৃতিটিকে আরও একবার জড়িত হিসাবে দেখতে শুরু করেছি। এন্টোলজিক্যালি আর আলাদা করা হয় না। আমি একটি বগিযুক্ত বিশ্ব হিসাবে বুঝতে পেরেছি কি, ঝরঝরে এবং কঠোরভাবে সিলযুক্ত সমন্বিত, স্বায়ত্তশাসিত ‘স্থান খামে’ (বাড়ি, শহর এবং প্রকৃতি) আসলে একটি অগোছালো আর্থ-সামাজিক ধারাবাহিকতা ছিল ”[২৫] এবং উইলিয়াম ক্রোনন প্রান্তরের ধারণাটির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখান কারণ এটি “দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে জড়িত যাতে মানব সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির বাহিরে থাকে না”[২৬] এমনকি ম্যানহাটনের ফুটপাতের ফাটলে বন্যতা (প্রান্তরের বিপরীতে) কোথাও পাওয়া যেতে পারে বলে নিশ্চিত করে।[২৭] ক্রোননের মতে আমাদের “দ্বৈতবাদকে ত্যাগ করতে হবে যা বাগানের গাছটিকে কৃত্রিম হিসাবে দেখায় এবং প্রান্তরে গাছ প্রাকৃতিক হিসাবে কিছু চূড়ান্ত অর্থে উভয়ই বন্য।”[২৮] এখানে তিনি কিছুটা বুনো নিয়মিত অভিধানের অর্থ ব্যক্ত করেন, এটি জোর দেওয়ার জন্য যে কোনও বাগান এমনকি প্রাকৃতিক কিছুই সম্পূর্ণরূপে মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়।
ইউরোপ
ইউরোপের ভূদৃশ্য এমনকি লোকও কোন অঞ্চলে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে, স্কটল্যান্ডের কায়ারনগর্ম পর্বতের মতো, কম জনসংখ্যার ঘনত্বের সাথে, কেবল “কেয়ার্নগর্ম পর্বতমালার উচ্চ শিখরগুলি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত।[২৯] এই উচ্চ শিখরগুলি অবশ্যই কায়রঙ্গমগুলির অংশ মাত্র, এবং স্কটল্যান্ডের প্রান্তরে আর নেকড়ে, ভাল্লুক, বুনো শুয়োর নেই।[৩০][৩১][৩২] ক্যালেডোনিয়ান বন হিসাবে স্কটস পাইন এছাড়াও আজকের চেয়ে স্কটিশ ভূদৃশ্যে অনেক বেশি আচ্ছাদিত।[৩৩]
সুইস জাতীয় উদ্যান, তবে আরও প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এবং এটি ইউরোপের অন্যতম পুরোনো উদ্যান। দর্শনার্থীদের মোটর রোড, বা পার্কের পথ দিয়ে শিবির স্থাপনের অনুমতি নেই। পার্কের মধ্যে একমাত্র স্থাপনা হলো চামনা ক্লুওজা, যা একটি পাহাড়ের ঝুপড়ি। এখানে প্রাণী বা উদ্ভিদকে বিরক্ত করাও নিষিদ্ধ এমনকি পার্কে খুজে পাওয়া কিছু নেওয়া নিষিদ্ধ। কুকুর আনা নিষিদ্ধ। এসব কড়া নিয়মের কারণে সুইস জাতীয় উদ্যানটি আল্পসের একমাত্র পার্ক যা আইইউসিএন দ্বারা কঠোর প্রকৃতি সংরক্ষণ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, যা হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সূচক।[৩৪]
প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের ইতিহাস
মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি দ্বারা পৃথিবীতে কোনও স্থান প্রভাবিত হয় না। মানুষ জীববৈচিত্রের অংশ, কিন্তু মানুষের ক্রিয়াকলাপ জীববৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করে, এবং এটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিবর্তন করে।[৩৫] মানবজাতি ভূদৃশ্যের এতদূর পরিবর্তন করেছে যে পৃথিবীতে খুব কম জায়গাই প্রাচীন আছে। তবে একবার মানব প্রভাবমুক্ত হলে প্রাকৃতিক স্থান প্রাকৃতিক বা কাছাকাছি প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।[৩৬]
এমনকি প্রত্যন্ত ইউকন এবং আলাস্কান প্রান্তরে, দ্বি-জাতীয় ক্লুয়েন-রঞ্জেল-সেন্ট। ইলিয়াস-গ্লেসিয়ার বে-তাতেনশিনি-আলসেক পার্ক সিস্টেমটিতে ক্লুয়েন, রাইঞ্জেল-সেন্ট ইলিয়াস, গ্লেসিয়ার বে এবং তাতশনশিনি-আলসেক পার্কগুলি সমন্বিত, ইউনেস্কোর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মানুষের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। কারণ ক্লুয়েন ন্যাশনাল পার্কটি চ্যাম্পেইন এবং শিক ফার্স্ট নেশনস ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে যাদের এই অঞ্চলে দীর্ঘকালীন ইতিহাস রয়েছে। যদিও কানাডিয়ান সরকারের সাথে তাদের নিজ নিজ চূড়ান্ত চুক্তির মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলে ফসলের অধিকার আইন করে দিয়েছে।
সাংস্কৃতিক শক্তির উদাহরণ
সাংস্কৃতিক শক্তির ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই ভূদৃশ্যের উপর প্রভাব আছে।[৩৭] সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপগুলি এমন জায়গা বা শিল্পকর্ম যা মানুষ তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। ল্যান্ডস্কেপে সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশের উদাহরণগুলি হলোঃ রাস্তাঘাট, পার্কিংয়ের জায়গা, বালির গর্ত, ভবন, হাইকিং ট্রেলস, উদ্ভিদ পরিচালনা সহ আক্রমণাত্মক প্রজাতি প্রবর্তন, উদ্ভিদ আহরণ বা অপসারণ, প্রাণীজ পরিচালনা, খনন, শিকার, প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপিং, কৃষিকাজ এবং বনজ, দূষণ। যে অঞ্চলগুলি প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে বিভ্রান্ত হতে পারে সেগুলির মধ্যে রয়েছে পাবলিক পার্ক, খামার, বাগান, কৃত্রিম হ্রদ এবং জলাধার, পরিচালিত বন, গল্ফ কোর্স, প্রকৃতি কেন্দ্রের ট্রেইল, উদ্যান ইত্যাদি।
পৃথিবীর গোলার্ধ শব্দ যুগল ভূগোল এবং মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যায় ব্যবহৃত হয়; এর দ্বারা পৃথিবীকে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়। গোলার্ধ শব্দটির উত্পত্তি প্রাচীন গ্রীক শব্দ “ἡμισφαίριον” হতে, যা প্রাচীন ল্যাটিন শব্দ “hēmisphairion”-কে নির্দেশ করে; এর অর্থ ‘একটি গোলকের অর্ধেক’ (“half of a sphere”)।
অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশ চিহ্নিতকরণের দ্বারা এই জাতীয় বিভাগগুলি সবচেয়ে সাধারণভাবে প্রদর্শন করা হয়:[১]