একটি রেখার (যেকোনো) দুটি স্বতন্ত্র বিন্দুর মধ্যে “উল্লম্ব পরিবর্তন” থেকে “অনুভূমিক পরিবর্তন” এর অনুপাত খুঁজে বের করে ঢাল গণনা করা হয়। কখনও কখনও অনুপাতটি ভাগফল হিসাবে প্রকাশ করা হয়, একই রেখায় প্রতি দুটি স্বতন্ত্র বিন্দুর জন্য একই সংখ্যা দেয়। একটি রেখা যা কমছে তার একটি ঋণাত্মক “বৃদ্ধি” আছে।
বিশ্লেষণ
স্থানাঙ্ক জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির সাহায্যে
ধরি, ছক কাগজে দুটি বিন্দু ( x 1 , y 1 ) ও ( x 2 , y 2 ) । তাহলে বিন্দু দুটির সংযোজক সরলরেখার নতি হবে:- m = Δ y Δ x = y 2 − y 1 x 2 − x 1
আবার সরলরেখাটি x -অক্ষের সঙ্গে θ কোণে আনত থাকলে, সেক্ষেত্রে নতি হবে m = t a n θ
উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, একটি সমকোণী ত্রিভুজ তৈরী হয়েছে। সেখান থেকে,
m = t a n θ = y 2 − y 1 x 2 − x 1 = Δ y Δ x
অবকলনের সাহায্যে
নতিকে এভাবেও প্রকাশ করা যায়:
m = d y d x
কোন বক্ররেখার কোন বিন্দুতে নতি নির্ণয় করতে হলে, ওই বিন্দুতে স্পর্শক অঙ্কন করা হয়। তারপর নতি নির্ণয় করা হয়।
সরলরেখায় প্রয়োগ
y = m x + c সমীকরণটি সরলরেখার অন্যতম প্রধান সমীকরণ। এতে ব্যবহৃত m পদটি নতি নির্দেশ করে।
৪৫° রেখা
কোনো সরলরেখা মূলবিন্দুগামী হলে, যদি তার নতি ১ এর সমান হয়, তাকে ৪৫° রেখা বলে।
এটি y = m x + c সমীকরণটি মেনে চলে। এক্ষেত্রে c = 0 (যেহেতু y -অক্ষকে ( 0 , 0 ) বিন্দুতে ছেদ করে।)
মূলবিন্দুগামী যে কোনও সরলেখার সমীকরণ তাই y = m x ।
৪৫° রেখায় m = 1 হবার জন্য, এটির সমীকরণ হয়:- y = x
এখানে আবার নতিকোণ ( θ )=৪৫° বা π 4 হবার জন্যই, m = t a n π 4 = 1
সাধারণ সমীকরণে
সরলরেখার সাধারণ সমীকরণ:- a x + b y + c = 0 এখান থেকে নতি পাওয়া যায়, m = − a b
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ হল কোন নির্দিষ্ট স্থানের অধিবাসী কিংবা স্থানীয় ব্যক্তিদেরকে সাধারণভাবে শনাক্তকরণে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যা সাধারণত উক্ত জায়গাটির নামানুসারে উদ্ভব হয়[১]।এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঢাকা শহরের অধিবাসীকে “ঢাকাইয়া“, যুক্তরাষ্ট্র নামক দেশের ব্যক্তিকে “আমেরিকান” এবং সোয়াহিলি উপকূলের অধিবাসীকে সোয়াহিলি বলা হয়।
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ সবসময় কোন ব্যক্তির নাগরিকত্ব কিংবা বসবাসের স্থানকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ নাও করতে পারে এবং অনেক বিশেষণ কোন ব্যক্তির জাতিতাত্ত্বিক নামের সঙ্গে মিশে দ্ব্যর্থতা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ “থাই” বলতে থাইল্যান্ডের যে কোন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর যেকোনো অধিবাসী কিংবা নাগরিককে বুঝাতে পারে অথবা আরও সংকীর্ণ ভাবে থাই জাতির সদস্যকে বোঝাতে পারে।
অন্যদিকে কিছু ব্যক্তিবর্গ একাধিক জাতীয়তাসূচক বিশেষণে বিশেষায়িত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের স্থানীয় অধিবাসীকে “ব্রিটিশ“, “ব্রিটন” কিংবা কথ্যভাষায় “ব্রিট” বলা যেতে পারে। কিছু ভাষায় জাতীয়তাসূচক শব্দ অন্য ভাষার শব্দ ভান্ডার থেকে উদ্ভূত হতে পারে। যেমন ইংরেজি ভাষায় “Québécois(e)” শব্দটি প্রায়ই কুইবেকের অধিবাসীদেরকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় (যদিও কুইবেকার ও ব্যবহৃত হয়)।
জলবায়ুবিদ্যা বলতে প্রাকৃতিক ভূগোলের এমন একটি শাখাকে বুঝানো হয় যেখানে কোন একটি স্থানের কয়েক বছরের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়।
ভিন্ন উপস্থাপনায়
৩০ বছরের গড় তাপমাত্রার মানচিত্র। দীর্ঘ সময়ের গড় উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্যপঞ্জী কখনো কখনো “জলবায়ুবিদ্যা” বলে নির্দেশিত হয়।
বিষয়ক অধ্যয়ন খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর যুদ্ধকালীন সময় হতে শুরু হয়েছে। এর বিস্তৃতি হান রাজবংশের অধীনে চীনা সাম্রাজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল চীন ভূখণ্ড গঠনের পরও বহুদিন যাবত্ চলেছে। ১১দশ শতাব্দীতে কম্পাস আবিষ্কারের দ্বারা (সুং রাজবংশের শাসনামলে) মাধ্যমে এটি স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে এবং ১৫দশ শতকে অ্যাডমিরাল ঝেং হে-র অধীনে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা অনুসন্ধান দলের সমুদ্র যাত্রার সময় (মিং রাজবংশের আমলে) এটি মধ্যগগণে অবস্থান করছিলো।
ঘূর্ণন বলতে কোনও বিন্দুকে বা কেন্দ্রকে ঘিরে কোনও বস্তুর বৃত্তাকার গতিকে বোঝায়। একটি ত্রিমাত্রিক বস্তু অসীম সংখ্যক কাল্পনিক রেখাকে ঘিরে ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে পারে; এগুলিকে ঐ বস্তুর ঘূর্ণন অক্ষ বলে। যদি অক্ষরেখাটি বস্তুটির ভরকেন্দ্র দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে বলা হয় যে বস্তুটি নিজ অক্ষের উপরে ঘূর্ণনশীল। যেমন পৃথিবীর ভিতর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ মেরু বরাবর একটি সরলরেখা কল্পনা করা হয়, যাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী পূর্ব–পশ্চিমে ঘোরে। একে পৃথিবীর অক্ষ বা মেরুরেখা বলে। পৃথিবী তার অক্ষে সম্পূর্ণ একবার ঘুরতে ২৪ ঘণ্টা সময় নেয়।
যদি বস্তুটি বহিঃস্থ কোনও বিন্দুকে ঘিরে বৃত্তাকার গতিপথে ভ্রমণ করে, তাহলে সেটিকে আবর্তন বা কাক্ষিক আবর্তন বলে। যেমন পৃথিবীকে সূর্যের চারপাশে আবর্তন করছে।
যে রেখা কোনো সুষম বস্তু অথবা চিত্রকে দু’টি প্রতিসম অংশে বিভক্ত করে তাকে অক্ষ বলে। যেমন – বৃত্তেরব্যাস।
রাবরেখা বা অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ হল হিমবাহের অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় এর সাথে যেসব পাথরখণ্ড, বালি, কাদা প্রভৃতি বাহিত হয়, হিমবাহ গলতে শুরু করলে সেগুলি হিমবাহের প্রবাহপথের আশেপাশে সঞ্চিত হতে থাকে। এই অসংবদ্ধ মিশ্র পদার্থের সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বা অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ বলে।[১]
প্রকারভেদ
অবস্থান ও প্রস্তুতি অনুযায়ী গ্রাবরেখাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
পার্শ্ব গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের দুইপাশে সরু দৈর্ঘ্য আকারে যে সরু গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
ভূমি গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের নিচে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
প্রান্ত গ্রাবরেখাঃ হিমবাহ যেখানে এসে মিলিত হয় অর্থাৎ হিমবাহের সামনে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
মধ্য গ্রাবরেখাঃ দু’দিক থেকে এগিয়ে আসা দুটি হিমবাহ যেখানে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের গ্রাবরেখা দ্বারা সৃষ্ট গ্রাবরেখাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখাঃ অনেক সময় নানা আকৃতির পাথরের টুকরো হিমবাহের ফাটলের মধ্যে ঢুকে হিমবাহের মধ্যে আবদ্ধ হয়। এই ধরনের গ্রাবরেখা হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা নামে পরিচিত।
উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়। উপরিউক্ত গ্রাবরেখাগুলি ছাড়াও ভূপৃষ্ঠ-এ যে বিশেষ ধরনের কিছু গ্রাবরেখা দেখা যায় সেগুলি হল-
অবিন্যস্ত গ্রাবরেখাঃহিমবাহের প্রান্তভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত গ্রাবরেখা কে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
বলয়ধর্মী গ্রাবরেখাঃহিমবাহের প্রান্তভাগে বলয়ের আকারে সঞ্চিত গ্রাবরেখা কে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
রোজেন গ্রাবরেখাঃগ্রাবরেখা গুলি একে অপরের ওপর সঞ্চিত হলে তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখাঃউপকূল অঞ্চলে হিমবাহ প্রসারিত হলে সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় এদের স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা বলে।
গ্রহণ (ইংরেজি: Eclipse এক্লিপ্স্) বলতে একটি খ-বস্তুর কারণে অন্য একটি খ-বস্তুর আংশিক বা পূর্ণরূপে আড়াল হওয়াকে বোঝায়। যখন তিনটি খ-বস্তু একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন তাদের মধ্যে একটি খ-বস্তু থেকে বাকী দুইটি খ-বস্তুর মধ্যে সংঘটিত গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। যে খ-বস্তুটি আড়াল করে, তাকে বলে গ্রহণকারী খ-বস্তু। আর যে খ-বস্তুটি আড়ালে চলে যায়, তাকে বলে গ্রহণকৃত খ-বস্তু।[১]
The ESO 3.6-metre telescope at La Silla, during observations. The Milky Way, our own galaxy, stretches across the picture: it is a disc-shaped structure seen perfectly edge-on. Above the telescope´s dome, here lit by the Moon, and partially hidden behind dark dust clouds, is the yellowish and prominent central bulge of the Milky Way. The whole plane of the galaxy is populated by about a hundred thousand million stars, as well as significant amounts of interstellar gas and dusts. The dust absorbs visible light and reemits it at longer wavelength, appearing totally opaque at our eyes. The ancient Andean civilizations saw in these dark lanes their animal-shaped constellations. By following the dark lane which seems to grow from the centre of the Galaxy toward the top, we find the reddish nebula around Antares (Alpha Scorpii). The Galactic Centre itself lies in the constellation of Sagittarius and reaches its maximum visibility during the austral winter season. The ESO 3.6-metre telescope, inaugurated in 1976, currently operates with the HARPS spectrograph, the most precise exoplanet “hunter” in the world. Located 600 km north of Santiago, at 2400 metres altitude in the outskirts of the Chilean Atacama Desert, La Silla was first ESO site in Chile and the largest observatory of its time. This photograph was taken by ESO Photo Ambassador Serge Brunier. Links ESO Photo Ambassadors webpage.
যেমন – যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণ সূর্যে অবস্থিত কাল্পনিক পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ঘটলেও, চাঁদের দিকে মুখ করে থাকা পৃথিবীপৃষ্ঠের মানুষেরাও এই চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, কেননা সূর্য একটি তারা বলে তার আলো পৃথিবীতে বাধা পায় এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হল একটি তারা ও দুইটি অন্য ধরনের জ্যোতিষ্ক নিয়ে গঠিত ব্যবস্থায় সংঘটিত গ্রহণ।
এছাড়া প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপগ্রহগুলি যখন তাদের গ্রহের পেছনে চলে যায়, তখন পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে তাদেরও গ্রহণ ঘটে।
একটি যুগ্ম তারা ব্যবস্থার কক্ষপথের তল পৃথিবীর মধ্য দিয়ে বা খুব কাছাকাছি অতিক্রম করলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পর্যায়বৃত্তভাবে একটি তারা অপরটির গ্রহণ ঘটায়। এই ধরনের গ্রহণ হল দুইটি তারা ও একটি অন্য ধরনের জ্যোতিষ্ক নিয়ে গঠিত ব্যবস্থায় সংঘটিত গ্রহণ।
যখন গ্রহণকারী বস্তুর আপাত আকার গ্রহণকৃত বস্তুটির আপাত আকারের চেয়ে অনেক বড় হয়, তবে সেই ঘটনাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশেষ পরিভাষায় “অদৃশ্যকরণ” (occultation অকাল্টেশন) বলে। যেমন – চাঁদের পেছনে দূরের কোন তারা, নীহারিকা বা গ্রহের সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যাওয়া, অথবা কোন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপগ্রহের কিংবা অনুসন্ধানী মহাকাশযানেরসৌরজগতের কোন খ-বস্তুর পেছনে সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যাওয়া।
যখন অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খ-বস্তু অনেক বড় একটি খ-বস্তুর সামনে দিয়ে চলে যায়, এবং খুব ছোট আকারের গ্রহণ ঘটে, তখন তাকে গ্রহণ না বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় “অতিক্রম” (transit ট্রানজিট) বলে। বুধ ও শুক্র গ্রহ দুইটি প্রায়ই সূর্যকে এ অর্থে “অতিক্রম” করে। ছোট উপগ্রহগুলি তাদের নিজ নিজ গ্রহগুলিকে “অতিক্রম” করতে পারে।
[১][২] এ সমভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে সমতল, মসৃন অঞ্চলের অন্তর্গত এবং এখানে খুব কম মানুষই গিয়েছে। [৩] মহাসাগরীয় বেসিনের মূল ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলোর অন্যতম হলো গভীর সমুদ্রের সমভূমিসমূহ (অন্যান্য উপাদানগুলো হলো মধ্য মহাসাগরীয় উচ্চ শৈলশ্রেণি এবং সমভূমির প্রান্তের দুপাশের পাহাড়শ্রেণি। এ উপাদানগুলো ছাড়া সক্রিয় মহাসাগরীয় বেসিনসমূহ (ঐগুলো আবার গতিশীল টেকটনিক প্লেট এর সীমানার সাথে সম্পর্কযুক্ত) also typically include an oceanic trench and a subduction zone.
খরা হল জল সরবরাহে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতির একটি ঘটনা, যা বায়ুমণ্ডলীয় (গড় বৃষ্টিপাতের নীচে), ভূ-পৃষ্ঠের জল বা ভূগর্ভস্থ জল হতে পারে। একটি খরা এক মাস এমনকি এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং কৃষির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বার্ষিক শুষ্ক মৌসুমগুলি খরার বিকাশ এবং পরবর্তীতে গুল্ম আগুনের সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। তাপের সময়কাল জলীয় বাষ্পের দ্রুত বাষ্পীভবনের মাধ্যমে খরা পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ করতে পারে।
খরা পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে জলবায়ুর একটি পুনরাবৃত্ত বৈশিষ্ট্য। যাইহোক, এই নিয়মিত খরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও চরম এবং আরও অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে ডেনড্রোক্রোনোলজি, বা ট্রি রিংস ডেটিং-এর উপর ভিত্তি করে গবেষণাগুলি নিশ্চিত করে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং দ্বারা প্রভাবিত খরা 1900-এ ফিরে যায়।
অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি, যেমন Cactaceae (বা cacti) পরিবারের খরা সহনশীলতা অভিযোজন আছে, যেমন – পাতার ক্ষেত্রফল কমে যাওয়া এবং খরা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে মোমযুক্ত কিউটিকল। কেউ কেউ দাফন বীজ হিসাবে শুকনো সময়কাল বেঁচে থাকে। আধা-স্থায়ী খরা মরুভূমি এবং তৃণভূমির মতো শুষ্ক বায়োম তৈরি করে। দীর্ঘস্থায়ী খরা ব্যাপক অভিবাসন ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। বেশিরভাগ শুষ্ক বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিকভাবেই কম উৎপাদনশীলতা রয়েছে। নথিভুক্ত ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়িত খরা চিলির আতাকামা মরুভূমিতে (400 বছর) হয়েছিল।
ইতিহাস জুড়ে, খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং সমাজের বাকি অংশের উপর প্রভাবের কারণে মানুষ সাধারণত খরাকে “বিপর্যয়” হিসাবে দেখেছে। মানুষ প্রায়ই খরাকে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অতিপ্রাকৃত শক্তির ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। এটি প্রাচীনতম নথিভুক্ত জলবায়ু ঘটনাগুলির মধ্যে একটি, যা গিলগামেশের মহাকাব্যে উপস্থিত এবং জোসেফের আগমন এবং প্রাচীন মিশর থেকে পরবর্তী যাত্রার বাইবেলের গল্পের সাথে যুক্ত। 9,500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিলিতে শিকারী-সংগ্রাহক অভিবাসন ঘটনাটির সাথে যুক্ত হয়েছে, যেমনটি প্রায় 135,000 বছর আগে আফ্রিকার বাইরে এবং বাকি বিশ্বে প্রাথমিক মানুষের নির্বাসন রয়েছে। খরা প্রতিরোধ বা এড়ানোর জন্য আচার-অনুষ্ঠান বিদ্যমান, বৃষ্টি তৈরি করা নাচ থেকে শুরু করে মানুষের বলিদান পর্যন্ত যেতে পারে। আজকাল, সেই প্রাচীন অনুশীলনগুলি বেশিরভাগ অংশে লোককাহিনীতে নিবদ্ধ এবং আরও যুক্তিযুক্ত জল ব্যবস্থাপনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
প্রকার
মানুষ খরাকে তিনটি প্রধান উপায়ে সংজ্ঞায়িত করে:
১। আবহাওয়া সংক্রান্ত খরা ঘটে যখন গড় বৃষ্টিপাতের সাথে দীর্ঘ সময় থাকে। আবহাওয়া সংক্রান্ত খরা সাধারণত অন্যান্য ধরণের খরার আগে থাকে।
২। কৃষি খরা ফসল উৎপাদন বা পরিসরের বাস্তুবিদ্যাকে প্রভাবিত করে। এই অবস্থাটি বৃষ্টিপাতের মাত্রার যে কোনো পরিবর্তন থেকে স্বাধীনভাবেও প্রকাশিত হতে পারে যখন কৃষি খরা হয় তখন বর্ধিত সেচ বা মাটির অবস্থা এবং দুর্বল পরিকল্পিত কৃষি প্রচেষ্টার কারণে ফসলের ক্ষয় হয় এবং পানির ঘাটতি ঘটায়। যাইহোক, একটি সাধারণ খরা বৃষ্টিপাতের বর্ধিত সময়ের কারণে ঘটে।
৩। জলবিষয়ক খরা দেখা দেয় যখন জলাশয়, হ্রদ এবং জলাধারগুলির মতো উৎসগুলোতে উপলব্ধ জলের মজুদ সাধারণ মাত্রা থেকে নীচে নেমে আসে। হাইড্রোলজিক্যাল খরা ধীরে ধীরে দেখা যায় কারণ এতে সঞ্চিত পানি জড়িত থাকে যা ব্যবহার করা হয় কিন্তু পুনরায় পূরণ করা হয় না। কৃষি খরার মতো, এটি শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতের ক্ষতির কারণেই হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, 2007 সালের দিকে কাজাখস্তানকে সোভিয়েত শাসনের অধীনে আরাল সাগর থেকে অন্য দেশগুলির দিকে সরিয়ে নেওয়া জল পুনরুদ্ধার করার জন্য বিশ্বব্যাংকের দ্বারা প্রচুর অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। অনুরূপ পরিস্থিতিতে তাদের বৃহত্তম হ্রদ, বলখাশ, সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল।
খরা অব্যাহত থাকায় এর আশেপাশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে এবং স্থানীয় জনগণের উপর এর প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
কারণ
ক্ষয় এবং মানুষের কার্যকলাপ
মানুষের কার্যকলাপ সরাসরি যেমন অতিরিক্ত কৃষিকাজ, অত্যধিক সেচ,বন উজাড়, এবং ক্ষয় যথাঃ বিরূপভাবে জল ধারণ এবং ধরে রাখার ক্ষমতা প্রভাবিত হওইয়া খরার অন্যতম কারণ ।শুষ্ক জলবায়ুতে, ক্ষয়ের প্রধান উৎস হল বায়ু। ক্ষয় বায়ুর উপাদানের আন্দোলনের ফলাফল হতে পারে. বাতাসের কারণে ছোট ছোট কণাগুলোকে উত্তোলন করা যেতে পারে এবং তাই অন্য অঞ্চলে চলে যেতে পারে। বাতাসের মধ্যে স্থগিত কণাগুলি ঘর্ষণ (পরিবেশগত উত্তরাধিকার) দ্বারা ক্ষয় সৃষ্টিকারী কঠিন বস্তুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বায়ু ক্ষয় সাধারণত এমন এলাকায় ঘটে যেখানে গাছপালা কম বা নেই, প্রায়শই এমন এলাকায় যেখানে গাছপালা সমর্থন করার জন্য অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন
বিভিন্ন গ্লোবাল ওয়ার্মিং পরিস্থিতির জন্য তাপ তরঙ্গ, খরা এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনাগুলির জন্য প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় চরম ঘটনার ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বে এবং বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কৃষির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে যা খরা শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিছু এলাকায় খরার পাশাপাশি বন্যা ও ভাঙন বাড়তে পারে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কিছু প্রস্তাবিত সমাধান যা আরও সক্রিয় কৌশলগুলিতে ফোকাস করে – একজনের জন্য একটি স্পেস সানশেড ব্যবহারের মাধ্যমে সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা, তাদের সাথে খরার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূমি সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন খরা ও মরুকরণ বাড়ায়। শত কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার বড় অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রভাব
খরা এবং পানির ঘাটতির প্রভাবকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক।
পরিবেশগত প্রভাবের ক্ষেত্রে: নিম্ন পৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ জল-স্তর, নিম্ন প্রবাহ-স্তর (ন্যূনতমের নীচে হ্রাস যা উভচর জীবনের জন্য সরাসরি বিপদের দিকে পরিচালিত করে), ভূ-পৃষ্ঠের জলের দূষণ বৃদ্ধি, জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া, আরও এবং বৃহত্তর দাবানল, উচ্চতর ডিফ্লেশনের তীব্রতা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, গাছের স্বাস্থ্য খারাপ এবং কীটপতঙ্গ এবং ডেনড্রয়েড রোগের উপস্থিতি।
অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে নিম্ন কৃষি, বন, খেলা এবং মাছ ধরার আউটপুট, উচ্চ খাদ্য-উৎপাদন খরচ, হাইড্রো প্ল্যান্টে কম শক্তি-উৎপাদনের মাত্রা, জলের পর্যটন এবং পরিবহন রাজস্ব হ্রাসের কারণে ক্ষতি, শক্তি সেক্টরের জন্য জল সরবরাহের সমস্যা এবং প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলির জন্য ধাতুবিদ্যা, খনির, রাসায়নিক, কাগজ, কাঠ, খাদ্যদ্রব্য শিল্প ইত্যাদি, পৌর অর্থনীতির জন্য জল সরবরাহের ব্যাঘাত।
সামাজিক ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে এই ঘটনার সরাসরি সংস্পর্শে আসা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব (অতিরিক্ত তাপ তরঙ্গ), জল সরবরাহের সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা, দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ খাদ্য-খরচ, ব্যর্থ ফসলের কারণে সৃষ্ট চাপ ইত্যাদি। এটি ব্যাখ্যা করে কেন খরা এবং সুপেয় পানির ঘাটতি একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে যা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ব্যবধান বাড়ায়
এই তিন প্রকার কার্যের মধ্যে ক্ষয়কার্যই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্ষয়কার্যের উপরেই নদীর অবশিষ্ট আর দুটি কার্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইরকম ভাবেই নির্ভর করে।
পদ্মা নদীর তীরে ক্ষয়
নদী তার বিশেষ কয়েকটি ধর্ম যেমন: প্রবল গতিশক্তি, জলরাশির চাপ, দ্রবণ প্রভৃতি দ্বারা নদী উপত্যকা সংশ্লিষ্ট শিলাস্তরকে বিভিন্নমাত্রায় ও বিভিন্নভাবে ক্ষয় করতে করতে প্রবাহিত হতে থাকে। নদীর এরূপ কার্যকে নদীর ক্ষয়কার্য (Erosional Works of River) বলা হয়।[১]
বৈশিষ্ট্য
নদীর ক্ষয়কার্যের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
ক) নদীর ক্ষয়কার্যের পরিমাণ নির্ভর করে নদীর গতিবেগ, জলের পরিমান, স্থানীয় শিলাস্তরের গাঠনিক প্রকৃতি প্রভৃতি বিষয়ের উপর।
খ) নদীর ক্ষয়কার্যই প্রকারান্তরে নদীর অপর দুটি কার্য; বহন কার্য ও অবক্ষেপণ কার্যকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।
গ) নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সামগ্রিক উচ্চতা ও প্রশস্থতা হ্রাস পেতে থাকে।
নদীর ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়া মূলত পাঁচ প্রকার। যথা-
১. জলপ্রবাহজনিত ক্ষয় (Hydraulic Action): নদীর প্রবল গতিসম্পন্ন জলপ্রবাহের আঘাতে নদীখাত ও নদীপার্শ্বস্থ অপেক্ষাকৃত কোমল ও আলগা শিলাখন্ডগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ভেঙ্গে যায় ও জলপ্রবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে এগিয়ে চলে। একে নদীর জলপ্রবাহজনিত ক্ষয় বলে।
২. ঘর্ষণজনিত ক্ষয় (Attrition): নদীবাহিত প্রস্তরখন্ডগুলি (Boulders) একটি অপরটির সাথে সংঘর্ষের ফলে ভেঙ্গে গিয়ে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরখন্ডে এবং অবশেষে বালুকণায় পরিণত হয়। একে নদীর ঘর্ষণজনিত ক্ষয় বলে।
৩. অবঘর্ষজনিত ক্ষয় (Corrasion): নদীবাহিত প্রস্তরখন্ডগুলি চলতে চলতে নদীখাতের সাথে সংঘর্ষে সৃষ্টি করে। ফলে নদীবক্ষ ভীষণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। নদীর এরূপ ক্ষয়কে অবঘর্ষজনিত ক্ষয় বলে।
৪. দ্রবণজনিত ক্ষয় (Solution): স্থানীয় শিলাস্তরের বিশেষ প্রকৃতি (যেমন – চুনাপাথর, লবণশিলা প্রভৃতি) অথবা নদীর জলের বিশেষ প্রকৃতি (যেমন: অত্যধিক অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব) জনিত কারণে অনেকসময় নদীর গতিপথে অবস্থিত শিলা দ্রুত গলে গিয়ে বা দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। নদীর এরূপ ক্ষয়কে দ্রবণজনিত ক্ষয় বলে।
৫. বুদবুদজনিত ক্ষয় (Bubble Erosion): নদীর জলস্রোতের মধ্যে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এই বুদবুদগুলি জলপ্রবাহের মধ্যে চাপা পড়ে থাকলে তার মধ্যে বাতাসের চাপ প্রচন্ড থাকে। পরবর্তীতে এই বুদবুদ্গুলি মুক্ত হলে তা নদীপার্শ্বস্থ বা নদীমধ্যস্থ শিলাস্তরের গাত্রে ফেটে যায়। এইভাবে অজস্র বুদবুদ ক্রমাগত শিলাগাত্রে ফাটতে থাকলে শিলাগাত্রে ক্রমশ মৌচাকের ছিদ্রের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি হয়। একে নদীর বুদবুদজনিত ক্ষয় বলে।[৩]
নদীর ক্ষয়কার্যে সৃষ্টি হওয়া ভূমিরূপ
উচ্চগতিতে নদীর গতিপথের ঢাল খুব বেশি থাকে (সাধারণভাবে ২২°-৩৫°)। ফলে নদীর জলধারা প্রবলবেগে নিচের দিকে বয়ে চলে। এই অংশে নদীর প্রবল স্রোতের জন্য নদী উপত্যকা ভীষণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয় প্রাপ্ত শিলাখণ্ড গুলিকে নদী নিচের দিকে বহন করে নিয়ে যায়। তাই উচ্চগতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় করা এবং ক্ষয়িত দ্রব্য বহন করা। এই অংশে ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে কিছু কিছু সঞ্চয় কাজও হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে ক্ষয়, বহন ও স্বল্প পরিমাণে সঞ্চয়ের ফলে উচ্চ গতিতে নানা ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়ে থাকে। এগুলি হল:
১. ‘I’ আকৃতির উপত্যকা
পার্বত্য অঞ্চলে প্রবল জলস্রোত ও বাহিত শিলাখণ্ডের সঙ্গে নদীখাতের ঘর্ষণের ফলে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয়। এর ফলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি ‘I’ আকৃতির আকার ধারণ করে।
২. ‘V’ আকৃতির উপত্যকা
পার্বত্য অঞ্চলে প্রবল জলস্রোত ও শিলাখণ্ডের ঘর্ষণের সঙ্গে ভূমিক্ষয় ও ধসের ফলে নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য পার্শ্বক্ষয়ও ঘটে। ফলে নদীউপত্যকা অনেকটা ইংরেজি ‘V’ আকৃতির আকার ধারণ করে।
৩. গিরিখাত
বৃষ্টিবহুল অতি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নদীর নিম্নক্ষয়ের মাত্রা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও অতি গভীর হয়। এই ধরনেরঅতি গভীর ও সংকীর্ণ নদী উপত্যকাকেই গিরিখাত বলে। কোন কোন গিরিখাতের তলদেশের সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার হয়। উদাহরণ: সাধারণত হিমালয় প্রভৃতি নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ পেরুরকল্কা নদীর গিরিখাতটি হল বিশ্বের গভীরতম গিরিখাত। এর সর্বাধিক গভীরতা ৪৩৭৫ মিটার।
৪. ক্যানিয়ন
মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলের অতি সংকীর্ন ও অতি গভীর গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। এর উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রেরকলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হল পৃথিবীর বৃহত্তম গিরিখাত। এর দৈর্ঘ্য ৪৮৩ কিমি, প্রস্থ ১২ কিমি এবং সর্বাধিক গভীরতা ১.৯ কিমি। অন্যদিকে দক্ষিণ পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাত (এল-ক্যানন দ্য কলকা) হল পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত।
জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণ
নায়াগ্রা
জলপ্রপাত নানা কারণে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন:
ক. চ্যূতি
নদীর গতিপথে হঠাৎ কোন চ্যূতির সৃষ্টি হলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। আফ্রিকারজাম্বেসী নদী এর ওপর জাম্বেসী জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
খ. লাভা প্রবাহ
নদীর গতিপথে কঠিন লাভা স্তর অবস্থান করলে জলতলের প্রভেদ ঘটে। ফলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হতে পারে
গ. ভূ-আন্দোলন
ভূ-আন্দোলনের ফলে কোন স্থানে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হতে পারে। এরুপ স্থানের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
ঘ. ঝুলন্ত উপত্যকা
পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে ঝুলন্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার য়োসেমিতি জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পাশাপাশি অবস্থান করলে কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
উদাহরণ
পৃথিবীতে প্রায় ১০০ টির মত বড় জলপ্রপাত আছে। পৃথিবীর সুন্দর জলপ্রপাতগুলির মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লরেন্স নদী এর ওপর নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জাম্বেসী নদীর উপর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলায় রিওকরোনি নদীর এঞ্জেল জলপ্রপাত পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত (৯৮০ মিটার)। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের শরাবতী নদীর ওপর গেরসোপ্পা ওযোগ জলপ্রপাত দেশের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত (২৭৫ মিটার)।
জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ
নরম শিলা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে একসময় অপসারিত হয় এবং কঠিন শিলাস্তরও ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে। এরুপ অবস্থায় জলপ্রপাত পেছনের দিকে সরে যায়। একে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে।
নদীর পার্বত্য গতি ও সৃষ্ট ভূমিরূপ
নদীর পার্বত্য গতি
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রাথমিক গতি থাকে। এখানে নদীর স্রোত খুব প্রবল ও গভীরতা খুব বেশি। নদী এখানে খুব বেশি চওড়া হয় না। পর্বতের গা দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে নদী এখানে বইতে থাকে এবং নানা রকমের ভূমিরূপ গঠন করে থাকে। এগুলি হল:
অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ। পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ বা নদীর প্রবাহ পথে, নদীর ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও খাঁজ-কাটা শৈলশিরাগুলিকে অভিক্ষিপ্তাংশ বলে। পার্বত্য অঞ্চলে কোনও নদীর গতিপথে অনেক সময় পাহাড়গুলির অভিক্ষিপ্তাংশ এমন ভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, নদীর প্রবাহপথের একটি অংশ আর একটি অংশ থেকে আড়াল হয়ে যায় এবং নদীটি সামান্য একটু বাঁক নিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় দূর থেকে দেখলে নদীটির গতিপথ আড়াল হয়ে এবং মনে হয় শৈলশিরাগুলি যেন আবদ্ধ অবস্থায় আছে, একে তখন আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ (Interlocking Spur) বলে।
কর্তিত অভিক্ষিপ্তাংশ
পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে যখন হিমবাহ অগ্রসর হয়, সে সময় এই হিমবাহের গতিপথে যেসব পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ হিমবাহের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে, হিমবাহ সেগুলিকে কেটে বা ক্ষয় করে সোজা পথে অগ্রসর হয় এবং খাড়া ঢালের সৃষ্টি করে। এর ফলে পর্বতশিরার অবতল ও উত্তল ঢালটি হঠাৎ খাড়াভাবে হিমবাহ উপত্যকায় নেমে আসে। এইভাবে হিমবাহ দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত এবং ত্রিভূজের মতো দেখতে শৈলশিরাগুলোকে কর্তিত স্পার বা পল কাটা স্পার (Truncated Spur) বলে।যে কোনো নদীর পার্বত্য গতিপথে এই ধরনের বাধা থাকলে নদীটি এঁকে বাঁক প্রবাহিত হয়, যার ফলে আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ (Interlocking Spur) এর সৃষ্টি হয়। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর গতিপথে কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spur) দেখা যায়।
‘V’ অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, V অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ। পার্বত্য অঞ্চলে স্রোতের বেগ প্রচন্ড হওয়ায় নদী বড় বড় শিলাখন্ড, নুড়ি, পাথর প্রভৃতি বহন করে নামতে থাকে। শিলাখন্ডের আঘাতে নদীগর্ভ ক্ষয় হয়। পার্বত্যপথে নদীর ইংরেজি I অথবা সরু V আকৃতির নদী-উপত্যকা যখন খুব গভীর হয়, তখন তাকে গিরিখাত (Gorge) বলে। গিরিখাত যতটা গভীর ততটা চওড়া নয়। কখনো কখনো এই সমস্ত গিরিখাতের তলদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার হয়। এর উদাহরণ শতদ্রু, সিন্ধু, তিস্তা প্রভৃতি নদীর হিমালয়ের পার্বত্য গতিপথে গভীর নদী উপত্যকা বা গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায়। সিন্ধুনদের অরুণ গিরিখাত বিখ্যাত। দক্ষিণ পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাতটি হল বিশ্বের গভীরতম গিরিখাত যার গভীরতা সর্বাধিক ৪,৩৭৫ মিটার।
জলপ্রপাত ও প্রপাত কূপ
পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে আড়াআড়ি ভাবে কোনো কঠিন শিলা থাকলে, সেই কঠিন শিলা পাশের কোমল শিলা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পায় এবং কালক্রমে উঁচু হয়ে থাকে। নদীস্রোত সেই খাড়া ঢাল থেকে বিপুল বেগে নিচের কোমল শিলায় পড়ে জলপ্রপাতের (Walerfalls) সৃষ্টি করে। নদীর গতিপথের যে অংশে জলপ্রপাতের জলধারা সজোরে এসে পড়ে সেখানে এই জলধারা সজোরে এসে পড়ার ফলে মন্থকূপের সৃষ্টি হয় যাকে প্রপাতকূপ (Plunge-pool) বলে। জলপ্রপাতের উপস্থিতির ফলে নিচের কোমল শিলাস্তরের ভিতরের অংশের দ্রুত ক্ষয় হওয়ায় এই ধরনের জলপ্রপাত ধীরে ধীরে পিছনের দিকে সরে আসতে থাকে, একে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে। দক্ষিণ আমেরিকারভেনিজুয়েলারঅ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতটি হল পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।
ক্যানিয়ন
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্যানিয়ন হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ। বৃষ্টিহীন মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। দীর্ঘপথ ধরে বৃষ্টিহীন পার্বত্য মরু অঞ্চল দিয়ে কোনো নদী প্রবাহিত হলে নদীর জলের স্বল্পতার জন্য নদীখাতে শুধু মাত্র নিম্নক্ষয় হয়। শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম, ফলে দুই পাড় ভেঙ্গে জল নদীতে নেমে আসে না। তাই নদীর পার্শ্বক্ষয় বিশেষ হয় না। শুধুমাত্র নিম্নক্ষয়ের জন্য ‘I’ আকৃতির সুগভীর খাত বা ক্যানিয়ন (canyon) এর সৃষ্টি হয়। এর উদাহরণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কলোরাডো নদী পৃথিবী বিখ্যাত গ্রান্ড ক্যানিয়ন সৃষ্টি করেছে যার দৈর্ঘ হল ৪৪৬ কিলোমিটার এবং কোথাও কোথাও এর গভীরতা ১.৬ কিলোমিটারেরও বেশি।