টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের। মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী,পাখি [১] সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়।[২] স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়,যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এটি প্রধান পুরুষ হরমোন যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোষ (Leydig Cell) থেকে উৎপন্ন হয়।
পুরুষের জন্য টেস্টোস্টেরন প্রজনন অঙ্গ যেমন শুক্রাশয় (Testis) বর্ধনের পাশাপাশি গৌণ বৈশিষ্ট্য যেমন মাংসপেশি,শরীরের লোম বৃদ্ধি করে। [৩]
পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। [৪][৫]

শব্দতত্ত্ব
টেস্টোস্টেরন নামটি মূলত টেস্টিস বা শুক্রাশয় ও স্টেরন বা স্টেরয়েড কিটোন নামক দুটি শব্দের সন্ধির মাধ্যমে নামকরণ করা হয়েছে। সুতরাং টেস্টোস্টেরন শব্দের অর্থ হলো শুক্রাশয় নিসৃত কিটোনবিশিষ্ট স্টেরয়েড হরমোন।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব
সাধারণত এন্ড্রোজেন প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর সংবলিত টিস্যুর বৃদ্ধি সাধন করে।টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে লিঙ্গিক(virilizing) এবং অ্যানাবলিক (Anabolic) এই দু ভাগে ভাগ করা যায়।
- মাংসপেশি বৃদ্ধি,হাড়ের ঘনত্ব(density)বৃদ্ধি,হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে উদ্দীপনা করা – এসব অ্যানাবলিক কাজ।
- যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা,বিশেষ করে ফিটাসের শিশ্ন এবং শুক্রথলি তৈরি এবং জন্মের পরে (বয়ঃসন্ধিকালে) কণ্ঠস্বর গাঢ় হওয়া,দাড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি – এসব এন্ড্রোজেনিক কাজ।এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য।
জন্মের পূর্বে
প্রারম্ভিক শৈশব
বয়ঃসন্ধির পূর্বে
শৈশবের পরে এন্ড্রোজেন লেভেল বৃদ্ধির লক্ষণীয় প্রভাব দেখা যায় ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই।যেমন-
- বয়স্ক-টাইপ শরীরের গন্ধ।
- বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজায়।
- উচ্চতায় বৃদ্ধি।
- গোঁফ ও দাড়ি গজানো।
- পুরুষালী কণ্ঠস্বর হয়।
বয়ঃসন্ধিকাল
প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে বয়ঃসন্ধিকালিন প্রভাব দেখা যায়। ছেলেদের এই প্রভাব সচরাচর একটু দেরিতে হয় কিন্তু মেয়েদের রক্তে মুক্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ অনেক দিন থেকে বেশি মাত্রায় থাকলে এমনটি দেখা যায়।
- সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া। এটি ব্রণের কারণ হতে পারে।
- ভগাংকুর (Clitoris) বর্ধিত হওয়া।
- শ্রোণীদেশের চুল নিচে উরু এবং উপরে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত।
- মুখমণ্ডলে চুল (জুল্পি, গোঁফ, দাঁড়ি)। *মাথার চুল কমে যাওয়া।
- বুকে,বৃন্তের চারপাশে,নিতম্বের চারপাশে লোম।
- পায়ে পশম।
- বগলে চুল।
- মুখের উপরস্থ ফ্যাট কমে যাওয়া।
- পেশি বৃদ্ধি।
- গাঢ় কণ্ঠস্বর।
- পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি।
- কাঁধ প্রসারিত, বুকের পাঁজর ফুলে যাওয়া।
- হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং বৃদ্ধি রোহিত হওয়া।
প্রাপ্ত বয়স্ক
টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বয়স্ক নারীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আরো পরিষ্কারভাবে প্রমাণযোগ্য , কিন্তু উভয়ের জন্যই দরকারি। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পরে হ্রাস পাওয়ায় এইসবের কিছু প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।

রক্ত পরীক্ষা, কেন্দ্রের বাম দিকে হালকা নীল বর্ণ পুরুষ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেখাচ্ছে।
জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত ব্যবহার
- স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য টেস্টোস্টেরন ভুমিকা রাখে। এটি সারটলি কোষ এর জিনকে সক্রিয় করে।[৬]
- শারীরিক শক্তি নিয়ন্ত্রক।
- পেশী গঠন করে।
- টেস্টোস্টেরন মেগাক্যারিওসাইট ও অণুচক্রিকার থ্রম্বোক্সেন A2 রিসেপ্টরের উপর কাজ করে অণুচক্রিকা একত্রীতকরণে ভূমিকা রাখে।[৭][৮]
ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি
টেস্টোস্টেরন এবং যৌন উদ্দীপনা
পুরুষের যৌন উদ্দীপনায় টেস্টোস্টেরন
টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা একই ব্যক্তির যৌন ক্রিয়ার সময়সীমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম যৌন সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য বেশি ।[৯] একাধিক ব্যক্তিদের সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত ব্যক্তি পরের দিন সকালে টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা অনুভব করে থাকেন।[১০]
যে সকল পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা (যেমনঃ পর্নোগ্রাফি) দেখেন, তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা গড়ে ৩৫% বেড়ে যায়, ফিল্ম শেষ হওয়ার পর ৬০-৯০ মিনিট এ চূড়ান্তে ওঠে, কিন্তু কোন বৃদ্ধি যৌন নিরপেক্ষ ছবি দেখার পর হয় না।[১১] এছাড়াও যে সকল পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা দেখেন, তাদের মানসিক অবসাদ কমে বলে জানা গেছে।[১২] আগের গবেষণা যৌন উদ্দীপনা এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রার মাঝে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। [১৩]
২০০২ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়,একজন মহিলার সাথে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের পরে পুরুষের মাঝে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ে।পুরুষেরা নারীদের মুগ্ধ (Impress) করার চেষ্টা করেছিল- এই বর্ধন এইরূপে সম্পর্কিত ছিল।[১৪]
নারীদের দেহের হরমোন চক্রের উপর পুরুষের টেস্টোস্টেরন মাত্রা এবং যৌন উদ্দীপনা বহুলাংশে জ্ঞাত। [১৫]
নারীদের যৌন উদ্দীপনায় টেস্টোস্টেরন
আচরণ এবং ব্যক্তিত্ব
টেস্টোস্টেরন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিবার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে।[১৬][১৭]
টেস্টোস্টেরন আগ্রাসী মনোভাব বাড়ার পিছনেও অনেকাংশে দায়ী।”[১৮]