সামাজিক শ্রেণি বা শুধুই “শ্রেণি”, যা শ্রেণিভিত্তিক সমাজে, হচ্ছে সমাজের স্তরবিন্যাসের মডেলের উপরে কেন্দ্র করে গঠিত সমাজবিজ্ঞানের ধারণা এবং রাজনৈতিক তত্ত্ব। এটি হচ্ছে জনগণ বা দলের ক্রমবিভক্ত সামাজিক বিভাগের একটি সমষ্টি[১] যেগুলোর সবচেয়ে বড় পরিচিত হচ্ছে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন শ্রেণিসমূহ।
তাত্ত্বিক প্রতিমানসমূহ
মার্কসবাদী
“সামাজিক উৎপাদনের ইতিহাস-নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় নিজেদের স্থান, উৎপাদনের উপায়ের সংগে তাদের সম্পর্ক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা আইন রূপে বিধিবদ্ধ), শ্রমের সামাজিক সংগঠনে তাদের ভূমিকা, সুতরাং যে সামাজিক সম্পদ তাদের হাতে রয়েছে তার কতটা অংশ ও পাবার উপায় অনুসারে লোকেদের পৃথক বড়ো বড়ো দলকে বলা হয় শ্রেণি। শ্রেণি হলও লোকেদের তেমন সব গ্রুপ, সামাজিক অর্থনীতির নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় তাদের বিভিন্ন স্থানের দরুন একদল অপর দলের শ্রম আত্মসাৎ করতে পারে।”
খুব সহজ ভাষায় শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, একই প্রণালীতে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে সমাজের এরূপ এক একটি অংশ হলো এক একটি শ্রেণি। শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, সমাজের একাংশের শ্রমকে অপরাংশ আত্মসাৎ করতে পায় যার মাধ্যমে তাই হলও শ্রেণি। সমাজের একাংশ সমস্ত ভূমি আত্মসাৎ করলে হয় ভূস্বামী শ্রেণি ও কৃষক শ্রেণি। যদি সমাজের একাংশ হয় কলকারখানা, শেয়ার এবং পুঁজির মালিক, আর অন্য একটা অংশ কাজ করে ওইসব কলকারখানায়, তাহলে হয় পুঁজিপতি শ্রেণি এবং প্রলেতারিয়ান শ্রেণি অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি। শ্রেণিদের মধ্যে পার্থক্যের মৌল লক্ষণ হলো- সামাজিক উত্পাদনে তাদের স্থান, সুতরাং উত্পাদনের উপায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে। প্রতিটি শ্রেণির থাকে উৎপাদনের উপায়ের সংগে সুনির্দিষ্ট নিজস্ব সম্পর্ক। এই লক্ষণ দিয়েই পার্থক্য করা যায় শ্রেণি আর অন্যান্য সামাজিক গ্রুপের মধ্যে যারা শ্রেণি নয়। যেমন, উত্পাদনের উপায়ের সাথে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্ক নেই, তাই তারা শ্রেণি নয়, বুদ্ধিজীবীরা হলও বিভিন্ন শ্রেণির অংশবিশেষ নিয়ে একটা সামাজিক স্তর।[৩]
অর্থাৎ শ্রেণি হচ্ছে বিশাল সংখ্যার একদল লোক যারা উৎপাদনের উপায়ের সংগে সম্পর্ক, শ্রমের সামাজিক সংগঠন, সামাজিক সম্পদ প্রাপ্তির প্রণালী আর পরিমাণের দিক থেকে পৃথক। এক্ষেত্রে শোষক দলটা সংখ্যায় অল্প, শোষিতরা অধিকাংশ। এই যে একদল লোক শোষক, উৎপীড়ক এবং অন্যদল শোষিত ও উৎপীড়িতরূপে সৃষ্ট হয়, তাদের বলা হয় বৈরী শ্রেণি, কারণ তাদের স্বার্থ আপোষহীন।[২]
যখন কোনও জাতি বা জনগোষ্ঠী তাদের স্বদেশভূমি থেকে বিশ্বের অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই ব্যাপারটিকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন (ইংরেজি: Diaspora) বলা হয়।[১][২]সাধারণত বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন পরিভাষাটি দ্বারা কোন জনগোষ্ঠীর তাদের স্বভূমি থেকে অনৈচ্ছিকভাবে ছড়িয়ে পড়াকে বোঝানো হয়। যেসব জাতি বা সম্প্রদায় বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন সম্পাদন করে, তাদেরকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় বলা হয়। প্রাচীনকালে যিহুদীয়া থেকে ইহুদিদের ছড়িয়ে পড়া এবং কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) থেকে গ্রিকদের পালিয়ে যাওয়া এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগরান্তর দাস বাণিজ্য, কুলি বাণিজ্যের সময় দক্ষিণ চীন এবং ভারতীয়দের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, আইরিশ দুর্ভিক্ষের সময় আইরিশ জাতির বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, ফিলিস্তিনি বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন,[২][৩] সারকেশীয়দের নির্বাসন, ইংল্যান্ডে নরমান বিজয়ের পর অ্যাংলো-স্যাক্সন যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের দেশান্তর ইত্যাদি।[৪]
ইংরেজি “ডায়াস্পোরা” (Diaspora) পরিভাষাটি দিয়ে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের ঘটনা এবং বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি উভয়কেই বোঝানো হয়ে থাকে।
সম্প্রতি, বিদ্বজ্জনগণ বিভিন্ন রকম বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন। বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের কারণ, যেমন সাম্রাজ্যবাদ, বাণিজ্য বা শ্রমিক অভিপ্রয়াণের ভিত্তিতে, বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মধ্যকার সামাজিক সংসক্তি ও পূর্বপুরুষের ভূমির সাথে তাদের বন্ধনের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীবিভাগগুলো করা হয়। কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় তাদের স্বভূমির সাথে শক্তিশালী রাজনৈতিক বন্ধন বজায় রাখে। বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে স্বভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অভিলাষ, অন্যান্য সমজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক, এবং আশ্রয়দাতা দেশের সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত না হওয়া।[২]
CC-RedLineMus-146213_A.jpg
শব্দটির উদ্ভব এবং বিকাশ
বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন কথাটি “Diaspora”-র বাংলা পরিভাষা। “Diaspora” শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ διασπείρω (diaspeirō) থেকে, যার অর্থ “আমি বিক্ষিপ্ত হই” বা “আমি ছড়িয়ে পড়ি”। প্রাচীন গ্রীসে διασπορά (diaspora) শব্দটির অর্থ ছিল “বিক্ষিপ্ত হওয়া”,[৫] আর এর দ্বারা সমাজের শীর্ষস্থানীয় নাগরিকদের বোঝানো হত যারা উপনিবেশীকরণের উদ্দেশ্যে বা কোন অঞ্চলকে সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন স্থানে এসেছেন।[৬] প্রাচীন যুগের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের একটি উদাহরণ হচ্ছে স্পার্টানদের শাসনে মেসেনীয়দের শতাব্দীব্যাপী নির্বাসন যা থুসিডাইডসের গ্রন্থ “পেলপনেশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস” গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ থেকে বর্তমান অর্থে বিকাশ শুরু হয় যখন হিব্রু বাইবেলকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়;[৭] এক্ষেত্রে সেপটুয়াজিন্ট (গ্রীক ভাষায় অনুদিত হিব্রু বাইবেল) এর যেসব স্থানে “diaspora” শব্দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:
ডিউটেরোনমি ২৮:২৫, বাক্যাংশটি “ἔσῃ ἐν διασπορᾷ ἐν πάσαις ταῖς βασιλείαις τῆς γῆς”, (esē en diaspora en pasais tais basileiais tēs gēs), অর্থাৎ, “পৃথিবীর সকল রাজ্যে তোমরা ছড়িয়ে পড়বে”।
এবং
সালমস ১৪৬(১৪৭).২, বাক্যাংশটি “οἰκοδομῶν Ἰερουσαλὴμ ὁ Kύριος καὶ τὰς διασπορὰς τοῦ Ἰσραὴλ ἐπισυνάξει”, (oikodomōn Ierousalēm ho Kyrios kai tas diasporas tou Israēl episynaxē), অর্থাৎ, “প্রভু জেরুসালেম তৈরি করেছেন: ইজরায়েল থেকে বহিস্কৃতদেরকে তিনি সেখানে একত্রিত করেছেন”
পুরুষত্ব বা নরত্ব (ছেলেস্বভাব, পুরুষালি ভাব অথবা পৌরুষ নামেও পরিচিত) হল কতগুলো বৈশিষ্ট্য, চরিত্র ও প্রবণতার সমষ্টি যা ছেলে বা পুরুষের মধ্যে প্রকাশিত হয়। পুরুষত্ব সামাজিকভাবে প্রস্ফুটিত হয়, কিন্তু সামাজিক ও জীববৈজ্ঞানিক প্রভাবক দ্বারা গঠিত হয়,[১][২][৩] যদিও এটি জীববিজ্ঞানগত পুরুষ লিঙ্গ হতে আলাদা। [৪][৫] নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই পুরুষালি লক্ষণ ও আচরণ দেখা যেতে পারে। যাদের মধ্যে পুরুষালি ও মেয়েলি উভয় চরিত্রের প্রভাব দেখা যায় তাদের এন্ড্রোজিনাস বলা হয়। নারীবাদী দার্শনিকগণ মনে করেন লিঙ্গের অস্পষ্টতা লৈঙ্গিক পার্থক্যকে জটিল করে তুলতে পারে। [৬][৭]
সাহস, স্বাধীনচেতা হওয়া, দৃঢ়তা প্রভৃতি পুরুষত্বের গুণ। [৮][৯][১০] এসকল গুণ স্থান ও পরিবেশভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। [১১] পুরুষত্ব ও ক্ষমতাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে, দায় ও পরিণতি উপেক্ষা করা হলে তাকে ম্যাকিস্মো ( machismo) বলা হয়। [১২]
আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান (ইংরেজি ভাষায় Anthropology) মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা । কিন্তু মানুষ বিষয়ক অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির চেয়ে এটির পরিধি ব্যাপকতর। বিশ্বের সকল অঞ্চলের, সংস্কৃতির মানুষকে নিয়ে এই বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়। লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষের বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের গবেষণাও নৃবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। নৃবিজ্ঞানে মানুষকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষণা করা হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ ও তাদের সব রকমের অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে ও সেগুলি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা সামাজিক রীতিনীতি হতে পারে।
ইতিহাস
প্রথম দিকে বিমূর্ত বিশেষ্য হিসাবে ইতিহাসের ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান বা নৃতত্ত্ববিজ্ঞানকে ব্যবহার করা হতো । বর্তমানের নৃবিজ্ঞান শব্দের যে রূপ তা প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল রেনেসাঁস জার্মানিতে, ম্যাগনাস হন্ড্ট ও ওটো ক্যাসম্যানের কাজগুলোতে । তাদের নতুন ল্যাটিন অ্যানথ্রোপোলজিয়া গ্রিক শব্দ ánthrōpos (ἄνθρωπος, “মানব”) এবং lógos (λόγος, “অধ্যয়ন”) এর মিশ্র রূপ থেকে উদ্ভব হয়েছে । (এটি বিশেষণ হিসাবে অ্যারিস্টট্লের কাজগুলিতে প্রকাশিত হয়েছিল) ১৮ শতকের প্রথম দিকে এটি ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা শুরু হয় সম্ভবত ফরাসি এনথ্রোপোলজির মাধ্যমে।
১৯ শতক
১৬৪৭ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বার্থোলিনস নিম্নরূপে ”l’anthropologie” কে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন – নৃবিজ্ঞান বা বলা যেতে পারে মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে সচরাচর কিংবা যুক্তিসংগত কারণেই ভাগ করা হয় শরীর বিদ্যায়-যা আলোচনা করে দেহ ও তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এবং মনোবিদ্যায়-যা আলোচনা করে আত্মা নিয়ে।’ [১]
পরবর্তীতে এলোমেলোভাবে এই পরিভাষা বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন এতিয়েন সেরেস ১৮৩৯ সালে তুলনামূলক শরীরতত্ত্বের ভিত্তিতে মানুষের প্রাকৃতিক ইতিহাস বা জীবাশ্মবিজ্ঞান ব্যাখ্যার জন্য এবং ১৮৫০ সালে National museum of natural history(France) এর Jean louise armand de quatrefages breau নৃবিদ্যা এবং নৃকূলবিদ্যার সাহায্যে চেয়ার তৈরির ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে এই পরিভাষা ব্যবহার করেছিলেন।বিভিন্ন সময়ে নৃবিজ্ঞানীদের বেশ কিছু ক্ষণস্থায়ী সংগঠন তৈরি হয়েছে।১৮৩৯ সালে ফ্রান্সের Societe ethnologique de Paris যারা প্রথবার নৃকূলবিদ্যা পরিভাষা ব্যবহার করেছিলো তারা মূলত ছিলো দাস প্রথা বিরোধী।ফলে ১৮৪৮ সালে এই প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে সংগঠনেরও বিলুপ্তি ঘটে।
২০ ও ২১ শতক
ক্ষেত্র
সামাজিক-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র্যতা এবং সাদৃশ্যতা অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে থাকে। সংস্কৃতি হলো একটি মানবগোষ্ঠীর ধর্ম, সামজিক রীতিনীতি, খাবার, আচার ও শিল্পের বৈশিষ্ট্য। ফলে, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানে মানুষ কিভাবে সংস্কৃতির অংশ হয়ে জীবন-যাপন করে, সেটা অন্যতম আলোচ্য বিষয়। সংস্কৃতির পরিবর্তনের ব্যাপারগুলোও এইক্ষেত্রে আলোচিত হয়৷ সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান সামাজিক কাঠামোর উন্মোচন,প্রতীকের ব্যাখ্যা প্রদানের কাজও করে থাকে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরা মাঠকর্ম অথবা সংস্কৃতির তুলনামূলক অধ্যয়নের মাধ্যমে করে থাকেন। মাঠকর্মে নৃবিজ্ঞানীরা যে সমাজ, সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করেন তারা সেই জনগোষ্ঠীর সাথে বসবাস করে এসকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। প্রথাগতভাবে নৃবিজ্ঞানীরা ছোট কোন জনগোষ্ঠীতে থেকে ঐ জনগোষ্ঠীর আচার, রীতিনীতি, প্রথা, বিশ্বাস, সামাজিক রীতি, ধর্ম, অর্থনীতি ও রাজনীতি পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়ন করেন। নৃবৈজ্ঞানিক চিন্তাসূত্র নৃতাত্ত্বিক মাঠকর্ম থেকে উদ্ভূত হয় বলে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিজ্ঞান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সংস্কৃতির আড়াআড়ি পাঠের ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীরা মাঠকর্ম থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করে থাকে। সাংস্কৃতিক তুলনা, বৈচিত্র্য নির্ণয় ও সাধারণীকরণ করতে এথনোলজি ( Ethnology ) অনুসরণ করা হয়। অনুমান নিরীক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত তত্ত্ব নির্মাণে এথনোলজি সাহায্য করে। বহু মহাদেশে নৃবিজ্ঞান বলতে কেবলমাত্র ‘সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান’ কে বোঝায় কিন্তু উত্তর আমেরিকায় নৃবিজ্ঞানের যেকোনো উপবিভাগের অনুশীলন ঘটে ‘চার ক্ষেত্রের’ সাপেক্ষ হিসেবে।[১]
জৈবিক নৃবিজ্ঞান
নৃবিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে মানুষের প্রাচীনসত্তা বা জৈবিকসত্তা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা হয়ে থাকে। প্রধান উদ্দেশ্য হল – মানুষকে জৈবিকসত্তা হিসাবে বিবেচনা করে তার প্রাণিজগতে সঠিক অবস্থান, ক্রমবিকাশের ধারায় তার উদ্ভব, বৈজ্ঞানিক অভিধা,তার জিনের গঠন, শারীরিক গঠনগতবিদ্যা এবং বাসস্থানগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে সর্বেক্ষণ ও পর্যালোচনা।
প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান
প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান হলো অতীতের মানুষ ও তার সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণার ক্ষেত্র। নৃবিজ্ঞানের এই শাখায় মানুষের পূর্বসূরী ও মানব-সদৃশ প্রাণীর জীবাশ্মের নিদর্শন এবং সেইসব মানুষ ও মানব-সদৃশ প্রাণী গোষ্ঠীর জীবন যাপনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক ও সামাজিক বস্তুসামগ্রী গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা। এই ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির সাথে বর্তমানের সেতুবন্ধন।
ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান
নৃবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হল দৈহিক নৃবিজ্ঞান। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের একটি উপশাখায় পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ও পরবর্তীকালে তাদের শারীরিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য জীবাশ্মবিজ্ঞান নামে পরিচিত। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের আরেকটি উপশাখায় বর্তমান মনুষ্য সমাজগুলির মধ্যকার দৈহিক বৈচিত্র্যের প্রকৃতি ও কারণ আলোচনা করা হয়; এই ক্ষেত্রটি মনুষ্য বৈচিত্র্য নামে পরিচিত।
নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় প্রধান শাখা হল সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান আবার তিনটি উপশাখায় বিভক্ত—প্রত্নবিজ্ঞান, নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান ও জাতিবিজ্ঞান। এই তিনটি উপশাখাই মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এগুলি থেকে কোন নির্দিষ্ট সমাজের চিন্তাধারা ও আচরণের রীতিনীতি বুঝতে পারা যায়।
প্রত্নবিজ্ঞানীরা প্রাগৈতিহাসিক মানুষদের দৈনন্দিন জীবন এবং রীতিনীতি তাত্ত্বিকভাবে পুনর্গঠন করতে চেষ্টা করেন। এছাড়াও তারা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অনুসরণ করেন এবং এই পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তারা পুরাতন মনুষ্য সংস্কৃতিগুলির অবশেষ থেকে ইতিহাস পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালান।
নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানীদের একাংশ ভাষার আবির্ভাব এবং সময়ের সাথে ভাষার বিস্তার নিয়ে আগ্রহী; এই ক্ষেত্রটি ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান নামে পরিচিত। তারা সমকালিক ভাষাগুলি কীভাবে একে অপরের থেকে আলাদা, তা নিয়েও গবেষণা করেন; এই গবেষণা বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। এছাড়াও তারা সমাজে ভাষার প্রকৃত প্রয়োগ নিয়েও আগ্রহী; এই ক্ষেত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে সমাজভাষাবিজ্ঞান।
বর্তমান ও নিকট অতীতের জাতিগুলির রীতিনীতি, চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের মধ্যে কী পার্থক্য আছে এবং কেনই বা এই পার্থক্য হয়, তা জাতিবিজ্ঞানে আলোচিত হয়। জাতিবিজ্ঞানীদের একাংশ জাতিবিবরণে আগ্রহী; একজন জাতিবিবরক কোন একটি সমাজে গিয়ে বছরখানেক বাস করেন, কথা বলেন এবং সেই সমাজের রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সামাজিক দলটির একটি পূর্ণাঙ্গ জাতিগত বিবরণ প্রস্তুত করেন। আরেক ধরনের জাতিবিজ্ঞানীর নাম জাতি-ইতিহাসবিদ; এরা লিখিত দলিলপত্র অনুসন্ধান করে সময়ের সাথে কোন একটি নির্দিষ্ট জাতিগত দলের জীবনধারা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। তৃতীয় আরেক ধরনের জাতিবিজ্ঞানীকে বলা হয় আন্তঃসাংস্কৃতিক গবেষক; এরা জাতিবিবরক ও জাতিইতিহাসবিদদের উপাত্ত থেকে কিছু সংস্কৃতির নমুনা নেন এবং কোন ধরনের রীতিনীতি সাধারণভাবে সব ধরনের সমাজে প্রযোজ্য, তা আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।
নৃবিজ্ঞানের গবেষণা মানুষকে সহিষ্ণু করতে সাহায্য করতে পারে। অন্য জাতির লোক কেন সাংস্কৃতিক ও দৈহিক দিক থেকে আলাদা আচরণ করে, নৃবিজ্ঞান তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়। যেসব সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও কাজকর্ম আমাদের কাছে ভুল বা অশোভন মনে হতে পারে, সেগুলি হয়ত বিশেষ পরিবেশগত বা সামাজিক অবস্থার জন্য অভিযোজনের ফসল।
এছাড়াও নৃবিজ্ঞানের আরো অনেক শাখা রয়েছে, সেগুলো হলোঃ- স্বাস্থ্য নৃবিজ্ঞান, ব্যবসায় নৃবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক নৃবিজ্ঞান প্রভৃতি।
এরও পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক কালেও তুর্ক-মঙ্গোল ঐতিহ্য ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যেই প্রোটো-তুর্কীয় ভাষা থেকে প্রোটো-মঙ্গোলীয় ভাষার পূর্বপুরুষ ভাষাগুলোতে প্রচুর শব্দ প্রবেশ করে। ব্যক্তিবাচক সর্বনামগুলোতে তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয় ভাষাগুলোতে অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় (যেমন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে যথাক্রমে *b-, *s-, *i- প্যারাডাইম)। এরকম অন্যান্য সাদৃশ্যগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের পূর্বে তুর্কীয় ভাষাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগে বিভক্ত হয়ে বিকশিত হবার আগেই তৈরি হয়ে যায়।[২] তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয় মানুষেরা অন্তত সেই সময় থেকেই একই ধর্ম তেনগ্রিবাদ এর অনুসারী ছিল।
প্রাচীন কালে অনেক সময় ব্যাপী ভাষাগত সংস্পর্শে থাকার কারণে তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয়দের ভাষায় আরও বেশি মৌলিক ফনোট্যাক্টিক, ব্যাকরণগত ও টাইপোলজি সংক্রান্ত সাদৃশ্য দেখা যায় (যেমন সঙ্কালিক স্বরসঙ্গতি, ব্যাকরণগত লিঙ্গের অভাব, প্রচুর সংযোজন, উচ্চমাত্রার সাদৃশ্যপূর্ণ ফনোট্যাকটিকাল নিয়ম)।[২] অতীতে এরকম সাদৃশ্যগুলোর এদের মধ্যকার জিনগত সম্পর্ক অনুসন্ধানে ধাবিত করে, আর সেখান থেকে আলতাইক ভাষা পরিবার নামক ধারণার জন্ম হয় যা এখন বিস্তৃত পরিসরে পণ্ডিতমহলে গৃহীত। আরও সম্প্রতি, জিনগত সম্পর্কের নির্দিষ্ট প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাব হেতু, এই সাদৃশ্যগুলোকে ভাষা সংস্পর্শের তিনটি জ্ঞাত সময়কাল অনুসারে ভাগ করা হয়েছে। এই সাদৃশ্যগুলোর কারণে উত্তর-পূর্ব এশীয় ভাষা অঞ্চল এর একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে তুংগুসীয়, কোরীয় এবং জাপনীয় ভাষা পরিবারও অন্তর্গত, যদিও তুর্কীয় এবং মঙ্গোলীয় ভাষাগুলোই সব থেকে বেশি সাদৃশ্য প্রদর্শন করে।
জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস বা এথনোহিস্টরি (Ethnohistory) হলো আদিবাসী মানুষের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলির পাশাপাশি তাদের জীবন ও ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যের উৎসগুলো পর্যালোচনা এবং অধ্যয়ন। এটি এমন সব বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর ইতিহাস অধ্যয়ন করে যা বর্তমান সময়ে বিদ্যমান থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। এই শব্দটি আমেরিকার ইতিহাস সম্পর্কে লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এথনোহিস্টরি তার ভিত্তি হিসাবে ঐতিহাসিক এবং নৃতাত্ত্বিক উভয় উপাত্তই (ডেটা) ব্যবহার করে। এটির ঐতিহাসিক পদ্ধতি এবং উপকরণ নথি ও পান্ডুলিপির প্রচলিত বা মানক ব্যবহারের চেয়ে ব্যতিক্রম। অনুশীলনকারীরা মানচিত্র, সংগীত, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, লোককাহিনী, মৌখিক ঐতিহ্য, নিদর্শনস্থান অনুসন্ধান, প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণ, জাদুঘর সংগ্রহ, স্থায়ী রীতিনীতি, ভাষা এবং স্থাননাম ইত্যাদি উৎস উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।[১]
ঐতিহাসিক উন্নয়ন
উত্তর ফিলিপাইনের ইটনেগ কুমাররা। ডানদিকে থাকা ব্যক্তিটি একজন পুরুষ এবং তিনি মহিলাদের পোশাক পরিহিত, এটি ছিলো প্রাক-উপনিবেশিক ফিলিপাইনের একটি প্রচলিত রীতি
মেক্সিকোয় আদিবাসীদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণারত পণ্ডিতদের উপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু হওয়া এক দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য রয়েছে; তারা মেক্সিকো আদিবাসীদের ইতিহাস লেখার জন্য বর্ণানুক্রমিক পাঠ্য এবং অন্যান্য উৎস ব্যবহার করেছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ রবার্ট ওউচোপ সম্পাদিত মধ্য আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের হ্যান্ডবুক-এ (The Handbook of Middle American Indians)মেসোআমেরিকান জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাসের উপরেও কয়েকটি খণ্ড (ভলিউম) তৈরি হয়েছিল যা গাইড টু জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাসিক উৎস (Guide to Ethnohistorical Sources) হিসেবে ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়।[২] খণ্ডগুলি প্রকাশিত হওয়ার সময়, তাতে ব্যবহৃত ‘এথনোহিস্টোরি’ (জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস) শব্দটি এবং এর ধারণাটি উভয়ই সাম্প্রতিক সময়ে সাহিত্যে প্রবেশ করে এবং এবিষয়ে এখনো কেউই সম্পূর্ণরূপে একমত হয় নি। ” [৩] খণ্ডগুলোর উৎসগুলিকে এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল যাতে পরবর্তীতে পেশাদারভাবে গ্রহণযোগ্য নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়। [৪]
বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষদিকে মেক্সিকোয় বেশ কয়েকজন নৃতাত্ত্বিক স্থানীয় নিউ মেক্সিকো ভাষায় বহু উপনিবেশিক বর্ণানুক্রমিক গ্রন্থগুলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন, যা বর্তমানে জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস শাখায় নিউ ফিলোলোজি নামে পরিচিত। এটি মেক্সিকোর ইতিহাস রচনাকারীদের পূর্ববর্তী ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত যা আদিবাসীদের ইতিহাসকে পুরোপুরি একীভূত করেছিল। [৫][৬][৭]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডিয়ান ক্লেইম কমিশন-এর দাবিতে মার্কিন গবেষণা সম্প্রদায় থেকে এই ক্ষেত্রটির উদ্ভব হয়েছিল। অনুশীলনকারীরা ইন্ডিয়ান দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে উভয়টিতেই সাক্ষ্য দিয়ে এই তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে একটি বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছিল। উদীয়মান পদ্ধতিটি প্রামাণ্য (ডকুমেন্টারি) ঐতিহাসিক উৎস এবং এথনোগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। এরকম ঘটনাগুলোতে কাজ করা পন্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন লাতিন আমেরিকান হাওয়ার্ড এফ. ক্লাইন, যিনি ফ্লোরিডা ইন্ডিয়ান্স এবং জিকারিলা অ্যাপাচি নিয়ে কাজ করার জন্য কমিশনে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
ক্ষেত্রটি মেলানেশিয়াতেও পৌঁছেছে, যেখানে সাম্প্রতিক কালে ইউরোপীয় কনট্যাক্ট গবেষকদের প্রাচীন যোগাযোগ-উত্তর সময়কাল সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক প্রশ্নগুলির সমাধান করার অনুমতি দিয়েছে। মাইকেল হারকিন যুক্তি দিয়েছেন যে ২০তম শতাব্দীর শেষের দিকে ইতিহাস ও নৃতত্ত্বের মধ্যে সাধারণ সম্মিলনের একটি অংশ ছিল জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস।[৮]
বাহ্যিক অ-পাণ্ডিত্য চাপের হেতু কোনও অতিরিক্ত ব্যক্তিত্ব বা সচেতন পরিকল্পনা ছাড়াই জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস স্বভাবগতভাবে বিকশিত হয়েছিল; তা সত্ত্বেও, এটি সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রীয় বিষয়গুলিতে জড়িত হয়ে পড়েছিলো। জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাসবিদগণ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিষয়ে তাদের বিশেষ জ্ঞান, ভাষাগত অন্তর্দৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করে গর্ববোধ করেন। তারা দাবি করেন যে গড়পড়তা ইতিহাসবিদদের চাইতে তারা আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।[৯] তারা কেনো সংস্কৃতিকে ওই সংস্কৃতির নিজস্ব শর্তাদি এবং নিজস্ব সংস্কৃতি কোড অনুসারে বোঝার চেষ্টা করেন।[১০] বিভিন্ন রকম কাঠামোর মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি এবং অতীতের বিষয়াদি ব্যাখ্যার স্বার্থে আরো তথ্যবহুল ধারণা উপলব্ধির কারণে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাসের সংজ্ঞাটি কালক্রমে আরও পরিশ্রুত ও স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমদিকে, জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস শাখাটি ইতিহাস থেকে যথাযথভাবে পৃথক হয়েছিল যেহেতু এটি একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিল। উইলিয়াম এন ফেন্টনের বর্ণনা মতে নতুন মাত্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো “পর্যালোচনায় এথনোলজিক্যাল ধারণা ও উপাদানের সমালোচনা এবং ঐতিহাসিক উৎস উপাদানগুলির ব্যবহার। [১১] জেমস অ্যাক্সটেলের সংজ্ঞা অনুসারে জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস হলো “জাতিতাত্ত্বিক ধারণা এবং শ্রেণিকরণের দ্বারা বিভিন্ন সংস্কৃতির ধরন ও পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ঐতিহাসিক এবং জাতিতাত্ত্বিক পদ্ধতির ব্যবহার।”[১] অন্যরা এই প্রাথমিক ধারণাটিকে পূর্বে উপেক্ষা করা ইতিহাস-কর্মীদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এড শিফেলিন দৃৃৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে, কীভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঘটনাগুলি গঠন করা হয় এবং অতীতকে সাংস্কৃতিকভাবে নির্মাণের পদ্ধতিতে মানুষের নিজস্ব বোধকে জাতিগত ইতিহাসের আলোচনায় অবশ্যই মৌলিকভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।[১২] পরিশেষে, জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস সম্পর্কে সাইমন্স ধারণা রচনা করেছিলেন যে “এটি এমন এক সাংস্কৃতিক জীবনী যা সূত্র অনুসারে যতদূরসম্ভব দীর্ঘকালীন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষ্য দেয়”। তিনি জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাসকে একটি সামগ্রিক ও ডায়াক্রোনিক পদ্ধতির উপর ভিত্তিকৃত একটি প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা তখনই সবচেয়ে ফলপ্রসূ হয় যখন “জীবিত মানুষের স্মৃতি এবং কন্ঠে যোগ দিতে পারে” । [১৩]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের উপর আলোকপাতকালে হারকিন এটিকে ইতিহাস ও নৃতত্ত্বের ক্ষেত্রগুলির একত্রিতকরণ এবং বিচ্যুতি এবং বিশ শতকের মধ্যভাগে মার্কিন ইন্ডিয়ানদের ভূমি দাবির বিশেষ পরিস্থিতি ও উত্তর আমেরিকার আইনি ইতিহাসের বিস্তৃত প্রসঙ্গের সাথে যুক্ত করেছেন।[১৪]
ইউরোপের চিরাচরিত সমাজগুলির (যেমন আয়ারল্যান্ডের) জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস গবেষণার সম্ভাবনার বিষয়ে মন্তব্য করে গাই বাইনার বলেছিলেন যে “নৃতাত্ত্বিক বিকাশের অগ্রণী ব্যক্তিত্বরা… যুক্তি দেখিয়েছেন যে পশ্চিমা সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ফলপ্রসূ প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় নি এবং এখন অবধি ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস খুব কমই লেখা হয়েছে”। [১৫]
গ্যোটিঙেন ইতিহাসের বিদ্যালয় ছিল অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত একটি বিশেষ শৈলীর ইতিহাস রচনার সাথে যুক্ত ইতিহাসবিদদের একটি দল। [১] ঐতিহাসিকদের এই দলটি ঐতিহাসিক গবেষণার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল,[২] এবং বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদে পরিভাষার দুটি মৌলিক গোষ্ঠী তৈরি করার জন্যও দায়ী ছিল:
জাতি জন্য ব্লুমেনবাখ এবং মেইনার্সের রঙের পরিভাষা: ককেশীয় বা সাদা জাতি; মঙ্গোলীয় বা হলুদ জাতি; মালয় বা বাদামী জাতি; ইথিওপিয়ান বা কালো জাতি; এবং আমেরিকান বা লাল জাতি;[৩]
গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল “গেশিচ্টসউইসেনশ্যাফ্ট“বা একটি একাডেমিক শৃঙ্খলা হিসাবে ইতিহাসের মূল কেন্দ্র এবং বিশ্বব্যাপী-ভিত্তিক নৃবিজ্ঞানের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। [৪] স্কুলটি নিজেই ইউরোপের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি, যা ১৭৩৪ সালে গের্লাচ অ্যাডলফ ভন মুঞ্চহাউসেন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং বক্তৃতার পাশাপাশি গবেষণা পরিচালনা এবং প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন ছিল। [৫] এই স্কুলের ইতিহাসবিদরা ভলতেয়ার এবং এডওয়ার্ড গিবনের মতো দার্শনিক ইতিহাসবিদদের সাথে জিন ম্যাবিলনের সমালোচনামূলক পদ্ধতির সমন্বয় করে একটি সর্বজনীন ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন। [৬]
খানাত বা খাগানাত একটি তুর্কি উদ্ভূত শব্দ যা খান শাসিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। আধুনিক তুর্কি ভাষায় শব্দটি কাগানলিক বা হানলিক নামে এবং মোঙ্গলীয় ভাষায় খানলিগ নামে ব্যবহৃত হয়।
মোঙ্গল সাম্রাজ্যের পূর্বের খানাত
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পূর্বে কিছু খানাত স্থাপিত হয়েছিল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রোরা খানাত।
মোঙ্গল খানাত
চেঙ্গিজ খান তার রাজত্বকালে (১২০৬-১২২৭) মঙ্গোল সাম্রাজ্যে তার পরিবারের জন্য আপানিজ স্থাপনের পর, তার পুত্র, কন্যা ও পৌত্রগণ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের উত্তরাধিকারী হন।[১] এই আপানিজ থেকে মঙ্গোল সাম্রাজ্য ও মঙ্গোল খানাতের আবির্ভাব হতে থাকে।[২]
খামাগ খানাত, দশম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত; মঙ্গোলীয় সমভূমি, অনন, খেরলেন, ও তুল নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপন করে।[৩][৪]
রোগবিজ্ঞান (ইংরেজি: Pathology) হচ্ছে একটি বিশুদ্ধ প্রাণিবিজ্ঞানের প্রধান শাখা, এই শাখায় প্রাণিদেহের বিভিন্ন রোগ, লক্ষণ, রোগতত্ত্ব, প্রতিকার ইত্যাদি বিশদভারে পর্যালোচনা করা হয়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে রোগের লক্ষণের সাথে আলাদা করে কোষের পরিবর্তন সম্পর্কযুক্ত করা যায় এই রোগনিরূপণবিদ্যার মাধ্যমে।[১]
ইতিহাস
শুরুর দিকে রোগবিজ্ঞান ছিল খুব বর্ণনামূলক। পূর্বে রোগ নির্ণয় এবং শ্রেণীবিভাগ করা হতো শারীরস্থানিক এবং আণুবীক্ষণিক শারীরস্থানিক পরিবর্তন দেখে। ১৯শ শতকের অর্ধেক সময় ধরে এই পদ্ধতিতে এবং অণুজীববিদ্যার পদ্ধতি যোগ করে অণুজীব (প্রোটোযোয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক) মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।
মৎস্যবিদ্যাজীববিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা যেখানে মাছ নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। মৎস্যবিদ্যায় মূলত মাছের জীবতত্ত্ব অর্থাৎ উৎপত্তি, বিবর্তন, শ্রেণীবিন্যাস, অঙ্গসংস্থানবিদ্যা, শারীরতত্ত্ব, বাস্তুতন্ত্র, কোষতত্ত্ব, কলাতত্ত্ব, জেনেটিক্স ইত্যাদি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ ও গবেষণা করা হয়।[১] বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ অর্থনৈতিকভাবে মৎস্যের উপর নির্ভরশীল। ২০১৬ সালে ১৭১ মিলিয়ন টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিল, কিন্তু অতিরিক্ত মাছ ধরা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা – যা কিছু জনসংখ্যায় হ্রাসের কারণ।[২]
সংজ্ঞা
এফএও এর মতে, “… একটি মৎস্য একটি ক্রিয়াকলাপ যা মাছ আহরণের দিকে পরিচালিত করে। এতে বন্য মাছ ধরা বা জলজ চাষের মাধ্যমে মাছ উঠানো জড়িত হতে পারে।” এটি সাধারণত “জড়িত মানুষ, প্রজাতি বা মাছের ধরন, জলের এলাকা বা সমুদ্রতল, মাছ ধরার পদ্ধতি, নৌকার শ্রেণী, ক্রিয়াকলাপের উদ্দেশ্য বা পূর্বের বৈশিষ্ট্যগুলির সংমিশ্রণ” এর পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৩]
সংজ্ঞায় প্রায়শই একটি অঞ্চলে স্তন্যপায়ী এবং মাছ ধরার সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকে, একই ধরণের গিয়ারের সাথে একই প্রজাতির জন্য পরবর্তী মাছ ধরা।[৪] কিছু সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা, বিশেষ করে যারা বিনোদনমূলক মাছ ধরার দিকে মনোনিবেশ করছে তাদের সংজ্ঞায় কেবল জেলেরা নয়, মাছ এবং আবাসস্থল যার উপর মাছ নির্ভর করে।[৫]