Category: সাধারণ বিজ্ঞান

General Science

  • অ্যানাসাইরমা

    অ্যানাসাইরমা

    অ্যানাসাইরমা (ইংরেজি: Anasyrma) যাকে অ্যানাসাইরমসও[১] বলা হয় এক ধরনের ভাবভঙ্গী যেখানে স্কার্টকে উপরে তোলা হয়। এটা কিছু ধর্মীয় উপাসনাতে, স্থূলতায় ও ইন্দ্রিয়াসক্তিপূর্ণ কৌতুকে ব্যবহার করা হয়। শিল্প সম্পর্কিত কাজের বর্ণনাতেও এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। অ্যানাসাইরমা ফ্ল্যাসিং থেকে আলাদা যা এক প্রকারের প্রদর্শনকামনা যেখানে যৌন উদ্দীপনাই মুখ্য থাকে; আর এখানে দর্শকের প্রতিক্রিয়ার জন্যই করা হয়। অ্যানাসাইরমা একধরনের প্ররোচনাপূর্ণ স্ব-উম্মোচন যেখানে একজন তার গুপ্তাঙ্গ বা নিতম্ব প্রদর্শন করে। কোন কোন সংস্কৃতিতে এটা করা হয় অতিপ্রাকৃতিক শত্রুকে ব্যঙ্গ করতে যা অনেকটা মুনিং-এর মতো।

    অ্যানাসাইরমা

    গ্রিসের প্রাচীন ইতিহাসে

    ধর্মীয় তামাশা ও অশ্লীলতা হলো সাধারণ একটা বিষয় ডিমিটার ও ডিওনাইসুসের উপাসনায়। পৌরণিকত্তত্ববিদ অ্যাপোলোডরাসের মতে ল্যাম্বিদের তামাশাই থেস্মোফোরিয়া নামের ধর্মীয় তামাশার চর্চার কারণ, যা ডিমিটার ও ডিওনাইসুসের স্নমানে করা হত। কিন্তু অন্য পুরাণ মতে ডিমিটার দেবী বাউবো নামের একজন মহিলাকে পায় যে তাকে হাসায় নিজেকে উন্মুক্ত করে অ্যানাসাইরমা নামের ধর্মীয় ভাবভঙ্গির মাধ্যমে।

  • অতিথি

    অতিথি

    যে ব্যক্তিকে গৃহে, সামাজিক অনুষ্ঠানে কিংবা প্রচারমাধ্যমে সাদরে আপ্যায়ন করা হয় তাকে অতিথি বলে। প্রায় সব ধর্মে অতিথি বা মেহমান কে ভালো ভাবে আপ্যায়ন করার নির্দেশ রয়েছে। মুসলিমদের ধর্মে অতিথি আপ্যায়ন একটি মহৎ কাজের মধ্যে পরে। হিন্দুরা মনে করেন অতিথি হচ্ছে তাদের দেবতার অংশ। অতিথিকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানবমনে সৌজন্য, শিষ্ঠাচার ও মানবপ্রেমের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

    অতিথি

    সংস্কৃতি

    সব দেশেই অতিথিদের সুন্দরভাবে আপ্যায়ন করার রীতি রয়েছে। যুগ যুগ ধরে অতিথি আপ্যায়নে বাঙালিদের সুনাম রয়েছে।বাংলাদেশে কারো বাড়িতে অতিথি বা মেহমান এলে সে বাড়িতে ভালো খাবার রান্না করা হয়। তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা হয়। অনেক গল্প-গুজব হয়। মেহমানরা যেন কোনো ভাবে কোনো রকম কষ্ট না পান সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। এক কথায় অতিথি আসলে বাড়িতে অন্যরকম একটা আমেজ তৈরি হয়।

  • অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি হল কোন বহিরাগত বা অপরিচিত মানুষের থেকে ভয় বা অবিশ্বাস।[১][২]

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতির প্রভাব গোষ্ঠীর ভিতরের মানুষের গোষ্ঠীর বাইরের মানুষের ওপর বা বিষয়ে সম্বন্ধ, অনুভূতি ইত্যাদিতে দেখা যায়। নিজের পরিচয় হারানোর ভয়, কর্মকাণ্ডের ওপর সন্দেহ, উগ্রতা, এবং তার উপস্থিতি নাকচ করে আগে থেকে ধারণা করে নিয়ে পবিত্রতা রক্ষা ইত্যাদি এর অন্তর্গত।[৩] অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে “অন্য সংস্কৃতির অসমালোচনামূলক উৎকর্ষ” হিসাবে দেখানো যায়, যেখানে কোনো একটি সংস্কৃতিকে “অবাস্তব, রূঢ়বদ্ধভাবে ধৃত এবং বিদেশী” আখ্যা দেওয়া হয়।[৩]

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি এবং বর্ণবাদের (racism) ভেদ না বুঝে কখনো কখনো দুটি শব্দকে অন্যটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। কারণ বহুক্ষেত্রে, একই রাষ্ট্রের লোক একই বর্ণ বা জাতির হয়।[৪] সেইজন্য, অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে বহিরাগত সংস্কৃতির বিরোধ বলে মনে করে পৃথক করা হয়।[৪]

    সংজ্ঞা

    অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে “বহিরাগতের প্রতি দৃঢ়বদ্ধভাবে থাকা ভয়” বা “অচেনার ভয়” বলা যায়।[৫] অজ্ঞাতভীতির ইংরাজী শব্দ জেনোফোবিয়া (xenophobia) এসেছে গ্রিক জেনোস (ξένος) অর্থাৎ “অপরিচিত”, “বহিরাগত” এবং ফোবোস (φόβος) অর্থাৎ “ভয়”-এর থেকে।

    চিহ্নিতকরণ

    এশিয়া

    মালয়েশিয়া

    ২০১৪ সালে, পেনাং রাজ্যে বিদেশিদের স্থানীয় খাবার রান্না করার উপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। খ্যাতনামা স্থানীয় রাঁধুনি রেজুয়াওয়ান ইসমাইল এই আইনের সমালোচনা করেন।

    ওশিয়ানিয়া

    অস্ট্রেলিয়া

    ২০০৫ সালের ক্রোনুলা দাঙ্গা সংঘটিত হয় শ্বেতাঙ্গ ও লেবানিয় অস্ট্রেলীয়দের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসপূর্ণ মনোভাবের জন্য।

    আফ্রিকা

    দক্ষিণ আফ্রিকা

    ২৩ এপ্রিল ২০১৫-তে জোহানেসবার্গে অজ্ঞাতব্যক্তিভীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

    দক্ষিণ আফ্রিকায় অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি বর্ণভেদের যুগ এবং বর্ণভেদের পরবর্তী যুগ, উভয় সময়েই দেখা গেছে। দ্বিতীয় বুয়ার্স যুদ্ধের পর বুয়ারদের এবং ব্রিটিশদের মধ্যেকার সম্বন্ধ অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক গরিব আফ্রিকান ব্রিটিশদের ব্যবসায়িক স্থানসমূহ আক্রমণ করে।[৬] দক্ষিণ আফ্রিকায় সেকারণে অনেক আইন গৃহীত হয়, যেমন: “ইচ্ছুক না হওয়া” ভারতীয়দের বিতাড়ন করতে প্রণয়ন করা ১৯১৩ সালের ইমিগ্রেণ্টস্ রেগুলেশন অ্যাক্টটাউনশিপ ফ্র্যানচাইজি অর্ডিনেন্স অব ১৯২৪-এ ভারতীয়দেরকে মিউনিসিপাল ফ্র্যানচাইজির থেকে বঞ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছিল।[৭]

    ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫-তে জোহানেসবার্গে বিদেশীদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। দাবী করা হয় যে, পুলিশরা যেন বিদেশীদের তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়।[৮] ২০০৮ এ একই স্থানে পুনরায় আক্রমণ ঘটে।[৯][১০][১১] হাজার হাজার বিদেশীকে স্থান ত্যাগ করতে হয়; তাদের সম্পত্তি, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়ি লুট করা হয়।[১২] এই আক্রমণে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়।[৮]

    ২০১৫-তে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পুনরায় অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি সম্বন্ধীয় আক্রমণ সংঘটিত হয় জিম্বাবুয়ে থেকে আসা লোকজনের বিরুদ্ধে।[১৩] জুলু রাজা গুডউইল জ্বেলিথিনি কভেকুজুলু বিদেশীদের “তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশ ছাড়ো” বলার পরেই এমনটা হয়।[৮][১৪] ২০ এপ্রিল ২০১৫-এর তথ্যানুযায়ী, এই ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু, এবং ২০০০-এরও বেশি বিদেশী স্থানচ্যুত হয়।[১৩]

  • স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট

    স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট

    স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট (ইংরেজি: Stop Online Piracy Act), সংক্ষেপে সোপা হচ্ছে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর উত্থাপিত, যুক্তরাষ্ট্র সিনেট প্রস্তাবিত একটি বিল। মূলত অনলাইনে স্বত্বাধিকার ও মেধাস্বত্ব রক্ষা করার জন্য এ বিলটি পাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবের মধ্যে আছে কপিরাইট বা স্বত্বাধিকার না মেনে যেসব ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপন ও অর্থপ্রদান করবে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সার্চ ইঞ্জিনগুলো্র বিভিন্ন কপিরাইট বা স্বত্বাধিকার না মেনে চলা সাইটের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের ওইসব ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করতে বাধ্য করা। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাস হওয়ার পর এ বিলটি একটি আইন বলে গণ্য হবে এবং এর প্রস্তাবিত নিয়মগুলো ভঙ্গ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে যার সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড।

    স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট

    স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট (সোপা) পাস হলে যেসব ওয়েবসাইটের সত্ত্বাধিকারী গুগল অ্যাডসেন্স বা অন্য কোনো বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করে থাকেন, সেই ওয়েবসাইটগুলোর বিষয়বস্তু যদি স্বত্বাধিকার ভঙ্গ করে থাকে তবে সেই ওয়েবসাইটগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এধরনের ওয়েবসাইটগুলো ইন্ডেক্স করতে পারবে না। এছাড়াও বিভিন্ন পেমেন্ট প্রসেসর যেমন: পেপ্যাল, ভিসা, মাস্টারকার্ড, মানিবুকার ইত্যাদির কার্যক্রমও আইনত দণ্ডনীয় বলে বিবেচিত হবে।

  • সেকশন ৩৭৭

    সেকশন ৩৭৭

    সেকশন ৩৭৭ ব্রিটিশ ঔপনিবেশ আমলের (১৮৬০ সালের) একটি ভারতীয় আইন যেটি ব্রিটিশদের অধীনস্থ ৪২ টি দেশে করা হয় এবং এটি পায়ুকাম নিষিদ্ধ বিষয়ক একটি আইন।[১][২] মূলত সমকামীদের ক্ষেত্রে আইনটি বানানো হলেও এটি বিষম যুগলদের মধ্যেও পায়ুকাম করতে বারণ করে যদিও বিষম যুগলদের প্রতি অতটা কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হয়নি। ঠিক পায়ুকামিতা আইন এই সেকশন ৩৭৭ অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশে তৈরি হয় যেটাতে স্বামী-স্ত্রীর যোনি-শিশ্নের মিলন ছাড়া সকল প্রকার যৌন-কর্মকে অস্বাভাবিক এবং প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলা হয়।[৩]

    সেকশন ৩৭৭

    এই আইনে বলা হয়েছে,

    যদি কেউ প্রকৃতির আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো পুরুষ বা নারী বা কোনো প্রাণীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় তবে তাকে দশ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে এবং এই মেয়াদ আজীবন পর্যন্ত বর্ধিত করা হতে পারে।

    আইনটি ব্রিটেনে ১৯৬৭ সালে বাতিল করা হয়।[৪]

  • অলৌকিক ঘটনা

    অলৌকিক ঘটনা

    অলৌকিক ঘটনা এমন একটি ঘটনা যা প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক আইন দ্বারা ব্যাখ্যাযোগ্য নয়। [১] এই জাতীয় ঘটনাকে কোনও অতিপ্রাকৃত সত্তা (বিশেষত দেবতা ), যাদু, একটি অলৌকিক কর্মী, সাধু বা কোনও ধর্মীয় নেতা হিসাবে দায়ী করা যেতে পারে।

    অলৌকিক ঘটনা

    অনানুষ্ঠানিকভাবে, শব্দ অলৌকিক ঘটনা প্রায়ই কোনো উপকারী ঘটনা যে পরিসংখ্যানগত অসম্ভাব্য কিন্তু বিরোধী নয় বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয় প্রকৃতির আইন যেমন একটি জীবিত হিসাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অথবা কেবল একটি “বিস্ময়কর” সংঘটন, সম্ভাবনা নির্বিশেষে, যেমন একটি জন্ম হিসাবে, একটি আসল, বা অনুমিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে একটি মানব সিদ্ধান্তে পৌঁছে। এই জাতীয় অন্যান্য অলৌকিক চিহ্নগুলি হতে পারে: টার্মিনাল হিসাবে চিহ্নিত রোগের বেঁচে থাকা, জীবন-হুমকির পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বা ‘প্রতিকূলতাকে মারধর’। কিছু কাকতালীয় ঘটনাগুলি অলৌকিক হিসাবে দেখা যেতে পারে। [২]

    একটি সত্য অলৌকিক সংজ্ঞা অনুসারে, এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হবে, যার ফলে অনেক চিন্তাবিদ তাদের শারীরিকভাবে অসম্ভব হিসাবে বরখাস্ত করে (যা তাদের বৈধতার ডোমেনের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত আইন লঙ্ঘনের প্রয়োজন) বা তাদের প্রকৃতির দ্বারা নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব (কারণ) সমস্ত সম্ভাব্য শারীরিক প্রক্রিয়া কখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না)। পূর্বের অবস্থানটি টমাস জেফারসন এবং দ্বিতীয়টি ডেভিড হিউমে প্রকাশ করেছেনধর্মতত্ত্ববিদরা সাধারণত বলে থাকেন যে divineশ্বরিক প্রমাণের সাথে God শ্বর নিয়মিতভাবে প্রকৃতির মধ্য দিয়ে কাজ করেন, একজন স্রষ্টা হিসাবে, ছাড়াও, উপরে বা এর বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারেন না। [৩]

    সংজ্ঞা

    সাধারনভাবে অসম্ভব বা প্রকৃতিকভাবেও যা হওয়া অসম্ভব এমন কোন ঘটনার বর্ণনা দিতে সাধারণত “অলৌকিক শব্দ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। [১] ওয়েন গারডেম ” তার মতে – ইশ্বরের ক্রিয়াকলাপের একটি কম সাধারণ ধরণের যাতে তিনি লোকদের বিস্মিত ও আশ্চর্য করে এবং নিজেই সাক্ষ্য দেন।” [৪]

    ব্যাখ্যা

    অতিপ্রাকৃত কাজ

    একটি অলৌকিক ঘটনা এমন একটি ঘটনা যা,প্রকৃতিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। অলৌকিক ঘট। প্রায়শই ধর্মীয় পাঠ্য যেমনঃ বাইবেল বা কুরআন বলে যে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে এবং বিশ্বাসীরা এটিকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছে।

  • চাচাপোয়া

    চাচাপোয়া

    চাচাপোয়ারা হল আন্দিজ পার্বত্যাঞ্চলের একটি প্রাচীন জাতি। আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢালে, অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের বিপরীত দিকে, বর্তমান পেরুর আমাজন নদী সংলগ্ন আমাজোনাস অঞ্চলে তাদের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ইনকাদের সাথে তাদের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। বহু চেষ্টার পর অবশেষে স্পেনীয় আক্রমণের মাত্র বছর ষাটেক আগে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইনকারা তাদের নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়। চাচাপোয়া নামটিও তাদেরই দেওয়া, কেচুয়া ভাষায় যার মানে ‘মেঘ-যোদ্ধা’। এই অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অরণ্য (রেন ফরেস্ট) ও সবসময় আর্দ্র পরিবেশের জন্যই বোধহয় ইনকারা তাদের এমন নামে ডাকত।

    চাচাপোয়া

    তবে চাচাপোয়াদের সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য হাতে পাওয়া যায় না। কারণ তাদের সম্বন্ধে স্পেনীয় ও ইনকাদের রেখে যাওয়া প্রত্যক্ষ বিবরণ নিতান্তই স্বল্প। এইকারণেই তাদের উপর তথ্যর প্রয়োজনে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির উপরই বেশি নির্ভর করতে হয়। যাইহোক, তাদের সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ পাওয়া যায়, তার অন্যতম হল স্পেনীয় বিজেতা ও ঐতিহাসিক পেদ্রো সিয়েজা দে লেওনের লেখা বর্ণনা। তিনি চাচাপোয়াদের সমগ্র আমেরিন্ডীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ফরসা ও সুন্দর বলে উল্লেখ করেছেন।[১] এর থেকে বোঝা যায় অন্য আন্দীয় জাতিগুলির থেকে এরা ছিল কিছুটা আলাদা। তবে পেরুর ইনস্তিতুতো দে আরকেওলখিয়া আমাজোনিকার প্রত্নতাত্ত্বিকরা চাচাপোয়াদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী পরীক্ষা করে অভিমত প্রকাশ করেন যে তারা সংস্কৃতিগত দিক থেকে আমাজনীয় জাতিগুলির থেকে আন্দীয় জাতিগুলিরই বেশি কাছাকাছি ছিল।

    ইতিহাস

    কুয়েলাপ দুর্গর ভগ্নাবশেষ ও চারপাশের দৃশ্য

    যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণাদি থেকে বুঝতে পারা যায়, ২০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সময় থেকেই আন্দিজ পর্বতের পূর্বঢালের এই আমাজন অরণ্যাঞ্চলে মানুষের বসতি ছিল, চাচাপোয়াদের সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাসময় হিসেবে সাধারণত ৭৫০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দকেই ধরা হয়। এদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটি বিশাল দুর্গ – কুয়েলাপগ্রান পাহাতেন, পাহাড়ের চূড়ার উপর তৈরি আরেকটি দেওয়াল ঘেরা প্রাচীন বসতির ধ্বংসস্তূপ। দুটি জায়গাতেই সামরিক প্রয়োজনে নির্মাণের দিকটি পরিষ্কার ফুটে ওঠে।[২] মনে হয় উয়ারিদের (চাচাপোয়াদের সমসাময়িক এই সংস্কৃতি আন্দিজের ঠিক উলটো ঢালে এইসময় বিকাশ লাভ করেছিল ও পর্বতের উচ্চভূমি থেকে একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।) হাত থেকে প্রতিরক্ষার খাতিরেই তারা এগুলি, গড়ে তুলেছিল। এর থেকে তাদের ‘যোদ্ধা’ পরিচয়টিরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এছাড়াও কুয়েলাপ’এর অদূরেই তাদের একটি কবরস্থান কারাহিয়াও আবিষ্কৃত হয়েছে।[৩] তবে পঞ্চদশ শতকে ইনকারা আন্দিজ পর্বত পেরিয়ে তার পূর্বঢালের দিকে অগ্রসর হলে, চাচাপোয়াদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তারা ইনকাদের হাতে পরাজিত হয়। তাদের একরকম জোর করেই দলে দলে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। তাদের পরপর বিভিন্ন বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়। এই কারণেই হয়তো স্পেনীয়রা যখন এই অঞ্চলে প্রবেশ করে, ইনকাদের বিরুদ্ধে বহুক্ষেত্রে চাচাপোয়ারা স্পেনীয়দেরই পক্ষাবলম্বন করে। যাইহোক, ১৫৪৭’এর পর চাচাপোয়াদের স্বাধীন অস্তিত্ব স্পেনীয় ঔপনিবেশিক সৈন্যদের হাতেই খর্বিত হয় ও পরবর্তী সময়ে প্রবল অত্যাচার, দারিদ্র ও মহামারীতে তাদের জনসংখ্যা প্রবলভাবে হ্রাস পায়।[৪]

    ১৪৭৫ সালে যখন চাচাপোয়ারা ইনকাদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় তখন তাদের জনসংখ্যা ছিল মোটামুটি ৫ লক্ষ বলে আন্দাজ করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে একটা বড় অংশকে (গবেষক এস্পিনোথা[৫] ও পেটার লেরখের[৬] মতে জনসংখ্যার প্রায় ৫০%কেই) সেই সময় অন্যত্র, বিশেষত তিতিকাকা হ্রদকুসকোতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। ইনকাদের আমলে করদাতাদের সংখ্যার যে হিসেব পাওয়া গেছে, তার উপরে নির্ভর করে আন্দাজ করা হয়, স্পেনীয় বিজেতাদের আগমণের কালে এদের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ১ লক্ষে।[৭]

    বিতর্ক

    যদিও সাধারণভাবে ৭৫০ – ৮০০ খ্রিষ্টাব্দকে চাচাপোয়া সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাপর্ব হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এর সঠিক সময় নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের অবকাশ রয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে বর্তমানে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাদের দৈত্যাকার দুর্গ কুয়েলাপএর নির্মাণের সময়কাল নিয়েও। এই দু’টিই কিছুদিন আগে পর্যন্তও ধরা হত ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ আলফ্রেদো নার্বায়েথ এই দুর্গের নির্মাণকার্যের সঠিক সময় বের করার উদ্দেশ্যে যে রেডিওকার্বন পরীক্ষা চালান, তাতে উঠে আসে এই দুর্গটির অন্তত কিছু অংশ ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমদিকে, অর্থাৎ ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। সেই হিসেবে ষষ্ঠ শতাব্দকে দুর্গটির নির্মাণকার্যের সূচনাপর্ব বলে ধরা যেতেই পারে। এর মানে দাঁড়ায় চাচাপোয়া সংস্কৃতির বিকাশের সূচনাপর্বকেও অন্ততপক্ষে সেই সময়ে বা তার কিছুটা আগে বলেই ধরতে হবে।[৮][৯] ১৯৮০ থেকে এই অঞ্চলে পড়ে থেকে গবেষণা চালিয়ে আসা জার্মান বংশোদ্ভূত বর্তমানে পেরুর নাগরিক গবেষক পেটার লেরখেরও মতে এ’ধরনের একটি নির্মাণকার্য করার একটি পূর্বশর্তই হল – একেবারে নতুন কোনও সংস্কৃতি, যাদের এ’ধরনের নির্মাণকার্যের কোনওরকম পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই, তাদের পক্ষে এইরকম দুর্গনির্মাণ সম্ভবই নয়। তার গবেষণার তাই ইঙ্গিত এই সংস্কৃতির সূচনাপর্ব বাস্তবে নিশ্চয়ই আরও প্রাচীন, হয়তো বা আজ থেকে ২০০০ বছর আগেই এর বিকাশ আরম্ভ হয়।[১০]

  • গ্রোভিও

    গ্রোভিও

    প্রাক-রোমান যুগে ইবেরীয় উপদ্বীপের ভাষিক মানচিত্র। এদের মধ্যে C – 2 চিহ্নিত অঞ্চলটিতে গ্রোভিওরা বাস করতো বলে মনে করা হয়।

    গ্রোভিও

    গ্রোভিওরা (লাতিনGrovii; স্পেনীয়grovios) ছিল প্রাক-রোমান যুগে ইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে বর্তমান পর্তুগালের উত্তরাংশ ও বর্তমান স্পেনের গালিথিয়া অঞ্চলের অংশবিশেষে বসবাস করা এক প্রাচীন উপজাতি। এর মূলত মিনিও নদীর উপত্যকা ও মোহনা, থিয়েস দ্বীপপুঞ্জ, বাইয়োনা অঞ্চল ও রিয়া দে বিগো সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করতো। এদের বসবাসের সীমানা আ গ্রোভা উচ্চভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে মনে করা হয়। বর্তমান উত্তর পশ্চিম স্পেনের পন্তেবেদ্রা প্রদেশের তুই অঞ্চল ছিল তাদের অন্যতম মূল কেন্দ্র।[১] রোমানদের লেখাপত্রে কাস্তেলাম টাইডি নামে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রোঞ্জ যুগ থেকেই এই অঞ্চলে মানুষের বসতি পরিলক্ষিত হয়।

    আলোইয়াআগিয়া পার্বত্য অঞ্চল, কাবেথা দে ফ্রাঙ্কোস ও তুই’এ এদের নির্মিত প্রাকারবেষ্টিত ধ্বংসাবশেষ বা কাস্ত্রো আবিষ্কৃত হয়েছে।

    প্রাচীন বিভিন্ন লেখাপত্রে, যেমন প্রখ্যাত রোমান ভৌগোলিক পম্পোনিয়াস মেলা, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও সৈনিক প্লিনি (বড়), রাজনীতিবিদ ও কবি সিলিকাস ইতালিকাস এবং টলেমির লেখাতেও এদের উল্লেখ পাওয়া যায়। পম্পোনিয়াস মেলা ও প্লিনির মতে এরা এদের আশেপাশে বসবাসকারী অন্যান্য উপজাতির ন্যায় কেল্টীয় ছিল না, বরং ছিল গ্রিক বংশোদ্ভূত।[১] ট্রয় যুদ্ধখ্যাত গ্রিক বীর ডিওমিডিসের বংশধর বলেও এরা উল্লিখিত হয়েছে। এদের মূল উপাস্য দেবতা ছিল সম্ভবত তুরিয়াকাস (আইরিশ দেবতা টোর-এর সঙ্গে যার সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়)।

  • পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু মূলত ক্রান্তীয় প্রকৃতির অর্থাৎ উষ্ণ ধরনের। এছাড়া এই রাজ্যের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এজন্য পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তার এবং ভূমিরূপের নানা বৈচিত্র্য এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য ঘটিয়েছে। জলবায়ুগতভাবে পশ্চিমবঙ্গ একটি বৈচিত্র্যময় রাজ্য।

    পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু

    জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

    • ঋতু পরিবর্তন : পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়। যথা: গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল।
    • মৌসুমী বায়ুর প্রভাব : গ্রীষ্মকালে উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এবং শীতকালে শীতল ও শুষ্ক মৌসুমী বায়ু এই রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বর্ষাকালে (গ্রীষ্মকালের শেষভাগ) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে এবং শীতকালে শুষ্ক ও শীতল জলবায়ু বিরাজ করে।
    • বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, শীতকালে হয় ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে।
    • উত্তরপ্রান্তে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই রাজ্যের উত্তরপ্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে (দার্জিলিং হিমালয়ের পাদদেশে) প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
    • উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় রাজ্যের বাকী এলাকার জলবায়ু সমভাবাপন্ন : দার্জিলিং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল-এ ভূমির উচ্চতা বেশি বলে গ্রীষ্মকাল মনোরম, কিন্তু শীতকাল অত্যন্ত তীব্র

    পশ্চিমবঙ্গের অবশিষ্ট সমভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি হয় না। তবে পশ্চিমের পুরুলিয়া জেলায় শীত-গ্রীষ্মের তাপের পার্থক্য সমভূমি অঞ্চল থেকে বেশি।[১]

    ঋতুচক্র

    বছরের বিভিন্ন সময়ে উষ্ণতার তারতম্য, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বায়ুপ্রবাহের বৈচিত্র্য প্রভৃতি লক্ষ্য করে আবহতত্ত্ববিদগণ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে চারটি প্রধান ঋতুতে ভাগ করেছেন। যথা: গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল। গ্রীষ্মকাল সম্পাদনা মার্চ মাসের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব।

    উষ্ণতা

    গ্রীষ্মকালে সমভূমি অঞ্চলে গড় উষ্ণতা থাকে ২৪ °সে (৭৫ °ফা) থেকে ৩২ °সে (৯০ °ফা)।[২] তবে, স্থানভেদে উষ্ণতার তারতম্য দেখা যায়। যেমন, এপ্রিল মে মাসে যখন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে চায় না, তখন দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে অবস্থান করে।[৩][৪][৫] গ্রীষ্মকালে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তাপপ্রবাহ চলে ও উষ্ণতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে।[৬][৭][৮] তবে, দার্জিলিঙের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির উচ্চতা বেশি বলে গ্রীষ্মকাল মনোরম। দার্জিলিঙে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    বৃষ্টিপাত

    মে মাসে মাঝে মাঝে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কালবৈশাখী নামক ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাবের ফলে ঝড়বৃষ্টি হয় এবং গরম অনেকটা কমে যায়।[৯]

    বর্ষাকাল সম্পাদনা জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগ পর্যন্ত বর্ষাকাল। বর্ষাকালে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে আসা উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা রাজ্যে বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও কম কোথাও বেশি। বার্ষিক ১৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের ১২৫ সেন্টিমিটার এই সময় বর্ষিত হয়। রাজ্যের উত্তরভাগে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ২৫০ সেন্টিমিটার।

    শরৎকাল সম্পাদনা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত শরৎকালের স্থায়ীত্ব। এই সময় আকাশ মেঘমুক্ত হয় এবং অপেক্ষাকৃত মনোরম আবহাওয়া বিরাজ করে। তবে এসময় মাঝে মাঝে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়, একে আশ্বিনের ঝড় বলা হয়। এই ঋতুর শেষে বাতাসে ক্রমশ হিমেল ভাব দেখা দেয়।

    শীতকাল সম্পাদনা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতকাল স্থায়ী থাকে। জানুয়ারি শীতলতম মাস। তাপমাত্রা সর্বনিম্ন গড়ে ৯°-১৬° সেন্টিগ্রেড থাকলেও রাজ্যের উত্তরভাগে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। কোন কোন সময় ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমা ঝঞ্ঝার সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।

    জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক

    • কর্কটক্রান্তি রেখা : পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও নদিয়া) পূর্ব-পশ্চিমে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর) বিস্তৃত থাকায় এই রাজ্যের অধিকাংশ স্থান (দার্জিলিং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া) উষ্ণভাবাপন্ন।
    • মৌসুমী বায়ু : বর্ষাকালে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে আসা উষ্ণ-আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা রাজ্যে বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও কম কোথাও বেশি। শীতকালে উত্তরভাগের ঠান্ডা স্থলভাগ থেকে আসা উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে ঠান্ডা পড়ে। এই বায়ুপ্রবাহ শুষ্ক থাকে বলে বৃষ্টিপাত বিশেষ হয় না।
    • ভূমির উচ্চতা : ভূমির উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমে।

    পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতা বেশি বলে উষ্ণতাও এই অঞ্চলে অনেক কম।

    • সামুদ্রিক প্রভাব : সমুদ্রের প্রভাবের জন্য এই রাজ্যের দক্ষিণ ভাগের জলবায়ু প্রায় সমভাবাপন্ন; শীত ও গ্রীষ্ম কোনটাই তীব্র নয়।
    • পর্বতের প্রভাব : পশ্চিমবঙ্গের উত্তর সীমান্তে হিমালয় পর্বতশ্রেণী পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত থাকায় একদিকে যেমন আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এতে বাধা পেয়ে এই রাজ্যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তেমনি উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুও হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে পশ্চিমবঙ্গে শীত কম পড়ে।[২]

    প্রভাব

    বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে বেশিরভাগ শস্য উৎপাদন হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু ধানপাট চাষের পক্ষে আদর্শ। এছাড়া ডাল ও তৈলবীজের ফলন ব্যাপকভাবে হয়। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে চা-এর উৎপাদন উন্নতমানের এবং স্বাদে-গন্ধে জগৎ-বিখ্যাত।

    পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ঋতুতে রথযাত্রা, দোল উৎসব, দুর্গাপূজা, ঈদ-উল-ফিতর,বড়দিন (খ্রীস্টমাস), নবান্ন ইত্যাদি পালিত হয়।

  • রাজনৈতিক বাস্তবতাবাদ

    রাজনৈতিক বাস্তবতাবাদ বা বস্তুতন্ত্রবাদ বা রাজনৈতিক বস্তুতন্ত্রবাদ বা রাজনৈতিক বাস্তববাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিদ্যার একটি বিশেষ শাখা। এটি কোন রাষ্ট্রের এমন বিশেষ রাজনৈতিক আচরণের ব্যাখ্যা দেয় যে আচরণের ফলে রাষ্ট্র নৈতিকতা, আদর্শ, সামাজিক পূণর্গঠন ইত্যাদি বিষয়াবলীকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ও যেকোন উপায়ে জাতীয় স্বার্থ কায়েম ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নীতি নির্ধারণ করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় বস্তুতন্ত্রবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতিকে ক্ষেত্র বিশেষে পরস্পরের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বস্তুতন্ত্রবাদের মতে- আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কার্যত নৈরাজ্যবাদমূলক; প্রতিটি রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোকে প্রাধান্য দেয় এবং পদক্ষেপগুলো রাষ্ট্রের স্বতঃস্ফুর্ততা ও গতিময়তার মধ্য দিয়ে সম্পাদিত হয়; রাষ্ট্রের এরূপ নীতিমালার জন্য মানবকূল পরস্পরের প্রতি সাংঘর্ষিক মনোবৃত্তি ধারণ করে; ব্যক্তি পর্যায়ের নৈতিক আদর্শগুলোর দ্বারা রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিকে মূল্যায়ন করা যায় না কেননা রাষ্ট্রসমূহ যখন পরস্পরের মুখোমুখি হয় তখন তা তারা ব্যক্তি হিসেবে নয় বরং একেকটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে হয়; রাজনৈতিক নীতিমালার ভিত্তি যতটা না আদর্শ, তার চেয়ে বেশি স্বার্থ ও ক্ষমতা; টিকে থাকার লড়াই ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র এককভাবে দায়ী।

    রাজনৈতিক বাস্তববাদ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহের মধ্যে একটি চিন্তাধারা, যা প্রারম্ভিক আধুনিক ইউরোপের বাস্তব-রাজনৈতিক ধারণার মধ্য দিয়ে উদ্ভূত হয়েছিল। এই চিন্তাধারা মূলত এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যে, বিশ্ব রাজনীতি চূড়ান্তভাবে সবসময় এবং অপরিহার্যভাবে ক্ষমতান্বেষণকারীদের দ্বন্দ্ব-ক্ষেত্র। এই প্রত্যাখ্যান-অযোগ্য দ্বন্দ্বের উৎস্য কী – সেই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক বাস্তববাদীদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধ্রুপদী বাস্তববাদীগণ মনে করেন এর উৎস্য মানব প্রকৃতি বা প্রবৃত্তিতেই নিহিত। নব্যবাস্তববাদীগণ নৈরাজ্যময় রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোকে এই দ্বন্দ্বের উৎস্য বলে মনে করেন। এদিকে নব্য-ধ্রুপদী বাস্তববাদীগণ এর উৎস্য হল মানব প্রকৃতি ও নৈরাজ্যময় রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো দুটোই, ও সেই সাথে কিছু নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় আভ্যন্তরীন চলক। এছাড়াও বিশ্ব রাজনীতির পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে কিরকম কাজ করা উচিত তা নিয়েও নব্যবাস্তববাদীরা দুইভাগে বিভক্ত: প্রতিরক্ষামূলক বাস্তববাদআক্রমণাত্মক বাস্তববাদ। বাস্তববাদীরা দাবি করেন, প্রাচীন যুগের থুসিডাইডিসের সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাসের সকল সময়ে রাজনৈতিক বাস্তববাদের ঐতিহ্য বজায় রয়েছে।

    জোনাথন হাসলাম রাজনৈতিক বাস্তববাদকে “বিভিন্ন ধারণার একটি মতপরিসর” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[১] যে সংজ্ঞাই ব্যবহার করা হোক না কেন, রাজনৈতিক বাস্তববাদের তত্ত্ব সমূহ চারটি কেন্দ্রীয় প্রস্তাবকে ঘিরেই আবর্তিত হবে:[২]

    রাজনৈতিক বাস্তববাদকে প্রায়ই প্রয়োগবাদী রাজনীতি-র (রেয়ালপোলিটিক) সাথে সম্পর্কিত করা হয়, কেননা উভয়ই অভীষ্ট, অর্জন এবং ক্ষমতার প্রয়োগের ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। যাই হোক, প্রয়োগবাদী রাজনীতি একটি পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি যা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ (যেমন বৈদেশিক নীতি)। অন্যদিকে রাজনৈতিক বাস্তববাদ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক পরিকাঠামো, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধীনের বিভিন্ন বিষয়কে বর্ণনা করতে, ব্যাখ্যা করতে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহৃত হয়। এই তত্ত্বগুলোকে রাজনৈতিক উদারতাবাদের আদর্শগুলোর সাথে প্রতিতুলনা করা হয়।

    রাজনৈতিক বাস্তববাদ হচ্ছে আধুনিক বিদেশ নীতিগত চিন্তাধারার একটি প্রভাবশালী শাখা। একটি শিক্ষায়তনিক অভিষ্ট হিসেবে রাজনৈতিক বাস্তববাদ কোন মতাদর্শের বন্ধনে আবদ্ধ নয়। এটি না কোন নৈতিক দর্শনের পক্ষে থাকে, না কোন মতাদর্শকে রাষ্ট্রের আচরণের প্রধান বিষয় হওয়া উচিত বলে মনে করে। রাজনৈতিক বাস্তববাদীদের অগ্রাধিকারকে “মাকিয়াভেল্লীয়” হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যেখানে তাদের কেন্দ্রীয় মনোযোগের বিষয় হয় অন্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় নিজের রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।[৩]