Category: সাধারণ বিজ্ঞান

General Science

  • জৈবক্ষমতা

    জৈবক্ষমতা (ইংরেজি: Biopower, ফরাসী: Biopouvoir) হচ্ছে ফরাসী শিক্ষায়তনিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজতাত্ত্বিক মিশেল ফুকো এর দেয়া একটি শব্দ। এটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের চর্চা এবং সেগুলোর নাগরিকের “শরীরের উপর আধিপত্য অর্জন এবং জনগণকে নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে অনেক ও বৈচিত্র্যময় উপায় এর বিষ্ফোরণ” সাথে এটি সম্পর্কিত।[১] কলেজ ডি ফ্রান্স-এ ফুকো এই শব্দটি প্রথম তার লেকচার কোর্সে উল্লেখ করেন।কলেজ ডি ফ্রান্স[২][৩] কিন্তু এই শব্দটি প্রথম ছাপানো অবস্থায় পাওয়া যায় দ্য উইল টু নলেজ গ্রন্থে, যা ফুকোর দ্য হিস্টোরি অফ সেক্সুয়ালিটি এর প্রথম খণ্ডে এসেছিল।[৪] ফুকোর কাজে এটাকে গণস্বাস্থ্য, উত্তরাধিকারসূত্র নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, এবং আরও অনেক নিয়ন্ত্রণমূলক কৌশলের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো সরাসরি শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। এটি আরেকটি শব্দের সাথে সম্পর্কিত যা তিনি কম পরিমাণে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু পরবর্তী চিন্তাবিদরা স্বাধীনভাবে সেই শব্দটাকে নিয়ে নিয়েছেন, সেটা হল জৈবরাজনীতি (Biopolitics)। যে কৌশলের দ্বারা রাষ্ট্র দ্বারা জ্ঞান, ক্ষমতার উপর আধিপত্য এবং অধীনস্থ বানাবার প্রক্রিয়ার দ্বারা মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে তার ক্ষেত্রে জৈবরাজনীতির ধারণাটি আরও বেশি সম্পর্কিত।

    ফুকোর ধারণা

    ফুকো অনুসারে, জৈবক্ষমতা হচ্ছে মানুষের বিশাল গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্ষমতার একটি প্রযুক্তি। এই রাজনৈতিক প্রযুক্তির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রাষ্ট্রের সমগ্র জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তৈরি করে। এটি মানব দেহের শারীরস্থান-রাজনীতি এর মাধ্যমে মানব দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামাজিক নিয়মানুবর্তিতামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জৈবরাজনীতি এর দ্বারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে এটি বাহির থেকে আরোপ করা হয় যার উৎস্য সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক বিভাগের দ্বারা গবেষণার দ্বারা সঠিকভাবে বোঝা যায় না, কেননা সেই উৎস্যগুলো ছলনাময় ও প্রতারণাপূর্ণ হয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিভাগগুলো তাদের বর্তমান গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো প্রতারণাপূর্ণ হয়ে থাকে। ফুকোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মানুষেরা সামাজিক অনুযায়িতার প্রত্যাশা অনুযায়ী ধীরে ধীরে সম্মত হতে থাকার ফলে, আধুনিক ক্ষমতা সামাজিক আচরণ এবং মানুষের আচরণে প্রোথিত হয়ে যায়। আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও পুঁজিবাদ ইত্যাদির উদ্ভবের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রয়োজনীয় ও সার বৈশিষ্ট্য, যার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে।[৫] জৈবক্ষমতা দ্বারা আক্ষরিক অর্থেই শরীরের উপর ক্ষমতা অর্জন বোঝানো হয়। এটি হচ্ছে “শরীরের উপর আধিপত্য অর্জন এবং জনগণকে নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে অনেক ও বৈচিত্র্যময় উপায় এর বিষ্ফোরণ”।[৬] ফুকো তার কলেজ ডি ফ্রান্সে জানুয়ারি ও এপ্রিল। ১৯৭৮ এ দেয়া সিকিউরিটি, টেরিটোরি, পপুলেশন শিরোনামের লেকচার কোর্সে এই ধারণাটিকে আরও বিস্তৃত করেন:

    এর দ্বারা আমি অনেকগুলো প্রপঞ্চের কথা বোঝাচ্ছি যেগুলো আমার কাছে খুবই উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়। এগুলো হচ্ছে একাধিক কৌশলের সমাহার যার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক জীববিজ্ঞানগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে রাজনৈতিক কৌশল ও ক্ষমতার একটি সাধারণ কৌশলের অধীনস্থ বানানো হয়। অন্য কথায়, অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকে আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজগুলো কিভাবে মানুষের একটি প্রজাতি হবার মৌলিক জীববিজ্ঞানগত সত্যকে বিবেচনা করেছে সেটা দেখলেই এটা বোঝা যায়। একেই আমি জৈবক্ষমতা বলছি।[৭]

    এটি জনগণের জীবনের রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রতিপালনের জন্য সরকারের উদ্বিগ্নতার সাথে সম্পর্কিত, “মানুষের শরীরের উপর শ্রারীরস্থান-রাজনীতি হচ্ছে জীবনের সকল বৈশিষ্ট্য যেমন জন্ম, মৃত্যু, প্রজনন, রোগ ইত্যাদির উপর নিয়ন্ত্রণ।[৮] এটি একটি সাধারণীকৃত নিয়মানুবর্তি সমাজ তৈরি করে[৯] এবং জনগণের উপর আরোপিত জৈবরাজনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।”[১০][১১][১২] তার লেকচার সোসাইটি মাস্ট বি ডিফেন্ডেড এ ফুকো জৈবরাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ এর কথা বলেন। এবং বলেন যে এটি নিজেদের মত পুরাণ ও ব্যাখ্যা তৈরি করে। এখানে তিনি জৈবরাজনীতি[১৩] ও শৃঙ্খলার মধ্যে এভাবে পার্থক্য দেখান:

    শৃঙ্খলা হচ্ছে একটি প্রযুক্তি যা ব্যক্তিদেরকে আচরণ সেখায়, কার্যকরী ও ফলপ্রসূ শ্রমিক তৈরি করে। অন্যদিকে জৈবরাজনীতি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োগ করা হয়, যেমন একটি স্বাস্থ্যবান কর্মশক্তি নিশ্চিত করার জন্য।[১৪]

    ফুকো বলেন, পূর্ববর্তী গ্রীক, রোমান ও মধ্যযুগীয় শাসনে রোমান সম্রাট, নাইটদের স্বর্গীয় অধিকার, স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র এবং পোপদের[১৫] শরীরের উপর ক্ষমতা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মডেল ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক যা কোন একক ব্যক্তি যেমন রাজা, পবিত্র রোমান সম্রাট, পোপ বা রোমান সম্রাটকে কেন্দ্র করেই ছিল। যাই হোক, মধ্যযুগে রূপক বডি পলিটিক এর উদ্ভব হয়, যার দ্বারা বোঝানো হয় গোটা সমাজই শাসকের সাথে আছে। এক্ষেত্রে রাজা হচ্ছেন সমাজের প্রধান, সেই সাথে তথাকথিত রাজ্যের এস্টেট এবং মধ্যযুগীয় রোমান ক্যাথলিক চার্চ রয়েছেন রাজতন্ত্রের পরেই। তাদের সাথে আবার রয়েছে বেশিরভাগ সামন্ততান্ত্রিক সার্ফ এর কৃষক সম্প্রদায়, এবং সব মিলে একটা স্তরক্রমীয় পিরামিড। উচ্চ বিশ্বাসঘাতকতা এর জন্য এই রূপক এর অর্থ মধ্যযুগীয় আইনে নথিবদ্ধ হয়, এবং যদি এর জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হতেন তাহলে তাকে ফাঁসি ও অন্যান্য শাস্তি দেয়া হত।[১৬][১৭] যাই হোক, প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে আধুনিক রাজনৈতিক ক্ষমতার আবির্ভাবের পর এই অবস্থাটি অষ্টাদশ শতকের ইউরোপে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। জনগণের কাছে আসে উদারপন্থী পাশ্চাত্য জগতের উদার সংসদীয় গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক দল। বিশ্বে আসে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার, যদিও তখন পুরুষের অধিকারেই কেবল এটা ছিল। ইউরোপে পরে ১৯২৯ সাল থেকে নারীরাও ভোট দিতে শুরু করে (সুইজারল্যান্ডে পায় সবার পর ১৯৭১ সালে), আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৪ সালে কুখ্যাত বর্ণবাদী জিম ক্রো আইন রদের পর কৃষ্ণাঙ্গরাও ভোট দিতে সক্ষম হন।

    মানব বিজ্ঞানের উদ্ভব ও ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে তার বিকাশের লক্ষ্যবস্তু ছিল প্রাথমিকভাবে আধুনিক পাশ্চাত্য মানব এবং যে সমাজে তারা বাস করে সেই সমাজ। এটি নিয়মানুবর্তী প্রতিষ্ঠান এর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।[১৮][১৯][২০] এবং, ফুকো এই মানব বিজ্ঞান বলতে বিশেষ করে মধ্যযুগীয় বিজ্ঞানকে বুঝিয়েছেন, যার ফলে মানব শরীরের শারীরস্থান-রাজনীতি এর উদ্ভব ঘটে, যা মানুষের জৈব ইতিহাসের একটি জৈবরাজনীতি।[২১] সমাজের একটি রূপান্তর ঘটে যার ফলে জোড় করে ইউরোপীয় রাজতন্ত্রকে সরিয়ে দিয়ে “বৈজ্ঞানিক” রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করা হয়, এবং আইনগত চর্চার পূর্ণাঙ্গ মৌলবাদী পরিবর্তন ঘটানো হয়, যেখানে শাস্তিযোগ্যদের পুনরাবিষ্কার করা হয় এবং এদেরকে পৃথক করা হয়।[২২]

    ক্ষমতা দখলের একটি দ্বিতীয় সংস্করণের বিকাশ ঘটে একটি নতুন প্রকরণের ক্ষমতার দ্বারা যেটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে সম্ভাবনার সূত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (স্টোক্যাস্টিক) ও জনগণকেন্দ্রিক ছিল। জনগণকেন্দ্রিক বলতে ফুকো বুঝিয়েছেন এই রাষ্ট্র ব্যক্তি থেকে জনগণে পরিণত হয়েছে (“জনগণ রাষ্ট্র”),[২৩] সেই সাথে এখানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্র এবং সরঞ্জামের আকারে সরকারী কৌশলের নতুন অতিরিক্ত প্রেরণা তৈরি হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক কৌশল, যাকে আমরা রাষ্ট্র নামে চিনি তা জনগণ নিয়ে কম শাসন করে এবং বহিঃস্থ যন্ত্রসমূহ পরিচালনাতেই বেশি মনোনিবেশ করে। এরপর ফুকো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, শরীর (এবং জীবনের) এবং জনগণের এই শারীরস্থান জৈবরাজনীতি একটি নতুন আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং আধুনিক সমাজের “নতুন” রাজনীতি এর সাথে সম্পর্কিত হয়। আর এই আধুনিক সমাজের “নতুন” রাজনীতি উদার গণতন্ত্র এর ছদ্মবেশে আমাদের সামনে হাজির হয়, যেখানে জীবন (জীববিজ্ঞানগত) নিজেই কেবল ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক কৌশল এর অংশ হয় না, সেই সাথে এটি গাণিতিক বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান এবং জাতিরাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সমস্যা হয়ে ওঠে।[২৪]

  • জননীতি

    সাধারণত জননীতি বলতে জনকল্যাণ ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করে এমন কতিপয় নিয়ম নীতি বুঝায় যা সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। অর্থাৎ জননীতি হচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রণীত এমন কিছু সিদ্ধান্ত যা জনগণের বৃহৎ কল্যাণের জন্য প্রণয়ন করা হয় এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে থাকে।[১] জননীতি হচ্ছে সেটাই যা সরকার করতে চায় বা চায় না।[২] সমস্ত সমাজের মাঝে মূল্যের কর্তৃত্বপূর্ণ বরাদ্দই হলো জননীতি।[৩]

    বিস্তারিত তথ্য

    বর্তমান বিশ্বের আধুনিক প্রাপ্তসমূহ জন-কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আর তাই রাষ্টীয় গঠন ও ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়। এ নীতি হচ্ছে সুপরিকল্পিত ও ন্যায়সঙ্গত কিছু পরিকল্পনা। আর এই নীতিগুলোকেই বলা হয় জননীতি। সরকার কোন কোন নীতিগ্রহণ বা অনুসরণ করে থাকে শুধু মাত্র তাই জননীতির আলোচ্য বিষয় নিয় বরং সরকার কেন এসব নীতি গ্রহণ করে থাকে। তাও জননীতি আলোচনা করে। জননীতি যুক্তিসম্পন্ন পরিকল্পনা বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব, এলিটের পছন্দ, নিয়মতান্ত্রিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক প্রভাবেরই সমষ্টি। সরকার একটি সমাজকে সংগঠিত করে অন্যান্য সমাজের সমস্যা সমূহকে বিবেচনায় রাখে। এছাড়া সমাজের সকল স্থরের জনগনের মধ্যে সকল প্রকারের সেবা ও সুবিধা বণ্টন করে। এজন্য সরকার জনগনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অর্থ কর আরোপের মাধ্যমে করা হয়। আর সরকার এসব কিছুইল জননীতি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ, আমলাতন্ত্রকে সুসংগঠিত করে এবং সমাজের সকল স্তরের জনগনের মধ্যে সকল প্রকারের সেবা ও সুবিধা বণ্টন করে। এজন্য সরকার জনগনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

    তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অর্থ কর আরোপের মাধ্যমে করা হয়। আর সরিকার এসব কিছু জননীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে করে থাকে। এভাবেই জননীতি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ, আমলাতন্ত্রকে সুসংগঠিত করে এবং সমাজের সকল স্তরে সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করে। সরকারের এ নীতি প্রনয়ণ ও বাস্তবানের উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র তথা জনগনের সার্বিক কল্যাণ বিনীত হয়। জননীতি যেহেতু সমাজের বিরাজমান সমস্যার উপর ভিত্তি করে রচিত হয় এবং রাজনীতি বিজ্ঞান সমাজের বিদ্যমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণ করে। সেহেতু রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জননীতি বা সরকারী নীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সরকারী নীতি বা জননীতির পরিধি ওগুরুত্ব সম্পর্কে জানার আগে আমাদেএ জানতে হবে জননীতি বা সরকারী নীতি বিস্তার এবং জননীতির আলোচ্য বিষয়গগুলো কি? এগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

    জননীতির বৈশিষ্ট্য

    সরকারী নীতির পরিধিঃ জননীতির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। সরকারী নীতিতে কি কি অন্তর্ভুক্ত হয় সেটা নয় বরং কি কি অন্তর্ভুক্ত নয় সেটাই মূল বিষয়। নিম্নে সরকারী নীতির পরিধি পর্যায় ক্রমিকভাবে আলোচিত হলঃ

    ১) লক্ষ্য নির্ধারণে লক্ষ্য স্থির করা দিক নির্দেশনাঃ

    বর্তমান জনকল্যাণমূখী রাষ্ট্রের সরকারকে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এ সকল কর্মকান্ড কিভাবে করবে, কখন করলে সুবিধা হয়, কি করা উচিত বা অনুচিত ইত্যাদি বিষয়ে একটি লক্ষ্য নির্ণয় করা হয়। সরকারী নীতি এই সকল বিষয়ের উপর দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

    ২) সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ

    যে কোন বিষয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হলে তার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সরকারী নীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলো অনেকগুলো বিকল্পের মধ্য থেকে একটি সঠিক ও বাস্তব সম্মত বিষয় নির্ধারণ। জননীতি সব সময় এ ধরনের বিষয়ের উপর জোর দিয়ে থাকে।

    ৩) নীতি বাস্তবায়নঃ

    সরকার বাস্তবে যা করছেন তাই সরকারী নীতির বাস্তবায়ন। সরকার দেশে বিরাজমান ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবে তার ত্রুটি দেয়া দিলে ঐ নীতি বাস্তবতা বিবর্জিত বলে ধরা পূর্বে তাকে সরকারী নীতি বলা যাবে না। সরকারি নীতিই সরকারের বাস্তবায়ন অভিব্যক্তি।

    ৪) ইতিবাচক ও নেতিবাচকঃ সরকারের নীতি ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। কারণ সরকারের সকল নীতিই রাষ্টের কল্যাণে কাজ করতে সক্ষম হয় না। তবে তা সরকারি নীতির এখতিয়ার বহির্ভূত নয়।

    যেমনঃ খাদ্য নীতি, সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্য স্থির করলেন কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। ইহা সরকারী নীতির নেতিবাচক দিক।

    ৫) তথ্যঃ

    একটি প্রকৃত ঘটনাকেই কেন্দ্র করে নীতি প্রণীত হয়। কারণ নীতি নির্ধারণে কতগুলো তথ্যের প্রয়োজন। সে জন্য প্রকৃত ঘটনা নয় বরং প্রকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই নীতি প্রনয়ণ করা হয়। যা সংগঠনের কার্যকারিতাকে নির্ভর যোগ্যতা প্রদান করে ।

    ৬) নমনীয়তাঃ সরকারী নমনীয় হওয়া উচিত যাতে প্রয়োজনের অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। নীতি প্রণেতাদেরকে স্থায়ীত্বের কথা বিবেচনা করে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। নীতির স্থায়িত্বের খুবই প্রয়োজন। দ্রুত পরিবর্তনশীল নীতি সংগঠনের স্থায়িত্বের পক্ষে অন্তরায়। তাই নমনীয়তা জননীতির বিষয়বস্তু।

    ৭) সফলতাঃ লক্ষ্যহীন নীতি কখনো সাফল্যের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। যে নীতি সফলতা অর্জন করতে পারে না মূলত সে ধরনের নীতির কোন প্রয়োজন নেই। যে কোন দেশে সরকারী নীতি সাফল্য লাভ করতে পারে যদি সরকার সে ধরনের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হয় যে তাকে সাফল্য লাভ করতে হবে এবং সেভাবে যদি নীতি বাস্তবায়ন করা হয়।

    সরকারী নীতি বিশ্লেষণে আমরা বিষয় বস্তুর মাধ্যমে কতেকগুলো উপাদান দেখতে পাই যে জননীতির অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো হলঃ

    ক) policy Demand:

    কোন সমস্যার উপর সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি। যেমন সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি বিবেচনা কল্পে বেতন ও মঞ্জুরি কমিশন গঠন।

    খ) Policy Decision:

    সরকার কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম কিভাবে নেবেন তার আইন ভিত্তিক বর্ণনা বা সিদ্ধান্ত।

    গ) Policy Statement:

    নীতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত অনেক সময় statement আকার প্রকাশিত হয়। যেমনঃ কমিটি বা মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ ধরনের বিশ্বের অনুদান দেয়া হয়।

    ঘ) Policy out put:

    যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করা হয়েছে কিনা, তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মিল আছে কিনা তা যাচাই করা। যেমনঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ হয়েছে কিনা তা যাচাই করা।

    ঙ) Policy Out come: ইহা Policy out put এর একটি consequence যেমনঃ বিনামূল্যে বই সরবরাহের সাথে শিক্ষার হার বাড়ছে কি না দেখা।

    চ) Policy analysis and policy advocacy ইহা হল কি করা উচিৎ এবং নীতি গ্রহণের ফলাফল কি তা যাচাই করা।

    পরিশেষে বলা যায় যে, জননীতির পরিধিত্ব বা বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। কারণ, কল্যাণ মূলক নীতিমালা উদ্ভবের ফলে সরকারের কর্মকান্ডের ক্রমশ বৃদ্ধির হয়েছে। ফলে সরকারকে নতুন নতুন নীতিগ্রহণ করতে হয়। তাই সরকারী নীতির সীমা বা পরিধি নির্ণয় করা কঠিন ব্যাপার। তাই বলা যায় যে, যেহেতু এর পরিধি বা বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং সরকারের গৃহীত সকল সিদ্ধান্তের সাথেই তা জড়িত তাই এটা একটা বহুবিষয়ক ব্যাপার।

    জননীতির গুরুত্ব

    যে কোন দেশের সকল কার্যকারিতা নির্ভর করে, সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর। সুষ্ঠু নীতি ব্যবহারের ফলে সমন্বয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। একটি দেশ তার লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার কাজে নীতিসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীতি সাধারণত সকলের সিদ্ধান্তের দ্বারা তৈরী করা হয়। নীতিকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করার নিমিত্তে নির্বাহী গন এর নিয়ন্ত্রণে নিজের হাতে রাখে যাতে পুনঃপুন সংগঠিত ঘটনাকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কারণ গুলোর জন্য সরকারী নীতি গুরুত্বপূর্ণ।

    সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সম্বন্ধে ধারণা লাভ

    Dror এর মতে, জননীতি মানুষকে পশু থেকে স্বতন্ত্র দান করেছে। আধুনিক উন্নয়নশীল সমাজগুলো লক্ষভিমুখী ক্রিয়া কল্পে লিপ্ত থাকে। জননীতি এসব সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে মানুষকে ধারণা লাভে সাহায্য করে। Dror বলেন-

    Public policy marking necessary became a local social activities.

    ২) নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নঃ

    সরকারী কিংবা বেসরকারি নীতি সকলের আলোচনার পর গৃহীত হয়। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণে এখানে শুধু নীতি নির্ধারণ করলে চলবে না সাথে তা বাস্তবায়ন করতে হবে.

    ৩) নীতির কাঠামোঃ

    নীতি হল সকল নির্বাহীদের সিদ্ধান্তের ফল। নীতির কাঠামো নতুন নীতি প্রনয়ণে সাহায্য করে এবং ব্যবস্থাপনা সকল সদস্যদের নিকট নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। পুনঃ পুনঃ সংগঠিত সমস্যাসমূহ সমাধান করার কাজে পূর্বের নীতি সমূহ বিশেষভাবে সাহায্য করে। ইহা ব্যবস্থাপনা সময়ের অপচয় রোধ করে।

    সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে জানা

    একটি সমাজের জন্য সরকার কি কি নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এসব নীতিমালার উদ্দেশ্য কি। এসব নীতিমালা থেকে জনগন কতটুকু উপকৃত হবে তা জননীতির মাধ্যমে জানা যায়। আবার এসব নীতিমালার গুরুত্ব অনুধাবন করে কল্যাণমূলক নীতিগুলোকে গ্রহণ করা সকলেরই দায়িত্ব। কারণ, জনগনের সহায়তায় বা শহযোগীতায় জননীতি বাস্তবায়ন হতে পারে। তাই জননীতি সম্পর্কে যদি জ্ঞান না থাকে তবে কল্যাণমূলক নীতিগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া সম্ভব হবে না। আবার অনেক নীতির মূল-আন্তির সমালোচনাও করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান বলেন যে, “সরকারী নীতির গুরুত্ব এত বেশি যে এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সরকারী নীতিমালা নিয়মকানুন কর্মকান্ড আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে।

    বিভিন্ন সেক্টরগত নীতি সম্পর্কে ধারণা

    রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরগত এর নীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক এবং জানা যায় বিস্তারিত। যেমনঃ

    ক) শিক্ষানীতিঃ জননীতির মাধ্যমে সরকারের শিক্ষারত প্রত্যাশা এবং ব্যয় ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।

    খ) স্বাস্থ্যনীতিঃ স্বাস্থ্যই সম্পদ। সবার জন্য স্বাস্থ্য। প্রত্যেক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রেই কামনা করে এবং এজন্য সরকার তার স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা করে থাকে।

    গ) কৃষিনীতিঃ

    এর মাধ্যমে কৃষি সামগ্রির দাম ও কৃষি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে সরকারের মনোভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

    ঘ) শিল্পনীতিঃ বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি শিল্পক্ষেত্রে গতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে। একটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের শিল্প উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। তাই নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।

    ৬) অংশগ্রহণঃ একটি দেশে সরকার বহুবিধ সমস্যার সমাধান থাকে। এই কর্মকান্ডে জনগন তাদের মতামত এর জন্য শহযোগীতার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারে। যদি জনগণের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকে। রাজনীতি বিজ্ঞাননে অংশ গ্রহণ এর বিভিন্ন আলোচ্য বিষয় এর মধ্যে জননীতির সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করা যায়। এতে সরকারেরও শহযোগীতা হয়।

    ৭) জনমত গঠনঃ জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর লোকদের এর গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে জনমত গঠন করা সম্ভব হয়। আর এর জনমত যে দিকে থাকে। সাধারণত তার অনুকূলেই জননীতি নির্ধারণ করা হয়। তাই জনমতমূখী কর্মসূচি প্রনয়ণের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করার জন্য জননীতি অধ্যায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

    ৮) কোন নীতিকে গ্রহণ করা হবেঃ একটি সমস্যা সমাধানে অনেকগুলো পথ থাকতে পারে। তার মধ্যে কোন পথটি অনুসরণ করা হবে বা কোন নীতিটা অধিক কার্যকর ইত্যাদির জন্য পর্যাপ্ত পরিমান তথ্যের প্রয়োজন হয়। আর এসব তথ্যাদি বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে জননীতি নির্ধারণ করতে হয়। তাই জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।

    ৯) নীতি বিশ্লেষণ সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ নীতি বিশ্লেষণ নীতি প্রণয়নের কারণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। অর্থাৎ নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সরকার কেন, কখন, কিভাবে নীতি প্রনয়ণ করলে তার প্রকৃত রহস্য ও তথ্য আর তা জননীতির মাধ্যমেই জানা সম্ভব।

    ১০) বৈজ্ঞানিক কারণঃ

    বাস্তবিকই সরকারী নীতি অধ্যয়ন করা হয় বৈজ্ঞানিক কারণে। একটা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হলে সরকারের নীতিটা হওয়া চাই বাস্তব সম্মত বা বিজ্ঞান সম্মত। তাই আধুনিক সমাজের অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে সরকারী নীতি সম্পর্কে জানতে হবে।

    ১১) রাজনৈতিক কারণঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই এমন রাষ্ট্র পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মশকিল। সরকারী নীতিতে দেখা যায়, যদি কোন নীতি ব্যর্থ হয় তবে তার মূল কারণ হিসেবে ধারণা করতে পারি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তাই একটি দেশের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি কি ধরণের ও তা কিভাবে অর্জন করা যায় এবং সরকারী নীতির সাথে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটুকু সম্পর্কযুক্ত তা জানার জন্য সরকারী নীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

    ১২) জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবহারঃ জনসংখ্যা সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য প্রতিটি সরকার বিভিন্ন নীতিমালার প্রনয়ণ করে। তাই বর্তমানে কি উন্নত উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশেই মানব সম্পদের উন্নয়নের উপর অধিক গুরুত্বারুপ করা হয়েছে।

    ১৩) সময়ের প্রতি দায়িত্বশীলঃ জননীতি প্রশাসকদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্য সম্পন্ন করতে অনুপ্রাণিত করে সময় সচেতন করে তোলে। যে ক্ষেত্রে একই সমস্যা পুনঃ পুনঃ দেখা দেয়া, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে সময় নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় না। ফলে, কর্মচারীদের একই প্রশ্ন উত্তরদানের জন্য ব্যবস্থাপককে বিরক্ত না করে সময়ক্ষেপণ করতে হয় না।

    ১৪) সামঞ্জস্য বিধানঃ সরকারী নীতিসমূহ বিভিন্ন কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। প্রতিটি কর্মচারী যদি প্রতিষ্ঠানের নীতিসমূহ সম্বন্ধে অকাত থাকে তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধনে সুবিধাজনক হয়।

    ১৫) স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ সরকার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতিমালার গ্রহণ করে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

    ১৬) নির্ভরশীল চলকঃ জননীতি অধ্যয়নের ফলে কতিপয় নির্ভরশীল চলক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। যা অর্থ-সামাজিক অবসর অবস্থান জানতে সাহায্য করে। সমাজের মধ্যে রাজতান্ত্রিক অবস্থার ধরন এবং তার সাথে অন্যান্য অবস্থার সম্পর্কে জানার জন্য জননীতি অধ্যয়ন করা হয়।

    ১৭) অ-নির্ভরশীল চলকঃ একটি সমাজে কেবল নির্ভরশীল চলকই থাকে না পাশাপাশি অ-নির্ভরশীল চলকও থাকে। এ অ-নির্ভরশীল চলক সম্পর্কে ধারণা জন্য জননীতি অধ্যয়ন প্রয়োজন।

    ১৮) দেশে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ধারণাঃ জননীতি অধ্যয়ন আমাদেরকে দেশের সাম্প্রতিক কালের এবং সুদূর অতীতের বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। ফলে এই সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন জননীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। জননীতি অধ্যয়ন করলেই এই সমস্যার জন্য কোন ধরণের জননীতি বাস্তবায়ন করতে হবে তা জানা যায়।

    ১৯) মানব সম্পদ উন্নয়নঃ জনসংখ্যা সমস্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার জন্য জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ, সঠিক জননীতির ফলেই মানব সম্পদের উন্নয়ন করা যায়।

    ২০) অধিকার সম্পর্কে সচেতনঃ নাগরিকগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে হতে পারে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে। যেমনঃ বসবাসের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদি।

    ২১) অন্যান্য কারণঃ উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও জননীতি অধ্যয়নের আরও অনেক ধারণা রয়েছে। তা নিম্নে দেয়া হলো-

    ১) আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোন নীতি গ্রহণ করা হয় কোনটি গ্রহণ করা হয় না তা রাজনীতির মাধ্যমে জানা সম্ভব।

    ২) সরকারের আর্থিক নীতি (মুদ্রা নীতি, রাজস্ব নীতি) সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য জননীতি অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

    ৩) জনম্যান ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য জননীতি অধ্যয়ন আবশ্যক।

    ৪) সরকারের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালার জননীতির আলোচনার বিষয় বস্তু। একজন রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এসব জানা প্রয়োজন।

    ৫) জাতীয় প্রতিরক্ষা নিয়েও জননীতি আলোচনা করে।

    ৬) প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও পরিবেশ নীতি সম্পর্কে জননীতি থেকে জ্ঞান লাভ করা যায়।

    এতক্ষণের আলোচনা থেকে এ কথায় আসতে পারি যে, কোন দেশের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে কিংবা কিভাবে সরকারী নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। এই জন্যই জননীতি অধ্যয়নে গুরুত্ব অপরিসীম।

  • উন্নত দেশ

    উন্নত দেশ বলতে ঐ সকল সার্বভৌম দেশকে বুঝায় যারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উচ্চতর প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর বা নির্দিষ্ট সীমারেখায় অবস্থানসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে। উন্নত দেশকে অনেকে অধিক উন্নত দেশ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেক উপায়ে উন্নত দেশের সংজ্ঞা নিরূপিত করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হিসেবে জনগণের মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদন, শিল্পায়নের স্তর, বিস্তৃত অবকাঠামোর বিন্যাস এবং সাধারণ জীবনযাত্রার মান এর প্রধান মাপকাঠি।[১] এছাড়াও, মানব উন্নয়ন সূচকের মাধ্যমে উন্নত দেশকে নির্ধারিত করা হয়। তবে, কোন দেশটি কি মানদণ্ডে, কোন শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে উন্নত দেশের মর্যাদা পাবে এটি প্রকৃতই বিতর্কিত বিষয়। সাধারণতঃ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের উৎপাদন ও এর মাথাপিছু ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক হাসপাতাল, সুন্দর ব্যবস্থাসম্পন্ন চমৎকার গণশৌচাগার উন্নত দেশসমূহে বিদ্যমান থাকে।

    উন্নত দেশসমূহের শিল্পাঞ্চল-পরবর্তী সমাজ ব্যবস্থায় মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি বিরাজমান। অর্থাৎ, শিল্পাঞ্চল খাতের তুলনায় সেবা খাতেই অর্থনৈতিক বুনিয়াদ রয়েছে বেশি। উন্নয়নশীল দেশের শিল্পায়নে প্রবেশের চেষ্টা কিংবা শিল্প-পূর্ব সমাজের তুলনায় উন্নত দেশে বিপরীত চিত্র সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ২০১০ সালের তথ্য মোতাবেক উচ্চ অর্থনীতিতে উন্নত দেশের জিডিপিতে ৬৫.৮% এবং পিপিপিতে ৫২.১% বৈশ্বিক অংশগ্রহণ রয়েছে।[২] ২০১১ সালে শীর্ষ দশ উচ্চ অর্থনীতির দেশ হিসেবে – যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডা, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া পরিচিতি পেয়েছে।[৩][৪]

    সমার্থক পরিভাষা

    উন্নত দেশের সমার্থক পরিভাষা হিসেবে রয়েছে – উচ্চতর দেশ, শিল্পাঞ্চল দেশ, অধিক উন্নত দেশ (এমডিসি), অধিক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ (এমইডিসি), বৈশ্বিক উত্তর দেশ, প্রথম বিশ্ব দেশ এবং শিল্প-পরবর্তী দেশ। শিল্পাঞ্চল দেশের সংজ্ঞাটি চলমান প্রক্রিয়া বিধায় সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করা বেশ খানিকটা কঠিন। এমইডিসি পরিভাষাটি আধুনিককালের ভূগোলবিশারদগণ সুনির্দিষ্টভাবে অধিক অর্থনৈতিক উন্নত দেশসমূহকে নির্দেশ করেছেন। প্রথম শিল্পাঞ্চল দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম। পরবর্তীতে তা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জেফ্রে সাচের ন্যায় অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘বিংশ শতকে বিশ্ব অর্থনীতি দু’টি ধারায় বিভক্ত। একটি হচ্ছে উন্নত দেশ এবং অপরটি উন্নয়নশীল দেশ।’

    সংজ্ঞার্থ নিরূপণ

    মূল নিবন্ধ: উন্নয়নশীল দেশ

    জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আন্নান উন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন,[৫]

    উন্নত দেশ বলতে যে সকল দেশ তার নাগরিকদের মুক্ত ও নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তাসহ উপযুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যকর জীবন প্রদানে সক্ষম তাকে বুঝাবে।

    কিন্তু জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বিভাগের মতে,[৬]

    উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ অথবা অঞ্চলের রূপরেখা জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

    জাতিসংঘ আরো বলেছে, সাধারণভাবে এশিয়ায় জাপান, উত্তর আমেরিকায় কানাডামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো উন্নত অঞ্চল বা এলাকা হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান মোতাবেক সাউদার্ন আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়নকেও উন্নত অঞ্চল এবং ইসরায়েলকে উন্নত দেশ হিসেবে বলা যায়। উদীয়মান দেশ হিসেবে পরিচিত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ এবং কমনওয়েলথভূক্ত স্বাধীন দেশ বা সিআইএস-ভূক্ত ইউরোপীয় দেশসমূহ (কোড ১৭২) উন্নত বা উন্নয়নশীল কোনটিরই মর্যাদা পায়নি।[৬]

    অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ তাদের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছে যে – এপ্রিল, ২০০৪-এর পূর্বেকার উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশসমূহ বিশেষতঃ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানসহ মঙ্গোলিয়া উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের আওতাভূক্ত নয়। কিন্তু, ঐ সকল দেশসমূহও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

    মানব উন্নয়ন সূচক

    বৈশ্বিকভাবে ২০১১ সালের মানব উন্নয়ন সূচকের অবস্থান।

      খুবই ভাল

      ভাল

      মাঝারি

      নিম্ন

      তথ্য পাওয়া যায়নি

    জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচকে পরিসংখ্যানগতভাবে কোন দেশের মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্যাদি তুলে ধরে। উচ্চমাত্রার মানব উন্নয়ন সূচকের সাথে উন্নত দেশের ভবিষ্যতের অর্থনীতির গতিধারা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেখানে একটি দেশের আর্থিক আয় কিংবা উৎপাদনশীলতার চেয়ে অন্যান্য বিষয়াদির উপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়। মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কিংবা মাথাপিছ আয়ের পাশাপাশি আয়ের কতটুকু অংশ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়িত হয়েছে তা-ও তুলে ধরা হয়।

    ১৯৯০ সাল থেকে নরওয়ে, জাপান, কানাডা এবং আইসল্যান্ড সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচকে স্থান পেয়েছে। ২০১১ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২ নভেম্বর, ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়। এতে উচ্চমাত্রার মানব উন্নয়ন সূচকে ৪৭টি দেশ স্থান পায় যাতে সর্বোচ্চ ০.৯৪৩ স্কোরে নরওয়ে এবং ০.৭৯৩ স্কোরে বার্বাডোজ জায়গা করে নেয়।[৭]

    ০.৭৮৮ স্কোরের অনেক দেশের তালিকা আইএমএফ অথবা[৮] সিআইএ তৈরী করেছে যাতে ২০০৯ সাল থেকে ঐ দেশসমূহকে উচ্চতর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অনেক দেশ[৯] ২০১০ সাল থেকে মানব উন্নয়ন সূচকে ০.৭৮৮ স্কোরে পৌঁছে। এ স্কোর কিংবা তারও বেশি স্কোরকে ২০০৯ সাল থেকে আইএমএফ বা সিআইএ উচ্চতর দেশ হিসেবে তাদের তালিকায় রাখে। এছাড়াও, ২০০৯ সাল থেকে অনেক উচ্চতর অর্থনীতির দেশ হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকে ০.৯ বা তদূর্ধ্ব স্কোরের অধিকারী দেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

  • রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস

    রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের ভিন্ন শাখা হিসেবে তুলনামূলকভাবে দেরিতে এসেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক দর্শন থেকে আলাদা নয় এবং এই আধুনিক শাখার পূর্বগামী ধারণাসমূহ হল নৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস ও অন্যান্য মাননির্ধারক শাখা।[১]

    পশ্চিমা

    প্লেটো (বাম) এবং অ্যারিস্টটল (ডান), রাফায়েলের একটি ফ্রেস্কো দ্য স্কুল অফ অ্যাথেন্সের বিবরণ থেকে। প্লেটোর প্রজাতন্ত্র এবং অ্যারিস্টটলের রাজনীতি গ্রীক দার্শনিকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দার্শনিকদের আশ্বাস দিয়েছিল।

    সক্রেটিসীয় রাজনৈতিক দার্শনিকগণ পশ্চিমা রাজনৈতিক ভাবধারার পূর্বসূরি; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অ্যারিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ), যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়। অ্যারিস্টটলই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কার্যকর সংজ্ঞা প্রদান করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য শাখা বলে মনে করতেন এবং এটি সামরিক বিজ্ঞানসহ অন্য শাখাগুলোর উপর বিশেষ কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে।[২] প্লেটোঅ্যারিস্টটলদের মত রাজনৈতিক দার্শনিকগণ এমনভাবে রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিশ্লেষণ শুরু করেন যে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক ধারণাসমূহে অধিকতর গুরুত্ব বহন করে, যা তাদের পূর্বের গ্রিক দার্শনিকগণ যেভাবে এই বিষয়টিকে চিত্রায়িত করেছিলেন তার বিপরীত। প্লেটোর পূর্বে রাজনীতির উপর উল্লেখযোগ্য বক্তব্য প্রদান করেছিলেন সে সময়ের কবি, ইতিহাসবেত্তা ও বিখ্যাত নাট্যকারগণ।[৩]

    আলোকিত যুগ

    নব্য পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত হয় আলোকিত যুগে যা পৃথক গির্জা ও রাজ্যের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেয়। এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিগুলো বস্তু বিজ্ঞানের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে যা সমাজে প্রয়োগ করা যায় ও সামাজিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটায়। রাজনীতি গবেষণাগারে অধ্যয়ন করা যেত কারণ এটি সামাজিক প্রতিবেশ ছিল। ১৭৮৭ সালে আলেকজান্ডার হ্যামিলটন লিখেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞানের মত অনেকাংশে বিকশিত হয়েছে।” মার্কুইস দার্গেনসন ও আব দ্য সাঁ-পিয়ের দুজনেই রাজনীতিকে বিজ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করেছেন; তন্মধ্যে দার্গেনসন একজন দার্শনিক এবং দ্য সাঁ-পিয়ের আলোকিত যুগের সংস্কারক ছিলেন।[৪]

    ভারত

    ভারতে চাণক্য খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে অর্থশাস্ত্র রচনা করেন, যা ভারতের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত রচনা হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে।[৫] অর্থশাস্ত্র রাজনৈতিক চিন্তাধারার একটি প্রামাণ্য ইতিহাস, যেটাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের কৌশল, রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।

    প্রাচীন ভারতের রাজনীতির পূর্বসূরির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রচনা হল হিন্দুধর্মের চারটি বেদের মধ্যকার তিনটি বেদ, এবং মহাভারতপালি ত্রিপিটক। উল্লেখিত তিনটি বেদ হল ঋগ্বেদ, সংহিতাব্রাহ্মণ। চাণক্যের সময়ের প্রায় দুইশত বছর পর মনুসংহিতা প্রকাশিত হয়, যা সে সময়ের ভারতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রামাণ্য গ্রন্থ।[৬]

    চীন

    কনফুসীয়বাদতাওবাদ মূলত ধর্ম হিসেবে পরিচিত হলেও এতে মৌলিক রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে। যুক্তিবাদ ও মহিবাদসহ এই রাজনৈতিক দর্শন প্রাচীন চীনের শরৎ বসন্ত কাল থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। চীনের ইতিহাসে এই সময়টি চীনা দর্শনের স্বর্ণযুগ ছিল, কারণ এই সময়ে অনেকগুলো ভিন্ন ধারণার জন্ম হয় যা মুক্তভাবে আলোচিত হত। শরৎ বসন্ত কালে সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক পদ আরোহণ মানব জীবনের দিকগুলো আধ্যাত্মিকতার প্রতি মানুষের আকর্ষণের মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়।[৭]

    মধ্যপ্রাচ্য

    ইবন সিনামায়মোনিদেসসহ মধ্যপ্রাচ্যের অ্যারিস্টটলবাদীগণ অ্যারিস্টটলের অভিজ্ঞতাবাদের ঐতিহ্য ধরে রাখেন এবং অ্যারিস্টটলের কাজের উপর বিশদ মন্তব্য রচনার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণকে বাঁচিয়ে রাখেন। আরব পরবর্তীকালে অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাবধারা থেকে সরে যায় এবং প্লেটোর রিপাবলিক রচনার দিকে মনোনিবেশ করে। এর ফলে রিপাবলিক ইহুদি-ইসলামি রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা আল ফারাবীইবনে রুশদের রচনাবলিতে দেখা যায়।[৮]

    ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎফেরদৌসীর শাহনামার মত রচনাবলিতে মধ্যযুগীয় পারস্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৮]

  • সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন একটি আন্তঃবিভাগীয় ক্ষেত্র যা সমসাময়িক সংস্কৃতির রাজনৈতিক গতিশীলতা (জনপ্রিয় সংস্কৃতি সহ) এবং এর ঐতিহাসিক ভিত্তি গবেষণা বা তদন্ত ও পরীক্ষা করে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন গবেষকরা সাধারণত তদন্ত করেন যে কীভাবে সাংস্কৃতিক অনুশীলনগুলো সামাজিক ঘটনার সাথে যুক্ত বা পরিচালনার সাথে জড়িত ক্ষমতার বিস্তৃত পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে রয়েছে মতাদর্শ, শ্রেণী কাঠামো, জাতীয় গঠন, জাতিসত্তা, যৌন অভিযোজন, লিঙ্গ এবং প্রজন্ম। সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ নিযুক্ত করা, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সংস্কৃতিগুলিকে স্থির, আবদ্ধ, স্থিতিশীল এবং বিচ্ছিন্ন সত্তা হিসাবে নয়, বরং ক্রমাগত পরস্পরের উপর ক্রিয়ারত এবং অনুশীলন এবং প্রক্রিয়াগুলির সদৃশ হিসাবে পরিবর্তন করে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রটি তাত্ত্বিক এবং পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলনের একটি পরিসীমা অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শৃঙ্খলা এবং জাতিগত অধ্যয়নের আন্তঃবিভাগীয় ক্ষেত্র থেকে আলাদা, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন।[১]

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন প্রাথমিকভাবে ১৯৫০, ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকের শেষদিকে ব্রিটিশ মার্কসবাদী শিক্ষাবিদদের দ্বারা বিকশিত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন শাখার পণ্ডিতদের দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছে এবং রূপান্তরিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন স্পষ্টতই ও এমনকি আমূল আন্তঃবিভাগীয় এবং কখনও কখনও শৃঙ্খলাবিরোধী হিসাবে দেখা যায়। সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অনুশীলনকারীদের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয় হল সেই শক্তিগুলির পরীক্ষা করা যার মাধ্যমে সামাজিকভাবে সংগঠিত লোকেরা তাদের দৈনন্দিন জীবন গঠনে পরিচালনা করে এবং অংশগ্রহণ করে।[২]

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সেমিওটিক্স, মার্কসবাদ, নারীবাদী তত্ত্ব, নৃতাত্ত্বিকতা, পোস্ট- কাঠামোবাদ, উত্তর- ঔপনিবেশিকতা, সামাজিক তত্ত্ব, রাজনৈতিক তত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য তত্ত্ব, মিডিয়া তত্ত্ব, চলচিত্র বিদ্যা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিকভাবে জড়িত সমালোচনামূলক পদ্ধতির সমন্বয় করে রাজনৈতিক অর্থনীতি, অনুবাদ অধ্যয়ন, যাদুঘর অধ্যয়ন এবং শিল্প ইতিহাস /সমালোচনা বিভিন্ন সমাজ এবং ঐতিহাসিক সময়ের সাংস্কৃতিক ঘটনা অধ্যয়ন করার জন্য। সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলি বোঝার চেষ্টা করে যে কীভাবে অর্থ তৈরি হয়, প্রচার করা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়, ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাথে আবদ্ধ হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গঠন বা সংমিশ্রণে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন হয়। আন্দোলনটি সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব তৈরি করেছে। এর অনুশীলনকারীরা বিশ্বায়নের সাথে সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক শক্তি এবং প্রক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে।[৩]

    ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নব্যউদারনীতিবাদ উত্থানের সময়, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন উভয়ই একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল এবং বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এবং এর বাইরে অনেক রক্ষণশীল বিরোধীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পান্ডিত্যপূর্ণ সংঘ এবং প্রোগ্রাম, বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রকাশনাগুলির একটি ভেলা সহ ছাত্র এবং অনুশীলনকারীদের একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন আজ এই ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের স্বতন্ত্র পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে।[৪][৫]

    পরিদর্শন

    বৈশিষ্ট্য

    প্রাচ্যবিদ পণ্ডিত জিয়াউদ্দিন সরদার তাঁর ১৯৯৪ সালের বই, ইনট্রোডিউসিং কালচারাল স্টাডিজে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের নিম্নলিখিত পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের তালিকা করেছেন:[৬]

    • সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের উদ্দেশ্য হল সংস্কৃতিকে তার সমস্ত জটিল আকারে বোঝা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা যেখানে সংস্কৃতি নিজেকে প্রকাশ করে।
    • সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অধ্যয়ন/বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক সমালোচনা উভয়েরই একটি দিক। উদাহরণস্বরূপ, একজন সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পণ্ডিত শুধুমাত্র একটি বস্তু অধ্যয়ন করবেন না, কিন্তু তারা এই অধ্যয়নটিকে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত করতে পারে।
    • সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন জ্ঞানের নির্মিত বিভাজনগুলোকে উন্মোচিত এবং মিলিত করার চেষ্টা করে যা প্রকৃতিতে( অভিজ্ঞতাবাদ) ভিত্তি করে
    • সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন আধুনিক সমাজের নৈতিক মূল্যায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
    • সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের একটি লক্ষ্য হতে পারে সমালোচনামূলক তত্ত্ব অনুসরণ করে সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং ক্ষমতার সাথে তাদের সম্পর্ক গবেষণা বা তদন্ত করা। উদাহরণস্বরূপ, একটি উপ -সংস্কৃতির অধ্যয়ন (যেমন: লন্ডনে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক-শ্রেণির যুবক) তাদের সামাজিক অনুশীলনকে প্রভাবশালী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিবেচনা করবে (এই উদাহরণে, লন্ডনের মধ্য ও উচ্চবিত্ত যারা রাজনৈতিক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করে লন্ডনের শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণীর যুবকদের মঙ্গলকে প্রভাবিত করে এমন নীতি তৈরি করুন)।

    ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ইতিহাসের অসংখ্য প্রকাশিত বিবরণ রয়েছে।[৭][৮][৯]

    ডেনিস ডোয়ার্কিন লিখেছেন যে একটি ক্ষেত্র হিসাবে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের শুরুতে “একটি সমালোচনামূলক মুহূর্ত” ছিল যখন রিচার্ড হগার্ট ১৯৬৪ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সময় এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এই কেন্দ্রটি বুদ্ধিবৃত্তিক অভিযোজনের বিকাশের আবাসস্থল হয়ে উঠবে যা আন্তর্জাতিকভাবে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে বার্মিংহাম স্কুল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে,[১০][১১] এইভাবে বিশ্বের প্রথম সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের প্রাতিষ্ঠানিক আবাসস্থল হয়ে উঠেছে।[১২]

    হগার্ট তার সহকারী স্টুয়ার্ট হল নিযুক্ত হন, যিনি কার্যকরভাবে ১৯৬৮ সালের মধ্যে বার্মিংহাম স্কুল পরিচালনা করবেন। হল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালে বার্মিংহাম স্কুল-এর ডিরেক্টরশিপ গ্রহণ করেন, যখন হগার্ট ইউনেস্কোর সহকারী মহাপরিচালক হওয়ার জন্য বার্মিংহাম ত্যাগ করেন।[১৩] এরপর হলের কাজের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালে, হল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন গ্রহণ করার জন্য বার্মিংহাম ত্যাগ করেন এবং রিচার্ড জনসন কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১৪][১৫]

    ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের “পুনর্গঠন” বার্মিংহাম স্কুল অফ কালচারাল স্টাডিজ-কে বাদ দিয়ে এবং ১৯৯৯ সালে একটি নতুন ডিপার্টমেন্ট অফ কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড সোসিওলজি (সিএসএস) তৈরি করে। তারপর, ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রশাসন আকস্মিকভাবে সিএসএস-কে বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়, যা একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক ক্ষোভ উস্কে দেয়। ২০০১ সালের যুক্তরাজ্যের গবেষণা মূল্যায়ন অনুশীলনে একটি অপ্রত্যাশিতভাবে কম ফলাফল ছিল নতুন বিভাগটি বিচ্ছিন্ন করার তাৎক্ষণিক কারণ, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিন এই সিদ্ধান্তটিকে “অভিজ্ঞ ‘মাচো ম্যানেজমেন্ট’” বলে দায়ী করেছেন।[১৬] আরএই, ১৯৮৬ সালের মার্গারেট থ্যাচারের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সরকারের একটি হোল্ডওভার উদ্যোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলির জন্য গবেষণা তহবিল নির্ধারণ করে।[১৭]

    ব্রিটিশ কালচারাল স্টাডিজের বিকাশের সন্ধান করতে, উদাহরণস্বরূপ, রিচার্ড হগার্ট, ইপি থম্পসন, রেমন্ড উইলিয়ামস, স্টুয়ার্ট হল, পল উইলিস, অ্যাঞ্জেলা ম্যাকরোবি, পল গিলরয়, ডেভিড মরলে, শার্লট ব্রান্সডন, রিচার্ড ডায়ার এবং অন্যান্যদের কাজ দেখুন।

    বার্মিংহাম স্কুল-এর স্টুয়ার্ট হলের ডিরেক্টরশিপ

    ১৯৬৪ সালের শুরুতে, ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে ব্রিটিশ কালচারাল স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা কাজের প্রাথমিক উপস্থিতির পর, বার্মিংহাম স্কুল -এ স্টুয়ার্ট হলের অগ্রগামী কাজ, তার সহকর্মী এবং স্নাতকোত্তর ছাত্রদের সাথে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটি আকার এবং উপাদান দিয়েছিল। এর মধ্যে পল উইলিস, ডিক হেবডিজ, ডেভিড মরলে, শার্লট ব্রান্সডন, জন ক্লার্ক, রিচার্ড ডায়ার, জুডিথ উইলিয়ামসন, রিচার্ড জনসন, ইয়ান চেম্বার্স, ডরোথি হবসন, ক্রিস উইডন, টনি জেফারসন, মাইকেল গ্রিন এবং অ্যাঞ্জেলা ম্যাকরোবি-এর মতো ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

    অনেক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পণ্ডিতরা বিশ্লেষণের মার্কসবাদী পদ্ধতি ব্যবহার করেন, সাংস্কৃতিক ফর্ম (অর্থাৎ, উপরিকাঠামো ) এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির (অর্থাৎ ভিত্তি ) মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ করেন। ১৯৭০ এর দশকের মধ্যে, লুই আলথুসারের কাজ মৌলিকভাবে ভিত্তি এবং উপরিকাঠামোর মার্কসবাদী বিবরণকে এমনভাবে পুনর্বিবেচনা করে যেগুলি “বার্মিংহাম স্কুল” এর উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। বার্মিংহাম স্কুলে করা বেশিরভাগ কাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে “সম্মানিত” মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রতি বৈরিতার যুব-উপ-সংস্কৃতির অভিব্যক্তি অধ্যয়ন করেছে। এছাড়াও ১৯৭০ এর দশকে, রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ব্রিটিশ শ্রমিক শ্রেণীর পতন ঘটেছিল। ব্রিটেনের উৎপাদন শিল্পগুলি যখন উৎপাদন এবং মূল্যের বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছিল, জিডিপির অংশ এবং নিযুক্ত সংখ্যা কমছিল, এবং ইউনিয়ন চরিত্রগুলোও সঙ্কুচিত হচ্ছিল। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী ব্রিটেন শ্রম ক্ষতির মধ্য দিয়ে মার্গারেট থ্যাচারের উত্থানকে সমর্থন করেছিল। স্টুয়ার্ট হল এবং তার সহকর্মীদের জন্য, লেবার পার্টি থেকে কনজারভেটিভ পার্টিতে আনুগত্যের এই পরিবর্তনকে সাংস্কৃতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল, যা তারা থ্যাচারের প্রথম বিজয়ের আগে থেকেই অনুসরণ করেছিল। এই কাজের কিছু উপস্থাপনা করা হয়েছিল কালচারাল স্টাডিজ ক্লাসিক, পলিসিং দ্য ক্রাইসিস,[১৮] এবং অন্যান্য পরবর্তী গ্রন্থে যেমন: হলের দ্য হার্ড রোড টু রিনিউয়াল: থ্যাচারিজম অ্যান্ড দ্য ক্রাইসিস অফ দ্য লেফট,[১৯] এবং নিউ টাইমস: দ্য চেঞ্জিং;১৯৯০-এর দশকে রাজনীতির চেহারা[২০]

    ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এবং তার পরেও

    ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, দ্য বার্মিংহাম স্কুলের সাথে যুক্ত পণ্ডিতরা সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের লক্ষ্যে লিঙ্গ এবং বর্ণের প্রশ্নগুলিকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তারা তখন থেকেই রয়ে গেছে। এছাড়াও ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করেছিল। এটি ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক জুড়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এটি করার সাথে সাথে, এটি উভয়ই জ্ঞান উৎপাদনের নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল এবং অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিক স্রোত যেমন উত্তর গঠনতন্ত্রবাদ, উত্তর আধুনিকতাবাদ এবং উত্তর- ঔপনিবেশিকতার সাথে জড়িত ছিল। সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন জার্নালগুলির বিস্তৃত পরিসর এখন সারা বিশ্বে অবস্থিত, নীচে দেখানো হিসাবে, এই ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের একটি ইঙ্গিত।[২১]

    যুক্তরাজ্যের বাইরে উন্নয়ন

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্রিটিশ কালচারাল স্টাডিজের উত্থানের আগে, সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন সংস্করণ মূলত বাস্তববাদী এবং উদার-বহুত্ববাদী দার্শনিক ঐতিহ্য থেকে আবির্ভূত হয়।[২২] ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং নারীবাদ, উত্তর গঠনতন্ত্রবাদ, উত্তর আধুনিকতাবাদ, এবং জাতিতত্ত্বের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে, তখন সমালোচনামূলক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন (যেমন, মার্কসবাদী, নারীবাদী, পোস্টস্ট্রাকচারালিস্ট, ইত্যাদি) আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। যোগাযোগ অধ্যয়ন, শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান এবং সাহিত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মতো ক্ষেত্রে।[২৩][২৪][২৫] সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন , এই ক্ষেত্রের পতাকাধারী পত্রিকা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিত্তি করে এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জন ফিস্ক ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে এটিকে সেখানে নিয়ে আসেন।

    ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের দৃশ্য বিদ্যমান ছিল, যখন মার্গারেট থ্যাচার ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অনুশীলনকারী যুক্তরাজ্য থেকে সেখানে চলে আসেন, ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন তাদের সাথে নিয়ে আসেন। সাংস্কৃতিক পলিসি স্টাডিজ নামে পরিচিত সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের স্কুল একটি স্বতন্ত্র অস্ট্রেলিয়ান অবদান, যদিও এটি একমাত্র নয়। অস্ট্রেলিয়াও ১৯৯০ সালে বিশ্বের প্রথম পেশাদার সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সমিতির জন্ম দেয় যা বর্তমানে অস্ট্রেলাশিয়ার কালচারাল স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত।[২৬][২৭] অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কালচারাল স্টাডিজ, কন্টিনিউম: জার্নাল অফ মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, এবং কালচারাল স্টাডিজ রিভিউ

    কানাডায়, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কখনও কখনও প্রযুক্তি এবং সমাজের বিষয়গুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, মার্শাল ম্যাকলুহান, হ্যারল্ড ইনিস এবং অন্যান্যদের কাজের উপর জোর দেওয়া অব্যাহত রাখে। কানাডা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পত্রিকার মধ্যে রয়েছে টপিয়া: কানাডিয়ান জার্নাল অফ কালচারাল স্টাডিজ

    আফ্রিকাতে, মানবাধিকার এবং তৃতীয় বিশ্বের সমস্যাগুলো কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং মিডিয়া অধ্যয়ন বৃত্তি রয়েছে, যা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়েতে হয়।[২৮] আফ্রিকা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক স্টাডিজ জার্নালগুলির মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান কালচারাল স্টাডিজ জার্নাল

    লাতিন আমেরিকায়, বিশ্বের অন্যান্য অংশে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের সাথে যুক্ত পশ্চিমা তাত্ত্বিক উৎস ছাড়াও, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলি জোসে মার্টি, অ্যাঞ্জেল রামা এবং অন্যান্য লাতিন-আমেরিকান ব্যক্তিত্বের মতো চিন্তাবিদদের আকৃষ্ট করেছে। নেস্টর গার্সিয়া ক্যানক্লিনি, জেসুস মার্টিন- বারবেরো, এবং বিয়াট্রিজ সারলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় লাতিন আমেরিকান সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পণ্ডিতদের মধ্যে রয়েছে।[২৯][৩০] লাতিন আমেরিকান সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পণ্ডিতদের দ্বারা সম্বোধন করা মূল বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে ঔপনিবেশিকতা, শহুরে সংস্কৃতি এবং উত্তরোন্নয়ন তত্ত্ব । ল্যাটিন আমেরিকান কালচারাল স্টাডিজ জার্নালের মধ্যে রয়েছে – জার্নাল অফ ল্যাটিন আমেরিকান কালচারাল স্টাডিজ

    যদিও সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন মহাদেশীয় ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাজ্যে অনেক দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে, ফ্রান্স, স্পেন এবং পর্তুগালের মতো দেশে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের উপস্থিতি রয়েছে। ক্ষেত্রটি জার্মানিতে তুলনামূলকভাবে অনুন্নত, সম্ভবত ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের অব্যাহত প্রভাবের কারণে,[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] যা এখন প্রায়ই বলা হয় তৃতীয় প্রজন্মের, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব যেমন অ্যাক্সেল হোনেথ রয়েছে। মহাদেশীয় ইউরোপে অবস্থিত সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন জার্নালগুলির মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় জার্নাল অফ কালচারাল স্টাডিজ, জার্নাল অফ স্প্যানিশ কালচারাল স্টাডিজ, ফ্রেঞ্চ কালচারাল স্টাডিজ এবং পর্তুগিজ কালচারাল স্টাডিজ

    জার্মানিতে, কালচারাল স্টাডিজ শব্দটি বিশেষ করে অ্যাংলোস্ফিয়ারের ক্ষেত্রকে বোঝায়, বিশেষ করে ব্রিটিশ কালচারাল স্টাডিজ, এটিকে জার্মান কালচারউইসেনশ্যাফ্ট থেকে আলাদা করার জন্য যা বিভিন্ন রেখায় বিকশিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে এর দূরত্ব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।[৩১] যাইহোক, কালচারউইসেনশ্যাফ্ট (Kulturwissenschaft) এবং সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো প্রায়ই বিনিময়যোগ্যভাবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে সাধারণ মানুষদের দ্বারা।

    সমগ্র এশিয়া জুড়ে, ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সমৃদ্ধ হয়েছে।[৩২] এশিয়া ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পত্রিকার মধ্যে রয়েছে ইন্টার-এশিয়া সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন । ভারতে, সেন্টার ফর স্টাডি অফ কালচার অ্যান্ড সোসাইটি, ব্যাঙ্গালোর এবং ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস ডিপার্টমেন্ট অফ কালচারাল স্টাডিজ এবং হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটি হল সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের জন্য দুটি প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক স্থান।

    সমস্যা,ধারণা ও পন্থা

    মার্কসবাদ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। যারা বার্মিংহাম স্কুল এর সাথে যুক্ত তারা প্রথমে লুই আলথুসারের গঠনতন্ত্রের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিল এবং পরে ১৯৭০-এর দশকে তারা আন্তোনিও গ্রামসির দিকে সিদ্ধান্তমূলকভাবে ফিরে আসে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন জাতি, লিঙ্গ এবং পরিচয়ের অন্যান্য দিকগুলোর পরীক্ষাকেও গ্রহণ করেছে, যেমনটি চিত্রিত করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে বার্মিংহাম স্কুল নামে সম্মিলিতভাবে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি মূল বইয়ের দ্বারা, যার মধ্যে রয়েছে উইমেন টেক ইস্যু্ : নারীর অধীনতার দিকগুলো (১৯৭৮), এবং কিংডম স্ট্রাইকস ব্যাক: ৭০ এর দশকে ব্রিটেনে জাতি এবং বর্ণবাদ (১৯৮২)।

    গ্রামসি এবং আধিপত্য

    যুক্তরাজ্যের শ্রেণী, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য বার্মিংহাম স্কুলের পণ্ডিতরা ইতালীয় চিন্তাবিদ, লেখক এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আন্তোনিও গ্রামসি -এর কাজের দিকে ঝুঁকেছিলেন। গ্রামসি একই ধরনের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন: কেন ইতালীয় শ্রমিক ও কৃষকরা ফ্যাসিস্টদের ভোট দেবে? আরও প্রগতিশীল দিকে জনসমর্থন জোগাড় করার জন্য কোন কৌশলগত পদ্ধতির প্রয়োজন? গ্রামসি ধ্রুপদী মার্কসবাদকে পরিবর্তিত করেন এবং যুক্তি দেন যে সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামের মূল স্থান হিসেবে বোঝা উচিত। তার দৃষ্টিতে, পুঁজিবাদীরা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য শুধুমাত্র পাশবিক শক্তি ( পুলিশ, কারাগার,দমন, সামরিক ) ব্যবহার করেনি বরং জনপ্রিয় “সম্মতি” অর্জনের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন উপায়ে শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন সংস্কৃতিতেও প্রবেশ করেছে।[৩৩]

    এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে গ্রামসির জন্য, ঐতিহাসিক নেতৃত্ব বা আধিপত্য, শ্রেণী উপদলের মধ্যে জোট গঠন এবং দৈনন্দিন সাধারণ জ্ঞানের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মধ্যে সংগ্রাম। গ্রামসির জন্য আধিপত্য সর্বদাই ছিল, একটি অন্তহীন, অস্থির এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রক্রিয়া।

    স্কট ল্যাশ লিখেছেন:

    হল, হেবডিজ এবং ম্যাকরোবির কাজে জনপ্রিয় সংস্কৃতি সামনে এসেছিল… গ্রামসি এটিকে যা দিয়েছেন তা হল সম্মতি এবং সংস্কৃতির গুরুত্ব। যদি মৌলিক মার্কসবাদীরা শ্রেণী-বনাম-শ্রেণীর পরিপ্রেক্ষিতে শক্তি দেখেন, তাহলে গ্রামসি আমাদের কাছে শ্রেণী জোট-এর একটি প্রশ্ন দিয়েছিলেন। সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের উত্থান নিজেই মৌলিক শ্রেণী-বনাম-শ্রেণীর রাজনীতির প্রাধান্যের পতনের উপর ভিত্তি করে।

    — [৩৪]

    এডগার এবং সেডগউইক লিখেছেন:

    আধিপত্যের তত্ত্বটি ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের [বিশেষ করে বার্মিংহাম স্কুলের বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্ব ছিল। এটি অধস্তন গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া করার উপায়গুলির বিশ্লেষণকে সহজতর করেছে। অধস্তন গোষ্ঠীগুলিকে শুধুমাত্র আধিপত্যবাদী শ্রেণী এবং তার মতাদর্শের নিষ্ক্রিয় প্রতারক হিসাবে দেখা উচিত নয়।

    কাঠামো এবং সংস্থা

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে আধিপত্য তত্ত্বের বিকাশ কিছু উপায়ে অন্বেষণকারী সংস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল, একটি তাত্ত্বিক ধারণা যা অধীনস্থ মানুষের সক্রিয়, সমালোচনামূলক ক্ষমতার উপর জোর দেয় (যেমন শ্রমিক শ্রেণী, উপনিবেশিত মানুষ, নারী)।[৩৫] যেমন স্টুয়ার্ট হল বিখ্যাতভাবে তার ১৯৮১ প্রবন্ধে যুক্তি দিয়েছিলেন, “নোটস অন ডিকনস্ট্রাক্টিং ‘দ্য পপুলার’”: “সাধারণ মানুষ সাংস্কৃতিক ডোপ নয়।”[৩৬] অধস্তন লোকদের সংস্থার হিসাবরক্ষণের জন্য ঐতিহ্যগত কাঠামোবাদীদের কাজের বিপরীতে চলে। কিছু বিশ্লেষক[কে?] যদিও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের কিছু কাজের সমালোচনা করেছেন যে তারা মনে করেন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংস্থার কিছু রূপের তাৎপর্য অতিমাত্রায় বা এমনকি রোমান্টিক করে তোলে।[৩৭]

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন প্রায়শই দৈনন্দিন জীবনের অনুশীলনের স্তরে সংস্থার সাথে নিজেকে উদ্বিগ্ন করে এবং আমূল প্রাসঙ্গিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের গবেষণার দিকে যায়। অন্য কথায়, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সাংস্কৃতিক অনুশীলন, অর্থ এবং পরিচয়ের সার্বজনীন বিবরণ প্রত্যাখ্যান করে।

    জুডিথ বাটলার, একজন আমেরিকান নারীবাদী তাত্ত্বিক যার কাজ প্রায়শই সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের সাথে জড়িত, লিখেছেন যে:

    একটি কাঠামোবাদী বিবরণ থেকে সরানো যেখানে পুঁজিকে বোঝা যায় সামাজিক সম্পর্ককে তুলনামূলকভাবে সমজাতীয় উপায়ে আধিপত্যের একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে গঠন করা হয় যেখানে ক্ষমতা সম্পর্ক পুনরাবৃত্তি, একত্রিত হওয়া এবং পুনরুক্তিকরণের সাপেক্ষে কাঠামোর চিন্তায় অস্থায়ীতার প্রশ্ন নিয়ে আসে। এটি আলথুসেরিয়ান তত্ত্বের একটি রূপ থেকে একটি স্থানান্তর চিহ্নিত করেছে যা কাঠামোগত সামগ্রিকতাকে তাত্ত্বিক বস্তু হিসাবে নিয়ে যায় যেখানে কাঠামোর আনুষঙ্গিক সম্ভাবনার অন্তর্দৃষ্টি ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের আনুষঙ্গিক দিক এবং কৌশলগুলোর সাথে আবদ্ধ হিসাবে আধিপত্যের একটি নতুন ধারণার উদ্বোধন করে।

    বিশ্বায়ন

    সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, বিশ্বায়নের সমসাময়িক ধাঁচের মাধ্যমে পুঁজিবাদ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো স্থানীয় ক্ষেত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ এবং পশ্চিমা আধিপত্যের সাথে আলোচনা এবং প্রতিরোধের অনুশীলন তৈরি করেছে৷[৩৮]

    সাংস্কৃতিক খাদন

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন নিষ্ক্রিয় ভোক্তার ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে, বিশেষ করে বিভিন্ন উপায়ে মানুষ যেভাবে সাংস্কৃতিক পাঠ্য পাঠ, গ্রহণ এবং ব্যাখ্যা করে বা অন্যান্য ধরণের সাংস্কৃতিক পণ্যের উপযুক্ত বা অন্যথায় অর্থের উৎপাদন ও প্রচলনে অংশগ্রহণ করে তার উপর গুরুত্বারোপ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, একজন ভোক্তা সাংস্কৃতিক পাঠ্যের মাধ্যমে প্রচারিত অর্থগুলোকে উপযুক্ত, সক্রিয়ভাবে পুনরায় কাজ করতে বা চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এর কিছু রূপের মধ্যে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিকে উৎপাদনের ঐতিহ্যগত বোঝাপড়া থেকে ভোগে স্থানান্তরিত করেছে – এটিকে তার নিজের অধিকারে উৎপাদনের একটি রূপ (অর্থ, পরিচয় ইত্যাদি) হিসাবে দেখা হয়। স্টুয়ার্ট হল, জন ফিস্ক এবং অন্যান্যরা এই উন্নয়নে প্রভাবশালী হয়েছে।

    এই ক্ষেত্রের পতাকাধারী জার্নাল, কালচারাল স্টাডিজের একটি বিশেষ ২০০৮ ইস্যু, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কোণ থেকে ” ভোক্তাবিরোধী ” পরীক্ষা করেছে। জেরেমি গিলবার্ট ইস্যুতে উল্লেখ করেছেন, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অবশ্যই এই সত্যের সাথে আঁকড়ে ধরতে হবে যে “আমরা এখন এমন এক যুগে বাস করছি যখন, পুরো পুঁজিবাদী বিশ্ব জুড়ে, সরকারের অর্থনৈতিক নীতির প্রধান লক্ষ্য হল ভোক্তা ব্যয়ের মাত্রা বজায় রাখা। এটি এমন একটি যুগ যখন ‘ভোক্তা আস্থা’কে অর্থনৈতিক কার্যকারিতার মূল সূচক এবং কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।”[৩৯]

    “পাঠ্য” ধারণা

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, সেমিওটিক্সের উপর আঁকা এবং বিকাশ করে, শুধুমাত্র লিখিত ভাষাই নয়, টেলিভিশন প্রোগ্রাম, চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফ, ফ্যাশন, চুলের স্টাইল এবং আরও অনেক কিছু নির্ধারণ করতে পাঠ্যের ধারণা ব্যবহার করে; সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের পাঠ্যগুলো সংস্কৃতির সমস্ত অর্থপূর্ণ নিদর্শন নিয়ে গঠিত। পাঠ্যতার এই ধারণাটি বিশেষত অগ্রগামী এবং প্রভাবশালী সেমিওটিশিয়ান রোল্যান্ড বার্থেসের কাজ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তবে অন্যান্য উৎস যেমন: জুরি লটম্যান এবং তারতু -মস্কো স্কুলের তার সহকর্মীদের কাছেও ঋণ রয়েছে। একইভাবে, ক্ষেত্রটি সংস্কৃতির ধারণাকে প্রশস্ত করে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো দৈনন্দিন জীবনের স্থান এবং স্থানগুলোর সাথে যোগাযোগ করে, যেমন: পাব, বসার ঘর, বাগান এবং সমুদ্র সৈকত, “পাঠ্য” হিসাবে।[৪০]

    সংস্কৃতি, এই প্রেক্ষাপটে, শুধুমাত্র উচ্চ সংস্কৃতিই অন্তর্ভুক্ত করে না,[৪১] বরং দৈনন্দিন অর্থ ও অনুশীলনও অন্তর্ভুক্ত করে, যা সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের কেন্দ্রবিন্দু।

    জেফ লুইস তার সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের পাঠ্যপুস্তক এবং মিডিয়া এবং সন্ত্রাসবাদের উপর একটি উত্তর-৯/১১ মনোগ্রাফে পাঠ্যতা এবং পাঠ্য বিশ্লেষণের অনেক কাজ সংক্ষিপ্ত করেছেন।[৪২][৪৩] লুইসের মতে, পাঠ্য অধ্যয়ন জটিল এবং কঠিন হিউরিস্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং শক্তিশালী ব্যাখ্যামূলক দক্ষতা এবং রাজনীতি এবং প্রসঙ্গগুলোর একটি সূক্ষ্ম ধারণা উভয়ই প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক বিশ্লেষকের কাজ, লুইসের জন্য, উভয় জ্ঞান ব্যবস্থা এবং পাঠ্যের সাথে জড়িত হওয়া এবং উভয়ের একে অপরের সাথে যোগাযোগের উপায়গুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা। এই ব্যস্ততা বিশ্লেষণের সমালোচনামূলক মাত্রাগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, প্রদত্ত পাঠ্য এবং এর বক্তৃতার মধ্যে এবং আশেপাশের শ্রেণিবিন্যাসগুলোকে আলোকিত করার ক্ষমতা।

    একাডেমিক সমাদর

    নৃবিজ্ঞান, প্রচার মাধ্যম বিদ্যা, যোগাযোগ অধ্যয়ন, সাহিত্য অধ্যয়ন, শিক্ষা, ভূগোল, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর সংমিশ্রণে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন বিকশিত হয়েছে।

    যদিও কেউ কেউ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রকে রাজনৈতিক আপেক্ষিকতাবাদে পরিণত করার এবং ” উত্তরআধুনিক ” বিশ্লেষণের এক ধরণের খালি সংস্করণের অভিযোগ করেছেন, অন্যরা মনে করেন যে এর মূলে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমালোচনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধারণাগত এবং পদ্ধতিগত কাঠামো প্রদান করে। এই সমালোচনাটি ” বিনির্মাণ ” করার জন্য নকশা করা হয়েছে যে অর্থ এবং অনুমানগুলো যা প্রতিষ্ঠান, পাঠ্য এবং অনুশীলনগুলোতে খোদাই করা আছে যেগুলোর সাথে এবং মাধ্যমে কাজ করে , সংস্কৃতি তৈরি করে এবং পুনরায় উপস্থাপন করে৷[৪৪][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] [ পৃষ্ঠা প্রয়োজন ] সুতরাং, যখন কিছু পণ্ডিত এবং শৃঙ্খলা শৃঙ্খলার পদ্ধতিগত প্রত্যাখ্যানের জন্য সাংস্কৃতিক অধ্যয়নকে বরখাস্ত করেছে, সমালোচনা এবং বিশ্লেষণের মূল কৌশলগুলো সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক ক্ষেত্রগুলোকে প্রভাবিত করেছে; উদাহরণস্বরূপ, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো সামাজিক পার্থক্য, নিয়ন্ত্রণ এবং অসমতা, পরিচয়, সম্প্রদায়-নির্মাণ, মিডিয়া, এবং জ্ঞান উৎপাদনের উপর কাজ করে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। অধিকন্তু, অনুবাদ অধ্যয়ন, স্বাস্থ্য অধ্যয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন অধ্যয়ন, কম্পিউটার অধ্যয়ন, অর্থনীতি, প্রত্নতত্ত্ব এবং নিউরোবায়োলজির মতো বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোতে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো গণমাধ্যম নীতি, গণতন্ত্র, নকশা, অবসর, পর্যটন, যুদ্ধ এবং উন্নয়নের উপর অধ্যয়নের একটি পরিসীমা অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব আগ্রহ এবং পদ্ধতিগুলোকেও বৈচিত্র্যময় করেছে। যদিও কিছু মূল ধারণা যেমন মতাদর্শ বা বক্তৃতা, শ্রেণী, আধিপত্য, পরিচয় এবং লিঙ্গ তাৎপর্যপূর্ণ থেকে যায়,সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন দীর্ঘকাল ধরে নতুন ধারণা এবং পদ্ধতির সাথে জড়িত এবং সংহত করেছে। এইভাবে ক্ষেত্রটি সংস্কৃতি ও রাজনীতির শক্তির সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।[৪৫][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] [ পৃষ্ঠা প্রয়োজন ]

    দ্য ব্ল্যাকওয়েল কম্প্যানিয়ন টু কালচারাল স্টাডিজ, শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন পণ্ডিত টবি মিলারের দ্বারা সম্পাদিত প্রবন্ধ, যা সমসাময়িক সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিকতা জুড়ে বিস্তৃত প্রতিটি শাখার মধ্যে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের পদ্ধতির বিকাশকে বিশ্লেষণ করে।[৪৬]

    সাহিত্য বিশারদগণ

    অনেক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অনুশীলনকারী ইংরেজি বা তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে কাজ করে। তা সত্ত্বেও, কিছু ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যিক পণ্ডিত যেমন: ইয়েলের অধ্যাপক হ্যারল্ড ব্লুম সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের স্পষ্ট সমালোচক। পদ্ধতির স্তরে, এই পণ্ডিতরা আন্দোলনের সমালোচনামূলক কাঠামোর তাত্ত্বিক ভিত্তিকে বিতর্ক করেন।

    ব্লুম ৩ সেপ্টেম্বর ২০০০-এর সি-স্প্যানের বুকনোটস পর্বে তাঁর অবস্থান বর্ণনা করেন, তাঁর বই ‘কিভাবে পড়তে হয়’এবং কেন ‘ আলোচনার সময়।

    (ঐ)এখানে পড়ার দুটি শত্রু এখন বিশ্বে, শুধু ইংরেজি-ভাষী বিশ্বে নয়। একটি হল সাহিত্য অধ্যয়নের উন্মাদ ধ্বংস…এবং ইংরেজিভাষী বিশ্বের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে যাকে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন বলা হয় তার দ্বারা প্রতিস্থাপন করা, এবং সবাই জানে সেই ঘটনাটি কী। আমি বলতে চাচ্ছি,…এখন ক্লান্ত-শ্রান্ত বাক্যাংশ ‘রাজনৈতিক শুদ্ধতা’ যা হয়েছে তার জন্য একটি পুরোপুরি ভাল বর্ণনামূলক বাক্যাংশ হিসেবে রয়ে গেছে, হায় এখনও প্রায় সর্বত্র চলছে এবং যা প্রাধান্য পাচ্ছে, আমি বলব বরং তিন-পঞ্চমাংশেরও বেশি ইংরেজি-ভাষী বিশ্বের স্থায়ী অনুষদের মধ্যে, যারা সত্যিই বুদ্ধিজীবীদের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিনিধিত্ব করে, আমি মনে করি তা ‘কেরানিদের বিশ্বাসঘাতকতা’।”

    — [৪৭]


    মার্কসবাদী সাহিত্য সমালোচক টেরি ঈগলটন সম্পূর্ণরূপে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের বিরোধী নন, তবে তিনি এর দিকগুলোর সমালোচনা করেছেন এবং আফটার থিওরি (২০০৩) এর মতো বইগুলোতে এর শক্তি ও দুর্বলতাগুলোকে তিনি তুলে ধরেছেন। ঈগলটনের জন্য, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তত্ত্বের জীবনের “মৌলিক প্রশ্ন” সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু তাত্ত্বিকরা এই সম্ভাবনা খুব কমই উপলব্ধি করেছেন।

    ইংরেজি বিভাগগুলো সাংস্কৃতিক অলঙ্কারশাস্ত্রের পণ্ডিতদেরও আকর্ষণ করে। এই একাডেমিক ক্ষেত্রটি সাংস্কৃতিক অলঙ্কারশাস্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করে “সমস্ত সংস্কৃতি অলংকারমূলক এবং সমস্ত অলঙ্কারশাস্ত্র সাংস্কৃতিক।” সাংস্কৃতিক অলঙ্কারশাস্ত্রের পণ্ডিতরা জলবায়ু পরিবর্তন, আত্মসংবৃতি, এশীয় আমেরিকান অলঙ্কারশাস্ত্র, এবং আরও অনেক বিষয়ে তদন্ত করতে আগ্রহী।[৪৮]

    সমাজবিজ্ঞান

    সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সমাজবিজ্ঞানের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন স্টুয়ার্ট হল বার্মিংহামে বার্মিংহাম স্কুল ত্যাগ করেন, তখন ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানের একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রফেসরশিপ গ্রহণ করতে হয়। সাংস্কৃতিক সমাজবিজ্ঞানের উপক্ষেত্র, বিশেষ করে, অনেক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অনুশীলনকারীদের জন্য শৃঙ্খলামূলক আবাস। তা সত্ত্বেও, একটি শৃঙ্খলা হিসাবে সমাজবিজ্ঞান এবং সামগ্রিকভাবে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যদিও সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন ঐতিহাসিক কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর্শন বা মনোবিজ্ঞান থেকে বিষয়টিকে আলাদা করে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নগুলো স্পষ্টভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং শৃঙ্খলার ঐতিহ্যগত বোঝাপড়া এবং অনুশীলনের সমালোচনা করেছে। বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন অনুশীলনকারীরা মনে করেন যে এটি সর্বোত্তম যে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন শৃঙ্খলা অনুকরণ করে না বা সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধতার আকাঙ্ক্ষা করে না। বরং, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ভিত্তি হিসাবে এক ধরনের আমূল আন্তঃবিভাগীয়তার প্রচার করে।

    একজন সমাজবিজ্ঞানী যার কাজ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছে তিনি হলেন পিয়েরে বোর্দিউ, যার কাজ পরিসংখ্যান এবং গভীর সাক্ষাৎকারের উদ্ভাবনী ব্যবহার করে।[৪৯][৫০] যাইহোক, বার্দিউ-এর কাজ সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়েছে, এবং যদিও বোর্দিউ তার কাজকে বিজ্ঞানের একটি রূপ হিসাবে বিবেচনা করেছেন, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কখনই এই ধারণাটিকে গ্রহণ করেনি যে এটি “বৈজ্ঞানিকতার” দিকে আকাঙ্ক্ষা করা উচিত এবং তাত্ত্বিক ও বিস্তৃত পরিসরে প্রবেশ করেছে। সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ভিত্তি হিসাবে “বৈজ্ঞানিকতা” এর ফেটিশাইজেশনের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত যুক্তি।

    দুই সমাজবিজ্ঞানী যারা সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের সমালোচনা করেছেন, ক্রিস রোজেক এবং ব্রায়ান এস টার্নার, তাদের প্রবন্ধ, “সজ্জাসংক্রান্ত সমাজবিজ্ঞান: সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সূচক সমালোচনার প্রতি” যুক্তি দিয়েছেন যে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, বিশেষ করে স্টুয়ার্ট হল দ্বারা রক্ষা করা স্বাদের অভাব রয়েছে। স্থিতিশীল গবেষণা লক্ষ্য,এবং পাঠ্যের সমসাময়িক পড়ার বিশেষাধিকার, এইভাবে একটি ঐতিহাসিক তাত্ত্বিক দৃষ্টি তৈরি করে।[৫১] যাইহোক, হল অনুসরণ করে, যুক্তি দেবে যে সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন সবসময় একটি নির্দিষ্ট গবেষণা লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা এড়াতে চেয়েছে; এটি তার শৃঙ্খলার সমালোচনা থেকে অনুসরণ করে। অধিকন্তু, হল এবং অন্য অনেকে দীর্ঘদিন ধরে এই ভুল বোঝাবুঝির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়েছেন যে পাঠ্য বিশ্লেষণ হল সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের একমাত্র পদ্ধতি এবং উপরে উল্লিখিত হিসাবে অন্যান্য অনেক পদ্ধতির অনুশীলন করেছে। রোজেক এবং টার্নার সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে “রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঠিকতা সম্পর্কে নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের ধারনা” বলেও অভিযোগ তোলেন।

    পদার্থবিদ্যা (অ্যালান সোকাল)

    ১৯৯৬ সালে, পদার্থবিদ অ্যালান সোকাল একটি সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন জার্নাল, সোশ্যাল টেক্সটে একটি প্রতারণামূলক নিবন্ধ জমা দিয়ে সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের বিরুদ্ধে তার বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন। নিবন্ধটি, যা সোকাল যাকে উত্তর- আধুনিকতার “ফ্যাশনেবল ননসেন্স” হিসাবে উল্লেখ করেছে তার মিথ্যা অভিনয় হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, জার্নালের সম্পাদকদের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল, যা সেই সময়ে পিয়ার রিভিউ অনুশীলন করেনি। কাগজটি ছাপা হলে, সোকাল একটি স্ব-বর্ণিত “একাডেমিক গসিপ” ম্যাগাজিনে একটি দ্বিতীয় নিবন্ধ প্রকাশ করে, লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, সামাজিক পাঠ্যের উপর তার প্রতারণা প্রকাশ করে। সোকাল বলেছেন যে তার প্রেরণাটি বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের সমসাময়িক সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে উদ্ভূত হয়েছিল:[৫২]

    রাজনৈতিকভাবে, আমি ক্ষুব্ধ কারণ এই মূর্খতার বেশিরভাগই (যদিও সব নয়) স্বঘোষিত বামদের থেকে উদ্ভূত। আমরা এখানে একটি গভীর ঐতিহাসিক ভোল্ট-ফেস প্রত্যক্ষ করছি। গত দুই শতাব্দীর বেশির ভাগ সময় ধরে, বামপন্থীরা বিজ্ঞানের সাথে এবং অস্পষ্টবাদের বিরুদ্ধে চিহ্নিত হয়েছে; আমরা বিশ্বাস করেছি যে যৌক্তিক চিন্তা এবং বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার নির্ভীক বিশ্লেষণ (প্রাকৃতিক এবং সামাজিক উভয়ই) ক্ষমতাবানদের দ্বারা প্রচারিত রহস্যময়তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তীক্ষ্ণ হাতিয়ার – তাদের নিজের অধিকারে কাঙ্খিত মানবিক পরিণতির কথা উল্লেখ না করা। অনেক “প্রগতিশীল” বা “বামপন্থী” একাডেমিক মানবতাবাদী এবং সমাজ বিজ্ঞানীদের এক বা অন্য রূপের জ্ঞানীয় আপেক্ষিকতার দিকে সাম্প্রতিক বাঁক এই যোগ্য ঐতিহ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং প্রগতিশীল সামাজিক সমালোচনার জন্য ইতিমধ্যে ভঙ্গুর সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করে। “বাস্তবতার সামাজিক নির্মাণ” সম্পর্কে তাত্ত্বিকতা আমাদের এইডসের একটি কার্যকর চিকিত্সা খুঁজে পেতে বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধের জন্য কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করবে না। আমরা সত্য ও মিথ্যার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করলে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে মিথ্যা ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি না।

    এই সমালোচনার জবাবে, জ্যাক দেরিদা লিখেছেন:[৫৩]

    দুঃখজনকভাবে, এটি প্রতিস্থাপিত কাজে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে দ্রুত ব্যবহারিক রসিকতার জন্য যাওয়া, কার স্বার্থে ছিল?

    প্রতিষ্ঠার কর্ম

    হল এবং অন্যরা সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে কিছু মূল উদ্ভব পাঠ্য বা মূল ” পাঠ্যক্রম ” চিহ্নিত করেছেন:

  • সামাজিক বিজ্ঞান

    সামাজিক বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ ও মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।[১] সামাজিক বিজ্ঞানকে সাধারণত জ্ঞানের একটি বৃহত্তর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যার মধ্যে রয়েছে নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, অপরাধ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক ভূগোল, মনোবিজ্ঞানআইন, পরিবেশ বিজ্ঞান, সমাজকর্ম ও তুলনামূলক-সংস্কৃতি অধ্যয়ন এর মতো বিষয়গুলোও কখনো কখনো সামাজিক বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।


    কখনো কখনো বিশেষ ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান বলতে শুধুমাত্র সমাজবিজ্ঞান বোঝান হয়। এমিল ডুর্খাইম, কার্ল মার্ক্সমাক্স ভেবারকে সাধারণত আধুনিক সামাজিক বিজ্ঞানের মূল স্থপতি বলে বিবেচনা করা হয়।[২] দৃষ্টবাদী সামাজিক বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানকে আধুনিক দৃষ্টিতে দেখেন এবং সমাজকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, ব্যাখ্যাবাদী সামাজিক বিজ্ঞানীরা অভিজ্ঞতা দ্বারা যাচাইযোগ্য তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার বদলে সামাজিক সমালোচনা বা প্রতীকীমূলক ব্যাখ্যা দেন। তারা বিজ্ঞানকে ব্যাপক অর্থে ধরে নেন। তবে আধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষকরা সাধারণত বহুদর্শনবাদী হয়ে থাকেন এবং গবেষণার ক্ষেত্রে পরিমাণাত্বক ও গুণাত্বক গবেষণা পদ্ধতির মিশেল ব্যবহার করেন। বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ের সংশ্লিষ্ট মানুষ বর্তমানে সামাজিক গবেষণার লক্ষ্য ও পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন যা সামাজিক গবেষণাকে একটি স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। ব্যাপক অর্থে সমাজ বিজ্ঞান কে সংজ্ঞায়িত করলে বলা যায় যে সমাজ বিজ্ঞান হল মানবসমাজের একটি বস্তুনিষ্ঠ যুক্তিসিদ্ধ বিচার ও নিয়ম ভিত্তিক চর্চা।

  • Vue.js (সাধারণভাবে ভু ; উচ্চারিত /vjuː/ , মত মত ) হচ্ছে একটা মডেল-ভিউ-ভিউমডেল শৈলীর উন্মুক্ত-উৎসের সফটওয়্যার যা সাধারনত ইন্টারএক্টিভ ওয়েব এপলিকেশন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে । ভ্যু ইউজার ইন্টারফেস তৈরির জন্য একটি প্রগতিশীল কাঠামো। এবং যা সিংগেল পেজ এপ্লিকেশন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে [৪] ভূ-জেস একটি অঙ্গুলার-জেস সমধর্মী স্ক্রিপ্টিং ভাষা। ভ্যূ মূলধারা থেকে ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্য হতে ডিজাইন করা হয়েছে।

    ইতিহাস

    ভু তৈরি করেছেন ইভান ইউ । যিনি এর আগে গুগল এর প্রডাক্ট এংগুলার যে এস ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করেছেন । তিনি পরে তার চিন্তাধারার প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে তুলে ধরেন: “আমি মনে করি, আমি যদি এমন অংশটি বের করতে পারি যা কিনা সত্যি এংগুলার এর চাইতে হালকা হবে । ” [৫] ভু মূলত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায়।

    বিবরণ

    Vue.js একটি ক্রমবর্ধমানভাবে গ্রহণযোগ্য আর্কিটেকচার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ এবং যা রেন্ডারিং এবং কম্পনেন্ট বেজ কাজ করে । কোন ফাংশানের এডভান্সড ফিচারের প্রয়োগের জন্য এর রাউটিং , স্টেট ম্যানেজমেন্ট এবং বিল্ড টুলিংয়ের এর ব্যবহার শুনিসচিত করতে হবে যাতে সহায়তাকারী লাইব্রেরি এবং প্যাকেজগুলির অন্তুর্ভুক্তি থাকবে । [৬]

    মডেল-ভিউ-ভিউমডেল শৈলীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর গঠনকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায় :

    মডেল

    স্ক্রিপ্ট ট্যাগের মধ্যবর্তি এই অংশে পশ্চাদপ্রান্তের পরিষেবা থেকে তথ্য কোনো অবজেক্টে অর্পণ করা হয়।

        data(){   
            return{
                testdata : "Hello",
            }
        },
    

    ভিউমডেল

    এটির অবস্থান মূল জাভাস্ক্রিপ্ট ফাইলে(main.js) যা প্রারম্ভিক ফাইল গুলোর একটি। এটি মূলত একটি ভিত্তি যার ওপর মডেল ও ভিউ তাদের কার্যক্রম করে এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

     new Vue({
       el : "#app",
     data : data 
     })
    

    ভিউ

    এটি প্রান্তিক অংশ যেটা ব্যবহারকারীদের প্রতি উন্মুক্ত হয়।

    <template>
     <div id="app">
       {{testdata}}
     </div>
     </template>
    

    বৈশিষ্ট্য

    Vue ব্যবহারকারীরা ভু এর টেমপ্লেট সিস্টেম ইউজ করে কোড লিখতে পারেন বা JSX ব্যবহার করে সরাসরি রেন্ডার ফাংশন লিখতে পারেন । [৭] ভু এ ডাটা রেন্ডারিং পুরোটা কম্পোনেন্ট বেজ । । [৮]

    রিঅ্যাকটিবিটি

    Vue একটি প্রতিক্রিয়াশীলতা সিস্টেম যা প্লেইন জাভাস্ক্রিপ্ট অবজেক্ট এবং অপটিমাজিং রি-রেন্ডার ব্যবহার করে । প্রতিটি উপাদান তার রেন্ডারিংয়ের সময় তার ডিপেন্ডেন্সির উপরে খেয়াল রাখে , তাই সিস্টেম বুঝতে পারে কখন রি এবং কোন এলিমেন্ট রি রেন্ডার হচ্ছে [৯]

    উপাদান

    <div id="tuto">
    	<button-clicked v-bind:initial-count="0"></button-clicked>
    </div>
    
    <script>
    Vue.component('button-clicked', {
      props: [ "initialCount" ],
      data: () => ({
        count: 0,
      }),
      template: `<button v-on:click="onClick">Clicked <nowiki>{{ count }}</nowiki> times</button>`,
      computed: {
        countTimesTwo() {
          return this.count * 2;
        }
      }
      watch: {
        count(newValue, oldValue) {
          console.log(`The value of count is changed from ${oldValue} to ${newValue}.`);
        }
      }
      methods: {
        onClick() {
            this.count += 1;
        }
      },
      mounted() {
        this.count = this.initialCount;
      }
    });
    
    new Vue({
      el: '#tuto',
    });
    </script>
    

    রাউটিং

    <div id="app">
      <router-view></router-view>
    </div>
    ...
    
    <script>
    ...
    const User = {
      template: '<div>User <nowiki>{{ $route.params.id }}</nowiki></div>'
    }
    
    const router = new VueRouter({
      routes: [
        { path: '/user/:id', component: User }
      ]
    })
    ...
    </script>
    

    ভূ-জেস রাউটিং পরিষেবা প্রদান করে।

    উপরের কোডটি:

    1. websitename.com/user/<id> এ একটি ফ্রন্ট-এন্ড রাউট সেট করে।
    2. যা রেন্ডার হবে (কনস্টেবল ব্যবহারকারী। । । )
    3. ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট উপাদানটি পাস করার জন্য ব্যবহারকারীর উপাদানকে অনুমতি দেয় যা $ রুট অবজেক্টের $route.params.id কী ব্যবহার করে URL এ টাইপ করা হয়েছিল: $route.params.id
    4. ডম এর এলেমেন্ট গুলা এর মধ্যে <router-view></router-view> রেন্ডার করা হবে।
    5. অবশেষে জেনারেট করা HTML আউটপুট ফাইল : websitename.com/user/1
    <div id="app">
      <div>
        <div>User 1</div>
      </div>
    </div>
    

    [১০]

    পরিকাঠামো গঠন

    স্ক্রিপ্ট ট্যাগ ব্যবহার করে

    এটি সহজতম পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ভূ এর ওয়েবসাইট vuejs.org/v2/guide/installation.html থেকে তার জাভাস্ক্রিপ্ট ফাইলটি ডাউনলোড করা এবং সেটি সরাসরি ব্যবহার করা।

    এক্ষেত্রে ২ রকম জাভাস্ক্রিপ্ট ফাইল রয়েছে। একটি ডেভেলপমেন্ট সংস্করণ vue.js এবং অন্যটি প্রোডাকশন সংস্করণ(সিঞ্চিত সংস্করণ) vue.min.js

    নিচে একটি নমুনা দেয়া হলো :

    <html>
       <head>
          <script type = "text/javascript" src = "vue.min.js"></script>
       </head>
       <body></body>
    </html>
    

    কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে

    পূর্ব-প্রয়োজনীয় হিসাবে নোড প্যাকেজ ম্যানেজার ইনস্টল করতে হবে। যদি তা থাকে তবে , প্রথমে CLI ইনস্টল করতে :

    npm install --global vue-cli
    

    ওয়েবপ্যাক মডিউল বান্ডলার ব্যবহার করে প্রজেক্ট শুরু করা

    vue init webpack <project name>
    

    পরবর্তী অপশনগুলো সিলেক্ট করে নেয়া। স্ক্রিন এ প্রজেক্ট সফল তৈরির মেসেজ থাকবে।

    এবার প্রজেক্ট টি চালাতে হলে , প্রথমে সেই প্রজেক্ট লোকেশন অব্দি যেতে হবে। তারপর নিম্নোক্ত কম্যান্ড চালাতে হবে :

    npm run dev
    

    যদি প্রজেক্টটি ইতিমধ্যেই তৈরী অবস্থায় থাকে তবে চালাতে হলে , প্রথমে সেই প্রজেক্ট লোকেশন অব্দি যেতে হবে। তারপর নিম্নোক্ত কম্যান্ড চালাতে হবে :

    npm run serve
    

    এইচটিটিপি গ্রাহক সংযোগ

    ওয়েবে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার সময় অনেক সময় কোনও এপিআই থেকে ডেটা গ্রাস করতে এবং প্রদর্শন করতে চাইতে হতে পারে। এটি করার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে তবে খুব জনপ্রিয় পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে এক্সিওস , যা একটি প্রতিশ্রুতি ভিত্তিক এইচটিটিপি গ্রাহক ।

    এক্সিওস ইনস্টল করতে

    npm install axios—save
    

    একটি জাভাস্ক্রিপ্ট (.js) ফাইল তৈরী করতে হবে। ধরাযাক সেটি তৈরী হলো ../../js/apis/ স্থানে। নাম backend-apis.js

    তাতে একটি get অনুরোধ করতে হলে নিম্নরূপ কোড হবে :[১১]

    import axios from 'axios'
    export default{
        getCustomers(phoneNumber){
            return axios.get('http://localhost:8111/callcenter/api/customerService/phone/' + phoneNumber,{timeout:5000});
        },
    }
    

    এবার যে ভূ ফাইলে থেকে অনুরোধটি সূচিত হবে তার মডেলের মধ্যে (স্ক্রিপ্ট ট্যাগ এর মধ্যে)

    import api  from '../../js/apis/backend-apis'
    export default {
        data(){   
            return{
                searchPanelResponse: {}
            }
        },
        methods:
        {       
            getCustomers(phoneNo){
                if (phoneNo !== null && phoneNo !== undefined && phoneNo !== '') {
                    api.getCustomers(phoneNo).then(
                    response => {
                        this.searchPanelResponse = {
                            showCustList : true,
                            backEndResponse : response.data,
                            errors : {}
                        }
                        this.$store.commit('updateCustList', this.searchPanelResponse);
                        }).catch(error=>{
                            //error handling goes here                                       
                        })   
                }              
            }
        },   
    }
    
  • কাস্তে

    কাস্তে ফসল কাটার কাজে ব্যবহৃত বাঁকা চাঁদের মত গঠনের হাতলওয়ালা একধরনের যন্ত্র। অনেক প্রাচীন কাল থেকেই এই যন্ত্রটির ব্যবহার হয়ে আসছে। সাধারণত কাস্তে বা কাচির অবতল দিক খাজকাটা ভাবে ধারালো করা থাকে।

    ইতিহাস

    মেসোপটেমিয়ায় কাস্তের বিকাশ সেই সময়ের আগে নিওলিথিক যুগেও পাওয়া গেছে। ইসলায়েলের আশেপাশের এলাকায় খননকালে প্রচুর পরিমাণে কাস্তের ব্লেড পা ওয়া গেছে যা এপিপালিওলিথিক (খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০০-৮০০০) যুগের। [১]

    বানানোর পদ্ধতি

    কাস্তে তৈরীর জন্য লাগবে লোহা। লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে লাল রং করা হয়। তারপর লাল লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কাস্তে তৈরি করা হয়। এভাবে বেশ কয়েকবার পুড়িয়ে এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তৈরি করা হয় কাস্তে। কাস্তে তৈরীর কারিগরকে কামার বলা হয়।

    ব্যবহার

    বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে কাস্তে কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ধান পাকার পরে কৃষকেরা ধান কাটতে এটি ব্যবহার করে। এছাড়া গবাদিপশুর ঘাস, লতাপাতা এবং অন্যান্য অনেক সবজি ফসল কাস্তে দিয়ে কেটে সংগ্রহ করা হয়। এভাবেই বহু যুগ ধরে কাস্তে ব্যবহার হয়ে আ

  • আলপিন

    আলপিন হলো একপ্রকারের সরু, সূচাগ্র কীলকবিশেষ, যা সাধারণত কাগজ ইত্যাদি ফুঁড়ে, গেঁথে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। আলপিনকে সংক্ষেপে পিনও বলা হয়ে থাকে।

    Pin-artsy.jpg

    স্ট্যান্ডার্ড পিন

    Bobby pin.jpg

    শব্দগত ব্যুৎপত্তি

    বাংলা “আলপিন” শব্দটি এসেছে পোর্তুগিজ শব্দ alfinete থেকে বিবর্তিত হয়ে।[১]

    গণমাধ্যমে ব্যবহার

    • দৈনিক প্রথম আলো, “আলপিন” নামে একটি ব্যঙ্গাত্মক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করতো, যা মূলত রম্যকৌতুকের আশ্রয়ে সমাজের নানা অসঙ্গতির বিষয়কে উপস্থাপন করতো।
  • অশ্বক্ষমতা

    অশ্বশক্তি হল ক্ষমতার একক যা একটি ইঞ্জিন কতটা শক্তিশালী তা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। । এটি প্রায় ৭৪৬ ওয়াটের সমান।ধারণাটি সর্বপ্রথম জেমস ওয়াট দ্বারা উপস্থাপন করেন, যিনি বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন।যেহেতু মানুষ ঘোড়া ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল,এই শক্তির পরিমাণ সেই সময়ে অধিকাংশ লোক অনুমান করতে পারতেন।ছোট মোটর ১০ অশ্বশক্তি তৈরি করতে পারে যেখানে একটি জেট ইঞ্জিন ১০০০ অশ্বশক্তি তৈরি করতে পারে।

    ইতিহাস

    বাষ্পীয় ইঞ্জিন

    বাষ্পীয় ইঞ্জিন

    জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন যে তখনকার সময়ের ঘোড়াগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকরী এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে বাষ্পীয় ইঞ্জিন এর ক্ষমতা তুলে ধরার জন্য এ এককের বিপণন কৌশল হিসাবে এ একক দেন । তার নতুন উদ্ভাবিত বাষ্প ইঞ্জিন বিক্রি করার চেষ্টা করার সময়, ওয়াট বুঝতে পেরেছিলেন যে তার অনেক গ্রাহক ঘোড়া প্রতিস্থাপনের জন্য মেশিনটি ব্যবহার করবে, তাই তিনি একটি ঘোড়ার দ্বারা সরবরাহিত শক্তি পরিমাপ করেন। তাই তিনি ১৯৭০-এর দশকে তিনি একটি কূপের নিচ থেকে ১০০ পাউন্ড (৪৫ কেজি) ভর টানার জন্য দুটি ভারী ড্রে ঘোড়া খাটান এবং দেখতে পান যে তারা ঘন্টায় ২.৫ মাইল বেগে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে কাজটি অর্জন করতে পারে। ওয়াট তারপরে ঘর্ষণ কাটানো কাজের জন্য হিসাবটিতে একটি অতিরিক্ত ৫০% যোগ করেন এবং ১ হর্সপাওয়ার সংজ্ঞায়িত করেন। ওয়াট ইচ্ছাকৃতভাবে ঘোড়ার শক্তি আউটপুটকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করেছিলেন যাতে তার স্টিম ইঞ্জিনগুলি প্রতিস্থাপিত ঘোড়াগুলির চেয়ে ভাল পারফর্ম করে। সাধারণ কিংবদন্তি বলে যে এককটি তৈরি হয়েছিল যখন ওয়াটের প্রথম গ্রাহকদের মধ্যে একজন সুরা-প্রস্তুতকারী(brewer) এমন একটি ইঞ্জিন চেয়েছিলেন যা একটি বলিষ্ঠ ঘোড়া মতো এবং সর্বোচ সীমায় কাজ করবে।ওয়াট, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন এবং এমন একটি মেশিন তৈরি করলেন যা আসলে সুরা-প্রস্তুতকারী যা চেয়ে ছিলেন তার তুলনায়ও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল, এবং এই মেশিনের শক্তি আউটপুটকেই অশ্বশক্তি বা horsepower বলে।

    প্রাসঙ্গিক সুত্র

    P = W t = F s t . {\displaystyle P={\frac {W}{t}}={\frac {Fs}{t}}.}