.বিজ্ঞান বিজ্ঞানের ইতিহাসদর্শনের বিজ্ঞানগণিতজীববিজ্ঞানরসায়নপদার্থবিজ্ঞানভূ বিজ্ঞানপ্রযুক্তিসম্পাদনারসায়ন প্রবেশদ্বারসংক্ষিপ্তP:CHEMরসায়ন প্রবেশদ্বারে স্বাগতম। বাংলা রসায়ন শব্দের উদ্ভব সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জানা না গেলেও ইংরেজী কেমিস্ট্রি শব্দ সম্পর্কে জানা যায়। ইংরেজী কেমিস্ট্রি শব্দটি এসেছে আরবী আলকেমি থেকে। আর এই আলকেমি শব্দ এসেছে গ্রিক শব্দ χημεία (যার অর্থ “একত্রে ঢালা”) থেকে। রসায়ন বিজ্ঞানের একটি শাখা। আধুনিক রসায়ন মৌলিক পদার্থ এবং মৌলসমূহের মধ্যে বিরাজিত বন্ধন সম্পর্কে আলোচনা করে। এছাড়া মৌল ও যৌগের গঠন, ধর্ম, রূপান্তর ইত্যাদি সম্পর্কেও রসায়ন আলোচনা করে। পদার্থসমূহের নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক ক্রিয়া এবং শক্তির সাথে ক্রিয়াও রসায়নে আলোচিত হয়। পদার্থসমূহের মধ্যে ব্যাপক বৈচিত্র বিদ্যমান এবং এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌগ হিসেবে থাকে। রসায়নবিদগণ বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণু কীভাবে অণু গঠন করে এবং অণুসমূহ এক অপরের সাথে কীভাবে ক্রিয়া করে তা গবেষণা করেন। রসায়ন সম্বন্ধে আরও জানুন…সম্পাদনানির্বাচিত নিবন্ধগ্লুকোজ (ইংরেজী: Glucose) বা দ্রাক্ষা-শর্করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্বোহাইড্রেট যা শর্করার রাসায়নিক শ্রেণিবিভাগে এক প্রকার একশর্করা বা মনোস্যাকারাইড। জীবন্ত কোষ গ্লুকোজকে শক্তি ও বিপাকীয় প্রক্রিয়ার একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান উৎপাদ। গ্লুকোজ প্রাণী ও উদ্ভিদের কোষের শ্বাসক্রিয়ায় অন্যতম অপরিহার্য উপাদান। পাকা, মধু ও আধিকাংশ মিষ্ট ফলে গ্লুকোজ থাকে। রক্তে এবং বহুমূত্র রোগীর মূত্রে সামান্য পরিমাণে গ্লুকোজ আছে। “গ্লুকোজ” গ্রিক শব্দ glukus (γλυκύς) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ “মিষ্টি” এবং “-ose” প্রত্যয়টি চিনি নির্দেশ করে। অ্যালডোহেক্সোজ চিনির দুইটি স্টেরিও সমাণু গ্লুকোজ নামে পরিচিত, যার মাত্র একটি (ডি-গ্লুকোজ ) জৈবিকভাবে সক্রিয়। এই গঠনটিকে অনেক সময় ডেক্সট্রোজ (“ডেক্সট্রোরোটেটরি” হতে উদ্ভূত) মনোহাইড্রেট অথবা বিশেষত খাদ্য শিল্পে সাধারণভাবে ডেক্সট্রোজ বলা হয়। এই নিবন্ধটিতে ডি-গঠনবিশিষ্ট গ্লুকোজ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এল-গ্লুকোজ কোষে জৈবিকভাবে বিপাকীয় ক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে না, যা গ্লাইকোলাইসিস নামে পরিচিত। আরও দেখুন…সম্পাদনানির্বাচিত চিত্রসম্পাদনানির্বাচিত বিষয়দশে মিলে করবো কাজ, বাংলা উইকিকে দেবো নয়া সাজ। বাংলা উইকিপিডিয়ায় রসায়ন বিভাগকে পরিপূর্ণ করতে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। প্রতি সপ্তাহে একটি বিশেষ নিবন্ধ নির্বাচিত করা হবে। এবং সবাই মিলে সেই নিবন্ধটিকে পরিপূর্ণ করা হবে। এই সপ্তাহের বিষয় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড । পরবর্তী সপ্তাহের বিষয় ইথানল । সম্পাদনাবিষয়শ্রেণীসমূহ
হারম্যান এমিল ফিসার (অক্টোবর ৯, ১৮৫২ – জুলাই ১৫, ১৯১৯) একজন জার্মান রসায়নবিদ। তিনি কার্বহাইড্রেট সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১৯০২ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ফিসার এস্টারিফিকেশন আবিষ্কারের কারণে তিনি সমধিক পরিচিত। ১৮৭৫ সালে তিনি ফিনাইল হাইড্রাজিন প্রস্তুত করেন যা অ্যালডিহাইড ও কিটোনের সাথে বিক্রিয়া করে নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রাজোন উৎপন্ন করে। তিনি এ বিকারক ব্যবহার করে সুগার রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সুগারের গাঠনিক সংকেত নির্ণয়ে ও সংশ্লেষণে তাঁর ব্যপক অবদানের জন্য তাকে “সুগার রসায়নের জনক” হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি প্রোটিন ও রঞ্জক পদার্থের রসায়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। আরও দেখুন…
উপরন্তু পরমাণুতে যে ইলেক্ট্রনীয় উত্তেজিত অবস্থা বিরাজ করে সেই ক্ষেত্রে অণুসমূহ ঘূর্ণন ও কম্পন মোড প্রদর্শন করে এবং অণুসমূহের শক্তি স্তরগুলো কোয়ান্টায়িত অবস্থায় থাকে। দুটি ভিন্ন ঘূর্ণন অবস্থার মধ্যে ক্ষুদ্রতম শক্তি পার্থক্য বিদ্যামান যেখানে বিশুদ্ধ ঘূর্ণন বর্ণালীর পাল্লা তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীরঅবলোহিত অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যায় (তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় 30 – 150 µm)। কম্পন বর্ণালীসমূহের পাল্লা অবলোহিত রশ্মির কাছাকাছি হয় (প্রায় ১ – ৫ µm), অপরদিকে ইলেকট্রনের পরিবৃত্তি ঘটিত বর্ণালীসমূহ মূলত দৃশ্যমান ও অতিবেগুনী অঞ্চলে হয়ে থাকে। কম্পন ও ঘূর্ণন বর্ণালীর পরিমাপ করে দুইটি নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী দূরত্বের ন্যায় অণুর ধর্মাবলী নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায়।
পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অপরিহার্য পারমাণবিক অরবিটাল তত্ত্ব রয়েছে তাকে আণবিক অরবিটাল তত্ত্বে সম্প্রসারিত করা যায় – যা আণবিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয় সেটাই আড় তরঙ্গ/অণুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse wave)। পানি, আলো, তাপ, বেতার ইত্যাদির তরঙ্গ অণুপ্রস্থ তরঙ্গ।
এটি কোন মাধ্যমে তরঙ্গচূড়া ও তরঙ্গখাঁজ উৎপন্ন করে সঞ্চালিত হয়। একটি তরঙ্গচূড়া থেকে পরবর্তি তরঙ্গচূড়া পর্যন্ত দুরত্বকে এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে। আবার একটি তরঙ্গখাঁজ থেকে পরবর্তী তরঙ্গখাঁজ পর্যন্ত দুরত্বকে এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।এ ধরনের তরঙ্গে সমাবর্তন ঘটে।
ঘনপদার্থবিজ্ঞান হল পদার্থবিজ্ঞানেরএকটি শাখা যাতে বিভিন্ন ঘন পদার্থের নানা ধর্ম, যেমন অতিপরিবাহিতা, অর্ধপরিবাহিতা, অয়শ্চৌম্বকত্ব ইত্যাদি আলোচিত হয়। পদার্থের ভৌত ধর্ম যেমন দশান্তর ইত্যাদি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখাটিতেই সবচেয়ে গভীর গবেষণা হয়।
শক্তি স্তর
যেকোন ঘন পদার্থের মধ্যে ইলেক্ট্রনগুলি নানা শক্তিস্তরে বিস্তৃত থাকে। ইলেক্ট্রন একটি ফার্মিয়ন হবার ফলে পাউলির বহিষ্করণ সূত্র অনুসারে একেবারে একই শক্তিস্তরে একটির বেশি ইলেক্ট্রন একসাথে অবস্থান করতে পারে না। অতএব দুটি সমান শক্তির ইলেক্ট্রন সহাবস্থান করলে তাদের শক্তিস্তর একটির বদলে দুটি শক্তি স্তরে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ঘন পদার্থের মধ্যে এত বেশি ইলেক্ট্রন সহাবস্থান করে যে তাদের বিশ্লিষ্ট শক্তিস্তরগুলি কাছাকাছি থেকে একটিই প্রশস্ত শক্তিস্তর তৈরি করে যাতে “ব্যান্ড” বলে।
পরমানুতে অবস্থিত মুক্ত যোজন ইলেক্ট্রন বিদ্যুৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে ফলে এদেরকে পরিবহন ইলেক্ট্রন বলে। এই ইলেক্ট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।এই ব্যান্ডটির মধ্যে যে ইলেকট্রন গুলি ডিলোকালাইজড (Delocalized) বা অনাবদ্ধ অর্থাৎ তারা কোনো একটি বিশেষ কেন্দ্রীণের চারিদিকে আবদ্ধ না থেকে পুরো ঘন পদার্থটির উপর মিলিত ভাবে ছড়িয়ে থাকে)।
পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর (চাঁদ, কৃত্রিম উপগ্রহ এবং আপাতভাবে সূর্য) উপবৃত্তাকার কক্ষপথের পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের বিন্দুকে অপভূ(ইংরেজি: Apsis)(গ্রিক: ἁψίς; plural apsides/ˈæps[অসমর্থিত ইনপুট: ‘ɨ’]diːz/, Greek: ἁψίδες) বলা হয়। সূর্য ভূ-কক্ষের অপভূ’তে আসে ৩ রা জুলাই।
গাণিতিক সূত্র
অপসূর: সর্বোচ্চ দূরত্ব(যাকে পরাভূ দূরত্বও বলা হয়) r a p = ( 1 + e ) a তে সর্বনিম্ন দ্রুতি v a p = ( 1 − e ) μ ( 1 + e ) a
অপবর্তন (ইংরেজি: Diffraction) হল এমন একটি আলোকীয় ঘটনা, যেখানে কোনো প্রতিবন্ধকের ধার ঘেঁষে বা সরু চিরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় জ্যামিতিক ছায়া অঞ্চলের মধ্যে আলো বেঁকে যায়। একই তরঙ্গমুখের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত গৌণ তরঙ্গসমূহের উপরিপাতনের ফলে অপবর্তনের সৃষ্টি হয়।[১]
এছাড়া এই বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ এক এক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর জন্য এক এক রকম। সাদা আলোকে এই ধরনের ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অপবর্তিত করা হলে এর মধ্যে উপস্থিত সাতটি আলো ভিন্ন ভিন্ন কোণে বেকে যায়। এতে বর্নালীর সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ – মাকড়শার জালে যে বর্ণালি দেখা যায় তা এর তন্তুগুলির সরু ফাঁকগুলিতে আলোর অপবর্তনের ফলেই সৃষ্টি হয়ে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞানপদার্থ ও তার গতিরবিজ্ঞান।[১] বাংলায় “পদার্থবিজ্ঞান” শব্দটি একটি সমাসবদ্ধ পদ। “পদার্থ” ও “বিজ্ঞান” দুটি সংস্কৃত শব্দ নিয়ে এটি গঠিত। এর ইংরেজি পরিভাষা Physics শব্দটি গ্রিকφύσις (ফুঁসিস) অর্থাৎ “প্রকৃতি”, এবং φυσικῆ (ফুঁসিকে) অর্থাৎ “প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান” থেকে এসেছে। পদার্থবিজ্ঞান বলতে বলা যেতে পারে এটা হলো গণিতের বাস্তব রূপ। এখানে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব নিকাশ দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়। অত্যন্ত বিমূর্তভাবে বলতে গেলে, পদার্থবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যার লক্ষ্য আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করা।[২]
পাশ্চাত্যের ভাষাগুলোতে পদার্থবিজ্ঞানকে “ফিজিক্স” বা এই জাতীয় শব্দ দিয়ে নির্দেশ করা হয়। এই শব্দটি প্রাচীন গ্রিক φυσική (ἐπιστήμη) বা রোমান Physikḗ (epistḗmē), φύσις physis “প্রকৃতি”[৩][৪][৫]) থেকে এসেছে যার অর্থ “প্রকৃতির জ্ঞান”।[৬] যেখানে পদার্থ, পদার্থের গতি এবং স্থান ও সময় মাধ্যমে তার আচরণ এবং শক্তি এবং বল সংক্রান্ত রাশি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে একটি। পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের আচরণ সম্পর্কে অনুধাবন করা ।[ক][৭][৮][৯]
পদার্থবিজ্ঞান প্রাচীনতম একাডেমিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম, সম্ভবত জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রাচীনতম।[১০] শেষ দুই সহস্রাব্দে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং গণিতের কিছু শাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দর্শনের অংশ ছিল, কিন্তু ১৭দশ শতকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান তাদের নিজস্ব অধিকার হিসাবে অনন্য গবেষণা কর্মসূচিতে পরিণত হয়।[খ] পদার্থবিদ্যা গবেষণার অনেক আন্তঃসম্পর্কিত এলাকায়, যেমন জৈববিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম রসায়ন হিসাবে ছেদ করে, এবং পদার্থবিজ্ঞানের সীমারেখা কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না পদার্থবিজ্ঞানে নতুন ধারণাগুলি প্রায়ই অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির মৌলিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে[৭] যখন গণিত এবং দর্শনের ক্ষেত্রে গবেষণার নতুন নতুন উপায়গুলি খোলার সময়।
পদার্থবিজ্ঞান তাত্ত্বিক সাফল্য থেকে উদ্ভূত নতুন প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদানও করে। উদাহরণস্বরূপ, তড়িচ্চুম্বকত্ব বা পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশের অগ্রগতিগুলি সরাসরি নতুন পণ্যগুলির উন্নয়নে পরিচালিত হয়েছে যা নাটকীয়ভাবে একটি আধুনিককালের সমাজ যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, গার্হস্থ্য যন্ত্রপাতি এবং পারমাণবিক অস্ত্রকে রূপান্তরিত করেছে;[৭] তাপবিদ্যায় অগ্রগতি ঘটেছে শিল্পায়ন উন্নয়ন, এবং মেকানিক্স মধ্যে অগ্রগতি ক্যালকুলাসের (calculus) উন্নয়ন অনুপ্রাণিত করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞান জ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলির একটি এবং এটির সবচেয়ে প্রাচীন উপশাখার আধুনিক নাম জ্যোতির্বিজ্ঞান।[১২]প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা মানুষের আদিমতম কাজের একটি, তবে পদার্থবিজ্ঞান বলতে বর্তমানে যাকে বোঝানো হয় তার জন্ম ১৬শ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক বিপ্লবোত্তর-কালে, যখন এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণকারী একটি বিজ্ঞানে পরিণত হয়[১৩] তার আগে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সাধারণ নাম ছিল প্রাকৃতিক দর্শন, যাকে ঠিক বিজ্ঞান বলা যায় না।
জড়পদার্থের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানদায়ক বিদ্যা বা শাস্ত্র হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত ব্যক্তি পদার্থবিজ্ঞানী-রূপে পরিচিত। পদার্থবিজ্ঞানীরা আমাদের চারপাশের বস্তুজগৎ কি আচরণ করে আর কেনই বা সেইসব আচরণ করে, তা বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁরা এ উদ্দেশ্যে অনুকল্প প্রস্তাব করেন, এবং সেগুলি বাস্তবে পর্যবেক্ষণসম্ভব উপাত্তের সাথে মিলিয়ে দেখেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। আবার শাস্ত্রটি দর্শন ও গণিতের সাথেও সম্পর্কিত। উল্লিখিত সমস্ত শাস্ত্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা সুসংজ্ঞায়িত নয়, বরং জটিল। প্রকৃতিকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান এই তিনটি প্রধান বিজ্ঞানে ভাগ করে নেয়া হয়েছে। রসায়নে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ আলোচিত হয়, জীববিজ্ঞানে জীবন ও জীবিত বস্তুসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়, আর বাকী সব কিছু আলোচনা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানে। দর্শন ও গণিতের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক আরও জটিল। আধুনিক বিজ্ঞান হিসেবে জন্মলাভের আগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু দর্শনশাস্ত্রে আলোচিত হত এবং বর্তমান দর্শনের নানা শাখায় অধীত বিষয়সমূহ পদার্থবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে ব্যাখ্যা করার ইচ্ছা রাখেন (যেমন – অস্তিত্বের মত অধিবিদ্যামূলক ধারণাসমূহ), যদিও তা সম্ভব না-ও হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা ও তত্ত্বগুলি প্রায় সার্বজনীনভাবে গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। তাই গণিতকে প্রায়ই পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা বলে অভিহিত করা হয়।[১৪] আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে উপরের সবগুলি শাস্ত্রের মধ্যে গণিতের সাথেই পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়। পদার্থবিজ্ঞান গণিতের কিছু শাখার উন্নয়নে সরাসরি সহায়তা করেছে, যেমন – ভেক্টর বিশ্লেষণ। আবার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম অনেক ব্যক্তি আছেন যারা গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান উভয়ক্ষেত্রেই পারদর্শী ছিলেন, যেমন – নিউটন, অয়লার, গাউস, পোয়াঁকারে প্রমুখ। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের আন্তঃসম্পর্ক পদার্থবিজ্ঞানকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ও পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান নামের দুইটি প্রধান শাখায় ভাগ করেছে।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান এবং এর সংশ্লিষ্ট শাস্ত্র গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে সাধারণত অনুকল্পসমূহ প্রস্তাব করা হয়, আর পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানে এই অনুকল্পগুলিকে প্রকৃতির সাথে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই দুই শাখা একে-অপরের পরিপূরক: তত্ত্বসমূহ পরীক্ষা করা হয় ও পরীক্ষাশেষে উন্নততর তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়, যেগুলো আবার পরীক্ষা করা হয় এবং এভাবেই ক্রমশ চলতে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পেশাদারী পরীক্ষাগারে সম্পন্ন করা হয় এবং আধুনিক যুগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষণা হয় না বললেই চলে। তাত্ত্বিক কাজকর্ম মূলত ব্যক্তিগত হলেও তা অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতেই ঘটে।[১৫] বর্তমান আধুনিক যুগে পদার্থবিজ্ঞানীরা সাধারণত পদার্থবিজ্ঞানের যে-কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রের উপর দক্ষতা অর্জন করেন, যা অতীতের পদার্থবিজ্ঞানীদের কর্মপন্থার বিপরীত।[১৬] অন্যদিকে নিউটন, অয়লার বা গাউসের মত পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাদা শাখার প্রতিটিতে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন, এরকম আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে পদার্থবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের শাখা। পদার্থবিজ্ঞানীদের কাজ বিদ্যুৎ, মোটর পরিবহন, চিকিৎসা (বিশেষ করে এক্স-রশ্মির ব্যবহার), ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। তবে অনেক সময় পদার্থবিজ্ঞানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির মত অনৈতিক কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞানীরা যদিও গত প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও প্রকৃতিতে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে যেগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে পদার্থবিজ্ঞান এখনও একটি সক্রিয় শাস্ত্র; বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার গবেষক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় রত। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার পরিমাণ ও পরিসর দুই-ই অনেক বেশি। পদার্থবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বগুলো কেবল প্রকৃতির আরও গভীরতর বর্ণনাই দেয়নি, এর অনন্য ও রহস্যময় রূপ আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার করে তুলেছে।
বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান বলতে আমরা যে বিষয়টিকে বােঝাই প্রাচীনকালে সেটি শুরু হয়েছিল জ্যোতির্বিদ্যা,আলােকবিজ্ঞান, গতিবিদ্যা এবং গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যামিতিরতির সমন্বয়ে!
গ্রিকদের অবদান
গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিসের (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬-৬২৪) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ তিনিই প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া শুধু ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন থেলিস, সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং লােডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন। সেই সময়ের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে পিথাগােরাস (৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) একটি স্মরণীয় নাম। জ্যামিতি ছাড়াও কম্পমান তারের ওপর তার মৌলিক কাজ ছিল। গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস (৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম ধারণা দেন যে পদার্থের অবিভাজ্য একক আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল এটম (এই নামটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকে)। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তার ধারণাটি প্রমাণের কোনাে সুযােগ ছিল না বলে সেটি সবার কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। সেই সময়কার সবচেয়ে বড় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি হওয়ার মতবাদটিই অনেক বেশি গ্রহণযােগ্য ছিল। (আরিস্তারাকস (৩১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তার অনুসারী সেলেউকাস যুক্তিতর্ক দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছিলেন, যদিও সেই যুক্তিগুলাে এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে .গ্রিক বিজ্ঞান এবং গণিত তার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের (২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় । তরল পদার্থে উধ্বমুখী বলের বিষয়টি এখনাে বিজ্ঞান বইয়ের পঠনসূচিতে থাকে। গােলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দূর থেকে শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে তিনি যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতেস্থিনিস (২৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।
মুসলিম সভ্যতার অবদান
মুসলিম গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানীদের ভেতর মুসা ইবনে আল খােয়ারিজমির (৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। তার লেখা আল জাবির বই থেকে বর্তমান এলজেবরা নামটি এসেছে। ইবনে আল হাইয়াম (৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ) কে আলােকবিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল মাসুদি (৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ) প্রকৃতির ইতিহাস নিয়ে ৩০ খণ্ডে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লিখেছিলেন। ওমর খৈয়ামের নাম সবাই কবি হিসেবে জানে, কিন্তু তিনি ছিলেন উঁচুমাপের গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক।
বিজ্ঞানের উত্থান পর্ব (মধ্যযুগীয় ইউরোপের অবদান)
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে একটি বিস্ময়কর বিপ্লবের শুরু হয়, সময়টা ছিল ইউরোপীয় রেঁনেসার যুগ। ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাস তার একটি বইয়ে সূর্যকেন্দ্রিক একটি সৌরজগতের ব্যাখ্যা দেন (বইয়ের প্রকাশক ধর্মযাজকদের ভয়ে লিখেছিলেন যে এটি সত্যিকারের ব্যাখ্যা নয়, শুধু একটি গাণিতিক সমাধান মাত্র!) ।কোপার্নিকাসের তত্ত্বটি দীর্ঘাদন লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে ছিল, গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২) সেটিকে সবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি গাণিতিক সূত্র দেওয়ার পর পরীক্ষা করে সেই সূত্রটি প্রমাণ করার বৈজ্ঞানিক ধারার সূচনা করেন। গ্যালিলিওকে অনেক সময় আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তবে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের প্রবন্তা হওয়ার কারণে তিনি চার্চের কোপানলে পড়েছিলেন এবং শেষ জীবনে তাঁকে গৃহবন্দী হয়ে কাটাতে হয়। ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আইজাক নিউটন বলবিদ্যার তিনটি এবং মহাকর্ষ বলের সূত্র প্রকাশ করেন, যেটি বল এবং গতিবিদ্যার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। আলোকবিজ্ঞান এবং অন্য আরো কাজের সাথে সাথে বিজ্ঞানী নিউটন লিবনিজের সাথে গণিতের নতুন একটি শাখা ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন. অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে তাপকে ভরহীন এক ধরনের তরল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৭৯৮ সাল কাউন্ট রামফোর্ড দেখান,তাপ এক ধরনের শক্তি এবং যান্ত্রিক শক্তিকে তাপশক্তিতে রুপান্তুর করা যায়। আরও অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে লর্ড কেলভিন ১৮৫০ সালে তাপ গতিবিজ্ঞানের (থার্মোডিনামিক্সের) দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ ও চুষকের ওপরেও এই সময় ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। ১৭৭৮ সালে কুলম্ব বৈদ্যুতিক চার্জের ভেতরকার বলের জন্য সূত্র আবিষ্কার করেন। ১৮০০ সালে ভোল্টা বৈদ্যুতিক ব্যাটারি আবিষ্কার করার পর বিদ্যুৎ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা শুরু হয়। ১৮২০ সালে অরস্টেড দেখান বিদ্যুৎ প্রবাহ দিয়ে চুম্বক তৈরি করা যায়। ১৮৩১ সালে ফ্যারাডে এবং হেনরি ঠিক তার বিপরীত প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তারা দেখান চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল তার বিখ্যাত ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ দিয়ে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে একই সূত্রের মাঝে নিয়ে এসে দেখান যে আলো আসলে একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। বিদ্যুৎ ও চুম্বক আলাদা কিছু নয়, আসলে এ দুটি একই শক্তি দুটি ভিন্ন রূপ। এটি সময়োপযোগী একটি আবিষ্কার ছিল,কারণ ১৮০১ সালে ইয়ং পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর তরঙ্গ ধর্মের প্রমাণ করে রেখেছিলেন।
মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন যে, বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া রয়েছে। এরপর পদার্থবিজ্ঞানের মঞ্চে আবির্ভূত হন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)। তিনি বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে একীভূত করে চারটি অসাধারণ সূত্র প্রদান করে। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানে ম্যাক্সওয়েলের সূত্র নামে পরিচিত। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় বেতার তরঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় ও এর উপর গবেষণা চলে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই প্রথম বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণে সক্ষম হন। তবে তার এ আবিষ্কারের পেটেন্ট না করানোর কারণে তিনি নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত হন। প্রায় একই সময় ইতালিয়ান বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনিও বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণ করেন। তিনি তার কাজের পেটেন্ট করানোর ফলে প্রথম স্বীকৃতভাবে রেডিও আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হন। তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উইলহেলম রন্টজেন (১৮৪৫-১৯২৩) এক্স রে আবিষ্কার করেন। এ কাজের জন্য তিনি ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া হেনরি বেকেরেল ও কুরি দম্পতি এ সময় তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। প্রমুখ বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই এ সময় পদার্থবিজ্ঞান এগোতে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞানের প্রধান শাখাসমূহ
পদার্থবিজ্ঞান শাস্ত্রের পরিপক্বতার সাথে সাথে প্রকৃতিতে পর্যবেক্ষণযোগ্য ভৌত ঘটনাগুলিকে এর কতগুলি বিশেষ বিশেষ শাখার অধীনে বণ্টন করে নেওয়া হয়েছে। যদিও পদার্থবিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে একত্রে একক একটি তত্ত্বের অধীন হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে, এ ধারণাটি এখনও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। পদার্থবিজ্ঞানের মূল শাখাগুলি এরকম:
চিরায়ত বলবিজ্ঞান: চিরায়ত বলবিজ্ঞানে বস্তুসমূহের উপর বলের ক্রিয়ার পদার্থ-বৈজ্ঞানিক মডেল আলোচিত হয়। এই মডেল নিষ্পত্তিমূলক (deterministic)। চিরায়ত বলবিজ্ঞানকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সীমা হিসবে গণ্য করা হয়, যদিও এটা প্রমাণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। চিরায়ত বলবিজ্ঞানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান: এই শাখায় পারমাণবিক ও অতি-পারমাণবিক ব্যবস্থাসমূহ এবং বিকিরণের সাথে এদের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণযোগ্য রাশির সাপেক্ষে আলোচনা করা হয়। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ভিত্তি পর্যবেক্ষণটি হচ্ছে সব ধরনের শক্তি কিছু বিচ্ছিন্ন এককের গুচ্ছ আকারে নিঃসরিত হয়, যে গুচ্ছগুলির নাম কোয়ান্টা (বহুবচনে)। কোয়ান্টাম তত্ত্বে পর্যবেক্ষণযোগ্য কণাগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কেবল সম্ভাবনাভিত্তিক বা পরিসংখ্যানিক গণনা সম্ভব, এবং এগুলি তরঙ্গ ফাংশনের আকারে আলোচনা করা হয়।
তড়িৎ-চুম্বকত্ব : এই শাখায় তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রের পদার্থবিজ্ঞান আলোচিত হয়। তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র এমন একটি ক্ষেত্র যা সর্বত্র বিস্তৃত এবং বৈদ্যুতিক চার্জ-যুক্ত কণার উপর এটি বল প্রয়োগ করতে পারে। একইভাবে বৈদ্যুতিক আধানের উপস্থিতি ও চলন কোন তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
পরিসংখ্যানিক বলবিজ্ঞান ও তাপগতিবিজ্ঞান: এই শাখাগুলিতে তাপ, কাজ ও এনট্রপি আলোচিত হয়। তাপগতিবিজ্ঞানে বড় আকারের (macroscopic) ব্যবস্থার শক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এর উপর তাপমাত্রা, চাপ, আয়তন, যান্ত্রিক কাজ ইত্যাদির প্রভাব গবেষণা করা হয়। পরিসংখ্যানিক বলবিজ্ঞানে বৃহদায়তনিক (macroscopic) ব্যবস্থার ক্ষুদ্রায়তনিক (microscopic) উপাদানগুলিতে পরিসংখ্যানের পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাপগতিবিজ্ঞানের বৃৃৃৃৃৃহদায়তনিক (macroscopic) দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিরায়ত বা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে ব্যাখ্যাকৃত পদার্থের পারমাণবিক আচরণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের শাখা
শব্দবিজ্ঞান (Acoustics) – কঠিন বস্তুর তরল পদার্থ, এবং গ্যাস (যেমন কম্পন এবং শব্দ হিসাবে) মধ্যে যান্ত্রিক তরঙ্গ অধ্যয়ন
কৃষি পদার্থবিজ্ঞান (Agrophysics) – পদার্থবিজ্ঞান গবেষণায় কৃষি সংস্থাগুলোর প্রয়োগ
নভোপদার্থবিজ্ঞান (Astrophysics ) – মহাজাগতিক বস্তুসমূহের ভৌত ধর্ম অধ্যয়ন
জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) – পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্ব এবং তার গঠন ও বিকাশের পাশাপাশি বিবর্তন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, আবহাওয়াবিদ্যা এবং মহাকাশীয় বস্তুর গতি (যেমন ছায়াপথ, গ্রহ, নক্ষত্র,ধূমকেতু ইত্যাদি ) এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে উৎপন্ন (যেমন হিসাবে মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ) ঘটনাবলি।
জ্যোতির্গতিবিজ্ঞান (Astrodynamics) – রকেট এবং অন্যান্য মহাকাশযানের গতিবিধি সংক্রান্ত বাস্তব সমস্যার জন্য বলবিদ্যার প্রয়োগ।
নভোমিতি বা জ্যোতির্মিতি (Astrometry) – জ্যোতির্বিজ্ঞানের শাখা যা বড় এবং অন্যান্য খ-বস্তুসমূহের অবস্থান ও অবস্থানের সঠিক পরিমাপের সাথে জড়িত।
ছায়াপথ জ্যোতির্বিজ্ঞান (Galactic astronomy) – আমাদের নিজস্ব আকাশগঙ্গা ছায়াপথ এবং তার সমস্ত বিষয়বস্তু অধ্যয়ন।
ভৌত বিশ্বতত্ত্ব (Physical cosmology) – মহাবিশ্বের বৃহৎ-স্তরের কাঠামো এবং গতিবিদ্যা গবেষণা এবং তার গঠনের এবং বিবর্তন সম্পর্কে মৌলিক আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট।
গ্রহীয় বিজ্ঞান (Planetary science) – গ্রহগুলোর (পৃথিবী সহ) উপগ্রহ,চন্দ্র ও গ্রহের সিস্টেম, বিশেষ করে সৌর সিস্টেম এবং তাদের গঠন প্রক্রিয়াগুলে।
নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান (Stellar astronomy) – প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যা মহাজাগতিক বস্তুর (যেমন তারা, গ্রহ, ধূমকেতু, তারকা সংমিশ্রণ এবং ছায়াপথ) এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল (যেমন মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ)
পরিগণনামূলক পদার্থবিজ্ঞান (Computational physics) – পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধানের জন্য সাংখ্যিক নির্দেশক্রম বা অ্যালগরিদমগুলির গবেষণা এবং বাস্তবায়ন, যার জন্য একটি পরিগণনামূলক তত্ত্ব ইতিমধ্যে বিদ্যমান।
ফলিত বিজ্ঞান হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং জ্ঞানকে ব্যবহারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা। এর মধ্যে প্রকৌশল এবং ঔষধশাস্ত্রের মতো বিস্তৃত শাখা রয়েছে। ফলিত বিজ্ঞান প্রায়শই তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি করে, যা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং সুত্রসমুহকে এগিয়ে নিয়ে যায় যা প্রকৃতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে এবং নতুন আবিষ্কারের পূর্বাভাস দেয়।
ফলিত বিজ্ঞান কৌলিতত্ত্বের মতো পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা তত্ত্বের মতো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানও প্রয়োগ করতে পারে। জেনেটিক এপিডেমিওলজি হল একটি প্রয়োগ বিজ্ঞান যা জৈবিক এবং পরিসংখ্যান উভয় পদ্ধতিই প্রয়োগ করে।
ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা তদন্ত চলাকালীন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করেন। কিছু ফরেনসিক বিজ্ঞানী নিজেই প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অপরাধের ঘটনাস্থলে যায়, অন্যরা পরীক্ষাগারে তাদের দায়িত্ব পালন করে এবং তাদের কাছে আনা বস্তু বিশ্লেষণ করে থাকে। [২]
তাদের পরীক্ষাগারের দায়িত্ব পালন ছাড়াও, ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা ফৌজদারি ও দেওয়ানী উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দেয় এবং রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রতিরক্ষা উভয় পক্ষেই কাজ করতে পারে। যে কোনও ক্ষেত্র প্রযুক্তিগতভাবে ফরেনসিক হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ফরেনসিক ভাবে সম্পর্কিত কেস অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিভাগ সময়ের সাথে বিকাশ লাভ করেছে। [৩] ফরেনসিক বিজ্ঞান দুটি পৃথক লাতিন শব্দের সংমিশ্রণ: ফরেনসিস এবং বিজ্ঞান। প্রাক্তন, ফরেনসিক, জনসমক্ষে সম্পাদিত আলোচনা বা পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত। যেহেতু প্রাচীন বিশ্বে বিচারগুলি সাধারণত জনসাধারণের মধ্যে অনুষ্ঠিত হত, এটি একটি শক্তিশালী বিচারিক অভিব্যক্তি বহন করে। দ্বিতীয়টি হ’ল বিজ্ঞান, যা ‘জ্ঞান’ শব্দটির লাতিন শব্দ থেকে উদ্ভূত এবং আজ বিজ্ঞান পদ্ধতির সাথে, যা জ্ঞান অর্জনের একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জড়িত। একসাথে নিলে, ফরেনসিক বিজ্ঞানকে অপরাধ সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়াগুলির ব্যবহার হিসাবে দেখা যায়।
Owen, D. (2000). Hidden Evidence: The Story of Forensic Science and how it Helped to Solve 40 of the World’s Toughest Crimes Quintet Publishing, London. আইএসবিএন১-৮৬১৫৫-২৭৮-৫.
Quinche, Nicolas, and Margot, Pierre, “Coulier, Paul-Jean (1824–1890): A precursor in the history of fingermark detection and their potential use for identifying their source (1863)”, Journal of forensic identification (Californie), 60 (2), March–April 2010, pp. 129–134.
Silverman, Mike; Thompson, Tony. Written in Blood: A History of Forensic Science. 2014.
Stanton G (২০০৩)। SF Norton, সম্পাদক। “Underwater Crime Scene Investigations (UCSI), a New Paradigm”। Diving for Science… 2003.। Proceedings of the American Academy of Underwater Sciences (22nd annual Scientific Diving Symposium)। ২৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৮।
Starr, Douglas (২০১১)। The Killer of Little Shepherds: A True Crime Story and the Birth of Forensic Science। আইএসবিএন978-0307279088।
ডাবল-টিউনড বিবর্ধক বা ডাবল-টিউনড অ্যামপ্লিফায়ার হল একপ্রকার টিউনড অ্যামপ্লিফায়ার যার অ্যামপ্লিফায়ার গুলির প্রতিটি ধাপ একটি করে ট্রান্সফরমার দ্বারা পরবর্তী অংশের সাথে সংযুক্ত করা থাকে যাদের মুখ্য এবং গৌণ কুন্ডিলীর প্রত্যেকের আবেশ (Inductance) পৃথক ভাবে এর সমান্তরালে ধারক (Capatitor) দ্বারা টিউন করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অন্যান্য একক টিউন বর্তনীর চাইতে অধিকতর প্রশস্থ ব্যান্ডউইথ এবং ঢালু ট্রাঞ্জিশন ব্যান্ড পাওয়া যায়।
একাধিক ধাপের ক্যাসকেডিং ডাবল-টিউনড অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহারের ফলে সামগ্রিক অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথ কমে আসে। দুই ধাপ বিশিষ্ট ডাবল-টিউনড অ্যামপ্লিফায়ারে একক ধাপ বিশিষ্টের ৮০% ব্যান্ডউইথ থাকে। ব্যান্ডউইথ অপচয় পরিহার করতে ডাবল-টিউনিং এর বিকল্প হল স্ট্যাগার টিউনিং। যেকোন একক ধাপের অ্যামপ্লিফায়ারের চাইতে বড় ব্যন্ডউইথে স্ট্যাগার টিউন অ্যামপ্লিফায়ারকে নির্ধারিত ব্যন্ডউইথে পরিকল্পনা করা সম্ভব। যদিও, স্ট্যাগার টিউনিং-এর গেইন ডাবল-টিউনিং-এর চাইতে কম এবং এতে আরো বেশি ধাপের প্রয়োজন হয়।
সাধারণ বর্তনী
একটি সাধারণ ২-ধাপ বিশিষ্ট ডাবল-টিউনড বিবর্ধক
বর্তনীতে দুই ধাপে নির্মিত অ্যামপ্লিফায়ার অভিন্ন এমিটারটপোলজিতে দেখানো হয়েছে। বায়াসরোধকগুলির সকলেই তাদের নিজ নিজ স্বাভাবিক ফাংশন মেনে চলে। বায়াসের উপর প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রথম ধাপের অন্তঃগমনকে (input) শ্রেণী ধারকের মাধ্যমে প্রথাগত ভাবে কাপলিং করা হয়। যদিও, সংগ্রাহক লোড ট্রান্সফরমার দ্বারা গঠিত যা ধারকের বদলে আন্ত-ধাপ কাপলিং-এর কাজ করে। ট্রান্সফরমারের কুণ্ডলীর ধারকত্ত্ব আছে। অনুনাদিত বর্তনী (resonant circuit) থেকে ট্রান্সফরমারের কুণ্ডলী বরাবর ধারকের অবস্থান অ্যামপ্লিফায়ারের টিউনিং প্রদান করে।
এ ধরনের অ্যামপ্লিফায়ারে আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যা হল ট্রান্সফরমারের কুণ্ডলীতে ট্যাপ-এর উপস্থিতি। এগুলি সর্বোচ্চ কুণ্ডলীর বদলে ট্রান্সফরমারের বহিঃগামি এবং অন্তঃগামি সংযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা সংরোধ (impedence) সমতার জন্য ব্যবহৃত হয়; বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর(bipolar junction transistor) অ্যামপ্লিফায়ারগুলির (বর্তনীতে যেরূপ দেখানো হয়েছে) বহিঃগামি সংরোধ বেশ বড় এবং অন্তঃগামি সংরোধ বেশ ক্ষুদ্র। মসফেট ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে যাদের অন্তঃগামি সংরোধ অনেক বেশি।[১]
ট্রান্সফরমারের গৌণ কুণ্ডলী নিম্নভাগ এবং ভূ-সংযোগ-এর (ground) মধ্যে ধারক সংযোজিত থাকে যা টিউনিং-এ অংশগ্রহণ করে না। বরং, তাদের উদ্দেশ্য পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ বর্তনী থেকে ট্রন্জিস্টরের বায়াস রোধকেডিকাপল করা।
বৈশিষ্ট্য
একক টিউনিং-এর সাথে তুলনা করলে পাওয়া যায়, অ্যামপ্লিফায়ারের অধিকতর প্রশস্ত ব্যান্ডউইথ এবং ঢালু ট্রান্জিশন ব্যান্ড প্রতিক্রিয়ার উপর ডাবল টিউনিং-এর প্রভাব আছে।[২] ট্রান্সফরমারের উভয় পার্শ্বে টিউনিং করা হলে এক জোড়া সম্মিলিত অনুনাদক (coupled resonator) উৎপন্ন করে যা বর্ধিত ব্যান্ডউইথের উৎস। অ্যামপ্লিফায়ারের গেইন কাপলিং গুণাঙ্ক ( coupling coefficient), k এর একটি ফাংশন, যা পারষ্পরিক আবেশাঙ্ক (mutual inductance), M এর সাথে সম্পর্কিত এবং মুখ্য ও গৌণ কুন্ডলির আবেশাঙ্ক যথাক্রমে Lp ও Ls, M = k L p L s
কাপলিং-এর ক্রান্তি মানে অনুনাদে অ্যামপ্লিফায়ারের গেইন সর্বোচ্চ। ক্রান্তি মানের নিচে বিভব অনুনাদে পৌছানো পর্যন্ত কম্পাঙ্ক প্রতিক্রিয়াতে (frequency response) একটি একক পিক আছে এবং k এর মান হ্রাসের সাথে সাথে পিক হ্রাস পায়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াকে আন্ডারকাপল (undercoupled) বলা হয়, ক্রান্তি কাপলিং-এর চাইতে বেশি মানের k এর জন্য প্রতিক্রিয়াটি দুইটি পিকে বিভক্ত হতে শুরু করে। k এর মান বৃদ্ধির সাথে সাথে পিক গুলি সংকীর্ণ হতে এবং দুরে চলে যেতে শুরু করে এবং তাদের মধ্যবর্তী দুরত্ত্ব (অনুনাদ কম্পাঙ্ককে কেন্দ্র করে) ক্রমশ গভীর হয়ে যায়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াকে ওভারকাপল (overcoupled) বলা হয়।[৩][৪]
ক্রান্তি কাপলিংকৃত অ্যামপ্লিফায়ারের প্রতিক্রিয়া সর্বাধিক সমতল (maximally flat)। এই প্রতিক্রিয়া ট্রান্সফরমার না ব্যবহার করেও দুই ধাপ বিশিষ্ট স্ট্যাগার টিউন অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে অর্জন করা সম্ভব। ডাবল টিউনিং সাধারণত দুটি অনুনাদককেই অভিন্ন অনুনাদিত কম্পাংকে (resonant frequency) টিউন করে, যা স্ট্যাগার টিউনিং-এ ঘটে না।[৫] যদিও একজন পরিকল্পনাকারি (designer) প্রশস্থ ব্যান্ডউইথ অর্জনের জন্য কম্পাংক প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রে সামান্য ডিপের বিনিময়ে (সাধারনত ৩ডেসিবেল) পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন।[৬]
সমলয় টিউনিং (synchronous tuning) এর মত, ডাবল টিউনড অ্যামপ্লিফায়ার অধিকতর ধাপ যুক্তকরণ ব্যান্ডউইথ কমানোকে প্রভাবিত করে। একক ধাপের ব্যান্ডউইথের ভগ্নাংশ হিসেবে n সংখ্যক অভিন্ন ধাপের জন্য ৩ডেসিবেল ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায় আনুমানিক, 2 1 / n − 1 4
এই রীতি কেবলমাত্র ক্ষুদ্র আংশিক ব্যান্ডউইথের জন্য প্রযোজ্য।[৭]
বিশ্লেষণ
অ্যামপ্লিফায়ার গুলোকে সরলকৃত অতি-পরিবাহকত্ত্ব (transconductance) দ্বারা প্রতিস্থাপন করে বর্তনীটিকে আরো সাধারণ ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব, যেমনটি দেখানো হয়েছে।
ডাবল-টিউনড বিবর্ধকের একটি ধাপ এবং পরবর্তী ধাপের অংশের সাধারণ উপস্থাপন যেখানে (ধাপ সংখ্যরি প্রত্যয় বাদ দিয়ে), Go হল অ্যামপ্লিফায়ারের বহিঃগামি পরিবাহকত্ত্বGi হল অ্যামপ্লিফায়ারের অন্তঃগামি পরিবাহকত্ত্ব.
সাধারণত, অনুনাদিত কম্পাঙ্ক গুলি এবং অভিন্ন মুখ্য ও গৌণ পার্শ্বের Qs ধরে পরিকল্পনা করা হয়, যেন, ω 0 = ω 0 p = 1 L p C p = ω 0 s = 1 L s C s এবং, Q = Q p = 1 L p G o = Q s = 1 L s G i যেখানে ω0 হল অনুনাদিত কম্পাঙ্ক যা কৌনিক কম্পাঙ্ক-এর এককে প্রকাশ করা হয় এবং প্রত্যয় p ও s ট্রান্সফরমারের মুখ্য ও গৌণ পার্শ্বের উপাদান।
ধাপের গেইন
উপরের ধারণা থেকে পাই, অ্যামপ্লিফায়ারের এক ধাপের বিভব গেইন, A যাকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে A = A 0 2 k Q 4 Q δ − i ( 1 + k 2 Q 2 − 4 Q 2 δ 2 ) যেখানে i হল একটি কাল্পনিক একক, A 0 = g m 2 G o G i হল ঐ ধাপে অর্জিত সর্বোচ্চ সম্ভব গেইন, এবং δ = ω − ω 0 ω 0 হল কম্পাঙ্ক যা অনুনাদিত কম্পাঙ্ক থেকে পাওয়া কম্পাঙ্ক বিচ্যুতির অংশ।
শীর্ষ/পিক কম্পাঙ্ক
প্রতিবেদনে ক্রান্তি সংযোজন-এর পূর্বে অনুনাদ-এ একটি পিক উপস্থিত আছে। ক্রান্তি সংযোজনের পরে কম্পাঙ্কে দুটি পিক আছে, যা প্রকাশ করা হয়ে থাকে δ H , δ L = ± 1 2 Q k 2 Q 2 − 1 যেখানে δL এবং δH হল পর্যায়ক্রমে পিকের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক যা আংশিক বিচ্যুতি হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
ক্রান্তি সংযোজনে অথবা তার পরে পিক গুলি অ্যামপ্লিফায়ারের সর্বোচ্চ গেইনে পৌছায়।
ক্রান্তি সংযোজন
ক্রান্তি সংযোজন ঘটে যখন পিক দুইটি সমাপতিত হয়। এর অর্থ, যখন k 2 Q 2 − 1 = 0